রামকৃষ্ণ মঠের মহাসচিব শ্রীযুক্ত স্বামী সুবীরানন্দজী মহারাজ, স্বামী দিব্যানন্দজী মহারাজ, এখানে উপস্থিত পূজনীয় সাধুগণ, আমার নবীন বন্ধুরা,
আপনাদের সবাইকে স্বামী বিবেকানন্দ জয়ন্তীর এই পবিত্র অবসরে, জাতীয় যুব দিবস উপলক্ষে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। দেশবাসীর জন্য বেলুর মঠের এই পবিত্র ভূমিতে আসা কোনও তীর্থযাত্রা থেকে কম নয়, কিন্তু আমার জন্য এখানে আসা সবসময়েই নিজের বাড়িতে আসার মতোই। আমি অধ্যক্ষ স্বামীজীকে, এখানকার সকল ব্যবস্থাপকদের হৃদয় থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই যে, আমাকে গতকাল রাতে এখানে থাকার অনুমতি দিয়েছেন। আমি সরকারের কাছেও কৃতজ্ঞ। কারণ সরকারি প্রক্রিয়ায় প্রোটোকল, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এক চুল এদিক-ওদিক হওয়ার জো নেই। কিন্তু এখানে ব্যবস্থাপকেরা আমার অনুরোধ রক্ষা করেছেন। আর আমার এই পবিত্র ভূমিতে রাত্রিবাসের সৌভাগ্য হ’ল। এই মাটিতে, এখানকার বাতাসে সবাই স্বামী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, মা সারদা দেবী, স্বামী ব্রহ্মানন্দ, স্বামী বিবেকানন্দ সহ সমস্ত গুরুদের সান্নিধ্য অনুভব করেন। যখনই এখানে বেলুরমঠে আসি, অতীতের সেই পৃষ্ঠাগুলি খুলে যায়। সেই দিনগুলির জন্যই আজ আমি এতদূর পৌঁছেছি। আর ১৩০ কোটি ভারতবাসীর সেবায় কিছু কর্তব্য পালন করতে পারছি।
গতবার যখন এখানে এসেছিলাম, তখন গুরুজী, স্বামী আত্মআস্থানন্দজীর আশীর্বাদ নিয়ে গিয়েছিলাম। আর আমি বলতে পারি যে, তিনি আমাকে হাত ধরে জনসেবার মাধ্যমে প্রভু সেবার পথ দেখিয়েছেন। আজ তিনি আমাদের মাঝে শারীরিক রূপে উপস্থিত নেই। কিন্তু তাঁর কাজ, তাঁর প্রদর্শিত পথ, রামকৃষ্ণ মিশন রূপে সদাসর্বদা আমাদের চলার পথকে প্রশস্ত করে যাবে।
এখানে অনেক নবীন ব্রহ্মচারী বসে আছেন, আমার তাঁদের সঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটানোর সুযোগ হয়েছে। আপনারা এখন যে মনস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, একটা সময় আমারও সেই মনস্থিতির মধ্য দিয়ে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। আপনারা হয়তো অনুভব করেছেন, আমাদের মধ্যে অধিকাংশের মনেই এখানকার প্রতি আকর্ষণ জন্মায়বিবেকানন্দের ভাবনা, তাঁর বাণী, তাঁর ব্যক্তিত্ব। কিন্তু এই মাটিতে পা রাখার পর, মা সারদাদেবীর আঁচল আমাদের এখানে থাকার জন্য মায়ের ভালোবাসা দেয়। যত ব্রহ্মচারীরা রয়েছেন, প্রত্যেকেরই হয়তো এই অভিজ্ঞতা হয়, যেমনটি এক সময় আমার হ’ত।
বন্ধুগণ, স্বামী বিবেকানন্দ শুধু একজন ব্যক্তি নন, তিনি একটি জীবনধারা, একটি জীবনশৈলীর নামরূপ। তিনি দরিদ্র নারায়ণের সেবা এবং ভারত ভক্তিকেই জীবনের আদি ও অন্ত ভেবে নিয়েছিলেন। এই ভাবনা নিয়েই তিনি বেঁচেছিলেন আর আজও কোটি কোটি মানুষকে বাঁচার জন্য পথ দেখাচ্ছেন।
আপনারা সবাই, দেশের প্রত্যেক নবীন ও আমি বিশ্বাসে ভরপুর হয়ে উঠি। দেশের প্রত্যেক নবীন ব্যক্তি, যিনি বিবেকানন্দকে জানেন কিংবা জানেন না, তাঁরা জ্ঞাতসারে কিংবা অজ্ঞাতসারে সেই সংকল্পের অঙ্গ হয়ে উঠি। সময় বদলেছে, দশক বদলেছে, শতাব্দীও বদলে গেছে। কিন্তু স্বামীজীর সেই সংকল্পকে সিদ্ধ করার দায়িত্ব আমাদের উপর বর্তেছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপরও বর্তাবে। একাজ এমন নয় যে একবার করে দিলেই হয়ে গেল। একাজ অবিরত, নিরন্তর, যুগ যুগ ধরে করে যেতে হবে।
কখনও কখনও আমাদের মনে ভাবনা জাগে যে, আমি একা করলে কী হবে, আমার কথা কেউ শোনেই না। আমি যা চাই, যা ভাবি, সেদিকে কেউ লক্ষ্য দেয় না;আর সেই পরিস্থিতি থেকে যুব মনকে বের করে আনা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমি সরাসরি আপনাদের একটি মন্ত্র বলে দিই যা আমি কখনও গুরুজনদের কাছ থেকে শিখেছি। আমরা কখনও একা নই, কখনই একা নই। আমাদের সঙ্গে আরেকজন থাকেন, যাকে আমরা দেখতে পাই না, তা ঈশ্বরের রূপ। আমরা কখনও একা থাকি না। আমাদের সৃষ্টিকর্তা সর্বদাই আমাদের সঙ্গে থাকেন।
স্বামীজীর বক্তব্য আমাদের সর্বদাই মনে রাখতে হবে। তিনি বলতেন, “আমি যদি ১০০ জন প্রাণপ্রাচুর্যময় যুবককে পাই, তা হলে ভারতকে বদলে দেবো”। স্বামিজী কখনও একথা বলেননি যে, ১০০ জনকে সঙ্গে পেলে আমি এমন কিছু হয়ে যাবো। তিনি বলেছেন, ভারত বদলে যাবে। অর্থাৎ, পরিবর্তনের জন্য আমাদের প্রাণশক্তি কিছু করার উৎসাহ ও উদ্দীপনাই অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
স্বামীজী পরাধীনতার সেই কালখন্ডে ১০০ জন উজ্জীবিত নবীন বন্ধুর সন্ধানে ছিলেন। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীকে ভারতের শতাব্দীতে পরিবর্তিত করার জন্য, নতুন ভারত নির্মাণের জন্য কোটি কোটি প্রাণপ্রাচুর্যময় যুবক-যুবতী আজ ভারতের প্রত্যেক প্রান্তে উঠে পড়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম নবীন জনসংখ্যার ঐশ্বর্য আজ ভারতের রয়েছে।
বন্ধুগণ, একবিংশ শতাব্দীর ভারতের এই নবীন প্রজন্মের কাছে শুধু দেশবাসী নয়, বিশ্ববাসীর অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। আপনারা সবাই জানেন যে, দেশ একবিংশ শতাব্দীর জন্য নতুন ভারত নির্মাণের জন্য বড় সংকল্প নিয়ে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে। এই সংকল্পগুলি শুধুই সরকারের নয়, এই সংকল্পগুলি ১৩০ কোটি ভারতবাসীর, দেশের যুবসম্প্রদায়ের।
বিগত পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখতে পাই যে, দেশের যুবসম্প্রদায় যে ঐকান্তিকতা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁদের সাফল্য নিশ্চিত। ভারত পরিচ্ছন্ন হয়ে উঠতে পারে কিনা, তা নিয়ে বিগত পাঁচ বছরে একটা নিরাশার আবহ ছিল। কিন্তু দেশের যুবসম্প্রদায় এই অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছে এবং আমরা সবাই এই পরিবর্তন এখন দেখতে পাচ্ছি।
ভারতে ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার সম্ভব কিনা, তা নিয়ে ৪ – ৫ বছর আগে অনেকের মনেই সন্দেহ ছিল। কিন্তু আজ ভারত বিশ্বের দ্রুত ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল অর্থ-ব্যবস্থার দেশ হয়ে উঠেছে।
কয়েক বছর আগে পর্যন্ত দেশের যুবসম্প্রদায় কিভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন, আন্দোলন করেছেন – তা আমরা দেখেছি। তখন মনে হ’ত যে, দেশের এই ব্যবস্থা পরিবর্তন হওয়া খুব কঠিন। কিন্তু দেশের যুবসম্প্রদায় এই পরিবর্তনও সম্ভব করেছেন।
বন্ধুগণ, যুবসম্প্রদায়ের উৎসাহ, উদ্দীপনা এবং প্রাণশক্তিই একবিংশ শতাব্দীর এই দশকে ভারতকে পরিবর্তনের ভিত্তি রচনা করেছে। এদিক থেকে দেখতে গেলে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস নতুন বছরের শুভেচ্ছা দিয়ে শুরু হয়েছে। কিন্তু আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে, এটি শুধুই নববর্ষ নয়, নতুন দশকেরও সূত্রপাত। সেজন্য আমাদের স্বপ্নগুলিকে এই দশকের সংকল্পের সঙ্গে যুক্ত করে সিদ্ধিলাভের লক্ষ্যে আরও বেশি প্রাণশক্তি নিয়ে আরও বেশি উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে অধিক সমর্পণ ভাবনা নিয়ে কাজ করে যেতে হবে।
নতুন ভারতের সংকল্প আপনাদেরকেই বাস্তবায়িত করতে হবে। এই যুব ভাবনাই বলে, সমস্যাকে সমাধান না করে ছাড়বেন না। যুবসম্প্রদায় কিভাবে সমস্যাকে সমাধান না করে ছেড়ে দেবেন! যৌবনের মানেই হ’ল সমস্যার মোকাবিলা, সমস্যার সমাধান, প্রত্যেক স্পর্ধার বিরুদ্ধে প্রতিস্পর্ধা গড়ে তোলা। এই ভাবনা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারও দেশের সামনে উপস্থিত। অনেক দশক পুরনো সমস্যাগুলি সমাধানের চেষ্টা করছে।
বন্ধুগণ, বিগত কিছু সময় ধরে দেশে যুবসম্প্রদায়ের মধ্যে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এই আইন কী, একে আনার প্রয়োজন কী ছিল, যুবসম্প্রদায়ের মনে ভিন্ন ভিন্ন মানুষেরা নানারকম প্রশ্ন জাগিয়ে তুলেছেন, অনেক যুবক-যুবতী এ বিষয়ে সচেতন আবার অনেকেই এখনও ভ্রম ও গুজবের শিকার। এক্ষেত্রে যুবসম্প্রদায়ের প্রত্যেককে সঠিকভাবে বোঝানো আমাদের সকলের দায়িত্ব। আর তাঁদের সন্তুষ্ট করাও আমাদের সকলেরই কর্তব্য।
আর সেজন্য আজ জাতীয় যুব দিবস উপলক্ষে আমি আরেকবার দেশের নবীন সম্প্রদায়কে পশ্চিমবঙ্গের যুবসম্প্রদায়কে, উত্তর – পূর্ব ভারতের যুবসম্প্রদায়কে আজ এই পবিত্র মাটি থেকে যুবসম্প্রদায়ের মাঝে দাঁড়িয়ে কিছু কথা অবশ্যই বলতে চাই।
বন্ধুগণ, এমন নয় যে, দেশের নাগরিকতা প্রদানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার রাতারাতি কোনও নতুন আইন প্রণয়ন করেছে। আমাদের সবার জানে রাখা উচিৎ যে, অন্য কোনও দেশ থেকে যে কোনও ধর্মের ব্যক্তি, যিনি ভারতের আস্থা রাখেন, ভারতের সংবিধানকে মানেন, তিনি ভারতের নাগরিকতা গ্রহণ করতে পারেন। এতে কোনও দ্বিধা নেই। আমি আরেকবার বলবও যে, নাগরিকত্ব আইন, নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য নয়, এটি নাগরিকত্ব প্রদানের আইন এবং নাগরিকত্ব সংশোধিত আইন, সেই আইনে একটি সংশোধন এনেছে মাত্র। এই সংশোধনটি কী? আমরা এই পরিবর্তন এনেছি যে, ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদানের সুবিধা বৃদ্ধি করেছি। এই সুবিধা কাদের জন্য বৃদ্ধি করেছি? তাঁদের জন্য, যাঁদের উপর দেশভাগের পর নবগঠিত পাকিস্তানে তাঁদের ধর্মবিশ্বাসের কারণে অত্যাচার, নিপীড়ন হয়েছে, সেদেশে বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে, বোন ও কন্যাদের মর্যাদা অসুরক্ষিত হয়ে গেছে, বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে, অনেক সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য যাঁরা আমাদের দেশে শরণার্থী হয়েছেন।
বন্ধুগণ, স্বাধীনতার পর পূজনীয় মহাত্মা গান্ধী থেকে শুরু করে তখনকার বড় বড় দিগ্গজ নেতারাও একথাই বলেছেন যে, এই অত্যাচারিত, নিপীড়িত শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান করতে হবে। যাঁরা ধর্মের কারণে অত্যাচারের শিকার হয়েছেন।
এখন আমি আপনাদের জিজ্ঞেস করতে চাই যে, বলুন তো, এই শরণার্থীদের কি এখন মরার জন্য তাঁদের ফেরৎ পাঠানো উচিৎ? নাকি তাঁদেরকে অন্যদের মতো সমমর্যাদা দিয়ে দেশের নাগরিক হিসাবে শিকার করে নিতে হবে – এটা কি আমাদের দায়িত্ব নয়! তাঁরা যদি আইনসম্মতভাবে এদেশে শান্তিতে বসবাস করতে পারেন, তা হলে কি আমরা আনন্দ পাবো না! এই কাজ কি পবিত্র কাজ নয়?আমাদের করা উচিৎ কি উচিৎ না। অন্যদের ভালোর জন্য কাজ করা উচিৎ কি উচিৎ না। মোদীজী এই কাজ করলে, আপানারা কি তাঁর পাশে রয়েছেন? আপনারা হাত তুলে বলুন, পাশে রয়েছেন কি না!
আমাদের সরকার দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামী মহান সুপুত্রদের ইচ্ছা পূরণ করেছে। যিনি ভারতের সংবিধানকে মানেন, তিনি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভারতের নাগরিকতা পেতে পারেন। একথা কি আপনারা স্পষ্ট বুঝতে পেরেছেন, যে ছাত্ররা এখানে উপস্থিত রয়েছো, তারা কি বুঝতে পেরেছো? দেখুন, আপনারাও বুঝতে পারছেন, কিন্তু যাঁরা রাজনীতির খেলা খেলেন, তাঁরা বুঝতে চাইছেন না। এখন কেউ বুঝতে না চাইলে কি করা যাবে? আপনারা বুঝতেও পারছেন এবং দেশের ভালোও চান।
আর হ্যাঁ, উত্তর – পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির বাসিন্দাদের মনে যেসব প্রশ্ন আছে, সেগুলি নিয়ে বলছি। উত্তর – পূর্ব ভারতের জন্য আমরা গর্বিত। এই আইনে যে সংশোধন করা হয়েছে, তার কোনও বিপরীত প্রভাব যেন উত্তর – পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির সংস্কৃতি, পরম্পরা, জনসংখ্যার অনুপাত, রীতি-রেওয়াজ, খাদ্য, বস্ত্র, পোশাক – এসব কিছুকে কোনোভাবে প্রভাবিত না করতে পারে, তার ব্যবস্থাও কেন্দ্রীয় সরকার করেছে।
বন্ধুগণ, এত স্পষ্টতা থাকা সত্ত্বেও কিছু মানুষ নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে এই নাগরিকত্ব সংশোধিত আইন নিয়ে লাগাতার মানুষকে ভুল বুঝিয়ে যাচ্ছেন। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আজকের যুবসম্প্রদায়ই এই মানুষদের মন থেকে ভ্রম দূর করছেন।
পাকিস্তানে যেভাবে অন্যান্য ধর্মের মানুষদের ওপর অত্যাচার হয়, তার বিরুদ্ধে সারা পৃথিবীতে আমাসদের যুবসম্প্রদায়ই প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এটা পরিস্কার যে, নাগরিকত্ব আইনে আমাদের আনা এই সংশোধন নিয়ে কোনও বিতর্ক তৈরি না হলে বিশ্ববাসী এটাও জানতে পারতো না যে, পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের ওপর কিরকম অত্যাচার হয়, কিভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়, কিভাবে ভগিনী ও কন্যাদের জীবনে সর্বনাশ ডেকে আনা হয় – এটা আমাদেরই উদ্যোগের পরিণাম, এখন পাকিস্তানকেও জবাব দিতে হবে যে, গত ৭০ বছরে তাদের দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর এত অত্যাচার কেন হয়েছে?
বন্ধুগণ, নিজেরা সচেতন থেকে অন্যদের সচেতন করে তোলাও আমাদের সকলের দায়িত্ব। আরও অনেক বিষয় নিয়ে সমাজ জাগরণ, গণআন্দোলন ও গণচেতনা জাগিয়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে। যেমন – জলের অভাব! জল সাশ্রয় আজ প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব হয়ে ওঠা উচিৎ। সিঙ্গল ইয়ুজ প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে অভিযান হোক কিংবা গরিবের জন্য সরকারের অনেক প্রকল্প এইসব বিষয় নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আপনাদের সহযোগিতা দেশকে অনেক এগিয়ে দেবে।
বন্ধুগণ, আমাদের সংস্কৃতি ও সংবিধান আমাদের থেকে নাগরিক রূপে নিজেদের কর্তব্য পালন, নিজেদের দায়িত্বগুলি সম্পূর্ণ সততার সঙ্গে সম্পূর্ণ সমর্পণ ভাব নিয়ে পালনের প্রত্যাশা করে। স্বাধীনতার পর ৭০ বছর ধরে আমরা আমাদের অধিকার – অধিকার ……….. এরকম অনেক শুনেছি! অধিকারের প্রতি জনগণকে সচেতনও করে তোলা হয়েছে। এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। কিন্তু এখন শুধুই অধিকারের কথা ভাবলে চলবে না। প্রত্যেক ভারতবাসীকে নিজেদের কর্তব্য সম্পর্কেও সচেতন হতে হবে। আমরা সেই পথে এগিয়ে তবেই ভারতকে বিশ্ব মানচিত্রে নিজের স্বাভাবিক জায়গায় দেখতে পাবো। এটাই সকল ভারতবাসীর প্রতি স্বামী বিবেকানন্দের প্রত্যাশা। আর এই প্রতিষ্ঠানের ভাবনার ভিত্তি।
স্বামী বিবেকানন্দ এটাই চাইতেন। তিনি ভারতমাতাকে বৈভবশালী দেখতে চাইতেন। আর আমরা সবাই তো সেই স্বপ্নকেই বাস্তবায়নের জন্য সংকল্প গ্রহণ করছি। আজ আরেকবার স্বামী বিবেকানন্দের পবিত্র জন্মদিবসে বেলুর মঠের এই পবিত্র মাটিতে পূজনীয় সাধুদের মাঝে সময় কাটানোর সৌভাগ্য হ’ল। আজ কাকভোরে দীর্ঘক্ষণ পূজনীয় স্বামী বিবেকানন্দ কক্ষে থাকতেন, সেখানে বসে একটি আধ্যাত্মিক চেতনার স্পন্দন অনুভব করেছি। সেই আবহে আজকের সকালটি কাটানো আমার জীবনে অত্যন্ত অমূল্য সম্পদ হয়ে থেকে যাবে। এমন অনুভব করছিলাম যেন পূজনীয় স্বামী বিবেকানন্দ আমাকে আরও বেশি কাজ করার জন্য প্রেরণা যোগাচ্ছেন। নতুন প্রাণশক্তি প্রদান করছেন। আমার নিজস্ব সংকল্পগুলিকে নতুন সামর্থ্যে পরিপূর্ণ করে তুলছেন। এই ভাবনা, প্রেরণা ও নতুন প্রাণশক্তি নিয়ে আপনাদের মতো বন্ধুদের উৎসাহ নিয়ে, এই মাটির আশীর্বাদ নিয়ে আরেকবার এখান থেকে সেই স্বপনগুলিকে সাকার করতে এগিয়ে যাবো, এগিয়েই যাবো, কিছু না কিছু করে যাবো, সকল সাধুদের আশীর্বাদ যেন আমার উপর বর্ষিত হতে থাকে। আপনাদের সকলকে আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা। স্বামীজী সর্বদাই বলতেন, সবকিছু ভুলে যাও, ভারতমাতাকেই নিজের আরাধ্যাদেবী মনে করে কাজ করতে থাকো। আপনারা সবাই আমার সঙ্গে বলুন, মুষ্ঠিবদ্ধ দু’হাত তুলে পূর্ণ শক্তি দিয়ে বলুন –
ভারতমাতা কি জয়।
ভারতমাতা কি জয়।
ভারতমাতা কি জয়।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।