আজকের যুব সম্প্রদায়ের মানসিকতার সঙ্গে আত্মনির্ভর ভারতের ভাবনা সামঞ্জস্যপূর্ণ : প্রধানমন্ত্রী
অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাম্প্রতিক জয় নতুন ভারতের যুব সম্প্রদায়ের মানসিকতার প্রতিফলন : প্রধানমন্ত্রী
তথ্য ও তথ্য বিশ্লেষণের জন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রস্তুত করবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ আসামের তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অষ্টাদশ সমাবর্তনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রেখেছেন। আসামের রাজ্যপাল অধ্যাপক জগদীশ মুখী, কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ডঃ রমেশ পোখরিয়াল ‘নিশাঙ্ক’ এবং আসামের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী এই অনুষ্ঠানে বলেছেন, ১২০০ ছাত্রছাত্রীর জীবনে আজকের এই মুহূর্ত চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা যা শিখেছেন তার সাহায্যে আসাম ও দেশের উন্নতিকে তাঁরা ত্বরান্বিত করবেন। তিনি বলেছেন, ভারতরত্ন ভূপেন হাজারিকা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে সঙ্গীত রচনা করেছিলেন তার মধ্য দিয়ে তেজপুরের মহান ইতিহাস প্রতিধ্বনিত হয়। প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই সঙ্গীতের কয়েকটি লাইন উল্লেখ করেছেন।

‘অগ্নিগড়র স্থাপত্য, কলিয়া ভোমরার সেতু নির্মাণ,

জ্ঞান জ্যোর্তিময়,

সোহি স্থানতে বিরাজিসে তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়’-

অর্থাৎ তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয় সেইখানে গড়ে উঠেছে যেখানে অগ্নিগড়ের মতো স্থাপত্য, কলিয়া-ভোমরা সেতু, জ্ঞানের আলো রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তেজপুরের সঙ্গে ভূপেনদা, জ্যোতিপ্রকাশ আগরওয়াল ও বিষ্ণুপ্রসাদ রাভার মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের নাম জড়িয়ে রয়েছে।

ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন থেকে দেশের স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তাঁদের জীবনেও সোনালী অধ্যায় থাকবে। তেজপুরের গৌরবকে সারা ভারত ও বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে এবং আসাম ও উত্তরপূর্বের উন্নয়নকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে তিনি আহ্বান জানিয়েছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো ক্ষেত্র সহ বিভিন্ন বিষয়ে উত্তরপূর্বের উন্নয়নের জন্য সরকারের উদ্যোগের সুবিধা নিতে তিনি ছাত্রছাত্রীদের পরামর্শ দিয়েছেন।

শ্রী মোদী তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে উদ্ভাবনের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হওয়ার প্রসঙ্গটিও উল্লেখ করেছেন। বিভিন্ন স্থানীয় সমস্যার সমাধান ও উন্নয়নের নতুন সম্ভাবনার সুযোগ তৈরির জন্য তৃণমূল স্তরের এই উদ্ভাবনগুলি ভোকাল ফর লোকালকে সাহায্য করছে। স্বচ্ছ পানীয় জলের জন্য স্বল্প মূল্যের প্রযুক্তি উদ্ভাবন, প্রতিটি গ্রামে বর্জ্য থেকে জ্বালানী তৈরি করার উদ্যোগ, কম খরচে দক্ষভাবে বায়ো গ্যাস ও জৈব যৌগ উৎপাদনের প্রযুক্তি উদ্ভাবন, জীব বৈচিত্র্য রক্ষা, উত্তর পূর্বাঞ্চলের সমৃদ্ধ পরম্পরা রক্ষা করা, এই অঞ্চলের যেসব আদিবাসী সমাজ সংকটাপন্ন তাদের ভাষা রক্ষার জন্য যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ, নওগার বাটাদ্রব থানায় শতাব্দী প্রাচীন কাঠের তৈরি নকশা রক্ষা, আসামের বইপত্র এবং কাগজ ডিজিটাইজেশন করার মতো তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয় কম খরচে বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করায় তিনি প্রশংসা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, স্থানীয় চাহিদা পূরণে তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের পরিবেশ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করার বিষয়ে অনুপ্রেরণা যোগানোর কারণ। এখানকার হোস্টেলগুলি এই অঞ্চলের পাহাড় ও নদীর নামে নামাঙ্কিত। শ্রী মোদী বলেছেন এইগুলি শুধু নামই নয় বরং এগুলি হল জীবনের অনুপ্রেরণা। জীবনের চলার পথে আমরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হই, অনেক পাহাড় পর্বত ও নদী অতিক্রম করি। তিনি বলেছেন ছাত্রছাত্রীরা যখনই কোনও পর্বত আরোহণ করেন তখনই তারা নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। আর এভাবে নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার জন্য তাঁরা অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। অনেক উপনদী মিশে যেমন নদী হয় এবং সেই নদী যেমন সাগরে মেশে, ঠিক একইভাবে আমাদের লক্ষ্যপূরণে এবং ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা জীবনের বিভিন্ন সময়ে নানা মানুষের থেকে জ্ঞান আহরণ করি। এইভাবে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ চলে। কেউ যখন এরকমভাবে এগিয়ে যান তখনই উত্তরপূর্ব ভারত দেশের উন্নয়নের জন্য ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আত্মনির্ভর ভারতের জন্য সবথেকে বড় পরিবর্তন হল আজকের যুব সম্প্রদায়ের মানসিকতা, যা সহজাত প্রবৃত্তি ও সক্রিয়তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে চলে। তিনি আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের বিষয়ে সমাবর্তনে বিস্তারিত জানিয়েছেন।

শ্রী মোদী বলেছেন, আজ ভারতের যুব সম্প্রদায় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ দারুণভাবে গ্রহণ করছে। এই বিষয়ে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি ভারতীয় তরুণ ক্রিকেটারদের অস্ট্রেলিয়ায় সাফল্যের কথা উল্লেখ করেছেন। ভারতীয় ক্রিকেট দল নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল। তারা শোচনীয় পরাজয় বরণ করেছিল। তা সত্ত্বেও দ্রুত পরিস্থিতি সামলে নিয়ে পরের ম্যাচেই তারা বিজয়ী হয়েছেন। আহত হওয়া সত্ত্বেও খোলোয়াড়রা তাদের জেদ দেখিয়েছেন। কঠিন পরিস্থিতিতে হতাশ হওয়ার বদলে নতুন সমাধান খুঁজে বের করে তারা চ্যালেঞ্জের দিকে এগিয়ে গেছেন। তাঁদের অভিজ্ঞতা ছিল না, কিন্তু মনোবল ছিল তুঙ্গে। আর এইভাবেই তাঁরা সুযোগকে কাজে লাগিয়েছেন। তাঁরা তাঁদের মেধা এবং মানসিকতা দিয়ে ভালো একটি দলকে পরাজিত করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন, আমাদের খেলোয়াড়দের এই নজরকাড়া সাফল্য শুধুমাত্র খেলাধুলোর জগতেই সীমাবদ্ধ নয়। জীবনের নানা ক্ষেত্রে কার্য সম্পাদনার জন্য শিক্ষার বিষয় তিনি উল্লেখ করেছেন। প্রথমত আমাদের ক্ষমতার ওপর নিজের বিশ্বাস ও আস্থা থাকতে হবে ; দ্বিতীয়ত ইতিবাচক মানসিকতার সাহায্যে ইতিবাচক ফলাফলের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তৃতীয় এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হল যদি কারুর কাছে দুটি উপায় থাকে- একটি নিরাপদ এবং অন্যটি জেতার ক্ষেত্রে কঠিন পথ অতিক্রম করতে হবে, সেক্ষেত্রে জয়ের জন্য ওই পথেই এগিয়া যাওয়া দরকার। কখনও ব্যর্থ হলে তাতে ক্ষতি নেই এবং যেকোন ঝুঁকি নেওয়ার থেকে পিছিয়ে আসা উচিত নয়। আমাদের ভয়শূন্য ও সক্রিয় হতে হবে। যদি আমরা ব্যর্থতার ভয়কে ও অহেতুক চাপকে অতিক্রম করতে পারি তাহলে আমরা ভয়মুক্ত হবো। নতুন এই ভারত লক্ষ্যপূরণে আস্থাবান এবং উৎসর্গকৃত। আজ শুধুমাত্র ক্রিকেটের মাঠেই এর প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছেনা, এই ছবি চারদিকে দেখা যাচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রছাত্রীদের বলেছেন।

এই আত্মপ্রত্যয় এবং ভয়হীনতা নতুন রাস্তা দেখায় এবং এভাবেই যুবশক্তি করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশের উদ্যোগকে শক্তিশালী করেছে। প্রাথমিকভাবে যেসব সমস্যাগুলি দেখা দিয়েছিল ভারত সেগুলির সমাধান করেছে। এদেশের সম্পদ এখন আর বাইরে যেতে পারেনা, পরিস্থিতি মানিয়ে নেওয়ার পরিবর্তে দেশ দ্রুত সক্রিয়ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় ভারত এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে লড়াই করতে পেরেছে। দেশে তৈরি বিভিন্ন উপাদান স্বাস্থ্যক্ষেত্রে পরিকাঠামোর উন্নয়ন ঘটাতে পেরেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমাদের টিকা সংক্রান্ত গবেষণা ও টিকা উপাদনের ক্ষমতা বিশ্বে ভারত সহ বিভিন্ন দেশে সুরক্ষা সংক্রান্ত আস্থা বাড়াতে সাহায্য করেছে।

সুবিধাভোগীদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি অর্থ পাঠানোর জন্য ডিজিটাল পরিকাঠামোর ব্যবহার, আর্থিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ডিজিটাল পরিকাঠামো, বিশ্বের বৃহত্তম ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সমন্বয়, শৌচাগার নির্মাণ অভিযান প্রত্যেক বাড়িতে নল বাহিত জল পৌঁছে দেওয়া, স্বাস্থ্য বীমা এবং টিকাকরণ অভিযানের মধ্য দিয়ে আজকের ভারতের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে ভয়হীন উদ্যোগ গ্রহণ এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণের মানসিকতা প্রতিফলিত হচ্ছে। এই প্রকল্পগুলি আসাম ও উত্তরপূর্ব ভারতের জন্য সুফল নিয়ে আসছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নতুন প্রযুক্তি, নতুন নতুন সম্ভাবনা গড়ে তোলে। ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ছাত্রছাত্রীদের ভার্চুয়ালি পাঠদানের ব্যবস্থা করতে পারবে, বিশ্বের যেকোন প্রান্ত থেকে অধ্যাপক, অধ্যাপিকারা এই প্রক্রিয়ায় সামিল হতে পারবেন। এই ধরণের পরিবর্তনে একটি নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর শ্রী মোদী জোর দিয়েছেন। আর জাতীয় শিক্ষানীতি সেই পথেই এগিয়ে চলেছে। এই নীতি প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার, বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদান ও নমনীয়তার উৎসাহিত করে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় তথ্য ও তথ্য বিশ্লেষণের ওপর জাতীয় শিক্ষানীতি গুরুত্ব দিয়েছে। ভর্তি হওয়া থেকে পাঠদান এবং ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়ণের প্রক্রিয়ায় তথ্য বিশ্লেষণ বিপুলভাবে সাহায্য করবে।

প্রধানমন্ত্রী তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের এই লক্ষ্যপূরণে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ছাত্রছাত্রীরা তাঁদের প্রথাগত শিক্ষা শেষের পর শুধু নিজের নয় দেশের ভবিষ্যৎ নিয়েও কাজ করবেন। তাঁদের উচ্চাকাঙ্খা বজায় রাখার সঙ্গে জীবনের বিভিন্ন উত্থান পতন থেকে নিজেদের রক্ষা করারও তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। শ্রী মোদী বলেছেন আগামী ২৫-২৬ বছর তাঁদের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, একইভাবে দেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আশাপ্রকাশ করেছেন ছাত্রছাত্রীরা দেশকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।

সম্পূর্ণ ভাষণ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
PLI, Make in India schemes attracting foreign investors to India: CII

Media Coverage

PLI, Make in India schemes attracting foreign investors to India: CII
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
সোশ্যাল মিডিয়া কর্নার 21 নভেম্বর 2024
November 21, 2024

PM Modi's International Accolades: A Reflection of India's Growing Influence on the World Stage