শ্রীভেঙ্কাইয়া নাইডু হলেন দেশের প্রথম উপ-রাষ্ট্রপতি যাঁর জন্ম স্বাধীনতা-উত্তরভারতবর্ষে। তিনি দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এবং সংসদীয় পদ্ধতি ও প্রক্রিয়াসম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল।
আজ সংসদেরাজ্যসভার নতুন চেয়ারম্যান উপ-রাষ্ট্রপতি শ্রী এম ভেঙ্কাইয়া নাইডুকে স্বাগত জানিয়েএকথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। রাজ্যসভার অন্যান্য সদস্যরাও এদিনউপস্থিত ছিলেন এই বিশেষ অনুষ্ঠানে।
শ্রী মোদীবলেন, এই ১১ আগস্টের দিনটিতেই স্বাধীনতা সংগ্রামের এক তরুণ বিপ্লবী শ্রী ক্ষুদিরামবোস আত্মবলিদান দিয়েছিলেন ব্রিটিশদের ফাঁসির মঞ্চে। এই ঘটনা স্বাধীনতা সংগ্রামীদেরআত্মোৎসর্গের কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। দায়িত্ব পালনের যে উত্তরাধিকার আজন্যস্ত রয়েছে আমাদের ওপর, সে সম্পর্কেও আমাদের সচেতন করিয়ে দেয় এই বিশেষ ঘটনাটি।
শ্রীভেঙ্কাইয়া নাইডুর সঙ্গে তাঁর সুদীর্ঘ সম্পর্কের স্মৃতিচারণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীবলেন, দেশের পল্লী অঞ্চলের দরিদ্র জনসাধারণ এবং কৃষকদের চাহিদা ও প্রয়োজনের প্রতিশ্রী নাইডু বরাবরই সংবেদনশীল । তাঁদের সমস্যার সমাধানে শ্রী নাইডুরপ্রস্তাব ও পরামর্শযথেষ্ট মূল্যবান ।
শ্রী মোদীবলেন, গ্রামের দরিদ্র পটভূমিকা থেকে উঠে এসে কোন কোন ব্যক্তি যে ভারতের উচ্চতমআসনটিও অলঙ্কৃত করতে পারেন, এই ঘটনা থেকে আমরা উপলব্ধি করি যে ভারতীয় গণতন্ত্র এখনযথেষ্ট পরিণত এবং ভারতীয় সংবিধানও যথেষ্ট শক্তিশালী ।
আসুন পড়ুন, প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য
আজ ১১ আগস্ট, ইতিহাসে এই তারিখটির গুরুত্ব অপরিসীম। আজকের দিনে মাত্র ১৮বছর বয়সী স্বাধীনতা সংগ্রামী ক্ষুদিরাম বসু’কে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল। দেশেরস্বাধীনতা সংগ্রামে কত লড়াই হয়েছে, কত স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রাণবিসর্জন দিয়েছেন,তাঁদের স্মৃতি আমাদেরকে স্মরণ করায় যে, তাঁদের স্বপ্ন সফল করতে আমাদের সকলেরই কতবড় দায়িত্ব রয়েছে।
আমাদের সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, ভেঙ্কাইয়া নাইডু দেশের প্রথমউপ-রাষ্ট্রপতি, যাঁর জন্ম হয়েছে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর। তাছাড়া, শ্রী ভেঙ্কাইয়ানাইডু প্রথম এমন উপরাষ্ট্রপতি যিনি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক জীবন ধরে কেন্দ্রীয় সরকারেরনানা দায়িত্ব পালন করেছেন। এই সংসদ ভবন’কে তিনি হাতের তালুর মতো চেনেন। সংসদ সদস্যথেকে শুরু করে নানা সমিতির দায়ভার পালন করা, সংসদ অধিবেশনে সক্রিয় অংশগ্রহণ থেকেএখন উপ-রাষ্ট্রপতি। দেশ সম্ভবত, এই প্রথম এরকম একজন উপ-রাষ্ট্রপতি পেয়েছে।
রাজনৈতিক জীবনে তাঁর জন্ম হয়েছে জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বাধীন আন্দোলনকর্মসূচি থেকে। ছাত্রাবস্থাতেই জয়প্রকাশ নারায়ণের আহ্বানে শুচিতা থেকে সুশাসন-এরযে দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু হয়েছিল, অন্ধ্রপ্রদেশে একজন ছাত্রনেতা রূপে তিনিআন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আর তখনই অন্ধ্রপ্রদেশের বিধানসভায় নির্বাচিত হওয়ারপর থেকে রাজ্যসভা সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে তিনি নিজের ব্যক্তিত্বেরবিকাশ ঘটিয়েছেন। তাঁর কাজের পরিধিও ক্রমে অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলস্বরূপ, আজতাঁকে সবাই পছন্দ করে এই মহীয়ান পদের গৌরব প্রদান করেছেন।
ভেঙ্কাইয়াজী কৃষকের সন্তান। অনেক বছর ধরে আমার তাঁর সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্যহয়েছে। গ্রাম, গরিব ও কৃষকদের প্রতিটি বিষয়কে অনুপুঙ্খ অধ্যয়ন করে তবেই তিনি নিজেরইনপুট দেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় তিনি ছিলেন নগরোন্নয়ন মন্ত্রী। কিন্তু আমি অনুভবকরেছি যে, মন্ত্রিসভায় নগরোন্নয়ন নিয়ে তিনি যত কথা বলতেন, গ্রামোন্নয়ন নিয়েও ততটাইগুরুত্ব দিয়ে কৃষকদের বিষয়গুলি তুলে ধরতেন। এটা তিনি অত্যন্ত আন্তরিকভাবে করতেন;তাঁর পারিবারিক প্রেক্ষিতের কারণেই হয়তো তিনি তা করতেন।
এমন সময়ে ভেঙ্কাইয়াজী উপরাষ্ট্রপতি পদে আসীন হয়েছেন, যখন সারা পৃথিবীর সামনেআমাদের গণতন্ত্রের পরিপক্কতাকে তুলে ধরার প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছে। সকল রাজনৈতিকদেওয়ালের ঊর্ধ্বে এই দায়িত্ব। বিশ্বকে বোঝাতে হবে যে, ভারতের সংবিধানের প্রতিটিঅনুপুঙ্খের শক্তি কতটা! সামর্থ্য কতটা! আজ ভারতের সকল সাংবিধানিক উচ্চপদে এমনব্যক্তিরা বসে আছেন, যাঁরা গরিব ঘরের সন্তান। তাঁদের প্রেক্ষাপট দারিদ্র্য, গ্রামআর সাধারণ নিম্নবিত্ত পরিবার। তাঁরা কোনও উচ্চ বংশজাত নন। এই প্রথমবার সকলসাংবিধানিক উচ্চপদে এই গরিব ঘরের মানুষদের আসীন হওয়ার বিষয়টিই ভারতের সংবিধানেরগরিমা প্রদর্শন করে। আমাদের গণতন্ত্রের পরিপক্কতা প্রমাণ করে। সেজন্য ১২৫ কোটিভারতবাসী গর্ব করতে পারেন। আমাদের পূর্বজরা আমাদের যে ঐতিহ্য দিয়ে গেছেন, এই ঘটনারমাধ্যমে সেই ঐতিহ্যের গরিমা অনুভব করা যায়। সেজন্য আমি আরেকবার দেশের সংবিধাননির্মাতাদের প্রণাম জানাই।
ভেঙ্কাইয়াজির প্রখর ব্যক্তিত্ব, কর্তৃত্ব এবং সুবক্তা হিসাবে সর্বজনবিদিত।তিনি যখন তেলুগু ভাষায় বক্তৃতা দেন, মনে হয় যে, সুপারফাস্ট রেলগাড়ি চালাচ্ছেন। এটাতখনই সম্ভব, যখন অন্তরে ভাবনাচিন্তার স্পষ্টতা থাকে। শ্রোতাদের সঙ্গে নিজেকে জুড়তেনিছকই শব্দের খেলা নির্ভর বক্তৃতা দিলে চলবে না, শব্দের খেলা কারও অন্তর স্পর্শকরে না। কিন্তু শ্রদ্ধাভাব থেকে অঙ্কুরিত ভাবনাচিন্তার ভিত্তিতেই নিজের ধারণা আরদূরদৃষ্টির মিশেলে হৃদয় থেকে বেরিয়ে আসা শব্দাবলীই মানুষের মন স্পর্শ করে।ভেঙ্কাইয়াজির বক্তব্য এমনভাবেই মানুষের মন ছুঁয়ে যায়।
এটা সত্যি কথা যে, আজ সংসদে এমন কোনও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নেই, যিনিসরকারের কাছে তাঁর এলাকার গ্রামবিকাশ ও সার্বিক উন্নতির খাতিরে নানা প্রকল্পেরজন্য দরবার করেন না! নিজের এলাকায় প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার দ্রুতবাস্তবায়নের জন্য তাঁরা দরবার করেন। আমাদের সাংসদদের জন্য গর্বের কথা যে, এইপ্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা আমাদের উপ-রাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডু’রমস্তিষ্কপ্রসূত। গ্রাম, গরিব, দলিত, পীড়িত, শোষিতদের প্রতি মনে সংবেদনা থাকলে তবেইকারও মনে তাঁদেরকে সেই কঠিন পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করার প্রবল ইচ্ছা জন্ম নিতেপারে। ভেঙ্কাইয়াজি তেমন একজন মানুষ।
আজ যখন ভেঙ্কাইয়াজি আমাদের মাঝে উপ-রাষ্ট্রপতি রূপে আসীন, আমাদের সকলেরজন্য কিছুদিন খুবই কঠিন কাটবে। কারণ, আদালতে কোনও উকিল যখন নির্বাচিত হয়েবিচারপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন শুরুর দিকে বার সদস্যদের মনে অদ্ভুত অনুভূতিহয়। এতদিন যিনি আমাদের সঙ্গে নিয়মিত আড্ডা দিয়েছেন এখন তাঁকেই বিশেষভাবে মান্যকরতে হবে। আমাদের গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যই এটা যে আমরা ব্যবস্থা অনুকূল কার্যশৈলীরঅভিযোজন ঘটাই।
আমি বিশ্বাস করি, যিনি এত দীর্ঘকাল রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন, প্রতিটি ঘটনা ওসিদ্ধান্তের বিবরণ অনুপুঙ্খ জানেন, এই পরিণত মানুষটি উপ-রাষ্ট্রপতি হিসাবে আমাদেরসকলকে সঠিক পথ দেখাবেন। এই পদের গরিমাকে আরও উচ্চে তুলে ধরার ক্ষেত্রে তাঁর অবদানহবে অবিস্মরণীয়। আমি অনেক বড় পরিবর্তনের সংকেত পাচ্ছি। এই পরিবর্তন দেশের ভালোরজন্য হবে। আজ ভেঙ্কাইয়াজীকে এই গরিমাময় পদে আসীন হতে দেখে একটি কবিতার লাইন আমারমনে পড়ছে –
আমল করো এইসা আমন মেঁ,
আমল করো এইসা আমন মেঁ,
জঁহা সে গুজরে তুমহারি নজরেঁ,
উধর সে তুমহে সেলাম আয়ে।
অউর উসী কো জোড়তে হুয়ে মেঁই কহনা চাহুঙ্গা –
এই পঙক্তির শব্দগুলি সামান্য বদলে আমি বলতে চাই –
আমল করে এইসা সদন মেঁ,
জঁহা সে গুজরে তুমহারী নজরেঁ,
উধর সে তুমহে সেলাম আয়ে।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা। অনেক অনেক ধন্যবাদ।