Swami Pranavananda connected his disciples to service and spirituality: PM
During several natural disasters, BSS teams have served people with great dedication: PM Modi
Societal development through 'Bhakti', 'Shakti' and 'Jan Shakti' was achieved by Swami Pranavananda: PM
Swami Pranavananda never liked social divisions and inequalities: PM
In the last three years, the development of the Northeast has become a priority. Focus is on connectivity and infrastructure: PM

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভারত সেবাশ্রম সংঘের শতবর্ষ উদযাপনউৎসবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভাষণ দেন। অনুষ্ঠানটি শিলং-এ আয়োজিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে ভারত সেবাশ্রম সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্রীমৎস্বামী বিশ্বাত্মানন্দজি মহারাজ ভারতের গৌরবময় আধ্যাত্মিকতা ও সেবার ঐতিহ্যসম্পর্কে বলেন।

সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী গুজরাটে তিনি যখন ভারত সেবাশ্রমসংঘের সঙ্গে কাজ করেছিলেন, তখনকার কথা স্মরণ করেন। তিনি ভারত সেবাশ্রম সংঘকেশতবর্ষ উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, এই সংগঠনে সেবা ও শ্রম এই দুই গুণের সমন্বয়ঘটেছে।

তিনি বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই সংগঠনের কাজকর্ম এবং বিপর্যয়ের সময় এরভূমিকা বিশেষভাবে প্রশংসনীয়।

প্রধানমন্ত্রী পুঁথি ইত্যাদিতে যেমন বলা আছে তেমনভাবেই গরিব ও দুস্থদেরসেবা করার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন।

তিনি বলেন, ভারত সেবাশ্রম সংঘের প্রতিষ্ঠাতা এক শতাব্দী আগে সামাজিকন্যায়ের কথা বলেছিলেন এবং তিনি এই উদ্দেশ্যেই সংঘ গড়ে তোলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি একটি মিথ গড়ে তোলা হচ্ছে যে, সেবা আরআধ্যাত্মিকতা দুটি পৃথক বিষয়। তিনি বলেন, ভারত সেবাশ্রম সংঘ তার কাজের মধ্য দিয়েএই মিথটি ভেঙে দিতে পেরেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন – ভক্তি, শক্তি আর জনশক্তিরমাধ্যমে স্বামী প্রণবানন্দজি সামাজিক উন্নয়ন ঘটিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী ভারত সেবাশ্রম সংঘের প্রতি উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘স্বচ্ছাগ্রহ’বা পরিচ্ছন্নতা অর্জনের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি উত্তর-পূর্বাঞ্চলেরউন্নয়নে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা বলেন এবং বলেন যে, যোগাযোগ ও পরিকাঠামোর ওপর যেনজর দেওয়া হচ্ছে, তা এই অঞ্চলকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুয়ার হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।

শ্রীমন্ত স্বামী অম্বরিশানন্দজি মহারাজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গুজরাটে কাজকরেছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর ভাষণেও তা উল্লেখ ছিল। তিনি অনুষ্ঠান শেষে ধন্যবাদসূচকভাষণ দেন।

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ –


দিল্লি এবং শিলং-এর মধ্যে ২ হাজার কিলোমিটার দূরত্ব। কিন্তু প্রযুক্তি সেইদূরত্ব মিটিয়ে দিয়েছে। গত বছর মে মাসেই আমি শিলং গিয়েছিলাম। আজ যখন ভিডিওকনফারেন্সের মাধ্যমে আপনাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি, অনেক স্মৃতি তাজা হয়েউঠছে।

গুজরাটে ভারত সেবাশ্রম সংঘের তৎকালীন অধ্যক্ষ স্বর্গীয় স্বামী অক্ষয়ানন্দমহারাজের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আজ মঞ্চে উপস্থিত স্বামী অম্বরিশানন্দমহারাজও গুজরাট ইউনিটের অধ্যক্ষপদ সামলেছেন। স্বামী গণেশানন্দজির অভিজ্ঞতা থেকেওআমি অনেক কিছু শেখার সুযোগ পেয়েছি।

আচার্য শ্রীমৎ স্বামী প্রণবানন্দজি মহারাজ দ্বারা স্থাপিত ‘ভারত সেবাশ্রমসংঘ এ বছর শতবর্ষ পূর্ণ করল। ভারত নির্মাণের জন্য সেবা এবং শ্রমকে পাথেয় করে এগিয়েযাওয়া এই সংঘের সকল সদস্যকে আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। যে কোনও সংস্থারজন্য এটা অনেক গর্বের বিষয় যে তার সেবার বিস্তার, ১০০ বছর পূর্ণ করছে। বিশেষ করে,উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে ভারত সেবাশ্রম সংঘের জনকল্যাণকারী কাজ অনেকপ্রশংসার দাবি রাখে।

বন্যা হোক বা খরা, কিংবা প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের পর ভারত সেবাশ্রম সংঘেরসদস্যদের ঝাঁপিয়ে পড়ে পীড়িতদের ত্রাণ পৌঁছতে দেখা যায়।

সংকটের সময় যখন মানুষের সর্বাধিক সাহায্যের প্রয়োজন, তখন স্বামীপ্রণবানন্দের শিষ্যরা সবকিছু ভুলে তাঁদের পাশে দাঁড়ান। আমাদের শাস্ত্রে পীড়িতমানুষের সেবাকে তীর্থযাত্রার সাফল্যের সমতুল মনে করা হয় । বলা হয়েছে –‘একতঃ ক্রতবঃ সর্বে সহস্র বর দক্ষিণা অন্যতো রোগভীতানাম্‌ প্রাণীনাম্‌ প্রাণরক্ষণম্‌’। অর্থাৎ, একদিকে যথাবিধি সকলকে ভালো দক্ষিণা দিয়ে সম্পন্ন করা যজ্ঞকর্মআর অন্যদিকে দুঃখী এবং রোগগ্রস্ত মানুষের সেবা – উভয়ই সমান পুণ্যের কাজ।

বন্ধুগণ, স্বামী প্রণবানন্দ মহারাজ তাঁর আধ্যাত্মিক যাত্রার চরমে পৌঁছেবলেছিলেন – ‘এই সময় মহামিলন, মহাজাগরণ, মহামুক্তি আর মহান সমন্যায়ের’। তারপরই তিনিভারত সেবাশ্রম সংঘের ভিত্তি স্থাপন করেন।

১৯১৭ সালে স্থাপনের পর যে সেবাভাব নিয়ে এই সংস্থা কাজ শুরু করেছিল, তা দেখেবড়োদার মহারাজ সয়াজীরাও গায়কোয়াড়-ও অত্যন্ত প্রভাবিত হয়েছিলেন।

মহারাজ সয়াজীরাও গায়কোয়াড় যে উৎসাহ নিয়ে সাধারণ মানুষের কল্যাণসাধনেপরিশ্রম করতেন, তা সর্বজনবিদিত। তিনি ছিলেন, জনকল্যাণের ক্ষেত্রে একজন চলমানসংস্থাস্বরূপ। সেজন্য তিনি শ্রীমৎ স্বামী প্রণবানন্দজি প্রেরিত সেবাদূতদের সারাদেশে তৃণমূল স্তরে কাজ করতে দেখে, তাঁদেরপ্রশংসা না করে থাকতে পারেননি।

জনসংঘের প্রতিষ্ঠাতা, শ্রদ্ধেয় ডঃ শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায় তো স্বামীপ্রণবানন্দজিকে নিজের গুরুর মতো সম্মান করতেন। ডঃ মুখোপাধ্যায়ের ভাবনাচিন্তায় অনেকক্ষেত্রেই স্বামী প্রণবানন্দজির ভাবনাচিন্তার প্রতিফলন পরিলক্ষিত হয়। শিষ্যদের মনেরাষ্ট্র নির্মাণের ভাবনার অঙ্কুরোদ্‌গম ঘটিয়ে তবেই স্বামী প্রণবানন্দ তাঁদেরঅধ্যাত্মচর্চা আর সেবার জন্য যেভাবে সমর্পণ করতেন, তা অতুলনীয়। ১৯২৩ সালের বাংলারভয়াবহ খরার সময়, ১৯৪৬ সালে নোয়াখালির দাঙ্গা, ১৯৫০ সালে জলপাইগুড়ির ভয়াবহ বন্যা,১৯৫৬ সালে কচ্ছ-এর ভূমিকম্প, ১৯৭৭ সালে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত অন্ধ্রপ্রদেশে,১৯৮৪ সালে অভূতপূর্ব গ্যাস দুর্ঘটনা পরবর্তী ভোপালে ভারত সেবাশ্রম সংঘেরসেবাদূতেরা পীড়িতদের মাঝে গিয়ে যেভাবে তাঁদের সেবা করেছেন, তা উচ্চ প্রশংসার দাবিরাখে।

আমাদের মাথায় রাখতে হবে, সেসব সময়ে দেশে বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্থাপনারপ্রশিক্ষিত এজেন্সিগুলির অধিকাংশই ছিল অনভিজ্ঞ। প্রাকৃতিক বিপর্যয় কিংবা ধর্মীয় ওসাম্প্রদায়িক দাঙ্গার দুর্মর সময়ে ভারত সেবাশ্রম সংঘ এগুলির মোকাবিলায়গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

সাম্প্রতিক ঘটনাসমূহের উল্লেখ করছি – ২০০১ সালে গুজরাটের ভূমিকম্প, ২০০৪সালে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর তটবর্তী অঞ্চলে ভয়ানক সুনামি, ২০১৩ সালেউত্তরাখন্ডে মেঘভাঙা বৃষ্টি থেকে বন্যা, ২০১৫ সালে তামিলনাডুর প্রবল বন্যায় ত্রাণও উদ্ধারকর্মে সবার আগে যাঁরা পৌঁছেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ভারত সেবাশ্রম সংঘেরসদস্যরা অন্যতম।

ভাই ও বোনেরা, স্বামী প্রণবানন্দ বলতেন – ‘আদর্শহীন জীবন মৃত্যু সমান’নিজের জীবনে উচ্চ আদর্শ স্থাপন করলে, যে কোনও ব্যক্তিই সঠিক অর্থে মানবতার সেবাকরতে পারে’। আপনাদের সংস্থার সকল সদস্য স্বামীজির এই দর্শনকে নিজেদের জীবনে প্রয়োগকরেছেন। আজ স্বামী প্রণবানন্দজি যেখানেই থাকুন না কেন, মানবতার সেবায় আপনাদেরউৎসর্গীকৃত দেখে নিশ্চয়ই অত্যন্ত আনন্দ পাচ্ছেন।

শুধু দেশেই নয়, বিশ্বের যে কোনও অঞ্চলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে ভারতসেবাশ্রম সংঘের সদস্যরা ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে পৌঁছে যান, সেজন্য আপনাদের যতঅভিনন্দনই জানানো হোক, তা কম হবে। আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে –

‘আত্মার্থম জীব লোকে অস্মিন্‌ কো ন জীবতি মানবঃ।
পরম পরোপকার আর্থম য়ো জীবতি স জীবতি’।।

অর্থাৎ, এই সংসারে নিজের জন্য কে না বাঁচে, কিন্তু যিনি পরোপকারের জন্যনিজের জীবন উৎসর্গ করেন, তাঁর জীবনই হ’ল আসল জীবন। সেজন্য পরার্থে অসংখ্য প্রয়াসদ্বারা সুশোভিত আপনাদের সংস্থার শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে অভিনন্দন জানাই।

বন্ধুগণ,

বিগত কয়েক দশকে দেশে একটি মিথ তৈরি করা হয়েছে যে, আধ্যাত্মিকতা আর সেবার পথভিন্ন। আপনারা এই মিথকে শুধু ভুল প্রমাণ করেই থেমে থাকেননি, অধ্যাত্ম এবং ভারতীয়মূল্যবোধ-নির্ভর সেবা ধর্মকে একসঙ্গে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আজ সারা দেশে ভারত সেবাশ্রমসংঘের ১০০-টিরও বেশি শাখা এবং ৫০০-রও বেশি ইউনিট স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা এবংদক্ষতা উন্নয়ন যজ্ঞে নিরন্তর কাজ করে চলেছে। ভারত সেবাশ্রম সংঘের সাধনা এবংসমাজসেবা সংক্রান্ত ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে জনসেবা একটি অভিনব মডেল আপনারা বিকশিতকরেছেন। বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে এই মডেল সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছে। এমনকি,রাষ্ট্রসংঘেও ভারত সেবাশ্রম সংঘের এই জনসেবামূলক ক্রিয়াকলাপের প্রশংসা করা হয়েছে।

স্বামী প্রণবানন্দ মহারাজ বিগত শতাব্দীতে দেশে আধ্যাত্মিক চেতনা প্রসারেরপাশাপাশি তার সঙ্গে স্বাধীনতা আন্দোলনকে যুক্ত করে যাঁরা কাজ করেছেন, তেমন মহানমহাপুরুষদের মধ্যে একজন।

স্বামী বিবেকানন্দ এবং মহর্ষি অরবিন্দের মতোই তিনি বিগত শতাব্দীর মহানসন্ন্যাসীদের মধ্যে অন্যতম। স্বামী প্রণবানন্দজি বলতেন, ‘মানুষকে এক হাতে ভক্তি আরঅন্য হাতে শক্তিতে বলিয়ান হয়ে উঠতে হবে’। তিনি মনে করতেন, শক্তিসাধনা না করলেমানুষ নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন না । আর ভক্তি না থাকলে, তাঁর নিজেরই ভক্ষক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।

সমাজ উন্নয়নের জন্য শক্তি ও ভক্তিকে একসঙ্গে নিয়ে জনশক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করারকাজে, জনচেতনাকে জাগ্রত করার কাজে তিনি ছোটবেলা থেকেই সক্রিয় ছিলেন। নির্বাণ লাভেরঅনেক আগেই যখন তিনি শুধু ‘বিনোদ’ নামে পরিচিত ছিলেন, তখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল আরশাকসব্জি ভিক্ষা করে এনে গ্রামের গরিবদের মধ্যে বিলি করতেন। গ্রামে যাতায়াতের জন্যভালো রাস্তা ছিল না, তাই তিনি গ্রামবাসীদের প্রেরণা জুগিয়ে সকলের সাহায্যে একটিসড়ক নির্মাণ করিয়ে ছিলেন।

জাতপাত ও অস্পৃশ্যতার বিষ কিভাবে সমাজকে বিভক্ত করে রেখেছে, এই অনুভব তাঁকেছোটবেলা থেকেই কষ্ট দিত। সেজন্য গ্রামের সকলকে একসঙ্গে বসিয়ে ঈশ্বর পূজার মাধ্যমেবৈষম্য দূর করতে চাইতেন।

উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে আর বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বাংলা যে ধরণেররাজনৈতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল, সেই সময় স্বামী প্রণবানন্দের রাষ্ট্রীয়চেতনা জাগ্রত করার প্রয়াস বৃদ্ধি পেয়েছিল। অনুশীলন সমিতির সদস্য সশস্ত্রবিপ্লবীদের তিনি সমর্থন করতেন। তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করারসময় তিনি একবার জেলও খেটেছেন। নিজের কাজের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, সাধনারজন্য শুধু গুহায় থাকা আবশ্যক নয়। জনজাগরণ ও জনচেতনাকে জাগ্রত করার মাধ্যমেও সাধনাকরা যায়, ঈশ্বরপ্রাপ্তির এটাও অন্যতম উপায়।

ভাই ও বোনেরা, আজ থেকে ১০০ বছর আগে দেশমাতৃকাকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকেমুক্ত করতে দেশের নানাপ্রান্তে জনশক্তিকে সংগঠিত করার প্রয়াস জারি ছিল।

১৯১৭ সালেই মহাত্মা গান্ধী চম্পারণে সত্যাগ্রহ আন্দোলনের বীজ রোপণ করেছেন।এ বছর আমরা সেই চম্পারণ সত্যাগ্রহেরও শতবর্ষ পালন করছি।

সত্যাগ্রহ আন্দোলনের পাশাপাশি মহাত্মা গান্ধী মানুষকে পরিচ্ছন্নতার প্রতিওসচেতন করতে চেয়েছেন। আপনারা সকলেই জানেন যে, গত মাসে চম্পারণ সত্যাগ্রহের মতোইদেশে আমরা ‘স্বচ্ছাগ্রহ অভিযান’-এর সূত্রপাত করেছি। স্বচ্ছাগ্রহ বলতে আমরা বুঝি,পরিচ্ছন্নতার প্রতি আগ্রহ। আজ এই উপলক্ষে আমি আপনাদেরকেও এই স্বচ্ছাগ্রহকে নিজেদেরসাধনার অভিন্ন অঙ্গ করে তুলতে অনুরোধ জানাই। এই অনুরোধের পেছনে একটি উদ্দেশ্য রয়েছে।

আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন, তিন-চার দিন আগে এ বছরের ‘স্বচ্ছ সর্বেক্ষণ’-এরমাধ্যমে দেশের শহরগুলির র‍্যাঙ্কিং ঘোষণা করা হয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতেররাজ্যগুলির ১২টি শহরেও এই সমীক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি খুব একটা ভালোনেই। এগুলির মধ্যে কেবল গ্যাংটক ৫০তম স্থান অধিকার করেছে। আর চারটি শহরের র‍্যাঙ্কিং১০০-২০০’র মধ্যে রয়েছে। বাকি ৬০টির র‍্যাঙ্কিং ২০০-৩০০’র মধ্যে। আপনারা যেখানে বসেরয়েছেন, সেই শিলং শহরের র‍্যাঙ্ক হয়েছে ২৭৬। এই পরিস্থিতি আমাদের জন্য, সংশ্লিষ্টরাজ্য সরকারগুলির জন্য এবং ভারত সেবাশ্রম সংঘের মতো সংস্থাগুলির জন্য একটি সতর্কবার্তা-স্বরূপ।স্থানীয় সংস্থাগুলি নিজেদের কাজ করছে কিন্তু তাদের পাশাপাশি প্রত্যেক ব্যক্তিকেসচেতন করতে হবে যে, আপনারা সকলেই এই পরিচ্ছন্নতা মিশনে একেকজন সিপাহী। প্রত্যেকব্যক্তির মিলিত প্রয়াসেই ‘স্বচ্ছ ভারত, স্বচ্ছ উত্তর-পূর্ব ভারত’ এই লক্ষ্য পূরণকরা সম্ভব হবে।

ভাই ও বোনেরা, স্বামী প্রণবানন্দজি মহারাজ বলতেন, ‘দেশের পরিস্থিতিপরিবর্তন করতে হলে লক্ষ লক্ষ নিঃস্বার্থ কর্মযোগী চাই। এই নিঃস্বার্থ কর্মযোগীরাদেশের প্রত্যেক নাগরিককে সচেতন করবেন আর এই পরিবর্তিত মনোভাবের মাধ্যমে এক নতুনরাষ্ট্র গড়ে উঠবে’।

স্বামী প্রণবানন্দের মতো মহাত্মাদের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ দেশে আপনাদের মতোকোটি কোটি নিঃস্বার্থ কর্মযোগী রয়েছেন। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে মিলে‘স্বচ্ছাগ্রহ’-এর এই আন্দোলনকে সফল করে তুলতে হবে।

আমাকে বলা হয়েছে, যখন স্বচ্ছ ভারত অভিযান শুরু হয়েছিল, তখন আপনারাউত্তর-পূর্ব ভারতে পাঁচটি রেল স্টেশনকে বেছে নিয়েছিলেন, সেই পাঁচটি স্টেশনে আপনারাপ্রতি সপ্তাহে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়েছেন। এখন আপনাদের সেই প্রয়াসের পরিধি আরওবৃদ্ধি করার প্রয়োজন রয়েছে।
এ বছর যখন আপনারা সবাই এই মহান সংগঠনের শতবর্ষ পূর্তি উৎসব পালন করছেন,আপনাদের এ বছরের কর্মকান্ড পরিচ্ছন্নতা-কেন্দ্রীক হয়ে উঠুক।

আপনাদের সংস্থা যেসব এলাকায় কাজ করছে, সেসব এলাকার পরিবেশ রক্ষার স্বার্থেঅঞ্চলগুলিকে প্লাস্টিক মুক্ত করার জন্য সচেতনতা গড়ে তুলতে পারেন। সাধারণ মানুষেরস্বার্থে জল সংরক্ষণ এবং জল ব্যবস্থাপনার নানা দিক সম্পর্কে তাঁদের সচেতন করতেপারেন। আপনারা কী সংস্থার কিছু কর্মসূচিকে আগামী ২০২২ সালের সঙ্গে যুক্ত করতেপারেন? ২০২২ সালে ভারত স্বাধীনতার ৭৫ বছর পালন করবে। এখনও পাঁচ বছর সময় আছে। দেশেরপ্রত্যেক ব্যক্তি, প্রত্যেক সংস্থার উচিৎ এই সময়ের সদ্ব্যবহার করে নিজের চারপাশেপরিব্যপ্ত সকল ‘কু’-এর বিনাশের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়া।

বন্ধুগণ,

আপনারা জানেন যে, ১৯২৪ সালে স্বামী প্রণবানন্দ দেশের অনেক তীর্থস্থানগুলিকেপুনরুদ্ধারের কাজ করেছিলেন। সেই প্রকল্পের নাম ছিল ‘তীর্থশঙ্কর’। এর মাধ্যমে তিনিসেই সময় আমাদের তীর্থস্থানগুলিকে নানারকম দুর্নীতি থেকে মুক্ত করেছেন। আজ আমাদেরতীর্থস্থানগুলির একটি বড় দুর্বলতা হ’ল পরিচ্ছন্নতা। ভারত সেবাশ্রম সংঘ কি আরেকবারপরিচ্ছন্নতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে এই ‘তীর্থশঙ্কর’ প্রকল্প শুরু করতে পারে?

এভাবেই বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আপনাদের অভিজ্ঞতাকে ভারত সেবাশ্রমসংঘ কিভাবে দেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন, তা ভেবে দেখা উচিৎ।প্রতি বছর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে দেশে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। কী কী ব্যবস্থানিলে ঐ প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলি থেকে কম ক্ষয়ক্ষতি হবে, একথা মাথায় রেখে গত বছর দেশেপ্রথমবার জাতীয় বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা গড়ে তোলা হয়েছে। সরকার যত বেশিসম্ভব মানুষকে সচেতন করা যায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে ‘মক এক্সারসাইজ’ বা মহড়ারমাধ্যমে বিপর্যয় মোকাবিলার পদ্ধতিগুলি সম্পর্কে নবীন প্রজন্মের যুবক-যুবতীদেরপ্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

বন্ধুগণ,

উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে আপনাদের সংগঠন শক্তি এবং সক্রিয়তা বিপর্যয়মোকাবিলার ক্ষেত্রে আলোকবর্তিকা হয়ে উঠতে পারে। বিপর্যয়ের আগে ও পরে উভয়পরিস্থিতিতে কাজ করার জন্য আপনারা জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মানুষকে প্রস্তুতরাখতে পারেন।
এভাবেই স্বামী প্রণবানন্দজি ‘প্রবচন’ দল পাঠিয়ে অধ্যাত্ম চেতনার বিস্তার আরসেবার বার্তা দেশে-বিদেশে পৌঁছে দিয়েছেন, তেমনই আপনাদের সংস্থা উত্তর-পূর্ব ভারতেরনানাপ্রান্তে আদিবাসী এলাকাগুলিতে গিয়ে নানা ক্রীড়ার প্রতিভা অণ্বেষনেওগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। আপনাদের নির্মিত হোস্টেলগুলিতেও হাজার হাজারআদিবাসী ছেলেমেয়েরা থেকে পড়াশুনা করে। সেজন্যই বলছি, একাজ আপনাদের পক্ষে কঠিন হবেনা।

আপনারা তৃণমূল স্তরে কাজ করে অভ্যস্ত। আপনাদের অভিজ্ঞ দৃষ্টিক্রীড়াপ্রতিভাগুলিকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।

স্বামী প্রণবানন্দই বলতেন, দেশের যুব শক্তিকে জাগ্রত না করতে পারলে সকলপ্রচেষ্টা বিফলে যাবে। এখন আবার সুযোগ এসেছে, সুদূর উত্তর-পূর্ব ভারতের গ্রাম ওশহরগুলি থেকে সুপ্ত প্রতিভা অণ্বেষণের মাধ্যমে তাঁদেরকে মূল ধারায় নিয়ে আসা।এক্ষেত্রে আপনাদের সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

আমার অনুরোধ আপনারা এই সেবা-সাধনার জন্য যে লক্ষ্যই স্থির করুন না কেন, তাযেন পরিমাপযোগ্য হয়, অর্থাৎ, তা যেন পরিসংখ্যানের মাধ্যমে স্থির করা হয়।পরিচ্ছন্নতার জন্য আপনারা উত্তর-পূর্ব ভারতের ১০টি শহর পর্যন্ত তো পৌঁছবেনই,পাশাপাশি ১০০০টি গ্রামেও পৌঁছবেন। এটা আপনারাই ঠিক করুন, বিপর্যয় ব্যবস্থাপনারজন্য ১০০টি ক্যাম্প করুন। আমার বলার অর্থ হ’ল এই যে, যাই করবেন, তা যেনপরিমাপযোগ্য হয়।

২০২২ সাল পর্যন্ত ভারত সেবাশ্রম সংঘ যেন একথা বলার মতো জায়গায় থাকে যে,আমরা কেবল অভিযান চালাইনি, ৫০ হাজার কিংবা ১ লক্ষ মানুষকেও এর সঙ্গে যুক্ত করেছি।স্বামী প্রণবানন্দজি যেমন বলতেন, ‘সবসময় একটি ডায়রি মেনটেন করতে হবে’। আপনারাওসেরকম সংস্থার একটি ডায়রি চালু করুন, যাতে নিজেদের লক্ষ্য লেখা থাকবে আর নির্দিষ্টসময় পর লেখা হবে, ঐ লক্ষ্যসাধনে কতটা কাজ করা গেছে।

আপনাদের এই প্রয়াস, এই শ্রম দেশ গঠনের স্বার্থে নতুন ভারত-এর স্বপ্ন পূরণকরতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে শ্রমকে সবচেয়ে সবচেয়ে বড় দান বলে মানা হয়।প্রত্যেক পরিস্থিতি মোকাবিলায় এই দানের প্রেরণা দেওয়া হয় – ‘শ্রদ্ধা দেয়ম্‌,অশ্রদ্ধা দেয়ম্‌, শ্রিয়া দেয়ম্‌, হৃয়া দেয়ম্‌, ভিয়া দেয়ম্‌, সম্বিদা দেয়ম্‌’।অর্থাৎ, শ্রদ্ধার সঙ্গে দান করুন, শ্রদ্ধা না থাকলে অশ্রদ্ধার সঙ্গে দান করুন, ধনবৃদ্ধি হলে দান করুন, ধন বৃদ্ধি না হলে লোকলজ্জায় দান করুন, ভয়ে দান করুন অথবাভালোবেসে দান করুন – বলার তাৎপর্য হ’ল এই যে, প্রত্যেক পরিস্থিতিতেই দান করতে হবে।

বন্ধুগণ,

উত্তর-পূর্ব ভারতের ক্ষেত্রে আমি বেশি জোর দিচ্ছি, কারণ – স্বাধীনতার পরথেকে এত বছরে দেশের এই অঞ্চলে সুষম উন্নয়ন হয়নি। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার বিগত তিনবছরে নিজের পূর্ণ শক্তি দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের সুষম উন্নয়নের চেষ্টা করে যাচ্ছে।গোটা এলাকা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ৪০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে সড়কপরিকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। রেলের ১৯টি বড় প্রকল্প শুরু করা হয়েছে। বিদ্যুৎসংযোগের ব্যবস্থাও উন্নত করা হচ্ছে। গোটা এলাকাকে পর্যটনের অনুকূল করে তুলতেউপযোগী পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে।

উত্তর-পূর্ব ভারতের ছোট ছোট বিমানবন্দরগুলির আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে। আপনাদেরশিলং এয়ারপোর্টেরও রানওয়ের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি বাবদ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। অতি শীঘ্রইউত্তর-পূর্ব ভারতকে উড়ান প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। এভাবে আমাদের উত্তর-পূর্বভারতকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বার হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমরা সাফল্যপাব।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই সুন্দর প্রবেশদ্বার যদি পরিচ্ছন্ন না থাকে, অসুস্থথাকে, অশিক্ষিত থাকে, ভারসাম্যহীন থাকে – তা হলে দেশের উন্নয়নের প্রবেশদ্বারওপিছিয়ে পড়বে। সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা এবং খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ আমাদের দেশের পিছিয়েথাকার বা দরিদ্র হয়ে থাকার কোনও কারণ নেই। ‘সকলের সঙ্গে সকলের উন্নয়ন’ মন্ত্র নিয়েআমরা সকলের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে এগিয়ে যাব।

আমাদের সমাজ – সমন্বয়, সহযোগ এবং সৌহার্দ্যের মাধ্যমে ক্ষমতায়িত হবে,আমাদের যুবসমাজ – চরিত্র, চিন্তন এবং চেতনায় ক্ষমতায়িত হবে, আমাদের দেশ – জনশক্তি,জনসমর্থন এবং জনভাবনায় ক্ষমতায়িত হবে।

এই পরিবর্তনের জন্য, পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য নতুন ভারত গড়ে তোলার জন্যআমাদের সবাইকে কোটি কোটি নিঃস্বার্থ কর্মযোগীদের, ভারত সেবাশ্রম সংঘের মতো অসংখ্যসংস্থাগুলিকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। এই আহ্বান রেখে আমি আমার বক্তব্য সম্পূর্ণকরছি। আরেকবার ভারত সেবাশ্রম সংঘের সকল সদস্যদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। অনেকঅনেক ধন্যবাদ।

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
Snacks, Laughter And More, PM Modi's Candid Moments With Indian Workers In Kuwait

Media Coverage

Snacks, Laughter And More, PM Modi's Candid Moments With Indian Workers In Kuwait
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
Prime Minister Narendra Modi to attend Christmas Celebrations hosted by the Catholic Bishops' Conference of India
December 22, 2024
PM to interact with prominent leaders from the Christian community including Cardinals and Bishops
First such instance that a Prime Minister will attend such a programme at the Headquarters of the Catholic Church in India

Prime Minister Shri Narendra Modi will attend the Christmas Celebrations hosted by the Catholic Bishops' Conference of India (CBCI) at the CBCI Centre premises, New Delhi at 6:30 PM on 23rd December.

Prime Minister will interact with key leaders from the Christian community, including Cardinals, Bishops and prominent lay leaders of the Church.

This is the first time a Prime Minister will attend such a programme at the Headquarters of the Catholic Church in India.

Catholic Bishops' Conference of India (CBCI) was established in 1944 and is the body which works closest with all the Catholics across India.