ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর ঐতিহাসিক ইজরায়েল সফরের প্রাক্কালে জানিয়েছিলেন যে দুটি দেশই পারস্পরিক “সম্পর্ককে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে প্রস্তুত”। তিনি আরও বলেছিলেন যে, “সাহসিকতার সঙ্গে বহু সংকটজনক পরিস্থিতির মোকাবিলা করে এসেছে” ইজরায়েল এবং তার সার্বিক “সাফল্য এক কথায় বিস্ময়কর”।
১২৫ কোটি মানুষের দেশের একজন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যখন কেউ সাক্ষাৎ করতে যান, তখন কিন্তু তাঁর মনে হয় না যে দেশে বা বিদেশে তিনি এক মহানায়কের সম্মান অর্জন করেছেন। হয়তো এই কারণেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারকে এক বিশেষ ঘটনা বলে মনে করা হয়।
৪ জুলাই তারিখে ইজরায়েল সফরে আসার জন্য প্রস্তুত শ্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর এই সফর হয়ে উঠবে নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক ঘটনা। তিনিই হলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যিনি ইজরায়েল সফর করছেন। আকার-আয়তনের দিক থেকে দুটি দেশের মধ্যে কোনও সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া না গেলেও তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক কিন্তু গড়ে উঠেছে সমতার ভিত্তিতেই। এই কৃতিত্ব প্রাপ্য ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর-ই।
নরেন্দ্র মোদী হলেন এক ভিন্ন প্রকৃতির নেতা। ভারতীয়দের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা গগনচুম্বী। তিনি যা করতে আগ্রহী, তা তিনি ব্যক্ত করেন যথেষ্ট বলিষ্ঠতার সঙ্গে এবং সংস্কার প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতাও রয়েছে তাঁর। ভারত’কে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে তিনি সর্বদাই সচেষ্ট। কারণ, ভারত’কে তিনি অধিষ্ঠিত করতে চান বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে। তাঁর মতে, এই লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হতে পারে ইজরায়েলের মাধ্যমে। ইজরায়েলবাসীদের পক্ষে এ এক অনন্য সম্মান। তিনি একথাও জানেন যে, ভারতীয়রা তাঁকে ভীষণভাবে ভালোবাসেন। আবার একথাও তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বিশ্বাস করেন যে, ব্যর্থতা শব্দটি তাঁর জীবনে অপরিচিত। সত্যি কথা বলতে কি, এ হ’ল তাঁর এক বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ।
নরেন্দ্র মোদীর সরকারি বাসভবনে গিয়ে আমি আবিষ্কার করলাম এমন এক ব্যক্তি-মানুষকে, যাঁকে সর্বদাই খুব কঠিন প্রকৃতির বলে মনে করা হয়। ক্যামেরার সামনে অনেক সময় তাঁকে এইভাবেই দেখতে আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু আলাপচারিতার সময় তিনি একেবারেই হাসিখুশি বন্ধুর মতোই এক কাছের মানুষ। এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও অভাব-অনটনের সংসারে কিভাবে একটু একটু করে নিজেকে প্রস্তুত করে জীবনে সাফল্য অর্জন করেছেন, একথা চিন্তা করে তিনি যথেষ্ট গর্ববোধ করেন।
অটুট আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই নরেন্দ্র মোদী তাঁর জীবনের মূলমন্ত্রের কথা উচ্চারণ করেছিলেন আমার সামনে। তাঁর এই মন্ত্র হ’ল – ‘সর্বজন হিতায়, সর্বজন সুখায়’। স্থানীয় ভাষায় তিনি যার ব্যাখ্যা করেছেন – ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর মাধ্যমে। তাঁর এই মন্ত্রের তর্জমা করলে দাঁড়ায় ‘সকলের স্বার্থে, সকলের কল্যাণে, সকলকে সঙ্গে নিয়ে সকলের জন্য উন্নয়ন’ নিশ্চিত করা।
ভারত ও ইজরায়েলের জনসাধারণের মধ্যে যে গভীর সম্পর্কের এক বাতাবরণ গড়ে উঠেছে এ কথাই আমাদের সাক্ষাৎকারে বারবার বোঝাতে চেয়েছেন শ্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন যে, দুটি জাতিই পরস্পরের সঙ্গে খুবই একাত্মবোধ করে। শিল্পোদ্যোগ ও উদ্ভাবন প্রচেষ্টার শরিক ভারত ও ইজরায়েল দুটি দেশই। দু’দেশের মধ্যে এই অংশীদারিত্বের সম্পর্ক পৌঁছে গেছে এক নতুন মাত্রায়। ৫ জুলাই তারিখে তেল আভিভ-এ স্থানীয় ভারতীয় সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে একটি সমাবেশের আয়োজন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং তাঁর সহকর্মীরা চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেননি। সমাবেশে নেতৃত্ব দেবেন শ্রী মোদী স্বয়ং। এই অধ্যায়টিকে তাঁর ইজরায়েল সফরের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বলেই মনে করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এইভাবেই ইজরায়েলে বসবাসকারী ভারতীয় সম্প্রদায়ের প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা ও সম্ভ্রমকে তুলে ধরতে চান তিনি।
প্রশ্ন : ইজরায়েল’কে আপনি কতটা চেনেন বা জানেন? আপনি কি কখনও ইজরায়েল সফর করেছেন?
“২০০৬ সালে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কৃষি প্রযুক্তি প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের জন্য যখন ইজরায়েল সফর করেছিলাম, তখনই ইজরায়েল সম্পর্কে আমার প্রথম ও প্রাথমিক এক ধারণা ও অভিজ্ঞতা গড়ে উঠেছিল। এক দশকেরও বেশি সময় পরে আমি আবার এখানে আসতে পেরে খুবই আনন্দিত। এই সময়কালের মধ্যে ইজরায়েলের উন্নয়ন ও অগ্রগতির বিষয়গুলি সম্পর্কে পরিচিত হওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
“ইজরায়েল সম্পর্কে আমাদের দেশের নাগরিকরা যে মত ও ধারণা পোষণ করেন, তাঁদের অনেকের সঙ্গেই আমি একমত। ইজরায়েল’কে প্রযুক্তির এক শক্তিশালী কেন্দ্র বলেই মনে করে ভারত। শুধু তাই নয়, ঐ দেশটি বহু প্রতিবন্ধকতাকেই যথেষ্ট সাহস ও বলিষ্ঠতার সঙ্গেই অতিক্রম করে এসেছে। প্রযুক্তি-ভিত্তিক এমন অনেক উদ্ভাবন রয়েছে, যার সূতিকাগার হ’ল ইজরায়েলের বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণাগারগুলি। এই উদ্ভাবন প্রচেষ্টা মানবজাতির কল্যাণই করেছে। ইউএসবি ফ্ল্যাশ ড্রাইভ থেকে শুরু করে চেরি টোমাটো উৎপাদন পর্যন্ত বিস্তৃতি এই কল্যাণ প্রচেষ্টার। ইজরায়েল যেভাবে তীব্র জল কষ্টের একটি দেশ থেকে উদ্বৃত্ত একটি জলের দেশে নিজের রূপান্তর ঘটিয়েছে এবং যেভাবে তার মরুভূমিকেও করে তুলেছে উর্বরভূমি, তা সত্যিই এক বিস্ময়কর সাফল্য। ইজরায়েলের এই সমস্ত টুকরো টুকরো ছবি গেঁথে রয়েছে আমার মনের গভীরে।
প্রশ্ন : এই ঐতিহাসিক সফরকে ঘিরে আপনি এত উৎসাহী কেন ?
“আমাদের এই দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্ক বরাবরই বেশ শক্তিশালী। সত্যি কথা বলতে কি, এই সম্পর্কের ক্রমপ্রসার ও বৈচিত্র্য আমরা লক্ষ্য করছি বহু বছর ধরেই। আমাদের এই শক্তিশালী সম্পর্কের নিরন্তর প্রবাহ ও প্রতিফলন দেখা গেছে সাম্প্রতিককালের উচ্চ পর্যায়ের সফরগুলির মধ্যে। আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে গত তিন বছরে আমাদের সফর বিনিময় কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে আরও ঘন ঘন। ২০১৫ সালে আমাদের রাষ্ট্রপতির ইজরায়েল সফরের পূর্বে আর কোন ভারতীয় রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী ঐ দেশ সফর করেননি। ২০১৬-তে প্রেসিডেন্ট রুভেন রিভলিনের ভারত সফর ছিল দ্বিতীয় ইজরায়েলি প্রেসিডেন্টের এ দেশ সফর।
আমার আসন্ন ইজরায়েল সফর আমাদের দু’দেশের সমাজ ব্যবস্থার শতাব্দী প্রাচীন গভীর সম্পর্কের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। আমাদের মতে, দু’দেশের এই সম্পর্কের প্রতিফলন ঘটা প্রয়োজন আমাদের যৌথ কর্মপ্রচেষ্টার সবক’টি ক্ষেত্রেই। আবার এজন্য প্রয়োজন নিয়মিতভাবে উচ্চ পর্যায়ে সংযোগ ও যোগাযোগ রক্ষা করে চলা। আমার মনে হয়, এ বছর আমরা যখন দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ২৫ বর্ষপূর্তি উদযাপন করতে চলেছি, তখন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে তা এক নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে আমাদের কাছে।”
প্রশ্ন : আপনার এই সিদ্ধান্ত কি রাষ্ট্রসঙ্ঘে ইজরায়েলের সমর্থনে আপনাদের অবস্থানকেই তুলে ধরবে ?
“রাষ্ট্রসঙ্ঘে আমাদের অবস্থানের মূলে রয়েছে সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলির পেছনে যুক্তি যা চালিত হয়েছে আমাদের নীতি ও মূল্যবোধগুলির মাধ্যমে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সর্বোচ্চ ব্যবহার ও কার্যকারিতা সম্ভব করে তোলার লক্ষ্যে ইজরায়েল সহ সবক’টি সহযোগী দেশের সঙ্গেই আমরা প্রচেষ্টাবদ্ধ রয়েছি। এছাড়াও, বহুপক্ষীয় যে সমস্ত মঞ্চে আমাদের সাধারণ ও মিলিত উদ্বেগ ও অগ্রাধিকারগুলির প্রতিফলন ঘটেছে সেখানেও আমরা সহযোগিতা প্রসারে আগ্রহী। রাষ্ট্রসঙ্ঘে কোন দেশকে বিচ্ছিন্ন বা একঘরে করে রাখার পক্ষপাতী নয় ভারত।”
প্রশ্ন : ভারত কি এখনও নিজেকে প্রাচ্য বা পাশ্চাত্য উভয় দিক থেকেই জোট নিরপেক্ষ বলে মনে করে ?
‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ – এই দর্শনে আমরা বিশ্বাস করি। এর অর্থ হল, সমগ্র বিশ্বই এক ও অভিন্ন পরিবার। পূর্ব বা পশ্চিম যাই হোক না কেন, সবক’টি দেশের সঙ্গেই আমরা গঠনমূলক কাজকর্মের মধ্য দিয়ে যুক্ত হতে আগ্রহী।
প্রশ্ন : আপনি কি মনে করেন যে ভারত ও ইজরায়েল একই ধরনের সন্ত্রাসের সম্মুখীন ?
সন্ত্রাসবাদ এখন সমগ্র বিশ্বের একটিসমস্যা। ভারত এবং ইজরায়েলও তা থেকে মুক্ত নয়। আমরা সকলেই চুক্তিবদ্ধ যে যে সমস্ত শক্তি নিরীহ মানুষের ওপর হিংসার আঘাত হানতে উদ্যত, তাদের কোনভাবেই আর বাড়তে দেওয়া হবে না। আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস আমাদের কাছে একটি বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ। সীমান্ত বরাবর বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি দেশের ঐক্যকে বিনষ্ট করতে চাইছে। যারা এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে উদ্যত, তারা প্রায়ই ধর্মের অপব্যবহারের মাধ্যমে তাকে একটি হাতিয়ার করে তুলতে চায় আমাদের দেশ এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের তরুণ প্রজন্মকে বিপথগামী করার উদ্দেশ্য নিয়ে। কোন একটি বিশেষ ধর্মের তকমা দিয়ে সন্ত্রাসকে আখ্যা দেওয়া যায় না। তাই সন্ত্রাসের মোকাবিলায় ভারত ও ইজরায়েল পরস্পরের সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে সহযোগিতার প্রসার ঘটাতে পারে। আর এইভাবেই তারা একে অপরের প্রচেষ্টার পরিপূরক হয়ে উঠতে পারে।
প্রশ্ন : আপনার কি মনে হয় যে এটি সম্পর্কের এক পুনর্বিন্যাস, নাকি তার উন্নীতকরণ ?
আমার এই সফর কিন্তু যথেষ্ট তাৎপর্যময়। কারণ এই প্রথম কোন একজন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইজরায়েল সফরে যাচ্ছেন। একটি বিষয়ে আমার দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে যে আমার এই সফর বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করে তুলবে। শুধু তাই নয়, সহযোগিতা প্রসারের লক্ষ্যে নতুন নতুন অগ্রাধিকারের সুযোগও তাতে সম্প্রসারিত হবে।
প্রশ্ন : আপনি কি জেরুজালেম সফরেও সম্মতি জানিয়েছেন ? প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো পশ্চিমের প্রাচীরেও কি আপনি গিয়ে পৌঁছতে চান ?
আমার সফরের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল ভারত ও ইজরায়েলের মধ্যে সম্পর্কের বাতাবরণকে আরও নিবিড় করে তোলা। হ্যাঁ, আমি যে জেরুজালেম সফর করব তা এক প্রকার নিশ্চিত। আমার এই সফর এবং তার কর্মসূচি এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে ইজরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতার সবক’টি ক্ষেত্রে আমরা অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাব। প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনগত যোগাযোগ এবং কৃষি ও সহায়সম্পদের দক্ষ ব্যবস্থাপনাও রয়েছে এর মধ্যে।
প্রশ্ন : জেরুজালেমের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপনার অবস্থান কি ? সেখানকার ভারতীয় দূতাবাস কি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে ?
আমরা দুটি রাষ্ট্রের নিজস্ব সমাধানসূত্রে বিশ্বাস করি যেখানে ইজরায়েল এবং ভবিষ্যতের প্যালেস্টাইন শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করবে। চূড়ান্ত পর্যায়ের চুক্তিটিতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের দাবি ও আবেগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রয়োজন। এই সমস্যা সমাধানের মূল চাবিকাঠি লুকিয়ে রয়েছে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলির কাছেই। জেরুজালেম সহ অমীমাংসিত বহু বিষয়েরই এক গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করার কাজে সমস্ত ধরনের প্রচেষ্টাকেই সমর্থন জানাবে ভারত। আমার মনে হয়, তেল আভিভে আমাদের দূতাবাস সম্পর্কেই প্রশ্নটি আপনি তুলেছেন। জেরুজালেম প্রশ্নে দু’পক্ষই মীমাংসা চুক্তিতে উপনীত হওয়ার পরই আমরা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।
প্রশ্ন : একবার আপনার জীবনপঞ্জীর দিকে তাকানো যাক। দারিদ্র্যের মধ্যে বড় হয়ে কঠোর পরিশ্রমের সোপান বেয়ে আপনি আজ ভারতের শাসন ব্যবস্থার প্রধান। নিঃসন্দেহে বিষয়টি যথেষ্ট আকর্ষক। কিন্তু আপনার অতীত যাই থাকুন না কেন, আপনি মূলধনবাদের একজন কট্টর সমর্থক। আবার, দেশের অর্থনীতির উদারীকরণের পক্ষেও। বিশ্ব সম্পর্কে আপনার দৃষ্টিভঙ্গির মূলে কি রয়েছে তা যদি একটু ব্যাখ্যা করেন।
দেখুন, কোনরকম অমুকবাদ, তমুকবাদে আমি বিশ্বাসী নই। আমি এবং আমার সরকার কর্মপ্রচেষ্টার ক্ষেত্রে একটি মন্ত্রই মেনে চলি আর তা হল ‘সব কা সাথ সব কা বিকাশ’। দেশের তরুণ প্রজন্মকে আমরা কর্মপ্রার্থী হিসেবে দেখতে আগ্রহী নই, আমরা তাঁদের দেখতে ইচ্ছুক কর্মদাতার ভূমিকায়। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে উদ্ভাবন ও শিল্পোদ্যোগের যে সম্ভাবনা রয়েছে তার বিকাশে আমরা প্রয়োজনে সকল রকম ব্যবস্থাই গ্রহণ করব। কোন কাজ সমর্থন করা বা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমার মাপকাঠি হল তা থেকে দেশবাসীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে আখেরে আমাদের কি লাভ হবে সেই দিকটি সম্পর্কে ভেবে দেখা। এই বিষয়টিকে যদি আমরা সর্বাগ্রে স্থান দিই তাহলে তার ফল হবে কিন্তু বেশ লাভজনক। আমার নিজের রাজ্য পশ্চিম ভারতের গুজরাটে আমি তা লক্ষ্য করেছি আমার ১৩ বছরের মুখ্যমন্ত্রীত্বকালে। আর বর্তমানে আমি তা দেখতে পাচ্ছি ভারতের জাতীয় স্তরেও।
প্রশ্ন :উপযুক্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অভাব রয়েছে, এ ধরণের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ ও ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি পর্যায়ক্রমে ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থার সংস্কারসাধনে সচেষ্ট রয়েছেন। আপনার এই প্রচেষ্টায় ইজরায়েল কি কোনওভাবে কোনও রকম ভূমিকা পালন করতে পারে?
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই পারে। আমাদের এই রূপান্তর প্রক্রিয়ায় এক প্রযুক্তিগত অংশীদার হয়ে উঠতে পারে ইজরায়েল। গঙ্গা শোধন কর্মসূচি (অর্থাৎ গঙ্গানদীকে দূষণমুক্ত করার প্রচেষ্টা) এবং স্মার্ট নগরীরমতো প্রধান প্রধান প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রে সাহায্য করার মতো যথেষ্ট ক্ষমতা ও দক্ষতা রয়েছে ইজরায়েলের। আমাদের দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ইজরায়েলি প্রযুক্তির প্রয়োগ ও ব্যবহার সম্ভব যদি ইজরায়েলের উদ্ভাবন প্রচেষ্টাকে আমাদের দেশের গ্রামীণ জনসাধারণের প্রয়োজন ও চাহিদা পূরণের উপযোগী করে তোলা সম্ভব হয়। গ্রামীণ পর্যায়ে বাজারের চাহিদা ও প্রবণতার বিষয়টি উপলব্ধি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন :কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্য সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত ও ইজরায়েলের প্রচেষ্টাগত দৃষ্টিভঙ্গীতে কোন্ কোন্ পার্থক্য রয়েছে বলে আপনার মনে হয়?
ভারত এবং ইজরায়েল দু’দেশের সমাজ ব্যবস্থাতেই এক বলিষ্ঠ শিল্পোদ্যোগ মানসিকতা কাজ করে। দুটি দেশের বাণিজ্য সংস্কৃতি এক কথায় অতুলনীয় এবং নিজস্ব প্রেক্ষিত বা পরিপ্রেক্ষিতকে ঘিরেই তা ক্রমশ প্রসার লাভ করেছে। প্রচেষ্টা ও দৃষ্টিভঙ্গীর দিক থেকে হয়তো কোনও পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু ভারতীয় এবং ইজরায়েলি বাণিজ্যিক পক্ষ আমাকে জানিয়েছে যে, উভয়েরই বৈজ্ঞানিক মানসিকতার মধ্যে যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রশ্ন :একজন সাধারণ মানুষকে আমরা কিভাবে ভারত ও ইজরায়েলের মধ্যে উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে প্রচেষ্টাবদ্ধ হওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে পারব?
আমার মনে হয়, প্রতিটি ব্যক্তি উদ্ভাবন প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে ঐ দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বিষয়টি সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। কারণ, আমাদের যুক্ত উদ্ভাবন প্রচেষ্টা সেই ব্যক্তির জীবনকেও স্পর্শ করেছে। উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে আমাদের প্রেক্ষিত হয়তো ভিন্ন হতে পারে কিন্তু সমাজে সম্পদ ও মূল্যবোধের প্রসারের মতো বিষয়টির ওপর দুটি দেশেরই যথেষ্ট আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। সত্যি কথা বলতে কি, ভারতীয় এবং ইজরায়েলিরা জন্মগতভাবেই উদ্ভাবন-প্রবণ। উদ্ভাবন প্রচেষ্টার উপযোগী এক অনুকূল পরিবেশ ধরে রাখার কাজে দুটি দেশই সমানভাবে কাজ করে। আমাদের সাধারণ প্রচেষ্টা হ’ল উদ্ভাবনী সৃজনশীলতাকে শিল্পোদ্যোগ ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত করা।
প্রশ্ন :ইজরায়েল থেকে ঠিক কোন্ কোন্ পণ্য আমদানি করতে ভারত আগ্রহী?
ইজরায়েলের সঙ্গে প্রথগত আমদানি-রপ্তানি সম্পর্কে যুক্ত হতে আমরা আগ্রহী নই। ক্রেতা-বিক্রেতার স্বাভাবিক সম্পর্কের অনেক উর্ধ্বে রয়েছে আমাদের এই দুটি দেশের সম্পর্ক। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপের মাধ্যমে প্রযুক্তি-ভিত্তিক এক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলতে আমরা আগ্রহী। গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করার কর্মসূচির মতো আমাদের বহু প্রধান প্রধান প্রকল্পের বিষয়ে ইজরায়েলি শিল্প সংস্থাগুলির দৃষ্টিভঙ্গী যথেষ্ট ইতিবাচক। তাই, ভারতের প্রধান প্রধান কর্মসূচিতে ঐ দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক প্রসারের ক্ষেত্রও রয়েছে যথেষ্ট বিশাল।