আমার বন্ধু, আবে সান

Published By : Admin | July 8, 2022 | 19:27 IST

শিনজো আবে - জাপানের একজন অন্যতম যোগ্য নেতা, বিশ্বস্তরে এক মহান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং ভারত-জাপান বন্ধুত্বের একজন মহান চ্যাম্পিয়ন - আর আমাদের মধ্যে নেই। জাপান ও বিশ্ব একজন মহান স্বপ্নদ্রষ্টাকে হারালো। এবং, আমি একজন প্রিয় বন্ধুকে হারিয়েছি।

২০০৭ সালে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে জাপান সফরের সময় আমি প্রথম তাঁর সঙ্গে দেখা করি। সেই প্রথম সাক্ষাত থেকেই, আমাদের বন্ধুত্ব ছিল অটুট এবং অফিসিয়াল প্রোটোকলের শেকলের বাইরে চলে গিয়েছিল।

কিয়োটোর তোজি মন্দিরে আমাদের সফর, শিনকানসেনে আমাদের ট্রেন ভ্রমণ, আমেদাবাদের সবরমতি আশ্রমে আমাদের সফর, কাশীতে গঙ্গা আরতি, টোকিওতে বিস্তৃত চা অনুষ্ঠান, আমাদের স্মরণীয় মতবিনিময়ের তালিকা সত্যিই দীর্ঘ।

 

 

এবং, মাউন্ট ফুজির পাদদেশে ইয়ামানাশিতে তাঁর পারিবারিক বাসভবনে আমন্ত্রিত হওয়ার সম্মান আমার সবসময় মনে থাকবে।

এমনকি যখন তিনি ২০০৭ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত জাপানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না এবং সম্প্রতি ২০২০ সালের পরেও, আমাদের মধ্যে ব্যক্তিগত বন্ধন আগের মতোই অটুট ছিল।

আবে সানের সঙ্গে প্রতিটি বৈঠকই ভীষণভাবে বুদ্ধদীপ্ত ছিল। 

আবে সানের সাথে প্রতিটি বৈঠকই বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে উদ্দীপক ছিল। তিনি সর্বদা সুশাসন, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, বিদেশ নীতি এবং অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ে নতুন ধারণা নিয়ে এসেছিলেন।

তাঁর পরামর্শ আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল গুজরাতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য। এবং, জাপানের সঙ্গে গুজরাতের প্রাণবন্ত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর সমর্থন সবসময় সহায়তা করেছিল।

পরবর্তীতে, ভারত ও জাপানের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্কের অভূতপূর্ব পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে তাঁর সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে করছি। দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক থেকে শুরু করে আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আবে সান গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তাঁর কাছে, এটি ছিল আমাদের দুই দেশের এবং বিশ্বের জনগণের জন্য সবচেয়ে পরিণত সম্পর্কগুলির একটি। তিনি ভারতের সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক চুক্তি অনুসরণ করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন - যা তার দেশের জন্য সবচেয়ে কঠিন ছিল - এবং ভারতে হাই স্পিড রেলের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। স্বাধীন ভারতের যাত্রার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকগুলির মতো, তিনি সুনিশ্চিত করেছিলেন যে জাপান পাশে রয়েছে কারণ নতুন ভারত তার বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করছে।

ভারত-জাপান সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান ২০২১ সালে তাঁকে পদ্মবিভূষণ সন্মান প্রদানের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত হয়েছিল।

পৃথিবীতে সংঘটিত জটিল এবং একাধিক পরিবর্তনের বিষয়ে আবে সানের গভীর অন্তর্দৃষ্টি ছিল, রাজনীতি, সমাজ, অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর এর প্রভাব দেখার জন্য তার সময়ের আগে থাকার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। এমনকি কনভেনশনের মুখেও স্পষ্ট এবং সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং বিশ্বকে তার সাথে বহন করার বিরল ক্ষমতা। তার সুদূরপ্রসারী নীতিগুলি - অ্যাবেনোমিক্স - জাপানের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করেছে এবং তার জনগণের উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তার চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করেছে।

আমাদের কাছে তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার এবং তাঁর সবচেয়ে স্থায়ী লিগেসি এবং যার জন্য বিশ্ব সর্বদা ঋণী থাকবে, তা হল আমাদের সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল জোয়ারের ক্ষেত্রে তাঁর দূরদর্শিতা এবং এর প্রতিক্রিয়ায় তাঁর নেতৃত্ব। তিনি, ২০০৭ সালে ভারতীয় সংসদে তার মূল বক্তৃতায়, সমসাময়িক রাজনৈতিক, কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক বাস্তবতা হিসাবে ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলের উত্থানের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন - এমন একটি অঞ্চল যা এই শতাব্দীতে বিশ্বকেও রূপ দেবে।

এবং, তিনি গভীরভাবে মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে এর স্থিতিশীল ও নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য একটি কাঠামো এবং স্থাপত্য নির্মাণে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন - সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা, আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়মের আনুগত্য, আন্তর্জাতিক শান্তির আচরণ। অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার মাধ্যমে সমতা এবং সমৃদ্ধির চেতনা।

কোয়াড, আসিয়ান-নেতৃত্বাধীন ফোরাম, ইন্দো প্যাসিফিক ওশান ইনিশিয়েটিভ, ভারত-জাপান ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন ইন দ্য ইন্দো-প্যাসিফিক, আফ্রিকা সহ এবং কোয়ালিশন ফর ডিজাস্টার রেসিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার সবই তার অবদান থেকে উপকৃত হয়েছে। দেশে দ্বিধা এবং বিদেশে সংশয় কাটিয়ে উঠে, তিনি ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চল জুড়ে প্রতিরক্ষা, সংযোগ, অবকাঠামো এবং স্থায়িত্ব সহ জাপানের কৌশলগত সম্পৃক্ততাকে রূপান্তরিত করেছিলেন। এর জন্য, অঞ্চলটি তার ভাগ্য সম্পর্কে আরও আশাবাদী এবং বিশ্ব তার ভবিষ্যত সম্পর্কে আরও আত্মবিশ্বাসী।

এই বছরের মে মাসে আমার আমার জাপান সফরের সময় আবে সানের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছিল, যিনি সবেমাত্র জাপান-ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি স্ব- উদ্যমী, চিত্তাকর্ষক, ক্যারিশম্যাটিক এবং খুব বুদ্ধিমান ছিলেন। ভারত-জাপান বন্ধুত্বকে কীভাবে আরও মজবুত করা যায় সে বিষয়ে তাঁর উদ্ভাবনী ধারণা ছিল। সেদিন যখন আমি তাকে বিদায় জানিয়েছিলাম, তখন আমি কল্পনাও করিনি যে এটা হবে আমাদের শেষ দেখা।

আমি সর্বদা তার প্রজ্ঞা, ভালোবাসা এবং উদারতা, বন্ধুত্ব এবং নির্দেশনার জন্য ঋণী থাকব এবং আমি তাকে খুব মিস করব।

ভারতে আমরা আমাদের নিজেদের একজন হিসাবে তাঁর মৃত্যুতে আমরা শোকাহত, ঠিক যেমন তিনি আমাদেরকে খোলা মনে আলিঙ্গন করেছিলেন। তিনি যাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন - তার লোকেদের অনুপ্রাণিত করতে তিনি মারা গিয়েছিলেন। তার জীবন দুঃখজনকভাবে ছোট হতে পারে, কিন্তু তার লেগাসি চিরকাল স্থায়ী হবে।

আমি ভারতের জনগণের পক্ষ থেকে এবং আমার নিজের পক্ষ থেকে জাপানের জনগণের প্রতি, বিশেষ করে মিসেস আকি আবে এবং তার পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। ওম শান্তি।



Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
Govt saved 48 billion kiloWatt of energy per hour by distributing 37 cr LED bulbs

Media Coverage

Govt saved 48 billion kiloWatt of energy per hour by distributing 37 cr LED bulbs
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
একতার মহাকুম্ভ – নতুন এক যুগের সূচনা
February 27, 2025

পবিত্র প্রয়াগরাজ শহরে সফল এক মহাকুম্ভ সম্পন্ন হয়েছে। ঐক্যের মহাযজ্ঞ সম্পূর্ণ হল। কোন জাতির মধ্যে যখন চেতনা জাগ্রত হয়, তখন সেই জাতি দীর্ঘ কয়েক শতক পুরনো পরাধীনতার শিকলকে ভেঙে ফেলে, নতুন শক্তিতে মুক্ত বাতাস গ্রহণ করে। ১৩ জানুয়ারি থেকে প্রয়াগরাজে একতার মহাকুম্ভে তার-ই প্রতিফলন দেখা গেছে।

অযোধ্যায় রাম মন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠার সময় ২২ জানুয়ারি আমি দেবভক্তি এবং দেশভক্তির বিষয়ে বলেছিলাম। প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভ চলাকালীন দেব-দেবী, সাধু-সন্ত, মহিলা, শিশু, যুবক-যুবতী, প্রবীণ নাগরিকবৃন্দ থেকে শুরু করে সমাজের সকল স্তরের মানুষ এখানে জড়ো হয়েছেন। আমরা জাতির মধ্যে চেতনা জাগ্রত হওয়ার প্রমাণ পেয়েছি। একতার এই মহাকুম্ভে একই জায়গায় একই সময়ে পবিত্র এক আয়োজনে ১৪০ কোটি ভারতবাসীর আবেগ পুঞ্জিভূত হয়েছে।

প্রয়াগরাজ অঞ্চলের পবিত্র শৃঙ্ঘারপুর হল ঐক্য, সম্প্রীতি এবং ভালোবাসার এক মহান ভূমি, যেখানে প্রভু শ্রীরাম এবং নিশাদরাজের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়। তাঁদের সেই সাক্ষাৎ আসলে নিষ্ঠা এবং সদিচ্ছার মিলন। আজও সেই একই মানসিকতায় প্রয়াগরাজ আমাদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে।

গত ৪৫ দিন ধরে আমি প্রত্যক্ষ করেছি দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে কোটি কোটি মানুষ সঙ্গমের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন। মিলনের সেই আবেগ আরো সঞ্চারিত হয়েছে। গঙ্গা, যমুনা এবং সরস্বতীর পবিত্র সঙ্গমে ভক্তরা বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় আস্থার সঙ্গে মিলিত হয়েছেন।

প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভ নিয়ে আধুনিক যুগের ম্যানেজমেন্টের পেশাদার ব্যক্তিত্বরা পড়াশোনা করছেন। বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন যারা করেন, সেই বিশেষজ্ঞ এবং পরিকল্পনাকারীরাও এই মহাকুম্ভের বিষয়ে আগ্রহপ্রকাশ করেছেন। এর আগে বিশ্বের কোথাও এত বৃহৎ জনসমাগম হয় নি।

তিনটি নদীর সঙ্গমস্থলে কোটি কোটি মানুষ জড়ো হওয়ার জন্য কিভাবে প্রয়াগরাজে এসেছেন সারা বিশ্ব তা প্রত্যক্ষ করেছে। এঁদের কাছে কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে কোন আমন্ত্রণপত্র পাঠায়নি, কোথায় যেতে হবে তা বলে দেয়নি, অথচ কোটি কোটি মানুষ স্বইচ্ছায় মহাকুম্ভের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন, পবিত্র অবগাহনের মাধ্যমে নিজেকে আশীর্বাদধন্য বলে মনে করেছেন।

পবিত্র স্থানের পর প্রত্যেকের মুখে যে অপার আনন্দ ও তৃপ্তি আমি প্রত্যক্ষ করেছি তা কোনদিনই ভোলার নয়। মহিলা, বয়স্কজনেরা, আমাদের দিব্যাঙ্গ ভাই ও বোনেরা – প্রত্যেকেই ঠিক সঙ্গমে পৌঁছোনোর রাস্তা খুজে পেয়েছেন।

ভারতের যুবসম্প্রদায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই আয়োজনে সামিল হয়েছেন, যা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। মহাকুম্ভে তরুণ প্রজন্মের উপস্থিতি এক নতুন বার্তা দিয়েছে – আমাদের গৌরবোজ্জ্বল সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে তাঁরা এগিয়ে নিয়ে যাবেন। একে সংরক্ষণ করার বিষয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে তাঁরা ওয়াকিবহাল হয়েছেন এবং এই দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন।

মহাকুম্ভ উপলক্ষে প্রয়াগরাজের বিপুল জনসমাগম নতুন এক রেকর্ড তৈরি করেছে। কিন্তু শারীরিক ভাবে উপস্থিত না হয়েও কোটি কোটি মানুষ এই উপলক্ষে এখানে মানসিক ভাবে সমাবেত হন। ভক্তরা যে পবিত্র জল নিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে গেছেন, সেই জল লক্ষ লক্ষ মানুষের আধ্যাত্মিক ভাবনার উৎসে পরিণত হয়েছে। মহাকুম্ভ ফেরত বহু পূণ্যার্থীকে নিজ নিজ গ্রামে সসম্মানে বরণ করে নেওয়া হয়েছে, সমাজ তাঁদের সম্মানিত করেছে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রয়াগরাজে যা ঘটেছে তা অভূতপূর্ব। এর মাধ্যমে আগামীদিনের দেশ গঠনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছে।

কেউ ভাবতেও পারেননি এত বিপুল সংখ্যক তীর্থযাত্রী এখানে জড়ো হবেন। কুম্ভের অতীতের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে এখানে কতজন আসতে পারেন, সেবিষয়ে প্রশাসন কিছু হিসেব-নিকেশ করেছিল, কিন্তু সেই প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে বহু মানুষ এখানে এসেছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যতজন বসবাস করেন তার প্রায় দ্বিগুণ মানুষ একতার এই মহাকুম্ভে এসেছিলেন।

কোটি কোটি উৎসাহী অংশগ্রহণকারী ভারতবাসীর বিষয়ে আধ্যাত্মিক জগতের বিশেষজ্ঞরা যদি পর্যালোচনা করেন, তাহলে তাঁরা দেখবেন নিজ ঐতিহ্যে গর্বিত দেশবাসী এখন নতুন এক উদ্দীপনায় ভরপুর হয়ে উঠেছেন। আমি তাই মনে করি নতুন এক যুগের সূচনা হয়েছে, যা নতুন ভারতের ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করবে।

হাজার হাজার বছর ধরে ভারতের জাতীয় ভাবনাকে মহাকুম্ভ শক্তিশালী করেছে। প্রতিটি পূর্ণ কুম্ভে সাধু-সন্ত, বিদ্বান ব্যক্তি এবং পণ্ডিতেরা জড়ো হতেন। তাঁরা সেই সময়ে সমাজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মত বিনিময় করতেন। তাঁদের আলোচনার ওপর ভিত্তি করে দেশ এবং সমাজ নতুন এক দিশায় এগিয়ে চলতো। প্রতি ৬ বছর পর অর্ধকুম্ভের সময় গৃহীত নীতিগুলি পর্যালোচনা করা হতো। ১৪৪ বছর পর ১২টি পূর্ণ কুম্ভের শেষে সেকেলে ঐতিহ্যগুলিকে বাতিল করে দেওয়া হতো, নতুন নতুন ধারণা যুক্ত হতো, ভবিষ্যতের জন্য নতুন নতুন রীতি-নীতি কার্যকর করা হতো।

১৪৪ বছর পর এই মহাকুম্ভে ভারতের উন্নয়নযাত্রা সম্পর্কে আমাদের সাধু-সন্ন্যাসীরা নতুন এক বার্তা দিয়েছেন। সেই বার্তা হল বিকশিত অর্থাৎ উন্নত ভারত গড়তে হবে।

একতার এই মহাকুম্ভে ধনী, দরিদ্র নির্বিশেষে , তরুণ বা প্রবীণ, গ্রামবাসী বা শহরের বাসিন্দা, দেশ-বিদেশের মানুষ, পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ – যে কোন প্রান্তের মানুষ এখানে মিলিত হয়েছেন। জাত, ধর্ম, নীতি, আদর্শ এ সব কিছু অগ্রাহ্য করে সঙ্গমে তাঁরা সমবেত হয়েছেন। এটি আসলে এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত ভাবনার প্রতিফলন, যেখানে কোটি কোটি মানুষের আস্থা রয়েছে। আর এখন আমরা সেই একই উৎসাহ, উদ্দীপনায় উন্নত ভারত গড়তে ব্রতী হব।

এই প্রসঙ্গে আমার ভগবান কৃষ্ণের সেই উপাখ্যানটি মনে পড়ছে। মা যশোদা তাঁকে মুখ খুলে হাঁ করতে বললে, তিনি যখন মুখ খুলেছিলেন, তখন তাঁর মা সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মান্ড প্রত্যক্ষ করেন। একই ভাবে এই মহাকুম্ভে দেশ-বিদেশের মানুষ ভারতের সম্মিলিত শক্তির সম্ভাবনাকে প্রত্যক্ষ করেছেন। আমাদের আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে, একনিষ্ঠ ভাবে উন্নত ভারত গড়তে হবে।

অতীতে ভক্তি আন্দোলনের সময় সাধু-সন্ন্যাসীরা দেশ জুড়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ সংকল্পকে চিহ্নিত করে তাকে কাজে লাগাতে উৎসাহিত করেছিলেন। আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের শক্তি সম্পর্কে স্বামী বিবেকানন্দ থেকে শ্রী অরবিন্দ — প্রত্যেক মহান চিন্তাবিদ মনে করিয়ে দিয়েছেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় মহাত্মা গান্ধীও সেই অভিজ্ঞতা লাভ করেন। স্বাধীনতা উত্তর যুগে এই সম্মিলিত শক্তিকে যদি যথাযথ ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হতো, তাহলে তা প্রত্যেকের কল্যাণে ব্যবহার করা যেত। ফল স্বরূপ নতুন এক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য তা গুরুত্বপূর্ণ এক শক্তি হিসেবে কাজে লাগান যেতো। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সেই শক্তিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তবে, বর্তমানে উন্নত ভারত গড়তে যে ভাবে জনগণের সম্মিলিত শক্তি আত্মপ্রকাশ করছে তা দেখে আমি আনন্দিত।

বৈদিক যুগ থেকে বিবেকানন্দ , প্রাচীন যুগের নীতি থেকে আধুনিক যুগের কৃত্রিম উপগ্রহ – দেশের মহান রীতি-নীতি সবসময়ই জাতি গঠনে সহায়ক হয়েছে। নাগরিক হিসেবে আমি চাইবো আমাদের পূর্বপুরুষ এবং সাধু-সন্ন্যাসীদের কর্ম তৎপরতা অনুপ্রেরণার নতুন উৎস হোক। একতার এই মহাকুম্ভ নতুন নতুন সংকল্পকে বাস্তবায়িত করতে সহায়তা করুক। আসুন আমরা ঐক্যকে আমাদের পথপ্রদর্শক নীতি হিসেবে গ্রহণ করি। দেশ সেবা আসলে অধ্যাত্ম সেবার সমার্থক – এই ভাবনায় আমরা এগিয়ে চলি।

কাশীতে আমার নির্বাচনী প্রচারের সময়কালে আমি বলেছিলাম, “মা গঙ্গার আহ্বানে আমি এখানে এসেছি”। এটি নিছক কোন আবেগ ছিল না। এর মধ্য দিয়ে পবিত্র নদীগুলিকে পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে আমাদের দায়বদ্ধতার বিষয়টি অন্তর্নিহীত ছিল। প্রয়াগরাজে গঙ্গা, যমুনা এবং সরস্বতী নদীর সঙ্গমে দাঁড়িয়ে আমার সেই সংকল্প আরও দৃঢ় হয়েছে। আমাদের নদীগুলির পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার সঙ্গে নিজেদের জীবনযাত্রা যুক্ত রয়েছে। তাই বড় বা ছোট যেরকমেরই নদী হোক সেই নদীকে জীবনদায়ী মাতা হিসেবে আমরা পুজো করবো। আমাদের নদীগুলিকে পরিচ্ছন্ন রাখার ক্ষেত্রে যে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, এই মহাকুম্ভ তাকে আরও অনুপ্রাণিত করেছে।

আমি জানি এধরনের একটি বৃহৎ কর্মকান্ডকে বাস্তবায়িত করা সহজ কোন কাজ নয়। আমাদের নিষ্ঠায় কোন ঘাটতি থাকলে তার জন্য আমি মা গঙ্গা, মা যমুনা এবং মা সরস্বতীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। আধ্যাত্মিক চেতনার প্রতিমূর্তি জনতা জনার্দনকে পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের তরফে যদি কোনরকমের খামতি থাকে, তার জন্য আমি সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

এই মহাকুম্ভে অগণিত মানুষ যে আধ্যাত্মিক চেতনায় জড়ো হয়েছিলেন, তাঁদের পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে একই রকমের ভাবনায় আমরা কাজ করেছি। উত্তর প্রদেশের সাংসদ হিসেবে আমি বলতে চাই যোগীজির নেতৃত্বে প্রশাসন এবং জনসাধারণ যে ভাবে এই একতার মহাকুম্ভকে সফল করে তুলেছেন তার জন্য আমি গর্বিত। রাজ্য অথবা কেন্দ্র, প্রশাসক অথবা শাসক – কারোর পক্ষে একক ভাবে এই আয়োজন সফল করা সম্ভব নয়। নিকাশী ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত কর্মী, পুলিশ, নৌকো চালক, গাড়ি চালক, খাদ্য সরবরাহকারী - প্রত্যেকে একনিষ্ঠ সেবক হিসেবে এখানে নিরলস ভাবে কাজ করে গেছেন। প্রয়াগরাজের জনসাধারণ নিজেদের হাজারও অসুবিধা সত্বেও যে ভাবে তীর্থযাত্রীদের স্বাগত জানিয়েছেন, তা এককথায় অনবদ্য। আমি প্রয়াগরাজের জনসাধারণ সহ উত্তরপ্রদেশের প্রত্যেককে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। তাঁরা এক অসাধারণ কাজ করেছেন।

আমাদের দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের বিষয়ে আমার সবসময়ই অটুট আস্থা রয়েছে। এবারের মহাকুম্ভ প্রত্যক্ষ করে সেই আস্থা বহুগুণ শক্তিশালী হয়েছে।

যেভাবে ১৪০ কোটি ভারতবাসী একতার মহাকুম্ভকে আন্তর্জাতিক এক কর্মসূচিতে পরিণত করেছেন, তা অবিশ্বাস্য। আমাদের জনগণের নিষ্ঠা, অধ্যবসায় এবং উদ্যোগে আমি আপ্লুত। দেশবাসীর এই সম্মিলিত প্রয়াসের মধ্য দিয়ে যে সাফল্য আমরা অর্জন করেছি, আমি তা শ্রী সোমনাথকে নিবেদন করবো। দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে আমি প্রথমে সেখানে যাব এবং তার কাছে প্রত্যেক দেশবাসীর জন্য প্রার্থনা করবো।

মহাশিবরাত্রীর দিনে মহাকুম্ভ হয়তো আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ হয়েছে, কিন্তু গঙ্গার শাশ্বত প্রবাহের মতো আমাদের আধ্যাত্মিক শক্তি, জাতীয় ঐক্য ও চেতনা জাগ্রত থাকবে, যেগুলিকে মহাকুম্ভ আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে সঞ্চারিত করেছে। এই শক্তি, ঐক্য ও চেতনা আমাদের আগামী প্রজন্মকেও অনুপ্রাণিত করবে।