প্রধানমন্ত্রীশ্রী নরেন্দ্র মোদী বুধবার সারা দেশের জেলাশাসকদের উদ্দেশে এক ভাষণ দেন ভিডিওকনফারেন্সের মাধ্যমে। ‘নতুন ভারত– মন্থন’ বিষয়টির ওপর তিনি সবিস্তার আলোকপাত করেনজেলাশাসকদের সঙ্গে আলোচনা ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ৭৫তমবার্ষিকী উপলক্ষেই এই বিশেষ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এর লক্ষ্য হল, ‘নতুন ভারত –মন্থন’-এর চিন্তাভাবনাকে দেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া।
প্রধানমন্ত্রীতাঁর ভাষণে ব্যাখ্যা করেন যে ৯ আগস্ট, এই তারিখটি তরুণ ও যুব সমাজের ইচ্ছাশক্তিএবং উচ্চাকাঙ্ক্ষারই প্রতীক। তিনি বলেন, ‘সঙ্কল্প সে সিদ্ধি’ অর্থাৎ সঙ্কল্পেইসিদ্ধিলাভ – এই মন্ত্রটির সঙ্গে সম্পৃক্ত ৯ আগস্টের দিনটি।
ভারত ছাড়োআন্দোলনের সূচনায় দেশের প্রবীণ নেতাদের কারারুদ্ধ করা হলেও দেশের বিভিন্নপ্রান্তের তরুণ ও যুবকরা কিভাবে এই আন্দোলনকে সেই সময় এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন সেকথাও এদিন স্মরণ করেন শ্রী নরেন্দ্র মোদী।
প্রধানমন্ত্রীবলেন, দেশের তরুণ ও যুবকরা যখন নেতৃত্বের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন তখন লক্ষ্য পূরণনিশ্চিত। তিনি বলেন, জেলাশাসকরা শুধুমাত্র জেলাগুলিরই প্রতিনিধি নন, একইসঙ্গেতাঁরা সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের তরুণ ও যুব সমাজের প্রতিনিধিও। দেশের জেলাশাসকরা একদিকথেকে খুবই ভাগ্যবান কারণ জাতির সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করার সুযোগ তাঁরা লাভকরেছেন।
শ্রী মোদীবলেন, দেশের প্রত্যেক ব্যক্তি, প্রতিটি পরিবার এবং প্রত্যেকটি সংস্থা ও সংগঠনকেসরকার পরামর্শ দিয়েছে এমন কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করার জন্য যা আগামী ২০২২সালের মধ্যে অবশ্যই পূরণ করা সম্ভব। বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধি হিসেবে জেলাশাসকদেরএখন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে এই মর্মে যে আগামী ২০২২ সালের মধ্যে তাঁরা তাঁদেরজেলাগুলিকে কিভাবে উন্নয়নের পথে চালিত করবেন এবং যে সমস্ত ঘাটতি, ত্রুটি-বিচ্যুতিবা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সেগুলি দূর করার চেষ্টা করবেন। এই লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্যপরিষেবা ব্যবস্থাকেও কিভাবে নিশ্চিত করা যায় সেই সিদ্ধান্তও গ্রহণ করতে হবেতাঁদেরই।
দেশেরকয়েকটি জেলা যে বরাবরই জল, বিদ্যুৎ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের দিক থেকে যথেষ্ট অনগ্রসররয়ে গেছে সে কথাও এদিন উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশের সর্বাপেক্ষাঅনগ্রসর ১০০টি জেলায় যখন আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটে, তখন তা দেশেরউন্নয়নের সার্বিক অগ্রগতিকে নানাভাবে উৎসাহিত করে। সুতরাং, এই সমস্ত জেলারউন্নয়নের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদেরই।
দেশের যেসমস্ত জেলায় উন্নয়নের জোয়ার এসেছে, সেগুলিকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে এই কাজে এগিয়েযাওয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। কোন জেলায় কোন একটি বিশেষ ক্ষেত্রে বা বিশেষকোন কর্মসূচি রূপায়ণের সুবাদে যদি ভালো ফল লাভ সম্ভব হয়, তাহলে সেখানকার সেই কর্মপদ্ধতিঅনুসরণ করা প্রয়োজন।
সহকর্মী,জেলার বুদ্ধিজীবী এবং স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের সহায়তায় পন্থা-পদ্ধতির একটিসুনির্দিষ্ট খসড়া জেলাশাসকরা প্রস্তুত করতে পারেন বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তবেএই কাজ ১৫ আগস্টের পূর্বেই সেরে ফেলা প্রয়োজন। ঐ খসড়ার ভিত্তিতে যে সঙ্কল্প তাঁরাগ্রহণ করবেন তার মধ্যে ১০ থেকে ১৫টি বিশেষ লক্ষ্য চিহ্নিত করা যেতে পারে যা আগামী২০২২ সালের মধ্যে পূরণ করা সম্ভব।
সরকারিওয়েবসাইট (https://www.newindia.in-এ”>www.newindia.in -এ গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য ওকাজকর্ম সম্পর্কে অবহিত হওয়ার জন্য জেলাশাসকদের পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনিবলেন, ‘সঙ্কল্পেই সিদ্ধিলাভ’ – এই মন্ত্রটিকে অবলম্বন করে কিভাবে উন্নয়নের পথেএগিয়ে যাওয়া সম্ভব তার হদিশ পাওয়া যাবে ঐ ওয়েবসাইটটিতে। তিনি যেভাবে জেলাশাসকদেরসঙ্গে এই বিশেষ ‘মন্থন’ কর্মসূচির মাধ্যমে মতবিনিময়ের সুযোগ গ্রহণ করেছেন, নিজেরনিজের জেলায় জেলাশাসকরাও এই বিশেষ মঞ্চটির সাহায্যে অন্যান্যদের সঙ্গে আলোচনা ওমতবিনিময়ের সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন।
‘নতুন ভারত’ ওয়েবসাইটটির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলিরকথা ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের ওপর একটি অনলাইন ক্যুইজএবং ‘সঙ্কল্পেই সিদ্ধিলাভ’ আন্দোলনের বিভিন্ন ঘটনাবলীর ওপর এক বিশেষ দিনপঞ্জীরসন্ধান পাওয়া যাবে ঐ ওয়েব পোর্টালটিতে।
রিলে দৌড় প্রতিযোগিতার সঙ্গে উন্নয়ন প্রচেষ্টারতুলনা করেন শ্রী মোদী। তিনি বলেন, একটি রিলে দৌড় প্রতিযোগিতায় যেমন একজনঅ্যাথলিটের কাছ থেকে আরেকজন অ্যাথলিটের কাছে ব্যাটন পৌঁছে দেওয়া হয়, সেইভাবে একজনজেলাশাসকের কাছ থেকে অন্য জেলাশাসকের কাছেও উন্নয়নের ব্যাটন পৌঁছে দেওয়া যেতেপারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই জনসচেতনতারঅভাবেই কাঙ্খিত লক্ষ্যে কোন কোন কর্মসূচির রূপায়ণকে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয় না। এইকারণে, জেলাশাসকদের উচিৎ এলইডি বাল্ব, ভিম অ্যাপ সহ বিভিন্ন কর্মসূচির সুফলসম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করে তোলা। একইভাবে, ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ কর্মসূচির সাফল্যনির্ভরশীল সক্রিয় প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষের সচেতনতার ওপর। জনসাধারণের সক্রিয়অংশগ্রহণের মাধ্যমেই পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
শুধুমাত্র ফাইলের মধ্যে নিজেদের আবদ্ধ না রেখে বাইরেগিয়ে কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি হওয়ার জন্য জেলাশাসকদের পরামর্শ দেন তিনি। জেলারপ্রত্যন্ত প্রান্তে সেখানকার স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্পর্কে সরেজমিন খোঁজখবর নেওয়ারদায়িত্ব যে জেলাশাসকদেরই একথাও তাঁদের স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, একজনজেলাশাসক বাইরে গিয়ে বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে যত বেশি অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতেপারবেন, তত বেশি করে তিনি সক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারবেন তাঁর অফিসের ফাইলপত্রে। জিএসটিসম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জেলাশাসকদের নির্দেশ দেন নিজের নিজেরজেলায় ব্যবসায়ী ও বাণিজ্য প্রতিনিধিদের কাছে জিএসটি-কে একটি ‘ভালো এবং সরল কর ব্যবস্থা’( Good and Simple Tax ) বলে ব্যাখ্যা করার জন্য। বাণিজ্যিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিতথা সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলির জিএসটি-র আওতায় নথিভুক্তির বিষয়টিকে নিশ্চিত করারজন্যও তিনি নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের। এছাড়া, পণ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রেসরকারি বৈদ্যুতিন বিপণন ব্যবস্থার প্রসারেও জেলাশাসকদের সক্রিয় ভূমিকা পালনেরবিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারি শাসন ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হওয়াউচিৎ দেশের দরিদ্রতম মানুষটিরও জীবনযাত্রাকে উন্নত করে তোলা – মহাত্মা গান্ধীর এইবাণীর কথাও এদিন তাঁর ভাষণে পুনরুচ্চারণ করেন শ্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রাত্যহিক দিনলিপিঅনুসারে দরিদ্র জনসাধারণের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন সম্ভব করে তোলার জন্য তাঁরা কোনকাজ করেছেন কিনা সে সম্পর্কে জেলাশাসকদের নিজের নিজের কাজের পর্যালোচনা করারওপরামর্শ দেন তিনি। দরিদ্র মানুষ তাঁদের ক্ষোভ এবং অভাব-অভিযোগ নিয়ে যদি শরণাপন্নহন, তাহলে তাঁদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার জন্য জেলাশাসকদেরনির্দেশ দেনপ্রধানমন্ত্রী।
পরিশেষে, প্রধানমন্ত্রী বলেন যে দেশের জেলাশাসকরাবয়সে তরুণ। সুতরাং, আগামী ২০২২ সালের মধ্যে এক নতুন ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্যেসঙ্কল্প গ্রহণের মতো দক্ষতা ও মানসিকতা তাঁদের রয়েছে। এই সঙ্কল্পে সিদ্ধিলাভ যেসম্ভব এ বিষয়ে দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের কথা ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে এইপ্রক্রিয়ায় দেশও পৌঁছে যাবে উন্নয়নের এক নতুন শিখরে।