প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী শনিবার নতুন দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কার্গিল বিজয় দিবস স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বীরত্ব ও দেশের স্বার্থে উৎসর্গীকৃত অনুপ্রেরণাদায়ক কার্গিল যুদ্ধ জয়ের কাহিনী প্রত্যেক ভারতীয় আজ স্মরণ করছেন। কার্গিলে পর্বত চূড়া রক্ষায় যাঁরা জীবন উৎসর্গ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী সেইসব শহীদদের শ্রদ্ধা জানান। দেশের কল্যাণে জম্মু ও কাশ্মীরের যেসব মানুষ নিজেদের কর্তব্য পালন করেছেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁদের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ২০ বছর আগে কার্গিলের পর্বতমালায় যে সাফল্য অর্জিত হয়েছে, তা আগামী প্রজন্মকেও অনুপ্রাণিত করবে।
কার্গিল বিজয়কে প্রধানমন্ত্রী ভারতের সাহসী সন্তান, দৃঢ় সংকল্প, সক্ষমতা ও বীরত্বের জয় বলে বর্ণনা করেন। তিনি আরও বলেন, এই জয় কেবল ভারতের মর্যাদা ও অনুশাসনেরই নয়, বরং প্রত্যেক ভারতীয়র প্রত্যাশা ও কর্তব্যের প্রতি নিষ্ঠার জয়।
প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, যুদ্ধে কেবল সরকারই নয়, সমগ্র জাতিও সামিল হয়। তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জওয়ানরা তাঁদের সর্বস্ব বিসর্জন দেন। তাই, জওয়ানদের অবদান ও কৃতিত্ব প্রত্যেক ভারতীয়র কাছে গর্বের বিষয়।
২০১৪’তে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের কয়ক মাস পরেই তিনি কার্গিল সফর করেছিলেন উল্লেখ করে শ্রী মোদী ২০ বছর আগে কার্গিল সফরের কথাও স্মরণ করেন। কার্গিলে সেনা জওয়ানদের বীরত্বের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, সমগ্র জাতি সেনার পাশে রয়েছে। যুবরা রক্তদান করছেন, এমনকি স্কুল পড়ুয়া শিশুরা সেনা জওয়ানদের জন্য তাঁদের পকেটমানি দান করছে।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রী অটল বিহারী বাজেপেয়ীর কথা স্মরণ করে শ্রী মোদী বলেন, শ্রী বাজপেয়ী বলেছিলেন, “আমরা যদি সেনা জওয়ানদের জীবনের প্রতি গুরুত্ব না দিই, তা হলে মাতৃভূমির প্রতি কর্তব্য পালনে আমরা ব্যর্থ প্রতিপন্ন হব”। বিগত পাঁচ বছরে সেনাকর্মী ও তাঁদের পরিবারের কল্যাণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার যে সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ প্রসঙ্গে শ্রী মোদী এক পদ, এক পেনশন; শহীদ জওয়ানদের ছেলেমেয়েদের জন্য বৃত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি এবং জাতীয় যুদ্ধস্মারকের কথা উল্লেখ করেন।
শ্রী মোদী বলেন, “কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের প্রবঞ্চনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। কিন্তু আমরা ১৯৯৯ সালেও তাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছি”। এমনকি, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীর এক কার্যকর পদক্ষেপের ক্ষেত্রেও শত্রু পক্ষ পাকিস্তানের কাছ থেকে কোনও জবাব পাওয়া যায়নি। শ্রী মোদী বলেন, বাজপেয়ী সরকারের শান্তি স্থাপনের উদ্যোগগুলি সমগ্র বিশ্বে ভারতের অবস্থানের ব্যাপারে এক উপযুক্ত বোঝাপড়ার বাতাবরণ গড়ে তুলেছিল।
প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, ভারত কখনও এমনকি, অতীতেও আগ্রাসী মনোভাব গ্রহণ করেনি। ভারতীয় সেনাবাহিনী সারা বিশ্ব জুড়ে মানবতা ও শান্তির রক্ষক হিসাবে ভূমিকা পালন করেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি ইজরায়েলে হাইফার স্বাধীনতায় ভারতীয় সেনা জওয়ানদের ভূমিকা এবং প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে শহীদ ভারতীয় সেনা জওয়ানদের স্মৃতিতে ফ্রান্সে গড়ে ওঠা সৌধের কথাও স্মরণ করেন। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় ১ লক্ষেরও বেশি ভারতীয় সেনা শহীদ হয়েছিলেন বলে উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, রাষ্ট্রসংঘের শান্তিরক্ষা অভিযানগুলিতেও সবচেয়ে বেশি ভারতীয় সেনারাই শহীদ হয়েছেন। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সেনাবাহিনীর নিষ্ঠা ও নিঃস্বার্থ সেবার কথাও তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।
শ্রী মোদী বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও ছায়াযুদ্ধ সমগ্র বিশ্বের কাছেই আজ বড় বিপদ। তিনি বলেন, যুদ্ধে যারা পরাজিত হয়েছে, তারা আজ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে ছায়াযুদ্ধকে প্রশ্রয় দিচ্ছে এবং সন্ত্রাসে মদত যোগাচ্ছে। মানবতাবাদে যাঁরা বিশ্বাস করেন, এখন সময় এসেছে সেনাবাহিনীর পাশে তাঁদের দাঁড়ানো ও সমর্থন যোগানোর। সন্ত্রাসের কার্যকর মোকাবিলার জন্য এটা অত্যন্ত জরুরি বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দন্দ্ব এখন মহাকাশ ও সাইবার দুনিয়াতেও পৌঁছে গেছে। সেইহেতু, সেনাবাহিনীকেও আধুনিক করে তুলতে হবে। তিনি বলেন, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ভারত কোনও চাপের কাছে কোনও অবস্থাতেই মাথা নত করবে না। এ প্রসঙ্গে তিনি অরিহন্তের মাধ্যমে পারমাণবিক আক্রমণের ক্ষেত্রে ভারতের সক্ষমতা এবং উপগ্রহ বিধ্বংসী সফল পরীক্ষার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনীর দ্রুত আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির মাধ্যমে বেসরকারি সংস্থার অংশগ্রহণ বাড়ানোর যাবতীয় প্রয়াস চলছে। সেনাবাহিনীর তিন শাখার মধ্যে আরও বেশি জয়েন্টনেস বা ‘সুসমন্বয়’ গড়ে তোলার ওপর তিনি জোর দেন।
শ্রী মোদী বলেন, সীমান্ত এলাকায় পরিকাঠামো জোরদার করা হচ্ছে। এই সমস্ত এলাকার উন্নয়ন ও সেখানে বসবাসকারী মানুষের কল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপগুলির কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
পরিশেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সেই জাতি, যাঁরা ১৯৪৭ – এ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল; এই সেই জাতি, যাঁদের জন্য ১৯৫০ – এর সংবিধান রচিত হয়েছিল এবং এই জাতির জন্যই কার্গিলে তুষারাবৃত পর্বত শিখরে ৫০০ জনের বেশি নির্ভীক সেনা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
এই আত্মত্যাগ যাতে বিফল না হয় এবং শহীদদের কর্তব্য থেকে প্রেরণা নিয়ে তাঁদের স্বাপ্নের ভারত গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী সকলকে দৃঢ় সংকল্প গ্রহণের আহ্বান জানান।