প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী, আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজকোটে এইমস-এর শিলান্যাস করেছেন। এই অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ড. হর্ষ বর্ধন, গুজরাটের রাজ্যপাল আচার্য্য দেবব্রত, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বিজয় রূপানী উপস্থিত ছিলেন।
এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ৯ লক্ষ চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, সাফাই কর্মী এবং অন্যান্য সামনের সারিতে থাকা কোভিড যোদ্ধাদের কথা স্মরণ করেছেন, যাঁরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি সত্ত্বেও মানব জাতিকে রক্ষা করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বিজ্ঞানীদের উদ্যোগ এবং যাঁরা সঙ্কটের এই সময়ে দরিদ্র মানুষদের পুর্ণ নিষ্ঠা সহযোগে খাদ্যের যোগান দিচ্ছেন, তাঁদের সকলের উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন।
শ্রী মোদী বলেছেন, এই বছর প্রমাণ করে দিল যে ভারত, ঐক্যবদ্ধভাবে সবথেকে সঙ্কটময় পরিস্থিতিকে যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে পারে। দেশ, সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় কোভিড সংক্রমিতদের রক্ষা করার ক্ষেত্রে ভালো আবস্থায় রয়েছে। ভারতে টিকাকরণের সব রকমের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। টিকা তৈরির চূড়ান্ত পর্বে সকলের কাছে যাতে সেই টিকা ঠিকভাবে পৌঁচ্ছায়, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিশ্বের বৃহত্তম টিকাকরণ কর্মসূচীতে দেশ সবরকমের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। টিকাকরণকে সফল করে তোলার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যেভাবে আমরা সংক্রমণ প্রতিহত করেছি, সেইভাবেই আমাদের এগোতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রাজকোটের এইমস, গুজরাটে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ও চিকিৎসা শিক্ষার উন্নতি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ গড়ে তুলবে। ৫ হাজার প্রত্যক্ষ ও বহু অপ্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুজরাটের প্রশংসা করে শ্রী মোদী বলেছেন, রাজ্য কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পথ দেখাচ্ছে। এর কৃতিত্ব তিনি বিপুল স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে দিয়েছেন, যার মাধ্যমে রাজ্যে সফলভাবে করোনার মোকাবিলা করা গেছে। চিকিৎসা পরিষেবায় গুজরাটের এই সাফল্য দু’দশক ধরে নিরবচ্ছিন্ন উদ্যোগ ও নিষ্ঠার ফল।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, স্বাধীনতার অনেক দশক পরেও দেশে মাত্র ৬টি এইমস গড়ে উঠেছে। ২০০৩ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকার, ৬ টি এইমস গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল। গত ৬ বছরে ১০টি নতুন এইমস তৈরির কাজ চলছে এবং অনেকগুলির উদ্বোধনও হয়ে গেছে। এইমস-এর পাশাপাশি ২০টি সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন, ২০১৪ সালের আগে আমাদের স্বাস্থ্য ক্ষেত্র ভিন্ন পথে কাজ করছিল। ২০১৪র পর স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সর্বাঙ্গীনভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং রোগ – প্রতিরোধ ও আধুনিক চিকিৎসা ব্য়বস্থার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সরকার, দরিদ্র মানুষের চিকিৎসার খরচ কমিয়েছে এবং চিকিৎসকদের সংখ্যা যাতে দ্রুত বৃদ্ধি পায়, তা নিয়ে কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে ১৫ লক্ষ স্বাস্থ্য কেন্দ্র দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে তোলা হচ্ছে। এর মধ্যে ৫০ হাজার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা পরিষেবা শুরু হয়েছে। গুজরাটে এধরণের ৫ হাজর কেন্দ্র রয়েছে। সাড়ে ৩ লক্ষ দরিদ্র রোগী, বর্তমানে প্রায় ৭ হাজার জনঔষধী কেন্দ্র থেকে কম খরচে ওষুধ পাচ্ছেন। স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতিতে সরকার, কি কি উদ্যোগ নিয়েছে, তিনি সেবিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন।
শ্রী মোদী বলেছেন, ২০২০ সাল যদি স্বাস্থ্য সঙ্কটের বছর হয়, তাহলে ২০২১ সাল হবে স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানের বছর। বিশ্ব আরো সচেতনভাবে বিভিন্ন স্বাস্থ্য জনিত সমস্যার সমাধানের জন্য এগিয়ে চলেছে। ভারত, ২০২০ সালে বিভিন্ন সঙ্কটের মোকাবিলা করেছে এবং ২০২১ সালে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে। তিনি বলেছেন, আগামী বছর ভারত, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ভারতীয় চিকিৎসকদের দক্ষতা ও সেবা করার মানসিকতা এবং গণটিকাকরণের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে দেশ, সারা বিশ্বকে পথ দেখাবে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণের ফলে প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য পরিষেবায় আরো ব্যবহৃত হচ্ছে। শ্রী মোদী বলেছেন, “স্বাস্থ্যের ভবিষ্যৎ এবং ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য – দুটি ক্ষেত্রেই ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে”।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যেহেতু বর্তমানে রোগ ব্যাধি আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, তাই স্বাস্থ্যজনিত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানও আন্তর্জাতিক স্তরে সহযোগিতার মাধ্যমে হওয়া প্রয়োজন। ভারত, বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে এই কাজটি করছে। চাহিদা অনুসারে ভারত, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের প্রসার ঘটিয়েছে। সারা বিশ্বের সঙ্গে সমন্বিতভাবে ভারত, নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দেশ, দৃঢ়ভাবে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করবে। আর এর জন্য আমাদের আরো শক্তিশালী উদ্যোগ নিতে হবে।