চিনের প্রেসিডেন্ট মিঃ জি জিংপিং-এর আহ্বানে ও নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত চতুর্দশ ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে ২৩ ও ২৪ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এক ভারতীয় প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে। ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে এই শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ২৩ তারিখের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী ছাড়াও যোগ দেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট মিঃ জে বোলসোনারো, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট মিঃ ভ্লাদিমির পুতিন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট মিঃ সিরিল রামাফোসা। অন্যদিকে, ২৪ তারিখের বৈঠকে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন প্রসঙ্গে এক উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এই শীর্ষ সম্মেলনে।
২৩ জুন ব্রিকস নেতৃবৃন্দ সন্ত্রাস রোধ, বিশ্ব বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, চিরাচরিত চিকিৎসা পদ্ধতি, পরিবেশ, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন, কৃষি, কারিগরি ও বৃত্তিগত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে মতবিনিময় করেন। এছাড়াও, কোভিড-১৯ অতিমারী, বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন, বহুপক্ষীয় পদ্ধতি ও ব্যবস্থার সংস্কার সহ অন্যান্য বিষয়েও তাঁরা আলোচনা করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী ব্রিকস-কে আরও শক্তিশালী করে তোলার ওপর জোর দেন। এছাড়াও, ব্রিকস-এর নথিপত্রের অনলাইন ডেটাবেস তৈরির গুরুত্বের কথাও তিনি তুলে ধরেন। ব্রিকস দেশগুলির মধ্যে রেল সংযোগ সম্পর্কে গবেষণার এক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা এবং সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলির ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অণু শিল্প সংস্থার মধ্যে সহযোগিতার বাতাবরণকে আরও শক্তিশালী করে তোলার ওপরও জোর দেন শ্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, ব্রিকস-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলিতে যে সমস্ত স্টার্ট-আপ সংস্থা রয়েছে, সেগুলির মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী একথাও বলেন যে ব্রিকস-এর সদস্য হিসেবে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলির উচিৎ পরস্পরের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলি সম্পর্কে আরও ভালোভাবে অবহিত হওয়া এবং সন্ত্রাস মোকাবিলায় পারস্পরিক সহযোগিতার বাতাবরণকে আরও প্রসারিত করা। স্পর্শকাতর বিষয়গুলির মধ্যে কোনভাবেই রাজনীতি নিয়ে আসা কখনই উচিৎ নয় বলে তিনি মত ব্যক্ত করেন। উল্লেখ্য, শীর্ষ বৈঠকের সমাপ্তি পর্বে ‘বেজিং ঘোষণা’টি গৃহীত হয়।
পরেরদিন, অর্থাৎ ২৪ জুন, প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চল থেকে শুরু করে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত ভারতের উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্বের বিষয়গুলি সুপরিস্ফুট করেন। অন্যান্য যে বিষয়গুলি প্রধানমন্ত্রীর এদিনের বক্তব্যে উঠে আসে তার মধ্যে রয়েছে – এক মুক্ত, অবাধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং নিয়মনীতি-ভিত্তিক সামুদ্রিক বাণিজ্য; ভারত মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত বিভিন্ন রাষ্ট্রের নিজস্ব ভূখণ্ড ও সার্বভৌমত্বকে মেনে চলা। প্রধানমন্ত্রী এই মর্মে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যে আন্তর্জাতিক বিষয়গুলিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এশিয়ার এক বৃহৎ অংশ তথা আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলির কোনও ভূমিকা না থাকায় বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার সংস্কারের ওপরও বিশেষ জোর দেন তিনি। ব্রিকস রাষ্ট্রগুলির অর্থনীতি সম্পর্কে পারস্পরিক তথ্য বিনিময়ের গুরুত্ব তুলে ধরে অংশগ্রহণকারী সদস্য রাষ্ট্রগুলির নাগরিকদের ‘লাইফস্টাইল ফর এনভায়রনমেন্ট’ (LIFE) অভিযানে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান শ্রী মোদী। এবারের শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত অতিথি রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ছিল – আলজেরিয়া, আর্জেন্টিনা, কাম্বোডিয়া, ঈজিপ্ট, ইথিওপিয়া, ফিজি, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কাজাখস্তান, মালয়েশিয়া, সেনেগাল, থাইল্যান্ড এবং উজবেকিস্তান।
এর আগে ২২ জুন ব্রিকস বাণিজ্যিক ফোরামের সূচনা পর্বে প্রদত্ত মূল ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী কোভিড-১৯ অতিমারীর সময়েও ব্রিকস বাণিজ্য পরিষদ এবং ব্রিকস মহিলা বাণিজ্য গোষ্ঠীর বিশেষ ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন। আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জ, স্টার্ট-আপ সংক্রান্ত বিষয় এবং ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অণু শিল্প সংস্থাগুলির প্রযুক্তি সংক্রান্ত সমাধানের ক্ষেত্রে ব্রিকস বাণিজ্যিক গোষ্ঠীগুলির মধ্যে সহযোগিতা প্রসারেরও আহ্বান জানান তিনি।