রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে আয়োজিত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামের বৈঠকে জলবায়ু, ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক, চিন এবং বিশ্ব বাণিজ্য সম্পর্কে তাঁর মত ও চিন্তাভাবনার কথা ব্যক্ত করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী।
জলবায়ু প্রসঙ্গে শ্রী মোদী জানান যে খুব সহজ-সরলভাবে তিনি ব্যক্ত করেছেন তাঁর নতুন ভারত গড়ে তোলার চিন্তাভাবনাকে। ৫০০০ বছর আগে রচিত বেদ-এর কথাও উল্লেখ করেন তিনি। বেদানুসারে, প্রকৃতির সুফলগুলি অবশ্যই গ্রহণযোগ্য, কিন্তু প্রকৃতিকে শোষণ করা নীতি ও নিয়ম বিরুদ্ধ।
প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনদিন আগে জার্মানিতেও তাঁকে সম্মুখীন হতে হয়েছে এই একই প্রশ্নের। সেখানে তিনি সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে প্যারিস চুক্তি থাকুক বা নাই থাকুক, দূষণমুক্ত এক বাসযোগ্য পৃথিবী ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিশ্চিত করে যাওয়া ভারতীয় ঐতিহ্যের অঙ্গীভূত। এই পৃথিবীতে থাকবে দূষণমুক্ত বাতাস। যার ফলে, ভবিষ্যৎ সন্তানরা সুস্থভাবে জীবন অতিবাহিত করতে পারবে। কে কোন পক্ষকে কিভাবে সমর্থন করবে সেটা এখানে বড় কথা নয়। প্রধান কথা হল, অনাগত ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষাদান করে যাওয়া।
ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক এবং চিন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাত্র কয়েক দশক আগেও বিশ্ব ছিল দুটি বিশেষ পক্ষের সমর্থক বা বিরোধী। কিন্তু বর্তমানে আমরা আলোচনা করি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে যে সমগ্র বিশ্বই আজ পরস্পর সংযুক্ত এবং পরস্পর নির্ভরশীল। একটি দেশ অন্য যে কোন দেশের সঙ্গে আজ কোন না কোনভাবে যুক্ত রয়েছে। মতভেদ ও মতপার্থক্য যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে সহযোগিতার বাতাবরণও।
শ্রী মোদী বলেন, ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক বর্তমানে যথেষ্ট মজবুত। এই সম্পর্ককে অনুধাবন ও উপলব্ধি করতে হলে বিশ্বের উচিৎ সেন্ট পিটার্সবার্গ ঘোষণাকে যত্নের সঙ্গে পাঠ করা। তাহলেই বোঝা সম্ভব আমাদের এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আজ কতটা পথ অতিক্রম করে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিনের সঙ্গে আমাদের সীমান্ত বিরোধ রয়েছে একথা সত্য। কিন্তু ৪০ বছরে সীমান্ত অঞ্চলে গুলি বর্ষণের কোন ঘটনা ঘটেনি। অন্যদিকে, দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্কেরও যথেষ্ট প্রসার ঘটেছে। দু’দেশের সম্পর্ককে তৃতীয় কোন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা ঠিক নয়। ব্রিক্স সদস্য রাষ্ট্রগুলি যে একযোগে মিলিতভাবে কাজ করে চলেছে সে কথারও উল্লেখ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এর এক বিশেষ দৃষ্টান্ত হল ব্রিক্স ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠা। ভারত বিশ্বাস করে ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ – এই নীতি ও কর্মসূচিতে। উন্নয়নের যাত্রাপথে সকলকে সঙ্গে করে আমরা এগিয়ে যেতে আগ্রহী।
সন্ত্রাস প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৮০ এবং ৯০-এর দশকে সন্ত্রাস ও বিপদের আসল চেহারাটা বিশ্ব বুঝে উঠতে পারেনি। কিন্তু গত ৪০ বছর ধরে সীমান্ত সন্ত্রাসের শিকার হয়ে এসেছে ভারত। ২০১১-র নভেম্বর মাসের পরই সন্ত্রাসের কদর্য ও ভয়ঙ্কর রূপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বিশ্ববাসীর কাছে। তাঁরা উপলব্ধি করেছেন যে সন্ত্রাস বর্তমানে কোন একটি বা দুটি দেশের সীমান্তের মধ্যে আজ আর আবদ্ধ নেই।
শ্রী মোদী বলেন, মানবতাবাদী সমস্ত শক্তির উচিৎ জোটবদ্ধভাবে সন্ত্রাসের হাত থেকে বিশ্বকে রক্ষা করা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন যে গত ৪০ বছরে সন্ত্রাসের প্রশ্নে কোন চুক্তি বা মতৈক্যে পৌঁছতে পারেনি রাষ্ট্রসঙ্ঘ। এই বিষয়টি ঐ বিশেষ মঞ্চে উত্থাপনের যে প্রস্তাব রেখেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন, তাকে আন্তরিকভাবে সমর্থন জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
অস্ত্র নির্মাণ বা কারেন্সি নোট ছাপানোর ক্ষমতা যে সন্ত্রাসবাদীদের নেই একথার উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, কয়েকটি দেশের কাছ থেকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদীরা এগুলি সংগ্রহ করে থাকে। মানবজাতির পক্ষে ভয়ঙ্কর এই পরিস্থিতি সম্পর্কে সমগ্র বিশ্ব যেদিন সহমত হবে, একমাত্র সেদিনই সন্ত্রাসকে পরাস্ত করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী বক্তব্য রাখেন বিশ্ব বাণিজ্য প্রসঙ্গেও। তিনি বলেন, উদার তথা মুক্ত অর্থনীতিতে ভারত বিশ্বাসী। তাই, বিশ্ব বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবক’টি দেশের উচিৎ একে অপরের সঙ্গে এক সমঝোতার সম্পর্ক স্থাপনে উদ্যোগী হওয়া। কারণ, এইভাবেই তারা একে অপরের পাশে সাহায্য ও সমর্থন নিয়ে দাঁড়াতে পারে।