প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আমেদাবাদ মেট্রো রেল প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় এবং সুরাট মেট্রো রেল প্রকল্পের ভূমিপুজো করেছেন। এই অনুষ্ঠানে গুজরাটের রাজ্যপাল, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন ও আবাসন মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।
এই উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী আমেদাবাদ এবং সুরাট শহরের নাগরিকদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। দেশের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্রে মেট্রো পরিষেবার মাধ্যমে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। তিনি কেভাডিয়ার জন্য নতুন ট্রেন ও রেল লাইন চালু হওয়ায় গুজরাটের জনসাধারণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এর মধ্যে আমেদাবাদ থেকে কেভাডিয়া পর্যন্ত অত্যাধুনিক জনশতাব্দী এক্সপ্রেস রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন আজ ১৭ হাজার কোটি টাকার পরিকাঠামো প্রকল্পের কাজ শুরু হল। এর মধ্য দিয়ে এটি প্রতিফলিত যে কোভিডের সময়েও পরিকাঠামো উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং তা গতি পেয়েছে। সম্প্রতি হাজার হাজার কোটি টাকার পরিকাঠামোগত প্রকল্পগুলির কাজ শেষ হয়েছে, নয়তো কাজ চলছে।
আত্মনির্ভরতার জন্য আমেদাবাদ এবং সুরাট শহরের অবদানের কথা উল্লেখ করে আমেদাবাদে যখন মেট্রো রেল চালু হয়েছিল সেই সময়ের উৎসাহ উদ্দীপনার কথা প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেছেন। কিভাবে আমেদাবাদ তার স্বপ্ন পূরণ করেছে এবং মেট্রো পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রধানমন্ত্রী সেকথাও জানিয়েছেন। আমেদাবাদের দ্বিতীয় পর্বের মেট্রো প্রকল্প শহরের নতুন নতুন এলাকার সঙ্গে যুক্ত হবে। মানুষ এর থেকে উপকৃত হবেন, কারণ আরামপ্রদ গণ-পরিবহণের সুযোগ তারা বেশি করে পাবেন। একইভাবে সুরাট শহরও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধা পাবে। ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই এই প্রকল্পগুলির পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সরকারের সঙ্গে পূর্বতন সরকারের মানসিকতার পরিবর্তনের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি মেট্রো রেলের সম্প্রসারণের কথা জানিয়েছেন। ২০১৪ সালের আগে ১০-১২ বছরে দেশে মাত্র ২০০ কিলোমিটার পথে মেট্রো রেল চলাচল করতো। গত ৬ বছরে এই পরিমাণ ৪০০ কিলোমিটারে পৌঁছেছে। সরকার ২৭টি শহরে মোট ১ হাজার কিলোমিটার মেট্রো লাইনের কাজ করছে। এর আগে সুসংহত আধুনিক চিন্তাধারার অভাবের বিষয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মেট্রো নিয়ে তখন কোনও জাতীয় নীতি ছিলনা। তার ফলে বিভিন্ন শহরে মেট্রো পরিষেবার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি এবং ব্যবস্থাপনায় কোনও মিল ছিলনা। আর একটি বড় সমস্যা ছিল ওই শহরগুলির ভিন্ন পরিবহণ ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল। আজ এইসব শহরে সুসংহতভাবে পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে; যেখানে মেট্রো পরিষেবা আলাদাভাবে নয়, অন্যান্য পরিবহণের সঙ্গেই সক্রিয় রয়েছে। সম্প্রতি ন্যাশনাল কমন মোবিলিটি কার্ডের সূচনা করা হয়েছে౼ যার মাধ্যমে এই সমন্বয় আরও বৃদ্ধি পাবে বলে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন।
সুরাট এবং গান্ধীনগরের উদাহরণ উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেছেন, ভবিষ্যতের চাহিদার কথা মাথায় রেখে সরকার এখানে নগরায়ণের কাজ সক্রিয়ভাবে করছে। একটা সময় সুরাট প্লেগের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হত- উন্নয়নের জন্য নয়। সরকার শিল্পোদ্যোগের উৎসাহকে এখন কাজে লাগিয়েছে। আর তাই আজ এই শহর জনসংখ্যার নিরিখে ভারতের অষ্টম বৃহত্তম শহর এবং বিশ্বে চতুর্থ দ্রুত বিকাশশীল শহর। ১০টি হীরে কাটা হলে তার মধ্যে ৯-টিই সুরাটে কেটে পালিশ করা হয়। একইভাবে দেশের ৪০ শতাংশ হস্তচালিত বস্ত্র বয়ন শিল্পের কাজ সুরাটেই হয় এবং ৩০ শতাংশ হাতে তৈরি সুতোও এখানেই উৎপাদিত হয়। প্রধানমন্ত্রী দরিদ্রদের জন্য আবাসন, যানজটের ব্যবস্থাপনা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং হাসপাতালের পরিকাঠামো বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে বলেছেন এগুলির মধ্যে দিয়ে শহরের জীবনযাত্রা সহজ হবে। উন্নত পরিকল্পনা এবং সর্বাঙ্গীন ভাবনার কারণে এগুলি সম্ভব হয়েছে, আর সুরাট ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতে’র আদর্শ উদাহরণ হয়ে উঠেছে౼ কারণ সুরাট দেশের সব অংশের শিল্পোদ্যোগী ও শ্রমিকদের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
একইভাবে প্রধানমন্ত্রী গান্ধীনগরের কথা উল্লেখ করেন। এক সময়ের সরকারি কর্মচারী ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের শহরের তকমা সরিয়ে আজ এই শহর তরুণ প্রাণবন্ত শহরে পরিণত হয়েছে। আইআইটি, ন্যাশনাল ল ইউনিভার্সিটি, এনআইএফটি, ন্যাশনাল ফরেন্সিক সায়েন্স ইউনিভার্সিটি, পন্ডিত দীনদয়াল পেট্রোলিয়াম ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ টিচার এডুকেশন, ধীরুভাই আম্বানী ইন্সটিটিউট অফ ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ডিজাইন, রক্ষা শক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলি এই শহরে গড়ে উঠেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলি শুধু এই শহরের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তনই আনেনি, বড় বড় সংস্থাগুলি এখানে আরও সংস্থাকে নিয়ে এসেছে। যার ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে।
শ্রী মোদী মহাত্মা মন্দিরের কথা উল্লেখ করেছেন, যেটি সম্মেলন পর্যটনের প্রসার ঘটাবে। অত্যাধুনিক রেল স্টেশন, গিফ্ট সিটি, সবরমতী নদী তীরের সৌন্দর্য্যায়ন, কাকারিয়া হ্রদের সৌন্দর্য্যায়ন, দ্রুত পরিবহণের জন্য ওয়াটার অ্যারোড্রাম, মোতেরায় বিশ্বের বৃহত্তম স্টেডিয়াম এবং ৬ লেনের গান্ধীনগর মহাসড়কের মতো প্রকল্পগুলি আমেদাবাদের পরিচিতির নিদর্শন হয়ে উঠছে। এই শহর তার পুরনো বৈশিষ্টগুলি বজায় রেখে আধুনিক হয়ে উঠছে।
শ্রী মোদী আমেদাবাদকে বিশ্ব ঐতিহ্যশালী শহরের তকমা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। ধোলেরায় নতুন বিমান বন্দর তৈরি করা হবে। এই বিমান বন্দরের সঙ্গে আমেদাবাদ শহরকে যুক্ত করার জন্য মনো রেল প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। আমেদাবাদ এবং সুরাটের সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক রাজধানী মুম্বাইকে যুক্ত করার জন্য বুলেট ট্রেন চালানোর কাজ চলছে।
প্রধানমন্ত্রী গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেছেন। গত ২ দশকে গুজরাটে রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ ও জলের সংযোগ সহজে পাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আদিবাসীদের গ্রামগুলিতেও ভালো রাস্তা বানানো হয়েছে। আজ জল জীবন মিশনের আওতায় এই রাজ্যে ৮০ শতাংশ বাড়িতে নলবাহিত জল পৌঁছে দেওয়া গেছে। ১০ লক্ষ জলের সংযোগ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই গুজরাটের প্রতিটি বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা হবে।
সর্দার সরোবর সৌনি প্রকল্পের আওতায় সেচের কাজে গতি এসেছে। শুখা অঞ্চলে সেচের জল গ্রীডের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। নর্মদার জল কচ্ছে পৌঁছেছে। সেখানে ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের কাজ হয়েছে। গুজরাটে বিদ্যুৎ আর একটি সফল উদ্যোগ। সৌরশক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে রাজ্য প্রথম সারিতে রয়েছে। সম্প্রতি বিশ্বের বৃহত্তম সৌরশক্তি উৎপাদন কেন্দ্র কচ্ছতে গড়ে তোলার জন্য কাজ চলছে। সর্বোদয় যোজনায় সেচের কাজে আলাদা বিদ্যুতের ব্যবস্থা করার উদ্দেশ্যে গুজরাট দেশের মধ্যে প্রথম পৃথক ব্যবস্থা নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেছেন। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যে ২১ লক্ষ মানুষ উপকৃত হয়েছেন। ৫০০টি জনৌষধি কেন্দ্রের সাহায্যে স্থানীয় মানুষ ১০০ কোটি টাকা বাঁচাতে পেরেছেন। পিএম আবাস-গ্রামীণের আওতায় ২.৫ লক্ষ বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। স্বচ্ছ ভারত মিশনে রাজ্যে ৩৫ লক্ষ শৌচাগার নির্মিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ভারত বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এবং সেগুলি দ্রুত বাস্তবায়িত করছে। ভারত বৃহৎ প্রকল্পের পরিকল্পনাই করছেনা সেগুলি সুন্দরভাবে সম্পাদনা করছে। বিশ্বের উচ্চতম মূর্তি, বিশ্বে বৃহত্তম ব্যয় সাশ্রয়ী আবাসন প্রকল্প, স্বাস্থ্য পরিষেবা, ৬ লক্ষ গ্রামে ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া এবং সম্প্রতি পৃথিবীর বৃহত্তম টিকাকরণ কর্মসূচির মতো বিভিন্ন বিষয়ের কথা তিনি উল্লেখ করেছেন।
শ্রী মোদী, হাজিরা এবং ঘোঘার মধ্যে রো-প্যাক্স ফেরি পরিষেবা এবং গিরনারে রোপওয়ে প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলির মাধ্যমে স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। ঘোঘা এবং হাজিরার মধ্যে দূরত্ব ফেরি পরিষেবার কারণে ৩৭৫ কিলোমিটার থেকে কমে হয়েছে ৯০ কিলোমিটার। এই প্রকল্পগুলি জ্বালানী এবং সময় দুয়েরই সাশ্রয় করছে। গত ২ মাসে ৫০ হাজার মানুষ এবং ১৪ হাজার যানবাহন এই ফেরি পরিষেবা ব্যবহার করেছে। এর ফলে এই অঞ্চলের কৃষিকাজ এবং পশুপালনের ক্ষেত্রে সুবিধা হয়েছে। একইভাবে গত আড়াই মাসে ২ লক্ষ মানুষ গিরনার রোপওয়ে ব্যবহার করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নতুন ভারতের লক্ষ্য হল মানুষের চাহিদা এবং উচ্চাকাঙ্খা উপলব্ধি করে দ্রুত কাজ শেষ করা। এই প্রসঙ্গে তিনি ‘প্রগতি’ ব্যবস্থাপনার কথা উল্লেখ করেছেন। দেশে বিভিন্ন কাজ দ্রুত করার ক্ষেত্রে প্রগতি নতুন গতির সঞ্চার করেছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী নিজেই প্রগতির বৈঠকে পৌরহিত্য করেন। বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা হয়। গত ৫ বছরে ১৩ লক্ষ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্পের পর্যালোচনা করা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন।
সুরাটের মতো শহরগুলিতে নতুন উদ্যোগ সঞ্চারের জন্য দীর্ঘদিনের বকেয়া প্রকল্পগুলি শেষ করার বিষয়ে উদ্ভুত সমস্যার সমাধানের ওপর তিনি জোর দিয়েছেন। অতিক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ (এমএসএমই)সহ আমাদের শিল্পসংস্থাগুলি এখন আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছে। তারা যখন আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিযোগিতায় নামবে তখন উন্নত পরিকাঠামোর সহায়তা পাবে সেই বিশ্বাস তাদের এসেছে। আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন ছোট ছোট শিল্পগুলিকে সাহায্যের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সংকটের থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তাদের হাজার হাজার কোটি টাকার সহজে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমএসএমই-র সংজ্ঞার পরিবর্তন ঘটানোয় এই প্রতিষ্ঠানগুলি নতুন নতুন সুযোগ পাচ্ছে। একইসঙ্গে ব্যবসায়ীরা এমএসএমই-র সুযোগ হারানোর ভয় থেকে চিন্তামুক্ত হচ্ছেন। সরকার তাদের জন্য বিভিন্ন বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়ার ফলে এই সংস্থাগুলি নতুন নতুন সুযোগ পাচ্ছে। নতুনভাবে সংজ্ঞা নির্ধারিত হওয়ায় উৎপাদন ক্ষেত্র ও পরিষেবা ক্ষেত্রের মধ্যে ব্যবধান দূর করা গেছে। পরিষেবা ক্ষেত্রে নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। সরকার এমএসএমই-গুলি থেকে বেশি করে পণ্য সংগ্রহ করছে। ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলি যাতে আরও বেশি সুযোগ পায় সরকার সে বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই প্রতিষ্ঠানগুলি আরও ভালো সুযোগ পেলে এখানে কর্মরত শ্রমিকদের জীবনযাত্রা উন্নত হবে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন।