ভাই ও বোনেরা, আজ আমার সাঁওতালদের ভূমিতে আসার সৌভাগ্য হয়েছে। ভগবান বিরসামুন্ডা, চাঁদ ভৈরব, নীলাম্বর-পীতাম্বরের মতো বীর সুসন্তানদের কর্মভূমি এই মাটি। এইমাটিকে আমি প্রণাম জানাই। এই মাটির বীর নাগরিকদেরও আমি অন্তর থেকে অভিবাদন জানাই।আজ ঝাড়খন্ডের সাহেবগঞ্জের মাটিতে একসঙ্গে সপ্তধারা বিকাশ যোজনার শুভারম্ভ হচ্ছে।আমার মনে হয়, স্বাধীনতার পর থেকে সাঁওতাল ভূমির কোনও অঞ্চলে এই প্রথম একটিঅনুষ্ঠানের মাধ্যমে একসঙ্গে এতগুলি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন হচ্ছে। এই গোটা সাঁওতালএলাকার উন্নয়নে সাফল্য পেতে হলে আগে এখানকার দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর, পিছিয়ে পড়াআদিবাসী ভাই ও বোনেদের জীবনে পরিবর্তন আনতে হবে। যত দ্রত গতিতে এখানে উন্নয়নের কাজচলবে, তত দ্রুত এখানকার সাধারণ মানুষের জীবনে পরিবর্তন আসবে।
আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ঝাড়খন্ড ও বিহার নতুনভাবে যুক্তহবে। ২,২০০ কোটি টাকারও বেশি খরচ করে গঙ্গানদীর উপর দুই রাজ্যের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী সর্ববৃহৎ সেতুটি নির্মিত হবে, যা শুধু এই দুটি রাজ্য নয়, পূর্ব ভারতেরসঙ্গে দেশের অন্যান্য অংশকে সংযুক্ত করার মাধ্যমে উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করারনতুন সেতু হিসাবে বিবেচিত হবে।
আমি বিহারবাসী ও ঝাড়খন্ডবাসীদের অভিনন্দন জানাই। আমাদের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীশ্রদ্ধেয় নীতিন গড়করি মহাশয় নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে প্রতিটি প্রকল্পের কাজ শেষকরিয়ে সুনাম অর্জন করেছেন। সেজন্য আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই প্রকল্পের ক্ষেত্রেওউদ্বোধনের দিনও এখন থেকে স্থির করা আছে এবং তার আগেই নির্মাণকার্য সম্পূর্ণ হবে।এই প্রকল্প ঝুলে থাকবে না। আপনারা কল্পনা করতে পারেন, এত বড় প্রকল্পের দ্রুতবাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের কত অসংখ্য নবীন প্রজন্মের মানুষের কর্মসংস্থানহবে! আজ নিজের এলাকায় কাজ হলে, কাজ সেরে কত সহজে বাড়ি ফেরা যায়! কর্মসংস্থানেরপাশাপাশি অনেকের হাতে-কলমে কাজ করে দক্ষতা উন্নয়নও হবে। দুই-আড়াই বছর ধরে একজনকোনও প্রকল্পে কাজ করলে, আগামীদিনে তাঁর দক্ষতা অনেক সময় কোনও ইঞ্জিনিয়ারেরদক্ষতাকে ছাপিয়ে যেতে পারে। এই অঞ্চলের নবযুবকদের সামনে এখন সেই সুযোগ খুলে যাবে।পরবর্তী সময়ে যখনই আশেপাশের রাজ্যে বা ভারতের অন্যত্র এ ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প হবেএই অঞ্চলের কর্মীরা তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার কারণে সেখানে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেঅগ্রাধিকার পাবেন। আর এই সকল প্রকল্পগুলির সবচাইতে বড় শক্তি হ’ল যে এখানেমানবশক্তিকে সুপরিকল্পিতভাবে দক্ষতা উন্নয়নের পথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
আমি এখানকার নবীন নাগরিকদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আপনারা এই সুযোগেরসদ্ব্যবহার করুন। পরিশ্রম করুন, নিজের দক্ষতা বাড়ান। আর একবার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলেসারা পৃথিবী বলতে শুরু করবে, অমুক এলাকায় অভিজ্ঞ নবযুবকরা রয়েছেন, তাদেরকে কাজেরজন্য পাঠান। এই পরিবর্তন আসতে চলেছে । আমি আজ এখানে দ্বিতীয় যে প্রকল্পটি উদ্বোধনের সুযোগ পেয়েছি, সেটি হ’লসাহেবগঞ্জ থেকে গোবিন্দপুর সড়কপথ। আগে এখান থেকে গোবিন্দপুর যেতে ১০ থেকে ১৪ ঘন্টালাগতো। এই নতুন সড়কপথ খোলার পর এখন ৫-৭ ঘন্টার মধ্যে গোবিন্দপুর পৌঁছে যেতেপারবেন। এই গতি বৃদ্ধির ফলে আপনাদের জীবনে অনেক পরিবর্তন অবষম্ভাবী। গোটা সাঁওতালপরগনা অঞ্চলের দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর মানুষের জীবনে এই উন্নয়ন নতুনভাবে বাঁচার পথখুলে দেবে। উন্নয়নের নতুন পথ খুলে দেবে। উন্নয়নের একটি নতুন লক্ষ্যকে সামনে তুলেধরবে। সেজন্য নিছকই যাতায়াত নয়, এটি উন্নয়নের প্রতীক হয়ে উঠে গোটা এলাকার চেহারাবদলে দেবে বলে আমার বিশ্বাস।
ভাই ও বোনেরা, নদীকে আমরা মা বলি। মা আমাদেরশ সবকিছু দেন। একটি প্রবাদরয়েছে, ‘বাচ্চা না কাঁদলে, মা-ও দুধ দেন না’! গঙ্গা মা শতাব্দীর পর শতাব্দীকাল ধরেএই পুরো এলাকাকে সুজলা সুফলা করে রেখেছে। গঙ্গা আমাদের জীবনধারা রূপে প্রবাহিত।কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে আমরা এই গঙ্গার মাধ্যমে ঝাড়খন্ডকে সরাসরি বাকি বিশ্বেরসঙ্গে যুক্ত করতে চলেছি। আপনারা জানেন যে, সমুদ্রতট সন্নিকটস্থ শহরগুলির সঙ্গেবিশ্বের বিভিন্ন শহরে যোগাযোগ অবলীলায় গড়ে ওঠে। কিন্তু স্থলবেষ্টিত ঝাড়খন্ডের কোনওসমুদ্রতট নেই। সমুদ্র অনেক দূরে। একথা মাথায় রেখে আমাদের নীতিন গড়করি মহোদয়েরনেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকারের একদল মানুষ নিবিড় অধ্যবসায়ে একটি প্রকল্প এগিয়ে নিয়েযাচ্ছেন। এটি সম্পূর্ণ হলে ঝাড়খন্ডের সঙ্গে বাকি বিশ্বের সরাসরি যোগাযোগ সুলভ হবে।সেটি হ’ল, গঙ্গানদীতে মাল্টি-মোডাল টার্মিনালের কাজ। আজ সেটিরও ভিত্তিপ্রস্তরস্থাপন করা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়িত হলে গঙ্গাপথে জাহাজ আসতে পারবে, আর এখানকারব্যবসায়ীরা এর সুযোগ নিয়ে বঙ্গোপসাগর দিয়ে বিদেশের সঙ্গে সরাসরি আমদানি-রপ্তানিকরবে। বিশ্ব বাণিজ্যে ঝাড়খন্ডও নিজের জায়গা তৈরি করে নিতে পারবে। এ রাজ্যেরস্টোনচিপস্, কয়লা ও অন্যান্য উৎপাদিত সামগ্রী সরাসরি বিশ্ব বাজারে পৌঁছে দেওয়ারসামর্থ্য অর্জন করবে ঝাড়খন্ড। শুধু তাই নয়, এই জলপথ খুলে গেলে সড়ক কিংবা রে লপথেরচাইতে অনেক সুলভে পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলিতে পণ্য পরিবহণ সম্ভব হবে।
ভাই ও বোনেরা, আমাদের দেশে পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে মাননীয় অটল বিহারীবাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন সরকার দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে গেছেন। দুটির কথা আমিউল্লেখ করেছি, কিন্তু এগুলির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন।প্রথমটি হ’ল, গোটা ভারতকে সোনালী চতুষ্কোণের মাধ্যমে সংযুক্তিকরণ। আর এই সফলপ্রয়োগের পাশাপাশি দেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামকে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনারমাধ্যমে যুক্ত করা। এভাবে শরীরের শিরা-ধমনীর মাধ্যমে যেমন প্রতিটি কোষে রক্তআসা-যাওয়া করে, তেমনই দেশের প্রায় প্রত্যেক গ্রামে পৌঁছানোর পথকে সুগম ও উন্নতকরেছেন। পরবর্তী সরকারগুলিও এই প্রকল্পকে বাস্তবায়নের কাজে হাত লাগিয়েছে। কিন্তুএক্ষেত্রে বাজেপেয়ীজির অবদান সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
ভাই ও বোনেরা, শুধু সড়কপথ নয়, সার্বিক পরিকাঠামো উন্নয়ন সুনিশ্চিত করতেআমরা রেলপথের বিস্তার ঘটিয়েছি, বিমানবন্দর গড়ে তোলার কাজ করছি। বর্তমান কেন্দ্রীয়সরকার পণ্য পরিবহণকে সুলভ করতে নীতিনজির নেতৃত্বে জলপথ সংস্কারের মাধ্যমে আমাদেরনদীগুলিকে সুগম করে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছোট ছোট নৌকায় করে পণ্য পরিবহণ আমরাঅনেক দেখেছি। এবার হাজার হাজার টন পণ্য পরিবহণে সক্ষম জাহাজ দেখব । বঙ্গোপসাগরের সঙ্গেসরাসরি জাহাজ সংযোগ স্থাপিত হবে। আজ সেই প্রকল্পেরও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হচ্ছে।এর ফলে, অদূর ভবিষ্যতেই এই রাজ্যে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। গোটা ভারতেনতুনভাবে এই প্রকল্পের কাজ বিস্তারিত হবে। আমরা পরিবেশ-বান্ধব পরিকাঠামো উন্নয়নেজোর দিয়েছি। মা গঙ্গা আমাদের সব কিছু দেন। এখন নীতিনজির নেতৃত্বে মা গঙ্গাযাতায়াতের ক্ষেত্রে এবং পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবেন। আজ তারইপ্রস্তুতি চলছে। সেজন্য আমরা মা গঙ্গার কাছে যত ঋণ স্বীকারই করি না কেন, তা কমবিবেচিত হবে।
ভাই ও বোনেরা, আজ আমি ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী শ্রদ্ধেয় রঘুবর দাসকে এজন্যকৃতজ্ঞতা জানাতে চাই যে, তিনি সাঁওতাল পরগনার কৃষকদের জন্য, পশুপালকদের জন্যগুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছেন। পশুপালন বৃদ্ধি পেলে দুগ্ধ উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়।ডেয়ারি গড়ে উঠলে গরিব কৃষক গরিব পশুপালককেও দুগ্ধ উৎপাদনের মূল্যায়ন করে বাজারেএকটি শৃঙ্খলার অংশ করে তোলে। আমি গুজরাটের মানুষ। ডেয়ারি ক্ষেত্রে গুজরাটের আমূলবিখ্যাত। এই আমূল কী? বহু বছর আগে সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের পরামর্শে পশুপালকদেরএকটি সমিতি গড়ে ওঠে। সেই পশুপালকরা মিলিতভাবে দুধের ব্যবসা শুরু করে। দুধ ওদুগ্ধজাত নানা জিনিসের প্যাকেজিং করে অন্যত্র পাঠাতে শুরু করে। দেখতে দেখতে তাঁদেরব্যবসা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আজ রঘুবর দাস মহোদয়ও তেমনই এই এলাকার পশুপালকদেরসমিতি গড়ে তুলে ডেয়ারির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করাচ্ছেন। আগামী দিনে এই ডেয়ারিলক্ষাধিক পশুপালক পরিবারে উৎপাদিত দুধের প্রক্রিয়াকরণ, বাজারজাত করা,ব্র্যান্ডিং-এর মাধ্যমে তাদেরকে একটি সুনিশ্চিত নিত্য আয়ের পথে ঠেলে দেবেন। সেজন্যআমি তাঁকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। এক্ষেত্রে আপনারা যদি গুজরাটের অভিজ্ঞতাকেকাজে লাগাতে চান, তা হলে আমার অনুরোধে তাঁরাও আপনাদের দিকে হাত বাড়িয়ে দেবেন।কৃষির পাশাপাশি পশুপালন কৃষকদের নতুন রোজগারের পথ প্রশস্ত করে। আমি মুখ্যমন্ত্রীমহোদয়কে বলব, এর সঙ্গে আপনারা মৌ-পালনকেও উৎসাহ দিন। অতিরিক্ত পরিশ্রম ছাড়াই চাষ,পশুপালন ও মৌ-পালন পাশাপাশি চলতে পারে। ডেয়ারির মাধ্যমে সকলের মধু সংগ্রহ ওপ্রক্রিয়াকরণ করে সেটিকে বাজারজাত করা যেতে পারে। এখন বিশ্ব বাজারে মধুর বেশচাহিদা রয়েছে। এর ফলে, কৃষকের বারো মাসের রোজগার নিশ্চিত হবে। কখনও ফসলের টাকাআসবে, কখনও দুধের, আবার কখনও মধু বিক্রির টাকা। আজ ছোট মনে হলেও শ্রদ্ধেয় রঘুবরদাসের দূরদৃষ্টির পরিণাম হবে ব্যাপক। সর্দার বল্লভভাইয়ের প্রেরণায় গুজরাটের কৃষকরাযখন শুরু করেছিলেন তখনও ছোট-ই মনে হয়েছিল। আজ সেই প্রকল্পকে সারা পৃথিবী চেনে।রঘুবর দাসের এই ছোট প্রচেষ্টাও তেমনই সাফল্য পাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। এইপ্রকল্প গোটা সাঁওতাল পরগনার ভাগ্য পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ভাই ও বোনেরা, ২০১৫’র ২ অক্টোবর বিচারপতি ডিএন প্যাটেলের নিমন্ত্রণে খুটিতেআসার সৌভাগ্য হয়েছিল। সেদিন থেকেই খুটির আদালত দেশের প্রথম পূর্ণরূপে সৌরবিদ্যুৎসুবিধাযুক্ত আদালত হিসাবে সকল বিদ্যুতের প্রয়োজন সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে করতে শুরুকরে। আমি আনন্দিত যে, সাহেবগঞ্জের আদালত-ও আজ সরকারি ব্যবস্থায় পূর্ণরূপেসৌরবিদ্যুৎ সুবিধাযুক্ত আদালত হয়ে উঠতে যাচ্ছে।
আমি সেজন্য বিচারপতি ডি এন প্যাটেল ও তাঁর টিমকে শুভেচ্ছা জানাই। ঝাড়খন্ডসরকারকেও শুভেচ্ছা জানাই। তারা সৌরশক্তি উৎপাদনে উৎসাহ যুগিয়েছেন। সারা দেশে ‘রুফটপ সোলার এনার্জি’ উৎপাদনে ঝাড়খন্ড রাজ্য সরকার অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।ইতিমধ্যেই তারা প্রায় ৪,৫০০ কিলোওয়াট সৌরশক্তি উৎপাদনে সাফল্য পেয়েছেন। আমাদেরঅরণ্য বাঁচাতে হলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রকৃতির ঐশ্বর্য দিয়ে যেতে হলে,পরিবেশের সুরক্ষা অত্যন্ত জরুরি। ভারতের মতো দেশে বিকল্প শক্তি উৎপাদনে সৌরশক্তিসর্বাধিক সহজলভ্য উপাদান। এক্ষেত্রে ভারত অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ভারতস্বপ্ন দেখছে ১৭৫ গিগাওয়াট পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদন। এর মধ্যে ১০০ গিগাওয়াটদেশের নানা প্রান্তে সৌরশক্তি থেকেই উৎপাদিত হতে পারে। আজ আমাদের বিদেশ থেকেজ্বালানি কিনতে হয়। এক্ষেত্রে সাশ্রয় হলে দেশের দরিদ্র জনগণের উপকারে লাগবে। একটাসময় ছিল যখন ১ ইউনিট সৌরশক্তি উৎপাদন করতে ১৯ টাকা খরচ হতো। কিন্তু আজ ভারত যেভাবেঅভিযান শুরু করেছে, এখন এমন পরিস্থিতি এসেছে যে কয়লা থেকে জ্বালানি হিসাবেসৌরশক্তি অনেক সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে। অতি সম্প্রতি যে দরপত্র আমরা পেয়েছি তাতেইউনিট প্রতি ২ টাকা ৯৬ পয়সা দর দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ একবার বিনিয়োগ করার পর প্রায়বিনা পয়সায় বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়ে যায়।
ভাই ও বোনেরা, একবিংশ শতাব্দীর কোনও নাগরিককে সন্ধ্যার পর অন্ধকারে জীবনকাটাতে বাধ্য করা যায় না। কিন্তু আজও অনেক পরিবার, অনেক বাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগপৌঁছায়নি। অনেকে অপ্রয়োজনীয় মনে করেন। তাঁদেরকে অনেক বুঝিয়ে বিদ্যুতের সংযোগ দিতেহয়। সরকার বিনা পয়সায় সংযোগ দিলেও অনেকে উদাসীন থাকেন। কিন্তু সরকার চায়, তাঁদেরছেলেমেয়েরা সন্ধ্যার পর বিদ্যুতের আলোয় পড়াশুনা করুক। সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকেলক্ষাধিক পরিবারে সৌরশক্তি দ্বারা রিচার্জ করা যায় এরকম ব্যাটারি-চালিত ছোট টেবিলল্যাম্পের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের কৃষকরা যেখানে ভূগর্ভস্থ জল পাম্পের মাধ্যমেসেচের কাজে লাগান, তাঁদের জন্য আমরা সোলার পাম্পের ব্যবস্থা করেছি। সৌরশক্তিরমাধ্যমে পাম্প চলবে, ব্যাটারি রিচার্জ হবে, ফসলের ক্ষেত শস্যশ্যামলা হবে। যিনিবছরে দু’বার ফসল উৎপাদন করেন, তিনি বছরে তিন বার ফসল উৎপাদন করবেন। আমরা যে দেশেরকৃষকদের আয় দ্বিগুণ করতে চাইছি, সেক্ষেত্রে এই সোলার পাম্প একটি গুরুত্বপূর্ণউপাদান হয়ে উঠবে। এভাবে ভারত সরকারের নেতৃত্বে সৌরশক্তির ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব হতেচলেছে। ঝাড়খন্ড সরকারও কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে,সেজন্য আমি তাদের কৃতজ্ঞতা জানাই। দেশবাসীকে অনুরোধ জানাই যে, জ্বালানি ক্ষেত্রেপ্রত্যেকেই সংবেদনশীল হন। জ্বালানি সাশ্রয় করুন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত রাখারকথা ভাবুন। গত কয়েক মাস ধরে আমরা সারা দেশে এলইডি বাল্ব ব্যবহারের অভিযান শুরুকরেছি। কোনও সরকার যদি বাজেটে ঘোষণা করে যে, আমরা ১০ হাজার কোটি টাকা দান করবে, তাহলে খবরের কাগজে হেডলাইন হবে – বাঃ মোদী কত ভাল প্রধানমন্ত্রী। ভাই ও বোনেরা,আপনাদের সহযোগিতায় আমরা এমন একটা কাজ করেছি যাতে ১০ হাজার কোটিরও বেশি টাকা দেশেরমানুষের সাশ্রয় হবে। এলইডি বাল্ব লাগিয়েছি। বিদ্যুতের বিল কম আসবে। কারও বছরেআড়াইশো টাকা বাঁচবে আবার কারও দু’হাজার টাকা । সেই টাকা দিয়েবাচ্চাদের দুধ খাওয়াবেন, লেখাপড়া করাবেন। আমরা যখন সরকারে এসেছি তখন একটা এলইডিবাল্বের দাম ছিল সাড়ে তিনশো থেকে চারশো টাকা, আর এখন দাঁড়িয়েছে ৫০-৬০ টাকায়। সরকারইতিমধ্যেই ২২ কোটি বাল্ব বিতরণ করেছে। আর তার থেকেও বেশি বাল্ব মানুষ নিজেরাকিনেছেন – প্রায় ৫০ কোটি নতুন এলইডি বাল্ব। এভাবে ইতিমধ্যেই যে বিদ্যুৎ সাশ্রয়হয়েছে তার মূল্য ১১ হাজার কোটি টাকার চেয়েও বেশি। কত বড় বিপ্লব এসেছে। এভাবে কাজকরে জ্বালানি উৎপাদনে সরকার জ্বালানি ক্ষেত্রে ৩৬০ ডিগ্রি একটি নেটওয়ার্ক গড়েতুলেছে। এর দ্বারা আপনারা সকলেই লাভবান হবেন।
আজ আমার সামনে নবীন প্রজন্মের অসংখ্য যুবক-যুবতীদের দেখতে পাচ্ছি। তাদেরপ্রত্যেকের মাথায় টুপি, আর টুপিতে গোঁজা রয়েছে হলুদ রঙের ফুল। দেখতে কি অসাধারণলাগছে। এই পাহাড়ি জনজাতি সমাজের ছেলেমেয়েদের পরিবার থেকে এখনও পর্যন্ত কেউ সরকারিচাকরি পাননি। মেইরথোডারজি-র মৌলিক চিন্তাভাবনার আমি প্রশংসা করি। তিনি এইছেলেমেয়েদের নির্বাচন করেছেন, সরকারি নিয়ম বদলেছেন, সরকারি নিয়মানুযায়ী যে শারীরিকউচ্চতা থাকা দরকার প্রকৃতিগতভাবে এই ছেলেমেয়েদের সেই উচ্চতা নেই, সরকারি মানঅনুযায়ী শিক্ষাগত যোগ্যতাও তাদের নেই – কিন্তু এদেরকেই প্রশিক্ষণ দিয়ে তিনিনিরাপত্তা রক্ষীর কাজে নিয়োগ করেছেন, আসুন আমরা তাঁদের হাততালি দিয়ে স্বাগত জানাই।এরাই এখন গ্রামে গ্রামে সরকারের প্রতিনিধি। ঐ পাহাড়ি প্রান্তিক গ্রামগুলিতে এইপ্রশিক্ষিত ছেলেমেয়রা যখন পৌঁছবে, তাঁদের কদর বেড়ে যাবে। এই পাহাড়ি মেয়েরা আজ মূলধারায় সামিল হয়েছে। উন্নয়নের মূল ধারার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তাঁরা যখন শংসাপত্রনিতে আসছিলেন, তাঁদের হাঁটাচলা, অভিনন্দন করার কায়দা এবং সংবাদমাধ্যমের কাছেপ্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময়, তাঁদের আত্মবিশ্বাস দেখে আমি খুব খুশি হয়েছি।মুখ্যমন্ত্রী শ্রী রঘুবর দাসকেও এজন্য আমি অভিনন্দন জানাই। সমাজের প্রান্তিক গরিবমানুষদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাঁর এই পদক্ষেপ আমাকে মুগ্ধ করেছে। এটাই আমার নিউইন্ডিয়া। দেশের দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম মানুষকে ভারতের উন্নয়ন যাত্রার সঙ্গে যুক্তকরা এটাই প্রকৃষ্টতম উদাহরণ। আপনাদের এই সাফল্য দেখে আমার জীবন ধন্য হয়ে গেল।
ভাই ও বোনেরা, আজ মঞ্চে কয়েকজন মহিলা এসেছিলেন। আপনারা দূর থেকে দেখতেপেয়েছেন কি না জানি না, আমি ঝাড়খন্ড সরকারের পক্ষ থেকে আমি তাঁদের হাতে মোবাইল ফোনতুলে দিয়েছি। আরও আশ্চর্যের কথা, ঐ মহিলারা প্রত্যেকেই আমার প্রশ্নের সঠিক জবাবদিয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই জানেন যে, ভীম অ্যাপ কাকে বলে, ঐ অ্যাপ কিভাবে ডাউনলোডকরা যায়, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কিভাবে আর্থিক লেনদেন করা যায় – এ সম্পর্কে তাঁরাসকলেই অবগত। এই উদাহরণ প্রমাণ করছে যে, দেশের গরিব মানুষের হাতে আধুনিক প্রযুক্তিরসফল ব্যবহার সম্ভব। আমি দিল্লি ফিরে সহযোগী সাংসদদের বলব যে, আমি দেশের পিছিয়েথাকা সাঁওতাল পরগনায় গিয়েছিলাম, সেখানকার আদিবাসী বোনেরা আমাকে মোবাইল ফোনেরব্যবহার সম্পর্কে যেভাবে জানিয়েছেন, তাকে আমি ডিজিটাল ইন্ডিয়ার বিপ্লব ছাড়া আর কিবলব! এটাই ‘লেস ক্যাশ সোসাইটি’র বিপ্লব। বিমুদ্রাকরণের পর সকলেই বুঝতে পারছেন যে,আমরা কিভাবে মোবাইল ফোনকে নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যাঙ্কে পরিণত করতে পারি। ইতিমধ্যেইজানতে পেরেছি যে, অনেক ছোট ছোট ‘সখী মণ্ডল’ এবং ‘সমবায়’-এ যাঁদের মোবাইল ফোনরয়েছে, তাঁদের মাধ্যমে অন্যরাও এই নতুন বিপ্লবে অংশগ্রহণ করছেন। আমি সাঁওতালপরগনার সখী মন্ডলের বোনদের কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার একটি পুরনো অভিজ্ঞতার কথা জানাতেচাই, আমি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, তখন একবার দক্ষিণ গুজরাটের প্রান্তিক আদিবাসীবস্তি কপরারায় গিয়েছিলাম। ঘন অরণ্য সংকুল এলাকা একটা বাড়ি থেকে আরেকটা বাড়িরদূরত্ব ৩-৪ মাইল। সেখানে একটি ডেয়ারি প্রকল্পের সুবিধার্থে সরকারের তৈরি করা হিমঘরউদ্বোধন করতে গিয়েছিলাম। ২০-২৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগে সেই প্রকল্পটি গড়ে উঠেছিল। সেইপ্রকল্প থেকে ৩-৪ কিলোমিটার দূরে একটি মাঠে জনসভার আয়োজন করা হয়েছিল। প্রত্যেকমহিলার হাতে দুধের বাসন ছিল। কিন্তু সেই বাসন পাশে রেখে মোবাইল ফোনে তাঁরা আমারছবি তুলছিলেন । প্রায় ৩০ জন মহিলা। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি, এই ছবি দিয়ে আপনার কি করবেন।তাঁরা বললেন ডাউনলোড করবেন। আমি অবাক! সেই সময় অনেক শিক্ষিত মানুষও ডাউনলোডশব্দটার সঙ্গে পরিচয় ছিলেন না। আজও তেমনই এখানে এসে দেখলাম, আমাদের স্বপ্নের ডিজিটালবিপ্লব কোথায় সফল হতে যাচ্ছে। আপনাদের মাঝে এসে আমার আত্মপ্রত্যয় বেড়ে গেল। আমি এইসকল সখী মন্ডলকে মোবাইল ফোনের সংযোগের মাধ্যমে ডিজিটাল বিপ্লবের সৈনিক করে তুলতেপারার জন্য ঝাড়খন্ড সরকারকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। যুগ বদলে গেছে। যুগেরপরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
ভাই ও বোনেরা, ভারতের গরিব, আদিবাসী, দলিত, পীড়িত ও শোষিত মানুষরা সম্মানেরসঙ্গে বাঁচতে চান। তাঁরা কারও দয়ার পাত্র হয়ে থাকতে চান না। এই প্রান্তিকপরিবারগুলির নবীন প্রজন্ম বলছে, আমাদের সু্যোগ দিন আমরা নিজেদের ভাগ্য নিজেরাইলিখব। আমিও এটাই চাই। এরা নিজেদের ভাগ্য নিজেরা গড়লে অবলীলায় ভারতেরও ভাগ্যপরিবর্তন হবে।
ভাই ও বোনেরা, দুর্নীতি ও কালো টাকা ঘুনের মতো কুরে কুরে দেশের সর্বনাশ করেদিয়েছে। একদিকে তাঁদেরকে আটকাতে পারলেও অন্য দিক দিয়ে বেরিয়ে আসে। কিন্তু আপনাদেরআশীর্বাদে আমরা ইতিমধ্যেই দুর্নীতি ও কালোটাকার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাফল্য পেয়েছি।কিন্তু এটা সূত্রপাত মাত্র। গরিব মানুষকে যারা শোষণ করে আসছে, তাদের হাত থেকে আমরাশোষিতদের অধিকার ফিরিয়ে আনবই। একের পর এক পদক্ষেপ আমরা নেব, শুধু আপনাদের আশীর্বাদচাই। আপনারা শুনলে অবাক হবেন যে, বিমুদ্রাকরণের পর ধনী পরিবারের কয়েকজন লেখাপড়াজানা নবযুবকের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। আমি ভেবেছিলাম, তাঁরা বিমুদ্রাকরণেরফলে অসন্তোষ দেখাবেন। কিন্তু তাঁরা আমাকে হাড়ির খবর শোনালেন, তাঁদের পরিবারে কিরকমতর্ক-বিতর্ক হয়। এক যুবক বলছিলেন, বাবাকে বলছিলাম, আপনাদের সময় সরকার এত বেশি করনিত যে, আপনারা কর ফাঁকি দেওয়ার কথা ভাবতেন। কিন্তু এখন দেশে সততার যুগ এসেছে,বর্তমান প্রজন্মের ব্যবসায়ীরা বেইমানি পছন্দ করেন না। আমরা সৎভাবে ব্যবসা করতেচাই। তাঁদের মুখে এই কথা শুনে আমি ভবিষ্যৎ ভারতের জন্য একটি শুভ সংকেত অনুভব করি। পূর্বজরাযে অন্যায় করেছেন, নবীন প্রজন্ম সেই অন্যায় করতে রাজি নন।
ভাই ও বোনেরা, চুরি না করেও, অন্যের সম্পদ লুন্ঠন না করেও সুখে জীবনযাপনকরা যায়। ২০২২ সালে ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি হতে চলেছে। এই স্বাধীনতাঅর্জনের জন্য এই মাটি থেকে বিরসা মুন্ডার মতো অসংখ্য যুবক-যুবতী জীবন উৎসর্গকরেছেন। তাঁরা যে স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্নকে সফল করতে তাঁরাফাঁসির মঞ্চে উঠেছিলেন। অনেকে আবার সারা জীবন জেলে কাটিয়েছেন। দেশের মানুষেরস্বাধীনতা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শোষণহীন জীবনের স্বপ্ন নিয়ে তাঁরা নিজেদের ওপরিবারের সর্বনাশ ডেকে এনেছেন। কিন্তু আজও তাঁদের সকল স্বপ্ন সফল হয়নি। আমরা কি আরপাঁচ বছর পর ২০২২ সালের মধ্যে দেশের স্বার্থে তাঁদের সকলের স্বপ্ন সফল করে দেখাতেপারি? ১২৫ কোটি ভারতবাসী যদি স্বপ্ন দেখেন এবং সংকল্প গ্রহণ করেন – তা হলে এটাসম্ভব। ১২৫ কোটি মানুষ যদি এক পা বাড়ায়, তা হলে ভারত ১২৫ কোটি পা এগিয়ে যাবে। আরসেজন্য সময়ের দাবি হ’ল দেশের সকল গ্রাম পঞ্চায়েত, পুরসভা, স্কুল, কলেজ, এলাকায়এলাকায় সকল প্রকল্পকে মনপ্রাণ দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। প্রত্যেক মানুষ সংকল্প গ্রহণকরুন যে, ২০২২ সালের মধ্যে আমরা দেশের জন্য আত্মোৎসর্গ করা মহাপুরুষদের স্বপ্ন সফলকরবই – এই আশা নিয়ে আমি আরেকবার ঝাড়খন্ডের মাটিকে প্রাণাম জানাই। ভগবান বিরসামুন্ডার মাটিকে প্রণাম জানাই। এই পাহাড়ি যুবক-যুবতীদের অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই,ঝাড়খন্ডের আপামর মানুষকে শুভেচ্ছা জানাই। মা গঙ্গার আশীর্বাদ নিয়ে আমরা এই অভিযানশুরু করেছি। আর আমি নিশ্চিত যে, এই রাজ্যে মা গঙ্গার আশীর্বাদে একটি নতুন আর্থিকবিপ্লব আনব – এই আশা নিয়ে সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।