1. আমরা ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চিন ও দক্ষিণ আফ্রিকা ব্রিক্স দেশ গোষ্ঠীর প্রধানরা ৩০ নভেম্বর, ২০১৮-য় এক ঘরোয়া বৈঠকে মিলিত হই। আর্জেন্টিনার বুয়েন্স এয়ার্স-এ জি-২০ শিখর সম্মেলনের ফাঁকে এই বৈঠক হয়। ২০১৮-র জি-২০ শিখর সম্মেলন আয়োজন করার জন্য এবং আমাদেরকে আতিথেয়তা প্রদান করার জন্য আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপতিকে আমরা অভিনন্দন জানাই।
2. আমরা আন্তর্জাতিক রাজনীতি, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ইস্যুতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পন্থাপদ্ধতি নিয়ে মতবিনিময় করি। বিশ্ব শান্তি ও সুস্থিতির লক্ষ্যে রাষ্ট্রসঙ্ঘের দিশা-নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করার জন্য আমরা পুনরায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তি, সুস্থিতি বজায় রাখার জন্য আমরা পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহমত হয়েছি।
3. আমরা জঙ্গি আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানাই। কয়েকটি ব্রিক্স গোষ্ঠীভুক্ত দেশ-সহ সমগ্র বিশ্বে সব অর্থে সন্ত্রাসবাদের সমালোচনা করি আমরা। সন্ত্রাসবাদ নির্মূলীকরণে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছি। রাষ্ট্রসঙ্ঘের স্থির করা দিশা-নির্দেশ অনুযায়ী ও আইনি পন্থাপদ্ধতি অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক স্তরে সন্ত্রাস সমস্যা মোকাবিলায় যৌথ প্রয়াস চালানোর অঙ্গীকার নিয়েছি আমরা। সন্ত্রাস মোকাবিলার ক্ষেত্রে আমরা সব দেশগুলিকে একটি সুসংহত পরিকল্পনা গ্রহণ করার আবেদন জানাই।
4. আমরা বিশ্ব বাণিজ্য প্রক্রিয়ার আওতায় স্বচ্ছ লেনদেন, মুক্ত বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক স্তরে ব্যবসায়িক আদান-প্রদানের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি।
5. আমরা ডব্লিউটিও-র সামঞ্জস্যহীন পদক্ষেপগুলির বিরোধ করে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাতে যে প্রতিশ্রুতিগুলি গ্রহণ করা হয়েছে জি-২০ দেশগুলির পক্ষ থেকে সেগুলিকে অবলম্বন করব।
6. বর্তমান ও ভবিষ্যতের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ডব্লিউটিও-র সঙ্গে আমরা একযোগে কাজ করে যাব। এই লক্ষ্যে ডব্লিউটিও গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির স্বার্থসমূহ প্রতিফলিত হতে হবে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলির স্বার্থসমূহেও নজর দিতে হবে।
7. আমরা ডব্লিউটিও-র যথাযথ কাজকর্মের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। এটি সঠিকভাবে কাজ করলে সদস্য দেশগুলি ভবিষ্যতে এর ওপর আস্থা বজায় রাখতে পারবে।
8. ডব্লিউটিও গোষ্ঠীভুক্ত অন্য দেশগুলির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে ও সহযোগিতা বাড়াতে আমরা সম্মত হয়েছি। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং বিশ্ব অর্থনীতির মজবুতীকরণের লক্ষ্যে আমরা একযোগে কাজ করে যাব।
9. আমরা জি-২০-র শিখর সম্মেলনে আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপতির মূল ভাবনা সুস্থিত উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বচ্ছ চিন্তাভাবনা গঠন এবং এই লক্ষ্যে কাজের জন্য পরিকাঠামো উন্নয়নের বিষয়টি স্বাগত জানাই। খাদ্য নিরাপত্তা এবং সুস্থায়ী ভবিষ্যতের জন্য আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপতি যে লক্ষ্য স্থির করেছেন তাকেও স্বাগত জানাই।
10. আমরা পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং বিশ্বে সম্পদের যথাযথ মূল্যায়ন, বিপর্যয় মোকাবিলা এবং নতুন উন্নয়ন ব্যাঙ্ক সহ যৌথ উদ্যোগগুলি কার্যকর করার বিষয়ে জোর দিয়েছি।
11. আমরা আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নিরাপত্তার দাবি জানাই। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক তহবিল বা আইএমএফ-এর অন্তর্ভুক্ত সব সম্পদের যথাযথ ব্যবহার প্রয়োজন। আইএমএফ-এর পঞ্চদশ সাধারণ পর্যালোচনায় যে বিষয়গুলি উঠে এসেছে তা যথাযথভাবে পালনে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। বিশ্ব অর্থনীতির উন্নয়নে উন্নয়নশীল দেশগুলির ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ২০১৯-এর বার্ষিক বৈঠকের আগে অর্থনীতির উন্নয়নের ওপর আরও জোর দিতে হবে।
12. ধারাবাহিক উন্নয়ন, ২০৩০-এর সম্মেলনের মূল ভাবনা। এটি কার্যকর করার জন্য যথাযথভাবে কাজ করতে হবে। সর্বসম্মতভাবে মুক্ত বাণিজ্য, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। আমরা উন্নত দেশগুলিকে তাদের সরকারি উন্নয়নমূলক সহায়তা সম্পর্কে যে দায়বদ্ধতা রয়েছে তাকে সম্মান জানানোর আহ্বান জানাই এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিকে অতিরিক্ত উন্নয়নমূলক সহায়সম্পদ যোগানোর অনুরোধ রাখছি।
13. বিশ্ব অর্থনীতির সম্প্রসারণ হচ্ছে। যদিও বর্তমানে এর ভারসাম্যে কিছুটা সমস্যা রয়েছে। আমরা সবরকম সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। কোন বড় ধরণের অর্থনৈতিক বিপর্যয় যেন না হয় এবং বর্তমানে যে সমস্যা রয়েছে তা দ্রুত সমাধান করা যায়, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে চলেছি। আমরা অর্থনীতিবিদদের নীতি নির্ধারণের জন্য আহ্বান জানাই।
14. জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আমরা প্যারিস চুক্তি কার্যকর করার বিষয়ে সম্পূর্ণ সহমত জানাই। আমরা উন্নত দেশগুলিকে তাদের অর্থনৈতিক, কারিগরি ও নির্মাণ ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানাই। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি গ্রহণের জন্য উন্নত দেশগুলি সর্বত সহায়তা করবে এটাই আমাদের কামনা। সবুজ জলবায়ু তহবিল সফলভাবে রূপায়ণের জন্য আমরা গুরুত্ব দিয়েছি।
15. ২০১৮ সালের ২৫ থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত জোহানেসবার্গে সফলভাবে দশম ব্রিক্স শিখর সম্মেলন আয়োজনের জন্য আমরা দক্ষিণ আফ্রিকাকে উষ্ণ অভিনন্দন জানাই। আমাদের জনগণের উন্নয়নে আমরা কৌশলগত অংশীদারিত্ব বজায় রাখতে সম্মত হয়েছি। অর্থনীতি, শান্তি, নিরাপত্তা, মানুষে-মানুষে সংযোগ-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানোন্নয়নে দক্ষিণ আফ্রিকার নেতৃত্বে ব্রিক্স যে সাফল্য অর্জন করেছে আমরা তাতেও সন্তোষ প্রকাশ করি। নতুন শিল্প বিপ্লব, ব্রিক্স টিকা গবেষণা উন্নয়ন কেন্দ্র, ব্রিক্স শক্তি গবেষণা সহযোগিতা ক্ষেত্র-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্রিক্স-এর কার্যকর ভূমিকার প্রশংসা করি আমরা। জোহানেসবার্গ শিখর সম্মেলন ও এর আগের অন্যান্য সম্মেলনগুলিতে যে বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে সেগুলির যথাযথ রূপদানের বিষয়ে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।
16. ২০১৯ সালে ব্রাজিলের আয়োজনে একাদশ ব্রিক্স শিখর সম্মেলনের দিকে আমরা এখন তাকিয়ে রয়েছি। সফলভাবে ঐ সম্মেলন সম্পূর্ণ করার জন্য আমরা ব্রাজিলকে আমাদের পূর্ণ সমর্থন জানাই।