প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী দেশে কোভিড-১৯ ও ওমিক্রণ পরিস্থিতি, উদ্বেগের কারণ হয়ে ওঠা নতুন ভ্যারিয়েন্ট, কোভিড-১৯ কনটেনমেন্ট জোন এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে গৃহীত ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ক্ষেত্রকে শক্তিশালী করা সহ ওষুধ, অক্সিজেন সিলিন্ডার ও কনসেন্ট্রেটর, ভেন্টিলেটর, পিএসএ প্ল্যান্ট, আইসিইউ/অক্সিজেন সাপোর্ট বেড, মানবসম্পদ, তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং টিকাকরণে অগ্রগতি নিয়ে আজ উচ্চ পর্যায়ের এক পর্যালোচনা বৈঠকে পৌরোহিত্য করেন।
বৈঠকে আধিকারিকরা সারা বিশ্বে নতুন ভেরিয়েন্টের দরুণ উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। যে সমস্ত দেশে টিকাকরণের হার বেশি এবং ওমিক্রণ ভ্যারিয়েন্টের প্রমাণ মিলেছে, সেই সমস্ত দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া সম্পর্কেও প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়। ওমিক্রণ পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে সমস্ত কারিগরি পদক্ষেপ নিয়েছে, সে সম্পর্কে এবং অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে যেসব প্রায়স গ্রহণের কথা বলা হয়েছে, সে বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীকে বিশদে জানানো হয়। দেশে কোভিড-১৯ ও ওমিক্রণ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করার পাশাপাশি, যেসব রাজ্য ও জেলা থেকে অধিক সংখ্যায় আক্রান্তের খবর মিলছে, সে ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন তথ্য দেওয়া হয়। বৈঠকে আধিকারিকরা দেশে ওমিক্রণে আক্রান্তের সংখ্যা, আক্রান্ত ব্যক্তিদের ভ্রমণ ইতিহাস, টিকাকরণ পরিস্থিতি এবং সুস্থতার বিষয়ে অবহিত করা হয়।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক গত ২৫ নভেম্বর থেকে যে সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করে রাজ্যগুলির সঙ্গে শেয়ার করেছে, সে সম্পর্কেও প্রধানমন্ত্রীকে সংক্ষেপে জানানো হয়। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক যাত্রীদের জন্য সংশোধিত ভ্রমণ নির্দেশিকা, কোভিড-১৯ জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় পদক্ষেপ, টিকাকরণের হার বৃদ্ধি, অক্সিজেন সরবরাহকারী সরঞ্জামের যোগান ও বন্দোবস্ত সম্পর্কেও বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়।
আধিকারিকদের বক্তব্য শোনার পর প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি স্তরে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নজরদারি বজায় রাখার নির্দেশ দেন। সামগ্রিক সরকার এই দৃষ্টিভঙ্গীকে বিবেচনায় রেখে কন্টেনমেন্ট ও ম্যানেজমেন্ট প্রয়াসে রাজ্যগুলিকে সার্বিক সহায়তা অব্যহাত থাকবে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান। এই লক্ষ্যে তিনি কেন্দ্রকে রাজ্যগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় বজায় রেখে কাজ করার নির্দেশ দেন। মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কেন্দ্র সহযোগীতা ও সমন্বয়ের ভিত্তিতে যে সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তা সঙ্কট মোকাবিলায় ভবিষ্যতের দিশারি হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
নতুন ভ্যারিয়েন্টের প্রেক্ষিতে আমাদের সকলকে সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই এখনও শেষ হয়নি, তাই যাবতীয় কোভিড আদর্শ আচরণ মেনে চলা এখনও অপরিহার্য।
প্রধানমন্ত্রী আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, জেলাস্তর থেকে শুরু করে রাজ্য পর্যায় পর্যন্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে হবে, যাতে নতুন ভ্যারিয়েন্টের ফলে উদ্ভূত যে কোনও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায়। রাজ্যগুলিও যাতে অক্সিজেন সরবরাহকারী সরঞ্জাম ও তা কাজে লাগানো সুনিশ্চিত করে, তা দেখার জন্য প্রধানমন্ত্রী আধিকারিকদের নির্দেশ দেন। নিয়মিত-ভিত্তিতে রাজ্যগুলির সঙ্গে কাজ করার জন্য আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন বিষয়, যেমন – মানবসম্পদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি, সময় মতো অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য কোভিড চিকিৎসা পরিষেবা চালু রাখতে রাজ্যগুলির প্রস্তুতি এবং বাড়িতেই একান্তে থাকা ব্যক্তিদের উপর নজরদারি ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করতে গুরুত্ব দেন। টেলিমেডিসিন ও টেলিপরামর্শের ক্ষেত্রে শ্রী মোদী আধিকারিকদের তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বাড়াতে বলেন।
কিছু কিছু এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি, নজরদারি ব্যবস্থা আরও নিবিড় করার উপর জোর দেন। জেনম সিকোয়েন্সিয়েনের জন্য ইনসাকগ্ ল্যাবগুলিতে আরও বেশি সংখ্যায় পজিটিভ নমুনা পাঠানোর উপর তিনি জোর দেন। সময় মতো কনটেইনমেন্ট ও চিকিৎসার জন্য নমুনা পরীক্ষার গতি বাড়ানো ও আক্রান্তদের দ্রুত খুঁজে বের করার উপর প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব দেন। তিনি যে সমস্ত রাজ্যে টিকাকরণের হার কম, আক্রান্তের সংখ্যা বেশি এবং অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো রয়েছে, সেখানে পরিস্থিতির উন্নতিতে কেন্দ্রীয় দল পাঠানোর জন্য আধিকারিকদের নির্দেশ দেন।
দেশে টিকাকরণের অগ্রগতি সম্পর্কেও প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়। তাঁকে জানানো হয় যে, সারা দেশে যোগ্য জনসংখ্যার ৮৮ শতাংশের বেশি ব্যক্তির প্রথম ডোজ এবং ৬০ শতাংশের বেশি ব্যক্তির দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ টিকাকরণ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তুলতে হর ঘর দস্তক অভিযান অত্যন্ত কার্যকর হয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়। এই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমস্ত যোগ্য ব্যক্তির সম্পূর্ণ টিকাকরণ সুনিশ্চিত করার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, সমস্ত যোগ্য ব্যক্তির সম্পূর্ণ টিকাকরণ যত দ্রুত সম্পন্ন হবে, ধার্য লক্ষ্যপূরণে তত অগ্রগতি হবে।
আজকের এই পর্যালোচনা বৈঠকে ক্যাবিনেট সচিবের পাশাপাশি, নীতি আয়োগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সদস্য ডাঃ ভি কে পল, স্বরাষ্ট্র সচিব শ্রী এ কে ভাল্লা, স্বাস্থ্য সচিব শ্রী রাজেশ ভূষণ, জৈব প্রযুক্তি দপ্তরের সচিব ডঃ রাজেশ গোখলে, ভারতীয় চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের মহানির্দেশক ডাঃ বলরাম ভার্গব, আয়ুষ সচিব শ্রী বৈদ্য রাজেশ কোটেচা, নগরোন্নয়ন সচিব শ্রী দুর্গাশঙ্কর মিশ্র, ভারত সরকারের মুখ্য বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা অধ্যাপক কে বিজয় রাঘবন সহ উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন।