মহারাষ্ট্রের পুণে শহরে দাদা ওয়াসওয়ানির ৯৯তম জন্মদিন উপলক্ষেপ্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২৭ বছর আগেরাষ্ট্রসঙ্ঘে আয়োজিত ‘বিশ্ব ধর্ম সম্মেলন’-এ তাঁর সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা বলেন। তিনি২০১৩ সালে দাদা ওয়াসওয়ানির সঙ্গে সাক্ষাতের স্মৃতিও তুলে ধরেন।
দাদা ওয়াসওয়ানির নিঃস্বার্থ মানবসেবার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। দাদাওয়াসওয়ানির ‘মেকিং দ্য রাইট চয়েস’ ভাবনার প্রশংসা করে তিনি বলেন, মানুষ যদি সঠিকসংকল্প নেয়, তা হলে সমাজ থেকে দুর্নীতি, জাতপাত, ড্রাগ সমস্যা ও অপরাধ দূর করাসম্ভব। তিনি বলেন, ২০২২ সালে ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষেভারতবাসীকে আজই আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্বপ্নবাস্তবায়নের সংকল্প নিতে হবে। তিনি সাধু ওয়াসওয়ানি মিশনকে অনুরোধ করেন যে, তাঁরাওযেন নিজেদের সাধ্যমতো এই কর্মযজ্ঞে অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের অনুবাদ নীচে তুলে দেওয়া হ’ল –
“শ্রদ্ধেয় ‘দাদা’ জে পি ওয়াসওয়ানি’কে তাঁর ৯৯তম জন্মদিবসে আমার অনেক অনেকশুভেচ্ছা। জন্মদিন দাদা ওয়াসওয়ানির, কিন্তু তাঁর আশীর্বাদলাভের সৌভাগ্য হয়েছেআমার। তাঁর জন্মশতবর্ষের সূচনা উপলক্ষে আয়োজিত এই সমারোহে উপস্থিত সকলকে আমিআন্তরিক অভিনন্দন জানাই। দাদা ওয়াসওয়ানির লক্ষ লক্ষ শিষ্যের কাছে তাঁর নির্মল ওঅম্লান মুচকি হাসি চির পরিচিত। তাঁর সারল্য ও সহজতার পরিচয় আমি ২৭ বছর আগেইপেয়েছি। সেসময় রাষ্ট্রসঙ্ঘে আয়োজিত ‘বিশ্ব ধর্ম সম্মেলন’-এ আমারও যাওয়ার সৌভাগ্যহয়েছিল। তখন তাঁর সঙ্গে রাষ্ট্র নির্মাণ এবং সামাজিক কর্তব্য নিয়ে কয়েক ঘন্টা ধরেদীর্ঘ আলোচনা হয়েছে।
২০১৩ সালে পুণে শহরে আমরা দু’জন মিলে সাধু ওয়াসওয়ানি কলেজ অফ নার্সিং-এরউদ্বোধন করেছি।
গত বছর দাদা ওয়াসওয়ানি যখন দিল্লিতে এসেছিলেন, তখন আরেকবার তাঁর সঙ্গেসাক্ষাতের সৌভাগ্য হয়েছিল। তখনও আমরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েঅনেকক্ষণ কথা বলেছিলাম। আজ আপনাদের কাছে সশরীরে গিয়ে কথা বলতে পারলে ভাল হ’ত, কিন্তুনানা অপরিহার্য দায়িত্বের কারণে আসতে পারিনি।
সাথীগণ,
দাদা ওয়াসওয়ানির ব্যক্তিত্ব আধুনিক ভারতের সন্ত (সন্ন্যাসী) পরম্পরারআধ্যাত্মিক যাত্রাকে উন্নত করেছে।
যখনই আমার তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছে – তাঁর ব্যক্তিত্বের সন্তোষ, বিনম্রতা এবংপ্রেমের বাস্তবিক শক্তির প্রাণস্পন্দন টের পেয়েছি। পরার্থে নিজের সর্বস্ব উৎসর্গেরপ্রবৃত্তি, দাদা ওয়াসওয়ানির জীবনের ভিত্তি। দাদা জে পি ওয়াসওয়ানির একটি কথা আমারপ্রায়ই মনে পড়ে –
তুমি যত ভালো করতে পারো, করো।
তুমি যত মানুষের ভালো করতে পারো, করো!
তুমি যত ধরনের ভালো করতে পারো, করো।
আর
যত বেশিবার ভালো করতে পারো, করো!
দাদা ওয়াসওয়ানির এই দিব্য বচন সম্পূর্ণ মানবিক ক্ষমতায়নের পথ খুলে দেয়।
আমাদের সমাজে কত না দীন-দুঃখী, গরিব, দলিত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষ রয়েছেন!তাঁরা নিজেদের পরিস্থিতি শুধরানোর জন্য লড়াই ও পরিশ্রম করছেন।
সাধু ওয়াসওয়ানি মিশন বছরের পর বছর ধরে উন্নয়নের মাধ্যমে এঁদের জীবন স্বচ্ছন্দকরার চেষ্টা করছে। আমি তাঁদের হৃদয় থেকে অভিনন্দন জানাই।
সাথীগণ,
আপনারা সবাই আজ ‘দাদা’র জন্মবার্ষিকী উৎসব উদ্বোধন করতে চলেছেন বলে আমিআনন্দিত। আমি আজ বিশেষভাবে আপনাদের দু’দিন আগের আলোচনার বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখতেচাই। আজকের প্রেক্ষিতে সেই ‘মেক দ্য রাইট চয়েস’ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
জীবনে ঠিক আর ভুল বিকল্প নিয়ে দাদা ওয়াসওয়ানির সেই বক্তব্য আমি এখানে তুলেধরতে চাই। তিনি বলেছিলেন, “সঠিক বিকল্প বাছার আগে আমাদের নিজের চেতনাকে শান্ত করতেহবে, ভাবনাকে শান্ত করতে হবে, চারিদিকে ঈশ্বরের উপস্থিতি মেনে নিয়ে খোলা মনেচিন্তা করলেই আমরা সঠিক বিকল্প বেছে নিতে পারব! জীবনের প্রত্যেক অভিজ্ঞতা আমাদেরএকটি শিক্ষা দেয়। এটা আমাদের উপর যে আমরা কিভাবে শিক্ষা গ্রহণ করব”।
দাদা ওয়াসওয়ানির এই বাণী থেকে আজকের নবীন প্রজন্ম প্রেরণা নিতে পারে।জীবনের পথে মানুষকে হামেশা এ ধরণের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়।
আজ সমাজে ব্যাপ্ত যাবতীয় অনর্থের কারণ হ’ল – ঠিক কোনটা আর ভুল কোনটা – তাজেনেও কিছু মানুষ ভুলটাকে বেছে নেয়।
দুর্নীতি, জাতপাত, অপরাধ, ড্রাগসের নেশা এই সকল অনর্থ থেকে মুক্তির উপায়হ’ল প্রত্যেকের নিজের জীবনে বিকল্প বেছে নেওয়ার প্রবৃত্তিকে শুধরানো।
সমাজে প্রত্যেক ব্যক্তি সঠিক বিকল্প বেছে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমেইশক্তিশালী সমাজ গঠনের ভিত্তি গড়ে ওঠে।
সাথীগণ,
এটা অত্যন্ত সুন্দর সংযোগ যে এ বছরই চম্পারণ সত্যাগ্রহের শতবর্ষ পেরিয়েছে।চম্পারণ সত্যাগ্রহের মাধ্যমে মহাত্মা গান্ধী শুধু দেশকে সত্যাগ্রহের শক্তিসম্পর্কে অবহিত করিয়েছেন, তিনি সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে গণঅংশীদারিত্বকেও একটিশক্তিশালী মন্ত্র রূপে স্থাপন করেন। এই সম্পারণ সত্যাগ্রহের শতবর্ষকে সরকার‘স্বচ্ছাগ্রহ’ রূপে পালন করছে।
দাদা ওয়াসওয়ানির আশীর্বাদ এই ‘স্বচ্ছাগ্রহ’কে আরও শক্তি যোগাবে। মহাত্মাগান্ধীর অসম্পূর্ণ কাজগুলি বাস্তবায়িত করতে সহায়করূপে পরিগণিত হবে।
আজ ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ দেশে একটি গণআন্দোলনের রূপ নিয়েছে। ২ অক্টোবর,২০১৪ তারিখে আমরা যখন এই অভিযান শুরু করেছিলাম, তখন দেশে গ্রামীণ পরিচ্ছন্নতারমাত্রা কেবলই ৩৯ শতাংশ ছিল। আজ সেই মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে ৬৬ শতাংশে পৌঁছেছে। একটিসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। গ্রামে-গ্রামে, জেলা-জেলায়, রাজ্যগুলির মধ্যেউন্মুক্ত স্থানে প্রাকৃতিক কর্ম থেকে মুক্তিদানের প্রতিযোগিতা চলছে। ইতিমধ্যেইদেশের ২ লক্ষ ১৭ হাজার গ্রাম নিজেদের উন্মুক্ত স্থানে প্রাকৃতিক কর্ম থেকে মুক্তঘোষণা করে দিয়েছে। দেশের পাঁচটি রাজ্য – হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, উত্তরাখন্ড,সিকিম এবং কেরল এই তালিকায় সবার ওপরে।
আপনারা সকল লোকশিক্ষা ক্ষেত্রে, নারী কল্যাণ ক্ষেত্রে, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেএত কিছু করেছেন। পরিচ্ছন্নতা অভিযানে আপনারাও সামিল হলে মানুষ শিক্ষিত হয়ে উঠবে,তাঁদের স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।
আমি আজ এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের প্রত্যেক সমাজসেবী সংগঠনকে অনুরোধজানাতে চাই।
সাথীগণ,
ইঁট-পাথর বাঁধাই করে শৌচালয় নির্মাণ করা যেতে পারে, কর্মচারীদের একত্রিতকরে সড়কের সাফাই করানো যেতে পারে, রেল স্টেশন, বাস স্তেশন পরিষ্কার করানো যেতে পারে,কিন্তু সেগুলিকে সর্বদা পরিচ্ছন্ন রাখতে সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে।
পরিচ্ছন্নতা একটি ব্যবস্থা নয়, পরিচ্ছন্নতা একটি প্রবৃত্তি। আমাদের সকলেরস্বভাবে এই প্রবৃত্তি অঙ্কুরিত হলে, ঐকান্তিকতার সঙ্গে নিয়মিত অভ্যাস করলে তবেই এইপ্রবৃত্তি আমাদের সমাজের চরিত্র হয়ে উঠবে।
একই রকমভাবে পরিবেশ সংরক্ষণের প্রতিও মানুষকে সচেতন করে তোলার প্রয়োজনীয়তারয়েছে। আজ আবহাওয়া পরিবর্তন গোটা বিশ্বের সামনে একটি বিরাট সমস্যা হইয়ে দাঁড়িয়েছে।যত সম্ভব বৃক্ষরোপণ, বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদন, সৌরশক্তি উৎপাদনের প্রতি মানুষেরআগ্রহ বৃদ্ধির কাজ, জল সংরক্ষণের জন্য মানুষকে প্রেরণা যোগানো আমাদের প্রকৃতিকেপরিবেশ-বান্ধব করবে।
সাথীগণ,
দাদা ওয়াসওয়ানি এবং তাঁর সংস্থা আমাকে এত ভালোবাসা দিয়েছে বলেই আমি সেইঅধিকার নিয়ে আপনাদের কাছে একটি আব্দার করতে চাই।
আমাদের দেশ ২০২২ সালে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উৎসব পালন করবে। দাদাওয়াসওয়ানি স্বয়ং স্বাধীনতা আন্দোলনের সাক্ষী। দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ বিসর্জনদেওয়া আমাদের দেশের বীর সন্তানদের স্বপ্ন আজও অসম্পূর্ণ রয়েছে। গোটা দেশ ২০২২সালের মধ্যে সেইসব অসম্পূর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার সংকল্প নিচ্ছে। এই সংকল্প নিউইন্ডিয়া (নতুন ভারত) গড়ে তোলার সংকল্প।
দাদা ওয়াসওয়ানির আশীর্বাদ, সাধু ওয়াসওয়ানি মিশনের ইচ্ছাশক্তি এই সংকল্পকেবাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। সেজন্য আমার অনুরোধ, আপনাদের সংস্থা যেন ২০২২সালকে লক্ষ্য নির্ধারণ করে। এমন লক্ষ্য যা সংখ্যায় পরিমাপ করা যাবে!
যেমন আপনারা যদি পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করেন, তা হলেবছরে ১০ হাজার কিংবা ২০ হাজার মানুষ, সৌরশক্তি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ৫ হাজারমানুষকে লক্ষ্য করে এগোবেন, আপনাদের সংস্থাকে এরকম সংকল্প গ্রহণ করতে হবে।
যখন দেশের প্রত্যেক ব্যক্তি, প্রতিটি পরিবার, প্রত্যেক সংস্থা নিজস্বলক্ষ্য নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়নের জন্য পরিশ্রম করবেন, তখনই লক্ষ্যে পৌঁছনোসম্ভব হবে আর নিউ ইন্ডিয়ার স্বপ্নও বাস্তবায়িত হবে।
দাদা ওয়াসওয়ানির জীবনকে দেখে, আমরা সবাই যাঁরা তাঁকে ভালোবাসি, আর তিনিযাঁদের ভালোবাসেন, সকলের জন্য এই শতবর্ষ পালন কেমনভাবে করব, তা আমাদের স্থির করতেহবে।
আমার পরামর্শ হ’ল, এই শতবর্ষ পালন একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে রচিত হোক, যখনপ্রত্যেক ব্যক্তি সমাজের জন্য কিছু করব, সমাজের জন্য বাঁচব, আর আমার বিশ্বাস, এটাইহবে দাদা ওয়াসওয়ানির তপস্যার মূর্তরূপ প্রদর্শন।
দাদা ওয়াসওয়ানির শিক্ষা থেকে আমরা সর্বদাই এই লক্ষ্যে পৌঁছনোর প্রেরণা নিতেপারব।
আমাদের সবার ওপর তাঁর আশীর্বাদ বর্ষিত হতে থাকুক, এই কামনা নিয়ে আমি নিজেরবক্তব্য সম্পূর্ণ করছি। আরেকবার আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
ধন্যবাদ!!!”
অবশেষে, দাদা ওয়াসওয়ানি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁকে বর্তমানপৃথিবীর মহানতম নেতা বলে আখ্যা দেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর জন ধন যোজনা, মেক ইনইন্ডিয়া, স্বচ্ছ ভারত অভিযান ইত্যাদি উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, এগুলিরপ্রভাব চোখে দেখা যাচ্ছে। ভারত বিগত তিন বছরে অনেক বদলে গেছে। তিনি আরও বলেন যে –রাজনীতি নয়, সঠিক সময়ে সঠিক শিক্ষাই রাষ্ট্রগঠনের মূল চাবিকাঠি। আমাদেরপ্রত্যেকেরই উচিৎ দেশকে এমন রাষ্ট্রে পরিণত করা, যার জন্য আমরা সবাই গর্ববোধ করব।