প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ নতুন দিল্লীর কারিয়াপ্পা গ্রাউন্ডে জাতীয় সমর শিক্ষার্থী বাহিনীর (ন্যাশনাল ক্যাডেট করর্পস-এনসিসি)রালিতে ভাষণ দিয়েছেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ, তিন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেছেন। তিনি এনসিসি কন্টিনজেন্টগুলির মার্চ পাস্ট প্রত্যক্ষ করেন। এই আয়োজনে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী এই অনুষ্ঠানে বলেছেন, যেসব রাষ্ট্রের সামাজিক জীবনে যথেষ্ট শৃঙ্খলাবোধ রয়েছে সেই দেশগুলি সব ক্ষেত্রে উন্নতি সাধন করেছে। ভারতের সামাজিক জীবনে শৃঙ্খলাবোধ সঞ্চারিত করতে এনসিসি-র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। সর্ববৃহৎ সুশৃঙ্খল যুব সংগঠন এনসিসি-র প্রতিনিয়ত গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংবিধানের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, ভারতীয় সংস্কৃতির শৌর্য্য ও সেবার প্রচার౼ সব ক্ষেত্রেই এনসিসি ক্যাডেটদের উপস্থিতি রয়েছে। একইভাবে পরিবেশ বা জল সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও তারা অংশ নিয়ে থাকে। প্রধানমন্ত্রী করোনার মতো মহামারীর সময়ে এনসিসি ক্যাডেটদের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের সংবিধান যে কর্তব্য পালনের দায়িত্ব নাগরিকদের দিয়েছে সেগুলি সকলকে মেনে চলতে হবে। সাধারণ নাগরিক ও সুশীল সমাজ এগুলি যখন মেনে চলেন, তখন বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে সাফল্য অর্জিত হয়। শ্রী মোদী বলেছেন, আমাদের দেশের বৃহৎ অংশে নকশাল ও মাওবাদী সমস্যার মোকাবিলায় নাগরিকদের কর্তব্যবোধ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সাহসের মিশ্রণ সাহায্য করেছে। এখন দেশের খুব অল্প জায়গায় নকশাল সমস্যা রয়েছে। প্রভাবিত তরুণ-তরুণীরা হিংসার পথ ছেড়ে উন্নয়নের মূল স্রোতে ফিরে এসেছে।
শ্রী মোদী বলেছেন, করোনার সময়ে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষের অভূতপূর্ব কাজের জন্য ওইসব সমস্যা, সুযোগে পরিণত হয়েছে, যার ফলে দেশের দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আত্মনির্ভরতার জন্য সাধারণ থেকে শ্রেষ্ঠমানের হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সুবিধে হবে। যুব সম্প্রদায় এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ১৫ই আগস্টের ভাষণের কথা উল্লেখ করেছেন, সেদিন তিনি সীমান্তবর্তী ও উপকূলীয় অঞ্চলে এনসিসি-র প্রসার ঘটানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। বর্তমানে সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীতে ১ লক্ষ ক্যাডেট প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, যাদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশই মহিলা। এনসিসি-র প্রশিক্ষণের পরিকাঠামো বাড়ানো হয়েছে। আগে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার প্রশিক্ষণের মাত্র একটি কেন্দ্র ছিল, বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৯৮টি হয়েছে। আকাশপথে প্রশিক্ষণের কেন্দ্র ৫ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪৪ ও জলপথের প্রশিক্ষণের কেন্দ্র ১১ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৬০ হয়েছে।
ফিল্ড মার্শাল কারিয়াপ্পার জন্মদিনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেছেন, আজকের অনুষ্ঠান স্থলের নাম তাঁর নামে করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীতে এখন মহিলা ক্যাডেটদের সুযোগ বেড়েছে। এনসিসি-তে মহিলা ক্যাডেটের সংখ্যা ৩৫ শতাংশ হওয়ায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যুদ্ধের বিজয়ের ৫০ বছর উপলক্ষ্যে সশস্ত্র বাহিনীকে প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তিনি ক্যাডেটদের পরামর্শ দিয়েছেন তারা যাতে জাতীয় স্মারক সৌধে যায় এবং সাহসীকতার পুরস্কারের পোর্টালটি দেখে। এনসিসি-র ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মটির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখানে নতুন নতুন ধারণা দেওয়া হয়েছে।
শ্রী মোদী জানিয়েছেন দেশ স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে প্রবেশ করেছে। একইসঙ্গে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্ম বাষির্কীও শুরু হয়েছে। ক্যাডেটদের নেতাজীর গৌরবময় ঘটনাবলী থেকে অনুপ্রাণিত হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আগামী ২৫-২৬ বছর খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ, এরপর ভারতের স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তি হবে।
দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ সহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভারতের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে সবথেকে ভাল সামরিক সরঞ্জাম তৈরি হচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, সৌদি আরব এবং গ্রীসের সাহায্যে নতুন রাফায়েল যুদ্ধ বিমানের মাঝ আকাশে জ্বালানী ভরার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, এর মাধ্যমে উপসাগরীয় অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক প্রতিফলিত হচ্ছে। ভারত বর্তমানে ১০০ রকমের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়াও বিমান বাহিনী ৮০টি তেজস যুদ্ধ বিমান তৈরির বরাত দিয়েছে। কৃত্রিম মেধা ভিত্তিক যুদ্ধের সরঞ্জামের মাধ্যমে ভারত প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বাজারের পরিবর্তে বৃহৎ উৎপাদক হিসেবে উঠে আসছে।
প্রধানমন্ত্রী ক্যাডেটদের ভোকাল ফর লোকালের জন্য প্রচার চালাতে পরামর্শ দিয়েছেন। যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে এখন নতুন ফ্যাশনের উপকরণ হিসেবে খাদির প্রচলন বাড়ছে। স্থানীয় পণ্যগুলি ফ্যাশন শো, বিয়ে, উৎসব সহ অন্যান্য আয়োজনে বেশি করে ব্যবহৃত হচ্ছে। যুব সম্প্রদায়ের আত্মপ্রত্যয় দেশের আত্মনির্ভরতার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই সরকার ফিটনেস শিক্ষা ও দক্ষতা নিয়ে কাজ করছে। অটল টিঙ্কারিং ল্যাবের থেকে সাহায্যের ফলে স্কিল ইন্ডিয়া ও মূদ্রা যোজনায় অত্যাধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এনসিসি-র বিশেষ কর্মসূচি সহ ফিট ইন্ডিয়াতে ফিটনেস ও খেলো ইন্ডিয়াতে খেলাধুলাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা ছাত্র কেন্দ্রিক হওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা তাদের পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন বিষয় বাছাই করতে পারবে। সংস্কারের কারণে যে সুযোগ তৈরি হয়েছে সেগুলি দেশের যুব সম্প্রদায়ের কাজে লাগাবে এবং এর মাধ্যমে দেশের উন্নতি হবে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন।