আমেরিকায়বসবাসকারী আমার পরিবারের সকল সদস্যবৃন্দ,
পরিবারেরসদস্যদের সঙ্গে দেখা হলে যেমন আনন্দ হয়, আপনাদের সঙ্গে দেখা হলে প্রতিবারই আমিতেমন আনন্দ অনুভব করি আর এক নতুন প্রেরণা নিয়ে ফিরি। আপনারা আমার মধ্যে নতুন উৎসাহসঞ্চার করে দেন। আজ আমি আরেকবার তেমন সুযোগ পেয়েছি।
বিগত ২০ বছরেআমি অনেকবার আমেরিকা আসার সুযোগ পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগেই আমি গুজরাটেরমুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আমেরিকার প্রায় ৩০টি রাজ্যে ঘুরেছি, আর প্রতিবারই কোনও নাকোনওভাবে এদেশে বসবাসকারী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীহওয়ার পর আপনারা এত বড় সমারোহের আয়োজন করেছেন যে সেগুলির প্রতিধ্বনি আজও বিশ্বেশোনা যায়। শুধু আমেরিকার নয়, বিশ্বের যে কোনও দেশের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে দেখাহলে, তাঁরা আমেরিকায় আপনাদের আয়োজিত সমারোহের কথা উল্লেখ করেন, এভাবে ঐ সংবর্ধনাঅনুষ্ঠান যেন আমার পরিচিতির অংশ হয়ে উঠেছে।
এইসব কিছুআপনাদের অবদান, আপনাদেরই পরিশ্রমের ফসল। আমি জানি, আমেরিকায় থেকে এভাবে আয়োজন করাকত কঠিন! কত খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখতে হয়, কিন্তু এসব সত্ত্বেও আপনারা সফল আয়োজনকরেছেন!
আমার এবারেরসফরে অধিকাংশ প্রিয়জনকে অখুশি রেখেই ফিরতে হবে। অনেক অনুরোধের চাপ ছিল, বেশ কিছুঅনুষ্ঠানের জন্য অনুরোধ ছিল, আপনারা আরও বড় করে অনুষ্ঠান করতে চাইছিলেন, কিন্তুআমি বলেছি, এবার অনুষ্ঠান সাধারণভাবেই হোক, বরং আমি সেই মানুষদের সঙ্গে মিলিত হতেচাই, যাঁরা গতবার অনেক পরিশ্রম করে এত ঘটা করে আয়োজন করেছিলেন, যাঁদের পরিশ্রমেরসুফল উপভোগ করছি আমি।
তাঁরা সময়দিয়েছেন, অর্থ ব্যয় করেছেন, নিজেদের ব্যক্তিগত কর্মসূচির পরিবর্তন এনেছেন, তবেই তোআমি আজও তাঁদের কৃতকর্ম দ্বারা পরিচিত হই। এখানে আজ যে জমায়েত দেখছি, তাকে ছোট্টভারতও বলতে পারি আবার ক্ষুদে আমেরিকাও বলতে পারি!
এখানে ভারতেরপ্রায় প্রত্যেক রাজ্যের মানুষ, আমেরিকার প্রায় সকল প্রান্ত থেকে ছুটে আসাপ্রবাসীরা এখানে রয়েছেন। আপনারা কে কোথায় থাকেন, কেমন আছেন, কী ধরণের কাজের সঙ্গেযুক্ত, কোন্ পরিস্থিতিতে দেশ ছেড়ে এখানে এসেছেন – জানি না। কিন্তু এটা জানি যে,ভারতে ভাল কিছু হলে আপনাদের আনন্দ আর ধরে না! আর ভারতে খারাপ কিছু হলে আপনারানিদ্রাহীন রাত কাটান। কারণ, আপনাদের মন সবসময় চায়, আমার দেশ এমনটি কবে হবে, আমারদেশ এমন অগ্রসর কবে হবে!
আমি আপনাদেরআশ্বস্ত করতে চাই, যে স্বপ্ন আপনারা দেখেছেন, আপনারা অবশ্যই সেই স্বপ্ন সফল হতেদেখে যাবেন। কারণ, আপনারাই ভারতে ছিলেন আর আপনারাই আমেরিকায় থাকেন; কিন্তু আপনাদেরশক্তি, সামর্থ্য, এখানে এসে অনুকূল পরিবেশ পেতেই ফলে-ফুলে সমৃদ্ধ হয়েছে। নিজেদেরসমৃদ্ধির পাশাপাশি আমেরিকার সমৃদ্ধিতেও আপনারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
সেই ভারতীয়শক্তি আমেরিকায় এসে অনুকূল পরিবেশ পেয়ে নিজের সমৃদ্ধির পাশাপাশি আমেরিকার সমৃদ্ধিঘটাতে পারে। আপনাদের মতোই সামর্থ্যবান, আপনাদের মতোই বুদ্ধি ও প্রতিভাশালী ১২৫কোটী ভারতীয় ভারতে রয়েছেন।
যে অনুকূলপরিবেশে আপনারা নিজেদের ও চারপাশকে বদলে দিতে পেরেছেন, এখন দেশে তেমনি অনুকূলপরিবেশে গড়ে উঠছে আর অচিরেই কত দ্রুত তাঁরা ভারতকে বদলে দেবেন – তা আপনারা কল্পনাকরতে পারেন!
আজ ভারতেসবচাইতে বড় যে পরিবর্তন এসেছে বলে আমি প্রতি মুহূর্তে অনুভব করি, প্রত্যেক ভারতবাসীকিছু না কিছু করতে চান, কিছু না কিছু করে চলেছেন, দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়েযাওয়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার সংকল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছে। কাশ্মীর থেকেকন্যাকুমারী, অটক থেকে কটকে এই সংকল্প সঞ্চারিত হয়েছে বলেই আমি আপনাদের আশ্বস্তকরছি, বিগত অনেক বছরের তুলনায় অনেক তীব্র গতিতে আজ দেশ এগিয়ে চলেছে।
ভারতে যেসবকারণে সরকারের বদনাম হয়েছিল, পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়েছিল – তার মধ্যে একটি হ’লদুর্নীতি ও বেইমানি। দেশের সাধারণ মানুষের মন ঘৃণায় ভরে উঠেছিল। আমি আজ এখানে মাথানত করে বিনম্রভাবে বলতে চাই যে, বর্তমান সরকারের কার্যকাল তিন বছর সম্পূর্ণ হয়েছে।এখনও পর্যন্ত এই সরকারের গায়ে কোনও দাগ লাগেনি। সরকার পরিচালনার পদ্ধতিতেই এমন কিছুব্যবস্থাবলী তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে, যেখানে সততাই সহজ প্রক্রিয়া গড়ে তুলেছে।এমন নয় যে, ভিজিল্যান্স বরাবর চৌকশ হলে তবেই এটা সম্ভব।
প্রযুক্তিএতে বড় ভূমিকা পালন করছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বচ্ছতা আসে, নেতৃত্ব আর প্রশাসনেরনীতির কারণে দায়বদ্ধতা আসে। সাধারণ মানুষ তখন সেই পথে যেতেই বেশি পছন্দ করেন।
আমি দেশেরপ্রত্যেক মানুষকে সরকারি কোষাগার থেকে অর্থ প্রদানের কথা বলছিলাম। সেই প্রতিশ্রুতিআমি প্রযুক্তির মাধ্যমে ‘ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার স্কিম’-এ রূপান্তরিত করেছি।পরিণামস্বরূপ, আমাদের দেশে বাড়িতে বাড়িতে যে ভর্তুকিসম্পন্ন গ্যাস সিলিন্ডারসরবরাহ করা হয়, প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কয়েকদিনের মধ্যেইভর্তুকির টাকা পৌঁছে যায়। এর ফলে, দেশে আর একটাও ভুতুড়ে গ্রাহক নেই, সরকারিভর্তুকিতে দুর্নীতি আর গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে দালালি বন্ধ হয়েছে। সাধারণ মানুষেরআর্থিক দুরবস্থা দূর করতে পরিবারের যে টাকা সাশ্রয় হয়, তা তাঁদের ছেলেমেয়েদেরপড়াশুনা এবং চিকিৎসায় খরচ করতে পারেন। সরকারি ভর্তুকির ব্যবস্থা তো এই গরিবদের কথাভেবেই চালু হয়েছে! গ্যাস ভর্তুকির ক্ষেত্রে অবশ্য ‘ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফারস্কিম’-এর মাধ্যমে গরিবদের পাশাপাশি কোটিপতি গ্রাহকদের মধ্যে যাঁরা এখনও স্বচ্ছায়গ্যাস সিলিন্ডারে ভর্তুকি পরিত্যাগ করেননি তাঁদের ব্যাঙ্কের খাতায়ও নিয়মিতভর্তুকির টাকা পৌঁছে যায়।
আমিপ্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর, সেই ভাগ্যবান নাগরিকদের কাছে গ্যাস সিলিন্ডারে ভর্তুকিপরিত্যাগের আবেদন জানিয়েছিলাম। আমার আবেদনে সাড়া দিয়ে ১ কোটি ২৫ লক্ষ পরিবার এইভর্তুকি পরিত্যাগ করেছেন। একথা প্রমাণ করে যে, সাধারণ মানুষ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতেনিজেকে অংশীদার করতে চান, নেতৃত্ব দিতে চান, কিছু করে দেখাতে চান। আমরা তাঁদেরপরিত্যাগ করা ভর্তুকির টাকা রাজকোষে জমা দিয়ে সেখান থেকে প্রতিশ্রুতি মতো সারাদেশের অসংখ্য হতদরিদ্র পরিবারের মায়েদের হাতে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার তুলেদিয়েছি, যাঁরা এতদিন কাকভোরে উঠে শুকনো গাছের ডাল-পাতা কুড়িয়ে এনে কাঠের উনুনধরাতেন। শুকনো গাছের ডাল কিংবা কয়লার উনুনের ধোঁয়ায় চোখ লাল করে রান্না করতেন।বৈজ্ঞানিকদের মতে, উনুনের ধোঁয়ায় প্রত্যেক মায়ের শরীরে প্রতিদিন ৪০০টি সিগারেটেরসমান ধোঁয়া ঢোকে। বাড়ির ছোট ছেলেমেয়ে এবং অন্যান্যদের ফুসফুসেও সেই ধোঁয়া ঢোকে।ছোট বাচ্চাদের শরীরে প্রতিদিন ৪০০টি সিগারেটের ধোঁয়া ঢুকলে তাঁদের শরীরের কীঅবস্থা হয়, তা আপনারা কল্পনা করতে পারেন?
আমি যে সুস্থভারতের স্বপ্ন দেখি, সেখানে প্রত্যেক মা ও প্রতিটি শিশুকে সুস্থ থাকতে হবে। সেজন্যআমরা যাঁরা গ্যাস সিলিন্ডারে ভর্তুকি স্বেচ্ছায় ত্যাগ করেছেন, তাঁদের ভর্তুকি আমরাদেশের কোন্ প্রান্তের কোন্ পরিবারে পৌঁছে দিয়েছি, সেই খবর চিঠির মাধ্যমে ঐ ১কোটি ২৫ লক্ষ মানুষকে জানিয়েছি। আমরা তিন বছরের মধ্যে ৫ কোটি হতদরিদ্র পরিবারেগ্যাস সিলিন্ডার সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার সংকল্প নিয়েছি। আর আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছিযে, তিন বছরের মধ্যে এখনও এক বছর সম্পূর্ণ হয়নি, ইতিমধ্যেই আমরা ২ কোটিরও বেশিপরিবারে সিলিন্ডার পৌঁছে দিতে পেরেছি।
ভর্তুকিরটাকা সাধারণ মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি পাঠানোর ব্যবস্থা করার আগেই আমরাজন ধন যোজনার মাধ্যমে ছ’মাসের মধ্যে কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টখুলিয়েছি। দেশের ৪০ শতাংশ মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টই ছিল না। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টখোলানোর পর লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিরোধীরা সমালোচনা করে বলতেন, এভাবে লোকের ব্যাঙ্কঅ্যাকাউন্ট খুলিয়ে কি লাভ, তাঁদের অ্যাকাউন্টে তো টাকাই নেই।
অভিযোগেরজন্য কোনও বাহানা তো লাগেই। কিন্তু তারপর আমরা যখন ‘ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার’শুরু করলাম তখন থেকে সরকারি ভর্তুকি সরাসরি তাঁদের ব্যাঙ্কের খাতায় জমা হতে শুরুকরে। আর মজার ব্যাপার হ’ল, যত মানুষ গ্যাস সিলিন্ডারে ভর্তুকি পেতেন, তার মধ্যে ৩কোটিরও বেশি মানুষকে আমরা খুঁজেই পেলাম না। তিন কোটি ভুতুড়ে গ্রাহক গায়েব হয়ে গেল।সেই সাশ্রয় হওয়া ভর্তুকির টাকা দিয়ে দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের জন্য গ্রামে গ্রামেবিদ্যালয় স্থাপনের কাজ চলছে।
স্বচ্ছতারক্ষেত্রে প্রযুক্তির ভূমিকা কত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, তা দেশের নবীন প্রজন্মবুঝতে পারছে। আজ ভারতে প্রযুক্তি উন্নয়নে জোর দিয়ে নানা ব্যবস্থা বিকশিত করাহচ্ছে। আগে চাষের সময় এলে সারা দেশে ইউরিয়ার যোগান নিয়ে হাহাকার পড়ে যেত। আমি যখনমুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, তখন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ইউরিয়া চেয়ে নিয়মিত চিঠি লিখতেহ’ত, তাগাদা দিতে হ’ত। প্রধানমন্ত্রীহওয়ার পর প্রথম মাসেই আমাকে দেশের প্রায় সকল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ইউরিয়া চেয়ে চিঠিদিয়েছিলেন। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, তারপর থেকে আরেকজন মুখ্যমন্ত্রীকেও আমি সেইসুযোগ দিইনি। এখন দেশে কোথাও ইউরিয়ার অভাব নেই, কোনও কৃষককে ইউরিয়ার জন্য সারা রাতলাইনে দাঁড়াতে হয় না।
আমরা কিভাবেএই সমস্যার সমাধান করেছি? আমরা কি রাতারাতি অনেক কটা ইউরিয়া কারখানা খুলেছি? না,এসব কিছুই করতে হয়নি। আমরা ব্যবস্থায় সাধারণ একটা পরিবর্তন এনেছি। প্রযুক্তিরমাধ্যমে ইউরিয়াকে নিম কোটিং করিয়েছি। নিম ফলের তেল, যা কোনও কাজে লাগে না, সেই তেলদিয়ে ইউরিয়াকে কোটিং করিয়ে দিয়েছি। সারা বছরে সরকারকে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকাইউরিয়া খাতে ভর্তুকি দিতে হ’ত। কিন্তু বাস্তবে সেই ভর্তুকিপ্রাপ্ত ইউরিয়ারসিংহভাগই ফসলের ক্ষেত পর্যন্ত পৌঁছতো না, রাসায়নিক কারখানায় সস্তা কাঁচামালে পরিণতহ’ত। রাসায়নিক কারখানাগুলি সেই ভর্তুকিপ্রাপ্ত ইউরিয়া কম দামে কিনে প্রক্রিয়াকরণেরমাধ্যমে মূল্যবান কোনও পণ্য বানিয়ে বাজারজাত করে অধিক মুনাফা লুঠত। নিম কোটিং করেদেওয়ার পর এক গ্রাম ইউরিয়াও আর অন্য কোনও কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না। রাসায়নিককারখানার বদলে নিম আচ্ছাদিত ইউরিয়া ফসলের ক্ষেতে যাওয়ায় দেশে ফসলের উৎপাদন ৫ শতাংশথেকে ৭ শতাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে আমরা এই সাফল্য পেয়েছি।
আমি এরকমঅনেক উদাহরণ দিতে পারি। গত তিন বছরে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে আমরা অনেকসাফল্য পেয়েছি। মহাকাশ বিজ্ঞানে ভারতের সাফল্য অতুলনীয়। এই তো দু’দিন আগেই ৩১টিন্যানো কৃত্রিম উপগ্রহ একসঙ্গে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। গত মাসে তো আমাদের বিজ্ঞানীরাএকসঙ্গে ১০৪টি কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে পাঠিয়ে বিশ্ব রেকর্ড করেছেন। আর সেগুলিরমধ্যে অধিকাংশই ছিল বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশের কৃত্রিম উপগ্রহ। সেগুলি অত্যন্তসুলভে আমাদের বিজ্ঞানীরা মহাকাশে পাঠিয়ে সেসব দেশ থেকে প্রভূত উৎক্ষেপন শুল্কদেশের রাজকোষে জমা দিয়েছে। বিশ্ববাসী ভারতীয় বৈজ্ঞানিকদের এই সাফল্যে অবাক হয়েছেন।
ভারতীয়মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এত ভারী কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণে সাফল্য পেয়েছেন, যেগুলিকে আরকিলোগ্রাম এককে না মেপে কতকগুলি হাতির ওজনের সমতুল সেই হিসাবে মাপা হচ্ছে। এসব কথাবলার অর্থ হ’ল আধুনিক ভারতের স্বপ্ন সফল করতে একটি প্রযুক্তিচালিত প্রশাসন,প্রযুক্তি নির্ভর সমাজ ও প্রযুক্তি নির্ভর উন্নয়ন যাত্রা শুরু করে আমরা দ্রুতএগিয়ে চলেছি।
এমনটা নয় যেআমরা শাসন ক্ষমতায় আসার আগে ভারত সরকার কোনও কাজ করত না। কাজ করত, সরকার তৈরি হয়জনগণের কাজ করার জন্য। প্রত্যেক সরকারই চায়, পূর্ববর্তীদের থেকে বেশি কাজ করেদেখাতে, যাতে পরবর্তী নির্বাচনে আরও বেশি ভোট পেয়ে জিতে আসতে পারে। কিন্তু দেশেরপ্রয়োজন আশানুরূপ দ্রুতগতিতে কাজ করা এবং সঠিক লক্ষ্যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেপরিণাম লাভ করলে তবেই দ্রুত অগ্রগতি সম্ভব।
আগে প্রতিদিনকত কিলোমিটার সড়ক তৈরি হ’ত, কত কিলোমিটার রেলপথ বিছানো হ’ত, বিদ্যুৎ-চালিত রেলব্যবস্থার সম্প্রসারণের গতি কেমন ছিল, আর আজ কত কিলোমিটার রেলপথ ও সড়ক সম্প্রসারিতহচ্ছে, বিদ্যুতায়নের কাজ কী হারে এগোচ্ছে তার তুলনা করলেই বুঝতে পারবেন, বর্তমানসরকার সুদূরপ্রসারী পরিকাঠামো উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে এই উন্নয়নের গতি কিভাবেবৃদ্ধি করতে পেরেছে! কিভাবে একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বমানের পরিকাঠামো উন্নয়ন দেশকেআগের তুলনায় অনেক বেশি সুগম করে তুলছে।
এখন শুধু কাজকরলেই হবে না, একটা সময় ছিল যখন আকালের সময় গ্রামের মানুষ সরকারকে চিঠি লিখতেন,যাতে গ্রামে কিছু অতিরিক্ত মাটি কাটানোর কাজ শুরু হয়। সরকার সেই আবেদনে সাড়া দিয়েগ্রামগুলিতে কিছু গর্ত খুড়িয়ে মেঠোপথ নির্মাণ করিয়ে শ্রমদানের বিনিময়েগ্রামবাসীদের অর্থ দিলে সবাই খুশি হতেন, একেই সরকারের সাফল্য বলে মানা হ’ত।
কিন্তু এখনগ্রামবাসী পাকা সড়ক চান, ডবল লেন সড়ক চান, গ্রামের পাশ দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে চান – এইক্রমবর্ধমান প্রত্যাশাই ভারতের উন্নয়নেসবচেয়ে বড় শক্তি। এই প্রত্যাশা যদি যথাযথ নেতৃত্ব, স্বচ্ছ প্রশাসন ও স্পষ্ট নীতিরঅবলম্বন পায়, তা হলে প্রত্যাশা পূরণের পথ নিজে থেকেই খুলে যায়। সাধারণ মানুষেরপ্রত্যাশাকে সাফল্যে রূপান্তরনে এই প্রক্রিয়াকে সঠিক পথে নিয়ে যেতে আমরা আগেনীতিনির্ধারণ করি, গতি নির্ধারণ করি, অগ্রাধিকার যাচাই করি আর তারপর প্রাণপনে কাজকরে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সাফল্যলাভের চেষ্টা করি।
আজ গোটাবিশ্ব সন্ত্রাসদীর্ণ। এই সন্ত্রাসবাদ মানবতার শত্রু। আজ থেকে ২০-২৫ বছর আগে ভারতযখন আন্তর্জাতিক স্তরে সন্ত্রাসবাদ দমনের কথা তুলত, তখন বিশ্বের অনেক তাবড় তাবড়দেশ একে ভারতের নিজস্ব আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা বলে হেয় করত। কারণ, তাদেরকে এই সমস্যায়ভুগতে হয়নি। এখন আর বিশ্বের কোনও দেশকে সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে বোঝাতে হয় না।সন্ত্রাসবাদীরা নিজেরাই তাদের বুঝিয়ে দিয়েছে। কিন্তু যখন ভারত সার্জিকাল স্ট্রাইককরে, তখন বিশ্ব আমাদের শক্তি অনুভব করে যে ভারত সংযম রক্ষা করে চলছে ঠিকই, কিন্তুপ্রয়োজনে নিজের সামর্থ্যের পরিচয়ও দিতে পারে।
আমরাআন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলি। আমাদের সংস্কার ও স্বভাব হ’ল নিয়ম মেনে চলা। আমরা‘বসুধৈব কুটুম্বকম্’ কল্পনাকে শিরোধার্য করে চলি। এ কেবল কথার কথা নয়, এটাইআমাদের চরিত্র। আমরা গ্লোবাল অর্ডারকে ছিন্নভিন্ন করে নিজেদের দন্ড ঘোরাতে চাই না।আমরা সকল আন্তর্জাতিক নিয়ম পালন করে নিজেদের সার্বভৌমত্বের জন্য দেশের জনগণেরসুরক্ষা, সুখ, শান্তি ও প্রগতির স্বার্থে কঠোর থেকে কঠোরতম পদক্ষেপ নেওয়ারসামর্থ্য রাখি। আর তখন পৃথিবীর কেউ আমাদের আটকাতে পারবে না।
সার্জিকালস্ট্রাইক এমন একটি ঘটনা ছিল, যা নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভারতকে কোণ্ ঠাসা করেদিতে পারত। আমাদের কাছ থেকে জবাবদিহি চাইতে পারত। কিন্তু এই প্রথম বিশ্ববাসী অনুভবকরেছে আর সার্জিকাল স্ট্রাইকের মতো বড় পদক্ষেপ নেওয়ার পরও বিশ্বের কোনও দেশ এপ্রসঙ্গে প্রশ্ন তোলেনি। যারা ভুক্তভোগী তাদের কথা আলাদা। কিন্তু অন্যরাও শব্দটিওকরেনি। কারণ, তাদেরকেও আমরা সন্ত্রাসবাদের স্বরূপ সম্পর্কে অবহিত করতে সফল হয়েছি।
আমরা ভারতকেআর্থিক উদারীকরণের মাধ্যমে একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে বিভিন্নপদক্ষেপ নিয়েছি। দেশ শুধু আর্থিকভাবেই এগোয় তা নয়, তার সবচাইতে বড় শক্তি হয় তারমানবসম্পদ, সবচাইতে বড় শক্তি হয় প্রাকৃতিক সম্পদ। যে দেশের ৮০ কোটি মানুষের বয়স ৩৫বছরের কম, যে দেশ নবীন, তার স্বপ্নও নবীন হয়, তার সামর্থ্য নবীন হয়। আমরা এইস্বপ্নকে দ্রুত সফল করতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের নীতি নিয়েছি। দেশ স্বাধীনহওয়ার পর থেকে এত বছরে যত প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ভারতে এসেছে, গত কয়েক বছরেতারচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে।
বিশ্বের নামীক্রেডিট রেটিং এজেন্সিগুলি ভারতকে এখন আর্থিক দুনিয়ায় উজ্জ্বল তারা রূপে দেখছে।বিশ্ব ব্যাঙ্ক থেকে শুরু করে আইএমএফ সকলেই ভারতের সামর্থ্যকে স্বীকার করে নিচ্ছে।গোটা বিশ্ব ভারতকে এখন বিনিয়োগ গন্তব্য হিসাবে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। পাশাপাশিউদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও মেধার গুরুত্ব অপরিসীম।
সারাপৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়া ভারতীয়রা যে সামর্থ্যের পরিচয় দিয়েছে, অনুকূল পরিবেশে তারাযেভাবে সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছে, আমি সেই সফল ভারতীয়দেরও আমন্ত্রণ জানাই। আপনাদেরসামর্থ্য ও অভিজ্ঞতা যদি মনে করেন ভারতের কাজে লাগবে, তা হলে যে দেশকে আপনারাউন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দিয়েছেন, সেই মাটির ঋণ পরিশোধ করার লক্ষ্যে এর থেকে ভালসুযোগ আর আসবে না।
আমেরিকায় বিশ্বেরসকল দেশের মানুষ এসে বসবাস করেন। কিন্তু অন্য কোনও দেশের মানুষ হয়তো ভারতীয়দের মতোআদর ও সম্মান পান না। যে ভালবাসা আমি পেয়েছি, বিশ্বের অন্য কোনও আমেরিকায় এরকমভালবাসা পাননি। কিন্তু কখনও মনে হয়, বর্তমান প্রজন্মের এই উৎসাহ ও উদ্দীপনা কিপরবর্তী প্রজন্মের মানুষদের মধ্যেও সঞ্চারিত হবে? সেজন্য ভারতের সঙ্গে আপনাদেরনিয়মিত সম্পর্ক বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
ভারতের নতুনপ্রজন্মের সঙ্গে প্রবাসী ভারতীয়দের নতুন প্রজন্মের সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রয়োজনরয়েছে। আপনারা ভারতের যে রাজ্য থেকে যাঁরা এসেছেন, সেই রাজ্যগুলিতে প্রবাসীভারতীয়দের জন্য কোনও না কোনও বিভাগ গড়ে তোলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারও দিল্লিতেএকটি সুন্দর প্রবাসী ভারতীয় ভবন নির্মাণ করেছে। আমি চাই যে, আপনারা যখনই ভারতেআসবেন, অবশ্যই সেখানে যাবেন, সেখানে থাকারও খুব ভাল ব্যবস্থা রয়েছে। আর এই সকলসুবিধা আপনাদের কথা মাথায় রেখে গড়ে তোলা হয়েছে।
আগে বিদেশমন্ত্রক বলতে কোট-প্যান্ট-টাই পরা, বড় বড় লোকেদের সঙ্গে হাত মেলানো, দেশ-বিদেশেঘুরে বেড়ানো এমন এ ক টা ছবি সাধারণ মানুষের সামনে গড়ে উঠেছিল। কিন্তু গত তিন বছরে আপনারা দেখেছেন মানবিকদৃষ্টিকোণ থেকে নতুন নতুন সাফল্য পেয়েছে। ইতিমধ্যেই ৮০ হাজারেরও বেশি ভারতীয়কেবিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কোনও না কোনও সঙ্কট থেকে উদ্ধার করে সুস্থভাবে দেশেফিরিয়ে এনেছেন। ৮০ হাজার মানুষকে সঠিক সময়ে ত্রাণ পৌঁছনো ও উদ্ধার করা কম কথা নয়।
আজ থেকে ২০বছর আগে যে কোনও দেশে আপনারা যত সুখে-শান্তিতে বসবাস করতেন, আজ আর সেরকম অবস্থানেই। প্রতি মুহূর্তেই প্রবাসী ভারতীয়দের মনে শঙ্কা থাকে, কিছু হবে না তো! কিন্তুবিগত তিন বছরে আপনারা এই ভেবে স্বস্তিতে থাকেন যে, যাই হোক না কেন, এখানে ভারতীয়দূতাবাস আছে! সম্প্রতি একটি ভারতীয় মেয়ে মালয়েশিয়া গিয়েছিল, কারও পরিচয়ে গিয়েছিল,তারপর সেখান থেকে পাকিস্তান চলে যায়। মুসলিম ঘরের মেয়ে অনেক স্বপ্ন নিয়ে সেপাকিস্তান গিয়েছিল, কিন্তু সেখানে গিয়ে তার জীবন বরবাদ হয়ে যায়। একদিন সে সুযোগপেয়ে পাকিস্তানে ভারতীয় দূতাবাসে পৌঁছে শরণ নেয়। আজ সে ভারতে ফিরেছে আর আমাদেরবিদেশ মন্ত্রী সুষমাজি নিজে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেছেন।
আগে যখনএখানে আসতাম, তখন প্রবাসী বন্ধুদের সঙ্গে অনেক আড্ডা হ’ত। তাঁরা বলতেন, ভারতে গেলেইবিমানবন্দরে কাস্টমস্-এর বাড়াবাড়ি, বিমানবন্দর থেকে বেরোলেই ট্যাক্সিচালকদেরবাড়াবাড়ি, পথে পা রাখলেই নোংরা – এই সমস্ত কিছু শুনতে হ’ত। ভাল না লাগলেও শুনতেহ’ত। আজ আমি আনন্দের সঙ্গে বলছি যে, বিদেশ থেকে যত চিঠি পাই, সেই চিঠিগুলিতে ঐদেশে ভারতীয় দূতাবাসে কেমন পরিবর্তন এসেছে, ভারতীয় দূতাবাসের কর্মচারীরা কতসক্রিয়ভাবে সাহায্য করেন – এইসব প্রশংসার কথা পড়ি। আমরা মৌলিক নীতিতে পরিবর্তনএনেছি। আপনারা জানেন, যখন আপনারা পাসপোর্ট-এর জন্য আবেদন করেছিলেন, তখন পাসপোর্টপেতে কত কষ্ট হয়েছিল। আর আজ দেশের প্রতিটি ডাকঘরে পাসপোর্ট সেন্টার খোলা হচ্ছে।৬-৭ মাসের জায়গায় এখন ১৫ দিনের মধ্যেই পাসপোর্ট আবেদনকারীর বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছে।
আজকাল সোশ্যালমিডিয়া অনেক ক্ষমতাবান। আমি নিজেও সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত। আপনাদের মধ্যেঅনেকেই যে নিয়মিত নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ দেখে, সেটা আমি জানি। আর যাঁরা দেখেন না,তাঁরা ডাউনলোড করে নিন। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া থেকে কোন একটি ডিপার্টমেন্টের শক্তিকেমনভাবে বৃদ্ধি পায় তা যদি দেশের কোন বিভাগ সবচাইতে ভালভাবে করে দেখিয়ে থাকে তাহল আমাদের বিদেশমন্ত্রকের নেতৃত্বে বিদেশ বিভাগ।
ভারতে আজসবাই অনুভব করে যে, দেশের বিদেশমন্ত্রক এখন শুধুই কোট-প্যান্ট- টাই এ সীমাবদ্ধনেই। দেশের বিদেশ মন্ত্রকও আজ গরিবদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিদেশ মন্ত্রক বিশ্বের যেকোনও প্রান্ত থেকে রাত ২টোর সময় কোনও ট্যুইট রিসিভ করে ১৫ মিনিটের মধ্যে স্বয়ংবিদেশ মন্ত্রী সুষমাজির জবাব পায়। আর ২৪ ঘন্টার মধ্যে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থানেয়, যাতে সে দেশের ভারতীয় দূতাবাস দ্রুত তাদের পাশে দাঁড়াতে পারে। একেই বলেসুপ্রশাসন, গণমুখী প্রশাসন, আবেগতাড়িত প্রশাসন।
বন্ধুগণ,আপনারা আমাদের যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা পালন করার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা আমরা চালিয়েযাচ্ছি। অতুলনীয় তিনটি বছর আমরা পেরিয়ে এসেছি, এর প্রতিটি মুহূর্ত দেশকে নতুনউচ্চতায় পৌঁছে দিতে আমরা সচেষ্ট ছিলাম, পরবর্তী প্রতিটি মুহূর্তেও আমরা একইভাবেকাজ করে যাব। আপনাদের পাশে পেয়েছি, সহযোগিতা পেয়েছি। আজ আপনারা বিপুল সংখ্যায়এখানে এসেছেন, সেজন্য আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমাকে বলা হয়েছে যে, এরপরমিলিতভাবে ছবি তোলা হবে। আমি অবশ্যই আপনাদের মাঝে গিয়ে দাঁড়াব। আপনারা প্রস্তুতথাকুন। আমি আরেকবার কৃতজ্ঞতা জানাই।
ধন্যবাদ।