মাননীয় রাষ্ট্রপতি,
আমার প্রিয় বন্ধু মির্জিওয়েব,
উজবেকিস্তান থেকে আগত সম্মানিত অতিথিবৃন্দ এবং বন্ধুগণ,
ভারতীয় প্রতিনিধিদলের সদস্যবৃন্দ,
নমস্কার।
রাষ্ট্রপতি মহোদয়,
এটি আপনার সরকারিভাবে প্রথম ভারত সফর। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আপনি নিজের পরিবারের সদস্য এবং উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। আপনার পরিবারের সদস্যদের এবং এই প্রতিনিধিদলের সদস্যদের স্বাগত জানাতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। উজবেকিস্তান ও ভারতের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সাক্ষী আমাদের পারস্পরিক ইতিহাস এবং সংস্কৃতি। ‘মেহমান’, ‘দোস্ত’ এবং ‘আজিজ’ – এর মতো অসংখ্য শব্দ উভয় দেশে একই অর্থ বহন করে সমানভাবে প্রযোজ্য। এটা শুধু ভাষার মিল নয়, হৃদয় ও ভাবনার মিল। আমি গর্বিত ও আনন্দিত যে আমাদের উভয় দেশের সম্পর্কের বুনিয়াদ এতো শক্তিশালী ভিতের ওপর গড়ে উঠেছে। রাষ্ট্রপতি মহোদয়, আপনার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল ২০১৫ সালে, যখন আমি উজবেকিস্তান সফরে গিয়েছিলাম। আপনার ভারতের প্রতি সদ্ভাবনা এবং বন্ধুত্ব ভাবনা দেখে আমার মনে আপনার ব্যক্তিত্ব প্রভাব ফেলেছিল। এটি আমাদের চতুর্থ সাক্ষাৎ। কিন্তু আমার মনে আপনি ইতিমধ্যেই একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর স্থান দখল করেছেন। আপনি আমার ‘আজিজ দোস্ত’! আপনার সঙ্গে আসা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধিদলকে কাছে পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আপনার আদেশ এবং প্রদর্শিত পথে বিগত দিনে ভারতে তাঁদের অনেকের সঙ্গে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের গুরুত্বপূর্ণ দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে। আজ আমাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এবং সার্থক আলোচনা হয়েছে। ভারত ও উজবেকিস্তানের ঐতিহাসিক সম্পর্ককে আরও নিবিড় করে তুলতে আমাদের কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করার জন্য আমরা কিছু সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ নিয়েছি। আঞ্চলিক গুরুত্ব বিষয়ক আলোচনা, যেখানে আমাদের নিরাপত্তা, শান্তি, সমৃদ্ধি এবং পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে সার্থক আলোচনা হয়েছে। এই বিষয়গুলিকে আমরা সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে উত্থাপন করে আমাদের সহযোগিতাকে আরও নিবিড় করে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আজকের এই সাক্ষাতে আমরা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ সহমত হয়েছি যে, উভয় দেশের মধ্যে প্রাচীন ও প্রগাঢ় সম্পর্ককে উভয় দেশের জনগণের আশা ও আকাঙ্খা অনুসারে আরও বিস্তারিত করার সময় এসেছে।
মাননীয়,
আপনার বেশ কিছু সাহসী এবং গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ও সংস্কারের মাধ্যমে উজবেকিস্তান পুরনো ব্যবস্থাকে পেছনে রেখে আধুনিকতার পথে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এটা আপনার নেতৃত্ব ও দূরদৃষ্টির পরিণাম। আমি একে স্বাগত জানাই। আপনাকে অনেক অভিনন্দন জানাই এবং ভবিষ্যতে আরও সাফল্যের জন্য শুভেচ্ছা জানাই।
মাননীয়,
উজবেকিস্তানের অগ্রাধিকার অনুযায়ী, ভারত প্রস্তাবিত ক্ষেত্রগুলিতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমাদের বর্তমান সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলির বৃদ্ধির জন্য আমরা আজ বিশেষভাবে আলোচনা করেছি। ব্যবসা ও বিনিয়োগের সম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমরা সহমত পোষণ করেছি। ২০২০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে এক বিলিয়ন ডলারে –পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। আমরা অগ্রাধিকারসম্পন্ন বাণিজ্য চুক্তির ক্ষেত্রে আলাপ-আলোচনা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উজবেকিস্তানের প্রস্তাবে ভারত উজবেকিস্তানে সামাজিক ক্ষেত্রে পরিষেবা প্রদানে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। সুলভে গৃহ নির্মাণ এবং এরকম আরও সামাজিক পরিকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ২০০ মিলিয়ন ডলারের লাইন অফ ক্রেডিট প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, ৮০০ মিলিয়ন ডলারের লাইন অফ ক্রেডিট তথা এক্সিম ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ‘বায়ার্স ক্রেডিট’ – এর অন্তর্গত আমরা উজবেকিস্তানের প্রস্তাবগুলিকে স্বাগত জানাবো। মহাকাশ বিজ্ঞান, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উজবেকিস্তানের উন্নয়নের স্বার্থে ভারতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর প্রস্তাব আমরা পেশ করেছি। ভারত ও উজবেকিস্তানের রাজ্যগুলির মধ্যে ক্রমবর্ধমান সহযোগিতাকে আমরা স্বাগত জানাই। আজ আগ্রা এবং সমর্কন্দের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি এবং গুজরাট ও আন্দিজনের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ভারত ও উজবেকিস্তানের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির নানা পথ নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। বাণিজ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ভারত ২০১৮-র ফেব্রুয়ারি মাসে অ্যাশগ্যাবেট চুক্তির সদস্য হয়েছে। এক্ষেত্রে সমর্থনের জন্য আমরা উজবেকিস্তানের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা আনন্দিত যে, উজবেকিস্তান আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহণ করিডরে সামিল হওয়ার ক্ষেত্রে সহমত হয়েছে।
মাননীয়,
আপনার বরিষ্ঠ পরামর্শদাতা ও মন্ত্রী আগামীকাল গান্ধী স্যানিটেশন কনভেনশনের সমাপণ সমারোহে সামিল হবেন। মহাত্মা গান্ধীর সত্য, অহিংসা ও শান্তির বার্তার প্রতি আপনাদের মনে যে সম্মান রয়েছে, তা ভারতীয়দের হৃদয় স্পর্শ করেছে। তাসকন্দের সঙ্গে ভারতের পূর্ব প্রধানমন্ত্রী শ্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর স্মৃতি জড়িয়ে আছে। শাস্ত্রীজির স্মারক এবং লালবাহাদুর শাস্ত্রী স্কুলের পুনরুজ্জীবনের জন্য আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। এই দুই মহান নেতার জন্মদিনের প্রাক্-সন্ধ্যায় আপনাদের ভারতে উপস্থিত থাকা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মাননীয়,
এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে, আমাদের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও নিবিড় হচ্ছে। আজকের আলোচনার সময়ে আমরা যৌথ সৈন্য অভ্যাস এবং সৈন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মহোদয়, আপনার বক্তব্যে ও প্রতিনিধিদলের বক্তব্যে আরেকবার স্পষ্ট হয়েছে যে, ভারত ও উজবেকিস্তান একটি নিরাপদ ও সমৃদ্ধ পারিপার্শিক পরিবেশ চায়। ক্ষেত্রীয় শান্তি এবং স্থিরতার স্বার্থে আমি উজবেকিস্তানের প্রচেষ্টাসমূহকে সমর্থন জানাই ও প্রশংসা করি। এক্ষেত্রে ভারত, উজবেকিস্তানের সঙ্গে যথাসম্ভব সহযোগিতা করবে। স্থির, গণতান্ত্রিক এবং সমৃদ্ধ উজবেকিস্তান আমাদের সমগ্র ক্ষেত্রের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, এই প্রেক্ষিতে উভয় দেশের মধ্যে নিয়মিতভাবে সম্পর্ক বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি। সাংস্কৃতিক ও ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্কই আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের মূল ভিত্তি। ই-ভিসা, পর্যটন, অ্যাকাডেমিক এক্সচেঞ্জ এবং বিমান যোগাযোগের মতো বিষয়গুলি নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করেছি।
মাননীয়,
আজ আমরা একটি নতুন যুগের দিকে পা বাড়াচ্ছি, যাতে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতা স্পর্শ করবে এবং আমাদের কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করবে। আমি আরেকবার আপনাকে এবং আপনার প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানাই। ভারতে আপনার আনন্দময় ও সুফলদায়ক সফর কামনা করি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।