প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তামিলনাডুর গুরুত্বপূর্ণ একগুচ্ছ তেল ও গ্যাস প্রকল্প জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ ও শিলান্যাস করেছেন। প্রধানমন্ত্রী রামানাথপুরম – থুঠুকুড়ি প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইন এবং মানালিতে চেন্নাই পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেডের (সিপিসিএল) গ্যাসোলিন ডিসালফারাইজেশন ইউনিটটি জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেছেন। তিনি নাগাপট্টিনমে কাবেরী উপত্যাকা শোধনাগারটির শিলান্যাসও করেছেন। তামিলনাডুর রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, ২০১৯ – ২০ সালে চাহিদা মেটাতে ভারত, ৮৫ শতাংশ তেল ও ৫৩ শতাংশ গ্য়াস আমদানি করে। তিনি প্রশ্ন তোলেন বৈচিত্রময় ও মেধাসম্পন্ন একটি রাষ্ট্র কিভাবে জ্বালানীর জন্য আমদানি নির্ভর হয়ে থাকে ? তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, এই বিষয়গুলি নিয়ে আমাদের অনেক আগেই ভাবা উচিত ছিল, আমাদের মধ্যবিত্তর উপর এই সংক্রান্ত বোঝা চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। আর এখন পরিবেশ বান্ধব ও স্বচ্ছ জ্বালানী নিশ্চিত করতে এবং জ্বালানীর আমদানি নির্ভরতা কমাতে আমাদের সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, “মধ্যবিত্তদের সমস্যার বিষয়ে আমাদের সরকার সংবেদনশীল।”
ভারত, কৃষক এবং গ্রাহকদের সাহায্য করার জন্য এখন ইথানলের ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। সৌরশক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশ নেতৃত্ব দিতে উদ্যোগী হয়েছে। গণপরিবহণের ব্যবহার বাড়াতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও এলইডি বাল্বের মতো বিকল্প উৎসের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে মধ্যবিত্ত বাড়িতে বিপুল অর্থের সাশ্রয় হবে।
প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করে বলেছেন, জ্বালানীর ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ভারত, বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জ্বালানী ক্ষেত্রে আমদানির নির্ভরতা কমানো এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে আমদানি করার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা গড়ে তোলা হচ্ছে। ২০১৯ – ২০ সালে ভারত, বিশ্বে তেল সংশোধনের দক্ষতার ক্ষেত্রে চতুর্থ স্থান দখল করেছে। প্রায় ৬ কোটি ৫২ লক্ষ পেট্রোপণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। যা আগামী দিনে আরো বৃদ্ধি করা হবে।
ভারতীয় তেল ও গ্যাস সংস্থাগুলি ২৭টি দেশে কাজ করে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই সংস্থাগুলি বিদেশে ২ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ করেছে।
এক দেশ, এক গ্যাস গ্রীডের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেছেন, “গত ৫ বছর ধরে আমরা তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য সাড়ে ৭ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করার পরিকল্পনা করেছি। ৪০৭টি জেলায় শহরাঞ্চলে গ্যাস বন্টনের ব্যবস্থাকে সম্প্রসারিত করার জন্য গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে”।
প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, পাহাল ও পিএম উজ্জ্বলা যোজনার মতো উপভোক্তা বান্ধব কর্মসূচীগুলি প্রত্যেক দেশবাসীর ঘরে গ্যাস পৌঁছে দিতে সহায়ক হয়েছে। তামিলনাডুতে ৯৫ শতাংশ এলপিজির উপভোক্তা পাহাল প্রকল্পে যুক্ত হয়েছেন। ৯০ শতাংশের বেশি গ্রাহকরা প্রত্যক্ষ ভর্তুকি হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় যুক্ত রয়েছেন। তামিলনাডুতে ৪২ লক্ষ দারিদ্র সীমার নিচে থাকা পরিবার উজ্জ্বলা যোজনায় নতুন সংযোগ পেয়েছেন। ৩১ লক্ষ ৬০ হাজারের বেশি পরিবার পিএম গরীব কল্যাণ যোজনায় বিনামূল্যে গ্যাস পেয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, ইন্ডিয়ান অয়েলের রামানাথাপুরম থেকে তুতিকোরিন পর্যন্ত ১৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস সরবরাহ আজ থেকে শুরু হয়েছে। এর ফলে ওএনজিসি –র গ্যাস ক্ষেত্রগুলির থেকে উত্তোলিত গ্যাস বন্টনে সুবিধা হবে। এটি আসলে ৪৫০০ কোটি টাকার গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পের অঙ্গ। এন্নোর, থিরুভাল্লুর, বেঙ্গালুরু, পুডুচেরী, নাগাপট্টিনম, মাদুরাই এবং তুতিকোরিন এর ফলে উপকৃত হবে।
এই গ্যাসের পাইপলাইনগুলি শহরাঞ্চলের গ্যাস প্রকল্পের উন্নয়নে সহায়ক হবে। তামিলনাডুর ১০টি জেলায় এর জন্য ৫০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। তুতিকোরিনের সাদার্ণ পেট্রোকেমিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রিজ কর্পোরেশন লিমিটেড (এসপিআইসি) -কে ওএনজিসি থেকে গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা প্রাকৃতিক গ্যাস এসপিআইসি –কে সস্তায় সার উৎপাদনে সাহায্য করবে। এর ফলে বছরে ৭০ – ৯৫ কোটি টাকার সাশ্রয় হবে। যার জন্য সারের দামও কমবে।
প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, দেশে জ্বালানীর জন্য গ্যাসের ব্যবহার বর্তমানে ৬.৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার পরিকল্পানা করা হয়েছে।
নাগাপট্টিনমের নতুন সিপিসিএল –এর শোধনাগারটির জন্য স্থানীয় শহরগুলির সুবিধা হবে। এই সব শহরের উৎপাদিত পণ্য ও পরিষেবা এই শোধনাগারের উপর নির্ভরশীল হবে। পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প, অনুসারী শিল্প এবং ক্ষুদ্র মাপের সংস্থাগুলি এর ফলে লাভবান হবে।
ভারত, পুনর্নবিকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দিয়েছে। শ্রী মোদী জানিয়েছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ জ্বালানী পরিবেশবান্ধব জ্বালানীর মাধ্যমে উৎপাদিত হবে। সিপিসিএল –এর মানালির শোধনাগারে নতুন যে গ্যাসোলিন ডিসালফারাইজেশন ইউনিটটি তৈরি হয়েছে, সেখান থেকে পরিবেশবান্ধব জ্বালানী পাওয়া যাবে।
গত ৬ বছরে তামিলনাডুর জন্য ৫০,০০০ কোটি টাকার তেল ও গ্যাস সম্পদের ব্যয়ের বরাদ্দর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একই সময়ে ২০১৪র আগে ৯১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও আরো ৪৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প শীঘ্রই হাতে নেওয়া হবে। তামিলনাডুর এই সব প্রকল্পগুলি ভারতের স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য আমাদের ধারাবাহিক উদ্যোগ বলে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন।