নয়া দিল্লি: ০১ জানুয়ারি: আজ একটা খুব সুন্দর মুহূর্ত, যখনআমরা দেশের জন্য নিজের জীবন সমর্পণকারী দেশের মহান সন্তানকে স্মরণ করছি| দেশেরজন্য নিরন্তর কাজ করে যাওয়া ও নিজেকে সমর্পিত করার ক্ষেত্রে এটা এমন এক উদ্যম, যাআমাদেরকে দিন-সময়-মুহূর্তের চিন্তার বাইরে একসঙ্গে নিয়ে আসে|
আচার্যসত্যেন্দ্রনাথ বসু’র ১২৫তম জন্মোত্সবে আমি আপনাদের সবাইকে, বিশেষ করে বিজ্ঞানীবন্ধুদের অনেক অনেক শুভেচ্ছে জানাচ্ছি|
বন্ধুগণ, প্রতি বছরের সূচনায় বিভিন্ন প্রখ্যাতবিজ্ঞানীদের সঙ্গে আমার আলোচনা করার সুযোগ হয়| আমি আনন্দিত যে, আমার কিছুচিন্তাভাবনা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করার এক সুবর্ণ সুযোগ এসেছে|
আজআমরা আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসুর ১২৫তম জন্মজয়ন্তীর বর্ষব্যাপী অনুষ্ঠানের সূচনাকরতে যাচ্ছি, যিনি ১৮৯৪ সালের এমনই দিনে (১ জানুয়ারি) জন্মগ্রহণ করেছিলেন| আমিতাঁর কর্মকৃতি ও সাফল্য সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছি, যা তখনকার সময় ও সমাজের চেয়েঅনেক দূর এগিয়ে ছিল|
বন্ধুগণ, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস তাঁর একগীতিকাব্যে বলেছিলেন—
“বাংলারজল ও বাংলার মাটিতে এক চিরন্তন সত্য নিহিত রয়েছে”|
এটাহচ্ছে সেই সত্য, যা বাংলার মানুষদের মনন ও চিন্তাকে সেই স্তরে নিয়ে যায়, যেখানেপৌঁছানো কঠিন| এটা সেই সত্য, যার জন্য বাংলা শতাব্দীর পর শতাব্দী অক্ষ হিসেবেদেশকে ধরে রেখেছে|
স্বাধীনতাআন্দোলনের বিষয় হোক, সাহিত্য হোক, বিজ্ঞান হোক, খেলাধুলা হোক, সমস্ত ক্ষেত্রেইবাংলার জল ও বাংলার মাটির প্রভাব স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়ে থাকে| স্বামী রামকৃষ্ণপরমহংস, স্বামী বিবেকানন্দ, গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুভাষচন্দ্র বসু,শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি, বঙ্কিমচন্দ্র, শরত্চন্দ্র, সত্যজিত রায়—আপনি যেকোনোক্ষেত্রেরই নাম করুন, বাংলার কোনো না কোনো নক্ষত্রকে সেখানে উজ্জ্বল হয়ে দেখতেপাবেন|
ভারতেরজন্য এটা এক গর্বের বিষয় যে, এই ভূমি একের পর এক শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিককেও গোটাবিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে| আচার্য এস.এন. বসু ছাড়াও জে.সি. বসু, মেঘনাদ সাহা আরওকতো নাম, যারা দেশে আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করেছেন|
অনেককম সংস্থান এবং অনেক বেশি সংঘর্ষের মধ্যে তাঁরা তাঁদের চিন্তাধারা ও আবিষ্কারেরমধ্য দিয়ে মানুষের সেবা করেছেন| আজও আমরা তাঁদের সমর্পণ ও সৃজনশীলতা থেকে শিখেযাচ্ছি|
বন্ধুগণ, আচার্য এস.এন. বসুর জীবন ও কর্মকৃতিথেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার রয়েছে| তিনি ছিলেন একজন স্ব-শিক্ষিত বিদ্বান| নানাধরনের প্রতিকূলতা সত্বেও তিনি সফল হয়েছিলেন| এইসব প্রতিবন্ধকতার মধ্যে ছিল প্রথাগতগবেষণা-শিক্ষা ও বিশ্বের বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে খুবই কম সংযোগ| অজ্ঞাতবিজ্ঞানের প্রতি তাঁর একনিষ্ঠতার জন্যই ১৯২৪ সালে তাঁর যুগান্তকারী কাজ সম্ভবহয়েছে|
যাউদ্যোগ কোয়ান্টাম স্ট্যাটিস্টিকসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিল এবং আধুনিক পরমাণু-তত্ত্বেরমূলনীতির সূচনা করেছিল| আইনস্টাইনের জীবনীকার অ্যাব্রাহাম পেস তাঁর কাজকেকোয়ান্টাম থিওরির শেষতম চারটি উল্লেখযোগ্য কাজের একটি বলে উল্লেখ করেছেন| বোসস্ট্যাটিস্টিক, বোস আইনস্টাইন ঘনত্ব, হিগস-বোসনের মতো বিজ্ঞানের বিভিন্ন পরিভাষা ওধারনায় সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নাম বিজ্ঞানের ইতিহাসে অমর হয়ে রয়েছে|
সত্যেন্দ্রনাথবসুর কাজের মৌলিক গুরুত্বকে একটি বিষয় থেকে পরিমাপ করা যেতে পারে যে, তাঁর ধারণাকেপদার্থবিদ্যার বিভিন্ন ব্যবহারের ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় পরবর্তীকালে বেশকিছুগবেষককে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে|
স্বদেশীভাষায় বিজ্ঞান-শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে অধ্যাপক বসু ছিলেন একজন অগ্রণী যোদ্ধা| তিনিবাংলায় বিজ্ঞানের সাময়িকপত্র ‘জ্ঞান ও বিজ্ঞান’-এর সূচনা করেন|
আমাদেরছোটদের মধ্যে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে এবং বিজ্ঞানকে সহজবোধ্য করে তুলতে হলেবিজ্ঞানের সঙ্গে তাদের যোগাযোগকে আরও ভালোভাবে করতে হবে| ভাষা এক্ষেত্রে যেন কোনোবাধা হওয়ার পরিবর্তে সহায়ক ভুমিকা পালন করতে পারে|
বন্ধুগণ, ভারতের বৈজ্ঞানিক গবেষণারবাস্তুতন্ত্র অনেক বেশি মজবুত| আমাদের দেশে প্রতিভার যেমন অভাব নেই, তেমনি পরিশ্রমবা উদ্দেশ্যেরও ঘাটতি নেই|
গতকয়েক দশক ধরে ভারত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আরও গতি নিয়ে এগিয়ে এসেছে| সেটাতথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রেই হোক, মহাকাশ গবেষণা হোক, মিসাইল প্রযুক্তি হোক, সবক্ষেত্রেই ভারত গোটা বিশ্বে নিজের কর্তৃত্ব স্থাপন করতে পেরেছে| আমাদেরবৈজ্ঞানিকগণ, আমাদের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের এই সাফল্য গোটা দেশের জন্য এক গর্বেরবিষয়|
ইসরো’ররকেটে করে যখন একবারেই একশটির বেশি কৃত্রিম উপগ্রহ উত্ক্ষেপণ করা হয়, তখন গোটাবিশ্ব বিস্ফারিত চোখে দেখে| সেসময় আমরা ভারতীয়রা আমাদের মাথা উঁচু করে নিজেদেরবৈজ্ঞানিকদের এই কৃতিত্বের জন্য উত্ফুল্লিত হয়ে থাকি|
বন্ধুগণ, আপনারা গবেষণাগারে যে পরিশ্রম করেন,নিজের জীবনপাত করেন, তা যদি শুধুমাত্র গবেষণাগারেই থেকে যায়, তাহলে তা দেশের সঙ্গেআপনার সঙ্গে অনেক বড় অন্যায় হবে| দেশের বৈজ্ঞানিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য আপনাদেরপরিশ্রম তখনই সার্থক হবে, যখন আপনারা নিজেদের মৌলিক জ্ঞানকে আজকের সময়ের হিসেবেদেশের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারবেন| সেজন্য আজ এটা খুব প্রয়োজন যে, আমাদেরউদ্ভাবনা, আমাদের গবেষণার চূড়ান্ত ফলাফল স্থির হোক| আপনার আবিষ্কারের ফলে কি কোনোগরিবের জীবন সহজ হচ্ছে, মধ্যবিত্ত কোনো ব্যক্তির সমস্যা কমছে কি?
যখনআমাদের বৈজ্ঞানিক ব্যবহারের ফলে আমাদের সামাজিক-আর্থিক সমস্যার সমাধান নিয়ে আসবে,তখন আপনার চূড়ান্ত ফলাফল, আপনার লক্ষ্য স্থির করার ক্ষেত্রেও সহজ হবে|
আমারবিশ্বাস যে, আমাদের দেশের বৈজ্ঞানিকগণ প্রথাগত ধারণার বাইরে নিজেদের ধারণার মধ্যদিয়ে দেশকে সৃজনশীল প্রযুক্তির সমাধানদিতে থাকবেন, যার সুবিধা দেশের সাধারণ মানুষ পাবেন, তাদের জীবন আরও অনেক সহজ হয়েউঠবে|
আমাকেবলা হয়েছে যে, বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান সৌরশক্তি, পরিচ্ছন্ন বিদ্যুত, জলসংরক্ষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মত বিষয়গুলোর দিকে মনোযোগ দিয়ে গবেষণা ও উন্নয়ন কর্মসূচি(আর. এন্ড ডি.) শুরু করেছেন| এ ধরনের কর্মসূচি ও এর ফলাফল যেন শুধুমাত্রগবেষণাগারেই থেকে না যায়, এটাও আমাদের সবার দায়িত্ব|
বিশিষ্টবৈজ্ঞানিকগণ ও ছাত্রছাত্রীরা, আপনারা সবাই পড়েছেন এবং কোয়ান্টাম মেকানিকস সম্পর্কেঅভিজ্ঞও| আমি এনিয়ে পড়িনি| কিন্তু আমি এটা বুঝি যে, পদার্থবিদ্যার এমন বেশকিছুবিষয় রয়েছে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শিক্ষা দিতে পারে| একটি ক্লাসিক্যাল কণাসহজে ‘ডিপ ওয়েলের’ ভেতর থেকে সরতে না পারলেও কোয়ান্টাম কণা তা পারে|
কোনোনা কোনো কারণে আমরা নিজেদেরকে বিচ্ছিন্নতার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রেখেছি| আমরা খুবকমই অন্য প্রতিষ্ঠানের ও জাতীয় গবেষণাগারের সহকর্মী বিজ্ঞানীদের সঙ্গে সহযোগিতাকরি, একসঙ্গে কাজ করি অথবা আমাদের অভিজ্ঞতাকে শেয়ার করি|
আমাদেরসঠিক সম্ভাব্যতায় পৌঁছাতে এবং ভারতের বিজ্ঞানকে এর ন্যায্য গরিমায় নিয়ে যেতেআমাদেরকে বাইরে বেরিয়ে যাওয়া কোয়ান্টাম কণার মতোই হতে হবে| আর এটা বর্তমান সময়েআরও বেশি জরুরি| কেননা বিজ্ঞান এখন বহুমুখী হয়ে উঠেছে এবং এরজন্য সম্মিলিতপ্রচেষ্টার প্রয়োজন|
আমিব্যবহারিক ও গবেষণা পরিকাঠামোর আরও বেশি আদান-প্রদানের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছি,যেগুলো অনেক বেশি ব্যয়বহুল ও সংক্ষিপ্ত জীবনকালের|
আমাকেবলা হয়েছে যে, আমাদের বিজ্ঞান বিভাগ একটি বহুমুখী অভিমুখ নিয়ে কাজ করছে| বৈজ্ঞানিকপরিকাঠামো আদান-প্রদানের জন্য একটি পোর্টাল তৈরি করা হচ্ছে, যা সংস্থান ও সম্পদেরস্বচ্ছ ও দক্ষ ট্যাগিং ও শেয়ারিং করবে|
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং গবেষণা ও উন্নয়ন (আর. এন্ড ডি.) প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শক্তিশালীসমন্বয়ের জন্য একটি পদ্ধতি নিয়ে আসা হচ্ছে| শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানএবং শিল্প থেকে শুরু করে স্টার্ট-আপ পর্যন্ত সমস্ত ক্ষেত্রের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহযোগীদের একসঙ্গে নিয়ে আসার জন্য শহর ভিত্তিক আর. এন্ড ডি. ক্লাস্টার তৈরি করাহচ্ছে|
এইকৌশলের অধীনে সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতার ওপরই এইপ্রচেষ্টার সাফল্য নির্ভর করবে| এর জন্য আমাদের সবার সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন|যাতে দেশের দূরতম প্রান্তের কোনো বিজ্ঞানী আই.আই.টি. দিল্লি অথবা দেরাদুনেরসি.এস.আই.আর. ল্যাবের সুবিধা যাতে পেতে পারেন, তা সুনিশ্চিত করাতে হবে| আমাদেরপ্রচেষ্টা ও কাজের সম্পূর্ণতা যেন সবসময় বিভিন্ন ক্ষেত্রের যোগফলের চেয়ে বেশি হতেপারে, তা সুনিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত|
বন্ধুগণ, উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি ও রূপান্তরের জন্যবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি একটা অসাধারণ চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে| আমি আপনাদেরকে,দেশের বৈজ্ঞানিকদেরকে আবার আহ্বান জনাবো, যাতে তাঁরা আমাদের আর্থ-সামাজিকপ্রতিকূলতার দিকে মনোযোগ দিয়ে নিজেদের উদ্ভাবনার লক্ষ্য স্থির করেন|
আপনারাজানেন যে, দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ বিশেষ করে আদিবাসী সমাজের হাজার হাজার শিশু ‘সিকলসেল অ্যানিমিয়ায়’ আক্রান্ত| এনিয়ে দশকের পর দশক ধরে গবেষণা হচ্ছে| কিন্তু এই রোগেরএকটা সাশ্রয়ী সহজ সমাধান গোটা বিশ্বের কাছে দেবো বলে কি আমরা সংকল্প গ্রহণ করতেপারিনা?
অপুষ্টিরপ্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কি আরও বেশি প্রোটিন সমৃদ্ধ ডালের নতুন নতুনপ্রজাতি তৈরি করা যায় না? আমাদের সবজি ও শস্যের গুণমানকে কি আরও বেশি উন্নত করাযায়? নদীগুলোকে পরিচ্ছন্ন করার জন্য, আগাছা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য কি নতুনপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করাকে আরও বেশি গতিশীল করা যেতে পারে?
ম্যালেরিয়া,যক্ষ্মা, জাপানিজ এনকেফেলাইটিজের মতো অসুখ প্রতিরোধে নতুন ওষুধ, নতুন টিকা তৈরিকরা যেতে পারে? আমরা কি এ ধরনের ক্ষেত্র বাছাই করতে পারি, যেখানে আমাদের প্রথাগতজ্ঞান ও আধুনিক বিজ্ঞানকে সৃজনশীলভাবে মিশ্রণ করা যাবে?
বন্ধুগণ, নানা কারণে আমরা প্রথমশিল্প-বিপ্লবের সুযোগ হারিয়েছি| আজ আমরা এ ধরনের সুযোগ হাতছাড়া করতে পারিনা| বর্তমানেযেসব বিষয় যেমন নকল বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডাটা অ্যানালিটিক্স, মেশিন লার্নিং,সাইবার-ফিজিক্যাল সিস্টেম, জেনোমিক্স, ইলেকট্রিক ভেহিকেলের মত নানা বিষয়গুলিতেআপনাদের মনোযোগ প্রয়োজন| একটি দেশ হিসেবে আমরা যেন সেসব উদীয়মান প্রযুক্তি ওউদ্ভাবনার সঙ্গে যেন তাল মিলিয়ে চলতে পারি, তা অনুগ্রহ করে সুনিশ্চিত করবেন|
আমাদেরবিজ্ঞানীগণ এইসব প্রতিকূলতাকে কীভাবে মোকাবিলা করবেন, তার ওপর আমাদের স্মার্টম্যানুফ্যাকচারিং, স্মার্ট সিটি, ইন্ডাস্ট্রি ৪.০, ইন্টারনেট-ও-থিং ইত্যাদিরসাফল্য নির্ভর করবে| আমাদের বৈজ্ঞানিক বাস্তুতন্ত্রকে অবশ্যই উদ্ভাবক ও উদ্যোগীদেরসঙ্গে সংযুক্ত হতে হবে, যাতে তাদেরকে সহায়তা করা যায়, সুযোগ পৌঁছে দেওয়া যায় ওসক্ষম করা যায়|
বন্ধুগণ, আমাদের দেশে জনসংখ্যার যে শক্তি,তাতে গোটা বিশ্বের ঈর্ষা হতে পারে| এই বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে সরকার স্ট্যান্ড-আপইন্ডিয়া, স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া, স্কিল ডেভেলপমেন্ট মিশন, প্রধানমন্ত্রী মুদ্রাযোজনার মত কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে| এই পর্যায়ে আমরা দেশে কুড়িটি এ ধরনেরপ্রতিষ্ঠানের নির্মাণের প্রচেষ্টা করছি, যেগুলো বিশ্বের মধ্যে নিজের ক্ষমতা জাহিরকরতে পারে, যাদের পরিচয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ের হবে|
ইনস্টিটিউটঅফ এমিনেন্স মিশনের মধ্যে যুক্ত হওয়ার জন্য সরকার উচ্চশিক্ষার সঙ্গে সংযুক্তসরকারি ও বেসরকারি সংস্থাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে| আমরা নিয়মের মধ্যে বদল এনেছি,আইনের মধ্যে পরিবর্তন ঘটিয়েছি| বেসরকারি ক্ষেত্রের যে প্রতিষ্ঠান মনোনীত হবে,তাদেরকে এককালীন ১০০০ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে|
এস.এন.বোস ন্যাশনাল সেন্টার ফর বেসিক সায়েন্স এবং এ ধরনের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিআমার আহ্বান হচ্ছে, তারা যেন তাদের প্রতিষ্ঠানকে শীর্ষ রেংকিং-এর প্রতিষ্ঠান করারজন্য কাজ করেন| আজ আমার আরও একটি আহ্বান হচ্ছে যে, এই প্রতিষ্ঠানে এমন ধরনেরবাস্তুতন্ত্র তৈরি করুন, যাতে ছাত্রছাত্রী ও তরুণ-তরুণীরা গবেষণার জন্যআগ্রহান্বিত হতে পারেন|
যদিপ্রত্যেক বৈজ্ঞানিক শুধুমাত্র একটি শিশুকে বিজ্ঞান শিক্ষা, গবেষণার প্রতি তারআগ্রহ বৃদ্ধি করার জন্য সামান্য সময় দিতে পারেন, তাহলে দেশের লক্ষ লক্ষছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যত তৈরি হতে পারে| আচার্য এস.এন. বোসের ১২৫তম জন্মজয়ন্তীতে এটাইতাঁর প্রতি সবচেয়ে বড় শ্রদ্ধাঞ্জলি হবে|
বন্ধুগণ, ২০১৭ সালে আমরা সবাই, সোয়াকোটিভারতীয় সম্মিলিতভাবে একটি সংকল্প গ্রহণ করেছি| এই সংকল্প হচ্ছে ‘নিউ ইন্ডিয়া’ বা‘নব ভারতের’| এই সংকল্প হচ্ছে ২০২২ সালের মধ্যে দেশকে অভ্যন্তরীণ মন্দগুলি থেকেমুক্ত করা| এই সংকল্প হচ্ছে সেই ভারত গঠনের, যে ভারতের স্বপ্ন আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামীগণ দেখেছিলেন|
২০১৮সালের এই বছর সেই সংকল্পের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ| এই বছরে আমাদেরকে সমস্ত শক্তিও উদ্যমকে সংকল্প সিদ্ধির জন্য কেন্দ্রীভূত করতে হবে|
দেশেরসমস্ত ব্যক্তি, সব পরিবার, প্রত্যেক সংস্থা, প্রতিটি সংগঠন, সমস্ত বিভাগ, প্রত্যেকমন্ত্রককেই নিজের নিজের অবদান রাখতে হবে| যেভাবে কোনো স্টেশন থেকে যখন ট্রেন চলতেশুরু করলে পাঁচ-দশ মিনিট পরে নিজের সম্পূর্ণ গতিতে আসে, সেভাবেই ২০১৮ সালের এই বছরহচ্ছে নিজেদের সম্পূর্ণ গতি ব্যবহারের জন্য|
দেশেরবিজ্ঞানীদেরও, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে যুক্ত ব্যক্তিদেরও নিজেদের উদ্ভাবনা ওগবেষণার সমস্ত লক্ষ্য নিউ ইন্ডিয়া নির্মাণের দিকেই কেন্দ্রীভূত করতে হবে|
আপনারউদ্ভাবনা দেশের গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষকে মজবুত করবে, দেশকে শক্তিশালী করবে| আধারহোক, প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তর হোক, মৃত্তিকা স্বাস্থ্যপত্র হোক, স্যাটেলাইট ওড্রোনের মাধ্যমে প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা হোক—এইসব ব্যবস্থা আপনাদেরই তৈরি করা|
এধরনের আর কী কী করা যায়, কীভাবে কর্মসংস্থান-নির্ভর অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করাযায়—এসব নিয়ে বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক সহায়তা করতে পারে| বিশেষ করে দেশেরগ্রামীণ এলাকায় সেখানকার মানুষের প্রয়োজনীয়তার নিরিখে নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসা,নতুন প্রযুক্তিকে গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনাদের ভুমিকা অনেকগুরুত্বপূর্ণ|
বন্ধুগণ, গৃহনির্মাণ, পানীয় জল, বিদ্যুত,রেলওয়ে, নদী, সড়ক, বিমানবন্দর, সেচ, যোগাযোগ, ডিজিট্যাল পরিকাঠামোর মত অনেকক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্ভাবনা আপানাদের অপেক্ষা করছে|
সরকারআপনাদের সঙ্গে রয়েছে, সম্পদ আপনাদের সঙ্গে রয়েছে, সামর্থ্য আপনাদের কারো কম নয়,তাই সফলতাকেও আপনাদের কাছে আসতেই হবে| আপনারা সফল হলে দেশ সফল হবে| আপনাদের সংকল্পপূরণ হলে দেশের সংকল্প পূরণ হবে|
বন্ধুগণ, পরবর্তী কর্ম পরিকল্পনা থাকলেইউদ্বোধন বা সূচনা এক উদ্দেশ্য সাধন করে| আমি জেনে খুশি হয়েছি যে, এই উদ্বোধনের পরআকর্ষণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ নানা কর্ম পরিকল্পনা রয়েছে|
আমাকেবলা হয়েছে যে, ১০০টির বেশি বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ে আউটরিচ লেকচারের পরিকল্পনা করাহয়েছে| তাছাড়া রয়েছে বেশকিছু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মেলন, বৈজ্ঞানিকভাবে ১২৫টিকঠিন সমস্যার সমাধান নিয়ে প্রতিযোগিতা ইত্যাদি|
মেধাবীকোনো ধারণার প্রাসঙ্গিকতা সময়ের গণ্ডি অতিক্রম করে যায় এবং তারপরও তা আলোচনারবিষয়বস্তু হয়ে থাকে| বর্তমান সময়েও আচার্য বসুর কর্মকৃতি বৈজ্ঞানিকদের অনুপ্রেরণাজুগিয়ে যাচ্ছে|
বৈজ্ঞানিকগবেষণার উদীয়মান ক্ষেত্রে আপনাদের উদ্দম সফল হোক বলে আমি কামনা করি| আমার দৃঢ় বিশ্বাসযে, আপনাদের নিরলস প্রচেষ্টায় দেশের সামনে এক উন্নত ও উজ্জ্বল ভবিষ্যত খুলে যাবে|
আমিআপনাদের সবাইকে এক পরিপূরক ও সৃজনশীল নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি|
জয়হিন্দ!