প্রধানমন্ত্রীশ্রী নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি এক আলোচনা-বৈঠকে মিলিত হন বিভিন্ন রাজ্য ওকেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্য সচিবদের সঙ্গে।‘ভারতের রূপান্তর প্রচেষ্টারচালিকাশক্তি হল রাজ্য’ – এই বিষয়টির ওপর রাজ্য মুখ্য সচিবদের এক জাতীয় সম্মেলনেরঅঙ্গ হিসেবেই আয়োজন করা হয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্য সচিবদের এই আলোচনা-বৈঠকের।এই প্রথম এই ধরনের বিষয়ের ওপর আলোচনার জন্য আয়োজিত এক সমাবেশে ভাষণ দিলেনপ্রধানমন্ত্রী।
আলোচনাকালেমুখ্য সচিবরা তাঁদের নিজের নিজের রাজ্যের কাজকর্মের ধারা ও পদ্ধতিগুলি সংক্ষেপেবিবৃত করেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
আলোচনাকালে,পল্লী উন্নয়ন, দক্ষতা বিকাশ, শস্য বিমা, স্বাস্থ্য বিমা, স্বাস্থ্য পরিচর্যা,দিব্যাঙ্গ শিশুদের কল্যাণ, শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা, আদিবাসী কল্যাণ, কঠিনবর্জ্যের ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য রক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, পানীয় জল, নদীসংরক্ষণ, জলের ব্যবস্থাপনা, বৈদ্যুতিন প্রশাসন ও পরিচালন, পেনশন সংস্কার, আপৎকালীনপরিষেবা, খনিজ সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলির উন্নয়ন, সরকারি গণবন্টন ব্যবস্থার সংস্কার,ভর্তুকিদানের জন্য প্রত্যক্ষ সুফল হস্তান্তর, সৌর জ্বালানি তথা সৌরশক্তি, গুচ্ছউন্নয়ন, সৎ ও দক্ষ প্রশাসন এবং বাণিজ্যিক কাজকর্মের সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিজেরনিজের রাজ্যের সেরা কর্মপদ্ধতিগুলি তুলে ধরেন মুখ্য সচিবরা।
প্রধানমন্ত্রীতাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে প্রশাসন ও পরিচালনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ওদৃষ্টিভঙ্গি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয়। তিনি বলেন, রাজ্যগুলির অভিজ্ঞতা থেকেআমাদের অনেক কিছুই শিক্ষণীয় রয়েছে যা বিভিন্ন সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায়শ্রেষ্ঠ সমাধানের পথ দেখাতে পারে। তিনি আরও বলেন যে শীর্ষ স্থানীয় সরকারি কর্মীদেরচ্যালেঞ্জ জয় করার এক মিলিত চিন্তাভাবনা ও ক্ষমতা রয়েছে। এই বিষয়টিতে অভিজ্ঞতাবিনিময় যে বিশেষভাবে জরুরি সেকথাও স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
শ্রী মোদীবলেন, বিভিন্ন রাজ্যের তরুণ আধিকারিকদের একটি দলের উচিৎ প্রতিটি রাজ্য সফর করে এবংসেখানকার কাজকর্মের সেরা পদ্ধতিগুলি সম্পর্কে অবহিত হয়ে তা অনুসরণ করা। এইব্যবস্থায় সবক’টি রাজ্যেই সেরা কাজের পদ্ধতি অনুসৃত হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
মুখ্যসচিবদের ‘প্রতিযোগিতামুখী সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয়তা’ নীতির প্রতি সর্বদা সজাগথাকার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। উন্নয়ন ও সুপ্রশাসনের কাজে এক প্রতিযোগিতামুখীপরিবেশ গড়ে তুলতে বিভিন্ন জেলা ও শহরগুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছেবলে মনে করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছোট ছোট রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিরসাফল্য বড় বড় রাজ্যগুলি অনুসরণ করতে পারে যে কোন একটি জেলা থেকে শুরু করে।প্রসঙ্গত, হরিয়ানা ও চণ্ডীগড় যে কেরোসিন মুক্ত দুটি রাজ্যে পরিণত হয়েছে, একথারওউল্লেখ করেন তিনি।
‘প্রগতি’রমঞ্চে প্রতি মাসে যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, তার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেনযে দীর্ঘদিনের মুলতুবি বহু প্রকল্পকে চালু করার ক্ষেত্রে ঐ বৈঠক এক বিশেষ শক্তি ওউৎসাহ যুগিয়ে থাকে। বিচ্ছিন্ন না থেকে বরং কেন্দ্রীয় সরকার এবং পরস্পরেরমধ্যেসহযোগিতার এক বাতাবরণ গড়ে তুলে কাজ করে যাওয়ার জন্য রাজ্যগুলিকে পরামর্শ দেনপ্রধানমন্ত্রী।
শ্রী মোদীবলেন, ভারত বর্তমানে সমগ্র বিশ্বেরই আস্থাভাজন একটি দেশ হয়ে উঠেছে। ভারত থেকে তারাঅনেক কিছুই প্রত্যাশা করে। এমনকি, উন্নয়নের কাজে ভারতের অংশীদার হতেও তারাপ্রস্তুত। এটি নিঃসন্দেহে আমাদের কাছে এক সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে। বাণিজ্যিককাজকর্মকে সহজতর করে তোলার বিষয়টিকে যে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন, সে কথাস্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে তার মধ্য দিয়ে রাজ্যগুলি আরও বেশি করেবিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে। তিনি বলেন, বাণিজ্যিক কাজকর্মকে সহজতর করে তোলার বিষয়টিকেআরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে রাজ্যগুলিতেও আরও বেশি করে বিনিয়োগ সম্ভব হয়ে উঠবে।রাজ্যগুলির পর্যাপ্ত উন্নয়ন সম্ভাবনা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তুএই সম্ভাবনাকে এখনও পুরোপুরি এবং সঠিকভাবে কাজে লাগানো হয়নি বলে মনে করেন তিনি।
গুজরাটেরমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর সূচনার সেই দিনগুলির কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।কচ্ছ-এর ভূমিকম্প পরবর্তী পুনর্নিমাণ প্রচেষ্টারও উল্লেখ করেন তিনি। ঐ দিনগুলিতেযে সমস্ত কর্মী ও আধিকারিক দলবদ্ধভাবে নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রীতাঁদের ভূয়সী প্রশংসাও করেন। অপ্রচলিত বিধি ও আইনগুলি বাতিল করার প্রয়োজনীয়তারকথাও তাঁর ভাষণে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
কৃষিপ্রসঙ্গে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শ্রী মোদী বলেন যে এই বিশেষ ক্ষেত্রটিতে প্রযুক্তিরপ্রয়োগ ও ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের ওপর বিশেষ জোর দিয়েপ্রধানমন্ত্রী বলেন যে কৃষি উৎপাদনের বিষয়টি বর্জ্য মুক্ত করে তুলতে হবে। কৃষিসংস্কার কর্মসূচি বিশেষত, বৈদ্যুতিন বিপণন ব্যবস্থাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ারজন্য রাজ্যগুলির কাছে আর্জি জানান তিনি।
নতুন নতুনউদ্যোগ ও কর্মপ্রচেষ্টার ক্ষেত্রে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের জন্য আধিকারিকদেরউদ্বুদ্ধ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, নির্বাচিত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মতাদর্শনির্বিশেষে সর্বদাই নতুন ও ইতিবাচক চিন্তাভাবনাকে স্বাগত জানিয়ে থাকেন।
শ্রী মোদীবলেন, আধারের প্রয়োগ ও ব্যবহারের ফলে সার্বিকভাবে সকলেরই কল্যাণ সম্ভব হয়েছে। কারণযাবতীয় ত্রুটি ও ফাঁকফোকর তাতে দূর করা গেছে। সুপ্রশাসন সম্ভব করে তুলতে হলে এইব্যবস্থার প্রয়োগ ও ব্যবহারকে সর্বোচ্চ মাত্রায় নিয়ে যেতে হবে। সরকারি সংগ্রহব্যবস্থায়বৈদ্যুতিন বিপণনের প্রয়োগ ও ব্যবহার যে স্বচ্ছতা, দক্ষতা এবং ব্যয়সাশ্রয় নিশ্চিতকরতে পারে, সে সম্পর্কে তাঁর আস্থা ও বিশ্বাসের কথা ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।আগামী ১৫ আগস্টের মধ্যে বৈদ্যুতিন বিপণনের প্রয়োগ সর্বোচ্চ করে তুলতে রাজ্যগুলিকেপরামর্শ দেন তিনি।
‘এক ভারতশ্রেষ্ঠ ভারত’ প্রসঙ্গে শ্রী মোদী বলেন, যে সমস্ত বিষয় আমাদের ঐক্যবদ্ধ করেছেসেসম্পর্কে আমাদের অবশ্যই যত্নবান হতে হবে। তাই ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’ কর্মসূচির লক্ষ্যপূরণে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য রাজ্যের মুখ্য সচিবদের পরামর্শ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীবলেন, সরকারি কর্মসূচি এবং উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণের মূল চাবিকাঠি হল সুপ্রশাসন ও সুপরিচালন।তিনি বলেন, রাজ্যস্তরে যে সমস্ত অল্পবয়সী আধিকারিক রয়েছেন, তাঁদের উচিৎ বিভিন্ন স্থানসফর করে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা, কারণ এর মাধ্যমেই তাঁরা হাতে-কলমে অনেক বিষয়েইশিক্ষালাভ করতে পারবেন। স্মরণীয় ঘটনাবলীর প্রাতিষ্ঠানিক সংরক্ষণের ওপরও বিশেষ জোরদেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকারি আধিকারিকদের দিয়ে গেজেট রচনা করা জেলাগুলিরমধ্যে বাধ্যতামূলক করে তোলা উচিৎ।
আগামী ২০২২সালে দেশের স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ পূর্তি হতে চলেছে। একথা স্মরণ করিয়ে দিয়েপ্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সার্বিক বিকাশ ও অগ্রগতির লক্ষ্যে মিলিতভাবে উৎসাহ ওঅনুপ্রেরণা লাভের এ হল এক বিশেষ সুযোগ ও মুহূর্ত।
কেন্দ্রীয়পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শ্রী রাও ইন্দরজিৎ সিং, নিতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান ডঃঅরবিন্দ পানাগারিয়া, নিতি আয়োগের সিইও শ্রী অমিতাভ কান্ত এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরও ক্যাবিনেট সচিবালয়ের পদস্থ আধিকারিকরাও এদিন উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেমুখ্য সচিবদের আলোচনা-বৈঠকে।