মহামান্য রাষ্ট্রনায়কগণ,
সবার আগে আমি রাষ্ট্রপতি বোলস্নারোকে ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার জন্য শুভেচ্ছা জানাই। তাঁকে ব্রিকস্ পরিবারে স্বাগত জানাই। আমি রাষ্ট্রপতি বোলস্নারোকে এই বৈঠক আয়োজনের জন্য হার্দিক ধন্যবাদ জানাই। এই অবসরে আমাদের বন্ধু রামাফোসাকে আরেকবার দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার জন্য শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।
এরকম ঘরোয়া আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আমরা জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরস্পরের সঙ্গে সমন্বয়ের সুযোগ গড়ে তুলতে পারি। আজ আমি তিনটি প্রধান সমস্যাকে গুরুত্ব দেব। প্রথমটি হ’ল – বিশ্ব অর্থ ব্যবস্থায় মন্দা এবং অনিশ্চয়তা। নিয়ম-ভিত্তিক বহুপক্ষীয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় এক তরফা সিদ্ধান্ত ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। অন্যদিকে, সম্পদের অভাব এই তথ্যে প্রতিফলিত হয় যে, ইমার্জিং মার্কেট ইকনোমিগুলি পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য প্রায় ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার ঘাটতি রয়েছে।
দ্বিতীয় বড় সমস্যা হ’ল – উন্নয়ন ও প্রগতিকে সমন্বয়ধর্মী এবং সুদূরপ্রসারী করে তোলা। দ্রুত পরিবর্তমান প্রযুক্তি যেমন ডিজিটালাইজেশন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য শুধু নিজেদের জন্যই নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। উন্নয়নকে তখনই সঠিক অর্থে উন্নয়ন বলা যায়, যখন তা অসাম্য হ্রাস করে এবং ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে অবদান রাখে। সন্ত্রাসবাদ সমগ্র মানবতার জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ। তারা নির্দোষ মানুষদের হত্যার পাশাপাশি, আর্থিক উন্নয়ন ও সামাজিক স্থিতিশীলতায় অত্যন্ত কুপ্রভাব ফেলে। আমাদের উচিত সন্ত্রাসবাদ এবং জাতিবাদকে সমর্থন ও সহায়তার সমস্ত পথ বন্ধ করে দেওয়া।
মাননীয় রাষ্ট্রনায়কগণ,
এই সমস্যাগুলি দূর করা সহজ নয়। তবুও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমি পাঁচটি পরামর্শ দিতে চাইব।
১) ব্রিকস্ দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে এক তরফা সিদ্ধান্তসমূহ ও দুস্পরিণামের সমাধান অনেকটাই সম্ভব। আমাদের রিফর্মড্ মাল্টিলেটারলিজম – এর জন্য আন্তর্জাতিক আর্থিক এবং বাণিজ্যিক সংস্থা ও সংগঠনগুলির আবশ্যক সংস্কারে জোর দিয়ে যেতে হবে।
২) নিরন্তর আর্থিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানির যোগান, যেমন – তেল ও গ্যাসের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে যেতে হবে।
৩) নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক – এর মাধ্যমে সদস্য দেশগুলি ভৌতিক ও সামাজিক পরিকাঠামো তথা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদন কর্মসূচিতে বিনিয়োগকে আরও অগ্রাধিকার দেওয়া উচিৎ। কোয়ালিশন ফর ডিজাস্টার রেসিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার – এর জন্য ভারতের উদ্যোগ অল্প বিকশিত এবং বিকাশশীল দেশগুলিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষেত্রে যথাযথ পরিকাঠামো যোগাতে সহায়ক হবে। আমি আপনাদের এই কোয়ালিশনে সামিল হওয়ার জন্য আহ্বান জানাই।
৪) সারা পৃথিবীতে দক্ষ কারিগরদের যাওয়া-আসা আরও সহজ হওয়া উচিৎ। তা হলে সেই দেশগুলি বেশি লাভবান হবে, যেখানকার জনসংখ্যার একটা বড় অংশের কাজ করার বয়স পেরিয়ে গেছে।
৫) আমি সম্প্রতি সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আহ্বান করেছি। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে জরুরি সহমতের অভাবে আমরা নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকতে পারি না। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য আমি ব্রাজিলের প্রশংসা করি।
মাননীয় রাষ্ট্রনায়কগণ,
আমি ব্রাজিলিয়াকে ব্রিকস্ শীর্ষ সম্মেলনের জন্য অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে অপেক্ষা করছি। এই শীর্ষ সম্মেলনকে সফল করে তুলতে ভারত পূর্ণ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে।
আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।