দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি শ্রী সিরিল রামাফোসা,
ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার কর্পোরেট জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা,
ভদ্রমহোদয় ও মহোদয়াগণ,
নমস্কার!
ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা বাণিজ্য ফোরামে আপনাদের সকলের সঙ্গে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমাদের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার মাননীয় রাষ্ট্রপতিকে পেয়ে আমরা সম্মানিত।
এটা খুবই আনন্দের বিষয় যে আমরা আপনাকে আগামীকাল আমাদের ৭০তম সাধারণতন্ত্র দিবসের শোভাযাত্রায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে পাচ্ছি। আমাদের অংশীদারিত্ব ইতিহাসের এক অটুট বন্ধন। এই অটুট বন্ধনের সঙ্গে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় আন্দোলনের যোগসূত্র রয়েছে।
বর্তমানে আমাদের অংশীদারিত্ব এক অভিন্ন ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার সঙ্গে যুক্ত যা, মাদিবা ও মহাত্মার স্বপ্নগুলির বাস্তবায়ন ঘটায়। আমাদের দুই দেশের মানুষের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আমরা আরও বেশি সহযোগিতা ও সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
আমাদের কৌশলগত অংশীদারিত্বের সূচনা ২২ বছর আগে লালকেল্লা ঘোষণাপত্র থেকে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, পুরনো দুই বন্ধু ও অংশীদার দেশের মধ্যে নিরন্তর আলাপ-আলোচনা প্রায় সব ক্ষেত্রেই আমাদেরকে আরও কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলির পাশাপাশি আরও নিবিড় সহযোগিতা ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ব্যাপারে আমাদের অঙ্গীকারগুলির প্রতি আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সাম্প্রতিক সময়ে দুই পুরনো বন্ধুর মধ্যে অগ্রগতির ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে।
ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন ক্রমশ বাড়ছে। ২০১৭-১৮-তে লেনদেনের পরিমাণ ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। বাণিজ্যিক লেনদেনের বৃদ্ধিতে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা বাণিজ্য শীর্ষ সম্মেলন এবং ভারতে বিনিয়োগ সংক্রান্ত বাণিজ্য ফোরাম কার্যকর ভূমিকা নিয়েছে।
অবশ্য, বাণিজ্যিক লেনদেনের ক্ষেত্রে আরও অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। আমি ভারতীয় ও দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের সংস্থাগুলিকে লগ্নি বাড়ানোর ব্যাপারে একযোগে কাজ করার লক্ষ্যে এবং প্রকৃত সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে আহ্বান জানাই।
গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ভাইব্র্যান্ট গুজরাট সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকার অংশগ্রহণকে স্বাগত জানিয়েছি। গত সপ্তাহে আয়োজিত ভাইব্র্যান্ট গুজরাট সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিরা বিপুল সংখ্যায় যোগ দিয়েছিলেন। এবারের সম্মেলনে ‘আফ্রিকা দিবস’ নামে পৃথক একটি দিন ধার্য ছিল।
দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের এই গভীরতা আমরা সাধারণভাবে যা অনুভব করি তার থেকে অনেক বেশি। আমাদের দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বও অত্যন্ত নিবিড়। আপনারা সকলেই জানেন বর্তমানে ভারতের অর্থ ব্যবস্থা ২.৬ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা বিশ্বের দ্রুততম বিকাশশীল প্রধান অর্থনীতিগুলির অন্যতম একটি।
আমরা বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে ওঠার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি। সহজে ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল বাতাবরণ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশ্ব ব্যাঙ্কের সর্বশেষ প্রতিবেদনে ভারত বিগত চার বছরে ৬৫ ধাপ উন্নতি করে ৭৭তম স্থানে পৌঁছেছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের অন্য একটি সংস্থার তালিকায় ভারত প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যতম আকর্ষণীয় দেশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু এসব সত্ত্বেও আমরা সন্তুষ্ট নই। আমরা প্রায়শই অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও সংস্কারের কাজ করে চলেছি।
মেক ইন ইন্ডিয়া, ডিজিটাল ইন্ডিয়া, ও স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়ার মতো আমাদের বিশেষ কর্মসূচিগুলি বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আমরা এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। আমরা এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, থ্রিডি প্রিন্টিং, রোবোটিক্সের মতো উদ্ভাবনমূলক প্রযুক্তির বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের সরকার ১৩০ কোটি মানুষের জীবনযাপনের মানোন্নয়নে নিরন্তর কাজ করে চলেছে।
আমরা আগামী প্রজন্মের পরিকাঠামো সহ এক নতুন ভারত গড়ে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই নতুন ভারতে গতি, দক্ষতা ও নতুন মানদণ্ড নিরূপণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এক নতুন দক্ষিণ আফ্রিকার স্বপ্নকে সাকার করতে ২০১৮-তে আপনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের সূচনা করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে আপনার প্রয়াসগুলির আমরা সাফল্য কামনা করি। আগামী তিন বছরে ১০ লক্ষের বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ গড়ে তোলার যে উদ্যোগ আপনি নিয়েছেন, আমি তার সাফল্য কামনা করি।
দক্ষিণ আফ্রিকায় আমাদের বিনিয়োগ ক্রমশ বাড়ছে। ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের ফলে সেখানে ২০ হাজারেরও বেশি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। মৈত্রী দেশ হিসেবে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে নীতিগত সংস্কার ক্ষেত্রে তার অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারলে খুশি হবে। সে দেশে ভারতীয় সংস্থাগুলির বিনিয়োগ আরও বাড়াতে আমরা উৎসাহ দিচ্ছি। আমাদের বিশ্বাস রয়েছে যে, দক্ষিণ আফ্রিকার আরও বেশি সংস্থা ভারতের বাজারে সামিল হবে।
নতুন ভারত গড়ে তোলার যে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, সে ব্যাপারে আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে চাই যে এই নতুন ভারতে বিশেষ করে, খাদ্য ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, খনন, প্রতিরক্ষা, আর্থিক প্রযুক্তি, বিমা ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা থাকবে।
একইভাবে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে নতুন শিল্প স্থাপন, স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও ওষুধ শিল্প, জৈব প্রযুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে আগ্রহী।
সম্প্রতি চালু হওয়া গান্ধী ম্যান্ডেলা দক্ষতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকার দক্ষতা প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রে অংশীদার হয়ে উঠতে পেরে আমরা আনন্দিত। দক্ষতা প্রশিক্ষণের এই উদ্যোগে সে দেশের যুবসম্প্রদায়ের ক্ষমতায়ন ঘটবে।
আমাদের দুই দেশের মধ্যে রত্নালঙ্কার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা গড়ে উঠতে পারে। সরাসরি হীরে সংগ্রহের ব্যাপারে দুই দেশ নতুন নতুন পন্থা-পদ্ধতি খুঁজে বের করতে পারে। হীরে সংগ্রহ ব্যবস্থায় পারস্পরিক এই উদ্যোগ, দুই দেশের ক্রেতা-বিক্রেতাদের খরচ সাশ্রয় করবে। আন্তর্জাতিক সৌর জোটের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকা ভারতের নতুন ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করতে পারে।
ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের জন্য ভিসা ব্যবস্থার নিয়মনীতিতে সরলীকরণ এবং সরাসরি যোগাযোগ দুই দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। একইসঙ্গে, মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়বে।
ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা অংশীদারিত্বের এমন অনেক সম্ভাবনা রয়েছে, যা এখনও কাজে লাগানো যায়নি। আমাদের দুই দেশের মানুষের স্বার্থে অভিন্ন অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য এক নতুন যুগের সূচনা করতে আমরা একযোগে কাজ করতে পারি।
আপনার এই সফর দুই দেশের সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে অনেক সুযোগ তৈরি করে দেবে। অভিন্ন এই উদ্যোগগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে আমি অঙ্গীকারবদ্ধ।
ধন্যবাদ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।