প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী রবিবার (১৭ জুন) নীতি আয়োগের পরিচালন পর্ষদের চতুর্থ বৈঠকে সমাপ্তি ভাষণ দেন।
মুখ্যমন্ত্রীদের গঠনমূলক চিন্তাভাবনা ও সুপারিশগুলিকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে উপস্থিত সকলকে আশ্বস্ত করে বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সমস্ত এই সুপারিশগুলি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। রাজ্যগুলির দেওয়া সুপারিশের প্রেক্ষিতে তিন মাসের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তিনি নীতি আয়োগকে বলেন।
নীতি আয়োগ যে ১১৫টি উন্নয়নকামী জেলা চিহ্নিত করেছে, সে প্রসঙ্গে শ্রী মোদী বলেন, রাজ্যগুলি তাদের রাজ্যের মোত ব্লকের মধ্যে ২০ শতাংশ ব্লককে উন্নয়নকামী ব্লক হিসাবে মনোনীত করতে নিজস্ব মাপকাঠি স্থির করতে পারে।
পরিবেশ সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীদের উত্থাপিত বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সমস্ত রাজ্যকে তাদের সরকারি ভবন, সরকারি আবাসন ও সড়কে এলইডি বাতি ব্যবহারের আর্জি জানান। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে হবে। জল সংরক্ষণ, কৃষি, এমজিনারেগা প্রভৃতি বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীরা যে সমস্ত পরামর্শ দেন, শ্রী মোদী সেগুলিরও প্রশংসা করেন।
কৃষি ও এমজিনারেগা – এই দুটি বিষয়ে সমন্বিত নীতি-উদ্যোগের মাধ্যমে সুপারিশ প্রদান করে একযোগে কাজ করার জন্য তিনি মধ্যপ্রদেশ, বিহার, সিকিম, গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীদের প্রতি আহ্বান জানান। বীজ রোপণ ও ফসল কাটার পরবর্তি সময়েও একই উদ্যোগ বজায় রাখার জন্যও তিনি ঐ রাজ্যগুলিকে বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, লাইনের এক্কেবারে শেষে থাকা ব্যক্তিটিকেও চিহ্নিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তাঁর কাছেও প্রশাসনিক সুযোগ-সুবিধা পৌঁছায়। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, সামাজিক ন্যায়-বিচার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক উদ্দেশ্য। মানুষের স্বার্থে ও কল্যাণে এই সমস্ত উদ্যোগগুলির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় ও নিরবচ্ছিন্ন নজরদারি রাখা প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
উন্নয়নকামী ১১৫টি জেলার অতিরিক্ত ৪৫ হাজার গ্রামে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের সামগ্রিক সুযোগ-সুবিধা আগামী ১৫ আগস্টের মধ্যে পৌঁছে দিতে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা পুনরায় জানান।
কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ নীতি-আদর্শের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের প্রকল্প ও কর্মসূচিগুলি নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষ বা জাতির মধ্যেই সীমিত নয়। এগুলির সুফল কোনরকম বৈষম্য ছাড়াই সকলের কাছে সমানভাবে পৌঁছে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, বর্তমানে দেশের সমস্ত গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। ‘সৌভাগ্য’ যোজনার আওতায় ৪ কোটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, গ্রামীণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পরিধি বিগত চার বছরে ৪০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮৫ শতাংশে পৌঁছেছে। জন ধন যোজনা রূপায়ণের পর দেশের মানুষের সঙ্গে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা যুক্ত হবে। একইভাবে, ‘উজ্জ্বলা’ যোজনায় রান্নার গ্যাস পৌঁছে যাচ্ছে। সর্বজনীন টিকাকরণের জন্য ‘মিশন ইন্দ্রধনুষ’ অভিযান চালানো হচ্ছে। ২০২২ সালের মধ্যে সকলের জন্য বাড়ির ব্যবস্থা করতে কেন্দ্রীয় সরকার কাজ করে চলেছে বলেও তিনি জানান।
গরিব মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচি ১০০ শতাংশ রূপায়ণে সর্বাত্মক প্রয়াসী হওয়ার জন্য তিনি মুখ্যমন্ত্রীদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সমস্ত প্রকল্পের রূপায়ণের ফলে মানুষের জীবনযাপনে আচার-আচরণগত পরিবর্তন আসছে। এই প্রেক্ষিতে, তিনি নিমের আস্তরণযুক্ত ইউরিয়া সার, উজ্জ্বলা যোজানা, জন ধন অ্যাকাউন্ট, রুপে ডেবিট কার্ডের কথা উল্লেখ করেন।
স্বচ্ছ ভারত মিশন নিয়ে সারা দুনিয়া জুড়ে আলোচনা হচ্ছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত চার বছরে ৭ কোটি ৭০ লক্ষেরও বেশি শৌচাগার নির্মিত হয়েছে। মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ২০১৯-এর ২রা অক্টোবরের মধ্যে ১০০ শতাংশ স্বচ্ছ দেশ গড়ে তুলতে প্রয়াসী হতে বৈঠকে উপস্থিত সকলের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে জল সংরক্ষণ ও জলসম্পদের ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে কাজ করার আহ্বান জানান।
অর্থনীতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমগ্র বিশ্ব চায় ভারত শীঘ্রই পাঁচ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনীতি হয়ে উঠুক। তিনি রাজ্যগুলিকে ফলাফল-ভিত্তিক বন্টন ও ব্যয় সংশোধনের ক্ষেত্রে অর্থ কমিশনকে নতুন ধ্যান-ধারণা দেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করেন।
রাজ্যগুলির বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজনের উদ্যোগে তিনি আনন্দ প্রকাশ করেন। তিনি রাজ্যগুলিকে রপ্তানি ক্ষেত্রে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন। সহজে ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল বাতাবরণ তৈরি করার জন্যও তিনি রাজ্যগুলিকে উৎসাহিত করেন। শীঘ্রই নীতি আয়োগ সহজে ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল বাতাবরণ নিয়ে সমস্ত রাজ্যের সঙ্গে বৈঠক করবে বলেও তিনি জানান। তিনি বলে, সাধারণ মানুষের ‘সহজে জীবনযাপন’ বর্তমান সময়ের চাহিদা হয়ে উঠেছে। রাজ্যগুলিকে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে বলেও তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।
কৃষি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতে এই ক্ষেত্রটিতে কর্পোরেট বিনিয়োগের পরিমাণ খুবই কম। তিনি বলেন, রাজ্যগুলিকে ওয়্যারহাউজিং, পণ্য-পরিবহণ, মূল্য সংযুক্তিকরণ ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ক্ষেত্রে এমন নীতি গ্রহণ করতে হবে, যা কর্পোরেট বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়ক।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সাফল্যের সঙ্গে নিলাম হওয়া খনিগুলি থেকে যত দ্রুত সম্ভব উৎপাদন প্রক্রিয়া চালু করতে হবে। এ ব্যাপারে রাজ্যগুলিকে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান। জেলা খনিজ সংগঠনগুলি গরিব ও আদিবাসী মানুষজনের ব্যাপক কল্যাণসাধন করতে পারে বলেও তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।
লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন একইসঙ্গে করার ব্যাপারে তিনি ব্যাপক আলাপ-আলোচনার আহ্বান জানান। এর ফলে, আর্থিক সাশ্রয়ের পাশাপাশি সম্পদের আরও ভালো সদ্ব্যবহার সম্ভব হবে।
পরিশেষে, মুখ্যমন্ত্রীদের বিভিন্ন পরামর্শের জন্য তাঁদেরকে প্রধানমন্ত্রী আরও একবার ধন্যবাদ জানান।