আজমুম্বাইতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নৌ-সাবমেরিন আইএনএস কালভরি-কে জাতির উদ্দেশে উৎসর্গকরলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। এই সাবমেরিনটিকে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’কর্মসূচির সাফল্যের এক বড় দৃষ্টান্ত বলে বর্ণনা করেন তিনি। এজন্য দেশবাসীকেঅভিনন্দনও জানান প্রধানমন্ত্রী।
শ্রীমোদী বলেন, ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক যে দ্রুত প্রসারলাভ করছে, তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হল এই সাবমেরিনটি। ভারতীয় নৌ-বাহিনীর শক্তিবৃদ্ধিতে এই ডুবোজাহাজটি বিশেষভাবে সাহায্য করবে বলে মনে করেন তিনি। এর নির্মাণ ওউৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত সকলেরই ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
একুশেরশতকটিকে এশিয়ার শতক বলে চিহ্নিত করা হয় – এই প্রসঙ্গের অবতারণা করে শ্রী নরেন্দ্রমোদী বলেন, একবিংশ শতাব্দীর উন্নয়ন ধারা যে ভারত মহাসাগরের মধ্য দিয়েই বয়ে চলেছে,এ বিষয়ে কোন সংশয় নেই। এই কারণেই কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিতে একটি বিশেষ স্থানঅধিকার করে রয়েছে ভারত মহাসাগর।
‘সাগর’– তাঁর এই প্রতীকি ব্যাঞ্জনার মধ্য দিয়েই বিষয়টি সুপরিস্ফুট হবে বলে মনে করেনপ্রধানমন্ত্রী। তাঁর কাছে সাগরের অর্থ হল ‘সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সকলের জন্য বিকাশ ওনিরাপত্তা’ (সিকিউরিটি অ্যান্ড গ্রোথ ফর অল ইন দ্য রিজিয়ন)।
ভারতমহাসাগর অঞ্চলে দেশের আন্তর্জাতিক, কৌশলগত তথা অর্থনৈতিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্টবিষয়গুলি সম্পর্কে ভারত যে পূর্ণ মাত্রায় সতর্ক ও সচেতন, একথারও প্রসঙ্গত উল্লেখকরেন তিনি। তাঁর মতে, ঠিক এই কারণেই আধুনিক সাজে সজ্জিত ভারতীয় নৌ-বাহিনীসংশ্লিষ্ট অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রসারে এক অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে।
শ্রীমোদী বলেন, মহাসাগরের অন্তর্নিহিত সম্পদ ও সম্ভাবনা আমাদের জাতীয় বিকাশ প্রচেষ্টায়শক্তি সঞ্চার করে। এই কারণেই নৌ-সন্ত্রাস, জলদস্যুতা এবং মাদক পাচারের মতো সমস্যাও চ্যালেঞ্জগুলি সম্পর্কে ভারত পূর্ণ মাত্রায় সচেতন। এই সমস্যা শুধু ভারতের একারনয়। এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলিও একই সমস্যার সম্মুখীন। তবে, এই সমস্তচ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকাটি পালন করে চলেছে ভারতই।
প্রধানমন্ত্রীবলেন, সমগ্র বিশ্ব জগতই যে এক ও অভিন্ন পরিবার, এই নীতি ও মানসিকতায় বিশ্বাস করেভারত। এই কারণে, আন্তর্জাতিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও আমাদের দেশ কোনভাবেই পিছিয়েনেই। এমনকি, সঙ্কটের মুহূর্তেও সহযোগী দেশগুলির মধ্যে সাহসে ভর করে প্রথম এগিয়েযায় ভারত। ভারতের কূটনীতি এবং নিরাপত্তা জোরদার করার মধ্যেও মানবতাবাদী একটি দিকরয়েছে। ভারত হল এমন একটি শক্তিশালী দেশ যার মানবতাবাদী কর্মপ্রচেষ্টার ক্ষেত্রেওএক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের ক্ষমতা রয়েছে। আর ঠিক এই কারণেই, শান্তি ওস্থিতিশীলতার পথে ভারতের সঙ্গে একসাথে এগিয়ে যেতে আগ্রহী বিশ্বের অন্যান্য দেশ।
প্রধানমন্ত্রীবলেন, গত তিন বছরে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত পরিবেশ ও পরিস্থিতি দ্রুতপরিবর্তিত হচ্ছে। আইএনএস কালভরি-র নির্মাণকালে যে ক্ষমতা ও দক্ষতার পরিচয় পাওয়াগেছে, তা নিঃসন্দেহে ভারতের এক বিশেষ সম্পদ।
ভাষণদানকালেপ্রসঙ্গত তিনি উল্লেখ করেন যে ‘এক পদ, এক পেনশন’ নীতি চালু করার যে বিষয়টিদীর্ঘদিন ধরে মুলতবি ছিল, তার নিরসনে তাঁর সরকার যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, বাস্তবেরঘটনাই তার প্রমাণ।
প্রধানমন্ত্রীবলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি এবং দেশের সশস্ত্র বাহিনীগুলির শৌর্য ও সাহসিকতাএকথাই প্রমাণ করেছে যে জম্মু ও কাশ্মীরে যে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিসৃষ্টি করেছিল সন্ত্রাসবাদীরা, তা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
জাতির নিরাপত্তার স্বার্থে যাঁরা আত্মবলিদানদিয়েছেন, তাঁদের উদ্দেশে এদিন শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শ্রী নরেন্দ্র মোদী।