‘প্রগতি’র মঞ্চে বুধবার বিভিন্ন মন্ত্রক ওদপ্তরের কাজকর্মের অগ্রগতির বিষয়টি পর্যালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্রমোদী। প্রযুক্তিচালিত ‘প্রগতি’র মঞ্চে এটি ছিল তাঁর ১৬তম পর্যালোচনা পর্ব।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রকের কাজকর্মের অগ্রগতিখতিয়ে দেখার সময় ইপিএফও, ইএসআইসি এবং শ্রম কমিশনারদের সম্পর্কে জনসাধারণের ক্ষোভ ওঅভিযোগের নিষ্পত্তির বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নেন প্রধানমন্ত্রী। সেইসঙ্গে ক্ষোভ ওঅভিযোগ নিরসনের ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পর্কে অনলাইন ব্যবস্থারপ্রয়োগ ও ব্যবহারের বিষয়টি সম্পর্কে জানতে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি । বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার অনলাইন ব্যবস্থায়নিষ্পত্তি, ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে চালান তৈরি ও পেশ, মোবাইল ফোনে অ্যাপ্স-এরপ্রয়োগ ও ব্যবহার, এসএমএস অ্যালার্ট, আধার নম্বরের সঙ্গে ইউএএন যুক্ত করা,টেলি-মেডিসিন ব্যবস্থা চালু করা এবং আরও বেশি সংখ্যক সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালকেপ্যানেলভুক্ত করার প্রসঙ্গে পর্যালোচনা ও মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী।
শ্রমিক-কর্মচারী এবং ইপিএফ গ্রাহকদের ক্ষোভ ওঅভিযোগের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন শ্রী মোদী। তিনি বলেন, শ্রমিক-কর্মচারীদেরপ্রয়োজন ও চাহিদার প্রতি সরকারকে অবশ্যই সংবেদনশীল থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর মতেগণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ন্যায্য প্রাপ্য আদায়ের জন্য শ্রমিক-কর্মচারীদের কষ্ট ওসংগ্রামের মধ্যে ফেলে দেওয়া কখনই উচিত নয়। তাই, এমন একটি পদ্ধতিগত ব্যবস্থা গড়েতোলার আবেদন জানান তিনি যাতে সমস্ত কর্মীর অবসর গ্রহণের এক বছর আগেই তাঁদেরঅবসরকালীন প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধার বিষয়গুলি প্রক্রিয়াকরণের কাজ শুরু করা যায়।কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীর অকালে মৃত্যু হলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রক্রিয়া করার কাজএকটি সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেরে ফেলা উচিত বলে মনে করেন তিনি; বলেন, এইবিষয়টিতে দায়বদ্ধ থাকতে হবে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের।
ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে জাতীয় কৃষি বাজারেরউদ্যোগের বিষয়টি পর্যালোচনাকালে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেনযে এ বছর এপ্রিল মাসে শুরু হওয়া এই কর্মসূচির আওতায় দেশের ১০টি রাজ্যে বাজারেরসংখ্যা এখন ২৫০-এ দাঁড়িয়েছে। সূচনায়, এই উদ্যোগ শুরু হয়েছিল আটটি রাজ্যে যেখানে জাতীয়কৃষি বাজার গড়ে তোলা হয়েছিল ২১টির মতো। এই উদ্যোগে সাড়া দিতে ১৩টি রাজ্য ইতিমধ্যেইপ্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের কাজ সম্পূর্ণ করেছে। যে রাজ্যগুলিতে এই উদ্যোগ গ্রহণের কাজএখনও বাকি রয়েছে, সেগুলিতে জাতীয় কৃষি বাজার গড়ে তোলার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট আইনসংশোধনের কাজ দ্রুত শেষ করার আর্জি জানান প্রধানমন্ত্রী । দেশের জাতীয় কৃষি বাজারগুলিতে উৎপাদিত পণ্যবিক্রির মাধ্যমে কৃষকরা যাতে লাভজনক দাম পেতে পারেন সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকলেরইউদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। এই বিষয়টিতে বিভিন্ন রাজ্যেরমুখ্যসচিবদের মতামতও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তেলেঙ্গানা, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, কেরল,উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ, সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড এবংবিহারে রেল, সড়ক, বিদ্যুৎ এবং প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্রের প্রধান প্রধান পরিকাঠামোক্ষেত্রগুলির কাজকর্মের বিষয়টিও এদিনের মঞ্চে পর্যালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ করারও নির্দেশ দেন তিনি। শ্রী মোদীবলেন, প্রকল্প রূপায়ণের কাজে বিলম্ব ঘটলে ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি জনসাধারণের কাছে বিভিন্নকর্মসূচির সুফল পৌঁছে দেওয়ার কাজও বিলম্বিত হয়ে পড়ে। এদিন প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টযে সমস্ত প্রকল্পের কাজ ও অগ্রগতি খতিয়ে দেখেন তার মধ্যে ছিল হায়দরাবাদ ওসেকেন্দ্রাবাদের বহু উদ্দেশ্যসাধক পরিবহণ ব্যবস্থার দ্বিতীয় পর্যায়, অঙ্গমালি-শবরীমালারেলপথ, দিল্লি-মীরাট এক্সপ্রেসওয়ে, সিকিমের রেনক-পাকিয়ং সড়ক প্রকল্প এবং পূর্বভারতের বিদ্যুৎ পরিকাঠামো প্রকল্পের শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে পঞ্চম পর্বেরকর্মসূচিগুলি। এছাড়াও, উত্তরপ্রদেশে ফুলপুর-হলদিয়া গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পটিও ছিলপ্রধানমন্ত্রীর পর্যালোচনার অন্তর্গত ।
‘অম্রুত’ কর্মসূচির অগ্রগতি সম্পর্কেও এদিন‘প্রগতি’র মঞ্চে কথাবার্তা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এই কর্মসূচির আওতায় ৫০০টি শহরেরঅধিবাসীদের কাছে বিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য তিনিঅনুরোধ জানান সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির মুখ্যসচিবদের। শ্রী মোদী বলেন, হিন্দিতে ‘নগর’বলে যে শব্দটি ব্যবহৃত হয় তার সামান্য অদলবদল করে ‘নল’কে পানীয় জল, ‘গুট্টার’অর্থাৎ, পরিচ্ছন্ন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং ‘রাস্তা’ অর্থাৎ, সড়ক – এই তিনটিরউন্নয়নের কথা তুলে ধরতে পারি আমরা। ‘অম্রুত’কে নাগরিক-কেন্দ্রিক সংস্কার কর্মসূচিরএকটি লক্ষ্য বলে চিহ্নিত করেন তিনি ।
সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে বক্তব্য রাখতেগিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে এই ধরনের কর্মসূচি সরকারি সবক’টি দপ্তরেই শুরু হওয়াউচিত। বাণিজ্যিক কাজকর্মকে সহজতর করে তোলা সম্পর্কে বিশ্ব ব্যাঙ্কের সাম্প্রতিকপ্রতিবেদনটির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে রাজ্যের মুখ্যসচিব এবংকেন্দ্রীয় সরকারের সচিবদের উচিত এই প্রতিবেদনটি পাঠ করে তার বিশ্লেষণ ওসম্ভাবনাগুলির দিকে নজর দেওয়া। আগামী এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে একটি রিপোর্ট পেশকরার জন্য তিনি নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে থেকে এবং তা পর্যালোচনার নির্দেশদেন ক্যাবিনেট সচিবকে।
বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচির কাজ দ্রুত রূপায়ণেরলক্ষ্যে কেন্দ্রীয় বাজেট পেশের দিন এক মাস এগিয়ে আনা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেনপ্রধানমন্ত্রী। এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সবক’টি রাজ্যকেই তাদের পরিকল্পনাআগেভাগেই জানাতে বলেন তিনি যাতে এই বিশেষ উদ্যোগের সর্বোচ্চ সুফল লাভ করা যায়।
আসন্ন সর্দার প্যাটেল জয়ন্তী উদযাপন প্রসঙ্গেপ্রধানমন্ত্রী সকল সচিব এবং মুখ্যসচিবদের নির্দেশ দেন যে তাঁদের দপ্তর ওসংস্থাগুলির অন্তত একটি করে ওয়েবসাইটে যেন সরকারিভাবে স্বীকৃত ভারতীয় ভাষাগুলিতেতথ্য ও কর্মসূচির বিবরণ তুলে ধরা হয়।