নমস্কার সিঙ্গাপুর!
শুভ সন্ধ্যা!
নী হাও
সালামত ……
বনক্কম
মন্ত্রী ঈশ্বরণ
শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীগণ,
সিঙ্গাপুরে আমার বন্ধুগণ,
সিঙ্গাপুরে বসবাসকারী প্রবাসী ভারতীয় সদস্যগণ,
আপনাদের প্রত্যেককে নমস্কার!
আজ, এখানে এই সুন্দর মুহূর্তে আমরা ভারত ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে সুদৃঢ় সম্পর্ক দেখতে পাচ্ছি। এটাই আপনাদের ঐতিহ্য; আমাদের জনগণ এবং আমাদের সময়ের এক মহান অংশীদারিত্ব। এটাই হ’ল – দুই সিংহের প্রভাব, মহিমা এবং গর্জন। সিঙ্গাপুরে আসা সর্দদাই আনন্দের। এটি এমন এক শহর যে, কখনও প্রেরণাদায়ক হিসাবে ব্যর্থ হয় না। সিঙ্গাপুর একটি ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র হতে পারে কিন্তু এর দিগন্ত ব্যাপক। ছোট্ট এই দেশটি আমাদের দেখিয়েছে যে, সাফল্য ও জনগণের শক্তির দিক থেকে আকার কোনও বাধাই নয়।
এসব সত্ত্বেও সিঙ্গাপুরের সাফল্য নিহিত রয়েছে তার বহু সাংস্কৃতিক সমাজ, বৈচিত্র্যের বিবিধতার মধ্যে। আর এই বৈশিষ্ট্যগুলিই সিঙ্গাপুরবাসীদের স্বতন্ত্র ও অনন্য পরিচিতি গড়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে, সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন রঙিন আস্তরণের মধ্যে এমন কিছু প্রাচীন বর্ণময় যোগসূত্র রয়েছে, যা দুই দেশকে এক সুতোয় বেঁধেছে।
বন্ধুগণ,
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারতের কয়েক শতাব্দী প্রাচীন যাত্রাপথ সিঙ্গাপুরকে জুড়েছে। মানবিক সম্পর্ক গভীর ও অক্ষুণ্ন। সিঙ্গাপুরে বসবাসকারী ভারতীয়দের মধ্যে এই সম্পর্ক এখনও জীবন্ত। আজকের এই সন্ধ্যা আপনাদের উপস্থিতি, আপনাদের প্রাণশক্তি, আপনাদের মেধা ও সাফল্যের উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
ঐতিহাসিক কারণ বা বিশ্বায়নের সুযোগ-সুবিধা ; অথবা পূর্বসূরীদের কয়েক প্রজন্ম আগে আগমন বা এই শতকে আপনাদের এখানে আসা – কারণ যাই হোক না কেন, আপনারা প্রত্যেকেই সিঙ্গাপুরের অনন্য অংশ এবং এখানকার অগ্রগতির অংশীদার।
প্রতিদানে সিঙ্গাপুরও আপনাদের স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছে। আপনাদের মেধা ও কঠোর পরিশ্রমকে স্বাগত জানিয়েছে। এই সিঙ্গাপুরে আপনারা ভারতের বৈচিত্র্যের প্রতিনিধি। আপনারা যদি একটি শহরেই ভারতের সমস্ত উৎসব, সপ্তাহ ধরে তার উদযাপন দেখতে চান, তা হলে সিঙ্গাপুর হ’ল আদর্শ স্থান।
ভারতীয় খাবারের ক্ষেত্রেও এই আপ্তবাক্য সত্য হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী লি-র সঙ্গে আমার নৈশভোজের কথা এখনও মনে পড়ছে।
তামিল এখানকার সরকারি ভাষা। সিঙ্গাপুরের উদার মনোভাবের এটি একটি দৃষ্টান্ত যে, বিদ্যালয়ের শিশুরা আরও পাঁচটি ভারতীয় ভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে। এই শহরে ভারতীয় সংস্কৃতির স্পন্দন দেখা যায়। এটা সম্ভব হয়েছে ভারতীয় সম্প্রদায়ের মানুষের মেধা ও সিঙ্গাপুর সরকারের সমর্থনের কারণে।
আপনারা এই সিঙ্গাপুরে পরম্পরাগত ভারতীয় খেলাধূলা নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন। এই প্রতিযোগিতা আপনাদের কিশোর বয়সের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। সেই সঙ্গে, আপনাদের শিশুদেরও খো-খো ও কাবাডি খেলার সঙ্গে পরিচয় ঘটে।
২০১৭-তে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস এই শহরের ৭০টি কেন্দ্রে আয়োজিত হয়েছিল। অর্থাৎ প্রতি ১০ বর্গ কিলোমিটারে একটি করে যোগ কেন্দ্রের আয়োজন করা হয়েছিল।
বিশ্বের আর কোনও শহরে এত নিবিড়ভাবে যোগ চর্চা কেন্দ্রের আয়োজন করা হয়নি। শ্রীরামকৃষ্ণ মিশন ও শ্রীনারয়ান মিশনের মতো প্রতিষ্ঠান এখানে কয়েক দশক ধরে কাজ করে চলেছে। সমাজের প্রতি এদের সেবা, সেই মূল্যবোধগুলিকে প্রতিফলিত করে, যা ভারত ও সিঙ্গাপুরকে এক সুতোয় বেঁধেছে। সিঙ্গাপুরের মাটি থেকে ভারতের স্বাধীনতার জন্য নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর ডাক ‘দিল্লি চল’ – প্রতিটি ভারতীয়র মনে এখনও এক উজ্জ্বল শিক্ষা হয়ে রয়েছে। এমনকি, ১৯৪৮-এ মহাত্মা গান্ধীর চিতাভস্মের একাংশ ক্লিফোর্ড পিয়ের-এ বিসর্জন দেওয়া হয়েছিল।
আগামী পরশু (২ জুন) আমাদের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের স্মরণ উপলক্ষে ক্লিফোর্ড পিয়ের-এ আমি এক ফলকের আবরণ উন্মোচন করব। এমনকি আজও ইতিহাসের ঐ অধ্যায়টি মহাত্মা গান্ধীএ চিরন্তন ও সর্বজনীন মূল্যবোধকে প্রতিফলিত করে।
বন্ধুগণ,
ভারতের দরজা যখন বিশ্বের কাছে খুলে গিয়েছিল এবং ভারত পূবের দেশগুলির দিকে নজর দিয়েছিল, তখন সিঙ্গাপুরই সেতু হয়ে উঠেছিল ভারত ও আশিয়ান দেশগুলির মধ্যে। ভারত ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক অত্যন্ত উষ্ণ ও নিবিড়। এই সম্পর্কের মধ্যে কোনও দাবি-দাওয়া বা সন্দেহ নেই।
অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে এই সম্পর্ক এক স্বাভাবিক অংশীদারিত্ব। আমাদের প্রতিরক্ষা সম্পর্কও যথেষ্ট মজবুত। সিঙ্গাপুরের সঙ্গেই ভারতের ধারাবাহিকভাবে সবচেয়ে দীর্ঘতম নৌ-মহড়া কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।
দুই দেশের সেনাবাহিনী এখন তাঁদের সম্পর্কের রজত জয়ন্তী উদযাপ্ন করছে। ভারতে সেদেশের সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত হওয়ায় আমরা গর্বিত। আমাদের নৌ-জাহাজগুলি নিয়মিতভাবে একে অপরের দেশের যাওয়া-আসা করে।
আপনাদের মধ্যে অনেকেই আমাদের নৌ-জাহাজগুলিতে চড়েছেন। আগামী পরশু চাঙ্গি নৌ-সেনা ঘাঁটিত্যে সিঙ্গাপুর নৌ-বাহিনীর জাহাজ ও ভারতীয় নৌ-বাহিনীর জাহাজগুলি পরিদর্শনের ব্যাপারে আমি অত্যন্ত আশাবাদী।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমরা দুই দেশই আইনের শাসন, সমস্ত রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব-সমতা, বাণিজ্য ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে অবাধ ও মুক্ত রাস্তাপথের স্বার্থে এক সুরে কথা বলি। অর্থনীতিই হ’ল এই সম্পর্কের হৃদ-স্পন্দন।
বিশ্বের সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে তোলার অগ্রভাগে রয়েছে আমাদের দুই দেশের এই অংশীদারিত্ব। ভারতের কাছে সিঙ্গাপুর বিনিয়োগের অগ্রণী উৎস ও গন্তব্য উভয়ই। সিঙ্গাপুরই প্রথম রাষ্ট্র যাদের সঙ্গে আমাদের প্রথম সুসংহত অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
ভারতের ১৬টি শহরের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের মধ্যে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২৫০টি বিমানের যোগাযোগ রয়েছে। এই যোগাযোগ আরও বাড়ছে। সিঙ্গাপুরের বিদেশি পর্যটক আগমনের দিক থেকে ভারতের স্থান তৃতীয়। এই সংখ্যাও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের তথ্য প্রযুক্তি সংস্থাগুলি সিঙ্গাপুরকে স্মার্ট ও সর্বাধুনিক রাখতে সাহায্য করছে।
ভারতের উন্নয়নমূলক অগ্রাধিকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। এর মধ্যে রয়েছে – স্মার্টসিটি, নগরাঞ্চলের সমস্যা সমাধান, আর্থিক ব্যবস্থা, দক্ষতা উন্নয়ন, বন্দর, লজিস্টিক, বিমান চলাচল ও শিল্প পার্ক।
এইভাবে ভারত ও সিঙ্গাপুর পরস্পরের সমৃদ্ধিতে অবদান রাখছে। এখন আমরা এক নতুন ডিজিটাল বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে অংশীদার হচ্ছি।
ভারতের বহু মেধাবী যুবক-যুবতী সিঙ্গাপুরকে তাঁদের বাড়ি হিসাবে গ্রহণ করেছে। এই মেধাবী যুবকরা ভারত, সিঙ্গাপুর ও আশিয়ান দেশগুলির মধ্যে উদ্ভাবন ও শিল্প স্থাপনের সেতু হয়ে উঠতে পারেন। কয়েক মূহুর্ত আগেই আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায় রূপে ভীম এবং ইউপিআই-এর উদ্বোধন প্রত্যক্ষ করেছি।
সিঙ্গাপুর যেমন এক নতুন ভবিষ্যতের লক্ষ্যে গড়ে উঠেছে, ভারতও তেমনই বিশ্ব সুযোগ-সুবিধার অগ্রণী দেশ হিসাবে উঠে আসছে। অভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা কর চালু করার মতো ব্যাপক কাঠামোগত সংস্কারের বছরটিতেও আমরা বিশ্বের দ্রুত বিকাশশীল অর্থনীতি হয়ে থেকেছি।
আমরা এটাই চেয়েছিলাম। আমাদের অর্থনীতি আরও স্থিতিশীল হয়েছে। রাজস্ব ঘাটতি কমছে। মুদ্রাস্ফীতি নিম্নগামী। চলতি খাতে ঘাটতি যথেষ্ট সন্তোষজনক। মুদ্রা ব্যবস্থাও স্থিতিশীল। বিদেশি মুদ্রা ভাণ্ডার রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।
ভারতের ‘বর্তমান’ দ্রুত পাল্টাচ্ছে। এক ‘নতুন ভারত’ ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে। অবশ্য, এর নেপথ্যে বহু কারণ রয়েছে। আমাদের আর্থিক সংস্কার অত্যন্ত দ্রুতগতিতে অগ্রসর হচ্ছে, যা আগে কখনও হয়নি। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির গৃহীত ১০ হাজারের বেশি বিভিন্ন কর্মসূচির ফলে সহজে ব্যবসা-বাণিজ্য করার ক্রমতালিকায় ভারত ৪২ ধাপ উঠে এসেছে।
প্রায় ১ হাজার ৪০০ অপ্রাসঙ্গিক আইন বাতিল করা হয়েছে। ভারত এখন বিশ্বের অন্যতম উদার অর্তনীতিগুলির মধ্যে একটি। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখন প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রেই বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। এমনকি, ভারতে ৯০ শতাংশ বিনিয়োগ সরাসরি এসেছে।
কর কাঠামো ব্যবস্থায় পরিবর্তন করা হয়েছে। কর হার কম হওয়ায় স্থিতিশীলতা বেড়েছে। কর সংক্রান্ত বিবাদগুলির দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব হয়েছে। ই-রিটার্ন দাখিল ব্যবস্থা দ্রুত হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে অভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা কর সবচেয়ে বড় কর সংস্কার। এর ফলে, সমগ্র দেশ এক বাজার ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে এবং কর-ভিত্তি বেড়েছে।
এই কাজ৯ সহজ ছিল না। কিন্তু সাফল্যের সঙ্গে এই কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এরফলে, অর্থনীতিতে নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধা তৈরি হয়েছে। আমাদের ব্যক্তিগত আয়কর ভিত্তি প্রায় ২ কোটি বৃদ্ধি পেয়েছে।
আমাদের পরিকাঠামো ক্ষেত্রের দ্রুত সম্প্রসারণ হচ্ছে। গত বছর, আমরা প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক নির্মাণ করেছি। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ২৭ কিলোমিটার জাতীয় সড়ক নির্মিত হয়েছে, যা কয়েক বছর আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
নতুন রেল লাইন পাতার কাজ দ্বিগুণ হয়েছে। বিভিন্ন শহরে মেট্রোরেল পরিষেবা শুরু হয়েছে। সাতটি উচ্চগতিসম্পন্ন রেল প্রকল্প, ডেটিকেটেড পণ্য করিডর ও ৪০০টি স্টেশনের আধুনিকীকরণের ফলে রেল পরিষেবা ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে চলেছে।
অন্যান্য প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে – ১০টি গ্রিনফিল্ড বিমানবন্দর, ৫টি নতুন প্রধান বন্দর, ১১১টি নদীপথ থেকে জাতীয় জলপথ হিসাবে ঘোষণা, ৩০টিরও বেশি লজিস্টিক পার্ক প্রভৃতি। বিগত তিন বছরে আমরা ৮- হাজারেরও বেশি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় যুক্ত করেছি।
পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম উৎপাদনকারী দেশ হয়ে উঠেছি। দূষণমুক্ত ও সুস্থায়ী ভবিষ্যতের লক্ষ্যে এটি আমাদের অঙ্গীকার।
আমাদের পরিকাঠামো ক্ষেত্রে আবার গতি সঞ্চার হচ্ছে। বিগত তিন বছরে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ লক্ষ্যণীয় পরিমাণে বেড়েছে। ২০১৩-১৪’র ৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০১৬-১৭’তে বেড়ে হয়েছে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
একই সঙ্গে অতিক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ ক্ষেত্রেও বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।
আমরা ক্ষেত্র-বিশেষে আধুনিকীকরণ ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। কর্পোরেট করের হার কমিয়েছি। কর প্রদান ব্যবস্থাকে আরও আকর্ষণীয় ও সরল করে তুলেছি। ভারতীয় স্টার্ট আপ ক্ষেত্র ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে, বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।
আমার পছন্দের প্রকল্প হ’ল ‘মুদ্রা’ প্রকল্প। গরিব ও দুর্বল শ্রেণীর মানুষজনকে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়। বিগত তিন বছরে ১২ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষকে ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ঋণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭৪ শতাংশ ঋণ সহায়তা পেয়েছেন মহিলারা।
আমরা এখন আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। বিগত তিন বছরে ৩১ কোটি ৬০ লক্ষ নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এখন ৯৯ শতাংশ ভারতীয় পরিবারের একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে।
প্রতিটি ভারতবাসীর কাছে এটি আত্মমর্যাদা ও পরিচিতির নতুন উৎস। আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে এটি এক অসাধারণ কাহিনী। এই অ্যাকাউন্টগুলিতে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ জমা পড়েছে।
উপভোক্তাদের কাছে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি সরকারি অর্থ সরাসরি স্থানান্তরিত হয়েছে। এখন তাঁরা পেনশন ও বিমার সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন। বিশ্বের কোথাও ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার এত দ্রুত সম্প্রসারণ হয়নি।
সারা ভারত জুড়ে ডিজিটাল উদ্যোগ পুরোদমে চলছে। প্রত্যেকের বায়োমেট্রিক পরিচিতি হিসাবে এখন পকেটে অন্তত একটি মোবাইল ফোন রয়েছে। এমনকি, প্রায় প্রত্যেকের একটি করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। প্রতিটি ভারতবাসীর জীবন ধীরে ধীরে পাল্টাচ্ছে। এরফলে, ডিজিটাল লেনদেন দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০১৭-তে ইউপিআই-ভিত্তিক লেনদেন ৭ হাজার শতাংশ বেড়েছে। জানুয়ারিতে সবধরণের ডিজিটাল লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। আড়াই লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতে ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। এমনকি, প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে কমন সার্ভিস সেন্টার গড়ে তোলা হচ্ছে।
এই সমস্ত পদক্ষেপের ফলে ডিজিটাল পরিষেবা বৃদ্ধি পাবে এবং গ্রামীণ কর্মসংস্থান বাড়বে। অটল উদ্ভাবন মিশনের আওতায় আমরা১০০টি ইনক্যুবেশন কেন্দ্র চালু করেছি। শিশুদের মধ্যে উদ্ভাবনকে উৎসাহ দিতে ২ হাজার ৪০০টি টিঙ্কারিং ল্যাব চালু করা হয়েছে।
ভারতে আগামী দুই দশকে নগরায়নের ঢেউ আসতে চলেছে। এটা একদিকে যেমন চ্যালেঞ্জ, অন্যদিকে তেমনই আমাদের কাছে বিরাট দায়িত্বের। একই সঙ্গে থাকছে অসংখ্য সুযোগ-সুবিধাও।
আমরা ১০০টি শহরকে স্মার্টসিটিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে কাজ করছি। ১১৫টি উন্নয়নকামী জেলাকে অগ্রগতির পথে নিয়ে আসার কাজও চলছে।
আমাদের অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে – দ্রুত গণপরিবহণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, দূষণ নিয়ন্ত্রণ, সুস্থায়ী বাসস্থান ও সুলভ আবাসন। দেশের ৮০ কোটি যুবসম্প্রদায়ের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপনের জন্য আমরা দক্ষতা উন্নয়ন ও উচ্চ শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। সিঙ্গাপুরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা দক্ষতা উন্নয়নের মতো আধুনিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করছি। চলতি অর্থবর্ষে আমাদের উচ্চতর শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের একটি কর্মসূচি চালু করা হয়েছে।
কয়েক দশক আগে সবুজ বিপ্লবের পরে এখন পুনরায় কৃষিক্ষেত্রকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। ২০২২ সালের মধ্যে আমরা কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নিয়েছি। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা প্রযুক্তি, রিমোর্ট সেন্সিং, ইন্টারনেট, ডিজিটাল অর্থ ব্যবস্থা, সহজশর্তে ঋণ সহায়তা, বিমা, মৃত্তিকার মানোন্নয়ন, সেচ ও যোগাযোগের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।
আমরা চাই, প্রত্যেক নাগরিক ২০২২ সালের মধ্যে স্বচ্ছল জীবন যাপন করুক। এর অর্থ, ঐ সময়সীমার মধ্যে প্রত্যেকের মাথার ওপর ছাদ বা ৫ কোটি বাড়ির ব্যবস্থা করা।
গত মাসে আমরা এক মাইলফলক স্পর্শ করেছি। ৬ লক্ষ গ্রামের প্রতিটির সঙ্গেই বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।
জাতীয় স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প ‘আয়ুষ্মান ভারত’ এ বছরই শুরু হয়েছে। এই কর্মসূচির ফলে ১০ কোটি পরিবার বা ৫০ কোটি ভারতীয় ব্যাঙ্ক ৮ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের স্বাস্থ্য বিমা পাবেন। প্রকৃতপক্ষেই এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্য পরিচর্যা প্রকল্প।
প্রকৃত ও সুস্থায়ী উন্নয়নের সঙ্গে জীবনযাপনের মানকেও যুক্ত করা হয়েছে। এটি আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য। আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে এর সম্পর্ক। স্বচ্ছ ভারত, নদী উন্নয়ন, দূষণমুক্ত বায়ু ও পরিচ্ছন্ন শহরের মতো কর্মসূচিগুলিকেও এই উন্নয়নে সামিল করা হয়েছে। দেশের মানুষের স্বার্থেই এই উন্নয়নযজ্ঞ রূপায়িত হচ্ছে। দেশের ১২৫ কোটি মানুষ, যার ৬৫ শতাংশেরও বয়স ৩৫ বছরের মধ্যে তাঁরা সকলে একত্রে পরিবর্তনের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। তাঁরা নতুন ভারত গড়ে তোলার ব্যাপারেও যথেষ্ট আশাবাদী। সঙ্গত কারণেই প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও নীতিতে পরিবর্তন করতে হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
ভারতে আর্থিক সংস্কারের গতি ও দিশার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা রয়েছে। ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য অর্থ ব্যবস্থাকে আরও সহজ-সরল করে তুলব। আমরা এক উদার, স্থিতিশীল ও অবাধ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছি। পূবের দেশগুলির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ও যোগাযোগ আরও মজবুত হবে।
আর্থিক দিকটিও আমাদের ‘পূবে তাকাও নীতি’র অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকবে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা সুষ্ঠু ও সামঞ্জস্যপূর্ণ চুক্তির পক্ষে, যা সমস্ত রাষ্ট্রের স্বার্থ পূরণ করবে। আমরা সদ্য সদ্য ভারত-সিঙ্গাপুর সুসংহত অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি পর্যালোচনা সম্পূর্ণ করেছি। এখন আমরা এই সহযোগিতাকে আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছি।
এক সুসংহত আঞ্চলিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে দূত চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছতে আমরা সমস্ত আশিয়ান দেশের সঙ্গে কাজ করব। এই অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ও যোগাযোগ যেহেতু বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই সিঙ্গাপুর আশিয়ান দেশগুলিতে ভারতের প্রবেশদ্বার হিসাবেই থাকবে।
বন্ধুগণ,
পরিশেষে বলতে চাই, সিঙ্গাপুরের কাছে ভারতের তুলনায় বেশি সুযোগ-সুবিধা আর কোথাও নেই। ভারত ও সিঙ্গাপুরের মতো কয়েকটি দেশের কাছে এ ধরণের অভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও সম্ভাবনা রয়েছে।
ভবিষ্যতে যে অসংখ্য সুযোগ-সুবিধা আমাদের কাছে আসছে তা কাজে লাগাতে হবে। উচ্চাকাঙ্খী হইয়ে সাহসিকতার সঙ্গে এগুলিকে কাজে লাগানোর দায়িত্ব আমাদের ওপর নিহিত। আমরা সঠিক দিশাতেই এগিয়ে চলেছে, তা এই সন্ধ্যা জানান দিচ্ছে। দুই সিংহ একসঙ্গে ভবিষ্যতের দিশায় পা বাড়াবে।
ধন্যবাদ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।