রাষ্ট্রসঙ্ঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে নিউ ইয়র্কে মঙ্গলবার প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্রগুলির নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে ফিজি, কিরিবাতি, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, মাইক্রোনেশিয়া, নাউরো, পাপুয়া নিউ গিনি, সামোয়া, সোলোমন দ্বীপপুঞ্জ, টঙ্গো, টুভালু এবং ভানাউতু-র প্রতিনিধিদলের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ‘পুবে তাকাও নীতি’র দরুণ আরও নিবিড় হয়েছে। এর ফলশ্রুতিস্বরূপ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্র সহযোগিতা সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা রূপায়ণ মঞ্চ স্থাপিত হয়েছে। এই মঞ্চের প্রথম ও দ্বিতীয় অধিবেশন ২০১৫ সালে ফিজিতে এবং ২০১৬ সালে জয়পুরে আয়োজিত হয়। এই মঞ্চের প্রথম বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা গড়ে তোলার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, দ্বীপ রাষ্ট্রগুলির উন্নয়নমূলক কর্মসূচিগুলিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে ভারত একযোগে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে। এই প্রথমবার রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে এক বহুপাক্ষিক মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্রগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হলেন।
এই বৈঠকে দ্বীপ রাষ্ট্রগুলির নেতৃবৃন্দ সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণ, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি, নবগঠিত বিপর্যয় প্রতিরোধী পরিকাঠামো জোটে যোগদান, সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলির বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি সহ একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে ভারত ও দ্বীপ রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ভবিষ্যৎ সহযোগিতার রূপরেখা নিয়েও আলোচনা হয়।
প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্রগুলির মধ্যে অভিন্ন মূল্যবোধ ও অভিন্ন ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করে রয়েছে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে বৈষম্য কমাতে সার্বিক ও সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতি গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের মানোন্নয়নে ও তাঁদের ক্ষমতায়নে আরও বড় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ভারতও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় অঙ্গীকারবদ্ধ। এই সমস্যার মোকাবিলায় ভারত দ্বীপ রাষ্ট্রগুলির প্রয়াসে সাহায্য করতে চায়। এছাড়াও, দ্বীপ রাষ্ট্রগুলিকে তাদের উন্নয়নমূলক লক্ষ্য অর্জনে অংশীদার হওয়ার পাশাপাশি কারিগরি সহায়তা প্রদানে আগ্রহী।
জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানোর আহ্বান জানান যাতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাবগুলি আরও শক্ত হাতে মোকাবিলা করা যায়। পুনর্নবীকরণযোগ্য বা বিকল্প শক্তিক্ষেত্রের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী দ্বীপ রাষ্ট্রগুলিকে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের প্রস্তাব দেন। আন্তর্জাতিক সৌর জোটে বহু দ্বীপ রাষ্ট্র যোগ দেওয়ায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। বিপর্যয় প্রতিরোধী পরিকাঠামো জোটে অংশগ্রহণের জন্যও তিনি দ্বীপ রাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান।
সকলকে সঙ্গে নিয়ে সকলের উন্নয়ন ও সকলের প্রতি বিশ্বাস – এই মন্ত্রকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী দ্বীপ রাষ্ট্রগুলির উন্নয়নমূলক প্রকল্পে ১ কোটি ২০ লক্ষ মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তার কথা ঘোষণা করেন। এর ফলে, প্রতিটি দ্বীপ রাষ্ট্র ১০ লক্ষ মার্কিন ডলার অর্থ সহায়তা পাবে। এছাড়াও, দ্বীপ রাষ্ট্রগুলিকে সৌরশক্তি, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যার মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণে সহজ শর্তে আরও ১৫ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
দক্ষতা বৃদ্ধি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য তাঁর অঙ্গীকারের কথা পুনরায় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী দ্বীপ রাষ্ট্রগুলিকে কারিগরি সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তাব দেন। ভারতের ফরেন সার্ভিস প্রতিষ্ঠানে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্রগুলির কূটনীতিকদের প্রশিক্ষণের বিষয়টিও এর মধ্যে রয়েছে।
মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ আরও বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী দ্বীপ রাষ্ট্রগুলির বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ভারত ভ্রমণের জন্য একটি কর্মসূচির কথাও ঘোষণা করেন। দ্বীপ রাষ্ট্রগুলির সংসদীয় প্রতিনিধিদলের ভারত সফরের প্রস্তাবকে স্বাগত জানানো হয়েছে। ২০২০-র প্রথমার্ধে পোর্ট মোরসেবিতে আয়োজিত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্র সহযোগিতার তৃতীয় বৈঠকে ভারতের তরফে সমস্ত নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর এই আমন্ত্রণের প্রস্তাবকে সমস্ত দ্বীপ রাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দ স্বাগত জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই আমন্ত্রণের ফলে দুই পক্ষের মধ্যে সহযোগিতা আরও নিবিড় হবে। প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলির সরকারকে পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।