শ্রীমতি ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা,বিশ্বব্যাংকের সি.ই.ও.;
মন্ত্রী পরিষদে আমার সহকর্মীরা;
বরিষ্ঠ আধিকারিকগণ, বাণিজ্য-প্রধানগণ; ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ!
আজ গুরু পরবের পবিত্র দিন| গুরু নানক দেবজি’র পুণ্য স্মরণ দেশের একতা,সত্যনিষ্ঠতা ও সত্যপূর্ণ জীবনের জন্য প্রেরণা প্রদান করে| দু’বছর পর গুরু নানকদেবজি’র ৫৫০ তম আবির্ভাব পর্ব উদযাপন করার এক সুযোগ গোটা মানব জাতি পেতে যাচ্ছে|এই জগদগুরুকে প্রণাম করে আমি আপনাদের সবাইকে শুভকামনা জানাচ্ছি|
আজ আমি এখানে থাকতে পেরে বিশেষভাবে আনন্দিত হয়েছি| আমি এখানে উদযাপনের একউপযুক্ত পরিবেশ উপলব্ধি করছি| বিশ্বব্যাঙ্ক বাণিজ্য সহজতার পরিবেশের উন্নয়নেরক্ষেত্রে আমাদের অসাধারণ কাজের স্বীকৃতি দিয়েছে| বাণিজ্য করার রেংকিং-এর ক্ষেত্রেআমরা এখন প্রথম সারির একশোটি দেশের মধ্যে রয়েছি| তিন বছরের এই স্বল্প সময়ের মধ্যেইআমরা বিয়াল্লিশ রেংক এগিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছি|
এই আনন্দময় অনুষ্ঠানে আমাদের সঙ্গে উপস্থিত থাকার জন্য আমি শ্রীমতি ক্রিস্টালিনাজর্জিয়েভাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি| সমাজ ও অর্থনীতির লাভের জন্য সংস্কার প্রক্রিয়াগ্রহণকারী দেশগুলোকে উত্সাহ প্রদানের জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রতিশ্রুতি এর মধ্য দিয়েস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হচ্ছে| আগামী দিনগুলোতে আরও ভালো করার জন্য তাঁর এই উপস্থিতিআমাদের সবাইকে উদ্বুদ্ধ করবে|
গত তিন বছর ধরে আমি দেশীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বারবার বলে আসছি যে, আমরাভারতে ‘বাণিজ্য সহজতার পরিবেশ’ উন্নয়নে আন্তরিক প্রচেষ্টা করে চলেছি|
আর বন্ধুগণ! ভারত সেই কথাকে কাজে পরিণত করে দেখিয়েছে|
এ বছর এই রেংকিং-এর মধ্যে ভারতের অগ্রগতিই সবচেয়ে বেশি| ভারত প্রধানসংস্কারকদের মধ্যে একটি দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে| এই উদ্যোগে শামিল সবাইকে আমিঅভিনন্দন জানাচ্ছি| আপনারা দেশকে গর্বিত করেছেন|
এই উন্নতি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ:
*কেননা এটা দেশে সু-প্রশাসনের একটা ইঙ্গিত;
*কেননা এটা আমাদের সরকারি নীতির গুণমানের এক পরিমাপক;
*কেননা এটা প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার এক সূচক;
*কেননা বাণিজ্য সহজতার পরিবেশ, জীবনের সহজতার দিকে নিয়ে যায়;
*এবং সবশেষে, এটা সমাজে মানুষ কিভাবে জীবনযাপন করেন, কাজকর্ম করেন ও লেনদেনকরেন তা প্রতিফলিত করে|
বন্ধুগণ!
কিন্তু এগুলো সব হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সবার ভালোর ও সুবিধার জন্য| আমার কাছেবিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদন এটাই প্রদর্শিত করে যে, প্রতিশ্রুতি ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেবিশাল পরিবর্তন করা সম্ভব| ধারাবাহিক প্রচেষ্টা আমাদেরকে আরও অনেক এগিয়ে যাওয়ারক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে|
আর আপনারা জানেন যে, আমার কাছে অন্য কোনো কাজই নেই| তাই এর সামনেও আমি কাজইদেখতে পাচ্ছি| আমার দেশ, আমার দেশের শতকোটি মানুষ, তাদের জীবনে কিছু পরিবর্তন আনাএবং এর জন্য আমাদের কাছে বিশ্বের যে আকাঙ্ক্ষা তা পূরণ করার ক্ষেত্রে আমরা কোনোঘাটতি রাখবো না, এ নিয়ে আমি আপনাদেরকে আশ্বস্ত করতে চাই|
আমি এটা বলছি কারণ, ভারত এমন এক অবস্থায় এখন এসে পৌঁছেছে, যেখান থেকে আরওএগিয়ে যাওয়া সহজ| আমাদের প্রচেষ্টা বিশেষ গতি নিয়ে এসেছে| ম্যানেজমেন্ট-এর পরিভাষায়,আমরা একটা ‘স্যুইফট টেকঅফ’ করার জন্য ‘ক্রিটিক্যাল মাস’ অর্জন করেছি|
উদাহরণ হিসেবে বলতে হয়, বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদনে পণ্য ও পরিষেবা কর অর্থাতজি.এস.টি. রূপায়ণের বিষয়টিকে দেখা হয়নি| আপনারা সবাই জানেন, জি.এস.টি. হচ্ছেভারতের সর্ববৃহত কর-সংস্কার| আর তা বাণিজ্য সহজতার বিভিন্ন ক্ষেত্রকে প্রভাবিতকরছে| জি.এস.টি.’র মাধ্যমে আমরা আধুনিক কর-পদ্ধতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, যা স্বচ্ছ,স্থিতিশীল ও পূর্বানুমানযোগ্য|
জি.এস.টি.’র আলোচনা যখন হয়েছে তখন আমি বলতে চাই, এখানে বাণিজ্য জগতের অনেকমানুষ রয়েছেন এবং এই মঞ্চের মাধ্যমে আমি দেশের সমস্ত ব্যবসায়ীদের বলতে চাই| যে সময়আমরা জি.এস.টি. চালু করার সংকল্প গ্রহণ করেছি, তখন মানুষ ভেবেছেন, চালু হবে কিহবেনা, পয়লা জুলাই থেকে শুরু হবে কি হবে না| কিন্তু হয়েছে... আর চালু হওয়ার পর মনেহয়েছে, এবার তো মরে গেলাম... এ হচ্ছে মোদি, কোনো সংস্কার করবে না আর আমরা তখনবলেছি যে, তিন মাস আমাদেরকে ভালোভাবে দেখতে দিন, কেননা হিন্দুস্থান এতো বড় আরশুধুমাত্র যে দিল্লিতেই বুদ্ধি পরিপূর্ণ হয়ে রয়েছে এমন নয়|
দেশের সাধারণ মানুষের কাছেও জ্ঞান ও প্রজ্ঞা রয়েছে| আমরা তা থেকে জানবো,শিখবো, প্রতিকূল পরিস্থিতির ধারণা করবো, গতিপথ খুঁজবো এবং তিন মাস পর যখনজি.এস.টি. পরিষদের বৈঠক হয়েছে, তখন যতগুলো সমস্যা সামনে এসেছে সেগুলোর সমাধান করাহয়েছে| কিছু বিষয়ের জন্য পরিষদে কিছু রাজ্য ঐকমত্য ছিলনা, তো আমরা রাজ্যগুলোরমন্ত্রিগণ ও আধিকারিকদের নিয়ে সমিতি তৈরি করেছি এবং আজ এটা জানাতে গিয়ে আমার আনন্দহচ্ছে যে, আক্ষরিক প্রতিবেদন এখনও আমার কাছে এসে পৌঁছায়নি, কিন্তু জি.এস.টি.পরিষদের তৈরি করা মন্ত্রীদের কমিটি, তারাই সম্মিলিতভাবে এই কমিটি তৈরি করেছেন,তাদের বৈঠকে যা এসেছে, যার কিছু তথ্য আমার কাছে রয়েছে, সম্পূর্ণ রিপোর্ট তো আমারকাছে নেই, কিন্তু বলতে পারি যে, যতগুলো সমস্যা সাধারণ ব্যবসায়ীগণ এনেছিলেন, যেসবপরামর্শ ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে এসেছে, প্রায় সব বিষয়গুলোকেই ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করাহয়েছে| এমনকি দশ তারিখে জি.এস.টি. পরিষদের বৈঠকে যদি কোনো রাজ্য সমস্যা তৈরি নাকরে, তাহলে আমার বিশ্বাস যে, ভারতের বাণিজ্য জগতকে ও ভারতের আর্থিক ব্যবস্থাকেনতুন শক্তি প্রদান করার জন্য যে সংস্কার প্রয়োজন সেটাই করা হবে| তা সত্ত্বেওআগামীতে এ ধরনের আরও অনেক কথা উঠবে, কেননা এক নতুন ব্যবস্থাকে গ্রহণ করার সময়,পুরনো ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার সময়, সরকারের মস্তিষ্কই কাজ করে, এটা জরুরি নয় যেসংশ্লিষ্ট সবার মাথা কাজ করলেই ভালো ফলাফল আসবে| আর জি.এস.টি. এর জন্যও এক উত্তমউদাহরণ হবে যে, সবার অনুভুতিকে সম্মান জানিয়ে কোনো ব্যবস্থাকে কিভাবে অব্যর্থহিসেবে তৈরি করা যায়, তা জি.এস.টি.’র পদ্ধতিতে দেখা যাচ্ছে|
বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদনে মে মাস পর্যন্ত (২০১৭) সময়েরই সংস্কারের বিষয়টিদেখা হয়েছে, যদিও জি.এস.টি. জুলাই মাস (২০১৭) থেকেই কার্যকর হয়েছে| তাতে আপনারাআন্দাজ করতে পারেন যে, যখন ২০১৮ সালে এর আলোচনা হবে তখন এনিয়ে আমাদের যা উদ্যোগ,সেগুলোও যুক্ত হবে|
এছাড়াও বেশকিছু সংস্কার যা ইতোমধ্যেই হয়ে গেছে, কিন্তু বিশ্বব্যাংক সেগুলোকেতাদের সমীক্ষার মধ্যে নিয়ে আসার আগে সেগুলোর আত্মস্থ করা ও এর স্থিতিশীলতার জন্যকিছু সময়ের প্রয়োজন| কিছু সংস্কার এমন রয়েছে, যেখানে আমাদের টিম এবং বিশ্বব্যাংকেরটিমকে সাধারণ অবস্থান খুঁজে নেওয়া প্রয়োজন| এগুলোর পাশাপাশি আরও ভালো করার জন্যআমাদের প্রতীতি আমাকে স্থির বিশ্বাস যোগাচ্ছে যে, ভারত আগামী বছর এবং আসন্নবছরগুলোতে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে এক গর্বের স্থান দখল করবে|
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশগুলোর বাণিজ্য সহজতার পরিবেশের মানোন্নয়নে যুক্ত থাকারজন্য আমি বিশ্বব্যাংকের প্রশংসা করছি| আমি এ বছরের মূল ভাব ‘কর্মসংস্থান তৈরিরজন্য সংস্কার’-এর জন্যও তাদেরকে অভিনন্দন জানাচ্ছি| একথা কেউ অস্বীকার করবে না যে,বাণিজ্য আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি| উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি,সম্পদের সৃষ্টি এবং পণ্য ও পরিষেবা প্রদান সহ যাকিছু আমাদের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্যবয়ে নিয়ে আসে, সেসব বিষয়ের চালিকাশক্তি হচ্ছে এই বাণিজ্য|
আমরা তরুণ জনসমাজপূর্ণ এক দেশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা আমাদের কাছে যেমনএকটা সুযোগ, তেমনি তা এক চ্যালেঞ্জও| তাই আমাদের যুবসমাজের শক্তিকে কাজে লাগানোরজন্য আমরা ভারতকে একটি ‘স্টার্ট-আপ নেশন’ এবং বিশ্বের নির্মাণ কেন্দ্র হিসেবে তুলেধরছি| সেজন্য আমরা নানা ধরনের উদ্যোগ শুরু করেছি, যেমন ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ ও‘স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া’|
প্রথাগত অর্থনীতির নতুন বাস্তুতন্ত্র এবং এক সমন্বিত কর ব্যবস্থা সহ এইউদ্যোগগুলোর মধ্য দিয়ে আমরা এক নব ভারত গঠনের প্রচেষ্টা করে যাচ্ছি| এমন একভারত যেখানে পিছিয়ে পড়াদের জন্য নানা সম্ভাবনা তৈরি হবে এবং তার চর্চা হবে| আমরাভারতকে এক জ্ঞান-নির্ভর, দক্ষতাপূর্ণ ও প্রযুক্তি পরিচালিত সমাজ হিসেবে গড়ে তুলতেআগ্রহী| ডিজিট্যাল ভারত ও দক্ষ ভারত উদ্যোগের মধ্য দিয়ে এর এক সুন্দর সূচনা করাসম্ভব হয়েছে|
বন্ধুগণ!
ভারত উন্নতির দিকে দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে| আর তা প্রদর্শিত করে এমন কিছুবৈশ্বিক স্বীকৃতি আমি তুলে ধরতে চাই:
*বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সূচকে গত দুই বছরে আমরা বত্রিশস্থান এগিয়ে এসেছি| যেকোন দেশের কাছেই তা এক বিশাল সাফল্যের|
*গত দুই বছরে আমরা ডব্লিউ.আই.পি.ও.-এর বৈশ্বিক উদ্ভাবনা সূচকে একুশ স্থানএগিয়ে এসেছি|
*বিশ্বব্যাংকের লজিস্টিক দক্ষতার সূচক ২০১৬-এর হিসেবে আমরা উনিশ স্থান এগিয়েএসেছি|
*ইউ.এন.সি.টি.এ.ডি.-এর তালিকা অনুসারে আমরা প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ অর্থাতএফ.ডি.আই.-এর গন্তব্য হিসেবে এখন আমরা সবার প্রথম|
কিছু মানুষ ভারতের এই রেংকিং ১৪২ থেকে ১০০ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারেন না|তাদের কাছে এতে কোনো পার্থক্য হয় না| এদের মধ্যে কিছু মানুষ তো আগে বিশ্বব্যাংকেওকাজ করেছেন| তাঁরা আজও ভারতের এই রেংকিং নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন| যদি ইনসলভেন্সি কোড,ব্যাঙ্করাপ্সি কোড, কমার্শিয়াল কোর্টের মত আইনি সংস্কার যদি আপনার সময়েই হয়ে যেতো,তাহলে আমাদের রেংকিং আগেই ভালো হয়ে যেতো| এই রেংকিং আপনার ভাগ্যেই আসতো| দেশেরপরিস্থিতি তাহলে ভালো হতো| কিছুই করেননি, আর যারা এখন করছে তাদের নিয়ে প্রশ্নতুলছেন|
এটাও এক কাকতালীয় ঘটনা যে, বিশ্বব্যাঙ্ক ‘বাণিজ্য সহজতার পরিবেশ’-এর এইপ্রক্রিয়া ২০০৪ সালেই শুরু করেছিল| তার পর থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশে কার সরকারছিল, সেটাও আপনারা সবাই জানেন|
আমি এমন এক প্রধানমন্ত্রী যে আমি বিশ্বব্যাংকের ভবনটিই দেখিনি, কিন্তুবিশ্বব্যাংককে যিনি চালাতেন এমন লোকই আগে এখানে বসতেন|
আমি তো বলতে চাই, আপনি বিশ্বব্যাংকের এই রেংকিং নিয়ে প্রশ্ন ওঠানোর পরিবর্তেআমাদের সহযোগিতা করুন, যাতে আমরা দেশকে আরও উপরের স্থানে নিয়ে যেতে পারি| নবভারত নির্মাণের জন্য একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার সংকল্প করুন|
আমাদের মন্ত্র হচ্ছে সংস্কার, সম্পাদন ও রূপান্তর| আমরা আরও ভালো আরও উত্তমকরতে চাই| আমি এটা উল্লেখ করতে পেরে আনন্দিত যে, প্রথমবারের মত বিশ্বব্যাংকআমাদেরকে উপ-জাতীয় স্তরেও সহায়তা করছে| ভারতের মত যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতন্ত্রে কোনোসংস্কারের কাজ করার সময় সংশ্লিষ্ট সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে আসা খুব সহজ কাজ নয়| যদিওগত তিন বছর ধরে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের তত্পরতার ক্ষেত্রে বিশাল পরিবর্তনএসেছে| রাজ্য সরকারগুলোও বাণিজ্য-বান্ধব পরিবেশ তৈরির জন্য উদ্ভাবনী উপায় খুঁজেবের করছে| বাণিজ্য সংস্কারের কাজ করার ক্ষেত্রে একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতারপাশাপাশি সেগুলো রূপায়ণের ক্ষেত্রে তারা একে অপরকে সহায়তাও করছে| এটা এক আকর্ষকজগত যেখানে প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতা একই সঙ্গে রয়েছে|
বন্ধুগণ,
প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নানা ধরনের পরিকাঠামোগতপরিবর্তন, অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত ও প্রচুর নতুন আইনের প্রয়োজন| তাছাড়া নির্ভয়ে ও সততারসঙ্গে কাজ করার জন্য আমলাতন্ত্রের মানসিকতারও পরিবর্তন প্রয়োজন| গত তিন বছরেকেন্দ্রীয় সরকার এই বিষয়গুলো নিয়ে নানা ধরনের কাজ করেছে| আমরা বেশকিছু আইন ও নীতিনিয়ে এসেছি যার মুখোমুখি হয়েছে বাণিজ্য ও কোম্পানিগুলো|
আমরা নির্মাণ ক্ষেত্রের পাশাপাশি পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রেও দ্রুত অগ্রগতির জন্যপ্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি| তাই আমরা বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করার জন্যধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি| গত সাড়ে তিন বছরে আমরা একুশটি ক্ষেত্রের সাতাশিটিনীতির বিষয়ে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের সংস্কার করেছি| আমি দু’বছর পর্যন্ত শুনছিবিগ ব্যাং...বিগ ব্যাং...সংস্কার... এখন বন্ধ হয়ে গেছে, কেননা মানুষ বুঝতে পেরেছেনযে, সংস্কারের গতি, পর্যায় ও আকার এত বড় যে আলোচনাকারীরা তাতে মিলিয়ে নিতেই পারছেনা|
এই সংস্কার প্রতিরক্ষা, রেলওয়ে, নির্মাণকার্য, বিমা, পেনশন, অসামরিক বিমানপরিবহন, ওষুধশিল্প সহ নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রকেও সংযুক্ত করেছে|প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের অন্তত নব্বই শতাংশ অনুমোদন স্বয়ংক্রিয় পথেই চলছে| এটাঅনেক বড় বিষয়| প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা এখন সবচেয়ে উন্মুক্তঅর্থনীতিগুলোর মধ্যে একটি|
এর ফলে এফ.ডি.আই.-এর অন্তর্প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বছরের পর বছর রেকর্ডসৃষ্টি করে চলেছে| মার্চ ২০১৬ বর্ষশেষের হিসেবে এফ.ডি.আই.-এর অন্তর্প্রবাহ ৫৫.৬বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা সর্বকালীন রেকর্ড| এর পরবর্তী বছরে ভারতেএফ.ডি.আই.-এর অন্তর্প্রবাহ ৬০.০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা একে আরও এগিয়ে নিয়েগেছে| যার ফলে তিন বছরের স্বল্প সময়েই দেশে সর্বমোট এফ.ডি.আই. আসার পরিমাণ বৃদ্ধিপেয়ে ৬৭% হয়ে গেছে|
বর্তমান অর্থবছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ৩০.৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরএফ.ডি.আই. এসেছে, যা গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ৩০% বেশি| গত আগস্ট মাসে (২০১৭)ভারতে এফ.ডি.আই. এসেছে ৯.৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা কোনো একটি মাসের হিসেবে এযাবত কালের মধ্যে সর্বাধিক এফ.ডি.আই. অর্থাত প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ|
বন্ধুগণ!
গত তিন বছর ধরে আমরা পদ্ধতিগতভাবে এবং বিবেচনাপূর্ণভাবে বাণিজ্যবিধি মূল্যায়নকরেছি| আমরা সরকারের সঙ্গে সংলিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে বাণিজ্যের প্রধান সমস্যার বিষয়কেউপলব্ধি করার চেষ্টা করেছি| আমরা নিয়মিতভাবে বাণিজ্যের বিষয়গুলোর সঙ্গে সংযুক্তথেকেছি, তাদের বিষয় বোঝার চেষ্টা করেছি এবং তারপর সেই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্যনিয়ম-বিধি পরিবর্তিত করার কথা বলেছি|
আমি সবসময় একটা কথা জোর দিয়ে বলি যে, প্রযুক্তিকে সরকারের রূপান্তরের জন্যঅবশ্যই ব্যবহার করতে হবে| প্রযুক্তির ব্যবহার প্রত্যক্ষভাবে মানুষের কাজকে কমিয়েনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত তৈরিতে সহায়তা করবে| আমি আনন্দিত যে, বেশকিছুসরকারি বিভাগ এবং রাজ্য সরকার প্রশাসনের উন্নয়ন এবং পরিষেবা প্রদানের জন্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করছে|
প্রযুক্তির সরঞ্জামের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে কাজ করার সময় আমাদেরকে মানসিকতাতেওসম্পূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে| আসলে মন এবং মেশিন দুই ক্ষেত্রেই আমাদেরপুনর্প্রকৌশল প্রয়োজন| আগে যে মাত্রাতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণের মানসিকতা ছিল, তারপরিবর্তে ‘ন্যূনতম সরকার, সর্বাধিক প্রশাসন’-এর ধারণাকে নিয়ে আসা হয়েছে| এটাইহচ্ছে আমাদের লক্ষ্য, আর আমার সরকার এই লক্ষ্য পূরণে বদ্ধপরিকর|
এই লক্ষ্য নিয়ে বাণিজ্য পরিবেশকে সহজ ও সহায়ক করার জন্য আইনকে ঢেলে সাজানো এবংসরকারি প্রক্রিয়াকে পুনর্প্রকৌশল করার একটা ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে|ভারতের নিয়ন্ত্রণ পরিবেশকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের সেরা প্রক্রিয়ার সঙ্গে সাযুজ্যকরার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে| যদিও বাণিজ্য করার প্রতিবেদনে ভারতের রেংককে আমরাআরও উন্নত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু সরকারের সংস্কারের পদক্ষেপ আরোবেশি ব্যাপক| আপনাদের একটি উদাহরণ দিয়ে বলছি, আমরা ১২০০ এর বেশি পুরনো সেকেলে আইনও বিধির বিলোপ করেছি, যেগুলো প্রশাসনিক ক্ষেত্রে শুধু জটিলতাই সৃষ্টি করত| এগুলোকেসংবিধি থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে| একইরকমভাবে রাজ্যগুলোও কয়েক হাজার সংস্কারকরেছে| এই অতিরিক্ত বিষয়গুলো বিশ্ব ব্যাংকের দেখার আওতার বিষয় নয়|
কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত মন্ত্রক, সরকার অধিগৃহীত সংস্থা, রাজ্য সরকারেরপাশাপাশি নিয়ামকদেরও আন্তর্জাতিক সেরা বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করা উচিত| তারপরসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে সেই সেরা বিষয়গুলোকে তাদের আইন ও প্রক্রিয়ার সঙ্গেসাযুজ্য করে নেওয়া উচিত| এ বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই যে, এই সংস্থাগুলোতে যারাকাজ করেন তাদের দক্ষতা ও জন-পরিষেবার ক্ষেত্রে তাদের অঙ্গীকার বিশ্বে অদ্বিতীয়|
বন্ধুগণ, এই রেংকিংকে বাণিজ্য সহজতার পরিবেশ বলা হলেও আমি মনে করি, এটা ‘বাণিজ্যসহজতার’ সঙ্গে ‘জীবনযাপনের সহজতার’ও রেংকিং| এই রেংকিং ভালো হওয়ার অর্থ হচ্ছে,দেশের সাধারণ মানুষ, দেশের মধ্যবিত্ত মানুষদের জীবন আরও সহজ হয়েছে|
আমি এটা এজন্য বলছি যে, এই রেংকিং-এর জন্য যেসব প্যারামিটার বা বৈশিষ্ট্যকেবাছাই করা হয়, তার অধিকাংশই সাধারণ মানুষ ও দেশের যুব অংশের জীবনের সঙ্গে সংযুক্ত|
ভারতের রেংকিং-এ এত অগ্রগতি এর জন্যই এসেছে যে, গত তিন বছর ধরে সরকার দেশেরসাধারণ মানুষের জীবনের সমস্যাগুলোকে কমিয়ে আনার জন্য সংস্কারের পথ গ্রহণ করেছে|তিন বছরে দেশে কর দেওয়ার প্রক্রিয়ায় বিশেষ অগ্রগতি এসেছে| আয়কর রিটার্নের জন্য এখনমাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়না| পি.এফ. নিবন্ধীকরণ এবং পি.এফ.-এর টাকা পেতে আগেআপনাকে দফতরগুলোতে ঘুরতে হতো| এখন সবকিছু অনলাইনে হয়ে গেছে|
আমার যুববন্ধুরা এখন শুধুমাত্র একদিনে নিজের কোম্পানি নিবন্ধীকরণ করতে পারেন|ব্যবসায়িক মামলার শুনানিও সহজ হয়ে গেছে| তিন বছরে ভারতে নির্মাণের অনুমতি পাওয়াসহজ হয়ে গেছে| বিদ্যুতের সংযোগ পাওয়া সহজ হয়েছে| রেলের রিজার্ভেশন করা সহজ হয়েছে|আগে যে পাসপোর্ট পেতে কয়েক মাস লেগে যেতো, তা এখন এক সপ্তাহের মধ্যেই হয়ে যাচ্ছে| যদিতা ‘জীবনযাপনের সহজতা’ না হয়, তাহলে এটা কী?
আমি একটা বিষয়কে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই| বাণিজ্য সহজতা সমস্ত ব্যবসার জন্যগুরুত্বপূর্ণ, এটা ক্ষুদ্র আকারের নির্মাতা সহ ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের জন্যওগুরুত্বপূর্ণ| এই ক্ষেত্রটি দেশে বিরাট পরিমাণে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়| তাইতাদেরকে আরও বেশি প্রতিযোগিতামূলক করে তোলার জন্য আমাদেরকে ব্যবসা করার খরচ আরওকমাতে হবে| বাণিজ্য সহজতা নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে এইসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্রনির্মাতাদের সমস্যাগুলোকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে|
আরও একবার আমি বাণিজ্য সহজতার বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করা টিমগুলোকে তাদের অঙ্গীকারও নিষ্ঠার জন্য অভিনন্দন জানাই| আমি নিশ্চিত যে, আমরা একসঙ্গে মিলে ভারতেরইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় লিখব এবং ভারতকে এমনভাবে রূপান্তরিত করব যাতে আমাদেরজনগণের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা পাখা মেলে উড়তে পারে|
বাণিজ্য সহজতার পরিবেশ উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমাদের প্রচেষ্টায় পথপ্রদর্শন করারজন্য আমি আরও একবার বিশ্বব্যাংককে ধন্যবাদ জানাতে চাই| আমাকে বলা হয়েছে যে, ভারতেরমত এক বিশাল দেশের প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রভাব না ফেলে এ ধরনের নির্ণায়কমূলকপরিবর্তন নিয়ে আসার অভিজ্ঞতা বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর কাছে এক উদাহরণস্বরূপ হয়েউঠবে| অন্যের কাছ থেকে সবসময়ই শেখার সুযোগ রয়েছে| প্রয়োজনে আমরাও অন্য দেশগুলোরসঙ্গে আমাদের অভিজ্ঞতার আদান প্রদান করতে পারলে খুশি হবো|
আপনাদের ধন্যবাদ!
আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ!