সাংবিধানিক পদে আসীন থেকে বিগত বছরগুলির মত প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী এবছরও সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে দীপাবলি উদযাপন করেছেন। তিনি আজ জম্মু ও কাশ্মীরে নওশেরা জেলায় ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে সময় কাটান।
বাহিনীর জওয়ানদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনা জওয়ানদের সঙ্গে দীপাবলিতে সময় কাটানো তাঁর কাছে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানোর মতই। আর একারণেই তিনি সাংবিধানিক পদে দায়িত্ব গ্রহণের পর সীমান্তে সেনা জওয়ানদের সঙ্গে দীপাবলিতে সময় কাটান। তিনি বলেন, ১৩০ কোটি ভারতীয়ের শুভেচ্ছা নিয়ে তিনি এখানে এসেছেন। আজ সন্ধ্যায় প্রত্যেক ভারতীয় দেশের সাহসী সেনা জওয়ানদের শুভকামনায় অন্তত একটি প্রদীপ জ্বালাবেন। তিনি সেনা জওয়ানদের বলেন, তাঁরা সকলেই দেশের জীবন্ত সুরক্ষা কবচ। সাহসী সন্তান হয়ে দেশের মানুষের সেবা করা এক সৌভাগ্য, যার সুযোগ সকলের কাছে আসে না।
নওশেরা থেকে প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী দেশবাসীকে দীপাবলির পাশাপাশি আসন্ন গোবর্ধন পুজো ও ভাইফোঁটার শুভেচ্ছা জানান। তিনি গুজরাটবাসীকে নববর্ষের শুভকামনাও জানান।
নওশেরা থেকে প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী দেশবাসীকে দীপাবলির পাশাপাশি আসন্ন গোবর্ধন পুজো ও ভাইফোঁটার শুভেচ্ছা জানান। তিনি গুজরাটবাসীকে নববর্ষের শুভকামনাও জানান।
শ্রী মোদী বলেন, নওশেরার ইতিহাস ভারতের সহসীকতাকেই প্রতিফলিত করে। আর বর্তমান নওশেরা সেনা জওয়ানদের সাহসিকতা ও দৃঢ় সংকল্পের মূর্ত প্রতীক। এই নওশেরা অঞ্চল আগ্রাসী ও দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। শ্রী মোদী মাতৃভূমির সুরক্ষায় যাঁরা সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন, নওশেরার সেই বীর সেনানী ব্রিগেডিয়ার উষ্মান ও নায়েক যদুনাথ সিং-কে বিনম্র শ্রদ্ধা জানান। তিনি বীরত্ব ও দেশাত্মবোধের বিরল নজির রাখার জন্য লেফটেন্যান্ট আর আর রানে ও অন্যান্য অসীম সাহসী সেনা যোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মরণ করেন। শ্রী বলদেব সিং ও শ্রী বসন্ত সিং, যাঁরা অবিচল ভাবে সেনাবাহিনীর পাশে থেকেছেন, তাঁদের আশীর্বাদ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাবনার কথাও সেনা জওয়ানদের সঙ্গে ভাগ করে নেন। শ্রী মোদী সার্জিক্যাল স্টাইকের সময় নওশেরা সেক্টারে স্টেশনের দায়িত্বে থাকা ব্রিগেডিয়ারের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি স্মরণ করে জানান, সার্জিক্যাল স্টাইকের সময় সমস্ত বীর সেনা জওয়ানরা নিরাপদে দেশের মাটিতে না ফেরা পর্যন্ত তিনি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব প্রত্যেকের ওপর ন্যাস্ত। তাই স্বাধীনতার অমৃত কালে আজকের ভারত তার সক্ষমতা ও সম্পদ সম্পর্কে সম্পূর্ণ সজাগ রয়েছে। তিনি প্রতিরক্ষা সম্পদ ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান আত্মনির্ভরতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের সময় প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতকে অন্য দেশের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। কিন্তু এখন প্রতিরক্ষা বাজেটের ৬৫ শতাংশ অর্থই দেশের ভেতরে খরচ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি ২০০টি প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই এই তালিকায় আরও সরঞ্জামের সংযোজন ঘটতে চলেছে। বিজয়া দশমীর দিন প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ৭টি নতুন সংস্থার সূচনা হয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুরানো অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টিগুলি এখন প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র ভিত্তিক নতুন ধরণের আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উৎপাদন করবে। দেশে প্রতিরক্ষা করিডর গড়ে তোলা হচ্ছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের যুবারা এক প্রাণবন্ত প্রতিরক্ষা স্টার্ট আপ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। আর এগুলি সবই প্রতিরক্ষা সামগ্রী রপ্তানিতে ভারতের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।
প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, ভারতীয় সামরিক শক্তির সম্প্রসারণ প্রয়োজন এবং পরিবর্তনশীল সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রূপান্তরণ আবশ্যক। তিনি বলেন, ক্রমপরিবর্তনশীল প্রযুক্তিগত আঙ্গিক ভারতীয় সামরিক ক্ষেত্রে রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তাকে আরও প্রকট করেছে। আর একারণে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন বিভাগে নেতৃত্ব দানের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য রাখা অনেক বেশি জরুরী হয়ে উঠেছে। এই লক্ষ্যে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ এবং সামরিক বিষয়ক দপ্তর গড়ে তোলা হয়েছে। একই ভাবে সীমান্তে আধুনিক পরিকাঠামো দেশের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। তিনি বলেন, লাদাখ থেকে অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত, জয়সলমের থেকে আন্দামান নিকোবর পর্যন্ত সীমান্ত বরাবর আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তোলার ফলে সেনা জওয়ানদের যোগাযোগে উন্নতি ঘটেছে।
দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ নতুন উচ্চতায় পৌঁছুচ্ছে বলে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যেই নৌ ও বিমানবাহিনীতে ফ্রন্ট লাইন বা অগ্রবর্তী ক্ষেত্রে মহিলাদের মোতায়েন করা হয়েছে। শীঘ্রই সেনাবাহিনীতেও মহিলাদের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করা হবে। মহিলাদের জন্য সেনাবাহিনীতে স্থায়ী নিযুক্তি, এনডিএ, ন্যাশনাল মিলিটারি স্কুল, ন্যাশনাল ইন্ডিয়ান মিলিটারি কলেজ খুলে দেওয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী সৈনিক বিদ্যালয়গুলিতে বালিকাদের পঠন-পাঠনের সুযোগ করে দেওয়ার কথা পুনরায় উল্লেখ করেন। স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বালিকাদের জন্য সৈনিক বিদ্যালয়গুলিতে পঠন-পাঠনের কথা ঘোষণা করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্র বাহিনীতে তিনি কেবল অসীম সক্ষমতার বিষয়টি উপলব্ধি করেন না, সেই সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর জওয়ানরাও নিরলস সেবার মানসিকতা, দৃঢ় সংকল্প এবং অতুলনীয় সংবেদনশীলতার দিকগুলিও প্রত্যক্ষ করেন। আর এগুলি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে বিশ্বের অন্যান্য বাহিনীর মধ্যে স্বতন্ত্র ও অনন্য করে তুলেছে। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী বিশ্বের অন্যান্য অগ্রণী বাহিনীর মতই সমান পেশাদার। কিন্তু, ভারতীয় বাহিনীর মূল্যবোধ তাকে স্বতন্ত্র ও অনন্য সাধারণ করে তুলেছে। আপনাদের কাছে দেশের প্রতি এই সেবা কেবল মাসিক বেতন নেওয়ার কোন কাজ নয়, বরং এই সেবা আপনাদের কাছে উপাসনার মত। এই উপাসনা এমন, যার সঙ্গে ১৩০ কোটি ভারতীয়ের আত্মার যোগসূত্র গড়ে উঠেছে। তিনি আরও বলেন, শাসক ক্ষমতায় আসবে ও যাবে, কিন্তু ভারত হাজার বছর আগেও যেমন চিরন্তন ছিল, আজও তেমন শাশ্বত রয়েছে। ভারতের এই চিরন্তন প্রকৃতি হাজার বছর পরেও অটুট থাকবে। তিনি বলেন, আমাদের কাছে দেশ কেবল সরকার, ক্ষমতা বা সাম্রাজ্য নয়, বরং একটি জীবন্ত আত্মা; তাই জাতীয় নিরাপত্তার অর্থ আমাদের কাছে জাতীয় প্রাণবন্ততা, জাতীয় একতা ও জাতীয় অখন্ডতাকে রক্ষা করা।
প্রধানমন্ত্রী পরিশেষে বলেন, যদি আমাদের সশস্ত্র বাহিনী গগন স্পর্শকারী বীরত্বে সমৃদ্ধ হয়, তথাপি সেনা জওয়ানদের হৃদয়ে মানব দয়ার সাগর অটুট থাকবে। আর একারণে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী কেবল সীমান্তের সুরক্ষাই করে না, সেই সঙ্গে বিপর্যয় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সর্বদাই সাহায্যে প্রস্তুত থাকে। প্রত্যেক ভারতীয়ের মনে আমাদের সেনাবাহিনী এক অটুট আস্থা গড়ে তুলেছে। তাই আপনারা ভারতের একতা ও অখন্ডতার প্রহরী এবং রক্ষক। এমনকি, এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত আবেগের মূর্ত প্রতীক। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আপনাদের সাহসিকতার প্রেরণায় আমরা ভারতকে বিকাশ ও অগ্রগতির এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে পারবো।