মাননীয় রাষ্ট্রপতি রামাফোসা,
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আগত বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ,
বন্ধুগণ,
ভারতের অভিন্ন হৃদয় বন্ধু আজ আমাদের মধ্যে উপস্থিত হয়েছেন, যা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। ভারত তাঁর কাছে নতুন নয়, তবে, রাষ্ট্রপতি হিসেবে এটিই তাঁর প্রথম ভারত সফর। আমাদের দুই দেশের সম্পর্কের এক বিশেষ মুহূর্তে তাঁর ভারত সফর হচ্ছে। এ বছর মহাত্মা গান্ধীর জন্মের সার্ধ শতবার্ষিকী। গত বছর ছিল নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মবার্ষিকী। এমনকি, গত বছর আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের হীরক জয়ন্তী উদযাপিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি রামাফোসা বিশেষ এই মুহূর্তে ভারত সফরে আসায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত। এছাড়াও, ভারতের কাছে তাঁর সফরের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। আসলে, আমরা আগামীকাল আমাদের সাধারণতন্ত্র দিবস উদযাপন করতে চলেছি, যেখানে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকছেন। রাষ্ট্রপতি রামাফোসা আমাদের যে শ্রদ্ধা এবং সম্মান জানিয়েছেন, তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। বিশেষ এই মুহূর্তে সমগ্র ভারতও তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।
বন্ধুগণ,
আমার সঙ্গে রামাফোসার প্রথম দেখা হয় ২০১৬-তে দক্ষিণ আফ্রিকায় যখন আমি সে দেশ সফর করছিলাম। সে সময়ে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার উপ-রাষ্ট্রপতি ছিলেন। আমাদের দু’জনের প্রথম বৈঠকে আমি ভারতের প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ ও অনুরাগ উপলব্ধি করেছিলাম। গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় আয়োজিত ব্রিক্স শীর্ষ সম্মেলনের সময়ও আমি তাঁর উষ্ণ আতিথেয়তা পেয়েছি। দিল্লিতে এখন শীতের মরশুম চলছে। কিন্তু আমার বিশ্বাস শীতের এই সময়ে রাষ্ট্রপতি রামাফোসা ভারতের আতিথেয়তার উষ্ণতা অনুভব করবেন। আমি, রাষ্ট্রপতি ও তাঁর প্রতিনিধিদলকে ভারতে আন্তরিক স্বাগত জানাই।
বন্ধুগণ,
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আজ আমার মতবিনিময়ের সময় আমাদের দুই দেশের সম্পর্কের সমস্ত দিক নিয়ে আমরা পর্যালোচনা করেছি। আমাদের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্পর্ক ক্রমশ নিবিড় থেকে নিবিড়তর হচ্ছে। আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। এ বছর ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাট’ শীর্ষ সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকা অংশীদার দেশ হিসেবে যোগ দেয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় বিনিয়োগ বাড়াতে রাষ্ট্রপতি রামাফোসা যে সমস্ত উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, ভারতীয় সংস্থাগুলি তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে। দক্ষিণ আফ্রিকার দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচিগুলিতেও আমরা অংশীদার হয়েছি। শীঘ্রই সে দেশের প্রিটোরিয়াতে গান্ধী-ম্যান্ডেলা দক্ষতা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে। আমরা দু’জনেই এই সম্পর্ককে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই লক্ষ্যে, আর কিছু সময় পরেই আমরা দু’জনেই উভয় দেশের শিল্পপতিদের সঙ্গে মিলিত হব।
বন্ধুগণ,
আমরা যদি বিশ্ব মানচিত্রে চোখ রাখি, তাহলে দেখতে পাবো ভারত মহাসাগরের খুব গুরুত্বপূর্ণ দুটি জায়গায় এই দুই দেশের অবস্থান। এই দুই গণতান্ত্রিক দেশেই রয়েছে বিপুল বৈচিত্র্যের সমাহার। আমরা মহাত্মা গান্ধী ও নেলসন ম্যান্ডেলার মহান ঐতিহ্যের উত্তরসূরী। তাই, সমগ্র বিশ্ব আমাদের এই দুই দেশকে প্রায় একই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখে থাকে। ব্রিক্স, জি-২০, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল সংগঠন, ইবসা-র মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয় অত্যন্ত মজবুত। রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের ক্ষেত্রেও আমরা একযোগে কাজ করছি। রাষ্ট্রপতি রামাফোসার এই ভারত সফরের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল প্রথম “গান্ধী-ম্যান্ডেলা ফ্রিডম লেকচার”-এ তিনি ভাষণ দেবেন। কেবল আমিই নই, সমগ্র ভারত এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকাও মাননীয় রাষ্ট্রপতির ভাষণ শোনার অধীর অপেক্ষায় রয়েছে।
বন্ধুগণ,
সাধারণতন্ত্র দিবসে রাষ্ট্রপতি রামাফোসার উপস্থিতি এবং প্রধান অতিথি হিসাবে তাঁর যোগদান আমাদের দুই দেশের অভিন্ন অঙ্গীকারকে আরও মজবুত করবে। আমি আরও একবার রাষ্ট্রপতিকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাই।
ধন্যবাদ।