আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি এবং সর্দার প্যাটেল বিভিন্ন প্রদেশকে একসঙ্গে নিয়ে এসে যে সংযুক্ত ভারত গঠন করেছেন তা সাত দশক হয়ে গেছে| রাজনৈতিক ঐক্য বাস্তব রূপ পেয়েছে, কিন্তু ভারত এক বাজার হয়ে উঠতে পারেনি| এন.ডি.এ. সরকার ভারতের বাজারগুলিকে সংযুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে, যাতে আমাদের উত্পাদনকারীদের সক্ষম করা যায় ও ক্রেতাদের শক্তিশালী করা যায়| সত্যিকার অর্থে এক জাতি এক বাজার-এর লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে এন.ডি.এ. সরকার বহুমুখী উদ্যোগ হাতে নিয়েছে|
ই-নাম
কৃষি বাজারগুলি রাজ্যগুলির কৃষি-বাজার প্রবিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যার মাধ্যমে রাজ্য বিভিন্ন বাজার অঞ্চলে বিভক্ত হয়ে থাকে, আর এই প্রতিটি ক্ষেত্রকে পৃথক কৃষিজাত উত্পাদক বাজার কমিটি (এ.পি.এম.সি.) নিয়ন্ত্রিত করে থাকে যা তাদের নিজস্ব বাজার নিয়ম প্রয়োগ করে থাকে (ফি সহ)| রাজ্যের ভেতরেই বাজারের এই ভাগ কৃষি-পণ্যকে এক বাজার থেকে আরেক বাজারে যাওয়ার প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন পর্যায়ে কৃষি-পণ্যের ঘাঁটাঘাটি ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে মান্ডি চার্জের ফলে কৃষকদের কোনো সুবিধা না হওয়া সত্বেও ক্রেতাদের জন্য দাম বেড়ে যায়|
ই-নাম রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরে অনলাইন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম-এর মাধ্যমে একটি সংযুক্ত বাজার গঠনের মাধ্যমে এই প্রতিকুলতাগুলিকে দূর করছে এবং অভিন্নতায় উত্সাহ দিচ্ছে, সুসংহত বাজারগুলিতে পদ্ধতির সরলিকরণ করছে, ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যেকার তথ্যের অসামঞ্জস্যতা দূর করছে এবং সত্যিকারের চাহিদা ও সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে সেই সময়কার দাম জানতে সহায়তা করছে, নিলামের ক্ষেত্র্রে স্বচ্ছতায় উত্সাহ দিচ্ছে এবং পণ্যের গুণমানের সমান তালে এর দাম সহ কৃষকদের জন্য সারা দেশের বাজারের অধিগম্যতা তৈরি করে দিচ্ছে এবং ভালো পণ্যের জন্য অনলাইন পেমেন্ট ও সহজলভ্যতা এবং গ্রাহকদের জন্য আরও বেশি ন্যায়সঙ্গত দামের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে|
জি.এস.টি.
আমাদের দেশে রয়েছে বহুমুখী করের ব্যবস্থা| একটি দেশেরই বহুমুখী কর হার ও নানা ধরনের নিয়ম| তাই প্রায়শই উত্পাদনকারী ও ক্রেতাকে অনেক বেশি কর দিতে হয়| জি.এস.টি. এলে এই সমস্ত কিছু পরিবর্তিত হয়ে যাবে| জি.এস.টি. অনুসারে গোটা দেশে একটি কর হার কার্যকর হবে|
জি.এস.টি. হচ্ছে পণ্য ও পরিষেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে উত্পাদনকারী থেকে গ্রাহক পর্যন্ত একটিমাত্র কর পদ্ধতি| প্রতিটি পর্যায়ে প্রদেয় করের আমানত মূল্য সংযোজনের পরবর্তী পর্যায়ে লভ্য হবে| যা জি.এস.টি.-কে প্রতিটি পর্যায়ে মূলত একটি কর হিসেবে তৈরি করবে| অপ্রত্যক্ষ করের হার ও পরিকাঠামো সারা দেশ জুড়েই এক হওয়াটা সুনিশ্চিত করবে জি.এস.টি., যা নিশ্চয়তা ও বাণিজ্যের অনুকুল পরেবেশ বৃদ্ধি করবে| মূল্য-শৃঙ্খল ও রাজ্যগুলি জুড়ে একটি কর-আমানত প্রবাহের পদ্ধতি করের ন্যূনতম প্রবাহ সুনিশ্চিত করবে| জি.এস.টি.-তে কেন্দ্র ও রাজ্যের প্রধান কর অন্তর্ভুক্ত করায়, সম্পূর্ণ ও সার্বিক ইনপুট পণ্য ও পরিষেবা এবং কেন্দ্রীয় বিক্রয় করের (সি.এস.টি.) উন্নয়ন স্থানীয়ভাবে নির্মিত পণ্য ও পরিষেবার খরচ কমাবে| যা আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় পণ্য ও পরিষেবার প্রতিযোগিতা বাড়াবে এবং ভারতের রফতানিতে বিশেষ গুরুত্ব দেবে| দক্ষতা অর্জন ও ঘাটতি প্রতিরোধ করায় বেশিরভাগ পণ্যের ওপর করের বোঝা কমে যাবে, যা ক্রেতাদের সহায়তা করবে|
এক জাতি, এক গ্রিড, এক দাম
ভারতে সঞ্চালন ক্ষমতা পর্যাপ্ত নয়, যার ফলে উদ্বৃত্ত রাজ্য থেকে ঘাটতি রাজ্যে বিদ্যুত সরবরাহ করতে হয়| দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি বিশেষ করে গ্রীষ্মকালের মাঝামাঝি সময়ে সরবরাহ লাইনে চাপ পড়ায় বিদ্যুতের সংকটে ভোগে| যা এই রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে দাম বাড়িয়ে দেয়| এন.ডি.এ. সরকার লভ্য সরবরাহ ক্ষমতা (এ.টি.সি.) প্রায় ৭১% বাড়িয়ে দিয়েছে অর্থাৎ ২০১৩-১৪ সালে যেখানে ছিল ৩৪৫০ মেগাওয়াট, তা এখন ৫৯০০ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে| যার ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দাম কমেছে|
গ্রিডে বাড়তি বিদ্যুতের লভ্যতা ও মূল্যের তথ্য মোবাইল অ্যাপ “বিদ্যুত্প্রবাহ” (VidyutPravah)-এর মাধ্যমে জনগণকে প্রদান করা হয়| এই অ্যাপ-এর মাধ্যমে রাজ্য কতটুকু বিদ্যুত ক্রয় করছে এবং রাজ্য কোনো ঘাটতির ঘোষণা দিয়েছে কিনা তাও জানা যায়| এই অ্যাপ অনুযায়ী আমরা দেখতে পাই যে বিভিন্ন সময়ে বিদ্যুতের দাম সব রাজ্যের জন্য এক| এগুলো হচ্ছে সরকারের গৃহিত বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য|
সরবরাহ ক্ষমতার বৃদ্ধি বিভিন্ন রাজ্যের জন্য স্বল্পকালীন প্রয়োজনে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুত কেনার সুযোগও করে দিচ্ছে| সরকার “দীপ (ডিসকভারি অফ এফিসিয়েন্ট ইলেকট্রিসিটি প্রাইস) ই-বিডিং এন্ড ই-রিভার্স অকশন পোর্টাল”-এর সূচনা করেছে, যার ফলে সরবরাহকারী কোম্পানিগুলি(ডিসকম) স্বল্পকালীন বিদ্যুত সংগ্রহ করতে পারে| এই প্রতিযোগিতামূলক সংগ্রহ দাম কমাতে সহায়তা করে, যার ফলে শেষ পর্যন্ত লাভবান হন গ্রাহকরাই|
ইউ.এ.এন.
আগে যখন কোনো ব্যক্তি প্রথমবারের মত কোনো কাজে যোগ দিতেন, তখন তিনি যেখানে কাজ করেন সেখানে তাকে একটি ই.পি.এফ. একাউন্ট খুলতে হত, যাতে তার ভবিষ্যনিধি জমা হত| তারপর যখন ওই কর্মচারী কাজ ছেড়ে দিতেন তখন তার জন্য নতুন ই.পি.এফ. একাউন্ট চালু হত| এক্ষেত্রে লেনদেনের ব্যয় এবং বিভিন্ন ধরনের ফর্ম পূরণ করা ছাড়াও এর বৈধতার জন্য কর্মচারীকে তার আগের কর্মদাতার ওপর নির্ভর থাকতে হত| ইউ.এ.এন.-এর মাধ্যেম এখন কর্মচারীর লেনদেনে আর কর্মদাতার কোনো ভুমিকা রইলো না এবং কর্মচারী ও ই.পি.এফ.ও.-এর মধ্যে এখন সরাসরি সংযোগ হয়ে গেল| ইউ.এ.এন. কর্মচারীর জীবনভর একই থাকবে এবং ভবিষ্যনিধির জমা হওয়া অর্থের সঙ্গে ইউ.এ.এন.-এর সংযোগ থাকায় সহজে তা তোলাও যায়|
এইসব উদ্যোগ ভারতের বাজারকে সংহত করার ক্ষেত্রে নগরিকদের জীবন সহজতর করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভুমিকা নেবে|