স্বচ্ছ ভারত অভিযানে দেশব্যাপী জনগণের অংশগ্রহণ বাড়াতে এবং পরিচ্ছন্ন ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাপু’র স্বপ্ন পূরণে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ‘স্বচ্ছতাই প্রকৃত সেবা’ অভিযানের সূচনা করেন।
‘স্বচ্ছতাই প্রকৃত সেবা’ অভিযানের উদ্দেশ্য হল পরিষ্কার-পরিচ্চন্নতার লক্ষ্যে জনগণের অংশগ্রহণ আরও বাড়ানো। আগামী দোসরা অক্টোবর ‘স্বচ্ছ ভারত মিশনে’র চতুর্থ বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে এই কর্মসূচির আয়োজন। এদিনই মহাত্মা গান্ধীর জন্মের সার্ধ শতবার্ষিকী উদযাপনের সুচনা হচ্ছে। এই আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী সকলের প্রতি আহ্বান জানান এবং স্বচ্ছ ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্যে যাবতীয় প্রয়াসকে আরও জোরদার করতে বলেন।
প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ১৭টি জায়গা থেকে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে মত বিনিময় করেন।
কথোপকথনের সময় প্রধানমন্ত্রী সকলের সঙ্গে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সাফল্যের কথা ভাগ করে নেন। এর মধ্যে ছিল চার বছরের মধ্যে দেশের ৪৫০টি জেলার প্রকাশ্য স্থানে শৌচকর্মমুক্ত হওয়ার কথাও। একইভাবে, বিগত চার বছরে ২০টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে প্রকাশ্য স্থান শৌচকর্ম বর্জিত এলাকা হয়ে উঠেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, শৌচাগার বা ডাস্টবিনের সুবিধা প্রদান করাই যথেষ্ট নয়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিকেও অভ্যাস হিসেবে গ্রহণ করা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, এই অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য সারা দেশের মানুষ এই অভিযানে সামিল হচ্ছেন।
অসমের ডিব্রুগড়ের এক বিদ্যালয় পড়ুয়া তাদের স্কুল চত্বরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রাখার জন্য নিজেদের অবদানের কথা প্রধানমন্ত্রীকে শোনায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবসম্প্রদায় সামাজিক পরিবর্তনের দূত। যেভাবে তাঁরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে, তা প্রশংসার যোগ্য বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
স্বচ্ছতার লক্ষ্য নিজেদের উদ্যোগগুলির কথা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার জন্য গুজরাটের মেহসানার দুগ্ধ ও কৃষি সমবায় সমিতিগুলির সদস্যরাও একত্রিত হয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী জানান, ‘স্বচ্ছ ভারত’ অভিযানের দরুণ ডাইরিয়ার মতো রোগের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।
ভারতের প্রবেশদ্বার মুম্বাই থেকে বিশিষ্ট অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন জানান, মুম্বাইয়ে একটি সমুদ্র সৈকতের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি একাধিক পরিচ্ছন্নতা অভিযানে তিনি সামিল হয়েছেন। বিশিষ্ট শিল্পপতি শ্রী রতন টাটাও মতবিনিময়ে অংশ নেন এবং বলেন, প্রত্যেক ভারতবাসীর স্বপ্ন এমন একটি অভিযানের সূচনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারার সুযোগ পেয়ে তিনি সম্মানিত। পরিচ্ছন্ন ভারত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বেসরকারি ক্ষেত্রেরও বড় ভূমিকা রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
এই মতবিনিময় অনুষ্ঠানে শ্রী সঞ্জয় গুপ্তা সহ দৈনিক জাগরণের বরিষ্ঠ সাংবাদিকরা নয়ডা থেকে যোগ দেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রসারে তাঁরা তাঁদের প্রয়াসগুলির কথা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভাগ করে নেন। লাদাকের প্যানগং হ্রদ থেকে ভারত-তিব্বত সীমান্ত পুলিশের (আইটিবিপি) জওয়ানরা এই মতবিনিময়ে অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী জওয়ানের সাহসিকতা ও দেশের প্রতি সেবার প্রশংসা করেন।
কোয়েম্বাটোর থেকে সাধগুরু জাগ্গি বাসুদেব ও মতবিনিময়ে যোগ দেন। তিনি বলেন, এখানে স্বচ্ছতা অভিযানের ব্যাপারে বিশেষ উৎসাহ রয়েছে, যা তার বিভিন্ন জায়গায় সফরের সময় নজরে পড়েছে। ‘স্বচ্ছতাই প্রকৃত সেবা’ আন্দোলনের সূচনার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বচ্ছ ভারত’ কোনও সরকার বা কোনও প্রধানমন্ত্রীর পরিচালিত অভিযান নয় বরং তা একটি সমগ্র জাতির আন্দোলন।
ছত্তিশগড়ে দান্তেওয়াড়া এবং তামিলনাড়ুর সালেম থেকেও মহিলা স্বচ্ছাগ্রহীতা তাঁদের বিভিন্ন প্রয়াসের কথা প্রধানমন্ত্রীকে শোনান। পাটনা সাহেব গুরুদ্বার থেকে আধ্যাত্মিক গুরু ও সাধারণ মানুষ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন। মাউন্ট আবু থেকে দাদি জানকিজিও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে যোগ দেন। পরিষ্কার-পরিচ্চন্নন্তার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রয়াসের জন্য প্রধানমন্ত্রী ব্রহ্মকুমারকে ধন্যবাদ দেন। মধ্যপ্রদেশের রাজগড়ের সাধারণ মানুষের সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী মতবিনিময় করেন। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সহ ফতেপুরের মানুষও এই মতবিনিময়ে যোগ দেন। বেঙ্গালুরু থেকে মতবিনিময়ে যোগ দেন আধ্যাত্মিক গুরু শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সমগ্র জাতিকে বিশেষ করে, যুবসম্প্রদায়কে উৎসাহিত করেছেন।
উত্তরপ্রদেশের বিজনোরে গঙ্গা-পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে যুক্ত স্বচ্ছাসেবীদের সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী মতবিনিময় করেন। মা গঙ্গাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কাজে তাঁদের প্রয়াসগুলির প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। গঙ্গানদীর তীরে বসবাসকারী সমস্ত মানুষকে ‘স্বচ্ছতাই প্রকৃত সেবা’ আন্দোলন চলাকালীন এই নদীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। আজমের শরিফ দরগা থেকে অসংখ্য ভক্ত এবং হরিয়ানার রিওয়ারি থেকে রেল কর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কোল্লাম থেকে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে যোগ দেন মা অমৃতানন্দময়ী।
মতবিনিময় অনুষ্ঠান শেষ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী স্বচ্ছতাগ্রহীদের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, তাঁদের ভূমিকা ইতিহাসে সর্বদাই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি আরও বলেন, “পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি আমাদের আস্থা এবং দৃঢ় সঙ্কল্প গগনচুম্বি।” ‘স্বচ্ছতাই প্রকৃত সেবা’ আন্দোলনের জন্য কাজ করতে সাধারণ মানুষের প্রতি তিনি আন্তরিক আহ্বান জানান।