ভারতেরপ্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে ৬ থেকে ৮ এপ্রিল, ২০১৮ পর্যন্ত ভারতসফর করছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী মিঃ কে পি শর্মা ওলি।
৭এপ্রিল দুই প্রধানমন্ত্রী মিলিতভাবে ভারত ও নেপাল – এই দুটি দেশের বহুধা প্রসারিতসম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে এক পর্যালোচনা বৈঠকে মিলিত হন। দু’দেশের সরকার ও জনসাধারণ পর্যায়েএবং বেসরকারি ক্ষেত্রগুলির ক্রমপ্রসারমান সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের সম্পর্ককেতাঁরা উভয়েই আন্তরিকভাবে স্বাগত জানান। সমতা এবং পারস্পরিক আস্থা, সম্মান ও কল্যাণেরভিত্তিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে একযোগে কাজ করে যাওয়ারলক্ষ্যে তাঁরা সঙ্কল্পবদ্ধ হন।
ভারতও নেপালের এই নিবিড় মৈত্রী সম্পর্ক যে দু’দেশের সাধারণ ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকযোগাযোগ তথা নাগরিকদের মধ্যে পারস্পরিক নিবিড় সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে,সেকথার উল্লেখ করে দুই প্রধানমন্ত্রীই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করে তুলতেনিয়মিতভাবে উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সফর বিনিময় কর্মসূচির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপকরেন।
প্রধানমন্ত্রীওলি বলেন যে তাঁর সরকার ভারতের সঙ্গে মৈত্রী সম্পর্ককে আরও জোরদার করে তোলারবিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নেপাল এমনভাবেএগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী যাতে ভারতের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি এবং সেইসঙ্গে অর্থনৈতিকরূপান্তর প্রচেষ্টা ও উন্নয়ন থেকে ঐ দেশ লাভবান হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শ্রীমোদী, মিঃ কে পি শর্মা ওলিকে আশ্বাস দিয়ে বলেন যে তাঁর দেশের চাহিদা ওঅগ্রাধিকারের ভিত্তিতেই নেপালের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে জোরদার করে তুলতেভারত বরাবরই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
শ্রীমোদী বলেন, ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ – এই দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাভাবনা অনুসরণ করেভারত তার প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্কে আরও উন্নত করে তুলতে আগ্রহী। এর মূলভিত্তি হবে সমৃদ্ধি প্রচেষ্টা তথা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব। নেপালেরপ্রধানমন্ত্রী জানান যে এক বিরাট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর তাঁর সরকার ‘সমৃদ্ধ নেপাল,সুখী নেপালী’ – এই মূলমন্ত্রকে সম্বল করে অর্থনৈতিক রূপান্তর প্রচেষ্টাকে বিশেষভাবেঅগ্রাধিকার দিয়েছে। আঞ্চলিক পর্যায়ে তথা যুক্তরাষ্ট্রীয় সংসদ গঠনের ক্ষেত্রে নেপালেরসাফল্যের জন্য ঐ দেশের সরকার ও জনগণকে অভিনন্দন জানান শ্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনিবলেন, নেপালে এই প্রথম প্রাদেশিক পর্যায়ের যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে ঐদেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার চিন্তাভাবনারই সদর্থক প্রতিফলন ঘটেছে।
নেপালেরবীরগঞ্জে এক বিশেষ চেকপোস্ট ব্যবস্থার এদিন সূচনা করেন দুই প্রধানমন্ত্রী। তাঁরাআশা প্রকাশ করে বলেন যে এটি যত দ্রুত সম্ভব চালু করার মাধ্যমে আন্তঃসীমান্তপর্যায়ে বাণিজ্য ও পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করে তোলা যাবে। সেইসঙ্গে, দু’দেশেরজনগণের পরস্পরের দেশে যাতায়াতের পথও অনেক সুগম হয়ে উঠবে এবং এর সুবাদে দুটি দেশেরইমিলিতভাবে উন্নয়ন ও অগ্রগতি আরও ত্বরান্বিত হবে।
ভারতেরমোতিহারিতে, মোতিহারি-আমলেখগঞ্জ আন্তঃসীমান্ত পেট্রোলিয়াম পরিবহণের জন্য পাইপলাইনস্থাপনের সূচনাপর্বের এদিন সাক্ষী ছিলেন দুই প্রধানমন্ত্রীই।
শ্রীমোদী এবং মিঃ ওলি নেপালে দ্বিপাক্ষিক প্রকল্পগুলির দ্রুত রূপায়ণের ওপর বিশেষ জোরদেন। সেইসঙ্গে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক কর্মসূচির বিষয়গুলিকে আরও জোরদারকরে তোলার ওপরও তাঁরা গুরুত্ব আরোপ করেন।
দুইপ্রধানমন্ত্রী সহমত প্রকাশ করে বলেন যে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর এই সফর দু’দেশের বহুধাপ্রসারিত অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে আরও গতিশীল করে তুলবে।
সাদরআমন্ত্রণ এবং উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদজানান নেপালের প্রধানমন্ত্রী। সেইসঙ্গে, অদূর ভবিষ্যতে নেপাল সফরের জন্যও তিনিআমন্ত্রণ জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে। শ্রী মোদী সম্মতি প্রকাশ করে বলেন যে দু’দেশেরকূটনৈতিক পর্যায়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই তাঁর এই সফরসূচি স্থির করা হবে।
দুইপ্রধানমন্ত্রী এদিন মিলিতভাবে যে বিষয়গুলির ওপর পৃথক পৃথক বিবৃতিদান করেন, তারমধ্যে রয়েছে – ভারত-নেপাল : কৃষিক্ষেত্রে এক নতুন অংশীদারিত্ব; রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রসার : ভারতের রক্সৌল-এরসঙ্গে নেপালের কাঠমাণ্ডুর যোগাযোগ এবং অন্তর্দেশীয় জলপথের মাধ্যমে ভারত ও নেপালেরমধ্যে নতুন সংযোগ ও যোগাযোগের প্রসার।