বিপুল সংখ্যায় আগত আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
মুম্বাই এবং থানে দেশের এমন অংশ, যা দেশের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এখানকার ছোট ছোট গ্রাম ও মফঃস্বল শহরের মানুষেরাও দেশকে নানা সমইয়ে গৌরবান্বিত করেছেন। এখানকার মানুষের হৃদয় এত বিশাল যে, তাঁরা সবাইকে নিজেদের হৃদয়ে স্থান দিতে পারেন। সেজন্য এখানে দাঁড়ালে এক জায়গাতেই গোটা ভারতের চিত্র দেখা যায়। আর যাঁরাই এখানে আসেন, তাঁরা মুম্বাইয়া রঙে রাঙিয়ে যান; মারাঠী ঐতিহ্যের অংশ হয়ে পড়েন।
ভাই ও বোনেরা, আজ মুম্বাই চারদিকে বিকশিত হচ্ছে। বিকাশের পাশাপাশি, সম্পদের উৎসে চাপ বৃদ্ধি হচ্ছে। বিশেষ করে, এখানকার পরিবহণ ব্যবস্থা, সড়ক ও রেল ব্যবস্থা এর দ্বারা ভীষণভাবে প্রভাবিত। এসব কথা মাথায় রেখে বিগত চার – সাড়ে চার বছরে মুম্বাই এবং থানে সহ পার্শ্ববর্তী সকল অঞ্চলে পরিবহণ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য অনেক প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।
আজও এখানে যে ৩৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি প্রকল্পগুলির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হ’ল, তার মধ্যে রয়েছে – দুটি মেট্রো লাইন এবং থানে শহরে ৯০ হাজার গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য নিজস্ব বাড়ি নির্মাণের প্রকল্প।
বন্ধুগণ, পরিবহণ ব্যবস্থা যে কোনও শহর, গ্রাম তথা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারত বিশ্বের সেই দেশগুলির অন্যতম, যেখানে দ্রুতগতিতে নগরায়ন বাড়ছে। একটি গবেষণালব্ধ অনুমান, আগামী দশকে বিশ্বের সর্বাধিক দ্রুততম উন্নয়নশীল শহরগুলির মধ্যে শ্রেষ্ঠ ১০টি ভারতীয় শহর স্থান পাবে।
মুম্বাই আগে থেকেই দেশের আর্থিক গতিবিধির কেন্দ্র। আগামী দিনে এই গতিবিধি আরও বিস্তারিত হবে, সেজন্য ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার কেন্দ্রের দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা এখানকার পরিকাঠামো উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। এখানকার পুরনো রেল সেতুগুলি নবিকৃত করা হয়েছে। মুম্বাই লোকালের কয়েক হাজার কোটি টাকার পরিবহণ পরিকাঠামো নির্মিত হয়েছে। মেট্রো সিস্টেম ইতিমধ্যেই সর্বাধিক জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। আজ থানে শহরে যে মেট্রোর বিস্তার হ’ল, তা মুম্বাই ও থানের মধ্যে এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলির যোগাযোগ ব্যবস্থাকে নতুন গতি প্রদান করবে। বন্ধুগণ, ২০০৬ সালে মুম্বাই শহরে প্রথম মেট্রো প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী ৮ বছর ধরে কী হয়েছিল, তা বলা অত্যন্ত কঠিন। মাত্র ১১ কিলোমিটার মেট্রো লাইনের উদ্বোধন হয়েছিল ২০১৪ সালে। ৮ বছরে মাত্র ১১ কিলোমিটার। ২০১৪ সালের পর আমরা সেই কাজের গতি ও পরিসর বৃদ্ধি করে ইতিমধ্যেই অনেকটা কাজ এগোতে পেরেছি এবং আজ যে মেট্রো লাইনগুলির শিলান্যাস হ’ল, সেগুলি সম্পন্ন হলে আগামী তিন বছরে আরও ৩৫ কিলোমিটার মেট্রো পরিষেবা যুক্ত হবে। আর ২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ২৭৫ কিলোমিটারেরও বেশি মেট্রো লাইন পাতা হবে। আজকে যে লাইনের শিলান্যাস করা হ’ল, তার দ্বারা থানে থেকে ভিওন্ডি, কল্যাণ, দোহিসর থেকে মীরা – ভায়ন্দর পর্যন্ত অঞ্চলের জনগণ উপকৃত হবেন। এতে, সমগ্র মুম্বাই শহর যানজট মুক্ত হবে।
বন্ধুগণ, এই পরিষেবাগুলি শুধুই আজকের প্রয়োজন ভেবে গড়ে তোলা হচ্ছে না, ২০৩৫ সালে প্রয়োজনের হিসাবে বিকশিত করা হচ্ছে।
বন্ধুগণ, আপনাদের যাতায়াত ব্যবস্থা সরল ও সুগম করার পাশাপাশি দেশের গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষেরা যাতে গৃহহীন না থাকেন, তা সুনিশ্চিত করার জন্য আমরা ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ২০২২ সালে যখন দেশ স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপন করবে, তখন দেশের প্রত্যেক পরিবারের মাথার ওপর যেন পাকা ছাদ থাকে, সেই লক্ষ্য মাথায় রেখে আমরা এখানে ৯০ হাজার নতুন গৃহ নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। আমাকে বলা হয়েছে যে, তিন বছরের মধ্যে এই বাড়িগুলি নির্মিত হয়ে যাবে।
বন্ধুগণ, পূর্ববর্তী সরকার থেকে আমাদের সংস্কার, কাজ করার পদ্ধতি ও গতি ভিন্ন। বিগত সরকার তার শেষ চার বছরে মাত্র ২৫ লক্ষ ৫০ হাজার গৃহহীনের জন্য বাড়ি বানিয়েছিল। আর আমরা বিগত চার বছরে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষেরও বেশি বাড়ি নির্মাণ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী শহরী আবাস যোজনার মাধ্যমে সমগ্র মহারাষ্ট্রে আমরা ৮ লক্ষ গৃহ নির্মাণ করছি। আর প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে গৃহহীনদের জন্য আদর্শ সোসাইটি গড়ে তুলে সাধারণ পরিবারগুলির ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস জাগানো হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে আমাদের সরকার ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত সহায়তা সরাসরি সুবিধাভোগীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করে দিচ্ছি।, যাতে তাঁদের ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা কম ঋণ নিতে হয়। এছাড়া, আগের তুলনায় গৃহ ঋণে সুদের হার অনেক হ্রাস পেয়েছে। সরকার দ্বারা এই প্রকল্প অনুযায়ী দুর্বল ও নিম্নবর্গের মানুষদের ৬.৫ শতাংশ সুদে ছাড় দেওয়া হচ্ছে।
মধ্যবিত্তদের ৩ – ৪ শতাংশ সুদে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এই প্রচেষ্টাগুলির ফলে কেউ যদি ২০ বছরের জন্য ২০ লক্ষ টাকা গৃহ ঋণ নেন, তা হলে তাঁকে সেই সময়ের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা সাহায্য দেওয়া হচ্ছে।
বন্ধুগণ, সরকারের এই সৎ প্রচেষ্টার ফলে বিগত এক – দেড় বছরে এই প্রকল্পের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাঁদের প্রথম নতুন বাড়িতে পা রাখার সুযোগ পেয়েছেন, কিনতে পেরেছেন কিংবা বায়না করতে পেরেছেন। একটি রিপোর্ট অনুযায়ী বিগত ৭ – ৮ মাসে নতুন বাড়ি কেনার গতি বিগত বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। মহারাষ্ট্রে ইতিমধ্যেই ৮৫ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি সাহায্য পেয়েছেন। বন্ধুগণ, আমরা শুধু মধ্যবিত্তদের নিজস্ব বাড়ির স্বপ্ন সাকার করতে সাহায্য করছি না, এর সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য সমস্যাও দূর করার চেষ্টা করছি। চার বছর আগে পর্যন্ত আপনাদের সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে বায়না করা বাড়ি দখল পেতে কি ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হতে হ’ত সে সম্পর্কে আপনারা ভালোভাবেই অভিহিত। অনেকেই প্রতিশ্রুতি মতো সঠিক মানের বাড়ি পেতেন না। আমাদের সরকার এই প্রবৃত্তিকে শুধরানোর জন্য দেশের অধিকাংশ রাজ্যে রিয়েল এস্টেট রেগুলারিটি অথরিটি বা রেরা চালু করেছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইতিমধ্যেই সারা দেশে ৩৫ হাজার রিয়েল এস্টেট প্রকল্প এবং ২৭ হাজার রিয়েল এস্টেট এজেন্ট নথিভুক্ত হয়েছে। ২১টি রাজ্যে ট্রাইব্যুনালও কাজ করছে।
আমি ফড়নবিশজি-কে অভিনন্দন জানাই, কারণ, মহারাষ্ট্র সেই রাজ্যগুলির অন্যতম, যেগুলিতে রেরা চালু হয়েছে। আমাদের দেশে রেরার নথিভুক্তিকৃত প্রকল্পগুলির মধ্যে সর্বাধিক হ’ল এই মহারাষ্ট্রের।
বন্ধুগণ, একবার ভাবুন, ৭০ বছর ধরে কোনও কঠিন ও স্পষ্ট আইন ছাড়াই রিয়েল এস্টেট সেক্টর চলছিল। এই ধরণের আইন আগে প্রণয়ন করলে কোটি কোটি মানুষ প্রতারিত হতেন না। রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্র এতদিনে সততার সঙ্গে অনেক বিকশিত হ’ত।
ভাই ও বোনেরা, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের বিদ্যুতের বিল কম করার জন্য সরকার উজালা যোজনার মাধ্যমে ৩০ কোটিরও বেশি এলইডি বাল্ব বিতরণ করেছে। এর মধ্যে প্রায় ২ কোটি ২৫ লক্ষ বাল্ব মহারাষ্ট্রে বিতরণ করা হয়েছে। আগে ৬০ ওয়াটের বাল্বে যে কাজ চলত, তা আজ ৭ কিংবা ৮ ওয়াটের বাল্ব দিয়ে হচ্ছে। শুধুমাত্র এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের সমস্ত পরিবারের সাশ্রয় বছরে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। শুধু মহারাষ্ট্রে প্রত্যেক বছর প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার বিদ্যুতের বিলে সাশ্রয় হয়েছে।
আমরা এলইডি বাল্ব বিতরণের অভিযানে জোর দেওয়ার ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে। প্রতিযোগিতার আবহ গড়ে তুলে ব্যবস্থা থেকে দালালদের সরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। সেজন্য আগে যে বাল্ব ২৫০ – ৩০০ টাকায় কিনতে হ’ত, সেগুলি আজ ৫০ টাকায় কেনা যাচ্ছে।
বন্ধুগণ, কেন্দ্রীয় সরকার ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ মন্ত্র নিয়ে এমনভাবে কাজ করছে, যাতে দেশের কোনও প্রান্ত, কোনও গ্রাম কিংবা শহর উন্নয়নের ক্ষেত্রে অস্পৃশ্য না থাকে! দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নত করার জন্য প্রকল্প গড়ে তোলা এবং পরিচালনা করা হচ্ছে। উজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে সারা দেশে গরিব বোনেদের জীবন ধোঁয়ামুক্ত করা এবং তাঁদের সময় সাশ্রয় করার জন্য বিনামূল্যে রান্নার গ্যাসের সংযোগ প্রদান করা হচ্ছে।
বন্ধুগণ, যে বোনেরা ছোট ছোট ব্যবসা করেন, যেমন – সেলুন, টেলারিং, বুনন শিল্প, চরকা শিল্প, হস্ত চালিত তাঁতে কাজ করতে চান, তাঁদের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাওয়া সহজ করা হয়েছে। মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কোনও রকম গ্যারান্টি ছাড়াই ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই মহারাষ্ট্রের প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ মানুষকে ঋণ প্রদান করা হয়েছে, এর মধ্যে রয়েছেন ১ কোটি মহিলা।
ভাই ও বোনেরা, গরিবদের জীবনকে গৌরবময় করে তুলতে মহিলাদের আত্মসম্মান বৃদ্ধিতে আমরা সদা সচেষ্ট। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, যুবকদের কর্মসংস্থান, বয়স্কদের ওষুধপত্র, কৃষকদের সেচের জল, প্রত্যেক ব্যক্তির বক্তব্য শোনা; উন্নয়নের এই পঞ্চধারার প্রতি আমাদের সরকার সমর্পিতপ্রাণ।
অবশেষে, আরেকবার আপনাদের সবাইকে এই নতুন উন্নয়ন প্রকল্পগুলির জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই। আপনারা এত বিপুল সংখ্যায় এখানে এসে আমাকে আশীর্বাদ জানিয়েছেন, সেজন্য আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
এখান থেকে আমি পুণে যাব, সেখানেও কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের শিলান্যাস কিংবা উদ্বোধন হতে চলেছে। আপনারা এখানে বিপুল সংখ্যায় উপস্থিত হয়ে যে শক্তি প্রদর্শন করেছেন, সেজন্য আমি আপনাদের অভিনন্দন জানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।