প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের রেওয়ারি- মাদার শাখায় ৩০৬ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলের পণ্য পরিবাহী করিডোর জাতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করলেন।
এর পাশাপাশি আজ তিনি পতাকা নেড়ে এই শাখায় ডাবল স্ট্যাক লং হল কন্টেনার ট্রেনের যাত্রার আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। অনুষ্ঠানে রাজস্থান ও হরিয়ানার রাজ্যপাল ছাড়াও দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, রেলমন্ত্রী শ্রী পীযূষ গোয়েল সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী গজেন্দ্র সিং সেখওয়াত, শ্রী অর্জুন রাম মেঘাওয়াল, শ্রী কৈলাস চৌধুরী, শ্রী রাও ইন্দ্রজিৎ সিং, শ্রী রতন লাল কাটারিয়া, শ্রী কৃষান পাল গুরজার প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, দেশের আধুনিকীকরণের জন্য পরিকাঠামোগত উন্নয়নের মহাযজ্ঞ একটা নতুন গতি অর্জন করেছে। বিগত ১২ দিনে সরকার যে সমস্ত আধুনিকীকরণের মাধ্যমে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটিয়েছে তার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষকদের কাছে সরাসরি সুবিধা স্থানান্তর বা ডিবিটি প্রদান করা সহ, বিমানবন্দর এক্সপ্রেস লাইনে জাতীয় গতিশীলতা কার্ড-এর উদ্বোধন, রাজকোটে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সাইন্সেসের উদ্বোধন, আই আই এম সম্বলপুর ছাড়াও ৬টি শহরে লাইটহাউস প্রকল্পের উদ্বোধন, জাতীয় পরমাণুর টাইম স্কেল এবং ভারতীয় নির্দেশক দ্রব্য, জাতীয় পরিবেশগত মান পরীক্ষাগার, কোচি- ম্যাঙ্গালোর গ্যাস পাইপলাইন, একশতম কিষান রেল পরিষেবা, পূর্বাঞ্চল রেলের পণ্য পরিষেবার একটি অংশের উদ্বোধন ইত্যাদি হয়েছে। করোনার সময়কালেও দেশের আধুনিকীরণের ক্ষেত্রে এতগুলি প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতে তৈরি অনুমোদিত করোনা ভ্যাকসিন দেশের নাগরিকদের মনোবল বাড়িয়েছে।
তিনি বলেন, এই পণ্য পরিবাহী করিডোরসহ দরুণ একুশ শতকে ভারতকে গেম চেঞ্জার হিসেবে দেখা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিউ ভাউপুর- নিউ খুরজা শাখায় পণ্যবাহী ট্রেনের গতি তিন গুণ বেড়েছে। হরিয়ানার নিউ আটেলি থেকে রাজস্থানের নিউ কিশানগঞ্জ পর্যন্ত প্রথম ডাবল স্ট্যাক যুক্ত কন্টেইনার মালবাহী ট্রেনটির যাত্রা শুরু করায় ভারত বিশ্বের নির্বাচিত দেশগুলির তালিকায় যোগ দিতে পেরেছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার ও তাঁদের প্রতিনিধি দলের কাজের প্রশংসা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন এই পণ্য পরিবাহী করিডোর প্রত্যেকের জন্য বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি করবে, বিশেষ করে রাজস্থানের কৃষক, উদ্যোগপতি এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে। এই ধরনের করিডোর কেবল পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে নয়, দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে। যাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শহরের বিকাশ ঘটবে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, পূর্বাঞ্চলের পণ্য পরিবাহী করিডোরের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে শক্তি ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলের এই করিডোরের মাধ্যমেও হরিয়ানা এবং রাজস্থানের কৃষি ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রসার ঘটবে। এর পাশাপাশি মহেন্দ্রগড়, জয়পুর, আজমীঢ়দ এবং শিকার শহরেও তার ফল মিলবে। শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের বন্দরগুলির মাধ্যমে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক পরিকাঠামো তৈরির ফলে জীবিকা এবং ব্যবসার ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হবে। অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে তুলবে। তিনি বলেন, পণ্য পরিবাহী করিডোর কেবল নির্মাণ শিল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে না, এর পাশাপাশি সিমেন্ট, স্টিল এবং পরিবহনের মতো অন্যান্য ক্ষেত্রেও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এই পণ্য পরিবাহী করিডোর প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, এটি ৯টি রাজ্যের ১৩৩ টি রেলস্টেশনকে যুক্ত করবে। এই স্টেশনগুলিতে মাল্টি মডেল লজিস্টিক পার্ক, ফ্রেট টার্মিনাল, কন্টেইনার ডিপো, কন্টেইনার টার্মিনাল, পার্সেল হাব থাকবে। এগুলিতে কৃষক সহ ক্ষুদ্র শিল্প সংস্থা ও কুটির শিল্প সংস্থা গুলি উপকৃত হবে।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, ভারতের অগ্রগতি এখন দুটি পর্যায়ে সমান তালে চলছে। স্বতন্ত্র পর্যায়ে আবাসন, স্যানিটেশন, বিদ্যুৎ, এলপিজি, সড়ক ও ইন্টারনেট সংযোগের সংস্কার হয়েছে। যাতে কোটি কোটি ভারতবাসী এই প্রকল্প গুলি থেকে উপকৃত হচ্ছেন। অন্য পর্যায়ে, হাইওয়ে, রেলপথ, বিমানপথ, জলপথ এবং মাল্টি মডেল বন্দর সংযোগের দ্রুত বাস্তবায়নের ফলে শিল্প এবং উদ্যোগপতিরা উপকৃত হচ্ছেন। এই পণ্য পরিবাহী করিডোরের মতো অর্থনৈতিক করিডোর, প্রতিরক্ষা করিডোর ও প্রযুক্তি ক্লাসটারের মাধ্যমে শিল্পের বিস্তার ঘটছে। যার ফলে ভারতের একটা ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে। যা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বৃদ্ধি এবং দেশের আস্থা বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এই নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য জাপানের অধিবাসীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
রেলের আধুনিকীকরণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বচ্ছতা, সময়ানুবর্তিতা, ভালো পরিষেবা, টিকিট গ্রহণের পদ্ধতি এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে রেলের উল্লেখযোগ্য কাজ হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ তিনি বিভিন্ন রেল স্টেশন, রেলের কামরা, বায়ো শৌচাগার, ক্যাটারিং সার্ভিস এবং মডেল ট্রেন হিসেবে তেজস ও বন্দে ভারত এক্সপ্রেস, ভিস্টা-ডোম কোচের কথা উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী রেলের গেজ পরিবর্তন ও বৈদ্যুতিকীকরনের ক্ষেত্রে অভাবনীয় অর্থ মঞ্জুরের কথা উল্লেখ করে বলেন, এর ফলে ট্রেনের গতি অনেক বাড়বে। প্রধানমন্ত্রী সেমি হাইস্পিড ট্রেন ও রেললাইন পাতার ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়গুলি উল্লেখ করে বলেন, উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্য গুলির রাজধানীর সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব।
করোনা জনিত পরিস্থিতিতে ভারতীয় রেলের অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে রেলের ভূমিকার প্রশংসা করেন।