আমি শ্রী হরিবংশজিকে দ্বিতীয়বার এই সভার উপসভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার জন্য সংসদ এবং সমস্ত দেশবাসীর পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। সামাজিক কাজ এবং সাংবাদিকতার জগতে হরিবংশজি যেভাবে তাঁর সততার মাধ্যমে নিজস্ব পরিচয় গড়ে তুলেছিলেনতা থেকেই আমার মনে সর্বদা তাঁর প্রতি একটি সম্মানের জায়গা ছিল। আমি অনুভব করেছিহরিবংশজির জন্য আমার মনে যে সম্মান এবং আপনত্ব রয়েছেঘনিষ্ঠভাবে কাউকে জানার পরসেরকম সম্মান ও আপনত্ব এখন সংসদের উভয় কক্ষের প্রত্যেক সদস্যের মনে গড়ে উঠেছে। এই মনোভাবএই আত্মীয়তা হরিবংশজির নিজস্ব উপার্জিত মূলধন। তাঁর যে কর্মদক্ষতাযেভাবে তিনি সভার কাজ পরিচালনা করেনতা দেখে স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যেকের মনে সমীহ জেগে ওঠে। সভাকে নিরপেক্ষভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা গোড়া থেকেই গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে।

 

সভাপতি মহোদয়এবার এই সভার ইতিহাসে সব থেকে ভিন্ন এবং বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতিতে সঞ্চালিত হচ্ছে। করোনার ফলে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছেএহেন সময়ে সংসদে কাজ করাদেশের জন্য জরুরি দায়িত্ব পালন করাএটা আমাদের সবার কর্তব্য। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আমরা সবাই সমস্ত রকম সতর্কতা বজায় রেখেসমস্ত বিধিনিষেধ পালন করে নিজেদের কর্তব্য নির্বাহ করব।

 

রাজ্যসভার সদস্যরা এবং সভাপতিজি এখন উপসভাপতিজিকে সভার কাজ সুচারুরূপে পরিচালনার ক্ষেত্রে যতটা সাহায্য করবেনততটাই সময়ের সদ্ব্যবহার হবে ও সবাই সুরক্ষিত থাকবেন।

 

সভাপতি মহোদয়সংসদের উচ্চকক্ষের সদস্যরা যে দায়িত্বের জন্য হরিবংশজির ওপর আস্থা রেখেছিলেনহরিবংশজি তা প্রতিটি পর্যায়ে সর্বস্তরে ভালোভাবে পালন করেছেন। আমি গতবার আমার বক্তব্যে বলেছিলাম যে আমার দৃঢ় বিশ্বাসযেভাবে হরি‘ সবার হয়তেমনই এই সভার হরিও পক্ষ এবং বিপক্ষ সকলের হবেন। রাজ্যসভায় আমাদের হরিহরিবংশজি এদিকের এবং ওদিকের সবাইকে সমান রূপে দেখবেন। সরকার এবং বিরোধী পক্ষের জন্য তাঁর মনে কোন পক্ষপাতিত্ব থাকবে না।

 

আমি এটাও বলেছিলাম যে এই সভায় খেলোয়াড়দের থেকে আম্পায়ারদের সমস্যা বেশি হয়। নিয়মের মধ্যে থেকে খেলার জন্য সাংসদদের বাধ্য করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং কাজ। আমার ভরসা ছিল যে এই আম্পায়ারিংএর কাজ হরিবংশজি খুব ভালোভাবেই করবেন। কিন্তু যাঁরা তাঁর ক্ষমতা সম্পর্কে অপরিচিত ছিলেনহরিবংশজির নির্ণায়ক শক্তি এবং নিজস্ব সিদ্ধান্তগুলির মাধ্যমে তাঁদের সবার ভরসাও জিতে নিয়েছেন।

 

সভাপতি মহোদয়হরিবংশজি তাঁর দায়িত্ব কতটা সাফল্যের সঙ্গে নির্বাহ করেছেনগত দুবছর এই সভা তার সাক্ষী। এই সভায় যে ব্যপ্তি নিয়ে বড় বড় বিষয়ে আলোচনা সম্পূর্ণ করানো সম্ভব হয়েছেতেমনি দ্রুততার সঙ্গে বিল পাশ করানোর জন্য হরিবংশজি প্রয়োজনে ঘন্টার পর ঘন্টা লাগাতার তাঁর আসনে বসে থাকতেন এবং সভার অধিবেশন দক্ষতার সঙ্গে সঞ্চালনা করে গেছেন। এর মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যতকেদেশের দিশা পরিবর্তনকারী অনেক ঐতিহাসিক বিল এই সভায় পাশ হয়েছে। গত বছরই এই সভা বিগত ১০ বছরের মধ্যে সবচাইতে বেশি কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেওয়ার রেকর্ড স্থাপন করেছে। তাও এমন সময়ে, যখন গত বছর লোকসভা নির্বাচনের বছর ছিল।

 

এটি প্রত্যেক সদস্যের জন্য গর্বের বিষয় যে রাজ্যসভায় প্রোডাক্টিভিটির পাশাপাশি ইতিবাচকতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে সবাই মন খুলে নিজের বক্তব্য রেখেছেন। অধিবেশনের কাজ থেমে থাকেনি এবং যাতে কোনও অধিবেশন না থামে সেজন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা দেখা গেছে। এতে এই সভার গরিমাও বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের সংবিধান রচয়িতারা সংসদের উচ্চকক্ষ থেকে এমন প্রত্যাশাই করেছিলেন। গণতন্ত্রের মাটি বিহার থেকে, জয়প্রকাশ নারায়ণ এবং কর্পুরি ঠাকুরের মাটি থেকেবাপুজির চম্পারণের মাটি থেকে যখন কোনও গণতন্ত্রের সাধক এগিয়ে এসে দায়িত্ব পালন করেনতখন এমনটাই হয়, যেমন এখানে হরিবংশজি করে দেখিয়েছেন।

 

যখন আপনারা হরিবংশজির ঘনিষ্ঠদের নিয়ে আলোচনা করেনতখন বোঝা যায় যে তিনি কেন এতটা মাটির সঙ্গে জড়িত। তাঁর গ্রামের নিম গাছের নিচে বিদ্যালয় বসত যেখানে তাঁর প্রাথমিক পড়াশোনা শুরু হয়েছিল। মাটিতে বসে মাটিকে বোঝামাটির সঙ্গে যুক্ত থাকার শিক্ষা তিনি সেখান থেকেই পেয়েছেন।

 

আমরা সবাই এটা খুব ভালোভাবেই জানি যে হরিবংশজি জয়প্রকাশজির গ্রাম সীতাব দিয়ারার সন্তান। এই গ্রাম শ্রদ্ধেয় জয়প্রকাশ নারায়ণেরও জন্মভূমি। এই গ্রামের চারপাশে দুটি রাজ্য উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারের তিনটি জেলা আরাবালিয়া ও ছাপরার বিভিন্ন অঞ্চলদুটি নদী গঙ্গা ও ঘাগরার মাঝে অবস্থিত দিয়ারা গ্রামটি একটি দ্বীপের মতো। প্রতি বছর এই গ্রামের ফসলের জমি বন্যায় প্লাবিত হত। অনেক কষ্টে একবার ফসল তোলা যেত। তখন কোথাও আসাযাওয়ার জন্য সাধারণত নৌকায় বসে নদী পার করতে হত।

 

সেজন্য নিজের গ্রাম ও বাড়ির পরিস্থিতি থেকে হরিবংশজি যে ব্যবহারিক জ্ঞান পেয়েছেনসেটি হল ‘সন্তোষেই সুখ’ – অর্থাৎসন্তুষ্ট থাকলেই সুখ পাওয়া যায়। একজন আমাকে তাঁর এই প্রেক্ষিত সম্পর্কে একটি গল্প শুনিয়েছিলেন। তিনি হাইস্কুলে ভর্তি হওয়ার পর হরিবংশজির বাড়িতে প্রথমবার তাঁর জন্য জুতো তৈরি করার কথা উঠেছিল। তার আগে তাঁর কোন জুতো ছিল না। কখনও কেনাও হয়নি। তাঁর গ্রামে যে ব্যক্তি জুতো তৈরি করতেনতাঁকেই হরিবংশজির জন্য জুতো বানানোর কথা বলা হয়। হরিবংশজি প্রায়ই সেই মানুষটির কাছে যেতেন তাঁর জুতো কতটা তৈরি হয়েছে দেখার জন্য। যেমন বড়লোকেরা তাঁদের বাংলো বানানোর সময় বারবার দেখতে যানতেমনই হরিবংশজি তাঁর জুতো কিভাবে তৈরি হচ্ছেকতটা তৈরি হল তা দেখার জন্য সেই মানুষটির কাছে পৌঁছে যেতেন। রোজই তাঁকে জিজ্ঞাসা করতেন যে কবে এটা তৈরি হওয়া সম্পূর্ণ হবে। আপনারা আন্দাজ করতে পারেন হরিবংশজি কতটা মাটির সঙ্গে যুক্ত।

 

তাঁর ছাত্রজীবনে তিনি জয়প্রকাশ নারায়ণের আদর্শ দ্বারা অত্যন্ত প্রভাবিত ছিলেন। পাশাপাশিতাঁর বই পড়ার প্রতি অত্যন্ত আকর্ষণ ছিল। তাঁর বই পড়া নিয়ে একটা গল্প আমি জানতে পেরেছি। হরিবংশজি যখন প্রথম সরকারি ছাত্রবৃত্তি পানতখন বাড়ির কয়েকজন সদস্য আশা করেছিলেন যে ছেলে ছাত্রবৃত্তির পুরো টাকাটা এনে বাড়িতে দেবে। কিন্তু হরিবংশজি সেই ছাত্রবৃত্তির টাকা বাড়িতে না নিয়ে গিয়ে বই কিনে বাড়িতে ফেরেন। অনেক ধরনের সংক্ষিপ্ত জীবনী এবং সাহিত্যের বই নিয়ে বাড়ি ফেরেন। হরিবংশজি ছাত্রজীবনে সেই যে বই পড়ার নেশায় ডুবে গেলেনসেই নেশা তাঁর আজও সেরকমই রয়েছে।

 

সভাপতি মহোদয়প্রায় চার দশক ধরে সমাজ সেবার মতো করে সাংবাদিকতা করার পর হরিবংশজি ২০১৪ সালে সংসদীয় জীবনে প্রবেশ করেন। সংসদের উপসভাপতি রূপে যেভাবে হরিবংশজি ওই পদের মর্যাদার কথা মাথায় রেখে কাজ করেছেনসংসদ সদস্য রূপেও তাঁর কার্যকাল ততটাই গরিমাপূর্ণ। সংসদ সদস্য রূপে অর্থনীতি থেকে শুরু করে সামরিক সুরক্ষা পর্যন্ত – সমস্ত বিষয়ে হরিবংশজি তাঁর বক্তব্য অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে উপস্থাপিত করেছেন।

 

আমরা সকলে জানি শালীনতা বজায় রেখে সারগর্ভ বক্তব্য পেশ করার ক্ষেত্রে তাঁর একটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি সেই জ্ঞানসেই অভিজ্ঞতা দেশের সেবায় সম্পূর্ণরূপে উজার করে দিয়েছেন। হরিবংশজি সমস্ত আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের গরিমাভারতের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে গেছেন। তা সে ইন্টারপার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সমস্ত বৈঠক থেকে শুরু করে অন্যান্য দেশে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতিনিধিমণ্ডলের সদস্য রূপে কার্যকরী ভূমিকা পালনপ্রতিটি ক্ষেত্রেই হরিবংশজি ভারত এবং ভারতের সংসদের সম্মান বাড়িয়েছেন।

 

সভাপতি মহোদয়রাজ্যসভার উপসভাপতির ভূমিকা ছাড়াও হরিবংশজি রাজ্যসভার বেশ কিছু সমিতির অধ্যক্ষও ছিলেন। এই সমস্ত সমিতির অধ্যক্ষ হিসেবে হরিবংশজি দক্ষতার সঙ্গে এই সমিতিগুলির কাজও খুব ভালোভাবে করেছেন। তাঁর নিজস্ব ভূমিকা অত্যন্ত কার্যকরী রূপে পালন করেছেন।

 

আমি গতবারও বলেছিলাম যে হরিবংশজি কখনও সাংবাদিক হিসেবে আমাদের সংসদ কিভাবে চলা উচিৎ এই বিষয় নিয়ে তাঁর ভাবনার কথা লিখেছেন, আন্দোলন করেছেন। সাংসদ হওয়ার পর তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন যাতে সমস্ত সাংসদরা তাঁদের আচারব্যবহারে আরও কর্তব্যনিষ্ট থাকেন ।

 

সভাপতি মহোদয়হরিবংশজি সংসদীয় কার্যপরিচালনা এবং দায়িত্ব নির্বাহের পাশাপাশি একজন বুদ্ধিজীবী ও দার্শনিক রূপে ততটাই সক্রিয় থেকে গেছেন। তিনি এখনও সারা দেশে সফর করেন। ভারতের অর্থনৈতিকসামাজিকসামরিক এবং রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলি সম্পর্কে জনমানসকে সচেতন করতে থাকেন। তাঁর সত্ত্বার সাংবাদিক এবং লেখক এখনও তেমনই জাগ্রত। তাঁর লেখা বইয়ে আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধেয় চন্দ্রশেখরজির জীবনের খুঁটিনাটি ফুঁটে উঠেছে। পাশাপাশিহরিবংশজির অনুপম প্রকাশ ভঙ্গীও পাঠকদের আকর্ষণ করে। আমার এবং এই সভার সমস্ত সদস্যের সৌভাগ্য যে উপসভাপতি হিসেবে হরিবংশজির নেতৃত্ব এবং আলোকবর্তিকা ভবিষ্যতেও আমাদের পথ দেখাবে।

 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়সংসদের এই উচ্চকক্ষ ইতিমধ্যেই ২৫০টি অধিবেশনের সফর পার করেছে। এই সফর একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আমাদের পরিপক্কতার প্রমাণ। আরেকবার হরিবংশজিকে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ এই বড় দায়িত্ব পালনের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। আপনি সুস্থ থাকবেন এবং রাজ্যসভায় সুস্থ পরিবেশ বজায় রেখে একটি উচ্চকক্ষের থেকে সংবিধান প্রণেতারা যে প্রত্যাশা রেখেছিলেনতা ভবিষ্যতেও বাস্তবায়িত করে যাবেন। হরিবংশজির বিরুদ্ধে যিনি দাঁড়িয়েছিলেনসেই শ্রদ্ধেয় সাংসদ মনোজ ঝা–জিকেও আমার পক্ষ থেকে শুভকামনা। গণতন্ত্রের গরিমার জন্য নির্বাচনের এই প্রক্রিয়াও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বিহার ভারতের গণতান্ত্রিক পরম্পরার ভূমি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বৈশালীর সেই পরম্পরাকেবিহারের সেই গৌরবকেসেই আদর্শকে হরিবংশজি এই সভার মাধ্যমে আপনাদের সঠিক পথ দেখিয়ে যাবেন এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

 

আমি রাজ্যসভার সমস্ত সম্মানিত সদস্যদের এই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সামিল হওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই। আরেকবার হরিবংশজিকে এবং সমস্ত সদস্যদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।

 

ধন্যবাদ।

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
India's Economic Growth Activity at 8-Month High in October, Festive Season Key Indicator

Media Coverage

India's Economic Growth Activity at 8-Month High in October, Festive Season Key Indicator
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
সোশ্যাল মিডিয়া কর্নার 22 নভেম্বর 2024
November 22, 2024

PM Modi's Visionary Leadership: A Guiding Light for the Global South