অরোভিলেরসুবর্ণ জয়ন্তী সমারোহ সপ্তাহে আজ এখানে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি আনন্দিত। ভারতেরআধ্যাত্মিক নেতৃত্ব সম্পর্কে শ্রী অরবিন্দের চিন্তাভাবনা আজও আমাদের অনুপ্রাণিতকরে।
সেইচিন্তাভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গিরই বাস্তব প্রতিফলন ঘটেছে অরোভিলের মধ্যে। গত পাঁচদশককাল যাবৎ একটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষানৈতিক, অর্থনৈতিক এবং অধ্যাত্মিকউদ্ভাবনকেন্দ্র রূপে গড়ে উঠেছে এটি।
বন্ধুগণ,
শ্রীঅরবিন্দের বিশাল কর্মকাণ্ড ও চিন্তাভাবনা স্মরণ করার আজ হল একটি বিশেষ দিন।
কর্মনিষ্ঠা,দার্শনিকতা, কবি প্রতিভা – এই ধরনের অনেকগুলি বৈশিষ্ট্য ছিল তাঁর চরিত্রের মধ্যে।এর প্রত্যেকটি তিনি উৎসর্গ করেছিলেন জাতি তথা মানবতার বৃহত্তর কল্যাণে।
রবীন্দ্রনাথঠাকুরের একটি উদ্ধৃতি এখানে স্মরণীয় :
“অরবিন্দরবীন্দ্রের লহ নমস্কার!
হে বন্ধু,হে দেশবন্ধু, স্বদেশ-আত্মার বাণীমূর্তি তুমি” ।
বন্ধুগণ,
শ্রীমা-রমতাদর্শ অনুযায়ী, অরোভিল হল একটি সার্বজনীন শহর।অরোভিল-এর উদ্দেশ্যই হল মানবঐক্যের প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ন।
আজ এখানে এইবিশাল সমাবেশ সেই চিন্তাভাবনারই এক বাস্তব প্রতিফলন। যুগ যুগ ধরে ভারত হয়ে উঠেছেবিশ্বের এক আধ্যাত্মিক গন্তব্য। নালন্দা এবং তক্ষশিলার মতো প্রাচীনবিশ্ববিদ্যালয়গুলি সাদরে আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বের সকল প্রান্তের শিক্ষার্থীদের। বিশ্বেরবহু ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে এখানেই। দৈনন্দিন কাজকর্মের মধ্যেও একটি আধ্যাত্মিক পথখুঁজে নেওয়ার জন্য তা উদ্বুদ্ধ করেছে সকল শ্রেণীর মানুষকে।
ভারতের এইমহান ঐতিহ্যের স্বীকৃতিতেই ২১ জুন দিনটি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক যোগ দিবস রূপে ঘোষণাকরেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। সমস্তরকম সীমারেখা এবং পরিচিতির বিভেদ ও পার্থক্য অতিক্রম করেপুরুষ ও নারী, নবীন ও প্রবীণ – সকলেই একত্রিত করেছে অরোভিল।
অরোভিল-এরমূল সনদটি ফরাসী ভাষায় হাতে লিখে প্রস্তুত করেছিলেন শ্রীমা স্বয়ং। ঐ সনদ অনুযায়ী, অরোভিল-এরজন্য পাঁচটি বিশেষ নীতিকেচিহ্নিত করেছেন তিনি।
অরোভিল-এরবিশেষ নীতিগুলির প্রথমটি হল এই, যে এই বিশেষ স্থানটি উন্মুক্ত সকল মানবতার জন্যই।‘বসুধৈব কুটুম্বকম’, অর্থাৎ সমগ্র বিশ্বই হল এক ও অভিন্ন পরিবার, ভারতের সুপ্রাচীনএই মূল্যবোধেরই প্রতিফলন ঘটেছে এর মধ্যে।
১৯৬৮ সালে অরোভিল-এরউদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন বিশ্বের ১২৪টি দেশের প্রতিনিধিরা। আজ আমি জানতেপেরেছি যে বর্তমানে এখানে বাস করছেন ৪৯টি দেশের ২,৪০০ জনমানুষ।
অরোভিল-এরদ্বিতীয় বিশেষ নীতিটি হল এই যে, ঐশ্বরিক চেতনায় বিশ্বাসী যে কেউ অরোভিল-এ বাস করারযোগ্য।
মহা ঋষিঅরবিন্দের চেতনা দর্শন শুধুমাত্র মানবজাতির মধ্যেই নয়, অখণ্ড বিশ্বের মধ্যেইসংহতিসাধন করেছে। ঈসাভাষ্য উপনিষদের একটি সুপ্রাচীন উক্তির সঙ্গে এর মিল খুঁজেপাওয়া যায়। এই উক্তির এক বিশেষ অর্থ করেছেন মহাত্মা গান্ধী তাঁর এক অনুবাদেরমাধ্যমে –“ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণুকণাও হল ঐশ্বরিক ক্ষমতাসম্পন্ন” ।
অরোভিলপ্রতিষ্ঠার তৃতীয় নীতিটি হল এই, যে অতীত এবং ভবিষ্যতের মধ্যে এক সংযোগ সেতু গড়েতুলবে এই শহরটি। ১৯৬৮ সালে অরোভিল প্রতিষ্ঠাকালে ভারত তথা সমগ্র বিশ্বের সেই সময়েরঅবস্থানের দিকে যদি কেউ একবার দৃষ্টিপাত করেন, তাহলে দেখতে পাবেন যে সমগ্র বিশ্বতখন ছিল দ্বন্দ্বদীর্ণ এবং সেটি ছিল এক ঠান্ডা যুদ্ধের সময়কাল।অরোভিল-এরচিন্তাভাবনার পিছনে ছিল এক বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি। সমগ্র বিশ্বকে বাণিজ্য, পর্যটন এবংযোগাযোগের মাধ্যমে এক সংহতির অবস্থানে প্রতিষ্ঠা করাই ছিল তার লক্ষ্য।
এক ক্ষুদ্রপরিসরের মধ্যে সমগ্র মানবজাতিকে আশ্রয়দানের এক বিশেষ চিন্তাদর্শ ছিল অরোভিল-এর। এরলক্ষ্য ছিল, এক সংহত বিশ্বের মধ্যে ভবিষ্যতের স্থিতি ও অবস্থান।অরোভিলপ্রতিষ্ঠাকালে যে চতুর্থ নীতিটি অনুসরণ করা হয়েছিল, তা হল সমসাময়িক বিশ্বেরআধ্যাত্মিক ও বস্তুগত দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে সংযোগ ও সমন্বয়সাধন। বিজ্ঞান ওপ্রযুক্তির মধ্য দিয়ে বৈষয়িক ক্ষেত্রে বিশ্বের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সামাজিকস্থিতি ও শৃঙ্খলার লক্ষ্যে আধ্যাত্মিক সমন্বয় ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
এই অরোভিল-এরমধ্যে বস্তুতান্ত্রিকতা ও আধ্যাত্মিকতার সমন্বয় ও সহাবস্থান ঘটেছে এক সম্প্রীতিরপরিবেশেই।
অরোভিল-এরপঞ্চম মূল নীতিটি হল এই যে, তা হয়ে উঠবে নিরন্তর শিক্ষা ও অগ্রগতির একটি বিশেষস্থান যেখানে কোন কিছুই থেমে থাকতে পারে না।
মানবজাতিরঅগ্রগতির জন্য প্রয়োজন নিরন্তর চিন্তাভাবনা ও তার পুনর্মূল্যায়ন যাতে একটিমাত্র চিন্তাবা ভাবনাকে আশ্রয় করেই মানব মন সন্তুষ্ট থাকতে পারে না।
মানববৈচিত্র্য ও চিন্তাদর্শের বিভিন্নতার একত্রসমাবেশ ও সমাহারের মধ্য দিয়েই অরোভিলবিতর্ক ও আলাপ-আলোচনার পরিসরকে স্বাভাবিক করে তুলেছে।
ভারতীয় সমাজব্যবস্থা খুব স্বাভাবিকভাবেই বৈচিত্র্যময়। আলাপ-আলোচনা ও দার্শনিকতার ঐতিহ্যকে তালালন করে এসেছে। বিশ্ব বৈচিত্র্যের মধ্যে সুপ্রাচীন ভারতীয় পরম্পরার মিলন ঘটিয়েছে অরোভিল।
ভিন্ন ভিন্নধর্ম ও সংস্কৃতির সহাবস্থানকে স্বীকার করে নেওয়ার পাশাপাশি, সেগুলির মধ্যেপারস্পরিক শ্রদ্ধার মানসিকতাও গড়ে তুলেছে ভারত। গুরুকুলের মতো একটি প্রাচীনঐতিহ্যের জন্মস্থান হল আমাদের এই দেশ যেখানে শিক্ষা কখনই সীমাবদ্ধ থাকে না কোনশ্রেণীকক্ষের মধ্যে। এখানে জীবন হল এক চলমানপরীক্ষাগার। জীবনভর সীমাহীন এক শিক্ষারপীঠস্থান রূপেই প্রতিষ্ঠা ঘটেছে অরোভিল-এর।
সুপ্রাচীনসময়কালে আমাদের দেশের মুনি-ঋষিরা কোন বড় ধরনের কর্মপ্রচেষ্টায় নিযুক্ত হওয়ার আগে যজ্ঞানুষ্ঠানকরতেন। সময়ে সময়ে ঐ যজ্ঞগুলি ইতিহাসের পথও নির্ধারণ করে দিয়েছে।
ঐক্যেরলক্ষ্যে এই ধরনেরই একটি যজ্ঞের সূচনা হয়েছিল ঠিক ৫০ বছর আগে। পুরুষ-নারীনির্বিশেষে সকলেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেখানকার মাটি সংগ্রহ করে এনেছিল। সেইমাটি সংমিশ্রণের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল ঐক্যের পথে যাত্রা।
বহু বছরধরেই বিভিন্ন ভাবে ইতিবাচক অভিজ্ঞতা লাভ করে এসেছে সমগ্র বিশ্ব।
তা সেনিরন্তর শিক্ষা, পরিবেশ ভাবনার পুনর্জাগরণ, পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি, জৈব কৃষিব্যবস্থা, উপযুক্ত বাড়ি তৈরির প্রযুক্তি, জল ব্যবস্থাপনা কিংবা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা– যাই হোক না কেন।অরোভিল সকল সময়ে পথ প্রদর্শন করে এসেছে।
দেশে গুণগতশিক্ষার প্রসারে আপনারা প্রচুর কাজ করে এসেছেন। অরোভিল-এর ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষেআমি আশা করব যে এই লক্ষ্যে আপনাদের এই কর্মপ্রচেষ্টা আরও বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। শিক্ষারমাধ্যমে নবীনদের কাছে সেবামূলক কর্মসূচি পৌঁছে দেওয়াই হবে শ্রী অরবিন্দ এবংশ্রীমায়ের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা প্রদর্শন।
আপনাদেরঅনেকেই, এমনকি আমি নিজেও অগোচরেই আপনাদের শিক্ষা প্রচেষ্টাকে অনুসরণ করে এসেছি। শ্রীঅরবিন্দের একনিষ্ঠ শিষ্য শ্রী কিরীটভাই যোশী এবং শ্রীমা – উভয়েই ছিলেন বিশিষ্টশিক্ষাবিদ।
আমি যখনগুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, তখন তিনি ছিলেন আমারও শিক্ষা উপদেষ্টা। কিন্তুদুঃখের বিষয়, তিনি আজ এখন আমাদের মধ্যে আর নেই। কিন্তু ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁরসেই অবদান স্মরণীয় হয়ে রয়েছে।
বন্ধুগণ,
ঋগ্বেদ-এর উদ্ধৃতিঅনুযায়ী, সকল দিক থেকেই মহান চিন্তাভাবনা আমাদের আলোকিত করুক।
এই উদ্ধৃতিরসূত্র ধরে আমি বলতে চাই যে দেশের সাধারণ নাগরিকদের ক্ষমতায়নে অরোভিল-এর এইচিন্তাদর্শ অক্ষুণ্ণ ও অমলিন থাক।
দূর-দূরান্তথেকে মানুষ এখানে সমবেত হোন তাঁদের নতুন নতুন চিন্তাভাবনাকে সঙ্গে করে। আর, অরোভিলহয়ে উঠুক এই সমস্ত চিন্তাভাবনার এক সমন্বয়ভূমি।
সমগ্রবিশ্বকে তার শিক্ষাদর্শের আলোকবর্তিকা নিয়ে পথ প্রদর্শন করুক অরোভিল।
মানব মনেরসংকীর্ণ দেওয়াল ভেঙে দেওয়ার আহ্বান জানায় এই বিশেষ কেন্দ্রটি। ঐক্যবদ্ধ মানবজাতিরসম্ভাবনাগুলির উদযাপনে সকলকেই আমন্ত্রণ জানাক এই বিশেষ কেন্দ্রটি।
মহা ঋষিঅরবিন্দ এবং শ্রীমায়ের আধ্যাত্মিকতার শক্তি অরোভিল-এর প্রতিষ্ঠাকালের সেই বিশেষলক্ষ্য পূরণে আমাদের সকলের কাছে পথ প্রদর্শক হয়ে উঠুক।
ধন্যবাদ।
It is important today to remember the vast extent of action and thought of Shri Aurobindo. A man of action, a philosopher, a poet, there were so many facets to his character. And each of them was dedicated to the good of the nation and humanity: PM @narendramodi
— PMO India (@PMOIndia) February 25, 2018
Auroville has brought together men and women, young and old, cutting across boundaries and identities. I understand that Auroville’s Charter was hand-written in French by the Divine Mother herself. According to the Charter, the Mother set five high principles for Auroville: PM
— PMO India (@PMOIndia) February 25, 2018
Maharishi Aurobindo’s philosophy of Consciousness integrates not just humans, but the entire universe. This matches with the ancient saying: “ईशावास्यम इदम सर्वम्.” This has been translated by Mahatma Gandhi to mean “everything down to the tiniest atom is divine”: PM
— PMO India (@PMOIndia) February 25, 2018
As the world progresses materially through science and technology, it will increasingly long for and need spiritual orientation for social order and stability. At Auroville, the material and the spiritual, co-exist in harmony: PM
— PMO India (@PMOIndia) February 25, 2018
The fact that Auroville has brought together such huge diversity of people and ideas makes dialogue and debate natural. Indian society is fundamentally diverse. It has fostered dialogue & a philosophic tradition. Auroville show-cases this ancient Indian tradition to the world: PM
— PMO India (@PMOIndia) February 25, 2018
India has always allowed mutual respect & co-existence of different religions and cultures. India is home to the age old tradition of Gurukul, where learning is not confined to classrooms. Auroville too has developed as a place of un-ending and life-long education: PM
— PMO India (@PMOIndia) February 25, 2018