We will send you 4 digit OTP to confirm your number
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। মন কি বাত অর্থাৎ দেশের সমষ্টিগত প্রয়াসের কথা, দেশের উপলব্ধির কথা, জনমানুষের সক্ষমতার কথা, মন কি বাত অর্থাৎ দেশের তরুণদের স্বপ্ন, দেশের নাগরিকদের আকাঙ্খার কাহিনী। আমি গোটা মাস ধরে মন কি বাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি, যাতে আপনাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারি। কত খবরাখবর, কত বার্তা! আমার সম্পূর্ণ প্রচেষ্টা থাকে যাতে বেশি-বেশি করে আপনাদের বার্তা পড়তে পারি, আপনাদের পরামর্শ নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে পারি।
বন্ধুরা, আজ অত্যন্ত বিশেষ একটা দিন – আজ এনসিসি দিবস। এনসিসি-র কথা উঠলেই আমাদের স্কুল-কলেজের দিনগুলো মনে পড়ে যায়। আমি নিজেও এনসিসি-র ক্যাডেট ছিলাম আর তাই সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে পারি যে এখান থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা আমার কাছে অমূল্য। এনসিসি তরুণদের মধ্যে অনুশাসন, নেতৃত্ব আর সেবার ভাবনা তৈরি করে। আপনারা নিজেদের চারপাশে দেখেছেন হয়ত, যখনই কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়, সেটা বন্যা পরিস্থিতি হোক, কোথাও ভূমিকম্প হয়ে থাকুক, কোনও দুর্ঘটনা ঘটে থাকুক, সেখানে সহায়তা করার জন্য নিশ্চিতভাবে এনসিসি ক্যাডেটরা উপস্থিত হয়ে যান। আজ দেশে এনসিসি-কে শক্তিশালী করার জন্য নিরন্তর কাজ চলছে। ২০১৪ সালে প্রায় চোদ্দ লক্ষ তরুণ এনসিসি-র সঙ্গে যুক্ত ছিল। এখন ২০২৪ সালে, কুড়ি লক্ষেরও বেশি তরুণ এনসিসি-র সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। আগের তুলনায় আরও পাঁচ হাজার স্কুল-কলেজে এনসিসি-র সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে, আর সবথেকে বড় কথা, আগে এনসিসি-তে মেয়ে ক্যাডেটের সংখ্যা থাকত পঁচিশ শতাংশের মত। এখন এনসিসি-তে মেয়ে ক্যাডেটদের সংখ্যা প্রায় চল্লিশ শতাংশের মত হয়ে গিয়েছে। সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত তরুণদের বেশি-বেশি করে এনসিসি-তে যুক্ত করার অভিযানও চলছে নিরন্তর। আমি তরুণদের কাছে অনুরোধ জানাব যে তারা যেন বেশি-বেশি সংখ্যায় এনসিসি- র সঙ্গে যুক্ত হন। আপনারা দেখবেন, যে কোনও কেরিয়ারই আপনি বেছে নিন না কেন, আপনার ব্যক্তিত্ব নির্মাণে এনসিসি থেকে বড় সহায়তা পাওয়া যাবে।
বন্ধুরা, বিকশিত ভারতের নির্মাণে তরুণদের ভূমিকা খুব বড়। তরুণ মন আজ যখন একজোট হয়ে দেশের অগ্রগতির জন্য গভীরভাবে ভাবে চিন্তাভাবনা করে, তখন নিশ্চিতভাবে একটা কার্যকরী পথ বের হয়। আপনারা জানেন যে ১২ই জানুয়ারি স্বামী বিবেকানন্দের জন্মজয়ন্তীতে দেশ ‘যুবদিবস’ পালন করে। আগামী বছর স্বামী বিবেকানন্দজীর ১৬২তম জন্মজয়ন্তী। এবার এটি অত্যন্ত বিশেষভাবে পালন করা হবে। এই উপলক্ষে ১১ ও ১২ জানুয়ারি দিল্লীর ভারত মণ্ডপমে তরুণদের আলাপ-আলোচনার মহাকুম্ভ অনুষ্ঠিত হতে চলেছে, আর এই উদ্যোগের নাম ‘বিকশিত ভারত ইয়ং লীডার্স ডায়লগ’। গোটা ভারত থেকে কোটি-কোটি তরুণ অংশ নেবে এখানে।
গ্রাম, ব্লক, জেলা, রাজ্য থেকে উঠে আসা বাছাই করা এমন দু'হাজার তরুণ ভারত মণ্ডপমে "বিকশিত ভারত ইয়ং লিডারস ডায়লগ" এর জন্য একত্রিত হবেন। আপনাদের মনে থাকবে আমি লালকেল্লার প্রাকার থেকে এমন তরুণদের রাজনীতিতে আসার আহ্বান জানিয়েছিলাম। যাদের পরিবারে কোন ব্যাক্তি অর্থাৎ সমগ্র পরিবারের কারোর পলিটিকাল ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। এমন এক লক্ষ তরুণদের, নবীন যুবদের রাজনীতিতে যুক্ত করার জন্য দেশে বিভিন্ন ধরনের বিশেষ অভিযান চলবে। বিকশিত ভারত ইয়াং লিডারস ডায়লগও এমনই এক প্রয়াস। এতে দেশ-বিদেশ থেকে এক্সপার্টরা আসবেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহু গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও থাকবেন। আমিও সেখানে বেশিরভাগ সময় উপস্থিত থাকবো। তরুণরা আমাদের সামনে নিজেদের আইডিয়াগুলি ব্যক্ত করার সুযোগ পাবেন। আমাদের দেশ এই আইডিয়াগুলি নিয়ে কীভাবে অগ্রসর হতে পারে? কিভাবে একটি মজবুত রোড ম্যাপ তৈরি হতে পারে তার একটি ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করা হবে। তাহলে আপনারাও প্রস্তুত হোন। যারা ভারতের ভবিষ্যতের নির্মাণকারী, যারা দেশের আগামী প্রজন্ম, তাদের জন্য খুব বড় একটা সুযোগ আসছে। আসুন সবাই মিলে দেশ গড়ি, দেশকে বিকশিত করি।
আমার প্রিয় দেশবাসী মন কি বাতে আমরা প্রায়শই এমন তরুণদের বিষয়ে আলোচনা করি, যারা নিঃস্বার্থভাবে সমাজের জন্য কাজ করে। এমন কত যুবা আছে যারা মানুষের ছোট ছোট সমস্যাগুলির সমাধানে রত । আমরা যদি আমাদের চারপাশে দেখি তাহলে কত মানুষকেই দেখতে পাবো যাদের কোনো না কোনো ধরনের সাহায্য প্রয়োজন, কোন তথ্য প্রয়োজন। আমার এটা জেনে ভালো লেগেছে যে কিছু যুবা একত্রিত হয়ে এই ধরনের বিষয়গুলি নিয়ে ভাবছেন । যেমন লখনৌয়ের বাসিন্দা বীরেন্দ্র যিনি প্রবীণদের ডিজিটাল লাইফ সার্টিফিকেট এর কাজে সহায়তা করেন।
আপনারা তো জানেনই নিয়ম অনুযায়ী Pensioner-দের বছরে একবার life certificate জমা করাতে হয়। ২০১৪ পর্যন্ত এটার প্রক্রিয়া এমন ছিল যে বয়স্কদের ব্যাংকে গিয়ে নিজেকেই জমা করাতে হতো। আপনারা নিশ্চয়ই কল্পনা করতে পারছেন যে এজন্য আমাদের প্রবীনদের কতটা অসুবিধা হতো। এখন এই ব্যবস্থা বদলে গেছে। এখন digital life certificate আসায় বিষয়গুলো অনেক সুবিধা-জনক হয়ে গেছে। প্রবীনদের ব্যাংকে যেতে হয় না। Technology'র কারণে যাতে প্রবীনদের কোন অসুবিধা না হয় সেজন্য বীরেন্দ্রর মতো যুবদের অনেক বড় ভূমিকা আছে। তিনি নিজের এলাকায় প্রবীনদের এ বিষয়ে সচেতন করে তোলেন। এটুকুই নয়, তিনি প্রবীনদের tech savvy'ও করে তুলছেন, এমন প্রচেষ্টার জন্যেই এখন digital life certificate পাওয়া মানুষের সংখ্যা ৮০ লক্ষ'র গন্ডি ছাড়িয়ে গেছে। তাঁদের মধ্যে, দু লক্ষেরও বেশি এমন কিছু প্রবীণ মানুষ রয়েছেন, যাদের বয়েস আশি'রো বেশী।
বন্ধুরা, অনেক শহরেই যুবরা প্রবীনদের digital বিপ্লবে অংশীদার করে তুলতেও এগিয়ে আসছেন। ভূপালের মহেশ নিজের এলাকায় বহু প্রবীনদের মোবাইলের মাধ্যমে পেমেন্ট করা শিখিয়েছেন। সেইসব প্রবীণদের কাছে smart phone তো ছিল কিন্তু তার সঠিক প্রয়োগ দেখিয়ে দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। প্রবীনদের digital arrest-এর হাত থেকে বাঁচানোর জন্যেও যুবরা এগিয়ে এসেছে। আহমেদাবাদের রাজীব মানুষকে digital arrest-এর বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেন। আমি মন কি বাতের গত episode এ digital arrest সম্পর্কে আলোচনা করেছিলাম। প্রবীনরা'ই সবচেয়ে বেশি এ ধরনের অপরাধের শিকার হন। সেজন্য আমাদের দায়িত্ব তাদের সচেতন করে তোলা আর cyber fraud থেকে বাঁচতে সাহায্য করা। আমাদের বারবার মানুষকে বোঝাতে হবে যে digital arrest বলে সরকারের কোন নিয়ম নেই- এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, মানুষকে ফাঁসানোর একটা ষড়যন্ত্র; আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আমাদের যুব বন্ধুরা এই কাজে পূর্ণ সংবেদনশীলতার সঙ্গে অংশ নিচ্ছেন, এবং অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করছেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজকাল বাচ্চাদের পড়াশোনা নিয়ে নানা ধরনের প্রয়োগ হচ্ছে। প্রচেষ্টা এটাই থাকে যে আমাদের বাচ্চাদের মধ্যে ক্রিয়েটিভিটি যাতে আরো বাড়ে, বইয়ের প্রতি ভালোবাসা আরো বাড়ে, এবং এটা বলাও হয়ে থাকে যে বই মানুষের সবথেকে ভালো বন্ধু, আর এই বন্ধুত্বকে আরো মজবুত করার জন্য, লাইব্রেরীর থেকে ভালো জায়গা আর কি হতে পারে। আমি চেন্নাই-এর একটি উদাহরণ আপনাদের সবার সঙ্গে ভাগ করতে চাই। এখানে বাচ্চাদের জন্য এমন একটি লাইব্রেরী তৈরি করা হয়েছে, যা ক্রিয়েটিভিটি এবং লার্নিং এর হাব হিসেবে গড়ে উঠেছে। এটি প্রকৃত অরিওয়গম নামে পরিচিত। এই লাইব্রেরীটির আইডিয়া, টেকনোলজির দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত শ্রীরাম গোপালনের মস্তিষ্কপ্রসূত। বিদেশে নিজের কর্মসূত্রে তিনি লেটেস্ট টেকনোলজির সঙ্গে বরাবর যুক্ত থেকেছেন। কিন্তু তিনি বাচ্চাদের মধ্যে পড়া এবং শেখার অভ্যাস বিকশিত করার ব্যাপারেও ভাবতে থাকেন। ভারতে ফিরে তিনি প্রকৃত অরিওয়গম তৈরি করেন। এখানে ৩ হাজারেরও বেশি বই আছে, যেটা পড়ার জন্য বাচ্চাদের মধ্যে হুড়োহুড়ি লেগেই থাকে। বই ছাড়াও এখানে হওয়া নানারকমের একটিভিটিও বাচ্চাদের আকর্ষণের কারণ। স্টোরি টেলিং সেশন হোক বা আর্ট ওয়ার্কশপ, মেমারি ট্রেনিং ক্লাস বা রোবোটিক্স লেসন, নয়তো পাবলিক স্পিকিং.. এখানে সব বাচ্চাদেরই পছন্দমত কিছু না কিছু রয়েছে ।
বন্ধুরা, হায়দ্রাবাদের ফুড ফর থট ফাউন্ডেশন অনেকগুলি চমৎকার লাইব্রেরী বানিয়েছে। এদেরও প্রচেষ্টা এটাই যে বাচ্চাদের যতটা বেশি সম্ভব বিষয়ের উপর সামগ্রিক জ্ঞানের পাশাপাশি পড়ার জন্য বই উপলব্ধ হোক। বিহারের গোপালগঞ্জের 'প্রয়োগ লাইব্রেরী' সম্পর্কে তো আশেপাশের অনেক শহরেই চর্চা হয়ে থাকে। এই লাইব্রেরি থেকে আশেপাশের প্রায় ১২টি গ্রামের যুবকেরা বই পড়ার সুযোগ পেয়ে থাকে, তার সঙ্গে এই লাইব্রেরীতে পড়াশোনা সম্বন্ধিত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাও পাওয়া যায়। কিছু লাইব্রেরী তো এমনও আছে, যেগুলি প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ছাত্রদের সাহায্য করে থাকে। এটা দেখে খুবই ভালো লাগছে যে, সমাজকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আজ লাইব্রেরীগুলির চমৎকার ব্যবহার করা হচ্ছে। আপনারাও বইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়ান, আর দেখুন কিভাবে আপনার জীবনেও পরিবর্তন আসে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি গত পরশু রাতে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ গায়ানায় থেকে ফিরলাম। ভারত থেকে হাজার হাজার কিলোমিটারের দূরত্বে, গয়ানাতেও, একটা Mini ভারত বাস করে। আজ থেকে প্রায় ১৮০ বছর আগে, গয়ানাতে, কৃষিশ্রমিক হিসেবে ও অন্যান্য কাজের জন্য ভারত থেকে লোক নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আজ গয়ানাতে ভারতীয় বংশোদ্ভূত লোকেরা রাজনীতি, ব্যবসা, শিক্ষা এবং সংস্কৃতির প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে গয়ানাকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। গয়ানার রাষ্ট্রপতি ড. ইরফান আলিও একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত, যিনি তাঁর ভারতীয় ঐতিহ্য নিয়ে গর্বিত। আমি যখন গয়ানায় ছিলাম, তখন আমি একটা বিষয়ে নিয়ে ভেবেছিলাম – যেটা আমি ‘মন কি বাত’-এ আপনাদের সঙ্গে Share করছি। গয়ানার মতো, বিশ্বের অগুণিত দেশে লক্ষ লক্ষ সংখ্যায় ভারতীয় রয়েছেন। কয়েক দশক পূর্বের, ২০০-৩০০ বছর আগের, পূর্বপুরুষদের তাঁদের নিজস্ব কাহিনী আছে। আপনারা কি এমন সব কাহিনী খুঁজে বার করতে পারবেন যে কিভাবে ভারতীয় প্রবাসীরা অন্য অন্য দেশে নিজের পরিচয় তৈরী করেছেন! কি করে তাঁরা অন্যান্য দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন! কিভাবে তাঁরা ভারতীয় ঐতিহ্য জীবিত রেখেছেন? আমি চাই আপনারা এমন ধরণের সত্য কাহিনী খুঁজুন, আর আমার সঙ্গে share করুন। আপনারা এই কাহিনীগুলো NaMo app এ বা mygov-এ #IndianDiasporaStories দিয়েও share করতে পারেন।
বন্ধুরা, আপনি ওমানে একটি extraordinary project দেখতে পাবেন যা খুবই আকর্ষণীয়। বহু ভারতীয় পরিবার বহু শতাব্দী ধরে ওমানে বসবাস করছেন। তাঁদের অধিকাংশই গুজরাটের কচ্ছ থেকে গিয়ে ওখানে বসতি স্থাপন করেছিলেন। এঁনারা তাঁদের ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ link তৈরী করেছিলেন। আজ তাঁদের ওমানের নাগরিকত্ব আছে, কিন্তু ভারতীয়ত্ত্ব তাঁদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়েছে। ওমানে ভারতীয় দূতাবাস এবং National Archives of India সহযোগিতায় একটি team এই পরিবারগুলির ইতিহাস সংরক্ষণ করার কাজ শুরু করেছে।
এই অভিযানের আওতায় এ পর্যন্ত হাজার হাজার নথি সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ডায়েরি, একাউন্ট বুক , লেজরস, চিঠিপত্র ও টেলিগ্রাম। এই নথির মধ্যে ১৮৩৮ সালের কিছু নথিও রয়েছে। এই নথিগুলিতে অনেকরকম চিন্তাভাবনা রয়েছে। বহু বছর আগে তারা যখন ওমানে পৌঁছেছিলেন তখন তারা কী ধরনের জীবনযাপন করেছিলেন, তারা যে সুখ-দুঃখের মুখোমুখি হয়েছেন এবং ওমানের জনগণের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কীভাবে এগিয়েছে, সেগুলিও এই নথির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। Oral history projectও এই মিশনের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। এই মিশনে, সেখানকার প্রবীন মানুষেরা তাঁদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন। জনগণ তাঁদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানিয়েছেন।
বন্ধুরা, এরকম একটি Oral history project ভারতেও হচ্ছে। এই প্রজেক্টের আওতায় ইতিহাসপ্রেমীরা দেশভাগের সময়কার অভিজ্ঞতার কথা তৎকালীন নিপীড়িত মানুষদের অভিজ্ঞতা থেকে সংগ্রহ করছেন। দেশভাগের বীভৎসতা দেখেছেন এমন মানুষ বর্তমানে দেশে খুব কমই আছেন। এমতাবস্থায় এরকম একটি প্রয়াস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। বন্ধুরা, যে দেশ, যে অঞ্চল ইতিহাসকে লালন করে, তার ভবিষ্যৎও সুরক্ষিত থাকে। এই ভাবনা থেকেই একটি প্রয়াসের সূত্রপাত হয়েছে যেখানে গ্রামের ইতিহাস সংরক্ষণ করার জন্য একটি ডিরেক্টরি তৈরি করা হচ্ছে। চলছে ভারতের প্রাচীন সমুদ্র ভ্রমণের সামর্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রামাণ্য জোগাড়ের কাজ। লোথালে, এর সঙ্গে সম্পৃক্ত, একটি বিশাল জাদুঘরও তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়াও, যদি আপনার অবগতিতে কোনো লিপি, ঐতিহাসিক নথি বা কোনো হস্তলিখিত কপি থাকে, তাহলে আপনি ভারতের ন্যাশনাল আর্কাইভস অফ ইন্ডিয়ার সাহায্যে তা সংরক্ষণ করতে পারেন।
বন্ধুরা, আমি ‘Slovakia-তে চলছে এমনই আর একটি প্রচেষ্টা সম্পর্কে জানতে পেরেছি, যা আমাদের সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে জড়িত। এখানে প্রথমবারের মতো Slovak ভাষায় আমাদের উপনিষদকে অনুবাদ করা হয়েছে। এই সমস্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে জানতে পারা যায় সারা বিশ্বে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাব কতটা। আমাদের সকলের জন্য এটা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়, যে সারা বিশ্বে, এমন কোটি কোটি মানুষ আছেন যাদের হৃদয়ে ভারত বিরাজমান।
আমার প্রিয় দেশবাসী আমি এখন আপনাদের কাছে দেশের এমন একটি উপলব্ধির কথা তুলে ধরবো যেটা শুনে আপনাদের ভীষণ আনন্দ হবে ও গর্ববোধও হবে, আর যদি আপনারা না করে থাকেন তাহলে আফসোস-ও হতে পারে। বেশ কিছু মাস আগে আমরা ‘Ek ped maa ke naam’ অভিযানটি শুরু করেছিলাম।
দেশের বহু মানুষ এই অভিযানে প্রচন্ড উৎসাহের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছেন। আমার বলতে ভীষণ ভালো লাগছে যে এই অভিযানের নিরিখে আমরা ১০০ কোটি গাছ লাগানোর গুরুত্বপূর্ণ পদাঙ্ক অতিক্রম করেছি। ১০০ কোটি গাছ! আর তাও মাত্র ৫ মাসে- এটি সম্ভব হয়েছে একমাত্র আমার দেশবাসীর নিরলস পরিশ্রমের জন্য। এই একই প্রসঙ্গে আরেকটি কথা জেনে আপনারা গৌরবান্বিত হবেন। 'Ek ped maa ke naam' অভিযান এখন বিশ্বের আরো অনেক দেশেই ছড়িয়ে পড়ছে। যখন আমি Guyana এ ছিলাম, সেখানেও আমি এই অভিযানটির সাক্ষী ছিলাম। সেখানে আমার সঙ্গে Guyana -র রাষ্ট্রপতি, ডক্টর ইরফান আলী ওর সহধর্মিনীর মা এবং পরিবারের অন্য সদস্যরাও, “Ek ped ma ke naam” অভিযানে শামিল হয়েছিলেন।
বন্ধুরা, দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই অভিযানটি নিরন্তর চলছে। মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর শহরে “ek ped maa ke naam” অভিযানের মাধ্যমে গাছ লাগানোর record তৈরি হয়েছে- এখানে ২৪ ঘন্টায় ১২ লক্ষেরও বেশি অনুর্বর এলাকায় গাছ রোপন করা হয়েছে। এই অভিযানটির জন্য ইন্দরের Revati Hills-এ অনুর্বর এলাকাগুলি এখন green zone-এ পরিণত হয়ে যাবে।
রাজস্থানের জয়সলমেরে এই অভিযানের মাধ্যমে একটি অভূতপূর্ব record সৃষ্টি হয়- এখানকার মহিলাদের একটি টিম এক ঘন্টায় ২৫ হাজার গাছ রোপন করেন। মায়েরা মায়ের নামে বৃক্ষ রোপণ করেন ও অন্যদেরও অনুপ্রেরণা জোগান। এখানে একটি জায়গাতেই পাঁচ হাজের বেশি মানুষ মিলিত হয়ে গাছ লাগান - এটাও একটি রেকর্ড। অভিজানের আওতায় “এক পেঢ় মাকে নাম” এই প্রকল্পের অধীনে বেশ কিছু সামাজিক সংস্থা স্থানীয় প্রয়োজনের ভিত্তিতে গাছ লাগাচ্ছেন। ওঁরা চেষ্টা করছেন যেখানে গাছ লাগানো হবে সেখানে পরিবেশের অনুকূল পুরো eco system develop করার। এই জন্য এই সংস্থাগুলি কোথাও ওষধি গাছ লাগাচ্ছেন, তো কোথাও পাখিদের বাসা বানানোর লক্ষ্যে বৃক্ষ রোপণ করছেন।
বিহারের ‘Jeevika Self-help Group’-এর মহিলারা ৭৫ লাখ গাছ লাগানোর অভিযান চালাচ্ছেন। এঁদের focus ফল দেওয়া গাছের উপর যাতে পরবর্তী সময়ে আয়ের সংস্থানও হয়।
বন্ধুরা, এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যে কেউ নিজের মায়ের নামে বৃক্ষ রোপণ করতে পারেন। যদি মা সঙ্গে থাকেন তাহলে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে গাছ লাগাতে পারেন, যদি না থাকেন তো তাঁর ছবি সঙ্গে নিয়ে এই অভিযানের অঙ্গ হতে পারেন। বৃক্ষের সঙ্গে নিজের selfie তুলে mygov.in সাইটে পোস্টও করতে পারেন। মা আমাদের জন্য যা করেন… আমরা কখনোই তাঁর ঋণ শোধ করতে পারিনা, কিন্তু তাঁর নামে একটি গাছ লাগিয়ে আমরা তাঁর উপস্থিতিকে সদা সর্বদা জীবিত রাখতে পারি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনারা সবাই ছোটবেলায় চড়াই পাখি বা sparrow-কে নিজেদের বাড়ির ছাদে বা গাছগাছালিতে ডাকতে দেখেছেন। চড়াই পাখিকে তামিল ও মালায়ালামে কুরুভি, তেলুগুতে পিচ্চুকা আর কন্নড়ে গুব্বি বলে ডাকা হয়। প্রতিটি ভাষায় চড়ুইদের নিয়ে গল্প-গাথা বলা হয়। আমাদের চারপাশের biodiversity বজায় রাখার ক্ষেত্রে চড়ুই পাখিরা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কিন্তু আজকাল শহরে চড়ুই পাখি বিরল। নগরায়নের প্রসারের কারণে চড়ুইরা আমাদের থেকে দূরে চলে গেছে। আজকের প্রজন্মের এমন অনেক বাচ্চা আছে যারা চড়ুইদের কেবল ছবি বা ভিডিওতে দেখেছে। এইরকম বাচ্চাদের জীবনে এই মিষ্টি পাখিটিকে ফিরিয়ে আনার জন্য বেশ কিছু অনন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
চেন্নাইয়ের কুড়ুগল ট্রাস্ট চড়াই পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য স্কুলের ছেলেমেয়েদের নিজেদের অভিযানের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। ওই সংস্থাটির লোকেরা স্কুলে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের এই বিষয়ে অবগত করেন যে চড়ুই পাখি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এই সংস্থাটি বাচ্চাদের চড়াই পাখির বাসা তৈরি করার ট্রেনিং দেয়। এর জন্য সংস্থাটির লোকেরা ছেলে-মেয়েদের কাঠের টুকরো দিয়ে ছোট্ট ঘরের মতো বাসা তৈরি করা শিখিয়েছেন। এর মধ্যে চড়াই পাখিদের থাকার এবং খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এটা একটা বিশেষ ধরনের বাসা যা যেকোনো ভবনের বাইরের দেওয়ালে অথবা গাছে লাগানো যেতে পারে। ছেলেমেয়েরা এই অভিযানে উৎসাহের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছে এবং চড়াই পাখিদের জন্য এমন অনেক বাসা তৈরি করা শুরু করেছে। গত চার বছরে এই সংস্থাটি চড়াই পাখিদের জন্য প্রায় দশ হাজার বাসা তৈরি করেছেন। কুড়ুগল ট্রাস্টের এই উদ্যোগে পাশাপাশি সব অঞ্চলে চড়াই পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। আপনারাও নিজেদের আশেপাশে এমন প্রচেষ্টা করলে চড়াই পাখিরা নিশ্চিত রূপে আবার আমাদের জীবনের অংশ হয়ে উঠবে।
বন্ধুরা, কর্নাটকের মাইসুরুর একটি সংস্থা ছেলে মেয়েদের জন্য আর্লি বার্ড নামে একটি অভিযান শুরু করেছে। এই সংস্থাটি ছেলেমেয়েদের পাখিদের বিষয়ে জানানোর জন্য বিশেষ ধরনের একটি লাইব্রেরি পরিচালনা করে। শুধু তাই নয় ছেলেমেয়েদের মধ্যে প্রকৃতির প্রতি দায়িত্ববোধের ভাবনা তৈরি করার জন্য নেচার এডুকেশন কিটও তৈরি করেছে। এই কিটের মধ্যে শিশুদের জন্য স্টোরি বুক, গেমস, এক্টিভিটি শিটস এবং জিক্সপাজলস থাকে। এই সংস্থাটি শহরের ছেলেমেয়েদের গ্রামে নিয়ে যায় এবং তাদের পাখিদের সম্বন্ধে বলে। সংস্থাটির এই প্রচেষ্টার জন্য ছেলেমেয়েরা পাখিদের অনেক প্রজাতিদের চেনা শুরু করেছে। মন কি বাতের শ্রোতারাও এই ধরনের প্রচেষ্টার মাধ্যমে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে নিজেদের আশেপাশের প্রকৃতিকে দেখার, বোঝার এক অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী করার চেষ্টা করতে পারেন।
আমার প্রিয় দেশবাসীরা, আপনারা দেখে থাকবেন, যখনই কেউ "সরকারি দপ্তর"-এর কথা বলেন, আপনার মনে ফাইলের স্তূপের ছবি ভেসে ওঠে। সিনেমাতেও আপনারা এমনই কিছু ছবি দেখেছেন। সরকারি দপ্তরে এই ফাইলের স্তূপ নিয়ে কত যে মস্করা হয়, কত যে গল্প লেখা হয়ে গেছে; বছরের পর বছর অফিসে পড়ে পড়ে এই ফাইলগুলো ধুলোয় ভরে যেত, ময়লা জমতো সেখানে। এমনই বহু দশক পুরোনো এবং বাতিল ফাইল সরানোর জন্যে এক বিশেষ স্বচ্ছতা অভিযান পালন করা হয়েছে। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, সরকারি দপ্তরে এই অভিযানের দরুণ ভারি অদ্ভুত কিছু পরিণাম সামনে এসেছে। সাফসুতরো করার জন্যে দপ্তরের বেশ অনেকটা জায়গা খালি হয়ে গিয়েছে। এর ফলে, অফিসের কর্মচারীদের মধ্যে বেশ একটা ওনারশিপ-এর ভাব এসেছে। নিজের কাজের জায়গা পরিষ্কার রাখার গুরুত্বও তাঁরা অনুভব করছেন।
বন্ধুরা, আপনারা নিশ্চয়ই গুরুজনেদের বলতে শুনেছেন, যে, যেখানে স্বচ্ছতা, সেখানেই মা লক্ষ্মীর বাস। আমাদের এখানে "পাঁক থেকেই পদ্মের জন্ম" তো বহু পুরোনো প্রচলিত কথা। দেশের বেশ কিছু জায়গায় তরুণ প্রজন্ম, অব্যবহার্য, বাতিল জিনিস দিয়েই "পাঁক থেকে পদ্ম" তৈরি করছেন। নানারকমের Innovation করছেন। এর দ্বারা তাঁরা আয় করছেন, আবার, রোজগারের দিকটিও বিকশিত হচ্ছে। এই নবীন প্রজন্ম নিজেদের চেষ্টায় সাসটেইনেবল লাইফস্টাইলকেও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। মুম্বাইয়ের দুই কন্যার এই প্রয়াস, সত্যিই উদ্বুদ্ধ করার মত। অক্ষারা এবং প্রকৃতি নামের এই দুই কন্যে, কাপড়ের ছোট ছোট টুকরো দিয়ে ফ্যাশনের অনেককিছু তৈরি করছেন। আপনারা তো জানেনই, কাপড় কেটে, সেলাই করার সময়ে কত ছোট ছোট টুকরো বাতিল ভেবে ফেলেই দেওয়া হয়। অক্ষরা আর প্রকৃতির টিম, ওই বাতিল কাপড়ের টুকরোগুলোকেই ফ্যাশন প্রোডাক্টে বদলে দেন। কাপড়ের টুকরো দিয়ে তৈরি টুপি, ব্যাগ, এসব হাতেহাতে বিক্রিও হয়ে যায়।
বন্ধুরা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে উত্তর প্রদেশের কানপুরেও খুব ভালো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ এখানে কিছু মানুষ রোজ সকালে morning walk-এ বেরোন ও গঙ্গার ঘাটে ছড়ানো Plastic ও অন্যান্য জঞ্জাল তুলে নেন ৷ এই দলকে ‘Kanpur Ploggers Group’ নাম দেওয়া হয়েছে| কিছু বন্ধু মিলে এই উদ্যোগ প্রথম শুরু করেন৷ জনগণের অংশগ্রহণের ফলে ক্রমে-ক্রমে তা এক বড় অভিযানের রূপ নেয়৷ শহরের প্রচুর মানুষ এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত৷ এখন এদের সদস্যরা দোকান ও বাড়ির জঞ্জালও তোলা শুরু করেছেন৷ এই জঞ্জাল দিয়ে Recycle Plant-এর tree guard তৈরি করা হয়, অর্থাৎ, এই Group-এর লোকজন জঞ্জাল দিয়ে তৈরি tree guard দিয়ে গাছের সুরক্ষার ব্যবস্থাও করেন৷
বন্ধুরা, ছোট ছোট প্রচেষ্টার মাধ্যমে কি করে বড় সাফল্য পাওয়া যায়, তার এক উদাহরণ অসমের ইতিশা৷ ইতিশার পড়াশোনা দিল্লী ও পুণেতে হয়েছে৷ ইতিশা Corporate জগতের চাকচিক্য ছেড়ে অরুণাচলের সাঙ্গতি উপত্যকাকে পরিষ্কার করার কাজে ব্যস্ত৷ ওখানে পর্যটকদের জন্য অনেক Plastic waste জমা হয়েছিল৷ ওখানকার নদী যা একসময় পরিষ্কার ছিল তা Plastic waste-এর জন্য দূষিত হয়ে গিয়েছিল৷ তাকে পরিষ্কার করতে ইতিশা স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কাজ করছেন৷ তাঁর Group-এর সদস্যরা ওখানে ঘুরতে আসা Tourist-দের সচেতন করছেন এবং পুরো উপত্যকায় Plastic waste collect করতে বাঁশের তৈরি ডাস্টবিন লাগানোর ব্যবস্থা করেছেন৷
বন্ধুরা, এইসব প্রচেষ্টা ভারতের স্বচ্ছতা অভিযানকে গতিশীল করে৷ এই প্রচেষ্টা নিরন্তর চলমান৷ আপনার আশেপাশেও নিশ্চয়ই এরকমই হয়ে থাকে৷ আপনি আমাকে এইসব প্রচেষ্টা সম্পর্কে অবশ্যই লিখে পাঠান৷
বন্ধুরা, ‘মন কি বাত’-এর এই Episode এ পর্যন্তই। পুরো মাস আমি অধীর আগ্রহে আপনাদের প্রতিক্রিয়া, চিঠি ও মতামতের অপেক্ষায় থাকি৷ প্রতি মাসে আপনাদের কাছ থেকে আসা বার্তা আমায় আরো ভালো করার প্রেরণা যোগায়৷ পরের মাসে আমাদের আবার দেখা হবে, ‘মন কি বাত’-এর আরো এক পর্বে- দেশ ও দেশবাসীর নতুন উপলব্ধির সঙ্গে, ততক্ষণ পর্যন্ত, সমস্ত দেশবাসীকে আমার অনেক শুভকামনা৷
অনেক অনেক ধন্যবাদ৷
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। মন কি বাত অর্থাৎ দেশের সমষ্টিগত প্রয়াসের কথা, দেশের উপলব্ধির কথা, জনমানুষের সক্ষমতার কথা, মন কি বাত অর্থাৎ দেশের তরুণদের স্বপ্ন, দেশের নাগরিকদের আকাঙ্খার কাহিনী। আমি গোটা মাস ধরে মন কি বাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি, যাতে আপনাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারি। কত খবরাখবর, কত বার্তা! আমার সম্পূর্ণ প্রচেষ্টা থাকে যাতে বেশি-বেশি করে আপনাদের বার্তা পড়তে পারি, আপনাদের পরামর্শ নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে পারি।
বন্ধুরা, আজ অত্যন্ত বিশেষ একটা দিন – আজ এনসিসি দিবস। এনসিসি-র কথা উঠলেই আমাদের স্কুল-কলেজের দিনগুলো মনে পড়ে যায়। আমি নিজেও এনসিসি-র ক্যাডেট ছিলাম আর তাই সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে পারি যে এখান থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা আমার কাছে অমূল্য। এনসিসি তরুণদের মধ্যে অনুশাসন, নেতৃত্ব আর সেবার ভাবনা তৈরি করে। আপনারা নিজেদের চারপাশে দেখেছেন হয়ত, যখনই কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়, সেটা বন্যা পরিস্থিতি হোক, কোথাও ভূমিকম্প হয়ে থাকুক, কোনও দুর্ঘটনা ঘটে থাকুক, সেখানে সহায়তা করার জন্য নিশ্চিতভাবে এনসিসি ক্যাডেটরা উপস্থিত হয়ে যান। আজ দেশে এনসিসি-কে শক্তিশালী করার জন্য নিরন্তর কাজ চলছে। ২০১৪ সালে প্রায় চোদ্দ লক্ষ তরুণ এনসিসি-র সঙ্গে যুক্ত ছিল। এখন ২০২৪ সালে, কুড়ি লক্ষেরও বেশি তরুণ এনসিসি-র সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। আগের তুলনায় আরও পাঁচ হাজার স্কুল-কলেজে এনসিসি-র সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে, আর সবথেকে বড় কথা, আগে এনসিসি-তে মেয়ে ক্যাডেটের সংখ্যা থাকত পঁচিশ শতাংশের মত। এখন এনসিসি-তে মেয়ে ক্যাডেটদের সংখ্যা প্রায় চল্লিশ শতাংশের মত হয়ে গিয়েছে। সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত তরুণদের বেশি-বেশি করে এনসিসি-তে যুক্ত করার অভিযানও চলছে নিরন্তর। আমি তরুণদের কাছে অনুরোধ জানাব যে তারা যেন বেশি-বেশি সংখ্যায় এনসিসি- র সঙ্গে যুক্ত হন। আপনারা দেখবেন, যে কোনও কেরিয়ারই আপনি বেছে নিন না কেন, আপনার ব্যক্তিত্ব নির্মাণে এনসিসি থেকে বড় সহায়তা পাওয়া যাবে।
বন্ধুরা, বিকশিত ভারতের নির্মাণে তরুণদের ভূমিকা খুব বড়। তরুণ মন আজ যখন একজোট হয়ে দেশের অগ্রগতির জন্য গভীরভাবে ভাবে চিন্তাভাবনা করে, তখন নিশ্চিতভাবে একটা কার্যকরী পথ বের হয়। আপনারা জানেন যে ১২ই জানুয়ারি স্বামী বিবেকানন্দের জন্মজয়ন্তীতে দেশ ‘যুবদিবস’ পালন করে। আগামী বছর স্বামী বিবেকানন্দজীর ১৬২তম জন্মজয়ন্তী। এবার এটি অত্যন্ত বিশেষভাবে পালন করা হবে। এই উপলক্ষে ১১ ও ১২ জানুয়ারি দিল্লীর ভারত মণ্ডপমে তরুণদের আলাপ-আলোচনার মহাকুম্ভ অনুষ্ঠিত হতে চলেছে, আর এই উদ্যোগের নাম ‘বিকশিত ভারত ইয়ং লীডার্স ডায়লগ’। গোটা ভারত থেকে কোটি-কোটি তরুণ অংশ নেবে এখানে।
গ্রাম, ব্লক, জেলা, রাজ্য থেকে উঠে আসা বাছাই করা এমন দু'হাজার তরুণ ভারত মণ্ডপমে "বিকশিত ভারত ইয়ং লিডারস ডায়লগ" এর জন্য একত্রিত হবেন। আপনাদের মনে থাকবে আমি লালকেল্লার প্রাকার থেকে এমন তরুণদের রাজনীতিতে আসার আহ্বান জানিয়েছিলাম। যাদের পরিবারে কোন ব্যাক্তি অর্থাৎ সমগ্র পরিবারের কারোর পলিটিকাল ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। এমন এক লক্ষ তরুণদের, নবীন যুবদের রাজনীতিতে যুক্ত করার জন্য দেশে বিভিন্ন ধরনের বিশেষ অভিযান চলবে। বিকশিত ভারত ইয়াং লিডারস ডায়লগও এমনই এক প্রয়াস। এতে দেশ-বিদেশ থেকে এক্সপার্টরা আসবেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহু গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও থাকবেন। আমিও সেখানে বেশিরভাগ সময় উপস্থিত থাকবো। তরুণরা আমাদের সামনে নিজেদের আইডিয়াগুলি ব্যক্ত করার সুযোগ পাবেন। আমাদের দেশ এই আইডিয়াগুলি নিয়ে কীভাবে অগ্রসর হতে পারে? কিভাবে একটি মজবুত রোড ম্যাপ তৈরি হতে পারে তার একটি ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করা হবে। তাহলে আপনারাও প্রস্তুত হোন। যারা ভারতের ভবিষ্যতের নির্মাণকারী, যারা দেশের আগামী প্রজন্ম, তাদের জন্য খুব বড় একটা সুযোগ আসছে। আসুন সবাই মিলে দেশ গড়ি, দেশকে বিকশিত করি।
আমার প্রিয় দেশবাসী মন কি বাতে আমরা প্রায়শই এমন তরুণদের বিষয়ে আলোচনা করি, যারা নিঃস্বার্থভাবে সমাজের জন্য কাজ করে। এমন কত যুবা আছে যারা মানুষের ছোট ছোট সমস্যাগুলির সমাধানে রত । আমরা যদি আমাদের চারপাশে দেখি তাহলে কত মানুষকেই দেখতে পাবো যাদের কোনো না কোনো ধরনের সাহায্য প্রয়োজন, কোন তথ্য প্রয়োজন। আমার এটা জেনে ভালো লেগেছে যে কিছু যুবা একত্রিত হয়ে এই ধরনের বিষয়গুলি নিয়ে ভাবছেন । যেমন লখনৌয়ের বাসিন্দা বীরেন্দ্র যিনি প্রবীণদের ডিজিটাল লাইফ সার্টিফিকেট এর কাজে সহায়তা করেন।
আপনারা তো জানেনই নিয়ম অনুযায়ী Pensioner-দের বছরে একবার life certificate জমা করাতে হয়। ২০১৪ পর্যন্ত এটার প্রক্রিয়া এমন ছিল যে বয়স্কদের ব্যাংকে গিয়ে নিজেকেই জমা করাতে হতো। আপনারা নিশ্চয়ই কল্পনা করতে পারছেন যে এজন্য আমাদের প্রবীনদের কতটা অসুবিধা হতো। এখন এই ব্যবস্থা বদলে গেছে। এখন digital life certificate আসায় বিষয়গুলো অনেক সুবিধা-জনক হয়ে গেছে। প্রবীনদের ব্যাংকে যেতে হয় না। Technology'র কারণে যাতে প্রবীনদের কোন অসুবিধা না হয় সেজন্য বীরেন্দ্রর মতো যুবদের অনেক বড় ভূমিকা আছে। তিনি নিজের এলাকায় প্রবীনদের এ বিষয়ে সচেতন করে তোলেন। এটুকুই নয়, তিনি প্রবীনদের tech savvy'ও করে তুলছেন, এমন প্রচেষ্টার জন্যেই এখন digital life certificate পাওয়া মানুষের সংখ্যা ৮০ লক্ষ'র গন্ডি ছাড়িয়ে গেছে। তাঁদের মধ্যে, দু লক্ষেরও বেশি এমন কিছু প্রবীণ মানুষ রয়েছেন, যাদের বয়েস আশি'রো বেশী।
বন্ধুরা, অনেক শহরেই যুবরা প্রবীনদের digital বিপ্লবে অংশীদার করে তুলতেও এগিয়ে আসছেন। ভূপালের মহেশ নিজের এলাকায় বহু প্রবীনদের মোবাইলের মাধ্যমে পেমেন্ট করা শিখিয়েছেন। সেইসব প্রবীণদের কাছে smart phone তো ছিল কিন্তু তার সঠিক প্রয়োগ দেখিয়ে দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। প্রবীনদের digital arrest-এর হাত থেকে বাঁচানোর জন্যেও যুবরা এগিয়ে এসেছে। আহমেদাবাদের রাজীব মানুষকে digital arrest-এর বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেন। আমি মন কি বাতের গত episode এ digital arrest সম্পর্কে আলোচনা করেছিলাম। প্রবীনরা'ই সবচেয়ে বেশি এ ধরনের অপরাধের শিকার হন। সেজন্য আমাদের দায়িত্ব তাদের সচেতন করে তোলা আর cyber fraud থেকে বাঁচতে সাহায্য করা। আমাদের বারবার মানুষকে বোঝাতে হবে যে digital arrest বলে সরকারের কোন নিয়ম নেই- এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, মানুষকে ফাঁসানোর একটা ষড়যন্ত্র; আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আমাদের যুব বন্ধুরা এই কাজে পূর্ণ সংবেদনশীলতার সঙ্গে অংশ নিচ্ছেন, এবং অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করছেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজকাল বাচ্চাদের পড়াশোনা নিয়ে নানা ধরনের প্রয়োগ হচ্ছে। প্রচেষ্টা এটাই থাকে যে আমাদের বাচ্চাদের মধ্যে ক্রিয়েটিভিটি যাতে আরো বাড়ে, বইয়ের প্রতি ভালোবাসা আরো বাড়ে, এবং এটা বলাও হয়ে থাকে যে বই মানুষের সবথেকে ভালো বন্ধু, আর এই বন্ধুত্বকে আরো মজবুত করার জন্য, লাইব্রেরীর থেকে ভালো জায়গা আর কি হতে পারে। আমি চেন্নাই-এর একটি উদাহরণ আপনাদের সবার সঙ্গে ভাগ করতে চাই। এখানে বাচ্চাদের জন্য এমন একটি লাইব্রেরী তৈরি করা হয়েছে, যা ক্রিয়েটিভিটি এবং লার্নিং এর হাব হিসেবে গড়ে উঠেছে। এটি প্রকৃত অরিওয়গম নামে পরিচিত। এই লাইব্রেরীটির আইডিয়া, টেকনোলজির দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত শ্রীরাম গোপালনের মস্তিষ্কপ্রসূত। বিদেশে নিজের কর্মসূত্রে তিনি লেটেস্ট টেকনোলজির সঙ্গে বরাবর যুক্ত থেকেছেন। কিন্তু তিনি বাচ্চাদের মধ্যে পড়া এবং শেখার অভ্যাস বিকশিত করার ব্যাপারেও ভাবতে থাকেন। ভারতে ফিরে তিনি প্রকৃত অরিওয়গম তৈরি করেন। এখানে ৩ হাজারেরও বেশি বই আছে, যেটা পড়ার জন্য বাচ্চাদের মধ্যে হুড়োহুড়ি লেগেই থাকে। বই ছাড়াও এখানে হওয়া নানারকমের একটিভিটিও বাচ্চাদের আকর্ষণের কারণ। স্টোরি টেলিং সেশন হোক বা আর্ট ওয়ার্কশপ, মেমারি ট্রেনিং ক্লাস বা রোবোটিক্স লেসন, নয়তো পাবলিক স্পিকিং.. এখানে সব বাচ্চাদেরই পছন্দমত কিছু না কিছু রয়েছে ।
বন্ধুরা, হায়দ্রাবাদের ফুড ফর থট ফাউন্ডেশন অনেকগুলি চমৎকার লাইব্রেরী বানিয়েছে। এদেরও প্রচেষ্টা এটাই যে বাচ্চাদের যতটা বেশি সম্ভব বিষয়ের উপর সামগ্রিক জ্ঞানের পাশাপাশি পড়ার জন্য বই উপলব্ধ হোক। বিহারের গোপালগঞ্জের 'প্রয়োগ লাইব্রেরী' সম্পর্কে তো আশেপাশের অনেক শহরেই চর্চা হয়ে থাকে। এই লাইব্রেরি থেকে আশেপাশের প্রায় ১২টি গ্রামের যুবকেরা বই পড়ার সুযোগ পেয়ে থাকে, তার সঙ্গে এই লাইব্রেরীতে পড়াশোনা সম্বন্ধিত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাও পাওয়া যায়। কিছু লাইব্রেরী তো এমনও আছে, যেগুলি প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ছাত্রদের সাহায্য করে থাকে। এটা দেখে খুবই ভালো লাগছে যে, সমাজকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আজ লাইব্রেরীগুলির চমৎকার ব্যবহার করা হচ্ছে। আপনারাও বইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়ান, আর দেখুন কিভাবে আপনার জীবনেও পরিবর্তন আসে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি গত পরশু রাতে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ গায়ানায় থেকে ফিরলাম। ভারত থেকে হাজার হাজার কিলোমিটারের দূরত্বে, গয়ানাতেও, একটা Mini ভারত বাস করে। আজ থেকে প্রায় ১৮০ বছর আগে, গয়ানাতে, কৃষিশ্রমিক হিসেবে ও অন্যান্য কাজের জন্য ভারত থেকে লোক নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আজ গয়ানাতে ভারতীয় বংশোদ্ভূত লোকেরা রাজনীতি, ব্যবসা, শিক্ষা এবং সংস্কৃতির প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে গয়ানাকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। গয়ানার রাষ্ট্রপতি ড. ইরফান আলিও একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত, যিনি তাঁর ভারতীয় ঐতিহ্য নিয়ে গর্বিত। আমি যখন গয়ানায় ছিলাম, তখন আমি একটা বিষয়ে নিয়ে ভেবেছিলাম – যেটা আমি ‘মন কি বাত’-এ আপনাদের সঙ্গে Share করছি। গয়ানার মতো, বিশ্বের অগুণিত দেশে লক্ষ লক্ষ সংখ্যায় ভারতীয় রয়েছেন। কয়েক দশক পূর্বের, ২০০-৩০০ বছর আগের, পূর্বপুরুষদের তাঁদের নিজস্ব কাহিনী আছে। আপনারা কি এমন সব কাহিনী খুঁজে বার করতে পারবেন যে কিভাবে ভারতীয় প্রবাসীরা অন্য অন্য দেশে নিজের পরিচয় তৈরী করেছেন! কি করে তাঁরা অন্যান্য দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন! কিভাবে তাঁরা ভারতীয় ঐতিহ্য জীবিত রেখেছেন? আমি চাই আপনারা এমন ধরণের সত্য কাহিনী খুঁজুন, আর আমার সঙ্গে share করুন। আপনারা এই কাহিনীগুলো NaMo app এ বা mygov-এ #IndianDiasporaStories দিয়েও share করতে পারেন।
বন্ধুরা, আপনি ওমানে একটি extraordinary project দেখতে পাবেন যা খুবই আকর্ষণীয়। বহু ভারতীয় পরিবার বহু শতাব্দী ধরে ওমানে বসবাস করছেন। তাঁদের অধিকাংশই গুজরাটের কচ্ছ থেকে গিয়ে ওখানে বসতি স্থাপন করেছিলেন। এঁনারা তাঁদের ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ link তৈরী করেছিলেন। আজ তাঁদের ওমানের নাগরিকত্ব আছে, কিন্তু ভারতীয়ত্ত্ব তাঁদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়েছে। ওমানে ভারতীয় দূতাবাস এবং National Archives of India সহযোগিতায় একটি team এই পরিবারগুলির ইতিহাস সংরক্ষণ করার কাজ শুরু করেছে।
এই অভিযানের আওতায় এ পর্যন্ত হাজার হাজার নথি সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ডায়েরি, একাউন্ট বুক , লেজরস, চিঠিপত্র ও টেলিগ্রাম। এই নথির মধ্যে ১৮৩৮ সালের কিছু নথিও রয়েছে। এই নথিগুলিতে অনেকরকম চিন্তাভাবনা রয়েছে। বহু বছর আগে তারা যখন ওমানে পৌঁছেছিলেন তখন তারা কী ধরনের জীবনযাপন করেছিলেন, তারা যে সুখ-দুঃখের মুখোমুখি হয়েছেন এবং ওমানের জনগণের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কীভাবে এগিয়েছে, সেগুলিও এই নথির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। Oral history projectও এই মিশনের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। এই মিশনে, সেখানকার প্রবীন মানুষেরা তাঁদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন। জনগণ তাঁদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানিয়েছেন।
বন্ধুরা, এরকম একটি Oral history project ভারতেও হচ্ছে। এই প্রজেক্টের আওতায় ইতিহাসপ্রেমীরা দেশভাগের সময়কার অভিজ্ঞতার কথা তৎকালীন নিপীড়িত মানুষদের অভিজ্ঞতা থেকে সংগ্রহ করছেন। দেশভাগের বীভৎসতা দেখেছেন এমন মানুষ বর্তমানে দেশে খুব কমই আছেন। এমতাবস্থায় এরকম একটি প্রয়াস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। বন্ধুরা, যে দেশ, যে অঞ্চল ইতিহাসকে লালন করে, তার ভবিষ্যৎও সুরক্ষিত থাকে। এই ভাবনা থেকেই একটি প্রয়াসের সূত্রপাত হয়েছে যেখানে গ্রামের ইতিহাস সংরক্ষণ করার জন্য একটি ডিরেক্টরি তৈরি করা হচ্ছে। চলছে ভারতের প্রাচীন সমুদ্র ভ্রমণের সামর্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রামাণ্য জোগাড়ের কাজ। লোথালে, এর সঙ্গে সম্পৃক্ত, একটি বিশাল জাদুঘরও তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়াও, যদি আপনার অবগতিতে কোনো লিপি, ঐতিহাসিক নথি বা কোনো হস্তলিখিত কপি থাকে, তাহলে আপনি ভারতের ন্যাশনাল আর্কাইভস অফ ইন্ডিয়ার সাহায্যে তা সংরক্ষণ করতে পারেন।
বন্ধুরা, আমি ‘Slovakia-তে চলছে এমনই আর একটি প্রচেষ্টা সম্পর্কে জানতে পেরেছি, যা আমাদের সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে জড়িত। এখানে প্রথমবারের মতো Slovak ভাষায় আমাদের উপনিষদকে অনুবাদ করা হয়েছে। এই সমস্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে জানতে পারা যায় সারা বিশ্বে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাব কতটা। আমাদের সকলের জন্য এটা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়, যে সারা বিশ্বে, এমন কোটি কোটি মানুষ আছেন যাদের হৃদয়ে ভারত বিরাজমান।
আমার প্রিয় দেশবাসী আমি এখন আপনাদের কাছে দেশের এমন একটি উপলব্ধির কথা তুলে ধরবো যেটা শুনে আপনাদের ভীষণ আনন্দ হবে ও গর্ববোধও হবে, আর যদি আপনারা না করে থাকেন তাহলে আফসোস-ও হতে পারে। বেশ কিছু মাস আগে আমরা ‘Ek ped maa ke naam’ অভিযানটি শুরু করেছিলাম।
দেশের বহু মানুষ এই অভিযানে প্রচন্ড উৎসাহের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছেন। আমার বলতে ভীষণ ভালো লাগছে যে এই অভিযানের নিরিখে আমরা ১০০ কোটি গাছ লাগানোর গুরুত্বপূর্ণ পদাঙ্ক অতিক্রম করেছি। ১০০ কোটি গাছ! আর তাও মাত্র ৫ মাসে- এটি সম্ভব হয়েছে একমাত্র আমার দেশবাসীর নিরলস পরিশ্রমের জন্য। এই একই প্রসঙ্গে আরেকটি কথা জেনে আপনারা গৌরবান্বিত হবেন। 'Ek ped maa ke naam' অভিযান এখন বিশ্বের আরো অনেক দেশেই ছড়িয়ে পড়ছে। যখন আমি Guyana এ ছিলাম, সেখানেও আমি এই অভিযানটির সাক্ষী ছিলাম। সেখানে আমার সঙ্গে Guyana -র রাষ্ট্রপতি, ডক্টর ইরফান আলী ওর সহধর্মিনীর মা এবং পরিবারের অন্য সদস্যরাও, “Ek ped ma ke naam” অভিযানে শামিল হয়েছিলেন।
বন্ধুরা, দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই অভিযানটি নিরন্তর চলছে। মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর শহরে “ek ped maa ke naam” অভিযানের মাধ্যমে গাছ লাগানোর record তৈরি হয়েছে- এখানে ২৪ ঘন্টায় ১২ লক্ষেরও বেশি অনুর্বর এলাকায় গাছ রোপন করা হয়েছে। এই অভিযানটির জন্য ইন্দরের Revati Hills-এ অনুর্বর এলাকাগুলি এখন green zone-এ পরিণত হয়ে যাবে।
রাজস্থানের জয়সলমেরে এই অভিযানের মাধ্যমে একটি অভূতপূর্ব record সৃষ্টি হয়- এখানকার মহিলাদের একটি টিম এক ঘন্টায় ২৫ হাজার গাছ রোপন করেন। মায়েরা মায়ের নামে বৃক্ষ রোপণ করেন ও অন্যদেরও অনুপ্রেরণা জোগান। এখানে একটি জায়গাতেই পাঁচ হাজের বেশি মানুষ মিলিত হয়ে গাছ লাগান - এটাও একটি রেকর্ড। অভিজানের আওতায় “এক পেঢ় মাকে নাম” এই প্রকল্পের অধীনে বেশ কিছু সামাজিক সংস্থা স্থানীয় প্রয়োজনের ভিত্তিতে গাছ লাগাচ্ছেন। ওঁরা চেষ্টা করছেন যেখানে গাছ লাগানো হবে সেখানে পরিবেশের অনুকূল পুরো eco system develop করার। এই জন্য এই সংস্থাগুলি কোথাও ওষধি গাছ লাগাচ্ছেন, তো কোথাও পাখিদের বাসা বানানোর লক্ষ্যে বৃক্ষ রোপণ করছেন।
বিহারের ‘Jeevika Self-help Group’-এর মহিলারা ৭৫ লাখ গাছ লাগানোর অভিযান চালাচ্ছেন। এঁদের focus ফল দেওয়া গাছের উপর যাতে পরবর্তী সময়ে আয়ের সংস্থানও হয়।
বন্ধুরা, এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যে কেউ নিজের মায়ের নামে বৃক্ষ রোপণ করতে পারেন। যদি মা সঙ্গে থাকেন তাহলে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে গাছ লাগাতে পারেন, যদি না থাকেন তো তাঁর ছবি সঙ্গে নিয়ে এই অভিযানের অঙ্গ হতে পারেন। বৃক্ষের সঙ্গে নিজের selfie তুলে mygov.in সাইটে পোস্টও করতে পারেন। মা আমাদের জন্য যা করেন… আমরা কখনোই তাঁর ঋণ শোধ করতে পারিনা, কিন্তু তাঁর নামে একটি গাছ লাগিয়ে আমরা তাঁর উপস্থিতিকে সদা সর্বদা জীবিত রাখতে পারি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনারা সবাই ছোটবেলায় চড়াই পাখি বা sparrow-কে নিজেদের বাড়ির ছাদে বা গাছগাছালিতে ডাকতে দেখেছেন। চড়াই পাখিকে তামিল ও মালায়ালামে কুরুভি, তেলুগুতে পিচ্চুকা আর কন্নড়ে গুব্বি বলে ডাকা হয়। প্রতিটি ভাষায় চড়ুইদের নিয়ে গল্প-গাথা বলা হয়। আমাদের চারপাশের biodiversity বজায় রাখার ক্ষেত্রে চড়ুই পাখিরা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কিন্তু আজকাল শহরে চড়ুই পাখি বিরল। নগরায়নের প্রসারের কারণে চড়ুইরা আমাদের থেকে দূরে চলে গেছে। আজকের প্রজন্মের এমন অনেক বাচ্চা আছে যারা চড়ুইদের কেবল ছবি বা ভিডিওতে দেখেছে। এইরকম বাচ্চাদের জীবনে এই মিষ্টি পাখিটিকে ফিরিয়ে আনার জন্য বেশ কিছু অনন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
চেন্নাইয়ের কুড়ুগল ট্রাস্ট চড়াই পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য স্কুলের ছেলেমেয়েদের নিজেদের অভিযানের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। ওই সংস্থাটির লোকেরা স্কুলে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের এই বিষয়ে অবগত করেন যে চড়ুই পাখি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এই সংস্থাটি বাচ্চাদের চড়াই পাখির বাসা তৈরি করার ট্রেনিং দেয়। এর জন্য সংস্থাটির লোকেরা ছেলে-মেয়েদের কাঠের টুকরো দিয়ে ছোট্ট ঘরের মতো বাসা তৈরি করা শিখিয়েছেন। এর মধ্যে চড়াই পাখিদের থাকার এবং খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এটা একটা বিশেষ ধরনের বাসা যা যেকোনো ভবনের বাইরের দেওয়ালে অথবা গাছে লাগানো যেতে পারে। ছেলেমেয়েরা এই অভিযানে উৎসাহের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছে এবং চড়াই পাখিদের জন্য এমন অনেক বাসা তৈরি করা শুরু করেছে। গত চার বছরে এই সংস্থাটি চড়াই পাখিদের জন্য প্রায় দশ হাজার বাসা তৈরি করেছেন। কুড়ুগল ট্রাস্টের এই উদ্যোগে পাশাপাশি সব অঞ্চলে চড়াই পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। আপনারাও নিজেদের আশেপাশে এমন প্রচেষ্টা করলে চড়াই পাখিরা নিশ্চিত রূপে আবার আমাদের জীবনের অংশ হয়ে উঠবে।
বন্ধুরা, কর্নাটকের মাইসুরুর একটি সংস্থা ছেলে মেয়েদের জন্য আর্লি বার্ড নামে একটি অভিযান শুরু করেছে। এই সংস্থাটি ছেলেমেয়েদের পাখিদের বিষয়ে জানানোর জন্য বিশেষ ধরনের একটি লাইব্রেরি পরিচালনা করে। শুধু তাই নয় ছেলেমেয়েদের মধ্যে প্রকৃতির প্রতি দায়িত্ববোধের ভাবনা তৈরি করার জন্য নেচার এডুকেশন কিটও তৈরি করেছে। এই কিটের মধ্যে শিশুদের জন্য স্টোরি বুক, গেমস, এক্টিভিটি শিটস এবং জিক্সপাজলস থাকে। এই সংস্থাটি শহরের ছেলেমেয়েদের গ্রামে নিয়ে যায় এবং তাদের পাখিদের সম্বন্ধে বলে। সংস্থাটির এই প্রচেষ্টার জন্য ছেলেমেয়েরা পাখিদের অনেক প্রজাতিদের চেনা শুরু করেছে। মন কি বাতের শ্রোতারাও এই ধরনের প্রচেষ্টার মাধ্যমে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে নিজেদের আশেপাশের প্রকৃতিকে দেখার, বোঝার এক অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী করার চেষ্টা করতে পারেন।
আমার প্রিয় দেশবাসীরা, আপনারা দেখে থাকবেন, যখনই কেউ "সরকারি দপ্তর"-এর কথা বলেন, আপনার মনে ফাইলের স্তূপের ছবি ভেসে ওঠে। সিনেমাতেও আপনারা এমনই কিছু ছবি দেখেছেন। সরকারি দপ্তরে এই ফাইলের স্তূপ নিয়ে কত যে মস্করা হয়, কত যে গল্প লেখা হয়ে গেছে; বছরের পর বছর অফিসে পড়ে পড়ে এই ফাইলগুলো ধুলোয় ভরে যেত, ময়লা জমতো সেখানে। এমনই বহু দশক পুরোনো এবং বাতিল ফাইল সরানোর জন্যে এক বিশেষ স্বচ্ছতা অভিযান পালন করা হয়েছে। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, সরকারি দপ্তরে এই অভিযানের দরুণ ভারি অদ্ভুত কিছু পরিণাম সামনে এসেছে। সাফসুতরো করার জন্যে দপ্তরের বেশ অনেকটা জায়গা খালি হয়ে গিয়েছে। এর ফলে, অফিসের কর্মচারীদের মধ্যে বেশ একটা ওনারশিপ-এর ভাব এসেছে। নিজের কাজের জায়গা পরিষ্কার রাখার গুরুত্বও তাঁরা অনুভব করছেন।
বন্ধুরা, আপনারা নিশ্চয়ই গুরুজনেদের বলতে শুনেছেন, যে, যেখানে স্বচ্ছতা, সেখানেই মা লক্ষ্মীর বাস। আমাদের এখানে "পাঁক থেকেই পদ্মের জন্ম" তো বহু পুরোনো প্রচলিত কথা। দেশের বেশ কিছু জায়গায় তরুণ প্রজন্ম, অব্যবহার্য, বাতিল জিনিস দিয়েই "পাঁক থেকে পদ্ম" তৈরি করছেন। নানারকমের Innovation করছেন। এর দ্বারা তাঁরা আয় করছেন, আবার, রোজগারের দিকটিও বিকশিত হচ্ছে। এই নবীন প্রজন্ম নিজেদের চেষ্টায় সাসটেইনেবল লাইফস্টাইলকেও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। মুম্বাইয়ের দুই কন্যার এই প্রয়াস, সত্যিই উদ্বুদ্ধ করার মত। অক্ষারা এবং প্রকৃতি নামের এই দুই কন্যে, কাপড়ের ছোট ছোট টুকরো দিয়ে ফ্যাশনের অনেককিছু তৈরি করছেন। আপনারা তো জানেনই, কাপড় কেটে, সেলাই করার সময়ে কত ছোট ছোট টুকরো বাতিল ভেবে ফেলেই দেওয়া হয়। অক্ষরা আর প্রকৃতির টিম, ওই বাতিল কাপড়ের টুকরোগুলোকেই ফ্যাশন প্রোডাক্টে বদলে দেন। কাপড়ের টুকরো দিয়ে তৈরি টুপি, ব্যাগ, এসব হাতেহাতে বিক্রিও হয়ে যায়।
বন্ধুরা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে উত্তর প্রদেশের কানপুরেও খুব ভালো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ এখানে কিছু মানুষ রোজ সকালে morning walk-এ বেরোন ও গঙ্গার ঘাটে ছড়ানো Plastic ও অন্যান্য জঞ্জাল তুলে নেন ৷ এই দলকে ‘Kanpur Ploggers Group’ নাম দেওয়া হয়েছে| কিছু বন্ধু মিলে এই উদ্যোগ প্রথম শুরু করেন৷ জনগণের অংশগ্রহণের ফলে ক্রমে-ক্রমে তা এক বড় অভিযানের রূপ নেয়৷ শহরের প্রচুর মানুষ এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত৷ এখন এদের সদস্যরা দোকান ও বাড়ির জঞ্জালও তোলা শুরু করেছেন৷ এই জঞ্জাল দিয়ে Recycle Plant-এর tree guard তৈরি করা হয়, অর্থাৎ, এই Group-এর লোকজন জঞ্জাল দিয়ে তৈরি tree guard দিয়ে গাছের সুরক্ষার ব্যবস্থাও করেন৷
বন্ধুরা, ছোট ছোট প্রচেষ্টার মাধ্যমে কি করে বড় সাফল্য পাওয়া যায়, তার এক উদাহরণ অসমের ইতিশা৷ ইতিশার পড়াশোনা দিল্লী ও পুণেতে হয়েছে৷ ইতিশা Corporate জগতের চাকচিক্য ছেড়ে অরুণাচলের সাঙ্গতি উপত্যকাকে পরিষ্কার করার কাজে ব্যস্ত৷ ওখানে পর্যটকদের জন্য অনেক Plastic waste জমা হয়েছিল৷ ওখানকার নদী যা একসময় পরিষ্কার ছিল তা Plastic waste-এর জন্য দূষিত হয়ে গিয়েছিল৷ তাকে পরিষ্কার করতে ইতিশা স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কাজ করছেন৷ তাঁর Group-এর সদস্যরা ওখানে ঘুরতে আসা Tourist-দের সচেতন করছেন এবং পুরো উপত্যকায় Plastic waste collect করতে বাঁশের তৈরি ডাস্টবিন লাগানোর ব্যবস্থা করেছেন৷
বন্ধুরা, এইসব প্রচেষ্টা ভারতের স্বচ্ছতা অভিযানকে গতিশীল করে৷ এই প্রচেষ্টা নিরন্তর চলমান৷ আপনার আশেপাশেও নিশ্চয়ই এরকমই হয়ে থাকে৷ আপনি আমাকে এইসব প্রচেষ্টা সম্পর্কে অবশ্যই লিখে পাঠান৷
বন্ধুরা, ‘মন কি বাত’-এর এই Episode এ পর্যন্তই। পুরো মাস আমি অধীর আগ্রহে আপনাদের প্রতিক্রিয়া, চিঠি ও মতামতের অপেক্ষায় থাকি৷ প্রতি মাসে আপনাদের কাছ থেকে আসা বার্তা আমায় আরো ভালো করার প্রেরণা যোগায়৷ পরের মাসে আমাদের আবার দেখা হবে, ‘মন কি বাত’-এর আরো এক পর্বে- দেশ ও দেশবাসীর নতুন উপলব্ধির সঙ্গে, ততক্ষণ পর্যন্ত, সমস্ত দেশবাসীকে আমার অনেক শুভকামনা৷
অনেক অনেক ধন্যবাদ৷
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। মন কি বাতে আপনাদের সকলকে স্বাগত। আমাকে যদি আপনারা জিজ্ঞাসা করেন যে আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত কোনটি তাহলে তো অনেক ঘটনাই মনে পড়ে, কিন্তু তার মধ্যেও একটা মুহূর্ত বিশেষ ভাবে স্মরণীয়। সেই মুহূর্তটি হলো যখন গতবছর ১৫ ই নভেম্বর আমি ভগবান বিরসা মুন্ডার জন্মজয়ন্তীতে ওঁর জন্মস্থান ঝাড়খণ্ডের উলিহাতু গ্রামে গিয়েছিলাম। আমার উপর এই যাত্রার অত্যন্ত গভীর প্রভাব পড়েছিল। আমি দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী যার এই পবিত্র ভূমির মাটি নিজের মাথায় ছোঁয়ানোর সৌভাগ্য হয়েছে। সেই মুহূর্তে আমি কেবল স্বাধীনতার সংগ্রামের শক্তিকে অনুভব করেছিলাম তাই নয়, এই ধরিত্রীর শক্তির সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ারও সুযোগ পেয়েছিলাম। আমি উপলব্ধি করেছিলাম কীভাবে একটি সংকল্প পূরণ করার সাহস দেশের কোটি কোটি মানুষের ভাগ্য বদল করতে পারে।
বন্ধুরা, ভারতে প্রত্যেক যুগে কিছু বাধা বা চ্যালেঞ্জ এসেছে এবং প্রতি যুগেই এমন অসাধারণ ভারতবাসীরা জন্ম নিয়েছেন যারা এই চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করেছেন। আজ মন কি বাতে আমি সাহস এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এমন দুজন মহানায়কের বিষয়ে আলোচনা করব। দেশ তাদের সার্ধশতবর্ষ উদযাপনের সংকল্প করেছে। ৩১ শে অক্টোবর থেকে সর্দার প্যাটেলের সার্ধশতবর্ষ শুরু হচ্ছে। এরপর ১৫ই নভেম্বর থেকে ভগবান বিরসা মুন্ডার সার্ধশতবর্ষ শুরু হবে। এই দুই মহাপুরুষ পৃথক পৃথক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিলেন, কিন্তু দুজনের ভিশন (vision) এক ছিল – "দেশের একতা"।
বন্ধুরা, গতবছর দেশ এমন মহান দেশনায়ক–নায়িকাদের জন্মজয়ন্তী নব উদ্যমে উদযাপন করে নবীন প্রজন্মকে নতুন প্রেরণা দিয়েছে। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে থাকবে যখন আমরা মহাত্মা গান্ধীজীর সার্ধশতবর্ষ উদযাপন করেছিলাম তখন অসাধারণ কত কিছু হয়েছিল। নিউইয়র্কের টাইমস স্কোয়ার থেকে আফ্রিকার ছোট্ট গ্রাম পর্যন্ত বিশ্বের মানুষ ভারতের সত্য ও অহিংসার বার্তাকে বুঝেছিল, তাকে পুনরায় জেনেছিল, তাকে যাপন করেছিল। নবীন থেকে প্রবীণরা , ভারতীয় থেকে বিদেশীরা প্রত্যেকে গান্ধীজীর উপদেশগুলি নতুন তথ্যের আলোয় বুঝেছেন, নতুন বৈশ্বিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে তাকে জেনেছেন। যখন আমরা স্বামী বিবেকানন্দজীর সার্ধশতবর্ষ উদযাপন করি তখন দেশের নব্যযুবারা ভারতের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক শক্তিকে নতুন পরিভাষার মাধ্যমে বুঝেছেন। এই কর্মসূচিগুলি আমাদের এই উপলব্ধি দিয়েছে যে আমাদের মহাপুরুষরা অতীতে হারিয়ে যান না, বরং তাঁদের জীবন আমাদের বর্তমানকে ভবিষ্যতের পথ দেখায়।
বন্ধুরা, সরকার রাষ্ট্রীয় স্তরে এই মহান ব্যক্তিদের সার্ধশতবর্ষ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু আপনাদের সহযোগিতাই প্রাণসঞ্চার করবে এই উদ্যোগে, সজীব বানাবে একে। আমি আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করব এই উদ্যোগের অংশীদার হতে। লৌহপুরুষ সর্দার প্যাটেল সম্পর্কে আপনার ভাবনা এবং কাজ জানান হ্যাশট্যাগ-সর্দার-ওয়ানফিফটি-তে এবং ধরতীআবা বীরসা মুণ্ডার প্রেরণা হ্যাশট্যাগ-বীরসামুণ্ডা-ওয়ানফিফটি-র মাধ্যমে আনুন পৃথিবীর সামনে। আসুন, একসঙ্গে মিলে এই উৎসবকে ভারতের বিবিধতার মধ্যে ঐক্যের উৎসব বানাই, একে ঐতিহ্য থেকে বিকাশের উৎসব বানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, সেই দিনটা নিশ্চয়ই মনে আছে আপনাদের যেদিন থেকে টিভিতে ছোটা ভীমকে দেখা যেতে লাগল। শিশুরা তো কখনই ভুলতে পারবে না সেটা, কত উত্তেজনা ছিল ছোটা ভীমকে ঘিরে। আপনারা জেনে বিস্মিত হবেন যে আজ ‘ঢোলকপুরের ঢোল’ কেবল ভারতেরই নয় বরং অন্যান্য দেশের বাচ্চাদেরও খুব আকৃষ্ট করে। এইভাবেই আমাদের অন্যান্য অ্যানিমেটেড সিরিয়াল, কৃষ্ণা, হনুমান, মোটু-পতলুর অনুরাগী ছড়িয়ে আছে দুনিয়াজুড়ে। ভারতের তৈরি অ্যানিমেশন চরিত্র, এখানকার অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র, নিজেদের বিষয়বস্তু আর সৃষ্টিশীলতার কারণে গোটা পৃথিবীতে সমাদৃত হচ্ছে। আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন যে স্মার্টফোন থেকে সিনেমার পর্দা অবধি, গেমিং কনসোল থেকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অবধি, সর্বত্র রয়েছে অ্যানিমেশন। অ্যানিমেশনের জগতে নতুন বিপ্লব আনার পথে চলেছে ভারত। ভারতের গেমিং স্পেসেরও বিস্তার হচ্ছে দ্রুতগতিতে। ইন্ডিয়ান গেম্স্ও সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হচ্ছে। কয়েক মাস আগে ভারতের অগ্রণী গেমিং বিশারদদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল, তখন ইন্ডিয়ান গেমসের বিস্ময়কর সৃষ্টিশীলতা আর গুণমান জানার ও বোঝার সুযোগ হয়েছিল আমার। সত্যি, সৃষ্টিশীল উদ্যমের এক ঢেউ বইছে দেশজুড়ে। অ্যানিমেশনের জগতে ‘মেড ইন ইণ্ডিয়া’ আর ‘মেড বাই ইণ্ডিয়ানস’ ব্যাপ্ত হয়ে আছে। আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন যে আজ ভারতের মেধা বিদেশী প্রোডাকশনেরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠছে। এখনকার স্পাইডারম্যান হোক বা ট্র্যান্সফর্মারস, এই দুটো ছবিতে হরিনারায়ণ রাজীবের অবদানের খুব প্রশংসা করেছে লোকজন। ভারতের অ্যানিমেশন স্টুডিওগুলো ডিজনি এবং ওয়ার্নার ব্রাদার্সের মত বিশ্বের নামীদামী প্রোডাকশন কোম্পানির সঙ্গে কাজ করছে।
বন্ধুরা, এখন আমাদের যুবরা Original Indian Content তৈরি করছে, যেগুলোতে আমাদের সংস্কৃতির একটা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেগুলো সারা বিশ্বে দেখা হচ্ছে। এখন, Animation Sector এমন একটা industry-র রূপ নিয়েছে যা অন্যান্য Industries-কেও শক্তি যোগাচ্ছে, যেমন ইদানিং VR Tourism খুব famous হয়ে উঠছে। আপনি virtual tour এর মাধ্যমে অজন্তার গুহা গুলোকে দেখতে পারেন, কোনারক মন্দিরের corridor-এ ঘুরে আসতে পারেন, কিংবা বারাণসীর ঘাটে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। এইসব VR animation ভারতের creator-রা তৈরি করেছেন। VR এর মাধ্যমে এইসব জায়গাগুলোকে দেখার পর বহু মানুষই বাস্তবে এই সমস্ত পর্যটন স্থলে ঘুরতে যেতে চাইছেন, অর্থাৎ tourist destination-এর virtual tour, লোকজনের মনে কৌতুহল তৈরি করার একটা মাধ্যম হয়ে উঠেছে। আজ এই সেক্টরে animator-দের সঙ্গে সঙ্গে story tellers, writers, voice over experts, musicians, game developers, VR এবং AR expert-দের'ও চাহিদা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এইজন্য আমি ভারতের যুবদের বলব নিজেদের creativity কে বিস্তৃত করুন। কে জানে, হয়তো বিশ্বের পরবর্তী super hit animation-টা আপনার computer থেকে বেরোতে পারে! ঠিক পরের viral game-টা আপনার creation হতে পারে! কিংবা educational animations এ আপনার innovation-টা হয়তো বড় সাফল্য অর্জন করতে পারে। এই ২৮শে অক্টোবর অর্থাৎ আগামীকাল World Animation Day'ও পালন করা হবে। আসুন আমরা ভারতকে Global animation power house বানানোর অঙ্গীকার করি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, স্বামী বিবেকানন্দ একবার সাফল্যর মন্ত্র দিয়েছেন, তাঁর সেই মন্ত্র হলো- "কোনও একটা idea র কথা ভাবো এবং সেই idea-টিকেই তোমার জীবন করে তোলো - সেটা নিয়েই ভাবনা চিন্তা করো, সেটা নিয়েই স্বপ্ন দেখো, সেটা নিয়েই বাঁচো"। আজ 'আত্মনির্ভর ভারত অভিযান'ও সাফল্যের এই মন্ত্র নিয়েই এগিয়ে চলছে। এই প্রচারাভিযান আমাদের সমষ্টিগত চেতনার অংশ হয়ে উঠেছে। ক্রমাগত, পদে-পদে আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। আত্মনির্ভরতা আমাদের policy-ই নয় আমাদের passion হয়ে গেছে। অনেক বছর নয়, মাত্র ১০ বছর আগের কথা, তখন কোন complex technology-কে ভারতে বিকশিত করার কথা যখন কেউ বলতো, বহু লোকের সেটা বিশ্বাস হতো না, অনেকেই উপহাস করতো, কিন্তু এখন সেই লোকেরাই দেশের সাফল্য দেখে বিস্মিত হন। ভারত আত্মনির্ভর হচ্ছে, প্রত্যেকটা sector-এ অদ্ভুত ভালো কাজ করছে। আপনি ভাবুন, এক যুগে mobile phone import করা ভারত আজ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম manufacturer হয়ে উঠেছে। ভারত, যে একসময় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনেছিল, সে এখন ৮৫টি দেশে রপ্তানি করছে। স্পেস টেকনোলজি তে ভারত আজ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছানো প্রথম দেশ হয়ে উঠেছে এবং একটি বিষয় যা আমার সবচেয়ে ভালো লাগে তা হলো - আত্মনির্ভরতা-- এই প্রচারাভিযানটি আর শুধু সরকারি অভিযান হিসেবে সীমাবদ্ধ নেই, এখন আত্মনির্ভর ভারত অভিযান একটি গণ অভিযানে পরিণত হচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সাফল্য অর্জন করা যাচ্ছে। যেমন এই মাসে আমরা লাদাখের হানলেতে এশিয়ার বৃহত্তম ইমেজিং টেলিস্কোপ "মেস"-এর উদ্বোধন করেছি। এটি ৪৩০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। জানেন এর বিশেষত্ব কি? এটি মেড ইন ইন্ডিয়া। ভাবুন, এমন একটি জায়গায় যেখানে -৩০ ডিগ্রির মতো ঠান্ডা পড়ে, যেখানে অক্সিজেনের অভাবও রয়েছে, আমাদের বিজ্ঞানীরা এবং local industry তাই করে দেখিয়েছেন যা এশিয়ার অন্য কোনও দেশ করতে পারেনি। হানলের টেলিস্কোপ হয়তো দূরের বিশ্বকে দেখছে, কিন্তু এটা আমাদের আরও একটা জিনিস দেখাচ্ছে, যা হল --- আত্মনির্ভর ভারতের শক্তি।
বন্ধুরা, আমি চাই আপনারাও একটা কাজ অবশ্যই করুন, আত্মনির্ভর ভারতের বেশি বেশি উদাহরণ, এবং এই ধরণের প্রচেষ্টাকে শেয়ার করুন। আপনি আপনার আশেপাশে কোন নতুন innovation দেখেছেন, কোন লোকাল স্টার্টআপ আপনাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে, #atmanirbharinnovation -এর সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়াতে এই সব বিবরণ লিখুন আর আত্মনির্ভর ভারতের উৎসব পালন করুন। এই উৎসবের মরশুমে, আমরা সকলেই এই আত্মনির্ভর ভারতের অভিযানকে আরো বেশি শক্তিশালী করি। আমরা ভোকাল ফর লোকালের মন্ত্র নিয়ে কেনাকাটা করি। এটা নতুন ভারত, যেখানে impossible শব্দটি একটি চ্যালেঞ্জ মাত্র, যেখানে মেক ইন ইন্ডিয়া এখন মেক ফর দ্য ওয়ার্ল্ড হয়ে গেছে, যেখানে প্রতিটি নাগরিক innovator। যেখানে প্রতিটি চ্যালেঞ্জই একটি সুযোগ। আমাদের কেবল ভারতকেই আত্মনির্ভর করলে চলবে না, বরং আমাদের দেশকে innovation-এর গ্লোবাল পাওয়ারহাউস হিসেবে শক্তিশালী করে তুলতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি আপনাদের একটি অডিও শোনাচ্ছি।
ফ্রড কলার ১: হ্যালো
ভিকটিম: স্যার, নমস্কার স্যার
ফ্রড কলার ১: নমস্কার
ভিকটিম: স্যার, বলুন স্যার
ফ্রড কলার ১: দেখুন এই যে আপনি এফ আই আর নম্বরটি আমায় পাঠিয়েছেন এই নম্বরের বিরুদ্ধে ১৭টি কমপ্লেন রয়েছে আমাদের কাছে, আপনি এই নম্বরটি ইউজ করছেন?
ভিকটিম: না, আমি এই নম্বরটি ব্যবহার করি না
ফ্রড কলার ১: এখন আপনি কোথা থেকে কথা বলছেন?
ভিকটিম: স্যার আমি কর্ণাটক থেকে কথা বলছি, এখন বাড়িতেই রয়েছি
ফ্রড কলার ১: ওকে, চলুন আপনি আপনার স্টেটমেন্ট রেকর্ড করুন যাতে এই নম্বরটি ব্লক করা যায়। ভবিষ্যতে যাতে আপনার কোন প্রবলেম না হয়, ওকে?
ভিকটিম: হ্যাঁ স্যার
ফ্রড কলার ১: এখন আমি আপনাকে যার সঙ্গে কানেক্ট করছি, তিনি আপনার ইনভেস্টিগেশন অফিসার। আপনি আপনার স্টেটমেন্ট রেকর্ড করুন যাতে এই নম্বরটা ব্লক করা যায়। ওকে?
ভিকটিম: হ্যাঁ স্যার
ফ্রড কলার ১: হ্যাঁ স্যার বলুন আমি কার সঙ্গে কথা বলছি এখন? আপনার আধার কার্ড আমায় শো করুন, ভেরিফাই করার জন্য নম্বরটি বলুন।
ভিকটিম: স্যার আমার কাছে এখন আধার কার্ড নেই স্যার। প্লিজ স্যার ।
ফ্রড কলার ১: ফোন ? আপনার ফোনে আছে?
ভিকটিম: না স্যার
ফ্রড কলার ১: ফোনে আপনার আধার কার্ডের কোন ছবি নেই?
ভিকটিম: না স্যার
ফ্রড কলার ১: নম্বর মনে আছে আপনার?
ভিকটিম: না স্যার মনে নেই, নম্বরটা আমার মনে নেই।
ফ্রড কলার ১: আমাদের শুধু ভেরিফাই করতে হব। ওকে? ভেরিফাই করার জন্য।
ভিকটিম: না স্যার
ফ্রড কলার ১: আপনি ভয় পাবেন না, ভয় পাবেন ন। যদি আপনি কিছুই না করে থাকেন তাহলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই
ভিকটিম: হ্যাঁ স্যার, অবশ্যই।
ফ্রড কলার ১: আপনার কাছে আধার কার্ড থাকলে আমায় দেখিয়ে দিন ভেরিফাই করার জন্য।
ভিকটিম: না স্যার, না স্যার, আমি আসলে গ্রামে এসেছি, কার্ড আমার বাড়িতে রয়েছে।
ফ্রড কলার১: ওকে
দ্বিতীয় কন্ঠ: মে আই কাম ইন স্যার?
ফ্রড কলার ১: কাম ইন
ফ্রড কলার ২: জয় হিন্দ
ফ্রড কলার ১: জয় হিন্দ
ফ্রড কলার ১: এই ব্যক্তির ওয়ান সাইডেড ভিডিও কল রেকর্ড করো এজ পার দা প্রটোকল ওকে?
এই অডিওটির লক্ষ্য কেবল তথ্য তুলে ধরা নয়, এটি মনোরঞ্জনের জন্যও নয়, এই অডিওটি আমাদের সামনে এসেছে একটি গভীর চিন্তা নিয়ে । আপনারা এইমাত্র যে কথোপকথনটি শুনলেন তার বিষয়বস্তু ছিল digital arrest-এর প্রতারণা। এই কথোপকথনটি একজন প্রতারিত ব্যক্তি, ও fraud যারা করছিল তাদের মধ্যে হয়েছিল। Digital arrest-এর fraud-এ phone যাঁরা করেন তাঁরা কখনো পুলিশ, কখনো C.B.I, কখনো narcotics বা কখনো R.B.I, এরকম বিভিন্ন label লাগিয়ে নকল আধিকারিক সেজে কথা বলেন এবং ভীষণ confidence-এর সঙ্গে বলেন। আমাকে ‘মন কী বাতের’ বহু শ্রোতা বলেছেন যে এই বিষয়ে এই অনুষ্ঠানে অবশ্যই আলোচনা করা উচিৎ।
আসুন, আমি আপনাদের বলি এই fraud-করা গ্যাংগুলি কী ভাবে কাজ করে এবং এই বিপজ্জনক গেমটি কী? আপনারও যেমন এই বিষয়টি বোঝা জরুরি, তেমনই অন্যদেরও এর ব্যপারে জানাটা ততটাই আবশ্যক। প্রথম চাল, এরা আপনার সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য জোগাড় করে রাখেন- “আপনি আগের মাসে গোয়া গেছিলেন না? আপনার মেয়ে দিল্লিতে পড়াশোনা করে না? এরা আপনার এত ব্যক্তিগত তথ্য জোগাড় করে রাখেন যে তার পরিমাণ জানলে আপনি থ হয়ে যাবেন।
দ্বিতীয় চাল- ভয়ের বাতাবরণ সৃষ্টি করো, উর্দি, সরকারি দপ্তরের set-up, আইনের নানা ধারা, এঁরা phone-এ বার্তালাপের মাধ্যমে আপনাকে এতটাই ভয় পাইয়ে দেবেন যে আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। এবং এরপর এঁদের তৃতীয় চাল শুরু হয়। তৃতীয় চাল- সময়ের চাপ। “এখনি আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে নইলে আপনাকে গ্রেফতার হতে হবে,“- এঁরা প্রতারিত ব্যক্তিদের উপর এতটাই মনস্তাত্বিক চাপ সৃষ্টি করেন যে তাঁরা ভীষণ রুপে ভীত হয়ে যান।
Digital arrest-এর শিকার যাঁরা হয়েছেন তাঁদের মধ্যে সমাজের প্রতিটি শ্রেণির, প্রতি বয়েসের মানুষ রয়েছেন। মানুষ কেবল ভীতির কারণে নিজেদের পরিশ্রমে রোজগার করা লক্ষ-লক্ষ টাকা খুইয়ে ফেলেছেন। কোন সময়ে আপনার কাছে এরকম call এলে আপনার ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আপনার জেনে রাখা জরুরি যে কখনোই কোন তদন্তকারী agency, phone call বা video call-এর মাধ্যমে এই ধরণের জেরা কখনই করে না। আমি আপনাদের digital সুরক্ষার তিনটি স্তর কী কী জানাব এখন। এই তিনটি স্তর হল- “থামো, ভাবো, action নাও”। Call এলে, থামো, ঘাবড়াবেন না, শান্ত থাকুন, তাড়াহুড়োয় কোন পদক্ষেপ নেবেন না, কাউকে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য দেবেন না, সম্ভব হলে screenshot নেবেন ও recording অবশ্যই করবেন। এরপর আসে দ্বিতীয় স্তর। প্রথম স্তর ছিল, থামো, দ্বিতীয় স্তর, ভাবো। কোন সরকারি agency phone-এ এরকম ধমক দেয় না, না তারা video call-এর মাধ্যমে জেরা করে, না তারা এরকম ভাবে টাকা চায়, যদি ভয় দেখায়, মনে করবেন কোন গোলমাল আছে। এই গেল প্রথম স্তর, দ্বিতীয় স্তর, এবার আপনাদের আমি তৃতীয় স্তর কী সেটা বলব।
প্রথম স্তরে আমি বললাম ‘থামো’, দ্বিতীয় স্তরে আমি বললাম ‘ভাবো’, তৃতীয় স্তরে বলছি ‘action নাও’।
রাষ্ট্রীয় সাইবার হেল্পলাইন ১৯৩০ ডায়াল করুন, cybercrime.gov.in-এ রিপোর্ট করুন, পরিবার ও পুলিশকে সবটা জানান, তথ্য প্রমাণ নিজের কাছে সুরক্ষিত রাখুন। ‘থামো’, এরপর ‘ভাবো’ এবং শেষে ‘action নাও’, এই তিনটি স্তর আপনার digital সুরক্ষার রক্ষক হিসেবে কাজ করবে।
বন্ধুরা, আমি আবার বলবো যে digital arrest বলে কোনো ব্যবস্থাই আমাদের আইনে নেই। এটা কেবল মাত্র একটা fraud, একটা জোচ্চুরি, একটা মিথ্যে, শয়তানদের দুর্নীতি আর যে সব মানুষ এই ধরণের কাজ করে, তারা সমাজের শত্রু। Digital arrest এর নামে যে সব জালিয়াতি চলছে তার মোকাবেলা করার জন্য বিভিন্ন তদন্তকারী agency রাজ্য সরকার এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছে। এই agency-গুলির মধ্যে সমন্বয় বজায় রাখতে National Cyber Coordination Centre নামে একটি সংস্থার গঠন করা হয়েছে। Agency র দ্বারা এই ধরণের ছল চাতুরী করা হাজার হাজার video calling ID গুলি কে ব্লক করা হয়েছে। লক্ষ্য লক্ষ্য sim card, mobile phone আর bank account ও block করা হয়েছে। Agency নিজেদের কাজ ঠিকই করছে কিন্তু digital arrest এর নামে যে scam টা চলছে তার থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়ে হলো - প্রত্যেকটি ব্যক্তির সচেতনতা, প্রত্যেক নাগরিকের সচেতনতা। যারা এই ধরণের cyber fraud এর শিকার হয়েছেন তারা আশে পাশের মানুষ কে সাবধান করুন। আপনারা সচেতনতার বৃদ্ধির জন্য #safedigitalindia র প্রয়োগ করতে পারেন। আমি দেশের school আর কলেজগুলিকেও অনুরোধ করবো যাতে তারা cyber scam এর বিরুদ্ধে প্রত্যেকটি উদ্যোগে, ছাত্রদের ও শামিল করেন। সমাজের প্রত্যেকের সহযোগিতা থাকলেই আমরা এই সংকটজনক পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারবো।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের বহু স্কুল পড়ুয়ারা calligraphy বা সুলিখন-এ বিশেষ আগ্রহী। এর মাধ্যমে আমাদের লেখনী স্বচ্ছ, সুন্দর ও আঁকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। আজ জম্মু-কাশ্মীর এ স্থানীয় সংস্কৃতিকে জনপ্রিয় করার জন্য এটির প্রয়োগ করা হচ্ছে। এখানে অনন্তনাগের বাসিন্দা ফিরদৌসা বসির জি calligraphy-তে দক্ষ। তিনি এর মাধ্যমে স্থানীয় সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। ফিরদৌসা জির calligraphy, স্থানীয় বাসিন্দা, বিশেষ করে, যুবাদের আকৃষ্ট করেছে। এরকমই একটি প্রচেষ্টা উধমপুরের গোরীনাথজিও করছেন। এক শতকেরও বেশি পুরোনো সারেঙ্গীর মাধ্যমে উনি ডোগরা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বিভিন্ন রূপ সংরক্ষণ করতে বদ্ধপরিকর। সারেঙ্গীর সুরের সাহায্যে তিনি নিজের সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন প্রাচীন কাহিনী ও ঐতিহাসিক ঘটনাকে আকর্ষণীয় ভাবে বর্ণনা করেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আপনারা এমন অনেক অসাধারণ মানুষ পাবেন যারা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করার জন্য এগিয়ে এসেছেন। ডি. ব্যয়কুন্ঠাম বিগত প্রায় ৫০ বছর ধরে চেরিয়াল ফোক আর্ট কে জনপ্রিয় বানানোর কাজে যুক্ত। তেলেঙ্গানার সঙ্গে জড়িত এই কলা কে আগে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য ওনার প্রচেষ্টা বড়ই অদ্ভুত। চেরিয়াল পেইন্টিং তৈরি করার প্রক্রিয়া সত্যিই অনন্য। এটি একটি স্ক্রল এর মাধ্যমে গল্পকে উপস্থাপন করে। এতে আমাদের ইতিহাস আর মাইথলজির সম্পূর্ণ প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়। ছত্তিশগড়ের নারায়ণপুরের বুটলুরাম মাথরাজি অবুঝমারিয়া জনজাতির লোকশিল্প কে সংরক্ষণ করার জন্য কাজ করছেন। বিগত চার দশকে উনি নিজের এই মিশনের কাজে লেগে আছেন। ওনার এই শিল্প বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও এবং স্বচ্ছ ভারত এর মত অভিযানের সঙ্গে মানুষকে যুক্ত করার জন্য অনেক কার্যকরী ছিল।
বন্ধুরা এখন আমরা কথা বলছি কিভাবে কাশ্মীরের উপত্যকা থেকে ছত্তিশগড়ের জঙ্গল পর্যন্ত আমাদের কলা এবং সংস্কৃতি নতুন নতুন রং বিকিরণ করছে, কিন্তু এই কথাটা এখানেই শেষ হয় না। আমাদের এই শিল্প-সংস্কৃতির সুগন্ধ দূর দূরান্ত পর্যন্ত পৌঁছচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ভারতীয় কলা এবং সংস্কৃতি দেখে মন্ত্রমুগ্ধ হচ্ছেন। যখন আমি আপনাদের উধমপুরের সারেঙ্গীর সুরের মূর্ছনার কথা বলছিলাম, তখন আমার মনে পড়ল যে কিভাবে হাজার মাইল দূরে রাশিয়ার শহর যাকুটস্ক-এ ভারতীয় কলার সুমধুর সুর প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। ভেবে দেখুন, শীতকালের এক–আধ দিন, মাইনাস ৬৫ ডিগ্রী তাপমাত্রা, চারদিকে সাদা বরফের চাদর আর তারই মধ্যে সেখানে একটা theatre এ দর্শকরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে কালিদাসের অভিজ্ঞান শকুন্তলম দেখছে। আপনি কি চিন্তা করতে পারছেন বিশ্বের সবচেয়ে শীতলতম শহর ইয়াকুটস্কে, ভারতীয় সাহিত্যের উষ্ণতা! এটা কোন কল্পনা নয়, সত্যি- আমাদের সবাইকে গর্বে এবং আনন্দে পরিপূর্ণ করে তোলার মত সত্যি।
বন্ধুরা, কয়েক সপ্তাহ আগে, আমি Laos এ গিয়েছিলাম। এটি ছিল নবরাত্রির সময় এবং সেখানে আমি আশ্চর্যজনক কিছু দেখলাম। স্থানীয় শিল্পী “ফলক ফলম” পরিবেশন করছিলেন – ‘Laos-এর রামায়ণ’। ওঁনার চোখে দেখলাম সেই একই ভক্তি, ওঁনার কণ্ঠে সেই একই সমর্পণ, যা রামায়ণের প্রতি আমাদের মনে আছে । একইভাবে, কুয়েতে শ্রী আবদুল্লা অল-বরুন রামায়ণ ও মহাভারতকে আরবি ভাষায় অনুবাদ করেছেন। এই কাজ শুধুমাত্র একটি অনুবাদ নয়, বরং দুটি মহান সংস্কৃতির মধ্যে একটি সেতুবন্ধনের মত। ওঁনার এই প্রচেষ্টা আরব জগতে ভারতীয় সাহিত্যের একটি নতুন ধারণা বিকশিত করছে। পেরু থেকে আরেকটি অনুপ্রেরণামূলক উদাহরণ হল এরলিন্ডা গার্সিয়া (Erlinda Garcia) সেখানকার যুবাদের ভরতনাট্যম শেখাচ্ছেন এবং মারিয়া ভালদেজ (Maria Valdez) ওড়িশি নৃত্যের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এই নৃত্যশৈলীগুলির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ‘ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্য’ দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
বন্ধুরা, বিদেশের মাটিতে ভারতের এই উদাহরণগুলি দেখায় যে ভারতীয় সংস্কৃতির শক্তি ঠিক কতটা বিস্ময়কর, যা ক্রমাগত বিশ্বকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করে রেখেছে।
“যেখানে যেখানে শিল্প, সেখানে সেখানে ভারত”
“যেখানে যেখানে সংস্কৃতি,, সেখানে সেখানে ভারত”
আজ বিশ্বের মানুষ ভারতকে জানতে চায়, ভারতের মানুষকে জানতে চায়। তাই আপনাদের সবাইকে অনুরোধ, আপনারা আশেপাশের এমন সাংস্কৃতিক উদ্যোগগুলিকে #CulturalBridges এর সাথে শেয়ার করুন। ‘মন কি বাত’-এ আমরা এমন উদাহরণ নিয়ে আগামী দিনেও আলোচনা করবো।
আমার প্রিয় দেশবাসী, দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে শীতের মরশুম শুরু হয়ে গিয়েছে, কিন্তু Fitness-এর passion, Fit India-র spirit- তাকে কোনো মরশুম প্রভাবিত করতে পারে না। যার Fit থাকার অভ্যেস, সে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা কিছুই দেখে না। আমি খুশী যে এখন সবাই Fitness নিয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়ে উঠেছেন। আপনিও দেখছেন, আপনার আশেপাশে পার্কে লোকজনের সংখ্যা বেড়েছে। পার্কে বয়স্কদের হাঁটতে দেখে, যুব ও যোগব্যায়ামরত পরিবারকে দেখতে আমার ভালো লাগে। মনে পড়ে, যখন আমি যোগ দিবসে শ্রীনগরে ছিলাম, বৃষ্টি হওয়া সত্বেও কত মানুষ ‘যোগ’ করার জন্য একত্রিত হয়েছিল। সম্প্রতি শ্রীনগরে marathon হয়েছিল, তাতেও আমি fit থাকার এই উদ্দীপনাকে দেখেছিলাম। Fit India-র এই ভাবনা, এখন এক mass movement-এর রূপ নিয়েছে।
বন্ধুরা, আমার এটা দেখেও বেশ ভালো লাগে যে আমাদের স্কুলগুলির, বাচ্চাদের fitness-এর ওপর এখন আরও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। Fit India School Hoursও এক অভিনব উদ্যোগ। স্কুলগুলি এখন first পিরিয়ড-কে ব্যবহার করছে বিভিন্ন fitness activities-এর জন্য। অনেক স্কুলে যোগ ব্যায়াম করানো হয়, কোনো কোনো দিন অ্যারোবিক্স করানো হয় তো কখনও sports skill এর ওপর নজর দেওয়া হয়। কখনো কখনো খো খো বা কাবাডির মত খেলায় মনোযোগ দেওয়া হয়। এর ফলাফল ও খুব ভাল হচ্ছে। বাচ্চাদের attendance বাড়ছে, তাদের concentration বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তাদের আনন্দও হচ্ছে।
বন্ধুরা, আমি wellness-এর এই প্রাণশক্তি সব জায়গায় দেখতে পাচ্ছি। মন কি বাতের অনেক শ্রোতাও আমাকে তাদের মতামত জানিয়েছেন। কিছু মানুষ তো খুবই চমৎকার প্রয়োগ করছেন। তেমনি একটি উদাহরণ হলো family fitness hour। অর্থাৎ একটি পরিবার সপ্তাহান্তে একদিন একটি ঘণ্টা নির্দিষ্ট করে রাখছে গোটা ফ্যামিলি ফিটনেস activity এর জন্য । আরো একটি উদাহরণ হচ্ছে indigenous games revival , এই উদ্যোগ। কিছু পরিবার তাদের বাচ্চাদের traditional games শেখাচ্ছে ও খেলানো হচ্ছে। আপনিও আপনার fitness routine ও তার অভিজ্ঞতা #fitindia নামের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে অবশ্যই শেয়ার করুন। আমি আমার দেশবাসীকে একটি গুরুত্বপূর্ন তথ্য দিতে চাই। এই বছর, ৩১শে অক্টোবর, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্ম জয়ন্তী দিনই দীপাবলীর শুভ দিন পড়েছে। আমরা প্রতি বছর ৩১শে অক্টোবর "রাষ্ট্রীয় একতা দিবস" উপলক্ষ্যে "Run for Unity"-র আয়োজন করে থাকি। এ বছর দীপাবলির কারণে ২৯শে অক্টোবর, মঙ্গলবার "Run for Unity"-র আয়োজন করা হবে। আমার ইচ্ছে যে, যত বেশি সংখ্যায় সম্ভব, মানুষ এই কর্মযজ্ঞে অংশগ্রহণ করুন। দেশের একতার মন্ত্রের সঙ্গেই fitness-এর মন্ত্রও চতুর্দিকে ছড়িয়ে দিন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কি বাত’ এবার এই পর্যন্তই। আপনারা আপনাদের ফিডব্যাক অতি অবশ্যই পাঠাতে থাকুন। এখন উৎসবের সময়। মন কি বাতের শ্রোতাদের ধনতেরাস, দীপাবলি, ছট পূজা, গুরু নানক জয়ন্তী সহ সকল পার্বণের অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। আপনারা সম্পূর্ণ আনন্দের সঙ্গে উৎসব পালন করুন। Vocal for Local এর মন্ত্রও মনে রাখুন। চেষ্টা করুন, যাতে, উৎসবের সময় স্থানীয় দোকানদারদের কাছ থেকে কেনা জিনিসই আপনার ঘরে আসে। আরো একবার আপনাদের সকলকে জানাই আসন্ন উৎসবের মরশুমের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। মন কি বাতে ফের একবার যুক্ত হওয়ার সুযোগ হল আমার। আজকের এই পর্ব আমাকে আবেগময় করে তুলেছে, অনেক পুরনো স্মৃতি জেগে উঠছে – কারণ এটাই, যে মন কি বাতের আমাদের এই পথচলার দশ বছর পূর্ণ হচ্ছে। দশ বছর আগে মন কি বাতের সূচনা তেসরা অক্টোবর বিজয়া দশমীর দিনে হয়েছিল, আর এ কত পবিত্র সংযোগ যে এই বছর তেসরা অক্টোবর যখন মন কি বাতের দশ বছর পূর্ণ হবে তখন নবরাত্রির প্রথম দিন হবে। মন কি বাতের এই দীর্ঘ যাত্রার এমন বেশ কিছু ধাপ রয়েছে যেগুলো কখনই ভুলতে পারব না আমি। মন কি বাতের কোটি-কোটি শ্রোতা আমাদের এই যাত্রার এমন সঙ্গী যাঁদের নিরন্তর সহযোগিতা পেয়ে চলেছি আমি। দেশের বিভিন্ন কোণ থেকে তথ্য পাঠিয়েছেন তাঁরা। মন কি বাতের শ্রোতারাই এই অনুষ্ঠানের প্রকৃত সূত্রধর। সাধারণভাবে এমন একটা ধারণা চালু যে যতক্ষণ মুখরোচক আলোচনা না হচ্ছে, নেতিবাচক কথা না হচ্ছে ততক্ষণ সেটা বেশি মনযোগ পায় না। কিন্তু মন কি বাত প্রমাণ করেছে যে দেশের মানুষ সদর্থক তথ্যের জন্য কতটা মুখিয়ে আছেন। সদর্থক আলোচনা, প্রেরণাদায়ী উদাহরণ, উৎসাহ বাড়ায় এমন কাহিনী, খুব পছন্দ করেন মানুষজন। যেমন একটা পাখি আছে, চাতক যার সম্বন্ধে বলা হয় যে সে শুধু বৃষ্টির জলই পান করে। মন কি বাতে আমরা দেখেছি যে মানুষজনও চাতক পাখির মত, দেশের অর্জিত সাফল্য, মানুষের গোষ্ঠীগত সাফল্যের কথা কত গর্বের সঙ্গে শোনেন।
মন কি বাতের ১০ বছরের যাত্রা এমন এক মালা প্রস্তুত করেছে যাতে প্রত্যেক পর্বে নতুন গাথা, নতুন নতুন কৃতিত্ব, নতুন ব্যক্তিত্বদের কথা যুক্ত হয়েছে। আমাদের সমাজে সমষ্টিগত ভাবনা থেকে যে যে কাজ হচ্ছে সেগুলি মন কি বাত এর মাধ্যমে সম্মানিত হয়। আমার মনও গর্বে ভরে ওঠে যখন আমি মন কি বাতের জন্য আসা চিঠিগুলো পড়ি। আমাদের দেশে কত কত প্রতিভাবান মানুষ আছেন! দেশ আর সমাজের সেবা করার জন্য কি আবেগ তাদের! নিঃস্বার্থভাবে সেবা করার জন্য তাঁরা তাদের সমগ্র জীবন সমর্পণ করেন। তাদের সম্বন্ধে জেনে আমি শক্তিতে, উদ্দীপনায় ভরপুর হয়ে উঠি। মন কি বাতের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি আমার কাছে মন্দিরে গিয়ে ঈশ্বর দর্শন করার মতোই। মন কি বাতের প্রতিটি কথা, প্রতিটি ঘটনা, প্রতিটি চিঠি যখন আমি স্মরণ করি, তখন আমার মনে হয় যে, জনতা জনার্দন - যারা আমার কাছে ঈশ্বরের রূপ, আমি যেন তাদের দর্শন করছি।
বন্ধুরা, আমি আজ দূরদর্শন, প্রসার ভারতী এবং অল ইন্ডিয়া রেডিওর সঙ্গে সংযুক্ত সকল মানুষকে আমার অভিনন্দন জানাই। তাদের অক্লান্ত প্রয়াসে মন কি বাত এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমি বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও রিজিওনাল টিভি চ্যানেলদের ধন্যবাদ জানাই যারা ক্রমাগত এই অনুষ্ঠান দেখিয়েছেন। মন কি বাত এর মাধ্যমে আমরা যে প্রসঙ্গগুলো উত্থাপন করেছি সেগুলো নিয়ে অনেক মিডিয়া হাউস প্রচার চালিয়েছেন। আমি প্রিন্ট মিডিয়াকে ধন্যবাদ জানাই কারণ তারা একে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন। আমি সেই ইউটিউবারদেরও ধন্যবাদ জানাই যারা মন কি বাতের উপর অনুষ্ঠান করেছেন। মান কি বাত অনুষ্ঠানটি দেশের ২২ টি ভাষার পাশাপাশি ১২ টি বিদেশী ভাষাতেও শোনা যায়। আমি আনন্দিত হই যখন মানুষ বলেন যে তারা মন কি বাত অনুষ্ঠান তাদের স্থানীয় ভাষায় শুনেছেন। আপনাদের মধ্যে অনেকেই নিশ্চয়ই এটা জানেন যে মন কি বাত অনুষ্ঠানের উপর ভিত্তি করে একটি কুইজ কম্পিটিশনও চলছে, যাতে যে কোন ব্যক্তি অংশগ্রহণ করতে পারেন। Mygov.in-এ গিয়ে আপনি এই কম্পিটিশনে অংশ নিতে পারেন এবং পুরস্কারও জিততে পারেন।
আজ, এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে আমি আপনাদের সকলের কাছে আশীর্বাদ কামনা করছি। শুদ্ধ-চিত্ত ও সম্পূর্ণ সমর্পনের সঙ্গে আমি যেন এভাবেই ভারতবাসীর গৌরবের গান গেয়ে যেতে পারি। দেশের সামগ্রিকতার যে শক্তি তাকে যেন এভাবেই আমরা সবাই celebrate করতে পারি- ঈশ্বরের কাছে এটাই আমার প্রার্থনা, জনতা-জনার্দনের কাছে এটাই আমার প্রার্থনা।
আমার প্রিয় দেশবাসী, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন অংশে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষার এই সময় আমাদের মনে করিয়ে দেয় জল সংরক্ষণ কতটা প্রয়োজন, জল সঞ্চিত করে রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ! বৃষ্টির সময়ে ধরে রাখা জল, জল-সংকটের মাসগুলোয় অনেক উপকারে লাগে, আর এই ভাবনা থেকেই 'catch the rain'-এর মতো প্রচারাভিযানের সূত্রপাত। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে বহু মানুষ জল সংরক্ষণ নিয়ে নতুন করে পথ দেখাচ্ছেন। এরকমই একটি প্রচেষ্টা উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসি'তে দেখা গেছে। আপনারা তো জানেনই যে ঝাঁসি বুন্দেলখন্ডে অবস্থিত, যেখানকার পরিচিতি জলসংকটের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সেখানে, ঝাঁসির কিছু মহিলাদের জন্য ঘুরারী নদী নবজীবন লাভ করেছে। সেই মহিলারা self help group-এর সঙ্গে যুক্ত এবং তাঁরা 'জল সহেলী' হয়ে এই অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেই মহিলারা যেভাবে মৃতপ্রায় ঘুরারী নদীকে বাঁচিয়েছেন, সেটা কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। সেই 'জল সহেলী'রা বস্তায় বালি ভরে চেকড্যাম তৈরি করেছেন, বৃষ্টির জলের অপচয় বন্ধ করেছেন, আর নদীকে জলে টইটম্বুর করে তুলেছেন। সেই মহিলারা প্রচুর জলাশয় নির্মাণে এবং সেগুলোকে বাঁচিয়ে তোলার ক্ষেত্রে উৎসাহের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন। এভাবে সে অঞ্চলের জলের সমস্যা তো দূর হয়েছেই তার সঙ্গে তাদের মুখে খুশীর হাসিও ফুটেছে।
বন্ধুরা, কখনো নারী শক্তি জলশক্তিকে সমৃদ্ধ করে, তো কোথাও জল শক্তি, নারী শক্তিকে সুদৃঢ় করে। আমি মধ্যপ্রদেশের দুটি বড় প্রেরণাদায়ক প্রচেষ্টা সম্বন্ধে জানতে পেরেছি। এখানে ডিন্দরীর রায়পুরা গ্রামে একটি বড় ঝিল নির্মাণের ফলে ভূ-জলস্তর অনেক বেড়ে গেছে। যার সুবিধা এখানকার গ্রামের মহিলারা পেয়েছেন। 'সারদা আজীবিকা স্বর্নিভর গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত মহিলারা মাছ চাষের মাধ্যমে এক নতুন ব্যবসার সুযোগও পেয়েছেন। এই মহিলারা ফিশ পার্লারও শুরু করেছেন, যেখানে মাছ বিক্রি করার ফলে তাদের আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। মধ্যপ্রদেশের ছাতারপুর এলাকার মহিলাদের প্রচেষ্টাও অনেক প্রশংসনীয়। এখানকার খোঁপ গ্রামের একটি বড় ঝিল যখন শুকিয়ে যেতে শুরু করে, তখন ওখানকার মহিলারা একে পুনর্জীবিত করার সংকল্প নেন। 'হরি বাগিয়াঁ স্বর্নিভর গোষ্ঠীর’ মহিলারা ঝিল থেকে বিশাল মাত্রায় আবর্জনা নিষ্কাশন করেন, আর সেই আবর্জনা অনুর্বর জমিতে ফ্রুট ফরেস্ট তৈরি করার কাজে লাগান। এই মহিলাদের পরিশ্রমের ফলে ঝিলে শুধুমাত্র জলস্তর বৃদ্ধি পায়নি, ফসলের ফলনও অনেক বেড়ে গেছে। দেশের প্রতিটি কোণে হওয়া জল সংরক্ষণের এইরকম প্রচেষ্টা জলের সংকট থেকে বাঁচার জন্য অনেক কার্যকারী হতে চলেছে। আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস যে আপনারা আপনাদের চারপাশে হওয়া এরকম প্রচেষ্টায় নিশ্চয়ই অংশগ্রহণ করবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী উত্তরাখণ্ডের উত্তর কাশিতে এক সীমান্তবর্তী গ্রাম হল ঝালা। এখানকার যুবকেরা নিজেদের গ্রামকে স্বচ্ছ রাখার জন্য একটি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে।
ওনারা নিজেদের গ্রামে ‘ধন্যবাদ প্রকৃতি’ বা বলতে পারেন ‘thank you nature’ অভিযান চালানো শুরু করেছে। এর অধীনে প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে গ্রাম পরিস্কার করার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। গ্রামের রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আবর্জনা সংগ্রহ করে, সেগুলো, গ্রামের বাইরে, নির্দিষ্ট স্থানে, ফেলে দেওয়া হয়। এরফলে ঝালা গ্রাম পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকছে এবং গ্রামের মানুষও সচেতন হচ্ছে। একটু ভেবে দেখুন, প্রতিটি গ্রাম, প্রতিটি গলি, প্রতিটি পাড়া যদি একইভাবে ‘thank you’ অভিযান শুরু করে দেয়, তাহলে কত বড়ো পরিবর্তন আসতে পারে।
বন্ধুরা, পুদুচেরী সমুদ্র সৈকতে পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে। এইখানে রম্যাজি নামে একজন মহিলা, ‘মাহে’ পৌরসভা এবং এর আশেপাশের এলাকার যুবাদের নিয়ে গঠিত একটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই দলের যুবারা তাদের প্রচেষ্টায় মাহে এলাকা এবং বিশেষ করে সেখানকার সমুদ্র উপকূল সম্পূর্ণ পরিষ্কার রাখছে।
বন্ধুরা, আমি এখানে মাত্র দুটি প্রচেষ্টার কথা আলোচনা করেছি, কিন্ত আমরা যদি চারপাশে তাকাই, তাহলে, দেখতে পাব যে, দেশের প্রতিটি প্রান্তে অবশ্যই ‘স্বচ্ছতা’ নিয়ে কোনো না কোনো অনন্য প্রচেষ্টা চলছে। আর কিছুদিনের মধ্যে, ২রা অক্টোবর, ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’ ১০ বছর পূর্ণ করবে। এই বিশেষ সময়টি সেই মানুষগুলিকে অভিনন্দন জানানোর সময়, যাঁরা এই অভিযানকে ভারতীয় ইতিহাসে এত বৃহৎ গণআন্দোলনে পরিণত করেছেন। এটি মহাত্মা গান্ধীজির প্রতিও সশ্রদ্ধ শ্রদ্ধাঞ্জলি, যিনি সারা জীবন এই উদ্দেশ্যে নিজেকে সমর্পিত করেছিলেন।
বন্ধুরা, আজ এটি ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’-এর সাফল্য যে ‘waste to wealth’ মন্ত্রটি মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। লোকেরা ‘Reduce, Reuse এবং Recycle’ সম্পর্কে কথা বলতে শুরু করেছেন, এই নিয়ে উদাহরণও দিচ্ছেন ।
এখন যেমন কেরলের কোঝিকোডে একটি অসাধারণ প্রচেষ্টার কথা আমি জানতে পারলাম। এখানে ৭৪ বছর বয়সী সুব্রহমনিয়ন বাবু ২৩ হাজারের বেশি চেয়ার সারাই করে আবার তাদের ব্যবহার-যোগ্য করে তুলেছেন। মানুষ তো তাঁকে reduce, reuse, recycle, অর্থাৎ RRR (triple R) Champion বলেও ডাকেন। ওঁর এই অনন্য প্রয়াসগুলি কোঝিকোডের সিভিল স্টেশন, PWD এবং LIC-র দপ্তরে দেখতে পাওয়া যেতে পারে।
বন্ধুরা, স্বচ্ছতা নিয়ে চলতে থাকা এই অভিযানের সঙ্গে অধিক থেকে অধিকতর মানুষকে জুড়তে হবে এবং এটি এমন একটি অভিযান যা কোন এক দিন বা এক বছরের নয়, এটি যুগ-যুগ ধরে নিরন্তর করে যাওয়ার মত একটি কাজ। যতদিন না ‘স্বচ্ছতা’ আমাদের অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে ততদিন কাজ করে যেতে হবে ।
আমার আপনাদের কাছে অনুরোধ আপনারা নিজেদের পরিবার, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশীদের বা সহকর্মীদের সঙ্গে মিলিত হয়ে স্বচ্ছতা অভিযানে অবশ্যই অংশগ্রহণ করুন। আমি আরেকবার আপনাদের সবাইকে স্বচ্ছ ভারত মিশনের সাফল্যের জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী আমারা সবাই নিজেদের ঐতিহ্য নিয়ে গর্ববোধ করি । এবং আমি তো সবসময়ই বলি, ''বিকাশ ভি, বিরাসত ভি'', অর্থাৎ “প্রগতি-ও, ঐতিহ্য-ও”।
এই কারণেই আমার সাম্প্রতিক আমেরিকা সফরের একটি বিশেষ দিক নিয়ে আমি বহু বার্তা পাচ্ছি। আরো একবার আমাদের প্রাচীন শিল্পকর্মের প্রত্যাবর্তন নিয়ে অনেক চর্চা হচ্ছে।
আমি এই ব্যাপারটি নিয়ে আপনাদের অনুভূতিগুলি বুঝতে পারছি এবং মন কি বাতের শ্রোতাদের এই বিষয়ে বলতেও চাই।
বন্ধুরা, আমার আমেরিকা সফরের সময় মার্কিন সরকার ভারতবর্ষকে প্রায় ৩০০টি প্রাচীন শিল্পকর্ম ফিরিয়ে দিয়েছে। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি বাইডেন আন্তরিকতার সঙ্গে ডেলাওয়ারে নিজের বাসভবনে এর মধ্যে থেকে কিছু শিল্পকর্ম আমায় দেখান।
ফিরিয়ে দেওয়া শিল্পকর্ম, টেরাকোটা, পাথর, হাতির দাঁত, কাঠ, তামা এবং কাঁসার মতো জিনিস দিয়ে তৈরি। এর মধ্যে কয়েকটির বয়স ৪০০০ বছর পুরোনো। ৪০০০ বছরের প্রাচীন শিল্পকর্ম থেকে ১৯ শতকের শিল্পকর্ম আমেরিকা ফিরিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফুলদানি, দেবী-দেবতাদের টেরাকোটার ফলক, জৈন তীর্থঙ্করদের মূর্তি এবং ভগবান বুদ্ধ ও ভগবান শ্রী কৃষ্ণের মূর্তি। ফিরিয়ে দেওয়া জিনিসগুলির মধ্যে, অনেক পশুপ্রাণীর মৃর্তি রয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের টেরাকোটা টাইলস, যেখানে পুরুষ ও মহিলাদের চিত্র রয়েছে, তা খুবই আকর্ষণীয়। এর মধ্যে কাঁসার তৈরি ভগবান শ্রী গণেশের মূর্তি রয়েছে যা দক্ষিণ ভারতের। ফেরত পাওয়া জিনিসগুলির মধ্যে বিপুল সংখ্যায়ে ভগবান বিষ্ণুর ছবিও রয়েছে। এটি মূলত উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত । এই শিল্পকর্মগুলি দেখলে আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের পূর্বপুরুষরা সুক্ষ বিষয়গুলোর ওপরও কতটা গুরুত্ব দিতেন। শিল্প সম্পর্কে তাঁদের অনন্য বোধ ছিল। এসব শিল্পকর্মের অনেকগুলোই চোরাচালান বা অন্যান্য অবৈধ উপায়ে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল যা একটি গুরুতর অপরাধ। এটি নিজেদের ঐতিহ্যকে ধ্বংস করার মতো অপরাধ। তবে আমি খুবই আনন্দিত যে গত এক দশকে এমন অনেক নিদর্শন এবং আমাদের বহু প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী জিনিস ঘরে ফিরেছে। আজ ভারতও, অন্য অনেক দেশের সঙ্গে, এই বিষয়ে কাজ করছে। আমি বিশ্বাস করি, যখন আমরা আমাদের ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব করি, তখন বিশ্বও এটিকে সম্মান করে। আর তারই ফল আজ পৃথিবীর অনেক দেশ আমাদের দেশ থেকে হারিয়ে যাওয়া বেশ কিছু শিল্পকর্ম ফিরিয়ে দিচ্ছে।
আমার প্রিয় বন্ধুগণ, যদি আমি প্রশ্ন করি, একটি শিশু কোন ভাষা সবচেয়ে সহজে এবং দ্রুত শেখে - তাহলে আপনার উত্তর হবে 'মাতৃভাষা'। আমাদের দেশে প্রায় কুড়ি হাজার ভাষা এবং উপভাষা রয়েছে, এবং এগুলো সবই কোনো না কোনো ব্যক্তির মাতৃভাষা তো বটেই। এমন কিছু ভাষা আছে যাকে ব্যবহারকারী মানুষের সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু আপনারা জেনে খুশি হবেন যে এইসব ভাষাগুলির সংরক্ষাণের জন্য আজ অভিনব প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। এমন একটি ভাষা হলো আমাদের santhali ভাষা। Santhali-কে digital innovation-এর সহযোগিতায় একটি নতুন রূপ দেওয়ার অভিযান শুরু করা হয়েছে। santhali আমাদের দেশের বহু রাজ্যের নিবাসী santhali জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষেরা বলে থাকেন। ভারতবর্ষের বাইরেও বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটান এ santhali জনজাতির আদিবাসীরা বাস করেন। Santhali ভাষার online পরিচিতি তৈরী করার জন্য ওড়িশার ময়ূরভাঞ্জের বাসিন্দা শ্রীমান রামজিৎ টুডু একটি অভিযান চালাচ্ছে । রামজিৎ জি এমন একটি digital platform তৈরী করেছেন যার মাধ্যমে santhali ভাষার সাথে যুক্ত সাহিত্য পড়া যেতে পারে ও santhali ভাষায় লেখাও যেতে পারে। আসলে কয়েক বছর আগে মোবাইল ফোনের ব্যবহার শুরু করার পর উনি এইটা ভেবে হতাশ হন যে উনি নিজের মাতৃ ভাষায় কোনো বার্তা দিতে পারছেননা। এর পর থেকেই উনি santhali ভাষার লিপি ওলচিকি টাইপ করার পথ খোঁজা শুরু করেন। নিজের কিছু বন্ধুদের সঙ্গে মিলে উনি ওলচিকি তে type করার প্রযুক্তি তৈরী করে ফেলেন। আজ ওর প্রয়াসের জন্য santhali ভাষায় প্রকাশিত লেখা অসংখ্য মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।
বন্ধুরা, যখন আমাদের দৃঢ় সংকল্পের সঙ্গে সম্মিলিত অংশগ্রহণের মিলন হয় তখন গোটা সমাজের সামনে আশ্চর্য ফলাফল বেরিয়ে আসে। এর সবচেয়ে সাম্প্রতিক উদাহরণ – “এক পেড় মা কে নাম' অর্থাৎ একটি গাছ মায়ের নামে”- এই আশ্চর্যজনক অভিযান মানুষজনের সম্মিলিত অংশগ্রহণের ফলে এমন এক উদাহরণ হয়ে উঠেছে যা সত্যি খুবই প্রেরণাদায়ক। পরিবেশ সংরক্ষণ কে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া এই অভিযানে দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে মানুষ যুক্ত হয়ে বিস্ময়কর কাজ করে দেখিয়েছেন। উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও তেলেঙ্গানা লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি সংখ্যায় গাছ লাগিয়ে নতুন রেকর্ডের সৃষ্টি করেছে। এই অভিযানে উত্তরপ্রদেশে ২৬ কোটির থেকেও বেশি গাছ লাগানো হয়েছে। গুজরাটের মানুষজন ১৫ কোটির চেয়েও বেশি গাছ লাগিয়েছেন। রাজস্থানের শুধু আগস্ট মাসেই ছয় কোটির বেশি গাছ লাগানো হয়েছে। দেশের হাজার হাজার স্কুলও এই অভিযানে অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে অংশগ্রহণ করছেন।
বন্ধুরা, আমাদের দেশে গাছ লাগানোর অভিযানে যুক্ত কতশত উদাহরণ সামনে আসছে। এমনই এক উদাহরণ তেলেঙ্গানার কে. এন. রাজশেখরজি। গাছ লাগানো নিয়ে তাঁর অঙ্গীকার আমাদের সবাইকে অবাক করেছে। প্রায় চার বছর আগে তিনি গাছ লাগানোর অভিযান শুরু করেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে প্রতিদিন অন্তত একটি গাছ অবশ্যই লাগাবেন। তিনি কঠোর ব্রতের মতো তাঁর প্রতিশ্রুতি পালন করেছেন। ইতিমধ্যেই পনেরশোরও বেশি গাছ লাগিয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা এই বছর এক দুর্ঘটনার শিকার হওয়া সত্বেও তিনি তার সংকল্প থেকে নড়েননি। আমি এই সকল প্রচেষ্টাকে হৃদয় থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি আপনাদের অনুরোধ করছি “এক পেড় মা কে নাম”-র এই পবিত্র অভিযানে আপনিও অবশ্যই যুক্ত হন।
আমার প্রিয় বন্ধুরা, আপনারা দেখেছেন আমাদের আশেপাশে এমন কিছু মানুষ থাকেন যাঁরা বিপর্যয়ের পরিস্থিতিতেও ধৈর্য হারান না, বরং সেখান থেকে শেখেন। এমনই একজন মহিলা সুবাশ্রী, যিনি নিজের চেষ্টায় দুষ্প্রাপ্য এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় শেকড়-বাকড়-এর একটি আশ্চর্য বাগান তৈরি করেছেন। উনি তামিলনাড়ুর মাদুরাই-এর বাসিন্দা। পেশায় উনি একজন শিক্ষিকা, কিন্তু ঔষধি গাছ অর্থাৎ মেডিকেল হার্বস-এর প্রতি ওঁর গভীর আগ্রহ রয়েছে। আশির দশকে উনি এই আগ্রহ প্রথমবার অনুভব করেছিলেন যখন ওঁর বাবাকে একটি বিষাক্ত সাপে কামড়ায়। তখন প্রচলিত কিছু শেকড়-বাকড় ওঁর বাবার সুস্বাস্থ্য ফিরিয়ে দিতে অনেকটা সাহায্য করেছিল। এই ঘটনার পরে উনি আমাদের ঐতিহ্যবাহী ঔষধি এবং শেকড়-বাকড়ের খোঁজ শুরু করেন। আজ মাদুরাইয়ের বেরিচিয়ুর গ্রামে ওঁর বিশেষ হার্বাল গার্ডেন আছে যেখানে পাঁচশোরও বেশি দুষ্প্রাপ্য ঔষধি গাছ পাওয়া যায়। নিজের এই বাগান তৈরি করার জন্য উনি কঠিন পরিশ্রম করেছেন। এক একটি গাছ খোঁজার জন্য উনি অনেক দূরে যাত্রা করেছেন, এই বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেছেন এবং বহুবার অন্য অনেক মানুষের কাছে সাহায্য নিয়েছেন। কোভিডের সময়ে উনি ইমিউনিটি বাড়াতে পারে এমন শেকড়-বাকড় মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। আজ ওঁর হার্বাল গার্ডেন দেখতে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন। উনি সকলকে ঔষধি গাছের সম্বন্ধে তথ্য প্রদান করেন এবং তাদের উপকারিতার বিষয়ও বলেন। সুবাশ্রী আমাদের ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন যা প্রায় কোটি কোটি বছর ধরে আমাদের সংস্কৃতির অংশ। ওঁর হার্বাল গার্ডেন আমাদের অতীতের সঙ্গে ভবিষ্যতের সংযোগ ঘটায়। ওঁকে আমার অনেক শুভকামনা।
বন্ধুরা বদলে যাওয়া এই সময়ে কাজের ধরন অর্থাৎ নেচার অফ জবস পাল্টাচ্ছে, এবং নতুন নতুন সেক্টর অর্থাৎ ক্ষেত্র আত্মপ্রকাশ করছে। যেমন গেমিং, অ্যানিমেশন, রিল মেকিং, ফ্লিম মেকিং এবং পোস্টার মেকিং।
যদি আপনি এর মধ্যে কোনো বিষয়ে পারদর্শীতা দেখাতে পারেন, তাহলে আপনারা প্রতিভা প্রদর্শনের অনেক বড় মঞ্চ পেতে পারে। যদি আপনি কোনো ব্যান্ডের সাথে যুক্ত থাকেন বা কোনো কমিউনিটি রেডিওর জন্য কাজ করেন, তাহলেও আপনি অনেক বড় সুযোগ পেতে পারেন। আপনাদের প্রতিভা ও সৃজশীলতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ভারত সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রালয় , "create in India," এই থিমের অন্তর্গত ২৫টি চ্যালেঞ্জ শুরু করেছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো নিশ্চয়ই আপনাদের খুব মনোগ্রাহী হবে। কিছু চ্যালেঞ্জ সঙ্গীত, শিক্ষা এমনকি anti piracy - এই বিষয়ের উপর রয়েছে। এই গোটা আয়োজনে বেশ কয়েকটি পেশাদার সংস্থা যুক্ত আছে যারা এই চ্যালেঞ্জগুলিকে পুরো সাপ্পোর্ট দিচ্ছে। অংশগ্রহণ করার জন্য আপনারা wavesindia.org তে লগ ইন করতে পারেন। সারা দেশের ক্রিয়েটারদের কাছে আমার অনুরোধ তারা এগিয়ে আসুক ও এতে অংশগ্রহণ করে তাদের সৃজনশীলতাকে সবার সামনে তুলে ধরুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এই মাসে আরও একটি গুরুত্বপুর্ন অভিযানের দশ বছর পূর্ণ হল। এই অভিযানের সাফল্যের পেছনে দেশের বড় বড় উদ্যোগপতি থেকে শুরু করে ছোটো দোকানদার সকলের অবদান রয়েছে। আমি কথা বলছি মেক ইন ইন্ডিয়া র। আজ আমার এটা দেখে খুবই আনন্দ হয় যে দরিদ্র, মাঝারি অর্থাৎ MSME-গুলি এই অভিযান থেকে খুবই লাভবান হয়েছে। এই অভিযান প্রত্যেক শ্রেণীর মানুষকে নিজের প্রতিভা তুলে ধরার সুযোগ করে দিয়েছে। আজ ভারত manufacturing-এর powerhouse হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এবং দেশের যুবশক্তির কারনে গোটা পৃথিবীর নজর আমাদের উপর। Automobile হোক, textile হোক, aviation হোক, electronics হোক বা defence- প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের দেশের রপ্তানি লাগাতার বেড়ে চলেছে । দেশে ক্রমাগত FDI এর হার বৃদ্ধি পাওয়াও, আমাদের মেক ইন ইন্ডিয়ার সাফল্যের কাহিনী তুলে ধরছে ।
এখন আমরা মূলত দুটি বিষয়ের উপর জোর দিচ্ছি। প্রথম বিষয়টি হল কোয়ালিটি অর্থাৎ গুনমান । আমাদের দেশের তৈরি প্রতিটি বস্তু যেন বিশ্বমানের হয়। দ্বিতীয় বিষয়টি হল 'vocal for local', অর্থাৎ স্থানীয় বস্তুগুলোকে যেন আরো বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। মন কি বাত অনুষ্ঠানে আমি #myproductmypride, এই বিষয়ে আলোচনা করেছি। Local product কে গুরুত্ব দিলে আমাদের দেশের মানুষের কিভাবে সুবিধে হয়, তা একটা উদাহরন শুনলেই আপনারা বুঝতে পারবেন ।
মহারাষ্ট্রের ভাণ্ডারা জেলায় বস্ত্রশিল্পের একটি প্রাচীন পরম্পরা আছে; "ভান্ডারা তসর সিল্ক হ্যান্ডলুম"। তসর সিল্ক তার ডিজাইন, রং এবং পোক্ত বুনটের জন্যে খ্যাত। এর সংরক্ষণের কাজে ভাণ্ডারার কিছু কিছু এলাকার প্রায় ৫০ টিরও বেশি self help group নিয়োজিত রয়েছে। এই ক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণও যথেষ্ট বেশি। এই সিল্ক অত্যন্ত দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং স্থানীয় মানুষদের কর্মসংস্থান দিয়ে চলেছে। আর, এটাই তো make in India র স্পিরিট।
বন্ধুরা, উৎসবের এই মরসুমে আপনারা সেই পুরোনো সংকল্প আবারো স্মরণ করে নেবেন। যাই কিনবেন, তা made in India হতেই হবে। যাই উপহার দেবেন, তাও, made in India ই হতে হবে। শুধুমাত্র মাটির প্রদীপ কেনাই Vocal for Local হওয়া নয়। আপনাকে নিজের ভূমিতে তৈরি স্থানীয় জিনিসকে যতটা বেশি সম্ভব প্রোমোট করতে হবে। এমন যেকোনো দ্রব্য, যা তৈরিতে ভারতের কোনো না কোনো কারিগরের ঘাম মিশে আছে, যা ভারতের মাটিতে তৈরি, সেটাই আমাদের গর্ব। এই গৌরবকে সর্বদাই উজ্বল করে তুলতে হবে আমাদের।
বন্ধুরা, মন কি বাতের এই পর্বে আপনাদের সাথে যুক্ত থাকতে পেরে আমার খুবই ভালো লাগছে। এই অনুষ্ঠানের জন্যে আপনাদের মতামত এবং পরামর্শ আমার কাছে নিশ্চয়ই পাঠাবেন। আপনাদের চিঠি এবং বার্তার অপেক্ষায় রইলাম। কিছুদিনের মধ্যেই উৎসবের মরসুম শুরু হতে চলেছে। নবরাত্রির সঙ্গে এর সূচনা হবে, এবং আগামী দুই মাস পূজাপাঠ, ব্রতকথা, আনন্দ উল্লাস, চারিপাশে এমনই এক পরিবেশ থাকবে। আসন্ন উৎসবের জন্যে আপনাদের জানাই অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আপনারা সবাই, আপনাদের পরিবার এবং প্রিয়জনেদের সঙ্গে উৎসবে খুব আনন্দ করুন, আর অন্যদেরও এই আনন্দে সামিল করুন। সামনের মাসে অন্য আরো নতুন বিষয় নিয়ে মন কি বাত আপনাদের কাছে আসবে। আপনাদের সবাইকে জানাই অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। "মন কি বাতে" আরও একবার আমার সকল পরিবারবর্গকে স্বাগত জানাই। আজ আবারও কথা হবে দেশের সাফল্য অর্জন নিয়ে, দেশবাসীর সামগ্রিক প্রয়াস নিয়ে। একবিংশ শতাব্দীর ভারতে অনেক কিছু হচ্ছে যা বিকশিত ভারতের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করে। যেমন এই ২৩শে অগাস্ট আমরা সকল দেশবাসী মিলে প্রথম ন্যাশনাল স্পেস ডে উদযাপন করলাম। আমার বিশ্বাস আপনারাও সবাই এই দিনটি সেলিব্রেটে করেছেন, আরো একবার চন্দ্রযান-৩ এর সাফল্যকে উদযাপন করেছেন। গত বছর এই দিনেই চন্দ্রযান-৩ চাঁদের দক্ষিণ ভাগে শিবশক্তি পয়েন্টে সফল ল্যান্ডিং করেছিল। ভারত প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের ওই অংশে অবতরণ করার গৌরবময় কৃতিত্ব অর্জন করেছিল।
বন্ধুরা, দেশের যুবশক্তি স্পেস সেক্টর রিফর্ম-এর দ্বারা যথেষ্ট উপকৃত হয়েছে। তাই আমি ভাবলাম আজ মন কি বাতে স্পেস সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন যুবা বন্ধুর সঙ্গে কথা বলা যাক। আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য Spacetech Start-Up GalaxEye এর টিম রয়েছে। এই স্টার্ট আপটি আইআইটি মাদ্রাজের alumni শুরু করেছিল। এই সমস্ত যুবকেরা আজ আমার সঙ্গে ফোন লাইনে রয়েছেন - সুযশ, ডেনিল, রক্ষিত, কিশন ও প্রণিত। আসুন এই যুবকদের অভিজ্ঞতার কথা শুনি।
প্রধানমন্ত্রী জি - Hello!
যুবকেরা (chorus): Hello !
প্রধানমন্ত্রী জি - নমস্কার
যুবকেরা (chorus): নমস্কার স্যার
প্রধানমন্ত্রী জি - আচ্ছা বন্ধুরা, আমি এটা দেখে আনন্দিত যে আইআইটি মাদ্রাজে পড়ার সময় আপনাদের যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল তা আজও সুদৃঢ়ভাবে বজায় আছে। আর এই কারণেই আপনারা একসঙ্গে GalaxEye শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আজ আমি এটার সম্বন্ধে একটু জানতে চাই। এ সম্বন্ধে বলুন। আর তার সঙ্গে এটাও বলুন যে আপনাদের টেকনোলজির মাধ্যমে দেশ কতটা উপকৃত হবে।
সুযশ: স্যার, আমার নাম সুযশ। আমরা একসঙ্গে আছি যেমনটা আপনি বললেন। আমাদের সকলের আইআইটি মাদ্রাজে আলাপ। সেখানেই আমরা সবাই পড়াশোনা করছিলাম আলাদা আলাদা ইয়ারে। আমরা ইঞ্জিনিয়ারিং করেছিলাম। আর তখনই আমরা দেখেছিলাম যে হাইপারলুপ নামে একটা প্রজেক্ট আছে, যেটা আমরা একসঙ্গে করতে চেয়েছিলাম। তখন আমরা একটা টিম তৈরি করি - "আবিষ্কার হাইপারলুপ" যেটা নিয়ে আমরা আমেরিকাও গিয়েছিলাম। সে বছর আমরাই ছিলাম এশিয়া থেকে একমাত্র টিম যারা সেখানে গিয়েছিল এবং আমাদের দেশের পতাকা আমরা উঁচুতে তুলে ধরেছিলাম। সারা পৃথিবী থেকে আসা ১৫০০টি টিমের মধ্যে আমরা প্রথম কুড়িটির মধ্যে ছিলাম।
প্রধানমন্ত্রী জি - চলুন, পরের কথাগুলো শোনার আগে এটার জন্য আমার তরফ থেকে আপনাদের অনেক অভিনন্দন জানাই!
সুযশ - আপনাকে অনেক ধন্যবাদ | এই কৃতিত্ব অর্জন করার সময়, আমাদের বন্ধুত্ব অনেক গভীর হয়েছে এবং আমরা এমন কঠিন প্রজেক্ট এবং tough প্রজেক্ট করার আত্মবিশ্বাসও পেয়েছি। এবং এই সময়ে, spaceX কে দেখে এবং আপনি যে মহাকাশে প্রাইভেটাইজেশন ওপেন করেছিলেন ২০২০ সালে, তা এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ছিল। আমরা এটি নিয়ে খুব উত্তেজিত ছিলাম। আমি এবার রক্ষিতকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি বলার জন্য যে আমরা ঠিক কি তৈরি করছিলাম, এবং তার উপকারিতা কি?
রক্ষিত - হ্যাঁ, আমার নাম রক্ষিত। এবং এই টেকনোলজি থেকে আমাদের কি লাভ হবে এই প্রশ্নের উত্তর আমি দেবো।
প্রধানমন্ত্রী জি - রক্ষিত আপনি উত্তরাখণ্ডের কোন অঞ্চলে থাকেন?
রক্ষিত - স্যার আমি আলমোড়া থেকে
প্রধানমন্ত্রী জি - তো আপনি "বালমিঠাইওয়ালা"?
রক্ষিত - হ্যাঁ স্যার, হ্যাঁ স্যার, বালমিঠাই আমাদের favourite।
প্রধানমন্ত্রী জি - আমাদের লক্ষ্য সেন আছে না, তিনি আমাকে প্রায়শই বালমিঠাই খাওয়ান। হ্যাঁ তো রক্ষিত, আপনি বলুন।
রক্ষিত - আমাদের এই যে টেকনোলজি আছে, এটি মহাকাশ থেকে মেঘেদের ভেদ করে দেখতে পারে এবং এটি রাতেও দেখতে পারে। তাই এটি দিয়ে আমরা প্রতিদিন দেশের যে কোনো প্রান্তের একটি পরিষ্কার ছবি তুলতে পারি এবং আমাদের কাছে যে ডেটা আসবে সেটা আমরা ব্যবহার করতে পারি দুটি ক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য। প্রথমত, ভারতকে অত্যন্ত নিরাপদ করতে ব্যবহার করতে পারি। আমরা প্রতিদিন আমাদের সীমানা এবং আমাদের সাগর এবং মহাসাগর monitor করব এবং শত্রুদের কার্যকলাপের উপর নজর রাখব এবং আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে ইন্টেলিজেন্স তথ্য প্রদান করব। দ্বিতীয়টি হল, ভারতের কৃষকদের ক্ষমতায়ন। তাই আমরা ইতিমধ্যে একটি product তৈরি করেছি, চিংড়ি চাষীদের জন্য যা দিয়ে মহাকাশ থেকে তাদের পুকুরের জলের গুণমান পরিমাপ করা যাবে বর্তমান খরচের দশ ভাগের এক ভাগ (১/১০) কম খরচে। এবং আমরা চাই যে ভবিষ্যতে আমরা বিশ্বের জন্য বেস্ট কোয়ালিটি স্যাটেলাইট ইমেজ জেনারেট করি এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের মতো বৈশ্বিক সমস্যাগুলির সঙ্গে লড়াই করার জন্য বিশ্বের বেস্ট কোয়ালিটি স্যাটেলাইট ডেটা সরবরাহ করি।
প্রধানমন্ত্রী জি - তার মানে, আপনার এই দল, জয় জওয়ানও করবে, জয় কিষাণও করবে ।
রক্ষিত - হ্যাঁ স্যার, বিলক্ষণ।
প্রধানমন্ত্রী জি - বন্ধুরা, আপনারা এত ভালো কাজ করছেন। আমি এও জানতে চাই যে আপনাদের এই প্রযুক্তির কতটা precision আছে ?
রক্ষিত - স্যার, আমরা ৫০ সেন্টিমিটারের কম রেজোলিউশন অবধি যেতে সক্ষম হব এবং আমরা আনুমানিক ৩০০-বর্গকিলোমিটার-এর বেশি এলাকা জুড়ে ছবি তুলতে পারব।
প্রধানমন্ত্রী জি - আমার মনে হয় যে দেশবাসী যখন এই কথাটি শুনবেন, তখন তারা খুব গর্বিত হবেন। তবে আমি আরও একটি প্রশ্ন করতে চাই।
রক্ষিত - হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জি - Space ecosystem খুবই vibrant হয়ে উঠছে। এখন আপনার team এখানে কি পরিবর্তন দেখছে?
কিশন: আমার নাম কিশন, আমরা এই GalaxEye শুরু হওয়ার পর থেকে IN-SPACe-কে আসতে দেখেছি, আর তাছাড়া আরো অনেক policies আসতে দেখেছি যেমন 'geo-Spatial Data Policy and India Space Policy', আর গত তিন বছরে আমরা অনেক পরিবর্তন আসতে দেখেছি, তাছাড়া ISRO-এ অনেক Processes, Infrastructure, Facilities available হয়েছে এবং খুব সুষ্ঠ ভাবে হয়েছে ।
যেমন ISRO-এ গিয়ে আমরা আমাদের Hardware-এর testing করতে পারি, এখন এটা খুব সহজভাবেই করা যায়। তিন বছর আগে এই process-টা সেভাবে ছিল না, আর এটা আমাদের ও আরো অন্যান্য start ups-এর জন্যে খুব Helpful হয়েছে। আর recent FDI policies এবং এই facilities availability'র জন্যে আরো start ups গড়ে ওঠার মতো যথেষ্ট incentive আছে, আর এই start up-গুলো এসে খুব easily এবং খুব ভালোভাবে development করতে পারবে, আর সেটা এমন একটা ফিল্ডে যেখানে usually কোনো development করা ভীষণ costly এবং time consuming. But current policies এবং IN-SPACe আসার পর start up-গুলোর জন্যে অনেক কিছুই সহজ হয়ে গেছে। আমার বন্ধু ডেনিল চাবড়া'ও এ বিষয়ে কিছু বলতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী জি - বলুন ডেনিল...
ডেনিল - স্যার আমরা আরো একটা বিষয় observe করেছি, আমরা দেখেছি যে যারা ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র, তাদের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন এসেছে। তারা আগে বাইরে গিয়ে Higher studies pursue করতে চাইতো, আর সেখানে অন্য কোনো space domain-এ কাজ করতে চাইতো, but এখন যেহেতু India তে একটা space ecosystem খুব ভালোভাবে তৈরি হচ্ছে সেজন্যে তারা India-এ ফিরে এসে, সেই ecosystem-এর part হতে চাইছে। তো এইরকম ভালো একটা feedback আমরা পেয়েছি, আর একারণে আমাদের নিজেদের কোম্পানিতে কিছু লোক ফিরে এসে কাজ করছেন।
প্রধানমন্ত্রী জি - আমার মনে হয় কিশন এবং ডেনিল আপনারা দুজনে যে দিকগুলো তুলে ধরলেন, আমার বিশ্বাস অনেক মানুষেরই সেদিকে দৃষ্টি যায়নি, যে কোন একটা ক্ষেত্রে যখন reform হয়, তখন reform-এর কতো multiple effects তৈরি হয়, কত মানুষের লাভ হয়; আপনার বর্ণনা অনুযায়ী, যেহেতু আপনারা এই field-এ আছেন, তা নিশ্চয়ই আপনাদের নজরে পড়ে আর আপনারা observe -ও করেছেন যে দেশের যুবরা এখন এখানে, এই field-এ নিজেদের ভবিষ্যৎ পরখ করতে চায়, নিজেদের talent কাজে লাগাতে চায়। এটা আপনার খুব সুন্দর observation! আরো একটা প্রশ্ন আমি করতে চাইবো, আপনি এই যুবদের কি বার্তা দিতে চাইবেন, যারা start ups এবং space sector-এ সাফল্য পেতে চায়।
প্রণীত- আমি প্রণীত কথা বলছি। আর আমি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে চাই ।
প্রধানমন্ত্রী জি – হ্যাঁ, প্রণীত বলুন।
প্রণীত – স্যার, আমি আমার বিগত কিছু বছরের experience থেকে দুটি বিষয় সম্পর্কে বলতে চাই। সবার প্রথমে, আপনি যদি start up শুরু করতে চান, তাহলে এইটাই সুবর্ণ সুযোগ। কারণ পুরো বিশ্বে India আজ সেই দেশ যা world এর সবথেকে fastest growing economy আর তার মানে এই যে আমাদের কাছে opportunity অনেক বেশি আছে। যেমন আমি ২৪ বছর বয়স থেকেই এইটা ভেবে proud feel করি কি পরের বছর একটা স্যাটেলাইট launch হবে। যেটার basis-এ আমাদের government কিছু major decision নেবে। আর তাতে আমার ছোট্ট একটা contribution আছে। এইরকমই কিছু National impact সম্পন্ন project-এ কাজ করার সুযোগ পাওয়া যাবে, এটা এমনই এক industry । আর এটা এমনই এক time যখন এই space industry start হচ্ছে। তাই আমি আমার যুবা বন্ধুদের এটাই বলতে চাই যে এই opportunity শুধু impact এর নয়, but also ওদের নিজেদের financial growth-এর জন্য এবং একটা global problem solve করার জন্য। আমরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করি যে ছোটবেলায় আমরা বলতাম আমি actor হবো, অথবা, sportsmen হবো। But আজ যদি আমরা এটা শুনি যে কেউ বলছে আমি বড় হয়ে entrepreneur হবো, space industry-তে কাজ করবো। এটা আমার জন্য খুবই proud moment হবে, কারণ আমি এই transformation-এ একটা ছোট part play করছি।
প্রধানমন্ত্রী জি - বন্ধুরা, এই ভাবে প্রণীত, কিষন, ডেনিল, রক্ষিত, সুযশ আপনাদের মধ্যে যেমন অটুট বন্ধুত্ব তেমনই মজবুত আপনাদের start up-ও । তাই তো আপনরা এমন চমৎকার কাজ করছেন। আমার কয়েক বছর আগে আইআইটি মাদ্রাজ যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিলো আর আমি সেই প্রতিষ্ঠানের excellence নিজে অনুভব করেছিলাম। আর এমনিতেও সমগ্র বিশ্ব আইআইটিকে সম্মানের চোখে দেখে। আর সেইখান থেকে পাশ করে বেরোনোর পর যখন কেউ দেশের জন্য কাজ করে তখন নিশ্চিত যে কিছু না কিছু ভালো contribute করবে। আপনাদের সবাইকে এবং Space সেক্টরে কাজ করে, এমন অন্যান্য স্টার্ট আপ গুলির জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো। আর আপনাদের পাঁচ বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে খুব ভালো লাগলো। বেশ, অনেক অনেক ধন্যবাদ বন্ধুরা।
সুযশ- থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ !
আমার প্রিয় দেশবাসী, এই বছর আমি লাল কেল্লা থেকে পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড নেই এমন এক লাখ যুবক-যুবতীদের পলিটিক্যাল সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলাম। আমার এই কথায় দারুণ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এর থেকে বোঝা যায় যে কী বিশাল সংখ্যায় আমাদের যুবশক্তি রাজনীতিতে আসার জন্য তৈরি। ওঁদের সঠিক সুযোগ এবং সঠিক পথ প্রদর্শনের প্রয়োজন রয়েছে। এই বিষয়ে আমি সমগ্র দেশের যুবাদের থেকে চিঠিও পেয়েছি। সোশ্যাল মিডিয়াতেও অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি। সকলেই আমায় বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ পাঠিয়েছেন। কয়েকজন যুবা চিঠিতে লিখেছেন যে, এটা ওদের জন্য একেবারে অকল্পনীয়। দাদু বা বাবা-মা কেউই রাজনৈতিক ক্ষেত্রে না থাকার কারণে ওরা রাজনীতিতে চাইলেও আসতে পারত না। কয়জন যুবা লিখেছেন যে ওদের কাছে তৃণমূল স্তরে অর্থাৎ GRASSROOT LEVEL-এ কাজ করার ভালো অভিজ্ঞতা আছে। এই জন্যে ওরা মানুষের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারবে। কয়েকজন যুবা এটাও লিখেছেন যে পরিবারমুখী রাজনীতি নতুন প্রতিভা বিকশিত হতে দেয় না। কিছু যুবা এটাও বলেছেন যে এই ধরনের প্রচেষ্টার ফলে আমাদের গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে। এই বিষয়ে আমায় পরামর্শ পাঠানোর জন্য আমি সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি আশা করছি যে এখন আমাদের সামগ্রিক প্রচেষ্টার ফলে এমন যুবা, যাদের কোন পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড নেই তারাও রাজনীতিতে আসতে পারবেন, তাদের অভিজ্ঞতা, সাহস, দেশের প্রয়োজনে লাগবে।
বন্ধুরা, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়েও সমাজের প্রত্যেক ক্ষেত্র থেকে এমন অনেক মানুষ সামনে এসেছিলেন যাদের কোন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ছিল না। তারা নিজেদের ভারতের স্বাধীনতার জন্য সমর্পণ করেছিলেন। আজ আমাদের বিকশিত ভারতের লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্যে আবার ওই একই স্পিরিটের প্রয়োজন। আমি আমাদের সকল যুবা বন্ধুদের বলব যে আপনারা এই অভিযানের সঙ্গে অবশ্যই যুক্ত হোন। আপনাদের এই পদক্ষেপ আপনাদের নিজেদের এবং দেশের ভবিষ্যৎ বদলাবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘হর ঘর তিরঙ্গা ও’র পুরা দেশ তিরাঙ্গা‘ এই অভিযান এই বার দারুণ উচ্চতায় পৌঁছেছিল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার চমৎকার সব ছবি সামনে এসেছে। আমরা বাড়িতে তিরঙ্গা উড়তে দেখেছি। স্কুল, কলেজ, ইউনিভারসিটিতে তিরঙ্গা দেখেছি। মানুষ নিজেদের দোকান, অফিসেও তিরঙ্গা উড়িয়েছেন। এমনকি অনেকে নিজেদের ডেস্কটপ, মোবাইল এবং গাড়িতেও এই পতাকা ব্যবহার করেছেন। যখন মানুষ একসঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজেদের ভাবনা প্রকাশ করেন তখন এভাবেই প্রত্যেক অভিযান তার সর্বোচ্চ শিখর ছুঁয়ে ফেলে। আপনারা এখন নিজেদের টিভি স্ক্রিনে যে ছবি দেখছেন এটা জম্মু-কাশ্মীরের রিয়াসির। এখানে ৭৫০ মিটার লম্বা একটি পতাকা নিয়ে বিশেষ তিরঙ্গা র্যালি বেরিয়েছিল। আর এই র্যালি পৃথিবীর সবথেকে উঁচু চেনাব রেলওয়ে ব্রিজের ওপর বার করা হয়েছিল। যারা এই ছবি দেখেছেন, তারা আনন্দিত হয়েছেন। শ্রীনগরের ডাল লেকেও এমন তিরঙ্গা পদযাত্রার চমৎকার সব ছবি আমরা দেখেছি। অরুণাচল প্রদেশের ইস্ট কামেঙ্গ জেলায় ৬০০ ফুট লম্বা একটি তিরঙ্গার সঙ্গে একটি পদযাত্রা বার করা হয়েছিল। দেশের অন্য রাজ্যেও এমনই, সব বয়সের মানুষ তিরঙ্গা পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেছেন। স্বাধীনতা দিবস এখন এক সামাজিক উৎসবে পরিণত হচ্ছে যা আপনারাও অনুভব করেছেন। সকলের নিজেদের বাড়িও তিরঙ্গা মালা দিয়ে সাজান। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত মেয়েরা লক্ষ লক্ষ পতাকা তৈরি করেন। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে তিরঙ্গার ত্রিবর্ণ রঞ্জিত জিনিসপত্রের বিক্রি বেড়ে যায়। স্বাধীনতা দিবসের সময়ে দেশের প্রত্যেক প্রান্তে, জলে-স্থলে-আকাশে সব জায়গায় আমাদের পতাকার তিনটি রং দেখা যায়। ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ ওয়েবসাইটে ৫ কোটির থেকে বেশি সেল্ফি পোস্ট করা হয়েছে। এই অভিযান সম্পূর্ণ দেশকে একটা সুতোয় বেঁধে দিয়েছে আর এটাই হল ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’।
আমার প্রিয় দেশবাসী, মানুষ ও পশুর ভালবাসা নিয়ে আপনারা অনেক সিনেমা দেখেছেন। কিন্তু একটি সত্যি কাহিনী এখন আসামে তৈরি হচ্ছে। আসামের তিনশুকিয়া জেলার একটি ছোট গ্রাম, বারেকুরিতে মোরান সম্প্রদায়ের মানুষ থাকেন। আর এখানেই বসতি 'হুলক গীবন' যারা 'হোলো বাঁদর' নামে পরিচিত। হুলক গীবনরা এই গ্রামেই নিজেদের বসতি গড়ে তুলেছে। আপনারা জেনে অবাক হবেন যে, এই গ্রামের বাসিন্দাদের হুলোক গিবনদের সঙ্গে এক গভীর সম্পর্ক আছে। গ্রামের মানুষেরা আজও নিজেদের চিরাচরিত ঐতিহ্য পালন করে চলেছেন । তাই তাঁরা সেই সমস্ত কাজ করেন, যার ফলে গীবনদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরো মজবুত হয়। তাঁরা যখন বুঝতে পারে যে গীবনরা কলা খুব পছন্দ করে, তখন তারা কলার চাষ করতে শুরু করে দেন। এছাড়াও তাঁরা স্থির করেন যে গীবনদের জন্ম ও মৃত্যুর সঙ্গে যুক্ত রীতি-নীতিও তারা সেভাবেই পালন করবে, যেভাবে তারা নিজেদের লোকেদের জন্য করে থাকেন । তাঁরা গীবনদের নামকরণও করেছেন। সম্প্রতি গ্রামের পাশ দিয়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক তারের জন্য গীবনদের অসুবিধায় পড়তে হচ্ছিল। তাই গ্রামের মানুষেরা সরকারের কাছে এই সমস্যার কথা রাখেন, আর শীঘ্রই এই সমস্যার সমাধানও বেরিয়ে আসে। আমায় জানানো হয়েছে যে এখন এই গীবনরা ছবি তোলার জন্য পোজও দেয়।
বন্ধুরা, পশুদের প্রতি প্রেমে আমাদের অরুণাচল প্রদেশের যুবারাও কারোর থেকে পিছিয়ে নেই। জানেন কি, অরুণাচলের কিছু যুবারা 3D printing technology-এর ব্যবহারও শুরু করেছে। কারণ তারা বন্যপ্রাণীদের শিং ও দাঁতের জন্য শিকার হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে চান। নাবম বাপু ও লিখা নানার নেতৃত্বে এই দল পশুদের ভিন্ন ভিন্ন অঙ্গের 3D প্রিন্টিং করেন। পশুদের শিং হোক, দাঁত হোক, এই সবই 3D printing দিয়ে তৈরি করেন। এর থেকে পরে ড্রেস আর টুপির মত জিনিষ তৈরি করা হয়। এটা একটা অদ্ভুত অল্টারনেটিভ যাতে bio-degradable material ব্যবহার করা হয়। এরকম অদ্ভুত সুন্দর প্রচেষ্টার যতই প্রশংসা করা যায় তা কম। আমি তো বলব, এই ক্ষেত্রে অনেক বেশি সংখ্যায় স্টার্টআপ এগিয়ে আসুক, যাতে আমাদের পশুরা রক্ষা পাক আর এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, মধ্য প্রদেশের ঝাবুআ তে এমন দারুণ কিছু হচ্ছে যা আপনাদের অবশ্যই জানানো উচিৎ। ওখানে আমাদের সাফাই-কর্মী ভাই বোনেরা কামাল করেছে। এই ভাই বোনেরা আমাদের ‘Waste to Wealth’-এর বার্তা সত্যেএ পরিণত করে দেখিয়েছে। এই টিমটি ঝাবুয়ার একটি পার্কে আবর্জনা থেকে আশ্চর্য Art works সৃষ্টি করেছে।
নিজেদের এই কাজের জন্য তাঁরা আশপাশের এলাকা থেকে plastic waste, ব্যবহার-করা bottles, tyres আর pipes নিয়ে একত্রিত করে। এই Art works-এর মধ্যে হেলিকপ্টার, গাড়ি, এমন কি কামানও আছে। অপূর্ব সুন্দর হ্যাঙ্গিং flower pots-ও তৈরি করা হয়েছে। এখানে ব্যবহার-করা টায়ার থেকে আরামদায়ক bench বানানো হয়েছে। সাফাই কর্মীদের এই দল reduce, reuse আর recycle-এর মন্ত্রকে বাস্তবায়িত করেছে। ওঁদের প্রচেষ্টায় পার্কটি ভীষণই সুন্দর দেখাচ্ছে। এটি দেখতে স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি, আশপাশের জেলাগুলির থেকেও মানুষ আসছেন।
বন্ধুরা, আমি আনন্দিত যে আজ আমদের দেশে বহু start-up টিম পরিবেশের উন্নতির -সাধনের প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত। e-Conscious নামের একটি টিম আছে, যারা plastic waste-কে eco-friendly products বানাতে ব্যবহার করছে। তারা এই idea-টি আমাদের দেশের বিভিন্ন পর্যটন ক্ষেত্র, বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায় ছড়িয়ে ফেলে রাখা আবর্জনা দেখে পেয়েছে।
এরকমই আরেটি টিম Ecokaari বলে আরেকটি start-up শুরু করেছেন। এঁরা plastic waste থেকে বিভিন্ন সুন্দর-সুন্দর জিনিস বানান।
বন্ধুরা, Toy recycling-ও এমনই একটি ক্ষেত্র, যেখানে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি। আমরা জানি বহু বাচ্চা খুব শীঘ্র খেলনা ব্যবহার করে bore হয়ে যায়, আবার এরকম অনেক বাচ্চা আছে যারা ওই খেলনাগুলি পাওয়ার স্বপ্নই লালন করে। যে সমস্ত খেলনা নিয়ে আপনার বাচ্চা আর খেলে না, সেগুলি আপনারা এমন জায়গায় দান করতে পারেন যেখানে সেগুলি ব্যবহৃত হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার এটিও একটি ভাল রাস্তা। আমরা সবাই মিলে প্রচেষ্টা করলে তবেই পরিবেশ আরও মজবুত হবে এবং দেশও এগিয়ে যাবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছুদিন আগে উনিশে আগস্ট আমরা রাখীবন্ধন উৎসব পালন করি। ওই দিনই সারা পৃথিবীতে ‘বিশ্ব সংস্কৃত দিবস-ও’ উদযাপিত হয়। আজও সংস্কৃত ভাষার প্রতি দেশ-বিদেশের বহু মানুষের বিশেষ আকর্ষণ লক্ষ্য করা যায়। পৃথিবীর বহু দেশে সংস্কৃত ভাষা নিয়ে বিভিন্ন প্রকারের research আর প্রয়োগ হচ্ছে।
এর পরের কথাগুলি বলার আগে আমি আপনাদের জন্য একটি ছোট্ট audio clip play করছিঃ
অডিও ক্লিপ
বন্ধুরা, এই audio-টির সম্পর্ক রয়েছে ইউরোপের Lithuania নামের একটি দেশের সঙ্গে। ওখানে Vytis Vidunas নামের একজন প্রফেসর একটি অভিনব প্রয়াস আরম্ভ করেছেন, যার নাম দিয়েছেন - 'সংস্কৃত : On the Rivers'। কিছু মানুষের একটি গ্রুপ Neris নদীর ধারে একত্রিত হয়ে, বেদ আর গীতার পাঠ করেছেন। সেখানে এরকম প্রয়াস বেশ কিছু বছর ধরেই চলছে। আপনারাও সংস্কৃত ভাষাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এই ধরণের প্রচেষ্টা গুলিকে সামনে নিয়ে আসুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী। আমাদের সকলের জীবনে fitness-এর একটা আলাদা গুরুত্ব আছে। ফিট থাকার জন্য আমাদের খাওয়া দাওয়া, জীবন যাপনের উপর বিশেষ নজর দিতে হবে। জনগণ কে fitness-এর প্রতি আগ্রহী করার জন্য ‘Fit India’ অভিযান আরম্ভ করা হয়েছে। সুস্থ থাকার জন্য আজ বয়স বা শ্রেণি নির্বিশেষে যোগাভ্যাসকে আপন করে নিচ্ছে। মানুষ এখন তাদের থালায় সুপারফুড মিলেটস, অর্থাৎ শ্রীঅন্নকে স্থান দিতে শুরু করেছে। এই সমস্ত প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য হল প্রতিটি পরিবার যেন সুস্থ থাকে।
বন্ধুরা, আমাদের পরিবার, আমাদের সমাজ, আমাদের দেশ, এই সবের ভবিষ্যৎ আমাদের সন্তানদের স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে। আর সন্তানদের ভালো স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন যে তারা সঠিক পুষ্টি পাক। শিশুদের পুষ্টি দেশের প্রধান অগ্রাধিকার। আমরা সাধারণত তাদের পুষ্টির দিকে খেয়াল রাখি, তবে একটি মাস, আমাদের দেশ এর ওপর বিশেষ নজর দেবে। এজন্য প্রতি বছর ১লা সেপ্টেম্বর থেকে ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুষ্টি মাস পালন করা হয়। পুষ্টি সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য পুষ্টি মেলা, রক্তাল্পতা (anemia) শিবির, নবজাতকদের ঘরে পরিদর্শন, seminar, webinar ইত্যাদি নানা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। অনেক জায়গায় আঙ্গনওয়াড়ির অধীনে Mother and Child Committee গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি গর্ভবতী মহিলাদের, শিশুদের এবং নবজাতকের মায়েদের track করে, তাদের নিয়মিত monitor করা হয়, এবং তাদের পুষ্টির ব্যবস্থা করা হয়।
গত বছর পুষ্টি অভিযানকে নতুন শিক্ষা নীতির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। “পোষন ভী, পঢ়াই ভী” অর্থাৎ পুষ্টিও - শিক্ষাও এই অভিযানের মাধ্যমে বাচ্চাদের সুষম বিকাশের উপর focus করা হয়েছে। আপনিও আপনার অঞ্চলের পুষ্টির প্রতি সচেতনতা অভিযানে অবশ্যই যুক্ত হোন। আপনার একটি ছোট্ট প্রচেষ্টা অপুষ্টির বিরুদ্ধে যে লড়াই তাতে খুব সাহায্য করবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এবারের মত ‘মন কি বাত’ এইটুকুই। ‘মন কি বাত’-এ আপনাদের সঙ্গে কথা বলে আমার সবসময় খুব ভালো লাগে। মনে হয় যেন আমি আমার পরিবারবর্গের সঙ্গে বসে মনোরম পরিবেশে নিজের মনের কথা ভাগ করে নিচ্ছি। আপনাদের মনের সঙ্গে নিজেকে জুড়ে নিচ্ছি। আপনাদের feedback, আপনাদের পরামর্শ আমার জন্য খুবই মূল্যবান। আসন্ন কয়েকদিনে অনেকগুলি উৎসব রয়েছে। সেইজন্য আমি আপনাদের সবাইকে অনেক শুভকামনা জানাচ্ছি। জন্মাষ্টমীর উৎসবও রয়েছে। পরের মাসের শুরুতেই গণেশ চতুর্থীও রয়েছে। ওনাম উৎসবও কাছেই। মিলাদ-উন-নবীরও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
বন্ধুরা, এই মাসে ২৯ তারিখে ‘তেলেগু ভাষা দিবস’ও রয়েছে। এ সত্যিই এক অসাধারণ ভাষা। আমি বিশ্বের সমস্ত তেলেগুভাষীদের ‘তেলেগু ভাষা দিবস’ উপলক্ষে শুভকামনা জানাই।
প্রপঞ্চ ব্যাপ্তঙ্গা উন্ন
তেলেগু ওয়ারিকি,
তেলেগু ভাষা দিনোৎসব শুভাকাঙ্ক্ষলু ।
বন্ধুরা, আমি আপনাদের সবাইকে এই বর্ষাকালে সাবধান থাকার সঙ্গে আবার একবার “Catch the rain movement”-এর সঙ্গে যুক্ত থাকার আবেদন জানাচ্ছি। আমি আপনাদের সবাইকে “এক পেড় মা কে নাম” অভিযানের কথাও মনে করিয়ে দিতে চাই। বেশি বেশি করে গাছ লাগান ও অন্যদেরও তা করতে উৎসাহ দিন। আগামী দিনে প্যারিসে Paralympics শুরু হতে চলেছে। আমার দিব্যাঙ্গ ভাই-বোনেরা সেখানে পৌঁছে গিয়েছেন। ১৪০ কোটি ভারতবাসী নিজেদের athlete ও খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করছেন। আপনিও #cheer4bharat-এর সঙ্গে নিজের খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিন। পরের মাসে আবার আমরা যুক্ত হব এবং অনেকগুলি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। ততক্ষণ পর্যন্ত বিদায় নিচ্ছি। অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, মন কি বাতে স্বাগত জানাই আপনাদের, অভিনন্দন জানাই। এই সময়ে, পুরো বিশ্ব প্যারিস অলিম্পিকের মোহে আবিষ্ট। অলিম্পিক আমাদের ক্রীড়াবিদদের বিশ্ব মঞ্চে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সুযোগ দেয়, দেশের জন্য কিছু করার সুযোগ দেয়। আপনিও নিজের দেশের খেলোয়াড়দের জন্য উৎসাহ বাড়ান, চীয়ার ফর ভারত!
বন্ধুরা, ক্রীড়াজগতের এই অলিম্পিক ছাড়াও কিছুদিন আগে Maths-এর দুনিয়ায় এক অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয়েছে। International Mathematics Olympiad। এই অলিম্পিয়াডে দেশের ছাত্রছাত্রীরা অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে। এতে আমাদের দল অত্যন্ত সর্বশ্রেষ্ঠ প্রদর্শন করে, চারটি স্বর্ণ ও একটি রৌপ্য পদক জিতেছে। International Mathematics Olympiad-এ একশোটিরও বেশি দেশের তরুণ অংশ নেয় এবং সামগ্রিক তালিকার মধ্যে আমাদের দল শীর্ষ পাঁচে আসতে সক্ষম হয়েছে। দেশকে গৌরবান্বিত করা এই ছাত্রছাত্রীদের নাম - পুনে থেকে আদিত্য ভেঙ্কট গণেশ, পুনেরই সিদ্ধার্থ চোপড়া, দিল্লী থেকে অর্জুন গুপ্তা, গ্রেটার নয়ডা থেকে কানভ্ তলওয়ার, মুম্বাই থেকে রুশীল মাথুর এবং গুয়াহাটির আনন্দ ভাদুরি।
বন্ধুরা, আজ ‘মন কি বাতে’ আমি বিশেষভাবে এই তরুণ বিজয়ীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। এঁরা এখন আমাদের সঙ্গে ফোনে যুক্ত।
প্রধানমন্ত্রীঃ নমস্কার বন্ধুরা। ‘মন কি বাতে’ তোমাদের অনেক অনেক স্বাগত জানাই। কেমন আছো তোমরা?
শিক্ষার্থীরাঃ আমরা ঠিক আছি স্যার।
প্রধানমন্ত্রীঃ বন্ধুরা, মন কি বাতের মাধ্যমে দেশবাসী তোমাদের অভিজ্ঞতার কথা জানতে খুব আগ্রহী। আমি আদিত্য আর সিদ্ধার্থকে দিয়ে শুরু করব। তোমরা পুনেতে আছো, প্রথমে আমি তোমাদের দিয়ে শুরু করছি। অলিম্পিয়াডের সময় তোমরা যা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছ, তা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করো।
আদিত্যঃ Maths-এ আমার ছোট থেকে আগ্রহ। ক্লাস সিক্সে এম. প্রকাশ স্যার, আমার Maths-এর শিক্ষক, আমাকে শিখিয়েছিলেন এবং তিনি Maths-এর প্রতি আমার আগ্রহ বাড়িয়ে তুলেছিলেন। আমি শিখেছিলাম এবং যথেষ্ট সুযোগও পেয়েছিলাম।
প্রধানমন্ত্রীঃ তোমার সঙ্গীর বক্তব্য কী?
সিদ্ধার্থঃ স্যার, আমি সিদ্ধার্থ, পুণে থেকে। আমি দ্বাদশ শ্রেণী পাশ করেছি। আই. এম. ও-তে এটি আমার দ্বিতীয়বার, Maths-এ আমারও ছোট থেকে আগ্রহ। আর আদিত্যর সঙ্গে, আমি যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি, তখন এম. প্রকাশ স্যার আমাদের দু’জনকেই প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। আর সেটা অনেক সাহায্য করে আমাকে। আমি কলেজের জন্য এখন সি. এম. আই-তে যাচ্ছি এবং Maths ও সি. এস. পড়ছি।
প্রধানমন্ত্রীঃ আচ্ছা, আমি শুনলাম যে, অর্জুন বর্তমানে গান্ধীনগরে রয়েছে এবং কানভ্ তো গ্রেটার নয়ডার বাসিন্দা। অর্জুন এবং কানভ্, আমরা অলিম্পিয়াড নিয়ে আলোচনা করেছি কিন্তু তোমরা দু’জনে প্রস্তুতি সম্পর্কিত কোনও বিষয়, কোনও অভিজ্ঞাতা যদি আমাদের জানাও তবে আমাদের শ্রোতাদের ভালো লাগবে।
অর্জুনঃ নমস্কার স্যার, জয় হিন্দ। আমি অর্জুন বলছি।
প্রধানমন্ত্রীঃ জয় হিন্দ অর্জুন।
অর্জুনঃ আমি দিল্লিতে থাকি। আমার মা শ্রীমতী আশা গুপ্তা, দিল্লি University-র ফিজিক্সের প্রফেসার। আমার বাবা শ্রী অমিত গুপ্তা চার্টার্ড একাউন্টেন্ট। আমার দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছি এই ভেবে আমি অত্যন্ত গৌরবান্বিত বোধ করছি। সবার প্রথমে আমার সাফল্যের কৃতিত্ব আমি আমার বাবা-মাকে দিতে চাই। আমার মনে হয় যখন একটি পরিবারের কোন সদস্য এমন একটি প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি নেয় তখন তা কেবল সেই সদস্যের লড়াই থাকে না, সমগ্র পরিবারের লড়াই হয়ে ওঠে। আমাদের যে প্রশ্নপত্র হয় তাতে আমাদের কাছে তিনটি প্রবলেম সলভ করার জন্য মোট সাড়ে চার ঘন্টা থাকে, অর্থাৎ প্রতিটি প্রবলেম এর জন্য দেড় ঘন্টা। তাহলে আমরা বুঝতে পারছি যে একটা প্রবলেম সলভ করার জন্য আমাদের কাছে কতটুকু সময় থাকে। আমাদের বাড়িতে যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয়, প্রবেলেমের সঙ্গে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটাতে হয়। কখনো কখনো তো একটা প্রবলেমের সঙ্গে একদিন, এমনকি তিনদিন পর্যন্ত লেগে যায়। এর জন্য আমাদের অনলাইন প্রবলেমস খুঁজতে হয়। আমরা গত বছরের প্রবলেমগুলো ট্রাই করি। আর এভাবেই ধীরে ধীরে পরিশ্রম করতে করতে ক্রমশ আমাদের অভিজ্ঞতা বাড়ে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা আমাদের প্রবলেম সলভিং এবিলিটি বাড়ে, যা শুধু Mathametic-সের ক্ষেত্রে নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সাহায্য করে।
প্রধানমন্ত্রীঃ আচ্ছা, আমাকে কনভ্ বলতে পারো কোন একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা, এই সমগ্র প্রস্তুতি পর্বের কোন একটি বিশেষ বিষয় যা আমাদের তরুণ বন্ধুদের জেনে খুব ভালো লাগবে?
কনভ্ তলওয়ারঃ আমার নাম কনভ্ তলওয়ার। আমি গ্রেটার নয়ডা, উত্তরপ্রদেশে থাকি। আমি একাদশ শ্রেণির ছাত্র। Maths আমার প্রিয় Subject। ছোটবেলা থেকেই Maths আমার খুব ভালো লাগে। ছোটবেলায় আমার বাবা আমাকে পাজল (puzzle) করাতেন, যা থেকে আমার আগ্রহ বাড়ে। আমি সপ্তম শ্রেণী থেকে অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। এতে আমার বোনেরও বিরাট অবদান আছে। আর আমার বাবা-মাও সব সময় আমাকে সাপোর্ট করেছেন। এই অলিম্পিয়াড HBCSE কন্ডাক্ট করে। আর এটা একটা ফাইভ স্টেজ প্রসেস। গত বছর আমি খুব কাছাকাছি ছিলাম কিন্তু দলে সুযোগ পাইনি। সুযোগ না পাওয়ায় খুব দুঃখ হয়েছিল। তখন আমার বাবা-মা আমাকে শিখিয়েছিলেন যে আমরা হয় জয়ী হই অথবা শিখি, এবং জীবনে সফরটাই আসল অর্থবাহী, সাফল্য নয়। তাই আমি এটাই বলতে চাইবো – ‘Love what you do and do what you love’। সফর বা যাত্রাটাই আসল, সাফল্য নয়। আর যদি আমাদের নিজেদের বিষয়ের প্রতি ভালোবাসা থাকে, এবং আমাদের যাত্রাটা আমরা উপভোগ করতে পারি, তাহলে সাফল্য আসবেই।
প্রধানমন্ত্রীঃ তাহলে Kanav তোমার তো দেখছি mathematics-এও interest রয়েছে আর যেভাবে কথা বল তাতে মনে হয় সাহিত্যেও আগ্রহ রয়েছে।
কনভ্ তলওয়ারঃ হ্যাঁ স্যার। আমি ছোটবেলায় debate এবং Orating-ও করতাম।
প্রধানমন্ত্রীঃ আচ্ছা আসুন তাহলে আমরা এবার আনন্দর সঙ্গে কথা বলি। আনন্দ তুমি এখন গৌহাটিতে আছেন, আর তোমার সঙ্গী রুশীল এখন মুম্বাইয়ে। তোমাদের দু’জনের কাছে আমার একটা Question আছে। দেখ আমি 'পরীক্ষা পে চর্চা'র মতো অনুষ্ঠান তো করেই থাকি, আর 'পরীক্ষা পে চর্চা' ছাড়াও অন্যান্য অনুষ্ঠানে student-দের সাথে কথা বলে থাকি। বহু ছাত্র-ছাত্রী maths-এ এতো ভয় পায় যে Maths-এর নাম শুনলেই ঘাবড়ে যায়। তুমি বলো, Maths-এর সঙ্গে কি করে বন্ধুত্ব করা যায়?
রুশীল মাথুরঃ স্যার, আমি রুশীল মাথুর। ছোটবেলায় আমরা যখন প্রথমবার addition শিখি, আমাদের carry forward করা শেখানো হয়; কিন্তু carry forward হয় কেন সেটা আমাদের কখনো বোঝানো হয় না। যখন আমরা compound interest-এর বিষয়ে জানি, তখন আমরা কখনো এই question-টা করিনা যে এই compound interest-এর formula-টা এলো কোথা থেকে? আমার বিশ্বাস maths, actually একটা চিন্তাধারা এবং problem solving-এর প্রক্রিয়া। আর এজন্য আমার মনে হয় যদি আমরা সবাই mathematics-এ একটা নতুন question জুড়ে দিই, যেমন question-টা হতে পারে- 'আমরা এটা কেন করছি? এইটা এমন কেন হচ্ছে?' তাহলে I think মানুষের maths-এ interest অনেক বেশি বেড়ে যেতে পারে! কারণ আমরা যখনই কোন বিষয় বুঝতে পারিনা, সেটায় আমরা ভয় পেতে শুরু করি। তাছাড়া আমার এটাও মনে হয় যে সবাই মনে করে maths ভীষণ logical একটা subject! কিন্তু তা ছাড়াও maths-এ প্রচুর creativity-ও Important! কারণ creativity থেকেই আমরা out of the box solutions খুঁজে পাই, যেটা Olympiad-এ খুব useful হয়; আর সে কারণেই Maths Olympiad-এরো একটা ভীষণ Important relevance রয়েছে, Maths-এ interest বাড়ানোর জন্যে।
প্রধানমন্ত্রীঃ আনন্দ কিছু বলতে চাও?
আনন্দ ভাদুরীঃ নমস্কার প্রধানমন্ত্রী জি, আমি আনন্দ ভাদুড়ি, গোয়াহাটি থেকে কথা বলছি। আমি কিছুদিন আগেই দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা পাশ করেছি। আমি এখানকার লোকাল অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করতাম ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণীতে। সেখান থেকেই আমার আগ্রহ তৈরি হয়। এইটা আমার দ্বিতীয় আই.এম.ও. ছিল। আমার দুটো আই.এম.ও-ই খুব ভালো লেগেছে। রুশীল যা বলল আমি তার সাথে সম্পূর্ণ একমত। আমি এটাও বলতে চাই যে যারা Maths কে ভয় পান, তাদের একটু ধৈর্য-এর প্রয়োজন। আমাদের Maths এমন ভাবে শেখানো হয়, যেখানে একটাই ফর্মুলা মুখস্ত করিয়ে, তার ওপরই ১০০ টার মতো অঙ্ক কষে যেতে হয়। এইটা দেখা হয়না যে ফর্মুলাটা সে ঠিকমত বুঝতে পেরেছে কিনা। শুধু অঙ্ক কষতে থাকো কষতে থাকো। ফর্মুলা নাহয় মুখস্ত করলাম, যদি পরীক্ষায় গিয়ে কেউ ফর্মুলাটাই ভুলে যায় তখন কি হবে? এই কারণেই আমি বলবো ফর্মুলাটা বোঝো, যেটা রুশীল বলল, তার পর ধৈর্য সহকারে দেখ। ফর্মুলাটা ঠিকমতো বুঝে গেলে আর একশোটা Maths করতে হবে না, তখন একটা দু’টো প্রশ্নতেই হয়ে যাবে, আর Maths-কে ভয় পেতে হবে না।
প্রধানমন্ত্রীঃ আদিত্য এবং সিদ্ধার্থ, শুরুতে তোমরা যখন কথা বলছিলে তখন ভালো করে তোমাদের সাথে কথা বলা হয়নি। এখন এদের সবার কথা শোনার পর তোমাদেরও নিশ্চয়ই মনে হচ্ছে তোমরা আরো কিছু বলতে চাও। তোমাদের যা অভিজ্ঞতা, সেটা তোমরা আরো একটু বিশদে আমাদের সাথে Share করবে ?
সিদ্ধার্থঃ বিভিন্ন দেশ থেকে স্টুডেন্টরা এসেছিল। তাদের সাথে ইন্টারেক্ট করা, তাদের সাথে তাদের কালচার সম্পর্কে জানা, এই আদান-প্রদানের বিষয়টা খুব ভালো লেগেছিল এবং অনেক বিখ্যাত ম্যাথমেটিসিয়ানরাও এসেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীঃ হ্যাঁ আদিত্য ।
আদিত্যঃ খুব ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমাদেরকে বাথ শহরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সমস্ত কিছু সুন্দরভাবে ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছিল। নানারকম সুন্দর জায়গা, নানা রকম পার্ক এমনকি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়তেও আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সব মিলিয়ে খুবই সুন্দর অভিজ্ঞতা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রীঃ ঠিক আছে বন্ধুরা তোমাদের সকলের সাথে কথা বলে আমার খুব ভালো লাগলো। আমি তোমাদের সকলকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানাই।
কারণ আমি জানি যে এই ধরনের খেলার জন্য একজনকে প্রচুর focus activity করতে হয়, মস্তিষ্কের ব্যবহার করতে হয় এবং এর ফলে কখনও কখনও পরিবারের সদস্যরাও বিরক্ত হয়ে যান- ভাবেন এটা কি গুন ভাগ, গুন ভাগ করছে। কিন্তু আমি আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। তোমরা দেশের সম্মান বাড়িয়েছ, দেশের নাম উজ্জ্বল করেছ। ধন্যবাদ বন্ধুরা।
ছাত্ররাঃ Thank you, ধন্যবাদ।
প্রধানমন্ত্রীঃ ধন্যবাদ,
ছাত্ররাঃ ধন্যবাদ স্যার, জয় হিন্দ
প্রধানমন্ত্রীঃ জয় হিন্দ, জয় হিন্দ।
তোমাদের মত ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে আনন্দিত হয়েছি। মন কি বাতে যোগদান করার জন্য তোমাদের প্রত্যেককে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমি নিশ্চিত যে Maths-এর এই তরুণ বিশেষজ্ঞদের কথা শোনার পর অন্য যুবদেরও Maths-এর প্রতি আগ্রহ জন্মাবে, তারা অনুপ্রাণিত হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, মান কি বাতে এখন আমি এমন একটি বিষয় শেয়ার করতে চাই যা প্রত্যেক ভারতীয়কে গর্বিত করবে। কিন্তু এটি সম্পর্কে বলার আগে আমি আপনাকে একটি প্রশ্ন করতে চাই। আপনারা চড়াইদেউ ময়দামের নাম শুনেছেন? যদি না শুনে থাকেন তাহলে এখন বারবার শুনবেন, আর খুব উৎসাহের সঙ্গে অন্যদেরও জানাবেন। অসমের চড়াইদেউ ময়দামকে, ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই তালিকায় এটি ভারত ৪৩-তম হলেও উত্তর পূর্বের এটি প্রথম সাইট হবে।
বন্ধুরা, এই প্রশ্নটি নিশ্চয়ই আপনার মনে আসছে যে চড়াইদেউ ময়দাম কী এবং এর বৈশিষ্টই বা কি? চড়াইদেউ-এর অর্থ হলো shining city on the hills, মানে, পাহাড়ের ওপর উজ্জ্বল শহর।
এটিই ছিল অহোম রাজবংশের প্রথম রাজধানী। অহোম রাজবংশের লোক পরম্পরাগত ভাবে তাঁদের পূর্বপুরুষদের মৃতদেহ এবং তাঁদের মূল্যবান জিনিসপত্র Maidam-এ রাখতেন। Maidam হল টিলার আকৃতির একটি কাঠামো, যা উপরে মাটি দিয়ে আবৃত এবং নীচে এক বা একাধিক ঘর রয়েছে। এই Maidam অহোম সাম্রাজ্যের মৃত রাজা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক। এটি আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি সম্মান দেখানোর একটি অত্যন্ত অনন্য উপায়। এই স্থানে সামুদায়িক পূজাও হতো।
বন্ধুরা, অহোম সাম্রাজ্য সম্পর্কে অন্যান্য তথ্যও আপনাকে আরও অবাক করবে। এই সাম্রাজ্য ১৩ শতক থেকে শুরু করে ১৯ শতকের শুরু পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। এত দীর্ঘ সময়ের জন্য একটি সাম্রাজ্য স্থায়ী হওয়া একটি মহান বিষয়। সম্ভবত অহোম সাম্রাজ্যের নীতি ও বিশ্বাস এত শক্তিশালী ছিল যে, এই রাজবংশটি এতদিন ধরে রাজত্ব কায়েম রেখেছিল। আমার মনে আছে, এই বছরের ৯ই মার্চ, অদম্য সাহস এবং বীরত্বের প্রতীক, মহান অহোম যোদ্ধা লসিত বোরফুকনের সবচেয়ে উঁচু মূর্তিটি উন্মোচন করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। এই কর্মসূচি চলাকালীন, আমি অহোম সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক পরম্পরাগত ঐতিহ্য পালন করতে পেরে একটি অনন্য অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। লসিত Maidam-এ অহোম সম্প্রদায়ের উৎসবে পূর্বপুরুষদের সম্মান জ্ঞাপনের সুযোগ পাওয়া, এ আমার জন্য সৌভাগ্যের বিষয়। এখন Charaideu Maidam ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হওয়ার অর্থ এখানে আরও বেশি পরিমাণ পর্যটক আসবে। আপনিও এই সাইটটিকে আপনার ভবিষ্যত travel plans-এ অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করবেন।
বন্ধুরা, নিজেদের সংস্কৃতির ওপর গর্বিত হয়েই কোন দেশ এগিয়ে যেতে পারে। ভারতেও এই ধরনের অনেকগুলি প্রয়াস শুরু হয়েছে। এইরকমই একটি প্রয়াস - project Pari। এখন আপনি Pari শুনে confused হয়ে যাবেন না। এই Pari স্বর্গের কল্পনার সঙ্গে জড়িত নয় বরং পৃথিবীকেই স্বর্গের রূপ দেবে এই প্রোজেক্ট। PARI অর্থাৎ Public Art of India। Project Pari, public art গুলিকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য উদীয়মান শিল্পীদের এক মঞ্চে নিয়ে আসার একটি বৃহত্তম মাধ্যম হিসেবে গড়ে উঠছে। আপনি নিশ্চয়ই দেখে থাকবেন, রাস্তার ধারে, দেওয়ালে, underpass-এ খুবই সুন্দর paintings করা থাকে। এই paintings, এই ভাস্কর্য এই শিল্পীরাই নির্মাণ করেন যাঁরা সরাসরি এই pari project এর সঙ্গে যুক্ত। এতে আমাদের যেমন সার্বজনীন স্থানগুলির সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পায়, তেমনি আমাদের culture কে আরও popular করতেও সাহায্য করে৷ যেমন উদাহরণ স্বরূপ দিল্লির ভারত মন্ডপম। এখানে আপনি সারা দেশের আশ্চর্যজনক art work দেখতে পাবেন। আপনি দিল্লির কিছু আন্ডারপাস এবং ফ্লাইওভারে এই রকম সুন্দর পাবলিক আর্ট দেখতে পাবেন। আমি শিল্প ও সংস্কৃতি উৎসাহীদের public art নিয়ে আরও কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি। এটা সবসময় আমাদের শিকড় নিয়ে গর্ব করার সুখানুভূতি দেবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, 'মন কি বাত'-এ এখন কথা হবে 'রঙের' - এমন রং, যিনি হরিয়ানার রোহতক জেলার আড়াইশোরও বেশি মহিলার জীবনে সমৃদ্ধির রং ভরে দিয়েছেন। হস্ত শিল্পের সঙ্গে জড়িত মহিলারা ছোট ছোট দোকান চালিয়ে এবং ছোট ছোট কাজ করে তাঁদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। তবে সবার মনে আরও এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা তো থাকেই। তাই এঁরা সবাই ‘UNNATI সেলফ হেল্প গ্রুপে’-র সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং এই গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হয়েই তাঁরা ব্লক প্রিন্টিং এবং ডায়িং এর ট্রেনিং নেন। পোশাকে রং-এর যাদু ছড়াতে ছড়াতে আজ এই নারীরা লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। তাঁদের তৈরি বেড কভার, শাড়ি এবং ওড়নার বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
বন্ধুরা, Rohtak এর এই নারীদের মত দেশের আলাদা আলাদা অংশের কারিগরেরা হ্যান্ডলুমকে জনপ্রিয় করে তুলতে উদ্যোগী। তা সে উড়িষ্যার সম্বলপুরী শাড়ী হোক, মধ্যপ্রদেশের মাহেশ্বরী শাড়ী হোক, মহারাষ্ট্রের পৈঠানি বা বিদর্ভ এর হ্যান্ড ব্লক প্রিন্ট হোক, হিমাচল প্রদেশের ভুট্টিকোর শাল আর উলের পোশাক হোক, বা জম্মু কাশ্মীরের কনি শাল হোক। দেশের প্রত্যেকটি কোণে হ্যান্ডলুম-এর কারিগরদের কাজ ছেয়ে আছে। আর আপনারা এটাতো জানবেনই, কিছুদিন পরে ৭ই আগস্ট আমরা “ন্যাশনাল হ্যান্ডলুম ডে’’ পালন করব। আজকাল যেভাবে হ্যান্ডলুম-এর উৎপাদন মানুষের মনে নিজের জায়গা বানিয়েছে, তা সত্যিই অত্যন্ত সফল, অসাধারণ ব্যাপার। এখন তো অনেক ব্যক্তিগত মালিকানাধীন কোম্পানি AI-এর মাধ্যমে হ্যান্ডলুম উৎপাদন ও সাসটেইনেবল ফ্যাশনকে উৎসাহ প্রদান করছে। কোষা AI, Handloom India, D-Junk, Novatax, Brahmaputra Fables - এরকম অনেক স্টার্টআপ হ্যান্ডলুম প্রোডাক্টকে জনপ্রিয় করতে সচেষ্ট। আমার এটা দেখে ভালো লাগছে অনেক মানুষ তাদের নিজেদের অঞ্চলের, লোকাল প্রোডাক্টকে পপুলার বানাতে সচেষ্ট। আপনারাও আপনাদের লোকাল প্রোডাক্টকে "হ্যাশট্যাগ my product my pride" নামে সোশ্যাল মিডিয়া এ আপলোড করুন। আপনাদের এই ছোট্ট প্রয়াস, অনেক মানুষের জীবন পাল্টে দেবে।
বন্ধুরা, হ্যান্ডলুম এর সঙ্গে আমি খাদির কথাও বলতে চাই। আপনাদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন যারা আগে খাদির সামগ্রী ব্যবহার করেননি, কিন্তু আজ সগর্বে খাদি পরে থাকেন। এটা বলতেও আমার আনন্দ হচ্ছে যে প্রথমবার খাদি গ্রামোদ্যোগ-এর ব্যবসা দেড় লক্ষ কোটি টাকা পার করে গেছে। ভাবুন, দেড় লক্ষ কোটি!! আপনারা কি জানেন খাদির বিক্রি কতো বেড়েছে? ৪০০ শতাংশ। খাদি, হ্যান্ডলুম-এর এই ক্রমবর্ধমান চাহিদা, বড় মাত্রায় উপার্জনের নতুন নতুন সুযোগ তৈরি করছে। এই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে সবথেকে বেশি মহিলারা যুক্ত, তাই সবথেকে বেশি লাভ তাদেরই হচ্ছে। আমার আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ আছে, আপনাদের কাছে তো বিভিন্ন ধরনের কাপড় আছে, আর আপনারা এখনো যদি খাদির কাপড় না কিনে থাকেন, তাহলে এই বছর থেকে শুরু করুন। আগস্ট মাস এসে গেছে, এটা স্বাধীনতা অর্জনের মাস, বিপ্লবের মাস। এর থেকে ভালো সময় আর কি হবে খাদি কেনার জন্য!!
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কি বাতে’ আমি প্রায়শই ড্রাগস-এর চ্যালেঞ্জের ব্যাপারে আলোচনা করেছি। প্রত্যেক পরিবারের চিন্তা লেগে থাকে যে তাদের সন্তান যেন ড্রাগস-এর খপ্পরে না পড়ে। এখন এরকম মানুষদের সাহায্যের জন্য সরকার একটি বিশেষ কেন্দ্র খুলেছে, যার নাম 'মানস'। ড্রাগস-এর বিরুদ্ধে এটা একটা বড় পদক্ষেপ। কিছুদিন আগেই মানস-এর হেল্পলাইন আর পোর্টাল launch করা হয়েছে। সরকার থেকে একটি টোল ফ্রী নম্বর '১৯৩৩' শুরু করা হয়েছে। এতে কল করে যে কোনো জরুরী পরামর্শ নেওয়া যাবে, অথবা রিহ্যাবিলিটেশন-এর সঙ্গে যুক্ত তথ্যও পাওয়া যাবে। যদি কারো কাছে ড্রাগস সম্বন্ধীয় কোনো অন্য তথ্য থাকে তো তারা এই নম্বরে কল করে 'Narcotics Control Bureau'-এর সঙ্গে কথা বলতে পারে। 'মানস' এর সঙ্গে আলোচনা করা প্রত্যেকটি কথা গোপনীয় রাখা হয়। ভারতকে ড্রাগস ফ্রী বানাতে উদ্যোগী প্রত্যেকটি মানুষকে, প্রত্যেকটি পরিবারকে, সমস্ত সংস্থাকে আমার অনুরোধ যে মানস হেল্পলাইন এর সম্পূর্ণ ব্যবহার করুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আগামীকাল বিশ্বজুড়ে Tiger Day বা ব্যাঘ্র দিবস রূপে পালন করা হবে। ভারতে Tigers বা বাঘ আমাদের সংস্কৃতির এক অভিন্ন অংশ। আমরা সবাই বাঘ সম্পর্কিত নানান কাহিনী শুনে বড় হয়েছি। জঙ্গলের আশেপাশে অবস্থিত গ্রামের সবার জানা ছিল বাঘের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কিভাবে বাস করতে হবে। আমাদের দেশে এইরকম প্রচুর গ্রাম রয়েছে যেখানে মানুষ ও বাঘ একত্রে বাস করেও কখনো কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়নি। কিন্তু যেখানে এই সমস্যা তৈরি হয়, সেখানেও বাঘেদের সংরক্ষণের জন্য অভূতপূর্ব প্রয়াস চলছে। জনসচেতনতার এমনই এক প্রচেষ্টার নাম “Kulhari Band পঞ্চায়েত”। রাজস্থানের রণথম্বরে শুরু হওয়া “Kulhari Band পঞ্চায়েত” অভিযান খুব আকর্ষণীয়। স্থানীয় সম্প্রদায়ের সবাই নিজেরাই শপথ গ্রহণ করল যে জঙ্গলে তারা কুড়ুল নিয়ে যাবেন না ও গাছ কাটবেন না। এই একটি সিদ্ধান্তের ফলে এখানকার জঙ্গল আরও একবার সবুজ হয়ে উঠছে, এবং বাঘেদের জন্য উত্তম পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে।
বন্ধুরা, মহারাষ্ট্রের Tadoba-Andhari Tiger Reserve বাঘেদের বাসস্থানের মধ্যে অন্যতম। সেখানকার স্থানীয় সম্প্রদায়, বিশেষত: গোন্ড ও মানা জনজাতির আমাদের ভাই-বোনেরা Eco-tourism-এর দিকে দ্রুত এগিয়ে চলেছেন। তারা জঙ্গলের ওপর নিজেদের নির্ভরতা কমিয়েছেন যাতে বাঘেদের গতিবিধির বাড়বাড়ন্ত ঘটে। আপনাদের অন্ধ্রপ্রদেশের নল্লামলাই পাহাড়ে অবস্থিত চেন্চু জনজাতির মানুষজনের প্রচেষ্টাও অবাক করে দেবে। তারা Tiger trackers রূপে জঙ্গলের বন্যপ্রাণীর movement-এর তথ্য জমা করেছেন। তারই সঙ্গে, তারা এলাকায় অবৈধ গতিবিধির উপরেও নজরদারি রাখেন। এরই মতন উত্তরপ্রদেশের পিলিভিতে চলাকালীন “বাঘ মিত্র কর্মসূচী”ও ভীষণ চর্চিত। এই কর্মসূচীর অন্তর্গত স্থানীয় বাসিন্দাদের “বাঘ মিত্র” রূপে কাজ করার training দেওয়া হয়। এই বাঘ মিত্রেরা খেয়াল রাখেন মানুষ ও বাঘেদের মধ্যে সংঘর্ষের পরিস্থিতি না সৃষ্টি হয়। দেশের ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তে এই ধরনের অনেক প্রচেষ্টা চলছে। এখানে আমি কয়েকটি প্রচেষ্টা সম্পর্কে আলোচনা করলাম কিন্তু আমি আনন্দিত যে জনগণের যোগদানের ফলে বাঘেদের সংরক্ষণে খুবই কাজে দিয়েছে। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টার জন্যই ভারতে বাঘেদের সংখ্যা প্রতিবছর বেড়ে চলেছে। আপনারা জেনে খুশি হবেন ও গর্ববোধ করবেন যে বিশ্বে যত সংখ্যক বাঘ রয়েছে তার সত্তর শতাংশ বাঘ আমাদের দেশে রয়েছে। ভাবুন! সত্তর শতাংশ বাঘ! সেই জন্যই আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রান্তে অনেক Tiger Sanctuary রয়েছে।
বন্ধুরা, বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশে বনাঞ্চলের পরিমাণও খুব তাড়াতাড়ি বাড়ছে। এখানেও সামগ্রিক প্রচেষ্টার ফলে বড় সাফল্য দেখা যাচ্ছে। গত ‘মন কি বাত অনুষ্ঠানে’ আমি আপনাদের সঙ্গে ‘এক পেড় মা কে নাম’ এই কর্মসূচী নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি খুবই আনন্দিত যে দেশের বিভিন্ন অংশে অনেক মানুষ এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। এই কিছুদিন আগে স্বচ্ছতা অভিযানের জন্য বিখ্যাত ইন্দোরে একটি চমৎকার অনুষ্ঠান হয়েছে। এখানে ‘এক পেড় মাকে নাম’ এই কর্মসূচির সময়ে একদিনে দু’লাখের থেকে বেশি গাছ লাগানো হয়েছে। নিজের মায়ের নামে গাছ লাগানোর এই অভিযানে আপনারাও যুক্ত হোন এবং তার সেলফি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করুন। এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হলে আপনাদের নিজের মা এবং ধরিত্রী মা দু’জনের জন্যই কিছু বিশেষ করতে পারার অনুভূতি হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ১৫ই আগস্ট আর বেশি দিন বাকি নেই। আর এখন ১৫ ই আগস্ট -এর সঙ্গে অন্য আরেকটি কর্মসূচিও যুক্ত হয়েছে ‘হর ঘর তিরাঙ্গা’ অভিযান। গত কয়েক বছর ধরে দেখা গেছে সারা দেশে ‘হর ঘর তিরাঙ্গা’ অভিযানের জন্য সকলের উদ্দীপনা যথেষ্ট বেশি থাকে। দরিদ্র হোক বা ধনী হোক, ছোট ঘর হোক, বড় ঘর হোক প্রত্যেকেই পতাকা উড়িয়ে গর্ব অনুভব করেন। পতাকার সঙ্গে সেলফি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার ক্রেজও দেখা যায়। আপনারা লক্ষ্য করেছেন হয়তো যখন কলোনি বা সোসাইটির এক একটি ঘরে পতাকা ওড়ে তখন দেখতে দেখতে দ্বিতীয় বাড়িটাতেও পতাকা দেখা যায়। অর্থাৎ ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ অভিযান আমাদের পতাকার প্রতি গর্ববোধ করার একটা ইউনিক festival হয়ে উঠেছে। এই বিষয়টা নিয়ে তো এখন নানা ধরণের ইনোভেশনও হচ্ছে। ১৫ ই আগস্ট আসতে আসতে বাড়িতে, অফিসে, গাড়িতে, পতাকা লাগানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট দেখা যাচ্ছে। কিছু মানুষ তো পতাকা নিজেদের বন্ধু, প্রতিবেশীদের উপহার দেন। পতাকা নিয়ে এমন উল্লাস, উৎসাহ, উদ্দীপনা আমাদের একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত করে রাখে।
বন্ধুরা, আগের মত এই বছরেও আপনারা ‘হর ঘর তিরঙ্গা ডট কম’ এই ওয়েবসাইটে পতাকার সঙ্গে নিজেদের সেলফি অবশ্যই আপলোড করুন আর আমি আপনাদের আরেকটা কথাও মনে করিয়ে দিতে চাই। প্রতি বছর ১৫ই আগস্ট এর আগে আপনারা আমায় আপনাদের অনেক পরামর্শ পাঠান। এই বছরেও আপনারা আমায় নিজেদের পরামর্শ অবশ্যই পাঠান। আপনারা মাই গভ অথবা নমো অ্যাপেও নিজেদের পরামর্শ পাঠাতে পারেন। আমি ১৫ই আগস্টে নিজের বক্তৃতায় আপনাদের পাঠানো পরামর্শের বেশিরভাগটাই কভার করার চেষ্টা করব।
আমার প্রিয় দেশবাসী, মন কি বাত-এর এই এপিসোডে আপনাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে খুব ভালো লাগলো। পরেরবার আবার দেখা হবে, দেশের নতুন উপলব্ধির সঙ্গে, জনঅংশীদারিত্বের নতুন প্রচেষ্টার সঙ্গে। আপনারা মন কি বাতের জন্য আপনাদের পরামর্শ অবশ্যই পাঠাতে থাকুন। আগামী সময়ে আরো অনেক উৎসব আসতে চলেছে। আপনাদের সকল উৎসবের অনেক শুভকামনা রইল। আপনারা আপনাদের পরিবারের সঙ্গে একজোট হয়ে উৎসবের আনন্দ উপভোগ করুন। দেশের জন্য কিছু না কিছু নতুন করার শক্তি বজায় রাখুন। অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আজ চলেই এল সেই দিন যার অপেক্ষা আমরা সবাই করছিলাম সেই ফেব্রুয়ারি থেকে। আমি ‘মন কি বাত’-এর মাধ্যমে আবার আপনার মাঝে, নিজের পরিবারের মানুষদের মধ্যে এলাম। খুব সুন্দর একটা উক্তি – ‘ইতি বিদা পুনর্মিলনায়’, এর অর্থও ততটাই সুন্দর, আমি বিদায় নিচ্ছি আবার মিলিত হওয়ার জন্য। এই ভাবনা নিয়েই ফেব্রুয়ারিতে আমি আপনাদের বলেছিলাম যে নির্বাচনের ফলাফল বেরনোর পর আবার মিলিত হব, আর আজ, ‘মন কি বাত’ নিয়ে, আমি, আবার আপনাদের মধ্যে উপস্থিত হয়েছি। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন, বাড়িতে সবার স্বাস্থ্য ভালো আছে আর এখন তো বর্ষাও এসে গিয়েছে, আর যখন বর্ষা আসে, তখন মনও খুশি হয়ে ওঠে। আজ থেকে আবার, এক বার, মন কি বাতে এমন সব দেশবাসীদের নিয়ে আলোচনা করব যাঁরা নিজেদের কাজের মাধ্যমে সমাজে, দেশে পরিবর্তন আনছেন। আমরা আলোচনা করব আমাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি নিয়ে, গৌরবময় ইতিহাস নিয়ে, আর, বিকশিত ভারত গঠনের প্রয়াস নিয়ে।
বন্ধুরা, ফেব্রুয়ারি থেকে আজ অবধি, যখনই, মাসের শেষ রবিবার এগিয়ে আসত, তখন আপনাদের সঙ্গে এই আলাপ-আলোচনার অভাব বোধ হত আমার। কিন্তু আমার এটা দেখে খুব ভালোও লেগেছে যে এই মাসগুলোতে আপনারা আমাকে লক্ষ লক্ষ বার্তা পাঠিয়েছেন। ‘মন কি বাত’ বেতার অনুষ্ঠান হয়ত বন্ধ ছিল কয়েক মাস, কিন্তু, মন কি বাতের যে স্পিরিট ছড়িয়ে রয়েছে দেশে, সমাজে, প্রত্যেক দিন ভালো কাজ, নিঃস্বার্থ ভাবনা থেকে করা কাজ, সমাজের উপর সদর্থক প্রভাব ফেলা কাজ – নিরন্তর ঘটে চলেছে। নির্বাচনের খবরের মাঝে নিশ্চিতভাবে মন ছুঁয়ে যাওয়া এমন খবর পেয়েছেন আপনারা।
বন্ধুরা, আমি আজ সমগ্র দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাই কারণ তারা আমাদের সংবিধান এবং দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি নিজেদের অটুট বিশ্বাস পুনরায় বজায় রেখেছেন। ২০২৪ এর নির্বাচন বিশ্বের সর্ববৃহৎ নির্বাচন ছিল। পৃথিবীর কোন দেশে এত বড় নির্বাচন কখনো হয়নি যেখানে ৬৫ কোটি মানুষ ভোট দিয়েছেন। আমি নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি ব্যক্তিকে এর জন্য অভিনন্দন জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ ৩০শে জুনের এই দিন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনটিকে আমাদের জনজাতি ভাই বোনেরা "হুল দিবস" রূপে উদযাপন করেন। এই দিনটি বীর সিধু-কানুর অদম্য সাহসের সঙ্গে জড়িত, যারা দৃঢ়ভাবে বিদেশী শাসকদের অত্যাচারের বিরোধিতা করেছিলেন। বীর সিধু কানু হাজার হাজার সাঁওতালি সাথীদের একত্রিত করে ইংরেজদের সঙ্গে মরণপণ লড়াই করেছিলেন। আপনারা জানেন এটি কবে ঘটেছিল? ১৮৫৫ সালে, অর্থাৎ ১৮৫৭ সালের ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামেরও দু বছর আগে এটি সংঘটিত হয়। তখন ঝাড়খণ্ডের সাঁওতাল পরগনায় আমাদের জনজাতি ভাইবোনেরা বিদেশি শাসকদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল। ইংরেজরা আমাদের সাঁওতালি ভাই-বোনদের ওপর প্রভূত অত্যাচার করত। তাদের ওপর বহু নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছিল। এই লড়াইতে অবিস্মরণীয় বীরত্ব প্রদর্শন করে বীর সিধু ও কানু শহীদ হয়েছিলেন। ঝাড়খণ্ডের এই অমর ভূমিপুত্রদের আত্মবলিদান আজও দেশবাসীকে প্রেরণা যোগায়। আসুন, শোনা যাক সাঁওতালি ভাষায় এদের প্রতি সমর্পিত এক গানের অংশ -
(Audio Clip)
আমার প্রিয় বন্ধুরা যদি আমি আপনাদের জিজ্ঞাসা করি পৃথিবীতে সবচেয়ে অমূল্য সম্পর্ক কোনটি আপনারা নিশ্চয়ই বলবেন - মা। আমাদের সবার জীবনে মায়ের অবস্থান সবার উপরে। মা সব দুঃখ সহ্য করেও নিজ সন্তানদের লালন পালন করেন। প্রতিটি মা নিজের সন্তানদের ওপর সব রকম স্নেহ বর্ষণ করেন। জন্মদাত্রী মায়ের এই স্নেহ আমাদের সবার কাছে এক ঋণের মত যা কেউ পরিশোধ করতে পারে না। আমি ভাবছিলাম, আমরা মাকে কিছু দিতে তো পারি না, কিন্তু অন্য কিছু করতে পারি কি? এই ভাবনা থেকেই এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসে এক বিশেষ কর্মসূচী শুরু করা হয়েছে, যার নাম "এক পেড় মা-কে নাম" (একটি বৃক্ষ মায়ের নামে)। আমিও একটি বৃক্ষ আমার মায়ের নামে রোপণ করেছি। আমি সব দেশবাসীর কাছে, পৃথিবীর সমস্ত দেশের সব মানুষের কাছে এই আবেদন রাখছি যে, নিজের মায়ের সঙ্গে বা মায়ের নামে একটি গাছ অবশ্যই লাগান। আর আমি অত্যন্ত আনন্দিত এই দেখে যে, মায়ের স্মৃতিতে বা তাঁকে সম্মান জানিয়ে গাছ লাগানোর এই কর্মসূচি দ্রুতগতিতে অগ্রসর হচ্ছে। মানুষ নিজেদের মায়ের সঙ্গে বা তার ছবির সঙ্গে গাছ লাগানোর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করছেন। প্রত্যেকে নিজের মায়ের জন্য গাছ লাগাচ্ছেন তা তিনি ধনী হোন বা দরিদ্র, কর্মরতা মহিলা হোন বা গৃহবধূ - এই কর্মসূচি সবাইকে নিজেদের মা-দের প্রতি ভালোবাসা জানানোর সমান সুযোগ দিয়েছে। তারা নিজেদের ছবি #Plant4Mother এবং #এক_পেড়_মা_কে_নাম - এই হ্যাশট্যাগের সঙ্গে শেয়ার করে অন্যদের অনুপ্রাণিত করছেন।
বন্ধুরা, এই অভিযানে আরো একটি লাভ হবে। পৃথিবী তো মায়ের মতই আমাদের লালন করে। ধরিত্রী মাতা আমাদের সকলের জীবনের ভিত্তি-স্বরূপা, সেজন্য আমাদের'ও কর্তব্য ধরিত্রী মায়ের খেয়াল রাখা। মায়ের নামে বৃক্ষরোপন অভিযানে, মাকে সম্মান জানানো তো হবেই, তার সঙ্গে মা বসুন্ধরাকেও রক্ষা করা হবে। ভারতে, গত এক দশকে সকলের প্রচেষ্টায় বনাঞ্চলের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অমৃত-মহোৎসব চলাকালীন, দেশ জুড়ে ৬০ হাজারেরো বেশি অমৃত সরোবর খনন করা হয়েছে। এবার আমাদের সেভাবেই মায়ের নামে বৃক্ষরোপন অভিযানকে আরো দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, দেশের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে বর্ষা দ্রুত নিজের রূপ মেলে ধরছে। আর এই বৃষ্টি-বাদলের মরশুমে সবার ঘরে ঘরে যে বস্তুটির খোঁজ শুরু হয়ে গেছে, সেটি হল 'ছাতা'! 'মন কি বাতে' আজ আমি আপনাদের একটি বিশেষ ধরনের ছাতা সম্পর্কে বলতে চাই। আমাদের কেরালায় এই ধরণের ছাতা তৈরি হয়। কেরালার সংস্কৃতিতে এমনিতেও ছাতার একটা বিশেষ গুরুত্ব আছে। সেখানে ছাতা অনেক আচার অনুষ্ঠান এবং ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ; কিন্তু আমি যে ছাতার কথা বলছি তার নাম 'কার্থুম্বী ছাতা', আর এগুলো তৈরি করা হয় কেরালার অট্টাপডী-তে। এই রংবেরঙের ছাতাগুলো ভারী সুন্দর; আর এর বিশেষত্ব হলো আমাদের কেরালার পিছিয়ে পড়া জনজাতি গোষ্ঠীর (আদিবাসী) বোনেরা এই ছাতাগুলো তৈরি করেন। এখন দেশ জুড়ে এই ছাতার চাহিদা বাড়ছে। এগুলোর online বিক্রিও হচ্ছে। এই ছাতাগুলো 'বট্টালক্কী সহকারি কৃষি সোসাইটি'-র তত্ত্বাবধানে প্রস্তুত করা হয়। এই সোসাইটি পরিচালনার দায়িত্ব আমাদের নারী শক্তির হাতে। মহিলাদের নেতৃত্বে অট্টাপডীর জনজাতি গোষ্ঠীর (আদিবাসী সম্প্রদায়ের) মানুষ Entrepreneurship-এর এক অদ্ভুত দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এই society একটা 'ব্যাম্বু হ্যান্ডিক্রাফট ইউনিট'-ও তৈরি করেছে। এখন তাঁরা একটা retail outlet আর একটি ঐতিহ্যবাহী cafe খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এদের উদ্দেশ্য কেবল নিজেদের ছাতা ও অন্যান্য উৎপাদন বিক্রি করা নয়। এরা নিজেদের পরম্পরা ও সংস্কৃতির সঙ্গে গোটা বিশ্বকে পরিচয় করাতে চায়। আজ কার্থুম্বি ছাতা কেরালার একটা ছোট্ট গ্রাম থেকে multinational company হয়ে ওঠার সফর সম্পূর্ণ করছে। লোকালের জন্য ভোকাল হওয়ার এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কি হতে পারে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আগামী মাসে এই সময়ে Paris Olympic শুরু হয়ে যাবে। আমার বিশ্বাস আপনারা সকলে Olympics এ ভারতীয় খেলোয়াড়দের উৎসাহ বাড়ানোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। আমি ভারতীয় দলকে Olympics er জন্য অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। আমাদের সবার মনে Tokyo Olympics এর স্মৃতি এখনো তাজা। Tokyo তে ভারতীয় খেলোয়াড়দের প্রদর্শন আমাদের সকলের মন জয় করে নিয়েছিল। Tokyo Olympics এর পর আমাদের athletes, Paris Olympics-এর খেলোয়াড়রা মনপ্রাণ দিয়ে অনুশীলনে ব্যস্ত ছিলেন। সব খেলোয়াড়দের ধরে হিসেব করলে সবাই মিলে প্রায় nine hundred - ৯০০ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন। এটা একটা বৃহৎ সংখ্যা।
বন্ধুরা প্যারিস অলিম্পিকসে কিছু জিনিস প্রথমবার দেখা যাবে। শুটিংয়ে আমাদের খেলোয়ারদের প্রতিভা বিশেষভাবে চোখে পড়ছে। টেবিল টেনিসে পুরুষ ও মহিলা দু’টি টিমই কোয়ালিফাই করে গেছে ইতিমধ্যেই। ভারতীয় শটগান টিমে আমাদের শুটার মহিলারাও অন্তর্ভুক্ত আছেন । কুস্তি ও ঘোড় সওয়ারীতে আমাদের ভারতীয় খেলোয়াড়রা এমন কিছু ক্যাটাগরিতে এইবার কমপিট করবেন যেখানে এর আগে কখনো তারা সামিল হননি। আপনারা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন এবারের অলিম্পিকসে এক অন্য লেবেলের রোমাঞ্চ চোখে পরবে। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে থাকবে কিছু মাস আগে ওয়ার্ল্ড প্যারা অলিম্পিকসে আমাদের বেস্ট পারফরম্যান্স হয়েছিল। চেস ও ব্যাডমিন্টন খেলাতেও আমাদের খেলোয়াড়রা জয়ের পতাকা উড়িয়েছেন। এখন গোটা দেশ এটাই প্রার্থনা ও প্রত্যাশা করছে যে অলিম্পিকসেও আমরা খুব ভালো পারফরম্যান্স করি। এই খেলাগুলিতে আমরা মেডেলও জিতবো, দেশবাসীর মনও জিতবো। আসন্ন কয়েকদিনের মধ্যে ভারতীয় দলের সঙ্গে আলাপ হওয়ার সুযোগও আমার হবে। আমি আপনাদের তরফ থেকে তাদের অবশ্যই আরও উৎসাহ দেব। ও হ্যাঁ এবার আমাদের হাসট্যাগ হল #cheer4bharat। এই হাসট্যাগ-এর মাধ্যমে আমাদের ভারতীয় খেলোয়ারদের উৎসাহ বাড়াতে হবে তাদের চিয়ার করতে হবে। এই মোমেন্টাম বজায় রাখতে হবে। আপনাদের এই মোমেন্টাম ভারতের ম্যাজিক কে পৃথিবীর সামনে নিয়ে আসতে সাহায্য করবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি আপনাদের সবার জন্য একটি ছোট অডিও ক্লিপ play করছি।
(Audio Clip-কুয়েত)
এই রেডিও অনুষ্ঠানটি শুনে আপনিও অবাক হয়েছেন, তাই না? তাহলে আসুন আপনাদের এর প্রেক্ষাপটটি বলি। আসলে এটি কুয়েত রেডিওর একটি অনুষ্ঠানের ক্লিপ।
এখন আপনি ভাবতেই পারেন যেখানে কুয়েতের কথা হচ্ছে, সেখানে হিন্দি কোথা থেকে এলো? আসলে, কুয়েত সরকার তার ন্যাশনাল রেডিওতে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান শুরু করেছে, তাও আবার হিন্দিতে। এটি কুয়েত রেডিওতে প্রতি রবিবার আধ ঘন্টার জন্য সম্প্রচারিত হয়। এতে ভারতীয় সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। আমাদের চলচ্চিত্র ও কলা জগতের সস্পর্কিত খবরাখবর সেখানে বসবাসকারী ভারতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে খুব জনপ্রিয়। আমাকে এও বলা হয়েছে, কুয়েতের স্থানীয় জনগণও এতে ব্যাপক আগ্রহ প্রকাশ করছেন। আমি কুয়েত সরকার ও সেখানকার জনগণকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই, যারা এই অভিনব উদ্যোগটি নিয়েছেন।
বন্ধুরা, সারা বিশ্বে যেভাবে আমাদের সংস্কৃতিকে মহিমান্বিত করা হচ্ছে তাতে কোন ভারতীয় খুশি হবেন না? যেমন ধরুন, এই বছরের মে মাসে তুর্কমেনিস্তানের জাতীয় কবির ৩০০তম জন্মবার্ষিকী পালিত হল। এই উপলক্ষে তুর্কমেনিস্তানের রাষ্ট্রপতি বিশ্বের ২৪ জন বিখ্যাত কবির মূর্তি উন্মোচন করেন। এই মূর্তিগুলির মধ্যে একটি, গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। এটি গুরুদেবের সম্মান এবং ভারতের সম্মান। একইভাবে, জুন মাসে, দু’টি ক্যারিবিয়ান দেশ, সুরিনাম এবং সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রেনাডিন্স, Indian Heritage-কে পূর্ণ উদ্যম এবং উৎসাহের সঙ্গে উদযাপন করে। প্রতি বছর ৫ই জুনকে Indian Arrival Day এবং প্রবাসী দিবস হিসেবে পালন করেন সুরিনামে বসবাসকারী ভারতীয়রা। এখানেতো হিন্দির সঙ্গে ভোজপুরী ভাষাও প্রচলিত। সেন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রেনাডিন্সে বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভাই-বোনদের সংখ্যা প্রায় ৬০০০। তাঁরা সবাই তাঁদের ঐতিহ্য নিয়ে খুব গর্বিত। ১লা জুন, তারা সকলে যে উৎসাহ ও আড়ম্বরের সঙ্গে Indian Aarrival Day উদ্যাপন করেছে, তা তাদের অনুভূতির সুস্পষ্ট প্রতিফলন। যখন সারা বিশ্বে ভারতীয় ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির প্রসার ঘটে, তখন প্রত্যেক ভারতবাসী গর্ববোধ করেন।
বন্ধুরা, সারা বিশ্ব, এই মাসে, দশম যোগ দিবস উদযাপন করেছে, পূর্ণ উদ্যম এবং উদ্দীপনার সঙ্গে। জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আয়োজিত যোগ কর্মসূচিতে আমিও অংশ নিয়েছিলাম। কাশ্মীরের যুবকদের পাশাপাশি মা ও বোনেরাও যোগ দিবসে উৎসাহের সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন।
যোগ দিবসের আয়োজন যতই এগিয়ে চলেছে, ততই নতুন নতুন record তৈরি হচ্ছে। সারা বিশ্বে যোগ দিবসে প্রভূত সাড়া পাওয়া গেছে। সৌদি আরবে প্রথমবার একজন মহিলা আল হানোফ সাদজী Common Yoga Protocol কে lead করেছেন। এই প্রথম কোনো সৌদি নারী কোন main yoga session এ instruct করলেন। Egypt-এ এই বছর যোগ দিবসে একটি photo competition এর আয়োজন করা হয়েছিল । নীল নদের তীরে, red sea এর beaches এ এবং পিরামিডের সামনে- যোগব্যায়াম করছে, এমন লক্ষাধিক লোকের ছবি খুব জনপ্রিয় হয়েছে। আমাদের marbel budhha statue এর জন্য প্রসিদ্ধ মায়ানমারের মারাউইজায়া প্যাগোডা কমপ্লেক্স, সারা বিশ্বে বিখ্যাত। এখানেও ২১শে জুন একটি চমৎকার Yoga session er আয়োজন করা হয়েছিল। বাহরিনে বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের জন্য একটি special camp এর আয়োজন করা হয়েছিল। শ্রীলঙ্কায় UNESCO Heritage Site এর জন্য বিখ্যাত গাল ফোর্টেও একটি স্মরণীয় Yoga session হয়েছিল। আমেরিকার নিউইয়র্কের অবজারভেশন ডেকেও মানুষ যোগব্যায়াম করেছে। মার্শাল আইল্যান্ডে প্রথমবারের মতো বৃহৎ পরিসরে আয়োজিত যোগ দিবসের কর্মসূচিতেও রাষ্ট্রপতি অংশগ্রহণ করেছেন। ভুটানের থিম্পুতে একটি বড় যোগ দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে আমার বন্ধু প্রধানমন্ত্রী তোবগে অংশগ্রহণ করেন। অর্থাৎ, বিশ্বের প্রতিটি কোণে কোণে যোগব্যায়াম অনুশীলনকারী মানুষের নান্দনিক দৃশ্য মত আমরা সবাই দেখতে পেয়েছি। যোগ দিবসে অংশগ্রহণকারী সকল বন্ধুদের প্রতি আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমার আপনাদের প্রতি একটা পুরনো আগ্রহ ব্যক্ত করার আছে। আমাদের যোগব্যায়ামকে শুধুমাত্র একদিনের অনুশীলন অভ্যাসে পরিণত করলে হবে না। আপনি নিয়মিত যোগব্যায়াম করবেন। এর মাধ্যমে আপনি অবশ্যই আপনার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন অনুভব করবেন।
বন্ধুরা, ভারতের অনেক products রয়েছে যেগুলির সারা বিশ্বে প্রচুর demand রয়েছে এবং আমরা যখন ভারতের কোনও local product কে global হতে দেখি, তখন গর্বিত হওয়া স্বাভাবিক। এরকম একটি product হল আরাকু কফি। আরাকু কফি, অন্ধ্রপ্রদেশের আল্লুরি সীতা রাম রাজু জেলায় প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয় । এটি তার rich flavour এবং aromar জন্য প্রসিদ্ধ। প্রায় দেড় লাখ জনজাতি পরিবার আরাকু কফি বাগানের ওপর নির্ভরশীল। গত কয়েকদিনে আরাকু কফির চাষকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোয় গিরিজান cooperative এর বড়ো ভূমিকা রয়েছে । তিনি এক বছর ধরে এখানকার কৃষক ভাই-বোনদের জন্য বাগানের কাজ করছেন এবং তাদের আরাকু কফি চাষে উৎসাহিত করেছেন। এই কারণে এইসব কৃষকের আয়ও বহুগুণ বেড়েছে। কোন্ডাডোরা জনজাতি সম্প্রদায়ও এর থেকে অনেক উপকৃত হয়েছে। রোজগারের পাশাপাশি সম্মানের জীবনও পাচ্ছেন তাঁরা। আমার মনে আছে একবার আমি অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুজীর সঙ্গে বিশাখাপত্তনমে এই কফির স্বাদ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। এর টেস্ট নিয়ে কোন প্রশ্ন নয়! অসাধারণ হয় এই কফি! আরাকু কফি অনেক Global Aawards পেয়েছে। দিল্লিতে আয়োজিত G-20 সম্মেলনেও এই কফি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সুযোগ পেলেই আপনারাও আরাকু কফি উপভোগ করবেন।
বন্ধুরা, লোকাল প্রোডাক্ট কে গ্লোবাল বানাতে আমাদের জম্মু কাশ্মীরের মানুষেরাও পিছিয়ে নেই।বিগত মাসে জম্মু কাশ্মীর যা করে দেখিয়েছে, তা সমগ্র দেশের জন্য একটা উদাহরণ।এখানকার পুলওয়ামার স্নো peas এর প্রথম উৎপাদন লন্ডন পাঠানো হয়েছে।কিছু মানুষের এই বুদ্ধির উদ্রেক হয় যে কাশ্মীরে উৎপন্ন হওয়া এক্সোটিক vegetables গুলিকে দুনিয়ার মানচিত্রে নিয়ে আসা হোক.. ব্যাস তারপর আর কি.... চাকুরা গ্রামের আব্দুল রশিদ মীরজি-এর জন্য সকলের আগেই এগিয়ে এসেছিলেন। উনি গ্রামের অন্য কৃষকদের জমি নিয়ে একসঙ্গে চাষ করার কাজ শুরু করেছিলেন এবং দেখতে দেখতে স্নো পিজ লন্ডন পর্যন্ত পৌঁছোতে শুরু করে। এই সাফল্য জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের উন্নতির ক্ষেত্রে নতুন দিশা দেখায়। আমাদের দেশে এমন অভিনব পণ্যের অভাব নেই। আপনারা এমন প্রোডাক্ট-এর কথা #myproductsmypride এর সঙ্গে অবশ্যই শেয়ার করুন। আমি এই বিষয়ে আগামী মন কি বাতেও আলোচনা করব।
(Audio Clip)
মম প্রিয়াঃ দেশবাসীনঃ।
অদ্য অহং কিঞ্চিৎ চর্চা সংস্কৃত ভাষায়াং আরভে।
আপনারা ভাবছেন যে মন-কি-বাত্ অনুষ্ঠানে হঠাৎ সংস্কৃত বলছি কেন আমি? এর কারণ আজ সংস্কৃত ভাষার সঙ্গে যুক্ত একটি বিশেষ দিন। আজ ৩০শে জুন আকাশবাণীর সংস্কৃত বুলেটিন তার সম্প্রচারের ৫০ বছর পূর্ণ করছে। ৫০ বছর ধরে ক্রমাগত এই বুলেটিন অনেক মানুষকে সংস্কৃত ভাষার সঙ্গে যুক্ত করে রেখেছে। আমি অল ইন্ডিয়া রেডিও পরিবারকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
বন্ধুরা সংস্কৃত ভাষা ভারতের প্রাচীন জ্ঞান এবং বিজ্ঞানের উন্নতির ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছে। এটা বর্তমান সময়ের দাবি যে আমরা সংস্কৃত ভাষাকে সম্মান করব এবং একে নিজেদের প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গেও যুক্ত করব। আজকাল ব্যাঙ্গালুরুর কিছু মানুষ এমনই এক প্রচেষ্টায় মেতেছেন। বেঙ্গালুরুতে একটি পার্ক রয়েছে-কব্বান পার্ক। এই পার্কে এখানকার লোকেরা এক নতুন প্রথা শুরু করেছেন। এখানে সপ্তাহে একদিন, প্রতি রবিবার শিশু, যুবক-যুবতী এবং বয়স্করা নিজেদের মধ্যে সংস্কৃত ভাষায় কথা বলেন। শুধু তাই নয় এখানে তর্ক-বিতর্কের বিভিন্ন সেশন সংস্কৃত ভাষায় আয়োজন করা হয়।
এঁদের এই উদ্যোগের নাম – সংস্কৃত উইকএণ্ড। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সমষ্টি গুব্বির সদস্যরা শুরু করেছিল এটা। মাত্র কিছু দিন আগে শুরু হওয়া এই উদ্যোগ দেখতে-দেখতে বেঙ্গালুরুবাসীর কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যদি এমন সব উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হই আমরা তবে বিশ্বের এত প্রাচীন ও বৈজ্ঞানিক ভাষা থেকে অনেক কিছু শিখতে পারব।
আমার প্রিয় দেশবাসী, মন কি বাতের এই পর্বে আপনাদের সঙ্গে যোগ দিতে পেরে ভালো লাগছে। এবার এই ধারা আবার আগের মত চলতে থাকবে। এখন থেকে এক সপ্তাহ পরে পবিত্র রথযাত্রা শুরু হচ্ছে। আমার কামনা, মহাপ্রভু জগন্নাথের কৃপা সর্বদা থাকুক দেশবাসীর উপর। অমরনাথ যাত্রাও শুরু হয়েছে, আর আগামী কয়েক দিনে পণ্ডরপুর ওয়ারি-ও শুরু হতে চলেছে। এই সব যাত্রায় সামিল সব ভক্তদের শুভকামনা জানাই আমি। এর পর কচ্ছী নববর্ষ – আষাঢ়ী বীজ উৎসবও রয়েছে। এই সব পরব-উৎসবের জন্যও আপনাদের অনেক শুভাকামনা জানাই। আমার বিশ্বাস সদর্থক চিন্তার সঙ্গে যুক্ত জনগণের অংশগ্রহণের এই সব উদ্যোগ আপনারা অবশ্যই আমার সঙ্গে ভাগ করে নেবেন। আমি পরের মাসে আবার আপনাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার প্রতীক্ষায় থাকব। ততদিন অবধি নিজের ও নিজের পরিবারের খেয়াল রাখুন। অনেক-অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। মন কি বাতের ১১০ তম পর্বে আমি আপনাদের স্বাগত জানাই। প্রত্যেক বারের মতো এবারও আমরা আপনাদের অনেক পরামর্শ, ইনপুটস এবং কমেন্টস পেয়েছি। আর প্রতিবারের মতোই এবারও কোন্ কোন্ বিষয়কে এপিসোডে অন্তর্ভুক্ত করা হবে তা ঠিক করা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। আমি পজিটিভিটিতে ভরপুর, একে অন্যকে টেক্কা দেয় এমন বহু ইনপুট পেয়েছি। তাতে এমন অনেক দেশবাসীর কথা আছে যাঁরা অন্যদের কাছে আশার আলো হয়ে তাদের জীবন উন্নততর করার কাজে যুক্ত।
বন্ধুরা, কিছুদিন পরেই ৮ই মার্চ আমরা মহিলা দিবস উদযাপন করব এই বিশেষ দিনটি দেশের বিকাশ যাত্রায় নারী শক্তির অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ দেয়। মহাকবি ভারতীয়ারজি বলেছেন, বিশ্ব তখনই সমৃদ্ধ হবে যখন নারীরা সমান সুযোগ পাবে। আজ ভারতের নারী শক্তি প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রগতির নতুন শিখর স্পর্শ করছে। কিছু বছর আগে পর্যন্ত কে ভেবেছিল যে আমাদের দেশের গ্রামীণ মহিলারাও ড্রোন ওড়াবেন! কিন্তু আজ তা সম্ভব হচ্ছে। আজ তো গ্রামে গ্রামে ‘ড্রোন দিদির’ বিষয়ে এতটাই চর্চা হচ্ছে, যে সকলের মুখে মুখে ‘নমো ড্রোন দিদি’, ‘নমো ড্রোন দিদি’ এই ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। প্রত্যেকে তার বিষয়ে আলোচনা করছেন। এক বিরাট বড় প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। আর তাই আমিও ভাবলাম যে এবারের ‘মন কি বাতে’ এক নমো ড্রোন দিদির সঙ্গে কথা বলা যাক। আমাদের সঙ্গে এই মুহূর্তে নমো ড্রোন দিদি সুনীতা জি রয়েছেন যিনি উত্তরপ্রদেশের সীতাপুরের বাসিন্দা। আসুন তার সঙ্গে কথা বলি।
মোদী জি: সুনীতা দেবীজী, নমস্কার।
সুনীতা দেবী: নমস্কার, স্যার।
মোদীজি: আচ্ছা সুনীতা জি, প্রথমে আমি আপনার সম্বন্ধে জানতে চাইব, আপনার পরিবার সম্বন্ধে জানতে চাইব। একটু কিছু বলুন।
সুনীতা দেবী: স্যার, আমার পরিবারে দুটি বাচ্চা, আমি, আমার স্বামী এবং আমার মা আছেন।
মোদীজি: আপনি কত দূর পড়াশোনা করেছেন সুনীতা জি?
সুনীতা দেবী: স্যার বি.এ. ফাইনাল।
মোদীজি: আর ঘরে কী কী কাজকর্ম করেন?
সুনীতা দেবী: চাষবাস, ক্ষেতি জমি এই সব কাজকর্ম করি স্যার।
মোদীজি: আচ্ছা সুনীতা জি, আপনার ড্রোন দিদি হওয়ার যে যাত্রা সেটা কিভাবে শুরু হলো? আপনি ট্রেনিং কোথায় পেলেন, কীভাবে কী কী পরিবর্তন এলো, আমাকে শুরু থেকে বলুন।
সুনীতা দেবী: হ্যাঁ স্যার, ট্রেনিং আমাদের ফুলপুর IFFCO কোম্পানিতে হয়েছিল, এলাহাবাদে। ওখান থেকে আমি ট্রেনিং পেয়েছিলাম।
মোদীজি: সেই সময় আপনি ড্রোনের বিষয়ে শুনেছিলেন কখনো?
সুনীতা দেবী: স্যার, আগে শুনিনি কখনও, কিন্তু, একবার এরকম দেখেছিলাম; কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র, যেটা সিতাপুরে আছে, ওখানে আমরা প্রথমবার ড্রোন দেখেছিলাম।
মোদিজি: সুনীতাজী, আমাকে এটা বুঝতে হবে। যে আপনি ওখানে প্রথমদিন গিয়েছিলেন ।
সুনীতা: হ্যাঁ স্যার
মোদীজী: প্রথমদিন হয়তো আপনাকে ড্রোন দেখানো হয়েছিলো, এরপর বোর্ডে কিছু পড়ানো হয়েছিলো, কাগজেও কিছু হয়তো পড়ানো হয়েছিলো, এরপর মাঠে নিয়ে গিয়ে প্র্যাকটিস , এরকম কি কী হয়েছে, আমাকে সম্পুর্নরূপে বর্ণনা করে বোঝাতে পারবেন কি?
সুনীতা দেবী: হ্যাঁ হ্যাঁ, স্যার। প্রথমদিন আমরা সবাই গেলাম। তারপরের দিন থেকে ট্রেনিং শুরু হল। প্রথমে তো থিওরি পড়ানো হলো, এরপর ক্লাস হলো দু’দিন। ক্লাসে ড্রোনে কি কি পার্ট আছে, কিভাবে আপনাকে কি কি করতে হবে, এই সবকিছু থিওরিতে পড়ানো হয়েছিল। তৃতীয় দিন স্যার, আমাদের পরীক্ষা হয়েছিল। এরপর স্যার, আবারও একটা কম্পিউটারে পরীক্ষা হলো। অর্থাৎ, প্রথমে ক্লাস হলো, তারপর টেস্ট নেওয়া হলো। এরপর আমাদের আবারও প্র্যাক্টিক্যাল করানো হলো। অর্থাৎ, ড্রোন কিভাবে উড়াতে হয়, কিভাবে ওকে কন্ট্রোল করতে হয়, চালাতে হয়, সবকিছু শেখানো হয়েছিল প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাসে।
মোদীজী: এরপর বলুন, ড্রোন কি কি কাজ করবে, সেটা কিভাবে শেখানো হলো।
সুনীতা দেবী: স্যার, ধরুন, তখন ক্ষেতে ফসল বড় হচ্ছিল। বর্ষার মরশুম তখন। বৃষ্টির মধ্যে ক্ষেতে ঢুকে ফসল দেখা খুব মুশকিলের। ড্রোনকে এক্ষেত্রে ক্ষেতের মধ্যে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে সব দেখাও যাবে, আর চাষীকে ক্ষেতে ঢুকতেও হবেনা। নিজেদের ক্ষেতে মজুর লাগিয়ে যে কাজ আমাদের করাতে হতো, মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে ড্রোনের মাধ্যমে খুব সহজেই সেই কাজ আমরা করে ফেলতে পারছি। ক্ষেতের মধ্যে কোনো পোকামাকড় থাকলে আমরা এক্ষেত্রে সাবধান হয়ে যেতে পারছি, আর, কৃষকভাইদেরও তাই, ব্যপারটা খুবই ভালো লাগছে। স্যার, এভাবে আমরা ৩৫ একর জমি স্প্রে করেছি এখনও পর্যন্ত।
মোদি জি: তাহলে কৃষক ভাইয়েরা বুঝতে পারছেন যে এর লাভ আছে।
সুনিতা দেবী: হ্যাঁ, স্যার। কৃষক ভাইরা খুবই সন্তুষ্ট হয়েছেন আর বলছেন যে তাদের ভীষণ ভালো লাগছে। সময়েরও সাশ্রয় হচ্ছে সব রকমের সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। জল, ওষুধ সবকিছু নিজের সঙ্গে রাখি, আমাদেরকে এসে শুধু দেখিয়ে দিতে হয় যে কোথা থেকে কোথা অব্দি আমাদের জমি। সব কাজ আধ ঘন্টার মধ্যে সেরে ফেলা যায়।
মোদি জি: তাহলে এই ড্রোন দেখার জন্য নিশ্চয়ই আরো অনেকে আসে।
সুনিতা দেবী: স্যার অনেক ভিড় হয়। ড্রোন দেখার জন্য অনেক মানুষ একত্রিত হন। যারা বড় মাপের কৃষক তারা আমাদের ফোন নাম্বারও নিয়ে যায় তাদের জমিতে ড্রোনের মাধ্যমে spray করার জন্য।
মোদি জি: আমার জীবনের এক অন্যতম লক্ষ্য হলো ‘লাখপতি দিদি’ গড়ে তোলা, আজ যদি দেশের বোনেরা এই পর্বটি শুনছেন তাহলে জেনে রাখুন, আজ প্রথমবার এক ড্রোন দিদি আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন। এই প্রসঙ্গে আপনি কি বলতে চান।
সুনিতা দেবী: আজ যেরকম আমি একা ড্রোন দিদি বলে পরিচিতি পেয়েছি এরকম ভাবেই হাজার হাজার বোনেরা এগিয়ে আসুন আর আমার মতন ড্রোন দিদি তারাও হন আর আমি ভীষণ খুশি হব যখন দেখবো আমার একার সঙ্গে আরো হাজার হাজার বোনেরা আমার সঙ্গে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, তখন খুব ভালো লাগবে এটা ভেবে যে আমি একা নই আমার সঙ্গে বহু মহিলারা ‘ড্রোন দিদি’ নামে পরিচিতি পাচ্ছেন ।
মোদি জি: সুনিতা দেবী। আমার তরফ থেকে আপনাকে জানাই অভিনন্দন। ‘NaMo ড্রোন দিদি’ দেশের কৃষি কার্যকে আধুনিক বানানো কাজে, একটি গুরুতপূর্ণ মাধ্যাম হিসাবে কাজ করছে। আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।
সুনিতা দেবী: Thank you Thank you Sir
মোদি জি : Thank you
বন্ধুরা, আজ দেশে এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে নারী শক্তির প্রভাব পড়েনি। এমন আরেকটি ক্ষেত্র যেখানে মহিলারা নিজেদের উৎকৃষ্ট মানের নেতৃত্বের ক্ষমতা দেখিয়েছেন তা হল - প্রাকৃতিক কৃষি কার্য, জল সংরক্ষণ আর স্বচ্ছতা। রাসায়ানিক প্রয়োগের ফলে আমাদের ধরিত্রী মার যে কষ্ট হচ্ছে, পীড়া হচ্ছে, বেদনা হচ্ছে, সেখানে ধরিত্রী মাকে বাচাঁতে আমাদের দেশের মাতৃশক্তি একটি বড় ভূমিকা পালন করছেন। দেশের কোনায় কোনায় মহিলারা এখন প্রাকৃতিক কৃষিকার্যকে আরো ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
আজ যদি দেশে 'জল জীবন মিশন'-এর দরুন এত কাজ করা সম্ভবপর হচ্ছে তার পিছনে জল সমিতিগুলোর অনেক বড় ভূমিকা আছে। এই জল সমিতিগুলোর নেতৃত্বে মহিলারাই আছেন। এছাড়াও আমাদের মেয়ে, বোনেরা জল সংরক্ষণের জন্য চারিদিকে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমার সঙ্গে ফোন লাইনে এমনই একজন মহিলা আছেন, তিনি কল্যাণী প্রফুল্ল পাটিলজি। ইনি মহারাষ্ট্রে থাকেন। আসুন কল্যাণী প্রফুল্ল পাটিলজির সঙ্গে কথা বলে ওনার অভিজ্ঞতা শুনি।
প্রধানমন্ত্রী জি: কল্যাণী জি নমস্কার।
কল্যাণী জি: নমস্কার স্যার, নমস্কার।
প্রধান মন্ত্রী জি: কল্যাণী জি, প্রথমেই আপনি আপনার সম্বন্ধে, আপনার পরিবার আর আপনার কাজ সম্বন্ধে কিছু জানান।
কল্যাণী জি: স্যার, আমি Microbiology-তে এম.এস.সি. করেছি, আর আমার ঘরে আমার স্বামী, শ্বাশুড়ি আর আমার দুই সন্তান আছে। আর তিন বছর ধরে আমি আমাদের গ্রাম পঞ্চায়েতে কাজ করছি।
প্রধানমন্ত্রী জি: আর তারপরেই গ্রামে কৃষিকাজে লেগে গেলেন? কারণ আপনার কাছে basic knowledge-ও আছে, আপনার পড়াশোনাও এই বিষয়ে হয়েছে, আর এখন আপনি চাষবাসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, এখন কি কি নতুন পরীক্ষা করেছেন আপনি?
কল্যাণী জি: স্যার, আমরা, যে দশ রকমের বনস্পতি হয় তাদের একত্রিত করে একটি অর্গানিক spray বানিয়েছি। আমরা ফসলে যে pesticide ইত্যাদি spray করি তাতে আমাদের বন্ধু কীট ও নষ্ট হয়ে যায়, আর আমাদের মাটি ও দূষিত হয়। উপরন্তু আমাদের জলেও এই ক্ষতিকারক রাসায়নিক মিশে আমাদের শরীরেরও ক্ষতি সাধন করছে। তাই আমাদের যতটা সম্ভব কম pesticide ব্যবহার করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী জি: তাহলে আপনি একপ্রকার পুরোপুরি প্রাকৃতিক কৃষিকার্য অর্থাৎ জৈব চাষের দিকে এগোচ্ছেন।
কল্যাণী জি: হ্যাঁ, আমাদের যে ঐতিহ্যবাহী কৃষিপদ্ধতি রয়েছে, আমরা সেই অনুযায়ীই গত বছর সব করেছিলাম, স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জি: জৈব পদ্ধতিতে কৃষিকাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
কল্যাণী জি: স্যার আমাদের মহিলাদের কৃষিকার্য-এর পেছনে যে খরচ হয় সেটা কম হয়েছে, আর Sir একটা সমাধান হিসাবে without pest এই product আমরা পেয়েছি। কারণ এখন cancer-এর প্রকোপ যেভাবে বাড়ছে, শহরে তো বটেই এমনকি আমাদের গ্রামেও যেভাবে ঘটনা বাড়ছে, তাতে যদি আপনি নিজের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে চান তাহলে এই পথ আপনাকে বেছে নিতেই হবে; সেই কারণেই মহিলারাও এক্ষেত্রে সক্রিয় ভাবে তাদের অংশীদারিত্ব পালন করছেন।
প্রধানমন্ত্রী জি: আচ্ছা কল্যাণী জী আপনি কি জলসংরক্ষণ নিয়েও কিছু কাজ করেছেন? সেখানে আপনি কি করেছেন?
কল্যানী জি: স্যার Rainwater Harvesting; আমাদের সরকারি যত বাড়িঘর আছে যেমন-- প্রাথমিক বিদ্যালয়, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, গ্রাম পঞ্চায়েতের যে building, সেই সমস্ত জায়গা থেকে বৃষ্টির জল এক জায়গায় collect করা হয়েছে, সেটা একটা recharge shaft স্যার, কারণ বৃষ্টির জল মাটিতে পড়ার পর, মাটির ভেতরে চুঁইয়ে যাওয়া অর্থাৎ Percolate হওয়া উচিত। সেই ভাবনা থেকে আমরা ২০টা recharge shaft আমাদের গ্রামের ভেতর তৈরি করেছি, আরো 50টা recharge shaft-এর sanction হয়ে গেছে। খুব তাড়াতাড়ি সেই কাজ শুরু হবে।
প্রধানমন্ত্রী জি: আচ্ছা কল্যাণীজি, আপনার সঙ্গে কথা বলে খুব ভালো লাগলো। আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
কল্যানী জি: স্যার, আপনাকে ধন্যবাদ স্যার, আমিও আপনার সঙ্গে কথা বলে খুব খুশি। মানে, আমি বিশ্বাস করি যে আমার জীবন সম্পূর্ণরূপে সার্থক হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জি: শুধু সেবা করুন।
প্রধানমন্ত্রী জি: দেখুন, আপনার নামই যখন কল্যাণী, তখন আপনি তো কল্যাণ করবেনই। ধন্যবাদ, নমস্কার।
কল্যানী জি: ধন্যবাদ স্যার, ধন্যবাদ।
বন্ধুরা, সুনীতাজী হোন বা কল্যাণীজী, বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীশক্তির সাফল্য খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক। আমি আবার আমাদের নারী শক্তির এই spiritকে হৃদয় থেকে সাধুবাদ জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ আমাদের জীবনে প্রযুক্তির গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। মোবাইল ফোন এবং ডিজিটাল গ্যাজেট আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু আপনি কি জানেন যে ডিজিটাল গ্যাজেটের সাহায্যে আমরা এখন বন্য প্রাণীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম হয়েছি? কয়েকদিন পর, ৩ মার্চ, বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস পালিত হবে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের বিষয়ে সচেতনতা ছড়ানোর লক্ষ্যেই এই দিনটি পালিত হয়। এ বছর, বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবসের theme-এ ডিজিটাল উদ্ভাবনকে সর্বাগ্রে রাখা হয়েছে। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য, প্রযুক্তিকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকারের প্রচেষ্টায়, গত কয়েক বছরে, দেশে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। মহারাষ্ট্রের চন্দ্রপুরের টাইগার রিজার্ভে বাঘের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আড়াইশোরও বেশি। চন্দ্রপুর জেলায় মানুষ ও বাঘের সংঘর্ষ কমাতে artificial Intelligence-এর সাহায্য নেওয়া হয়েছে। সেখানে, গ্রাম ও বনের সীমান্তে ক্যামেরা বসানো হয়েছে। যখনই কোনও বাঘ গ্রামের কাছাকাছি আসে, তখনই artificial Intelligence অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে স্থানীয় লোকেদের মোবাইলে একটি alert আসে (সতর্কবার্তা আসে)। আজ এই টাইগার রিজার্ভের আশেপাশের তেরোটি গ্রামে, এই ব্যবস্থা মানুষকে অনেক সুবিধা করে দিয়েছে এবং বাঘের নিরাপত্তার সুনিশ্চিত হয়েছে।
বন্ধুরা, আজ তরুণ অন্ত্রপ্রেনাররা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং ইকো-ট্যুরিজমের জন্য নতুন নতুন ইনোভেশন সামনে আনছেন। উত্তরাখণ্ডের রুরকিতে, ওয়াইল্ডলাইফ ইন্সটিটিউট অফ ইন্ডিয়ার সহযোগিতায় রোটোর প্রিসিশন গ্রুপস এমন একটি ড্রোন তৈরি করেছে যা 'কেন' নদীতে ঘড়িয়ালদের উপর নজর রাখতে সাহায্য করছে। একইভাবে বেঙ্গালুরুর একটি কোম্পানি ‘বঘিরা’ এবং ‘গরুড়’ নামে একটি অ্যাপ তৈরি করেছে। বঘিরা অ্যাপের সাহায্যে জঙ্গল সাফারির (SAFARI) সময় গাড়ির স্পিড এবং অন্যান্য গতিবিধির ওপর নজর রাখা সম্ভব। দেশের অনেক টাইগার রিজার্ভে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং ইন্টারনেট অফ থিংস - এর উপর ভিত্তি করে গরুড় অ্যাপটি, যেকোনো সিসিটিভির সাথে সংযুক্ত করলে সেটার থেকে রিয়েল টাইম অ্যালার্ট পাওয়া যায়৷ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রতি এমন প্রতিটি প্রচেষ্টার ফলে আমাদের দেশের জীববৈচিত্র্য আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে।
বন্ধুরা, ভারতে প্রকৃতির সঙ্গে সম্প্রীতি আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। হাজার হাজার বছর ধরে আমরা প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণীর সাথে সহাবস্থানের ভাবনা নিয়ে চলেছি। আপনি যদি কখনও মহারাষ্ট্রের মেলঘাট টাইগার রিজার্ভে যান তবে আপনি নিজেই এটি অনুভব করতে পারবেন। এই টাইগার রিজার্ভের পাশে খটকলি গ্রামে বসবাসকারী আদিবাসী পরিবারগুলি সরকারের সহায়তায় তাদের বাড়িগুলিকে হোম স্টে-তে রূপান্তরিত করেছে। এটি তাদের আয়ের একটি বড় উৎস হয়ে উঠছে। এই গ্রামেরই অধিবাসী কোরকু উপজাতির প্রকাশ জামকার জি, তার দুই হেক্টর জমিতে সাতটি রুমের একটি হোম স্টে তৈরি করেছেন। তার পরিবার তার বাড়িতে থাকা পর্যটকদের জন্য খাবার এবং পানীয়ের ব্যবস্থা করে। ঔষধি গাছের পাশাপাশি তিনি তার বাড়ির আশেপাশে আম ও কফির গাছও লাগিয়েছেন। এটি শুধু পর্যটকদের আকর্ষণই বাড়ায়নি, বরং অন্যান্য মানুষের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি করেছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমরা যখন পশুপালনের কথা বলি, তখন সেটা প্রায়শই শুধু গরু-মহিষের কথা পর্যন্তই সীমিত থাকে। তবে ছাগলও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী, যাকে নিয়ে তেমন আলোচনা হয় না। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বহু মানুষ ছাগল প্রতিপালনের সঙ্গে যুক্ত। ওড়িশার কালাহান্ডিতে, ছাগল প্রতিপালন গ্রামের মানুষের জীবিকার পাশাপাশি তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের একটি প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠছে। এই প্রচেষ্টার পিছনে রয়েছে জয়ন্তী মহাপাত্র জি এবং তাঁর স্বামী বীরেন সাহু জির একটি বড় সিদ্ধান্ত। তারা দু’জনেই বেঙ্গালুরুতে ম্যানেজমেন্ট প্রফেশনাল ছিলেন, কিন্তু তাঁরা ব্রেক নিয়ে নিয়ে কালাহান্ডির সালেভাটা গ্রামে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা এমন কিছু করতে চেয়েছিলেন যা এখানকার গ্রামবাসীদের সমস্যার সমাধান করবে এবং তাদের ক্ষমতাশালী করবে। সেবা ও নিষ্ঠায় পরিপূর্ণ এই চিন্তা নিয়ে তাঁরা মানিকাস্তু এগ্রো প্রতিষ্ঠা করেন এবং কৃষকদের নিয়ে কাজ শুরু করেন। জয়ন্তী জি এবং বীরেন জি এখানে একটি চমৎকার মানিকাস্তু গোট ব্যাঙ্কও খুলেছেন৷ তাঁরা সামুদায়িক স্তরে ছাগল পালনের প্রচার করছে। তাঁদের গোট ফার্মে প্রায় ডজন খানেক ছাগল রয়েছে। মানিকাস্তু গোট ব্যাঙ্ক, এটি কৃষকদের জন্য একটি সম্পূর্ণ সিস্টেম প্রস্তুত করেছে। এর মাধ্যমে কৃষকদের ২৪ মাসের জন্য দুটি ছাগল দেওয়া হয়। ছাগল ২ বছরে, ৯ থেকে ১০টি বাচ্চা দেয়, যার মধ্যে ৬টি বাচ্চা ব্যাঙ্কে রাখা হয়, বাকিগুলি ওই পরিবারকে দেওয়া হয়, যারা ছাগল পালন করে। শুধু তাই নয়, ছাগলের পরিচর্যার জন্য প্রয়োজনীয় সেবাও দেওয়া হয়। বর্তমানে ৫০টি গ্রামের এক হাজারেরও বেশি কৃষক এই দম্পতির সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের সহায়তায় গ্রামের মানুষ পশুপালনের ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি এটা দেখে খুবই আনন্দিত বোধ করছি যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল প্রফেশনালস ক্ষুদ্র কৃষকদের ক্ষমতাশালী ও স্বনির্ভর করার জন্য নতুন নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করছেন। তাঁদের এই প্রচেষ্টা সবাইকে অনুপ্রাণিত করবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী আমাদের সংস্কৃতির শিক্ষা হলো “পরমার্থ পরমো ধর্মঃ” অর্থাৎ অন্যদের সাহায্য করাই সবথেকে বড় কর্তব্য। এই মূল্যবোধে বিশ্বাসী আমাদের দেশের অগণিত মানুষ নিঃস্বার্থভাবে অন্যদের সেবায় নিজেদের জীবন সমর্পণ করেছেন। এমনই একজন মানুষ হলেন বিহারের ভোজ পুরের ভীম সিং ভবেশ জি। নিজের এলাকায় মুশহর জাতির মানুষদের মধ্যে ওঁর কর্মকাণ্ড খুবই আলোচিত। তাই আমার মনে হল এনাকে নিয়েই আজ আপনাদের সাথে কথাবার্তা বলি। বিহারের মুশহর এক অত্যন্ত বঞ্চিত ও অতি দরিদ্র সম্প্রদায়। ভীম সিংহ ভবেশ জি এই সম্প্রদায়ের বাচ্চাদের শিক্ষাদান করাকে নিজের জীবনের ফোকাস বানিয়েছেন যাতে ওদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হয়। উনি এই জাতির প্রায় ৮০০০ ছেলেমেয়েকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন । ওদের জন্য একটি বড় লাইব্রেরী ও বানিয়ে দিয়েছেন যাতে বাচ্চারা পড়াশোনা করার জন্য আরও সুবিধা পায়। ভীমসিং জি নিজের সম্প্রদায়ের মানুষদের জরুরি ডকুমেন্টস তৈরি করাতে, ওদের ফর্ম ভর্তি করতেও অনেক সাহায্য করছেন। এর ফলে বিভিন্ন জরুরি পরিষেবা গ্রামের এই মানুষদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। স্বাস্থ্য সম্বন্ধীয় পরিষেবার জন্য উনি একশোরও বেশি মেডিকেল ক্যাম্পের ব্যবস্থা করেছেন। যখন করোনার মহা সংকট উপস্থিত ছিল তখন ও ভীমসিং জি নিজের এলাকার মানুষজনদের ভ্যাকসিন নেবার জন্য উৎসাহিত করেছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভীম সিং ভবেশ জির মত আরও অনেক মানুষ আছেন যারা সমাজে এরকম নানান সৎ কার্যের সাথে যুক্ত । একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে আমরা যদি এই ভাবেই নিজেদের কর্তব্য পালন করতে পারি তাহলে এক শক্তিশালী রাষ্ট্র নির্মাণে তা খুবই কার্যকরী প্রমাণিত হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ভারতের সৌন্দর্য এখানকার বৈচিত্র ও আমাদের সংস্কৃতির নানা রং মধ্যে সমাহিত। আমার এটা দেখে খুব ভালো লাগে যে কত মানুষ নিঃস্বার্থভাবে ভারতীয় সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও একে আরো বেশি সুন্দর করে গড়ে তোলার চেষ্টা সাথে যুক্ত আছেন। আপনারা এরকম মানুষ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তেই পেয়ে যাবেন। এরমধ্যে সিংহভাগ মানুষ আছেন যারা ভাষার ক্ষেত্রে কাজ করছেন। যেমন জম্মু-কাশ্মীরে গান্দারবল-এর মহম্মদ মানসা জি। উনি বিগত ৩ দশক ধরে গোজরি ভাষাকে সংরক্ষিত করবার চেষ্টা করে চলেছেন। উনি গুজ্জার বকারওয়াল সম্প্রদায়ের একজন মানুষ যেটি একটি জনজাতি ভুক্ত গোষ্ঠী। ওণাকে ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনা করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। রোজ প্রায় হেঁটে কুড়ি কিলোমিটার এর দূরত্ব অতিক্রম করতে হতো। এই ধরনের সমস্যার মোকাবিলা করেই উনি মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন এবং এই ভাবেই নিজের ভাষাকে সংরক্ষিত করার সংকল্প ওঁনার আরও দৃঢ় হয়। সাহিত্যক্ষেত্রে মানসা জির কর্মকান্ড এত বিশাল যে অন্তত ৫০ সংস্করণে ওনার কাজ সংরক্ষিত করা হয়েছে । এর মধ্যে কবিতা ও লোকগীতি ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে । উনি অনেক বইয়ের অনুবাদও গোজরি ভাষাতে করেছেন।
বন্ধুরা, অরুণাচল প্রদেশে তীরপ-এর banwang লসুজি একজন শিক্ষক। উনি wancho ভাষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা করেছেন। এই ভাষাটি অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড ও আসামের কিছু অংশে বলা হয়ে থাকে। উনি একটি ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুল বানানোর কাজ করেছেন যার ফলে বাঞ্চোভাষার একটি লিপিও তৈরি হয়েছে। উনি আগামি প্রজন্মকেও বাঞ্চোভাষা শেখাচ্ছেন, যাতে এই ভাষাকে অবলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানো যেতে পারে। বন্ধুরা ,আমাদের দেশে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা নাচ গানের মাধ্যমে নিজেদের সংস্কৃতি ও ভাষার সংরক্ষণ করার কাজে যুক্ত রয়েছেন। কর্নাটকের বেঙ্কপ্পা আম্বাজি সুগেৎকার নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন এমনই কাজে যা খুবই প্রেরণাদায়ক। এই অঞ্চলের বাগল কোর্টের বাসিন্দা সুগেৎকার জি একজন লোক গায়ক। উনি হাজারের থেকেও বেশি গোঁধলি গান গেয়েছেন, সঙ্গে এই ভাষায় লেখা গল্পের ব্যাপক প্রচার করেছেন। উনি কোন পারিশ্রমিক ছাড়াই অজস্র শিক্ষার্থীকে ট্রেনিংও দিয়েছেন। ভারতে এমন আগ্রহী ও উৎসাহী মানুষের কোন অভাব নেই যাঁরা আমাদের সংস্কৃতিকে অনবরত সমৃদ্ধ করে চলেন। আপনারাও এঁদের থেকে প্রেরণা গ্রহণ করুন, নিজেরাও কিছু করে দেখানোর চেষ্টা করুন। এতে আপনাদের প্রশান্তি অনুভূব হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, দু’দিন আগে আমি বারাণসীতে ছিলাম আর ওখানে আমি একটি চমৎকার চিত্র প্রদর্শনী দেখেছিলাম। কাশী এবং তার আশেপাশের অঞ্চলের যুবক-যুবতীরা নিজেদের ক্যামেরায় যেসব মোমেন্ট ক্যাপচার করেছেন তা আশ্চর্য রকমের সুন্দর। এর মধ্যে কয়েকটা ফটোগ্রাফ তো মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় তোলা। সত্যি, এখন যার কাছে মোবাইল ফোন থাকে সে কনটেন্ট ক্রিয়েটর হয়ে ওঠে। নিজের প্রতিভা এবং দক্ষতা দেখানোর ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া ভীষণভাবে সাহায্য করেছে। ভারতের যুবরা কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের ক্ষেত্রে দারুণ কাজ করছে। সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম যাই হোক না কেন ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে আলাদা আলাদা কনটেন্ট শেয়ার করতে থাকা যুব বন্ধুদের আপনি ঠিকই খুঁজে পাবেন। ট্যুরিজম, সোশ্যাল কজ, পাবলিক পার্টিসিপেশন অথবা অনুপ্রেরণামূলক জীবনযাত্রা এই সব কিছুর সাথেই যুক্ত নানা ধরনের কনটেন্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকে। কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছেন দেশের এমন যুবদের কথা এখন অনেকখানি প্রভাব ফেলে। এঁদের প্রতিভাকে সম্মান জানানোর জন্য দেশে ‘ন্যাশনাল ক্রিয়েটর্স অ্যাওয়ার্ড’ শুরু করা হয়েছে। এর অনেক আলাদা আলাদা ক্যাটাগরিতে সেই চেঞ্জ মেকারদের সম্মানিত করার প্রস্তুতি চলছে যাঁরা সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রভাব সৃষ্টি করা কন্ঠ হয়ে ওঠার জন্য টেকনোলজির ব্যবহার করছেন। এই কনটেস্ট ‘মাই গভ পোর্টালে’ চলছে; আর আমি কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য অনুরোধ করব। আপনিও যদি এমন ইন্টারেস্টিং কনটেন্ট ক্রিয়েটারদের চেনেন তাহলে তাঁদের national creators award-এর জন্য অবশ্যই নমিনেট করুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি এই বিষয়ে খুশী যে কিছুদিন আগেই নির্বাচন কমিশন আরও একটি অভিযান শুরু করেছে- 'আমার প্রথম ভোট- দেশের জন্য'। এর মাধ্যমে বিশেষ করে যাঁরা first time voters - তাঁদের কাছে অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যায় ভোটদানের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। ভারতের, উদ্যম্ এবং ক্ষমতায় ভরপুর যুবশক্তির জন্য গর্ববোধ হয়। আমাদের যুবশক্তি যত বেশি করে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবে, এর ফলাফল দেশের জন্য তত বেশি লাভজনক হবে। আমিও যাঁরা first time voters, তাঁদের কাছে আবেদন করবো যাতে তাঁরা record সংখ্যায় ভোট দেয়। ১৮ বছর হওয়ার পর আপনারা ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে সদস্য নির্বাচন করার সুযোগ পাচ্ছেন। অর্থাৎ এই ১৮তম লোকসভা নির্বাচন যুব আকাঙ্ক্ষার প্রতীক বহন করছে। এই জন্য আপনাদের প্রতিটি ভোটের মহত্ব আরও বেড়ে গেছে। সাধারণ নির্বাচনের এই আবহাওয়ায়, আপনারা অর্থাৎ যুবারা, না শুধু, এই রাজনৈতিক গতিবিধিতে অংশ নিন, বরং আলোচনা ও বিতর্ক নিয়েও সজাগ থাকুন। আর মনে রাখুন, 'আমার প্রথম ভোট-দেশের জন্য'। আমি দেশের influencers-দেরও আবেদন করবো, সে ক্রীড়া জগতের হোক, ফিল্ম জগতের হোক, সাহিত্য জগতের হোক, বা অন্য কোন professionals হোক বা আমাদের ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউবের influencers হোক, তারাও অনেক বেশি মাত্রায় এই অভিযানে অংশগ্রহণ করুক এবং first time voters দের ভোট দানের জন্য motivate করুক।
বন্ধুরা, ‘মন কি বাতের’ এই এপিসোডে আমার কথা আজকের মত এইটুকুই। সারা দেশে এখন লোকসভা নির্বাচনের পরিবেশ আর যেরকম গতবার হয়েছিল, মার্চ মাসে আচরণবিধি জারি করার সম্ভাবনা রয়েছে। এটা ‘মন কি বাতের’ অনেক বড়ো একটা সাফল্য যে এই ১১০টি পর্ব পর্যন্ত আমরা সরকারের ছায়া থেকে একে দূরে রেখেছি। 'মন কি বাতে' দেশের সমষ্টিগত শক্তির কথা হয়, দেশের উপলব্ধির কথা হয়। এটা একপ্রকার মানুষের, মানুষের জন্য, মানুষের দ্বারা সৃষ্ট একটি অনুষ্ঠান। কিন্তু তবুও রাজনৈতিক মর্যাদা পালনের উদ্দেশ্যে লোকসভা নির্বাচনের এই দিনগুলিতে আগামী তিন মাস মন কি বাত অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হবে না। এরপর যখন 'মন কি বাতে'র মাধ্যমে যোগাযোগ হবে সেটা ‘মন কি বাতের’ ১১১তম পর্ব হবে। পরবর্তী episode এর শুরু শুভ ১১১তম সংখ্যা দিয়ে হবে, এর থেকে ভালও আর কি হতে পারে। কিন্তু, বন্ধুরা আপনাদেরকে একটা কাজ করতে হবে, 'মন কি বাত' হয়তো তিন মাসের জন্য স্থগিত থাকবে, কিন্তু দেশের উপলব্ধি তো থেমে থাকবে না, এইজন্য, আপনারা ‘মন কি বাত’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে সমাজের উপলব্ধি, দেশের উপলব্ধির কথা social media-তে পোস্ট করতে থাকবেন। কিছু সময় আগেই আমাকে এক যুবক ভালো পরামর্শ দিয়েছেন, পরামর্শ এটাই যে এখনও পর্যন্ত হওয়া- 'মন কি বাত' এপিসোড থেকে ছোট ছোট video , YouTube shorts এর আকারে share করা উচিৎ। এইজন্য আমি ‘মন কি বাত’ শ্রোতাদের আবেদন করবো যাতে তাঁরা এইধরনের shorts গুলো অনেক বেশি মাত্রায় share করেন।
বন্ধুরা, এরপর যখন আপনাদের সঙ্গে আবার যোগাযোগ হবে, তখন, নতুন উদ্যম, নতুন তথ্য নিয়ে আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে। আপনারা নিজেদের খেয়াল রাখবেন, অনেক অনেক ধন্যবাদ, নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। এটা ২০২৪-এর প্রথম ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান। অমৃতকালে এক নতুন উদ্দীপনা, নতুন তরঙ্গ। দু’দিন আগে আমরা সব দেশবাসী সাড়ম্বরে পঁচাত্তরতম সাধারণতন্ত্র দিবস পালন করলাম। এ বছর আমাদের সংবিধানেরও পঁচাত্তর বছর হচ্ছে আর সুপ্রীম কোর্টেরও পঁচাত্তর বছর পূর্তি হচ্ছে। আমাদের গণতন্ত্রের এই পর্ব গণতন্ত্রের জননী হিসাবে ভারতকে আরও শক্তিশালী করে। ভারতের সংবিধান এত সুগভীর পর্যালোচনার পরে তৈরি হয়েছে যে তাকে জীবন্ত দলিল বলা হয়। এই সংবিধানের মূল সংস্করণের তৃতীয় অধ্যায়ে ভারতের নাগরিকদের মৌলিক অধিকারসমূহের বর্ণনা করা হয়েছে আর এটা খুব আকর্ষণীয় বিষয় যে তৃতীয় অধ্যায়ের শুরুতে আমাদের সংবিধান প্রণেতারা ভগবান রাম, মা সীতা এবং লক্ষণজীর ছবি রেখেছেন। প্রভু রামের শাসন আমাদের সংবিধান প্রণেতাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস ছিল আর এই কারণে ২২শে জানুয়ারি অযোধ্যায় আমি ‘দেব থেকে দেশ’-এর কথা বলেছিলাম, ‘রাম থেকে রাষ্ট্রের কথা’ আলোচনা করেছিলাম।
বন্ধুরা, অযোধ্যায় প্রাণপ্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠান দেশের কোটি-কোটি মানুষকে যেন এক সূত্রে গেঁথেছে। সবার ভাবনা এক, ভক্তি এক, সবার কথায় রাম, সবার হৃদয়ে রাম। দেশের অনেক মানুষ এই সময় রামের ভজন গেয়ে রামের চরণে সমর্পণ করেছেন। ২২শে জানুয়ারির সন্ধ্যায় গোটা দেশ রামজ্যোতি প্রজ্জ্বলিত করেছে, দীপাবলী উদযাপন করেছে। এই সময় দেশ ঐক্যের শক্তি দেখেছে, যা বিকশিত ভারত সম্পর্কে আমাদের সংকল্পের একটা খুব বড় ভিত্তি। আমি দেশের মানুষের কাছে অনুরোধ রেখেছিলাম যে মকর সংক্রান্তি থেকে ২২শে জানুয়ারি অবধি স্বচ্ছতার অভিযান চালানো হোক। আমার ভালো লেগেছে যে লক্ষ-লক্ষ মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে নিজেদের এলাকার ধর্মীয় স্থান পরিষ্কার করেছে। কত মানুষ এ সম্পর্কিত ছবি পাঠিয়েছেন আমাকে, ভিডিও পাঠিয়েছেন – এই চিন্তা যেন রুদ্ধ না হয়, এই অভিযান না থামে। ঐক্যের এটাই শক্তি, আমাদের দেশের সাফল্যকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এবার ২৬ শে জানুয়ারির প্যারেড অত্যন্ত চমৎকার ছিল, তবে সর্বাধিক চর্চা হয়েছে প্যারেডে নারীশক্তিকে দেখে। যখন কর্তব্যপথে "কেন্দ্রীয় সুরক্ষা বল" ও দিল্লী পুলিশের মহিলা বাহিনী কুচকাওয়াজ শুরু করলেন তখন সকলের মন গর্বে ভরে উঠলো। মহিলা ব্যান্ডের মার্চ দেখে তাদের দুর্দান্ত তাল মিল দেখে দেশ-বিদেশের মানুষও সেই ছন্দে দুলে উঠছিলেন। এবারের প্যারেডে মার্চ করা কুড়িটি বাহিনীর মধ্যে ১১ টি বাহিনী নারীদেরই ছিল। আমরা দেখেছি, যে ট্যাবলো গুলো বেরিয়েছিল তাতেও মহিলা শিল্পীরাই ছিলেন। যে সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে তাতেও প্রায় দেড় হাজার মেয়ে অংশ নিয়েছেন। অনেক মহিলা শিল্পী শঙ্খ, নাদস্বরম, নাগারার মতো ভারতীয় বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছিলেন। DRDO যে ট্যাবলো বার করেছিল তাও সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। তাতে দেখানো হয়েছে কিভাবে নারী শক্তি, জল, স্থল, আকাশ, সাইবার ও স্পেস প্রত্যেক ক্ষেত্রে দেশকে সুরক্ষিত রাখছে। একবিংশ শতাব্দীর ভারত এভাবেই "ওম্যান লেড ডেভেলপমেন্ট" এর মন্ত্রকে সঙ্গে নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।
বন্ধুরা, কিছুদিন আগে অর্জুন পুরস্কার প্রদানের সমারোহও আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন। সেই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ভবনে দেশের অনেক উদীয়মান ক্রীড়াবিদ ও অ্যাথলিটদের সম্মানিত করা হয়েছে। এখানেও যে বিষয়টি প্রভূতভাবে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে তা হলো অর্জুন পুরস্কার প্রাপক মেয়েরা এবং তাদের লাইফ জার্নিস। এবার তের জন Women অ্যাথলিটকে অর্জুন অ্যাওয়ার্ডে সম্মানিত করা হয়েছে। এই Women অ্যাথলিটরা অনেক নামকরা টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন এবং ভারতের পতাকা উড্ডীন করেছেন।
শারীরিক সমস্যা, আর্থিক সমস্যা এই সাহসী এবং ট্যালেন্টেড ক্রীড়াবিদদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি। পরিবর্তনশীল এই ভারতে প্রত্যেক ক্ষেত্রেই ভারতের মেয়েরা, ভারতের মহিলারা তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন। অপর এক ক্ষেত্র, যেখানে মহিলারা নিজেদের নিশান উড়িয়েছেন, তা হল, self help groups। আজ দেশে women self help groups-এর সংখ্যাও যথেষ্ট বেশি এবং নানান ধরনের কাজের ক্ষেত্রেও তারা বিস্তার ঘটিয়েছেন। সেই দিন আর খুব বেশি দূরে নেই যেদিন গ্রামে গ্রামে, ক্ষেতে ক্ষেতে, “নম্ ড্রোন দিদি” চাষের কাজে সাহায্য করছে, এমনটা দেখা যাবে। আমি উত্তর প্রদেশের বেহেরাইচ জেলায় স্থানীয় জিনিষ দিয়ে bio fertilizer এবং bio pesticides তৈরী করেন এমন অনেক মহিলাদের সম্বন্ধে জানতে পেরেছি। নিবিয়া বেগমপুর গ্রামের self help groups এর সঙ্গে জড়িত মহিলারা গোবর, নিমপাতা সহ আরও অন্য কিছু কিছু ওষধি গাছের পাতার সংমিশ্রণে bio fertilizer তৈরী করেন। ঠিক এইভাবেই মহিলারা আদা, রসুন, পেঁয়াজ এবং লঙ্কার পেস্ট বানিয়ে অর্গানিক pesticide ও তৈরী করেন। এই মহিলারা একসঙ্গে "উন্নতি জৈবিক ইকায়ী" নামক একটি সংগঠন তৈরি করেছেন। Bio products প্রস্তুত করতে এই সংগঠনটি এই মহিলাদের সাহায্য করে থাকে। এঁদের তৈরি bio fertilizer এবং bio pesticides এর চাহিদা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। আজ, আশপাশের গ্রামের ছয় হাজারেরও বেশি কৃষক এঁদের কাছ থেকে bio products কিনে থাকেন। এরফলে, self help groups এর সঙ্গে জড়িত এই মহিলাদের আয় যেমন বেড়েছে, তাঁদের আর্থিক অবস্থারও উন্নতি ঘটেছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, “মন কি বাত”-এ আমরা এমন দেশবাসীর প্রচেষ্টাকে সামনে আনি, যারা নিঃস্বার্থ ভাবনার সঙ্গে সমাজকে, দেশকে সশক্ত করার কাজ করছে। এরকম অবস্থায় তিন দিন আগে যখন দেশ পদ্ম পুরস্কার ঘোষণা করেছিল, তখন “মন কি বাত”-এ এরকম মানুষের চর্চা করাটাই স্বাভাবিক। এইবারও এমন অনেক দেশবাসীকে পদ্ম সম্মান দেওয়া হয়েছে, যাঁরা মাটির সঙ্গে জুড়ে থেকে সমাজে বড় বড় পরিবর্তন আনার জন্য কাজ করেছেন। এই inspiring মানুষদের জীবনযাত্রা সম্বন্ধে জানার জন্য দেশের মানুষের মধ্যে অনেক ঔৎসুক্য দেখা গেছে। মিডিয়ার headlines থেকে দূরে, খবরের কাগজের ফ্রন্ট পেজ থেকে দূরে, এই মানুষেরা বিনা কোনো লাইমলাইটে থেকেই সমাজ সেবার সঙ্গে যুক্ত। আমরা আগে এইসব মানুষদের সম্পর্কে হয়তো জানতামই না, কিন্তু এখন আমি খুশি যে পদ্ম সম্মান ঘোষণার পর এরকম মানুষদের চর্চা সব জায়গায় হচ্ছে, মানুষ এদের সম্বন্ধে বেশি বেশি জানার ব্যাপারে আগ্রহী। পদ্ম পুরস্কার পাওয়া বেশিরভাগ মানুষেরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে অভিনব কাজ করছেন। যেমন কেউ এম্বুলেন্স পরিষেবা ব্যাবস্থা করেছেন, তো কেউ অসহায়দের জন্য মাথার উপর ছাদের ব্যবস্থা করছেন। কিছু মানুষ তো হাজার হাজার গাছ লাগিয়ে প্রকৃতি সংরক্ষণ এর কাজ করছেন। একজন এমনও আছেন যিনি চালের ৬৫০-এরও বেশি প্রকারের সংরক্ষণ করছেন। একজন এমনও আছেন যিনি ড্রাগস আর মদ এর নেশা থেকে বাঁচার জন্য সমাজে সচেতনতা বাড়াচ্ছেন।
কিছু এমনও মানুষ আছেন, যারা self help group বিশেষ করে নারী শক্তি অভিযানে, জনগণকে যুক্ত করার জন্য উদ্যোগী হয়েছেন। দেশবাসীও আনন্দিত যে পুরস্কার প্রাপকদের মধ্যে ৩০ জন মহিলা। এই মহিলারা তৃণমূল স্তরে নিজেদের কাজের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।
বন্ধুরা, ‘পদ্ম সম্মান’ যারা পেয়েছেন তাদের প্রত্যেকের যোগদান দেশবাসীকে উৎসাহিত করবে। এইবার পুরস্কার প্রাপকদের মধ্যে বহু সংখ্যায় তারা আছেন যারা শাস্ত্রীয় নৃত্য, শাস্ত্রীয় সংগীত, লোকনৃত্য, থিয়েটার ও ভজনের জগতে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। প্রাকৃত, মালভি ও লম্বাডি ভাষায় অত্যন্ত উৎকৃষ্ট কাজ যারা করেছেন তাদেরকেও পুরস্কৃত করা হয়েছে। কয়েকজন বিশেষ বিদেশিদেকেও পদ্ম সম্মানে সম্মানিত করা হয়েছে যাদের কাজের মাধ্যমে ভারতের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নতুন উচ্চতা স্পর্শ করেছে। এদের মধ্যে France, Taiwan, Mexico আর Bangladesh এর নাগরিকরাও সামিল আছেন।
বন্ধুরা, আমি ভীষণ আনন্দিত যে গত এক দশকে পদ্ম সম্মানের system পুরোপুরিভাবে বদলে গেছে। এটি এখন ‘পিপলস পদ্ম’ হয়ে গেছে। ‘পদ্মসম্মান’ দেওয়ার ব্যবস্থাতেও অনেক পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন জনগণের কাছে নিজেকে পদ্ম সম্মানের জন্য nominate করারও সুযোগ রয়েছে। ঠিক এই কারণেই ২০১৪-র তুলনায় এই বছর ২৮গুন বেশি Nominations এসেছে। এতেই বোঝা যায় যে পদ্ম সম্মানের প্রতিষ্ঠা, তার বিশ্বাসযোগ্যতা, তার প্রতি সম্মান প্রত্যেক বছর বেড়েই চলেছে। আমি পদ্ম সম্মান প্রাপকদের আরো একবার আমার শুভেচ্ছা জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী। কথায় বলে, যে প্রত্যেক জীবনেরই একটা লক্ষ্য থাকে, প্রত্যেকেই একটি লক্ষ্যকে সার্থক করে তুলতেই জন্মগ্রহণ করে। এর জন্য মানুষ সম্পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে নিজের কর্তব্য পালন করে। আমরা দেখেছি যে কেউ সমাজসেবার মাধ্যমে, কেউ সেনাবাহিনীতে ভর্তি হয়ে, কেউ আগামী প্রজন্মকে পড়িয়ে নিজেদের কর্তব্য পালন করেন কিন্তু বন্ধুরা আমাদের মধ্যে এমন কিছু মানুষ আছেন যারা মৃত্যুর পরেও সমাজের প্রতি তাদের কর্তব্য পালন করে যায় আর এর জন্য তাদের মাধ্যম হয়ে ওঠে - মরণোত্তর অঙ্গদান।
বিগত কয়েক বছরে, আমাদের দেশে এক হাজারেরও বেশী মানুষ মরনোত্তর নিজেদের অঙ্গদান করেছেন। এটা খুব একটা সহজ সিদ্ধান্ত হয় না কিন্তু এই কঠিন নির্নয় অনেকের কাছে জীবনদায়ী হয়। আমি সেই সকল পরিবারের প্রসংশা করি যারা তাদের নিকটাত্মীয়ের শেষ ইচ্ছকে মর্যাদা দিয়েছেন। আজ আমাদের দেশে অনেক সংগঠন এই দিকে প্রেরণাদায়ক কাজ করছে। কিছু সংগঠন অঙ্গদানের জন্য মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করছে, কিছু সংস্থা অঙ্গদানে ইচ্ছুক ব্যাক্তিদের registration করতে সাহায্য করছে। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টাতে দেশে organ donation নিয়ে এক ইতিবাচক আবহ তৈরী হয়েছে এবং বহু মানুষের প্রাণও রক্ষা হচ্ছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এখন আমি আপনাদের সঙ্গে ভারতের এমন এক বিষয় সম্পর্কে বলব যার ফলে অসুস্থ মানুষেরা উপকৃত হবেন, তাদের খানিক কষ্ট লাঘব হবে। আপনাদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন যারা চিকিৎসার জন্য আয়ুর্বেদ, সিদ্ধা বা ইউনানীর দ্বারস্থ হন। কিন্তু অসুবিধা তখন হয় যখন এই রোগীরা এই পদ্ধতির অন্য কোনো চিকিৎসক এর কাছে যান। এই চিকিৎসা পদ্ধতিগুলিতে রোগের নাম, চিকিৎসা পদ্ধতি, ওষুধের নাম, ইত্যাদি লেখার জন্য এক পরিভাষা ব্যবহার করা হয়না। প্রত্যেক চিকিৎসক তার নিজের মত করে রোগের নাম, চিকিৎসার পদ্ধতির বিবরণ লেখে, এর ফলে অন্য একজন চিকিৎসক এর পক্ষে সেটা সঠিক ভাবে বুঝতে অনেক ক্ষেত্রেই অসুবিধা হয়। বহু দশক ধরে চলে আসা এই সমস্যার সমাধান এখন পাওয়া গেছে। আমার এটা বলতে খুবই আনন্দ হচ্ছে যে আয়ুষ মন্ত্রক আয়ুর্বেদ, সিদ্ধা ও ইউনানী চিকিৎসার সমস্ত তথ্য ও শব্দাবলীর পর্যায়ভুক্ত করেছে। এই কাজে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও আমাদের সাহায্য করেছে। এই সম্মিলিত চেষ্টায় আয়ুর্বেদ, সিদ্ধা ও ইউনানী পদ্ধতিতে রোগের নাম ও চিকিৎসাতে ব্যবহার করা শব্দগুলির coding করে দেওয়া হয়েছে।
এই coding-এর সাহায্যে সব ডাক্তার নিজেদের prescription-এ একরকম ভাষা লিখবেন। এর সুবিধে হল যখন আপনি এই প্রেসক্রিপশন নিয়ে অন্য ডাক্তারের কাছে যাবেন, তখন সে আপনার রোগের আগের সমস্ত তথ্য পেয়ে যাবে। আপনার কি রোগ, তার কি বৃত্তান্ত, কবে থেকে চিকিৎসা চলছে, কি কি ওষুধ দেওয়া হয়েছে, কোনো allergy আছে কিনা যাবতীয় বিবরণ prescription-এর কাগজ থেকে পাওয়া যাবে। এর আরো একটা সুফল তারা পাবেন যারা research এর কাজে যুক্ত। অন্যান্য দেশের বিজ্ঞানীরাও অসুখ, ওষুধ ও তার প্রভাব, সবকিছু সম্পর্কে তথ্য পেয়ে যাবেন। যত research বাড়বে, আরো বিজ্ঞানীরা এর সাথে যুক্ত হবেন, এই চিকিৎসা পদ্ধতি আরো উন্নত হবে, আরো সুফল দেবে। মানুষের এই দিকে ঝোঁক বাড়বে। আমার বিশ্বাস Ayush পদ্ধতীর সাথে যুক্ত আমাদের চিকিৎসকেরা খুব শীঘ্রই এই coding-কে গ্রহণ করবেন।
আমার বন্ধুরা, যখন আয়ুষ পদ্ধতিতে চিকিৎসার কথা বলি, তখন আমার চোখের সামনে ইয়ানুং জামোহ্ ল্যাইগোর ছবিও ভেসে উঠছে। সুশ্রী ইয়ানুং অরুণাচল প্রদেশে থাকেন এবং হার্বাল ঔষুধির বিশেষজ্ঞ। উনি আদি জনজাতির ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা ব্যবস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য অনেক কাজ করেছেন। এই অবদানের জন্য তিনি এইবছর পদ্ম সম্মানও পেয়েছেন। একইভাবে এইবছর পদ্মসম্মান পেয়েছেন ছত্তিশগড়ের হেমচাঁদ মাঝিও। বৈদ্যরাজ হেমচাঁদ মাঝি আয়ুষ চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্যে মানুষের চিকিৎসা করেন। ছত্তিশগড়ের নারায়ণপুরে দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা করছেন প্রায় ৫ দশকেরও বেশি সময় ধরে। আমাদের দেশে আয়ুর্বেদ এবং হার্বাল মেডিসিনের যে সম্পদ লুকিয়ে আছে, সেগুলোর সংরক্ষণে সুশ্রী ইয়াং এবং হেমচাঁদ মাঝির মত মানুষদের বড় ভূমিকা আছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কি বাত’-এর মাধ্যমে আপনাদের এবং আমার মধ্যে যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তা এক দশকেরও বেশি পুরনো। সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেটের যুগেও, রেডিও সম্পূর্ণ দেশকে জুড়ে করে রাখার একটি শক্তিশালী মাধ্যম। রেডিওর শক্তি কতটা পরিবর্তন আনতে পারে, তার এক অনন্য উদাহরণ ছত্তিশগড়ে দেখতে পাওয়া গেছে। এইখানে গত ৭ বছর ধরে রেডিওতে একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে, যার নাম ‘হমর হাতি-হমর গোঠ’। নামটি দেখে আপনি ভাবতে পারেন রেডিও এবং হাতির মধ্যে আবার কী connection হতে পারে। কিন্তু এটাই রেডিওর বিশেষত্ব। ছত্তিশগড়ে আকাশবাণীর চারটি কেন্দ্র- অম্বিকাপুর, রায়পুর, বিলাসপুর এবং রায়গড় থেকে এই অনুষ্ঠানটি প্রতি সন্ধ্যায় সম্প্রচার করা হয় এবং আপনি জেনে অবাক হবেন যে ছত্তিশগড়ের জঙ্গল এবং তার আশেপাশের এলাকায় বসবাসকারী লোকেরা এই অনুষ্ঠানটি খুব মনোযোগ দিয়ে শোনে।
‘হমর হাতি-হমর গোঠ’ এই অনুষ্ঠানে বলা হয় হাতির দল কোন এলাকা দিয়ে যাতায়াত করছে। এই তথ্য এই এলাকার বাসিন্দাদের জন্য খুব প্রয়োজনীয়। যেই বাসিন্দারা রেডিওর মাধ্যমে হাতির দলের খবর পান, ওঁরা সতর্ক হয়ে যায়। যে রাস্তায় হাতির দল ঘোরে, সেইসব রাস্তায় যাওয়ার কোনো আশঙ্কা থাকেনা। এইভাবে একদিকে যেমন হাতির দলের থেকে ক্ষতির সম্ভাবনা কমে যায়, তেমনই হাতি সম্পর্কে data সংগ্রহে সহায়তা করে। এই data ভবিষ্যতে হাতি সংরক্ষণেও সাহায্য করবে। এখানে হাতি সংক্রান্ত তথ্যও social media এর মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে জঙ্গলের আশেপাশে বসবাসকারী মানুষদের জন্য হাতিদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা সহজ হয়ে গেছে। ছত্তিশগড়ের এই অনন্য উদ্যোগ এবং অভিজ্ঞতার সুবিধা দেশের অন্য বনাঞ্চলে বসবাসকারী লোকেরাও নিতে পারে।
আমার প্রিয় দেশবাসী এই ২৫শে জানুয়ারি আমরা সকলেই ‘ন্যাশনাল ভোটারস ডে’ পালন করেছি। এটা আমাদের গৌরবময় গণতন্ত্রের ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে এক বিশেষ দিন। এখন এই দেশে প্রায় ৯৬ কোটি ভোটদাতা আছে। আপনারা জানেন? যে এই পরিসংখ্যান কতটা বড়? আমেরিকার সম্পূর্ণ জনসংখ্যার থেকেও প্রায় তিন গুণ বেশি। এটা সম্পূর্ণ ইউরোপের জনসংখ্যার থেকেও প্রায় দেড় গুণ বেশি। যদি ভোটদান কেন্দ্রের কথা বলি তাহলে দেশে আজ তার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১০ লাখ। ভারতের প্রত্যেক নাগরিক যাতে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার ব্যবহার করতে পারে, এর জন্য আমাদের নির্বাচন কমিশন এমন জায়গাতেও পোলিং বুথ তৈরি করেন যেখানে হয়তো একজন মাত্র ভোটার রয়েছেন। আমি নির্বাচন কমিশনের বিশেষ প্রশংসা করতে চাই যারা দেশে গণতান্ত্রিক মূল্যকে শক্তিশালী করার জন্য অনবরত চেষ্টা করে চলেছেন।
বন্ধুরা, বর্তমানে দেশের জন্য এটা খুবই উৎসাহের কথা যেখানে এই পৃথিবীতে অনেক দেশের ভোটিং পারসেন্ট কম হচ্ছে, ভারতে সেখানে ভোট দানের শতকরা হার বেড়েই চলেছে। ১৯৫১-৫২ সালে যখন দেশের প্রথমবার নির্বাচন হয়েছিল তখন প্রায় ৪৫ শতাংশ ভোটদাতা ভোট দান করেছিলেন। এখন এই পরিসংখ্যান অনেকটা বেড়েছে। দেশে শুধুমাত্র ভোটদাতার সংখ্যাই বাড়েনি বরং টার্ন-আউটও বেড়েছে। আমাদের যুব ভোটদাতারা যাতে রেজিস্ট্রেশনের জন্য বেশি সুযোগ পান এর জন্য সরকার আইনের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন করেছে। এটা দেখে আমার ভালো লাগে যে ভোটারদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য সামগ্রিক স্তরে নানা প্রচেষ্টা চলছে। অনেকেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের ভোট দানের বিষয়ে বলছেন কোথাও ছবি এঁকে, কোথাও পথনাটিকা পরিবেশনের মাধ্যমে যুবক-যুবতীদের আকর্ষণ করার চেষ্টা চলছে। এমন প্রত্যেক প্রচেষ্টা আমাদের গণতন্ত্রের উৎসবে ভিন্ন ভিন্ন রং প্রদান করছে। আমি “মন কি বাত”-এর মাধ্যমে আমার ফার্স্ট টাইম ভোটার্সদের বলব যে তারা যেন ভোটের লিস্টে নিজের নাম অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করে। National Voter service পোর্টাল এবং ভোটার হেল্পলাইন অ্যাপের-এর মাধ্যমে তারা খুব সহজেই এই কাজ অনলাইনে করতে পারবেন। আপনারা এটা সব সময় মনে রাখবেন যে আপনাদের একটা ভোট দেশের ভাগ্য বদলে দিতে পারে, দেশের ভাগ্য তৈরি করতে পারে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ ২৮ জানুয়ারি ভারতের এমন দু’জন মহান ব্যক্তির জন্ম জয়ন্তী যাঁরা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে দেশভক্তির নিদর্শন রেখেছেন। আজ দেশ পাঞ্জাব কেশরী লালা লাজপত রায়জীকে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করছে। লালাজি স্বাধীনতা-সংগ্রামের এক এমন যোদ্ধা যিনি বিদেশি শাসন থেকে মুক্তি প্রদানের জন্য নিজের জীবন আহুতি দিয়েছিলেন।
লালা'জীর ব্যক্তিত্বকে শুধুমাত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা যায় না। তিনি ছিলেন অত্যন্ত দূরদর্শী। Punjab National Bank এবং আরো বহু প্রতিষ্ঠান তৈরীতে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর উদ্দেশ্য শুধুই আমাদের দেশ থেকে বিদেশীদের বিতাড়িত করা ছিল না, আমাদের দেশকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করার Vision'ও তার চিন্তাভাবনার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। তাঁর মতাদর্শ এবং আত্মত্যাগ ভগৎ সিং'কে ভীষণ উদ্বুদ্ধ করেছিল।
আজ ফিল্ড মার্শাল কে. এম. করিয়প্পা'জি-কে'ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করার দিন। ইতিহাসের একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনি আমাদের সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং শৌর্য ও সাহসের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। আমাদের সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করে তুলতে তার অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এখন খেলাধুলার জগতেও ভারত প্রতিদিন নতুন উচ্চতা স্পর্শ করছে। ক্রীড়াজগতের অগ্রগতির জন্য খেলোয়াড়দের আরো বেশি করে খেলার সুযোগ পাওয়া এবং দেশে আরো বেশী করে Sports Tournament-এর আয়োজন হওয়া প্রয়োজন। এই চিন্তা ভাবনা মাথায় রেখে এখন ভারতে নতুন নতুন sports tournament-এর আয়োজন করা হচ্ছে। কয়েকদিন আগে চেন্নাইয়ে 'খেলো ইন্ডিয়া ইউথ গেমস'-এর উদ্বোধন হয়েছে। সেখানে আমাদের দেশের ৫ হাজারেরও বেশি athletes অংশগ্রহণ করছেন। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে এখন ভারতে এই ধরনের নতুন platform ক্রমাগত তৈরি হচ্ছে, যেখানে খেলোয়াড়রা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করার সুযোগ পাচ্ছে। এমনই একটা platform তৈরি হয়েছে--beach games-এর, এটির আয়োজন করা হয়েছিল দিউ-এর অভ্যন্তরে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে “দিউ” একটি কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চল এবং সোমনাথের একদম কাছে।
এই বছরের শুরুতেই দিউতে এই বিচ গেমসের আয়োজন করা হয়েছিল। এটি ভারতের প্রথম মাল্টি-স্পোর্টস বিচ গেম ছিল। এর মধ্যে ছিল Tug of war, Sea swimming, pencak silat, মালখাম্ব, Beach volleyball, Beach কাবাডি, Beach soccer এবং বিচ বক্সিংয়ের মতো প্রতিযোগিতা। এতে, প্রত্যেক প্রতিযোগী তার প্রতিভা প্রদর্শনের পর্যাপ্ত সুযোগ পেয়েছে এবং আপনি জেনে অবাক হবেন যে এই টুর্নামেন্টে অনেক খেলোয়াড় এসেছিল এমন রাজ্য থেকে যাদের সমুদ্রের সাথে দূর-দুরান্তেও কোন যোগাযোগ নেই। মধ্যপ্রদেশ এই টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ পদক জিতেছে, যেখানে কোনো সমুদ্র সৈকত নেই। খেলাধুলার প্রতি এই মনোভাব যে কোনো দেশকে ক্রীড়া জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ করে তোলে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, “মন কী বাতে” আমার সঙ্গে এবার এইটুকুই। ফেব্রুয়ারিতে আবার আপনাদের সঙ্গে কথা হবে। দেশের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়, ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় কী ভাবে দেশ অগ্রসর হচ্ছে, এই বিষয়েই আমাদের focus থাকবে।
বন্ধুরা, আগামীকাল, ২৯ তারিখ, সকাল ১১টায় আমি ‘পরীক্ষা পে চর্চা’ অনুষ্ঠানটিও করব। পরীক্ষা পে চর্চা-র এটা সপ্তম সংস্করণ। এটি এমন একটি অনুষ্ঠান যার প্রতীক্ষা আমি সবসময় করি। এর মাধ্যমে আমি students-দের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সুযোগ পাই, এবং আমি ওঁদের পরীক্ষা সংক্রান্ত চিন্তা নিরসন করার প্রচেষ্টা করি।
বিগত ৭ বছরে “পরীক্ষা পে চর্চা” শিক্ষা ও পরীক্ষা সম্পর্কিত বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করার খুব ভাল মাধ্যম হিসেবে উঠে এসেছে। আমি খুব খুশি যে এবার সওয়া দু’কোটিরও বেশি বিদ্যার্থী এর জন্যে রেজিস্ট্রেশন করেছেন এবং এর ব্যাপারে নিজস্ব inputs-ও দিয়েছেন। আমি আপনাদের জানিয়ে দিই যে যেবার প্রথম ২০১৮-তে আমরা এই অনুষ্ঠান শুরু করেছিলাম তখন এই সংখ্যাটি কেবল ২২,০০০ ছিল। students-দের অনুপ্রাণিত করার জন্য ও পরীক্ষা সংক্রান্ত চাপ ও চিন্তা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বহু অভিনব পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। আমি আপনাদের সবার কাছে, বিশেষ করে যুবাদের কাছে, বিদ্যার্থীদের কাছে, অনুরোধ করব যে তাঁরা কাল record সংখ্যায় শামিল হোন। আমারও আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে ভাল লাগবে।
এই কথাগুলোর সঙ্গেই আমি “মন কী বাতের” এই পর্ব-এ আপনাদের থেকে বিদায় নিচ্ছি। শিগগিরি আবার দেখা হবে। ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। ‘মন কি বাত’ অর্থাৎ আপনাদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার এক শুভ সুযোগ। আর যখন নিজের পরিবারের মানুষদের সঙ্গে মিলিত হই, তখন সেটা কত আনন্দের, কত তৃপ্তির। ‘মন কি বাত’এর মাধ্যমে আপনাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে আমার এমনই অনুভব হয়, আর আজ তো আমাদের একসঙ্গে পথ চলার এক’শো আটতম পর্ব। আমাদের এখানে ১০৮ সংখ্যাটির গুরুত্ব, এর পবিত্রতা, এক গভীর অধ্যয়নের বিষয়। মালায় একশো আটটি পুঁতি, ১০৮ বার জপ, ১০৮টি পুণ্য ক্ষেত্র, মন্দিরে ১০৮টি সিঁড়ির ধাপ, ১০৮টি ঘন্টা, ১০৮ এই অঙ্কটি অসীম আস্থার সঙ্গে যুক্ত। এই কারণে ‘মন কি বাত’এর একশো আটতম পর্ব আমার জন্য আরও বিশিষ্ট হয়ে উঠেছে। এই একশো আটটি পর্বে জনগণের অংশগ্রহণের কত উদাহরণ প্রত্যক্ষ করেছি আমি, সেখান থেকে প্রেরণা পেয়েছি। এখন এই পর্যায়ে পৌঁছনোর পর আমাদের নতুন এক শুভারম্ভ করতে হবে, নতুন উদ্যমের সঙ্গে এবং দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার সঙ্কল্প গ্রহণ করতে হবে। আর এটা কত সুখকর সংযোগ যে আগামীকালের সূর্যোদয়, ২০২৪-এর প্রথম সূর্যোদয় হবে – ২০২৪ সালে প্রবেশ ঘটে যাবে আমাদের। আপনাদের সবাইকে ২০২৪ সালের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
বন্ধুরা, ‘মন কি বাত’ শুনে অনেক মানুষ আমাকে চিঠি লিখে নিজেদের স্মরণীয় মুহূর্ত ভাগ করে নিয়েছেন। এটা এক’শো চল্লিশ কোটি ভারতীয়দের শক্তি, যে এই বছর আমাদের দেশ, বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ অনেক সাফল্য অর্জন করেছে। এই বছরে ‘নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম’ পাশ হয়েছে যার প্রতীক্ষা ছিল বহু বছর ধরে। ভারত পঞ্চম সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হওয়ায় অনেক মানুষ চিঠি লিখে আনন্দ প্রকাশ করেছেন। অনেক মানুষ আমাকে জি-টুয়েন্টি সামিটের সাফল্য মনে করিয়ে দিয়েছেন। বন্ধুরা, আজ ভারতের প্রত্যেকটি কোণ বিকশিত ভারতের চিন্তায়, আত্মনির্ভতার ভাবনায় আত্মবিশ্বাসে ভরপুর রয়েছেন, আবিষ্ট রয়েছেন। ২০২৪-এ আমাদের এই চিন্তা আর অভিঘাত বজায় রাখতে হবে। দীপাবলীতে রেকর্ড বিপণন এটা প্রমাণ করে দিয়েছে যে প্রত্যেক ভারতীয় ‘ভোকাল ফর লোকাল’ মন্ত্রকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
বন্ধুরা, আজও বহু মানুষ চন্দ্রযান-থ্রি-এর সাফল্য নিয়ে বার্তা পাঠিয়ে চলেছেন আমাকে। আমার বিশ্বাস যে আমার মত আপনারাও আমাদের বৈজ্ঞানিক, বিশেষ করে মহিলা বৈজ্ঞানিকদের নিয়ে গর্ব অনুভব করেন।
বন্ধুরা, এবার নাটু-নাটু অস্কার পাওয়ায় গোটা দেশ খুশিতে নেচে উঠেছে। ‘দ্য এলিফ্যান্ট হুইসপারারস’-এর সাফল্যের কথা শুনে কে খুশি হয়নি! এর মাধ্যমে সারা বিশ্ব ভারতের সৃষ্টিশীলতাকে প্রত্যক্ষ করেছে আর প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের গভীর যোগকে বুঝেছে। এই বছর খেলাধুলোতেও আমাদের অ্যাথলীটরা দুরন্ত প্রদর্শন করেছে। এশীয়ান গেমসে আমাদের খেলোয়াড়রা এক’শো সাতটি আর এশিয়ান প্যারা-গেমসে এক’শো এগারোটি পদক জিতেছে। ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারতীয় খেলোয়াড়রা নিজেদের প্রদর্শনের মাধ্যমে সবার হৃদয় জয় করে নিয়েছে। অনূর্ধ্ব উনিশ T-20 ক্রিকেট বিশ্বকাপে আমাদের মহিলা ক্রিকেট দলের জয় অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক। অনেক খেলায় খেলোয়াড়দের সাফল্য দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে। এবার ২০২৪ সালে প্যারিস অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হবে যার জন্য গোটা দেশ আমাদের খেলোয়াড়দের উৎসাহ বাড়াচ্ছে।
বন্ধুরা, যখনই আমরা মিলেমিশে প্রচেষ্টা করেছি, আমাদের দেশের বিকাশ যাত্রায় তা যথেষ্ট ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আমরা ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ এবং ‘মেরি মাটি মেরা দেশ’-এর মতো সফল অভিযানের অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। এতে কোটি কোটি মানুষের অংশগ্রহণের সাক্ষী আমরা সবাই। ৭০ হাজার অমৃত সরোবর নির্মাণও আমাদের সম্মিলিত উপলব্ধী।
বন্ধুরা, আমি সবসময় বিশ্বাস করে এসেছি, যে দেশ Innovation-কে গুরুত্ব দেয় না তার উন্নয়ন থেমে যায়। ভারতের Innovation Hub-এ পরিণত হওয়া এই সত্যের প্রতীক যে আমরা থামতে রাজি নই। ২০১৫ সালে আমরা গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্সে ৮১তম স্থানে ছিলাম – আজ আমাদের র্যাঙ্ক ৪০। এই বছর, ভারতে দায়ের করা পেটেন্টের সংখ্যা বেশি ছিল, যার মধ্যে প্রায় ৬০% Domestic Funds থেকে ছিল। এবার কিউএস এশিয়া ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিংয়ে ভারতের সর্বোচ্চ সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। আপনি যদি এই উপলব্ধিগুলির একটি তালিকা তৈরি করতে শুরু করেন তবে এটি কখনই সম্পূর্ণ হবে না। ভারতের সম্ভাবনা যে কতটা প্রভাবশালী এটা তার একটা আভাস মাত্র - দেশের এই সাফল্যগুলি থেকে, দেশের মানুষের এই উপলব্ধিগুলি থেকে অনুপ্রেরণা নিতে হবে, গর্ব করতে হবে, নতুন সংকল্প নিতে হবে। আবারও, আমি আপনাদের সবাইকে ২০২৪ সালের শুভেচ্ছা জানাই।
আমার পরিবারবর্গ, আমরা এই মুহূর্তে ভারত সম্পর্কে সর্বত্র যে আশা এবং উদ্দীপনা নিয়ে আলোচনা করলাম - এই আশা এবং প্রত্যাশাটি খুবই ভাল। ভারত যখন বিকশিত হবে, তখন সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে যুবসমাজ। তবে যুবসমাজ এর থেকে তখনই লাভবান হবে যখন তারা ফিট হবে। আজকাল আমরা দেখছি যে লাইফস্টাইল সম্পর্কিত রোগগুলি সম্পর্কে কতটা আলোচনা হয়, এটি আমাদের সকলের জন্য বিশেষ করে যুবসমাজের জন্য যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয়। এই ‘মন-কি বাত’-এর জন্য আমি আপনাদের সকলকে ফিট ইন্ডিয়া সম্পর্কিত ইনপুট পাঠাতে অনুরোধ করেছিলাম। আপনারা যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তা আমাকে খুবই উৎসাহিত করেছে। অনেক সংখ্যক স্টার্টআপও আমাকে “নমো অ্যাপে” তাদের পরামর্শ পাঠিয়েছে, তারা তাদের বিভিন্ন অনন্য প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনা করেছে।
বন্ধুরা, ভারতের প্রচেষ্টার কারণে, ২০২৩ সালকে International Year of Millets হিসাবে পালন করা সম্ভব হয়েছিল। এর ফলে এই ক্ষেত্রে কাজ করা স্টার্টআপগুলি বেশ কিছু সুযোগ পেয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে লখনউ থেকে শুরু হওয়া ‘কিরোজ ফুডস’, প্রয়াগরাজের ‘গ্র্যান্ড-মা মিলেটস’ এবং ‘নিউট্রাসিউটিক্যাল রিচ অর্গানিক ইন্ডিয়া’-এর মতো অনেক স্টার্ট-আপ। Alpino Health Foods, Arboreal এবং Keeros Food-এর সঙ্গে যুক্ত যুবসমাজ স্বাস্থ্যকর খাবারের বিকল্প সম্পর্কে নতুন নতুন উদ্ভাবন করছে। বেঙ্গালুরুর আন-বক্স হেলথের সঙ্গে যুক্ত যুবসমাজ এটাও জানিয়েছে যে কিভাবে তারা মানুষকে তাদের পছন্দের Diet বেছে নিতে সাহায্য করছে। Physical Health-এর প্রতি আগ্রহ যেভাবে বাড়ছে, তার ফলে এই ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত কোচ ও প্রশিক্ষকের চাহিদাও বাড়ছে। "JOGO টেকনোলজিস" এর মতো স্টার্টআপগুলি এই চাহিদা মেটাতে সাহায্য করছে৷
বন্ধুরা, আজ শারীরিক স্বাস্থ্য এবং ভালো থাকা নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে, তবে এর সঙ্গেই সম্পর্কিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল মানসিক স্বাস্থ্য। আমি জেনে খুবই আনন্দিত যে মুম্বাই-ভিত্তিক স্টার্টআপ যেমন Infi Heal এবং Your Dost, মানসিক স্বাস্থ্য এবং well being-এর উন্নতির জন্য কাজ করছে। শুধু তাই নয়, আজ Artificial Intelligence-এর মতো Technology-এর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। বন্ধুরা, আমি এখানে শুধুমাত্র কয়েকটি স্টার্টআপেরই নাম নিতে পারি কারণ তালিকাটি অনেক দীর্ঘ। আমি আপনাদের সকলকে অনুরোধ করব ফিট ইন্ডিয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য innovative Health care Startups সম্পর্কে আমাকে অবশ্যই লিখতে থাকুন। আমি আপনার সঙ্গে শারীরিক স্বাস্থ্য এবং মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতাও শেয়ার করতে চাই ।
এই প্রথম message-টি সদগুরু জগ্গি বাসুদেবজীর।
তিনি fitness, বিশেষত, fitness of the mind, অর্থাৎ মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিজের মতামত ব্যক্ত করেছেন।
** অডিও **
“মন কি বাতের” এই পর্বে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলতে পারাটা আমার সৌভাগ্য। মানসিক রোগ এবং আমাদের স্নায়ুতন্ত্র সরাসরি সম্পর্কিত। আমদের স্নায়ুতন্ত্র কতটা সজাগ, সচল এবং ঝামেলা মুক্ত থাকবে তা নির্ধারণ করে আমরা নিজেদের ভেতরে কতটা আনন্দ অনুভব করছি তার ওপর। আমরা যাকে বলি শান্তি, প্রেম, আনন্দ, যন্ত্রণা, বিষণ্নতা, উচ্ছ্বাস সবগুলোরই একটি Chemical Neurological ভিত্তি রয়েছে। ফার্মাকোলজি মূলত বাইরে থেকে chemicals যোগ করে শরীরের মধ্যে Chemical imbalance ঠিক করার চেষ্টা করে। মানসিক রোগগুলি এইভাবেই সামাল দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে যে বাইরে থেকে ক্যামিক্যাল গ্রহণ করা প্রয়োজন তখনই যখন কেউ গুরুতর পরিস্থিতিতে রয়েছে। শরীরের অভ্যন্তরে মনের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য বা সুষম রাসায়নিক ব্যবস্থার জন্য, শান্তি, আনন্দ, সুখের উপযোগী রাসায়নিক ব্যবস্থার জন্য কাজ করা, প্রত্যেকের জীবনের, একটা সমাজের সাংস্কৃতিক চর্যার, বিশ্বজুড়ে প্রতিটি দেশের এবং সামগ্রিকভাবে মানবতার অঙ্গ করে তুলতে হবে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা বুঝি যে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য, আমাদের মনের ভারসাম্য একটি Fragile Privilege – এগুলোকে রক্ষা করতে হবে, লালন করতে হবে আমাদের। এই লক্ষ্যে যোগ পদ্ধতিতে নানা স্তরের ক্রিয়ার সংস্থান আছে। আত্তীকরণ করার এমন পদ্ধতি আছে, যা নিজেদের রসায়নে ভারসাম্য আনতে, এবং নিজেদের স্নায়ুব্যবস্থায় বিশেষ একটা প্রশান্তি আনতে, সাধারণ ক্রিয়া হিসাবে অভ্যাস করতে পারে মানুষ। অন্তরের সুস্থতা আনার প্রযুক্তি যোগবিজ্ঞান হিসাবে পরিচিত। আসুন এটার চর্চা করি।
সাধারণত সদগুরুজি এরকম উত্তম উপায়ে নিজের কথাকে সামনে রাখার জন্যই পরিচিত।
আসুন, এবার আমরা জনপ্রিয় ক্রিকেট খেলোয়াড় হরমনপ্রীত কৌর জির কথা শুনি।
** অডিও **
নমস্কার। আমি আমার দেশবাসীকে “মন কি বাত” এর মাধ্যমে কিছু বলতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী জির ফিট ইন্ডিয়ার প্রয়াস, আমায় নিজের fitness মন্ত্র আপনাদের সকলের সঙ্গে share করার জন্য উৎসাহিত করেছে। আপনাদের সবাইকে আমার প্রথম suggestion এটাই যে 'one cannot out-train a bad diet' . অর্থাৎ আপনারা কি খান আর কখন খান এই ব্যাপারে আপনাদের অনেক সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মোদী জি সবাইকে বাজরা খাবার জন্য encourage করেছেন। যা immunity বাড়ায় আর টেকসই কৃষিতে সাহায্য করবে এবং বাজরা হজম করাও সহজ। Regular exercise এবং ৭ঘণ্টার সম্পূর্ণ ঘুম শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় আর ফিট থাকতেও সাহায্য করে। এর জন্য অনেক discipline এবং consistency-এরও দরকার। যখন আপনি এর ফল লাভ করতে শুরু করবেন তখন আপনি নিজেই প্রত্যেকদিন এক্সারসাইজ করা শুরু করে দেবেন। আমায় আপনাদের সবার সঙ্গে কথা বলার এবং নিজের ফিটনেস মন্ত্র share করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজিকে অনেক ধন্যবাদ।
হরমনপ্রীতজির মতো প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের কথা, নিশ্চিতরূপে আপনাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করবে।
আসুন, গ্র্যান্ডমাস্টার Viswanathan Anand জির কথা শুনি। আমরা সবাই জানি যে ওঁর খেলা ' দাবা ' এর জন্য মেন্টাল ফিটনেস কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
** অডিও **
নমস্কার। আমি Viswanathan Anand। আপনারা আমায় chess খেলতে দেখেছেন এবং প্রায়ই আমায় জিজ্ঞেস করা হয় আমার ফিটনেস রুটিন সম্বন্ধে। এখন দাবায় প্রচুর পরিমাণে একাগ্রতা ও ধৈর্যের দরকার, তাই আমি নিজেকে ফিট এবং কর্মতৎপর রাখার জন্য এগুলি করি। আমি যোগাভ্যাস করি সপ্তাহে দু’বার, cardio করি সপ্তাহে দু’বার। আমি flexibility, stretching, weight training এর উপর focus করি এবং প্রত্যেক সপ্তাহে অন্তত একদিন ছুটি নেবার চেষ্টা করি।
এই সব কিছুই দাবার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছয়-সাত ঘন্টা তীব্র মানসিক পরিশ্রম করার মত স্ট্যামিনা আপনার থাকতে হবে। পাশাপাশি আরামদায়কভাবে বসার মত নমনীয়তা থাকা প্রয়োজন। দাবা খেলা মানে কোন একটি সমস্যায় মনঃসংযোগ করা, সে ক্ষেত্রে নিঃশ্বাস প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা, শান্ত, স্থির থাকতে সাহায্য করে। “মন কি বাত”-এর সকল শ্রোতার প্রতি আমার ফিটনেস টিপস্ হল, প্রশান্ত থাকা এবং সামনে যে কাজ রয়েছে তাতে শান্ত ভাবে মনঃসংযোগ করা। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বোত্তম ফিটনেস টিপ হচ্ছে রাতে ভালো করে ঘুমনো। রাতে চার-পাঁচ ঘণ্টা ঘুমনোর অভ্যাস করবেন না। আমার মতে ন্যূনতম সাত বা আট ঘন্টার ঘুম আবশ্যক। কাজেই আমাদের যথাসম্ভব চেষ্টা করতে হবে রাতের ভালো ঘুমের জন্য, কারণ তখনই পরের দিনটা আপনারা প্রশান্ত মনে কাটাতে পারবেন, আবেগ প্রবণ হয়ে কোন হঠকারী সিদ্ধান্ত নেবেন না এবং আপনাদের আবেগকে আপনারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। তাই আমার কাছে ঘুমই হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফিটনেস টিপ।
আসুন এবার অক্ষয় কুমার জির কথা শুনি।
** অডিও **
নমস্কার, আমি অক্ষয় কুমার। সবার প্রথমে আমি আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রীজিকে অনেক ধন্যবাদ জানাই যে তাঁর "মন কি বাতে" আমিও আমার মনের কথা আপনাদের শোনানোর একটা ছোট্ট সুযোগ পেলাম। আপনারা তো জানেন যে আমি ফিটনেস্-এর জন্য যতটা প্যাশনেট তার থেকেও অনেক বেশি প্যাশনেট প্রাকৃতিক পদ্ধতি অবলম্বন করে ফিট থাকার ব্যাপারে। ফ্যান্সি জিমের থেকেও আমি বেশি পছন্দ করি বাইরে সাঁতার কাটা, ব্যাডমিন্টন খেলা, সিঁড়ি দিয়ে ওঠা, মুগুরের সাহায্যে ব্যায়াম করা, স্বাস্থ্যকর খাওয়া দাওয়া করা। যেমন আমার মনে হয় শুদ্ধ ঘি যদি সঠিক মাত্রায় খাওয়া যায় তাহলে তা আমাদের জন্য উপকারী। কিন্তু আমি দেখি অনেক ইয়াং ছেলে মেয়ে মোটা হয়ে যাবেন এই আশঙ্কায় ঘি খান না। আমাদের ফিটনেসের জন্য কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ সেটা বুঝে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আপনারা ডাক্তারদের পরামর্শ নিয়ে নিজেদের লাইফস্টাইল বদলান, কোন ফিল্মস্টারের বডি দেখে নয়। অভিনেতাদের স্ক্রিনে যেমন দেখতে লাগে, তেমনটা তারা বাস্তবে অনেক সময়ই হন না। অনেক ধরনের ফিল্টার, স্পেশাল এফেক্ট ব্যবহার করা হয়, আর আমরা সেগুলি দেখে নিজেদের শরীরে বদল আনার জন্য ভুল শর্টকাট ব্যবহার করা শুরু করে দিই। আজকাল এত এত মানুষ স্টেরয়েড নিয়ে সিক্স প্যাক, এইট প্যাকের জন্য ছুটছেন। এই ধরনের শর্টকাটে শরীর ওপর ওপর ফুলে যায় কিন্তু ভেতরে ফাঁপা, অপুষ্টই রয়ে যায়। আপনারা মনে রাখবেন যে শর্টকাট ক্যান কাট ইয়োর লাইফ শর্ট, অর্থাৎ শর্টকাট আপনাদের আয়ু কমিয়ে দিতে পারে। আপনাদের শর্টকাট নয়, প্রয়োজন লং লাস্টিং ফিটনেস।
বন্ধুরা fitness একরকমের সাধনা। Instant coffee বা দু’মিনিটের noodles নয়। নতুন বছরে নিজের কাছে শপথ নাও, no chemicals, no shortcut; শরীর চর্চা, যোগাভ্যাস, ভালো খাবার, ঠিক সময় ঘুমানো, সামান্য meditation আর তার সঙ্গে সবচেয়ে জরুরি, তোমায় যেমন'ই দেখতে হোক সেটাই আনন্দের সঙ্গে accept করো। আজকে থেকে filter ওয়ালা লাইফ নয়, fitter life নিয়ে বাঁচো। Take care! জয় মহাকাল।
এই সেক্টরে আরো অনেক Start-ups আছে, এজন্য আমি ভাবলাম একজন যুব Start-up founder-এর সঙ্গেও আলোচনা করা যাক, যিনি এই জায়গায় খুব ভালো কাজ করছেন।
** অডিও **
নমস্কার, আমার নাম রিশভ মালহোত্রা, আমি বেঙ্গালুরুতে থাকি। “মন-কি-বাতে” ফিটনেস নিয়ে আলোচনা হচ্ছে জেনে আমার খুব আনন্দ হচ্ছে। আমি নিজে fitness-এর জগতে belong করি, আর বেঙ্গালুরুতে আমাদের একটা Start-up আছে, যার নাম 'তাগড়া রহো'। আমাদের এই Start-up তৈরি করা হয়েছে ভারতের ঐতিহ্যময় ব্যায়ামকে সামনে আনার জন্যে। ভারতের পরম্পরাগত শরীর চর্চায় একটা ভারি অদ্ভুত কসরত আছে যার নাম 'গদা-ব্যায়াম'; আর আমাদের পুরো focus থাকে গদা এবং মুগুর'এর ব্যায়ামের ওপর। লোকে জেনে অবাক হয় যে গদা নিয়ে সমস্ত training আপনি কি করে করেন! আমি এটুকুই বলতে চাইবো যে গদা ব্যায়াম হাজার হাজার বছরের পুরনো কসরত, আর এটা হাজার হাজার বছর ধরেই ভারতে চলে আসছে। আপনারা এটা ছোট বড় নানা আখড়ায় নিশ্চই দেখেছেন, আর আমাদের start-up এর মাধ্যমে আমরা এটাকে আধুনিক form-এ ফিরিয়ে এনেছি। সারা দেশ থেকে আমরা অনেক ভালোবাসা পেয়েছি, খুব ভালো response পেয়েছি। “মন কি বাতের” মধ্যে দিয়ে আমি এটুকু বলতে চাই যে এটা ছাড়াও ভারতে এমন অনেক পুরনো শরীর চর্চার কৌশল রয়েছে, Health আর fitness এর সঙ্গে যুক্ত নিয়মকানুন আছে, যা আমাদের আপন করে নেয়া উচিত, এবং সারা দুনিয়ায় সেটা শেখানো উচিত। আমি fitness জগতের লোক, তাই আপনাদের একটা personal tip দিতে চাই। গদা ব্যায়ামের মধ্যে দিয়ে আপনি আপনার শক্তি, শারীরিক ক্ষমতা, posture এবং breathing'কে ঠিক করে নিতে পারবেন, তাই গদা ব্যায়ামকে জীবনের অঙ্গ করে নিন ও একে এগিয়ে নিয়ে যান। জয় হিন্দ।
বন্ধুরা, প্রত্যেকে নিজের মতামত তুলে ধরেছেন কিন্তু সবার একটাই মন্ত্র -- Healthy থাকুন, fit থাকুন। ২০২৪-এর শুরুর মূহুর্তে আপনার কাছে নিজের fitness-এর চেয়ে বড় সংকল্প আর কি হতে পারে!
আমার পরিবারবর্গ, কিছুদিন আগে কাশীতে একটা এক্সপেরিমেন্ট হয়েছিল যার কথা আমি “মন কী বাতের” শ্রোতাদের অবশ্যই বলতে চাই। আপনারা জানেন যে কাশী তামিল সঙ্গমম্-এ অংশগ্রহণ করতে তামিলনাড়ু থেকে হাজার-হাজার মানুষ কাশী পৌঁছেছিলেন। ওঁদের সঙ্গে কথা বলার জন্যে আমি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এ. আই. টুল ভাষিণীর সর্বসমক্ষে প্রথম ব্যবহার করি। আমি মঞ্চ থেকে হিন্দিতে সম্বোধন করছিলাম কিন্তু এ. আই. টুল ভাষিণীর জন্য ওখানে উপস্থিত তামিলনাড়ুর ব্যক্তিরা সেই সম্বোধনই ঠিক সেই সময়েই তামিল ভাষায় শুনতে পাচ্ছিলেন।
কাশী তামিল সঙ্গমম্-এ উপস্থিত মানুষজনকে প্রযুক্তির এই ব্যবহারের পরে বেশ উৎসাহিত লাগছিল। ওই দিন দূর নেই যেদিন কোন একটি ভাষায় সম্বোধন করা হবে এবং জনতা real time-এ সেই ভাষণ নিজের ভাষায় শুনতে পাবে। এটা ফিল্মের ক্ষেত্রেও দেখা যাবে যখন সাধারণ মানুষ সিনেমা হলে এ আই-এর সাহায্যে real time translation শুনতে পাবে। আপনারা আন্দাজ করতে পারছেন যে যখন এই technology আমাদের স্কুলে, আমাদের হাসপাতালে, আমাদের আদালতে ব্যাপক রুপে ব্যবহৃত হবে তখন কী বিশাল পরিবর্তন আসবে। আমি আজকের যুব প্রজন্মের কাছে অনুরোধ করব যে real time translation-এর সঙ্গে যুক্ত AI tools-গুলিকে তারা যেন আরও explore করে এবং ১০০% full proof বানায়।
বন্ধুরা, এই পরিবর্তনশীল সময়ে আমাদের নিজেদের ভাষাগুলিকে বাঁচাতেও হবে এবং তাদের বৃদ্ধিসাধনও করতে হবে। এখন আমি আপনাদের ঝাড়খন্ডের একটি আদিবাসী গ্রামের কথা বলতে চাই। এই গ্রাম তাদের বাচ্চাদের নিজেদের মাতৃভাষায় শিক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে একটি অভিনব পদক্ষেপ নিয়েছে। গড়বা জেলার মংলো গ্রামে বাচ্চাদের কুড়ুখ ভাষায় শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। এই স্কুলের নাম কার্তিক ওরাঁও আদিবাসী কুড়ুখ স্কুল। এই স্কুলে ৩০০ আদিবাসী বাচ্চা পড়ে। কুড়ূখ ভাষা, ওরাঁও আদিবাসী জনজাতির মাতৃভাষা। কুড়ুখ ভাষার নিজস্ব লিপিও আছে যা তোলং সিকি নামে পরিচিত। এই ভাষাটি ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছিল যাকে বাঁচানোর জন্য এই জনজাতি নিজেদের ভাষায় বাচ্চাদের শিক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এই স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা অরবিন্দ ওরাঁও বলেন যে আদিবাসী বাচ্চাদের ইংরেজি ভাষা নিয়ে সমস্যা হত, তাই তিনি গ্রামের বাচ্চাদের নিজেদের মাতৃভাষায় পড়ানো শুরু করেন। ওঁর এই প্রচেষ্টায় আরও ভাল ফল পাওয়া শুরু হওয়ার পর বাকি গ্রামবাসীরাও ওঁর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান। নিজেদের ভাষায় পড়াশোনা করার কারণে বাচ্চাদের শেখার গতিও বেড়ে যায়। আমাদের দেশে বহু বাচ্চা ভাষাগত সমস্যার জন্য পড়াশোনা মাঝপথে ছেড়ে দিত। এই ধরণের অসুবিধেগুলি দূর করতে নতুন রাষ্ট্রীয় শিক্ষা নীতি থেকেও সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের প্রচেষ্টা এই যে, ভাষা - কোন বাচ্চার শিক্ষা ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে যেন না বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
বন্ধুরা, যুগে যুগে আমাদের ভারতভূমিকে ভারতের গুণী কন্যারা গৌরবান্বিত করেছে। সাবিত্রী বাঈ ফুলেজী এবং রানী বেলু নাচিয়ারজী দেশের এমনই দুই মহান কন্যা। তাঁদের ব্যক্তিত্ব এমনই প্রকাশ স্তম্ভের মত, যে সর্ব যুগে নারী শক্তিদের এগিয়ে চলার রাস্তা দেখায়। আজ থেকে আর কয়েকদিন পরেই, তেসরা জানুয়ারি আমরা এঁদের জন্মজয়ন্তী পালন করবো। সাবিত্রীবাঈ ফুলেজীর নাম স্মরণে আসতেই শিক্ষা এবং সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে তাঁর যোগদানের কথাই মনে আসে। তিনি বরাবর মহিলা এবং বঞ্চিতদের শিক্ষার জন্যে সোচ্চার ছিলেন। তিনি সমসময়ের থেকে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন এবং সেই সময়ের ভুল প্রথার বিরুদ্ধে মুখর ছিলেন। শিক্ষার মাধ্যমেই সমাজের সশক্তিকরণ সম্ভব, এই ছিল তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস। মহাত্মা ফুলেজীর সঙ্গে তিনি মেয়েদের জন্যে বেশ কয়েকটি স্কুল নির্মাণ করেছিলেন। তাঁর কবিতাগুলি মানুষকে সচেতনতার এবং আত্মবিশ্বাসে ভরিয়ে তুলতো। মানুষ একে অপরকে সাহায্য করবে এবং প্রকৃতির প্রতিও দায়িত্বশীল হবে, এমনটাই আশা করতেন তিনি মানুষের কাছে। তিনি কতটা দয়ালু ছিলেন, তা শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করা অসম্ভব। মহারাষ্ট্রে যখন আকাল এসেছিল, তখন সাবিত্রী বাঈ এবং মহাত্মাফুলেজী তাঁদের দরজা সাহায্যপ্রার্থীদের জন্যে খুলে দিয়েছিলেন। সামাজিক ন্যায়ের ক্ষেত্রে এমন উদাহরণ কমই দেখতে পাওয়া যায়। যখন সেখানে প্লেগের ভয় দেখা দিল, সেসময়ে তাঁরা মানুষের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করলেন। এর ফলে তাঁরা নিজেরাও প্লেগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। মানবতার প্রতি উতসর্গীকৃৎ তাঁদের জীবন আমাদের আজও প্রাণিত করে।
বন্ধুরা, বিদেশি শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন যাঁরা, সেই মহান ব্যক্তিত্বদের মধ্যে রানী বেলু নাচিয়ার-ও একটি নাম। আমার তামিলনাড়ুর ভাই বোনেরা আজও তাঁকে বীরা মঙ্গাই অর্থাৎ বীর নারী নামেই স্মরণ করে। ইংরেজদের বিরুদ্ধে সাহসীকতার সঙ্গে লড়াই করে রানী বেলু নাচিয়ারজী যে পরাক্রম দেখিয়েছেন, তা আমাদের প্রেরণা যোগায়। ইংরেজরা শিবগঙ্গা সাম্রাজ্যে হামলা করে সেখানকার রাজা, তাঁর স্বামীকে হত্যা করে। রানীজী এবং তাঁর কন্যা কোনক্রমে সেখান থেকে পলায়ন করেন। তিনি সংগঠন গড়ে তুলতে এবং মুরুদু ব্রাদার্স অর্থাৎ নিজের কমান্ডারদের সঙ্গে সেনাবাহিনী তৈরি করতে কয়েক বছর অতিবাহিত করেন। তিনি সম্পূর্ন প্রস্তুতির সঙ্গে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন এবং সাহসিকতা ও সংকল্প শক্তির সঙ্গে লড়াই করেন। রানী বেলু নাচিয়ারের নাম তাঁদের মধ্যে আসে, যাঁরা সম্পূর্ন মহিলাদের নিয়ে সেনাদের গ্রুপ তৈরী করেছিলেন। আমি এই দুই বীরাঙ্গনার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
আমার পরিবারবর্গ, গুজরাটে ডায়রার একটা রীতি আছে। সারারাত হাজারো মানুষ ডায়রাতে জড়ো হয়ে বিনোদনের মধ্যে দিয়ে জ্ঞান অর্জন করে। এই ডায়রাতে লোকসংগীত, লোকসাহিত্য এবং হাস্যরসের ত্রিসঙ্গম সবার মনকে আনন্দে ভরিয়ে দেয়। এই ডায়রার একজন প্রসিদ্ধ শিল্পী হলেন ভাই জগদীশ ত্রিবেদীজী। ভাই জগদীশ ত্রিবেদীজী প্রায় ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কৌতুক শিল্পী হিসাবে তাঁর প্রভাব প্রতিষ্ঠা করেছেন। সম্প্রতি আমি ভাই জগদীশ ত্রিবেদীজীর কাছ থেকে একটি চিঠি পেয়েছি এবং এঁর সঙ্গে তিনি তাঁর একটি বইও পাঠিয়েছেন। বইটির নাম হল – Social Audit of Social Service । এই বইটি খুবই অনন্য। এই বইটিতে হিসেব নিকেষ রয়েছে, এই বইটি একধরণের Balance Sheet। গত ৬ বছরে ভাই জগদীশ ত্রিবেদীজী কোন কোন অনুষ্ঠান থেকে কত আয় করেছেন এবং কোথায় কোথায় খরচা করেছেন তার সম্পূর্ণ লিখিত হিসাব বইটিতে রয়েছে। এই Balance Sheet, এই জন্য অনন্য কারণ উনি ওঁর সম্পূর্ণ আয়, এক এক টাকা সমাজের জন্য, School, Hospital, Library, বিশেষ ভাবে সক্ষম মানুষদের সঙ্গে যুক্ত সংস্থায়, সমাজসেবার কাজে খরচ করেছেন - এই পুরো ৬ বছরের হিসাব রয়েছে। যেমন বইটির এক জায়গায় লেখা আছে, ২০২২ সালে তিনি তাঁর অনুষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত ২ কোটি পঁয়ত্রিশ লক্ষ ঊনআশি হাজার ছয়শ চুয়াত্তর টাকা আয় করেছেন। আর এই ২ কোটি পঁয়ত্রিশ লাখ ঊনআশি হাজার ছয়শ চুয়াত্তর টাকা তিনি খরচ করেছেন School, Hospital, Library তে। এক পয়সাও নিজের কাছে রাখেননি। আসলে এর পিছনেও একটা মজার ঘটনা আছে। এমনটা হয়েছিল যে একবার ভাই জগদীশ ত্রিবেদীজী বলেছিলেন যে তিনি ২০১৭ সালে যখন তাঁর ৫০ বছর বয়স হবে, তারপরে তিনি তাঁর অনুষ্ঠান থেকে অর্জিত আয় ঘরে নেবেন না, বরং সমাজে ব্যয় করবেন। ২০১৭ সালের পর থেকে এখনও পর্যন্ত, তিনি প্রায় পৌনে ন’কোটি টাকা আলাদা আলাদা সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যয় করেছেন। একজন হাস্য কৌতুক শিল্পী, তাঁর কথা দিয়ে, সবাইকে হাসতে বাধ্য করেন। কিন্তু তিনি যে নিজের ভিতর কতটা সংবেদনশীলতাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, তা ভাই জগদীশ ত্রিবেদীজীর জীবন থেকে স্পষ্ট। জানলে অবাক হবেন যে তাঁর PHD-র তিনটি ডিগ্রিও রয়েছে। তিনি ৭৫টি বই লিখেছেন, যার মধ্যে অনেকগুলি বই যথাযথ সম্মানও পেয়েছে। তিনি তাঁর সামাজিক কাজের জন্য অনেক পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন। আমি ভাই জগদীশ ত্রিবেদীজীকে তাঁর সামাজিক কাজের জন্য অনেক শুভকামনা জানাই।
আমার পরিবারবর্গ, অযোধ্যায় রামমন্দিরকে কেন্দ্র করে সারা দেশে উৎসাহ ও উত্তেজনার সঞ্চার হয়েছে। দেশবাসী নিজেদের ভাবনা বিভিন্ন ভাবে ব্যক্ত করছেন। আপনারা দেখে থাকবেন বিগত কিছুদিন ধরে শ্রীরাম ও অযোধ্যাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গান ও ভজনের রচনা করা হয়েছে। বহু মানুষ নতুন কবিতাও লিখছেন। এদের মধ্যে যেমন অনেক অভিজ্ঞ শিল্পীরা রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন তরুণ শিল্পীবৃন্দ যাদের সৃষ্টি করা ভজন মন কেড়ে নিচ্ছে। এগুলির মধ্যে কিছু গান ও ভজন আমিও নিজের সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করেছি। মনে হচ্ছে যেন অতলনীয় শৈলীর মাধ্যমে কলাজগৎ এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সহযোগী হচ্ছে। আমার মনে একটি কথা আসছে যে আমরা কি এই সমস্ত রচনা গুলিকে একটি common hashtag-এর মাধ্যমে শেয়ার করতে পারি? আমার আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ যে #Shri Ram bhajan দিয়ে আপনারা নিজেদের রচনা সোশ্যাল মেডিয়াতে share করুন। এই সংকলনটি ভাবনার এবং ভক্তির এমন একটি প্রবাহ সৃষ্টি করবে যার স্পর্শে সবাই রাম-ময় হয়ে উঠবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী। “মন কি বাতে” আজ এটুকুই। ২০২৪ কেবলমাত্র কিছু ঘন্টার অপেক্ষায়। ভারতবর্ষের উপলব্ধি, প্রত্যেক ভারতবাসীর উপলব্ধি। পঞ্চপ্রাণকে মাথায় রেখে ভারতের উন্নয়নের জন্য আমাদের ক্রমাগত কাজ করতে হবে। আমরা যে কাজই করি না কেন, যে সিদ্ধান্তই নিই না কেন আমাদের সর্বোপরি উদ্দেশ্য এটাই হওয়া উচিত যে এতে আমাদের দেশ কি পাবে, দেশের কি লাভ হবে? রাষ্ট্র প্রথম - Nation First... এটাই একমাত্র মন্ত্র! এর থেকে বড় কোনো মন্ত্র নেই। এই মন্ত্রের অনুপালন করে আমরা ভারতীয়রা আমাদের দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাব, আত্মনির্ভর করে তুলবো। আপনারা সকলে ২০২৪-এ সাফল্যের নতুন শিখর জয় করুন, সকলে সুস্থ থাকুন, fit থাকুন আর খুব আনন্দে থাকুন - আমি এই প্রার্থনাই করি। ২০২৪ এ আমরা আবারো দেশের মানুষের নতুন উপলব্ধি নিয়ে চর্চা করব। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। ‘মন কি বাতে’ স্বাগত জানাই আপনাদের। কিন্তু আজ, ২৬শে নভেম্বরকে কখনই ভুলতে পারব না আমরা। আজকের দিনেই দেশের উপর সবথেকে জঘন্য আতঙ্কবাদী হামলা হয়েছিল। আতঙ্কবাদীরা মুম্বাইকে, পুরো দেশকে স্থবির করে দিয়েছিল। কিন্তু এটা ভারতের সামর্থ্য যে আমরা সেই হামলা থেকে বেরিয়ে এসেছি আর এখন পুরো শক্তি দিয়ে আতঙ্কের বিনাশও করছি। মুম্বাই হামলায় নিজেদের প্রাণ হারানো প্রত্যেক ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করছি আমি। এই হামলায় প্রাণের আহুতি দেওয়া আমাদের যে সব সন্তান, বীরের পরিণতি পেয়েছে তাঁদের আজ স্মরণ করছে দেশ।
আমার প্রিয়জনেরা, ২৬ নভেম্বরের আজকের এই দিন আরও একটা কারণেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৪৯ সালে আজকের দিনেই সংবিধান সভা ভারতের সংবিধানের অঙ্গীকার করেছিল। আমার মনে আছে, যখন ২০১৫ সালে আমরা বাবা সাহেব আম্বেদকরের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী পালন করছিলাম তখন এই ভাবনা এসেছিল যে ২৬শে নভেম্বরকে ‘সংবিধান দিবস’ হিসাবে পালন করা হোক। আর তখন থেকে প্রতি বছর আজকের এই দিনকে আমরা ‘সংবিধান দিবস’ হিসাবে পালন করে আসছি। আমি সব দেশবাসীকে সংবিধান দিবসের অনেক-অনেক শুভকামনা জানাচ্ছি। আর আমরা সবাই মিলে, নাগরিকের কর্তব্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে, বিকশিত ভারতের সঙ্কল্পকে অবশ্যই পূরণ করব।
বন্ধুরা, আমরা সবাই জানি যে সংবিধান নির্মাণে ২ বছর ১১ মাস ১৮ দিন সময় লেগেছিল। শ্রী সচ্চিদানন্দ সিন্হা’জি সংবিধান সভার সবথেকে বয়স্ক সদস্য ছিলেন। ষাটটিরও বেশি দেশের সংবিধানের অধ্যয়ন আর দীর্ঘ আলোচনার পরে আমাদের সংবিধানের খসড়া তৈরি হয়েছিল। খসড়া তৈরি হওয়ার পরে সেটাকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার আগে আবার সেটাতে দু’হাজারেরও বেশি সংশোধন করা হয়েছিল। ১৯৫০ সালে সংবিধান প্রযুক্ত হওয়ার পরে এখনও অবধি মোট ১০৬ বার সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। সময়, পরিস্থিতি, দেশের প্রয়োজনের কথা মনে রেখে আলাদা-আলাদা সরকার আলাদা-আলাদা সময়ে সংশোধন করেছে। কিন্তু এটাও দুর্ভাগ্যজনক যে সংবিধানের প্রথম সংশোধন, বাকস্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় কাটছাঁট করার জন্য হয়েছিল। সেই সংবিধানেরই চুয়াল্লিশতম সংশোধনের মাধ্যমে, ইমারজেন্সির সময় করা ত্রুটি শুধরে নেওয়া হয়েছিল।
বন্ধুরা, এটাও খুবই প্রেরণাদায়ক যে সংবিধানসভাতে কিছু সদস্য মনোনীত করা হয়েছিল, যার মধ্যে ১৫ জন মহিলা ছিলেন। এমনই একজন সদস্য, হংসা মেহতা’জী মহিলাদের অধিকার এবং ন্যায়বিচারের পক্ষে সোচ্চার হন। সেই সময়ে, ভারত ছিল এমন কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি যেখানে সংবিধান বলে মহিলাদের ভোটাধিকার দেওয়া হয়েছিল। রাষ্ট্র নির্মাণে সবাই অংশগ্রহণ করলেই সকলের উন্নয়ন সম্ভব। আমি সন্তুষ্ট যে সংবিধান প্রণেতাদের এই দূরদর্শিতা অনুসরণ করে ভারতের সংসদ এখন 'নারী শক্তি বন্দন আইন' পাস করেছে। ‘নারী শক্তি বন্দন আইন’ আমাদের গণতন্ত্রের সংকল্প শক্তির উদাহরণ। এটি একটি উন্নত ভারতের জন্য আমাদের সংকল্পকে অগ্রসর করতেও সমানভাবে সহায়ক হবে।
আমার প্রিয়জনেরা, দেশ গঠনের কাজ সাধারণ মানুষ নিজের কাঁধে তুলে নিলে সেই দেশের অগ্রগতি কোনো অপশক্তি আটকাতে পারে না। আজ ভারতেও স্পষ্ট চিত্র দেখা যাচ্ছে যে বেশ কিছু পরিবর্তনের নেতৃত্ব দেশের ১৪০ কোটি জনগণ সামলাচ্ছে। এর এক প্রত্যক্ষ উদাহরণ আমরা উৎসবের এই মরশুমে দেখলাম। গত মাসে 'মন কী বাত'-এ আমি 'ভোকাল ফর লোকাল ' অর্থাৎ স্থানীয় উৎপাদিত পণ্যদ্রব্য কেনার প্রতি জোর দিয়েছিলাম। গত কয়েকদিন আগেই দীপাবলি, ভাইফোঁটা, ছট্ পুজোতে দেশে চার লাখ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। এবং সেই সময় ভারতে উৎপাদিত পণ্যদ্রব্য কেনার উৎসাহ মানুষের মধ্যে দেখা গিয়েছিল। এখন তো বাচ্চারাও দোকানে কিছু কিনতে গেলে দেখে যে সেখানে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ লেখা আছে না নেই। এটাই শেষ নয়, অনলাইনে জিনিস কেনার সময় এখন লোকজন ‘কান্ট্রি অফ অরিজিন’ দেখতেও ভোলেনা।
বন্ধুরা, স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সাফল্যই যেমন এর এগিয়ে চলার প্রেরণা ঠিক তেমনই ভোকাল ফর লোকাল-এর সাফল্য বিকশিত ভারত, সমৃদ্ধ ভারতের দরজা খুলে দিচ্ছে। ভোকাল ফর লোকাল এর এই অভিযান গোটা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা মজবুত করছে। ভোকাল ফর লোকাল অভিযান রোজগারের গ্যারান্টি দেয়। এটি হল বিকাশের গ্যারান্টি, দেশের সুষম বিকাশের গ্যারান্টি। এটি শহুরে এবং গ্রামীণ উভয় মানুষের জন্য সমান সুযোগ প্রদান করে। এটি স্থানীয় পণ্যগুলিতে মূল্য সংস্করণের পথও প্রশস্ত করে, এবং যদি কখনও ব্যবসা নির্ভর অর্থনীতিতে উত্থান-পতন ঘটে, তবে ভোকাল ফর লোকালের মন্ত্রটি আমাদের অর্থনীতিকেও রক্ষা করে।
বন্ধুরা, ভারতীয় উৎপাদনের প্রতি এই মনোভাব শুধুমাত্র উৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। এখন বিয়ের মরশুমও আরম্ভ হয়ে গেছে। কিছু ব্যবসায়িক সংস্থার অনুমান বিয়ের এই Season-এ প্রায় পাঁচ লক্ষ কোটি টাকার কারবার হতে পারে। বিয়ের কেনাকাটায় আপনারা ভারতে তৈরী সামগ্রীগুলিকে প্রাধান্য দিন। আর বিয়ের কথা যখন এলো, একটা বিষয় আমাকে অনেক দিন ধরে কখনো কখনো খুব কষ্ট দেয়। আর মনের কষ্টের কথা পরিবারের সদস্যের বলবো না তো কাকে বলবো? আপনি ভাবুন আজকাল এই যে কিছু পরিবারের মধ্যে বিদেশে গিয়ে বিয়ে করবার নতুন প্রচলন আরম্ভ হয়েছে, এটা কি জরুরী? ভারতের মাটিতে, ভারতের লোকজনের মধ্যে থেকে যদি আমরা বিয়েশাদী করি, তাহলে ভারতের টাকা ভারতেই থাকে। দেশের মানুষজন আপনার বিয়েতে কিছু না কিছু কাজ করার সুযোগ পাবেন। ছোট খাটো কাজ করা গরীব মানুষেরা তাদের ছেলেমেয়েদের আপনাদের বিয়ের কথা বলবেন। আপনারা কি Vocal for Local-এর এই মিশনকে আরো বিস্তৃত করতে পারেন? বিয়েশাদির মতন অনুষ্ঠানগুলি আমাদের নিজেদের দেশেই করলে কেমন হয়? হতে পারে আপনারা যেরকম ব্যবস্থা চান, সেটা এখনই উপলব্ধ নয় কিন্তু আমরা যদি এরকম করে অনুষ্ঠান করতে থাকি তাহলে আমাদের পরিকাঠামোগুলি উন্নতি হবে। এটা অনেক বৃহৎ পরিসরের বিষয়, অনেক পরিবার যুক্ত এর সঙ্গে। আশা করছি আমার এই কষ্ট সেই বড় বড় পরিবারগুলির কাছে নিশ্চয়ই পৌঁছাবে।
আমার প্রিয়জনেরা, উৎসবের এই মরসুমে আরো একটি বড় Trend দেখা যাচ্ছে। এই নিয়ে পরপর দু’বছর দেখা গেল দীপাবলীর কেনাকাটায় ক্যাশ টাকার ব্যবহার ধীরে ধীরে কম হয়েছে। তার মানে মানুষজন এখন বেশি করে Digital মাধ্যম ব্যবহার করছেন। এটা বড়ই উৎসাহ ব্যঞ্জক। আপনারা আরো একটা কাজ করতে পারেন। আপনারা সিদ্ধান্ত নিন যে একমাস আপনারা UPI বা অন্য কোনো মাধ্যমে Digital Payment করবেন, কোনো ক্যাশ Payment করবেন না। ভারতের Digital বিপ্লবের সাফল্যতা এখন এই কাজকে খুবই বাস্তবায়ীত করেছে। আর এক মাস অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, আপনি অবশ্যই আমার সঙ্গে আপনার অভিজ্ঞতা এবং ছবি শেয়ার করবেন। এখন থেকেই, আমি আপনাকে আমার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাই। আমার প্রিয়জনের, আমাদের তরুণ বন্ধুরা দেশকে আরেকটি বড় সুখবর দিয়েছেন যা আমাদের সবাইকে গর্বে ভরিয়ে দেবে। Intelligence, Idea ও Innovation আজ ভারতীয় যুবকদের পরিচয়। এতে, প্রযুক্তির সংমিশ্রণের মাধ্যমে তাদের বৌদ্ধিক গুণাবলীর ক্রমাগত বৃদ্ধি দেশের শক্তিকে বাড়ানোর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আপনি জেনে খুশি হবেন যে ২০২২ সালে ভারতীয়দের পেটেন্ট আবেদনে ৩১% এরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। World Intellectual Property Organisation একটি খুব চমকপ্রদ report প্রকাশ করেছে। এই report-এ বলা হয়েছে যে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশ যা পেটেন্ট দাখিল করায় শীর্ষস্থানে রয়েছে তার মধ্যে ভারতও আছে। এটি আগে কখনও ঘটেনি। এই অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য আমি আমার তরুণ বন্ধুদের অভিনন্দন জানাই। আমি আমার তরুণ বন্ধুদের আশ্বস্ত করতে চাই যে দেশ প্রতিটি পদক্ষেপে আপনার সঙ্গে আছে। সরকারের করা প্রশাসনিক ও আইনগত সংস্কারের পর, আজ আমাদের তরুণরা একটি নতুন শক্তি নিয়ে বৃহত্তর ইনোভেশনের কাজে যুক্ত হচ্ছে। যদি আমরা ১০ বছর আগের পরিসংখ্যানের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে আজ আমাদের পেটেন্টগুলি ১০ গুণ বেশি অনুমোদন পাচ্ছে। আমরা সবাই জানি যে পেটেন্ট শুধুমাত্র দেশের intellectual property বাড়ায় না, এটি নতুন নতুন সুযোগের দরজা খুলে দেয়। এটি আমাদের স্টার্টআপগুলির শক্তি এবং ক্ষমতাকেও বৃদ্ধি করে। আজ, আমাদের স্কুলের পড়ুয়াদের মধ্যেও উদ্ভাবনের চেতনা বিকশিত হচ্ছে। অটল টিঙ্কারিং ল্যাব, অটল ইনোভেশন মিশন, কলেজে ইনকিউবেশন সেন্টার, স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া ক্যাম্পেইন - এই ধরনের নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলাফল দেশবাসীর সামনে রয়েছে। এটাও ভারতের যুবশক্তি, ভারতের innovative power-এর প্রত্যক্ষ উদাহরণ। এই উদ্যমের সঙ্গে আগে এগোতে পারলেই আমরা বিকশিত ভারতের সংকল্প পূরণ করে দেখাতে পারবো, আর সেইজন্য আমি বারবার বলি 'জয় জওয়ান, জয় কিষান, জয় বিজ্ঞান, জয় অনুসন্ধান'।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের মনে আছে কিছুদিন আগে ‘মন কি বাত’-এ ভারতে আয়োজিত বিভিন্ন মেলা সম্বন্ধে আমি চর্চা করেছিলাম। তখন একটি এমন প্রতিযোগিতারও কথা উঠেছিল যেখানে মানুষ মেলা কেন্দ্রিক ছবি ভাগ করে নেয়। সংস্কৃতি মন্ত্রক এটার উপরেই Mela Moments Contest-এর আয়োজন করেছিল। আপনাদের এটা জেনে ভালোলাগবে যে এতে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং অনেকেই পুরস্কার জিতেছিলেন। কলকাতার অধিবাসী রাজেশ ধর’জি 'চড়ক মেলা'-এ বেলুন ও খেলনা বিক্রয়কারীর এক অদ্ভুত সুন্দর ছবি তুলে পুরস্কার জিতে ছিলেন। এই মেলা গ্রামীণ বাংলায় জনপ্রিয়। বারাণসির হোলিকে showcase করার জন্য অনুপম সিং’জি Mela portraits-এর পুরস্কার পান। অরুণ কুমার নলিমেলা’জি 'কুলসাই দশেরার' সঙ্গে জড়িত একটি আকর্ষক দিক ছবিতে তুলে ধরার জন্য পুরস্কৃত হয়েছিলেন। সেরকমই 'পান্ডহারপুরের ভক্তি প্রদর্শক ছবি , সবথেকে বেশি পছন্দ হওয়া ছবিগুলোর অন্তর্গত, যেটা পাঠিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রেরই এক সজ্জন ব্যক্তি শ্রীমান রাহুল’জি। এই প্রতিযোগিতায় অনেক ছবি মেলার সময়কার স্থানীয় খাওয়াদাওয়ারেও ছিল। এতে পুরুলিয়ার বাসিন্দা আলোক অবিনাশ’জির ছবি পুরস্কার জিতেছিলেন। উনি একটি মেলার সময় বাংলার গ্রামীণ ক্ষেত্রের খাওয়াদাওয়ার ছবি তুলে ধরেছেন। প্রণব বসাক’জির সেই ছবিও পুরস্কৃত হয় যেখানে ভাগোরিয়া মহোৎসব এর সময় কিছু মহিলা কুলফির আস্বাদন করছিলেন। রুমেলা’জি ছত্তিশগড়-এর জগদলপুর এর একটি গ্রামের মেলায় এক মহিলার তেলেভাজা খাওয়ার Photo পাঠিয়েছিলেন - এটাও পুরস্কৃত হয়েছিল।
বন্ধুরা, মন কি বাত এর মাধ্যমে আজ প্রতিটি গ্রাম, প্রতিটি স্কুল, প্রতিটি পঞ্চায়েতের কাছে আমার অনুরোধ যে, প্রতিনিয়ত এই ধরনের প্রতিযোগিতার যেন আয়োজন করা হয়। আজকাল তো সোশ্যাল মিডিয়া এত শক্তিশালী - টেকনোলজি ও মোবাইল ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। আপনাদের লোকাল উৎসব হোক বা কোন প্রোডাক্ট, আপনারা তাকে এভাবেও গ্লোবালে পরিণত করতে পারেন।
বন্ধুরা, গ্রামে গ্রামে অনুষ্ঠিত মেলাগুলির মতই আমাদের এখানে বিভিন্ন নৃত্যেরও নিজ নিজ ঐতিহ্য রয়েছে। ঝাড়খন্ড, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের জনজাতি অঞ্চলে একটি অত্যন্ত প্রসিদ্ধ নৃত্য আছে যা ছৌ নামে খ্যাত। ১৫ থেকে ১৭ই নভেম্বর "এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত" এই ভাবনাকে সঙ্গে নিয়ে শ্রীনগরে ছৌ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে সকলে মিলে ছৌ নাচের আনন্দ উপভোগ করেছেন। শ্রীনগরের তরুণ ও যুবাদের ছৌ নাচের ট্রেনিং দেওয়ার জন্য একটি ওয়ার্কশপেরও আয়োজন করা হয়েছে। অনুরূপভাবে কিছু সপ্তাহ আগেই কঠুয়া জেলায় বসোহলি উৎসব আয়োজিত হয়েছে। এই স্থানটি জম্মু থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই উৎসবে স্থানীয় শিল্পকলা, লোকনৃত্য এবং পরম্পরাগত রামলীলার আয়োজন করা হয়েছে।
বন্ধুরা, ভারতীয় সংস্কৃতির সৌন্দর্য সৌদি আরবেও অনুভূত হয়েছে। এ মাসেই সৌদি আরবে "সংস্কৃত উৎসব" নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে। এটি খুবই অনন্য একটি আয়োজন ছিল কারণ সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটি সংস্কৃতে হয়েছিল। সংবাদ, সংগীত, নৃত্য সবকিছু সংস্কৃতে। এই অনুষ্ঠানে ওখানকার স্থানীয় মানুষদেরও অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে।
আমার প্রিয়জনেরা, "স্বচ্ছ ভারত" তো এখন সারা দেশের প্রিয় বিষয় হয়ে উঠেছে। আমার তো প্রিয় বিষয় এটি অবশ্যই, আর যখনই এই সম্পর্কিত কোনো খবর আমি পাই, আমার মন সেদিকে ধাবিত হয়। আর স্বাভাবিকভাবেই ‘মন কি বাতে’ও সেটি স্থান পায়। স্বচ্ছ ভারত অভিযান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সার্বিক, সর্বজনীন স্বচ্ছতা বিষয়ে মানুষের ভাবনা বদলে দিয়েছে। এই উদ্যোগ এখন রাষ্ট্রীয় ভাবনার প্রতীক হয়ে উঠেছে যা কোটি কোটি দেশবাসীর জীবন উন্নততর করেছে। এই অভিযান ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষকে বিশেষ করে যুবা বন্ধুদের সামগ্রিক অংশগ্রহণে অনুপ্রাণিত করেছে। এমনই একটি প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা সুরাটে দেখা গেছে। যুবদের একটি দল “প্রজেক্ট সুরাট” নামে এক প্রকল্প শুরু করেছে। এর লক্ষ্য সুরাটকে একটি মডেল শহর হিসেবে তৈরি করা যা পরিচ্ছন্নতা এবং সাস্টেনেবল ডেভলপমেন্টের ক্ষেত্রে উপযুক্ত উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত হয়। “সাফাই সান’ডে” নামে শুরু হওয়া একটি বিশেষ প্রচেষ্টার মাধ্যমে সুরাটের যুবরা আগে সব জায়গায় এবং ‘ডু মাস’ বিচ পরিষ্কার করতেন। পরবর্তীকালে এঁরা তাপ্তি নদীর তীরবর্তী এলাকাও পরিষ্কার করার বিষয়ে প্রাণপণে উদ্যোগ নেন এবং আপনারা জেনে খুশি হবেন যে ধীরে ধীরে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত লোকের সংখ্যা ৫০ হাজার অতিক্রম করে যায়। মানুষের থেকে পাওয়া এই সমর্থন আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়, এর পরে ওঁরা আবর্জনা একত্র করার কাজও শুরু করেন। আপনাদের জেনে আর্শয্য লাগবে যে এই দল লক্ষ লক্ষ কিলো নোংরা পরিষ্কার করেছে। একেবারে তৃণমূল স্তরে হওয়া এমন কাজ অনেক বড় পরিবর্তন নিয়ে আসে।
বন্ধুরা গুজরাট থেকে আরও একটি তথ্য এসেছে। কয়েক সপ্তাহ আগে এখানে অম্বাজিতে ভাদ্রবী পূর্ণিমা মেলার আয়োজন করা হয়েছিল, এই মেলায় পঞ্চাশ লাখেরও বেশি মানুষের সমাগম হয়েছিল। এই মেলা প্রতিবছর আয়োজিত হয়। এর সবচেয়ে ভালো বিষয় ছিল যে এই মেলায় আসা মানুষরা গব্বর পর্বতের একটি বড় অংশে সাফাই অভিযান চালিয়েছিল। মন্দিরের আশেপাশের সব অংশ পরিষ্কার রাখার এই অভিযান অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক ছিল।
বন্ধুরা আমি সব সময় বলি যে স্বচ্ছতা কোন একটি দিন বা একটি সপ্তাহের অভিযান নয় বরং এটা জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা একটি কাজ। আমরা আমাদের আশেপাশে এমন মানুষ দেখতে পাই যাঁরা নিজের সম্পূর্ণ জীবন স্বচ্ছতার সঙ্গে যুক্ত বিষয়েই কাজে লাগিয়েছেন। তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটুরে বাস করা লোগনাথন’জি এমনই আশ্চর্য মানুষ। ছোটবেলায় আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের ছেঁড়া জামাকাপড় দেখে তিনি খুব কষ্ট পেতেন। এরপরে উনি এমন শিশুদের সাহায্য করার পণ গ্রহণ করেন এবং নিজের রোজগারের একটি অংশ তাঁদের দান করা শুরু করেন। যখন অর্থের অভাব হয়েছিল লোগানাথন’জি এমন কি Toilet পর্যন্ত পরিষ্কার করেছিলেন যাতে অসহায় শিশুদের সাহায্য করা যায়। গত ২৫ বছর ধরে তিনি এই কাজে নিজেকে পুরোপুরি সমর্পিত করে রেখেছেন আর এখনো পর্যন্ত পনেরশোর'ও বেশী শিশুকে তিনি সাহায্য করেছেন। আমি আরো একবার এমন প্রচেষ্টার প্রশংসা করছি। এমন অনেক প্রয়াস যা সারা দেশ জুড়ে হয়ে চলেছে তা শুধু আমাদের অনুপ্রাণিত'ই করে না নতুন কিছু করার ইচ্ছা শক্তি'ও যোগায়।
আমার প্রিয়জনেরা, একুশ শতকের সবথেকে বড় সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হলো 'জল সংরক্ষণ'! জল সংরক্ষণ জীবন রক্ষার থেকে কোন অংশে কম নয়। যখন আমরা সামগ্রিক ভাবে এই চিন্তা-ভাবনা থেকে কোন কাজ করি তখন সাফল্য'ও আসে। দেশের প্রত্যেক জেলায় চলতে থাকা অমৃত সরোবর নির্মানের কাজ এর একটা উদাহরণ। অমৃত-মহোৎসব চলাকালীন ভারতে ৬৫ হাজারেরো বেশি অমৃত সরোবর নির্মাণ হয়েছে, যা থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম লাভবান হবে। এখন আমাদের দায়িত্ব যেখানে যেখানে অমৃত সরোবর নির্মাণ হয়েছে তার অবিরাম দেখাশোনা করা, যাতে সেগুলো জল সংরক্ষণে মুখ্য ভূমিকা নেয়।
বন্ধুরা, জল সংরক্ষণ নিয়ে এই আলোচনার মধ্যেই আমি গুজরাটের অমরেলি'তে হওয়া জল উৎসব সম্পর্কে জানতে পেরেছি। গুজরাটে বারো মাস প্রবাহমান নদীর অভাব, সে কারণে লোকজনকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বৃষ্টির জলের ওপর নির্ভর করতে হয়। গত কুড়ি পঁচিশ বছরে, সরকার এবং বহু সমাজসেবী সংগঠনের মিলিত প্রচেষ্টার পর সেখানে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। আর এ জন্য সেখানে জল উৎসবের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। অমরেলিতে হওয়া এই জল উৎসব চলাকালীন জল সংরক্ষণ ও সরোবর রক্ষার বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করা হয়েছে। এখানে ওয়াটার স্পোর্টসের বিষয়েও উৎসাহ যোগানো হয়েছে, Water Security বিশেষজ্ঞদের নিয়ে নানান পর্যালোচনা'ও করা হয়েছে। কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী মানুষের তেরাঙ্গা Water fountain খুব পছন্দ হয়েছে। সুরাটের এর Diamond Buisness-এ সুনাম অর্জন করা, সাওজি ভাই ঢোলকিয়ার ফাউন্ডেশন এই জল উৎসব আয়োজন করেছিল। এর সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেককে আমার অভিনন্দন, জল সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে এমন কাজ করার জন্য থাকলো শুভকামনা।
আমার প্রিয়জনেরা, আজ সারা বিশ্বে Skill Development এর গুরুত্ব গ্রহণ করা হচ্ছে। যখন আমরা একজন ব্যক্তিকে একটি Skill শেখাই, তখন আমরা তাকে শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট দক্ষতা দিই না বরং তাকে আয়ের একটি উৎসও প্রদান করি এবং যখন আমি জানলাম যে একটি সংস্থা গত চার দশক ধরে Skill Development এর কাজে নিযুক্ত, তখন আমার আরও ভালো লেগেছে। এই সংস্থাটি, অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামে এবং এর নাম ‘বেলজিপুরাম Youth Club’। Skill Development এর ওপর focus করে ‘বেলজিপুরাম Youth Club' প্রায় ৭০০০ মহিলার সশক্তিকরণ করেছে। এই মহিলাদের মধ্যে অনেকেই আজ নিজেদের ক্ষমতায় নিজেদের কাজ করছেন। এই সংস্থাটি শিশু শ্রমজীবী বাচ্চাদেরও কিছু কাজের দক্ষতা দিয়ে সেই দুর্দশা থেকে বের করে আনতে সাহায্য করেছে। ‘বেলজিপুরাম Youth Club' দল কৃষক উৎপাদক সংগঠন অর্থাৎ FPO-র সঙ্গে যুক্ত কৃষকদের নতুন Skill শিখিয়েছে যার কারণে বিপুল সংখ্যক কৃষক নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। স্বচ্ছতা নিয়েও এই Youth Club' গ্রামে গ্রামে সচেতনতা প্রচার করছে । অনেক শৌচালয় নির্মাণেও সাহায্য করেছে। আমি Skill Development-এর জন্য এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত সকলকে অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং তাদের প্রশংসা করছি। আজ, দেশের গ্রামে-গ্রামে Skill Development এর জন্য এমন সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
বন্ধুগণ, যখন কোন এক লক্ষের জন্য সকলের সমষ্টিগত প্রয়াস থাকে তখন সফলতার উচ্চতা ও বেড়ে যায়। আমি লাদাখের একটি অতি প্রেরণাদায়ক ঘটনার উল্লেখ করতে চাই। আপনারা পাশমিনা শালের ব্যাপারে তো নিশ্চয়ই শুনে থাকবেন! বেশ কিছু সময় ধরে কিন্তু লাদাকি পাশমিনা-ও বহু চর্চিত হচ্ছে। ‘লুম্স অফ লাদাখ’ নামে, লাদাকি পাশমিনা সারা বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে পৌঁছে যাচ্ছে। আপনারা এটা জেনে অবাক হবেন যে এই শালটি তৈরি করার পেছনে ১৫টি গ্রামের, ৪৫০ এরও বেশি মহিলাদের বিশেষ অবদান রয়েছে। এর পূর্বে ওরা ওদের সৃষ্ট বস্তু পর্যটকদেরই বিক্রি করতো। কিন্তু এখন ডিজিটাল ভারতের যুগে, ওদের হাতে তৈরি জিনিস দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন বাজারে পৌঁছে যাচ্ছে। অর্থাৎ আমাদের লোকাল এখন গ্লোবাল হচ্ছে এবং এই মহিলাদের আর্থিক অবস্থার ও উন্নতি হচ্ছে।
বন্ধুগণ, নারী শক্তির এই ধরনের সাফল্যের কাহিনী দেশের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে রয়েছে। প্রয়োজন হল, এই সাফল্যের কাহিনী গুলোকে জনসাধারণের কাছে তুলে ধরা। আর এই ঘটনাগুলি বলার জন্য ‘মন কি বাত’-এর চেয়ে ভালো আর কি কোন প্রচার মাধ্যম হয়? তাই আপনারাও আরো বেশি করে এই ধরনের উদাহরণ আমার সঙ্গে নিশ্চয়ই শেয়ার করবেন। আমিও পুরো চেষ্টা করব এই ঘটনাগুলিকে আপনাদের মাঝে তুলে ধরার।
আমার প্রিয়জনেরা, ‘মন কী বাত’ অনুষ্ঠানে আমরা এমন সব সমষ্টিগত প্রয়াসের ব্যাপারে আলোচনা করি যেগুলির মাধ্যমে সমাজে বড়-বড় পরিবর্তন এসেছে। ‘মন কী বাত’ আরেকটি কাজ করতে সক্ষম হয়েছে, তা হল ঘরে-ঘরে রেডিওর জনপ্রিয়তা আরও বাড়াতে।
উত্তরপ্রদেশের আমরোহার রাম সিং বৌদ্ধ’জির একটি চিঠি আমি মাই গভে পেয়েছি। রাম সিং’জি বিগত বহু দশক ধরে রেডিও সংগ্রহের কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। ওঁর বক্তব্য, ‘মন কী বাতের’ জন্য ওঁর Radio Museum-এর প্রতি মানুষের আগ্রহ বহুগুণ বেড়ে গেছে।
ঠিক এভাবেই ‘মন কী বাতের’ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আহমেদাবাদের পার্শ্ববর্তী তীর্থস্থান প্রেরণা তীর্থ একটি আকর্ষণীয় প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। এখানে দেশ-বিদেশের ১০০-রও বেশি antique radio রাখা হয়েছে। এখানে ‘মন কী বাতের’ এখনও-পর্যন্ত- সম্প্রাচারিত সমস্ত Episodes শোনানো হয়।
‘মন কী বাতে’ অনুপ্রাণিত হয়ে কীভাবে মানুষ নিজের কাজ শুরু করেছেন, বহু উদাহরণ থেকে এই কথা জানা যায়। এমনই একটি উদাহরণ কর্ণাটকের চামরাজনগরের বাসিন্দা বর্ষা’জির জীবন, যিনি ‘মন কী বাত’-এর অনুপ্রেরণায় নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছেন। এই অনুষ্ঠানের একটি Episode শুনে অনুপ্রাণিত হয়েই উনি কলা থেকে জৈবিক সার উৎপাদন করতে শুরু করেন। প্রকৃতিপ্রেমী বর্ষা’জি এই উদ্যোগ অন্য মানুষের জন্যও রোজগারের সুযোগ নিয়ে এসেছে।
আমার প্রিয়জনেরা, কাল, ২৭ নভেম্বর কার্তিক পূর্ণিমা তিথি। এই দিনই দেব দীপাবলি পালিত হয়। আর আমার সবসময় ইচ্ছে থাকে এই দিন কাশীর দেব দীপাবলি যেন অবশ্যই দর্শন করি। এবার আমি কাশী যেতে পারছি না বটে, কিন্তু ‘মন কী বাতের’ মাধ্যমে বেনারসের সকল মানুষকে আমার শুভকামনা অবশ্যই পাঠাচ্ছি। এবারও কাশীর ঘাটে-ঘাটে লক্ষ-লক্ষ প্রদীপ জ্বালানো হবে, অপূর্ব-সুন্দর আরতি করা হবে, laser show হবে, দেশ-বিদেশ থেকে আসা লক্ষাধিক মানুষ দেব দীপাবলি উপভোগ করবেন।
বন্ধুরা, কাল পূর্ণিমার দিনই গুরু নানক দেবের প্রকাশ পর্বও রয়েছে। গুরু নানক দেবের অমূল্য বার্তা কেবল ভারতবর্ষ নয়, পৃথিবী জুড়ে আজও অনুপ্রেরণামূলক ও প্রাসঙ্গিক। তাঁর বার্তা আমাদের সারল্য, সদ্ভাব ও অন্যের প্রতি সমর্পিত হতে শেখায়। গুরু নানক দেব যে সেবা ভাবনা ও সেবা কার্যের শিক্ষা দিয়েছেন তা আজও আমাদের শিখ ভাই-বোনেরা সারা বিশ্বে পালন করছে। ‘মন কী বাতের’ সকল শ্রোতাদের আমি গুরু নানক দেবের প্রকাশ পর্বের অনেক অনেক শুভকামনা জানাচ্ছি।
আমার প্রিয়জনেরা, ‘মন কী বাতে’ এবার আমার সঙ্গে এই পর্যন্তই। দেখতে-দেখতে ২০২৩ শেষের দিকে এগোচ্ছে। এবং প্রতিবারের মত আমি-আপনি ভাবছি…আরে, কী দ্রুত বছরটা কেটে গেল। কিন্তু এটাও ঠিক, এ বছরটি ভারতবর্ষের জন্য বহু নতুন প্রাপ্তি নিয়ে এসেছে, এবং ভারতবর্ষের প্রাপ্তি মানে প্রতিটি ভারতীয়ের প্রাপ্তি। আমি খুশি কারণ ‘মন কী বাত’ ভারতীয়দের এই প্রাপ্তিগুলি প্রকাশ্যে আনার একটি শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। পরেরবার আবার ভারতীয়দের বহু সাফল্য নিয়ে আপনাদের সঙ্গে কথা হবে। ততক্ষণের জন্য আমায় বিদায় দিন। অনেক-অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।
My dear countrymen, Namaskar. Welcome once again to Mann Ki Baat. This episode is taking place at a time when the entire country is enveloped in the fervour of festivities. Heartiest greetings to all of you on the occasion of the festivals.
Friends, amid the zeal of the festivities, I wish to commence Mann Ki Baat with a news from Delhi itself. At the beginning of this month, on the occasion of Gandhi Jayanti, Khadi witnessed record sales in Delhi. Here at Connaught Place, at a single Khadi store, in a single day, people purchased goods worth over a crore and a half rupees. The ongoing Khadi Mahotsav this month has broken all its previous sales records. You will be pleased to know of another fact that earlier in the country, whereas the sale of Khadi products could barely touch thirty thousand crore rupees; now this is rising to reach almost 1.25 lakh crore rupees. The rise in the sale of Khadi means its benefit reaches myriad sections across cities and villages. Benefiting from these sales are our weavers, handicraft artisans, our farmers, cottage industries engaged in growing Ayurvedic plants, everyone is getting the benefit of this sale… and, this is the strength of the ‘Vocal for Local’ campaign… gradually the support of all you countrymen is increasing.
Friends, today I would like to reiterate one more request to you, and insistently at that! Whenever you travel for tourism; go on a pilgrimage, do buy products made by the local artisans there.
In the overall budget of your travel itinerary, do include purchasing local products as an important priority. Be it ten percent, twenty percent, as much as your budget allows, you should spend it on local and spend it only there.
Friends, like every time, this time too, in our festivals, our priority should be ‘Vocal for Local’ and let us together fulfill that dream; our dream is ‘Aatmnirbhar Bharat’. This time, let us illuminate homes only with a product which radiates the fragrance of the sweat of one of my countrymen, the talent of a youth of my country… which has provided employment to my countrymen in its making. Whatever be our daily life’s requirements, we shall buy local. But you will have to focus on one more thing, this spirit for Vocal for Local, is not limited only to festival shopping and somewhere I have seen, people buy Diwali diyas and then post ‘Vocal for Local’ on social media - No… not at all, this is just the beginning. We have to move ahead a lot, in our country. Now every necessity of life… everything is available. This vision is not limited to just buying goods from small shopkeepers and street vendors. Today India is becoming the world’s biggest manufacturing hub. Many big brands are manufacturing their products here. If we adopt those products, then Make In India gets a fillip and this too is being ‘Vocal For Local’, and Yes, while buying such products, try to insist on the pride of our country, the UPI digital payment system. Make it a habit in life, and share a selfie with that product, or with that artisan, with me on Namo App and that too through a made in India smartphone. I will share some of those posts on Social Media so that other people can also be inspired to be ‘Vocal for Local’.
Friends, when you brighten up your Diwali with products Made In India, Made by Indians; fulfill every little need of your family locally, the sparkle of Diwali will only increase, but in the lives of those artisans, a new Diwali will shine, a dawn of life will rise, their life will become wonderful. Make India self-reliant, keep choosing ‘Make in India’, so that the Diwali of crores of countrymen along with you becomes wonderful, lively, radiant and interesting.
My dear countrymen, 31st October is a very special day for all of us. On this day we celebrate the birth anniversary of our Iron Man Sardar Vallabhbhai Patel. We Indians remember him, for many reasons and pay our respects. The biggest reason is – his incomparable role in integrating more than 580 princely states of the country. We know that every year on the 31st of October, the main function related to Unity Day takes place at the Statue of Unity in Gujarat. Apart from this, a very special program is being organized on Kartavya Path. You might remember that recently I had urged you to collect soil from every village, every house in the country. After collecting soil from every house, it was placed in a Kalash and then Amrit Kalash Yatras were organized. This soil collected from every corner of the country, these thousands of Amrit Kalash Yatras are now reaching Delhi. Here in Delhi, that soil will be put in an enormous Bharat Kalash and with this sacred soil, ‘Amrit Vatika’ will be built in Delhi. It will remain as a grand legacy of the Amrit Mahotsav in the heart of the country’s capital. The Azadi Ka Amrit Mahotsav, which has been going on for the last two and a half years across the country, will conclude on the 31st of October. All of you together have made it one of the longest running festivals in the world. Be it honouring our freedom fighters or Har Ghar Tiranga, in the Azadi Ka Amrit Mahotsav, people have lent a new identity to their local history. During this period, wonderful examples of community service have also been observed.
Friends, today I am sharing with you another good news, especially to my young sons and daughters, who have the passion, dreams and resolve to do something for the country. This good news is not only for the countrymen, but it is special for you, my young friends. Just two days later, on the 31st of October, the foundation of a very big nationwide organization is being laid and that too on the birth anniversary of Sardar Sahib. The name of this organization is - Mera Yuva Bharat, i.e. My Bharat. My Bharat Organization will provide an opportunity to the youth of India to play an active role in various nation building events. This is a unique effort of integrating the youth power of India in building a developed India.
Mera Yuva Bharat’s website My Bharat is also about to be launched. I would urge the youth – I would urge them again and again that all of you Youth of my country, all you sons and daughters of my country, register on MyBharat.gov.in and sign up for various programs. The 31st of October is also the death anniversary of former Prime Minister Smt Indira Gandhi Ji. I also pay my heartfelt tribute to her.
My family members, our literature is one of the best mediums to deepen the sentiment of the spirit of Ek Bharat Shreshtha Bharat. I would like to share with you two very inspiring endeavours related to the glorious heritage of Tamil Nadu. I have got the opportunity to know about the famous Tamil writer Sister ShivaShankari Ji. She has done a project - Knit India, through literature. It means - to knit over a common thread and connect the country through literature. She has been working on this project for the last 16 years. Through this project she has translated literature written in 18 Indian languages. She travelled across the country several times, from Kanyakumari to Kashmir and from Imphal to Jaisalmer, so that she could interview writers and poets from different states. ShivShankari Ji travelled to different places and published the accounts along with travel commentaries. This is in both Tamil and English languages. There are four big volumes in this project and each volume is dedicated to a different part of India. I am proud of the strength of her resolve.
Friends, the work of Thiru A. K. Perumal Ji of Kanyakumari is also very inspiring. He has done a commendable job of preserving the story telling tradition of Tamil Nadu. He has been engaged in this mission for the last 40 years. For this, he travels to different parts of Tamil Nadu, discovers the folk art forms and makes them a part of his book. You will be surprised to know that till now he has written around a 100 such books. Apart from this, Perumal Ji also has another passion. He likes to research on the Temple culture of Tamil Nadu. He has also done a lot of research on leather puppets, which is benefitting the local folk artists there. ShivShankari Ji and A.K. Perumal Ji’s efforts are exemplary to everyone. India is proud of every such effort to preserve her culture, which not only strengthens our national unity but also enhances the glory of the country, the honour of the country… infact, everything.
My family members, the entire country will celebrate the ‘Janjaatiya Gaurav Diwas’ on the 15th of November. This special day is associated with the birth anniversary of Bhagwan Birsa Munda. Bhagwan Birsa Munda dwells in the hearts of all of us. We can learn from his life what true courage is and what it means to stand firm on one’s resolve. He never accepted foreign rule. He envisioned a society where there was no room for injustice. He wanted that every person should be entitled to a life of dignity and equality. Bhagwan Birsa Munda always emphasized on living in harmony with nature. Even today we can say that our tribal brothers and sisters are dedicated in every way to the care and conservation of nature. For all of us, these endeavours of our Adivasi brothers and sisters is a great inspiration.
Friends, tomorrow i.e. the 30th of October is also the death anniversary of Govind Guru Ji. Govind Guru Ji has had a very special significance in the lives of the tribal and deprived communities of Gujarat and Rajasthan. I also pay my tribute to Govind Guru Ji. In the month of November we solemnly observe the anniversary of the Mangadh massacre. I salute all the children of Ma Bharati who were martyred in that massacre.
Friends, India has a rich history of tribal warriors. It was on this very land of India that the great Tilka Manjhi sounded the trumpet against injustice. From this very land Sidhho - Kanhu raised the voice for equality. We are proud that the warrior Tantiya Bheel was born on our soil. We remember Shaheed Veer Narayan Singh with full reverence, who stood by his people in difficult circumstances.
Be it Veer RamJi Gond, Veer Gundadhur, Bheema Nayak, their courage still inspires us. The country still remembers the spirit that Alluri Sitaram Raju instilled in the tribal brothers and sisters. We also get a lot of inspiration from freedom fighters like Kiang Nobang and Rani Gaidinliu in the North East. It is from the tribal community that the country got women brave hearts like RajMohini Devi and Rani Kamlapati. The country is currently celebrating the 500th Birth Anniversary of Rani Durgavati Ji, who inspired the tribal society. I hope that more and more youth of the country will know about the tribal personalities of their region and derive inspiration from them. The country is grateful to its tribal society, which has always held the self-respect and upliftment of the nation paramount.
My dear countrymen, during this festive season, at this time in the country, the flag of sports is also flying high. Recently, after the Asian Games, Indian Players also achieved tremendous success in the Para Asian Games. India has created a new history by winning 111 medals in these games. I congratulate all the athletes participating in the Para Asian Games.
Friends, I wish to draw your attention to the Special Olympics World Summer Games, as well. It was organized in Berlin. This competition is a wonderful opportunity for our athletes with intellectual disabilities, to display their capabilities. In this competition, the Indian Team won 200 medals including 75 Gold Medals. Be it Roller Skating, Beach Volleyball, Football or Lawn Tennis, Indian players won a flurry of medals. The life journey of these medal winners has been quite inspiring. Haryana’s Ranveer Saini has won the Gold Medal in Golf. For Ranveer, who has been suffering from autism since childhood, no challenge could reduce his passion for Golf. His mother even says that everyone in the family has now become a golfer. 16 year old T-Vishal from Puducherry won 4 medals. Siya Sarode of Goa won 4 medals including 2 Gold Medals in power lifting. Even after losing her mother at the age of 9, she did not let herself get discouraged. Anurag Prasad, resident of Durg Chhattisgarh, has won 3 Gold and 1 Silver medal in power lifting. Another such inspiring story is that of Indu Prakash of Jharkhand, who has won 2 medals in cycling. Despite being from a very ordinary family, Indu never let poverty become an obstacle in the path of her success. I am confident that the success of Indian players in these games will also inspire other children with intellectual disabilities and their families. I also urge you all to go with your family and visit such children in your village, or in the neighbourhood, who have taken part in these games or have emerged victorious. Congratulate them. And spend some moments with those children. You will undergo a new experience. God has instilled within them a certain strength that you will also get a chance to observe and feel. Do visit.
My family members, all of you must have certainly heard of the pilgrimage site in Gujarat, Amba Ji Mandir. This is an important Shakti Peeth, where a large number of devotees from India and abroad arrive to have a Darshan of Ma Ambe. Here on the way to Gabbar Parvat, you will be able to see sculptures of various Yoga postures and Asanas. Do you know what is special about these statues? Actually these are sculptures made from scrap; in a way, made of junk and which are very amazing. That means these statues have been made from used items that have been thrown away as scrap. Along with the darshan of Mother Goddess at Amba Ji Shakti Peeth, these statues have also become the center of attraction for the devotees. Looking at the success of this effort, a suggestion is also coming to my mind. There are many people in our country who can make such artefacts from waste. I request the Gujarat government to start a competition and invite such people. This endeavour, along with enhancing the attraction value of Gabbar Parvat, will also inspire people for the ‘Waste to Wealth’ campaign across the country.
Friends, whenever it comes to Swachh Bharat and ‘Waste To Wealth’, we see countless examples from every corner of the country. A school named Akshar Forum in Kamrup Metropolitan District of Assam is relentlessly performing the task of inculcating Sanskar & values and values of sustainable development in children. The students studying here collect plastic waste every week, which is used in making items like eco-friendly bricks and key chains. Here students are also taught to make products from recycling and plastic waste. This awareness towards the environment at an early age will go a long way in making these children dutiful citizens of the country.
My family members, today there is no area of life where we are not able to see the capacity potential of woman power. In this era, when their achievements are being appreciated everywhere, we also have to remember a woman saint who showed the power of Bhakti, whose name is recorded in the golden annals of history. This year the country is celebrating the 525th birth anniversary of the great saint Mirabai. She has been an inspiring force for people across the country for many reasons. If someone is interested in music, she is a great example of dedication towards music; if someone is a lover of poetry, Meerabai's bhajans, immersed in devotion, give one an entirely different joy; if someone believes in divine power, Mirabai's rapt absorption in Shri Krishna can become a great inspiration for that person. Mirabai considered Saint Ravidas as her guru. She also used to say-
Guru Miliya Raidas, Dinhi Gyan ki Gutki.
Mirabai is still a source of inspiration for the mothers, sisters and daughters of the country. Even during that period, she listened to her inner voice and stood against conservative notions. Even as a saint, she inspires us all. She came forward to strengthen Indian society and culture when the country was facing many types of invasions. We come to know from the lifetime of Mirabai how much strength there is in simplicity and modesty. I bow to Sant Mirabai.
My dear family members, that’s all this time in 'Mann Ki Baat'. Every interaction with all of you fills me up with new energy. Hundreds of stories related to hope and positivity keep reaching me in your messages. I again urge you to emphasize on Aatma Nirbhar Bharat campaign. Buy local products, be Vocal for Local. Just as you keep your houses clean, keep your locality and city clean. And you know, on the 31st of October, the birth anniversary of Sardar Saheb, the country celebrates it as Unity Day; Run for Unity programs are organized at many places in the country. You too should organize the Run for Unity Programs on the 31st of October. You should also join in large numbers and strengthen the resolve of unity. Once again, I extend many best wishes for the upcoming festivals. I wish you all celebrate with joy, with your family; stay healthy, stay happy. And yes, at the time of Diwali, no such mistake should be made that any incidents of fire may occur. If someone's life is in danger then you must take care; take care of yourself, and also take care of the entire area.
Many best wishes. Thank you very much.
আমার প্রিয় পরিবারবর্গ, নমস্কার। ‘মন কি বাত’ এর আরও এক পর্বে দেশের সাফল্য, দেশবাসীর সফলতা, তাঁদের প্রেরণাদায়ক জীবনযাত্রা আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি আমি। ইদানীং সবথেকে বেশি চিঠি, বার্তা যা আমি পেয়েছি, তা দুটো বিষয়ের ক্ষেত্রে সর্বাধিক। প্রথম বিষয় হল চন্দ্রযান ৩-এর সফল অবতরণ আর দ্বিতীয় বিষয় হল দিল্লীতে জি-টোয়েন্টির সফল আয়োজন। দেশের প্রতিটি অংশ থেকে, সমাজের প্রত্যেকটি শ্রেণী থেকে, আমি সব বয়সের মানুষের কাছ থেকে অগণিত চিঠি পেয়েছি। যখন চন্দ্রযান ৩-এর ল্যাণ্ডার চাঁদে নামতে যাচ্ছে, তখন কোটি-কোটি মানুষ নানা মাধ্যমে এই ঘটনার প্রতিটি মুহূর্তের সাক্ষী হচ্ছিলেন। ইসরোর ইউটিউব লাইভ চ্যানেলে আশি লক্ষেরও বেশি মানুষ এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিলেন – এটা এমনিতেই একটা রেকর্ড। এর থেকে বোঝা যায় যে চন্দ্রযান ৩-এর সঙ্গে কোটি-কোটি ভারতবাসীর কত গভীর বন্ধন রয়েছে। চন্দ্রযানের এই সাফল্য নিয়ে বর্তমানে দেশে এক চমৎকার ক্যুইজ প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে – প্রশ্নমালা আর তার নাম দেওয়া হয়েছে – ‘চন্দ্রযান-৩ মহাক্যুইজ’। মাইগভ পোর্টালে চলা এই প্রতিযোগিতায় এখন পর্যন্ত পনেরো লক্ষেরও বেশি মানুষ অংশ নিয়েছে। মাইগভ শুরু হওয়ার পর থেকে যে কোনও ক্যুইজে এটা সবথেকে বেশি অংশগ্রহণ। আমি তো আপনাদেরও বলব যে আপনারা যদি এখনও এতে অংশ না নিয়ে থাকেন তবে দেরি করবেন না, এখনও এটাতে আরও ছ’দিন সময় আছে। এই ক্যুইজে অবশ্যই অংশ নিন।
আমার প্রিয় পরিবারবর্গ, চন্দ্রযান ৩-এর সাফল্যের পরে জি-টোয়েন্টির জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন প্রতিটি ভারতবাসীর আনন্দকে দ্বিগুণ করে দিয়েছে। ভারত মণ্ডপম তো নিজেই বিখ্যাত মত হয়ে গিয়েছে। মানুষজন এর সঙ্গে সেলফি তুলছেন আর গর্ব করে পোস্টও করছেন। ভারত এই শীর্ষ সম্মেলনে আফ্রিকান ইউনিয়নকে জি২০-র পূর্ণ সদস্য বানিয়ে নিজের নেতৃত্বকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। আপনাদের মনে থাকবে, ভারত যখন অনেকটাই সমৃদ্ধশালী ছিল, সেই সময়, আমাদের দেশে, এবং সারা বিশ্বে, সিল্ক রুট নিয়ে অনেক আলোচনা হতো। এই সিল্ক রুট ব্যবসা বাণিজ্যের অনেক বড় মাধ্যম ছিল। এখন আধুনিক যুগে ভারত আরেকটি অর্থনৈতিক করিডোর তৈরি করার ব্যাপারটি জি-20 তে উত্থাপন করেছে। এটি হলো ভারত- মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডোর। এই করিডোর আগামী শত শত বছর ধরে বিশ্ব বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে, এবং ইতিহাস এই কথা চিরকাল মনে রাখবে যে এই করিডোরের সূত্রপাত ভারতের মাটিতে হয়েছিল।
বন্ধুরা, জি-20-এর সময় ভারতের তরুণরা যেভাবে এই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল, তা নিয়ে আজ একটি বিশেষ আলোচনা আব্যশ্যক। সারা বছর ধরে দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে জি-20 সংক্রান্ত অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। এখন এই সিরিজে, দিল্লিতে আরেকটি আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান হতে চলেছে - 'জি-20 ইউনিভারসিটি কানেক্ট প্রোগ্রাম’। এই কর্মসূচির মাধ্যমে সারাদেশের লক্ষ লক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হবে। আইআইটি, আইআইএম, এনআইটি এবং মেডিকেল কলেজের মতো অনেক মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানও এতে অংশ নেবে। আমি চাই, আপনি যদি একজন কলেজ ছাত্র হন, তাহলে আপনি অবশ্যই ২৬শে সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে চলা এই অনুষ্ঠানটি দেখবেন এবং এতে যোগদান করবেন। ভারতের ভবিষ্যৎ নিয়ে, যুব সমাজের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান হতে চলেছে। আমি নিজেও এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করব। আমিও আমার কলেজ ছাত্রদের সংবাদের অপেক্ষায় রয়েছি।
আমার পরিবারবর্গ, আজ থেকে দুদিন পর ২৭সে সেপ্টেম্বর 'বিশ্ব পর্যটন দিবস'। কেউ কেউ পর্যটনকে শুধুমাত্র ঘুরে বেড়ানো হিসেবে দেখেন, কিন্তু পর্যটনের একটি খুব বড় দিক 'কর্মসংস্থান'-এর সঙ্গে সম্পর্কিত। বলা হয়ে থাকে পর্যটন হলো সেই ক্ষেত্র যা কিনা সবচেয়ে কম বিনিয়োগে, সর্বোচ্চ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। পর্যটন শিল্পের অগ্রগতির জন্য যেকোনো দেশের ব্যবসায়ে সুনাম ও সেই দেশের প্রতি আকর্ষণ খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গত কয়েক বছরে ভারতের প্রতি আকর্ষণ অনেক বেড়েছে এবং জি-20-এর সফল আয়োজনের পর ভারতের প্রতি বিশ্বের মানুষের আগ্রহ আরও বেড়েছে।
বন্ধুরা, জি-২০ উপলক্ষে এক লাখের বেশী প্রতিনিধি ভারতে আসেন। তাঁরা আমাদের দেশের বৈচিত্র, আমাদের বিভিন্ন পরম্পরা, আমাদের নানান ধরনের খাদ্যাভ্যাস, তথা আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হন। আগত প্রতিনিধিরা তাঁদের সঙ্গে যে অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা নিয়ে গেছেন তাতে পর্যটনের আরও বিস্তার হবে। আপনারা জানেন ভারতে একাধিক অভিনব বিশ্ব ঐতিহ্যশালী স্থান আছে এবং শুধু তাই নয়, এর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কিছুদিন আগেই শান্তিনিকেতন এবং কর্নাটকের পবিত্র হোয়শালা মন্দিরকে বিশ্বের ঐতিহ্যশালী স্থান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই অসাধারণ স্বীকৃতির জন্য আমি সমস্ত ভারতবাসীকে অভিনন্দন জানাই। ২০১৮ তে আমার শান্তিনিকেতন যাবার সৌভাগ্য হয়েছিল। শান্তিনিকেতন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ও সম্পৃক্ত। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন সংস্কৃতের এক প্রাচীন শ্লোক থেকেঃ-
‘যত্র বিশ্বম, ভবত্যেক নীড়ম’
অর্থাৎ যেখানে একটি নীড়ে সমস্ত সংসার সমাহিত হতে পারে। কর্নাটকের যে হোয়শালা মন্দিরগুলি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটসের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে সেগুলি তেরশো শতাব্দীর অসাধারন স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত। এই মন্দিরগুলির ইউনেস্কোর স্বীকৃতিলাভ, মন্দির নির্মাণে ভারতীয় পদ্ধতিকে সম্মানিত করেছে। আমাদের দেশে এখন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটসের মোট সংখ্যা ৪২। ভারতের এখন এটাও লক্ষ্য, যাতে আরো আরো বেশী ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক জায়গা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটসের তকমা পায়। আমার আপনাদের কাছে অনুরোধ যখনই আপনারা কোথাও বেড়াতে যাবেন, ভারতের এই বৈচিত্র্যময় জায়গা অবশ্যই দর্শন করুন। আপনারা আলাদা আলাদা রাজ্যের সংস্কৃতিকে জানুন, এদের ঐতিহ্যশালী স্থানগুলিকে দেখুন। এইভাবে আপনারা আপনাদের দেশের গৌরবময় ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত হবেন এবং স্থানীয় মানুষদের আয় বাড়ানোর অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠবেন।
আমার পরিবারবর্গ, ভারতীয় সংস্কৃতি ও সংগীত এখন আন্তর্জাতিক পরিচিতি লাভ করেছে। এই বিষয়ে দুনিয়াজুড়ে মানুষের আকর্ষণ বেড়েই চলেছে। এক মিষ্টি মেয়ে এমনই এক পরিবেশনা করেছে। তার কিছু অংশ আপনাদের শোনাই.....
(বাণীবদ্ধ করা একটি অংশ)
এটা শোনার পর আপনিও অবাক হয়ে গেলেন, তাই না? কন্ঠস্বরটি কত মধুর এবং প্রতিটি শব্দে যে অনুভূতি প্রতিফলিত হয়, তাতে আমরা ঈশ্বরের প্রতি তাঁর ভক্তি অনুভব করতে পারি। যদি আমি আপনাকে বলি যে এই সুরেলা কন্ঠটি জার্মানির একটি মেয়ের, তাহলে হয়তো আরো বেশি অবাক হবেন। এই মেয়েটির নাম ক্যায়সমি। ২১ বছর বয়সী ক্যায়সমি আজকাল ইন্সটাগ্রামে খুব জনপ্রিয় হয়েছেন। জার্মানি নিবাসী ক্যায়সমি কোনদিন ভারতে আসেননি কিন্ত তিনি ভারতীয় সঙ্গীতের অনুরাগী। যিনি কখনও ভারতকে দেখেননি তাঁর ভারতীয় সঙ্গীতের প্রতি এমন অনুরাগ সত্যিই খুব অনুপ্রেরণামূলক। ক্যায়সমি জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন, কিন্ত এই কঠিন প্রতিবন্ধকতা তাঁর অসাধারণ কৃতিত্বকে আটকাতে পারেনি। সঙ্গীত ও সৃজনশীলতার প্রতি তাঁর এতটাই গভীর অনুরাগ ছিল যে ছোট্টবেলাতেই তিনি গান গাইতে আরম্ভ করেন। তিনি মাত্র ৩ বছর বয়সে আফ্রিকান ড্রাম বাজাতে শুরু করেন। ভারতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় মাত্র ৫-৬ বছর আগে। তিনি ভারতীয় সঙ্গীতে এতটা মুগ্ধ হয়েছিলেন, এতটাই আকৃষ্ট হয়েছিলেন যে তিনি সম্পূর্ণরূপে তা আত্মস্থ করে ফেলেন। তিনি তবলা বাজাতেও শিখেছেন। সবচেয়ে অনুপ্রেরণামূলক বিষয় হল এই যে তিনি অনেক ভারতীয় ভাষায় গান গাওয়ার দক্ষতা অর্জন করেছেন। সংস্কৃত, হিন্দি, মালয়ালম, তামিল, কন্নড় বা অসমীয়া, বাংলা, মারাঠি বা উর্দুই হোক না কেন, এই সব ভাষায় তিনি গান গেয়েছেন। আপনি কল্পনা করতে পারেন যে কাউকে যদি অন্য অজানা ভাষায় দুই-তিন লাইন বলতে হয় তবে কতটা কঠিন হয়, কিন্তু ক্যায়সমির জন্য এটি বাঁ হাতের খেলার মতো। আপনাদের সবার জন্য আমি এখানে তাঁর গাওয়া একটি কন্নড় গান শোনাচ্ছি। (দ্বিতীয় বাণীবদ্ধ অংশ)
ভারতীয় সংস্কৃতি এবং সঙ্গীতের প্রতি জার্মানির ক্যায়সমির এই আবেগকে আমি অন্তর থেকে প্রশংসা করি৷ আশা করি তাঁর এই প্রচেষ্টা প্রতিটি ভারতীয়কে অভিভূত করবে৷
আমার পরিবারবর্গ, আমাদের দেশে শিক্ষাকে সবসময় সেবা রূপে দেখা হয়ে থাকে। আমি উত্তরাখণ্ডের এমন কিছু যুবক-যুবতীর সম্বন্ধে জানতে পেরেছি যাঁরা এইরকম ভাবনার সঙ্গে বাচ্চাদের শিক্ষার জন্য কাজ করছেন। নৈনিতাল জেলার কিছু যুবক যুবতী বাচ্চাদের জন্য এক অনন্য ঘোড়া লাইব্রেরির সূচনা করেছেন। এই লাইব্রেরীর সব থেকে বড় বিশেষত্ব হচ্ছে যে দুর্গম থেকে দুর্গমতর এলাকায় এর মাধ্যমে বাচ্চাদের কাছে বই পৌঁছচ্ছে, আর তার থেকেও বড় কথা, এই পরিষেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। এখনো পর্যন্ত এর আওতায় নৈনিতালের বারোটি গ্রামকে অন্তর্ভুক্ত করা গেছে। বাচ্চাদের শিক্ষার সঙ্গে জড়িত এই পবিত্র কাজটিতে সাহায্য করার জন্য স্থানীয় মানুষেরাও এগিয়ে আসছেন। এই ঘোড়া লাইব্রেরীর মাধ্যমে চেষ্টা করা হচ্ছে দূর-দূরান্তের গ্রামের বাচ্চাদের, স্কুলের বই ছাড়াও কবিতা, গল্প এবং নৈতিক শিক্ষার বইও পড়ার সম্পূর্ণ সুযোগ করে দেওয়া। এই অনন্য লাইব্রেরীটি বাচ্চাদেরও অনেক পছন্দ হয়েছে।
বন্ধুরা, আমি হায়দ্রাবাদের একটি লাইব্রেরীর সঙ্গে জড়িত এক অনন্য উদ্যোগের সম্বন্ধেও জানতে পেরেছি। এখানে সপ্তম শ্রেণীতে পাঠরত কন্যা, আকর্ষণা সতীশ এক অদ্ভুত কাজ করে দেখিয়েছেন। আপনারা এটা জেনে খুব আশ্চর্য হবেন যে মাত্র ১১ বছর বয়সে সে বাচ্চাদের জন্য একটি - দুটি নয়, বরঞ্চ সাত সাতটি লাইব্রেরী পরিচালনা করছে। দু বছর আগে আকর্ষণা এই অনুপ্রেরণা তখন পায় যখন সে তার মা-বাবার সঙ্গে একটি ক্যান্সার হাসপাতালে গিয়েছিল। ওর বাবা অভাবগ্রস্থ মানুষদের সাহায্য করার সেখানে গিয়েছিলেন। বাচ্চারা সেখানে তাঁর কাছে কালারিং বুকস চেয়েছিল আর এই কথাটা এই মিষ্টি মেয়েটির মন এতটাই ছুঁয়ে গেছিল, যে সে আলাদা আলাদা ধরনের বই জোগাড় করার জেদ ধরে নেয়। সে নিজের প্রতিবেশী, আত্মীয়- স্বজন ও বন্ধুদের কাছ থেকে বই একত্রিত করা শুরু করে দিয়েছিল এবং আপনারা এটা জেনে খুশি হবেন যে প্রথম লাইব্রেরী সেই ক্যান্সার হসপিটালের বাচ্চাদের জন্যই খোলা হয়েছিল। অভাবী বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন জায়গায় এই মেয়েটি এখনো পর্যন্ত যে সাতটা লাইব্রেরী খুলেছে, সেখানে এখন প্রায় ছ হাজার বই পাওয়া যায়। ছোট্ট আকর্ষণা যেইভাবে বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ সাজানোর এই মহৎ কাজটি করছে, তা সবাইকে অণুপ্রেরিত করবে।
বন্ধুরা, এ কথা ঠিক যে আজকের যুগ ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-বুকের, কিন্তু তবুও বই
আমাদের জীবনে সব সময় একজন ভালো বন্ধুর ভূমিকা পালন করে। তাই আমাদের উচিত বইপড়ার জন্য শিশুদের উৎসাহিত করা। আমার পরিবারবর্গ, আমাদের শাস্ত্রে কথিত আছে,
"জীবেষু করুণা চাপি, মৈত্রী তেষু বিধিয়তাম।"
অর্থাৎ জীবদের করুণা করুন এবং তাদের নিজের বন্ধু করে তুলুন। আমাদের অধিকাংশ দেবদেবীর বাহনই তো পশুপাখি। অনেক মানুষ মন্দিরে যান, ভগবান দর্শন করেন, কিন্তু যে জীবজন্তু তার বাহন তার দিকে ততটা মনোযোগ দেন না। এই জীবজন্তুদের তো আমাদের আস্থার কেন্দ্রে রাখা উচিত। এদের যথাসম্ভব সংরক্ষণও আমাদের করা উচিত। গত কয়েক বছরে দেশে সিংহ, বাঘ, চিতা ও হাতিদের সংখ্যায় উৎসাহব্যঞ্জক বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। অন্যান্য বহু প্রয়াসও নিরন্তর করা হচ্ছে যাতে এই পৃথিবীর বুকে প্রতিটি জীবজন্তুকে বাঁচানো যায়। এমনই এক অনন্য প্রয়াস রাজস্থানের পুষ্করেও করা হচ্ছে। এখানে সুখদেব ভট্টজি এবং তাঁর দলের সদস্যরা মিলে বন্যপ্রাণীদের বাঁচানোর কাজে উদ্যোগী হয়েছেন। আর আপনারা জানেন তাঁদের দলের নাম কী? তাঁদের দলের নাম কোবরা! এই ভয়ানক নাম এই কারণে যে তাঁদের দল এই অঞ্চলে বিপজ্জনক সাপদের উদ্ধার করার কাজও করে। এই দলে অনেক মানুষ যুক্ত হয়েছেন যারা শুধু একটা কল করলেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান এবং নিজেদের মিশন শুরু করে দেন। সুখদেবজির এই দল এখনো পর্যন্ত ত্রিশ হাজারেরও বেশি বিষধর সাপের প্রাণ বাঁচিয়েছে। এই প্রয়াসের মাধ্যমে যেমন মানুষের বিপদ দূর হয় তেমনি পাশাপাশি প্রকৃতির সংরক্ষণও হয়। এই দল অন্যান্য অসুস্থ প্রাণীদের সেবার কাজের সঙ্গেও যুক্ত।
বন্ধুরা, তামিলনাড়ুর চেন্নাইতে অটো ড্রাইভার এম. রাজেন্দ্র প্রসাদজিও এক অনন্য কাজ করে চলেছেন। তিনি গত ২৫-৩০ বছরে পায়রাদের সেবার কাজে যুক্ত আছেন। তাঁর নিজের বাড়িতে ২০০-র বেশি পায়রা আছে। সেইসব পাখিদের খাদ্য, পানীয়, স্বাস্থ্য — প্রতিটি প্রয়োজনের প্রতি তিনি সম্পূর্ণ মনোযোগী ও যত্নবান। এতে ওঁর যথেষ্ট খরচও হয় কিন্তু উনি নিজের কাজে অটল। বন্ধুরা, মানুষকে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এমন কাজ করতে দেখলে সত্যিই ভারি শান্তি পাওয়া যায়। খুব আনন্দ হয়। যদি আপনারাও এমন কিছু অনন্য প্রয়াস সম্বন্ধে জানেন তবে অবশ্যই তা শেয়ার করবেন।
আমার প্রিয় পরিবারবর্গ, স্বাধীনতার এই অমৃতকাল দেশের সকল নাগরিকের জন্যে কর্তব্যকালও। আমরা নিজেদের কর্তব্য পালনের মধ্যে দিয়েই লক্ষে পৌঁছতে পারি, কাঙ্ক্ষিত অভিষ্ট অর্জন করতে পারি। কর্তব্য পালনের এই ভাবনাই আমাদের সবাইকে এক সূত্রে বেঁধে রাখে। উত্তর প্রদেশের সম্ভাল-এ এমনই কর্তব্যবোধের একটা দৃষ্টান্ত সারা দেশ দেখেছে, এবং সেটা আপনাদের সঙ্গে আমি ভাগ করে নিতে চাই। আপনারা ভাবুন, গ্রামের সংখ্যা সত্তরের বেশী, লোক সংখ্যা কয়েক হাজার, আর সমস্ত মানুষ মিলে একটাই লক্ষ্য, একটাই অভিষ্ট অর্জনের জন্য একত্রিত হচ্ছেন, একজোট হচ্ছেন এমনটা সাধারণত দেখা যায় না, কিন্তু সম্ভাল-এর মানুষ সেটাই করে দেখিয়েছেন। এখানকার মানুষ একত্রিত হয়ে জন-অংশীদারিত্ব ও সমষ্টিগত ঐক্যের একটা সুন্দর নজির তৈরি করেছেন। আসলে কয়েক দশক আগে এই অঞ্চলে 'সোত' নামে একটা নদী ছিল। 'আমরোহা' থেকে শুরু হয়ে 'সম্ভল' হয়ে 'বদায়ু' পর্যন্ত বয়ে যাওয়া এই নদী একসময় এ অঞ্চলের জীবনদাত্রী রূপে পরিচিত ছিল। নদীতে যথেষ্ট জলপ্রবাহ ছিল , আর কৃষিজীবীদের কৃষি কাজের জন্য তা ছিল প্রধান ভিত্তি। সময়ের সঙ্গে প্রবাহ ক্ষীণ হয়, নদী যে পথ বয়ে যেত তা দখল হয়ে যায়, আর নদী হারিয়ে যায়। আমাদের যে দেশে নদীকে মাতৃ রূপে কল্পনা করা হয়, সে দেশেরই সম্ভলের মানুষ এই সোত নদীকে পুনরুজ্জীবিত করার সংকল্প নিয়েছিলেন। গত বছর ডিসেম্বর মাসে, ৭০-টিরও বেশি গ্রাম পঞ্চায়েতের মানুষ একসঙ্গে 'সোত' নদীর পুনরুজ্জীবনের সেই কাজ শুরু করেছেন। গ্রাম পঞ্চায়েতের লোকজন সরকারি দপ্তরগুলো'কেও নিজেদের সঙ্গে সামিল করেছেন। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে বছরের প্রথম ছ মাসেই তাঁরা এই নদীর একশো কিলোমিটার'এরও বেশি পুনরুদ্ধার করে ফেলেছিলেন। যখন বর্ষা শুরু হল, তখন এখানকার মানুষের এই পরিশ্রম সার্থক হলো, 'সোত' নদী জলে পরিপুষ্ট হয়ে উঠলো। এখানকার কৃষিজীবী মানুষের জন্য এলো এক বড় খুশির মুহুর্ত। এই অঞ্চলের মানুষ নদীর পাড়ে দশ হাজারেরো বেশি বাঁশ গাছ লাগিয়েছেন, যাতে নদীর পাড় সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত থাকে। নদীর জলে ত্রিশ হাজার'এরও বেশি গম্বুশিয়া মাছ ছাড়া হয়েছে যাতে মশা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বন্ধুরা, 'সোত' নদীর এই দৃষ্টান্ত আমাদের শিখিয়েছে যে দৃঢ়-সংকল্পবদ্ধ হলে আমরা অনেক কঠিন কঠিন সমস্যাও কাটিয়ে উঠে একটা বড় পরিবর্তন আনতে পারি। আপনিও কর্তব্যের এই পথে এগনোর সময় আপনার চারপাশে হতে থাকা এমন অনেক পরিবর্তনের অংশীদার হয়ে উঠতে পারেন।
আমার পরিবারবর্গ, যখন উদ্দেশ্য দৃঢ় হয় এবং কিছু শেখার অধ্যবসায় থাকে, তখন কোন কাজই, কঠিন মনে হয় না। পশ্চিমবঙ্গের শ্রীমতি শকুন্তলা সর্দার এই কথাটি একেবারে সত্যি প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। আজ তিনি আরও অনেক নারীর অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। শকুন্তলা জি জঙ্গলমহলের শাতনালা গ্রামের বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরে তাঁর পরিবার প্রতিদিন মজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এমনকি তাঁর পরিবারের জন্য দিন গুজরান করা কঠিন ছিল। এরপর তিনি নতুন পথে এগিয়ে চলার সিদ্ধান্ত নেন এবং সাফল্য অর্জন করে সবাইকে অবাক করে দেন। আপনারা নিশ্চয়ই জানতে চাইবেন উনি কি করে এই সাফল্যের মুখ দেখলেন! এর উত্তর হল – একটা সেলাই মেশিন। একটা সেলাই মেশিনকে নির্ভর করে উনি ‘শাল’ পাতার ওপর সুন্দর নকশা আঁকতে শুরু করলেন। এই প্রতিভা তাঁর সমগ্র পরিবারের জীবন আমূল বদলে দিয়েছে। ওঁর বানানো এই অদ্ভুত হস্তশিল্পের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। শকুন্তলাজির এই প্রতিভা কেবল তাঁর জীবনই নয়, ‘শাল’ পাতা সংগ্রহকারী অনেক মানুষের জীবনকেও বদলে দিয়েছে। এখন, উনি অনেক মহিলাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজও করছেন। আপনি কল্পনা করতে পারেন, একটি পরিবার, যা এক সময় মজদুরীর উপর নির্ভরশীল ছিল, এখন অন্যদের রোজগারের জন্য অনুপ্রেরিত করছেন। উনি দৈনিক মজদুরির উপর নির্ভরশীল নিজের পরিবারকে নিজের পায়ে দাঁড় করিয়েছেন। এর ফলে তাঁর পরিবার অন্যান্য বিষয়েও মনোনিবেশ করার সুযোগ পেয়েছে। আরও একটা ব্যাপার হলো, শকুন্তলা দেবীর আর্থিক অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি সঞ্চয় করতে শুরু করেছেন। এখন তিনি জীবন বীমা পরিকল্পনায় বিনিয়োগ শুরু করেছেন, যাতে তাঁর সন্তানদের ভবিষ্যৎও উজ্জ্বল হয়। শকুন্তলা’জির সাহসের জন্য তাঁর প্রশংসা যতই করা হোক না কেন কম হবে। ভারতবর্ষের জনগণ এমনই প্রতিভা সম্পন্ন। আপনারা ওদের সুযোগ দিন আর দেখুন তাঁরা কি কি দারুণ সব কাজ করে দেখান।
আমার পরিবারবর্গ, দিল্লিতে জি-20 শীর্ষ সম্মেলন চলাকালীন, সেই দৃশ্যটি কে ভুলতে পারে, যখন বিশ্বের নেতারা একজোট হয়ে রাজঘাটে বাপুকে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করতে যান। এটা এই ধারণাটাকে আরো দৃঢ় করে যে বাপুর চিন্তাধারা সারা বিশ্বে আজও কতটা প্রাসঙ্গিক। আমি এই ভেবে খুশি যে গান্ধীজয়ন্তী উপলক্ষে সারা দেশে স্বচ্ছতা কেন্দ্রিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রত্যেকটি কার্যালয়ে 'স্বচ্ছতাই সেবা অভিযান' জোর কদমে চলছে। ইন্ডিয়ান স্বচ্ছতা লীগেও যথেষ্ঠ ভালো মাত্রায় অংশগ্রহণ চলছে। আজ আমি ‘মন কি বাত’- এর মাধ্যমে প্রত্যেক দেশবাসীর কাছে একটি আবেদন জানাতে চাই।
১লা অক্টোবর অর্থাৎ রবিবার সকাল দশটার সময় স্বচ্ছতার ওপর একটি বড় অনুষ্ঠান হতে চলেছে। আপনারাও নিজেদের সময় বার করে এই স্বচ্ছতা অভিযানে সঙ্গে যুক্ত হোন এবং অংশগ্রহণ করুন। আপনারা নিজেদের গলি, পাড়া, পার্ক, নদী, সরোবর বা অন্য কোন সার্বজনীন স্থলে এই স্বচ্ছতা অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন, এবং যে জায়গায় অমৃত সরোবর তৈরি হয়েছে সেখানে তো স্বচ্ছতা রাখতেই হবে। স্বচ্ছতার এই কার্যাবলী গান্ধীজীর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি হবে। আমি আপনাদেরকে আরেকবার মনে করিয়ে দিতে চাই যে গান্ধীজয়ন্তী উপলক্ষে একটা না একটা খাদির জিনিস অবশ্যই কিনবেন।
আমার পরিবারবর্গ, আমাদের দেশে উৎসবের মরশুম শুরু হয়ে গেছে। আপনাদের বাড়িতেও হয়তো নতুন কিছু কেনাকাটা করার পরিকল্পনা চলছে । কেউ এই অপেক্ষায় রয়েছেন যে নবরাত্রির সময়ে নিজের কোন শুভ কাজ শুরু করবেন। আনন্দ, আশার এই পরিবেশে আপনারা ভোকাল ফর লোকালের মন্ত্র অবশ্যই মনে রাখবেন। যতটা সম্ভব আপনারা ভারতে তৈরি জিনিসপত্র কেনাকাটা করবেন, ভারতীয় সামগ্রীর ব্যবহার করবেন আর মেড ইন ইন্ডিয়া জিনিসপত্রই উপহার হিসেবে দেবেন। আপনার ছোট্ট খুশির মুহূর্ত অন্য আরেকটি পরিবারের বৃহৎ আনন্দের কারণ হতে পারে। আপনারা যে যে ভারতীয় জিনিসপত্র কিনবেন তার লাভ সোজা আমাদের শ্রমিক কর্মচারী, শিল্পী এবং অন্য বিশ্বকর্মা ভাইবোনেদের কাছে পৌঁছে যাবে। আজকাল অনেক স্টার্টাপ ও স্থানীয় পণ্য তৈরির বিষয়ে উৎসাহ দিচ্ছে। আপনারা স্থানীয় জিনিসপত্র কিনলে স্টার্টআপের সঙ্গে যুক্ত থাকা যুববন্ধুদেরও লাভ হবে।
আমার প্রিয় পরিবারবর্গ, ‘মন কি বাত’ আজ এই পর্যন্তই। পরেরবার যখন আপনাদের সঙ্গে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে কথা হবে তখন নবরাত্রি এবং দশেরা পর্ব শেষ হয়ে যাবে। উৎসবের এই মরসুমে আপনারাও দারুণ আনন্দ করুন, উৎসাহের সঙ্গে প্রত্যেক উৎসব পালন করুন। আপনার পরিবারে সর্বদা খুশি থাকুক এটাই আমার প্রার্থনা রইলো। আপনাদের জন্য প্রতিটি উৎসবের শুভকামনা রইল। আপনাদের সঙ্গে আবার দেখা হবে, আরো নতুন বিষয়ের সঙ্গে, দেশবাসীর নতুন সাফল্যের সঙ্গে। আপনারা আপনাদের বার্তা আমায় অবশ্যই পাঠাবেন। নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে ভুলবেন না, আমি অপেক্ষা করব। অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।
আমার পরিবারবর্গ, নমস্কার। ‘মন কি বাত’-এর এই আগস্ট মাসের পর্বে আপনাদেরকে স্বাগত জানাই। আমার ঠিক মনে পড়ছে না, যে কখনো শ্রাবণ মাসে, দু -দু বার মন কি বাত এর অনুষ্ঠান হয়েছে কিনা। কিন্তু এই বারে ঠিক এমনটাই ঘটছে। শ্রাবণ মানেই মহাশিবের মাস। উৎসব ও আনন্দের মাস। চন্দ্রযানের সাফল্য এই উৎসবের পরিবেশ ও আনন্দকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তিন দিনেরও বেশি হয়ে গেছে চন্দ্রযান চাঁদে পৌঁছেছে। এই সাফল্য এতটাই বড় যে এর যত চর্চা করব ততই যেন কম হয়ে যাবে। আজ যখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি তখন আমার লেখা একটি কবিতার কিছু অংশ মনে পড়ে যাচ্ছে-
দিগন্তে কার উচ্চশির?
মেঘের মুলুক ধরছে চির
ঊষার লালীর শপথ নিয়ে।
দিনমণি ওই যে এলো।
অটল হয়ে এগিয়ে চলা।
সংকটেরে দমন করা।
ঘন আধার রুখে দিতে।
দিনমণি ওই যে এলো।
দিগন্তে কার উচ্চ শির?
মেঘের মুলুক ধরছে চির
দিনমণি ওই যে এলো।
আমার পরিবারবর্গ, তেইশে আগস্ট ভারত এবং ভারতের চন্দ্রযান এই কথাটি প্রমাণ করে দিয়েছে যে সংকল্পের অরুণোদয় চাঁদেও হতে পারে। মিশন চন্দ্রযান নবভারতের সেই চেতনার প্রতীক, যে প্রতিটি পরিস্থিতিতেই জিততে চায়, এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে জয়লাভ করতে পারে।
বন্ধুরা, এই মিশনের এমন একটি দিকও আছে যেটি নিয়ে আজকে আমি বিশেষভাবে আপনাদের সঙ্গে চর্চা করতে চাই। আপনাদের হয়তো মনে আছে যে এইবার লালকেল্লা থেকে বলেছিলাম যে আমাদের মহিলাদের নেতৃত্বে উন্নয়নকে রাষ্ট্র চরিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। যেখানে নারীর শক্তি সামর্থ্যর সঙ্গে জুড়ে যায়, সেখানে অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলাটাও কঠিন হয় না। ভারতের মিশন চন্দ্রযান, নারীশক্তিরও একটি জীবন্ত দৃষ্টান্ত। এই গোটা মিশনে বহু মহিলা বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়াররা সরাসরি ভাবে যুক্ত আছেন। এঁরা আলাদা আলাদা সিস্টেমের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর, প্রজেক্ট ম্যানেজারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালন করেছেন । ভারতবর্ষের মেয়েরা অনন্ত মহাকাশকেও চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। কোন দেশের কন্যা সন্তানেরা যখন উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে যায় তখন সেই দেশের সাফল্যকে কে আটকাতে পারে?
বন্ধুরা, এই বিশাল উড়ান এই জন্যই সফল হয়েছে কারণ আমাদের স্বপ্নগুলো বড় ছিল আর তাই অনেক বেশি পরিশ্রমও করতে হয়েছে । চন্দ্রযান-তিন এর সাফল্যের পেছনে আমাদের বৈজ্ঞানিকদের সঙ্গে আরো অন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সমস্ত অংশ ও প্রযুক্তিগত চাহিদাগুলিকে মেটানোর জন্য বহু দেশবাসীর এখানে ভূমিকা রয়েছে। যখন সকলে একজোট হয়ে চেষ্টা করেছেন, তখন সাফল্যও পেয়েছি। চন্দ্রযান-তিনের এটাই সবচেয়ে বড় সার্থকতা ! আমি প্রার্থনা করি আগামীদিনে আমাদের মহাকাশ ক্ষেত্র সকলের প্রচেষ্টায় এভাবেই অজস্র সাফল্য অর্জন করবে!
আমার পরিবারবর্গ, সেপ্টেম্বর মাস ভারতের সামর্থের সাক্ষী হতে চলেছে। আগামী মাসে আয়োজিত জি-২০ গোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দের শীর্ষ সম্মেলনের জন্য ভারত সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এই আয়োজনে অংশ নেওয়ার জন্য ৪০টি দেশের রাষ্ট্র প্রধান এবং অনেক আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা রাজধানী দিল্লিতে আসছেন। জি-২০র শীর্ষ সম্মেলনের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত এটি সবচেয়ে বেশিসংখ্যায় অংশগ্রহণ। ভারত নিজের সভাপতির দায়িত্ব পালনের সময় জি-২০ গোষ্ঠীকে আরো বেশি সমন্বয়ের মঞ্চ হিসেবে গড়ে তুলেছে। ভারতের নিমন্ত্রণেই আফ্রিকান ইউনিয়ন জি-২০র সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এবং আফ্রিকার মানুষের কণ্ঠ পৃথিবীর এই অতি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত পৌঁছেছে। বন্ধুরা, গত বছর, বালিতে ভারত জি-20র সভাপতিত্ব পাওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত এত কিছু হয়েছে যে তা আমাদের গর্বে ভরিয়ে দেয়। দিল্লিতে বড় বড় অনুষ্ঠান আয়োজন করার ভাবনা থেকে সরে এসে আমরা একে দেশের ভিন্ন ভিন্ন শহরে নিয়ে গিয়েছি। দেশের প্রায় ৬০টি শহরে এর সঙ্গে জড়িত প্রায় ২০০টি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। জি-20-র প্রতিনিধিরা যেখানেই গিয়েছেন, সেখানেই মানুষ তাঁদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছে। এইসব প্রতিনিধি আমাদের দেশের বৈচিত্র্য দেখে, আমাদের প্রাণবন্ত গণতন্ত্র দেখে যথেষ্ট প্রভাবিত হয়েছেন। ভারত ঠিক কতটা সম্ভাবনাময়, সেটি তাঁরা বুঝতে পেরেছেন।
বন্ধুরা, জি-20 তে আমাদের সভাপতিত্ব হল মানুষের নেতৃত্বে সভাপতিত্ব— পিপলস প্রেসিডেন্সি, যেখানে জনসাধারণের অংশগ্রহণের ভাবনা সবার আগে স্থান পায়। জি-20 তে যে ১১টি বিভিন্ন বিষয়ের গোষ্ঠী ছিল তার মধ্যে শিক্ষা জগত, সুশীল সমাজ, যুবক, মহিলা, আমাদের সাংসদ, শিল্পোদ্যোগী, পুর প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষ গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেছেন। একে নিয়ে দেশজুড়ে যে আয়োজন চলছে, তার সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে দেড় কোটির চেয়েও বেশি মানুষ যুক্ত আছেন। জনগণের যোগদানের আমাদের এই প্রচেষ্টায় একটা নয়, দু-দুটো বিশ্ব রেকর্ডও হয়ে গেছে। বারাণসীতে আয়োজিত জি-20 কুইজ প্রতিযোগিতায় ৮০০টি স্কুলের এক লাখ পঁচিশ হাজার ছাত্রছাত্রীর অংশগ্রহণ এক নতুন বিশ্বরেকর্ড তৈরি করেছে। ওদিকে, লম্বানি কারিগরেরাও কামাল করেছেন। ৪৫০ জন কারিগর প্রায় ১৮০০ নতুন ধরণের নকশা কাপড়ের উপর ফুটিয়ে তুলে আশ্চর্যজনক কালেকশন বানিয়ে নিজেদের প্রতিভা এবং কারুশিল্পে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। জি-20 তে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক প্রতিনিধি আমাদের দেশের শৈল্পিক বৈচিত্র্য দেখে যথেষ্ট বিস্মিত হয়েছেন। সুরাতে এমনই এক সুন্দর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে আয়োজিত 'শাড়ি ওয়াকাথন' এ ১৫ টি রাজ্যের ১৫ হাজার মহিলা অংশ নিয়েছিল। এই অনুষ্ঠান সুরাতের বস্ত্র শিল্পকে যেমন উৎসাহিত করেছিল, তেমনই 'ভোকাল ফর লোক্যাল' ভাবনাও শক্তি সঞ্চয় করে এবং স্থানীয় পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে পৌছানোর পথও তৈরি হয়। শ্রীনগরে জি-20 বৈঠকের পর কাশ্মীরের পর্যটক সংখ্যায় যথেষ্ট বৃদ্ধি ঘটেছে। আমি, সমস্ত দেশবাসীকে বলতে চাই যে আসুন, সবাই মিলে জি-20 সম্মেলনকে সফল করি, দেশের সম্মান বাড়াই।
আমার পরিবারবর্গ, 'মন কি বাত'-এর পর্বে, আমরা প্রায়ই আমাদের তরুণ প্রজন্মের সক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করি। আজ, খেলাধুলা এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে আমাদের যুবসম্প্রদায় ক্রমাগত সাফল্যের নতুন উচ্চতা অর্জন করছে। আজ 'মন কি বাত'-এ আমি এমন একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতার কথা বলব যেখানে সম্প্রতি আমাদের খেলোয়াড়রা জাতীয় পতাকার সম্মান বৃদ্ধি করেছে। কয়েকদিন আগে চীনে আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বার এই প্রতিযোগিতার খেলাগুলিতে ভারত নিজের সবথেকে ভালো ক্রীড়া নৈপুণ্য দেখিয়েছে । আমাদের খেলোয়াড়রা মোট ২৬টি পদক জিতেছেন, যার মধ্যে ১১টি সোনা। আপনি জেনে খুশি হবেন যে ১৯৫৯ সাল থেকে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় প্রাপ্ত সমস্ত পদক যোগ করা হলেও এই সংখ্যাটি মাত্র ১৮-এ পৌঁছায়। বিগত দশকগুলিতে মাত্র ১৮টি, যেখানে আমাদের খেলোয়াড়রা এবার ২৬টি মেডেল জিতেছে। তাই, কয়েকজন তরুণ ক্রীড়াবিদ, যারা আসলে পড়াশোনা করছেন, আবার আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পদক জিতেছেন তারা এই সময় আমার সঙ্গে ফোন লাইনে যুক্ত হয়েছেন। আমি প্রথমে তাদের সম্পর্কে কিছু বলতে চাই । উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা প্রগতি তীরন্দাজীতে পদক জিতেছেন। আসামের অম্লান অ্যাথলেটিক্সে পদক জিতেছেন। উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা রেস ওয়াকে পদক জিতেছেন। মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা অভিদন্যা শ্যুটিংয়ে্ পদক জিতেছেন।
মোদিজী - আমার প্রিয় যুব খেলোয়াড়রা, নমস্কার
যুব খেলোয়াড়রা - নমস্কার স্যার।
মোদিজী - আমার আপনাদের সঙ্গে কথা বলে খুব ভাল লাগছে। আমি সবার আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে বেছে নেওয়া খেলোয়াড়দের শুভেচ্ছা জানাতে চাই। আপনারা ভারতের নাম উজ্জ্বল করেছেন, তার জন্য আপনাদের সকলকে অভিনন্দন। আপনারা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় যে নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন তাতে প্রত্যেক দেশবাসীর মাথা গর্বে উঁচু হয়ে গেছে। আমি সবার আগে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।
প্রগতি, এই আলোচনা আমি আপনাকে দিয়ে শুরু করতে চাই। আপনি সবার আগে বলুন যে যখন এখান থেকে দুটো মেডেল জিতে যান, তখন কি ভেবেছিলেন, এত বড় পদকপ্রাপ্তি সম্ভব? এখন কেমন লাগছে আপনার?
প্রগতিঃ- স্যার, আমি খুবই গর্ব বোধ করছিলাম, আমার ভীষণ আনন্দ হচ্ছিল যে দেশের পতাকা সর্বোচ্চ জায়গায় উত্তোলন করে আসতে পেরেছি। গোল্ড ফাইটে পৌঁছেও হেরে গিয়ে আপশোষ হচ্ছিল। কিন্তু তখনই আমরা পণ করে নিই যে আর আমাদের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকাকে নিচে নামতে দেওয়া যাবে না। সব অবস্থায়, আমাদের পতাকাকে সবার ওপরে রাখতে হবে। তারপর যখন আমরা জিতলাম, আমরা ওই পোডিয়ামে খুব ভালো ভাবে উদযাপন করি। ওই মূহুর্তটা খুব অমূল্য ছিল। এত গর্ববোধ হচ্ছিল যে বলা মুশকিল।
মোদিজিঃ- প্রগতি, আপনাকে তো খুব বড়সড় শারীরিক সমস্যার সসম্মুখীন হতে হয়েছিল। আপনি তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হন। এটা দেশের যুবসম্প্রদায়ের জন্য খুবই প্রেরণাদায়ক। ঠিক কি হয়েছিল আপনার?
প্রগতিঃ স্যার ৫ই মে ২০২০ তে আমার ব্রেন হ্যামারেজ হয়। আমি ভেন্টিলেটরে ছিলাম। এটাই নিশ্চিত ছিল না যে আমি আদৌ বাঁচবো কি না। আর বেঁচে গেলেও কি অবস্থায় থাকবো। কিন্তু আমি সাহস হারাইনি। আমার মনে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে আমাকে আবার উঠে দাঁড়াতে হবে, তীর চালাতে মাঠে নামতে হবে। আমার জীবন রক্ষা করার জন্য আমি সবথেকে বেশি কৃতজ্ঞতা জানাই ভগবানকে, তারপর ডাক্তারদের, এবং সবশেষে অবশ্যই তীরন্দাজীকে।
আমাদের সঙ্গে অম্লানও আছে। অম্লান আমাদেরকে একটু বল অ্যাথলেটিক্স এর প্রতি তোমার এই আগ্রহ এলো কিভাবে।
অম্লানঃ নমস্কার স্যার।
মোদিজিঃ নমস্কার নমস্কার।
অম্লানঃ স্যার অ্যাথলেটিক্স এর প্রতি শুরুতে তো অত আগ্রহ ছিল না। আমার আগে ফুটবল ভালো লাগতো। আমার দাদার এক বন্ধু আছে সে আমাকে বলল, অম্লান তোমার অ্যাথলেটিক্সের নানা প্রতিযোগিতায় যাওয়া উচিত। আমিও ভাবলাম ঠিক আছে একবার চেষ্টা করে দেখি। প্রথমবার আমি যখন স্টেট মিটে খেলি আমি হেরে যাই। সেই হার আমাকে বড়ই কষ্ট দেয়। তখন থেকে আমি মন দিয়ে খেলতে থাকি। এভাবেই আমার অ্যাথলেটিক্সে আসা হয় স্যার। এখন তো স্যার এতেই আনন্দ হয়।
মোদিজিঃ অম্লান আমাদের বল তুমি বেশিরভাগ অনুশীলন কোথায় করেছ?
অম্লানঃ আমি বেশিরভাগ অনুশীলন হায়দ্রাবাদে করেছি, সাই রেড্ডি স্যারের তত্ত্বাবধানে। তারপরে আমি ভুবনেশ্বরে শিফট হয়ে যাই সেখান থেকেই আমার পেশাদারী অনুশীলন শুরু হয় স্যার।
আচ্ছা, আমাদের সঙ্গে প্রিয়াঙ্কাও আছে। প্রিয়াঙ্কা, আপনি ২০ কিলোমিটার রেস
ওয়াক টিমের একজন সদস্য ছিলেন। সারা দেশ আজ আপনার কথা শুনছে, এবং তারা এই খেলা সম্পর্কে জানতে চায়। আপনি আমাদের এটা বলুন এর জন্য বিশেষ কি দক্ষতার প্রয়োজন? এবং আপনার ক্যারিয়ার কোথা থেকে কোথায় পৌঁছে গেছে?
প্রিয়াঙ্কা - আমার ইভেন্ট যথেষ্টই কঠিন কারণ ৫ জন বিচারক দাঁড়িয়ে থাকেন। আমরা যদি দৌড়েও যাই, তাও তাঁরা আমাদের বের করে দেবেন। যদি আমরা রাস্তা থেকে বেরিয়েও যাই বা লাফিয়েও পড়ি তাও তাঁরা আমাদের বার করে দেবেন। এমনকি হাঁটু মুড়লেও তাঁরা বাতিল করে দিতে পারেন। আমাকে তো দুবার তারা সতর্ক করেও দিয়েছেন। তারপর থেকে আমি আমার গতিকে এতটা নিয়ন্ত্রণ করেছি যাতে দলের জন্য এখান থেকে পদক পেতে পারি। কারণ আমরা এখানে দেশের জন্য খেলতে এসেছি আর শূন্য হাতে এখান থেকে ফিরব না।
প্রধানমন্ত্রী- আপনার বাবা ও ভাই ভালো আছেন?
প্রিয়াঙ্কা - হ্যাঁ সবাই ভালো আছেন। আমি তো সবাইকে বলি যে আপনি কিভাবে আমাদের অনুপ্রাণিত করেন। সত্যি বলছি স্যার, খুব ভালো লাগে। কারণ আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মত খেলা সম্পর্কে ভারতে কেউ তেমন জানেই না। কিন্তু এখন যা উৎসাহ আমরা পাচ্ছি, মানে আমরা টুইট দেখি যেখানে প্রচুর লোকে টুইট করেন, আমরা এত পদক জিতেছি তো বেশ ভালই লাগে যে অলিম্পিক্সের মত এখানেও অনেক উৎসাহ পাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী- ঠিক আছে প্রিয়াঙ্কাজী, আপনাকে আমার তরফ থেকে অনেক অভিনন্দন, আপনি দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। আসুন এবার আমরা অভিধন্যার সঙ্গে কথা বলি।
অভিধন্যা- নমস্কার স্যার।
প্রধানমন্ত্রী- নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন।
অভিধন্যা- স্যার আমি মহারাষ্ট্রের কোলাপুর শহর থেকে এসেছি। আমি শুটিং-এ ২৫ মিটার স্পোর্টস পিস্তল এবং ১০ মিটার এয়ার পিস্তল- দুটি ইভেন্টেই অংশগ্রহণ করি। আমার বাবা-মা দুজনেই উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আমি, ২০১৫ সালে শুটিং শুরু করেছি। যখন আমি শুটিং শুরু করি তখন কোলহাপুরে এত সুযোগ সুবিধে ছিলনা। বাসে যাতায়াত করে ওয়াডগাঁও থেকে কোলাপুর যেতাম, দেড় ঘণ্টা সময় লাগতো। ফেরার সময়ও দেড় ঘণ্টা সময় লাগতো। তার ওপর চার ঘণ্টা ধরে প্রশিক্ষণ। এভাবেই ৬-৭ ঘণ্টা যাতায়াত আর ট্রেনিংয়ে চলে যেত। আমার স্কুলও মিস হতো। তখন মা বাবা বললেন যে একটা কাজ করা যায়, আমরা তোমাকে শনি ও রবিবার শুটিং রেঞ্জে নিয়ে যাবো, বাকি দিনগুলো তুমি অন্য সব গেমস খেলো। তো আমি ছোটবেলায় অনেকগুলো খেলা খেলতাম কারণ আমার মা বাবা দুজনেরই খেলার প্রতি ঝোঁক ছিল। কিন্তু তাঁরা কিছু করতে পারেননি কারণ তখন অত আর্থিক সামর্থও ছিলনা আর তাঁদের কাছে সঠিক তথ্যও ছিলনা। তবে আমার মায়ের স্বপ্ন ছিল যে দেশের প্রতিনিধিত্ব করি এবং দেশের জন্য পদকও জিতি। সেজন্য আমি তার স্বপ্নপূরণ করতে ছোট থেকেই খেলাধুলাকে গুরুত্ব দেওয়া শুরু করি। তারপর আমি তাইকোন্ডাও শিখি, এতে আমি ব্ল্যাক বেল্ট পেয়েছি। এছাড়াও বক্সিং, জুডো, ফেন্সিং এবং ডিস্কাস থ্রো-এর মত খেলাধুলোতে অংশ নিয়ে তারপর ২০১৫ সালে আমি শুটিংয়ে আসি।
তারপর দু-তিন বছর আমি অনেক লড়াই করেছি এবং প্রথমবার আমার ইউনিভার্সিটি চ্যাম্পিয়নশিপে মালয়েশিয়া সিলেকশন হয়েছে, আর সেখানে আমি ব্রোঞ্জ পেয়েছিলাম, ওখান থেকেই আসলে আমি উদ্বুদ্ধ হয়েছি। তারপর আমার স্কুল থেকে আমার জন্য একটা শুটিং রেঞ্জ তৈরি করা হয়েছিল, আমি তখন সেখানেই প্রশিক্ষণ নিতাম আর ওঁরা আমায় তারপর পুণে পাঠায় ট্রেনিং করার জন্য। সেখানে গগন নারাঙ্গ স্পোর্টস ফাউন্ডেশনে ‘গান ফর গ্লোরি’ রয়েছে, সেখানেই আমি এখন প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। গগন স্যার আমায় খুব সহযোগিতা করেন এবং আমায় খেলার জন্য অনুপ্রেরণা দেন।
মোদী জি:- আচ্ছা আপনারা চারজন যদি আমায় কিছু বলতে চান তো আমি সেটা শুনতে চাই। প্রগতি, অম্লান, প্রিয়াঙ্কা এবং অভিদন্যা। আপনারা সকলেই আমার সঙ্গে এই মুহূর্তে রয়েছেন তাই কিছু বলতে চাইলে অবশ্যই আমি শুনবো ।
অম্লান:- স্যার আমার একটা প্রশ্ন আছে।
মোদী জি:- বলুন।
অম্লান:- আপনার কোন খেলা সবচেয়ে বেশি পছন্দ?
মোদিজি:- খেলাধুলার জগতে ভারতের আরো প্রস্ফুটিত হওয়া উচিত আর এই জন্যই আমি এই বিষয়গুলোয় খুব উৎসাহ প্রদান করছি কিন্তু হকি, ফুটবল, কাবাডি, খো খো- এগুলো আমাদের মাটির সঙ্গে জুড়ে থাকা খেলা। তাই এগুলোয় আমাদের কখনোই পিছিয়ে পড়া উচিত নয় আর আমি দেখছি যে তীরন্দাজীতে আমাদের খেলোয়াড়রা ভালো ফল করছে শুটিংয়েও ভালো ফল করছে। তৃতীয় আরেকটা বিষয় আমি লক্ষ্য করছি যে আমাদের যুবকযুবতীদের মধ্যে, এমনকী তাদের পরিবারের মানুষদের মধ্যেও খেলার প্রতি আগে যে মনোভাব ছিল এখন তা আর নেই। আগে তো বাচ্চারা খেলতে গেলে তাদের আটকানো হতো কিন্তু এখন সময় অনেক পাল্টেছে, আপনারা যা সাফল্য নিয়ে আসছেন তা সব পরিবারকেই অনুপ্রাণিত করছে। আর যে খেলাতেই আমাদের ছেলেমেয়েরা যাচ্ছে, তারা দেশের জন্য কিছু না কিছু করছে। এই খবর দেশে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পরিবেশন করা হচ্ছে, দেখানো হচ্ছে আর স্কুল-কলেজেও এ বিষয়ে ক্রমাগত আলোচনা চলছে। যাই হোক, আমার এই বিষয়টা খুব ভালো লেগেছে তাই আমার তরফ থেকে আপনাদের সকলকে অনেক অনেক শুভকামনা।
যুব খেলোয়াড়েরা:- অনেক অনেক ধন্যবাদ। থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। ধন্যবাদ।
মোদিজি:- ধন্যবাদ জি। নমস্কার।
আমার পরিবারবর্গ, এই বছর ১৫ ই আগস্ট এর সময় দেশে ‘সবকা প্রয়াস’ প্রকল্পের সাফল্য দেখলাম। সকল দেশবাসীর প্রচেষ্টা হর ঘর তিরঙ্গা’ অভিযানকে বাস্তবে ‘হর মন তিরঙ্গা’ অভিযান হিসেবে রূপায়িত করেছে। এই অভিযানের সময়ে অনেক রেকর্ড গড়ে উঠেছে। দেশবাসীরা কোটি কোটি তেরঙা কিনেছেন। দেড় লক্ষ পোস্ট অফিসের মাধ্যমে প্রায় দেড় কোটি তেরঙ্গা পতাকা বিক্রি হয়েছে। এতে আমাদের বিক্রেতা এবং যারা এই পতাকা তৈরি করেন বিশেষ করে মহিলারা কোটি কোটি টাকা রোজগার করতে পেরেছেন। পতাকার সঙ্গে নিজস্বী পোস্ট করার বিষয়েও দেশবাসী নতুন রেকর্ড তৈরি করেছেন। গতবছর ১৫ ই আগস্ট পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কোটি দেশবাসী তেরঙা পতাকার সঙ্গে সেলফি পোস্ট করেছিলেন। এই বছর এই সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি অতিক্রম করেছে।
বন্ধুরা, এই সময় “আমার মাটি, আমার দেশ”, দেশাত্মবোধ প্রকাশ করার এই অভিযান
জোর কদমে চলছে। সেপ্টেম্বর মাসে দেশের গ্রামে-গ্রামে গিয়ে প্রতিটি বাড়ি থেকে
মাটি সংগ্রহ করার অভিযান চলবে। দেশের পবিত্র মৃত্তিকা হাজার-হাজার অমৃত
কলসে জমা করা হবে। অক্টোবরের শেষে এই হাজার-হাজার অমৃত কলস যাত্রা
করে দেশের রাজধানী দিল্লি পৌছবে। এই মৃত্তিকা দিয়েই দিল্লিতে অমৃতবাটিকা
নির্মাণ করা হবে। আমার বিশ্বাস, প্রতিটি দেশবাসীর উদ্যোগ এই অভিযানটিকেও
সাফল্যমন্ডিত করবে।
আমার পরিবারবর্গ, এবার আমি অনেক চিঠি সংস্কৃত ভাষায় পেয়েছি। এর কারণ
শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা, এই তিথিতে বিশ্ব সংস্কৃত দিবস উদযাপিত হয়।
“সর্বেভ্যঃ বিশ্ব-সংস্কৃত-দিবসস্য হার্দয়ঃ শুভকামনাঃ”
আপনাদের সকলকে বিশ্ব সংস্কৃত দিবস উপলক্ষ্যে অনেক-অনেক অভিনন্দন
জানাই। আমরা সবাই জানি সংস্কৃত পৃথিবীর প্রাচীনতম ভাষাগুলির অন্যতম। একে
বহু আধুনিক ভাষার জননীও বলা হয়। সংস্কৃত নিজের প্রাচীনতা ছাড়াও তার
বৈজ্ঞানিক কাঠামো ও ব্যাকরণের জন্যও প্রসিদ্ধ। ভারতবর্ষের কত প্রাচীন
জ্ঞান হাজার হাজার বছর ধরে কেবল সংস্কৃত ভাষাতেই সংরক্ষিত ছিল। যোগ, আয়ুর্বেদ,
তথা দর্শনের মত বিষয়ে গবেষণা যাঁরা করেন তাঁরা অনেকেই সংস্কৃতের
অধ্যয়ন করছেন এখন। বহু প্রতিষ্ঠানেও এই ক্ষেত্রে অনেক ভাল-ভাল
কাজ হচ্ছে। যেমন সংস্কৃত প্রমোশন ফাউন্ডেশন, সংস্কৃত ফর যোগ, সংস্কৃত ফর আয়ুর্বেদ ও সংস্কৃত ফর বুদ্ধইজমের প্রতিষ্ঠানে বহু পাঠক্রম শুরু হয়েছে।
সংস্কৃত ভারতী মানুষকে সংস্কৃত শেখানোর অভিযান চালায়। এখানে আপনি ১০ দিনের ‘সংস্কৃত সম্ভাষণ শিবিরে’ অংশগ্রহণ করতে পারেন। আজ মানুষের মধ্যে সংস্কৃত নিয়ে সচেতনতা ও গর্বের ভাব বেড়েছে দেখে আমার আনন্দ হয়। এর পিছনে গত কয়েক বছরে দেশের নানা পদক্ষেপের প্রভাব রয়েছে। যেমন তিনটি সংস্কৃত ডিমড বিশ্ববিদ্যালয়কে ২০২০ সালে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করা হয়েছে। বিভিন্ন শহরে সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নানা কলেজ ও সংস্থাও চলছে। আইআইটি ও আইআইএমের মত প্রতিষ্ঠানগুলিতেও সংস্কৃত কেন্দ্রগুলি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
বন্ধুরা, আপনারা অনেক সময়ই নিশ্চয় অনুভব করেছেন যে আমাদের শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য, আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য আমাদের ঐতিহ্যের খুব বড় শক্তিশালী মাধ্যম হল আমাদের মাতৃভাষা। যখন আমরা আমাদের মাতৃভাষার সঙ্গে যুক্ত হই তখন খুব সহজেই আমরা নিজেদের সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত হতে পারি। আমরা তখন নিজেদের আচার-আচরণ, নিজেদের পরম্পরার সঙ্গে জুড়ে যেতে পারি, তখন আমরা আমাদের চির পুরাতন প্রাচীন, অপরুপ বৈভবের সঙ্গে যুক্ত হতে পারি। ভারতের এরকম আরেকটি মাতৃভাষা, গৌরবময় তেলুগু ভাষা। ২৯শে অগাস্ট তেলুগু দিবস পালিত হবে।
“অন্দরিকী তেলেগু ভাষা দিনোতসব শুভকাঁক্ষলু”।
আপনাদের সকলকে তেলুগু দিবসের অনেক-অনেক অভিনন্দন জানাই। তেলুগু ভাষার সাহিত্য ও ঐতিহ্যে ভারতীয় সংস্কৃতির বহু অমূল্য রত্ন লুকিয়ে আছে। তেলুগুর এই ঐতিহ্যের সুফল সারা দেশ পেয়েছে। এর জন্য অনেক উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে।
আমার পরিবারবর্গ, ‘মন কি বাত’ এর বহু পর্বে আমরা পর্যটন নিয়ে কথা বলেছি। কোন স্থান বা বস্তুকে নিজের চোখে দেখা, বোঝা এবং কিছু সময় তার সঙ্গে কাটানো এক আলাদা অনুভূতি এনে দেয়। কেউ সমুদ্রের যত বিশদ বর্ণনাই করুক না কেন, আমরা সমুদ্রকে স্বচক্ষে না দেখলে তার বিশালতাকে উপলব্ধি করতে পারিনা। কেউ হিমালয় সম্বন্ধে যতই ব্যাখ্যা করুক না কেন, হিমালয়কে না দেখলে তার সৌন্দর্য অনুভব করা যায় না। এর জন্যই আমি সব সময় আপনাদের কাছে অনুরোধ জানাই, যখনই সুযোগ পাবেন তখনই আমাদের দেশের সৌন্দর্য, দেশের বৈচিত্রকে দেখতে বেরিয়ে পড়া উচিত। প্রায়শই আমরা আরো একটা জিনিস লক্ষ্য করি। আমরা হয়তো পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াই কিন্তু নিজেদের শহর বা রাজ্যেরই বহু অপরূপ স্থান বা বস্তু আমাদের অগোচরেই থেকে যায়।
অনেক সময় এমন হয় যে মানুষ নিজেদের শহরের ঐতিহাসিক স্থানগুলি সম্বন্ধেও তেমনভাবে জানেন না। এমনই একটি ঘটনা ধনপাল জি’র সঙ্গে ঘটেছে। ধনপাল জি বেঙ্গালুরুর ট্রান্সপোর্ট অফিসে ড্রাইভারের কাজ করতেন। প্রায় ১৭ বছর আগে তিনি সাইটসিইং উইং এর ভারপ্রাপ্ত হন। সেই বিভাগটিকে এখন মানুষ বেঙ্গালুরু দর্শিনী নামে জানেন। ধনপাল জি পর্যটকদের শহরের আলাদা আলাদা বিভিন্ন পর্যটন স্থলে নিয়ে যেতেন। এমনই কোন এক ট্রিপে এক পর্যটক তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন বেঙ্গালুরুতে ট্যাংককে সেঁকি ট্যাংক কেন বলা হয়। তার খুবই খারাপ লাগে কারণ এর উত্তর তিনি জানতেন না। এরপর তিনি নিজের জ্ঞান বাড়ানোর দিকে নজর দেন। নিজেদের ঐতিহ্যকে জানার এই সুতীব্র আগ্রহে তিনি অনেক পাথর এবং শিলালিপির সঙ্গে পরিচিত হন। এই কাজ ধনপাল জি’র কাছে এতটাই ভালোবাসার হয়ে ওঠে যে তিনি এপিগ্রাফি অর্থাৎ শিলালিপি সম্পর্কিত বিষয়ে ডিপ্লোমা করেন। এখন উনি অবসর নিয়েছেন, কিন্তু বেঙ্গালুরুর ইতিহাস সন্ধানে তার আগ্রহ এখনও অটুট।
বন্ধুরা, আমার খুবই আনন্দ হচ্ছে ব্রায়ান.ডি.খারপ্রণের বিষয়ে বলতে। ইনি মেঘালয়ের অধিবাসী এবং স্পেলিওলজিতে ওঁর প্রবল আগ্রহ। সহজ ভাষায় বলতে গেলে স্পেলিওলজির অর্থ গুহা বিষয়ে অধ্যয়ন। অনেক বছর আগে বেশ কিছু গল্পের বই পড়ে উনি এই বিষয়ে আগ্রহী হন। ১৯৬৪ তে তিনি একজন স্কুল ছাত্র হিসেবে নিজের প্রথম অভিযান চালিয়েছিলেন। ১৯৯০ এ ব্রায়ান জি নিজের বন্ধুর সঙ্গে একটি সংগঠন তৈরি করেন এবং তার মাধ্যমে মেঘালয়ের অজানা গুহাগুলির বিষয়ে সন্ধান শুরু করেন। দেখতে দেখতে তিনি নিজের দলের সঙ্গে মেঘালয়ের ১৭০০রও বেশি গুহায় সন্ধান চালিয়েছেন এবং নিজের রাজ্যকে ওয়ার্ল্ড কেভ ম্যাপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ভারতের দীর্ঘতম এবং গভীরতম গুহাগুলির কয়েকটি মেঘালয় রয়েছে। ব্রায়ান জি এবং ওঁর দলের সদস্যরা, কেভ ফনা(fauna) অর্থাৎ গুহার সেই জীবজন্তুদেরও তথ্যও নথিভুক্ত করেছেন যেগুলি পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় না। আমি তাঁর দলের সকল সদস্যদের প্রয়াসকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। পাশাপাশি আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি যে মেঘালয়ের গুহাগুলিতে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা অবশ্যই করবেন।
আমার পরিবারবর্গ, আপনারা সবাই জানেন যে দোহ অর্থাৎ ডেয়ারি সেক্টর আমাদের দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলির অন্যতম। আমাদের মা ও বোনেদের জীবনে বিরাট পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে এর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। কিছুদিন আগেই আমি গুজরাটের ‘বনাস ডেয়ারী’র একটি আকর্ষণীয় উদ্যোগের সম্পর্কে জানতে পারলাম। ‘বনাস ডেয়ারী’কে এশিয়ার সবচেয়ে বড় ডেয়ারী হিসেবে গণ্য করা হয়। এখানে প্রতিদিন গড়ে ৭৫ লাখ লিটার দুধ প্রকিয়াকরণের কাজ করা হয়। এর পরে এই দুধ অন্য রাজ্যেও পাঠানো হয়। এখান থেকে অন্য রাজ্যে সময়মতো দুধ সরবরাহ করার জন্য, এখনও পর্যন্ত ট্যাঙ্কার বা মিল্ক ট্রেন অর্থাৎ ট্রেনকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হত। কিন্তু এর মধ্যেও প্রতিকূলতা কম ছিল না। প্রথমত, ট্রেনে দুধ তুলতে এবং নামাতে অনেক সময় লেগে যেত এবং কখনও কখনও দুধও নষ্ট হয়ে যেত। এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে ভারতীয় রেল নতুন এক পরীক্ষা করল। রেলওয়ে পালনপুর থেকে নিউ রেবাড়ী পর্যন্ত ট্রাক অন ট্র্যাক সুবিধা শুরু করেছে। এতে সরাসরি ট্রেনে দুধের ট্রাকগুলিকে তুলে দেওয়া হয়। অর্থাৎ পণ্য পরিবহণের বিশাল সমস্যার সমাধান হয়েছে । ট্রাক অন ট্র্যাক সুবিধার ফলাফল খুবই সন্তোষজনক হয়েছে। আগে যে দুধ পৌঁছাতে ৩০ ঘন্টা লাগতো, তা এখন অর্ধেকেরও কম সময়ে পৌঁছে যাচ্ছে। এতে যেমন জ্বালানির কারণে হওয়া দূষণ কমেছে, আবার সেখানে জ্বালানির খরচও সাশ্রয় হচ্ছে। ট্রাকের ড্রাইভারদেরও অনেক উপকার হয়েছে, তাঁদের জীবন সহজ হয়েছে।
বন্ধুরা, যৌথ উদ্যোগের জন্য আজ আমাদের দুগ্ধশিল্প আধুনিক চিন্তাধারার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। বনাস ডেয়ারী পরিবেশ রক্ষার দিকে কিভাবে এগিয়েছে, এর নিদর্শন সীডবল বৃক্ষরোপণ অভিযানের মাধ্যমে বোঝা যায়। বারাণসী মিল্ক ইউনিয়ন আমাদের দুধওয়ালাদের আয় বাড়ানোর জন্য সার ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছে। কেরালার মালাবার মিল্ক ইউনিয়ন ডেইরির প্রচেষ্টাও খুব অনন্য। এঁরা পশু রোগের চিকিৎসার জন্য আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরিতে নিযুক্ত রয়েছে।
বন্ধুরা, আজকে অনেক মানুষ আছেন যাঁরা দোহ (ডেয়ারি)কে গ্রহণ করে নানা ধরণের বৈচিত্র্য আনছেন। অমনপ্রিত সিং রাজস্থানের কোটায় একটি ডেয়ারী ফার্ম চালাচ্ছেন, আপনাদের তাঁর সম্পর্কেও জানা উচিত। উনি ডেয়ারীর সঙ্গে সঙ্গে বায়োগ্যাসের ওপরেও গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং দুটি জৈবগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করেছেন। যার জন্য ওঁর বিদ্যুতের খরচ প্রায় ৭০ শতাংশ কমে গেছে। ওঁর এই প্রচেষ্টা সারাদেশে দুগ্ধ শিল্পের সঙ্গে যুক্তদের অনুপ্রাণিত করবে। আজ অনেক বড় বড় ডেয়ারি, জৈবগ্যাস নিয়ে কাজ করছে। এই ধরনের সম্প্রদায়গত উদ্যোগের মাধ্যমে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। আমি নিশ্চিত যে সারাদেশে এ ধরনের প্রবণতা বজায় থাকবে।
আমার পরিবারবর্গ, ‘মন কি বাত’এ আজ এইটুকুই। এখন উৎসবের মরশুমও চলে এসেছে। রাখীবন্ধন উপলক্ষে আপনাদের সকলকে জানাই অগ্রিম শুভেচ্ছা। উৎসব উদযাপনের সময়, আমাদের ভোকাল ফর লোকালের মূলমন্ত্রটিও মনে রাখতে হবে। ‘আত্মনির্ভর ভারত’ এই অভিযান প্রতিটি দেশবাসীর নিজের অভিযান। আর যখন উৎসবের আবহ থাকে, তখন আমাদের আরাধনার জায়গা এবং আশপাশের এলাকা পরিষ্কার রাখতে হবে, তবে সবসময়ের জন্য। পরের বার আপনাদের সঙ্গে আবার ‘মন কি বাত’ হবে, কিছু নতুন বিষয় নিয়ে আসবো। দেশবাসীর নতুন কিছু উদ্যোগ ও তাদের সাফল্য নিয়ে মন ভরে আলোচনা করব। ততক্ষণ পর্যন্ত বিদায় চাইছি। অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।
নতুনদিল্লি, ৩০শে জুলাই, ২০২৩
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। “মন কি বাতে” আপনাদের স্বাগত জানাই। জুলাই মাস মানে বর্ষা ঋতুর মাস, বৃষ্টির মাস। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে, গত কিছু দিন উদ্বেগ আর সমস্যাসঙ্কুল হয়ে রয়েছে। যমুনা সমেত অনেক নদীতে বন্যার কারণে অনেক এলাকায় মানুষকে কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধ্বসের ঘটনাও ঘটেছে। এরই মধ্যে, দেশের পশ্চিম অংশে, কিছু দিন আগে গুজরাতে, ‘বিপর্যয়’ সাইক্লোনও এসেছিল। কিন্তু বন্ধুরা, এই সব বিপর্যয়ের মধ্যে, আমরা সব দেশবাসী আবার দেখিয়ে দিয়েছি, সম্মিলিত প্রয়াসের শক্তি কেমন হতে পারে। স্থানীয় মানুষজন, আমাদের এন-ডি-আর-এফের জওয়ানরা, স্থানীয় প্রশাসনের সদস্যরা, দিনরাত এক করে এই সব বিপর্যয়ের মোকাবিলা করেছেন। যে কোনও বিপর্যয়ের সঙ্গে লড়ার জন্য আমাদের সামর্থ্য আর ক্ষমতার ভূমিকা খুব বড় – কিন্তু এরই সঙ্গে, আমাদের সংবেদনশীলতা এবং অন্য একজনের হাত ধরার ভাবনা, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। সর্বজনের হিতের এই ভাবনা ভারতের পরিচয়ও বটে আর ভারতের শক্তিও বটে।
বন্ধুরা, বর্ষার এই সময় ‘বৃক্ষরোপণ’ এবং ‘জল সংরক্ষণের’ জন্যও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। ‘আজাদী কে অমৃৎ মহোৎসব’ চলাকালীন তৈরি হওয়া ষাট হাজারেরও বেশি অমৃৎ সরোবরেও সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে। এখন পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি অমৃৎ সরোবর তৈরি করার কাজও চলছে। আমাদের দেশবাসী পূর্ণ সচেতনতা ও দায়িত্বের সঙ্গে জল সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে নতুন-নতুন প্রয়াস করছেন। আপনাদের মনে থাকবে, কিছু দিন আগে আমি মধ্যপ্রদেশের শহডোলে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল পকরিয়া গ্রামের আদিবাসী ভাইবোনেদের সঙ্গে। ওখানেই প্রকৃতি আর জল বাঁচানোর ব্যাপারে আমার সঙ্গে আলোচনাও হয়েছিল। এখন আমি জানতে পেরেছি যে পকরিয়া গ্রামের আদিবাসী ভাইবোনেরা এই নিয়ে কাজও শুরু করে দিয়েছেন। এখানে, প্রশাসনের সহায়তায়, প্রায় একশো কূয়োকে ওয়াটার রিচার্জ ব্যবস্থায় বদলে ফেলা হয়েছে। বৃষ্টির জল এখন এই সব কূয়োতে ঢোকে , আর কূয়ো থেকে এই জল মাটির গভীরে পৌঁছে যায়। এতে এলাকার ভূগর্ভস্থ জলের স্তরেও ধীরে-ধীরে উন্নতি ঘটবে। এখন সব গ্রামবাসী গোটা এলাকায় প্রায় আট’শো কূয়োকে রিচার্জের জন্য উপযোগী করে তোলার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন। এমনই এক উৎসাহব্যঞ্জক খবর উত্তরপ্রদেশের থেকে এসেছে। কিছুদিন আগে, উত্তরপ্রদেশে, এক দিনে তিরিশ কোটি গাছ লাগানোর রেকর্ড তৈরি করা হয়েছে। এই অভিযান শুরু করেছিল রাজ্য সরকার, সেটা সম্পূর্ণ করেন ওখানকার মানুষ। এমন প্রয়াস জন-অংশীদারিত্বের সঙ্গে-সঙ্গে জন-জাগরণেরও বড় উদাহরণ। আমি চাইব যে আমরাও সবাই, গাছ লাগানো এবং জল বাঁচানোর এই সব প্রয়াসের অংশ হয়ে উঠি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এই সময়ে শ্রাবণের পবিত্র মাস চলছে। সদাশিব মহাদেবের পূজা আরাধনার পাশাপাশি এই মাস আনন্দ উৎসবের সঙ্গে যুক্ত। তাই আধ্যাত্মিক ব্যাপারের সঙ্গে সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোন থেকেও শ্রাবণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। শ্রাবণের ঝুলন, শ্রাবণের মেহেন্দী, শ্রাবণের উৎসব - সব মিলিয়ে এই মাস মানেই আনন্দ উল্লাস।
বন্ধুরা, আমাদের এই বিশ্বাস ও পরম্পরার আরও একটা দিক আছে। আমাদের এই পরব, পরম্পরাগুলি আমাদের সচল, গতিশীল রাখে। এই শ্রাবণ মাসে শিবের আরাধণার জন্য অগনিত ভক্ত কাঁধে বাঁক নিয়ে যাত্রা করেন। শ্রাবণ মাসে বলে বহু ভক্তদের সমাগম হচ্ছে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গে। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ বেনারসে হাজির হচ্ছেন। এখন কাশীতে প্রতি বছর দশ কোটির বেশি পর্যটক যান। অয্যোধ্যা, মথুরা, উজ্জয়িনীর মতো তীর্থক্ষেত্রেও আগত ভক্তের সংখ্যা খুব দ্রুত বাড়ছে। এতে লক্ষ লক্ষ গরীব মানুষের রোজগার হচ্ছে, তাদের জীবন ধারণের রসদ যোগাচ্ছে। এসবই আমাদের সাংস্কৃতিক জন-জাগরণের ফল। এর দর্শন পেতে এখন বিশ্ব থেকে মানুষ আমাদের দেশের তীর্থস্থানে আসছেন। আমি এরকমই দু’জন আমেরিকান বন্ধুর ব্যাপারে জানতে পেরেছি যারা সুদূর ক্যালিফোর্নিয়া থেকে অমরনাথ যাত্রা করতে এসেছেন। এই বিদেশী অতিথিরা স্বামী বিবেকানন্দের অমরনাথ যাত্রার অভিজ্ঞতার কথা কোথাও শুনেছিলেন। তাঁরাও অনুপ্রাণিত হয়ে সরাসরি অমরনাথ যাত্রা করতে চলে আসেন। এঁরা একে ভগবান ভোলানাথের আশীর্বাদ মনে করেন। এটাই ভারতের বৈশিষ্ট্য, সবাইকে আপন করে নেয়, সবাই কিছু না কিছু লাভ করে। এমনই একজন মহিলা হলেন ফ্রান্সের - শার্লট শোপিন. কিছুদিন আগে আমি যখন ফ্রান্সে গিয়েছিলাম, তখন তার সঙ্গে আলাপ হয়। শার্লট শোপিন নিয়মিত যোগাভ্যাস করেন, যোগ প্রশিক্ষক এবং তার বয়স ১০০-রও বেশি। উনি বয়সের সেঞ্চুরি পার করে ফেলেছেন। উনি বিগত ৪০ বছর ধরে যোগাভ্যাস করছেন। উনি নিজের এই সুস্বাস্থ্য ও ১০০ বছর পরমায়ুর সব কৃতিত্ব যোগাভ্যাসকে দেন। উনি গোটা বিশ্বের কাছে ভারতের এই যোগবিজ্ঞান ও তার শক্তির পরিচায়ক হয়ে উঠেছেন। আমাদের সকলের এঁর থেকে শেখা উচিৎ। আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে বুঝি ও দায়িত্বশীল ভাবে বিশ্বের সামনে তা তুলে ধরি। আমি আনন্দিত যে এরকমই একটি চেষ্টা উজ্জয়িনীতে এখন চলছে। এখানে সারাদেশের ১৮জন চিত্রশিল্পী পুরাণ অবলম্বনে আকর্ষণীয় চিত্রকথা তৈরি করছেন। এই ছবিগুলি বুন্দি শৈলী, নাথদ্বারা শৈলী, পাহাড়ি শৈলী এবং অপভ্রংশ শৈলীর মতো কিছু বিশেষ শৈলীতে তৈরি করা হবে।
বন্ধুরা, এগুলো উজ্জয়িনীর ত্রিবেণী যাদুঘরে প্রদর্শিত হবে, অর্থাৎ, কিছুদিন পর যখন আপনি উজ্জয়িনীতে যাবেন, তখন আপনি মহাকাল মহালোকের সঙ্গে অন্য একটি ঐশ্বরিক স্থান পরিদর্শন করতে পারবেন। বন্ধুরা, উজ্জয়িনীতে যে পেইন্টিং করা হচ্ছে সেই কথা বলার সময় আমার আরেকটি অনন্য পেইন্টিং এর কথা মনে পড়ল, এই পেইন্টিংটি তৈরি করেছিলেন রাজকোটের এক শিল্পী, প্রভাত সিং মোডভাই বারহাটজি। এই পেইন্টিংটি ছত্রপতি বীর শিবাজি মহারাজের জীবনের একটি ঘটনার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল।
ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ রাজ্যাভিষেকের পর যখন তাঁর কুলদেবী তুলজা মাতার দর্শন করতে গিয়েছিলেন, সে সময় পরিবেশ কেমন ছিল তা শিল্পী প্রভাত ভাই এঁকেছিলেন । আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সেগুলোর যত্ন করতে হবে, বাঁচাতে হবে, আগামী প্রজন্মকে শেখাতে হবে। আমি খুশি যে আজ এই লক্ষ্যে অনেক প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। আমার প্রিয় দেশবাসী, অনেক সময় যখন আমরা ইকোলজি, ফ্লোরা, ফনা,বায়ো-ডাইভারসিটির মতো শব্দ শুনি, তখন কেউ কেউ মনে করেন যে এটি নির্দিষ্ট কোনএকটি বিষয়, এর সঙ্গে যুক্ত বিষেষজ্ঞদের বিষয়, কিন্তু এমনটা নয়। আমরা যদি সত্যিই প্রকৃতিকে ভালবাসি তবে আমরা আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার মধ্যেও অনেক কিছু করতে পারি। তামিলনাড়ুর ভাদাভল্লির একজন বন্ধু সুরেশ রাঘওয়নজী। রাঘওয়নজীর ছবি আঁকার শখ। আপনারা জানেন যে পেইন্টিং শিল্প এবং ক্যানভাসের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি কাজ, কিন্তু রাঘওয়নজী ঠিক করলেন যে তার চিত্রকলার মাধ্যমে তিনি গাছপালা এবং প্রাণী সম্পর্কে জ্ঞানকে সংরক্ষণ করবেন। তিনি বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর চিত্র তৈরি করে সে সম্পর্কিত নানা তথ্য নথিভুক্ত করেন। তিনি এখনো পর্যন্ত কয়েক ডজন পাখি, প্রাণী এবং অর্কিডের ছবি এঁকেছেন যা বিলুপ্তির পথে। শিল্পের মাধ্যমে প্রকৃতির সেবা করার এমন একটি উদাহরণ সত্যিই অসাধারণ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ আমি আপনাদের আরও একটি মজার কথা বলতে চাই। কিছু দিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি দারুণ খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে আমেরিকা আমাদের কাছে ১০০টিরও বেশি দুর্লভ ও প্রাচীন নিদর্শন ফিরিয়ে দিয়েছে। এই খবরটি প্রকাশ্যে আসার পর, এই নিদর্শনগুলি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল আলোচনা হয়েছে। তরুণরা তাদের ঐতিহ্য নিয়ে গর্ববোধ করেছে। ভারতে ফিরে আসা এই নিদর্শনগুলি ২৫০০ বছর থেকে ২৫০ বছর পুরনো৷ আপনারা জেনে খুশি হবেন যে এই বিরল জিনিসগুলি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এগুলি টেরাকোটা, পাথর, ধাতু ও কাঠের সাহায্যে বানানো হয়েছে। এর মধ্যে কিছু তো এমনও আছে, যেগুলো আপনাকে আশ্চর্য করে দেবে। আপনারা এগুলোকে দেখলে তাকিয়েই থাকবেন। এরমধ্যে একাদশ শতাব্দীর একটি সুন্দর সান্ডস্টোন-এর স্থাপত্যও আপনারা দেখতে পাবেন। এটি নৃত্যরত এক অপ্সরার কারুকৃতি যার সম্পর্ক মধ্যপ্রদেশের সঙ্গে। চোল যুগের অনেক মূর্তিও এর মধ্যে আছে। দেবী এবং ভগবান মুরুগানের মুর্তি তো দ্বাদশ শতাব্দীর আর তামিলনাড়ুর প্রভাবশালী সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত। ভগবান গণেশের প্রায় এক হাজার বছর পুরানো কাঁসার মুর্তি ভারতকে ফেরত দেওয়া হয়েছে। ললিতাসনে বিরাজমান উমা-মহেশ্বরের একটি মূর্তি একবিংশ শতাব্দীর বলা হয়ে থাকে, যেখানে ওঁরা দু’জনে নন্দীর ওপর আসীন। পাথরের তৈরি জৈন তীর্থঙ্কর এর দু’টি মূর্তিও ভারতে ফেরত এসেছে। ভগবান সূর্যদেবের দুটি মুর্তিও আপনাদের মন ছুঁয়ে যাবে। এর মধ্যে একটি স্যান্ডস্টোন দিয়ে তৈরি। ফেরত দেওয়া জিনিসের মধ্যে কাঠের তৈরি একটি প্যানেলও আছে যা সমুদ্রমন্থন এর ইতিহাস সামনে নিয়ে আসে। ষোড়শ-সপ্তদশ শতাব্দীর এই প্যানেলের সম্পর্ক দক্ষিণ ভারতের সঙ্গে।
বন্ধুরা এখানে তো আমি অনেক কম নাম বলেছি, কিন্তু বস্তুতপক্ষে এই তালিকা অনেক লম্বা। আমি মার্কিন সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ, আমাদের এই বহুমূল্য ঐতিহ্য ফেরত দেওয়ার জন্য। ২০১৬ এবং ২০২১ সালেও আমি যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছিলাম তখনও অনেক শিল্পকলা ভারতকে ফেরত দেওয়া হয়েছিল। আমার বিশ্বাস এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যর চুরি আটকানোর ক্ষেত্রে দেশব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে আমাদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যর সঙ্গে দেশবাসীর সম্পর্ক আরো গভীর হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, দেবভূমি উত্তরাখণ্ডের কিছু মা এবং বোনেরা যে চিঠি আমাকে লিখেছিলেন তা আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। তাঁরা নিজেদের ছেলেদের, নিজেদের ভাইদের অনেক আশীর্বাদ করেছেন। তাঁরা লিখেছেন যে তারা কখনো কল্পনাও করেননি যে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ভূর্জপত্র তাঁদের জীবিকার অবলম্বন হতে পারে। আপনারা ভাবছেন যে এই পুরো ব্যাপারটা কি?
বন্ধুরা, আমাকে এই চিঠিটা লিখেছেন চমোলী জেলার নীতিমানা ঘাঁটির কিছু মহিলারা। এরা হলেন সেই মহিলা যারা গত বছর অক্টোবরে আমাকে ভূর্জপত্রের উপর একটি অনন্য কলাকৃতি উপহার দিয়েছিলেন। এই উপহারটি পেয়ে আমিও অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম। সেই প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের শাস্ত্র এবং গ্রন্থ তো এই ভূর্জপত্রেই সংরক্ষিত হয়ে এসেছে। মহাভারতও তো এই ভূর্জপত্রেই লেখা হয়েছিল। আজ দেবভূমির এই মহিলারা এই ভূর্জপত্র দিয়ে অত্যন্ত সুন্দর সুন্দর শিল্পকীর্তি ও স্মারক তৈরি করছেন। মানা গ্রামে যাত্রার সময় আমি তাদের এই অনন্য প্রয়াসের প্রশংসা করেছিলাম। আমি দেবভূমিতে আগত পর্যটকদের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম তারা যেন যাত্রার সময় বেশি করে স্থানীয় দ্রব্য কেনেন। সেই আবেদনের যথেষ্ট প্রভাব এখানে দেখা গেছে। এখন এখানে আগত তীর্থযাত্রীরা ভূর্জপত্র দ্বারা উৎপাদিত দ্রব্য খুবই পছন্দ করছেন এবং ভালো দাম দিয়ে তা কিনছেনও। ভূর্জপত্রের এই প্রাচীন ঐতিহ্য উত্তরাখণ্ডের মহিলাদের জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধির নতুন নতুন রং যোগ করছে। আমি এটা জেনেও খুশি হয়েছি যে ভূর্জপত্রের নতুন নতুন জিনিস তৈরি করার জন্য রাজ্য সরকার মহিলাদের প্রশিক্ষণও দিচ্ছে।
রাজ্য সরকার ভূর্জপত্রের দুর্লভ প্রজাতিগুলি সংরক্ষণের জন্যও অভিযান শুরু করেছে। যে ভূখণ্ডকে একসময় দেশের শেষ প্রান্ত বলে মনে করা হতো, তাকে এখন দেশের প্রথম গ্রাম বিবেচনা করে উন্নতি সাধন করা হচ্ছে। এই প্রয়াস আমাদের পরম্পরা ও সংস্কৃতিকে লালন করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নতিরও মূলধন হয়ে উঠছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এবারের ‘মন কি বাতে’ আমি যথেষ্ট সংখ্যায় এমন চিঠি পেয়েছি যা মনকে ভালো করে দেয়। এই সব চিঠি সেই মুসলিম মহিলারা লিখেছেন যারা সম্প্রতি হজযাত্রা করে এসেছেন। তাদের এই যাত্রা অনেক অর্থেই অনন্য। এরা সেই মহিলা যারা কোন পুরুষ সহযোগী বা নিকটাত্মীয় অর্থাৎ "মেহরম" ছাড়াই হজযাত্রা সম্পূর্ণ করেছেন। আর এদের সংখ্যা ৫০ বা ১০০ নয়, ৪ হাজারেরও বেশি। এটা একটা বিরাট পরিবর্তন। আগে মুসলিম মহিলাদের পুরুষ নিকটাত্মীয় তথা মেহরম ছাড়া হজ করার অনুমতি ছিল না। আমি ‘মন কি বাত’-এর মাধ্যমে সৌদি আরব সরকারের প্রতিও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। মেহরম ছাড়া হজ করতে আসা মহিলাদের জন্য বিশেষ করে উইমেন কো- অর্ডিনেটর নিযুক্ত করা হয়েছিল।
বন্ধুরা, গত কয়েক বছরে হজ নীতিতে যে পরিবর্তন করা হয়েছে তা বিপুলভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। আমাদের মুসলিম মা ও বোনেরা এ বিষয়ে আমাকে অনেক কিছু লিখেছেন। এখন বেশী সংখ্যায় মানুষ হজে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। হজযাত্রা থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিরা বিশেষ করে আমাদের মা-বোনেরা চিঠি লিখে যে আশীর্বাদ করেছেন তা আমার কাছে অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক।
আমার প্রিয় দেশবাসী, জম্মু-কাশ্মীরে মিউজিক্যাল নাইট আয়োজিত হওয়া, অত্যন্ত উচ্চতায় বাইক র্যালি হওয়া, চণ্ডীগড়ে স্থানীয় ক্লাব তৈরি হওয়া, এবং পাঞ্জাবে খেলাধুলার জন্য বহু গোষ্ঠী গঠিত হওয়া— কথাগুলি শুনে মনে হবে বিনোদনের কথা হচ্ছে, অ্যাডভেঞ্চারের কথা হচ্ছে, কিন্তু ব্যাপারটা অন্যরকম, এই আয়োজন একটা অভিন্ন উদ্যোগের সঙ্গেও যুক্ত আছে। আর সেই অভিন্ন উদ্যোগটি হল ড্রাগসের বিরুদ্ধে জন সচেতনতা অভিযান।
জম্মু কাশ্মীরের যুবক-যুবতীদের ড্রাগস থেকে বাঁচাতে বেশ কিছু উদ্ভাবনমূলক প্রয়াস দেখতে পাচ্ছি আমরা। এখানে মিউজিক্যাল নাইট, বাইক র্যালির মতন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। চন্ডীগড়ে এই বার্তা ছড়িয়ে দেবার জন্য স্থানীয় ক্লাবগুলোকে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। তাঁরা এঁদের ভাডা ক্লাবস্ বলে অভিহিত করেছেন। ভাডা অর্থাৎ ভিকট্রি এগেইনস্ট ড্রাগ অ্যাবিউস । পাঞ্জাবে খেলাধুলার বেশ কিছু গোষ্ঠী তৈরি করা হয়েছে, যারা ফিটনেসে মনোনিবেশ করছেন ও নেশা-মুক্তির লক্ষ্যে সচেতনতা কর্মসূচী চালাচ্ছেন।
নেশা মুক্তির কার্যক্রমে যুবাদের বেশি অংশগ্রহণ খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। এই প্রচেষ্টা ভারতের নেশা-বিরোধী অভিযানকে অনেক শক্তি দেবে। আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মগুলিকে বাঁচাতে গেলে তাদের ড্রাগস থেকে দূরে রাখতে হবে। এই ভাবনা মাথায় রেখেই ২০২০ সালের ১৫ই আগস্ট ‘নেশা মুক্ত ভারত অভিযান’ শুরু করা হয়। এই অভিযানের সঙ্গে ১১ কোটির বেশি মানুষ যুক্ত হয়েছেন। দু’সপ্তাহ আগেই ভারত মাদকের বিরুদ্ধে বিশাল একটি পদক্ষেপ নিয়েছে। মাদকের প্রায় দেড় লক্ষ কিলোর একটি চালান বাজেয়াপ্ত করে ধ্বংস করা হয়েছে।
ভারত ১০ লক্ষ কিলোর মাদক নষ্ট করার একটি দারুণ রেকর্ড-ও তৈরি করেছে। এই মাদকের দাম ১২,০০০ কোটি টাকারও বেশি ছিল। আমি তাঁদের সবাইকে প্রশংসিত করতে চাইব যাঁরা এই মহত নেশা মুক্তি অভিযানে অংশগ্রহণ করছেন। নেশার কুপ্রভাব শুধু একটি পরিবার না, পুরো সমাজের জন্য বড় সমস্যা সৃষ্টি করে। এই পরিস্থিতিতে যাতে এই সমস্যা সম্পূর্ণ নির্মূল করা যায় তার জন্য আমাদের সবার মিলিত হয়ে এগোন প্রয়োজন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, যেহেতু কথা মাদক ও যুবসম্প্রদায়ের হচ্ছে, আমি আপনাদের মধ্য প্রদেশের একটি অনুপ্রেরণামুলক উদ্যোগের কথা বলতে চাইব। এই অনুপ্রেরণামুলক উদ্যোগটি মিনি ব্রাজিলের । আপনি হয়ত ভাবছেন মধ্য প্রদেশে মিনি ব্রাজিল কোথা থেকে এল, এটাই তো গল্পের মোড়। মধ্যপ্রদেশের শাহডোলের একটি গ্রামের নাম বিচারপুর। বিচারপুরকে মিনি ব্রাজিল বলা হয়। মিনি ব্রাজিল এই জন্য বলা হয় কারণ এই গ্রামটি ফুটবলের উঠতি তারকাদের বিচরণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। কয়েক সপ্তাহ আগে যখন আমি শাহডোল গিয়েছিলাম, তখন আমার ওখানকার এরকম বেশ কিছু ফুটবলারের সঙ্গে দেখা হয়। আমার মনে হল এই ব্যাপারে আমাদের দেশবাসীদের, বিশেষ করে যুবা বন্ধুদের, অবশ্যই জানানো উচিৎ।
বন্ধুরা, বিচারপুর গ্রামকে মিনি ব্রাজিল বানানোর এই যাত্রা দু-আড়াই দশক আগে শুরু হয়েছিল। সেই যুগে বিচারপুর বেআইনি মদের জন্য কুখ্যাত ছিল, নেশার করাল গ্রাসে বন্দি ছিল। এই পরিবেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল সেখানকার তরুণ প্রজন্ম। একজন প্রাক্তন জাতীয়স্তরের খেলোয়াড় এবং প্রশিক্ষক রইস আহমেদ এই যুবকদের প্রতিভার খোঁজ পেয়েছেন। রইসজির খুব বেশি সম্পদ ছিল না, তবে তিনি, যুবকদের, সম্পূর্ণ উৎসাহের সঙ্গে ফুটবল শেখানো শুরু করেছিলেন। কয়েক বছরের মধ্যে এখানে ফুটবল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে বিচারপুর গ্রামটি, এখন ফুটবল খেলা দিয়েই পরিচিত হয়ে উঠেছে। এখন এখানে ফুটবল ক্রান্তি নামে একটি কর্মসূচি চলছে। এই কর্মসূচির আওতায় যুবকদের এই খেলার সঙ্গে যুক্ত করে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই কর্মসূচি এতটাই সফল হয়েছে যে বিচারপুর থেকে জাতীয় ও রাজ্যস্তরের ৪০জনেরও বেশি খেলোয়াড় উঠে এসেছে। এই ফুটবল আন্দোলন এখন ধীরে ধীরে সমগ্র অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। শাহডোল ও এর আশপাশের এলাকায় বারোশোর বেশী ফুটবল ক্লাব গড়ে উঠেছে। এখান থেকে বিপুল সংখ্যক খেলোয়াড় এমন উঠে আসছেন, যাঁরা জাতীয় স্তরে খেলছেন। অনেক বড় প্রাক্তন ফুটবল খেলোয়াড় এবং প্রশিক্ষক, আজ, এখানে তরুণদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। আপনারাই ভাবুন, একটি জনজাতি এলাকা যেটি অবৈধ মদের জন্য পরিচিত ছিল, মাদকের জন্য কুখ্যাত ছিল, তা এখন দেশের ফুটবলের ধাত্রীভূমি হয়ে উঠেছে। তাইতো কথাতেই আছে- ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। আমাদের দেশে প্রতিভার অভাব নেই। যদি প্রয়োজন হয় তবে সেগুলি সন্ধান করুন এবং যত্ন করুন। এরপর সেই যুবকরাই দেশের নাম উজ্জ্বল করবে এবং দেশের উন্নয়নের পথের সন্ধান দেবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা সবাই সম্পূর্ণ উৎসাহের সঙ্গে ‘অমৃত মহোৎসব’ উদ্যাপন করছি। ‘অমৃত মহোৎসব’ উপলক্ষে সারাদেশে প্রায় দুই লক্ষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানগুলি একাধিক রঙে সজ্জিত ছিল, এবং বৈচিত্র্যে পূর্ণ ছিল। এই আয়োজনের একটি বিশেষত্ব ছিল এইগুলির মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক যুবক অংশগ্রহণ করেছিল। এই সুযোগেই তরুণরা দেশের মহান ব্যক্তিত্বদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছে। প্রথম কয়েক মাসের কথা বললে, জনগণের অংশগ্রহণ সংক্রান্ত অনেক আকর্ষণীয় কর্মকাণ্ডের সাক্ষী ছিল। সেরকমই একটি অনুষ্ঠান ছিল- বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন লেখকদের জন্য লেখক সম্মেলনের আয়োজন। এতে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ করেন। অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতিতে ‘রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত সম্মেলন’-এর আয়োজন করা হয়েছিল। আমাদের ইতিহাসে দুর্গ — ফোর্ট কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা সবাই জানি। এটাই বোঝানোর জন্য ‘দুর্গ এবং কাহিনী’ অর্থাৎ ফোর্টের সঙ্গে সম্পর্কিত গল্পগুলিকে চিত্রায়ণ করার এক উদ্যোগ নেওয়া হয়, যা সকলের খুব পছন্দ হয়েছিল।
বন্ধুরা, আজ যখন সারা দেশ জুড়ে ‘অমৃত মহোৎসবের’ হাওয়া বইছে, সামনেই ১৫ই আগস্ট, তাই দেশে আরো একটি বড় অভিযান আরম্ভ হতে চলেছে। শহীদ বীর ও বীরাঙ্গনাদের সম্মান জানানোর জন্য 'মেরি মাটি - মেরা দেশ' অভিযান শুরু হবে। এর মাধ্যমে, অমর শহীদদের স্মরণে অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এই বিভূতিদের স্মরণ করে, দেশের লক্ষ লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতে বিশেষ স্মারক শিলান্যাস করা হবে। এই অভিযানের মাধ্যমে সারা দেশ জুড়ে অমৃত কলস যাত্রা বের করা হবে। দেশের বিভিন্ন গ্রাম ও প্রান্ত থেকে ৭৫০০ কলসিতে, মাটি ভরে এই অমৃত কলস যাত্রা দেশের রাজধানী দিল্লিতে পৌছবে। এই যাত্রা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গাছের চারাও নিয়ে আসবে। ৭৫০০ কলসিতে ভরে আনা মাটি ও গাছের চারা গুলি দিয়ে জাতীয় যুদ্ধ স্মারকের কাছে অমৃত বাটিকা নির্মাণ করা হবে। এই অমৃত বাটিকা ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতের’ একটি মহৎ প্রতীক হয়ে উঠবে। আমি গত বছর লাল কেল্লা থেকে আগামী ২৫ বছরের অমৃত কালের জন্য পঞ্চ প্রণের কথা বলেছিলাম। ‘মেরি মাটি মেরা দেশ’ অভিযানে ভাগ নিয়ে আমরা এই পঞ্চ প্রণকে পূরণ করারও শপথ নেব। আপনারা সকলে দেশের পবিত্র মাটিকে হাতে নিয়ে শপথ নেওয়ার সময় নিজেদের সেলফি yuva.gov.in এঅতি অবশ্যই আপলোড করবেন। গত বছর স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ অভিযানের জন্য পুরো দেশ একত্র হয়েছিল, সেই রকমই আমাদের এবারেও ঘরে ঘরে পতাকা উত্তোলন করতে হবে এবং এই ঐতিহ্যকে নিরন্তর এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
এইসব প্রয়াসের মাধ্যমে আমাদের নিজেদের কর্তব্যবোধ তৈরী হবে, দেশের স্বাধীনতার জন্য অসংখ্য আত্মবলিদান সম্পর্কে বোধ জাগ্রত হবে, স্বাধীনতার মূল্য সম্পর্কে ধারণা তৈরী হবে। অতএব প্রত্যেক দেশবাসীর এই প্রয়াস এর সঙ্গে অবশ্যই যুক্ত হওয়া উচিত।
আমার প্রিয় দেশবাসী ‘মন কি বাতে’ আজ এপর্যন্তই। আর মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা ১৫ই আগস্ট এ স্বাধীনতা দিবসের মহান উৎসবের পালন করব। দেশের স্বাধীনতার জন্য মৃত্যুকে যারা বরণ করে নিয়েছেন তাদের সব সময় স্মরণ করব। আমাদের অনেক স্বপ্ন সফল করার জন্য দিন রাত পরিশ্রম করতে হবে আর ‘মন কি বাত’ দেশবাসীর এই পরিশ্রমকে, তাদের সম্মিলিত প্রয়াসকে সামনে আনার জন্য একটি মাধ্যম মাত্র।
পরের বার আবার কিছু নতুন বিষয় নিয়ে আপনাদের সঙ্গে কথা হবে। অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।
নতুনদিল্লি, ১৮ই জুন, ২০২৩
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। 'মন কি বাতে' আবার একবার স্বাগত জানাই আপনাদের সবাইকে। এমনিতে তো 'মন কি বাত' প্রত্যেক মাসের শেষ রবিবার অনুষ্ঠিত হয়, কিন্তু, এবার এক সপ্তাহ আগেই হচ্ছে। আপনারা সবাই জানেন, আগামী সপ্তাহে আমি আমেরিকায় থাকব আর সেখানে অনেক দৌড়ঝাঁপ থাকবে আর এইজন্য আমি ভাবলাম, ওখানে যাওয়ার আগে আপনাদের সঙ্গে কথা বলে নি, আর এর থেকে ভালো কী হতে পারে? জনতা-জনার্দনের আশীর্বাদ, আপনাদের প্রেরণা, আমার শক্তিও বাড়তে থাকবে।
বন্ধুরা, অনেক মানুষ বলেন যে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আমি এই ভালো কাজ করেছি, ওই বড় কাজ করেছি। ‘মন কি বাতের’ কত না শ্রোতা নিজেদের চিঠিতে অনেক প্রশংসা করেন। কেউ বলেন এটা করেছেন, কেউ বলেন ওটা করেছেন, এটা ভালো করেছেন, এটা বেশি ভালো করেছেন, এটা অসাধারণ করেছেন; কিন্তু, আমি যখন ভারতের সাধারণ মানুষের প্রয়াস, তাঁর পরিশ্রম, তাঁর ইচ্ছাশক্তিকে দেখি, তখন নিজেই অভিভূত হয়ে যাই। একের পর এক যত বড় লক্ষ্যই হোক, কঠিন থেকে কঠিনতর চ্যালেঞ্জ হোক, ভারতের মানুষের সামগ্রিক বল, সামগ্রিক শক্তি, প্রত্যেকটি চ্যালেঞ্জের সমাধান করে দেয়। এই দু'তিন দিন আগে আমরা দেখলাম, যে, দেশের পশ্চিম প্রান্তে কত বড় ঘূর্ণিঝড় এল। প্রবল গতির হাওয়া, প্রবল বর্ষণ। ঘূর্ণিঝড় 'বিপর্যয়' কচ্ছ অঞ্চলে কত কিছু বিধ্বস্ত করে দিল, কিন্তু কচ্ছের মানুষ যে শৌর্য আর প্রস্তুতি নিয়ে এত বিপজ্জনক ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলা করল, সেটাও ততটাই অভূতপূর্ব। দু'দিন পরে কচ্ছের মানুষ নিজেদের নববর্ষ অর্থাৎ 'আষাঢ়ী বীজ' উদযাপন করতে যাচ্ছে। এটাও দারুণ ব্যাপার যে 'আষাঢ়ী বীজ' কচ্ছে বর্ষার প্রারম্ভের প্রতীক বলে মানা হয়। আমি, এত বছর কচ্ছে আসা-যাওয়া করছি, ওখানকার মানুষের সেবা করার সৌভাগ্যও পেয়েছি, আমি আর এই কারণে কচ্ছের মানুষের উদ্যম আর প্রাণশক্তি সম্পর্কে ভালোই জানি। দু'দশক আগের বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পরে যে কচ্ছ সম্পর্কে বলা হত যে তারা উঠে দাঁড়াতে পারবে না, আজ, সেই জেলা, দেশের দ্রুত উন্নয়নশীল জেলাগুলোর মধ্যে একটি। আমার বিশ্বাস, ঘূর্ণিঝড় 'বিপর্যয়' যে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে, সেখান থেকেও কচ্ছের মানুষ দ্রুত বেরিয়ে আসবেন।
বন্ধুরা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের উপর আমাদের কোনো জোর খাটেনা। কিন্তু, বিগত বছরগুলিতে ভারত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় যে শক্তিবৃদ্ধি ঘটেছে, তা বর্তমানে এক উদাহরণ প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা করার একটি বড় পদ্ধতি হল - প্রকৃতির সংরক্ষণ। আজকাল, বর্ষার সময় এই ব্যাপারে আমাদের দায়িত্ত্ব আরো বেড়ে যায়। এই কারণেই আজ দেশ, 'ক্যাচ দ্য রেইন' এর মত অভিযানের মাধ্যমে সামগ্রিক প্রয়াস চালাচ্ছে। গত মাসেই 'মন কী বাত'-এ আমরা জল সংরক্ষণের সঙ্গে সম্পর্কিত স্টার্ট আপদের নিয়ে চর্চা করেছিলাম। এবারেও এমন অনেকের ব্যাপারে চিঠি লিখে আমায় জানানো হয়েছে যাঁরা জলের এক এক বিন্দু বাঁচানোর জন্য প্রাণপাত করছেন। এমনই একজন ব্যক্তি হলেন – উত্তর প্রদেশের বান্দা জেলার তুলসীরাম যাদবজী। তুলসীরাম যাদবজী লুকতরা গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান। আপনারাও জানেন যে, বান্দা আর বুন্দেলখন্ড জেলায় জল নিয়ে কতটা সমস্যা রয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারের জন্য তুলসীরামজী গ্রামের মানুষদের সঙ্গে নিয়ে ওই এলাকায় ৪০টিরও বেশি পুকুর নির্মাণ করান। তুলসীরামজী তাঁর অভিযানের ভিত্তি তৈরি করেছিলেন - ক্ষেতের জল ক্ষেতে, গ্রামের জল গ্রামে। আজ ওঁর পরিশ্রমের ফলেই ওই গ্রামে ভূগর্ভস্থ জলস্তর আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। ঠিক এভাবেই উত্তর প্রদেশের হাপুর জেলায় সব লোকজন মিলে একটি বিলুপ্ত নদীকে পুনর্জীবিত করেছে। সেখানে বেশ অনেকদিন আগে নীম নামের একটি নদী ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটা বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু স্থানীয় মানুষের স্মৃতিকথায় এবং লোককথায় তাকে বারবার স্মরণ করা হত। শেষ পর্যন্ত অধিবাসীরা তাদের এই প্রাকৃতিক সম্পদকে পুনর্জীবিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। মানুষের সামগ্রিক প্রয়াসে নীম নদী আবারও জীবিত হয়ে উঠছে। নদীর উৎপত্তিস্থলকেও অমৃত সরোবরের মতো বিকশিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বন্ধুরা, এই নদী, খাল, সরোবর, এগুলি শুধুই জলের স্রোত নয়, বরং, আমাদের জীবনের রং এবং ভাবনা এদের সঙ্গেই জুড়ে থাকে। এমনই এক দৃশ্য এই কদিন আগে মহারাষ্ট্রে দেখা গেছে। এই এলাকাটি বেশিরভাগ সময় ক্ষরা কবলিত হয়ে থাকে। পাঁচ দশকের অপেক্ষার পর এখানে 'নীলওয়ান্দে জলাধার ' এ খালের কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। কিছুদিন আগে পরীক্ষামূলকভাবে খালে জল ছাড়া হয়েছিল। এই সময়ে যে চিত্র দেখা গেছে তা সত্যিই মন ছুঁয়ে যায়। গ্রামের মানুষ এমনভাবে আনন্দ করছিলেন যেন হোলি বা দীপাবলির উৎসব।
বন্ধুরা, ব্যবস্থাপনার কথা যখন আজ হচ্ছেই, তখন আমি ছত্রপতি শিবাজী মহারাজকে স্মরণ করতে চাই। ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের বীরত্বের পাশাপাশি ওঁর প্রশাসনিক উদ্যোগ, এবং ওঁর ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির থেকেও অনেক কিছু শেখা যায়। বিশেষত, জল-ব্যবস্থাপনা, এবং নৌ-সেনাদের নিয়ে উনি যে কর্মকাণ্ড করেছিলেন তা আজও ভারতীয় ইতিহাসের গৌরব বৃদ্ধি করে।
ওঁর তৈরি জলদূর্গ, এত শতাব্দী পেরিয়েও আজও সমুদ্রের মাঝখানে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে। এই মাসের গোড়াতেই ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের রাজ্যাভিষেকের ৩৫০ বছর পূর্ণ হল। এই উপলক্ষ্যটি একটি বড় উৎসব রূপে পালন করা হচ্ছে। মহারাষ্ট্রের রায়গড় কেল্লায় এই উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আমার মনে আছে, কয়েক বছর আগে, ২০১৪ তে, আমার রায়গড় যাওয়ার সু্যোগ হয়েছিল, সেই পবিত্র ভূমিকে প্রণাম করার সৌভাগ্য হয়েছিল। আমাদের সকলের কর্তব্য যে আমরা শিবাজি মহারাজের লড়াইয়ের কৌশল জানি, ওঁর থেকে শিখি। এতে আমরা আমাদের দেশের ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব বোধ করব, এবং ভবিষ্যতের জন্য কর্তব্যপালনের প্রেরণাও তৈরী হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনারা রামায়ণের সেই ছোট্ট কাঠবিড়ালির কথা নিশ্চয়ই শুনেছেন, যে রামসেতু বানাতে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিল। আমার বলার অর্থ এই যে যখন উদ্দেশ্য স্থির থাকে, এক সৎ প্রচেষ্টা থাকে, তখন কোনো লক্ষ্যই কঠিন থাকে না। ভারতবর্ষ এই সৎ উদ্দেশ্য নিয়েই আজ এক বড় চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছে। এই চ্যালেঞ্জটি হল টিবি রোগ, যাকে ক্ষয় রোগও বলা হয়। ভারত সংকল্প নিয়েছে যে ২০২৫-এর মধ্যে টিবি মুক্ত ভারত তৈরীর - লক্ষ্য অবশ্যই কঠিন। একটা সময় ছিল যখন টিবি হয়েছে জানলে পরিবারের লোকেরাই দূরে সরে যেত। কিন্তু বর্তমান সময়ে, টিবি রোগীকে তাঁর পরিবারের মধ্যে রেখেই, সাহায্যে করা হচ্ছে। এই রোগকে সমূলে বিনাশ করার সংকল্প নিয়েছেন "নিক্ষয়মিত্ররা"। দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেক সামাজিক সংস্থা নিক্ষয়মিত্রের কাজ করছে। গ্রাম-গঞ্জে, পঞ্চায়েত এলাকায়, বহু মানুষ স্বতপ্রনোদিত ভাবে এগিয়ে এসে এই যক্ষা রোগীদের দত্তক নিয়েছেন। বহু ছোট ছেলেমেয়েরা আছে, যারা টিবি রোগীদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে। সবার অংশীদার হয়ে ওঠাই এই অভিযানের সবচেয়ে বড় শক্তি। এই অংশিদারীত্ব-এর জন্য আজ দেশে প্রায় দশ লাখের বেশী টিবিরোগীকে দত্তক নেওয়া হয়েছে; আর এই পূণ্য কাজে এগিয়ে এসেছেন দেশের প্রায় ৮৫ হাজার “নিক্ষয়মিত্র”। আমার খুব আনন্দ হয়েছে জেনে যে দেশের অনেক গ্রাম প্রধান, পঞ্চায়েত প্রধান নিজেরাও এই সংকল্প নিয়েছেন যে তাদের গ্রামে টিবি নির্মূল করবেন।
নৈনিতালের একটি গ্রামের নিক্ষয় বন্ধু, শ্রী দীকর সিং মেভরিজি, টি.বি.র ৬জন রোগীকে দত্তক নিয়েছেন। একইভাবে, কিন্নর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নিক্ষয় মিত্র, শ্রী জ্ঞান সিংজিও তাঁর ব্লকে টিবি আক্রান্ত রোগীদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা প্রদানে নিয়োজিত রয়েছেন। ভারতকে টি.বি মুক্ত করার অভিযানে আমাদের শিশু ও যুব সাথীরাও পিছিয়ে নেই। হিমাচল প্রদেশের উনার ৭ বছরের মেয়ে নলিনী সিং-এর চমৎকার উদ্যোগ দেখুন। নলিনী, তার পকেট মানির টাকা দিয়ে টি.বি.রোগীদের সাহায্য করে। আপনারা জানেন যে, বাচ্চারা তাদের লক্ষ্মীর ভাঁড়গুলিকে কতটা ভালোবাসে, কিন্তু মধ্যপ্রদেশের কাটনি জেলার ১৩ বছর বয়সী মীনাক্ষী এবং পশ্চিমবঙ্গের ডায়মন্ড হারবারের ১১ বছর বয়সী ভাস্বর মুখার্জি, দু’জনই অন্য ধরণের। এই দুই শিশুই তাদের লক্ষীর ভাঁড়ের টাকা টি.বি.মুক্ত ভারতের অভিযানে নিয়োজিত করেছে। এই সমস্ত উদাহরণ আবেগে ভরা এবং খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক। আমি এই সমস্ত শিশু, যারা বয়েস কম হলেও চিন্তাভাবনায় অনেক বেশি মহৎ, তাদের আমি অন্তর থেকে সাধুবাদ জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এটা আমাদের, ভারতীয়দের, স্বভাব যে আমরা সবসময় নতুন চিন্তাধারাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত থাকি। আমরা আমাদের সবকিছু ভালবাসি এবং নতুন কিছুও সাদরে গ্রহণ করি। এর একটি উদাহরণ হল জাপানের মিয়াওয়াকির কৌশল। কোনো জায়গার মাটি যদি উর্বর না হয়, তাহলে সেই জায়গাটিকে আবার সবুজ করার জন্য মিয়াওয়াকি কৌশল একটি খুব ভালো উপায়। মিয়াওয়াকি বন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ২-৩ দশকে জীববৈচিত্র্যের কেন্দ্রে পরিণত হয়। এখন এটি ভারতের বিভিন্ন স্থানেও খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। আমাদের এখানে কেরালার একজন শিক্ষক, শ্রী রাফী রামনাথজি এই কৌশলটি দিয়ে একটি এলাকার চিত্রটাই বদলে দিয়েছেন। আসলে রামনাথজি তাঁর ছাত্রদের কাছে প্রকৃতি ও পরিবেশকে গভীরভাবে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছিলেন। এর জন্য তিনি গোটা একটা ভেষজ বাগান তৈরী করে ফেলেছেন। তাঁর বাগান এখন একটি জীব-বৈচিত্র অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। তাঁর এই সাফল্য তাঁকে আরও অনুপ্রাণিত করেছে। এরপর রাফিজি মিয়াওয়াকি কৌশলে একটি মিনি ফরেস্ট অর্থাৎ ছোট জঙ্গল তৈরি করেন এবং এর নাম দেন ‘বিদ্যাবনম’। এত সুন্দর নাম শুধু একজন শিক্ষকই রাখতে পারেন ‘বিদ্যাবনম’। রামনাথজির এই বিদ্যাবনমে খুব অল্প জায়গায় ১১৫টি প্রজাতির ৪৫০টিরও বেশি গাছ লাগানো হয়। তাঁর ছাত্ররাও এর রক্ষণাবেক্ষণে তাঁকে সাহায্য করেন। আশেপাশের স্কুলের বাচ্চারা, সাধারণ নাগরিকরা এই সুন্দর জায়গাটি দেখতে বিপুল ভিড় জমান। মিয়াওয়াকি জঙ্গল সহজেই যে কোনো জায়গায়, এমনকি শহরেও তৈরী করা যায়। কিছুদিন আগেই আমি গুজরাটের কেভারিয়ার একতা নগরে একটি মিয়াওয়াকি জঙ্গল উদ্বোধন করেছিলাম।
২০০১ সালে কচ্ছের ভূকম্পে মৃত মানুষের স্মৃতিতেও মিয়াওয়াকি পদ্ধতিতে স্মৃতিবন বানানো হয়েছে। কচ্ছর মতো জায়গায় এর সাফল্য এটাই প্রমাণ করে যে যেকোনো কঠিন প্রাকৃতিক পরিবেশেও এই পদ্ধতি কতটা প্রভাবশালী। এভাবেই অম্বাজি এবং পাওয়াগড়-এও মিয়াওয়াকি পদ্ধতিতে গাছ লাগানো হয়েছে। আমি জানতে পেরেছি যে লক্ষ্ণৌয়ের আলীগঞ্জেও একটি মিয়াওয়াকি উদ্যান তৈরি করা হচ্ছে। বিগত চার বছরে মুম্বাই এবং তার আশেপাশের অঞ্চলে এরকম ষাটটিরও অধিক জঙ্গলের উপর কাজ করা হয়েছে। এখন তো এই পদ্ধতি সমগ্র বিশ্বে পছন্দ করা হয়ে থাকে। সিঙ্গাপুর প্যারিস, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়ার মত অনেক দেশেই এর প্রয়োগ বড় আকারে করা হচ্ছে। আমি দেশবাসীর কাছে, বিশেষ করে শহরে থাকা মানুষের কাছে অনুরোধ করব, যে তারা যেন মিয়াওয়াকি পদ্ধতি সম্বন্ধে জানার প্রচেষ্টা করেন। এর মাধ্যমে আপনারা আপনাদের পৃথিবী এবং প্রকৃতিকে সবুজ এবং স্বচ্ছ বানানোতে অমূল্য ভূমিকা পালন করতে পারেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজকাল আমাদের দেশে জম্মু-কাশ্মীরের অনেক চর্চা হয়। কখনো পর্যটনের বৃদ্ধির জন্য তো কখনো জি-টোয়েন্টির বিশাল আয়োজনের জন্য। কিছু মাস আগে আমি 'মন কি বাতে' আপনাদের বলেছিলাম যে কিভাবে কাশ্মীরের 'নাদরু' দেশের বাইরেও আলোচিত। এখন জম্মু-কাশ্মীরের বারামুলা জেলার মানুষেরা এক আশ্চর্য কাজ করে দেখিয়েছেন। বারামুলাতে চাষবাস অনেকদিন থেকেই হয়ে থাকে কিন্তু এখানে দুধ-এর যোগানে ঘাটতি ছিল। বারামুলার মানুষেরা এই চ্যালেঞ্জকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছে। এখানে বড় সংখ্যায় মানুষ ডেয়ারীর কাজ করা শুরু করেছেন। এই কাজে সবার আগে এখানকার মহিলারা এগিয়ে আসেন - যে রকম একজন বোন হলেন ইশরাত নবী। ইসরাত একজন স্নাতক এবং তিনি মির সিস্টার্স ডেয়ারী ফার্ম শুরু করেছেন। ওঁর এই ডেয়ারি ফার্ম থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড়শ লিটার দুধ বিক্রি হয়ে থাকে। এ রকমই সোপর এর এক বন্ধু আছেন ওয়াসিম অনায়ত। ওয়াসিমের কাছে দু’ডজনেরও বেশি পশু আছে আর উনি প্রতিদিন ২০০ লিটারেরও বেশি দুধ বিক্রি করেন। আরও একজন যুবক আবিদ হুসেনও দোহ বা ডেয়ারীর কাজ করছেন। উনিও খুব উন্নতি করছেন। এরকম মানুষদেরই পরিশ্রমের জন্য আজ বারামুলাতে প্রত্যেকদিন সাড়ে পাঁচ লক্ষ লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে। সমগ্র বারামুলা একটি নতুন শ্বেত বিপ্লবের পরিচায়ক হিসেবে তৈরি হচ্ছে। বিগত আড়াই তিন বছরে এখানে ৫০০-এরও বেশি ডেয়ারী ইউনিটস বসেছে। বারামুলার এই দোহ শিল্পের বিষয়ের সাক্ষী যে আমাদের দেশের প্রত্যেকটি অংশই কতটা সম্ভাবনাময়। যেকোনো ক্ষেত্রের মানুষের সমষ্টিগত ইচ্ছাশক্তি যেকোনো লক্ষ্য প্রাপ্ত করে দেখাতে পারে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এই মাসে ক্রীড়া জগত থেকে ভারতের জন্য বেশ কয়েকটি বড় সুসংবাদ এসেছে। ভারতীয় মহিলা দল প্রথম বার জুনিয়ার এশিয়া কাপ জয় করে ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকার মর্যাদা বাড়িয়েছে। এই মাসেই আমাদের পুরুষদের হকি দলও জুনিয়র এশিয়া কাপ জিতেছে। এই জয়ের ফলে আমরা এই টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সবথেকে বেশি বার বিজয়ী হওয়ার স্বীকৃতি লাভ করেছি। জুনিয়র শুটিং ওয়ার্ল্ড কাপেও আমাদের জুনিয়র টিম দারুণ সাফল্য অর্জন করেছে। ভারতীয় দল এই টুর্নামেন্টে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। এই টুর্নামেন্টে মোট যতগুলি স্বর্ণ পদক ছিল তার কুড়ি শতাংশ ভারত একাই পেয়েছে। এই জুন মাসেই এশিয়ান অনুর্ধ ২০ অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপও হয়েছে। তাতে ভারত পদক তালিকায় ৪৫টি দেশের মধ্যে প্রথম তিনে রয়েছে।
বন্ধুরা, আগে একটা সময় ছিল যখন আমরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার বিষয়ে জানতাম বটে কিন্তু তাতে প্রায়শই ভারতের কোথাও কোনো নাম থাকত না। কিন্তু আজ আমি শুধু গত কয়েক সপ্তাহের সাফল্যের কথা বলছি, তাতেই লিস্ট এত বড় হচ্ছে। এটাই আমাদের যুবশক্তির প্রকৃত ক্ষমতা। এমন কত ক্রীড়া এবং প্রতিযোগিতা আছে যেখানে আজ ভারত প্রথমবার নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। যেমন লং-জাম্পে শ্রীশংকর মুরলী প্যারিস ডায়মন্ড লীগের মতো খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিযোগিতায় দেশকে ব্রোঞ্জ এনে দিয়েছে। এটা এই প্রতিযোগিতায় ভারতের প্রথম পদক। এ রকমই এক সাফল্য আমাদের অনুর্ধ ১৭ মহিলাদের রেসলিং টিম কিরগিজস্তানেও অর্জন করেছে। আমি দেশের সেই সব খেলোয়াড়, তাদের বাবা-মা এবং কোচদের সবাইকে তাদের প্রয়াসের জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন জানাচ্ছি।
বন্ধুরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় দেশের এই সাফল্যের পেছনে জাতীয় স্তরে আমাদের ক্রীড়াবিদদের কঠোর পরিশ্রম থাকে। আজ দেশের আলাদা আলাদা রাজ্যে এক নতুন উৎসাহের সঙ্গে খেলাধুলার আয়োজন করা হচ্ছে। এতে ক্রীড়াবিদরা খেলার, জেতার এবং হার থেকে শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। যেমন সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশে খেলো ইন্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজিত হল। এতে তরুণ ক্রীড়াবিদদের মধ্যে প্রভূত উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। এই খেলায় আমাদের যুবকযুবতীরা ১১টি রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন। এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি, অমৃতসরের গুরু নানক দেব ইউনিভার্সিটি আর কর্ণাটকের জৈন ইউনিভার্সিটি পদক তালিকায় প্রথম তিনটি স্থানে রয়েছে।
বন্ধুরা, এই ধরনের টুর্নামেন্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটাও যে এর মাধ্যমে তরুণ ক্রীড়াবিদদের বহু অনুপ্রেরণাদায়ক ঘটনা সামনে আসে। খেলো ইন্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় রোয়িং-এ প্রতিযোগিতায় অসমের কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজকুমার প্রথম দিব্যাঙ্গ খেলোয়াড় হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। বরকতুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিধি পাওয়াইয়া হাঁটুতে গম্ভীর চোট থাকা সত্ত্বেও শট পুটে স্বর্ণ পদক জিততে সক্ষম হয়েছিলেন। পুণের সাবিত্রীবাই ফুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শুভম ভান্ডারের হাটুতে চোট থাকার দরুন গতবার বেঙ্গালুরুতে হতাশ হয়েছিলেন, কিন্তু এবার তিনি স্টিপলচেজে সোনা জিতেছেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সরস্বতী কুন্ডু নিজের কবাডি টিমের ক্যাপ্টেন। তিনি অনেক কঠিন বিপত্তি পার করে এই জায়গায় পৌঁছেছেন। দুর্দান্ত ক্রীড়া প্রদর্শনকারী এমন বহু খেলোয়াড়দের “টপস” প্রকল্পের মাধ্যমে সাহায্য পৌঁছাচ্ছে। আমাদের খেলোয়াড়রা যত খেলবেন ততই উজ্জ্বল হবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, একুশে জুন প্রায় আসন্ন। এবার বিশ্বের কোনায় কোনায় মানুষ আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের জন্য উৎসাহের সঙ্গে অপেক্ষা করছেন। এবছর যোগ দিবসের মূল ভাবনা- যোগা ফর বসুধৈব কুটুম্বকম অর্থাৎ ‘এক বিশ্ব - এক পরিবার’ ভাবনায় সবার কল্যাণের জন্য যোগ। এর মাধ্যমে যোগের সেই ধারণাকে তুলে করা হচ্ছে যা সবাইকে যুক্ত করে ও সঙ্গে নিয়ে চলে। প্রতিবারের মতো এবারও দেশের কোনায় কোনায় যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন কার্যক্রম আয়োজন করা হচ্ছে।
বন্ধুরা, এবার আমি নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সদর দপ্তরে রাষ্ট্র সঙ্ঘ আয়োজিত যোগ দিবস কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছি। সামাজিক মাধ্যমেও চোখে পড়ার মতো যোগ দিবস নিয়ে অত্যধিক উৎসাহ আমি লক্ষ্য করেছি ।
বন্ধুরা, আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ করবো যে আপনারাও যোগকে আপনাদের জীবনে অন্তর্ভুক্ত করুন, আপনাদের রোজনামচার অঙ্গ করে তুলুন। যদি এখনো আপনি যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে না থাকেন, তাহলে আগামী একুশে জুন, এই সংকল্পের জন্য অতি উত্তম সুযোগ। যোগেতে এমনিও বেশি চাকচিক্যের প্রয়োজন হয় না। দেখবেন, যখন আপনি যোগের সঙ্গে যুক্ত হবেন, তখন আপনার জীবনেও কত বড় পরিবর্তন আসবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, পরশু অর্থাৎ ২০শে জুন ঐতিহাসিক রথযাত্রার দিন। সম্পূর্ণ বিশ্বে রথযাত্রার এক বিশেষ পরিচয় রয়েছে। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে খুব ধুমধামের সঙ্গে ভগবান জগন্নাথের রথযাত্রা বের হয়। ওড়িশার পুরীতে অনুষ্ঠিত রথযাত্রা নিজেই এক বিস্ময়। যখন আমি গুজরাটে ছিলাম, তখন আমেদাবাদে আয়োজিত বিশাল রথযাত্রায় অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য হয়েছিল। এই রথযাত্রায় যেভাবে দেশের সমস্ত স্তরের, সমস্ত বর্গের মানুষের ভিড় হয় তা সত্যিই অনুকরণযোগ্য। এই আস্থার মাধ্যমে ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত'-ও প্রতিফলিত হয়ে ওঠে। এই শুভ উৎসব উপলক্ষে আমি আপনাদের জানাই অনেক অনেক শুভকামনা। আমি প্রার্থনা করি যে ভগবান জগন্নাথ সমগ্র দেশবাসীদের সুস্বাস্থ্য ও সুখ-সমৃদ্ধির আশীর্বাদ প্রদান করুন।
বন্ধুরা ভারতীয় পরম্পরা এবং সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত উৎসবের কথা বলার সময় আমি দেশের রাজভবনে হওয়া সুন্দর আয়োজনগুলোর কথাও অবশ্যই উল্লেখ করব। এখন দেশে রাজভবনগুলোর পরিচিতি সামাজিক এবং জনকল্যাণমূলক কার্যের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে। আজ আমাদের রাজভবন টিবি মুক্ত ভারত অভিযানের, প্রাকৃতিক উপায়ে চাষবাস সংক্রান্ত অভিযানের পরিচয়বাহক। কয়েকদিন আগে গুজরাট হোক, গোয়া হোক, তেলেঙ্গানা হোক, মহারাষ্ট্র হোক, সিকিম হোক, এই সব রাজ্যের প্রতিষ্ঠা দিবস আলাদা আলাদা রাজভবন যেভাবে উৎসাহের সঙ্গে পালিত হয়েছে, সেটি বিশেষ উদাহরণের মতো। এটা একটা ভালো উদ্যোগ যা এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত এই ভাবনাকে আরো মজবুত করে।
বন্ধুরা ভারত গণতন্ত্রের জননী, মাদার অফ ডেমোক্রেসি। আমরা গণতান্ত্রিক আদর্শকে সবার উপরে মনে করি, আমাদের সংবিধানকে সর্বোপরি মনে করি, এই জন্য আমরা ২৫শে জুন দিনটি কখনো ভুলতে পারবো না। এটি সেই দিন যেদিন আমাদের দেশে জরুরী অবস্থা আরোপ করা হয়েছিল। এটা ভারতের ইতিহাসের একটা অন্ধকার সময় ছিল। লক্ষ লক্ষ মানুষ পূর্ণ শক্তিতে জরুরী অবস্থার বিরোধিতা করেছিলন। গণতন্ত্রের সমর্থকদের ওপর সেই সময় এত অত্যাচার করা হয়েছিল, এত যন্ত্রণা দেওয়া হয়েছিল যে আজও আমার মন শিউরে ওঠে। এই অত্যাচারে পুলিশ এবং প্রশাসনের মাধ্যমে যেসব শাস্তি দেওয়া হয়েছিল তার ওপর অনেক বই লেখা হয়েছে। আমিও “সংঘর্ষ মে গুজরাট” নামের একটি বই সেই সময়ে লেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। কয়েকদিন আগেই জরুরী অবস্থার ওপর লেখা আরেকটি বই আমি পেয়েছি যার নাম “টর্চার অফ পলিটিক্যাল প্রিজনার্স ইন ইন্ডিয়া”। জরুরী অবস্থার সময়ে ছেপে বেরোনো এই বইটিতে বর্ণনা করা হয়েছে যে কীভাবে সেই সময় সরকার গণতন্ত্রের রক্ষকদের সঙ্গে নিষ্ঠুরতম ব্যবহার করেছিল। এই বইতে অনেক ঘটনার কথা রয়েছে, বিভিন্ন ধরনের ছবি রয়েছে। আমি চাই যে আজ যখন আমরা আজাদীর অমৃত মহোৎসব পালন করছি তখন দেশের স্বাধীনতাকে বিপদে ফেলার মতো এমন অপরাধেরও আলোচনা হোক। এতে বর্তমান সময়ের যুবক-যুবতীদের গণতন্ত্রের গুরুত্ব এবং তার অর্থ বুঝতে আরো বেশি সুবিধা হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, 'মন কি বাত’ রঙবেরঙের মুক্তো দিয়ে সাজানো সুন্দর একটা মালা যেটার প্রতিটা মুক্ত নিজে থেকেই অনন্য এবং অমূল্য। এই অনুষ্ঠানের প্রতিটি পর্ব খুবই প্রাণবন্ত। আমাদের একতার অনুভূতির সঙ্গে সঙ্গে সমাজের প্রতি কর্তব্যের অনুভূতি এবং সেবার অনুভূতি সঞ্চার করে। এখানে সেই বিষয়গুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা হয়, যে বিষয়গুলো সম্পর্কে, আমরা, সাধারণত কম পড়তে এবং শুনতে পাই। আমরা প্রায়ই দেখতে পাই যে ‘মন কি বাত’-এ যে কোন বিষয় নিয়ে উল্লেখ করা হলে তা থেকে কত দেশবাসী নতুন করে অনুপ্রেরণা পায়। এই কিছুদিন আগে দেশের বিখ্যাত ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পী আনন্দা শঙ্কর জয়ন্তের থেকে একটি চিঠি পেয়েছি। তিনি তাঁর চিঠিতে 'মন কি বাত’-এর সেই এপিসোডের বিষয়ে লিখেছেন, যেখানে আমি স্টোরি টেলিং-এর প্রসঙ্গে চর্চা করেছিলাম। সেই অনুষ্ঠানে আমি এই বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের প্রতিভাকে স্বীকৃতি দিয়েছিলাম। 'মন কি বাতে'র সেই অনুষ্ঠানটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আনন্দা শঙ্কর জয়ন্ত “কুট্টি কাহিনী” রচনা করেছেন। এটি বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত গল্পের একটি উত্তম সংগ্রহ। এই প্রয়াস এই জন্য খুব ভালো, কারণ এইভাবে আমাদের বাচ্চাদের নিজেদের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় আরও গভীর হবে। উনি নিজের গল্পগুলির কিছু আকর্ষণীয় ভিডিও নিজের ইউ টিউব চ্যানেলে আপলোড করেছেন। আমি আনন্দা শংকর জয়ন্তের এই প্রয়াসের বিষয়ে বিশেষ করে আলোচনা করলাম কারণ, এটা দেখে আমার খুব ভালো লাগলো যে কিভাবে একজন দেশবাসীর ভালো কাজ, অন্যদেরও অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। এর থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজের প্রতিভা দিয়ে তারাও দেশ এবং সমাজের জন্য কিছু ভালো কাজ করার চেষ্টা করবে। এটাই তো আমাদের ভারতীয়দের যৌথশক্তি, যা দেশের অগ্রগতিতে নব শক্তি আহরণ করছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজকের ‘মন কি বাত’ - এইটুকুই। পরের বার, একটি নতুন বিষয় নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আবার দেখা হবে। এটি বর্ষার সময়, তাই নিজের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখবেন। সুষম খাবার খান এবং সুস্থ থাকুন। হ্যাঁ! যোগব্যায়াম অবশ্যই করবেন। অনেক স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটিও শেষ হয়ে আসছে। আমি বাচ্চাদের বলব যে হোমওয়ার্ক শেষ দিনের জন্য বাকি রাখা উচিত নয়। কাজ শেষ করো আর নিশ্চিন্ত থেকো। অনেক-অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। ‘মন কি বাত’-এ আবার একবার আপনাদের অনেক অনেক স্বাগত জানাই। এবার ‘মন কি বাত’-এর এই পর্ব দ্বিতীয় শতকের শুরু। গত মাসে আমরা সবাই এর বিশেষ শতকপূর্তি উদযাপন করেছি। আপনাদের অংশগ্রহণই এই অনুষ্ঠানের সবথেকে বড় শক্তি। শততম পর্বের সম্প্রচারের সময় এক অর্থে গোটা দেশ এক সূত্রে বাঁধা পড়েছিল। আমাদের সাফাইকর্মী ভাইবোন হোন বা বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ, ‘মন কি বাত’ সবাইকে এক জায়গায় আনার কাজ করেছে। আপনারা সবাই যে আত্মীয়তা আর স্নেহ, মন কি বাতের জন্য দেখিয়েছেন, সেটা অভূতপূর্ব, আবেগে পূর্ণ করে দেওয়ার মত। যখন মন কি বাতের সম্প্রচার হয় তখন পৃথিবীর আলাদা-আলাদা দেশে, ভিন্ন-ভিন্ন টাইম জোনে, কোথাও সন্ধ্যা হচ্ছিল তো কোথাও গভীর রাত ছিল , তা সত্ত্বেও প্রচুর সংখ্যক মানুষ ‘মন কি বাত’-এর শততম পর্ব শোনার জন্য সময় বের করেছিলেন। হাজার-হাজার মাইল দূরে নিউজিল্যাণ্ডের ওই ভিডিও-ও দেখেছি, যেখানে একশো বছর বয়সী এক মা আমাকে তাঁর আশীর্বাদ দিচ্ছেন। ‘মন কি বাত’ নিয়ে দেশবিদেশের মানুষজন তাঁদের ভাবনা ব্যক্ত করেছেন। অনেকে গঠনমূলক বিশ্লেষণও করেছেন। মানুষজন এই ব্যাপারটার প্রশংসা করেছেন যে ‘মন কি বাত’-এ কেবলমাত্র দেশ আর দেশবাসীর উপলব্ধি নিয়ে আলোচনা হয়। আবার একবার এই আশীর্বাদের জন্য আমি সম্পূর্ণ সমাদরে আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, অতীতে আমি ‘মন কি বাতে’ কাশী-তামিল সঙ্গমমের কথা বলেছি, সৌরাষ্ট্র-তামিল সঙ্গমমের কথা উল্লেখ করেছি। কিছুদিন আগে বারাণসীতে, কাশী-তেলুগু সঙ্গমমও অনুষ্ঠিত হল। এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারতের ভাবনাকে শক্তিশালী করার এমনই আর এক অনন্য প্রয়াস গ্রহণ করা হয়েছে দেশে। এই প্রয়াস যুব সঙ্গমের। আমি ভাবলাম, এই ব্যাপারে বিস্তারে তাঁদের কাছ থেকেই জেনে নিই না কেন, যাঁরা এই অনন্য প্রয়াসের অংশীদার। এই জন্য এই মুহূর্তে আমার সঙ্গে ফোনে রয়েছেন দুই তরুণ – একজন অরুণাচল প্রদেশের গ্যামর নৌকুমজী আর দ্বিতীয় জন হল বিহারের কন্যা বিশাখা সিংজী।
আসুন প্রথমে আমরা গ্যামর নৌকুমের সঙ্গে কথা বলি।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ গ্যামরজী নমস্কার।
গ্যামর জীঃ নমস্কার মোদীজী।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আচ্ছা গ্যামরজী, সবার আগে আমি আপনার বিষয়ে একটু জানতে চাই।
গ্যামর জীঃ মোদীজী, সবার আগে তো আমি আপনার এবং ভারত সরকারের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই যে আপনি খুব মূল্যবান সময় বের করে আপনার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দিয়েছেন আমাকে। অরুণাচল প্রদেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে প্রথম বর্ষে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনীয়ারিং নিয়ে পড়ছি আমি।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আর পরিবারে পিতা এবং অন্যান্যরা কী করেন?
গ্যামর জীঃ আমার বাবা ছোটখাটো ব্যাবসা আর তার পরে কিছু চাষবাস সহ নানা কাজ করেন।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আপনি যুব সঙ্গমের খোঁজ পেলেন কিভাবে? যুব সঙ্গমে কোথায় গেলেন, কিভাবে গেলেন, কী হলো সেখানে?
গ্যামর জীঃ মোদীজি, যুব সঙ্গমের আমাদের যে ইনস্টিটিউশন আছে౼ NIT , ওরা আমায় জানিয়েছিল যে আপনি এটাতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তো আমি তখন ইন্টারনেটে একটু খোঁজখবর করি এবং তখনই জানতে পারি যে এটা খুবই ভালো একটি কর্মসূচী যা কিনা “এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতের” আমাদের যে পরিকল্পনা আছে সেখানে সংযোজন করতে পারে এবং আমাকে কিছু নতুন বিষয় শেখার সুযোগ করে দেবে। তখনই আমি ওয়েবসাইটে গিয়ে নাম নথিভুক্ত করি। আমার খুবই মজার অভিজ্ঞতা হয়েছে, এটা খুবই ভালো ছিল।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আপনাকে কিভাবে বাছাই করতে হয়েছে?
গ্যামর জীঃ মোদীজি, যখন ওয়েবসাইট খুলে ছিলাম তখন অরুণাচল বাসীদের জন্য দুটো অপশন পেলাম। প্রথমটি, অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতি আইআইটি । আর, দ্বিতীয়টি ছিল সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি, রাজস্থান। আমার প্রথম পছন্দ ছিল রাজস্থান আর দ্বিতীয় পছন্দে রেখেছিলাম তিরুপতি আইআইটিকে। আমি রাজস্থানের জন্য সিলেক্ট হয়েছিলাম। তারপর আমি রাজস্থান গিয়েছিলাম।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আপনার রাজস্থান যাত্রা কেমন ছিল? আপনি এই প্রথমবার রাজস্থান গেলেন?
গ্যামর জীঃ হ্যাঁ আমি এই প্রথম অরুণাচল প্রদেশের বাইরে কোথাও গেলাম। রাজস্থানের সব দুর্গ আমি শুধুই সিনেমা আর ফোনে দেখেছিলাম, তো আমি যখন প্রথমবার রাজস্থানে গেলাম তো আমার অভিজ্ঞতা খুবই ভালো ছিল, ওখানকার মানুষ খুবই ভাল ছিলেন আর তারা আমাদের যেভাবে আপ্যায়ন করেছিলেন, তা খুবই ভালো ছিল। নতুন নতুন জিনিস শেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। রাজস্থানের বড় ঝিল এবং সেখানকার মানুষ যেভাবে বৃষ্টির জল সঞ্চয় করে, তা দেখে অনেক নতুন কিছু শিখলাম, যা এর আগে আমার একেবারেই জানা ছিল না, তো রাজস্থান ভ্রমণের এই আয়োজন খুবই ভালো ছিল।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ দেখুন, আপনার সব থেকে বড় লাভ হল যে, অরুণাচল বীরদের ভূমি, রাজস্থানও বীরদের ভূমি এবং রাজস্থান থেকে সেনাবাহিনীতেও প্রচুর পরিমাণে সেনা যোগদান করেন, আর অরুণাচলের সীমান্তে যে সৈনিকেরা আছেন, সেখানে রাজস্থানের মানুষের খোঁজ পাবেন তখন আপনি অবশ্যই তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন, দেখুন আমি রাজস্থানে গিয়েছিলাম, সেখানকার অভিজ্ঞতা ভাগ করলে আপনার সঙ্গে তাদের বন্ধুত্ব আরো গাঢ় হবে। আচ্ছা ওখানে আপনি নিশ্চয়ই কোন সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছিলেন যা দেখে আপনার মনে হয়েছে যে অরুনাচলেও এমনটা আছে?
গ্যামর জীঃ মোদীজি, আমি যে এক সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছিলাম সেটা ছিল দেশপ্রেম। এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতের ভাবনা এবং অনুভূতি আমি দেখেছি। কারণ, অরুণাচলেও মানুষ নিজেদের নিয়ে খুবই গর্বিত যে তারা ভারতীয় আর রাজস্থানেও মানুষ তার মাতৃভূমির জন্য যথেষ্ট গর্বিত। এই বিষয়টা আমার খুবই নজরে এসেছে এবং বিশেষত যুব সম্প্রদায়, কারণ আমি ওখানে অনেক যুবকের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি এবং কথাবার্তা বলেছি, এসবের মধ্যে একটা মিল আমার নজরে এসেছে। ওরা চায় ভারতের জন্য কিছু করতে, ওদের মনে নিজের দেশের জন্য ভালোবাসা আছে, তো এই জিনিসটা দুই রাজ্যের ক্ষেত্রেই আমার এক বলে মনে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ ওখানে যাদের সাথে পরিচয় হল, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেন না ফিরে এসে ভুলে গেলেন?
গ্যামর জীঃ না না, আমরা কথা বলেছি, যোগাযোগ রেখেছি।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আপনি স্যোশাল মিডিয়াতে আক্টিভ?
গ্যামর জীঃ হ্যাঁ মোদিজী, আমি স্যোশাল মিডিয়াতে আক্টিভ।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ তাহলেতো আপনার ব্লগ লেখা উচিৎ। আপনার এই যুব সংগমে কি অভিজ্ঞতা হল, আপনি এতে কিকরে নাম নথিভুক্ত করলেন, রাজস্থানে আপনার কিরকম লাগলো - এই সব কথা লিখুন, যাতে সারা দেশের যুবরা জানতে পারে 'এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত' যোজনাটি কি, এর মাহাত্ম্য কি এবং যুবসম্প্রদায় এর থেকে কিভাবে লাভবান হতে পারে - আপনার গোটা অভিজ্ঞতার ব্লগ লিখুন, যাতে লোকে পড়ে সব জানতে পারে।
গ্যামর জীঃ হ্যাঁ হ্যাঁ আমি নিশ্চয়ই করব।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ গ্যামরজী খুব ভাল লাগলো আপনার সাথে কথা বলে। আপনি, আপনার মত যুবরা, দেশের জন্য, দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য অন্ত্যত গুরুত্বপূর্ণ। আর এই ২৫ বছর বয়সটাও খুব মূল্যবান, আপনাদের নিজেদের জীবনেও এবং দেশের জন্যও। আমার অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
গ্যামর জীঃ ধন্যবাদ মোদিজী আপনাকে।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ নমস্কার ভাই।
বন্ধুরা, অরুণাচলের মানুষজন এত অতিথিবৎসল হন, ওদের সাথে কথা বলতে আমার খুব ভাল লাগে। যুব সংগমে গ্যামরজির অভিজ্ঞতা তো খুব ভাল ছিল। আসুন, এবারে বিহারের কন্যা বিশাখা সিং-এর সঙ্গে কথা বলি।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ বিশাখা সিংজী নমস্কার।
বিশাখাজীঃ সর্বপ্রথম ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমার সাদর প্রণাম। আমার সাথে আসা সমস্ত প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকেও আপনাকে জানাই সাদর প্রণাম।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আচ্ছা বিশাখাজি, আগে আমাকে আপনার ব্যাপারে কিছু বলুন। তারপর আমি যুব সংগমের ব্যাপারেও জানতে চাই।
বিশাখাজীঃ আমি বিহারের সাসারাম শহরের বাসিন্দা। আমি যুব সংগমের ব্যাপারে সবার আগে জানতে পারি কলেজের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ থেকে। তারপর আমি এই ব্যাপারে আরও খোঁজ খবর নিই, বিস্তারিত তথ্য বের করি। তখন আমি জানতে পারি যে এটা প্রধানমন্ত্রীজির একটি কর্মসূচী – ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর অন্তর্ভুক্ত যুবসঙ্গম। আমি এতে আবেদন করি এবং আমি এটাতে যোগ দেবার জন্য আগ্রহী ছিলাম খুবই। কিন্তু এই যে তামিলনাড়ু থেকে আমি ঘুরে এলাম , অনেক কিছু জানতে পারলাম, এটা অমূল্য। এটা আমার কাছে খুবই গর্বের বিষয় যে আমি এই যুব সংগমের একজন অংশগ্রহণকারী ছিলাম। আমি খুবই আনন্দিত। আমি আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই, আপনি আমার মত যুবক-যুবতীদের জন্য এত ভাল একটা কর্মসূচী বানিয়েছেন যাতে আমরা ভারতের বিভিন্ন ভাগের সংস্কৃতিক বৈচিত্রর সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ বিশাখাজী আপনি কী পড়াশুনা করেন?
বিশাখাজীঃ আমি কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং-এর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আচ্ছা বিশাখাজী, আপনাকে কোন রাজ্যে যেতে হবে, কোথায় যোগ দিতে হবে, সেটা কীভাবে ঠিক করলেন?
বিশাখাজীঃ আমি যখন গুগলে যুব সঙ্গম সম্পর্কে সার্চ করা শুরু করি, তখন আমি জানতে পারি যে বিহারের প্রতিনিধিদের তামিলনাড়ুর প্রতিনিধির সঙ্গে বিনিময় করা হচ্ছে। তামিলনাড়ু আমাদের দেশের একটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক রাজ্য, তাই সেই সময়েও যখন আমি জানতে পারি যে বিহার থেকে প্রতিনিধিদের তামিলনাড়ুতে পাঠানো হচ্ছে, এটি আমাকে ফর্মটি পূরণ করা উচিত কিনা, সেখানে যাব কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নিতে অনেকটাই সাহায্য করেছিল। আমি আজ সত্যিই খুব গর্ববোধ করছি যে আমি এতে অংশগ্রহণ করেছি এবং আমি খুবই খুশি।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আপনি প্রথমবার তামিলনাড়ুতে গিয়েছিলেন?
বিশাখাজীঃ হ্যাঁ প্রথমবার গিয়েছিলাম।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আচ্ছা, আপনি যদি কোনও স্মরণীয় ঘটনার কথা বলতে চান তাহলে কী বলবেন? দেশের যুবক-যুবতীরা আপনার কথা শুনছেন কিন্তু।
বিশাখাজীঃ পুরো যাত্রাটাই আমার জন্য খুবই ভাল ছিল। প্রতিটি ধাপেই আমরা অনেক কিছু শিখেছি। আমি তামিলনাড়ুতে ভাল বন্ধু পেয়েছি। সেখানকার সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি। সেখানকার লোকদের সঙ্গে মেলামেশা করেছি। তবে সবচেয়ে ভাল জিনিস যেটি পেলাম, যা সবাই পায় না, তা হলো ইসরোতে যাওয়ার সুযোগ এবং আমরা প্রতিনিধি দলের থেকে গিয়েছিলাম বলেই আমরা ইসরোতে যাওয়ার এই সুযোগটা পেয়েছিলাম। দ্বিতীয় সেরা জিনিসটি ছিল যখন আমরা রাজভবনে যাই এবং তামিলনাড়ুর রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করি। এই দুটি মুহূর্ত আমার কাছে খুব স্মরণীয় ছিল এবং আমি মনে করি যে আমরা এই বয়সে, যুবতী হিসেবে এমন সুযোগ পেতামনা, যা এই যুবসঙ্গমের মাধ্যমে পেলাম। তাই এটি বেশ সুন্দর এবং স্মরণীয় মুহূর্ত ছিল আমার কাছে।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ বিহারে খাওয়ার ধরন আলাদা, তামিলনাড়ুতে খাওয়ার ধরন আলাদা।
বিশাখাজীঃ হ্যাঁ।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ সেটা কি পুরোপুরি মানানো গিয়েছিল?
বিশাখাজি : যখন আমরা তামিলনাড়ু গিয়েছিলাম, সেখানে তো দক্ষিণ ভারতীয় খাবার। সেখানে যেতেই সবাই আমাদের ধোসা, ইডলি, সাম্বর, উত্তপম, বড়া, উপমা এইসব পরিবেশন করছিল। যখন আমরা সেটা মুখে তুললাম, আমাদের দারুণ লেগেছিল! ওখানকার খাবার খুবই স্বাস্থ্যকর, আসলে দারুন স্বাদের খাবার আর আমাদের উত্তর ভারতের খাবারের থেকে একেবারেই আলাদা, তাই ওখানকার খাবার আমাদের খুব ভালো লেগেছে এবং ওখানকার লোকজনও খুব ভালো।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ তাহলে তামিলনাড়ুতে এখন বেশ কিছু বন্ধুও হয়েছে নিশ্চয়ই?
বিশাখাজীঃ হ্যাঁ। ওখানে আমরা ছিলাম এনআইটি ত্রিচিতে, তারপর ম্যাড্রাস আইআইটিএ। এই দুই জায়গার ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়েছে। এছাড়াও, মাঝে একবার সিআইআই-এর অভ্যর্থনা কর্মসূচী ছিল, সেখানকার আশেপাশের কলেজ থেকেও অনেক ছাত্রছাত্রী এসেছিল। সেখানে আমরা সেই ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেছিলাম আর আমার খুব ভালো লাগলো তাদের সঙ্গে দেখা করে, অনেকে তো এখন আমার বন্ধু। সেখানে বেশ কিছু প্রতিনিধি-দের সঙ্গেও দেখা হয়েছিল যারা তামিলনাড়ু্তে এসেছিল বিহারের প্রতিনিধি হিসেবে। আমরা তাদের সাথেও আলাপ করেছিলাম আর এখনো আমরা একে অপরের সম্পর্কে রয়েছি, তাই এটা আমার খুব ভালো লাগে।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ তাহলে বিশাখাজি, আপনি ব্লগ লিখুন আর স্যোস্যাল মিডিয়া-তে আপনার সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতা জানান। প্রথমত, যুবা সঙ্গমের বিষয়ে, তারপর ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতের’ বিষয়ে এবং তামিলনাড়ুতে আপনি যেরকম ভালোবাসা পেয়েছেন, আদর-আপ্যায়ন পেয়েছেন সেই বিষয়ে। তামিল মানুষদের ভালবাসা পেয়েছেন, সেই সব বিষয়ে দেশকে জানান। তাহলে লিখবেন আপনি?
বিশাখাজীঃ হ্যাঁ, অবশ্যই।
প্রধানমন্ত্রী জীঃ আমার তরফ থেকে আপনাকে জানাই অনেক শুভকামনা ও অনেক অনেক ধন্যবাদ।
বিশাখাজীঃ প্রধানমন্ত্রী জী অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।
গ্যামর ও বিশাখা, আপনাদের দু’জনকেই অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। যুবা সঙ্গমের মাধ্যমে আপনারা যা শিখলেন, তা আজীবন আপনাদের সঙ্গে থাকবে। আপনাদের সকলকে আমার শুভকামনা জানাই।
বন্ধুরা, বৈচিত্রের মধ্যেই রয়েছে ভারতের শক্তি। আমাদের দেশে দেখার মত অনেক কিছু রয়েছে। সেই কথা মাথায় রেখেই শিক্ষা মন্ত্রক ‘যুবাসঙ্গম’ নামের এক অনন্য উদ্যোগ শুরু করেছে।
এই প্রচেষ্টার উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বাড়ানো। এছাড়াও যুবক-যুবতীদের মধ্যে মেলামেশার সুযোগ করে দেওয়া। বিভিন্ন রাজ্যের উচ্চশিক্ষা সংস্থাকে এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। 'যুবসঙ্গমে' যুবক-যুবতীরা অন্য রাজ্যের শহর ও গ্রামে যান, সেখানে তারা বিভিন্ন ধরনের মানুষের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ পান। যুব সঙ্গমের প্রথম পর্বে প্রায় ১২০০ যবে-যুবতী দেশের বাইশটি রাজ্যে ঘুরে এসেছেন। যে যুবকই এর অংশ হয়েছেন, তারা এমন কিছু স্মৃতি নিয়ে ফিরছেন যা সারাজীবন তাদের হৃদয়ে গেথে হয়ে থাকবে। আমরা দেখেছি অনেক কোম্পানির মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক , বিজনেস লিডারসরা ব্যাদ প্যাকারসদের মত ভারতে সময় কাটিয়েছেন। আমি যখন অন্য দেশের লিডারদের সঙ্গে দেখা করি, তখন তারা বলেন যে তারাও তাদের যুবাবস্থায় ভারত ঘুরতে এসেছিলেন। আমাদের ভারতে এত কিছু জানার এবং দেখার আছে যে প্রত্যেকবার আপনার ঔৎসুক্য বাড়তেই থাকবে। আমি আশা করি যে এই সমস্ত রোমাঞ্চকর তথ্য জানার পর আপনারাও দেশের বিভিন্ন স্থানে যাবার জন্য নিশ্চয়ই অনুপ্রানিত হবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী কিছুদিন আগে আমি জাপানের হিরোশিমায় গিয়েছিলাম। ওখানে আমার হিরোশিমা পিস মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। এটা একটি আবেগঘন অনুভূতি ছিল। যখন আমরা ইতিহাসের স্মৃতিকে যত্ন করে সামলে রাখি তো সেটা আগামী প্রজন্মের অনেক ভাবে সাহায্য করে। অনেক সময় মিউজিয়াম-এ আমরা নতুন অভিজ্ঞতা হয়, তো কখনো কখনো অনেক কিছু শিখতে পারি। কিছু দিন আগে ভারতে আন্তর্জাতিক সংগ্রহশালার এক্সপোর আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে বিশ্বের ১২০০-এর ও বেশী মিউজিয়াম এর বিশেষত্ব প্রদর্শন করা হয়েছিল। আমাদের এখানে ভারতে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের অনেক মিউজিয়াম আছে, যা আমাদের অতীত এর সঙ্গে জড়িত অনেক অজানা তথ্যকে প্রদর্শন করে, যেরকম গুরুগ্রামে একটি ক্যামেরার অনন্য সংগ্রহশালা আছে, এখানে ১৮৬০ সালের পর থেকে ৮০০০ এরও বেশি ক্যামেরার সংগ্রহ রয়েছে। তামিলনাড়ুর মিউজিয়াম অফ পসিবিলিটজে আমাদের ভিন্ন ভাবে সক্ষম বন্ধুদের কথা মাথায় রেখে নকশা করা হয়েছে। মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ বাস্তু সংগ্রহালয় একটি এমন মিউজিয়াম যেখানে ৭০ হাজারেরও বেশি সামগ্রী সংরক্ষিত করা হয়েছে। ২০১০ সালে স্থাপিত ইন্ডিয়ান মেমারি প্রজেক্ট এক ধরনের অনলাইন মিউজিয়াম। এটি পৃথিবীব্যাপী পাঠানো ছবি এবং গল্পের মাধ্যমে ভারতের গৌরবময় ইতিহাসের সংযোগ সূত্রকে জোড়ার কাজ করে চলেছে। বিভাজনের বিভীষিকার সঙ্গে জড়িত স্মৃতিকেও সামনে আনার প্রয়াস করা হচ্ছে। বিগত বছরেও আমরা ভারতে নতুন নতুন ধরনের মিউজিয়াম আর স্মারক তৈরি হতে দেখেছি। স্বাধীনতা সংগ্রামে আদিবাসী ভাই বোনেদের অংশগ্রহণের উপর সমর্পিত দশটি নতুন মিউজিয়াম তৈরি করা হচ্ছে। কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল-এর বিপ্লবী ভারত গ্যালারিই হোক বা জালিয়ানওয়ালাবাগ মেমোরিয়ালকে পুনরুদ্ধার, দেশের সব পূর্ব প্রধানমন্ত্রীদেরকে সমর্পিত পি এম মিউজিয়ামও আজ দিল্লীর শোভা বর্ধন করছে। দিল্লির ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল এবং পুলিশ মেমোরিয়াল-এ প্রত্যেকদিন অনেক মানুষ শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। ঐতিহাসিক ডান্ডি যাত্রাকে সমর্পিত ডান্ডি মেমোরিয়াল হোক বা স্ট্যাচু অফ ইউনিটি মিউজিয়াম। যাই হোক, আমাদের এখানেই থেমে যাওয়া উচিত কারণ দেশ ব্যাপী সংগ্রহশালাগুলির তালিকা অনেক লম্বা আর প্রথমবার দেশে সমস্ত মিউজিয়ামের সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংকলন করা হচ্ছে। মিউজিয়াম কোন থিম এর উপর তৈরি করা হয়েছে, ওখানে কোন ধরনের কি বস্তু রাখা আছে, সংগ্রহশালার সঙ্গে কি ভাবে যোগাযোগ করা যাবে, এই সমস্ত কিছুই একটি অনলাইন ডিরেক্টারির মধ্যে একসঙ্গে রাখা হচ্ছে।
আমি আপনাদের অনুরোধ করছি আপনারা যখনই সুযোগ পাবেন, নিজের দেশের এই সংগ্রহশালাগুলো অবশ্যই দেখতে যাবেন। আপনারা সেখানে আকর্ষণীয় ছবিগুলি #(হ্যাশট্যাগ) Museum Memories এ সকলের সঙ্গে ভাগ করতে ভুলে যাবেন না যেন। এইভাবে আমাদের গৌরবময় সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের ভারতীয়দের সংযোগ আরও শক্তিশালী হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমরা সবাই নিশ্চয়ই একটি কথা বহুবার শুনেছি, বারবার শুনেছি- বিন পানি সব সুন। জল ছাড়া জীবন সংকট তো দেখা দেবেই, ব্যক্তি এবং দেশের উন্নয়নও থমকে যায়। ভবিষ্যতের এই চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে আজ দেশের প্রতিটি জেলায় ৭৫টি অমৃত সরোবর কাটা হচ্ছে। আমাদের অমৃত সরোবর এইজন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ, এইগুলি স্বাধীনতার অমৃত কালের সময় নির্মিত হচ্ছে এবং এতে মানুষের অমৃত প্রচেষ্টা জড়িয়ে আছে। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে এখনও পর্যন্ত ৫০ হাজারেরও বেশি অমৃত সরোবর কাটা হয়েছে। জল সংরক্ষণের লক্ষ্যে এটি একটি বড় পদক্ষেপ।
বন্ধুরা, আমরা প্রতি গ্রীষ্মে এইভাবে, জল সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলি নিয়ে কথা বলতে থাকি। এবারও আমরা এই বিষয়ে বলব, তবে এবার আমরা আলোচনা করব জল সংরক্ষণ সম্পর্কিত নতুন উদ্যোগ নিয়ে। একটি স্টার্ট-আপস আছে – ফ্লাক্সজেন। এই স্টার্ট- আপ, আইওটি এনাবেল্ড প্রযুক্তির মাধ্যমে জল সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনার বিকল্প দেয়। এই প্রযুক্তি জল ব্যবহারের ধারাকে বদলে দেবে এবং নিত্য ব্যবহারে সাহায্য করবে৷ আরেকটি স্টার্ট আপ হল লিভ-এন-সেন্স। এটি কৃত্রিম মেধা এবং মেশিন লার্নিং- এর উপর ভিত্তি করে একটি প্ল্যাটফর্ম। এর সাহায্যে জল বন্টনের কার্যকরী তত্বাবধান করা যাবে। এর থেকে এটাও জানা যাবে কোথায় কতটুকু জল অপচয় হচ্ছে। আরেকটি স্টার্ট আপ হল 'কুম্ভী কাগজ' (Kumbhi Kagaz)। এই 'কুম্ভী কাগজ' এমন একটি বিষয়, আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস যে, আপনাদেরও খুব ভালো লাগবে। ‘কুম্ভী কাগজ’ নতুন উদ্যোগ সংস্থাটি একটি বিশেষ কাজ শুরু করেছে। এরা কচুরিপানা থেকে কাগজ তৈরির কাজ শুরু করেছে, অর্থাৎ, এক সময় যে কচুরিপানা, কখনো, জলস্রোতের সময় সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হতো, এখন কাগজ তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বন্ধুরা, অনেক যুবকযুবতী যেরকম উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে কাজ করছেন, আবার এমন অনেক যুবকযুবতী রয়েছেন যারা সমাজকে সচেতন করার মিশনে নিয়োজিত । যেমন ছত্তিশগড়ের বালোদ জেলার যুবসম্প্রদায়। এখানকার যুবক-যুবতীরা জল বাঁচাতে প্রচার শুরু করেছে। তারা বাড়ী-বাড়ী গিয়ে মানুষকে জল সংরক্ষণের বিষয়ে সচেতন করে। যেখানেই বিবাহের মতো অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, সেখানে, তরুণদের এই দল-টি যায়, কীভাবে জলের অপব্যবহার বন্ধ করা যায়, সে সম্পর্কে তথ্য দেয়। ঝাড়খণ্ডের খুঁটি জেলাতেও জলের দক্ষ ব্যবহার সম্পর্কিত একটি প্রচারমূলক প্রচেষ্টা করা হচ্ছে৷ খুঁটির মানুষ জল সংকট মোকাবিলায় বস্তা দিয়ে বাঁধ নির্মাণের পথ খুঁজে পেয়েছেন। বস্তা বাঁধের মাধ্যমে জল জমিয়ে এখানে শাক সবজিও ফলতে শুরু করেছে। এতে মানুষের আয়ও বাড়ছে, এলাকার চাহিদাও পূরণ হচ্ছে। সাধারণের যে কোনো উদ্যোগ, কীভাবে অনেক পরিবর্তন নিয়ে আসে, তার এক উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে উঠেছে খুঁটি। এই প্রচেষ্টার জন্য আমি এখানকার মানুষকে অভিনন্দন জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের সময় আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী জয় জওয়ান, জয় কিষান স্লোগান দিয়েছিলেন।
পরবর্তীকালে অটলজি তার সঙ্গে জয় বিজ্ঞান যোগ করেছিলেন। কয়েক বছর আগে দেশের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলার সময় আমি জয় অনুসন্ধানের কথা বলেছিলাম। মন কি বাতে আজ এমন এক ব্যক্তির কথা, এমন এক সংস্থার কথা বলব, যারা জয় জওয়ান, জয় কিষান, জয় বিজ্ঞান এবং জয় অনুসন্ধান এই চারটিরই প্রতিফলিত। এই ভদ্রলোক হলেন মহারাষ্ট্রের শ্রীমান শিবাজী শামরাও ডোলেজি। শিবাজী ডোলে নাসিক জেলার একটি ছোট্ট গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দরিদ্র জনজাতি কৃষক পরিবারের সন্তান এবং একজন প্রাক্তন সৈনিকও বটে। সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন তিনি দেশের সেবায় নিয়জিত ছিলেন । অবসর গ্রহণের পর তিনি নতুন কিছু শেখার সিদ্ধান্ত নেন এবং কৃষি বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা করেন। অর্থাৎ জয় জওয়ান থেকে জয় কিষানের দিকে অগ্রসর হন। এখন প্রতিমুহূর্তে তাঁর চেষ্টা এটাই থাকে, যে কী ভাবে কৃষি ক্ষেত্রে অধিকতর অবদান রাখা যায়। নিজের এই অভিযানে শিবাজী ডোলেজি কুড়ি জনের একটি ছোট টিম তৈরি করেছেন এবং কয়েকজন প্রাক্তন সৈনিককেও এতে যুক্ত করেছেন। এরপর তাঁর এই টিম ভেঙ্কটেশ্বর কো-অপারেটিভ পাওয়ার এন্ড অ্যাগ্রো প্রসেসিং লিমিটেড নামের একটি সহকারী সংস্থার পরিচালনার দায়িত্ব নিজেদের হাতে নিয়েছেন। এই সহকারী সংস্থাটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পরে ছিল। তাকে পুনরুজ্জীবিত করার গুরুদায়িত্ব তারা নিয়েছেন। দেখতে দেখতে আজ ভেঙ্কটেশ্বর কো-অপারেটিভের প্রসার অনেক জেলাতে হয়ে গেছে। আজ এই দলটি মহারাষ্ট্র আর কর্নাটকে কাজ করছে। এতে প্রায় ১৮ হাজার মানুষ যুক্ত হয়েছেন, যার মধ্যে যথেষ্ট সংখ্যক সেনাবাহিনীর প্রাক্তনীরাও রয়েছেন।
নাসিকের মালেগাঁওতে এই দলের সদস্যরা ৫০০ একরেরও বেশি জমিতে অ্যাগ্রো ফার্মিং করছে। এই দলটি জল সংরক্ষণের জন্য অনেক জলাশয় তৈরি করার কাজেও যুক্ত আছে। আরেকটা বিশেষ ব্যাপার হল এই যে তারা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে আর দোহ শিল্প অর্থাৎ ডেয়ারিও শুরু করেছেন। এখন তাদের ফলানো আঙ্গুর ইউরোপেও রপ্তানি করা হচ্ছে। এই দলের যে দুটি বড় বৈশিষ্ট্য আমার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে তা হল জয় বিজ্ঞান এবং জয় অনুসন্ধান। এর সদস্যরা প্রযুক্তি ও আধুনিক কৃষিকাজের নানা পন্থাপদ্ধতি যত বেশি সম্ভব ব্যবহার করছেন। দ্বিতীয়ত তারা রপ্তানির জন্য প্রয়োজনীয় অনেক রকম সার্টিফিকেশনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। "সহকার থেকে সমৃদ্ধি" এই ভাবনার সঙ্গে কাজ করা এই দলটিকে আমি অভিনন্দন জানাই। এই প্রয়াসের মাধ্যমে শুধু বহু সংখ্যক মানুষের ক্ষমতায়ন হয়েছে তাই নয়, জীবিকারও অনেক সংস্থান হয়েছে। আমার বিশ্বাস এই প্রয়াস মান কি বাত এর প্রত্যেক শ্রোতাকে অনুপ্রাণিত করবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ ২৮ শে মে, মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী বীর সাভারকারের জন্মদিন। তাঁর ত্যাগ, সাহস ও সংকল্পশক্তির সঙ্গে যুক্ত কাহিনীগুলি আজও আমাদের সবাইকে উদ্বুদ্ধ করে। আমি সেই দিনটা ভুলতে পারব না, যখন আমি আন্দামানে সেই কুঠুরিতে গিয়েছিলাম যেখানে বীর সাভারকর দ্বীপান্তরের সাজা ভোগ করছিলেন। বীর সাভারকারের ব্যক্তিত্ব দৃঢ়তা ও বিশালত্বের আধার ছিল। তার নির্ভীক ও আত্মাভিমানী স্বভাব দাসত্বের মানসিকতা একেবারেই বরদাস্ত করতে পারত না। শুধু স্বাধীনতা সংগ্রামই নয়, সামাজিক সাম্য ও ন্যায়ের জন্য বীর সাভারকর যা কিছু করেছেন তার জন্য তাকে আজও স্মরণ করা হয়।
বন্ধুরা, কয়েকদিন পর চৌঠা জুন সন্ত কবীরদাসজিরও জন্মদিন। কবীরদাসজি আমাদের যে পথ দেখিয়েছেন তা আজও ততটাই প্রাসঙ্গিক। কবীরদাসজি বলতেন,
"কবীরা কুয়া এক হ্যায়, পানি ভরে অনেক
বর্তন মে হি ভেদ হ্যায়, পানি সব মে এক"।
অর্থাৎ কুয়ো থেকে যতই আলাদা আলাদা ধরনের মানুষ জল ভর্তি করতে আসুক না কেন কুয়ো কারোর মধ্যে কোন তফাৎ করে না। প্রত্যেকটা পাত্রে থাকা জল একই। সাধক কবীর সমাজকে যেকোনোভাবে ভাগ করার মত কু-প্রথার বিরোধিতা করেছেন, সমাজকে এই বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা করেছিলেন। আজ যখন দেশ উন্নত হওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে এগোচ্ছে তখন আমরা সাধক কবীরের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করে সমাজের ক্ষমতায়নে নিজেদের উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে পারি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এখন আমি আপনাদের সঙ্গে দেশের এমন এক মহান ব্যক্তির কথা আলোচনা করব যিনি রাজনীতি এবং চলচ্চিত্র জগতে নিজের আশ্চর্য প্রতিভার জোরে বিশেষ নিদর্শন রেখেছেন। এই বিখ্যাত ব্যক্তির নাম এন টি রামারাও যাঁকে আমরা সকলে এন টি আর নামেও চিনি। আজ এন টি আরের শততম জন্মজয়ন্তী। নিজের বহুমুখী প্রতিভার মাধ্যমে তিনি শুধু তেলেগু সিনেমার একজন মহানায়ক হিসেবেই উপস্থাপিত হননি; বরং তিনি কোটি কোটি মানুষের মন জয় করেছিলেন। আপনারা জানেন যে উনি ৩০০ থেকেও বেশি সিনেমায় কাজ করেছেন? উনি অনেক ঐতিহাসিক চরিত্রকে নিজের অভিনয়ের মাধ্যমে জীবন্ত করে তুলেছিলেন। ভগবান কৃষ্ণ, রাম এবং এমন অনেক ভূমিকায় এন টি আরের অভিনয় মানুষ এতটাই পছন্দ করেছেন যে মানুষ তাঁকে আজও মনে রেখেছেন। এন টি আর সিনেমা জগতের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতেও নিজের বিশেষ পরিচিতি তৈরি করেছিলেন। এখানেও তিনি মানুষের সম্পূর্ণ ভালবাসা এবং আশীর্বাদ পেয়েছেন। এই দেশ, এই পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষের মনে বিশেষ জায়গা তৈরি করে নেওয়া এন টি রামারাওজিকে আমি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কি বাত’ এবার এই পর্যন্তই। পরেরবার নতুন কিছু বিষয়ের সঙ্গে আপনাদের মাঝে আসবো, ততদিনে কিছু জায়গায় ভীষণ গরম পড়বে। কিছু জায়গায় হয়তো বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। আবহাওয়ার যে কোন পরিস্থিতিতেই আপনাদের নিজেদের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে হবে। একুশে জুন আমরা আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালন করব, এই বিষয়ে দেশে-বিদেশে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। আপনারা এই প্রস্তুতির বিষয়ে নিজেদের মনের কথা আমায় লিখতে থাকুন। কোন অন্য বিষয়েও কিছু যদি আপনারা জেনে থাকেন তা আমায়ও জানান। আমি চেষ্টা করি ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আপনাদের থেকে আসা অনেক পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত করতে। আবারো আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। পরের মাসে আবার দেখা হবে, ততদিনের জন্য আমায় বিদায় দিন। নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আজ “মান কি বাত”-এর শততম পর্ব। আপনাদের হাজার হাজার চিঠি পেয়েছি আমি, লক্ষ-লক্ষ বার্তা এসে পৌঁছেছে আর আমি চেষ্টা করেছি যাতে বেশি-বেশি চিঠি পড়ে উঠতে পারি, দেখতে পারি, বার্তার মর্মার্থ উদ্ধার করতে পারি। আপনাদের চিঠি পড়তে গিয়ে অনেক বার আমি আপ্লুত হয়েছি, আবেগে পূর্ণ হয়েছি, ভেসে গিয়েছি আবেগে এবং আবার নিজেকে সামলে নিয়েছি। আপনারা আমাকে ‘মন কি বাত’-এর শততম পর্ব উপলক্ষে অভিনন্দন জানিয়েছেন; কিন্তু আমি হৃদয়ের অন্তর থেকে বলছি, প্রকৃতপক্ষে অভিনন্দনের পাত্র তো আপনারা, মন কি বাতের শ্রোতারা, আমাদের দেশবাসী। ‘মন কি বাত’ কোটি কোটি ভারতীয়র মনের কথা, তাঁদের ভাবনার প্রকাশ।
বন্ধুরা, ২০১৪ সালের তেসরা অক্টোবর, বিজয়া দশমীর সেই উৎসব ছিল আর আমরা সবাই মিলে বিজয়া দশমীর দিনে ‘মন কি বাত’-এর যাত্রা শুরু করেছিলাম। বিজয়া দশমী অর্থাৎ অশুভের বিরুদ্ধে শুভর বিজয়ের উৎসব। ‘মন কি বাত’ও দেশবাসীর যা কিছু ভালো, যা সদর্থক তার এক অনন্য উৎসব হয়ে উঠেছে। এমন এক উৎসব যা প্রত্যেক মাসে আসে, যার প্রতীক্ষা আমাদের সবার থাকে। আমরা এখানে সদর্থক ভাবনার উদ্যাপন করি। আমরা এখানে জনগণের অংশগ্রহণের উদ্যাপনও করি। অনেক সময় বিশ্বাসই হয় না যে ‘মন কি বাত’ এত মাস আর এত বছর পেরিয়ে এল। নিজগুণে প্রত্যেকটি পর্বই বিশেষ। প্রত্যেক বার নতুন উদাহরণের নবীনত্ব, প্রত্যেক বার দেশবাসীর নতুন-নতুন সাফল্যের বর্ণনা। ‘মন কি বাত’-এ দেশের বিভিন্ন কোণ থেকে মানুষ যুক্ত হয়েছেন, সব বয়সের মানুষ যুক্ত হয়েছেন। বেটি বচাও-বেটি পড়াওয়ের আলোচনা হোক, স্বচ্ছ ভারত আন্দোলন হোক, খাদির প্রতি ভালোবাসা হোক অথবা প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা, আজাদী-কে-অমৃত মহোৎসব হোক অথবা অমৃত সরোবরের কথা হোক, ‘মন কি বাত’ যে বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, সেটা, জন-আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়েছে আর আপনারা সেটা তৈরি করেছেন। যখন আমি, তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার সঙ্গে ‘মন কি বাত’ করেছিলাম, তখন এর আলোচনা হয়েছিল গোটা বিশ্ব জুড়ে।
বন্ধুরা, আমার জন্য ‘মন কি বাত’ তো অন্যের গুণের পূজো করার মতই। আমার এক পথপ্রদর্শক ছিলেন – শ্রী লক্ষণরাও জী ইনামদার। আমি তাঁকে উকিল সাহেব বলে ডাকতাম। উনি সবসময় বলতেন যে অন্যের গুণাবলীর পূজো করা উচিত। সামনে যেই থাকুন, আপনার পক্ষের হোন, আপনার বিরোধী হোন, তাঁর ভালো গুণাবলীর কথা জানার, তাঁর থেকে শেখার প্রচেষ্টা করা উচিত আমাদের। তাঁর এই কথা সবসময় আমাকে প্রেরণা দিয়েছে। অন্যের গুণ থেকে শেখার খুব বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে মন কি বাত।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এই অনুষ্ঠান আমাকে কখনোই আপনাদের থেকে দূরে যেতে দেয়নি। আমার মনে আছে, যখন আমি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, তখন সাধারণ মানুষের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই মেলামেশা হয়ে যেত। মুখ্যমন্ত্রীর কাজকর্ম এবং কার্যকাল এমনই হয়ে থাকে যে মেলামেশার অনেক সুযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু ২০১৪ তে দিল্লিতে আসার পর আমি বুঝেছিলাম যে এখানকার জীবন অনেকটাই আলাদা। কাজের ধরন আলাদা, দায়িত্ব আলাদা, স্থিতি-পরিস্থিতির বন্ধন, সুরক্ষার আয়োজন, সময়ের সীমা। শুরুর দিকে একটু অন্যরকম অনুভূতি হত, ফাঁকা ফাঁকা মনে হতো। ৫০ বছর আগে আমি নিজের ঘর এই জন্য ছাড়েনি যে, একদিন নিজের দেশের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা মুশকিল হয়ে যাবে এটা ভেবে। যে দেশবাসী আমার সবকিছু, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে আমার পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব না। 'মন কি বাত' আমাকে এই চ্যালেঞ্জের সমাধান দিয়েছে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে জুড়ে থাকার পথ খুঁজে দিয়েছে। পদমর্যাদা এবং প্রোটোকল, একটা নির্দিষ্ট ব্যবস্থা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থেকেছে এবং কোটি কোটি জনমতের সঙ্গে আমার ভাবনা, বিশ্বের এক অটুট অঙ্গে পরিণত হয়েছে। প্রতিমাসে আমি দেশের মানুষের পাঠানো হাজার হাজার বার্তা পড়ি, প্রতিমাসে আমি দেশবাসীর একের পর এক অনন্য স্বরূপ দেখি। আমি দেশবাসীর তপস্যা ও ত্যাগের পরাকাষ্ঠা দেখি, অনুভব করি। আমার মনেই হয় না যে আমি আপনাদের থেকে একটুও দূরে আছি। আমার জন্য ‘মন কি বাত’ শুধুমাত্র একটি অনুষ্ঠান নয়, আমার জন্য এটা এক আস্থা, পূজা, ব্রত। যেমনভাবে মানুষ ঈশ্বরের পুজো করতে গেলে প্রসাদের থালা নিয়ে যায়, আমার জন্য ‘মন কি বাত’ ঈশ্বররূপী জনতা জনার্দনের চরণে প্রসাদের থালার মত। ‘মন কি বাত’ আমার মনের এক আধ্যাত্মিক যাত্রা।
'মন কি বাত' স্ব থেকে সমষ্টির যাত্রা।
'মন কি বাত' অহম থেকে বয়ম এর যাত্রা।
এ তো 'আমি' নয়, ' তুমি ' র মধ্যে দিয়েই এর সংস্কার সাধনা।
আপনি কল্পনা করুন, আমার কোন এক দেশবাসী ৪০-৪০ বছর ধরে নির্জন পাহাড়ি এবং বন্ধ্যা জমিতে গাছ লাগাচ্ছে, কত মানুষ ৩০-৩০ বছর ধরে জল সংরক্ষণের জন্য কুঁয়ো এবং পুকুর তৈরি করছে, সেটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখছে। কেউ আবার ২৫-৩০ বছর ধরে গরিব বাচ্চাদের পড়াচ্ছে, কেউ গরিব বাচ্চাদের চিকিৎসার জন্য সাহায্য করছে। কতবার ‘মন কি বাত’-এ তাদের নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আমি ভাবুক হয়ে পড়েছি। আকাশবাণীর বন্ধুদের কতবার সেটা আবার নতুন করে রেকর্ড করতে হয়েছে। আজ, অতীতের কতকিছু আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। দেশবাসীর এই প্রয়াস আমাকে ক্রমাগত কাজ করে যাওয়ার প্রেরণা দেয়।
বন্ধুরা, ‘মন কি বাত’-এ যাদের কথা আমি উল্লেখ করেছি, তাঁরা আমাদের হিরো, তাঁদের জন্যই এই অনুষ্ঠান জীবন্ত হয়ে উঠেছে। আজ যখন আমরা শততম পর্বের দোরগোড়ায়, আমার ইচ্ছে আরও একবার, এই হিরোদের কাছে গিয়ে তাঁদের যাত্রাপথ সম্পর্কে জানি। আজ আমরা কিছু বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলারো চেষ্টা করব। দূরভাষে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন, হরিয়ানা থেকে ভাই সুনিল জাগলানজি। আমার মনের ওপর সুনিল জাগলানজির কাজের গভীর প্রভাব পড়ে, কারণ হরিয়ানাতে gender ratio বিষয়টি খুবই চর্চায় থাকে। আমিও 'বেটি বাচাও - বেটি পড়াও' অভিযান হরিয়ানা থেকেই আরম্ভ করি। আর এর মধ্যে যখন সুনীলজির 'selfie with daughter' campaign, আমার দৃষ্টিগোচর হয়, আমি খুব আনন্দিত হই। আমিও ওনার থেকে শিক্ষালাভ করি, এবং ওনাকে ‘মন কি বাত’-এর অংশ করেনি। দেখতে দেখতে 'selfie with daughter' এক global campaign হয়ে উঠেছে। এই campaign এর মূখ্য বিষয় selfie ছিল না, technology ছিলোনা, কন্যাসন্তানকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমাদের জীবনে মেয়েদের গুরুত্ব যে অসীম, এই অভিযানের ফলে এই কথাই স্পষ্ট হয়। আর আজ, তার এই অভিযানের ফল স্বরূপ, হরিয়ানাতে gender ratio উন্নত হয়েছে। আসুন, আজ সুনীল বাবুর সঙ্গে কিছুটা গল্প করি।
প্রধানমন্ত্রীজি - নমস্কার সুনীলজি।
সুনীল জি - নমস্কার স্যার। আপনার কন্ঠস্বর শুনে আমার আনন্দ আরও বেড়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রীজি - সুনীলজি, selfie with daughter, অভিযান সবার মনে আছে। এখন এই বিষয়টি আবার চর্চায় এসেছে, আপনার কেমন লাগছে?
সুনীল জি - আসলে আপনি আমাদের প্রদেশ হরিয়ানাতে, মেয়েদের মুখে হাসি ফোটানোর ক্ষেত্রে পানিপথের যে চতুর্থ লড়াই শুরু করেছেন, এবং আপনার নেতৃত্বে সারা দেশের মানুষ যে যুদ্ধ জেতার চেষ্টা করেছেন, এটা আমি, আমার মত সব মেয়েদের বাবা ও মেয়েদের শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে খুব বড় ব্যাপার।
প্রধানমন্ত্রীজি - সুনীল জি, আপনার মেয়ে এখন কেমন আছে, আজকাল কী করছে?
সুনীল জি - হ্যাঁ, আমার মেয়েরা নন্দনী আর ইয়াচিকা, একজন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ছে, একজন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ছে এবং তারা আপনার অনেক বড় ভক্ত এবং তারা তাদের সহপাঠীদের আপনাকে, অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি লিখতে উৎসাহিতও করেছিল।
প্রধানমন্ত্রীজি - বাহ্ বাহ্! সোনা মেয়েদের আপনি আমার এবং ‘মন কি বাত’-এর শ্রোতাদের তরফ থেকে অনেক আশীর্বাদ দেবেন।
সুনীল জি - আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, আপনার কারণে দেশের মেয়েদের মুখের হাসি ক্রমাগত বাড়ছে।
প্রধানমন্ত্রীজি - আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সুনীলজি।
সুনীল জি - ধন্যবাদ।
বন্ধুরা, আমি খুবই সন্তুষ্ট যে 'মন কি বাত'-এ আমরা দেশের নারীশক্তির শত শত অনুপ্রেরণামূলক গল্পের উল্লেখ করেছি। সে আমাদের সেনাবাহিনীই হোক বা ক্রীড়া জগৎ, আমি যখনই নারীদের সাফল্যের কথা বলেছি, তা বেশ প্রশংসিত হয়েছে। যেমন আমরা ছত্তিশগড়ের দেউর গ্রামের মহিলাদের নিয়ে আলোচনা করেছি। এই মহিলারা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির মাধ্যমে গ্রামের চত্বর, রাস্তা এবং মন্দির পরিষ্কার করার অভিযান চালান। একইভাবে, এই দেশ তামিলনাড়ুর আদিবাসী মহিলাদের থেকেও ভীষণ অনুপ্রাণিত হয়েছে, যারা হাজার হাজার ইকো-ফ্রেন্ডলি টেরাকোটা কাপ রপ্তানি করেছিলেন। খোদ তামিলনাড়ুতে, ভেলোরে নাগ নদীকে পুনরুজ্জীবিত করতে ২০ হাজার মহিলা একত্রিত হয়েছিল। এই ধরনের অনেক অভিযান আমাদের নারী শক্তির নেতৃত্বে হয়েছে এবং 'মন কি বাত' তাদের প্রচেষ্টাকে সামনে আনার একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে।
বন্ধুরা, এখন আমাদের ফোন লাইনে আরও একজন ভদ্রলোক আছেন। তাঁর নাম মনজুর আহমেদ। 'মন কি বাত'-এ, জম্মু ও কাশ্মীরের পেন্সিল স্লেট সম্পর্কে কথা বলার সময় মনজুর আহমেদজির উল্লেখ করা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রীজি - মনজুর সাহেব, কেমন আছেন?
মনজুর জি - ধন্যবাদ স্যার...খুব ভালো আছি স্যার।
প্রধানমন্ত্রীজি - ‘মন কি বাত’-এর এই শততম পর্বে আপনার সঙ্গে কথা বলতে পেরে খুব ভালো লাগছে।
মনজুর জি - ধন্যবাদ স্যার।
প্রধানমন্ত্রীজি - আচ্ছা এই পেন্সিল slate এর কাজ কিরকম চলছে?
মনজুর জি - খুব ভালো ভাবে চলছে স্যার, যেদিন থেকে আপনি আমাদের কথা ‘মন কি বাত’-এ বলেছেন তখন থেকে আমাদের কাজ আরো বেড়ে গেছে আর অন্যদেরও রোজগার বেড়ে গেছে এই কাজের মাধ্যমে।
প্রধানমন্ত্রীজি - কতজন লোক এখন রোজগার করেন এর থেকে?
মনজুর জি - এখন আমার কাছে ২০০-এরও বেশী লোক আছে।
প্রধানমন্ত্রীজি - আরে বাহ! আমি শুনে খুব খুশি হলাম।
মনজুর জি - হ্যাঁ স্যার, আর এক-দু’মাসে আমি এটাকে এক্সপ্যান্ড করছি, এতে আরো ২০০ জনের রোজগার বেড়ে যাবে স্যার।
প্রধানমন্ত্রীজি – বাহ্ বাহ্ দেখুন মঞ্জুর জি...
মনজুর জি - হ্যাঁ স্যার..
প্রধানমন্ত্রীজি - আমার খুব মনে আছে আপনি ওইদিন বলেছিলেন যে এটা এমন একটা কাজ যার কোনো পরিচিতি নেই, আপনার নিজস্ব কোনো পরিচিতি নেই, যার জন্য আপনার অনেক কষ্ট হতো, অনেক কঠিন পরিস্থিতিতে আপনাকে কাজ করতে হয়েছে আপনি বলেছিলেন, কিন্তু এখন তো আপনি প্রসিদ্ধও হয়ে গেছেন আর আপনার জন্য ২০০-রও বেশি মানুষ রোজগার করছেন।
মনজুর জি - হ্যাঁ স্যার.. হ্যাঁ স্যার..
প্রধানমন্ত্রীজি - আর এই নতুন এক্সপ্যানশন এর মাধ্যমে আরো ২০০ জনের রোজগারের সংস্থান হবে,এটা আরো খুশির খবর।
মনজুর জি - এমনকি স্যার এর ফলে এখানকার কৃষক বন্ধুরাও অনেক উপকৃত হয়েছেন। ২০০০ টাকার গাছ এখন ৫০০০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এত ডিমান্ড বেড়ে গেছে তারপর থেকে, আর এই ক্ষেত্রে আমাদের পরিচিতিও বেড়ে গেছে, তাই অনেক অর্ডারও আসছে, আর সামনের এক-দু’মাসে এক্সপ্যান্ড করার পর আরো আশেপাশের বেশ কিছু গ্রামের যত যুবক-যুবতীদের এই কাজে নিয়োজিত করা যায় ততই তাদের কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা হতে পারবে স্যার।
প্রধানমন্ত্রীজি - দেখুন মঞ্জুর জি ভোকাল ফর লোকাল এর শক্তি কতটা অভূতপূর্ব হতে পারে তা আপনি পৃথিবীর মাটিতে করে দেখিয়ে দিয়েছেন।
মনজুর জি - হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রীজি - আমার পক্ষ থেকে আপনাকে, গ্রামের সকল কৃষক বন্ধুদের এবং আপনার সঙ্গে কাজ করছেন এমন সমস্ত বন্ধুদের অনেক অনেক শুভকামনা। ধন্যবাদ ভাই।
মনজুর জি - ধন্যবাদ স্যার।
বন্ধুরা, আমাদের দেশে এমন অনেক প্রতিভাবান মানুষ রয়েছেন, যারা কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছেন। আমার মনে আছে বিশাখাপত্তনমের বেঙ্কট মুরলী প্রসাদ জি একটা 'আত্মনির্ভর ভারত chart' share করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন কিভাবে তিনি আরো বেশি পরিমাণে ভারতীয় products ব্যবহার করবেন। যখন বেতিয়ার প্রমোদ জি LED বাল্ব বানানোর ছোট একটা ইউনিট শুরু করেন বা গড়-মুক্তেশ্বর'এর সন্তোষ জি Mats তৈরি করার কাজ শুরু করেন তখন 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানই তাদের সেই উৎপাদিত পণ্যকে সবার সামনে তুলে ধরার মাধ্যম হয়ে ওঠে। আমরা Make in India'র অনেক দৃষ্টান্ত থেকে শুরু করে Space start-ups পর্যন্ত বহু আলোচনা 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানে করেছি।
বন্ধুরা, আপনাদের হয়তো মনে আছে বেশ কিছু এপিসোড আগে আমি আমাদের মণিপুরের বোন বিজয়শান্তি দেবীর কথা বলেছিলাম। বিজয়শান্তি জি পদ্ম-ফুলের আঁশ থেকে জামাকাপড় তৈরী করেন। 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানে তার এই অনন্য eco-friendly idea নিয়ে কথা হয়, আর সেজন্য তার এই কাজ আরো popular হয়ে গেছে। আজ বিজয়শান্তি জি আমাদের সঙ্গে টেলিফোন লাইনে রয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীজি - নমস্কার বিজয় শান্তি জি। কেমন আছেন?
বিজয়শান্তি জি - Sir, আমি ভালো আছি।
প্রধানমন্ত্রীজি - আপনার কাজকর্ম কেমন চলছে?
বিজয়শান্তি জি - Sir, এখন আমি ৩০ জন মহিলাকে নিয়ে কাজ করছি।
প্রধানমন্ত্রীজি - এত অল্প সময়ের মধ্যে আপনি তাহলে ৩০ জনের দল তৈরি করে ফেলেছেন!
বিজয়শান্তি জি - হ্যাঁ স্যার, এ বছর আরো বাড়তে পারে, ১০০ জনকে দলে পেতে পারি, আমার এলাকা থেকে।
প্রধানমন্ত্রীজি - অর্থাৎ আপনার লক্ষ্য ১০০ জন মহিলা।
বিজয়শান্তি জি - হ্যাঁ! ১০০ জন মহিলা।
প্রধানমন্ত্রীজি - আর এখন মানুষ lotus stem fiber-এর (পদ্ম ডাটার আঁশের) সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন।
বিজয়শান্তি জি - হ্যাঁ প্রধানমন্ত্রীর 'মন কি বাত'-এর মাধ্যমে সারা দেশের মানুষ এর কথা জানেন।
প্রধানমন্ত্রীজি - তাহলে এটা এখন ভীষণ জনপ্রিয়।
বিজয়শান্তি জি - হ্যাঁ স্যার , এখন সবাই প্রধানমন্ত্রীর 'মন কি বাত'-এর মাধ্যমে লোটাস ফাইবারের কথা জানেন।
প্রধানমন্ত্রীজি - তাহলে আপনারা বাজারেও পৌঁছতে পেরেছেন?
বিজয়শান্তি জি - হ্যাঁ আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটা বাজারে পৌঁছতে পেরেছি, এবং তাঁরা বৃহৎ পরিমাণে এই সামগ্রী কিনতে চান, এবং আমি এ বছর থেকে আমেরিকাতে আমার জিনিস রপ্তানি করতে চাই।
প্রধানমন্ত্রীজি - তাহলে আপনি এখন রপ্তানি ব্যবসাদার হয়ে গেছেন?
বিজয়শান্তি জি - হ্যাঁ, এ বছর থেকে আমরা ভারতীয় lotus fiber-এর তৈরি সামগ্রী বিদেশে রপ্তানি করব।
প্রধানমন্ত্রীজি - মানে আমার বলা ভোকাল ফর লোকাল এখন লোকাল ফর গ্লোবাল হয়ে গেছে?
বিজয়শান্তি জি - হ্যাঁ, স্যার, আমি এখন আমার সামগ্রী সারা পৃথিবীতে রপ্তানি করতে চাই।
প্রধানমন্ত্রীজি - আপনাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই।
বিজয়শান্তি জি - ধন্যবাদ, স্যার।
প্রধানমন্ত্রীজি - ধন্যবাদ বিজয়শান্তি জী।
বিজয়শান্তি জি - ধন্যবাদ, স্যার।
বন্ধুরা, 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানের আরেকটা বিশেষত্ব আছে। 'মন কি বাত'-এর মাধ্যমে বহু জন আন্দোলন জন্মেছে এবং গতি নিয়েছে। যেমন আমাদের খেলনা, আমাদের toy industry-কে আবার প্রতিষ্ঠিত করার মিশন 'মন কি বাত'-এই শুরু হয়েছিল। আমাদের দেশীয় প্রজাতির কুকুর, দেশি ডগস নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজও শুরু হয়েছিল 'মন কি বাত'-এই। আমরা আরেকটি কাজও শুরু করেছিলাম, যে গরীব, ক্ষুদ্র দোকানদারদের সঙ্গে দরদাম করব না, ঝগড়া করব না। প্রতি ঘরে তেরঙ্গার মত কঠিন প্রকল্পে নামার সময় দেশবাসীকে এই ব্রতে ব্রতী করার ভূমিকাও 'মন কি বাত' বিরাট রূপে পালন করে।
এইরূপ প্রতিটি দৃষ্টান্ত সমাজে পরিবর্তন এনেছে। সমাজকে প্রেরণা জোগানোর এরকম প্রতিজ্ঞা প্রদীপ সাংওয়ান মহাশয়ও নিয়েছেন। 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানে আমরা প্রদীপ সাংওয়ানের healing Himalayas অভিযানের কথা আলোচনা করেছিলাম। উনি এখন ফোনলাইনে রয়েছেন আমাদের সঙ্গে।
প্রধানমন্ত্রীজি - প্রদীপ জি, নমস্কার!
প্রদীপজি - স্যার, জয় হিন্দ!
প্রধানমন্ত্রীজি - জয় হিন্দ, জয় হিন্দ ভাই! কেমন আছেন আপনি?
প্রদীপজি - স্যার, খুব ভালো। আপনার কণ্ঠস্বর শুনে আরো ভালো লাগছে।
প্রধানমন্ত্রীজি - আপনি হিমালয়কে হিল (heal) করার কথা ভেবেছেন।
প্রদীপজি - হ্যাঁ, স্যার ।
প্রধানমন্ত্রীজি - এ বিষয়ে কর্মসূচিও চালিয়েছেন। আজকাল আপনার ক্যাম্পেন কেমন চলছে?
প্রদীপজি - স্যার, খুব ভালো চলছে। আগে যতটা কাজ আমরা পাঁচ বছরে করতাম, ২০২০ সাল থেকে সেটা মোটামুটি এক বছরে হয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীজি - আরে বাঃ!
প্রদীপজি - হ্যাঁ, স্যার। শুরুতে খুব নার্ভাস ছিলাম। খুব ভয় করত এ কথা ভেবে যে, জীবনভর এই কাজ করতে পারব কিনা। কিন্তু তারপর কিছুটা সাপোর্ট পেলাম। সত্যি কথা বলতে, ২০২০ পর্যন্ত আমরা খুব ওনেস্টলি স্ট্রাগল করেছি। খুব অল্প সংখ্যক মানুষ আমাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছিলেন। এমন অনেক মানুষ ছিলেন যারা সাপোর্ট করতে পারছিলেন না। আমাদের অভিযানের দিকে সেভাবে গুরুত্ব সহকারে মনোনিবেশও করছিলেন না। কিন্তু ২০২০ এর পরে, অর্থাৎ 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানে আপনি উল্লেখ করার পর থেকে অনেক কিছু বদলে গেল। আগে আমরা বছরে ছয় - সাতটা, বড়জোর দশটা ক্লিনিং ড্রাইভ করতে পারতাম। আর আজকের তারিখে দাঁড়িয়ে আমরা ডেইলি বেসিসে পাঁচ টন জঞ্জাল একত্র করি। আলাদা আলাদা লোকেশনে।
প্রধানমন্ত্রীজি - আরে বাঃ!
প্রদীপজি - স্যার, আপনি আমার কথা বিশ্বাস করুন, আমি একটা সময় প্রায় হাল ছেড়ে দেওয়ার পর্যায়ে ছিলাম। কিন্তু 'মন কি বাত'-এ আপনি উল্লেখ করার পর থেকে আমার জীবনে অনেক কিছু বদলে গেল, আর বিষয়গুলো এত স্পিড আপ হয়ে গেল যা আমরা কখনো ভাবতেই পারিনি। সো আই অ্যাম রিয়েলি থ্যাঙ্কফুল। জানি না কী ভাবে আমাদের মত মানুষদের আপনি খুঁজে নেন। হিমালয়ের কোন সুদূর প্রত্যন্ত অঞ্চলে, এত অল্টিচুডে গিয়ে আমরা কাজ করছি। সেখান থেকেও আপনি আমাদের খুঁজে নিয়েছেন। আমাদের কাজকে সারা পৃথিবীর সামনে নিয়ে এসেছেন। তাই আমার কাছে সেদিনও খুব ইমোশনাল মোমেন্ট ছিল, আজও তাই। কারণ আমাদের দেশের যিনি প্রথম সেবক তাঁর সঙ্গে আমি কথা বলার সুযোগ পাচ্ছি। আমার জন্য এর থেকে বড় সৌভাগ্যের কথা আর কিছু হতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রীজি - প্রদীপ জি আপনি হিমালয়ের চূড়ায় প্রকৃত অর্থেই সাধনা করছেন আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে এখন আপনার নাম শুনলেই সকলের এটা মনে পড়বে যে আপনি কিভাবে পাহাড়ের স্বচ্ছতা অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন।
প্রদীপজি - হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রীজি - আর যেমন আপনি বললেন যে এখন একটি বিরাট টিম তৈরি হতে চলেছে আর আপনি প্রতিদিন এত বড় মাপের কাজ করে চলেছেন।
প্রদীপজি - হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রীজি - আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস যে এই প্রচেষ্টার ফলে, এই বিষয়ের আলোচনার ফলে অনেক পর্বতারোহী স্বচ্ছতা অভিযানের ফটো পোস্ট করছেন।
প্রদীপজি - হ্যাঁ স্যার। অনেকেই।
প্রধানমন্ত্রীজি - এটা ভালো বিষয় যে আপনাদের মত বন্ধুদের কারণে ওয়েস্ট ইজ অলসো অ্যা ওয়েলথ এই কথাটা মানুষের মনের মধ্যে গেঁথে যাচ্ছে। আর পরিবেশেরও সুরক্ষা নিশ্চিত হচ্ছে, আর হিমালয় যা আমাদের অহংকার তার সুরক্ষা, সৌন্দর্য রক্ষা এবং সাধারণ মানুষরা এর সঙ্গে জড়িত হচ্ছে। প্রদীপ জি খুব ভালো লাগছে আমার। অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।
প্রদীপজি - ধন্যবাদ স্যার। অনেক ধন্যবাদ। জয় হিন্দ।
বন্ধুরা, আজ দেশে ট্যুরিজম খুব তাড়াতাড়ি গ্রো করছে। আমাদের এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নদী, পাহাড়, জলাশয় অথবা আমাদের তীর্থস্থান এই সব কিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা অত্যন্ত জরুরী। এটা ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রিকে অনেক সাহায্য করবে। পর্যটনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া মুভমেন্টের কথাও অনেকবার বলেছি। এই মুভমেন্টে মানুষ প্রথমবার এমন অনেক স্থানের বিষয়ে জানতে পেরেছে যা হয়তো তাদের খুব কাছাকাছি ছিল। আমি সবসময়ই বলি যে আমাদের বিদেশে ট্যুরিজমের ব্যাপারে যাওয়ার আগে আমাদের দেশে কমপক্ষে ১৫টি টুরিস্ট ডেস্টিনেশনে যাওয়া উচিত এবং সেই ডেস্টিনেশন গুলো যে রাজ্যে আপনি থাকেন, অবশ্যই সেই রাজ্যের হওয়া উচিত নয়। অর্থাৎ আপনার রাজ্যের বাইরে অন্য রাজ্যে যাওয়া উচিত।
এইভাবে আমরা স্বচ্ছ সিয়াচিন, single use plastic এবং e-waste এর মত গুরুতর বিষয়েও ক্রমাগত বলেছি। আজ সারা বিশ্ব পরিবেশের যে issue নিয়ে বিশেষভাবে নাজেহাল, সেই সমস্যা সমাধানে 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানের এই প্রয়াস খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বন্ধুরা, এবার আমি 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানটি নিয়ে ইউনেস্কোর ডিজি অড্রে আজুলের আরেকটি বিশেষ বার্তা পেয়েছি। তিনি শততম পর্বের এই অবিস্মরণীয় যাত্রার জন্য সমস্ত দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এছাড়াও, তিনি কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছেন। আসুন প্রথমে ইউনেস্কোর ডিজির মনের কথা শোনা যাক।
#অডিও UNESCO DG
ডিজি ইউনেস্কো: নমস্কার মহামান্য, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী; ‘মন কি বাত’ রেডিও সম্প্রচারের শততম পর্বে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। ইউনেস্কো এবং ভারতের একটি দীর্ঘ সাদুর্যপূর্ণ ইতিহাস রয়েছে। বিভিন্নক্ষেত্রে আমাদের যৌথভাবে খুবই শক্তিশালী অংশীদারিত্ব রয়েছে - শিক্ষা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, তথ্য এবং আমি আজ এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে শিক্ষার গুরুত্ব নিয়ে কথা বলতে চাই। UNESCO, তার সদস্য রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে কাজ করছে যাতে 2030 সালের মধ্যে বিশ্বের প্রত্যেকে উচ্চমানের শিক্ষার সুযোগ পায়। বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ হওয়ার সুবাদে, এই লক্ষ্য অর্জনের ভারতীয় পন্থা আপনি অনুগ্রহ করে বিশ্লেষণ করুন৷ UNESCO সংস্কৃতিকে সমর্থন এবং ঐতিহ্য রক্ষা করার জন্যও কাজ করে এবং ভারত এই বছর G-20-এর সভাপতিত্ব করছে। এই অনুষ্ঠানে বিশ্ব নেতারা আসতে চলেছে দিল্লিতে। মহামান্য, ভারত কিভাবে সংস্কৃতি ও শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক এজেন্ডার শীর্ষে রাখতে চায়? আমি আবারও এই সুযোগের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই এবং ভারতের জনগণকে আপনার মাধ্যমে আমার অনেক শুভকামনা জানাই.... শীঘ্রই দেখা হবে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ.
প্রধানমন্ত্রী মোদি: আপনাকে ধন্যবাদ, মহামান্য। শততম 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরে আমি অভিভূত। আমি আরও খুশি যে আপনি শিক্ষা ও সংস্কৃতির মতন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন।
বন্ধুরা, ইউনেস্কোর DG Education ও Cultural Preservation, অর্থাৎ শিক্ষা ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ ক্ষেত্রে ভারতের প্রচেষ্টার বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। এ দুটি ‘মন কি বাত' অনুষ্ঠানের খুব পছন্দসই বিষয়।
শিক্ষা হোক বা সংস্কৃতি, তার সংরক্ষণ বা উন্নয়ন যে বিষয়েই কথা হোক না কেন, ভারতের এ এক প্রাচীন পরম্পরা। এই বিষয়ে আমাদের দেশে যা কাজ চলছে, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। National Education Policy হোক বা স্থানীয় ভাষায় পড়াশোনার বিকল্প ব্যবস্থা হোক বা Education-এ Technology Integration হোক, আপনি এরকম অনেক প্রচেষ্টার নিদর্শন অনেক দেখতে পাবেন। অনেক বছর আগে গুজরাটে উন্নততর শিক্ষা প্রদান ও ‘Dropout Rates’ কম করার লক্ষ্যে ‘গুণোৎসব ও শালা প্রবেশোৎসব’-এর মতো অনুষ্ঠানে জনগণের যোগদানের মাধ্যমে এক অনন্য উদাহরণ তৈরি হয়েছিল। ‘মন কি বাত'-এ আমরা এরকম কত জনের প্রচেষ্টাকে Highlight করি, যারা নিঃস্বার্থভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে কাজ করে চলেছেন। আপনাদের হয়তো মনে আছে, একবার আমরা উড়িষ্যায় ঠেলার উপর চা বিক্রেতা স্বর্গীয় ডি. প্রকাশ রাউজি সম্পর্কে আলোচনা করেছিলাম, যিনি গরিব বাচ্চাদের শিক্ষিত করে তোলার মিশনে কাজ করছিলেন। ঝাড়খণ্ডের গ্রামে Digital Library চালানো সঞ্জয় কাশ্যপ জি হোন, বা Covid-এর সময় E-learning-এর মাধ্যমে বাচ্চাদের সাহায্যকারী হেমলতা এন কে জি হোন, এমন অসংখ্য শিক্ষকদের উদাহরণ আমরা ‘মন কি বাত'-এ নিয়ে এসেছি। আমরা Cultural Preservation সম্পর্কিত প্রচেষ্টাকেও ‘মন কি বাত' অনুষ্ঠানে ক্রমাগত স্থান দিয়েছি।
লাক্ষাদ্বীপের Kummel Brothers Challengers Club হোক, বা কর্ণাটকের কোয়েমশ্রী জির ‘কলা চেতনার’ মতো মঞ্চ হোক, দেশের প্রতিটি কোন থেকে মানুষ এরকম বহু উদাহরণ আমায় চিঠি লিখে জানিয়েছেন। আমরা সেই তিন Competition- এর বিষয়েও কথা বলেছি যা দেশভক্তির উপর ‘গীত’, ‘লোরি’(ঘুমপাড়ানি গান) ও ‘রঙ্গলি’র সঙ্গে যুক্ত। আপনাদের মনে থাকবে একবার আমরা সমগ্র দেশে Story Tellers-এর দ্বারা Story Telling-এর মাধ্যমে শিক্ষায় ভারতীয় বিধান নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আমার অটুট বিশ্বাস এই সামগ্রিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে বড় থেকে বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব। এই বছর আমরা যখন আজাদীর অমৃতকালে এগিয়ে চলেছি, তখন G-20র সভাপতিত্বও করছি। এটাও আরেকটা কারণ যে Education-এর সঙ্গে Diverse Global Cultures কে সমৃদ্ধ করার জন্য আমাদের সংকল্প আরো মজবুত হয়েছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের উপনিষদের এক মন্ত্র শত শত বছর ধরে আমাদের প্রেরণা দিয়ে এসেছে।
চরৈবতি চরৈবতি চরৈবতি।
চলতে থাকো - চলতে থাকো - চলতে থাকো।
আজ আমরা এই এগিয়ে চলার চরৈবতি মন্ত্র নিয়েই "মন কী বাত"-এর শততম পর্বে এসে পৌঁছেছি। ‘মন কি বাত’ মালার সুতোর মত। যে কিনা ভারতের সামাজিক বিভিন্ন খন্ড খন্ড বিষয়কে দৃঢ়বন্ধ করে রেখেছে এবং যা সকলের মনকে এক এক সুতোয় বেঁধে রেখেছে। প্রত্যেক পর্বেই দেশবাসী তাদের সেবা ও সামর্থ্য দিয়ে অন্যকে প্রেরণা যুগিয়েছেন। এই অনুষ্ঠানে প্রত্যেক দেশবাসী ওপর দেশবাসীর প্রেরণা উৎস হয়ে উঠেছেন। সেভাবে দেখতে গেলে, ‘মন কি বাত’-এর প্রতি পর্ব তার পরবর্তী পর্বের জমি তৈরি করে রাখে। মন কি বাত সর্বদাই সদিচ্ছা, সেবা ও কর্তব্যকে সঙ্গী করেই এগিয়ে চলেছে। স্বাধীনতার অমৃতকালে এই পসিটিভিটিই দেশকে সামনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে, নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে, এবং আমার আনন্দ হচ্ছে ভেবে, যে, মন কি বাতের হাত ধরে যে নতুন এক দিগন্তের শুরু হল, তা দেশের এক নতুন পরম্পরাও তৈরি করতে চলেছে। এ এমন এক পরম্পরা, যার মধ্যে সবার সবরকম প্রয়াস একত্রে প্রতিভাত হয়।
বন্ধুগণ, আজ আমি আকাশবাণীর বন্ধুদেরও ধন্যবাদ দিতে চাই, যাঁরা প্রভূত ধৈর্যের সঙ্গে এই সম্পূর্ন অনুষ্ঠানটি রেকর্ড করেন। সেসকল অনুবাদকেরা, যাঁরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে, অতি দ্রুত ভারতের বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করেন, আমি তাঁদের প্রতিও কৃতজ্ঞ। আমি দূরদর্শন এবং My Gov এর বন্ধুদেরও ধন্যবাদ দিতে চাই। সারা দেশের টিভি চ্যানেল এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মানুষেরা, যাঁরা মন কি বাতের এই সম্প্রচার কোনরকম বিজ্ঞাপন বিরতি ছাড়াই প্রচার করে থাকেন, তাঁদের সকলের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা রইল। এবং সবশেষে, ভারতবাসী এবং ভারতের ওপর আস্থা রেখেছেন এমন সকল মানুষ, যাঁরা ‘মন কী বাত’-এর রাশ ধরে রেখেছেন, আমি তাঁদের প্রতিও জানাই আমার কৃতজ্ঞতা। এই সবকিছু, আপনাদের প্রেরণা এবং আপনাদের ক্ষমতার জন্যেই সম্ভবপর হলো।
বন্ধুরা, বস্তুতই আজ এতো কিছু আমার বলতে ইচ্ছে করছে, যে তার জন্যে সময় এবং শব্দ দুইই কম মনে হচ্ছে। কিন্তু, আমার বিশ্বাস আছে যে, আপনারা নিশ্চয়ই আমার মনের সেই ভাব, সেই সকল ভাবনার কথা বুঝতে পারছেন। মন কি বাতের মাধ্যমে আপনাদের পরিবারের একজন সদস্য হয়ে আপনাদের মাঝে থেকেছি। আপনাদের মাঝেই থাকবো আগামীতেও। সামনের মাসে আমরা আবার একবার মিলিত হবো। আবারও কিছু নতুন বিষয়, কিছু নতুন তথ্যের সঙ্গে দেশবাসীর সাফল্যের উদ্যাপন করবো। ততক্ষণের জন্যে আমায় বিদায় জানাবেন এবং নিজের ও আপনার জনদের খুবই খেয়াল রাখবেন। অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, মন কি বাতে আবার এক বার আপনাদের অনেক-অনেক স্বাগত জানাই। আজ এই চর্চা শুরু করতে গিয়ে মন-মস্তিষ্কের মধ্যে কতই না ভাব উঠে আসছে। আমার এবং আপনাদের মন কি বাতের এই জুটি, নিরানব্বইতম পর্বে এসে পৌঁছেছে। সাধারণভাবে আমরা শুনে থাকি যে নিরানব্বইয়ের বাধা খুব কঠিন হয়। ক্রিকেটে তো নার্ভাস নাইনটিজ-কে খুব কঠিন একটা পর্যায় ধরা হয়। কিন্তু যেখানে ভারতের প্রতিটি মানুষের ‘মন কি বাত’ রয়েছে সেখানকার প্রেরণা থেকে অন্যতর কিছু হয়। আমি এটা নিয়েও খুশি যে মন কি বাতের শততম পর্ব নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে প্রচুর উৎসাহ রয়েছে। আমি অনেক বার্তা পাচ্ছি, ফোন আসছে। আজ যখন আমরা আজাদি কা অমৃতকাল উদযাপন করছি, নতুন সঙ্কল্প নিয়ে অগ্রসর হচ্ছি, তখন শততম মন কি বাত নিয়ে আপনাদের পরামর্শ আর সিদ্ধান্ত জানার জন্য আমিও খুব উৎসুক হয়ে আছি। এরকম পরামর্শের জন্য অধীর অপেক্ষা রয়েছে আমার। এমনিতে তো অপেক্ষা প্রতি বারই থাকে তবে এবার সেটা একটু বেশি। আপনাদের এই পরামর্শ আর সিদ্ধান্তই তিরিশে এপ্রিল সম্প্রচার হতে চলা শততম মন কি বাতকে আরও স্মরণীয় করে তুলবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, মন কি বাতে আমরা এমন হাজার-হাজার মানুষের কথা বলেছি যাঁরা অন্যের সেবায় নিজেদের জীবন সমর্পণ করেন। কিছু মানুষ এমন থাকেন যাঁরা নিজের কন্যার শিক্ষার জন্য পুরো পেনশন খরচ করে ফেলেন, কেউ কেউ পরিবেশ আর জীবসেবার জন্য নিজের গোটা জীবনের আয় সমর্পণ করে দেন। আমাদের দেশে পরমার্থকে এত উপরে স্থান দেওয়া হয়েছে যে অন্যের সুখের জন্য মানুষ নিজের সর্বস্ব দান করে দিতেও সঙ্কোচ করে না। এই জন্য তো শৈশব থেকেই আমাদের শিবি আর দধীচির মতো দেহ দানকারীদের কাহিনী শোনানো হয়।
বন্ধুরা, আধুনিক মেডিকেল সায়েন্সের এই পর্যায়ে অর্গান ডোনেশন যে কোনো মানুষকে জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার অত্যন্ত বড় একটা মাধ্যম হয়ে উঠেছে। বলা হয়, যখন একজন মানুষ মৃত্যুর পরে নিজের শরীর দান করে, তখন সেটা থেকে আট থেকে ন’জন মানুষের নতুন জীবন পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তৃপ্তির কথা যে আজ দেশে অর্গান ডোনেশনের ব্যাপারে সচেতনতা বেড়েছে। ২০১৩ সালে আমাদের দেশে অর্গান ডোনেশনের ঘটনা পাঁচ হাজারেরও কম ছিল, কিন্তু ২০২২ সালে এই সংখ্যা বেড়ে পনেরো হাজারেরও বেশি হয়ে গিয়েছে। অর্গান ডোনেশন করা ব্যক্তি, তাঁদের পরিবার সত্যিই বড় পুণ্যের কাজ করেছেন।
বন্ধুরা, বহুদিন ধরে আমার ইচ্ছে ছিল যে আমি এমনই পুণ্যবান মানুষদের 'মন কী বাত' জানব এবং দেশবাসীর সঙ্গে তা ভাগ করে নেব। তাই আজ 'মন কি বাত'-এ আমাদের সঙ্গে একজন মিষ্টি মেয়ে, সুন্দর মেয়ের বাবা এবং তার মা যুক্ত হতে চলেছেন। বাবার নাম সুখবীর সিং সন্ধু জী আর মায়ের নাম সুপ্রীত কৌর জী, তাঁরা থাকেন পাঞ্জাবের অমৃতসরে। অনেক প্রার্থনা করে তাঁদের একটি খুব সুন্দর কন্যা সন্তান হয়েছিল। পরিবারের সবাই খুব আদর করে তার নাম রেখেছিল অবাবত কৌর। অবাবতের অর্থ অন্যদের যে সেবাকার্য করে, অন্যদের কষ্ট দূর করে। অবাবতের বয়স যখন মাত্র ৩৯ দিন, তখন সে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু সুখবীর সিং সন্ধুজী, তাঁর স্ত্রী সুপ্রীত কৌরজী এবং তাঁদের পরিবার একটি অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা ঠিক করেন যে ৩৯ দিন বয়সী তাঁদের কন্যাসন্তানের অঙ্গদান করবেন, Organ Donation করবেন। আমাদের সঙ্গে ফোন লাইনে সুখবীর সিং সন্ধুজী এবং তাঁর শ্রীমতি উপস্থিত আছেন। আসুন, ওঁদের সঙ্গে কথা বলি।
প্রধানমন্ত্রী জী - সুখবীর জী নমস্কার।
সুখবীর জী - নমস্কার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী। সৎ শ্রী অকাল।
প্রধানমন্ত্রী জী - সৎ শ্রী অকালজী, সৎ শ্রী অকালজী। সুখবীর জী, আজ আমি 'মন কি বাত ' সম্বন্ধে ভাবছিলাম তো আমার মনে হলো যে অবাবতের কাহিনী এতটাই প্রেরণা দেয় যে সেটা আপনার মুখ থেকেই শুনি, কারণ পরিবারে যখন কন্যাসন্তানের জন্ম হয়, তখন তা অনেক স্বপ্ন, অনেক আনন্দ নিয়ে আসে, কিন্তু মেয়ে যখন এত কম বয়সে ছেড়ে চলে যায় সেই কষ্ট কতটা ভয়ংকর, তা আমি কল্পনা করতে পারি। কীভাবে আপনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন; সেই সবটাই আমি জানতে চাই।
সুখবীর জী - স্যার ভগবান আমাদের একটি ফুটফুটে সন্তান দিয়েছিলেন, আমাদের বাড়িতে একটি খুব সুন্দর পুতুল এসেছিল। তার জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই আমরা জানতে পারি যে তার মস্তিষ্কে স্নায়ুর এক এমন গঠন রয়েছে, যার কারণে তার হৃৎপিণ্ডের আকার বড় হচ্ছে। আমরা আশ্চর্য হয়েছিলাম যে শিশুটির স্বাস্থ্য এত ভাল, এত সুন্দর একটি শিশু কিন্তু সে এত বড় সমস্যার সঙ্গে জন্ম নিয়েছে। তারপর প্রথম ২৪ দিন সে খুব ভাল ছিল, শিশুটি একেবারে স্বাভাবিক ছিল। হঠাৎ তার হৃদপিন্ড পুরোপুরি কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তখন আমরা তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে ডাক্তাররা তাকে revive করলেও, সময় লেগে যায় এটা বুঝতে যে তার কী এমন বড় সমস্যা আছে যে একটি ছোট শিশুর হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হয়। তাই তাকে চিকিৎসার জন্য পিজিআই চণ্ডীগড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শিশুটি বীরত্বের সঙ্গে আরোগ্যের জন্য লড়াই করে। কিন্তু অসুখটা এমন যে তার চিকিৎসা এত অল্প বয়সে সম্ভব নয়। ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করেন তাকে রিভাইভ করতে। যদি বাচ্চা ছয় মাস বয়সের কাছাকাছি যায় তাহলে অপারেশন করার কথা ভাবা যেতে পারে। কিন্তু ভগবানের অন্য ইচ্ছে ছিল। মাত্র ৩৯ দিনেই সে আবার হার্ট আট্যাকের শিকার হয় এবং এবার ডাক্তারেরা জানান তার বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম। আমরা স্বামী-স্ত্রী শোক সন্তপ্ত অবস্থায় ভেবে দেখলাম, এই শিশু বারবার অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে আবার ফিরে আসছে, মানে এর জন্ম নেওয়ার নিশ্চয়ই কোনো মহৎ উদ্দেশ্য আছে। এর পর ডাক্তারেরা যখন একেবারেই জবাব দিয়ে দেয়, তখন আমরা ওর organ donate করার সিদ্ধান্ত নিই। অন্য কারো জীবন উদ্ধার হোক। আমরা তারপর PGI.এর administrative বিভাগে যোগাযোগ করি। তারা আমাদের জানায় এত ছোটো বাচ্চার কেবল কিডনি নেওয়া সম্ভব। পরমাত্মার কাছে শক্তি প্রার্থনা করে, গুরু নানকজী কে স্মরণ করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিই।
প্রধানমন্ত্রীজি - আমাদের গুরুরা যে শিক্ষা দেন, আপনারা তা পালন করে দেখালেন। সুপ্রিতজি আছেন কি? ওনার সঙ্গে কথা বলা যাবে?
সুপ্রিতজি – হ্যালো।
প্রধানমন্ত্রী জি- সুপ্রিতজি; আমি আপনাকে প্রণাম জানাই।
সুপ্রিতজি - নমস্কার স্যার, নমস্কার। আমাদের কাছে এ পরম গর্বের বিষয় যে আপনি আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন।
প্রধানমন্ত্রী জি - আপনারা এত বড় একটা কাজ করেছেন, আমার বিশ্বাস দেশের মানুষ যখন একথা জানতে পারবে তখন কারো জীবন বাঁচানোর জন্য আরো অনেকে এগিয়ে আসবেন। অবাবত এর এই অব্দান অনেক বড়।
সুপ্রিতজি - স্যার, এটাও হয়তো গুরু নানক জির আশীর্বাদ ছিল, উনিই এই সিদ্ধান্ত নেবার শক্তি দেন।
প্রধানমন্ত্রী জি - গুরুর কৃপা ছাড়া তো কিছুই সম্ভব নয়।
সুপ্রিতজি - একদম স্যার, একদম।
প্রধানমন্ত্রী জি - সুখবীরজি, আপনি যখন হাসপাতালে ছিলেন এবং ডাক্তার যখন আপনাকে এই মর্মান্তিক খবর দিয়েছিলেন, তার পরেও আপনি এবং আপনার স্ত্রী সুস্থ মন নিয়ে এত বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটা গুরুদেরই শিক্ষা যে আপনারা এত উদার মনের অধিকারী এবং সত্যি কথা বলতে কী, অবাবত শব্দের অর্থ সহজ ভাষায় হল উপকারী ব্যক্তি। আমি সেই মুহূর্তের কথা শুনতে চাই যখন আপনারা এই কাজটা করলেন।
সুখবীরজি - স্যার, আসলে আমাদের এক পারিবারিক বন্ধু আছেন, প্রিয়াজি, তিনি তাঁর অঙ্গ দান করেছিলেন। আমরা তাঁর কাছ থেকেও অনুপ্রেরণা পেয়েছি। তাই সেই সময় আমরা অনুভব করেছি যে আমাদের এই দেহ পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যাবে। কেউ যখন আমাদের কাছ থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় নেয়, বা চলে যায়, তখন তার দেহকে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বা কবর দেওয়া হয়। কিন্তু তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যদি অন্য কারো কাজে লাগে, তাহলে তো তা মহৎ কাজ। এবং সেই সময় আমরা আরও গর্ব বোধ করি যখন ডাক্তারবাবুরা আমাদের বলেছিলেন যে আপনার মেয়ে ভারতের সর্বকনিষ্ঠ অর্গান ডোনার, যার অঙ্গ সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তখন আমরা গর্বিত হই এই ভেবে যে আমরা এত বয়স পর্যন্ত আমাদের বাবা-মায়ের নাম উজ্জ্বল করতে পারিনি। সেখানে একটি ছোট্ট শিশু এসে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে এবং এছাড়াও বড়ো কথা হল, আজ আমি আপনার সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলছি। আমরা গর্ববোধ করছি।
প্রধানমন্ত্রী জি - সুখবীরজি, আজ আপনার মেয়ের একটা অঙ্গই বেঁচে আছে, তা নয়। আপনার মেয়ে হয়ে উঠেছে মানবতার অমর গাথার অমর পথিক। শরীরের একটি অঙ্গের মাধ্যমে সে আজও বর্তমান। এই মহৎ কাজের জন্য আমি আপনার, আপনার স্ত্রী এবং আপনার পরিবারের প্রশংসা করি।
সুখবীরজি - আপনাকে ধন্যবাদ স্যার।
বন্ধুরা, অঙ্গদানের জন্য সবচেয়ে বড়ো যে আবেগ কাজ করে তা হল, চলে যেতে যেতে শেষ সময়ে কারো উপকার করা, কারো জীবন রক্ষা করা। যাঁরা দান করা অঙ্গ পাবার জন্য অপেক্ষা করছেন তাঁরা জানেন অপেক্ষার প্রতিটি মুহূর্ত পার করা কতটা কঠিন। আর এমন পরিস্থিতিতে যখন কোনো অঙ্গদাতা বা দেহদানকারী পাওয়া যায়, তখন তাঁর মধ্যে ঈশ্বরেরই রূপ দেখা যায়। ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা স্নেহলতা চৌধুরীও এমনই ছিলেন, যিনি ঈশ্বর হয়ে অন্যদের জীবন দিয়েছেন। ৬৩ বছরের স্নেহলতা চৌধুরী নিজের তাঁর হার্ট, কিডনি ও লিভার দান করেগিয়েছেন। আজ ‘মন কি বাতে’, তাঁর ছেলে অভিজিৎ চৌধুরী আমাদের সঙ্গে আছেন। আসুন তাঁর কথা শুনি।
প্রধানমন্ত্রী জি - অভিজিৎজি নমস্কার।
অভিজিৎ জি - প্রণাম স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জি - অভিজিৎ জি, আপনি এমন এক মায়ের সন্তান তিনি আপনাকে তো জন্ম দিয়েছেনই, এমনকি নিজের মৃত্যুর পরেও অনেকের জীবন বাঁচিয়েছেন। একজন ছেলে হিসেবে আপনার তো নিশ্চয়ই ভীষণ গর্ববোধ হচ্ছে।
অভিজিৎ জি - অবশ্যই স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জি - আপনি আপনার মায়ের বিষয়ে কিছু বলুন, ঠিক কি পরিস্থিতিতে Organ donation-এর সিদ্ধান্ত নিলেন?
অভিজিৎ জি - ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা নামের এক ছোট্ট গ্রামে আমার বাবা-মা থাকতেন। বিগত ২৫ বছর ধরে তারা নিয়মিত morning walk করতেন ও নিজেদের habit অনুসারে সকাল চারটে morning walk-এর জন্য বেরিয়ে পড়তেন। একদিন এক motor cycle-ওয়ালা হঠাৎ পেছনে ধাক্কা মারায় মা পড়ে যান ও মাথায় অনেক বেশি চোট পান। তৎক্ষণাৎ আমরা তাঁকে সরাইকেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই যেখানে ডাক্তারবাবু মায়ের চিকিৎসা করেন কিন্তু তবুও প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। আর মায়ের কোন sense ছিল না। সঙ্গে সঙ্গে আমরা মাকে Tata main hospital-এ নিয়ে চলে আসি। সেখানেই তার সার্জারি হয়, 48 ঘন্টা observation-এর পর ডাক্তারবাবুরা জানালেন, এখানে বাঁচার সম্ভবনা খুবই কম। আবার আমরা তাঁকে airlift করে AIIMS Delhi-তে নিয়ে যাই। ওখানে তাঁর treatment চলে প্রায় সাত-আট দিন ধরে। এরপর মায়ের position ভালো ছিল, হঠাৎই তাঁর blood pressure ভীষণ কমে যায় ও পরে জানা যায় তাঁর brain death হয়েছে। এরপর ডাক্তারবাবুরা আমাদের প্রোটোকল সমেত brief করলেন organ donation সম্পর্কে। আমরা আমাদের বাবাকে হয়তো কখনো বোঝাতে পারতাম না organ donation type-এর মতো কোন জিনিস হয়, কারণ আমাদের মনে হয়েছিল উনি হয়তো এই বিষয়টা ঠিক মেনে নিতে পারবেন না, তাই এই বিষয়ে আলাপ আলোচনা সম্পর্কে বাবাকে প্রথমে জানাইনি। যখনই বাবাকে বললাম যে মায়ের organ donation-এর বিষয়ে কথা হচ্ছে তখন উনি সঙ্গে সঙ্গে বললেন যে তোমাদের মায়ের ভীষণ ইচ্ছে ছিল এই কাজ করার, তাই আমাদের এটা করতেই হবে। আমরা অনেক নিরাশ ছিলাম সেই সময় পর্যন্ত যখন আমরা জানতে পেরেছিলাম যে মা আর বাঁচবেন না, কিন্তু যখন এই অর্গান ডোনেশন সম্বন্ধীয় ডিসকাশন শুরু হলো তখন সেই নিরাশা একটি অত্যন্ত পজিটিভ দিকে চলে গেল আর আমরা এক অত্যন্ত পজিটিভ পরিবেশে অবতীর্ণ হলাম। এটা করতে করতে রাত আটটার সময় আমাদের কাউন্সিলিং হল। পরের দিন আমরা অর্গান ডোনেশন করলাম। এই ব্যাপারে মায়ের একটা বড় ভাবনা ছিল যে প্রথমে, উনি চক্ষুদান ও এইরকম সোশ্যাল অ্যাক্টিভিটিসে অনেক বেশি অ্যাক্টিভ ছিলেন। হয়তো এই ভাবনার জন্যই আমরা এত বড় একটা কাজ করতে পেরেছি আর আমার বাবার যে ডিসিশন মেকিং ছিল এই সম্বন্ধে, সেই কারণেও এই ব্যাপারটা সম্ভব হল।
প্রধানমন্ত্রী জি: এই অঙ্গ কতজনের কাজে লাগলো?
অভিজিৎ জি: ওনার হার্ট দুটো কিডনি লিভার আর দুটো চোখ দান করা হয়েছিল, তাই চারজন জীবন পেয়েছিলেন এবং দু’জন চোখ পেয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী জি: অভিজিৎ জি আপনার বাবা ও মা দুজনেই প্রনম্য। আমি ওদের প্রণাম জানাই আর আপনার বাবা যিনি এত বড় সিদ্ধান্তে আপনার পরিবারকে নেতৃত্ব দিয়েছেন যা সত্যি অনেক প্রেরণাদায়ক। আর আমি মানি যে মা তো মাই হন। মা নিজেই এক প্রেরণার উৎস হন। কিন্তু মা যে পরম্পরা রেখে যান তা এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মের শক্তির উৎস হয়ে ওঠে। অঙ্গদানের জন্য আপনার মায়ের এই প্রেরণা আজ সমগ্র দেশের কাছে পৌঁছাচ্ছে। আমি আপনাদের এই পবিত্র এবং মহান কাজের জন্য আপনার পুরো পরিবারকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। অভিজিৎ জি ধন্যবাদ আর আপনার বাবাকে আমাদের প্রণাম অবশ্যই জানাবেন।
অভিজিৎ জি: নিশ্চয়ই, ধন্যবাদ।
বন্ধুরা, ৩৯ দিনের অবাবত কৌর হোক বা ৬৩ বছরের স্নেহলতা চৌধুরী, এঁদের মতো দাতা আমাদের জীবনের মহত্ত্ব উপলব্ধি করিয়ে দিয়ে যান। আমাদের দেশে আজ বহু সংখ্যক এরকম অভাবগ্রস্ত মানুষ আছেন যাঁরা সুস্থ জীবনের আশায় কোনো অংদানকারী মানুষের অপেক্ষায় আছেন। আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে অঙ্গদানকে সহজ বানানোর জন্য এবং এই ব্যাপারে উৎসাহ দানের জন্য পুরো দেশে একই রকম পলিসির উপর কাজ করা হচ্ছে। সেই উপলক্ষে রাজ্যগুলোর domicile বিষয়ক শর্ত তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, অর্থাৎ চিকিৎসাধীন মানুষ এখন থেকে দেশের যেকোনো রাজ্যে গিয়ে organ পাওয়ার জন্যে নাম register করতে পারবেন। Organ donation-এর জন্য ৬৫ বছরের কম যে বয়সসীমা ছিল সরকার সেটাকেও তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই উদ্যোগ সত্ত্বেও আমার দেশবাসীর কাছে অনুরোধ- আরো বেশি করে যেন organ donor'রা এগিয়ে আসেন। আপনার একটা সিদ্ধান্ত বহু মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারে এবং জীবন গড়ে দিতে পারে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এখন নবরাত্রির সময়, শক্তির উপাসনার সময়। আজ ভারতের যে সামর্থ্য নতুন করে উজ্জ্বল হয়ে উঠছে তাতে আমাদের দেশের নারীশক্তির একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। সম্প্রতি এমন অনেক উদাহরণ আমাদের সামনে উঠে এসেছে। এশিয়ার প্রথম মহিলা লোকো পাইলট সুরেখা যাদব'কে আপনারা social media-তে নিশ্চয়ই দেখেছেন। আরো একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করে সুরেখাজী 'বন্দে ভারত express-এর'ও প্রথম মহিলা লোকো পাইলট হওয়ার নজির গড়েছেন। এ মাসেই producer গুনীত মোংগা এবং director কার্তিকী গঞ্জালভেস, তাঁদের Documentary 'Elephant whisperers' এর Oscar বিজয়ের মাধ্যমে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। দেশের জন্য আরও বড় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন Bhabha Atomic Research Centre-এর Scientist জ্যোতির্ময়ী মোহন্তী জী। জ্যোতির্ময়ী জী, Chemistry এবং Chemical engineering-এর field এ IUPAC'র বিশেষ পুরস্কার পেয়েছেন। এই বছরের শুরুতেই ভারতের under-19 মহিলা ক্রিকেট টিম T-20 ওয়ার্ল্ড কাপ জিতে নতুন ইতিহাস গড়েছেন। আপনারা যদি রাজনীতির দিকে দৃষ্টিপাত করেন, তাহলে নাগাল্যান্ডে একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা লক্ষ্য করবেন। নাগাল্যান্ডে ৭৫ বছরে প্রথমবার দুজন মহিলা বিধায়ক ভোটে জিতে বিধানসভায় স্থান করে নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজনকে নাগাল্যান্ড সরকার মন্ত্রিত্ব'ও দিয়েছে, অর্থাৎ সেই রাজ্যের রাজ্যবাসী প্রথমবার কোনো মহিলাকে মন্ত্রীরূপে পেলেন।
বন্ধুরা, কিছুদিন আগে আমি সেই সকল নির্ভীক মেয়েদের সঙ্গেও দেখা করি টার্কিতে হওয়া বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পর যাঁরা সেখানকার মানুষদের সাহায্য করতে সে দেশে গিয়েছিলেন। এঁরা সবাই NDRF-এর দলে ছিলেন। এঁদের সাহস ও কর্মদক্ষতার প্রশংসা হচ্ছে সারা বিশ্বে। ভারতবর্ষ UN mission-এর অন্তর্ভুক্ত শান্তিসেনাতে women-only platoonও নিযুক্ত করেছে। আজ মহিলারা দেশের সৈন্যদলের তিনটি বিভাগেই নিজেদের শৌর্যের পতাকা গর্বের সঙ্গে মেলে ধরছেন। Group Captain শলিজা ধামী বায়ুসেনার combat unit-এর command appointment পাওয়া প্রথম মহিলা আধিকারিক। তাঁর প্রায় ৩ হাজার ঘন্টার flying experience রয়েছে। একই ভাবে, ভারতীয় সেনার সাহসিনী ক্যাপ্টেন শিবা চৌহান সিয়াচেনে কাজ করা প্রথম মহিলা আধিকারিক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। সিয়াচেনে, যেখানে পারদ -৬০ ডিগ্রী অব্দি নেমে যায়, সেখানে তিনি তিন মাস নিযুক্ত থাকবেন।
বন্ধুরা, এই তালিকা এতটাই লম্বা যে এখানে সবার কথা বলা মুশকিল। এভাবেই সব মেয়ে, আমাদের মেয়েরা, ভারত ও ভারতের স্বপ্নগুলিকে শক্তি জোগাচ্ছে। নারীশক্তির এই ক্ষমতাই উন্নত ভারতের প্রাণবায়ু। আমার প্রিয় দেশবাসী, আজকাল পুনর্ণবীকরণ শক্তি বা renewable energyর খুব চর্চা হচ্ছে সারা বিশ্বে। আমি যখন পৃথিবীর অন্য প্রান্তের মানুষদের সঙ্গে দেখা করি তখন এই ক্ষেত্রে ভারতের অভূতপূর্ব সাফল্য নিয়ে তাঁরা কথা বলবেনই। বিশেষ করে solar energy ক্ষেত্রে যে গতিতে ভারত এগোচ্ছে তা স্বতন্ত্র রুপে একটা বিশাল সাফল্য।
ভারতীয়রা বহু যুগ আগে থেকেই সূর্যের সঙ্গে একটি বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। আমাদের দেশে সূর্যের শক্তি নিয়ে যে ধরণের বৈজ্ঞানিক বিশ্বাস রয়েছে, সূর্যের উপাসনা করা নিয়ে যে রকম আচার-ব্যবহার রয়েছে, তা অন্য কোথাও খুব কমই দেখা যায়। আমি ভীষণ খুশি যে আজকাল প্রতিটি দেশবাসী সৌর শক্তির মাহাত্ম্য বুঝছেন এবং clean energy-র ক্ষেত্রে অংশগ্রহণও করতে চাইছেন। ‘সবার চেষ্টায় এই spirit আজ ভারতের solar mission-কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মহারাষ্ট্রের পুনেতে এরকমই একটি অসাধারণ প্রচেষ্টা আমার মনযোগ আকর্ষণ করেছে। তার দিকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। ওখানকার MSR-Olive Housing Society সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে নিজেদের সোসাইটিতে পানীয় জল, লিফট ও লাইটের মতন সাধারণ পরিষেবা এখন সোলার এনার্জি দিয়ে চলবে। এরপর এই সোসাইটিতে সবাই মিলে অনেকগুলি সোলার প্যানেল লাগান। আর আজ এই সোলার প্যানেলগুলি থেকে বছরে প্রায় ৯০ হাজার কিলোওয়াট hour বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে। এর ফলে মাসে প্রায় ৪০,০০০ টাকার সাশ্রয় হচ্ছে। এই সঞ্চয়ের লাভ সোসাইটির সমস্ত মানুষ পাচ্ছেন।
বন্ধুরা, ঠিক পুনের মতনই Daman - Diu এর মধ্যে Diu বলে জায়গাটি একটি আলাদা জেলা। এবং এখানকার মানুষেরা একটি আশ্চর্যজনক কাজ করে দেখিয়েছেন। আপনারা জানেন যে Diu সোমনাথ এর কাছে। এটি ভারতবর্ষের প্রথম এমন জেলা হয়ে উঠেছে, যেটি দিনের বেলায় তার সমস্ত প্রয়োজনের জন্য একশো শতাংশ clean energy ব্যবহার করছে।
দিউ-এর এই সফলতার মন্ত্র হল সকলের আন্তরিক প্রয়াস। এক সময় এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সম্পদের অভাব ছিল। স্থানীয় মানুষেরা এই সমস্যার সমাধানের জন্য সোলার এনার্জিকে মনোনীত করে নিয়েছে। এখানে অনুর্বর জমি ও কিছু বিল্ডিং-এ সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। এই প্যানেলগুলি থেকে দিউয়ে, দিনের বেলায়, যতটা বিদ্যুতের প্রয়োজন তার থেকেও বেশি বিদ্যুৎ তৈরি হচ্ছে। এই সোলার প্রজেক্ট এর মাধ্যমে, বিদ্যুৎ কেনার জন্য, প্রায় ৫২ কোটি টাকার খরচ বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। এই কারণে পরিবেশেরও ব্যাপক সুরক্ষা হয়েছে। বন্ধুরা, পুনে ও Diu যা সফল করে দেখিয়েছে, সারাদেশে আরও অনেক জায়গায় এমন ধরনেরই প্রচেষ্টা চলছে। এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে আমরা ভারতীয়রা পরিবেশ এবং প্রকৃতি সম্পর্কে কতটা সংবেদনশীল এবং আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কতটা সতর্ক। আমি এই ধরনের সমস্ত প্রচেষ্টাকে আন্তরিকভাবে প্রশংসা করি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের দেশে, সময়ের সঙ্গে, পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী, অনেক ঐতিহ্য গড়ে ওঠে। এই ঐতিহ্যগুলি আমাদের সংস্কৃতির সম্প্রীতি বৃদ্ধি করে এবং এটিকে একটি নতুন মর্যাদা দেয়। কয়েক মাস আগে কাশীতে এমনই এক প্রথা শুরু হয়েছিল। কাশী-তামিল সঙ্গমমের সময়, কাশী এবং তামিল অঞ্চলের মধ্যে, শত বছরের চেয়ে প্রাচীন, ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক উদযাপিত হয়েছিল। 'এক ভারত-শ্রেষ্ঠ ভারত'-এর চেতনা আমাদের দেশকে শক্তি যোগায় । যখন আমরা একে অপরের সম্পর্কে জানি এবং শিখি, তখন এই একত্বের অনুভূতি আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে!
ইউনিটির এমন স্পিরিট এর সঙ্গেই আগামী মাসে গুজরাটের বিভিন্ন অংশে "সৌরাষ্ট্র তামিল সঙ্গমম" আয়োজিত হতে চলেছে। "সৌরাষ্ট্র তামিল সঙ্গমম" ১৭ থেকে ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। মন কি বাতের কিছু শ্রোতা নিশ্চয়ই ভাবছেন গুজরাটের সৌরাষ্ট্রের তামিলনাড়ুর সঙ্গে কী সম্বন্ধ? আসলে অনেক যুগ আগে সৌরাষ্ট্রের বহু মানুষ তামিলনাড়ুর আলাদা আলাদা অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাঁরা আজও সৌরাষ্ট্রী তামিল নামে পরিচিত। তাদের খাওয়া দাওয়া, রীতিনীতি, সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে আজও সৌরাষ্ট্রের কিছু কিছু ঝলক পাওয়া যায়। এই অনুষ্ঠানের বিষয়ে তামিলনাড়ুর বহু মানুষ আমাকে প্রশংসাসূচক চিঠি পাঠিয়েছেন। মাদুরাইয়ের বাসিন্দা, জয়চন্দ্রনজী একটি অত্যন্ত সুচিন্তিত কথা লিখেছেন। তিনি বলেছেন, হাজার বছরের পর প্রথমবার কেউ সৌরাষ্ট্র-তামিলের এই সম্পর্কের বিষয়ে ভেবেছেন। সৌরাষ্ট্র থেকে তামিলনাড়ুতে আগত ও বসবাসরত মানুষদের কথা জানতে চেয়েছেন। জয়চন্দ্রনজীর কথা হাজার হাজার তামিল ভাইবোনের মনের কথা।
বন্ধুরা, মন কি বাত এর শ্রোতাদের আমি অসমের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি খবর জানতে চাই। এটিও "এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত"-এর ভাবনাকে শক্তিশালী করে। আপনারা সবাই জানেন আমরা বীর লাসিত বরফুকনজির ৪০০তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন করছি। বীর লাসিত বরফুকন অত্যাচারী মুঘল সাম্রাজ্যের কবল থেকে গুয়াহাটিকে মুক্ত করেছিলেন। আজ দেশ এই মহান যোদ্ধার অদম্য সাহসের কথা জানছে। কিছুদিন আগে লাসিত বরফুকন-এর জীবনের ওপর আধারিত নিবন্ধ লেখার একটি কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। আপনারা জেনে আশ্চর্য হবেন যে তার জন্য প্রায় ৪৫ লক্ষ মানুষ নিবন্ধ পাঠিয়েছিলেন। আপনারা এ কথা জেনেও অত্যন্ত আনন্দিত হবেন যে এটি এখন একটি গিনেস রেকর্ডে পরিণত হয়েছে। আর সব থেকে বড় কথা এবং সবচেয়ে খুশির কথা, বীর লাসিত বরফুকন এর ওপর প্রায় ২৩টি পৃথক পৃথক ভাষায় আপনারা নিবন্ধ লিখে পাঠিয়েছেন। তার মধ্যে অসমীয়া ভাষা ছাড়াও হিন্দি, ইংরেজি, বাংলা, বোড়ো, নেপালি, সংস্কৃত, সাঁওতালির মতো ভাষায় মানুষ তাঁদের লেখা পাঠিয়েছেন। আমি এই প্রয়াসের অংশীদার সকলকে আন্তরিক প্রশংসা জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, যখন কাশ্মীর বা শ্রীনগরের কথা হয়, তখন সবার প্রথমে আমাদের সামনে এর উপত্যকা এবং ডাল লেকের ছবি ফুটে ওঠে। আমরা সবাই ডাল লেকের অনিন্দ্যসুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে চাই। কিন্তু ডাল লেকের আরও একটি বিশেষ ব্যাপার রয়েছে। এই লেক তার অত্যন্ত স্বাদু লোটাস স্টেম অর্থাৎ পদ্মফুলের ডাঁটির জন্য প্রসিদ্ধ। পদ্মের ডাটি দেশের আলাদা আলাদা জায়গায় আলাদা আলাদা নামে পরিচিত। কাশ্মীরে একে নাদরু বলে। কাশ্মীরের নাদরুর চাহিদা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এই চাহিদা দেখে ডাল লেকে নাদরু ফলনকারী কৃষকরা একটি FPO তৈরি করেছেন। এই FPO তে প্রায় ২৫০ জন কৃষক শামিল হয়েছেন। আজ এই কৃষকরা নিজেদের নাদরু বিদেশে পর্যন্ত পাঠাচ্ছেন। কিছুদিন আগেই এই কৃষকরা দুটি খেপে UAE-তেও নাদরু পাঠিয়েছেন। এই সাফল্য কাশ্মীরের নাম তো উজ্জ্বল করছেই, পাশাপাশি এতে শত শত কৃষকের উপার্জনও বাড়ছে।
বন্ধুরা, কৃষি সম্পর্কিত কাশ্মীরের মানুষের এমনই একটি প্রচেষ্টা আজকাল তাঁদের সাফল্যের সুরভি ছড়াচ্ছে। আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন যে আমি কেন সাফল্যের সুরভির কথা বলছি- এটা সুগন্ধের বিষয়, সুরভির বিষয়! আসলে জম্মু ও কাশ্মীরের ডোডা জেলায় একটি জনপদ আছে ‘ভদরওয়াহ’! এখানকার কৃষকরা যুগ যুগ ধরে ঐতিহ্যবাহী ভুট্টা চাষ করে আসছেন, তবে কিছু কৃষক অন্যরকম কিছু করার প্রয়াস করেছেন। তাঁরা floriculture শুরু করেন, অর্থাৎ ফুলের চাষ। বর্তমানে প্রায় ২৫০০ কৃষক এখানে ল্যাভেন্ডার চাষ করছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের aroma mission-এর সহায়তাও পেয়েছেন তাঁরা। এই নতুন চাষ কৃষকদের আয় অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে এবং আজ ল্যাভেন্ডারের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সাফল্যের সুরভিও ছড়িয়ে পড়ছে বহুদূর।
বন্ধুরা, যখন কাশ্মীরের কথা হচ্ছে, পদ্মের কথা হচ্ছে, ফুলের কথা হচ্ছে , সুরভির কথা হচ্ছে, তখন পদ্মফুলে বিরাজমান মা শারদার কথা স্মরণে আসবে, খুবই স্বাভাবিক। কয়েকদিন আগে কুপওয়ারায় মা শারদার বিশাল মন্দির উদ্বোধন করা হয়েছে। যে পথ দিয়ে একসময় শারদা পীঠ দর্শনের জন্য যেতেন, সেই পথেই এই মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছে। এই মন্দির নির্মাণে স্থানীয় মানুষ অনেক সহযোগিতা করেছেন। আমি জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণকে এই শুভ কাজের জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এবার ‘মন কি বাত’-এ এতটুকুই। ‘মন কি বাত’-এর শততম পর্বে (১০০তম) পর্বে পরের বার দেখা হবে। আপনারা সবাই, আপনাদের পরামর্শ পাঠান। এই মার্চ মাসে, আমরা হোলি থেকে নবরাত্রি পর্যন্ত অনেক উৎসব এবং পুজো-পার্বণে ব্যস্ত ছিলাম। পবিত্র রমজান মাসও শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে শ্রী রাম নবমীর মহা উৎসবও আসতে চলেছে। এর পর মহাবীর জয়ন্তী, Good Friday এবং Easter-ও আসবে। এপ্রিল মাসে, আমরা ভারতের দুই মহান ব্যক্তিত্বের জন্মবার্ষিকীও উদযাপন করি। এই দুই মহাপুরুষ হলেন – মহাত্মা জ্যোতিবা ফুলে এবং বাবাসাহেব আম্বেদকর। এই দুই মহাপুরুষই সমাজের বৈষম্য দূর করতে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছিলেন। আজ স্বাধীনতার অমৃতকালে আমাদের এমন মহান ব্যক্তিত্বদের কাছ থেকে শেখার এবং নিরন্তর অনুপ্রেরণা নেওয়া দরকার। আমাদের কর্তব্যকে সর্বাগ্রে রাখতে হবে। বন্ধুরা, এই সময়ে কিছু জায়গায় করোনাও বাড়ছে। সেজন্য আপনাদের সবাইকে আরও সাবধান হতে হবে, স্বচ্ছতার বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। আগামী মাসে, 'মন কি বাত'-এর শততম (১০০তম) পর্বে, আমরা আবার মিলিত হব, ততদিনের জন্য আমাকে বিদায় দিন। ধন্যবাদ । নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। মন কি বাতের এই ৯৮তম পর্বে আপনাদের সবার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আমার খুব ভালো লাগছে। শতপূর্তির দিকে এই যাত্রায়, মন কি বাত-কে, আপনারা সবাই, জনসাধারণের অংশগ্রহণের যে অভিব্যক্তি তার অনন্য মঞ্চ করে তুলেছেন। প্রত্যেক মাসে লক্ষ লক্ষ বার্তায় কত মানুষের মন কি বাত আমার কাছে এসে পৌঁছয়। আপনারা নিজেদের মনের শক্তি সম্পর্কে তো জানেনই, এভাবেই সমাজের শক্তিতে কীভাবে দেশের শক্তি বাড়ে, এটা আমরা মন কি বাতের ভিন্ন ভিন্ন পর্বে দেখেছি, বুঝেছি, আর আমি অনুভব করেছি - স্বীকারও করেছি। আমার সেই দিনটির কথা মনে আছে যদিন আমরা মন কি বাতে ভারতের চিরাচরিত খেলাধুলোকে উৎসাহ দেওয়ার কথা আলোচনা করেছিলাম। তৎক্ষণাৎ ভারতে একটা ঢেউ উঠল চিরাচরিত খেলাধুলোকে যুক্ত করার, তার চর্চার, সেগুলো শেখার। মন কি বাতে যখন ভারতের খেলনার আলোচনা হল তখন দেশের মানুষ সক্রিয়ভাবে একে উৎসাহ দিল। এখন তো ভারতের খেলনার এমন ক্রেস তৈরি হয়ে গিয়েছে যে বিদেশেও এর চাহিদা খুব বাড়ছে। যখন মন কি বাতে আমরা স্টোরি টেলিং-এর ভারতীয় ধারা সম্পর্কে চর্চা করলাম তখন এর সুনাম দূরদূরান্তে পৌঁছে গেল। বেশি-বেশি মানুষ স্টোরি টেলিং-এর ভারতীয় ধারা প্রতি আকৃষ্ট হতে লাগল।
বন্ধুগণ, আপনাদের মনে আছে যে সর্দার প্যাটেলের জন্মজয়ন্তী অর্থাৎ একতা দিবসে মন কি বাতে আমরা তিনটে প্রতিযোগিতার কথা বলেছিলাম। এই সব প্রতিযোগিতা দেশভক্তির উপর আধারিত গীত, লোরি আর রঙ্গোলি নিয়ে ছিল। আমার বলতে ভালো লাগছে যে গোটা দেশের সাতশোরও বেশি জেলার পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ প্রবল উৎসাহে এতে অংশ নেয়। শিশুরা, বড়রা, প্রবীণরা সবাই এতে হৈ হৈ করে অংশ নেয় আর কুড়িটিরও বেশি ভাষায় নিজেদের এন্ট্রি পাঠায়। এই সব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সব প্রতিযোগীকে আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক অভিনন্দন। আপনারা প্রত্যেকে, নিজেই, এক একজন চ্যাম্পিয়ন, শিল্প সাধক। আপনারা সবাই এটা দেখিয়েছেন যে নিজের দেশের বৈচিত্র্য এবং সংস্কৃতির প্রতি আপনাদের হৃদয় কতটা প্রেম রয়েছে।
বন্ধুগণ, আজ এই প্রসঙ্গে আমার লতা মঙ্গেশকর জী, অর্থাৎ লতা দিদির কথা মনে পড়া অত্যন্ত স্বাভাবিক। কারণ যখন এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল তখন লতা দিদি ট্যুইট করে দেশবাসীর কাছে অনুরোধ করেন যাতে তাঁরা অবশ্যই এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হন।
বন্ধুগণ, লোরি লিখন প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার জেতেন কর্ণাটকের চামরাজনগর জেলার বি এম মঞ্জুনাথ’জী। তিনি এই পুরস্কার পান কন্নড় ভাষায় লেখা তাঁর লোরি 'মালগু কন্দা'র জন্য। এটা লেখার প্রেরণা তিনি পান নিজের মা আর ঠাকুমার গাওয়া লোরি-গীত থেকে। এটা শুনলে আপনাদেরও ভালো লাগবে।
ঘুমিয়ে পড়ো, ঘুমিয়ে পড়ো আমার বেবি
আমার বুদ্ধিমান সোনা, ঘুমিয়ে পড়ো
দিন শেষ হয়ে নেমেছে অন্ধকার
ঘুমের দেবী চলে আসবেন
তারাদের বাগান থেকে
স্বপ্ন নিয়ে আসবেন
ঘুমিয়ে পড়ো, ঘুমিয়ে পড়ো
জোজো জো জো
জোজো জো জো
অসমের কামরূপ জেলার বাসিন্দা দিনেশ গোয়ালা জী এই প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় পুরস্কার জিতেছেন। ইনি যে লোরি লিখেছেন তাতে মাটি আর ধাতু দিয়ে তৈরি স্থানীয় বাসন তৈরীর কারিগরের Propular Craft-এর ছাপ রয়েছে।
কুমোর দাদা বস্তা নিয়ে এসেছেন
আচ্ছা, কী আছে কুমোরের এই বস্তার মধ্যে?
কুমোরের বস্তা খুলে দেখতে পেলাম
বস্তার মধ্যে রয়েছে মিষ্টি একটা বাটি
আমাদের পুচকিটা কুমোরকে জিজ্ঞাসা করল
কেমন এই ছোট্ট বাটি!
গীত আর লোরির মতোই রঙ্গোলি প্রতিযোগিতাও খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। এতে অংশ নেওয়া প্রতিযোগীরা দারুণ দারুণ রঙ্গোলি বানিয়ে পাঠিয়েছেন। এতে বিজয়ী এন্ট্রি ছিল পঞ্জাবের কমল কুমার জী-র। ইনি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং অমর শহীদ বীর ভগৎ সিংহের খুব সুন্দর রঙ্গোলি বানিয়েছেন। মহারাষ্ট্রের সাংলির শচীন নরেন্দ্র অওসারি’জী নিজের রঙ্গোলিতে জালিয়ানওয়ালাবাগ, সেখানকার নরসংহার আর শহীদ উধম সিংহের বীরত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন।
গোয়ার বাসিন্দা গুরুদত্ত ওয়ান্তেকার গান্ধীজির রঙ্গোলি তৈরি করেছিলেন, অন্যদিকে পুদুচেরির মালাতিসেলভম জি’ও অনেক মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উপর মনোনিবেশ করেছিলেন। দেশাত্মবোধক গানের প্রতিযোগিতার বিজয়ী, টি. বিজয় দুর্গা’জী অন্ধ্র প্রদেশের মানুষ। তিনি তেলুগু ভাষায় নিজের এন্ট্রি পাঠিয়েছিলেন। তিনি নিজের অঞ্চলের প্রসিদ্ধ স্বাধীনতা সংগ্রামী নরসিংহ রেড্ডি গারুজী দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। আপনারাও বিজয় দুর্গা’জী সেই এন্ট্রির কিছুটা অংশ শুনুন
(Telugu Sound Clip (27 seconds) HINDI Translation)
রেনাড়ু প্রদেশের সূর্য,
হে বীর নরসিংহ!
ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের অংকুর তুমি, অঙ্কুশ তুমি!
ব্রিটিশদের অন্যায় ও স্বৈরাচারী দমন-পীড়নের ঘটনা দেখে।
তোমার রক্ত গরম হয়েছিল এবং আগুন জ্বলেছিল!
রেনাড়ু প্রদেশের সূর্য,
হে বীর নরসিংহ!
তেলেগুর পরে, এখন আমি আপনাকে মৈথিলীতে একটি ক্লিপ শোনাব। এটি পাঠিয়েছেন দীপক বৎস’জী। এই প্রতিযোগিতায় তিনি পুরস্কারও জিতেছেন।
(Maithili Sound Clip (30 seconds) HINDI Translation)
ভারত বিশ্বের গর্ব ভাই,
আমাদের দেশ মহান
তিন দিক সাগরে ঘেরা,
উত্তরে কৈলাস বলবান,
গঙ্গা, যমুনা, কৃষ্ণা, কাবেরী,
কোশি, কমলা, বলান
আমাদের দেশ মহান ভাই।
তেরঙা অন্ত প্রাণ
বন্ধুরা, আশা করি আপনাদের ভালো লেগেছে। প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন এমন এন্ট্রির তালিকা অনেক দীর্ঘ। আপনি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে, আপনার পরিবারের সাথে তাঁদের দেখুন এবং শুনুন - আপনি অনেক অনুপ্রেরণা পাবেন। আমার প্রিয় দেশবাসী, বেনারসের কথাই হোক, সানাইয়ের কথাই হোক, ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান জীর কথাই হোক, আমার মনোযোগ সেদিকে যাবেই। কয়েকদিন আগে 'ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান যুব পুরস্কার' দেওয়া হয়েছে। সঙ্গীত ও পারফর্মিং আর্ট এর ক্ষেত্রে উদীয়মান, প্রতিভাবান শিল্পীদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়। এই পুরস্কার শিল্প, কলা ও সঙ্গীত জগতের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির পাশাপাশি, সমৃদ্ধিতেও অবদান রাখছে। এর মধ্যে এমন শিল্পীরাও অন্তর্ভুক্ত যাঁরা সেই সকল বাদ্যযন্ত্রগুলির নবজাগরণ ঘটিয়েছেন, যাদের জনপ্রিয়তা সময়ের সাথে কমে যাচ্ছিল। এখন, আপনারা সবাই এই টিউনটি মন দিয়ে শুনুন...
(Sound Clip (21 seconds) Instrument- ‘ সুরসিঙ্গার’, Artist - জয়দীপ মুখার্জী)
আপনি কি জানেন এটি কোন বাদ্যযন্ত্র? আপনি হয়তো জানেন না! এই বাদ্যযন্ত্রের নাম 'সুরসিঙ্গার' এবং এই সুরটি রচনা করেছেন জয়দীপ মুখার্জি।
ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান পুরস্কারে সম্মানিত যুবকদের মধ্যে জয়দীপ জি একজন । ৫০ ও ৬০-এর দশকে থেকেই এই বাদ্যযন্ত্রের সুর শুনতে পাওয়া দুর্লভ হয়ে পড়লেও জয়দীপ সুরসিঙ্গারকে আবার জনপ্রিয় করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। একইভাবে, বোন উপ্পলপু নাগমণি জি’র প্রচেষ্টাও অত্যন্ত অনুপ্রেরণাদায়ক, যাঁকে ম্যান্ডোলিনে কর্নাটকী ইন্সট্রুমেন্টালের জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আবার সংগ্রাম সিং সুহাস ভান্ডারে জি বারকরি কীর্তনের জন্য এই পুরস্কার পেয়েছেন। এই তালিকায় শুধু সঙ্গীত শিল্পীই আছেন এমন নয় - ভি দুর্গা দেবী’জি 'করকাট্টম', একটি প্রাচীন নৃত্যশৈলীর জন্য এই পুরস্কার জিতেছেন। এই পুরস্কারের আরেকজন বিজয়ী, রাজ কুমার নায়ক জী, তেলেঙ্গানার ৩১টি জেলায় ১০১ দিন ধরে চলা পেরিনি ওডিসির আয়োজন করেছিলেন। আজ সকলে তাঁকে পেরিনি রাজকুমার নামেই চেনে। পেরিনি নাট্যম, ভগবান শিবকে উৎস্বর্গীকৃতএকটি নৃত্য, কাকাতিয়া রাজবংশের সময় খুব জনপ্রিয় ছিল। এই রাজবংশের শিকড় আজকের তেলেঙ্গানার সাথে সম্পর্কিত। আর একজন পুরস্কার বিজয়ী হলেন সাইখোম সুরচন্দ্রা সিং।
ইনি মাইতেই পুং যন্ত্রটি তৈরিতে তার দক্ষতার জন্য প্রসিদ্ধ. এই বাদ্যযন্ত্রটির মনিপুরের সঙ্গে যোগ আছে। পুরন সিংহ, যিনি একজন দিব্যাংগ শিল্পী, যিনি রাজুলা মালুশাহী,নিউলি, হুড়কা বল, জাগারের মতো সংগীতের বিভিন্ন ধারাকে জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি এই সংক্রান্ত বেশ কিছু অডিও রেকর্ডিংও করেছেন। উত্তরাখন্ড এর লোকসঙ্গীতে নিজের উৎকর্ষের নিদর্শন রেখে তিনি বেশ কিছু পুরস্কারও পেয়েছেন। সময়ের অপ্রতুলতার কারণে আমি এখানে সব পুরস্কার প্রাপকদের নাম না নিতে পারলেও, আমি আশাবাদী যে আপনারা ওঁদের সম্পর্কে নিশ্চই খোঁজ রাখবেন। আমি এও আশা রাখি যে এই সব শিল্পীরা তাদের Performing Arts কে আরো জনপ্রিয় করে তোলার জন্য তৃণমূল স্তরে গিয়ে সকলকে অনুপ্রাণিত করবেন। আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের দেশ এখন দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। দেশের বিভিন্ন কোণায় আমরা ডিজিটাল ইন্ডিয়ার শক্তি উপলব্ধি করতে পারছি। ডিজিটাল ইন্ডিয়ার শক্তিকে ঘরে ঘরে পৌঁছনোর পেছনে অনেকগুলো apps এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। এমনি একটি app হলো ই-সঞ্জীবনী। এই app এর সাহায্যে টেলি -কন্সালটেশন অর্থাৎ দূরে বসেই ভিডিও কনফারেন্সিঙের মাধ্যমে ডক্টরের কাছ থেকে আপনার রোগ ব্যাধি নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব। এই app ব্যবহার করে এখনো পর্যন্ত ১০ কোটিরও বেশি মানুষ টেলি কন্সালটেশন করেছেন। আপনারা ভাবতে পারেন ! ১০ কোটি লোক ভিডিও কন্সালটেশন করেছেন! রুগী ও চিকিৎসকের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরী হলো, এটা একটা বিরাট প্রাপ্তি। আর এই প্রাপ্তির জন্য আমি সকল চিকিৎসক এবং এই সুবিধাপ্রাপ্ত সকল রুগীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। ভারতবাসীরা, কিভাবে এই প্রযুক্তিকে নিজেদের জীবনের অঙ্গ করেছেন এটি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমরা দেখেছি কোরোনাকালে কিভাবে এই ই-সঞ্জীবনী app এর মাধ্যমে হওয়া টেলিকনসালটেশন কত মানুষের কাছে একটা আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমার মনে হলো যে এই নিয়ে “মন কি বাতে” একজন চিকিৎসক ও রুগীর সঙ্গে আলোচনা করা যাক, তাদের কথা শোনা যাক এবং আপনাদের কাছে সেটা পৌঁছানো যাক। আমরা জানতে চাইবো যে এই টেলি কন্সালটেশন মানুষের জন্য কতটা উপকারী। আমাদের সঙ্গে আছেন সিক্কিমের এক চিকিৎসক, ডাক্তার মদন মণি’জী ।ডাক্তার মদন মণি’জী, সিক্কিমের বাসিন্দা ঠিকই কিন্তু তিনি তার MBBS ধানবাদ থেকে করেছেন এবং তারপর বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি থেকে MD করেছেন। উনি বিভিন্ন গ্রামীণ অঞ্চলের বহু মানুষদের টেলি কন্সালটেশন দ্বারা চিকিৎসা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী – নমস্কার.. নমস্কার… মদন মণি’জী।
ডা: মদন মণি – নমস্কার স্যার।
প্রধানমন্ত্রী – আমি নরেন্দ্র মোদী বলছি।
ডা: মদন মণি– হ্যাঁ.. হ্যাঁ.. বলুন স্যার।
প্রধানমন্ত্রী – আপনি তো বেনারসে পড়াশোনা করেছেন?
ডা: মদন মণি– হ্যাঁ.. স্যার আমি বেনারসে পড়াশোনা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী – আপনার medical education ওখানেই হয়েছে?
ডা: মদন মণি – হ্যাঁ.. হ্যাঁ..
প্রধানমন্ত্রী – তাহলে আপনি যেসময় বেনারসে ছিলেন, সেই তখনকার বেনারস আর এখনকার বদলে যাওয়া বেনারস কখনও দেখতে গেছেন নাকি যাওয়া হয়নি?
ডা: মদন মণি – হ্যাঁ প্রধানমন্ত্রী’জী আমি যেতে পারিনি, যবে থেকে সিকিমে চলে এসেছি, কিন্তু আমি শুনেছি যে বেশ পরিবর্তন ঘটেছে।
প্রধানমন্ত্রী – তো কত বছর হয়ে গেল আপনি বেনারস ছেড়েছেন?
ডা: মদন মণি – বেনারস 2006 সালে ছেড়ে এসেছি, স্যার।
প্রধানমন্ত্রী – ওহ আচ্ছা.. তাহলে আপনার নিশ্চয় একবার যাওয়া উচিৎ।
ডা: মদন মণি – হ্যাঁ.. হ্যাঁ.. স্যার।
প্রধানমন্ত্রী – আচ্ছা, আমি ফোন করেছি, এই কারণে যে আপনি সিকিমের ভেতরে প্রত্যন্ত পাহাড়ে থেকে বসবাসকারী জনগণকে টেলিকনসালটেশনের দুর্দান্ত পরিষেবা প্রদান করছেন।
ডা: মদন মণি – হ্যাঁ..
প্রধানমন্ত্রী – আমি মন কি বাতের শ্রোতা বন্ধুদের আপনার অভিজ্ঞতাশোনাতে চাই।
ডা: মদন মণি – আচ্ছা..
প্রধানমন্ত্রী – একটু বলুন আমাকে, কেমন অভিজ্ঞতা ছিল?
ডা: মদন মণি – অভিজ্ঞতা খুব ভালো ছিল প্রধানমন্ত্রী জি। ব্যাপারটা হল, সিকিমে, খুব কাছাকাছিও যে PHC রয়েছে, সেখানে যেতেও লোকজনেদের গাড়িতে চেপে কমপক্ষে এক-দুশো টাকা নিয়ে যেতে হতো। আর ডাক্তার পাওয়া যায়, কি না পাওয়া যায়, সেটাও একটা problem। তাই Tele Consultation-এর মাধ্যমে মানুষ আমাদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হতে পারেন, এমনকি দূর দূরান্তের মানুষও। Health & Wellness Centre-এর যারা CHOs রয়েছেন, তারাও আমাদের, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। আর আমরা, যদি তাদের কোন পুরনো অসুখ থাকে তার reports, তার এখনকার present condition, ইত্যাদি সবকিছুই তাদের জানিয়ে দি।
প্রধানমন্ত্রী – মানে document transfer করেন।
ডা: মদন মণি – হ্যাঁ.. হ্যাঁ। Document transferও করি এবং যদি transfer করতে না পারি, তাহলে আমরা তা মানুষদের পড়ে শোনাই।
প্রধানমন্ত্রী – ওখানের Wellness Centre-এর doctor বলে দেন।
ডা: মদন মণি – হ্যাঁ, Wellness Centre-এর যে CHO থাকেন তিনি, Community Health Officer।
প্রধানমন্ত্রী – আর যারা patient, তারা নিজেদের অসুবিধার বিষয়ে আপনাদের সরাসরি বলেন।
ডা: মদন মণি – হ্যাঁ, patientও নিজের অসুবিধা আমাদের জানান। তারপর পুরনো records দেখে, আবার যদি নতুন কিছু পাওয়া যায় তা জানানো হয়। ধরুন, যদি কারোর Chest Auscultate করাতে হয়, তাহলে জানা দরকার তার পা ফোলা নেই তো! যদি CHO তা না দেখে থাকেন, তাহলে আমরা সেই ব্যক্তিকে বলি যে সে যেন পরীক্ষা করায় তার ফোলা রয়েছে কি নেই, চোখ দেখাতে বলা হয়, anaemia রয়েছে কিনা, যদি তার কাশি হয়ে থাকে তাহলে Chest-এর Auscultate করিয়ে জানা দরকার সেখানে sounds রয়েছে কিনা।
প্রধানমন্ত্রী – আপনি Voice Call-এ কথা বলেন না Video Call-এরও ব্যবহার করেন?
ডা: মদন মণি – হ্যাঁ, Video Call-এরও ব্যবহার করি।
প্রধানমন্ত্রী – তাহলে patient-কে, আপনিও দেখতে পান?
ডা: মদন মণি – হ্যাঁ, patient-কেও দেখতে পাই।
প্রধানমন্ত্রী – Patient-এর কি রকম feeling হয়?
ডা: মদন মণি – Patient-এর ভালই লাগে কারণ ডাক্তারকে তারা এত কাছে দেখতে পায়। তাদের confusion থাকে যে তাদের ওষুধ বাড়ানো হবে না কমানো হবে, কারণ সিকিমে বেশিরভাগ patient diabetes, Hypertension ইত্যাদিতে ভোগে, একটা diabetes ও hypertension-এর ওষুধ change করানোর জন্য তাঁকে ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করতে অনেক দূর যেতে হয়। কিন্তু Tele Consultation-এর মাধ্যমে ওখানেই পরামর্শ পাওয়া যায় আর ওষুধও health & Wellness Centre-এ Free Drugs initiative-এর দরুন পাওয়া যায়। তাই একই জায়গা থেকেই ওষুধও নিয়ে যেতে পারে সবাই।
প্রধানমন্ত্রী – আচ্ছা মদনমণি জি, আপনি তো জানেন যে patient-দের একটা স্বভাব রয়েছে যে যতক্ষণ না ডাক্তার আসছেন, এবং দেখছেন, ততক্ষণ সে সন্তুষ্ট হয় না, আর ডাক্তারেরও মনে হয় রোগীকে দেখতে হবে, তাহলে এখানে যে পুরো ব্যাপারটাই Telecom-এর Consultation-এর মাধ্যমে হচ্ছে, তখন সেখানে ডাক্তার কি feel করছে, patient-টি বা কি feel হচ্ছে?
ডা: মদন মণি – হ্যাঁ, আমাদেরও মনে হয় যদি patient মনে করেন যে ডাক্তারের দেখা উচিত, তাহলে যা যা দেখা প্রয়োজন, তা আমরা CHO-কে বলে video-তেই দেখাবার কথা বলি। আর কখনো কখনো তো patient-কে video-তেই কাছে এসে তার যা সমস্যা রয়েছে, ধরুন কারুর যদি চামড়ার কোন problem হয়েছে, skin-এর problem হয়েছে, তখন আমরা তার সমস্যা video-তেই দেখিয়ে দি। তাই তাঁরাও সন্তুষ্টি হন।
প্রধানমন্ত্রী – আর তারপর রোগীকে পরিষেবা দেবার পর তিনি যখন খুশি হন তখন কি রকম অনুভব হয়? রোগী কি সুস্থ হচ্ছেন?
ডা: মদন মণি – হ্যাঁ খুব ভালো লাগে। আমাদেরও ভালো লাগে স্যার। কারন আমি এখন স্বাস্থ্য বিভাগে আছি আর এর সঙ্গে আমি টেলি কনসাল্টেশন ও করি, তাই ফাইলের সঙ্গে সঙ্গে পেশেন্টদের দেখাশোনা করাও আমায় অনেক আনন্দের অনুভূতি দেয়।
প্রধানমন্ত্রী – গড়ে কতজন রোগীর টেলিকনসাল্টেশন কেস আপনার কাছে আসে?
ডা: মদন মণি – এখন অবধি আমি ৫৩৬ জন রোগী দেখেছি।
প্রধানমন্ত্রী – ওহ অর্থাৎ আপনার এই বিষয়ে অনেকটা দক্ষতা এসে গেছে।
ডা: মদন মণি – হ্যাঁ ভালো লাগে দেখতে।
প্রধানমন্ত্রী – আমি আপনাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এই টেকনোলজির মাধ্যমে আপনি সিকিমের দূর দূরান্তের জঙ্গলে, পাহাড়ের বাসিন্দাদের এত বড় পরিষেবা দিচ্ছেন। আর খুশির কথা এটাই যে আমাদের দেশের প্র্রান্তিক ক্ষেত্রেও এই টেকনোলজির এত সুন্দর ব্যবহার হচ্ছে। আমার তরফ থেকে আপনাকে অনেক অনেক অভিনন্দন।
ডা: মদন মণি – ধন্যবাদ।
বন্ধুরা ডঃ মদন মনির কথা থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে এই ই-সঞ্জীবনী অ্যাপ কিভাবে ওনার সাহায্য করছে। ডক্টর মদন জি’র পরে আমরা আরো এক মদনজির সঙ্গে কথা বলব। ইনি হলেন উত্তরপ্রদেশের চন্দৌলি জেলার অধিবাসী মদন মোহন লাল জি। এখন এটাও একটা অদ্ভুত বিষয় যে চন্দৌলিও বেনারসের পাশেই অবস্থিত। আসুন মদনমোহন জি’র কাছ থেকে জানি যে ই-সঞ্জীবনী কে নিয়ে একজন রোগী হিসেবে ওনার অনুভূতি কি রকম?
প্রধানমন্ত্রী – মদন মোহন জি প্রণাম।
মদন মোহন জি – নমস্কার, নমস্কার সাহেব।
প্রধানমন্ত্রী – নমস্কার। আচ্ছা আমাকে এটা বলা হয়েছে যে আপনি ডায়াবেটিসের রোগী।
মদন মোহন জি – হ্যাঁ।
প্রধানমন্ত্রী – আর আপনি টেকনোলজির সাহায্যে টেলিকনসালটেশন করে আপনার রোগের সম্বন্ধে সাহায্য নেন।
মদন মোহন জি – হ্যাঁ।
প্রধানমন্ত্রী – একজন পেশেন্ট হয়ে আমি আপনার অনুভূতি শুনতে চাই, যাতে আমি দেশবাসীর কাছে এই কথাটা পৌঁছে দিতে পারি যে আজ টেকনোলজির মাধ্যমে আমাদের গ্রামের মানুষেরাও কিভাবে এর সাহায্য নিতে পারেন। একটু বলুন কিভাবে ব্যবহার করেন?
মদন মোহন জি – আসলে স্যার হসপিটাল অনেক দূরে আর আমার যখন ডায়াবেটিস হলো তখন আমাকে ৫-৬ কিলোমিটার দূরে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হতো, ডাক্তার দেখাতে হতো। যখন থেকে আপনার দ্বারা এই ব্যবস্থা করা হয়েছে তখন থেকে আমি যাই, আমার পরীক্ষা করা হয়, আমাদের বাইরের ডাক্তারদের সঙ্গে কথাও বলিয়ে দেওয়া হয় আর ওষুধও দিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে আমার ও আমার মতো অনেক মানুষের লাভ হল।
প্রধানমন্ত্রী – তাহলে প্রতিবার কী একই ডাক্তারবাবু দেখেন; না কী ডাক্তার বদলে যায়?
মদন মোহন জি – যখন সে বুঝতে পারেন না, তখন ডাক্তারবাবুকে দেখায়। তারপর তিনিই কথা বলে অন্য ডাক্তারের সঙ্গে আমার কথা বলিয়ে দেয়।
প্রধানমন্ত্রী – আর ডাক্তার আপনাকে যে গাইডেন্স (guidance) দেয় তাতে কি আপনার সম্পূর্ণ লাভ হয়?
মদন মোহন জি – হ্যাঁ লাভ তো হয়েই, এতে আমার অনেক সুবিধা হয়। আর গ্রামের লোকজনেরো সুবিধা হয়। সবাই ওখানেই বলেন যে দাদা আমাদের BP আছে বা সুগার আছে, Test করুন বা পরীক্ষা নিরীক্ষা করুন, ওষুধ দিন। আর আগে তো ৫-৬ কিলোমিটার দূরে যেতে হতো। লম্বা লম্বা লাইন পড়তো। Pathology-তেও লাইন পড়তো, একটা গোটা দিন নষ্ট হয়ে যেতো।
প্রধানমন্ত্রী – মানে আপনার সময়-ও বেঁচে যাচ্ছে!
মদন মোহন জি – তাছাড়া পয়সা'ও খরচ হতো, আর এখানে বিনামূল্যে সব পরিষেবা পাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী – আচ্ছা, যখন আপনি সামনাসামনি ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করেন তখন একটা ভরসা তৈরি হয়। মনে হয় অন্তত ডাক্তারবাবু আছেন, আমার পালস দেখে নিয়েছেন, চোখ পরীক্ষা করেছেন, আমার জিভ চেক করেছেন; মানে একটা অন্যরকম feeling কাজ করে, কিন্তু যখন এই tele consultation এর সাহায্য নিতে হয় তখন কী সেই একই রকম ভরসা তৈরি হয়?
মদন মোহন জি – হ্যাঁ, অবশ্যই ভরসা তৈরি হয়! উনি আমার নাড়ি পরীক্ষা করছেন, স্টেথোস্কোপে শ্বাস পরীক্ষা করছেন- এরকমই একটা অনুভূতি আমার হয়, আর আমার শরীরটাও বেশ ভালো লাগে। এতো সুন্দর একটা ব্যবস্থা আপনার জন্য আমরা পেয়েছি যে তার ফলে আমাদের কষ্ট করে যেখানে যেতে হতো, গাড়ির ভাড়া দিতে হতো, লাইন দিতে হতো, সেখানে সব পরিষেবা আমরা ঘরে বসে বসেই পেয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী – আচ্ছা মদন মোহন জি, আপনাকে অনেক অনেক অভিনন্দন। এই বয়সে এসেও আপনি technology সম্পর্কে জেনেছেন, এর ব্যবহার-ও করছেন। অন্যদেরও বলুন যাতে তাদের সময় বেঁচে যায়, খরচও বেঁচে যায়, আর তাঁদের যে উপায় বাতলে দেওয়া হয় সেইমতো ওষুধ পেতেও কোন অসুবিধা হয় না।
মদন মোহন জি – হ্যাঁ, সেই আর কি!
প্রধানমন্ত্রী – আচ্ছা আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা মদন মোহন জি।
মদন মোহন জি – সাহেব, আপনি বেনারসকে কাশি বিশ্বনাথ স্টেশন করেছেন। আপনার জন্যে Devlopment হয়েছে । তাই আপনাকে আমাদের তরফ থেকে অভিনন্দন।
প্রধানমন্ত্রী – আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ, তবে আমি নয়, বেনারসের মানুষই বেনারসকে গড়ে তুলেছেন, আমি তো শুধুই মা গঙ্গার সেবার জন্যে এখানে, মা গঙ্গা'ই আমাকে ডেকেছেন, ব্যাস এটুকুই। আচ্ছা ঠিক আছে, আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। প্রনাম।
মদন মোহন জি – নমস্কার স্যার।
প্রধানমন্ত্রী – হ্যাঁ নমস্কার!
বন্ধুগণ, দেশের সাধারণ মানুষের জন্য, মধ্যবিত্তদের জন্য, পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দাদের জন্য E- Sanjivani., নামে জীবন রক্ষার অ্যাপ তৈরি হয়েছে। এটি হলো ভারতবর্ষের ডিজিটাল বিপ্লবের শক্তি। আর তার প্রভাব আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখতে পাচ্ছি। আপনারা তো জানেনই ভারতের ইউপিআই এর ক্ষমতা। বিশ্বের বহু দেশ এর প্রতি আকৃষ্ট। কিছুদিন পূর্বেই ভারত আর সিঙ্গাপুরের মধ্যে upi pay now link লঞ্চ করা হয়েছে। এখন ভারত আর সিঙ্গাপুর বাসীরা নিজেদের মোবাইল ফোন থেকে ঠিক সেই ভাবেই পয়সার লেনদেন করছেন যেভাবে তারা নিজেদের দেশে করে থাকেন। আমি খুবই আনন্দিত যে জনগণ এর সুযোগ নেওয়া শুরু করে দিয়েছে। ভারতের ই সঞ্জীবনী app বলুন বা UPI, এগুলি Ease of Living কে আরো উন্নত করতে সাহায্য করেছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী। যখন কোন দেশে, বিলুপ্তপ্রায় কোন বিশেষ পাখির প্রজাতিকে, বা কোন জীবকে বাঁচানো হয়, তখন সারা বিশ্বে সেটার চর্চা হয়। আমাদের দেশে এমন অনেক মহান পরম্পরা আছে যেগুলি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল, জনমানস থেকে মুছে গিয়েছিল, কিন্তু এখন জনগণের অংশগ্রহণের ফলে ফের পুনর্জীবিত হয়ে উঠেছে আর তার চর্চার জন্য মন কি বাতের মঞ্চের চেয়ে ভালো কি কিছু হতে পারে?
এখন আমি আপনাদের যা বলতে চলেছি, সেটা জেনে আপনাদের সত্যিই খুব ভালো লাগবে এবং ঐতিহ্যের প্রতি গর্ববোধ করবেন। আমেরিকার নিবাসী শ্রীমান কাঞ্চন ব্যানার্জি ঐতিহ্যের সংরক্ষণের কাজের যুক্ত একটি অভিযানের দিকে আমার নজর আকৃষ্ট করেছেন। আমি ওনাকে অভিনন্দন জানাই। বন্ধুগণ, পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায় বাঁশবেড়িয়াতে এই মাসে ত্রিবেণী কুম্ভ মহোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এতে ৮ লাখেরও বেশি ভক্তের সমাগম ঘটেছে। কিন্তু আপনারা কি জানেন এই মেলা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? এই জন্য গুরুত্ব পূর্ণ কারণ বিশেষ এই জন্য কারণ এই মেলাটিকে ৭০০ বছরের পর আবার পুনর্জীবিত করে তোলা হয়েছে। এমনিতেই এই পরম্পরা হাজার বছরেরও বেশি পুরনো, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ৭০০ বছর আগে বাংলার ত্রিবেণী তে এই মহোৎসবটি বন্ধ গিয়েছিল। স্বাধীনতার পর এটিকে আবার শুরু করা উচিত ছিল কিন্তু সেটাও হয়ে ওঠেনি। দু'বছর আগে স্থানীয় বাসিন্দারা এবং ত্রিবেণী কুম্ভ পরিচালনা সমিতির উদ্যোগে এই মহোৎসবটি আবার আরম্ভ করা হয়েছে। এই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত সব্বাইকে সাধুবাদ জানাই। আপনারা কেবলমাত্র একটি প্রথাকে জীবিত করে তুলছেন তা না; বরং ভারতবর্ষের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে রক্ষাও করছেন।
বন্ধুগণ , পশ্চিমবঙ্গের ত্রিবেণীকে যুগ যুগ ধরে একটি পবিত্র স্থান বলে মনে করা হয়। এটার উল্লেখ বিভিন্ন মঙ্গল কাব্যে, বৈষ্ণব সাহিত্যে, শাক্ত সাহিত্যে ও অন্যান্য বাংলা সাহিত্যের ধারায় লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল থেকে এইটা জানা যায় যে এই ঐতিহাসিক স্থানটি কোন এক সময় সংস্কৃত, শিক্ষা, ও ভারতীয় সংস্কৃতির কেন্দ্র ছিল। অনেক সাধুরাই এই স্থানটিকে মাঘ সংক্রান্তির কুম্ভ স্নানের জন্য পবিত্র মনে করেন। ত্রিবেণীতে আপনারা অনেক গঙ্গার ঘাট, শিব মন্দির ও টেরাকোটার কারুকার্য খচিত প্রাচীন ঘর-বাড়ি ইত্যাদি দেখতে পাবেন। ত্রিবেনীর ঐতিহ্যকে পুনঃস্থাপন করার জন্য ও কুম্ভ মেলার গৌরবকে পুনর্জীবিত করার জন্য এখানে গতবছর কুম্ভ মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। সাতশো বছর পর এই তিন দিন ব্যাপী কুম্ভ মহাস্নান ও মেলা এই ক্ষেত্রে। এক নতুন প্রাণশক্তির সঞ্চার ঘটিয়েছে। তিন দিন ধরে প্রত্যেক দিনের গঙ্গা আরতি, রুদ্রাভিষেক ও যজ্ঞে বহু মানুষ দলে দলে যোগ দিয়েছেন। এইবারের মহোৎসবে বিভিন্ন আশ্রম মঠ ও আখড়া থেকেও অনেকেই যোগদান করেছেন। বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ধারা যেমন কীর্তন, বাউল , গৌড়ীয়ন নৃত্য, শ্রীখোল, পটের গান, ছৌ নাচ, সান্ধ্য অনুষ্ঠানের আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। আমাদের দেশের তরুণদের তাদের সোনালী অতীতের সঙ্গে যুক্ত করার এটি একটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় প্রয়াস। ভারতবর্ষে এমন বহু প্রথা আছে যেগুলিকে রিভাইভ করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমি আশা করি যে এই সমস্ত বিষয়ের উপর আলোচনা এইদিকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, স্বচ্ছ ভারত অভিযান আমাদের দেশে জন-অংশীদারিত্বের অর্থই বদলে দিয়েছে। দেশের যে কোন স্থানে যদি স্বচ্ছতা সম্পর্কিত কোন কর্মসূচি চলে, তাহলে মানুষ তার খবর আমাকে অতি অবশ্যই পৌঁছে দেন। এভাবেই আমার মনোযোগ আকৃষ্ট হয়েছে, হরিয়ানার যুবাদের এক স্বচ্ছতা অভিযানের প্রতি। হরিয়ানাতে একটি গ্রাম আছে - দুলহেরী। সেখানকার যুবারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে ভিওয়ানী শহরকে স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে এক দৃষ্টান্ত রূপে গড়ে তুলতে হবে। তাঁরা "যুবা স্বচ্ছতা এবং জনসেবা সমিতি" নামে একটি সংগঠন তৈরি করেছেন। এই সংগঠনের সদস্যরা ভোর চারটের সময় ভিওয়ানী পৌঁছে যান। শহরের আলাদা আলাদা জায়গায় তারা একযোগে সাফাই অভিযান চালান। এঁরা এখনো পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে বহু টন জঞ্জাল পরিষ্কার করেছেন।
বন্ধুরা, স্বচ্ছ ভারত অভিযানের এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় "ওয়েস্ট টু ওয়েলথ" ও বটে। ওড়িশার কেন্দ্রপাড়া জেলার এক বোন কমলা মোহরানা একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী চালান। সেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা দুধের প্যাকেট ও অন্যান্য প্লাস্টিক প্যাকিং থেকে ঝুড়ি, মোবাইল স্ট্যান্ড এর মত অনেক দ্রব্য প্রস্তুত করেন। এটা তাদের জন্য স্বচ্ছতার পাশাপাশি উপার্জনেরও একটা প্রশস্ত উপায় হয়ে উঠছে। আমরা যদি মনস্থির করি তাহলে স্বচ্ছ ভারত অভিযানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারি। অন্ততপক্ষে প্লাস্টিক ব্যাগের বদলে কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করার সংকল্প তো আমাদের সবারই করা উচিত। আপনি দেখবেন আপনার এই সংকল্প আপনাকে কতটা তৃপ্তি দেবে, এবং পাশাপাশি অন্যদেরও অবশ্যই অনুপ্রাণিত করবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ আমরা ও আপনারা আরো একবার অনেক প্রেরণাদায়ক বিষয় নিয়ে কথা বললাম। পরিবারের সঙ্গে বসে সেগুলি আপনারা শুনলেন এবং সারাদিন তার গুঞ্জরণ আপনাদের মধ্যে থাকবে। দেশের কর্মক্ষমতা বিষয়ে আমরা যত আলোচনা করব ততই উদ্বুদ্ধ হব। সেই উদ্দীপনা-প্রবাহের সঙ্গে চলতে চলতে আজ আমরা "মন কি বাত" এর ৯৮ তম পর্বের গন্তব্য পর্যন্ত পৌঁছে গেছি। কিছুদিন পরই হোলির উৎসব। আপনাদের সবাইকে হোলির শুভকামনা জানাই। আমাদের উৎসবগুলি "ভোকাল ফর লোকাল" এই সংকল্পের সঙ্গেই আমাদের উদযাপন করতে হবে। আপনাদের অনুভূতির কথাও আমার সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ততক্ষণ পর্যন্ত আমাকে বিদায় দিন। পরের বার আরো নতুন নতুন বিষয়ে আপনাদের সঙ্গে কথা হবে। অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। ২০২৩-এর এটা প্রথম 'মন কি বাত' আর সেই সঙ্গে সঙ্গে এই কার্যক্রমের সাতানব্বইতম পর্বও বটে। আপনাদের সঙ্গে আবার একবার আলোচনা করে আমার খুব আনন্দ হচ্ছে। প্রত্যেক বছর জানুয়ারি মাসে ঘটনার ঘনঘটা থাকে। এই মাসে চোদ্দ জানুয়ারির আশেপাশে উত্তর থেকে দক্ষিণে, পূর্ব থেকে পশ্চিমে, গোটা দেশে পরবের চমক দেখা যায়। এর পরে দেশ নিজের গণতন্ত্রের উৎসবও পালন করে। এবারও সাধারণতন্ত্র দিবসের সমারোহের অনেক বিষয়ের প্রভূত প্রশংসা হয়েছে। জয়সলমীর থেকে পুল্কিত আমাকে লিখেছেন যে ২৬শে জানুয়ারি প্যারেডের সময় কর্তব্যপথ নির্মাণকারী শ্রমিকদের দেখে খুব ভালো লেগেছে। কানপুর থেকে জয়া লিখেছেন যে প্যারেডে অন্তর্ভুক্ত নানা ট্যাবলোর মধ্যে ভারতীয় সংস্কৃতির নানা দিক প্রত্যক্ষ করে আনন্দ পেয়েছেন। এই প্যারেডে প্রথম বার অংশ নেওয়া উটে আরোহী মহিলাদের এবং সিআরপিএফের মহিলা বিভাগেরও অনেক প্রশংসা হয়েছে।
বন্ধুরা, দেরাদুনের বৎসল জী আমাকে লিখেছেন, সবসময়ই ২৫শে জানুয়ারির জন্য অপেক্ষা করি কারণ ওই দিন পদ্ম পুরস্কার ঘোষণা হয়, আর এক অর্থে ২৫শে জানুয়ারির সন্ধ্যাই আমার ২৬শে জানুয়ারির প্রত্যাশাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। তৃনমূলস্তরে নিজের আত্মনিবেদন আর সেবার মনোভাবের সফল নিদর্শন রাখা ব্যক্তিদের জন্য পিপলস্ পদ্ম নিয়েও অনেক মানুষ নিজের ভাবনা ভাগ করে নিয়েছেন। এবার পদ্ম পুরস্কারে সম্মানিতদের মধ্যে জনজাতীয় গোষ্ঠী এবং জনজাতীয় জীবনের সঙ্গে জুড়ে থাকা মানুষের ভালো রকম প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। জনজাতীয় জীবন শহরের বিপুল ব্যস্ততা থেকে ভিন্ন। সেখানকার সমস্যাগুলোও আলাদা। এ সত্ত্বেও জনজাতীয় সমাজ নিজের পরম্পরা তুলে ধরতে সর্বদা তৎপর থাকে। জনজাতীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে জুড়ে থাকা বস্তুর সংরক্ষণ আর সেগুলো নিয়ে গবেষণার প্রচেষ্টাও হয়। এভাবেই টোটো, হো, কুই, কুবী এবং মাণ্ডার মত জনজাতির ভাষার উপর কাজ করা বেশ কয়েকজন মহানুভবী পদ্ম পুরস্কার পেয়েছেন। এটা আমাদের সবার জন্য গর্বের বিষয়। ধনীরাম টোটো, জানুম সিং সোয় এবং বি রামকৃষ্ণ রেড্ডিজীর নামের সঙ্গে তো এখন গোটা দেশের পরিচয় ঘটে গিয়েছে। সিদ্ধি, জারোয়া আর ওঙ্গে জনজাতির সঙ্গে কাজ করা মানুষদেরও এবার সম্মানিত করা হয়েছে। যেমন হীরাবাঈ লোবী, রতন চন্দ্র কর এবং ঈশ্বর চন্দ্র বর্মাজী। জনজাতীয় গোষ্ঠী আমাদের পৃথিবী, আমাদের ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থেকেছে। দেশ ও সমাজের বিকাশে তাঁদের অবদান খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের জন্য কাজ করা মানুষদের সম্মান নতুন প্রজন্মকেও উদ্বুদ্ধ করবে। এ বছর পদ্ম পুরস্কারের গুঞ্জন সেই সব জায়গাতেও শোনা যাচ্ছে যেগুলো এক সময় নকশাল অধ্যুষিত ছিল। নিজেদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে নকশাল অধ্যুষিত এলাকার বিপথগামী যুবকদের সঠিক পথ দেখানো ব্যক্তিদের পদ্ম পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছে। এর জন্য কাঙ্কেরে কাঠের উপর কারুকাজ করা অজয় কুমার মণ্ডাবী আর গড়চিরৌলির প্রসিদ্ধ ঝাডীপট্টী রঙ্গভূমির সঙ্গে যুক্ত পরশুরাম খোমাজী খুণেও এই সম্মান পেয়েছেন। এভাবেই উত্তর-পূর্ব ভারতে আমাদের সংস্কৃতির সংরক্ষণে যুক্ত রামকুইবাঙবে নিউমে, বিক্রম বাহাদুর জমাতিয়া এবং করমা ওয়াংচুক-কেও সম্মানিত করা হয়েছে।
বন্ধুরা, এবছর পদ্ম পুরস্কারে সম্মানিত ব্যক্তিদের মধ্যে এমন অনেকেই রয়েছেন যাঁরা সংগীত জগতকে সমৃদ্ধ করেছেন। এমন কেউ নেই যার সংগীত পছন্দ নয়। এক-একজনের সংগীতের পছন্দ আলাদা আলাদা হতে পারে কিন্তু সংগীত প্রত্যেকের জীবনের একটি অংশ। এই বার পদ্ম পুরস্কার বিজয়ীদের মধ্যে এমন ব্যক্তিত্ব আছেন, যাঁরা সন্তুর, বমহুম, দোতারার মত আমাদের পারম্পরিক বাদ্যযন্ত্রের সুর ছড়িয়ে দিতে পারদর্শিতা রাখেন। গোলাম মোহাম্মদ জাজ, মোয়া সু - পোঙ্গ, রি সিংবোর কুরকা লাঙ্গ, মুনি - বেংকটপ্পা, এবং মঙ্গল কান্তি রায় এমন অনেক নাম আছে যাঁদের নিয়ে চারিদিকে আলোচনা হচ্ছে।
বন্ধুরা, পদ্ম পুরস্কার বিজয়ী অনেকেই, আমাদের মধ্যে থাকা সেই বন্ধু, যাঁরা, আমাদের দেশকে সবার উপরে রেখেছেন, রাষ্ট্রই প্রথম - এই বিচারধারায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাঁরা সেবাপরায়ণ হয়ে নিজেদের কাজ করে চলেছেন এবং তার জন্য কখনও কোনো পুরস্কারের প্রত্যাশা করেন নি। ওঁরা যাদের জন্য কাজ করছেন তাদের সন্তুষ্টিই ওঁদের কাছে সবচেয়ে বড় award। এমন ব্যক্তিত্ব দের সম্মানিত করে আমাদের দেশবাসীর গৌরব বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি প্রত্যেক পদ্ম পুরস্কার বিজয়ীর নাম এখানে নিতে না পারলেও, আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ যে, আপনারা পদ্ম পুরস্কার প্রাপ্ত এই মহানুভব ব্যক্তিত্বদের প্রেরণাদায়ী জীবনের বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানুন এবং বাকিদেরও জানান।
বন্ধুরা, আজ যখন আমরা আজাদী কে অমৃত মহোৎসবের সময়ে গণতন্ত্র দিবসের আলোচনা করছি, সেখানে আমি একটা মনোগ্রাহী বইয়ের কথা বলব। কয়েক সপ্তাহ আগে পাওয়া এই বইতে একটি বেশ ইন্টারেস্টিং সাবজেক্ট নিয়ে চর্চা করা হয়েছে। এই বইটির নাম – India The Mother of Democracy এবং এতে অনেক দুর্দান্ত প্রবন্ধ রয়েছে। ভারত পৃথিবীর সব থেকে বড় গণতন্ত্র এবং ভারতীয় হিসেবে আমাদের কাছে এটা গর্বের বিষয় যে আমাদের দেশ Mother of Democracy-ও। গণতন্ত্র আমাদের শিরা-উপশিরায় আছে, আমাদের সংস্কৃতিতে আছে - এটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আমাদের কর্মকান্ডের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রকৃতিগতভাবে, আমরা একটি গণতান্ত্রিক সমাজ । ডঃ আম্বেদকর বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘকে ভারতীয় সংসদের সাথে তুলনা করেছিলেন। তিনি এটিকে এমন একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে বর্ণনা করেন যেখানে Motions, Resolutions, Quorum, ভোটদান এবং ভোট গণনার অনেক নিয়ম ছিল। বাবাসাহেব বিশ্বাস করতেন যে ভগবান বুদ্ধ অবশ্যই সেই সময়ের রাজনৈতিক ব্যবস্থা থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন।
তামিলনাড়ুতে একটি ছোট কিন্তু বিখ্যাত গ্রাম আছে – উতিরমেরুর। এখানে পাওয়া ১১০০ থেকে ১২০০ বছর আগের একটি শিলালিপি সারা বিশ্বের কাছে অবাক করার মত। এই শিলালিপিটি যেন একটি mini-constitution। গ্রামসভা কীভাবে পরিচালনা করা উচিত এবং এর সদস্য নির্বাচনের প্রক্রিয়া কী হওয়া উচিত তা বিশদভাবে এখানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আমাদের দেশের ইতিহাসে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের আরেকটি উদাহরণ – দ্বাদশ শতাব্দীর প্রভু বাসবেশ্বরের অনুভব মন্ডপম। এখানে free debate ও আলোচনাকে উৎসাহিত করা হতো। আপনি জানলে অবাক হবেন যে এটা ম্যাগনা কার্টা' রও পূর্বের। ওয়ারাঙ্গলের কাকতিয় বংশের রাজাদের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যও প্রসিদ্ধ ছিল। ভক্তি আন্দোলন পশ্চিম ভারতে গণতন্ত্রের সংস্কৃতিকে উন্নীত করেছিল। বইতে শিখ ধর্মের গণতান্ত্রিক চেতনার উপরেও একটি নিবন্ধকে অন্তর্গত করা হয়েছে যা গুরু নানক দেব জির সর্বসম্মত ভাবে নেওয়া সিদ্ধান্তের উপর আলোকপাত করে।
মধ্য ভারতের ওড়াঁও ও মুন্ডা উপজাতির মধ্যে community driven ও consensus driven decision-এর বিষয়েও ভালো তথ্য রয়েছে এই বইয়ে। আপনি এই বইটি পড়ার পর অনুভব করবেন যে কিভাবে এই দেশের প্রতি অঞ্চলে কয়েক শতাব্দি ধরে গণতন্ত্রের ভাবনা প্রবাহিত হয়েছে। আমাদের প্রতিনিয়ত Mother of democracy-র রূপের বিষয়ে গভীর চিন্তাও করা উচিত, চর্চাও করা উচিত এবং দুনিয়াকে জানানোও উচিত। এতে দেশের মধ্যে গণতন্ত্রের ভাবনা আরো গভীর হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, যদি আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করি যে যোগ দিবস ও আমাদের বিভিন্ন ধরনের মোটা শস্য - Millets-এর মধ্যে common কি, তাহলে আপনারা ভাববেন যে এ কি রকম তুলনা? যদি আমি বলি যে এই দুই বিষয়ে কিছু common রয়েছে তাহলে আপনি আশ্চর্য হয়ে যাবেন। আসলে রাষ্ট্রসংঘ International Yoga Day ও International Year of Millets, এই দুই বিষয়ে নির্ণয় ভারতের পাঠানো প্রস্তাবের পর নিয়েছে। দ্বিতীয়তঃ যোগও স্বাস্থ্যের সঙ্গে যুক্ত এবং millets স্বাস্থ্যক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তৃতীয়ত: এবং গুরুত্বপূর্ণ হল যে উভয় প্রচারের ক্ষেত্রে জনগণের অংশগ্রহণের কারণেই বিপ্লব আসছে। যেভাবে মানুষ ব্যাপক স্তরে সক্রিয় অংশগ্রহণের ফলে যোগ ও fitness-কে জীবনের অংশ করে নিয়েছে সেই ভাবেই millets কেও মানুষ ব্যাপকভাবে গ্রহণ করছে। এখন মানুষ millets-কে নিজের খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছে। এই পরিবর্তনের অনেক বড় প্রভাবও নজরে পড়ছে। এর ফলে একদিকে ক্ষুদ্র কৃষকরা খুব উৎসাহিত হচ্ছেন যারা বংশপরম্পরায় millets-এর উৎপাদন করতেন। তারা এই জোনে খুব খুশি হবেন যে বিশ্ব এখন millets-এর গুরুত্ব বুঝতে শুরু করেছে। অন্যদিকে FPO ও entrepreneur-রা millets-কে বাজারজাত করা ও তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টা শুরু করে দিয়েছে।
অন্ধ্রপ্রদেশের নানদয়াল জেলার বাসিন্দা কে বি রামা সুব্বা রেড্ডিজি millets-এর জন্য ভাল রকমের salaryওয়ালা চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। মায়ের হাতের তৈরি millets-এর খাবারের স্বাদ তার এমনভাবে লেগে রয়েছে যে তিনি তার গ্রামেই বাজরার processing unit শুরু করে দিয়েছেন। সুব্বা রেড্ডিজি সবাইকে বাজারার উপকারিতা জানাচ্ছেন ও তা সুলভে পাওয়ার ব্যবস্থাও করে দিচ্ছেন। মহারাষ্ট্রের আলীবাগের কাছে কেনাড গ্রামের বাসিন্দা শর্মিলা ওসওয়ালজি গত কুড়ি বছর ধরে millets-এর ফলনে unique উপায়ে নিজের অবদান রেখেছেন। তিনি কৃষকদেরকে smart agriculture-এর training দিচ্ছেন। তার চেষ্টার ফলে শুধু millets-এর ফলনই বৃদ্ধি হয়নি, উপরন্তু কৃষকদের আয়ও বৃদ্ধি হয়েছে।
যদি আপনি ছত্রিশগড়ের রায়গর যাওয়ার সুযোগ পান তাহলে সেখানে Millets Cafe অবশ্যই যাবেন। কয়েক মাস শুরু হওয়া এই Millets Cafeতে চিলা, ধোসা, মোমো, পিজা ও মাঞ্চুরিয়ানের মত item খুব popular হচ্ছে।
আমি আপনাদের আর একটা বিষয়ে জিজ্ঞাসা করব? আপনারা হয়তো entrepreneur শব্দটা শুনেছেন, কিন্তু আপনারা Milletpreneurs শুনেছেন কি? উড়িষ্যার Milletpreneurs আজকাল খবরের শিরোনামে রয়েছে। আদিবাসী জেলা সুন্দরগড়ে প্রায় দেড় হাজার মহিলা Self Help Group, Odisha Millets Mission-এর সঙ্গে যুক্ত। এখানে মহিলারা millets দিয়ে cookies, রসগোল্লা গোলাপজাম ও কেক তৈরি করছেন। বাজারে এর খুব demand হওয়ার ফলে মহিলাদের আয়ও অনেক বেড়ে যাচ্ছে। কর্নাটকে কালবুর্গিতে অলন্দ ভূতাঈ-এর Millets Farmers Producer Company গত বছর Indian institute of Millets Research-এর তত্ত্বাবধানে কাজ শুরু করেছে।
এখানকার খাকরা, বিস্কুট আর লাড্ডু লোকের ভালো লাগছে। কর্নাটকেরই বিদর জেলায় Hulsoor Millets Producer Company'র সঙ্গে যুক্ত মহিলারা মিলেট চাষের পাশাপাশি তার আটাও তৈরি করছে। এতে তাদের উপার্জনও বেশ বেড়ে গেছে। ছত্তিশগড়ের সন্দীপ শর্মাজি প্রাকৃতিক চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত, এখন তার FPO-র সঙ্গে বারোটি রাজ্যের কৃষকরা যুক্ত। বিলাসপুরের এই FPO মিলেটের আট-রকম আটা এবং তা থেকে নানান পদ তৈরি করছে।
বন্ধুরা, এখন ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে ক্রমাগত G-20 Summit চলছে, আর আমি অত্যন্ত খুশী যে G-20 Summit দেশের যেখানেই হোক না কেন সেখানে মিলেটস থেকে তৈরী সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর খাবারের কিছু পদ অবশ্যই রাখা হচ্ছে। সেখানে বাজারার খিচুড়ি, পোহা, ক্ষীর এবং রুটির সঙ্গে রাগীর পায়েস, পুরী এবং ধোসার মত বেশ কিছু পদ পরিবেশন করা হচ্ছে। G20'র সমস্ত venue'র Millets Exhibition-এ মিলেটস থেকে তৈরি health drinks, cereals আর noodles-এর showcase করা হয়েছিল। সারা বিশ্বজুড়ে Indian Missions'ও এর জনপ্রিয়তা বাড়ানোর প্রচুর চেষ্টা করছে। আপনারা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন যে আমাদের দেশের এই প্রচেষ্টা আর বিশ্বব্যাপী বেড়ে চলা মিলেটের demand আমাদের ক্ষুদ্রচাষীদের কতটা পরিমাণ শক্তি জোগাবে। আমার এটা দেখেও ভালো লাগে যে, এখন যত ধরনের নতুন নতুন জিনিস মিলেটস থেকে তৈরি হচ্ছে যুব সমাজেরও তা ততটাই পছন্দ হচ্ছে। International Year of Millets-এর এত সুন্দর সূচনা করার জন্য এবং তাকে ক্রমাগত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমি “মন কি বাত”-এর সকল শ্রোতাদেরও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, যখন কেউ আপনাকে গোয়া'র Tourist Hub-এর ব্যাপারে প্রশ্ন করে তখন আপনার কি মনে হয়? স্বাভাবিকভাবেই গোয়ার কথা উঠলেই সবার আগেই সেখানকার সুন্দর coastline, beaches এবং সুস্বাদু খাবার দাবার ও পানীয়'র কথা মাথায় আসে; কিন্তু গোয়ায় এ মাসে এমন কিছু হয়েছে যা এখন শিরোনামে রয়েছে! আজ মন কি বাত অনুষ্ঠানে সে কথাই আমি আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। ৬ থেকে ৮ই জানুয়ারি, গোয়ার এই event- purple fest, গোয়ার পণজি'তে আয়োজিত হয়েছিল। দিব্যাঙ্গদের কল্যাণার্থে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান ছিল এক স্তন্ত্র প্রয়াস। Purple Festএর জন্য কত বড় সুযোগ তৈরি হয়েছিল তার একটা ধারণা এটা থেকেই পাওয়া যায় যে এখানে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি ভাই-বোনেরা যোগ দিয়েছিল। যারা এখানে এসেছিল তারা মীরামর বীচ ঘোরার আনন্দ উপভোগ করতে পারবে সেকথা ভেবেই অত্যন্ত রোমাঞ্চিত ছিল। আসলে, মীরামর বীচ দিব্যাঙ্গ ভাই-বোনেদের জন্য গোয়ার Accessible বীচগুলোর মধ্যে একটা হয়ে উঠেছে। এখানে Cricket tournament, Table tennis Tournament, Marathon Competition এর সঙ্গে সঙ্গেই এক Deaf-Blind Convention-এরও আয়োজন করা হয়েছিল। এখানে Unique Bird watching program এর সঙ্গে সঙ্গে একটা Film'ও দেখানো হয়েছিল। এর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল যাতে সমস্ত দিব্যাঙ্গ ভাই-বোন এবং বাচ্চারা তার পুরো আনন্দ নিতে পারে। Purple Fest-এর আরো একটা বিশেষত্ব হল যে এখানে আমাদের দেশের Private Sector'ও অংশ নিয়েছিল। তাদের পক্ষ থেকে সেই সব পণ্যের প্রদর্শণ হয়েছিল যা Divyang-friendly। এই Fest-এ তাদের দিক থেকে দিব্যাঙ্গদের উপকারের জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধির একটা প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে। Purple Fest-কে সফল করার জন্য আমি এতে অংশগ্রহণকারী সমস্ত মানুষকে অভিনন্দন জানাই। তার সঙ্গে সেই সমস্ত volunteers'কে অভিনন্দন জানাই যারা এটা organise করার জন্য রাত দিন এক করে দিয়েছিল।
আমার পুরো বিশ্বাস আছে যে , Accessible India-তে আমাদের উদ্দেশ্যকে সফল করতে এই ধরনের অভিযান খুবই কার্যকরী হয়ে উঠবে ।
আমার প্রিয় দেশবাসী , এখন "মন কী বাত"-এ আমি এমন এক বিষয়ে কথা বলবো যাতে আপনাদের আনন্দও হবে , গর্বও হবে আর মন বলে উঠবে -- বাঃ ! ভাই , বাঃ ! মন ভালো হয়ে উঠলো ! দেশের সবথেকে পুরোনো Science Institution-গুলির মধ্যে অন্যতম বেঙ্গালুরুর Indian Institute of Science , অর্থাৎ IISc এক মহৎ দৃষ্টান্ত পেশ করছে । "মন কী বাত"-এ আমি আগে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি যে, এই সংস্থা স্থাপনের নেপথ্যে ভারতের দুই মহান ব্যক্তিত্ব জামশেদজী টাটা ও স্বামী বিবেকানন্দের কতখানি প্রেরণা রয়েছে , এখন আপনাদের আর আমাকে আনন্দিত ও গর্বিত করার মতো কথা হলো যে ২০২২ সালে এই সংস্থার নামে ১৪৫ টি পেটেন্ট (patents) রয়েছে। এর অর্থ প্রতি পাঁচ দিনে দুটি পেটেন্ট। এই রেকর্ড আশ্চর্য! এই সফলতার জন্য আমি IISc-র টীম কে শুভেচ্ছা জানাতে চাই । বন্ধুরা , আজ পেটেন্ট ফিলিং-এ ভারতের স্থান সপ্তম আর ট্রেডমার্কে পঞ্চম । শুধুমাত্র পেটেণ্টের কথা বললে গত পাঁচ বছরে এখানে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে । Global Innovation Index-এও ভারতের ranking-এ উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে এবং ভারত চল্লিশতম স্থানে এসে পৌঁছেছে , যেখানে ২০১৫-তে Global Innovation Index-এ আশিতম স্থানেরও পিছনে ছিলো । আমি আরো একটি খুশির কথা আপনাদের বলতে চাইছি । ভারতে গত এগারো বছরে প্রথমবার Domestic Patent Filling-এর সংখ্যা Foreign Filling-এর থেকে বেশি দেখা গেছে । এটি ভারতের বর্ধিষ্ণু বৈজ্ঞানিক সামর্থ্যেরই পরিচয় বহন করে ।
বন্ধুরা, আমরা সকলেই জানি যে, একবিংশ শতকের Global Economy-তে জ্ঞান বা Knowledge-ই সবার উপরে। আমার বিশ্বাস আছে যে আমাদের Innovator আর তাঁদের পেটেণ্টের শক্তির দ্বারাই ভারতের Techade-এর স্বপ্ন অবশ্যই পূরণ হবে । এর ফলে আমরা সকলে নিজের দেশে তৈরি World Class Technology আর Product-এর পুরোপুরি সুবিধা নিতে পারবো।
আমার প্রিয় দেশবাসী , NaMo App-এ আমি তেলেঙ্গানার ইঞ্জিনিয়ার বিজয় জীর একটি post দেখেছি । এতে বিজয়জী E-Waste বিষয়ে লিখেছেন । বিজয়জীর ইচ্ছে "মন কী বাত"-এ আমি এ বিষয়ে আলোচনা করি । এই কার্যক্রমে আমি আগেও "Waste to Wealth" অর্থাৎ "আবর্জনা থেকে সোনা"-র ("কচড়ে সে কাঞ্চন") বিষয়ে বলেছিলাম , কিন্তু আজ তার সঙ্গে যুক্ত E-Waste । বন্ধুরা , আজ প্রত্যেক ঘরে মোবাইল ফোন , ল্যাপটপ , ট্যাবলেটের মতো যন্ত্র থাকাটা খুব স্বাভাবিক হয়ে গেছে । দেশ জুড়ে এর সংখ্যা হবে বিলিয়নে । আজকের নতুনতম যন্ত্রপাতিই ভবিষ্যতের E-Waste হয়ে ওঠে । যখনই কোনো নতুন যন্ত্র কিনি বা নিজেদের পুরোনো যন্ত্র বদলাই, তখন এটা খেয়াল রাখা জরুরি যে সেগুলি ঠিক ভাবে বাতিল করা হয়েছে , না হয়নি। যদি E-Waste-কে ঠিকভাবে নিষ্পত্তি না করা হয়, তবে তা আমাদের পরিবেশেরও ক্ষতি করে পারে। কিন্তু যদি সাবধানতার সঙ্গে তা করা যায় , তবে এগুলি Recycle, Reuse, ও Circular Economy খুব বড়ো শক্তি হয়ে উঠতে পারে । রাষ্ট্র সঙ্ঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিলো যে প্রতি বছর ৫০ মিলিয়ন টন E-Waste ফেলা হচ্ছে। আপনারা ভাবতে পারছেন যে এটা কত হতে পারে ? মানব ইতিহাসে যত Commercial Plane তৈরি হয়েছে , তার সবগুলির ওজন মেলালেও যত E-Waste বেরোচ্ছে , তার সমান হবে না । এটি এমন , যেন প্রতি সেকেন্ডে আটশো ল্যাপটপ ফেলে দেওয়া হচ্ছে । আপনারা জেনে আশ্চর্য হবেন যে ভিন্ন ভিন্ন process এর মাধ্যমে উৎপন্ন এই e-waste থেকে প্রায় ১৭ রকম প্রেশাস মেটাল নিষ্কাশিত করা যায়। তার মধ্যে গোল্ড, সিলভার, কপার ও নিকেল রয়েছে। তাই e-waste এর সদ্ব্যবহার, "কাচরে কো কাঞ্চন" অর্থাৎ জঞ্জালকে সোনা বানানোর থেকে কম কিছু নয়। এই লক্ষ্যে ইনোভেটিভ কাজ করছে এমন স্টার্টআপের সংখ্যা আজ কম নয়। আজ প্রায় ৫০০ e-waste recycler এই সেক্টরে সংযুক্ত আছে এবং আরো অনেক নতুন উদ্যোগীদেরও এতে শামিল করা হচ্ছে। এই সেক্টর হাজার হাজার মানুষকে সরাসরি রোজগারও দিয়েছে। বেঙ্গালুরুর E-Parisaraa এমনই এক প্রয়াস নিয়েছে। এরা প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ডের মূল্যবান ধাতুকে পৃথক করে স্বদেশী টেকনোলজির বিকাশ ঘটিয়েছে। অনুরূপভাবে মুম্বইয়ের ইকোরিকো (Ecoreco) মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে e-waste সংগ্রহ করার সিস্টেম তৈরি করেছে। উত্তরাখণ্ডের রুরকির এটেরো রিসাইক্লিং (Attero Recycling) তো এই প্রযুক্তিতে দুনিয়া জুড়ে অনেক পেটেন্ট পেয়েছে। তারাও নিজেদের ই-ওয়েস্ট রিসাইক্লিং টেকনোলজি তৈরি করে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছে। ভোপালে মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েবসাইট "কবাড়ীওয়ালা"র মাধ্যমে টন টন e-waste একত্রিত করা হচ্ছে। এমন অনেক উদাহরণ আছে। এরা সবাই ভারতকে গ্লোবাল রিসাইক্লিং হাব হিসেবে প্রস্তুত করতে সাহায্য করছেন; কিন্তু এমন ইনিশিয়েটিভগুলির সাফল্যের জন্য একটা জরুরী শর্তও রয়েছে। তা হল, e-waste ডিসপোজাল এর সুরক্ষিত, উপযোগী পদ্ধতিগুলির সম্বন্ধে জনসাধারণকে সচেতন করে যেতে হবে। e-waste নিয়ে কাজ করা মানুষরা বলেন, বর্তমানে প্রতি বছর কেবলমাত্র পনেরো থেকে সতেরো শতাংশ e-waste কেই রিসাইকেল করা হচ্ছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ সারা বিশ্বে ক্লাইমেট চেঞ্জ ও বায়োডাইভারসিটির সংরক্ষণ প্রসঙ্গে বহু আলোচনা হয়। এই লক্ষ্যে ভারতের উল্লেখযোগ্য প্রয়াসের বিষয়ে আমরা ক্রমাগত কথা বলে এসেছি। ভারত নিজের wetlands এর জন্য যে কাজ করেছে তা জেনে আপনাদেরও খুব ভালো লাগবে। কিছু শ্রোতা হয়তো ভাবছেন wetlands টা আসলে কী। wetland sites হল সেই সব স্থান যেখানে নরম তুলতুলে মাটির মত জমিতে বছরভর জল জমে থাকে। কিছুদিন পরেই আগামী দোসরা ফেব্রুয়ারি World Wetlands Day। আমাদের পৃথিবীর অস্তিত্বের জন্য Wetlands অত্যন্ত জরুরি কারণ এর ওপর বহু পাখি, জীবজন্তু নির্ভর করে। এটি বায়োডাইভারসিটিকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি ফ্লাড কন্ট্রোল ও গ্রাউন্ড ওয়াটার রিচার্জও সুনিশ্চিত করে। আপনাদের মধ্যে অনেকেই নিশ্চয়ই জানেন রামসার সাইটস (Ramsar sites) এমনই Wetlands যার ইন্টারন্যাশনাল ইম্পর্টেন্স আছে। ওয়েট ল্যান্ডস যে দেশেই হোক না কেন তাকে অনেক মানদন্ড পূরণ করতে হয়, তারপর তাকে রামসার সাইটস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। রামসার সাইটসে কুড়ি হাজার বা তার বেশি ওয়াটার বার্ডস এর উপস্থিতি আবশ্যিক। বিপুল সংখ্যায় স্থানীয় প্রজাতির মাছ থাকতে হবে। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর, অমৃত মহোৎসবের সময়কালে, রামসার সাইটস সম্বন্ধীয় একটা ভালো খবরও আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। আমাদের দেশে এখন রামসার সাইটসের সংখ্যা ৭৫ হয়ে গেছে, যেখানে ২০১৪-র আগে দেশে মাত্র ২৬ টি রামসার সাইটস ছিল। এর জন্য স্থানীয় মানুষেরা প্রশংসার পাত্র, যারা এই বায়োডাইভারসিটি কে সযত্নে লালন করেছেন। প্রকৃতির সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে বাস করার যে শতাব্দী প্রাচীন সংস্কৃতি ও পরম্পরা আমাদের দেশে রয়েছে, এই পরিসংখ্যান তার প্রতিও এক সম্মান জ্ঞাপন। ভারতের এই Wetlands আমাদের প্রাকৃতিক শক্তিরও উদাহরণ। ওড়িশার চিলকা সরোবর ৪০ টিরও বেশি ওয়াটার বার্ড স্পিসিসের আশ্রয়স্থল হিসেবে সুবিদিত। কাইবুল লামজাও (Keibul Lamjao), লোকটাকের (Loktak) swamp deer এর একমাত্র natural habitat রূপে পরিচিত।
তামিলনাড়ুর বেড়ান্থাঙ্গল-কে ২০২২ সালে Ramsar site ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে Bird population সংরক্ষণের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আশেপাশের এলাকার কৃষকদের। কাশ্মীরের পাঞ্জাথ নাগ সম্প্রদায় Annual Fruit blossom Festival এর সময় একদিন বিশেষ করে গ্রামের ঝর্ণাগুলির পরিষ্কারের কাজে লাগে। World Ramsar site এ বেশীরভাগ unique culture heritage আছে। মণিপুরের লোকটাক এবং পবিত্র জলাশয় রেণুকার সঙ্গে সেখানকার সংস্কৃতির একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এই রকমের sambhar-এর সম্পর্ক মা দূর্গার অবতার দেবী শাকম্ভরির সঙ্গেও রয়েছে। ভারতে wetlands-এর সম্প্রসারণ সেই মানুষগুলোর জন্যই সম্ভব হচ্ছে, যাঁরা এই Ramsar Site এর আশেপাশে থাকেন। আমি এই ধরনের সব মানুষদের খুবই কদর করে থাকি। “মন কি বাত’-এর সব শ্রোতাদের পক্ষ থেকে ওঁদের জন্য রইল শুভ কামনা।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এবার আমাদের দেশে বিশেষ করে উত্তর ভারতে প্রচণ্ড শীত পড়েছে। এই শীতে লোকেরা পাহাড়ে বরফ পড়াও খুব উপভোগ করেছেন। জম্মু ও কাশ্মীরের এমনই কিছু ছবি সারা দেশের মন জয় করে নিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সারা বিশ্বের মানুষ এই ছবিগুলো পছন্দ করছে। প্রতি বছরের মত এবারও আমাদের কাশ্মীর ঘাটি তুষারপাতের ফলে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। বনিহাল থাকে বদগাম যাওয়ার ট্রেনের ভিডিওটি বিশেষ করে সবাই খুব পছন্দ করছে। সুন্দর তুষারপাতে চারদিক বরফের চাদরে ঢেকে গেছে। যাঁরাই দেখছেন বলছেন এই দৃশ্য কোনো রূপকথার দেশের। আবার কেউ বলছেন এই জায়গাটা কোনো বিদেশের নয়, আমাদেরই দেশের কাশ্মীরের ছবি।
একজন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী লিখেছেন- 'এর থেকে স্বর্গ আর কত সুন্দর হবে?’
সত্যিই তো একদম ঠিকই বলেছেন। তাই তো কাশ্মীর কে এই পৃথিবীর ভূ-স্বর্গ বলে।
আপনিও এই ছবিগুলো দেখে কাশ্মীরে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন নিশ্চয়ই। আমি চাই আপনি নিজে এবং আপনার বন্ধুদেরও নিয়ে যান। কাশ্মীরের বরফে ঢাকা পাহাড়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি দেখার ও জানার মতো আরও অনেক কিছু রয়েছে। যেমন কাশ্মীরের সায়েদাবাদে Winter Games এর আয়োজন করা হয়েছিল। এই গেমসের থিম ছিল- স্নো ক্রিকেট! আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন যে স্নো ক্রিকেট তো বেশ রোমাঞ্চকর খেলা হবে। আপনি একদম ঠিক ভাবছেন। তরুণ কাশ্মিরী যুবকরা বরফের মধ্যে ক্রিকেটকে আরও অদ্ভুত সুন্দর করে তোলে। এর মধ্যে দিয়েই কাশ্মীরে এমন তরুণ খেলোয়াড়দের খোঁজ করা হচ্ছে, যারা পরবর্তী সময়ে টিম ইন্ডিয়াতে জায়গা করে নিতে পারে। এটাও একধরনের খেলো ইন্ডিয়া মুভমেন্টের সম্প্রসারিত অংশ। কাশ্মীরে, যুবকদের মধ্যে, খেলাধুলা নিয়ে, ব্যাপক উৎসাহ বেড়েই চলেছে। আগামী দিনে এই যুবকদের মধ্যে, অনেকেই দেশের জন্য পদক জিতবে, জাতীয় পতাকা ওড়াবে। আমি আপনাদের এই পরামর্শই দেবো, এরপর আপনি যখন কাশ্মীর ভ্রমণের প্ল্যান করবেন, অবশ্যই তখন এই ধরনের আয়োজন দেখার জন্যও সময় বার করবেন। এই অভিজ্ঞতা আপনার ভ্রমণকে আরও বেশি স্মরণীয় করে তুলবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, গণতন্ত্রকে মজবুত করে তোলার প্রয়াস আমাদের নিরন্তর চালিয়ে যেতে হবে। গণতন্ত্র মজবুত হয় জনগণের অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে, সবার চেষ্টায়, দেশের প্রতি নিজ নিজ কর্তব্য পালনের মধ্যে দিয়ে, আর আমার সন্তুষ্টি এটাই যে আমাদের 'মন কি বাত' এইরকম কর্তব্যনিষ্ঠ সৈন্যদের শক্তিশালী আওয়াজ। পরেরবার আবার দেখা হবে এইরকম কর্তব্যনিষ্ঠ মানুষদের হৃদয়স্পর্শী এবং প্রেরণামূলক কাহিনী সঙ্গে নিয়ে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আজ আমরা “মন কি বাতের” ছিয়ানব্বইতম পর্বে একসঙ্গে মিলিত হচ্ছি। “মন কি বাতের” আগামী পর্ব ২০২৩ সালের প্রথম পর্ব হবে। আপনারা যে সব বার্তা পাঠিয়েছেন তাতে বিদায়ী ২০২২ সাল সম্পর্কে আলোচনা করার কথাও আগ্রহ নিয়ে বলেছেন। অতীতের অবলোকন চিরকাল আমাদের বর্তমান আর ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতির প্রেরণা দেয়। ২০২২ সালে দেশের মানুষের সামর্থ্য, তাদের সহযোগিতা, তাদের সঙ্কল্প, তাদের সাফল্যের বিস্তার এতটাই বেশি ছিল যে “মন কি বাত”-এ সবকিছুর বর্ণনা করা কঠিন হবে। সত্যিই ২০২২ অনেক দিক থেকে প্রেরণাদায়ী ছিল, অদ্ভূত ছিল। এই বছর ভারত নিজের স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পূর্ণ করেছে আর এই বছরই অমৃতকালের প্রারম্ভ হয়েছে। এই বছর দেশ নতুন গতি পেয়েছে, প্রত্যেক দেশবাসী একটার পর একটা বড় কাজ করেছেন। ২০২২ সালের বিভিন্ন সফলতা আজ গোটা বিশ্বে ভারতের জন্য এক বিশেষ স্থান নির্মাণ করেছে। ২০২২ অর্থাৎ ভারতের বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থব্যবস্থার মর্যাদা অর্জন করা, ২০২২ অর্থাৎ ভারতের ২২০ কোটি ভ্যাকসিনের অবিশ্বাস্য পরিসংখ্যান পার করে যাওয়ার রেকর্ড, ২০২২ অর্থাৎ রপ্তানিতে ভারতের চার’শো বিলিয়ন ডলারের আশ্চর্য পরিসংখ্যান অতিক্রম করে যাওয়া, ২০২২ অর্থাৎ দেশে জনে-জনে 'আত্মনির্ভর ভারত'এর সঙ্কল্প গ্রহণ করা, প্রয়োগ করে দেখানো, ২০২২ অর্থাৎ ভারতের প্রথম স্বদেশী এয়ারক্র্যাফ্ট কোরিয়ার আই-এন-এস বিক্রান্তকে স্বাগত জানানো, ২০২২ অর্থাৎ স্পেস, ড্রোন আর ডিফেন্স সেক্টরে ভারতের সমূহ অগ্রগতি, ২০২২ অর্থাৎ সব ক্ষেত্রে ভারতের দাপট। খেলাধুলোর ময়দানেও, সেটা কমনওয়েলথ গেমসেই হোক অথবা আমাদের মহিলা হকি টিমের জয়, আমাদের তরুণরা জবরদস্ত সামর্থ্যের প্রমাণ রেখেছে।
বন্ধুরা, এই সব কিছুর সঙ্গে আরও একটা কারণে ২০২২ সালকে মনে করা হবে। সেটা হল 'এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত' ভাবনার বিস্তার। দেশের মানুষ একতা আর সংহতির উদযাপনের জন্য অনেক অদ্ভূত আয়োজন করেছিলেন। গুজরাতের মাধবপুর মেলা হোক যেখানে রুক্মিণী বিবাহ আর ভগবান কৃষ্ণের উত্তর-পূর্বের নানা সম্পর্ক উদযাপন করা হয় বা কাশী-তমিল সঙ্গমম হোক, এই সব পর্বের মধ্যেও একতার নানা বর্ণ ধরা পড়েছে। ২০২২ সালে দেশবাসীরা আর এক অমর ইতিহাস রচনা করেছেন। অগাস্ট মাসে চলা 'হর ঘর তিরঙ্গা' অভিযান কেই বা ভুলতে পারবে? এ এমন এক মুহূর্ত যা সব দেশবাসীর পক্ষে রোমহর্ষক ছিল। স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছরের এই অভিযানে গোটা দেশ তিরঙ্গাময় হয়ে গিয়েছিল। ছ'কোটিরও বেশি মানুষ তো তিরঙ্গার সঙ্গে সেল্ফি তুলে পাঠিয়েছেন। আজাদীর এই অমৃত মহোৎসব আগামী বছরও একইভাবে চলবে - অমৃতকালের ভীতকে আরও মজবুত করবে।
বন্ধুরা, এই বছর ভারত জি টোয়েন্টি গোষ্ঠীর অধ্যক্ষতা করার দায়িত্ব পেয়েছিল। আমি গতবার এ ব্যাপারে বিস্তারিত চর্চা করেছি। ২০২৩ সালে জি টোয়েন্টির উৎসাহকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে আমাদের, এক জনআন্দোলনের রূপ দিতে হবে এই আয়োজনকে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ সারা বিশ্বে বড়দিনের উৎসবও আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত হচ্ছে। এটি যিশু খ্রিস্টের জীবন এবং শিক্ষাকে স্মরণ করার একটি দিন। আমি আপনাদের সকলকে বড়দিনের অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুরা, আজ আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয় অটল বিহারী বাজপেয়ী জিরও জন্মদিন। তিনি একজন মহান রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন যিনি দেশকে অসাধারণ নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রত্যেক ভারতীয়ের হৃদয়ে তাঁর একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। আমি কলকাতা থেকে আস্থাজির একটি চিঠি পেয়েছি। এই চিঠিতে তিনি তার সাম্প্রতিক দিল্লি সফরের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন যে সেই সময় তিনি PM Museum পরিদর্শন করেছিলেন। এই মিউজিয়ামে অটলজির গ্যালারি তাঁর খুব পছন্দ হয়েছিল। সেখানে অটলজির সঙ্গে ক্লিক করা ছবি তাঁর কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে। অটলজির গ্যালারিতে, আমরা দেশের জন্য তাঁর মূল্যবান অবদানের ঝলক দেখতে পাই। পরিকাঠামো হোক, শিক্ষা হোক বা বিদেশনীতি, প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি ভারতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার কাজ করেছেন। আমি আরও একবার অটলজিকে অন্তর থেকে প্রণাম জানাই।
বন্ধুরা, আগামীকাল ২৬-এ ডিসেম্বর 'বীর বাল দিবস' এবং এই উপলক্ষে আমি দিল্লিতে সাহেবজাদা জোরাবার সিং জি এবং সাহেবজাদা ফতেহ সিং জি-এর বলিদানকে উৎসর্গিকৃত একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সৌভাগ্য লাভ করব। দেশ সাহেবজাদে ও মাতা গুজরির বলিদানকে চিরকাল মনে রাখবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের এখানে বলা হয় –
‘সত্যম্ কিম প্রমানম্, প্রত্যক্ষম কিম প্রমানম
অর্থাৎ সত্যের প্রমাণের প্রয়োজন হয় না, যা প্রত্যক্ষ তারও প্রমাণের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যখন আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কথা আসে, তখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল – প্রমাণ, Evidance । বহু শতাব্দী ধরে ভারতীয় জীবনের একটি অংশ - যোগ এবং আয়ুর্বেদ। আমাদের শাস্ত্রে Evidence Based Research-এর অভাব, যা সবসময়ই একটি চ্যালেঞ্জ ! ফলাফল দৃশ্যমান, কিন্তু প্রমাণ নেই । কিন্তু, আমি খুশি যে Evidence Based Medicine এর যুগে, যোগ এবং আয়ুর্বেদ এখন আধুনিক যুগের পরীক্ষা-নিরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হচ্ছে । আপনারা সবাই মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল সেন্টারের কথা শুনে থাকবেন। এই প্রতিষ্ঠানটি Recharch, Inovation এবং ক্যান্সার কেয়ার-এ অনেক সুনাম অর্জন করেছে। এই কেন্দ্রের একটি Intensive Research-এ জানা গিয়েছে যে যোগব্যায়াম স্তন ক্যান্সার রোগীদের জন্য খুব কার্যকর। টাটা মেমোরিয়াল সেন্টার আমেরিকায় অনুষ্ঠিত অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ এক স্তন ক্যান্সার সম্মেলনে তাদের গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেছে। এই ফলাফল বিশ্বের বড় বড় বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কারণ, টাটা মেমোরিয়াল সেন্টার প্রমান সহকারে জানিয়েছে কীভাবে রোগীরা যোগব্যায়াম থেকে উপকৃত হয়েছেন। এই কেন্দ্রের গবেষণা অনুসারে, নিয়মিত যোগব্যায়াম অভ্যাসে স্তন ক্যান্সারের রোগীদের, রোগের পুনরাবৃত্তি এবং মৃত্যুর ঝুঁকি ১৫ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে।
ভারতীয় পারম্পরিক চিকিৎসার এটি প্রথম উদাহরণ যার পশ্চিমী কড়া মাপদন্ডে পরখ হয়েছে। এর পাশাপাশি, এটি প্রথম study, যাতে Brest Cancer আক্রান্ত মহিলাদের যোগ এর কারণে quality of life এর উন্নতি হওয়ার কথা জানা গেছে। শুধু তাই নয়, long term benefits এর ব্যাপারেও জানা গেছে। Tata Memorial Centre নিজেদের পরীক্ষার এই ফলাফল প্যারিসের European Society of Medical Oncology র সম্মেলনে উপস্থাপিত করেছে।
বন্ধুরা, আজকের সময়ে ভারতীয় চিকিৎসা পদ্ধতি যত evidence based হবে, তত বেশী গোটা দুনিয়ায় তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। এই ভাবনাকে মাথায় রেখে দিল্লীর AIIMSএ এক প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। এখানে আমাদের পারম্পরিক চিকিৎসা পদ্ধতিগুলিকে validate করার জন্য, ছয় বছর আগে Centre for integrative medicine and research গঠন করা হয়। এখানে latest modern techniques এবং research methods ব্যবহার করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যেই স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক পত্রিকায় ২০টি পেপার প্রকাশিত করে ফেলেছে। American College of Cardiology র জার্নালে প্রকাশিত পেপারে syncope (সিঙ্কপী) তে পীড়িত রুগীদের যোগ এর দ্বারা সুফল লাভের কথা বলা হয়েছে। ঠিক এইভাবে, যোগ কিভাবে মাইগ্রেনে রুগীদের আরাম দিয়েছে সেই কথা বলা হয়েছে Neurology Journal এর পেপারে। এছাড়াও, আরও অন্যান্য অসুখে যোগ কিভাবে উপকারী সেই নিয়ে study চলছে, যেমন heart diseases, depression, sleep disorder, pregnancy র সময়ে মহিলাদের নানা শারীরিক সমস্যা ইত্যাদি।
বন্ধুরা, কিছুদিন আগেই আমি গোয়াতে ছিলাম, World Ayurvedic Congress-এর জন্য। এখানে ৪০ টি দেশের ডেলিগেটরা অংশগ্রহণ করেন এবং এখানে ৫৫০ এরও বেশী Scientific Paper Present করা হয়। ভারত সহ গোটা দুনিয়ার ২১৫ টি কোম্পানি এখানকার Exhibition এ তাদের Product Display করে। চারদিন ব্যাপী এই expo তে এক লাখেরও বেশী মানুষ আয়ুর্বেদের সংশ্লিষ্ট তাদের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন, enjoy করেন। এই Ayurveda Congress-এও আমি সারা বিশ্ব থেকে আসা আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞদের সামনে evidence based research বিষয়টির ওপর জোর দিই। যেভাবে এই বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর সময়ে আমরা যোগ ও আয়ুর্বেদের শক্তি সকলে দেখছি, এই ক্ষেত্রে Evidence Based Research আগামীতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হবে। আমার আপনাদের কাছে অনুরোধ, যোগ, আয়ুর্বেদ তথা আমাদের পারম্পরিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে যদি আপনাদের কাছে কোনো তথ্য থাকে তাহলে তা অবশ্যই স্যোশাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, বিগত কিছু বছরে আমরা স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত বেশ কিছু বড় চ্যালেঞ্জকে পরাজিত করতে পেরেছি। এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আমাদের Medical Experts, Scientists ও দেশবাসীর ইচ্ছাশক্তি। আমরা ভারত থেকে Smallpox, Polio ও ‘Guinea Worm'-এর মত রোগকে শেষ করে দেখিয়েছি।
আজ ‘মন কি বাত'-এর শ্রোতাদের আমি আরো এক চ্যালেঞ্জের বিষয়ে জানাতে চাই, যা এখন শেষের কাছাকাছি চলে এসেছে। এই সমস্যা, এই রোগ হলো কালা জ্বর। এই রোগের সংক্রমণ Sand Fly অর্থাৎ বেলে মাছির কামড়ানোর ফলে ছড়ায়। যখন কেউ কালাজ্বরে আক্রান্ত হন তখন তার কয়েক মাস যাবত জ্বর হয়, রক্তাল্পতা, শারীরিক দুর্বলতা ও ওজন কমে যায়। এই রোগে আবালবৃদ্ধবণিতা, যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু সকলের প্রচেষ্টায়, কালা জ্বর নামক এই রোগ, এবার দ্রুতগতিতে শেষের পথে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত কালা জ্বরের প্রকোপ চার রাজ্যের ৫০ টিরও বেশি জেলায় ছড়িয়েছিল। কিন্তু এখন তা বিহার ও ঝাড়খন্ডের চারটি জেলায় সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। আমার বিশ্বাস, বিহার ঝাড়খণ্ডের মানুষের চেষ্টা ও তাদের সচেতনতা এই চার জেলা থেকেও কালা জ্বরকে নির্মূল করতে সরকারের এই প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করবে। কালা জ্বর আক্রান্ত জায়গার বাসিন্দাদের কাছে আমার অনুরোধ যে তারা দু’টি বিষয় অবশ্যই মনে রাখবেন। প্রথমত, Sand Fly বা বেলে মাছির নিয়ন্ত্রণ, ও দ্বিতীয়তঃ দ্রুততার সঙ্গে রোগের সনাক্তকরণ ও তার সম্পূর্ণ চিকিৎসা। কালা জ্বরের চিকিৎসা খুবই সহজ, চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ওষুধ খুবই কার্যকর। শুধু আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। জ্বর হলে অবহেলা করবেন না ও বেলে মাছি মারার জন্য দরকারি কীটনাশক ব্যবহার করতে থাকুন। ভাবুন, যখন আমাদের দেশ কালা জ্বর মুক্ত হয়ে যাবে, তখন তা আমাদের সকলের জন্য কতটা খুশির বিষয় হয়ে উঠবে। এই ভাবনা থেকেই আমাদের প্রচেষ্টা যে আমরা ভারতকে ২০২৫ এর মধ্যে টি. বি. মুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছি। আপনারা জানেন, বিগত দিনে যখন টি. বি. মুক্ত ভারত অভিযান শুরু হয়েছিল তখন হাজারো মানুষ টি. বি. রোগীদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিলেন। তারা নিক্ষয় মিত্র হয়ে টি. বি. রোগীদের দেখাশোনা করছেন, তাদের আর্থিক সাহায্য করছেন। জনসেবা ও জনগণের অংশগ্রহণের এই শক্তি, প্রতিটি কঠিন লক্ষ্য অর্জন করে দেখায়।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের পরম্পরা ও সংস্কৃতি মা গঙ্গার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। গঙ্গাজল আমাদের জীবনধারার অভিন্ন অংশ এবং আমাদের শাস্ত্রেও বলা হয়েছে:
নমামি গঙ্গে তব্ পাদ্ পঙ্কজং,
সুর অসুরৈঃ বন্দিত দিব্য রুপম্।
ভুক্তিম্ চ মুক্তিম্ চ দদাসি নিত্যম্,
ভাব অনুসারেণ সদা নরাণাম্।।
অর্থাৎ, হে মা গঙ্গা আপনি আপনার ভক্তদের তাদের ভাবনার অনুরূপ সাংসারিক সুখ, আনন্দ, আর মোক্ষ প্রদান করুন। সবাই আপনার পবিত্র চরণের বন্দনা করেন। আমিও আপনার পবিত্র চরণে আমার প্রণাম অর্পণ করছি। শতাব্দীর পর শতাব্দী কলকল করে বহমান মা গঙ্গাকে স্বচ্ছ রাখা আমাদের সবারই অনেক বড় দায়িত্ব। এই উদ্দেশ্য নিয়ে আট বছর আগে আমরা “নমামি গঙ্গে” অভিযান শুরু করেছিলাম। আমাদের সবার জন্য এটি অত্যন্ত গৌরবজনক যে ভারতের এই প্রচেষ্টা পৃথিবীব্যাপী প্রশংসা পাচ্ছে। ইউনাইটেড নেশনস “নমামি গঙ্গে” মিশনকে ইকোসিস্টেম রিস্টোর করতে পারার টপ টেন ইনিশিয়েটিভ এর মধ্যে সামিল করেছে। এটি আরও খুশির কথা যে সমগ্র বিশ্বে ১৬০ টি এরকম initiative-এর মধ্যে “নমামি গঙ্গে” এই সম্মান পেয়েছে।
বন্ধুরা, “নমামি গঙ্গে” অভিযানের সবথেকে বড় চালিকা শক্তি হলো মানুষজনের অক্লান্ত সহযোগিতা। “নমামি গঙ্গে” অভিযানে গঙ্গা প্রহরী এবং গঙ্গা দূত এর ভূমিকা খুব গুরুত্ব পূর্ণ। তারা গাছ লাগানো, ঘাট পরিষ্কার, গঙ্গা আরতি, পথ নাটিকা, পেইন্টিং, আর কবিতার মাধ্যমে সচেতনতা প্রচার করে চলেছেন। এই অভিযান থেকে bio-diversity তেও অনেক বদল দেখা যাচ্ছে। ইলিশ মাছ, গঙ্গা ডলফিন এবং কচ্ছপের বিভিন্ন প্রজাতির সংখ্যায় অনেক বৃদ্ধি হয়েছে। গঙ্গার ইকোসিস্টেম পরিষ্কার হওয়ার জন্য জীবন ধারণের অন্যান্য সুযোগও বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে "জলজ আজিবিকা মডেল"-এর ব্যাপারে আমি আলোচনা করতে চাই, যেটা বায়োডাইভার্সিটি-কে মাথায় রেখে বানানো হয়েছে। এই tourism based boat safari ২৬টি লোকেশনে শুরু করা হয়েছে। স্বভাবতই “নমামি গঙ্গে” মিশনের বিস্তার, এর সীমানা, নদীর পরিচ্ছন্নতার থেকেও অনেক বড়। এটি একদিকে যেমন আমাদের ইচ্ছা শক্তি ও নিরলস প্রচেষ্টার একটি প্রত্যক্ষ প্রমাণ তেমনি পরিবেশ সংরক্ষণের দিকে বিশ্বকেও এক নতুন পথ দেখাতে চলেছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, যখন আমাদের সঙ্কল্প ও শক্তি মজবুত হয়, তখন বড় থেকে বড় চ্যালেঞ্জও সহজ হয়ে যায়। এর উদাহরণ স্থাপন করেছেন সিকিম এর থেগু গ্রামের সাঙ্গে শেরপাজি। ইনি বিগত ১৪ বছর থেকে ১২,০০০ ফুট এরও বেশি উচ্চতায় পরিবেশ সংরক্ষণ এর কাজ করে যাচ্ছেন। সাঙ্গে জি সাংস্কৃতিক ও পৌরাণিক মাহাত্ম্য যুক্ত Tsomgo (সোমগো) lake-কে পরিষ্কার রাখার সংকল্প গ্রহণ করেছেন। নিজের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় উনি এই গ্লেসিয়ার লেক এর রং রূপই বদলে দিয়েছেন। ২০০৮ সালে সাঙ্গে শেরপা জি যখন স্বছতার এই অভিযান শুরু করেছিলেন তখন উনি অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন।
কিন্তু দেখতে দেখতে তাঁর এই মহৎ কাজে যুবসমাজ এবং গ্রামবাসীদের পাশাপাশি পঞ্চায়েতের তরফ থেকেও প্রচুর সহযোগিতা মেলা শুরু হয়। এখন যদি আপনি Tsomgo (সোমগো) Lake দেখতে যান, তাহলে দেখতে পাবেন ওখানে চারপাশে বড় বড় Garbage Bins রয়েছে। এখন এখানে জমা হওয়া আবর্জনা recycling-এর জন্য পাঠানো হয়। এখানে যে সব পর্যটকেরা আসেন, তাদেরকে কাপড়ের তৈরী Garbage bags-ও দেওয়া হয়ে থাকে যাতে তারা যেখানে সেখানে আবর্জনা না ফেলেন। এখন অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন এই হ্রদটিকে দেখার জন্য প্রতিবছর প্রায় ৫ লক্ষ পর্যটক এখানে আসেন। Tsomgo (সোমগো) lake সংরক্ষণের এই বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সাঙ্গে শেরপা-জি'কে বহু সংস্থা সম্মান-প্রদান'ও করেছে। এই সমস্ত প্রয়াসের কারণেই সিকিমকে বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন রাজ্যগুলির মধ্যে গণ্য করা হয়। আমি সাঙ্গে শেরপা-জি এবং তাঁর সহযোগীদের পাশাপাশি সারাদেশ জুড়ে যাঁরা পরিবেশ সংরক্ষণের মত ভালো কাজের সঙ্গে যুক্ত, সেই সমস্ত মানুষদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।
বন্ধুরা, আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে স্বচ্ছ-ভারত মিশন আজ প্রত্যেক ভারতবাসীর মনে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে। ২০১৪ সালে এই জনবিপ্লব শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একে এক অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিতে আমাদের দেশের মানুষ বহু ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন। আর এই উদ্যোগ কেবলমাত্র সমাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, তা সরকারি দপ্তরের অভ্যন্তরেও সমানভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ক্রমাগত এই প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ-- জঞ্জাল-আবর্জনা পরিষ্কার হওয়ার ফলে, অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরানোর ফলে দপ্তরে অনেক জায়গা বেরিয়ে আসে, নতুন space পাওয়া যায়। আগে, জায়গার অভাবে অনেক দূর-দূরান্ত পর্যন্ত ভাড়া নিয়ে অফিস চালাতে হতো। বর্তমানে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য এত জায়গা বেরিয়ে আসছে, যে এখন একই স্থানে সমস্ত দফতরকে জায়গা করে দেওয়া যাচ্ছে। কিছুদিন আগে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক-- মুম্বাই, আমেদাবাদ, কলকাতা ও শিলং সহ বহু শহরে এমনই উদ্যোগ নিয়েছে এবং আর তার ফলে আজ তাদের দুই-তিন তলা বিল্ডিং-এর সমান বহু জায়গা যা নতুন করে কাজে লাগানো যায়, তা মিলে গিয়েছে। সম্পদের optimum utilization-এর যে উত্তম অনুভূতি আমরা আপনা আপনিই পাচ্ছি তা এই স্বচ্ছতার কারণে। সমাজে, প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটা শহরে, একইভাবে বিভিন্ন দপ্তরে এই উদ্যোগ সমস্ত দিক থেকে সমগ্র দেশের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী প্রমাণিত হচ্ছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী। আমাদের দেশে নিজেদের শিল্প ও সংস্কৃতিকে ঘিরে আমরা নতুন ভাবে সজাগ হয়েছি। একটি নতুন চেতনা জেগে উঠেছে। “মন কি বাতে” আমরা এই ধরনের চর্চা প্রায়শই করে থাকি। যেমন শিল্প, সংস্কৃতি, সাহিত্য, সমাজের সমষ্টিগত সম্পদ, এইরকমই এটা কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব সমাজের ওপরেই। এইরকমই একটি সফল প্রয়াস লাক্ষাদ্বীপে হচ্ছে। এখানে কল্পেনি দ্বীপে একটি ক্লাব আছে যার নাম কুমেল ব্রাদার্স চ্যালেঞ্জার্স ক্লাব। এই ক্লাব যুবকদের স্থানীয় ঐতিহ্যপূর্ণ কলা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের জন্য উৎসাহ প্রদান করে। এখানে যুবকদের স্থানীয় লোকশিল্প কোলকলি, পরীচাকলি, কিলিপ্পট্ট্ আর পারম্পরিক গানের ট্রেনিং দেওয়া হয়। অর্থাৎ পুরনো ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের হাতে সুরক্ষিত থাকছে, আগে এগিয়ে চলেছে, এবং বন্ধুরা, আমি খুবই খুশি যে এই ধরনের প্রয়াস শুধু দেশে নয় বিদেশেও হচ্ছে। সম্প্রতি জানা গেছে যে দুবাইয়ের কালারি ক্লাব গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লিখিয়েছে। কেউ ভাবতেই পারে দুবাইয়ের ক্লাব রেকর্ড করেছে তো তাতে ভারতের কি? আসলে এই রেকর্ড ভারতের প্রাচীন মার্শাল আর্ট কলারীপট্টু-র সঙ্গে জড়িত। এই রেকর্ড একসঙ্গে করা সর্বাধিক মানুষের কলারীর প্রদর্শন। দুবাইতে কলারী ক্লাব, দুবাই পুলিশের সহযোগে এই প্ল্যানটি করে এবং UAE-র রাষ্ট্রীয় দিবসে প্রদর্শন করে। এই অনুষ্ঠানে চার বছরের শিশু থেকে শুরু করে ষাট বছরের মানুষেরা কলারীর দক্ষতার সর্বোত্তম ভাবে প্রদর্শন করে। ভিন্ন ভিন্ন প্রজন্ম কিভাবে একটি প্রাচীন পরম্পরাকে গভীর মনোযোগের সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে চলেছে, এটি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
বন্ধুরা, “মন কি বাতের” শ্রোতাদের আমি কর্নাটকের গডক জেলার বাসিন্দা কেমোশ্রী জি-এর সম্বন্ধে জানাতে চাই। কেমশ্রী জি দক্ষিণে কর্নাটকের কলা-সংস্কৃতিকে পুণর্জীবিত করার লক্ষ্যে বিগত ২৫ বছর ধরে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন। আপনি কল্পনা করতে পারেন কত দীর্ঘ ওঁর তপস্যা। আগে তো উনি হোটেল ম্যানেজমেন্ট এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু নিজের সংস্কৃতি ও পরম্পরা নিয়ে ওঁর টান এত গভীর ছিল যে এটাকেই তিনি জীবনের মিশন বানিয়ে নিয়েছেন। উনি “কলা চেতনা” নামক একটি মঞ্চ বানিয়েছেন। এই মঞ্চ আজ কর্নাটকের এবং দেশ-বিদেশের কলাকুশলীদের নিয়ে নানা অনুষ্ঠান আয়োজিত করে। এখানে লোকাল আর্ট এবং কালচারকে প্রমোট করার জন্য নানা ধরনের উদ্ভাবনী কাজকর্ম হয়।
বন্ধুগণ, কলা সংস্কৃতির প্রতি দেশবাসীর এই উৎসাহ নিজেদের ঐতিহ্যের প্রতি গর্বের ভাবনারই প্রকাশ। আমাদের দেশের নানা কোনায়, এরকম কতইনা রঙ ছড়িয়ে আছে। আমাদের উচিত সেগুলোকে সাজিয়ে গুছিয়ে যত্নে সংরক্ষণের জন্য নিরন্তর চেষ্টা করে যাওয়া।
আমার প্রিয় দেশবাসী, দেশের বহু জায়গায় বাঁশ দিয়ে অনেক সুন্দর ও উপযোগী দ্রব্য তৈরি করা হয়। বিশেষ করে জনজাতি অঞ্চলে বাঁশের দক্ষ কারিগর ও শিল্পীরা রয়েছেন। যখন থেকে দেশে বাঁশের সঙ্গে সম্পর্কিত অতীতের আইন কানুন বদলানো হয়েছে তখন থেকে এর একটা বড় বাজার গড়ে উঠেছে। মহারাষ্ট্রের পালঘরের মতো স্থানেও জনজাতি সমাজের মানুষেরা বাঁশ দিয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর প্রোডাক্ট তৈরি করছেন। বাঁশ দিয়ে তৈরি বাক্স, চেয়ার, চায়ের পাত্র, ঝুড়ি, ট্রে ইত্যাদি জিনিস খুব জনপ্রিয় হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এই শিল্পীরা bamboo ঘাস দিয়ে খুব সুন্দর পোশাক ও সাজগোজের জিনিসও তৈরি করছেন। এতে জনজাতি মহিলাদের উপার্জনও হচ্ছে, আবার তাঁদের দক্ষতার পরিচয়ও সবাই পাচ্ছেন।
বন্ধুরা, কর্নাটকের এক দম্পতির সুপারির তন্তুর সাহায্যে তৈরি বহু ইউনিক প্রোডাক্টস ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট পর্যন্ত পৌঁছেছে। কর্নাটকের শিবমোগার এই দম্পতি হলেন শ্রীমান সুরেশ আর ওঁর স্ত্রী শ্রীমতি মৈথিলী। এঁরা সুপারির তন্তু দিয়ে ট্রে, প্লেট, হ্যান্ডব্যাগ থেকে শুরু করে বহু ডেকোরেটিভ জিনিস বানাচ্ছেন। এমন তন্তু দিয়ে বানানো চপ্পলও আজকাল মানুষ খুব পছন্দ করছেন। তাঁদের প্রোডাক্টস আজ লন্ডন ও ইউরোপের বাজারেও বিক্রি হচ্ছে। এটাই তো আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ আর পরম্পরাগত দক্ষতার গুণ যা সবাই পছন্দ করছেন, ভারতের এই পরম্পরাগত দক্ষতায় সারা দুনিয়া সাসটেনেবল ফিউচার এর দিশা খুঁজে পাচ্ছে। আমাদের নিজেদেরও এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি আরো বেশি সচেতন থাকতে হবে। আমরা নিজেরাও যেন এমন স্বদেশী ও লোকাল প্রোডাক্ট বেশি করে ব্যবহার করি ও অন্যদেরও উপহার দিই। এতে আমাদের পরিচয়ও দৃঢ় হবে, স্থানীয় অর্থ ব্যবস্থাও মজবুত হবে এবং অধিক সংখ্যায় মানুষের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এখন আমরা ধীরে ধীরে “মন কি বাত” এর ১০০তম পর্বের অভূতপূর্ব মুহূর্তের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। আমি অনেক দেশবাসীর চিঠি পেয়েছি যাতে তাঁরা ১০০তম পর্বের বিষয়ে উৎসাহ ভরে জানতে চেয়েছেন। ১০০ তম পর্বে আমরা কী কথা বলব, সেই পর্বকে কীভাবে বিশেষ করে তুলব সে ব্যাপারে আপনারা আমাকে পরামর্শ দিলে আমার খুব ভালো লাগবে। আগামী পর্বে আমরা ২০২৩ সালে মিলিত হব। আমি আপনাদের সবাইকে ২০২৩ এর শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এই বছরটাও দেশের জন্য স্মরণীয় হোক, দেশ নতুন নতুন শিখর স্পর্শ করুক - আমাদের সবাই মিলে এই সংকল্প করতে হবে ও তাকে বাস্তব রূপও দিতে হবে। এ সময় বহু মানুষই ছুটির মেজাজে আছেন। আপনারা এই উৎসবের, অবসরের আনন্দ খুব ভালোভাবে উপভোগ করুন, কিন্তু একটু সতর্কও থাকুন।
আপনারাও দেখছেন পৃথিবীর অনেক দেশে করোনা বাড়ছে। তাই আমাদের মাস্ক আর হাত ধোয়ার মতো সাবধানতার প্রতি আরো বেশি করে মনোযোগী হতে হবে। আমরা সাবধান থাকলে সুরক্ষিতও থাকব আর আমাদের আনন্দে কোন বাধাও পড়বে না। এ কথার সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের সবাইকে আরো একবার শুভকামনা জানাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। ‘মন কি বাত’-এ আবার একবার আপনাদের সবাইকে অনেক-অনেক স্বাগত। এই অনুষ্ঠান পঁচানব্বইতম পর্ব। আমরা খুব দ্রুততার সঙ্গে “মন কি বাত”-এর শততম পর্বের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। এই অনুষ্ঠান আমার জন্য দেশের একশো তিরিশ কোটি দেশবাসীর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আর এক মাধ্যম। প্রত্যেক পর্বের আগে, গ্রাম ও শহর থেকে আসা বহু চিঠি পড়া, বাচ্চা থেকে শুরু করে প্রবীণদের অডিও মেসেজ শোনা, এটা আমার জন্য এক আধ্যাত্মিক অনুভবের মত।
বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানের আরম্ভ আমি এক অনুপম উপহারের আলোচনা দিয়ে করতে চাই। তেলেঙ্গানার রাজন্না সির্সিল্লা জেলার এক তন্তুবায় ভাই হলেন ইয়েলধী হরিপ্রসাদ গারু। উনি নিজের হাতে বুনে আমাকে জি-টুয়েন্টির এই লোগো পাঠিয়েছেন। এই দুর্দান্ত উপহার দেখে তো আমি হতচকিত হয়ে গিয়েছি। হরিপ্রসাদজী নিজের শিল্পে এতটাই নৈপুণ্য অর্জন করেছেন যে উনি সবার নজর কেড়ে নেন। হাতে বোনা জি-টুয়েন্টির এই লোগোর সঙ্গে হরিপ্রসাদজী আমাকে একটা চিঠিও পাঠিয়েছেন। এতে উনি লিখেছেন যে আগামী বছর জি-টুয়েন্টির শিখর সম্মেলনের আয়োজক হওয়া ভারতের জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। দেশের এই মর্যাদা পাওয়ার আনন্দে উনি জি-টুয়েন্টির এই লোগো নিজের হাতে তৈরি করেছেন। বয়নের এই অসামান্য প্রতিভা উনি বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার হিসাবে পেয়েছেন আর আজ উনি পুরো প্যাশনের সঙ্গে এই কাজে যুক্ত।
বন্ধুরা, কিছু দিন আগেই জি-টুয়েন্টির লোগো আর ভারতের প্রেসিডেন্সি সংক্রান্ত ওয়াবসাইট উদ্বোধনের সুযোগ হয়েছে আমার। এই লোগোর নির্বাচন এক পাবলিক কনটেস্টের মাধ্যমে হয়েছিল। যখন আমার কাছে হরিপ্রসাদ গারুর পাঠানো এই উপহার পৌঁছল, তখন আমার মনে আর একটা ভাবনা এল। তেলেঙ্গানার কোনও জেলায় বসে থাকা ব্যক্তিও জি-টুয়েন্টির মত সম্মেলনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত বলে বোধ করতে পারেন, এটা দেখে আমার খুব ভালো লাগল। আজ হরিপ্রসাদ গারুর মত অনেক মানুষ আমাকে চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছেন যে দেশ এত বড় সামিট আয়োজনের সুযোগ পাওয়ায় ওঁদের বুক গর্বে ফুলে গিয়েছে। আমি আপনাদের পুণের বাসিন্দা সুব্বা রাও চিল্লারা জী আর কলকাতার তুষার জগমোহনের বার্তার উল্লেখও করব। ওঁরা জি-টুয়েন্টি নিয়ে ভারতের প্রো-অ্যাকটিভ উদ্যোগের খুব প্রশংসা করেছেন।
বন্ধুরা, জি-টুয়েন্টির বিশ্ব জনসংখ্যায় দুই-তৃতীয়াংশ, বিশ্ব বাণিজ্যে তিন-চতুর্থাংশ আর বিশ্ব জিডিপি-তে পঁচাশি শতাংশ ভাগীদারী রয়েছে। আপনারা ভাবুন – ভারত আজ থেকে তিন দিন পরে অর্থাৎ পয়লা ডিসেম্বর থেকে এত বড় গোষ্ঠীর, এত সামর্থ্যবান গোষ্ঠীর অধ্যক্ষতা করতে যাচ্ছে। ভারতের জন্য, প্রত্যেক ভারতবাসীর জন্য, এটা কত বড় সুযোগ! এটা এই কারণেও আরও বিশিষ্ট যে এই দায়িত্ব ভারত পেয়েছে আজাদীর অমৃতকালে।
বন্ধুরা, G-20 র সভাপতিত্ব আমাদের জন্য এক বড় Opportunity নিয়ে এসেছে। আমাদের এই সুযোগের সম্পূর্ণ রূপে সদ্ব্যবহার করে গ্লোবাল গুড, অর্থাৎ বিশ্ব কল্যাণের প্রতি ফোকাস রাখতে হবে। শান্তি হোক বা ঐক্য, পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীলতা অথবা সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট, ভারতের কাছে এই সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জের সমাধান আছে।
আমরা One Earth, One Family, One Future - এর যে থিম দিয়েছি, তাতে বসুধৈব কুটুম্বাকাম-এর প্রতি আমাদের অঙ্গীকার প্রকাশ পায়। আমরা সব সময় বলি,
ওম সর্বেষাং স্বস্তির্ভবতু।
সর্বেষাং শান্তির্ভবতু।
সর্বেষাং পূর্ণম্ভবতু।
সর্বেষাং মঙ্গলম্ভবতু।
ওম শান্তি: শান্তি: শান্তি:।।
অর্থাৎ সবার কল্যাণ হোক, সবাই শান্তি পাক, সবাই পূর্ণতা পাক এবং সবার মঙ্গল হোক। আগামী দিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় G-20 সম্পর্কিত অনেক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। সেই উপলক্ষে পৃথিবীর আলাদা আলাদা জায়গা থেকে আপনাদের রাজ্যে মানুষের আসার সুযোগ মিলবে। আমার বিশ্বাস আছে, যে আপনারা নিজেদের সংস্কৃতির বিবিধ এবং বিশিষ্ট রূপ পৃথিবীর সামনে নিয়ে আসবেন এবং আপনাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে G-20-তে যারা আসবেন, তারা এখন ডেলিগেট হিসেবে এলেও তারাই কিন্তু ভবিষ্যতের টুরিস্ট। আপনাদের সবার প্রতি, বিশেষ করে আমার যুব বন্ধুদের প্রতি আমার আরো একটি আবেদন যে, হরিপ্রসাদ গারুর মত আপনারাও কোন না কোন ভাবে G-20 র সঙ্গে অবশ্যই যুক্ত হোন। কাপড়ের ওপর G-20র ভারতীয় লোগো, বেশ cool ভাবে, স্টাইলিশ ভাবে বানানো যেতে পারে, ছাপানো যেতে পারে। আমি স্কুল কলেজ, ইউনিভারসিটির প্রতিও আবেদন করব যে আপনারা এখানে G-20 সম্পর্কিত চর্চা, আলোচনা, কম্পিটিশন করানোর সময় বের করুন। আপনারা G20.in ওয়েবসাইটে গেলে আপনাদের রুচি অনুযায়ী অনেক ধরনের জিনিস খুঁজে পাবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ১৮ই নভেম্বর সমগ্র দেশ Space Sector-এ নতুন ইতিহাস তৈরি হতে দেখলো। ঐদিন ভারত নিজের প্রথম এমন একটি রকেট মহাকাশে পাঠিয়েছে যেটা ভারতের প্রাইভেট সেক্টর ডিজাইন এবং নির্মাণ করেছে। এই রকেটের নাম ''বিক্রম - S' । শ্রীহরিকোটাতে স্বদেশী Space Start-Up এর এই প্রথম রকেট, যে মুহূর্তে ঐতিহাসিক উড়ান নেয়, প্রত্যেক ভারতীয়র মাথা গৌরবে উচুঁ হয়ে গিয়েছিল।
বন্ধুরা, বিক্রম-এস, এই রকেটটি বহুগুণান্বিত। অন্যান্য রকেটের তুলনায় এটি হালকা এবং সস্তা। এর Development Cost মহাকাশ অভিযানের সঙ্গে যুক্ত দেশগুলির লগ্নির তুলনায়ও অনেকটাই কম। Space Technology-র ক্ষেত্রে কম খরচায় আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা এখন ভারতের অন্যতম পরিচয় হয়ে উঠেছে। এই রকেটটি তৈরি করতে আরও একটি আধুনিক Technology ব্যবহার করা হয়েছে। আপনারা জেনে অবাক হবেন, এই রকেটের কিছু জরুরি অংশ 3D Printing এর সাহায্যে তৈরি হয়েছে। সত্যি, বিক্রম- এস রকেটের লঞ্চ মিশনের একেবারে যথাযথ নাম দেওয়া হয়েছে- 'প্রারম্ভ'। ভারতে প্রাইভেট স্পেস সেক্টরের এক নতুন দিগন্ত উন্মুক্ত হল। এই দেশে আত্মবিশ্বাসী এক নতুন যুগের সূচনা হল। আপনারা ভাবুন, যে বাচ্চারা হাতে কাগজের উড়োজাহাজ বানিয়ে ঘুরত, তারা আজকে ভারতে সত্যিকারের উড়োজাহাজ বানানোর সুযোগ পাচ্ছে। যে বাচ্চারা আকাশের চাঁদ তারা দেখে শূন্যে ছবি আকত, তারা আজ দেশের মাটিতে রকেট তৈরির সুযোগ পাচ্ছে। স্পেস প্রাইভেট সেক্টরের জন্য খুলে যাওয়ার ফলে বহু যুবদের স্বপ্ন পূরণ হওয়া সম্ভব হচ্ছে। রকেট বানাতে ব্যস্ত এই যুবরা যেন বলছে - ' sky is not the limit'.
বন্ধুরা, ভারত স্পেস সেক্টরের এই সাফল্য তার প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গেও ভাগ করে নিচ্ছে। কালই ভারত এক Satellite Launch করেছে যা ভারত ভুটানের সাথে তৈরি করেছে। এই উপগ্রহ খুবই উচ্চমানের রেসলিউসনের ছবি তুলে পাঠাবে যা ভুটানকে তার প্রাকৃতিক সম্পদ আরো ভাল ভাবে সামলাতে সাহায্য করবে। এই Satellite Launch ভারত ভুটান সুসম্পর্কের এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
বন্ধুরা, আপনারা খেয়াল করে থাকবেন, বিগত কয়েকটি ' মন কি বাত' এ আমরা space, tech, innovation নিয়ে অনেক আলোচনা করেছি। এর দুটি কারণ আছে। এক হল আমাদের যুবরা এই ক্ষেত্রে চমতকার কাজ করছে। They are thinking big and achieving big. এখন তারা আর অল্পে সন্তুষ্ট থাকবে না। দ্বিতীয় কারণ হল, innovation এবং value creation, এর এই রোমাঞ্চকর যাত্রায় যুবরা তাদের বাকি বন্ধু ও start upsদেরও encourage করছে।
বন্ধুরা, আমরা যখন প্রযুক্তি সম্পর্কিত উদ্ভাবনের কথা বলছি, তখন আমরা ড্রোনের কথা কীভাবে ভুলতে পারি? ভারত ড্রোনের ক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। কিছুদিন আগে, আমরা দেখেছিলাম যে হিমাচল প্রদেশের কিন্নৌরে কীভাবে ড্রোনের মাধ্যমে আপেল পরিবহন করা হয়েছিল। কিন্নৌর হল হিমাচলের দূরবর্তী জেলা এবং এই মরসুমে সেখানে প্রচন্ড তুষারপাত হয়। এইরকম তুষারপাতের মধ্যে, রাজ্যের বাকি অংশের সঙ্গে কিন্নৌরের যোগাযোগ কয়েক সপ্তাহ ধরে কঠিন হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় সেখান থেকে আপেল পরিবহন ততধিক কঠিন হয়ে যায়। ড্রোন প্রযুক্তির ফলে হিমাচলের সুস্বাদু কিন্নৌরি আপেল মানুষের কাছে আরও অনেক তাড়াতাড়ি পৌঁছবে। এতে আমাদের কৃষক ভাই-বোনদের খরচ কমবে, আপেল সময়মতো বাজারে পৌঁছাবে, এবং আপেল নষ্টও কম হবে।
বন্ধুরা, আজকে আমাদের দেশবাসী তাদের উদ্ভাবনের মাধ্যমে সেই সব জিনিসও সম্ভব করছে, যা আগে কল্পনাও করা যেত না। এটা দেখে কে না খুশি হবে? সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, আমাদের দেশ সাফল্যের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে। আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে যে আমরা ভারতীয়রা এবং বিশেষ করে আমাদের তরুণ প্রজন্ম এখন অপ্রতিরোধ্য। প্রিয় দেশবাসী, আমি আপনাদের জন্য একটি ছোট ক্লিপ প্লে করতে যাচ্ছি।
আপনারা সবাই এই গানটি কখনো না কখনো শুনে থাকবেন। এটি বাপুর প্রিয় গান বলে কথা। কিন্তু আমি যদি আপনাদের বলি যে এই সুরমূর্ছনার গায়ক গ্রিস দেশের নাগরিক, তাহলে আপনি অবশ্যই অবাক হবেন এবং এই তথ্যটি আপনাকে গর্বিতও করবে। এই গানটি গ্রীক গায়ক Konstantinos Kalaitzis গেয়েছেন। তিনি গান্ধীজির সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উদযাপন সমারোহে এটি গেয়েছিলেন। কিন্তু আজ আমি তাঁর কথা অন্য একটি কারণে আলোচনা করছি। ভারত এবং ভারতীয় সঙ্গীত সম্পর্কে তাঁর মনে অমোঘ আকর্ষণ রয়েছে। ভারতের প্রতি তাঁর ভালবাসা এতটাই যে গত ৪২ বছর ধরে তিনি প্রায় প্রতি বছর ভারতে এসেছেন। তিনি ভারতীয় সঙ্গীতের উৎস, বিভিন্ন ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতি, বিভিন্ন ধরণের রাগ, তাল এবং রাসের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ঘরানার সম্পর্কে পড়াশোনা করেছেন। ভারতীয় সঙ্গীতের অনেক মহান ব্যক্তিত্বের অবদান সম্পর্কেও অধ্যয়ন করেছেন। তিনি ভারতের শাস্ত্রীয় নৃত্যের বিভিন্ন দিকও খুব কাছ থেকে জেনেছেন। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত এই সব অভিজ্ঞতাগুলিকে তিনি খুব সুন্দরভাবে একটি বইতে তুলে ধরেছেন। তাঁর ইন্ডিয়ান মিউজিক নামক বইটিতে প্রায় ৭৬০টি ছবি রয়েছে।
এরমধ্যে বেশিরভাগ ছবি নিজেই তুলেছেন। অন্য দেশেও ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়ে এমন উৎসাহ আর আকর্ষণ প্রকৃতপক্ষেই আনন্দদায়ক।
বন্ধুরা, কয়েক সপ্তাহ আগেই এমন একটি খবর পাওয়া গেছে যা আমাদের গর্বিত করে। আপনাদের জেনে ভালো লাগবে যে গত ৮ বছরে ভারত থেকে মিউজিকাল ইন্সট্রুমেন্টসের এক্সপোর্ট সাড়ে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইলেকট্রিক্যাল মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্টস-এর ক্ষেত্রে জানা গেছে যে, এদের এক্সপোর্ট ষাট গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর থেকে বোঝা যায় যে ভারতীয় সংস্কৃতি এবং সংগীতের craze সারা বিশ্ব জুড়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইন্ডিয়ান মিউজিকাল ইন্সট্রুমেন্টস-এর সবচেয়ে বড় ক্রেতা USA, জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান এবং ইউকের মত উন্নত দেশ। আমাদের সকলের কাছেই এটা অত্যন্ত সৌভাগ্যের যে আমাদের দেশে মিউজিক, ডান্স এবং আর্টের এত সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে।
বন্ধুরা, মহান মনীষী কবি ভর্তৃহরিকে আমরা সকলেই তাঁর রচিত ‘নীতিশতকের’ জন্য চিনি। একটি শ্লোকে তিনি বলেছেন যে শিল্প, সঙ্গীত এবং সাহিত্যর প্রতি আমাদের ভালোবাসাই আমাদের মানবতার আসল পরিচয়, যেটিকে বাস্তবে আমাদের সংস্কৃতি, Humanity র চেয়েও উর্ধে Divinity তে নিয়ে যায়। বেদের মধ্যে সামবেদকে আমাদের বিভিন্ন সংগীতের স্তোত্র বলা হয়। মা সরস্বতীর বীণা হোক, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি হোক, বা ভোলানাথের ডমরু, আমাদের দেব দেবীরাও সংগীতের থেকে পৃথক নয়। আমরা ভারতীয়রা প্রত্যেক বিষয়েই সংগীত খুঁজে নিই। তা সেটা নদীর কূলকুল করে বয়ে যাওয়া হোক, বৃষ্টির ফোঁটা হোক, পাখিদের কলরব হোক অথবা বাতাসের গুঞ্জন। আমাদের সভ্যতায় সংগীত সবদিক থেকে অন্তর্নিহিত রয়েছে। সংগীত শুধু আমাদের শরীরকেই শান্তি প্রদান করে না, আমাদের মনকেও আনন্দ দেয়। সংগীত আমাদের সমাজকেও বেঁধে রাখে। যদি ভাংড়া আর লাবনীতে উত্তেজনা আর আনন্দের ভাবনা থাকে তাহলে রবীন্দ্র সংগীত আমাদের আত্মাকে আপ্লুত করে। সারা দেশের আদিবাসীদের ও নানা ধরনের সংগীতের পরম্পরা রয়েছে। এটা আমাদের নিজেদের মধ্যে মিলেমিশে থাকা ও প্রকৃতির সঙ্গে জুড়ে থাকার অনুপ্রেরণা দেয়।
বন্ধুরা, আমাদের সংগীতের এই ধারা শুধুমাত্র আমাদের সংস্কৃতিকেই সমৃদ্ধ করেনি বরং সারা বিশ্বের সংগীতে তার নিজস্ব চিরস্থায়ী ছাপ ফেলেছে। ভারতীয় সংগীতের খ্যাতি বিশ্বের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়েছে। আমি আপনাদের আরেকটি অডিও ক্লিপ শোনাচ্ছি।
আপনি হয়তো ভাবছেন যে ঘরের পাশে কোন মন্দিরে ভজন কীর্তন চলছে। কিন্তু এই আওয়াজ ও আপনার কাছে ভারত থেকে হাজার মাইল দূরে অবস্থিত সাউথ আমেরিকান দেশ গুয়ানা থেকে আসছে। উনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীতে আমাদের দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ গুয়ানা গিয়েছিলেন। ওঁরা এখান থেকে ভারতের অনেক রীতিনীতি নিজেদের সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। উদাহরণস্বরূপ যে রকম আমরা ভারতে হোলি উদযাপন করি, গুয়ানাতেও হোলির উদ্দীপনা প্রবল ভাবে অনুভূত হয়। যেখানে হোলির রং থাকে, সেখানে ফাগওয়া অর্থাৎ ফাগুয়া সঙ্গীতও পাওয়া যায়। গুয়ানার ফাগুয়াতে ভগবান রাম এবং ভগবান কৃষ্ণের সঙ্গে জড়িত বিবাহ সঙ্গীত গাওয়ার বিশেষ পরম্পরা আছে। এই গানগুলোকে চওতাল বলা হয়ে থাকে। এগুলিকে ওই রকমই সুর আর হাই পিচ এই গাওয়া হয়, যে রকম আমাদের এখানে গাওয়া হয়ে থাকে। শুধুমাত্র এতোটাই নয় গুয়ানাতে চওতাল কম্পিটিশনও হয়ে থাকে। এইরকমই বহু সংখ্যক ভারতীয় বিশেষ করে পূর্ব উত্তর প্রদেশ এবং বিহার থেকে ফিজিতেও গিয়েছিলেন। তাঁরা পারম্পরিক ভজন কীর্তন গাইতেন যার মধ্যে মুখ্য রূপে রামচরিত মানস-এর দোহা গাওয়া হত। তাঁরা ফিজিতেও ভজন কীর্তন সঙ্গে জড়িত অনেক দলও বানিয়ে ফেলেছেন। ফিজিতে রামায়ণ মন্ডলী নামে আজও ২০০০ এরও বেশি ভজন কীর্তন দল আছে। এদের আজ প্রত্যেক গ্রামেগঞ্জে দেখতে পাওয়া যায়। আমি তো এখানে কয়েকটা মাত্র উদাহরণই দিয়েছি। যদি আপনি সমগ্র দুনিয়াতে দেখেন তাহলে দেখতে পাবেন ভারতীয় সংগীতকে ভালোবাসার মানুষের লিস্ট অনেক লম্বা।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমরা সবাই সব সময় এই ব্যাপারে গর্ব করি যে আমাদের দেশ সমগ্র পৃথিবীতে সবথেকে প্রাচীন ঐতিহ্যের পিঠস্থান। এইজন্য এটা আমাদের দায়িত্ব যে আমরা আমাদের ঐতিহ্য আর পারম্পরিক জ্ঞানকে সংরক্ষিত করি, তার লালন পালন করি, আর সম্ভব হলে তাকে এগিয়ে নিয়ে যাই। এরকমই প্রশংসনীয় একটি প্রচেষ্টা আমাদের পূর্বত্তর রাজ্য নাগাল্যান্ড এর কিছু বন্ধুরা করছেন। আমার এই প্রচেষ্টা অত্যন্ত ভালো লেগেছে, তাই আমি ভাবলাম “মন কি বাত”-এর শ্রোতাদের সঙ্গে এটা ভাগ করে নিই।
বন্ধুরা, নাগাল্যান্ড-এ নাগা সমাজ এর জীবনশৈলী তাদের কলা-সংস্কৃতি আর সংগীত আমাদের সবাইকে আকর্ষিত করে। এটা আমাদের দেশের গৌরবময় ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নাগাল্যান্ডের মানুষদের জীবন আর ওঁদের স্কিলস, সাসটেইনেবল লাইফ স্টাইলের জন্যও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই পরম্পরা আর স্কিলসকে বাঁচিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পর্যন্ত পৌঁছে দেবার লক্ষ্যে ওখানকার মানুষেরা একটি সংস্থা বানিয়েছেন যার নাম “লিডি ক্রো ইউ”। নাগা সংস্কৃতির যে সুন্দর আবহ হারাতে বসেছিল “লিডি ক্রো ইউ” সংস্থা সেটাকে পুনর্জীবিত করার কাজ করছে। উদাহরণ স্বরূপ নাগা লোকসংগীত নিজেই অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এই সংস্থাটি নাগা সংগীতের অ্যালবাম লঞ্চ করার কাজ শুরু করে দিয়েছে। এখনো পর্যন্ত তিনটি অ্যালবাম লঞ্চ করা হয়ে গিয়েছে। এই মানুষেরা লোকসংগীত, লোকনৃত্যর সঙ্গে জড়িত ওয়ার্কশপও আয়োজন করে থাকেন।
এই সবকিছুর জন্য তরুণদের training-ও দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, নাগাল্যান্ডের পারম্পরিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কাপড় তৈরী, সেলাই-বোনাই করার মত যা যা কাজ আছে তারও ট্রেনিং তরুণদের দেয়া হয়। উত্তর-পূর্বে, বাঁশ থেকেও অনেক ধরনের product তৈরি করা হয়। নতুন প্রজন্মের যুব-সমাজকে Bamboo product তৈরি করাও শেখানো হয়। এর ফলে নিজস্ব সংস্কৃতির সঙ্গে যুব-সমাজের শুধু একটা সুনিবিড় যোগাযোগই তৈরি হয় না, তার সঙ্গে রোজগারেরও নতুন নতুন রাস্তা তৈরি হয়। নাগা লোকসংস্কৃতি সম্পর্কে যাতে আরো বেশি করে মানুষ জানতে পারে সেজন্য লিডি-ক্রো-ইউ'র লোকেরা উদ্যোগ নিয়েছেন।
বন্ধুরা, আপনারা যে অঞ্চলে থাকেন সেখানেও নিশ্চয়ই এরকম কিছু সাংস্কৃতিক রীতিনীতি ও পরম্পরা রয়েছে। আপনারাও নিজেদের অঞ্চলে তাই এ ধরনের উদ্যোগ নিতেই পারেন। আর এরকম কোন বিরল উদ্যোগ সম্পর্কে আপনার জানা থাকলে সেই তথ্য'ও আমার সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারেন।
প্রিয় দেশবাসী, আমাদের এখানে বলা হয়ে থাকে-
"বিদ্যাধনং সর্বধনপ্রধানম্"
অর্থাৎ, কেউ যদি বিদ্যাদান করে থাকেন তাহলে তিনি সমাজের মঙ্গলার্থে সবথেকে বড় কাজ করছেন। শিক্ষার অঙ্গনে প্রজ্জ্বলিত ছোট্ট একটি প্রদীপ'ও সমগ্র সমাজকে আলোকিত করতে পারে। আমি এদেখে অনেক অনন্দিত যে জেশজুরে এমন অনেক প্রচেষ্টা চলছে। উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনৌ থেকে ৭০-৮০ কিলোমিটার দূরে হরদইয়ে, বাংশা বলে একটা বাঁসা গ্রাম আছে! এই গ্রামের যতীন ললিত সিং-জি সম্পর্কে সম্প্রতি আমি জানতে পেরেছি, তিনি শিক্ষার জাগরণে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। যতীন-জি দু’বছর আগে এখানে 'Community Library and Resource Centre' চালানো শুরু করেন। তাঁর সেই centre-এ হিন্দি ও ইংরেজি সাহিত্য, কম্পিউটার, law এবং বহু সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ৩০০০-এরও বেশী পুস্তক রয়েছে। এই লাইব্রেরীতে শিশুদের পছন্দের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এখানে মজুত comics-এর বই হোক বা educational toys, শিশুরা সেগুলো খুবই পছন্দ করেছে। ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা খেলার মধ্যে দিয়ে নতুন নতুন বিষয় শেখার জন্য এখানে আসে। পড়াশোনা offline-এই হোক বা online-এ, অন্ততপক্ষে ৪০ জন volunteers এই centre-এ student'দের guide করার কাজে যুক্ত থাকে। প্রতিদিন গ্রামের অন্ততপক্ষে ৮০ জন শিক্ষার্থী এই Library-তে পড়াশোনা করতে আসে।
বন্ধুরা, ঝাড়খণ্ডের সঞ্জয় কশ্যপজীও দরিদ্র শিশুদের স্বপ্নকে নতুন করে ডানা মেলার সুযোগ করে দিচ্ছেন। ছাত্রজীবনে সঞ্জয়জীকে ভালো বইয়ের অভাব জনিত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এজন্য তিনি সিদ্ধান্ত নেন, তাঁর অঞ্চলের শিশুদের ভবিষ্যৎ বইয়ের অভাবে অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে তিনি দেবেন না। নিজের এই মিশনের ফলে আজ ঝাড়খণ্ডের অনেক জেলায় বাচ্চাদের জন্য তিনি "লাইব্রেরি ম্যান" হয়ে উঠেছেন। সঞ্জয়জী নিজের চাকরি জীবন শুরু করার সময় প্রথম গ্রন্থাগার নিজের পৈতৃক ভিটেতে তৈরি করেছিলেন। তারপর চাকরির কারণে তাঁর যেখানেই ট্রান্সফার হত সেখানকার দরিদ্র ও জনজাতি শিশুদের পড়াশোনার জন্য লাইব্রেরি খোলার মিশনে তিনি মগ্ন থাকতেন। এভাবে ঝাড়খণ্ডের বহু জেলায় তিনি বাচ্চাদের জন্য লাইব্রেরী খুলেছেন। তাঁর লাইব্রেরি খোলার এই মিশন আজ এক সামাজিক আন্দোলনের রূপ নিচ্ছে। সঞ্জয়জী, যতীনজীর মত এমন প্রয়াস অনেকেই করছেন। তাঁদের আমি বিশেষভাবে অভিনন্দন জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, মেডিকেল সাইন্সের দুনিয়ায় রিসার্চ আর ইনোভেশনের পাশাপাশি অত্যাধুনিক টেকনোলজি ও উপকরণের সাহায্যে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু তবুও কিছু রোগ আজও আমাদের জন্য খুব বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে রয়ে গেছে। এমনই একটি রোগ হল মাসকুলার ডিস্ট্রফি। এটি প্রধানত একটি বংশগত রোগ যা যে কোন বয়সেই হতে পারে। এতে দেহের মাংসপেশীগুলি দুর্বল হতে থাকে। রোগীর পক্ষে প্রতিদিনের নিজস্ব ছোট ছোট কাজগুলি করাও দুরূহ হয়ে ওঠে। এ ধরনের রোগীদের চিকিৎসা ও দেখাশোনার জন্য আন্তরিকভাবে সেবাপরায়ণ হওয়া প্রয়োজন। আমাদের দেশে হিমাচল প্রদেশের সোলানে এমন একটি সেন্টার আছে যারা মাসকুলার ডিস্ট্রফির রোগীদের কাছে এক নতুন আশার আলো হয়ে উঠেছে। এই সেন্টারের নাম "মানব মন্দির"। এটি ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ মাসকুলার ডিস্ট্রফি দ্বারা পরিচালিত। নিজের নামের প্রতি সুবিচার করে "মানব মন্দির" মানব সেবার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। এখানে রোগীদের জন্য ওপিডি এবং অ্যাডমিশনের সুবিধা তিন - চার বছর আগে থেকে শুরু হয়েছে। মানব মন্দিরে প্রায় ৫০ জন রোগীর জন্য বেডের ব্যবস্থা আছে। ফিজিওথেরাপি, ইলেকট্রোথেরাপি ও হাইড্রো থেরাপির পাশাপাশি যোগ-প্রাণায়ামের সাহায্যেও এখানে রোগের চিকিৎসা করা হয়।
বন্ধুরা, সব রকমের hi-tech সুবিধার মাধ্যমে এই কেন্দ্রে রোগীদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার প্রচেষ্টা রয়েছে। Muscular Dystrophy-র সঙ্গে যুক্ত এই চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সচেতনতার অভাবও রয়েছে। তাই, এই কেন্দ্র হিমাচল প্রদেশেরই নয়, পুরো দেশের রোগীদের জন্য সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করে। সবচেয়ে বেশি সাহস আমরা এই জেনে পাই যে এই সংস্থার মুখ্য ব্যবস্থাপকরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরাই, যেমন সামাজিক কর্মী, উর্মিলা বালদিজি, Indian Association of Muscular Dystrophy-র অধ্যক্ষ আমাদের বোন সঞ্জনা গোয়েল জি, আর এই Association-এর বড় ভূমিকায় ছিলেন শ্রীমান বিপুল গোয়েল জি, এই সংস্থার গঠনে অত্যন্ত বড় ভূমিকা পালন করেছেন। মানব মন্দির কে hospital ও Research centre হিসেবে বিকশিত করার প্রচেষ্টায় রয়েছেন। এর ফলে এখানে রোগীদের আরো উন্নত পরিষেবা পাওয়ার সুযোগ হবে। আমি এই বিষয়ে প্রচেষ্টারত সবাইকে আমার হৃদয় থেকে প্রশংসা করছি, সঙ্গে Muscular Dystrophy-র সঙ্গে যারা যুদ্ধ করছে সেইসব রোগীদের সুস্থতা কামনা করি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ “মন কি বাত”-এ আমরা দেশবাসীর গঠনমূলক ও সামাজিক কর্মের আলোচনা করলাম, তা দেশের শক্তি ও উৎসাহের উদাহরণ। আজ সব দেশবাসী কোন না কোন ক্ষেত্রে, প্রতি পর্যায়ে, দেশের জন্য আলাদা কিছু করার কাজে প্রচেষ্ট। আজকের আলোচনায় আমরা দেখলাম, G-20র মত আন্তর্জাতিক পরিসরে আমাদের এক তন্তুবায় বন্ধু নিজের দায়িত্ব বুঝে, তা পূরণ করতে এগিয়ে এলেন। তেমনই, কেউ পরিবেশের জন্য প্রচেষ্ট, কেউ জলের জন্য কাজ করছেন, কেউ কেউ শিক্ষা, চিকিৎসা ও Science Technology থেকে সংস্কৃতি ঐতিহ্য পর্যন্ত, অসাধারণ কাজ করে চলেছেন। এই কারণ আজ আমাদের প্রতিটি নাগরিক নিজের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন, যখন এরূপ কর্তব্য ভাবনা কোন রাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়, তখন তার স্বর্ণালী ভবিষ্যৎ অবধারিতরূপে নির্ধারিত হয়ে যায় ও দেশের স্বর্ণালী ভবিষ্যতেই রয়েছে আমাদের সকলের স্বর্ণালী ভবিষ্যৎ।
আমি, আরো একবার দেশবাসীদের তাদের প্রচেষ্টার জন্য প্রণাম জানাই। পরের মাসে আবার দেখা হবে ও এই ভাবেই আরো অনেক উৎসাহব্যঞ্জক বিষয়ে আমরা অবশ্যই কথা বলব। আপনাদের পরামর্শ ও ভাবনা আমাকে অবশ্যই পাঠাবেন। আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আজ দেশের বহু অংশে সূর্য উপাসনার মহাপর্ব ‘ছট’ পালন করা হচ্ছে। ‘ছট’ পর্বে অংশ নেওয়ার জন্য লক্ষ-লক্ষ পুণ্যার্থী নিজেদের গ্রাম, নিজেদের বাড়ি, নিজেদের পরিবারের মাঝে পৌঁছে গিয়েছেন। আমার প্রার্থনা ছট মা সবার সমৃদ্ধি, সবার কল্যাণের আশীর্বাদ দিন।
বন্ধুরা, সূর্য উপাসনার পরম্পরা এই ব্যাপারের প্রমাণ যে আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের আস্থার, প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক কত গভীর। এই পূজার মাধ্যমে আমাদের জীবনে সূর্যের আলোর গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে। একইসঙ্গে এই বার্তাও দেওয়া হয়েছে যে উত্থানপতন জীবনের অভিন্ন অংশ। এই জন্য সব পরিস্থিতিতে আমাদের সমান একটা মনোভাব রাখতে হবে। ছট মায়ের পুজোতে নানা রকমের ফল আর ঠেকুয়া প্রসাদ হিসাবে রাখা হয়। এর ব্রতও কোনও কঠিন সাধনার থেকে কম নয়। ছট পূজার আর এক বিশেষ দিক হল যে এই পূজায় যে সব সামগ্রীর ব্যবহার হয় তা সমাজের বিভিন্ন লোক মিলে তৈরি করেন। এতে বাঁশের তৈরি ছোট ঝুড়ির ব্যবহার হয়। মাটির প্রদীপের নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে। এর মাধ্যমে ছোলা ফলানো কৃষক আর বাতাসা বানানো ছোট ব্যবসায়ীদের গুরুত্ব সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এঁদের সহায়তা ছাড়া ছটের পূজা কখনই সম্পূর্ণ হতে পারে না। ছটের পর্ব আমাদের জীবনে স্বচ্ছতার গুরুত্বের উপরও জোর দেয়। এই পর্ব এলে সর্বজনীন ক্ষেত্রে রাস্তা, নদী, ঘাট, জলের বিভিন্ন স্রোত, সব কিছু পরিষ্কার করা হয়। ছটের পর্ব ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-এরও উদাহরণ। আজ বিহার এবং পূর্বাঞ্চলের মানুষ দেশের যে কোণেই থাকুন না কেন, সেখানে ধুমধাম করে ছটের আয়োজন করা হচ্ছে। দিল্লী, মুম্বাই সহ মহারাষ্ট্রের আলাদা-আলাদা জেলা এবং গুজরাতের অনেক অংশে বড় আকারে ছটের আয়োজন হচ্ছে। আমার তো মনে আছে, আগে গুজরাতে ছট পূজা অতটা হত না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে আজ গুজরাতের প্রায় সর্বত্র ছট পূজার রং দেখা যাচ্ছে। এটা দেখে আমারও খুব আনন্দ হয়। আজকাল আমরা দেখি, বিদেশেও ছট পূজার কত নান্দনিক দৃশ্য দেখা যায়। অর্থাৎ ভারতের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য, আমাদের আস্থা, বিশ্বের কোণায়-কোণায় নিজের পরিচয়ের বিস্তার ঘটাচ্ছে। এই মহাপর্বে সামিল হওয়া প্রত্যেক আস্থাবানকে আমার তরফ থেকে অনেক-অনেক শুভেচ্ছা।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এইমাত্র আমরা পবিত্র ছট পূজার কথা বললাম, ভগবান সূর্যের উপাসনার কথা বললাম। আচ্ছা, তাহলে সূর্য উপাসনার সঙ্গে সঙ্গে ওঁর বরদান নিয়েও আলোচনা করি? সূর্য দেবতার বরদান হল সৌরশক্তি। সোলার এনার্জি আজ এমন একটি বিষয় যার মধ্যে সারা পৃথিবী ভবিষ্যতের সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছে এবং ভারতের ক্ষেত্রে তো বহু যুগ ধরে সূর্যদেবতার শুধু উপাসনাই হচ্ছে তাই নয়, জীবন পদ্ধতির কেন্দ্রবিন্দুতেও রয়েছে। ভারত, আজ তার পারম্পরিক অভিজ্ঞতাকে আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে যুক্ত করছে, এই কারণেই, আজ আমরা, সৌর বিদ্যুৎ নির্মাণে শ্রেষ্ঠ বড় দেশগুলির মধ্যে পৌঁছাতে পেরেছি। সৌর শক্তি কীভাবে আমাদের দেশের গরিব এবং মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনছে, সেটিও অধ্যয়নের একটি বিষয়। তামিলনাড়ুতে, কাঞ্চিপুরামের মেয়ে একজন কৃষক আছেন, থিরু. কে. এঝিলান। তিনি 'পি. এম. কুসুম যোজনা' থেকে লাভবান হয়েছেন এবং নিজের ক্ষেতে দশ হর্সপাওয়ারের সোলার পাম্প সেট লাগিয়েছেন। এখন ওকে ওর ক্ষেতের বিদ্যুতের জন্য কোন খরচা করতে হয়না। ক্ষেতে জলসিঞ্চনের জন্য এখন সরকারের বিদ্যুৎ সাপ্লাই-এর উপর নির্ভরও করতে হয় না। একইভাবে রাজস্থানের ভরতপুরে 'পি.এম. কুসুম যোজনা'র আরো একজন লাভবান কৃষক কমলজী মীণা। কমলজী ক্ষেতে সোলার পাম্প লাগিয়েছিলেন যাতে ওঁর খরচ কমে গেছে। খরচা কমে যাওয়ায় আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে। কমলজী সোলার বিদ্যুৎ ব্যবহার করে অন্য অনেক ছোট উদ্যোগকেও যুক্ত করছেন। ওঁর এলাকায় কাঠের কাজ আছে, গরুর গোবর থেকে বিভিন্ন দ্রব্য উৎপাদন করা আছে, তাতেও সৌর বিদ্যুৎ-এর ব্যবহার হচ্ছে, তিনি, ১০-১২ জনকে রোজগারের পথ দেখাচ্ছেন, কুসুম যোজনা থেকে কমলজী যে সূত্রপাত করেছিলেন, তার সৌরভ আরো কত মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে।
বন্ধুরা, আপনারা কি কল্পনা পারেন যে আপনি গোটা মাস বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন এবং আপনার বিদ্যুতের বিল আসার পরিবর্তে, আপনি বিদ্যুতের জন্য টাকা পাবেন? সৌরশক্তি এই কাজটাও করে দেখিয়েছে। কিছুদিন আগে, আপনি নিশ্চয়ই দেশের প্রথম সূর্য গ্রাম - গুজরাটের মোঢেরা সম্পর্কে অনেক কথা শুনেছেন। মোঢেরা সূর্য গ্রামের বেশিরভাগ বাড়ি, সৌরবিদ্যুৎ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে শুরু করেছে। এখন অনেক বাড়িতে মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল আসে না, তার বদলে আসছে বিদ্যুৎ থেকে উপার্জিত চেক। এই ঘটনা দেখে এখন দেশের অনেক গ্রামের মানুষ আমাকে চিঠি লিখছেন, যাতে তাদের গ্রামকেও সূর্যগ্রামে রূপান্তরিত করা হয়, অর্থাৎ সেই দিন বেশি দূরে নয়, যেদিন ভারতে সূর্যগ্রাম নির্মাণ, একটি বড় গণআন্দোলনে পরিণত হবে এবং মোঢেরা গ্রামের মানুষ তা ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছে।
আসুন মন কি বাত এর শ্রোতাদেরও সঙ্গে মোঢেরার বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপ করাই। আমাদের সঙ্গে এই মূহুর্তে ফোন লাইনে আছেন শ্রীমান বিপিন ভাই পাটেল।
প্রধানমন্ত্রী জী : বিপিন ভাই নমস্কার। দেখুন এখন তো মোঢেরা গোটা দেশের জন্য এক মডেল হিসেবে আলোচনায় আছে। কিন্তু যখন আপনাকে আপনার আত্মীয়, পরিচিতরা জিজ্ঞেস করেন, তাদেরকে আপনি কি বলেন? কি কি লাভ হয়েছে জানান তাদের?
বিপিন জী : স্যার, লোকে জিজ্ঞেস করলে আমি তাদের এটাই বলি যে আগে আমাদের বিদ্যুৎ বিল আসত, এখন তা শূন্য আসে। কখনো কখনো কিছু বিল আসে - এই ৭০টাকা। কিন্তু, গোটা গ্রামের আর্থিক পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে অনেক ভাল।
প্রধানমন্ত্রী জী : তার মানে, বিদ্যুৎ এর বিলের যে চিন্তা ছিল সেটা এক প্রকার নির্মূল হয়ে গেছে।
বিপিন জী : হ্যাঁ স্যার, এই কথাটা একদম ঠিক। এখন পুরো গ্রামে কোনো চিন্তা নেই। সবার মনে হচ্ছে স্যার যেটা করেছেন খুবই ভালো কাজ হয়েছে তাতে। সবাই খুব খুশি ও আনন্দিত।
প্রধানমন্ত্রী জি : আপনি তো নিজেই নিজের বাড়িতেই বিদ্যুৎ কারখানা বানিয়ে তার মালিক হয়ে গেছেন। নিজের বাড়ির ছাদেই বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।
বিপিন জী : হ্যাঁ স্যার, একদম ঠিক বলেছেন স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জী : এই পরিবর্তনে গ্রামের মানুষের উপর কি প্রভাব পরেছে?
বিপিন জী : স্যার আমাদের গ্রামের লোকেরা চাষবাস করে। এই কাজে বিদ্যুৎ-এর চাহিদা নিয়ে যে চিন্তা, ঝঞ্জাট ছিল, সেটা একদম চলে গেছে। কোনো বিল দিতে হবে না, আমরা সবাই নিশ্চিন্ত।
প্রধানমন্ত্রী জী : মানে বিদ্যুৎ-এর বিল ও নেই, উপরন্তু বাড়তি সুবিধাও পাওয়া যাচ্ছে।
বিপিন জী : স্যার সব রকম ঝঞ্জাট তো চলে গেছেই। স্যার আপনি যখন মোঢেরা গ্রামে এসেছিলেন, সেই 3D Show-এর উদবোধন করেছিলেন, তারপর তো স্যার এখানকার পুরো ভোলই পালটে গেছে। আপনার সাথে যে সেক্রেটারি এসেছিলেন...
প্রধানমন্ত্রী জী : হ্যাঁ হ্যাঁ
বিপিন জী : আমাদের গ্রাম বিখ্যাত হয়ে গেছে স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জী : হ্যাঁ উনি UN এর Secretary General। উনি নিজে আসার ব্যাপারে খুবই আগ্রহী ছিলেন। উনি আমাকে বলেছিলেন এত বড় একটা কাজ যখন হয়েছে, আমি নিজে গিয়ে দেখতে চাই। অনেক ধন্যবাদ বিপিন ভাই। আপনাকে এবং আপনার গ্রামের সকলকে আমার অনেক অভিনন্দন ও শুভ কামনা জানাই। দুনিয়া আপনাদের থেকে অনুপ্রেরণা পাক এবং সোলার এনের্জির এই অভিযান প্রত্যেক ঘরে ঘরে পৌঁছে যাক।
বিপিন জী : ঠিক আছে স্যার, আমরা সবাইকে বলবো, স্যার, যে ভাই সোলার ইন্সটল করে নিন, নিজের টাকা দিয়েও ইন্সটল করে নিলে অনেক লাভ হবে।
প্রধানমন্ত্রী জী : হ্যাঁ, জনগণকে বুঝিয়ে বলুন, অনেক শুভকামনা ও ধন্যবাদ ভাই।
বিপিন জী : আপনাকে ধন্যবাদ স্যার, আপনাকে ধন্যবাদ, আমার জীবন ধন্য হয়ে গেছে আপনার সঙ্গে কথা বলে।
প্রধানমন্ত্রী জী : বিপিন ভাই, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
এবার আসুন আমরা মোঢেরা গ্রামের বর্ষাবেনের সঙ্গে কথা বলি।
বর্ষা বেন : হ্যালো নমস্কার স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জী : নমস্কার, নমস্কার বর্ষা বেন, কেমন আছেন?
বর্ষা বেন : আমরা খুব ভালো আছি, আপনি কেমন আছেন?
প্রধানমন্ত্রী জী : আমিও খুব ভাল আছি।
বর্ষা বেন : আমরা ধন্য হয়ে গেছি আপনার সঙ্গে কথা বলতে পেরে।
প্রধানমন্ত্রী জী : আচ্ছা বর্ষা বেন
বর্ষা বেন : হ্যাঁ…
প্রধানমন্ত্রী জী : মোধেরাতে থেকে আপনি কথা বলছেন, আপনি তো একটি সৈনিক পরিবারের সদস্য তাই না?
বর্ষা বেন : হ্যা, আমি সৈনিক পরিবারের থেকেই, আমার স্বামী প্রাক্তন সেনাকর্মী ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী জী : তো ভারতের কোন কোন জায়গায় যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন?
বর্ষা বেন : রাজস্থানে গেছি, গান্ধীনগরে গিয়েছি, কচরা কান্ঝোর জম্মুতে যাওয়ার ও থাকার সুযোগ মিলেছে। ওখানে অনেক সুবিধেই পেয়েছি স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জী : হ্যাঁ সেনাবাহিনীতে থাকার ফলে আপনি বেশ ভাল হিন্দী বলতে শিখেছেন।
বর্ষা বেন : হ্যাঁ… হ্যাঁ স্যার তা তো শিখেছি, হ্যাঁ।
প্রধানমন্ত্রী জী : আমায় বলুন তো মোঢেরায় এত বড় পরিবর্তন কিভাবে এলো, যে আপনারা এই সোলার রুফটপ প্ল্যান্ট বসিয়েছেন? মানুষ নিশ্চয়ই শুরুতে যখন বলেছেন, তখন নিশ্চয়ই আপনার মাথায় এসেছে যে এসবের মানে কী, কী করতে হবে, কিভাবে বিদ্যুৎ আসবে, এইসব আপনার মনে নিশ্চয়ই এসেছে। এখন কী অভিজ্ঞতা হল, এতে লাভ হয়েছে কিছু?
বর্ষা বেন : লাভ বলতে লাভ! অনেক লাভ হয়েছে স্যার। আপনার কারণে আমাদের গ্রামে প্রতিদিনই দীপাবলি উদযাপন হয়। ২৪ ঘন্টা আমরা বিদ্যুৎ পাচ্ছি। বিল তো আসেই না একেবারে। আমরা আমাদের বাড়িতে সব ইলেকট্রিক জিনিস এনে রেখেছি স্যার, সব জিনিস ব্যবহার করছি, আপনার জন্যেই স্যার। বিল তো আসেই না, তা আমরা ফ্রি মাইন্ডে সব ইউজ করতে পারি যেঁ।
প্রধানমন্ত্রী জী : এটা ঠিক কথা, আপনারা বিদ্যুতের সর্বোচ্চ ব্যবহার করার জন্যে মনস্থির করে ফেলেছেন?
বর্ষা বেন : করে ফেলেছি স্যার, করে ফেলেছি। একেবারে মনস্থির করেছি। এখন আমাদের কোন অসুবিধাই নেই। আমরা ফ্রি মাইন্ডে ওয়াশিং মেশিন, এসি সব চালাতে পারি স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জী : আর গ্রামের বাকি লোকও এর জন্যে খুশি তো?
বর্ষা বেন : খুব খুব খুশি স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জী : আচ্ছা আপনার স্বামী তো এখানে সূর্য মন্দিরে কাজ করেন? তো ওখানে যে লাইট শো হয়েছে, এত বড় ইভেন্ট হয়েছে, এখন ওখানে সারা পৃথিবী থেকে অতিথিরাও আসছেন।
বর্ষা বেন : সারা পৃথিবীর ফরেনাররা আসতে পারেন , আপনি আমাদের গ্রামকে এতটাই বিখ্যাত করে দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী জী : তাহলে আপনার স্বামীর কাজ অনেক বেড়ে গেছে, এত অতিথিরা আসছেন মন্দিরে দেখতে আসছেন।
বর্ষা বেন : আরে কোন ব্যাপার নয়, কাজ যতই বাড়ুক, স্যার কোন ব্যাপার নয়, এতে আমার বা আমার স্বামীর কোন অসুবিধা নেই, আপনি শুধু আমাদের গ্রামের উন্নতি করতে থাকুন।
প্রধানমন্ত্রী জী : এখন এই গ্রামের উন্নতি তো আমাদের সকলকে একসঙ্গে মিলেমিশে করতে হবে
বর্ষা বেন : হ্যাঁ হ্যাঁ স্যার আমরা আপনার সঙ্গে আছি।
প্রধানমন্ত্রী জী : আমি মোঢেরা বাসীদের অভিনন্দন জানাবো, কারণ গ্রামবাসীরা এই যোজনাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ওঁরা বিশ্বাস করেন যে হ্যাঁ, আমরা নিজেদের বাড়িতেই বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারি।
বর্ষা বেন : ২৪ ঘন্টা স্যার! আমাদের বাড়িতে বিদ্যুৎ রয়েছে এবং আমরা অত্যন্ত খুশি।
প্রধানমন্ত্রী জী : বেশ! আপনাকে জানাই অনেক শুভকামনা। যে অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে তা বাচ্চাদের স্বার্থে ব্যবহার করুন। ওই অর্থের সদ্ব্যবহার করুন যাতে আপনিও জীবনে লাভবান হন। আমি সবাইকে অনেক শুভকামনা জানাই। আর সমস্ত মোঢেরা বাসীদের জানাই নমস্কার।
বন্ধুরা, বর্ষা বেন ও বিপিন ভাই যা বললেন তা পুরো দেশের জন্য, গ্রাম আর শহরের জন্য এক প্রেরণা। মোঢেরার এই অভিজ্ঞতা পুরো দেশে পুনরায় প্রয়োগ করা যেতে পারে। সৌর শক্তির দ্বারা এবার অর্থেরও সাশ্রয় হবে আবার আয়েরও বৃদ্ধি হবে। জম্মু-কাশ্মীরের শ্রীনগরের এক বন্ধু - মঞ্জুর আহমাদ লরহওয়াল। শীতের জন্য কাশ্মীরে বিদ্যুতের খরচা অনেক বেশি। তাই মঞ্জুর জির বিদ্যুতের বিল ৪০০০ টাকারও বেশি হত। কিন্তু যেদিন থেকে মঞ্জুর জি নিজের বাড়িতে Solar Rooftop Plant লাগিয়েছেন, তাঁর খরচা অর্ধেকেরও কম হয়ে গেছে। এইভাবে উড়িষ্যার এক মেয়ে কুন্নী দেউরি, সৌর শক্তির মাধ্যমে নিজের ও অন্যান্য মহিলাদের রোজকারের উপায় বার করেছেন। কুন্নী, উড়িষ্যার কেন্দুঝর জেলার কর্দাপাল গ্রামে থাকে। সে আদিবাসী মহিলাদের solar চালিত রিলিং মেশিনে silk বুননের training দেয়। Solar Machine-এর জন্য এই আদিবাসী মহিলাদের উপর বিদ্যুৎ বিলের ভার পড়ে না, আর ওদের আয়ও বেড়েছে। এটাই তো সূর্য দেবের ও সৌর শক্তির আশীর্বাদ। আশীর্বাদ ও অনুগ্রহ যত প্রসারিত হবে ততই মঙ্গল। তাই আমি আপনাদের সবার কাছে প্রার্থনা করি, আপনিও এর সঙ্গে যুক্ত হন ও অন্যদেরও সংযুক্ত করুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, একটু আগেই আমি আপনাদের সঙ্গে সূর্য নিয়ে আলোচনা করছিলাম। এখন আমার মনযোগ স্পেসের দিকে যাচ্ছে। সেটা এইজন্য যে আমাদের দেশ সোলার সেক্টরের সঙ্গে স্পেস সেক্টরেও দারুণ সাফল্য দেখাচ্ছে। গোটা বিশ্ব আজ ভারতের সাফল্য দেখে হতচকিত। এই জন্য আমি ভাবলাম, মন কি বাতের শ্রোতাদের এটা বলে আমি তাঁদেরও আনন্দ বাড়িয়ে দিই।
বন্ধুরা, আজ থেকে কিছু দিন আগে আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন যে ভারত এক সঙ্গে ছত্রিশটা স্যাটেলাইট অন্তরীক্ষে স্থাপন করেছে। দীপাবলীর ঠিক এক দিন আগে পাওয়া এই সাফল্য এক অর্থে আমাদের তরুণদের পক্ষ থেকে দেশের জন্য এক স্পেশাল দীওয়ালি গিফট। এই লঞ্চঙ্গিয়ের ফলে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা, আর কচ্ছ থেকে কোহিমা অবধি, পুরো দেশে, ডিজিটাল কানেক্টিভিটি আরও শক্তিশালী হবে। এর সাহায্যে নিতান্ত দূর-দূরান্তের এলাকাও দেশের বাকি অংশের সঙ্গে সহজে যুক্ত হয়ে যাবে। দেশ যখন আত্মনির্ভর হয়, তখন কেমনভাবে সফলতার নতুন শিখরে পৌঁছে যায় – তারও এক উদাহরণ এটা। আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে-বলতে আমার সেই পুরনো সময়ও মনে পড়ে যাচ্ছে যখন ভারতকে ক্রায়োজেনিক রকেট টেকনোলজি দেওয়া হয়নি। কিন্তু, ভারতের বৈজ্ঞানিকরা কেবল স্বদেশী প্রযুক্তিরই বিকাশ ঘটান নি বরং আজ এর সাহায্যে ডজন-ডজন স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠাচ্ছেন। এই লঞ্চিংয়ের ফলে ভারত গ্লোবাল কমার্শিয়াল মার্কেটে এক শোক্তিশালী প্লেয়ার হয়ে দেখা দিয়েছে। এর ফলে অন্তরীক্ষের ক্ষেত্রে ভারতের জন্য নতুন সুযোগের দ্বারও উন্মুক্ত হয়েছে।
বন্ধুরা, বিকশিত ভারতের সঙ্কল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছে আমাদের দেশ, সবার প্রয়াসেই নিজের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে। ভারতে প্রথমে স্পেস সেক্টর, সরকারী ব্যবস্থার গণ্ডীতে সীমাবদ্ধ ছিল। যখন এই স্পেস সেক্টর, ভারতের তরুণদের জন্য, ভারতের প্রাইভেট সেক্টরের জন্য খুলে দেওয়া হল তখন থেকে এতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। ভারতীয় ইণ্ডাস্ট্রি আর স্টার্ট-আপ এই ক্ষেত্রে নতুন-নতুন ইনোভেশন আর নতুন-নতুন টেকনোলজি আনতে উদ্যোগী হয়ে রয়েছে। বিশেষ করে, ইন-স্পেসের সহযোগিতায় এই ক্ষেত্রে বড়ো পরিবর্তন আসতে চলেছে। ইন-স্পেসের মাধ্যমে বেসরকারী কোম্পানিদেরও নিজের-নিজের পে-লোড আর স্যাটেলাইট লঞ্চ করার সুযোগ মিলছে। আমি আরও বেশি-বেশি স্টার্ট-আপ আর ইনোভেটরদের কাছে অনুরোধ করব যে তারা স্পেস সেক্টরে ভারতে তৈরি হওয়া এই সব বড় সুযোগের পুর্ণ লাভ নিন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, যখন স্টুডেন্ট দের প্রসঙ্গ আসে, যুবশক্তির প্রসঙ্গ আসে, নেতৃত্ব শক্তির কথা আসে, তখন আমাদের মনের মধ্যে সেই বহু পুরোনো ধ্যান ধারণা বাসা বেঁধে আছে। অনেক সময় আমরা দেখি স্টুডেন্টস পাওয়ারের কথা উঠলে সেটাকে ছাত্রসংঘের নির্বাচনের সঙ্গে জুড়ে, এর পরিধি সীমিত করে দেওয়া হয়। কিন্ত স্টুডেন্টস পাওয়ারের পরিধির ব্যাপ্তি অনেক বৃহৎ এবং বিশাল। স্টুডেন্টস পাওয়ার ভারতকে powerful গড়ে তোলার মূল ভিত্তি। সর্বোপরি, আজ যারা তরুণ তারাই তো ভারতকে ২০৪৭ সাল পর্যন্ত নিয়ে যাবে। ভারত যখন শতবর্ষ উদযাপন করবে, তখন তারুণ্যের এই শক্তি, তাদের কঠোর পরিশ্রম, তাদের ঘাম, তাদের প্রতিভা, ভারতকে সেই উচ্চতায় নিয়ে যাবে, যার জন্য দেশ আজ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমাদের আজকের তরুণরা যেভাবে দেশের জন্য কাজ করছে, Nation Building এ যোগ দিয়েছে, তা দেখে আমি খুবই আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। আমাদের তরুণরা যেভাবে হ্যাকাথনে সমস্যার সমাধান করে, রাতের পর রাত জেগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করে, তা খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক। গত বছর অনুষ্ঠিত একটি হ্যাকাথন, দেশের লক্ষাধিক তরুণ-তরুণীর সঙ্গে একযোগে, অনেক চ্যালেঞ্জের সমাধান করেছে, দেশকে নতুন solution দিয়েছে।
বন্ধুরা, আপনাদের মনে থাকবে আমি লাল কেল্লা থেকে 'জয় অনুসন্ধান' ডাক দিয়েছিলাম। আমি এই দশকে ভারতকে Techade বানানোর কথাও বলেছিলাম। আমি এটা দেখে খুবই খুশি যে আমাদের IIT-এর স্টুডেন্টসরা এই বিষয়ে খুবই আগ্রহী হয়ে এগিয়ে এসেছে। এই মাসে ১৪-১৫ অক্টোবর, ২৩টি IIT তাদের innovation এবং research project প্রদর্শন করার জন্য প্রথমবারের মতো একটি মঞ্চে এসেছিল৷ এই প্রদর্শনীতে সারা দেশের বাছাই করে আনা স্টুডেন্টস এবং Researchers-রা ৭৫টিরও বেশি অসাধারণ প্রজেক্ট প্রদর্শন করেন। হেলথ কেয়ার, এগ্রিকালচার, রোবোটিক্স, সেমিকন্ডাক্টরস, 5G কমিউনিকেশন, এই রকম অনেক থিমের উপর এই প্রোজেক্টগুলি তৈরি করা হয়েছিল। যদিও এই সমস্ত প্রোজেক্ট ছিল একাধিক, কিন্তু, আমি কিছু প্রোজেক্ট সম্পর্কে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। যেমন IIT ভুবনেশ্বরের একটি দল নবজাতক শিশুর জন্য পোর্টেবল ভেন্টিলেটর তৈরি করেছে । এটি ব্যাটারিতে চলে এবং সহজেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যবহার করা যায়। নিদিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নেওয়া শিশুদের জীবন বাঁচাতে এটি খুবই উপযোগী প্রমাণিত হতে পারে। Electric mobility হোক, দ্রোণ Technology হোক, 5G হোক আমাদের অনেক শিক্ষার্থী এগুলির সঙ্গে যুক্ত নতুন টেকনোলজির বিকাশে উদ্যত। অনেকগুলো IIT, একটি বহুভাষিক প্রজেক্টে একসঙ্গে কাজ করছে যা স্থানীয় ভাষা শেখাকে সহজ করে তোলে। এই প্রজেক্টটি নতুন রাষ্ট্রীয় শিক্ষা নীতিকে, তার লক্ষ্যগুলি অর্জনেও অনেক সাহায্য করবে। আপনাদের এটা জেনেও হয়তো ভালো লাগবে যে IIT মাদ্রাজ এবং IIT কানপুর ভারতের স্বদেশী 5G Test Bed তৈরিতে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি দুর্দান্ত সূচনা। আমি আশা করি আগামী দিনে এরকম আরও অনেক উদ্যোগ দেখতে পাব। আমি আরও আশা করি যে IIT থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে অন্যান্য ইনস্টিটিউশনগুলিও তাদের গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমকে আরও দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীলতা আমাদের সমাজের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জায়গায় সমাহিত আর এটাকে আমরা আমাদের চারপাশে অনুভব করতে পারি। দেশে এমন মানুষের অভাব নেই যারা পরিবেশ রক্ষার্থে নিজের জীবন উৎসর্গ করে দেন।
কর্নাটকের বেঙ্গালুরুর অধিবাসী সুরেশ কুমারজির কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি, ওনার মধ্যে প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার জন্য এক আলাদাই উন্মাদনা বর্তমান। কুড়ি বছর আগে উনি শহরের সহকার নগরের এক জঙ্গলকে পুনরায় সজীব করার সংকল্প গ্রহণ করেছিলেন । এই কাজ অনেক কঠোর ছিল, কিন্তু, কুড়ি বছর আগে লাগানো সেই সব চারা আজ চল্লিশ ফিট লম্বা বিশালায়তন মহীরুহে পরিণত হয়েছে। এখন এদের সৌন্দর্য্য সবার মন কেড়ে নেয়। এতে ওখানের বাসিন্দাদেরও অনেক গর্ব অনুভব হয়। সুরেশ কুমারজি আরও একটি অদ্ভুত কাজ করেন। উনি কন্নড় ভাষা এবং সংস্কৃতিকে বাড়তি উৎসাহ প্রদানের জন্য সহকার নগরে একটি বাস শেল্টার বানিয়েছেন। কয়েকশো মানুষকে কন্নড় ভাষায় লেখা পেতলের প্লেট প্রদান করেছেন । ইকোলজি ও কালচার দুটোই একসঙ্গে এগিয়ে চলুক ও প্রস্ফুটিত হোক, ভাবুন, এটা কত বড় ব্যাপার।
বন্ধুরা, আজ ইকো ফ্রেন্ডলী লিভিং আর ইকো ফ্রেন্ডলী প্রোডাক্টস এর ব্যাপারে মানুষের মধ্যে আগের থেকে অনেক বেশি সচেতনতা দেখা যাচ্ছে। আমার তামিলনাড়ুর এরকমই একটি প্রচেষ্টা সম্বন্ধে জানার অবকাশ হয়েছে। এই চমৎকার প্রচেষ্টা Coimbatore এর Anaikatti র বাসিন্দা কিছু আদিবাসী মহিলাদের একটি টিমের। এই মহিলারা রপ্তানির জন্য দশ হাজার ইকোফ্রেন্ডলির টেরাকোটার চায়ের কাপ বানিয়েছেন। আশর্যের বিষয় এটা যে টেরাকোটা চায়ের কাপ বানানোর সমগ্র দায়িত্ব এই মহিলারা নিজেরাই নিয়েছিলেন। Clay mixing থেকে final প্যাকেজিং পর্যন্ত সব কাজ এনারা নিজেরাই করেছেন। এই কাজের জন্য এনারা প্রশিক্ষণ ও নিয়েছিলেন। এই অদ্ভুত প্রচেষ্টার যতই প্রশংসা করা হোক না কেনো তা কম।
বন্ধুরা, ত্রিপুরার কিছু গ্রাম ও অনেক সুন্দর শিক্ষা দিয়েছে আমাদের। আপনারা Bio ভিলেজের কথা তো অবশ্যই শুনেছেন, কিন্তু ত্রিপুরার কিছু গ্রাম তো Bio Village 2 এর ধাপেও উঠে গেছে। Bio Village 2 তে এই ব্যাপারে জোর দেওয়া হয় যে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে হওয়া ক্ষয় ক্ষতি কি করে কমানো যায়। এতে বিভিন্ন উপায়ে মানুষের জীবন স্তরকে আরও ভালো বানানোর প্রতি নজর দেওয়া হয়। Solar Energy, Biogas, Bee Keeping ও Bio Fertilizers এই সব বিষয়ে সমগ্র ফোকাস থাকে।
সব মিলিয়ে যদি দেখা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে এই সচেতনতা অভিযান কে Bio-Village-2 অনেক শক্তিশালী করে তুলবে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত কারণ আমাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে মানুষের উৎসাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিছুদিন আগেই, ভারতে পরিবেশ-রক্ষার উদ্দেশ্যে 'Mission Life' launch করা হয়েছে। Mission Life'এর মূল কথা হলো- এমন জীবনশৈলী ও এমন lifestyle'এর বিষয়ে মানুষকে অনুপ্রাণিত করা, যা পরিবেশের জন্য একেবারেই ক্ষতিকর নয়। আমার অনুরোধ, আপনারাও Mission Life'এর ব্যাপারে জানুন এবং তা আয়ত্ত করার চেষ্টা করুন।
বন্ধুরা, আগামীকাল অর্থাৎ ৩১শে অক্টোবর রাষ্ট্রীয় ঐক্য দিবস, যা সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেলের জন্মজয়ন্তীর পুণ্যতিথিও। এই দিন দেশের কোনে কোনে Run for Unity'র আয়োজন করা হয়ে থাকে। এই দৌড় দেশে ঐক্যের বন্ধন কে আরো সুদৃঢ় করে, আমাদের যুব-সমাজকে অনুপ্রাণিত করে। কিছুদিন আগে, এই চিন্তা-ভাবনার প্রতিফলন আমরা জাতীয় ন্যাশেনাল গেমস চলাকালীন দেখেছি। 'জুড়েগা ইন্ডিয়া তো জিতেগা ইন্ডিয়া' এই থিম নিয়ে জাতীয় ন্যাশেনাল গেমস যেমন ঐক্যের একটা সুদৃঢ় বার্তা দিয়েছে, তেমনি ভারতের ক্রীড়া সংস্কৃতিকেও বিস্তৃত করেছে। আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন যে এটি এখনো পর্যন্ত ভারতে আয়োজীত সর্ব বৃহৎ থেকে বড় ন্যাশেনাল গেমস ছিল। এতে ৩৬টি খেলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, যার মধ্যে সাতটি নতুন এবং যোগাসন ও মল্লখম্ব সহ দুটি স্বদেশী খেলাও ছিল। স্বর্ণপদক পাওয়ার দৌড়ে সর্বাগ্রে যে তিনটি টিম ছিল তারা হলো- সার্ভিসেস, মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানার টিম। এই প্রতিযোগিতায় ছটি Natinal Record এবং অন্ততপক্ষে ৬০টি National Games Record তৈরী হয়েছে। যারা পদক জিতেছেন, নতুন Record গড়েছেন, এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন, সেই সমস্ত ক্রীড়া প্রতিযোগীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। এই খেলোয়ারদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি ।
বন্ধুরা, গুজরাটে আয়োজিত এই ন্যাশেনাল গেমসকে সফল করে তুলতে যাদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাদের সকলকে আমি আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানাই।
আপনারা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, গুজরাটে, নব-রাত্রির সময় এই ন্যাশেনাল গেমসের আয়োজন হয়েছিল। এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের আগে, একবার তো আমারও মনে হয়েছিল, যে এই সময় সারা গুজরাট উৎসবে ব্যস্ত থাকে, তাহলে মানুষ প্রতিযোগিতার আনন্দ কী করে উপভোগ করবে? একদিকে এত বড় ব্যবস্থাপনা আর অন্যদিকে নবরাত্রির গর্বার মতো উৎসবের আয়োজন। এই সমস্ত কাজ গুজরাট একসঙ্গে কিভাবে করবে? কিন্তু গুজরাটের মানুষ তাদের আতিথেয়তার মধ্যে দিয়ে সকল অতিথির মন জয় করে নিয়েছেন।
আমেদাবাদের National Games চলাকালীন যেভাবে শিল্পকলা, খেলাধুলা ও সংস্কৃতির সমন্বয় হয়েছিল তা খুবই উৎসাহপূর্ণ ছিল। দিনের বেলায় খেলোয়াড়রা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতেন আবার সন্ধ্যেবেলায় তারা গারবা ও ডান্ডিয়ার উৎসবে মেতে উঠতেন। তারা গুজরাটি খাবার ও নবরাত্রির প্রচুর ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করেছেন। এইটা দেখা আমাদের প্রত্যেকের জন্য খুবই আনন্দময় ছিল। সর্বোপরি, এই খেলাগুলির মাধ্যমে, ভারতবর্ষের বৈচিত্রময় সংস্কৃতির একটি আভাস পাওয়া যায়। এটি "এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতের" ভাবনাকে আরো মজবুত করে তোলে।
আমার প্রিয় দেশবাসী। নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখে আমাদের দেশে উদযাপিত হবে জনজাতি গৌরব দিবস। মনে আছে নিশ্চয়ই, গত বছর এটা শুরু করা হয়েছিল, ভগবান বিরসা মুন্ডার জন্মজয়ন্তীর দিনে আদিবাসীর ঐতিহ্য ও গৌরবকে সম্মান জানানোর জন্য। ভগবান বিরসা মুন্ডা নিজের ছোট্ট জীবন কালেই ইংরেজদের বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষকে একজোট করতে পেরেছিলেন। উনি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা ও আদিবাসীদের সংস্কৃতির রক্ষার জন্য নিজের জীবন বলিদান করে দিয়েছিলেন। এরকম কত কি আছে যা আমরা ধারতি আবা বীরসা মুন্ডার কাছ থেকে শিখতে পারি।
বন্ধুরা, যখনই ধরতি আবা বিরসা মুন্ডার কথা ওঠে, ওঁর ছোট্ট জীবনের দিকে ফিরে তাকাই, আজও আমরা তার থেকে অনেক কিছুই শিখতে পারি, আর ধরতি আবা বলেছেন এই মাটি আমার, আর আমরাই এর রক্ষক। ওঁর এই একটি বাক্যের মধ্যে মাতৃভূমির প্রতি কর্তব্যের ভাবনাও যেমন আছে, তেমনি রয়েছে পরিবেশ সম্পর্কে আমাদের কর্তব্যের সচেতনতা। উনি সবসময়ই এই কথার উপর জোর দিয়েছেন যে আমরা আমাদের আদিবাসী সংস্কৃতিকে কখনোই ভুলবো না ও তার থেকে এক বিন্দুও দূরে সরে যাব না। আজও আমরা আমাদের দেশের আদিবাসী সম্প্রদায়ের থেকে প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্বন্ধে অনেক কিছু শিখতে পারি।
বন্ধুরা, গত বছর ভগবান বিরসা মুন্ডার জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে রাঁচিতে ভগবান বিরসা মুন্ডার নামে একটি মিউজিয়াম উদঘাটন করার আমার পরম সৌভাগ্য হয়েছিল। আমি দেশের যুবা বন্ধুদের অনুরোধ করবো যে তারা যখনই সময় পাবেন যেন এই মিউজিয়ামটি দেখতে অবশ্যই যান। আমি আপনাদের এটাও জানাতে চাই যে পয়লা নভেম্বর মানে, পরশুদিন আমি গুজরাট ও রাজস্থানের বর্ডারের একটি জায়গা, মানগঢ়-এ থাকবো। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ও আমাদের সমৃদ্ধ আদিবাসীদের ঐতিহ্যে মানগঢ়-এর এক বিশিষ্ট স্থান রয়েছে। এখানে ১৯১৩-র নভেম্বর মাসে একটি ভয়ংকর হত্যাকাণ্ডে ইংরেজরা স্থানীয় আদিবাসীদের নৃশংস ভাবে হত্যা করেছিল। কথিত আছে যে এই হত্যাকাণ্ডে এক হাজারেরও বেশি আদিবাসীকে প্রাণ হারাতে হয়েছিল।
এই জনজাতি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন গোবিন্দ গুরুজী, যার জীবন প্রতিটি মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। আজ আমি সেই সকল জনজাতি শহীদ ও গোবিন্দ গুরুজীর অদম্য সাহস আর শৌর্যকে প্রণাম জানাচ্ছি। এই অমৃতকালে ভগবান বিরসা মুন্ডা, গোবিন্দ গুরুজী ও অন্যান্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আদর্শ আমরা যত নিষ্ঠা ভরে পালন করব আমাদের দেশ ততই উন্নতির শিখর স্পর্শ করতে পারবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আগামী ৮ই নভেম্বর গুরুপুরব। গুরু নানকজীর প্রকাশপর্ব আমাদের বিশ্বাসের জন্য যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ততটাই আমাদের কাছে শিক্ষণীয়। গুরু নানক দেবজী নিজের সারা জীবন মানবতার আলোকবর্তিকা হয়ে ছিলেন। গুরুদের আলোকময় পথ নির্দেশ প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে গত কয়েক বছরে আমাদের দেশে অনেক প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। গুরু নানক দেবজীর ৫৫০তম প্রকাশ পর্ব দেশে ও বিদেশে ব্যাপকভাবে উদযাপন করার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছিল। অনেক দশকের প্রতীক্ষার পর কর্তারপুর সাহিব করিডোর নির্মাণ করতে পারাও ততটাই আনন্দদায়ক। কিছুদিন আগেই হেমকুন্ড সাহিবের জন্য রোপওয়ের শিলান্যাস করার সৌভাগ্যও আমার হয়েছে। আমাদের গুরুদের ভাবনা থেকে ক্রমাগত শিক্ষা নিতে হবে, তাদের প্রতি সমর্পিত থাকতে হবে।
সেই দিন কার্তিক পূর্ণিমাও রয়েছে। এদিন আমরা তীর্থে, নদীতে স্নান করি, সেবা ও দান করি। আমি আপনাদের সকলকে এই উৎসব উপলক্ষ্যে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। আগামী কিছুদিনের মধ্যে অনেক রাজ্য নিজেদের রাজ্য দিবসও উদযাপন করবে। অন্ধ্রপ্রদেশ নিজেদের প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন করবে, কেরালা পিরাভি পালন করবে, কর্ণাটক রাজ্যোৎসব উদযাপন করবে। অনুরূপভাবে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও হরিয়ানাও নিজেদের রাজ্য দিবস উদযাপন করবে। আমি এই সব রাজ্যের মানুষদের শুভেচ্ছা জানাই। আমাদের সব রাজ্যে একে অন্যের থেকে শেখার, সহযোগিতা করার এবং মিলেমিশে কাজ করার স্পিরিট যত মজবুত হবে দেশ ততই উন্নতি করবে। আমি বিশ্বাস করি আমরা এই ভাবনা নিয়েই অগ্রসর হব। আপনারা সকলে নিজেদের খেয়াল রাখুন, সুস্থ থাকুন। মন কি বাতের পরবর্তী সাক্ষাৎ পর্যন্ত আমাকে বিদায় নেওয়ার অনুমতি দিন।
নমস্কার, ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। বিগত দিনগুলোতে যে বিষয় আমাদের মনযোগ আকর্ষণ করেছে - তা হল চিতা। চিতা নিয়ে কথা বলার অনুরোধ জানিয়ে অনেক বার্তা এসেছে, সেটা উত্তরপ্রদেশের অরুণ কুমার গুপ্তাজী হোন অথবা তেলেঙ্গানার এন. রামচন্দ্রন রঘুরামজীর; গুজরাতের রাজনজী হোন বা দিল্লীর সুব্রতজী। দেশের প্রত্যেকটা কোণ থেকে মানুষজন দেশে চিতার প্রত্যাবর্তন নিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছেন। একশো তিরিশ কোটি ভারতবাসী খুশী, গর্বিত – এই হল ভারতের প্রকৃতিপ্রেম। এই ব্যাপারে লোকজনের একটা সাধারণ প্রশ্ন এই যে মোদীজী আমরা চিতা দেখার সুযোগ কবে পাব?
বন্ধুগণ, একটা টাস্ক ফোর্স তৈরি করা হয়েছে। এই টাস্ক ফোর্স চিতার নজরদারি করবে আর দেখবে যে এখানকার পরিবেশে তারা কতটা খাপ খাইয়ে নিয়েছে। এর ভিত্তিতে কয়েক মাস পর কোনও একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, আর তখন আপনারা চিতাদের দেখতে পাবেন। কিন্তু ততদিন অবধি আমি আপনাদের সবাইকে কিছু-কিছু কাজ দিচ্ছি। এর জন্য মাই গভ-এর প্ল্যাটফর্মে, একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন হবে, যেখানে আপনাদের কাছে কিছু শেয়ার করার অনুরোধ আমি জানাচ্ছি। চিতাদের নিয়ে আমরা যে অভিযান চালাচ্ছি, সেটার নাম কী হওয়া উচিত! আমরা কি এই সব চিতাদের নামকরণের ব্যাপারেও ভাবতে পারি, যে এর মধ্যে প্রত্যেককে কোন নামে ডাকা হবে! এমনিতে এই নামকরণ যদি চিরাচরিত পদ্ধতিতে হয় তবে খুব ভালো হবে, কারণ আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতি, পরম্পরা আর ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত যে কোনও বিষয়, সহজেই তার দিকে আমাদের আকর্ষণ করে। এটাই শুধু নয়, আপনারা এও বলুন, যে পশুর সঙ্গে মানুষের কেমন ব্যবহার করা উচিত! আমাদের মৌলিক কর্তব্যেও তো পশুদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। আপনাদের সবার কাছে আমার আবেদন যে আপনারা এই কম্পিটিশনে অবশ্যই অংশগ্রহণ করুন – কে বলতে পারে, পুরস্কার হিসাবে চিতা দেখার প্রথম সুযোগও আপনিই পেতে পারেন!
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ ২৫শে সেপ্টেম্বর দেশের প্রখর মানবতাবাদী, চিন্তাবিদ এবং মহান সুপুত্র দীনদয়াল উপাধ্যায়জীর জন্মদিন পালন করা হয়। যে কোনও দেশে তরুণরা যত নিজের পরিচয় আর গৌরব নিয়ে গর্ব করে, তাকে নিজেদের মৌলিক বিচার আর দর্শন ততই আকর্ষণ করে। দীনদয়ালজীর মতধারার সবথেকে বড় বিশেষত্বের দিক এটাই যে উনি নিজের জীবনে বিশ্বের বড়-বড় উত্থান-পতন দেখেছেন। উনি নানা মতের সঙ্ঘাতের সাক্ষী ছিলেন। এই জন্য উনি ‘একাত্ম মানবদর্শন’ আর ‘অন্ত্যোদয়ের’ এক ভাবনা দেশের সামনে উপস্থিত করেছিলেন যা পুরোপুরি ভারতীয় ছিল। দীনদয়ালজীর ‘একাত্ম মানবদর্শন’ এমন এক ভাবনা যা মতবাদের নামে দ্বন্দ্ব আর একগুঁয়েমি থেকে মুক্তি দেয়। উনি মানুষমাত্রকে সমান বলে গণ্য করা ভারতীয় দর্শনকে আবার পৃথিবীর সামনে উপস্থিত করলেন। আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে ‘আত্মবৎ সর্বভূতেষু’ অর্থাৎ আমরা জীবমাত্রকে নিজেদের সমান বলে গণ্য করব, আপন ভেবে আচরণ করব। আধুনিক, সামাজিক আর রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতেও ভারতীয় দর্শন কেমনভাবে দুনিয়াকে পথ দেখাতে পারে এটা দীনদয়ালজী আমাদের শিখিয়েছেন। এক অর্থে, স্বাধীনতার পর দেশের মধ্যে যে হীনভাবনা ছিল, তার থেকে মুক্তি দিয়ে তিনি আমাদের নিজেদের বৌদ্ধিক চেতনাকে জাগ্রত করেন।
উনি বলতেনও, - 'আমাদের স্বাধীনতা তখনই সার্থক হবে যখন ওরা আমাদের সংস্কৃতি ও পরিচয়ের উপলব্ধি করবে। ' এই বিচারের উপর ভিত্তি করেই উনি দেশের বিকাশের vision নির্মাণ করেছিলেন। দীনদয়াল উপাধ্যায় মহাশয় বলতেন যে, দেশের উন্নতির মাপকাঠি হল শেষ পদে থাকা ব্যক্তি। আজাদীর অমৃত মহোৎসবে আমরা দীনদয়াল উপাধ্যায় মহাশয় কে যত বেশি জানব, যত বেশি ওঁর থেকে শিখবো, ততই আমরা সবাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পাব।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ থেকে তিন দিন পর, অর্থাৎ, ২৮শে সেপ্টেম্বর অমৃত মহোৎসবের এক বিশেষ দিন আসতে চলেছে। ঐদিন আমরা ভারত মাতার বীরপুত্র ভগৎ সিং জীর জন্ম জয়ন্তী পালন করব। ভগৎ সিং জীর জন্মদিনের ঠিক আগে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি স্বরূপ এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঠিক হয়েছে যে, এবার থেকে চন্ডীগড় এয়ারপোর্ট এর নাম শহীদ ভগৎ সিং জীর এর নামে রাখা হবে। দীর্ঘ সময় ধরে এর প্রতীক্ষা ছিল। আমি চন্ডীগড়, পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং দেশের প্রত্যেকটি মানুষকে এই সিদ্ধান্তের জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন জানাচ্ছি।
বন্ধুরা, আমরা আমাদের স্বাধীনতার সৈনিকদের থেকে প্রেরণা নেব, তাঁদের আদর্শ অনুসরণ করে তাঁদের স্বপ্নের ভারত বানাব, এটাই তাঁদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি। শহীদদের স্মারক, তাঁদের নামে নামাঙ্কিত স্থান এবং প্রতিষ্ঠানের নাম আমাদের কর্তব্য পালনের অনুপ্রেরণা দেয়। এই কিছুদিন আগেই দেশ কর্তব্যপথে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তি স্থাপনার মাধ্যমে এমনই এক প্রচেষ্টা করেছে এবং এখন শহীদ ভগৎ সিং-এর নামে চন্ডিগড় এয়ারপোর্ট-এর নাম, এই দিকে আরো একধাপ এগোনো হবে। আমি চাইব, অমৃত মহোৎসবে আমরা যেভাবে স্বাধীনতার সৈনিকদের সঙ্গে সম্পর্কিত বিশেষ অনুষ্ঠানগুলি সেলিব্রেট করছি সেইভাবেই ২৮শে সেপ্টেম্বরেও প্রত্যেক যুবক-যুবতী কিছু নতুন প্রচেষ্টা অবশ্যই করুক।
আমার প্রিয় দেশবাসী, তবে আপনাদের সবার কাছে ২৮শে সেপ্টেম্বর সেলিব্রেট করার আরো একটি উপলক্ষ্য আছে। জানেন কি সেটা? আমি শুধু দুটো শব্দ বলব কিন্তু আমি জানি আপনাদের জোশ চারগুণ বেড়ে যাবে। এই দুটো শব্দ হলো - সার্জিক্যাল স্ট্রাইক। জোশ বৃদ্ধি হলো তো!! আমাদের দেশে অমৃত মহোৎসবের যে অভিযান চলছে তা আমাদের সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে সেলিব্রেট করতে হবে, নিজের আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগ করে নিন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, বলা হয়, জীবন সংগ্রামের ঘাত-প্রতিঘাতে জর্জরিত ব্যক্তির সামনে কোনোকিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে, আমরা এমন কিছু সঙ্গীকেও দেখি যাঁরা কিছু শারীরিক সমস্যার মোকাবিলা করছেন। অনেক মানুষ আছেন যাঁরা হয় শুনতে পান না বা কথা বলে তাঁদের বক্তব্য প্রকাশ করতে পারেন না। এই ধরনের সঙ্গীদের জন্য সবচেয়ে বড় সম্বল হল sign language বা ইশারায় কথা বলা। কিন্তু বহু বছর ধরে ভারতে এই বিষয়ে একটি বড় সমস্যা দেখা গেছে, তা হল যে sign language-এর জন্য কোনও স্পষ্ট নির্দিষ্ট ভঙ্গিমা ছিলনা, কোন standards ছিলনা। এই অসুবিধাগুলি কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যেই, ২০১৫ সালে, Indian Sign Language Research And Training Centre প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আমি আনন্দিত যে এই প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত ১০,০০০ শব্দ এবং অভিব্যক্তির একটি ডিকশনারি তৈরি করেফেলেছে। দুই দিন আগে অর্থাৎ ২৩শে সেপ্টেম্বর, সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ডে-তে, অনেক স্কুলের পাঠ্যক্রমও সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে শুরু করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতিতেও sign language-এর মান বজায় রাখার ওপর ব্যাপক জোর দেওয়া হয়েছে। sign language এ যে ডিকশনারি তৈরি হয়েছে তারও ভিডিও তৈরি করে প্রচার করা হচ্ছে অবিরাম। Youtube-এ অনেক লোক, অনেক সংস্থানও Indian sign language-এর নিজেদের চ্যানেল পর্যন্ত শুরু করে দিয়েছে। অর্থাৎ সাত-আট বছর আগে sign language নিয়ে দেশে যে অভিযান শুরু হয়েছিল তার লাভ এখন আমার লক্ষ লক্ষ দিব্যাংগ ভাই-বোনরা পাচ্ছেন। হরিয়ানার বাসিন্দা পূজাজি তো Indian sign language নিয়ে খুব খুশি। আগে তিনি তার ছেলের সঙ্গেই কথা বলতে পারতেন না, কিন্তু ২০১৮ সালে sign language-এর Tranning নেওয়ার পরে, মা ও ছেলে, উভয়ের জীবন সহজ হয়ে গেছে। পূজাজির ছেলেও sign language শিখেছিল এবং তার স্কুলে গল্প বলার ক্ষেত্রে পুরস্কার জিতেও দেখিয়েছিল। একইভাবে টিংকাজির একটি ৬ বছর বয়সী কন্যা রয়েছে যে শুনতে অক্ষম। টিংকাজি তাঁর মেয়েকে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের একটি কোর্স করিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নিজে sign language জানতেন না, যার কারণে তিনি তার সন্তানের সঙ্গে কথোপকথন করতে পারতেন না। এখন টিঙ্কাজিও sign language –এর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং মা ও মেয়ে দু’জনেই এখন নিজেদের মধ্যে অনেক কথা বলেন। কেরালার মঞ্জুজিও এই প্রচেষ্টায় ভীষণ উপকৃত হয়েছেন। মঞ্জুজি জন্ম থেকেই শুনতে পান না। শুধু তাই নয়, তার বাবা-মায়ের জীবনেও একই রকম পরিস্থিতি ছিল। এমন পরিস্থিতিতে, sign language পুরো পরিবারের কাছে যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এখন মঞ্জুজি নিজেও sign language -এর শিক্ষক হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বন্ধুরা আমি এই বিষয়ে “মন কি বাত” অনুষ্ঠানে এই কারণেও আলোচনা করছি যাতে ইন্ডিয়ান সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে সচেতনতা বাড়ে। এতে আমরা নিজেদের দিব্যাংগ বন্ধুদের অনেকখানি সাহায্য করতে পারব। ভাই ও বোনেরা, কিছুদিন আগে আমি ব্রেল পদ্ধতিতে লেখা হেমকোষ-এর একটি কপি পেয়েছি। হেমকোষ অসমীয়া ভাষায় লেখা সবচেয়ে পুরনো ডিকশনারিগুলির মধ্যে একটি। এটি উনবিংশ শতাব্দীতে তৈরি করা হয়েছিল। এর সম্পাদনা করেছিলেন প্রখ্যাত ভাষাবিদ হেমচন্দ্র বড়ুয়া। হেমকোষের ব্রেল এডিশনটি প্রায় ১০ হাজার পাতার আর ১৫ টিরও বেশি খন্ডে প্রকাশিত হতে চলেছে এটি। প্রায় এক লক্ষেরও বেশি শব্দের অনুবাদ করা হবে এতে। আমি এই সংবেদনশীল প্রচেষ্টার খুবই প্রশংসা করছি। এই ধরনের সকল প্রচেষ্টাই দিব্যাংগ বন্ধুদের দক্ষতা ও সামর্থ্য বাড়াতে সাহায্য করে। বর্তমানে ভারত প্যারা স্পোর্টসেও নিজের সাফল্যের পতাকা ওড়াচ্ছে। আমরা সকলেই বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্টে এর সাক্ষী হয়েছি।
এখন এরকম অনেক মানুষ রয়েছেন যারা দিব্যাংগ মানুষদের মধ্যে ফিটনেস কালচার বিষয়টিকে একেবারে নিচের স্তর থেকে উৎসাহ দেওয়ার কাজ করে চলেছেন। এতে দিব্যাংগ মানুষদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছুদিন আগে আমি সুরাটের একটি মেয়ে অন্বির সঙ্গে দেখা করেছি। অন্বি আর অন্বির যোগ অভ্যাসের সঙ্গে আমার এমন স্মরণীয় সাক্ষাৎ হয়েছে যে আমি মন কি বাত অনুষ্ঠানের সকল শ্রোতাদের এই বিষয়ে কিছু বলতে চাই। বন্ধুরা অন্বি জন্ম থেকেই ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত এবং ছোটবেলা থেকেই হার্টের জটিল সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছে। যখন ওর বয়স মাত্র তিন মাস, সেই সময়ই ওকে ওপেন হার্ট সার্জারির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। এই সব সমস্যার পরেও অন্বি বা ওর বাবা-মা কখনোই হার স্বীকার করেননি। অন্বির বাবা-মাও ডাউন সিনড্রোম-এর বিষয়ে সমস্ত তথ্য যোগাড় করেছেন এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে অন্বিকে অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। ওরা অন্বিকে জলের গ্লাস তোলা, জুতোর ফিতে বাঁধা, জামাকাপড়ের বোতাম লাগানোর মতো ছোট ছোট জিনিস শেখানো শুরু করেন । কোন জিনিসের স্থান কোথায়, কোনটা ভালো অভ্যাস এই সমস্ত কিছুই অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে অন্বিকে শেখানোর চেষ্টা করেছিলেন। ছোট্ট অন্বি এইসব জিনিস শেখার যেভাবে আগ্রহ দেখিয়েছিল, ইচ্ছা-শক্তির পরিচয় দিয়েছিল, নিজের প্রতিভা প্রদর্শন করেছিল, এতে ওর মা-বাবাও উৎসাহিত হয়। ওরা তখন অন্বিকে যোগ শেখার জন্য উৎসাহ দেয়। সমস্যা এতটাই জটিল ছিল যে অন্বি নিজের দুই পায়ের সাহায্যে দাঁড়াতে পারতো না। এমন পরিস্থিতিতে অন্বির বাবা-মা ওকে যোগ শেখার জন্য উৎসাহ দেয়। প্রথমবার যখন ও যোগ প্রশিক্ষকের কাছে যায়, তিনিও অনিশ্চিত ছিলেন যে, এই ছোট্ট নিষ্পাপ মেয়েটা কি আদৌ যোগ শিখতে পারবে? কিন্তু সেই প্রশিক্ষক বোধ হয় জানতেন না অন্বির কি ধাতু দিয়ে তৈরী। ও নিজের মায়ের সঙ্গে যোগ অভ্যাস করতে শুরু করে আর এখন তো ও যোগের বিষয়ে এক্সপার্ট হয়ে গেছে।
আজ অন্বি সারা দেশের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ও পদক জিতে নেয়। যোগ অন্বিকে নতুন জীবন দিয়েছে। যোগ কে আত্মস্থ করে জীবনকেও আত্মস্থ করেছে অন্বি। অন্বির বাবা-মা আমাকে বলছিলেন যে যোগ অন্বির জীবনে আশ্চর্যজনক পরিবর্তন এনেছে, এখন তার আত্মবিশ্বাস অবিশ্বাস্য হয়ে উঠেছে। যোগব্যায়াম অন্বির শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করেছে এবং ওষুধের প্রয়োজনীয়তা ক্রমশ কমিয়ে দিচ্ছে। আমি চাই দেশে-বিদেশে উপস্থিত ‘মন কি বাত’-এর শ্রোতারা অন্বির যোগব্যায়াম থেকে উপকারিতা সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক গবেষণা করুক। আমি মনে করি অন্বি একটি দুর্দান্ত কেস স্টাডি। যারা যোগের উপকারিতা সম্পর্কে গবেষণা করতে চান, সেই সব বিজ্ঞানীরা এগিয়ে এসে অন্বির এই সাফল্যের উপর অধ্যয়ন করে বিশ্বকে যোগের শক্তির সঙ্গে পরিচয় করান। এই ধরনের যেকোনো গবেষণা বিশ্বজুড়ে ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুদের জন্য দারুন সহায়ক হতে পারে। এখন বিশ্ব স্বীকার করেছে যে যোগব্যায়াম শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য খুবই কার্যকর। বিশেষ করে ডায়াবেটিস এবং রক্তচাপ সংক্রান্ত সমস্যায় যোগ ব্যায়াম বিশেষ রূপে সাহায্য করে। যোগ ব্যায়ামের এমনি শক্তিতে প্রভাবিত হয়ে জাতিসংঘ ২১শে জুন আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন ভারতের আরেকটি প্রচেষ্টাকে ইউনাইটেড নেশনস বা জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছে, সম্মানিত করেছে। এই প্রচেষ্টাটি ২০১৭ সালে শুরু হয়েছে - ইন্ডিয়া হাইপারটেনশন কন্ট্রোল ইনিশিয়েটিভ। এর আওতায় রক্তচাপজনিত সমস্যায় আক্রান্ত লক্ষ লক্ষ মানুষ এখন সরকারি সেবা কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে পারবেন। এই উদ্যোগ যেভাবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, তা নজিরবিহীন। আমরা সবাই উৎসাহিত হই, জেনে যে যাদের চিকিৎসা করা হয়েছে তাদের প্রায় অর্ধেকের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যারা এই উদ্যোগের জন্য কাজ করেছেন, যারা তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এটিকে সফল করেছেন, তাঁদের আমি অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুরা, মানব জীবনের বিকাশ সর্বদাই জলের সঙ্গে যুক্ত - তা সে সমুদ্র, নদী বা পুকুর হোক। ভারতবর্ষেরও সৌভাগ্য যে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কিলোমিটারের কোস্টলাইন হওয়ার জন্য সমুদ্রের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট। এই তটরেখা বেশ কয়েকটি রাজ্য ও দ্বীপসমূহ জুড়ে বিস্তৃত। ভারতবর্ষের বিভিন্ন সম্প্রদায় ও বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি এই অঞ্চলে বিকশিত হতে দেখা গিয়েছে। শুধু তাই নয় এই উপকূলবর্তী এলাকার খাওয়া-দাওয়া, সকলকে খুব আকৃষ্ট করে। কিন্তু এই খুশির বিষয়ের সঙ্গে একটি খারাপ দিকও রয়েছে। আমাদের এই উপকূলবর্তী অঞ্চল পরিবেশ জনিত নানান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। ক্লাইমেট চেঞ্জ, মেরিন ইকোসিস্টেমের জন্য বড় এক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে আমাদের Beach-এ ছড়ানো আবর্জনা অসুবিধা সৃষ্টি করে। আমাদের দায়িত্ব এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য আমাদের সমস্ত রকমের জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। এখানে আমি দেশের উপকূলবর্তী এলাকায় Coastal Cleaning এর একটি প্রচেষ্টা 'স্বচ্ছ সাগর - সুরক্ষিত সাগর' - বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাই। ৫ই জুলাই যে অভিযান শুরু হয়েছিল তার সমাপন গত ১৭ই সেপ্টেম্বর অর্থাৎ বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে হয়েছে। এই দিনটি কোস্টাল Cleanup-Day-ও ছিল। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটি পঁচাত্তর দিন চলল। এতে জনগণের অংশগ্রহণ দেখার মত ছিল। এই প্রয়াস এর দরুন পুরো আড়াই মাস ধরে স্বচ্ছতার উপর বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখা গেছে। Goa তে একটি দীর্ঘ মানব শৃংখল গঠন করা হয়েছিল। Kakinada তে গণপতি বিসর্জন এর সময় জনগণকে প্লাস্টিকের অপকারিতা সম্পর্কে জানানো হয়েছিল। NSS এর প্রায় ৫০০০ যুবক-যুবতীরা ৩০ ton-এর ও বেশি প্লাস্টিক জড়ো করেছে। ওড়িষ্যাতে তিনদিনের মধ্যে কুড়ি হাজারেরও বেশি স্কুলের ছাত্ররা প্রতিজ্ঞা করেছে যে তারা নিজের সঙ্গে, নিজের পরিবার ও আশেপাশের মানুষজনদেরও ‘স্বচ্ছ সাগর সুরক্ষিত সাগরের’ জন্য অনুপ্রাণিত করবে। আমি সেই সকল মানুষকে অভিনন্দন জানাতে চাই যারা এই অভিযানে অংশগ্রহণ করেছেন।
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা বিশেষ করে শহরের Mayor বা গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধানদের সঙ্গে যখন কথা বলি, তাদের এই অনুরোধটি আমি অবশ্যই করি যে স্বচ্ছতার মতন প্রচেষ্টাতে লোকাল কমিউনিটি আর লোকাল অরগানাইজেশন গুলিকে যুক্ত করুক, innovative পদ্ধতি প্রয়োগ করুক।
বেঙ্গালুরুতে একটি টিম আছে - "ইউথ ফর পরিবর্তন"। গত আট বছর ধরে এই টিম স্বচ্ছতা ও অন্যান্য বিভিন্ন Community ভিত্তিক বিষয় নিয়ে কাজ করছে। তাদের উদ্দেশ্য অত্যন্ত স্পষ্ট - "স্টপ কমপ্লেনিং, স্টার্ট অ্যাক্টিং"। এই টিম এখনো পর্যন্ত শহরের ৩৭০ টিরও বেশি স্থানের সৌন্দর্যায়ন করেছে। প্রতিটি স্থানেই ইউথ ফর পরিবর্তন তাদের অভিযানে ১০০ থেকে ১৫০ জন নাগরিককে যুক্ত করেছে। এই কর্মসূচি প্রতি রবিবার সকালে শুরু হয় এবং দুপুর পর্যন্ত চলে। এই কাজের মাধ্যমে জঞ্জাল তো দূর করা হয়ই, দেওয়ালে পেইন্টিং এবং আর্টিস্টিক স্কেচেসও করা হয়। অনেক জায়গায় আপনি বিখ্যাত ব্যক্তিদের স্কেচেস এবং তাদের ইনস্পিরেশনাল কোটসও দেখতে পাবেন। বেঙ্গালুরুর ইয়ুথ ফর পরিবর্তনের প্রচেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের মিরাটের "কওয়াড় সে জুগাড়" অভিযানের প্রসঙ্গেও বলতে চাই। এই অভিযান পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি শহরের সৌন্দর্যায়নের সঙ্গেও যুক্ত। এই কর্মসূচির একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো এখানে লোহার স্ক্র্যাপ প্লাস্টিক ওয়েস্ট, পুরানো টায়ার বা ড্রামের মত বাতিল হওয়া জিনিস ব্যবহৃত হয়। স্বল্প খরচে সর্বজনিক স্থানেও সৌন্দর্যায়ন কীভাবে সম্ভব এই অভিযান তারও এক আদর্শ উদাহরণ। এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত সকলকে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এখন দেশের চতুর্দিকে উৎসবের রোশনাই। আগামীকাল নবরাত্রির প্রথম দিন। এদিন আমরা দেবীর প্রথম রূপ "মা শৈলপুত্রী"র উপাসনা করব। একটানা ন’দিনের নিয়ম, সংযম ও উপবাস পালনের পর বিজয়া দশমীর উৎসবও আসবে। অর্থাৎ এদিক থেকে দেখলে আমরা বুঝতে পারব আমাদের উৎসবগুলির মধ্যে আস্থা ও আধ্যাত্মিকতার পাশাপাশি কত গভীর বার্তাও লুকিয়ে আছে! অনুশাসন ও সংযমের মাধ্যমে সিদ্ধিপ্রাপ্তি আর তারপর বিজয় উৎসব - এই তো জীবনে যে কোন লক্ষ্য পূরণের পথ! দশেরার পর ধনতেরাস ও দীপাবলীর উৎসবও আসতে চলেছে।
বন্ধুরা, বিগত বছর থেকে আমাদের উৎসবগুলির সঙ্গে একটি নতুন সংকল্প জুড়েছে। আপনারা সবাই জানেন, এই সংকল্প হলো 'vocal for local' এর। এখন আমরা উৎসবের আনন্দে আমাদের Local কারিগর, শিল্পী, আর ব্যবসায়ীদেরও যুক্ত করছি। আসন্ন ২রা অক্টোবর বাপুজীর জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে আমাদের এই অভিযান কে আরও ত্বরান্বিত করার সংকল্প নিতে হবে। খাদি, হ্যান্ডলুম, হ্যান্ডিক্রাফট এই সমস্ত জিনিসের সঙ্গে লোকাল দ্রব্যও অবশ্যই কিনুন।
আসলে এই উৎসবের সত্যিকারের আনন্দও তখন হবে যখন প্রত্যেকে এই উৎসবের অংশীদার হবে। এই জন্য স্থানীয় প্রোডাক্টের কাজের সঙ্গে যুক্ত লোকেদের আমাদের Suportও করতে হবে। একটা ভালো উপায় এটাও হতে পারে, উৎসবের সময় আমরা যা উপহার দিই, আমরা এই ধরনের প্রডাক্টকেও সংমিলিত করি। এই সময় এই অভিযান এইজন্যও বিশেষ গুরুতপূর্ণ, কারণ আজাদীর অমৃত মহোৎসব-এর সময় আত্মনির্ভর ভারতেরও লক্ষ্য নিয়ে আমরা চলছি। যা প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতা প্রেমীদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি হবে। সেইজন্য আমার আপনাদের কাছে এই নিবেদন যে এই বার খাদি, হ্যান্ডলুম বা হ্যান্ডিক্রাফট - এই সব জিনিস কেনার সমস্ত রেকর্ড আপনারা ভেঙে দিন। আমরা দেখেছি যে উৎসবের দিনে packing আর packaging এর জন্য পলিথিন ব্যাগের অনেক ব্যবহারও হয়ে থাকে। স্বচ্ছতার পর্বে পলিথিনের ক্ষতিকারক আবর্জনা, আমাদের উৎসবের ভাবনার বিরুদ্ধে। এইজন্য আমরা যেনো স্থানীয় স্তরে প্রস্তুত non-plastic ব্যাগেই ব্যবহার করি। আমাদের এখানে পাটের, সুতোর, কলা দিয়ে তৈরী, এরকম হরেক রকম ঐতিহ্যগত ব্যাগের চলন পুনরায় বাড়ছে। এটা আমাদের দায়িত্ব যে উৎসবের দিনগুলিতে এইগুলির ব্যবহারে আমরা উৎসাহ প্রদান করি। আর স্বচ্ছতার সঙ্গে নিজেদের আর পরিবেশের স্বাস্থ্যেরও খেয়াল রাখি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের শাস্ত্রে বলা আছে,
'পরহিত সরিস ধরম্ নেহি ভাই'
অর্থাৎ পরের ভালো করা, অপরের সেবা ও উপকার করার মতো অন্য কোনো ধর্ম হয়না। বিগত দিনে দেশে সমাজ সেবার এই ভাবনারই প্রতিফলন দেখতে পেয়েছিলাম। আপনারাও দেখেছেন হয়তো, মানুষ এগিয়ে এসে কোনো না কোনো টি বি রুগীদের দত্তক নিচ্ছেন, তার জন্য পুষ্টিকর আহারের ব্যবস্থা করছেন।
আসলে, এটি টিবি মুক্ত ভারত অভিযানের একটি অংশ, যার মূল ভিত্তি হল জনগণের অংশগ্রহণ, কর্তব্য অনুভূতি। সঠিক পুষ্টি, সঠিক সময়ে ওষুধ দিয়ে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা সম্ভব। আমি নিশ্চিত যে জনগণের স্বতস্ফূর্ত এই শক্তি দ্বারা, ২০২৫ সালের মধ্যে ভারত টিবি মুক্ত হবে। বন্ধুরা, কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল দাদরা-নগর হাভেলী এবং দমন-দিউ থেকে এমনই একটি উদাহরণ জানতে পেরেছি, যা মন ছুঁয়ে যায়। এখানকার আদিবাসী অঞ্চলে বসবাসকারী জিনু রাবতিয়াজী লিখেছেন যে সেখানে গ্রাম দত্তক কার্যক্রমের অধীনে মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা ৫০ টি গ্রাম দত্তক নিয়েছে। এর মধ্যে জিনুজীর গ্রামও রয়েছে। এই মেডিকেলের ছাত্ররা অসুখ থেকে বাঁচাতে গ্রামের লোকেদের সচেতন করে, অসুস্থদের সাহায্য করে এবং সরকারী প্রকল্পগুলি সম্পর্কেও তথ্য দেয়। পরোপকারের এই চেতনা গ্রামে বসবাসকারী মানুষের জীবনে এনেছে খুশির আমেজ। এজন্য আমি মেডিকেল কলেজের সকল শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুরা, 'মন কি বাত'-এ নতুন নতুন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে। অনেক সময়, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, আমরা কিছু পুরানো বিষয়ের গভীরে যাওয়ারও সুযোগ পাই। গত মাসে 'মন কি বাত'-এ, আমি মোটা দানা শস্যর কথা বলেছিলাম, এবং ২০২৩ সালকে 'আন্তর্জাতিক মিলেট ইয়ার' হিসেবে উদ্যাপন করার বিষয়ে কথা বলেছিলাম। মানুষ এই বিষয় সম্পর্কে খুব কৌতূহলী। আমি অনেক চিঠি পেয়েছি যেখানে অনেকেই বলছেন তারা কিভাবে মিলেটস্-কে দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। মিলেট দিয়ে তৈরি ঐতিহ্যবাহী রান্নার কথাও বলেছেন কেউ কেউ। এগুলো বড় পরিবর্তনের লক্ষণ। মানুষের এই উৎসাহ দেখে, আমি মনে করি আমাদের এক সঙ্গে একটি ই-বুক তৈরি করা উচিত, যাতে লোকেরা মিলেট থেকে তৈরি রান্নার পদ্ধতি এবং অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে পারেন, যাতে আন্তর্জাতিক মিলেট ইয়ার শুরু হওয়ার আগে, আমাদের কাছে মিলেট সম্পর্কিত একটি পাবলিক এনসাইক্লোপিডিয়া তৈরী হবে। তারপর আপনি এটিকে MyGov পোর্টালে প্রকাশ করতে পারেন।
বন্ধুরা, এইবারের 'মন কি বাত'-এ এইটুকুই, কিন্তু যেতে-যেতে, আমি আপনাকে National Games সম্পর্কেও বলতে চাই। ২৯শে সেপ্টেম্বর থেকে গুজরাটে National Games আয়োজিত হচ্ছে। এটি একটি বিশেষ উপলক্ষ, কারণ বহু বছর পর জাতীয় গেমসের আয়োজন করা হচ্ছে। গতবার কোভিড অতিমারীর কারণে অনুষ্ঠানটি বাতিল করতে হয়েছিল। এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক খেলোয়াড়কে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল। এই দিনে আমি খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিতে তাঁদের মাঝে থাকব। আপনারা সকলে অবশ্যই National Games Follow করুন এবং আপনার খেলোয়াড়দের মনবল প্রদান করুন। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। আগামী মাসে আবার দেখা হবে 'মন কি বাত'-এ একটি নতুন বিষয় নিয়ে। ধন্যবাদ , নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। অগাস্টের এই মাসে, আপনাদের সবার চিঠি, বার্তা আর কার্ড, আমার দপ্তরকে ত্রিবর্ণ রঞ্জিত করে দিয়েছে। আমি এমন কোনও চিঠিই প্রায় পাই নি, যার উপরে তেরঙ্গা ছিল না, অথবা তেরঙ্গা আর স্বাধীনতার সঙ্গে যুক্ত কথা ছিল না। বাচ্চারা, তরুণ সাথীরা তো অমৃত মহোৎসবে খুব সুন্দর-সুন্দর ছবি, আর নকশা বানিয়েও পাঠিয়েছে। স্বাধীনতার এই মাসে আমাদের গোটা দেশে, প্রত্যেক শহরে, প্রত্যেক গ্রামে, অমৃত মহোৎসবের অমৃতধারা বইছে। অমৃত মহোৎসব আর স্বাধীনতা দিবসের এই বিশেষ সময়ে দেশের সামগ্রিক শক্তির দর্শন করেছি আমরা। এক চেতনার অনুভব হয়েছে। এত বড় দেশ, এত বিবিধতা, কিন্তু যখন তেরঙ্গা উত্তোলনের প্রসঙ্গ এল, তখন প্রত্যেকে, একটাই ভাবনায় সামিল দেখা গেল। তেরঙ্গার গৌরবের প্রথম প্রহরী হয়ে, মানুষ, নিজেরা এগিয়ে এল। আমরা স্বচ্ছতা অভিযান আর টিকাকরণ অভিযানেও দেশের স্পিরিট দেখেছি। অমৃত মহোৎসবে আবার দেশভক্তির এমনই প্লাবন দেখতে পাচ্ছি আমরা। আমাদের সৈনিকরা উঁচু-উঁচু পাহাড়ের শিখরে, দেশের সীমানায়, আর সমুদ্রের মাঝখানে তেরঙ্গা উত্তোলন করেছে। মানুষজন তেরঙ্গা অভিযানের জন্য আলাদা-আলাদা উদ্ভাবনী আইডিয়াও বের করেছে। যেমন তরুণ সাথী, কৃশনীল অনিল জী। অনিল জী একজন পাজ্ল আর্টিস্ট আর উনি রেকর্ড সময়ে অত্যন্ত সুন্দর মোজাইক আর্ট তৈরি করেছেন। কর্ণাটকের কোলারে, মানুষজন ছ’শো তিরিশ ফিট লম্বা আর দু’শো পাঁচ ফিট চওড়া তেরঙ্গা হাতে ধরে অভূতপূর্ব দৃশ্য তৈরি করেছে। অসমে সরকারি কর্মীরা দিঘালীপুখুরী War Memorial-এ তেরঙ্গা উত্তোলনের জন্য নিজেদের হাতে কুড়ি ফিটের তেরঙ্গা বানিয়েছে। এইভাবে, ইন্দোরের মানুষ মানব-শৃঙ্খলের মাধ্যমে ভারতের নকশা বানিয়েছে। চণ্ডীগড়ে, তরুণরা, বিশাল মানব তেরঙ্গা নির্মাণ করে। এই দুটো প্রয়াসই গিনেস রেকর্ডে নথিবদ্ধ করা হয়েছে। এই সবকিছুর মাঝখানে, হিমাচল প্রদেশের গঙ্গোট পঞ্চায়েত থেকে এক বড় প্রেরণাদায়ী উদাহরণও দেখতে পাওয়া গেল। এখানে পঞ্চায়েতে স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচীতে প্রবাসী শ্রমিকদের সন্তানদের প্রধান অতিথি হিসাবে সামিল করা হয়।
বন্ধু, অমৃত মহোৎসবের এই রঙ, শুধু ভারতেই নয়, বরং, দুনিয়ার অন্যান্য দেশেও দেখতে পাওয়া গেল। বোটসোয়ানা-তে বসবাসকারী স্থানীয় সঙ্গীতশিল্পীরা ভারতের স্বাধীনতার পঁচাত্তর বর্ষপূর্তি উদযাপনের জন্য দেশভক্তির পঁচাত্তরটা গান গেয়েছেন। এর মধ্যে আরও বিশেষ ব্যাপার যেটা তা হল পঁচাত্তরটা গান হিন্দী, পাঞ্জাবি, গুজরাতী, বাংলা, অসমিয়া, তামিল, তেলুগু, কন্নড় আর সংস্কৃতের মত ভাষায় গাওয়া হয়েছে। এইভাবে, নামিবিয়াতে ভারত-নামিবিয়ার সাংস্কৃতিক-পারম্পরিক সম্বন্ধ নিয়ে বিশেষ স্ট্যাম্প প্রকাশিত হয়েছে। বন্ধু, আমি আর একটা আনন্দের কথা বলতে চাই। এই কিছু দিন আগে, আমার সুযোগ হয়েছিল ভারত সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার বিভাগের অনুষ্ঠানে যাওয়ার। সেখানে ওঁরা দূরদর্শনের ‘স্বরাজ’ সিরিয়ালের স্ক্রীনিংয়ের ব্যবস্থা রেখেছিলেন। এর প্রিমিয়ারে আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নেওয়া অজানা নায়ক-নায়িকাদের প্রচেষ্টার সঙ্গে দেশের তরুণ প্রজন্মকে পরিচিত করতে এটি একটি দারুণ উদ্যোগ। দূরদর্শনে, প্রতি রবিবার রাত ৯'টায় এটি সম্প্রচারিত হয়। এবং আমাকে জানানো হয়েছে যে, এটি ৭৫ সপ্তাহ ধরে চলবে। আমার আবেদন যে, আপনারা সময় করে নিজেরা দেখুন এবং বাড়ির বাচ্চাদেরও অবশ্যই দেখান এবং স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরাতো এটি রেকর্ডিং করে যখন সোমবার স্কুল খুলবে তখন বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজনও করতে পারে, যাতে আমাদের স্বাধীনতার জন্মের এই সকল মহানায়কদের প্রতি, আমাদের দেশে, নতুন করে সচেতনতা তৈরি হয়। আজাদীর অমৃত মহোৎসব পরের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সাল এর অগাস্ট মাস পর্যন্ত চলবে। দেশের জন্য, স্বাধীনতার সৈনিকদের জন্য, আমরা যে লেখালেখির আয়োজন করছিলাম তা আমাদের আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসীরা, আমাদের পূর্বপুরুষদের জ্ঞান, আমাদের পূর্বপুরুষদের বহুধাবিস্তৃত দৃষ্টি এবং আমাদের পূর্বপুরুষদের একাত্মচিন্তন , আজও কত গুরুত্বপূর্ণ তার গভীরে গেলে আমরা আশ্চর্য হয়ে যাই। হাজার হাজার বছরের পুরনো আমাদের ঋগ্বেদ। ঋকবেদে বলা হয়েছে:-
ओमान-मापो मानुषी: अमृक्तम् धात तोकाय तनयाय शं यो: |
यूयं हिष्ठा भिषजो मातृतमा विश्वस्य स्थातु: जगतो जनित्री: ||
ওমান-মাপো মানুষী: অমৃক্তমধাত তোকায় তনয়ায় শং য়ো: ।
য়ূয়ং হিষ্ঠা ভিষজো মাতৃতমা বিশ্বস্য স্থাতুঃ জগতো জনিত্রীঃ ।।
অর্থাৎ, হে জল, আপনি মানবতার পরম মিত্র। আপনি জীবনদায়িনী, আপনার থেকেই অন্ন উৎপত্তি হয় এবং আপনার মাধ্যমেই আমাদের সন্তানদের মঙ্গল হয়। আপনি, আমাদের সুরক্ষা প্রদান করেন এবং আপনিই আমাদের অমঙ্গল থেকে দূরে রাখেন, আপনি হলেন সর্বোত্তম ঔষুধি, আপনিই এই ব্রহ্মাণ্ডের পালনকর্তা। ভাবুন, হাজার হাজার বছর আগেই আমাদের সংস্কৃতিতে, জল ও জল সংরক্ষণের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আজকের প্রেক্ষাপটে এই জ্ঞান সম্মন্ধে জানলে আমরা শিহরিত হই, কিন্তু দেশ যখন এই জ্ঞানকে তার শক্তি হিসেবে গ্রহণ করে, তখন তাদের শক্তি বহুগুণ বেড়ে যায়। আপনার নিশ্চই মনে আছে, 'মন কি বাত'-এ, আমি চার মাস আগে, অমৃত সরোবরের কথা বলেছিলাম। এরপর বিভিন্ন জেলায় স্থানীয় প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, স্থানীয় মানুষ একত্রিত হয়, এবং দেখতে দেখতেই অমৃত সরোবর নির্মাণ এক গণআন্দোলনে পরিণত হয়। যখন দেশের জন্য কিছু করার অনুভূতি জন্মায়, নিজের কর্তব্যের উপলব্ধিও হয়, আগামী প্রজন্মের জন্য ভাবনা মনে আসে, তখন শক্তিও যোগ হয়, সংকল্প মহৎ রূপ নেয়। আমি তেলেঙ্গানার ওয়ারঙ্গল থেকে একটি দুর্দান্ত প্রচেষ্টা সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এখানে একটি নতুন গ্রাম পঞ্চায়েত গঠিত হয়েছে, যার নাম 'মঙ্গত্যা- বাল্যা- থান্ডা'। এই গ্রামটি বনাঞ্চলের কাছাকাছি। গ্রামের কাছে একটি জায়গা ছিল যেখানে বর্ষাকালে প্রচুর জল জমা হত। গ্রামবাসীদের উদ্যোগে, এখন এই জায়গাটি অমৃত সরোবর অভিযানের অধীনে উন্নত করা হচ্ছে। এবার বর্ষার সময় বৃষ্টিতে সরোবরটি জলে টইটুম্বুর হয়ে গেছে।
আমি মধ্য প্রদেশের মন্ডলার মোচা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৈরি করা অমৃত সরোবরের কথা আপনাদের বলতে চাই। কানহা জাতীয় উদ্যানের নিকটবর্তী এই সরোবর এলাকার অনেকখানি সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। উত্তরপ্রদেশের ললিতপুরে নবনির্মিত শহীদ ভগত সিং অমৃত সরোবরও মানুষের খুব পছন্দ হয়েছে। এখানের নিওয়ারি গ্রাম পঞ্চায়েতে তৈরি এই সরোবর চার একর জমি জুড়ে বিস্তৃত। সরোবরের চারদিকের লাগানো গাছগাছালি জায়গাটিকে আরো মনোরম করে তুলেছে। সরোবরের কাছে ৩৫ ফুট উচুঁ তেরঙ্গা দেখতে দূর দূর থেকে লোকজন আসেন। অমৃত সরোবরের এই অভিযান কর্নাটকেও জোর কদমে চলছে। এখানের বাগলকোট জেলার বিল্কেরুর গ্রামেও খুব সুন্দর অমৃত সরোবর তৈরি হয়েছে। আসলে এই সব অঞ্চলে পাহাড় থেকে আসা জলে থেকে কৃষক ও ফসলের খুব ক্ষতি হত, মানুষজনের খুব অসুবিধা হত। অমৃত সরোবর বানানোর জন্য গ্রামের লোকেরা এই পাহাড় নিঃসৃত জলকে channelize করে একদিকে নিয়ে আসে। এর ফলে, এই এলাকায় বন্যার সমস্যাও চলে গেছে। অমৃত সরোবর আমাদের উপস্থিত অনেক সমস্যার সমাধান ত করছেই, উপরন্তু আগামী প্রজন্মের জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই অভিযানে আরও অনেক পুরনো জলাশয়েরও ভোলবদল করা হচ্ছে। পশুপাখির তেষ্টা নিবারণ থেকে চাষবাস, অমৃত সরোবর নানা ভাবে সকলের উপকারে আসছে। এই জলাশয়গুলির জন্য আশেপাশের অঞ্চলের ground water table বাড়ছে। পাশাপাশি সবুজায়ন হচ্ছে। অনেক জায়গায় এই সরোবরে লোকজন মাছচাষ করবারও প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমার আপনাদের সকলের কাছে, বিশেষ করে আমার যুববন্ধুদের কাছে অনুরোধ আপনারা সবাই এগিয়ে আসুন ও এই অমৃত সরোবর অভিযানে যোগদান করুন। জল সঞ্চয় ও জলসংরক্ষণের এই প্রচেষ্টাগুলিকে সাফল্যমন্ডিত করে তুলুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আসামের বঁগাইগাঁও একটি খুব মনোগ্রাহী প্রকল্প চালু আছে- নাম তার প্রজেক্ট সম্পূর্ণা। এই প্রজেক্টের উদ্দেশ্য হল অপুষ্টির বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং এই প্রক্রিয়াও খুব Unique। এই যোজনায় কোনো অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রে সুস্থ সবল বাচ্চার মা অপুষ্টিতে ভোগা বাচ্চার মায়ের সঙ্গে প্রত্যেক সপ্তাহে দেখা করেন এবং পুষ্টির সম্পর্কে সমস্ত তথ্যাদি আলোচনা করেন। এইভাবে একজন মা অন্য মায়ের বন্ধু হয়ে তার সাহায্য করেন, তাকে শেখান। এই প্রজেক্টের সাহায্যে এই এলাকায়, মাত্র এক বছরে ৯০ শতাংশের বেশি বাচ্চারা অপুষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। আপনারা কি ভাবতে পারেন অপুষ্টি দূর করতে গান বাজনা তথা ভজনের ব্যবহার হতে পারে! এমনটাই হয়েছে মধ্য প্রদেশের দতিয়া জেলার "মেরা বচ্চা" অভিযানে। এই অভিযানে ভজন কীর্তনের আয়োজন করা হয় এবং সেখানে ডাকা হয় পুষ্টি ও এই সম্বন্ধিত বিশেষজ্ঞদের। একটি 'মটকা' অনুষ্ঠানও হয়। মহিলারা অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রে এক মুষ্টি শস্য নিয়ে আসেন এবং সেই শস্য দিয়েই শনিবারে 'বালভোজ' এর আয়োজন করা হয়। এতে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশুদের উপস্থিতি যেমন বাড়বে তেমনি অপুষ্টিও কমবে। অপুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ঝাড়খণ্ডে একটি অনন্য অভিযান চলছে। ঝাড়খণ্ডের গিরিডিতে তৈরি হয়েছে সাপ-সিঁড়ির মতো একটি খেলা। শিশুরা খেলার মাধ্যমে ভালো আর খারাপ অভ্যাস সম্পর্কে শেখে।
বন্ধুরা, আমি আপনাদের অপুষ্টি সংক্রান্ত অনেক উদ্ভাবনী পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলছি কারণ আগামী মাসে আমাদের সকলকেও এই অভিযানে যোগ দিতে হবে। সেপ্টেম্বর মাসটি উৎসবের পাশাপাশি পুষ্টি সম্পর্কিত একটি বড় প্রচারাভিযানের জন্যও উত্সর্গীকৃত। আমরা প্রতি বছর ১লা থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর, পুষ্টির মাস হিসেবে উদযাপন করি। অপুষ্টির বিরুদ্ধে সারা দেশে অনেক Creative এবং Diverse effort করা হচ্ছে। প্রযুক্তির উন্নত ব্যবহার এবং জনগণের অংশগ্রহণ পুষ্টি অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। দেশের লক্ষাধিক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মোবাইল ডিভাইস সরবরাহ করা থেকে শুরু করে অঙ্গনওয়াড়ি পরিষেবাগুলির ঠিকমতো পৌঁছছে কিনা তা Monitor করার জন্য, পুষ্টি ট্র্যাকারও চালু করা হয়েছে। সমস্ত Aspirational Districts এবং উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে বসবাসকারী 14 থেকে18 বছর বয়সী কন্যাদের এই পুষ্টি অভিযানের আওতায় আনা হয়েছে। অপুষ্টির সমস্যার সমাধান শুধু এই কয়েকটি পদক্ষেপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, আরও অনেক উদ্যোগেরও এই লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ জল জীবন মিশনের কথাই ধরুন, এই মিশনটি ভারতকে অপুষ্টি মুক্ত করার ক্ষেত্রেও বিশাল প্রভাব ফেলতে চলেছে। অপুষ্টির মোকাবিলা করতে সামাজিক সচেতনতামূলক প্রচেষ্টাগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমি আপনাদের সকলকে আগামী মাসে, অপুষ্টি দূর করার প্রচেষ্টায় অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাই। আমার প্রিয় দেশবাসী চেন্নাই থেকে শ্রীদেবী বর্ধরাজন জি আমাকে একটি Reminder পাঠিয়েছেন। তিনি mygov-এ তাঁর কথাগুলি এইভাবে লিখেছেন-
নতুন বছর আসতে এখন ৫ মাসেরও কম সময় বাকি এবং আমরা সবাই জানি যে আগামী বছরটি, International Year of Millets হিসেবে পালন করা হবে। তিনি আমাকে দেশের একটি মিলেট ম্যাপও পাঠিয়েছেন এবং জিজ্ঞাসা করেছেন যে আপনি ‘মন কি বাত’ এর আসন্ন পর্বে এটি নিয়ে আলোচনা করতে পারেন কিনা। আমার দেশবাসীর মধ্যে এই ধরনের আবেগ দেখে আমি খুব আনন্দিত হই। আপনার মনে থাকবে যে জাতিসংঘ একটি প্রস্তাব পাস করেছিল এবং ২০২৩ সালকে আন্তর্জাতিক শস্য বর্ষ হিসাবে ঘোষণা করেছে। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে ভারতের এই প্রস্তাবটি ৭০টিরও বেশি দেশ থেকে সমর্থন পেয়ে তবেই গৃহীত হয়েছে। আজ সারা বিশ্বে এই মোটা শস্যের চাহিদা ও কদর বাড়ছে। বন্ধুরা, যখন আমি মোটা শস্যের কথা বলি, তখন আমি আজকে আমার একটি প্রচেষ্টা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। বিগত কিছু সময়ে যখনই কোনও বিদেশী অতিথি ভারতে আসেন, বা কোনও রাষ্ট্রপ্রধান ভারতে আসেন, আমার চেষ্টা থাকে ভারতের মোটা শস্য থেকে তৈরি বিশেষ খাবার তাঁদের সামনে উপস্থাপন করি। আমার অভিজ্ঞতা বলে যে, এই গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এই খাবারগুলি খুবই পছন্দ করেন এবং আমাদের মোটা শস্য সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য জোগাড় করতেও তাঁরা তৎপর হন। মোটা শস্য প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের কৃষি, সংস্কৃতি ও সভ্যতার একটি অংশ।
আমাদের বেদে মিলেটস অর্থাৎ শস্যদানার ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায়, আর এভাবেই পুরাণ- নুরু এবং তোল্কাপ্পিয়মেও এই বিষয়ে বলা হয়েছে। আপনি এই দেশের যে কোনো অঞ্চলেই যান, সেখানকার খাদ্যাভ্যাসে নানা ধরনের মিলেটস অবশ্যই দেখতে পাবেন। আমাদের সংস্কৃতির মতোই মিলেটসও বিভিন্ন ধরনের হয়। জোয়ার, বাজরা, রাগি, সাবু, কাওনদানা, বাদাম, কোদো, কুটকি, কুট্টু এইসবই নানা ধরনের মিলেটস। ভারত বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মিলেটস উৎপাদনকারী দেশ, তাই এই কার্যক্রমকে সফল করার দায়িত্ব আমাদের ভারতবাসীদের কাঁধেই থাকে। আমরা সকলে মিলে এ বিষয়ে একটা জনআন্দোলন গড়ে তুলতে পারি আর দেশের মানুষের মধ্যে মিলেটসের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে পারি। বন্ধুরা আপনারা তো ভালোভাবেই জানেন মিলটস কৃষক বন্ধুদের জন্যও লাভজনক, বিশেষ করে ছোট পরিসরের চাষীদের জন্য। আসলে অনেকটা কম সময়ে এর ফসল তৈরি হয়। আর এতে খুব বেশি জলের প্রয়োজনও হয় না। আমাদের ক্ষূদ্র চাষিদের জন্য মিলেটস বিশেষভাবে লাভজনক। মিলেটসের খোসা অত্যন্ত উন্নত মানের পশুখাদ্য। বর্তমানের যুবক-যুবতীরা হেলদি লিভিং আর ইটিং এই বিষয়ে ভীষণ ফোকাস্ড। এই দিক থেকে দেখলে মিলেটসে প্রচুর প্রোটিন, ফাইবার আর মিনারেলস রয়েছে। কেউ কেউ একে super foodও বলে। মিলেটসের একটা নয় একাধিক গুণ রয়েছে। ওবেসিটি কমানোর সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন এবং হার্টের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায় মিলেটস। এর সঙ্গে পেট এবং লিভারজনিত অসুখ থেকে মুক্ত রাখতে সাহায্য করে। কিছুক্ষণ আগেই আমরা অপুষ্টি নিয়ে কথা বলছিলাম। অপুষ্টির সঙ্গে লড়ার জন্যও মিলেটস খুব উপকারী কারণ প্রোটিনের সঙ্গে সঙ্গে এতে রয়েছে এনার্জি। দেশে মিলেটসের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য অনেক কিছু করা হচ্ছে। এই বিষয়ে নানা গবেষণা ও inovation এর ব্যাপারেও ফোকাস করা হচ্ছে, FPOকে উৎসাহিত করা হচ্ছে যাতে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। আমাদের নিজেদের কৃষক ভাই-বোনেদের কাছে এটাই বলার যে মোটাদানার শস্যকে আপনারা বেশি করে আপন করে নিন আর এর থেকে লাভ করুন। এটা দেখে আমার খুব ভালো লাগছে যে এখন অনেক স্টার্ট আপ কোম্পানি এগিয়ে আসছে যারা মিলেটস এর ওপর কাজ করছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ মিলেট কুকি তৈরি করছে, কেউ আবার মিলেট প্যানকেক এবং মিলেটসের ধোসাও তৈরি করছে। কেউ আবার মিলেট এনার্জি বার এবং মিলেট ব্রেকফাস্ট তৈরি করছে। আমি এই ক্ষেত্রে কাজ করা সমস্ত মানুষকে অনেক শুভকামনা জানাচ্ছি। উৎসবের এই সময়ে আমরা নানান রান্নায় মিলেটসের ব্যবহার করতে পারি। আপনারা আপনাদের বাড়িতে তৈরি এমন খাবারের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় অবশ্যই শেয়ার করবেন যাতে লোকজনের মধ্যে মিলেটস এর বিষয়ে সচেতনতা তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য হয়।
আমার প্রিয় দেশবাসী। কিছুদিন পূর্বেই আমি অরুণাচল প্রদেশের সিয়াং জেলার জোরসিং গ্রামের একটি খবর দেখলাম। এই খবরটি এমন একটি পরিবর্তনের সম্বন্ধে ছিল যার অপেক্ষা এই গ্রামের মানুষ অনেক বছর ধরেই করছিলো। উল্লেখ্য, জোরসিং গ্রামে, এই মাস থেকেই স্বাধীনতা দিবসের দিনে, 4g ইন্টারনেট - এর পরিষেবা শুরু হয়ে গেছে। যেমন আগে কখনও গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছলে গ্রামবাসী আনন্দিত হত, এখন নতুন ভারতে ঠিক সেই রকমই আনন্দ হয় যখন 4g পৌঁছে যায় । অরুণাচল ও নর্থ ইস্ট এর দূরদূরান্তে এলাকায় 4G রূপে এক নতুন সূর্যোদয় হয়েছে, ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি একটি নতুন ভোরের সূচনা করেছে। যে সমস্ত সুবিধাগুলি কেবলমাত্র বড় শহরে পাওয়া যেত সেগুলো ডিজিটাল ইন্ডিয়া গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দিয়েছে। এই কারণেই দেশে নতুন Digital Enterpreneur এর জন্ম হচ্ছে। রাজস্থানের আজমির জেলার Setha Singh Rawat জি 'দর্জি অনলাইন' নামে একটি ই-স্টোর চালান। আপনারা ভাবছেন, এ আবার কি কাজ দর্জি অনলাইন? আসলে, Setha Singh Rawat, Covid এর আগে দর্জির কাজ করতেন। কোভিদ যখন এলো তখন রাওয়াত জি এটাকে সমস্যা হিসেবে না দেখে একটি সুযোগ হিসেবে দেখলেন। উনি Common সার্ভিস সেন্টার অর্থাৎ সিএসসি ই-স্টোর join করলেন, আর অনলাইন কাজকর্ম শুরু করলেন। উনি দেখলেন যে গ্রাহক বড় সংখ্যায় মাস্ক এর অর্ডার দিচ্ছে। উনি কিছু মহিলাদের কাজে নিযুক্ত করলেন ও mask বানাতে লাগলেন। এর পরেই উনি 'দর্জি অনলাইন' নামে নিজের অনলাইন স্টোর শুরু করে দিলেন, যার মাধ্যমে উনি আরো অনেক বিভিন্ন ধরনের কাপড় বানিয়ে বিক্রি করতে লাগলেন। আজ ডিজিটাল ইন্ডিয়ার দৌলতে সেঠা সিং জি -র কাজ এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে এখন উনি সারা দেশ থেকেই অর্ডার পান। উনি শয়ে শয়ে মহিলাদের রোজগারের ব্যবস্থা করেছেন। ডিজিটাল ইন্ডিয়ার UPতে উন্নাও এর বাসিন্দা ওম প্রকাশ সিং জি কে ও ডিজিটাল Enterpreneur বানিয়ে দিয়েছে। উনি নিজের গ্রামে হাজারেরও বেশি ব্রডব্যান্ড কানেকশানের স্থাপন করেছেন। ওম প্রকাশ জি কমন সার্ভিস সেন্টারের আশেপাশে বিনা মূল্যে WiFi জোনেরও ব্যবস্থা করেছেন যাতে আগ্রহি মানুষের অনেক উপকার হচ্ছে । ওম প্রকাশ জির কাজ এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে উনি ২০জনেরও বেশি লোকেদের চাকরি দিয়েছেন। এই লোকেরা গ্রামের স্কুল, হসপিটাল, মহকুমা অফিস ও অঙ্গনবাড়ি কেন্দ্রগুলিতে ব্রডব্যান্ড কানেকশন পৌঁছে দিচ্ছে ও এর থেকে রোজগারও করছেন। কমন সার্ভিস সেন্টার এর মতই, Government E - Market Place অর্থাৎ GEM পোর্টাল-এ এরকম অনেক success stories এর কথা জানা যাচ্ছে। বন্ধুরা, গ্রামে ইন্টারনেটের জন্য যেসব পরিবর্তন হয়েছে সে সম্পর্কে আমি অনেক খবর পাই। Internet আমাদের যুববন্ধুদের পড়াশোনা এবং শেখার পদ্ধতিই বদলে দিয়েছে। যখন উত্তর প্রদেশের গুড়িয়া সিং উন্নাওতে আমোইয়া গ্রামে তাঁর শ্বশুর বাড়িতে আসেন, তখন তিনি তাঁর পড়াশোনা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। কিন্তু, ভারতনেট তার উদ্বেগের সমাধান করেছে। গুড়িয়া ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাঁর পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে গেছে, এবং তাঁর স্নাতক পর্বও শেষ করেছে। গ্রামে-গঞ্জে এমন কত জীবন ডিজিটাল ইন্ডিয়া অভিযান থেকে নতুন শক্তি পাচ্ছে। আপনারা আমাকে গ্রামের ডিজিটাল Enterpreneurদের সম্পর্কে আরও বেশি করে লিখুন এবং তাদের সাফল্যের গল্পও সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছুক্ষণ আগে, আমি হিমাচল প্রদেশ থেকে 'মন কি বাত'-এর শ্রোতা রমেশ বাবুর চিঠি পেয়েছি। রমেশ বাবু তাঁর চিঠিতে পাহাড়ের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করেছেন, উনি লিখেছেন যদিও পাহাড়ে জনবসতি বেশ দূরে দূরে, কিন্তু মানুষের মন একে অপরের খুব কাছাকাছি। প্রকৃতই আমরা পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষদের থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। পাহাড়ের জীবনধারা ও সংস্কৃতি থেকে আমরা প্রথম যে শিক্ষা পাই তা হলো, পরিস্থিতির চাপে না এসে আমরা সহজেই সেগুলোকে জয় করতে পারি এবং দ্বিতীয়ত, কীভাবে আমরা স্থানীয় সম্পদের ওপর আত্মনির্ভর হতে পারি। আমি প্রথম যে শিক্ষনীয় বিষয়ের কথা বলছি তার একটি সুন্দর চিত্র আজকাল স্পিতি অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে। স্পিতি একটি উপজাতীয় অঞ্চল। এখানে, বর্তমানে, মটর তোলার কাজ চলছে। পাহাড়ি ক্ষেতে এটি শ্রমসাধ্য এবং কঠিন কাজ। কিন্তু এখানে, গ্রামের মহিলারা একত্রিত হয়, একসঙ্গে একে অপরের ক্ষেত থেকে মটর তোলে। এই কাজের পাশাপাশি মহিলারা স্থানীয় গান 'ছপড়া মাঝি ছপড়া'ও গেয়ে থাকেন। অর্থাৎ এখানে পারস্পরিক সহযোগিতাও লোক-ঐতিহ্যের একটি অংশ। স্থানীয় সম্পদ ব্যবহারের সর্বোত্তম উদাহরণও পাওয়া যায় স্পিতিতে। স্পিতিতে, কৃষকরা যারা গরু পালন করেন । গরুর গোবর শুকিয়ে বস্তায় ভরে রাখেন। শীতকাল এলেই এসব বস্তা গরুর থাকার জায়গায়়, যাকে খুড় বলে, সেখানে পেতে দেওয়া হয়। তুষারপাতের সময়, এই বস্তাগুলি গরুকে ঠান্ডা থেকে রক্ষা করে। শীত যাওয়ার পর এই গোবর জমিতে সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ পশুর বর্জ্য থেকে তাদের সুরক্ষা, এবং খামারের জন্য সারও পাওয়া যায়। চাষের খরচও কম, জমিতে ফলনও বেশি। এই কারণেই এই অঞ্চলটি, আজকাল, প্রাকৃতিক চাষের প্রেরণা হয়ে উঠছে।
বন্ধুরা, এরকমই অনেক প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা, আমাদের আরও একটি পাহাড়ী রাজ্য, উত্তরাখণ্ডেও দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। উত্তরাখণ্ডে অনেক ধরনের ওষধি আর বনস্পতি পাওয়া যায়। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এদের মধ্যেই একটি ফল হলো বেডু। এটি হিমালয়ান ফিগ নামেও পরিচিত। এই ফলে, খনিজ আর ভিটামিন ভরপুর মাত্রায় পাওয়া যায়। মানুষ ফল হিসেবে তো এটি খায়ই, এরই সঙ্গে অনেক রোগ উপসম করতেও এটি গুরুত্বপূর্ণ। এই ফলের এইসব গুণের কথা মাথায় রেখে বেডুর জুস, এর জ্যাম, চাটনী, আচার, আর একে শুকিয়ে তৈরি করা ড্রাই ফ্রুটস বাজারে আনা হয়েছে। পিথরাগড় প্রশাসন এর চেষ্টা আর স্থানীয় মানুষের সহযোগিতার মাধ্যমে বেডুকে বাজারে আলাদা আলাদা রুপে নিয়ে আসা সম্ভবপর হয়েছে। বেডুকে পাহাড়ী অঞ্জীর নামে ব্র্যান্ডিং করে অনলাইন মার্কেটেও নিয়ে আসা হয়েছে। এতে কৃষক বন্ধুদের আয়ের নতুন পথ তো খুলেছেই, এর সঙ্গে এর ওষধিগুণ দূর দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কি বাত’এ আজ প্রথমে আমরা আজাদীর অমৃত মহোৎসব সম্বন্ধে কথা বলেছি। স্বাধীনতা দিবসের মহান পর্বের সঙ্গে সঙ্গে আগামী দিনে আরো অনেক পর্ব আসতে চলেছে। এখন কিছুদিন বাদেই ভগবান গণেশজীর আরাধনা পর্ব গণেশ চতুর্থী শুরু হতে চলেছে। গণেশ চতুর্থী অর্থাৎ গণপতি বাপ্পার আশীর্বাদ পর্ব। গণেশ চতুর্থীর আগে ওনাম পর্বও শুরু হবে। কেরালায় বিশেষ রুপে ওনাম শান্তি আর সমৃদ্ধির ভাবনার সঙ্গে পালন করা হয়। ৩০শে আগষ্ট হর্তালিকা তিজ ও আছে। ওড়িশায় ১লা সেপটেম্বর নুয়াখাই পর্ব ও পালন করা হবে। নুয়াখাই মানে নতুন খাবার, অর্থাৎ এটিও অন্যান্য পর্বের মতোই আমাদের কৃষি পরম্পরার সঙ্গে যুক্ত উৎসব। এরই মধ্যে জৈন সমাজের সম্বৎসরি পর্বও হবে। আমাদের এই সমস্ত পর্ব আমাদের সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি আর জীবনের প্রতীক। আমি আপনাদের সবাইকে এই উৎসব এবং বিশেষ পার্বণগুলির জন্য শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এই পার্বণগুলির সঙ্গে সঙ্গে কাল ২৯শে আগষ্ট মেজর ধ্যানচাঁদ জীর জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় ক্রীড়া দিবসও পালন করা হবে। আমাদের তরুণ খেলোয়াড়রা বিশ্ব মঞ্চে আমাদের পতাকার মর্যাদা বৃদ্ধি করতে থাকুক, এটাই আমাদের ধ্যানচাঁদজির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি হবে। দেশের জন্য আমরা সবাই মিলে এরকমই কাজ করতে থাকি, দেশের মান বাড়াতে থাকি, এই কামনার সঙ্গে আমি আজকের কথা সমাপ্ত করছি। আগামী মাসে, পুনরায় আপনাদের সঙ্গে ‘মন কি বাত’ হবে। অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। মন কি বাতের এটা একানব্বইতম পর্ব। আমরা এর আগে কত কথা বলেছি, বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের কথা ভাগ করে নিয়েছি, কিন্তু এবার মন কি বাতের অন্য এক বিশেষত্ব আছে। এর কারণ হল এবারের স্বাধীনতা দিবসে ভারত নিজের স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পূর্ণ করবে। আমরা সবাই এক অভূতপূর্ব আর ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে চলেছি। এ এক বড় সৌভাগ্য ঈশ্বর আমাদের দিয়েছেন। আপনারাও ভাবুন, যদি আমরা দাসত্বের পর্বে জন্ম নিতাম, তাহলে এই দিনের কল্পনা আমাদের জন্য কেমন হত? দাসত্ব থেকে মুক্তির সেই আকুলতা, পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে স্বাধীনতা লাভের জন্য সেই আকুলতা - কতটা ব্যাপ্ত ছিল। সেই দিন, যখন আমরা, লক্ষ লক্ষ দেশবাসীকে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে, সংগ্রাম করতে, আত্মবলিদান দিতে দেখতাম। যখন আমরা, প্রত্যেক দিন সকালে এই স্বপ্ন নিয়ে জেগে উঠতাম, যে আমার হিন্দুস্থান কবে স্বাধীন হবে আর হতেও পারে যে আমাদের জীবনে সেই দিনও আসত যখন বন্দেমাতরম আর ‘ভারত মা কি জয়’ ধ্বনি দিয়ে, আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য নিজেদের জীবন সমর্পণ করতাম, যৌবন বিলিয়ে দিতাম।
বন্ধুরা, ৩১শে জুলাই অর্থাৎ আজকের দিনে, আমরা সকল দেশবাসী উধম সিংয়ের শহীদ হওয়ার ঘটনাকে প্রণাম জানাই। এমন অন্যান্য সংগ্রামীদের আমি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই যাঁরা দেশের জন্য নিজেদের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছেন। বন্ধুরা, এটা দেখে আমার খুব আনন্দ হয় যে, স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব এক জন-আন্দোলনের রূপ নিচ্ছে। সব ক্ষেত্র আর সমাজের সব শ্রেণীর মানুষ এটার সঙ্গে যুক্ত ভিন্ন ভিন্ন কাজে অংশ নিচ্ছে। এমনই এক অনুষ্ঠান এই মাসের শুরুতে মেঘালয়ে হল। মেঘালয়ের বীর যোদ্ধা ইউ টিরোত সিংয়ের পুণ্যতিথিতে মানুষজন তাঁকে শ্রদ্ধা জানালেন। খাসি পাহাড়ের উপর নিয়ন্ত্রণ আর সেখানকার সংস্কৃতির উপর আক্রমণ নামিয়ে আনার লক্ষ্যে ইংরেজদের চেষ্টার তীব্র বিরোধিতা করেন টিরোত সিংজী। এই অনুষ্ঠানে বহু শিল্পী সুন্দর উপস্থাপনা করেন।
এঁরা ইতিহাস কে জীবন্ত করে তুলেছে। এখানে একটা কার্নিভালের আয়োজনও করা হয়, যেখানে, মেঘালয়ের মহান সংস্কৃতিকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে। আজ থেকে কিছু সপ্তাহ আগে, কর্ণাটকে, অমৃতা ভারতী কন্নডার্থী নামের একটি অভিনব অভিযান চালানো হয়েছিল। সেখানে রাজ্যের ৭৫টি জায়গায় স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের সঙ্গে সম্পর্কিত বেশ বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। যার মধ্যে কর্নাটকের মহান প্রজাতান্ত্রিক সেনাবাহিনীকে স্মরণ করার পাশাপাশি স্থানীয় সাহিত্যি উপলব্ধিকেও সামনে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা করা হয়েছিল।
বন্ধুরা, এই জুলাই মাসে একটি অত্যন্ত আনন্দদায়ক প্রচেষ্টা হয়েছে যার নাম স্বাধীনতার রেলগাড়ি আর রেলওয়ে স্টেশন। এই প্রয়াসের লক্ষ্য হলো যে, সাধারণ মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতীয় রেলের ভূমিকা সম্পর্কে জানুন। আমাদের দেশে এমন অনেক রেলস্টেশন আছে যা স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। আপনিও, এইসব রেলস্টেশনের সম্পর্কে জানলে অবাক হবেন। ঝাড়খণ্ডের গোমো জংশনকে, বর্তমানে, সরকারি ভাবে, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস জংশন গোমো হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়েছে। জানেন কেন? আসলে, এই স্টেশন থেকেই কালকা মেলে চেপে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ব্রিটিশদের চোখে ধুলো দিয়ে পালাতে সফল হয়েছিলেন। আপনারা সবাই লখনৌর কাছে কাকোরি রেলস্টেশনের নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন। এই স্টেশনের সঙ্গে রামপ্রসাদ বিসমিল এবং আশফাক উল্লাহ খানের মতো অকুতোভয় সংগ্রামীদের নাম জড়িয়ে আছে। এখানে চলন্ত ট্রেন থেকে ইংরেজদের ধন-সম্পত্তি লুট করে বীর সংগ্রামীরা ইংরেজদের কাছে নিজেদের ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছিলেন। আপনি যখনই তামিলনাড়ুর মানুষদের সঙ্গে কথা বলবেন তখন আপনি থুথুকুড়ি জেলার বাঞ্চি মনিয়াচ্চি জংশন সম্পর্কে জানতে পারবেন। এই স্টেশন তামিল স্বাধীনতা আন্দোলনের সৈনিক বাঞ্চিনাথন জীর নামানুসারে রাখা হয়েছে। এই স্থানেই ২৫ বছরের যুবক বাঞ্চি ব্রিটিশ কালেক্টরকে তার কৃতকর্মের শাস্তি দিয়েছিলেন।
বন্ধুরা, এই তালিকা বেশ দীর্ঘ। সারা দেশে ২৪টি রাজ্যে ৭৫টি রেল স্টেশনের চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ৭৫টি রেল স্টেশনকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হচ্ছে। আপনারাও সময় বের করে আপনার আশেপাশের এমন ঐতিহাসিক স্টেশনে যাওয়া উচিত। আপনি, স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সেইসব ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন যে বিষয়ে আপনি অজ্ঞ ছিলেন। আমি আশেপাশের স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের আবেদন করব, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আবেদন করব যে নিজের স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে এই সব স্টেশনে অবশ্যই যাবেন এবং পুরো ঘটনাক্রম সেই বাচ্চাদের বলবেন, বোঝাবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব উপলক্ষে ১৩ থেকে ১৫ আগস্ট একটি বিশেষ আন্দোলন হিসেবে- 'হর ঘর তিরঙ্গা-হর ঘর তিরঙ্গা' সংগঠিত হচ্ছে। এই আন্দোলনের অংশ হয়ে, ১৩ থেকে ১৫ আগস্ট, আপনারা অবশ্যই আপনার বাড়িতে তেরঙ্গা উত্তোলন করুন, বা আপনার বাড়িতে তেরঙ্গা লাগিয়ে রাখুন। তেরঙা আমাদের সংযুক্ত করে, দেশের জন্য কিছু করতে অনুপ্রাণিত করে। আমার একটি পরামর্শও আছে যে ২রা আগস্ট থেকে ১৫ই আগস্ট পর্যন্ত, আমরা সবাই আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল ছবিতে তিরঙ্গা লাগাতে পারি। যাইহোক, আপনি কি জানেন, আমাদের তেরঙ্গার সঙ্গেও ২রা আগস্টের একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। এই দিনটি পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া জির জন্মবার্ষিকী যিনি আমাদের জাতীয় পতাকার নকশা করেছিলেন। আমি ওঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। আমাদের জাতীয় পতাকার কথা বলতে গেলে মহান বিপ্লবী মাদাম কামাকেও স্মরণ করব। তেরঙ্গা রূপদানে তাঁর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বন্ধুগণ, স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব উপলক্ষে আয়োজিত এই সমস্ত অনুষ্ঠানের সবচেয়ে বড় বার্তা হল আমরা সকল দেশবাসী যেন আমাদের কর্তব্যকে পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করি। তবেই আমরা সেই অগণিত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারব। তাঁদের স্বপ্নের ভারত গড়তে পারবো। তাই আমাদের আগামী ২৫ বছরের এই অমৃত কাল প্রতিটি দেশবাসীর জন্য একটি কর্তব্যকাল। দেশকে স্বাধীন করার জন্য আমাদের বীর যোদ্ধারা আমাদের এই দায়িত্ব দিয়েছেন, আমাদের তা পুরোপুরি পালন করতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, করোনার বিরুদ্ধে লড়াই আমাদের এখনো জারি আছে। গোটা বিশ্ব এখনো এর সঙ্গে মোকাবিলা করছে। Holistic Healthcare-এ মানুষজনের রুচি বাড়ছে যা সকলের জন্য মঙ্গলজনক। আমরা সবাই জানি এক্ষেত্রে ভারতীয় পারম্পরিক পদ্ধতি কতখানি উপযোগি। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আয়ুষ, বিশ্বস্তরে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গোটা বিশ্বে আয়ুর্বেদ ও ভারতীয় ঔষধের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। এই কারণে Ayush Exports রেকর্ড মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু তাই নয়, আরও আনন্দের বিষয় হল, এই ক্ষেত্রে বেশ কয়েকাটি Start upও চোখে পড়ছে। কিছুদিন আগেই একটি Global Ayush Investment ও Innovation Summit অনুষ্ঠিত হয়। আপনারা জেনে অবাক হবেন, এখানে দশ হাজার কোটি টাকার লগ্নির Proposals এসেছে। করোনাকালে আরো একটি ঘটনা ঘটেছে – ঔষধী (oushadhi) নিয়ে গবেষণা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বিষয়ে অনেক Research Study প্রকাশিত হচ্ছে। নিশ্চিত ভাবে এটাকে একটা ভাল সূচনা বলা যায়।
বন্ধুরা, দেশে বিভিন্ন ধরনের ঔষধী ও জড়িবুটি নিয়ে এক প্রশংসনীয় কাজ হয়েছে। সম্প্রতি, জুলাই মাসেই Indian virtual herbarium-এর উদবোধণ করা হয়। আমরা কিভাবে ডিজিটাল মাধ্যমের সাহায্যে আমাদের শিকড়ের সঙ্গে যোগস্থাপন করতে পারি, এ তার উদাহরণ। Indian virtual herbarium, Preserved Plants অথবা Plant Parts-এর ডিজিটাল ছবির এক আকর্ষনীয় সংগ্রহ, যা web-এ বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। এই Virtual Herbarium-এ এখন লক্ষাধিক specimenও তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা উপলদ্ধ। Virtual Herbarium-এ, ভারতের সমৃদ্ধ Botanical Diversity-র ছবি আমরা দেখতে পাই। আমার বিশ্বাস, Indian Virtual Herbarium, ভারতীয় বনস্পতি সংক্রান্ত গবেষণায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, মন কি বাতে আমরা দেশবাসীর এমন কিছু সাফল্যের কাহিনি সামনে নিয়ে আসি যা আমাদের মুখে হাসি ফোটায়। এরকম কোনো গল্প, যা আমাদের মুখে হাসি ফোটায় আবার স্বাদেও মিষ্টি হয়, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। আমাদের কৃষক বন্ধুরা, মধু উৎপাদনে এরকমই অসাধারণ কাজ করছেন। মধুর মিষ্টত্ব তাদের জীবনও বদলাচ্ছে, পাশাপাশি তাদের আয়ও বৃদ্ধি করছে।
হরিয়ানার যমুনানগরে, সুভাষ কম্বোজজী নামে এক মৌমাছি পালক বন্ধু থাকেন। উনি বৈজ্ঞানিক ভাবে মৌমাছি পালনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপরে উনি কেবল ছয়টি বাক্স নিয়ে কাজ শুরু করেন। আজ উনি প্রায় দু’হাজার বাক্সে মৌমাছি পালন করেন। ওনার তৈরি এই মধু বহু রাজ্যে চালান হয়। জম্মুর 'পল্লি' গ্রামে বিনোদ কুমারজীও দেড় হাজারের বেশী কলোনিতে মৌমাছি পালন করছেন। উনি গত বছরে, রানি মৌমাছি পালনের প্রশিক্ষণ নেন। এই কাজে উনি বছরে পনেরো থেকে কুড়ি লক্ষ টাকা আয় করছেন। কর্নাটকের আর একজন কৃষক বন্ধু আছেন-মধুকেশ্বর হেগড়েজী। উনি জানান, উনি ভারত সরকার থেকে পঞ্চাশটি মৌমাছির কলোনির জন্য subsidy নেন। আজ ওনার কাছে আটশোর বেশি কলোনি আছে এবং উনি কয়েক টন মধু বিক্রি করেন। উনি নিজের কাজে innovation নিয়ে এসেছেন। এখন উনি আমলকি মধু, জামের মধু, তুলসি মধুর মত বনস্পতি মধুও তৈরি করছেন। মধুকেশ্বজি, মধু উৎপাদনে আপনার innovation ও সাফল্য আপনাকে একজন স্বার্থকনামা ব্যক্তি করে তুলেছে।
বন্ধুরা, আপনারা জানেন, মধুকে আমাদের পারম্পরিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞানে কতখানি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আয়ুর্বেদ গ্রন্থে তো মধুকে অমৃত বলা হয়েছে। মধু শুধু স্বাদের জন্য নয়, রোগ নিরাময়ের জন্যও জরুরি। মধু উৎপাদন ক্ষেত্রে আজ এত বিপুল সম্ভাবনা যে যারা প্রোফেসনাল বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছেন, তারাও এটিকে তাদের স্বনির্ভর রোজগারের উপায় হিসেবে দেখছেন। এমনই একজন যুবক হলেন উত্তর প্রদেশের গোরখপুরের নিমিত সিংহ। নিমিতজী বি.টেক করেছেন। ওর বাবা ডাক্তার। কিন্তু, পড়াশোনা শেষ করার পর, নিমিতজী চাকরি করার বদলে স্বনির্ভর হয়ে কিছু কিরার সিদ্ধান্ত নেন। উনি মধু উৎপাদনের কাজ আরম্ভ করেন। quality check. এর জন্য উনি লখনউ তে একটা ল্যাবরেটরিও তৈরি করেন। নিমিতজী এখন মধু ও bee wax থেকে ভাল উপার্জন করছেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণও দেন।
আজ দেশ এমন যুবকদের কঠোর পরিশ্রমের জন্যই মধুর বড় উৎপাদক হয়ে উঠেছে। আপনারা জেনে খুশি হবেন আমাদের দেশে মধুর রপ্তানিও বেড়েছে। দেশে National Beekeeping and Honey মিশনের মতো প্রচার চালানো হয়েছে, কৃষকরা কঠোর পরিশ্রম করেছেন এবং আমাদের মধুর মিষ্টত্ব বিশ্বে পৌঁছাতে শুরু করেছে। এখনো এই ক্ষেত্রে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। আমি চাই আমাদের তরুণেরা এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করুন, এতে যোগ দিয়ে লাভান্বিত হোন ও নতুন সম্ভাবনাগুলি পূর্ণ করুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি হিমাচল প্রদেশ থেকে 'মন কি বাত'-এর জন্য একজন শ্রোতা, শ্রীমান আশিস বহলজির কাছ থেকে একটি চিঠি পেয়েছি। তিনি তার চিঠিতে উল্লেখ করেছেন চম্বা’র 'মিঞ্জর মেলার’। আসলে, ভুট্টার ফুল কে ‘মিঞ্জর’ বলা হয়। যখন ভুট্টা গাছে ফুল ফোটে, তখন মিঞ্জর মেলা পালিত হয় এবং এই মেলায় দেশের দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা অংশগ্রহণ করেন। প্রসঙ্গত, এই সময়ে মিঞ্জার মেলা চলছে। আপনি যদি হিমাচলে গিয়ে থাকেন, তাহলে এই মেলা দেখতে চাম্বা যেতে পারেন। চাম্বা এতোটাই সুন্দর যে এখানের লোকসঙ্গীতে বার বার বলা হয় -
"চাম্বে এক দিন ওণা কনে মহীনা রয়না" |
অর্থাৎ যারা একদিনের জন্য চাম্বায় আসেন, তারা এঁর সৌন্দর্য দেখে মাসখানেক এখানেই থেকে যান।
বন্ধুরা, আমাদের দেশে মেলারও অনেক সাংস্কৃতিক গুরুত্ব রয়েছে। মানুষ ও মনকে সংযুক্ত করে মেলা। যখন বর্ষার পর হিমাচলে খরিফ ফসল পেকে ওঠে, তখন সেপ্টেম্বর মাসে সিমলা, মান্ডি, কুল্লু এবং সোলানের সবাই সইরি বা আনন্দভ্রমণে মেতে ওঠেন।
সেপ্টেম্বরে 'জাগরা মেলা'ও আসতে চলেছে। জাগরা মেলায় মহাসু দেবতার আহ্বানে বিসু গান গাওয়া হয়। হিমাচলের সিমলা, কিন্নর, সিরমৌর সহ উত্তরাখণ্ডের অনেক জায়গায় মহাসু দেবতার এই জাগর উৎসব পালিত হয়।
বন্ধুরা, আমাদের দেশের বিভিন্ন রাজ্যে, জনজাতি সমাজের মধ্যেও অনেক ঐতিহ্যবাহী মেলা রয়েছে। তার মধ্যে কিছু মেলা জনজাতিগুলির সংস্কৃতি সম্পর্কিত, আর কিছু মেলা রয়েছে জনজাতিগুলির ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর সঙ্গে সম্পর্কিত; যেমন আপনার যদি কখনো সুযোগ হয় তাহলে তেলেঙ্গানার 'মেডারম'এ চারদিনের 'সমক্কা-সরলম্মা যাত্রা' মেলাতে একবার অবশ্যই যাবেন। এই মেলাকে তেলেঙ্গানার মহাকুম্ভ'ও বলা হয়ে থাকে। 'সরলাম্মা যাত্রা' মেলার এই উৎসব জনজাতিগোষ্ঠীর দু’জন বীরাঙ্গনা 'সমক্কা' এবং সরলম্মা'কে সম্মান জানাতে পালিত হয়। শুধু তেলেঙ্গানা'ই নয়, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র এবং অন্ধ্রপ্রদেশের কোয়া জনজাতির মানুষের ভাবাবেগের দিক থেকেও এই মেলাটি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। অন্ধ্রপ্রদেশের 'মারীদম্মার মেলা'ও জনজাতি-গোষ্ঠী মানুষের বিশ্বাস সঙ্গে যুক্ত একটা বড় মেলা। মারীদম্মার মেলা জ্যৈষ্ঠের অমাবস্যা থেকে আষাঢ়ের অমাবস্যা পর্যন্ত চলে; এবং সেই সময় সেখানকার জনজাতি-গোষ্ঠীর মানুষ, এই উৎসব উপলক্ষে শক্তির উপাসনা করেন। সেখানে পূর্ব-গোদাবরীর পেদ্দাপুরমে, মারীদম্মা মন্দির'ও রয়েছে। একই ভাবে রাজস্থানে, গরাসিয়া উপজাতির লোকেরা বৈশাখের শুক্লা চতুর্দশীতে 'সিয়াওয়া কা মেলা' বা 'মানখাং-রো মেলা' নামে এক উৎসবের আয়োজন করেন।
ছত্তিশগড়ে, বাস্তারের নারায়নপুরে 'মাওলি মেলা' নামে খুবই উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশের 'ভগোরিয়া মেলা'ও অত্যন্ত বিখ্যাত। কথিত আছে, রাজা ভোজের সময় 'ভগোরিয়া মেলা' শুরু হয়েছিল। সেই সময়ের ভীল রাজা কাসুমরা এবং বালুন তাদের নিজ নিজ রাজধানীতে প্রথমবার এই মেলার আয়োজন করেছিলেন।
সেই দিন থেকে আজও, এই মেলা, একই উৎসাহের সঙ্গে আয়োজন করা হয়। একইভাবে, গুজরাটের তর্নেটার এবং মাধোপুরের মতন অনেক মেলা বিখ্যাত। 'মেলা' নিজেই, আমাদের সমাজ, জীবনের শক্তির একটি বড় উৎস। আপনার আশেপাশেও এমন অনেক মেলার আয়োজন হয়তো করা হয়ে থাকে। আধুনিক সময়ে, 'এক ভারত-শ্রেষ্ঠ ভারত'-এর চেতনাকে শক্তিশালী করার জন্য সমাজের এই পুরনো যোগসূত্রগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের যুবসমাজকে অবশ্যই এই চেতনার সঙ্গে যোগ দিতে হবে এবং যখনই আপনি এই ধরনের মেলায় যাবেন, সেখানকার ছবিগুলি সোশ্যাল মিডিয়াতেও শেয়ার করুন। আপনি চাইলে একটি নির্দিষ্ট হ্যাশট্যাগও ব্যবহার করতে পারেন। এর মাধ্যমে অন্যান্য মানুষও সেইসব মেলা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
আপনি সংস্কৃতি মন্ত্রকের ওয়েবসাইটেও ছবিগুলি আপলোড করতে পারেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রক একটি প্রতিযোগিতাও শুরু করতে চলেছে। যাঁরা মেলার সেরা ছবি পাঠাবেন তাঁদেরও পুরস্কৃত করা হবে, তাই দেরি না করে মেলা ঘুরে দেখুন, মুহূর্তগুলির ছবি share করুন, হয়ত আপনিও পুরস্কার পেয়ে যেতে পারেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, 'মন কি বাত'-এর একটি পর্বে আমি বলেছিলাম যে খেলনা রপ্তানিতে ভারতের একটি পাওয়ার হাউসে পরিণত হওয়ার সম্পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে। খেলাধুলা ও খেলায় ভারতের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য নিয়ে আমি বিশেষভাবে আলোচনা করেছি। ভারতের স্থানীয় খেলনা ঐতিহ্য এবং প্রকৃতি উভয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, পরিবেশ বান্ধব। আজ আমি আপনাদের সঙ্গে ভারতীয় খেলনা শিল্পের সাফল্য শেয়ার করতে চাই। আমাদের তরুণ, স্টার্ট আপ এবং উদ্যোক্তাদের কারণে, আমাদের খেলনা শিল্প যা করেছে, আমরা যে সাফল্য অর্জন করেছি তা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।
আজ যখন ভারতীয় খেলনার কথা হয় তখন সব দিকে ভোকাল ফর লোকাল এর প্রতিধ্বনিই শোনা যায়। আপনাদের এটা জেনেও ভাল লাগবে যে ভারতে এখন বিদেশ থেকে আসা খেলনার সংখ্যা ক্রমাগত কম হতে শুরু করেছে। প্রথমে যেখানে ৩০০০ কোটি টাকার বেশি খেলনা আমদানি করা হতো, সেখানে বর্তমানে এই সংখ্যা ৭০% পর্যন্ত কমানো গেছে আর খুশির কথা এই যে, এই সময়ে ভারত ২৬০০ কোটি টাকারও বেশি খেলনা বিদেশে রপ্তানি করেছে, অথচ প্রথম দিকে মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার খেলনা ভারত থেকে বাইরে যেত, আর আপনারা তো জানেনই যে এইসব করোনা কালেই হয়েছে। ভারতের টয় সেক্টর নিজেকে ট্রান্সফর্ম করে দেখিয়ে দিয়েছে। ভারতীয় উৎপাদকরা এখন ভারতীয় পুরাণ, ইতিহাস আর সংস্কৃতি ভিত্তিক খেলনা বানাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় খেলনার যে ক্লাসটার আছে, খেলনা প্রস্তুতকারক যে ছোট ছোট উদ্যমী আছে, তারা এই জন্য অনেক লাভবান হচ্ছেন। এই ছোট ছোট উদ্যমীদের বানানো খেলনা এখন পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। ভারতের খেলনা নির্মাতারা বিশ্বের বিখ্যাত গ্লোবাল টয় ব্র্যান্ডস এর সাথে মিলে কাজ করছেন। আমার এটাও ভারী ভালো লাগছে, যে আমাদের স্টার্টআপ সেক্টরও খেলনার জগতের উপর সম্পূর্ণ মনোযোগ দিচ্ছে। তারা এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন মজাদার উদ্ভাবনও করছেন। ব্যাঙ্গালোরে 'সুমি টয়েজ' নামের একটি স্টার্টআপ ইকো ফ্রেন্ডলি খেলনার উপর ফোকাস করছে। গুজরাটের 'আর্কিডজু ' কম্পানি এ.আর বেসড্ ফ্ল্যাশ কার্ড আর এ.আর বেসড্ স্টোরি বুকস বানাচ্ছে। Pune-র কম্পানি 'ফানভেনশন লার্নিং', খেলনা আর Activity Puzzle এর মাধ্যমে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি আর অংকে বাচ্চাদের আগ্রহ বাড়াতে সচেষ্ট। খেলনার দুনিয়ায় এরকম অসাধারণ কাজে যুক্ত সকল ম্যানুফ্যাকচারার আর স্টার্টআপ দের আমি অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
আসুন, আমরা সবাই মিলে ভারতীয় খেলনাকে বিশ্বজুড়ে আরো বেশি জনপ্রিয় করে তুলি। এরই সঙ্গে আমি অভিভাবকদের কাছেও অনুরোধ করতে চাই, তারা যেন বেশি করে দেশীয় খেলনা, puzzles এবং games কেনেন।
বন্ধুরা, ক্লাসরুম হোক বা খেলার মাঠ, আমাদের যুব সম্প্রদায় আজ প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেশকে গৌরবান্বিত করছেন। এ মাসেই পি. ভি. সিন্ধু সিঙ্গাপুর ওপেনে নিজের প্রথম খেতাব জয় করেছেন। নীরজ চোপড়াও নিজের অসাধারণ প্রদর্শন বজায় রেখে ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে দেশের জন্য রৌপ্য পদক জিতেছেন। আয়ারল্যান্ড প্যারা ব্যাডমিন্টন ইন্টারন্যাশনালেও আমাদের ক্রীড়াবিদরা এগারোটি পদক জিতে দেশের গৌরব বাড়িয়েছেন। রোমে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ক্যাডেট রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপেও ভারতীয় ক্রীড়াবিদরা দুর্দান্ত প্রদর্শন করেছেন। আমাদের অ্যাথলিট সুরজ তো গ্রেকো-রোমান ইভেন্টে সবাইকে চমকে দিয়েছেন। তিনি দীর্ঘ ৩২ বছর পর রেসলিং এর এই ইভেন্টে স্বর্ণপদক জিতেছেন। ক্রীড়াবিদদের জন্য তো এই গোটা মাসটাই অ্যাকশনে ভরপুর ছিল। চেন্নাইতে ৪৪ তম চেস অলিম্পিয়াডের আয়োজন করাও ভারতের জন্য অত্যন্ত সম্মানের বিষয়। ২৮শে জুলাই এই টুর্নামেন্টের শুভ সূচনা হয় এবং তার ওপেনিং সেরিমনিতে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। একই দিনে UK তে কমনওয়েলথ গেমসও শুরু হয়েছে। তারুণ্যের শক্তিতে ভরপুর ভারতীয় দল সেখানে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। আমি সব ক্রীড়াবিদ ও অ্যাথলিটদের সকল দেশবাসীর পক্ষ থেকে শুভকামনা জানাচ্ছি। এটাও আমার কাছে খুব আনন্দের বিষয় যে ভারত Fifa Under 17 Women's World Cup-এরও আয়োজন করতে চলেছে।
এই টুর্নামেন্টটি অক্টোবরের কাছাকাছি হবে, যা খেলার প্রতি দেশের মেয়েদের উৎসাহ বৃদ্ধি করবে। বন্ধুরা, কিছুদিন আগেই সমগ্র দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। আমি ওই সকল ছাত্র-ছাত্রীদের অভিনন্দন জানাই যারা কঠিন পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের দ্বারা সাফল্য অর্জন করেছে। মহামারী চলাকালীন বিগত দু’বছর অত্যন্ত উদ্বেগজনক ছিল। এই পরিস্থিতিতেও যেভাবে আমাদের দেশের তরুণেরা, যে সাহস এবং সংযমের পরিচয় দিয়েছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমি সকলের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ আমরা দেশের ৭৫ তম স্বাধীনতা জয়ন্তীতে দেশের যাত্রার সঙ্গে আমাদের আলাপচারিতা শুরু করেছি। পরের বার যখন আমাদের কথা হবে তখন আমাদের আগামী ২৫ বছরের যাত্রা শুরু হয়ে যাবে। নিজের ঘরে ও আপনজনদের ঘরে যাতে আমাদের প্রিয় ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা ওড়ে সেই জন্য সকলকে একত্রিত হতে হবে। আপনারা এইবার স্বাধীনতা দিবস কি ভাবে উদযাপন করলেন, উল্লেখযোগ্য কি কি করলেন সেগুলো আমাকে নিশ্চয়ই জানাবেন। পরের বার আমরা আমাদের অমৃতকালের নানান রঙ্গিন অধ্যায় বিভিন্ন দিক নিয়ে আবার কথা বলব। ততক্ষণ পর্যন্ত আমাকে অনুমতি দিন অনেক-অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। ‘মন কি বাত’–এর জন্য আমি আপনাদের কাছ থেকে অনেক চিঠি পেয়েছি, সোশ্যাল মিডিয়া আর নমো অ্যাপেও অনেক বার্তা পেয়েছি, এর জন্য আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ আমরা। এই অনুষ্ঠানে আমাদের সবার চেষ্টা থাকে যে একে অন্যের প্রেরণাদায়ক কীর্তির আলোচনা করা, জনআন্দোলন থেকে শুরু করে পরিবর্তনের কাহিনী, গোটা দেশকে জানানো। এই পর্বে আমি আজ আপনাদের সঙ্গে দেশের এমন এক জনআন্দোলনের আলোচনা করতে চাই যার প্রভূত গুরুত্ব রয়েছে দেশের প্রত্যেকটা নাগরিকের জীবনে। কিন্তু তার আগে আমি আজকের প্রজন্মের নবযুবাদের, চব্বিশ-পঁচিশ বছর বয়সী তরুণদের কাছে একটা প্রশ্ন রাখতে চাই, এই প্রশ্ন খুব গুরুত্বপূর্ণ, আর আমার প্রশ্ন নিয়ে অবশ্যই ভাববেন। আপনারা কি জানেন যে আপনাদের মা-বাবা যখন আপনাদের মত বয়সে ছিলেন তখন একবার তাঁদের কাছ থেকে এমনকি জীবিত থাকার অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল? আপনারা হয়ত ভাবছেন যে এটা কীভাবে সম্ভব? এটা তো অসম্ভব। কিন্তু আমার তরুণ বন্ধু, আমাদের দেশে এমন একবার হয়েছিল। এটা অনেক বছর আগে, ১৯৭৫ সালের কথা। জুন মাসের এমন সময়েই এমার্জেন্সী কার্যকর করা হয়েছিল। তাতে দেশের নাগরিকদের কাছ থেকে সব অধিকার হরণ করা হয়েছিল। তার মধ্যে একটা অধিকার, সংবিধানের ধারা একুশ অনুযায়ী সব ভারতীয়র পাওয়া ‘রাইট টু লাইফ অ্যাণ্ড পারসোনাল লিবার্টি’ও ছিল। সেই সময় ভারতের গণতন্ত্রকে পদদলিত করার প্রচেষ্টা হয়েছিল। দেশের নানা আদালত, প্রত্যেকটা সাংবিধানিক সংস্থা, প্রেস, সবকিছুর উপর নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়েছিল। সেন্সরশিপ এমন কঠোর ছিল যে বিনা অনুমতিতে কিছুই ছাপা যেত না। আমার মনে আছে, তখন বিখ্যাত গায়ক কিশোর কুমারজী সরকারের গুণগান করতে অস্বীকার করায় ওঁর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। রেডিওতে ওঁর প্রবেশই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বহুও চেষ্টা, হাজার গ্রেপ্তার, লক্ষ লক্ষ মানুষের উপর অত্যাচারের পরও, ভারতের মানুষদের মন থেকে গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস টলে নি, এতটুকু টলে নি। ভারতের মানুষের মধ্যে, সেই প্রাচীন কাল থেকে, গণতন্ত্রের যে সংস্কার চলে আসছে, আমাদের শিরায়-শিরায় যে গণতান্ত্রিক ভাবনা প্রবাহিত অবশেষে তারই জয় হল। ভারতের মানুষ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই এমার্জেন্সীকে হটিয়ে দিয়ে, আবার, গণতন্ত্রের স্থাপন করলেন। অত্যাচারী জোটের মানসিকতা, অত্যাচারী শাসকের প্রবৃত্তিকে এইভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরাজিত করার এমন উদাহরণ পৃথিবীতে পাওয়া মুশকিল।
জরুরি অবস্থার সময়, আমিও, গণতন্ত্রের এক সৈনিক রূপে, দেশবাসীর সংগ্রামের সাক্ষী হওয়ার, অংশীদার হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছি। আজ, যখন দেশ তার স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপন করছে, অমৃত মহোৎসব পালন করছে, তখন জরুরি অবস্থার সেই ভয়ঙ্কর সময়টিকে আমাদের কখনই ভুলে যাওয়া উচিত নয়। আগামী প্রজন্মেরও ভুলে যাওয়া উচিত না। অমৃত মহোৎসব শুধু শত-শত বছরের দাসত্ব থেকে মুক্তির বিজয় গাথাই নয়, স্বাধীনতার পরের ৭৫ বছরের যাত্রাও জুড়ে রয়েছে। ইতিহাসের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা এগিয়ে যাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের মধ্যে কেউ এমন নেই যে কিনা নিজের জীবনে মহাকাশ নিয়ে কল্পনা করেননি। ছোটবেলায় প্রত্যেককে আকাশের চাঁদ তারা আর তার গল্প আকর্ষণ করতো। তরুণদের জন্য মহাকাশকে ছোঁয়া মানে নিজের স্বপ্নপূরণ করার সমান। আজ আমাদের ভারতবর্ষ যখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহাকাশ ছোঁয়া সাফল্য অর্জন করছে তখন মহাকাশ অর্থাৎ অন্তরীক্ষ কী করেই বা বাদ থাকে! বিগত কিছু দিনে আমাদের দেশে স্পেস সেক্টরের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক বড় বড় কাজ হয়েছে। দেশের এই উপলব্ধির অন্যতম হল In-space নামক এজেন্সির নির্মাণ। এটি এমন একটি এজেন্সি যেটি স্পেস সেক্টরে ভারতের প্রাইভেট সেক্টরের জন্য নতুন সম্ভাবনাকে প্রমোট করছে। এই সূত্রপাত আমাদের দেশের যুবকদের নতুন করে আকর্ষণ করেছে। এর সঙ্গে সম্পর্কিত তরুণদের অনেক খবর আমার কাছে এসেছে। কিছুদিন আগে যখন আমি ইন-স্পেস এর হেডকোয়ার্টার-এর উদ্বোধনে গিয়েছিলাম তখন আমি যুবকদের মধ্যে নতুন start-up নিয়ে আইডিয়া এবং উৎসাহ দেখেছি। আমি তাদের সঙ্গে অনেকক্ষণ আলোচনা করেছি। আপনিও যখন তাঁদের সম্পর্কে জানবেন, তখন অবাক না হয়ে থাকতে পারবেন না, যেমন, স্পেস start-up-এর সংখ্যা এবং ক্রমশ বেড়ে চলার স্পিডটাই ধরুন। আজ থেকে কিছু বছর আগে পর্যন্ত আমাদের দেশে স্পেস সেক্টরে স্টার্টআপ নিয়ে কেউ ভাবত পর্যন্ত না। আজ সেই সংখ্যা শতাধিক। এইসব start-up এমন এমন আইডিয়ার ওপর কাজ করছে যার ব্যাপারে হয় আগে ভাবা হয়নি অথবা প্রাইভেট সেক্টরের জন্য তা অসম্ভব মনে করা হত।
উদাহরণ স্বরুপ চেন্নাই ও হায়দেরাবাদের দুটি start-up আছে - অগ্নিকুল ও স্কাইরুট। এই start up দুটি এমন launch vehicle তৈরী করছে যেগুলি মহাকাশে ছোটো payload নিয়ে যেতে সক্ষম। অনুমান করা হচ্ছে এর ফলে Space Launching-এর খরচ অনেক কমে যাবে। Dhruva Space নামের এরকমই হায়দেরাবাদের একটি start-up, Satellite Deployer ও Satellite এর জন্য high technology solar panel এর উপর কাজ করছে। আমি আর এক স্পেস start up দিগন্তরা আর তানবীর আহমেদের সঙ্গে দেখা করে ছিলাম, যিনি মহাকাশের আবর্জনার ম্যাপিং-এর চেষ্টা করেছেন। আমি ওঁকে একটা Challenge ও দিয়েছি। ওরা এমন প্রযুক্তির ওপর কাজ করুক যার ফলে মহাকাশে আবর্জনার সমস্যার সমাধান হয়। দিগন্তরা আর ধ্রুব স্পেস, দুটো start-upই ৩০শে জুন ইসরোর Launch Vehicle থেকে প্রথম Launch করতে চলেছে। এরকমই, ব্যাঙ্গালোরের Space start-up Astrome-এর প্রতিষ্ঠাতা নেহা এক দারুন idea-র উপর কাজ করছে। এই start-up এমন Flat Antenna বানাচ্ছে যা শুধু ছোটোই হবে না, দামেও কম হবে। গোটা দুনিয়ায় এই technology-র চাহিদা তৈরি হতে পারে।
বন্ধুরা, in space কার্যক্রমে, আমি মেহসানার স্কুল ছাত্রী তন্বী প্যাটেলের সাথে দেখা করি। সে খুবই ছোট্ট একটি Satellite নিয়ে কাজ করছে যা আগামী কয়েক মাসে Space-এ Launch হতে চলেছে। তন্বী গুজরাতি ভাষায় খুব সহজ ভাবে আমাকে তার কাজ সম্পর্কে জানায়। তন্বীর মতনই দেশে স্কুলের প্রায় সাড়ে সাতশো ছাত্র ছাত্রীরা, অমৃত মহোৎসব উপলক্ষে এমন ৭৫টি Satellite-এর উপর কাজ করছে। আরো আনন্দের কথা এই যে এদের মধ্যে বেশীরভাগ ছাত্রছাত্রী ছোটো শহরের।
বন্ধুরা, এরা সেই যুবারাই, কয়েক বছর আগে পর্যন্ত যাদের মনে Space Sector সম্পর্কে ধারণা ছিল যে এগুলো Secret Mission এর মতন কিছু। কিন্তু দেশ Space Reforms নিয়ে এসেছে এবং এখন সেই যুবক যুবতীরা নিজেদের Satellite Launch করছে। যখন আমাদের দেশের যুবরা আকাশ ছুতে তৈরি তখন আমাদের দেশ কি করে পিছিয়ে থাকতে পারে!
আমার প্রিয় দেশবাসী, মন কি বাত-এ এবার আমি এমন একটি বিষয় নিয়ে বলব যা শুনলে আপনারা খুশিও হবেন এবং অনুপ্রেরণাও পাবেন। কয়েকদিন আগে আমাদের অলিম্পিকের স্বর্ণপদক বিজেতা নীরজ চোপড়া আবার খবরের শিরোনামে ছিলেন। অলিম্পিকের পরেও উনি সাফল্যের নিত্যনতুন নজির সৃষ্টি করেছেন।
ফিনল্যান্ডে নীরজ পাভো নুরমি গেমসে শুধু রৌপ্যই জিতেননি, তিনি নিজের জ্যাভলিন থ্রো-এর রেকর্ডও ভেঙেছেন। কূয়োরটানে গেমস-এ নীরজ আরও একবার সোনা জিতে দেশকে গর্বিত করেছেন। এই সোনা তিনি এমন একটি পরিস্থিতিতে জিতেছেন যখন সেখানকার আবহাওয়া বেশ প্রতিকূল ছিল। এই সাহসই আজকের যুবাদের বৈশিষ্ট্য। স্টার্টআপ থেকে শুরু করে ক্রীড়া জগতেও, ভারতের যুবকরা নতুন রেকর্ড গড়েছেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত খেলো ইন্ডিয়া ইয়ুথ গেমসে, আমাদের খেলোয়াড়রা অনেক রেকর্ড গড়েছেন। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে এই গেমসএ মোট ১২টি রেকর্ড ভাঙা হয়েছে। শুধু তাই নয়, মহিলা খেলোয়াড়দের নামেও ১১টি রেকর্ড নথিভুক্ত হয়েছে। মণিপুরের এম মার্টিনা দেবী ভারোত্তোলনে ৮টি রেকর্ড গড়েছেন। একইভাবে সঞ্জনা, সোনাক্ষী এবং ভাবনাও বিভিন্ন রেকর্ড গড়েছেন। এই খেলোয়াড়রা তাদের কঠোর পরিশ্রম দিয়ে বুঝিয়েছেন কীভাবে আগামী দিনে ভারত আন্তর্জাতিক খেলার আঙিনায় কতটা বড়ো হতে চলেছে। আমি এই সমস্ত খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানাই এবং ভবিষ্যতের জন্য তাদের মঙ্গল কামনা করি।
বন্ধুরা, খেলো ইন্ডিয়া ইয়ুথ গেমস-এর আরও একটি বৈশিষ্ট রয়েছে। এমন এমন অনেক প্রতিভা সেখানে উঠে এসেছে যারা খুব সাধারণ পরিবার থেকে এসেছেন। এই খেলোয়াড়রা তাদের জীবনে অনেক সংগ্রাম করেছেন এবং সাফল্যের এই পর্যায়ে পৌঁছেছেন। এই সাফল্যে তাদের পরিবার এবং বাবা-মায়েরও একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। ৭০ কিলোমিটার সাইক্লিং-এ সোনা জয় করা, শ্রীনগরের আদিল আলতাফের বাবা সেলাইয়ের কাজ করেন। কিন্তু তিনি তার ছেলের স্বপ্ন পূরণ করতে সব রকম চেষ্টা করেছেন। আজ আদিল গোটা জম্মু ও কাশ্মীর এবং তার বাবার মুখ উজ্জ্বল করেছেন। ভারোত্তোলনে সোনা জয়ী চেন্নাইয়ের এল. ধনুশের বাবাও একজন সাধারণ কাঠমিস্ত্রি । সাংলির মেয়ে কাজল সরগার। তার বাবা একজন চা বিক্রেতা। কাজল তার বাবার কাজে তাকে সাহায্যও করেন এবং একইসঙ্গে তিনি ভারোত্তোলন অনুশীলনও করতেন। তার পরিবারের কঠোর পরিশ্রমে ফলে কাজল ভারোত্তোলনে অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছে। একইরকম উৎকর্ষ রোহতকের তনুও দেখিয়েছেন। তনুর বাবা রাজবীর সিং রোহতকের একটি স্কুল-এ বাস ড্রাইভার। কুস্তিতে স্বর্ণপদক জিতে তনু, তার পরিবার ও তার বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছেন।
বন্ধুরা, ক্রীড়া জগতে এখন ভারতীয় খেলোয়াড়দের গুরুত্ব তো বাড়ছেই, সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন খেলারও নতুন পরিচিতি তৈরি হচ্ছে। যেমন এবার 'খেলো ইন্ডিয়া ইউথ গেমস'-এ অলিম্পিকে থাকা খেলাগুলি ছাড়াও পাঁচটি ভারতীয় খেলা যোগ হয়েছে। এই পাঁচটি খেলা হল – গতকা, থাংগতা, যোগাসন, কলারিপায়াত্তু আর মল্লখম্ব।
বন্ধুরা, ভারতে এমন একটি খেলার আন্তর্রাষ্ট্রীয় টুর্নামেন্ট হতে চলেছে, বহু যুগ আগে আমাদের দেশেই যে খেলার জন্ম হয়েছিল। আমাদের ভারতেই এই খেলা প্রথম শুরু হয়েছিল। ২৮শে জুলাই থেকে দাবা অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়েছে। এইবার দাবা অলিম্পিয়াডে ১৮০টিরও বেশি দেশ অংশগ্রহণ করছে। খেলা এবং ফিটনেস নিয়ে আমাদের আজকের এই আলোচনা একটা নাম ছাড়া সম্পূর্ণ হবে না। এই নাম হল তেলেঙ্গানার পর্বতারোহী পূর্ণা মালাবধ। পূর্ণা সেভেন সামিট চ্যালেঞ্জ শেষ করে সাফল্যের শিখর ছুঁয়েছে। সেভেন সামিট চ্যালেঞ্জ অর্থাৎ পৃথিবীর সাতটা সবথেকে কঠিন আর উঁচু পাহাড়ে চড়ার স্পর্ধা দেখিয়েছে পূর্ণা। পূর্ণা নিজের সাহসের সঙ্গে নর্থ আমেরিকার সবচেয়ে উঁচু এবং ছোট মাউন্ট দেনালি পর্বত আরোহণ করে দেশকে গর্বিত করেছে। পূর্ণা ভারতের সেই মেয়ে, যে ১৩ বছর বয়সে মাউন্ট এভারেস্টে চড়ার অবিশ্বাস্য কাজ সম্পন্ন করেছিল।
বন্ধুরা, খেলার বিষয় যখন কথা হচ্ছে তাহলে আমি আজ ভারতের সবচেয়ে প্রতিভাশালী ক্রিকেটারদের মধ্যে একজন মিতালি রাজ এর কথা বলতে চাই। উনি এই মাসেই ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। অনেক ক্রীড়াপ্রেমীরাই এতে কষ্ট পেয়েছেন। মিতালী শুধু এক অসাধারণ খেলোয়াড়ই নয়, উনি অনেক খেলোয়াড়ের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। আমি মিতালীকে ওঁর ভবিষ্যতের জন্য অনেক শুভকামনা জানাতে চাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমরা “মন কি বাত”-এ waste to wealth এই বিষয়ে সফল প্রচেষ্টার কথা আলোচনা করি। মিজোরামের রাজধানী আইজলের এমনই এক উদাহরণ দেওয়া যাক। আইজলে একটি সুন্দর নদী আছে। 'চিটে লুই', বহু বছরের অবহেলার জন্যে এই নদী নোংরা ও আবর্জনায় পূর্ন ছিল। গত কয়েক বছর ধরে এই নদী বাঁচানোর চেষ্টা শুরু হয়েছিল। এর জন্য স্থানীয় এজেন্সি, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও স্থানীয় মানুষ সকলে মিলে ‘সেভ চিটে লুই’ অ্যাকশন প্ল্যান শুরু করেছিল। নদীটির এই সাফাই অভিযান waste থেকে wealth ক্রিয়েশনের এক অনন্য সুযোগ গড়ে দেয়।
প্রকৃতপক্ষে, এই নদী ও তার তীরে প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য জমেছিল। যেসব সংস্থাগুলি নদীর বাঁচানোর এই প্রয়াসে শামিল ছিল তারা পলিথিন থেকে রাস্তা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়, অর্থাৎ নদী থেকে যে আবর্জনা বেরিয়েছে তা দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হল মিজোরামের একটি গ্রামে। তৈরি হল রাজ্যের প্রথম প্লাস্টিকের রাস্তা, অর্থাৎ একইসঙ্গে পরিচ্ছন্নতা ও উন্নয়ন।
বন্ধুরা, এমনই এক প্রচেষ্টা পুদুচেরির স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরুণদের মাধ্যমে শুরু হয়েছে। বিপুল সংখ্যক মানুষ সেখানে Beach ও সমুদ্রের সৌন্দর্য দেখতে আসেন। কিন্তু পুদুচেরির সমুদ্র সৈকতেও প্লাস্টিকের দূষণ বাড়ছিল, তাই সেখানকার মানুষ সমুদ্র, Beach ও Ecology বাঁচাতে Recycling for life প্রকল্প শুরু করেছে। আজ পুদুচেরির করাইকালে প্রতিদিন হাজার হাজার কিলো আবর্জনা collect করা হয় ও পরে Segregate করা হয়। এর মধ্যে জৈব বর্জ্য দিয়ে কম্পোস্ট তৈরি করা হয়, বাকি অন্যান্য জিনিসগুলি আলাদা করে পুনর্ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের প্রচেষ্টা শুধুমাত্র অনুপ্রেরণাদায়ী নয়, single use plastic-এর বিরুদ্ধে ভারতের এই প্রচেষ্টাকেও ত্বরান্বিত করে।
বন্ধুরা, এই সময়ে যখন আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি, তখন হিমাচল প্রদেশে একটি অভিনব Cycling Rally চলছে। আমি আপনাদের এই সম্পর্কে জানাতে চাই। পরিচ্ছন্নতার বার্তা নিয়ে সিমলা থেকে মান্ডিতে বেরিয়েছে একদল সাইকেল সওয়ার। এই সাইকেল আরোহীরা প্রায় পৌনে দু’শো কিলোমিটার দূরত্বের পাহাড়ি রাস্তা শুধু সাইকেল চালিয়েই শেষ করবে। এই দলে নাবালক ও বৃদ্ধ উভয়েই রয়েছে। যদি আমাদের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন থাকে, আমাদের পাহাড়-পর্বত, নদী-সাগর পরিচ্ছন্ন থাকে, তাহলে আমাদের স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। আপনি আমাকে এই ধরনের প্রচেষ্টা সম্পর্কে অবশ্যই লিখে জানাবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের দেশে মনসুন ক্রমশ ছড়িয়ে যাচ্ছে। বহু রাজ্যে বৃষ্টি বাড়ছে। এই সময়টা জল ও জল সংরক্ষণের দিকে নজর দেওয়ার ও বিশেষ প্রচেষ্টা করার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে তো বহু শতাব্দী ধরেই সমাজ মিলিত রুপে এই দায়িত্ব পালন করে এসেছে। আপনাদের হয়ত মনে আছে, মন কি বাতে একবার আমরা স্টেপ ওয়েল অর্থাৎ ধাপ-ওলা কুয়ার অথবা বাওড়ির ঐতিহাসিক তাৎপর্যের কথা আলোচনা করেছিলাম। বাওড়ি সেই সব কুয়াকে বলে যেখানে পৌঁছানোর জন্য সিঁড়ি ব্যবহার করতে হয়।
রাজস্থানের উদয়পুরে এরকমই বহু বছরের পুরনো একটি বাওড়ি আছে, যার নাম সুলতান কি বাওড়ি। এটি রাও সুলতান সিং নির্মাণ করেন। কিন্তু বহু বছরের অবহেলার কারণে জায়গাটি আসতে-আসতে পরিত্যক্ত হতে শুরু করে এবং আবর্জনার স্তুপে পরিনত হয়।
একদিন একদল যুবা ঘুরতে-ঘুরতে ওই জায়গায় পৌঁছন এবং কুয়াটির ওরকম অবস্থা দেখে খুব কষ্ট পান। ওই যুবার দল সেদিনই সুলতান কি বাওড়ির রুপ ও ভাগ্য দুটিই বদল করার প্রতিজ্ঞা নেন। তাঁরা তাঁদের এই মিশনের নাম দেন – ‘সুলতান থেকে সুর-তান’। আপনারা হয়ত ভাবছেন, এই সুর-তান টা কী? আসলে এই যুবারা শুধু বাওড়িটিকে পুনরুজ্জীবিত করেননি, একে সঙ্গীতের সুর ও তানের সঙ্গেও যুক্ত করে দিয়েছেন। সুলতান কি বাওড়ি পরিষ্কার করার পর, একে সাজানোর পর, ওখানে সঙ্গীতের অনুষ্ঠান হয়। এই সংস্কারের কাজটি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে বিদেশ থেকেও বহু মানুষ এটা দেখতে আসেন।
এই সফল প্রচেষ্টার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল যে এই কর্মযজ্ঞ শুরু করেছেন যে যুবকেরা তারা চার্টার্ড একাউন্টেন্ট। কাকতালীয়ভাবে, কিছুদিন পরেই পয়লা জুলাই Chartered Accountants Day। সেই উপলক্ষে দেশের সকল চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের আমার অগ্রিম শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
জলাশয়গুলোকে নিয়ে আমরা সঙ্গীত ও অন্যান্য সামাজিক কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে বিশেষ সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারি। জল সংরক্ষণ তো বাস্তবে জীবন রক্ষা। আপনারা নিশ্চয়ই দেখে থাকবেন আজকাল কত নদী-মহোৎসব উদযাপিত হচ্ছে। আপনাদের শহরেও এ ধরনের যে জলাশয় রয়েছে সেখানেও এরকম কিছু না কিছু আয়োজন অবশ্যই করবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের উপনিষদে একটা বীজ-মন্ত্র রয়েছে, সেটা হল- চরৈবেতি-চরৈবেতি-চরৈবেতি। আপনারা এই মন্ত্রটি নিশ্চয়ই শুনেছেন। এর অর্থ হলো এগিয়ে চলো, অগ্রসর হও! এই মন্ত্রটি আমাদের দেশে এত জনপ্রিয় তার কারণ সর্বদা এগিয়ে চলা এবং গতিশীল থাকা আমাদের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য। একটা দেশ হিসেবে হাজার বছরের উন্নয়নের মধ্যে দিয়ে আমারা এখানে এসে পৌঁছেছি। একই সমাজের মানুষ হিসেবে, আমরা সর্বদা নতুন চিন্তা ভাবনা, নতুন নতুন পরিবর্তনগুলোকে মেনে নিয়ে অগ্রসর হয়েছি। এর জন্য আমাদের সাংস্কৃতিক প্রবাহমানতা, এবং এই পথ চলার একটা বড় ভূমিকা আছে। সেজন্যই তো আমাদের দেশের মুনি-ঋষিরা তীর্থযাত্রার মত ধর্মীয়-দায়িত্ব আমাদের দিয়ে গেছেন। বিভিন্ন তীর্থযাত্রায় আমরা তো গিয়েই থাকি। আপনারা দেখে থাকবেন, এবছর চারধাম যাত্রায় কী বিপুল সংখ্যক ভক্তের সমাগম হয়েছিল। আমাদের দেশে নানান সময়ে বিভিন্ন দেবযাত্রা বা পরিক্রমা আয়োজিত হয়ে থাকে। দেবযাত্রা অর্থাৎ যেখানে শুধু ভক্তরাই নন, স্বয়ং ভগবানও যাত্রায় অংশ নেন। কয়েকদিন পরেই পয়লা জুলাই থেকে জগন্নাথ দেবের প্রসিদ্ধ রথযাত্রা শুরু হতে চলেছে।
উড়িষ্যার পুরী যাত্রা সম্বন্ধে তো সমস্ত দেশবাসী অবগত। মানুষের প্রচেষ্টা থাকে যে এই সুযোগে যেনো তাদের পুরী যাবার সৌভাগ্য প্রাপ্তি হয়। অন্যান্য রাজ্যেও জগন্নাথ যাত্রা খুব আড়ম্বরের সঙ্গে পালন করা হয়। ভগবান জগন্নাথ যাত্রা আষাঢ় মাসের দ্বিতীয়াতে শুরু হয়। আমাদের গ্রন্থে 'আষাঢ়স্য দ্বিতীয় দিবসে..রথ যাত্রা' এইরকম সংস্কৃত শ্লোক এর বর্ণনা পাওয়া যায়। গুজরাটের আমদাবাদে প্রতিবছর আষাঢ়ের দ্বিতীয়া থেকে রথযাত্রা শুরু হয়। আমি যখন গুজরাতে ছিলাম তখন আমারও এই যাত্রায় সেবা করার সৌভাগ্যপ্রাপ্তি হত। আষাঢ়ের দ্বিতীয় দিন যাকে আষাঢ়ে বিজও বলা হয় হয়ে থাকে, এই দিন থেকেই কচ্ছ-এর নববর্ষও শুরু হয়। আমি আমার সমস্ত কাচ্ছি ভাই-বোনেদের নববর্ষের শুভ কামনা জানাই। আমার জন্য এই দিনটা আরও একটা বিশেষ কারণে গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে আছে আষাঢ় দ্বিতীয়ার একদিন আগে অর্থাৎ প্রথম আষাঢ়ে আমরা গুজরাতে একটি সংস্কৃত উৎসবের সূচনা করেছিলাম যেখানে সংস্কৃত ভাষায় গীত-সংগীত এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রম হত। এই আয়োজনের নাম ছিল 'আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে'। এই উৎসবের এমন নাম দেবার পেছনেও একটি কারণ আছে। আসলে সংস্কৃতের মহান কবি কালিদাস এই আষাঢ় মাসেই বর্ষার আগমনে মেঘদূতম্ লিখেছিলেন। মেঘদূতমে একটি শ্লোক আছে, "আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে মেঘম আশ্লীষ্ট সানুম" অর্থাৎ আষাঢ়ের প্রথম দিনে পর্বত চূড়ায় লেপ্টে থাকা মেঘ, এই শ্লোকই ছিল এই আয়োজনের আধার।
বন্ধুরা, আহমেদাবাদ হোক কিংবা পুরী, ভগবান জগন্নাথ তাঁর এই যাত্রার মাধ্যমে আমাদের বেশ কিছু গভীর মানবিক বার্তা দিয়েছেন। ভগবান জগন্নাথ সমগ্র জগতের স্বামী তো বটেই, কিন্তু তাঁর যাত্রায় দরিদ্ররা, বঞ্চিতরা বিশেষভাবে অংশগ্রহণ করেন। ভগবানও সমাজের প্রতিটি শ্রেণি ও ব্যক্তির সঙ্গে চলেন। অনুরূপভাবে আমাদের দেশে যতগুলি যাত্রা হয়, কোনোটিতেই ধনী-দরিদ্র, উচ্চ-নীচ ইত্যাদি কোন বিভেদ নজরে আসে না। সমস্ত বিভেদের ঊর্ধ্বে উঠে সেই যাত্রাটিই স্বয়ং সর্বোচ্চ স্থানে আসীন হয়। যেমন মহারাষ্ট্রের পনঢরপুরের (pandharpur) যাত্রা সম্পর্কে আপনারা নিশ্চয়ই শুনেছেন। পনঢরপুরের যাত্রায় কেউ বড় নয়, কেউ ছোট নয়। প্রত্যেকেই বারকারি (Varkari), ভগবান বিঠঠলের সেবক। চার দিন পরেই ৩০শে জুন থেকে অমরনাথ যাত্রা শুরু হতে চলেছে। সারা দেশ থেকে ভক্তরা অমরনাথ যাত্রার জন্য জম্মু-কাশ্মীরে পৌঁছচ্ছেন। জম্মু-কাশ্মীরের স্থানীয় মানুষরাও ততটাই শ্রদ্ধার সঙ্গে এই যাত্রার দায়িত্বভার পালন করেন, তীর্থযাত্রীদের সহায়তা করেন।
বন্ধুরা, দক্ষিণে অনুরূপ মাহাত্ম্য শবরীমালা যাত্রারও রয়েছে। শবরীমালার পাহাড়ে ভগবান আয়াপ্পার দর্শনের জন্য এই যাত্রা তখন থেকে চলে আসছে, যখন পথ পুরোপুরি জঙ্গলে ঘেরা ছিল। আজও মানুষ যখন এ ধরনের যাত্রায় যান, তখন ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে তাদের বিশ্রাম বা থাকার ব্যবস্থা পর্যন্ত দরিদ্র মানুষদের জন্য কাজের কত সুযোগ তৈরি হয়! অর্থাৎ এই যাত্রাগুলি প্রত্যক্ষভাবে আমাদের কাছে দরিদ্রদের সেবা করার সুযোগ এনে দেয় এবং দরিদ্র মানুষদের জন্যও ততটাই মঙ্গলকারী হয়। তাই তো এখন দেশে আধ্যাত্মিক যাত্রায় ভক্তদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য কত রকম প্রচেষ্টা করা হচ্ছে! আপনারাও যদি এরকম কোন যাত্রায় যান তাহলে আপনাদের আধ্যাত্মিক দর্শনের পাশাপাশি "এক ভারত-শ্রেষ্ঠ ভারত" এই দর্শনও হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, প্রতিবারের মতো এবারও ‘মন কি বাত’ এর মাধ্যমে আপনাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা খুব সুখকর হল। এতক্ষণ আমরা দেশবাসীর সাফল্য এবং উপলব্ধি নিয়ে আলোচনা করলাম। এসবের মধ্যেও আমাদের করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সাবধানতা মাথায় রাখতে হবে। যদিও স্বস্তির কথা এই যে দেশের কাছে এই মুহূর্তে যথেষ্ট পরিমাণে ভ্যাকসিনের সুরক্ষা কবচ মজুত আছে। আমরা ২০০ কোটি ভ্যাকসিন ডোজ-এর দোরগোড়ায় পৌছে গেছি। দেশে খুব দ্রুত গতিতে Precaution Dose লাগানো হচ্ছে। যদি আপনার Second Dose-এর পর Precaution dose-এর সময় হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে আপনি এই তৃতীয় Dose-টি অবশ্যই নিন। আপনার পরিবারের সবাইকে, বিশেষ করে বয়স্কদের এই Precaution Dose অবশ্যই লাগান। আমাদের হাত ধোয়া এবং মাস্ক এর ব্যবহারের মতো সতর্কতা মেনে চলা উচিত। আমাদের বর্ষার সময় আশেপাশে ময়লা থেকে সংক্রমিত যাবতীয় রোগ সম্বন্ধে সতর্ক থাকা উচিত। আপনারা সবাই সজাগ থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং এরকমই উদ্দীপনার সঙ্গে এগিয়ে চলুন। সামনের মাসে আবার আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত অসংখ্য ধন্যবাদ, নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আজ আবার ‘মন কি বাতের’ মাধ্যমে আপনাদের অর্থাৎ পরিবারের কোটি-কোটি সদস্যের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছি। ‘মন কি বাতে’ আপনারা সবাই স্বাগত। কিছু দিন আগে দেশ এমন এক সাফল্য অর্জন করেছে যা আমাদের সবাইকে প্রেরণা দেয়। ভারতের সামর্থ্যের প্রতি এক নতুন বিশ্বাস জাগায়। আপনারা ক্রিকেটের ময়দানে টীম ইণ্ডিয়ার কোনও ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি করা শুনে খুশি হন নিশ্চয়ই। কিন্তু, ভারত আরও এক ময়দানে সেঞ্চুরি করেছে এবং সেই ক্ষেত্রটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসের পাঁচ তারিখে দেশে ইউনিকর্নের সংখ্যা একশোতে পৌঁছে গিয়েছে আর আপনারা তো জানেনই একটি ইউনিকর্ন মানে হল কম করে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার স্টার্ট-আপ। এইসব ইউনিকর্নের মোট নির্ধারিত মূল্য তিনশো তিরিশ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ পঁচিশ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। নিশ্চিতভাবে এই বিষয়টা একজন ভারতীয়ের কাছে গর্ব করার মত ব্যাপার। আপনারা এটা জেনেও আশ্চর্য হবেন যে আমাদের মোট ইউনিকর্নের মধ্যে চুয়াল্লিশটি গত বছরে তৈরি হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই বছরের তিন-চার মাসের মধ্যেই আরও চোদ্দটা ইউনিকর্ন তৈরি হয়ে গেছে। এর মানে হল বিশ্বজুড়ে মহামারীর এই আবহেও আমাদের স্টার্ট-আপগুলো সম্পদ আর ভ্যালু তৈরি করে গিয়েছে। ভারতের ইউনিকর্নগুলোর বার্ষিক বৃদ্ধির গড় হার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন এবং অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় বেশি। যারা মূল্যায়ন করেন, তাঁরা তো এও বলছেন যে আগামী বছরগুলোতে এই সংখ্যায় দ্রুত বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হবে। একটা ভালো কথা এটাও যে আমাদের ইউনিকর্নগুলো বৈচিত্র্যমুখী। এগুলো ই-কমার্স, ফিন-টেক, এডু-টেক, বায়োটেকের মত অনেক ক্ষেত্রে কাজ করছে। আরও একটা বিষয় যেটা আমি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি সেটা হল, স্টার্ট-আপের জগৎ নতুন ভারতের মনোভাবকে তুলে ধরছে।
বর্তমানে ভারতের স্টার্টআপ ব্যবস্থাপনা শুধু বড় শহরগুলোর মধ্যে সীমিত নেই, ছোট ছোট শহরাঞ্চল থেকেও শিল্পোদ্যোগীরা এগিয়ে আসছেন। এর থেকে বোঝা যায়, যার কাছে উদ্ভাবনী শক্তি আছে, তিনিই সম্পদ তৈরি করতে পারেন।
বন্ধুরা, দেশের এই সাফল্যের পিছনে, দেশের যুবশক্তি, দেশের প্রতিভা, আর সরকার, সবাই মিলেই এই প্রচেষ্টায় যুক্ত আছেন, সবার অংশীদারিত্ব আছে। কিন্তু এখানে আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আছে, আর তাহলো স্টার্টআপের জগতে সঠিক পথপ্রদর্শন। একজন ভালো মেন্টর স্টার্টআপকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। তারা নতুন শিল্পোদ্যোগীদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সব দিক দিয়ে সাহায্য করবেন। আমি এই ব্যাপারে গর্বিত যে ভারতে এরকম অনেক মেন্টর আছেন যাঁরা স্টার্টআপকে আগে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিজেদের সমর্পণ করেছেন।
শ্রীধর বেম্বু জি সম্প্রতি পদ্ম সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। উনি নিজে একজন সফল শিল্পোদ্যোগী, কিন্তু এখন উনি অন্যান্য শিল্পোদ্যোগীদেরও গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন। শ্রীধর জি নিজের কাজ গ্রাম্য এলাকা থেকে শুরু করেছিলেন। উনি গ্রামীণ যুবকদের গ্রামে থেকেই কিছু করার জন্য উৎসাহিত করছেন। আমাদের এখানে মদন পডাকির মত মানুষও আছেন যিনি গ্রামাঞ্চলে শিল্পোদ্যোগীদের উৎসাহিত করার জন্য ২০১৪ সালে ওয়ান-ব্রিজ নামের একটি প্লাটফর্ম বানান। আজ ওয়ান-ব্রিজ দক্ষিণ আর পূর্ব ভারতের ৭৫টিরও বেশী জেলায় সক্রিয়। এর সঙ্গে যুক্ত ৯,০০০-এরও বেশী গ্রামাঞ্চলের শিল্পোদ্যোগীরা গ্রামীণ উপভোক্তাদের নিজেদের পরিষেবা প্রদান করছেন। মীরা সেনয়জিও এরকমই এক উদাহরণ।
তিনি গ্রামাঞ্চলে, আদিবাসী এবং যুবসম্প্রদায়ের জন্য বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতার প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কাজ করছেন। আমি এখানে মাত্র কয়েকজনেরই নাম উল্লেখ করলাম। কিন্তু আজ আমাদের এমন অনেক মেন্টর আছেন। আমাদের জন্য খুবই আনন্দের বিষয় যে স্টার্ট আপের জন্য আমাদের দেশে একটা গোটা সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি হচ্ছে। আমার বিশ্বাস আগামী সময়ে ভারতের স্টার্ট আপ জগত প্রগতির ডানা মেলবে।
বন্ধুরা, কয়েকদিন আগে আমি এমন একটি আকর্ষণীয় আর উৎসাহব্যাঞ্জক জিনিস পাই যা আমাদের দেশবাসীর সৃজনশীলতা ও শিল্পী সত্ত্বার রঙে রঙিন। এটি একটি উপহার যা তামিলনাড়ুর তাঞ্জাভুর জেলা থেকে একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী আমাকে পাঠায়। এতে ভারতীয়ত্বের সুবাস, মাতৃ শক্তির আশির্বাদ তথা আমার প্রতি তাদের স্নেহ দীপ্যমান। এটি জিআই ট্যাগপ্রাপ্ত একটি বিশেষ তাঞ্জাভুর পুতুল। আমি তাঞ্জাভুর স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই, তাদের স্থানীয় সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ এই উপহার আমায় পাঠানোর জন্য। বন্ধুরা, এই তাঞ্জাভুর পুতুল অতি সুন্দর তো বটেই, পাশাপাশি এটি নিপুনভাবে নারী ক্ষমতায়নের গাথা লিখছে। তাঞ্জাভুরে মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর বহু দোকান, কিয়স্ক খোলা হচ্ছে যার ফলে বহু দরিদ্র পরিবারের জীবন বদলে যাচ্ছে। এই দোকান ও কিয়স্কের সাহায্যে মহিলারা তাদের পণ্য গ্রাহকদের সরাসরি বেচতে পারছেন। এই উদ্যোগকে থারগাইগাল কায়ভিনাই পোরুত্তকল বিরপ্পনই আঁগাড়ী নাম দেওয়া হয়েছে। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার, এই উদ্যোগের সঙ্গে ২২টা স্বনির্ভর গোষ্ঠী যুক্ত আছে। আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন, মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীদের এই দোকানগুলি তাঞ্জাভুরে খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত। এর তত্ত্বাবধানের সম্পূর্ণ দ্বায়িত্বও মহিলাদের। এই মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী জিআই ট্যাগ প্রাপ্ত থাঞ্জাভুরের পুতুল ও ব্রোঞ্জের প্রদীপ ছাড়াও চাটাই, খেলনা ও গয়না প্রস্তুত করেন। এই দোকানের জন্য জি আই ট্যাগ এর পাশাপাশি হস্তশিল্পের সামগ্রীর বিক্রিও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই উদ্যোগে কারিগররা উৎসাহ পেয়েছেন, উপরন্তু মহিলাদের আয় বাড়ায় নারী ক্ষমতায়নের পক্ষে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হয়ে উঠেছে। আমার ‘মন কি বাত’-এর শ্রোতাদের কাছেও একটি অনুরোধ আছে। আপনারা একটু খোঁজ নিন আপনাদের এলাকায় কোন মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী কাজ করছে। তাদের পণ্যবস্তু সম্পর্কে খোঁজ খবর হন, ও সেগুলি ব্যবহার করে দেখুন। এর মাধ্যমে আপনি স্বনির্ভর গোষ্ঠীদের আয় বাড়াতে তো সাহায্য করবেনই, উপরন্তু আত্মনির্ভর ভারত অভিযানকেও সাহায্য করবেন।
বন্ধুরা, আমাদের দেশে অনেক ভাষা, লিপি ও উপভাষার সমৃদ্ধ ভান্ডার রয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন পোশাক, খাদ্য ও সংস্কৃতি, এটাই আমাদের পরিচয়। এই ডাইভারসিটি, এই বৈচিত্র্য, একটি রাষ্ট্রের মতো, আমাদের শক্তিশালী করে এবং ঐক্যবদ্ধ রাখে। এর সঙ্গে সম্পর্কিত একটি বিশেষ অনুপ্রেরণামূলক উদাহরণ হল কল্পনা নামের এক কন্যা, যার বিষয়ে আমি আপনাদের জানাতে চাই। তার নাম কল্পনা, কিন্তু তার প্রচেষ্টা 'এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত'-এর প্রকৃত চেতনায় পরিপূর্ণ। আসলে, কল্পনা সম্প্রতি কর্ণাটকে তার দশম শ্রেণীর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে, কিন্তু; তার সাফল্যের বিশেষ বৈশিষ্ট্য এই যে, কল্পনা কিছুদিন আগে পর্যন্ত কন্নড় ভাষা জানত না। ও তিন মাসে শুধু কন্নড় ভাষাই শেখেনি, ৯২ নম্বরও পেয়েছে। আপনি নিশ্চই অবাক হচ্ছেন, কিন্তু এটাই সত্যি। তার সম্পর্কে আরও অনেক কিছু রয়েছে যা আপনাকে অবাক করবে এবং অনুপ্রাণিতও করবে। কল্পনা প্রকৃতপক্ষে উত্তরাখণ্ডের যোশী মঠের অধিবাসী। সে আগে যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়েছিল এবং তৃতীয় শ্রেণীতে পড়াকালীন সে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিল, কিন্তু কথায় বলে না যে, 'ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়'। পরবর্তীকালে কল্পনা, মাইসোর এর অধিবাসী প্রফেসর তারামূর্তির সান্নিধ্যে আসেন, যিনি শুধুমাত্র ওকে যে উৎসাহিত করেছিলেন তাই নয়, সব রকম ভাবে সাহায্যও করেছিলেন। আজ, সে নিজের পরিশ্রমের মাধ্যমে আমাদের সবার কাছে একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে। আমি কল্পনাকে ওর উদ্যমের জন্য অভিবাদন জানাচ্ছি। এইভাবেই আমাদের দেশে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা দেশের ভাষাগত বৈচিত্র্যকে আরো মজবুত করার কাজ করে চলেছেন। এমনই একজন বন্ধু হলেন পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ার, শ্রীপতি টুডু মহাশয়। টুডু মহাশয় পুরুলিয়ার সিধু-কানু-বিরসা ইউনিভার্সিটিতে সাঁওতালি ভাষার অধ্যাপক। উনি সাঁওতালি সমাজের জন্য ওদের নিজস্ব অলচিকি লিপিতে দেশের সংবিধানের একটি অনুলিপি তৈরি করেছেন। শ্রীপতি টুডু মহাশয় বলেন যে, আমাদের সংবিধান আমাদের দেশের প্রত্যেক নাগরিককে তার অধিকার এবং কর্তব্যবোধের সঙ্গে পরিচয় করায়। এই কারণে প্রত্যেক নাগরিকের এর সাথে পরিচিত হওয়া জরুরী। তাই তিনি সাঁওতালি সমাজের জন্য তাঁদের লিপিতে সংবিধানের একটি অনুলিপি প্রস্তুত করে উপহার দেন। আমি শ্রীপতি মহাশয়ের এই চিন্তাভাবনা এবং তাঁর প্রচেষ্টার প্রশংসা করি। এটি 'এক ভারত-শ্রেষ্ঠ ভারত'-এর চেতনার প্রাণবন্ত উদাহরণ। এই ভাবনাচিন্তাকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেইরকম বিভিন্ন প্রচেষ্টার বিষয়ে আপনি 'এক ভারত-শ্রেষ্ঠ ভারত'-এর ওয়েবসাইটে জানতে পারবেন । এখানে আপনি খাদ্য, শিল্প, সংস্কৃতি, পর্যটন সহ এই ধরনের অনেক কার্যকলাপ সম্পর্কে জানতে পারবেন। আপনিও এই কর্মকাণ্ডে অংশও নিতে পারেন। এর ফলে আপনি আপনার দেশ সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পারবেন এবং আপনি দেশের বৈচিত্র্যও অনুভব করতে পারবেন ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, বর্তমানে আমাদের দেশে উত্তরাখণ্ডের চার ধামের পবিত্র তীর্থযাত্রা চলছে। চার ধামে এবং বিশেষ করে কেদারনাথে, প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্ত পৌঁছাচ্ছেন। লোকেরা তাদের চারধাম যাত্রার আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন, কিন্তু আমি এটাও দেখেছি যে ভক্তরা কেদারনাথে কিছু তীর্থযাত্রীর আবর্জনা ছড়ানোর কারণে বেশ হতাশ। সোশ্যাল মিডিয়াতেও অনেকে তাদের মতামত দিয়েছেন। আমরা পবিত্র তীর্থস্থানে যাবো আর সেখানে ময়লার স্তূপ থাকবে, এটা ভাল বিষয় নয়। তবে বন্ধুরা, এসব অভিযোগের মধ্যেও অনেক ভালো ছবিও দেখা যাচ্ছে। যেখানে শ্রদ্ধা আছে, সেখানে সৃষ্টি ও ইতিবাচক উদ্যোগও আসে। এমনও অনেক ভক্ত আছেন যারা বাবা কেদারের ধামে দর্শন এবং পুজো করার পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অনুশীলনও করছেন, কেউ তাদের থাকার জায়গার আশেপাশে পরিষ্কার করছেন এবং কেউ ভ্রমণ পথে পড়ে থাকা সমস্ত আবর্জনা পরিষ্কার করছেন। স্বচ্ছ ভারত অভিযান দল-এর সঙ্গে অনেক সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠণও সেখানে কাজ করছে। বন্ধুরা, আমাদের যেমন তীর্থযাত্রার গুরুত্ব আছে, তেমনি তীর্থসেবারও গুরুত্বও রয়েছে। আমি তো বলব তীর্থসেবা ছাড়া তীর্থযাত্রা অসম্পূর্ণ। দেবভূমি উত্তরাখণ্ডের অনেকে আছেন যারা পরিচ্ছন্নতা এবং সেবার অনুশীলনে নিযুক্ত। আপনি রুদ্রপ্রয়াগের বাসিন্দা মনোজ বেঞ্জওয়ালজির কাছ থেকেও অনেক অনুপ্রেরণা পাবেন। মনোজজি বিগত ২৫ বছর ধরে পরিবেশের যত্ন নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন, তিনি স্বচ্ছতার প্রচার চালানোর পাশাপাশি পবিত্র স্থানগুলিকে প্লাস্টিক মুক্ত করতেও নিযুক্ত রয়েছেন। অন্যদিকে, গুপ্তকাশীর বাসিন্দা সুরেন্দ্র বাগওয়ানিজিও স্বচ্ছতাকে নিজের জীবনের মন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি গুপ্তকাশীতে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতার কর্মসূচি চালান এবং আমি জানতে পেরেছি যে তিনি এই অভিযানের নাম দিয়েছেন ‘মন কি বাত’। একইভাবে দেওয়ার গ্রামের চম্পাদেবী বিগত ৩ বছরধরে, তার গ্রামের মহিলাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অর্থাৎ ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট শেখাচ্ছেন। চম্পাজি শত শত গাছও রোপণ করেছেন এবং তার কঠোর পরিশ্রমে তিনি একটি সবুজ বন তৈরি করেছেন। বন্ধুরা, এই সব মানুষের প্রয়াস-এর কারণেই আমরা দেবভূমি আর তীর্থভূমির দৈবিক অনুভূতি উপলব্ধি করে থাকি। যেটা অনুভব করার জন্যই আমরা ওখানে যাই, এই দেবত্ব এবং আধ্যাত্মিককতা বজায় রাখার আমাদেরও দায়িত্ব।
এখন আমাদের দেশে চারধাম যাত্রার পাশাপাশি আগামী দিনে অমরনাথ যাত্রা, পন্ধরপুর যাত্রা এবং জগন্নাথ যাত্রার মতো অনেক যাত্রা হবে। শ্রাবন মাসে, প্রতিটি গ্রামেই বোধহয় কোনো না কোনো মেলা হয়। বন্ধুরা, আমরা যেখানেই যাই না কেন, এই তীর্থস্থানগুলোর গৌরব বজায় রাখতে হবে।
পরিচ্ছন্নতা, একটি পবিত্র পরিবেশ বজায় রাখা, এটা আমাদের কখনই ভুলে যাওয়া উচিত নয় এবং তাই আমাদের পরিচ্ছন্নতার সংকল্প নেয়া উচিত। কিছুদিন পর ৫ই জুন, বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে পালিত হবে। পরিবেশ নিয়ে আমাদের চারপাশে ইতিবাচক প্রচার চালানো উচিত এবং এটি একটি ধারাবাহিক কাজ। আপনারা এবার সবাইকে সঙ্গে নিয়ে স্বচ্ছতা ও বৃক্ষরোপনের কিছু উদ্যোগে অবশ্যই সামিল হবেন। আপনারা নিজেরাও গাছ লাগান এবং অন্যকেও অনুপ্রাণিত করুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আগামী মাসে ২১শে জুন, আমরা অষ্টম 'আন্তর্জাতিক যোগ দিবস' পালন করবো। এই বছর যোগ দিবসের থিম হল – যোগা ফর হিউম্যানিটি, আমি আপনাদের সবাইকে যোগ দিবস খুবই উৎসাহের সঙ্গে পালন করবার জন্য অনুরোধ করছি। হ্যাঁ! করোনা থেকে বাঁচতে যথোপযুক্ত সাবধানতাও অবলম্বন করুন, তবে, এখন তো সারা বিশ্বে করোনার সামগ্রিক পরিস্থিতি আগের থাকে কিছুটা ভালো, যথেষ্ট টিকাকরণের কারণে এখন লোকজন আগের থেকে অনেক বেশি বাইরে বেরোচ্ছেন, এইজন্য বিশ্বব্যাপী "যোগ দিবস" উপলক্ষে অনেক প্রস্তুতি চোখে পড়ছে। করোনা অতিমারি আমাদের সবাইকে অনুভব করিয়েছে যে, আমাদের জীবনে, সুস্বাস্থ্যের কতটা প্রয়োজনীয়তা আছে। আর যোগ, এক্ষেত্রে কত বড় মাধ্যম! মানুষ এটা বুঝতে পেরেছে - যে যোগ থেকে শারীরিক, আধ্যাত্মিক ও বৌদ্ধিক ౼ তিনটি ক্ষেত্রেই বিকাশ ঘটে । বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় বাণিজ্য জগতের ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, ছাত্রছাত্রী থেকে সামান্য মানুষও, সবাই যোগকে নিজের জীবনের অভিন্ন অঙ্গ করে ফেলছেন। আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে, যে সমগ্র বিশ্বে যোগের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা দেখে আপনাদের সবার নিশ্চয় খুব ভালো লাগছে। বন্ধুরা, এইবার দেশ বিদেশে "যোগ দিবস" উপলক্ষে আয়োজিত হতে চলা বেশ কিছু দারুণ উদ্ভাবনমূলক উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এর মধ্যে একটি হলো গার্ডিয়ান রিং, যা একটি বড়ো অনন্য কর্মসূচী হতে চলেছে। এই অনুষ্ঠানে সূর্যর গতিপ্রকৃতিকে উদযাপন করা হবে, অর্থাৎ সূর্য যেরকম যেরকম যাত্রা করবে, পৃথিবীর আলাদা আলাদা প্রান্তে, আমরা যোগের মধ্য দিয়ে তাকে স্বাগত জানাবো। ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভারতীয় মিশন সেখানকার স্থানীয় সময় অনুযায়ী সূর্যোদয়ের সময় যোগ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।
একটি দেশের পরে আর একটি দেশে কার্য্যক্রম শুরু হবে। পূর্ব থেকে পশ্চিমে এক নিরন্তর যাত্রাপথ চলতে থাকবে, সেই একইভাবে, এগিয়ে যেতে থাকবে। এই অনুষ্ঠানের স্ট্রিমিংও এইভাবে একের পর এক জুড়তে থাকবে, অর্থাৎ এটা একরকম রিলে যোগ স্ট্রিমিং অনুষ্ঠান হবে। আপনারাও অবশ্যই এটা দেখবেন।
বন্ধুরা, আমাদের দেশে এবার 'অমৃত মহোৎসবের' কথা মাথায় রেখে দেশের ৭৫ টি বিভিন্ন জায়গায়ও 'আন্তজাতিক যোগ দিবসের' আয়োজন করা হবে। এই উপলক্ষে বেশ কয়েকটি সংগঠন এবং দেশের মানুষও নিজের নিজের ক্ষেত্রের বিশেষ স্থানে কিছু সৃজনশীল কাজ করার চেষ্টা করছেন। আমি আপনাদের কাছেও অনুরোধ করব এবার যোগ দিবস পালন করার জন্য আপনারা নিজেদের শহর বা গ্রামের এমন কোন জায়গা বাছুন যা সবথেকে আলাদা ও অনন্য। এই জায়গা কোন প্রাচীন মন্দির অথবা কোন পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে, বা কোন বিখ্যাত নদী, হ্রদ বা পুকুরের পার হতে পারে। এতে যোগের সঙ্গে আপনাদের সেই জায়গার পরিচিতিও বাড়বে ফলে পর্যটনের প্রসার ঘটবে। এই সময়ে যোগ দিবস নিয়ে ১০০ দিনের কাউন্টডাউনও চলছে, অথবা এটাও বলতে পারেন যে নিজেদের এবং সামাজিক প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত থাকা নানা কার্যক্রম তিন মাস আগেই শুরু হয়েছে। এই যেমন দিল্লিতে শততম এবং ৭৫ তম দিনের কাউন্টডাউন অনুষ্ঠান হয়েছে। তেমনি আসামের শিবসাগরে ৫০তম এবং হায়দ্রাবাদে ২৫তম কাউন্টডাউন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল। আমি চাই যে আপনিও আপনার পরিসরে যোগ দিবসের প্রস্তুতি শুরু করুন। বেশি করে মানুষের সঙ্গে দেখা করুন, প্রত্যেককে যোগ দিবসের অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকার আহ্বান জানান, তাদের অনুপ্রাণিত করুন। আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস যে আপনারা সকলেই যোগ দিবসের কর্মসূচীতে উৎসাহের সঙ্গে অংশগ্রহণ করবেন আর এতে আপনারা প্রাত্যহিক জীবনেও যোগকে আপন করে নেবেন।
বন্ধুরা কয়েকদিন আগে আমি জাপান গিয়েছিলাম। নিজের অনেক কাজের মাঝে মাঝেই কিছু সুন্দর মানুষদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। আমি ‘মন কি বাতে’ আপনাদের তাঁদের কথা শোনাতে চাই। এঁরা জাপানের অধিবাসী কিন্তু ভারতের প্রতি এঁদের আশ্চর্য রকমের টান রয়েছে। এঁদের মধ্যে একজন হিরোশি কোইকেজি রয়েছেন, যিনি একজন বিখ্যাত আর্ট ডিরেক্টর। আপনারা এটা জেনে খুশি হবেন যে উনি মহাভারত প্রকল্পকে পরিচালনা করেছেন। এই প্রকল্প শুরু হয়েছিল কম্বোডিয়ায়। গত ৯ বছর ধরে এটা অনবরত চলছে। হিরোশি কোইকেজি প্রত্যেকটা কাজ অন্যরকম ভাবে সম্পন্ন করেন। উনি প্রতিবছর এশিয়ার কোন একটি দেশে যাত্রা করেন এবং সেখানকার স্থানীয় শিল্পী এবং সুরকারদের সঙ্গে মহাভারতের কিছু অংশ প্রযোজনা করেন।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে ওঁরা ভারত, কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়া সমেত ৯টি দেশে প্রোডাকশন ও স্টেজ পারফর্মেন্সও করেছেন। হিরোশি কোইকে এমন সমস্ত শিল্পীদের একত্রে আনেন যাঁদের ধ্রুপদী ও চিরায়ত এশিয়ান পারফর্মিং আর্টে ডাইভার্স ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। এই কারণেই তাঁর পারফর্মেন্সগুলিতে ভিন্ন-ভিন্ন আঙ্গিক দেখা যায়। ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও জাপানের শিল্পীরা জাভা নৃত্য, বালী নৃত্য, থাই নৃত্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানগুলি আরও আকর্ষণীয় করে তোলেন। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে এখানে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারী নিজেদের মাতৃভাষায় কথা বলেন এবং নৃত্যশৈলীগুলি খুব সুন্দর ভাবে এই বৈচিত্র ফুটিয়ে তোলে আর সঙ্গীতের বৈচিত্র এই প্রোডাকশনগুলিকে আরও প্রাণবন্ত করে দেয়। এঁদের উদ্দেশ্য আমাদের সমাজে বৈচিত্র ও সহাবস্থানের গুরুত্বটি সামনে আনা এবং শান্তির প্রকৃত রুপ কী - সেটা তুলে ধরা। এঁদের ছাড়া আমি জাপানে আর যে দু’জন ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেছিলাম তাঁরা হলেন আতসুশি মাতসুও ও কেঞ্জি ইয়োশি। এঁরা দু’জনেই টিইএম প্রোডাকশন কোম্পানীর সঙ্গে যুক্ত। এই কোম্পানির সঙ্গে যোগ রয়েছে রামায়ণের সেই জাপানিজ অ্যানিমেশন ফিল্মটির, যেটি ১৯৯৩ সালে রিলিজ হয়। এই প্রজেক্টটির জাপানের বিখ্যাত ফিল্ম ডিরেক্টর য়ুগো সাকোর সঙ্গেও যোগ ছিল। প্রায় ৪০ বছর আগে, ১৯৮৩-তে উনি রামায়ণের ব্যাপারে প্রথমবার শোনেন। রামায়ণ ওঁর হৃদয় স্পর্শ করে, যার পর তিনি এই বিষয়ে আরও গভীরে গিয়ে গবেষণা করতে শুরু করেন। এটুকুই নয়, উনি নিজের ভাষায় রামায়ণের ১০টি সংস্করণ পড়ে ফেলেন এবং তিনি এখানেই থামেন নি, উনি এই মহাকাব্যটিকে অ্যানিমেশনেও নিয়ে আসতে চান।
এ কাজে ভারতীয় অ্যানিমেটররাও তাদের যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। চলচ্চিত্রে প্রদর্শিত ভারতীয় রীতিনীতি ও পরম্পরা সম্বন্ধে তাদের নানা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাদের জানানো হয়েছে ভারতীয়রা ধুতি কিভাবে পরেন, শাড়ি কিভাবে পরেন, কেশসজ্জা কিভাবে করেন, বাচ্চারা পরিবারের অন্যান্যদের ও একে অপরকে কিভাবে সম্মান প্রদর্শন করেন, আশীর্বাদের পরম্পরাটি কি। সকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির বয়ো: জ্যেষ্ঠদের প্রণাম করা, তাদের আশীর্বাদ নেওয়া, এই সমস্ত কিছু আজ ৩০ বছর পর এই অ্যানিমেশন ফিল্মের মাধ্যমে আবারো 4K তে রিমাস্টার করা হচ্ছে। এই প্রোজেক্টটি শীঘ্রই সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরের জাপানের মানুষেরা, যারা আমাদের ভাষা জানেন না, আমাদের রীতিনীতি, পরম্পরা সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেই, তাদের ভারতীয় সংস্কৃতির জন্য এই আত্মনিবেদন, এই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। কোন ভারতীয় এতে গর্ববোধ করবেন না বলুন তো?
আমার প্রিয় দেশবাসী, আত্মচিন্তার ঊর্ধ্বে উঠে সমাজের সেবা করার মন্ত্র, সেল্ফ ফর সোসাইটির মন্ত্র আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ। আমাদের দেশে অগণিত মানুষ এই মন্ত্রকে নিজেদের জীবনের ধ্যান জ্ঞান করেছেন। আমি অন্ধ্রপ্রদেশের মরকাপুরমের বাসিন্দা এক বন্ধু, রামভূপাল রেড্ডিজির সম্বন্ধে জানতে পেরেছি। আপনারা জেনে আশ্চর্য হবেন, রামভূপাল রেড্ডিজি অবসরগ্রহণের পর প্রাপ্য তাঁর সমস্ত উপার্জন মেয়েদের শিক্ষার জন্য দান করেছেন। তিনি প্রায় ১০০ জন মেয়ের জন্য সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছেন, আর তাতে নিজের ২৫ লক্ষেরও বেশি টাকা জমা করেছেন। সেবার এমনই আরেকটি উদাহরণ ইউ.পি তে আগ্রার কচৌরা গ্রামে রয়েছে। অনেক বছর ধরেই এই গ্রামে মিষ্টি জলের অভাব ছিল। ইতোমধ্যে গ্রামের এক কৃষক কুঁয়ার সিং গ্রাম থেকে ছয়-সাত কিলোমিটার দূরে নিজের ক্ষেতে মিষ্টি জলের সন্ধান পান। এটা তার কাছে খুবই আনন্দের বিষয় ছিল। তিনি ভাবলেন, এই জল দিয়ে বাকি সব গ্রামবাসীদেরও সেবা করা যাক!
কিন্তু ক্ষেত থেকে গ্রাম পর্যন্ত জল পৌঁছাতে ৩০ থেকে ৩২ লক্ষ টাকার প্রয়োজন ছিল। কিছুদিন পর, কুঁওয়ার সিংয়ের ছোট ভাই শ্যাম সিং সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়ে হওয়ার পর গ্রামে আসেন, তখন তিনি বিষয়টি জানতে পারেন। তিনি অবসরগ্রহণের পর পাওয়া তাঁর সমস্ত অর্থ এই কাজের জন্য তুলে দেন এবং ক্ষেত থেকে গ্রামে পাইপলাইনের এর মাধ্যমে গ্রামবাসীদের মিষ্টি জল সরবরাহের ব্যবস্থা করেন। যদি আন্তরিকতা থাকে ও আপনি আপনার কর্তব্যের প্রতি নিষ্ঠাবান হন, তাহলে একজন ব্যক্তিও কীভাবে পুরো সমাজের ভবিষ্যত পরিবর্তন করতে পারে, এই প্রচেষ্টা তার একটি বড় প্রেরণাদায়ক উদাহরণ। এই কর্তব্য-পথে চলেই আমরা শক্তিশালী সমাজ গড়তে পারি, দেশকে ক্ষমতাশালী করে তুলতে পারি। স্বাধীনতার এই অমৃত মহোৎসবে এই হওয়া উচিত আমাদের সংকল্প এবং এই হওয়া উচিত আমাদের সাধনা - যার একমাত্র পথ কর্তব্য, কর্তব্য ও কর্তব্য।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ "মন কি বাত"-এ আমরা সমাজ সম্পর্কিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম। আপনারা সবাই বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত আপনাদের মূল্যবান পরামর্শ আমায় পাঠান এবং তার ভিত্তিতে আমাদের আলোচনা এগোয়। "মন কি বাত"-এর পরবর্তী সংস্করণের জন্য আপনারা আপনাদের পরামর্শ পাঠাতে ভুলবেন না। বর্তমানে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব সংক্রান্ত যেসব অনুষ্ঠান চলছে, আপনি যেগুলিতে অংশ নিচ্ছেন, সেগুলি সম্পর্কে আমায় অবশ্যই জানাবেন। আমি নমো অ্যাপ এবং মাই গভ সম্পর্কিত আপনাদের পরামর্শের অপেক্ষায় রয়েছি। পরের বার আমাদের আবার দেখা হবে, আবার দেশবাসীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে এরকমই অনেক বিষয়ের উপর কথা হবে। আপনি নিজের যত্ন নিন এবং আপনার চারপাশের সমস্ত প্রাণীর যত্ন নিন। এই গ্রীষ্মে, পশু-পাখিদের জন্য খাদ্য এবং জল সরবরাহ করার আপনার মানবিক দায়িত্ব পালন করুন, ততদিন পর্যন্ত আপনাদের জানাই অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার।
নতুন বিষয় সঙ্গে নিয়ে, অনুপ্রেরণা জাগানো নতুন উদাহরণের সঙ্গে, নতুন-নতুন খবর সংগ্রহ করে, আরো এক বার আমি আপনাদের সঙ্গে ‘মন কি বাত’ করতে এসেছি। জানেন এবার আমি সবথেকে বেশি চিঠি আর বার্তা কোন বিষয়ে পেয়েছি? এই বিষয়টা এমন যা বর্তমান, অতীত আর ভবিষ্যৎ তিনটেরই সঙ্গে জুড়ে আছে। দেশ যে নতুন প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয় পেয়েছে আমি সেই ব্যাপারে কথা বলছি। গত ১৪ই এপ্রিল বাবাসাহেব আম্বেদকরের জন্মজয়ন্তীতে প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয় দেশবাসীর উদ্দেশে সমর্পিত হল। দেশের নাগরিকদের জন্য এর দ্বার উন্মুক্ত করা হয়েছে। এক জন শ্রোতা আছেন শ্রীমান সার্থক জী− সার্থক জী গুরুগ্রামে থাকেন আর প্রথম সুযোগেই তিনি প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয় দেখে এসেছেন। সার্থক জী নমো অ্যাপে যে বার্তা পাঠিয়েছেন আমাকে, তা বেশ ইন্টারেস্টিং। তিনি লিখেছেন যে বহু বছর ধরে উনি নিউজ চ্যানেল দেখছেন, খবরের কাগজ পড়ছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গেও যুক্ত উনি, তাই ওনার মনে হয়েছিল যে ওনার সাধারণ জ্ঞান খুব ভালো রয়েছে, কিন্তু যখন পি এম সংগ্রহালয়ে গেলেন তখন উনি বেশ অবাক হলেন, উনি বুঝলেন যে নিজের দেশ আর দেশের নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিদের ব্যাপারে উনি অনেক কিছু জানেনই না। উনি পি এম সংগ্রহালয়ের এমন কিছু কিছু বিষয় নিয়ে লিখেছেন যা ওনার জিজ্ঞাসা আরও বাড়িয়ে তুলেছে, যেমন উনি লালবাহাদুর শাস্ত্রীর সেই চরকা দেখে খুব খুশী হয়েছেন যা তিনি শ্বশুরবাড়ি থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন। উনি শাস্ত্রীজীর পাসবুকও দেখেছেন আর এটাও দেখেছেন যে তাঁর সঞ্চয় কত কম ছিল। সার্থকজী লিখেছেন যে ওনার এটাও জানা ছিল না, যে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেওয়ার আগে মোরারজী ভাই দেশাই গুজরাতে ডেপুটি কালেক্টর ছিলেন। প্রশাসনিক পরিষেবায় ওনার দীর্ঘ একটা কেরিয়ার ছিল। সার্থকজী চৌধুরী চরণ সিংয়ের ব্যাপারে সেই বিষয়টা নিয়ে লিখছেন যা তাঁর জানা ছিল না যে জমিদারি উচ্ছেদের ক্ষেত্রে চৌধুরী চরণ সিংয়ের অনেক বড় অবদান ছিল। এটুকুই নয়, এরপর তিনি লিখছেন যে ভূমি সংস্কারের ব্যাপারে ওখানে আমি দেখলাম যে শ্রী পি ভি নরসিম্হা রাওজি ভূমি সংস্কারের কাজে গভীর আগ্রহ দেখাতেন। সার্থকজীরও এই মিউজিয়ামে এসেই জানা হল যে চন্দ্রশেখরজি চার হাজার কিলোমিটারের বেশি পায়ে হেঁটে ঐতিহাসিক ভারত যাত্রা সম্পন্ন করেন। উনি যখন সংগ্রহালয়ে সেই সব জিনিস দেখেন যা অটলজী ব্যবহার করতেন, তাঁর ভাষণ শোনেন, তখন গর্বে তাঁর বুক ভরে উঠেছিল। সার্থকজী এও বলেছেন যে এই সংগ্রহালয়ে মহাত্মা গান্ধী, সর্দার প্যাটেল, ডক্টর আম্বেদকর, জয়প্রকাশ নারায়ণ আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জহরলাল নেহরু সম্পর্কেও অনেক আকর্ষণীয় তথ্য রয়েছে।
বন্ধুগণ, দেশের প্রধানমন্ত্রীর অবদানকে স্মরণ করতে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের চেয়ে ভাল সময় কি-ই বা হতে পারে। দেশের জন্য এটা গর্বের বিষয় যে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব একটি গণআন্দোলনের রূপ নিচ্ছে। ইতিহাসের প্রতি মানুষের আগ্রহ অনেক বেড়েছে এবং পি.এম. সংগ্রহশালা তরুণদের আকর্ষণের উৎস হয়ে উঠেছে, যা তাদের দেশের অমূল্য ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত করছে। যাইহোক, যখন জাদুঘর সম্পর্কে এত কথাই হচ্ছে আপনাদের সঙ্গে, তখন আমার মনে হচ্ছে যে আমারও আপনাদের কিছু প্রশ্ন করা উচিত। দেখা যাক আপনাদের সাধারণ জ্ঞানের পরিধি কেমন - আপনাদের কতটুকু জ্ঞান আছে। আমার তরুণ বন্ধুরা আপনারা তৈরী তো? কাগজ কলম হাতে নিয়ে নিয়েছেন তো? এই মুহূর্তে আমি আপনাদের যা জিজ্ঞাসা করতে চলেছি, তার উত্তর আপনারা নমো অ্যাপ বা স্যোসাল মিডিয়াতে #MuseumQuiz লিখে শেয়ার করতে পারেন। অবশ্যই করবেন। আমি আপনাদের অনুরোধ করছি যে আপনারা অবশ্যই এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেবেন। এর মাধ্যমে এই দেশের মানুষ জাদুঘরের প্রতি আরও আগ্রহী হবেন। আপনারা কি জানেন দেশের কোন শহরে একটি বিখ্যাত রেল মিউজিয়াম আছে, যেখানে বিগত ৪৫ বছর ধরে, মানুষ ভারতীয় রেলের ঐতিহ্য উপলব্ধি করার সুযোগ পাচ্ছেন? আমি আপনাদের একটি ক্লু দিচ্ছি । আপনারা এখানে ফেয়ারি কুইন থেকে শুরু করে সেলুন অফ প্রিন্স অফ ওয়েলসের এবং ফায়ারলেস স্টিম লোকোমোটিভও দেখতে পাবেন। আপনারা কি জানেন মুম্বাইয়ে এমন কোন জাদুঘর আছে যেখানে খুবই আকর্ষণীয় উপায়ে মুদ্রার বিবর্তন দেখতে পাওয়া যায়? এখানে এক দিকে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর মুদ্রা যেমন বিদ্যমান, তেমনি ই-মানিও রয়েছে। তৃতীয় প্রশ্ন 'বিরাসত -এ -খালসা' এই জাদুঘর-এর সঙ্গে সম্পর্কিত। আপনারা বলতে পারবেন, এই জাদুঘরটি পাঞ্জাবের কোন শহরে অবস্থিত? ঘুড়ি ওড়ানো আপনারা সবাই নিশ্চয়ই বেশ উপভোগ করেন, পরের প্রশ্নটি এর সঙ্গেই সংযুক্ত। দেশের একমাত্র ঘুড়ি জাদুঘর কোথায় অবস্থিত? আসুন আমি আপনাদের একটা ক্লু দিচ্ছি, যে এখানে রাখা সবচেয়ে বড় ঘুড়িটির আকার ২২ বাই ১৬ ফুট। কিছু মনে এলো? না হলে এখানে- আর একটা কথা বলবো- এই শহরের সঙ্গে বাপুর বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। শৈশবে ডাকটিকিট সংগ্রহ করার শখ অনেকেরই থাকে? কিন্তু, আপনারা কি জানেন যে ভারতে ডাকটিকিটের সঙ্গে সংযুক্ত জাতীয় জাদুঘরটি কোথায় অবস্থিত? আমি আপনাদের জন্য আরো একটি প্রশ্ন রাখছি। গুলশান মহল নামের ভবনে কোন জাদুঘর রয়েছে? আপনাদের জন্য একটা ক্লু হলো, যে এই মিউজিয়ামে গিয়ে আপনারা একজন চিত্র পরিচালকও হতে পারেন, এছাড়াও এখানে আপনারা ক্যামেরা ও সম্পাদনার খুঁটিনাটিও শিখতে পারেন। আচ্ছা, আপনারা এমন কোনো জাদুঘর সম্পর্কে জানেন যা ভারতের বস্ত্রশিল্প সম্পর্কিত এবং যা বস্ত্রশিল্পর ঐতিহ্য তুলে করে। এই মিউজিয়ামে মিনিয়েচার পেইন্টিং, জৈন পাণ্ডুলিপি, ভাস্কর্য- অনেক কিছু আছে। এটি তার অনন্য প্রদর্শন শৈলীর জন্যও পরিচিত।
বন্ধুরা, প্রযুক্তির এই সময়ে সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা খুবই সহজ। এই প্রশ্নগুলি আমি এই জন্য করলাম যাতে আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে কৌতুহল বাড়ে, তারা এই ব্যাপারগুলো নিয়ে আরও পড়াশোনা করে, চাক্ষুষ করতে যায়। আজকাল তা মিউজিয়ামের মাহাত্ম্য বুঝে অনেকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এগিয়ে এসে মিউজিয়ামে অনেক দানও করেন। এরকম অনেকে আছেন যারা তাদের পুরনো সংগ্রহ, বহু ঐতিহাসিক জিনিস জাদুঘরকে দিয়ে দিচ্ছেন। আপনি যখন এরকম করেন তখন আপনি এক সাংস্কৃতিক সম্ভারকে গোটা সমাজের সাথে ভাগ করে নেন। ভারতে এখন অনেক মানুষ এর জন্য এগিয়ে আসছেন। আমি এরকম সকল নিজস্ব উদ্যোগকে সাহায্য করি। আজ এই বদলে যাওয়া সময় ও কোভিড প্রোটোকলের কারণে সংগ্রহশালাগুলিতে নিত্যনতুন পদ্ধতি অবলম্বনের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। মিউজিয়ামগুলোয় ডিজিটাইজেশনের উপর গুরুত্ব বাড়ানো হয়েছে। আপনারা জানেন ১৮ই মে গোটা বিশ্বে আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস পালিত হবে। এই প্রসঙ্গে আমার যুবক-যুবতী বন্ধুদের জন্য আমার একটা প্রস্তাব আছে। সামনে যে ছুটির দিন আসছে, তাতে বন্ধু বান্ধবদের দল বল নিয়ে কোনো স্থানীয় মিউজিয়াম দেখতে যান। আপনারা নিজেদের অভিজ্ঞতা #museummemories-এ সকলের সাথে অবশ্যই ভাগ করে নিন। এর মাধ্যমে অন্যদের মনেও সংগ্রহশালা সম্পর্কে আগ্রহ জন্মাবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনারা নিজেদের জীবনে অনেক সংকল্প নিয়ে থাকবেন এবং সেগুলি পূরণ করার জন্য অনেক পরিশ্রমও করে থাকবেন। কিন্তু বন্ধুরা, হালফিলএ আমি এক অভিনব সংকল্পর কথা জানতে পেরেছি। তাই ভাবলাম, এটা ‘মান কি বাত’ এর শ্রোতাদের সাথে নিশ্চয়ই ভাগ করি।
বন্ধুরা, আপনারা ভাবতে পারেন কেউ নিজের ঘর থেকে এই সংকল্প নিয়ে বেরচ্ছেন যে সারাদিন শহরে ঘুরবেন কিন্তু কোনো কিছু নগদ টাকা দিয়ে করবেন না! একটিও লেনদেন নগদে হবেনা। সত্যি অভিনব সংকল্প বৈকি। দিল্লির দুই মেয়ে, সাগরিকা ও প্রেক্ষা, এরকমই একটি নগদবিহীন দিন কাটালেন। সাগরিকা ও প্রেক্ষা দিল্লিতে যেখানেই যান, তারা নগদবিহীন পদ্ধতিতে আর্থিক লেনদেন করার সুবিধা পেয়েও যান। ইউপিআই কিউআর কোড থাকায় তাদের নগদ টাকা বের করার কোন প্রয়োজনই পড়েনি। এমনকি স্ট্রীট ফুড ও রাস্তার দোকানে কেনাকাটার সময়েও বেশীরভাগ জায়গায় তারা অনলাইনে আর্থিক লেনদেনের সুবিধা পান।
বন্ধুরা, কেউ ভাববেন যেহেতু দিল্লি মেট্রো শহর, তাই এখানে এটা সহজেই সম্ভব। কিন্তু এখন এরকম নয় যে ইউপিআই এর পরিষেবা শুধু দিল্লির মত বড় শহরেই সীমাবদ্ধ। গাজিয়াবাদের আনন্দিতা ত্রিপাঠীর এক বার্তাও পেয়েছি। গত সপ্তাহে আনন্দিতা তার স্বামীর সঙ্গে উত্তরপূর্ব বেড়াতে গিয়েছিলেন। তিনি অসম থেকে মেঘালয়, এমনকি অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও আমাকে জানিয়েছেন। আপনারাও চমৎকৃত হবেন জেনে যে বেশ কয়েকদিন এই ভ্রমণ চলাকালীন তাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কখনো নগদ টাকা ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়েনি। কিছু বছর আগেও যেসব এলাকায় ভালো ইন্টারনেট এর পরিষেবা পাওয়া যেত না, সেখানেও এখন ইউপিআই এর মাধ্যমে লেনদেনের সুবিধা পাওয়া সম্ভব। সাগরিকা, প্রেক্ষা ও আনন্দিতার অভিজ্ঞতা জেনে আমিও আপনাদের অনুরোধ করব নগদবিহীন একটি লেনদেনের দিন কাটান, এ ধরণের একটি অভিজ্ঞতা ভেবে দেখুন।
বন্ধুরা, বিগত কিছু বছরে ভিম ইউপিআই আমাদের অর্থনীতি এবং অভ্যাসের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। এখন ছোট ছোট শহরে এমনকি বেশিরভাগ গ্রামেও মানুষ ইউপিআই দিয়ে লেন-দেনের কারবার করছেন। ডিজিট্যাল অর্থনীতির মাধ্যমে আমাদের দেশে এক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। অলি গলির মধ্যে ছোটখাটো দোকানেও ডিজিট্যাল অর্থনীতির দরুন অনেক বেশি সংখ্যক গ্রাহককে সহজেই পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এখন ওদের খুচরো পয়সা নিয়েও সমস্যা হয় না। আপনিও হয়তো দৈনন্দিন জীবনে ইউপিআই-এর সহজলভ্য পরিষেবা উপভোগ করছেন। যেখানেই যান, নগদ টাকা নিয়ে যাওয়ার, ব্যাংকে যাওয়ার, বা এটিএম খোঁজার ঝঞ্ঝাটই শেষ। মোবাইল দিয়েই সমস্ত আর্থিক লেনদেন হয়ে যায়, কিন্তু, আপনি কি কখনো ভেবেছেন আপনার এই ছোট ছোট অনলাইন লেনদেন দিয়ে দেশের কত বড় ডিজিট্যাল অর্থনীতি তৈরি হয়েছে। এখন আমাদের দেশে প্রায় কুড়ি হাজার কোটি টাকার আর্থিক লেনদেন রোজ হয়ে থাকে। গত মার্চ মাসে ইউপিআই এর মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন প্রায় দশ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছে গিয়েছিল। এইভাবে দেশে সুবিধাও বেড়েছে, সঙ্গে সততার পরিবেশও সৃষ্টি হয়েছে। এবার দেশে ফিন-টেকের সঙ্গে যুক্ত অনেক নতুন স্টার্ট আপ্সের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি চাইবো যদি আপনার কাছেও ডিজিটাল আর্থিক লেনদেন ও স্টার্ট আপ্সের ব্যবস্থাপনার শক্তি সম্পর্কিত কোন অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে আমাদের তা জানান। আপনার অভিজ্ঞতা অন্যদের ও দেশবাসীকে অনুপ্রেরণা দিতে পারে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, প্রযুক্তি'র শক্তি কিভাবে সাধারণ মানুষের জীবন বদলে দিচ্ছে তা আমরা আমাদের চারপাশে ক্রমাগত দেখতে পাচ্ছি। প্রযুক্তি আরও একটা দুর্দান্ত কাজ করেছে, ভিন্নভাবে সক্ষম বন্ধুদের অসাধারণ ক্ষমতার পরিচয় দেশ ও দুনিয়ার সামনে তুলে ধরেছে। আমাদের দিব্যাঙ্গ ভাই-বোনেরা কি কি করতে পারেন তা আমরা টোকিও প্যারা-অলিম্পিকে দেখেছি! খেলাধুলোর মতই, আর্টস, একাডেমিকস এবং অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে তারা অসাধারণ কৃতিত্বের পরিচয় দিচ্ছেন। কিন্তু যখন এই বন্ধুরা প্রযুক্তির সাহায্য পায় তখন তারা আরো বড় লক্ষ্য অর্জন করে দেখায়। এইজন্য এখন আমাদের দেশ ভিন্নভাবে সক্ষম বন্ধুদের জন্য সরঞ্জাম ও পরিকাঠামো সহজলভ্য করে তোলার ক্রমাগত চেষ্টা করছে। আমাদের দেশে এমন বহু স্টার্ট-আপ এবং সংস্থা আছে যারা এই উদ্দেশ্যে উৎসাহব্যাঞ্জক কাজ করে চলেছে। এমনই একটি সংস্থা ভয়েস অফ স্পেশালি-এবলড পিওপ্ল; এই সংস্থাটি সহায়ক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করছে। বিশেষভাবে সক্ষম শিল্পী বন্ধুদের কাজকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য-ও একটা উদ্ভাবনী প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। ভয়েস অফ স্পেশালি-এবলড পিওপলের এই শিল্পীদের আঁকা ছবি নিয়ে একটি ডিজিটাল আর্ট গ্যালারি'ও তৈরি করা হয়েছে। দিব্যাঙ্গ বন্ধুরা কতটা অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী হয় এবং তাদের কত অসাধারণ ক্ষমতা থাকে তার উদাহরণ এই আর্ট গ্যালারি। ভিন্নভাবে সক্ষম বন্ধুদের জীবনে কত প্রতিকূলতা থাকে, সেই প্রতিকূলতা কাটিয়ে তারা কতদূর অগ্রসর হতে পারে... এমন বহু বিষয় এই ছবিগুলির মাধ্যমে অনুভব করতে পারবেন। যদি এমনি কোন দিব্যাঙ্গ বন্ধুকে চেনেন, এবং তার প্রতিভার বিষয়ে জানেন, তাহলে আপনিও ডিজিট্যাল প্রযুক্তির সাহায্যে তাকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে পারেন। যাদের ভিন্নভাবে সক্ষম বন্ধু আছেন, তারাও যেন এই ধরনের উদ্যোগের সঙ্গে নিজেদের অবশ্যই যুক্ত করেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, দেশের অধিকাংশ জায়গায় গ্রীষ্মের দাবদাহ খুব দ্রুত বেড়ে চলেছে। বাড়তে চলা এই গরমে, জল বাঁচানোর প্রয়োজনটাকেও একইরকম প্রাধান্য দেয়। হতে পারে আপনি এখন যেখানে আছেন, সেখানে জল পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় । কিন্তু, আপনাকে সেই কোটি কোটি মানুষদেরও সবসময় মনে রাখতে হবে, যাঁরা জলসঙ্কট হয় সেইরকম জায়গায় থাকেন, যাঁদের কাছে জলের এক একটি বিন্দু অমৃত সমান হয়।
বন্ধুগণ, এই সময় স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে, স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে, দেশ যে সংকল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছে, তাতে জল সংরক্ষণও আছে। অমৃত মহোৎসব চলাকালীন দেশের প্রতিটি জেলায় ৭৫টি অমৃত সরোবর বানানো হবে। আপনি কল্পনা করতে পারেন যে এই অভিযানটি কতো বড়ো আকারের হতে চলেছে। সেই দিন আর দূরে নেই, যখন আপনার জেলায় ৭৫টি অমৃত সরোবর থাকবে। আমি, আপনাদের সবাইকে, এবং বিশেষকরে যুবাদের বলব যে তারা যেন এই অভিযানের বিষয়ে জানে এবং এর দায়িত্ব পালন করে। যদি আপনার অঞ্চলে স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত কোনো ইতিহাস থাকে, কোনো বিপ্লবীর স্মৃতি থাকে, তাহলে সেই ইতিহাসও অমৃত সরোবরের সঙ্গে যুক্ত করতে পারেন। যদিও আমার এটা জেনে ভালো লেগেছে যে অমৃত সরোবরের সংকল্প নেওয়ার পর বিভিন্ন জায়গায় এই বিষয়ে কাজ দ্রুততার সঙ্গে শুরু হয়ে গেছে। আমি উত্তর প্রদেশের রামপুরের গ্রাম পঞ্চায়েত পটবইয়ের সম্বন্ধে জানতে পেরেছি। সেখানে গ্রাম সভার মাঠে একটি পুকুর ছিল; কিন্তু সেটি, ময়লা এবং আবর্জনার স্তুপে ভর্তি ছিল। গত কয়েক সপ্তাহে অনেক পরিশ্রম করে স্থানীয় লোকদের সাহায্যে, স্থানীয় স্কুলের বাচ্চাদের সহায়তায়, ঐ নোংরা পুকুরটি পুনরুদ্ধার হয়েছে। এখন, ঐ পুকুরটিতে পার বাধানো হয়েছে, সুন্দর প্রাচীর, ফুড কোর্ট, ফোয়ারা এবং আলোকসজ্জা− এরকম আরও কত ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি রামপুরের পটবাই গ্রাম পঞ্চায়েতকে, গ্রামের লোকেদের, সেখানের বাচ্চাদের এই প্রয়াসের জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুরা, জলের অভাব এবং জলের উপস্থিতি প্রতিটি দেশের প্রগতি এবং গতি প্রভাবিত করে। আপনারাও নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন, ‘মন কী বাত’ অনুষ্ঠানে আমি পরিচ্ছন্নতার মত বিষয়ের পাশাপাশি জল সংরক্ষণের বিষয়েও বারবার কথা বলেছি নিশ্চিতরূপে । আমাদের প্রাচীন গ্রন্থে তো স্পষ্ট লেখা রয়েছেঃ
পানিয়ম্ পরমম্ লোকে, জীবানাম্ জীবনম সম্রিতম্।
অর্থাৎ, জগৎ সংসারে জলই প্রত্যেক জীবের জীবনের সহায় এবং সবচেয়ে বড় সম্পদ, সেই জন্যই আমাদের পূর্বপুরুষরা জল সংরক্ষণের উপর এত জোর দিয়েছিলেন। বেদ থেকে পুরাণ পর্যন্ত প্রতিটি জায়গায় জল বাঁচানো, পুকুর, ঝিল, ইত্যাদি বানানো মানুষের সামাজিক ও আধ্যাত্মিক কাজের অঙ্গ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাল্মীকি রামায়ণে জলের উৎসগুলিকে যুক্ত করা, জল সংরক্ষণ করার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।
ঠিক একই ভাবে, ইতিহাসের ছাত্রছাত্রীরা জানবেন, সিন্ধু- সরস্বতী ও হারাপ্পা সভ্যতার সময়ে আমাদের দেশে কী রকম অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হয়েছিল।
প্রাচীন কালে, বহু শহরে জলের উৎসগুলির মধ্যে আন্তঃ-সংযোগ ব্যবস্থাপনা তৈরি করা হয়েছিল, একে-অপরের সঙ্গে তাদের যুক্ত করা হয়েছিল। সে সময় জনসংখ্যা এত ছিল না, প্রাকৃতিক সম্পদের অপ্রতুলতা ছিল না, বরং প্রাচুর্য ছিল, তবুও জল সংরক্ষণের বিষয়ে জন সচেতনতা ছিল বিপুল মাত্রায়।
কিন্তু আজ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত। আমি আপনাদের সবার কাছে অনুরোধ করছি, আপনারা আপনাদের এলাকার এই ধরণের সমস্ত প্রাচীন পুকুর, কুয়ো, ঝিলের ব্যাপারে জানুন। অমৃত সরোবর অভিযানের হেতু জল সংরক্ষণের পাশাপাশি আপনাদের নিজেদের এলাকার পরিচিতিও তৈরি হবে। এর ফলে শহরগুলিতে, অঞ্চলগুলিতে অবস্থিত স্থানীয় পর্যটনস্থলগুলিও বিকশিত হবে। সাধারণ মানুষের ঘোরাঘুরির জন্যও নতুন জায়গা মিলবে।
বন্ধুরা, জলের সঙ্গে জড়িত সমস্ত প্রচেষ্টাই আমাদের ভবিষ্যতের সঙ্গে যুক্ত। এতে পুরো সমাজেরই দায়িত্ব থাকে। এরজন্য বছরের-পর-বছর বিভিন্ন সমাজ নিয়মিতভাবে বিভিন্ন উপায়ে প্রচেষ্টা করে গেছে। যেমন 'কচ্ছের রান' এর এক জনজাতি 'মালধারী' জল সংরক্ষণের জন্য 'বৃদাস' নামের একটি উপায় ব্যবহার করে থাকে। এর জন্য ছোট কুয়ো বানানো হয় আর তাকে বাঁচানোর জন্য তার আশেপাশে গাছপালা লাগানো হয়ে থাকে। এই ভাবেই মধ্যপ্রদেশের ভিল জনজাতি নিজস্ব একটি ঐতিহাসিক পরম্পরা 'হলমা'-কে জল সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত করে থাকে। এই পরম্পরায় এই জনজাতির মানুষ জলের সঙ্গে যুক্ত সমস্যার সমাধানের জন্য এক জায়গায় একত্রিত হন। হলমা পরম্পরার মাধ্যমে পাওয়া পরামর্শের জন্যই এই এলাকায় জলের সংকট কম হয়েছে আর মাটির নীচের জলস্তর বাড়তে শুরু করেছে।
বন্ধুরা, এ রকমই কর্তব্যের ভাব যদি সবার মনে সঞ্চারিত হয় তাহলে জল সংকটের সঙ্গে যুক্ত বড় বড় সমস্যার সমাধান হতে পারে। আসুন, স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে আমরা জল সংরক্ষণ আর জীবন সংরক্ষণের সংকল্প গ্রহণ করি। আমরা বিন্দু বিন্দু জল বাঁচাবো আর তার সঙ্গে প্রত্যেকটি জীবনও।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনারা দেখেছেন যে কিছুদিন আগে আমি আমাদের তরুণ বন্ধু আর ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে পরীক্ষা-পে-চর্চা করেছিলাম। এই চর্চার সময় কিছু ছাত্রছাত্রী বলেছিলেন যে তাদের অঙ্ক পরীক্ষার প্রতি ভীতি আছে। এরকম কথা অনেক বিদ্যার্থীই নিজেদের বার্তায় আমায় পাঠিয়েছিলেন। ওই সময়ই আমি স্থির করেছিলাম যে গণিতের উপর আমি মন কি বাতে নিশ্চয়ই চর্চা করব। বন্ধুরা, গনিত তো এমন একটি বিষয় যেটা আমাদের ভারতীয়দের কাছে সবচেয়ে বেশি সহজ হওয়া উচিত। কারণ গণিত নিয়ে সমগ্র বিশ্বের মধ্যে সবথেকে বেশি অবদান ও যোগদান ভারতীয়রাই করেছেন। শূণ্য অর্থাৎ জিরোর আবিষ্কার আর তার মাহাত্ম্য সম্বন্ধে আপনারা সবাই অনেক শুনেছেন। আপনারা এটাও অনেকবার শুনেছেন যে যদি শূন্য আবিষ্কার না হতো তাহলে হয়তো আমরা এত বৈজ্ঞানিক প্রগতি দেখতে পেতাম না। ক্যালকুলাস থেকে কম্পিউটার পর্যন্ত সব বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার জিরোর উপরেই তো আধারিত। ভারতের গণিতজ্ঞ এবং পণ্ডিতেরা এটাও উল্লেখ করেছেন
''যৎ কিঞ্চিৎ বস্তু তত্ সর্বং, গণিতেন বিনা নাহি।''
অর্থাৎ এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যা কিছু রয়েছে তার সবটাই অংক দিয়ে নির্মিত। আপনারা বিজ্ঞানের পড়াশোনার কথা মনে করুন তাহলে এই কথার অর্থ আপনারা বুঝতে পারবেন। বিজ্ঞানের সকল নীতি একটা গাণিতিক সূত্রের মাধ্যমে ব্যক্ত করা হয়। নিউটনের ল, আইনস্টাইনের ফেমাস ইকুয়েশন, বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানের সকল বিষয় আসলে অঙ্ক। এখনতো বৈজ্ঞানিকরাও থিওরি অফ এভরিথিং-এর কথা ও আলোচনা করেন। অর্থাৎ এমন একটা সিঙ্গেল ফর্মুলা যেটা এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সকল বিষয়কে একসঙ্গে যুক্তিপূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করে। আমাদের মুনি-ঋষিরা অঙ্কের সাহায্যে বিজ্ঞানের বিস্তার নিয়ে এমন কল্পনা সব সময় এভাবেই ব্যক্ত করেছেন। আমরা যেমন শূন্যের আবিষ্কার করেছি তেমনি অসীম অর্থাৎ ইনফিনিটিকেও প্রকাশ করেছি। আমরা কথা বলার সময় যখন যোগ বা সংখ্যার কথা বলি, তখন মিলিয়ন, বিলিয়ন এবং ট্রিলিয়ন পর্যন্ত বলি আর ভাবি। কিন্তু বেদে আর ভারতীয় গণিতে গণনা এইসব উচ্চসীমা অতিক্রম করে। আমাদের এখানে একটা পুরনো শ্লোক প্রচলিত আছে.
''একং দশং শতং চৈব, সহস্রম, অযুতং, তথা।
লক্ষ্যং, নিযুতং, চ্, কোটিঃ, অর্বুদম এব চ।।
বৃন্দং, খর্ব, নিখর্বঃ চ, শঙ্খঃ পদমঃ চ সাগরঃ
অন্ত্যং মধ্যং পরার্ধঃ চ, দশ বৃদ্ধয়া তথা ক্রমম।।
এই শ্লোকে সংখ্যার একটা অর্ডার বলা রয়েছে।
যেমন এক, দশ, একশ, হাজার আর অযুত। লাখ নিযুত আর কোটি অর্থাৎ ক্রোড়।
এভাবেই এই সংখ্যা এগোয়। সংখ, পদম্ এবং সাগর পর্যন্ত। এক সাগর-এর মানে ১০ এর গুণিতক ৫৭ পর্যন্ত। শুধু এটাই নয়, এরপরেও ঔধ, মহোধের মত সংখ্যাও রয়েছে। এক মহোঘ অর্থাৎ ১০-এর পাওয়ার ৬২ পর্যন্ত। মানে একের পর ৬২টা শূন্য। সিক্সটিটু জিরো। আমরা এত বড় সংখ্যা মাথায় চিন্তা করলেও আমাদের সমস্যা হয়, কিন্তু ভারতীয় গণিতশাস্ত্রে এর ব্যবহার হাজার হাজার বছর ধরে হয়ে এসেছে। এই কিছুদিন আগে আমার ইন্টেল কোম্পানির সি.ই.ও-র সঙ্গে দেখা হয়েছিল। উনি আমায় একটি পেন্টিং দিয়েছিলেন যেখানে বামন অবতার এর মাধ্যমে গণনা বা পরিমাপের ভারতীয় পদ্ধতি চিত্রের মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়েছে। ইন্টেলের নাম এলেই কম্পিউটারের কথা আপনার মাথায় নিশ্চয় এসেছে। কম্পিউটারের ভাষায় বাইনারী সিস্টেমের ব্যাপারে আপনারা অবশ্যই শুনেছেন, কিন্তু আপনারা কি জানেন যে আমাদের দেশে আচার্য পিঙ্গলার মত ঋষিরা ছিলেন যিনি বাইনারি কল্পনা করেছিলেন। এভাবেই আর্যভট্ট থেকে শুরু করে রামানুজন পর্যন্ত এমন বিশিষ্ট গণিতজ্ঞরা এরকম কত বিষয়ে এখানে কাজ করেছেন।
বন্ধুগণ, আমাদের ভারতীয়দের জন্য গণিত কখনই কঠিন বিষয় ছিল না। এর একটি বড় কারণ হল আমাদের বৈদিক গণিত। আধুনিক কালে বৈদিক গণিতের কৃতিত্ব দেওয়া হয় শ্রী ভারতী কৃষ্ণ তীর্থজী মহারাজকে। উনি গণনার প্রাচীন পদ্ধতি পুনর্জীবিত করেছেন এবং তাকে বৈদিক গণিতের নাম দিয়েছেন। বৈদিক গণিতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিশেষত্ব হলো যে আপনি এর মাধ্যমে কঠিন থেকে কঠিনতর গণনা চোখের পলকে মনে মনে করে ফেলতে পারবেন। আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ায়, যুব সম্প্রদায়ের তৈরী বৈদিক গণিত শেখার এবং শেখানোর এমন অনেক ভিডিও আপনি নিশ্চয়ই দেখে থাকবেন।
বন্ধুগণ, আজ 'মন কি বাতে' বৈদিক গণিত শেখায় এমন এক জন আমাদের সাথে যোগ দেবেন। সেই সাথী হচ্ছেন কলকাতার গৌরব টেকরীওয়াল জী। উনি বিগত দুই থেকে আড়াই দশক ধরে বৈদিক গণিতের আন্দোলনকে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আসুন, তাঁর সাথে কিছু কথা বলি।
মোদি জি- গৌরব জি নমস্কার!
গৌরব- নমস্কার স্যার।
মোদি জি- আমি শুনেছি যে আপনি বৈদিক গণিতের বিষয়ে খুব উৎসাহী । অনেক কিছু করেছেন। প্রথমে আমি আপনার বিষয়ে কিছু জানতে চাইব এবং তারপরে আপনার এই আগ্রহের বিষয়ে আমাকে জানাবেন।
গৌরব- স্যার কুড়ি বছর আগে আমি যখন বিজনেস স্কুলের জন্য আবেদন করছিলাম, তখন তার একটা প্রতিযোগিতামূলক ছিল, যার নাম হচ্ছে ক্যাট। তাতে গণিতের অনেক প্রশ্ন থাকত। যেগুলি কম সময়ের মধ্যে সমাধান করতে হত। তো আমার মা আমাকে একটা বই এনে দেয়, যার নাম ছিল বৈদিক গণিত। স্বামী শ্রী ভারতী কৃষ্ণ তীর্থ জি মহারাজ সে বইটি লিখেছিলেন। সে বইতে উনি ১৬টি সূত্র দিয়েছিলেন। যার মাধ্যমে গণিতের সমাধান খুব সহজ এবং দ্রুত করা যেত। যখন আমি বইটি পড়ি তখন আমি খুব অনুপ্রাণিত হই এবং তারপরে গণিতের প্রতি আমার আগ্রহ জন্ম নেয়। আমি বুঝতে পারি এই বিষয়, যেটি কিনা ভারতেরই উপহার, যা আমাদের ঐতিহ্য, তাকে বিশ্বের প্রতিটি কোণে কোণে পৌঁছে দিতে হবে। তখন থেকেই আমি বৈদিক গণিতকে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করি। কারণ গণিতের আতঙ্ক সবার মনেই আছে। আর বৈদিক গণিতের থেকে সরল আর কি বা হতে পারে !
মোদি জি- গৌরব জি কত বছর ধরে আপনি এই বিষয়ে কাজ করছেন?
গৌরব- আজ প্রায় কুড়ি বছর হয়ে গেল। আমি এই বিষয়ে চেষ্টা করে চলেছি।
মোদি জি- আর সচেতনতার জন্য কি করেছেন? কোন কোন উপায় ব্যবহার করছেন? কিভাবে পৌঁছাচ্ছেন মানুষের কাছে?
গৌরব - আমরা স্কুলে যাই, আমরা অনলাইন শিক্ষা দি। আমাদের সংস্থার নাম হল ভেদিক ম্যাক্স ফোরাম ইন্ডিয়া। এই সংস্থার পক্ষ থেকে আমরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ২৪ ঘন্টা বৈদিক অঙ্ক করাই স্যার।
মোদি জি- গৌরব জি, আপনি তো জানেন আমি নিয়মিত বাচ্চাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে পছন্দ করি এবং তার জন্য অবসর খুঁজি। আর "এক্সাম ওয়ারিয়রস" এর মাধ্যমে আমি তো তাদের বলতে গেলে এক রকম ইনস্টিটিউশনালাইজড করে দিয়েছি! আর আমার অভিজ্ঞতা হল, অধিকাংশ ক্ষেত্রে যখন বাচ্চাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলি তখন অংকের নাম শুনলেই তারা পালিয়ে যায়! আর তাই আমার চেষ্টা এটাই, অকারণে একটা যে আতঙ্কের আবহ তৈরি হয়েছে তাকে দূর করা, এই ভয় দূর করা। আর ছোট ছোট টেকনিক যেগুলি পরম্পরায় চলে আসছে তা ভারতের গণিত শাস্ত্রের ক্ষেত্রে কোন নতুন বিষয় নয়। সম্ভবত পৃথিবীতে প্রাচীন ভারতীয় পরম্পরা যেগুলি রয়েছে, তার মধ্যে গণিতের পরম্পরাও রয়েছে। সেক্ষেত্রে এক্সাম ওয়ারিয়রসদের ভয় দূর করার জন্য আপনি কী করবেন?
গৌরব- স্যার, এটা তো সবচেয়ে বেশি উপযোগী বাচ্চাদের জন্য। কারণ পরীক্ষার এই ভয় প্রত্যেক বাড়িতেই রয়েছে। পরীক্ষার জন্য বাচ্চারা টিউশন নেয়। বাবা মা-রা নাজেহাল হন। টিচাররাও জেরবার হয়ে পড়েন। বৈদিক গণিতের মাধ্যমে এসব ছুমন্তর হয়ে যায়। সাধারণ গণিত এর থেকে বৈদিক গণিত পনেরশো শতাংশ দ্রুত, আর এর মাধ্যমে বাচ্চাদের মধ্যে প্রচুর আত্মবিশ্বাস আসে এবং মস্তিষ্কও দ্রুত কাজ করে। আমরা বৈদিক গণিতের পাশাপাশি যোগও শুরু করেছি, যাতে বাচ্চারা যদি চায় তাহলে চোখ বন্ধ করেও হিসেব কষতে পারে বৈদিক গণিতের মাধ্যমে।
মোদি জি- ধ্যানের যে পরম্পরা আছে তাতেও এভাবে অংক করা বিষয়ে একটি প্রাইমারি কোর্স রয়েছে।
গৌরব- রাইট স্যার।
মোদি জি- আচ্ছা গৌরব জি। আমার খুব ভালো লাগলো। আপনি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই কাজের দায়িত্বভার নিয়েছেন আর বিশেষ করে আপনার মা এক উত্তম গুরুর উদাহরণস্বরূপ আপনাকে এই পথে নিয়ে এসেছেন। আর আজ আপনি লক্ষ লক্ষ বাচ্চাদের সেই রাস্তায় নিয়ে চলেছেন। আমার তরফ থেকে আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
গৌরব- ধন্যবাদ স্যার। আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ স্যার কারণ আপনি বৈদিক গণিতের মাহাত্ম্যকে স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং আমাকে বেছে নিয়েছেন। আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।
মোদি জি- অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।
গৌরব- নমস্কার স্যার।
বন্ধুরা গৌরব জি খুব সুন্দর ভাবে বললেন বৈদিক গণিত কিভাবে গণিতের সমস্যাকে মজাদার করে তুলতে পারে। শুধু তাই নয়, বৈদিক গণিতের মাধ্যমে আপনারা বিজ্ঞানের বড় বড় সমস্যার সমাধান করতে পারেন। আমি চাইব সব বাবা মা-রা নিজেদের সন্তানদের বৈদিক গণিত অবশ্যই শেখাবেন। তাতে ওদের আস্থা তো বাড়বেই, ব্রেনের অ্যানালিটিক্যাল পাওয়ারও বাড়বে। আর হ্যাঁ, গণিত নিয়ে কিছু বাচ্চার মধ্যে যেটুকু ভয় আছে সেই ভয়টুকুও পুরোপুরি কেটে যাবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ "মন কি বাতে" মিউজিয়াম থেকে শুরু করে গণিত পর্যন্ত অনেক জ্ঞানবর্ধক বিষয় নিয়ে আলোচনা হল। এইসব বিষয় আপনাদের পরামর্শ অনুসারেই ‘মন কি বাত’ এর অংশ হয়ে ওঠে। আমাকে আপনারা ভবিষ্যতেও এভাবেই আপনাদের পরামর্শ নমো অ্যাপ এবং মাই গভ এর মাধ্যমে পাঠাতে থাকবেন।
আগামী দিনে দেশে ঈদের উৎসব আসতে চলেছে। তেসরা মে অক্ষয় তৃতীয়া এবং ভগবান পরশুরাম এর জন্মতিথি উদযাপিত হবে। কিছুদিন পরেই বৈশাখ বুদ্ধ পূর্ণিমার উৎসব আসবে। এ সকল উৎসবই সংযম, পবিত্রতা, দান এবং সৌহার্দ্যের উৎসব। আপনাদের সবাইকে এই উৎসবগুলির অগ্রিম শুভকামনা জানাই। আপনারা এই উৎসবগুলি খুব আনন্দ ও সৌহার্দ্যের সঙ্গে উদযাপন করুন। এসবের মধ্যে আপনাদের করোনা থেকেও সতর্ক থাকতে হবে। মাস্ক পরা, নিয়মিত ব্যবধানে হাত ধোয়া, সুরক্ষার জন্য যা কিছু জরুরী সব কিছু আপনারা পালন করুন। আগামী "মন কি বাত" এ আমরা আবার মিলিত হব এবং আপনাদের পাঠানো আরও কিছু নতুন বিষয় সম্বন্ধে আলোচনা করব। ততক্ষণ পর্যন্ত আপনাদের থেকে বিদায় নিচ্ছি। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। গত সপ্তাহে আমরা এমন এক সাফল্য অর্জন করলাম যা আমাদের সবাইকে গর্বিত করেছে। আপনারা হয়ত শুনেছেন যে ভারত গত সপ্তাহে চারশো বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ৩০ লক্ষ কোটি টাকার রপ্তানীর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। প্রাথমিক ভাবে শুনে মনে হয় যে আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত একটা ব্যাপার, কিন্তু এটা আর্থিক ব্যবস্থার থেকেও বেশি, ভারতের সামর্থ্য, ভারতের সম্ভাবনার সঙ্গে যুক্ত বিষয়। এক সময় ভারত থেকে রপ্তানীর পরিমাণ কখনও একশো বিলিয়ন, কখনও দেড়শো বিলিয়ন, কখনও দু’শো বিলিয়ন হত, আর আজ, ভারত চারশো বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গিয়েছে। এর একটা অর্থ হল যে ভারতে তৈরি জিনিসের চাহিদা বাড়ছে বিশ্বজুড়ে, দ্বিতীয় অর্থ হল যে ভারতের সরবরাহ শৃঙ্খল দিনে-দিনে শক্তিশালী হয়ে উঠছে আর এর একটা গুরুত্বপূর্ণ বার্তাও রয়েছে। দেশ, বড় পদক্ষেপ তখনই নেয় যখন স্বপ্নের থেকেও বড় হয়ে ওঠে সঙ্কল্প। যখন রাতদিন নিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্কল্পের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন সেই সঙ্কল্প বাস্তবায়িতও হয়, আর আপনারা দেখুন, কোনও ব্যক্তির জীবনেও তো এমনটাই হয়। যখন কারও সঙ্কল্প, তাঁর চেষ্টা , তাঁর স্বপ্নের থেকেও বড় হয়ে যায় তখন সফলতা নিজে পায়ে হেঁটে তাঁর কাছে আসে।
বন্ধুগণ, দেশের নানা কোণ থেকে নতুন-নতুন পণ্য এখন বিদেশে যাচ্ছে। অসমের হাইলাকান্দির চামড়ার তৈরি পণ্য হোক বা উসমানাবাদের তাঁতের পণ্য, বীজাপুরের ফল-সব্জি হোক বা চন্দৌলির ব্ল্যাক রাইস, সবকিছুর রপ্তানী বাড়ছে। এখন লাদাখের বিশ্বখ্যাত অ্যাপ্রিকট আপনি দুবাইতেও পাবেন আর সৌদি আরবে তামিলনাড়ুর থেকে পাঠানো কলা পাওয়া যাবে। এখন সবথেকে বড় কথা হল যে নতুন-নতুন পণ্য, নতুন-নতুন দেশে পাঠানো হচ্ছে। যেমন হিমাচল, উত্তরাখণ্ডে উৎপন্ন বাজরা জাতীয় মোটা দানার শস্যের প্রথম কিস্তি ডেনমার্কে রপ্তানী করা হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশের কৃষ্ণা আর চিত্তুর জেলার বঙ্গনপল্লী আর সুবর্ণরেখা আম দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানী করা হয়েছে। ত্রিপুরা থেকে তাজা কাঁঠাল আকাশপথে লণ্ডনে রপ্তানী করা হয়েছে, আরও কী, প্রথম বার নাগাল্যাণ্ডের রাজালঙ্কা লণ্ডনে পাঠানো হয়েছে। এইভাবেই ভালিয়া গমের প্রথম কিস্তি গুজরাত থেকে কেনিয়া আর শ্রীলঙ্কায় রপ্তানী করা হয়েছে। অর্থাৎ, এখন আপনি অন্য দেশে গেলে, আগের থেকে অনেক বেশি মেড ইন ইণ্ডিয়া পণ্য আপনার চোখে পড়বে।
বন্ধুগণ, এই তালিকা অনেক লম্বা আর যত লম্বা এই তালিকা, ততটাই বড়ো মেক ইন ইণ্ডিয়ার শক্তি, ততটাই বিরাট ভারতের সামর্থ্য, আর সামর্থ্যের ভিত্তি – আমাদের কৃষক, আমাদের কারিগর, আমাদের তন্তুবায় শিল্পী, আমাদের ইঞ্জিনীয়ার, আমাদের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, আমাদের অতি ক্ষুদ্র , ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পোদ্যোগ, বিভিন্ন পেশার অনেক মানুষ, এঁরা সব এর সত্যিকারের শক্তি। এঁদের পরিশ্রমেই চারশো বিলিয়ন ডলারের রপ্তানীর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে আর আমি খুশী যে ভারতের মানুষের এই সামর্থ্য বিশ্বের কোণায়-কোণায়, নতুন বাজারে পৌঁছচ্ছে। যখন এক-একজন ভারতবাসী লোকালের জন্য ভোকাল হন তখন লোকালের গ্লোবাল হতে দেরি হয় না। আসুন, আমরা স্থানীয় পণ্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে নিয়ে যাই আর আমাদের উৎপাদিত বস্তুর খ্যাতি আরও বাড়াই।
বন্ধুরা, 'মন কি বাত'-এর শ্রোতাদের এটা জেনে ভালো লাগবে যে দেশীয় পর্যায়েও আমাদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সাফল্য আমাদের গর্বিত করে। আজ আমাদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সরকারি স্তরে ক্রয়-এর জন্য গভর্নমেন্ট ই-মার্কেট প্লেস অর্থাৎ জিইএম- এর বড় অংশীদার। প্রযুক্তির মাধ্যমে খুব স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। গত এক বছরে জিইএম পোর্টাল-এর মাধ্যমে সরকার, এক লক্ষ কোটি টাকার বেশি কেনাকাটা করেছে। দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, ছোটো দোকানদার তাদের পণ্য সরাসরি সরকারের কাছে বিক্রি করেছে। একটা সময় ছিল যখন শুধুমাত্র বড় কোম্পানিগুলিই সরকারের কাছে পণ্য বিক্রি করতে সক্ষম হতো। কিন্তু এখন দেশ বদলাচ্ছে, পুরনো ব্যবস্থাও বদলাচ্ছে। এখন ছোটোর চেয়ে ছোট দোকানদাররাও তাদের পণ্য জিইএম পোর্টালের মাধ্যমে সরকারের কাছে বিক্রি করতে পারে। এটাই নতুন ভারত। সে শুধু বড় স্বপ্নই দেখে না, সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর সাহসও দেখায়, যেখানে আগে কেউ আসেনি। এই সাহসের জোরেই আমরা ভারতীয়রা আত্ম নির্ভর ভারতের স্বপ্ন পূরণ করব।
আমার প্রিয় দেশবাসী, সাম্প্রতিক পদ্ম পুরস্কার অনুষ্ঠানে আপনারা নিশ্চয়ই বাবা শিবানন্দজিকে দেখেছেন। ১২৬ বছর বয়সী প্রবীনের উচ্ছ্বাস দেখে আমার মতো সবাই নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন, আর আমি দেখলাম, কিভাবে এক নিমেষে তিনি নন্দী মুদ্রায় প্রণাম করতে লাগলেন। আমিও বাবা শিবানন্দজিকে নত হয়ে বারবার প্রণাম করলাম। ১২৬ বছর বয়সী বাবা শিবানন্দের বয়স এবং ফিটনেস, দুটোই, আজ দেশে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকের মন্তব্য দেখলাম, যে বাবা শিবানন্দ তাঁর বয়সের চেয়ে চার গুণ কম বয়সীদের চেয়েও ফিট। সত্যিই, বাবা শিবানন্দের জীবন আমাদের সকলকে অনুপ্রাণিত করে। আমি তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করছি। ওঁর মধ্যে যোগব্যায়ামের প্রতি একটা আলাদা আবেগ আছে এবং তিনি খুব স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করেন।
জীবেম শরদহ্ শতম্।
আমাদের সংস্কৃতিতে সকলকে সুস্থ জীবনসহ শতায়ু হওয়ার শুভকামনা প্রদান করা হয়। আমরা ৭ই এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালন করব। আজ সমগ্র বিশ্বে স্বাস্থ্য নিয়ে ভারতীয় চিন্তাধারা, সেটা যোগ হোক অথবা আয়ুর্বেদ, সব কিছুর প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাচ্ছে। আপনারা দেখেছেন যে গত সপ্তাহে কাতারে একটি যোগ অনুশীলনের কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছিল। এতে ১১৪টি দেশের নাগরিকরা অংশগ্রহণ করে নতুন ওয়ার্ল্ড রেকর্ড তৈরি করেছেন। এভাবেই আয়ুস শিল্পের বিপণন ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ৬বছর আগে আয়ুর্বেদের সঙ্গে যুক্ত ওষুধের বাজার ২২,০০০ কোটি টাকার কাছাকাছি ছিল। এখন আয়ুষ উৎপাদন শিল্প প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার কোটির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে সম্ভাবনা অনবরত বেড়েই চলেছে। স্টার্ট আপসের দুনিয়াতেও আয়ুষ আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছে।
বন্ধুরা, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের অন্য স্টার্ট আপসের সম্বন্ধে তো আমি আগেও অনেকবার কথা বলেছি, কিন্তু এইবার আয়ুস স্টার্ট আপস নিয়ে আপনাদের সঙ্গে বিশেষভাবে কথা বলব। একটা স্টার্ট আপ রয়েছে যার নাম কপিভা। এই নামের মধ্যেই এর অর্থ লুকিয়ে রয়েছে - ক এর অর্থ কফ, পি এর অর্থ পিত্ত, এবং বা এর অর্থ বাত। এই স্টার্টআপ আমাদের ঐতিহ্য অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য গড়ে উঠেছে। আরেকটি স্টার্টআপ নিরোগ-স্ট্রীট রয়েছে, আয়ুর্বেদ চিকিৎসা ব্যবস্থার এক আশ্চর্য ধারণা। এখানে প্রযুক্তি ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা সারা পৃথিবীর আয়ুর্বেদ ডাক্তারদের সরাসরি সাধারন মানুষদের সঙ্গে যুক্ত করে। ৫০ হাজারেরও বেশি চিকিৎসক এর সঙ্গে যুক্ত। এমনই আত্রেয় ইনোভেশন একটি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের প্রযুক্তি সংক্রান্ত স্টার্ট আপ যা সর্বাঙ্গীণ সুস্থতার জন্য কাজ করছে। ইক্সোরিয়েল কেবলমাত্র অশ্বগন্ধা প্রয়োগ নিয়েই সচেতনতা বৃদ্ধি করেনি বরং উন্নত গুণমানের পণ্যসামগ্রীর বিষয়েও বড় মাত্রা যোগ করেছে। কিওরভেদাও শেকড়-বাকড় এর আধুনিক প্রয়োগ এবং এ বিষয়ের ঐতিহ্য ও জ্ঞানের সমন্বয়ে সর্বাঙ্গীণ জীবনযাত্রা নিয়ে ডায়েটরি সাপ্লিমেন্টসের তৈরি করেছে।
বন্ধুরা, আমি মাত্র কয়েকটা নাম বললাম, এই লিস্ট আসলে অনেক লম্বা। এটি ভারতের তরুণ উদ্যম এবং ভারতে তৈরি নতুন সম্ভাবনার প্রতীক। আমার স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নতুন শিল্পোদ্যোগ বা স্টার্ট-আপ্সের বিশেষতঃ আয়ুষ স্টার্ট-আপ্সের কাছে একটা অনুরোধ রয়েছে। আপনারা অনলাইনে যে কোনও পোর্টাল তৈরি করুন, যা কিছু বিষয়বস্তু রচনা করুন করুন, তা রাষ্ট্রসঙ্ঘের মান্যতা প্রাপ্ত সবকটি ভাষায় তৈরি করার চেষ্টা করুন। বিশ্বে এমন বহু দেশ রয়েছে যেখানে ইংরাজি না বিশেষ বলা হয়, না কেউ বিশেষ বোঝে। সেই সব দেশের কথা মাথায় রেখে আপনারা তথ্যের প্রচার-প্রসার করুন। আমার বিশ্বাস, ভারতের আয়ুষ স্টার্ট-আপ্সের উন্নত গুণমানের পণ্য খুব শীঘ্রই বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।
বন্ধুরা, স্বাস্থ্যের সঙ্গে স্বচ্ছতার সোজাসুজি সম্পর্ক রয়েছে। "মন কি বাত"-এ আমরা সবসময় স্বচ্ছতায় আগ্রহীদের বিভিন্ন প্রচেষ্টা সম্পর্কে বলি। এমনি একজন স্বচ্ছতাগ্রহী হলেন চন্দ্রকিশোর পাতিলজি। উনি মহারাষ্ট্রের নাসিকে থাকেন। চন্দ্রকিশোরজি স্বচ্ছতা সম্পর্কে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। তিনি গোদাবরী নদীর তীরে দাঁড়িয়ে জনসাধারণকে নদীতে আবর্জনা না ফেলতে উদ্বুদ্ধ করেন। যদি কাউকে আবর্জনা ফেলতে দেখেন, তৎক্ষণাৎ তাকে বারণ করেন। এই কাজে চন্দ্রকিশোরজি নিজের অনেক সময় ব্যয় করেন। বিকেল অব্দি তাঁর কাছে স্তুপাকৃত আবর্জনার জমা হয়ে যায়, যা সবাই নদীর জলে ফেলার জন্য এনেছিল। চন্দ্রকিশোরজির এই প্রচেষ্টা, সচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং অনুপ্রেরণাও যোগায়। এই রকম আরো একজন স্বচ্ছতাগ্রহী - উড়িষ্যার পুরীর রাহুল মহারাণা। রাহুল প্রতি রবিবার সকাল-সকাল পুরীতে তীর্থ ক্ষেত্র ঘুরে ঘুরে প্লাস্টিকের আবর্জনা পরিষ্কার করেন। উনি এখনো পর্যন্ত কয়েকশো কিলো প্লাস্টিকের আবর্জনা ও জঞ্জাল পরিষ্কার করেছেন। পুরীর রাহুল হোক বা নাসিকের চন্দ্রকিশোর, এঁরা সবাই আমাদের অনেক কিছু শেখান। নাগরিক হওয়ার দরুন আমরা আমাদের কর্তব্য পালন করি, তা সে স্বচ্ছতা হোক, পুষ্টি হোক, বা টিকাকরণ, এই সকল প্রয়াস আমাদের সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এবারে বলবো কেরালার মুপত্তাম শ্রী নারায়ণনজী কথা। তিনি এক প্রকল্প শুরু করেছেন যার নাম - ‘পটস ফর ওয়াটার অফ লাইফ’. আপনি যখন এই প্রকল্প সম্পর্কে জানবেন তখন ভাববেন কি অসাধারণ এই কাজ।
বন্ধুরা, গ্রীষ্মকালে পশুপাখিরা যাতে পানীয় জলের অভাবে কষ্ট না পায় সেজন্য মূপট্টম শ্রী নারায়ণনজী মাটির পাত্র বিলি করার কাজ করে চলেছেন। গরমে তিনি পশুপাখিদের এই কষ্ট দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠতেন। তখন তিনি ভাবলেন, কেমন হয় যদি নিজেই মাটির পাত্র বিলি করা শুরু করেন... তাহলে অন্তত অন্যদের জন্য শুধু সেই পাত্র গুলোয় কেবল জল ভরার কাজটিই পড়ে থাকে! আপনারা শুনলে অবাক হয়ে যাবেন, নারায়ণনজী যত মাটির পাত্র বন্টন করেছেন, তার সংখ্যা এক লক্ষের গন্ডী পার করতে চলেছে। তার এই অভিযানে, এক লক্ষ-তম পাত্রটি তিনি গান্ধীজী স্থাপিত সবরমতী আশ্রমে প্রদান করবেন। ঠিক এই সময়, যখন গ্রীষ্মের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে, তখন নারায়ণনজী'র এই কাজ আমাদের সকলকে নিশ্চয়ই অনুপ্রাণিত করবে, এবং আমরাও এই গ্রীষ্মে পশুপাখি বন্ধুদের জন্য জলের ব্যবস্থা করব!
বন্ধুরা, আমি মন-কী-বাত অনুষ্ঠানের শ্রোতাদেরও অনুরোধ করবো, আমরা যেন সেই প্রতিজ্ঞা অবশ্যই পালন করি। পানীয় জলের প্রতিটি বিন্দু সংরক্ষণের জন্য আমরা যা কিছু করতে পারি তা যেন অবশ্যই করি। তাছাড়া, জলের পুনর্ব্যবহারের বিষয়েও আমাদের সমান গুরুত্ব দিতে হবে। গৃহস্থালির ব্যবহার করা জল ধোয়ার কাজে এবং বাগানে জল দেবার কাজে পুনরায় ব্যবহার করা উচিত। সামান্য চেষ্টা করলেই আপনি আপনার বাড়িতেই এমন ব্যবস্থা করে নিতে পারবেন। রহীম দাসজী বহু যুগ আগে হয়তো সেই উদ্দেশ্যেই বলে গিয়েছিলেন - "রহিমান পানি রাখিয়ে, বিন পানি সব শূন" অর্থাৎ এই বলে রহিম জী জলের মাহাত্য বোঝাতে চেয়েছিলেন। কারণ জল ছাড়া সবকিছুই বৃথা। জল সংরক্ষণের এই কাজে আমি ছোট্ট বন্ধুদের কাছে অনেক বেশি প্রত্যাশা করি। স্বচ্ছতাকে যেভাবে আমাদের ছোট্ট ছোট্ট বন্ধুরা জন-আন্দোলনে পরিণত করেছে, ঠিক সেভাবেই ওয়াটার ওয়ারিয়র হয়ে তারা জল সংরক্ষণেও সহায়তা করতে পারে।
বন্ধুরা, চিরকালই আমাদের দেশে পানীয় জলের সংরক্ষণ ও জলের উৎস গুলির সুরক্ষা করা আমাদের সামাজিক উদ্যোগের একটা অংশ। আমি আনন্দিত যে আমাদের দেশে অনেকেই জল সংরক্ষণকে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে গ্রহণ করেছেন করে। যেমন চেন্নাইয়ের এক বন্ধু অরুণ কৃষ্ণমূর্তি জী। অরুন জী, তার এলাকায় পুকুর ও দীঘিগুলি পরিষ্কার রাখার কাজ করে চলেছেন। উনি দেড়শোর-ও বেশী দিঘি ও পুকুর পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, এবং তা সাফল্যের সঙ্গে পূর্ণও করেছেন। ঠিক সেরকমই মহারাষ্ট্রের এক বন্ধু রোহন কালে। রোহন পেশাগতভাবে একজন এইচআর প্রোফেশনাল। তিনি মহারাষ্ট্রের শত শত স্টেপওয়েলস অর্থাৎ সিঁড়ি যুক্ত পুরনো জলুকুপগুলির সংরক্ষণের প্রচার চালাচ্ছেন। এগুলোর মধ্যে অনেক কুয়োই বহু প্রাচীন, এবং আমাদের পরম্পরার একটা অংশ।
সিকান্দ্রাবাদের বংশী লাল পেট কুঁয়ো এরকমই একটি step well। বহু বছর উপেক্ষিত থাকার ফলে এই স্টেপ ওয়েল মাটি আর আবর্জনায় ভরে গেছিল। কিন্তু এখন এই স্টেপ ওয়েল-কে পুনরুজ্জীবিত করার অভিযান জন অংশীদারির মাধ্যমে শুরু হয়েছে।
বন্ধুরা, আমি তো সেই রাজ্য থেকে এসেছি, যেখানে সবসময়ই জলের ঘাটতি থাকে। গুজরাতে এই স্টেপ ওয়েল-কে ভাভ বলা হয়। গুজরাতের মতো রাজ্যে ভাভের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কুঁয়ো বা বাউড়ি সংরক্ষণে 'জল মন্দির যোজনা' একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। পুরো গুজরাটে অনেক বাউড়িকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে। এর ফলে এই এলাকায় জলস্তর বৃদ্ধিতেও সাহায্য হয়েছে। এরকমই অভিযান আপনারা স্থানীয় স্তরেও চালাতে পারেন। চেক ড্যাম বানানো হোক বা বৃষ্টির জল সংরক্ষণ, ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনই সমষ্টিগত প্রচেষ্টারও প্রয়োজন আছে। যেরকম স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে আমাদের দেশের প্রত্যেক জেলায় অন্তত ৭৫টি অমৃত সরোবর বানানো যেতে পারে। কিছু পুরানো সরোবরকে সংস্কার করা যেতে পারে আর কিছু নতুন সরোবরও বানানো যেতে পারে। আমার বিশ্বাস আপনারা এই লক্ষ্যে কিছু না কিছু উদ্যোগ নিশ্চয়ই নেবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী 'মন কি বাত'-এর একটা সৌন্দর্য এটাও যে এখানে আমি আপনাদের বার্তা বিভিন্ন ভাষায় ও বিভিন্ন উপভাষায় পাই। অনেকে মাইগভে অডিও মেসেজও পাঠান। ভারতের সংস্কৃতি, আমাদের ভাষা, আমাদের উপভাষা, আমাদের থাকা-খাওয়ার অভ্যাস, এইসব বিবিধতা আমাদের অনেক বড় শক্তি। পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত ভারতের এই বিবিধতা ভারতকে এক করে রেখেছে, 'এক ভারত-শ্রেষ্ঠ ভারত' বানিয়েছে। আর এতেও আমাদের ঐতিহাসিক স্থান আর পৌরাণিক কাহিনী উভয়েরই ভূমিকা আছে। আপনি ভাবছেন এই কথাগুলো আমি এখন আপনাদের কেন বলছি। এর কারণ হলো মাধবপুর মেলা। মাধবপুর মেলা কোথায় বসে, কেন বসে, কিভাবে এটি ভারতের বিবিধতার সঙ্গে জড়িত এটা জানতে শ্রোতাদের খুব আকর্ষণীয় লাগবে।
বন্ধুরা, মাধবপুর মেলা গুজরাটের পোরবন্দরে সমুদ্রতটে অবস্থিত মাধবপুর গ্রামে হয়। কিন্তু এই মেলার সঙ্গে ভারতের পূর্বভাগেরও সম্পর্ক রয়েছে। আপনারা ভাবছেন এও কী করে সম্ভব? এই প্রশ্নের উত্তরও পুরাণের এক আখ্যানে পাওয়া যায় কথিত আছে হাজার-হাজার বছর আগে, ভগবান শ্রী কৃষ্ণের বিবাহ উত্তরপূর্বের রাজকুমারী রুক্মিণীর সঙ্গে হয়েছিল। এই বিবাহ পোরবন্দরের মাধবপুর গ্রামে সম্পন্ন হয়েছিল আর সেই বিবাহের প্রতীক হিসেবে আজও ওই জায়গায় মাধবপুর মেলা অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব আর পশ্চিমের এই গভীর সম্পর্ক আমাদের ঐতিহ্য। সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে এবং মানুষের প্রয়াসে এখন মাধবপুরের মেলায় নতুন-নতুন জিনিস যুক্ত হচ্ছে।
আমাদের এখানে কন্যা পক্ষকে ঘরাতি বলে এবং আজকাল এই মেলার সময় উত্তরপূর্ব থেকে বহু ঘরাতি আসছেন। এক সপ্তাহ ধরে চলা এই মেলায় এখন উত্তরপূর্ব অঞ্চলের সব রাজ্য থেকে শিল্পী আসেন, হস্তশিল্পের সঙ্গে যুক্ত বহু শিল্পী আসেন এবং এই মেলাকে আরও উজ্জ্বল করে তোলেন।
এক সপ্তাহ ধরে চলা এই মাধবপুর মেলায় পশ্চিম ও পূর্বের সংস্কৃতির অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটে এবং এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতের এক অপরুপ নিদর্শন হয়ে ওঠে এই মেলা। আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি এই মেলার সম্বন্ধে পড়ুন ও জানুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, দেশে চলা আজাদী কী অমৃত মহোৎসব জনসাধারণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুন্দর নিদর্শন হয়ে উঠছে। কিছুদিন আগে ২৩শে মার্চ শহীদ দিবসের দিন দেশের ভিন্ন-ভিন্ন অংশে বহু অনুষ্ঠান হয়। আমাদের দেশ স্বাধীনতার নায়ক-নায়িকাদের শ্রদ্ধাপূর্বক স্মরণ করে ওই দিন। ওই দিনই কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের বিপ্লবী ভারত গ্যালারি জনসাধারণের জন্য উৎসর্গ করার সুযোগ হয় আমার।
ভারতের বীর বিপ্লবীদের প্রতি শ্রদ্ধা অর্পণের জন্য সৃষ্ট এটি একটি বিশেষ গ্যালারি। সময় পেলে অবশ্যই এই গ্যালারিটি দেখতে যাবেন আপনারা। বন্ধুরা এপ্রিল মাসে আমরা দু’জন বিখ্যাত মানুষের জন্মবার্ষিকী পালন করব। এঁরা দুজনেই ভারতীয় সমাজের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিলেন। এই দু’জন মহতি হলেন মহাত্মা ফুলে এবং বাবাসাহেব আম্বেদকর। মহাত্মা ফুলের জন্ম জয়ন্তী ১১ই এপ্রিল এবং বাবাসাহেবের জন্মজয়ন্তী আমরা ১৪ই এপ্রিল পালন করব। এই দুই মহাপুরুষ ভেদাভেদ এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিশাল সংগ্রাম করেন। মহাত্মা ফুলে ওই সময়ে মেয়েদের জন্য স্কুল খোলেন, কন্যা শিশু হত্যার বিরুদ্ধাচরণ করেন। তিনি জলসঙ্কট থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যও বড় অভিযান চালান।
বন্ধুগণ, মহাত্মা ফুলের বিষয়ে আলোচনার সময় সাবিত্রী বাই ফুলের উল্লেখ করাও জরুরী। সাবিত্রী বাই ফুলে বিভিন্ন সামাজিক সংস্থার নির্মাণে বড়ো ভূমিকা পালন করেছিলেন। একজন শিক্ষিকা এবং একজন সমাজ সংস্কারক হিসেবে উনি সমাজে চেতনা সৃষ্টি করেছিলেন এবং সাহসও জুগিয়েছিলেন। দুজনে মিলে সত্যশোধক সমাজের প্রতিষ্ঠা করেন। মানুষের ক্ষমতায়নের চেষ্টা করেন। আমরা বাবা সাহেব আম্বেদকরের কাজেও মহাত্মা ফুলের প্রভাব পরিষ্কার দেখতে পাই। উনি বলতেন কোনো সমাজের বিকাশের মূল্যায়ন সেই সমাজের মহিলাদের অবস্থা দেখে বোঝা যায়। মহাত্মা ফুলে, সাবিত্রী বাই ফুলে, বাবা সাহেব আম্বেদকরের জীবন থেকে প্রেরণা নিয়ে আমি প্রত্যেক মা-বাবা, অভিভাবকদের অনুরোধ করছি যে তাঁরা যেন মেয়েদের অবশ্যই শিক্ষিত করেন। মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করানোর সংখ্যা আরও বাড়ানোর জন্য কিছুদিন আগেই কন্যা শিক্ষা প্রবেশ উৎসব শুরু করা হয়েছে, যে মেয়ের পড়াশোনা কোনো কারণে মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে, তাদের দ্বিতীয়বার স্কুলে ভর্তি করানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বন্ধুরা, এটা আমাদের সকলের জন্য সৌভাগ্যের কথা যে বাবা সাহেবের সঙ্গে জুড়ে থাকা পাঁচটি তীর্থস্থানের জন্য কাজ করার সুযোগ পাওয়া গেছে। ওঁর জন্মস্থান মহু হোক, মুম্বাইতে চৈত্যভূমি হোক, লন্ডনে ওঁর বাড়ী হোক, নাগপুরে দীক্ষাভূমি হোক বা দিল্লিতে মহাপরিনির্বান স্থল, আমার সব স্থানগুলিতে, সব তীর্থস্থানগুলিতে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। আমি মন কি বাতের শ্রোতাদের কাছে অনুরোধ করবো যে তাঁরা যেন মহাত্মা ফুলে, সাবিত্রী বাই ফুলে, বাবা সাহেব আম্বেদকরের সঙ্গে জুড়ে থাকা সবকটি জায়গা দর্শন করেন। আপনার সেখানে অনেক কিছু শেখার বিষয় পাবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, মন কি বাত অনুষ্ঠানে এইবারেও অনেক বিষয়ে কথা বললাম। আগামী মাসে অনেক উৎসব আসছে। কিছুদিন বাদেই নবরাত্রি আসছে। নবরাত্রিতে আমরা ব্রত-উপবাস, শক্তির আরাধনা করি, শক্তির পূজা করি, অর্থাৎ আমাদের সংস্কার আমাদের আনন্দ করতে শেখায় আবার নিয়ন্ত্রণ করতেও শেখায়। দৃঢ়তা এবং তপস্যা আমাদের কাছে উৎসবই, সেইজন্য নবরাত্রি আমাদের সবার কাছে খুবই বিশেষ পার্বণ। নবরাত্রির প্রথম দিনই গুড়িপাড়োয়া উৎসব আছে। এপ্রিল মাসেই ইস্টারও আছে আবার রমজানের পবিত্র দিনও শুরু হচ্ছে। আমরা সকলকে সঙ্গে নিয়ে নিজেদের উৎসব পালন করবো, ভারতের বৈচিত্রকে আরও শক্তিশালী করবো। সবার এটাই কামনা। এইবারে মন কি বাতে এইটুকুই। আগামী মাসে আপনাদের সঙ্গে নতুন বিষয়ে কথা বলবো।
অনেক অনেক ধন্যবাদ
আমার প্রিয় দেশবাসীরা, নমস্কার। 'মন কি বাত'- এ আপনাদের সকলকে আরও একবার স্বাগত জানাই। আজ আমরা 'মন কি বাত' শুরু করব ভারতের সাফল্যের বিষয় উল্লেখ করে। এই মাসের শুরুতে, ভারত ইটালি থেকে নিজের এক বহুমূল্য ঐতিহ্য ফেরত আনতে সফল হয়েছে। এই ঐতিহ্য হলো অবলোকিতেশ্বর পদ্মপাণির হাজার বছরের থেকেও বেশি পুরনো এক মূর্তি। কয়েক বছর আগে এই মূর্তিটি বিহারের গয়াজী দেবীর স্থান কুন্ডলপুর মন্দির থেকে চুরি হয়েছিল। কিন্তু অনেক চেষ্টার পর ভারত এই মূর্তিটি ফিরিয়ে আনতে পেরেছে। একইভাবে কয়েক বছর আগে তামিলনাড়ুর ভেলোর থেকে ভগবান অঞ্জনেয়ার হনুমানজীর মূর্তি চুরি হয়েছিল। হনুমানজীর এই মূর্তিটিও ৬০০-৭০০ বছরের পুরনো ছিল। এই মাসের শুরুতে অস্ট্রেলিয়াতে আমরা এটি পেয়েছি। আমাদের মিশন এটি পেয়েছে।
বন্ধুরা, হাজার হাজার বছরের আমাদের ইতিহাসে, দেশের কোণে কোণে, একের পর এক মূর্তি সর্বদাই তৈরি হতো, তাতে শ্রদ্ধা ছিল, শক্তি ছিল, দক্ষতা ছিল এবং তা ছিল বৈচিত্র্যে ভরপুর । আমাদের প্রতিটি মূর্তির ইতিহাসে তৎকালীন সময়ের প্রভাব স্পষ্ট ছিল। এগুলি ভারতীয় ভাস্কর্যের এক অপূর্ব নিদর্শন তো ছিলই, তাদের প্রতি আমাদের বিশ্বাসও যুক্ত ছিল। কিন্তু অতীতে অনেক মূর্তি চুরি করে ভারতের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কখনও এদেশে, কখনো ওদেশে এসব মূর্তি বিক্রি হতো এবং তাদের কাছে সেগুলো ছিল শুধুই শিল্পকর্ম। বিশ্বাস বা ইতিহাসের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক ছিল না। ভারতমাতার প্রতি আমাদের দায়িত্ব হল এই মূর্তি গুলো ফিরিয়ে আনা। এই মূর্তিগুলিতে ভারতের আত্মা আছে, বিশ্বাসের অংশ আছে। তাদের সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক গুরুত্বও রয়েছে। এই দায়িত্বের কথা উপলব্ধি করে ভারত নিজের উদ্যোগ বৃদ্ধি করে। এর ফলে , চুরি করার প্রবৃত্তি যাদের মধ্যে ছিল, তাদের মধ্যে এক ভয় জন্ম নেয়। যেসব দেশে এই মূর্তিগুলি চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তারাও এখন মনে করতে শুরু করেছে যে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কোমল শক্তির যে কূটনৈতিক যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে, সেখানেও মূর্তিগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ, এর সঙ্গে ভারতের অনুভূতি জড়িত, ভারতের শ্রদ্ধা যুক্ত। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে যা শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারে। এই কিছুদিন আগেও আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন, কাশি থেকে চুরি হয়ে যাওয়া মা অন্নপূর্ণা দেবীর মূর্তিও ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এটি ভারতের প্রতি বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের একটি উদাহরণ। ২০১৩ সাল পর্যন্ত মোটামুটি ১৩টি প্রতিমা ভারতে ফিরে এসেছিল। কিন্তু গত সাত বছরে ভারত সাফল্যের সাথে ২০০টিরও বেশি মূল্যবান মূর্তি ফিরিয়ে এনেছে। আমেরিকা, বৃটেন হল্যান্ড, ফ্রান্স, কানাডা, জার্মানি, সিঙ্গাপুর, এরকম অনেক দেশ ভারতের এই আবেগ বুঝতে পেরেছে এবং মূর্তিগুলোকে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে যখন আমি আমেরিকায় গিয়েছিলাম, তখন সেখানে অনেক পুরোনো মূর্তি এবং সাংস্কৃতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস পেয়েছিলাম। দেশের কোনো মূল্যবান ঐতিহ্য যখন দেশে ফেরত আসে, তখন ইতিহাসের প্রতি যারা শ্রদ্ধাশীল, প্রত্নতত্ত্বের প্রতি যাঁদের আস্থা রয়েছে, বিশ্বাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা এবং সর্বোপরি একজন ভারতীয় হিসেবে আমাদের সকলের সন্তুষ্টি খুবই স্বাভাবিক।
বন্ধুরা, ভারতীয় সংস্কৃতি এবং আমাদের ঐতিহ্যের কথা বলতে গিয়ে আমি আজ আপনাদের মন কি বাত অনুষ্ঠানে দু’জন লোকের কথা শোনাতে চাই। কয়েকদিন ধরে ফেসবুক, টুইটার এবং ইনস্টাগ্রামে তানজানিয়ার দুই ভাই-বোন কিলি পল এবং তার বোন নীমাকে নিয়ে নানান কথাবার্তা হচ্ছে, আর আমার বিশ্বাস আপনারাও ওঁদের কথা অবশ্যই শুনেছেন। ওঁদের মধ্যে ভারতীয় সঙ্গীত নিয়ে বিশেষ উন্মাদনা রয়েছে, ভালোবাসা রয়েছে আর তাই ওঁরা ভীষণভাবেই জনপ্রিয়। ওঁদের যথাযথভাবে ঠোঁট নাড়ানো দেখে বোঝা যায় যে ওঁরা এই বিষয়টার জন্য কতটা পরিশ্রম করেন। কিছুদিন আগেই সাধারণতন্ত্র দিবসে আমাদের জাতীয় সংগীত 'জণ গণ মন' গাওয়ার সময় ওদের ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। কয়েকদিন আগেই ওঁরা লতা দিদির একটি গান গেয়ে তাঁকে আবেগপ্রবণ শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়েছেন, আমি এই অদ্ভুত সৃজনশীলতার জন্য এই দু’জন ভাই-বোন কিলি আর নীমা - দু'জনকেই ভীষণভাবে প্রশংসাসূচক দৃষ্টিতে দেখি। কয়েকদিন আগে তানজানিয়ায় ভারতীয় দূতাবাসে এঁদের বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে। ভারতীয় সংগীতের জাদু এমনই যে সবাইকে তা আকৃষ্ট করে। আমার মনে আছে কয়েক বছর আগে দেড়শোর থেকেও বেশি দেশে গায়ক-গায়িকা এবং সঙ্গীতজ্ঞরা নিজেদের দেশে নিজেদের পোশাকে পরম পূজনীয় বাপুর প্রিয় অর্থাৎ মহাত্মা গান্ধীর প্রিয় ভজন 'বৈষ্ণব জন' গাওয়ার সফল চেষ্টা করেছেন।
আজ যখন ভারত নিজের স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকীর মতো গুরুত্বপূর্ণ উৎসব উদযাপন করছে, তখন দেশভক্তির গান নিয়েও এমন উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এখন বিদেশি নাগরিকরা সেখানকার বিখ্যাত গায়কদের ভারতের দেশভক্তির গান গাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। শুধু এটাই নয়, যদি তানজানিয়ায় কিলি আর নীমা ভারতের গান এভাবে লিপ-সিংক করে গাইতে পারে তাহলে আমার দেশে আমাদের দেশের অনেক ভাষায় এমন অনেক গান আছে, যা নিয়ে আমরাও এমন চেষ্টা করতে পারি। কোন গুজরাতি শিশু তামিল সংগীতের উপর করতে পারে, কোন কেরলের শিশু আসামের সংগীতের উপর করতে পারে, আবার কোন কন্নড় শিশু জম্মু-কাশ্মীরের গানের উপর করতে পারে। একটা এমন পরিবেশ আমরা তৈরি করতে পারি আমরা যেখানে ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-কে অনুভব করতে পারব। শুধু তাই নয় আমরা ‘আজাদী কা অমৃত মহোৎসবকে’ এরকম নতুন ভাবে পালন করতে পারি। আমি দেশের যুবক-যুবতীদের আহ্বান জানাচ্ছি যে আসুন ভারতীয় ভাষায় যেসব জনপ্রিয় গান রয়েছে আপনারা নিজেদের মতন করে তার ভিডিও বানান, আপনারাও জনপ্রিয় হবেন। আর দেশের বৈচিত্র্যের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের পরিচয়ও হবে ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এই কয়েকদিন আগেই আমরা মাতৃভাষা দিবস পালন করেছি। বিদ্বান মানুষেরা মাতৃভাষা শব্দ কোথা থেকে এসেছে, কেমনভাবে এই শব্দের উৎপত্তি হয়েছে তা নিয়ে অনেক একাডেমিক শিক্ষামূলক তথ্য দিতে পারেন। আমি তো মাতৃভাষার জন্য এটাই বলতে পারি যেভাবে আমাদের জীবনকে যেভাবে আমাদের মা গড়ে দেয়, মাতৃভাষাও সেভাবেই আমাদের জীবনকে তৈরি করে। মা আর মাতৃভাষা দুইয়ে মিলেই জীবনের ভিত্তি মজবুত করে, তাকে চিরন্তন রাখে। যেমন আমরা আমাদের মাকে কখনোই ছাড়তে পারি না তেমন ভাবেই নিজের মাতৃভাষাকেও ছাড়তে পারিনা। আমার অনেক বছর আগের এক কথা মনে পড়ছে, আমি যখন আমেরিকা যাচ্ছিলাম, আলাদা আলাদা পরিবারের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলাম, একবার এক তেলুগু পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম আমি, সেখানে খুব খুশির এক দৃশ্য দেখেছিলাম। সেই পরিবারের একজন আমায় বলেছিল যে তাঁরা তাঁদের পরিবারের মধ্যে একটি নিয়ম তৈরি করেছেন যে যতই কাজ থাকুক, তারা যদি শহরের বাইরে না থাকেন তাহলে পরিবারের সকল সদস্য ডিনার টেবিলে বসে একসঙ্গে রাতের খাবার খাবেন আর ডিনার টেবিলে অবশ্যই সকলে তেলুগু ভাষায় কথা বলবেন।
যে বাচ্চারা ওখানে জন্মেছিল, তাদের জন্যও এই নিয়ম বাধ্যতামূলক ছিল। নিজের মাতৃভাষার প্রতি এই পরিবারের প্রেম দেখে আমি খুবই প্রভাবিত হয়েছি।
বন্ধুরা, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও কিছু মানুষ এক মানসিক দ্বন্দ্বে ভোগেন, যার কারণে তারা নিজেদের ভাষা, পোশাক-আসাক, খাদ্যাভ্যাস নিয়ে সংকোচ বোধ করেন। এমনটা বিশ্বে আর কোথাও নেই। আমাদের গর্বের সঙ্গে নিজেদের মাতৃভাষায় কথা বলা উচিৎ। আর ভাষার ব্যাপারে ভারত এত সমৃদ্ধ যে পৃথিবীতে এর তুলনাই নেই আর। আমাদের ভাষা গুলির সৌন্দর্য হল- কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত, কচ্ছ থেকে কোহিমা পর্যন্ত, শত ভাষা, হাজার বুলি একে অন্যের থেকে একদম আলাদা হয়েও কোথাও গিয়ে ভাবাদর্শে এক। ভাষা অনেক, ভাব এক। বহু বছর ধরে আমাদের ভাষাগুলি একে অন্যের থেকে শিখে আসছে, একে অপরকে সমৃদ্ধ করেছে, একে অপরের বিকাশে সহায়ক হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ভাষা - তামিল আর ভারতীয় হিসেবে আমাদের গর্ব হওয়া উচিৎ যে আমাদের কাছে এরকম এক ঐতিহ্য আছে। এভাবেই যত পুরানো ধর্মশাস্ত্রগুলি আছে, তার অভিব্যক্তিও আমাদের সংস্কৃত ভাষায় আছে। ভারতবাসী প্রায় ১২১ কোটি। অর্থাৎ এটা গর্বের বিষয় যে ১২১ রকমের মাতৃভাষা এই দেশে রয়েছে। আর এর মধ্যে ১৪টি এমন ভাষা আছে, যাতে অন্তত এক কোটি মানুষ রোজ কথা বলেন, ব্যবহার করেন; অর্থাৎ, অনেক ইউরোপীয় দেশের জনসংখ্যা এক কোটিরও কম, তার চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ এই ১৪টি ভাষার সাথে যুক্ত। ২০১৯-এ হিন্দি বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভাষাগুলির মধ্যে তৃতীয় স্থানে ছিল। ভারতীয়দের এই বিষয়ে গর্ব হওয়া উচিৎ। ভাষা কেবল অভিব্যক্তি প্রকাশের এক মাধ্যম নয়, ভাষা সমাজের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বাচিঁয়ে রাখে। নিজের ভাষার ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছেন সুরিনামের সুরজন পরোহিজি। এই মাসের ২ তারিখে ওঁর ৮৪ বছর বয়স হল। ওঁর পূর্ব পুরুষরা বহু বছর আগে, রুজিরোজগারের খোঁজে হাজারো শ্রমিকদের সাথে সুরিনাম গিয়েছিলেন। সুরজন পরোহিজি হিন্দিতে চমৎকার কবিতা লেখেন। ওঁকে ওখানকার জাতীয় কবিদের মধ্যে গন্য করা হয়। আজও ওঁর ভারতের প্রতি ভালবাসা অটুট, মাটির টান বিদ্যমান। সুরিনামের লোকেরা সুরজন পরোহিজির নামে একটি সংগ্রহশালাও বানিয়েছেন। আমার জন্য একটি খুবই আনন্দের মূহুর্ত ছিল যখন আমি ২০১৫-তে ওঁকে সম্মানিত করার সুযোগ পাই।
বন্ধুরা, আজকে, অর্থাৎ ২৭শে ফেব্রুয়ারী মারাঠি ভাষা গৌরব দিবস।
সর্ব মারাঠী বন্ধু, ভগিনিনা মারাঠি ভাষা, দিনাচ্চা হার্দিক শুভেচ্ছা।
"সব মারাঠি বন্ধু, বোনেদের মারাঠি ভাষা দিবসের শুভেচ্ছা।"
মারাঠি কবিরাজ, বিষ্ণু বামন শীরওয়াডাকার জি, শ্রীমান কুসুমাগ্রজজি কে আজ শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে।
আজ কুসুমাগ্রজজির জন্ম দিন। কুসুমাগ্রজজি মারাঠি ভাষায় কবিতা লিখেছেন, অনেক নাটক লিখেছেন, মারাঠি সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন।
বন্ধুরা, আমাদের ভাষার নিজস্ব গুণ রয়েছে, মাতৃভাষার নিজস্ব বিজ্ঞান রয়েছে। সেই বিজ্ঞানকে বুঝেই জাতীয় শিক্ষানীতিতে স্থানীয় ভাষায় পড়াশোনার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রফেশনাল কোর্সগুলোও যেন স্থানীয় ভাষায় পড়ানো হয়, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। স্বাধীনতার অমৃতকালে আমাদের সকলের এক সঙ্গে এই উদ্যোগকে আরও ত্বরান্বিত করা উচিত, এ কাজ আমাদের আত্মমর্যাদার। আমি চাই, আপনার মাতৃভাষা যাই হোক না কেন, তার গুণাবলী সম্পর্কে অবশ্যই কিছু জানুন এবং কিছু অন্তত লিখুন।
বন্ধুরা, কয়েকদিন আগে আমার বন্ধু এবং কেনিয়ার পূর্ব প্রধানমন্ত্রী রাইলা ওডিঙ্গাজির সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। এই বৈঠক চিত্তাকর্ষক কিন্তু বেশ আবেগপূর্ণ ছিল। আমরা যেহেতু খুব ভালো বন্ধু, তাই একে অপরকে মনের কথাও খোলাখুলিভাবে বলতে পারি। যখন আমরা কথা বলছিলাম, ওডিঙ্গাজি তাঁর মেয়ের কথা বললেন। তাঁর মেয়ে রোজমেরির ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে এবং সেই জন্য উনি তাঁর মেয়ের অস্ত্রোপচার করিয়েছিলেন। কিন্তু, এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় রোজমেরির দৃষ্টিশক্তি প্রায় চলে গিয়েছিল, তিনি প্রায় কিছুই দেখতে পেতেন না। এবার আপনি কল্পনা করতে পারেন যে মেয়েটির কী দুরবস্থা হয়েছিল এবং আমরাও অনুমান করতে পারি একজন বাবার জন্যে তা কতটা কষ্টকর পরিস্থিতি, তা আমরা অনুভব করতে পারি। তিনি তাঁর মেয়ের চিকিৎসার জন্য বিশ্বের সমস্ত হাসপাতালে চেষ্টা করেছেন, বিশ্বের এমন কোন বড় দেশ নেই, যেখানে তিনি তাঁর মেয়ের চিকিৎসার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেননি। বিশ্বের বড় বড় দেশে খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সাফল্য না পেয়ে একপ্রকার তিনি সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন, তাঁর বাড়িতে তখন হতাশার পরিবেশ। এই সময় কেউ তাঁকে আয়ুর্বেদ চিকিৎসার জন্য ভারতে আসার পরামর্শ দিয়েছিলেন। যদিও তিনি মেয়ের জন্য অনেক কিছু করেছেন, ক্লান্ত ছিলেন, তবুও তিনি ভাবলেন দেখাই যাক একবার চেষ্টা করে, কি হয়? তিনি ভারতে আসেন, কেরালার একটি আয়ুর্বেদিক হাসপাতালে তাঁর মেয়ের চিকিৎসা করাতে শুরু করেন। তাঁর মেয়ে এখানে অনেকদিন থেকেছে। আয়ুর্বেদের এই চিকিৎসার প্রভাবে রোজমেরির দৃষ্টিশক্তি অনেকাংশে ফিরে আসে। আপনি কল্পনা করতে পারেন, যেন আবার নতুনকরে প্রাণের সঞ্চার হল, রোজমেরির জীবনে আলো ফিরে এলো। সম্পূর্ন পরিবারও যেন নতুন আলো নতুন জীবন ফিরে পেল। ওডিঙ্গাজি আমাকে আবেগপূর্ণ হয়ে বলেছিলেন তাঁর ইচ্ছা ভারতের আয়ুর্বেদের জ্ঞান, এই মহার্ঘ্য বিজ্ঞান, তিনি কেনিয়াতে নিয়ে যেতে চান। এতে যে ধরনের গাছপালা ব্যবহার করা হয় উনি সেইসব গাছের চাষ করবেন এবং আরও বেশি মানুষ যেন এর থেকে উপকৃত হয় তার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন।
এটা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয় আমাদের দেশ ও ঐতিহ্য একজনের জীবনে সীমাহীন এক কষ্ট দূর করতে সাহায্য করেছে। এটা শুনে আপনিও খুশি হবেন। এমন কোন ভারতীয় আছেন যে গর্বিত হবে না? আমরা সবাই জানি যে শুধু ওডিঙ্গাজিই নয়, বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ আয়ুর্বেদ থেকে অনুরূপ উপকৃত হচ্ছেন। আয়ুর্বেদের অতি বড় প্রশংসাকারীর মধ্যে ব্রিটেনের প্রিন্স চার্লস'ও একজন! আমার সঙ্গে যখনই তাঁর দেখা হয়, তখনই তিনি আয়ুর্বেদ প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি ভারতের বহু আয়ুর্বেদিক সংস্থার খবর-ও রাখেন!
বন্ধুরা, গত সাত বছরে, আমাদের দেশে আয়ুর্বেদের প্রচার এবং সম্প্রসারণের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আমাদের ঐতিহ্যবাহী চিরাচরিত স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থাকে জনপ্রিয় করার যে সংকল্প, তা আরো সুদৃঢ় হয়েছে আয়ুষ মন্ত্রালয় গঠন হওয়ায়। আমি অত্যন্ত আনন্দিত কারণ সাম্প্রতিক অতীতে আয়ুর্বেদিক ক্ষেত্রেও বেশ কিছু নতুন স্টার্টআপ সামনে এসেছে। এ মাসের শুরুতে, আয়ুস স্টার্টআপ চ্যালেঞ্জ শুরু হয়েছিল। এই চ্যালেঞ্জের উদ্দেশ্য ছিল এই ক্ষেত্রে কর্মরত স্টার্টআপ গুলোকে চিহ্নিত করে, তাদের সাহায্য দেওয়া। যে সমস্ত যুবক-যুবতী বন্ধুরা এ বিষয়ে কাজ করছেন তাদের কাছে আমার আবেদন, তারা যেন এই চ্যালেঞ্জে অবশ্যই অংশগ্রহণ করেন।
বন্ধুরা, একবার যখন সকলে মিলে কিছু করার সংকল্প নেয় তখন অসাধ্য সাধন-ও সম্ভব হয়। সমাজে এমন অনেক বড় পরিবর্তন এসেছে, যেখানে জনসাধারনের অংশগ্রহণ ও সমষ্টিগত প্রচেষ্টা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। কাশ্মীরের শ্রীনগরে, "মিশন জল থল" নামে এমনই এক জন-আন্দোলন চলছে। এটি শ্রীনগরের হ্রদ ও জলাশয় গুলিকে পরিষ্কার করা ও পুরনো আকর্ষণ ফিরিয়ে আনার এক অনন্য প্রচেষ্টা। মিশন জল থল"-এ "কুশল সার" এবং " গিল সার"-কে বেশী গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এখানে জনসাধারণের অংশগ্রহণের পাশাপাশি প্রযুক্তিরও অনেক সাহায্য নে য়া হচ্ছে। কোথায় কোথায় বেদখল হয়েছে, কোথায় অবৈধ নির্মাণ হয়েছে তা খুঁজে বার করতে এই এলাকার সমীক্ষাও করা হয়েছে। তার সঙ্গেই আবর্জনা পরিষ্কার ও প্লাস্টিক বর্জ্য সরানোর অভিযানও চালানো হয়েছে। মিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ে জলের পুরনো উৎস এবং জলাশয়ে জলের যোগান দেয় এমন উনিশটি ঝরনাকে পুনরুজ্জীবিত করার পূর্ণ চেষ্টা করা হয়েছে। এই পুনরুজ্জীবন প্রকল্পের গুরুত্ব নিয়ে জনসচেতনতা যাতে আরো বেশী বৃদ্ধি পায় সেজন্য স্থানীয় মানুষ এবং যুব বন্ধুদের ওয়াটার আম্বাস্যাডারও করা হয়েছে। এখন ওখানকার স্থানীয় মানুষেরা 'গিল সার লেকে' পরিযায়ী পাখি ও মাছের সংখ্যা যাতে আরো বাড়ে সেই উদ্যোগ নিয়েছেন, এবং তা দেখে আনন্দিতও হচ্ছেন। আমি এই সুন্দর প্রচেষ্টার জন্য শ্রীনগরের মানুষকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুরা, আট বছর আগে দেশে যে 'স্বচ্ছ ভারত মিশন' শুরু হয়েছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার পরিধি-ও বৃদ্ধি করা হয়েছে। নতুন নতুন উদ্ভাবন সংযোজন হয়েছে। ভারতে আপনি যেখানেই যান, স্বচ্ছতার জন্যে কোনো না কোনো উদ্যোগ আপনি সর্বত্রই দেখতে পাবেন। আসামের কোকরাঝারের এমনই একটি প্রয়াস সম্পর্কে আমি জানতে পেরেছি। সেখানে প্রাতঃভ্রমণকারীদের একটি দল 'স্বচ্ছ ও সবুজ কোকরাঝাড় মিশনের' জন্য প্রশংসনীয় কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাঁরা নতুন ফ্লাইওভার এলাকায় তিন কিলোমিটার লম্বা রাস্তা পরিষ্কার করে, স্বচ্ছতা সম্পর্কে উৎসাহিত হওয়ার মতো বার্তা দিয়েছেন। ঠিক একইভাবে বিশাখাপত্তনমেও স্বচ্ছ ভারত অভিযানের জন্য পলিথিন-এর বদলে কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
এখানকার লোক পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখতে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক উৎপাদনের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। এর সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা বাড়িতেই জঞ্জালকে আলাদা করার সুফলের বিষয়ে সচেতনতাও প্রচার করছে। মুম্বাইয়ের সোমাইয়া কলেজের ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের স্বচ্ছতা অভিযানে সৌন্দর্যকেও অন্তর্ভূক্ত করে নিয়েছে। এঁরা কল্যাণ রেলওয়ে স্টেশনের দেয়ালগুলোকে সুন্দর পেইন্টিং দিয়ে সাজিয়েছে। রাজস্থানের সাওয়াই মাধোপুর-এর আরেকটি অনুপ্রেরণাদায়ক উদ্যোগের কথা আমি জানতে পেরেছি। এখানকার যুবকরা রনথম্বরে মিশন বিট প্লাস্টিক নামে একটি অভিযান চালাচ্ছে। এর আওতায় রনথম্বরের জঙ্গলের ভেতর থেকে সমস্ত প্লাস্টিক পলিথিন সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সবার প্রয়াসের মাধ্যমে এইরকমই ভাবনা জনসাধারণের যোগদানকে আরও মজবুত করে আর জনসাধারণের অংশগ্রহণ থাকলে বড়ো থেকে বড়ো লক্ষ্য অবশ্যই পূরণ হয়।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ থেকে কিছুদিন বাদেই, ৮ই মার্চ সমগ্র বিশ্ব জুড়ে 'আন্তর্জাতিক মহিলা দিবস' পালন করা হবে। মহিলাদের সাহস, দক্ষতা, প্রতিভার সঙ্গে জুড়ে থাকা কত উদাহরণ আমি মন কি বাত অনুষ্ঠানে নানা সময়ে ভাগ করে থাকি। আজ স্কিল ইন্ডিয়া হোক, স্বনির্ভর গোষ্ঠিই হোক, বা ছোট বড় উদ্যোগ হোক, মহিলারা সব জায়গায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আপনারা যে কোন ক্ষেত্রেই দেখুন, পুরোনো ধারণাগুলো ভেঙে যাচ্ছে। আজ, আমাদের দেশে সংসদ থেকে পঞ্চায়েত পর্যন্ত আলাদা আলাদা কার্যক্ষেত্রে, মহিলারা নতুন উচ্চতায় পৌছোতে পারছেন। সেনাবাহিনীতেও মেয়েরা এখন নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাতে নিজেদের দায়িত্ব পালন করছে, দেশকে রক্ষা করছে। গত মাসে সাধারণতন্ত্র দিবসে আমরা দেখেছি আধুনিক যুদ্ধবিমানও মেয়েরা ওড়াচ্ছে । দেশও সৈনিক স্কুলগুলোতে মেয়েদের ভর্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে, আর সারা দেশে এখন সৈনিক স্কুলে মেয়েরা ভর্তি হচ্ছে। একইভাবে, আপনার স্টার্ট-আপ জগৎ-কে দেখুন, গত বছর দেশে হাজার রকমের স্টার্ট-আপ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক স্টার্ট-আপে মহিলারা পরিচালকের ভূমিকায় আছে। মহিলাদের মাতৃত্বকালীন অবকাশ বাড়ানোর মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ছেলে এবং মেয়েদের সমান অধিকার দেওয়ার জন্য বিয়ের বয়স সমান সমান করার জন্য দেশ চেষ্টা করছে। এইভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে আরও একটি বড়ো পরিবর্তনও হয়ত আপনারা দেখতে পাচ্ছেন! এই পরিবর্তন হলো আমাদের দেশের সামাজিক অভিযানগুলির সফলতা। ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’র সাফল্যকেই দেখুন, দেশে লিঙ্গ অনুপাত এখন অনেক ভালো হয়েছে। স্কুলে যাওয়া মেয়েদের সংখ্যা বেড়েছে। আমাদের মেয়েরা যাতে মাঝপথে স্কুলছুট না হয় সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের। এইভাবেই, 'স্বচ্ছ ভারত অভিযানের' মধ্যে দিয়ে দেশের মহিলাদের এখন আর খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করতে হয় না । তিন তালাকের মতন সামাজিক কুপ্রথাও শেষও হতে চলেছে। যবে থেকে তিন তালাকের বিরুদ্ধে আইন এসেছে, তবে থেকে তিন তালাকের মামলা ৮০ শতাংশ কমে গেছে। এই এত কিছু পরিবর্তন এত কম সময়ের মধ্যে কি করে হচ্ছে? এটা পরিবর্তন এই জন্য সম্ভব হচ্ছে কারণ আমাদের দেশে পরিবর্তন এবং প্রগতিশীল প্রয়াসের নেতৃত্ব মহিলারা নিজেরাই দিচ্ছেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আগামীকাল ২৮শে ফেব্রুয়ারি হল জাতীয় বিজ্ঞান দিবস। এই দিনটি রমন এফেক্ট-এর আবিষ্কারের জন্যও পরিচিত। আমি সি ভি রমন জির সঙ্গে সঙ্গে, সেই সমস্ত বৈজ্ঞানিকদের প্রতি সম্মানের সঙ্গে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করতে চাই, যাঁরা আমাদের বিজ্ঞান নিয়ে নানা গবেষোণাকে মসৃণ বানাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বন্ধুরা, আমাদের সহজ সরল জীবনযাত্রায় প্রযুক্তি একটা বিরাট স্থান তৈরি করেছে। কোন প্রযুক্তি ভালো বা কোনো প্রযুক্তির আরো ভালো ব্যবহার কিভাবে করা যায় - এইসব বিষয়ের ধারণা আমরা ভালোভাবে পেয়ে থাকি। কিন্তু এটাও সত্যি যে আমাদের পরিবারের বাচ্চাদের আমরা এটা বোঝাই না, যে ওই প্রযুক্তির ভিত্তি কি? তার পিছনের বিজ্ঞান কি? এইদিকে আমাদের মনোযোগ কখনোই যায়না। এই বিজ্ঞান দিবসে তে, আমার সমস্ত পরিবারের কাছে অনুরোধ আপনাদের বাচ্চাদের মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে তোলার জন্য অবশ্যই ছোট ছোট প্রয়াস গ্রহণ করুন। যেমন ধরুন যারা অস্পষ্ট দেখে, কিন্তু চশমা লাগানোর পরে তারা স্পষ্ট দেখতে পায়, এর পেছনের বিজ্ঞানটা কি তা বাচ্চাদের আমরা সহজেই বোঝাতে পারি । শুধুই চশমা দেখে আনন্দ পাবেন এমনটা নয়। এখন সহজেই আপনারা একটি ছোট কাগজের সাহায্যে ওকে বোঝাতে পারবেন। এখন ওরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, কিন্তু ক্যালকুলেটর কিভাবে কাজ করে? রিমোট কন্ট্রোল কি করে কাজ করে? সেন্সর কি জিনিস? এইরকম বিজ্ঞানের নানা কথাবার্তা ওদের সঙ্গে ঘরে আলোচনা করা হয় কি? হতে পারে খুব সহজেই। আমরা ঘরের রোজনামচায় দরকারি জিনিসের পিছনে কি বিজ্ঞান আছে এটা ওদের বোঝাতে পারি। সেই ভাবেই আমরা কি কখনো বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে আকাশ পর্যবেক্ষণ করেছি? রাতে তারাদের সম্পর্কে নিশ্চিত কথা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের নক্ষত্রপুঞ্জ দেখা যায়, তাদের সম্বন্ধে বলুন। এরকমভাবে আপনারা বাচ্চাদের মধ্যে পদার্থবিদ্যা আর জ্যোতির্বিদ্যার প্রতি নতুন আগ্রহ তৈরি করতে পারেন। আজকাল তো অনেক অ্যাপ-ও আছে যার মাধ্যমে আপনারা গ্রহ-নক্ষত্রকে চিহ্নিত করতে পারেন বা যে নক্ষত্র আকাশে দেখা যাচ্ছে তাকে চিনে নিতে পারেন, জানতে পারেন তার সম্বন্ধে। আমি আমাদের নতুন শিল্পোদ্যোগীদের- ও বলবো, আপনারা আপনাদের কৌশল আর সায়ন্টিফিক ক্যারেক্টার রাষ্ট্র নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত কাজেও লাগান। এটা দেশের প্রতি আমাদের বিজ্ঞানের জন্য যৌথ দায়বদ্ধতাও বটে। যেরকম আজকাল আমি দেখছি আমাদের স্টার্টআপ ভার্চুয়াল রিয়েলিটির জগতে অনেক ভালো কাজ হচ্ছে। ভার্চুয়াল ক্লাসের এই যুগে, এরকমই একটি ভার্চুয়াল ল্যাব, বাচ্চাদের কথা মাথায় রেখে বানানো যায়। আমরা ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে বাচ্চাদের ঘরে বসেই রসায়নের গবেষণার অভিজ্ঞতা দিতে পারি। আমাদের শিক্ষক ও অভিভাবকদের কাছে আমার অনুরোধ যে আপনারা সবাই, ছাত্রছাত্রী ও বাচ্চাদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবার জন্য উৎসাহ দিন। ওদের সঙ্গে মিলে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করুন। আজ, আমি করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতীয় বৈজ্ঞানিকদের ভূমিকার প্রশংসা করতে চাই। তাঁদের কঠিন পরিশ্রমের জন্যই মেড ইন ইন্ডিয়া টিকা তৈরি সম্ভব হয়েছে যার ফলে সমগ্র বিশ্বের মানুষ বড় সাহায্য পেয়েছে। মানবতার জন্য বিজ্ঞানের এটাই তো উপহার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এ বারেও আমি বহু বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। আসন্ন মার্চ মাসে বহু উৎসব-পার্বণ রয়েছে, শিবরাত্রি রয়েছে এবং কিছুদিন পরেই আপনারা হোলি উৎসবের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। হোলি এমন একটি উৎসব যা আমাদের সবাইকে এক সূত্রে বেঁধে ফেলে। এখানে আপন-পর, শত্রুতা, বৈরি, ছোট-বড় সব বিভেদ মুছে যায়। এই জন্যই বলা হয়, হোলির রঙের থেকেও বেশি গাঢ় এই উৎসবের প্রেম ও সৌহার্দের রঙ। হোলিতে গুজিয়ার মিষ্টত্বের সঙ্গে থাকে সম্পর্কের অনন্য মিষ্টত্বও। এই সম্পর্কগুলি আমাদের আরও মজবুত করতে হবে। এবং সম্পর্ক বলতে আমি শুধু আপন পরিবারের কথা বলছি না, বলছি সেই সব সম্পর্কের কথা যেগুলি আপনার বৃহৎত্তর পরিবার সৃষ্টি করে। এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতিটিকেও আপনাদের মনে রাখতে হবে। এই পদ্ধতিটি হল - ভোকাল ফর লোকাল। একে সঙ্গে নিয়ে আমাদের উৎসব পালন করতে হবে। আপনারা উৎসবের সময় স্থানীয় জিনিস ক্রয় করুন যাতে আপনার চারপাশে থাকা মানুষজনের জীবন রঙ্গিন হয়ে ওঠে, রঙ্গিন থাকে, উদ্দীপনায় ভরা থাকে।
আমাদের দেশ যে সাফল্যের সঙ্গে করোনার মোকাবিলা করছে ও অগ্রসর হচ্ছে, তাতে উৎসব পালনের ক্ষেত্রেও উৎসাহ অনেক গুণ বেড়ে গেছে।
এই উৎসাহের সঙ্গেই আমাদের উৎসব পালন করতে হবে এবং তার পাশাপাশি সবাইকে সাবধানতাও অবলম্বন করতে হবে। আসন্ন উৎসবগুলি যাতে আপনাদের খুব ভাল কাটে এই কামনা করছি।
আমি সব সময়ই আপনাদের বার্তার, আপনাদের চিঠির, আপনাদের কথার অপেক্ষা করব। অনেক, অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আজ মন কি বাতের আরও এক পর্বের মাধ্যমে আমরা একত্রিত হচ্ছি। এটা ২০২২-এর প্রথম ‘মন কি বাত’। আজ আমরা এমন বিষয়ে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাব যা আমাদের দেশ আর দেশবাসীর সদর্থক প্রেরণা আর সামগ্রিক প্রয়াসের সঙ্গে জড়িত। আজ আমাদের পূজনীয় বাপু মহাত্মা গান্ধীজীর পুণ্যতিথিও বটে। ৩০শে জানুয়ারির এই দিন, আমাদের বাপুর শিক্ষাকে স্মরণ করায়। এই কিছুদিন আগেই আমরা সাধারণতন্ত্র দিবসও পালন করেছি। দিল্লীর রাজপথে আমরা দেশের শৌর্য আর সামর্থ্যের যে ঝলক দেখেছি তাতে সবার মন গর্ব আর উৎসাহে ভরে উঠেছে। একটা পরিবর্তন যা আপনারা লক্ষ্য করেছেন - তা হল এখন থেকে সাধারণতন্ত্র দিবসের সমারোহ ২৩শে জানুয়ারি অর্থাৎ নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তী থেকে শুরু হয়েছে আর ৩০শে জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থাৎ গান্ধীজির পুণ্যতিথি অবধি চলবে। ইণ্ডিয়া গেটে নেতাজির ডিজিটাল মূর্তিও স্থাপন করা হয়েছে। এই বিষয়টিকে পুরো দেশ যেভাবে স্বাগত জানিয়েছে, দেশের প্রত্যেক কোণে যেমন আনন্দের ঢেউ উঠেছে, প্রত্যেক দেশবাসী যেভাবে নিজের অনুভব ব্যক্ত করেছে তা আমরা কখনই ভুলতে পারি না।
বন্ধুরা, আজাদির অমৃত মহোৎসবে দেশ এইসব প্রচেষ্টার মাধ্যমে নিজের রাষ্ট্রীয় প্রতীক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করছে। আমরা দেখলাম যে ইণ্ডিয়া গেটের কাছে অমর জওয়ান জ্যোতি আর পাশেই ন্যশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালে প্রজ্জ্বলিত অগ্নিশিখাকে এক করে দেওয়া হল। এই মর্মস্পর্শী অনুষ্ঠান উপলক্ষে কত না দেশবাসী আর শহীদের পরিবারের চোখ অশ্রুসিক্ত হয়েছে। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে শহীদ হওয়া দেশের প্রত্যেক বীরের নাম খোদিত হয়েছে ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালে। সেনাবাহিনীর প্রাক্তন কিছু সমরকর্মী আমাকে চিঠি লিখে বলেছেন যে – ‘শহীদদের স্মৃতির সামনে প্রজ্জ্বলিত অমর জওয়ান জ্যোতি শহীদদের অমরত্বের প্রতীক’। সত্যিই, অমর জওয়ান জ্যোতির মতই অমর আমাদের শহীদরা, ওঁদের প্রেরণা আর ওঁদের অবদানও অমর। আমি আপনাদের সবাইকে বলব, যখনই সুযোগ পাবেন তখনই ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালে অবশ্যই যাবেন। নিজের পরিবার আর সন্তানদেরও অবশ্যই নিয়ে যাবেন। এখানে আপনি এক ভিন্ন শক্তি আর প্রেরণার অনুভব লাভ করবেন।
বন্ধুরা, অমৃত মহোৎসবের এই সব অনুষ্ঠানের মাঝে দেশে কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও প্রদান করা হয়েছে। একটি হল, ‘প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় বাল পুরস্কার’। এই পুরস্কার সেই সব শিশুরা পেল, যারা অল্প বয়সেই সাহসী আর প্রেরণাদায়ক কাজ করেছে। এই সব শিশুদের ব্যাপারে আমাদের সবার নিজেদের বাড়িতে জানানো উচিত। এতে আমাদের সন্তানরাও প্রেরণা পাবে আর তাদের ভেতরে দেশের নাম উজ্জ্বল করার উৎসাহ তৈরি হবে। দেশে সম্প্রতি পদ্ম সম্মানও ঘোষণা করা হয়েছে। পদ্ম পুরস্কার প্রাপকদের মধ্যে এমন অনেক নাম আছে যাঁদের সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানেন। এঁরা আমাদের দেশের আনসাঙ হিরোজ তথা অনামী বীর , যাঁরা সাধারণ পরিস্থিতির মধ্যেও অসাধারণ কাজ করেছেন। যেমন উত্তরাখণ্ডের বাসন্তী দেবীজী-কে পদ্মশ্রী দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে। বাসন্তী দেবী নিজের গোটা জীবন সংগ্রামের মধ্যে কাটিয়েছেন। অল্প বয়সেই তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়, আর তিনি একটি আশ্রমে থাকতে শুরু করেন। এখানে থেকে তিনি নদী বাঁচানোর জন্য লড়াই করেন আর পরিবেশ বাঁচাতে অসাধারণ অবদান রাখেন। তিনি মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্যও অনেক কাজ করেছেন। এভাবেই মণিপুরের সাতাত্তর বর্ষীয় লৌরেম্বম বীণো দেবী বহু দশক ধরে মণিপুরের লিবা টেক্সটাইল আর্টের সংরক্ষণ করছেন। তাঁকেও পদ্মশ্রী দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের অর্জুন সিং পদ্ম সম্মান পেয়েছেন বৈগা আদিবাসী নৃত্যকলাকে পরিচিত করানোর জন্য। পদ্ম সম্মান প্রাপক আর এক ব্যক্তি হলেন শ্রীমান অমাই মহালিঙ্গা নাইক। ইনি একজন কৃষক এবং কর্ণাটকের অধিবাসী। তাঁকে কেউ কেউ টানেল ম্যানও বলেন। ইনি চাষের ক্ষেত্রে এমন সব উদ্ভাবন করেছেন যা দেখে যে কেউ বিস্মিত হবেন। তাঁর প্রচেষ্টার অনেক বড় সুবিধা ছোট কৃষকরা পেয়েছেন। এমন আরও অনেক আনসাঙ হিরোজ রয়েছেন, দেশের জন্য অবদানের কারণে যাঁদের সম্মানিত করা হয়েছে। আপনারা অবশ্যই এঁদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। জীবনে অনেক কিছু শেখার রয়েছে এঁদের কাছ থেকে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, অমৃত মহোৎসব উপলক্ষে আপনারা সবাই আমাকে প্রচুর চিঠি আর বার্তা পাঠান, অনেক সুপারিশও পাঠান। এই ধারাবাহিকতার মধ্যেই এমন কিছু ঘটেছে যা আমার জন্য অবিস্মরণীয়। এক কোটিরও বেশি শিশু নিজের ‘মন কি বাত’ পোস্ট কার্ডের মাধ্যমে আমাকে লিখে পাঠিয়েছে। এই এক কোটি পোস্ট কার্ড দেশের আলাদা-আলাদা অংশ থেকে এসেছে, বিদেশ থেকেও এসেছে। সময় বার করে এরই মধ্য থেকে আমি অনেক পোস্টকার্ড পড়ার চেষ্টা করেছি। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মের চিন্তাভাবনা যে কত ব্যাপক এবং বিস্তৃত, তা এই পোস্টকার্ডের মধ্যে ধরা পড়ে। আমি 'মন কি বাত' এর শ্রোতাদের জন্য বেশ কিছু পোস্ট কার্ড বাছাই করে রেখেছি যা আমি আপনাদের জানাতে চাই। যেমন এটি আসামের গুয়াহাটির ঋদ্ধিমা স্বর্গিয়ারির পোস্টকার্ড। ঋদ্ধিমা সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী। সে লিখেছে যে সে স্বাধীনতার শতবর্ষে এমন এক ভারত দেখতে চায় যা বিশ্বের মধ্যে স্বচ্ছতম, সন্ত্রাসবাদ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত, ১০০% শিক্ষিত দেশ, দুর্ঘটনামুক্ত দেশ, এবং স্থিতিশীল প্রযুক্তির মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা দিতে সক্ষম। ঋদ্ধিমা, আমাদের মেয়েরা যা ভাবে, দেশের জন্য যে স্বপ্ন দেখে তা পূর্ণ হবেই। যখন সকলের প্রচেষ্টা যুক্ত হবে, আপনাদের মত তরুণ প্রজন্ম সেই লক্ষ্যে কাজ করবে, তখন আপনার ভারত সেরকম ভাবেই গড়ে উঠবে, ঠিক যেমন আপনি চান। একটি পোস্ট কার্ড আমি উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের নব্যা ভার্মার কাছ থেকে পেয়েছি। নব্যা লিখেছেন -তার স্বপ্ন ২০৪৭ সালে এমন এক ভারত যেখানে প্রত্যেকে সসম্মানে জীবন ধারণ করতে পারেন, যেখানে কৃষকরা সমৃদ্ধ এবং কোন দুর্নীতি নেই। নব্যা দেশের জন্য আপনার স্বপ্ন খুবই প্রশংসনীয়। দেশও সেই দিকে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। আপনি দুর্নীতিমুক্ত ভারতের কথা বলেছেন। দুর্নীতি দেশকে ঘুণের মত ফাঁপা করে দেয়। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে ২০৪৭ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করব কেন? আমাদের সকল দেশবাসীকে, আজকের তরুণ প্রজন্মকে একযোগে এই কাজ করতে হবে, দ্রুত করতে হবে এবং এর জন্য আমাদের কর্তব্যকে প্রাধান্য দেওয়া খুবই জরুরি; এটাই কর্তব্যবোধ। যেখানে কর্তব্য সর্বাগ্রে, সেখানে দুর্নীতির কোনো স্থান নেই।
বন্ধুরা, আমার সামনে আরো একটি পোস্ট কার্ড রয়েছে চেন্নাইয়ের মোহাম্মদ ইব্রাহিমের। ইব্রাহিম ২০৪৭ সালে ভারতকে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে একটি বড় শক্তি হিসেবে দেখতে চান। তিনি চান চাঁদে ভারতের নিজস্ব গবেষণা কেন্দ্র তৈরি হোক এবং ভারত মঙ্গলে মানুষের বসতি স্থাপনের কাজ শুরু করুক। একই সঙ্গে, পৃথিবীকে দূষণমুক্ত করতে ভারতকেও বড় ভূমিকায় দেখতে চান ইব্রাহিম। ইব্রাহিম, আপনাদের মতো তরুণ যে দেশে রয়েছে, সেই দেশের পক্ষে কিছুই অসম্ভব নয়।
বন্ধুরা, আমার সামনে আরো একটি চিঠি রয়েছে। পাঠিয়েছে মধ্যপ্রদেশের রায়সেন থেকে সরস্বতী বিদ্যামন্দিরের দশম শ্রেণীর ছাত্রী ভাবনা। প্রথমেই আমি ভাবনাকে বলব যে আপনি যেভাবে ভারতের পতাকা এঁকে পোস্ট কার্ড সাজিয়েছেন তা আমার খুব ভালো লেগেছে। বিপ্লবী শিরীষ কুমার সম্পর্কে লিখেছেন ভাবনা।
বন্ধুরা, আমি গোয়ার লরেন্সিয়া পেরেরার পোস্টকার্ডও পেয়েছি। তিনি দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। তার চিঠিরও বিষয় - স্বাধীনতার না জানা নায়ক। আমি তর্জমা করে আপনাদের বলছি। তিনি লিখেছেন - "ভিকাজি কামা ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত সাহসী নারীদের মধ্যে অন্যতম। মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য তিনি দেশে-বিদেশে বহু প্রচার অভিযান চালিয়েছেন। অনেক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন। অবশ্যই ভিকাজি কামা ছিলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম বীরাঙ্গনা। ১৯৬০ সালে, তিনি জার্মানিতে ভারতের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। এই পতাকা ডিজাইনে যে ব্যক্তি তাকে সাহায্য করেছিলেন, তিনি শ্রী শ্যামজি কৃষ্ণ বর্মা। শ্রী শ্যামজি কৃষ্ণ বর্মাজি ১৯৩০ সালে জেনেভায় দেহত্যাগ করেন। তাঁর শেষ ইচ্ছা ছিল, ভারতের স্বাধীনতার পর তাঁর অস্থি ভারতে আনা হোক। যদিও ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পরপরই তাঁর অস্থি ভারতে ফিরিয়ে আনা উচিত ছিল, কিন্তু সে কাজ হয়নি। হয়তো পরমাত্মা চেয়েছিলেন এই কাজ আমি করি এবং আমিও সেই কাজ করার সৌভাগ্য লাভ করেছি। আমি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, ২০০৩ সালে তাঁর অস্থি ভারতে আনা হয়েছিল। শ্যামজি কৃষ্ণ বর্মাজির জন্মস্থান, কচ্ছের মান্ডভিতে, তাঁর স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধও তৈরি করা হয়েছে।
বন্ধুরা, ভারতের স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের উৎসাহ শুধু আমাদের দেশেই সীমাবদ্ধ নেই। আমি ভারতের মিত্র-দেশ ক্রোয়েশিয়া থেকেও ৭৫টি পোস্টকার্ড পেয়েছি। ক্রোয়েশিয়ার জাগ্রেবের স্কুল অফ অ্যাপ্লাইড আর্টস অ্যান্ড ডিজাইনের শিক্ষার্থীরা এই ৭৫টি কার্ড ভারতের জনসাধারণের উদ্দেশে পাঠিয়েছেন এবং অমৃত মহোৎসবের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। সকল দেশবাসীর পক্ষ থেকে আমি ক্রোয়েশিয়া এবং তার জনসাধারণকে ধন্যবাদ জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, চিরকালই ভারত জ্ঞান ও শিক্ষার তপভূমি। 'শিক্ষা'কে আমরা বইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখিনি; বরং তাকে জীবনের সামগ্রিক অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখেছি। আমাদের দেশের প্রণম্য ও মহান ব্যক্তিদের সঙ্গেও শিক্ষার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। পন্ডিত মদনমোহন মালব্যজি যেমন বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ঠিক তেমনই মহাত্মা গান্ধী "গুজরাট বিদ্যাপীঠ" প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। গুজরাটের 'আনন্দ'-এ 'বল্লভ বিদ্যানগর' বলে একটা ভারী সুন্দর জায়গা আছে। সর্দার প্যাটেলের ইচ্ছায়, 'ভাই কাকা' ও 'ভিকা ভাই' নামে তার দুই সহযোগী সেখানে তরুণদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছিলেন। একইভাবে পশ্চিমবঙ্গে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শান্তিনিকেতনের প্রতিষ্ঠা করেন। মহারাজা গায়কোয়াড়-ও প্রবল শিক্ষানুরাগীদের মধ্যে একজন ছিলেন। তিনি বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছিলেন এবং ডক্টর অম্বেদকর ও শ্রী অরবিন্দ সহ বহু প্রণম্য ব্যক্তিকে উচ্চশিক্ষার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন। এই মহান ব্যক্তিদের তালিকায় আরও একটি নাম হলো রাজা মহেন্দ্র প্রতাপ সিং জী । রাজা মহেন্দ্র প্রতাপ সিং জি, একটা কারিগরি স্কুল তৈরীর জন্য নিজের বাড়ি দান করেছিলেন। তিনি আলীগড় এবং মথুরায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরীর জন্য অনেক আর্থিক সাহায্যও করেছিলেন। কিছুদিন আগে, তাঁর নামে আলীগড়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলান্যাস করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। আমি আনন্দিত কারণ শিক্ষার আলো প্রত্যেকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সেই প্রাণবন্ত ভাবনা ভারতে আজও রয়ে গেছে। আপনারা কি জানেন এই চিন্তাধারার সবচেয়ে সুন্দর দিকটি কী? তা হলো, শিক্ষার বিষয়ে এই সচেতনতা সমাজের প্রতিটি স্তরেই দেখা যাচ্ছে। তামিলনাড়ুর, তিরুপ্পুর জেলার উদুমলপেট ব্লকের বাসিন্দা তায়ম্মল-জী'র উদাহরণ ভীষণ-ই উৎসাহিত করার মত। তায়ম্মল-জী'র নিজের কোন জমিজমা নেই। বহু বছর ধরে তার পরিবার ডাবের জল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। আর্থিক অবস্থা ভালো না হলেও, তায়ম্মল-জী' তার ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার জন্য কোন প্রচেষ্টার ত্রুটি রাখেনি। তাঁর সন্তানেরা চিন্নবীরমপট্টী পঞ্চায়েত ইউনিয়ন মিডিল স্কুলে পড়তো। এমনই একদিন স্কুলে অভিভাবকদের সঙ্গে মিটিং-এর সময় কথা ওঠে, স্কুলের অবস্থা ও শ্রেণীকক্ষগুলোর সংশোধন প্রয়োজন, স্কুলের পরিকাঠামো ঠিক করা প্রয়োজন। তায়ম্মল-জী'ও সেই মিটিং-এ ছিলেন। তিনি সবকিছু শোনেন। সেই বৈঠকের আলোচনা একটা সময় অর্থাভাবের কারণে আটকে যায়। তারপর তায়ম্মলজী যা করেন তা কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। যে তায়ম্মলজী ডাবের জল বিক্রি করে সামান্য পুঁজি জমা করেছিলেন, সেই মানুষটিই 'এক লক্ষ' টাকা স্কুলের জন্য দান করেন। সত্যিই, এমন কাজ করার জন্য অনেক বড় হৃদয়ের প্রয়োজন, সেবা করার মতো মানসিকতার প্রয়োজন। তায়ম্মলজীর কথায় এখন স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়, কিন্তু পরিকাঠামো ভালো হলে উচ্চমাধ্যমিক (Higher Secondary) পর্যন্ত পড়ানো শুরু হবে। শিক্ষাকে নিয়ে আমাদের দেশের ঠিক এই চিন্তাধারার বিষয়টিই আমি আলোচনা করছিলাম। আইআইটি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তনীর ঠিক এরকমই একটি দান সম্পর্কে আমি জানতে পেরেছি। আইআইটি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র জয় চৌধুরী আইআইটি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাউন্ডেশনকে এক মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা দান করেছেন।
বন্ধুরা, আমাদের দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বহু মানুষ আছেন, যারা অন্যের সহায়তা করে সমাজের প্রতি তাদের কর্তব্য পালন করছেন। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে এই ধরনের প্রচেষ্টা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে আমাদের বিভিন্ন আইআইটি'তে প্রায়শই -ই দেখা যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও এই ধরনের অনুপ্রেরণামূলক উদাহরণের কমতি নেই। এই ধরনের প্রচেষ্টা যাতে আরো বাড়ে সেজন্য গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে আমাদের দেশে বিদ্যাঞ্জলি অভিযানও শুরু হয়েছে। এর উদ্দেশ্য আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং নিজস্ব অঞ্চলের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে দেশজুড়ে স্কুল শিক্ষার গুণগত মান ভালো করা। বিদ্যাঞ্জলি সমষ্টিগত অংশীদারিত্ব এবং মালিকানার মনস্তত্ত্বকে প্রসারিত করছে। নিজের স্কুল কলেজের সঙ্গে সব সময় যুক্ত থাকা, নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী সেখানে কিছু অবদান রাখা ইত্যাদি, এ হল এমন একটি বিষয় যার আনন্দ এবং পরিতৃপ্তি একমাত্র অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়েই লাভ করা যায়।
আমার প্রিয় দেশবাসী, প্রকৃতি প্রেম ও জীবের প্রতি সহানুভূতি আমাদের সংস্কৃতি এবং সহজাত অভ্যেস। আমাদের সেই সংস্কারেরই এক ঝলক সম্প্রতি দেখা গিয়েছিল, যখন মধ্যপ্রদেশের পাঞ্চ ব্যাঘ্র প্রকল্পে এক বাঘিনী পৃথিবী থেকে চির বিদায় নেয়। এই বাঘিনীটিকে লোকে কলার ওয়ালি বাঘিনী বলতো। বন বিভাগ এর নাম দিয়েছিল T-15। এই বাঘিনীর মৃত্যু মানুষকে এতটা আবেগপ্রবণ করেছিল যেন তাদের কোন স্বজন এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তারা প্রথামাফিক বাঘিনীর শেষকৃত্য করেছেন, তাকে পূর্ণ সম্মান ও ভালোবাসার সঙ্গে চিরবিদায় জানিয়েছেন। সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনারাও নিশ্চয়ই দেখেছেন। প্রকৃতি ও জীবজন্তুর প্রতি আমাদের, ভারতবাসীর এই ভালোবাসা সারা দুনিয়ায় অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছে। কলারওয়ালি বাঘিনী জীবদ্দশায় ২৯টি শাবকের জন্ম দিয়েছিল ও ২৫টিকে লালন পালন করে বড়ও করেছিল। আমরা এই T-15 এর জীবনকেও উদযাপিত করেছি, আবার দুনিয়া ছেড়ে যাওয়ার সময়ও তাকে আবেগপূর্ণ শেষ বিদায় জানিয়েছি। এটাই তো ভারতবাসীর মহৎ বৈশিষ্ট্য। আমরা সকল জীবজন্তুর সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি করে নিই। এমনই একটি দৃশ্য এবছর সাধারণতন্ত্র দিবসের প্যারেডেও আমরা দেখতে পেয়েছি। এই প্যারেডে রাষ্ট্রপতির দেহরক্ষীর চার্জার ঘোড়া বিরাট শেষ বারের মতো অংশগ্রহণ করেছে। বিরাট ২০০৩ সালে রাষ্ট্রপতি ভবনে এসেছিল এবং প্রতিটি সাধারণতন্ত্র দিবসে কমান্ড্যান্ট চার্জার হিসেবে কুচকাওয়াজকে নেতৃত্ব দিত। যখন কোন বিদেশী রাষ্ট্রনায়ককে রাষ্ট্রপতি ভবনে স্বাগত জানানো হতো তখনো সে নিজের দায়িত্ব পালন করত। এবছর আর্মি ডে-র দিন বিরাটকে সেনাপ্রধান সিওএএস কমেন্ডেশন কার্ডও দিয়েছেন। বিরাটের এই বিরাট সেবা ও অবদান দেখে ওর অবসরের পর ততটাই আড়ম্বরের সঙ্গে তাকে বিদায় জানানো হয়েছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, যখন একনিষ্ঠ হয়ে চেষ্টা করা হয়, সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করা হয় তখন তার ফলও পাওয়া যায়। এর এক উত্তম উদাহরণ সামনে এসেছে, অসম থেকে। অসমের নাম বললেই সেখানকার চা বাগান আর বহু সংখ্যক জাতীয় উদ্যানের কথা মনে পড়ে। তার সঙ্গে একশৃঙ্গ গন্ডার অর্থাৎ ওয়ান হর্ন রাইনোর ছবিও আমাদের মনে ভেসে ওঠে। আপনারা সবাই জানেন যে একশৃঙ্গ গন্ডার সর্বদাই অসমীয়া সংস্কৃতির অংশ হয়ে রয়েছে। ভারতরত্ন ভূপেন হাজারিকাজির বিখ্যাত গান প্রত্যেকের কানেই গুঞ্জরিত হয়েছে নিশ্চয়ই ।
বন্ধুরা, এই গানের অর্থ অত্যন্ত সুসংগত। এই গানে বলা হয়েছে, কাজিরাঙ্গার ঘন সবুজ পরিবেশ, হাতি আর বাঘের বাসস্থান, একশৃঙ্গ গন্ডারের পৃথিবী দেখো, পাখিদের মধুর কলকাকলি শোনো। অসমের বিশ্ব বিখ্যাত হাতে বোনা মুগা এবং এন্ডির পোশাকেও গন্ডারের আকৃতি দেখা যায়। অসমীয়া সংস্কৃতিতে যে গন্ডারের এত বড় মহিমা, তাকেও সংকটের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। ২০১৩ সালে ৩৭টি ও ২০১৪ তে ৩২ টি গন্ডারকে চোরাশিকারিরা হত্যা করেছিল। এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে গত ৭ বছর ধরে অসম সরকার বিশেষ প্রয়াসের মাধ্যমে গন্ডার শিকারের বিরুদ্ধে এক বিরাট বড় অভিযান চালিয়ে গিয়েছেন। গত ২২শে সেপ্টেম্বর “বিশ্ব গন্ডার দিবস” উপলক্ষে চোরা শিকারিদের থেকে উদ্ধার হওয়া ২৪০০টিরও বেশি শিং জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এটি চোরা শিকারিদের প্রতি এক কঠোর বার্তা ছিল। এমন বিভিন্ন প্রয়াসের ফলে এখন অসমে গন্ডার শিকারের ঘটনা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। যেখানে ২০১৩ তে ৩৭ টি গন্ডার মারা গিয়েছিল, সেখানে ২০২০-তে দুটি এবং ২০২১এ মাত্র একটি গন্ডার শিকারের ঘটনা সামনে এসেছে। আমি গন্ডার রক্ষার জন্য অসমবাসীর সংকল্পের প্রশংসা করছি।
বন্ধুরা, ভারতীয় সংস্কৃতির বহুবিধ রং ও আধ্যাত্মিক শক্তি সবসময়ই সারা পৃথিবীর মানুষকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করেছে। যদি আমি আপনাদের বলি যে ভারতীয় সংস্কৃতি আমেরিকা, কানাডা, দুবাই, সিঙ্গাপুর, পশ্চিম ইউরোপ এবং জাপানে খুবই জনপ্রিয়, তাহলে একথা আপনাদের খুবই সামান্য মনে হবে। আপনারা খুব একটা বিচলিত হবেন না। কিন্তু যদি আমি এটা বলি যে লাতিন আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকাতেও ভারতীয় সংস্কৃতির আকর্ষণ প্রবল তাহলে আপনারা নিশ্চয়ই একবার ভেবে দেখবেন। মেক্সিকোতে খাদির ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়ার কথাই হোক কিংবা ব্রাজিলে ভারতীয় পরম্পরাকে জনপ্রিয় করার প্রয়াস - "মন কি বাত" এ এই বিষয়গুলি নিয়ে আমরা আগে আলোচনা করেছি। আজ আমি আপনাদের আর্জেন্টিনায় উড্ডীয়মান ভারতীয় সংস্কৃতির ধ্বজার বিষয়ে বলব। আর্জেন্টিনায় আমাদের সংস্কৃতি খুবই জনপ্রিয়। ২০১৮ সালে আর্জেন্টিনায় যাওয়ার সময় আমি যোগের কার্যক্রম - "যোগা ফর পিস্" এ অংশগ্রহণ করেছিলাম। আর্জেন্টিনায় একটি সংস্থা আছে "হস্তিনাপুর ফাউন্ডেশন"। আপনারা শুনে আশ্চর্য হচ্ছেন না, কোথায় আর্জেন্টিনা আর সেখানেও হস্তিনাপুর ফাউন্ডেশন! এই ফাউন্ডেশন আর্জেন্টিনায় ভারতীয় বৈদিক পরম্পরা প্রসারের সঙ্গে যুক্ত। ৪০ বছর আগে এক ম্যাডাম, প্রফেসর এডা অ্যালব্রেখট এটি স্থাপন করেন। আজ প্রফেসর এডা অ্যালব্রেখট এর বয়স ৯০ হতে চলেছে।
ভারতের সঙ্গে ওঁর যোগাযোগ কিভাবে হয় তাও খুব মজাদার। যখন ওঁর বয়স ১৮, তখন প্রথমবার ভারতীয় সংস্কৃতির শক্তির সঙ্গে ওঁর পরিচয় হয়। উনি ভারতে দীর্ঘ সময় কাটান। ভগবত গীতা, উপনিষদ সম্বন্ধে গভীরে পড়াশোনা করেন। আজ হস্তিনাপুর ফাউন্ডেশনে ৪০ হাজারেরও বেশি সদস্য আর আর্জেন্টিনা ও অন্য লাতিন আমেরিকার দেশে এর প্রায় ৩০ টি শাখা রয়েছে। হস্তিনাপুর ফাউন্ডেশন স্প্যানিশ ভাষায় একশোরও বেশি বৈদিক ও দার্শনিক গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। এদের আশ্রমও খুবই মনোগ্রাহী। আশ্রমে বারোটি মন্দির তৈরী করানো হয়েছে যেখানে ওদের দেবদেবীদের মূর্তি আছে। এই সবকিছুর কেন্দ্রে আছে এমন এক মন্দির যা অদ্বৈতবাদী ধ্যানের জন্য বানানো হয়েছে।
বন্ধুরা, এরকম শ’য়ে শ’য়ে উদাহরণ এটাই বলে যে আমাদের সংস্কৃতি শুধু আমাদের জন্যই নয় বরং সমগ্র পৃথিবীর জন্য একটি অমূল্য ঐতিহ্য। সারা দুনিয়ার লোক এই ব্যাপারে জানতে চায়, বুঝতে চায়, উপলব্ধি করতে চায়। আমাদেরও পুরো দায়িত্বে নিয়ে নিজেদের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারকে নিজেদের জীবনের অংশ বানাতে হবে, জনসাধারণের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি এখন আপনাদের, বিশেষ করে তরুণদের একটি প্রশ্ন করতে চাই। আচ্ছা ভাবুনতো আপনি একবারে কতগুলি পুশ-আপ করতে পারেন। আমি এখন আপনাদের যা বলতে চলেছি, তা নিশ্চিত রূপে আপনাদের অবাক করে দেবে। মণিপুরে ২৪ বছরের যুবক থোউনাওজম নিরঞ্জায় সিং ১ মিনিটে ১০৯টি পুশ-আপের রেকর্ড গড়েছেন। নিরঞ্জয় সিং এর জন্য রেকর্ড ভাঙ্গা কোনো নতুন ব্যাপার নয়। এর আগেও তিনি এক মিনিটে এক হাতের সাহায্যে সবচেয়ে বেশি নাকল্ পুশ-আপ-এর রেকর্ড গড়েছেন। আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস যে, নিরঞ্জয় সিং-কে দেখে আপনারা অনুপ্রাণিত হবেন আর শারীরিক ফিটনেসকে নিজেদের জীবনের অঙ্গ করে তুলবেন।
বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের সঙ্গে লাদাখের একটি এমন তথ্য ভাগ করে নিতে চাই, যার সম্পর্কে শুনে আপনার নিশ্চয়ই গর্ববোধ হবে। লাদাখ তাড়াতাড়িই একটি চমৎকার ওপেন সিন্থেটিক ট্র্যাক আর অ্যাস্ট্রো টার্ফ ফুটবল স্টেডিয়াম উপহার পেতে চলেছে। এই স্টেডিয়াম ১০ হাজার ফিট এরও বেশি উচ্চতায় তৈরি হচ্ছে। আর তার নির্মাণ খুব শীঘ্রই সম্পূর্ণ হতে চলেছে। এটি লাদাখের সবথেকে বড় ওপেন স্টেডিয়াম হবে যেখানে ৩০ হাজার দর্শক একসঙ্গে বসতে পারবেন। লাদাখের এই আধুনিক ফুটবল স্টেডিয়ামে একটি ৮ লেন যুক্ত সিন্থেটিক ট্র্যাকও হবে। এছাড়াও এখানে ১০০০ শয্যার একটি হোস্টেলও তৈরি হবে। আপনাদের এটা জেনেও ভালো লাগবে যে এই স্টেডিয়ামকে ফুটবলের সব থেকে বড় সংস্থা ফিফা শংসায়িত করেছে। যখনই ক্রীড়াজগতে এরকম কোন বড় পরিকাঠামো তৈরি হয় তখন তা দেশের তরুণদের জন্য সুযোগ নিয়ে আসে। তার সঙ্গে যেখানে এই ব্যবস্থা হয় সেখানে দেশের মানুষের যাতায়াতও লেগে থাকে। পর্যটন উৎসাহিত হয় আর রোজগারের অনেক সুযোগ তৈরি হয়। এই স্টেডিয়ামের জন্য লাদাখের অনেক যুবক লাভবান হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কি বাত’ এ এইবারও আমরা অনেক বিষয়ে কথা বলেছি। আরো একটি বিষয় আছে, যা এই সময় সবারই মনে আছে আর তা হলো করোনা। করোনার নতুন ওয়েভকে ভারত অনেক সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করছে, আর গর্বের বিষয় হলো যে এখনো অবধি প্রায় সাড়ে চার কোটি কিশোর-কিশোরীও করোনা টিকার ডোজ নিয়ে নিয়েছে। এর অর্থ এই যে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যেই টিকা নিয়ে নিয়েছেন। এতে শুধুমাত্র আমাদের যুব সম্প্রদায় রক্ষা পাবে তাই নয়, তাদের পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে পারবে। আরেকটি ভালো কথা এই যে কুড়ি দিনের মধ্যে এক কোটি মানুষ সতর্কতামূলক ডোজ ও নিয়ে নিয়েছেন। আমাদের দেশের টিকার ওপর দেশবাসীর আস্থা আমাদের অনেক বড় শক্তির কারণ। এখন তো করোনা সংক্রমনের সংখ্যাও কমতে শুরু করেছে; যেটা একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত। মানুষ সুরক্ষিত থাকুক, দেশের আর্থিক গতিবিধির দ্রুততা বজায় থাকুক, এটা প্রত্যেক দেশবাসীরই কামনা। আর আপনারা তো জানেনই যে “মন কি বাত”-এ কিছু কথা না বলে আমি থাকতেই পারিনা। যেরকম স্বচ্ছতা অভিযান কে আমাদের ভুললে চলবেনা, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে অভিযানে আমাদের আরও গতি আনতে হবে, ভোকাল ফর লোকাল এর মন্ত্র হলো আমাদের দায়িত্ব, আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের জন্য মনে প্রাণে আমাদের চেষ্টা করে যেতে হবে। আমাদের সবার প্রচেষ্টায় দেশ বিকাশের নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে। এই কামনার সঙ্গে আজ আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। এই সময় আপনারা ২০২১কে বিদায় জানানো এবং ২০২২কে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত রয়েছেন। নতুন বছরে প্রত্যেক ব্যক্তি, প্রত্যেক সংস্থা আরও ভালো কিছু করার ও হওয়ার সঙ্কল্প নেয়। গত সাত বছর ধরে আমাদের এই ‘মন কি বাত’ও ব্যক্তি, সমাজ, দেশের ভালো দিককে তুলে ধরে আরও ভালো হওয়ার, ভালো করার প্রেরণা দিয়ে আসছে। এই সাত বছরে ‘মন কি বাত’ করার সময় আমি সরকারের নানা সাফল্য নিয়েও আলোচনা করতে পারতাম। আপনাদেরও ভালো লাগত, আপনারাও প্রশংসা করতেন, কিন্তু এ আমার কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা যে সংবাদমাধ্যমের চাকচিক্য থেকে দূরে, সংবাদপত্রের শিরোনাম থেকে দূরে, এমন কোটি-কোটি মানুষ আছেন যাঁরা অনেক কিছু ভালোভাবে করছেন। তাঁরা দেশের আগামী ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের বর্তমানকে সঁপে দিয়েছেন। তাঁরা দেশের আগামী প্রজন্মের জন্য আজ সর্বশক্তি দিয়ে নিজেদের প্রয়াসে লেগে থাকেন। এমন মানুষদের কাহিনী বড় শান্তি দেয়, অনেক প্রেরণা দেয়। আমার জন্য ‘মন কি বাত’ সর্বদাই এমন সব মানুষের প্রচেষ্টার কাহিনীতে পূর্ণ, বিকশিত, সুসজ্জিত উপবন হয়ে রয়েছে, আর ‘মন কি বাত’এ প্রত্যেক মাসে এই উপবনের কোন পাপড়ি আপনাদের মধ্যে নিয়ে আসব সেই প্রয়াসই আমার থাকে । আমি আনন্দিত যে আমাদের বহু রত্ন প্রসবিনী বসুন্ধরার পুণ্য কাজের স্রোত অবিরাম বয়ে চলেছে । আর আজ যখন দেশ ‘অমৃত মহোৎসব’ উদযাপন করছে তখন এই যে জনশক্তি, জনে-জনে যে শক্তি, তার উল্লেখ, তার প্রয়াস, তার পরিশ্রম, এক অর্থে ভারতের আর মানবতার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের গ্যারান্টি দেয়।
বন্ধুরা, এটা জনশক্তিরই ক্ষমতা, যার ফলে ভারত একশো বছরের মধ্যে আসা সবথেকে বড় মহামারীর বিরুদ্ধে লড়তে পেরেছে। আমরা প্রত্যেকটি কঠিন সময়ে একে অন্যের সঙ্গে, একটি অভিন্ন পরিবারের মত থেকেছি। নিজের পাড়ায় বা শহরে কাউকে সাহায্য করতে হলে যার যতটুকু সামর্থ্য তার থেকে বেশি করার চেষ্টা করেছেন। আজ সারা বিশ্বে টিকাকরণের যে পরিসংখ্যান রয়েছে তার তুলনা ভারতের পরিসংখ্যানের সঙ্গে করলে বোঝা যাবে যে দেশ কী অভূতপূর্ব কাজ করেছে। কত বড় লক্ষ্য অর্জন করেছে। টিকার একশো চল্লিশ কোটি ডোজের সীমা পার করা, প্রত্যেক ভারতবাসীর নিজের সাফল্য। প্রত্যেক ভারতবাসীর প্রশাসনিক ব্যবস্থার উপর ভরসা এর মাধ্যমে তুলে ধরে, বিজ্ঞানের উপর ভরসা করে , বিজ্ঞানীদের উপর আস্থা রেখে আর সমাজের প্রতি নিজের দায়িত্ব পালন করা আমাদের প্রত্যেক ভারতবাসীর ইচ্ছাশক্তির প্রমাণও। কিন্তু বন্ধুরা, আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে করোনার এক নতুন ভ্যারিয়েন্ট ইতিমধ্যেই দরজায় কড়া নেড়েছে । গত দু’ বছরে আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে যে বিশ্বব্যাপী এই মহামারীকে পরাজিত করতে হলে একজন নাগরিক হিসাবে আমাদের নিজেদের প্রয়াসও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই যে নতুন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এসেছে তার অধ্যয়ন আমাদের বিজ্ঞানীরা অবিরাম করে চলেছেন। প্রতিদিন নতুন তথ্য পাচ্ছেন তাঁরা, তাঁদের পরামর্শে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এমন সময়ে নিজে সজাগ থাকা, নিজে অনুশাসন পালন করা করোনার এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে দেশের খুব বড় শক্তি। আমাদের সঙ্ঘবদ্ধ শক্তিই করোনাকে পরাজিত করবে, এই দায়িত্ববোধ নিয়ে আমাদের ২০২২ সালে প্রবেশ করতে হবে ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, মহাভারতের যুদ্ধের সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন – ‘নভঃ স্পৃশং দীপ্তম’ অর্থাৎ গর্বের সঙ্গে আকাশকে স্পর্শ করা। এটা ভারতীয় বায়ুসেনার আদর্শ বাক্যও। ভারত মাতার সেবাতে সমর্পিত অনেক জীবন আকাশের এই শিখরকে প্রতিদিন স্পর্শ করে, আমাদের অনেক কিছু শিক্ষা দেয়। এরকমই এক জীবন হলো গ্রুপ ক্যাপ্টেন বরুণ সিং-এর। বরুণ সিং যে হেলিকপ্টারকে উড়াচ্ছিলেন সেটি এ মাসে তামিলনাড়ুতে দূর্ঘটনার শিকার হয়। এই দূর্ঘটনায় আমরা দেশের প্রথম সিডিএস জেনারেল বিপিন রাওয়াত এবং তাঁর পত্নী সহ কত বীরদের হারিয়েছি। বরুণ সিংও মৃত্যুর সঙ্গে অনেকদিন পাঞ্জা লড়েছিলেন, কিন্তু তিনিও আমাদের ছেড়ে চলে যান। বরুণ যখন হাসপাতালে ছিলেন ওই সময় আমি সামাজিক মাধ্যমে এরকম কিছু দেখেছিলাম যা আমার মনকে আলোড়িত করেছিল। এ বছর অগাস্ট মাসে ওঁকে শৌর্য চক্রে সম্মানিত করা হয়েছিল। এই সম্মান পাওয়ার পর তিনি নিজের স্কুলের প্রিন্সিপ্যালকে একটা চিঠি লিখেছিলেন। এই চিঠি পড়ে প্রথম আমার মনে হয়েছে সফলতার শীর্ষে পৌঁছেও নিজের শেকড়ে জল দিতে ভোলেন নি তিনি। দ্বিতীয়ত – ওঁর যখন উদযাপন করার সময় ছিল তখন তিনি ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা ভেবেছিলেন। তিনি চাইতেন যে স্কুলে তিনি পড়েছেন, সেখানের বিদ্যার্থীদের জীবনও যেন এক উৎসবের রুপ নেয়। নিজের চিঠিতে বরুণ জী নিজের পরাক্রমের কথা বাড়িয়ে বলেন নি, উল্টে তিনি অসফলতার কথা বলেছেন। কিভাবে নিজের দুর্বলতাকে শক্তিতে পরিবর্তিত করেছিলেন তার বর্ননা করেন। এই চিঠির এক জায়গায় তিনি লিখেছেন -"সাধারণ হওয়া কোনো দোষ নয়। সবাই স্কুলে খুব ভালো ফল করবে বা ৯০ এর ঘরে নম্বর পাবে এটা সম্ভব নয়। যদি তুমি তা করতে পারো সেই কীর্তি নিঃসন্দেহে প্রসংশনীয়। কিন্তু, যদি তা না হয়, এরকম ভাবার কোনো কারণ নেই যে তুমি সারা জীবন সাধারণই থেকে যাবে। স্কুলে তুমি মধ্য মেধার কেউ হতে পারো কিন্তু সেটা তোমার আগামী জীবনের একমাত্র মাপকাঠি নয়। নিজের প্রতিভাকে চেনো। সাহিত্য, সঙ্গীত, আর্ট, গ্রাফিক্স ডিসাইন প্রভৃতি যাই হোক না কেন, একনিষ্ঠ ভাবে সেটা করে যাও। পরিশ্রম কর, নিজের সেরাটা দাও। কখনো এমন না হয়, রাতে শুতে যাওয়ার সময়ে ভাবতে হবে আমি আরো ভাল করতে পারতাম। বন্ধুরা, সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠার জন্য উনি যে মন্ত্র দিয়েছেন তাও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। এই চিঠিতেই বরুণ সিং লিখেছিলেন, ''কখনো আশা ছেড়ো না। যা তুমি হতে চাও সেই লক্ষ্যের জন্য তুমি উপযুক্ত নও, এটা কখনোই ভেবোনা। এটা হয়তো সবসময় সহজ নয়, এর জন্য সময় এবং বিলাসিতার সঙ্গে আপস করতে হয়। আমি একজন মধ্যমেধার মানুষ ছিলাম এবং এখনও তাই আছি। আমার কর্মজীবনে আমি অনেক বাধা অতিক্রম করেছি। কখনো ভেবো না দ্বাদশ শ্রেণীর বোর্ডের পরীক্ষার নম্বর এটা সিদ্ধান্ত নেয় যে তুমি কতটা উচ্চতা ছুঁতে পারো। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখ এবং তার জন্য কাজ করো।’’
বরুণ লিখেছিলেন যে যদি একজন ছাত্রকেও অনুপ্রেরণা দিতে পারেন, সেটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আজ আমি বলতে চাই যে, তিনি সমগ্র দেশকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। ওঁর চিঠি শুধুমাত্র ছাত্রদের উদ্দেশে হলেও, তা আমাদের সমগ্র সমাজকে বার্তা দিয়েছে।
বন্ধুরা, প্রত্যেক বছর আমি এমনই বিষয়ের উপর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা করি। এই বছরও পরীক্ষার আগে আমি ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করার পরিকল্পনা করছি। এই অনুষ্ঠানের জন্য দুদিন পরে অর্থাৎ ২৮শে ডিসেম্বর থেকে mygov.in এ রেজিস্ট্রেশন শুরু হতে চলেছে। এই রেজিস্ট্রেশন ২৮ শে ডিসেম্বর থেকে ২০ শে জানুয়ারী পর্যন্ত চলবে। এর জন্য নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং বাবা-মায়েদের নিয়ে অনলাইন প্রতিযোগিতা আয়োজিত হবে। আমি চাইবো আপনারা সকলেই এতে অংশ নিন। আপনাদের সকলের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হবে। আমরা সকলে মিলে পরীক্ষা, কেরিয়ার, সাফল্য এবং ছাত্র-জীবনের সঙ্গে যুক্ত নানা বিষয়ে আলোচনা করব।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আমি এখন আপনাদের কিছু শোনাতে চলেছি, যা দেশের সীমান্ত পেরিয়ে অনেক দূর থেকে এসেছে। এটা আপনাকে আনন্দ দেবে এবং অবাক করবে।
(ভোকাল)
বন্দে মাতরম। বন্দে মাতরম।
সুজলাং সুফলাং মলয়জশীতলাম।
শস্যশ্যামলাং মাতরম। বন্দে মাতরম।
শুভ্রজোৎস্নাপুলকিতযামিনী।
ফুল্লকুসুমিতদ্রুমদলশোভিনী।
সুহাসিনী সুমধুরভাষিণী।
সুখদাং, বরদাং মাতরম।
বন্দেমাতরম। বন্দেমাতরম।
আমার পূর্ণবিশ্বাস যে এটা শুনে আপনাদের খুব ভালো লেগেছে। আপনাদের গর্ব অনুভব হয়েছে। বন্দেমাতরম এর মধ্যে যে ভাবনা নিহিত রয়েছে, তা আমাদের গর্ব এবং উত্তেজনায় পরিপূর্ণ করে।
বন্ধুরা আপনারা নিশ্চয়ই এটা ভাবছেন, এই সুন্দর ভিডিওটি কোন জায়গার? কোন দেশ থেকে এসেছে? এর উত্তর আপনাদের বিস্ময় আরো বাড়িয়ে দেবে। যে ছাত্ররা এই বন্দেমাতরম গানটি প্রস্তুত করেছে তারা গ্রিসের। ওখানে ইলিয়ার হাইস্কুলে পড়াশোনা করে এই ছাত্র ছাত্রীরা। ওঁরা যেমন অত্যন্ত সুন্দর এবং আবেগ ভরে বন্দেমাতরম গেয়েছেন, তা চমৎকার এবং প্রশংসনীয়। এমনই প্রচেষ্টা দুই দেশের মানুষদের আরো কাছাকাছি নিয়ে আসে। আমি এই গ্রীসের ছাত্র ছাত্রী ও তাদের শিক্ষকদের অভিনন্দন জানাই। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব চলাকালীন তাদের এই প্রচেষ্টাকে আমি সাধুবাদ জানাই।
বন্ধুরা, আমি লখনউ নিবাসী নীলেশজির একটি পোস্টের বিষয়ে বলতে চাই। নীলেশজি লখনৌতে আয়োজিত এক অভিনব ড্রোন শোর এর খুব প্রশংসা করেছেন। এই ড্রোন শো লখনৌর রেসিডেন্সী অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আজও রেসিডেন্সীর দেওয়ালগুলি ১৮৫৭ এর প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামে সাক্ষী দেয়। রেসিডেন্সীতে আয়োজিত ড্রোন শো ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন ঘটনাবলীকে জীবন্ত করে তুলেছে౼ তা সে চৌরিচৌরা আন্দোলন হোক, কাকোরি ট্রেনের ঘটনা হোক বা নেতাজি সুভাষের অদম্য সাহস এবং পরাক্রমের কাহিনী, এই ড্রোন শো সবার মন জয় করেছে। আপনিও এই ভাবে আপনার শহরের, গ্রামের, স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অভিনব প্রচেষ্টার বিভিন্ন দিক সবার সামনে তুলে ধরতে পারেন। এতে টেকনোলজির সাহায্য নিতে পারেন। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতি রোমন্থনের সুযোগ দেয়, তাকে অনুভব করার সুযোগ দেয়। এই মহোৎসব দেশের জন্য নতুন সংকল্প নেওয়ার, কিছু করার ইচ্ছাশক্তি জাগায়, এ এক প্রেরণাদায়ী উৎসব, এক প্রেরণাদায়ী সুযোগ। আসুন, স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান মনীষীদের কাছে আমরা প্রেরণা নিই এবং দেশের জন্য আমাদের প্রচেষ্টাকে আরও মজবুত করে তুলি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের ভারত অনেক অনন্য সাধারণ প্রতিভায় সমৃদ্ধ, যাদের কৃতিত্ব অন্যদেরও কিছু করার প্রেরণা যোগায়। এরকমই এক ব্যক্তিত্ব হলেন তেলেঙ্গানার ডাক্তার কুরেলা ভিটঠালাচার্য জি। তাঁর বয়স ৮৪ বছর। স্বপ্ন পূরণ করতে বয়স কোনো বাঁধা নয়, তার উদাহরণ ভিটঠালাচার্য জি। বন্ধুরা, ছোটবেলা থেকেই ভিটঠালাচার্য জির একটাই ইচ্ছে ছিল যে তিনি এক বড় লাইব্রেরী খুলবেন। দেশ তখন পরাধীন, পরিস্থিতি এমন ছিল যে ছোটবেলার সেই স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে গেলো। সময়ের সঙ্গে ভিটঠালাচার্য জি লেকচারার হলেন, তেলুগু ভাষার সুগভীর অধ্যয়ন করেছেন ও সেই ভাষায় তিনি অনেক সৃষ্টিশীল রচনাও লিখেছেন। ৬-৭ বছর আগে উনি ফের একবার নিজের স্বপ্নপূরণ করার উদ্যোগ নেন। উনি নিজের সংগ্রহের বই দিয়ে লাইব্রেরী শুরু করেন। সারা জীবনের উপার্জন এই কাজে উৎসর্গ করেন। ধীরে-ধীরে এই কাজে অংশগ্রহন করতে অন্য মানুষরা এগিয়ে আসতে থাকেন। যদাদ্রি-ভুবনাগিরি জেলার রমন্নাপেট ব্লকের এই লাইব্রেরীতে প্রায় ২ লক্ষ বই আছে। বিটঠল-আচার্যজি বলেন যে, তিনি চান না, পড়শোনা করতে তাঁকে যত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে তা আর কাউকে কোনদিন হতে হয়। বহু ছাত্রছাত্রী ওঁর কাজের ফলে লাভবান হচ্ছে দেখে উনি খুব খুশি হন। ওঁর কাজ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে এখন অন্য অনেক গ্রামের মানুষও তাঁদের এলাকায় গ্রন্থাগার বানানোর কাজ শুরু করেছেন।
বন্ধুরা, বই থেকে কেবল জ্ঞান লাভ হয়না, ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে এবং জীবন গড়ে তোলে। বই পড়ার নেশা একটি অদ্ভুত শান্তি দেয়। আজকাল আমি দেখি মানুষ বেশ গর্বের সঙ্গে বলে থাকেন যে এই বছর আমি এতগুলি বই পড়েছি। ভবিষ্যতে আমি এই-এই বইগুলি পড়তে চাই। এটা একটা খুব ভাল প্রবণতা যেটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিৎ। আমিও ‘মন কী বাত’এর শ্রোতাদের বলব এই বছরে যে ৫টি বই তাঁদের সবচেয়ে পছন্দ হয়েছে তার কথা তাঁরা যেন জানান। এর ফলে আপনি ২০২২এ অন্য পাঠকদের ভাল বই নির্বাচন করতে সাহায্য করবেন। এমন এক সময় যখন আমাদের স্ক্রিন টাইম বাড়ছে, তখন বই পড়াও যাতে আরও জনপ্রিয় হয় তার জন্য আমাদের সবাইকে একত্রে চেষ্টা করতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, সম্প্রতি একটি খুব আকর্ষণীয় প্রচেষ্টার প্রতি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এই প্রচেষ্টার লক্ষ্য আমাদের প্রাচীন গ্রন্থ এবং সাংস্কৃতিক ভাবনাগুলিকে, কেবলমাত্র ভারতেই নয়, বরং সারা পৃথিবীতে জনপ্রিয় করা। পুনেতে ভান্ডারকার ওরিয়েন্টাল রিসার্চ ইন্সটিটিউট বলে একটি সেন্টার আছে। এই সেন্টারটি অন্য দেশের মানুষকে মহাভারতের মাহাত্ব্য বোঝানোর জন্য একটি অনলাইন কোর্স শুরু করেছে। আপনারা এটা শুনে আশ্চর্য হয়ে যাবেন যে, যদিও এই পাঠক্রমটি সবেমাত্র শুরু হয়েছে, কিন্তু এর অন্তর্ভুক্ত বিষয়বস্তু তৈরি করার কাজটি ১০০ বছরেরও বেশি আগে শুরু হয়েছিল। যখন এই প্রতিষ্ঠান এই পাঠক্রমটি শুরু করে তখন তারা দারুণ সাড়া পায়। আমি এই অসাধারণ প্রচেষ্টার আলোচনা এই জন্য করছি যাতে মানুষ জানতে পারেন আমাদের ঐতিহ্যের বিভিন্ন আঙ্গিককে আধুনিকভাবে কীভাবে উপস্থাপনা করা হচ্ছে। সাত সমুদ্র পারে বসে থাকা মানুষের কাছে এর সুফল পৌছনোর জন্যও নতুন নতুন পন্থাপদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে।
বন্ধুরা, আজ সারা দুনিয়া জুড়ে ভারতীয় সংস্কৃতির বিষয়ে জানার আগ্রহ বাড়ছে। পৃথক পৃথক বিভিন্ন দেশের মানুষ শুধু আমাদের সংস্কৃতির ব্যাপারে জানার জন্য উৎসুকই নন, তার প্রসারে তাঁরা সাহায্যও করছেন। এমনই একজন মানুষ হলেন সার্বিয়ান স্কলার ডক্টর মোমির নিকিচ। ইনি সংস্কৃত-সার্বিয় দুটি ভাষায় একটি অভিধান তৈরি করেছেন। এই অভিধানে অন্তর্ভুক্ত ৭০ হাজারেরও বেশী সংস্কৃত শব্দের সার্বিয়ান ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। আপনাদের এটা জেনে আরো ভালো লাগবে যে ডক্টর নিকিচ ৭০ বছর বয়সে সংস্কৃত ভাষা শিখেছেন। উনি বলেন এর অনুপ্রেরণা উনি পেয়েছেন মহাত্মা গান্ধীর রচনা পড়ে। অনুরূপ আরেকটি উদাহরণ মঙ্গোলিয়ার ৯৩ বছর বয়সি প্রফেসর জে.গেন্দেধরম। উনি বিগত চার দশকে ভারতের প্রায় চল্লিশটি প্রাচীন গ্রন্থ, মহাকাব্য ও রচনা মঙ্গোলিয়ান ভাষায় অনুবাদ করেছেন। আমাদের দেশেও এই রকম আবেগের সঙ্গে বহু মানুষ কাজ করছেন। আমি গোয়ার সাগর মূলেজীর প্রয়াস সম্বন্ধেও জানতে পেরেছি, যিনি শয়ে শয়ে বছরের প্রাচীন "কাবী" চিত্রকলার অবলুপ্তি রক্ষার কাজে ব্যাপৃত রয়েছেন। "কাবী" চিত্রকলা ভারতের প্রাচীন ইতিহাসের ধারক। "কাব" শব্দের অর্থ লাল মাটি। প্রাচীনকালে এই চিত্রকলায় লাল মাটির প্রয়োগ করা হত। গোয়ায় পর্তুগিজ শাসনকালে সেখান থেকে পালানোর সময় গোয়ার মানুষ অন্যান্য রাজ্যের মানুষদেরও এই আশ্চর্য চিত্রকলার সঙ্গে পরিচিত করিয়ে ছিলেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই চিত্রকলা বিলুপ্ত হয়ে পড়ছিল। কিন্তু সাগর মূলেজী এতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছেন। তার এই প্রয়াস অত্যন্ত প্রশংসাও অর্জন করছে।
বন্ধুরা, একটা ছোট প্রচেষ্টা, একটা ছোট্ট পদক্ষেপও আমাদের সমৃদ্ধ শিল্পকলাগুলির সংরক্ষণে অনেক বড় ভূমিকা নিতে পারে। যদি আমাদের দেশের মানুষ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন তাহলে দেশজুড়ে আমাদের প্রাচীন শিল্পকলাগুলিকে সাজিয়ে তোলা ও সংরক্ষণের আবেগ এক জনআন্দোলনের রূপ নিতে পারে। আমি এখানে মাত্র কয়েকটি প্রয়াসের বিষয়েই বললাম। দেশজুড়ে এই ধরনের বহু প্রয়াস হচ্ছে। আপনারা তার খবর নমো অ্যাপ এর মাধ্যমে আমার কাছে অবশ্যই পৌঁছে দেবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, অরুণাচল প্রদেশের মানুষ বছর ভর একটি অনন্য অভিযান চালাচ্ছেন, আর তার নাম দিয়েছেন "অরুণাচলপ্রদেশ এয়ারগান সারেন্ডার অভিযান"। এই অভিযানে মানুষ স্বেচ্ছায় নিজের এয়ারগান সারেন্ডার করছেন। কেন জানেন? যাতে অরুণাচল প্রদেশের পাখিদের নির্বিচারে শিকার করা বন্ধ করা যায়। বন্ধুরা, অরুণাচল প্রদেশ পাঁচশোরও বেশি প্রজাতির পাখির বাসস্থান। এদের মধ্যে এমন কিছু দেশি প্রজাতি অন্তর্ভুক্ত যা পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় না। কিন্তু এখন জঙ্গলে পাখিদের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি বদলানোর জন্য এখন এয়ারগান সারেন্ডার অভিযান শুরু করা হয়েছে। বিগত কিছু মাসে পাহাড় থেকে সমতল এলাকা পর্যন্ত, এক সম্প্রদায় থেকে অন্য সম্প্রদায় পর্যন্ত, রাজ্যের সর্বত্রই মানুষ একে সাদরে গ্রহণ করেছে। অরুণাচলের লোক স্বেচ্ছায় এখনো পর্যন্ত ১৬০০-র ও বেশি এয়ারগান জমা দিয়ে ফেলেছেন। আমি অরুণাচলের মানুষদের এর জন্য প্রশংসা করছি, তাঁদের অভিনন্দন জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের সবার কাছ থেকেই ২০২২ এর সঙ্গে জড়িত অনেক বার্তা ও উপদেশ এসেছে। একটি বিষয় প্রতিবারের মত এবারেও অধিকাংশ বার্তায় লক্ষণীয়। সেটা হলো স্বচ্ছতা আর স্বচ্ছ ভারতের। স্বচ্ছতার এই সংকল্প শৃঙ্খলা, সচেতনতা আর সমর্পণের সাহায্যেই সম্পূর্ণ হবে। আমরা এনসিসি ক্যাডেট দের দিয়ে শুরু করা পুনিত সাগর অভিযানেও এর ঝলক দেখতে পাই। এই অভিযানে ৩০ হাজারেরও বেশি এনসিসি ক্যাডেট অংশগ্রহণ করে। এনসিসি ক্যাডেটসরা সমুদ্রতট পরিষ্কার করে। ওখানকার প্লাস্টিক আবর্জনা তুলে তা পুনর্ব্যবহারের জন্য জড়ো করে। আমাদের সমুদ্রতট, আমাদের পাহাড় তখনই ভ্রমণ যোগ্য হবে যখন তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবে। অনেক মানুষ কোনো জায়গায় যাওয়ার স্বপ্ন আজীবন দেখে থাকেন, কিন্তু যখন ওখানে যান তখন জ্ঞানে বা অজ্ঞানে সেখানে নোংরা ফেলে আসেন। এটা প্রত্যেক দেশবাসীর দায়িত্ব যে, যে জায়গা আমাদের এত আনন্দ দেয়, আমরা যেন তাকে নোংরা না করি।
বন্ধুরা আমি 'সাফ ওয়াটার' নামে একটি স্টার্টাপের কথা জানতে পেরেছি যেটা কয়েকজন যুবক মিলে শুরু করেছেন। এটি কৃত্রিম মেধা আর ইন্টার্নেট অফ থিংস এর সাহায্যে মানুষকে তাদের এলাকায় জলের শুদ্ধতা আর গুণমান সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করে।এটা স্বচ্ছতারই পরবর্তী ধাপ। মানুষের স্বচ্ছ আর স্বাস্থোজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য এই স্টার্টাপের গুরুত্বকে প্রাধান্য দিয়ে একে একটি গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ডও দেওয়া হয়েছে।
বন্ধুরা, স্বচ্ছতার প্রতি এক ধাপ, এই প্রচেষ্টায়, কোনো প্রতিষ্ঠান হোক বা সরকার, প্রত্যেকেরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আপনারা সবাই জানেন, আগে সরকারি অফিসে পুরনো ফাইল আর কাগজ কিভাবে স্তূপিকৃত হয়ে থাকত। যখন থেকে সরকার এই পুরানো পন্থা বদলাতে শুরু করেছে, এই ফাইল এবং কাগজের স্তূপ ডিজিটাইজ হয়ে কম্পিউটারে বিভিন্ন ফোল্ডারে ঢুকছে। যে কটা পুরানো এবং পড়ে থাকা ফাইল আছে তা সরানোর জন্য মন্ত্রক এবং বিভাগীয় স্তরে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। এই অভিযানে বেশ কিছু মজার ব্যাপার ঘটেছে | ডাক বিভাগে যখন এই পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হলো, তখন তাদের সমস্ত জাঙ্ক ইয়ার্ড সম্পূর্ণ খালি হয়ে গেলো। এখন এই জাঙ্ক ইয়ার্ডকে একটি কোর্টইয়ার্ড এবং একটি ক্যাফেটেরিয়াতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। আরেকটি জাঙ্কিয়ার্ডকে টু হুইলার পার্কিংয়ের জায়গা করা হয়েছে। একইভাবে, পরিবেশ মন্ত্রক তার খালি জাঙ্কইয়ার্ডকে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রূপান্তরিত করেছে। এমনকি নগরোন্নয়ন মন্ত্রক একটি ‘স্বচ্ছ এটিএম’ স্থাপনও করেছে। এর উদ্দেশ্য হল মানুষ আবর্জনার বিনিময়ে নগদ নিয়ে যান। অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রক, গাছ থেকে পড়া শুকনো পাতা ও জৈব বর্জ্য থেকে জৈব কম্পোস্ট তৈরি শুরু করেছে। এই বিভাগ বর্জ্য কাগজ থেকে স্টেশনারি তৈরির কাজও করছে। আমাদের সরকারি দপ্তরগুলোও স্বচ্ছতার মতো বিষয়ে এতটাই ইনোভেটিভ হতে পারে। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত, কেউ এমনটা বিশ্বাসই পারতো না, কিন্তু আজ এটি ব্যবস্থার অংশ হয়ে উঠছে। এটিই দেশের নতুন ভাবনা, যার নেতৃত্ব সকল দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে করছে। আমার প্রিয় দেশবাসী, 'মন কি বাত'-এ এবারও আমরা অনেক বিষয়ে কথা বলেছি। প্রতিবারের মতো এবারও এক মাস পর আমরা আবার মিলিত হবো, কিন্তু, ২০২২এ। প্রতিটি নতুন সূচনা নিজের সামর্থ্যকে চেনার সুযোগও নিয়ে আসে। যে লক্ষ্যপূরণ সম্পর্কে আমরা আগে কল্পনাও করিনি, আজ তার জন্য দেশ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের এখানে বলা হয়েছে-
‘ক্ষণশ: কণাশশ্চৈব, বিদ্যাম অর্থ চ সাধয়েৎ,
ক্ষণে নষ্টে কুতো বিদ্যা, কণে নষ্টে কুতো ধনম’
অর্থাৎ, যখন আমাদের শিক্ষা অর্জন করতে হবে, নতুন কিছু শিখতে হবে, করতে হবে, তখন আমাদের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাতে হবে। এবং যখন আমাদের অর্থ উপার্জন করতে হবে, অর্থাৎ উন্নতি করতে হবে, তখন প্রতিটি কণা, অর্থাৎ প্রতিটি সম্পদকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা উচিত। কারণ, মুহূর্তকে হারানোর সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যা আর জ্ঞান চলে যায়, এবং প্রতিটি কণার বিনাশের সঙ্গে সঙ্গে সম্পদ ও উন্নতির পথও বন্ধ হয়ে যায়। এইগুলো আমাদের সকল দেশবাসীর জন্য অনুপ্রেরণা। আমাদের কত কিছু শিখতে হবে, নতুন উদ্ভাবন করতে হবে, নতুন লক্ষ্য অর্জন করতে হবে, সুতরাং, আমাদের এক মুহূর্ত নষ্ট না করে লেগে পড়তে হবে। আমাদের দেশকে প্রগতির নতুন উচ্চতায় পৌঁছতে হবে, তাই আমাদের প্রতিটি সম্পদকে সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার করতে হবে। এটি একপ্রকার আত্মনির্ভর ভারতেরই মন্ত্র, কারণ আমরা যখন আমাদের সম্পদকে সঠিকভাবে ব্যবহার করবো তা নষ্ট হতে দেবো না, তখনই আমরা লোকাল-এর ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত হবো, আর তখনই দেশ আত্মনির্ভর হবে। এই জন্য আসুন আমরা নতুন করে আমাদের সংকল্প করি যে, আমরা চিন্তার প্রসার ঘটাবো, আমরা বড় বড় স্বপ্ন দেখবো এবং সেই স্বপ্নপূরণ করতে নিজেদের সমস্ত শক্তি উজাড় করে দেব। এবং আমাদের স্বপ্ন শুধুমাত্র আমাদের মধ্যেই সীমিত থাকবে না। আমাদের স্বপ্ন এমন হবে যার সঙ্গে আমাদের দেশ ও সমাজের বিকাশ যুক্ত থাকবে, আমাদের প্রগতির মাধ্যমে দেশের উন্নতির পথ প্রশস্ত হবে এবং তার জন্য আমাদের আজ থেকেই লেগে পড়তে হবে, এক কণা সম্পদ বা একটা মুহূর্ত নষ্ট করা চলবে না। আমি সম্পুর্ণ বিশ্বাস করি যে, এই সংকল্পের সঙ্গেই আগামী বছরে দেশ এগিয়ে যাবে এবং ২০২২ সাল, এক নতুন ভারত নির্মাণের স্বর্ণালী অধ্যায়ের সূচনা করবে। এই আস্থার সঙ্গেই আপনাদের সকলকে আগামী ২০২২ সালের অনেক অনেক শুভকামনা। অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আজ আমরা ফের একবার ‘মন কি বাত’এর জন্য একসঙ্গে মিলিত হচ্ছি। দু’ দিন পরে ডিসেম্বর মাসও শুরু হচ্ছে আর ডিসেম্বর এলেই আমাদের এমন মানসিক ভাব তৈরি হয় যে চলো ভাই, বছরটা শেষ হয়ে গেল। এটা বছরের শেষ মাস আর নতুন বছরের জন্য নকশা-পরিকল্পনা তৈরি শুরু করে দিই। এই মাসেই দেশ ‘নেভি ডে’ আর ‘আর্মড ফোর্সেস ফ্ল্যাগ ডে’ পালন করে । আমরা সবাই জানি যে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীও পালন করছে দেশ। আমি এই সব উপলক্ষ্যে দেশের সুরক্ষা বাহিনীর কীর্তিকে স্মরণ করি, আমাদের বীরদের স্মরণ করি। আর বিশেষভাবে সেইসব বীরদের জন্মদাত্রী বীর মায়েদের স্মরণ করি। প্রত্যেক বারের মত এবারও আমি নমো অ্যাপে, মাইগভে সবার অনেক-অনেক পরামর্শ পেয়েছি। আপনারা আমাকে আপনাদের পরিবারের অংশ মনে করে নিজেদের জীবনের সুখদুঃখও ভাগ করে নিয়েছেন। এঁদের মধ্যে অনেক নব্য যুবক-যুবতী আছেন, ছাত্রছাত্রীরা আছেন। আমার সত্যিই খুব ভালো লাগে যে ‘মন কি বাত’এর আমাদের এই পরিবার নিরন্তর বড় তো হচ্ছেই, মনের দিক থেকে, উদ্দেশ্যের দিক থেকেও সংযুক্ত হচ্ছে আর আমাদের হওয়া গভীরতর সম্পর্ক, আমাদের অন্তরে, নিরন্তর এক সদর্থক প্রবাহ প্রবাহিত করাচ্ছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাকে সীতাপুরের ওজস্বী লিখেছে যে অমৃত মহোৎসবের বিষয়ে আলোচনা তাঁর খুব পছন্দ হচ্ছে। সে নিজের বন্ধুদের সঙ্গে ‘মন কি বাত’ শোনে আর স্বাধীনতা সংগ্রামের ব্যাপারে কিছু জানার, শেখার ধারাবাহিক প্রয়াস বজায় যায়। বন্ধুরা, অমৃত মহোৎসব কিছু শেখানোর পাশাপাশি আমাদের দেশের জন্য কিছু করারও প্রেরণা দেয় আর এখন তো দেশের সাধারণ মানুষ হোন বা বিভিন্ন সরকার, পঞ্চায়েত থেকে সংসদ অবধি, অমৃত মহোৎসবের গুঞ্জন শোনা যায়, আর একটানা এই মহোৎসবের সঙ্গে জুড়ে থাকা কার্যক্রমের পালা চলছে। এমনই এক আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান কিছু দিন আগে দিল্লীতে হল। ‘আজাদী কি কঁহানী, বচ্চো কি জুবানি’ অনুষ্ঠানে শিশুরা স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত নানা কাহিনীকে পূর্ণ উৎসাহ নিয়ে পরিবেশন করেছিল। বিশেষ ব্যাপার এটাও ছিল যে এখানে ভারতের সঙ্গে নেপাল, মরিশাস, তানজানিয়া, নিউজিল্যাণ্ড আর ফিজির ছাত্রছাত্রীরাও যুক্ত হয়েছিল। আমাদের দেশের মহারত্ন ও এন জি সি। ও এন জি সি-ও কিছুটা ভিন্নভাবে অমৃত মহোৎসব পালন করছে। ও এন জি সি আজকাল তেলের খনিতে নিজেদের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষামূলক ভ্রমণের আয়োজন করছে। এই সব সফরে তরুণদের ও এন জি সি-র তেলের খনির কাজকর্ম সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হচ্ছে – উদ্দেশ্য এই যে আমাদের ভবিষ্যতের ইঞ্জিনীয়াররা রাষ্ট্রনির্মাণের প্রচেষ্টায় পুরো উৎসাহ আর উদ্যমের সঙ্গে যাতে অংশ নিতে পারে।
বন্ধুরা, স্বাধীনতার লড়াইতে আমাদের জনজাতিসমূহের অবদান মনে রেখে দেশ জনজাতীয় গৌরব সপ্তাহও পালন করেছে। দেশের ভিন্ন ভিন্ন অংশে এর সঙ্গে যুক্ত অনুষ্ঠানও হয়েছে। আন্দামান নিকোবর দ্বীপসমূহে জারোয়া আর ওঙ্গি, এমন জনজাতিসমূহর মানুষজন নিজেদের সংস্কৃতির প্রদর্শন করেছেন। এক অসাধারণ কাজ হিমাচল প্রদেশের ঊনার মিনিয়েচার রাইটার রাম কুমার জোশীজিও করেছেন। তিনি ডাকটিকিটের উপর, অর্থাৎ এত ছোট ডাকটিকিটের উপর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর অভূতপূর্ব স্কেচ তৈরি করেছেন। হিন্দীতে লেখা ‘রাম’ শব্দের উপর উনি স্কেচ তৈরি করেছেন, যেখানে সংক্ষেপে দু’জন মহাপুরুষের জীবনীও উৎকীর্ণ রয়েছে। মধ্যপ্রদেশের কাটনি থেকেও কিছু বন্ধু এক অবিস্মরণীয় দাস্তানগোঈ কর্মসূচী সম্পর্কে জানিয়েছেন। এতে রানী দুর্গাবতীর অদম্য সাহস আর বলিদানের স্মৃতিকে জীবন্ত করে তোলা হয়েছে। এমনই এক অনুষ্ঠান কাশীতে হয়েছে। গোস্বামী তুলসীদাস, সন্ত কবীর, সন্ত রুইদাস, ভারতেন্দু হরিশ্চন্দ্র, মুন্সী প্রেমচাঁদ আর জয়শঙ্কর প্রসাদের মত মহান ব্যক্তিদের সম্মানে তিন দিনের মহোৎসব আয়োজিত হয়েছিল। ভিন্ন ভিন্ন সময়পর্বে, এঁদের সবার, দেশের জনজাগরণেতে, খুব বড় ভূমিকা ছিল। আপনাদের মনে থাকবে, ‘মন কি বাত’এর আগের পর্বে আমি তিনটে প্রতিযোগিতার উল্লেখ করেছিলাম, প্রতিযোগিতার আলোচনা করেছিলাম - এক, দেশভক্তি নিয়ে গান রচনা, দেশভক্তির সঙ্গে যুক্ত, স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত ঘটনা নিয়ে রঙ্গিন আলপনা আঁকা আর আমাদের শিশুদের মনে মহান ভারতের স্বপ্ন জাগানো ঘুমপাড়ানি গান রচনা করা। আমার আশা যে এই তিন প্রতিযোগিতার জন্য আপনারা অবশ্যই নাম নথিভুক্ত করেছেন, পরিকল্পনা তৈরিও শুরু করেছেন আর নিজেদের বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনাও শুরু করেছেন। আমার আশা, উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে আপনারা ভারতের প্রত্যেক কোণায় অবশ্যই এই কর্মসূচীকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এই আলোচনা থেকে আমি আপনাদের সোজা বৃন্দাবনে নিয়ে যাচ্ছি। বৃন্দাবন প্রসঙ্গে বলা হয় যে এটা ভগবানের প্রেমের প্রত্যক্ষ স্বরূপ। আমাদের সাধুরাও বলেছেন,
“ইয়হ আসা ধরি চিত্ত মে, ইয়হ আসা ধরি চিত্ত মে
কহত যথা মোতি মোর।
বৃন্দাবন সুখ রঙ কো, বৃন্দাবন সুখ রঙ কো,
কাহু না পায়ো ওউর”।
অর্থাৎ বৃন্দাবনের মহিমা আমরা সকলেই নিজেদের সাধ্যমত মূল্যায়ন করি বটে, কিন্তু বৃন্দাবনের যে সুখ, যে মোহ, তার শেষ পর্যন্ত কেউ পৌঁছতে পারেনা, সে তো অসীম। তাইতো বৃন্দাবন সমগ্র বিশ্বের মানুষকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করে। এর দৃষ্টান্ত আপনি বিশ্বের প্রত্যেক প্রান্তে খুঁজে পাবেন।
পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় একটি শহর আছে, পার্থ। ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ এই জায়গার সঙ্গে ভালোভাবে পরিচিত, কারণ পার্থে প্রায়ই ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজিত হয়। পার্থে ''স্যাক্রেড ইন্ডিয়া গ্যালারি'' নামে একটি আর্ট গ্যালারিও আছে। এই গ্যালারি সোয়ান ভ্যালির একটি সুন্দর জায়গায় তৈরি করা হয়েছে, আর এটি অস্ট্রেলিয়ার এক নাগরিক জগত্তারিণী দাসীর প্রচেষ্টার ফলাফল। জগত্তারিণীজি যদিও অস্ট্রেলিয়ার নিবাসী, তাঁর জন্ম সেখানে হয়েছে, তিনি ওখানেই বড় হয়েছেন, কিন্তু ১৩ বছরেরও বেশি সময় তিনি বৃন্দাবনে কাটিয়েছেন। ওঁর মতে, উনি অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে তো গেছেন, নিজের দেশে ফিরে হয়তো গেছেন, কিন্তু উনি কখনোই বৃন্দাবনকে ভুলতে পারেননি। তাই তিনি বৃন্দাবন এবং তার আধ্যাত্মিক ভাবনার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য অস্ট্রেলিয়াতেও বৃন্দাবন তৈরি করেছেন। নিজের শিল্পকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে এক আশ্চর্য বৃন্দাবন সৃষ্টি করেছেন উনি। ওখানে যে সমস্ত মানুষের আসেন, তাঁরা নানা ধরনের শিল্প-সৃষ্টি দেখার সুযোগ পান। ওঁরা ভারতের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ তীর্থক্ষেত্র বৃন্দাবন, নবদ্বীপ এবং জগন্নাথধামের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি দেখতে পান। ওখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নানা শিল্প-সৃষ্টিরও প্রদর্শন করা হয়। একটা এমনও শিল্পকীর্তি প্রদর্শিত হয়, যেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গোবর্ধন পর্বতকে নিজের কড়ে আঙুলে ওঠাচ্ছেন, যার নিচে বৃন্দাবনের মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। জগত্তারিণীজির এই চমৎকার প্রচেষ্টা অবশ্যই আমাদের কৃষ্ণ-ভক্তির শক্তির দর্শন করায়। আমি ওঁকে এই প্রচেষ্টার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এখনই আমি অস্ট্রেলিয়ার পার্থে তৈরি হওয়া বৃন্দাবনের বিষয়ে কথা বলছিলাম। এখানেও একটা চমৎকার ইতিহাস রয়েছে যে অস্ট্রেলিয়ার একটা সম্পর্ক আমাদের বুন্দেলখন্ডের ঝাঁসির সঙ্গেও আছে, আসলে ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাঈ যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনি লড়াই লড়ছিলেন তখন ওঁর উকিল ছিলেন জন ল্যাঙ। জন ল্যাঙ মূলত অস্ট্রেলিয়ার অধিবাসী ছিলেন। ভারতে থেকে উনি রানী লক্ষ্মীবাঈ-এর হয়ে এই মোকদ্দমা লড়েছিলেন। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁসি আর বুন্দেলখন্ডের যে কত বড় অবদান ছিল তা আমরা সকলেই জানি। এখানে রানী লক্ষ্মীবাঈ আর ঝলকারি বাঈ-এর মত বীরাঙ্গনারাও জন্মগ্রহণ করেছেন, অন্যদিকে এই অঞ্চল মেজর ধ্যানচাঁদের মত ক্রীড়া-রত্নকেও দেশকে দিয়েছে ।
বন্ধুরা, বীরত্ব কেবলমাত্র যে যুদ্ধের ময়দানেই দেখানো যায়, এমনটা জরুরি নয়। শৌর্য যখন একটা ব্রতের মত হয়ে যায় আর তা বিস্তৃত হয়, তখন প্রতিক্ষেত্রে তার কার্যসিদ্ধি ঘটতে থাকে। আমায় এমনই সাহসিকতার সম্বন্ধে শ্রীমতি জ্যোৎস্না চিঠি লিখে জানিয়েছেন, জালৌনে এক ঐতিহ্যবাহী নদী আছে, নুন নদী। নুন, এই অঞ্চলের কৃষকদের জন্য জলের প্রধান উৎস হিসেবে ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে নুন নদী বিলুপ্ত হওয়ার পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল, যতটুকু অস্তিত্ব বেঁচে ছিল ওই নদীর, সেটুকুও নর্দমাইয় রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছিল। এতে কৃষকদের সেচের জন্য সংকটের মুখোমুখি হতে হচ্ছিল। জালোনের লোকেরা এই পরিস্থিতি বদলানোর দায়িত্ব নিল। এই বছরের মার্চ মাসে এর জন্য একটি কমিটি বানানো হলো। হাজার হাজার গ্রামীণ এবং স্থানীয় মানুষরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এখানের পঞ্চায়েতগুলো গ্রামের মানুষের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করা শুরু করে, আর এখন খুবই কম সময়ে ও কম পরিশ্রমে এই নদী পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। বহু কৃষক লাভবান হয়েছে এতে। রণক্ষেত্রের বীরত্বের বাইরেও আলাদা বীরত্বের উদাহরণ এটা, আমাদের দেশবাসীর সংকল্পের শক্তি প্রদর্শন করে এবং এটাও বোঝায় যে আমরা যদি কোন বিষয়ে মনস্থির করি তাহলে কিছুই অসম্ভব নয়। তাইতো আমি বলি 'সবকা প্রয়াস'।
আমার প্রিয় দেশবাসী, যখন আমি প্রকৃতির সংরক্ষণ করি, তখন তার পরিবর্তে প্রকৃতি ও আমাদের সংরক্ষণ ও সুরক্ষা প্রদান করে। এই কথাই আমরা নিজের জীবনে অনুভব করি, আর এমনই এক উদাহরণ তামিলনাড়ুর লোকেরা বৃহৎ আকারে তুলে ধরেছেন। এই উদাহরণ তামিলনাড়ুর তুতুকুড়ি জেলার। আমরা জানি যে উপকূলবর্তী এলাকায় অনেকবার জমি প্লাবিত হওয়ার ভয় থাকে। তুতুকুড়ির বেশ কয়েকটা ছোট দ্বীপ ও সমূদ্র তীরবর্তী জনপদের অবস্থা এমন ছিল, যেগুলো সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছিল। ওই অঞ্চলের লোকেরা আর বিশেষজ্ঞরা এই প্রাকৃতিক সংকট থেকে সুরক্ষার উপায় প্রকৃতির মাধ্যমেই খুঁজছিলেন। ওখানকার লোকেরা এই দ্বীপগুলোতে তাল গাছ লাগিয়েছেন। এই গাছ ঘূর্নিঝড় ও ঝড়ে দাঁড়িয়ে থাকে আর মাটিরও সুরক্ষা প্রদান করে। এর মাধ্যমে এখন এই অঞ্চলকে বাঁচানোর এক নতুন আশা জেগেছে।
বন্ধুরা, প্রকৃতি থেকে আমাদের বিপদের সম্ভাবনা তখনই তৈরি হয় যখন আমরা তার ভারসাম্যকে বিনষ্ট করি অথবা তার পবিত্রতা নষ্ট করি। প্রকৃতি মায়ের মত আমাদের সুরক্ষা প্রদান করে আর আমাদের পৃথিবীতে নতুন নতুন রংয়ের ছোঁয়া দেয়।
এইমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখছিলাম, মেঘালয়ে একটি উড়ন্ত নৌকার ছবি খুব ভাইরাল হয়েছে। এই ছবি প্রথম দর্শনেই আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আপনাদের মত অনেকেই হয়তো তা অনলাইনে নিশ্চয়ই দেখেছেন। হাওয়ায় ভাসমান এই নৌকাকে যখন আমরা খুব কাছ থেকে দেখি তখন বুঝতে পারি যে তা নদীর জলে ভাসছে। নদীর জল এতই স্বচ্ছ যে আমরা তার পাদদেশ দেখতে পাই তাই মনে হয় যেন নৌকা বাতাসে ভাসছে। আমাদের দেশে এমন অনেক রাজ্য, এমন অনেক এলাকা রয়েছে যেখানে মানুষ তাদের প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের ধারাকে সংরক্ষিত রেখেছেন। তাঁরা প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জীবনধারাকে আজও বাঁচিয়ে রেখেছেন। এটা আমাদের সকলের জন্যও অনুপ্রেরণা। আমাদের চারপাশে যা কিছু প্রাকৃতিক সম্পদ হয়েছে, আমাদের উচিত তা সংরক্ষণ করা, তাদের আসল রূপে ফিরিয়ে আনা। এতে আমাদের সকলের মঙ্গল, বিশ্বেরও মঙ্গল।
আমার প্রিয় দেশবাসী, সরকার যখন পরিকল্পনা করে, বাজেট বরাদ্দ করে, সময়মতো প্রকল্প শেষ করে, তখন মানুষ অনুভব করে যে সরকার কাজ করছে। কিন্তু সরকারের অনেক কাজে, উন্নয়নের অনেক পরিকল্পনার মধ্যে মানবিক সহানুভূতি সংক্রান্ত বিষয়গুলো সবসময়ই আলাদা আনন্দ দেয়। সরকারি প্রচেষ্টা ও পরিকল্পনা কিভাবে বদলে দেয় কারো জীবন, সেই বদলে যাওয়া জীবনের অভিজ্ঞতাই বা কী? সেসব যখন শুনি তখন আমাদেরও মন ভরে যায়। মনকে তৃপ্ত করে এবং সেই পরিকল্পনাকে আরো বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার অনুপ্রেরণাও দেয়। এটাই তো "স্বান্তঃ সুখায়"। তাই আজ ‘মন কি বাত’-এ আমাদের সঙ্গে এমন দুজন সঙ্গীও যোগ দিচ্ছেন, যারা নিজের সাহসিকতার বলে এক নতুন জীবন জয় করে এসেছেন। তাঁরা আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সাহায্যে চিকিত্সা করিয়ে একনতুন জীবন শুরু করেছেন। আমাদের প্রথম সঙ্গী হলেন রাজেশ কুমার প্রজাপতি যার হৃদরোগ বা হার্টের সমস্যা ছিল। আসুন, আমরা রাজেশ জির সঙ্গে কথা বলি-
প্রধানমন্ত্রীজী - রাজেশ জি নমস্কার।
রাজেশ প্রজাপতি - নমস্কার স্যার নমস্কার।
প্রধানমন্ত্রীজী - আপনার কি অসুখ ছিল রাজেশ জি? আপনি নিশ্চয়ই কোনো ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন, আমাকে একটু বুঝিয়ে বলুন, স্থানীয় ডাক্তার নিশ্চয়ই এমন কিছু বলেছিলেন তখন অন্য কোনো ডাক্তারের কাছেও গিয়েছিলেন? তখন আপনি কি ভাবছিলেন কি সিদ্ধান্ত নেবেন বা নেবেন না? ঠিক কী কী হয়েছিল?
রাজেশ প্রজাপতি - আমার হার্টে কিছু সমস্যা হয়েছিল স্যার। বুক জ্বালা হত স্যার, তখন আমি ডাক্তার দেখালাম। ডাক্তার প্রথমে বললেন হয়তো তোমার এসিড হয়েছে তাই বেশ কিছুদিন ধরে এসিডের ওষুধ খেলাম। যখন তাতে কিছু লাভ হল না তখন ডাক্তার কাপুর কে দেখালাম। উনি বললেন তোমার যা লক্ষণ দেখছি তা এনজিওগ্রাফিতে ধরা পড়বে, তাই উনি আমায় শ্রীরাম মূর্তি তে রেফার করলেন। ওখানে আমার অমরেশ আগরওয়ালজির সঙ্গে দেখা হলো, উনি আমার এনজিওগ্রাফি করলেন। তিনি জানালেন আমার শিরায় ব্লকেজ রয়েছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম স্যার কত খরচ পড়বে? তিনি জিজ্ঞাসা করলেন আয়ুষ্মানের কার্ড রয়েছে কি, যা প্রধানমন্ত্রীজি বানিয়ে দিয়েছেন? আমি বললাম স্যার আমার কাছে সেই কার্ড আছে। তো তিনি আমার কার্ড নিলেন ও আমার চিকিৎসার সমস্ত খরচা ওই কার্ডের মাধ্যমেই হয়েছে। স্যার আপনি যে এই কার্ড বানিয়েছেন তা খুব ভালোভাবে আমাদের মতো গরিব মানুষদের নানান সুবিধা দিয়েছে। আপনাকে যে কিভাবে ধন্যবাদ জানাবো।
প্রধানমন্ত্রীজী -আপনি কি করেন রাজেশ জি?
রাজেশ প্রজাপতি -স্যার এখন আমি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করি।
প্রধানমন্ত্রীজী - আপনার বয়স কত?
রাজেশ প্রজাপতি - ৩৯ বছর স্যার।
প্রধানমন্ত্রীজী - এত অল্প বয়সে আপনার হার্টের সমস্যা শুরু হয়ে গেল।
রাজেশ প্রজাপতি - হ্যাঁ স্যার, কি আর বলবো!
প্রধানমন্ত্রীজী - আপনার পরিবারে আপনার বাবা বা মায়ের এই ধরনের কি কোন সমস্যা ছিল?
রাজেশ প্রজাপতি - না স্যার, কারোরই কোনো সমস্যা নেই স্যার, আমারই প্রথমে সমস্যা হলো।
প্রধানমন্ত্রীজী – এই যে আয়ুষ্মান কার্ড যা ভারত সরকার দিয়ে থাকে, দরিদ্রদের জন্য অনেক বড় প্রকল্প। তার সম্পর্কে আপনি জানলেন কিভাবে?
রাজেশ প্রজাপতি - স্যার এটা তো অনেক বড় প্রকল্প। এতে গরিব মানুষের অনেক লাভ হয়েছে এবং তারা খুব খুশিও স্যার। আমি হসপিটালে দেখেছি এই কার্ডের জন্য মানুষ কত সুবিধা পাচ্ছে। যখন ডাক্তারকে কেউ বলে আমার কাছে কার্ড রয়েছে স্যার, তখন ডাক্তার বলে- ঠিক আছে আপনি কার্ড নিয়ে আসুন, আমি সেই কার্ডে আপনার চিকিৎসা করে দেবো।
প্রধানমন্ত্রীজী -আচ্ছা, যদি কার্ড না থাকতো তাহলে ডাক্তার কত টাকা খরচা হবে বলেছিলেন?
রাজেশ প্রজাপতি - ডাক্তার বলেছিল যদি কার্ড না থাকে তাহলে অনেক টাকা খরচা পড়বে। তখন আমি বললাম স্যার আমার কাছে কার্ড রয়েছে। উনি আমাকে তখনই তা দেখাতে বললেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে তা দেখালাম ও সেই কারণেই আমার চিকিৎসা হলো। আমায় এক পয়সা খরচা করতে হয়নি। এমনকি ওষুধের খরচাও কার্ড থেকেই পাওয়া গেছে।
প্রধানমন্ত্রীজী - তাহলে রাজেশ জি আপনি এখন খুশী তো? শরীর ঠিক আছে?
রাজেশ প্রজাপতি - হ্যাঁ স্যার। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ স্যার। আপনি দীর্ঘজীবী হোন ও দীর্ঘ হোক আপনার শাসনকাল। আমার পরিবারের সবাই আপনাকে নিয়ে এত আনন্দিত যে কি বলবো।
প্রধানমন্ত্রী - রাজেশবাবু, আপনি আমাকে ক্ষমতায় থাকার শুভকামনা জানাবেন না, আমি আজকেও ক্ষমতায় নেই এবং ভবিষ্যতেও যেতে চাই না। আমি শুধু সেবায় থাকতে চাই। আমার কাছে এই প্রধানমন্ত্রীত্ব, এই পদ, এই সব কিছু ক্ষমতার জন্য নয় ভাই, সেবার জন্য।
রাজেশ প্রজাপতি - আমরা তো সেবাই চাই, আর কিছু না।
প্রধানমন্ত্রী - দেখুন, দরিদ্রদের জন্য এই আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প নিজেই…
রাজেশ প্রজাপতি - হ্যাঁ স্যার, খুবই ভাল জিনিস।
প্রধানমন্ত্রী - কিন্তু দেখুন রাজেশবাবু, আপনি আমার একটা কাজ করে দিন, দেবেন?
রাজেশ প্রজাপতি - হ্যাঁ অবশ্যই করব, স্যার।
প্রধানমন্ত্রী - দেখুন, বাস্তবে এই প্রকল্পের ব্যপারে বেশিরভাগ মানুষ জানেন না। আপনি একটা দায়িত্ব নিন। আপনার চারপাশে যত গরীব পরিবার আছে, আপনি তাঁদের এই প্রকল্পে আপনার কী-রকম লাভ হল, কীরকম সাহায্য মিলল তা জানাবেন?
রাজেশ প্রজাপতি - অবশ্যই জানাব স্যার।
প্রধানমন্ত্রী - আর তাঁদের এটাও বলবেন এরকম কার্ড বানাতে। বলা তো যায় না পরিবারে কখন বিপদ আসে এবং দরিদ্র মানুষ ওষুধ কিনতে সমস্যায় পড়েন। এটা তো ঠিক বিষয় নয়। এবং পয়সার অভাবে যদি তাঁরা ওষুধ না নেন এবং অসুখের চিকিৎসা না করেন তাহলে সেটা খুবই চিন্তার বিষয়। আর দরিদ্র মানুষদের কী হয় সেটা আমরা জানি যেমন আপনার হার্ট প্রব্লেম হওয়ার কারণে আপনি বহু মাস কোন কাজ করতে পারেননি নিশ্চয়।
রাজেশ প্রজাপতি - আমি তো দশ পাও চলতে পারতাম না, সিঁড়ি চড়তে পারতাম না, স্যার।
প্রধানমন্ত্রী - বেশ রাজেশ বাবু তাহলে আপনি আমার একজন ভাল বন্ধু হয়ে যান। যত গরীব মানুষকে আপনি এই আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের ব্যাপারে বোঝাতে পারবেন যত অসুস্থ লোকের সাহায্য করতে পারবেন তাতে আপনিও তৃপ্তি অনুভব করবেন এবং আমারও খুব আনন্দ হবে যে একজন রাজেশবাবুর শরীর তো ঠিক হল কিন্তু সেই রাজেশবাবু আরও কোটি-কোটি মানুষের রোগমুক্তি ঘটালেন। এই আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প গরীবদের জন্য, মধ্যবিত্তদের জন্য, সাধারণ পরিবারদের জন্য, তাই ঘরে-ঘরে এই বার্তা পৌঁছে দেবেন আপনি।
রাজেশ প্রজাপতি - অবশ্যই পৌঁছে দেব, স্যার। আমি তো তিনদিন হাসপাতালে ছিলাম স্যার। বহু মানুষ দেখতে এসেছিল তখন, তাঁদের এই প্রকল্পের সব সুবিধের কথা আমি বলেছিলাম। কার্ড ফ্রি তে হবে এটাও বলেছিলাম।
প্রধানমন্ত্রী - ঠিক আছে রাজেশ বাবু, আপনি নিজেকে সুস্থ রাখুন। একটু শরীরের কথা ভাবুন, আপনার বাচ্চাদের কথা ভাবুন, এবং জীবনে খুব উন্নতি করুন, আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুরা, আমরা রাজেশবাবুর কথা শুনলাম। আসুন এখন আমাদের সঙ্গে সুখদেবীজিও যোগ দিচ্ছেন। তিনি হাটুর সমস্যায় খুব বিপদে পড়েছিলেন। আসুন আমরা প্রথমে সুখদেবীজির থেকে তাঁর দুঃখের কথা শুনি এবং তারপর কীভাবে তাঁর জীবনে সুখ এল সেটাও শুনি।
মোদী জি - সুখদেবীজি নমস্কার। আপনি কোথা থেকে বলছেন?
সুখদেবী - দানদাপরা থেকে।
মোদী জি - সেটা কোন জেলায় পড়ে?
সুখদেবী - মথুরায়।
মোদী জি - মথুরায়! তাহলে তো আপনাকে নমস্কারও জানাতে হবে এবং তাঁর পাশাপাশি রাধে-রাধেও বলতে হবে।
সুখদেবীজি - হ্যাঁ, রাধে-রাধে!
মোদী জি - আচ্ছা আমি শুনেছি আপনি বেশ সমস্যায় ছিলেন। আপনার একটি অপারেশনও হয়েছিল। একটু বলবেন পুরো ব্যাপারটা?
সুখদেবীজি - হ্যাঁ আমার হাঁটু খারাপ হয়ে গেছিল। তাই অপারেশন করতে হয়েছিল। প্রয়াগ হাসপাতালে।
মোদী জি - আপনার বয়স কত? সুখদেবীজি।
সুখদেবীজি - ৪০ বছর।
মোদী জি - ৪০ বছর আর সুখদেবী নাম, আর সুখদেবীর অসুখ হল।
সুখদেবীজি - আমি তো ১৫-১৬ বছর বয়স থেকেই অসুস্থায় ভুগছি।
মোদী জি - আরে বাবা রে। এত কম বয়স থেকেই আপনি হাঁটুর সমস্যায় ভুগছেন?
সুখদেবীজি - একে গেঁটে বাত বলে, যা গাঁটে-গাঁটে ব্যথা সৃষ্টি করে যার ফলে আস্তে আস্তে হাঁটু খারাপ হয়ে গেল।
মোদী জি - তো আপনি ১৬ থেকে ৪০ বছর অব্দি এই রোগের কোন চিকিৎসা করাননি?
সুখদেবীজি - না, করিয়েছিলাম। ব্যথার ওষুধ খেতাম। ছোট-খাটো ডাক্তাররা যেসব দেশীয় ওষুধ আছে সেগুলো দিয়েছিলেন। হাতুড়ে ডাক্তাররা তো সুস্থ হাঁটু অচল করে দিয়েছিলেন। ১-২ কিলোমিটার চলেই আমার হাঁটু খারাপ হয়ে গেছিল।
মোদী জি - তা সুখদেবীজি অপারেশনের ভাবনা কখন মাথায় এল? এর টাকাপয়সার জোগাড় কী করে করেছিলেন? কী ভাবে হল এ সব?
সুখদেবীজি - আমি ওই আয়ুষ্মান কার্ডের মাধ্যমে চিকিৎসা করাই।
মোদী জি - তার মানে আপনি আয়ুষ্মান কার্ড পেয়ে গেছিলেন?
সুখদেবীজি - হ্যাঁ।
মোদী জি - আর আয়ুষ্মান কার্ডের মাধ্যমে গরীবদের বিনামূল্যে চিকিৎসা হয় এটা জানতেন?
সুখদেবীজি - স্কুলে মিটিং হচ্ছিল। সেখানে আমার স্বামী জানতে পারেন। তারপর আমার নামে কার্ড তৈরি করেন।
মোদী জি - হ্যাঁ।
সুখদেবীজি - আর তারপর কার্ডের মাধ্যমে চিকিৎসা হল। আমাকে কোন টাকা দিতে হয়নি, এবং খুব ভাল চিকিৎসা হয়েছে।
মোদী জি - আচ্ছা কার্ড যদি না হত আপনার তাহলে ডাক্তার কি বলেছিলেন এই চিকিৎসায় কত খরচ পড়ত?
সুখদেবীজি - আড়াই লক্ষ, তিন লক্ষ টাকা। ৬-৭ বছর আমি বিছানায় শুয়ে ছিলাম। ভগবানকে বলতাম আমায় তুলে নিতে, আমি বাঁচতে চাইনা।
মোদীজি - ৬-৭ বছর বিছানায়? বাপ-রে বাপ।
সুখদেবীজি - হ্যাঁ।
মোদীজি - ওহো।
সুখদেবী জি - একদমই উঠতে বসতে পারতাম না
মোদী জি - তা এখন আপনার হাঁটু আগের থেকে ভালো আছে?
সুখদেবী জি - আমি খুব ঘুরে বেড়াই। রান্নাঘরের কাজ করি। ঘরের কাজ করি। বাচ্চাদের খাবার তৈরি করে দিই।
মোদী জি - তার মানে "আয়ুষ্মান ভারত" এর কার্ড আপনাকে সত্যিসত্যিই আয়ুষ্মান করে দিয়েছে।
সুখদেবী জি - অনেক অনেক ধন্যবাদ! আপনার প্রকল্পের ফলে আমি সুস্থ হয়ে উঠেছি। নিজের পায়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছি।
মোদী জি - তাহলে এখন তো বাচ্চারাও নিশ্চয়ই খুব আনন্দিত!
সুখদেবী জি - আজ্ঞে হ্যাঁ। বাচ্চাদের তো তখন খুবই অসুবিধা হতো। মা যদি সমস্যায় থাকেন তাহলে বাচ্চাদের তো অসুবিধা হবেই।
মোদী জি - দেখুন, আমাদের স্বাস্থ্যই হল আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় সুখ। এই সুখী জীবন যাতে সবাই পেতে পারে সেটাই "আয়ুষ্মান ভারত" এর ভাবনা। আচ্ছা সুখদেবী জি, আপনাকে আমার তরফ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আরো একবার আপনাকে জানাই, রাধে রাধে।
সুখদেবী জি - রাধে রাধে, নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, যুব সমাজের দ্বারা সমৃদ্ধ প্রতিটি দেশে তিনটি বিষয় গুরুত্ব বহন করে। সেগুলোই কখনো কখনো যুব সমাজের প্রকৃত পরিচয় হয়ে ওঠে প্রথম বিষয়টি হলো - আইডিয়াস এবং ইনোভেশন। দ্বিতীয়টি হল ঝুঁকি নেওয়ার আবেগ এবং তৃতীয়টি হলো ক্যান ডু স্পিরিট অর্থাৎ যেকোনো কাজ সম্পূর্ণ করার জেদ, তা সে পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক না কেন! যখন এই তিনটি বিষয় একত্রিত হয় তখন অভূতপূর্ব ফলাফল দেখা যায়। আশ্চর্য ব্যাপার ঘটে যায়। আজকাল আমরা চারদিকে শুনি স্টার্ট-আপ, স্টার্ট-আপ, স্টার্ট-আপ। একথা ঠিক যে এটা স্টার্ট-আপ এর যুগ আর এটাও সত্য যে স্টার্ট-আপের দুনিয়ায় ভারত আজ সারা বিশ্বে একরকম নেতৃত্ব দিচ্ছে। বছর বছর স্টার্ট-আপে রেকর্ড বিনিয়োগ হচ্ছে। এই ক্ষেত্রটি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে অগ্রসর হচ্ছে। এমনকি দেশের ছোট ছোট শহরেও স্টার্ট-আপের প্রসার বাড়ছে। আজকাল "ইউনিকর্ন" শব্দটি খুব আলোচনায় রয়েছে। আপনারা সবাই নিশ্চয়ই এর সম্বন্ধে শুনেছেন। "ইউনিকর্ন" একটি এমন স্টার্ট-আপ যার ভ্যালুয়েশন কমপক্ষে এক বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় সাত হাজার কোটি টাকারও বেশি। বন্ধুরা, ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশে বড়জোর ন'টি কি দশটি ইউনিকর্ন ছিল। আপনারা জেনে অত্যন্ত খুশি হবেন যে এখন ইউনিকর্নের দুনিয়াতেও ভারত দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। একটি রিপোর্ট অনুযায়ী এ বছরই একটি বড় পরিবর্তন এসেছে। কেবল দশ মাসের মধ্যেই ভারতে প্রতি ১০ দিনে একটি ইউনিকর্ন তৈরি হয়েছে। এটা এজন্যও একটা বড় বিষয় কারণ আমাদের যুব সমাজ এই সাফল্য করোনা মহামারী চলাকালীন অর্জন করেছে। আজ ভারতে সত্তরটিরও বেশি ইউনিকর্ন তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ সত্তরটিরও বেশি স্টার্ট-আপ এমন যারা একশো কোটি ডলারের বেশি ভ্যালুয়েশন অতিক্রম করেছে। বন্ধুরা, স্টার্ট-আপের এই সাফল্যের ফলে সবার নজরে এসেছে এবং যেভাবে দেশ থেকে, বিদেশ থেকে, বিনিয়োগকারীদের তরফ থেকে সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে তা কয়েকবছর আগে সম্ভবত কেউ কল্পনাও করতে পারতেন না।
বন্ধুরা, স্টার্ট-আপের মাধ্যমে ভারতীয় যুবসমাজ আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধানেও নিজেদের অবদান রাখছেন। আজ আমরা এক যুবক ময়ূর পাটিলের সঙ্গে কথা বলব। উনি নিজের বন্ধুদের সঙ্গে মিলে দূষণ সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেছেন।
মোদী জি - ময়ূর জি, নমস্কার।
ময়ূর পাটিল - নমস্কার, স্যার।
মোদী জি - ময়ূর জি, আপনি কেমন আছেন?
ময়ূর পাটিল - খুব ভালো, স্যার। আপনি কেমন আছেন?
মোদী জি - আমি খুব ভালো আছি। আচ্ছা আমাকে বলুন, আজ আপনি স্টার্ট-আপের দুনিয়ায় আছেন।
ময়ূর পাটিল - আজ্ঞে, হ্যাঁ।
মোদী জি - আর ওয়েস্ট থেকে বেস্ট ও করছেন।
ময়ূর পাটিল - আজ্ঞে, হ্যাঁ।
মোদী জি - পরিবেশ নিয়ে কাজ করছেন। আপনার সম্বন্ধে আমাকে একটু বলুন। আপনার কাজের বিষয়ে বলুন। আর এই কাজের পেছনে আপনার চিন্তাভাবনা কীভাবে এলো?
ময়ূর পাটিল: স্যার, যখন কলেজে ছিলাম তখনই আমার কাছে মোটরসাইকেল ছিল। যার মাইলেজ খুব কম ছিল আর কার্বন নিঃসরণ অনেক বেশি ছিল। ওটা টু-স্ট্রোক মোটরসাইকেল ছিল। নিঃসরণ কম করার জন্য আর মাইলেজ কিছুটা বাড়ানোর জন্য আমি চেষ্টা শুরু করেছিলাম। ২০১১-১২ নাগাদ ওটার মাইলেজ আমি প্রায় ৬২ কিলোমিটার পার লিটার পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমি অনুপ্রেরণা পেলাম এমন কিছু একটা তৈরী করার, যার মাস প্রোডাকশন করা সম্ভব। তাহলে বহু মানুষ তার সুফল পাবেন। ২০১৭-১৮ তে আমরা সেই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করলাম এবং রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের আধিকারিকরা দশটি বাসে তা ব্যবহার করলেন। তার ফলাফ্ল পরীক্ষা করে দেখা গেলো, বাসগুলির নিঃসরণ প্রায় চল্লিশ শতাংশ আমরা কমিয়ে দিতে পেরেছি।
মোদী জি - হুমম। আচ্ছা এই প্রযুক্তি যা আপনি সন্ধান করে পেয়েছেন তার পে্টেন্ট ইত্যাদি করিয়ে নিয়েছেন?
ময়ূর পাটিল - আজ্ঞে হ্যাঁ, পেটেন্ট হয়ে গিয়েছে। এবছর এটি পেটেন্ট অনুমোদনও পেয়েছে।
মোদী জি - আর একে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কী পরিকল্পনা আছে আপনার? কীভাবে এগোচ্ছেন? যেমন বাসের রেজাল্ট এসে গেছে। তারও সব খুঁটিনাটি বিষয় প্রকাশিত হয়েছে নিশ্চয়ই। তা কীভাবে অগ্রসর হওয়ার কথা ভাবছেন?
ময়ূর পাটিল - স্যার, স্টার্টআপ ইন্ডিয়ার মধ্যে নীতি আয়োগ অটল নিউ ইন্ডিয়া চ্যালেঞ্জ থেকে আমরা অনুদান পেয়েছি, আর সেই অনুদানের ভিত্তিতে আমরা এখন কারখানা চালু করেছি, যেখানে আমরা এয়ার ফিল্টারের উৎপাদন করতে পারব।
মোদী জি - ভারত সরকারের তরফ থেকে কতটা অনুদান পেয়েছেন আপনারা?
ময়ূর পাটিল - ৯০ লাখ।
মোদী জি - ৯০ লাখ?
ময়ূর পাটিল - আজ্ঞে হ্যাঁ।
মোদী জি - আর তাতে আপনাদের কাজ হয়ে গিয়েছে?
ময়ূর পাটিল - হ্যাঁ, এখন তো চালু হয়ে গিয়েছে। প্রসেসে রয়েছে।
মোদী জী - আপনারা কতজন বন্ধু মিলে করছেন এইসব?
ময়ূর পাটিল - আমরা চারজন আছি স্যার।
মোদী জী - আর চারজন প্রথমে একসঙ্গে পড়াশোনা করতেন আর তখনই আপনাদের এই ভাবনা মাথায় আসে আগে এগোনোর।
ময়ূর পাটিল - হ্যাঁ। হ্যাঁ স্যার। আমরা কলেজেই ছিলাম আর কলেজে আমরা এসব ভাবি আর এটা আমারই আইডিয়া ছিলো যে আমি আমার মোটরসাইকেলের অন্তত দূষণ যাতে কমাতে পারি আর মাইলেজ বাড়াতে পারি।
মোদী জী - আচ্ছা দূষণ কম করেছেন, মাইলেজ বাড়িয়েছেন তাহলে গড়ে কত সাশ্রয় হয়?
ময়ূর পাটিল - স্যার মোটরসাইকেলে আমরা টেস্ট করেছিলাম। এর মাইলেজ ছিল ২৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার, সেটা বাড়িয়ে আমরা করলাম ৩৯ কিলোমিটার প্রতি লিটার, তাহলে প্রায় ১৪ কিলোমিটার এর লাভ হলো আর তার ফলে চল্লিশ শতাংশ কার্বন নিঃসরণও কমানো গেল। আর যখন রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন এর বাসে এটা লাগানো হল করা হল তখন ১০% জ্বালানীর দক্ষতা বাড়ল হলো আর তাতেও ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ নিঃসরণ কম হল।
মোদী জী - ময়ূর আপনার সঙ্গে কথা বলে আমার খুব ভালো লাগলো আর আপনাদের বন্ধুদেরও আমার তরফ থেকে অভিনন্দন জানাবেন, যে কলেজ জীবনে নিজেদের যা সমস্যা ছিল তার সমাধানও আপনারা খুঁজেছেন আর এই সমাধানের পথ ধরে পরিবেশের সমস্যাকে সমাধান করার দায়িত্ব নিয়েছেন। আমাদের দেশের যুবকদের ক্ষমতা এতটাই যে, যেকোনো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে আর তার সমাধান খুঁজতে পারে। আমার পক্ষ থেকে আপনাদের অনেক অভিনন্দন। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ময়ূর পাটিল - ধন্যবাদ স্যার। ধন্যবাদ।
বন্ধুরা, কিছু বছর আগেও যদি কেউ বলত যে সে ব্যবসা করতে চায় বা কোন নতুন কোম্পানি শুরু করতে চায় তখন পরিবারের প্রবীণদের উত্তর হতে যে "তুমি চাকরি কেন করতে চাও না! চাকরি করো। চাকরি তে নিরাপত্তা থাকে, বেতন থাকে। ঝামেলা কম হয়। কিন্তু আজ যদি কেউ নিজের কোম্পানি শুরু করতে চান, তার আশেপাশের সব লোক অনেক উৎসাহিত হন, আর এতে তাদের সম্পূর্ণ সহযোগিতাও করেন। বন্ধুরা ভারতের উন্নয়নের টার্নিং পয়েন্ট এটাই, যেখানে এখন শুধু কর্মপ্রার্থী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন না বরং কর্ম সংস্থানও তৈরি করছেন। এতে বিশ্বমঞ্চে ভারতের অবস্থান আরো মজবুত হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘আজ মন কি বাত’এ আমরা অমৃত মহোৎসবের কথা বললাম।অমৃত কালে কিভাবে আমাদের দেশবাসী নতুন নতুন সংকল্প পূরণ করেছেন তার চর্চা করলাম আর তার সঙ্গে ডিসেম্বর মাসে সেনার শৌর্যের সঙ্গে যুক্ত উপলক্ষ গুলিরও উল্লেখ করলাম। ডিসেম্বর মাসে আরেকটি বড় দিন আমাদের সামনে আসে যেটা থেকে আমরা প্রেরণা পাই। এই দিনটি হল ৬ই ডিসেম্বর বাবাসাহেব আম্বেদকর এর পূণ্য তিথি। বাবাসাহেব নিজের পুরো জীবন দেশ ও সমাজের প্রতি নিজ কর্তব্য পালনে সমর্পণ করেছিলেন। আমরা দেশবাসীরা এটা কখনও ভুলব না যে আমাদের সংবিধানের মূল ভাবনা, আমাদের সংবিধান আমাদের সকল দেশবাসীর কাছে নিজ নিজ কর্তব্য পালনের প্রত্যাশা করে। তাহলে আসুন আমরাও সংকল্প নিই যে অমৃত মহোৎসবে আমরা আমাদের কর্তব্য সম্পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের প্রচেষ্টা করবো। এটাই হবে বাবা সাহেবের প্রতি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি।
বন্ধুরা, এখন আমরা ডিসেম্বর মাসে প্রবেশ করছি। স্বাভাবিকভাবেই পরের মন কি বাত ২০২১ সালের শেষ মন কি বাত হবে। ২০২২ এ পুনরায় যাত্রা শুরু করা হবে আর আমি তো আপনাদের কাছ থেকে অনেক উপদেশের অপেক্ষা করতেই থাকি আর করতে থাকবোও। আপনারা এই বছরকে কিভাবে বিদায় জানাচ্ছেন, নতুন বছরে কী করতে চলেছেন এটা অবশ্যই বলবেন আর হ্যাঁ এটা কখনো ভুলবেন না করোনা এখনো চলে যায়নি। সর্তকতা অবলম্বন করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের সবাইকে নমস্কার। কোটি কোটি নমস্কার। আর আমি কোটি কোটি নমস্কার এইজন্যেও বলছি যে আজ একশো কোটি টিকার ডোজের পরে দেশ নতুন উৎসাহ, নতুন শক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের টিকা কার্যক্রমের সাফল্য ভারতের সামর্থ্যকে তুলে ধরে, সম্মিলিত প্রয়াসের মন্ত্রের শক্তিকে তুলে ধরে।
বন্ধুরা, একশো কোটি টিকা ডোজের পরিসংখ্যান নিঃসন্দেহে খুব বড় কিন্তু এখানে ছোট-ছোট লক্ষ-লক্ষ প্রেরণাদায়ক আর গর্বে বুক ভরে দেওয়ার মত অনেক বিষয়, অনেক উদাহরণ জুড়ে আছে। অনেকে আমাকে চিঠি লিখে জানতে চেয়েছেন যে টিকাদান শুরু হতেই কীভাবে আমার মনে বিশ্বাস জন্মেছিল যে এই অভিযান এত বড় সাফল্য পাবে! আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই কারণে হয়েছিল যে আমি আমার দেশ, আমার দেশের মানুষের সঙ্গে সম্যকভাবে পরিচিত। আমি জানতাম যে আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা দেশবাসীদের টিকাকরণের জন্য যে কোনো পরিশ্রম করতে কসুর করবেন না। আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের নিশ্ছিদ্র পরিশ্রম আর সংকল্পর মাধ্যমে এক নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন, তাঁরা উদ্ভাবনের সাহায্যে নিজেদের দৃঢ়তার সঙ্গে মানবতার সেবার এক নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছেন। তাঁদের কাজের অগণিত দৃষ্টান্ত রয়েছে, যার মাধ্যমে তাঁরা যাবতীয় বাধা পার করে বেশি-বেশি মানুষকে সুরক্ষা কবচ দিয়েছেন। আমরা অনেক বার খবরের কাগজে পড়েছি, বাইরেও শুনেছি যে এই কাজ করার জন্য আমাদের এই সব মানুষজন কত পরিশ্রম করেছেন। এক-একটা চমৎকার উদাহরণ রয়েছে আমাদের সামনে। আমি আজ ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের শ্রোতাদের উত্তরাখণ্ডের বাগেশ্বর জেলার এমনই এক স্বাস্থ্যকর্মী পুনম নৌটিয়ালের সঙ্গে পরিচিত করাতে চাই। বন্ধুরা, এই বাগেশ্বর সেই উত্তরাখণ্ডের অন্তর্গত যে উত্তরাখণ্ড প্রথম ডোজ দেওয়ার লক্ষ্য একশো শতাংশ পূর্ণ করেছে। উত্তরাখণ্ডের সরকারও এই কারণে অভিনন্দনের দাবীদার কারণ এই ভূখণ্ড অত্যন্ত দুর্গম, অত্যন্ত কঠিন। এভাবেই হিমাচলও এমন কঠিন পথ অতিক্রম করে একশো শতাংশ ডোজ দেওয়ার কাজ করে নিয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে যে পুনমজী নিজের অঞ্চলের মানুষদের টিকাকরণের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী জী – পুনমজি নমস্কার।
পুনম নৌটিয়াল – স্যার, প্রণাম।
প্রধানমন্ত্রী জী – পুনমজী নিজের ব্যাপারে দেশের শ্রোতাদের বলুন।
পুনম নৌটিয়াল – স্যার, আমি পুনম নৌটিয়াল। স্যার, আমি উত্তরাখণ্ডের বাগেশ্বর জেলার চানী কোরালী সেন্টারে কাজ করছি স্যার। আমি একজন এ-এন-এম স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জী – পুনমজী, এটা আমার সৌভাগ্য যে আমার বাগেশ্বর যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল, সেটা এক অর্থে তীর্থক্ষেত্র। ওখানে পুরনো মন্দির ইত্যাদিও আছে। আমি দেখে অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছি যে বহু যুগ আগে মানুষ সেখানে কীভাবে কাজ করেছে।
পুনম নৌটিয়াল – হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জী – পুনমজী আপনি কি নিজের অঞ্চলের সব ব্যক্তির টিকাকরণ করিয়ে নিয়েছেন?
পুনম নৌটিয়াল – হ্যাঁ স্যার। সবারই হয়ে গিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জী – আপনাকে কোনো রকমের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে?
পুনম নৌটিয়াল – হ্যাঁ স্যার। স্যার, এখানে যেমন একটানা বৃষ্টি হলে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। স্যার, নদী পার করে গিয়েছি আমরা। আর স্যার প্রত্যেক বাড়িতে গিয়েছি, যেমন এন-এইচ-সি-ভি-সির প্রকল্পে আমরা বাড়িতে-বাড়িতে গিয়েছি। যে সব মানুষ সেন্টারে আসতে পারত না যেমন প্রবীণ মানুষ বা শারীরিকভাবে অসমর্থ মানুষ, গর্ভবতী নারী, ধাত্রী মহিলারা – এমন মানুষজন স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জী – কিন্তু ওখানে তো পাহাড়ে বাড়িঘর সব অনেক দূরে-দূরে।
পুনম নৌটিয়াল – হ্যাঁ।
প্রধানমন্ত্রী জী – তা এক দিনে কতটা করতে পারতেন আপনারা?
পুনম নৌটিয়াল – স্যার কিলোমিটারের হিসাবে – কখনও দশ কিলোমিটার কখনও আট কিলোমিটার।
প্রধানমন্ত্রী জী – যাই হোক, এই যে তরাই অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষজন তাঁরা বুঝতে পারবেন না, যে আট-দশ কিলোমিটার বলতে কতটা বোঝায়। আমি জানি যে পাহাড়ের আট-দশ কিলোমিটারের অর্থ গোটা দিন চলে যাওয়া।
পুনম নৌটিয়াল – হ্যাঁ।
প্রধানমন্ত্রী জী – কিন্তু এক দিনেই যেহেতু এটা খুব পরিশ্রমের কাজ আর টিকারকরণের যাবতীয় জিনিসপত্র বয়ে নিয়ে যেতে হয়। আপনার সঙ্গে কোনো সহায়ক থাকত কি?
পুনম নৌটিয়াল – হ্যাঁ স্যার, টিম মেম্বার, আমরা স্যার পাঁচ জন থাকতাম !
প্রধানমন্ত্রী জী – হ্যাঁ।
পুনম নটিয়াল - এদের মধ্যে একজন ডাক্তার, একজন এনএম, একজন ফারমাসিস্ট। একজন আশা মেম্বার আর অন্যজন ডাটা এনট্রি অপারেটার।
প্রধানমন্ত্রী জি - আচ্ছা এই যে ডাটা এনট্রির কাজ, ওখানে নেটওয়ার্ক পেয়ে যান, না বাগেশ্বর এসে করতেন?
পুনম নটিয়াল - স্যার, কোথাও কোথাও পাওয়া যেত নেটওয়ার্ক, নাহলে বাগেশ্বর ফেরত এসে করতাম।
প্রধানমন্ত্রী জি - আচ্ছা। আমাকে বলা হয়েছে পুনমজি, যে আপনি নির্দিষ্ট নিয়মের বাইরে গিয়ে অনেক লোকের টীকাকরন করিয়েছেন। এই ভাবনা কি করে আপনার মাথায় এল, এই কাজ কি করে করলেন?
পুনম নটিয়াল- আমরা সকলে, আমাদের পুরো টিম, এই সংকল্প গ্রহণ করেছিলাম যে কোনো একজন ব্যক্তিও যেন বাদ না পড়ে। আমাদের দেশ থেকে এই করোনা রোগ সম্পূর্ণ নির্মূল করতে হবে। আমি আর একজন আশাকর্মী গ্রাম পিছু বকেয়া তালিকা তৈরী করি। সেই অনুযায়ী যারা সেন্টারে আসেন, তাদের সেখানেই টীকা দিই। যারা বাকি থেকে যান, তাদের এরপর আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে টীকা দিই।
প্রধানমন্ত্রী জি - আচ্ছা লোকেদের বোঝাতে হতো?
পুনম নৌটিয়াল - হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জি - টিকা নেওয়ার জন্য লোকজনের কি আগ্রহ আছে?
পুনম নটিয়াল - হ্যাঁ স্যার, হ্যাঁ স্যার, হ্যাঁ, এখন তো লোকেরা বুঝে গেছে, প্রথম প্রথম আমাদের খুব অসুবিধা হত। তখন আমাদের অনেক বোঝাতে হত লোকজনদের, এই টীকা সুরক্ষিত এবং কার্যকরী। আমরা নিজেরাও টীকা নিয়েছি, আমাদের স্টাফেরাও সকলে টীকা নিয়েছে এবং সুস্থ আছে, বহাল তবিয়তে সকলে আপনাদের সামনে আছি।
প্রধানমন্ত্রী জি - কোথাও টীকা লাগানোর পর কোন রকম অভিযোগ এসেছে কি? পরে।
পুনম নটিয়াল- না, না স্যার, এরকম কিছু হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী জি – কিছু হয় নি?
পুনম নৌটিয়াল - না স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জি - সকলে সন্তুষ্ট ?
পুনম নৌটিয়াল - হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জি – সব ঠিক হয়ে গেছে ?
পুনম নটিয়াল - হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী জি- আপনি খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন এবং খুব ভালো কাজ করেছেন। এই পুরো এলাকা কত দুর্গম আমি জানি। পায়ে হেটে যেতে হয়। একবার একটা পাহাড় চড়া আবার নামা, আবার পরের পাহাড় চড়া, ঘর গুলোও দূরে দূরে। তা সত্ত্বেও আপনারা সকলে এত ভাল কাজ করেছেন।
পুনম নটিয়াল- ধন্যবাদ স্যার, আমার সৌভাগ্য আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারলাম।
আপনার মত লাখো স্বাস্থ্য কর্মীর অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণেই ভারত ১০০ কোটি টীকাকরণ সম্পূর্ণ করতে পেরেছে। আজ আমি শুধু আপনাদেরই কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি না, সেই সকল ভারতবাসীকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি যারা 'সকলের টিকা, বিনামূল্যে টিকা' এই অভিযানকে এতখানি সফল করেছেন। আপনাকে আপনার পরিবারকে আমার অনেক অনেক শুভকামনা।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনারা জানেন আগামী রবিবার, ৩১শে অক্টোবর, সর্দার প্যাটেলের জন্মবার্ষিকী। 'মন কি বাত' -এর প্রতিটি শ্রোতা এবং আমার পক্ষ থেকে, আমি লৌহ মানবকে প্রণাম জানাই। বন্ধুরা, ৩১শে অক্টোবর, আমরা 'জাতীয় ঐক্য দিবস' হিসেবে উদযাপন করি। এটা আমাদের সকলের দায়িত্ব যে আমরা এমন কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত হই যার মাধ্যমে ঐক্যের বার্তা ছড়ানো যায়। আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন যে সম্প্রতি গুজরাট পুলিশ কচ্ছের লাখপত দুর্গ থেকে স্ট্যাচু অফ ইউনিটি পর্যন্ত বাইক র্যালি বের করেছে। একতা দিবস উদযাপনে ত্রিপুরা থেকে স্ট্যাচু অফ ইউনিটি পর্যন্ত বাইক rally করছে ত্রিপুরা পুলিশের কর্মীরা। অর্থাৎ, পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত দেশকে সংযুক্ত করা হচ্ছে। জম্মু ও কাশ্মীর-এর পুলিশ কর্মীরা উরি থেকে পাঠানকোট পর্যন্ত একই রকম বাইক rally করে দেশের ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। আমি এই সব জওয়ানদের স্যালুট জানাই। আমি জম্মু ও কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলার অনেক বোনের সম্পর্কেও জানতে পেরেছি। এই বোনেরা কাশ্মীরে সেনা ও সরকারি অফিস-এর জন্য তেরঙ্গা পতাকা সেলাই করছেন। এই কাজটি দেশপ্রেমে পরিপূর্ণ। আমি এই বোনেদের এই মনোভাব-এর প্রশংসা করি। আপনাদেরও অবশ্যই ভারতের ঐক্যের জন্য, ভারতের শ্রেষ্ঠত্বের জন্য কিছু না কিছু করা উচিত। দেখবেন আপনারা মনে কতটা তৃপ্তি পান। বন্ধুরা, সর্দার সাহেব বলতেন যে - “আমরা আমাদের সমবেত উদ্যোগের মাধ্যমেই দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারি। যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ না হই, তাহলে আমরা নিত্য নতুন দুর্যোগের ফাঁদে নিজেরাই পড়ে যাবো। অর্থাৎ জাতীয় ঐক্য থাকলে উচ্চতার শিখরে পৌঁছনো যায়, উন্নতি করা যায় । আমরা সর্দার প্যাটেলজির জীবন থেকে, তাঁর চিন্তাধারা থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। দেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক সম্প্রতি সর্দার সাহেবের উপর একটি সচিত্র জীবনী প্রকাশ করেছে। আমি চাই আমাদের সমস্ত তরুণ বন্ধুরা এটি অবশ্যই পড়েন। এটি আকর্ষণীয় উপায়ে আপনাকে সর্দার সাহেব সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দেবে।
প্রিয় দেশবাসী, জীবন ধারাবাহিক অগ্রগতি চায়, উন্নয়ন চায়, উচ্চতা অতিক্রম করতে চায়। বিজ্ঞানের যতই অগ্রগতি হোক, অগ্রগতির গতি যতই দ্রুত হোক, বাড়ি যতই বড় হোক, তবুও জীবন অসম্পূর্ণ মনে হয়। কিন্তু, জীবনের সঙ্গে যখন গান-বাজনা, শিল্প, নৃত্য-নাট্য, সাহিত্য যুক্ত হয়, তখন তার ঔজ্বল্য ও প্রাণশক্তি বহুগুণ বেড়ে যায়। জীবনকে অর্থপূর্ণ হতে হলে, এই সবগুলি সমানভাবে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্যই বলা হয় যে এই সমস্ত পদ্ধতি, আমাদের জীবনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে, আমাদের শক্তি বৃদ্ধি করে। মানুষের অন্তরাত্মার বিকাশে, আমাদের আত্মার যাত্রাপথ তৈরিতে, সঙ্গীত এবং বিভিন্ন শিল্পের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে এবং তাদের একটি দুর্দান্ত শক্তি রয়েছে। সময় তাদের বাঁধতে পারে না, সীমানা আটকাতে পারে না, তাদের মত বা অমতের বেড়াজালে আবদ্ধ করা যায়না । অমৃত মহোৎসবকেও আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি, গান-বাজনার রঙে ভরিয়ে দিতে হবে। অমৃত মহোৎসবে গান-সংগীত-শিল্পের এই শক্তি সম্পর্কিত অনেক পরামর্শও পাচ্ছি আপনাদের কাছ থেকে। এই পরামর্শ আমার কাছে খুবই মূল্যবান। আমি এগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি ভাবনাচিন্তা করার জন্য। আমি আনন্দিত যে মন্ত্রণালয় এত অল্প সময়ের মধ্যে এই পরামর্শগুলিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে তার উপর কাজ করেছে। এই পরামর্শগুলির মধ্যে একটি হলো দেশাত্মবোধক গান সম্পর্কিত প্রতিযোগিতা! স্বাধীনতা সংগ্রামে দেশাত্মবোধক গান, বিভিন্ন ভাষায়, উপভাষা সমগ্র দেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। এখন অমৃতকালে, আমাদের তরুণরা এই ধরনের দেশাত্মবোধক গান লিখে এই অনুষ্ঠানকে আরও আকর্ষণীয় করতে পারে। এসব দেশাত্মবোধক গান মাতৃভাষায় হতে পারে, জাতীয় ভাষায় হতে পারে, ইংরেজিতেও লেখা যেতে পারে। কিন্তু এটা অত্যন্ত প্রয়োজন যে এই রচনা যাতে নতুন ভারতের নতুন চিন্তাধারার হয়, দেশের বর্তমান সাফল্য থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য দেশের প্রতি সংকল্পকে ব্যক্ত করে। সংস্কৃতি দপ্তর তার মহকুমা স্তর থেকে রাষ্ট্রীয় স্তর পর্যন্ত সকলকেই এই প্রতিযোগিতার সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করছে।
বন্ধুরা, 'মন কি বাত'-এর এমনই একজন শ্রোতা উপদেশ দিয়েছেন যে 'অমৃত মহোৎসব'কে রঙ্গোলি শিল্পের সঙ্গেও যুক্ত করা উচিত। আমাদের এখানে এই রঙ্গোলির মাধ্যমে উৎসবে রঙ ছড়িয়ে দেবার সংস্কৃতি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। রঙ্গোলিতে দেশের বৈচিত্রের দেখা মেলে। আলাদা আলাদা রাজ্যে, বিভিন্ন নামে, আলাদা আলাদা বিষয়ে রঙ্গোলি তৈরি করা হয়। এইজন্যে সংস্কৃতি দপ্তর এই বিষয়ে জাতীয় প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে চলেছে। আপনারা কল্পনা করুন, যখন স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রঙ্গোলি তৈরি হবে, মানুষ নিজের দরজায়, দেওয়ালে স্বাধীনতা সংগ্রামে উৎসর্গীকৃত সেনানীদের ছবি আঁকবে, স্বাধীনতার কোন ঘটনা রং-এর মাধ্যমে প্রদর্শন করবে, তখন অমৃত মহোৎসবও আরো রঙিন হয়ে উঠবে।
বন্ধুরা, আমাদের এখানে ঘুমপাড়ানি গান শোনানোর প্রথাও রয়েছে। ঘুমপাড়ানি গানের মাধ্যমে ছোট বাচ্চাদের সংস্কার সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়, আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে তাদের পরিচয় করানো হয়। ঘুম পাড়ানি গানেরও নিজের অনন্যতা রয়েছে। তাহলে, আসুন না আমরা এই অমৃতকালে এই শিল্পকে পুনর্জীবিত করি, আর দেশপ্রেমের ভাবনার সঙ্গে যুক্ত ঘুমপাড়ানি গান লিখি। কবিতা, গান কিছু-না-কিছু অবশ্যই লিখি যা খুব সহজেই প্রত্যেক ঘরে মায়েরা নিজেদের ছোট বাচ্চাদের শোনাতে পারে। এই ঘুমপাড়ানি গানে আধুনিক ভারতের প্রসঙ্গ থাকুক, একুশ শতকের ভারতের স্বপ্নের কথা থাকুক। আপনাদের, সকল শ্রোতার উপদেশের পরে সংস্কৃতি দপ্তর এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বন্ধুরা, এই তিনটি প্রতিযোগিতা ৩১শে অক্টোবর, সর্দার সাহেবের জন্মবার্ষিকী থেকে শুরু হতে চলেছে। আগামী দিনে সংস্কৃতি দপ্তর এই প্রতিযোগিতার বিষয়ে সমস্ত রকম তথ্য আপনাদের জানাবে। এইসব তথ্য মন্ত্রকের ওয়েব সাইটেও থাকবে, সোশ্যাল মিডিয়াতেও দেওয়া হবে। আমি চাই যে আপনারা সকলেই এর সঙ্গে যুক্ত হন। আমাদের যুবকযুবতি বন্ধুরা অবশ্যই এতে নিজেদের শিল্পকলার, নিজেদের প্রতিভার প্রদর্শন করবেন। এতে আপনার অঞ্চলের শিল্প এবং সংস্কৃতিও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌছবে, আপনার গল্প পুরো দেশ শুনবে।
প্রিয় দেশবাসী, এই সময় আমরা অমৃত মহোৎসব এর মাধ্যমে দেশের বীর সন্তান সন্ততিদের, সেই মহান পূণ্যাত্মাদের স্মরণ করছি। পরের মাসে, ১৫ই নভেম্বর আমাদের দেশের এমনই এক মহাপুরুষ, বীর যোদ্ধা, ভগবান বিরসা মুন্ডার জন্ম জয়ন্তী আসছে। ভগবান বিরসা মুন্ডাকে 'ধরতি আবা'ও বলা হয়। আপনারা কি জানেন এর মানে কি? এর অর্থ হলো ধরিত্রীর পিতা। ভগবান বিরসা মুন্ডা যেভাবে নিজের সংস্কৃতি, নিজের জঙ্গল, নিজের জমি রক্ষা করার জন্য লড়াই করেছেন, এটা কোন 'ধরতি আবা'ই করতে পারে। উনি আমাদের নিজের সংস্কৃতি আর শেকড়ের প্রতি গর্ব অনুভব করতে শিখিয়েছেন। বিদেশি শাসকেরা কতবার হুমকির মাধ্যমে ওঁর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু উনি আদিবাসী সংস্কৃতিকে কখনো ছাড়েননি। প্রকৃতি এবং বায়ুমন্ডল কে যদি আমাদের ভালবাসতে শিখতে হয় তাহলে সেখানেও ধরতি আবা ভগবান বিরসা মুন্ডা আমাদের বিশাল বড় প্রেরণা হতে পারেন। উনি বিদেশী শাসনের এমন নীতির পুরোদমে বিরোধিতা করেছিলেন যা প্রকৃতির ক্ষতি করে। দরিদ্র এবং সঙ্কটে থাকা মানুষের সাহায্য করার ক্ষেত্রেও ভগবান বিরসা মুন্ডা সবসময় এগিয়ে থাকতেন। সমাজের সমস্ত দুর্নীতি দূর করতে তিনি সমাজকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। উল্গুলান আন্দোলনের সময় ওঁর নেতৃত্বকে কে ভুলতে পারে? এই আন্দোলন ইংরেজদের কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এর পরেই ইংরেজরা ভগবান বিরসা মুন্ডাকে ধরার জন্য বিরাট পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন। ব্রিটিশ সরকার তাঁর ওপর জেলে এত অত্যাচার করে যে মাত্র ২৫ বছর বয়েসেই তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান। কিন্তু শুধু তাঁর দেহই আমাদের ছেড়ে গেছে। মানুষের হৃদয়ে ভগবান বিরসা মুন্ডার স্থান চিরকালের জন্য থেকে গেছে। মানুষের কাছে তাঁর জীবন একটি বিশাল প্রেরণা শক্তি হিসেবে বিরাজ করে। আজও তাঁর সাহস ও বীরত্বের কাহিনী ও লোকগীতি ভারতের মধ্যভাগে ভীষণ জনপ্রিয়। আমি ধরতি আবা বিরসা মুন্ডা কে আমার প্রণাম জানাই এবং যুবসম্প্রদায়কে বলি তাঁর ব্যাপারে আরও পড়াশোনা করতে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে আমাদের আদিবাসী সম্প্রদায়ের অবদান সম্বন্ধে আপনারা যত জানবেন তত গৌরব অনুভব করবেন ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ ২৪শে অক্টোবর ইউএন ডে অর্থাৎ রাষ্ট্রসংঘ দিবস হিসেবে পালিত হয়। এই দিনেই রাষ্ট্রসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম দিন থেকেই ভারত রাষ্ট্রসংঘের অংশ হিসাবে থেকেছে। আপনারা কি জানেন যে স্বাধীনতার আগেই অর্থাৎ ১৯৪৫এই ভারত সম্মিলিত রাষ্ট্রসংঘের সনদে সই করে? রাষ্ট্রসংঘের ক্ষেত্রে আরেকটি বিশেষ ব্যাপার হচ্ছে এর শক্তি ও প্রভাব বাড়াতে ভারতীয় নারী শক্তির বিশাল অবদান রয়েছে। ১৯৪৭-৪৮এ যখন ইউএন হিউমান রাইটসের ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন তৈরি হচ্ছিল তখন তাতে লেখা ছিল “ অল মেন আর ক্রিয়েটেড ইক্যুয়াল”। কিন্তু ভারতের একজন ডেলিগেট এতে আপত্তি জানান এবং তারপর ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশনে লেখা হয় “অল হিউম্যান বিয়িংস আর ক্রিয়েটেড ইক্যুয়াল”. এই কথাটি ভারতের বহু পুরনো লিঙ্গ সাম্যের ঐতিহ্যর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। আপনারা কি জানেন ভারতের সেই ডেলিগেটের নাম শ্রীমতি হান্সা মেহতা যার জন্য এই পরিবর্তনটি সম্ভব হয়েছিল? ঐ সময়েই ভারতের আরেক ডেলিগেট শ্রীমতি লক্ষ্মী মেনন লিঙ্গ সাম্যের বিষয়ে বলিষ্ঠ ভাবে নিজের বক্তব্য রাখেন। শুধু তাই নয়, ১৯৫৩তে শ্রীমতি বিজয়লক্ষী পন্ডিত ইউএন জেনারেল এসেম্বলির প্রথম মহিলা সভাপতি হন।
বন্ধুরা, আমরা এমন এক ভূমির সন্তান যারা বিশ্বাস করে, প্রার্থনা করেঃ
‘ওম দয়ৌঃ শান্তি শান্তিরন্তরিক্ষ
পৃথ্বী শান্তিরাপ শান্তিঃ শান্তিরোশধয়ঃ
বনস্তপ্তয়ঃ শান্তি শান্তিব্রহ্মঃদেবা শান্তির্বিশ্বেঃ
সর্বশান্তিঃ শান্তিরেবঃ শান্তিঃ সা মা শান্তিরেধিঃ
ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ’
ভারত সবসময়ই বিশ্বশান্তির জন্য কাজ করেছে। আমরা গর্বিত যে ১৯৫০এর দশক থেকে ভারত সম্মিলিত রাষ্ট্র শান্তি মিশনের অংশ হিসেবে কাজ করছে। দারিদ্র্য দূরীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন ও শ্রমিক সংক্রান্ত বিষয়েও ভারত অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এ ছাড়াও যোগ এবং আয়ুশকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে ভারত হু অর্থাৎ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে। মার্চ ২০২১-এ হু ঘোষণা করেছিল ভারতে পরম্পরাগত চিকিৎসার একটি আন্তর্জাতিক কেন্দ্র তৈরি হবে।
বন্ধুরা, রাষ্ট্রসংঘের ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে আজ আমার অটলজির কথাও মনে পড়ছে। ১৯৭৭এ উনি রাষ্ট্রসংঘে হিন্দিতে ভাষণ দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। আজ আমি ‘মন কি বাত’ এর শ্রোতাদের অটলজির সেই ভাষণের একটি অংশ শোনাতে চাই। আসুন শুনি অটলজির সেই শক্তিশালী কন্ঠঃ
“এখানে আমি রাষ্ট্রের শাসন এবং মাহাত্ম্যের ব্যপারে ভাবছি না। সাধারণ মানুষের প্রতিষ্ঠা এবং প্রগতি আমার কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অন্তত আমাদের সবার সাফল্য এবং ব্যর্থতা কেবলমাত্র একটি মাপকাঠিতে বিচার করা উচিত। আমরা কি সমগ্র মানব সমাজ, অর্থাৎ সমস্ত নর-নারী এবং শিশুর ন্যায় ও গরিমা দেওয়ার প্রতি যত্নশীল?
বন্ধুরা, অটলজির এই বাণী আমাদের আজও ঠিক দিশা দেখাতে সাহায্য করে। এই পৃথিবীকে আরও ভাল এবং সুরক্ষিত একটি প্ল্যানেট বানাতে ভারতের চেষ্টা সারা পৃথিবীর জন্য একটি বড় প্রেরণা।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছুদিন আগে, অর্থাৎ ২১শে অক্টোবর আমরা পুলিশ স্মৃতি দিবস উদযাপন করেছি। যে সকল পুলিশকর্মী দেশের জন্য নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করেছেন এই দিনে আমরা তাঁদের বিশেষ রূপে স্মরণ করি। আমি আজ সেই পুলিশকর্মীদের সঙ্গে তাঁদের আত্মীয়স্বজনদেরও স্মরণ করতে চাইব। পরিবারের ত্যাগ ও সহযোগিতা ছাড়া পুলিশের মতন কঠিন সেবায় কাজ করা খুব মুশকিল। পুলিশ সেবার ব্যাপারে আরেকটা কথা মন কি বাতের শ্রোতাদের জানাতে চাই। একসময় মনে করা হত পুলিশ বা সেনাবাহিনীর কাজ কেবলমাত্র পুরুষরা করতে পারে। আজ কিন্তু সেই চিন্তাধারা বদলে গেছে। ব্যুরো অফ পুলিশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিসংখ্যান আমাদের জানাচ্ছে বিগত কয়েক বছরে মহিলা পুলিশকর্মীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গেছে, ডবল হয়ে গেছে। ২০১৪তে যেখানে তাঁদের সংখ্যা ১ লক্ষ ৫ হাজারের কাছাকাছি ছিল, সেখানে ২০২০ তে প্রায় দুগুণের বেশি বাড়ার পর সেই সংখ্যা এখন ২ লক্ষ ১৫ হাজারে পৌঁছে গেছে। এমন কী কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীতেও বিগত ৭ বছরে মহিলাদের সংখ্যা প্রায় দিগুণ হয়ে গেছে। আর আমি কেবল পরিসংখ্যানের কথাই বলছি না, এখন দেশের মেয়েরা কঠিন থেকে কঠিনতর ডিউটিও সম্পূর্ণ সাহসিকতার সঙ্গে ও শক্তি দিয়ে করছেন। উদাহরণস্বরুপ, বহু মেয়ে এখন যেসব ট্রেনিং সবচেয়ে কঠিন মনে করে হয়, তার মধ্যে অন্যতম স্পেশালাইজড জাঙ্গল ওয়য়ারফেয়ার কম্যান্ডোর প্রশিক্ষণও নিচ্ছে। এঁরা আমাদের কোবরা ব্যাটেলিয়ানের অংশ হবে।
বন্ধুরা, আজকাল আমরা এয়ারপোর্ট, মেট্রো স্টেশন কিম্বা কোন সরকারি দপ্তরে গেলে দেখতে পাই সিআইএসএফের-এর সাহসী মহিলারা এসব সংবেদনশীল জায়গা রক্ষা করছেন। এর ইতিবাচক প্রভাব পুলিশ ফোর্সের পাশাপাশি আমাদের সমাজের মনোবলেও পড়ছে। মহিলা সুরক্ষাকর্মীর উপস্থিতিতে মানুষের মধ্যে, বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে একটা সহজ বিশ্বাস জন্মায়। স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা এঁদের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত মনে করেন। মহিলাদের সংবেদনশীলতার জন্যও মানুষ তাঁদের ওপর বেশি ভরসা করেন। আমাদের এই মহিলা পুলিশকর্মীরা দেশের লক্ষ-লক্ষ মেয়েদের জন্য আদর্শ স্থানীয় হচ্ছেন। মহিলা পুলিশকর্মীদের অনুরোধ করব তাঁরা যেন তাঁদের এলাকার স্কুলগুলি খুললে সেখানে যান, সেখানকার ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই কথোপকথনের মাধ্যমে আমাদের নতুন প্রজন্ম এক নতুন দিশা খুঁজে পাবে। শুধু তাই নয়, এর ফলে পুলিশের ওপর মানুষের বিশ্বাস আরও বাড়বে। আমি আশা করি ভবিষ্যতে আরো বেশি সংখ্যায় মহিলারা পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করবেন, আমাদের দেশের নতুন যুগকে নেতৃত্ব করবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, গত কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার যে দ্রুততার সঙ্গে বাড়ছে, তা নিয়ে প্রায়শই "মন কি বাত" এর শ্রোতারা তাদের চিন্তা ভাবনা আমাকে লিখে পাঠান। আজ আমি এমনই একটি বিষয়ের আলোচনা আপনাদের সঙ্গে করতে চাই যা আমাদের দেশ, বিশেষত আমাদের তরুণ প্রজন্ম, এমনকি ছোট ছোট বাচ্চাদের কল্পনাতেও জাঁকিয়ে বসেছে। সে বিষয়টি হলো ড্রোন, ড্রোন টেকনোলজি। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত যখনই ড্রোনের কথা উঠত, তখন মানুষের মনে প্রথম ভাবনা কি আসত? আসত সেনা, অস্ত্র বা যুদ্ধের ভাবনা। কিন্তু আজ আমাদের এখানে কোন বিয়ের আসর বা অন্য কোন অনুষ্ঠান হলে আমরা ড্রোনের সাহায্যে ফটো ও ভিডিও তুলে থাকি। কিন্তু ড্রোনের কার্যকারিতা, তার ক্ষমতা শুধু এটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়। ভারত পৃথিবীর সেই প্রথম দেশগুলির অন্যতম, যারা ড্রোনের সাহায্যে নিজেদের গ্রামে জমির ডিজিটাল রেকর্ড তৈরি করছে। ভারত পরিবহণের ক্ষেত্রে ড্রোনের ব্যবহার বহুল ও ব্যাপক ভাবে করছে। তা গ্রামে চাষবাস হোক বা বাড়িতে জিনিসপত্রের ডেলিভারি। আপৎকালীন সাহায্য পৌঁছে দেওয়া হোক কিংবা আইন ব্যবস্থার তত্ত্বাবধান। বেশি সময় বাকি নেই যখন আমরা দেখব যে ড্রোন আমাদের এই সব প্রয়োজনের জন্য ব্যবহার হবে। এর মধ্যে বেশিরভাগ কাজ তো শুরুও হয়ে গেছে। যেমন কিছুদিন আগে গুজরাতের ভাবনগরে ড্রোনের মাধ্যমে ক্ষেতে ন্যানো-ইউরিয়া ছড়ানো হল। কোভিড টিকা অভিযানেও ড্রোন নিজের ভূমিকা পালন করছে। তার একটি চিত্র আমরা মণিপুরে দেখতে পেয়েছি। সেখানে একটি দ্বীপে ড্রোনের মাধ্যমে টিকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তেলেঙ্গানাও ড্রোনের মাধ্যমে টিকা পৌঁছে দেবার জন্য ট্রায়াল সম্পূর্ণ করেছে। শুধু তাই নয়, এখন পরিকাঠামো সংক্রান্ত বড় বড় প্রকল্পর তত্ত্বাবধানের জন্যও ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। আমি এমন একজন কম বয়সি ছাত্রের বিষয়েও পড়েছি যিনি নিজের ড্রোনের সাহায্যে মৎস্যজীবীদের জীবন রক্ষার কাজ করেছেন।
বন্ধুরা, আগে এই ক্ষেত্রে এত নিয়ম কানুন ও প্রতিবন্ধকতা ছিল যে ড্রোনের প্রকৃত ক্ষমতার ব্যবহারই সম্ভব ছিল না। যে প্রযুক্তিকে সুযোগের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা উচিৎ ছিল তাকে সংকটের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয়েছিল। যদি আপনার কোন কাজের জন্য ড্রোন ওড়ানোর প্রয়োজন হত তাহলে লাইসেন্স এবং পারমিশনের এত ঝঞ্ঝাট হত যে মানুষ ড্রোনের নাম শুনেই পিছিয়ে যেতেন। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এই মানসিকতাকে পরিবর্তন করে নতুন প্রকল্পকে গ্রহণ করার। তাই এই বছর ২৫ শে অগাস্ট দেশ এক নতুন ড্রোন নীতি নিয়ে এসেছে। এই নীতি ড্রোনের সঙ্গে যুক্ত বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাগুলির কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে। এতে এখন প্রচুর ফর্মের চক্করেও পড়তে হবে না, আগের মত অত মাশুল ও দিতে হবে না। আমার আপনাদের বলতে আনন্দ হচ্ছে যে নতুন ড্রোননীতি আসার পরে অনেক ড্রোন স্টার্টআপে বিদেশি এবং দেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করেছে। অনেক কোম্পানি উৎপাদন কেন্দ্র ও তৈরি করছেন।
সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী আর বিমানবাহিনী, ভারতীয় ড্রোন কোম্পানিকে ৫০০ কোটি টাকারও বেশির অর্ডার দিয়েছে। আর এটা তো সবে মাত্র আরম্ভ। আমাদের এখানেই থামলে হবে না। আমাদের ড্রোন প্রযুক্তিতে অগ্রণী দেশ হতে হবে। এর জন্য সরকার সবরকম পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। আমি দেশের যুবকদের বলবো যে আপনারা ড্রোন নীতির ফলে তৈরি হওয়া সুযোগের সদ্ব্যবহার করার ব্যাপারে নিশ্চয়ই ভাবুন, এগিয়ে আসুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ইউ পি’র মেরঠ থেকে ‘মন কি বাত’ এর এক শ্রোতা শ্রীমতী প্রভা শুক্লাজি আমায় স্বচ্ছতা বিষয়ে একটি পত্র পাঠিয়েছেন। উনি লিখেছেন যে "ভারতে উৎসবের সময় আমরা সবাই স্বচ্ছতাকে উদযাপন করি। সেরকমই যদি আমরা স্বচ্ছতাকে রোজকার অভ্যেস বানিয়ে নিই তাহলে পুরো দেশ স্বচ্ছ হয়ে উঠবে।" আমার প্রভাজীর এই কথাটি খুবই পছন্দ হয়েছে। সত্যিই যেখানে সাফ সাফাই আছে, সেখানে স্বাস্থ্য আছে, যেখানে স্বাস্থ্য আছে, সেখানে সামর্থ্য আছে আর যেখানে সামর্থ্য আছে, সেখানে আছে সমৃদ্ধি। এই জন্যই তো দেশে স্বচ্ছ ভারত অভিযানের উপর এত বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে।
বন্ধুরা, আমার রাঁচি সংলগ্ন এক গ্রাম সপারোম নয়া সরায়, সম্বন্ধে জানতে পেরে খুব ভালো লেগেছে। এই গ্রামে একটি জলাশয় ছিল, কিন্তু গ্রামবাসীরা এই জলাশয়টিকে উন্মুক্ত শৌচালয় হিসেবে ব্যবহার করছিলেন। স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সময় যখন সবার ঘরে শৌচালয় তৈরি হয়ে গেল, তখন গ্রামের মানুষেরা ভাবলেন যে গ্রামকে স্বচ্ছ বাননোর পাশাপাশি সুন্দরও বানানো যাক। আর তারপরেই সবাই মিলে জলাশয়ের পাশে পার্ক বানিয়ে দেন। আজ ওই স্থান মানুষের জন্য, শিশুদের জন্য একটি সার্বজনীন স্থান হয়ে গেছে। এতে পুরো গ্রামের জীবনে অনেক বড় পরিবর্তন এসেছে। আমি আপনাদের ছত্তিশগড় এর দেউর গ্রামের মহিলাদের সম্বন্ধেও বলতে চাই। এখানকার মহিলারা একটি স্বয়ং সহায়তা সংস্থা পরিচালনা করেন আর মিলেমিশে গ্রামের চৌমাথা রাস্তা আর মন্দির পরিষ্কার করে থাকেন।
বন্ধুরা, ইউপির গাজিয়াবাদের রামবীর তনওয়ার জি কে মানুষ 'পন্ড ম্যান' নামে চেনেন। রাম বীর জি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করার পরে চাকরি করছিলেন। কিন্তু ওঁর মনে স্বচ্ছতার কিরণ এতটাই উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল যে তিনি চাকরি ছেড়ে জলাশয় পরিষ্কার করতে লেগে যান।রাম বীর জি এখনো অবধি বহু জলাশয় পরিষ্কার করে পুনর্জীবিত করে তুলেছেন।
বন্ধুরা, স্বচ্ছতার প্রচেষ্টা তখনই পুরোপুরি সফল হয় যখন প্রত্যেক নাগরিক স্বচ্ছতাকে নিজের দায়িত্ব ভাবে।এখন দীপাবলিতে আমরা সবাই নিজেদের ঘর পরিষ্কার করার কাজে শামিল হতে যাচ্ছি। কিন্তু এই সময়ে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে আমাদের ঘরের সঙ্গে আমাদের আশপাশও যেন পরিষ্কার থাকে। এরকম যেন না হয় যে আমরা নিজেদের ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে ঘরের আবর্জনা ঘরের বাইরে, আমাদের রাস্তায় পৌঁছে দিই। আর হ্যাঁ, আমি যখন স্বচ্ছতার কথা বলি তখন দয়া করে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক থেকে মুক্তির কথাও আমাদের ভুললে চলবে না। তাহলে আসুন, আমরা সংকল্প নিই যে স্বচ্ছ ভারত অভিযানের উৎসাহে আমরা ভাটা পড়তে দেবো না। আমরা সবাই মিলে নিজেদের দেশকে সম্পূর্ণরূপে স্বচ্ছ বানাবো আর স্বচ্ছ রাখবো।
আমার প্রিয় দেশবাসী, অক্টোবরের পুরো মাসটাই উৎসবের রঙে রঙিন হয়ে থাকে এবং আর কিছুদিন পরে দীপাবলি তো আসছেই। দীপাবলি তারপর গোবর্ধন পূজা আর তারপর ভাইফোঁটা এই তিনটি উৎসব তো হবেই হবে। এই সময়ে ছট পূজাও হবে। নভেম্বরে গুরু নানক দেবজীর জয়ন্তীও আছে। এতগুলো উৎসব একসঙ্গে থাকলে তার প্রস্তুতিও অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়। আপনারা সবাই এখন থেকেই কেনাকাটার প্ল্যান করতে শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু আপনাদের মনে করিয়ে দিই, কেনাকাটা মানে 'ভোক্যাল ফর লোক্যাল। আপনারা স্থানীয় সামগ্রী কিনলে আপনাদের উৎসবও আলোকিত হবে আর কোনো গরিব ভাই বোন, কোনো কারিগর, কোনো তন্তুবায়ের ঘরেও আলো জ্বলবে। আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস আমরা সবাই মিলে যে প্রচার করতে শুরু করেছি এবারের উৎসবে তা আরো মজবুত হবে। আপনারা নিজেদের এলাকার স্থানীয় পণ্য কিনুন, তার সম্বন্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ারও করুন। নিজের আশেপাশের লোকদেরও বলুন। আগামী মাসে আমাদের আবার দেখা হবে আর এভাবেই অনেক বিষয়ে আমরা চর্চা করব। আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আপনারা জানেন যে এক জরুরী কর্মসূচীতে আমাকে আমেরিকা যেতে হচ্ছে, তাই আমি ভাবলাম যে ভালো হবে, যদি আমি আমেরিকা যাওয়ার আগেই ‘মন কি বাত’ রেকর্ড করে যাই। সেপ্টেম্বরের যে দিন ‘মন কি বাত’ নির্ধারিত, সেই তারিখেই আর একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন রয়েছে। এমনিতে তো আমরা অনেক দিবস মনে রাখি, নানারকম দিবস পালনও করি আর আমাদের বাড়িতে তরুণ পুত্র-কন্যা থাকলে তাদের জিজ্ঞাসা করলে গোটা বছরে কোন দিবস কখন আছে তার সম্পূর্ণ তালিকা শুনিয়ে দেবে। কিন্তু এমন আর একটা দিবস আছে যা আমাদের মনে রাখা উচিত আর এই দিবস এমনই যা ভারতের পরম্পরার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। সুদূর অতীত থেকে যে পরম্পরার সঙ্গে জুড়ে আছি আমরা তার সঙ্গেই যুক্ত করবে আমাদের। এটা হল ‘ওয়ার্ল্ড রিভার ডে’ অর্থাৎ ‘বিশ্ব নদী দিবস’। আমাদের এখানে বলা হয় –
‘পিবন্তি নদ্যঃ, স্বয়-মেভ নাভ্যঃ’
অর্থাৎ নদী নিজের জল নিজে পান করে না, বরং পরোপকারের জন্য দেয়। আমাদের জন্য নদী শুধু এক জড় বস্তুই নয়, আমাদের জন্য নদী এক জীবন্ত একক, আর তাই তো, সেইজন্যই তো আমরা, নদীকে ‘মা’ বলে ডাকি। আমাদের কত পরব, কত উৎসব, কত উচ্ছ্বাস, এই সবই আমাদের এই সব মায়েদের কোলে পালিত হয়।
আপনারা সবাই জানেন – মাঘ মাস এলে আমাদের দেশের বহু মানুষ পুরো এক মাস মা গঙ্গা বা অন্য কোনও নদীর তীরে কল্পবাস করেন। এখন তো এটা আর পরম্পরা নেই কিন্তু আগেকার দিনে তো রীতি ছিল যে বাড়িতে স্নান করলেও নদীকে স্মরণ করতাম। এই পরম্পরা আজ হয়ত লুপ্ত হয়ে গিয়েছে অথবা কোথাও সামান্য পরিমাণে টিঁকে রয়েছে কিন্তু একটা খুব বড় প্রথা ছিল যা সকালে স্নান করার সময়েই বিশাল ভারতের এক যাত্রা করিয়ে দিত, মানসিক যাত্রা! দেশের প্রত্যেকটি কোণার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রেরণা তৈরি হয়ে যেত। আর ওই যে ছিল, ভারতে স্নান করার সময় শ্লোক উচ্চারণের এক রীতি –
গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরী সরস্বতী।
নর্মদে সিন্ধু কাবেরী জলে অস্মিন্ সন্নিধি কুরু।।
আগে আমাদের বাড়িতে পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ এই শ্লোক বাচ্চাদের মুখস্থ করাতেন আর এতে আমাদের দেশে নদী নিয়ে আস্থা জন্ম নিত। বিশাল ভারতের এক মানচিত্র মনে আঁকা হয়ে যেত। নদীর সঙ্গে এক বন্ধন তৈরি হত। যে নদীকে মায়ের রূপে দেখে, জেনে, জীবনধারণ করি আমরা সেই নদীর প্রতি এক আস্থার মনোভাব তৈরি হত। এ ছিল সংস্কার তৈরির এক প্রক্রিয়া।
বন্ধু, যখন আমরা আমাদের দেশে নদীর মহিমা নিয়ে কথা বলছি, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যেকে একটা প্রশ্ন তুলবেন আর প্রশ্ন তোলার অধিকারও আছে, আর এর জবাব দেওয়া আমাদের দায়িত্বও বটে। যে কেউ প্রশ্ন করবেন যে ভাই, আপনি নদীর এত প্রশস্তি করছেন, নদীকে ‘মা’ বলছেন, তাহলে নদী এত দূষিত হয়ে যাচ্ছে কেন? আমাদের শাস্ত্রে তো নদীকে সামান্য দূষিত করাও অন্যায় বলা হয়। আর আমাদের পরম্পরাও এমন, আপনারা তো জানেনই যে আমাদের হিন্দুস্থানের যে পশ্চিম ভাগ, বিশেষ করে গুজরাত আর রাজস্থান, সেখানে জলের খুব অভাব রয়েছে। অনেক বার আকাল দেখা দেয়। এখন এই কারণেই এখানকার সমাজ জীবনে এক নতুন পরম্পরা তৈরি হয়েছে। যেমন গুজরাতে বর্ষা শুরু হলেই জল-জীলনী একাদশী পালন করা হয়। অর্থাৎ আজকের যুগে আমরা যেটাকে বলি ‘ক্যাচ দ্য রেইন’ সেটাই করা হয় যে জলের এক-একটা বিন্দু জড়ো করা, জল-জীলনী। এইভাবে বর্ষার পরে বিহার আর পূর্বাঞ্চলে ছটের মহাপরব পালিত হয়। আমি আশা করি যে ছটের কথা মনে রেখে নদীর পাড়ে, ঘাটে পরিষ্কার করা আর মেরামতি করার কাজ শুরু করা হয়েছে। আমরা নদীকে পরিষ্কার করা আর দূষণমুক্ত রাখার কাজ সবার প্রচেষ্টা আর সবার সহযোগিতায় করতেই পারি। ‘নমামি গঙ্গে মিশন’ও আজ এগিয়ে চলেছে আর তাই এখানে সব মানুষের প্রচেষ্টা, এক রকমের জনজাগরণ, জন-আন্দোলন, তার অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে।
বন্ধু, যখন নদীর কথা হচ্ছে, মা গঙ্গার কথা হচ্ছে তখন আরও একটা কথার প্রতি আপনাদের মনযোগ আকর্ষণের ইচ্ছে হচ্ছে। আলোচনা যখন ‘নমামি গঙ্গের’ নিয়ে হচ্ছে তখন নিশ্চয়ই একটা বিষয়ে আপনাদের নজর পড়েছে আর আমাদের তরুণতরুনীদের নজর তো অবশ্যই পড়েছে। আজকাল এক বিশেষ ই-অকশন, ই-নীলাম চলছে। এই ইলেকট্রনিক নীলাম সেই সব উপহারের যা বিভিন্ন সময়ে মানুষজন আমাকে দিয়েছেন। এই নীলাম থেকে যে অর্থ আসবে তা ‘নমামি গঙ্গে’ মিশনের জন্যই সমর্পিত হয়। আত্মীয়তার যে ভাবনা থেকে আপনারা আমাকে উপহার দেন, এই অভিযান সেই ভাবনাকে আরও শক্তিশালী করে।
বন্ধুরা, সারা দেশ জুড়ে নদীদের পুনর্জীবিত করার জন্য, পরিষ্কার জলের জন্য সরকার ও সমাজসেবী সংগঠনগুলি নিরন্তর কিছু না কিছু করে চলেছে। আজ থেকে নয়, অনেক দশক আগে থেকেই এই কাজ চলছে। কিছু মানুষ তো এমন কাজের জন্য নিজেকে সমর্পিত করে দিয়েছেন, এবং এই পরম্পরা, এই প্রয়াস, এই আস্থাই আমাদের নদীদের বাঁচিয়ে রেখেছে। ভারতবর্ষের যেকোনো প্রান্ত থেকেই যখন এমন খবর আমার কানে আসে, তখন আমার মনে সেই কৃতী ব্যক্তির প্রতি প্রভূত শ্রদ্ধা জন্মায়, আর ইচ্ছে করে সে কথা আপনাদের বলি। আমি তামিলনাড়ুর ভেল্লোর এবং তিরুভান্নামালাই জেলার একটি উদাহরণ দিতে চাই। সেখানে নাগানধী নামে এক নদী বয়ে গেছে। এই নাগা নদী বহু বছর আগে শুকিয়ে গিয়েছিল। তার ফলে সেখানকার জলস্তরও অনেক নিচে নেমে যায়। কিন্তু সেখানকার মহিলারা দৃঢ় সংকল্প নিলেন যে তাদের নদীকে তারা পুনর্জীবিত করবেন। তারপর তারা মানুষদের একত্রিত করলেন, সকলে কাজ ভাগ করে নিয়ে খাল কাটলেন, চেক ড্যাম বানালেন, রিচার্জ কুয়ো বানালেন। বন্ধুরা, আপনারাও জেনে খুশি হবেন যে আজ সেই নদী জলে ভরে উঠেছে, আর যখন নদী জলে ভরে ওঠে তখন মনে এক পরম শান্তি পাওয়া যায় যা আমি নিজে প্রত্যক্ষ ভাবে অনুভব করেছি।
আপনাদের মধ্যে অনেকেই নিশ্চয়ই জানেন, যে সবরমতীর তীরে মহাত্মা গান্ধী সবরমতী আশ্রম স্থাপন করেছিলেন, তা বিগত কিছু দশক ধরে শুকিয়ে গিয়েছিল। বছরে ছয় থেকে আট মাস জল চোখেই পড়তো না। কিন্তু নর্মদা নদী এবং সবরমতী নদীকে যুক্ত করা হয়েছে। আর আজ যদি আপনি আমেদাবাদ যান, তাহলে সবরমতী নদীর জল আপনার মনকে প্রফুল্ল করবে। এমনই বহু কাজ হয়ে চলেছে। তামিলনাড়ুতে আমাদের এই বোনেরা যেমন কাজ করছেন, দেশের আলাদা আলাদা প্রান্তেও তেমনই কাজ হচ্ছে। আমি তো জানি, আমাদের বহু ধার্মিক পরম্পরার সঙ্গে যুক্ত সাধু সন্ত, গুরুজনেরা নিজেদের আধ্যাত্মিক যাত্রার পাশাপাশি জলের জন্য, নদীর জন্য অনেক কিছু করছেন, বহু নদীর ধারে গাছ লাগানোর অভিযান চালাচ্ছেন। বহু নদীতে প্রবাহিত নোংরা জল আটকানোর কাজ হচ্ছে।
বন্ধুরা, "ওয়ার্ল্ড রিভার ডে" যখন আজ উদযাপিত হচ্ছে, তখন এই কাজে সমর্পিত সকলকে আমি শ্রদ্ধা জানাই, অভিনন্দন জানাই । কিন্তু প্রতিটি নদীর তীরে বসবাসকারী মানুষদের কাছে, দেশবাসীর কাছে আমি অনুরোধ করে বলব, ভারতের প্রতিটি প্রান্তে বছরে একবার তো নদী উৎসব পালন করাই উচিত।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ছোট কথা বা ছোট বিষয়কে ছোট করে দেখার মত ভুল কখনোই করা উচিত নয়। ছোট ছোট প্রয়াস থেকে কখনো কখনো তো বিরাট বড় বড় পরিবর্তনও আসে। যদি মহাত্মা গান্ধীর জীবনের প্রতি আমরা দৃষ্টি দিই তাহলে আমরা প্রতি মুহূর্তে উপলব্ধি করব যে, ওঁর জীবনে ছোট ছোট কথার কি বিরাট গুরুত্ব ছিল! আর ছোট ছোট কথা দিয়ে বড় বড় সংকল্পকে উনি কিভাবে রূপ দিয়েছিলেন। আমাদের আজকের তরুণ প্রজন্মের এটা অবশ্যই জানা উচিত যে স্বচ্ছতা অভিযান কিভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনকে নিরন্তর উদ্দীপনা যুগিয়েছিল। মহাত্মা গান্ধীই স্বচ্ছতাকে জন-আন্দোলনের রূপ দিয়েছিলেন। মহাত্মা গান্ধী স্বচ্ছতাকে স্বাধীনতার স্বপ্নের সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন। আজ এত দশক পরে স্বচ্ছতা আন্দোলন আবারও একবার দেশকে নতুন ভারতের স্বপ্নের সঙ্গে যুক্ত করার কাজ করেছে এবং আমাদের অভ্যাস পরিবর্তনের অভিযানেও পরিণত হচ্ছে। আমাদের এটা ভুললে চলবে না যে স্বচ্ছতা শুধুমাত্র একটি কর্মসূচি নয়, স্বচ্ছতা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলা সংস্কার থেকে নিবৃত্ত হওয়ার এক দায়িত্ব। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে স্বচ্ছতা অভিযান চালাতে হবে, তবেই সমগ্র সমাজ জীবনে স্বচ্ছতার অভ্যাস তৈরি হওয়া সম্ভব। তাই এটি দু এক বছর বা দু একটি সরকারের বিষয় নয়, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমাদের স্বচ্ছতা সম্বন্ধে সজাগ থেকে, ক্লান্তিহীনভাবে, সশ্রদ্ধ হয়ে অবিরাম এই স্বচ্ছতা অভিযান চালিয়ে যেতে হবে, আর আমি তো আগেও বলেছি যে এই স্বচ্ছতা - এটি পূজ্য বাপুকে এই দেশের পক্ষ থেকে এক বিরাট শ্রদ্ধাঞ্জলি। আর এই শ্রদ্ধাঞ্জলি আমাদের প্রতিবার দিয়ে যেতে হবে, নিরন্তর দিয়ে যেতে হবে।
বন্ধুরা, সবাই জানে যে আমি স্বচ্ছতা সম্পর্কে বলার কোন সুযোগ ছাড়ি না। হয়তো সেই জন্যই আমাদের 'মন কি বাত' এর একজন শ্রোতা শ্রীমান রমেশ প্যাটেল জি লিখেছেন - আমাদের বাপুর কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করে এবারের স্বাধীনতার "অমৃত মহোৎসবে" আর্থিক স্বচ্ছতার সংকল্পও নেওয়া উচিত। শৌচাগার নির্মাণ যেমন দরিদ্রদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে, তেমনি অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা দরিদ্রদের অধিকার নিশ্চিত করে, তাদের জীবনকে সহজ করে তোলে। আপনারা জেনে থাকবেন দেশে 'জন ধন' অ্যাকাউন্টের যে প্রয়াস শুরু হয়েছিল, তার ফলে আজ দরিদ্ররা তাঁদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি তাঁদের অধিকারের টাকা পাচ্ছেন, সেই জন্য দুর্নীতির মতো বাধা ও অনেকাংশ কম হয়েছে। এটা সত্য যে অর্থনৈতিক স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি খুব সাহায্য করতে পারে। এটা আমাদের জন্য আনন্দের বিষয় যে আজ গ্রামাঞ্চলেও ফিন-টেক ইউপিআই-এর মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেন করার পথে সাধারণ মানুষও যোগ দিচ্ছেন, এর প্রচলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমি আপনাদের একটা পরিসংখ্যান দিই, যা জেনে আপনারা গর্বিত হবেন, গত আগস্ট মাসে ইউপিআই এর মাধ্যমে এক মাসে ৩৫৫ কোটি লেন্দেন করা হয়, অর্থাৎ একমাসেই প্রায়-প্রায় ৩৫০ কোটিরও বেশি লেনদেন, অর্থাৎ আমরা বলতে পারি যে গত আগস্ট মাসে, ৩৫০ কোটিরও বেশি বার ডিজিটাল লেনদেনের জন্য ইউপিআই ব্যবহার করা হয়েছে। আজ, ইউপিআই এর মাধ্যমে গড়ে ৬ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ডিজিটাল পেমেন্ট করা হচ্ছে। দেশের অর্থনীতি পরিচ্ছন্ন ও স্বচ্ছ হয়ে উঠছে, এবং আমরা জানি এখন ফিনটেকের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যাচ্ছে।
বন্ধুরা, বাপু যেমন পরিষ্কার -পরিচ্ছন্নতাকে স্বাধীনতার সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন, ঠিক তেমনিভাবে খাদিকে স্বাধীনতার পরিচয়ে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। আজ, স্বাধীনতার ৭৫তম বছরে, যখন আমরা স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব উদযাপন করছি, তখন আমরা সন্তুষ্টি নিয়ে বলতে পারি যে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে খাদির যে গৌরব ছিল, আজ আমাদের তরুণ প্রজন্ম খাদির সেই গৌরব অক্ষুন্ন রেখেছেন। আজ খাদি ও তাঁতের উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর চাহিদাও বেড়েছে। আপনিও জানেন অনেকবার এমনও ঘটেছে যে দিল্লির খাদি শোরুম দিনে এক কোটি টাকারও বেশি ব্যবসা করেছে। আমি আপনাকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ২রা অক্টোবর, পূজনীয় বাপুর জন্মবার্ষিকীতে, আসুন আমরা সবাই আবার নতুন রেকর্ড গড়ি। দীপাবলির উৎসব তো সামনেই রয়েছে, তাই আপনার শহরে যেখানে খাদি, তাঁত, হস্তশিল্পের জিনিস বিক্রি হয়, সেখান থেকে কেনাকাটা করে এই উৎসবের মরসুমে খাদি, হস্তশিল্প, কুটির শিল্পের এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হোন। আপনার প্রতিটি কেনাকাটা ' ভ্যোকাল ফর ল্যোকাল' প্রচারাভিযানকে শক্তিশালী করে তুলুক, পুরনো সব রেকর্ড ভেঙে দিক।
বন্ধুরা, অমৃত মহোৎসবের এই সময়ে, দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের অব্যক্ত কাহিনী জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দিতে একটি প্রচারাভিযানও চলছে। এর জন্য উদীয়মান লেখক, দেশের ও বিশ্বের তরুণদের আহ্বান জানানো হয়েছিল। এখন পর্যন্ত ১৩ হাজারেরও বেশি মানুষ নিবন্ধিকরন করেছেন, তাও আবার ১৪টি ভিন্ন ভাষায়। এবং এটাও আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে ২০ টিরও বেশি দেশের প্রবাসী ভারতীয় এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। আরও একটি আকর্ষণীয় তথ্য রয়েছে, প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি উদীয়মান লেখক স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত কাহিনীর খোঁজ করছেন। যাঁরা অজানা নায়ক নায়িকা, যাঁরা অজ্ঞাতনামা, যাদের নাম ইতিহাসের পাতায় দেখা যায় না, সেই অজানা নায়ক নায়িকাদের বিষয়ে কিছু লেখার উদ্যোগ নিয়েছেন নতুন উদীয়মান লেখক, অর্থাৎ দেশের তরুণ তরুণীরা সেইসব স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ইতিহাস, তাদের জীবন ও বিভিন্ন ঘটনাকে দেশের সামনে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যাঁদের সম্বন্ধে গত ৭৫ বছরেও আলোচনা হয়নি। সকল শ্রোতার কাছে আমার অনুরোধ, শিক্ষা জগতের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আমার অনুরোধ আপনারাও এই তরুণ তরুনীদের অনুপ্রাণিত করুন। আপনিও এগিয়ে আসুন এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস যারা স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে ইতিহাস লিখছেন তারাও ইতিহাস তৈরি করবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, সিয়াচেন হিমবাহ সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। এখানে ঠান্ডা এত ভয়ঙ্কর যে সাধারণ মানুষের পক্ষে সেখানে বসবাস করা দুঃসাধ্য। দূর দূর পর্যন্ত শুধুই বরফ আর গাছপালার তো কোনো চিহ্নই নেই। এখানে তাপমাত্রা হিমাংকের নীচে ৬০ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে। কিছুদিন আগে সিয়াচেন এর এই দুর্গম এলাকায় ৮ জন ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের একটি দল এমন বিস্ময়কর কাজ করে দেখিয়েছে যা প্রতিটি দেশবাসীর গর্বের বিষয়। এই দল সিয়াচেন হিমবাহের ১৫ হাজার ফুটেরও বেশি উচ্চতায় অবস্থিত 'কুমার পোস্টে' পতাকা উত্তোলন করে বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও আমাদের এই দিব্যাঙ্গ বন্ধুরা যে কৃতিত্বের ছাপ রেখেছেন তা পুরো দেশের জন্য প্রেরণাদায়ক আর যখন আপনিও এই টিমের সদস্যদের সম্বন্ধে জানতে পারবেন আপনারাও আমারই মত সাহস আর উদ্যমে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবেন। এই সাহসী ভিন্নভাবে সক্ষম বন্ধুদের নাম হল মহেশ নেহরা, উত্তরাখণ্ডের অক্ষত রাওয়াত, মহারাষ্ট্রের পুষ্পক গবাণ্ডে, হরিয়ানার অজয় কুমার, লাদাখের লোবসং চস্পেল, তামিলনাড়ুর মেজর দ্বারকেশ, জম্মু-কাশ্মীরের ইরফান আহমেদ মির আর হিমাচল প্রদেশের চোঞ্জিন এঙ্গমো। সিয়াচেন হিমবাহকে জয় করার এই অভিযান ভারতীয় সেনার বিশেষ দলের অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের জন্য সফল হয়েছে। আমি এই ঐতিহাসিক ও অভূতপূর্ব সাফল্যর জন্য এই দলের প্রশংসা করছি। এটি আমাদের দেশবাসীকে "ক্যান ডু কালচার", "ক্যান ডু ডিটারমিনেশন", "ক্যান ডু অ্যাটিটিউড" এর সঙ্গে প্রত্যেক বাধার সম্মুখীন হওয়ার ভাবনার প্রেরণা যোগায়।
বন্ধুরা, আজ দেশে ভিন্নভাবে সক্ষমদের কল্যাণের জন্য বহু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশে একটি উদ্যোগ ওয়ান টিচার, ওয়ান কল এর সম্বন্ধে জানার সুযোগ আমি পাই। বরেলিতে এই অভিনব প্রচেষ্টা ভিন্নভাবে সক্ষম শিশুদের নতুন পথ দেখাচ্ছে। এই অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডভুউরা গঙ্গাপুর-এর একটি স্কুলের প্রিন্সিপাল দীপমালা পান্ডেজি। করোনাকালে এই অভিযানের দরুন কেবলমাত্র বহুসংখ্যক শিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তিই সম্ভব হয়নি এমনকি এর ফলে প্রায় ৩৫০ এর বেশি শিক্ষক সেবাব্রতের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরেছেন। এই শিক্ষক গ্রামে গ্রামে গিয়ে ভিন্নভাবে সক্ষম শিশুদের ডেকে আনেন, খুঁজে বের করেন আর তাদের কোনো না কোনো স্কুলে ভর্তি সুনিশ্চিত করান। দিব্যাঙ্গজনদের জন্য দীপমালাজি আর ওনার সহ শিক্ষকদের এই মহান উদ্যোগের জন্য আমি তাঁদের ভুয়সী প্রশংসা করছি। শিক্ষা ক্ষেত্রে এরকম প্রত্যেক উদ্যোগ আমাদের দেশের ভবিষ্যতকে সুসজ্জিত করে তুলবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ আমাদের জীবনের অবস্থা এমনই যে একদিনে করোনা শব্দটি কয়েকশোবার ধ্বনিত হয়, বিগত ১০০ বছরে আসা সব থেকে বড় বিশ্বব্যাপী মহামারী কোভিড নাইনটিন প্রত্যেক দেশবাসীকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। স্বাস্থ্যপরিষেবা ও সুস্থতা নিয়ে আজ প্রশ্ন আর সচেতনতাও বেশি। আমাদের দেশে পারম্পরিক রূপে এরকম প্রাকৃতিক সম্পদ প্রচুর মাত্রায় পাওয়া যায় যা ওয়েলনেস অর্থাৎ স্বাস্থ্যের জন্য অনেক কার্যকরী। ওড়িশার কালাহান্ডির নান্দওল এর অধিবাসী পাতায়েত সাহুজী এই ক্ষেত্রে বহুদিন ধরে একটি অভিনব কাজ করে চলেছেন। উনি দেড় একর জমির উপর ভেষজ গাছ লাগিয়েছেন, শুধু তাই নয় সাহুজি এই ভেষজ গাছের তথ্য নথীভুক্তির কাজও করেছেন। আমায় রাঁচির সতীশ জী এরকমই আরো একটি তথ্য পত্র মারফত জানিয়েছেন। সতীশজী ঝাড়খন্ডে অ্যালোভেরা গ্রামের প্রতি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। রাঁচির পাশে দেবরি গ্রামের মহিলারা মঞ্জু কাচ্ছপজীর নেতৃত্বে বিরসা কৃষি বিদ্যালয় থেকে এলোভেরা চাষের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এরপরে ওঁরা অ্যালোভেরা চাষ শুরু করেন। এই চাষ থেকে শুধুমাত্র স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে লাভ হয়েছে তাই নয় এমনকি ওই মহিলাদের আয়ও বেড়ে গেছে। কোভিড মহামারীর সময় ওঁদের ভালো আয় হয়েছে। এর একটি বড় কারণ ছিল যে স্যানিটাইজার বানানোর কোম্পানিগুলো সরাসরি ওনাদের কাছ থেকে অ্যালোভেরা কিনছিল। আজ এই কাজের সঙ্গে প্রায় ৪০ জন মহিলার দল যুক্ত। আরো অনেক একর জমিতে অ্যালোভেরার চাষ হয়। ওড়িশার পাতায়েত সাহুজী হোক বা দেওয়ারির মহিলাদের এই দল, এরা চাষবাস কে যেভাবে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত করেছেন তা দৃষ্টান্তমূলক।
বন্ধুরা, আসন্ন দোসরা অক্টোবর লাল বাহাদুর শাস্ত্রীজিরও জন্মজয়ন্তী। তাঁর স্মৃতিতে এই দিনটি আমাদের কৃষিক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রয়োগ করার অনুপ্রেরণা দেয়। ভেষজ গাছের ক্ষেত্রে স্টার্ট আপ-কে উৎসাহ দিতে মেডি হাব টিবিআই নামক একটি ইনকিউবেটর, গুজরাটের আনন্দে কাজ করছে। ঔষধি ও সুগন্ধি গাছের সঙ্গে সম্পৃক্ত এই ইনকিউবেটর খুব কম সময়ে ১৫ জন উদ্যোক্তাদের ব্যবসার ভাবনাকে সাহায্য করেছে। এই ইনকিউবেটর-এর সাহায্যেই সুধা চেব্রলুজী নিজের স্টার্ট আপ শুরু করেছেন। তাঁর কোম্পানিতে মহিলাদের প্রাধান্য দেয়া হয় এবং তাঁদের ওপরই উদ্ভাবনী ভেষজ ফর্মুলেশন-এর দায়িত্ব দেওয়া আছে। আর একজন উদ্যোক্তা, শুভাশ্রীজীও এই ঔষধি ও সুগন্ধি গাছের ইনকিউবেটর থেকে সুফল পেয়েছেন। শুভাশ্রীজীর কোম্পানি হার্বাল রুম আর কার ফ্রেশনার ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা একটি ভেষজ ছাদ বাগান বানিয়েছেন যেখানে চারশোরও বেশি ঔষধি গুল্ম আছে।
বন্ধুরা, বাচ্চাদের মধ্যে ঔষধি ও ভেষজ গাছের প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর জন্য আয়ুষ মন্ত্রণালয় একটি মজাদার উদ্যোগ নিয়েছে এবং তার পুরো দায়িত্বভার সামলাচ্ছেন আমাদের অধ্যাপক আয়ুষ্মানজী। আপনি হয়তো ভাবছেন যে, এই অধ্যাপক আয়ুষ্মান কে? আসলে অধ্যাপক আয়ুষ্মান একটি কমিক বই-এর নাম। এই বইয়ে বিভিন্ন কার্টুন চরিত্রদের মাধ্যমে ছোট ছোট গল্প তৈরী করা হয়েছে। এর পাশাপাশি অ্যালভেরা, তুলসী, আমলকি, গুলঞ্চ, নিম, অশ্বগন্ধা ও ব্ৰাহ্মীর মতো স্বাস্থ্যকর ঔষধি গাছের উপকারিতা বর্ণনাও করা হয়েছে।
বন্ধুরা, বর্তমান পরিস্থিতিতে যেভাবে ঔষধি গাছ ও ভেষজ দ্রব্যের প্রতি বিশ্বের মানুষের আগ্রহ বাড়ছে, তাতে ভারতের কাছে অনেক সম্ভাবনার দিক খুলে গেছে। সম্প্রতি আয়ুর্বেদিক ও ভেষজ দ্রব্যের রপ্তানিতে অনেকটা বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। আমি বিজ্ঞানী, গবেষক এবং স্টার্ট আপ-এর ক্ষেত্রে সঙ্গে যুক্ত লোকেদের এইসব দ্রব্যের দিকে দৃষ্টিপাত করতে অনুরোধ করছি, যা মানুষের সুস্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ায় এবং আমাদের কৃষক ও যুবসম্প্রদায়ের আয়ের পথকে প্রশস্ত করতে সাহায্য করে।
বন্ধুরা, প্রথাগত কৃষিকাজ থেকে একটু এগিয়ে, কৃষিক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রয়োগ, নতুন বিকল্প, নিরন্তর স্বনিযুক্তির নতুন পথ খুলে দিচ্ছে। পুলওয়ামা অঞ্চলের দুই ভাইয়ের গল্প এমনি একটি উদাহরণ। জম্মু কাশ্মীরের পুলওয়ামায় বিলাল আহমেদ শেখ ও মুনির আহমেদ শেখ যেভাবে নিজেদের জন্য নতুন পথ সৃষ্টি করেছেন তা নতুন ভারতের জন্য একটি নজির। ৩৯ বছর বয়সী বিলাল আহমেদ উচ্চ শিক্ষিত, অনেক ডিগ্রী আছে ওঁর। উচ্চ শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত অভিজ্ঞতাকে ব্যবহার করে আজ তিনি কৃষিক্ষেত্রে নিজের স্টার্ট আপ খুলেছেন। বিলালজী নিজের বাড়িতেই ভার্মি কম্পোস্টিং-এর একটি ইউনিট তৈরী করেছেন। এই ইউনিট থেকে তৈরী হওয়া জৈব সার দিয়ে তিনি শুধুমাত্র চাষে, লাভের মুখ দেখেছেন তা নয়, বহু মানুষের উপার্জনের পথও খুলে দিয়েছে। প্রতি বছর এই দুই ভাইয়ের ইউনিট থেকে কৃষকদের প্রায় তিন হাজার কুইন্টাল ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন হয়। আজ ওঁদের এই ভার্মি কম্পোস্টিং ইউনিটে ১৫জন কাজ করছেন। ওঁদের এই ইউনিটকে দেখতে প্রচুর লোক যাচ্ছেন যার একটা বড় অংশ হলো যুবক যুবতীরা, যারা কৃষিক্ষেত্রে কিছু করতে চাইছেন। পুলওয়ামার এই শেখ ভাইরা ‘জব সিকার’ হওয়ার থেকে ‘জব ক্রিয়েটর’ হওয়ার সংকল্প নিয়েছেন এবং আজ তাঁরা জম্মু কাশ্মীরেই শুধু নয়, গোটা দেশের মানুষকে নতুন পথ দেখাচ্ছেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ২৫ সেপ্টেম্বর দেশের মহান সন্তান পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্ম জয়ন্তী। দীনদয়ালজী বিগত শতাব্দীর সবচেয়ে বড় বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে একজন ছিলেন। ওঁর অর্থনৈতিক ভাবনা, সমাজকে শক্তিশালী করতে ওঁর বিভিন্ন নীতি, ওঁর দেখানো অন্তদ্বয়ের মার্গ, আজ যতটা প্রাসঙ্গিক, ততটাই প্রেরণাদায়ক। তিন বছর আগে ২৫ সেপ্টেম্বর ওঁর জন্ম জয়ন্তীতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হেলথ অ্যাসুয়ারেন্স স্কিম - আয়ুষ্মান ভারত যোজনা শুরু করা হয়েছিল। আজ দেশের দুই থেকে সওয়া দুই কোটির বেশী গরিব মানুষ, আয়ুষ্মান যোজনার জন্য হাসপাতালে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা পেয়েছে। দরিদ্র মানুষের জন্য এত বড় মাপের যোজনা, দীনদয়ালজীর অন্তোদ্যয় দর্শনকেই সমর্পিত। আজকের তরুণরা যদি তার আদর্শ ও ম্যূল্যবোধকে নিজেদের জীবনে মেনে চলেন তবে তারাও লাভবান হবেন। একবার লখনউতে দীনদয়ালজী বলেছিলেন- "কত ভাল ভাল বিষয় আছে, গুণ আছে যা আমরা সমাজ থেকেই পাই। সামাজিক ঋণ শোধ করা আমাদের কর্তব্য, আমাদের বিচারধারা এরকম হওয়া উচিৎ ।"
দীনদয়ালজী আমাদের এই শিক্ষা দিয়েছেন যে আমরা দেশ থেকে, সমাজ থেকে এত কিছু পাই, তা সে যে কোন জিনিস হোক। অতএব, আমরা দেশের প্রতি এই ঋণ কি করে শোধ করব সেই বিষয়ে ভাবা উচিৎ। এটা আজকের যুব সম্প্রদায়ের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।
বন্ধুরা, দীনদয়ালজীর জীবন থেকে আমরা কখনও হার না মানার শিক্ষাও পাই। ভিন্ন রাজনৈতিক দৃষ্টি ও আদর্শ সত্ত্বেও ভারতের উন্নতির জন্য তিনি স্বদেশী মডেলের সংস্করণ থেকে কখনও সরে আসেন নি। আজ অনেক তরুণ তরুনী গড়পড়তা রাস্তায় না হেঁটে, স্বতন্ত্র ভাবে এগিয়ে যেতে চান, নিজেদের মত করে কাজ করতে চান। তারা দীনদয়ালজীর জীবন থেকে অনেক কিছু শিখতে পারেন। এইজন্য যুবদের আমার অনুরোধ তারা ওঁর সর্ম্পকে অবশ্যই জানুক।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমরা আজকে অনেক রকম বিষয়ে চর্চা করলাম। আমরা আলোচনাও করলাম, সামনেই সময়টা নানা উৎসবের। গোটা দেশ মর্যাদা পুরুষত্তোম শ্রীরামের অসত্যের উপর জয়ের উৎসব পালন করতে চলেছে। কিন্তু এই উৎসবের মধ্যে আমাদের অন্য এক লড়াইয়ের বিষয়েও মনে রাখতে হবে - সেটা হলো দেশের করোনার বিরুদ্ধে লড়াই। টিম ইন্ডিয়া এই লড়াইতে প্রতিদিন নতুন রেকর্ড তৈরি করছে। টিকাকরণে দেশ এমন অনেক রেকর্ড করেছে যার চর্চা সমগ্র বিশ্বে হচ্ছে। এই লড়াইতে ভারতবাসীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমাদের টিকা তো নিতেই হবে, কিন্তু এই বিষয়ও খেয়াল রাখতে হবে যে কেউ যাতে এই নিরাপত্তা চক্র থেকে বাদ না যায়। আপনার আশপাশে যে এখনো টিকা নেয়নি তাকেও টিকাকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। টিকা নেওয়ার পরেও প্রয়োজনীয় বিধি পালন করতে হবে। আমি আশা করি এই লড়াইতেও আরও একবার টিম ইন্ডিয়া নিজের বিজয় পতাকা উত্তোলন করবে। আমরা পরের বার অন্য কোন বিষয়ে ‘মন কি বাত’ করব। আপনাদের সকলকে, প্রত্যেক দেশবাসীকে, উৎসবের অনেক অনেক শুভকামনা। ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আমরা সবাই জানি যে আজ মেজর ধ্যানচাঁদজির জন্মবার্ষিকী। এবং আমাদের দেশ তাঁর স্মরণে এই দিনটি জাতীয় ক্রীড়া দিবস হিসেবে উদযাপন করে। আমি ভাবছিলাম যে এই সময় হয়তো, মেজর ধ্যানচাঁদজির আত্মা যেখানেই থাকুক, তিনি নিশ্চয়ই খুব আনন্দ অনুভব করছেন। কারণ বিশ্বে ভারতীয় হকির জয়ডঙ্কা বেজে উঠেছিল ধ্যানচাঁদজির হকির সৌজন্যে। এবং চার দশক পরে, প্রায় ৪১ বছর পরে, ভারতের যুবসম্প্রদায়, ছেলে ও মেয়েরা হকিকে আরো একবার পুনরুজ্জীবিত করে তুলেছে। আর যতই পদক লাভ হোক, কিন্তু হকিতে পদক না পাওয়া পর্যন্ত ভারতের কোন নাগরিক জয়ের আনন্দ উপভোগ করতে পারে না, আর এইবার অলিম্পিকে হকিতে পদক লাভ হয়েছে, চার দশক পর। আপনি কল্পনা করতে পারেন মেজর ধ্যানচাঁদজির মন, তাঁর আত্মা যেখানেই থাকুক, সেখানে তিনি কত খুশি হবেন। ধ্যানচাঁদজির সারা জীবন খেলাধুলার জন্য সমর্পিত ছিল এবং সেই কারণেই আজ আমরা দেশের যুবদের মধ্যে, আমাদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে খেলাধুলার প্রতি আকর্ষণ দেখতে পেয়েছি। বাবা-মাও খুশি হন যখন তাঁরা তাঁদের বাচ্চাদের খেলাধুলোয় এগিয়ে যেতে দেখেন। এই যে উৎসাহ দেখা যাচ্ছে, আমি মনে করি এটাই মেজর ধ্যানচাঁদজির প্রতি মহান শ্রদ্ধাঞ্জলী।
বন্ধুরা , যখন খেলাধুলার কথা হয়, তখন আমাদের সামনে সমস্ত তরুণ প্রজন্মকে দেখতে পাওয়াটাই স্বাভাবিক। এবং যখন আমি তরুণ প্রজন্মকে লক্ষ্য করি, তখন তাদের মধ্যে অনেক বড় পরিবর্তন ধরা পড়ে। যুবদের মনের পরিবর্তন হয়েছে। আজকের তরুণ মন জীর্ণ পুরনো পন্থা থেকে সরে গিয়ে নতুন কিছু করতে চায়, ভিন্নভাবে কিছু করতে চায়। আজকের তরুণ মন চিরাচরিত পথে হাটতে চায় না। সে নতুন পথ তৈরি করতে চায়। অজানা জায়গায় পা রাখতে চায়। নতুন গন্তব্য, নতুন লক্ষ্য, রাস্তাও নতুন এবং ইচ্ছাও নতুন। আরে, তরুণ যদি একবার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়, সেই কাজে উঠে পড়ে লাগে । দিনরাত পরিশ্রম করে। এই কিছুদিন আগেই আমরা দেখলাম ভারত নিজের মহাকাশ ক্ষেত্রকে উন্মুক্ত করেছে এবং সঙ্গে সঙ্গেই সেই সুযোগ তরুণ প্রজন্ম গ্রহণ করেছে ও তার লাভ তোলার জন্য কলেজের ছাত্রছাত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারী ক্ষেত্রে কর্মরত তরুণরা অনেক উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে এসেছে এবং আমি নিশ্চিত যে আগামী দিনে এই ধরনের বিপুল সংখ্যক কৃত্রিম উপগ্রহ থাকবে যেখানে আমাদের যুবরা, আমাদের ছাত্ররা, আমাদের কলেজ, আমাদের ইউনিভার্সিটি, পরীক্ষাগারে কাজ করে এমন সব ছাত্রছাত্রীরা কাজ করেছে ।
একইভাবে, আজ যে দিকেই তাকান, যে কোন পরিবারেই যান, পরিবার যতই ধনী হোক, শিক্ষিত হোক, কিন্তু পরিবারে তরুণদের সঙ্গে কথা বললে, তারা কি বলে -- সে তার পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে ভিন্ন মত পোষণ করে। বলে যে আমি স্টার্টআপ করব, নতুন উদ্যোগে চলে যাব। অর্থাৎ তার মন ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত। আজ ছোট ছোট শহরে নতুন উদ্যোগের সংস্কৃতি প্রসারিত হচ্ছে এবং আমি তাদের মধ্যে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের লক্ষণ দেখতে পেয়েছি। মাত্র কয়েকদিন আগে আমাদের দেশে খেলনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো । তৎক্ষণাৎ এই বিষয়টি আমাদের তরুণদের নজরে আসে, তারা সিদ্ধান্ত নেয় কিভাবে বিশ্বের দরবারে ভারতীয় খেলনা স্বীকৃতি লাভ করতে পারে। তাঁরা নতুন নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন এবং বিশ্বে খেলনার বিশাল বাজার রয়েছে, প্রায় ৬-৭ লক্ষ কোটি টাকার বাজার রয়েছে। সেখানে আজ ভারতের অংশ খুবই কম। কিন্তু খেলনা কিভাবে তৈরি করা যায়, খেলনায় কি বৈচিত্র থাকবে, খেলনায় কি প্রযুক্তি থাকবে, কিভাবে শিশুদের মনস্তত্ত্ব অনুযায়ী খেলনা বানানো যায়, আজ আমাদের দেশের যুবরা এইসব বিষয়ে মনোনিবেশ করছেন। তারা কিছু অবদান রাখতে চায়। বন্ধুরা, আরেকটি বিষয় আছে যা মনকে খুশিতে ভরিয়ে দেয় ও আমাদের বিশ্বাসকেও শক্তিশালী করে। সেটা কি, তা আপনি কখনো খেয়াল করেছেন? সাধারণত আমাদের স্বভাব হয়ে গিয়েছিল-- এটাই ঘটে, বন্ধু এমনটাই চলে, কিন্তু এখন দেখছি আমার দেশের যুব মন সেরার দিকেই নিজেকে কেন্দ্রীভূত করছে। সবার চেয়ে সেরা করতে চায়, সেরা ভাবে করতে চায়। এটিও জাতিকে এক মহান শক্তিতে পরিণত করবে ।
বন্ধুরা , এবারের অলিম্পিক বিশাল প্রভাব ফেলেছে। অলিম্পিক গেমস শেষ। এখন প্যারালিম্পিকস চলছে। ক্রীড়া জগতে আমাদের দেশ যা কিছু লাভ করেছে, তা বিশ্বের তুলনায় কম হতে পারে, কিন্তু আত্মবিশ্বাস জাগানোর জন্য অনেক কিছুই হয়েছে। আজকের যুব সমাজ শুধু খেলাধুলার দিকেই তাকিয়ে নেই বরং তারা এর সঙ্গে যুক্ত সম্ভাবনার দিকেও তাকিয়ে রয়েছে। তারা এর পুরো বাস্তুতন্ত্রকে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, সামর্থকে বুঝছে এবং নিজেকে তার সঙ্গে কোনো না কোনো ভাবে যুক্ত করতে চাইছে। এখন তারা প্রচলিত জিনিসকে ছাড়িয়ে গিয়ে নতুনকে গ্রহণ করছে। আর আমার দেশবাসী, এখন এতটা গতি এসেছে, যে প্রতি পরিবারে খেলাধুলা সংক্রান্ত চর্চা শুরু হয়েছে। এবার আপনি বলুন, এখন এই গতিকে থামতে দেওয়া উচিত? বন্ধ করে দেওয়া উচিত? না। আপনিও নিশ্চয়ই আমার মত ভাবছেন ।
এখন দেশে খেলাধুলা, স্পোর্টস, স্পোর্টসম্যান স্পিরিট আর থামালে চলবে না। এই উদ্দীপনাকে পারিবারিক জীবনে, সামাজিক জীবনে, সমগ্র দেশবাসীর জীবনে স্থায়ী করতে হবে। শক্তি দিয়ে পূর্ণ করতে হবে। ক্রমাগত নতুন শক্তি দিয়ে পূর্ণ করতে হবে। ঘর হোক, বাহির হোক, গ্রাম হোক, শহর হোক, আমাদের খেলার মাঠ যেন ভরা থাকে। সকলেই খেলুক, সকলেই প্রস্ফুটিত হোক, আর আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে যে আমি লালকেল্লা থেকে বলেছিলাম, "সবকা প্রয়াস'' - হ্যাঁ সকলের প্রচেষ্টা। সকলের প্রচেষ্টার মাধ্যমেই ভারত খেলায় সেই উচ্চতায় পৌঁছতে পারে যা তার অধিকার। মেজর ধ্যানচাঁদ জির মত মানুষেরা যে পথ দেখিয়েছেন, তাতে এগিয়ে যাওয়া আমাদের কর্তব্য। অনেক বছর পরে দেশে এমন এক সময় এসেছে যে খেলার প্রতি পরিবার হোক, সমাজ হোক, রাজ্য হোক, রাষ্ট্র হোক, একই অনুভূতি নিয়ে সকলেই যুক্ত রয়েছেন।
আমার প্রিয় যুবা বন্ধুরা, আমাদের এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের স্পোর্টসে সাফল্য অর্জন করতে হবে। গ্রামে গ্রামে খেলার প্রতিযোগিতা অনবরত চলা উচিত। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে খেলা বিস্তৃতি লাভ করে, খেলার বিকাশ হয়, খেলোয়াড়াও এভাবেই উঠে আসেন। আসুন আমরা সকল দেশবাসী এই উদ্দীপনাকে যতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, যতটা আমরা যোগদান করতে পারি, ''সবকা প্রয়াস''- এই মন্ত্রের মাধ্যমে সফল করে দেখাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কাল জন্মাষ্টমী মহোৎসব । জন্মাষ্টমীর এই উৎসব ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মোৎসব। আমরা ঈশ্বরের সকল রূপের সঙ্গে পরিচিত, চঞ্চল গোপাল থেকে শুরু করে বিশ্বরূপ ধারণ করা কৃষ্ণ পর্যন্ত। শাস্ত্রজ্ঞানী থেকে শুরু করে অস্ত্রধারী কৃষ্ণ পর্যন্ত। শিল্প হোক, সৌন্দর্য হোক, মাধুর্য হোক, সব স্থানেই কৃষ্ণ বিরাজমান। কিন্তু এই কথা আমি এই জন্য বলছি যে, জন্মাষ্টমীর কিছুদিন আগেই আমি এমন এক অত্যাশ্চর্য অনুভূতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছি যে আমার ইচ্ছে করছে এই কথাগুলো আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিই। আপনারা মনে করতে পারেন, এই মাসের কুড়ি তারিখে ভগবান সোমনাথ মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। সোমনাথ মন্দির থেকে তিন চার কিলোমিটার দূরে ভালকা তীর্থ স্থান, এই ভালকা তীর্থস্থানেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর জীবনের অন্তিম মুহূর্ত কাটিয়েছেন। একপ্রকার এই পৃথিবীতে ওঁর লীলার সমাপন হয়েছে এখানে। সোমনাথ ট্রাস্টের মাধ্যমে ওই সমস্ত অঞ্চলে উন্নয়নমূলক নানা কাজ চলছে। আমি ভালকা তীর্থ আর ওখানে হওয়া কাজের ব্যাপারে ভাবছিলাম, ঠিক তখনই আমার নজর পড়ে এক সুন্দর আর্ট বুকের উপর। এই বইটা আমার বাড়ির বাইরে কেউ আমার জন্য রেখে গিয়েছিল। এতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অনেক রূপের কথা, অনেক ছবি ছিল। সব মনমুগ্ধকর ছবি এবং খুব অর্থবহ ছবিও। আমি বইয়ের পাতা উল্টানো শুরু করলাম, তো আমার কৌতুহল বাড়লো। যখন আমি এই বইয়ের সব ছবি দেখলাম, ওর মধ্যে আমার জন্য লেখা এক বার্তা পড়লাম তখন আমার মনে হল ওঁর সঙ্গে দেখা করি। যিনি আমার বাড়ির বাইরে এই বই রেখে গেছেন, তাঁর সঙ্গে আমার দেখা করা উচিত। সেই কারণে আমার অফিস ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমার ওই আর্টবুক দেখে, শ্রীকৃষ্ণের নানা রূপ দেখে এতটাই কৌতূহল হয়, যে পরের দিনই তাকে দেখা করতে ডাকলাম। এই কৌতুহল এর জন্যই আমার দেখা হলো যদুরানী দাসীর সঙ্গে। উনি আমেরিকা নিবাসী, ওর জন্ম আমেরিকায়, বড় হয়েছেন আমেরিকায়। যদুরানী দাসী ইস্কনের সঙ্গে যুক্ত। হরেকৃষ্ণ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। আর তার এক বড় বৈশিষ্ট্য, উনি ভক্তি আর্টসে দক্ষ। আপনারা জানেন যে আর দুদিন পরে পয়লা সেপ্টেম্বর ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীল প্রভুপাদ স্বামীর 125 তম জন্ম জয়ন্তী। যদুরানী দাসী এর জন্যেই ভারতবর্ষে এসেছিলেন। আমার সামনে বড় প্রশ্ন ছিল যে যাঁর জন্ম আমেরিকায় হয়েছে, যিনি ভারতীয় ভাবনার থেকে এত দূরে থেকেছেন, উনি কেমন করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এমন মনমুগ্ধকর ছবি আঁকতে পারেন। আমার তাঁর সঙ্গে দীর্ঘক্ষন কথা হয়েছিল, আমি আপনাদের তারই কিছু অংশ শোনাতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী : যদুরানীজি, হরে কৃষ্ণ! আমি ভক্তি আর্ট নিয়ে কিছু পড়াশোনা করেছি, কিন্তু আপনি আমাদের শ্রোতাদের এ বিষয়ে আরো কিছু বলুন। এই বিষয়ে আপনার আগ্রহ এবং আবেগ দারুন।
যদুরানীজি : ভক্তি আর্ট নিয়ে একটি নিবন্ধ রয়েছে যেটা ব্যাখ্যা করে যে এই শিল্প মন বা কল্পনা শক্তি থেকে উদ্ভূত হয় না বরং প্রাচীন বৈদিক শাস্ত্র ব্রহ্ম সংহিতা থেকে এর উৎপত্তি। 'ওয়েং ওঁকারায় পতিতং স্কিলতং সিকদং', বৃন্দাবনের গোঁসাই এর কথা, স্বয়ং ভগবান ব্রহ্মাও বলেছেন। "ঈশ্বর: পরমঃ, কৃষ্ণ ঃ, সচ্চিদানন্দ বিগ্রহঃ"। তিনি কিভাবে বাঁশি ধারণ করেন, কিভাবে তার এক অনুভূতি অন্য অনুভূতির সঙ্গে মিলে যায় তাই শ্রীমদ্ভগবত গীতার কথা '' বর্হাপিন্ড নটবরবপু কর্নায়ও, কর্ণিকারং'', তিনি একটি পদ্ম ফুল তাঁর কানে দেন, তার পদ্ম পায়ের ছাপ বৃন্দাবনের মাটিতে থাকে, গোরুর পালের মাধ্যমে তাঁর গৌরবের কথা ছড়িয়ে পরে, তাঁর বাঁশি সকল ভাগ্যবান মানুষের হৃদয় এবং মস্তিষ্ককে আকৃষ্ট করে।
কাজেই সবকিছুই প্রাচীন বৈদিক শাস্ত্র থেকে গৃহীত এবং এই শাস্ত্র গুলির শক্তি হলো অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা সম্পন্ন খাঁটি ভক্ত সাধকদের শক্তি। এই সাধনাকে তারা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন এবং তার জন্যই তা রূপান্তরে সক্ষম। এখানে আমার নিজস্ব শক্তি কিছুই নেই।
প্রধানমন্ত্রী : যদুরানী জি, আপনার জন্য আমার একটা অন্য ধরনের প্রশ্ন আছে। আপনি দীর্ঘদিন ধরে ভারতবর্ষের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। ১৯৬৬ থেকে একভাবে, এবং ১৯৭৬ থেকে প্রত্যক্ষভাবে। আপনি দয়া করে আমাকে বলবেন, ভারত বর্ষ আপনার কাছে কী অর্থ বহন করে?
যদুরানীজি: প্রধানমন্ত্রী জি আমার কাছে ভারতবর্ষই সব। কয়েকদিন আগে আমি মাননীয় রাষ্ট্রপতি জিকে বলছিলাম যে ভারত প্রযুক্তিগতভাবে এত উন্নতি করেছে এবং পাশ্চাত্যের অনুসরণে টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, আইফোন, বড় বড় বিল্ডিং ও অন্যান্য বহু সুযোগ-সুবিধা ও হচ্ছে, কিন্তু কি জানেন ওটা ভারতের আসল গৌরব নয় । ভারতকে যা গৌরবান্বিত করে তা হলো স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ অবতার রূপে এখানে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং অন্যান্য সকল অবতারেরা আবির্ভূত হয়েছিলেন। দেবাদিদেব মহাদেব, প্রভু রাম এখানে আবির্ভূত হয়েছিলেন । সব পবিত্র নদী গুলি এখানে অবস্থিত। বৈষ্ণব সংস্কৃতির সব পূণ্য স্থানগুলি এখানে রয়েছে। তাই ভারত বিশেষ করে বৃন্দাবন এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এটি সকল বৈকুণ্ঠ গ্রহগুলির উৎস । বৃন্দাবন এটি দ্বারিকার উৎস, সমগ্র জড়বস্তু সৃষ্টির উৎস। তাই আমি ভারতকে ভালবাসি।
প্রধানমন্ত্রী: ধন্যবাদ যদুরানী জি, হরেকৃষ্ণ।
বন্ধুরা বিশ্বের মানুষ যখন আজ ভারতীয় অধ্যাত্ম ও দর্শনের বিষয়ে এতকিছু চিন্তা করেন তখন আমাদেরও দায়িত্ব আমরা আমাদের এই মহান ঐতিহ্য কে এগিয়ে নিয়ে যাই। যা সেকেলে তাকে ত্যাগ করতেই হবে, কিন্তু যা কালজয়ী তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। আসুন, আমরা আমাদের পালা-পার্বণ গুলি উদযাপন করি তাদের পেছনের বৈজ্ঞানিক ভাবনা ও অর্থকে বুঝি। শুধু এটুকুই নয় প্রতিটি পার্বনেই কোন না কোন বার্তা রয়েছে, কোনো না কোনো সংস্কার রয়েছে। আমাদের সেটাও জানতে হবে, যাপন করতে হবে এবং অনাগত প্রজন্মদের জন্য উত্তরাধিকার রূপে এগিয়েও নিয়ে যেতে হবে। আমি আরো একবার সকল দেশবাসীকে জন্মাষ্টমীর অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এই করোনাকালে স্বচ্ছতা বিষয়ে আমার যতটা বলা উচিত ছিল হয়তো তাতে কিছুটা খামতি রয়ে গিয়েছিলো। আমিও মনে করি স্বচ্ছতা অভিযানে আমাদের একটুও শিথিলতা দেখানো উচিত নয়। রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য সবার প্রচেষ্টা কিভাবে সবার উন্নতি সাধন করে, তার উদাহরণ আমাদের প্রেরনা যোগায় এবং কিছু করার জন্য এক নতুন উদ্যমে ভরে তোলে, নতুন বিশ্বাসে ভরপুর করে তোলে। আমাদের সংকল্পে প্রাণ সঞ্চার করে। আমরা এটা ভালভাবেই জানি যে স্বচ্ছ ভারত অভিযানের প্রসঙ্গ যখনই আসে ইন্দোরের নাম আসবেই আসবে, কারণ ইন্দোর স্বচ্ছতা বিষয়ে নিজের একটা বিশেষ পরিচিতি তৈরি করেছে এবং ইন্দোরের নাগরিকরা এজন্য অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য। আমাদের এই ইন্দোর অনেক বছর ধরেই স্বচ্ছ ভারত Ranking এ এক নম্বরে রয়েছে। এখন ইন্দোরের নাগরিকরা স্বচ্ছ ভারতের এই Ranking এ সন্তুষ্ট হয়ে বসে থাকতে রাজি নন। তারা এগিয়ে যেতে চান, নতুন কিছু করতে চান। তারা মনস্থির করে ফেলেছেন এবং ওয়াটার প্লাস সিটি তৈরি করার জন্য জান-প্রাণ দিয়ে কাজ করছেন। ওয়াটার প্লাস সিটি হল এমন শহর যেখানে ট্রিটমেন্ট ছাড়া কোন পয়ঃনিষ্কাসী জল কোন সার্বজনীন জলস্রোতে ফেলা হয় না। এখানকার নাগরিকরা নিজেরা এগিয়ে এসে নিজেদের নর্দমাগুলিকে সিউয়েজ লাইন এর সঙ্গে যুক্ত করেছেন। স্বচ্ছতা অভিযানও চালিয়েছেন আবার এর ফলে সরস্বতী ও কাহ্ন নদীতে পড়া নোংরা জল অনেক কমে গিয়েছে এবং পরিস্থিতির উন্নতি দেখা যাচ্ছে।
আজ যখন আমাদের দেশ আজাদী কা অমৃত মহোৎসব উদযাপন করছে তখন আমাদের এটা মনে রাখতে হবে যে স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সংকল্পকে আমরা কখনোই দুর্বল হতে দেবো না। আমাদের দেশে যত বেশি শহর ওয়াটার প্লাস সিটি হবে ততই স্বচ্ছতাও বাড়বে, আমাদের নদীগুলিও পরিষ্কার হবে এবং জল সংরক্ষণের এক মানবিক দায়িত্ব পালনের কাজও হবে।
বন্ধুরা, আমার সামনে একটি দৃষ্টান্ত বিহারের মধুবনী থেকে এসেছে । মধুবনীতে ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও সেখানকার স্থানীয় কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র একযোগে একটি ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন এর লাভ কৃষকরা তো পাচ্ছেনই, এতে স্বচ্ছ ভারত অভিযান নতুন শক্তি পাচ্ছে । বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উদ্যোগের নাম হল "সুক্ষেত মডেল"। সুক্ষেত মডেলের উদ্দেশ্য হলো গ্রামে দূষণ কমানো। এর মাধ্যমে গ্রামের কৃষকদের থেকে গোবর এবং ক্ষেত ও ঘরবাড়ি থেকে পাওয়া অন্যান্য বর্জ্য একত্রিত করা হয়, এবং পরিবর্তে গ্রামবাসীদের রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের জন্য অর্থ প্রদান করা হয়। যে বর্জ্য গ্রাম থেকে একত্রিত হয় তা দিয়ে ।
ভারমি কম্পোস্ট বানানোর কাজও হচ্ছে। অর্থাৎ সুখেত মডেলটির ৪টে লাভ তো সহজেই চোখে পড়ছে। প্রথমত গ্রামগুলির দূষণ থেকে মুক্তি, দ্বিতীয়ত গ্রামগুলির আবর্জনার থেকে মুক্তি, তৃতীয়ত গ্রামের মানুষদের রান্নাঘরের গ্যাস সিলিন্ডারের জন্য অর্থ সংস্থান, এবং চতুর্থত গ্রামের কৃষকদের জন্য জৈবিক সারের ব্যবস্থা। আপনারা ভাবুন, এই ধরণের প্রচেষ্টা আমাদের গ্রামগুলির শক্তি কতটা বাড়িয়ে দিতে পারে? এটাই তো আত্মনির্ভরতার বিষয়-বস্তু। আমি দেশের প্রত্যেক পঞ্চায়েত কে বলব তাঁদের নিজেদের এলাকাগুলিতেও এরকম কিছু করার কথা তাঁরা যেন নিশ্চই ভাবেন। এবং বন্ধুরা, আমরা যখন একটা লক্ষ্য নিয়ে বেরিয়ে পড়ি তখন ফল পাওয়া নিশ্চিত হয়ে যায়।
এই যেমন আমাদের তামিল নাড়ুর শিবগঙ্গা জেলার কাঞ্জিরঙ্গাল পঞ্চায়েতের কথাই ধরুন। দেখুন এই ছোট্ট পঞ্চায়েতটি কি করেছে, এখানেও আপনারা ওয়েস্ট থেকে ওয়েলথ-এর আরেকটি মডেল দেখতে পাবেন। এখানকার গ্রাম পঞ্চায়েত স্থানীয় লোকেদের সঙ্গে মিলিত হয়ে আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করার একটি স্থানীয় প্রকল্প নিজেদের গ্রামে শুরু করেছে। পুরো গ্রামের আবর্জনা একত্রিত করা হয়, বিদ্যুৎ তৈরি হয় এবং বেঁচে যাওয়া অবশিষ্টাংশ কীটনাশক হিসেবে বিক্রিও করা হয়। গ্রামের এই পাওয়ার প্লান্ট প্রতিদিন দু টন আবর্জনা্র বাতিল করার ক্ষমতা রাখে।
এর থেকে তৈরি বিদ্যুৎ গ্রামের পথবাতি জ্বালাতে এবং অন্য প্রয়োজনে ব্যবহার হচ্ছে। এর ফলে পঞ্চায়েতের টাকা তো বাঁচছেই, উপরন্তু সেই পয়সা অন্য উন্নয়নের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এখন আপনারা আমায় বলুন, তামিল নাড়ুর শিবগঙ্গা জেলার একটা ছোট্ট পঞ্চায়েত আমাদের প্রত্যেক দেশবাসীকে কিছু করার প্রেরণা দিচ্ছে কি দিচ্ছে না? এঁরা চমৎকার কাজ করেছেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, মন কি বাত এখন আর ভারতের সীমান্তের মধ্যে সীমিত নেই । পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মন কি বাত নিয়ে কথা হচ্ছে। এবং বিদেশের মাটিতে বসবাসকারী প্রচুর ভারতীয় সম্প্রদায়ের মানুষ আমাকে বহু নতুন তথ্য দিয়ে থাকেন। এবং মন কি বাতে বিদেশে যেসব আশ্চর্য কার্যকলাপ চলছে সেগুলো আপনাদের সঙ্গে মাঝে-মাঝে শেয়ার করতে আমারও ভাল লাগে। আজকেও আমি আপনাদের সঙ্গে এরকম কিছু মানুষের পরিচয় করাব, কিন্তু তার আগে আমি আপনাদের একটা অডিও শোনাতে চাই। মন দিয়ে শুনুন।
বন্ধুরা, ভাষাটা তো আপনারা নিশ্চয় চিনে ফেলেছেন। এখানে রেডিওতে সংস্কৃতে কথা হচ্ছে এবং যিনি বলছেন তিনি আরজে গঙ্গা। আরজে গঙ্গা গুজরাতের রেডিও জকিস গ্রুপের একজন সদস্যা। ওঁর আরও বেশ কিছু সঙ্গী রয়েছেন যেমন আরজে নীলম, আরজে গুরু ও আরজে হেতল। এঁরা সবাই মিলে গুজরাতের কেবাড়িয়াতে বর্তমান সময়ে সংস্কৃতের মান উন্নত করার চেষ্টা করছেন। এবং আপনারা জানেন আমি যে জায়গার কথা বলছি সেই কেবাড়িয়াতেই পৃথিবীর সর্ববৃহৎ স্ট্যাচু, আমাদের দেশের গর্ব স্ট্যাচু অফ ইউনিটি, রয়েছে। আর এঁরা এমন সব রেডিও জকিস যারা এক সঙ্গে অনেকগুলি ভূমিকা পালন করেন। এঁরা গাইড হিসেবেও কাজ করেন, এবং তার সঙ্গে কমিউনিটি রেডিও ইনিশিয়েটিভ, রেডিও ইউনিটি ৯০ এফএম, তার সঞ্চালনাও করেন। এই আরজেরা তাঁদের শ্রোতাদের সঙ্গে সংস্কৃতে কথা বলেন, তাঁদের সংস্কৃতে খবরাখবর দেন।
বন্ধুরা, আমাদের এখানে সংস্কৃত সম্বন্ধে বলা হয়েছে-
অমৃতম সংস্কৃতম মিত্র, সরসম সরলম বচঃ
একতা মুলকম রাষ্ট্রে, জ্ঞান বিজ্ঞান পোষকম।
অর্থাৎ আমাদের সংস্কৃত ভাষা সরস-ও, সরল-ও। সংস্কৃত নিজের চিন্তাভাবনা, নিজের সাহিত্যের মাধ্যমে জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং রাষ্ট্রের একতা বিকশিত করে ও মজবুত করে।
সংস্কৃত সাহিত্যে মানবতা ও জ্ঞানের এমন এক দিব্যদর্শন রয়েছে যা যে কাউকে আকৃষ্ট করতে পারে। সম্প্রতি আমি এমন বেশ কিছু মানুষের ব্যপারে জানতে পেরেছি যারা বিদেশে সংস্কৃত পড়ানোর প্রেরণাদায়ক কাজ করছেন। এরকমি একজন ব্যক্তি শ্রী রাটগার কারটেনহোস্ট, যিনি আয়ারল্যান্ডের প্রখ্যাত সংস্কৃত পন্ডিত ও শিক্ষক। তিনি সেখানে বাচ্চাদের সংস্কৃত পড়ান। এদিকে আমাদের পূর্বে ভারত এবং থাইল্যান্ডের মাঝে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক মজবুত করার ক্ষেত্রেও সংস্কৃত ভাষার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ডঃ চিরায়ত প্রপন্ডবিদ্যা ও ডঃ কুসুম রক্ষামণী, এই দুজন থাইল্যান্ডে সংস্কৃত ভাষার প্রচার প্রসারে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। ওঁরা থাই এবং সংস্কৃত ভাষায় তুলনামূলক সাহিত্যও রচনা করেছেন। এরকম আরেকজন প্রফেসর আছেন, শ্রী বরিস জাখরিন, রাশিয়ার মস্কো স্টেট ইউনিভারসিটিতে ইনি সংস্কৃত পড়ান, তিনি বহু গবেষণপত্র এবং বই প্রকাশ করেছেন। তিনি বহু বই সংস্কৃত থেকে রুশ ভাষায় অনুবাদও করেছেন। ঠিক সেরকমই সিডনি সংস্কৃত স্কুল, অস্ট্রেলিয়ার সেই মুখ্য প্রতিষ্ঠানগুলির অন্যতম যেখানে শিক্ষার্থীদের সংস্কৃত পড়ান হয়। এই স্কুলটি বাচ্চাদের জন্য সংস্কৃত গ্রামার ক্যাম্প, সংস্কৃত নাটক ও সংস্কৃত দিবসের মত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বন্ধুরা সম্প্রতি যে সব প্রচেষ্টা হয়েছে তাতে সংস্কৃত নিয়ে একটি নতুন সচেতনতাবোধ তৈরি হয়েছে। এখন সময় এসেছে এই পথে আমাদের আরও অগ্রসর হওয়ার। আমাদের ঐতিহ্যকে লালন করা, তার সুরক্ষা করা, নতুন প্রজন্মের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া আমাদের সবার কর্তব্য এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের তার ওপর অধিকারও রয়েছে। এখন সময় এসেছে এই সব কাজের জন্যও সবার প্রচেষ্টা আরও বাড়ুক।
বন্ধুরা যদি আপনি এই ধরনের প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত এমন কোন মানুষকে জানেন, এমন কোন খবর আপনাদের কাছে থাকে তাহলে দয়া করে #Celebrating Sanskrit -এর সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়াতে ওনার সম্পর্কে যা জানেন তা অবশ্যই জানান। আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছুদিনের মধ্যে বিশ্বকর্মা জয়ন্তী আসছে । ভগবান বিশ্বকর্মাকে আমাদের এখানে সৃজনশীলতার প্রতীক হিসেবে মানা হয়। যে ব্যাক্তি নিজের দক্ষতায় কোন জিনিসের নির্মাণ করেন, সৃষ্টি করেন, সেটা সেলাই-ফোঁড়াই হোক, সফটওয়্যার হোক কিংবা কৃত্রিম উপগ্রহ, এ সবই ভগবান বিশ্বকর্মার মহিমা। পৃথিবীতে যতই দক্ষতার পরিচয় আজ নতুনভাবে হোক না কেন কিন্তু আমাদের ঋষিরা হাজার বছর ধরে স্কিল আর স্কেল সম্পর্কে বলে দিয়েছেন। ওনারাও স্কিলকে, কৌশলকে আস্থার সঙ্গে জুড়ে আমাদের জীবন দর্শনের অঙ্গ করে দিয়েছেন। আমাদের কিছু বৈদিক সুক্তও ভগবান বিশ্বকর্মাকে সমর্পণ করা হয়েছে। সৃষ্টির যত বড় রচনাই হোক, যত নতুন আর বড় কাজ হয়েছে আমাদের শাস্ত্রে তার কৃতিত্ব ভগবান বিশ্বকর্মাকেই দেওয়া হয়েছে। এটা একদিক দিয়ে এই ধারণার প্রতীক যে সংসারে যা কিছু উন্নয়ন আর উদ্ভাবন হচ্ছে তা দক্ষতার জন্যই হচ্ছে। ভগবান বিশ্বকর্মা জয়ন্তী আর তার পুজোর পেছনে এটাই কারণ। আমাদের শাস্ত্রে কথিত আছে বিশ্বস্য কৃতে য়স্য কর্মব্যাপারঃ সঃ বিশ্বকর্মা। অর্থাৎ যিনি সৃষ্টি আর নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত সব কাজ করেন তিনিই বিশ্বকর্মা। আমাদের শাস্ত্র মতে নির্মাণ আর সৃজনের সঙ্গে যুক্ত যত দক্ষ ও প্রতিভাবান লোকজন আছেন তারা ভগবান বিশ্বকর্মার উত্তরাধিকারী। ওদের ছাড়া আমরা আমাদের জীবন কল্পনাও করতে পারি না। আপনারা ভেবে দেখুন আপনার ঘরে বিদ্যুতের কোনো সমস্যা হল আপনি কোন ইলেকট্রিশিয়ান পেলেন না, তাহলে কি হবে? আপনার সামনে কত বড় সমস্যা আসবে? আমাদের জীবন এমনই সব স্কিলড লোকদের জন্যই চলছে। আপনি আপনার চারিদিকে দেখুন লোহার কাজ করছেন যারা, মাটির বাসন তৈরি করছেন যারা, কাঠের জিনিস নির্মাণ করছেন যারা, বিদ্যুতের কাজ করছেন যারা, ঘরে রং করছেন যারা, সাফাই কর্মী যারা , মোবাইল ল্যাপটপ সারাচ্ছেন যারা, সবাইই তাদের দক্ষতার জন্যই পরিচিত। আধুনিক রুপে এরাও বিশ্বকর্মা। কিন্তু বন্ধুরা এর আরেকটা দিকও আছে যা মাঝে মাঝে আমাদের চিন্তার কারণ হয়ে ওঠে। যে দেশে, যার সংস্কৃতিতে, পরম্পরায় চিন্তায় কৌশলে দক্ষ মানব সম্পদকে ভগবান বিশ্বকর্মার সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে, সেখানে পরিস্থিতি কিভাবে বদলে গেছে। একসময় আমাদের পারিবারিক জীবন। সামাজিক জীবন, রাষ্ট্র জীবনের ওপর দক্ষতার খুব বড় প্রভাব ছিল। কিন্তু দাসত্বের লম্বা কালখণ্ড পার করে এই ধরনের সম্মান দেওয়ার ভাবনা ধীরে ধীরে ভুলে গিয়েছি আমরা। আমাদের চিন্তা ভাবনাও এমন হয়েছে যে এই ধরনের কাজকে হীন চোখে দেখা হয়। আর আজ দেখুন গোটা পৃথিবী সবচেয়ে বেশি প্রতিভা ও দক্ষতার ওপরেই চলছে ।
ভগবান বিশ্বকর্মার পূজা শুধুমাত্র উপাচারের মাধ্যমেই সম্পন্ন হবেনা। আমাদের প্রতিভা কে সম্মান দিতে হবে, প্রতিভাবান হয়ে ওঠার জন্য পরিশ্রম করতে হবে। প্রতিভাবান হওয়ার জন্য গর্ব বোধ করতে হবে। যখন আমরা কিছু না কিছু নতুন করবো, কিছু উদ্ভাবন করবো, এমন কিছু সৃষ্টি করবো যাতে সমাজের উপকার হয় , মানুষের জীবন সহজ হয়, তখনই আমাদের বিশ্বকর্মা পূজা সার্থক হবে। আজ সারা দুনিয়াতে দক্ষ ব্যক্তি দের জন্যে সুযোগের অভাব নেই। দক্ষতাকে কাজে লাগিয়েই প্রগতির একাধিক পথ খুলে যাচ্ছে আজ। তাহলে আসুন, এই বার আমরা ভগবান বিশ্বকর্মার পূজায় ভক্তির পাশাপাশি তাঁর দেওয়া বার্তাকেও নিজেদের সংকল্প হিসেবে গ্রহণ করি। আমাদের পূজার ধরণ এমনই হওয়া উচিত যে, আমরা দক্ষতার গুরুত্ব বুঝব। এবং দক্ষব্যক্তি দের, তাঁরা যে কাজই করুন না কেন, তাঁদের সম্পূর্ণভাবে সম্মান করবো।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এখন স্বাধীনতার ৭৫ বছর চলছে। এই বছরে আমাদের প্রতিদিন নতুন সংকল্প নিতে হবে, নতুন কিছু ভাবতে হবে, আর নতুন কিছু করার উদ্যম আরো বাড়াতে হবে। যখন আমাদের ভারত স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্ণ করবে, তখন আমাদের এই উদ্যমই তার সাফল্যের ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে সবার নজর কাড়বে। এই কারণেই আমরা কিছুতেই এই সুযোগ হাতছাড়া করতে পারিনা। আমাদের যত বেশি সম্ভব এতে যোগদান করতে হবে। কিন্তু এই প্রচেষ্টাগুলির মাঝেই আমাদের একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে - দাওয়াই ভি, কড়াই ভি। অর্থাৎ, টিকাকরণ ও, সতর্কতাও। দেশে ৬২ কোটিরও বেশি টিকাকারণ সম্পন্ন হয়েছে। তা সত্ত্বেও আমাদের সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে। আর হ্যাঁ, প্রত্যেকবারের মত, যখনই আপনি নতুন কিছু করবেন, নতুন ভাববেন, তখন অবশ্যই তাতে আমাকে সামিল করবেন। আমি আপনাদের চিঠি এবং মেসেজের অপেক্ষায় থাকবো। এই কামনার সঙ্গেই আপনাদের সবাইকে জানাই আগামী উৎসবের অনেক অভিনন্দন। অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার।
দু' দিন আগের কিছু অদ্ভূত ছবি, কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত এখনও ভাসছে আমার চোখের সামনে। তাই এবারের 'মন কি বাত' সেইসব মুহূর্ত দিয়েই শুরু করব। টোকিও অলিম্পিক্সে ভারতের খেলোয়াড়দের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা নিয়ে চলতে দেখে শুধু আমিই নয়, গোটা দেশ রোমাঞ্চিত হয়ে উঠেছে। পুরো দেশ যেন এক হয়ে নিজেদের এই যোদ্ধাদের বলছে,
বিজয়ী ভব, বিজয়ী ভব!
যখন এই সব খেলোয়াড়রা ভারত থেকে রওনা হয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে গল্প করার, তাঁদের সম্পর্কে জানার আর দেশকে জানানোর সুযোগ পেয়েছিলাম আমি। এই সব খেলোয়াড়রা জীবনের অনেক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে এখানে পৌঁছেছেন। আজ তাঁদের সঙ্গে রয়েছে আপনাদের সমর্থন ও ভালোবাসার শক্তি। এই জন্য, আসুন সবাই একসঙ্গে মিলে আমাদের সব খেলোয়াড়দের শুভেচ্ছা জানাই, তাঁদের মনোবল বাড়াই। সোশ্যাল মিডিয়াতে অলিম্পিক্সের খেলোয়াড়দের সমর্থনের জন্য আমাদের ভিক্টরি পাঞ্চ ক্যাম্পেন এখন শুরু হয়ে গিয়েছে। আপনিও নিজের টিমের সঙ্গে নিজের ভিক্টরি পাঞ্চ শেয়ার করুন, ইণ্ডিয়ার জন্য চীয়ার করুন।
বন্ধুরা, যিনি দেশের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করেন, সেই পতাকার সম্মানে, আবেগে পূর্ণ হওয়া তাঁর পক্ষে স্বাভাবিক। দেশপ্রেমের এই আবেগ আমাদের একত্রিত করে রাখে। আগামীকাল অর্থাৎ ২৬শে জুলাই 'কারগিল বিজয় দিবস'ও বটে। কারগিলের যুদ্ধ, ভারতের সৈনিকদের শৌর্য আর সংযমের এমন প্রতীক যা সারা বিশ্ব দেখেছে। এই বার এই গৌরবশালী দিবসও 'অমৃত মহোৎসবের' মধ্যে পালিত হবে। এই জন্য এটা আরও বিশিষ্ট হয়ে উঠছে। আমি চাইব যে আপনারা কারগিলের রোমাঞ্চকর কাহিনী অবশ্যই পড়ুন, কারগিলের বীরদের আমরা সবাই প্রণাম জানাই।
বন্ধুরা, এই বার ১৫ই আগস্ট দেশ তার স্বাধীনতার পঁচাত্তরতম বর্ষে প্রবেশ করছে। এটা আমাদের পরম সৌভাগ্য, যে স্বাধীনতার জন্য যুগ-যুগ ধরে দেশ অপেক্ষা করেছে তার পঁচাত্তর বর্ষের সাক্ষী হচ্ছি আমরা। আপনাদের মনে থাকবে, স্বাধীনতার পঁচাত্তরতম বর্ষ উদযাপনের জন্য, ১২ই মার্চ বাপুর সবরমতী আশ্রম থেকে ‘অমৃত মহোৎসবের’ সূচনা হয়েছিল। এই দিনেই বাপুর ডাণ্ডি যাত্রাকেও পুনরুর্জীবিত করা হয়েছিল। সেই সময় জম্মু-কাশ্মীর থেকে পুদুচ্চেরি অবধি, গুজরাত থেকে উত্তর - পূর্বাঞ্চল অবধি, দেশ জুড়ে অমৃত মহোৎসবের সঙ্গে যুক্ত কর্মসূচী পালিত হচ্ছে। অনেক এমন ঘটনা, এমন স্বাধীনতা সেনানী, যাঁদের অবদান তো বিরাট কিন্তু সেসবের চর্চা করা যায় নি – আজ মানুষ তাঁদের ব্যাপারেও জানতে পারছে। যেমন, মোইরাং ডে-র কথাই ধরুন। মণিপুরের ছোট একটা গ্রাম মোইরাং, কোনও এক সময় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ বাহিনী অর্থাৎ আই-এন-এর এক অন্যতম প্রধান ঠিকানা ছিল। এখানে, স্বাধীনতা লাভের আগেই, আইএনএর কর্নেল শৌকত মালিকজী পতাকা উত্তোলন করেন। অমৃত মহোৎসব চলাকালীন সেই মোইরাং-এ গত ১৪ই এপ্রিল আরেকবার ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। এমন কত স্বাধীনতা সেনানী আর মহাপুরুষ আছেন, অমৃত মহোৎসবে দেশ যাঁদের স্মরণ করছে। সরকার আর সামাজিক নানা সংগঠনের তরফেও এর সঙ্গে যুক্ত নানাধরণের কর্মসূচী আয়োজিত হচ্ছে। এমনই এক আয়োজন এবার ১৫ই আগস্টে হতে চলেছে, এটা জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে যুক্ত একটা প্রয়াস। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়েছে সেদিন যাতে প্রচুর সংখ্যক ভারতবাসী এক হয়ে জাতীয় সঙ্গীত গান। এর জন্য একটা ওয়েবসাইটও বানানো হয়েছে – রাষ্ট্রগান-ডট-ইন। এই ওয়েবসাইটের সাহায্যে আপনি জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে সেটা রেকর্ড করতে পারবেন, এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন। আমি আশা করি, আপনারা এই অভিনব উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হবেন। এইভাবে অনেক অভিযান, অনেক প্রয়াস, আপনারা আগামী দিনে দেখতে পাবেন। ‘অমৃত মহোৎসব’ কোনও সরকারের কর্মসূচী নয়, কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচী নয়, এটা কোটি-কোটি ভারতবাসীর কর্মসূচী। প্রত্যেক স্বাধীন আর কৃতজ্ঞ ভারতীয়র নিজেদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি প্রণাম নিবেদনে আর এই মহোৎসবের মূল ভাবনার বিস্তার তো বিশাল – এই ভাবনা হল, নিজেদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পথে চলার, তাঁদের স্বপ্নের দেশ নির্মাণের। যেমনভাবে দেশের স্বাধীনতার জন্য উদ্বেলিত সকলে স্বাধীনতার লক্ষ্যে একজোট হয়েছিলেন তেমনভাবেই আমাদেরও দেশের বিকাশের লক্ষ্যে একজোট হতে হবে। আমাদের দেশের জন্য বাঁচতে হবে, দেশের জন্য কাজ করতে হবে, আর এতে ছোট-ছোট উদ্যোগও বড় ফলাফল এনে দেয়। দৈনন্দিন কাজ করার মধ্যেও আমরা রাষ্ট্র নির্মাণ করতে পারি, যেমন ভোকাল ফর লোকাল। আমাদের দেশের স্থানীয় উদ্যোগপতি, সব ধরণের শিল্পী, তন্তুবায়দের সমর্থন করা আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি হওয়া উচিত। আগামী ৭ই আগস্ট ‘ন্যাশনাল হ্যাণ্ডলুম ডে’ এমন এক সুযোগ যখন আমরা সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই কাজ করতে পারি। ‘ন্যাশনাল হ্যাণ্ডলুম ডে’-র সঙ্গে অনেক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট যুক্ত হয়ে আছে। ১৯০৫ সালের এই দিনে স্বদেশী আন্দোলন শুরু হয়েছিল।
বন্ধুরা, আমাদের দেশের গ্রামীণ আর আদিবাসী এলাকায় তাঁতশিল্প রোজগারের একটা বড় পথ। এটা এমন ক্ষেত্র যার সঙ্গে লক্ষ-লক্ষ মহিলা, লক্ষ-লক্ষ বুননশিল্পী, লক্ষ-লক্ষ শিল্পী যুক্ত আছেন। আপনাদের ছোট-ছোট প্রয়াস তাঁতশিল্পীদের মধ্যে এক নতুন উৎসাহের সঞ্চার করবে। আপনারা নিজেরা কিছু-না-কিছু কিনুন, আর নিজেদের কেনার ব্যাপারে অন্যদেরও জানান, আর যখন আমরা স্বাধীনতার পঁচাত্তরতম বর্ষ পালন করছি, তখন তো এইটুকু করা আমাদের দায়িত্ব ভাই! আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে ২০১৪ সালের পরেই ‘মন কি বাতে’ আমরা প্রায়ই খাদি নিয়ে কথা বলি। এটা আপনাদের প্রচেষ্টারই ফল যে আজ দেশে খাদির বিক্রি কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। কেউ কি ভাবতে পারতেন যে খাদির কোনও দোকান থেকে এক দিনে এক কোটি টাকারও বেশি বিক্রি হবে! কিন্তু আপনারা এটাও করে দেখিয়েছেন। আপনারা যখনই কোথাও খাদির তৈরি কিছু কেনেন তখন এর লাভ আমাদের গরীব তন্তুবায় ভাইবোনেদেরই হয়। এইজন্য, খাদি কেনা এক দিক থেকে জনসেবা এবং দেশসেবাও বটে। আমার আপনাদের কাছে অনুরোধ যে আমার প্রিয় ভাইবোন, আপনারা, গ্রামীণ এলাকায় তৈরি হওয়া তাঁত শিল্পের সামগ্রী অবশ্যই কিনুন এবং হ্যাশট্যাগ মাই-হ্যাণ্ডলুম-মাই-প্রাইডের সঙ্গে শেয়ার করুন।
বন্ধুরা, কথা যখন স্বাধীনতা আন্দোলন আর খাদি নিয়ে হচ্ছে তখন পূজনীয় বাপুকে স্মরণ করা স্বাভাবিক – যেমন বাপুর নেতৃত্বে ‘ভারত ছাড়ো আন্দোলন’ চলেছিল তেমনই আজ প্রত্যেক ভারতবাসীকে ‘ভারত জোড়ো আন্দোলনের’ নেতৃত্ব দিতে হবে। এটা আমাদের কর্তব্য যে আমরা নিজেদের কাজ এমনভাবে করি যে তা বিবিধতার মাঝে আমাদের ভারতকে জোড়ার কাজে সহায়ক হয়। তাহলে আসুন, আমরা এই ‘অমৃত মহোৎসবে’, এই অমৃত সঙ্কল্প নিই, যে দেশই আমাদের সবথেকে বড় আস্থা, সবথেকে প্রধান অগ্রাধিকার হয়ে থাকবে। ‘নেশন ফার্স্ট, অলওয়েজ ফার্স্ট’ -এর মন্ত্র নিয়েই আমাদের এগিয়ে চলতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ আমি 'মন কি বাত' শুনছে, এ ধরণের যুব বন্ধুদের বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এই কিছুদিন আগেই, মাই-গভের তরফ থেকে 'মন কি বাত' এর শ্রোতাদের নিয়ে একটা সমীক্ষা করা হয়েছিল। এই সমীক্ষাতে দেখা গিয়েছে যে 'মন কি বাত' এর জন্য বার্তা এবং পরামর্শ কারা প্রধানত পাঠাচ্ছে। সমীক্ষার পরে জানা গিয়েছে যে বার্তা এবং পরামর্শ প্রেরকদের প্রায় ৭৫% মানুষ, ৩৫ বছর বা তারো কম বয়সী, অর্থাৎ ভারতের যুবশক্তির পরামর্শ 'মন কি বাত' কে দিশা দেখাচ্ছে। আমি মনে করি এ খুবই ভালো লক্ষণ। 'মন কি বাত' এমন একটি মাধ্যম যেখানে ইতিবাচক দিক রয়েছে - সংবেদনশীলতা রয়েছে। 'মন কি বাত' এ আমরা ইতিবাচক কথা বলি, এর বৈশিষ্টটা সঙ্ঘবদ্ধ। ইতিবাচক চিন্তা এবং পরামর্শের জন্য ভারতের যুবদের এই সক্রিয়তা আমায় আনন্দিত করেছে। আমি এই জন্য খুশি যে 'মন কি বাত' এর মাধ্যমে আমি যুবদের মন কে জানবার সুযোগ পেয়েছি।
বন্ধুরা, আপনাদের থেকে পাওয়া পরামর্শ 'মন কি বাত' এর আসল শক্তি। আপনাদের পরামর্শই 'মন কি বাত' এর মাধ্যমে ভারতের বৈচিত্র প্রকাশ করে, ভারতবাসীদের সেবা আর ত্যাগের সুগন্ধ চতুর্দিকে ছড়িয়ে দেয়, আমাদের পরিশ্রমী তরুণদের উদ্ভাবন সবার মনে প্রেরণা যোগায়। 'মন কি বাত' এ আপনারা নানান ভাবনা পাঠান। আমি সব বিষয়ে আলোচনা করে উঠতে পারি না, তবে তারমধ্যে বহু ভাবনাকে নির্দিষ্ট বিভাগে অবশ্যই পাঠিয়ে দি যাতে তার ওপর আরও কাজ করা যায়।
বন্ধুরা, আমি আপনাদের সাই প্রনীথজীর প্রচেষ্টা সম্পর্কে জানাতে চাই। সাই প্রনীথজী একজন অন্ধ্রপ্রদেশের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার । গতবছর তিনি লক্ষ্য করেন আবহাওয়ার খামখেয়ালীপনার জন্য ওখানকার কৃষকরা খুব ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। বহু বছর ধরে আবহবিদ্যা সম্পর্কে ওনার আগ্রহ ছিল। তাই তিনি তাঁর আগ্রহ আর নিজের মেধাকে কৃষকদের উন্নতির জন্য ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিলেন। এখন তিনি বিভিন্ন তথ্য সুত্র থেকে আবহাওয়ার তথ্য কেনেন, তার বিশ্লেষণ করেন আর স্থানীয় ভাষায় বিভিন্ন মাধ্যমের সাহায্যে কৃষকদের কাছে জরুরী তথ্য পৌঁছে দেন। আবহাওয়ার সর্বশেষ তথ্য ছাড়াও, প্রনীথজী ভিন্ন ভিন্ন জলবায়ুর পরিস্থিতিতে মানুষের কি করনীয় সেই পরামর্শও দেন। বিশেষত, বন্যা থেকে রক্ষা পাওয়া কিংবা ঝড় বা বজ্রপাতের সময় কিভাবে সুরক্ষিত থাকা যায় সেই বিষয়েও সবাইকে জানান।
বন্ধুরা, একদিকে এই তরুণ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এর প্রচেষ্টা মন ছুঁয়ে যায়, অন্যদিকে আমাদের এক বন্ধুর প্রযুক্তির ব্যবহার আপনাকে অবাক করে দেবে। এই বন্ধু উড়িষ্যার সম্বলপুর জেলার এক গ্রামের বাসিন্দা শ্রীমান ইসাক মুন্ডাজি। ইসাকজি একসময় দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন কিন্তু এখন তিনি একজন ইন্টারনেট সেন্সেশন হয়ে গিয়েছেন। নিজের ইউ টিউব চ্যানেল থেকে তিনি অনেক টাকা রোজগার করছেন। তিনি নিজের ভিডিওতে স্থানীয় রান্নার পদ, প্রচলিত রন্ধন পদ্ধতি, নিজের গ্রাম, নিজেদের জীবনশৈলী, পরিবার ও খাদ্যাভ্যাসকেই প্রধানত দেখান। একজন ইউ টিউবার হিসেবে তার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের মার্চ মাসে যখন তিনি উড়িষ্যার বিখ্যাত স্থানীয় পদ পখাল সম্পর্কিত একটা ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। সেই থেকে তিনি কয়েকশো ভিডিও পোস্ট করেছেন। তাঁর এই প্রচেষ্টা বহু কারণে অন্যদের থেকে ভিন্ন। বিশেষত তিনি শহুরে নাগরিকদের সেই জীবনযাত্রা দর্শনের সুযোগ করে দিয়েছেন যে সম্পর্কে তাদের খুব বেশি জানা ছিল না। ইসাক মুন্ডাজি সংস্কৃতি ও রান্নাবান্না দুটিকে সমানভাবে মিলিয়ে দিয়ে তা উদযাপন করছেন ও আমাদের সকলকে অনুপ্রাণিতও করছেন।
বন্ধুরা, যেহেতু আমরা প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করছি, তাই আমি একটা আকর্ষণীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই। আপনারা হয়তো সম্প্রতি পড়েছেন, দেখেছেন আইআইটি ম্যাড্রাসের এক প্রাক্তনীর নতুন উদ্যোগ সংস্থা একটি ত্রিমাত্রিক মুদ্রণে বাড়ি তৈরি করেছে। ত্রিমাত্রিক মুদ্রণের সাহায্যে বাড়ির নির্মাণ কিভাবে সম্ভব হলো? আসলে এই নতুন উদ্যোগ বা স্টার্ট আপে সবার প্রথমে ত্রিমাত্রিক মুদ্রণযন্ত্রে একটি থ্রি ডায়মেশনাল নকশা ঢোকান হয় এবং এক বিশেষ ধরনের কংক্রিটের সাহায্যে একটির উপর একটি স্তরে একটা ত্রিমাত্রিক কাঠামো তৈরি হয়ে যায়। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, দেশে এরকম অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। একটা সময় ছিল যখন ছোট ছোট নির্মাণের কাজে বহু বছর লেগে যেত। কিন্তু আজ প্রযুক্তির দরুন ভারতে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। কিছুকাল আগে আমরা বিশ্বের এইরকম উদ্ভাবন সংস্থাদের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য গ্লোবাল হাউজিং টেকনোলজি চ্যালেঞ্জ শুরু করেছিলাম। এটি দেশের মধ্যে একটি অনন্য প্রচেষ্টা, তাই আমরা এটিকে লাইট হাউস প্রোজেক্ট নাম দিয়েছি। বর্তমানে দেশের ছয়টি ভিন্ন জায়গায় লাইট হাউস প্রোজেক্টএর উপর দ্রুত গতিতে কাজ চলছে। এই লাইট হাউস প্রোজেক্ট এর মধ্যে আধুনিক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এতে নির্মাণ কাজে সময় কম লাগে। সেইসঙ্গে যে বাড়িগুলি তৈরি হয় তা অনেক বেশি মজবুত, সাশ্রয়কর ও আরামদায়ক। আমি সম্প্রতি ড্রোনের মাধ্যমে এই প্রকল্পগুলির বিশ্লেষণ করলাম এবং কাজের অগ্রগতিও সরাসরি দেখলাম।
ইন্দোরের প্রকল্পে এ ইট ও চুন বালির দেওয়ালের পরিবর্তে প্রি-ফেব্রিকেটেড স্যান্ডউইচ প্যানেল সিস্টেমের ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজকোটে লাইট হাইস ফরাসি প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করা হচ্ছে, যার মধ্যে সুড়ঙ্গের সাহায্যে মোনোলিথিক কংক্রিট নির্মাণ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। এই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি বাড়ি বিপর্যয় মোকাবিলা করতে অনেক বেশি সক্ষম হবে। চেন্নাইতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফিনল্যান্ডের প্রযুক্তি , প্রিকাস্ট কংক্রিট সিস্টেমের ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে বাড়ি দ্রুত তৈরি হবে, আর খরচাও কম হবে। রাঁচিতে তে জার্মানির ত্রিমাত্রিক নির্মাণ পদ্ধতিতে বাড়ি নির্মাণ করা হবে। এতে প্রতিটি ঘর আলাদা ভাবে তৈরি হবে, এরপর পুরো কাঠামোকে এমন ভাবে জোড়া লাগানো হবে যেমনভাবে ব্লক টয়কে জোড়া যায়। আগরতলায় নিউজিল্যান্ডের এর প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্টিলের কাঠামোর সঙ্গে বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে, যা বড় ভূমিকম্প সহ্য করতে পারবে। আবার লখনৌতে কানাডার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে প্লাস্টার ও রঙের প্রয়োজন পড়বে না এবং দ্রুত বাড়ি নির্মাণ করার জন্য আগের থেকে তৈরি দেওয়াল ব্যবহার করা হবে।
বন্ধুরা, দেশে এখন এই চেষ্টা করা হচ্ছে যে এটা প্রজেক্ট ইনকিউবেশন সেন্টার-এর মত কাজ করবে। এতে আমাদের প্ল্যানার্স, আর্কিটেক্টস, ইঞ্জিনিয়ার এবং ছাত্রছাত্রীরা নতুন প্রযুক্তি সম্বন্ধে জানতে পারবে এবং তার পরীক্ষানিরীক্ষাও করতে পারবে। আমি এই কথাগুলো বিশেষ করে আমাদের যুবক যুবতী বন্ধুদের উদ্দেশে বলছি যাতে আমাদের যুবক যুবতী বন্ধুরা রাষ্ট্রের কল্যাণ সাধনের জন্য প্রযুক্তির নতুন নতুন ক্ষেত্রে আরও উৎসাহ অনুভব করে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনারা ইংরেজিতে একটা কথা শুনেছেন 'টু লার্ন ইজ টু গ্রো' অর্থাৎ শেখার মাধ্যমে এগিয়ে চলা। যখন আমরা নতুন কিছু শিখি, তখন উন্নতির নতুন নতুন পথ নিজে থেকেই আমাদের জন্য উন্মুক্ত হয়। যখন কোথাও প্রথাগত থেকে আলাদা নতুন কিছু করার চেষ্টা হয়েছে মানবতার জন্য নতুন দরজা খুলে গেছে, এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। আর আপনারা দেখেছেন যখনই কোথাও নতুন কিছু হয়েছে তার ফলাফল প্রত্যেককে অভিভূত করে দিয়েছে। এখন যেমন, যদি আমি আপনাদের জিজ্ঞেস করি যে, এমন কোন রাজ্য আছে যা আপেলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত? নিশ্চিতভাবেই আপনাদের মনে সর্বপ্রথম হিমাচল প্রদেশ জম্মু-কাশ্মীর এবং উত্তরাখণ্ডের নাম আসবে। কিন্তু আমি যদি বলি এই লিস্টে আপনি মনিপুরকেও যোগ করুন, তাহলে আপনি নিশ্চয়ই অবাক হবেন। কিছু নতুন করার উদ্যমে উদ্বুদ্ধ যুবকবন্ধুরা মণিপুরে এই কাজটি করে দেখিয়েছেন। আজকাল মনিপুরের উখরুল জেলায় আপেলের চাষ জোর কদমে শুরু হয়েছে। এখানকার কৃষকরা নিজেদের বাগানে আপেল উৎপাদন করছেন। আপেল উৎপাদন করার জন্য এঁরা রীতিমতো হিমাচলে গিয়ে ট্রেনিংও নিয়েছেন। এঁদের মধ্যেই একজন টি.এস. রিংফামি ইয়োং। তিনি পেশায় একজন এরোনোটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। তিনি তাঁর স্ত্রী শ্রীমতি টি এস এঞ্জেল-এর সঙ্গে মিলে আপেলের উৎপাদন করেছেন। এভাবেই আভুংশী সিমরে অগাস্টিনাও নিজের বাগানে আপেলের চাষ করেছেন। আভুংশী দিল্লিতে চাকরি করতেন। চাকরি ছেড়ে নিজের গ্রামে ফিরে আপেলের চাষ শুরু করেছেন। মণিপুরে আজ এমন অনেক আপেল উৎপাদক আছেন যাঁরা আলাদা এবং নতুন কিছু করে দেখিয়েছেন।
বন্ধুরা, আমাদের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে কুল খুবই জনপ্রিয়। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ সবসময়ই কুলের চাষ করে এসেছেন। কিন্তু কোভিড নাইনটিন মহামারীর পরে এর চাষ বিশেষভাবে বেড়ে যাচ্ছে। ত্রিপুরার ঊনকোটির ৩২ বছর বয়সী আমার এমনই এক যুবকবন্ধু বিক্রমজিত চাকমা। তিনি কুলের চাষ করে অনেক মুনাফা অর্জন করেছেন এবং এখন তিনি লোকজনকে কুলের চাষ করার জন্য অনুপ্রেরণাও দিচ্ছেন। রাজ্য সরকারও এমন লোকের সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছে। সরকারী উদ্যোগে এর জন্য অনেক বিশেষ নার্সারি তৈরি করা হয়েছে যাতে কুলের চাষের সঙ্গে যুক্ত লোকের দাবি পূরণ করা যেতে পারে। চাষে উদ্ভাবন হচ্ছে, তাই চাষের ফলে উৎপন্ন বাইপ্রডাক্টস এর মধ্যেও সৃজনশীলতাও দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।
বন্ধুরা, আমি উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খেরিতে হওয়া একটি প্রচেষ্টার ব্যাপারে জানতে পেরেছি। কোভিডের সময়ে লখিমপুর খেরিতে এক অভিনব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখানে মহিলাদের, কলার পরিত্যক্ত কান্ড থেকে ফাইবার তৈরীর ট্রেনিং দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। বর্জ্য থেকে ভালো কিছু করার পথ। কলার কান্ড কেটে মেশিনের সাহায্যে ব্যানানা ফাইবার তৈরি করা হয় যা পাটের তন্তুর মত। এই ফাইবার থেকে হ্যান্ডব্যাগ, মাদুর, কার্পেটের মতো কতই না জিনিস তৈরি করা হচ্ছে। এতে প্রথমত ফসলের আবর্জনার ব্যবহার শুরু হয়েছে, দ্বিতীয়তঃ গ্রামে বাস করা আমাদের বোন-মেয়েদের আয়ের এক সুযোগ তৈরি হয়েছে। কলা তন্তুর এই কাজের মাধ্যমে একজন স্থানীয় মহিলার প্রতিদিন প্রায় ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা মত রোজগার হয়। লখিমপুর খেরিতে কয়েকশো একর জমিতে কলার চাষ হয়। কলার ফসল উৎপাদনের পরে সাধারণত কৃষকদের এর কান্ডকে ফেলার জন্য আলাদা করে খরচ করতে হতো। এখন ওদের এই পয়সাও বেঁচে যায়, মানে আমের আম খাওয়াও হলো আবার আঁটিরও দাম পাওয়া গেল, এই প্রবাদ এখানে একেবারে সঠিক ভাবে প্রযোজ্য।
বন্ধুরা, একদিকে ব্যানানা ফাইবার থেকে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করা হচ্ছে। অপরদিকে কলার আটা থেকে ধোসা এবং গোলাপজাম এর মত সুস্বাদু খাবার তৈরি হচ্ছে। কর্নাটকের উত্তর কন্নড় এবং দক্ষিণ কন্নড় জেলায় মহিলারা এই অবিনব কাজ করছেন। এর শুরুও এই করোনাকালেই হয়েছে। এই মহিলারা তো শুধু কলার আটা থেকে ধোসা, গোলাপজাম-এর মত জিনিস তৈরি করেছেন তা নয়, এইসব জিনিসের ছবিও সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করেছেন। অনেক লোক যখন কলার আটার কথা জানতে পেরেছেন, এর চাহিদা বেড়েছে, আর এই মহিলাদের আমদানিও বেড়েছে। লখিমপুর খেরির মত এখানেও এই উদ্ভাবনমূলক উদ্যোগে মহিলারাই নেতৃত্ব দিয়েছেন।
বন্ধুরা, এমন উদাহরণই জীবনে নতুন কিছু করার অনুপ্রেরণা। আপনাদের আশেপাশে এমন অনেক মানুষ আছেন। যখন আপনার পরিবার তাদের মনের কথা বলেন তখন আপনি এঁদেরও সঙ্গে আড্ডায় যোগ করুন। কখনো সময় বের করে বাচ্চাদের সঙ্গে এমন প্রচেষ্টা দেখতেও যান এবং অবসর পেলে নিজেও এমন কিছু করে দেখান। আর হ্যাঁ এই সব আপনারা আমার সঙ্গে নামোঅ্যাপ অথবা মাই গভ-এ ভাগ করে নিন , তাহলে আমার আরো ভালো লাগবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের সংস্কৃত গ্রন্থে একটি শ্লোক আছে
"আত্মার্থম, জীব লোকে অস্মিন, কো ন জীবতি মানবঃ
পরম পরোপকার্থম, য়ো জীবতি স জীবতি"
অর্থাৎ এই পৃথিবীতে নিজের জন্য তো সকলেই বাঁচে। কিন্তু সেই ব্যক্তিই প্রকৃতভাবে বাঁচে, যে পরোপকারের জন্য বাঁচে। ভারত মাতার ছেলেমেয়েদের পরোপকারের প্রচেষ্টার কথা- এটাই তো 'মন কি বাত।' আজও আরো এমন কিছু বন্ধুদের ব্যাপারে আমরা কথা বলি। চন্ডিগড় শহরের এক বন্ধু। চন্ডীগড়ে আমিও কয়েক বছর থেকে এসেছি। এটি খুব সুন্দর এবং আনন্দময় শহর। এখানে বাস করা মানুষেরা উদার মনের এবং হ্যাঁ, যদি আপনি খাওয়ার ব্যাপারে শৌখিন হন তাহলে এখানে আপনার আরো ভালো লাগবে।
এই চণ্ডীগড়ের সেক্টর -২৯ এ সঞ্জয় রাণাজি একটি ফুড স্টল চালান, এবং সাইকেলে করে ছোলা বাটোরা বিক্রি করেন। তার মেয়ে ঋদ্ধিমা ও ভাইঝি রিয়া একদিন তাকে একটি আইডিয়া দেয়। তারা দুজনে ওঁকে বলেন, যারা কোভিড টিকা নিয়েছে তাদের বিনামূল্যে ছোলা বাটোরা খাওয়াতে। তিনিও সে কথায় খুশি মনে রাজি হয়ে যান, এবং শীঘ্রই তিনি সেই ভালো কাজ করা শুরুও করেন। সঞ্জয় রাণাজির সেই ছোলা বাটোরা বিনা পয়সায় খাওয়ার জন্য আপনাকে দেখাতে হবে যে সেই দিনই আপনি টিকা নিয়েছেন। টিকা নেওয়ার মেসেজ দেখানো মাত্রই তিনি আপনাকে সুস্বাদু ছোলা বাটোরা দিয়ে দেবেন। বলা হয় সমাজের মঙ্গলের জন্য টাকা-পয়সার থেকেও বেশি প্রয়োজন সেবার মানসিকতা ও কর্তব্যবোধ। সেই কথাটাকেই আমাদের সঞ্জয় ভাই সত্য প্রমাণ করে চলেছেন।
বন্ধুরা, আজ ঠিক এমনই আরেকটা কাজের বিষয়ে আপনাদের সঙ্গে আমি আলোচনা করতে চাই। এই ঘটনাটা হচ্ছে তামিলনাড়ুর নীলগিরির। সেখানে রাধিকা শাস্ত্রী জি এম্বুরেক্স প্রকল্প শুরু করেছেন। এই প্রকল্পর উদ্দেশ্য পাহাড়ি এলাকায় অসুস্থদের চিকিৎসার জন্য সহজে পরিবহনের ব্যবস্থা করা। রাধিকা কুন্নুরে একটি ক্যাফে চালান। তিনি তার কাফের সঙ্গী সাথীদের কাছ থেকে এম্বুরেক্সর জন্য তহবিল সংগ্রহ করেন। নীলগিরি পাহাড়ে বর্তমানে ছটি এম্বুরেক্স পরিষেবা চালু রয়েছে, এবং যে কোন জরুরী পরিস্থিতিতে দূরদূরান্তের অঞ্চলেও তা অসুস্থদের কাজে আসছে। এম্বুরেক্স এ স্ট্রেচার, অক্সিজেন সিলিন্ডার, ফাস্ট এইড বক্সের এর মত অনেক কিছুরই সুবিধা রয়েছে। বন্ধুরা, আমরা নিজের কাজ, ব্যবসা বা চাকরি করেও যে মানুষের সেবা করতে পারি সঞ্জয়জি বা রাধিকাজি তারই উদাহরণ।
বন্ধুরা কিছুদিন আগে ভীষণ আকর্ষণীয় এবং খুবই আবেগময় একটা ঘটনা ঘটেছে যার ফলে ভারত এবং জর্জিয়ার সম্পর্ক নতুন করে আরো মজবুত হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে, ভারত সেন্ট কুইন কেটেভানের পবিত্র স্মৃতিচিহ্ন জর্জিয়ার সরকার ও তাদের জনতার হাতে তুলে দিয়েছে, সে জন্য আমাদের বিদেশমন্ত্রী স্বয়ং সেখানে গিয়েছিলেন। খুবই আবেগঘন অনুষ্ঠানে জর্জিয়ার রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, তাঁদের ধর্ম গুরু এবং বহু সংখ্যক জর্জিয়ার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।এই অনুষ্ঠানে ভারতের প্রশংসায় যা কিছু বলা হয়েছে তা স্মরণ করে রাখার মত। এই অনুষ্ঠানটি দুটি দেশের পাশাপাশি, গোয়া এবং জর্জিয়ার মধ্যে যে সম্পর্ক তাকেও আরো প্রগাঢ় করেছে। তার কারণ ২০০৫ সালে সেন্ট কুইন কাটেভানের পবিত্র অবশেষ গোয়ার সেন্ট অগাস্টিন চার্চেই পাওয়া গিয়েছিল।
বন্ধুরা, আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে এ সমস্ত কি ?এগুলো কবে আর কীভাবেই বা হলো? প্রকৃতপক্ষে এটি আজ থেকে চার-পাঁচশ বছর আগের ঘটনা। কুইন কেটেভান ছিলেন জর্জিয়ার রাজপরিবারের কন্যা। ১০ বছর কারাবাসের পর ১৬২৪ সালে তিনি শহীদ হয়েছিলেন। এক প্রাচীন পর্তুগিজ দলিল অনুযায়ী জানা যায় সেন্ট কুইন কেটেভান এর অস্থি ওল্ড গোয়ার সেন্ট অগাস্টিন কনভেন্ট রাখা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে মনে করা হতো যে গোয়ায় সমাহিত তার দেহাবশেষ ১৯৩০ সালের ভূমিকম্পে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
ভারত সরকার ও জর্জিয়ার ঐতিহাসিক, গবেষক, পূরাতত্ত্ববিদ এবং জর্জিয়ার চার্চের কয়েক দশকের নিরলস প্রচেষ্টার পর ২০০৫ সালে সেই পবিত্র অবশেষগুলির অনুসন্ধানে সাফল্য মেলে। এটি জর্জিয়াবাসীর জন্য অত্যন্ত আবেগপ্রবণ একটি বিষয়। সেজন্য তাদের ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং আধ্যাত্বিক অনুভূতির কথা মাথায় রেখে ভারত সরকার এই অবশেষের একটা অংশ জর্জিয়ার মানুষকে উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ভারত ও জর্জিয়ার সম্মিলিত ইতিহাসের এই অনন্য নির্দশনকে সংরক্ষণের জন্য আমি গোয়ার জনগণকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই। গোয়া মহান আধ্যাত্বিক ঐতিহ্যবাহী একটি স্থান। সেন্ট অগাস্টিন গির্জা, ইউনেস্কো'র ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট চার্চেস অ্যান্ড কনভেন্ট অফ গোয়ার একটি অংশ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, জর্জিয়া থেকে এবার আমি আপনাদের সরাসরি সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাচ্ছি, যেখানে এ মাসের শুরুতে আরো একটি গৌরবময় ঘটনা ঘটেছে। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী, আমার বন্ধু লি সেন লুঙ সম্প্রতি পুনর্নির্মিত সিলাট রোড গুরুদুয়ারার উদ্বোধন করেন। তিনি পরম্পরাগত শিখ পাগড়িও পড়ে ছিলেন। এই গুরুদুয়ারাটি প্রায় ১০০ বছর আগে তৈরি হয়েছিল এবং এটি ভাই মহারাজ সিংহর উদ্দেশ্যে নিবেদিত একটি স্মারক। ভাই মহারাজ সিংহ ভারতের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। ঠিক এই মুহূর্তে যখন আমরা স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপন করতে চলেছি তখন এটি অনেক বেশি অনুপ্রেরণার বিষয় হয়ে ওঠে। এরকমই কিছু ঘটনা এবং প্রচেষ্টা দুটি দেশের মধ্যে জনসাধারণের মধ্যে যোগাযোগের মত বিষয়কে আরো সুদৃঢ় করে। সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে থাকার এবং পরস্পরের সংস্কৃতিকে জানার এবং বোঝার গুরুত্ব কতটাতা এখান থেকেই স্পষ্ট হয়।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আমরা অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম। আরেকটি বিষয় যেটা আমার হৃদয়গ্রাহী। সেটা হলো জল সংরক্ষণ। আমার শৈশব যেখানে কেটেছে, সেখানে জলের অভাব সবসময় থাকতো। আমরা বৃষ্টির জন্য তাকিয়ে থাকতাম, তাই জলের প্রত্যেক ফোঁটা বাঁচানো আমাদের সংস্কারের অংশ ছিল। বর্তমানের ‘সাধারণের সহযোগিতায় জল সংরক্ষণ’ এই মন্ত্র ওখানের চালচিত্র বদলে দিয়েছে। জলের এক এক ফোঁটা বাঁচানো, জলের যে কোনো রকমের অপচয়কে বন্ধ করা আমাদের জীবন শৈলীর এক অন্যতম অংশ হওয়া দরকার। আমাদের পরিবারের মধ্যেও এই রকম পরম্পরা শুরু হওয়া দরকার, যা নিয়ে পরিবারের প্রত্যেক সদস্য গর্ব অনুভব করবে।
বন্ধুরা, প্রকৃতি ও পরিবেশের রক্ষা ভারতের সাংস্কৃতিক জীবনে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেইসঙ্গে বৃষ্টি-বাদল আমাদের বিচার, আমাদের দর্শন আর আমাদের সভ্যতাকে আকার দিয়ে আসছে। ‘ঋতুসংহার’ এবং ‘মেঘদূতে’ মহাকবি কালিদাস বর্ষা নিয়ে খুব সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন।সাহিত্যপ্রেমীদের মধ্যে এইসব কবিতা আজও খুব জনপ্রিয়। ঋকবেদের ‘পর্জন্য সুক্তম’ -এও বর্ষাকালের সৌন্দর্য খুব সুন্দর করে বর্ণিত আছে। একি ভাবে, শ্রীমৎ ভাগবতেও কাব্যের মাধ্যমে পৃথিবী, সূর্য এবং বর্ষার মধ্যে সম্পর্ককে বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা আছে।
অষ্টৌ মাসান নিপীতং যদ, ভুম্যাঃ চ, ঔদ-ময়ম বসু ।
স্বগোভিঃ মোক্তুম আরেভে, পর্জন্যঃ কাল আগতে।।
অর্থাৎ, সূর্য আট মাস পর্যন্ত জলের রূপে পৃথিবীর সম্পদকে শুষে নিচ্ছিল, এখন বর্ষাকালে সূর্য এই সঞ্চিত সম্পদকে পৃথিবীকে ফিরিয়ে দেয়। ঠিকই, বর্ষাকাল শুধু খুব সুন্দর আর মনোরম হয় না, এই ঋতু পুষ্টি দেয়, প্রাণ সঞ্চারও করে। বর্ষার যে জল আমরা পাচ্ছি সেটা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য, এটা আমাদের কখনো ভুললে চলবে না।
আজ আমার মনে হল যে এই মজার দৃষ্টান্তের মাধ্যমে আজকের পর্ব শেষ করি। আপনাদের সবাইকে আসন্ন উৎসবের অনেক অনেক শুভকামনা। পার্বণ-উৎসবের সময় এটা ঠিক মনে রাখবেন যে করোনা এখনো আমাদের মধ্য থেকে বিদায় নেয় নি। করোনা বিধি আপনাদের ভুললে চলবেন না। আপনি সুস্থ ও আনন্দে থাকুন । অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার! প্রায়শই ‘মন কি বাত’ এ আপনাদের প্রচুর প্রশ্ন থাকে। এই বার আমি ভাবলাম যে ভিন্ন কিছু করা যাক, আমি আপনাদের প্রশ্ন করব। অতএব মনযোগ দিয়ে শুনুন আমার প্রশ্ন।
…অলিম্পিকে ব্যক্তিগত স্বর্ণপদক জয়ী প্রথম ভারতীয় কে ছিলেন?
…অলিম্পিকের কোন খেলায় এখনও পর্যন্ত ভারত সবথেকে বেশি পদক জিতেছে?
…অলিম্পিকে কোন খেলোয়াড় সবথেকে বেশি পদক জিতেছেন?
বন্ধু, আপনি আমাকে উত্তর দিন বা না দিন, কিন্তু মাইগভে অলিম্পিকের উপর যে ক্যুইজ আছে সেখানে প্রশ্নের উত্তর যদি দেন তাহলে অনেক পুরস্কার পাবেন। মাইগভে ‘রোড টু টোকিও ক্যুইজে’ এমন অনেক প্রশ্ন আছে। আপনারা ‘রোড টু টোকিও ক্যুইজে’ অংশ নিন। ভারত আগে কেমন ফল করেছে? টোকিও অলিম্পিক্সের জন্য এখন আমাদের কেমন প্রস্তুতি রয়েছে? এইসব নিজে জানুন আর অন্যদেরও জানান। আমি আপনাদের সবার কাছে অনুরোধ জানাতে চাই যে আপনারা এই ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় অবশ্যই অংশগ্রহণ করুন।
বন্ধু, যখন টোকিও অলিম্পিক্সের কথা হচ্ছে তখন মিলখা সিংয়ের মত কিংবদন্তী অ্যাথলীটকে কে ভুলে যেতে পারে! কিছু দিন আগেই করোনা তাঁকে আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। যখন তিনি হাসপাতালে ছিলেন তখন ওঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল আমার। কথা বলার সময় আমি ওঁর কাছে নিজের আগ্রহ প্রকাশ করলাম। আমি বলেছিলাম যে আপনি তো ১৯৬৪ সালে টোকিও অলিম্পিক্সে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। তাই এই বার, যখন আমাদের খেলোয়াড়রা, অলিম্পিক্সের জন্য টোকিও যাচ্ছে, তখন আমাদের অ্যাথলীটদের মনোবল বাড়াতে হবে আপনাকে, নিজের বার্তা দিয়ে তাঁদের অনুপ্রাণিত করতে হবে। উনি খেলাধুলোর প্রতি এতটাই নিবেদিত এবং আবেগপ্রবণ যে অসুখের মধ্যেও উনি তৎক্ষণাৎ রাজিও হয়ে গেলেন। দুর্ভাগ্য যে নিয়তি অন্য কিছু স্থির করে রেখেছিল। আমার এখনও মনে আছে, ২০১৪ সালে তিনি সুরাতে এসেছিলেন। আমরা এক ‘নাইট ম্যারাথনে’র উদ্বোধন করেছিলাম। সেইসময় ওঁর সঙ্গে যে আলাপ-আলোচনা হয়েছিল, খেলাধুলোর ব্যাপারে যে কথা হয়েছিল তাতে আমিও অনেক প্রেরণা পেয়েছিলাম। আমরা সবাই জানি যে মিলখা সিংয়ের গোটা পরিবার খেলাধুলোর প্রতি উৎসর্গীকৃত, ভারতের গৌরব বাড়িয়েছেন।
বন্ধু, যখন মেধা, উৎসর্গ, দৃঢ়প্রতিজ্ঞা আর খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতা একসঙ্গে মেশে তখন কেউ চ্যাম্পিয়নে পরিণত হয়। আমাদের দেশে তো অধিকাংশ খেলোয়াড় ছোট-ছোট শহর, নগর, গ্রাম থেকে উঠে আসেন। আমাদের টোকিওগামী অলিম্পিক দলেও এমন অনেক খেলোয়াড় রয়েছেন, যাঁদের জীবন খুবই অনুপ্রাণিত করে। আমাদের প্রবীণ যাদবজী সম্পর্কে আপনারা শুনলে আপনাদেরও মনে হবে যে কত কঠিন সঙ্ঘর্ষের মধ্যে দিয়ে প্রবীণজী এখানে পৌঁছেছেন। প্রবীণ যাদবজী মহারাষ্ট্রের সতারা জেলার এক গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ধনুর্বিদ্যার অসাধারণ খেলোয়াড়। ওঁর মা-বাবা মজদুরি করে সংসার চালায়, আর এখন তাঁদের পুত্র নিজের প্রথম অলিম্পিক্সে অংশ নিতে টোকিও যাচ্ছেন। এটা শুধু ওঁর মা-বাবার জন্যই নয়, আমাদের সবার জন্য কত গৌরবের কথা। এমনই আর একজন খেলোয়াড় আছেন, আমাদের নেহা গোয়েলজী। নেহা টোকিওগামী মহিলা হকি দলের সদস্য। ওঁর মা আর বোন সাইকেলের কারখানায় কাজ করে সংসার চালানোর খরচা জোগাড় করেন। নেহার মতই দীপিকা কুমারীজীর জীবনের পথচলাও চড়াই-উৎরাইয়ে পূর্ণ। দীপিকার বাবা অটো রিকশা চালান আর ওঁর মা নার্স। আর এখন দেখুন, দীপিকা এবার টোকিও অলিম্পিক্সে ভারতের পক্ষ থেকে একমাত্র মহিলা তীরন্দাজ। এক সময় বিশ্বের প্রথম স্থানাধিকারী তীরন্দাজ দীপিকার সঙ্গে আমাদের সবার শুভকামনা রয়েছে।
বন্ধু, জীবনে আমরা যেখানেই পৌঁছই, যে উচ্চতাতেই উঠি না কেন, মাটির সঙ্গে এই বন্ধন, সবসময়, আমাদের নিজেদের শেকড়ের সঙ্গে বেঁধে রাখে। সঙ্ঘর্ষময় দিনগুলোর পরে পাওয়া সফলতার আনন্দ বেশ অন্যরকম হয়। টোকিওগামী খেলোয়াড়রা শৈশবে রসদ আর উপকরণের সব রকম অভাবের সম্মুখীন হয়েছে কিন্তু তাঁরা সাহস করে টিঁকে থেকেছেন, লেগে থেকেছেন। উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগরের প্রিয়াঙ্কা গোস্বামীর জীবনও আমাদের অনেক কিছু শেখায়। প্রিয়াঙ্কার বাবা বাস কন্ডাক্টর। ছোটবেলায় প্রিয়াঙ্কার সেই ব্যাগটা খুব পছন্দ ছিল যা মেডেল পাওয়া খেলোয়াড়দের দেওয়া হয়। এই আকর্ষণেই প্রথম বার তিনি রেস-ওয়াকিং প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এখন সে এই ক্ষেত্রের বড় চ্যাম্পিয়ন। জ্যাভেলিন থ্রো-তে অংশ নেওয়া শিবপাল সিং জী বেনারসের বাসিন্দা। শিবপালজীর তো গোটা পরিবারই এই খেলার সঙ্গে যুক্ত। ওঁর বাবা, কাকা আর ভাই, সবাই বর্শা ছোঁড়ায় দক্ষ। পরিবারের এই পরম্পরাই টোকিও অলিম্পিক্সে ওঁর জন্য কাজে আসবে। টোকিও অলিম্পিকের জন্য যাচ্ছেন যে চিরাগ শেট্টি আর তাঁর সঙ্গী সাত্ত্বিক সাইরাজ, তাঁদের উদ্যমও অনুপ্রাণিত করার মত। সম্প্রতি চিরাগের দাদু করোনাতে মারা যান। সাত্ত্বিক নিজেও গত বছর করোনা পজিটিভ হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু এই সব সমস্যার পরেও এই দু’জন পুরুষদের ডাবলস শাট্ল প্রতিযোগিতায় নিজেদের সেরাটা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতিতে লেগে রয়েছেন। আর একজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে আমি আপনাদের পরিচয় করাতে চাইব, ইনি হলেন হরিয়ানার ভিওয়ানীর মণীশ কৌশিক জী। মণীশজী চাষ-আবাদ করা পরিবার থেকে এসেছেন। ছোটবেলায় চাষের ক্ষেতে কাজ করতে করতে মণীশজীকে বক্সিংয়ের শখ পেয়ে বসে। আজ এই শখ তাঁকে টোকিও নিয়ে যাচ্ছে। আর একজন খেলোয়াড় রয়েছেন, সি এ ভবানী দেবী জী। নাম ভবানী আর তলোয়ার চালানোতে সুদক্ষ। চেন্নাইয়ের বাসিন্দা ভবানী প্রথম ভারতীয় ফেন্সার যিনি অলিম্পিক্সসের জন্য কোয়ালিফাই করেছেন। আমি কোথাও একটা পড়ছিলাম যে যাতে ভবানীজীর ট্রেনিং বন্ধ না হয় তার জন্য তাঁর মা নিজের গয়নাও বন্ধক রেখেছিলেন।
বন্ধু, এমন তো অসংখ্য নাম রয়েছে কিন্তু মন কি বাতে আমি আজ অল্প কিছু নামেরই উল্লেখ করতে পারলাম। টোকিওগামী সব খেলোয়াড়েরই নিজের সংগ্রামের কাহিনী রয়েছে, বহু বছরের পরিশ্রম রয়েছে। তাঁরা শুধু নিজের জন্যই যাচ্ছেন না বরং দেশের জন্য যাচ্ছেন। এই খেলোয়াড়দের ভারতের গৌরবও বাড়াতে হবে আর মানুষের মনও জয় করতে হবে। আর এই জন্য, আমার দেশবাসী, আমি আপনাদেরও পরামর্শ দিতে চাই, সচেতন বা অচেতনভাবেও এই খেলোয়াড়দের উপর আমাদের চাপ সৃষ্টি করা উচিত নয়, বরং খোলা মনে এঁদের সঙ্গ দিতে হবে, প্রত্যেক খেলোয়াড়ের উৎসাহ বাড়াতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনারা হ্যাশট্যাগ-চিয়ার-ফর-ইণ্ডিয়া সহ আমাদের এই খেলোয়াড়োদের শুভকামনা জানাতে পারেন। আপনারা আর কিছু উদ্ভাবনী করতে চাইলে সেটাও অবশ্যই করুন। যদি আপনাদের এমন কোনও আইডিয়া আসে যেটা আমাদের খেলোয়াড়দের জন্য গোটা দেশের একসঙ্গে মিলে প্রয়োগ করা উচিত, তাহলে আমাকে অবশ্যই পাঠাবেন। আমরা সবাই একসঙ্গে আমাদের টোকিওগামী খেলোয়াড়দের সমর্থন করব – চিয়ার-ফর-ইণ্ডিয়া!!! চিয়ার-ফর-ইণ্ডিয়া!!! চিয়ার-ফর-ইণ্ডিয়া!!!
আমার প্রিয় দেশবাসী, করোনার বিরুদ্ধে আমাদের দেশবাসীদের লড়াই অব্যাহত, কিন্তু এই লড়াইতে আমরা এক হয়ে অনেক অসাধারণ লক্ষ্যও পূরণ করছি। এই কিছু দিন আগেই আমাদের দেশ এক অভূতপূর্ব কাজ করেছে। ২১শে জুন টিকাকরণের পরবর্তী দফা শুরু হল আর সেদিনই দেশ ছিয়াশি লক্ষেরও বেশি মানুষকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার রেকর্ড বানিয়ে ফেলল, আর সেটাও মাত্র এক দিনে। ভারত সরকারের তরফ থেকে বিনামূল্যে এত বেশি সংখ্যক মানুষকে টিকা দেওয়া আর সেটাও মাত্র এক দিনে। স্বাভাবিক যে এটা নিয়ে অনেক চর্চা হয়েছে।
বন্ধু, এক বছর আগে সবার সামনে প্রশ্ন ছিল যে টিকা কবে আসবে? আজ আমরা এক দিনে লক্ষ লক্ষ মানুষকে মেড ইন ইণ্ডিয়া টিকা বিনামূল্যে দিচ্ছি আর এটাই তো নতুন ভারতের পরিচয়।
বন্ধু, টিকার সুরক্ষা যাতে দেশের প্রত্যেক নাগরিক পায় তার জন্য আমাদের নিরন্তর প্রয়াস করতে হবে। অনেক জায়গায় টিকা নিয়ে সংশয় দূর করতে অনেক সংগঠন, সুশীল সমাজের সদস্যরা এগিয়ে এসেছেন আর সবাই মিলে তাঁরা খুব ভালো কাজ করছেন। চলুন, আমরাও আজ এক গ্রামে যাই আর সেই সব মানুষদের সঙ্গে কথা বলি।
প্রধানমন্ত্রী : হ্যালো
রাজেশ : নমস্কার
প্রধানমন্ত্রী : নমস্কার
রাজেশ : আমার নাম রাজেশ হিরাবে, গ্রাম পঞ্চায়েত দুলারিয়া ব্লক ভীমপুর
প্রধানমন্ত্রী : রাজেশ জি আপনাকে ফোন করার কারণ আপনাদের গ্রামে করোনা পরিস্থিতি কি রকম?
রাজেশ : এখানে করোনা তেমন কিছু নয় স্যার
প্রধানমন্ত্রী : এখন কেউ অসুস্থ নয় তো?
রাজেশ : স্যার
প্রধানমন্ত্রী : গ্রামে কতো জন থাকেন? মানে গ্রামের জনসংখ্যা কতো?
রাজেশ : গ্রামে ৪৬২জন পুরুষ আর ৩৩২ জন মহিলা থাকেন স্যার
প্রধানমন্ত্রী : রাজেশ জি আপনি টিকা নিয়েছেন?
রাজেশ : এখনো নিই নি স্যার
প্রধানমন্ত্রী : এখনো নেন নি কেন?
রাজেশ : স্যার এখানে একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে খুব ভয়ভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। লোকজন ভয় পেয়ে গেছে স্যার
প্রধানমন্ত্রী : আপনার মনেও কি ভয় আছে?
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার, সারা গ্রামেই এমন ভ্রান্তি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল স্যার
প্রধানমন্ত্রী : আরে এ কেমন কথা হল?
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : দেখুন রাজেশ জি
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আপনাকে আর গ্রামের ভাইবোনকে এটা বলতে চাই, যদি কোনো ভয় থাকে তো ভুলে যান।
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : সারা দেশে প্রায় ৩১ কোটিরও বেশি মানুষ ভ্যাক্সিন নিয়েছেন
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আপনি জানেন কি আমি নিজেও দু ডোজ ভ্যাক্সিন নিয়ে নিয়েছি।
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আমার মায়ের বয়স প্রায় একশ বছর। তিনিও দুটো ডোজ নিয়েছেন। কখনও কারো জ্বর জ্বালা হয়। তাও অল্প হয়, কয়েক ঘণ্টার জন্য। দেখুন ভ্যাক্সিন না নেওয়া তো অত্যন্ত ভয়াবহ ব্যাপার
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : এর ফলে আপনি নিজেকে বিপদে ফেলছেন আবার নিজের পরিবার গ্রামবাসী সবাইকেই বিপদে ফেলছেন।
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : রাজেশ জি যত তাড়াতাড়ি হয় ভ্যাক্সিন নিয়ে নিন এবং সমস্ত গ্রাম বাসীকে জানান ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ১৮ বছরের ওপর সবাইকে বিনামূল্যে ভ্যাক্সিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার,হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আপনিও গ্রামের লোকেদের বলুন, গ্রামে এরকম ভয়ের আবহাওয়ার তো কোনো কারণ নেই।
রাজেশ : কারণ সেটাই স্যার, কিছু লোক ভুল ভ্রান্তি ছড়িয়ে দিয়েছে আর লোকে খুব ভয় পেয়ে গেছে, যেমন, ভ্যাক্সিন নেওয়ার পর যে জ্বর আসছে, জ্বর থেকে রোগটা ছড়িয়ে যাওয়া, এমনকি মানুষের মৃত্যুর ভ্রান্তিও ছড়ানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী : ওহ ওহ, দেখুন এখন রেডিও টিভি আরও অনেক সংবাদমাধ্যমে লোককে বোঝানো সহজ হয়ে যাচ্ছে, আর দেখুন আমি আপনাকে বলি, ভারতের এমন অনেক গ্রাম আছে যেখানে গ্রামের ১০০% লোক টীকাকরণ করিয়ে নিয়েছে।
রাজেশ :হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আপনাকে একটা উদাহরণ দিই
রাজেশ :হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : কাশ্মীরের বান্দিপোরা জেলায় বেয়ান (Weyan) গ্রামের ১০০% মানুষ টিকা নিয়েছে। কাশ্মীরের এই গ্রামে ১৮ বছরের ওপরের সবাই টীকা নিয়ে নিয়েছে। নাগাল্যান্ডের তিনটে গ্রামের কথা শুনেছি সেখানকার ১০০% মানুষ ভ্যাক্সিন নিয়েছে।
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার,হ্যাঁ স্যার
প্রধানমন্ত্রী : রাজেশ জি, আপনাকে আপনার গ্রামের এবং আশেপাশের সব গ্রামে এই কথা পৌঁছে দিতে হবে, আপনি যেওরকম বলছে এটা ভ্রান্তি, আর সত্যি এটা একটা ভ্রান্তি।
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার
প্রধানমন্ত্রী : ভ্রান্তি কাটানোর একমাত্র উপায় আপনি নিজে টিকা নিয়ে অন্যের ভয় কাটান। আপনি তাই করবেন তো?
রাজেশ : অবশ্যই স্যার
প্রধানমন্ত্রী : ঠিক তো
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার, আপনার সঙ্গে কথা বলার পর মনে হচ্ছে, আমি তো নেবই বাকিদের কেও নিতে বলবো।
প্রধানমন্ত্রী : আচ্ছা গ্রামের আর কেউ আছেন যাঁর সঙ্গে আমি কথা বলতে পারি?
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী :কে কথা বলবেন?
কিশোরীলাল : হ্যালো স্যার নমস্কার
প্রধানমন্ত্রী : নমস্কার, কে কথা বলছেন?.
কিশোরীলাল : আমার নাম কিশোরীলাল দুর্বে
প্রধানমন্ত্রী : হ্যা কিশোরীলাল জি আমি রাজেশ জির সঙ্গে কথা বলছিলাম
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : তো রাজেশ তো খুব দুঃখের সঙ্গে বলছিলেন লোকজন টিকা নিয়ে নানা রকম কথা বলে।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী :আপনিও কি এমন সব কথা শুনেছেন?
কিশোরীলাল : স্যার আমি এমন শুনেছি..
প্রধানমন্ত্রী : কি শুনেছেন?
কিশোরীলাল : কারণ এটাই স্যার আমাদের পাশেই মহারাষ্ট্র। ওখানকার কিছু আত্মীয়-স্বজন গোচের মানুষ গুজব ছড়াচ্ছেন যে টিকা নিলে লোকজন সবাই নাকি মারা যাচ্ছে, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ছে স্যার। মানুষের মনে অনেক ভ্রান্তি রয়েছ স্যার, তাই নিচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী : না... বলছে কি? এখন করোনা চলে গিয়েছে, এমন বলছে?
কিশোরীলাল : হ্যাঁ।
প্রধানমন্ত্রী : করোনা তে কিছুই হবে না এরকম বলছে কি?
কিশোরীলাল : না, করোনা চলে গিয়েছে তা বলছে না স্যার, বলছে করোনা তো রয়েছে কিন্তু টিকা যারা নিচ্ছে তারা মানে অসুস্থ হচ্ছে, সবাই মারা যাচ্ছে। তারা এরকম পরিস্থিতির কথা বলছেন স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আচ্ছা টিকা এর কারনে মারা যাচ্ছে?
কিশোরীলাল : আমার এলাকা আদিবাসীদের এলাকা স্যার, এমনিতেই লোকজন এসবে তাড়াতাড়ি ভয় পায়.... যা ভ্রান্তি ছড়িয়ে দেয়, সেই কারণেই লোকজন টিকা নিচ্ছে না স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : দেখুন কিশোরীলালজি...
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার...
প্রধানমন্ত্রী : এই গুজব ছড়ানোর মানুষজন তো গুজব ছড়াতেই থাকবেন।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ।
প্রধানমন্ত্রী : আমাদের তো জীবন বাঁচাতে হবে, আমাদের গ্রামের সবাই কে বাঁচাতে হবে, আমাদের দেশবাসীদের বাঁচাতে হবে। আর যদি কেউ বলে যে করোনা চলে গিয়েছে তাহলে সেই ভ্রান্তিতে থাকবেন না।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ।
প্রধানমন্ত্রী : এই অসুখটা এমনই যে বহুরূপে রয়েছে।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : এটা রূপ বদলায়... নতুন নতুন রং-রূপে পৌঁছে যাচ্ছে।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ।
প্রধানমন্ত্রী : আর এর থেকে বাঁচার জন্য আমাদের কাছে দুটো রাস্তা রয়েছে। এক তো করোনার জন্য যে নিয়ম তৈরি করা হয়েছে, যেমন মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া, দূরত্ব বজায় রাখা আর দ্বিতীয় রাস্তা হল একই সঙ্গে টিকা লাগানো, এও এক ভালো সুরক্ষা কবচ তাই তার চিন্তাও করুন।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ।
প্রধানমন্ত্রী : আচ্ছা কিশোরীলালজি বলুনতো,
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : যখন মানুষ আপনার সঙ্গে কথা বলে তখন আপনি তাদের কিভাবে বোঝান? আপনি বোঝানোর কাজটা করেন তো নাকি আপনিও গুজবে কান দেন?
কিশোরীলাল : বোঝাবো কি, ওরা সবাই সংখ্যায় বেশি হয়ে যায় স্যার, তখন আমিও ভয় পেয়ে যাই স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : দেখুন কিশোরীলাল জি, আজ আপনার সঙ্গে আমার কথা হল, আপনি আমার বন্ধু।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আপনি ভয় পাবেন না আর মানুষেরও ভয় দূর করতে হবে। দূর করবেন তো?
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার। দূর করব স্যার, মানুষদের ভয় দূর করব স্যার। আমি নিজেও টিকা নেবো।
প্রধানমন্ত্রী : দেখুন, গুজবে একদম কান দেবেন না।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ
প্রধানমন্ত্রী : আপনি কি জানেন, আমাদের বৈজ্ঞানিকেরা কত কষ্ট করে এই টিকা বানিয়েছে?
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : বছরভর, রাতদিন সব বড় বড় বৈজ্ঞানিকেরা কাজ করেছেন আর আমাদের বিজ্ঞানের উপর ভরসা রাখতে হবে, বৈজ্ঞানিকদের উপর ভরসা রাখতে হবে। আর যেসব লোকজন মিথ্যে প্রচার করছেন তাদের বারবার বোঝাতে হবে যে দেখুন ভাই এভাবে চলবে না, এত জন মানুষ টিকা নিয়েছেন তাদের কিছু হয়নি।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ
প্রধানমন্ত্রী : আর গুজব থেকে খুব বেঁচে থাকতে হবে, গ্রামকেও বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ
প্রধানমন্ত্রী : আর রাজেশজি, কিশোরীলালজি, আপনাদের মত বন্ধুদেরকে তো আমি বলব যে আপনি আপনাদের গ্রামেই শুধু নয়, অন্যান্য গ্রামেও এইসব গুজব থামানোর কাজ করুন আর মানুষকে বলুন আমার সঙ্গে আপনাদের কথা হয়েছে।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : বলে দেবেন, আমার নাম বলে দেবেন।
কিশোরীলাল : বলবো স্যার, আর লোকজনদের ও বোঝাবো এবং নিজেও টিকা নেব।
প্রধানমন্ত্রী : দেখুন আপনার পুরো গ্রামকে আমার তরফ থেকে শুভকামনা জানাবেন।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আর সবাইকে বলবেন যখনই আপনার নম্বর আসবে...
কিশোরীলাল : হ্যাঁ...
প্রধানমন্ত্রী : তখনই টিকা অবশ্যই নেবে।
কিশোরীলাল : ঠিক আছে স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আমি চাই গ্রামের মহিলারা, আমার মায়েরা বোনেরা
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার
প্রধানমন্ত্রী : এই কাজের সঙ্গে আরো বেশি বেশি করে যুক্ত হন ও সক্রিয় রূপে ওঁদের সঙ্গে রাখুন।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ
প্রধানমন্ত্রী : কখনো কখনো মায়েরা বোনেরা যখন কোন কথা বলেন তখন মানুষ তাড়াতাড়ি রাজি হয়ে যায়।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ
প্রধানমন্ত্রী : আপনার গ্রামে যখন টিকাকরণ শেষ হয়ে যাবে তখন আমাকে জানাবেন তো?
কিশোরীলাল : হ্যাঁ, জানাবো স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : পাক্কা জানাবেন?
কিশোরীলাল : হ্যাঁ
প্রধানমন্ত্রী : দেখুন, আমি আপনার চিঠির অপেক্ষা করবো।
কিশোরীলাল: হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী: ঠিক আছে রাজেশজি কিশোরজি, অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেলাম।
কিশোরীলাল: ধন্যবাদ স্যার। আমাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।
বন্ধুরা, এই করোনা কালে যেভাবে ভারতের গ্রামের মানুষজন, আমাদের বনবাসী ও আদিবাসী ভাইবোনেরা নিজেদের সক্ষমতা এবং বোধশক্তির পরিচয় দিয়েছেন তা সমগ্র বিশ্বের জন্য কখনো না কখনো কেস স্টাডির একটি বিষয় হবে। গ্রামের লোকেরা কোয়ারেন্টাইন সেন্টার তৈরি করেছে, স্থানীয় প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী কোভিড বিধি তৈরি করেছে। গ্রামের লোকেরা কাউকে খিদের জ্বালা বুঝতে দেয়নি, কৃষিকাজও বন্ধ হতে দেয়নি। নিকটবর্তী শহরে যাতে রোজ দুধ সব্জি এসব পৌঁছয় গ্রামের লোকেরা তাও সুনিশ্চিত করেছে অর্থাৎ নিজেদের সঙ্গে অন্যদেরও খেয়াল রেখেছে। ঠিক এভাবেই আমাদের টিকাকরণ অভিযানের সময় একই কাজ করে যেতে হবে। আমাদের সচেতন থাকতে হবে এবং অন্যদেরও সচেতন করতে হবে। প্রতিটা গ্রামে যাতে প্রত্যেকে টিকা পায় তা সমস্ত গ্রামের লক্ষ্য হওয়া উচিত। মনে রাখবেন, আর আমি এ কথাই আপনাদের বিশেষ ভাবে বলতে চাই। আপনারা নিজেদের মনকে একবার জিজ্ঞেস করুন- প্রত্যেকেই তো সফল হতে চায় কিন্তু প্রকৃত সাফল্যের মন্ত্র কি? প্রকৃত সাফল্য আসে ধারাবাহিকতা থেকে। এজন্য আমাদের থেমে গেলে চলবে না, কোন ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হলেও চলবে না। আমাদের সর্বদা চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, করোনার বিরুদ্ধে জিততেই হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের দেশে এখন বর্ষাও এসে গেছে। বর্ষায় যখন বৃষ্টি হয় তখন তা কেবল আমাদের জন্যই হয় না, সেই বৃষ্টি থেকে আগামী প্রজন্মও উপকৃত হয়। বর্ষার জল ভূ-মধ্যে প্রবেশ করে শুধু সঞ্চিতই হয় না তা জলস্তর বৃদ্ধিও করে। তাই আমি জল-সংরক্ষণকে দেশ সেবার একটি রূপ বলেই মনে করি। আপনারাও হয়তো দেখেছেন, আমাদের মধ্যে অনেকেই এই পূণ্য কাজকে নিজেদের দায়িত্ব হিসেবে মেনে চলেন। ঠিক এমনই একজন মানুষ উত্তরাখণ্ডের পৌরী গারোয়ালের সচ্চিদানন্দ ভারতী জি। ভারতী জি একজন শিক্ষক এবং তিনি তার কাজের মধ্যে দিয়ে মানুষকে খুব সুন্দর শিক্ষা প্রদান করেছেন। আজ তার প্রচেষ্টাতেই পৌরি গারোয়ালের উফরৈখাল অঞ্চলে জল সংকট-এর কঠিন সময় কেটে গিয়েছে। যেখানে লোক জলের জন্য কষ্ট পেত, সেখানে আজ সারা বছর জল-সরবরাহ অব্যাহত থাকে।
বন্ধুরা, পাহাড়ে জল সংরক্ষণের একটি প্রচলিত প্রথা রয়েছে, যাকে "চাল-খাল"ও বলা হয়ে থাকে, অর্থাৎ জল জমানোর জন্য একটা বড় গর্ত খোঁড়া। ভারতী জি এই প্রচলিত প্রক্রিয়াটিতে কিছু নতুন কৌশল প্রয়োগ করেন, এভাবেই তিনি পরপর ছোট-বড় একাধিক পুকুর খনন করেন। এর ফলে উফরৈখলের পাহাড়ি অংশ কেবল সবুজই হয় নি, সেখানকার মানুষের পানীয় জলের সমস্যাও দূর হয়ে গেছে। আপনারা একথা জেনে আশ্চর্য হয়ে যাবেন যে ভারতী জি এরকমই ৩০০০০ এর বেশি জল কুন্ড তৈরি করেছেন। ৩০ হাজার! ভগীরথ এর মত তার এই কাজ আজও চলছে এবং অনেক লোক কে অনুপ্রাণিত করছে।
বন্ধুরা, এভাবেই UP র বাঁদা জেলার অন্ধাভ গ্রামের লোকেরাও একটা অন্যরকম কিছু করার প্রচেষ্টা করেছেন। তাঁরা তাঁদের এই অভিযানের একটা ভারী সুন্দর নাম দিয়েছেন-' ক্ষেতের জল ক্ষেতে, গ্রামের জল গ্রামে'। এই অভিযানের সময় গ্রামের কয়েকশো বিঘার ক্ষেতকে উঁচু উঁচু করে ঘিরে দেয়া হয়েছে যাতে বর্ষার জল খেতে এসে জমা হতে থাকে এবং মাটিতে প্রবেশ করতে থাকে। এখন এই সমস্ত লোকেরা সেই আলে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করছেন। অর্থাৎ এখন কৃষক বন্ধুরা জল বৃক্ষ ও অর্থ এই তিনই পাবে। ভালো কাজের জন্য তাদের গ্রামের পরিচিতি বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। বন্ধুরা, এ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের আশেপাশে যেভাবে আমরা জল সংরক্ষণ করতে পারি তা আমাদের করতে হবে। বর্ষার এই গুরুত্বপূর্ণ সময়কে নষ্ট হতে দেওয়া চলবে না।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে- “নাস্তি মূলম্ অনৈষেধম”
অর্থাৎ পৃথিবীতে এমন কোন গাছ নেই যার কোন না কোন ঔষধি গুণ নেই। আমাদের চারপাশে এমন অনেক গাছপালা আছে যাদের অদ্ভুত কিছু ঔষধি গুণ আছে, কিন্তু অনেক সময় আমাদের সে সম্পর্কে কোন ধারণা থাকে না। আমায় নৈনিতাল থেকে এ বিষয়ে পরিতোষ ভাই একটি চিঠি লিখেছেন। তিনি লিখেছেন যে গুলঞ্চ এবং আরো অনেক গাছপালার অদ্ভুত ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে তিনি জানতে পেরেছেন করোনা আসার পর। পরিতোষ আমায় অনুরোধ করেছে যে ‘মন কি বাত’ এর সমস্ত শ্রোতাদের যেন আমি বলি- তারা যাতে তাদের আশেপাশের গাছপালা সম্পর্কে জানেন এবং অন্যদেরও জানান। আসলে এগুলি আমাদের শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য, যা আমাদেরই সংরক্ষণ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে বলি, মধ্যপ্রদেশের ছাতনা জেলার এক বন্ধু শ্রীমান রামলোটন কুসওয়াহা জি একটি প্রশংসনীয় কাজ করেছেন। রামলোটন জি তার ক্ষেতে একটি দেশীয় মিউজিয়াম বানিয়েছেন। এই মিউজিয়ামে তিনি অসংখ্য ঔষধি গুণাগুণ সম্পন্ন ভেষজ গাছ-পালা ও বীজ সংগ্রহ করে রেখেছেন। তিনি তা দূর দুরান্ত থেকে সংগ্রহ করে এখানে এনেছেন। তাছাড়া তিনি প্রতিবছর বহু ধরনের ভারতীয় শাকসবজিও চাষ করে থাকেন। রামলোটন জির এই বাগান ও দেশীয় মিউজিয়াম বহু লোক দেখতেও আসেন এবং সেখান থেকে অনেক কিছু শিখেও যান। সত্যিই এ এক অদ্ভুত সুন্দর উদ্যোগ যা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ও বহু জায়গায় প্রয়োগ করা যেতে পারে। আমি চাই, আপনাদের মধ্যে যারা এরকম কিছু করতে সক্ষম তারা যেন তা অবশ্যই করেন। এর ফলে আপনার উপার্জনের একটা নতুন সুযোগও তৈরি হতে পারে। আর অন্যদিকে, স্থানীয় গাছপালার জন্য আপনার অঞ্চলের পরিচিতিও তাতে বাড়বে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আর কিছুদিন বাদে পয়লা জুলাই আমরা ন্যাশানাল ডক্টরস ডে পালন করব। এই দিনটি দেশের বিশিষ্ট চিকিৎসক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ডক্টর বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে উদযাপিত হয়। করোনার সময় ডাক্তারদের ভূমিকায় আমরা সবাই যথার্থই কৃতজ্ঞ। আমাদের চিকিৎসকেরা নিজেদের প্রাণ এর পরোয়া না করে আমাদের সেবা করেছে। সেজন্যই এ বছর জাতীয় চিকিৎসক দিবস আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বন্ধুরা, চিকিৎসার দুনিয়ার সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন "Whenever the art of medicine is loved there is also a love of Humanity'' অর্থাৎ যেখানে ওষুধের গুনাগুনের এর জন্য ভালোবাসা থাকে সেখানে মানবতার জন্যেও ভালোবাসা থাকে। চিকিৎসকেরা এই ভালবাসার শক্তি দিয়েই আমাদের সেবা করে থাকেন। সেজন্য আমাদের দায়িত্ব ততটাই ভালোবাসার সঙ্গে তাদের ধন্যবাদ জানানো ও উৎসাহিত করা। যদিও আমাদের দেশে এমন বহু মানুষ রয়েছেন যারা ডাক্তারদের সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেন এবং তাদের সহযোগিতা করেন। শ্রীনগর থেকে এরকমই এক উদ্যোগের বিষয়ে আমি জানতে পেরেছি, সেখানে ডাল লেকে একটি বোট আম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এই পরিষেবাটি শুরু করেছেন শ্রীনগরের একজন হাউসবোট মালিক তারিখ আহমেদ পাতলু। তিনি নিজেও একজন কোভিড যোদ্ধা, যা তাকে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করতে অনুপ্রাণিত করেছে। তার সেই অ্যাম্বুলেন্স থেকে সচেতনতা বৃদ্ধির অভিযানও চলছে, তিনি সেজন্য তার অ্যাম্বুলেন্স থেকে অনবরত এ বিষয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। প্রচেষ্টা এটাই যে- জনসাধারণ যেন মাস্ক পরা থেকে শুরু করে অন্যান্য সমস্ত প্রয়োজনীয় সতর্কতাঃ মেনে চলেন, তা নিশ্চিত করা।
বন্ধুরা, ডক্টরস ডে র সঙ্গে সঙ্গে পয়লা জুলাই চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেটস ডেও পালন করা হয়। আমি কয়েক বছর আগে দেশের চার্টার্ড অ্যাকাউন্টটেন্টদের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক স্তরের ভারতীয় অডিট ফার্ম উপহার চেয়েছিলাম। আজ আমি তাদের সেই কথা মনে করিয়ে দিতে চাই। অর্থব্যবস্থায় পারদর্শিতা আনবার জন্য চার্টার্ড অ্যাকাউন্টটেন্টরা খুব ভাল এবং ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারেন। আমি প্রত্যেক চার্টার্ড অ্যাকাউন্টটেন্ট ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আমার শুভেচ্ছা জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, করোনার বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধের একটা বিশেষত্ব আছে। এই যুদ্ধে দেশের প্রতিটি ব্যক্তি নিজের ভূমিকা পালন করেছেন। আমি ‘মন কি বাত’ এ অনেকবার এটা বলেছি। কিন্তু কিছু মানুষের অভিযোগও থাকে যে তাদের ব্যাপারে অতোটা বলা হয় না। অনেক লোক, তা সে ব্যাংক স্টাফই হোক, টিচার হোক, ছোটো ব্যবসায়ী বা দোকানদার হোক , দোকানের কর্মী হোক, ফুটপাথের হকার ভাই বোনেরা হোক, নিরাপত্তা কর্মী হোক বা ডাক পিয়ন বা ডাকঘরের কর্মচারী- আসলে এই লিস্ট বিরাট লম্বা, আর প্রত্যেকে নিজের ভুমিকা পালন করেছেন। প্রশাসন ও শাসনব্যবস্থাতেও কতো মানুষ আলাদা আলাদা স্তরে কাজ করছেন।
বন্ধুরা, আপনারা সম্ভবত গুরুপ্রসাদ মহাপাত্রের নাম শুনেছেন যিনি ভারত সরকারের সচিব ছিলেন । আমি আজ ‘মন কি বাত’ এ তাঁর উল্লেখ করতে চাই। গুরুপ্রসাদ জীর করোনা হয়েছিল তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন আর নিজের কর্তব্য করে যাচ্ছিলেন । দেশে অক্সিজেনের উৎপাদন যাতে বৃদ্ধি পায় ও দূর দুরান্তে অক্সিজেন পৌঁছয় এর জন্য তিনি দিন রাত কাজ করেছেন। এক দিকে কোর্ট কাছারীতে ঘোরাঘুরি, মিডিয়ার চাপ- এক সাথে উনি অনেক গুলি ব্যাপারে লড়ছিলেন, অসুখের সময়েও তিনি কাজ বন্ধ করেন নি । বারণ করা সত্বেও উনি জেদ করে অক্সিজেনের ব্যাপারে হওয়া ভিডিও কনফারেন্স গুলিতে থাকতেন । ওঁর কাছে দেশবাসীর চিন্তা ছিল। হাসপাতেলের বেডেও উনি নিজের চিন্তা ছেড়ে দেশের লোকের কাছে যাতে অক্সিজেন পৌঁছয় সেই ব্যবস্থা করায় ব্যস্ত ছিলেন। আমাদের প্রত্যেকের জন্য এটি দুঃখজনক যে এরকম একজন কর্ম যোগীকে দেশ হারিয়েছে । করোনা ওঁকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে । এরকম অগুন্তি মানুষ আছেন যাদের কথা কখোনো বলা হয় নি। এরকম মানুষদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি এটাই হবে যে প্রত্যেকে আমরা সম্পুর্ণ কোভিড প্রোটোকল মেনে চলি, ভ্যক্সিন অবশ্যই নিই।
আমার প্রিয় দেশবাসী ‘মন কি বাত’ এর সবথেকে ভাল দিক হল যে এতে আমার থেকে আপনাদের অংশ গ্রহন বেশি থাকে। এক্ষুনি আমি মাই গভ-এ চেন্নাই-এর থিরু আর গুরুপ্রসাদের একটী পোস্ট দেখলাম। উনি যা লিখেছেন সেটা জেনে আপনাদের ও ভাল লাগবে।উনি লিখেছেন যে উনি মন কি বাত অনুষ্ঠানের নিয়মিত শ্রোতা। গুরুপ্রসাদজীর পোস্ট থেকে আমি কিছু লাইন উদ্ধৃত করছি। উনি লিখেছেন “যখনই আপনি তামিলনাড়ু সম্বন্ধে বলেন তখন আমার আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। আপনি তামিল ভাষা, তামিল সংস্কৃতির মহত্ব, তামিল উৎসবগুলি ও তামিলনাড়ুর বিশিষ্ট স্থানগুলির আলোচনা করেছেন । গুরুপ্রসাদজী আরো লিখেছেন যে মন কি বাত এ আমি তামিলনাড়ুর লোকেদের সাফল্য সম্বন্ধেও অনেকবার বলেছি। তিরুক্কুরল এর প্রতি আপনার ভালবাসা ও তিরুবল্লুবরজীর প্রতি আপনার শ্রদ্ধার সম্পর্কে আর কি ই বা বলা যায়। এইজন্য আমি ‘মন কি বাত’ এ আপনি তামিলনাড়ু সম্বন্ধে যা বলেছেন সব সংগ্রহ করে একটা ই –বুক তৈরি করেছি।আপনি কি এই ই- বুক সম্পর্কে কিছু বলবেন ? আর নমো অ্যাপের ও এটিকে প্রকাশ করবেন? ধন্যবাদ।
এটা গুরুপ্রসাদজীর লেখা চিঠি আমি আপনাদের সামনে পড়ছিলাম। গুরুপ্রসাদজী আপনার পোস্টটী পড়ে খুব আনন্দ পেলাম। এখন আপনি আপনার ই-বুকে আরও একটি পাতা জুড়ে দিন ।
...নান তমিলকলা চারাক্তিন পেরিয়ে অভিমানী
নান উলগতলয়ে পলমায়াং তমিল মোলিইয়ন পেরিয়ে অভিমানী।
উচ্চারণের ত্রুটি অবশ্যই হবে, কিন্তু আমার চেষ্টা আর ভালবাসা কখনো কমবে না। যারা তামিল ভাষী নন তাদের আমি বলতে চাই গুরুপ্রসাদজীকে আমি বললাম
আমি তামিল সংস্কৃতির বড় ভক্ত
আমি পৃথিবীর সব থেকে পুরোনো ভাষা তামিলের বড় ভক্ত।
বন্ধুরা, বিশ্বের সব থেকে পুরোনো ভাষা তামিল, আমাদের দেশের, প্রত্যেক ভারতবাসীর এর গুণগান করাই উচিৎ, এর প্রতি গর্ব অনুভব করা উচিৎ । আমিও তামিল নিয়ে খুব গর্ব বোধ করি। গুরুপ্রসাদজী আপনার এই প্র্য়াস আমায় নতুন দৃষ্টিদান করল। কারন আমি আমি যখন ‘মন কি বাত’ করি, সহজ সরল ভাবে নিজের বক্তব্য রাখি। আমি জানতামই না যে এও এটার একটা অঙ্গ। আপনি যখন সব পুরোনো কথা সংগ্রহ করলেন তখন আমিও সেটা একবার নয় দু-দুবার পড়লাম । গুরুপ্রসাদজী আপনার এই বইটি আমি নমো আপেও নিশ্চয় আপলোড করাব। ভবিষ্যতের চেষ্টার জন্য আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ আমরা করোনার অসুবিধে ও সাবধানতা সম্বন্ধে কথা বললাম , দেশের ও দেশবাসীর কিছু অভিজ্ঞতা নিয়েও আলোচনা করলাম। এখন একটা বড় সুযোগ আমাদের সামনে আছে. ১৫ ই অগাস্টও আসছে। স্বাধীনতার ৭৫ বছরের অমৃত মহোৎসব আমাদের জন্য খুব বড় প্রেরণা। আমরা দেশের জন্য বাঁচতে শিখি। স্বাধীনতার যুদ্ধ দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গের গাথা। স্বাধীনতার পরের এই সময় কে আমাদের দেশের জন্য বেঁচে থাকা মানুষদের জীবন গাথা করে তুলতে হবে, আমাদের মন্ত্র হওয়া উচিত – ভারতই হবে প্রথম, আমাদের সব সিদ্ধান্ত, সব নির্ণয় এর আধার হওয়া উচিত ইন্ডিয়া ফার্স্ট।
বন্ধুরা অমৃত মহোৎসব দেশের কিছু সামগ্রিক লক্ষ্যও স্থির করেছে। যেমন আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মৃতিচারণ করে তাঁদের ইতিহাস কে পুনরুজ্জীবিত করা প্রয়োজন । আপনাদের হয়তো মনে আছে যে আমি ‘মন কি বাত’ এ যুব সম্প্রদায় কে স্বাধীনতা সংগ্রামের ওপর ইতিহাস লিখতে ও গবেষণা করার অনুরোধ করেছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল যে যুব সম্প্রদা্যের প্রতিভা এগিয়ে আসুক, যুব চিন্তা যুব ভাবনা সামনে আসুক, যাতে যুব লেখনী নতুন উৎসাহের সঙ্গে লেখে। আমার এটা দেখে খুব ভাল লাগল যে খুব কম সময়ের মধ্যে আড়াই হাজারের ও বেশি যুবক-যুবতী এই কাজ করার জন্য এগিয়ে এসেছেন । বন্ধুরা মজার কথা এই যে উনবিংশ আর বিংশ শতাব্দীর যুদ্ধের কথা তো প্রায়শই হয়, একবিংশ শতাব্দীতে যারা জন্মেছেন এরকম তরুন বন্ধুরাও উনবিংশ আর বিংশ শতাব্দীর স্বাধীনতার যুদ্ধের ব্যাপারে মানুষকে জানাবার জন্য কাজ করেছেন । এরা সবাই মাই গভের সম্পুর্ণ বিবরণ পাঠিয়েছেন। এরা হিন্দি, ইংলিশ, তমিল , কন্নড় , বাংলা , তেলেগু, মারাঠী, মালয়ালম, গুজরাতী দেশের এইরকম, আলাদা আলাদা ভাষায় স্বাধীনতা সংগ্রামের ওপর লিখবেন। কেউ স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে যুক্ত আশেপাশের অঞ্চলের তথ্য জোগাড় করছেন আবার কেউ আদিবাসী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ওপর বই লিখছে্ন । একটা ভাল আরম্ভ। আপনাদের সবাইকে অনুরোধ যে যেভাবে পারেন অমৃত মহোৎসবের সঙ্গে অবশ্যই যুক্ত হোন। এটা আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা স্বাধীনতার ৭৫ তম অধ্যায়ের সাক্ষী থাকতে পারছি। তাই এর পরের বার যখন মন কি বাত করব তখন অমৃত মহোৎসবের প্রস্তুতি নিয়েও কথা বলব। আপনারা সবাই সুস্থ থাকুন। করোনা সম্পর্কিত সব নিয়মগুলি মেনে এগিয়ে চলুন। নিজেদের নতুন নতুন প্রয়াসের দ্বারা দেশকে এরকমই গতিময় করে রাখুন। এই শুভেচ্ছার সঙ্গে অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আমরা দেখছি যে দেশ পুরো শক্তি নিয়ে কিভাবে কোভিড নাইনটিনের বিরুদ্ধে লড়ছে। গত একশো বছরের মধ্যে এটা সবথেকে বড় মহামারী আর এই মহামারীর মধ্যে ভারত অনেক প্রাকৃতিক বিপর্যয়েরও মোকাবিলা করেছে সাহসের সঙ্গে। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এসেছে, ঘূর্ণিঝড় নিসর্গ এসেছে, অনেক রাজ্যে বন্যা হয়েছে, ছোট বড় অনেক ভূমিকম্প হয়েছে, ভূ-স্খলন হয়েছে। এই সম্প্রতি গত দশ দিনের মধ্যে আবার দুটো বড় ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হয়েছে আমাদের দেশ। পশ্চিম ঊপকূলে ঘূর্ণিঝড় তাউতে আর পূর্ব উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। এই দুটো ঘূর্ণিঝড় বেশ কয়েকটি রাজ্যকে প্রভাবিত করেছে। দেশ আর দেশের জনতা এই দূয়ের সঙ্গে পূর্ণ শক্তি নিয়ে লড়েছে আর যতটা সম্ভব কম প্রাণহানি সুনিশ্চিত করেছে। আমরা এখন এটা অনুভব করছি যে আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে। বিপর্যয়ের এই কঠিন ও অ-সাধারণ পরিস্থিতিতে ঘূর্ণিঝড় প্রভাবিত সব রাজ্যের মানুষ যেরকম সাহসের পরিচয় দিয়েছেন, এই সঙ্কটের সময় অনেক ধৈর্য নিয়ে, অনুশাসন মেনে মোকাবিলা করেছেন তাতে আমি সমাদরে, হৃদয় থেকে সব নাগরিকের প্রশংসা করতে চাই। যে সব মানুষ এগিয়ে এসে ত্রাণ আর উদ্ধারের কাজে অংশ নিয়েছেন, এমন সব মানুষের যতই প্রশংসা করা যাক, তা কম হবে। আমি এদের সবাইকে স্যালুট জানাই। কেন্দ্র, রাজ্য সরকার, স্থানীয় প্রশাসন সবাই এক হয়ে এই বিপর্যয়ের মোকাবিলা করছে। আমি সেই সব মানুষের প্রতি আমার সমবেদনা জানাই যাঁরা নিজেদের আপনজনদের হারিয়েছেন। আমরা সবাই এই কঠিন সময়ে দৃঢ়তা নিয়ে তাঁদের সঙ্গে রয়েছি যাঁরা এই বিপর্যয়ের ক্ষয়ক্ষতি সহ্য করেছেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, চ্যালেঞ্জ যতই বড় হোক, ভারতের জয়ের সঙ্কল্পও সবসময় ততই বড় থেকেছে। দেশের সমষ্টিগত শক্তি আর আমাদের সেবার মনোভাব, দেশকে সব ঝঞ্ঝা থেকে মুক্ত করেছে। সাম্প্রতিককালে আমরা দেখেছি যে কেমনভাবে আমাদের ডাক্তার, নার্স এবং সামনের সারির যোদ্ধারা - তাঁরা নিজেদের চিন্তা ছেড়ে দিনরাত কাজ করেছেন এবং আজও করছেন। এই সবের মাঝে কিছু মানুষ এমনও আছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিরুদ্ধে লড়ার ক্ষেত্রে যাঁদের বড় ভূমিকা আছে। ‘মন কি বাত’-এর অনেক শ্রোতা নমো অ্যাপে চিঠি পাঠিয়ে এইসব যোদ্ধাদের সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য আমাকে অনুরোধ করেছেন।
বন্ধুরা, যখন দ্বিতীয় ঢেউ এল, অক্সিজেনের চাহিদা হঠাৎ কয়েক গুণ বেড়ে গেল যা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। দেশের দূর দূর অংশে মেডিকেল অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া এমনিতেই ছিল বড় একটা চ্যালেঞ্জ। অক্সিজেন ট্যাঙ্কার অনেক বেশি গতিতে চলেছিল। ছোট একটা ভুল হলেও তাতে অনেক বড় বিস্ফোরণের ঝুঁকি ছিল। শিল্পের জন্য অক্সিজেন উৎপাদনের অনেক প্লান্ট দেশের পূর্ব অংশে রয়েছে, ওখান থেকে অন্যান্য রাজ্যে অক্সিজেন পৌঁছতে বেশ কয়েক দিন সময় লাগে। দেশের সামনে এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে দেশকে সাহায্য করে ক্রায়োজেনিক ট্যাঙ্কারের চালকরা, অক্সিজেন এক্সপ্রেস এবং বিমান বাহিনীর পাইলটরা। এইভাবে তাঁরা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করে লক্ষ-লক্ষ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। আজ ‘মন কি বাতে’ আমাদের সঙ্গে এমনই এক বন্ধু যুক্ত হচ্ছেন – উত্তরপ্রদেশের জৌনপুরের নিবাসী শ্রীমান দীনেশ উপাধ্যায় মহোদয়।
মোদী জি – দীনেশ জি, নমস্কার।
দীনেশ উপাধ্যায় জি – স্যার জি, প্রণাম।
মোদী জি – সবার আগে তো আমি চাইব যে আপনি নিজের ব্যাপারে অবশ্যই কিছু বলুন।
দীনেশ উপাধ্যায় জি – স্যার আমার নাম দীনেশ বাবুলনাথ উপাধ্যায়। আমি হসনপুর গ্রাম, ডাকঘর জমুয়া, জেলা জৌনপুরের নিবাসী স্যার।
মোদী জি – উত্তর প্রদেশে থাকেন আপনি?
দীনেশ উপাধ্যায় জি – হ্যাঁ হ্যাঁ স্যার।
মোদী জি – আচ্ছা
দীনেশ উপাধ্যায় জি – আর স্যার আমার এক ছেলে, দুই মেয়ে, স্ত্রী আর মা-বাবা আছেন।
মোদী জি – আর, আপনি কী করেন?
দীনেশ উপাধ্যায় জি – স্যার আমি অক্সিজেনের ট্যাঙ্কার চালাই…তরল অক্সিজেনের।
মোদী জি – ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ঠিক মত হচ্ছে?
দীনেশ উপাধ্যায় জি – হ্যাঁ স্যার, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া হচ্ছে। দুই মেয়েও পড়ছে আর আমার ছেলেও পড়ছে।
মোদী জি – ওদের এই অনলাইন লেখাপড়াও ঠিকমত চলছে তো?
দীনেশ উপাধ্যায় জি – হ্যাঁ স্যার, ভালোভাবে করছে, এখন আমার মেয়েরা পড়ছে। অনলাইনেও পড়ছে স্যার। স্যার, ১৫ থেকে ১৭ বছর হয়ে গেল স্যার, আমি অক্সিজেনের ট্যাঙ্কার চালাই স্যার।
মোদী জি – আচ্ছা! আপনি এই ১৫-১৭ বছর ধরে শুধু অক্সিজেন নিয়ে যাচ্ছেন, মানে আপনি কেবল ট্রাক ড্রাইভার নন। আপনি এক অর্থে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বাঁচানোর কাজে যুক্ত আছেন।
দীনেশ - স্যার, আমাদের কাজই এরকম স্যার। আইনক্স নামে অক্সিজেন ট্যাঙ্কার-এর যে কোম্পানি আছে, সেটিও আমাদের লোকেদের খেয়াল রাখে। এবং আমরা প্রয়োজনে যে কোনো জায়গায় গিয়ে অক্সিজেন ট্যাঙ্কার খালি করতে পারলে খুশি হই স্যার।
মোদীজি - তবে করোনার সময়ে আপনাদের দায়িত্ব অনেকটাই বেড়েছে।
দীনেশ - হ্যাঁ স্যার, অনেকটাই বেড়েছে।
মোদীজী - আপনি যখন ট্রাকের ড্রাইভিং সিটে থাকেন তখন আপনার মনে ঠিক কি চলে? আগের চেয়ে কতটা আলাদা সেই অনুভূতি? অনেকটা চাপে থাকতে হয় নিশ্চয়ই? মানসিক চাপ ও থাকে। পরিবারের চিন্তা, করোনার এরকম পরিস্থিতি, মানুষের থেকে আসা চাপ, তাদের বিভিন্ন চাহিদা। কত কিছুই চলে নিশ্চয়ই।
দীনেশ - স্যার আমরা এসব নিয়ে চিন্তিত হইনা। আমরা শুধু এটাই ভাবি যে আমরা আমাদের কর্তব্য করছি এবং যদি সময়মতো আমরা অক্সিজেন পৌঁছে দিতে পারি, আর তাতে যদি কারো প্রাণ বাঁচে, সেটাই আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়।
মোদী জী - আপনি খুব সুন্দর করে আপনার অনুভূতি প্রকাশ করলেন। আচ্ছা,বলুন তো, আজ যখন লোকেরা এই মহামারী চলাকালীন আপনার কাজের গুরুত্ব বুঝছেন, আগে হয়তো তারা এতটা বুঝতে পারেন নি, কিন্তু এখন বুঝতে পারছেন, তখন আপনার প্রতি এবং আপনার কাজের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে কি কোনো বদল লক্ষ্য করেছেন?
দীনেশ - হ্যাঁ স্যার! আগে বহুবার আমরা, মানে অক্সিজেন ট্যাঙ্কার চালকরা, জ্যামে আটকে থাকতাম। কিন্তু আজকের তারিখে, প্রশাসন আমাদের খুব সাহায্য করে। এবং আমরাও যখনি কাজে বেরোই আমাদের মনেও এটাই কাজ করে যে কত তাড়াতাড়ি পৌঁছে আমরা মানুষের জীবন বাঁচাতে পারি, স্যার। আমরা খাবার খাই বা না খাই, বা অন্যান্য যে কোনো সমস্যার মুখোমুখি হই না কেন,যখন সময়মতো অক্সিজেন ট্যাঙ্কার নিয়ে আমরা হাসপাতালে পৌঁছোই আর ওখানে উপস্থিত লোকজন, বিশেষ করে রোগীর পরিজনেরা আমাদের ‘ভি’ সাইন দেখায়।
মোদীজি – ‘ভি’ সাইন মানে ভিকট্রি সাইনের কথা বলছেন?
দীনেশ - হ্যাঁ স্যার! কেউ ‘ভি’ সাইন দেখায় কেউ আবার বুড়ো আঙুল দেখায়। এটাই ভেবে ভালো লাগে যে হয়তো আমরা এই জীবনে কিছু ভাল কাজ করেছি যে এমন মানব সেবার সুযোগ মিলেছে।
মোদীজি- এটা ভেবেই সব ক্লান্তি কেটে যায় নিশ্চয়ই?
দীনেশ - হ্যাঁ স্যার! হ্যাঁ স্যার!
মোদীজি- আপনি বাড়ি ফিরে বাচ্চাদের এসব বলেন?
দীনেশ - না স্যার। আমার বাচ্চারা গ্রামে থাকে । আমি তো এখানে আইএনওএক্স এয়ার প্রোডাক্টে, ড্রাইভার হিসাবে কাজ করছি। ৮-৯ মাস পর বাড়িতে যাই।
মোদীজি- আপনি ফোনে বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলেন?
দীনেশ - হ্যাঁ স্যার! প্রায়ই কথা হয়।
মোদীজি- তারাও নিশ্চয়ই বলে যে এরকম সময়ে সাবধানে থেকো বাবা ?
দীনেশ - স্যার, ওরা বলে, বাবা কাজ করো তবে নিজের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে। আমরাও স্যার সাবধানতার সঙ্গেই কাজ করি, আমাদের মানগাঁও-তেও আমাদের প্ল্যান্ট আছে, আর আমাদের অফিস আইনক্স আমাদের খুব সাহায্য করে।
মোদীজি - দীনেশবাবু, আমার খুব ভাল লাগল আপনার কথা শুনে এবং দেশও অনুভব করবে যে এই করোনার লড়াইয়ে - কীভাবে, কত কত মানুষ কাজ করে চলেছেন। আপনি ৯ মাস ধরে আপনার সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না। শুধুমাত্র মানুষের প্রাণ বাঁচানোর জন্য আপনি আপনার পরিবারের সঙ্গেও দেখা করছেন না। যখন এই দেশ শুনবে তারা তখন গর্ব করবে যে দীনেশ উপাধ্যায়ের মত লক্ষ লক্ষ মানুষ নিরলস কাজ করে গেছেন বলেই আমরা যুদ্ধটা জিততে পারবো।
দীনেশ – স্যার জি! আমরা কোনও না কোনো দিন করোনাকে পরাজিত করবই, স্যার জি।
মোদীজী - দীনেশবাবু, আপনার চেতনাই দেশের শক্তি। অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই আপনাকে দীনেশবাবু। আপনার সন্তানদের জন্য আমার আশীর্বাদ রইলো।
দীনেশ - ঠিক আছে স্যার, প্রণাম ।
মোদীজি – ধন্যবাদ ।
বন্ধুরা, দীনেশবাবু যেমন বলছিলেন, সত্যি একজন ট্যাঙ্কার চালক যখন
অক্সিজেন নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছান, মনে হয় যেন ঈশ্বরের প্রেরিত দুত । আমরা সবাই জানি কতটা দায়িত্বপূর্ণ এই কাজ এবং কাজটা করতে গিয়ে কতটা মানসিক চাপের মধ্যে থাকতে হয়। বন্ধুরা, এরকম সংকটপূর্ণ সময়ে অক্সিজেনের পরিবহনকে সহজ করতে ভারতীয় রেল এগিয়ে এসেছে। অক্সিজেন এক্সপ্রেস এবং অক্সিজেন রেল, অক্সিজেন ট্যাঙ্কার-এর চেয়েও দ্রুত সময়ে এবং অনেক বেশি পরিমাণে অক্সিজেন দেশের কোনায় কোনায় পৌঁছে দিয়েছে। মা-বোনেদের এটা শুনে গর্ব হবে যে একটি অক্সিজেন এক্সপ্রেস তো শুধুমাত্র মহিলারাই চালাচ্ছেন। দেশের প্রত্যেকটি নারীর এটা শুনে গর্ব হবার কথা। শুধুমাত্র নারীরাই নন প্রত্যেক ভারতবাসীর এটা শুনে গর্ব হবে। আমি অক্সিজেন এক্সপ্রেসের লোকো পাইলট শিরিষা গজনি জীকে ‘মন কি বাত’ এ আমন্ত্রন জানিয়েছিলাম।
মোদী জি - নমস্কার শিরিষা জি।
শিরিষা জি - নমস্কার স্যার, কেমন আছেন স্যার?
মোদী জি - আমি ভালই আছি। শিরিষা জি, আমি শুনেছি আপনি রেলওয়ে পাইলট হিসেবে কাজ করছেন এবং আমাকে জানানো হয়েছে যে, আপনার পুরো মহিলাদের দ্বারা গঠিত একটি দল আছে যাঁরা এই অক্সিজেন এক্সপ্রেস চালায়। শিরিষা জি আপনি অসাধারণ কাজ করছেন। করোনা কালে আপনার মত বহু মহিলা এগিয়ে এসে করোনার সঙ্গে যুঝতে দেশকে শক্তি দিয়েছে। আপনি নারী শক্তির একটি বিশাল নিদর্শন। আমি জানতে চাই আপনি কোথা থেকে এই অনুপ্রেরণা পান?
শিরিষা জি - স্যার আমার অনুপ্রেরণা আমার বাবা-মা’র থেকে আসে স্যার। আমার বাবা সরকারী কর্মচারী স্যার। আসলে আমার দুই বড় দিদি আছে। আমরা তিন মেয়ে, কিন্তু বাবা আমাদের কাজে খুব উৎসাহ দেন, আমার বড় দিদি ব্যাংকে সরকারি কর্মী আর আমি রেলে কাজ করি। আমার বাবা-মা ই আমার অনুপ্রেরণা।
মোদী জি - আচ্ছা শিরিষা জি আপনি সাধারণ সময়েও রেলওয়ের সেবা করেছেন। ট্রেনকে স্বাভাবিকভাবে চালিয়েছেন। কিন্তু যখন একদিকে অক্সিজেনের এত চাহিদা এবং যখন আপনি অক্সিজেন নিয়ে আসছেন তখন কাজটা আরও কিছুটা দায়িত্বের হয়ে যায়, তখন আপনার দায়িত্বও কিছুটা বেড়ে যায়। সাধারণ পণ্য নিয়ে যাওয়া এক রকম ব্যাপার, অক্সিজেন খুব স্পর্শকাতর জিনিষ, আপনার অভিজ্ঞতা কীরকম শুনতে চাই।
শিরিষাঃ আমার খুব ভালো লাগে এই কাজ করার সময়। অক্সিজেন স্পেশাল ট্রেনের সময় সব কিছু দেখভাল করেছি, সুরক্ষার ক্ষেত্রে, ফরমেশনের ক্ষেত্রে, লিকেজ আছে কি না? এ ছাড়াও ভারতীয় রেল খুব সাহায্য করে স্যার। এই অক্সিজেন এক্সপ্রেস চালানোর জন্য আমায় গ্রিনপাথ দেওয়া হয়। এই গাড়ি নিয়ে ১২৫ কিমি. আমি দেড় ঘন্টায় অতিক্রম করি। এতটা দায়িত্ব রেলওয়েও নিয়েছে, আমিও নিয়েছি।
মোদী জি - বাহ। শিরিষা জি আপনাকে অনেক অভিনন্দন এবং আপনার বাবা ও মাকে আলাদা ভাবে প্রনাম জানাচ্ছি, যাঁরা তিন মেয়েকে এতটা অনুপ্রেরণা দিয়েছেন এবং এত আগে নিয়ে গেছেন এবং এরকম সাহস জুগিয়েছেন। আমি এরকম মা-বাবা কে প্রণাম জানাই এবং আপনাদের তিন বোনকেও প্রণাম যারা এভাবে দেশের সেবা করেছেন এবং এরকম উৎসাহ দেখিয়েছেন। অনেক অনেক ধন্যবাদ শিরিষা জি।
শিরিষা জি - ধন্যবাদ স্যার, থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। আপনার আশীর্বাদ চাই।
মোদী জি - আপনার উপর ঈশ্বরের আশীর্বাদ সবসময় থাকুক, আপনার বাবা-মার আশীর্বাদ সর্বক্ষণ থাকুক, ধন্যবাদ।
শিরিষা জি - ধন্যবাদ স্যার।
বন্ধুরা, আমরা শিরিষা জি’র কথা শুনলাম, ওঁর অভিজ্ঞতা আমাদের প্রেরণা জোগায়, আমাদের ভাবতে বাধ্য করে। বাস্তবে এই লড়াই এত বড়, এতে রেলওয়ের মতই আমাদের দেশ জল, স্থল, আকাশ তিন জায়গাতেই কাজ করছে। এক দিকে খালি ট্যাংকারগুলিকে বিমান বাহিনীর বিমানগুলি অক্সিজেন প্লান্টস অব্দি পৌঁছে দিচ্ছে, অন্য দিকে নতুন অক্সিজেন প্লান্ট তৈরির কাজ-ও চলছে। এর পাশাপাশি বিদেশ থেকে অক্সিজেন, অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেটর এবং ক্রায়োজনিক ট্যাঙ্কারও দেশে আনা হচ্ছে। এই জন্য এই কাজে নৌ, বিমান ও সেনা বাহিনী এবং ডিআরডিও-র মত আমাদের সংস্থাগুলি যুক্ত রয়েছে। আমাদের বহু বৈজ্ঞানিক, শিল্প সংস্থার বিশেষজ্ঞ এবং প্রযুক্তিবিদরা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করছে।
এদের সবার কাজ জানার, সমর্থন করার ইচ্ছে প্রত্যেক দেশবাসীর মনে রয়েছে। এই কারণে আমাদের সঙ্গে আমাদের বিমান বাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন পটনায়ক জি যুক্ত হচ্ছেন।
মোদী জি - পটনায়ক জি জয় হিন্দ।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন - স্যার জয় হিন্দ। স্যার আমি গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে পটনায়ক। বায়ুসেনা স্টেশন হিন্ডন থেকে কথা বলছি।
মোদী জি - পটনায়ক জি, করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের সময় আপনি বিশাল বড় দায়িত্ব পালন করছেন। সারা পৃথিবী ঘুরে ট্যাংকার আনা, ট্যাংকার এখানে পৌছনো। আমি জানতে চাইব একজন সৈনিক হিসেবে আপনি একটি ভিন্ন প্রকৃতির কাজ করেছেন। মরতে বা জীবন দিতে আপনি দৌড়দৌড়ি করেন। আজ আপনি জীবন বাঁচানোর জন্য দৌড়চ্ছেন। আপনার অভিজ্ঞতা কেমন জানতে চাই।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন - স্যার, এই সঙ্কট কালে আমাদের দেশবাসী কে সাহায্য করতে পারা আমাদের জন্য ভীষণ সৌভাগ্যের কাজ, স্যার। এবং যা যা মিশন আমরা পেয়েছি তা আমরা সফল ভাবে সম্পূর্ণ করছি। আমাদের প্রশিক্ষণ এবং সহায়ক ব্যবস্থা, আমাদের সম্পূর্ণ সাহায্য করছে। এবং সবচেয়ে বড় ব্যাপার স্যার এতে আমরা কাজ করে যে আনন্দ পাচ্ছি তা খুবই উচ্চ স্তরের এবং এই কারণেই আমরা নিরলসভাবে কাজ করতে পারছি।
মোদী জি- ক্যাপ্টেন, আপনারা এই কয়েকদিনে যে বিশেষ প্রচেষ্টা করেছেন, খুব কম সময়ের মধ্যে সবকিছু করতে হয়েছে। কেমন ছিল সেই দিনগুলো?
গ্রুপ ক্যাপ্টেন- স্যার, গত এক মাসে আমরা ক্রমাগত অক্সিজেন ট্যাংকার এবং তরল অক্সিজেন কন্টেনার দেশের এবং বিদেশের গন্তব্য౼ দু জায়গা থেকে তুলে আনছি। প্রায় ১৬০০ সরটিস থেকেও বেশি বিমান পরিবহণ করে এবং প্রায় তিন হাজারেরও বেশি ঘন্টা ধরে উড়েছি এবং ১৬০ টি আন্তর্জাতিক মিশন সম্পন্ন করেছি। এই কারণে আমরা দেশের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে যেখানে অক্সিজেন ট্যাঙ্কারগুলো পৌঁছে দিতে দুই থেকে তিন দিন লাগতো, স্যার আমরা সেখানে দুই থেকে তিন ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে দিতে পেরেছি। আন্তর্জাতিক মিশনের ক্ষেত্রেও ২৪ ঘন্টা অনবরত এই কাজ করেছি। সকল বায়ু সেনার সদস্যরা এই কাজে যুক্ত থেকেছেন যাতে অত্যন্ত দ্রুত আমরা অনেক ট্যাংকার আনতে পারি এবং দেশকে সাহায্য করতে পারি স্যার।
মোদি জি- ক্যাপ্টেন আপনাকে দেশের বাইরে কোন কোন জায়গায় যেতে হয়েছে?
গ্রুপ ক্যাপ্টেন- স্যার, কম সময়ের মধ্যে আমরা সিঙ্গাপুর, দুবাই, বেলজিয়াম, জার্মানি এবং বৃটেনের মত জায়গায় পৌঁছেছি। এই সব জায়গায় বিমান বাহিনীর বিভিন্ন বিমান যেমন IL-76, C-17 ছাড়াও অন্যান্য বিমান পৌঁছেছিল। এছাড়াও C-130ও খুবই কম সময়ের মধ্যে এই মিশনে অংশ নিয়েছে। আমাদের প্রশিক্ষণ এবং উদ্যমের জন্য আমরা সময়মতো এই মিশন সম্পন্ন করতে পেরেছি স্যার।
মোদি জি- দেখুন, এবারে দেশ গর্ব অনুভব করছে যে জলে, স্থলে, আকাশে আমাদের সেনারা এই করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে গেছে। ক্যাপ্টেন আপনিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন যার জন্য আপনাকে আমি অনেক অভিনন্দন জানাচ্ছি।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন- স্যার অনেক ধন্যবাদ। আমরা মনপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করছি আর আমার সঙ্গে আমার মেয়েও আছে, অদিতি।
মোদি জি- আরে বাহ!
অদিতি- নমস্কার মোদীজি।
মোদি জি- নমস্কার বেটি, নমস্কার। অদিতি আপনার বয়স কত?
অদিতি- আমার বয়স ১২ বছর আর আমি ক্লাস এইটে পড়ি।
মোদীজি- তা বাবা যখন বাইরে যান, ইউনিফর্ম পরেন।
অদিতি- হ্যাঁ, ওঁর জন্য আমি খুব গর্বিত। খুব গর্ব অনুভব করি যে উনি এতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন। সকল করোনা-আক্রান্ত মানুষদের এমন সাহায্য করছেন, এতগুলো দেশ থেকে অক্সিজেন ট্যাংকার্স নিয়ে আসছেন, কন্টেনার্স নিয়ে আসছেন।
মোদি জি- কিন্তু মেয়ে তো বাবাকে খুব মিস করে নিশ্চয়ই?
অদিতি- হ্যাঁ আমি ওঁকে খুব মিস করি। উনি আজকাল বাড়িতে থাকতেই পারেন না, কারণ আন্তর্জাতিক বিমানে করে অনেক দেশে কন্টেইনার এবং ট্যাংকার তাদের উৎপাদন কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছেন, যাতে করোনা-আক্রান্ত মানুষরা সময়মত অক্সিজেন পায় এবং তাদের প্রাণ বাঁচে।
মোদি জি- তাহলে বেটি, অক্সিজেনের মাধ্যমে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর এই কাজ এখন প্রত্যেক বাড়িতে সকলেই জানতে পেরেছে।
অদিতি- হ্যাঁ,
মোদি জি- যখন তোমার পরিচিত বন্ধু মহলে, তোমার সমবয়সী ছাত্র-ছাত্রীরা জানতে পারে যে তোমার বাবা অক্সিজেন পরিবহনের মাধ্যমে এমন সেবামূলক কাজে যুক্ত আছেন তখন তোমার প্রতিও তারা সম্ভ্রমসুলভ ব্যবহার করে, তাই না?
অদিতি- হ্যাঁ আমার সব বন্ধুরা এটাই বলে যে তোমার বাবা এত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন আর তার জন্য আমিও খুব গর্বিত, তখন আমারও ভীষণ গর্ব অনুভব হয়। আর আমার পুরো পরিবার, আমার দাদু-দিদা, ঠাকুমা সকলেই আমার বাবার জন্য গর্বিত। আমার মা এবং বাড়ির বাকি সকলেই ডাক্তার, তাঁরাও দিনরাত কাজ করে চলেছেন, আর পুরো বিমান বাহিনী, আমার বাবার স্কোয়াড্রনের সব কাকুরা , এছাড়াও আরো যে সেনারা রয়েছেন সকলেই অনেক কাজ করছেন আর আমার বিশ্বাস সকলের প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ অবশ্যই জিতবো।
মোদীজি- আমাদের এখানে বলা হয় মেয়ে যখন কিছু বলে, তার সেই শব্দে স্বয়ং সরস্বতী বাস করেন, এখন অদিতি যখন বলছে যে আমরা অবশ্যই জিতবো, তাহলে এটা এক রকম ঈশ্বরেরই বাণী। আচ্ছা অদিতি, এখন নিশ্চয়ই অনলাইন পড়াশোনা করছ?
অদিতি - হ্যাঁ, এখন আমাদের সব পড়াশোনা অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে হচ্ছে। আমরা ঘরেও সম্পূর্ণ সুরক্ষা নিচ্ছি। যদি কোথাও বাইরে যেতে হয়, তখন দুটো মাস্ক পরে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও অন্যান্য সব সর্তক বিধি মানছি।
মোদীজি- আচ্ছা, তোমার হবি কি? কি করতে ভাল লাগে তোমার?
অদিতি - আমার হবি হল সাঁতার কাটা আর বাস্কেটবল খেলা। কিন্তু সেসব ত এখন লকডাউনের জন্য বন্ধ। আমার রান্না করা আর বেকিং এর খুব শখ ছিল। এখন আমি অনেক রান্নাবান্না করি, বেকিং করি। বাবা যখন অনেক কাজ করে বাড়ি আসে তখন আমি বাবার জন্য কেক আর কুকিজ বানিয়ে দিই।
মোদীজি- বাহ, বাহ, খুব চমৎকার। অনেক দিন পর বাবার সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছ। খুব ভাল লাগলো। ক্যাপ্টেন আপনাকেও অনেক শুভেচ্ছা। যখন আমি ক্যাপ্টেনকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, তখন আমি শুধু একজন ব্যক্তিবিশেষকে নয়, আমাদের সমস্ত বাহিনী, নৌ, স্থল, বায়ু - সব বাহিনী যে ভাবে একজোট হয়ে কাজ করছে, তার জন্য সকলকে স্যালুট জানাচ্ছি। ধন্যবাদ ভাই।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন - ধন্যবাদ স্যর.
বন্ধুরা, আমাদের এই জওয়ানরা, এই যোদ্ধারা যে কাজ করেছে তার জন্য দেশ এঁদের স্যালুট জানায়। এভাবেই লাখো মানুষ কাজে ব্যস্ত, যা তাদের রুটিন কাজের অংশ নয়। এত বড় বিপর্যয় একশো বছর পর এসেছে, এক শতাব্দী পর এসেছে এমন সংকট। এই জন্য কারও কাছে এই ধরনের কাজের কোন অভিজ্ঞতা নেই। এর পেছনে আছে দেশসেবার আবেগ ও অমোঘ সংকল্পশক্তি। এর দ্বারাই দেশ সেই কাজ করতে পেরেছে যা আগে কখনো হয়নি। আপনারা আন্দাজ করতে পারবেন - স্বাভাবিক সময়ে আমাদের এখানে এক দিনে ৯00 মেট্রিক টন চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত তরল অক্সিজেন উৎপাদন হত। এখন সেটা প্রায় দশগুনের চেয়েও বেশী বেড়ে প্রায় ৯৫00 metric টন প্রতিদিন উৎপাদিত হয়। আর এই অক্সিজেন আমাদের যোদ্ধা-রা দেশের প্রত্যন্ত জায়গায় পৌঁছে দেয়।
আমার প্রিয় দেশবাসী, অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়ার কাজে এত মানুষ এগিয়ে আসেন, এত রকমের চেষ্টা হয়, একজন নাগরিক হিসেবে তা খুবই প্রেরণাদায়ক। একটা টিম হয়ে সকলে নিজের কর্তব্যপালন করেছেন। ব্যাঙ্গালোর থেকে উর্মিলাজি আমাকে জানিয়েছেন তাঁর স্বামী ল্যাব টেকনিশিয়ান এবং কিভাবে প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি নমুনা পরীক্ষার কাজ করে চলেছেন।
বন্ধুরা, করোনা শুরুর সময়ে দেশে কেবল একটি পরীক্ষাগার ছিল। কিন্তু আজ, আড়াই হাজার পরীক্ষাগার কাজ করছে। গোড়ার দিকে দিনে একশোটার মত নমুনা পরীক্ষা হত, এখন কুড়ি লাখেরও বেশী পরীক্ষা একদিনে হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত দেশে তেত্রিশ কোটির বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়ে গেছে। এত বড় কাজ আমাদের এই বন্ধুদের জন্যই সম্ভব হচ্ছে। কতই না সামনের সারির কর্মী আছেন যাঁরা নমুনা সংগ্রহের কাজে যুক্ত আছেন। আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে আসা, তাদের নমুনা নেওয়া এটা অনেক বড় সেবার কাজ। নিজেদের সুরক্ষার্থে এঁদের এত গরমেও সারাক্ষন পিপিই কিট পরে থাকতে হচ্ছে। তার পরই এই নমুনা পরীক্ষাগারে পৌঁছায়। এই জন্য যখন আমি আপনাদের প্রশ্ন, মতামত পড়ছিলাম, তখনই মনে হয় এই বন্ধুদেরও চর্চাও অবশ্যই হওয়া উচিৎ। এঁদের অভিজ্ঞতা থেকে আমরাও অনেক কিছু জানতে পারবো। আসুন, দিল্লিতে একজন ল্যাব টেকনিশিয়ান হিসেবে কর্মরত, আমাদের বন্ধু প্রকাশ কান্ডপালের সঙ্গে কথা বলি।
মোদীজি- প্রকাশজি নমস্কার।
প্রকাশ- নমস্কার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জি।
মোদি জি - প্রকাশজি, সবার আগে আপনি আমাদের ‘মন কি বাত’ এর সমস্ত শ্রোতাদের নিজের ব্যাপারে বলুন। আপনি কতদিন ধরে এই কাজ করছেন এবং করোনার সময়ে আপনার কিরকম অভিজ্ঞতা হয়েছে? দেশের মানুষজন আপনাদের না টিভি তে দেখতে পান না খবরের কাগজে। তবু, এক ঋষির মতো পরীক্ষাগারে নিজের কাজে মগ্ন থেকেছেন। আমি চাই, আপনার মাধ্যমে দেশ জানুক যে দেশে কাজ কিভাবে হচ্ছে।
প্রকাশজি - আমি দিল্লি সরকারের স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা ইন্সটিটিউট অফ লিভার অ্যান্ড বাইলিয়ারি সায়েন্সেস নামে হাসপাতালে বিগত দশ বছর ধরে ল্যাব টেকনিশিয়ান হিসেবে কর্মরত। স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে আমার অভিজ্ঞতা দীর্ঘ বাইশ বছরের। ইন্সটিটিউট অফ লিভার অ্যান্ড বাইলিয়ারি সায়েন্সেস-এর আগে আমি দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতাল, রাজীব গান্ধী ক্যান্সার হাসপাতাল, রোটারি ব্লাড ব্যাঙ্কের মত প্রতিষ্ঠিত সংস্থায় কাজ করে এসেছি। স্যার, সব জায়গায় আমি রক্তকোষ বিভাগে আমার সেবা দিয়েছি কিন্ত গত বছর, পয়লা এপ্রিল ২০২০ থেকে আমি ইন্সটিটিউট অফ লিভার অ্যান্ড বাইলিয়ারি সায়েন্সেস-এর ভাইরোরোলোজি বিভাগের কোভিড টেস্টিং ল্যাবে কাজ করছি। নিঃসন্দেহে কোভিড মহামারীর ফলে স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে অত্যধিক চাপ পড়েছে কিন্তু এই যুদ্ধের সময়টাকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে নিজের জন্য এমন সুযোগ ভাবি যখন রাষ্ট্র, মানবজাতি ও সমাজ আমাদের কাছ থেকে অনেক বেশি দায়িত্ব, অনেক বেশি সহযোগিতা, অনেক বেশি সামর্থ্য আর আমাদের কাছ থেকে অনেকটা বেশি ক্ষমতা প্রদর্শন আশা করে। আর স্যার যখন আমরা ব্যক্তিগত স্তরে রাষ্ট্রের, মানবিকতার, সমাজের আশানুরূপ কাজ করতে পারি, যা কিনা শুধু মাত্র একটা বিন্দুরই মতো, সেটা যখন ঠিক করে করতে পারি, সেই পরীক্ষাটায় যখন উত্তীর্ণ হই তখন একরকম গর্ব হয়। কখনো যখন আমাদের পরিবারের লোকেরাও আশংকিত হয়, বা একটু ভয় পায় সেই সময়ে তাঁদের মনে করিয়ে দিই যে আমাদের দেশের সৈনিকরা যারা কিনা সবসময়েই পরিবার থেকে দূরে সীমান্তে ভীষণ এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দেশ রক্ষার কাজ করছে, তাদের তুলনায় তো আমাদের ঝুঁকি অনেক টাই কম। তখন ওরাও ব্যাপারটা বোঝে আর আমার সঙ্গে সহযোগিতা করে, ওরাও তখন এই বিপদে, সমান ভাবে যেটুকু ওদের পক্ষে সম্ভব , সাহায্য করে।
মোদীজী –প্রকাশ জী একদিকে তো সরকার সবাইকে বলছে , দূরত্ব বজায় রাখুন, দূরত্ব বজায় রাখুন, করোনায় একে অপরের থেকে দূরে থাকো, কিন্তু আপনাকে তো একেবারে সামনা-সামনি, করোনার জীবাণুদের মধ্যেই থাকতে হয়,তার সামনে দিয়েই যেতে হয়, তো এটা তো জীবনকে সংকটে ফেলবার মতোই একটা কাজ তাই পরিবারের চিন্তা হওয়া খুব স্বাভাবিক। কিন্তু এই ল্যাব টেকনিশিয়ান এর কাজ স্বাভাবিক সময়ে একরকম আর এই মহামারীর পরিস্থিতিতে আলাদা, সেটাই আপনি করছেন। তাহলে কাজের সময়ও তো বেড়ে গেছে? অনেক রাতে পরীক্ষাগারেই থাকতে হচ্ছে হয়তো? কারণ এতো কোটি কোটি লোকের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে তার চাপও বাড়ছে, কিন্তু এরা আপনার সুরক্ষার ব্যবস্থা করে তো? নাকি? করে না?
প্রকাশজী – নিশ্চয় করে স্যর। আমাদের ইন্সটিটিউট অফ লিভার অ্যান্ড বাইলিয়ারি সায়েন্সেস যে ল্যাবটা সেটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃত । তাই এখানকার সমস্ত বিধি নিয়ম আন্তর্জাতিক মানের। আমাদের ত্রিস্তরিয় পোষাক আছে সেই পরেই আমরা ল্যাবে যাই আর কাজ করি। সম্পূর্ণ নমুনা সংগ্রহ, লেবেল লাগানো এবং এটার নমুনা পরীক্ষার পুরো একটা নিয়ম আছে , আমরা সেই নিয়ম মেনেই কাজ করি। স্যার এটাও ঈশ্বরের কৃপাই যে এখনো আমার পরিবার আর আমার পরিচিত অনেকেই এই সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত আছেন। এখানে একটা বিষয়, যদি আপনি সতর্ক ও সংযমী থাকেন তবে এর থেকে কিছুটা বেঁচে যাবেন।
মোদীজী- প্রকাশ জী আপনার মতো হাজার হাজার মানুষ এক বছর ধরে পরীক্ষাগারে বসে আছেন আর এত পরিশ্রম করছেন, এত মানুষকে বাঁচাবার কাজ করছেন, যা আজ দেশ জানতে পারছে। কিন্তু প্রকাশ জী আপনার মাধ্যমে আমি আপনার কর্মজগতের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই, দেশবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই আপনি সুস্থ থাকুন। আপনার পরিবার সুস্থ থাকুক। আমার অনেক শুভেচ্ছা রইল।
প্রকাশ জী- ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী জী আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ যে আপনি আমায় এই সুযোগ দিয়েছেন ।
মোদীজী- ধন্যবাদ ভাই ।
বন্ধুরা, কথা তো আমি শুধু ভাই প্রকাশ জী’র সঙ্গেই বলেছি কিন্তু তাঁর কথায় হাজার হাজার ল্যাব টেকনিশিয়ানের সেবার সৌরভ আমাদের কাছে এসে পৌঁছল। এই কথাগুলোতে লক্ষ-লক্ষ মানুষের সেবার মনোভাব তো দেখা যায়ই এছাড়াও আমাদের সবার দায়িত্বের বোধও বাড়ে। যতটা পরিশ্রম ও নিষ্ঠা দিয়ে ভাই প্রকাশ জী আর আমাদের আরো সব বন্ধুরা কাজ করছেন, ততটাই নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের সহযোগিতা করোনাকে হারাতে সাহায্য করবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এতক্ষণ আমরা করোনা যোদ্ধাদের নিয়ে আলোচনা করছিলাম, গত দেড় বছরে আমরা তাদের প্রচুর আত্মোৎসর্গ আর পরিশ্রম দেখেছি। কিন্তু এই যুদ্ধে দেশের আরো অনেক ক্ষেত্রের অনেক যোদ্ধাদেরও বড় ভূমিকা আছে। ভাবুন আপনারা আমাদের দেশে এত বড় একটা সংকট এলো, এর প্রভাব দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রের ওপর পড়ল। কৃষি নিজেকে এর থেকে অনেকটা সুরক্ষিত রেখেছে। শুধু সুরক্ষিতই রাখেনি প্রগতিও করেছে এগিয়েছেও। আপনারা কি জানেন যে এই মহামারীতেও আমাদের কৃষকেরা রেকর্ড উৎপাদন করেছে। কৃষকেরা রেকর্ড উৎপাদন করেছে তাই দেশও এবারে রেকর্ড ফসল কিনেছে। এবারে তো কোন কোন জায়গায় সরষের জন্য কৃষকরা ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের থেকেও বেশি দাম পেয়েছে। রেকর্ড খাদ্যশস্য উৎপাদনের কারণেই আমাদের দেশ প্রত্যেক দেশবাসীকে সাহায্য করতে পারছে। আজ এই সংকটের সময়ে আশি কোটি গরীব মানুষ কে বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হচ্ছে যাতে এমন কোন দিন না আসে যে গরীবের বাড়িতে উনুন না জ্বলে।
বন্ধুরা, আজ আমাদের দেশের কৃষকেরা বেশ কিছু ক্ষেত্রে নতুন ব্যবস্থার সুবিধে নিয়ে দারুণ কাজ করছেন। যেমন আগরতলার কৃষকদের কথাই ধরুন, এঁরা খুব ভাল কাঁঠালের চাষ করেন। এর চাহিদা দেশে- বিদেশে সর্বত্র হতে পারে। তাই এবার আগরতলার কৃষকদের কাঁঠাল ট্রেনে করে গুয়াহাটী আনা হয়েছে। গুয়াহাটী থেকে এই কাঁঠাল লন্ডনে পাঠানো হবে। ঠিক তেমনই আপনারা বিহারের শাহী লিচুর কথাও শুনে থাকবেন । ২০১৮ সালে সরকার শাহী লিচুকে জিআই ট্যাগও দিয়েছিল যাতে এর পরিচয় ও মজবুত হয় আর কৃষকদেরও বেশি লাভ হয়। এবারে বিহারের শাহী লিচুও বিমানে লন্ডনে পাঠানো হয়েছে। পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ আমাদের দেশ এরকমই অনন্য স্বাদ আর পণ্যে ভর্তি। দক্ষিন ভারতের বিজয়নগরমের আমের কথা আপনারা নিশ্চয়ই শুনেছেন, এখন এই আম কে না খেতে চাইবে? তাই এখন কিসান – রেল লক্ষ টন বিজয়নগরম আম দিল্লী পৌঁছে দিচ্ছে। দিল্লী আর উত্তর প্রদেশের লোকেরা বিজয়নগরমের আম খেতে পাবে আর বিজয়নগরমের কৃষকদের ভালো উপার্জন হবে। কিসান-রেল আজ অবধি প্রায় 2 লাখ টনের মতো পণ্যের পরিবহন করেছে। এখন কৃষকেরা খুব কম খরচে ফল সব্জী, তরি্তরকারি দেশের সুদুর প্রান্তে পাঠাতে পারছে ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ ৩০শে মে আমরা ‘মন কি বাত’ করছি আর ঘটনা ক্রমে এটা এই সরকারের ৭ বছর পূর্ণ হওয়ারও সময়। এই সময়ে দেশ ‘সব কা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস’ এই মন্ত্রে চলেছে । দেশের সেবায় প্রতিটা মুহুর্ত সমর্পিত এই ভাবনায় আমরা সবাই কাজ করেছি। আমাকে অনেক বন্ধুরা চিঠি লিখেছেন আর বলেছেন যে ‘মন কি বাত’ এ আমি এই ৭ বছরে আমার আপনার এই সহযাত্রার কথাও যেন বলি। বন্ধুরা এই ৭ বছরে যা কিছু উপলব্ধি তা দেশের দেশবাসীর। এই বছরগুলোয় এক সঙ্গে মিলে আমরা কতো জাতীয় গৌরবময় মুহুর্ত কাটিয়েছি। যখন আমরা দেখি যে এখন ভারত অন্য দেশের কথায় আর তাদের চাপে নয়, নিজের সংকল্পে চলে তখন আমাদের গর্ব হয়। যখন আমরা দেখি যে ভারত তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের মুখের ওপর জবাব দেয় তখন আমাদের আত্মবিশ্বাস আরো বাড়ে। যখন ভারত জাতীয় সুরক্ষার ব্যাপারে কোন আপোষ করেনা, তখন আমাদের সেনাদের শক্তি বাড়ে, তখন আমাদের মনে হয় যে হ্যাঁ আমরা সঠিক পথে আছি।
বন্ধুরা, দেশের প্রতিটি জায়গা থেকে আমি কতো দেশবাসীদের বার্তা, চিঠি পাই, কতো লোক দেশকে ধন্যবাদ দেয় যে ৭০ বছর পরে তাদের গ্রামে প্রথম বার বিদ্যুতের আলো পৌঁছেছে, তাদের ছেলে মেয়েরা আলোয় বসে পাখার তলায় বসে পড়ছে। কতো লোক জানায় যে আমাদের গ্রামও এখন পাকা সড়ক পথে শহরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। আমার মনে আছে একটি আদিবাসী এলাকা থেকে কিছু বন্ধু আমায় বার্তা পাঠিয়েছিল যে রাস্তা হওয়ার পর প্রথম বার ওদের মনে হয়েছিল যে ওরাও বাকী পৃথিবীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এরকমই কেউ ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার আনন্দ ভাগ করে নেয় তো কেউ আলাদা আলাদা পরিকল্পনার সাহায্যে যখন নতুন রোজগার শুরু করেন তো সেই আনন্দে আমাকেও আমন্ত্রন জানান। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অন্তর্গত ঘর পাবার পরে গৃহপ্রবেশের আয়োজনে দেশবাসীদের কাছ থেকে কতো যে নিমন্ত্রণ আমার দেশবাসীর কাছ থেকে ক্রমাগত পাই। এই ৭ বছরে সবার এরকম অনেক আনন্দে আমি সামিল হয়েছি। এই কিছু দিন আগেই গ্রামের একটা পরিবার আমায় জল জীবন মিশন এর অন্তর্গত ঘরে লাগানো জলের কলের একটা ছবি পাঠিয়েছে । ওঁরা সেই ছবিতে ক্যাপশন লিখেছেন – আমাদের গ্রামের জীবন ধারা। এরকম কতো পরিবার আছে। স্বাধীনতার পরে ৭ দশক ধরে আমাদের দেশে মাত্র ৩ কোটি গ্রামীণ ঘরেই জলের ব্যাবস্থা ছিল।। কিন্তু গত ২১ মাসেই সাড়ে চার লক্ষ ঘরে পরিশ্রুত জলের কানেকশন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ মাস তো করোনারই সময় ছিল। এরকমই এক নতুন বিশ্বাস দেশে আয়ুষ্মান ভারত যোজনা মাধ্যমেও এসেছে । যখন কোন গরীব মানুষ বিনামূল্যের চিকিৎসাতে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরে তখন তার মনে হয় যেন সে পুনর্জীবন লাভ করেছে। তার ভরসা হয় যে দেশ তার সঙ্গে আছে। এরকম কতো লোকের আশীর্বচন্, কতো মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে আমাদের দেশ দৃঢ়ভাবে উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
বন্ধুরা, এই ৭ বছরে ডিজিটাল আদান প্রদানের ক্ষেত্রে ভারত দুনিয়া কে নতুন পথ দেখানোর কাজ করেছে। আজ যেকোনো জায়গায় আপনি যত সহজে এক মুহুর্তে ডিজ্যিট্যাল মাধ্যমে জিনিসের দাম দেন , তা এই করোনার সময়ে খুবই উপকারী প্রমাণিত হয়েছে। আজ পরিচ্ছন্নতার প্রতি দেশবাসীর সতর্কতাও বেড়েছে । আমরা রেকর্ড সংখ্যক কৃত্রিম উপগ্রহ উতক্ষেপন করেছি ও রেকর্ড সংখ্যক রাস্তাও বানিয়েছি। এই ৭ বছরে দেশের অনেক পুরোনো বিবাদের ও সম্পূর্ণ শান্তি ও সৌহার্দ্য দিয়ে সমাধান করা গেছে। উত্তর পূর্ব থেকে থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত শান্তি এবং উন্নতির এক নতুন আস্থা দেখা দিয়েছে। বন্ধুরা আপনারা কি কখনও ভেবেছেন যে কাজ দশক দশক ধরে হয়ে ওঠেনি তা এই ৭ বছরে কিভাবে হলো? সেটা সম্ভব হয়েছে কারণ এই ৭ বছরে আমরা সরকার এবং জনতা হিসেবে নয়, সারা দেশে এক হয়ে কাজ করেছি, একটা টিম এর মতো কাজ করেছি, টিম ইন্ডিয়ার মতো কাজ করেছি । প্রত্যেক নাগরিকই দেশের অগ্রগতির জন্য এক পা এক পা করে বাড়ানোর চেষ্টা করেছে । হ্যাঁ, যেখানে সাফল্য থাকে সেখানে পরীক্ষাও থাকে। এই ৭ বছরে আমরা এক সঙ্গে অনেক কঠিন পরীক্ষাও দিয়েছি আর প্রতিবার সবাই আরো শক্তিশালী হয়ে বেরিয়েছি । করোনা মহামারী নামের এত বড়ো একটা পরীক্ষা তো একনাগাড়ে চলছে। এতো এমন একটা সংকট যা পুরো পৃথিবীকে সমস্যায় ফেলেছে, যাতে কতো লোক তাদের আপনজনকে হারিয়েছে । বড় বড় দেশ ও এর ধ্বংসলীলা থেকে বাঁচতে পারেনি। এই বিশ্ব মহামারীর মধ্যেও ভারত সেবা ও সহযোগিতার সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে । আমরা প্রথম ঢেউও পুরো বিশ্বাসের সঙ্গে লড়াই করেছিলাম। এবারেও ভাইরাসের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে ভারতই বিজয়ী হবে। দু’গজের দুরত্ব হোক বা মাস্ক পরবার নিয়ম বা টিকা, আমাদের নিয়ম ভাঙলে চলবে না । এটাই আমাদের জেতার পথ । পরের বার ‘মন কি বাত’ এ যখন আবার আসব তখন দেশবাসীর সঙ্গে আরো কিছু প্রেরণাদায়ক উদাহরণের ব্যাপারে কথা বলব আর নতুন বিষয়ে আলোচনা করব । আপনারা এভাবেই আপনাদের পরামর্শ আমায় পাঠাতে থাকুন । নিজেও সুস্থ থাকুন দেশকেও এভাবেই এগিয়ে নিয়ে চলুন। অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার, আজ আপনাদের সঙ্গে ‘মন কি বাত’ এমন এক সময় করছি যখন করোনা আমাদের সবার ধৈর্য ও আমাদের সবার দুঃখ সহ্য করার সীমার পরীক্ষা নিচ্ছে। আমাদের অনেক নিজেদের লোক অসময়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন । করোনার প্রথম ঢেউ সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করার পরে দেশ আত্মবিশ্বাসে ভরপুর হয়ে উঠেছিল, কিন্তু এই তুফান দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। বন্ধুরা, বিগত দিনে এই সংকটের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আমরা বিভিন্ন দপ্তরের বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেছি। আমাদের ওষুধ প্রস্তুতকারক শিল্পের লোকেরা হোক, টিকা উৎপাদকরা হোক, অক্সিজেনের উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত লোকেরাই হোক বা চিকিৎসা জগতের অভিজ্ঞরা, নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ সরকারকে দিয়েছেন। এই সময় আমাদের এই লড়াই জেতার জন্য বিশেষজ্ঞ আর বৈজ্ঞানিক পরামর্শকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। রাজ্য সরকারের প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য ভারত সরকার সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে। রাজ্য সরকারগুলিও নিজেদের দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বন্ধুরা, করোনার বিরুদ্ধে এই সময় দেশের ডাক্তার আর স্বাস্থ্যকর্মীরা অনেক বড় লড়াই করে যাচ্ছেন। বিগত এক বছরে ওঁদের এই অসুখ নিয়ে সব রকমের অভিজ্ঞতা হয়েছে। এই সময় মুম্বাইয়ের বিখ্যাত ডাক্তার শশাঙ্ক যোশী জি আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। ডাক্তার শশাঙ্ক জির করোনার চিকিৎসা আর এর সঙ্গে যুক্ত গবেষণার তৃণমূলস্তরে অভিজ্ঞতা আছে। তিনি ইন্ডিয়ান কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস এর ডিন ছিলেন। আসুন কথা বলি ডাক্তার শশাঙ্কের জি সঙ্গে:-
মোদিজী - নমস্কার ডাক্তার শশাঙ্ক জি
ডাক্তার - নমস্কার স্যার।
মোদিজী - কিছুদিন আগেই আপনার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। আপনার মতামতের স্পষ্টতা আমার খুব ভালো লেগে ছিল। আমার মনে হয়েছে দেশের সমস্ত নাগরিকের আপনার মতামত জানা প্রয়োজন। যেসব কথা শুনতে পাই, সেগুলোই একটি প্রশ্নের আকারে আপনার সামনে তুলে ধরছি। ডাক্তার শশাঙ্ক আপনারা এই সময় দিন রাত জীবন রক্ষার কাজে নিযুক্ত আছেন। সবার আগে আমি চাইবো যে আপনি দ্বিতীয় ঢেউএর বিষয়ে সবাইকে বলুন। চিকিৎসার দিক থেকে এটা কিভাবে আলাদা। আর কি কি সাবধানতা জরুরি।
ডাক্তার শশাঙ্ক - ধন্যবাদ স্যার, এই যে দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে, এটা দ্রুততার সঙ্গে এসেছে। যতটা প্রথম ঢেউ ছিল তার থেকে এই ভাইরাস বেশি দ্রুততার সঙ্গে বেড়ে চলেছে। কিন্তু ভালো কথা এই যে তার থেকেও দ্রুত গতিতে সুস্থও হচ্ছে আর মৃত্যু হার অনেক কম। এর মধ্যে দু'তিনটে তফাৎ আছে। প্রথমত, এটা যুবক যুবতীদের আর বাচ্চাদের মধ্যেও অল্প দেখা দিচ্ছে, । প্রথমে যেমন লক্ষণ ছিল শ্বাসকষ্ট, শুকনো কাশি, জ্বর সেগুলো তো সব আছেই । তার সঙ্গে গন্ধ পাওয়া, স্বাদ না থাকাও আছে। আর লোকেরা একটু ভয়ে আছেন। ভীতসন্ত্রস্ত হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই ৮0 থেকে ৯0 শতাংশ লোকের মধ্যে এগুলির কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এই মিউটেশন - মিউটেশন যা বলা হচ্ছে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। এই মিউটেশন হতেই থাকে যেভাবে আমরা জামা কাপড় বদলাই সেই ভাবেই ভাইরাস নিজের রং বদলাচ্ছে। আর সেই জন্যেই একেবারেই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা এই ঢেউটাও পার হয়ে যাব। ওয়েভ আসে যায়, আর এই ভাইরাস আসা যাওয়া করতে থাকে। তো এটাই আলাদা আলাদা লক্ষণ। আর চিকিৎসার দিক থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ১৪ থেকে ২১ দিনের এইযে কোভিডের টাইম টেবিল আছে। এই সময়ের মধ্যেই ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
মোদিজী- ডাক্তার শশাঙ্ক, আমার জন্য আপনি যে বিশ্লেষণ করে বলেছিলেন তা খুবই উৎসাহজনক। আমি অনেক চিঠি পেয়েছি। যার মধ্যে চিকিৎসার বিষয়েও মানুষের মধ্যে অনেক আশঙ্কা আছে। কিছু ওষুধের চাহিদা খুব বেশি। এজন্য আমি চাই যে কোভিডের চিকিৎসার ব্যাপারেও আপনি অবশ্যই লোকেদের বলুন।
ডাক্তার শশাঙ্ক - হ্যাঁ স্যার, ক্লিনিক্যাল ট্রিটমেন্ট লোকেরা অনেক দেরিতে শুরু করেন। মনে করেন নিজে থেকেই রোগ সেরে যাবে। এই ভরসাতেই থাকেন। আর মোবাইলে আসা বার্তা উপর ভরসা রাখেন। অথচ যদি সরকারি নির্দেশ পালন করেন তাহলে এই কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় না। কোভিডে ক্লিনিক ট্রিটমেন্ট প্রটোকল আছে, যার মধ্যে তিন রকমের তীব্রতা আছে। হালকা বা মাইল্ড কোভিড, মধ্যম বা মডারেট কোভিড, আর তীব্র বা Severe কোভিড। যেটা হালকা কোভিড, সেটার জন্য আমরা অক্সিজেনের মনিটরিং করে থাকি। পালসের মনিটরিং করে থাকি, জ্বরের মনিটরিং করে থাকি, জ্বর বেড়ে গেলে কখনো কখনো প্যারাসিটামল এর মত ওষুধের ব্যবহার করে থাকি। আর নিজেদের ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। যদি মডারেট কোভিড হয়ে থাকে, মধ্যম কোভিড হোক বা তীব্র গভীর হোক, সেক্ষেত্রে ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়া খুবই জরুরী। সঠিক এবং সস্তা ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে। এরমধ্যে স্টেরয়েড আছে সেটা প্রাণ বাঁচাতে পারে, যেটা ইনহেলার দিতে পারে। ট্যাবলেটও দেওয়া যেতে পারে। আর এর সঙ্গেই প্রাণবায়ু ౼ অক্সিজেন সেটাও দিতে হয়। আর এই জন্য ছোট ছোট চিকিৎসা আছে। কিন্তু সচরাচর যেটা হচ্ছে, একটা নতুন পরীক্ষামূলক ওষুধ আছে, যার নাম রেমডেসিভির। এই ওষুধে অবশ্যই একটা জিনিস হয়, সেটা হল হাসপাতালে দু-তিনদিন কম থাকতে হয়। আর সুস্থ হওয়ার ক্ষেত্রে অল্পবিস্তর সাহায্য পাওয়া যায়। আর এই ওষুধ কখন কাজ করে, যখন প্রথমে ৯ থেকে ১0 দিনে দেওয়া হয়ে থাকে। আর এটা পাঁচদিনই দিতে হয়। এই যে লোকেরা রেমডিসিভিরের পেছনে দৌড়চ্ছে, এর কোনো দরকার নেই। এই ওষুধটার কাজ অল্পই। যাঁদের অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়, যারা হাসপাতালে ভর্তি হন, আর ডাক্তার যখন বলেন তখন নিতে হয়। তাই এটা সবাইকে বোঝানো খুবই জরুরী। আমরা প্রাণায়াম করব, আমাদের শরীরে যে Lungs আছে সেটাকে একটু এক্সপ্যান্ড করব, আর আমাদের রক্ত পাতলা করার যে ইনজেকশন আছে যেটাকে আমরা হেপারিন বলে থাকি। এইসব ছোট ছোট ওষুধ দিলে ৯৮% লোক ঠিক হয়ে যান। তাই পজিটিভ থাকা অত্যন্ত জরুরী। ট্রিটমেন্ট প্রোটোকলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া খুবই জরুরী। আর যেসব দামি দামি ওষুধ আছে, সেগুলির পিছনে দৌড়ানোর কোন প্রয়োজন নেই। স্যার, আমাদের কাছে ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে। প্রাণবায়ু অক্সিজেন আছে। ভেন্টিলেটরেরও সুবিধা আছে। সবকিছুই আছে স্যার। আর কখনো কখনো যদি এই ওষুধ পাওয়া যায় তাহলে চাহিদাসম্পন্ন লোকেদেরই দেওয়া উচিত। তাই এই বিষয়ে অনেক ভুল ধারণা আছে। আর এর জন্য স্পষ্ট করে বলতে চাই স্যার যে আমাদের কাছে বিশ্বের সবথেকে ভাল চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। আপনি দেখবেন সুস্থতার হার ভারতে সবথেকে ভালো আপনি যদি ইউরোপের সঙ্গে তুলনা করেন। আমেরিকাতে রোগী সেরে উঠছেন আমাদের ট্রিটমেন্ট প্রটোকলে স্যার।
মোদিজী - ডাক্তার শশাঙ্ক আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ডাক্তার শশাঙ্ক আমাদের যা জানালেন তা অত্যন্ত জরুরী এবং আমাদের সব কাজে লাগবে। বন্ধুরা আমি আপনাদের সকলের কাছে অনুরোধ করছি, আপনাদের যদি যেকোনো তথ্য জানার থাকে, আর কোনো আশংকা থাকে তাহলে সঠিক সুত্র থেকে জেনে নেবেন। আপনাদের যে পারিবারিক চিকিৎসক আছেন, আশেপাশের যে ডাক্তার আছেন আপনারা তাদের ফোন করে যোগাযোগ করুন। এবং সঠিক পরামর্শ নিন। আমি দেখতে পাচ্ছি যে আমাদের অনেক ডাক্তারই নিজেরাই এই দায়িত্ব নিচ্ছেন। অনেক ডাক্তার সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে লোকেদের সচেতন করছেন। ফোনে, হোয়াটসঅ্যাপেও কাউন্সেলিং করছেন। অনেক হাসপাতালের ওয়েবসাইট আছে সেখানে এই সংক্রান্ত বিষয়ে জানার ব্যবস্থা আছে। আর সেখানে আপনারা ডাক্তারের পরামর্শও নিতে পারবেন। এটা খুবই প্রশংসনীয়। আমার সঙ্গে শ্রীনগর থেকে ডাক্তার নাবিদ নাজির শাহ্ রয়েছেন। ডাক্তার নাবিদ শ্রীনগরের এক সরকারী মেডিকেল কলেজের প্রফেসর। নবীদ জি নিজের তত্ত্বাবধানে অনেক করোনা পেশেন্টকে সারিয়ে তুলেছেন। আর রমজানের এই পবিত্র মাসে ডাক্তার নাবিদ নিজের কর্তব্য পালন করছেন। তিনি আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য সময় বের করেছেন। আসুন ওঁর সঙ্গে কথা বলি।
মোদিজী - নাবিদ জি নমস্কার।
নাবিদ - নমস্কার স্যার।
মোদিজী - ডাক্তার নাবিদ ‘’মন কি বাত’’ এর আমাদের শ্রোতারা এই কঠিন সময়ে প্যানিক ম্যানেজমেন্টের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। আপনি আপনার অভিজ্ঞতা থেকে তাঁদের কি পরামর্শ দেবেন ?
নাবিদ - দেখুন যখন করোনা শুরু হয়েছিল, তখন কাশ্মীরে যে প্রথম কোভিড হসপিটাল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল সেটা ছিল আমাদের সিটি হসপিটাল। যেটা আসলে মেডিকেল কলেজের অধীনে। সে সময়টা এক ভয়ের পরিবেশ ছিল। কোভিডের সংক্রমণ হলেই লোকেরা মনে করতেন তাঁদের মৃত্যদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর এর ফলে আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসক মহল এবং প্যারা মেডিকেল কর্মীদের মধ্যেও ভয়ের সঞ্চার হয়েছিল যে তাঁরা এই রোগীদের কিভাবে চিকিৎসা করবে? সংক্রমণ হওয়ার মত বিপদ নেই তো! কিন্তু যেমন যেমন সময় এগিয়েছে, আমরাও দেখলাম যে, যদি সম্পূর্ণভাবে আমরা সুরক্ষা সংক্রান্ত পোষাক পরি এবং সুরক্ষা বিধি মেনে চলি তাহলে আমরাও সুরক্ষিত থাকতে পারবো। আর আমাদের যে বাকি কর্মীরা আছেন তারাও সুরক্ষিত থাকতে পারেন। আর এর পরে আমরা দেখতে পেলাম রোগী বা কিছু লোক অসুস্থ ছিলেন যাঁরা উপসর্গ হীন, যাদের মধ্যে রোগের কোনো লক্ষণ ছিল না। আমরা দেখলাম ৯0 থেকে ৯৫ শতাংশের বেশি সমস্ত রোগী কোনো ওষুধ ছাড়াই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে মানুষের মধ্যে করোনার যে ভয় ছিল সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটা অনেক কমে গিয়েছে। আজ যখন করোনার এই দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে তখনও আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। এই সময়েও যে সুরক্ষা বিধি আছে আর মান্য বিধি আছে, যদি সেগুলো ওপর আমরা গুরুত্ব দিই, যেমন মাস্ক পরা, হাতে স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, এ ছাড়াও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা বা জমায়েত এড়িয়ে যেতে পারি তাহলে আমরা আমাদের দৈনন্দিন কাজকার্মও খুব ভালোভাবে করে যেতে পারব। তাহলে এই রোগের হাত থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারবো।
মোদিজী - ডাক্তার নাবিদ, টিকার ব্যাপারেও মানুষের মধ্যে নানা রকম প্রশ্ন আছে যেমন টিকার মাধ্যমে কতটা সুরক্ষা পাওয়া যাবে ? টিকা নেওয়ার পর কতটা নিশ্চিন্ত থাকতে পারবো? আপনি এ প্রসঙ্গে কিছু বলুন যাতে শ্রোতাদের উপকার হয়।
ডাক্তার নাবিদ - যখন করোনার সংক্রমণের সন্মুখিন হলাম, তখন থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের কাছে কোভিড-19 এর সঠিক কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। ফলে আমরা দুটো জিনিস দিয়ে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারি। একটা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, আর আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি যে যদি কোন যথাযথ টিকা আমাদের কাছে আসে তাহলে সেটা আমাদের এই রোগের হাত থেকে মুক্তি দিতে পারে। আর এখন আমাদের দেশে দুটো টিকা এইসময় আছে, কোভ্যাকসিন এবং কোভিশিল্ড। যেগুলো এখানেই তৈরি হওয়া ভ্যাকসিন। কোম্পানিগুলো যখন পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছে, তখন দেখা গেছে যে সেগুলির কার্যকারিতা ৬০% এর বেশি। আর যদি আমরা জম্মু- কাশ্মীরের কথা বলি তাহলে আমাদের এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এখনো পর্যন্ত ১৫ থেকে ১৬ লক্ষ মানুষ এই টিকা নিয়েছেন। হ্যাঁ সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেক ভ্রান্ত ধারণা বা গুজব ছড়ান হয়েছে যে এগুলোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত আমাদের এখানে যে সমস্ত টিকা প্রয়োগ হয়েছে সেখানে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। সাধারণত টিকা নেওয়ার পর কারও জ্বর আসা, সারা শরীর ব্যথা বা লোকাল সাইড অর্থাৎ ইনজেকশনের জায়গায় ব্যথা হওয়া এমনই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আমরা প্রত্যেকের মধ্যে দেখেছি। তেমন কোনো বিরূপ প্রতিক্রয়া আমরা দেখি নি। আর হ্যাঁ, দ্বিতীয় কথা মানুষের মধ্যে এই আশঙ্কাও ছিল যে কিছু লোক টিকাকরণের পরে পজিটিভ হয়েছেন। সেখানে কোম্পানী থেকেই বলা ছিল টিকাকরণের পরেও সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকতে পারে এবং পজেটিভ হতে পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে রোগের ভয়াবহতা কম থাকবে। অর্থাৎ তিনি পজেটিভ হতে পারেন কিন্তু জীবনহানির আশংকা কম। তাই টিকাকরণ নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা মাথা থেকে সরিয়ে ফেলা উচিত। পয়লা মে থেকে আমাদের সমগ্র দেশে যাদের ১৮ বছরের বেশি বয়স তাদের ভ্যাকসিন দেওয়ার কর্মসূচি শুরু হবে। তাই সবার কাছে এটাই আবেদন করব যার যখন সময় আসবে, আপনারা আসুন টিকা নিন এবং নিজেকেও রক্ষা করুন। আর সামগ্রিকভাবে আমাদের সমাজ ও আমাদের এলাকা এর ফলে কোভিড ১৯ র সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত হয়ে উঠবে।
মোদিজী - ডাক্তার নাবিদ আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। এবং আপনাকে রমজানের পবিত্র মাসে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।
ডাক্তার নাবিদ - অনেক অনেক ধন্যবাদ।
মোদিজী - বন্ধুগণ করোনার এই সংকটকালে ভ্যাকসিনের গুরুত্ব সকলেই উপলব্ধি করতে পারছেন। এর জন্য আমি চাই যে ভ্যাকসিন নিয়ে কোনরকম অপপ্রচারে কান দেবেন না। আপনারা সকলেই জানেন যে ভারত সরকারের তরফ থেকে সমস্ত রাজ্য সরকারকে ফ্রি ভ্যাক্সিন পাঠানো হয়েছে যার সুফল ৪৫ বছর বয়সের ঊর্ধ্বের লোকেরা পেতে পারবেন। এখন তো পয়লা মে থেকে দেশে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সকল ব্যক্তির টিকা পাবেন। এবার দেশের কর্পোরেট সেক্টর কোম্পানিগুলোও নিজেদের কর্মচারীদের টিকা দেওয়ার অভিযানে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। আমি এটাও বলতে চাই যে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে টিকার যে কর্মসূচি এখন চলছে সেটা আগামী দিনেও চলবে। আমি রাজ্যগুলোকেও বলতে চাইছি যে তারা ভারত সরকারের এই বিনামূল্যে টিকা অভিযানের সুবিধা নিজের নিজের রাজ্যের যত বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে দিক। বন্ধুগণ, আমরা সবাই জানি এই রোগের প্রকোপের ফলে আমাদের পক্ষে নিজেকে, নিজের পরিবারকে দেখাশোনা করা মানসিকভাবে কতটা দুরূহ হয়ে ওঠে। কিন্তু আমাদের হাসপাতালের নার্সিং কর্মীদের তো সেই কাজটাই একনাগাড়ে অসংখ্য রোগীদের জন্য একসঙ্গে করতে হয়। এই সেবাভাবই আমাদের সমাজের সবচেয়ে বড় শক্তি। নার্সিং সেবাদান আর পরিশ্রমের ব্যাপারে সবথেকে ভালো বলতে পারবেন কোন নার্স। এইজন্য আমি রায়পুরের ডাক্তার বি আর আম্বেদকর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেবারত সিস্টার ভাবনা ধুপ জি কে ‘’মন কি বাত’’এ আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তিনি অসংখ্য করোনা রোগীদের দেখাশোনা করেছেন। আসুন ওঁর সঙ্গে কথা বলি।
মোদি - নমস্কার ভাবনা জি।
ভাবনা - মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জি নমস্কার।
মোদি - ভাবনা জি ?
ভাবনা - ইয়েস স্যার।
মোদি - ‘’মন কি বাত’’ এর শ্রোতাদের আপনি অবশ্যই এটা বলুন যে আপনার পরিবারে এতগুলো দায়িত্ব পালন, এতগুলো অর্থাৎ মাল্টি টাস্ক, আর তার পরেও আপনি করোনা রোগীদের সেবা করছেন, করোনা রোগীদের সঙ্গে কাজ করে আপনার যে অভিজ্ঞতা দেশবাসী অবশ্যই শুনতে চাইবেন। কারণ যারা সিস্টার হন , যারা নার্স হন তারা রোগীদের সবথেকে কাছের হয়ে থাকেন, আর সব থেকে দীর্ঘ সময় তাঁরা রোগীদের সঙ্গে থাকেন। তাই তাঁরা সমস্ত জিনিস খুব সূক্ষ্ম ভাবে বুঝতে পারেন। আপনি বলুন।
ভাবনা - জি স্যার। আমার টোটাল কোভিড অভিজ্ঞতা দু মাসের স্যার। আমরা ১৪ দিন ডিউটি করি আর ১৪ দিন পরে আমাদের রেস্ট দেওয়া হয়, তারপর দুই মাস পরে আমাদের এই কোভিড ডিউটি রিপিট হয় স্যার। যখন আমার প্রথম কোভিড ডিউটি পড়ল তখন আমি সবার প্রথমে আমার পরিবারের সদস্যদের এই কোভিড ডিউটির কথা জানাই। সেটা মে মাসের কথা, আমি যখনি এটা জানালাম সবাই ভয় পেয়ে গেল, বললেন ঠিক করে কাজ করতে, একটা আবেগঘন পরিস্থিতির তৈরি হয়েছিল। মাঝে যখন আমার মেয়ে জিজ্ঞেস করেছিল যে মা তুমি কোভিড ডিউটিতে যাচ্ছ সেইসময়টা আমার জন্য খুব আবেগের ছিল। কিন্তু যখন আমি কোভিড রোগীদের পাশে গেলাম, দেখলাম তাঁরা আরো বেশি ভীতিগ্রস্ত। কোভিডের নামে সবাই এত ভয় পেয়েছিল, যে ওঁরা বুঝতেই পারছিল না যে ওঁদের সঙ্গে কি হতে চলছে? আর আমরা এরপর কি করবো। আমরা ওঁদের ভয় দূর করার জন্য ওঁদের খুব ভালো স্বাস্থ্যকর পরিবেশ দিয়েছি, স্যার। কোভিড ডিউটির প্রথমেই আমাদের পিপিই কিট পরতে বলা হয়েছিল, পিপিই কিট পরে ডিউটি করা খুব কঠিন কাজ। স্যার, আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক ছিল। আমি দু মাসের ডিউটিতে সব জায়গায় ১৪ দিন করে ডিউটি করেছি ওয়ার্ডে আইসিইউ তে, আইসোলেশনে এ স্যার।
মোদি জি – অর্থাৎ সব মিলিয়ে আপনি প্রায় একবছর এই কাজটা করছেন।
ভাবনা – ইয়েস স্যার, ওখানে যাওয়ার আগে আমি জানতাম না আমার সহকর্মী কারা, আমরা দলগতভাবে কাজ করেছি। রোগীদের যে সব সমস্যা ছিল আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নিতাম। আমরা রোগীদের সম্বন্ধে জানলাম, ওঁদের লজ্জা দূর করলাম। অনেক লোক এমন ছিল যাঁরা কোভিডের নামে ভয় পেত। যখন আমরা তাঁদের ইতিহাস লিখতাম, কোভিডের সমস্ত উপসর্গ তাঁদের মধ্যে পাওয়া যেত কিন্তু ওঁরা ভয়ের জন্য নমুনা পরীক্ষা করাতে চাইতেন না। তখন আমরা ওঁদের বোঝাতাম, স্যার যখন তীব্রতা বেড়ে যেত , ততক্ষনে ওঁদের ফুসফুস সংক্রমিত হয়ে থাকতো এবং আইসিইউ এর প্রয়োজন হতো। তখন সঙ্গে তাঁদের পুরো পরিবার আসতো। এরকম এক দুটো কেস আমি দেখেছি স্যার। আর শুধু এটাই করিনি। সমস্ত বয়সের সঙ্গেই কাজ করেছি স্যার আমি। যার মধ্যে ছোট বাচ্চাও ছিল। মহিলা, পুরুষ, প্রবীণ সব রকম রোগী ছিল স্যার। ওদের সবার সঙ্গেই আমি কথা বলেছি। তো সবাই বলে যে আমি ভয়ের কারণে আসতে পারিনি। সবার কাছ থেকেই আমরা এই উত্তর পেয়েছি স্যার। তাই আমরা ওঁদের বুঝিয়েছি স্যার। যে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আপনারা আমাদের সহযোগিতা করুন। আমরাও আপনাদের সহযোগিতা করব। আপনার যে নিয়মগুলি আছে সেটা মেনে চলুন। আমরা এইটুকুই ওঁদের জন্য করতে পেরেছি স্যার।
মোদিজী - ভাবনা জি, আপনার সঙ্গে কথা বলে আমার খুব ভালো লেগেছে, আপনি অনেক কথা জানালেন। আপনার নিজের অভিজ্ঞতার কথা বললেন তাই অবশ্যই দেশবাসীর কাছে এর একটা ইতিবাচক বার্তা পৌঁছবে। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাবনা জি।
ভাবনা - থ্যাংক ইউ সো মাচ স্যার থ্যাংক ইউ সো মাচ। জয় হিন্দ।
মোদিজী - জয় হিন্দ।
ভাবনা জী এবং আপনাদের মত হাজার হাজার নার্স ভাই বোনেরা নিজেদের দায়িত্ব খুব ভালোভাবে পালন করছেন। এটা আমাদের সবার জন্যই প্রেরণাদায়ক।আপনারা আপনাদের নিজেদের স্বাস্থের দিকেও ভাল করে নজর দিন। নিজেদের পরিবারের দিকেও মনোযোগ দিন।
বন্ধুরা, বেঙ্গালুরু থেকে সিস্টার সুরেখা জী এখন আমাদের সঙ্গে আছেন।সুরেখা জী কে সি জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়ার নার্সিং অফিসার .আসুন তাঁর অভিজ্ঞতাও শুনি-
মোদী জী- নমস্কার সুরেখা জী,
সুরেখা- আমি আমাদের দেশের প্রধান মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পেরে সত্যি গর্বিত ও সম্মানিত বোধ করছি।
মোদীজী- সুরেখা জী আপনি ও আপনার সহকর্মী নার্স এবং হাসপাতালের কর্মীরা অসাধারণ কাজ করছেন। ভারতবর্ষ আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। কোভিড -১৯ এর বিরুদ্ধে যারা লড়াই করছেন সেই সব নাগরিকদের আপনি কি বলতে চান?
সুরেখা জী- হ্যাঁ স্যার, একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হওয়ার সুবাদে আমি সবাইকে বলতে চাই যে নিজের প্রতিবেশিদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করুন। প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষা ও সঠিক ট্র্যাকিং মৃত্যুহার কমাতে সাহায্য করবে, এবং আরো বলতে চাই যে যদি কোন লক্ষণ দেখেন তবে সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে আলাদা রাখুন ও নিকটবর্তী কোন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অবিলম্বে চিকিৎসা শুরু করুন।সমাজে এই রোগ সম্বন্ধে সচেতনতা জরুরী, আমাদের আশাবাদী হওয়া উচিত,ভয় পাবেন না ও দুশিন্তা করবেন না। এতে রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়।আমরা আমাদের সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ ও একটা টিকার জন্য গর্বিতও। আমি টিকা নিয়েছি। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে ভারতের নাগরিকদের একটা কথা বলতে চাইব যে কোন টিকাই সঙ্গে সঙ্গে ১০০ ভাগ নিরাপত্তা দিতে পারেনা । প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে ও সময় লাগে। টিকা নিতে ভয় পাবেন না। নিজেরা টিকা নিন, এর সামান্য কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে। আমি বলতে চাই সবাই বাড়িতে থাকুন, সুস্থ থাকুন, অসুস্থ মানুষদের থেকে দূরে থাকুন, বার বার নাকে মুখে চোখে অকারণে হাত দেবেন না। শারীরিক দুরত্ব বজায় রাখুন, সঠিক ভাবে মাস্ক পরুন, বারবার হাত ধুয়ে নিন এবং ঘরোয়া শুশ্রুষাগুলি যতটা সম্ভব পালন করুন। আয়ূর্বেদিক কোয়াত পান করুন,গরম জলের ভাপ নিন গার্গল করুন ও নিশ্বাস প্রশ্বাসের কিছু ব্যায়াম করতে পারেন, সবশেষ কিন্তু শেষ কথা নয়, সামনের সারিতে থাকা কোভিড যোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা রাখুন। আমরা আপনাদের সমর্থন ও সহযোগিতা চাই। আমরা এক সঙ্গে লড়াই করব, এভাবেই আমরা অতিমারীকে হারাতে পারব। মানুষের জন্য এটাই আমার বার্তা স্যার।
মোদীজী- ধন্যবাদ সুরেখা জী ।
সুরেখা জী--ধন্যবাদ স্যার ।
সুরেখা জী, সত্যিই আপনি খুব কঠিন সময়ে হাল ধরে আছেন। আপনি নিজের যত্ন নিন। আপনার পরিবারের প্রতিও আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল। আমি দেশবাসীকেও বলতে চাই যে যেমনটা ভাবনা জী ও সুরেখা জী নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে বললেন, করোনার সঙ্গে লড়বার জন্য ইতিবাচক মানসিকতা বজায় রাখা খুব জরুরী, দেশবাসীকে এটা বজায় রাখতে হবে।
বন্ধুরা, ডাক্তার এবং নার্সিং স্টাফেরদের সঙ্গে সঙ্গে ল্যাব টেকনিশিয়ান ও অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারদের মতো ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কাররাও ঈশ্বরের মতো কাজ করছেন । যখন কোনো আম্বুল্যান্স কোনো রোগীর কাছে পৌঁছয় তখন তাকে দেবদূত বলে মনে হয়। এঁদের সবার কাজের ব্যাপারে এঁদের অভিজ্ঞতার ব্যাপারে দেশের সবার জানা উচিত।আমার সঙ্গে এখন এমনই এক ভদ্রলোক আছেন শ্রী প্রেম বর্মা , যিনি একজন অ্যাম্বুল্যান্স ড্রাইভার, এঁর নাম শুনেই তা বোঝা যায়। প্রেম বর্মা জী নিজের কাজ, নিজের কর্তব্য সম্পুর্ণ প্রেম ও নিষ্ঠা র সঙ্গে করেন। আসুন ওঁর সাথে কথা বলি-
মোদী জী- নমস্কার প্রেম জী,
প্রেম জী- নমস্কার মোদীজি,
মোদীজী- ভাই প্রেম ,
প্রেম জী- হ্যাঁ স্যার ,
মোদীজী- আপনি আপনার কাজের ব্যাপারে
প্রেম জী- হ্যাঁ স্যার ,
মোদী জী- একটু বিস্তারিত ভাবে জানান, আপনার যা অভিজ্ঞতা সেটাও জানান,
প্রেম জী-আমি ক্যাটের অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার, যখনই কন্ট্রোল আমাদের ট্যাবে কল করে, ১০২ থেকে যখন কল গুলো আসে আমরা রোগীদের কাছে চলে যাই। এইভাবে আমি দু বছর ধরে ক্রমাগত এই কাজটিই করে আসছি। নিজের কিট পরে নিজের গ্লাভস মাস্ক পরে, রোগী যেখানে ড্রপ করতে বলেন, যেকোনো হসপিটালে, আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে সেখানে পৌঁছে করি।
মোদীজী- আপনি টিকার দুটো ডোজই পেয়ে গেছেন নিশ্চয়।
প্রেম জী- হ্যাঁ স্যার
মোদীজী- তাহলে অন্যরা টিকা নিক। এইব্যাপারে আপনি কি বলতে চান?
প্রেম জী- নিশ্চয় স্যার। সবারই এই ডোজ নেওয়া উচিত আর এটা পরিবারের জন্যেও ভালো। এখন আমার মা বলেন এই চাকরী ছেড়ে দাও। আমি বলেছি, মা, যদি আমি চাকরি ছেড়ে বসে থাকি তবে রোগীদের কে কিভাবে পৌঁছে দেবে? কারন এই করোনার সময়ে সবাই পালাচ্ছে।সবাই চাকরি ছেড়েছুড়ে চলে যাচ্ছে। মা ও আমায় বলেন এই চাকরি ছেড়ে দিতে। আমি বলেছি না মা আমি চাকরি ছাড়ব না।
মোদীজী- মাকে কষ্ট দেবেন না, মাকে বুঝিয়ে বলবেন,
প্রেম জী- হ্যাঁ ,
মোদী জি- কিন্তু এই যে আপনি মায়ের কথা বললেন,
প্রেম জী- হ্যাঁ,
মোদী জী- এটা খুবই মর্মস্পর্শী,
প্রেম জী- হ্যাঁ
মোদীজী-আপনার মাকেও,
প্রেম জী- হ্যাঁ
মোদীজী- আমার প্রণাম জানাবেন,
প্রেম জী- নিশ্চয়,
মোদীজী- হ্যাঁ
প্রেম জী- হ্যাঁ
মোদীজি-প্রেম জী আমি আপনার মাধ্যমে ,
প্রেম জী- হ্যাঁ
মোদীজী- এই যারা অ্যাম্বুল্যান্স চালায় আমাদের সেই ড্রাইভাররাও
প্রেম জী- হ্যাঁ
মোদীজী - বড় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন,
প্রেম জী- হ্যাঁ,
মোদীজী- আর সবার মায়েরা কি ভাবেন,
প্রেম জী- নিশ্চয় স্যার,
মোদীজী- এই কথা যখন শ্রোতা দের কাছে পৌঁছবে।
প্রেম জী- হ্যাঁ,
মোদীজি- আমি নিশ্চিত জানি যে তাদের ও হৃদয় স্পর্শ করবে।
প্রেম জী- হ্যাঁ,
মোদীজি- প্রেম জি অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনি তো প্রায় প্রেমের গঙ্গা বইয়ে দিচ্ছেন।
প্রেম জী- ধন্যবাদ স্যার,
মোদীজী- ধন্যবাদ ভাই,
প্রেম জী- ধন্যবাদ,
বন্ধুরা, প্রেমজী এবং আরো এরকম হাজার হাজার মানুষ,আজ নিজের জীবন বাজি রেখে মানুষের সেবা করে চলেছেন।করোনার বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে যতো জীবন বাঁচছে তাতে অ্যম্বুলেন্স ড্রাইভারদের ও বিশাল বড় অবদান আছে। প্রেম জী আপনাকে ও সারাদেশে আপনার সব সঙ্গীকে আমি অনেক অনেক সাধুবাদ জানাই। আপনি সময়ে পৌঁছোন, জীবন বাঁচান।
আমার প্রিয় দেশবাসী,এটা ঠিক যে করোনায় বহু মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন , কিন্তু করোনায় সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষের সংখ্যাও কিন্তু ততোটাই।গুরুগ্রামের প্রীতি চতুর্বেদী ও সম্প্রতি করোনা কে হারিয়ে দিয়েছেন। প্রীতি জী “মন কি বাত” এ আমাদের সাথে যুক্ত হচ্ছেন। তাঁর অভিজ্ঞতা আমাদের সবার খুব কাজে লাগবে।
মোদীজী- প্রীতি জি নমস্কার
প্রীতি জি- নমস্কার স্যার আপনি কেমন আছেন?
মোদীজী- আমি ভাল আছি, সবথেকে আগে আমি আপনাকে কোভিড-১৯ এ
প্রীতি জি – হ্যাঁ
মোদীজী- সাফল্যের সঙ্গে লড়বার জন্যে
প্রীতি জি –হ্যাঁ
মোদীজী-প্রশংসা জানাই
প্রীতি জি – অনেক ধন্যবাদ স্যার
মোদীজী- আপনার স্বাস্থ্য আরো দ্রুত ভালো হয়ে উঠুক এই কামনা করি
প্রীতি জি –ধন্যবাদ স্যার
মোদীজী- প্রীতি জি
প্রীতি জি –হ্যাঁ স্যার
মোদীজী- এতে কি শুধু আপনিই অসুস্থ হয়েছিলেন নাকি আপনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও সংক্রমিত হয়েছিলেন?
প্রীতি – না না স্যার আমারি শুধু হয়েছিল।
মোদিজি- যাক ঈশ্বরের অসীম কৃপা। আচ্ছা আমি চাই
প্রীতি –হ্যাঁ স্যার।
মোদিজি- যে আপনি যদি আপনার কষ্টের সময়ের অভিজ্ঞতার কথা সবাইকে জানান তবে হয়তো শ্রোতারাও এই রকম সময়ে কিভাবে নিজেদের সামলাবেন তার একটা পথনির্দেশ পাবেন।
প্রীতি ---হ্যাঁ স্যার নিশ্চয়।স্যার গোড়ার দিকে আমার খুব কুঁড়েমি , খুব আলস্য আলস্য লাগত আর তার পরে না আমার গলা একটু একটু খুশ খুশ করতে লাগল, এরপর আমার মনে হল যে এগুলো লক্ষণ , তাই আমি টেস্ট করাবার জন্যই টেস্ট করালাম , পরের দিন রিপোর্ট আসা মাত্রই যেই দেহলাম আমি পজিটিভ, আমি নিজেকে কোয়ারান্টিন করে ফেললাম।একটা ঘরে আইসোলেট করে আমি ডাক্তারদের সাথে পরামর্শ করলাম ।ওদের বলে দেওয়া ওষুধও শুরু করে দিলাম।
মোদীজি- তাহলে আপনার এই পদক্ষেপ নেবার কারণে আপনার পরিবার রক্ষা পেল।
প্রীতি- হ্যাঁ স্যার, সবারই টেষ্ট পরে করানো হয়ে ছিল। সবাই নেগেটিভ ছিল। আমিই পজিটিভ ছিলাম। আগেই আমি নিজেকে একটা ঘরে আইসোলেট করে নিয়ে ছিলাম। নিজের প্রয়োজনের সব জিনিসপত্র নিয়ে আমি নিজেই ঘরে বন্ধ ছিলাম। তার সঙ্গে সঙ্গে আমি ডাক্তারদের দেওয়া ওষুধ ও শুরু করে দিয়ে ছিলাম।স্যার আমি না ওষুধের সঙ্গে যোগ ব্যায়াম, আয়ূর্বেদিক ও শুরু করে দিয়ে ছিলাম, আর আমি কোয়াত খাওয়াও শুরু করেছিলাম। আর স্যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করবার জন্য আমি যখনই খেতাম হেলদি ফুড, মানে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতাম। আমি প্রচুর ফ্লুইড খেয়েছি, স্টিম নিয়েছি গার্গল করেছি আর গরম জল খেয়েছি। আমি সারাদিন ধরে এই সব করেছি রোজ। আর স্যার সব থেকে বড় কথা আমি বলতে চাই যে একদম ঘাবড়াবেন না। মানসিক ভাবে খুব স্ট্রং থাকতে হবে, যার জন্য আমি যোগ ব্যায়াম , ব্রিদিং এক্সারসাইজ করতাম, ওটা করলে আমার খুব ভাল লাগতো।
মোদীজী- হ্যাঁ আচ্ছা প্রীতি জী যখন আপনার এই প্রক্রিয়া সম্পুর্ণ হয়ে গেল। আপনি সংকট মুক্ত হলেন
প্রীতি- হ্যাঁ
মোদীজি- এখন আপনার রিপোর্টও নেগেটিভ
প্রীতি- হ্যাঁ স্যার
মোদীজী- তাহলে আপনি আপনার স্বাস্থের জন্য, এখন কি করছেন?
প্রীতি- স্যার প্রথমত আমি যোগ ব্যায়াম বন্ধ করিনি
মোদীজি- হ্যাঁ
প্রীতি-ঠিক আছে, আমি এখোনো কোয়াত খাচ্ছি আর নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল রাখবার জন্য আমি সুষম স্বাস্থ্যকর খাবার খাচ্ছি এখনো।
মোদীজি-হ্যাঁ
প্রীতি- আমি যেমন আগে নিজেকে খুব অবহেলা করতাম সেদিকে এখন খুব মনোযোগ দিচ্ছি ।
মোদিজি- ধন্যবাদ প্রীতি জি
প্রীতি- অনেক ধন্যবাদ স্যার
মোদীজি-আপনি আমাদের যা জানালেন আমার মনে হয় এটা বহু মানুষের কাজে লাগবে , আপনি সুস্থ থাকুন আপনার পরিবারের লোকেরা সুস্থ থাকুক, আপনাকে আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ যেমন আমাদের চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত লোকেরা, সামনের সারিতে থাকা কর্মীরা দিন রাত সেবার কাজ করে যাচ্ছেন ।তেমনই সমাজের অন্য লোকেরাও এই সময়ে পিছিয়ে নেই। দেশ আবার একবার একজোট হয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছে । এই সময়ে আমি দেখতে পাচ্ছি কেউ কোয়ারান্টিনে থাকা পরিবারের জন্য ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছে , কেউ সব্জী দুধ ফল ইত্যাদি পৌঁছে দিচ্ছে । কেউ বিনা মূল্যে রোগীদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা দিচ্ছে। এই কঠিন সময়েও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি এগিয়ে এসে অন্যের সাহায্যের জন্য যেটুকু করা সম্ভব করার চেষ্টা করছে। এবার গ্রামেও নতুনভাবে সচেতনতা দেখা যাচ্ছে । কঠোর ভাবে কোভিড নিয়মের পালন করে মানুষ নিজের গ্রামকে করোনা থেকে বাঁচাচ্ছেন, যারা বাইরে থেকে আসছেন তাদের জন্যেও সঠিক ব্যাবস্থা করা হচ্ছে। শহরেও তরুণ প্রজন্ম এগিয়ে এসেছেন। নিজেদের এলাকায় যাতে করোনা কেস না বাড়ে তার জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা মিলিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।অর্থাৎ এক দিকে দেশ দিনরাত হাসপাতাল, ভেন্টিলেটর আর ওষুধ নিয়ে কাজ করছে তো অন্য দিকে দেশের মানুষ ও জানপ্রাণ দিয়ে করোনার চ্যালেঞ্জের সঙ্গে যুদ্ধ করছে।এই চিন্তাটা আমাদের অনেক শক্তি দেয়, অনেক বিশ্বাস দেয়। যা যা চেষ্টা হচ্ছে তা বিরাট বড় সমাজ সেবা। এতে সমাজের শক্তি বাড়ে।
আমার প্রিয় দেশবাসী আজ মন কি বাত এর পুরো আলোচনাটাই আমি করোনা মহামারীর ওপরেই রেখেছিলাম কারণ এই রোগকে হারানোই এখন আমাদের প্রাথমিকতা। আজ ভগবান মহাবীর জয়ন্তীও। এর জন্য আমি প্রত্যেক দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানাই।ভগবান মহাবীরের বার্তা আমাদের তপস্যা ও আত্মসংযমের প্রেরনা দেয়। এখন রমজানের পবিত্র মাসও চলছে, সামনে বুদ্ধপূর্ণিমা। গুরু তেগবাহাদুরের চারশোতম প্রকাশ পর্বও আছে। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন পঁচিশে বৈশাখ –রবীন্দ্রজয়ন্তীও আছে, এগুলো সবই আমাদের নিজেদের কর্তব্য করে যাওয়ার প্রেরণা দেয়। একজন নাগরিক হওয়ার সুবাদে আমরা আমাদের নিজেদের জীবনে যতটা কুশলতার সঙ্গে নিজেদের কর্তব্য পালন করব, ততই দ্রুতগতিতে সংকট মুক্ত হয়ে আমরা ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাব। এই কামনার সঙ্গে আমি আপনাদের সবাইকে আবার একবার বলতে চাই যে টিকা সবাইকে নিতে হবে এবং সাবধান ও থাকতে হবে। ‘দবাই ভী- কড়াই ভী’। এই মন্ত্র কখোনোই ভুললে চলবেনা। আমরা একসঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি এই বিপদ থেকে বেরিয়ে আসব। এই বিশ্বাস সহ আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার! এবারের ‘মন কি বাত’ এর জন্য যেসব চিঠিপত্র এসেছে, মন্তব্য এসেছে, যেসব ইনপুট আসে, সেগুলিতে যখন আমি চোখ বোলাচ্ছিলাম তখন দেখলাম বহু মানুষ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা স্মরণ করেছেন। মাই গভে এরিয়ান শ্রী, বেঙ্গালুরু থেকে অনুপ রাও, নয়ডা থেকে দেবেশ, ঠানে থেকে সুজিত এঁরা সবাই বলেছেন, মোদিজী, এবার "মন কি বাত" এর ৭৫ তম এপিসোড। এর জন্য আপনাকে অভিনন্দন। আপনারা যে এত ভালোভাবে ‘মন কি বাত’ শুনে আসছেন এবং এর সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন তার জন্য আমি আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। এটা আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়, আনন্দের বিষয়। আমার তরফ থেকেও আপনাদের তো ধন্যবাদ জানাচ্ছিই, সেইসঙ্গে ‘মন কি বাত’ -এর সকল শ্রোতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি কারণ আপনাদের সাহায্য ছাড়া এই যাত্রা সম্ভবই হত না। মনে হয় যেন এই গতকালেরই কথা, যেদিন আমরা সবাই একসঙ্গে মিলে এই মতাদর্শগত যাত্রা শুরু করেছিলাম। সেদিন তেসরা অক্টোবর ২০১৪, বিজয়া দশমীর পবিত্র উৎসব ছিল। আর কি যোগাযোগ দেখুন, আজ হোলিকা দহন! "একটি প্রদীপ থেকে অন্যটি জ্বলুক এবং আমাদের দেশ আলোকিত হোক" – এই ভাবনায় অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা এই পথে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা দেশের প্রতিটি প্রান্তের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি এবং তাঁদের অসাধারণ কাজের সম্পর্কে জেনেছি। আপনাদেরও নিশ্চয়ই অভিজ্ঞতা হয়েছে যে আমাদের দেশের দূর-দূরান্তে, প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কত অভূতপূর্ব ক্ষমতা রয়েছে। ভারত মাতার কোলে কেমন সব রত্ন লালিত পালিত হচ্ছে। এটা আমাদের নিজেদের কাছেও সমাজকে দেখার, জানার, সমাজের সামর্থ্যকে চেনার একটা সুযোগ। আমার জন্য তো এটা এক আশ্চর্য অভিজ্ঞতা। এই ৭৫ পর্বের সময় কালে কত কত বিষয়ের কথা উঠে এসেছে। কখনও নদীর কথা, কখনো হিমালয়ের শৃঙ্গের কথা, কখনো মরুভূমির কথা, কখনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কথা, আবার কখনো মানবসেবার অগণিত কাহিনীর অনুভূতি, কখনো প্রযুক্তির আবিষ্কার আবার কখনো কোন অজানা, প্রত্যন্ত অঞ্চলের নতুন কিছু করে দেখানো কোন ব্যক্তির অভিজ্ঞতার কথা। আবার দেখুন, স্বচ্ছতার কথা হোক কিংবা আমাদের ঐতিহ্য রক্ষা করার আলোচনা হোক, বা শুধু এটুকুই নয়, খেলনা বানানোর কথা হোক, কি ছিল না সেখানে! কতগুলো বিষয় আমরা ছুঁয়ে গেছি তা সম্ভবত গুনে শেষ করা যাবে না। এই সময়ের মধ্যে মাঝে মাঝে আমরা মহান ব্যক্তিদের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছি, তাঁদের সম্বন্ধে জেনেছি, যাঁরা ভারতের নির্মাণে অতুলনীয় অবদান রেখেছেন। আমরা বহু বিশ্বজনীন প্রসঙ্গ নিয়েও কথা বলেছি। সেগুলি থেকে অনুপ্রাণিত হওয়ার চেষ্টা করেছি। অনেক কথা আপনারা আমাকে বলেছেন, বহু ধারণা দিয়েছেন। এক দিক থেকে এই মতাদর্শগত যাত্রায় আপনারাও সঙ্গে সঙ্গে চলেছেন, যুক্ত থেকেছেন এবং নতুন কিছু না কিছু যোগও করেছেন। আমি আজ এই ৭৫ তম পর্বের সময় সবার আগে ‘মন কি বাত’-কে সফল করার জন্য, সমৃদ্ধ করার জন্য এবং এর সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য প্রত্যেক শ্রোতাকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার প্রিয় দেশবাসী, দেখুন কত বড় শুভ যোগাযোগ! আজ আমার ৭৫তম "মন কি বাত" করার দিন, আর এই মাস স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে "অমৃত মহোৎসব" শুরু হওয়ার মাস। "অমৃত মহোৎসব" ডান্ডি যাত্রার দিন থেকে শুরু হয়েছিল এবং ১৫ই অগাস্ট ২০২৩ পর্যন্ত চলবে। "অমৃত মহোৎসব" এর অনুষ্ঠান সারাদেশে নিয়মিতভাবে হচ্ছে। আলাদা আলাদা স্থানে এই অনুষ্ঠানের ছবি, তথ্য মানুষ শেয়ার করছেন। নমো অ্যাপে এমনই কিছু ছবির সঙ্গে সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের নবীন আমায় একটা বার্তা পাঠিয়েছেন। উনি লিখেছেন যে উনি 'অমৃত মহোৎসবের' কার্যকলাপ দেখেছেন এবং ঠিক করেছেন যে নিজেও স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত এরকম কমপক্ষে ১০টি জায়গায় যাবেন। ওঁর তালিকায় প্রথম নামটি ভগবান বিরসা মুন্ডার জন্মস্থান। নবীন লিখেছেন যে, ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী স্বতন্ত্র সৈনিকদের কাহিনী তিনি দেশের অন্য প্রান্তে পৌঁছে দেবেন। ভাই নবীন, আপনার এই চিন্তা-ভাবনার জন্য আমি আপনাকে অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুরা, কোন স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াইয়ের গল্প হোক, কোন জায়গার ইতিহাস হোক, দেশের কোন সাংস্কৃতিক কাহিনী হোক, ‘অমৃত মহোৎসব’ এর সময়ে আপনি সেটিকে সমগ্র দেশের সামনে তুলে ধরতে পারেন, সকল দেশবাসীর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার মাধ্যম হতে পারেন। আপনারা দেখবেন, দেখতে দেখতে 'অমৃত মহোৎসব' এমন অনেক অনুপ্রেরণামূলক অমৃত বিন্দুতে পূর্ণ হবে, আর তারপর এমন অমৃত ধারা বইতে থাকবে, যে আমাদের ভারতের স্বাধীনতার একশ বছর পরেও তা প্রেরণা যোগাবে। দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে, কিছু করার উদ্যমের জন্ম দেবে। স্বাধীনতার জন্য লড়াইতে আমাদের সৈনিকরা কতই না কষ্ট শুধু এইজন্য সহ্য করেছেন, কারণ, তাঁরা দেশের জন্য ত্যাগ এবং বলিদানকে নিজেদের কর্তব্য মনে করতেন। ওঁদের ত্যাগ এবং বলিদানের অমর কাহিনী এখন যেন আমাদের কর্তব্যের পথে প্রেরণা দান করে যেমন গীতায় ভগবান কৃষ্ণ বলেছিলেন
“নিয়তং কুরু কর্ম ত্বং কর্ম জ্যায়ো হ্যকর্মণঃ”
এই ভাবনার সঙ্গে আমরা সকলে নিজেদের প্রতিদিনের কর্তব্যকে সম্পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব এবং স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের মানে এই যে আমরা নতুন সংকল্প গ্রহণ করব। সেই সংকল্প পূর্ণ করার জন্য মনপ্রাণ এক করে চেষ্টা করব আর সংকল্প তেমনি হবে যা সমাজের ভালোর জন্য হবে, দেশের ভালোর জন্য হবে, ভারতবর্ষের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য হবে, আর সংকল্প তেমন হবে যাতে আমার, নিজের, নিজস্ব কিছু দায়িত্ব থাকবে, আমাদের নিজেদের কর্তব্য যুক্ত থাকবে। আমার বিশ্বাস গীতার মধ্যে দিয়ে বেঁচে থাকার এই সুবর্ণ সুযোগ আমাদের কাছে আছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, গতবছর এই মার্চ মাসই ছিল, দেশ প্রথমবার জনতা কারফিউ শব্দটি শুনেছিল। কিন্তু এই মহান দেশের মহান দেশবাসীর মহাশক্তির অনুভব দেখুন, জনতা কারফিউ পুরো বিশ্বের জন্য এক আশ্চর্য ঘটনার নিদর্শন রাখল। অনুশাসনের এক অভূতপূর্ব উদাহরণ ছিল এটা, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই একটা বিষয়ে অবশ্যই অহংকার করবে। একইভাবে উল্লেখ্য আমাদের করোনা যোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানানো, আদর প্রকাশ, থালা বাজানো, তালি দেওয়া, প্রদীপ জ্বালানো। আপনাদের কোনো ধারনাই নেই এটা করোনা যোদ্ধাদের মনকে কিভাবে স্পর্শ করেছিল, আর এটাই তো কারণ, যে সারা বছর ওঁরা ক্লান্ত না হয়ে, একটুও না থেমে লড়ে গেছেন। দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জীবন বাঁচানোর জন্য মন প্রাণ এক করে পরিশ্রম করেছেন। গতবছর এই সময়ে প্রশ্ন ছিল যে করোনার টীকা কবে আসবে। বন্ধুরা, আমাদের সকলের জন্য এটা গর্বের বিষয় যে আজ ভারত পৃথিবীর সবথেকে বড় টিকাকরণ কর্মসূচি পরিচালনা করছে। টিকাকরণ কর্মসূচির বিষয়ে আমায় ভুবনেশ্বরের পুষ্পা শুক্লাজি লিখেছেন। ওঁর বক্তব্য, বাড়ির বয়স্ক সদস্যদের মধ্যে টিকা নিয়ে যে আগ্রহ দেখা গেছে, আমি যেন 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানে সেই বিষয়ে কথা বলি। বন্ধুরা এটা সঠিক যে, দেশের প্রত্যেক প্রান্ত থেকে আমরা এমন সব খবর শুনতে পাচ্ছি, এমন ছবি দেখতে পাচ্ছি, যে আমাদের মনকে তা স্পর্শ করছে। উত্তরপ্রদেশের জৌনপুরের ১০৯ বছরের বৃদ্ধা মা রাম দুলেয়াজি টিকা নিয়েছেন, এমনি দিল্লিতেও ১০৭ বছরের কেবল কৃষ্ণ জি টিকার ডোজ নিয়েছেন। হায়দ্রাবাদের ১০০ বছরের জয় চৌধুরী জিও টিকা নিয়েছেন এবং সকলের কাছে টিকা নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। আমি ফেসবুক- টুইটারেও দেখছি, যে লোকজন নিজেদের বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠদের টিকা নেওয়ার পরে তাঁদের ছবি আপলোড করছেন। কেরলের একজন যুবক আনন্দন নায়ার তো এই বিষয়টির একটি নতুন নাম দিয়েছেন, ‘ভ্যাকসিন সেবা’। এই একইধরনের বার্তা দিল্লি থেকে শিবানী, হিমাচল থেকে হিমাংশু, এবং অন্য অনেক যুবক-যুবতীরাও পাঠিয়েছেন। আমি সকল শ্রোতা বন্ধুদের এইধরনের চিন্তা ভাবনার জন্য প্রশংসা করছি। এই সব কিছুর মধ্যেও করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের মন্ত্রটাও অবশ্যই মনে রাখতে হবে 'ওষুধও খাবো, নিয়মও মেনে চলবো’। আর শুধু আমিই বলে যাবো তা কিন্তু নয়। আমাদের বাঁচতেও হবে, বলতেও হবে, জানাতেও হবে বাকি লোকেদের, যে 'ওষুধও খাবো, নিয়মও মেনে চলবো’। এরজন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি আজ ইন্দোরবাসী সৌম্যাজিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে চাই, তিনি একটি বিষয়ে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এবং এই বিষয়টা সম্পর্কে 'মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে বলতে বলেছেন। বিষয়টা হল, ভারতবর্ষের ক্রিকেটার মিতালী রাজজির নতুন রেকর্ড। মিতালীজি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ভারতীয় মহিলা যিনি দশ হাজার রান করেছেন। ওঁর এই সাফল্যে অনেক অনেক অভিনন্দন। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচে উনিই একমাত্র মহিলা খেলোয়াড় যিনি সাত হাজার রান করেছেন। মহিলা ক্রিকেট খেলায় ওঁর অবদান উল্লেখযোগ্য। দুই দশকেরও বেশি কেরিয়ারে, মিতালী রাজজি হাজারো-লক্ষ মানুষকে প্রেরণা দিয়েছেন। ওঁর কঠোর পরিশ্রম এবং সাফল্যের কাহিনী শুধুমাত্র মহিলা ক্রিকেটারদের নয় পুরুষ ক্রিকেটারদের জন্যও অনুপ্রেরণা।
বন্ধুগণ, এটা বেশ মজার বিষয়, এই মার্চ মাসেই যখন আমরা আন্তর্জাতিক মহিলা দিবস পালন করছিলাম, সেইসময়ই অনেক মহিলা খেলোয়াড়, মেডেল পেয়েছেন এবং রেকর্ডস গড়েছেন। দিল্লিতে আয়োজিত আইএসএসএফ ওয়ার্ল্ড কাপে, শুটিং এ ভারত শীর্ষ স্থানে ছিল। স্বর্ণপদক প্রাপ্তি সংখ্যাতেও, ভারত নজির স্থাপন করেছে। এটা ভারতের মহিলা এবং পুরুষ শুটার্সদের উল্লেখযোগ্য প্রদর্শনের জন্যই সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যেই, পি বি সিন্ধু জি, বিডব্লুএফ সুইস ওপেন সুপার ৩০০ টুর্নামেন্টে রৌপ্য পদক জিতেছেন। এখন, শিক্ষা থেকে শুরু করে শিল্পোদ্যো্গ, সশস্ত্র বাহিনী থেকে শুরু করে বিজ্ঞান- প্রযুক্তিতেও, সব জায়গায় দেশের মেয়েরা নিজেদের আলাদা পরিচয় তৈরি করছে। আমি বিশেষভাবে খুশি এই কথা ভেবে যে মেয়েরা খেলাধুলাতেও নিজেদের স্থান তৈরি করছে। পেশাগত জীবিকা হিসাবে খেলাধুলাও একটি পছন্দের বিষয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছুদিন আগেই হয়ে যাওয়া ম্যারিটাইম ইন্ডিয়া সামিটের কথা আপনাদের সবার মনে আছে তো? এই শীর্ষ সম্মেলনে আমি কি বলেছিলাম, আপনাদের কি মনে আছে? স্বাভাবিক, যে এতো অনুষ্ঠান হতে থাকে, এত কথা হতে থাকে, সব কথা কি করে মনে থাকবে? আর এত মনোযোগ দেওয়া কি করে সম্ভব? খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু, আমার খুব ভালো লেগেছে, যে আমার একটি অনুরোধকে গুরু প্রসাদজি খুব উৎসাহিত হয়ে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আমি এই শীর্ষ সম্মেলনে , দেশের লাইট হাউস কমপ্লেক্সের আশেপাশে পর্যটনের সুবিধা উন্নত করার কথা বলেছিলাম। গুরু প্রসাদজি ২০১৯ সালে তামিলনাড়ুর দুটি লাইট হাউস- চেন্নাই লাইট হাউস এবং মহবালিপুরম লাইট হাউস ঘোরার অনুভূতি ভাগ করে নিয়েছেন। উনি বেশ মজার ঘটনা বলেছেন যা শুনলে, মন কি বাত অনুষ্ঠানের শ্রোতা বন্ধুরাও অবাক হয়ে যাবেন। যেমন চেন্নাই লাইট হাউস, এটা বিশ্বের অন্যতম লাইট হাউস, যেখানে এলিভেটর আছে। শুধু তাই নয়, এটা একমাত্র লাইট হাউস যা শহরের সীমার মধ্যেই অবস্হিত। এর মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সোলার প্যানেলও রয়েছে। গুরুপ্রসাদজি লাইট হাউসের হেরিটেজ মিউজিয়াম সম্পর্কেও বলেছেন যা স্মুদ্র যাত্রার ইতিহাসকে তুলে ধরে। মিউজিয়ামে তেলে জ্বালানো বড় বড় বাতি, কেরোসিনের বাতি, পেট্রোলিয়াম ভেপার এবং পুরনো দিনের ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক বাতি প্রদর্শিত হয়। ভারতের সবচেয়ে পুরনো লাইট হাউস – মহাবালিপুরাম লাইট হাউস সম্পর্কেও গুরুপ্রসাদজি বিস্তারিত বিবরণ লিখেছেন। ওঁর মতে এই লাইটহাউসের ঠিক পাশেই কয়েকশো বছর আগে পল্লব রাজা মহেন্দ্র বর্মন-প্রথম "উল্কনেস্বরা" মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।
বন্ধুরা, "মন কি বাত"-এর সময়, আমি পর্যটনের বিভিন্ন দিক গুলি নিয়ে বহুবার কথা বলেছি, কিন্তু এই লাইটহাউস, ট্যুরিজমের প্রেক্ষাপটে অবশ্যই অনন্য। সুন্দর গঠনের জন্য লাইট হাউস বরাবরই মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। পর্যটন কে উৎসাহ দিতে ভারতেও ৭১ টি লাইট হাউস চিহ্নিত করা হয়েছে। এই সমস্ত লাইট হাউজ এর মধ্যে তাদের ক্ষমতা অনুযায়ী যাদুঘর, অ্যাম্পফি থিয়েটার, মুক্তমঞ্চ, ক্যাফেটেরিয়া , শিশু উদ্যান,পরিবেশ বান্ধব কটেজ এবং মনোরম পরিবেশ তৈরি করা হবে। অবশ্য, লাইট হাউসের প্রসঙ্গ যখন উঠলোই তখন আমি এক অনন্য লাইট হাউসের সম্পর্কে আপনাদের জানাতে চাই। এই লাইটহাউস গুজরাটের সুরেন্দ্রনগর জেলায় জিনঝুয়াড়ায় রয়েছে। জানেন এই লাইট হাউসের বিশেষত্ব কি? বিশেষত্বের কারণ, যেখানে এই লাইট হাউস রয়েছে, সেখান থেকে সমুদ্রতীর প্রায় ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে। আপনি এই গ্রামের মধ্যে বেশ কিছু প্রস্তরখণ্ড পাবেন, যা জানায় যে এই স্থানে একসময় একটি ব্যস্ত বন্দর ছিল। অর্থাৎ বহুকাল আগে সমুদ্র সৈকত জিনঝুয়াড়া পর্যন্ত ছিল। সমুদ্রের ঢেউএর পতন, উত্থান, পশ্চাদপসরণ, পুনরাগমন, এতদূর পর্যন্ত চলে যাওয়া, এও তার এক রূপ। ১০ বছর আগে এই মাসেই জাপানে এসেছিল এক ভয়ংকর সুনামি। এই সুনামিতে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ গিয়েছিল। এমনই এক সুনামি ভারতে ২০০৪ সালে এসেছিল। সুনামির সময় আমরা লাইট হাউসে কর্মরত, আমাদের ১৪ জন কর্মচারীকে হারিয়েছি, যাঁরা আন্দামান নিকোবার আর তামিলনাডুর লাইট হাউসে ডিউটি করছিলেন। অত্যন্ত পরিশ্রমী আমাদের এই লাইট হাউজের কর্মীদের আমার গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই এবং তাদের কাজের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করি।
প্রিয় দেশবাসী, জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে নতুনত্ব, আধুনিকতা আবশ্যক, অন্যথায় সেসব কখনও কখনও আমাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। ভারতের কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিকতা এই সময়ের প্রয়োজন। অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমাদের অনেক সময় চলে গেছে। কৃষি ক্ষেত্রে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে, কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করতে, প্রচলিত কৃষির পাশাপাশি নতুন বিকল্পগুলিকে, নতুন নতুন উদ্ভাবনকে গ্রহণ করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। শ্বেত বিপ্লবের সময় দেশ এই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। এখন মৌমাছি পালন-ও এমনই একটি বিকল্প হিসেবে উঠে হয়েছে। মৌমাছি পালন দেশে মধু বিপ্লব বা সুইট রিভলিউশনের ভিত্তি হয়ে উঠছে। বহুসংখ্যক কৃষক এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন, উদ্ভাবন করছেন। যেমন পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ের একটি গ্রাম গুরদুম। এত উঁচু পাহাড়ে, নানান ভৌগলিক সমস্যা সত্বেও এখানকার মানুষ মৌচাষের কাজ শুরু করেছেন, আর এখন, এই জায়গায় তৈরি মধুর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। এতে কৃষকদেরও আয় বেড়েছে। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন এলাকার প্রাকৃতিক জৈব মধু সারা দেশে ও বিদেশে পছন্দ করা হয়। এমনই একটি ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা আমার গুজরাতেও আছে। গুজরাতের বনাসকান্থায় ২০১৬ সালে একটি অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে আমি লোকেদের বললাম এখানে এত সম্ভাবনা রয়েছে, কেন বনসকান্থা আর আমাদের এখানকার কৃষকরা মিলে স্যুইট রিভোলিউশনের একটি নতুন অধ্যায় তৈরি করবে না। আপনারা জেনে খুশী হবেন যে, এই কম সময়ে বনসকান্থা মধু উৎপাদনের একটি প্রধান কেন্দ্র তৈরি হয়ে উঠেছে। আজ বনসকান্থার কৃষকেরা মধু থেকে বার্ষিক লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করেন। হরিয়ানার যমুনা নগরেও এরকমই একটি উদাহরণ রয়েছে। যমুনা নগরে কৃষকেরা মৌচাষ করে বছরে কয়েক শো টন মধু উৎপাদন করে নিজেদের আয় বৃদ্ধি করছেন। কৃষকদের এই পরিশ্রমের ফলস্বরূপ দেশে মধু উৎপাদন ক্রমশঃ বাড়ছে,যা বছরে প্রায় সোয়া লাখ টনে গিয়ে পৌঁছেছে। এর মধ্যে থেকে প্রচুর মাত্রায় মধু বিদেশে রপ্তানিও করা হচ্ছে। বন্ধুরা, মৌমাছি প্রতিপালনে শুধু মধু থেকেই আয় হয় তা নয়, এমন কি মৌচাকের মোমও আয়ের এক প্রধান মাধ্যম। ওষুধ তৈরি শিল্প, খাদ্য শিল্প, বস্ত্র ও প্রসাধন সামগ্রী শিল্প౼ সর্বত্র মৌচাকের মোমের চাহিদা রয়েছে। আপাতত আমাদের দেশে মৌচাকের মোম আমদানি করা হয়। কিন্তু আমাদের কৃষকেরা পরিস্থিতি দ্রুত বদলে ফেলছেন, যা একদিক দিয়ে আত্মনির্ভর ভারত অভিযানে সাহায্য করছে। আজ তো সারা বিশ্ব আয়ূর্বেদ ও প্রাকৃতিক স্বাস্থ্যসম্মত পণ্যের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এর জন্য মধুর চাহিদা তীব্র গতিতে বাড়ছে। আমি চাই দেশের বেশির ভাগ কৃষকেরা চাষের পাশাপাশি মৌচাকের মোমের সঙ্গেও যুক্ত হোন। এতে কৃষকদের আয় ও বাড়বে আর জীবনের মাধুর্যও বৃদ্ধি পাবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছু দিন আগেই ওয়ার্ল্ড স্প্যারো ডে পালন করা হোল।স্প্যারো অর্থাৎ চড়ুই পাখি। কোথাও একে চকলী বলে, কোথাও চিমনী, কোথাও ঘান চিরিকা বলা হয়। আগে আমাদের ঘরের পাঁচিলে আশেপাশের গাছে চড়ুইয়ের কিচির মিচির শোনা যেত, কিন্তু এখন লোকে চড়ুইকে এই বলে মনে করে যে, শেষ বহু বছর আগে চড়ুই পাখি দেখেছিলাম। আজ আমাদের একে বাঁচানোর চেষ্টা করতে হচ্ছে। আমার বেনারসের এক বন্ধু ইন্দ্রপাল সিং বত্রা জী এমন একটি কাজ করেছেন যা আমি ‘মন কি বাত’ র শ্রোতাদের অবশ্যই বলতে চাই। বত্রা জী নিজের বাড়িটাকেই চড়ুইপাখির থাকবার জায়গা বানিয়ে দিয়েছেন। ইনি নিজের ঘরে কাঠ দিয়ে এমন বাসা বানিয়ে দিয়েছেন যাতে চড়ুই সহজেই থাকতে পারে। আজ বেনারসের অনেক বাড়িই এই অভিযানে যুক্ত হচ্ছে। এতে বাড়িতে একটা অদ্ভুত প্রাকৃতিক পরিবেশও তৈরি হচ্ছে। আমি চাই যে যেভাবে পারে প্রকৃতি, পরিবেশ, প্রাণী, পাখি যার জন্যই হোক, কম বেশি চেষ্টা সবাই করুক। যেমন এক বন্ধু বিজয় কুমার কাবী জী। বিজয় জী ওড়িশার কেন্দ্রাপাড়ায় থাকেন। কেন্দ্রাপাড়া সমুদ্রতটে অবস্থিত, এই জন্য এই জেলার কিছু গ্রাম এমন আছে যেখানে সমুদ্রের উঁচু ঢেউ আর ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ থাকে। এতে বহুবার অনেক ক্ষতিও হয়েছে। বিজয়জী অনুভব করলেন যে প্রাকৃতিক দুর্যোগকে যদি কেউ রুখতে পারে তাহলে সেটা প্রকৃতিই পারে। তারপর আর কি- বিজয় জী বড়াকোট গ্রাম থেকে নিজের মিশন শুরু করলেন। উনি ১২ বছর! বন্ধুরা ১২ বছর পরিশ্রম করে গ্রামের বাইরে সমুদ্রের দিকে ২৫ একরের ম্যানগ্রোভ জঙ্গল দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। আজ এই জঙ্গল এই গ্রামকে রক্ষা করছে। এরকম কাজ ওড়িশার পারাদীপ জেলার একজন ইঞ্জিনিয়র অমরেশ সামন্তও করেছেন। অমরেশ জী ছোটো ছোটো জঙ্গল লাগিয়েছেন যাতে আজ অনেক গ্রাম রক্ষা পাচ্ছে। বন্ধুরা, এই ধরণের কাজে যদি আমরা সমাজকেও সঙ্গে নিই তাহলে বৃহৎ ফল পাওয়া যায়। যেমন তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটুরে বাসের কনডাক্টার মরিমুথু যোগনাথন জী। যোগনাথন জী নিজের বাসে যাত্রীদের যখন টিকিট দেন, তার সঙ্গে বিনামূল্যে একটা গাছের চারাও দেন। এভাবেই যোগনাথন জী অজস্র বৃক্ষরোপণে সাহায্য করেছেন। যোগনাথন জী নিজের বেতনের একটা বড় অংশ এই কাজে ব্যয় করেন। এখন এটা শোনার পর এমন কে আছেন যে মরিমুথু যোগনাথন জীর প্রশংসা করবেন না। প্রেরনামূলক কাজের জন্য ওঁর এই চেষ্টা কে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ওয়েস্ট থেকে ওয়েলথ অর্থাৎ জঞ্জাল থেকে সম্পদ তৈরির ব্যাপারে আমরা সবাই দেখেওছি, শুনেওছি, আর আমরা সবাইকে বলিও। সেরকমই কিছু জঞ্জালকে মূল্যবান পণ্যে পরিবর্তনের কাজও শুরু হয়েছে। এরকমই একটি উদাহরণ কেরেলার কোচির সেন্ট টেরেসা কলেজের। আমার মনে আছে ২০১৭ তে আমি একবার এই কলেজ ক্যাম্পাসে বুক রিডিং সংক্রান্ত একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। এই কলেজের ছাত্রছাত্রীরা পূনর্ব্যবহারযোগ্য খেলনা তৈরি করছেন, তাও আবার খুবই সৃজনশীল ভাবে। এই ছাত্রছাত্রীরা পুরোনো কাপড়, ফেলে দেওয়া কাঠের টুকরো, ব্যাগ ও বাক্স ব্যবহার করে খেলনা বানানোর কাজ করছেন। কেউ পাজল বানাচ্ছেন, তো কেউ গাড়ি আর ট্রেন বানাচ্ছেন। এখানে বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখা হয় যাতে খেলনা সুরক্ষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুবান্ধবও হয়। আর এই পুরো প্রয়াসের আরো একটা ভাল দিক হলো এই খেলনাগুলো অঙ্গনওয়ারী শিশুদের খেলার জন্য দেওয়া হয়, আজ যখন ভারতবর্ষ খেলনার উৎপাদনে অনেক অগ্রগতি ঘটাচ্ছে তখন বর্জ বা নষ্ট জিনিসকে ব্যবহার্য বস্তুতে রূপান্তর করার এই অভিযান নিশ্চিতভাবেই একটি অভিনব প্রয়াস। অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়ায় এক প্রফেসর শ্রীনিবাস পদকান্ডালা। তিনি প্রচুর আকর্ষণীয় কাজ করে চলেছেন। অটোমোবাইলের মেটাল স্ক্র্যাপ দিয়ে ভাস্কর্য নির্মাণ করেছেন, তার তৈরি বিশাল ভাস্কর্য সার্বজনীন পার্কে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে সেই ভাস্কর্য শিল্প দর্শন করছেন। ইলেকট্রনিকন্স এবং অটোমোবাইলের পরিত্যাজ্য ধাতব বস্তু দিয়ে পুনর্ব্যবহারযোগ্য এই সৃষ্টির মধ্যে অভিনবত্ব আছে। তাই আমি আরো একবার কোচি এবং বিজয়ওয়াড়ার সৃষ্টিশীল এই মানুষদের প্রশংসা করছি। সেই সঙ্গে আমি এও প্রত্যাশা করি যে আগামী দিনে আরো বেশি সংখ্যক মানুষ এগিয়ে এসে এমন প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত হবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, যখন কোন ভারতবাসী পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে যান তখন তিনি গর্ব করে বলতে পারেন যে তিনি একজন ভারতীয়। আমাদের যোগসাধনা, আয়ুর্বেদ, দর্শন, থেকে শুরু করে কি নেই ? সব আছে আমাদের কাছে। যা নিয়ে আমরা গর্বিত হই, গর্বের কথা বলি, সেই সঙ্গে আমাদের স্থানীয় বা আঞ্চলিক ভাষা, পরিচয়, পোশাক, খাদ্য, পানীয়, এসব নিয়েও আমরা গর্ব করি, আমরা নতুনের প্রত্যাশী আর এটাই তো জীবন। কিন্তু সেইসঙ্গে আমরা পুরনোকেও হারাতে চাইনা। প্রচুর পরিশ্রমের সঙ্গে আমাদের নিজেদের চারপাশে বিদ্যমান অপার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এবং তা নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আজ এই কাজ আসামবাসী শিকারি টিসসো জী নিষ্ঠার সঙ্গে করে চলেছেন। কার্বি আঙ্গলং জেলার শিকারি টিসসো জী বিগত কুড়ি বছর ধরে কার্বি ভাষার ডকুমেন্টেশন এর কাজ করে চলেছেন। কোন এক সময় কোন এক যুগে কার্বি ছিল আদিবাসী ভাই-বোনেদের ভাষা। আজ তা মূল ধারা থেকে অদৃশ্য হতে চলেছে। শ্রীমান শিকারি টিসসো জী মনস্থির করেছিলেন তাদের ভাষার নিজস্বতাকে বাঁচাবেন। তাই আজ তার এই উদ্যোগের ফলেই কার্বি ভাষার তথ্যাদি যথেষ্ট পরিমাণে নথিভূক্ত হয়েছে। তার এই প্রচেষ্টার ফলেই তিনি নানা স্থানে প্রশংসা পেয়েছেন এবং পুরস্কৃত হয়েছেন। ‘মন কি বাত অনুষ্ঠান’ এর মাধ্যমে শ্রীমান শিকারি টিসসো জী কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু সেই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, কোণায় কোণায় হয়তো এই ধরনের আরো অনেক সাধক আছেন, যাঁরা কোন একটি কাজ নিয়ে নিমগ্ন আছেন। আমি তাঁদের সবাইকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, যেকোনো নতুন সূচনা অর্থাৎ নিউ বিগিনিং সব সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে। নূতন সূচনা কথাটির অর্থ হলো নতুন সম্ভাবনা বা নতুন প্রচেষ্টা। আর নতুন প্রচেষ্টার অর্থ নতুন শক্তি, নতুন উদ্যমতা। এই কারণে আলাদা আলাদা রাজ্য এবং ক্ষেত্রে বিভিন্নতায় পরিপূর্ণ আমাদের সংস্কৃতির যেকোনো সূচনাকে উৎসবের অঙ্গ হিসেবে পালন করার পরম্পরা লক্ষ্য করা যায়। আর বিশেষ করে এই সময়টা নতুন সূচনা আর নতুন উৎসবের আগমনের সময়। হোলিও তো বসন্তের উৎসব হিসেবে মেনে চলার এক পরম্পরা। যে সময়ে আমরা রং নিয়ে হোলি পালন করি, সেই সময় বসন্ত আমাদের চারপাশে নতুন রং ছড়াতে থাকে। এই সময়কালে ফুল ফোটা শুরু হয় এবং প্রকৃতি সজীব হয়ে ওঠে। আমাদের দেশের আলাদা আলাদা স্থানে খুব শীঘ্রই নতুন বছর উদযাপন করা হবে। তা সে উগাদি হোক বা পুথুন্ডি, গুড়ি পড়বা, কিম্বা বিহু, নবরেহ হোক বা পয়লা বৈশাখ বা বৈশাখী। সমগ্রদেশ উৎসাহ, উদ্দীপনা আর নতুন প্রত্যাশার রঙে স্নাত হয়ে উঠবে। এই সময়ে কেরালাও খুব সুন্দর উৎসব ‘বিশু’ উদযাপন করে থাকে। এর পরে দ্রুত চৈত্র নবরাত্রি পার্বণও চলে আসবে। চৈত্র মাসের নবম দিনে আমাদের এখানে রামনবমী পর্ব উদযাপিত হয়। এই পরবকে ভগবান রামের জন্মোৎসবের সঙ্গেই ন্যায় আর পরাক্রমের এক নতুন যুগের সূচনা রূপে মান্যতা দেওয়া হয়। এই সময়ে চতুর্দিকে ধুমধামের সঙ্গেই ভক্তিভাবে পরিপূর্ণ এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। যা মানুষকে আরো কাছে টেনে নেয়। সবাইকে পরিবার এবং সমাজের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ করে তোলে। নিজেদের সম্পর্কগুলোকে মজবুত করে। তাই এই পর্ব উপলক্ষে আমি দেশবাসীকে শুভকামনা জানাচ্ছি। বন্ধুরা, চৌঠা এপ্রিল দেশ ইস্টার উদযাপন করবে। যিশুখ্রিস্টের পুনর্জীবনের উৎসব রূপে ইস্টার পালন করা হয়ে থাকে। প্রতীকী হিসেবে ইস্টার জীবনের নতুন সূচনার সঙ্গেই জড়িত। ইস্টার আশার পুনর্জীবনের প্রতীক। এই পবিত্র ও পুণ্য তিথিতে আমি শুধুমাত্র ভারতেরই নয়, সাড়া বিশ্বের খ্রীশ্চান ভাই বোনেদের শুভেচ্ছা জানাই। আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ ‘মন কি বাত’ এ আমরা অমৃত মহোৎসব আর দেশের জন্য আমাদের কর্তব্যের কথা বললাম। আমরা অন্যান্য পরব এবং উৎসবের বিষয় নিয়ে চর্চা করলাম। এরই মাঝে আরো একটি পর্ব আসতে চলেছে যা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার আর কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দেয়। তা হল ১৪ই এপ্রিল ডক্টর বাবাসাহেব আম্বেদকর এর জন্মজয়ন্তী। এইবার ‘অমৃত মহোৎসব’এ তো এই উপলক্ষটি আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমি বিশ্বাস করি বাবা সাহেবের এই জন্মজয়ন্তীকে আমরা নিশ্চিত ভাবেই স্মরণীয় করে তুলবো। আমাদের কর্তব্যের সংকল্প নিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাবো। এই বিশ্বাসের সঙ্গেই আপনাদের সবাইকে আরো একবার পরব ও উৎসবের শুভকামনা জানাচ্ছি। আপনারা সবাই খুশি থাকুন, সুস্থ থাকুন, আর খুব উৎসাহ উদ্দীপনায় মেতে উঠুন। এই কামনা করে আরো একবার মনে করিয়ে দিচ্ছি ‘দাবাই ভি কড়াই ভি’ । অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী,
নমস্কার| কাল ছিল মাঘ পূর্ণিমার পরব| মাঘ মাস বিশেষভাবে নদী, সরোবর এবং জলস্রোতের সঙ্গে জুড়ে থাকে বলে মানা হয়| আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে:-
‘মাঘে নিমগ্নাঃ সলিলে সুশীতে, বিমুক্তপাপাঃ ত্রিদিবম প্রয়ান্তি||’
অর্থাৎ, মাঘ মাসে যে কোন পবিত্র জলাশয়ে স্নান করা শুদ্ধ মনে করা হয়| বিশ্বের প্রত্যেক সমাজেই নদীর সঙ্গে জুড়ে থাকা কোন না কোন ঐতিহ্য অবশ্যই থাকে| নদীতটেই অনেক সভ্যতার বিকাশ হয়েছে| আমাদের সংস্কৃতিও যেহেতু হাজার হাজার বছর প্রাচীন, তাই আমাদের এখানে এর বিস্তৃতি অনেক বেশি মাত্রায় দেখতে পাওয়া যায়| ভারতে এমন কোন দিনই হয়তো পাওয়া যাবে না, যেদিন দেশের কোন না কোন প্রান্তে জলের সঙ্গে জুড়ে থাকা কোন না কোন উৎসবের আয়োজন নেই| মাঘের দিনগুলিতে তো অনেক মানুষ নিজের ঘর-পরিবার, সুখ-সুবিধে ছেড়ে গোটা মাস নদীর পারে কল্পবাসে যান| এবার হরিদ্বারে কুম্ভও হতে চলেছে| জল আমাদের জন্য জীবন, আস্থার অপর নাম, আবার বিকাশের ধারাও| জল একদিক থেকে পরশমণি থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ| বলা হয় পরশমনির ছোঁয়ায় লোহা সোনায় পরিবর্তিত হয়| একইভাবে জলের স্পর্শ জীবনের জন্য জরুরি, উন্নয়নের জন্য জরুরি|
বন্ধুগণ, মাঘ মাসকে জলের সঙ্গে যুক্ত করার সম্ভবতঃ আরও এক কারণ আছে, এর পর থেকেই শীত কমে যায়| গরমের পদধ্বনি শোনা যায়| সেজন্যই জল সংরক্ষণের লক্ষ্যে আমাদের এখন থেকেই চেষ্টা শুরু করা উচিৎ| কিছু দিন বাদেই মার্চ মাসের ২২ তারিখে ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াটার ডে’ বা বিশ্ব জল দিবসও আছে|
আমাকে ইউ.পি.-র আরাধ্যাজি লিখেছেন, বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ নিজেদের জীবনের অনেক বড় ভাগ জলের অভাব পূরণ করার কাজেই খরচ করেন| ‘জল ছাড়া সবই শূণ্য’ কথাটা এমনি বলা হয়নি| জল সংকট সমাধানের জন্য পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের সুজিতজি আমাকে খুবই ভালো বার্তা পাঠিয়েছেন| তিনি লিখেছেন, প্রকৃতি জল রূপে আমাদের একটি সর্বজনীন উপহার দিয়েছে, তাই তাকে রক্ষা করার দায়িত্বও সর্বজনীন| এটা একদম ঠিক কথা, যেমন সর্বজনীন উপহার, তেমনি সর্বজনীন দায়বদ্ধতাও আছে| সুজিতজির কথা একদম ঠিক! নদী, সরোবর, হ্রদ, বর্ষা বা মাটির নীচের জল প্রত্যেকের জন্য|
বন্ধুগণ, একটা সময় ছিল যখন গ্রামের কুয়ো, পুকুরগুলির যত্ন, সবাই মিলে নিতেন, এখন এরকমই এক প্রচেষ্টা তামিলনাডুর তিরুবন্নামালাইয়ে হচ্ছে| সেখানে স্থানীয় মানুষ নিজেদের কুয়ো সংরক্ষণের জন্য অভিযান চালিয়েছেন| তাঁরা নিজেদের এলাকায় বছরের পর বছর পরিত্যক্ত হয়ে থাকা বারোয়ারি কুয়োকে ফের ব্যবহারের উপযোগী করে তুলছেন|
মধ্যপ্রদেশের অগরোথা গ্রামের ববিতা রাজপুতজিও যা করছেন, তাতে আপনারা সবাই অনুপ্রাণিত হবেন| ববিতাজির গ্রাম বুন্দেলখণ্ডে| তাঁর গ্রামের পাশে কোন এক সময় একটি বড়সড় হ্রদ ছিল, যা এখন শুকিয়ে গেছে| তিনি গ্রামেরই অন্য মহিলাদের সঙ্গে নিয়ে এই শুকনো হ্রদ পর্যন্ত জল নিয়ে আসার জন্য এক নালা তৈরি করে ফেলেছেন| এই নালার মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গার বৃষ্টির জল সোজা হ্রদে চলে আসতে থাকে| এখন এই হ্রদ জলে ভরে থাকে|
বন্ধুগণ, উত্তরাখণ্ডের বাগেশ্বরে থাকেন জগদীশ কুনিয়াল| তাঁর কর্মকাণ্ডও আমাদের অনেক কিছু শেখায়| জগদীশজির গ্রাম এবং আশেপাশের এলাকাগুলির জলের প্রয়োজন মিটত এক প্রাকৃতিক জলের উৎস থেকে| কিন্তু বেশ কয়েক বছর আগে তা শুকিয়ে যায়| এতে গোটা এলাকাতেই জলের সংকট ক্রমশ গভীর হতে থাকে| জগদীশজি বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে এই সংকট সমাধানের উপায় বের করার কথা ভাবেন| তিনি সেই সমস্ত এলাকার গ্রামের মানুষের সঙ্গে মিলে হাজার হাজার গাছ লাগিয়ে ফেলেন| আজ সেখানকার সেই শুকিয়ে যাওয়া জলের উৎস ফের জলে ভরে উঠেছে|
বন্ধুগণ, এভাবেই জল নিয়ে আমাদের সর্বজনীন দায়বদ্ধতার বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে| ভারতের বেশিরভাগ অংশে মে-জুন মাসে বর্ষা শুরু হয়| আমরা কি আমাদের আশেপাশের জলের উৎসগুলি পরিষ্কার করার জন্য, বর্ষার জল সংরক্ষণের জন্য ১০০ দিনের কোন অভিযান শুরু করতে পারি না? এই ভাবনা থেকেই এখন থেকে কয়েকদিন বাদেই জলশক্তিমন্ত্রক থেকেও জলশক্তি অভিযান ‘ক্যাচ দ্য রেইন’ শুরু হতে যাচ্ছে| এই অভিযানের মূলমন্ত্র হচ্ছে:-ক্যাচ দ্য রেইন হোয়ার ইট ফলস, হোয়েন ইট ফলস! বৃষ্টিকে লুফে নাও, যেখানেই পড়ুক যখনই পড়ুক! আমরা এখন থেকে এই কাজে লেগে পড়লে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের যে পদ্ধতি আছে তাকে আরও শক্তিশালী করে তুলবো, গ্রামের জলাশয়ে, পুকুরে, পরিষ্কার করিয়ে নেবো জলের উৎস পর্যন্ত জল আসার সমস্ত বাধা| তাহলে সেগুলিতে যত বেশি সম্ভব বর্ষার জল সঞ্চয় করতে পারবো|
আমার প্রিয় দেশবাসী, যখনই মাঘ মাস এবং এর আধ্যাত্মিক সামাজিক মহিমার কথা আলোচনায় উঠে আসে, তখন সেখানে একটা নাম উচ্চারিত না হলে অসম্পূর্ণতা থেকে যায়| আর সেই নাম হচ্ছে সন্ত রবিদাসজির| মাঘ পূর্ণিমার দিনই সন্ত রবিদাসজির জন্মজয়ন্তী| আজও সন্ত রবিদাসজির শব্দমালা, জ্ঞান আমাদের পথ দেখায়| তিনি বলেছিলেন,
“একৈ মাতি কে সভ ভান্ডে, সভ কা একৌ সিরজনহার|
রবিদাস ব্যাপৈ একৈ ঘট ভিতর, সভ কৌ একৈ ঘড়েই কুমহার|”
অর্থাৎ, আমরা সবাই একই মাটির পাত্র, আমাদের সবাইকে একজনই তৈরি করেছেন| সন্ত রবিদাসজি সমাজে ব্যাপ্ত বিকৃতিগুলি নিয়ে সর্বদা মন খুলে নিজের কথা বলেছেন| তিনি এই সমস্ত বিকৃতিগুলোকে সমাজের সামনে তুলে ধরেছেন, সেগুলি শুধরে নেওয়ার পথ দেখিয়েছেন| আর সেজন্যই মীরাজি বলেছিলেন– গুরু মিলিয়া রৈদাস, দীনহীন জ্ঞান কি গুটকি|
এটা আমার সৌভাগ্য যে, আমি সন্ত রবিদাসজির জন্মস্থান বারাণসীর সঙ্গে যুক্ত| সন্ত রবিদাসজির জীবনের আধ্যাত্মিক উচ্চতা এবং তার প্রাণশক্তিকে আমি সেই তীর্থস্থানে উপলব্ধি করেছি|
বন্ধুগণ, রবিদাসজি বলতেন––
“করম বন্ধন মে বন্ধ রহিও, ফল কি না তজ্জীও আস|
কর্ম মানুষ কা ধর্ম হ্যায়, সত ভাখৈ রবিদাস||”
অর্থাৎ, আমাদের নিরন্তর নিজেদের কাজ করে যেতে হবে| তাহলে ফল তো অবশ্যই পাবো| মানে, কাজ করলে সিদ্ধিলাভ অবশ্যই হয়ে থাকে| আমাদের যুববন্ধুদের সন্ত রবিদাসজির কাছ থেকে আরও একটা কথা অবশ্যই শিখতে হবে, নবীন প্রজন্মকে যে কোন কাজ করার জন্য নিজেদের পুরনো পন্থা-পদ্ধতির মধ্যে বেঁধে রাখলে চলবে না| আপনারা, আপনাদের নিজেদের জীবন ধারা নিজেরাই ঠিক করুন| নিজেদের পন্থা-পদ্ধতি নিজেরাই তৈরি করুন এবং নিজেদের লক্ষ্যমাত্রাও নিজেরাই ঠিক করুন| যদি আপনার বিবেক ও আত্মবিশ্বাস মজবুত হয় তাহলে পৃথিবীর কোনকিছু নিয়েই ভয় পাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই| আমি এমন কথা এজন্য বলছি, কেন না, অনেক বার আমাদের নবীন প্রজন্ম এক চলতি ভাবনার চাপে নিজেদের সেই কাজগুলিই করতে পারেন না, যেগুলি তাঁদের খুবই পছন্দের| এজন্য আপনাদের কখনই নতুন ভাবনা, নতুন কাজ নিয়ে কোনরকম দ্বিধা রাখা উচিৎ নয়| এভাবেই সন্ত রবিদাসজিও আরেক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন| আর সেই বার্তা হচ্ছে, নিজের পায়ে দাঁড়ানো| আমরা নিজেদের স্বপ্নপূরণের জন্য অন্য কারো ওপর নির্ভর করব সেটা ঠিক নয়| যা যেরকম আছে সেরকম চলতে থাকুক, রবিদাসজি কখনই এর পক্ষে ছিলেন না| আর আজ আমরা দেখছি, দেশের নবীন প্রজন্মও এরকম ভাবনার পক্ষে একদম নেই| আজ যখন আমি দেশের নবীন প্রজন্মের মধ্যে উদ্ভাবনী আবেগ দেখতে পাই তাতে আমার মনে হয়, আমাদের নবীন প্রজন্মের জন্য সন্ত রবিদাসজিও অবশ্যই গর্বিত হতেন|
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ জাতীয় বিজ্ঞান দিবসও বটে| আজকের দিনটি ভারতের মহান বিজ্ঞানী ড. সি.ভি. রমণজি’র আবিষ্কৃত ‘রমণ এফেক্ট’-এর প্রতি সমর্পিত| কেরল থেকে যোগেশ্বরণজি নমোঅ্যাপে লিখেছেন, রমণ এফেক্টের আবিষ্কার গোটা বিজ্ঞান জগতের গতিপথ বদলে দিয়েছিলো| এই প্রসঙ্গে নাসিকের স্নেহিলজি আমাকে একটি সুন্দর বার্তা পাঠিয়েছেন | তিনি লিখেছেন, আমাদের দেশে অসংখ্য বিজ্ঞানী আছেন, যাঁদের অবদান ছাড়া বিজ্ঞান এতদূর অগ্রগতি করতে পারত না| আমরা যেভাবে পৃথিবীর অন্য দেশের বিজ্ঞানীদের বিষয়ে জানি, সেভাবে আমাদের ভারতের বিজ্ঞানীদের বিষয়েও জানতে হবে| আমিও ‘মন কি বাতে’–র এই সমস্ত শ্রোতাদের সঙ্গে সহমত পোষণ করছি| আমি অবশ্যই চাইবো, আমাদের নবীন প্রজন্মও ভারতীয় বিজ্ঞানের ইতিহাস, আমাদের বিজ্ঞানীদের জানুক, বুঝুক এবং অনেক পড়াশুনো করুক|
বন্ধুগণ, আমরা যখন বিজ্ঞানের কথা বলি, তখন তাকে অনেকবারই মানুষ পদার্থবিদ্যা-রসায়নের মধ্যে অথবা গবেষণাগার পর্যন্তই সীমিত করে ফেলেন| কিন্তু বিজ্ঞানের বিস্তৃতি তো এর থেকে অনেক বেশি| আর ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযান’-এ বিজ্ঞানের শক্তিরও অনেক অবদান আছে| আমাদের বিজ্ঞানকে ‘ল্যাব টু ল্যান্ড’ এর মন্ত্রে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে|
উদাহরণ হিসেবে হায়দ্রাবাদের চিন্তলা বেঙ্কট রেড্ডিজির কথা বলতে হয়| রেড্ডিজি’র এক চিকিৎসক বন্ধু তাঁকে একবার ভিটামিন ডি-র অভাবে বিভিন্ন রোগের বিপদ সম্পর্কে বলেছিলেন| তিনি একজন কৃষক| তিনি ভাবেন, এই সমস্যার সমাধানে কী করা যায়! এর পর তিনি পরিশ্রম করে গম আর চালের এমন সব প্রজাতি তৈরি করেন, যেগুলি বিশেষভাবে ভিটামিন ডি যুক্ত| এই মাসেই তিনি জেনেভার বিশ্ব মেধাস্বত্ত্ব সংগঠন থেকে সেগুলির প্যাটেন্ট পেয়ে গেছেন| এটা আমাদের সরকারের সৌভাগ্য যে, আমরা গতবছর রেড্ডিজিকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করেছিলাম|
এমনি অনেক উদ্ভাবনী পদ্ধতিতে লাদাখের উর্গেন ফুতসৌগও কাজ করে যাচ্ছেন| ফুতসৌগজি এত উচ্চতায় জৈব পদ্ধতিতে চাষ করে প্রায় ২০ ধরনের ফসল উৎপাদন করছেন| তা-ও আবার সাইক্লিক পদ্ধতিতে| মানে তিনি এক ফসলের বর্জ্যকে আরেক ফসলের সার হিসেবে প্রয়োগ করে ফেলেন| দারুণ ব্যাপার, তাই না! এভাবেই গুজরাটে পাটন জেলার কামরাজ ভাই চৌধুরী ঘরের মধ্যেই সজনের উন্নত প্রজাতির বীজ উৎপন্ন করেছেন| একে অনেকে সর্গওয়া বলেন| একে মৌরিঙ্গা বা ড্রামস্টিকও বলা হয়| উন্নত প্রজাতির বীজ থেকে যে সজনে হয় তার গুণমানও খুব ভালো| নিজের উৎপাদনকে তিনি তামিলনাডু এবং পশ্চিমবঙ্গে পাঠিয়ে নিজের আয়ও বাড়াচ্ছেন|
বন্ধুগণ, আজকাল ‘চিয়া সিডস’ এর নাম আপনারা খুব শুনছেন| স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ একে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছেন| আর বিশ্বে এর খুব চাহিদাও রয়েছে| ভারতে এর চাহিদা মেটাতে বেশিরভাগই বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়| কিন্তু এখন দেশে অনেকে চিয়া সিডস চাষের মাধ্যমে আত্মনির্ভরতা অর্জনের সংকল্পও নিয়ে ফেলেছেন| এরকমই একজন হলেন ইউ পি-র বারাবাঁকির হরিশ্চন্দ্রজি। তিনি চিয়া সিডস এর চাষ শুরু করেছেন| চিয়া সিডস এর চাষ তাঁর আয়ও বাড়াবে এবং আত্মনির্ভর ভারত অভিযানেও সহায়তা পাওয়া যাবে|
বন্ধুগণ, কৃষির বর্জ্য থেকে সম্পদ সৃষ্টি করারও কিছু পদ্ধতি দেশজুড়ে সফলতার সঙ্গে চলছে| যেমন, মাদুরাইয়ের মুরুগেসন’জি কলা’র বর্জ্য থেকে দড়ি বানানোর একটা মেশিন তৈরি করেছেন| মুরুগেসন’জির এই উদ্ভাবন থেকে পরিবেশ আর বর্জ্য ব্যবস্থাপনারও সমাধান আসবে| আর কৃষকদের জন্য অতিরিক্ত আয়ের একটা পথও তৈরি হবে|
বন্ধুগণ, ‘মন কি বাত’-এর শ্রোতাদের এসব মানুষদের সম্পর্কে জানানোর পেছনে আমার উদ্দেশ্য হল, আমরা যেন তাঁদের থেকে প্রেরণা পেতে পারি| যখন দেশের সমস্ত নাগরিক নিজেদের জীবনে বিজ্ঞানের প্রসার ঘটাবে, প্রতিটি ক্ষেত্রে করবে, তখন অগ্রগতির পথও খুলে যাবে এবং দেশ আত্মনির্ভর হবে| আর আমার বিশ্বাস, এটা দেশের প্রত্যেক নাগরিক করতে পারবেন|
আমার প্রিয় দেশবাসী, কলকাতার রঞ্জনজি তাঁর চিঠিতে অনেক আকর্ষণীয় ও বুনিয়াদী প্রশ্ন করেছেন| আর সেই সঙ্গে অসাধারণ পদ্ধতিতে এর উত্তরও দেওয়ার চেষ্টা করেছেন| তিনি লিখেছেন, আমরা যখন আত্মনির্ভর হওয়ার কথা বলি, তখন আমাদের জন্য তার অর্থ কী হতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি নিজেই লিখেছেন, ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযান’ শুধুমাত্র একটা সরকারি নীতিই নয়, বরং এটা একটা জাতীয় আবেগ| তিনি মনে করেন, আত্মনির্ভর হওয়ার অর্থ হচ্ছে, নিজের ভাগ্যের সিদ্ধান্ত নিজেই নেওয়া অর্থাৎ স্বয়ং নিজের ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক হওয়া| রঞ্জনবাবুর কথা একশ শতাংশ সঠিক| তাঁর এই বক্তব্যকে তুলে ধরে আমি এটাও বলব যে, আত্মনির্ভরতার প্রথম শর্ত হচ্ছে, নিজের দেশের জিনিসপত্র নিয়ে গর্বিত হওয়া| নিজের দেশের মানুষের তৈরি জিনিস নিয়ে গর্বিত হওয়া| যখন প্রত্যেক দেশবাসী এভাবে গর্ব করবেন, প্রত্যেক দেশবাসী অংশগ্রহণ করবেন, তখন আত্মনির্ভর ভারত শুধুমাত্র একটা আর্থিক অভিযান না হয়ে একটা জাতীয় আবেগে পরিণত হবে| আমরা যখন আমাদের দেশের তৈরি ফাইটার প্লেন তেজস-কে আকাশে দক্ষতা প্রদর্শন করতে দেখি, যখন ভারতে তৈরি ট্যাঙ্ক, ভারতে তৈরি মিসাইল আমাদের গৌরব বৃদ্ধি করে, যখন সমৃদ্ধ দেশগুলোতে আমরা মেট্রো রেলপথে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া কোচ’ দেখতে পাই, যখন ডজন-খানেক দেশে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ করোনা ভ্যাকসিন পৌঁছাতে দেখি, তখন আমাদের মাথা আরও উঁচু হয়ে যায়| আর এটাই নয় যে, শুধুমাত্র বড় বড় জিনিসই ভারতকে আত্মনির্ভর করবে| ভারতে তৈরি হওয়া কাপড়, ভারতের মেধাবী কারিগরদের তৈরি হস্তশিল্পের পণ্য, ভারতের বৈদ্যুতিন উপকরণ, ভারতের মোবাইল, প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদেরকে এই গৌরবকে বৃদ্ধি করতে হবে| আমরা যখন এই চিন্তা নিয়ে এগিয়ে যাবো, তখনই সত্যিকার অর্থে আত্মনির্ভর হতে পারবো| আর বন্ধুরা, আমি আনন্দিত যে, আত্মনির্ভর ভারতের এই মন্ত্র এখন দেশের গ্রামে গ্রামে পৌঁছে যাচ্ছে| বিহারের বেতিয়ায় এটাই হয়েছে, যা নিয়ে আমি সংবাদ মাধ্যমে পড়েছি|
বেতিয়ার বাসিন্দা প্রমোদজি, দিল্লিতে একজন টেকনিশিয়ান হিসেবে এলইডি বাল্ব তৈরির একটা কারখানায় কাজ করতেন| তিনি এই কারখানায় কাজ করার সময় সম্পূর্ণ পদ্ধতিটি ভালো ভাবে জেনেছেন, বুঝেছেন| কিন্তু করোনার সময় প্রমোদজিকে নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে হয়েছে| আপনারা জানেন, ফিরে আসার পরে প্রমোদজি কী করেছেন? তিনি স্বয়ং এলইডি বাল্ব তৈরি করার একটা ছোট ইউনিট শুরু করে দেন| তিনি নিজের এলাকার কিছু যুবকদের সঙ্গে নেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই কারখানার কর্মী থেকে মালিক হওয়ার পথ অতিক্রম করেন| তাও সেটা নিজের বাড়িতে থেকেই|
আরও একটি উদাহরণ হচ্ছে—ইউ.পি.’র গড়মুক্তেশ্বরের| গড়মুক্তেশ্বর থেকে শ্রীযুক্ত সন্তোষজি লিখেছেন, কীভাবে তিনি করোনা সময়ের বিপর্যয়কে সুযোগে পরিবর্তিত করেছেন| সন্তোষজির পূর্বপুরুষরা অসাধারণ কারিগর ছিলেন, তারা মাদুর তৈরির কাজ করতেন| করোনার সময়ে যখন অন্য সমস্ত কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তখন তাঁরা বিশেষ উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে মাদুর তৈরির কাজ শুরু করেন| কিছুদিনের মধ্যেই তাদের কাছে শুধুমাত্র উত্তরপ্রদেশ নয়, অন্য রাজ্য থেকেও মাদুরের বরাত আসা শুরু হয়| সন্তোষজি এটাও জানিয়েছেন যে, এর ফলে এই অঞ্চলের অনেক পুরনো অসাধারণ শিল্পটিও নতুন প্রাণ পেয়েছে|
বন্ধুগণ, দেশজুড়ে এধরনের অনেক উদাহরণ রয়েছে, যেখানে মানুষ ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযানে’ এরকম অবদান রাখছেন| আজ এটা একটা মেজাজে পরিণত হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের মনে সঞ্চারিত হচ্ছে|
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি নমো-অ্যাপে গুরগাঁও’র বাসিন্দা ময়ূরের একটা আকর্ষণীয় পোস্ট দেখেছি| তিনি একজন উৎসাহী পক্ষী-পর্যবেক্ষক আর প্রকৃতি প্রেমী| ময়ূরজি লিখেছেন, আমি তো হরিয়ানায় থাকি, কিন্তু আমি চাই, আপনি আসামের মানুষদের নিয়ে, বিশেষ করে কাজিরাঙ্গার মানুষদের নিয়ে কথা বলুন| আমার মনে হচ্ছিল ময়ূরজি গণ্ডার সম্পর্কে বলবেন, যে গণ্ডারকে সেখানকার গৌরব বলা হয়ে থাকে| কিন্তু ময়ূরজি কাজিরাঙ্গার ওয়াটারফাউল বা জলকুক্কুট নামের পাখির সংখ্যা-বৃদ্ধির জন্য আসামের মানুষদের প্রশংসা করার জন্য এটা বলেছেন| আমি ভাবছিলাম, আমরা ওয়াটারফাউলকে সাধারণ শব্দে কী বলতে পারি| তখন একটা শব্দ পেলাম জলপাখি| এটা এমন পাখি যারা গাছে থাকে না, জলে থাকে, যেমন হাঁস ইত্যাদির মত| কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্ক এন্ড টাইগার রিজার্ভ অথরিটি কিছুকাল ধরেই বার্ষিক জলকুক্কুট গণনা করে আসছে| এই পক্ষীসুমারিতে এই জলপাখির সংখ্যা জানা যায় এবং তাদের পছন্দসই বাসস্থান সম্পর্কেও জানা যায়| এখন মাত্র দুই-তিন সপ্তাহ আগেই একবার সার্ভে হয়েছে| আপনারাও এটা জেনে খুশি হবেন যে, এবার জলকুক্কুটের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় একশ পঁচাত্তর শতাংশ বেশি হয়েছে| এই সেন্সাসের সময় কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্কে পাখির প্রায় একশ বারোটি প্রজাতি দেখা গেছে| এর মধ্যে ৫৮টি প্রজাতি ইউরোপ, মধ্য এশিয়া আর পূর্ব এশিয়া সহ দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শীতের পরিযায়ী পাখি| এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, এখানে ভালো জল সংরক্ষণের পাশাপাশি এখানে হিউম্যান ইন্টারফেস বা মানুষের হস্তক্ষেপ অনেক কম| যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক হিউম্যান ইন্টারফেস অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে|
আসামের শ্রী যাদব পায়েং-এর বিষয়টাই দেখুন| আপনাদের মধ্যে অনেকেই তাঁর সম্পর্কে অবশ্যই জানবেন| নিজের কাজের জন্য তিনি পদ্ম পুরস্কারও পেয়েছেন| শ্রী যাদব পায়েং সেই ব্যক্তি যিনি আসামের মাজুলি দ্বীপে প্রায় ৩০০ হেক্টর বৃক্ষরোপণে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন| তিনি বন সংরক্ষণের কাজ করেন এবং মানুষকে বৃক্ষরোপণ আর জৈব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণে অনুপ্রাণিত করার জন্যও যুক্ত আছেন|
বন্ধুগণ, আসামে আমাদের মন্দিরগুলিও পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে নিজেদের পৃথক ভূমিকা পালন করে চলেছে| যদি আপনারা আমাদের মন্দিরগুলো দেখেন, তাহলে দেখতে পাবেন যে, প্রতিটি মন্দিরের পাশে পুকুর আছে| হাজোতে হয়াগ্রীব মাধেব মন্দির, শোনিতপুরের নাগশংকর মন্দির আর গুয়াহাটির উগ্রতারা মন্দিরের কাছে এই ধরনের অনেকগুলো পুকুর আছে| এগুলোতে বেশ কিছু বিলুপ্তপ্রায় কচ্ছপের প্রজাতি সংরক্ষিত আছে| আসামে কচ্ছপের সবচেয়ে বেশি প্রজাতি পাওয়া যায়| মন্দিরের এই পুকুরগুলি কচ্ছপের সংরক্ষণ, প্রজনন আর তাদের নিয়ে প্রশিক্ষণের জন্য এক অসাধারণ স্থান হতে পারে|
আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছু মানুষ মনে করেন যে, উদ্ভাবনের জন্য বৈজ্ঞানিক হওয়া প্রয়োজন, কেউ কেউ ভাবেন যে, অন্যকে কিছু শেখানোর জন্য শিক্ষক হওয়া চাই| এই ধরনের ভাবনাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো মানুষ সবসময় প্রশংসার যোগ্য হন| যেমন কেউ যদি কাউকে সৈনিক হওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত করে থাকেন, তাহলে কি তাকেও সৈনিক হতে হবে? আপনারা হয়ত ভাবছেন, হ্যাঁ, সেটা জরুরি| কিন্তু এখানে সামান্য ট্যুইস্ট আছে|
মাইগভ-এ কমলকান্তজি সংবাদ মাধ্যমের একটা রিপোর্ট শেয়ার করেছেন, যা কিছুটা অন্যরকম কথা বলে| ওড়িশার অরাখুড়ায় এক ভদ্রলোক আছেন—নায়ক স্যার| তাঁর নাম আসলে সিলু নায়ক, কিন্তু সবাই তাঁকে নায়ক স্যার বলে থাকেন| আসলে তিনি একজন ‘ম্যান অন অ্যা মিশন’| যাঁরা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চান, তিনি সেই যুবকদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেন| নায়ক স্যারের সংস্থার নাম ‘মহাগুরু ব্যাটালিয়ন’| যেখানে ফিজিক্যাল ফিটনেস থেকে শুরু করে ইন্টারভিউ পর্যন্ত, আর লেখা- পরীক্ষা থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ পর্যন্ত, সমস্ত দিক নিয়ে বলা হয়ে থাকে| আপনারা এটা জেনে আশ্চর্য হবেন যে, তিনি যেসব মানুষকে প্রশিক্ষিত করেছেন, তাঁরা স্থলসেনা, নৌসেনা, বায়ুসেনা, সিআরপিএফ, বিএসএফ-এর মতো ইউনিফর্ম ফোর্সগুলোতে নিজেদের স্থান করে নিতে পেরেছেন| আপনারা এটা জেনেও অবাক হবেন যে, সিলু নায়কজি স্বয়ং ওড়িশা পুলিশে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন| কিন্তু তিনি সফল হতে পারেন নি| তা সত্বেও তিনি নিজের প্রশিক্ষণ ক্ষমতা দিয়ে অনেক যুবককে দেশসেবার যোগ্য করে গড়ে তুলেছেন| আসুন, আমরা সবাই মিলে নায়ক স্যারকে শুভেচ্ছা জানাই, যাতে তিনি আমাদের দেশের জন্য আরও অনেক বেশি নায়ক তৈরি করেন|
বন্ধুগণ, কখনও কখনও অনেক ছোট আর সাধারণ প্রশ্নও মনকে নাড়িয়ে যায়| এইসব প্রশ্ন দীর্ঘ হয়না, খুব সরল হয়, তার পরেও সেগুলো আমাদেরকে চিন্তা করতে বাধ্য করে| কিছুদিন আগে হায়দ্রাবাদের অপর্ণা রেড্ডিজি এরকমই একটা প্রশ্ন আমাকে করেছেন| তিনি বলেছেন, আপনি এত বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী, এত বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, আপনার কি মনে হয় যে, কোনো কিছু ত্রুটি রয়ে গেছে| অপর্ণাজি’র প্রশ্ন অনেক সহজ, কিন্তু ততটাই কঠিন| আমি এই প্রশ্ন নিয়ে অনেক ভেবেছি, তারপর নিজেকে বলেছি যে, আমার একটা বিষয়ের অভাব রয়েছে, আমি বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ভাষা তামিল শেখার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করতে পারিনি, আমি তামিল শিখতে পারিনি| এটা এমন এক সুন্দর ভাষা, যা বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়| অনেকেই আমাকে তামিল সাহিত্যের গুণ আর সেই ভাষায় লেখা কবিতার গভীরতা নিয়ে অনেক কিছু বলেছেন| ভারত এমন অনেক ভাষার স্থান, যা আমাদের সংস্কৃতি আর গৌরবের প্রতীক| ভাষার সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে আমি একটা ছোট মজার ক্লিপ আপনাদের সংগে শেয়ার করতে চাই|
## (স্ট্যাচু অফ ইউনিটির সাউন্ড ক্লিপ—কপি করার প্রয়োজন নেই)
আসলে এইমাত্র আপনারা যা শুনছিলেন, এতে স্ট্যাচু অফ ইউনিটি নিয়ে একজন গাইড সংস্কৃত ভাষায় বলছেন, পর্যটকদের বিশ্বের সর্বোচ্চ সর্দার প্যাটেলের মূর্তি সম্পর্কে বলছেন| আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, কেভড়িয়াতে ১৫জনেরও বেশি গাইড, সংস্কৃত ধারাভাষ্যে মানুষকে গাইড করে| এখন আমি আপনাদের আরও একটা কন্ঠস্বর শোনাচ্ছি|
##(ক্রিকেটের ধারাভাষ্যের সাউন্ড ক্লিপ—কপি করার প্রয়োজন নেই)
আপনারাও এটা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেছেন হয়ত| আসলে এটা সংস্কৃতে করা ক্রিকেটের ধারাভাষ্য| বারাণসীতে সংস্কৃত মহাবিদ্যালয়গুলির মধ্যে একটা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হয়েছিল| এই মহাবিদ্যালয়গুলি ছিল—শাস্ত্রার্থ মহাবিদ্যালয়, স্বামী বেদান্তি বেদ বিদ্যাপীঠ, শ্রী ব্রহ্ম বেদ বিদ্যালয় আর ইন্টারন্যাশনাল চন্দ্রমৌলি চেরিটেবল ট্রাস্ট| এই টুর্নামেন্টের ম্যাচগুলোর সময় ধারাভাষ্য সংস্কৃতেও করা হয়| এখন আমি এই ধারাভাষ্যের একটা ছোট অংশ আপনাদের শুনিয়েছি| শুধু তাই নয়, এই টুর্নামেন্টে খেলোয়াড় আর ভাষ্যকারদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে দেখা যায়| যদি আপনারা উৎসাহ, উদ্দীপনা, রোমাঞ্চ একসঙ্গে পেতে চান, তাহলে খেলার ধারাভাষ্য শোনা দরকার| টিভি আসার অনেক আগে, খেলার ধারাভাষ্যই শুধু এমন মাধ্যম ছিল, যার মাধ্যমে ক্রিকেট আর হকির মতো খেলার রোমাঞ্চ গোটা দেশের মানুষ অনুভব করতেন| টেনিস আর ফুটবল ম্যাচের ধারাভাষ্যও অনেক ভালো ভাবে উপস্থাপনা করা হত| আমরা দেখেছি, যেসব খেলার ধারাভাষ্য সমৃদ্ধ, সেই খেলার প্রচার-প্রসার অনেক দ্রুত হয়ে থাকে| আমাদের এখানে অনেক ভারতীয় খেলা আছে, যেগুলোর ক্ষেত্রে কমেন্টারি কালচার না আসার ফলে এইসব লুপ্ত হয়ে যাওয়ার মত অবস্থায়| আমার মনে একটা ভাবনা আছে—আলাদা আলাদা খেলা, বিশেষ করে ভারতীয় খেলার ভালো ধারাভাষ্য আরও বেশি ভাষাতে কেন হবে না| আমাদেরকে এই বিষয়টিকে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে অব্যশ্যই চিন্তা করা উচিত| আমি ক্রীড়ামন্ত্রক আর বেসরকারি সংস্থানের সহযোগীদের এই বিষয়ে চিন্তা করার জন্য অনুরোধ জানাবো|
আমার প্রিয় নবীন বন্ধুরা, আগামী কয়েকটি মাস আপনাদের জীবনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। অধিকাংশ নবীন বন্ধুর পরীক্ষা থাকবে। আপনাদের সবার মনে আছে তো—ওয়ারির (warrior) হতে হবে, ওরিয়র (worrier) নয়| হাসতে হাসতে exam দিতে যাবেন, হাসিমুখে ফিরবেন, আর কারও সঙ্গে নয়, নিজের সঙ্গেই প্রতিযোগিতা করতে হবে। যথেষ্ট ঘুমাতে হবে টাইম ম্যানেজমেন্টও করতে হবে| খেলা ছাড়বেন না, কারণ যে খেলে, সে প্রস্ফুটিত হয়। রিভিশন আর মনে রাখার স্মার্ট পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে| অর্থাৎ সব মিলিয়ে এই পরীক্ষায়, নিজের সেরাটাকে বের করে আনতে হবে। আপনারা হয়তো ভাবছেন, এসব হবে কেমন করে। আমরা সবাই মিলে এটা করতে চলেছি। প্রতি বছরের মতো এবছরও আমরা সবাই করবো – পরীক্ষা পে চর্চা। কিন্তু মার্চে আয়োজিত ‘পরীক্ষা পে চর্চা’-র আগে আমার সমস্ত একজাম ওয়ারিয়র, মা-বাবা, শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ হচ্ছে, আপনাদের অভিজ্ঞতা, আপনাদের টিপস অবশ্যই শেয়ার করবেন| আপনারা মাইগভ-এ সেটা শেয়ার করতে পারেন| নরেন্দ্রমোদি অ্যাপ-এ শেয়ার করতে পারেন| এবারের ‘পরীক্ষা পে চর্চা’-তে নবীনদের পাশাপাশি মা-বাবা আর শিক্ষক-শিক্ষিকারাও আমন্ত্রিত| কীভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে, কীভাবে প্রাইজ জেতা যায়, কীভাবে আমার সঙ্গে আলোচনার সুযোগ পাওয়া যাবে, সেইসব তথ্য আপনারা মাইগভ-এ পেয়ে যাবেন| এখন পর্যন্ত এতে এক লক্ষের বেশি শিক্ষার্থী, প্রায় ৪০ হাজার মা-বাবা, আর প্রায় ১০ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা অংশগ্রহণ করেছেন| আপনারাও আজই এতে অংশগ্রহণ করুন| এই করোনার সময়ে আমি কিছুটা সময় বের করে ‘একজাম ওয়ারিয়র বুক’-এর মধ্যেও কিছু নতুন মন্ত্র সংযুক্ত করে দিয়েছি| এখন এর মধ্যে মা-বাবাদের জন্যও কিছু মন্ত্র যুক্ত করা হয়েছে| এই মন্ত্রগুলোর সঙ্গে যুক্ত অনেকগুলো আকর্ষণীয় বিষয় নরেন্দ্রমোদি অ্যাপে দেওয়া হয়েছে, যেগুলো আপনাদের মধ্যে পরীক্ষা যোদ্ধাকে জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করবে| আপনারা এগুলি অবশ্যই চেষ্টা করে দেখুন। সমস্ত নবীন বন্ধুদের আগামী পরীক্ষাগুলির জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।
আমার প্রিয় দেশবাসীরা, মার্চ মাসটি আমাদের অর্থবর্ষের সর্বশেষ মাসও হয়, সেজন্যে আপনাদের মধ্যে অনেকের জন্য ভীষণ ব্যস্ততার সময়। এখন যেভাবে দেশে অর্থনৈতিক গতিবিধি বাড়ছে, তাতে আমাদের ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোগী বন্ধুদের ব্যস্ততাও অনেক বাড়ছে। এসব কাজের মাঝে আমাদের করোনা থেকে সতর্কতা কম করলে চলবে না। আপনারা সবাই সুস্থ থাকুন, আনন্দে থাকুন, কর্তব্য পথে অটল থাকুন, তাহলেই দেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে।
আপনাদের সবাইকে উৎসবের দিনগুলির অগ্রিম শুভকামনা, পাশাপাশি করোনা প্রতিরোধে যেসব নিয়ম পালন করতে হবে, সেগুলিকে অবহেলা করলে চলবে না।
অনেক অনেক ধন্যবাদ!
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। যখন আমি ‘মন কি বাত’ বলি তখন এমন মনে হয়, যেন আপনাদের মাঝে, আপনাদের পরিবারের একজন সদস্য হয়ে উপস্থিত রয়েছি। আমাদের ছোট-ছোট কথা, যা একে-অন্যকে কিছু শিখিয়ে যায়, জীবনের টক-মিষ্টি অভিজ্ঞতা যা প্রাণ ভরে জীবন যাপনের প্রেরণা হয়ে ওঠে – এটাই তো ‘মন কি বাত’। আজ, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ দিন। আপনারাও কি আমার মতই এটা ভাবছেন যে কিছু দিন আগেই তো ২০২১ সাল শুরু হল। মনেই হয় না যে পুরো জানুয়ারি মাস কেটে গেল – একেই তো বলে সময়ের গতি। কয়েকটা দিন আগের কথাই তো মনে হয় যখন আমরা একে অপরকে শুভকামনা জানাচ্ছিলাম, আবার আমরা ‘লোহরী’ পালন করলাম, মকর সংক্রান্তি পালন করলাম, পোঙ্গল, বিহু পালন করলাম। দেশের ভিন্ন ভিন্ন অংশে উৎসবের ধুম পড়ে গিয়েছিল। ২৩শে জানুয়ারি আমরা নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিন ‘পরাক্রম দিবস’ হিসাবে পালন করলাম, আর ২৬শে জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র দিবসের’ চমকপ্রদ প্যারেডও দেখেছি। সংসদের সংযুক্ত অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের ভাষণের পর ‘বাজেট অধিবেশনও’ শুরু হয়ে গিয়েছে। এই সব কিছুর মধ্যে আরও একটা কাজ হল যার জন্য আমরা সবাই অপেক্ষা করে থাকি – এটা হল পদ্ম সম্মানের ঘোষণা। অসাধারণ কর্মের নিদর্শন রাখা ব্যক্তিদের রাষ্ট্র সম্মানিত করেছে তাঁদের কীর্তি আর মানবতার জন্য অবদানের কারণে। এই বছরও সম্মান প্রাপকদের মধ্যে সেই সব মানুষ রয়েছেন, যাঁরা, ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে অনন্যসাধারণ কাজ করেছেন, নিজেদের কর্মের মাধ্যমে কারও জীবন বদলে দিয়েছেন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। অর্থাৎ মাটির কাছে থেকে কাজ করা নীরবে লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে যারা কাজ করেন, তাঁদের পদ্ম সম্মান দেওয়ার যে পরম্পরা দেশ শুরু করেছিল কয়েক বছর আগে, সেটা, এই বছরও বজায় রাখা হয়েছে। আপনাদের সবার কাছে আমার অনুরোধ, যে, এই সব মানুষদের সম্পর্কে, তাঁদের অবদান সম্পর্কে অবশ্যই জানুন, পরিবারের মধ্যে তাঁদের সম্পর্কে আলোচনা করুন। দেখবেন, সবাই কীভাবে এতে প্রেরণা পান।
এই মাসে, ক্রিকেট পিচ থেকেও খুব ভালো খবর এসেছে। আমাদের ক্রিকেট টিম প্রারম্ভিক সমস্যার পর, চমকপ্রaদ প্রত্যাবর্তন করে অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জিতেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের কঠিন পরিশ্রম আর দলগত সংহতি প্রেরণা দেওয়ার মত। এই সবকিছুর মধ্যে, দিল্লিতে, ২৬শে জানুয়ারি তেরঙ্গার অপমান দেখে, দেশ খুব দুঃখও পেয়েছে। আগামী সময়কে আমাদের নতুন আশা আর নতুনত্বের ছোঁয়ায় ভরিয়ে তুলতে হবে। আমরা গত বছর অসাধারণ সংযম আর সাহসের পরিচয় দিয়েছি। এই বছরও আমাদের কঠিন পরিশ্রম করে নিজেদের প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করতে হবে। নিজেদের দেশকে, আরও দ্রুত গতিতে, এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এই বছর শুরুর সঙ্গে সঙ্গে করোনার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ের প্রায় এক বছর পূর্ণ হয়ে গেল। যেমনভাবে করোনার বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই এক দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে, তেমনই, আমাদের টিকাকরণ কর্মসূচীও পৃথিবীতে এক দৃষ্টান্তে পরিণত হচ্ছে। আজ ভারত পৃথিবীর সবথেকে বড় কোভিড টিকাকরণ কর্মসূচী চালাচ্ছে। জানেন কি আপনারা, আরও গর্বের বিষয় কী? আমরা সবথেকে বড় টিকাকরণ কর্মসূচীর সঙ্গে পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে দ্রুত গতিতে নিজেদের নাগরিকদের টিকাও দিচ্ছি। কেবল পনেরো দিনে, ভারত, নিজের তিরিশ লক্ষেরও বেশি করোনা যোদ্ধার টিকাকরণ করেছে, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত সমৃদ্ধ দেশেরও এই কাজে আঠেরো দিন লেগেছিল আর ব্রিটেনের লেগেছিল ছত্রিশ দিন।
বন্ধুরা, মেড ইন ইণ্ডিয়া টিকা আজ ভারতের আত্মনির্ভরতার প্রতীক তো বটেই, ভারতের আত্মগৌরবের প্রতীকও বটে। ‘নমো অ্যাপে’ ইউ পি থেকে হিমাংশু যাদব লিখেছেন ‘মেড ইন ইণ্ডিয়া’ টিকা দেখে মনে এক নতুন আত্মবিশ্বাস এসে গিয়েছে। মাদুরাই থেকে কীর্তি জি লিখছেন যে ওঁর অনেক বিদেশি বন্ধু মেসেজ পাঠিয়ে ভারতের প্রতি ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। কীর্তি জির বন্ধুরা ওঁকে লিখেছেন যে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারত যেভাবে দুনিয়াকে সাহায্য করেছে তাতে তাদের মনে ভারতের প্রতি সম্মান আরও বেড়ে গিয়েছে। কীর্তি জি, দেশের এই গৌরবগাঁথা শুনে, ‘মন কি বাতের’ শ্রোতাদেরও গর্ব হচ্ছে। আজকাল আমিও ভিন্ন ভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি আর প্রধানমন্ত্রীদের কাছে থেকে ভারতের জন্য এমন বার্তা পাচ্ছি। আপনারাও দেখেছেন যে, সম্প্রতি, ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি ট্যুইট করে যেভাবে ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, সেটা দেখে প্রত্যেক ভারতবাসীর কতটা ভালো লেগেছে। হাজার-হাজার কিলোমিটার দূরে, দুনিয়ার দূর-সুদূর প্রান্তের অধিবাসীদের রামায়ণের সেই প্রসঙ্গ সম্পর্কে এতটা জ্ঞান রয়েছে, তাদের মনে এত গভীর ছাপ রয়েছে – এটা আমাদের সংস্কৃতির বিশিষ্টতা।
বন্ধুরা, এই টিকাকরণ কর্মসূচীতে আরও একটা বিষয়ের প্রতি আপনারা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন। সঙ্কটের সময় ভারত দুনিয়ার সেবা এই কারণে করতে পারছে কারণ ভারত আজ ওষুধ এবং টিকার ক্ষেত্রে সক্ষম, আত্মনির্ভর। এই ভাবনা আত্মনির্ভর ভারত অভিযানেরও অন্তর্ভুক্ত। ভারত যত সক্ষম হবে ততই বেশি মানবতার সেবা করবে, ততই বেশি লাভ হবে দুনিয়ার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, প্রত্যেকবার আপনাদের কাছ থেকে অনেক চিঠি পাই। নমো অ্যাপ এবং মাই গভ-এ মেসেজ, ফোন কলের মাধ্যমে আপনাদের কথা জানার সুযোগ পাই। এই এতো বার্তার মধ্যে একটি আমার বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষন করেছে। এই বার্তাটি হল প্রিয়াঙ্কা পাণ্ডের। তেইশ বছরের প্রিয়াঙ্কা হিন্দী সাহিত্যের ছাত্রী এবং বিহারের সিওয়ানের বাসিন্দা। প্রিয়াঙ্কা নমো অ্যাপ এ লিখেছেন যে দেশের পনেরোটি পর্যটনস্থলে যাওয়ার ব্যাপারে আমার পরামর্শে উনি খুব অনুপ্রাণিত হয়েছেন, তাই উনি পয়লা জানুয়ারী একটি বিশেষ জায়গার জন্য রওনা দেন। সেই জায়গাটা হল ওঁর ঘর থেকে পনেরো কিলোমিটার দূরে, দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদের পৈত্রিক নিবাস। প্রিয়াঙ্কাজী খুব সুন্দর কথা লিখেছেন যে নিজের দেশের মহান ব্যক্তিত্বদের জানার লক্ষ্যে এটি ওঁর প্রথম পদক্ষেপ। প্রিয়াঙ্কাজী ওখানে ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদের লেখা বই, অনেক ঐতিহাসিক ছবির সন্ধান পান। প্রিয়াঙ্কাজী, আপনার এই অভিজ্ঞতা অন্যদেরকেও উৎসাহিত করবে।
বন্ধুরা, এই বছর থেকে ভারত স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছরের সমারোহ – অমৃত মহোৎসব আরম্ভ করবে। যে সব মহানায়কদের জন্য দেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে, তাঁদের সঙ্গে জড়িত স্থানীয় জায়গাগুলির সন্ধান করা, সেগুলি সম্পর্কে জানার এই উপযুক্ত সময়।
বন্ধুরা, আমরা স্বাধীনতার আন্দোলন এবং বিহারের কথা বলছিলাম এবং এই প্রসঙ্গে আমি নমো অ্যাপে চর্চিত আর একটি বিষয়ের উল্লেখ করতে চাই। মুঙ্গেরবাসী জয়রাম বিপ্লব আমাকে তারাপুর শহীদ দিবস সম্পর্কে লিখে পাঠিয়েছেন। পনেরোই ফেব্রুয়ারী, ১৯৩২ তে, দেশভক্তদের একটি দলের বহু বীর নবযুবককে ইংরেজরা অত্যন্ত নির্মমভাবে হত্যা করে। ওঁদের একমাত্র অপরাধ ছিল তাঁরা “বন্দে মাতরম” এবং “ভারত মাতার জয়” স্লোগান দিচ্ছিলেন। আমি সেই বীর শহীদদের প্রণাম জানাচ্ছি এবং তাদের সাহসকে শ্রদ্ধাপূর্বক স্মরণ করছি। এই বিষয়টি সকলের সামনে নিয়ে আসার জন্য আমি জয়রাম বিপ্লব জীকে ধন্যবাদ জানাই। এটি এমন একটি বিষয় যার সম্পর্কে কখনও যথাযথ আলোচনা হয়নি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ভারতের সব জায়গায়, সব মফস্বল এবং গ্রামে স্বাধীনতার লড়াই সমস্ত শক্তি দিয়ে লড়া হয়েছিল। ভারতের প্রত্যেক অঞ্চলে এমন মহান পুত্র ও বীরাঙ্গনাদের জন্ম হয়েছে যাঁরা রাষ্ট্রের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমাদের উচিৎ তাঁদের সংগ্রাম এবং তার সঙ্গে সম্পৃক্ত স্মৃতিগুলি যথাযথ সম্মানের সঙ্গে বাঁচিয়ে রাখা, এই বিষয়গুলি আগামী প্রজন্মের জন্য লিপিবদ্ধ করে রাখা, যাতে তাঁদের স্মৃতি অমলিন থাকে। আমি সমস্ত দেশবাসীকে, বিশেষ করে আমার যুব বন্ধুদের আহ্বান জানাই যে তাঁরা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সম্পর্কে, স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে জড়িত ঘটনাগুলি সম্পর্কে লিখুন। নিজেদের অঞ্চলে স্বাধীনতার সময়ের শৌর্য, বীর্যের গাথা নিয়ে বই লিখুক। ভারত যখন স্বাধীনতার পঁচাত্তরতম বর্ষপূর্তি উদযাপন করবে তখন আপনাদের লেখাগুলি সেই সব বীর নায়কদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি হবে। ‘ইন্ডিয়া ৭৫’ উপলক্ষে তরুণ লেখকদের জন্য একটি বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর ফলে সমস্ত রাজ্যের এবং সব ভাষার যুব লেখকরা উৎসাহ পাবেন। দেশে এমন বহু লেখক তৈরি হবে যাঁদের ভারতীয় ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে গভীর পড়াশোনা থাকবে, জ্ঞান থাকবে। আমাদের এরকম উঠতি প্রতিভাদের সম্পুর্ন সহযোগিতা করা উচিৎ। এর ফলে ভবিষ্যৎ এর দিকনির্ধারন করার জন্য ‘থট লিডার’দের একটি দল তৈরি হবে। আমি আমাদের যুব বন্ধুদের এই উদ্যগের অংশীদার হওয়ার এবং নিজেদের সাহিত্যিক প্রতিভার প্রয়োগ করার আমন্ত্রন জানাই। এই সম্পর্কে আরও জানতে পারবেন শিক্ষা মন্ত্রকের ওয়েব সাইট থেকে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কী বাত’ অনুষ্ঠানে, শ্রোতাদের কী ভাল লাগে তা আপনারাই ভাল জানেন। কিন্তু আমার ‘মন কী বাত’ অনুষ্ঠানে সব চেয়ে ভাল লাগে যে আমি অনেক কিছু জানতে পারি, শিখতে পারি, পড়তে পারি। পরোক্ষভাবে আপনাদের সকলের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ মেলে। কারো কোনও বিশেষ উদ্যোগ, কারো দেশের জন্য করা কোন বিশেষ কাজ, তাদের প্রাণশক্তি – এই সব আমাকে খুবই অনুপ্রাণিত করে, উজ্জীবিত করে।
হায়দ্রাবাদের বইনপল্লীতে এক স্থানীয় সব্জি বাজার কিভাবে তাদের দ্বায়িত্বপালন করছে সেটা পড়ে আমার খুব ভাল লেগেছে। আমরা দেখেছি, নানা কারণে সব্জি বাজারে অনেক সব্জি নষ্ট হয়। এই সব পচা সব্জি এদিক ওদিক পড়ে থাকে, ময়লা ছড়ায়। কিন্তু বইনপল্লীতে সব্জি বাজারের সকলে সিদ্ধান্ত নেয় যে রোজ যে সব্জিগুলি বেঁচে যাবে সেগুলি এভাবে শুধু শুধু ফেলা হবে না। সমস্ত বাজারের সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। নষ্ট হয়ে যাওয়া সবজি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়ে আপনারা হয়তো কখনো শুনে থাকতে পারেন। এটাই তো উদ্ভাবনের শক্তি। বইনপল্লীর বাজারে আগে যা নষ্ট হত তা থেকেই আজ সম্পদ সৃষ্টি হচ্ছে। এটাই তো আবর্জনা থেকে সোনা তৈরীর যাত্রা। ওখানে প্রতিদিন প্রায় ১০ টন বর্জ্য পদার্থ সংগৃহীত হয়। তাকে একটি প্ল্যান্টে একত্রিত করা হয়। প্ল্যান্টের ভেতরে প্রতিদিন এই বর্জ্য থেকে ৫০০ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়, আর প্রায় ৩০ কিলো জৈব জ্বালানীও তৈরী হয়। এই বিদ্যুতেই সবজি বাজার আলোকিত হয়়, আর যে জৈব জ্বালানী তৈরী হয় তা দিয়ে বাজারের ক্যান্টিনে খাবার প্রস্তুত করা হয়। বলুন তো, এ এক আশ্চর্য প্রয়াস না! এমনই আরেকটি অভাবনীয় কাজ হরিয়ানার পঞ্চকুলার বড়োত গ্রাম পঞ্চায়েতও করে দেখিয়েছে। এই পঞ্চায়েতের জমিতে জল নিকাশির সমস্যা ছিল। তার ফলে নোংরা জল এখানে সেখানে জমে থাকত, রোগ ছড়াত। কিন্তু বড়োতের অধিবাসীরা ঠিক করলেন এই বর্জ্য জল থেকেই সম্পদ সৃষ্টি করবেন। গ্রাম পঞ্চায়েত পুরো গ্রাম থেকে আসা নোংরা জলকে এক জায়গায় একত্রিত করে ফিল্টার করতে শুরু করলেন, এবং ফিল্টার করা এই জল এখন গ্রামের কৃষকরা ক্ষেতে সেচের জন্য ব্যবহার করছেন। অর্থাৎ দূষণ, আবর্জনা এবং রোগ থেকে মুক্তিও হচ্ছে, আবার ক্ষেতের জলসেচও।
বন্ধুরা, পরিবেশ রক্ষার মাধ্যমে কিভাবে উপার্জনের রাস্তা খুলে যায় তার একটি উদাহরণ অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াংয়েও দেখার সুযোগ হয়েছে। অরুণাচল প্রদেশের এই পাহাড়ি এলাকায় বহু শতাব্দী ধরেই "মন শুগু" নামের একটি কাগজ তৈরি করা হয়। এই কাগজ এখানকার স্থানীয় শুগু শেং নামের একটি গাছের ছাল থেকে বানানো হয়, তাই এই কাগজ তৈরি করার জন্য গাছ কাটতে হয় না। এছাড়া এটি বানাতে কোন কেমিক্যালও ব্যবহৃত হয় না। অর্থাৎ এই কাগজ পরিবেশ ও স্বাস্থ্য উভয়ের জন্যই নিরাপদ। এমনও একটা সময় ছিল যখন এই কাগজ রফতানি হতো, কিন্তু যখন আধুনিক প্রযুক্তিতে বহুল পরিমাণে কাগজের উৎপাদন শুরু হল তখন এই স্থানীয় শিল্প অবলুপ্তির দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল। এখন এক স্থানীয় সামাজিক উদ্যোক্তা গোম্বু এই শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়াস করেছেন। এর ফলে এখানকার আদিবাসী ভাই-বোনেদের উপার্জনও হচ্ছে। আমি কেরলেরও একটি খবর দেখেছি যা আমাদের সবার নিজস্ব দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে। কেরলের কোট্টায়ামের এক ভিন্ন ভাবে সক্ষম প্রবীণ – এন এস রাজাপ্পান সাহেব। রাজাপ্পানজি প্যারালাইসিস এর জন্যে চলাফেরায় অসমর্থ। কিন্তু এতে স্বচ্ছতার প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতার কোন খামতি হয়নি। তিনি বিগত কয়েক বছর ধরে নৌকা করে ভেম্বানাদ ঝিলে যান এবং ঝিলে ফেলা প্লাস্টিকের বোতল বার করে আনেন। ভাবুন রাজাপ্পানজির চিন্তাভাবনা কতটা মহৎ। আমাদেরও রাজাপ্পানজির থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে স্বচ্ছতার জন্যে যেখানে যেখানে সম্ভব, সেই সব জায়গায় অংশগ্রহণ করা উচিত।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছুদিন আগে আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো থেকে বেঙ্গালুরুর জন্য একটি নন স্টপ ফ্লাইটের কমান্ড ভারতের চার মহিলা পাইলট সামলেছেন। দশ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ সফর অতিক্রম করে এই ফ্লাইট সোয়া দু'শোর বেশি যাত্রীদের ভারতে নিয়ে এসেছে। আপনারা এবার ২৬ শে জানুয়ারির প্যারেডেও নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, যেখানে ভারতীয় বায়ুসেনার দুই মহিলা অফিসার নতুন ইতিহাস রচনা করেছেন। ক্ষেত্র যাই হোক দেশের নারীদের অংশগ্রহণ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে, কিন্তু প্রায়শই আমরা দেখে থাকি, দেশের গ্রামে গ্রামে ঘটে চলা এই ধরনের পরিবর্তনের বিষয়ে তেমন চর্চা হয় না। তাই যখন আমি মধ্যপ্রদেশের জবলপুরের একটি খবর দেখলাম তখন আমার মনে হল যে এর উল্লেখ তো ‘মন কি বাতে’ আমার অবশ্যই করা উচিত। এই খবর অনেকের মধ্যে অনুপ্রেরণা যোগাবে। জবলপুরের চিচগাঁওতে কিছু আদিবাসী মহিলা একটি রাইস মিলে দৈনিক মজুরিতে কাজ করতেন। বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারী যেভাবে পৃথিবীর সব মানুষকে প্রভাবিত করেছে সেই ভাবেই এই মহিলারাও প্রভাবিত হয়েছিলেন। তাদের চাল কলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এটা স্বাভাবিক যে তার ফলে উপার্জনের সমস্যা শুরু হয়েছিল। কিন্তু তারা নিরাশ হননি। তারা হার মানেননি। তাঁরা ঠিক করলেন একসঙ্গে মিলে তাঁরা নিজেদের জন্য একটি চাল কল চালু করবেন। যে মিলে তাঁরা কাজ করতেন তারা তাদের মেশিনও বিক্রি করতে চাইছিল। এদের মধ্যে মিনা রাহংগডালে জি সব মহিলাদের একত্রিত করে "স্বয়ং সহায়তা সমূহ" প্রতিষ্ঠা করলেন এবং সবাই নিজেদের সঞ্চিত পুঁজি দিয়ে পয়সা যোগাড় করলেন।
|
|
যে টুকু অর্থের অভাব হয়েছিল "আজীবিকা মিশন" এর মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেললেন, আর এখন দেখুন এই জনজাতি বোনেরা আজ সেই চাল কল কিনে ফেললেন। যেখানে তাঁরা একসময়ে কিছু কাজ করতেন। আজ তাঁরা নিজেদের চাল কল চালাচ্ছেন। এতোদিনে এই মিল প্রায় তিন লাখ টাকা মুনাফা অর্জন করেছে। এই মুনাফা দিয়ে মিনা জী ও তাঁর সহযোগিরা প্রথমে ব্যাংকের ঋণ শোধ করেছেন এবং নিজেদের ব্যবসা বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। করোনা যে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল তাকে মোকাবিলা করতে দেশের আনাচে-কানাচে এধরনের কর্মকান্ড ঘটেছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি যদি আপনাদের বুন্দেলখন্ডের কথা বলি কোন কথা আপনাদের আপনাদের মনে পড়বে? ইতিহাসের চর্চা যাঁরা করেন এ ক্ষেত্রে ঝাঁসির রাণী লক্ষ্মীবাই এর কথা বলবেন। আবার অনেকে সুন্দর ও শান্ত ওর্ছার কথা ভাববেন। অনেকের এই অঞ্চলের অত্যধিক গরমের কথাও মনে পড়বে, কিন্তু এখন এখানে এমন কিছু অভিনব ঘটছে যা খুবই উৎসাহ ব্যঞ্জক এবং যার সম্বন্ধে আমাদের অবশ্যই জানা উচিৎ। কিছু দিন আগে ঝাঁসিতে মাসব্যাপী স্ট্রবেরী উৎসব শুরু হয়েছিল। যে কেউ অবাক হয়ে ভাববেন স্ট্রবেরী আর বুন্দেলখণ্ড! কিন্তু এটাই সত্যি। এখন বুন্দেলখণ্ডে স্ট্রবেরী খামার নিয়ে উৎসাহ বাড়ছে, আর এই উদ্যোগে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছেন ঝাঁসির এক কন্যা গুরলিন চাওলা। আইনের ছাত্রী গুরলিন প্রথমে নিজের বাড়িতে এবং ক্ষেতে সফলভাবে স্ট্রবেরী -র চাষ করে ঝাঁসিতেও যে স্ট্রবেরী চাষ হতে পারে এই বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করেছেন। ঝাঁসির স্ট্রবেরী উৎসব, বাড়ি থেকে কাজ করার ওপর জোর দেয়।এই মহোৎসবের মাধ্যমে কৃষক ও যুবদের নিজেদের বাড়ির পেছনে কি ছাদে টেরেস গার্ডেনে বাগান করার ও সেখানে স্ট্রবেরী চাষের জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যে স্ট্রবেরী এক সময় পাহাড়ের ফল হিসেবে পরিচিত ছিল আজ কচ্ছ- এর মতো রুক্ষ জমিতেও তার চাষ হচ্ছে এবং কৃষকদের আয় বাড়ছে।
বন্ধুরা, স্ট্রবেরী উৎসব মতো চিন্তাভাবনা উদ্ভাবনের এর মানসিকতা প্রদর্শন তো করছে, আবার আমাদের কৃষি ক্ষেত্রে যে নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগ হচ্ছে তারও জানান দিচ্ছে। বন্ধুরা, চাষবাস আধুনিক করার জন্য সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং অনেক পদক্ষেপও নিচ্ছে। সরকারের এই প্রয়াস আগামী দিনেও চালু থাকবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী! কিছুদিন আগে আমি একটা ভিডিও দেখেছি। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা গ্রামের এক চিত্রকর সরমুদ্দিনের ভিডিও ছিল। তিনি আনন্দের সঙ্গে বলছিলেন রামায়ণ নির্ভর ওঁর পেইন্টিং দুলাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এতে তাঁর গ্রামবাসীদেরও আনন্দ হয়েছে। এই ভিডিও দেখার পর এই বিষয়ে আমার জানার আগ্রহ হয়েছে। এই ভাবে পশ্চিমবঙ্গের একটি অত্যন্ত ভালো উদ্যোগের বিষয়ে জানতে পারি যা আমি আপনাদেরকে অবশ্যই জানাতে চাই। পর্যটন মন্ত্রকের আঞ্চলিক দপ্তর মাসের শুরুতে বাংলার গ্রামে একটি অতুল্য ভারত, সপ্তাহান্ত গেটওয়ে-র শুরু করেছে। এখানে পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বীরভূ্ম, পুরুলিয়া, পূর্ব বর্ধমানের হস্তশিল্পীরা বেড়াতে আসা মানুষদের জন্য হ্যান্ডিক্র্যাফট ওয়ার্কশপ আয়োজন করেছিলেন। আমি এও জেনেছি অতুল্য ভারত, সপ্তাহান্ত গেটওয়ের সময় হস্তশিল্পের যে সব সামগ্রী যে বিক্রি হয়েছে, তাতে হস্তশিল্পীরা যথেষ্ট উৎসাহিত হয়েছেন। সারা দেশের মানুষেরা নতুন নতুন পদ্ধতিতে আমাদের শিল্পকলা জনপ্রিয় করে তুলছেন। ওড়িষার রাউরকেল্লার ভাগ্যশ্রী সাহু কে দেখুন। এমনিতে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং- এর ছাত্রী ছিলেন কিন্তু কিছুদিন তিনি পটচিত্র আঁকা শিখতে শুরু করেন এবং সাফল্য লাভ করেন। কিন্তু আপনারা কি জানেন, তিনি তাঁর পেইন্টিং কোথায় এঁকেছেন ౼সফট স্টোন্সে! সফট স্টোন্স এর ওপর। কলেজ যাতায়াতের পথে ভাগ্যশ্রীর যে সফট স্টোন্স পেয়েছিলেন সেগুলো যোগাড় করে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করেছিলেন। তারপর দিনে দু’ ঘন্টা এই পাথরের ওপর পটচিত্র স্টাইলে পেইন্টিং করেছেন। উনি এই পাথরে পেইন্ট করে বন্ধুদের গিফট দিতে শুরু করেন। লকডাউনের সময় তিনি বোতলের ওপরেও পেইন্টিং করতে থাকলেন। এখন তো তিনি এই স্কিল্পের কর্মশালাও আয়োজন করছেন। কিছুদিন আগে সুভাষবাবুর জন্মদিনে ভাগ্যশ্রী পাথরের ওপর এঁকে তাঁকে ব্যতিক্রমী শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছেন। তাঁর আগামী সাফল্যের জন্য তাঁকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আর্ট এন্ড কালার্স এর মাধ্যমে অনেক নতুন কিছু শেখা যায়, করা যায়। ঝাড়খন্ডের দুমকায় এই ধরনের এক সুন্দর প্রয়াসের কথা আমাকে বলা হয়েছে। সেখানে মিডল স্কুলের এক প্রিন্সিপ্যাল বাচ্চাদের পড়ানোর জন্য ও শেখানোর জন্য গ্রামের দেওয়ালে ইংরেজি এবং হিন্দি অক্ষর এঁকে দিয়েছেন, তারসঙ্গে আলাদা আলাদা ছবিও এঁকে দিয়েছেন। এর ফলে গ্রামের বাচ্চাদের অত্যন্ত সুবিধা হয়েছে। আমি এমন সব মানুষদের অভিনন্দন জানাচ্ছি, যাঁরা এই ধরনের চেষ্টায় যুক্ত আছেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ভারত থেকে হাজার কিলোমিটার দূরে, অনেক মহাসাগরের পারে একটি দেশ আছে, যার নাম চিলি, ভারত থেকে চিলি পৌঁছতে অনেক বেশি সময় লাগে। কিন্তু ভারতীয় সংস্কৃতির সুগন্ধ, ওখানে অনেক আগের থেকেই ছড়িয়ে আছে। আরেকটি বিশেষ কথা হল, ওখানে যোগ অনেক জনপ্রিয়। আপনাদের এটা জেনে ভালো লাগবে যে চিলির এ রাজধানী স্যান্টিয়াগোতে ৩০ এর থেকেও বেশি যোগ বিদ্যালয় আছে। চিলিতে আন্তর্জাতিক যোগ দিবসও খুব উৎসাহের সঙ্গে পালন করা হয়। আমাকে বলা হয়েছে যে, হাউজ অফ ডেপুটিসে যোগ দিবস নিয়ে অনেক উৎসাহ ভরা পরিবেশের সৃষ্টি হয়। করোনার এই সময়ে রোগ প্রতিরোধের উপর জোর দিতে এবং রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে যোগের উপযোগিতা দেখে, এখন তাঁরাও যোগকে আগের থেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। চিলির কংগ্রেস, অর্থাৎ ওখানকার সংসদও এক প্রস্তাব পাস করেছেন। ওখানে চৌঠা নভেম্বর জাতীয় যোগ দিবস ঘোষণা করা হয়েছে। এখন আপনারা এটা ভাবতে পারেন যে চৌঠা নভেম্বরে এমন কি আছে? চৌঠা নভেম্বর ১৯৬২ তে চিলির "হোজে রাফাল এস্ট্রাডা" সেই দেশে প্রথম যোগ সংস্থা স্থা্পন করেন। এই দিনেই জাতীয় যোগ দিবস ঘোষণা করে এস্ট্রাডা জিকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে। চিলির সংসদের পক্ষ একটা বিশেষ সম্মান, যার জন্য প্রত্যেক ভারতীয় গর্ববোধ করেন। আসলে চিলির সংসদের সঙ্গে যুক্ত একটা আরো কথা আপনার ভালো লাগবে। চিলির সেনেটের ভাইস প্রেসিডেন্ট এর নাম রবীন্দ্রনাথ কুইয়েন্টেরাস। ওঁর এই নাম বিশ্বকবি গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামের প্রেরণায় রাখা হয়েছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, মাই গভ- এর উপর মহারাষ্ট্রের জালনার ডাক্তার স্বপ্নীল মন্ত্রী, আর কেরালার পলক্কড়ে প্রহ্লাদ রাজগোপালনও অনুরোধ করেছেন যে আমি 'মন কি বাত' এ পথসুরক্ষা নিয়েও আপনাদের সঙ্গে কথা বলি। এই মাসে ১৮ ই জানুয়ারি থেকে ১৭ ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমাদের দেশ 'পথ নিরাপত্তা মাস' অর্থাৎ রোড সেফটি মান্থ হিসেবে পালন করছে। পথ দুর্ঘটনা আজ শুধু আমাদের দেশেই নয় পুরো বিশ্বেই এক দুশ্চিন্তার বিষয়। আজ ভারতে রোড সেফটি বা পথ সুরক্ষার জন্য সরকারের সঙ্গে ব্যক্তিগত এবং সমষ্টিগত স্তরে অনেক রকমের চেষ্টা করা হচ্ছে। জীবন বাঁচানোর এই চেষ্টায় আমাদের আমাদের সকলেরই সক্রিয় অংশ নেওয়া উচিত। বন্ধুরা, আপনারা লক্ষ্য করে থাকবেন, বর্ডার রোড অরগানাইজেশন, যে রাস্তা তৈরি করে, সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় আপনি অনেক নতুন ধরণের স্লোগান দেখতে পাবেন। 'দিস ইজ হাইওয়ে নট রানওয়ে ' অথবা ' বি মিস্টার লেট দ্যান লেট মিস্টার '। এই শ্লোগানগুলো পথ সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে যথেষ্ট প্রভাবশালী। এখন আপনারাও এমনই আকর্ষণীয় স্লোগান অথবা ক্যাচ ফ্রেজ, মাই গভে পাঠাতে পারেন, আপনার ভালো স্লোগানগুলো এই অভিযানে ব্যবহার করা হবে। পথ নিরাপত্তা নিয়ে আমি নমো অ্যাপে কলকাতার অপর্না দাসের একটা পোস্টের আলোচনা করতে চাই। অপর্ণা জীও আমাকে 'ফাস্ট্যাগ’ কর্মসূচী নিয়ে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন। ওঁর বক্তব্য হলো 'ফাস্ট্যাগ’ এ যাত্রার অভিজ্ঞতাই বদলে গেছে। এতে সময়ও বেঁচে যায়, টোল প্লাজায় দাঁড়ানো, ক্যাশ পেমেন্ট করার ঝামেলা মিটে যায়। অপর্ণা জীর কথাই ঠিক। আগে আমাদের এখানে টোল প্লাজায় এক একটি গাড়িতে ৭ থেকে ৮ মিনিট লেগে যেত, কিন্তু 'ফাস্ট্যাগ' আসার পর এখন এই সময় মাত্র দেড় দুই মিনিটে দাঁড়িয়েছে। টোল প্লাজাতে অপেক্ষার সময় কম হওয়ার জন্যে গাড়ির জ্বালানীরও সাশ্রয় হচ্ছে। এতে দেশবাসীর প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা বেঁচে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থাৎ পয়সার সাশ্রয় আর সময়েরও সাশ্রয়। আপনাদের সবার কাছে আমার আবেদন, সবাই দিকনির্দেশগুলি পালন করুন, নিজেদের খেয়াল রাখুন, আর অন্যদেরও জীবন বাঁচান।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের এখানে বলা হয়- 'জলবিন্দু নিপাতেন ক্রমশ পূর্যতে ঘটঃ'। অর্থাৎ এক এক বিন্দুতেই কলসি ভরে ওঠে। আমাদের প্রতিনিয়ত চেষ্টাতেই সংকল্প সিদ্ধ হয়। এই কারণে, ২০২১ এর শুরু যে লক্ষ্যের সাথে আমরা করেছি, সেটা সবাই মিলেই পূর্ণ করতে হবে। আসুন, আমরা সবাই মিলে এই বছর কে সার্থক করার জন্য নিজের নিজের পা বাড়াই। আপনারা আপনাদের বার্তা, নিজের আইডিয়াগুলিও পাঠাতে থাকুন। সামনের মাসে আমাদের আবার দেখা হবে। ইতি- বিদা পুনর্মিলনায়।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আজ, সাতাশে ডিসেম্বর। আর মাত্র চারদিন বাদেই ২০২১ আরম্ভ হতে চলেছে। আজকের ‘মন কী বাত’, এক অর্থে ২০২০ র শেষ ‘মন কী বাত’। এর পরের ‘মন কী বাত’, ২০২১-এ হবে। বন্ধুরা, আমার সামনে আপনাদের পাঠানো অসংখ্য চিঠি রয়েছে। মাই গভ এ আপনারা যে সমস্ত প্রস্তাব পাঠান, সেগুলোও আমার সামনে রয়েছে। বহু মানুষ ফোন করে তাঁদের মতামত জানিয়েছেন। বেশীরভাগ বক্তব্যেই এই বছরের অভিজ্ঞতা, তাঁদের উপলব্ধি এবং ২০২১ এ তাঁদের সঙ্কল্পের কথা রয়েছে। কোলহাপুর থেকে অঞ্জলীজি লিখেছেন নতুন বছরে আমরা একে অপরকে শুভেচ্ছা জানাই, অভিনন্দন জানাই। এবার আমরা একটা নতুন কাজ করি আমাদের দেশকেও শুভেচ্ছা জানাই, অভিনন্দন জানাই। অঞ্জলীজি, সত্যি খুব ভাল ভাবনা। আমাদের দেশ ২০২১শে সাফল্যের নতুন শিখর স্পর্শ করুক, দুনিয়ায় ভারতের পরিচিতি আরও গৌরবমণ্ডিত হোক, এর চেয়ে বেশী আমরা আর কী চাইতে পারি।
বন্ধুরা, নমো অ্যাপে মুম্বাই এর অভিষেকজি একটি মেশেজ পোস্ট করেছেন, লিখেছেন ২০২০ যা যা আমাদের দেখালো, যা যা শেখালো, তা কোনোদিন কেউ ভাবেনি। করোনা সংক্রান্ত আরও অনেক কথা উনি লিখেছেন। এই সমস্ত চিঠি ও বার্তাগুলীতে একটা ‘কমন’ বিষয় আমার নজরে এসেছে যেটা আপনাদের সঙ্গে আমি ভাগ করে নিতে চাই। অধিকাংশ চিঠিপত্রে লোকে দেশের সামর্থ্য, দেশবাসীর সামগ্রিক শক্তির প্রশংসা করেছেন। যেভাবে জনতা কারফিউর মত অভিনব প্রয়াস গোটা বিশ্বের জন্য প্রেরণাদায়ক হয়ে ছিল, যেভাবে থালা-হাত-তালি বাজিয়ে আমাদের দেশবাসী করোনা যোদ্ধাদের সম্মান জানিয়েছিল, ঐক্যবদ্ধতা দেখিয়েছিল, অনেকেই এই বিষয়গুলিকে মনে রেখেছেন।
বন্ধুরা, দেশের আপামর জনসাধারণ এই পরিবর্তনকে অনুভব করেছেন। আমি দেশে আশার এক অদ্ভুত প্রবাহ অনুভব করেছি। অনেক বাধা বিপত্তি এসেছে, বহু বিপদ এসেছে। করোনার কারণে দুনিয়ায় সরবরাহ শৃঙ্খল নিয়ে অনেক সমস্যা তৈরি হয় কিন্তু আমরা এই সব বাধা থেকে নতুন শিক্ষা লাভ করেছি। দেশ এক নতুন ক্ষমতার উদ্ভব হয়েছে। তাকে এককথায় বলা যেতে পারে ‘আত্মনির্ভরতা’।
বন্ধুরা, দিল্লীবাসী অভিনব ব্যানার্জী আমাকে নিজের যে অভিজ্ঞতার কথা লিখে পাঠিয়েছেন, তা আমার খুবই চমকপ্রদ লেগেছে। অভিনবজিকে নিজের আত্মীয় পরিজনের বাচ্চাদের উপহার দেওয়ার জন্য কিছু খেলনা কিনতে হত, তাই তিনি দিল্লীর ঝন্ডেবালান বাজারে গিয়েছিলেন।আপনারা অনেকে হয়ত জানেন, দিল্লীর এই বাজার সাইকেল এবং খেলনার জন্য বিখ্যাত। আগে ওখানে দামী খেলনা মানেই ছিল আমদানী করা খেলনা। এমনকী সস্তা খেলনাও বাইরে থেকে আসত। কিন্তু, অভিনবজি আমাকে চিঠিতে জানিয়েছেন যে এখন ওখানকার অনেক দোকানদার ক্রেতাদের এই বলে খেলনা বিক্রি করছেন যে ভাল খেলনা মানে ভারতে তৈরি, ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ খেলনা। ক্রেতাদের মধ্যেও ইন্ডিয়া মেড খেলনারই চাহিদা দেখা যাচ্ছে। মানুষের চিন্তা ভাবনার যে আমূল পরিবর্তন হয়েছে এ হল তার জাজ্বল্যমান উদাহরণ। দেশবাসীর চিন্তাধারায় বিরাট পরিবর্তন এসেছে, তাও মাত্র এক বছরে। এই পরিবর্তনের হিসেব কষা সহজ নয়। অর্থনীতিবিদরাও নিজেদের মাপদন্ডে এর ওজন করতে পারবেন না।
বন্ধুরা, আমাকে বিশাখাপত্তনম থেকে ভেঙ্কট মুরলীপ্রসাদ যা লিখে পাঠিয়েছেন, তাতে এক সম্পূর্ণ অন্য ধারণা পেলাম। ভেঙ্কটজি লিখেছেন, আমি আপনাকে টোয়েণ্টী, টোয়েণ্টীওয়ান এর জন্য, দু হাজার একুশের জন্য আমার আমার এবিসি অ্যাটাচ করে পাঠালাম। আমি বুঝতে পারিনি, এবিসি মানে উনি কি বলতে চাইছেন। আমি দেখি ভেঙ্কটজি তার চিঠির সাথে একটি চার্টও অ্যাটাচ করে পাঠিয়েছেন। আমি চার্টটা দেখে বুঝতে পারি এবিসি মানে আত্মনির্ভর ভারত চার্ট। এটি খুবই চমকপ্রদ ব্যাপার। ভেঙ্কটজী সেই সমস্ত জিনিসের লিস্ট তৈরি করেছেন যা উনি প্রতিদিন ব্যবহার করেন। এর মধ্যে ইলেকট্রনিকস, স্টেশনারী, সেলফ কেয়ার আইটেম ইত্যাদি আরও অনেক জিনিস আছে। ভেঙ্কটজী বলেছেন আমরা নিজেদের অজান্তেই বহু বিদেশী দ্রব্য ব্যবহার করি যার ভারতীয় বিকল্প খুব সহজেই পাওয়া যায়। এখন উনি অঙ্গীকার করেছেন যে উনি শুধুমাত্র সেই পণ্যই ব্যবহার করবেন যার সঙ্গে আমাদের দেশবাসীর পরিশ্রম এবং ঘাম জড়িয়ে আছে।
বন্ধুরা, এর পাশাপাশি উনি আরও একটি বিষয় উল্লেখ করেছেন যা আমার ভীষণ চমকপ্রদ মনে হয়েছে। উনি লিখেছেন যে আমরা আত্মনির্ভর ভারতের সমর্থন করছি কিন্তু আমাদের উৎপাদকদের জন্যও স্পষ্ট নির্দেশ থাকা উচিৎ যে পণ্যের গুণমান নিয়ে কোন রকম আপোষ যেন না করা হয়। কথাটা একদম ঠিক। জিরো এফেক্ট, জিরো ডীফেক্ট এই ভাবনা নিয়ে কাজ করার সময় এসে গেছে। আমি দেশের উৎপাদক ও প্রথম সারির শিল্প সংস্থাগুলিকে অনুরোধ জানাই এই কথা মাথায় রাখতে। দেশের মানুষ এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়েছেন। ভোকাল ফর লোকাল এই ভাবনা আজ ঘরে ঘরে গুঞ্জরিত হচ্ছে। এই সময়, আমাদের সুনিশ্চিত করার সময় যে আমাদের উৎপাদিত পণ্য বিশ্বমানের হোক। যেটা বিশ্বে সবথেকে ভাল, সেটাই আমরা ভারতে তৈরি করতে পারি। এর জন্য আমাদের উদ্যমী সাথীদের এগিয়ে আসতে হবে। স্টার্টআপদেরও এগিয়ে আসতে হবে। আবারও একবার আমি ভেঙ্কটজিকে ওঁর অসাধারণ প্রয়াসের জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি।
বন্ধুরা, আমাদের এই ভাবনাকে জারি রাখতে হবে, বাঁচিয়ে রাখতে হবে এবং এর প্রসার ঘটাতে হবে। আমি আগেও বলেছি আরো একবার দেশবাসীর কাছে অনুরোধ করছি আপনারাও একটি সূচি তৈরি করুন। সারাদিন আমরা যে যে দ্রব্য কাজের জন্য ব্যবহার করি সেই সব জিনিস বিবেচনা করুন এবং দেখুন অজান্তে কোন কোন বিদেশে তৈরি হওয়া দ্রব্য আমাদের জীবনে প্রবেশ করেছে। এক হিসেবে আমরা এর দাস হয়ে পড়েছি। তাদের ভারতে তৈরি হওয়া বিকল্পের সন্ধান করুন এবং এই সিদ্ধান্ত নিন যে ভবিষ্যতে ভারতে তৈরি ভারতবাসীর পরিশ্রমে, ঘামে তৈরি দ্রব্যই আমরা ব্যবহার করব। আপনারা প্রতিবছর নতুন বছরের রেসোলিউশনস নিয়ে থাকেন। এবার একটি রেজলিউশন নিজের দেশের জন্যও অবশ্যই নিতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের দেশে, আততায়ীদের থেকে, অত্যাচারীদের থেকে দেশের হাজার হাজার বছরের প্রাচীন সংস্কৃতি, সভ্যতা, আমাদের রীতি-রেওয়াজকে রক্ষা করতে যাঁরা বিরাট আত্মবলিদান দিয়েছেন আজ তাঁদেরও স্মরণ করার দিন। আজকের দিনে গুরু গোবিন্দজীর পুত্রদ্বয় সাহিবজাদে জোরাবর সিং এবং ফতেহ সিংকে প্রাচীরে জীবন্ত সমাধি দেওয়া হয়েছিল। অত্যাচারী চেয়েছিল যে সাহিবজাদারা যেন নিজেদের বিশ্বাস ছেড়ে দেয়, মহান গুরু পরম্পরা শিক্ষা ছেড়ে দেয়। কিন্তু আমাদের সাহিবজাদারা এত কম বয়সেও আশ্চর্য সাহস দেখিয়েছিলেন, ইচ্ছাশক্তি দেখিয়েছিলেন। প্রাচীরে সমাধিস্থ করার সময় পাথর গায়ে লাগছিল, প্রাচীর উঁচু হচ্ছিল, মৃত্যু এগিয়ে আসছিল কিন্তু তবুও তাঁরা নিজেদের অবস্থানে অটল ছিলেন। আজকের দিনেই গুরু গোবিন্দ সিং এর মা – মাতা গুজরীও শহীদ হয়েছিলেন। প্রায় এক সপ্তাহ আগে শ্রী গুরু তেগবাহাদুরজীর শহীদত্ব বরণের দিনও ছিল। এখানে দিল্লিতে গুরুদ্বার রকাবগঞ্জ গিয়ে গুরু তেগ বাহাদুরকে শ্রদ্ধা নিবেদন করার, সেখানে মাথা ঠেকানোর সুযোগ আমার হয়েছে। এই মাসেই শ্রীগুরু গোবিন্দ সিং এর দ্বারা অনুপ্রাণিত বহু মানুষ মাটিতে শুয়ে থাকেন। মানুষ শ্রী গুরু গোবিন্দ সিং এর পরিবারের সদস্যদের বরণ করা শহীদ হওয়াকে অত্যন্ত আবেগঘন ভাবে স্মরণ করেন।
এই শহীদত্ব সম্পূর্ণ মানবতাকে, দেশকে নতুন শিক্ষা দিয়েছে। এই আত্মত্যাগ আমাদের সভ্যতা কে সুরক্ষিত রাখার মহান দায়িত্ব পালন করেছেন আমরা সবাই এর কাছে ঋণী। একবার আবারও শ্রীগুরু তেগ বাহাদুরজি, মাতা গুজরীজি, গুরু গোবিন্দ সিংহজি এবং চার সাহিবজাদাদের আত্মোতসর্গকে আমি প্রণাম জানাই। এভাবেই বহু আত্মত্যাগ ভারতের আজকের স্বরূপকে বাঁচিয়ে রেখেছে, সচল রেখেছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এবার আমি এমন একটি কথা বলতে চলেছি যাতে আপনাদের আনন্দও হবে এবং গর্বও হবে। ভারতে লেপার্ডের সংখ্যা ২০১৪ থেকে ২০১৮ এর মধ্যে ৬০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ তে দেশে লেপার্ড এর সংখ্যা প্রায় ৭৯০০ ছিল। ২০১৯ এ তাদের সংখ্যা বেড়ে ১২৮৫২ হয়েছে। এটা সেই লেপার্ড যাদের সম্বন্ধে জিম করবেট বলেছিলেন "যেসব মানুষ লেপার্ডকে প্রকৃতিতে স্বচ্ছন্দ রূপে চলাফেরা করতে দেখেননি তাঁরা তাদের সৌন্দর্য কল্পনাও করতে পারবেন না। তাদের রংয়ের আকর্ষণীয়তা এবং চলনের মোহময়তা সম্পর্কে ধারণা করতে পারবেন না।" দেশের অধিকাংশ রাজ্যে বিশেষ করে মধ্যভরতে লেপার্ডদের সংখ্যা বেড়েছে। লেপার্ডদের সর্বাধিক বসতিপূর্ণ রাজ্যের মধ্যে মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক এবং মহারাষ্ট্র সবার ওপরে রয়েছে। এটি একটি বড় প্রাপ্তি। লেপার্ড সারা দুনিয়ায় বহু বছর ধরেই বিপদের মোকাবিলা করে আসছে। পৃথিবীজুড়ে ওদের থাকার জায়গা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এমন সময় ভারত লেপার্ডের সংখ্যার ক্রমাগত বৃদ্ধি করে সারা বিশ্বকে পথ দেখিয়েছে। আপনারা নিশ্চয়ই এও জানেন যে গত কয়েক বছরে ভারতে সিংহের সংখ্যা বেড়েছে বাঘেদের সংখ্যাও বৃদ্ধি হয়েছে তার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের বনাঞ্চলও বৃদ্ধি পেয়েছে। তার কারণ এই যে শুধু সরকারই নয় বরং বহু মানুষ, সুশীল সমাজ, অনেক সংস্থা আমাদের গাছপালা ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে যুক্ত হয়েছে। তারা সবাই অভিনন্দনের দাবিদার।
বন্ধুরা, আমি তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটুরে এক হৃদয়স্পর্শী প্রয়াসের কথা পড়েছি। আপনারাও সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ছবি দেখে থাকবেন। আমরা সবাই মানুষদের জন্য হুইলচেয়ার দেখেছি কিন্তু কোয়েম্বাটুরের একটি মেয়ে গায়ত্রী নিজের বাবার সঙ্গে একটি অসুস্থ কুকুরের জন্য হুইল চেয়ার তৈরি করে দিয়েছে। এই সংবেদনশীলতা অনুপ্রেরণা যোগাবে, আর এটা তখনই হওয়া সম্ভব যখন মানুষের মন প্রতিটি জীবের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে।
জাতীয় রাজধানী অঞ্চল দিল্লী ও অন্যান্য কিছু শহরে ভয়ংকর ঠান্ডায় বেওয়ারিশ পশুদের দেখাশোনার জন্য কিছু মানুষ নানান ব্যবস্থা করছেন। তাঁরা এই পশুদের খাওয়াদাওয়া, এমনকি সোয়েটার আর বিছানার ব্যবস্থাও রাখছেন। এমনও কিছু মানুষ আছেন যাঁরা আবার প্রত্যেকদিন কয়েক শো বেওয়ারিশ পশুর খাওয়ার আয়োজন করে চলেছেন। এ ধরনের প্রয়াস অবশ্যই প্রশংসনীয়। এমনই আরেক রকম মহৎ প্রচেষ্টা চলছে উত্তর প্রদেশের কোশাম্বীতে। জেল বন্দীরা গরুদের ঠান্ডা থেকে বাঁচানোর জন্য পুরনো, ছেঁড়া কম্বল দিয়ে কভার তৈরি করছেন। কোশাম্বী ও আশেপাশের জেলার জেলবন্দীদের তৈরি কম্বল জড়ো করে এক সঙ্গে সেলাই করে গোশালায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কোশাম্বীর জেলবন্দীরা প্রতি সপ্তাহে অনেক কভার তৈরি করছেন। আসুন অন্যদের দেখাশোনা করার এই দরদী প্রচেষ্টাকে আমরাও উৎসাহিত করি। বাস্তবে এটা এমন একটা সৎকাজ যা সমাজের সংবেদনশীলতা জোরদার করে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এখন আমার সামনে যে চিঠিটা রয়েছে তাতে দুটো বড়ো ফটো রয়েছে। একটা মন্দিরের ফটো, একটা আগের আরেকটা বর্তমানের। এই ফটো দুটোর সঙ্গে যে চিঠি রয়েছে তাতে এমন একটা যুবগোষ্ঠীর কথা বলা হয়েছে যারা নিজেদের যুব ব্রিগেড বলে। আসলে এই যুব ব্রিগেড কর্ণাটকের শ্রীরঙ্গপট্টনের কাছে বীরভদ্র স্বামী নামের একটা প্রাচীন শিব মন্দিরের ভোল পাল্টে দিয়েছেন। মন্দিরের চারপাশ ঘাস আগাছার ঝোপঝাড় হয়ে গিয়েছিল পথচারীরা বাইরে থেকে মন্দির আছে বলে বুঝতেও পারতেন না। একদিন কয়েকজন পর্যটক এই ভুলে যাওয়া মন্দিরের ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন। যুব ব্রিগেড সেই ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় দেখে চুপচাপ না থেকে মন্দিরটির পুনরুদ্ধারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ওঁরা মন্দিরের চারপাশের বাড়তে থাকা ঘাস আগাছা ঝোপঝাড় কেটে সাফ করে দিলেন। যেখানে যতোটা মেরামত করার প্রয়োজন ছিল তাও করলেন। ভালো উদ্যোগ দেখে স্থানীয় লোকজন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। কেউ সিমেন্টের যোগান দিলেন কেউ বা রং দিলেন। যে যেমন পারলেন সাহায্য করলেন। এই সব যুবকেরা বিভিন্ন প্রফেশনে রয়েছেন। উইকএন্ডের অবসরের সময়ে মন্দিরের কাজ করেছেন। ওঁরা মন্দিরের দরজার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের কানেক্সনের ব্যবস্থা করে ফেলেছিলেন। এই ভাবে মন্দিরের পুরনো বৈভব ফিরিয়ে আনতে পারলেন। মানসিক দৃঢ়তা ও স্বপ্ন এ দুইয়ের সাহায্যে মানুষ যে কোনো লক্ষ্য পূরণ করতে পারে। যখনই আমি ভারতের তরুণদের দেখি আনন্দিত হই আশ্বস্ত হই, আনন্দিত ও আশ্বস্ত হই কারণ এ দেশের যুবসমাজের সব কিছু পারার চেষ্টা আছে আর করবার মানসিকতাও রয়েছে। ওদের কাছে কোনো বাধাই বাধা নয়। কোনো কিছুই ওঁদের আয়ত্ত্বের বাইরে নয়। আমি তামিলনাড়ুর এক শিক্ষকের কথা পড়েছি। তাঁর নাম হেমলতা এন কে, তিনি বিডডুপুরমের এক স্কুলে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ভাষা তামিল পড়ান। কোভিড ১৯ অতিমারি স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর অধ্যাপনায় কোনো বিঘ্ন ঘটাতে পারেনি। হ্যাঁ! ওঁর সামনে প্রতিবন্ধকতা নিশ্চয়ই ছিলো কিন্তু তিনি একটা উদ্ভাবনী উপায় বের করেছেন। কোর্সের ৫৩ টা চ্যাপটার রেকর্ড করে এনিমেটেড ভিডিও বানিয়ে পেন ড্রাইভে ভরে ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে দিয়েছেন। এতে তাঁর ছাত্রছাত্রীদের অনেক সুবিধে হয়েছে, অধ্যায়গুলো তারা ভিস্যুয়ালি বুঝে নিতে পেরেছে। এর সঙ্গে সঙ্গে তিনি ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে ফোনেও কথা বলেছেন। এর ফলে ছাত্রছাত্রীদের কাছে পড়াশোনা অনেক মনোগ্রাহী হয়েছে। দেশব্যাপী করোনার এই সময়ে শিক্ষক শিক্ষিকারা নানান নতুন উপায় উদ্ভাবন করেছেন, পাঠক্রমের বিষয়বস্তু ক্রিয়েটিভলি তৈরি করেছেন, অন লাইন পড়াশোনার যুগে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমি সমস্ত টিচারদের অনুরোধ করছি সেই সব কোর্স ম্যাটেরিয়াল শিক্ষা মন্ত্রকের দীক্ষা পোর্টালে অবশ্যই আপলোড করুন। দূর দূরান্তের ছাত্রছাত্রীরা এর ফলে অনেক বেশি উপকৃত হবে।
বন্ধুরা আসুন আমরা ঝাড়খন্ডের কোরওয়া জনজাতির হীরামনজি-র বিষয়ে কথা বলি। হীরামনজি গঢ়ওয়া জেলার সিংজো গ্রামে থাকেন। আপনারা জানলে অবাক হবেন কোরওয়া জনজাতির জনসংখ্যা খুব বেশি হলে ছ’ হাজার এবং তারা শহর থেকে দূরে পাহাড়ে জঙ্গলে বসবাস করে। হীরামনজি নিজের জনজাতির সংস্কৃতি ও জাতিসত্ত্বা সংরক্ষণের জন্য এক অনন্য পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি ১২ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে বিলুপ্ত প্রায় কোরওয়া ভাষার শব্দকোষ তৈরি করেছেন। তিনি এই শব্দকোষে ঘরগেরস্থালির চালু শব্দ থেকে দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ব্যবহৃত কোরওয়া ভাষার অনেক শব্দ শব্দার্থসহ সংগ্রহ করেছেন। কোরওয়া জনজাতির জন্য হীরামনজি যা করে দেখিয়েছেন তা সারা দেশের জন্য এক অনবদ্য দৃষ্টান্ত।
আমার প্রিয় দেশবাসী আমরা জানি আকবরের রাজসভায় এক বিশিষ্ট সদস্য ছিলেন আবুল ফজল। উনি একবার কাশ্মীর ভ্রমণের পর বলেছিলেন কাশ্মীরের সৌন্দর্য এতো অনুপম যে খিটখিটে কি বদরাগী লোকও খুশিতে ভরে উঠবেন।
আসলে উনি কাশ্মীরের কেশর চাষের কথা বলছিলেন। কেশর, যুগ যুগ ধরে কাশ্মীরের সঙ্গে যুক্ত। কাশ্মীরি কেশর প্রধানত পুলওয়ামা, বাড়গাম এবং কিশ্তওয়াড়ের মতো জায়গায় চাষ হয়। এই বছর মে মাসে, কাশ্মীরি কেশরকে জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন ট্যাগ অর্থাৎ জি.আই ট্যাগ দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা কাশ্মীরি কেশরকে একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্র্যান্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চেয়েছি। কাশ্মীরি কেশর সমগ্র বিশ্বে এমন এক মশলা হিসেবে বিখ্যাত যার নানা রকম ঔষধি গুনাগুন আছে। এটি অত্যন্ত সুগন্ধযুক্ত, এর রং গাঢ় হয় এবং এর তন্তুগুলো লম্বা এবং মোটা হয়, যা এর ঔষধিগুণ বৃদ্ধি করে। এটা জম্মু এবং কাশ্মীরের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করে। গুণাবলীর বিচারে কাশ্মীরের কেশর খুবই অনন্য এবং অন্যান্য দেশের কেশরের থেকে একেবারেই আলাদা। কাশ্মীরী কেশর এই জিআই ট্যাগ স্বীকৃতির মাধ্যমে আলাদা পরিচিতি লাভ করেছে। আপনারা এটা জেনে খুশি হবেন যে কাশ্মীরি কেশর জিআই ট্যাগ সার্টিফিকেট পাওয়ার পর এটিকে দুবাইয়ের একটি সুপার মার্কেটে লঞ্চ করা হয়েছে। এখন এর রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে, যা আত্মনির্ভর ভারত গঠনে আমাদের প্রচেষ্টাকে আরো শক্তিশালী করবে। এতে কেশর চাষীদের বিশেষ লাভ হবে। পুলওয়ামায় ত্রালের শার এলাকায় বসবাসকারী আব্দুল মজিদ ওয়ানীর কথাই ধরা যাক। উনি নিজের জিআই ট্যাগযুক্ত কেশরকে ন্যাশনাল স্যাফরন মিশনের সাহায্যে পম্পোরের ট্রেডিং সেন্টারে ই-ট্রেডিং-এর মাধ্যমে বিক্রি করছেন। এঁর মতোই অনেকে কাশ্মীরে এই কাজ করছেন। এরপর যখন আপনি কেশর কেনার কথা চিন্তা করবেন, কাশ্মীরী কেশর কেনার কথাই ভাববেন। কাশ্মীরি মানুষদের অন্তরের উষ্ণতা এমনই যে ওখানকার কেশরের স্বাদই আলাদা।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এই দু'দিন আগেই গীতা জয়ন্তী ছিল। গীতা আমাদের জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রেই অনুপ্রেরণা দেয়। কিন্তু আপনারা কখনো ভেবেছেন, গীতা এমন আশ্চর্য গ্রন্থ কেন? কারণ এটি স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণেরই বাণী। কিন্তু গীতার অনন্যতা এটাও যে, এই গ্রন্থ কিছু জানার ইচ্ছে দিয়ে শুরু হয়। প্রশ্নের মাধ্যমে শুরু হয়। অর্জুন ঈশ্বরকে প্রশ্ন করেছিলেন, জানতে চেয়েছিলেন, তাই গীতার জ্ঞান এই বিশ্ব-সংসারে ছড়িয়ে পড়ে। গীতার মতোই আমাদের সংস্কৃতিতে যত তত্ত্ব-জ্ঞান আছে, সবই কৌতুহল থেকে শুরু হয়েছে। বেদান্তের প্রথম মন্ত্রই তো "অথাতো ব্রহম জিজ্ঞাসা' অর্থাৎ এস আমরা ব্রহ্মের বিষয়ে জানতে চাই। তাই তো আমাদের এখানে ব্রহ্মের খোঁজ করার কথা বলা হয়। কৌতূহলের শক্তি এমনই হয়। কৌতূহল আপনাকে অনবরত নতুন কিছুর জন্য প্রেরণা দেয়। ছোটবেলায় আমরা শিখতে পারি তার কারণ আমাদের অন্তরে জিজ্ঞাসা থাকে। অর্থাৎ যতদিন কৌতুহল আছে, ততদিনই জীবন। যতদিন জিজ্ঞাসা আছে, ততদিন নতুন কিছু শেখার প্রচেষ্টা চলতে থাকে। কোনো বয়স বা পরিস্থিতি একে প্রভাবিত করতে পারে না। কৌতূহলের শক্তির এমনই এক সন্ধান আমি পেয়েছি, তামিলনাড়ুর এক বৃদ্ধ শ্রী টি শ্রীনিবাসাচার্য স্বামীর মাধ্যমে। শ্রী টি. শ্রীনিবাসাচার্য স্বামীর বয়স ৯২ বছর। উনি এই বয়সেও কম্পিউটারে নিজের বই লিখছেন, তাও নিজে টাইপ করে। আপনারা হয়তো ভাবছেন, বই লেখা ঠিক আছে, কিন্তু শ্রীনিবাসাচার্যজির সময়কালে তো কম্পিউটার ছিলই না। তাহলে উনি কম্পিউটার ব্যবহার কবে শিখলেন? এটা ঠিকই যে ওঁর কলেজের সময়ে কম্পিউটার ছিল না। কিন্তু ওঁর মনে ঔৎসুক্য এবং আত্মবিশ্বাস এখনো সেই মাত্রায় আছে যতটা নিজের যুবক অবস্থায় ছিল। আসলে শ্রীনিবাসাচার্য স্বামী সংস্কৃত এবং তামিল বিষয়ে পন্ডিত। তিনি এখনো পর্যন্ত প্রায় ১৬ টি আধ্যাত্মিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। কিন্তু কম্পিউটার আসার পরে উনি বুঝতে পেরেছিলেন যে বই লেখার এবং ছাপানোর ধরন বদলে গেছে, তাই উনি ৮৬ বছর বয়সে, কম্পিউটার শিখেছেন, নিজের প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারগুলো শিখেছেন। এখন উনি নিজের বই লেখা শেষ করছেন।
বন্ধুরা, শ্রী টি শ্রীনিবাসাচার্য স্বামীজির জীবন এটারই প্রত্যক্ষ প্রমাণ যে, যতদিন না জীবনে কৌতূহলের মৃত্যু হয়, শেখার ইচ্ছেরা মরে না যায়, ততদিন জীবন উদ্দীপনায় ভরা থাকে। এই জন্য আমাদের কখনো এটা ভাবা উচিৎ নয় যে আমরা পিছিয়ে পড়লাম বা কিছু বাদ চলে গেল। আমিও যদি এটা শিখতে পারতাম! আমাদের এটাও ভাবা উচিত নয় যে আমরা শিখতে পারবো না, বা এগিয়ে যেতে পারবোনা।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এখন আমরা কৌতূহল থেকে নতুন কিছু শেখা এবং করার কথা বলছিলাম। নতুন বছরের নতুন সংকল্পের কথা বলছিলাম। কিন্তু কিছু লোক এমনও হয় যারা অনবরত কিছু-না-কিছু নতুন করতে থাকে, নতুন নতুন সংকল্প পূরণ করতে থাকে। আপনিও নিজের জীবনে অনুভব করে থাকবেন, যখন আমরা সমাজের জন্য কিছু করি তখন অনেক কিছু করার উৎসাহ সমাজ নিজেই আমাদের জুগিয়ে দেয়। সামান্য প্রেরণাতে অনেক বড় কাজও সম্পন্ন হয়ে যায়। এমনই একজন যুবক শ্রীমান প্রদীপ সাঙওয়ান। গুরুগ্রাম-এর প্রদীপ সাঙওয়ান ২০১৬ থেকে হিলিং হিমালয়ের নামে অভিযান চালাচ্ছেন । তিনি নিজের টীম আর স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে হিমালয়ের আলাদা আলাদা এলাকায় যান,আর ভ্রমণকারীরা সেখানে যেসব প্লাস্টিক ও অন্যান্য আবর্জনা ফেলে রেখে যায় সেসব পরিষ্কার করেন। প্রদীপজি এখনো পর্যন্ত হিমালয়ের আলাদা আলাদা টুরিস্ট লোকেশন থেকে টনটন প্লাস্টিক পরিষ্কার করে ফেলেছেন। এমনই কর্ণাটকের এক তরুণ দম্পতি আছেন অনুদীপ আর মিনুষা। অনুদীপ আর মিনুষা দুজনে গত নভেম্বর মাসে বিয়ে করেছেন।বিয়ের পর অনেক তরুণ-তরুণীরা ঘুরতে যান, কিন্তু এঁরা দুজনে অন্যরকম কিছু করে দেখালেন। এঁরা প্রায়শই দেখতেন কি লোকেরা বাড়ীর বাইরে বেড়াতে তো যান, কিন্তু যেখানে যান সেখানে প্রচুর আবর্জনা ফেলে রেখে আসেন। কর্ণাটকের সোমেশ্বর সৈকতেরও একই অবস্থা। অনুদীপ আর মিনুষা ঠিক করলেন যে লোকেরা সোমেশ্বর সৈকতে যে সব আবর্জনা ফেলে গেছে সেগুলো সব পরিষ্কার করবেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনই বিবাহের পর প্রথম এটাই সংকল্প নিলেন। দুজনে মিলে সমুদ্রের তীরের বেশিরভাগ আবর্জনা পরিষ্কার করে ফেললেন। অনুদীপ নিজের সংকল্পের ব্যাপারে সোশ্যাল মিডিয়াতেও শেয়ার করলেন। তারপর আর কি, তাদের এমন দুর্দান্ত ভাবনায় প্রভাবিত হয়ে বহু তরুণ তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হলেন। আপনারা জেনে অবাক হয়ে যাবেন এই সব লোকজন মিলে সোমেশ্বর সৈকত থেকে ৮০০ কিলোরও বেশী আবর্জনা পরিস্কার করে দিয়েছেন। বন্ধুরা, এই প্রচেষ্টার মধ্যে, আমাদের এটাও ভাবতে হবে যে এই সমস্ত আবর্জনা এই সমুদ্রের তীরে, পাহাড়ে পৌঁছায় কিভাবে? প্রকৃতপক্ষে আমাদের মধ্যে কিছু লোক আবর্জনা সেখানে ফেলে আসে। আমাদের প্রদীপ আর অনুদীপ-মিনুষার মতো সাফাই অভিযান চালানো উচিত। কিন্তু তারও আগে আমাদের এই সংকল্প নিতে হবে, যে আমরা আবর্জনা ছড়াবো না। প্রকৃতপক্ষে 'স্বচ্ছ ভারত' অভিযানের ও তো এটাই প্রথম সংকল্প। হ্যাঁ, আরেকটা কথা আমি আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই। করোনার কারণে এই বছর ততটা আলোচনা করা হয়ে ওঠেনি। আমাদের দেশকে সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক থেকে মুক্ত করতেই হবে। এটা ২০২১ সালের সংকল্প গুলোর মধ্যে একটা। অবশেষে, আমি আপনাদের নতুন বছরের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা জানাচ্ছি। আপনি নিজে সুস্থ থাকুন, আর আপনার পরিবারকেও সুস্থ রাখুন। আগামী বছর জানুয়ারিতে নতুন বিষয়ে 'মনকি বাত' হবে। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আজ ‘মন কি বাত’-এর শুরুতে আপনাদের সবার সঙ্গে একটা খুশির খবর ভাগ করে নিতে চাই। প্রত্যেক ভারতবাসীর এটা জেনে গর্ব হবে যে দেবী অন্নপূর্ণার একটি খুব পুরনো প্রতিমা কানাডা থেকে ভারতে ফিরে আসছে। এই প্রতিমা প্রায় একশো বছর আগে, ১৯১৩ সালের কাছাকাছি, বারাণসীর একটি মন্দির থেকে চুরি করে, দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কানাডার সরকার আর এই পুণ্য কর্মকে সম্ভব করার ক্ষেত্রে যুক্ত সব ব্যক্তির এই সহৃদয়তার জন্য আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। মাতা অন্নপূর্ণার কাশীর সঙ্গে অত্যন্ত বিশিষ্ট একটি সম্বন্ধ আছে। এখন তার প্রতিমার ফেরত আসা আমাদের সবার জন্য আনন্দের। মাতা অন্নপূর্ণার প্রতিমার মতই, আমাদের ঐতিহ্যের অনেক অমূল্য রত্ন, আন্তর্জাতিক চক্রের শিকার হয়ে চলেছে। এই চক্র আন্তর্জাতিক বাজারে এগুলিকে খুব উঁচু দামে বিক্রি করে। এখন এদের উপর বল প্রয়োগ তো করা হচ্ছেই, এইসব সামগ্রী ফেরানোর জন্য ভারত নিজের প্রয়াস বাড়িয়েছে। এমনই প্রচেষ্টার কারণে বিগত কয়েক বছরে ভারত অনেক প্রতিমা এবং শিল্পসামগ্রী ফেরত আনতে সমর্থ হয়েছে। মাতা অন্নপূর্ণার প্রতিমা ফেরত আসার সঙ্গে আরও একটি ঘটনার সংযোগ রয়েছে। কিছু দিন আগেই ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ উইক পালিত হয়েছে। সংস্কৃতি প্রেমীদের জন্য ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ উইক পুরনো সময়ে ফিরে যাওয়ার, তার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ পর্বের খোঁজ নেওয়ার এক চিত্তাকর্ষক সুযোগ এনে দেয়। করোনা পর্ব চলা সত্ত্বেও এবার আমরা উদ্ভাবনী উপায়ে মানুষজনকে এই ‘হেরিটেজ উইক’ পালন করতে দেখলাম। সঙ্কটের সময় সংস্কৃতি খুব কাজে লাগে, এর মোকাবিলা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রযুক্তির মাধ্যমেও সংস্কৃতি আবেগের উদ্দীপনার এক মত কাজ করে। আজ দেশে অনেক সংগ্রহশালা আর গ্রন্থাগার নিজেদের সংগ্রহকে পুরোপুরি ডিজিটাল করার কাজে যুক্ত। দিল্লীতে আমাদের রাষ্ট্রীয় সংগ্রহশালা এই ব্যাপারে কিছু প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। রাষ্ট্রীয় সংগ্রহশালা প্রায় দশটি ভার্চুয়াল গ্যালারি গঠনের জন্য কাজ করছে – এটা আকর্ষণীয় নয় কি! এখন আপনি ঘরে বসে দিল্লীর ন্যাশনাল মিউজিয়ামের গ্যালারি ঘুরে দেখতে পারবেন। যেখানে একদিকে প্রযুক্তির মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আরও বেশি-বেশি মানুষের কাছে পৌঁছনো গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি অন্যদিকে এই ঐতিহ্যের সংরক্ষণের জন্য প্রযুক্তির প্রয়োগও গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি আমি একটি আকর্ষণীয় প্রকল্পের ব্যাপারে পড়ছিলাম। নরওয়ের উত্তরে স্ফালবার্ড নামে একটি দ্বীপ আছে। এই দ্বীপে আর্কটিক ওয়ার্ল্ড আর্কাইভ নামে একটি প্রকল্প নির্মিত হয়েছে। এই আর্কাইভে বহুমূল্য হেরিটেজ সংক্রান্ত তথ্য এমনভাবে রাখা আছে যে কোনো রকম প্রাকৃতিক বা মানুষের তৈরি বিপর্যয়ে তা প্রভাবিত হবে না । একেবারে সম্প্রতি এটাও জানা গিয়েছে যে অজন্তা গুহার সম্পদকেও ডিজিটাইজ করে এই প্রজেক্টে যুক্ত করা হচ্ছে। এতে অজন্তা গুহার পুরো দৃশ্য দেখতে পাওয়া যাবে। এখানে ডিজিটালাইজড এবং রেস্টোরড পেইন্টিংয়ের সঙ্গে-সঙ্গে সম্পর্কিত নথিপত্র এবং উদ্ধৃতি যুক্ত থাকবে। বন্ধুরা, মহামারী যেখানে একদিকে আমাদের কাজকর্মের পদ্ধতি বদলে দিয়েছে, অন্যদিকে প্রকৃতিকে নতুনভাবে উপলব্ধি করার সুযোগ দিয়েছে। প্রকৃতিকে দেখার ক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গীতেও পরিবর্তন এসেছে। এখন আমরা শীতের মরশুমে প্রবেশ করছি। আমরা প্রকৃতির ভিন্ন-ভিন্ন রঙ দেখতে পাব। বিগত কয়েকটি দিন চেরি ব্লসমের ভাইরাল ছবিতে পরিপূর্ণ রয়েছে ইন্টারনেট। এখন আপনারা হয়ত ভাবছেন যে যখন আমি চেরি ব্লসমের কথা বলছি তখন জাপানের এই প্রসিদ্ধ পরিচিতির কথা বলছি – কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়! এগুলো জাপানের ছবি নয়! এগুলো আমাদের মেঘালয়ের শিলঙের ছবি। মেঘালয়ের অপরূপ সৌন্দর্যকে এই চেরি ব্লসম আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
বন্ধুরা, এই নভেম্বর মাসের ১২ তারিখ থেকে ডক্টর সালিম আলি-জীর একশো পঁচিশতম জন্মজয়ন্তী সমারোহ শুরু হয়েছে। ডক্টর সালিম পাখিদের জগতে বার্ড ওয়াচিংয়ের ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন। দুনিয়ার পক্ষী বিশারদদের ভারতের প্রতি আকৃষ্টও করেছেন। আমি চিরদিন বার্ড ওয়াচিং-এ অনুরক্ত মানুষদের কদর করি। অনেক ধৈর্য নিয়ে, তারা, ঘন্টার পর ঘন্টা, সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি, বার্ড ওয়াচিং করতে পারেন, প্রকৃতির অনুপম সৌন্দর্যের আনন্দ নিতে পারে, আর নিজেদের জ্ঞানকে আমাদের কাছে পৌঁছে দেয়। ভারতেও অনেক বার্ড ওয়াচিং সোসাইটি সক্রিয়। আপনারাও অবশ্যই এই বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত হোন। আমার দৌড়ঝাপের জীবনেও, বিগত দিনে কেবাড়িয়াতে পাখিদের সঙ্গে সময় কাটানোর স্মরণীয় সুযোগ আমিও পেয়েছিলাম। পাখিদের সঙ্গে সময় কাটানোর মধ্য দিয়ে আপনি প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত হবেন আর পরিবেশ ভাবনা আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ভারতের সংস্কৃতি ও শাস্ত্র সবসময়ই সমগ্র বিশ্বের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। অনেক মানুষই তো এর খোঁজে ভারতে আসেন আর চিরকালের জন্য এখানকার হয়েই থেকে যান। আবার অনেক লোক নিজের দেশে ফিরে গিয়ে এই সংস্কৃতির সংবাহক হয়ে ওঠেন। আমার জোনেস মেসেত্তি-র কাজের সম্বন্ধে জানার সুযোগ হয়, যিনি 'বিশ্বনাথ' নামেও পরিচিত। জোনেস ব্রাজিলের মানুষদের বেদান্ত আর গীতা শেখান। উনি 'বিশ্ববিদ্যা' নামক একটি সংস্থা চালান, যা রিও ডি জেনিরো থেকে ঘণ্টাখানেকের দূরত্বে পেট্রোপোলিসের পাহাড়ে অবস্থিত। জোনেস মেক্যানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করার পর, স্টক মার্কেটের এক কোম্পানিতে কাজ করেন। পরে ভারতীয় সংস্কৃতি বিশেষ করে বেদান্তের প্রতি তিনি আকৃষ্ট হন। স্টক থেকে আধ্যাত্মিকতা, বাস্তবে ওনার যাত্রা পথ অতি সুদীর্ঘ। জোনেস ভারতে বেদান্ত দর্শন নিয়ে অধ্যয়ন করেন আর চার বছর পর্যন্ত কোয়েম্বাটুরের আর্শ বিদ্যা গুরুকুলামে থাকেন। জোনেসের আরো একটি বৈশিষ্ট্য আছে, তিনি নিজের মেসেজ সকলের কাছে পৌঁছানোর জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার করছেন। উনি নিয়মিত অনলাইন প্রোগ্রাম করেন। প্রতিদিনর পডকাস্টও করেন। বিগত সাত বছরে জোনেস বেদান্তের উপর সকলের জন্য বিনামূল্যের পাঠক্রমের মাধ্যমে দেড় লাখেরও বেশি ছাত্রছাত্রীকে পড়িয়েছেন। জোনেস শুধুমাত্র একটি বড় কাজই করছেন না, তাকে এমন ভাষায় করছেন, যাতে অনেক বেশি লোকের বুঝতে সুবিধে হয়। করোনা আর কোয়ারান্টাইনের এই সময়ে বেদান্ত কিভাবে সাহায্য করতে পারে সেটি জানার জন্য মানুষের এই বিষয়ে অনেক আগ্রহ আছে। মন কি বাত এর মাধ্যমে জোনেসের প্রয়াস গুলির জন্য তাঁকে অভিনন্দন এবং তাঁর ভবিষ্যত প্রচেষ্টার শুভকামনা জানাই।
বন্ধুরা, সম্প্রতি, এইরকমই, একটি খবরের প্রতি আপনাদের নজর নিশ্চয়ই গেছে। নিউজিল্যান্ডে ওখানকার নবনির্বাচিত সাংসদ, ডঃ গৌরব শর্মা বিশ্বের প্রাচীন ভাষাগুলির অন্যতম, সংস্কৃত ভাষায় শপথ গ্রহণ করেন। একজন ভারতীয় হয়ে ভারতীয় সংস্কৃতির এই প্রসারে আমাদের গর্ব বোধ হয়। ‘মন কি বাত’ এর মাধ্যমে গৌরব শর্মাজিকে শুভকামনা জানাই। আমাদের সবার এই কামনা রইল যে নিউজিল্যান্ডের মানুষের সেবায় উনি নতুন উচ্চতায় পৌঁছবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কাল ৩০ শে নভেম্বর। আমরা শ্রী গুরু নানক দেবজির ৫৫১তম প্রকাশ পর্ব উদযাপন করব। সমগ্র বিশ্বে গুরু নানাক দেবজির প্রভাব স্পষ্টরূপে দেখা যায়। ভ্যাঙ্কোবার থেকে ওয়েলিংটন , সিঙ্গাপুর থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত ওঁর উপদেশ সর্বত্রই শোনা যায়। গুরুগ্রন্থ সাহিব এ বলা হয়েছে "সেবক কো, সেবা বন আই " অর্থাৎ সেবকের কাজ, সেবা করা। বিগত কিছু বছরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পর্ব এসেছে, আর একজন সেবক হিসেবে আমি অনেক কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। গুরু সাহিব আমার থেকে সেবা গ্রহণ করেন। এর আগে গুরু নানক দেবজির ৫৫০তম প্রকাশ পর্ব, শ্রী গুরু গোবিন্দ সিং জির ৩৫০তম প্রকাশ পর্ব ছিল। আর আগামী বছর শ্রী গুরু তেগবাহাদুর জির ৪০০তম প্রকাশ পর্ব। আমি অনুভব করি, যে গুরু সাহেবের আমার ওপর বিশেষ কৃপা আছে, তাই উনি সর্বদা আমায় নিজের কাজে, খুব কাছ থেকে যুক্ত করেছেন।
বন্ধুরা আপনারা কি জানেন কচ্ছে একটি গুরদ্বারা আছে- 'লাখপত গুরদ্বারা সাহেব' । শ্রী গুরু নানকজী নিজের বিষন্নতার সময়ে 'লাখপত গুরদ্বারা সাহেবে' থেকেছিলেন। ২০০১ এর ভূমিকম্পে এই গুরুদ্বারেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়।এটা গুরু সাহেবেরই কৃপা যে আমি একে জীর্ণাবস্থা থেকে উদ্ধারের কাজ সুনিশ্চিত করতে পেরেছি। শুধু মেরামত নয়, এই গুরুদ্বারের বৈভব ও পূর্ব গৌরবকেও ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আমরা সকলে গুরু সাহেবের আশীর্বাদ লাভ করেছি। লখপত গুরুদ্বার সংরক্ষণের প্রয়াসকে ২০০৪ সালে ইউনেস্কোর এশিয়-প্রশান্তমহাসাগরিয় হেরিটেজ পুরস্কারে এওয়ার্ড অফ ডিসটিংশন দেওয়া হয়। মেরামতের সময় শৈল্পিক খুঁটিনাটি কে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জুরির মত ছিল। জুরি এও জানিয়েছিল, মেরামতের কাজে শিখ সসম্প্রদায়ের মানুষ শুধু যুক্ত ছিলেন তাই নয়, বরং তাদের তত্ত্বাবধানেই সমস্ত কাজ সম্পূর্ণ হয়। যখন আমি মুখ্যমন্ত্রীও ছিলাম না, তখনও লখপত গুরুদ্বার যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। ওখানে গেলে আমি অসীম শক্তি পাই। সকলেই এই গুরুদ্বারায় যেতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করবে। গুরু সাহেব আমার থেকে অনেক সেবা গ্রহন করেছেন আর এই জন্য আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ। গত বছর নভেম্বরে কারতারপুর সাহেব করিডর খোলার ঐতিহাসিক ঘটনা হয়েছিল। এই বিষয়টিকে আমি জীবনভর মনের মনিকোঠায় রেখে দেব। এটা আমাদের সকলের সৌভাগ্য যে আমাদের শ্রী দরবার সাহেবের সেবা করবার আরেকটি সুযোগ হয়েছে। আমার প্রবাসী শিখ ভাই বোনেরা এখন আরও সহজে দরবার সাহেবের সেবায় টাকা পাঠাতে পারবেন। এই পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে গোটা বিশ্বে তাঁরা যে যেখানে আছেন দরবার সাহেবের আরও নিকটে এসে গেলেন।
বন্ধুরা, গুরু নানকজীই লঙ্গরের প্রথা আরম্ভ করেন। আমরা করোনা মহামারীর এই সময়ে দেখলাম কিভাবে শিখ ভাই বোনেরা তাদের এই পরম্পরাকে বজায় রেখে মানবসেবার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। এই পরম্পরা আমাদের জন্য প্রেরণাস্বরূপ। আমার চাই, আমরা সকলে সেবক হয়ে কাজ করে যাই। গুরু সাহেব আমার থেকে ও আমার দেশবাসীর থেকে এভাবেই সেবা নিতে থাকুন। আরও একবার, গুরু নানক জয়ন্তীতে সকলকে জানাই অনেক অনেক শুভ কামনা।
আমার প্রিয় দেশবাসী, বিগত কয়েকদিনে, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলার, তাদের শিক্ষালাভের মহত্ত্বপূর্ণ ঘটনার অংশীদার হওয়ার সুযোগ হয়। আইআইটি গুয়াহাটি, আইআইটি দিল্লি, গান্ধীনগরের দীনদয়াল পেট্রোলিয়াম ইউনিভার্সিটি, দিল্লীর জেএনইউ, মাইশোর বিশ্ববিদ্যালয় ও লক্ষনৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে প্রযুক্তির সাহায্যে আমি যোগাযোগ করতে পেরেছি। দেশের যুবসম্প্রদায়ের মাঝে থাকতে পারলে মন তরতাজা ও উজ্জীবিত হয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসর এক ধরনের মিনি ইন্ডিয়া। একদিকে যেমন এই ক্যাম্পাসগুলোতে ভারতের বিবিধতা নজরে আসে, অন্যদিকে নতুন ভারত তৈরীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনার ইচ্ছেও চোখে পড়ে। করোনা মহামারীর আগে যখন আমি সশরীরে কোনো প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে যেতাম, তখন আমি অনুরোধও করতাম যে আশপাশের স্কুলের গরিব ছাত্রছাত্রীদেরও তাতে আমন্ত্রণ জানানো হোক। এই বাচ্চারা আমার বিশেষ অতিথি হিসেবে আসত। একজন ছোটো বাচ্চা যখন এই বিরাট সমারোহে কাউকে ডাক্তার, কাউকে ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী হতে দেখে, কাউকে মেডেল নিতে দেখে, তখন তার মনেও নতুন স্বপ্ন জাগে। ‘ আমিও পারি’- এই আত্মবিশ্বাস জাগে। নতুন সংকল্পের অনুপ্রেরণা পায়।
বন্ধুরা, আর একটি বিষয় সম্পর্কে আমার সবসময়ে কৌতূহল থাকে সেটা হল এই প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তনি কারা, সেই প্রাক্তনিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের কি ব্যবস্থা, এঁদের প্রাক্তনিদের সঙ্গে যোগাযোগ কতটা কার্যকরী।
আমার যুবা বন্ধুরা, আপনারা ততক্ষণ পর্যন্তই কোন প্রতিষ্ঠানের বিদ্যার্থী হন যতক্ষণ পর্যন্ত আপনারা সেখানে পড়াশোনা করেন, কিন্তু সেখানকার প্রাক্তনি আপনারা আজীবন থাকেন। স্কুল কলেজ থেকে বেরোনোর পরেও দুটি বিষয় কখনো শেষ হয় না। প্রথম – আপনার শিক্ষার প্রভাব, এবং দ্বিতীয় – নিজের স্কুল কলেজের সঙ্গে আপনার আত্মিক যোগ। যখন প্রাক্তনিরা নিজেদের মধ্যে কথা বলেন তখন স্কুল-কলেজ নিয়ে তাঁদের স্মৃতির মধ্যে বইপত্র, পড়াশোনার থেকেও ক্যাম্পাসে কাটানো সময়, বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো বেশি করে উঠে আসে। আর সেই স্মৃতির মধ্য থেকেই জন্ম নেয় প্রতিষ্ঠানের জন্য কিছু করার ইচ্ছা। যেখানে আপনার ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটেছে, তার উন্নতির জন্যে আপনি যদি কিছু করেন তার থেকে আনন্দের কথা আর কী হতে পারে! আমি এমন কিছু প্রয়াসের সম্বন্ধে পড়েছি যেখানে প্রাক্তন ছাত্ররা নিজেদের পুরনো প্রতিষ্ঠানের প্রভূত উন্নতি ঘটিয়েছেন। আজকাল প্রাক্তনীরা এ বিষয় নিয়ে অত্যন্ত সক্রিয়। আইআইটিয়ানরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের জন্য কনফারেন্স সেন্টার , ম্যানেজমেন্ট সেন্টার, ইনকিউবেশন সেন্টার ইত্যাদি অনেক পৃথক পৃথক ব্যবস্থা নিজেরাই তৈরি করে দিয়েছেন। এই সমস্ত উদ্যোগ বর্তমান বিদ্যার্থীদের শেখার অভিজ্ঞতাকে উন্নত করে। আইআইটি দিল্লি একটি এনডাওমেন্ট ফান্ডের সূচনা করেছে যা একটি দুর্দান্ত আইডিয়া। বিশ্বের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এ ধরনের এনডাওমেন্ট তৈরি করার সংস্কৃতি রয়েছে, যা ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করে। আমার মনে হয় ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও এই সংস্কৃতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সক্ষম। যখন প্রতিদানে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ওঠে তখন কোন কিছুই বড় বা ছোট হয়না। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সাহায্যও অর্থ বহন করে। প্রতিটি প্রয়াসই হয় তাৎপর্যপূর্ণ। প্রায়শই প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তির মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে, ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে, পুরষ্কার ও বৃত্তি চালু করার ক্ষেত্রে, দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচী শুরু করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কোন কোন স্কুলের "প্রাক্তনী সংগঠন" মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম চালু করেছেন। এর মাধ্যমে তাঁরা আলাদা আলাদা ব্যাচের ছাত্র-ছাত্রীদের গাইড করেন। একই সঙ্গে শিক্ষার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। বহু স্কুলে বিশেষ করে বোর্ডিং স্কুলগুলির প্রাক্তনীদের সংগঠন অত্যন্ত সক্রিয়, তাঁরা ক্রীড়ানুষ্ঠান এবং কমিউনিটি সার্ভিসের মতো কর্মসূচির আয়োজন করে থাকেন। আমি প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের অনুরোধ করতে চাইব, তাঁরা যে প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছেন তার সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ককে আরো বেশি মজবুত করতে থাকুন। তা স্কুল হোক কলেজ হোক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানগুলির কাছেও আমার অনুরোধ প্রাক্তনীদের যুক্ত করার নতুন ও উদ্ভাবনী উপায় নিয়ে কাজ করুন। সৃজনশীল প্লাটফর্ম তৈরি করুন যাতে প্রাক্তনীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ সম্ভব হয়। শুধু বড় কলেজ আর ইউনিভার্সিটিই নয়, গ্রামের স্কুলগুলিরও দৃঢ়, প্রাণবন্ত সক্রিয় প্রাক্তনী নেটওয়ার্ক হোক।
আমার প্রিয় দেশবাসী, পাঁচই ডিসেম্বর শ্রী অরবিন্দের পুণ্য তিথি। শ্রী অরবিন্দকে আমরা যত পড়ি ততই গভীরতা খুঁজে পাই। আমার যুবক বন্ধুরা শ্রী অরবিন্দকে যত জানবেন ততই নিজেকে জানতে পারবেন, নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারবেন। আপনার জীবনের যে চিন্তাভাবনা ও পরিস্থিতির মধ্যে আপনি রয়েছেন, যেসব সংকল্পকে সফল করার জন্য আপনি সচেষ্ট, তার মধ্যে সবসময়ই শ্রী অরবিন্দকে নতুন প্রেরণাদায়ক হিসেবে, এক নতুন পথের দিশারী রূপে আপনি পাবেন। যেমন আজ যখন আমরা "লোকাল ফর ভোকাল" – এই অভিযানে শামিল হয়ে অগ্রসর হচ্ছি তখনো অরবিন্দের স্বদেশী দর্শন আমাদের পথ দেখায়। শ্রী অরবিন্দ তাঁর স্বদেশীর প্রেরণা নিজের পরিবার থেকে পেয়েছিলেন। তাঁর মাতামহ শ্রী রাজনারায়ণ বসু বাংলার খুব বড় একজন চিন্তাবিদ ছিলেন। বাংলায় তার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কবিতা আছে।
“শুই সুতো পর্যন্ত আসে তুঙ্গ হতে।
দিয়াশালাই কাঠি, তাও আসে পোতে।।
প্রদীপটি জ্বালিতে খেতে, শুতে, যেতে।
কিছুতে লোক নয় স্বাধীন"।।
অর্থাৎ আমাদের এখানে সূঁচ এমনকি দেশলাইও বিদেশি জাহাজে করে আসে। খাওয়া-দাওয়া, শোওয়া কোন বিষয়েই মানুষ স্বাধীন নয়। নিজের দাদুর মনের এই কষ্ট শ্রীঅরবিন্দের শিশুমনকেও প্রভাবিত করেছিল। এরপরই উনি স্বাদেশীকতাকে নিজের জীবনের লক্ষ্য হিসেবে স্থির করেছিলেন। উনি বলতেন, স্বাদেশীকতার অর্থ হলো আমরা আমাদের ভারতীয় কর্মচারী এবং কারিগরদের তৈরি করা জিনিসকে প্রাধান্য দেব। এমনও নয় যে শ্রী অরবিন্দ বিদেশিদের থেকে কোনো কিছু শেখার ব্যাপারে বিরোধিতা করেছেন। যেখানে যা নতুন আছে, সেখান থেকে আমরা শিখব, আমাদের দেশে যা কিছু ভালো হতে পারে, আমরা তার সঙ্গে সহযোগিতা করব এবং উৎসাহ প্রদান করব, এটাই তো আত্মনির্ভর ভারত অভিযানে ভোক্যাল ফর লোক্যাল মন্ত্রের ভাবনা। বিশেষ করে স্বাদেশিকতাকে আপন করে নেওয়ার বিষয়ে উনি যা কিছু বলেছিলেন, তা আজ প্রত্যেক দেশবাসীর পড়া উচিত। বন্ধুরা, এভাবেই শিক্ষার বিষয়েও শ্রী অরবিন্দের বক্তব্য খুবই সুস্পষ্ট ছিল। উনি শিক্ষাকে শুধুমাত্র পুঁথিগত জ্ঞান, ডিগ্রি এবং চাকরির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখায় বিশ্বাস করতেন না। শ্রী অরবিন্দ বলতেন, আমাদের রাষ্ট্রীয় শিক্ষা, আমাদের যুবসমাজের মন এবং মস্তিষ্কের প্রশিক্ষণ হওয়া উচিত, অর্থাৎ মস্তিষ্কের বৈজ্ঞানিক বিকাশ হবে এবং মনে ভারতীয় চিন্তা-ভাবনাও থাকবে, তবেই একজন যুবক দেশের আরও ভালো নাগরিক হতে পারবে। শ্রী অরবিন্দ রাষ্ট্রীয় শিক্ষার বিষয়ে যে কথা বলেছিলেন, যে প্রত্যাশা করেছিলেন, আজ দেশ তাকেই নতুন রাষ্ট্রীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে পূর্ণ করছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ভারতে কৃষিক্ষেত্র এবং তার সঙ্গে আনুষঙ্গিক যুক্ত জিনিসে নতুন মাত্রা যুক্ত হতে চলেছে। কিছুদিন আগে হওয়া কৃষি সংশোধনীতে কৃষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খোলা হয়েছে । বহু বছর ধরে কৃষকদের যে দাবি ছিল, যে দাবিগুলো পূরণ করার জন্য কোন না কোন সময়ে প্রত্যেক রাজনৈতিক দল ওঁদের কথা দিয়েছিল, সেই সব দাবি পূরণ হয়েছে। অনেক বিচার বিবেচনার পরে ভারতীয় সংসদ কৃষি সংশোধনীকে আইনি স্বরূপ দিয়েছে। এই সংশোধনীর ফলে কৃষকদের অনেক সীমাবদ্ধতারই কেবল সমাপ্তি হয়নি, বরং ওঁরা নতুন অধিকার পেয়েছেন, নতুন সুযোগও পেয়েছেন। এই অধিকার অনেক কম সময়েই কৃষকদের অনেক সমস্যা কমাতে শুরু করে দিয়েছে। মহারাষ্ট্রের ধুলে জেলার কৃষক জিতেন্দ্র ভৈজী এই নতুন কৃষি আইনের ব্যবহার কিভাবে করেছেন তা আপনাদের সকলের জানা উচিত। জিতেন্দ্র ভৈজী ভুট্টার চাষ ও সেই ফসল সঠিক দামে ব্যবসায়ীদের বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ফসলের মোট মূল্য নির্ধারিত হয় প্রায় ৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা। জিতেন্দ্র ভাই প্রায় ২৫০০০ টাকা এডভান্সও পেয়েছিলেন। এটাই ঠিক করা হয়েছিল যে বকেয়া টাকা উনি ১৫ দিনের মধ্যে পেয়ে যাবেন। কিন্তু পরে পরিস্থিতি এমনই তৈরি হয়েছিল যে উনি বাকি টাকা পাননি। কৃষকের থেকে ফসল কিনে নাও, অথচ মাসের-পর-মাস টাকা দিও না, সম্ভবত ভুট্টা ক্রেতা বছরের পর বছর ধরে চলে আসা এই ধারাকেই অনুসরণ করেছিলেন। এভাবেই প্রায় চার মাস ধরে জিতেন্দ্র জির টাকা শোধ করা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সেপ্টেম্বরে পাশ হওয়া সংশোধনী যা কৃষি আইন হিসেবে রূপায়িত হলো, সেটাই ওঁর কাজে লাগলো। এই আইনে এটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে ফসল কেনার তিন দিনের মধ্যে কৃষককে পুরো মূল্য দিয়ে দিতে হবে, যদি এই মূল্য দেওয়া না হয় তাহলে কৃষক অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। এই আইনে আরও একটা বড় বিষয় রয়েছে যে, এই আইন অনুযায়ী কোন অঞ্চলের এসডিএম কে এক মাসের ভেতর কৃষকের অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে হবে। এখন যখন এরকম আইনের শক্তি আমাদের কৃষক বন্ধুদের কাছে আছে তাহলে ওঁদের সমস্যার সমাধান তো হওয়াই উচিৎ ছিল। উনি অভিযোগ করেছিলেন এবং কয়েক দিনের মধ্যেই ওঁর বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ আইনের সঠিক এবং সম্পূর্ণ জ্ঞানই জিতেন্দ্র জির শক্তি হল।
যে কোনও ক্ষেত্রই হোক, সব ধরনের ভুল বা গুজবের থেকে দূরে থেকে, সঠিক তথ্য প্রত্যেকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্বল হয়ে ওঠে। কৃষকদের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য রাজস্থানের বারাঁ জেলার বাসিন্দা মহম্মদ আসলাম জী এমন একটা কাজ করছেন। কিষান উৎপাদক সংস্থার সিইও ও তিনি। হ্যাঁ আপনারা ঠিকই শুনছেন কৃষিপণ্য উৎপাদক সংস্থার সিইও! আশা করি বড়ো বড়ো কোম্পানির সিইওরা জেনে খুশি হবেন যে দেশের দূর দূরান্তেও কিষাণ সংস্থার সিইও হয়ে উঠছেন অনেকেই। হ্যাঁ বন্ধুরা, মহম্মদ আসলাম জী নিজের কর্মক্ষেত্রের অন্যান্য অনেক কৃষকদের নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলেছেন। এই গ্রুপে প্রতিদিন তিনি আসপাশের বাজারের দর হালচাল কি তা কিষাণদের জানিয়ে দিচ্ছেন। ওঁর নিজের এফপিও ও চাষীভাইদের থেকে ফসল কেনে, তাই ওঁর এই প্রচেষ্টায় কৃষকদের সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধে হয়।
বন্ধুরা, সচেতন হলেই সজীবতা গড়ে ওঠে। নিজের সচেতনতা দিয়ে হাজার হাজার মানুষের জীবন প্রভাবিত করার আরেক কৃষি উদ্যোগী বীরেন্দ্র যাদব জী। বীরেন্দ্র যাদব জী কিছুদিন অস্ট্রেলিয়ায় ছিলেন! দু বছর আগে তিনি দেশে ফিরে এখন হরিয়ানার কৈথল এ থাকেন। অন্যান্য কৃষকদের মতো তাঁরও ক্ষেতে পড়ে থাকা খড় নিয়ে সমস্যা হচ্ছিলো। এর সমাধানের জন্য ব্যাপক প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আজ ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে বীরেন্দ্রজীর কথা আলাদা ভাবে উল্লেখ কারণ ওঁর প্রচেষ্টা ব্যতিক্রমী। তা এক নতুন দিশা দেখিয়েছে। পড়ে থাকা বাড়তি খড়ের সমস্যার সমাধানে বীরেন্দ্রজী বিচালি আটি বাঁধার জন্য স্ট্র বেলার মেশিন কিনেছেন। এর জন্য তিনি কৃষি বিভাগের আর্থিক সহায়তাও পেয়েছেন। ঐ মেশিনের সাহায্যে তিনি বাড়তি খড়ের গাঁটরি বানানো শুরু করেছিলেন। এই গাঁটরি এগ্রো এনার্জি প্ল্যান্ট এবং পেপার মিলে বিক্রি করছেন। আপনারা শুনলে তাজ্জব হয়ে যাবেন বীরেন্দ্রজী ক্ষেতের ঐ বাড়তি খড় থেকে দু বছরে দেড় কোটি টাকারও বেশি ব্যবসা করেছেন এবং তার থেকে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকা মুনাফা করেছেন। যে সব কৃষকেরা বীরেন্দ্রজীর ক্ষেত থেকে বাড়তি খড় তুলতেন তাঁদেরও উপকার হলো। আমরা আস্তাকুঁড় থেকে মণিকাঞ্চন বানানোর কথা শুনেছি, তবে বাড়তি খড় কাজে লাগিয়ে অর্থ ও পুণ্য অর্জনের এ এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ! আমার তরুণ বন্ধুরা বিশেষ করে কৃষিবিদ্যা নিয়ে যে লক্ষ লক্ষ ছাত্র পড়াশোনা করছেন তাঁদের উদ্দেশে বলছি আপনারা আপানাদের আশেপাশের গাঁয়ের কৃষকদের কে আধুনিক কৃষি পদ্ধতি, কৃষি সমস্যার যে সব সাম্প্রতিক সমাধান প্রক্রিয়া হয়েছে সে সম্পর্কে সচেতন করুন। এর সাহায্যে আপনি দেশে যে উন্নয়নের জোয়ার এসেছে তার সহযোগী হয়ে উঠতে পারবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আমরা আলাদা আলাদা নানান রকম বিষয় নিয়ে কথা বলি। কিন্তু এমন একটা কথা এক বছর ধরে চলছে যা আমরা খুশি মনে আলোচনা করতে চাই না। প্রায় এক বছর হতে চললো বিশ্বে প্রথম করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের খবর জেনেছি। সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত সারা বিশ্ব নানান উত্থান পতন দেখেছে। লক ডাউন পর্ব পেরিয়ে এখন ভ্যাক্সিন নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। কিন্তু করোনা নিয়ে যে কোনো রকম অসাবধানতা খুবই ভয়ংকর। করোনা নিয়ে আমাদের কঠোর লড়াই চালু রাখতে হবে৷
বন্ধুরা, কয়েকদিন বাদে ৬ই ডিসেম্বর বাবাসাহেব আম্বেদকরের পুণ্য তিথি। এই দিন বাবাসাহেবকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের প্রতি আমাদের কর্তব্য, সংবিধান একজন নাগরিক হিসেবে আমাদের কি কি দায়িত্ব দিয়েছে সে সবও আরেকবার মনে করার সময়। দেশের বৃহত্তর ভাগে শীত ক্রমশ জাঁকিয়ে পড়ছে। অনেক জায়গায় বরফ পড়ছে। এই মরশুমে বাচ্চাদের, বয়স্কদের, অসুস্থ মানুষদের বাড়তি যত্ন নিতে হবে এবং নিজের স্বাস্থ্যের প্রতিও নজর রাখতে হবে। আমার খুব ভালো লাগে যখন দেখি মানুষ নিজের চারপাশের অসহায় মানুষের চাহিদার কথা খেয়াল রাখে। শীতার্তকে গরম জামাকাপড় দেওয়া এমনই একটা কাজ। আশ্রয়হীন পশুদেরও এই শীতে খুব কষ্ট হয়। অনেকে আবার এদিকেও খেয়াল রাখেন। আমাদের যুব সমাজ এসব ব্যাপারে বেশ আগ্রহের সঙ্গেই অংশগ্রহণ করে। বন্ধুরা, এর পরের ‘মন কি বাত’ এর সময় ২০২০ সাল শেষ হয়ে আসবে।নতুন অঙ্গীকার, নতুন বিশ্বাস নিয়ে আমরা অগ্রসর হবো। এখন আপনাদের নতুন নতুন পরামর্শ, ভাবনা আমার কাছে পাঠাতে থাকুন। আপনাদের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভকামনা জানাই। আপনারা সবাই সুস্থ থাকুন, দেশের জন্য কাজ করতে থাকুন। অনেক অনেক ধন্যবাদ!
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। প্রিয় দেশবাসী, আজ বিজয়া দশমী অর্থাৎ দশেরা উৎসব! এই পবিত্র পার্বণ উপলক্ষে সমস্ত দেশবাসীকে আমার শুভ কামনা! দশেরার এই পরব অসত্যকে পরাজিত করে সত্যের জয়! একই সঙ্গে সংকটকে অতিক্রম করে ধৈর্য্যর জয়ের উৎসব। আজ আপনারা অত্যন্ত সংযমের সঙ্গে মর্যাদার সঙ্গে পরব, উৎসব পালন করছেন এবং সেই জন্যই আমরা যে লড়াই করছি তাতে জয় অনিবার্য। আগে দুর্গা মন্ডপে মায়ের দর্শনের জন্য এমন ভীড় হয়ে যেতো একদম মেলার মতো সমারোহ হয়ে যেতো কিন্তু এবারে তেমন হতে পারেনি। আগে দশেরার দিনও বড়ো বড়ো মেলা হতো কিন্তু এবারে তার চেহারা একেবারেই আলাদা। রামলীলার উৎসবেরও একই রকম আকর্ষণ ছিলো কিন্তু সেখানেও কিছু না কিছু প্রতিবন্ধকতা এসেছে। আগে নবরাত্রির সময় গুজরাটের গর্বার ধুন চারদিক ছেয়ে থাকতো এবার সব বড় বড় আয়োজন বন্ধ। আগামী দিনে আরও অনেক পরব,উৎসব আসছে, ঈদ, শরৎ পূর্ণিমা, বাল্মিকী জয়ন্তী আছে এরপর ধনতেরাস, দেওয়ালি, ভাই ফোঁটা, ছঠ মাইয়ার পুজো গুরু নানক দেবজির জন্মজয়ন্তীও আসছে৷ করোনার এই সংকটে আমাদের সংযমের সঙ্গে, মর্যাদার সঙ্গে, সব সামলে নিতে হবে।
বন্ধুরা, যখনই উৎসবের কথা ওঠে, প্রস্তুতি শুরু হয়,প্রথমেই মাথায় আসে বাজার কবে যেতে হবে? কি কি কেনাকাটা করতে হবে? সব থেকে বড়ো কথা বাচ্চাদের এ নিয়ে বিশেষ উৎসাহ থাকে – এবারে এই পরবে নতুন নতুন কি হবে! উৎসবের জৌলুস আর বাজারের চমক একে অপরের সঙ্গে জুড়ে থাকে। কিন্তু এবারে যখন আপনারা বাজারে যাবেন "ভ্যোকাল ফর ল্যোকাল " নিয়ে আপনার শপথ মনে রাখবেন। বাজারে যাইই কিনবেন স্থানীয় জিনিস পত্রকে বেশি গুরুত্ব দেবেন।
বন্ধুরা, উৎসবের এই হুল্লোড় মজার মাঝে লকডাউনের সময়ের কথাও মনে রাখতে হবে। সমাজের যে বন্ধুদের ছাড়া আমরা মুশকিলে পড়ে যাই যেমন সাফাই কর্মী, বাড়িতে যাঁরা কাজকর্ম করেন সেই ভাই বোনেরা, এলাকার সব্জি বিক্রেতা, দুধ বিক্রেতা, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বন্ধুরা- আমাদের জীবনে এঁদের কি অবদান, লকডাউনের সময় আমার সেটা খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করেছি। এই কঠিন সময়ে আমাদের সব্বার সঙ্গে তাঁরা ছিলেন আর এখন এই উৎসবের সময়ে আমাদের খুশির সময়ে এঁদেরকে সঙ্গে নিতে হবে। আমার আবেদন, যতোটা সম্ভব এঁদের আপনাদের খুশির সঙ্গী করে নেবেন, নিজেদের পরিবারের সদস্য হিসেবেই এদের ভাবুন, দেখবেন আপনার সেই খুশি কতটা বেড়ে যাবে।
বন্ধুরা, এ সময় দুঃসাহসী সেনাদের কথাও মনে রাখতে হবে, এই উৎসবের সময়েও তাঁরা সীমান্ত রক্ষায় ব্যস্ত রয়েছেন, ভারতমাতার সেবা ও সুরক্ষায় ব্রতী রয়েছেন এঁদের মনে রেখে আমাদের উৎসব উদযাপন করতে হবে। ভারতমাতার এই বীর ভাই বোনেদের জন্য বাড়িতে একটা প্রদীপ জ্বালাবেন।
আমি বীর সেনাবাহিনীকে বলতে চাই আপনারা হয়তো সীমান্তে রয়েছেন, কিন্তু সারা দেশ আপনাদের সঙ্গে আছে, আপনাদের জন্য প্রার্থনা করছে। আমি সেই সব পরিবারের লোকজনদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানাচ্ছি যাদের সন্তানেরা সীমান্তে রয়েছেন। দেশসেবার প্রয়োজনে কর্তব্যরত প্রত্যকটি মানুষ যাঁরা নিজেদের পরিবার সংসার থেকে দূরে রয়েছেন তাঁদেরকেও আমার আন্তরিক কৃতঞ্জতা।
বন্ধুরা, আমরা যখন স্থানীয় পণ্যের জন্য সোচ্চার হচ্ছি, দুনিয়াও আমাদের লোকাল প্রোডাক্টের ফ্যান হয়ে উঠছে,আমাদের অনেক স্থানীয় পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে জনপ্রিয় হয়ে ওঠার প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক খাদির কথা। দীর্ঘদিন ধরে খাদি সাদাসিধে জীবনধারনের প্রতীক ছিল, কিন্তু আজ খাদি, পরিবেশ-বান্ধব পোষাক হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। স্বাস্থ্যের দিকে থেকে এটি একটি বডি ফ্রন্ডলি ফেব্রিক, যে কোন আবহাওয়ায় পরার পোষাক। আজ খাদি ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হয়ে উঠছে,খাদির জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে বিশ্বের অনেক জায়গায় খাদি তৈরি হচ্ছে। মেক্সিকোর ওহাকা এমন এক জায়গা। এই এলাকায় এমন কিছু গ্রাম আছে, যেখানকার গ্রামবাসীরা খাদি বোনার কাজ করছেন। এখন ওখানকার খাদি ওহাকা খাদি নামে খ্যাত। ওহাকায় কি করে খাদি পৌঁছে গেলো সে কাহিনিও কম আকর্ষণীয় নয়। মার্ক ব্রাউন নামে মেক্সিকোর এক তরুণ, গান্ধীর ওপর একটা ফিল্ম দেখেছিলেন। ব্রাউন সেই ফিল্ম দেখে বাপুর দর্শনে এতোটাই প্রভাবিত হলেন যে ভারতে বাপুর আশ্রমে এসে হাজির হলেন এবং বাপুর দর্শন অত্যন্ত গভীর ভাবে অনুধাবন করলেন। তাঁর উপলব্ধি হলো খাদি শুধুমাত্র একটা বস্ত্র নয় একটা জীবন পদ্ধতি! এর সঙ্গে গ্রামীণ অর্থনীতি ও স্বয়ম্ভরতার দর্শন জুড়ে আছে। ব্রাউন এর দ্বারা অত্যন্ত প্রভাবিত হলেন। সেখান থেকে ব্রাউন ঠিক করে নিলেন যে তিনি মেক্সিকো গিয়ে খাদির কাজ শুরু করবেন। তিনি মেক্সিকোর ওহোকায় গ্রামীণ অধিবাসীদের খাদির কাজ শেখালেন, তাঁদের প্রশিক্ষণ দিলেন এবং আজ ‘ওহোকা খাদি’ এক ব্র্যাণ্ড হয়ে উঠেছে। এই প্রজেক্টের ওয়েবসাইটে লেখা রয়েছে ‘ দ্য সিম্বল অফ ধর্ম ইন মোশন ’. এই ওয়েবসাইটে মার্ক ব্রাউনের খুব আকর্ষণীয় সাক্ষাৎকারও পাওয়া যাবে। তিনি বলছেন যে শুরুর দিকে মানুষ খাদি নিয়ে সন্দিহান ছিল, কিন্তু শেষে এতে তাদের আগ্রহ বাড়ল আর এর বাজার তৈরি হয়ে গেল। তিনি বলছেন যে এটা রামরাজ্যের সঙ্গে জুড়ে থাকা ভাবনা যে আপনি যখন মানুষের প্রয়োজন মেটান তখন মানুষও এসে আপনার সঙ্গে যুক্ত হয়।
বন্ধুরা, দিল্লীর কনট প্লেসে খাদি স্টোরে গান্ধী জয়ন্তীতে এবার এক দিনে এক কোটি টাকার বেশি কেনাকাটা হয়েছে। এইভাবে করোনার সময় খাদির তৈরি মাস্কও খুব পপুলার হচ্ছে। গোটা দেশে অনেক জায়গায় স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী এবং অন্যান্য সংস্থা খাদির মাস্ক তৈরি করছে। উত্তর প্রদেশের বারাবাঙ্কিতে একজন মহিলা রয়েছেন, সুমন দেবীজী। সুমন জী স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীতে নিজের সঙ্গী মহিলাদের সঙ্গে খাদির মাস্ক বানানো শুরু করেন। ধীরে-ধীরে ওঁর সঙ্গে অন্য মহিলারাও যুক্ত হতে থাকেন, এখন তাঁরাও একসঙ্গে হাজার-হাজার খাদি মাস্ক তৈরি করছেন। আমাদের স্থানীয় স্তরে উৎপাদিত পণ্যের মহত্ত্ব হচ্ছে যে সেগুলোর সঙ্গে প্রায়শই একটা গোটা দর্শন জুড়ে থাকে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, যখন আমাদের নিজের জিনিস নিয়ে গর্ব হয় তখন দুনিয়াতেও সেটা নিয়ে আগ্রহ বাড়ে। যেমন আমাদের অধ্যাত্ম, যোগ, আয়ুর্বেদ গোটা দুনিয়াকে আকৃষ্ট করেছে। আমাদের অনেক খেলাধুলোও দুনিয়াকে আকৃষ্ট করছে। আজকাল আমাদের মলখম্ব-ও অনেক দেশে প্রচলিত হচ্ছে। আমেরিকায় চিন্ময় পাটনকর আর প্রজ্ঞা পাটনকর যখন নিজেদের বাড়ি থেকেই মলখম্ব শেখানো শুরু করলেন তখন ওঁদের কোনো আন্দাজ ছিল না যে এতটা সাফল্য পাবেন তাঁরা। আমেরিকায় আজ অনেক জায়গায় মলখম্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চলছে। বড় সংখ্যায় আমেরিকার যুবক-যুবতীরা এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন, মলখম্ব শিখছেন। আজ জার্মানি, পোল্যাণ্ড, মালয়েশিয়া, এমন প্রায় কুড়িটা দেশেও মলখম্ব খুব জনপ্রিয় হচ্ছে। এখন তো এটার ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু করা হয়েছে, যেখানে অনেক দেশের প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। ভারতে তো প্রাচীন কাল থেকে এমন অনেক খেলাধুলো আছে যেগুলো আমাদের অন্তরে এক অসাধারণ বিকাশ ঘটায়। আমাদের মন, দেহর ভারসাম্যকে এক নতুন স্তরে নিয়ে যায়। কিন্তু সম্ভবতঃ আমাদের নতুন প্রজন্মের যুব বন্ধুরা মলখম্বের সঙ্গে ততটা পরিচিত নয়। আপনারা অবশ্যই ইন্টারনেটে এটা নিয়ে সার্চ করে দেখুন।
বন্ধুরা, আমাদের দেশে কতরকম মার্শাল আর্টস রয়েছে। আমি চাইব যে আমাদের যুব বন্ধুরা সে ব্যাপারে জানুক, সেগুলো শিখুক, আর সময়ের নিরিখে উদ্ভাবনও করুক। যখন জীবনে বড় চ্যালেঞ্জ থাকে না, তখন ব্যক্তিত্বের সর্বশ্রেষ্ঠ পরিচয়ও বাইরে বেরিয়ে আসে না। তাই সর্বদা নিজেকে নিজে চ্যালেঞ্জ করতে থাকুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, বলা হয় যে ‘লার্নিং ইজ গ্রোয়িং’. আজ মন কি বাতে আপনাদের পরিচয় এমন এক ব্যক্তির সঙ্গে করাব, যাঁর মধ্যে এক অদ্ভূত পাগলামি রয়েছে। এই পাগলামি অন্যদের সঙ্গে বই পড়া আর শেখার আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার। উনি পোন মোরিয়প্পপন। পোন মোরিয়প্পন তামিলনাড়ুর তুতুকুড়িতে থাকেন। তুতুকুড়ি পার্ল সিটি অর্থাৎ মুক্তার শহর হিসাবেও পরিচিত। এটা কোনো সময় পাণ্ডিয়ন সাম্রাজ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। এখানকার অধিবাসী আমার বন্ধু পোন মোরিয়প্পন চুল কাটার পেশায় যুক্ত আর একটা সেলুন চালান। খুব ছোট একটা সেলুন। উনি এক অদ্ভূত এবং প্রেরণাদায়ক কাজ করেছেন। নিজের সেলুনের একটা অংশকেই গ্রন্থাগার বানিয়ে দিয়েছেন। যদি কোনো ব্যক্তি সেলুনে নিজের সুযোগের অপেক্ষা করার সময় এখানে কিছু পড়েন, আর যা পড়লেন তা নিয়ে অল্প কিছু লেখেন, তাহলে পোন মোরিয়প্পন জী ওনাকে ছাড় দেন – মজার ব্যাপার না!
আসুন তুতুকুড়ি যাই, পোন মোরিয়প্পন-জীর সঙ্গে কথা বলি,
প্রধানমন্ত্রীঃ পোন মোরিয়প্পন-জী ভোরাকম্ম, কেমন আছেন আপনি?
পোন মোরিয়প্পনঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী-জী, নমস্কার।
প্রধানমন্ত্রীঃ নমস্কার, নমস্কার, আপনার এই যে গ্রন্থাগারের ভাবনা, সেটা কেমনভাবে এল?
পোন মেরিয়াপ্পানের উত্তরের অনুবাদঃ আমি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। তারপর আমার পারিবারিক পরিস্থিতির জন্য আর পড়া হয়নি। যখন আমি লেখাপড়া শেখা লোকজনদের দেখি, আমার তাদের থেকে নিজেকে ছোটো মনে হয়। তখন আমার মনে হয় যদি একটি গ্রন্থাগার গড়ে তুলি, তাহলে ভাল হয়, বহু মানুষের উপকার হতে পারে। এটাই আমার অনুপ্রেরণা ছিল।
প্রধানমন্ত্রী:- আপনার কোন বই সবচেয়ে পছন্দের?
পোন মেরিয়াপ্পানঃ আমার থিরুকুরুল খুব প্রিয়।
প্রধানমন্ত্রী:- আপনার সাথে কথা বলে আমার খুব ভালো লাগলো, আপনাকে অনেক শুভ কামনা জানাই।
পোন মেরিয়াপ্পানঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমারও আপনার সাথে কথা বলে ততটাই ভাল লাগছে।
প্রধানমন্ত্রী:- অনেক শুভ কামনা।
পোন মেরিয়াপ্পানঃ ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী জি।
প্রধানমন্ত্রী:- ধন্যবাদ।
আমি এতক্ষন পোন মেরিয়াপ্পানের সাথে কথা বলছিলাম। দেখুন কিভাবে উনি লোকের কেশসজ্জার পাশাপাশি তাঁদের জীবনকেও সাজিয়ে তোলার ব্যবস্থা করেছেন। থিরুকুরুলের জনপ্রিয়তার কথা শুনে খুব ভালো লাগলো। থিরুকুরলের জনপ্রিয়তা সম্বন্ধে আজকে আপনারা সবাই শুনলেন। আজ ভারতের সমস্ত ভাষায় থিরুকুরল পাওয়া যায়। সুযোগ পেলে অবশ্যই পড়া উচিত। জীবনের চলার পথে এটা একপ্রকারের পথপ্রদর্শক।
বন্ধুরা, আপনারা জেনে খুশি হবেন যে ভারতে এমন অনেক মানুষ আছেন যাঁরা জ্ঞানের প্রসারের জন্য নানাভাবে উদ্যোগী। এঁরা সবসময় চেষ্টা করেন যাতে সকলে লেখাপড়া করে। যেমন মধ্যপ্রদেশের সিংরোলির শিক্ষিকা উষা দুবে। তিনি নিজের স্কুটিকেও একটি মোবাইল লাইব্রেরীতে পরিণত করেছেন। উনি প্রতিদিন নিজের চলমান গ্রন্থাগারটি নিয়ে কোন গ্রামে হাজির হয়ে যান ও বাচ্চাদের পড়ান। বাচ্চারা ভালোবেসে ওনাকে বইদিদি বলে ডাকে। এই বছর আগস্ট মাসে, অরুণাচলে নিরজুলির রায়ো গ্রামে একটি স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর গ্রন্থাগার বানানো হয়েছে। এখানকার মীনা গুরুং ও দিবাং হোসাই যখন জানতে পারেন যে এখানে কোনো গ্রন্থাগার নেই, তখন তারা এর তহবিল তৈরির জন্য এগিয়ে আসেন। আপনারা জেনে আশ্চর্য হবেন এই লাইব্রেরীর জন্য সদস্য হবার কোন প্রয়োজন নেই। যে কেউ, দুই সপ্তাহের জন্য বই নিয়ে যেতে পারেন, শুধু পড়ে ফেরত দিলেই হবে। এই লাইব্রেরী সপ্তাহে সাত দিন, চব্বিশ ঘণ্টাই খোলা থাকে। স্থানীয় অভিভাবকরা খুব খুশি এই দেখে যে তাদের সন্তানেরা বই পড়ায় ব্যস্ত, বিশেষ করে যখন স্কুলগুলিও অনলাইন ক্লাস আরম্ভ করে দিয়েছে। চন্ডীগড়ে একটি অসরকারি সংগঠন চালান সন্দীপ কুমার। তিনিও একটি মিনি ভ্যানে ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার বানিয়েছেন। গরীব বাচ্চাদের জন্য এখানে বিনামূল্যে বই দেওয়া হয়। এছাড়াও, গুজরাটের ভাবনগরের দুটি সংস্থার ব্যাপারে জানি যারা খুব ভালো কাজ করছে। তাদের মধ্যে একটি হল 'বিকাশ বর্তুল ট্রাস্ট। এই সংস্থাটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন ছাত্রছাত্রীদের অনেক সাহায্য করে। এই ট্রাস্ট ১৯৭৫ থেকে কাজ করে চলেছে এবং তাঁরা পাঁচ হাজারটি বইয়ের পাশাপাশি ১৪০টিরও বেশী ম্যাগাজিন এখানে রেখেছেন। এমনই একটি সংস্থা হল "পুস্তক পরব"। এটি একটি উদ্ভাবনী প্রকল্প, যেটি সাহিত্যের বইয়ের সঙ্গে অন্যান্য বইও বিনামূল্যে দিয়ে থাকে। আধ্যাত্মিক বিষয়, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা এবং অন্য আরো অনেক বিষয় সম্পর্কিত বই এই লাইব্রেরীতে রয়েছে। যদি এই ধরনের আরো অন্যান্য প্রচেষ্টার সম্বন্ধে আপনারা অবহিত হন, তবে আমার অনুরোধ যে তা অবশ্যই সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাগ করে নেবেন। এই উদাহরণ বই পড়া বা গ্রন্থাগার খোলাতেই সীমাবদ্ধ নয় বরং এটা সেই নতুন ভারতের ভাবনারও প্রতীক যেখানে সমাজের বিকাশের জন্য প্রতিটি ক্ষেত্র ও প্রতিটি স্তরের মানুষ নতুন নতুন উদ্ভাবনী উপায় গ্রহণ করছেন। গীতায় বলা হয়েছে,
"ন হি জ্ঞানেন সদৃশং পবিত্র মিহ বিদ্যতে"
অর্থাৎ সংসারে জ্ঞানের সমান পবিত্র আর কিছুই নয়। আমি জ্ঞানের এই প্রসারকারী, এমন মহান প্রয়াসের উদ্যোগী সকল মহানুভবদের হার্দিক অভিনন্দন জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছুদিন পরই সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলজির জন্মজয়ন্তী ৩১শে অক্টোবর, আমরা সবাই "রাষ্ট্রীয় একতা দিবস" রূপে পালন করব। আগেও "মন কি বাত"- এ আমরা সর্দার প্যাটেলকে নিয়ে বিস্তারিত ভাবে কথা বলেছি। তাঁর বিরাট ব্যক্তিত্বের অনেক দিক নিয়ে আমরা চর্চা করেছি। খুব কম মানুষই পাওয়া যাবে যাদের ব্যক্তিত্বে একই সঙ্গে অনেকগুলি উপাদান বিদ্যমান – মতাদর্শগত গভীরতা, নৈতিক সাহস, রাজনৈতিক মেধা, কৃষিক্ষেত্রে গভীর জ্ঞান এবং রাষ্ট্রীয় একতার প্রতি সম্পূর্ণ আবেগ। আপনারা কি সর্দার প্যাটেল এর বিষয়ে একটা কথা জানেন যা ওঁর রসবোধের স্বভাবকে প্রতিফলিত করে? একটু সেই লৌহ পুরুষের ছবি কল্পনা করুন যিনি ভারতীয় রাজন্যবর্গের সঙ্গে কথা বলছিলেন, পূজনীয় বাপুর জনআন্দোলনের ব্যবস্থাপনা করছিলেন এবং একই সঙ্গে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন। আর এসবের মধ্যেও ওঁর সেন্স অফ হিউমার সম্পূর্ণ স্বমহিমায় থাকত। বাপু সরদার প্যাটেল সম্পর্কে বলেছিলেন, "তাঁর মজার কথাবার্তা আমাকে এত হাসাতো যে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যেত। এমনটা দিনে একবার নয় অনেকবার হতো।" এ থেকে আমাদের একটা বিষয় শেখার আছে। পরিস্থিতি যতই বিরূপ হোক না কেন নিজের রসবোধের স্বভাবকে বাঁচিয়ে রাখুন। তা আমাদের হালকা তো রাখবেই, এবং আমরা নিজেদের সমস্যার সমাধানও বার করতে পারবো। সর্দার সাহেব সেটাই তো করেছিলেন!
আমার প্রিয় দেশবাসী, সর্দার প্যাটেল নিজের সম্পূর্ণ জীবন দেশের সংহতির জন্য সমর্পণ করেছেন। উনি ভারতীয় জনমানসকে স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। উনি স্বাধীনতার সঙ্গে কৃষকদের বিষয়গুলিকে যুক্ত করার কাজ করেছেন। উনি ভারতীয় রাজন্যবর্গকে আমাদের রাষ্ট্রের সঙ্গে একাত্ম করার কাজ করেছেন। এটি প্রতিটি ভারতীয়ের মনে বিবিধতার মধ্যে ঐক্যের মন্ত্র জাগরূক করে তুলেছিল।
বন্ধুরা, আজ আমাদের কথা, আমাদের ব্যবহার, আমাদের কাজের মাধ্যমে প্রতি মুহূর্তে সেইসব বিষয়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে যা আমাদের "এক" করে। যা দেশের এক অংশে বসবাসকারী নাগরিকদের মনে অন্যত্র বসবাসকারী নাগরিকদের জন্য স্বাভাবিকতা ও একাত্মতার জন্ম দিতে পারে – আমাদের পূর্বপুরুষরা শতবর্ষ ধরে যে প্রয়াস নিরন্তর করে এসেছেন। এখন দেখুন, কেরলে জন্মগ্রহণ করে পূজনীয় আদি শঙ্করাচার্য জি ভারতের চারদিকে চারটি গুরুত্বপূর্ণ মঠ স্থাপন করেছিলেন। উত্তরে বদ্রিকাশ্রম, পূর্বে পুরী, দক্ষিণে শৃঙ্গেরি আর পশ্চিমে দ্বারকা। উনি শ্রীনগর যাত্রাও করেছিলেন, সেই কারণেই সেখানে একটি "শঙ্করাচার্য হিল" আছে। তীর্থযাত্রা নিজে থেকেই ভারতকে একসূত্রে গাঁথে। জ্যোতির্লিঙ্গ এবং শক্তিপীঠের শৃঙ্খল ভারতকে একসূত্রে বাঁধে। ত্রিপুরা থেকে শুরু করে গুজরাট পর্যন্ত, জম্মু-কশ্মীর থেকে শুরু করে তামিলনাড়ু পর্যন্ত আমাদের আস্থার কেন্দ্র আমাদের "এক" করে। ভক্তি আন্দোলন পুরো ভারতে এক বড় জনআন্দোলনে রূপান্তরিত হয়েছে, যা ভক্তির মাধ্যমে আমাদের ঐক্যবদ্ধ করেছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও সেই বিষয়গুলি এমনভাবে মিশে গেছে যেখানে একতার শক্তি রয়েছে। প্রতিটি অনুষ্ঠানের আগে বিভিন্ন নদীকে আবাহন জানানো হয়। সেখানে সুদূর উত্তরের সিন্ধু নদী থেকে শুরু করে দক্ষিণ ভারতের জীবনদায়িনী কাবেরী নদী পর্যন্ত শামিল হয়। প্রায়শই আমাদের এখানে লোকেরা স্নান করার সময় পবিত্র চিত্তে একতার মন্ত্রই উচ্চারণ করেন,
"গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরী সরস্বতী
নর্মদে সিন্ধু কাবেরী জলেস্মিন সন্নিধিং কুরু"।
একইভাবে শিখদের পবিত্র স্থানে "নান্দের সাহিব" এবং "পাটনা সাহিব" গুরুদ্বার শামিল হয়। আমাদের শিখ গুরুরাও নিজেদের জীবন ও সৎ কাজের মাধ্যমে একতার ভাবনাকে প্রগাঢ় করেছেন।
গত শতকে, আমাদের দেশে ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকারের মত মহান ব্যক্তিত্বরা ছিলেন, যাঁরা সংবিধানের মাধ্যমে আমাদের সবাইকে এক সূত্রে বেঁধেছিলেন।
বন্ধুরা,
ইউনিটি ইজ পাওয়ার, ইউনিটি ইজ স্ট্রেংথ,
ইউনিটি ইস প্রোগ্রেস, ইউনিটি ইজ এমপাওয়ারমেন্ট,
ইউনাইটেড উই উইল স্কেল নিউ হাইটস
এমনিতে এরকম অনেক শক্তি মজুত রয়েছে যারা নিরন্তর আমাদের মনে সন্দেহের বীজ বপন করে যাওয়ার চেষ্টা করে, দেশকে ভাগ করার প্রয়াসী। দেশও এই অশুভ শক্তিদের প্রত্যেক বার যোগ্য জবাব দিয়েছে। অনবরত আমাদের সৃজনশীলতার দ্বারা, প্রেমের দ্বারা, প্রত্যেক মুহূর্তের প্রচেষ্টার মাধ্যমে ছোট থেকে ছোট কাজে এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতের সুন্দর রঙগুলিকে সামনে আনতে হবে। একতার নতুন রঙ তাতে রাঙাতে হবে এবং প্রত্যেক নাগরিককেই রাঙাতে হবে। এই বিষয়ে, আমি, আপনাদের সবাইকে, একটি ওয়েবসাইট দেখতে অনুরোধ করছি- ekbharat.gov.in। এতে, জাতীয় সংহতির লক্ষ্যে আমাদের এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেকরকম প্রয়াস দেখা যাবে। এটার একটি আকর্ষণীয় বিভাগ আছে- আজকের বাক্য। এই সেকশনে আমরা, রোজ একটি বাক্যকে, বিভিন্ন ভাষায় কিভাবে বলে এটা শিখতে পারি। আপনিও এই ওয়েবসাইট-এ লিখুন, যেমন ধরুন, প্রত্যেক রাজ্য এবং সংস্কৃতিতে আলাদা-আলাদা খাদ্যাভ্যাস রয়েছে। এই রান্নাগুলি স্থানীয় নানা উপাদান, অর্থাৎ সবজি এবং মশলার সাহায্যে বানানো হয়। আমরা কি এই স্থানীয় খাবারের রন্ধন প্রণালীগুলি রেসিপিগুলি আঞ্চলিক উপাদানের নামের সঙ্গে, এক ভারত-শ্রেষ্ঠ ভারত ওয়েবসাইটে ভাগ করে নিতে পারি? একতা ও রোগ প্রতিরোধ-কে বাড়ানোর জন্য এর থেকে ভাল উপায় আর কি হতে পারে?
বন্ধুরা, আমি এই মাসের ৩১ তারিখে কেবাড়িয়ায় ঐতিহাসিক স্ট্যাচু অফ ইউনিটি-তে অনুষ্ঠিত হতে চলা প্রচুর আয়োজনে সামিল হওয়ার সুযোগ পাব। আপনারাও অবশ্যই এর সঙ্গে যুক্ত হবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ৩১ অক্টোবর আমরা বাল্মীকি জয়ন্তীও পালন করব, আমি মহর্ষি বাল্মীকিকে আমার প্রণাম জানাচ্ছি এবং এই বিশেষ উৎসব উপলক্ষে সকল দেশবাসীকে আমার আন্তরিক শুভকামনা জানাচ্ছি। মহর্ষি বাল্মীকির মহান চিন্তাগুলি কোটি-কোটি মানুষকে প্রেরণা যোগায়, শক্তি প্রদান করে। উনি কোটি-কোটি গরীব-দুঃখী এবং দলিতদের জন্য বিশাল বড় আশার আলো। ওঁদের ভেতরে উনি আশা এবং বিশ্বাসের সঞ্চার করেন। উনি বলেন- যে কোন মানুষের ইচ্ছাশক্তি যদি তার সঙ্গে থাকে, তাহলে সে যে কোন কাজ সহজেই করতে পারে। এই ইচ্ছাশক্তিই অনেক যুবক যুবতীকে অসাধারণ কাজ করার শক্তি দেয়। মহর্ষি বাল্মীকি আশাবাদী চিন্তার ওপর জোর দিয়েছেন, তাঁর কাছে সেবা এবং মানুষের গৌরবের স্থান সবার ওপর। মহর্ষি বাল্মীকির আচার, বিচার এবং আদর্শ আজ নতুন ভারত গড়ার আমাদের সঙ্কল্পকে প্রেরণা এবং দিশা দেখায়। আমরা মহর্ষি বাল্মীকির প্রতি সর্বদা কৃতজ্ঞ থাকব কারণ উনি পরবর্তী বহু প্রজন্মের পথপ্রদর্শনের জন্য রামায়ণের মত মহাকাব্য রচনা করেছিলেন। ৩১ অক্টোবর আমরা দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে হারিয়েছিলাম। আমি তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ কাশ্মীরের পুলওয়ামা পুরো দেশের পড়াশোনাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে। আজ যখনই দেশের বাচ্চারা নিজেদের হোম ওয়ার্ক করে, নোট বানায়, সেই সময় কোথাও-না-কোথাও এর পেছনে পুলওয়ামার বাসিন্দাদের করা কঠিন পরিশ্রম থাকে। কাশ্মীর উপত্যকা পুরো দেশের প্রায় ৯০% পেন্সিল আর শ্লেটে ব্যবহৃত কাঠের বারের চাহিদা পুরণ করে। আর এর একটা বড় ভাগ পুলওয়ামার থেকে আসে। এক সময়ে, আমরা বিদেশ থেকে পেন্সিলের জন্য কাঠ আমদানি করতাম, কিন্তু এখন আমাদের পুলওয়ামা এই ক্ষেত্রে, দেশকে আত্মনির্ভর করছে। বাস্তবে, পুলওয়ামার এই পেন্সিল, শ্লেটের চাহিদাগুলি কম করতে সাহায্য করছে। উপতক্যার চিনারের কাঠে উচ্চ আদ্রভাব এবং নমনীয়তা থাকে, যা পেন্সিল তৈরির ক্ষেত্রে সহায়ক। পুলওয়ামায়, উকখু কে পেন্সিল গ্রাম নামে ডাকা হয়। এখানে, পেন্সিল স্লেট নির্মাণের বেশ কিছু ইউনিট আছে, যারা রোজগার করতে সাহায্য করছে, এবং এগুলোতে প্রচুর সংখ্যায় মহিলারা কাজ করেন। বন্ধুরা, পুলওয়ামার এই নিজস্ব পরিচয় তখনই তৈরি হয়েছে যখন এখানকার লোকেরা কিছু নতুন করার জন্য তৈরি ছিলেন, কাজ করার জন্য ঝুকি নিয়েছিলেন এবং নিজেদের তাতে যুক্ত করেছিলেন। এরকম কর্মঠ মানুষদের মধ্যে একজন ‘মঞ্জুর আহমেদ আলাই’। আগে মঞ্জুর ভাই সামান্য এক কাঠ কাটার মজদুর ছিলেন। মঞ্জুর ভাই নতুন কিছু করতে চাইছিলেন, যাতে ওঁর পরবর্তী প্রজন্মকে দারিদ্র্যে বসবাস না করতে হয়। উনি পূর্বপুরুষের জমি বিক্রি করে দেন এবং আপেল উডেন বক্স অর্থাৎ আপেল রাখার কাঠের বাক্স তৈরি করার ইউনিট শুরু করেন। তারা নিজেদের ছোট ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন,তখন মঞ্জুর ভাই জানতে পারলেন যে পেন্সিল তৈরিতে পপ্লার উড অর্থাৎ চীনার গাছের কাঠের ব্যবহার শুরু করা হয়েছে। এই তথ্য জানার পর মঞ্জুর ভাই নিজের শিল্পোদ্যোগের পরিচায়ক রূপে কিছু বিখ্যাত পেন্সিল ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট কে পপ্লার কাঠের বাক্স সরবরাহ করতে শুরু করেন। মঞ্জুর- জীর এটা খুবই লাভজনক মনে হয় আর ওঁর আয়ও ভালো রকম বাড়তে শুরু করে। সময়ের সঙ্গে উনি এরপর পেন্সিল, শ্লেট তৈরির যন্ত্র নিয়ে নেন আর এরপর তিনি দেশের বড় বড় কোম্পানি কে পেন্সিল শ্লেট এর সাপ্লাই শুরু করে দেন। মঞ্জুর ভাইয়ের ব্যবসার টার্নওভার আজ কোটিতে পৌঁছে গেছে। আর উনি প্রায় 200 লোকের জীবিকা সংস্থানও করে দিয়েছেন। আজ মন কি বাত এর মাধ্যমে সমস্ত দেশবাসীর তরফে, আমি মঞ্জুর ভাই সহ, পুলওয়ামার পরিশ্রমী ভাই-বোনেদের আর ওঁর পরিবার-পরিজনদের প্রশংসা করছি- আপনারা সবাই, দেশের তরুণ প্রজন্মদের শিক্ষিত করার জন্য নিজেদের মূল্যবান অবদান রাখছেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, লকডাউন এর সময় প্রযুক্তি ভিত্তিক পরিষেবা সরবরাহর অনেক ব্যবহার হয়েছে আমাদের দেশে, আর এখন এমনটাও নেই যে শুধু বড় প্রযুক্তি আর লজিস্টিক সংস্থা-ই এটা করতে পারবে। ঝাড়খন্ডে এই কাজ মহিলাদের একটি স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী করে দেখিয়েছে। এই মহিলারা কৃষকদের ক্ষেত থেকে সবজি আর ফল নিয়ে সোজা ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে। এই মহিলারা ‘আজীবিকা ফার্ম ফ্রেশ” নামে একটি অ্যাপ তৈরি করেন যার মাধ্যমে মানুষ খুব সহজেই সবজি আনাতে পারেন। এই সমগ্র প্রচেষ্টায়, কৃষকরা নিজেদের সবজি ও ফলের জন্য ভালো দাম পান, আর মানুষেরা পেতে থাকেন টাটকা সবজি। ওখানে ‘আজীবিকা ফার্ম ফ্রেশ” অ্যাপ এর ধারণা খুব জনপ্রিয় হচ্ছে। লকডাউনে এরা ৫০ লক্ষ টাকারও বেশি ফল ও সবজি মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। বন্ধুরা, কৃষি ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হতে দেখে, আমাদের যুব সম্প্রদায় বহু সংখ্যায় এর সঙ্গে জুড়তে শুরু করেছেন। মধ্যপ্রদেশের বড়ওয়ানীর অতুল পাটীদার নিজের এলাকায় চার হাজার কৃষককে ডিজিটাল মাধ্যমে সংযুক্ত করেছেন। এই কৃষকরা অতুল পাটীদারের এই বৈদ্যুতিন প্ল্যাটফর্ম ফার্ম কার্ডে মাধ্যমে, চাষের জিনিস, যেমন, সার, বীজ, কীটনাশক, ফাংগিসাইড ইত্যাদির হোম ডেলিভারি পাচ্ছেন, অর্থাৎ, কৃষকদের দরকারি জিনিস, তাঁরা ঘরে বসেই পাচ্ছেন। এই ডিজিটাল প্লাটফর্মে আধুনিক কৃষি উপকরণও ভাড়ায় পাওয়া যায়। লকডাউন এর সময় এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এর মাধ্যমে কৃষকদের হাজার হাজার প্যাকেট ডেলিভারি করা হয়েছে, যাতে তুলো আর সবজির বীজও ছিল। অতুলজী আর ওঁর দলের সদস্যরা , কৃষকদের প্রযুক্তিগত দিক থেকেও সচেতন করছে, অনলাইন পেমেন্ট আর কেনাকাটা করতে শেখাচ্ছেন।
বন্ধুরা, এই সময়ে মহারাষ্ট্রের একটি ঘটনা আমার নজরে আসে। ওখানে একটি কৃষি পণ্য উৎপাদক সংস্থা , ভুট্টা চাষ করে এমন কৃষকদের থেকে ভুট্টা কেনে। এই সংস্থা কৃষকদের, দামের অতিরিক্ত বোনাসও দেয়। কৃষকদের একটু আশ্চর্য লাগায় তারা কোম্পানিকে এর কারণ জিজ্ঞেস করেন। কোম্পানি বলেন যে ভারত সরকার যে নতুন কৃষি আইন বানিয়েছে, তার জন্য কৃষকেরা ভারতের যেকোনো জায়গায় ফসল বিক্রি করতে পারছেন আর তারা ভাল দাম পাচ্ছেন। তাই তারা ভাবলেন যে এই বাড়তি লাভ কৃষক বন্ধুদের সঙ্গেও ভাগ করে নেওয়া উচিত, এতে ওঁদেরও অধিকার আছে। আর তাই তাদের বোনাস দেওয়া হয়েছে। বন্ধুরা, বোনাস এখন যদিও ছোট, কিন্তু এই সূচনা অনেক বড়। এর থেকে আমরা জানতে পারি যে, নতুন কৃষি আইন প্রাথমিক স্তরে, কিভাবে কৃষকদের সুবিধার্থে পরিবর্তন আনার সম্ভাবনায় পরিপূর্ণ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ মন কি বাত এ, দেশবাসীর অসাধারণ উপলব্ধি, আমাদের দেশ, আমাদের সংস্কৃতির ভিন্ন ভিন্ন দিক নিয়ে আপনাদের সবার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেলাম। আমাদের দেশ প্রতিভাবান মানুষে ভরপুর। যদি আপনিও এরকম মানুষদের কথা জানেন, তবে তাঁদের সম্পর্কে বলুন, লিখুন আর তাঁদের সাফল্য ভাগ করে নিন। আপনাকে আর আপনার পুরো পরিবারকে আসন্ন উৎসবের অনেক শুভেচ্ছা। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবেন আর উৎসবের সময় তো বিশেষভাবে মনে রাখবেন- মাস্ক পরতে হবে, হাত সাবান দিয়ে বারবার ধুতে হবে, দুই গজ এর দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
বন্ধুরা, আগামী মাসে আবার আপনাদের সঙ্গে 'মন কি বাত' হবে। অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। করোনার এই সময়ে, গোটা পৃথিবীতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আজ, একদিকে যখন এই সঙ্কটকালীন সময় পরস্পরের মধ্যে দুই গজের দূরত্ব বজায় রাখতে বাধ্য করছে, তখন অন্যদিকে এই সময়ই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং তাদের মানসিক দিক থেকে কাছে আনার কাজটিও করেছে। কিন্তু এই দীর্ঘ সময় ধরে, কিভাবে একসঙ্গে থাকছেন, কীভাবে প্রতিটি মুহূর্তকে আনন্দে ভরিয়ে তুলছেন, সুখী থাকছেন? অনেক পরিবারেই সমস্যা দেখা গেছে। যা আমাদের ঐতিহ্য ছিল, যে পারিবারিক সংস্কার দ্বারা আমরা চালিত হয়ে এসেছি এতকাল, তার কিছুটা অভাব অনুভূত হয়েছে।এমন অনেক পরিবার রয়েছে যেখানে এই সংস্কারগুলো সব নষ্ট হয়ে গেছে, এবং এর কারণে, এই সঙ্কটের সময়কালে একসঙ্গে বাস করা একটু মুশকিল হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কী ছিল জানেন? প্রতিটি পরিবারে কোনো না কোনও প্রবীণ ব্যক্তি, পরিবারের পুরোনো গল্প শোনান এবং অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে নতুন অনুপ্রেরণা, নতুন শক্তি যোগান। আমরা অবশ্যই উপলব্ধি করেছি, যে আমাদের পিতৃপুরুষেরা যে রীতিগুলো তৈরী করেছিলেন তা আজও কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন যখন সেই রীতিগুলো মানা হয়না তখন আমরা সেগুলোর কতটা অভাব বোধ করি। আমি যেমন বলছিলাম, তেমন একটি রীতি হলো গল্প বলা। বন্ধুরা, গল্প বলার ইতিহাস মানব সভ্যতার মতোই পুরানো। ‘হ্যোয়ার দেয়ার ইজ অ্যা সোল, দেয়ার ইজ অ্যা স্টোরি’౼ মানুষের মধ্যে যে সৃজনশীল এবং সংবেদনশীল দিক আছে গল্প তাকেই তুলে ধরে। গল্পের মধ্যে যে কি শক্তি আছে তা সবথেকে বেশি অনুভূত হয় যখন একজন মা তার ছোট বাচ্চাকে ঘুম পড়ানোর বা তাকে খাওয়ানোর সময় গল্প বলেন। আমি আমার জীবনে দীর্ঘদিন ধরে একজন পরিব্রাজক হিসাবে থেকেছি। ঘুরে বেড়ানোই আমার জীবন ছিল। প্রতিদিন নতুন নতুন গ্রাম, নতুন মানুষ, নতুন পরিবারের সঙ্গে আলাপ হতো। আমি যখন পরিবারগুলিতে যেতাম আমি অবশ্যই বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলতাম, এবং বলতাম, চলো তোমরা আমাকে একটা গল্প শোনাও। কিন্তু আমি আশ্চর্য হয়ে যেতাম যখন তারা আমায় বলতেন যে আঙ্কেল আমরা আপনাকে গল্প না, একটা চুটকি শোনাবো আর আপনিও চুটকি বলবেন। আমি তখন বুঝতে পারলাম যে গল্পের সঙ্গে তাদের পরিচয়ই ঘটেনি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, তাদের জীবন চুটকিতেই আটকে গেছে। বন্ধুরা, ভারতে গল্প বলার একটি সমৃদ্ধ ঐতিহ্য আছে। আমরা গর্বিত যে আমরা সেই দেশের বাসিন্দা যেখানে হিতোপদেশ এবং পঞ্চতন্ত্রের ঐতিহ্য রয়েছে। যেখানে, গল্পে পশুপাখি ও পরীদের একটি কাল্পনিক জগৎ তৈরী করা হয় যার মাধ্যমে আমরা বিবেক ও বুদ্ধিমত্তার পাঠ নিতে পারি খুব সহজেই। আমাদের এখানে গল্প বলার একটা সুপ্রাচীন পরম্পরা আছে। ধর্মীয় গল্প বলার এটি একটি প্রাচীন পদ্ধতি। আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরণের লোককাহিনী রয়েছে। তামিলনাড়ু এবং কেরালায় গল্প বলার একটি খুব আকর্ষণীয় পদ্ধতি রয়েছে। একে বলা হয় 'বিল্লুপাট'। এটিতে কাহিনী এবং সঙ্গীতের খুব আকর্ষণীয় মিশেল রয়েছে। ভারতে পুতুল নাচের ঐতিহ্যও রয়েছে। আজকাল বিজ্ঞান এবং কল্পবিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কিত গল্প বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। আমি দেখেছি বেশ কিছু মানুষ গল্প বলার শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিচ্ছেন। আমি গাথাস্টোরি ডট ইন-এর মতো ওয়েবসাইট-এর খবর জানি যা অমর ব্যাস এবং অন্যান্যরা মিলে চালাচ্ছেন। অমর ব্যাস, আই আই এম আহমেদাবাদ থেকে এমবিএ করার পরে বিদেশে চলে যান, তারপর আবার দেশে ফিরে আসেন। বর্তমানে তিনি বেঙ্গালুরু-তে আছেন এবং কিছুটা অবসর সময় বার করে গল্প বলার এই আকর্ষণীয় কাজটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এমন অনেক প্রচেষ্টা রয়েছে যা গ্রামীণ ভারতের গল্পগুলিকে জনপ্রিয় করে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছে। বৈশালী ব্যবহারে দেশপাণ্ডের মতো অনেক মানুষ আছেন যারা মারাঠি ভাষায় এটিকে জনপ্রিয় করছেন। চেন্নাইয়ের শ্রীবিদ্যা বির রাঘাভনও আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কিত গল্পের প্রচার ও প্রসারে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। তেমনি কথালয় এবং দ্য ইন্ডিয়ান স্টোরি টেলিং নেটওয়ার্ক নামের দুটি ওয়েবসাইটও এই ক্ষেত্রে দুর্দান্ত কাজ করছে। গীতা রমানুজন কথালয় ডট ওআরজিতে গল্পগুলোকে একত্রিত করেছেন, তেমনি দ্য ইন্ডিয়ান স্টোরি টেলিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমেও বিভিন্ন শহরের গল্পকারদের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করা হচ্ছে। বেঙ্গালুরুতে একজন বিক্রম শ্রীধর আছেন যিনি বাপু সম্পর্কিত গল্পগুলি নিয়ে খুব উৎসাহী। আরও অনেক লোক অবশ্যই কাজ করছেন এই ক্ষেত্রে – আপনারা অবশ্যই তাদের সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন। আজ আমাদের সঙ্গে বেঙ্গালুরু স্টোরি টেলিং সোসাইটির এক বোন অপর্ণা আথ্রেয়া এবং অন্যান্যরা আছেন। আসুন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলি এবং তাঁদের অভিজ্ঞতাগুলি জানি।
প্রধানমন্ত্রী: – হ্যালো
অপর্ণা: – নমস্কর শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রীজী | আপনি কেমন আছেন?
প্রধানমন্ত্রী: – আমি ভাল আছি। কেমন আছেন অপর্ণাজী?
অপর্ণা: খুব ভালো আছি স্যার। সর্বপ্রথমে আমি ব্যাঙ্গালোর স্টোরিটেলিং সোসাইটির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ দিতে চাই কারণ আপনি আমাদের মত শিল্পীদের এই মঞ্চে আহ্বান জানিয়েছেন এবং বার্তালাপ করছেন।
প্রধানমন্ত্রী: আর আমি শুনলাম আজ বোধহয় আপনার পুরো টিম আপনার সঙ্গে রয়েছে।
অপর্ণা: হ্যাঁ… একদম। একদম স্যার।
প্রধানমন্ত্রী: তো খুব ভালো হয় যদি আপনি আপনার টিমের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তা হলে 'মন কি বাত' এর শ্রোতারা আপনাদের এই এত বড় অভিযানের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে।
অপর্ণা: স্যার। আমি অপর্ণা আথ্রেয়া, আমি দুই সন্তানের মা, ভারতীয় বায়ুসেনার একজন অফিসারের স্ত্রী, এবং একজন প্যাশোনেট স্টোরিটেলার। গল্প বলা শুরু হয়েছিল ১৫ বছর আগে যখন আমি সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতাম। সেই সময় যখন আমি সিএসআর প্রকল্পে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করতে গিয়েছিলাম তখন হাজার হাজার বাচ্চাদের গল্পের মাধ্যমে শিক্ষাদানের সুযোগ পেয়েছিলাম এবং যে গল্প আমি ওদের শুনিয়েছিলাম সেটি আমি আমার ঠাকুমার থেকে শুনেছিলাম। কিন্তু সেই গল্প শোনার সময় বাচ্চাদের মধ্যে যে আনন্দ আমি দেখেছিলাম, কী বলব আপনাকে যে কত হাসি ছিল, কত আনন্দ ছিল। ওই সময়েই আমি স্থির করে নিয়েছিলাম যে, গল্প বলা আমার জীবনের একটি লক্ষ্য হবে স্যার।
প্রধানমন্ত্রী: আপনার এই টিমে ওখানে আর কারা রয়েছেন?
অপর্ণা: আমার সাথে আছে শৈলজা সম্পত।
শৈলজা: নমস্কার স্যার।
প্রধানমন্ত্রী: নমস্কার।
শৈলজা: আমি শৈলজা সম্পত কথা বলছি। আমি প্রথমে শিক্ষিকা ছিলাম। তারপরে যখন আমার সন্তানেরা বড় হয়ে যায় তখন আমি থিয়েটারে কাজ করা শুরু করি এবং শেষ পর্যন্ত গল্প বলার মধ্যেই সবথেকে বেশি তৃপ্তি খুঁজে পাই।
প্রধানমন্ত্রী: ধন্যবাদ।
শৈলজা: আমার সাথে সৌম্যা আছে।
সৌম্যা: নমস্কার স্যার।
প্রধানমন্ত্রী: নমস্কার ।
সৌম্যা: আমি হলাম সৌম্যা শ্রীনিবাসন। আমি একজন সাইকোলজিস্ট। যখন আমি বাচ্চা এবং বয়স্ক মানুষের সাথে কাজ করি , তখন গল্পের মাধ্যমে মানুষের নবরসকে জাগানোর চেষ্টা করি এবং তার সঙ্গে আলোচনাও করি। আমার লক্ষ্য হল – গল্প বলার নতুন নিয়মে মনের কষ্ট দূর করা।
অপর্ণা: নমস্কার স্যার।
প্রধানমন্ত্রী: নমস্কার ।
অপর্ণা: আমার নাম অপর্ণা জয়শঙ্কর। এমনিতে আমি সৌভাগ্যবতী কারণ আমি আমার দাদু,দিদিমা এবং ঠাকুমার সাথে এই দেশের বিভিন্ন জায়গায় বড় হয়েছি, সেই কারণে প্রতি রাতে রামায়ণ, পুরাণ এবং গীতার বিভিন্ন কাহিনী উত্তরাধিকার সূত্রে শুনে এসেছি এবং ব্যাঙ্গালোর স্টোরি টেলিং স্যোসাইটির মত একটি সংস্থা যখন আছে, তখন আমাকে গল্প বলিয়ে তো হতেই হত। আমার সঙ্গে রয়েছে আমার সহকারি লাবণ্য প্রসাদ।
প্রধানমন্ত্রী: লাবণ্য জী নমস্কার।
লাবণ্য: নমস্কার স্যার। আমি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার থেকে প্রফেশনাল স্টোরিটেলারে পরিবর্তিত হয়েছি । ঠাকুরদার কাছ থেকে গল্প শুনে আমি বড় হয়েছি। আমি প্রবীণ নাগরিকদের সঙ্গেই কাজ করি। আমার একটি বিশেষ প্রজেক্টের নাম 'রুটস', যেখানে আমি প্রবীণ ব্যক্তিদের নিজেদের জীবন কাহিনী লিপিবদ্ধ করতে সাহায্য করি তাদের পরিবারের জন্য।
প্রধানমন্ত্রী : লাবণ্য জি আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা জানাই। যেরকম আপনি বললেন, আমিও একবার মন কি বাতে সকলকে বলেছিলাম তারা যেন নিজেদের পরিবারের দাদু-দিদিমা, ঠাকুরদা-ঠাকুরমার শৈশবের গল্প জানতে চায়। এবং সেগুলিকে যেন টেপ করে নেয়, রেকর্ড করে নেয়। এটি খুবই কার্যকরী হবে। তবে আমার খুব ভালো লাগলো যে, আপনারা সকলে নিজের যা পরিচয় দিলেন, তার মধ্যেও আপনাদের শিল্প, আপনাদের কম্যুনিকেশন স্কিল প্রকাশ পেল এবং খুব অল্প কথায়, দারুণ ভাবে, আপনারা নিজেদের পরিচয় দিয়েছেন। সেজন্যও আমি আপনাদের অভিনন্দন জানাই।
লাবণ্য : ধন্যবাদ স্যার। ধন্যবাদ।
এখন আমাদের 'মন কি বাতের' যারা শ্রোতা, তারাও নিশ্চয়ই গল্প শুনতে চাইবেন? আমি কি আপনাদের অনুরোধ করতে পারি দু-একটা গল্প শোনানোর জন্য?
সমবেত কণ্ঠে : হ্যাঁ অবশ্যই। এ তো আমাদের সৌভাগ্য!
"আসুন, আসুন আমরা একজন রাজার গল্প শুনি। তাঁর নাম ছিল কৃষ্ণদেব রায় এবং তাঁর রাজ্যের নাম ছিল বিজয়নগর। এখন রাজা ছিলেন অত্যন্ত গুণবান । যদি তাঁর কোনো দোষের কথা বলতেই হয়, তাহলে সেটি ছিল অত্যধিক ভালোবাসা। প্রথমতঃ নিজের মন্ত্রী তেনালি রামের প্রতি এবং দ্বিতীয়তঃ, ভোজনের প্রতি। রাজামশাই প্রতিদিন মধ্যাহ্নভোজনে খুব আশা নিয়ে বসতেন এই ভেবে যে আজ নিশ্চয়ই ভালো কিছু তৈরি হয়েছে, আর প্রতিদিনই তাঁর বাবুর্চি তাঁকে সেই একঘেয়ে সব্জি খাওয়াত – ঝিঙে, লাউ, কুমড়ো, চালকুমড়ো …উফফ! এমনই একদিন খাওয়ার সময় রাজামশাই রাগ করে থালা ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বাবুর্চিকে আদেশ দিলেন, "হয় কাল অন্য কোন সুস্বাদু তরকারি বানাবে না হলে কাল আমি তোমায় শুলে চড়াবো।" বেচারা বাবুর্চি ভয় পেয়ে গেল। এখন নতুন সবজির জন্য সে কোথায় যাবে! তখন বাবুর্চি এক দৌড়ে সোজা তেনালী রামের কাছে গেল এবং তাঁকে পুরো ঘটনা বলল। শুনে তেনালী রাম বাবুর্চিকে উপায় বলে দিলেন। পরদিন দুপুরে রাজামশাই খেতে এলেন এবং বাবুর্চিকে ডাকলেন, "আজ নতুন সুস্বাদু কিছু তৈরি হয়েছে নাকি আমি শুল প্রস্তুত করব?" ভীত বাবুর্চি দ্রুত থালা সাজিয়ে দিলো আর রাজার জন্য গরম গরম খাবার পরিবেশন করলো। থালায় নতুন সবজি ছিল। রাজা উৎসাহিত হলেন এবং একটু সবজি চেখে দেখলেন। আরে বাহ! কি চমৎকার সবজি! না ঝিঙের মত পানসে, না কুমড়োর মত মিষ্টি! বাবুর্চি যে যে মসলা ভেজে-বেটে দিয়েছিল, তার সবটাই খুব সুন্দর ভাবে মিশে ছিল। আঙ্গুল চাটতে চাটতে তৃপ্ত রাজা বাবুর্চিকে ডাকলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, "এটা কোন সবজি? এর নাম কী?" যেমন তাকে শেখানো হয়েছিল বাবুর্চি তেমনি উত্তর দিল, "মহারাজ এটি মুকুটধারী বেগুন। প্রভু, ঠিক আপনার মতই এটিও সবজিদের রাজা, আর এ কারণেই বাকি সবজিরা বেগুনকে মুকুট পরিয়েছে।" রাজা খুশী হলেন এবং ঘোষণা করলেন, "আজ থেকে আমি এই মুকুটধারী বেগুনই খাব। আর শুধু আমি নই, আমার রাজ্যেও শুধু বেগুনই রান্না হবে, আর কোন সবজি রান্না হবে না।" রাজা এবং প্রজা উভয়েই খুশি ছিলেন। মানে প্রথম প্রথম তো সবাই খুশি ছিলেন এই ভেবে যে একটা নতুন সবজি পাওয়া গেছে। কিন্তু যত দিন যেতে লাগলো সেই খুশির সুর একটু কমতে লাগলো। এক বাড়িতে বেগুন ভর্তা তো আরেক বাড়িতে বেগুন ভাজা। এক জায়গায় বেগুনের সম্বর তো আরেক জায়গায় বেগুন ভাতে। বেচারা একই বেগুন আর কত রূপ ধারণ করতে পারে! ধীরে ধীরে রাজাও বিরক্ত হয়ে গেলেন। প্রতিদিন সেই এক বেগুন! আর একদিন এমন এল যে রাজা বাবুর্চিকে ডেকে খুব ধমক দিলেন, "তোমাকে কে বলেছে যে বেগুনের মাথায় মুকুট আছে? এই রাজ্যে এখন থেকে কেউ বেগুন খাবেনা। কাল থেকে অন্য যে কোন সবজি রান্না করবে কিন্তু বেগুন রান্না করবে না।" "যথা আজ্ঞা, মহারাজ" এই বলে বাবুর্চি সোজা গেল তেনালী রামের কাছে। তেনালী রামার পায়ে পড়ে তাঁকে বলল, "মন্ত্রী মশাই, ধন্যবাদ! আপনি আমার প্রাণ বাঁচিয়েছেন। আপনার পরামর্শের জন্যই এখন আমি যেকোনো সবজিই মহারাজকে খাওয়াতে পারবো।" তেনালি রাম হেসে বললেন, "সে কিসের মন্ত্রী, যে রাজাকে খুশি রাখতে পারেনা!" আর এভাবেই রাজা কৃষ্ণদেব রায় আর মন্ত্রী তেনালী রামের কাহিনী তৈরি হতে থেকেছে এবং মানুষ শুনতে থেকেছেন। ধন্যবাদ।
প্রধানমন্ত্রী: আপনার কথায় এতটা চমৎকার বাচিকধারা ছিল, এতটা সুক্ষ্ণভাবে আপনি বিষয়টাকে ধরেছেন যে আমার মনে হয় বাচ্চা, বড় যেই শুনবে অনেক কিছুই মনে রাখতে পারবে। অত্যন্ত চমৎকার ভঙ্গিতে আপনি বলেছেন আর একটা বিশেষ কোইন্সিডেন্স হল, দেশে পোষণ মাস চলছে, আর আপনার কথা খাওয়া-দাওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। আর আমি অবশ্যই আপনার ও আপনাদের মত অনেক স্টোরিটেলার যাঁরা আছেন, তাঁদের একটা বিষয় বলব। আমাদের দেশের নবীন প্রজন্মকে কীভাবে আমাদের মহাপুরুষ, মহীয়সী মা বোনদের সম্পর্কে অবহিত করা যায়, গল্পের মাধ্যমে কীভাবে তাদের সাথে যুক্ত করা যায়, আমরা গল্প ও গল্প বলাকে কীভাবে আরো বেশি প্রচার করতে পারি, জনপ্রিয় করতে পারি তা আমাদের ভাবতে হবে। আর প্রতিটি ঘরে ভালো গল্প বলা, ভালো গল্প বাচ্চাদের শোনানো এটি জনজীবনের খুব বড় সম্পদ। এই পরিবেশ কিভাবে তৈরি করা যায় সে লক্ষ্যে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে মিলে কাজ করতে হবে। আমার খুব ভালো লাগলো আপনাদের সঙ্গে কথা বলে আর আমি আপনাদের সবাইকে অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।ধন্যবাদ।
সমবেত কণ্ঠ: ধন্যবাদ স্যার।
গল্পের মাধ্যমে সংস্কারের বহতা নদীকে প্রবহমান রাখা এই বোনেদের কথা আমরা শুনলাম। আমি যখন ওঁদের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলাম তা এক দীর্ঘ বাক্যালাপ হয়েছিল। আমার মনে হল "মন কি বাত"-এর তো সময় সীমিত, তাই তাঁদের সঙ্গে সম্পূর্ণ কথোপকথন আমি নরেন্দ্র মোদি অ্যাপে আপলোড করব। সম্পুর্ণটা আপনারা অবশ্যই শুনবেন। এখন "মন কি বাত"-এ তো তার খুব ছোট্ট একটা অংশ আমি আপনাদের সামনে পেশ করলাম। আমি অবশ্যই আপনাদের কাছে অনুরোধ করবো পরিবারের সদস্যরা একজোট হলে অবশ্যই গল্প বলার জন্য কিছুটা সময় বার করুন। আর এটাও করতে পারেন যে পরিবারের প্রতিটি সদস্য প্রত্যেক সপ্তাহের জন্য একটি বিষয় স্থির করুন, যেমন ধরুন – করুণা, সংবেদনশীলতা, পরাক্রম, ত্যাগ, শৌর্য – যেকোনো একটি আবেগ। এবার পরিবারের সব সদস্য ওই সপ্তাহে সেই একটি বিষয়ের ওপরই গল্প খুঁজবেন এবং পরিবারের সবাই মিলে একেক জন একেকটি গল্প বলবেন। আপনারা দেখবেন পরিবারের মধ্যে কি বিরাট এক সম্পদের সন্ধান পাবেন! রিসার্চের কত বড় কাজ হবে, প্রত্যেকে কত আনন্দ পাবেন এবং পরিবারের মধ্যে এক নতুন প্রাণ, এক নতুন উদ্দীপনা সঞ্চার হবে। একইভাবে আমরা আরেকটি কাজও করতে পারি। যাঁরা গল্প বলেন, তাঁদের সবাইকে আমি একটা অনুরোধ করব। আমরা স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপন করতে চলেছি। আমাদের পরাধীনতার সময়কালের যা কিছু প্রেরণাদায়ক ঘটনা তাকে কি আমরা গল্পের মাধ্যমে প্রচার করতে পারি? বিশেষত, ১৮৫৭ থেকে ১৯৪৭ সালের মধ্যে ঘটে যাওয়া ছোট, বড় সকল ঘটনার সঙ্গেই গল্প বলার মাধ্যমে আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে পরিচিত করানো যেতে পারে। আমার বিশ্বাস আপনারা অবশ্যই এই কাজ করবেন। গল্পের আকারে কোন কিছু ব্যক্ত করার এই ধারা আরো মজবুত হোক, আরো বেশি করে প্রচারিত হোক এবং আরো সাবলীল হোক। এর জন্য আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রয়াস ভীষণ জরুরী।
আমার প্রিয় দেশবাসী, গল্প শোনার এই পৃথিবী থেকে এখন আমরা সাত সমুদ্র পার করে এগিয়ে যাব, একজনের কথা শুনে নেওয়া যাক।
"নমস্কার, ভাই ও বোনেরা, আমার নাম সেদু দেম্বলে, আমি পশ্চিম আফ্রিকার একটি দেশ মালিতে থাকি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতে ভ্রমণ করাকালীন আমি ওখানকার সর্ব বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব কুম্ভ মেলায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। আমার কাছে এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয়। এই কুম্ভ মেলায় অংশগ্রহণ করতে পেরে আমার খুব ভাল লেগেছিল এবং ভারতের সংস্কৃতি দেখে আমি অনেক কিছু শিখতে পেরেছিলাম। আমি অনুরোধ করতে চাই যে, আমাদের আবার ভারত ভ্রমণের সুযোগ দেওয়া হোক যাতে আমরা ভারতবর্ষ সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানতে পারি, শিখতে পারি, নমস্কার"।
প্রধানমন্ত্রী: দারুণ, না! ইনি মালি’র সেদূ দেম্বলে। মালি, ভারত থেকে অনেক দূরে পশ্চিম আফ্রিকায় অবস্থিত একটি সুবিশাল, সম্পূর্ণরূপে স্থলবেষ্টিত দেশ। সেদূ দেম্বলে, মালির একটি শহর কিতার একটি পাবলিক স্কুলের শিক্ষক। উনি বাচ্চাদের ইংরেজি, সঙ্গীত, ছবি আঁকা শেখান। কিন্তু ওঁর আরও একটি পরিচয় আছে। কিন্তু ওঁর আর একটা পরিচয় আছে। ওঁকে মালির লোকের ‘হিন্দুস্তানের বাবু’ বলে ডাকে। নিজের এই পরিচয়ের জন্য উনি গর্ব বোধ করেন। প্রত্যেক রবিবার দুপুরের পরে উনি মালিতে এক ঘন্টার একটি বেতার অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, যার নাম ইন্ডিয়ান ফ্রিকোয়েন্সি অন বলিউড সংস। গত ২৩ বছর ধরে উনি এই অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছেন। এই অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে উনি ফরাসি ভাষার সঙ্গে সঙ্গে মালির একটি স্থানীয় ভাষা 'বম্বারা'তেও ধারাভাষ্য করেন এবং যথেষ্ট নাটকীয় ভাবে অনুষ্ঠানটি করেন। ভারতবর্ষের প্রতি ওঁর মনে গভীর ভালোবাসা রয়েছে। ভারতের সঙ্গে ওঁর অবিচ্ছেদ্য যোগের আরো একটি অন্যতম কারণ হলো, ওঁর জন্ম হয় ১৫ই আগস্ট। সেদূজি এখন প্রতি রবিবার রাত ন'টার সময় দু’ ঘন্টার আরো একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করা শুরু করেছেন, এই অনুষ্ঠানে উনি বলিউডের একটি সিনেমার গল্প ফরাসি এবং বম্বারা ভাষায় শোনান। কখনো কখনো সেই সব সিনেমার কিছু আবেগপ্রবণ দৃশ্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে উনি এবং ওঁর শ্রোতারা একসঙ্গে কেঁদে ফেলেন। সেদূজিকে ওঁর বাবাই ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিলেন। ওঁর বাবা চলচ্চিত্র এবং থিয়েটার জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং সেখানে ভারতীয় সিনেমাও দেখানো হতো। এই ১৫ই আগস্ট উনি হিন্দি ভাষায় একটি ভিডিওর মাধ্যমে ভারতবাসীকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। এখন ওঁর সন্তানেরা খুব সাবলীল ভাবে ভারতের জাতীয় সংগীত গাইতে পারে। আপনারা অবশ্যই এই দুটি ভিডিও দেখবেন এবং ওঁদের ভারতের প্রতি ভালোবাসা অনুভব করবেন। সেদূ জি যখন কুম্ভ মেলায় একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এসেছিলেন, তখন আমার সঙ্গে ওঁদের দেখা হয়। ভারতের জন্য সেঁদূজির এই উচ্ছ্বাস, স্নেহ, ভালোবাসা আমাদের সকলের জন্য গর্বের বিষয়।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের এখানে বলা হয়, যাঁর শেকড় মাটির যত গভীরে থাকে, বিশাল ঝড়েও তাঁর ভেঙ্গে পড়ার ভয় থাকে না। করোনার এই সময়ে আমাদের কৃষি ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের, কৃষকদের জীবন আমাদের কাছে উদাহরণস্বরূপ। সংকটের এই সময়ে আমাদের কৃষি ক্ষেত্র তার শক্তির পরিচয় দিয়েছে। বন্ধুরা, দেশের কৃষি পরিষেবা, আমাদের কৃষক বন্ধুরা, আমাদের গ্রাম আত্মনির্ভর ভারতের প্রধান শক্তি। এদের ক্ষমতায়নই মাধ্যমেই আত্মনির্ভর ভারতের ভীত। এঁরা শক্তিশালী হলে ভারতের ভীত মজবুত হবে। বিগত কিছু সময় ধরেই এই সব ক্ষেত্র তার নানা রকম সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্তি করেছে, বহু প্রচলিত ধ্যানধারণা ভাঙার চেষ্টা করেছে। আমায় অনেক কৃষকেরা চিঠি লেখেন, অনেক কৃষক সংগঠনের সঙ্গে আমার কথাবার্তা হয়, তারা বলেন কৃষি ক্ষেত্রে অনেক নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে , চাষের জমিতেও নানা পরিবর্তন আসছে। আমি ওঁদের কাছ থেকে যা শুনেছি, অন্যদের কাছ থেকেও যা শুনেছি, আজ খুব ইচ্ছে করছে এই 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানে কৃষকদের সেইসব কিছু কথা আপনাদেরও শোনাচ্ছি। হরিয়ানার সোনিপত জেলায় আমাদের এক কৃষক বন্ধু থাকেন যার নাম শ্রী কংয়ার চৌহান। উনি বলেছেন কীভাবে মান্ডির বাইরে সবজি ও ফল বিক্রি করার জন্য ওঁকে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো। যখন উনি মান্ডির বাইরে ফল ও সবজি বিক্রি করতে গেছেন, অনেক বারই ওঁর ফল, সবজী, এমনকি গাড়ীও আটক হয়ে যেত। কিন্তু ২০১৪ সালে ফল ও সবজি কে এপিএমসি আইনের আওতার বাইরে করে দেওয়া হল। এতে ওঁর মত অনেক কৃষকেরা লাভবান হলেন। চার বছর আগে উনি এবং ওই গ্রামের আরো কিছু কৃষক মিলে একটি কৃষি উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করেন। এখন গ্রামে কৃষকেরা সুইট কর্ন এবং বেবি কর্নের চাষ করেন। ওঁদের উৎপাদিত ফসল এখন দিল্লীর আজাদপুর মান্ডি, বড় বড় রিটেল চেন এবং ফাইভ স্টার হোটেলেও সরাসরি পৌঁছে যায়। এখন গ্রামের এই কৃষকেরা সুইট কর্ন এবং বেবিকর্নের চাষ করে একর প্রতি আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা বছরে আয় করেন। শুধু তাই নয়, এই গ্রামের প্রায় ৬০ জনেরও বেশি কৃষক নেট হাউস তৈরি করে, পলি হাউস তৈরি করে টমেটো, শসা, ক্যাপসিকাম এসব বিভিন্ন ধরণের ফসলের উৎপাদন করে প্রতিবছর একর পিছু ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা রোজগার করেন। আপনারা জানেন, এই কৃষকদের কাছে এমন কি আলাদা আছে!
নিজের ফল- সবজিগুলো যেকোনো জায়গার যে কোনো লোককে বিক্রি করার ক্ষমতা আছে, আর এই ক্ষমতাই তাঁদের প্রগতির ভিত্তি। আজ সেই সামর্থ্য দেশের অন্যান্য কৃষকেরাও লাভ করেছেন। শুধু ফল বা শাকসব্জি-ই নয়, নিজেদের খেতে কৃষকেরা যা যা উৎপাদন করছেন- ধান, গম, সরষে, আখ – সেই সমস্ত কিছুই নিজেদের ইচ্ছামতো, যেখানে ভালো দাম মিলবে, সেখানে বিক্রি করার স্বাধীনতা মিলেছে তাঁদের।
বন্ধুরা, তিন-চার বছর আগেই মহারাষ্ট্রে ফল ও শাক-সব্জিকে এপিএমসি-এর আওতার বাইরে নিয়ে আসা হয়েছিল। এই পরিবর্তনের ফলে ওই রাজ্যের ফল ও সব্জি কৃষকদের অবস্থা কিভাবে পাল্টে গিয়েছিল, তার-ই উদাহরণ হ'ল ‘শ্রী স্বামী সমর্থ ফার্মার্স প্রডিউসার কোম্পানি লিমিটেড’। এটি কৃষক বন্ধুদের একটি গোষ্ঠী। পুনে এবং মুম্বাইতে কৃষকরাই 'সাপ্তাহিক বাজার' পরিচালনা করছেন। এই বাজারগুলিতে প্রায় সত্তরটি গ্রামের সাড়ে চার হাজার কৃষকের উৎপাদন সরাসরি বিক্রি করা হয়ে থাকে, মাঝখানে কোন দালাল নেই। গ্রামের যুবকেরা চাষের কাজ এবং সরাসরি ফসল বেচার বাজারে অংশগ্রহণ করছেন। আর তার সুফল ভোগ করছেন কৃষক এবং গ্রামের তরুণেরা, তাঁদের উপার্জন বৃদ্ধির মাধ্যমে। আরেকটি উদাহরণ দেবো। তামিলনাড়ুর থৈনি জেলায় রয়েছে ‘তামিলনাড়ু কলা-চাষী উৎপাদন কোম্পানী’। নামে কোম্পানি হলেও আসলে এটি কৃষকদের একটি গোষ্ঠী। এঁদের ব্যবস্থাটি খুব নমনীয় । কৃষক বন্ধুরা পাঁচ-ছ' বছর আগে এটি স্থাপন করেন। সাম্প্রতিক লকডাউন এর সময় এই কোম্পানি আশপাশের গ্রামগুলির কৃষকদের থেকে শতাধিক মেট্রিক টন শাকসব্জি এবং ফল, কলা কিনে নেয়। আর চেন্নাই শহরে শাকসব্জির কম্বো কিট বিতরণ করে। একবার ভাবুন, এইভাবে কত তরুণের উপার্জনের পথ প্রশস্ত হলো। মজার ব্যাপার , মধ্যস্বত্বভোগী কোন ফ'ড়ে বা দালাল না থাকার ফলে, একদিকে কৃষক এবং অন্যদিকে ক্রেতা- উভয়েই লাভবান হয়েছেন। এরকমই একটি কৃষক গোষ্ঠী রয়েছে লখ্নৌ শহরে। নাম "ইরাদা ফার্মার প্রডিউসার"। তাঁরাও লকডাউন চলাকালীন কৃষকদের থেকে শাকসব্জি ও ফল সরাসরি কিনে লখ্নৌ-এর বাজারে সরাসরি বেচে দেন। এইভাবে দালালদের হাত থেকে কৃষকদের মুক্তি ঘটেছে এবং তাঁরা তাঁদের ফসলের ন্যায্য দাম পেয়েছেন।
বন্ধুরা, গুজরাতের বনসকান্থা জেলার রামপুরা গ্রামে ইসমাইল ভাই নামে এক কৃষকবন্ধু বাস করেন। তাঁর কাহিনী-ও খুবই চমকপ্রদ। তিনি চাষবাস করতে চাইতেন , কিন্তু তাঁর এই সিদ্ধান্ত তাঁর পরিবারের বিশেষ মনঃপুত হচ্ছিল না। কারণ ইসমাইল ভাইয়ের বাবা চাষবাস করে কোনোদিনই লাভের মুখ দেখতে পাননি। তাই তিনি ছেলেকে চাষবাস করতে নিষেধ করতেন। পরিবারের এবং বাবার প্রচুর বারণ সত্ত্বেও ইসমাইল ভাই চাষের কাজ-ই করবেন বলে মনস্থ করেন। তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন যে, 'কৃষি কাজ করা অলাভজনক'- এই চিন্তাধারা ,এবং নিজের বাস্তব অবস্থা – দুটিতেই পরিবর্তন আনবেন। তিনি চাষ শুরু করেন কিন্তু প্রগতিশীল এবং উদ্ভাবনী পন্থায়। “ ড্রিপ ইরিগেশন” পদ্ধতির সাহায্যে আলু চাষ শুরু করেন ইসমাইল ভাই। আর আজ ওঁর উৎপাদিত আলুর এক বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে। উনি যে আলু চাষ করছেন তার গুণগতমান খুব উন্নত। ইসমাইল ভাই এই আলু সরাসরি বড় কোম্পানিগুলিকে বিক্রি করেন, মধ্যস্বত্বভোগীদের উৎপাত না থাকায়, ইসমাইল ভাই প্রচুর লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন। এখন তো উনি নিজের বাবার সব ধার শোধ করে দিয়েছেন। আর সব থেকে বড় কথা কি জানেন? ইসমাইল ভাই౼ তিনি নিজের এলাকার শত শত কৃষক- বন্ধুদেরকে সাহায্য-ও ক'রে থাকেন। তাঁদেরও জীবন বদলে যাচ্ছে।
বন্ধুরা, আমরা এই সময়ে কৃষিক্ষেত্রকে যত বেশী আধুনিক বিকল্প দেবো, ততই তার উন্নতি ঘটবে। নতুন নতুন পদ্ধতি আসবে, উদ্ভাবন ঘটবে। মণিপুরের বিজয়শান্তি এ ধরনের একটি নতুন উদ্ভাবনের ফলে খ্যাতি লাভ করেছেন। তিনি পদ্মফুলের ডাটি থেকে সুতো বানানোর একটি নতুন উদ্যোগ চালু করেছেন। তাঁর এই উদ্ভাবনের ফলে পদ্ম চাষ আর বস্ত্রশিল্পের মধ্যে একটা মেলবন্ধন ঘটেছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি এবার আপনাদের অতীতে নিয়ে যাবো। ১৯১৯ সাল, অর্থাৎ ১০১ বছর আগের কথা। সে বছর জালিয়ানওয়ালাবাগে নির্দোষ ভারতবাসীর গণহত্যা ঘটিয়েছিল ইংরেজ শাসক-শক্তি। এই গণহত্যার কিছুদিন বাদে বারো বছর বয়সী হাসিখুশি, চঞ্চল স্বভাবের এক বালক ওখানে গিয়েছিল। কিন্তু গিয়ে সে যা দেখল তা তার কল্পনার বাইরে ছিল। সেখানে গিয়ে ছেলেটি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল এ কথা ভেবে যে, মানুষ একে অন্যের প্রতি এত নির্মম কিভাবে হতে পারে। ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে ছেলেটির মনে ক্রোধের আগুন জ্বলে ওঠে এবং সে তার বিরুদ্ধে আজীবন লড়াই করার শপথ নেয়। আপনারা কি বুঝতে পেরেছেন আমি কার কথা বলছি? হ্যাঁ, আমি বীর শহীদ ভগৎ সিং-এর কথাই বলছি। আগামীকাল অর্থাৎ আটাশে সেপ্টেম্বর শহীদ ভগৎ সিং-এর জন্মজয়ন্তী পালিত হবে। আমি সমস্ত দেশবাসীর সাথে বীরত্ব ও সাহসের এই মূর্ত প্রতীক ভগত সিং-কে প্রণাম জানাই। আপনারা ভাবতে পারেন? যে ইংরেজ শাসকশক্তি সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিল দুনিয়ার এক বিশাল অংশে। আর তাই বলা হতো, ইংরেজ সাম্রাজ্যে কখনো সূর্য অস্ত যায় না। অথচ মাত্র তেইশ বছরের এক যুবকের বীরত্ব ইংরেজ শাসকদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল। কেবলমাত্র সাহসী নন, শহীদ ভগৎ সিং ছিলেন বিদ্বান এবং চিন্তাশীল মানুষ-ও। শহীদ ভগৎ সিং এবং তাঁর বিপ্লবী সাথীরা নিজেদের প্রাণের মায়া তুচ্ছ ক'রে এমন এক দুঃসাহসিক কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, যার প্রভাব দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্ষেত্রে অপরিসীম। ভগৎ সিংয়ের জীবনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তিনি দলবদ্ধ কাজের মর্ম গভীরভাবে উপলব্ধি করতেন। আর তাই, লালা লাজপত রায়ের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধাই হোক বা চন্দ্রশেখর আজাদ, সুখদেব, রাজগুরু প্রমূখ বিপ্লবীদের সঙ্গে তাঁর সংযোগ হোক, এই নিয়ে তাঁর কোনো ব্যক্তিগত শ্লাঘা ছিল না। তাঁর জীবন এবং আত্মবলিদান – দুইয়েরই একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ভারতবর্ষকে অন্যায় ইংরেজ শাসনের নাগপাশ থেকে মুক্তি দেওয়া।
আমি নমো অ্যাপ-এ হায়দ্রাবাদের অজয় এস জী'র একটা কমেন্ট পড়লাম। অজয়জী লিখেছেন – আজকের যুবারা কিভাবে ভগৎ সিংহের মতন তৈরি হতে পারেন? দেখুন, আমরা ভগৎ সিংহের মত হতে পারি বা নাই পারি, কিন্তু ভগৎ সিংহের মত দেশপ্রেম, দেশের জন্য কিছু করার আবেগ আমাদের সবার মনের মধ্যে যেন অবশ্যই থাকে। শহীদ ভগৎ সিংয়ের প্রতি এটাই হবে আমাদের সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাঞ্জলি। চার বছর আগে, প্রায় এই সময়ে, সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের দরুন বিশ্ব আমাদের সৈন্য বাহিনীর সাহস, শৌর্য এবং নির্ভীকতার পরিচয় পেয়েছিল। আমাদের বাহাদুর সৈনিকদের একটাই উদ্দেশ্য এবং একটাই লক্ষ্য ছিল, যেকোনো মূল্যে, ভারত মায়ের গৌরব এবং সম্মান রক্ষা করার। তাঁরা নিজেদের জীবনের এতোটুকু পরোয়া করেননি। তাঁরা নিজেদের কর্তব্য পথে এগিয়ে গিয়েছিলেন এবং আমরা সবাই দেখেছি কিভাবে তাঁরা বিজয়ী হলেন। ভারত মায়ের গৌরব বৃদ্ধি করলেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আগামী কয়েকদিনে আমরা সবাই বেশ কিছু মনীষীদের স্মরণ করব, যাঁদের ভারত নির্মাণের ক্ষেত্রে অবর্ণনীয় অবদান রয়েছে। দোসরা অক্টোবর আমাদের সকলের জন্য এক পবিত্র এবং প্রেরণাদায়ী দিন। এই দিনে মা ভারতীর দুই সুসন্তান, মহাত্মা গান্ধী এবং লাল বাহাদুর শাস্ত্রীকে স্মরণ করার দিন।
পূজনীয় বাপুর বিচার এবং আদর্শ আজ আগের থেকেও বেশি প্রাসঙ্গিক, মহাত্মা গান্ধীর যে অর্থনৈতিক চিন্তা ভাবনা ছিল, যদি তার মর্মকে ধরা যেত, বোঝা যেত, সেই রাস্তায় চলা যেত, তাহলে আজ আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের কোন দরকার পড়তো না। গান্ধীজীর অর্থনৈতিক চিন্তা ভাবনার মধ্যে ভারতের প্রতিটি স্নায়ুর উপলব্ধি ছিল, ভারতের সুগন্ধ ছিল। পূজনীয় বাপুর জীবন আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আমাদের প্রতিটি কাজ যেন এইভাবে করি যাতে প্রতিটি গরিব থেকে গরিব ব্যক্তির যেন মঙ্গল সুনিশ্চিত হয় । অপরদিকে শাস্ত্রীজীর জীবন আমাদের নম্রতা এবং সরলতার বার্তা পৌঁছে দেয়। ১১ ই অক্টোবরের দিনটিও আমাদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সেদিন আমাদের ভারতরত্ন লোকনায়ক জয়প্রকাশজীকে তাঁর জন্ম জয়ন্তীতে স্মরণ করে থাকি। জে.পি. আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। আমরা ভারতরত্ন নানাজি দেশমুখ কেও স্মরণ করি, যার জন্ম জয়ন্তী ও সেই ১১ তারিখেই। নানাজি দেশমুখ জয়প্রকাশ নারায়ণজীর ভীষণ ঘনিষ্ঠ ছিলেন। যখন জে.পি. দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন, তখন পাটনায় তাঁর উপর প্রাণঘাতী হামলা করা হয়েছিল। সেই সময় নানাজি দেশমুখ সেই আঘাত নিজের ওপর নিয়ে নিলেন। যদিও এই হামলায় নানাজী বেশ আহত হয়েছিলেন, তবু তিনি জে.পি.'র জীবন রক্ষা করতে সফল হয়েছিলেন। এই ১২ ই অক্টোবর রাজমাতা বিজয় রাজে সিন্ধিয়াজীর জন্মজয়ন্তী, তাঁর পুরো জীবন মানুষের সেবায় নিবেদিত করেছিলেন। তিনি একটি রাজপরিবারের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, তাঁর কাছে সম্পত্তি, ক্ষমতা এবং অন্যান্য সংস্থানগুলির কোনও ঘাটতি ছিল না। তবুও তিনি তাঁর সারা জীবন, একজন মায়ের মত, সন্তান স্নেহে মানুষের সেবায় কাটিয়ে দিয়েছেন। উদার মনের মানুষ ছিলেন তিনি। এই ১২ ই অক্টোবর তাঁর জন্মশতবর্ষ উদযাপনের সমাপ্তির দিন, তাই আজ যখন আমি রাজ মাতাজীর সম্পর্কে বলছি তখন এক আবেগপূর্ণ ঘটনার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। এমনিতে ওঁর সঙ্গে বহু বছর কাজ করার সুবাদে বহু ঘটনাই রয়েছে। তবু আজ আমার ইচ্ছে একটি বিশেষ ঘটনার উল্লেখ করি। কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর হয়ে আমরা একতা যাত্রা করেছিলাম। ডাঃ মুরলি মনোহর যোশীর নেতৃত্বে এই যাত্রা চলছিল। ডিসেম্বর জানুয়ারির প্রচন্ড ঠান্ডার দিন ছিল। আমরা রাত ১২-১ টা নাগাদ মধ্য প্রদেশের গোয়ালিয়রের কাছে শিবপুরীতে পৌঁছেছি। নিবাস স্থানে পৌঁছে যেহেতু সারাদিনের ক্লান্তি থাকতো তাই স্নান সেরে ঘুমোতাম এবং সকালের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতাম। প্রায় রাত দুটোর কাছাকাছি আমি স্নানাদি সেরে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম এই সময় কেউ দরজায় কড়া নাড়লেন। দরজা খুলে দেখি সামনে রাজমাতা দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এই ভীষণ শীতের রাতে রাজমাতা কে দেখে আমি তো বেশ অবাক। আমি মাকে প্রণাম করে জিজ্ঞাসা করলাম, মা আপনি এত রাতে? উনি বললেন মোদিজি আপনার জন্য এই গরম দুধ, আপনি এই দুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। হলুদ দিয়ে দুধ নিয়ে উনি নিজে চলে এলেন আমার কাছে। পরের দিন আমি দেখলাম শুধু একা আমি নই আমাদের যাত্রী দলের যে ৩০-৪০ জন লোক ছিলেন, তার মধ্যে অনেক ড্রাইভার ছিলেন, কর্মকর্তাও ছিলেন, তাদের প্রত্যেকের কামরায় তিনি নিজে রাত দুটোর সময় দুধ নিয়ে গিয়ে খাইয়েছেন। মায়ের ভালোবাসা যে কি, বাৎসল্য ভাব যে কি, এই ঘটনা আমি কোনদিনও ভুলব না। আমাদের সৌভাগ্য, এমন মহান ব্যক্তিত্বরা তাঁদের ত্যাগ ও তপস্যার দ্বারা আমাদের ধরিত্রী কে সুফলা করে তুলেছেন। আসুন আমরা সবাই মিলে এমন এক ভারতের নির্মাণ করি যার জন্য এই মহাপুরুষরা গর্ববোধ করবেন। তাঁদের স্বপ্নকে আমাদের সংকল্প বানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, করোনার এই দুঃসময়ের মধ্যে, আমি আরো একবার আপনাদের মনে করিয়ে দি, মাস্ক অবশ্যই পরবেন, ফেস কভার ছাড়া বাইরে বেরোবেন না। দুই গজ এর দূরত্বের নিয়ম আপনাকেও রক্ষা করবে এবং আপনার পরিবারকেও রক্ষা করবে। এই কিছু নিয়ম করোনার বিরুদ্ধে আপনার হাতিয়ার, প্রতিটি নাগরিকের জীবন বাঁচানোর জন্য এক মজবুত উপায়। আমরা যেন না ভুলি, যতক্ষণ ওষুধ নেই ততক্ষণ ঢিলেমি নেই। আপনি সুস্থ থাকুন, আপনার পরিবার সুস্থ থাকুক, এই শুভ কামনার সঙ্গে অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসীগণ, নমস্কার | সাধারনভাবে এই সময়টা উৎসবের | বিভিন্ন জায়গায় মেলা হয় | ধার্মিক পূজার্চনা হয় | এই করোনা সংকটেও মানুষের মধ্যে উদ্দীপনা তো আছে, উৎসাহও আছে , কিন্তু আমাদের মনকে ছুঁয়ে যাওয়ার মত শৃঙ্খলাও আছে | দেখতে গেলে অনেক দিক থেকে নাগরিকদের মধ্যে দায়িত্ববোধও আছে | সাধারণ মানুষ নিজের প্রতি খেয়াল রাখার পাশাপাশি অন্যের জন্যও ভাবছেন, দৈনন্দিন কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন | দেশে অনুষ্ঠিত প্রতিটি আয়োজনে যেরকম সংযম ও সহযোগিতা এবার দেখা যাচ্ছে, তা সত্যিই অভূতপূর্ব ! গনেশোৎসবও অনলাইনে উদযাপিত হচ্ছে | বেশিরভাগ জায়গাতে তো এবার পরিবেশবান্ধব গনেশজীর মূর্তি বসানো হয় |
বন্ধুগণ, আমরা যদি খুব নিবিড়ভাবে দেখি তাহলে একবার অবশ্যই আমাদের ভাবনাতে এই কথাটা আসবে যে, আমাদের উৎসবের পর্ব এবং পরিবেশ––এই দুইয়ের মধ্যে এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে | একদিকে যেমন আমাদের উৎসবের আয়োজন পরিবেশ ও প্রকৃতির সঙ্গে সহবাসের বার্তা রয়েছে অন্যদিকে আমাদের অনেক উৎসবের পর্ব আয়োজিতই হয় প্রকৃতির সুরক্ষার জন্য | যেমন বিহারের পশ্চিম চম্পারনে বহু শতাব্দী ধরে চলে আসা থারু আদিবাসী সমাজের মানুষ ৬০ ঘন্টার লকডাউন অথবা তাঁদের ভাষায় যদি বলি ‘৬০ ঘন্টার বর্ণা’(বরণ)উদযাপন করে থাকেন| প্রকৃতির সুরক্ষায় থারু সমাজ বর্ণাকে নিজেদের ঐতিহ্যের অংশ করে তুলেছেন এবং তা বহু শতাব্দী ধরে চলে আসছে | এই সময়টাতে তাঁরা এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে আসেন না বা নিজেদের ঘর থেকেও বেরোনও না | কেননা তাঁরা বিশ্বাস করেন যে, এই সময় কেউ যদি গ্রামে আসেন বা গ্রাম থেকে যান তাহলে মানুষের যাতায়াতের ফলে গাছপালার ক্ষতি হতে পারে | বর্নার শুরুতে আদিবাসী ভাই-বোনেরা রীতিমত পূজার্চনা করে থাকেন এবং এই পর্বের সমাপ্তিতেও আদিবাসী সমাজের গান-বাজনা-নৃত্যের মধ্য দিয়ে জমজমাট অনুষ্ঠান হয়ে থাকে|
বন্ধুগণ, এই সময়ে ওণাম উৎসব মহা ধুমধামে উদযাপিত হচ্ছে | এই উৎসব চিঙ্গম মাসে হয় | এই সময় সাধারণ মানুষ কিছু না কিছু নতুন কিনে থাকেন | ঘর সাজান| পুক্কলম তৈরী করেন | ওণাম-সাদিয়ার আনন্দে মেতে ওঠেন | নানারকমের খেলা এবং প্রতিযোগিতারও আয়োজন হয়ে থাকে |ওণাম উদযাপনের ঢেউ তো আজ দূর-সুদূরের বিদেশেও লেগেছে | আমেরিকা হোক, ইউরোপ হোক বা উপসাগরীয় দেশ, সর্বত্র সোল্লাসে ওণাম উদযাপনের ছবি আপনি পেয়ে যাবেন | ও একটি আন্তর্জাতিক উৎসব হয়ে উঠছে |
বন্ধুগণ, ওণাম আমাদের কৃষির সঙ্গে যুক্ত উৎসব | এটা আমাদের গ্রামীন অর্থব্যবস্থার জন্যও এক নতুন সূচনার সময় বটে| কৃষকদের শক্তিতেই আমাদের জীবন, আমাদের সমাজ গতিশীল থাকে | আমাদের উৎসব কৃষকদের পরিশ্রমেই বর্ণময় হয়ে ওঠে | আমাদের অন্নদাতা, কৃষকদের জীবনদায়ী শক্তিকে বেদেও খুবই গৌরবময় ভাবে প্রনাম জানানো হয়েছে |
ঋকবেদে মন্ত্র আছে –
অন্নানং পতয়ে নমঃ , ক্ষেত্রানাম পতয়ে নমঃ | অর্থ্যাৎ অন্নদাতাকে প্রণাম | কৃষককে প্রণাম | আমাদের কৃষকেরা কঠিন করোনা পরিস্থিতিতেও নিজেদের শক্তি প্রমান করেছেন | আমাদের দেশে এইবছর গত বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি খরিফ ফসল বোনা হয়েছে | ধান প্রায় ১০ শতাংশ , ডাল প্রায় ৫ শতাংশ , মোটা দানাশস্য কোয়ার্স সিরিল্স প্রায় ৩ শতাংশ তেলবীজ প্রায় ১৩ শতাংশ , কার্পাস প্রায় ৩ শতাংশ বেশি রোপন করা হয়েছে | আমি এজন্য দেশের কৃষকদের অভিনন্দন জানাচ্ছি, তাঁদের পরিশ্রমকে প্রনাম জানাচ্ছি |
আমার প্রিয় দেশবাসীগণ,
এই করোনার সময়ে দেশ অনেক দিক থেকেই একসঙ্গে লড়াই চালাচ্ছে | কিন্তু একইসঙ্গে মনে এই প্রশ্নও উঠে আসছে যে, এত লম্বা সময় ঘরে বন্দী থাকার কারণে আমার ছোট ছোট শিশুরা-বন্ধুরা কিভাবে সময় কাটাচ্ছে | আর সে ব্যাপারেই আমি গান্ধীনগরের চিলড্রেন ইউনিভার্সিটি, যা নাকি পৃথিবীর বুকে এক অন্যধরণের প্রায়োগিক নিদর্শন, ভারত সরকারের মহিলা ও শিশু বিকাশ মন্ত্রক, শিক্ষা মন্ত্রক, সুক্ষ , লঘু এবং মাঝারি শিল্প উদ্যোগ মন্ত্রক সবাই মিলে আমরা শিশুদের জন্য কি করতে পারি সে ব্যাপারে বিচার বিশ্লেষণ করা হয়েছে | আমার জন্য তা খুবই সুখের বিষয় ছিল| লাভজনক ছিল | একদিক থেকে আমার জন্যও তা কিছু নতুন জেনে নেওয়া, নতুন কিছু শিখে নেওয়ার অবকাশ ছিল |
বন্ধুগণ , আমাদের ভাবনা চিন্তার বিষয় ছিল খেলনা, বিশেষ করে ভারতীয় খেলনা | আমরা মাথা ঘামিয়েছি শিশুদের জন্য নতুন নতুন খেলনা কী করে পাওয়া যেতে পারে! ভারত কিভাবে খেলনা উৎপাদনের ক্ষেত্রে অনেক বড় হাব হয়ে উঠতে পারে | এমনিতে আমি ‘মন কি বাত’ শুনতে থাকা শিশুদের মা-বাবাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি , কেন না এমনও হতে পারে , হয়তো ‘মন কি বাত’ শোনার পর খেলনার জন্য নতুন নতুন চাহিদা বা বায়নাক্কা শোনার এক নতুন কাজ এসে জুটবে |
বন্ধুগণ, খেলনা একদিকে যেমন সক্রিয়তা বাড়ানোর ব্যাপার হয় , তেমনি খেলনা আমাদের ইচ্ছের ডানা মেলারও অবকাশ বটে | খেলনা শুধু মনই ফুরফুরে করে না , খেলনা মন তৈরী করে, উদ্দেশ্য গড়ে দেয় | আমি কোথায় যেন পড়েছিলাম যে, খেলনা নিয়ে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, বেস্ট টয়, সেরা খেলনা সেটাই হয়, যা নাকি ইনকমপ্লিট , অসম্পূর্ণ | এমন খেলনা যা অর্ধেক গড়া হয়েছে, শিশুরা খেলতে খেলতে তা সম্পূর্ণ করবে | গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, যখন তিনি ছোট ছিলেন, নিজের কল্পনা মিশিয়ে ঘরের জিনিস দিয়েই নিজের বন্ধুদের সঙ্গে মিলে খেলা আর খেলনা তৈরী করতেন | কিন্তু একদিন শৈশবের সেই দুষ্টু-মিষ্টি সময়ের ঘরে বড়দের দখলদারির অনুপ্রবেশ ঘটলো | এমন হলো তাঁদের এক বন্ধু এক বড় আর সুন্দর দেখতে বিদেশী খেলনা নিয়ে হাজির | খেলনা নিয়ে ব্যস্ত বন্ধুদের সবাই খেলার চেয়ে সেই খেলনার দিকেই বেশি আকর্ষন বোধ করলো | সবার মনোযোগের কেন্দ্রে এখন আর খেলা নয়, খেলনা| যে শিশুরা কাল পর্যন্ত সবার সঙ্গে খেলত , সবার সঙ্গে থাকত , মিলেমিশে যেত , খেলায় ডুবে থাকত , তারা এখন দূরে দূরে থাকে | একদিক থেক অন্য শিশুদের সঙ্গে এক ভেদাভেদ যেন মনের ভেতর তৈরী হয়ে গেল | দামী খেলনার মধ্যে তো গড়ে তোলার মতো কিচ্ছু ছিল না | শেখার মতো কিছু ছিল না | মানে এক আকর্ষনীয় খেলনা এসে এক শিশুর উৎকর্ষকে যেন কোথাও দাবিয়ে দিলো, লুকিয়ে ফেললো, অচেতন করে দিলো | এই খেলনা তো ধন সম্পত্তি আর সামান্য বড় বড় ভাব দেখিয়ে ওই শিশুর সৃষ্টিশীল মন, সৃজনশীল ভাবনা বেড়ে ওঠা, পরিপক্ক হয়ে ওঠাকে আটকে দিল | খেলনা তো এলো , কিন্তু খেলা শেষ হয়ে গেল আর শিশুর বিকাশও হারিয়ে গেলো | এজন্যই গুরুদেব বলতেন, খেলনা এমন হতে হবে যা নাকি শিশুর শৈশবকে বের করে আনে | তার সৃজনশীলতাকে সামনে নিয়ে আসে |শিশুদের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে খেলনার যে প্রভাব , সেটা নিয়ে জাতীয় শিক্ষা নীতিতে ব্যাপক নজর দেওয়া হয়েছে | খেলতে খেলতে শেখা, খেলনা বানাতে শেখা, যেখানে খেলনা বানানো হয় সেখানে দেখতে যাওয়া, এই সমস্ত কিছুকে পাঠক্রমের অঙ্গ করা হয়েছে|
বন্ধুগণ, আমাদের দেশে স্থানীয় খেলনার এক সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে| অনেক প্রতিভাবান ও দক্ষ কারিগর রয়েছেন , যাঁরা ভালো খেলনা তৈরিতে নিপুন |ভারতের কিছু জায়গা টয় ক্লাস্টার মানে খেলনার কেন্দ্রস্থল হিসেবেও গড়ে উঠছে | যেমন কর্ণাটকের রামনগরমে চন্নাপটনা, অন্ধ্রপ্রদেশের কৃষ্ণাতে কন্ডাপল্লি, তামিলনাডুর তাঞ্জোর, আসামের ধুবরী , উত্তরপ্রদেশের বারানসী –এমন অনেক জায়গা রয়েছে , কত নাম গুনে বলা যেতে পারে | আপনারা জেনে অবাক হবেন , যে, গ্লোবাল টয় ইন্ডাস্ট্রির ৭ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ব্যবসা রয়েছে | ৭ লক্ষ কোটি টাকার এত বড় ব্যবসা অথচ এতে ভারতের অংশিদারিত্ব খুবই কম |
এবার আপনারাই ভাবুন , যে দেশের হাতে এত বড় উত্তরাধিকার, ঐতিহ্য, বৈচিত্র্য রয়েছে, যুবসম্পদ রয়েছে, খেলনার বিপননে আমাদের এতটা কম অংশিদারিত্ব, ভালো লাগবে কি ? একদমই না! এটা শোনার পর তো আপনাদের আরও ভালো লাগবে না | দেখুন বন্ধুগণ, টয় ইন্ডাস্ট্রি অনেক ব্যাপক | কুটির শিল্প হোক, ছোট ও লঘু শিল্প হোক, এমএসএমই হোক, এর পাশাপাশি বড় এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগও এর আওতায় আছে | একে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের সম্মিলিতভাবে পরিশ্রম করতে হবে | এখন যেরকম অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমের শ্রী সি.বি. রাজু আছেন | তাঁর গ্রামের এতি-কম্পকা টয় একসময় খুব চলতো | সেগুলির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সেগুলি কাঠের তৈরী | আরেক কথা হচ্ছে, এগুলির কোনভাবে কোনরকম অ্যাঙ্গেল বা কোণ থাকত না | এই খেলনাগুলি সবদিক থেকে গোলাকৃতি | ফলে সেগুলি দিয়ে শিশুদের কোনভাবেই আঘাত পাওয়ার ভয় থাকত না | সি.বি রাজু এখন এই খেলনা তৈরির জন্য গ্রামের কারিগরদের নিয়ে একদিক থেকে মুভমেন্ট বা আন্দোলন শুরু করে দিয়েছেন |উন্নততর গুনমানের এতি-কম্পকা টয় তৈরী করে সি.বি. রাজু স্থানীয় খেলনার হারানো গৌরবকে ফের উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন| খেলনা নিয়ে আমরা দু’টো কাজ করতে পারি – নিজেদের গৌরবময় অতীতকে নিজেদের জীবনে আবার নিয়ে আসতে পারি| আবার নিজেদের স্বর্ণালী ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল করে তুলতে পারি | আমি আমার স্টার্ট আপ বন্ধুদের , আমাদের নতুন উদ্যোগীদের বলছি, টিম আপ ফর টয়স …আসুন সবাই মিলে খেলনা তৈরী করি | এখন আমাদের সবার লোকাল খেলনার জন্য ভোকাল হওয়ার সময় | আসুন আমাদের যুব অংশের জন্য কোনো নতুন ধরনের , ভালো গুণমানের খেলনা তৈরী করি | খেলনা সেরকম হোক, যা থাকলে শৈশব জেগে ওঠে, বর্ণময় হয় | এমন খেলনা তৈরী করি, যা নাকি পরিবেশবান্ধবও বটে |
বন্ধুরা, এই ভাবেই, এখন কম্পিউটার আর স্মার্টফোনের এই জমানায় কম্পিউটার গেমস এর বিরাট ট্রেন্ড বা প্রবণতা রয়েছে এই খেলাগুলি বাচ্চারাও খেলে, বড়রাও খেলেন। কিন্তু এতে যত গেমস আছে, সেগুলির থিমস বা বিষয়বস্তু বেশিরভাগ বিদেশেরই হয়ে থাকে। আমাদের দেশে এত ধ্যানধারনা আছে, এত প্রত্যয়ী বিষয় রয়েছে, দারুণ সমৃদ্ধ আমাদের ইতিহাস। আমরা কি সেগুলির ভিত্তিতে গেমস বানাতে পারি না? আমি দেশের তরুণ প্রতিভাদের বলছি, আপনারা ভারতেও গেমস বানান, আর, ভারতের গেমস বানান। প্রবাদে বলা হয়, -লেট দি গেমস বিগিন! তো আসুন, খেলা শুরু করে দিই!
বন্ধুরা, আত্মনির্ভর ভারত অভিযানে ভার্চুয়াল গেমস হোক, টয়স হোক, সেক্টর হোক, সবাই, খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন আর এটা একটা সুযোগও। আজ থেকে একশো বছর আগে, প্রথম অসহযোগ আন্দোলন যখন শুরু হয়েছিল, তখন গান্ধীজি লিখেছিলেন, “অসহযোগ আন্দোলন হল দেশবাসীর আত্মসম্মান আর নিজের শক্তি অনুভব করানোর একটা প্রচেষ্টা।” ।
আজ, আমরা যখন দেশকে আত্মনির্ভর বানানোর প্রচেষ্টা করছি, তো, আমাদের, পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তাকে এগিয়ে নিতে হবে, প্রত্যেক ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হতে হবে। অসহযোগ আন্দোলন রূপে যে বীজ বপন করা হয়েছিল, তাকে, এখন, আত্মনির্ভর ভারতের বটবৃক্ষতে পরিবর্তিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ভারতীয়দের ইনোভেশন বা উদ্ভাবন আর সলিউশন বা সমাধান সূত্র প্রদানের ক্ষমতা প্রত্যেকে স্বীকার করেন, সহায়তা পেলে এই শক্তিই অসীম হয়ে যায়। এই মাসের শুরুতেই, দেশের যুবকদের সামনে, একটি অ্যাপ ইনোভেশন চাল্লেঞ্জ রাখা হয়েছিল। এই আত্মনির্ভর ভারত অ্যাপ ইনোভেশন চাল্লেঞ্জ-এ আমাদের তরুণরা বিপুল সংখ্যায় অংশ নিয়েছেন। প্রায় ৭ হাজার এন্ট্রিজ এসেছিল, তার মধ্যে, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অ্যাপস টায়ার টু আর টায়ার থ্রী শহরের যুববন্ধুরা বানিয়েছেন। এটা আত্মনির্ভর ভারতের জন্য, দেশের জন্য খুবই শুভ সংকেত। আত্মনির্ভর অ্যাপ ইনোভেশন চাল্লেঞ্জ-এর ফলাফল দেখে আপনি নিশ্চিত প্রভাবিত হবেন। অনেক বিচার বিশ্লেষণের পর,আলাদা আলাদা ক্যাটাগরি বা পর্যায়ে প্রায় দু’ ডজন অ্যাপ-কে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আপনারা এই অ্যাপগুলি সম্পর্কে জানুন, এগুলির সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান। হতে পারে, আপনিও এমন কিছু বানাতে উৎসাহিত হয়ে যাবেন। এর মধ্যে একটি অ্যাপ হল কুটুর কিডস লার্নিং অ্যাপ | এটি শিশুদের জন্য এমন একটি ইন্টারেক্টিভ অ্যাপ, যেটি গান এবং গল্পের মাধ্যমে শিশুদের গণিত ও বিজ্ঞানের অনেক কিছু শিখতে সাহায্য করবে। এতে একটিভিটিসও আছে, খেলাও আছে। এইভাবে একটি মাইক্রো ব্লগিং প্লাটফর্ম এর অ্যাপও তৈরী হয়েছে। এর নাম হল কু – KOO কু। এতে নিজের মাতৃভাষায় টেক্সট, ভিডিও আর অডিও-র মাধ্যমে কথা বলতে পারবেন, মতামত বিনিময় করতে পারবেন। এই রকমই চিঙ্গারি অ্যাপ-ও তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে। একটি অ্যাপ আছে, আস্ক সরকার। এখানে চ্যাট বোট-এর মাধ্যমে আপনি মতামত বিনিময় করতে পারবেন আর যে কোনও সরকারি প্রকল্প সম্পর্কে জ্ঞাতব্য তথ্য পেতে পারেন, তাও টেক্সট, ভিডিও আর অডিও-তিন ভাবেই। এটি আপনাদের খুব সাহায্য করতে পারে। আরও একটি অ্যাপ আছে স্টেপ সেট গো| এটি ফিটনেস অ্যাপ| আপনি কতটা হাঁটলেন, কতটা ক্যালোরিজ পুড়লো, সেই সব হিসাব এই অ্যাপটি রাখে, আর আপনাকে ফিট রাখার জন্য উদ্দীপ্ত-ও করে। আমি কয়েকটি উদাহরণই দিলাম। কিছু আরও অ্যাপ তো এই চ্যালেঞ্জ-টা জিতেছে। অনেকগুলি বিজনেস অ্যাপ আছে, গেমস-এর অ্যাপ আছে, যেমন ইজ ইকুয়াল টু, বুকস এন্ড এক্সপেন্স , জোহো, ওয়ার্কপ্লেস, এফটিসি ট্যালেন্ট | আপনারা এগুলির সম্পর্কে নেট-এ সার্চ করুন, আপনারা অনেক কিছু জানতে পারবেন। আপনিও এগিয়ে আসুন, কিছু উদ্ভাবন করুন, কিছু রূপায়ন করুন। আপনার প্রচেষ্টা, আজকের ছোটো ছোটো স্টার্ট-আপস , কাল বড় বড় কোম্পানিতে পরিণত হবে, আর বিশ্বে ভারতের পরিচিতি গড়ে উঠবে। আর, আপনারা একথা ভুলবেন না যে, আজ বিশ্বে যেসব বড় বড় কোম্পানি দেখা যায়, এইগুলিও, কখনও স্টার্ট আপ কোম্পানিই ছিল।
প্রিয় দেশবাসী, আমাদের এখানকার শিশুরা, আমাদের ছাত্রছাত্রীরা, যাতে নিজেদের পূর্ণ ক্ষমতা দেখতে পারেন, নিজেদের যোগ্যতা দেখাতে পারেন, তার পিছনে বিরাট বড় ভূমিকা থাকে পুষ্টিরও। সারা দেশে সেপ্টেম্বর মাসটি পুষ্টির মাস, নিউট্রিশন মান্থ হিসাবে পালিত হবে। নেশন আর নিউট্রিশন এর গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের এখানে একটি প্রবাদ আছে “যথা অন্নম, তথা মন্ত্রম”
অর্থাৎ, যেমন অন্নের ব্যবস্থা হয়, তেমনই আমাদের মানসিক আর বৌদ্ধিক বিকাশও হয় । বিশেষজ্ঞরা বলেন যে, গর্ভে থাকার সময় আর শৈশবে শিশু যতটা পুষ্টির সুযোগ পাবে, ততই ভাল তার মানসিক বিকাশ হবে এবং সে সুস্থ থাকবে। শিশুদের পুষ্টির জন্য ততটাই জরুরি মায়ের সম্পুর্ণ পুষ্টির সুযোগ পাওয়া , আর পুষ্টি বা নিউট্রিশন-এর অর্থ কেবল এটাই নয় যে, আপনি কি খাচ্ছেন, কতটা খাচ্ছেন, কতবার খাচ্ছেন। এর অর্থ হল, আপনার শরীর কতটা প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর পদার্থ পাচ্ছে, নিউট্রিয়েন্ট পাচ্ছে। কতটা আয়রন,ক্যালসিয়াম পাচ্ছে বা পাচ্ছে না, সোডিয়াম পাচ্ছে কি না, এইগুলি পুষ্টির খুব গুরুত্বপূর্ণ দিক| পুষ্টির এই আন্দোলনে জন অংশিদারিত্ব খুব জরুরি। জনতার অংশগ্রহণেই একে সফল করতে হবে। গত কিছু বছরে, এই লক্ষ্যে, দেশে, অনেক প্রযাস নেওয়া হয়েছে। বিশেষকরে আমাদের গ্রামে একে জন-অংশীদারির মাধ্যমে আন্দোলনে পরিণত করা হচ্ছে। পুষ্টি সপ্তাহ হোক, পুষ্টির মাস হোক, বেশি বেশি করে সচেতনতা তৈরির করা হচ্ছে। স্কুলগুলিকে যুক্ত করা হয়েছে। বাচ্চাদের জন্য প্রতিযগিতা হোক, তাতে সচেতনতা বাড়ে, এর জন্য লাগাতার প্রচেষ্টা জারি আছে। যেমন ক্লাস-এ একজন ক্লাস মনিটর হয়, রিপোর্ট কার্ড এর জায়গায় নিউট্রিশন কার্ড-ও বানানো হোক, এই রকম ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। পুষ্টির মাস – পুষ্টি মাস-এর সময়ে মাই গভ পোর্টালে একটি ফুড এন্ড নিউট্রিশন কুইজ এর আয়োজন করা হচ্ছে আর তার সঙ্গে মিম কম্পিটিশন-ও হবে। আপনি নিজেও অংশগ্রহন করুন আর অন্যদেরকেও উৎসাহিত করুন।
বন্ধুরা, আপনাদের হয়তো গুজরাটে সরদার বল্লভভাই প্যাটেলের স্টাচু অব ইউনিটি দেখতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে, আর কোভিডের পর যখন খুলবে আর আপনার যাওয়ার সুযোগ হবে, তো, দেখবেন সেখানে একটি বিশেষ ধরণের নিউট্রিশন পার্ক বানানো হয়েছে।খেলার মধ্যে দিয়েও পুষ্টির শিক্ষা আমোদ-প্রমোদের মধ্যে ওখানে অবশ্যই দেখতে পাবেন।
সাথীরা, ভারত এক বিরাট দেশ, খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রেও এর অনেক রকম বৈচিত্র্য আছে। আমাদের দেশে আলাদা আলাদা ছয়টি ঋতু আছে, আলাদা আলাদা এলাকায় সেখানকার জলবায়ুর হিসাবে আলাদা আলাদা সামগ্রী উৎপন্ন হয়।সেই কারণে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে, সেখানকার জলবায়ু , সেখানকার স্থানীয় খাওয়াদাওয়া আর সেখানে উৎপন্ন হওয়া অন্ন, ফল, সবজির হিসাবে একটি পুষ্টিকর, খাদ্যতালিকা পরিকল্পনা তৈরি হবে। এখন যেমন – মিলেটস – মোটাদানার শষ্য – যেমন বাজরা, জোয়ার, এগুলি খুব উপযোগী পুষ্টিকর খাদ্য। একটি ‘ভারতীয় কৃষি কোষ’ তৈরি করা হচ্ছে, যাতে প্রত্যেক জেলায় কোন কোন ধরণের ফসল হয়, সেগুলির পুষ্টি মূল্য কতটা, তার সম্পূর্ণ তথ্যাবলি থাকবে। এটি আপনাদের সকলের জন্য বিরাট বড় উপযোগী একটি আকরগ্রন্থ হতে পারে। আসুন, পুষ্টির মাসে পুষ্টিকর খাদ্য সুস্থ থাকার জন্য আমাদের সবাইকে প্রেরণা দিক।
প্রিয় দেশবাসী, বিগত দিনগুলিতে, যখন আমরা স্বাধীনতা দিবস পালন করছিলাম, তখন একটি আকর্ষনীয় খবরের দিকে আমার নজর গিয়েছে। খবরটি আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর দুই সাহসী চরিত্রের। একজন সোফি আরেকজন বিদা। সোফি আর বিদা ভারতীয় সেনা-র দুটি কুকুর, ডগস, আর তাদের চিফ অব আর্মি স্টাফ কমেন্ডেশন কার্ড সম্মানে সম্মানিত করা হয়েছে। সোফি আর বিদাকে এই সম্মান এইজন্য দেওয়া হয়েছে, কারণ তারা, নিজেদের দেশের রক্ষার কাজ করতে গিয়ে নিজেদের কর্তব্য দারুণ দারুণভাবে পালন করেছে। আমাদের সেনাদের মধ্যে, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে, এমন কত বাহাদুর কুকুর রয়েছে, ডগস আছে, যারা দেশের জন্য বাঁচে, দেশের জন্য নিজেদের জীবন বিসর্জন দেয়। কতগুলি বোমা বিফোরণ, কতগুলি জঙ্গি হামলার ষড়যন্ত্র আটকানোর ক্ষেত্রে এমন কুকুরগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিছুদিন আগে দেশের নিরাপত্তায় কুকুরদের ভূমিকা সস্পর্কে বেশ বিস্তারিতভাবে জানার সুযোগ হল। অনেক কাহিনীও শুনলাম। একটি কুকুর বলরাম ২০০৬ সালে অমরনাথ যাত্রার রাস্তায়, বিরাট পরিমাণে, গোলাবারুদের সন্ধান এনে দেয়। ২০০২ সালে সেনা কুকুর ভাবনা আই ই ডি-র সন্ধান দিয়েছিল। আই ই ডি উদ্ধারের সময় জঙ্গিরা বিস্ফোরণ ঘটায় আর কুকুরটি শহিদ হয়ে যায়। দু-তিন বছর আগে, ছত্তিশগড়ের বিজাপুরে সি আর পি এফ এর স্নাইফার ডগ ক্র্যাকারও আই ই ডি বিস্ফোরণে শহিদ হয়ে যায়। কিছুদিন আগে হয়তো টিভি-তে খুব বেদনাদায়ক একটি দৃশ্য দেখেছেন, যাতে বিড পুলিশ তাদের সাথী কুকুর রকিকে পূর্ণ সম্মানের সঙ্গে শেষ বিদায় জানাচ্ছেন। রকি ৩০০-র বেশি মামলার সমাধানে পুলিশকে সাহায্য করেছে। কুকুরদের বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা আর উদ্ধার অভিযানে বিরাট ভূমিকা রয়েছে। ভারতে তো জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী – এনদি আর এফ-এ এমন ডজন ডজন কুকুরকে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে | কোথাও ভূমিকম্প হলে, বাড়ি ভেঙে পড়লে, ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে জীবিত ব্যক্তিদের সন্ধান করে উদ্ধারে কুকুরেরা দারুণ দক্ষ!
বন্ধুরা, আমাকে বলা হয়েছে, ভারতীয় প্রজাতির কুকুর খুব ভাল গুণমানের, খুবই সক্ষম। ভারতীয় প্রজাতির মুধোল হাউন্ড আছে, হিমাচলি হাউন্ড আছে, এগুলি খুবই ভাল প্রজাতির। রাজাপলায়ম, কন্নী, চিপ্পিপরাই আর কোম্বাইও দারুণ ভাল ভারতীয় প্রজাতির। এগুলি পালনে খরচও কম হয়, আর ভারতীয় পরিবেশের সঙ্গে মানিয়েও নেয়। এখন আমাদের নিরাপত্তা সংস্থাগুলি ভারতীয় প্রজাতির কুকুরকে নিজেদের সুরক্ষা দলে অন্তর্ভুক্ত করছে। গত কিছু সময়ে সিআইএসএফ, এনএসজি মুধোল হাউন্ড কুকুরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ডগ স্কোয়াড-এ অন্তর্ভুক্ত করেছে, সিআরপিএফ কোম্বাই প্রজাতির কুকুর–কে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পর্ষদ আই সি এ আর –ও ভারতীয় প্রজাতির কুকুর-এর উপরে গবেষনা করছে। উদ্দেশ্য হল, ভারতীয় প্রজাতিকে কিভাবে আরও দক্ষ বানানো যায়, আরও উপযোগী করে তোলা যায়। আপনি ইন্টারনেট-এ এদের নামে সার্চ করুন, এদের সম্পর্কে জানুন, আপনারা এদের সৌন্দর্য, এদের গুণাবলী দেখে স্তম্ভিত হয়ে যাবেন। এর পর, যখনই আপনারা, কুকুর পালনও শিখবেন, আপনারা অবশ্যই এগুলির মধ্যে থেকে ভারতীয় প্রজাতির কুকুর ঘরে নিয়ে আসুন। আত্মনির্ভর ভারত, যখন জন-মনের মন্ত্র হয়েই যাচ্ছে, তখন যে কোনও ক্ষেত্রেই বা আমরা এর থেকে কি করে পি পিছনে পরে থাকতে পারি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছুদিন পরেই, পাঁচই সেপ্টেম্বর আমরা শিক্ষক দিবস পালন করবো। আমরা সবাই যখন আমাদের জীবনের সফলতাগুলি নিজেদের জীবন যাত্রায় খতিয়ে দেখি, তখন আমাদের কোনও না কোনও শিক্ষকের কথা অবশ্যই মনে পড়ে যায়। দ্রুত পরিবর্তনশীল সময় আর করোনার সঙ্কটকালে আমাদের শিক্ষকদের সামনেও সময়ের সঙ্গে পরিবর্তনের একটি চ্যালেঞ্জ এসেছে। আমার আনন্দ হচ্ছে যে, আমাদের শিক্ষকরা কেবল সেই চ্যালেঞ্জকে স্বীকারই করেননি, বরং, তাকে সুযোগে বদলে নিয়েছেন। পড়ার কৌশলের কিভাবে বেশি করে উপযোগ করা যায়, নতুন পদ্ধতিকে কিভাবে রূপায়ণ করা যায়, কিভাবে ছাত্রদের সহায়তা করা যায়, এগুলি আমাদের শিক্ষকরা সহজেই আত্মস্থ করেছেন এবং নিজেদের ছাত্র-ছাত্রী-দেরও শিখিয়েছেন। আজ, দেশে, প্রত্যেক জায়গায় কিছু না কিছু উদ্ভাবন হচ্ছে। শিক্ষক আর ছাত্ররা মিলে কিছু না কিছু নতুন করছেন। আমার আস্থা আছে, যেভাবে দেশে জাতীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে বিরাট এক নতুন পরিবর্তন আসছে, আমাদের শিক্ষকরা তার লাভ ছাত্রদের কাছে পৌঁছানোয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।
সাথীরা, বিশেষকরে আমার শিক্ষক সাথীরা, ২০২২-এ আমাদের দেশ স্বাধীনতার ৭৫ বছর পালন করবে। স্বাধীনতার আগে বহু বছর যাবৎ আমাদের দেশে স্বাধীনতার লড়াইয়ের এক দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এই সময়ে দেশের এমন কোনও প্রান্ত ছিল না, যেখানে স্বাধীনতার সংগ্রামীরা নিজেদের প্রাণ বলিদান করেননি।, নিজদের সর্বস্ব ত্যাগ করেননি। এটা খুবই জরুরি যে আজকের প্রজন্ম, আমাদের শিক্ষার্থী, স্বাধীনতার যুদ্ধে আমাদের দেশের নায়কদের সম্পর্কে জানুন, তাকে ততটাই অনুভব করুন। নিজেদের জেলায়, নিজের এলাকায়, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় কি হয়েছিল, কে শহিদ হয়েছিলেন, কে কত বছর দেশের জন্য কারাগারে ছিলেন। এইসব কথা আমাদের শিক্ষার্থীরা জানলে তাঁদের ব্যক্তিত্বেও এদের প্রভাব দেখা যায়, তার জন্য অনেক কাজ করা যেতে পারে, যাতে আমাদের শিক্ষকদের বিরাট বড় দায়িত্ব আছে। যেমন, আপনি যে জেলায় আছেন, সেখানে শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চলা এই স্বাধীনতার সংগ্রামে কি কি ঘটনা ঘটেছে? এই বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দিয়ে গবেষনা করানো যেতে পারে। সেগুলি স্কুল থেকে হাতে লেখা পত্রিকা হিসাবে প্রকাশিত হতে পারে। আপনার শহরে স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত স্থানগুলিতে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে যেতে পারেন। কোনও স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে, স্বাধীনতার ৭৫ বছরে নিজেদের এলাকার ৭৫ জন নায়কের উপরে কবিতা লিখবেন, নাটক লিখবেন। আপনার প্রচেষ্টা দেশের হাজার হাজার লাখ লাখ অকথিত বা অজানা বীর-দের সামনে নিয়ে আসবে, যাঁরা দেশের জন্য জীবন ধারণ করেছেন, দেশের জন্য শেষ হয়ে গিয়েছেন, যাঁদের নাম সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ভুলে গিয়েছে, এমন মহান ব্যক্তিদের যদি আমরা স্বাধীনতার ৭৫ বছরে সামনে নিয়ে আসি, তাহলে তাঁদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি হবে। আর, ৫ সেপ্টেম্বর তো শিক্ষক দিবস পালন করছি, তাই আমি আমার শিক্ষক সাথীদের অবশ্যই অনুরোধ করবো যে, তারজন্য একটা পরিবেশ তৈরি করে সবাইকে যুক্ত করুন আর সকলে মিলে তাতে লেগে পড়ুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, দেশ আজ বিকাশের পথে চলেছে। এর সাফল্য তখনই সুখদায়ক হবে যখন প্রত্যেক দেশবাসী তাতে অংশ নেবেন, এই যাত্রার যাত্রী হবেন, এই পথের পথিক হবেন। সেইজন্য এটা জরুরি যে, প্রত্যেক দেশবাসী সুস্থ থাকুন, সুখী থাকুন, আর আমরা সকলে মিলে করোনাকে সম্পূর্ণভাবে পরাস্ত করি। করোনা তখনই হারবে যখন আপনি নিরাপদ থাকবেন, যখন আপনারা “দো গজ কি দূরি, মাস্ক জরুরি’, এই শপথকে পরিপূর্ণভাবে পালন করবেন। আপনারা সুস্থ থাকুন, সুখী থাকুন, এই শুভকামনার সঙ্গে পরের বারের মনের কথায় আবার মিলিত হওয়ার আকাঙ্খায়।
অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আজ ২৬শে জুলাই আর এটি এক বিশেষ দিন। আজ ‘কার্গিল বিজয় দিবস’। একুশ বছর আগে আজকের দিনেই কারগিলের যুদ্ধে আমাদের সেনাবাহিনী ভারতের বিজয় পতাকা উড়িয়েছিল। সাথী, কারগিলের যুদ্ধ যে পরিস্থিতিতে হয়েছিল সেটা ভারত কখনও ভুলতে পারবে না। পাকিস্তান বড়-বড় পরিকল্পনা তৈরি করে ভারতের জমি দখল আর নিজেদের ওখানে চলতে থাকা অভ্যন্তরীণ কলহ থেকে দৃষ্টি সরানোর দুঃসাহস দেখিয়েছিল। ভারত তখন পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করছিল কিন্তু কথায় বলে,
বয়রু অকারণ সব কাহুঁ সো।
যো কর হিত অনহিত তাহুঁ সো…
অর্থাৎ দুষ্টের স্বভাবই হচ্ছে, বিনা কারণে সবার সঙ্গে শত্রুতা করা। এমন স্বভাবের লোক, যে উপকার করে তারও ক্ষতি করার কথাই ভাবে। তাই ভারতের মিত্রতার জবাবে পাকিস্তান পিঠে ছোরা মারার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু , এর পরে ভারতের বীর সৈন্যরা যে পরাক্রম দেখিয়েছিল, ভারত নিজের যে শক্তি প্রদর্শন করেছিল, তা সারা পৃথিবী দেখেছে। আপনি অনুমান করতে পারেন – উঁচু পাহাড়ে বসে থাকা শত্রু আর নীচ থেকে লড়তে থাকা আমাদের সেনা জওয়ানরা, আমাদের বীর জওয়ানরা, কিন্তু, জয় পাহাড়ের উচ্চতার হয় নি – ভারতীয় সেনার ভরপুর তেজ আর সত্যিকারের বীরত্বের হয়েছিল। সাথী, সেই সময় আমারও কার্গিল যাওয়া আর ভারতীয় সেনার বীরত্ব দর্শনের সৌভাগ্য হয়েছিল। সেই দিন, আমার জীবনের সবথেকে অমূল্য সময়ের একটি। আমি দেখতে পাচ্ছি যে আজ গোটা দেশের মানুষ কারগিলের জয়কে স্মরণ করছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে এক হ্যাশট্যাগ কারেজ-ইন-কারগিল ব্যবহার করে নিজেদের বীরদের প্রণাম জানাচ্ছে, যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। আমি আজ সব দেশবাসীর পক্ষ থেকে, আমাদের এই বীর জওয়ানদের সঙ্গে, সেই সব বীরাঙ্গনা মায়েদেরও প্রণাম করি, যাঁরা, মা-ভারতীর সত্যিকারের যোগ্য পুত্রদের জন্ম দিয়েছেন। আমার, দেশের তরুণদের কাছে অনুরোধ, আজ সারা দিন কার্গিল বিজয়ের সঙ্গে যুক্ত আমাদের বীর সেনাদের নানা কাহিনী, বীরাঙ্গনা মাতাদের ত্যাগ সম্পর্কে, একে অন্যকে বলুন, শেয়ার করুন। সাথী, আমি আজ আপনাদের একটি অনুরোধ করছি। একটি ওয়েবসাইট আছে ডব্লু ডব্লু ডব্লু-গ্যালান্ট্রি অ্যাওয়ার্ডস-ডট-গভ-ডট-ইন, আপনারা অবশ্যই সেটা দেখুন। ওখানে আপনি আমাদের বীর যোদ্ধাদের ব্যাপারে, তাঁদের পরাক্রমের ব্যাপারে, অনেক তথ্য পাবেন, আর সেই সব তথ্য নিয়ে যখন আপনি নিজের বন্ধুদের সঙ্গে চর্চা করবেন – তাদের কাছে তা প্রেরণার কারণ হয়ে উঠবে। আপনারা অবশ্যই এই ওয়েবসাইট দেখুন, আর আমি তো বলব, বার বার দেখুন।
বন্ধু, কার্গিল যুদ্ধের সময় অটলজি লালকেল্লা থেকে যা বলেছিলেন, আজও আমাদের সবার জন্য তা প্রাসঙ্গিক। অটলজী তখন দেশকে গান্ধীজির এক মন্ত্রের কথা স্মরণ করিয়েছিলেন। গান্ধীজির মন্ত্র ছিল যে কারও যদি, কখনও মনে সংশয় থাকে যে সে কী করবে, কী করবে না, তাহলে তাঁর ভারতের সবথেকে গরীব আর অসহায় ব্যক্তির সম্পর্কে ভাবা উচিত। তাঁর এটা ভাবা উচিত যে সে যা করতে যাচ্ছে তাতে সেই ব্যক্তির ভালো হবে কি হবে না। গান্ধীজির এই ভাবনার থেকে এগিয়ে অটলজি বলেছিলেন যে কার্গিল যুদ্ধ আমাদের আর একটা মন্ত্র দিয়েছে – এই মন্ত্র হল, কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, আমাদের এটা ভাবতে হবে, যে এই পদক্ষেপ সেই সৈনিকের সম্মানের যোগ্য কিনা যে দুর্গম পাহাড়ে নিজের প্রাণের আহুতি দিয়েছিল। আসুন অটলজির বয়ানে তাঁর এই ভাবনার কথা আমরা শুনি, বুঝি আর সময়ের দাবি হল সেটাকে গ্রহণ করি।
অটলজির কন্ঠ (সাউন্ড বাইট)
“আমাদের সবার মনে আছে যে গান্ধীজি আমাদের এক মন্ত্র দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে যদি মনে কোনও সংশয় থাকে যে তোমার কী করা উচিত তাহলে তুমি ভারতের সেই সবথেকে অসহায় ব্যক্তিটির ব্যাপারে ভাবো আর নিজেকে জিজ্ঞাসা করো যে তুমি যা করতে যাচ্ছ তাতে সেই ব্যক্তির ভালো হবে কিনা। কার্গিল আমাদের এক অন্য মন্ত্র দিয়েছে – কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের এটা ভাবা উচিত যে আমাদের পদক্ষেপ সেই সৈনিকের সম্মানের যোগ্য কিনা যে ওই দুর্গম পাহাড়ে নিজের প্রাণের আহুতি দিয়েছিল।”
বন্ধু, যুদ্ধের এই পরিস্থিতিতে, আমরা যা বলি, যা করি, সীমান্তে কর্তব্যরত সৈনিক আর তার পরিবারের মনোবলের উপর তার গভীর প্রভাব পড়ে। এই কথা আমাদের কখনও ভোলা উচিত নয় আর আমাদের আচার, আমাদের ব্যবহার, আমাদের বক্তব্য, আমাদের বয়ান, আমাদের মর্যাদা, আমাদের লক্ষ্য, সব কিছু খতিয়ে দেখা উচিত যে আমরা যা করছি, যা বলছি, তাতে সৈনিকদের মনোবল বাড়ে, তাদের সম্মান বৃদ্ধি পায়। রাষ্ট্রকে সবার উপরে রাখার মন্ত্র নিয়ে, একতার সূত্রে আবদ্ধ দেশবাসী, আমাদের সৈনিকদের শক্তিকে বহু হাজার গুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এখানে তো বলাই হয়েছে যে – কলিযুগে সঙ্ঘবদ্ধতাই শক্তি প্রদান করে।
কেউ কেউ এসব না বুঝে স্যোসাল মিডিয়ায় এমন বিষয়গুলো ছড়িয়ে দেন যে আমাদের দেশের তাতে বিপুল ক্ষতি হয়ে যায়, কখনো কখনো কৌতূহল থেকে ঐসব মেসেজ ফরোয়ার্ড করা হতেই থাকে,জানে যে এটা অন্যায় তবুও ফরোয়ার্ড করতেই থাকে। এখন যুদ্ধ শুধু সীমান্তেই হয় না,দেশের ভেতরেও অনেক দিক থেকে লড়াই চলে, সে লড়াইয়ে দেশের প্রত্যেক নাগরিককে অংশগ্রহণ করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। দেশের সীমান্তে দুর্গম পরিস্থিতিতে যুদ্ধের সেনারা লড়াই করছেন তাঁদের সে ভূমিকার কথা মনে রাখাও আমাদের কাজ।
আমার প্রিয় দেশবাসী! গত কয়েকমাস সারা দেশ একজোট হয়ে যে ভাবে করোনার সঙ্গে মোকাবিলা করেছে,তাঁরা বহু আশঙ্কাকে অমূলক প্রমাণ করেছেন, আজ আমাদের আরোগ্য লাভের হার অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় অনেক ভালো, শুধু তাইই নয়, আমাদের দেশের করোনায় মৃত্যু হারও অনেক অনেক দেশের থেকে কম। অবশ্যই একজন মানুষের মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক, সেখানে ভারত লাখ লাখ মানুষের জীবন দানে সফল হয়েছে। কিন্তু বন্ধুরা করোনার বিপদ কিন্তু কমেনি, কোনও কোনও এলাকায় তীব্র গতিতে এই রোগ ছড়াচ্ছে,আমাদের আরও অনেক বেশি সজাগ থাকার প্রয়োজন আছে,আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে করোনা শুরুতে যেমন বিপজ্জনক ছিলো আজও একই রকম রয়েছে,এজন্য আমাদের সম্পূর্ণ সতর্ক থাকতে হবে। মুখে মাস্ক বা গামছা দিতে হবে,একজনের থেকে অন্যজনের দু গজ দূরত্ব বজায় রাখা,বারবার হাত ধোওয়া, কোথাও থুতু না ফেলা,পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় সবসময় নজর রাখা এগুলোই করোনা থেকে বাঁচার হাতিয়ার। কখনো কখনো মুখে মাস্ক দিয়ে রাখতে অস্বস্তি হয়, মনে হয় মুখ থেকে মাস্ক সরিয়ে ফেলি।কথাবার্তার সময়, যখন সব থেকে বেশি মাস্কের ব্যবহার প্রয়োজন, সে সময়ই মাস্ক সরিয়ে রাখেন। এই রকম অবস্থায় আমি আপনাদের মনে করিয়ে দেবো ౼আপনি মাস্কের জন্য অস্বস্তি অনুভব করবেন, মনে হবে যে খুলে ফেলি, মুহূর্তের জন্য মনে করার চেষ্টা করুন যে চিকিৎসক, নার্স౼ আমাদের করোনা যোদ্ধাদের কথা মনে করুন, দেখবেন তাঁরা করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা মাস্ক পরে থাকছেন আমাদের বাঁচানোর জন্য ৮ ঘন্টা ১০ ঘন্টা মাস্ক পরে থাকছেন, তো এঁদের কি কষ্ট হয় না! ওঁদের কথা একটু মনে করুন, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে কোনও ক্ষেত্রেই শিথিল হলে চলবে না,কাউকে তা করতে দেওয়াও যাবে না।একদিকে করোনার বিরুদ্ধে সচেতনতা ও সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে, আবার অন্যদিকে ব্যবসা,অফিস,পড়াশোনা যে কাজই আমরা করিনা কেন সেখানেও গতি আনতে হবে, সেখানেও এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে। বন্ধুগণ, করোনার সময়ে আমাদের গ্রামাঞ্চল সারা দেশকে পথ দেখিয়েছে। গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষের, গ্রাম পঞ্চায়েতের নানান কর্মকাণ্ডর খবর পাওয়া যাচ্ছে। জম্মুতে ত্রেবা গ্রাম পঞ্চায়েত আছে, সেখানকার পঞ্চায়েত প্রধান বলবীর কাউর। আমি খবর পেয়েছি, তিনি তাঁর পঞ্চায়েত এলাকায় একটা ত্রিশ বেডের কোয়ারেন্টাইন সেন্টার বানিয়েছেন, পঞ্চায়েত অফিসে আসার রাস্তায় জলের ব্যবস্থা করেছেন, লোকজনের হাত ধুতে যেন অসুবিধে না হয় তার ব্যবস্থা করেছেন। শুধু এটুকু নয়, বলবীরজী ভলেন্টিয়ারদের নিয়ে নিজের কাঁধে স্প্রে পাম্প নিয়ে পঞ্চায়েতের অন্তর্ভুক্ত পুরো এলাকা ও আসেপাশের এলাকা জীবাণুমুক্ত করেছেন। এমনই আরেকজন কাশ্মীরী মহিলা পঞ্চায়েত প্রধান আছেন গান্দরওয়ালের চৌঁটলিবারের জৈতুনা বেগম। জৈতুনা বেগম সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁদের পঞ্চায়েত যেমন করোনার বিরুদ্ধে জবরদস্ত লড়াই চালাবে আবার সেই সঙ্গে উপার্জনের সুযোগও তৈরি করবে। উনি যেমন বিনামূল্যে বিতরণ করেছেন, নিখরচায় রেশনের ব্যবস্থা করেছেন আবার গ্রামবাসীদের শস্যবীজ ও সারও দিয়েছেন,যাতে কিনা চাষীদের ক্ষেতে,খামারে কাজে কোনো অসুবিধে না হয়। বন্ধুগণ, কাশ্মীর থেকে আরেকটা অনুপ্রেরণাজনক ঘটনার কথা জেনেছি, কাশ্মীরের অনন্তনাগের মিউনিসিপ্যাল প্রেসিডেন্ট শ্রীমান মোহাম্মদ ইকবাল। ওঁর নিজের এলাকায় জীবাণুমুক্ত করার জন্য স্প্রেয়ারের প্রয়োজন ছিলো এবং উনি বুঝতে পেরেছিলেন স্প্রেয়ার অন্য জায়গা থেকে আনাতে হবে এবং তার দাম পড়বে কমসে কম ছ’ লাখ টাকা, মোহাম্মদ ইকবাল কি করলেন౼ নিজেরাই স্প্রেয়ার বানিয়ে ফেললেন এবং খরচ হলো মাত্র ৫০,০০০ টাকা। এরকম আরও কতো যে উদাহরণ রয়েছে, দেশের বিভিন্ন কোন থেকে এসে হাজির হচ্ছে, প্রত্যেকেই অভিনন্দন যোগ্য। প্রতিবন্ধকতা এসেছে কিন্তু মানুষ সর্ব শক্তি দিয়ে তার মোকাবিলাও করে চলেছেন।
আমার প্রিয় দেশবাসীরা, সঠিক পদক্ষেপ, সদর্থক পদক্ষেপ নিতে পারলে বিপদের সময় অনেক উপকার হয়। এই করোনার সময়ে দেখা গেলো আমাদের যুবসমাজ,নারী সমাজ নিজেদের মেধা ও দক্ষতার নতুন নতুন প্রয়োগ করেছেন। যেমন, বিহারের অনেক মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী মধুবণি পেইন্টিং দিয়ে মাস্ক বানানো শুরু করেছে। আর দেখতে দেখতে সেই মাস্ক অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছে। একদিকে এই মাস্ক. যেমন শিল্পকলার সাবেক ঐতিহ্যকে পরিচিত করাচ্ছে আবার স্বাস্থ্য সুরক্ষার সঙ্গে উপার্জনের পথ-ও দেখাচ্ছে। আপনারা জানেন উত্তরপূর্ব অঞ্চলে প্রচুর বাঁশ হয়,সেই বাঁশ থেকে ত্রিপুরা, মণিপুর, অসমের কারিগররা কি দারুণ উচ্চমানের জলের বোতল ও টিফিন বাক্স তৈরি শুরু করেছেন। এগুলোর গুনমান দেখলে আপনি বিশ্বাসই করতে পারবেন না যে বাঁশ দিয়ে তৈরি করা বোতল এত চমৎকার হতে পারে। উপরন্তু এগুলি পরিবেশবান্ধবও বটে। এগুলো যখন তৈরি হয়, বাঁশ ব্যবহার করার আগে নিম ও অন্যান্য ঔষধীর সঙ্গে সেদ্ধ করা হয়, যাতে এর মধ্যে ঔষধের গুন পাওয়া যায়। ছোট ছোট স্থানীয় উৎপাদন থেকে কি করে বড় সাফল্য পাওয়া যায় তার উদাহরণ আমরা ঝাড়খণ্ডে দেখেছি। ঝাড়খণ্ডের বিশুনপুর গ্রামে তিরিশটির বেশি গোষ্ঠী মিলে লেমনগ্রাসের চাষ করছে। লেমনগ্রাস মাত্র চার মাসে তৈরি হয়ে যায় এবং এর তেল বাজারে ভাল দামে বিক্রি হয়। আজকাল এর প্রচুর চাহিদাও আছে। আমি দেশের দুটি অঞ্চলের কথা বলতে চাই। এই দুটি জায়গা পরস্পরের থেকে হাজারো কিলোমিটার দূরে কিন্তু ভারতকে আত্মনির্ভর বানাতে অভিনব কৌশল অবলম্বন করেছে। এই দুই জায়গা – এক হল লাদাখ আর অন্যটি হল কচ্ছ। লেহ লাদাখের নাম শুনলেই সু-উচ্চ পাহাড় আর নয়নাভিরাম পার্বত্য অঞ্চলের দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে ওঠে, হিমেল হাওয়ার স্পর্শ অনুভব করতে পারা যায়। আর কচ্ছ মানে দিগন্তবিস্তৃত ধুধু মরুভূমি, কোথাও কোন উদ্ভিদের চিহ্ন নেই। লাদাখে এক বিশেষ ধরনের ফল পাওয়া যায়, যার নাম চুলি বা অ্যাপ্রিকট। এর চাষ এলাকার অর্থনিতির আমূল পরিবর্তন করতে পারে কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সরবরাহ শৃঙ্খল, খারাপ আবহাওয়া প্রভৃতি নানা সমস্যায় জেরবার হতে থাকে এর ফলন। ফলনের যাতে ন্যূনতম ক্ষতি হয় তাই আজকাল এক নতুন উদ্ভাবনের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। এটি একটি দ্বৈত ব্যবস্থা, যার নাম হল, সোলার অ্যাপ্রিকট ড্রায়ার ও হিটিং সিস্টেম। এটি আপ্রিকট ও অন্যান্য ফল প্রয়োজন মত ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে শুকাতে পারে। আগে যখন আপ্রিকট ফল ক্ষেতের পাশে শুকানো হত, তখন অনেক ফল নষ্ট ত হতই, ধুলো, ময়লা, জলের জন্যে তার গুনমানও খারাপ হত। অন্যদিকে, কচ্ছতে ড্রাগন ফলের চাষ করার জন্য প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। অনেকেই শুনে অবাক হন- কচ্ছ আর ড্রাগনফল। কিন্তু আজকাল সেখানে বহু চাষীভাই এই কাজের সাথে যুক্ত এবং কম জমিতে কি করে বেশি ফলন সম্ভব হয় সেই নিয়ে নানা রকম উদ্ভাবনও হচ্ছে। আমি জানতে পেরেছি ড্রাগনফলের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। কচ্ছের চাষীভাইদের সংকল্প যে দেশকে যেন ড্রাগনফলের আমদানি না করতে হয় – একেই ত বলে আত্মনির্ভরশীল হওয়া।
বন্ধুরা, যখন আমরা কিছু নতুন করার কথা ভাবি, উদ্ভাবনের বিষয়ে চিন্তা করি, তখন এমন কাজ ও সম্ভব হয় যা আমরা আগে কখনো ভাবিনি। যেমন ধরুন বিহারের কিছু যুবক, যারা সামান্য চাকরি করত। একদিন তারা সিদ্ধান্ত নেয় তারা পার্ল মানে মুক্তোর চাষ করবে। ওদের অঞ্চলের লোকেদের এই বিষয় খুব একটা জানা ছিল না। এরা আগে সমস্ত খবরাখবর নেয়, জয়পুর ও ভুবনেশ্বর গিয়ে প্রশিক্ষণ ও নেয়। তারপর নিজেদের গ্রামেই চাষ আরম্ভ করে। আজ এরা নিজেরা যথেষ্ট রোজগার তো করছেনই উপরন্তু এরা অন্য রাজ্য থেকে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের মুজফফরপুর, বেগুসরাই ও পাটনাতে প্রশিক্ষণ দেওয়াও শুরু করেছে। বহু মানুষের এর ফলে আত্মনির্ভর হওয়ার পথ খুলে গেছে।
বন্ধুরা, আর কয়েকদিন পর রাখীবন্ধনের পবিত্র উৎসব আসবে। আমি দেখছি, বেশ কিছু মানুষ ও সংস্থা এবারের রাখীবন্ধন উৎসব অন্যরকম ভাবে পালন করার পরিকল্পনা করছেন। কিছু মানুষ একে ভ্যোকাল ফর ল্যোকাল এর সঙ্গেও যুক্ত করছেন। কথাটা ঠিকই। আমাদের উৎসব, পালা পার্বণে আমাদের কাছাকাছি লোকেদের ব্যবসার উন্নতি হলে, তাদের উৎসব সার্থক হলে তবেই ত আমরাও উৎসবকে যথার্থ উপভোগ করতে পারি। সমস্ত দেশবাসীকে রাখীবন্ধনের অনেক অনেক শুভকামনা।
বন্ধুরা, সাতই আগস্ট ন্যাশনাল হ্যান্ডলুম ডে। আমাদের হ্যান্ডলুম ও হস্তশিল্প হাজারো বছরের গৌরবজ্জল ইতিহাসের উজ্জ্বল নিদর্শন। আমাদের উচিৎ এর যত বেশি সম্ভব ব্যবহার ও প্রচার। ভারতের হ্যান্ডলুম ও হ্যান্ডিক্রাফট কত সমৃদ্ধ, কত রকমের এই বিষয়ে দুনিয়ার মানুষে যত জানবে, ততই আমাদের স্থানীয় কারিগর ও তাঁতশিল্পীরা উপকৃত হবে।
বন্ধুরা, বিশেষ করে আমার যুবসম্প্রদায়ের বন্ধুরা, আমাদের দেশ বদলাচ্ছে। কিভাবে বদলাচ্ছে? কত শীঘ্র বদলাচ্ছে? কোন কোন ক্ষেত্রে বদলাচ্ছে? এক সদর্থক দৃষ্টি দিয়ে দেখলে আমরা নিজেরাই হতবাক হয়ে যাব। একটা সময় ছিল যখন খেলাধুলা হোক বা অন্য ক্ষেত্র, অধিকাংশ লোক হয় বড় বড় শহর থেকে হতেন, নাহলে নামিদামি স্কুল কলেজ থেকে, নাহলে হতেন ধণী, সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য। এখন দেশে পরিবর্তন হচ্ছে। গ্রাম তথা ছোট শহর থেকে, সামান্য পরিবার থেকেও যুবকযুবতীরা এগিয়ে আসছেন, সাফল্যের শিখরে পৌঁছচ্ছে্ন। এরা বহু বাধাবিপত্তি সত্তেও নিজেদের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করছেন। এরকমই কিছু উদাহরণ আমরা সম্প্রতি বোর্ড পরীক্ষার ফলাফলে দেখতে পেয়েছি।
আজ 'মন কি বাত'-এ আমরা এমন কিছু প্রতিভাবান ছেলে-মেয়ের সঙ্গে কথা বলবো। এমনি এক প্রতিভাবান মেয়ে কৃত্তিকা নান্দল। কৃত্তিকা হরিয়ানার পানীপথের বাসিন্দা।
মোদী জী – হ্যালো, কৃত্তিকা, নমস্কার।
কৃত্তিকা – নমস্কার স্যার।
মোদী জি – এতো ভাল ফলাফলের জন্য আপনাকে অনেক অনেক অভিনন্দন।
কৃত্তিকা – ধন্যবাদ স্যার।
মোদী জী – এই কয়েক দিন ধরে আপনি ফোন কলে এতো শুভেচ্ছাবার্তা পেয়েছেন যে ক্লান্ত হয়ে গেছেন তাই না? প্রচুর ফোন কল পেয়েছেন নিশ্চয়ই।
কৃত্তিকা – হ্যাঁ স্যার।
মোদী জি – এবং যারা শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন আপনাকে তারাও নিশ্চই গর্ববোধ করেন যে তারা আপনার পরিচিত। কেমন অনুভূতি হচ্ছে আপনার?
কৃত্তিকা – স্যার খুব ভাল লাগছে। আমার অভিভাবকরা আমাকে নিয়ে গর্বিত দেখে আমারও গর্ববোধ হচ্ছে।
মোদী জি – আচ্ছা, আপনার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা কে?
কৃত্তিকা – স্যার, আমার মা আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।
মোদী জী – বাহ, আচ্ছা, আপনি আপনার মায়ের কাছ থেকে কী শিখছেন ?
কৃত্তিকা – স্যার তিনি তার জীবনে এতো কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে গেছেন, তবুও তিনি হাল ছাড়েননি। তিনি খুব সাহসী। আমি তার থেকেই অনুপ্রেরণা পাই, তার মতোই হতে চাই।
মোদী জী – আপনার মা কতদূর পড়াশুনো করেছেন ?
কৃত্তিকা – স্যার, বিএ পাস করেছেন ।
মোদী জী – আচ্ছা বিএ।
কৃত্তিকা – হ্যাঁ স্যার।
মোদী জী- আচ্ছা। তাহলে তো উনি নিশ্চই আপনাকে পড়ান ?
কৃত্তিকা – স্যার। সমাজে কিভাবে চলতে হয়, সে সম্পর্কে উনি আমাকে শেখান।
মোদী জী- উনি আপনাকে বকাঝকা করেন?
কৃত্তিকা – হ্যাঁ স্যার, বকাঝকাও করেন ।
মোদী জী- আচ্ছা ভবিষ্যতে আপনি কি করতে চান ?
কৃত্তিকা – স্যার, আমি চিকিত্সক হতে চাই।
মোদী জী- আরে বাহ্ !
কৃত্তিকা – এম. বি. বি. এস. করতে চাই।
মোদী জী- ডাক্তার হওয়া সহজ কাজ নয়।
কৃত্তিকা – হ্যাঁ স্যার।
মোদী জী – ডিগ্রি তো আপনি পেয়ে যাবেন কারণ আপনি খুবই মেধাবি। কিন্তু, একজন চিকিত্সকের জীবন বেশ কঠিন, তাকে সমাজের প্রতি সমর্পিত হতে হয়।
কৃত্তিকা – হ্যাঁ স্যার।
মোদী জী – নিশ্চিন্তে রাতে ঘুমাতে পারবেন না, শান্তিতে থাকতে পারবেন না।
কখনও কখনও রাত বিরেতে কোনও রোগীর কল আসে, তারপরে হাসপাতাল থেকে ফোন কল আসে। তখন হাসপাতালে দৌড়াতে হবে। ২৪ ঘণ্টা, তিনটি পঁয়ষট্টি দিনই ডাক্তার এর কাজ থাকে। ডাক্তার জনগণের সেবায় সমর্পিত প্রাণ ।
কৃত্তিকা- হ্যাঁ স্যার।
মোদী জী – এবং জীবনের ঝুঁকিও রয়েছে, কেন আপনি কখনই জানেন না, আজকাল এতো ধরণের রোগ রয়েছে, তার চিকিৎসা করতে গেলে প্রাণের আশঙ্কা তো হতেই পারে ।
কৃত্তিকা- সেটা ঠিক স্যার।
মোদী জী – আচ্ছা কৃত্তিকা, হরিয়ানা তো খেলাধুলায় গোটা দেশের কাছে একটি অনুপ্রেরণাদায়ক রাজ্য।
কৃত্তিকা- হ্যাঁ স্যার।
মোদী জি – তা আপনিও কোন খেলাতে অংশ নেন নাকি?খেলাধুলাতে আগ্রহ আছে আপনার?
আপনার কি কোন খেলাধুলো পছন্দ?
কৃত্তিকাঃ- স্যার, স্কুলে বাস্কেটবল খেলতাম।
মোদী জীঃ- আচ্ছা, আপনার উচ্চতা কত? আপনি লম্বা?
কৃত্তিকাঃ- না স্যার, পাঁচ ফুট দুই আমি।
মোদী জীঃ- আচ্ছা তাহলে আপনার খেলার প্রতি ভাললাগা আছে?
কৃত্তিকাঃ- স্যার, ওটা তো শুধুমাত্র একটা প্যাশন, সেই জন্যে খেলি।
মোদী জীঃ- আচ্ছা, আচ্ছা, তাহলে চলুন কৃত্তিকা, আমার তরফ থেকে আপনার মা কে প্রণাম জানাবেন, উনি আপনাকে এরকম যোগ্য করে তুলেছেন, আপনার জীবন গঠন করেছেন। আপনার মা কে প্রণাম এবং আপনাকে অনেক-অনেক অভিনন্দন, অনেক-অনেক শুভকামনা।
কৃত্তিকাঃ- ধন্যবাদ, স্যার।
চলুন এবার আমরা যাই কেরালার এরনাকুলামে। কেরালার এক যুবকের সঙ্গে কথা বলতে।
মোদী জীঃ- হ্যালো।
বিনায়কঃ- হ্যালো স্যার, নমস্কার।
মোদী জীঃ- তাহলে বিনায়ক, অভিনন্দন।
বিনায়কঃ- হ্যাঁ, ধন্যবাদ স্যার।
মোদী জীঃ- শাবাশ বিনায়ক, শাবাশ।
বিনায়কঃ- হ্যাঁ, ধন্যবাদ স্যার।
মোদী জীঃ- হাউ ইস যোশ?
বিনায়কঃ –হাই স্যর.
মোদী জীঃ- আপনি কি কোন খেলাধুলোর সঙ্গে যুক্ত?
বিনায়কঃ- ব্যাডমিন্টন।
মোদী জীঃ- ব্যাডমিন্টন।
বিনায়কঃ- হ্যাঁ,ইয়েস.
মোদী জীঃ- আপনি কি স্কুলেই খেলেন, নাকি অন্য কোথাও থেকে কোন প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন?
বিনায়কঃ- না স্কুলেই আমরা কিছু প্রশিক্ষণ পেয়েছি।
মোদী জী:- হুম, হুম।
বিনায়কঃ- আমাদের শিক্ষকদের থেকে।
মোদী জী:- হুম, হুম।
বিনায়কঃ- যাতে আমরা বাইরে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাই।
মোদী জীঃ- দারুণ।
বিনায়কঃ- স্কুল থেকেই পেয়েছি।
মোদী জীঃ- আপনি কটা রাজ্যে গেছেন?
বিনায়কঃ- আমি কেবলমাত্র কেরল এবং তামিলনাড়ুতে গেছি।
মোদী জীঃ- শুধু কেরল এবং তামিলনাড়ু।
বিনায়কঃ- হ্যাঁ স্যার।
মোদী জীঃ- তাহলে আপনার কি দিল্লী আসার সুযোগ পেলে ভাল লাগবে?
বিনায়কঃ- হ্যাঁ স্যার, এখন আমি দিল্লি ইউনিভার্সিটিতে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করছি।
মোদী জীঃ- বাহ, আপনি তাহলে দিল্লী আসছেন?
বিনায়কঃ- হ্যাঁ স্যার।
মোদী জীঃ- আচ্ছা আমায় বলুন, যে সব সহপাঠীরা ভবিষ্যতে বোর্ডের পরীক্ষা দেবেন তাদের জন্য কী আপনার কোন বার্তা আছে?
বিনায়কঃ- কঠোর পরিশ্রম এবং সময়ের সদ্ব্যবহার।
মোদী জীঃ- তার মানে সময়ের একদম সঠিক ব্যবস্থাপনা।
বিনায়কঃ- হ্যাঁ স্যার।
মোদী জীঃ- বিনায়ক, আমি আপনার শখগুলি জানতে চাই।
বিনায়কঃ- ব্যাডমিন্টন এবং রোইং।
মোদি জি: আপনি কি সোশ্যাল মিডিয়াতে সক্রিয়?
বিনায়ক: না আমাদের স্কুলে ইলেকট্রনিক্স আইটেম এবং গেজেট ব্যবহার করার অনুমতি নেই।
মোদি জি: তাহলে তো আপনি সৌভাগ্যবান!
বিনায়ক: হ্যাঁ স্যার।
মোদি জি: খুব ভালো বিনায়ক। আপনাকে অনেক শুভকামনা এবং উইশ ইউ অল দ্যা বেস্ট।
বিনায়ক: থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।
চলুন এবার উত্তরপ্রদেশে যাওয়া যাক। উত্তরপ্রদেশে অমরোহার শ্রীমান উসমান সৈফির সঙ্গে কথা বলা যাক।
মোদীজি: হ্যালো উসমান। আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
উসমান: ধন্যবাদ স্যার
মোদি জি: আচ্ছা উসমান আপনি বলুন আপনি যেমনটি চেয়ে ছিলেন ঠিক তেমনই রেজাল্ট হয়েছে নাকি প্রত্যাশার থেকে কিছুটা কম পেয়েছেন?
উসমান: না, আমি ঠিক যেমন চেয়েছিলাম, তেমনই হয়েছে। আমার বাবা-মাও খুব খুশী।
মোদী জী – বাহ, খুব ভালো। আচ্ছা পরিবারে আপনার ভাইয়েরাও কি আপনার মতই প্রখর মেধাবী নাকি আপনি একাই এত মেধাবী?
উসমান: না, কেবল আমিই , আমার ভাই একটু চঞ্চল প্রকৃতির।
মোদি জি: হা হা হা ( হাসি)
উসমান: পরিবারের বাকিরা আমায় নিয়ে খুব খুশীই।
মোদি জি: আচ্ছা, তাই নাকি! আচ্ছা পড়াশোনা করার সময় আপনার প্রিয় বিষয় কি ছিল?
উসমান: ম্যাথামেটিক্স( গণিত বিদ্যা)
মোদি জি: বাহ বাহ! তাহলে অংক করতে নিশ্চয়ই ভালো লাগতো? কি কারণে? কোন শিক্ষক কী আপনাকে অনুপ্রাণিত করেছিল?
উসমান: হ্যাঁ, আমাদের এক সাবজেক্ট টিচার রজত স্যার!উনি আমাকে উৎসাহিত করেছিলেন এবং উনি খুব ভালো পড়ান, আর তাছাড়া শুরু থেকেই ম্যাথামেটিক্স আমার খুব ভালো লাগতো কারণ ম্যাথামেটিক্স একটা ভীষণ ইন্টারেস্টিং বিষয়।
মোদি জি: হুম, হুম।
উসমান: যত বেশি অংক করি তত বেশী আগ্রহ জন্মায় ঠিক এই কারণেই এটা আমার ফেভারিট সাবজেক্ট।
মোদীজি: হুম, আপনি কি জানেন একটা অনলাইন "বৈদিক ম্যাথমেটিক্স" এর ক্লাস চলছে?
ওসমান: হ্যাঁ স্যার।
মোদি জি: আচ্ছা আপনি কি কখনো এটি ট্রাই করেছেন?
উসমান: না স্যার এখনো করা হয়নি।
মোদি জি: আপনি দেখবেন, আপনার বন্ধু-বান্ধবের মনে হবে আপনি যেন জাদুকর, কারণ বৈদিক ম্যাথামেটিক্সের সাহায্যে আপনি কম্পিউটারের স্পিডে গণনা করতে পারবেন। খুবই সরল পদ্ধতি, আর এখন তা অনলাইনেও সহজলভ্য।
উসমান: হ্যাঁ, স্যার।
মোদিজী: যেহেতু আপনার গণিতশাস্ত্রে আগ্রহ আছে ফলে অনেক নতুন নতুন জিনিস আপনি দিতে পারেন।
উসমান: হ্যাঁ, স্যার।
মোদিজী: উসমান, আপনি অবসর সময় কী করেন?
উসমান: অবসর সময় আমি কিছু না কিছু লিখি। লেখার প্রতি আমার খুব আগ্রহ রয়েছে।
মোদিজী: আরে বাঃ! অর্থাৎ আপনি গণিতশাস্ত্রেও আগ্রহী আবার সাহিত্যেও আগ্রহী?
উসমান: হ্যাঁ, স্যার।
মোদিজী: কী লেখেন আপনি? কবিতা, শায়েরী…?
উসমান: কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স সম্পর্কিত যেকোনো বিষয় নিয়ে লিখি।
মোদিজী: আচ্ছা!
উসমান: নতুন নতুন তথ্য জানা যায়। যেমন জিএসটি চালু হওয়া বা আমাদের নোট বন্দি সবকিছু।
মোদিজী: আরে বাঃ! তা আপনি কলেজে পড়ার জন্য ভবিষ্যত পরিকল্পনা তৈরি করছেন?
উসমান: স্যার আমার জিইই মেন-এর ফার্স্ট টাইম আটেম্প্ট হয়েছে আর এখন আমি সেপ্টেম্বরে সেকেন্ড আটেম্পট এ বসব। আমার মূল লক্ষ্য আমি প্রথমে আইআইটি থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেব, তারপর সিভিল সার্ভিসে যাব এবং একজন আইএএস হব।
মোদিজী: আরে বাঃ! আচ্ছা আপনার কি টেকনোলজিতেও আগ্রহ আছে?
উসমান: হ্যাঁ, স্যার। সেজন্য আমি প্রথম বার বেস্ট আই আই টি-র তথ্য প্রযুক্তি বেছে নিয়েছি।
মোদি জী: আচ্ছা ওসমান, আমার তরফ থেকে অনেক শুভেচ্ছা। আপনার ভাইয়ের দুষ্টুমিতে আপনার সময় নিশ্চয়ই ভালো কাটবে। আপনার বাবা-মাকে আমার তরফ থেকে প্রণাম জানাবেন। তারা আপনাকে এভাবে সুন্দর সুযোগ দিয়েছেন, আপনার মনোবল বাড়িয়েছেন। আর আমার এটা জেনে ভালো লাগছে যে আপনি পড়াশোনার পাশাপাশি সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়েও পড়াশোনা, চর্চা করছেন এবং লিখছেনও। দেখুন লেখার উপকার হল যে তাতে আপনার বিচারবোধে তীক্ষ্ণতা আসে। অনেক ভালো গুণ আছে লেখার। আচ্ছা, তাহলে অনেক অনেক অভিনন্দন আমার তরফ থেকে।
উসমান: ধন্যবাদ, স্যার।
আসুন, চলুন এবার একদম নিচে দক্ষিণে যাওয়া যাক। তামিলনাড়ুর নামাক্কলের কন্যা কনিগ্গার সঙ্গে কথা বলি, আর কনিগ্গার কথা তো খুবই উৎসাহব্যঞ্জক!
মোদিজী: কনিগ্গা জী, (বানাক্কাম) নমস্কার!
কনিগ্গা: (বানাক্কাম) নমস্কার স্যার।
মোদিজী: কেমন আছেন?
কনিগ্গা: ভালো, স্যার।
মোদীজি- প্রথমেই জানাই অভিনন্দন তোমাকে দুর্দান্ত সাফল্যের জন্য।
কনিগ্গা- ধন্যবাদ স্যার।
মোদিজি- আমি যখনই নামাক্কাল জায়গাটার নাম শুনি, আমার অঞ্জনেয়ার মন্দিরের কথা মনে পড়ে।
কনিগ্গা- হ্যাঁ স্যার।
মোদীজি- এবার থেকে তোমার সঙ্গে আলাপ হওয়ার দিনটাও মনে পড়বে।
কনিগ্গা- হ্যাঁ স্যার।
মোদী জী- আবারও তোমাকে অভিনন্দন জানাই।
কনিগ্গা- অনেক ধন্যবাদ স্যার।
মোদীজী- তুমি পরীক্ষার জন্য খুবই পরিশ্রম করেছো, কেমন ছিল সেই প্রস্তুতির অভিজ্ঞতা?
কনিগ্গা- স্যার, আমরা প্রথম দিন থেকেই পরিশ্রম করছি, আমি এইরকম কিছু আশা করিনি, কিন্ত আমি ভালো লিখেছিলাম, তাই ভালো ফল হয়েছে।
মোদী জী- তুমি কিরকম আশা করেছিলে?
কনিগ্গা- চারশো পঁচাশি কিংবা চারশো ছিয়াঁশি, এইরকম কিছু একটা ভেবেছিলাম।
মোদী জী- আর এখন?
কনিগ্গা- চারশো নব্ব্ই।
মোদী জী- তাহলে এখন, তোমার পরিবারের লোকেদের, তোমার শিক্ষকদের, প্রতিক্রিয়া কেমন?
কনিগ্গা- তাঁরা, সবাই খুব খুশি, খুবই গর্বিত।
মোদী জি- তোমার প্রিয় বিষয় কি?
কনিগ্গা-অঙ্ক।
মোদী জী- ওহহ! তোমার ভবিষ্যতের পরিকল্পনা কি?
কনিগ্গা- আমি ডাক্তার হতে চাই, যদি সম্ভব হয় তাহলে এএফএমসি মানে, সশস্ত্র বাহিনীর মেডিক্যাল কলেজে পড়তে চাই।
মোদী জী- তোমার পরিবারে আর কেউ ডাক্তার না অন্য কোনো পেশার সঙ্গে যুক্ত?
কনিগ্গা- না স্যার, আমার বাবা একজন ড্রাইভার, কিন্ত আমার দিদি ডাক্তারী পড়ছে।
মোদী জী- আরে বাহ! তাহলে তো আমি প্রথমে তোমার বাবাকে জানাই প্রণাম। তিনি তোমার দিদির এবং তোমাকে খুবই যত্ন করে বড়ো করছেন। তিনি অত্যন্ত ভালো কাজ করছেন।
কনিগ্গা- হ্যাঁ স্যার।
মোদী জী- আর তিনি প্রত্যেকের জন্য অনুপ্রেরণা।
কনিগ্গা- হ্যাঁ স্যার।
মোদী জী- তাহলে আবার তোমাকে, তোমার দিদি কে, তোমার বাবাকে, তোমার পরিবারকে জানাই অনেক অভিনন্দন।
কনিগ্গা- অনেক ধন্যবাদ স্যার।
বন্ধুগণ, এইরকম আরও কতো যুব বন্ধু আছে, যাঁদের মনের জোর, সফলতার কাহিনী আমাদের কঠিন পরিস্থিতিতেও অনুপ্রেরণা দেয়। আমার ইচ্ছে ছিল যত বেশি সংখ্যক যুব বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু সময়েরও নিজস্ব সীমা আছে। আমি সকল তরুণ-তরুণী বন্ধুদের অনুরোধ করছি যে তারা যেন নিজেদের জীবনের অনুপ্রেরণামূলক ঘটনাবলী যা দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে, নিজেদের ভাষায় আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নেয়।
আমার প্রিয় দেশবাসী, সাত সমুদ্র পারে, ভারতবর্ষ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে, 'সুরিনাম' নামে একটি ছোট দেশ আছে। 'সুরিনামের' সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খুবই গভীর। প্রায় একশ বছরেরও সময় আগে, ভারত থেকে মানুষজন ওই দেশে গিয়েছিল এবং সেই দেশকেই আপন করে নিয়েছিল। কত মানুষের চতুর্থ, পঞ্চম প্রজন্মও ওখানে আছে। আজ সুরিনামের প্রায় এক চতুর্থাংশেরও বেশি মানুষ ভারতীয় বংশোদ্ভুত। আমরা কি জানি যে ওই দেশের সাধারণ ভাষা গুলির মধ্যে একটি ভাষা 'সরনামি', যা আসলে ভোজপুরি ভাষারই এক প্রকার রূপান্তর। এই ধরনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য আমরা ভারতীয়রা গর্ব অনুভব করি। সাম্প্রতিককালে শ্রী চন্দ্রিকা প্রসাদ সন্তোখী 'সুরিনামের' নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। উনি ভারতের বন্ধু এবং উনি ২০১৮এ আয়োজিত ভারতীয় বংশোদ্ভুতদের সাংসদ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। শ্রী চন্দ্রিকা প্রসাদ সন্তোখী নিজের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান বেদ মন্ত্র উচ্চারণ এর মাধ্যমে শুরু করেছিলেন। সেটা সংস্কৃত ভাষায় উচ্চারণ করেছিলেন। উনি বেদের উল্লেখ করে "ওম শান্তি শান্তি শান্তি" বলার মাধ্যমে নিজের শপথগ্রহণ সম্পন্ন করেছিলেন। নিজের হাতে বেদ নিয়ে তিনি বলেছিলেন "আমি চন্দ্রিকা প্রসাদ সন্তোখী", তারপর উনি কি বলেছিলেন জানেন আপনারা ? উনি বেদের অন্তর্গত একটি শ্লোক উচ্চারণ করেছিলেন। উনি বলেছিলেন-
"ওম অগ্নে ব্রতপতে ব্রতম্ চরিষ্যামি তচ্ছকেয়ম তন্মে রাধ্যতাম।
ইদমহমনৃতাত সত্যমুপৈমি।"
অর্থাৎ, "হে অগ্নি, সংকল্পের দেবতা, আমি একটি প্রতিজ্ঞা করছি। আমায় এর জন্য শক্তি ও সামর্থ্য প্রদান করুন। আমায় অসত্যের থেকে দূরে থাকার এবং সত্যের কাছে যাওয়ার আশীর্বাদ প্রদান করুন"। সত্যিই এটা আমাদের সকলের কাছে খুবই গৌরবান্বিত হওয়ার বিষয়। আমিও শ্রী চন্দ্রিকা প্রসাদ সন্তোখী কে অভিনন্দন জানাচ্ছি, আর নিজের দেশের সেবা করার জন্য ১৩০ কোটি ভারতবাসীর তরফ থেকে শুভকামনা জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এটা বর্ষা ঋতুর সময়। গতবারে আমি আপনাদের বলেছিলাম যে বর্ষাকালে বিভিন্ন আবর্জনা ও তাদের থেকে ছড়িয়ে পড়া রোগের প্রকোপ বাড়ছে। হাসপাতালেও ভিড় বাড়ছে। তাই আপনারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে বিশেষ নজর দিন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বর্ধনকারী খাবার, আয়ুর্বেদিক ঔষধি খেতে থাকুন। এই করোনা সংক্রমনের সময় অন্যান্য রোগ থেকেও দূরে থাকুন। আমাদের যাতে হাসপাতালে না যেতে হয়, সেটা আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
বন্ধুরা, বর্ষাকালে দেশের একটা বড় অংশের মানুষ বন্যার সঙ্গেও লড়াই করছেন। বিহার, অসমের মত রাজ্য গুলোতে বন্যার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ একদিকে করোনা সংক্রমণ, অন্যদিকে এই ধরনের কঠিন পরিস্থিতি রয়েছে। এই সময় সমস্ত রাজ্যের সরকার, এনডিআরএফ এর সদস্যরা, রাজ্যের আপতকালীন নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সদস্যরা, বিভিন্ন সমাজসেবী সংস্থা সকলে একসঙ্গে মিলে এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য লড়াই করছেন। সমগ্র দেশ এই ধরনের জরুরী কালীন পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের পাশে আছে।
বন্ধুরা, পরের মন কি বাত এ আমাদের দেখা হওয়ার আগেই ১৫ ই আগস্ট আসছে। এইবার ১৫ ই আগস্টও অন্য রকম পরিস্থিতিতে পালন হবে। করোনা মহামারীর জরুরীকালীন অবস্থার মধ্যেই পালন হবে।
আমার সমস্ত যুবকযুবতী বন্ধুদের কাছে, সমগ্র দেশবাসীর কাছে অনুরোধ যে, আমরা স্বাধীনতা দিবসে এই মহামারী থেকে মুক্তির প্রতিজ্ঞা নিই। আত্মনির্ভর ভারতের সংকল্প নিই। কিছু নতুন শেখার ও শেখানোর প্রতিজ্ঞা নিই। আমাদের কর্তব্য পালনের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকি। আমাদের দেশ আজ যে উচ্চতার শিখরে পৌঁছেছে, তা অনেক মহান ব্যক্তির তপস্যার ফল, যাঁরা দেশ গঠনের জন্য নিজেদের জীবনের বলিদান দিয়েছিলেন। সেইরকম মহান মানুষদের মধ্যে একজন ছিলেন লোকমান্য তিলক। ১লা আগস্ট ২০২০তে লোকমান্য তিলকের শততম মৃত্যুবার্ষিকী। ওঁর জীবন আমাদের সকলের জন্য অনুপ্রেরণা, আমাদের প্রত্যেককেই কিছু শেখায়। এর পরে যখন আমাদের দেখা হবে, আবার অনেক কথা বলবো। একসঙ্গে মিলে কিছু নতুন শিখব ও সেটা সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেব। আপনারা সবাই নিজের খেয়াল রাখবেন। নিজেদের পরিবারের খেয়াল রাখবেন। সুস্থ থাকুন। সমস্ত দেশবাসীকে আগামী উৎসবের দিনগুলোর জন্যে অনেক শুভকামনা জানাই। অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। ২০২০ তে ‘মন কী বাত’ অর্ধেক সফর সম্পূর্ণ করল। এপর্যন্ত আমরা অনেক বিষয়ে আলোচনা করেছি। স্বাভাবিকভাবেই যে ভয়ংকর মহামারী উপস্থিত, মানব সভ্যতার উপর যে সংকট ছেয়ে আছে, স্বাভাবিকভাবেই সেই বিষয়ে কথা বেশী হয়েছে। কিন্থ ইদানীং দেখছি, লোকজন ক্রমাগত এটাই আলোচনা করছে যে কবে এই বছরটা শেষ হবে। কাউকে ফোন করলেও কথাবার্তা শুরুই হচ্ছে এই বলে এই বছরটা যেন তাড়াতাড়ি কাটে। কেউ কেউ লিখছে বা বন্ধুদের সাথে কথা বলছে, সেখানেও একই কথা – এই বছরটা ভাল নয়, ২০২০ শুভ নয়। সকলে এটাই চায় এই বছরটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কেটে যাক।
বন্ধুরা, আমি মাঝে মাঝে ভাবি যে, এরকম কেন হল, কেন হচ্ছে। হতে পারে এসবের পেছনে কোনো কারন আছে। ৬-৭ মাস আগেও কি আমরা জানতাম যে করোনার মত ভয়ংকর মহামারী আসবে আর তার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইটা এত লম্বা হবে। এই সংকট তো আছেই, তার উপর আরও তিন তিনটি সমস্যার মোকাবিলা করতে হল আমাদের। কিছুদিন আগে দেশের পূর্বাঞ্চলে সাইক্লোন উমপুন এল, পশ্চিম প্রান্তে সাইক্লোন নিসর্গ। বহু রাজ্যে চাষী ভাইরা পঙ্গপালের আক্রমণে ব্যতিব্যাস্ত। আবার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়েই চলেছে। আর এ সবের মধ্যেই আমাদের প্রতিবেশীরা যা করছে, দেশকে সেইসব সমস্যারও মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সত্যি, একসঙ্গে এতগুলো বিপদ, তাও এইমাপের, খুব কমই দেখা বা শোনা যায়। এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে সামান্য কিছু ঘটলেও এখন মানুষ তাকে এই সমস্ত বিপদের সাথে জুড়ে দিচ্ছে।
বন্ধুরা, সমস্যা আসে, সংকট আসে কিন্তু প্রশ্ন হলো এইসব কারনে কি ২০২০কে খারাপ ভাবা উচিত? প্রথম ছয় মাস খারাপ কেটেছে মানে বাকি বছরটাও সেরকমই কাটবে এইটা মেনে নেওয়া কি ঠিক? না নয়। আমার প্রিয় দেশবাসী, একেবারেই নয়। বছরে একটা বিপদ আসুক বা পঞ্চাশটা, সংখ্যার তারতম্য এটা কখনই প্রমান করেনা যে গোটা বছরটা খারাপ। ভারতের ইতিহাস সাক্ষী যে আমরা সব বিপদ আপদের সাথে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি, বরং আরও শক্তিশালী হয়েছি। বহু বছর ধরে ভারতে বহু আক্রমণ হয়েছে, তখন মনে হয়েছে যে ভারতের সভ্যতা ও সংস্কৃতি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু তেমনটা আদৌ হয়নি। ভারত এ সবের মোকাবিলা করে আরও উন্নত রাষ্ট্র হয়ে উঠেছে।
বন্ধুরা, আমাদের এখানে বলা হয় সৃজন শাশ্বত, সৃজন নিরন্তর। আমার একটা গানের কয়েকটি কথা মনে পড়ছে-
কুলকুল ছলছল করে বয়ে চলে কি বলে গঙ্গার ধারা?
যুগ যুগ ধরে চলে আসছে আমাদের পুণ্য প্রবাহধারা।
এই গানটিতে পরের কথাগুলি হল –
আপনি কি পারবেন রুখে দিতে,
রইবার যেটা সেটাই রবে,
নুড়ি-পাথরের মানুষ সব,
কী বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
ভারতেও যেখানে একদিকে বিশাল বিশাল সংকট এসেছে, একই সঙ্গে সমস্ত বাধা অপসারণ করে নিত্য নতুন সৃষ্টিও হয়েছে। নতুন সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছে, নতুন গবেষণাধর্মী কাজ, নতুন তত্ত্ব তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ সংকটের সময়ও প্রতিটি ক্ষেত্রেই সৃষ্টির প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে এবং সংস্কৃতির প্রসার হচ্ছে যাতে দেশ প্রগতির পথে এগিয়ে যেতে পারে। ভারত সবসময় সংকটকে সাফল্যের সিঁড়িতে রূপান্তরিত করেছে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে, আমাদের এই সঙ্কটের মাঝে এগিয়ে যেতে হবে। যদি আপনি এই ধারণাটি নিয়ে এগিয়ে যান, আর ১৩০ কোটি দেশবাসী এগিয়ে যায়, তবেই, এই বছরটি দেশের জন্য একটি ফলপ্রদ বছর হিসাবে প্রমাণিত হবে। এই বছরটি, দেশের সাফল্যের নতুন নজির গড়বে। এই বছরেই দেশ নতুন লক্ষ্যে পৌঁছাবে, নতুন উচ্চতা স্পর্শ করবে। ১৩০ কোটি দেশবাসীর সম্মিলিত শক্তির ওপর, আপনাদের ওপর, এবং এই দেশের গৌরবময় ঐতিহ্যের উপর আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে। আমার প্রিয় দেশবাসী, সংকট যত বড়ই হোক না কেন, ভারতের সংস্কৃতি নিঃস্বার্থভাবে সেবা করার অনুপ্রেরণা জাগায়। ভারত যেভাবে কঠিন সময়ে বিশ্বকে সাহায্য করেছে, আজ তা শান্তি ও উন্নয়নে ভারতের ভূমিকাকে আরও জোরদার করেছে। এই সময়কালে বিশ্ব ভারতের ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে অনুভব করেছে এবং এর পাশাপাশি নিজের সার্বভৌমত্ব ও সীমান্ত রক্ষায় ভারতের শক্তি এবং ভারতের প্রতিশ্রুতিও দেখেছে। লাদাখে, ভারতের মাটির দিকে যারা কুদৃষ্টি দিয়েছিল, তারা উপযুক্ত জবাব পেয়েছে। ভারত কীভাবে বন্ধুত্ব বজায় রাখতে হয় জানে, আবার তার দিকে ধেয়ে আসা বক্রদৃষ্টিকে কীভাবে প্রতিহত করতে হয় সেটাও জানে। আমাদের সাহসী সৈনিকরা দেখিয়েছে, তারা কখনও ভারত মায়ের গৌরবকে ক্ষুন্ন হতে দেবে না।
বন্ধুরা, লাদাখে শহীদ হওয়া আমাদের সাহসী সৈন্যদের বীরত্বের প্রতি গোটা দেশ শ্রদ্ধা নিবেদন করছে। পুরো দেশ তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এই শহীদদের পরিবারের মতো, প্রতিটি ভারতীয় তাদেরকে হারানোর বেদনা অনুভব করছে। এই বীর সন্তানদের আত্মত্যাগে তাদের পরিবার যে গর্বের অনুভব করছে, দেশের জন্য যে আবেগ রয়েছে তাদের মধ্যে, এটিই দেশের শক্তি। আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন সেই সব বাবা-মা, যাদের ছেলেরা শহীদ হয়েছিল, তারা তাদের অন্য ছেলেদের, বাড়ির অন্যান্য বাচ্চাদেরও সেনাবাহিনীতে পাঠানোর কথা বলছেন। বিহারের বাসিন্দা শহীদ কুন্দন কুমারের বাবার কথা কানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। তিনি বলছিলেন, আমি আমার নাতি-নাতনিদের দেশ রক্ষার জন্য সেনাবাহিনীতে পাঠাব। প্রতিটি শহীদ পরিবারেই এই সাহস পরিলক্ষিত। বাস্তবে এই আত্মীয়দের ত্যাগ প্রণম্য। ভারত মায়ের রক্ষার যে সংকল্পকে তুলে ধরতে আমাদের সৈনিকরা মৃত্যুবরণ করলেন, সেই সংকল্পকে আমাদের জীবনের লক্ষ্য তৈরি করতে হবে, প্রতিটি দেশবাসীকে একই সংকল্প গ্রহণ করতে হবে। আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা এটাই হওয়া উচিত, যাতে সীমান্ত রক্ষায় দেশের শক্তি বাড়ে, দেশ আরও সক্ষম হয় স্বাবলম্বী হয় আরো – এটিই আমাদের শহীদদের প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধাঞ্জলি হবে। আমাকে আসামের রজনীজি লিখেছেন, পূর্ব লাদাখের ঘটনাটি দেখে তিনি স্থির করেছেন, তিনি কেবল স্থানীয় জিনিষ কিনবেন, কেবল ‘ল্যোকাল’-এর পক্ষে সোচ্চার হবেন। দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে এ ধরনের বার্তা অনেক আসছে। অনেক লোক আমাকে চিঠি লিখছেন যে, তারা এই পথেই এগিয়ে যাচ্ছেন। একই ভাবে তামিল নাডুর মাদুরাই থেকে মোহন রামমূর্তি বাবু লিখেছেন উনি ভারতবর্ষের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রটিকে আত্মনির্ভরশীল রুপে দেখতে চান।
বন্ধুরা, স্বাধীনতার আগে আমাদের দেশ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বহু দেশের আগে ছিল। আমাদের এখানে সেই সব দেশের অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি ছিল౼এমন অনেক দেশ, যারা তখন আমাদের পিছনে ছিল, তারা এখন আমাদের ছাড়িয়ে চলে গেছে। স্বাধীনতার পরে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের যে সব পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ ছিল, যেসব উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজনীয় ছিল, আমাদের যে ভাবে পুরনো অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো দরকার ছিল, সেই অভিজ্ঞতা আমরা ব্যবহার করতে পারিনি। কিন্তু আজ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে, প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, ভারত এগিয়ে চলার নিরন্তর চেষ্টা করছে, ভারত আত্মনির্ভর হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে।
বন্ধুরা, কোন মিশনই, ‘পিপলস পারটিসিপেশন’౼ সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ, ছাড়া সম্পূর্ণ হতে পারে না, সফল হতে পারে না, এই জন্যে, আত্মনির্ভর ভারতের দিশায়, দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সবার প্রতিজ্ঞা, সমর্পণ এবং সহযোগিতা আবশ্যক। আপনি ‘ল্যোকাল’ কিনবেন, ‘ল্যোকাল’-এর জন্য ভোকাল হবেন, তাহলেই বুঝবেন আপনি দেশকে মজবুত করার ক্ষেত্রে আপনার ভূমিকা পালন করছেন। এটাও এক রকম দেশ সেবাই বটে। আপনি যে পেশায়ই থাকুন না কেন, প্রত্যেক ক্ষেত্রেই দেশের সেবা করার প্রচুর সুযোগ আছে। দেশের প্রয়োজনগুলি বুঝে যারাই কাজ করেন, তারা দেশেরই সেবা করেন। আপনার এই সেবাই, কোনও না কোনও ভাবে দেশ কে মজবুত করছে এবং, আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশ যত শক্তিশালী হবে, পৃথিবীতে শান্তির সম্ভাবনাও তত বাড়বে। কথায় বলে-
বিদ্যা বিবাদায় ধনং মদায়, শক্তিঃ পরেশান পরিপীডনায়।
খলস্য সাধোঃ বিপরীতম এতত, জ্ঞানায় দানায় চ রক্ষনায়।।
অর্থাৎ, যদি কেউ দুষ্ট স্বভাবের হয়, তাহলে সে বিদ্যার প্রয়োগ ব্যক্তি বিবাদে, ধনের প্রয়োগ অহংকারে এবং শক্তির প্রয়োগ অন্যদের কষ্ট দিতে করে। কিন্তু সজ্জনের বিদ্যা জ্ঞানের হেতু, ধন সাহায্যের জন্য এবং শক্তি রক্ষার হেতু ব্যবহৃত হয়। ভারত তার শক্তি সর্বদা এই চিন্তার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ব্যবহার করেছে। ভারতের অঙ্গীকার তার আত্মসম্মান এবং সার্বভৌমতাকে রক্ষার। ভারতের লক্ষ্য আত্মনির্ভর ভারত। ভারতের পরম্পরা বিশ্বাস এবং মিত্রতা। ভারতের মনভাব বন্ধুতার, আমরা এই আদর্শগুলোকে নিয়েই আগে এগোতে থাকব।
আমার প্রিয় দেশবাসী, করোনার সংকটময় সময়ে দেশ লকডাউন থেকে বেরিয়ে এসেছে। এখন আমরা ‘আনলক’ পর্যায়ে রয়েছি। ‘আনলক’-এর এই সময়ে দুটো জিনিসে ভীষণ খেয়াল করে চলতে হবে- করোনাকে পরাজিত করা এবং আর্থিকব্যবস্থাকে মজবুত বানানো, তাকে শক্তিশালী করা। বন্ধুরা, লকডাউনের থেকেও বেশি সতর্কতা আমাদের আনলকের সময় নিতে হবে। আপনার সতর্কতাই আপনাকে করোনার হাত থেকে বাঁচাবে। এই কথাটা সবসময় মনে রাখবেন যে যদি আপনি মাস্ক না পরেন, দু গজের দুরত্ব না রাখেন, কিংবা বাকি আবশ্যক সাবধানতা বিধিগুলি পালন না করেন, তাহলে আপনি নিজের পাশাপাশি অন্যদেরও বিপদের মুখে ফেলছেন। বিশেষ করে বাড়ির বাচ্চা ও বয়স্কদের, এই জন্য প্রত্যেক দেশবাসীর কাছে আমার নিবেদন হল, এবং এই আবেদন আমি বার-বার করি, এবং আমার নিবেদন হল আপনারা এই বিষয়টাকে অবহেলা করবেন না, অসতর্ক হবেন না, নিজেরও খেয়াল রাখুন এবং অন্যদেরও খেয়াল রাখুন।
বন্ধুরা, আনলক এর সময় এমন অনেক জিনিস আনলক হচ্ছে যাতে ভারত বহুদিন আবদ্ধ ছিল। বহু বছর আমাদের খনিশিল্প লকডাউনে বন্ধ ছিল। বাণিজ্যিক নিলামকে অনুমতি দেবার একটা সিদ্ধান্ত, সেই অবস্থায় পরিবর্তন এনে দিয়েছে। কিছুদিন আগেই মহাকাশ ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক সংশোধন করা হয়েছে। এই সংশোধনের মাধ্যমে বহু বছর যাবত লকডাউন-এ জর্জরিত এই সেক্টর স্বাধীনতা লাভ করেছে। ফলে আত্মনির্ভর অভিযানে শুধু গতিই আসেনি, উপরন্তু দেশ প্রযুক্তিগত দিক দিয়েও এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের কৃষি ক্ষেত্রকেই দেখুন, এখানেও অনেকগুলি জিনিস বহু দশক ধরে আটকে ছিল। এই ক্ষেত্রকেও এখন আনলক করা হয়েছে। ফলস্বরূপ, কৃষকরা যেমন নিজেদের ফসল যে কোন জায়গায়, যে কোন ব্যক্তিকে, বিক্রি করার স্বাধীনতা পেয়েছে, অন্যদিকে তাঁদের বেশি ঋণ পাওয়াটাও সুনিশ্চিত করা গেছে।এরকম অনেক ক্ষেত্র আছে যেখানে আমাদের দেশ এইসব সংকটের মধ্যেই, ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিকাশের নতুন পথ উন্মুক্ত করছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, প্রত্যেক মাসে, আমরা এমন এমন খবর পড়ি আর দেখি যা আমাদের ভাবিয়ে তোলে।যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, যে কিভাবে প্রত্যেক ভারতীয় একে অপরের সাহায্যের জন্য সদাতৎপর,তাঁরা যা যা করতে পারেন, তা করতে প্রস্তুত। অরুণাচল প্রদেশের এরকমই এক প্রেরণাদায়ক কাহিনী আমি মিডিয়ায় পড়েছিলাম। যেখানে সিয়া়ং জেলার মিরেম গ্রাম এমন অনন্য কাজ করেছে, যা সমগ্র ভারতের জন্য একটি উদাহরণ স্থাপন করেছে। এই গ্রামের কিছু লোক বাইরে থাকেন, চাকরি সূত্রে। গ্রামবাসীরা দেখলেন যে, করোনা মহামারির সময়, ঐ সমস্ত মানুষ গ্রামে ফিরে আসছেন। এসময় গ্রামবাসীরা আগেভাগেই, গ্রামের বাইরে কোয়ারান্টাইনের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নেন। তারা সবাই মিলে গ্রাম থেকে একটু দূরে ১৪টি অস্থায়ী ঝুপড়ি তৈরি করেন আর ঠিক করেন যখন গ্রামবাসীরা ফেরত আসবেন তখন তাদের ওই ঝুপড়িতে কিছুদিন কোয়ারান্টাইনে থাকতে হবে। ওই ঝুপড়িতে শৌচালয়,বিদ্যুৎ,জলসহ দৈনিক ব্যবহারের যাবতীয় সুবিধা ছিল। স্পষ্টত মিরেম গ্রামের সমষ্টিগত প্রয়াস আর সচেতনতা সবার মনোযোগ আকর্ষণ করে।
বন্ধুরা আমাদের এখানে বলা হয়ে থাকে-
স্বভাবং ন জহাতি এব, সাধুঃ আপদ্রতোপী সন।
কর্পূরঃ পাবক স্পৃষ্টঃ সৌরভং লভতেতরাম।।
অর্থাৎ, যেভাবে আগুনে পুড়েও কর্পূর নিজের সুগন্ধ বিস্তার করতে ভোলে না, তেমনই ভালো মানুষ বিপদের মধ্যেও নিজের গুণ, নিজের স্বভাবত্যাগ করে না। আজ আমাদের দেশের যে শ্রমশক্তি আছে, যে শ্রমিক বন্ধু আছে তারাও এর বাস্তবিক উদাহরণ। আপনারা দেখুন, এই সময়ে আমাদের পরিযায়ী শ্রমিকদের এরকম কত কাহিনীই না শোনা যাচ্ছে যা পুরো দেশকে প্রেরিত করছে। উত্তরপ্রদেশের বারাবাঁকি গ্রামে ফিরে আটজন শ্রমিক কল্যাণী নদীর স্বরূপ ফেরানোর কাজে হাত লাগিয়েছেন। নদীর উদ্ধারকাজ দেখে, আশেপাশের কৃষকরা, আশেপাশের মানুষজন উৎসাহিত। গ্রামে আসার পর কোয়ারান্টাইন সেন্টার, আইসোলেশন সেন্টারে থাকাকালীন আমাদের শ্রমিক বন্ধুরা যেভাবে নিজের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে, নিজেদের আশপাশে পরিস্থিতি বদল করেছেন, তা অভাবনীয়। কিন্তু বন্ধুরা, দেশের লক্ষ লক্ষ গ্রামের এরকম কত গল্প আছে, যা আমাদের কাছে পৌঁছতেই পারেনি। আমাদের দেশ এমনই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ যে, বন্ধুরা, আমার বিশ্বাস আপনার গ্রামে, বা আপনার আশেপাশেও এরকম অনেক ঘটনাই হয়তো ঘটে। কখনো যদি এরকম কোন বিষয় আপনার নজরে এসে থাকে, তাহলে এইধরনের উৎসাহমূলক ঘটনার কথা আমায় অবশ্যই লিখে জানাবেন। এরকম সংকটজনক অবস্থায় এই ধরনের ইতিবাচক বৃত্তান্ত বা ঘটনাবলী অন্যদেরও অনুপ্রেরণা যোগাবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এই করোনা ভাইরাস নিশ্চিত রূপেই আমাদের জীবনধারণের পদ্ধতি বদলে দিয়েছে। আমি লন্ডন থেকে প্রকাশিত “ফিন্যান্সিয়াল টাইমস”এ এই বিষয় নিয়ে একটি দারুন সুন্দর লেখা পড়ছিলাম। ওখানে বলা ছিল, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সময়ে, আদা, হলুদ সমেত অন্যান্য মশলাপাতির চাহিদা শুধু এশিয়াতেই নয়, এমনকি আমেরিকাতেও বৃদ্ধি পেয়েছে। সারা বিশ্বের লক্ষ্য এখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করা এই জিনিসগুলোর ব্যবহার আমাদের দেশের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমাদের সমগ্র বিশ্ববাসীকে এগুলোর গুনাগুন খুব সাধারণ ও সরল ভাষায় বোঝানো উচিত, যাতে খুব সহজেই বিষয়টা তাদের বোধগম্য হয় আর এভাবে একটা সুস্থ পৃথিবী তৈরি করার লক্ষ্যে আমরা অবদান করতে পারি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মত সংকটের মুখোমুখি না হলে হয়তো এই জীবনের অর্থ কি, কেমন তার রূপ, তার মাহাত্ম্যই বা কেমন,এসব হয়তো আমাদের মনেই পড়তো না। কত মানুষ এই কারণে মানসিক অশান্তিতে বেঁচে আছেন। অন্যদিকে অনেক মানুষ আমার সঙ্গে তাদের এই চিন্তা ভাবনা ভাগ করে নিয়েছেন যে, কিভাবে এই লকডাউনের সময়ে তারা আনন্দের ছোট ছোট মুহূর্তকে নিজেদের জীবনে নতুন করে খুঁজে পেয়েছেন। অনেকেই পরিবারের লোকজনের সঙ্গে পম্পরাগত ইনডোর গেম খেলার আনন্দ উপভোগ করেছেন, তাদের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটিয়েছেন, এইসব অনুভূতির কথা তারা আমায় জানিয়েছেন। আমাদের দেশ এই ধরনের ঐতিহ্যময় খেলার বিষয়ে সমৃদ্ধ। যেমন আপনারা একটা খেলার নাম হয়তো শুনে থাকবেন “পচিসি”। এই খেলাটি তামিলনাড়ুতে “পল্লাঙ্গুলি”, কর্নাটকে “অলি গুলি মেণ” আর অন্ধ্রপ্রদেশে “বামণ গুণ্টলু” নামে পরিচিত। এটা এক ধরনের কৌশলমূলক খেলা যেখানে একটি বোর্ডের ব্যবহার করা হয়। ওই বোর্ডে অনেকগুলো খোপ বা ঘর কাটা থাকে যার মধ্যে উপস্থিত ঘুঁটি গুলোর মাধ্যমে খেলোয়াড়দের পরাজিত করতে হয়। শোনা যায়,এই খেলাটি নাকি দক্ষিণ ভারত থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল।
বন্ধুরা, আজ প্রায় প্রতিটি বাচ্চাই সাপ – লুডো খেলার সম্বন্ধে জানে। এটা কি আপনারা জানেন যে , এই খেলাটিও একটি ভারতীয় ঐতিহ্যপূর্ণ খেলারই রূপ, যাকে মোক্ষ পাটম বা পরমপদম বলে। আমাদের আরও একটি এরকম ঐতিহ্যপূর্ণ খেলার নাম ড্যাঙগুলি। বড়রা ড্যাঙগুলি খেলে, আবার ছোট বাচ্চারাও খেলে। একই আকৃতির পাঁচটি ছোট পাথর সংগ্রহ করতে পারলেই আপনি ড্যাঙগুলি খেলার জন্য তৈরি। একটি পাথরকে হাওয়ায় ছুঁড়ে দিয়ে, মাটিতে রাখা বাকি পাথরগুলোকে তুলে নিতে হয়, ওই পাথরটি হাওয়ায় ভেসে থাকার সময়টুকুর মধ্যেই। সাধারণত এই ধরনের ইনডোর গেমগুলো খেলার জন্য বিশেষ কোন সাধনার দরকার হয়না। একটি চক বা পাথর নিয়ে এসে সেটা দিয়ে মাটিতে কিছু দাগ কাটলেই খেলা শুরু হয়ে যায়। যে সমস্ত খেলায় ডাইসের প্রয়োজন হয়, সেখানে কড়ি বা তেঁতুলের বীজ দিয়েও কাজ চলে যায়।
বন্ধুরা, আমি জানি, আজ যখন আমি এই কথাগুলো বলছি, অনেকেই নিজের ছোটবেলায় ফিরে গেছেন, বা অনেকের হয়ত নিজের ছোটবেলার দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। আমি এটাই বলব যে সেই দিনগুলো আপনারা ভুলে যাচ্ছেন কেন? সেই খেলাগুলিকে আপনারা ভুলে যাচ্ছেন কেন? বাড়ির দাদু, দিদা, ঠাকুরদা, ঠাকুমা, বাড়ির প্রবীণদের প্রতি আমার আবেদন, এই খেলাগুলিকে নতুন প্রজন্মের কাছে আপনারা যদি পৌঁছে না দেন তবে কারা দেবে! এখন অনলাইন পড়াশোনার কথা চলছে। তাই ভারসাম্য বজায় রাখতে অনলাইন গেম এর হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যও আমাদের এমনটা করতেই হবে. আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য, এবং আমাদের স্টার্টআপগুলির জন্যও এক্ষেত্রে একটা নতুন, শক্তিশালী এবং প্রতিশ্রুতি সম্পন্ন সুযোগ রয়েছে। আসুন, আমরা ভারতের পরম্পরাগত ইনডোর গেমসগুলিকে নতুন ও আকর্ষণীয়় রূপে প্রস্তুত করি। তার সঙ্গে যুক্ত জিনিসপত্রের যোগান বা সাপ্লাই যারা দেবে সেই সব স্টার্টআপগুলিও জনপ্রিয় হবে। আর আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে আমাদের ভারতীয় খেলাও তো লোকাল আর আমরা লোকাল এর জন্য ভোকাল হওয়ার ব্রত প্রথম থেকেই নিয়েছি। আর আমার ছোট্ট বন্ধুদের, প্রতিটি ঘরের বাচ্চাদের, আমার ছোট্ট সঙ্গীদের প্রতিও আজ আমি বিশেষ একটি আবেদন করছি। বাচ্চারা, তোমরা আমার অনুরোধ শুনবে তো? দেখো আমার অনুরোধ, আমি যেটা বলছি, সেটা তোমরা অবশ্যই কোরো। একটা কাজ করো, এখন একটু সময় পাওয়া গেছে, তাই বাবা মাকে জিজ্ঞাসা করে মোবাইল হাতে নিয়ে নিজের দাদু, দিদা, ঠাকুরদা, ঠাকুমা বা বাড়ির যেকোনো প্রবীণ মানুষের ইন্টারভিউ রেকর্ড করো। নিজেদের মোবাইল ফোনেই রেকর্ড করো। যেমন তোমরা টিভিতে দেখেছো কিভাবে সাংবাদিকরা ইন্টারভিউ নেয়। ব্যাস তেমনি ইন্টারভিউ তোমরা করো। আর তাতে তোমরা কী প্রশ্ন করবে? আমি তোমাদের একটা পরামর্শ দিচ্ছি। তোমরা তাঁদের অবশ্যই জিজ্ঞেস করো ছোটবেলায় তাঁরা কীভাবে জীবন কাটাতেন, কোন কোন খেলা তারা খেলতেন। কী কী নাটক দেখতে যেতেন, সিনেমা দেখতে যেতেন। ছুটিতে কখনো মামাবাড়ি যেতেন, কখনো বা চাষের জমিতে ঘুরতেন। কিভাবে তারা উৎসব পালন করতেন, এমন অনেক কথা তাদের তোমরা জিজ্ঞাসা করতে পারো। তারাও নিজেদের চল্লিশ, পঞ্চাশ বা ষাট বছর আগেকার জীবনে ফিরে যেতে খুব আনন্দ পাবেন, আর তোমরাও চল্লিশ, পঞ্চাশ বছর আগের ভারতবর্ষ কেমন ছিল, তোমরা যেখানে থাকো সেই জায়গা, আশেপাশের জায়গা কেমন ছিল, মানুষজনের আদব-কায়দা কেমন ছিল এসব বিষয় খুব সহজেই শিখতে পারবে, জানতে পারবে। তোমরা দেখো তোমাদের খুব ভালো লাগবে, আর পরিবারের জন্য এক অত্যন্ত অমূল্য সম্পদ – একটি দারুন ভিডিও অ্যালবামও তৈরি হয়ে যাবে।
বন্ধুরা, একথা সত্যি যে আত্মজীবনী বা জীবনী, অটোবায়োগ্রাফি বা বায়োগ্রাফি ইতিহাসের সত্যের কাছে যাওয়ার জন্য খুবই উপযোগী একটি মাধ্যম। তোমরাও যদি বয়স্ক, প্রবীণদের সঙ্গে কথা বল তাহলে তাঁদের সময়ের কথা, তাঁদের শৈশব, তাঁদের যৌবনের কথা আরো সহজে বুঝতে পারবে। আর প্রবীণদের জন্যও এটা একটা অসাধারণ সুযোগ যে তাঁরাও নিজেদের ছোটবেলার বিষয়ে, সেই সময়ের ব্যাপারে নিজেদের বাড়ির ছোটদের বলবেন।
বন্ধুরা, দেশের একটা বড় অংশে এখন বর্ষা পৌঁছে গেছে। এবছর বর্ষা নিয়ে আবহাওয়া বিজ্ঞানীরাও খুবই উৎসাহিত, তাঁরা অনেক প্রত্যাশা করে আছেন। বৃষ্টি ভালো হলে আমাদের কৃষকদের ফসল ভালো হবে। পরিবেশও সবুজ হবে। বর্ষা ঋতুতে প্রকৃতিও নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করে নেয়। মানুষ প্রাকৃতিক সম্পদের যতটা শোষণ করে, প্রকৃতি একদিক থেকে বর্ষার সময় তা পূরণ করে নেয়। রিফিলিং করে নেয়, কিন্তু এই রিফিলিং তখনই সম্ভব যখন তাতে আমরাও আমাদের ধরিত্রী-মা’র সহায়তা করি। নিজেদের দায়িত্ব পালন করি। আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস প্রকৃতিকে, পরিবেশকে অনেকটা সাহায্য করতে পারে।
আমাদের অনেক দেশবাসী এই ব্যাপারে খুব ভালো কাজ করছেন। কামেগৌড়াজী, ৮০-৮৫ বছরের এক বর্ষীয়ান ব্যক্তি থাকেন কর্ণাটকের মন্ডাবালীতে। পেশায় তিনি সামান্য এক কৃষক, কিন্তু ব্যক্তিত্বে তিনি অসামান্য। তিনি এমন একটি কাজ করেছেন যাতে যে কেউ অবাক হবেন। ৮০-৮৫ বছর বয়সে কামেগৌড়াজি পশুচারণের সঙ্গে সঙ্গে তার অঞ্চলে নতুন জলাশয় খননের কাজও করে চলেছেন। তিনি তাঁর এলাকায় জলের সমস্যা দূর করতে চান, সে কারণেই অর্থাৎ জল সংরক্ষণের জন্য তিনি ছোট ছোট জলাশয় তৈরীর কাজে মনোনিবেশ করছেন। জানলে আপনি অবাক হবেন যে ৮০-৮৫ বছর বয়সী কামেগৌড়াজি, কী ভীষণ কঠিন পরিশ্রম করে ইতিমধ্যে মোট ১৬টি জলাশয় খনন করে ফেলেছেন। হতে পারে তিনি যে জলাশয়গুলি তৈরি করেছেন সেগুলি খুব বড় নয়, কিন্তু তাঁর এই প্রচেষ্টা সত্যিই মহৎ। সেই জলাশয়গুলিই আজ ওই অঞ্চলে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছে।
বন্ধুরা, অনুপ্রাণিত করার মত একটি ঘটনা গুজরাটের ভোদোদারাতেও ঘটেছে। সেখানে স্থানীয় মানুষ এবং জেলা প্রশাসন একসঙ্গে একটি প্রচার অভিযানে যোগ দিয়েছিলেন। সেই প্রচার অভিযানের কারণে, বর্তমানে ভোদোদরায় এক হাজার স্কুলে বৃষ্টির জল সঞ্চয়ের কাজ শুরু হয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে এজন্য প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১০কোটি লিটার জল অপচয়ের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে।
বন্ধুরা, প্রকৃতি ও পরিবেশকে রক্ষা করার জন্য, এই বর্ষাকালে আমাদেরও এরকমই কিছু চিন্তা করার এবং উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। অনেক জায়গাতেই এবারও গণেশ চতুর্থীর প্রস্তুতি শুরু হতে চলেছে, সে ক্ষেত্রে আমরা কি এবার পরিবেশ বান্ধব গণেশ মূর্তি তৈরি করার এবং সেই মূর্তি পূজা করার চেষ্টা করতে পারি না? যে মূর্তি বা প্রতিমাগুলির নদী বা জলাশয়ে বিসর্জন দেওয়ার ফলে জলে বসবাসকারী প্রাণীরা সংকটের মুখে পড়ছে, সেই জাতীয় প্রতিমাগুলির উপাসনা কি আমরা এবার এড়িয়ে চলতে পারিনা? আমি বিশ্বাস করি যে আপনারা অবশ্যই তা করতে পারেন এবং এই সমস্ত কিছুর মধ্যে আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে বর্ষাকালে অনেক অসুখের প্রাদুর্ভাবও ঘটে। এই করোনার সময় আমাদের সে সমস্ত বিপদ থেকেও নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে, এই কারণে আয়ুর্বেদিক ওষুধ, কাথ্ব, গরম জল – এসবের ব্যবহার করুন এবং নিজেকে সুস্থ রাখুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ ২৮ শে জুন সমগ্র ভারত তার এক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছে। যিনি অত্যন্ত সংবেদনশীল এক সমযে় এই দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আজ আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রী পি ভি নরসিমহা রাওর জন্মশতবার্ষিকীর সূচনা। আমরা যখন পিভি নরসিংহ রাও সম্পর্কে আলোচনা করি স্বাভাবিকভাবেই একজন রাজনীতিবিদ হিসাবে তাঁর প্রতিচ্ছবি আমাদের সামনে ভেসে ওঠে কিন্তু আরও একটি সত্য হলো তিনি বহু ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। ভারতীয় ও বিদেশী বহু ভাষায় কথা বলতে পারতেন। একদিকে ভারতীয় মূল্যবোধ সম্পর্কে তার গভীর আস্থা ছিল, অন্যদিকে পশ্চিমী সাহিত্য ও বিজ্ঞান সম্পর্কেও তাঁর জ্ঞান ছিল প্রগাঢ়। তিনি ছিলেন ভারতের একজন অন্যতম অভিজ্ঞ নেতা ও রাজনীতিবিদ। কিন্তু, ওঁর জীবনের আরও একটি দিক ছিল এবং সেটি অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। আমাদের নিশ্চয়ই জানা উচিত। বন্ধুরা, নরসিমা রাওজী নিজের কৈশোরেই স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। যখন হায়দ্রাবাদের নিজাম বন্দেমাতরম গাওয়ার অনুমতি দিতে অস্বীকার করেন তখন তিনি তাঁর প্রতিবাদে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন, সেই সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর। অল্পবয়স থেকেই শ্রীনরসিমা রাও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হওয়ার অগ্রণী ছিলেন। দৃঢ়তার সাথে সোচ্চার হওয়ায় কখনো কোনো ত্রূটি রাখেননি। নরসিমা রাওজী ইতিহাসকে অত্যন্ত ভালো বুঝতেন। অতিসাধারণ এক পটভূমি থেকে তাঁর উত্তরণ, ওঁর শিক্ষার প্রতি জোর দেওয়া, শেখার প্রতি ওঁর আগ্রহ, এবং, এসবের সাথে, ওঁর নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা – সবকিছুই স্মরণীয়। আমার ইচ্ছে যে, নরসিমা রাওজীর জন্মশতবর্ষে, আপনারা সবাই ওঁর জীবন এবং বিচার ধারা সম্বন্ধে যত বেশি সম্ভব জানার চেষ্টা করুন। আমি আবারও একবার ওঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করছি।
আমার প্রিয়দেশবাসী, এবারের ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে অনেক বিষয়েই কথা হল। পরের বার যখন আমাদের সাক্ষাৎ হবে, তখন আরো নতুন কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলব। আপনারা আপনাদের বার্তা, আপনাদের উদ্ভাবনী ভাবনা আমাকে অবশ্যই পাঠাতে থাকুন। আমরা সবাই মিলে এগিয়ে যাব, এবং আগামীদিন আরও ইতিবাচক হয়ে উঠবে, যেমন ধরুন, আমি আজ প্রথমেই বলেছি, আমরা এইবছরেই অর্থাৎ ২০২০তেই উন্নতি করব, এগিয়ে যাব এবং আমাদের দেশও নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে। আমার বিশ্বাস যে, এই দশকে ভারতকে নতুন এক লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে ২০২০। এই বিশ্বাসের সঙ্গেই আপনারাও এগিয়ে চলুন, সুস্থ থাকুন, ইতিবাচক থাকুন। এই শুভকামনা নিয়েই আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ‘মন কি বাত ২.০’-র দ্বাদশ পর্বে মতবিনিময়ের সময় জানান, দেশে সবার সম্মিলিত চেষ্টায় করোনার বিরুদ্ধে লড়াই বেশ ভালোভাবে করা হচ্ছে। তিনি কোভিড-১৯ মহামারীর বিষয়ে জনসাধারণকে আরও সতর্ক ও সজাগ থাকে আহ্বান জানিয়েছেন, কারণ অর্থনৈতিক কাজকর্মের বেশিরভাগই এখন আবার শুরু হয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যথাযথ সতর্কতার সঙ্গে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন ও অন্যান্য বিশেষ ট্রেন পরিষেবা এবং বিমান চলাচলও শুরু হয়েছে। শিল্পসংস্থায় কাজকর্মও স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলে, করোনার বিরুদ্ধে লড়াই এখনও গুরুতর। আমাদের সকলের পরিবারে এখনও করোনা থেকে একইরকম গুরুতর ঝুঁকি রয়েছে। সেইজন্য দু-গজ দূরত্ব, মুখে মাস্ক, হাত ধোয়া এইসব সাবধানতা মেনে চলতে হবে – যেরকম আমরা মেনে চলছিলাম। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাধা বিপত্তি এবং কঠিন তপস্যার পর দেশ যেভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে সেটাকে নষ্ট হতে দিতে চলবে না – আমাদের এই লড়াইকে দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না।
প্রধানমন্ত্রী জনসাধারণের মানসিকতার প্রশংসা করেন এবং বলেন, দেশবাসীর সংকল্প শক্তির সঙ্গে এই লড়াইয়ে আর একটি বড় শক্তি হল౼ দেশবাসীর সেবার শক্তি। এটি আমাদের ক্ষমতার সব থেকে বড় উৎস। তিনি আরও বলেন, বাস্তবে এই মহামারীর সময় ভারতবাসী দেখিয়ে দিয়েছে সেবা আর ত্যাগের পথ অনুসরণ করা কেবল আমাদের আদর্শ নয় বরং ভারতের জীবন শৈলী। ‘সেবা পরমো ধর্মঃ’ এই ভাবনার সঙ্গে আমরা অত্যন্ত পরিচিত।
প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি চিকিৎসক, নার্স, সাফাই কর্মী, পুলিশ এবং সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের মানসিকতার প্রশংসা করেন। সংকটের এই সময়ে মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি যে নজরকাড়া ভূমিকা রাখছে তিনি তারও প্রশংসা করেন।
প্রধানমন্ত্রী কয়েকজন সাধারণ দেশবাসীর উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সংকটের এই সময়েও সীমিত সামর্থ দিয়ে তামিলনাড়ুর কে.সি. মোহন, আগরতলার গৌতম দাস, পাঠানকোটে ভিন্নভাবে সক্ষম বন্ধু রাজু যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তা উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। দেশের প্রতিটি প্রান্তে মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির বিভিন্ন কার্যকলাপের কথাও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী এই মহামারীর মোকাবিলায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকের সক্রিয় ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি নাসিকের রাজেন্দ্র যাদবের কথা জানান যিনি করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচানোর জন্য তাঁর ট্রাক্টরের সঙ্গে একটি স্যানিটাইজেশন মেশিন যুক্ত করেছেন। অনেক দোকানদার দু-গজ দূরত্ব বজায় রাখার জন্য দোকানে বড় পাইপলাইন লাগিয়েছেন, যার একটি দিক থেকে তারা ক্রেতাদের জিনিসপত্র পাঠাচ্ছেন আর অন্য দিক দিয়ে ক্রেতারা তা গ্রহণ করছেন।
এই মহামারীর ফলে জনসাধারণের দুর্দশার যন্ত্রণা ভাগ করে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাসের ফলে সমাজের সকলস্তরের মানুষই প্রভাবিত হয়েছেন, তবে প্রান্তিক শ্রমিকরা সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের প্রতিটি দপ্তর এবং প্রতিষ্ঠান ত্রাণের জন্য হাতে হাত রেখে কাজ করে চলেছে। শ্রী মোদী উল্লেখ করেন কেন্দ্র, রাজ্য বা স্থানীয় প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান – সকলেই দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন। ট্রেনে এবং বাসে লক্ষ লক্ষ শ্রমিকদের নিরাপদে নিয়ে যাওয়া, তাঁদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা এবং প্রতিটি জেলায় কোয়ারেন্টাইন সেন্টারের বন্দোবস্ত করার জন্য যাঁরা নিরলস কাজ করে চলেছে তিনি তাঁদের প্রশংসা করেন।
প্রধানমন্ত্রী সংকটের এই সময়ে নানা সমস্যার সমাধানের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। সরকার এই লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গ্রামে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা, স্বনির্ভর করে তোলা এবং ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য কেন্দ্র সম্প্রতি বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমান দশকে আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের মধ্য দিয়ে দেশ এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে বলে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
করোনা মহামারীর সময়ে প্রত্যেকে যোগ এবং আয়ুর্বেদের বিষয়ে আরও বেশি করে খোঁজ নিচ্ছেন বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। তিনি ‘কমিউনিটি, ইমিউনিটি ও ইউনিটি’౼র জন্য যোগাভ্যাসকে জীবনের অঙ্গ করার পরামর্শ দেন। শ্রী মোদী বলেন, করোনা মহামারী আমাদের শ্বাস প্রশ্বাস প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট ক্ষতি করার চেষ্টা করে। যোগে প্রণায়মের মাধ্যমে শ্বাসক্রিয়াকে শক্তিশালী করে তুলতে হবে, যার উপকার দীর্ঘদিন ধরে পাওয়া যাবে।
প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক ভিডিও ব্লগ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য জনসাধারণকে আহ্বান জানান। আয়ুষ মন্ত্রক ‘মাই লাইফ, মাই যোগ’ শীর্ষক একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। প্রধানমন্ত্রী চান সকলে যেন এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন এবং আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে অংশীদার হন।
শ্রী মোদী এই মহামারীর মোকাবিলায় সরকারের নানা উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তিনি জানান, ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এর মাধ্যমে প্রায় ১ কোটির বেশি মানুষ উপকৃত হয়েছেন। ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এর সমস্ত লাভবান ব্যক্তিদের ও তার সঙ্গে রোগীদের চিকিৎসায় যুক্ত ডাক্তার, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের এই মহামারীর সময়ে তিনি অভিনন্দন জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একদিকে আমরা মহামারীর সঙ্গে লড়াই করছি আর অন্যদিকে সম্প্রতি পূর্ব ভারতের কিছু এলাকায় আমাদের ঘূর্ণিঝড় উমপুন-এর মতন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার কৃষকরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তিনি তার জন্য সমবেদনা জানান এবং বলেন, জনগণ যেভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছেন তা প্রশংসনীয়।
শ্রী মোদী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অংশে পঙ্গপাল ‘লকেস্ট’ হানা দিয়েছে। তিনি এই সংকটের মোকাবিলায় সরকার কিভাবে কাজ করে চলেছে সেকথা জানান, যার ফলে দেশের জনসাধারণ অত্যাবশ্যক পণ্য সামগ্রির অভাব বোধ করবেন না । তিনি জানান কেন্দ্র, রাজ্য, কৃষি বিভাগ থেকে শুরু করে প্রশাসনের প্রতিটি দপ্তর এই সংকট থেকে কৃষকদের বাঁচাতে আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগ করছে౼ যাতে ফসলের ক্ষতি কমানো যায়।
প্রধানমন্ত্রী জল সংরক্ষণের জন্য বর্তমান প্রজন্মকে তাঁদের কর্তব্য উপলব্ধি করার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, বর্ষা ঋতুতে জল বাঁচানো এবং সংরক্ষণ করার উদ্যোগ সকলের নেওয়া উচিত। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে দেশবাসীকে কিছু গাছ লাগানোর তিনি অনুরোধ জানান, যাতে তাঁরা প্রকৃতির সেবার জন্য এমন কিছু সংকল্প গ্রহণ করেন যার মাধ্যমে প্রকৃতির সঙ্গে তাঁদের দৈনন্দিন সম্পর্ক বজায় থাকে। শ্রী মোদী বলেন, লকডাউনের কারণে বিগত কয়েক সপ্তাহে জীবনের গতি কিছুটা হ্রাস পেয়েছে ঠিকই, তবে এটি আমাদের চারপাশের প্রকৃতির সমৃদ্ধি ও জীব বৈচিত্রকে ঘনিষ্টভাবে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। অনেক জায়গা থেকে পশু-পাখির অনিয়ন্ত্রিত ঘোরাফেরার খবরও পাওয়া যাচ্ছে।
তাঁর অনুষ্ঠানের শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যেন বেপরোয়া বা অসাবধান না হই। করোনার বিরুদ্ধে লড়াই এখনও যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয় !
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আপনারা সকলে লকডাউনে এই মন কি বাত শুনছেন। এই মন কি বাতে আসা মতামত, ফোনকলের সংখ্যা অন্য বারের থেকে অনেক গুণ বেশি। আপনারা বহু বিষয় নিয়ে চিন্তিত, আপনাদের সেই সব মনের কথা আমার কাছে এসে পৌঁছেছে। আমি যথাসম্ভব চেষ্টা করেছি অধিকাংশ লেখা পড়ার, ফোন শোনার। আপনাদের মাধ্যমেই এমন অনেক বিষয়ের প্রতি নজর গেছে যা এই ব্যস্ততার মধ্যে প্রথমে খেয়াল হয়নি। আমার ইচ্ছে, যুদ্ধকালীন সময়ের এই মন কি বাতে এই সমস্ত বিষয়গুলিই আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিই।
বন্ধুরা, সত্যি কথা বলতে কি ভারতের করোনার বিরুদ্ধে লড়াই আসলে পিপল ড্রিভেন জনগণের পরিচালিত উদ্যোগ। ভারতে করোনার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ লড়ছে, আপনি লড়ছেন আর জনতার সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রশাসন লড়ছে। ভারতের মত বিশাল, প্রগতিশীল দেশ যে দারিদ্র্যের সঙ্গেও যুযুধান তারা করোনার সঙ্গে এক নির্ণায়ক লড়াই লড়ছে। আমাদের কাছে করোনার সাথে যুদ্ধ করার ও জেতার এটাই একমাত্র উপায়। আমরা ভাগ্যবান যে সকলে এর অংশীদার, দেশের প্রত্যেকটি নাগরিক এই যুদ্ধের সেপাই, সকলেই নেতৃত্বে।
আপনি যে কোন দিকে নজর দিন, দেখবেন ভারতের লড়াই জনগণের পরিচালিত উদ্যোগ। গোটা বিশ্ব আজ এই মহামারীর সংকটের সাথে লড়ছে। ভবিষ্যতে যখন এই বিষয়ে আলোচনা হবে, তখন ভারতের পিপেল ড্রিভেন লড়াই অবশ্যই উল্লেখযোগ্য হবে। গোটা দেশে, প্রত্যেক অলি গলিতে, পাড়ায় পাড়ায় লোকে একে অপরের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসছে। গরীব লোকের খাওয়ার ব্যাবস্থা হোক, রেশনের জোগাড় হোক কিম্বা লকডাউন পালন করা, হাসপাতাল যাওয়ার ব্যাবস্থা হোক বা চিকিৎসা সরঞ্জাম দেশেই তৈরি করা– আজ গোটা দেশ একটিই লক্ষ্যের দিকে একসাথে এগোচ্ছে। তালি দেওয়া, থালা বাজানো, প্রদীপ, মোমবাতি জ্বালানো এই একাত্মবোধের জন্ম দিয়েছে। প্রত্যেক দেশবাসী কিছু না কিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গ্রাম হোক কিম্বা শহর, এমন মনে হচ্ছে যেন কোন বিরাট যজ্ঞ চলছে এবং সকলে এর অংশীদার হতে আগ্রহী। আমাদের চাষীভাইদের দেখুন– তারা এই মহামারীর মধ্যেই নিজেদের ক্ষেতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন, ভাবছেন যাতে কেউ খালি পেটে না ঘুমোতে যায়। প্রত্যেকে নিজেদের সামর্থ্য অনুসারে এই লড়াই লড়ছেন। কেউ ভাড়া মাফ করে দিচ্ছেন, কেউ কেউ নিজদের পেনশন বা পুরস্কারপ্রাপ্ত অর্থ দান করছেন পিএম কেয়ারস এ। কেউ কেউ নিজের ক্ষেতের সমস্ত সব্জি দান করে দিচ্ছেন, আবার কেউ কেউ হাজারো গরীব মানুষকে খাওয়াচ্ছেন । অনেকে মাস্ক বানাচ্ছেন আমাদের অনেক মজদুর ভাইবোনেরা যে স্কুলে থাকছেন তার মেরামত, রং এই সব কাজ করে দিচ্ছেন।
বন্ধুরা, অপরকে সাহায্য করার এই ইচ্ছে ও আবেগ, এই আমাদের করোনার বিরুদ্ধে লড়াই এর প্রধান শক্তি। এই আবেগই আক্ষরিক অর্থে আমাদের লড়াই কে পিপল ড্রিভেন বানাচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে দেশের জন্য কিছু করার আবেগ ও একাত্মবোধকে আমরা আরও দৃঢ় হতে দেখেছি। লক্ষ লক্ষ প্রবীণ নাগরিকদের রেল এর ভর্তুকি ত্যাগ করা, স্বচ্ছ ভারত অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া, শৌচাগার নির্মান করা – এমন অজস্র উদাহরণ রয়েছে। এই সব বিষয় থেকে একটা ব্যাপার স্পষ্ট– আমাদের মন এক বিনি সুতোয় গাথামালা। আমরা সকলে একজোট হয়ে দেশের জন্য কিছু করতে বদ্ধপরিকর।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি সম্পুর্ণ বিনম্রতার সঙ্গে, নত মস্তকে একশো তিরিশ কোটি দেশবাসীকে প্রণাম জানাই। সরকার একটি ডিজিটাল প্লাটফর্ম তৈরি করেছে যাতে আপনারা নিজেদের সময় সুবিধা অনুযায়ী, নিজের রুচি ও ভাবনা অনুসারে দেশের জন্য কিছু করতে পারেন। এই প্লাটফর্ম টি হল– covidwarriors.gov.in। আমি আবার বলছি, এটি হল covidwarriors.gov.in। সরকার এই প্লাটফর্মটির মাধ্যমে সমস্ত সামাজিক সংস্থাগুলির স্বেচ্ছাসেবক, সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি তথা স্থানীয় প্রশাসনকে জুড়ে দিয়েছে। খুব কম সময়ে এই পোর্টালে ১ কোটি২৫ লক্ষ মানুষ যুক্ত হয়েছেন। এতে আমাদের ডাক্তার, নার্স থেকে আরম্ভ করে আশা ও এএনএম বোনেরা আছেন, আছেন আমাদের এনসিসি ও এনএসএসের সাথীরা। বিভিন্ন পেশার সাথে যুক্ত পেশাদার মানুষ একে নিজেদের প্লাটফর্ম বানিয়ে নিয়েছেন। এরা স্থানীয় স্তরে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা তৈরি ও তার বাস্তবায়নে সাহায্য করছেন। আপনিও covidwarriors.gov.in এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেশের জন্য কিছু করতে পারেন, কোভিড যোদ্ধা হতে পারেন।
বন্ধুরা, প্রতিটি কঠিন পরিস্থিতি, প্রতিটি লড়াই কিছু না কিছু শিক্ষা দেয়, কিছু শেখায় । কিছু সম্ভাবনার পথ প্রশস্ত করে এবং কিছু নতুন গন্তব্যের দিকনির্দেশ দেয়। এই পরিস্থিতিতে সমস্ত দেশবাসীর মাধ্যমে প্রদর্শিত সংকল্প শক্তির দৌলতে ভারতেও একটি নতুন পরিবর্তনের জোয়ার এসেছে। আমাদের ব্যবসা, আমাদের কর্মক্ষেত্র, আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আমাদের চিকিত্সাক্ষেত্র, প্রত্যেকে নতুন প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের দিকে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও, এটি সত্যই মনে হয় যে দেশের প্রতিটি উদ্ভাবক, উদ্ভূত নতুন পরিস্থিতি অনুযায়ী, নতুন কিছু সৃষ্টি করছে।
বন্ধুরা, যখন একটি দেশ দলগতভাবে কাজ করে, তখন কি কি হতে পারে – আমরা তা অনুভব করছি। আজ কেন্দ্রীয় সরকারই হোক, রাজ্য সরকার হোক, এর প্রতিটি বিভাগ এবং দপ্তর ত্রাণের জন্য একসঙ্গে পুরোদমে কাজ করছে। আমাদের বিমান চলাচল ক্ষেত্রে কর্মরত লোকেরাই হোন, বা রেল কর্মচারী হোন, দিনরাত তাঁরা কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন, যাতে দেশবাসীর সমস্যা কম হয়। সম্ভবত আপনারা অনেকেই জানেন যে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে ওষুধ সরবরাহ করার জন্য 'লাইফলাইন উড়ান (লাইফ–লাইন ফ্লাইট)' নামে একটি বিশেষ অভিযান চলছে। আমাদের এই সব বন্ধুরা, অল্প সময়ের মধ্যেই, দেশের অভ্যন্তরে তিন লক্ষ কিলোমিটার যাত্রা করেছে এবং দেশের প্রতিটি কোণে দেশবাসীদের কাছে ৫০০ টনেরও বেশি ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ করেছে। একইভাবে, রেল কর্মীরাও লকডাউনে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন যাতে সাধারণ মানুষের অত্যাবশকীয় জিনিসের অভাব না ঘটে। এই কাজের জন্য, ভারতীয় রেল ৬০টিরও বেশি রেলপথে ১০০টিরও বেশি পার্সেল ট্রেন চালাচ্ছে। একইভাবে, ওষুধ সরবরাহ করার ক্ষেত্রে আমাদের ডাক বিভাগের কর্মীরা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। আমাদের এই সব বন্ধুরা প্রকৃত অর্থেই করোনার যোদ্ধা।
বন্ধুরা, 'প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ প্যাকেজ'-এর অন্তর্গত, দরিদ্রদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছে অর্থ।'বৃদ্ধাবস্থা পেনশন' জারি করা হয়েছে। দরিদ্রদের তিন মাসের জন্য নিখরচায় গ্যাস সিলিন্ডার এবং রেশন সরবরাহ করা হচ্ছে। এই সমস্ত কাজে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কর্মী,ব্যাংকিং ক্ষেত্রের লোকেরা দলগতভাবে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। এবং আমি আমাদের রাজ্য সরকারগুলিরও প্রশংসা করব যে তারা এই মহামারী মোকাবিলায় খুব সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। স্থানীয় প্রশাসন ও রাজ্য সরকার যে দায়িত্ব পালন করছে তা করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশাল ভূমিকা নিয়েছে। তাদের পরিশ্রম প্রশংসার দাবি রাখে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, সারাদেশ থেকে স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা সম্প্রতি চালু হওয়া অধ্যাদেশটি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এই অধ্যাদেশে করোনার যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে হিংসা, নিপীড়ন এবং কোনওরকমভাবে তাদের আঘাতের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। এই পদক্ষেপটি, আমাদের চিকিত্সক, নার্স, প্যারা–মেডিক্যাল স্টাফ,স্বাস্থ্যকর্মী এবং সেই সমস্ত ব্যক্তি যারা দেশকে 'করোনামুক্ত' করার জন্য রাতদিন পরিশ্রম করে চলেছেন, তাদের রক্ষা করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমরা সকলেই অনুভব করছি যে এই মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় আমরা, আমাদের জীবন, সমাজ, আমাদের আশপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলিকে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতেও বড় পরিবর্তন এসেছে। আজ, আমরা আমাদের জীবনের সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি ব্যক্তির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে পেরেছি। আমাদের বাড়িতে কাজ করেন যাঁরা, সেই সব মানুষ যারা আমাদের চাহিদা মেটাতে কাজ করে, আশেপাশের দোকানিরা— আমাদের জীবনে তাদের সবার যে কত বড় ভূমিকা আছে – আমরা এটি অনুভব করছি। একইভাবে, যে সমস্ত লোক প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলি সরবরাহ করেন, আমাদের শ্রমজীবী ভাই–বোন, আমাদের পাড়ার অটো চালক, রিকশা চালকরা – আজ আমরা অনুভব করছি তাদের ছাড়া আমাদের জীবন কতটা কঠিন। আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি যে লকডাউন চলাকালীন, লোকেরা কেবল এই মানুষদের স্মরণই করছেন না, তাদের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে শুধু লিখছেনই না, বরং তাদের সম্পর্কে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে লিখছেন। আজ, দেশের প্রতিটি প্রান্তে এমন চিত্র ফুটে উঠছে যে লোকেরা সাফাই কর্মীদের ফুল উপহার দিচ্ছেন। এর আগে, আপনি সম্ভবত তাদের কাজকে কখনো লক্ষ্যই করেন নি। সে চিকিৎসক হোন, অথবা অন্যান্য চাকুরিজীবী মানুষ – বা আমাদের পু্লিশি ব্যবস্থা, এদের সবার সম্পর্কে সাধারণ মানুষের চিন্তাভাবনায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। এর আগে আমরা পুলিশ সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করার সময় নেতিবাচক ছাড়া আর কিছু ভাবতাম না। আজ আমাদের পুলিশকর্মীরা দরিদ্র, অভাবী মানুষকে ওষুধ খাওয়াচ্ছেন, পৌঁছে দিচ্ছেন খাবার।
পুলিশ যেভাবে প্রত্যেক কাজের জন্য এগিয়ে এসেছে এতে তাঁদের কাজের মানবিক ও সংবেদনশীল রূপ আপনাদের সামনে ফুটে উঠেছে যা আমাদের মন কে ছুঁয়ে গেছে, নাড়িয়ে দিয়ে গেছে ব্যাপকভাবে। এটা এমন একটা সময় যখন সাধারন মানুষের আবেগ পুলিশের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। আমাদের পুলিশকর্মীরা একে জনসাধারণের সেবার এক অবকাশ হিসেবে গ্রহণ করেছে আর আমার বিশ্বাস–এই ঘটনাবলীর ফলেই আগামী দিনে, প্রকৃত অর্থেই ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে, আর, আমাদের দায়িত্ব এই ইতিবাচকতাকে নেতিবাচকতার রঙে না রাঙানো।
বন্ধুরা, আমরা প্রায়ই শুনে থাকি– প্রকৃতি বিকৃতি এবং সংস্কৃতি। এই শব্দগুলিকে একত্রে দেখলে এবং এর অন্তর্নিহিত ভাবনা বুঝতে পারলে আপনারা জীবনকে উপলব্ধি করার এক নতুন পথ দেখতে পাবেন। যদি, মানব প্রকৃতির চর্চা করেন তাহলে-'এটা আমার', 'আমি এটা ব্যবহার করি' এই ভাবনাগুলিকে খুব স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়। এটা নিয়ে কারো কোনো আপত্তি থাকতে পারে না। একই আমরা 'প্রকৃতি' বলতে পারি। কিন্তু,'যা আমার নয়', 'যার উপর আমার অধিকার নেই', তাকে আমি অপরের থেকে কেড়ে নিয়ে, তা ব্যবহার করলে, তখন তাকে আমরা 'বিকৃতি' বলে থাকি। এই দুই ভাবনার ঊর্ধ্বে, প্রকৃতি আর বিকৃতির উপর, যখন কোন সাংস্কৃতিক মন তা নিয়ে ভাবে বা ব্যবহার করে তখন সেখানে 'সংস্কৃতি' দেখতে পাই। এখন কেউ নিজের অধিকারের জিনিস, নিজের পরিশ্রম দ্বারা উপার্জন করা জিনিস, নিজের প্রয়োজনীয় কোনো বস্তু,তা সে, কম হোক বা বেশি, চিন্তা না করে, কোনো ব্যক্তির প্রয়োজনীয়তা অনুসারে, নিজ ভাবনা ত্যাগ করে, নিজের প্রাপ্য অংশ ভাগ করে দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তির প্রয়োজন মেটায়–তাকেই তো বলে 'সংস্কৃতি'।বন্ধুরা, এই চরম পরীক্ষার সময়ই তো এইসব গুনাবলীর পরিচয় পাওয়া যাবে।
আপনারা বিগত কিছুদিনে দেখেছেন হয়ত, ভারত নিজের সংস্কারের মতো, নিজের ভাবনার মতই, নিজ সংস্কৃতি বজায় রেখে, কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সংকটময় পরিস্থিতিতে পৃথিবী তথা সমৃদ্ধশালী দেশগুলিতে, ওষুধের অভাব খুব বেশি পরিমাণে প্রকট হয়ে উঠেছে। এটা এমন এক সময়, যে, ভারত যদি পৃথিবীকে ওষুধ নাও দেয়,কেউ ভারতকে দোষারোপ করবে না। প্রত্যেকটা দেশ–ই বুঝতে পারছে, যে, ভারতের জন্য তার প্রাথমিক উদ্দেশ্য, ভারতবাসীর জীবন বাঁচানো। কিন্তু বন্ধুরা, ভারত প্রকৃতি– বিকৃতির ঊর্ধ্বে উঠে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ভারত নিজের সংস্কৃতি মেনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।আমরা ভারতের আবশ্যক অনুসারে যা যা দরকার, তার প্রচেষ্টা বাড়িয়েছি, উপরন্তু, বিশ্বব্যাপী মানবিকতা রক্ষার আহ্বানেও সম্পূর্ণরূপে সাড়া দিয়েছি। আমরা পৃথিবীর প্রত্যেক অভাবগ্রস্তের কাছে ওষুধ পৌঁছে দেবার পণ করেছি আর মানবিকতার এই লক্ষ্য পূরণ করেছি। বর্তমানে যখন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রাধ্যক্ষের সঙ্গে ফোনে আমার কথা হয়, তখন তাঁরা ভারতীয়দের প্রতি তাঁদের কৃতজ্ঞতা অবশ্যই ব্যক্ত করেন। যখন তাঁরা বলেন,' থ্যাংক ইউ ইন্ডিয়া, থ্যাংক ইউ পিপল অফ ইন্ডিয়া' তখন দেশের মর্যাদা আরও বেড়ে যায়।এইভাবে, এই সময়ে ভারতের আয়ুর্বেদ আর যোগের মাহাত্ম্য বিশ্বজুড়ে মানুষ সমীহের চোখে দেখছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখুন, ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য ভারতের আয়ুর্বেদ আর যোগ কতটা কার্যকরী, তারই চর্চা হচ্ছে সবদিকে। করোনার বিরুদ্ধে, আয়ুষ মন্ত্রক, ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য যে প্রটোকল দিয়েছে, আমার বিশ্বাস, আপনারা এর প্রয়োগ নিশ্চয়ই করছেন।গরম জল,ভেষজ নির্যাস ও অন্যান্য নির্দেশাবলী, আয়ুষ মন্ত্রক যা যা জারি করেছে, তা আপনারা নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে অন্তর্ভুক্ত করলে অনেক লাভবান হবেন।
বন্ধুরা, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, অনেক সময় আমরা নিজেদের শক্তি ও সমৃদ্ধ পরম্পরা কে চিনতে ভুল করে ফেলি। কিন্তু পৃথিবীর অন্য কোনো দেশ যখন 'প্রমাণ নির্ভর গবেষণা'র মাধ্যমে সেই একই কথা বলে, আমাদের ফর্মুলা আমাদেরকেই শেখায়, তখন তা আমরা সঙ্গে সঙ্গে গ্রহণ করে ফেলি। সম্ভবত এর পেছনে একটা বড় কারণ হলো– কয়েকশো বছরের দীর্ঘ আমাদের দাসত্ব জীবন। ভারতের তরুণ প্রজন্মকে এবার এই স্পর্ধা গ্রহণ করতে হবে। হ্যাঁ! এর জন্য তরুণ প্রজন্মকে সংকল্প গ্রহণ করতে হবে আর বিশ্ব যে ভাষা বোঝে, সেই বৈজ্ঞানিক ভাষাতেই বোঝাতে হবে, কিছু করে দেখাতে হবে।
বন্ধুরা, এমনিতে কোভিড-19 এর কারণে, অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন, আমাদের কাজ করার ধরণ, আমাদের জীবিকা আর আমাদের অভ্যাসেও খুব স্বাভাবিকভাবেই নিজের স্থান তৈরি করে নিয়েছে। আপনারা সবাই নিশ্চয়ই উপলব্ধি করেছেন এই সংকট কিভাবে আলাদা আলাদা বিষয়ে আমাদের বোধ এবং চেতনা জাগ্রত করেছে। আমাদের চারপাশে এর যে প্রভাবগুলি দেখা যাচ্ছে তার মধ্যে প্রথম হলো মাস্ক পরা এবং নিজের মুখ ঢেকে রাখা। করোনার ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মাস্কও আমাদের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। এমনিতে আমাদের চারপাশে বহু মানুষকে মাস্ক পড়ে থাকতে দেখার অভ্যাস আমাদের কখনোই ছিল না। কিন্তু এখন সেটা হচ্ছে। হ্যাঁ, এর মানে এটা কখনোই নয়<
আমার প্রিয় দেশবাসী, অন্যান্যবার ‘মন কি বাত’-এ আমি কত রকমের বিষয় নিয়ে হাজির হই, কিন্তু আজ দেশ এবং দুনিয়ার মনে একটিই এবং শুধু মাত্র একটিই কথা — করোনা মহামারী থেকে তৈরি হওয়া ভয়ঙ্কর সংকট। এই সময়ে আমার অন্য কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলা উচিত হবে না। গুরুত্বপূর্ণ কথা অনেক বলা যাবে, কিন্তু আজ আমার মন চাইছে এই মহামারী নিয়েই কিছু বলি। তবে সবার আগে আমি আমার সমস্ত দেশবাসীর কাছে মাপ চেয়ে নিচ্ছি। আমার মন বলছে, আমার কিছু সিদ্ধান্তের জন্য যে আপনাদের প্রচণ্ড অসুবিধার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে, সেজন্য আপনারা আমাকে নিশ্চয়ই মার্জনা করে দেবেন। বিশেষ করে আমার গরীব ভাই-বোনেরা নিশ্চয়ই ভাবছেন যে এ কেমন প্রধানমন্ত্রী, যে আমাদের এই রকম মুস্কিলে ফেলে দিল! তাঁদের কাছেও আমি বিশেষভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। হয়ত অনেকে আমার ওপর বিরক্তও হয়েছেন যে সবাইকে ঘরে বন্ধ করে রেখেছে, এ কেমন ব্যাপার!
আমি আপনাদের অসুবিধে — আপনাদের সমস্যা বুঝতে পারছি, কিন্তু ভারতের মত ১৩০ কোটি জনসংখ্যার একটি দেশে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অন্য আর কোনো রাস্তা ছিল না। করোনার সঙ্গে যুদ্ধ হল জীবন আর মৃত্যুর যুদ্ধ, আর এই যুদ্ধ আমাদের জিততেই হবে। আর সেজন্যেই কঠিন হওয়া জরুরি। কারুর ইচ্ছে করে না এত কঠোর পদক্ষেপ নিতে, কিন্তু গোটা দুনিয়ার অবস্থা দেখার পর মনে হয় এছাড়া গত্যন্তর ছিল না। আপনাদের এবং আপনাদের পরিবারগুলিকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। আমি আবার একবার আপনাদের যাবতীয় অসুবিধার জন্য মাপ চাইছি। বন্ধুগণ, কথায় আছে — ‘এবংএবংবিকারঃ, অপিতরুনহাসাধ্যতেসুখং’, অর্থাৎ রোগ এবং তার প্রকোপের ব্যাপারে শুরুতেই ব্যবস্থা নিতে হয়, কারণ পরে যখন তা আয়ত্বের বাইরে চলে যায় তখন প্রতিকার করাই মুশকিল হয়ে যায়। আজ গোটা ভারত, প্রত্যেক ভারতবাসী তা-ই করছেন। ভাই-বোন, মা এবং প্রবীণেরা, করোনা ভাইরাস সারা দুনিয়াকে বন্দি করে দিয়েছে। সে জ্ঞান, বিজ্ঞান, ধনী, দরিদ্র, দুর্বল, শক্তিমান — সকলকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। একে কোনো রাষ্ট্রসীমায় বাঁধা যায় না, কোনো এলাকা বা আবহাওয়ারও এ তোয়াক্কা করে না। এই ভাইরাস মানুষকে শুধু মারা নয়, একেবারে শেষ করে দেবার জেদ ধরে বসে আছে, আর সেই জন্যেই সব্বাইকে, পুরো মানবজাতিকে একজোট হয়ে এই ভাইরাসকে খতম করার সংকল্প নিতে হবে। কিছু মানুষের মনে হচ্ছে, ‘লকডাউন’ পালন করে তাঁরা অন্যের উপকার করছেন। এরকম ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করা ঠিক নয়। এই লকডাউন আপনাদের নিজেদের বাঁচার জন্যে। আপনাদের নিজেকে বাঁচতে হবে, নিজের পরিবারকে বাঁচাতে হবে। এখন আগামী বেশ কিছু দিন পর্যন্ত আপনাদের এই ধৈর্য দেখাতে হবে, লক্ষণরেখাটি মেনে চলতে হবে। সাথীরা, আমি জানি, আইন কেউ ভাঙতে চান না, নিয়মকেও ভাঙতে চান না, তবু কিছু লোক যে তা করছেন তার কারণ হল, তাঁরা পরিস্থিতির গুরুত্বটাই এখনও বুঝতে পারছেন না। এঁদের একথাই বলব যে, লকডাউনের নিয়ম যদি ভাঙেন তাহলে করোনা ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচা মুশকিল হয়ে যাবে। সারা পৃথিবীতে কিছু লোক, যাঁরা এই রকম ভুল করেছিলেন, তাঁরা আজ পস্তাচ্ছেন। বন্ধুরা, কথিত আছে – ‘আরোগ্যমপরমভাগ্যম / স্বাস্থ্যংসর্বার্থসাধনম’ অর্থাৎ আরোগ্যই সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য, এবং স্বাস্থ্যই দুনিয়ার সমস্ত সুখের সাধন। নিয়ম যাঁরা ভাঙছেন তাঁরা আসলে নিজেদের জীবন নিয়েই ছেলেখেলা করছেন।
বন্ধুগণ, এই লড়াইয়ে এমনও অনেক যোদ্ধা আছেন যাঁরা ঘরে নয়, ঘরের বাইরে থেকে করোনা ভাইরাসের মোকাবিলা করছেন যাঁরা আমাদের ফ্রন্টলাইন সোলজার্স-সামনের সারির যোদ্ধা। এর মধ্যে বিশেষ করে আমাদের সেই সব ভাইবোনেরা রয়েছেন যাঁরা নার্সিংয়ের কাজ করেন, রয়েছেন ডাক্তার এবং প্যারামেডিকেল কর্মীরা। সেই সব বন্ধুরা যাঁরা করোনাকে পরাজিত করেছেন, তাঁদের থেকে আমাদের প্রেরণা নিতে হবে। গত কয়েক দিনে আমি এই রকম কিছু মানুষের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি, তাঁদের উৎসাহ দিয়েছি এবং তাঁদের সঙ্গে কথা বলে আমার নিজেরও উৎসাহ বেড়ে গেছে। আমি তাঁদের থেকে অনেক কিছু শিখেছি। এবারের ‘মন কি বাত’-এ আমি সেই সব বন্ধুদের অনুভব, তাঁদের কথাবার্তার কিছু অংশ আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। প্রথমে আমাদের মধ্যে আসবেন শ্রী রামগম্পা তেজা-জী। যিনি একজন তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মরত। আসুন, তাঁর কথা শুনি।
রামগম্পা তেজা : নমস্কার।
মোদিজি : কে, রাম বলছেন?
রামগম্পা : হ্যাঁ, আমি রাম বলছি।
মোদিজী : হ্যাঁ, রাম, নমস্কার।
রামগম্পা : নমস্কার, নমস্কার।
মোদিজী : আমি শুনেছি, আপনি করোনা সংক্রমণের এই গভীর বিপদ কাটিয়ে উঠেছেন।
রামগম্পা : হ্যাঁ।
মোদিজী : আমি আপনার সঙ্গে কিছু কথা বলতে চাই। আপনি এই বিপদ কাটিয়ে উঠেছেন এ ব্যাপারে আপনার অভিজ্ঞতার কথা কিছু বলুন।
রামগম্পা : আমি আই-টি সেক্টরের একজন কর্মী। কাজের প্রয়োজনে আমাকে দুবাইতে একটি মিটিংয়ে যেতে হয়েছিল। সেখানে আমার অজান্তেই এই সংক্রমণ ঘটে যায়। দেশে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে জ্বর এবং বাকি সব উপসর্গ দেখা দেয়। পাঁচ-ছয় দিন বাদে ডাক্তারেরা যখন করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা করলেন তখন সেটা পজিটিভ এল। তখন আমি হায়দ্রাবাদে গান্ধী সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হই এবং চোদ্দদিন বাদে ঠিক হয়ে যাওয়ার পর আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সকলে একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিল।
মোদিজী : অর্থাৎ যখন আপনার সংক্রমণ ধরা পড়ে?
রামগম্পা : হ্যাঁ।
মোদিজী : এই ভাইরাসটি যে খুব মারাত্মক সেটা তাঁদের আগেই জানা ছিল নিশ্চয়ই।
রামগম্পা : হ্যাঁ।
মোদিজী : রোগ ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার একদম প্রথম প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
রামগম্পা : প্রথমে তো খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। শুরুতে বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে রোগটা আমার হয়েছে, কী করেই বা হল। কারণ, ভারতে তখন দু-তিনজনের সংক্রমণ হয়েছে। তাঁদের বিষয়ে কিছু জানতাম না। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর আমাকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। ওখানে প্রথম দু-তিন দিন এমনিই কেটে যায়। কিন্তু ওখানকার ডাক্তার এবং নার্স যাঁরা আছেন আমার সঙ্গে তাঁরা খুব ভালো ব্যবহার করেছিলেন। প্রত্যেক দিন আমাকে ফোন করে কথা বলতেন এবং ভরসা দিতেন যে কিছু হবে না, আপনি ঠিক হয়ে যাবেন। দিনে দু-তিনবার ডাক্তার এবং নার্সরা আমার সঙ্গে কথা বলতেন। প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম বটে কিন্তু তারপরে মনে হত এতসব ভালোমানুষের সঙ্গে আছি, এক্ষেত্রে কী করা উচিত সেটা তাঁরা জানেন কাজেই আমি নিশ্চয়ই ভালো হয়ে যাব। এই রকমই মনে হয়েছিল।
মোদিজী : পরিবারের বাকি লোকদের মানসিক অবস্থা কেমন ছিল?
রামগম্পা : যখন আমি হাসপাতালে ভর্তি হলাম, প্রথমে তো সকলে খুব চাপের মধ্যে ছিল, সবার অতিরিক্ত খেয়াল দেবার কারণে একটু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু হ্যাঁ, সবার আগে ওদের পরীক্ষা করাই। সকলেই নেগেটিভ আসে যেটা খুব বড় আশীর্বাদ ছিল আমার ও আমার পরিবারের জন্য, আমার আশেপাশের মানুষদের জন্য। তারপর তো প্রতিদিন অবস্থার উন্নতি হয়েছে। ডাক্তাররা আমাকে ও আমার পরিবারকে এই কথা-ই জানান।
মোদিজী : আপনি কী কী সাবধানতা অবলম্বন করেন? আপনার পরিবার কী কী বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখে?
রামগম্পা : প্রথম যখন জানতে পারি তখন আমি কোয়ারান্টাইনে এ ছিলাম। তারপর আরও চোদ্দ দিন ডাক্তাররা আমায় নিজের বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেয়। তারা বলে নিজের ঘরে হাউস কোয়ারান্টাইনে থাকতে। সুতরাং ফেরার পর আমি নিজের বাড়িতেই আছি। নিজের ঘরেই থাকি বেশীরভাগ, সবসময় মাস্ক পড়ে থাকি। খাওয়ার সময় হাত ধোয়া ভীষণ জরুরি, সেই সব খেয়াল রাখি।
মোদিজী : ঠিক আছে রাম, আপনি সুস্থ হয়ে এসেছেন, আপনাকে ও আপনার পরিবারকে আমার শুভ কামনা রইল।
রামগম্পা : ধন্যবাদ
মোদিজী : কিন্তু আমি চাই আপনার অভিজ্ঞতা।
রাম : হ্যাঁ।
মোদিজী : আপনি তো তথ্যপ্রযুক্তির পেশার সাথে যুক্ত?
রাম : হ্যাঁ
মোদিজী : আমি চাই আপনি অডিও বানিয়ে সবার সাথে শেয়ার করুন, স্যোসাল মিডিয়াতে ভাইরাল করুন। এর ফলে মানুষ ভয় পাবেনা, খুব সহজেই জানতে পারবে কি করনীয়।
রাম : হ্যাঁ, আমি বাইরে আসা ইস্তক দেখছি লোকে কোয়ারান্টাইন মানে জেল যাওয়ার মত ভাবছে। কিন্তু ব্যাপারটা সেরকম নয়। সবার জানা দরকার সরকারী নজরদারীতে আলাদা থাকাটা তাদের জন্য, তাদের পরিবারের জন্য। আমি সবাইকে বলতে চাই, পরীক্ষা করান, কোয়ারান্টাইনকে ভয় পাবেন না। কোনো লজ্জা থাকা উচিত নয় আলাদা নজরদারীতে থাকার বিষয়টার উপর।
মোদিজী : ঠিক আছে রাম, অনেক অনেক শুভ কামনা আপনাকে।
রাম : ধন্যবাদ!
মোদিজী : ধন্যবাদ ভাই, অনেক ধন্যবাদ!
বন্ধুরা, করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ার পর রাম ডাক্তারের প্রত্যেকটা নির্দেশ পালন করেন এবং তার ফলস্বরূপ সে এখন সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছে। আমাদের সঙ্গে এখন আর এক বন্ধু আছেন যিনি করোনাকে পরাজিত করেছেন। এঁর গোটা পরিবার সংকটাপন্ন হয়ে গিয়েছিল। তাঁর তরুন ছেলে ফেঁসে গিয়েছিল। আসুন, কথা বলি আগ্রার শ্রী অশোক কপুরের সঙ্গে।
মোদিজী : অশোকজি, নমস্কার
অশোক কাপুর : নমস্কার। আমার সৌভাগ্য যে আপনার সাথে কথা বলতে পারছি।
মোদিজী : আমারও সৌভাগ্য। আপনার পুরো পরিবার এই সংকটে পড়েছিল?
অশোক কাপুর : আজ্ঞে হ্যাঁ।
মোদিজী : আমি জানতে চাই আপনি এই সংক্রমণের ব্যাপারে জানতে পারলেন কিভাবে? ঠিক কি হয়েছিল? হাসপাতালে কি হয়েছিল? আপনার কথা শুনে যদি এমন কিছু জানতে পারি যা দেশের কাজে আসবে আমি তাই করব।
আশোক কাপুর : নিশ্চয়ই। আমার দুই ছেলে। ওরা ইতালি গিয়েছিল। ওখানে জুতো শিল্প মেলায় ছিল। আমরা জুতোর কারবার করি, কারখানা আছে জুতো তৈরির। ওরা ইতালি গিয়েছিল, মেলায়। আমার জামাইও গিয়েছিল। ও দিল্লিতে থাকে। ওর একটু অসুবিধা হচ্ছিল বলে ও রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতাল যায়। ওখানে ওকে পজিটিভ বলে আর সাফদারজাং পাঠিয়ে দেয়। আমাদের কাছে ফোন আসে যে আপনারাও ওঁর সঙ্গে গিয়েছিলেন সুতরাং আপনারাও পরীক্ষা করান। তাই আমার দুই ছেলে পরীক্ষা করাতে চলে যায় আগ্রা জেলা হাসপাতালে। সেখানে ওদের বলে গোটা পরিবারকে নিয়ে আসতে। আমরা সবাই যাই।
মোদিজী : আচ্ছা
অশোক কাপুর : পরের দিন ওঁরা আমাদের ছয়জনকে মানে আমার দুই ছেলে, আমি — আমার বয়স তিয়াত্তর বছর, আমার স্ত্রী, এক বউমা ও ষোলো বছরের নাতি — সকলকে পজিটিভ বলে আর জানায় যে আমাদের দিল্লি যেতে হবে।
মোদিজী : হে ভগবান!
অশোক কাপুর : কিন্তু স্যার, আমরা ভয় পাইনি। ভাবলাম, মন্দের ভাল, অন্তত জানতে তো পেরেছি। আমরা দিল্লির সাফদারজাং হাসপাতালে চলে যাই। আগ্রা থেকেই আমাদের পাঠানো হয়। ওরা আমাদের বিনামূল্যে দুটো অ্যাম্বুলেন্সে পাঠায়। আমরা খুব কৃতজ্ঞ আগ্রার ডাক্তারদের কাছে, এখানকার প্রশাসনের কাছে। এঁরা আমাদের সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছে।
মোদিজী : আপনারা অ্যাম্বুলেন্সে আসেন?
অশোক কাপুর : হ্যাঁ অ্যাম্বুলেন্সেই এসেছি। ভালোই ছিলাম, বসেছিলাম, যেরকম অ্যাম্বুলেন্সে বসা যায় আর কি। ওঁরা আমাদের দুটো অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছিলেন, সঙ্গে ডাক্তারও দিয়েছিলেন, আর আমাদের সাফদারজং হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। সাফদারজং হাসপাতালে ডাক্তাররা গেটে উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা আমাদেরকে নির্দিষ্ট ওয়ার্ডে নিয়ে গেলেন। আমাদের ছয়জনকে আলাদা আলাদা রুম দেওয়া হল। রুমগুলো ভালোই ছিল, সব ব্যবস্থাই ছিল। আমরা চৌদ্দ দিন হাসপাতালে একান্তেই কাটিয়েছি। ডাক্তারদের কথা বলতে গেলে এটুকুই বলবো যে তাঁরা আমাদের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করেন, আমাদের ভালোভাবে চিকিৎসা করেন। আসলে তাঁরা সেই বিশেষ পোশাকটি পড়তেন তো তাই বোঝা যেত না কে ডাক্তার, কে ওয়ার্ড বয়, বা কে নার্স। তাঁরা যা যা বলতেন, আমরা শুনতাম। তাই আমাদের কারও ১ শতাংশও কোন সমস্যা হয়নি।
মোদিজী : মনে হচ্ছে আপনার আত্মবিশ্বাসও বেশ দৃঢ়।
অশোক কাপুর : হ্যাঁ, আমি একদম সুস্থ আছি। আমিতো আমার হাঁটুর অপারেশনও করিয়েছি, তার পরেও আমি একদম ভালো আছি।
মোদিজী : না, কিন্তু যখন আপনার পরিবারকে এত বড় সংকটের মোকাবিলা করতে হলো, যার মধ্যে একটি ষোলো বছরের বাচ্চাও ছিল…
অশোক কাপুর : মহাশয় ওর পরীক্ষা ছিল। আই-সি-এস-সি’র পরীক্ষা। আমরা ওকে পরীক্ষা দিতে দিইনি। আমি বললাম পরে দেখা যাবে। প্রাণ থাকলে তবেই পরবর্তীতে এরকম অনেক পরীক্ষা দিতে পারবে। এই নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই।
মোদিজী : হ্যাঁ একদম ঠিক বলেছেন। আপনার অভিজ্ঞতা দিয়ে আপনি আপনার পরিবারকে ভরসা জুগিয়েছেন, তাদের আত্মবিশ্বাসও বাড়িয়েছেন।
অশোক কাপুর : হ্যাঁ, সেই কঠিন সময়ে আমাদের পরিবারের প্রত্যেকে একে অপরের মনোবল বাড়াতাম। আমাদের দেখা হতো না ঠিকই, কিন্তু ফোনে আমরা কথা বলে নিতাম। আর আমাদের সম্পূর্ণ দেখভাল, যতটা সম্ভব, ততটা ডাক্তাররা করেছেন। তার জন্য আমরা ওঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। হাসপাতালের কর্মীরা, নার্সরা, আমাদের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন।
মোদিজী : আমার পক্ষ থেকে আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।
অশোক কাপুর : অনেক ধন্যবাদ। আপনার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাওয়ায় আমি আপ্লুত।
মোদিজী : আমরাও
অশোক কাপুর : এর পরেও বলব মহাশয় যদি আমাদেরকে কোন ব্যাপারে প্রয়োজন হয়, তা সে সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য কোথাও যাওয়াই হোক, বা অন্য কোন কাজে, আমাদেরকে বলবেন, আমরা সব সময়ই প্রস্তুত।
মোদিজী : আপনারা আপনাদের মত করে আগ্রাতেই সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারেন। ক্ষুধার্ত কাউকে দেখলে তাকে খাবার দিতে পারেন। গরিব মানুষের কথা চিন্তা করুন আর কি কি নিয়ম পালন করা উচিত তা লোকজনকে বোঝান। লোকেদের জানান যে কীভাবে নিয়ম পালন করেই, নিয়মের মধ্যে থেকেই আপনি এবং আপনার পরিবার এই সংক্রমণ থেকে মুক্ত হয়েছেন। তাঁদের বোঝান যে নিয়ম পালন করলেই দেশ এই সংকটের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
অশোক কাপুর : মহাশয়, আমরা আমাদের ভিডিও বানিয়ে বিভিন্ন চ্যানেলে দিয়েছি।
মোদিজী : আচ্ছা।
অশোক কাপুর : চ্যানেলে ইতিমধ্যে সেগুলো দেখিয়েছে যাতে সচেতনতা বৃদ্ধি হয়।
মোদিজী : সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে এ বিষয়ে আরও বেশি প্রচার করতে হবে।
অশোক কাপুর : আমরা যে কলোনিতে থাকি তা বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। আমি সবাইকে বলে দিয়েছি যে আমরা ফিরে এসেছি বলে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। কারও যদি কোনো সমস্যা থেকে থাকে তাহলে গিয়ে যেন পরীক্ষা করায়। যাঁরা যাঁরা আমাদের সংস্পর্শে আসবেন তাঁরা যেন পরীক্ষা অবশ্যই করান। ঈশ্বরের কৃপায় সবাই যেন ভাল থাকেন।
মোদিজী : আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
অশোক কাপুর : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। আমার তো এটা ভেবেই খুব আনন্দ হচ্ছে যে আপনার সঙ্গে কথা হয়ে গেল। আপনাকে একবার দেখেছিলাম আমেদাবাদে, এখন আপনার সঙ্গে কথাও হয়ে গেল। আমাদের বাড়ি মণি নগরে।
মোদিজী : আচ্ছা আচ্ছা।
অশোক কাপুর : আপনাকে সেখানে দেখেছিলাম একবার, আমার দাদা সেখানে থাকেন।
মোদিজী : আচ্ছা, এখন আপনারা সপরিবারে আগ্রায় থাকেন?
অশোক কাপুর : হ্যাঁ আমরা আগ্রাতে থাকি ।আমার আরও দুই ভাই মণি নগর এবং আমেদাবাদে থাকেন।
মোদিজী : আচ্ছা আচ্ছা বেশ।
অশোক কাপুর : সেটা তো আপনার নির্বাচনক্ষেত্র ছিল, যখন আপনি মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।
মোদিজী : হ্যাঁ আমি সেই অঞ্চলেরই বিধায়ক ছিলাম।
অশোক কাপুর : হ্যাঁ, মহাশয় আমি একবার সেখানেই ছিলাম যখন আপনার প্রচার চলছিল। খুব ভালো লাগলো আপনার সঙ্গে কথা বলতে পেরে।
মোদিজী : অনেক ধন্যবাদ, অনেক শুভেচ্ছা।
অশোক কাপুর : অনেক অনেক ধন্যবাদ।
বন্ধুরা, আমরা অশোকবাবু এবং তাঁর পরিবারের দীর্ঘায়ু কামনা করি। যেমন তিনি বললেন যে আতঙ্কিত না হয়ে, নির্ভয়ে যথাসময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা, সময় মতো ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করেই আমরা এই মহামারীটিকে পরাস্ত করতে পারি। বন্ধুরা, আমরা কীভাবে চিকিত্সার মাধ্যমে এই মহামারীটির মোকাবিলা করছি তার অভিজ্ঞতা জানতে, আমি এমন কয়েকজন ডাক্তারের সঙ্গেও কথা বললাম যারা এই যুদ্ধে প্রথম সারির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁদের রোজনামচা এখন এই রোগীদেরকে ঘিরেই। আসুন দিল্লি থেকে ডাঃ নীতেশ গুপ্তের সঙ্গে আমরা কথা বলি।
মোদিজী : নমস্কার ডাক্তারবাবু।
ডাঃ নীতিশ গুপ্তা: নমস্কার স্যার।
মোদিজী : নমস্কার নীতিশ-জী, আপনি তো বাহিনীতে একেবারে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। আমি জানতে চাইছি যে হাসপাতালে আপনার বাকি সাথীদের মনোবল কেমন আছে?
ডাঃ নীতিশ গুপ্তা: সবারই মনোবল তুঙ্গে আছে। আপনার আশীর্বাদ সবার সঙ্গে আছে। হাসপাতালগুলিকে আপনি যেভাবে সাহায্য করছেন, যে জিনিসটা আমরা চাইছি, সেটাই আপনি যোগান করছেন, যেভাবে সেনাবাহিনী সীমান্তে লড়াই করে, আমরাও ঠিক সেভাবে কাজে লেগে রয়েছি এবং আমাদের কেবলমাত্র একটাই কর্তব্য, রোগীকে সুস্থ করে বাড়ি পাঠানো।
মোদিজী : আপনি একদম ঠিক বলেছেন, এটা সত্যিই একটা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি এবং আপনারাই সীমান্ত সামলাচ্ছেন।
ডাঃ নীতেশ গুপ্তা : হ্যাঁ সার।
মোদিজী : আপনাদের তো রোগীর চিকিৎসার পাশাপাশি তাদের কাউন্সেলিংও করতে হচ্ছে…
ডা নীতেশ গুপ্তা : হ্যাঁ সার, ওটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। কারণ রোগীরা যখন প্রথম জানতে পারেন তাঁদের কী হয়েছে তখন তাঁরা ভীষণ ভয় পেয়ে যান। ভাবেন এটা কী হচ্ছে আমার সঙ্গে…ওঁদের বোঝাতে হয় যে এটা কিছু না, আগামী ১৪ দিনে আপনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবেন। এখনো পর্যন্ত আমরা এরকম ১৬জন রোগীকে বাড়ী পাঠাতে সক্ষম হয়েছি।
মোদিজী : তাহলে এটা বলুন যে সব মিলিয়ে আপনাদের সামনে কী-কী সমস্যা আসছে, ভীত ব্যক্তিদের কী নিয়ে সবচেয়ে সংশয় হচ্ছে?
ডাঃ নীতেশ গুপ্তা : ওঁরা এটাই ভাবেন যে সামনে কী হবে? এবার ওঁদের কী হবে? আসলে ওঁরা দেখেছেন যে বাইরের দেশে এত লোক মারা যাচ্ছেন, তো ওঁরা ভাবেন ওঁদের সঙ্গেও এই পরিণতিই হবে। তখন আমাদের ওদেরকে বোঝাতে হয় যে আপনার এই সমস্যা এই দিনে ঠিক হবে। আপনার কেসটি ভীষণ অল্প, সাধারণ সর্দি–কাশীর কেসগুলো ঠিক এরকমই হয়। তাই ওঁরা যেরকম ৫–৭দিনে সেরে ওঠেন, আপনারাও উঠবেন। তারপর আমরা আপনাদের টেস্ট করব, সেটা নেগেটিভ এলে আপনাকে আমরা বাড়ী পাঠাতে পারব। এই জন্যই বার–বার, তিন–চার ঘন্টা অন্তর–অন্তর
আমার প্রিয় দেশবাসী, এটা আমার সৌভাগ্য যে “মন কি বাত”-এর মাধ্যমে আমি আর একবার কচ্ছ থেকে কোহিমা, কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত দেশের সমস্ত নাগরিককে নমস্কার জানাবার সুযোগ পেলাম। আপনাদের সকলকে নমস্কার। নিজের দেশের বিশালতা আর বৈচিত্র্যের কথা স্মরণ করে তাকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে প্রতিটি ভারতীয়ের মন গর্বে ভরে ওঠে। এই বৈচিত্র্যের অনুভব নিয়তই আমাদের অভিভূত করে, আনন্দিত করে, প্রেরণা যোগায়। কিছুদিন আগে আমি দিল্লির হুনর হাটে, ছোট একটি জায়গায়, দেশের বিশালতা, সংস্কৃতি, পরম্পরা, খাদ্যাভ্যাস আর আবেগের বিবিধ রূপ দেখতে পেলাম। সাবেকী বস্ত্র ও হস্তশিল্প, গালিচা, বাসন, বাঁশ এবং পিতলের জিনিস, পাঞ্জাবের ফুলকারি, অন্ধ্রপ্রদেশের অসাধারণ চামড়ার কাজ, তামিলনাড়ুর চমৎকার সব চিত্রকলা, উত্তরপ্রদেশের পিতলের সামগ্রী, ভাদোহীর গালিচা, কচ্ছের তামার জিনিস, অনেক রকম বাদ্যযন্ত্র — সারা ভারতের কলানৈপুণ্য আর কৃষ্টির অনন্য নিদর্শন এবং তার পিছনে শিল্পীদের সাধনা, নিষ্ঠা আর নিজেদের শিল্পশৈলীর প্রতি ভালোবাসার এই কাহিনি আমাদের বিশেষ অনুপ্রেরণা জোগায়। হুনার হাটে এক দিব্যাঙ্গ মহিলার কথা শুনে বড় ভালো লাগল। তিনি আমাকে বললেন যে আগে ফুটপাথে বসে উনি নিজের আঁকা ছবি বিক্রি করতেন। কিন্তু হুনর হাটের সঙ্গে সংযুক্ত হবার পর তাঁর জীবনটাই বদলে গেছে। আজ তিনি যে শুধু স্বনির্ভর হয়েছেন তাই-ই নয়, নিজের একটা বাসস্থানও কিনে নিতে পেরেছেন। হুনর হাটে আমার আরও কয়েকজন শিল্পীর সঙ্গে দেখা করার এবং কথা বলার সুযোগ হল। আমাকে বলা হয়েছে, হুনর হাটে যত কারিগর অংশ নিচ্ছেন তাঁদের ৫০ শতাংশের বেশি মহিলা। গত তিন বছরে এই হুনর হাটের মাধ্যমে প্রায় তিন লক্ষ কারিগর আর শিল্পী উপার্জন করার বিরাট সুযোগ পেলেন। এই হাট একদিকে যেমন কলানৈপুণ্য প্রদর্শনের এক মঞ্চ হয়ে উঠেছে সেই সঙ্গে দোসর হয়েছে এই সব মানুষের স্বপ্ন উড়ানের। এ এমন এক জায়গা যেখানে দেশের হরেক রকম বৈচিত্র্য চোখে পড়বেই। শিল্পকলা তো আছেই, সেই সঙ্গে আমাদের খাওয়া দাওয়ার বৈচিত্র্যও কিছু কম নয়। ওখানে একই লাইনে পর পর ইডলি দোসা, ছোলে বাটোরে, দাল বাটি, খমন-খান্ডভি — কত কী-ই যে বিক্রি হচ্ছিল। আমি নিজেও সানন্দে বিহারের সুস্বাদু লিট্টি-চোখার আস্বাদ নিলাম। বড় ভালো লাগল। ভারতের সর্বত্রই এই ধরনের মেলা, প্রদর্শনীর আয়োজন হয়ে আসছে। ভারতকে জানতে হলে, ভারতকে যথার্থ অনুভব করতে হলে সুযোগ পেলেই এই সব জায়গায় অবশ্যই যাওয়া দরকার। “এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত” আদর্শকে জীবন দিয়ে অনুভব করার এ এক দারুণ সুযোগ। এখানে শুধু যে আপনার নিজের দেশের শিল্পকলা আর সংস্কৃতির সঙ্গে সংযোগ ঘটবে তাই নয়, সেই সঙ্গে আপনি দেশের মেহনতী শিল্পীদের, বিশেষত, মহিলাদের সমৃদ্ধির শরিক হতে পারবেন। এ সব জায়গায় অবশ্যই যাবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের দেশের এক মহান ঐতিহ্য রয়েছে। পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে যে শিক্ষা আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি, সর্বজীবের প্রতি দয়া, প্রকৃতির প্রতি অপার প্রেম তারই অঙ্গ বিশেষ — আমাদের সাংস্কৃতিক পরম্পরা। এদেশের আবহাওয়ায় আতিথ্য নিতে বিশ্বের আলাদা আলাদা প্রজাতির পাখিরাও ভারতে আসে। আমাদের দেশ সারা বছরই বেশ কয়েকটি প্রজাতির পরিযায়ী পাখির আশ্রয় হয়ে ওঠে। ৫০০-রও বেশি আলাদা আলাদা প্রজাতির পাখি আলাদা আলাদা এলাকা থেকে এসে উপস্থিত হয়। আগে গান্ধীনগরে ‘কপ থারটিন’ সম্মেলনে এই নিয়ে যথেষ্ট চিন্তা-ভাবনা আলাপ-আলোচনা হয়েছে এবং এই ব্যাপারে ভারতের প্রয়াস যথেষ্ট প্রশংসিতও হয়েছে। বন্ধুগণ, আমাদের জন্যে এটা একটা গর্ব করার বিষয় যে আগামী তিন বছর ভারত পরিযায়ী প্রজাতি নিয়ে আয়োজিত ‘কপ কনভেনশন’-এর নেতৃত্ব দেবে। কীভাবে আমরা এই সুযোগটির সদ্ব্যবহার করতে পারি সে ব্যাপারে আপনাদের মূল্যবান পরামর্শ অবশ্যই পাঠাবেন। ‘COP convention’ নিয়ে এই আলোচনার সময় মেঘালয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি বিষয় আমার মনে পড়ে গেল। সম্প্রতি biologist-রা এক নতুন প্রজাতির মাছ খুঁজে পেয়েছেন যা কেবলমাত্র মেঘালয়ের পাহাড়ের গুহায় পাওয়া যায়। গুহার মাটিতে থাকা জলজ প্রাণীর মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় প্রজাতি। মাটির গভীরে অন্ধকার গুহায় যেখানে সূর্যালোক প্রায় পৌঁছতে পারেনা সেখানে এই মাছ পাওয়া যায়। বৈজ্ঞানিকরা পর্যন্ত আশ্চর্য হয়ে গেছেন যে এত গভীর ও অন্ধকার গুহায় এই মাছ কীভাবে জীবিত থাকে। এটা একটা আনন্দের বিষয় যে আমাদের ভারত বিশেষ করে মেঘালয় এক দুর্লভ প্রজাতির বাসস্থান। এই ঘটনা ভারতের জৈববৈচিত্র্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আমাদের আশপাশে এমন অনেক আশ্চর্য জিনিস আছে যা এখনও অনাবিষ্কৃত রয়েছে। এই সব আশ্চর্য জিনিস খোঁজ করার জন্য অনুসন্ধান জরুরি।
খ্যাতনামা তামিল মহিলা কবি অব্ওয়্যার (Avvaiyar) লিখেছেন— ‘KATRADHU KAIMANN ALAVAE AANAALUM, KALLAADHADHU ULAGALAVU’। অর্থাৎ আমরা যা জানি সেটা মাত্র এক মুঠো বালির সমান আর আমরা যা জানিনা, সেটা প্রায় পুরো ব্রহ্মাণ্ডের সমান। আমাদের দেশের বৈচিত্র্য সম্পর্কেও একথা বলা যায়। আমরা যা জানি তা নেহাতই নগণ্য। বিশ্বমানবতার জন্য আমাদের জীব বৈচিত্র্য এক অপূর্ব ভাণ্ডার যা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে, সাজাতে হবে এবং সংরক্ষণ করতে হবে।
আমার আদরের যুব সাথীরা, আজকাল আমাদের দেশের বাচ্চাদের মধ্যে যুবাদের মধ্যে science এবং technology-র প্রতি আকর্ষণ ক্রমবর্ধমান। মহাকাশে রেকর্ড সংখ্যক Satellite-এর উৎক্ষেপণ, নতুন নতুন রেকর্ড, নতুন নতুন মিশন সকল ভারতবাসীকে গর্বিত করে। ‘চন্দ্রায়ন-২’-এর উৎক্ষেপণের সময় আমি যখন বেঙ্গালুরুতে ছিলাম তখন সেখানে উপস্থিত বাচ্চাদের মধ্যে অফুরন্ত উৎসাহ দেখেছি। তাদের চোখে-মুখে ঘুমের কোন নামগন্ধ ছিলনা। পুরো রাত ওরা একরকম প্রায় জেগেই ছিল। ওদের মধ্যে science, technology এবং innovation নিয়ে যে উৎসাহ দেখেছি তা আমি কখনো ভুলবোনা। বাচ্চা ও যুবাদের এই উৎসাহের আরো শ্রীবৃদ্ধি ঘটাতে, ওদের এই scientific temper-কে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে এক অন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শ্রীহরিকোটা থেকে রকেট উৎক্ষেপণকে এখন আপনারা সামনে বসে দেখতে পাবেন। অতি সম্প্রতি এটা সকলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য visitor’s gallery বানানো হয়েছে যেখানে দশ হাজার লোকের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। ইসরোর ওয়েবসাইটে দেওয়া লিংক-এর মাধ্যমে অনলাইন বুকিংও করতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের রকেট উৎক্ষেপণ দেখানো এবং তাদের অনুপ্রাণিত করার জন্য অনেক স্কুল তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের tour-এ নিয়ে যাচ্ছেন বলে আমাকে জানানো হয়েছে। আমি সব বিদ্যালয়ের প্রিন্সিপাল ও শিক্ষকদের অনুরোধ করবো যে, আগামীদিনে আপনারা নিশ্চয় এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করবেন।
বন্ধুরা, আপনাদের আরও এক রোমাঞ্চকর খবর দিই। আমি ‘Namo App’-এ ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ নিবাসী পারস-এর comment পড়লাম। পারস চায় আমি ইসরোর (ISRO) ‘যুবিকা কার্যক্রম’ সম্বন্ধে যুব বন্ধুদের জানাই। তরুণদের বিজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য ইসরোর ‘যুবিকা’ এক প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা। 2019-এ এই কর্মসূচি স্কুলের student-দের জন্য শুরু করা হয়েছিল। ‘যুবিকা’ অর্থাৎ যুব বিজ্ঞানী কার্যক্রম। এই কার্যক্রম আমাদের vision ‘জয় জওয়ান, জয় কিষান, জয় বিজ্ঞান, জয় অনুসন্ধান’-এর অনুসারী। এই প্রোগ্রামের মধ্যে নিজেদের exam শেষ হওয়ার পর, ছুটির সময় student-রা ইসরোর বিভিন্ন centre-এ গিয়ে space technology, space science এবং space applications সম্পর্কে শিখতে পারবে। যদি আপনি জানতে চান training কেমন ভাবে হয়, ঠিক কী ধরনের বা তা কতটা আকর্ষণীয়, তাহলে যারা গতবার training attend করেছিল তাদের experience অবশ্যই পড়ুন। যদি নিজে attend করতে চান তাহলে ইসরোর সঙ্গে যুক্ত ‘যুবিকা’র website-এ গিয়ে নিজের registration-ও করাতে পারেন। আমার যুব বন্ধুরা, আমি আপনাদের জানিয়ে দিই website-এর নাম, লিখে নিন এবং আজ অবশ্যই visit করুন -www.yuvika.isro.gov.in। লিখে নিয়েছেন তো?
আমার প্রিয় দেশবাসী, একত্রিশে জানুয়ারি 2020-তে লাদাখের মনোরম উপত্যকা এক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হল। লেহ্ অঞ্চলের ‘কুশোক বাকুলা রিম্পোচি’ এয়ারপোর্ট থেকে ভারতীয় বায়ুসেনার বিমান AN 32 যখন উড়ে গেল তখন এক নতুন ইতিহাস তৈরি হলো। এই বিমানে 10 শতাংশ Indian biojet fuel-এর মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়েছিল। এমনটা প্রথমবার হলো যে দুটি ইঞ্জিনেই এই মিশ্রণের ব্যবহার করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, লেহ্-তে যে বিমানবন্দর থেকে এই বিমান উড়ে গেছে, তা শুধু ভারতেরই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত বিমানবন্দরগুলির মধ্যে অন্যতম। বিশেষ করে এই Biojet fuel, ‘non edible tree borne oil’ থেকে তৈরি। এই তেল ভারতের বিভিন্ন আদিবাসী এলাকা থেকে কেনা যায়। এই প্রচেষ্টার ফলে শুধু কার্বন নির্গমণ কম হবে তাই নয়, অপরিশোধিত তেলের ক্ষেত্রে আমদানির উপর ভারতের নির্ভরতা কমবে। আমি এই বৃহৎ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত সকলকে অভিনন্দন জানাই। বিশেষত CSIR, Indian Institute of Petroleum, Dehradun-এর বৈজ্ঞানিকদের, যাঁরা biofuel দিয়ে বিমান ওড়ানোর কৌশল সম্ভব করে দেখিয়েছেন। ওঁদের এই প্রয়াস Make in India-কেও শক্তিশালী করে তোলে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের নতুন ভারতবর্ষ এখন আর পুরনো পথ ধরে অগ্রসর হতে প্রস্তুত নয়। বিশেষ করে New India-য় আমাদের মা ও বোনেরা এগিয়ে এসে এমন সব চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছেন যাতে পুরো সমাজে এক সদর্থক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। বিহারের পূর্ণিয়ার এক ঘটনা সমগ্র দেশবাসীকে প্রেরণাদান করে। এটা এমন এক এলাকা, যেখানে কয়েক দশক ধরে মানুষ বিধ্বংসী বন্যার সঙ্গে লড়াই করে চলেছে। এই কারণে এখানে ফসল ফলানো এবং জীবিকা অর্জনের অন্যান্য উপায়গুলির সংস্থান খুবই কম। কিন্তু এই পরিস্থিতিতেই সেখানকার কিছু মহিলা এক অন্য রাস্তা বেছে নিয়েছেন। বন্ধুরা, এই এলাকার মহিলারা তুঁত বা মলবরী গাছে রেশমকীটের গুটি থেকে রেশম তৈরি করতেন, যার থেকে ওঁরা খুব স্বল্প অর্থ উপার্জন করতেন। অপরদিকে রেশম ক্রেতারা গুটি থেকে রেশমের সুতো বানিয়ে অনেক বেশি লাভ করত। কিন্তু আজ পূর্ণিয়ার মহিলারা নতুন ভাবে শুরু করেছেন যাতে পুরো চিত্রটা পালটে গেছে। এই মহিলারা সরকারী সহযোগিতায় ‘মলবরী উৎপাদন সমূহ’ স্থাপন করেছেন। তাঁরা গুটিপোকা থেকে রেশমের সুতো তৈরি করে সেই সুতো দিয়ে নিজেরা শাড়ি তৈরি করাও শুরু করেছেন। আপনারা জেনে অবাক হবেন, আগে যাঁরা গুটিপোকা বেচে সামান্য অর্থ উপার্জন করতেন, তাঁরাই এখন সেই রেশমের সুতোর তৈরি শাড়ি বেচে হাজার হাজার টাকা উপার্জন করছেন। ‘আদর্শ জীবিকা মহিলা মলবরী উৎপাদন সমূহ’-র দিদিরা যে বিস্ময়কর কাজ করেছেন, তার প্রভাব বর্তমানে অন্য অনেক গাঁয়ে দেখা যাচ্ছে। পূর্ণিয়ার অনেক গ্রামের কিসান দিদিভাইরা এখন কেবল শাড়িই তৈরি করছেন না, বড় বড় মেলাতে নিজেদের স্টল থেকে তাঁদের উৎপাদিত শাড়ি বেচছেনও। আজকের মহিলারা নতুন শক্তি, নতুন ভাবনা নিয়ে কীভাবে নতুন সাফল্য পাচ্ছেন এটা তার দৃষ্টান্ত।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের দেশের মহিলা ও কন্যাদের উদ্যম, তাঁদের সাহস প্রত্যেকের কাছে গর্বের বিষয়। আমাদের আশপাশে এরকম অনেক উদাহরণ আছে, যার থেকে আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের কন্যারা কীভাবে পুরনো ধ্যান-ধারণা ভেঙে নতুন উচ্চতায় পৌঁছচ্ছে। আমি আপনাদের সঙ্গে ১২ বছরের বালিকা কাম্যা কার্তিকেয়ন-এর উপলব্ধি ভাগ করে নিতে চাই। কাম্যা মাত্র ১২ বছর বয়সে Mount Aconcagua পর্বতমালা জয় করার কৃতিত্ব দেখিয়েছে। এটি দক্ষিণ আমেরিকার অ্যান্ডিস্ পর্বতের সবচাইতে উঁচু শৃঙ্গ, যা প্রায় ৭০০০ মিটার উঁচু। এই মাসের শুরুতে কাম্যা ওই শৃঙ্গ জয় করে আর প্রথমেই সেখানে আমাদের তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলন করে। এই ঘটনা সব ভারতীয়র হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। আমাকে এটাও বলা হয়েছে যে দেশকে গৌরবান্বিত করা এই মেয়েটির একটা নতুন মিশন আছে যার নাম ‘মিশন সাহস’। এই মিশনে সে সব মহাদেশের সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গগুলো জয় করার লক্ষ্য রেখেছে। এই অভিযানে ওকে নর্থ এবং সাউথ পোল-এ স্কি-ও করতে হবে। আমি কাম্যার এই ‘মিশন সাহস’-এর জন্য শুভকামনা জানাই। এত কম বয়সে কাম্যা যে উচ্চতায় পৌঁছেছে তাতে ফিটনেস-এর বিরাট ভূমিকা আছে। “A nation that is fit will be a nation that is hit.” যে জাতি ফিট, সে হিট-ও হবে। যে দেশ ফিট, সে সবসময়ই হিট-ও হবে। এভাবেই আগত মাসগুলো অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস–এর পক্ষেও খুব উপযুক্ত। ভারতের ভৌগোলিক গঠন এমনই যে আমাদের দেশে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসকে যথেষ্ট সুযোগ দেয়। একদিকে এখানে উঁচু উঁচু পাহাড় আছে তো অন্যদিকে দূর দূরান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত মরুভূমি আছে। একদিকে যেখানে ঘন জঙ্গলের সমারোহ, অন্যদিকে সমুদ্রের অসীম বিস্তার। এজন্যই আমি বিশেষভাবে বলতে চাই যে আপনারাও নিজের পছন্দমতো জায়গা বেছে নিয়ে নিজস্ব রুচি অনুযায়ী activity ঠিক করুন এবং অ্যাডভেঞ্চারের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করুন। জীবনে তো অ্যাডভেঞ্চার থাকতেই হবে, তাই না বন্ধু?
১২ বছরের কাম্যার সাফল্যের পর ১০৫ বছর বয়স্ক ভাগীরথী আম্মার সাফল্যের কাহিনি শুনলে তো আরও অবাক হয়ে যাবেন। বন্ধুরা, যদি আমরা জীবনে উন্নতি করতে চাই, কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ করে যেতে চাই, তাহলে প্রথম শর্ত এটাই যে আমাদের ভেতরের বিদ্যার্থী যেন কখনো না মরে যায়। ১০৫ বছরের ভাগীরথী আম্মা আমাদের এই প্রেরণা দেন। আপনারা হয়ত ভাবছেন ভাগীরথী আম্মা কে? ভাগীরথী আম্মা কেরালার কোল্লাম-এ থাকেন। খুব ছোটবেলায় উনি ওঁর মা-কে হারিয়েছেন। অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার পর স্বামীকেও হারান। কিন্তু ভাগীরথী আম্মা নিজের উৎসাহ হারাননি, নিজের উদ্যম ও আবেগ হারাননি। ১০ বছরেরও কম বয়সেই ওঁকে স্কুল ছাড়তে হয়। ১০৫ বছর বয়সে তিনি আবার স্কুলে পড়া শুরু করেন। এত বয়স হওয়া সত্ত্বেও ভাগীরথী আম্মা লেভেল-ফোর পরীক্ষা দেন এবং খুব উৎসাহের সঙ্গে রেজাল্ট-এর অপেক্ষা করতে থাকেন। উনি পরীক্ষায় ৭৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, অঙ্কে ১০০ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন। আম্মা এখন আরও পড়াশোনা করতে চাইছেন। এর পরের ধাপের পরীক্ষাগুলো দিতে চাইছেন। এটা বলতেই হবে যে ভাগীরথী আম্মার মতন মানুষই দেশের শক্তি। প্রেরণার এক বিরাট স্রোত। আমি আজ বিশেষভাবে ভাগীরথী আম্মাকে প্রণাম জানাই।
বন্ধুরা, জীবনে প্রতিকূল সময়ে আমাদের উৎসাহ, আমাদের ইচ্ছাশক্তি যে কোন পরিস্থিতিকে বদলে দিতে পারে। সম্প্রতি আমি মিডিয়াতে একটি গল্প পড়েছি, যেটা আমি আপনাদের সঙ্গে share করতে চাই।
এই ঘটনাটা হল মুরাদাবাদের হমিরপুর গ্রামে সলমনের জীবন কাহিনি! আজন্ম দিব্যাঙ্গ সলমন। সলমনের পা দুটো কমজোর ছিল। এমন প্রতিবন্ধকতায় সলমন হার মানেননি এবং নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জীবিকা শুরু করার। একই সঙ্গে সলমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁর মতো দিব্যাঙ্গ- দেরও সাহায্য করবেন। দেখতে দেখতে তাঁর সঙ্গে আরও তিরিশ জন দিব্যাঙ্গ সাথী যোগ দিলেন। তারপর সলমন নিজের গ্রামে চটি ও ডিটেরজেন্ট বানানোর কাজ শুরু করে দিলেন। সলমনের নিজেরই চলাফেরায় অসুবিধে ছিল, তা সত্ত্বেও তিনি অন্যদের চলার সুবিধার জন্য চপ্পল বানাবার সিদ্ধান্ত নেন। বড় কথা হলো সলমন নিজেই তাঁর সহযোগী দিব্যাঙ্গদের training দিলেন। ওঁরা নিজেরাই সবাই মিলে ম্যানুফ্যাকচারিং ও মার্কেটিং করতে শুরু করলেন। নিজেদের শ্রমে তাঁরা নিজেরা শুধু উপার্জন করলেন না নিজেদের কোম্পানিকেও প্রফিট এনে দিলেন। এখন ওঁরা সবাই মিলে দিনে দেড়শো জোড়া চপ্পল বানাচ্ছেন। শুধু তাই-ই নয় সলমন এখন আরও ১০০ দিব্যাঙ্গদের রোজগারের ব্যবস্থা করবার সংকল্প করেছেন। আমি এঁদের সবার উদ্যোগ ও উদ্যমকে স্যালুট জানাচ্ছি। এমনই সংকল্পের শক্তি দেখিয়েছেন গুজরাটের কচ্ছ এলাকার অজরক গ্রামের মানুষেরা। ২০০১ সালের ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের পর সবাই যখন গ্রাম ছেড়ে চলে গেল ইসমাইল ক্ষত্রী নামে এক ব্যক্তি গ্রামে থেকেই পরিবারের বংশানুক্রমিক শিল্পকলা অজরক প্রিন্টের কাজ চালিয়ে যান। দেখতে দেখতে প্রাকৃতিক রঙের অজরক শিল্প সবার কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠলো এবং গ্রামের সবাই তাঁদের এই প্রাচীন শিল্পধারায় নিয়োজিত হলেন। গ্রামের মানুষেরা শুধু যে তাঁদের এই প্রাচীন শিল্পকলার প্রসার করলেন তা-ই নয়, সেই সঙ্গে আধুনিক ফ্যাশনকেও সামিল করলেন। এখন তাবড় ডিজাইনার, বড় বড় ডিজাইন সংস্থা অজরক প্রিন্টের ব্যবহার শুরু করে দিয়েছে। গ্রামের পরিশ্রমী মানুষের দৌলতে অজরক প্রিন্ট একটা বড় ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছে। দুনিয়ার বড় বড় খরিদ্দারেরা এখন এই প্রিন্টে আকৃষ্ট হচ্ছেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, সদ্য দেশে মহাশিবরাত্রি পালিত হল। ভগবান শিব ও মাতা পার্বতী-র আশীর্বাদ দেশের চেতনাতে জাগ্রত রেখেছে। মহাশিবরাত্রিতে ভোলে বাবার আশীর্বাদ আপনাদের ওপর বর্ষিত হোক। আপনাদের সব মনষ্কামনা পূর্ণ হোক, আপনাদের উদ্যম, স্বাস্থ্য ও সুখ অটুট থাকুক। দেশের প্রতি আপনারা কর্তব্যপরায়ণ হয়ে উঠুন।
বন্ধুরা, মহাশিবরাত্রির পরেই বসন্ত ঋতুর মহিমা বাড়তে থাকবে। আর কিছুদিনের মধ্যেই হোলির উৎসব, তারপরে পরেই গুড়ি পরব ও নবরাত্রি পরব আসবে। তারপর আসবে রামনবমী। পরব আর উৎসব আমাদের সামাজিক জীবনের অচ্ছেদ্য অংশ। সব উৎসবের পিছনেই কোন না কোন বার্তা লুকিয়ে থাকে, যা শুধু সমাজ নয় পুরো দেশের ঐক্যকে সুদৃঢ় করে। হোলির পর চৈত্র শুক্লাপ্রতিপদে ভারতের বিক্রমাব্দের নববর্ষ শুরু হয়ে যাবে। সেই উপলক্ষে ও ভারতীয় নববর্ষের জন্য আমি আপনাদের আগাম শুভেচ্ছা জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আগামী ‘মন কি বাত’ পর্যন্ত ছাত্ররা পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। যাদের পরীক্ষা শেষ তারা আনন্দে থাকবে। যারা পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত আর যারা পরীক্ষা শেষের মজায় আছেন, সবাইকে আমার শুভ কামনা! আগামী ‘মন কি বাত’-এ আরও অনেক বিষয় নিয়ে আবার আসব। অনেক অনেক ধন্যবাদ! নমস্কার!
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আজ 26শে জানুয়ারি। গণতন্ত্র দিবসের অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। আজ 2020-র প্রথম ‘মন কি বাত’। এই বছরের এবং এই দশকের প্রথম ‘মন কি বাত’ এ মিলিত হচ্ছি। বন্ধুরা, এবার 'সাধারনতন্ত্র দিবসের' অনুষ্ঠানের কারণে, 'মন কি বাতের' সময় পরিবর্তন করতে হল। আর সেই কারণেই, একটি আলাদা সময় নির্ধারণ করে, আমি আজ আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি। বন্ধুরা, দিন বদলায়, সপ্তাহ বদলায়, মাসের পরিবর্তন হয়, বছরটাও পাল্টে যায়, কিন্তু ভারতের মানুষের উৎসাহে ভাটা পড়ে না। 'আমরাও কিছু কম নয়', 'আমরাও কিছু করে দেখাবো'। 'Can do', এই 'can do' র ভাবনাই সংকল্পের রূপ নেয়। দেশ আর সমাজের প্রতি কিছু করার অঙ্গীকার, প্রতিদিন দেশ আগের থেকে অধিক শক্তিশালী হচ্ছে। বন্ধুরা, 'মন কি বাত'-এর মঞ্চে, আমরা সবাই একবার ফের জড়ো হয়েছি, নতুন নতুন বিষয়ে আলোচনা করার জন্য, দেশবাসীর নতুন নতুন উপলব্ধি সেলিব্রেট করার জন্য, ভারতবর্ষকে সেলিব্রেট করার জন্য। 'মন কি বাত' – sharing, learning এবং growing together –এর, একটি ভালো এবং সহজ মঞ্চ হয়ে উঠেছে। প্রতি মাসে হাজার হাজার মানুষ তাদের পরামর্শ, প্রচেষ্টা এবং অনুভূতি ভাগ করে নেয়। তার মধ্যে থেকে,সমাজ অনুপ্রাণিত হবে, এরকম কিছু বিষয়, মানুষের অসাধারন প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ পাওয়া যায়।
'কেউ তো করে দেখিয়েছে' – তাহলে কি আমরাও করতে পারি? আমরা কি ওই প্রচেষ্টাকে পুরো দেশে পুনরাবৃত্তি করে এক বিশাল পরিবর্তন আনতে পারি? আমরা কি একে সমাজের এক সহজ অভ্যেসে রূপান্তরিত করে, ওই পরিবর্তনকে স্থায়ী করতে পারি? এরকমই কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে প্রতি মাসে, মন কি বাত, কিছু appeal, কিছু আহ্বান, কিছু করে দেখানোর সংকল্প নিয়ে পথ চলা শুরু করে। গত কয়েক বছরে আমরা বেশ কিছু ছোট ছোট সংকল্প নিয়েছি। যেমন, 'no to single use plastic', 'খাদি আর local দ্রব্য কেনার বিষয়টি, স্বচ্ছতার কথা, কন্যাদের সম্মান এবং গর্ব নিয়ে আলোচনা, less cash economy –র এই নতুন অধ্যায়, তার ওপর জোর দিয়েছি। এরকম অনেক সংকল্প জন্ম নিয়েছে আমাদের এই খোলামেলা 'মন কি বাত'-এর মাধ্যমে। এবং তাকে শক্তিও আপনারাই প্রদান করেছেন।
বিহারের শ্রীমান শৈলেশের থেকে আমি একটি দারুণ চিঠি পেয়েছি। উনি অবশ্য এখন বিহারে আর থাকেন না, উনি দিল্লিতে থেকে কোন এক এনজিও তে কাজ করছেন। শ্রীমান শৈলেশ-জি লিখছেন, "মোদীজি, আপনি প্রত্যেক 'মন কি বাতে' কিছুআবেদনকরে থাকেন। আমি তার মধ্যে অনেকগুলোই করেছি। এই শীতে আমি বাড়ি বাড়ি গিয়ে বস্ত্র সংগ্রহ করেছি এবং দুস্থ মানুষের মধ্যে তা বিতরণ করেছি। আমি 'মন কি বাত' থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক রকমের কাজ শুরু করেছি, কিন্তু তারপর আস্তে আস্তে কিছু জিনিস ভুলে গিয়েছি আর কিছু কিছু করা হয়ে ওঠেনি। তাই আমি এই নতুন বছরে, 'মন কি বাত'-এর উপর, একটি charter বানিয়েছি, যেখানে এই সকল বিষয়কে নিয়ে একটা list বানানো হয়েছে।যেমন সকলে নতুন বছরে, 'new year resolutions' নেয়, তেমনি মোদীজি, এটা আমার নতুন বছরের 'social resolutions'। আমার মনে হয় যে এই সকল ছোট ছোট বিষয়ও কিন্তু খুব বড় পরিবর্তন আনতে পারে। আপনি কি অনুগ্রহ করে এই charter-এ স্বাক্ষর করে আমার কাছে ফিরিয়ে দেবেন?”
শৈলেশজী আপনাকে অনেক অনেক অভিনন্দন এবং শুভকামনা জানাই। আপনার নতুন বছরের resolution হিসেবে এই 'মন কি বাত charter'-টি খুবই ইনোভেটিভ। আমি আমার শুভকামনার সাথে স্বাক্ষর করে অবশ্যই আপনাকে ফিরিয়ে দেব। বন্ধুরা, যখন আমি এই 'মন কি বাত' charter পড়ছিলাম, তখন আমিও আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম এটা দেখে যে, কত রকম বিষয় আছে ! এত রকম Hash Tags রয়েছে ! আর আমরা সবাই একসাথে অনেক প্রচেষ্টাও করেছি। কখনো আমরা 'সন্দেশ টু সোলজারস' এর মাধ্যমে, সহানুভূতি ও দৃঢ়তার সঙ্গে সেনাবাহিনীর পাশে থাকার অভিযান চালিয়েছি। 'khadi for nation- khadi for fashion' –এর মাধ্যমে খাদির বিক্রয়কে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছি। 'buy local' এর ভাবনাকে আপন করে নিয়েছি। 'হাম fit তো ইন্ডিয়া fit' এর মাধ্যমে ফিটনেসের প্রতি সচেতনতা বাড়িয়েছি। 'My Clean India' বা 'statue cleaning-র' প্রচেষ্টার মাধ্যমে, স্বচ্ছতাকে একটা mass মুভমেন্টে রূপান্তরিত করেছি। #NotoDrugs, #BharatkiLakshmi, #Self4Society, #StressfreeExams, #SurakshaBandhan, #DigitalEconomy, #RoadSafety, ও হো হো ! অগুন্তি রয়েছে।
শৈলেশ জি, আপনার 'মন কি বাত' এর charter দেখে উপলব্ধি করলাম যে সত্যিই লিস্টটা অনেক লম্বা। আসুন আমরা এই যাত্রা continue করি। এই 'মন কি বাত' charter-এর মাধ্যমে নিজের পছন্দ অনুযায়ী, যেকোন একটি cause এর সঙ্গে যুক্ত হোন। গর্বের সাথে হ্যাশট্যাগ use করে সকলের সঙ্গে নিজের contribution এর কথা share করুন। নিজের বন্ধুবান্ধবদের, পরিবার–পরিজনদের এবং বাকি সবাইকেও মোটিভেট করুন। যখন প্রত্যেক ভারতবাসী এক পা এগোয়, তখন সারাদেশ 130 কোটি পা এগিয়ে যায়। সেই জন্য চরৈবেতি চরৈবেতি চরৈবেতি, চলতে থাকো, চলতে থাকো, চলতে থাকার মন্ত্র নিয়ে নিজের প্রয়াস করতে থাকো।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমরা 'মন কি বাত' charter –এর বিষয়ে কথা বললাম। স্বচ্ছতার পরে, জন অংশ গ্রহণের চেতনা, participative spirit, আজ যে ক্ষেত্রটিতে দ্রুততার সাথে এগিয়ে চলেছে, তা হল 'জল সংরক্ষণ'। জল সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে, দেশের প্রতিটি কোণে, ব্যাপক হারে, প্রভূত উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা চলছে । আমি আনন্দের সঙ্গে বলছি যে গত বর্ষার সময় শুরু হওয়া, এই 'জল শক্তি অভিযান', জন অংশগ্রহণের মাধ্যমে অত্যধিক সাফল্যের পথে অগ্রসর হয়েছে। অনেক পুকুর, জলাশয়, ইত্যাদির নির্মাণ করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা এই যে, এই অভিযানে, সমাজের সব শ্রেণীর মানুষ যোগদান করেছে।এখন,রাজস্থানের ঝালর জেলাকেই দেখুন -ওখানের দুটি ঐতিহাসিক কুঁয়ো, নোংরা জলের ভাণ্ডারে পরিণত হয়েছিল। তারপর আর কি ! ভদ্রায়ু এবং থানওয়ালা পঞ্চায়েতের, শত শত মানুষ 'জল শক্তি' অভিযানের আওতায়, একে পুনরুজ্জীবিত করার দায়িত্ব নিয়েছিল। বর্ষার আগেই তারা নোংরা জল, আবর্জনা এবং কাদা পরিষ্কারের কাজ শুরু করে দিয়েছিল। এই অভিযানের জন্য কেউ শ্রম দান করেছিল আর কেউ অর্থ দান। এবং এর ফলস্বরূপ, এই কূঁয়োগুলি, আজ সেখানকার জীবন রেখায় পরিণত হয়েছে। ঠিক এরকমই আরেকটি ঘটনা ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের বারাবাঁকি- তে। ৪৩ একর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা, সারাহী হ্রদ, তার শেষ সময়ে এসে পৌঁছেছিল, কিন্তু গ্রামবাসীরা তাদের সংকল্প শক্তির দ্বারা হ্রদটিকে নতুন জীবন দান করেছে। এত বড় মিশনের পথে তারা কোন কিছুকেই বাধা হতে দেয়নি। একের পর এক গ্রাম একজোট হতে শুরু করে দিয়েছিল। তারা লেকের চারপাশে এক মিটার উঁচু বাঁধ তৈরি করে দেয়। এখন হ্রদটি জলে টই–টুম্বুর এবং ওখানকার পরিবেশ পাখির কূজনে মুখরিত হয়ে রয়েছে।
উত্তরাখণ্ডের আলমোড়া হালদ্বানি হাইওয়ে সংলগ্ন সুনিয়াকোট-এ গ্রামবাসীদের অংশগ্রহণের এক দারুণ নিদর্শন দেখতে পাই। গ্রামের জল সংকটের সমস্যা সমাধান করতে গ্রামবাসীরা সংকল্প নিল যে গ্রামে জল সরবরাহের ব্যবস্থা তারা নিজেরাই করবে। ব্যাস! নিজেরাই টাকা সংগ্রহ করলো, পরিকল্পনা তৈরি হলো, শ্রমদান করলো এবং প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে একেবারে গ্রাম পর্যন্ত জলের পাইপ বসানো হলো। পাম্পিং স্টেশন স্থাপিত হল। দুই দশকের পুরনো জলের সমস্যা চিরতরে বিদায় নিল। আবার তামিলনাডুতে borewell কে rainwater harvesting এর জন্য ব্যবহার করার innovative idea সবার সামনে এলো। জল সংরক্ষণ কে কেন্দ্র করে অগণিত কাহিনী সারাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে। তারাই new India গড়ে তোলার সংকল্পকে আরো দৃঢ় করে তোলে। আজ আমাদের জলশক্তি-champion দের কাহিনী জানতে সমগ্র দেশ উদগ্রীব। আমার অনুরোধ জল সঞ্চয় ও জল সংরক্ষণ সম্পর্কিত আপনার বা আপনার আশেপাশের প্রচেষ্টার কাহিনীকে, photo ও video সমেত #jalshakti4India তে অবশ্যই শেয়ার করুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী ও বিশেষত আমার যুব বন্ধুরা, আজ মন কি বাত এর মাধ্যমে আমি অসম সরকার ও অসম বাসীদের খেলো ইন্ডিয়ার চমৎকার আয়োজনের জন্য জানাই অনেক অনেক অভিনন্দন। বন্ধুরা, গত 22 শে জানুয়ারি গুয়াহাটিতে তৃতীয় খেলো ইন্ডিয়া গেমস সমাপ্ত হলো। এখানে বিভিন্ন রাজ্যের প্রায় ছয় হাজার খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করেছেন। আপনারা আশ্চর্য হবেন জেনে যে খেলার এই মহোৎসবে আশিটা রেকর্ড ভেঙেছে। গর্ব হচ্ছে জানাতে পেরে যে, তার মধ্যে 56 টা রেকর্ড ভেঙেছে আমাদের মেয়েরা। এই অসাধ্য সাধন করেছে আমাদের মেয়েরা। আমি সমস্ত বিজয়ীদের এবং খেলায় অংশগ্রহণকারীদের জানাই অভিনন্দন। একইসঙ্গে খেলো ইন্ডিয়া গেমসের সফল আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে, প্রশিক্ষক ও কারিগরি কর্মকর্তাদের, জানাই ধন্যবাদ। আমাদের জন্য আরো সুসংবাদ যে প্রতিবছর খেলো ইন্ডিয়া গেমসে খেলোয়াড়দের সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়ছে। জানতে পারি যে স্কুলপর্যায়ে বাচ্চাদের স্পোর্টসের প্রতি আগ্রহ কতটা বেড়ছে। আমি আপনাদের জানাতে চাই যে 2018 তে যখন খেলো ইন্ডিয়া গেমস শুরু হয়েছিল তখন সাড়ে তিন হাজার খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করেছিলেন। মাত্র তিন বছরের মধ্যেই খেলোয়াড়দের সংখ্যা ছয় হাজারেরও বেশি, অর্থাৎ প্রায়প্রায় দ্বিগুন হয়েছে। শুধু তাই নয়, মাত্র তিন বছরের মধ্যে খেলো ইন্ডিয়া গেমস এর মাধ্যমে প্রায় বত্রিশ শো প্রতিভাবান বাচ্চা উঠে এসেছে। এদের মধ্যে এমন অনেক বাচ্চা রয়েছে যারা অভাব ও দারিদ্র্যের মাঝে বড় হয়েছে। খেলো ইন্ডিয়া গেমসের শামিল হওয়া বাচ্চারা ও তাদের পিতা-মাতাদের ধৈর্য এবং দৃঢ় সংকল্পের কাহিনী সমস্ত দেশবাসীকে অনুপ্রাণিত করবে। গুয়াহাটির পূর্ণিমা মন্ডল এর কথাই ধরুন। উনি গুয়াহাটি পৌরসভার একজন সাফাই কর্মচারী। ওঁর মেয়ে মালবিকা যেখানে ফুটবলের দারুন খেলা দেখিয়েছে, সেখানে ওঁর এক ছেলে সুজিত খো খো খেলায় আরো এক ছেলে প্রদীপ অসমের হকি দলের প্রতিনিধিত্ব করেছে।
তামিলনাড়ু-রযোগনাথনের গল্পটিও কিছুটা এরকমই গর্ব করার মত। উনি নিজের জীবিকা নির্বাহ করেন তামিলনাড়ুতে বিড়ি বানানোর কাজ করে, কিন্ত ওঁর মেয়ে পূর্ণাশ্রী weightlifting-এ গোল্ড মেডেল জিতে সবার হৃদয় জয় করে নিয়েছে। আমি ডেভিড বেকহ্যামের নাম নিলে আপনারা বলবেন বিখ্যাত international footballer. কিন্তু এখন আমাদের কাছেও আমাদের নিজস্ব একজন ডেভিড বেকহ্যাম আছে,এবং সে গুয়াহাটির ইয়ুথ গেমসে স্বর্ণপদক জিতেছে। সেটাও সাইক্লিং-এর ২০০ মিটার স্প্রিন্ট ইভেন্টে এবং আমার কাছে দ্বিগুণ খুশির কারণ -কিছুদিন আগেই আমি আন্দামান নিকোবর দ্বিপপুঞ্জে গিয়েছিলাম, কার-নিকোবার দ্বীপের নিবাসী ডেভিড শৈশবেই মা-বাবাকে হারায়। কাকা চেয়েছিলেন ও ফুটবলার হোক, তাই বিখ্যাত ফুটবলারের নামে ওর নামকরণ করেছিলেন। কিন্তু ওর মন তো সাইক্লিং-এ পড়ে ছিল। খেলো ইন্ডিয়াস্কিম-এর অধীনে ও নির্বাচিত-ও হয়ে গেল, এবং আজ দেখুন ইনি সাইক্লিং-একীভাবে নতুন কীর্তি স্থাপন করল।
ভিওয়ানির প্রশান্ত সিংহ কানহাইয়া পোল ভল্ট ইভেন্টে নিজেরই national record ভেঙ্গে দিয়েছে। ১৯ বছর বয়সী প্রশান্ত-র জন্ম একটি কৃষক পরিবারে। আপনারাএটা জেনে অবাক হয়ে যাবেন যে প্রশান্ত মাটির ওপর পোল ভল্টের অনুশীলন করতেন। এই তথ্যটি জানার পর ক্রীড়া বিভাগ ওর কোচ-কে দিল্লির জহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে একাডেমি খুলতে সাহায্য করেন এবং প্রশান্ত এখন ওখানেই প্রশিক্ষণ নেন। মুম্বইএর করিনা শাঙ্কতার গল্পটি কোনো পরিস্থিতিতেও হার না মানার শক্তির গাথা, যা আজসবাইকে প্রেরণা জোগায়। উনি ১০০ মিটার ব্রেস্ট-স্ট্রোকের আন্ডার-১৭ বিভাগে গোল্ড জেতেন এবং নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েন। দশম শ্রেণীতে পড়া করিনাকে একসময় knee injury -র কারনে ট্রেনিং ছেড়ে দিতে হয় কিন্তু উনি এবং ওঁর মা হাল ছাড়েননি। তার ফল কী সেটা এখন আমরা সকলে জানি। আমি প্রত্যেক ক্রীড়াবিদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কামনা করি। এর পাশাপাশি আমি সকল দেশবাসীর সঙ্গে এদের পিতা-মাতাদেরও আমার প্রনাম জানাই যারা দারিদ্র্যকে এই ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যতের পথে অন্তরায় হতে দেননি। আমরা সকলেই জানি যে জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতাগুলি তে যেমন একদিকে ছেলে- মেয়েরা নিজেদের প্যাশন দেখানোর সুযোগ পায় তেমনই তারা অন্য রাজ্যের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠে। এই জন্যেই আমরা খেলো ইন্ডিয়া ইউথ গেমসের পাশাপাশি খেলো ইন্ডিয়া ইউনিভারসিটি গেমস এর আয়োজন করার-ও সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বন্ধুরা, আগামী মাসের ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১লা মার্চ অব্দি প্রথম খেলো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি গেমস কটক ও ভুবনেশ্বরে আয়োজিত হবে। এতে অংশগ্রহণ করার জন্যে ৩০০০এর বেশি খেলোয়াড় কোয়ালিফাই করে গেছেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, পরীক্ষারসিজন এসে গেছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যেক পরীক্ষার্থী শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। দেশের কোটি কোটি ছাত্রছাত্রী বন্ধুদের সঙ্গে ‘পরীক্ষা পে চর্চা’-য় কথা বলার অভিজ্ঞতা থেকে আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি, এই দেশের তরুন-রা সকল বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হওয়ার জন্য তৈরি।
বন্ধুরা, একদিকে পরীক্ষা অন্যদিকে শীতের মরশুম। এই দুইয়ের মাঝে আমি চাই নিজেকেযেন অবশ্যই ফিট রাখেন । কিছুটা ব্যায়াম আপনারা অবশ্যই করবেন, কিছুটা খেলা-ধুলো করবেন। খেলাধুলো ফিট থাকার মূলমন্ত্র। আজকাল আমি দেখছি ফিট ইন্ডিয়া নিয়ে অনেক ইভেন্ট চারদিকে হচ্ছে। ১৮ জানুয়ারি দেশজুড়ে তরুণরা সাইক্লোথন-এর আয়োজন করেন। এতে অংশগ্রহণকারি লক্ষ-লক্ষ দেশবাসী ফিটনেস-এর বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দেন। আমাদের নিউ ইন্ডিয়া যাতে পুরোপুরি ফিট থাকে তার জন্যে প্রতি স্তরে যে পরিমাণ প্রচেষ্টা চলছে তা খুবই উৎসাহব্যাঞ্জক এবং উৎসাহ উদ্রেককারী। গত বছর নভেম্বর মাসে শুরু হওয়া ফিট ইন্ডিয়া স্কুল প্রয়াসটিও এখন ফলপ্রসূ হয়ে উঠছে। আমাকে বলা হয়েছে, যে এখনো পর্যন্ত ৬৫০০০এরও বেশী স্কুল অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করে ‘ফিট ইন্ডিয়া স্কুল সার্টিফিকেট’পেয়েছে। দেশের বাকি স্কুলগুলির কাছেও আমার আবেদন তারা যেন পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলোর প্রশিক্ষণ প্রদান করে ‘ফিট স্কুল’– এর স্বীকৃতি অবশ্যইপায়। এর পাশাপাশি আমি প্রত্যেক দেশবাসীর কাছে আবেদন করছি যে তাঁরা তাঁদের দৈনিক দিনযাপনের মধ্যে শরীর চর্চা আরো বাড়ান। প্রতিদিন নিজেদের মনে করান ‘আমরা ফিট তো ইন্ডিয়া ফিট’।
আমার প্রিয় দেশবাসী, দু সপ্তাহ আগে, ভারতের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন উৎসব সাড়ম্বরে উদযাপিত হচ্ছিল। তখন পাঞ্জাবে লোহড়ী,উৎসাহআর উদ্দীপনারউষ্ণতা বাড়াচ্ছিল। তামিলনাড়ুর ভাই বোনেরা পোঙ্গল উৎসব পালন করছিল,থিরুবল্লভর-এর জয়ন্তী পালন করছিল।অসমে বিহুর মনোরঞ্জক ছটা দেখা যাচ্ছিল , গুজরাতে ছিল চারদিকে উত্তরায়ণের বাহার আর আকাশ ভরা ঘুঁড়ি। এই সময়ে দিল্লী একটি ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী থাকল। দিল্লীতে এক গুরুত্বপুর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো।এই সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ২৫ বছরের পুরানো ব্রু-রিয়াং উদ্বাস্তু সমস্যা, একটি করুণ চ্যাপ্টারের চিরতরে সমাধা হয়ে গেলো। আমাদের ব্যস্ত রুটিং ও উৎসবের মরশুমের জন্য, আপনি হয়তো এই ঐতিহাসিক চুক্তি সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে পারেননি, সেইজন্য আমার মনে হয় ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আপনাদের সঙ্গে অবশ্যই এই বিষয়ে নিয়ে আলোচনা করি। এই সমস্যাটা ৯০–এর দশকের। ১৯৯৭ সালে জাতিগত উত্তেজনার জন্য ব্রু রিয়াং আদিবাসীদের মিজোরাম ছেড়ে ত্রিপুরাতে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। এই উদ্বাস্তুদের উত্তর ত্রিপুরার কাঞ্চনপুরে অস্থায়ী ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল। ব্রু রিয়াং জনগোষ্ঠীর লোকেরা উদ্বাস্তু হয়ে নিজেদের জীবনের অনেকটা মুল্যবান অংশ হারিয়ে ফেলেছিল, এটা সত্যিই কষ্টদায়ক। ওঁদের জন্য ক্যম্পে জীবন কাটানোর মানে হলো সমস্তরকম মৌলিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়া। ২৩ বছর পর্যন্ত না ঘর, না জমি জায়গা, না পরিবারের জন্য, বা চিকিৎসার সুবিধা না পাওয়া, না বাচ্চাদের শিক্ষার সুযোগ বা ওঁদের নিজের জন্য সুবিধা কিছুই ছিল না। একটু ভাবুন ২৩ বছর পর্যন্ত ক্যাম্পের কঠিন পরিস্থিতিতে জীবন যাপন করা ওঁদের জন্য কতটা কষ্টদায়ক ছিল। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিদিনের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সঙ্গে জীবন কাটানো কতই না কষ্টের ছিল। সরকার এলো আর চলে গেলো, কিন্তু এঁদের দুঃখ দুর্দশার সমাধান হলো না। কিন্তু এত কষ্টের মধ্যে এঁদের ভারতীয় সংবিধান ও সংস্কৃতির প্রতি আস্থা অটুট ছিল। এই বিশ্বাসের ফলে ওঁদের জীবনে নতুন প্রভাতের উদয় হলো। চুক্তির ফলে ওঁদের মাথা উঁচু করে বাঁচার রাস্তা তৈরি হলো। সবশেষে ২০২০-র নতুন দশক, ব্রু-রিয়াং জনগোষ্ঠীদের জীবনে এক নতুন আশা ও প্রত্যাশার কিরণ নিয়ে এলো।প্রায় ৩৪০০০ ব্রু-উদ্বাস্তুদের ত্রিপুরার বাসিন্দা করা হবে। শুধু এইটুকুই নয়, ওঁদের পুনর্বাসন এবং সর্বাঙ্গীন উন্নতির জন্য কেন্দ্র সরকার প্রায় ৬০০ কোটি টাকা সাহায্যও করবে। প্রত্যেক উদ্বাস্তু পরিবারকে প্লট দেওয়া হবে। ঘর তৈরি করতে ওঁদের সাহায্য করা হবে। এর সঙ্গে রেশনের ব্যবস্থাও করা হবে। ওঁরা এখন থেকে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের জন-কল্যাণকারী যোজনার সুবিধা পাবেন। এই চুক্তি অনেক দিক থেকে গুরুত্বপুর্ণ। এটা cooperative federalism এর ভাবনার প্রতিফলন। চুক্তির জন্য মিজোরাম ও ত্রিপুরা দুই রাজ্যের-ই মুখ্যমন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। এই চুক্তি দুই রাজ্যের বাসিন্দাদের সম্মতি ও শুভকামনাতে সম্পাদিত হয়েছে। এর জন্য দুই রাজ্যের জনগন ও মুখ্যমন্ত্রীদের বিশেষভাবে ধন্যবাদ দিতে চাই।এই চুক্তি ভারতীয় সংস্কৃতিতে যে করুণা ও সহৃদয়তা রয়েছে সেই পরিচয়ও প্রকট করে। সবাইকে আত্মীয় মেনে চলা এবং এক জোট ভাবে বেঁচে থাকা, এটাই এই পবিত্র ভূমির সংস্কারে রচিত এবং বিদ্যমান আছে। আরেকবার দুই রাজ্যের নিবাসীদের আর ব্রু-রিয়াং জনগোষ্ঠীর লোকেদের অভিনন্দন জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এত বড় খেলো ইন্ডিয়া গেমসের সফল আয়োজক অসমে আর একটি বড় কাজ হয়েছে। আপনারাও হয়তো খবরে দেখেছেন কিছুদিন আগে অসমে আটটি আলাদা আলাদা মিলিটেন্ট গ্রুপের ৬৪৪ জন সদস্য নিজেদের হাতিয়ারসহ আত্মসমপর্ণ করেছেন। যাঁরা হিংসার রাস্তায় চলে গিয়েছিল, তাঁরা নিজেদের বিশ্বাস শান্তির প্রতি আস্থা রাখার ও দেশের উন্নতিতে সামিল হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, মূল স্রোতে ফিরে এসেছেন। গত বছর ত্রিপুরাতেও ৮০ জনের বেশি লোক হিংসার রাস্তা ছেড়ে মূল স্রোতে ফিরে এসেছেন। যাঁরা এটা ভেবে হাতিয়ার তুলে নিয়েছিলেন যে হিংসার দ্বারা সমস্যার সমাধান হতে পারে, ওঁদের এই বিশ্বাসটা দৃঢ় হল যে শান্তি আর এক জোট হওয়াই যে কোনো বিবাদ মেটানোর একমাত্র উপায়। দেশবাসীরা এটা জেনে প্রসন্ন হবেন যে উত্তর-পুর্ব ভারতের উগ্রপন্থা অনেকটা কমে গেছে, এর সবথেকে বড় কারণ হলো এই অঞ্চলের সমস্ত বিষয়কে শান্তির রাস্তায়, নিঃস্বার্থ ভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হচ্ছে। দেশের যে কোনো ভাগে এখনও হিংসা এবং হাতিয়ারের বলে সমস্যার সমাধান খোঁজার লোকেদের, আজ সাধারণতন্ত্র দিবসের পবিত্র উৎসব উপলক্ষে অনুরোধ করতে চাই যে ফিরে আসুন। বিভিন্ন বিষয়কে শান্তিপুর্ণভাবে মিটিয়ে আপনার এবং এইদেশের ক্ষমতার উপর ভরসা রাখুন। এই একবিংশতাব্দী হলো জ্ঞানবিজ্ঞান ও গণতন্ত্রের যুগ। আপনারা কি এমন কোন জায়গার কথা শুনেছেন, যেখানে হিংসার মাধ্যমে জীবন উন্নততর হয়েছে? এমন কোন স্থানের কথা শুনেছেন কি, যেখানে শান্তি ও সুচিন্তা সুস্থ জীবনের পক্ষে ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়িয়েছে? হিংসা কোন সমস্যারই সমাধান করে না । পৃথিবীর কোন সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়, আরেকটি সমস্যা সৃষ্টি করার মাধ্যমে।আসুন, আমরা সকলে মিলে এমন এক নতুন ভারত গঠনে সামিল হই, যেখানে সব প্রশ্নেরই উত্তর মিলবে শান্তির ভিত্তিতে।সমস্ত সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে। আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধ সব ধরনের বিভাজনের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ, সাধারণতন্ত্র দিবসের শুভ লগ্নে "গগনযান"-এর কথা বলতে গিয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি। এই লক্ষ্যে দেশ আরো এক পা এগিয়ে গেছে । ২০২২ সালে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ৭৫-তম জয়ন্তী উদযাপিত হবে। এই উপলক্ষে "গগনযান মিশন"-এর মাধ্যমে একজন ভারতবাসীকে মহাকাশে পাঠানোর অভীষ্ট আমাদের সিদ্ধ করতে হবে। একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিক্ষেত্রে ভারতের এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হবে “গগনযান মিশন”। এটি হবে নতুন ভারত গঠনের এক ভিত্তিপ্রস্তর।
বন্ধুরা, আপনারা জানেন, এই মিশনের যাত্রী হিসেবে চারজনকে এর মধ্যেই বেছে নেওয়া হয়েছে। এঁরা সকলেই ভারতীয় বায়ুসেনার তরুণ পাইলট। তাঁরা ভারতের প্রযুক্তি, প্রতিভা, দক্ষতা ,সাহস এবং স্বপ্নের প্রতীক। আমাদের এই চারজন বন্ধু আর কিছুদিনের মধ্যেই প্রশিক্ষণ নিতে রাশিয়ায় যাবেন। আমার বিশ্বাস, এই ঘটনাটি হবে ভারত-রাশিয়া মৈত্রী ও সহযোগিতার আরেকটি সোনালী অধ্যায়। এঁদের প্রশিক্ষণ চলবে এক বছরেরও বেশী । তারপর, তাঁদের মধ্যে একজন ভাগ্যবান পাবেন ভারতের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে অন্তরীক্ষে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব। আজ সাধারনতন্ত্র দিবসে এই চারজন যুবক পাইলট, এবং এই মিশনের দায়িত্বে থাকা সব ভারতীয় রুশ বিজ্ঞানী এবং ইঞ্জিনিয়ারদের আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, গত বছরের মার্চ মাসে একটি video, প্রচারমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছিল। এই আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন ১০৭-বছর বয়সী এক বৃদ্ধা মহিলা , যিনি রাষ্ট্রপতি ভবনে পদ্ম-সম্মান বিতরণ অনুষ্ঠানে নিয়ম-নিষেধের বেড়াজাল ভেঙে মাননীয় রাষ্ট্রপতিকে তাঁর আশীর্বাদ জানিয়েছিলেন। তাঁর নাম সালুমরদা থিমক্কা। তিনি কর্নাটকে "বৃক্ষমাতা" নামেই পরিচিত। খুবই সাধারণ প্রেক্ষাপট থেকে উঠে আসা থিমক্কার অসাধারণ কর্মকাণ্ডের কথা সারা দেশ জেনেছে, বুঝেছে এবং তাঁকে সম্মান দিয়েছে। তিনি লাভ করেছেন ‘পদ্মশ্রী’ সম্মান।
বন্ধুরা, আজ ভারতবর্ষ তার এই মহান সন্তানদের নিয়ে গর্ববোধ করে। মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষজনদের সম্মান দিয়ে আমরা গৌরবান্বিত হই। প্রত্যেক বছরের মতো এবছরও গতকাল সন্ধ্যায় পদ্ম-সম্মান প্রাপকদের তালিকা ঘোষিত হয়েছে। আমি চাই, আপনারা প্রত্যেকেই এঁদের বিষয়ে পড়ুন ও জানুন। এঁদের পরিবারের কথা এবং কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আলোচনা করুন। ২০২০ সালের পদ্ম- পুরস্কারের জন্য ৪৬০০০-এরও বেশী মনোনয়ন জমা পড়েছিল। এই সংখ্যাটি ২০১৪ সালের মনোনয়নের সংখ্যার কুড়ি গুণেরও বেশী। এই পরিসংখ্যান মানুষের মনে তৈরী হওয়া এই বিশ্বাসের প্রতিফলন যে, ‘পদ্ম-সম্মান এখন জনসম্মান’- এ পরিণত হয়েছে। বর্তমানে পদ্ম পুরষ্কার এর সমগ্র প্রক্রিয়া অন-লাইনে হচ্ছে। আগে পুরস্কার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতেন অল্প কিছু ব্যক্তি। কিন্তু এখন তা পুরোপুরি গণতন্ত্রের মাধ্যমে পরিচালিত। একদিক থেকে বলতে গেলে, পদ্ম-সম্মানকে ঘিরে দেশে এক নতুন বিশ্বাস ও মর্যাদা জন্মগ্রহণ করেছে। বর্তমানে পদ্ম-সম্মান প্রাপকদের মধ্যে এমন অনেকেই থাকেন, যাঁরা তাঁদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে মাটির কাছাকাছি থেকে উঠে এসেছেন। সীমিত সম্পদের বাঁধা এবং নিজেদের চারপাশে নিরাশার ঘন অন্ধকারকে দূরে ঠেলে তাঁরা নিজেদের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে গেছেন। এঁদের দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি আমাদের প্রেরণা যোগায় এবং নিঃস্বার্থ সেবার ভাবনায় অনুপ্রাণিত করে। আপনাদের সবাইকে আমি বিশেষভাবে অনুরোধ করবো এঁদের বিষয়ে জানতে। এঁদের অসাধারণ জীবনকাহিনী সমাজকে সঠিক দিশায় পরিচালিত করবে এবং অনুপ্রেরণা দেবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের সবাইকে আরো একবার গণতন্ত্র- উৎসবের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আগামী দশক আপনাদের তথা, ভারতবর্ষের জীবনে নতুন সংকল্প এবং সিদ্ধির বার্তা নিয়ে আসুক। সারা বিশ্ব ভারতের কাছে যা প্রত্যাশা করে, তা পূরণ করার শক্তি যেন আমরা লাভ করি। আসুন, এই বিশ্বাসকে বুকে নিয়ে আমরা নতুন দশক শুরু করি। ভারতমাতার জন্য নতুন সংকল্পে সবাই একজোট হই। অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী । নমস্কার । দু হাজার উনিশ এর বিদায় লগ্ন আসন্ন। আর মাত্র 3 দিন — তার পরেই 2019 কে বিদায় জানিয়ে আমরা শুধুমাত্র 2020 তেই প্রবেশ করবনা, আমরা একটি নতুন বছরে প্রবেশ করব, একটি নতুন দশকে প্রবেশ করবো, এবং একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকে প্রবেশ করব। আমি সকল দেশবাসীকে সাল 2020-র আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। এই দশকে একটি বিষয় নিশ্চিত, তা হলো, দেশের উন্নয়নকে গতিশীল করতে সেই সমস্ত মানুষ সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন, যাদের জন্ম একবিংশ শতাব্দীতে হয়েছে — যারা এই শতাব্দীর গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো দেখে এবং উপলব্ধি করে বড় হয়েছেন। অনেকেই সেই যুবদের অনেকগুলো নামে ডাকে। কিছু মানুষ তাদের মিলেনিয়াল্স বলে, তো কিছু মানুষ তাদের জেনারেশন z বা জেন z বলে সম্বোধন করেন। আরও ব্যাপকভাবে একটি জিনিস মানুষের মনে গেঁথে গেছে যে এরা হলো সোশ্যাল মিডিয়া জেনারেশন। আমরা প্রত্যেকেই এটা অনুভব করি যে এই প্রজন্ম ভীষণই প্রতিভাবান। কিছু নতুন করার বিষয়ে আগ্রহী, কিছু আলাদা করার স্বপ্ন দেখে; তাদের নিজস্ব কিছু মতামত আছে এবং সবচেয়ে আনন্দের বিষয়, বিশেষ করে ভারতের যুবদের কথা আমি বলব, যে তারা সিস্টেমকে পছন্দ করে, সিস্টেমকে মেনে চলতে পছন্দ করে, আর যদি কোনদিন সিস্টেম ঠিকমতো চলছে না বলে তারা মনে করে, তাহলে তারা অস্থির হয়ে যায় এবং সাহস করে সিস্টেমকে প্রশ্ন করে। তাদের এই বিষয়টিকে আমি ভালো মনে করি। একটি কথা হলফ করে বলা যায় যে আমাদের দেশের যুবরা অরাজকতাকে ঘৃণা করে, অব্যবস্থা ও অস্থির অবস্থার প্রতি তাদের বিরূপ মনোভাব আছে। পরিবারতন্ত্র, বর্ণবাদ, আপন-পর, স্ত্রী-পুরুষ এই সব বৈষম্যকে পছন্দ করে না। কখনো যখন আমরা বিমানবন্দরে বা সিনেমা হলে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকি এবং কেউ লাইন ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করে, তখন সর্বপ্রথম প্রতিবাদ করতে দেখা যায় কিন্তু যুবদেরই। আমরা তো এও দেখেছি যে যখনই কোনো ঘটনা ঘটে তখন যুবরা নিজেদের মোবাইল বার করে সেই ঘটনার ভিডিও করে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। এর ফলে যারা ভুল কাজ করে তারা বুঝতে পারে যে কি হয়ে গেল। তাই এক নতুন ধরনের ব্যবস্থা, একটি নতুন যুগ, নতুন ধরনের চিন্তাধারা আমাদের যুবদের মধ্যে পরিলক্ষিত। আজ ভারতের এই নবপ্রজন্ম থেকে অনেক আশা প্রত্যাশা আছে। এই যুবরাই পারবে দেশকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে । স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, “My Faith is in the Younger Generation, the Modern Generation, out of them will come my workers”। এবং, তিনি বিশ্বাস করতেন, এর মধ্যেই তাঁর কর্মীরা বেরিয়ে আসবে। যুবদের বিষয় বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন, তারুণ্যের সঠিক মূল্যায়ন বা বর্ণনা করা সম্ভব নয়। এটি জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান অধ্যায়। আপনি আপনার যুবাবস্থাকে কিভাবে কাজে লাগাচ্ছেন তার ওপর আপনার ভবিষ্যৎ এবং আপনার জীবন নির্ভর করে।স্বামী বিবেকানন্দের কথা অনুযায়ী, যুবরা প্রাণশক্তি ও গতিশীলতায় পরিপূর্ণ একটি সত্তা, যারা পরিবর্তন আনতে সক্ষম। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে এই দশকে শুধুমাত্র যুবদের উন্নতিই নয়, বরং যুব শক্তির ক্ষমতায় এই দেশের উন্নতিতে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। আমি এটা স্পষ্ট অনুভব করছি যে আগামী 12ই জানুয়ারি স্বামী বিবেকানন্দের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে যখন গোটা দেশ যুব দিবস পালন করবে, তখন এই দেশের যুবরা নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে ভাবনা চিন্তা করবে এবং এই দশককে ঘিরে কিছু সংকল্পও করবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কন্যাকুমারীতে যে শিলার ওপর স্বামী বিবেকানন্দ ধ্যানমগ্ন হয়েছিলেন — যে শিলাটির ওপর বিবেকানন্দ স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়, তার 50 বছর পূর্তি হতে চলেছে। বিগত পাঁচ দশক ধরে এই স্থানটি ভারতের গৌরব। কন্যাকুমারী দেশ ও দুনিয়ার কাছে আকর্ষণের কেন্দ্র হয়েছে। দেশভক্তিতে পরিপূর্ণ আধ্যাত্বিক চেতনাকে অনুভব করতে যারা চান, তাঁদের কাছে এই স্থানটি তীর্থক্ষেত্র হয়ে উঠেছে; হয়ে উঠেছে শ্রদ্ধা কেন্দ্র। স্বামীজীর এই স্মৃতিসৌধ প্রতিটি পন্থার, সমস্ত বয়সের মানুষকে, সমস্ত বর্গের মানুষকে জাতীয়তাবাদে অনুপ্রাণিত করে। দরিদ্র নারায়ণের সেবা- এই মন্ত্রটি তাঁদের জীবনে পথ দেখিয়েছে। যারাই ওখানে গেছেন তাদের অন্তরের শক্তি জাগরিত হওয়া, ইতিবাচক অনুভূতির সঞ্চার, দেশের জন্য কিছু করার মনোভাব উত্পন্ন হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।
সম্প্রতি আমাদের মাননীয় রাষ্ট্রপতি ৫০ বছর পূর্বে নির্মিত শিলা স্মৃতিসৌধটি পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন; এবং আমি খুশি যে আমাদের উপরাষ্ট্রপতি গুজরাটে, কছ-এর রণে, যেখানে ভীষণ সুন্দর রণোত্সব হয় তার শুভ উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন। যখন আমাদের রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতি ভারতের এমন গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করতে যাচ্ছেন, তখন দেশবাসীরাও নিশ্চই এর থেকে অনুপ্রাণিত হবেন – আপনারাও অবশ্যই যাবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমরা বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি এবং পড়াশোনার পাঠ চোকার পর অ্যালমনি মিট একটি সুবর্ণ সুযোগ দেয় পুরোনো দিনে ফিরে যাওয়ার। এই সব অ্যালমনি মিটে তরুণ তরুণীরা একজোট হয়ে দশ, কুড়ি, পঁচিশ বছর পুরোনো স্মৃতির জগতে হারিয়ে যায়। কিন্তু এইধরণের অ্যালুমনি মিট বিশেষ আকর্ষণের কারণ হয়ে উঠতে পারে এবং দেশবাসীরও এই ধরণের অনুষ্ঠানের দিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার। অ্যালমনি মিট গুলিতে পুরোনো বন্ধুদের সাথে দেখা হওয়া, স্মৃতি রোমন্থন করার এক আলাদা আনন্দ তো থাকেই কিন্তু এর সাথে যদি কোনো শেয়ার্ড পারপাস থাকে, কোনো বিশেষ সংকল্প থাকে, আবেগ থাকে, তাহলে তা আলাদা মাত্রা পায়। আপনারা দেখেছেন, অ্যালমনি গ্রূপ অনেক সময়ে নিজেদের স্কুলের জন্য নানা রকম অনুদান দেন। কেউ কম্পিউটারাইজড করার ব্যবস্থা করে দেন, কেউ ভালো লাইব্রেরি বানিয়ে দেন. কেউ পরিশ্রুত জলের ব্যবস্থা করে দেন আবার কেউ নতুন ক্লাসঘরের বন্দোবস্ত করেন, নাহলে স্পোর্টস কমপ্লেক্স তৈরী করে দেন. কিছু না কিছু অবশ্যই করেন। এতেই ওনাদের আনন্দ। যেখানে জীবনের ভীত তৈরী হয়েছে সেই জায়গাকে কিছু প্রতিদান দেওয়ার কথা সকলের মনেই থাকে, থাকা উচিতও। এর জন্য অনেকেই এগিয়েও আসেন. কিন্ত আমি আজ আপনাদের এক বিশেষ ঘটনার কথা বলতে চাই। কয়েকদিন আগে, সংবাদ মাধ্যমে বিহারের পশ্চিম চম্পারান জেলার ভইরাবগঞ্জ হেলথ সেন্টারের খবর শুনে আমার এতো ভালো লাগে যে, আপনাদের না বলে পারছিনা। এই হেলথ সেন্টারে অর্থাৎ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর জন্য আশেপাশের গ্রাম থেকে হাজার মানুষের ভীড় হয়। এ কথা শুনে অবশ্য আপনারা আশ্চর্য হবেন না। হয়তো ভাববেন এ আর নতুন কি! কিন্তু ঘটনাটি অভিনব। এটি সরকারি কার্যক্রম ছিলোনা, এমনকি কোনোরকম সরকারি উদ্যোগ ছিলোনা। ওখানকার কে আর হাই স্কুল এর প্রাক্তন ছাত্ররা ‘সংকল্প ৯৫’ নাম দিয়ে এই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত করেন। এই সঙ্কল্প ৯৫ এর অর্থ হল সেই হাই স্কুলে ১৯৯৫ সালের ব্যাচের ছাত্রদের নেওয়া সঙ্কল্প। আসলে তাদের এক অ্যালমনি মিট এ ছাত্ররা সিদ্ধান্ত নেন অভিনব কিছু করার। প্রাক্তনীরা সমাজের জন্য কিছু করার এবং জনস্বাস্থ্য সচেতনতার কাজ করার দায়িত্ব নেন।
‘সঙ্কল্পঃ ৯৫’ এর পরিকল্পনার সাথে যুক্ত হয় বেশ কিছু হাসপাতাল এবং বেতিয়ার মেডিকেল কলেজ। এর পর জনস্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য যেন এক অভিযান শুরু হয়। বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ওষুধ বিলি ও সচেতনতামূলক কাজে সঙ্কল্প-৯৫ এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো।
আমরা প্রায়শই বলে থাকি দেশের প্রত্যেক নাগরিক যদি এক পা এগোন তাহলে গোটা দেশ একশো তিরিশ কোটি পা এগোবে। এই ধরণের কাজ হতে দেখলে সকলের মনে আনন্দ হয়, সকলেই প্রেরণা পান সমাজের জন্য কিছু করার। বিহারের বেতিয়াতে যেমন প্রাক্তন ছাত্রেরা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সেবার দ্বায়িত্ব নেন, তেমনি উত্তরপ্রদেশের ফুলপুরের কিছু মহিলা নিজেদের কর্মক্ষমতার দ্বারা গোটা এলাকাকে প্রেরণা জুগিয়েছেন। এঁরা দেখালেন একজোট হয়ে কোনো কাজের সংকল্প করলে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে সময় লাগেনা। কিছুদিন আগে পর্যন্ত ফুলপুরের এই মহিলারা আর্থিক অনটনে ভুগতেন, কিন্তু এদের মধ্যে নিজেদের পরিবার তথা সমাজের জন্য কিছু করার অদম্য ইচ্ছা ছিল। এই মহিলারা, কাদিপুর এর উইমেন সেলফ হেল্প গ্রূপ এর সাথে যুক্ত হয়ে চপ্পল তৈরী করা শেখেন। এই প্রশিক্ষণ পেয়ে তাঁরা অসহায়তার কাঁটাকে তো উপড়ে ফেলেনই, উপরন্তু স্বাবলম্বী হয়ে নিজেদের পরিবারের সম্বলও হয়ে ওঠেন। গ্রামীণ আজীবিকা মিশন এর উদ্যোগে এখানে চপ্পল তৈরির প্লান্ট ও হয়ে গেছে, যেখানে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চপ্পল তৈরী হয়। আমি বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই স্থানীয় পুলিশ ও তাদের পরিবার পরিজনকে, যারা এই মহিলাদের তৈরী চপ্পল কিনে এদের উৎসাহ দিয়েছেন। আজ এই মহিলাদের সংকল্পের ফলে তাদের পরিবারের কেবল আর্থিক অবস্থাই মজবুত হয়নি, জীবনযাত্রার মানও উন্নত হয়েছে। যখন ফুলপুর পুলিশের জওয়ান বা তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলি তখন একটা কথা মনে হয়। আপনাদের স্মরণে থাকবে 15 ই আগস্ট লালকেল্লা থেকে আমি দেশবাসীর কাছে একটা আবেদন রেখেছিলাম। আমি বলেছিলাম, আমরা, দেশবাসীরা যেন স্থানীয় জিনিস কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করি। আজ আরও একবার আমার আবেদন, আমরা কি স্থানীয় স্তরে জিনিস প্রস্তুত করতে উৎসাহ দিতে পারি ? আমাদের কেনাকাটার ক্ষেত্রে তাকে প্রাধান্য দিতে পারি ? আমরা কি লোকাল প্রডাক্টস গুলির স্বীয় সম্মান ও প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত হতে পারি? এই ভাবনাকে সঙ্গী করে আমরা কি আমাদের সহ দেশবাসীদের সমৃদ্ধি লাভের মাধ্যম হতে পারি? বন্ধুরা, মহাত্মা গান্ধী স্বদেশীর এই ভাবনাকে এমন এক আলোকবর্তিকা রূপে কল্পনা করেছিলেন যা লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন আলোকিত করতে পারে। দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম মানুষদের জীবনে সমৃদ্ধি আনতে পারে। 100 বছর আগে গান্ধীজী একটি বড় জন-আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তার একটি লক্ষ্য ছিল, দেশীয় উৎপাদনকে উৎসাহ যোগানো। স্বনির্ভর হওয়ার এই পথই গান্ধীজী দেখিয়েছিলেন। 2022 সালে আমরা আমাদের স্বাধীনতার 75 বছর পূর্ণ করব। যে স্বাধীন ভারতে আমরা শ্বাস নিই, তাকে স্বাধীন করার জন্য দেশের লক্ষ লক্ষ সন্তান অনেক যন্ত্রণা সহ্য করেছেন। বহু মানুষ প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। লক্ষ লক্ষ মানুষের ত্যাগ, তপস্যা, বলিদানের ফলে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে, যে স্বাধীনতার সুফল আমরা পুরো মাত্রায় উপভোগ করছি। আমরা স্বাধীন জীবন যাপন করছি। কিন্তু নামী-অনামী অগণিত মানুষ দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। তাদের মধ্যে খুব অল্প সংখ্যকের নামই হয়তো আমরা জানি। একটাই স্বপ্ন বুকে নিয়ে তাঁরা আত্মবলিদান দিয়েছিলেন – স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন। সমৃদ্ধ, সুখী, সম্পন্ন, স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন। আমার প্রিয় দেশবাসী, আমরা কি এই সংকল্প করতে পারি যে, 2022 সালে স্বাধীনতার 75 বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে অন্ততপক্ষে আগামী 2-3 বছর আমরা স্থানীয় উৎপাদিত জিনিস কিনতে আগ্রহী হব? ভারতে তৈরি, দেশের মানুষের হাতে তৈরি, দেশের মানুষের পরিশ্রম মিশে থাকা সেইসব দ্রব্য কিনতে উৎসাহী হব? আমি দীর্ঘ সময়ের জন্য বলছি না। শুধুমাত্র 2022 সাল পর্যন্ত। স্বাধীনতার 75 বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত। আর এই কাজ শুধুমাত্র সরকারের নয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে তরুণ সমাজ এগিয়ে আসুন। ছোট ছোট সংগঠন তৈরি করুন। মানুষকে অনুপ্রাণিত করুন, বোঝান। আসুন আমরা স্থানীয় জিনিস কিনি, স্থানীয় উৎপাদন কে শক্তিশালী করি, দেশের মানুষের পরিশ্রম যেখানে মিশে আছে। সেটাই আমাদের স্বাধীন ভারতের সুখের সময়। এই স্বপ্ন নিয়েই আমরা এগিয়ে চলি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এটা আমাদের সবার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, দেশের সব নাগরিক স্বনির্ভর হয়ে সম্মানের সঙ্গে জীবন যাপন করুক। আমি এবার এমন একটা উদ্যোগের কথা আপনাদের বলতে চাইব যা আমার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। সেটা হল জম্মু কাশ্মীর ও লাদাখের হিমায়ত প্রকল্প। হিমায়ত আসলে স্কিল ডেভেলপমেন্ট এবং রোজগার এর সঙ্গে সম্পর্কিত। এই প্রকল্পে 15 থেকে 35 বছর পর্যন্ত কিশোর কিশোরী, যুবক-যুবতীরা শামিল হয়। এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হন জম্মু-কাশ্মীরের সেইসব মানুষ যাদের পড়াশোনা কোন কারণে সম্পূর্ণ হয়নি, মাঝপথেই স্কুল-কলেজ ছাড়তে হয়েছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের জেনে খুব ভালো লাগবে, গত দু বছরে এই প্রকল্পের অন্তর্গত 18000 যুবক-যুবতীকে 77 টি পৃথক পৃথক বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে 5000 যুবক-যুবতী কোথাও না কোথাও কাজ করছেন এবং অনেকেই স্বরোজগারের দিকে এগোচ্ছেন। হিমায়ত প্রকল্প থেকে নিজেদের জীবন বদলে যাওয়া এই মানুষদের যে কাহিনী আমরা শুনেছি তা সত্যিই মন ছুঁয়ে যায়। পারবিন ফাতিমা তামিলনাড়ুর ত্রিপুরের একটি গার্মেন্ট ইউনিটে পদোন্নতি পেয়ে সুপারভাইজার-কাম-কো-অর্ডিনেটর হয়েছেন। এক বছর আগেও তিনি কারগিলের একটি ছোট্ট গ্রামে থাকতেন। এখন ওর জীবনে একটা বড় পরিবর্তন হয়েছে। আত্মবিশ্বাস এসেছে, আত্মনির্ভর হয়েছেন। পুরো পরিবারের আর্থিক উন্নতি হয়েছে। পারবিন ফতিমার মতই হিমায়ত প্রকল্পে লে – লাদাখের অধিবাসী অন্য মেয়েদেরও জীবন বদলে গেছে। তারা সবাই তামিলনাড়ুর ঐ প্রতিষ্ঠানেই কাজ করছেন। এভাবেই হিমায়ত, ডোডার ফিয়াজ আহমেদের জীবনে আশীর্বাদের মতো এসেছে। ফিয়াজ 2012 সালে দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় পাশ করেছেন। কিন্তু অসুস্থতার কারনে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেনি। এরপর দু’বছর হৃদরোগের সঙ্গে লড়াই করেছেন। এরইমধ্যে ওর এক ভাই, এক বোন মারা গিয়েছে। বলতে গেলে ফিয়াজের পরিবারের উপর বিপর্যয়ের পাহাড় ভেঙে পড়েছে। শেষ পর্যন্ত ফিয়াজ হিমায়ত থেকে সাহায্য পেয়েছেন। হিমায়ত এর মাধ্যমে ITES অর্থাৎ Information Technology Enabled Services প্রশিক্ষণ নিয়ে বর্তমানে পাঞ্জাবে চাকরি করছেন। ফিয়াজ আহমেদের গ্র্যাজুয়েশনের লেখাপড়া, যা সে পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছিল, তাও এখন শেষ হতে চলেছে। সম্প্রতি হিমায়তের এক অনুষ্ঠানে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার জন্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। নিজের কাহিনী বর্ণনা করার সময় তাঁর চোখে জল এসে গিয়েছিল। এইভাবেই অনন্তনাগের রাকীব-উল-রহমান আর্থিক দুর্দশার কারণে নিজের লেখাপড়া শেষ করতে পারে নি। একদিন রাকীব নিজের ব্লকে যে ক্যাম্প বসেছিল, মোবিলাইজেশন ক্যাম্প, তার মাধ্যমে হিমায়ত কর্মসূচীর খবর পায়। রাকীব অবিলম্বে রিটেইল টীম লীডার কোর্সে ভর্তি হয়ে যায়। এখানে ট্রেনিং শেষ করে সে আজ এক কর্পোরেট হাউজে চাকরি করছে। হিমায়ত মিশনে উপকৃত, প্রতিভাশালী যুবদের এমন অনেক উদাহরণ আছে যা জম্মু কাশ্মীরে পরিবর্তনের প্রতীক হয়ে রয়েছে। হিমায়ত কর্মসূচী সরকার, ট্রেনিং পার্টনার, চাকরি দেওয়া কোম্পানি এবং জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের মধ্যে তালমিলের এক আদর্শ উদাহরণ। এই কর্মসূচী জম্মু-কাশ্মীরের যুবদের মধ্যে এক নতুন আত্মবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে আর সামনে এগোনোর পথও প্রশস্ত করেছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ছাব্বিশ তারিখে আমরা এই দশকের শেষ সূর্যগ্রহণ দেখলাম। সম্ভবত সূর্যগ্রহণের কারণেই রিপুন মাই গভ-এ খুবই ইন্টারেস্টিং একটা কমেন্ট লিখেছে। সে লিখছে, ‘নমস্কার স্যার, আমার নাম রিপুন…আমি নর্থ -ইস্টের বাসিন্দা কিন্তু এখন সাউথে কাজ করি। একটা ব্যাপার আমি আপনার সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। আমার মনে আছে, আমাদের অঞ্চলে আকাশ পরিষ্কার হওয়ার কারণে আমরা ঘন্টার পর ঘন্টা আকাশের তারাদের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। স্টার গেজিং আমার খুব পছন্দ ছিল। এখন আমি একজন প্রফেশনাল এবং নিজের রোজনামচার কারণে এই সব ব্যাপারে সময় দিতে পারি না…আপনি এই বিষয়ে কি কিছু আলোচনা করতে পারেন? বিশেষ করে কীভাবে অ্যাস্ট্রোনমিকে যুবদের মধ্যে জনপ্রিয় করা যায়?
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি মতামত অনেক পাই কিন্তু আমি বলতে পারি যে এমন একটা মত আমি এই প্রথম পেলাম। এর ফলে, বিজ্ঞান নিয়ে, তার অনেকগুলো দিক নিয়ে আলোচনার সুযোগ পাওয়া গেল। বিশেষ করে যুব প্রজন্মের আগ্রহের বিষয় নিয়ে কথা বলার সুযোগ পেলাম আমি। কিন্তু এই বিষয়টা তো অধরাই ছিল, আর এই ছাব্বিশ তারিখেই সূর্যগ্রহণ হয়েছে, তাই মনে হচ্ছে হয়ত এই বিষয়ে আপনাদের কিছুটা আগ্রহ থাকবে। সমস্ত দেশবাসী, বিশেষ করে আমার যুব সাথীদের মতও আমিও, , ২৬ তারিখে, যে দিন সূর্যগ্রহণ ছিল, দেশবাসীদের এবং যুব প্রজন্মের মনে যেমন উৎসাহ ছিল তেমন আমার মনেও ছিল, আর আমিও, সূর্যগ্রহণ দেখতে চাইছিলাম, কিন্তু, আফশোসের কথা এটাই যে, সেদিন দিল্লীর আকাশ মেঘে ঢাকা ছিল আর আমি তো সেই আনন্দ পেলাম না, যদিও, টিভিতে কোজিকোড় ও ভারতের অন্যান্য অংশে দৃশ্যমান সূর্যগ্রহণের সুন্দর ছবি দেখতে পাওয়া গেল। উজ্জ্বল রিংয়ের আকারে দেখতে পাওয়া গেল সূর্যকে। আর সে দিন এই বিষয়ের কয়েকজন এক্সপার্টের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হল আমার, তাঁরা বলছিলেন যে এমনটা এই কারণে হয় যে চাঁদ পৃথিবীর থেকে যথেষ্ট দূরে থাকে আর এইজন্য, এর আকার, পুরোপুরি সূর্যকে ঢেকে দিতে পারে না। এইভাবে একটা রিং-এর আকার তৈরি হয়। এই সূর্যগ্রহণ, এক অ্যানুলার সোলার একলিপ্স যাকে বলয়গ্রহণ বা কুণ্ডল গ্রহণও বলা হয়। গ্রহণ আমাদের এই বিষয়টা মনে করায় যে আমরা পৃথিবীর উপরে বাস করে অন্তরীক্ষে ঘুরে বেড়াচ্ছি। যেভাবে অন্তরীক্ষে সূর্য, চন্দ্র এবং অন্যান্য গ্রহের মত খগোলীয় পিণ্ড ঘুরে বেড়ায়। চাঁদের ছায়ার ফলেই গ্রহণের আলাদা-আলাদা রূপ দেখতে পাই আমরা। বন্ধুগণ, ভারতে অ্যাস্ট্রোনমি অর্থাৎ খগোল-বিজ্ঞানের খুব প্রাচীন এবং গৌরবশালী ইতিহাস রয়েছে। আকাশে টিমটিম করা তারাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ততটাই পুরনো যতটা পুরনো আমাদের সভ্যতা। আপনাদের মধ্যে অনেক লোকেরই জানা আছে যে ভারতের আলাদা-আলাদা জায়গায় দর্শনীয় যন্তর-মন্তর আছে। আর এই যন্তর-মন্তরের অ্যাস্ট্রোনমির সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মহান আর্যভট্টের অনন্য প্রতিভা সম্পর্কে কে না জানেন! নিজের সময়ে তিনি সূর্যগ্রহণের সঙ্গে-সঙ্গে চন্দ্রগ্রহণেরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেটাও ফিলজফিক্যাল এবং ম্যাথামেটিক্যাল, দুটো অ্যাঙ্গেল থেকেই করেছেন। উনি ম্যাথামেটিক্যালি বলেছেন যে পৃথিবীর ছায়া বা শ্যাডোর সাইজের ক্যালকুলেশন কীভাবে করা যায়। উনি গ্রহণের ডিওরেশন আর এক্সটেন্ট ক্যালকুলেট করার ক্ষেত্রেও সঠিক তথ্য দেন। ভাস্করের মত ওনার শিষ্যরা এই স্পিরিটকে আর এই জ্ঞানকে আগে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভরপুর চেষ্টা করেন। পরে চতুর্দশ-পঞ্চদশ শতকে, কেরালায়, সঙ্গম গ্রামের মাধব, উনি ব্রহ্মাণ্ডে থাকা গ্রহদের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য ক্যালকুলাসের প্রয়োগ করেন। রাতের আকাশ শুধুমাত্র কৌতুহলের বিষয়ই ছিল না, বরং অঙ্ক এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে যাঁরা ভাবেন তাঁদের জন্য এ ছিল একটি গুরুত্বপূর্ন সূত্র । কয়েক বছর আগে আমি ‘Pre Modern Kutchi ( কচ্ছী) Navigation techniques and Voyages’ বইটির আবরণ উন্মোচন করেছিলাম । এই বইটিকে বলা যেতে পারে ‘মালম-এর ডায়রি’ । মালম, একজন নাবিক হিসাবে যা অনুভব করতেন, নিজের মত করে ডায়রিতে লিখে রাখতেন । আধুনিক যুগে সেই মালম-এর পুঁথি, যা ছিল গুজরাটিতে পাণ্ডুলিপির আকারে, এবং যেখানে ছিল প্রাচীন Navigation technology র বর্ণনা সেই ‘ মালম-নী-পোথী’ তে আমরা দেখতে পাই আকাশের, তারাদের, তারাদের গতির বর্ণনা আছে এবং এও পরিস্কার করে বলা আছে সমুদ্রযাত্রার সময় তারাদের সাহায্যে কি ভাবে দিকনির্ণয় করা হত । গন্তব্যে পৌঁছবার পথও দেখাত তারামণ্ডলী ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, astronomy র বিষয়টিতে ভারত অনেক এগিয়ে। আর এই ক্ষেত্রে আমাদের initiatives, path breaking ও। আমাদের পুনার কাছে বিশালকায় Meter Wave Telescope আছে। শুধুমাত্র এই নয় , Kodaikanal, Udaghmandalam (উদাঘমন্ডলাম),Guru Shikhar আর Hanle Ladakh-এও আছে Powerful Telescope. 2016 তে বেলজিয়ামের ততকালিন প্রধানমন্ত্রী এবং আমি নৈনিতাল এ 3.6 মিটার ‘ দেবস্থল Optical Telescope’ এর উদ্বোধন করেছিলাম । এটিকে বলা হয় এশিয়ার বৃহত্তম টেলিস্কোপ। ISRO র কাছে ও আছে ‘Astrosat’ নামে এক ‘astronomical satellite’ । সূর্য সম্পর্কিত গবেষনার জন্য ISRO ‘আদিত্য’ নামে আরও একটি satellite launch করতে চলেছে । মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে আমাদের প্রাচীন ধ্যানধারনাই হোক বা আধুনিক উপলব্ধি, আমাদের এগুলি অবশ্যই বোঝা উচিৎ এবং গর্ববোধ করা উচিৎ । আজ আমাদের তরুন বৈজ্ঞানিকদের মধ্যে শুধুমাত্র নিজেদের বৈজ্ঞানিক ইতিহাস জানার প্রতি ঔৎসুক্যই বৃদ্ধি পাচ্ছে না, বরং তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে astronomy র ভবিষ্যৎ নিয়ে দৃঢ় ইচ্ছাশক্তির বিকাশ। আমাদের দেশে Planetarium গুলি রাতের আকাশকে বোঝানোর সাথে সাথে Star Gazing এর শখকেও বিকশিত হতে motivate করে। অনেকেই আছেন যারা amature Telescope কে ছাদে অথবা balcony-তে লাগিয়ে রাখেন। Star Gazing এর মাধ্যমে Rural Camps আর Rural Picnic গুলিকেও উৎসাহিত করা যেতে পারে । অনেক School College ও আছে , যেখানে Astronomy Club গঠন করা হয়েছে আর এই ধরণের ব্যবস্থা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়াও উচিৎ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের সংসদকে আমরা গণতন্ত্রের মন্দির হিসাবে জানি । একটি কথার উল্লেখ আজ আমি অত্যন্ত গর্বের সাথে করব যে, আপনারা যাঁদের প্রতিনিধি করে সংসদে পাঠিয়েছেন তাঁরা বিগত 60 বছরের সমস্ত record ভেঙে দিয়েছেন। গত 6 মাসে, সপ্তদশ লোকসভার দুটি সদনই অত্যন্ত productive ছিল। লোকসভা বলা যেতে পারে 114% কাজ করেছে, আর রাজ্যসভা 94%। আর এর আগে বাজেট অধিবেশনের সময় প্রায় 135% কাজ হয়েছে। গভীর রাত অবধি সংসদ চলেছে। সমস্ত সাংসদেরা এর জন্য শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনের অধিকারি। আপনারা যাঁদের জন প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছেন তাঁরা 60 বছরের সমস্ত record ভেঙে দিয়েছেন। এতটা কর্মশীল থাকা ভারতীয় গনতন্ত্রের শক্তি ও গনতন্ত্রের প্রতি আস্থা দুইয়েরই পরিচায়ক। আমি দুই সদনেরই অধ্যক্ষ, সমস্ত রাজনৈতিক দল, এবং সমস্ত সাংসদদের এই সক্রিয় ভুমিকার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, সূর্য, পৃথিবী এবং চাঁদের গতি কেবল গ্রহন সৃষ্টি করেনা, আরও অনেক কিছু এদের সাথে জড়িত। আমরা সবাই জানি, সূর্যর গতির উপর নির্ভর করে জানুয়ারীর মাঝামাঝি সময়ে সারা ভারতে বিভিন্ন পার্বণ ও উৎসব পালিত হবে। পঞ্জাব থেকে তামিলনাড়ূ আর গুজরাট থেকে অসম পর্যন্ত সবাই বিভিন্ন পার্বণ ও অনুষ্ঠানে মেতে থাকবে। জানুয়ারীতেই ধুমধাম করে পালিত হবে মকর সংক্রান্তি আর উত্তরায়ন। এই উৎসবগুলি, উৎসাহ ও উদ্দীপনার প্রতীক বলেও মনে করা হয়। এই সময়ে পাঞ্জাবে লোড়ী, তামিলনাড়ূতে পোঙ্গাল, এবং অসমে পালিত হবে মাঘ বিহু। এই উৎসব, কৃষকদের সমৃদ্ধি এবং ফসলের সাথে খুব ওতপ্রতভাবে জড়িত। এই পার্বণগুলি আমাদের ভারতের একতা এবং বৈচিত্রের কথা মনে করিয়ে দেয়। পোঙ্গালের শেষ দিনে মহান থীরুবল্লুবরের জন্মজয়ন্তী পালনের সৌভাগ্য আমরা দেশবাসীরা পেয়ে থাকি।এই দিনটি মহান লেখক, বিচারক, সন্ত থীরুবল্লুবর-জী এবং তাঁর জীবনের উদ্দেশ্যে সমর্পিত থাকে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ২০১৯ এর এটিই শেষ ‘মন কি বাত’। ২০২০তে আমরা আবার মিলিত হব নতুন বছর, নতুন দশক, নতুন সঙ্কল্প, নতুন শক্তি, নতুন উদ্দীপনা, নতুন উৎসাহকে সঙ্গী করে । আসুন এগিয়ে যাই সংকল্প পূরণের লক্ষ্যে সামর্থ্য সংগ্রহ করে। অনেক দূর যেতে হবে। অনেক কিছু করার আছে। দেশকে পৌঁছে দিতে হবে নতুন উচ্চতায়। একশো তিরিশ কোটি দেশবাসীর পুরুষার্থ, সামর্থ্য, সঙ্কল্পের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা রেখে আসুন আমরা এগিয়ে চলি। অনেক অনেক ধন্যবাদ, অনেক অনেক শুভকামনা।
মার প্রিয় দেশবাসী, ‘মনের কথা’-য় আপনাকে স্বাগত। আজ মনের কথার শুরুতে, যুব দেশের, যুবরা, সেই উদ্দীপনা, সেই দেশভক্তি, সেই সেবার রঙে রঙীন তরুনরা, আপনারা তো জানেন। নভেম্বর মাসের চতুর্থ রবিবার প্রতি বছর NCCDayহিসাবে সর্বদা মনে রাখা হয়। সাধারণভাবে আমাদের যুব প্রজন্ম FriendshipDayসর্বদা মনে রাখে। কিন্তু অনেক মানুষ NCCDay টাও মনে রাখেন। চলুন, আজ NCC-র বিষয়ে কথা হোক। আমিও কিছু স্মৃতি সতেজ করার সুযোগ পেয়ে যাব। শুরুতেই NCC-র প্রাক্তন আর বর্তমান Cadet-দের NCCDay-র অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। কারণ, আমিও আপনাদের মতোই Cadetছিলাম আর মন থেকে, আজও আমি নিজেকে Cadetমনে করি। এতা তো আমাদের সকলেরই জানা NCCঅর্থাৎ nationalCadetCrops বিশ্বের সবচেয়ে বড় UniformedYouthOrganisation-এ ভারতের NCC একনম্বরে। এটি একটি Tri-ServiceOrganisation, যেখানে সেনা, নৌসেনা আর বায়ুসেনা তিনটিই রয়েছে। Leadership,দেশভক্তি, selflessservice, discipline, hard-work এই সবগুলিকে নিজেদের character-এর অংশ বানিয়ে নেও, নিজেদের habitsবানাতে একটি রোমাঞ্চক যাত্রার অর্থই হল — NCC. এই Journey-র বিষয়ে আরও বেশি কথা বলার জন্যই আজ ফোন কলে কিছু তরুণের সঙ্গে, যারা NCC-তে নিজেদের জায়গা তৈরি করেছেন। আসুন তাদের সঙ্গে কথা বলি।
আমার প্রিয় দেশবাসীরা, আমাদের সবার এটা কখনও ভোলা উচিত নয় যে, ৭ ডিসেম্বরে Armed Forces Flag Day পালন করা হয়। এইদিনে আমরা আমাদের বীর সৈনিকদের, তাদের পরাক্রমকে, তাদের আত্মবলিদানকে স্মরণ তো করিই, আর স্মরণে অংশ নিই। শুধু সম্মানভাবই যথেষ্ট নয়, সক্রিয় অংশগ্রহণও প্রয়োজন। আর, ৭ ডিসেম্বরে প্রত্যেক নাগরিককে এগিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেকের কাছে সেদিন Armed Forces-এর Flagথাকাই উচিত, আর উদযাপনও করতে হবে। আসুন এই উপলক্ষ্যে আমরা আমাদের armed forces-এর অদম্য সাহস, শৌর্য এবং সমর্পন-ভাবের প্রতি কৃতিজ্ঞতা জানাই এবিং বীর সৈনিকদের স্মরণ করি।
আমার প্রিয় দেশবাসীরা, ভারতে Fit India Movementএর সঙ্গে তো আপনারা সম্ভবত পরিচিত হয়েছেন। CBSE একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে – Fit Indiaসপ্তাহ পালন। Schools, Fit Indiaসপ্তাহ ডিসেম্বর মাসে যে কোনও সপ্তাহে পালন করতে পারে। এতে fitness নিয়ে অনেক ধরণের আয়োজন করা হবে। এতে quiz, প্রবন্ধ রচনা, ছবি আঁকা, পারম্পরিক এবং স্থানীয় ক্রীড়া, যোগাসন, dance এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন হনে। Fit India সপ্তাহে ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি তাদের শিক্ষক এবং অবিভাবকরাও অংশগ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু এটা ভুললে চলবে না যে, Fit India মানে শুধুই মস্তিস্কের কসরৎ, কাগজের কসরত বা laptop কিংবা computer-এ কিংবা mobilephone-এ fitness-এর appদেখে যাওয়া। মোটেই না। ঘাম ঝরাতে হবে। খাদ্যাভ্যাস বদলাতে হবে। অধিকতম focus activity করার স্বভাব গড়তে হবে। আমি দেশের সব রাজ্যের school board এবং school প্রশাসনকে অনুরোধ জানাই যে, প্রত্যেক school-এ ডিসেম্বর মাসে Fit Indiaসপ্তাহ পালন করুন। এতে fitness এর স্বভাব আমাদের সকলের দিনযাপনে রপ্ত হবে। Fit India Movement-এfitness নিয়ে স্কুলগুলির ranking এর ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এই ranking অর্জনকারী সমস্ত school, Fit Indialogo আর flag এর ব্যবহার করতে পারবে। Fit Indiaportal এ গিয়ে school নিজেকে Fit করতে পারবে। Fit Indiathree star আর Fit India five star ratings-ও দেওয়া হবে। আমি অনুরোধ জানাই যে সব school,Fit Indiaranking-এ যোগ দিন আর Fit India সহজ স্বভাবে পরিণত হোক। একটি গণআন্দোলন গড়ে উঠুক, সচেতনয়া বাড়ুক, এর জন্য চেষ্টা করতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসীরা, আমাদের দেশ এত বিশাল, এত বৈচিত্র্যপূর্ণ, এত পুরাতন যে, অনেক বিষয় আমাদের মনেই থাকে না, আর এটাই স্বাভাবিক। এমনি একটি বিষয় আমি আপনাদের সাথে share করতে চাই। কিছু দিন আগে MyGov-এ একটি comment আমার চোখে পড়েছে। এই comment আসামের নওগাঁ-র শ্রীযুক রমেশ শর্মা জী লিখেছেন। তিনি লিখেছেন, ব্রহ্মপুত্র নদে একটি উৎসব চলছে। এরনাম ব্রহ্মপুত্র পুষ্কর। ৪ নভেম্বর থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত এই উৎসব ছিল। আর এই ব্রহ্মপুত্র পুষ্করে যোগ দেওয়ার জন্য দেশের ভিন্ন ভিন্ন অংশ থেকে অনেক মানুষ সেখানে হাজির হয়েছিলেন। একথা শুনে আপনিও আশ্চর্য হলেন তো! হ্যাঁ, এটাই কথা যে, এটি এমনই গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। আর, আমাদের পূর্বজরা এটি এমনভাবে রচনা করেছেন যে, গোটা বিষয়টা শুনলে আপনারা অবাক হবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, এর যতটা ব্যাপক প্রচার হওয়া উচিত, যতটা দেশের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে যাওয়া উচিত, সেই পরিমাণে হয় না। আর, এটাও সত্যি যে, এই সমগ্র আয়োজন এক প্রকারে এক দেশ, এক বার্তা আর আমরা সবাই এক, এই মনোভাবকে পুষ্ট করে, শক্তি যোগায়।
সবার আগে রমেশ জী, আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনি ‘মনের কথা’-র মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে একথা শেয়ার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আপনি যন্ত্রণার কথাও বলেছেন, এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কোনও চর্চা হয় না, ব্যাপক প্রচার হয় না। আপনার ব্যাথা আমি বুঝতে পারি। দেশের অধিকাংশ মানুষ এই বিষয়ে জানেন না। হ্যাঁ, যদি কেউ একে International River festival বলে দিতেন, কিছু চটকদার শব্দ ব্যবহার করতেন, তাহলে হয়তো আমাদের দেশের কিছু মানুষ তা নিয়ে আলাপ আলোচনা করতেন, আর প্রচারও হয়ে যেত।
আমার প্রিয় দেশবাসীরা, ‘পুষ্করম, পুষ্করালু, পুষ্করঃ’ আপনারা কখনও কি এই শব্দগুলি শুনেছেন? আপনারা কি জানেন? আপনারা জানেন এগুলি কী? আমি বলছি। এগুলি দেশের ১২টি ভিন্ন ভিন্ন নদীতে যে উৎসবের আয়জন হয়, তাদের ভিন্ন ভিন্ন নাম। প্রতি বছর একটি নদীতে … অর্থাৎ, সেই নদীতে আবার ১২ বছর পর উৎসব হবে, আর এই উৎসব দেশের আলাদা আলাদা প্রান্তের ১২টি নদীতে উদযাপিত হয়। পালা করে হয় আর ১২ দিন ধরে চলে। কুম্ভের মতোই এই উৎসবও জাতীয় একতাকে প্রেরণা যোগায়, আর ‘এক-ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’-কে তুলে ধরে। পুষ্করম এমনই একটি উৎসব, যাতে নদীর মাহাত্ম্য নদীর গৌরব, জীবনে নদীর গুরুত্ব অত্যন্ত সহজভাবে ভাবে পরিস্ফুট হয়।
আমাদের পূর্বজরা প্রকৃতিকে, পরিবেশকে, জলকে, জমিকে, জঙ্গলকে অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁরা নদীগুলির গুরুত্ব বুঝেছেন এবং সমাজে নদীগুলির প্রতি ইতিবাচক ভাব কিভাবে জন্ম নেবে, একটি সংস্কার কিভাবে রচিত হবে, নদীর সঙ্গে সংস্কৃতির ধারা, নদীর সঙ্গে সংস্কারের ধারা, নদীর সঙ্গে সমাজকে যুক্ত করার প্রয়াস নিরন্তর চলে আসছে। আর মজার কথা হল এই যে, সমাজ নদীর সঙ্গে যুক্ত আর পরস্পরের সঙ্গেও যুক্ত। গত বছর তামিলনাডুর তামীরবরনী নদীতে পুষ্করম হয়েছিল। এ বছর এটি ব্রহ্মপুত্র নদে উদযাপিত হয়েছে আর আগামী বছর তুঙ্গভদ্রা নদীতে –অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা ও কর্ণাটকে আয়োজিত হবে। এভাবে আপনারা এই ১২টি স্থানের যাত্রাকে একটি Tourist circuit রূপের করতে পারেন। এখানে আমি আসামবাসীদের উদ্দীপনা, তাদের আতিথেয়তার প্রশংসা করতে চাই, যাঁরা গোটা দেশ থেকে আগত তীর্থযাত্রীদের সাদর আপ্যায়ন করেছেন। আয়োজকরা স্বচ্ছতার দিকে পূর্ণ নজর দিয়েছেন। plastic free zone-এর ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছেন। জায়গায় জায়গায় Bio Toilets-এর ব্যবস্থা করেছেন। আমি আশা করি নদীগুলির প্রতি এমন মনোভাব জাগানোর এই হাজার হাজার বছরের প্রাচীন উৎসব আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে জুড়বে। প্রকৃতি, পরিবেশ, জল – এই সব কিছু আমাদের পর্যটনের অঙ্গ হোক, জীবনেরও অঙ্গ হোক।
আমার প্রিয় দেশবাসীরা, Namo App নিয়ে মধ্যপ্রদেশের মেয়ে শ্বেতা লিখছেন, আর তিনি লিখেছেন, স্যার, আমি নবম শ্রেণিতে পড়ি, আমার বোর্ডের পরীক্ষার এখনও এক বছর বাকি। কিন্তু আমি students এবং exam warriors দের সঙ্গে আপনার বার্তালাপ নিয়মিত শুনি। আমি এইজন্য আপনাকে লিখছি কারণ, আপনি আমাদের এখনও এটা বলেননি যে, পরের পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা কবে হবে। অনুগ্রহ করে আপনি এটা তাড়াতাড়ি করুন। যদি সম্ভব হয়, তাহলে জানুয়ারিতেই এই কর্মসুচির আয়োজন করুন। বন্ধুরা, মনের কথা অনুষ্ঠানের এই ব্যাপারটাই আমার খুব ভালো লাগে – আমার নবীন বন্ধু, আমাকে যে অধিকার আর ভালোবাসা নিয়ে আপনারা অভিযোগ করেন, আদেশ দেন, পরামর্শ দেন – এসব দেখে আমি খুব আনন্দ পাই। শ্বেতা জী, আপনি অত্যন্ত সঠিক সময়ে এই বিষয়টি তুলেছেন। পরীক্ষাগুলি আসছে, তাই, প্রতিবছরের মতো আমাদের পরীক্ষা নিয়ে আলোচনাও করতে হবে। আপনার কথা ঠিক, এই কর্মসুচিটি একটু আগেই আয়োজনের প্রয়োজন রয়েছে।
গত কর্মসূচির পর অনেক মানুষ একে প্রভাবশালী করার জন্য নিজেদের পরামর্শ পাঠিয়েছেনার অভিযোগও জানিয়েছেন যে, গতবার দেরিতে হয়েছে। পরীক্ষা একদম কাছে এসে গিয়েছিল। আর শ্বেতার অভিযোগ সঠিক যে, আমার এটা জানুয়ারিতে করা উচিত। HRD Ministry এবং MyGov-এর টিম মিলে এর প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু আমি চেষ্টা করব, এবার পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা যাতে জানুয়ারির গোরায় কিংবা মাঝামাঝি হয়। সারা দেশে ছাত্রছাত্রী বন্ধুদের সামনে দুটো সুযোগ থাকবে। প্রথমত, নিজের স্কুল থেকেই এই কর্মসুচিতে অংশগ্রহণ, দ্বিতীয়ত, এখানে দিল্লিতে আয়োজিত কর্মসুচিতে অংশগ্রহণ। দিল্লির জন্য সারা দেশ থেকে ছাত্রছাত্রীদের নির্বাচন MyGov এর মাধ্যমে করা হবে। বন্ধুরা, আমাদের সবাই মিলে পরীক্ষার ভীতিকে দূর করতে হবে। আমার নবীন বন্ধুদের পরীক্ষার সময় যাতে হাশিখুশি দেখা যায়, Parents উত্তেজনা মুক্ত থাকেন, Teachers আশ্বস্ত থাকেন, এই উদ্দেশ্য নিয়েই গত কয়েকবছর ধরে আমরা মনের কথার মাধ্যমে ‘পরীকসা পর চর্চা’ Town Hall-এর মাধ্যমে অথবা Exam Warrior’s Book-এর মাধ্যমে লাগাতর চেষ্টা করে যাচ্ছি। এই মিশনকে সারা দেশের ছাত্রছাত্রীরা, Parents আর Teachers গতি দিয়েছেন। সেই জন্য আমি এদের সবার কাছে কৃতজ্ঞ। আর, আগামী পরীক্ষা নিয়ে আলোচনার কর্মসুচি আমরা সবাই মিলে পালন করব। আপনাদের সকলকে আমন্ত্রণ জানাই।
সাথীরা, আগের ‘মনের কথা’-য় আমি ২০১০-এ অযোধ্যা মামলায় এলাহাবাদ হাই কোর্টের Judgement নিয়ে চর্চা করেছিলাম, আর আমি বলেছিলাম যে, দেশ সেই সময় কিভাবে শান্তি আর ভ্রাতৃত্ব বজায় রেখেছিল। রায় আসার আগেও আর রায় আসার পরেও। এই বারেও, ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের Judgement এসেছে, আর ১৩০ কোটি ভারতীয় আবার এটা প্রমাণ করেছে যে, তাদের জন্য দেশের হিতের চেয়ে বড় কিছু নেই। দেশে শান্তি, একতা আর সদ্ভাবনার মূল্য সবার উপরে। রাম মন্দিরের বিষয়ে যখন রায় এল, তখন সারা দেশ মন খুলে আলিঙ্গন করল। পূর্ণ সহজতা আর শান্তির সঙ্গে স্বীকার করেছে। আজ, ‘মনের কথা’-র মাধ্যমে দেশবাসীদের সাধুবাদ জানাই, ধন্যবাদ দিতে চাই। তারা, যেরকমের ধৈর্য, সংযম আর প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন, আমি তার জন্য বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। একদিকে যেখানে দীর্ঘ সময়ের আইনী লড়াই সমাপ্ত হয়েছে, সেখানেই, দ্বিতীয় দিকে, আদালতের প্রতি দেশের সম্মান আরও বেড়েছে। প্রকৃত অর্থে, এই রায় আমাদের বিচার ব্যবস্থার জন্য একটি মাইলফলক হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের এই ঐতিহাসিক রায়ের পর, এখন দেশ, নতুন আশার সঙ্গে নতুন আকাঙ্খার সাথে, নতুন রাস্তায়, নতুন ইচ্ছা নিয়ে চলতে শুরু করেছে। New India, এই ভাবনাকে আপন করে শান্তি, একতা আর সদ্ভাবনার সঙ্গে এগিয়ে যাক – এই আমার কামনা, আমাদের সকলের কামনা।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের সভ্যতা, সংস্কৃতি আর ভাষাগুলি গোটা বিশ্বে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের বার্তা দেয়। ১৩০ কোটি ভারতীয়ের এই দেশ, যেখানে বলা হয় ‘প্রতি ক্রোশে জল বদলায়, চার ক্রোশে ভাষা’। আমাদের ভারতভূমিতে শত শত ভাষা সহস্র সহস্র বছর ধরে পুষ্পিত পল্লবিত হয়ে চলেছে। যদিও, আমাদের এই কথাও চিন্তা হয় যে, কখনও ভাষা বা বুলি শেষ হয়ে যাবে না তো! অতীতে উত্তরাখণ্ডের ধারচুলার কাহিনী আমি পড়েছিলাম। আমার খুব আনন্দ হয়েছিল। এই কাহিনী থেকে জেনেছিলাম, কিভাবে মানুষ নিজের ভাষাকে উন্নত করার জন্য এগিয়ে আসছেন। Innvovative কিছু করছেন। ধারচুলার খবর আমার দৃষ্টি এইজন্য আকর্ষণ করেছিল যে, কখনও আমি আসা যাওয়ার পথে ধারচুলায় থেকে যেতাম। ওদিকে নেপাল, এদিকে কালীগঙ্গা – তাই, স্বাভাবিকভাবে ধারচুলা শুনতেই, সেই খবরের দিকে আমার দৃষ্টি গেছে। পিথোরাগড়ের ধারচুলায়, ‘রং’ সম্প্রদায়ের অনেক মানুষ বাস করেন, যাদের নিজেদের কথাবলার ভাষা হল ‘রঙ্গলো’। এই মানুষেরা একথা ভেবে খুবই ব্যথিত হতেন যে, এদের ভাষায় কথা বলার লোক ক্রমেই কমে যাচ্ছে। তখন একদিন, এরা সবাই, নিজেদের ভাষাকে বাচানোর প্রতিজ্ঞা করেন। দেখতে দেখতে এই মিশনে রং সম্প্রদায়ের লোকের যুক্ত হতে লাগলো। আপনি অবাক হবেন, এই সম্প্রদায়ের লোকসংখ্যা ছিল গুনতির মধ্যে। মোটা দাগের হিসাবে হয়তো হাজার দশেক হবেন। কিন্তু রং ভাষা বাঁচাতে সবাই একজোট হয়ে গেল। তা সে, চুরাশি বছরের প্রবীণ দিওয়ান সিং হোন বা বাইশ বছরের যুবতী বৈশালী গারোয়াল, অধ্যাপক বা ব্যাপারী, সকলেই, যথাসাধ্য চেষ্টা শুরু করলেন। এই মিশনে সোস্যাল মিডিয়াকে সবরকমভাবে ব্যবহার করা হল। অনেক Whatsapp group তৈরি হল। শত শত লোককে এর মধ্যে যুক্ত করা হল। এই ভাষার কোনও লিপি নেই, শুধু কথা বলার মধ্যেই এক রকমভাবে এর চলন। এভাবেই, লোকেরা গল্প, কবিতা, গান পোস্ট করতে লাগলেন। একজন আরেকজনের ভাষা ঠিক করে দিতে থাকলেন। এক অর্থে, Whatsapp এরclassroom তৈরি হয়ে গেল, যেখানে প্রত্যেকেই ছাত্রও, আবার শিক্ষকও! রঙ্গলোক ভাষাকে রক্ষা করার জন্য এটা একটা চেষ্টা। নানা রকমের কর্মসূচির আয়োজন করা হচ্ছে, পত্রিকা প্রকাশ করা হচ্ছে, আর এতে সামাজিক সংস্থাগুলিরও সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে।
সাথীরা, মূল কথা হল এই যে, রাষ্ট্রসঙ্ঘ ২০১৯-কে, অর্থাৎ এই বছরকে, ‘International Year of Indigenous Languages’ ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ, এমন ভাষাগুলিকে সংরক্ষণ করার উপর জোর দিয়েছে, যেগুলি বিলুপ্ত হওয়ার পথে। দেড়শো বছর আগে, আধুনিক হিন্দির জনক ভারতেন্দু হরিশচন্দ্র জী বলেছিলেন:-
“নিজ ভাষা উন্নতি অহে, সব উন্নতি কো মূল
বিন নিজ ভাষা-জ্ঞান কে , মিটত না হিয়ে কো সূল”।
অর্থাৎ, মাতৃভাষার জ্ঞান ছাড়া উন্নতি সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় রং সম্প্রদায়ের এই প্রচেষ্টা গোটা বিশ্বের জন্য পথ প্রদর্শক হতে পারে। আপনি যদি এই কাহিনী থেকে অনুপ্রাণিত হন, তাহলে, আজ থেকেই, নিজের মাতৃভাষার বুলিকে নিজে ব্যবহার করুন। পরিবারকে, সমাজকে প্রাণিত করুন।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে মহাকবি সুব্রহ্মণ্যম ভারতী জী বলেছিলেন, আর তামিলে বলেছিলেন। তিনি আমাদের জন্য খুবই প্রেরণাদায়ক।
সুব্রহ্মণ্যম ভারতী তামিল ভাষায় বলেছিলেন –
मुप्पदुकोडीमुगमुडैयाळ
उयिर्मोइम्बुरओंद्दुडैयाळ
इवळसेप्पुमोळीपधिनेट्टूडैयाळ
एनिर्सिन्दनैओंद्दुडैयाळ
(Muppadhu kodi mugamudayal, enil maipuram ondrudayal
Ival seppumozhi padhinetudayal, enil sindhanai ondrudayal)
আর সেই সময় থেকে ১৯ শতাব্দীর এই শেষ ভাগের কথা। আর তিনি বলেছিলেন, ভারত মাতার ৩০ কোটি চেহারা হতে পারে, কিন্তু শরীর একটাই। তারা ১৮টি ভাষা বলতে পারেন, কিন্তু ভাবনা একটাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কখনও কখনও জীবনে ছোট ছোট বিষয়ও আমাদের অনেক বড় বড় বার্তা দেয়। এখন দেখুন না, Media তে Scuba Drivers দের একটি story পড়ছিলাম। এমন একটি কাহিনী, যা ভারতবাসীদের প্রেরণা দিতে পারে। বিশাখাপত্তনমে ডাইভিং-য়ের প্রশিক্ষণ দেন যেসব scuba Divers একদিন mangamaripeta beach-এ সমুদ্র থেকে ফিরে আসছিলেন। সমুদ্রে ভাসমান কিছু প্লাস্টিকের বোতল আর pouch তাদের গায়ের কাছে আসছিল। সেগুলি পরিস্কার করতে করতে বিষয়টা তাদের খুব গুরুতর মনে হয়। আমাদের সমুদ্র কিভাবে আবর্জনায় ভরতি করা হচ্ছে। গত কয়েকদিন এই ডুবুরিরা তীর থেকে ১০০ মিটার ভিতরে গিয়ে গিয়ে গভীর সমুদ্রে ডুব দিচ্ছেন আর সেখানে জমে থাকা আবর্জনা বাইরে নিয়ে আসছেন। আমাকে বলা হয়েছে, গত ১৩ দিনে, অর্থাৎ দু সপ্তাহে, ৪০০ কিলোর বেশি plastic waste তারা সমুদ্র থেকে তুলে এনেছেন। এই scuba divers দের ছোট একটা সূত্রপাত একটা বড় বড় অভিযানের রূপ নিতে যাচ্ছে। এখন তারা স্থানীয় লোকেদের সহায়তাও পাচ্ছেন। আশেপাশের মৎস্যজীবীরাও তাদের সব রকম সাহায্য দিচ্ছেন। একবার ভাবুন, এই scuba divers-দের থেকে প্রেরণা নিয়ে যদি আমরা, শুধু নিজেদের আশেপাশের এলাকাকে প্লাস্টিকের আবর্জনা থেকে মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিই, তাহলে ‘প্লাস্টিক-মুক্ত ভারত’ পুরো বিশ্বের জন্য একটা উদাহরণ তৈরি করতে পারে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, দু দিন পরেই ২৬ নভেম্বর। এই দিনটি সমগ্র দেশের জন্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিন। আমাদের গণতন্ত্রের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ, সেই দিনটি আমরা ‘সংবিধান দিবস’ হিসবে পালন করি। আর, এবার সংবিধান দিবস’ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সংবিধানকে স্বীকার করার এবার ৭০ তম বর্ষ পূর্ণ হচ্ছে। এবার এই উপলক্ষ্যে সংসদে বিশেষ অনুষ্ঠান হবে আর তারপর বর্ষব্যাপী দেশ জুড়ে আলাদা আলাদা কর্মসূচি পালিত হবে। আসুন এই উপলক্ষ্যে আমরা সংবিধান সভার সব সদস্যকে সমাদরে নমস্কার করি, নিজেদের শ্রদ্ধা জানাই। ভারতের সংবিধান এমনই যা, প্রত্যেক নাগরিকের অধিকারগুলি আস সম্মান রক্ষা করে। আর, আমাদের সংবিধান রচয়িতাদের দূরদর্শিতা কারণেই এটা সুনিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। আমি কামনা করি, সংবিধান দিবস আমাদের সংবিধানের আদর্শগুলি বজায় রাখতে আর দেশ গঠনে যোগদান দেওয়ার আমাদের সিদ্ধান্তকে শক্তি দেবে। এই স্বপ্নই তো আমাদের সংবিধান রচয়িতারা দেখেছিলেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, শীতের মরশুম শুরু হচ্ছে। হাল্কা হাল্কা ঠাণ্ডা এখনই অনুভব করছি। হিমালয়ের কিছু অংশ বরফের চাদরে ঢাকতে শুরু করেছে। কিন্তু এটাই Fit India Movement-এর সময়। আপনি, আপনার পরিবার, আত্মীয়-পরিজন, আপনার সাথীরা এই সুযোগ ছাড়বেন না। ‘Fit India Moment’কে এগিয়ে নিয়ে যেতে এই মরশুমের পূর্ণ সুযোগ নিন।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আজ দীপাবলির শুভদিন। আপনাদের সবাইকে দীপাবলির অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আমাদের এখানে বলা হয়েছে –
শুভম্ করোতি কল্যাণং আরোগ্যং ধনসম্পদাম।
শত্রুবুদ্ধিবিনাশায় দীপজ্যোতির্নমোস্তুতে।
কত সুন্দর বার্তা । এই শ্লোকে বলা হয়েছে – আলো জীবনে সুখ, সুস্বাস্থ্য আর সমৃদ্ধি নিয়ে আসে, যা বিপরীত বুদ্ধির বিনাশ করে সদ্বুদ্ধি নিয়ে আসে।এরকম দিব্যজ্যোতিকে আমার প্রণাম। দীপাবলিকে মনে রাখার জন্য এর থেকে আরভালো চিন্তাধারা কি হতে পারে, এই আলোকে আমরা ছড়িয়ে দিই, ‘পজিটিভিটি’র বৃদ্ধি হোক এবং শত্রুতার ভাবনাকে বিনষ্ট করার প্রার্থনা করি। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দীপাবলি উদযাপিত হয়। বিশেষ করে এই উৎসবে কেবল ভারতীয়রাই সামিল হন এটা নয়, অনেক দেশের সরকার, ঐ দেশের নাগরিক, সামাজিক সংগঠন দীপাবলি উৎসবকে হর্ষ উল্লাসের সঙ্গে পালন করে। একরকমের ভারত সেখানে তৈরি হয়ে যায়।
বন্ধুগণ, পৃথিবীতে উতসব পর্যটনের একটা আলাদা আকর্ষণ রয়েছে। আমাদের ভারত হলো উতসবের দেশ, এখানে উতসব পর্যটনের বিশাল সুযোগ রয়েছে। আমাদের চেষ্টা করা উচিৎ যে হোলী হোক, দীপাবলি হোক, ওণম হোক, পোঙ্গল হোক, বিহু হোক, এই সমস্ত উৎসবের প্রচার করি আর এই খুশীতে অন্য রাজ্যের, অন্য দেশের লোকেদেরও সামিল করি। আমাদের এখানে প্রতি রাজ্যে, প্রতি অঞ্চলে এত রকমের বিভিন্ন উৎসব আছে – অন্য দেশের লোকেদের এই সব উৎসবের প্রতি আগ্রহ রয়েছে। এই কারণে ভারতে উতসব পর্যটনের উন্নতির জন্য দেশের বাইরে বসবাসকারী ভারতীয়দের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপুর্ণ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, গত ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আমি ঠিক করেছিলাম, এই দীপাবলি উপলক্ষে কিছু আলাদা করবো। আমি বলেছিলাম- আসুন, আমরা সবাই এই দীপাবলিতে ভারতীয় নারী শক্তি এবং ওঁদের সাফল্যকে উদযাপন করি, অর্থাৎ ভারতের লক্ষ্মীর সম্মান করি। দেখতে দেখতে এর ঠিক পরে স্যোসাল মিডিয়াতেঅসংখ্য অনুপ্রেরণামূলক কাহিনীর ভীড় উপচে পড়ছে। ওয়ারেংলের কোড়িপাকা রমেশ, নমো অ্যাপে লিখেছেন “আমার মা আমার শক্তি। ১৯৯০ তে যখন আমার বাবা মারা গেলেন, আমার মা পাঁচ ছেলের দায়িত্ব গ্রহন করলেন। আজ আমরা পাঁচ ভাই ভালো জীবিকায় আছি। আমার মা আমার ভগবান। আমার সব কিছু, ঠিক ভাবে দেখলে তিনি ভারতের লক্ষ্মী”।
রমেশজী, আপনার মাকে আমার প্রণাম। ট্যুইটারে সক্রিয়গীতিকা স্বামীর বক্তব্য হলো – তাঁর কাছে মেজর খুশবু কঁয়ার ভারতের লক্ষ্মী, যিনি বাস কন্ডাকটরের মেয়ে আর তিনি আসাম রাইফেলসের মহিলা বাহিনীর নেতৃত্ব করেছিলেন। কবিতা তিওয়ারিজীর কাছে ওঁর মেয়ে ভারতের লক্ষ্মী, যে ওঁর শক্তিও বটে। উনি গর্বিত যে ওঁর মেয়ে খুব ভালো ছবি আঁকে , আর ক্ল্যাটের পরীক্ষায় খুব ভালো স্থান দখল করেছে। আবার মেঘা জৈন লিখেছেন- ৯২ বছর বয়স্ক এক মহিলা অনেক বছর ধরে গোয়ালিয়র রেল স্টেশনে যাত্রিদের জলদান করছেন। মেঘাজী, ভারতের এই লক্ষ্মীর বিনম্র স্বভাব আর করুণা থেকে খুব অনুপ্রাণিত হয়েছেন। এরকম অনেক কাহিনী লোকেরা ভাগ করে নিয়েছেন। আপনারা অবশ্যই পড়ুন, প্রেরণা গ্রহণ করুন আর নিজেও আশেপাশের কিছু কথা ভাগ করুন। ভারতের এই সব লক্ষ্মীদের প্রতি আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম।
আমার প্রিয় দেশবাসী, সপ্তদশ শতাব্দীর বিখ্যাত মহিলা কবি সাচি হোন্নাম্মা, উনি সপ্তদশ শতকে কন্নড় ভাষায় একটি কবিতা লিখেছিলেন। সেই ভাব, সেই সবশব্দ ভারতের সেইসব লক্ষ্মী, যাঁদের কথা আমরা বলছি, মনে হয় এর ভিত সপ্তদশ শতকেরচনা করে দিয়েছিলেন। কত সুন্দর শব্দ, কত সুন্দর ভাব ব্যক্ত করেছেন, আর কত উচ্চ বিচারধারা কন্নড় ভাষার এই কবিতার মধ্যে রয়েছে-
পেণ্ণিন্দা পেরমেগনডনু হিমাবঁতন্তু,
পেণ্ণিন্দা ভৃগূ পের্চিদনু
পেণ্ণিন্দা জনকরায়নু জসবডেদনূ
এর মানে, হিমাবঁতন্তু অর্থাৎ পর্বতরাজ নিজের মেয়ে পার্বতীর জন্য, ঋষি ভৃগু নিজের মেয়ে লক্ষ্মীর জন্য এবং জনক নিজের মেয়ে সীতার জন্য বিখ্যাত হয়েছিলেন। আমাদের মেয়েরা আমাদের গৌরব আর এই মেয়েদের মহৎ কার্যের মাধ্যমে আমাদের সমাজের এক মজবুত পরিচয় রয়েছে এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ১২ ই নভেম্বর ২০১৯, এই দিনটিতেই সারাবিশ্বে শ্রী গুরু নানক দেবজীর ৫৫০ তম আবির্ভাব উৎসব পালন করা হবে। গুরু নানক দেবজীর প্রভাব শুধু ভারতেই নয় বরং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছে। এই পৃথিবীর অনেক দেশেই আমাদের শিখ ভাইবোনেরা আছেন যারা গুরু নানক দেবজীর আদর্শে তাদের জীবনকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পিত করেছেন। আমি ভ্যানকুভার ও তেহরানে আমার গুরুদুয়ারা যাত্রার কথা কখনো ভুলতে পারবো না। শ্রী গুরু নানক দেবজী-র বিষয়ে এমন অনেক কথা আছে যা আমি আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারি। কিন্তু এর জন্য মন কি বাত এর অনেক পর্ব লেগে যাবে। উনি সর্বদাই সেবামূলক কাজকে সবার উপরে স্থান দিয়েছেন। গুরু নানক দেবজী বিশ্বাস করতেন নিঃস্বার্থভাবে করা সেবামূলক কাজ অমূল্য। উনি অস্পৃশ্যতার মতো সামাজিক অভিশাপ এর বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সঙ্গে লড়াই করেছেন। শ্রী গুরু নানক দেব-জী, তাঁর বার্তা পৃথিবীর দূর-দূরান্তে পৌঁছে দিয়েছেন। উনি তাঁর সময়ের সবচেয়ে বেশি ভ্রমণকারীদের মধ্যে একজন ছিলেন । অনেক জায়গাতেই উনি গিয়েছিলেন আর যেখানেইগিয়েছেন নিজের সারল্য, নম্রতা, শুদ্ধত্মার মাধ্যমে সকলের হৃদয় জয় করেছেন। গুরু নানক দেবজী অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ ধার্মিকস্থানেযাত্রাকরেছেন। সেগুলি, ‘উদাসী’ নামে পরিচিত। সৎ চিন্তা ও সাম্যের ভাবনা নিয়ে তিনি উত্তর হোক বা দক্ষিণ, পূর্ব হোক বা পশ্চিম, সব দিকেই পাড়ি দিয়েছিলেন। সেখানকার সাধারণ মানুষ, ঋষি, সাধুদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। বলা হয় যে আসামের প্রখ্যাত সাধু, শংকরদেবও ওঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। উনি হরিদ্দারের পবিত্র মাটিতেও যাত্রা করেছিলেন। এরকম বলা হয় যে , কাশির এক পবিত্র স্থান, ‘গুরুপাক গুরুদুয়ারায় ‘ গুরু নানক দেবজী কিছুটাসময়কাটিয়েছিলেন।উনি বৌদ্ধ ধর্মের সাথে সম্পর্কিত, ‘রাজগীর’
এবং ‘গয়ার’ মত ধার্মিক স্থানেও গিয়েছিলেন। দক্ষিনে, গুরু নানক দেবজী শ্রীলংকা পর্যন্ত যাত্রা করেছিলেন। কর্নাটকের বিদার যাত্রার সময় গুরু নানক দেবজী, সেখানের জলের সমস্যার সমাধান করেছিলেন।বিদরে,গুরুনানকদেবজী-কেউৎসর্গিত, ‘গুরুনানক জীরা সাহেব’ নামক এক বিখ্যাত স্থান রয়েছে, যা আমাদের তাঁর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এক উদাসীর সময় গুরু নানকজী উত্তরে কাশ্মীর এবং তার আশেপাশের স্থানগুলিতেও যাত্রা করেছিলেন। এর ফলে, শিখ
ধর্ম অনুগামীদের এবং কাশ্মীরের মধ্যে এক দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপিত হয়। গুরুনানক দেবজী তিব্বতেও গিয়েছিলেন এবং সেখানেও ওঁকে ‘গুরু’ রূপে স্বীকারকরা হয়। উনি উজবেকিস্তানের যাত্রাও করেছিলেন এবং সেখানেও উনি পূজনীয়।আর এক উদাসীর সময়, উনি ব্যাপকভাবে ইসলামিক দেশগুলিতে যাত্রা করেছিলেন যারমধ্যে রয়েছে সৌদি আরব, ইরাক এবং আফগানিস্তান। উনি লক্ষ লক্ষ মানুষেরহৃদয়ে বসবাস করেন। সেই মানুষেরা, পূর্ণ শ্রদ্ধার সাথে, ওঁর উপদেশগুলিকেঅনুসরণ করেছিলেন এবং আজও করে চলেছেন। এই কিছুদিন আগেই 85 টি দেশেররাষ্ট্রদূত দিল্লি থেকে অমৃতসর গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁরা অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির দর্শন করেন। আর এই যাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল গুরু নানক দেবজী-র, ৫৫0 তম প্রকাশ পর্বের উদযাপনের উদ্দেশ্যে। সেখানে, সেই সকল রাজদূতেরা, গোল্ডেন টেম্পল দর্শনের সঙ্গে সঙ্গে, শিখ ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি সম্পর্কেওজানার সুযোগ পান। আগত রাষ্ট্রদূতেদের অনেকেই সেখানকার ছবি সোশ্যালমিডিয়াতে দিয়েছিলেন। নিজেদের সুন্দর, গৌরবময় অভিজ্ঞতার কথাওলিখেছিলেন। আমি আশা করি, গুরু নানক দেবজীর, ৫৫0 তম প্রকাশ পর্ব, আমাদেরওঁর বিচারধারা এবং আদর্শগুলি নিজেদের জীবনে অনুসরণ করার জন্য অনুপ্রাণিতকরবে। আমি আবারও নতমস্তকে গুরু নানক দেবজীর উদ্দেশ্যে প্রণাম জানাই।
আমার প্রিয় ভাইবোনেরা। আমার বিশ্বাস যে ৩১শে অক্টোবর দিনটিকেআপনাদের সবার অবশ্যই মনে আছে। এই দিনটি ভারতের লৌহ পুরুষ সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মজয়ন্তী। উনি ছিলেন এমন এক মহানায়ক, যিনি দেশকে একতারসূত্রে আবদ্ধ করেছিলেন। সর্দার প্যাটেলের যেমন মানুষকে একত্রিত করার একআশ্চর্য ক্ষমতা ছিল, ঠিক তেমনি যাঁদের সাথে মতাদর্শগত পার্থক্য দেখা দিত, তাঁদের সাথেও সমন্বয় স্থাপন করতে সক্ষম ছিলেন। সর্দার প্যাটেলক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়গুলিও, গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন এবং পরীক্ষাকরে দেখতেন। এই ব্যাপারে আক্ষরিক অর্থেই তিনি, ‘ম্যান অফ ডিটেইল’ ছিলেন ।এর পাশাপাশি তিনি সাংগঠনিক দক্ষতাতেও নিপুণ ছিলেন। পরিকল্পনা প্রণয়ন এবংরণকৌশল তৈরিতেও উনি বিশেষভাবে পারদর্শী ছিলেন। সর্দার সাহেবেরকর্মপদ্ধতির বিষয়ে যখন পড়া হয় বা শোনা হয় তখন জানতে পারা যায় যে ওঁরপ্ল্যানিং কত অসাধারণ হত। ১৯২১ সালে, কংগ্রেসের আমেদাবাদ অধিবেশনে যোগদিতে সারা দেশ থেকে হাজার হাজার প্রতিনিধি আগত হন। এই অধিবেশনেরব্যবস্থাপনার সমগ্র দায়িত্বভার ছিল সর্দার প্যাটেলের উপর। তিনি এইসুযোগটির সদ্ব্যবহার করেন, শহরের জল সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি সাধনে।তিনি সুনিশ্চিত করেন, কেউ যেন জল কষ্টে না ভোগেন। শুধু তাই নয়, তিনি এইবিষয়েও উদ্বিগ্ন ছিলেন যে, প্রতিনিধিদের জিনিসপত্র বা তাদের জুতো যেনঅধিবেশন স্থল থেকে চুরি না হয়। আর এই বিষয়টিকেমাথায় রেখে সর্দারপ্যাটেল যা করেছিলেন, তা জেনে আপনি খুব অবাক হয়ে যাবেন। উনি কৃষকদেরসাথে যোগাযোগ করেন এবং খাদির ব্যাগ তৈরির আহ্বান জানান।কৃষকরা সেই খাদির ব্যাগ তৈরি করেন এবং আমণ্ত্রিত প্রতিনিধিদের বিক্রি করেন ।এই ব্যাগে তাঁরা তাদের জুতো রেখে পরম নিশ্চিন্তে সভায় মন দিলেন ! আবার দেখুন , এরজন্যে খাদির বিক্রি ও অনেক বেড়ে গেলো। সংবিধান পরিষদে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করার জন্যে দেশ চিরকাল সর্দার প্যাটেলের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে। উনি আমাদের মৌলিক অধিকারকে সুনিশ্চিত করার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেন, যাতে আর জাতি অথবা সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে ভেদাভেদ করার সম্ভাবনাই না থাকে |
বন্ধুগণ, আমরা সকলেই জানি যে ভারতের প্রথম স্বরাস্ট্র মন্ত্রী হিসেবে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এই দেশের খন্ড খন্ড রাজ্য আর প্রান্তগুলিকে এক করার ঐতিহাসিক এবং মহৎ কাজটি করেছিলেন । সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের মধ্যে এক বৈশিষ্ট ছিল যে কোনো কিছুই তাঁর দৃষ্টি এড়িয়ে যেতনা, সব দিকেই তাঁর নজর ছিল । একদিকে যেমন তাঁর দৃষ্টি হায়দরাবাদ, জুনাগড় আর অন্য রাজ্যের ওপর কেন্দ্রীভূত ছিল। , তেমনই সুদূর দক্ষিণের লাক্ষাদ্বীপ ও তাঁর লক্ষ্য এড়িয়ে যায়নি | প্রকৃতপক্ষে, আমরা যখন সর্দার প্যাটেলের প্রয়াসের উল্লেখ করি তখন এই দেশের শুধুমাত্র কিছু বিশেষ প্রান্তে ওঁর ভূমিকার আলোচনা করি । লাক্ষাদ্বীপের মতো একটি ছোট প্রান্তের জন্যেও কিন্তূ উনি গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করেছিলেন । এই কথাটিকে হয়তো বা কেউ মনে রাখে ।আপনারা জানেন লাক্ষাদ্বীপ কয়েকটি দ্বীপের সমূহ । এই ভারতের অপূর্ব সুন্দর কয়েকটি জায়গার মধ্যে এটি একটি । ১৯৪৭ এ দেশভাগের পর , আমাদের প্রতিবেশীর নজর এই লাক্ষাদ্বীপের ওপর পড়লো এবং তাদের পতাকা বহনকারী একটি জাহাজকেও পাঠানো হয়েছিল । এই সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই , কালবিলম্ব না করে সর্দার প্যাটেল তৎক্ষণাৎ কড়া পদক্ষেপ নিয়ে নিলেন । উনি মুদালিয়ার ভ্রাতৃদ্বয় , আর্কট রামস্বামী মুদালিয়ার আর আর্কট লক্ষ্মনস্বামী মুদালিয়ার কে নির্দেশ পাঠালেন যে ট্রেভঙ্করের অধিবাসীদের সঙ্গে নিয়ে গিয়ে অবিলম্বে ওখানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন | লাক্ষাদ্বীপে যেন ভারতীয় তেরঙা প্রথমেই তোলা হয় । তাঁর নির্দেশ মতো তৎক্ষণাৎ তেরঙ্গা তোলা হয় আর লাক্ষাদ্বীপের ওপর প্রতিবেশীর কব্জা করার অভিসন্ধি পরাস্ত হয় । এই ঘটনার পর সর্দার প্যাটেল মুদালিয়ার ভ্রাতৃদ্বয় কে বলেন যে তাঁরা যেন ব্যক্তিগত ভাবে সুনিশ্চিত করেন যে লাক্ষাদ্বীপের উন্নয়নে যেন সবরকম সহায়তা পাওয়া যায় । আজ ভারতবর্ষের অগ্রগতিতে লাক্ষাদ্বীপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান করছে । এটি একটি আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য ও বটে । আমি আশা করবো আপনারা এই সুন্দর দ্বীপপুঞ্জ আর তাদের সমুদ্রসৈকত এ বেড়াতে যাবেন ।।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ৩১এ অক্টোবর ২০১৮ র দিনটি তে সর্দার সাহেবের স্মৃতিতে নির্মিত স্ট্যাচু অফ ইউনিটি সারা দেশ এবং বিশ্ব কে উৎসর্গ করা হয় । এইটি বিশ্বের দীর্ঘতম মানবমূর্তি । দৈর্ঘে এটি আমেরিকার স্ট্যাচু অফ লিবার্টির দ্বিগুন । বিশ্বের দীর্ঘতম মূর্তি প্রত্যেক ভারতীয়র বুক গর্বে ভরে দেয় (ভারতীয় হিসেবে বুক গর্বে ভরে ওঠে যখন ভাবি যে বিশ্বের দীর্ঘতম মূতিটি আমাদের দেশে প্রতিষ্ঠিত ) । আত্মাভিমানে প্রত্যেক ভারতীয়র মাথা উঁচু হয়ে যায় । আপনাদের জেনে আনন্দিত হবেন যে এক বছরেই স্ট্যাচু অফ ইউনিটি মূর্তিটি দেখতে ২৬ লক্ষ পর্যটক এসেছিলেন । অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে সাড়ে আট হাজার মানুষ এই স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’র গৌরব চাক্ষুষ করেছে । সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্যে তাদের হৃদয়ে যে আস্থা , যে শ্রদ্ধা রয়েছে এইটাই তো অভিব্যক্ত হয়েছে । এখন তো ঐখানে ক্যাকটাসের বাগান , প্রজাপতি উদ্যান, জাঙ্গল সাফারি , শিশু পুষ্টি পার্ক, একতা নার্সরীর মতন নানান আকর্ষণকেন্দ্র ক্রমাগত বিকশিত হচ্ছে আর এইজন্যে স্থানীয় অর্থব্যবস্থার ও উন্নতি হচ্ছে, লোকেরাও নানা নতুন ধরনের কর্মসংস্থানের সুযোগ ও পাচ্ছে । হোমস্টে বা বাড়িতে অতিথি আপ্যায়নের সুযোগ সুবিধার পেশাদারি প্রশিক্ষণ ও দেওয়া হচ্ছে । স্থানীয় মানুষ তো এখন ড্রাগন ফ্রুটের চাষবাস ও শুরু করে দিয়েছেন আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে এটি ওদের জীবিকা অর্জনের মুখ্য উপায় হয়ে উঠবে ।বন্ধুগণ , দেশের জন্যে , প্রত্যেকটি রাজ্যের জন্যে, পর্যটন শিল্পের জন্যে এই স্ট্যাচু অফ ইউনিটি, একটি অধ্যয়নের বিষয় হতে পারে । আমরা তো সাক্ষী কিভাবে একটি স্থান একটি বছরের মধ্যেই একটি বিশ্ব প্রসিদ্ধ পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে , যেখানে দেশের – বিদেশের লোক আসছে । পরিবহন ব্যবস্থা, থাকবার জায়গা , গাইড-দের উপস্থিতি , পরিবেশ বান্ধব ব্যবস্থা – একের পর এক প্রত্যেকটি উন্নত হয়ে চলেছে । খুব বড় ধরণের অর্থনৈতিক উন্নতি শুরু হয়েছে এবং পর্যটকদের প্রয়োজন মতো , স্থানীয় মানুষ পরিষেবা উদ্ভাবন করছেন । সরকার ও নিজের দায়িত্ত্ব পালন করছে । বন্ধুরা , এমন কোনো ভারতীয় আছে কি যার এইটা জেনে গর্ব হবেনা যে কয়েকদিন আগেই টাইম পত্রিকা বিশ্বের একশোটি শ্রেষ্ঠ পর্যটনস্থলের মধ্যে এই স্ট্যাচু অফ ইউনিটি কে উচ্চ আসনে বসিয়েছে | আমার আশা আপনারা সবাই আপনাদের মূল্যবান সময় থেকে কিছুটা অবকাশ বের করে এই স্ট্যাচু অফ ইউনিটি তো দেখতে যাবেনই , উপরন্তু আমার একান্ত ইচ্ছে যে প্রত্যেক ভারতীয় যিনি ভ্রমণের জন্যে বেরিয়ে পড়েন , তিনি সপরিবারে দেশের অন্ততঃ পনেরোটি গন্তব্যস্থলে বেড়াতে যান এবং সেখানে রাত্রিবাস করেন ।
বন্ধুরা, আপনারা জানেন যে, ২০১৪ থেকে প্রত্যেক বছর ৩১ শে অক্টোবর দিনটি রাষ্ট্রীয় একতা দিবস হিসাবে উদযাপিত হচ্ছে। এই দিনটি আমাদের দেশের ঐক্য, অখণ্ডতা এবং সুরক্ষা কে যেকোন মুল্যে বজায় রাখার বার্তা দেয়। এবারও এদিন ‘রান ফর ইউনিটি’- র আয়োজন করা হচ্ছে।এতে সমাজের সব শ্রেণীর মানুষ সামিল হবেন।আমাদের দেশের একতার প্রতীক ‘রান ফর ইউনিটি’। গোটা ভারত বর্ষ এক পথে একই লক্ষ্যের দিকে চলেছে।সেই লক্ষ্যটি হলো ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’।
গতপাঁচ বছরে দেখা গেছে যে, শুধুমাত্র দিল্লীই নয়, ভারতের প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল , প্রতিটি রাজধানী শহরে, জেলায় ছোট ছোট দ্বিতীয় ও তৃতীয়শ্রেণীশহরের প্রচুর মানুষ – পুরুষ ,মহিলা, শিশু ও দিব্যাঙ্গজন এই দৌড়ে সামিল হয়েছেন।আজকাল ম্যারাথন -র প্রতি মানুষের এক নতুন আগ্রহ দেখা দিয়েছে ‘রান ফর ইউনিটি’-ও এমনই একটি উপলক্ষ্য।দৌড়ানো, মন এবং শরীর দুয়ের পক্ষেই লাভজনক। ‘রান ফর ইউনিটি’- একইসঙ্গে ‘ফীট ইন্ডিয়া’ এবং ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’ – এই দুটি আদর্শকেই একসঙ্গে সফল করতে সাহায্য করে ।পাশাপাশি, ভারতের ঐক্য এবং অগ্রগতিরআদর্শ-ও মনের মধ্যে গঠিত হয় ।তাই আপনারা যে শহরের-ই বাসিন্দা হ’ন না কেন , নিজেদের কাছাকাছি অঞ্চলে ‘রান ফর ইউনিটি’-র সম্বন্ধে খোঁজখবর নিন।এর জন্য একটি পোর্টাল চালু করা হয়েছে।এই পোর্টাল টি হল ‘runforunity.gov.in ।এখানে, দেশের যে সমস্ত স্থানে ‘রান ফর ইউনিটি’ আয়োজন করা হচ্ছে সে ব্যাপারে জানা যাবে। আমি আশা রাখি যে, আপনারা সকলে 31 শে অক্টোবর দৌড়ে অংশগ্রহণ করবেন – দেশের একতা এবং নিজেদের শরীর সুস্থ রাখার উদ্দেশ্যে ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, সর্দার প্যাটেল দেশকে ঐক্যের সূত্রে বেঁধেছিলেন।ঐক্যের এই মন্ত্র আমাদের জীবনের সংস্কার- স্বরূপ।ভারতবর্ষের মতো বৈচিত্রপূর্ণ দেশে প্রত্যেক স্তরে, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে, ঐক্যের মন্ত্রকে দৃঢ় করার চেষ্টা করা উচিত।আমার প্রিয় দেশবাসী, দেশের ঐক্য ও সেই সংক্রান্ত চিন্তাকে শক্তিশালী করার জন্য আমাদের সমাজ সবসময়ই খুব সক্রিয় এবং সতর্ক থেকেছে।আমাদের চারপাশে এমন বহু উদাহরণ পাওয়া যাবে যারা এই উদ্দেশ্যে কাজ করে চলেছেন ।তবে অনেক সময় তাদের কথা আমাদের স্মৃতি থেকে খুব তাড়াতাড়ি মিলিয়ে যায়।
বন্ধুরা, আমার মনে পড়ছে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের কথা, যখন এলাহাবাদ হাইকোর্ট রাম জন্মভূমি সংক্রান্ত রায় দিয়েছিল।একটু মনে করে দেখুন ওই সময়ের পরিস্থিতি।জাতিতে জাতিতে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য বহু মানুষ মাঠে নেমে পড়েছিলেন ।বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য বিভিন্ন কৌশল করছিল ।পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার জন্য উস্কানিমূলক ভাষা বলা হচ্ছিল।কিন্তু, এসবের পরে, যখন হাইকোর্টের রায় এলো, তখন সারাদেশে এক আশ্চর্য এবং আনন্দজনক পরিবর্তন দেখা গেল।তার আগের দু-সপ্তাহে পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিল।কিন্তু, হাইকোর্টের রায়ের পরে তৎকালীন সরকার, রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, সিভিল সোসাইটি – সকলেই নিজেদের বয়ানে সংযম ও নিয়ন্ত্রন রক্ষা করেছিলেন, যাতে দেশের পরিস্থিতিতে হিংসা ও উত্তাপ কমানো যায়।আজও এ কথা মনে পড়লেআমার মন খুশিতে ভরে যায়।বিচার ব্যবস্থাকে অত্যন্ত গৌরব ও সম্মান দেওয়া হয়েছিল।কোথাও উত্তাপও হিংসা ছড়াতে দেওয়া হয়নি।একথা আমাদের সবসময় মনে রাখা উচিত। এ আমাদের এক বড় শক্তি।ঐক্যের স্বর দেশকে কতখানি শক্তি দিতে পারে তারই এক উদাহরণ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ৩১ অক্টোবর, আমাদের দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা দেবীকেও এই দিনেই হত্যা করা হয়।দেশে এক গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে।আমি আজ ওঁকেও আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করছি। আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ যদি প্রত্যেক বাড়িতে, প্রত্যেক গ্রামে একটি গাথা ধ্বনিত হয়, পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ, ভারতবর্ষের প্রত্যেক প্রান্তে যদি একটি কাহিনী মুখরিত হয়, তবে তা হল স্বচ্ছতার।প্রত্যেক ব্যক্তিকে, প্রত্যেক পরিবারকে, প্রত্যেক গ্রামকে স্বচ্ছতা সম্পর্কে আমার আনন্দময় অভিজ্ঞতার কথা বলতে ইচ্ছে করছে, কারণ স্বচ্ছতার এই প্রচেষ্টা সওয়া’শো কোটি ভারতীয়র মিলিত প্রচেষ্টা।তাই এর সুফলের অধিকারীও সওয়া’শো কোটি ভারতীয়ই।কিন্তু একটি আনন্দদায়ক এবং রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতাও আছে।আমি শুনেছি এবং আপনাদেরও শোনাতে চাই।আপনারা কল্পনা করুন, পৃথিবীর উচ্চতম যুদ্ধক্ষেত্র, যেখানে তাপমাত্রা ৫০, ৬০ ডিগ্রী মাইনাসে চলে যায়, ওখানে অক্সিজেনের পরিমানওনামমাত্র।এত কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে, এত প্রতিকূলতার মধ্যে থাকাও কম বীরত্বের ব্যাপার নয়।এরকম ভয়ানক অবস্থার মধ্যে আমাদের নির্ভীক জওয়ানরা যে কেবল বীর-বিক্রমে দেশের সীমা সুরক্ষিত রাখছেন তাই নয়, তাঁরা ওখানেস্বচ্ছ সিয়াচেন অভিযানও চালাচ্ছেন।আমি আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই অসামান্য দায়বদ্ধতা কে দেশবাসীর তরফ থেকে আমি সম্মান জানাচ্ছি।কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।ওখানে এত ঠাণ্ডা যে কোনও কিছুই গলতেচায় না।এরকম পরিস্থিতিতে আবর্জনা আলাদা করা, তার ব্যবস্থাপনা করাই একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।এরকম অবস্থায় হিমবাহ এবং চারপাশ থেকে ১৩০ টন এবং তার থেকেও বেশী আবর্জনা পরিষ্কার করা ওই এলাকার ভঙ্গুর পরিবেশ ব্যবস্থার- মাঝে! কি বিশাল সেবা এটা! এটি একটি এমন পরিবেশ ব্যবস্থা যেখানে তুষার চিতার মত দুর্লভ প্রজাতির বাস।এখানে ইবেক্স এবং বাদামী ভল্লুকের মত দুর্লভ প্রাণীও থাকে।আমরা সবাই জানি যে সিয়াচেন এমন একটিহিমবাহ যা নদী ও শুদ্ধ জলের উৎস।এরকম একটি জায়গায় স্বচ্ছ ভারত অভিযান চালানো মানে যারা নীচু এলাকায় থাকে তাদের জন্য শুদ্ধ জলের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা।এর সঙ্গে নুব্রা ও শিওক-এর মত নদীর জল ব্যবহার করেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, উৎসব এমন একটি পর্ব যা আমাদের সবার জীবনে একটি নতুন চেতনা জাগায়।আর দীপাবলিতে তো বিশেষ করে কিছু-না-কিছু নতুন কেনা, বাজার থেকে কিছু আনা কম-বেশি সব পরিবারেই হয়।আমি একবারবলেছিলাম যে আমরা চেষ্টা করি স্থানীয় জিনিসপত্র কিনি।যদি আমাদের প্রয়োজনের জিনিসপত্রগুলি যদি আমরা নিজেদের গ্রামেই পাই তাহলে তহসিলে যাওয়ার দরকার নেই।তহসিলে যদি পাই তাহলে জেলায় যাওয়ার প্রয়োজন নেই।যত বেশি আমরা লোকাল জিনিস কেনার প্রচেষ্টা করি, ততই বেশি গান্ধী ১৫০ আপনা-আপনি এক মহৎ উৎসবে পরিনত হবে।আর আমি তো সবসময়ই এই অনুরোধ করি যে আমাদের তাঁতির হাতে বোনা, আমাদের খাদি কর্মীদের হাতে তৈরি কিছু-না-কিছু তো আমাদের কেনা উচিৎ।এই দীপাবলিতেও, দীপাবলির আগেই অনেকে অনেক কিছু কিনে ফেলেছেন, কিন্তু এরকমও অনেকে আছেন যারা মনে করেন যে দীপাবলির পরে গেলে হয়ত জিনিসপত্র কিছুটা সস্তায় পাওয়া যাবে।তাই এরকম অনেক মানুষ থাকবেন যাঁদের কেনাকাটা এখনো বাকি।তাই দীপাবলির শুভেচ্ছা জানানোর সঙ্গে-সঙ্গে আমি আপনাদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি যে আসুন আমরা স্থানীয় কেনায় ইচ্ছুক হই, স্থানীয় জিনিস কিনি।দেখুন, মহাত্মা গান্ধীর স্বপ্ন সফল করতে আমরাও কি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারি।আমি আরেকবার দীপাবলির এই পুণ্যতিথির অনেক শুভকামনা আপনাদের সবাইকে জানাচ্ছি।দীপাবলি তে সবার মত আমরা বাজীর ব্যবহার করি।কিন্তু অনেক সময় অসাবধানতাবসত আগুন লেগে যায়।কখনও আহত হয়ে যায়।আমার আপনাদের সবার কাছে এই অনুরোধ যে আপনারা সাবধানে থাকুন এবং উৎসব প্রচুর উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করুন।আমার অনেক-অনেক শুভকামনা রইল।অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমারপ্রিয়দেশবাসী, নমস্কার! বন্ধুরা, আজকের ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আমি দেশের এমন একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের কথা বলব, সমগ্র দেশবাসীর হৃদয়ে যাঁর জন্য শ্রদ্ধা ও সম্মানের আসন পাতা। সারা ভারতে বোধহয় এমন একজনকেও পাওয়া যাবে না, যিনি তাঁকে সশ্রদ্ধ স্মরণ করেন না বা সম্মান জানান না। তিনি আমাদের সবার বয়োজ্যেষ্ঠা এবং দেশের বিভিন্ন ঘটনাবলীর সাক্ষী। আমরা তাঁকে ‘দিদি’ বলে সম্বোধন করি — ‘লতা দিদি’। এই ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি নব্বই বছর পূর্ণ করলেন। বিদেশ যাত্রার প্রাক্কালে দিদির সঙ্গে আমার ফোনে কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছিল। এই কথোপকথন ঠিক তেমনই ছিল যেমনভাবে একজন ছোট ভাই অত্যন্ত আদরের সঙ্গে নিজের বড় বোনের সঙ্গে কথা বলেন। আমি সাধারণতঃ এই ধরনের ব্যক্তিগত কথাবার্তার কথা কখনও বলি না, কিন্তু আজ আমি চাই যে আপনারাও লতাদিদির কথা শুনুন, সেই বার্তালাপ শুনুন। শুনুন কীভাবে বয়সের এই পর্যায়েও লতাদিদি দেশের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত বিষয় সম্বন্ধে উৎসুক, সজাগ এবং জীবনের সন্তুষ্টিও কীভাবে ভারতের অগ্রগতির সঙ্গে, পরিবর্তনশীল ভারত এবং নতুন নতুন উচ্চতর সীমা স্পর্শকারী ভারতের সঙ্গে জড়িত।
মোদীজী : লতাদিদি, প্রণাম। আমি নরেন্দ্র মোদী কথা বলছি।
লতাজী : প্রণাম।
মোদীজী : আমি এই জন্য ফোন করেছিলাম কারণ এবার আপনার জন্মদিনে —
(লতাজী — হ্যাঁ হ্যাঁ)
মোদীজী : — আমি আকাশপথে যাত্রায় ব্যস্ত থাকব।
(লতাজী — আচ্ছা)
মোদীজী : তাই আমার মনে হল যাবার আগেই…
(লতাজী — হ্যাঁ হ্যাঁ)
মোদীজী : আপনাকে শুভ জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা অগ্রিম জানিয়ে রাখি। আপনি সুস্থ থাকুন, আপনার আশীর্বাদ আমাদের সকলের ওপর বর্ষিত হোক, ব্যাস্ এই প্রার্থনাটুকু জানাতে ও আপনাকে প্রণাম জানাতেই আমি আমেরিকা যাত্রার আগে আপনাকে ফোন করছি।
লতাজী : আপনার ফোন আসবে, এটা শুনেই আমি অত্যন্ত আপ্লুত হয়েছিলাম। আপনি গিয়ে কবে ফেরৎ আসবেন?
মোদীজী : আমি ফিরব ২৮ তারিখ অনেক রাতে, আর ২৯-এর সকাল হলেও তো আপনার জন্মদিন পার হয়ে যাবে।
লতাজী: আচ্ছা, আচ্ছা। জন্মদিন আর কি পালন করব… এই পরিবারের সবার মধ্যেই থাকি…
(মোদীজী — দিদি দেখুন, আমার তো…)
লতাজী : আপনার আশীর্বাদ থাকলেই…
মোদীজী : …আরে — আমরা তো আপনার আশীর্বাদ চাই, আপনি আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠা….
লতাজী : বয়সে তো অনেকেই বড় হন, কিন্তু নিজের কাজ দিয়ে যিনি বড় হন তাঁর আশীর্বাদ পাওয়াটাই খুব বড় পাওয়া।
মোদীজী : দিদি, আপনি বয়সেও বড় এবং নিজের কাজের মধ্য দিয়েও বড়। আপনি যে সিদ্ধিলাভ করেছেন তা সাধনা ও তপস্যার মাধ্যেমেই সম্ভব।
লতাজী : হ্যাঁ, কিন্তু আমি মনে করি, এসবই আমার মা-বাবার আশীর্বাদ এবং সকল শ্রোতাবন্ধুদের আশীর্বাদ। আমি নিজে কিছু নই।
মোদীজী : আপনার এই নম্রতাই আমাদের নতুন প্রজন্মের প্রত্যেকের কাছে সবচেয়ে বড় শিক্ষিনীয় বিষয়। আমাদের কাছে এক খুব বড় প্রেরণাস্রোত, এক দৃষ্টান্তস্বরূপ যে জীবনে সবকিছু প্রাপ্তির পরেও আপনি আপনার মাতা-পিতার সংস্কার এবং নম্রতাকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার প্রদান করেছেন।
লতাজী : হ্যাঁ…
মোদীজী : …আমি আরও খুশী হই যখন আপনি গর্ব করে বলেন যে আপনার মা ‘গুজরাটি’ ছিলেন…
(লতাজী — হ্যাঁ, ঠিকই।)
মোদীজী : …আমি যখনই আপনার কাছে গেছি…
(লতাজী — হ্যাঁ)
মোদীজী : আপনি আমাকে কোনো না কোনো গুজরাটি খাবার খাইয়েছেন।
লতাজী : ঠিক – ঠিক। আপনি কি, আপনি নিজেও সেটা জানেন না। আমি জানি যে আপনি আসার পর ভারতের ছবি কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে আর সেখানেই আমি সবচেয়ে আনন্দিত বোধ করি, খুব ভালো লাগে।
মোদীজী : ব্যাস্ দিদি, আপনার আশীস মাথায় থাক। সমগ্র দেশের ওপর আপনার আশীর্বাদের হাত থাক। আমার মত লোকেরা সবসময়েই কোনো না কোনো ভালো কাজে নিয়োজিত থাকুক, এই প্রেরণা আপনি সবসময় দিয়েছেন। আপনার পত্র আমি নিয়মিত পাই, আপনার পাঠানো কিছু না কিছু উপহারও নিয়মিত আসে আমার কাছে, আর এই যে অন্তরঙ্গতা, যা আসলে এক পারিবারিক সম্পর্ক, তা আমাকে বিশেষ ভাবে আনন্দ দেয়।
লতাজী : ঠিক, ঠিক। না, আমি আপনাকে আর বেশি কষ্ট দিতে চাই না। কারণ আমি দেখতে পাচ্ছি এবং জানিও আপনি কতটা কর্মব্যস্ত এবং আপনার কী পরিমাণ কাজ থাকে। কত কী চিন্তা-ভাবনা করতে হয়। যখন আপনি আপনার মায়ের পদধূলি নিয়ে এসেছিলেন, তা দেখে আমিও একজনকে পাঠিয়েছিলাম ওঁর কাছে, তাঁর আশীর্বাদ নিতে।
মোদীজী : হ্যাঁ, আমার মার সে সব ঘটনা মনে ছিল এবং আমাকেও উনি বলেছিলেন।
(লতাজী — ঠিক)
(মোদীজী — হ্যাঁ)
লতাজী : আর টেলিফোনের মাধ্যমে উনি আমাকে যখন আশীর্বাদ জানিয়েছিলেন, আমার খুব ভালো লেগেছিল।
মোদীজী : আমার মাও খুব খুশী হয়েছিলেন আপনার এই ভালোবাসা প্রত্যক্ষ করে।
(লতাজী — ঠিক ঠিক)
মোদীজী : …আর আমি আপনার কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ এই কারণে, যে আপনি সবসময় আমার ভালোর জন্য চিন্তা করেন। আরও একবার আপনার জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
(লতাজী — হ্যাঁ)
মোদীজী : এইবার মুম্বই গিয়ে মনে হচ্ছিল সামনাসামনি সাক্ষাৎ করে আসি…
লতাজী : হ্যাঁ, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।
মোদীজী : … কিন্তু এত বেশী ব্যস্ততা ছিল যে আমি সময় করে উঠতে পারিনি।
(লতাজী — হ্যাঁ)
মোদীজী : কিন্তু খুব তাড়াতাড়িই আমি আসব।
লতাজি: আচ্ছা
মোদি জি: ঘরে এসে আপনার নিজেরহাতেবানানো কিছু গুজরাটি খাবার খাব।
লতাজি: হ্যাঁ, হ্যাঁ, অতি অবশ্যই! সে তো আমার সৌভাগ্য হবে।
মোদি জি: প্রণাম দিদি। আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা!
লতাজি: আপনাকেও অনেক অনেক প্রণাম।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নবরাত্রির সঙ্গে সঙ্গে আজ থেকে উৎসবের আবহ আরও একবার নতুন উৎসাহ উদ্দীপনা এবং সংকল্পে ভরে উঠবে। উৎসবের মরসুম বলে কথা!আগামী বেশ কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত দেশ জুড়ে এই উৎসব উদ্যাপনের খুশি ও ঔজ্জ্বল্য বজায় থাকবে। আমরা সবাই নবরাত্রি মহোৎসব, গরবা, দুর্গাপূজা,দশেরা, দীপাবলী, ভাইফোঁটা, ছট পূজা ইত্যাদি অসংখ্য উৎসব পালন করব। আপনাদের সবাইকে আগামী উৎসবের দিনগুলির জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা। উৎসবে পরিবারের সকলে একসঙ্গে কাটাবেন। ঘর খুশিতে ভরে উঠবে। কিন্তু আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন আমাদের চারপাশে এমন বহু মানুষ আছেন যাঁরা উৎসবের এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত। আর একেই বলে “প্রদীপের তলায় অন্ধকার”। হয়ত এই প্রবাদ শুধু কথার কথা নয়, এটি আমাদের জন্য একটি নির্দেশ, একটি দর্শন, একটি প্রেরণা। ভাবুন তো, একদিকে কিছু ঘর আলোয় আলোকময় হয়ে থাকে; অন্যদিকে তারই সামনে, আশেপাশে কিছু মানুষের ঘরে অন্ধকার বিরাজ করে। কিছু ঘরে মিষ্টি নষ্ট হয়ে যায়, আবার কিছু ঘরে বাচ্চারা মিষ্টির জন্য আকুল হয়ে থাকে। কোথাও আলমারিতে পোষাক রাখার জায়গা থাকে না, কোথাও আবার লজ্জা নিবারণের জন্যই কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। কি? একে আপনি “প্রদীপের তলায় অন্ধকার” বলবেন না? এটাই তো “প্রদীপের তলায় অন্ধকার”! উৎসবে প্রকৃত আনন্দ তখনই আসবে যখন এই অন্ধকার দূর হয়ে আলো দেখা যাবে। আসুন, আমরা সেখানেও খুশি ছড়িয়ে দিই যেখানে অভাব আছে। আর এটা আমাদের স্বভাবও হোক। আমাদের ঘরে মিষ্টি, পোশাক, উপহারের যখন ‘ডেলিভারি–ইন’ হয়, তখন এক মুহূর্তের জন্য ‘ডেলিভারি আউট’-এর কথাও না হয় একটু ভাবি! অন্ততপক্ষে বাড়ির অতিরিক্ত বা অব্যবহৃত জিনিসকে ‘ডেলিভারি-আউট’ করা যেতেই পারে। অনেক শহরে বেশ কিছু এনজিও–র তরুণ বন্ধুদের স্টার্টআপগুলি এই কাজ করছে। তারা লোকেদের ঘর থেকে পোশাক, মিষ্টি, খাবার সবকিছু একত্রিত করেন, তারপর দুঃস্থ-অভাবীদের খুঁজে বার করে জিনিসগুলি নীরবে তাদের কাছে পৌঁছে দেন। এবার উৎসবের এই মরসুমে সম্পূর্ণ সচেতনতা এবং সংকল্পের সঙ্গে প্রদীপের তলার সেই অন্ধকার আমরা কি ঘুচাতে পারি?উৎসবের সময় দরিদ্র পরিবারগুলির মুখে ফোটা হাসি আপনার খুশিকে দ্বিগুণ করে দেবে। আপনার মুখ আরো ঝলমল করবে। আপনার প্রদীপ আরও দেদীপ্যমান হবে। আপনার দীপাবলি আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, দীপাবলিতে সৌভাগ্য আর সমৃদ্ধির রূপ ধরে প্রতিটি ঘরে লক্ষ্মীর আগমন হয়। চিরাচরিত প্রথায় লক্ষ্মীকে স্বাগত জানানো হয়। এবছর আমরা কি একটু নতুন ভাবেলক্ষ্মীর অভ্যর্থনাকরতে পারি? আমাদের সংস্কৃতিতে মেয়েদের লক্ষ্মী বলে গণ্য করা হয়, কারণ মেয়েরা সৌভাগ্য আর সমৃদ্ধি নিয়ে আসে। এবছর আমরা নিজেদের সমাজে, গ্রামে, শহরে কি মেয়েদের সম্মান জানানোর সার্বজনীন কর্মসূচি রাখতে পারি? আমাদের মধ্যে এমন বহু মেয়ে আছে যারা নিজেদের পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং প্রতিভার সাহায্যে পরিবার, সমাজ এবং দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে। এই দীপাবলীতে ভারতের এইসব লক্ষ্মীদের সম্মান জানানোর কর্মসূচি কিআমরা রাখতে পারি? আমাদের চারপাশে অনেক কন্যা, অনেক বধূ এমন আছেন, যাঁরা অসাধারণ কাজ করছেন। কেউ গরীব বাচ্চাদের পড়ানোর কাজ করছেন, কেউ স্বচ্ছতা ও স্বাস্থ্য সম্বন্ধে সচেতনতা তৈরি করছেন, কেউ ডাক্তার–ইঞ্জিনিয়ার হয়ে সমাজের সেবা করছেন, আবারকেউ উকিল হয়ে কাউকে ন্যায়বিচারপাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। আমাদের সমাজ এই মেয়েদের স্বীকৃতি ও সম্মান দিকএবং তাদের নিয়ে গর্ব করুক। এদের সম্মান জানানোর কর্মসূচি দেশজুড়ে হোক। আরও একটা কাজ করতে পারেন, এই মেয়েদের কৃতিত্বের বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে যত বেশি সম্ভব শেয়ার করুন আর ‘হ্যাশট্যাগbharatkilaxmi’ ব্যবহার করুন। যেমন আমরা সবাই মিলে ‘সেলফি উইথ ডটার’ নামে এক বিরাট অভিযান চালিয়েছিলাম, যা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল। অনুরূপভাবে এবার এই ‘Bharat Ki Laxmi’অভিযান আমাদের চালাতে হবে। ভারতের লক্ষ্মীরা অনুপ্রাণিত হওয়ার অর্থ দেশ ও দেশবাসীর সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত হওয়া।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আমি আগেও বলেছি, এর একটা মস্ত লাভ হল যে পরিচিত-অপরিচিত বহু মানুষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কথা বলার সৌভাগ্য আমার হয়। কয়েকদিন আগে সুদূর অরুণাচল প্রদেশ থেকে এক বিদ্যার্থী অলীনা তায়ং আমাকে খুব আকর্ষণীয় একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। সেই চিঠিতে কি লেখা আছে তা আমি আপনাদের সামনে পেশ করছি—
শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রীজী, আমার নাম অলীনা তায়ং। আমি রোইং, অরুণাচল প্রদেশেথাকি। এবার যখন আমার পরীক্ষার ফল বেরোলো তখন কেউ কেউ আমাকে জিজ্ঞাসা করল, তুমি ‘একজাম ওয়ারিয়রস’ বইটি পড়েছ? আমি বললাম,“না, এই বইটি তো আমি পড়িনি!” কিন্তু ফিরে গিয়ে আমি এই বইটি কিনি এবং দু-তিনবার পড়ে নিই। পড়ে আমার খুবই ভালো লাগে, আমার মনে হল বইটি পরীক্ষার আগে পড়লে আমার অনেক উপকার হত। এই বইটির অনেক বিষয় আমার খুব ভালো লেগেছে, তবে আমি এটাও লক্ষ্য করলাম যে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য তো এই বইটিতে অনেক পরামর্শ আছে, কিন্তু অভিভাবক আর শিক্ষকদের জন্য এই বইটিতে তেমন কিছু নেই। আমি চাই যদি আপনি বইটির নতুন সংস্করণের বিষয়ে কিছু ভাবেন, তাহলে তাতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের জন্য কিছু পরামর্শ ও কিছু বিষয় অবশ্যই রাখবেন।
তাহলে দেখুন, আমার তরুণ বন্ধুদেরও এই ভরসা আছে যে দেশের প্রধান সেবককে কোনও কাজের কথা বললে তা হবেই হবে। আমার ছোট্ট বিদ্যার্থী বন্ধু, প্রথমেই চিঠি লেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। ‘একজাম ওয়ারিয়রস’ দু–তিনবার পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আর পড়ার সময় তাতে কি খামতি আছে, সেটাও আমাকে বলার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। তার সঙ্গে আমার এই ছোট্ট বন্ধু আমাকে একটা কাজও দিয়েছে। কিছু করার আদেশ দিয়েছে। আমি অবশ্যই আপনার আদেশ পালন করব। যদি আমি নতুন সংস্করণের জন্য সময় বার করতে পারি, তাহলে আপনার কথা মত অবশ্যই তাতে অভিভাবক এবং শিক্ষকদের জন্য কিছু কথা লেখার চেষ্টা করব। কিন্তু আমি আপনাদের সবার কাছে একটা আবেদন রাখবো। আপনারা কি আমাকে সাহায্য করতে পারেন? প্রতিদিনের জীবনে আপনাদের অভিজ্ঞতা কি? দেশের সব ছাত্র-ছাত্রীদের, শিক্ষকদের, অভিভাবকদের প্রতি আমার অনুরোধ —আপনারা ‘স্ট্রেস ফ্রি একজাম’ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আপনাদের অভিজ্ঞতা আমাকে জানান, আপনাদের পরামর্শ দিন। আমি অবশ্যই সেগুলি বিবেচনা করে দেখব। তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করব এবং সেগুলির মধ্যে যে কটি আমার উপযুক্ত মনে হবে তা আমি নিজের ভাষায়, নিজের পদ্ধতিতে অবশ্যই লেখার চেষ্টা করব। এও হতে পারে, যদি আপনাদের পরামর্শ যথেষ্ট সংখ্যায় আসে, তাহলে আমার নতুন সংস্করণের বিষয়টাও নিশ্চিত হয়ে যাবে।তাই আমি অপেক্ষা করব আপনাদের মতামতের জন্য। আমাদের ছোট্ট বিদ্যার্থী বন্ধু অরুণাচলেরঅলীনা তায়ং–কে আবারও ধন্যবাদ জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনারা খবরের কাগজের মাধ্যমে, টিভির মাধ্যমে দেশের প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ত কর্মসূচির বিষয়ে জানেন, ব্যস্ততা নিয়ে চর্চাও করেন। কিন্তু আপনারা তো জানেন যে আমিও আপনাদের মতই একজন সাধারণ মানুষ। আর সাধারণ মানুষ বলেই একটি সাধারণ জীবনে যে যে বিষয়ের প্রভাব থাকে তেমন প্রভাব আমার জীবনে, আমার মনেও হয়। কারণ আমিও তো আপনাদেরই একজন! দেখুন, এবছর ইউএস ওপেনে ট্রফি জেতা নিয়ে যতটা চর্চা হয়েছে ততটাই চর্চা হয়েছে রানার আপ দানিল মেদভেদেভ–এর বক্তৃতা নিয়েও। সোশ্যাল মিডিয়াতে সেটি যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে। আমিও সেই বক্তৃতাটি শুনেছি এবং ম্যাচও দেখেছি। ২৩বছর বয়সী দানিল মেদভেদেভ–এর সারল্য এবং পরিণত বোধ প্রত্যেককেই প্রভাবিত করার মত।আমি তো অবশ্যই প্রভাবিত হয়েছি। সেই বক্তৃতার অল্প কিছুক্ষণ আগেই তিনি ১৯ বার গ্র্যান্ডস্ল্যাম বিজয়ী এবং টেনিসের লেজেন্ড রাফায়েল নাদালের কাছে ফাইনালে পরাস্ত হয়েছিলেন। সেই পরিস্থিতিতে অন্য কেউ হলে দুঃখিত ও হতাশ হয়ে পড়তেন। কিন্তু ওঁর ক্ষেত্রে সেরকম কিছু তো হয়ইনি, উলটে ওঁর কথায় সকলের মুখে হাসি ফুটেছে। ওঁর সরল, বিনম্র ব্যবহার আক্ষরিক অর্থে স্পোর্টসম্যান স্পিরিট-এরনিদর্শন। উপস্থিত দর্শকও তাঁর বক্তব্যের সাদর সমাদর করেন।দানিলচ্যাম্পিয়ান নাদালের প্রভূত প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, নাদাল লক্ষ যুবকের কাছে অনুপ্রেরণা। উনি আরও বলেন যেনাদালের মোকাবিলা করা এক দুরূহ বিষয়। কড়া মোকাবিলার পর ফাইনালে হেরে গিয়েও নিজের প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রশংসা করে তিনি স্পোর্টসম্যান স্পিরিট–এর এক জাজ্বল্যমান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। অন্যদিকে চ্যাম্পিয়ান নাদালও দানিল-এর খেলার প্রশংসা করেন।একই ম্যাচে পরাজিত খেলোয়াড়ের মনোবল ও জয়ী খেলোয়াড়ের বিনম্র ব্যবহার দুটোই শিক্ষণীয়। যদি আপনারা দানিল মেদভেদেভ-এর speech না শুনে থাকেন, তবে আমি সকলকে, বিশেষ করে যুবকদের অনুরোধকরব সেই ভিডিওটি অবশ্যই দেখতে।এতে সব বয়সের, সব অবস্থার মানুষের জন্য অনেককিছু শেখার আছে।এমনকিছু মুহূর্ত থাকে যা হার–জিতের ঊর্ধ্বে। এইসব মুহূর্ত আমাদের শেখায় হার–জিতের আসলে কোনো মানে নেই। আসলে জেতে একমাত্র জীবন। এই বিষয়টাকে আমাদের শাস্ত্রে খুব সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করা আছে, যার থেকে আমরা এও বুঝতে পারি আমাদের পূর্ব পুরুষদের চিন্তাধারা কতখানি অগ্রসর ছিল। আমাদের শাস্ত্র বলে—
“বিদ্যা বিনয় উপেতা হরতি
ন চেতাংন্সি কস্য মনুজস্য
মনিকাঞ্চন সনযোগ
জনয়তি লোকস্যা লোচন আনন্দম”
অর্থাৎ যখন কোন ব্যাক্তির মধ্যে যোগ্যতা ও নম্রতা এই দুই গুণের সমন্বয় হয়, তখন সে দুনিয়ায় সকলের মন জয় করতে পারে। যেমন, এই যুব খেলোয়াড় সকলের মনে স্থান করে নিয়েছেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, বিশেষত আমার যুববন্ধুরা, এখন আমি যা বলতে চলেছি তা শুধুমাত্র আপনাদের ভালোর জন্য। তর্ক–বিতর্ক, বাক-বিতণ্ডা তো চলতেই থাকবে, কিন্তু কোন বিষয় মাত্রাছাড়া হওয়ার আগেই সেই সমস্যার সমাধান করা উচিত। নাহলে সমস্যা এক বৃহদাকার নিয়ে নেয় এবং তার সমাধান করা এক বিষম কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। গোড়াতেই যদি আমরা সচেতন হই, তবে অনেক কিছু বাঁচানো যেতে পারে। এই ভাবনা থেকেই আমার মনে হয়, আমার যুব বন্ধুদের একটি জরুরী বিষয়ে কিছু কথা অবশ্যই বলা উচিত। আমরা সবাই জানি, তামাকের নেশা স্বাস্থ্যের পক্ষে কতখানি ক্ষতিকর এবং একবার এই বদভ্যাস হয়ে গেলে তা ছাড়ানো কঠিন কাজ।
সবাই বলেন যাঁরা তামাক সেবন করেন, তাদের cancer, diabetes, blood pressureইত্যাদি রোগের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।তামাকেরনিকোটিন নেশা করায়।কৈশোর অবস্থায় এই তামাক সেবন শুরু করলে মস্তিস্কের বিকাশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।এই বিষয়গুলো আমরা সকলে মোটামুটি জানি, কিন্তু আজ আমি আপনাদের এক নতুন বিষয় সম্পর্কে অবগত করতে চাই। আপনারা জানেন, সম্প্রতি ভারতেe-cigarette-এর উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছে।সাধারন cigarette থেকে আলাদা এইe-cigaretteএকটি ইলেকট্রনিক উপকরণ। e-cigarette–এ নিকোটিনযুক্ত তরল পদার্থকে গরম করে এক প্রকার কেমিক্যাল ধোঁয়া তৈরি হয়, যার মাধ্যমে নিকোটিন শরীরে প্রবেশ করে। সাধারণcigarette–এর বিপদ সম্পর্কে আমরা জানি, কিন্তু e-cigarette সম্পর্কে এক ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়েছে যে এটি ক্ষতিকর নয়। সাধারণ cigarette-এর মতো দুর্গন্ধ যাতে না হয়, তার জন্য এতে সুগন্ধী রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। আমরা সচরাচর দেখে থাকি কোন পরিবারে বাবা chain smokerহলেও তিনি চেষ্টা করেন যাতে পরিবারের আর কেউ ধূমপান না করে। আরও চানবাড়ির ছোটোদেরcigarette, বিড়ির থেকে দূরে রাখতে।cigarette সম্পর্কে কোন ধোঁয়াশা নেই, যাঁরা বিক্রি করছেন, যাঁরা কিনছেন বা দেখছেন— তাঁরা সকলে জানেন যে cigarette ক্ষতিকর। কিন্তু e-cigaretteর বিষয়টি একদম আলাদা। এই সম্পর্কে খুব কম সচেতনতা আছে মানুষের মধ্যে। সাধারণ মানুষ e-cigarette-এর ক্ষতিকারক দিকটি সম্পর্কে অবগত নন এবং এই কারণেসন্তর্পণেe-cigarette ঢুকে পড়েছে ঘরেঘরে। অনেকসময় তো পরিবারে মা–বাবার সামনেই বাচ্চারা যাদুর খেলা দেখাচ্ছি বলে, আগুন ছাড়া, দেশলাই ছাড়া ধোঁয়া বের করছি মুখ থেকে বলে e-cigarette নিয়ে খেলে এবং বড়োরা হাততালি দেন। ওঁরা জানেনই না কতবড় ক্ষতি হচ্ছে। একবার যদি কোন কিশোর বা যুবক এর ফাঁদে পড়ে যায়, কখন তারা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে নিজেরাও জানতে পারেনা। আমাদের যুবশক্তি নিজেদের অজান্তে সর্বনাশের পথে চলে যায়।e-cigarette এ অনেক ক্ষতিকারক পদার্থ মেশানো হয় যা শরীরের ক্ষতি করে। আপনারা জানেন, যখন আমাদের আশেপাশে কেউ cigarette খেয়েছে কিনা সেটা আমরা গন্ধ দিয়ে বুঝতে পারি। এমনকি পকেটে সিগারেটের প্যাকেট থাকলেও গন্ধের মাধ্যমে তা বোঝা যায়। কিন্তু e-cigarette-এর ক্ষেত্রে এমনটা হয়না। যুবকরা জেনে হোক, অজান্তে হোক, কিংবা fashion statementহিসেবে হোক, নিজেদের ব্যাগে, বইয়ের মাঝখানে বা হাতে সগর্বে এটি নিয়ে ঘোরে।তারা এইভাবেই এই নেশার কবলে পড়ে যায়। যুবশক্তি আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ।e-cigaretteর উপর প্রতিবন্ধকতা এই জন্য লাগান হয়েছে যাতে নেশার এই নতুন উপকরণ আমাদের দেশকে বরবাদ না করে, পরিবারের স্বপ্ন ধ্বংস না করে, বাচ্চাদের জীবন নষ্ট না করে। কোন ভাবেই যাতে এই নেশার অসুখ সমাজে শিকড় না গাড়তে পারে।
আমি আপনাদের সকলকে অনুরোধ জানাই, তামাকের বদভ্যাস ত্যাগ করুন এবং
e-cigarette সম্পর্কে কোন ভ্রান্ত ধারনা পোষণ করা বন্ধ করুন। আসুন, আমরা সকলে মিলে এক সুস্থ ভারত গড়ে তুলি।
আপনাদের ‘ফিট ইন্ডিয়া’র কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। ‘ফিট ইন্ডিয়া’ মানে কিন্তু শুধুমাত্র রোজ সকাল-বিকাল দুঘণ্টা জিমে যাওয়া নয়। এই সমস্ত ভ্রান্ত ধারণা থেকে বাঁচার নামও কিন্তু ‘ফিট ইন্ডিয়া’।আমার বিশ্বাস, আমার কথা আপনাদের খারাপ লাগবেনা, বরং ভালই লাগবে।
আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আমাদের কাছে এটা খুব সৌভাগ্যের বিষয় যে ভারতবর্ষ এমন সব মহান ব্যক্তিত্বদের জন্মভুমি ও কর্মভূমি যাঁরা নিজেদের জন্য নয়, অন্যের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমাদের ভারত, আমাদের এই ভুমি বহুরত্না বসুন্ধরা। অনেক মানবরত্ন এই দেশ উপহার দিয়েছে। ভারতবর্ষ এমন বহু অসাধারণ মানুষের জন্মস্থানও কর্মস্থান যাঁরা নিজেদের কথা ভুলে অন্যের জন্য নিজের জীবন নিয়োজিত করেছেন। এমনই একজন মানবাত্মাকে ভ্যাটিকান সিটিতে ১৩ অক্টোবর সম্মানিত করা হতে চলেছে যা আমাদের সারা দেশের কাছে গর্বের বিষয়। ওইদিন পোপ ফ্রান্সিস, মরিয়াম থ্রেসিয়াকে সেন্ট ঘোষণা করতে চলেছেন।সিস্টার মরিয়াম থ্রেসিয়া পঞ্চাশ বছরের স্বল্প আয়ুষ্কালেই মানবকল্যাণে যে অপরিসীম অবদান রেখেছেন,সারা বিশ্বে তা দৃষ্টান্তস্বরূপ। সমাজসেবা ও শিক্ষাক্ষেত্রে ওঁর অনেক অবদান। তিনি অনেক বিদ্যালয়, অনাথালয়, হোস্টেল নির্মাণ করেন। সারা জীবন তিনি এই কাজে নিবেদিত ছিলেন।সিস্টার থ্রেসিয়া যে সমস্ত কাজ করেছেন তা নিষ্ঠা ও সমর্পণের সঙ্গে সম্পন্ন করেন। তিনিCongregation of the Sisters of the Holy Familyপ্রতিষ্ঠা করেন যা আজও তাঁর জীবনদর্শন ও লক্ষ্যকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। আমি আরও একবার সিস্টার মারিয়াম থ্রেসিয়া–কে আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই, এবং ভারতবাসীদের বিশেষত আমার খ্রিস্টান ভাই–বোনেদের এই সাফল্যের জন্য অভিনন্দন জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, শুধু ভারত নয়, সমগ্র বিশ্বের কাছে এটা গর্বের বিষয় যে আজ যখন আমরা ‘গান্ধী ১৫০’ পালন করতে চলেছি, এবং সেই একই সময়ে দাঁড়িয়ে ১৩০ কোটি দেশবাসী Single Use Plastic-এর ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার সঙ্কল্প নিয়েছেন। পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ে যেভাবে বিশ্বের মধ্যে ভারত অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে তাতে সমগ্র বিশ্বের নজর এখন ভারতের ওপর।আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আগামী ২ অক্টোবর Single Use Plastic–বিরোধী যে অভিযান তাতে আপনারা সবাই সামিল হবেন।বিভিন্ন জায়গায় মানুষ নিজের মতো করে এই অভিযানে তাদের অবদান রাখছেন।তবে আমাদের দেশেরই এক যুবক এক অনন্য অভিযান শুরু করেছেন।ওঁর এই কাজ আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং আমি ওঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলে তাঁর এই নতুন পরিকল্পনা সম্বন্ধে জানার এবং বোঝার চেষ্টা করি। হয়তো তার এই কথাগুলো দেশের অন্যান্য লোকেদেরও কাজে আসবে।শ্রী রিপুদমন বেলভি একটি অনন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।তিনিplogging করেন।আমি যখন প্রথমবার plogging শব্দটি শুনেছিলাম তখন তা আমার কাছেও নতুন ছিল।বিদেশে সম্ভবত এই শব্দটি অল্পবিস্তর ব্যবহৃত হয়।তবে ভারতে রিপুদমন বেলভি এটির বহুল প্রচার করেছেন।আসুন তার সঙ্গে কিছু কথা বলি।
মোদীজি: হ্যালো রিপুদামনজী, আমি নরেন্দ্র মোদী বলছি।
রিপুদমন : হ্যাঁ স্যার আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ স্যার।
মোদীজি: রিপুদমন বাবু।
রিপুদমন : হ্যাঁ স্যার।
মোদীজি: আপনি যে এত উৎসাহের সঙ্গে প্লগিঙ নিয়ে সমর্পিত ভাবে কাজ করেচলেছেন.
রিপুদমন : হ্যাঁ স্যার।
মোদীজি: তা নিয়ে আমার মনে বেশ কিছু জিজ্ঞাসা ছিল তাই ভাবলাম নিজেই ফোন করে আপনার কাছ থেকে জেনে নি।
রিপুদমন : OK।
মোদীজি: এই ভাবনাটা আপনার মাথায় কি করে এলো?
রিপুদমন : হ্যাঁ স্যার।
মোদীজি: এই শব্দ, এই পদ্ধতি, কিভাবে মাথায় এলো?
রিপুদমন : স্যার আজকের যুব সমাজ কিছু কুল, কিছু মজার জিনিস চায়, তাই তাদের অনুপ্রাণিত করতেই আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি। যদি আমার এই অভিযানে 130 কোটি ভারতীয়র যোগদান চাই, তাহলে আমাকে কিছু কুল, কিছু আকর্ষণীয় জিনিস করতেই হবে।আমি নিজে একজন দৌড়বীর আর সকালে যখন আমরা দৌড়াই তখন ট্রাফিক কম থাকে,আর লোকজন কম থাকলে ময়লা আবর্জনা এবং প্লাস্টিক সর্বাধিক দেখা যায়. তাই দোষারোপ এবং অভিযোগ করার পরিবর্তে আমি ভাবলাম এই বিষয়ে কিছু করা উচিত. তাই দিল্লিতে একটি দৌড়ের দল তৈরি করে সেটিকে পরে ভারতজুড়ে নিয়ে যাই, সর্বত্র এর জন্য প্রচুর প্রশংসা পেয়েছি।
মোদীজি: আপনি ঠিক কি করেন? কিছুটা বোঝান যাতে আমিও বুঝি এবং মন কি বাত এর মাধ্যমে দেশবাসীও জানতে পারেন।
রিপুদমন :স্যার আমরা শুরু করলাম রান এন্ড ক্লিনআপ মুভমেন্ট. যেখানে আমরা দৌড়ের দলগুলোকে তাদের ওয়ার্কআউট এরপরে কুলডাউন এক্টিভিটি সময় বললাম যে আপনারা আবর্জনা তোলা শুরু করুন প্লাস্টিক তোলা শুরু করুন,তাহলেএকদিকে যেমন দৌড় চলছে অন্যদিকে সাফাই–এর কাজ চলছে আর হঠাৎ করেই অনেকগুলো ব্যায়াম একসঙ্গে যোগ হয়ে যাচ্ছে। এভাবেআপনারাশুধুমাত্র দৌড়াচ্ছেন না আপনারা squatকরছেন, deep squat করছেন, lunges করছেন, ফরওয়ার্ড bent করছেন.তোএভাবেই এটি একটি সামগ্রিক ওয়ার্ক আউট হয়ে গেল.এবংআপনি জেনে খুশি হবেন যে গত বছর বেশ কিছু ফিটনেস ম্যাগাজিন এটিকে টপ fitness trend হিসেবে মনোনীত করেছে.মোদি–এর জন্য আপনাকে অনেক অনেক অভিনন্দন।
রিপুদমন :ধন্যবাদ স্যার।
মোদীজি: তো এখন আপনি 5 সেপ্টেম্বর থেকে কোচি থেকে শুরু করছেন।
রিপুদমন: হ্যাঁ স্যার,এইমিশনের নাম রেখেছি রান টু মেক ইন্ডিয়া লিটার ফ্রি.২রা অক্টোবরআপনিযেভাবে একটি ঐতিহাসিক রায় দেবেন আমি নিশ্চিত আবর্জনা মুক্ত হবে এই দেশ, এবং ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতাও আসবে।আমি 50 টিশহর জুড়ে হাজার কিলোমিটার ছুটে চলেছি এবং পরিষ্কার করছি। প্রত্যেকেই বলেছিল যে এটি সম্ভবত বিশ্বের দীর্ঘতম ক্লিন–আপ ড্রাইভ, এবং আমরা একটি দুর্দান্ত social মিডিয়া # (হ্যাশট্যাগ)ব্যবহারকরেছি #প্লাস্টিক উপবাস যেখানে আমরা মানুষকে বলছি যে আপনারা আমাদের জানান,কোনএকটা জিনিস, একক ব্যবহারের কিছু, কেবল একক ব্যবহারের প্লাস্টিক নয় একক ব্যবহারের কোন একটা কিছু,যাআপনি আপনার জীবন থেকে চিরতরে বাদ দিয়ে দেবেন।
মোদীজি: বাহ…5 সেপ্টেম্বর থেকে এখনওপর্যন্ত আপনার কীরকম অভিজ্ঞতা হয়েছে?
রিপুদমন: স্যার, এখনপর্যন্তখুবভালঅভিজ্ঞতাহয়েছে।গতদুইবছরে, আমরা প্রায় 300 টি ব্লগিং ড্রাইভ করেছি গোটা ভারত জুড়ে।যখনআমরা কোচি থেকে শুরু করি,তখনদৌড়ের দলগুলো যোগ দিয়েছিলো আমাদের সঙ্গে এবংসেখানকারস্থানীয় ক্লিন উপ ড্রাইভগুলোর সঙ্গেও নিজেকে যুক্ত করেছি।কোচিরপরে আমরা মাদুরাই, কইম্বাতোর, সালেম, উডুপীতেও পরিচ্ছন্নতা অভিযান করেছি।সেখানকারএকটিস্কুলথেকেযখনআমন্ত্রণএসেছিল, তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ শ্রেণির ছোট বাচ্চাদের আধ ঘন্টার একটি কর্মশালা করানোর জন্য, স্যার, তখন সেই আধ ঘন্টার কর্মশালা তিন ঘন্টার প্লগিঙ ড্রাইভ এপরিণত হয়েছিল।স্যার, কারণশিশুরা এটি করতে চেয়েছিল, তারা এত উত্সাহী ছিল যে এটিকে বাড়ি গিয়ে নিজেদের মা বাবাকে বিস্তারিত জানাতে, প্রতিবেশীদের জানাতে, তাদের সমবয়সীদের জানাতে যে এটাই সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আমাদের পরবর্তী স্তরে উত্তরণের ক্ষেত্রে |
মোদীজি : রিপুজি, এটা পরিশ্রমের বিষয় নয়, একরকম সাধনা। সত্যিই আপনি সাধনা করছেন!
রিপু দমন: হ্যাঁস্যার।
মোদীজি :আমার তরফ থেকে আপনার জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইলো। কিন্তু ধরুন, আপনি দেশবাসীর উদ্দেশে তিনটি কথা বলতে চান, তাহলে এরকম কোন তিনটি নির্দিষ্ট বার্তা আপনি পৌঁছে দিতে চান?
রিপু দমন:আমি আসলে তিনটি পর্যায় বা ধাপের কথা বলব — আবর্জনা মুক্ত ভারত গঠনের উদ্দেশ্যে। প্রথম ধাপ, বর্জ্য পদার্থ, আবর্জনা ফেলার পাত্রে ফেলুন। দ্বিতীয় ধাপ, মাটিতে যদি কোন ময়লা পড়ে থাকে সেটা তুলে নিয়ে গিয়ে আবর্জনা ফেলার পাত্রে ফেলুন। তৃতীয় ধাপ হল যদি আবর্জনা ফেলার পাত্র না দেখতে পান তাহলে সেই ময়লা নিজের পকেটে রাখুন বা নিজের গাড়ি করে বাড়ি নিয়ে যান। তারপর তাদের ‘শুষ্ক বর্জ্য পদার্থ’ ও ‘আর্দ্র বর্জ্য পদার্থ’ এই ভাগে ভাগ করুন। পরদিন সকালেপুরসভার ময়লা ফেলার গাড়িতে ওই বর্জ্য পদার্থ ফেলে দিন। আমরা যদি এই তিনটি পর্যায় অনুসরণ করি, তাহলেই আবর্জনা মুক্ত ভারতকেপাব।
মোদীজি : দেখুন রিপুজি, খুব সরল ভাষায় আর কিছু সহজ পদ্ধতি অনুসরণ করার মাধ্যমে আপনি একপ্রকারে গান্ধীজীর স্বপ্নকে সঙ্গে নিয়ে চলেছেন। এর সঙ্গে গান্ধীজীর সরল ভাষায় কথা বলার ধরনটাও আপনি রপ্ত করে ফেলেছেন।
রিপু দমন: ধন্যবাদ
মোদীজি : এর জন্য আপনার অভিনন্দন পাওয়া উচিত রিপু দমন জি। আপনার সঙ্গে কথা বলে খুব ভালো লাগল। আপনি আপনার উদ্ভাবনী শক্তির সাহায্যে বিশেষ করে যুবসমাজের পছন্দ হবে এমন পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে এই সমগ্র কার্য সম্পন্ন করেছেন। আমি আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। বন্ধুরা, এইবার পূজনীয় বাপুর জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ক্রীড়ামন্ত্রক ‘Fit India Plogging Run’-এর আয়োজন করেছে। ২ অক্টোবর দুই কিলোমিটার ‘plogging’। সারাদেশে এটা আয়োজিত হতে চলেছে। এই ক্রিয়া-কলাপ কেমন করে করা উচিত, এতে কি হয় — এটা রিপু দমনজীর অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জেনেছি। ২ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে আমাদের সকলকে দু’কিলোমিটার জগিংও করতে হবে আর রাস্তায় পড়ে থাকা প্লাস্টিক–যুক্ত আবর্জনাও জমা করতে হবে। এতে আমরা শুধু নিজেদের স্বাস্থ্যেরই খেয়াল রাখব না, পৃথিবী মায়েরও স্বাস্থ্য রক্ষা করতে পারব। এই অভিযানের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ফিটনেসের সঙ্গে সঙ্গেপরিছন্নতা বিষয়েও সচেতনতা বাড়ছে। আমি বিশ্বাস করি, ১৩০কোটি দেশবাসী এই লক্ষ্যে একধাপ এগোলে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকমুক্ত ভারত গঠনের উদ্দেশ্যে আমাদের দেশ ১৩০কোটি পদক্ষেপ এগিয়ে যাবে। রিপু দমনজী, আপনাকে আরও একবার অনেক ধন্যবাদ! আপনাকে, আপনার টিমকে, আর এই নতুন উদ্ভাবনী শক্তিকে আমার তরফ থেকে অনেক অভিনন্দন! থ্যাঙ্ক ইউ!
আমার প্রিয় দেশবাসী,২ অক্টোবরের প্রস্তুতি তো সারাদেশে এবং সমগ্র পৃথিবীতে চলছে, কিন্তু আমরা ‘গান্ধী ১৫০’-কেকর্তব্যপথের দিকে নিয়ে যেতে চাই। নিজের জীবনকে দেশের কল্যাণে নিয়োজিত করতে চাই। একটা বিষয় অগ্রিম মনে করাতে চাই, যদিও আমি পরের ‘মন কি বাত’-এ এটা বিস্তারিত আলোচনা করব। কিন্তু আমি আগাম এ বিষয়ে কথা বলতে চাই, যাতে আপনারা প্রস্তুত হওয়ার সময় পান। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ৩১ অক্টোবর সরদার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মজয়ন্তী।‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’ এটা আমাদের সকলের স্বপ্ন, আর সেই জন্যেই প্রত্যেক বছর ৩১ অক্টোবর আমরা সমগ্র দেশে ‘রান ফর ইউনিটি’ অর্থাৎ দেশেরএকতার জন্য দৌড়ের আয়োজন করি। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলেই, স্কুল–কলেজের ছাত্রছাত্রীরাও ভারতের লক্ষ লক্ষ গ্রামে ঐদিন দেশের একতার জন্য দৌড়ান। তাই আপনারা এখন থেকেই তৈরি থাকুন, বিস্তারিত আলোচনা অবশ্যই পরে হবে, কিন্তু এখনও সময় আছে, কেউ চাইলে অনুশীলন শুরু করতে পারেন, আবার কেউ কোনও পরিকল্পনাও করতে পারেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের হয়তো মনে থাকবে ১৫ আগস্ট আমি লালকেল্লা থেকে বলেছিলাম যে, ২০২২-এর মধ্যে আপনারা ভারতের পনেরোটি জায়গায় যান। কমপক্ষে ১৫-টি জায়গায় যান এবং ওখানে গিয়ে একরাত বাদুরাত থাকার চেষ্টা করুন। আপনারা ভারতকে দেখুন, বুঝুন, অনুভব করুন। আমাদের কতবিবিধতা আছে। দীপাবলী উপলক্ষে তো ছুটি থাকেই, তখন তো সকলেই বেড়াতে যায়। তাই আমি অনুরোধ করছি আপনারা ভারতেরই পনেরোটি জায়গায় বেড়াতে যান।
আমার প্রিয় দেশবাসী, গত পরশু অর্থাৎ ২৭সেপ্টেম্বর ‘ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম ডে’ পালন করা হল। পৃথিবীর কিছু দায়িত্বশীল এজেন্সি পর্যটনের নিরিখেবিভিন্ন দেশের ক্রম নির্ণয় করে। আপনারা জেনে খুশি হবেন, ভারত ‘ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজম কম্পিটিটিভ ইনডেক্স’-এ অনেকটা উন্নতি করেছে, আর এটা আপনাদের সকলের সহযোগিতার ফলেই সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে বেড়াতে যাওয়ার গুরুত্ব বোঝার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। স্বচ্ছতা অভিযানেরও এই বিষয়ে অনেকখানি গুরুত্ব আছে।এই উন্নতি কতখানি আপনারা জানেন? আপনারা জেনে খুশি হবেন, এই সূচকে আমাদের ক্রম এখন ৩৪তম। পাঁচ বছর আগে আমাদের ক্রম ছিল ৬৫-তম। অর্থাৎ, আমরা এই সময়েই অনেকটা এগিয়ে গেছি। আমরা যদি আরও চেষ্টা করি তাহলে স্বাধীনতার ৭৫বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই পর্যটনক্ষেত্রে সমগ্র বিশ্বে অন্যতম স্থান অর্জন করতে পারব।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের সকলের জন্য আবার এই বৈচিত্র্যপূর্ণ ভারতের নানা উৎসব উপলক্ষে অনেক শুভেচ্ছা রইল।এটাও অবশ্যই দেখবেন দীপাবলীর দিনগুলোতেআতসবাজীর জন্য যেন কোথাও আগুন লাগার ঘটনা না ঘটে বা কোন মানুষের ক্ষতি না হয়। এবিষয়ে যতরকম সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়, আপনারা অবশ্যই ততটাই সাবধান থাকবেন। খুশিও থাকা উচিত, আনন্দও থাকা উচিত, উৎসাহও থাকা উচিত, আমাদের উৎসব সকলের জন্য মঙ্গলবার্তা নিয়ে আসে, সামাজিক একতার সংস্কৃতিকে উন্নত করে।সামাজিক জীবনের ঐক্যই আমাদের নতুন শক্তি প্রদান করে। আর এই শক্তির সাধনা করাই উৎসব। আসুন, সকলে মিলে আশা, উৎসাহ, নতুন স্বপ্ন, নতুন সংকল্পের সঙ্গে উৎসব পালন করি।
আরও একবার অনেক অনেক শুভকামনা রইল। ধন্যবাদ!
আমারপ্রিয়দেশবাসী, নমস্কার! আমাদের দেশ এই সময় একদিকে যেমন বর্ষা ঋতুর আনন্দ অনুভব করছে অন্যদিকে দেশের প্রত্যেক প্রান্তে কোনো না কোনো উৎসব, মেলার আয়োজন করা হচ্ছে আর দীপাবলি পর্যন্ত এই রকমই চলবে। হয়তো আমাদের পূর্বপুরুষরা আমাদের ঋতুচক্র, অর্থনৈতিক বিন্যাস, সামাজিক ব্যবস্থা এমনভাবে সাজিয়েছিলেন যাতে কোনো অবস্থাতেই সমাজজীবনে শিথিলতা না আসে। গত কয়েকদিনে আমরা বেশ কিছু উৎসব পালন করলাম। গতকাল সমগ্র ভারতে শ্রীকৃষ্ণের জন্মোৎসব মহা সমারোহে পালিত হয়েছে। শ্রীকৃষ্ণ এমন এক ব্যক্তিত্ব যিনি এত হাজার বছর পরেও প্রতিটি উৎসবে নূতনত্ব, নব প্রেরণা, নূতন শক্তি সৃষ্টি করেন যা কিনা আমাদের কল্পনারও অতীত। তিনি আজও যে কোনও সমস্যার সমাধানে উদাহরণ হয়ে উঠতে পারেন, প্রেরণা দিতে পারেন। যে কোনো ব্যক্তি শ্রীকৃষ্ণের জীবন থেকে যে কোনো বর্তমান সমস্যার সমাধান খুঁজে নিতে পারে। এত শক্তিমান হওয়া সত্বেও তিনি রাসের উৎসবে বিলীন হয়ে যেতেন। কখনও গোরুদের মধ্যে, কখনও গোয়ালাদের সঙ্গে মিশে যেতেন। কখনো খেলাধূলায় মত্ত তো কখনো বাঁশি বাজানোয় নিমগ্ন। এত বিবিধতাপূর্ণ, মহাশক্তিমান কিন্তু তিনি সামাজিক শক্তির প্রতি সমর্পিত, লোকশক্তির প্রতি সমর্পিত এবং লোক-একজোট করার ক্ষেত্রে নূতন নিদর্শন স্থাপনকারী ব্যক্তিত্ব। বন্ধুত্ব কেমন হওয়া উচিত এজন্য সুদামার ঘটনাকে কি কেউ ভুলতে পারে! অপরদিকে এমন মহান ব্যক্তিত্ব সত্বেও রণভূমিতে সারথীর কাজ করতে রাজি হওয়ার কথাও বলা যেতে পারে। কখনও পাহাড় ওঠান তো কখনও খাবারের এঁটো থালা তোলেন — সব ব্যাপারেই যেন নূতনত্ব অনুভব করা যায়। আজ আমি যখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি, তখন দুই মোহনের দিকে আমার মন চলে যাচ্ছে। একজন সুদর্শনচক্রধারী মোহন, অন্যজন চরকাধারী মোহন। সুদর্শনচক্রধারী মোহন যমুনা নদীর তীর ছেড়ে গুজরাটের সমুদ্রতীরে দ্বারকা শহরে গিয়ে অবস্থান করেন আর সমুদ্রতীরে জন্মানো মোহন যমুনার তীরে দিল্লিতে জীবনের অন্তিম দিন অতিবাহিত করেন। ঐ সময়ের পরিস্থিতিতে আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগে সুদর্শনচক্রধারী মোহন যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়ার জন্য নিজ বুদ্ধি, কর্তব্য, সাহস এবং চিন্তাশক্তির উপযোগ করেছিলেন। চরকাধারী মোহনও স্বাধীনতার জন্য, মানবিক মূল্যবোধকে জাগ্রত রাখতে, ব্যক্তিত্বের মূল তত্বকে সুদৃঢ় করতে এমন একটি রাস্তা নেন, স্বাধীনতার যুদ্ধকে এমন একটি রূপ দেন, এমন পরিবর্তন আনেন যা পুরো বিশ্বের কাছে অভিনব। আজও অভিনব পন্থা। নিস্বার্থ সেবা, জ্ঞান বা জীবনের সকল উত্থান-পতনে হাসতে হাসতে এগিয়ে যাওয়ার গুরুত্বকে আমরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ থেকে শিখতে পারি। এই কারণেই শ্রীকৃষ্ণকে জগতগুরু রূপে মানা হয়। “কৃষ্ণ বন্দে জগতগুরুম।” আজ আমরা যখন উৎসব নিয়ে আলোচনা করছি তখন ভারত এক বড়ো উৎসব পালনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, এমনকি পুরো বিশ্বেই এই উৎসবের আলোচনা চলছে। আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি মহাত্মা গান্ধীর ১৫০-তম জন্মজয়ন্তীর কথা বলছি। পোরবন্দর সমুদ্রতীরে, যাকে আজ আমরা কীর্তিমন্দির বলি সেই ছোটো ঘরে ১৮৬৯ সালের ২-রা অক্টোবর একজন ব্যক্তিমাত্রই নয় এক যুগের জন্ম হয়েছিল, যিনি মানব ইতিহাসকে এক নূতন পথ দেখিয়েছিলেন, নূতন উৎকর্ষ স্থাপন করেছিলেন। সেবা, সেবাভাব, সেবার প্রতি কর্তব্যপরায়ণতা মহাত্মা গান্ধির জীবনের অংশ হয়ে উঠেছিল। তাঁর জীবনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছিল। আমরা যদি তাঁর পুরো জীবনকালটা দেখি, তাহলে দেখতে পাই দক্ষিণ আফ্রিকাতে তিনি সেই সম্প্রদায়ের মানুষের সেবা করেছেন যাঁরা বর্ণবৈষম্যের শিকার হয়েছিলেন। সেই সময়ে এটা কিন্তু একটা সামান্য কাজ ছিল না, তিনি সেই কৃষকদের সেবা করেছেন চম্পারণে যাদের সঙ্গে বিরূপ ব্যবহার করা হচ্ছিল। মিলের মজদুর — যাঁদের প্রাপ্য পারশ্রমিক দেওয়া হত না, তিনি তাদের সেবা করেছেন। গরীব, অসহায়, রুগ্ন, ক্ষুধার্ত মানুষের সেবা করাকে তিনি জীবনের অন্যতম কর্তব্য বলে মানতেন। কুষ্ঠ রোগ বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ভুল ধারণা ছিল সেগুলিকে মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য তিনি নিজে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্তদের সেবা করতেন যাতে অন্যরা অনুপ্রাণিত হয়। ‘সেবা’ কথাটি তিনি কেবলমাত্র একটি শব্দে নয়, কর্মের মধ্যে দিয়ে শিখিয়েছিলেন। ‘সত্য’র সঙ্গে গান্ধীজীর যেমন অটুট সম্পর্ক ছিল, ‘সেবা’র সঙ্গেও তাঁর তেমনই দৃঢ় সংযোগ ছিল। যে কোনও ব্যক্তি যেখানেই হোক, যখনই হোক বিপদে পড়লে তাঁকে সাহায্য করার জন্য মহাত্মা গান্ধী ছুটে যেতেন। তিনি শুধু সেবার কথায় জোর দিতেন না, সেবায় যে আত্মতৃপ্তি তার গুরুত্বও জানতেন। ‘সেবা’ শব্দটার সার্থকতা তখনই ঘটে যদি তা আনন্দের সঙ্গে করা হয়। তবেই ‘সেবা পরম ধর্ম’ হয়ে ওঠে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃত আনন্দ ‘স্বান্ত সুখায়’ — এই ভাবনাও সেবা কথাটির মধ্যে অন্তর্নিহিত। এটা আমরা গান্ধীজীর জীবন পর্যবেক্ষণ করলে সহজেই বুঝতে পারি। মহাত্মা গান্ধী অগণিত ভারতবাসীর স্বর হয়ে উঠেছিলেন। বিশ্বের মানুষের মানবিক মূল্যবোধ মনুষ্যত্বের গরিমার সমবেত ধ্বনি হয়ে উঠেছিলেন। মহাত্মা গান্ধীর জীবনে ব্যক্তি ও সমাজ, মানব এবং মানবতাই একমাত্র চিন্তা ছিল। আফ্রিকার Phoenix Farm–এই হোক কি Tolstoy Farm, সবরমতী আশ্রম বা ওয়ার্ধা — সব জায়গাতেই এক মৌলিক ভাবনায় সমাজ বিকাশে community mobilisation-এ তিনি গুরুত্ব দিতেন। আমার জীবনের পরম সৌভাগ্য পূজনীয় মহাত্মা গান্ধীজীর বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে গিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ হয়েছে। গান্ধীজী সেবা ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে সাংগঠনিক শক্তির প্রতিও গুরুত্ব দিতেন। সমাজসেবা এবং সামাজিক সংহতি, community service এবং community mobilisation — এই দুই ভাবনা আমরা ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগ করতে চাইছি। প্রকৃত অর্থে এই ভাবনা প্রয়োগেই মহাত্মা গান্ধীজির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলিও জানানো যায়, কাজের মাধ্যমে তাঁকে শ্রদ্ধা অর্পণ করা হয়। এমন অনেক উপলক্ষ আসে, আমরা যে বার্ষিকী / দিবস পালন করে থাকি কিন্তু ‘গান্ধী ১৫০’!আসবে আর চলে যাবে এ-কি আমরা মেনে নিতে পারি? দেশবাসী! তা কিছুতেই হতে পারে না।আসুন, আমরা সবাই মিলে
আত্ম-অনুসন্ধান করি, নিজেরা ভাবি এবং সম্মিলিতভাবে এই নিয়ে চর্চা করি। আমরা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে, শহর-গ্রাম সব জায়গার, সব বয়সের নারী-পুরুষ— সবার সঙ্গে আলোচনা করি। আসুন,একজোটে সমাজের জন্য কি করা যায়? কোন প্রয়াসে আপনি সহযোগী হতে পারেন তা চিন্তা করি আসুন। আমি নিজে কতটা value addition করতে পারি? সম্মিলিত শক্তির নিজের একটা জোর আছে।‘গান্ধী ১৫০’উদ্যাপন বছরে সেবাকর্মও হোক, আবার সম্মেলক প্রয়াসের বিকাশ হোক এই উপলক্ষে। চলুন, আমরা পাড়ার সকলে একসঙ্গে বেরিয় পড়ি। ফুটবল খেলোয়াড়রা তো ফুটবল খেলবেনই, তার সঙ্গে সঙ্গে গাঁধিজীর আদর্শের কিছু কাজ করতে এগিয়ে আসুন। Ladies Club! আধুনিক মহিলাদের নিজস্ব Ladies Clubহয়েছে এখন। তাঁরা সব বন্ধুরা মিলে কোনো না কোনো সমাজসেবামূলক কাজ পরিচালনা করতে পারেন। পুরোনো বই সংগ্রহ করে গরীব মানুষদের মধ্যে বিতরণ করা যেতে পারে। এতে জ্ঞানের প্রসার ঘটবে। ১৩০ কোটি দেশবাসীর কাছে
১৩০ কোটি ভাবনা রয়েছে এবং সেই মত ১৩০ কোটি কর্ম-ভাবনাও রয়েছে। কোনও বাধা নেই, যার মনে যা আসবে, সদিচ্ছায়, সদ্ভাবনায় পূর্ণ আত্মসমর্পণের মানসিকতায় সে কাজ করে গেলে এক অনন্য আনন্দ অনুভূতি লাভ হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কয়েক মাস আগে আমি গুজরাটের ডান্ডি গিয়েছিলাম। স্বাধীনতা আন্দোলনে লবণ সত্যাগ্রহ, ডান্ডি এক গুরুত্বপূর্ণ turning point। মহাত্মা গান্ধীর উদ্দেশে ডান্ডিতে এক অত্যাধুনিক museum উৎসর্গ করেছি। আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ এই সময়ে গান্ধীজীর স্মৃতিবিজড়িত কোনও না কোনও জায়গায় ঘুরে আসুন। সেটা যে কোনও জায়গা হতে পারে — পোরবন্দর, সবরমতী আশ্রম, চম্পারণ, ওয়ার্ধার আশ্রম বা দিল্লির যেসব জায়গায় মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতি জড়িয়ে আছে সেখানে গেলে ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়ে দিন, তাতে অন্যান্য মানুষও উৎসাহী হবে এবং সেই ছবির সঙ্গে আপনার অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি দু-চার কথা লিখে দিন। আপনার ভেতরে যে ভাবনার উন্মেষ হল, কোনও বিশেষ গ্রন্থের কোনও উদ্ধৃতি লিখলে তাতে গুরুত্ব বাড়বে। এমনও হতে পারে গান্ধীজীকে নিয়ে আপনার সেই ভাবনা অন্য আরও অনেকের কাছে আজকের দিনের পক্ষে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারে।
আগামী দিনে অনেক কার্যক্রম, প্রতিযোগিতা, প্রদর্শনী ইত্যাদির আয়োজন করা হচ্ছে। এই অবকাশে আপনাদের একটি চমৎকার খবর দিই। Venice Biennele একটি অত্যন্ত প্রসিদ্ধ art show। সেখানে সারা বিশ্বের সেরা চিত্রকরদের সমাবেশ ঘটে। এবারের ভেনিস বাইএনেলেরIndia Pavilion–এ আমি গান্ধিজীর স্মৃতি বিজড়িত অত্যন্ত আকর্ষণীয় প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি। এতে হরিপুরা প্যানেলগুলি বিশেষ ভাবে মনোগ্রাহী ছিল। আপনাদের মনে আছে গুজরাতের হরিপুরাতে কংগ্রেসের অধিবেশন হয়েছিল, যেখানে সুভাষ চন্দ্র বোসকে কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঘটনা ইতিহাসে নথিবদ্ধ আছে। এইসব Art Panel-গুলোর এক খুব সুন্দর অতীত রয়েছে। কংগ্রেসের হরিপুরা অধিবেশনের আগে ১৯৩৭-৩৮ সালে মহাত্মা গান্ধী শান্তিনিকেতনের কলাভবনের তখনকার অধ্যক্ষ নন্দলাল বোসকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। গান্ধীজী চেয়েছিলেন ভারতে বাস করা লোকেদের জীবনশৈলীকে শিল্পকলার মাধ্যমে দেখানো হোক, আর এই Art Work অধিবেশন চলাকালীন প্রদর্শিত হোক। ইনি সেই নন্দলাল বোস যাঁর শিল্পকলা আমাদের সংবিধানের শোভাবর্ধন করে। সংবিধানকে এক নতুন পরিচয় দেয়। তাঁর শিল্পকলার এই চর্চা সংবিধানের সঙ্গে সঙ্গে নন্দলাল বোসকেও অমরত্ব প্রদান করেছে। নন্দলাল বোস হরিপুরার আশেপাশের গ্রামগুলি পর্যবেক্ষণ করেন এবং তারপর গ্রামীণ ভারতকে নিয়ে কিছুart canvas তৈরিকরেছিলেন। এই অমূল্য শিল্পকলার খুব আলোচনা হয়েছিল ভেনিসে। আর-একবার গান্ধীজীর সার্ধশতবর্ষের অভিনন্দনের সঙ্গে প্রত্যেক ভারতবাসীর কাছে কিছু না কিছু সংকল্প করার আবেদন জানাচ্ছি। দেশের জন্য, সমাজের জন্য, অপরের জন্য কিছু না কিছু করা দরকার। এটাই বাপুর প্রতি আমাদের সুন্দর, সত্য ও প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি হবে।
ভারত মায়ের সুসন্তানেরা, আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে বিগত কিছু বছর ধরে আমরা ২রা অক্টোবরের আগে দু-সপ্তাহ ধরে সারা দেশে ‘স্বচ্ছতাই সেবা’ অভিযান চালাই। এবছর এটা ১১ই সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে। এই সময়ে আমরা ঘর থেকে বেরিয়ে শ্রমদানের মাধ্যমে মহাত্মা গান্ধীকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাব। ঘর হোক বা গলি, চক-চৌরাস্তা হোক বা নর্দমা, স্কুল, কলেজ থেকে সমস্ত সার্বজনিক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার মহা অভিযান চালাতে হবে। এই বার প্লাস্টিকের উপর বিশেষ জোর দিতে হবে। ১৫ই অগাস্ট লালকেল্লা থেকে আমি এটাই বলেছিলাম, যে উৎসাহ আর উদ্দীপনার সঙ্গে
১২৫ কোটি ভারতবাসী স্বচ্ছতার অভিযান চালিয়েছিল, খোলা জায়গায় শৌচকর্ম থেকে মুক্তি পাওয়ার কাজ করেছিল, ঠিক তেমন ভাবে আমাদের একসঙ্গে single use plastic-এর ব্যবহারেরঅবসান করতে হবে। এই অভিযানকে নিয়ে সমাজের সকল প্রকার মানুষের মধ্যে উৎসাহ আছে। আমার অনেক ব্যবসায়ী ভাই-বোনেরা দোকানের এক তক্তাতে placard লাগিয়ে দিয়েছে, যেখানে লেখা আছে খরিদ্দার যেন নিজের থলে সঙ্গে নিয়েই আসে। এতে পয়সাও বাঁচে আর পরিবেশকে রক্ষা করার নিজের অংশীদারিত্বও দেখাতে পারেন। এবার ২রা অক্টোবরে যখন বাপুর সার্ধশতবর্ষ পালিত হবে, তখন তাঁকে কেবল খোলা জায়গায় শৌচকর্ম মুক্ত ভারত সমর্পণ করবো না, ঐ দিন প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে এক নতুন জন আন্দোলনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন হবে। আমি সমাজের সকল সম্প্রদায়কে, প্রত্যেকগ্রাম, মফঃস্বল আর শহরের নিবাসীদের আবেদন জানাই, হাতজোড় করে প্রার্থনা করতে চাই, এই বছরের গান্ধী জয়ন্তী এক রকম ভাবে আমাদের এই ভারতমাতাকে প্লাস্টিক জঞ্জাল থেকে মুক্তির জন্য পালন করা হোক। ২রা অক্টোবর বিশেষ দিন হিসেবে পালিত হোক। মহাত্মা গান্ধী জন্মজয়ন্তীর দিন এক বিশেষ শ্রমদানের উৎসবে পরিণত হোক। দেশের সমস্ত Municipal Corporation, Municipality,জেলা প্রশাসন, গ্রাম-পঞ্চায়েত, সরকারি-বেসরকারী সমস্ত সংস্থা, সমস্ত সংগঠন, প্রত্যেক নাগরিকের প্রতি আমার অনুরোধ, প্লাস্টিক জঞ্জালের collection এবং storage-এর সঠিকব্যবস্থা করুন। আমি corporate sector-কেও অনুরোধ করছি, যখন এ সমস্ত বাতিল প্লাস্টিক এক জায়গায় হয়ে যাবে, এর থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য এগিয়ে আসুন এবং disposal-এর ব্যবস্থা করুন। একে recycle-ওকরা যেতে পারে। একে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ভাবে দীপাবলির আগেই আমরা প্লাস্টিক জঞ্জাল থেকে মুক্তি পেতে পারি। কেবল সদিচ্ছার দরকার। অনুপ্রেরণার জন্য এখানে ওখানে দেখার দরকার নেই, গান্ধীজীর থেকে বড় কেউ প্রেরণাদায়ক হতে পারে না।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের সংস্কৃত সুভাষিত, এক রকম জ্ঞানের রত্ন। আমাদের জীবনের সমস্ত দরকারি বিষয় সবই ওখান থেকে পাওয়া যেতে পারে। আজকাল ওই ভাষার সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনেক কমে গেছে কিন্তু আগে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। আজ আমি এক সংস্কৃত সুভাষিতের দ্বারা এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে স্পর্শ করতে চাই, এটা বহু পূর্বে লেখা এক বিষয়, কিন্তু আজও এর বিশালগুরুত্ব রয়েছে। এটা একটা উত্তম সুভাষিত যার অভিব্যক্তি এইরকম-
“পৃথিব্যাং ত্রীণি রত্নানি জলমন্নং সুভাষিতম্।
মূঢ়ৈঃ পাষাণখণ্ডেষু রত্নসংজ্ঞা প্রদীয়তে”
যার অর্থ, পৃথিবীতে জল, অন্ন আর সুভাষিত হলো তিন রত্ন। মূর্খরা পাথরকে রত্ন বলে। আমাদের সংস্কৃতিতে অন্নের অনেক বেশি মহিমা রয়েছে। এমনকি আমরা খাদ্যশস্য সংক্রান্ত জ্ঞানকে বিজ্ঞানে পরিবর্তন করেছি। সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার আমাদের সকলের প্রয়োজন। বিশেষ করে, মহিলা এবং নবজাতক শিশুদের জন্য। কারণ এরাই আমাদের সমাজের ভবিষ্যৎ ভিত্তি। ‘পোষণ অভিযান’-এর অন্তর্গত পুষ্টিকে সারা দেশে আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গণ-আন্দোলনে পরিণত করা হচ্ছে। মানুষ নতুন এবং মনোরঞ্জক পদ্ধতিতে অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
এক সময়ে, আমার নজরে একটা বিষয় আনা হয়েছিল — নাসিকে ‘মুঠ্ঠি ভর ধান্য’ শীর্ষক এক বড় আন্দোলন হয়েছিল। এখানে ফসল কাটার দিনে অঙ্গণবাড়ির সেবিকারা সবার থেকে এক এক মুঠো শস্য একত্র করতো। এই খাদ্যশস্য শিশু ও মহিলাদের জন্য গরম খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হত। এর ফলে যিনি দান করছেন তিনি এক সচেতন নাগরিক ও সমাজসেবক হয়ে যান। এর পর, ঐ ব্যক্তি এই লক্ষ্যে নিজেকে সমর্পণ করেন এবং এই আন্দোলনে তিনিও একজন সৈনিক হয়ে যান।
আমরা সবাই ভারতবর্ষের প্রত্যেক জায়গায় প্রত্যেক পরিবারে অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠানের কথা শুনেছি। এই অনুষ্ঠান তখনই করা হয় যখন ছোটো বাচ্চাকে প্রথমবার শক্ত খাবার খাওয়ানো হয়। Liquid food নয় Solid food।
গুজরাতে ২০১০ সালে ভাবা হয়েছিল অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠানে বাচ্চাকে complementary food দেওয়া হোক, যাতে মানুষের মনে এ বিষয়ে সচেতনতা আসে। এটা এক খুবই মহৎ উদ্যোগ যা কিনা সর্বত্রই গ্রহণ করা যায়। অনেক রাজ্যে মানুষেরা ‘তিথি ভোজন’ অভিযান পালন করেন। যদি কোনো পরিবারে জন্মদিন, কোনো শুভদিন, কোনো স্মৃতিদিবস থাকে, তবে পরিবারের সদস্যরা সুস্বাদু, পুষ্টিকর খাবার তৈরি করে অঙ্গণবাড়ি, বিদ্যালয়ে যান এবং পরিবারের সদস্যরা নিজেরাই বাচ্চাদের পরিবেশন করে খাবার খাওয়ান, নিজের আনন্দ সবার মধ্যে ভাগ করেন, যা আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এইভাবে সেবাভাব ও আনন্দভাবের এক অদ্ভুত মিলন লক্ষ করা যায়।
বন্ধুরা, এইরকম অনেক ছোটো ছোটো বিষয় আছে যেগুলির দ্বারা আমাদের দেশ অপুষ্টির বিরুদ্ধে এক ফলপ্রসূ লড়াই লড়তে পারে। আজ সচেতনতার অভাবে ‘অপুষ্টি’ গরীব এবং ধনী উভয় ব্যক্তিদের পরিবারেই প্রভাব বিস্তার করেছে।
সারা দেশে সেপ্টেম্বর মাসে ‘পোষণ অভিযান’ পালন করা হবে। আপনি অবশ্যই এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হবেন, তথ্য সংগ্রহ করবেন এবং নতুন কোনও ভাবনা যুক্ত করবেন। যদি আপনি দু-একজন ব্যক্তিকেও অপুষ্টির হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন, তার অর্থ আমাদের দেশও অপুষ্টির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
হ্যালো স্যার, আমার নাম সৃষ্টি বিদ্যা। আমি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। স্যার, ১২ই অগাস্ট যে episode দেখেছিলাম, সেখানে Bear Grylls-এর সঙ্গে আপনিও উপস্থিত ছিলেন। স্যার, আপনার ওই episode দেখে আমি মুগ্ধ! প্রথমত এটা শুনে আমার খুবই ভালো লেগেছে যে আপনি আমাদের এই প্রকৃতি, বন্যপ্রাণ এবং পরিবেশ নিয়ে কত চিন্তা-ভাবনা করেন, এ সব বিষয়ে কত খেয়াল রাখেন। স্যার, আপনার এই নতুন adventurous ভাবমূর্তি আমার খুব ভালো লেগেছে।
স্যার, আমি জানতে ইচ্ছুক, এই episodeতৈরি হওয়ার সময় আপনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল।
স্যার, সবশেষে আর একটি কথা যোগ করতে চাইছি, আপনার fitness level দেখে আমাদের মতো তরুণরা অনেক বেশি প্রভাবিত এবং অনুপ্রাণিত হয়েছি। আপনাকে এত fit এবং fine দেখে।
সৃষ্টিজী, আপনার ফোনের জন্য ধন্যবাদ। আপনার মতই, হরিয়ানার সোহনা থেকে কে.কে. পাণ্ডে এবং সুরাতের ঐশ্বর্য শর্মার সঙ্গে আরও কয়েকজন Discovery Channel-এ দেখানো ‘Man Vs Wild’ episode-এর বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। এইবার যখন ‘মন কি বাত’ নিয়ে আমি
চিন্তা-ভাবনা করছি, তখনই আমার দৃঢ় বিশ্বাস হয়েছিল যে এই বিষয়ের উপর অনেক অনেক বেশি প্রশ্ন আসবে এবং তাই-ই হলো। গত কয়েক সপ্তাহ যাবৎ আমি যেখানেই গিয়েছি এবং যাঁদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে, ‘Man Vs Wild’ প্রসঙ্গ উঠেছে। এই একটা episode-এর মাধ্যমে আমি শুধুমাত্র ভারতবর্ষই নয়, বিশ্বের সব জায়গার যুবসম্প্রদায়ের সঙ্গে একাত্ম হতে পেরেছি। আমি কখনই ভাবতে পারিনি যে যুবপ্রজন্মের মনে আমার এমন একটা জায়গা তৈরি হবে। আমি কখনও এটা চিন্তা করিনি যে আমাদের দেশের এবং বিশ্বের যুবসমাজ কত বিচিত্র বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখেন। এটা আমি কখনো কল্পনাও করতে পারিনি যে কোনোদিন বিশ্বের যুবসম্প্রদায়ের হৃদয় আমি এভাবে স্পর্শ করতে পারবো, আমার জীবনে এরকম একটা সুযোগ আসবে।
গত সপ্তাহে আমি ভুটান গিয়েছিলাম। আমি দেখেছি, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি যখনই বিশ্বের কোনো জায়গায় গিয়েছি, কারও সঙ্গে বসে কথা বলেছি, তখনই যোগা সম্বন্ধে অন্ততঃ পাঁচ-সাত মিনিট আলোচনা হয়েছে। এই দুনিয়ায়এমন কোন বড় নেতা নেই যিনি আমার সঙ্গে যোগ বিষয়ে চর্চা করেননি। এটাই আমি অনুভব করেছি। কিন্তু আজকাল এক নতুন অনুভূতি হচ্ছে। যার সঙ্গেই সাক্ষাৎ হোক,যেখানেই কথা বলার সুযোগ আসুক, সবাইwildlifeও environment–এর বিষয়ে আলোচনা করছে।Tiger, Lion, জীব-সৃষ্টি—আমি অবাক হয়ে যাই যে লোকেদের কত রকম বিষয়ে উৎসাহথাকতে পারে।Discoveryচ্যানেল এই অনুষ্ঠানকে ১৬৫টিদেশে স্থানীয়ভাষায় সম্প্রচার করার পরিকল্পনা করেছে। আজ যখন পরিবেশ, global warming, climate changeনিয়ে বিশ্বব্যাপী চিন্তাভাবনা চলছে, আমি আশা রাখি যে এইরকম কর্মসূচিকে ভারতবর্ষের বার্তা, ভারতীয় পরম্পরায় প্রকৃতির প্রতি সংবেদনশীলতা—এই সমস্ত বিষয় বিশ্বকে অবহিত করানোর জন্যDiscoveryচ্যানেলের এই এপিসোড খুবই সাহায্য করবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ভারতেclimate justice ওclean environmentবিষয়ে নেওয়া পদক্ষেপগুলি এখন লোকেরা জানতে চাইছে। কিন্তু আরেকটাকৌতুহলের বিষয় হলো কিছু লোক সংকোচের সাথে আমাকে একটা কথা অবশ্যই জিজ্ঞাসা করেন যে, মোদিজী, আপনি হিন্দি বলছেন আর বিয়ার গ্রিলস হিন্দি জানেন না! এত দ্রুতগতিতে আপনারা কি করে আলাপ করছিলেন? এটা কি পরে এডিট হয়েছে? এটা কি বার বার শুটিং করা হয়েছে?কি হয়েছিল? খুব কৌতুহলের সঙ্গে জানতে চায়। দেখুন, এতে কোনো রহস্য নেই। কিছু লোকের মনে এ নিয়ে প্রশ্ন আছে, তাই আমি এই রহস্যকে উন্মোচন করছি। আসলে এটা কোনো রহস্যই নয়। Reality এটাই যে বিয়ার গ্রিলস এর সাথে কথাবার্তায় টেকনোলজিরপুরোপুরি ব্যবহার হয়েছে। যখনই আমি কিছু বলতাম তখনি দ্রুত তা ইংরেজিতে অনুবাদ হয়ে যেত।Simultaneous interpretationঅর্থাৎ সঙ্গে সঙ্গেঅনুবাদ হত এবং বিয়ার গ্রিলস এর কানে কর্ডলেসের মতন ছোট instrumentলাগানো ছিল। আমি বলতাম হিন্দি কিন্তু উনি শুনতেন ইংরেজিতে।এই কারণেই কথাবার্তা খুব সহজ হয়ে যেত আর technology-র এটাই কামাল।এই শো-এর পরে আমি লক্ষ করেছি যে, অনেক লোক জিম করবেট ন্যাশনাল পার্কের বিষয়ে আলোচনা করছেন। আপনারাও nature আরwildlife— প্রকৃতি আর বন্যপ্রাণীঅধ্যুষিত জায়গায়অবশ্যই যান। আমি আগেও বলেছি,আমি আবার বলছি। আপনারা নর্থ ইস্ট অবশ্যই যান। সেখানকার প্রাকৃতিক শোভা দেখে আপনারাও মুগ্ধ হয়ে যাবেন। আপনার মন প্রসারিত হয়ে যাবে। ১৫-ই আগস্ট লালকেল্লা থেকে আমি আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করেছিলাম, যে আগামী তিন বছরেকমপক্ষে ভারতের ১৫টি জায়গা— ১০০শতাংশ tourismএর জন্য ১৫টি জায়গায় যান, দেখুন,চর্চা করুন, পরিবার নিয়ে যান, কিছু সময় ওখানে কাটান। বৈচিত্র্যময়দেশআপনাকে এক শিক্ষকের মতন আপনার মধ্যেও বৈচিত্র্যে পূর্ণ করে দেবে। আপনার জীবনের, আপনার ভাবনারপ্রসার ঘটবে।আমাকে ভরসা করুন, হিন্দুস্থানের ভেতরেই এমন জায়গা আছে যেখান থেকে আপনি নতুন আনন্দ, নতুন উৎসাহ, নতুন আশা, নতুন প্রেরণা সংগ্রহ করতে পারবেন। এমনও হতে পারে কিছু কিছু জায়গায় বারবার যেতে আপনার মন চাইবে, আপনার পরিবারেরও তাই হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসীগণ, ভারতে পরিবেশের প্রতিcareআর concernঅর্থাৎ দেখভালের চিন্তা খুবই স্বাভাবিক। গতমাসে দেশেtiger census জারী করার সৌভাগ্য হয়েছিল। আপনারা কি জানেন ভারতে বাঘের সংখ্যা কত?ভারতে ২৯৬৭-টি বাঘ আছে।TwoThousand Nine Hundred Sixty Seven!কয়েক বছর আগে এর অর্ধেকও খুব কষ্টে পাওয়া যেত। বাঘেদের নিয়ে ২০১০সালে রাশিয়ার সেন্টপিটার্সবার্গে ‘টাইগার সামিট’ হয়েছিল। এখানে পৃথিবীতে বাঘের সংখ্যার হ্রাসপ্রাপ্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে একটা সংকল্প নেওয়া হয়েছিল। এই সংকল্প ছিল ২০২২সালের মধ্যে গোটা পৃথিবীতে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করা হবে। কিন্তু এটা হল ‘নিউ ইন্ডিয়া’ —‘নতুন ভারত’, যেখানে আমরা লক্ষ্য অনেক তাড়াতাড়ি পূরণ করে ফেলেছি।
আমরা ২০১৯-এর মধ্যেই আমাদের এখানে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করে ফেলেছি। ভারতে শুধু বাঘের সংখ্যাই নয়,‘প্রটেক্টেড এরিয়া’ আর কমিউনিটি রিজার্ভ-এর সংখ্যাও বেড়েছে।
যখন আমি বাঘসুমারীরতথ্য প্রকাশ করছিলাম তখন আমার গুজরাটে গির অরণ্যের সিংহের কথাও মনে এসেছে। যখন আমিগুজরাটে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলাম তখন গির-এর জঙ্গলে সিংহের বাসস্থান সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছিল। ওদের সংখ্যা কমে যাচ্ছিল। আমরা গির-এ এক-এক করে বেশ কিছুউদ্যোগনিয়েছি। ২০০৭-এ ওখানে মহিলা গার্ড নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিই।পরিকাঠামোর সুবন্দোবস্তের মাধ্যমে পর্যটন শিল্পে উন্নতি সম্ভব। প্রকৃতি এবং বন্য জীবন প্রসঙ্গে আমরা শুধু সংরক্ষণ বা কনজারভেশন এর ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এবার আমাদের সংরক্ষণের গণ্ডি পেরিয়ে কম্প্যাশন বা সমবেদনার পরিপ্রেক্ষিতে ভাবনা-চিন্তা করতেই হবে। আমাদের শাস্ত্র এ বিষয়ে আমাদের আদর্শ পথ প্রদর্শক। বহু বছর আগে আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে—
নির্বাণা বাধ্যাতে ব্যাঘ্র, নিব্যাঘ্রং ছিদ্যতে বনাম।
তাস্মাদ ব্যাঘ্র বনং রকশেত, বনং ব্যঘ্রং ন পালায়েৎ।।
অর্থাৎ জঙ্গলের অভাবে বাঘ মানুষের বসতি এলাকায় আসতে বাধ্য হয় এবং মারা যায়। অপরদিকে জঙ্গলে যদি বাঘ না থাকে তাহলে মানুষ সেই জঙ্গল কেটে তা নষ্ট করে দেয়। বাস্তবে বাঘ বনের রক্ষাকর্তা, বন বাঘের রক্ষাকর্তা নয়। কি অসাধারণরূপে আমাদের পূর্বপুরুষেরা আমাদের বিষয়টি বুঝিয়েছিলেন! অতএব আমাদের শুধু বনজঙ্গল, উদ্ভিদ এবং প্রাণীকুলের সংরক্ষণে থেমে গেলে চলবেনা,এমন অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির প্রয়োজনযেখানে যথাযথভাবে উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্পদের শ্রীবৃদ্ধি সম্ভব।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ১১সেপ্টেম্বর ১৮৯৩সালে স্বামী বিবেকানন্দের ঐতিহাসিক ভাষণ আমরা কি কেউ ভুলতে পারি? এই তরুণ ভারতীয় সন্ন্যাসীর তেজস্বী ভাষণ সাড়া জাগিয়েছিল সমগ্র বিশ্বের মানবজাতির মধ্যে। যেখানে পরাধীন ভারত বিশ্বের দরবারে ছিল করুণার পাত্র, সেই বিশ্ব
১১সেপ্টেম্বর ১৮৯৩সালে মহাপুরুষ স্বামী বিবেকানন্দের তেজোদ্দীপ্ত শব্দে আবিষ্কার করতে বাধ্য হলএক নতুন ভারতকে। আসুন,স্বামী বিবেকানন্দ ভারতের যে রূপ দেখেছিলেন, যেশক্তিকে জেনেছিলেন সেই ভারত আমরা গড়ে তুলি। আমাদের মধ্যেই সবকিছু রয়েছে। আত্মবিশ্বাসে ভর করে এগিয়ে চলুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনারা জানেন, ২৯ শে আগস্ট জাতীয় ক্রীড়া দিবস রূপে পালিত হয়।এই উপলক্ষে আমরা দেশব্যাপী‘ফিট ইন্ডিয়া মুভমেন্ট’ শুরু করতে চলেছি। নিজেকে ফিট রাখতে হবে, দেশকে ফিট বানাতে হবে। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলের জন্য এ এক দারুণ আকর্ষণীয় অভিযান হবে। তবে আজ আমি এই বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জানাচ্ছি না। অপেক্ষা করুন
২৯আগস্টের। ঐদিন আমি আপনাদের এই বিষয়ে সবিস্তারে জানাবো এবং সবাইকে এই প্রচারে সামিল করব। কারণ আমি আপনাদের ফিট দেখতে চাই।আপনাদের মধ্যে ফিটনেস সম্বন্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে চাই। দেশকে ‘ফিট ইন্ডিয়া’ করে তোলার উদ্দেশ্যে আসুন সবাই মিলে কিছু লক্ষ্য স্থির করি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের ২৯শে আগস্ট ‘ফিট ইন্ডিয়া’ সম্পর্কে বলার জন্য
আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রয়েছি। সেপ্টেম্বর মাসে রয়েছে ‘পোষণ অভিযান’। বিশেষতঃ ১১ ই সেপ্টেম্বর থেকে দোসরা অক্টোবর পর্যন্ত রয়েছে ‘স্বচ্ছতা অভিযান’। এছাড়াও দোসরা অক্টোবর টোট্যালি ডেডিকেটেড প্লাস্টিকের জন্য। আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে আমরা বাড়ি এবং তার চারপাশ প্লাস্টিকমুক্ত রাখার অভিযানে সামিল হব। আমার বিশ্বাস এই অভিযান সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করবে। আসুন এক নতুন উৎসাহ, নতুন সংকল্প, নতুন শক্তি নিয়ে আমরা এই অভিযান শুরু করি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ ‘মন কি বাত’ এই পর্যন্তই। আবার কথা হবে। আমি আপনাদের বার্তা ও পরামর্শের অপেক্ষায় রইলাম। আসুন আমরা সবাই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্বপ্ন এবং গান্ধীজীর স্বপ্নের ভারত গড়ে তুলি। স্বান্তঃ সুখায়ঃ। অন্তরের আনন্দ ও সেবার মন্ত্রে আলোকিত হোক আমাদের চলার পথ।অনেক অনেক ধন্যবাদ, নমস্কার!
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার! ‘মন কি বাত’-এর জন্য সবসময় আমার তরফ থেকে এবং আপনাদের তরফ থেকে একটা প্রতীক্ষা থাকেই।এইবারওআমি দেখেছি যে প্রচুর সংখ্যক চিঠি, কমেন্টস, ফোনকল এসেছে, যার মধ্যে অনেক অনেক গল্প পেয়েছি, পরামর্শ পেয়েছি, পেয়েছি অনুপ্রেরণা।প্রত্যেকের মধ্যে অনেক কিছু করে দেখানোর, অনেক কিছু বলার অদম্য স্পৃহা অনুভব করেছি এবং সেই সবের মধ্যে প্রচুর কিছু আছে যেটাকে আমি একত্রিত করতে চাই, কিন্তু সময়সীমা বাঁধা থাকায় তা করতে পারছিনা।আমার মনে হচ্ছে যে আপনারা যেন আমার পরীক্ষা নিচ্ছেন।এতদ্সত্বেও, আপনাদেরই কথাকে, ‘মন কি বাত’-এর শৃঙ্খলায় গেঁথে, আবার একবার আপনাদের সঙ্গেই ভাগ করে নিতে চাই।
আপনাদের নিশ্চই স্মরণে আছে যে গতবার আমি প্রেমচাঁদজির গল্পের একটি বইয়ের কথা আলোচনা করেছিলাম এবং আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, কেউ যদি কোনো বই পড়েন তাহলে সেই বই সম্পর্কে কিছু কথা NarendraModiApp-এর মাধ্যমে সবার সঙ্গে ভাগ করে নেবেন।আমি দেখেছি যে প্রচুর সংখ্যক লোক, বিবিধ প্রকারের বই সম্পর্কে তথ্য সেখানে ভাগ করেছেন।আমার ভালো লাগলো দেখে যে লোকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, নতুন উদ্ভাবন, ইতিহাস, সংস্কৃতি, বাণিজ্য, আত্মজীবনীর মতো বেশ কিছু বিষয়েলেখা বই নিয়ে আলোচনা করেছেন।কিছু লোক তো আমাকে এই পরামর্শও দিয়েছেন যে আমি আরও কিছু বই নিয়ে কথা বলি।ঠিক আছে, আমি নিশ্চয়ই আরও কিছু বই নিয়ে আপনাদের সঙ্গে কথা বলবো।কিন্তু একটি কথা আমাকে স্বীকার করতেই হবে যে এখন আমি খুব বেশি বই পড়ার সময় পাইনা।অবশ্য এই গোটা প্রক্রিয়ায় আমার একটা লাভও হয়েছে।আপনারা যে সব বইয়ের কথা উল্লেখ করে লিখে পাঠিয়েছেন সেই সব বই সম্পর্কে জানার একটা সুযোগ আমি পাচ্ছি।কিন্তু আমার মনে হয় যে বিগত এক মাসের এই অভিজ্ঞতাকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত।চলুন না আমরা NarendraModiApp-এ পাকাপাকিভাবে, একটা বুক’স কর্নার তৈরিকরি।যখনই কেউ নতুন কোনো বই পড়বেন সেই বিষয়ে সেখানে লিখবেন, আলোচনা করবেন এবং আপনারা এই বুক’স কর্নারের একটা ভালো নামও বাতলে দেবেন।আমি চাই এই বুক’স কর্নার, পাঠক এবং লেখকদের জন্য একটা সক্রিয় মঞ্চ হয়ে উঠুক।আপনারা পড়তে থাকুন, লিখতে থাকুন এবং ‘মন কি বাত’-এর সমস্ত শ্রোতাদের সঙ্গে সেগুলো ভাগ করতে থাকুন।
বন্ধুগণ, আমার মনে হচ্ছে যে ‘মন কি বাত’-এ, ‘জল সংরক্ষণ’ — এই বিষয়টিকে আগে আমি ছুঁয়ে গেছিলাম, কিন্তু আজ হয়তো অনুভব করছি যে আমার বলার আগেই এই জল সংরক্ষণ বিষয়টি আপনাদের হৃদয়কে ছুঁয়ে যাওয়ার মতোই বিষয় ছিল, সাধারণ মানুষের পছন্দেরবিষয় ছিল।আমি অনুভব করছি যে সম্প্রতি এই জলের বিষয়টি আপামর দেশবাসীর মনকে নাড়া দিয়েছে।জল সংরক্ষণ নিয়ে দেশব্যাপী অনেক কার্যকর প্রচেষ্টা চলছে।মানুষ নানারকম প্রথাগতপদ্ধতি সম্পর্কে তথ্য ভাগ করে নিচ্ছেন।Mediaজল সংরক্ষণের উপর বেশ কিছু উদ্ভাবনী প্রচার শুরু করেছে।সরকার হোক কিংবা NGO— যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কিছু না কিছু করছেই।সমষ্টিগত শক্তি দেখে মন ভরে যাচ্ছে, খুবই সন্তুষ্ট আমি।যেমন ঝাড়খণ্ডে, রাঁচির থেকে একটু দূরে, ওরমানঝি ব্লকের আরাকেরম গ্রামে, গ্রামবাসীরা জল সংরক্ষণের যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা সবার জন্য একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে।গ্রামবাসীরা পাহাড় থেকে ঝর্ণার জলকে একটি নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত করতে সাহায্য করেছেন, তাও আবার বিশুদ্ধ দেশি পদ্ধতিতে।এর ফলে কেবল ভূমি ক্ষয় এবং ফসল নষ্ট হওয়াকে আটকানো যাচ্ছে তাই নয়, ক্ষেতগুলিও জল পাচ্ছে।গ্রামবাসীদের এই শ্রমদান গোটা গ্রামের জন্য জীবনদান হয়ে উঠেছে।আপনারা সবাই জেনে খুশি হবেন যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুন্দরী রাজ্য মেঘালয়, দেশের প্রথম রাজ্য যেটি নিজস্ব একটি জলনীতি বা ‘ওয়াটার পলিসি’তৈরিকরেছে।আমি সেখানকার সরকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
হরিয়ানায়, এমনফসলউৎপাদনেপ্রাধান্যদেওয়াহচ্ছেযেখানেকমজলেরপ্রয়োজনহয়এবংকৃষকদেরলোকসানওহয়না।আমিহরিয়ানাসরকারেরবিশেষপ্রশংসাকরতেচাইকারণতারাকৃষকদেরসঙ্গেআলোচনাকরে, তাদেরবুঝিয়ে, প্রথাগতকৃষিপদ্ধতিথেকেবেরিয়েএসেকমজললাগেএমনফসলউৎপাদনকরতেউৎসাহদিয়েছেন।এখন তো উৎসবের সময় এসে গেছে। এসব সময়ে অনেক মেলাও বসে। জল সংরক্ষণের জন্য আমরা এই মেলাগুলিকে কাজে লাগাতে পারি। সমাজের সব শ্রেণীর লোকজন এই মেলায় আসেন। জল বাঁচানোর খবর আমরা এখানেই প্রদর্শনীর আয়োজন করে, নাটক করে খুব চমৎকার ভাবে পৌঁছে দিতে পারি। উৎসবের সঙ্গে সঙ্গে জল সংরক্ষণের ব্যবস্থাও হয়ে যাবে।
বন্ধুগণ, জীবনে কিছু কিছু বিষয় আমাদের উৎসাহিত করে, বিশেষত শিশুদের উপলব্ধি, তাদের কৃতিত্ব আমাদের যেন নতুন জীবনীশক্তি যোগায়। এইজন্যেই আজ কয়েকটি বাচ্চার কথা আপনাদের শোনাতে ইচ্ছে করছে। এরা হল নিধি বাইপটু, মনীশ যোশী, দেবাংশী রাওয়াত, তনুষ জৈন, হার্শ দেওধারকার,অনন্ত তেওয়ারি,প্রীতি নাগ, অথর্ব দেশমুখ,অরণ্যতেশ গাঙ্গুলি এবং হৃতিক অলা-মন্দা।
এদের সম্বন্ধে আমি যা বলবো, তাতে আপনাদেরও গর্ব হবে, আপনাদের মধ্যেও এক তেজ সঞ্চারিত হবে। আমরা সবাই জানি, ‘ক্যান্সার’ এমন একটি শব্দ যাকে পুরো দুনিয়া ভয় পায়। এমন মনে হয় মৃত্যু দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু এই দশটি বাচ্চা জীবনের যুদ্ধে শুধু ক্যান্সারের মতো ঘাতক রোগকেই পরাজিত করেনি, সেই সঙ্গে নিজেদের কৃতিত্বে গোটা দুনিয়ায় ভারতের নাম উজ্জ্বল করেছে। খেলাধূলার ক্ষেত্রে আমরা প্রায়ই দেখি যে একজন খেলোয়াড় টুর্নামেন্ট জেতার পর বা পদক পাওয়ার পরই চ্যাম্পিয়ন হন, কিন্তু এ এক দুর্লভ অভিজ্ঞতা, যেখানে এরা প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার আগেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে — এবং তাও আবার জীবন যুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন।
এই মাসেই মস্কোয় World Children’s Winners Games–এর আয়োজন হয়েছিল। এটি একটি অনন্য ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, যাতে ‘ইয়ং ক্যানসার সারভাইভারস্’ অর্থাৎ যে সব ছোটরা নিজেদের জীবনে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে জিতে বেরিয়ে আসতে পেরেছে, একমাত্র তারাই অংশ নিতে পারে। এতে শ্যুটিং, দাবা, সাঁতার, দৌড়, ফুটবল, টেবিল টেনিসের মত খেলার আয়োজন করা হয়। আমাদের দেশের এই দশ কৃতী চ্যাম্পিয়ন এই টুর্নামেন্টে পদক জিতেছে। এদের মধ্যে কয়েকজন তো আবার একাধিক খেলায় পদক জিতেছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমার বিশ্বাস, আকাশ পেরিয়ে সুদূর অন্তরীক্ষে ভারতের সাফল্যেও আপনারা নিশ্চয়ই গর্বিত হয়েছেন — ‘চন্দ্রযান ২’।
রাজস্থানের যোধপুর থেকে সঞ্জীব হরিপুরা, কলকাতা থেকে মহেন্দ্র কুমার দাগা, তেলেঙ্গানা থেকে পি. অরবিন্দ রাও-এর মত অনেকেই সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ‘নরেন্দ্রমোদী অ্যাপ’ এবং ‘মাই গভ’-এ এই বিষয়ে লিখেছেন এবং ‘চন্দ্রযান-২’-এর বিষয়ে আলোচনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
আসলে মহাকাশ গবেষণার দৃষ্টিকোণ থেকে ২০১৯ সালটি ভারতের জন্য খুব ভালো একটি বছর। আমাদের বৈজ্ঞানিকরা মার্চ মাসে ‘A-Sat’ উৎক্ষেপণ করেছিলেন এবং তারপর এই
চন্দ্রযান-২। নির্বাচনের তালেগোলে সেই সময়ে ‘A-Sat’-এর মত এতো বড় আর গুরুত্বপূর্ণ খবরটি নিয়ে বেশি চর্চা করা সম্ভব হয়নি। মাত্র ৩ মিনিটের মধ্যে ‘A-Sat’ মিসাইল ৩০০ কিলোমিটার দূরের স্যাটেলাইটকে আঘাত করতে সক্ষম হয়েছিল। ভারত হল পৃথিবীর চতুর্থ দেশ যারা এই বিশেষ ক্ষেত্রটিতে সাফল্য অর্জন করল। সম্প্রতি গত ২২-শে জুলাই পুরো দেশ সগর্বে দেখেছে কীভাবে শ্রীহরিকোটা থেকে চন্দ্রযান-২ অন্তরীক্ষ অভিমুখে রওনা দিয়েছে। ‘চন্দ্রযান-২’-এর সফল উৎক্ষেপনের সেই সব ছবি দেশবাসীকে গৌরবে, শক্তিতে ও প্রসন্নতায় ভরিয়ে দিয়েছে।
‘চন্দ্রযান-২’অনেক অর্থে একটি বিশেষ ধরনের মিশন। ‘চন্দ্রযান -২’চাঁদকে নিয়ে আমাদের ধারণাকে আরো স্পষ্ট করবে’।চাঁদ সম্পর্কে সবিস্তারে জানলেও আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন যে চন্দ্রযান-২ থেকে সবচেয়ে বড় কোন দুটি শিক্ষণীয় তত্ত্ব আমরা জানতে পেরেছি তাহলে আমি বলবো তা হলো – বিশ্বাস আর নির্ভীকতা।আমাদের উচিত নিজেদের প্রতিভা আর ক্ষমতার ওপর বিশ্বাস রাখা।আপনারা জেনে খুশি হবেন যে ‘চন্দ্রযান-২’সম্পূর্ণ ভারতীয় একটি উদ্যোগ।এটি মনে প্রাণে ভারতীয়। এটি সম্পূর্ণ রূপে একটি স্বদেশী মিশন। এই মিশনটি আবার এই কথাটি প্রমাণকরলো যে নবদিগন্ত উন্মোচনে, উদ্ভাবনী শক্তিতে আমাদের বৈজ্ঞানিকরা সর্বশ্রেষ্ঠ এবং বিশ্বস্তরের।
দ্বিতীয় শিক্ষণীয় কথা হলো : কোনো ব্যবধান, কোনো অন্তরায়ই বাধার নয়, ঘাবড়াবার কারণ নয়। যেভাবে আমাদের বৈজ্ঞানিকেরা রেকর্ড সময়ে, দিন রাতকে এক করে সব প্রযুক্তিগত সমস্যাগুলিকে ঠিক করে চন্দ্রযান-২ কে লঞ্চ করলেনতা অভূতপর্ব।বৈজ্ঞানিকদের এই মহান তপস্যাকে সারা দুনিয়া দেখলো।এতে আমাদের সবার গর্ব হওয়া উচিত।বাধা সত্ত্বেও চন্দ্রযান-২’-এর পৌঁছনোর সময় অপরিবর্তিত রেখে বৈজ্ঞানিকরা এর সফল উৎক্ষেপণ করলেনএটা অনেকের কাছে আশ্চর্যের বিষয়।আমরা আমাদের জীবনেও এইরকম temporary setbackঅর্থাৎ সাময়িক বাধার সম্মুখীন হই।কিন্তু সবসময় এটা মনে রাখবেন যে এই বাধাকে অতিক্রম করার সামর্থ্যও আমাদের ভেতরে আছে।
আমারদৃঢ় বিশ্বাস যে এই ‘চন্দ্রযান-২’অভিযান দেশের যুবদের বিজ্ঞান আর নতুনত্ব উদ্ভাবনের দিকে প্রেরণা যোগাবে।এটি চূড়ান্ত সত্য যে বিজ্ঞানই উন্নয়নের পথ। আমরা এখন অধীর আগ্রহে সেপ্টেম্বর মাসের প্রতীক্ষায় আছি যখন চাঁদের জমিতে দুটি lander—বিক্রম আর রোভার অবতরণ করবে।
আজ আমি ‘মন কি বাত’-এর মাধ্যমে আমার দেশের বিদ্যার্থী বন্ধুদের, আমার যুব বন্ধুদের এক চিত্তাকর্ষক প্রতিযোগিতা,মানে একটা competitionএর ব্যাপারে কিছু জানাতে চাই আর দেশের যুবক-যুবতীদের আমন্ত্রণ জানাতে চাই একটি কুইজ কম্পিটিশনে।মহাকাশ আর অন্তরীক্ষকে ঘিরে জিজ্ঞাস্য, ভারতের মহাকাশ অভিযান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এই প্রশ্নোত্তরের মুখ্য বিষয়—যেমন ধরুন রকেট লঞ্চ করতে গেলে কি কি করতে হবে, একটি উপগ্রহকে কি করে কক্ষপথে পাঠানো হয় অথবা এই স্যাটেলাইট বা উপগ্রহ থেকে আমরা কি কি জানতে পারি, A-Satকি ..এইরকম অনেক কথা।এর সম্পূর্ণ বিবরণ MyGovওয়েবসাইট-এ পয়লা অগাস্ট দেওয়া হবে |
আমি আমার যুব বন্ধুদের অনুরোধ করবো যে তারা যেন এই কুইজ কম্পেটিশনে অংশ নেন আর এটিকে আরওমনোগ্রাহী আর স্মরণীয় করে তোলেন।আমি সব স্কুলগুলিকে, অভিভাবকদের, উৎসাহী শিক্ষক আর আচার্য্যদের বিশেষ ভাবে অনুরোধ করবো যে নিজেদের স্কুলকে বিজয়ী করতে তাঁরা যেন যথাসাধ্য চেষ্টা করেন।সব ছাত্রদের এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে উৎসাহিত করুন আর সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ব্যাপারটি এই যে প্রতিটি রাজ্য থেকে সবচেয়ে বেশি স্কোর করা বিদ্যার্থীদের ভারত সরকার নিজের খরচে শ্রীহরিকোটায় নিয়ে যাবে আর সেপ্টেম্বর মাসে সেই মুহূর্তেরসাক্ষী হবার সুযোগ দেবে যখন চাঁদের ওপর চন্দ্রযান অবতরণ করবে।সেই বিজয়ী, সেই কৃতীছাত্রদের জীবনে এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হবে – কিন্তু তার জন্যে আপনাদের এই Quiz Competition এ অংশ নিতে হবে, সবচেয়ে বেশি নম্বর পেতে হবে।আপনাকে বিজয়ী হতে হবে।
বন্ধুরা, আমার এই উপদেশ আপনাদের নিশ্চয়ই ভালো লেগেছে, কারণ এটা একটা মজাদার বিনোদনের উপায় — তাই না? আর তাই আমরা যেন Quiz-এ অংশগ্রহণ করতে না ভুলি এবং আমাদের বন্ধুদেরও যতটা সম্ভব অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনারা একটি বিষয় লক্ষ্য করে থাকবেন, আমাদের ‘মন কি বাত’ ‘স্বচ্ছতা অভিযান’কে বিভিন্ন সময় গতি প্রদান করেছে। স্বচ্ছতার জন্য যে সব প্রচেষ্টা চলছে, তা ‘মন কি বাত’-কে সবসময় প্রেরণা দিয়েছে। ৫ বছর আগে যে সফর শুরু হয়েছিল তা আজ সবার সহযোগিতায় স্বচ্ছতার নতুন নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে। এটা ঠিক যে, স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে আমরা এখনও আদর্শ অবস্থা অর্জন করতে পারি নি, কিন্তু যেভাবে ‘খোলা জায়গায় শৌচকর্ম’ বিরোধী অভিযান থেকে সার্বজনিক স্থানগুলিতে স্বচ্ছতা অভিযান সাফল্য পেয়েছে, সেটা ১৩০ কোটি দেশবাসীর ইচ্ছাশক্তির ফল। কিন্তু এটুকুতেই আমরা থেমে যাব না। এই আন্দোলন এখন ‘স্বচ্ছতা’ থেকে ‘সৌন্দর্য’-এর দিকে পা বাড়িয়েছে। কিছুদিন আগে আমি মিডিয়াতে শ্রী যোগেশ সাইনি আর ওঁর টিমের একটি খবর দেখছিলাম। যোগেশ সাইনি একজন ইঞ্জিনিয়র যিনি ভারত মাতাকে সেবা করার উদ্দেশ্যে তিনি আমেরিকার চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে এসেছেন। তিনি কিছুদিন আগে দিল্লিকে শুধু ‘স্বচ্ছ’ই নয়, ‘সুন্দর’ করে তোলারও দায়িত্ব নেন। উনি নিজের টিমের সঙ্গে লোদী গার্ডেনের আস্তাকুঁড় থেকে সৌন্দর্যায়নের কাজ শুরু করেন। ‘স্ট্রিট আর্ট’-এর মাধ্যমে দিল্লির বহু এলাকাকে খুব সুন্দর চিত্র দিয়ে সাজিয়ে তুলতে থাকেন। ওভারব্রিজ আর স্কুলের দেওয়াল থেকে শুরু করে ঝুপড়ি-বস্তিগুলোকে যখন উনি সুন্দর করে তুললেন, তখন আরও অনেকেই এগিয়ে আসতে লাগলেন এবং এই ভাবে কাজটি এগোতে লাগল। আপনাদের মনে থাকবে, কুম্ভ মেলার সময়ে ‘স্ট্রিট পেইন্টিং’ দিয়ে কীভাবে প্রয়াগরাজকে সাজানো হয়েছিল। আমি জানতে পারলাম যোগেশ সাইনি আর ওঁর টিম এই কাজেও অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছিল। রঙ আর রেখায় কোনও শব্দ হয়ত হয় না, কিন্তু এদের সাহায্যে তৈরি ছবিতে যে রামধনু ফুটে ওঠে, তার প্রভাব হাজার হাজার শব্দের চেয়েও বেশি অর্থবহ হয়। ‘স্বচ্ছতা অভিযান’-এর মধ্যেও আমরা এই সৌন্দর্য অবলোকন করে থাকি। আমাদের জীবনে ‘Waste to Wealth’ — আবর্জনা থেকে সম্পদ বানানোর প্রচেষ্টা তৈরি হোক, এটা খুব জরুরি। অর্থাৎ, আমাদের আবর্জনা থেকে সোনা বানানোর লক্ষ্যে এগোতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছুদিন আগে ‘মাই গভ’ পোর্টালে আমি একটি চিত্তাকর্ষক মন্তব্য পড়ি। মন্তব্যটি জম্মু-কাশ্মীরের সোপিয়ান জেলা নিবাসী ভাই মহম্মদ আসলাম-এর ছিল।
তিনি লিখেছেন — ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানটি শুনতে ভালো লাগে। আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আমি নিজের রাজ্য জম্মু-কাশ্মীরে Community Mobilisation Programme ‘Back to Village’–এর আয়োজনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করি। এই অনুষ্ঠানটি জুন মাসে আয়োজন করা হয়েছিল। আমার মনে হয় এই অনুষ্ঠানটি প্রত্যেক তিন মাস অন্তর আয়োজন করা উচিত। এর সঙ্গে, অনুষ্ঠানটির online monitoring-এর আয়োজন করা উচিত। আমার মনে হয়, এটা প্রথম এমন একটি অনুষ্ঠান যেখানে, জনগণ সরকারের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পেরেছিল।
ভাই মুহাম্মদ আসলামজি আমাকে যে বার্তা পাঠিয়েছেন, সেটি পড়ার পরে, “Back to Village” প্রকল্প সম্বন্ধে আমার জানার আগ্রহ বেড়ে যায়। তাই আমি এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে পড়লাম, এবং তখন আমার মনে হলো যে এটি সারা দেশকে জানানো দরকার।কাশ্মীরের মানুষ দেশের উন্নতির মূলধারার সঙ্গে যুক্ত হতে কতখানি আগ্রহী তা এই প্রকল্পের কথা থেকে বোঝা যায়। এই কার্যক্রমে, প্রথমে উচ্চ পদাধিকারীরা গ্রামে গিয়ে সেখানকার মানুষের সঙ্গে দেখা করেন।যে সমস্ত কর্মচারীরা আগে কখনো গ্রামবাসীদের দেখেননি, তারা নিজেরাই তাদের দরজায় কড়ানাড়লেন।উদ্দেশ্য, প্রগতির পথে যে সমস্ত বাধা ও সমস্যা আছে, সেগুলোকে দূর করা।রাজ্যের প্রায় সাড়ে চার হাজার গ্রাম-পঞ্চায়েতে সপ্তাহব্যাপী এই কার্যক্রমের মাধ্যমে সরকারি পদাধিকারীরা গ্রামের মানুষদের বিভিন্ন সরকারি যোজনা ও প্রকল্পের তথ্য বিস্তারিতভাবে জানালেন।তাঁরাও জেনে নিলেন যে, গ্রামবাসীরা আদৌ সরকারি পরিষেবা পাচ্ছেন কিনা।কীভাবে পঞ্চায়েতগুলিকে আরও শক্তিশালী বানানো যেতে পারে? তাদের আয় কীভাবে বাড়ানো যেতে পারে? সরকারি পরিষেবা গ্রামের সাধারণ মানুষেরজীবনে কি প্রভাব ফেলতে পারছে? এই সবকিছুই ছিল “Back to Village” প্রকল্পের উদ্দেশ্য।গ্রামবাসীরাও এই সুযোগে নিজেদের সমস্যাগুলির কথা খুলে বলতে পারলেন।সাক্ষরতার হার, লিঙ্গানুপাত, স্বাস্থ্য, পরিবেশ পরিচ্ছন্নতা, জল সংরক্ষণ,বিদ্যুৎ, পানীয় জল, মেয়েদের শিক্ষা, বয়স্কদের দেখভাল ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বন্ধুগণ, এই কার্যক্রম কেবলমাত্র কোনো নথিপত্র তৈরির উদ্দেশ্যে করা হয়নি।আর তাই, সরকারের তরফে যারা গ্রামে গিয়েছিলেন, তাঁরা সেদিনই ফিরে গেলেন না, বরং, দুদিন এবং এক রাত তারা পঞ্চায়েতেই কাটালেন।এর ফলে তাঁরা গ্রামে থাকার সুযোগ পেলেন।চেষ্টা করলেন, প্রত্যেকের সঙ্গে দেখা করার, প্রত্যেক সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করার। কার্যক্রমটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার উদ্দেশ্যে আরও কিছু কিছু জিনিস এতে যোগ করা হয়েছিল।“খেলো ইন্ডিয়া”যোজনার অন্তর্গত বাচ্চাদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল।এই অনুষ্ঠানে বিতরণ করা হয়েছিল খেলাধুলোর সরঞ্জাম,‘মনরেগা’প্রকল্পের কাজ পাওয়ার কার্ড এবং তপশিলিজাতি ও উপজাতিদের শংসাপত্র।অর্থনৈতিক সাক্ষরতা শিবির খোলা হয়েছিল।কৃষি, উদ্যানপালন প্রভৃতি সরকারি দপ্তরের তরফে স্টল দেওয়া হয়েছিল।সেখানে বিভিন্ন সরকারি যোজনাগুলি সম্বন্ধে মানুষকে সচেতন করার জন্য প্রচার চালানো হয়।এইভাবে এই আয়োজন যেন একটি বিকাশ উৎসবে পরিণত হয়েছিল।এটা ছিল জন অংশীদারিত্বের উৎসব, জন জাগরণের উৎসবও বটে।কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ এই বিকাশ উৎসবে মন খুলে শামিল হয়েছিলেন।আনন্দের কথা এই যে, অত্যন্ত দূর দূরান্তের গ্রামেও, “Back to Village” কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল।সরকারি কর্মচারী ও পদাধিকারীরা সেজন্য দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা, একদিন বা দেড়দিনের পদব্রজে অতিক্রম করেন।যে সমস্ত সীমান্তবর্তী গ্রামগুলি প্রায়ই সীমান্তপারের গোলাগুলি বিনিময় দেখে অভ্যস্ত, সেইসব গ্রামগুলিতেও আধিকারিকেরাপৌঁছে গেছেন।শুধু তাই নয়, সোপিয়ান, পুলওয়ামা, কুলগাম এবং অনন্তনাগ জেলার অত্যন্ত সংবেদনশীল এলাকাগুলোতেও সরকারি পদাধিকারীরা নির্ভয়ে গেছেন।কোনো কোনো অফিসার গ্রামবাসীদের তরফে দেওয়া উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়ে এতটাই অভিভূত হয়েছিলেন যে তাঁরা দুদিনেরওবেশি সময় সেই গ্রামে রয়ে যান।এইসব এলাকায় গ্রামসভারউদ্যোগে প্রচুর মানুষের অংশগ্রহণ এবং নিজেদের উন্নতির জন্য যোজনা তৈরিতে অংশীদারিত্ব সত্যিই খুব আনন্দের বিষয়।নব উদ্যমে এবং নতুন সংকল্পের এ এক চমকপ্রদ ফলাফল।এমন ধরনের কর্মসূচি এবং তাতে মানুষের অংশীদারিত্ব এটাই প্রমাণকরে যে আমাদের কাশ্মীরেরভাই-বোনেরা সুশাসনপেতে আগ্রহী।প্রগতির শক্তি যে সবসময় বোমা-বন্দুকের শক্তির চেয়ে বেশি এ-কথার প্রমাণ মেলে এইভাবে।যে সমস্ত ব্যক্তি উন্নয়নের রাস্তায় ঘৃণার কাঁটা ছড়াতে চান এবং প্রগতিকে আটকাতে চান, তারা যে কখনোই নিজেদের ঘৃণ্য অভিসন্ধিতে সফল হবে না একথা আজ দিনের আলোর মত স্পষ্ট।
আমার প্রিয় দেশবাসী, জ্ঞানপীঠ পুরস্কারে সম্মানিত শ্রীমান দত্তাত্রেয় রামচন্দ্র বেন্দ্রে তাঁর একটি কবিতায় শ্রাবণমাসের রূপ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, “হোডিগে মাডিগে আগ্যেদলগ্না, আদ্রাগ ভূমি মগ্না”, অর্থাৎ, বর্ষার ছন্দ এবং বারিধারার বন্ধন অনবদ্য।সেই সৌন্দর্য দর্শন করে পৃথিবী মগ্ন।
সমগ্র ভারতে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ভাষার লোকেরা শ্রাবণ মাস নিজেদের মতো করে পালন করেন। এই ঋতুতে যখনই আমাদের আশেপাশে নজর যায়, মনে হয় যেন বসুন্ধরা সবুজ চাদর গায়ে দিয়েছে। চারদিকে এক নতুন শক্তির উদ্গমন হতে থাকে। এই পবিত্র মাসে অনেক তীর্থযাত্রী কাঁবড় যাত্রা আর অমরনাথ যাত্রা করেন, আবার কিছু লোক উপবাস করেন এবং জন্মাষ্টমী ও নাগপঞ্চমীর মতো উৎসবের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকেন। এই সময়েই ভাই-বোনের ভালোবাসার উৎসব রাখীবন্ধনও পালন করা হয়। শ্রাবণ মাসের কথা যখন হচ্ছে, আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন এবারের অমরনাথ যাত্রায় গত চার বছরের মধ্যে সবথেকে বেশি তীর্থযাত্রী অংশগ্রহণ করেছেন। ১লা জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত তিন লাখেরও বেশি তীর্থযাত্রী পবিত্র অমরনাথ গুহার দর্শন করেছেন। ২০১৫ তে ৬০ দিন ধরে চলা এই যাত্রায় যত তীর্থযাত্রী অংশগ্রহণ করেছিলেন তার থেকেও বেশি তীর্থযাত্রী মাত্র ২৮ দিনে এবার সামিল হয়েছেন।
অমরনাথ যাত্রার সফলতার জন্য, আমি বিশেষ করে জম্মু-কাশ্মীরের লোকেদের ও তাঁদের অতিথিপরায়ণতারও প্রশংসা করতে চাই। যাঁরা যাত্রা সেরে ফিরে এসেছেন, তাঁরা ওই রাজ্যের লোকেদের আদর যত্ন ও আতিথেয়তার উষ্ণ স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে এসেছেন।এই সমস্ত বিষয় ভবিষ্যতে পর্যটনের উন্নতিতে সাহায্য করবে। আমাকে বলা হয়েছে উত্তরাখণ্ডেও এ বছর যেদিন থেকে চার ধাম যাত্রা শুরু হয়েছে, সেদিন থেকে দেড় মাসের মধ্যে ৮ লাখেরও বেশি তীর্থযাত্রী কেদারনাথ ধাম দর্শন করেছেন। ২০১৩-তে বিশাল প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর, প্রথম বার এত রেকর্ড সংখ্যায় তীর্থযাত্রী ওখানে পৌঁছেছেন।
আমার আপনাদের সবার প্রতি অনুরোধ, দেশের ওই সব অঞ্চলে আপনি অবশ্যই যান, যেখানকার সৌন্দর্য্য, বর্ষার সময় দেখতে চমৎকার লাগে। নিজের দেশের এই সৌন্দর্য্যকে দেখতে আর নিজের দেশের মানুষের আবেগকে বুঝতে, পর্যটন এবংতীর্থযাত্রা, মনে হয় এর থেকে বড় কোনো শিক্ষক হতে পারে না।
আমার আপনাদের সবার প্রতি শুভকামনা রইল যে, শ্রাবণের এই সুন্দর আর সজীব মাস আপনাদের সবার মধ্যে নতুন শক্তি, নতুন আশা এবং নতুন উদ্যমের সঞ্চার করুক। একই ভাবে অগাস্ট মাস ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের স্মৃতি বয়ে নিয়ে আসে। আমি চাই আপনারা ১৫-ই আগস্টের জন্য কিছু বিশেষ প্রস্তুতি নিন। স্বাধীনতার এই উৎসব পালনের জন্য এক নতুন পদ্ধতি খুঁজুন। আরও বেশি লোক অংশগ্রহণ করুক। ১৫-ইআগস্ট কি করে জনগণের উৎসব হতে পারে? এই চিন্তা আপনি নিশ্চয়ই করবেন। অন্য দিকে এটা সেই সময়, যখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। অনেক জায়গায় দেশবাসী বন্যার কবলে পড়েছেন। বন্যার ফলে কত রকমের ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়। বন্যার সংকটে থাকা সবাইকে আমি আশ্বস্ত করছি, যে কেন্দ্র, রাজ্য সরকারের সঙ্গে মিলে পীড়িত লোকেদের সবরকমের সাহায্য প্রদান করার কাজ অতি দ্রুত গতিতে করছে। আমরা যখন টিভি দেখি, একদিকে বর্ষাতে চার দিকে বন্যা, জল থই থই, ট্রাফিক জ্যাম। বর্ষার অন্য এক ছবি— যেখানে আনন্দ করছে আমাদের কৃষক, পাখির কলতান, ঝরনা বয়ে যাচ্ছে, সবুজের চাদর গায়ে বসুন্ধরা— এসব দেখতে আপনাকে পরিবারের সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে পড়তে হবে। বৃষ্টি, সতেজতা আর খুশি অর্থাৎ Freshnessআর happiness দুটোকে এক সঙ্গেনিয়ে আসে।আমার কামনা – এই বর্ষা আপনাদের সবাইকে নিরন্তর খুশিতে ভরে দিক।আপনারা সবাই সুস্থ থাকুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কি বাত’—কোথা থেকে শুরু করি, কোথায় থামি—বড় কঠিন কাজ মনে হয়, কিন্তু, সবশেষে সময়ের একটা সীমাথাকে।এক মাস অপেক্ষার পর আবার আসবো। আবার কথা হবে। সারা মাস ধরে আপনারা আমাকে অনেক কিছু কথা জানাতে থাকুন।আমি পরবর্তী ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে সেগুলোকে সামিল করতে চেষ্টা করবো।আর আমার যুবা বন্ধুদের বলতে চাই quiz competition-এর সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। শ্রীহরিকোটা যাওয়ার যে সুযোগ এসেছে সেটা কোনো ভাবেই ছাড়বেন না।
আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ! নমস্কার!
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার!এক দীর্ঘ ব্যবধানের পর আবারো একবার আপনাদের সবার সঙ্গে ‘মন কি বাত’, ‘জন কি বাত’, ‘জন-জন কি বাত’, ‘জন-মন কি বাত’-এর ধারাবাহিকতা শুরু করছি। ভোটের সরগরম দিনগুলিতে ব্যস্ততা তুঙ্গে থাকলেও ‘মন কি বাত’-এর আনন্দ হারিয়ে গিয়েছিল। একটা অভাব বোধ করছিলাম। নিজেদের মধ্যে হালকা পরিবেশে, ১৩০ কোটি দেশবাসীর একজন হয়ে কতরকম কথা শুনতাম, পুনরাবৃত্তি করতাম আর কখনও কখনও নিজেদের কথাই নিজেদের প্রেরণাস্রোত হয়ে উঠত। আপনারা কল্পনা করে নিন এই মাঝখানের সময়টুকু কীরকম গেছে। রবিবার, প্রত্যেকটি শেষ রবিবার ১১ টা বাজলেই আমার মনে হত আরে, কিছু যেন বাকি রয়ে গেল। আপনাদেরও মনে হত তো? নিশ্চয়ই মনে হত। আসলে এ যে কোন নিষ্প্রাণ অনুষ্ঠান ছিল না। এতে সজীবতা ছিল, অন্তরঙ্গতা ছিল, মন যুক্ত ছিল, হৃদয় জড়িত ছিল আর এই কারণেই মাঝখানের এই সময়টুকু খুব কঠিন মনে হয়েছে আমার। আমি প্রতিটি মুহূর্তে কিছু miss করতাম। যখন আমি ‘মন কী বাত’-এ মনের কথা বলি, তখন যদিও বলতাম আমিই, শব্দগুলিও আমার, গলার আওয়াজও আমার, কিন্তু বক্তব্য ছিল আপনাদের, পুরুষার্থ ছিল আপনাদের, পরাক্রমও ছিল আপনাদেরই। আমি তো শুধুমাত্র আমার শব্দ, আমার বাণীর প্রয়োগ করতাম। আর এই কারণেই আমি এই অনুষ্ঠানটি নয়, আপনাদের miss করতাম। এক রিক্ততা অনুভব করতাম। একবার তো মনে হল ভোট শেষ হতেই আপনাদের কাছে চলে আসি, কিন্তু পরক্ষণেই মনে হল — না, ওই রবিবারের পর্যায়ক্রমটি ধরে রাখা উচিৎ। কিন্তু এই রবিবার আমায় অনেক অপেক্ষা করিয়েছে। যাক, শেষ পর্যন্ত সুযোগও এসে গেছে। এক ঘরোয়া পরিবেশে, ‘মন কী বাত’ অর্থাৎ ছোটো ছোটো হালকা মনের কথা, যা সমাজে, জীবনে হয়ে উঠতে পারে পরিবর্তনের কারণ, তার ধারাবাহিকতা এক নতুন উদ্দীপনার জন্ম দিক আর এইভাবে নবীন ভারতের আত্মাকে বলীয়ান করে তুলে এই ধারাবাহিকতা এগিয়ে চলুক।
গত কয়েক মাস ধরে বেশ কিছু বার্তা এসেছে, যাতে লোকেরা জানিয়েছেন তাঁরা ‘মন কি বাত’ missকরছেন। যখন আমি এগুলো পড়ি, শুনি, আমার ভালো লাগে। অন্তরঙ্গতা অনুভব করি। কখনও আমার মনে হয় এ আমার একক থেকে সমষ্টির দিকে যাত্রা, ‘অহম্’ থেকে ‘বয়ম্’ অর্থাৎ ‘আমি’ থেকে ‘আমরা’–র দিকে যাত্রা। আপনাদের সঙ্গে আমার এই মৌণ আদানপ্রদান, আমার কাছে এ এক প্রকার আধ্যাত্মিক যাত্রার অনুভূত অংশ ছিল। অনেকে আমাকে এ-ও জিজ্ঞাসা করেছেন ভোটের ঐ ব্যস্ততার মধ্যে আমি কেদারনাথ কেন গিয়েছিলাম।
আপনাদের অধিকার আছে এবং আমি আপনাদের এই কৌতুহল বুঝতে পারি। আমার এ-ও মনে হয়, আমার ঐ সময়ের অবস্থার কথা কখনও আপনাদের কাছে বলি। কিন্তু আজ আমার মনে হয়, এখন যদি ঐসব কথা বলতে বসি, তবে ‘মন কি বাত’-এর স্বরূপটাই বদলে যাবে। ভোটের তুমুল ব্যস্ততা, হার-জিতের অনুমান এবং পোলিং তখনও বাকি, যখন আমি বেরিয়ে পড়েছিলাম। বেশির ভাগ মানুষই এর মধ্যে রাজনৈতিক মানে খুঁজে নিয়েছিলেন। কিন্তু আমার জন্য এ ছিল নিজের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ। বলতে পারেন আমি আমার সঙ্গে মিলিত হতে গিয়েছিলাম। আজ এর থেকে বেশি কিছু বলব না, তবে এটুকু নিশ্চয়ই বলব, ‘মন কি বাত’-এর এই ব্যবধানের জন্য যে রিক্ততা সৃষ্টি হয়েছিল, কেদারের উপত্যকায়, ঐ একান্ত গুহাটি বোধহয় তার কিছুটা হলেও পূর্ণ করার সুযোগ করে দিয়েছিল। বাকিটুকু, যা আপনারা জানতে চেয়েছেন কোনো একসময়ে সে কথাও জানাবো। কবে বলতে পারবো — জানি না, তবে নিশ্চয়ই বলব, কারণ আপনাদের অধিকার আছে আমার ওপর। যেরকম কেদারের বিষয়ে লোকেরা জানার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন, সেইরকম একটি ইতিবাচক শক্তি আপনাদের চেষ্টায়, আপনাদের কথায় আমি সর্বক্ষণ অনুভব করি।
‘মন কি বাত’-এর জন্য যে সমস্ত চিঠিপত্র আসে, যা যা input পাওয়া যায়, তা routine সরকারি কাজের থেকে একেবারেই আলাদা। বলা যেতে পারে, আপনাদের চিঠিগুলি কখনও আমাকে প্রেরণা যোগায়, আবার কখনও শক্তি প্রদান করে। কখনও কখনও তো আপনাদের কিছু কিছু শব্দ আমার চিন্তাভাবনাকে পর্যন্ত ধারালো করে তোলে। মানুষজন যেমন দেশ ও সমাজের সামনে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জের কথা বলেন, আবার সঙ্গে সঙ্গে তার সমাধানের কথাও বলেন। আমি লক্ষ্য করেছি, চিঠিতে সমস্যার বর্ণনা তো থাকেই, কিন্তু তার সঙ্গে এই বৈশিষ্ট্যও থাকে যে কোনও না কোনও সমাধান সূত্র, কিছু না কিছু পরামর্শ, কিছু কল্পনা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দেওয়া হয়। যদি কেউ স্বচ্ছতা নিয়ে লেখেন তিনি নোংরা আবর্জনা নিয়ে তাঁর বিরক্তির কথা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে স্বচ্ছতার প্রতি এই প্রচেষ্টাকে স্বাগতও জানান। কেউ যখন পরিবেশের কথা বলেন, তখন দূষণের প্রতি কষ্ট অনুভব করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাঁর নিজের চেষ্টার কথাও বলেন। যা যা উপায় অবলম্বন করা হচ্ছে, তার কথাও উল্লেখ করেন, আবার যে সমস্ত কল্পনা উনি মনে মনে এঁকে রেখেছেন পরিবেশ দূষণ রোধে, তার কথাও বলেন। অর্থাৎ সমস্যার সমাধান পুরো সমাজকে সঙ্গে নিয়ে কীভাবে সম্ভব তার এক ঝলক যেন আমি আপনাদের কথাবার্তা থেকে পাই। ‘মন কি বাত’ দেশ ও সমাজের কাছে একটি দর্পণের মতো। এ আমাদের বলে দেয় দেশবাসীর মধ্যে আন্তরিক শক্তি, সামর্থ্য ও প্রতিভার কোনো অভাব নেই। শুধু দরকার ঐ শক্তি ও প্রতিভাকে সঠিক পথে পরিচালিত করার, সুযোগ দেওয়ার, তাকে কাজে লাগানোর। ‘মন কি বাত’ এ-ও বলে দেয়, দেশের অগ্রগতিতে সমগ্র ১৩০ কোটি দেশবাসীর শক্তি ও সক্রিয়তাকে যুক্ত করতে হবে। আমি আরও একটি কথা অবশ্যই বলব যে ‘মন কি বাত’-এ আমার কাছে প্রচুর চিঠিপত্র আসে, অসংখ্য ফোন আসে, অনেক বার্তা আসে কিন্তু অভিযোগের মাত্রা থাকে খুব কম। কেউ কিছু চেয়েছেন, নিজের জন্য কিছু পাওয়ার কথা বলছেন এমনটা তো গত পাঁচবছরে একটিবারও হয়েছে বলে মনে করতে পারছি না।
আপনারা কল্পনা করতে পারেন, দেশের প্রধানমন্ত্রীকে কেউ চিঠি লিখছে কিন্তু নিজের জন্য কিছু চাইছে না? এটা দেশেরকোটি কোটি মানুষের উচ্চ চিন্তাধারার নিদর্শন। আমি যখন এই বিষয়গুলোকে খুঁটিয়ে দেখি, তখন আমার মনে কতআনন্দ হয়, কত উজ্জীবিত হই আমি সেটা আপনারা ভাবতেও পারবেন না। আপনারাই আমার চালিকাশক্তি, আমারএগিয়ে চলার পাথেয়, প্রতি মুহূর্তে আপনারা আমায় প্রাণবন্ত করে তোলেন। আপনাদের সঙ্গে আমার এইযোগাযোগকেই আমি মিস করতাম। আজ আমার মন খুশিতে ভরপুর। শেষবার যখন আমি বলেছিলাম যে আমরাআবার ৩-৪ মাস বাদে মিলিত হবো, তখন অনেকেই অনুমান করেছিল যে এর পেছনে নিশ্চই কোনো রাজনৈতিক স্বার্থআছে। কিছু লোক এ-ও বলেছিল যে মোদীজির কি কনফিডেন্স, কি আত্মবিশ্বাস! এই কনফিডেন্স মোদির ছিল না, এইবিশ্বাসের ভিত ছিল আমার ওপর আপনাদের ভরসা। আপনারাই আমার বিশ্বাসের আধার। আর তাই সহজভাবেই আমিশেষ ‘মন কি বাত’-এ ঘোষণা করেছিলাম যে কিছু মাস পর আমি আবার আপনাদের কাছে ফিরে আসব। আসলে আমিআসিনি, আপনারাই আমায় এনেছেন, আমায় অধিষ্ঠিত করেছেন, এবং আর একবার কথা বলার সুযোগ করেদিয়েছেন। এই ভাবনাকে পাথেয় করে চলুন ‘মন কি বাত’-এর ধারাবাহিকতাকে এগিয়ে নিয়ে যাই।
যখন দেশে জরুরি অবস্থা কার্যকর হয়েছিল তখন তার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুধুমাত্র রাজনৈতিক বৃত্ত, রাজনৈতিক নেতাবা কারাগারের গণ্ডি পর্যন্ত সীমিত ছিল না। প্রতিটি মানুষের মনের মধ্যে একটা চাপা ক্ষোভ ছিল, হারিয়ে যাওয়াগণতন্ত্রের জন্য প্রবল আকুতি ছিল। দিবা-রাত্র যখন সময়মতো আমরা খেতে পাই, তখন ক্ষুধার জ্বালা অনুভব করিনা।ঠিক তেমনই দৈনন্দিন জীবনে গনত্রন্ত্রের অধিকারের কী গুরুত্ব সেটা তখনই অনুভূত হয় যখন সেই অধিকার লুণ্ঠিতহয়। জরুরি অবস্থায় দেশের প্রতিটি নাগরিকের মনে হচ্ছিল যে তার থেকে কিছু ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। হয়ত সেঅধিকার সে জীবনে কোনও দিন প্রয়োগ করেনি, কিন্তু সেটাও হারানোর একটা ব্যথা তার মনে সঞ্চারিত হয়েছিল।আর এটা এই জন্য নয় যে ভারতীয় সংবিধান এমন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল যাতে গণতন্ত্রের শ্রীবৃদ্ধি হয়।সমাজব্যবস্থাকে সুষ্ঠভাবে চালাতে সংবিধান এবং আইনকানুনের প্রয়োজন। অধিকার এবং কর্তব্যের প্রসঙ্গও ওঠে।ভারত গর্বের সঙ্গে এ-কথা বলতে পারে যে আমাদের কাছে গণতন্ত্র সব আইনকানুনের ওপরে। গণতন্ত্র আমাদেরসংস্কার, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ঐতিহ্য, এবং এই ঐতিহ্যকে নিয়েই আমরা বড়ো হয়েছি। তাই এর অভাবআপামর দেশবাসী অনুভব করতে পারে, জরুরি অবস্থায় যা আমরাও অনুভব করেছিলাম। আর তাই দেশ একটা গোটানির্বাচনকে সমর্পণ করেছিল, নিজের জন্য নয় — শুধুমাত্র গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য। ১৯৭৭ সালে আমরাদেখেছিলাম কীভাবে গণতন্ত্র রক্ষার্থে নিজের অধিকার ও চাহিদাকে উপেক্ষা করে একটি সমগ্র দেশ মতাধিকার প্রয়োগকরেছিল। সম্প্রতি গণতন্ত্রের মহাপর্ব, সর্ববৃহৎ নির্বাচন প্রক্রিয়া আমাদের দেশে সম্পন্ন হল, যেখানে ধনী থেকে দরিদ্র, সবাই সানন্দে এই অভিযানে সামিল হয়ে দেশের ভবিষ্যৎ নির্ণয় করতে তৎপর হয়েছিল।
যখন কোনো বস্তু আমাদের অত্যন্ত কাছে থাকে, আমরা তার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারি না; তার অভিনব বিষয়গুলি ও অনেক সময় নজর এড়িয়ে যায়। আমাদের যে মূল্যবান গণতন্ত্র আছে, আমরা তাকে খুব সহজলভ্য মনে করে নিই। আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে যে এই গণতন্ত্র মহান, বহু বছরের সাধনা, বহু প্রজন্মের সংস্কার, এক মানসিক ব্যপ্তির ফসল এই গণতন্ত্র। ভারতে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে ৬১ কোটিরও বেশি মানুষ ভোটদান করেন, Sixty One Crore! সংখ্যাটা সামান্য মনে হতে পারে, কিন্তু গোটা দুনিয়ার নিরিখে দেখতে গেলে আমি বলব, এক চিন ছাড়া পৃথিবীর যে কোনো দেশের জনসংখ্যার থেকে বেশি মানুষ ভারতে ভোট দিয়েছেন।
যতজন ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন, সেই সংখ্যা আমেরিকার মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি, প্রায় দ্বিগুণ। ভারতের মোট ভোটদাতার সংখ্যা গোটা ইউরোপের জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। এগুলি আমাদের গণতন্ত্রের বিশালতা ও ব্যাপকতার পরিচায়ক। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন এখনও পর্যন্ত ইতিহাসে পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ গণতান্ত্রিক নির্বাচন। আপনি কল্পনা করতে পারেন — এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কী বিপুল আয়োজন ও মানব সম্পদের প্রয়োজন হয়। লক্ষাধিক শিক্ষক, আধিকারিক ও কর্মচারিদের কঠোর পরিশ্রমের জন্য এই নির্বাচন সম্ভব হয়েছে। গণতন্ত্রের এই মহাযজ্ঞকে সাফল্যপূর্বক সম্পন্ন করতে একদিকে যেমন আধা-সামরিক বাহিনীর প্রায় তিন লক্ষ সুরক্ষাকর্মীরা নিজেদের দায়িত্ব নিষ্পন্ন করেছেন, অন্যদিকে বিভিন্ন রাজ্যের কুড়ি লক্ষ পুলিশকর্মী অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। এঁদের কঠিন পরিশ্রমের ফলস্বরূপ এইবার, গত নির্বাচনের থেকে বেশি ভোটদান হয়। এই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রায় দশ লক্ষ Polling Station, প্রায় চল্লিশ লক্ষের বেশি EVMমেশিন, ১৭ লক্ষের বেশি VVPAT মেশিনের ব্যবস্থা করা হয় — কল্পনা করতে পারছেন, কী বিশাল মাপের কর্মকাণ্ড! এইসব সুনিশ্চিত করার জন্য যে, কেউ যেন তার ভোটাধিকার প্রয়োগে বঞ্চিত না থাকেন। অরুণাচল প্রদেশের এক প্রত্যন্ত জায়গায় কেবল একজন মাত্র মহিলা ভোটদাতার জন্য Polling Station বানানো হয়। আপনারা জেনে অবাক হবেন, নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকদের ওই জায়গায় পৌঁছনোর জন্য দু’দিন ধরে যাত্রা করতে হয়েছে। এটাই তো গণতন্ত্রের প্রকৃত সম্মান। পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু জায়গায় অবস্থিত ভোটদান কেন্দ্রও এই ভারতেই। হিমাচল প্রদেশের লাহুল-স্পিতি অঞ্চলে ১৫০০০ ফিট উচ্চতায় রয়েছে এই ভোটদান কেন্দ্র। এছাড়া আরও এক তথ্য আছে, যে বিষয়ে আমরা গর্ববোধ করতে পারি। সম্ভবত ইতিহাসে প্রথমবার মহিলারাও পুরুষদের মত উৎসাহের সঙ্গে ভোটদান করেছেন। এই নির্বাচনে পুরুষ ও মহিলা ভোটদাতার সংখ্যা প্রায় সমতুল্য। আরও এক অনুপ্রাণিত করার মত তথ্য হল এখন সংসদে ৭৮ জন মহিলা সাংসদ আছেন, যা এক রেকর্ড। আমি নির্বাচন কমিশনকে এবং ভোটদান প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেককে অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং ভারতের সচেতন ভোটদাতাদের প্রণাম জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনারা বেশ কয়েকবার আমার মুখে শুনে থাকবেন — “‘Bouquet’ নয়, বুক”। আমার ইচ্ছা ছিল অভ্যাগতদের আপ্যায়ণের জন্য যদি ফুলের তোড়ার বদলে বই দেওয়া যায়? এখন অনেক জায়গায় দেখছি এই ব্যবস্থা চালু হয়ে গেছে। আমাকে কিছুদিন আগেই একজন ‘প্রেমচাঁদ কী লোকপ্রিয় কাহাণীয়া’ বইটি উপহার দেয়। আমার খুব ভালো লাগে। খুব বেশি সময় না হলেও বিদেশে থাকাকালীন প্রেমচাঁদের গল্পগুলি আবার পড়ার সুযোগ পাই। উনি নিজের লেখায় সমাজচিত্রকে যথাযথ তুলে ধরেছেন। ওঁর লেখা পড়ার সময় আপনার মনেও সেই ছবি ফুটে ওঠে। ওঁর লেখা প্রত্যেকটি বিষয় যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। সহজ-সরল ভাষায় ব্যক্তি মানবমনের আবেগ, যা ওঁর লেখার বৈশিষ্ট্য, আমার মনকে বিশেষভাবে স্পর্শ করে ? আর গল্পগুলি গোটা ভারতের প্রতিচ্ছবি। যখন আমি ওঁর লেখা ‘Nasha’ নামক গল্পটি পড়ছিলাম, তখন অচিরেই সমাজের আর্থিক বৈষম্য প্রকট হয়ে ওঠে। আমার নিজের যুবক বয়সের স্মৃতি মনে পড়ে — যখন এই নিয়ে রাতভর তর্ক-বিতর্ক হত। জমিদার পুত্র ঈশ্বরী এবং গরীব ঘরের ছেলে বীর-এর এই গল্প থেকে আমরা শিক্ষা পাই যে অসৎ সঙ্গ থেকে সবসময় সাবধান থাকা উচিৎ। অসৎ সঙ্গ কখন সর্বনাশ ডেকে আনবে বোঝাও যায় না। আরেকটি গল্প, যা আমার হৃদয়কে গভীরভাবে নাড়া দেয়, সেটি হল ‘ঈদগাহ্’। গল্পের বিষয় এক বালকের সমবেদনা। নিজের দিদিমার প্রতি বিশুদ্ধ ভালোবাসা। চার-পাঁচ বছরের হামিদ যখন মেলা থেকে তার দিদিমার জন্য একটি চিমটে নিয়ে যায়, তখন সত্যিই মনে হয় মানব মনের ভালোবাসা, সহমর্মিতা কী অপূর্ব, কী অভাবনীয় হতে পারে। এই গল্পের শেষ লাইনটি আমাদের ভাবায়, শেখায় জীবনের এক অমোঘ সত্য।
“শিশু হামিদ, বৃদ্ধ হামিদের ভূমিকা পালন করেছিল — বৃদ্ধা আমিনা, বালিকা আমিনায় পরিবর্তিত হয়েছিল।”
এরকমই এক খুবই হৃদয়স্পর্শী গল্প হল ‘পুস কি রাত’। এই গল্পে এক গরীব কৃষকের জীবনের বিড়ম্বনারপ্রকৃত ছবি দেখতে পাওয়া যায়। নিজের ফসল নষ্ট হওয়ার পরেও কৃষক হলদু আনন্দিত হয়, কারণ তাকে আর শীতকালের ঠাণ্ডায় ক্ষেতের মধ্যে ঘুমোতে হবে না। যদিও এইসব গল্প প্রায় শতাব্দী প্রাচীন, তবুও এর প্রাসঙ্গিকতা আজও ততটাই অনুভূত হয়। গল্পটা পড়ার পর, আমার এক অন্য ধরনের অনুভুতি হয়।
যখন বই পড়ার কথা হচ্ছে, তখন কোন এক সংবাদমাধ্যমে, আমি কেরলের অক্ষরা লাইব্রেরি সম্বন্ধে পড়েছিলাম। আপনি এটা জেনে আশ্চর্য হবেন যে ওই লাইব্রেরি ইডুক্কির গভীর অরণ্যের এক গ্রামের মধ্যে অবস্থিত। ওখানকার এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পি.কে. মুরালিধরন আর এক ছোট্ট চায়ের দোকানের মালিক পি.ভি চিন্নাথাম্পি এই লাইব্রেরির জন্য অসামান্য পরিশ্রম করেছিলেন। একটা সময় এমনও ছিল, যখন বস্তায় ভরে পিঠের ওপর চাপিয়ে, এখানে বই আনা হত। আজ এই লাইব্রেরি আদিবাসী শিশুদের পাশাপাশি, সকলকেই এক নতুন দিশা দেখাচ্ছে।
গুজরাটের, ‘ওয়াংচে গুজরাট’ অভিযান, এক সফল উদ্যোগ। সব বয়সের, লক্ষ লক্ষ মানুষ, বই পড়ার এই অভিযানে অংশ নিয়েছিল। আজকের ডিজিটাল জগতে, গুগল গুরুর কালে, আমি আপনাদেরও অনুরোধ করব যে, একটু সময় বের করে, নিজের ডেইলি রুটিনে বইকেও যেন একটু স্থান দেওয়া হয়। আপনি সত্যিই খুব এনজয় করবেন আর যেই বই পড়ুন না কেন, সেই ব্যাপারে NarendraModiApp-এ অবশ্যই লিখবেন যাতে কিনা ‘মন কি বাত’-এর সকল শ্রোতারাও, সেই বিষয়ে অবগত হন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি খুব খুশি যে আমার দেশের জনগণ সেই সকল বিষয় নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করছে, যা কিনা কেবল বর্তমান নয়, ভবিষ্যতের জন্য এক বড় Challenge। আমি NarendraModiApp আর MyGov-এ আপনাদের কমেন্ট পড়ছিলাম। আমি লক্ষ্য করলাম যে জলের সমস্যা নিয়ে অনেকেই অনেক কিছু লিখেছেন।Belgavir পওয়ান গৌড়াই, ভুবনেশ্বরের সিতাংশু মোহন পারিদা, এছাড়াও ইয়াশ শর্মা, শাহাব আলতাফ এবং আরও অনেকেই জল সম্পর্কিত সমস্যার সম্বন্ধে লিখেছেন।
আমাদের সংস্কৃতিতে জলের খুব বড় প্রভাব রয়েছে। ঋকবেদের আপঃ সুক্তম-এ জলের সম্বন্ধে বলা হয়েছে যে,
আপো হিষ্ঠ ময়ো ভুবঃ স্থা ন উর্জে দধাতন,
মহে রণেয় চক্ষসে ইয়ো বহঃ শিবতমো রসঃ,
তস্য ভাজয়তেহ নঃ উশতিরিভ মাতরঃ।।
অর্থাৎ জলই হল জীবনদায়ী শক্তি। শক্তির স্রোত। আপনি মায়ের মত। অর্থাৎ আপনি মাতৃসম। আপনি মায়ের মতো আশীর্বাদ করুন। আমরা যেন সদা আপনার কৃপাধন্য থাকি।
জলের অভাবে দেশের বহু অংশ প্রতিবছর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আপনি আশ্চর্য হবেন জেনে যে এক বছরে, বর্ষাথেকে প্রাপ্ত জলের কেবল মাত্র ৮ শতাংশ আমাদের দেশে সংরক্ষণ করা হয়। শুধু মাত্র ৮ শতাংশ। কিন্তু এখন এই সমস্যার সমাধানের সময় এসেছে। আমি বিশ্বাস করি যে, আমরা অন্যান্য সমস্যার মতোই, গণ অংশগ্রহণের মাধ্যমে, জনগণের শক্তি দিয়ে, 130 কোটি দেশবাসীর সামর্থ্য, সহযোগিতা ও সংকল্পের সাহায্যে এই সংকটেরও সমাধান খুঁজে নেব।
জলের গুরুত্বকে সর্বাগ্রে রেখে দেশে নতুন জলশক্তি মন্ত্রক তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে জল সম্বন্ধিত সমস্ত বিষয়ে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে। কিছু দিন আগে আমি আলাদা কিছু উদ্ভাবন করার চেষ্টা করেছিলাম। আমি দেশের সমস্ত গ্রামপ্রধানকে চিঠি লিখেছিলাম। আমি গ্রামপ্রধানদের লিখেছিলাম জল বাচাঁতে, জল সঞ্চয় করতে, বর্ষার প্রতিটি ফোঁটাকে বাঁচাতে। তাঁরা গ্রামসভার বৈঠক ডেকে, গ্রামবাসীদের সঙ্গে বসে যেন শলা-পরামর্শকরেন। আমার ভালো লাগছে যে তাঁরা এ-বিষয়ে সম্পূর্ণ উৎসাহ দেখিয়েছেন এবং এ-মাসে ২২ তারিখে হাজার হাজার পঞ্চায়েতে কোটি কোটি লোক শ্রমদান করেছেন। গ্রামে গ্রামে লোকেরা জলের এক-এক ফোঁটা সঞ্চয় করতে সঙ্কল্প করেছেন। আজ ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আমি একজন গ্রামপঞ্চায়েতের কথা শোনাতে চাই। ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ জেলার কাটকামশাণ্ডী ব্লকের লুপুং গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান আমাদের সবাইকে কী বার্তা দিয়েছেন শুনুন —
আমার নাম দিলীপ কুমার রবিদাস। জল বাঁচাতে যখন প্রধানমন্ত্রী মহোদয় আমাদের চিঠি লিখেছেন, তো আমাদের বিশ্বাস হচ্ছিল না যে প্রধানমন্ত্রী আমাদের চিঠি লিখেছেন। যখন আমরা ২২ তারিখে গ্রামের সবাইকে জড়ো করে প্রধানমন্ত্রীর চিঠি পড়ে শোনাই, তো গ্রামের লোকেরা খুব উৎসাহিত হয়েছিলেন এবং জল বাঁচাতে পুকুর সংষ্কার ও নতুন পুকুর খুঁড়তে শ্রমদান করে নিজেদের কর্তব্য পালন করতে প্রস্তুত হয়ে গেলেন। বর্ষার আগে এই পদ্ধতি অবলম্বন করার ফলে ভবিষ্যতে আমাদের জলের অভাব হবে না। এটা খুব ভালো হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী আমাদের সঠিক সময়ে সতর্ক করে দিয়েছেন।
বিরসা মুণ্ডার ভূমি, যেখানে প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে থাকাই আমাদের সংস্কৃতির অংশ। ওখানের লোকেরা আবার একবার জল সংরক্ষণের জন্য নিজেদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত হয়েছেন। আমার পক্ষ থেকে সকল গ্রামপ্রধানকে, সকল পঞ্চায়েতপ্রধানকে, তাদের সক্রিয়তার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা। সারা দেশে এমন অনেক পঞ্চায়েতপ্রধান আছেন, যাঁরা জল সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়েছেন। এইভাবে সমগ্র গ্রামে জল বাঁচানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মনে হচ্ছে গ্রামের লোকেরা, এখন নিজেদের গ্রামে জলমন্দির তৈরি করতে সচেষ্ট হয়েছেন। আমি যেটা বলেছিলাম, সকলের চেষ্টায় বড়ো ইতিবাচক পরিণাম লাভ করা সম্ভব। সমগ্র দেশে জল সংকট সমাধান করতে কোনো একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি সম্ভব নয়, তাই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন পদ্ধতিতে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু সবার লক্ষ্য একটাই, সেটা হল জল বাঁচানো, জল সংরক্ষণ।
পাঞ্জাবে জলের নিকাশী নালা সংস্কারের কাজ চলছে। এর ফলে জল জমে যাওয়ার সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে। তেলেঙ্গানার থিমাঈপল্লীতে একটি জলাধার নির্মাণের ফলে গ্রামের লোকেদের জীবন বদলে যাচ্ছে। রাজস্থানের কবিরধামে ক্ষেতের মধ্যে তৈরি ছোটো ছোটো পুকুর নির্মাণের ফলে এক বড় পরিবর্তন এসেছে। আমি তামিলনাড়ুর ভেল্লোরে একটি সার্বজনিক প্রচেষ্টার কথা পড়ছিলাম, সেখানে নাগনদীকে আবার বাঁচিয়ে তুলতে ২০ হাজার মহিলা এক জায়গায় হয়েছেন। আমি গাঢ়ওয়ালের সেইসব মহিলাদের সম্বন্ধেও পড়ছিলাম, যাঁরা একসঙ্গে মিলে বৃষ্টির জলকে ধরে রাখার জন্য খুব সুন্দর কাজ করে যাচ্ছেন। এইভাবে অনেক ধরনের চেষ্টা চলছে, আর আমি বিশ্বাস করি যখন আমরা একজোট হয়ে, মজবুত হয়ে চেষ্টা করি, তখন অসম্ভবকেও সম্ভব করা যেতে পারে। যখন জনতা যুক্ত হবে, জল বাঁচবে। আজ ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশবাসীকে তিনটি অনুরোধ করছি।
আমার প্রথম অনুরোধ — যেভাবে দেশবাসী স্বচ্ছতাকে একটি গণ আন্দোলনের রূপ দিয়েছিলেন, আসুন সেইভাবে জল সংরক্ষণের জন্য একটি গণ আন্দোলনের শুভারম্ভ করি। আমরা সবাই মিলে জলের প্রতিটি ফোঁটা বাঁচানোর সংকল্প করি, আমার বিশ্বাস জল হল পরমেশ্বরের থেকে পাওয়া প্রসাদ, জল পরশপাথরের রূপ। আগে বলা হত পরশপাথরের ছোঁয়ায় লোহা সোনা হয়ে যায়। আমি বলি – জল পরশপাথর, যার সংস্পর্শে নবজীবনের নির্মাণ হয়। জলের এক-এক ফোঁটাকে বাঁচাতে একটি সচেতনতার অভিযানের শুভারম্ভ করি। যার মধ্যে জল সম্পর্কিত সমস্ত সমস্যাকে নিয়ে আলোচনা করি, তার সঙ্গে জল বাঁচানোর বিভিন্ন পদ্ধতির প্রচার-প্রসার করি। আমি বিশেষ ভাবে আলাদা আলাদা ক্ষেত্রের জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিদের জল সংরক্ষণের জন্য Innovative Campaign-এর নেতৃত্ব প্রদানের জন্য অনুরোধ করছি। সিনেমা জগত হোক, খেলাধূলার জগত হোক, মিডিয়ার বন্ধুরা হোক, সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত লোকেরা হোক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত লোকেরা হোক, কথা-কীর্তনের শিল্পীরা হোক, প্রত্যেকে নিজ নিজ পদ্ধতির মাধ্যমে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিন। সমাজকে জাগিয়ে তুলুন, প্রত্যেককে যুক্ত করুন ও জোট বাঁধুন। আপনারা দেখুন, নিজের চোখের সামনে আমরা পরিবর্তন দেখতে পাব।
সকল দেশবাসীর কাছে আমার দ্বিতীয় অনুরোধ এই যে, আমাদের দেশে জল সংরক্ষণের জন্য যে পারম্পরিক পদ্ধতি শত শত বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে, আমি আপনাদের সবাইকে জল সংরক্ষণের ওই পারম্পরিক পদ্ধতিগুলি share করার জন্য অনুরোধ করছি। আপনাদের মধ্যে যদি কোনও ব্যক্তির পোরবন্দর, পূজনীয় বাপুর জন্ম স্থানে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়, তাহলে দেখবেন পূজনীয় বাপুর বাড়ির ঠিক পিছনেই অন্য আর একটি বাড়ি আছে, যেখানে দু’শো বছরের পুরনো জল সংরক্ষণ ট্যাঙ্ক আছে, এবং আজও ওই ট্যাঙ্কের ভিতর জল আছে আর বর্ষার জল ধরে রাখার সুবন্দোবস্ত আছে। অতএব, যিনি কীর্তি মন্দির যাবেন, তিনি অবশ্যই ওই জল সংরক্ষণের আধারটিকে দেখবেন। আমার ধারণা এই রকম ব্যবস্থা অনেক জায়গাতেই পাওয়া যাবে।
আপনাদের সবার কাছে আমার তৃতীয় অনুরোধ এই যে, জল সংরক্ষণের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং এই বিশেষ ক্ষেত্রে কাজ করেন এরকম ব্যক্তির, ওঁদের কাছে যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে, সেগুলি আপনি share করুন যাতে করে জলের সংরক্ষণের জন্য উৎসর্গীকৃত মানুষ, জল সংরক্ষণের কাজে যুক্ত সক্রিয় সংগঠনগুলির এবং ব্যক্তিবর্গের একটি খুবই সমৃদ্ধ Database তৈরি করা যায়।
আসুন, আমরা জল সংরক্ষণের সঙ্গে যুক্ত পদ্ধতিগুলির একটি তালিকা তৈরি করে মানুষকে জল সংরক্ষণে অনুপ্রাণিত করি। আপনারা সকলে ‘হ্যাশট্যাগ janshakti4jalshakti’-এর ব্যবহার করে আপনার content shareকরতে পারেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আরও একটি বিষয়ের জন্য আপনাদের এবং বিশ্বের সকল মানুষকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। যেভাবে ২১ জুন, আবার একবার ‘যোগ দিবস’-এ যেরকম সক্রিয়তার সঙ্গে, উৎসাহে ভরপুর এক-একটি পরিবারের তিন-তিন বা চার-চার প্রজন্ম একসঙ্গে বসে ‘যোগ দিবস’ পালন করেছেন, তার জন্য।
Holistic Health Care-এর জন্য যে সচেতনতা এসেছে এর মধ্যে, ‘যোগ দিবস’-এর মাহাত্ম্য বেড়েই চলেছে।
পৃথিবীর প্রতিটি কোণে সূর্যোদয়ের সঙ্গে যদি কোনও যোগাপ্রেমী সূর্যকে স্বাগত জানায়, তবে তার পুরো যাত্রা শেষ হয় সূর্যাস্তের সঙ্গে। এরকম জায়গা আছে কি, যেখানে মানুষ আছে অথচ যোগার সঙ্গে যুক্ত নয়? ‘যোগা’ এমনই বৃহত্তর রূপে বিস্তার লাভ করেছে। ভারতে হিমালয় থেকে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত, সিয়াচেন থেকে সাবমেরিন, এয়ার ফোর্স থেকে এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার পর্যন্ত, এসি জিম থেকে তপ্ত মরুভূমি, গ্রাম থেকে শহর — যেখানেই সম্ভব হয়েছিল, প্রত্যেক জায়গাতেই শুধুমাত্র যোগাভ্যাসই করা হয়নি, বরং দিনটিকে সমষ্টিগতভাবে সমারোহের সঙ্গে পালন করা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সুপরিচিত গণ্য-মান্য ব্যক্তিত্ব, সাধারণ মানুষ — এঁরা আমাকে ট্যুইটারে দেখিয়েছেন কীভাবে তাঁদের নিজের নিজের দেশে ‘যোগ দিবস’ পালন করেছেন। ওই দিন, বিশ্বকে খুশিতে ভরপুর এক বিশাল পরিবারের মতো লাগছিল।
আমরা সবাই জানি, একটা সুস্থ সমাজ গড়তে, সুস্থ ও সংবেদনশীল মানুষের প্রয়োজন। যোগা সেটাই সুনিশ্চিত করে।তাই যোগের প্রচার ও প্রসার সমাজ সেবার অভিন্ন অঙ্গ। এই সেবাকে স্বীকৃতি দিয়ে সম্মানিত করা কি উচিত নয়? ২০১৯-এ যোগের প্রসার ও উন্নতিকল্পে অনন্য অবদানের জন্য Prime Minister’s Awards-এর ঘোষণা করাহয়েছিল, যেটা অবশ্যই আমার কাছে সুসংবাদ. এই পুরস্কার পৃথিবীর সেই সংগঠনগুলিকে দেওয়া হয়েছে যারা যোগেরপ্রচার ও প্রসারে গুরুপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যেমন, ‘জাপান যোগা নিকেতন’-এর কথাই বলা যেতে পারে, যারাসমগ্র জাপানে যোগাকে ভীষণ জনপ্রিয় করে তুলেছেন। ‘জাপান যোগা নিকেতন’ অনেকগুলো সংস্থা ও ট্রেনিং কোর্সেসচালায়। এবার আসি, ইতালির মিস অন্তনিয়েত্তা রোজির কথায়, যিনি ‘সর্বযোগা ইন্টারন্যাশনাল’-এর প্রতিষ্ঠা করেযোগকে সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এটি একটি অনুপ্রেরণাদায়ক উদাহরণ। আর যেখানে বিষয়টা যোগের সঙ্গেযুক্ত সেখানে কি ভারতীয়রা পিছিয়ে থাকতে পারেন? বিহারের মুঙ্গেরের যোগা বিদ্যালয়, যারা গত কয়েক দশক ধরেযোগের প্রতি নিবেদিত, তাদের সম্মানিত করা হয়েছে। একই ভাবে, স্বামী রাজর্ষি মুনিকেও সম্মান জ্ঞাপন করা হয়েছেযিনি ‘লাইফ মিশন’ এবং ‘লাকুলিশ যোগা বিশ্ববিদ্যালয়’-এর প্রতিষ্ঠা করেছেন। যোগের আড়ম্বরপূর্ণ উদ্যাপন এবংযাঁরা ঘরে ঘরে যোগের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন, তাঁদেরকে সম্মানিত করা, এই দুটি বিষয়ই ‘যোগ দিবস’-এ আলাদামাত্রা যোগ করেছে। আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের এই যাত্রা আজ নতুন ভাবনা, নতুন অনুভূতি, নতুন সংকল্প এবংনতুন শক্তিকে পাথেয় করে শুরু হয়েছে, আমি আপনাদের সুচিন্তিত মতামতের প্রতীক্ষায় রইলাম। আপনাদের ভাবনারসঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে পারা, আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ‘মন কি বাত’ তো নিমিত্তমাত্র। আসুন আমরা মিলিতহয়ে কথোপকথন চালিয়ে যাই, আপনাদের চিন্তাভাবনা শুনি, বুঝি এবং সেই ভাবনাগুলোকেই বাস্তবায়িত করার চেষ্টাকরি। আপনাদের আশীর্বাদ আমার সঙ্গে থাকুক। আপনারাই আমার প্রেরণা, আমার শক্তি। আসুন আমরা সবাইএকসঙ্গে বসে ‘মন কি বাত অনুষ্ঠান’ শুনতে শুনতে জীবনের সমস্ত দায়িত্ব সম্পন্ন করি। আগামী মাসে ‘মন কি বাত’অনুষ্ঠানে আবার আপনাদের সঙ্গে কথা হবে।
আপনাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ, নমস্কার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার!
‘মন কি বাত’ শুরু করতে গিয়ে আজ আমার মন ভারাক্রান্ত। দশ দিন আগে, ভারতমাতা তাঁর বীর সুসন্তানদের হারিয়েছেন। এই সাহসী বীরেরা আমাদের একশো কোটি ভারতবাসীকে রক্ষা করতে আত্মবলিদান করেছেন। দেশবাসী যাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারেন সেদিকে খেয়াল রেখে এইসব বীর সুসন্তানরা দিন-রাত এক করে সজাগ দৃষ্টি রেখে চলতো। পুলওয়ামাতে সন্ত্রাসবাদীদের আক্রমণে বীর জওয়ানদের শহিদ হওয়ার পর সারা দেশের মানুষের মনেই আঘাত ও আক্রোশ জন্মেছে। শহিদের এবং তাঁদের পরিবারের প্রতি চারিদিক থেকে সমবেদনার বার্তা আসছে। এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যে আবেগ আমার মনে জাগছে, সেই আবেগ প্রত্যেক দেশবাসীর অন্তরে আছে এবং মানবতায় বিশ্বাস করেন যাঁরা, সারা বিশ্বে মানবতাবাদী মানুষের মধ্যেও আছে। ভারতমাতাকে রক্ষা করার কাজে নিজের প্রাণ বলিদান দিচ্ছেন যাঁরা, দেশের সেই সব বীর, সুসন্তানদের প্রণাম জানাই। এই শহিদ হওয়া, সন্ত্রাসকে সমূলে উৎপাটিত করার জন্য আমাদের নিরন্তর উৎসাহিত করবে, আমাদের সঙ্কল্পকে আরও শক্ত করবে। দেশের সামনে উপস্থিত এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার জন্য আমাদের সবাইকে জাতপাত, সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিকতাবাদ এবং বাকি সব মতানৈক্য ভুলে যেতে হবে, যাতে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমরা আগের চাইতে আরও দৃঢ়, শক্তিশালী এবং ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নিতে পারি।
আমাদের সশস্ত্র সেনা অদম্য সাহসের পরিচয় দিয়ে থাকে। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য তাঁরা অত্যাশ্চর্য ক্ষমতা দেখিয়েছেন এবং সন্ত্রাসবাদীদের তাদের ভাষাতেই জবাব দিয়েছেন।
আপনারা দেখেছেন যে সন্ত্রাসের ১০০ ঘণ্টার ভিতরেই কীরকম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সেনারা সন্ত্রাসবাদীদের এবং তাদের মদতকারীদের কীভাবে সমূলে ধ্বংস করা যায় তার সঙ্কল্প নিয়েছে।
বীর সৈনিকদের শহিদ হয়ে যাওয়ার পর, মিডিয়ার মাধ্যমে তাঁদের পরিজনদের প্রেরণাদায়ক বার্তা সামনে এসেছিল, যা কিনা সমগ্র দেশের মানুষের মধ্যে অতীব সাহস, উৎসাহ এবং শক্তির প্রেরণা জাগিয়ে থাকে।
বিহারের ভাগলপুরে শহিদ রতন ঠাকুরের পিতা রামনিরঞ্জনজী এই দুঃখের সময়েও উদ্দীপনার সঙ্গে দৃঢ় সঙ্কল্পের যে পরিচয় দিয়েছেন তা আমাদের সকলকে প্রেরণা জোগায়। তিনি বললেন যে ওঁর অন্য পুত্রকেও দেশের শত্রুদের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য পাঠাবেন এবং প্রয়োজন হলে নিজেও লড়াইয়ের ময়দানে উপস্থিত হবেন।
ওড়িশার জগৎসিংহপুরের শহিদ প্রসন্না সাহুর পত্নী মীনাজীর অদম্য সাহসকে সমগ্র দেশ কুর্ণিশ জানাচ্ছে। তিনি তাঁর একমাত্র পুত্রকে CRPF-এ যোগদান করানোর সংকল্প নিয়েছেন। যখন জাতীয় পতাকায় ঢাকা শহিদ বিজয় সোরেনের মৃতদেহ ঝাড়খণ্ডের গুমলায় পৌঁছায়, সেই সময় তাঁর ছোট ছেলে বলে ওঠে যে সেও সেনাবাহিনিতে যোগ দেবে।
এই নিষ্পাপ শিশুর উৎসাহের সঙ্গে এই দৃঢ় সঙ্কল্প, ভাবনা আজ ভারতবর্ষের ছোট ছোট সন্তানদের ভাবনাকে প্রকাশ করে। এই ভাবনাই আমাদের বীর, সাহসী শহিদদের ঘরে ঘরে দেখতে পাওয়া যায়। একটিও বীর শহিদ এবং তাঁদের পরিবার এর ব্যতিক্রম নয় — সেটা দেবরিয়ার শহিদ বিজয় মৌর্যর পরিবার হোক বা কাংড়ার শহিদ তিলকরাজের পিতা-মাতা, বা কোটার শহিদ হেমরাজের ছ’বছরের পুত্রও হতে পারে। শহিদদের পরিবারের কাহিনিগুলি প্রেরণায় ভরপুর। আমি যুব সম্প্রদায়কে এই অনুরোধ করবো যে, এইসব পরিবার উৎসাহের সঙ্গে যে দৃঢ় সঙ্কল্প দেখিয়েছে তাঁদের যে সব ভাবনা প্রকাশ করেছেন, সেই সমস্ত জানার এবং বোঝার চেষ্টা করুন। দেশভক্তি কি? ত্যাগ, তপস্যা কাকে বলে — এই বিষয়ে জানার জন্য ইতিহাসে পুরনো ঘটনা জানার প্রয়োজন হয় না। আমাদের চোখের সামনে যে জীবন্ত বাস্তব দৃষ্টান্তগুলি আছে সেগুলি ভবিষ্যতে উজ্জ্বল ভারত গঠনের প্রেরণার কারণ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, স্বাধীনতার এত দীর্ঘসময়ে আমাদের সকলের যে ‘War Memorial’-এর অপেক্ষা ছিল, তা এখন সমাপ্ত হতে চলেছে। এই বিষয়ে দেশবাসীর অনেক প্রশ্ন, অনুসন্ধিৎসা থাকা খুবই স্বাভাবিক। ‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এ ওড়ুপী, কর্ণাটকের শ্রী ওঙ্কার শেট্টিজী ন্যাশনাল ওয়্যার মেমোরিয়াল তৈরি হওয়ায় নিজের প্রসন্নতা ব্যক্ত করেছেন। আমি অবাক হয়ে যেতাম এবং ব্যথিতও হয়েছি যে ভারতে কোনো ন্যাশনাল ওয়্যার মেমোরিয়াল ছিল না। এটা এমন এক মেমোরিয়াল যা দেশকে রক্ষার জন্য যাঁরা প্রাণ উৎসর্গ করেছেন, সেই বীর জওয়ানদের বীরত্বের গল্পগুলি সযত্নে রাখা যায়। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমাদের দেশে এরকম একটি স্মারক হওয়া অবশ্যই প্রয়োজন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের দেশের পূর্ব প্রধানমন্ত্রী মোরারজীভাই দেশাইয়ের জন্ম হয়েছিল২৯-শে ফেব্রুয়ারি। আপনারা সকলে এও জানেন যে ঐ বিশেষ দিনটি ৪ বছরে একবারই আসে। সহজ, শান্তিপূর্ণ ব্যক্তিত্বে বলীয়ান, মোরারজীভাই এই দেশের সবচেয়ে নিষ্ঠাবান নেতাদের অন্যতম ছিলেন। আমাদের এই স্বতন্ত্র ভারতে, সংসদে সবচেয়ে বেশিবার বাজেট পেশ করার রেকর্ড মোরারজী ভাই দেশাইয়ের নামেইরয়েছে। সেদিনের ঐ কঠিন সময়ে মোরারজী দেশাই ভারতকে সঠিক নেতৃত্ব দান করেন, যখন কিনা দেশের গণতন্ত্র এক সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় ছিল। আর এরজন্যই আমাদের আগামী প্রজন্ম তাঁর কাছে ঋণী থাকবে। মোরারজীভাই দেশাই এই গণতন্ত্রকে রক্ষা করতেই, ‘জরুরী অবস্থা’র বিরুদ্ধে আন্দোলনে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন। আর এর জন্য বার্ধক্যে এসেও তাঁকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছিল। সেদিনের সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করে। কিন্তু, ১৯৭৭-এ যখন জনতা পার্টি ভোটে জেতে, তখন তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী হন। তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্বের সময়কালেই ৪৪-তম সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়। ঘটনাটা এই কারণেই খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ‘জরুরী অবস্থা’র জন্য ৪২-তম সংশোধনের প্রস্তাব করা হয় — যেখানে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতাকে খর্ব করার এবং আরও কিছু প্রস্তাবও সেখানে ছিল যাতে আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধও খর্ব হত — সেগুলি কার্যকরী না করে ফেরৎ পাঠানো হয়। যেমন ৪৪-তম সংশোধনী প্রস্তাবের কারণে সংসদ ও বিধানসভার যাবতীয় কাজকর্মের খবর সংবাদপত্রে প্রকাশের সুযোগ করে দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি, সুপ্রিমকোর্টের কিছু কিছু ক্ষমতা বহাল রাখা হয়। এই সংশোধনী প্রস্তাবে রাখা হয় যে, সংবিধানের ২০ এবং ২১ নং অনুচ্ছেদ মিলে নাগরিকের মৌলিক অধিকারগুলিও যেন ‘জরুরী অবস্থা’র কারণে কোনোভাবেই কেড়ে নেওয়া না হয়। এই প্রথমবার এরকম বন্দোবস্ত হল যে মন্ত্রীসভার লিখিত ঐক্যমত্যের ভিত্তিতেই রাষ্ট্রপতি দেশে ‘জরুরী অবস্থা’ ঘোষণা করতে পারবেন। সেইসঙ্গে এও বলা হল যে এই ‘জরুরী অবস্থা’র মেয়াদ এককালীন ছ’মাসের বেশি বাড়ানো যাবে না। এইভাবে মোরারজীভাই সুনিশ্চিত করলেন যে — ১৯৭৫ সালে যে ভাবে ‘জরুরী অবস্থা’ ঘোষণা করে দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছিল — তা যেন আর আগামী দিনে ফিরে না আসে। ভারতীয় গণতন্ত্রের মাহাত্ম্য ও মর্যাদাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে তাঁর এই অবদান — আগামীপ্রজন্মও সর্বদাই সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করবে। আজ আর একবার এই মহান নেতাকে আমি আমার শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ করছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, প্রত্যেক বছরের মতই এবারও ‘পদ্ম’ পুরস্কার নিয়ে মানুষের মনে খুব কৌতুহল ছিল। আজ আমরা এক নতুন ভারতের দিকে এগিয়ে যেতে চলেছি। এভাবে আমরা তাঁদের সম্মানিত করতে চাই, যাঁরা প্রত্যাশাহীনভাবে একেবারে গ্রাসরুট লেভেলে নিজের নিজের কাজ করে চলেছেন। নিজের পরিশ্রমের ওপর ভরসা করে, নিজস্ব উপায়ে অন্যের জীবনে গুণগত পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছেন। আসলে তাঁরাই প্রকৃত কর্মযোগী, যাঁরা মানুষের সেবা, সমাজের সেবা এবং সর্বোপরি দেশের সেবায় একেবারে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে চলেছেন। আপনারা দেখেছেন যে, যখন ‘পদ্ম’ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়, তখন মানুষ জানতে চান যে ইনি কে? একদিক থেকে আমি এটাকে খুব বড় সাফল্য মনে করি, কারণ তাঁরা সেই মানুষ যাদের টিভি, ম্যাগাজিন বা খবরের কাগজের প্রথম পাতায় দেখতে পাই না, এই ঝলমলে দুনিয়া থেকে অনেক দূরে কিন্তু তাঁরা এমন মানুষ—যাঁরা নিজের নামের পরোয়া না করে মাটির কাছাকাছি থেকে কাজ করায় বিশ্বাসী। “যোগঃ কর্মসু কৌশলম্” গীতার এই বার্তাকে অনুসরণ করেই তাঁরা বাঁচেন। আমি আজ এরকম কিছু মানুষের কথা আপনাদের বলতে চাই। ওড়িশার দৈতারী নায়ক-এর কথা আপনারা নিশ্চয়ই শুনেছেন। তাঁকে ‘The Cannel Man of Odisha’ এমনি বলা হয় না। দৈতারী নায়ক, নিজের গ্রামে নিজের হাতে পাহাড় কেটে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ খাল বানিয়েছেন। নিজ পরিশ্রমে সেচ এবং পানীয় জলের সমস্যা চিরতরে মিটিয়েছেন। গুজরাটের আব্দুল গফুর খাতড়িজীর কথাই ধরন, তিনি কচ্ছের ঐতিহ্যবাহী রোগন শিল্পকলাকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য আশ্চর্যজনক কাজ করেছেন। তিনি এই দুর্লভ শিল্পকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে এক অসাধারণ কাজ করেছেন। আব্দুল গফুরের বানানো ‘Tree of Life’ আমি আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামাকে উপহার দিয়েছিলাম। ‘পদ্ম’ পুরস্কার প্রাপকদের মধ্যে মারাঠওয়াড়ার সাব্বির সঈদকে ‘গোমাতার সেবক’ হিসেবে সবাই জানে। তিনি যেভাবে নিজের সমস্ত জীবন গোমাতার সেবায় সঁপে দিয়েছেন — তাতে তিনি অনন্য। মাদুরাই চিন্না পিল্লাই, সেই বিশিষ্ট মানুষ, যিনি তামিলনাড়ুতে ‘কলঞ্জিয়ম আন্দোলন’-এর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত এবং শোষিতদের শক্তিশালী ও স্বনির্ভর করার চেষ্টা করেছেন। একইসঙ্গে তাদের জন্য সমবায় ভিত্তিক ক্ষুদ্র অর্থব্যবস্থা শুরু করেন। আমেরিকার Tao Porchon Lynch-এর কথা শুনে আপনারা আশ্চর্য হয়ে যাবেন। Lynch এক চলমান যোগা-প্রতিষ্ঠান। তিনি একশ বছর বয়সেও বিশ্বজুড়ে সব মানুষকে যোগ ব্যায়ামের প্রশিক্ষণ দিয়ে চলেছেন এবং এখন পর্যন্ত ১৫০০ জন যোগা শিক্ষক তৈরি করেছেন।
ঝাড়খণ্ডের বিখ্যাত ‘Lady Tarzan’ হিসেবে খ্যাত যমুনা টুডু, গাছপাচারকারী মাফিয়া ও নকশালদের মোকাবিলা করার মত সাহসী কাজ করে তিনি শুধু ৫০ হেক্টর জঙ্গল উজাড় হয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাননি, উপরন্তু দশ হাজার মহিলাকে একজোট করে গাছ ও বন্যপ্রাণীদের সুরক্ষার জন্য পাঠিয়েছেন। যমুনাজীর এই পরিশ্রমের সুফল হিসেবে আজ গ্রামের মানুষ প্রতিটি শিশুর জন্মের সময় ১৮টি করে এবং প্রতিটি মেয়ের বিয়ের সময় ১০টি করে গাছ লাগান।
গুজরাটের মুক্তা বেন পঙ্কজ কুমার দগলীর কাহিনি শুনলে আপনারা অনুপ্রাণিত হবেন। নিজে দিব্যাঙ্গ হয়েও দিব্যাঙ্গ মহিলাদের উন্নয়নের জন্য তিনি যেভাবে কাজ করেছেন — তেমন উদাহরণ বিরল। ‘চক্ষু মহিলা সেবাকুঞ্জ’ নামক সংস্থা তৈরি করে দৃষ্টিহীন শিশুদের স্বনির্ভর করে তোলার পুণ্যকাজে তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।
বিহারের মজঃফরপুরের ‘কিষাণচাচী’ রাজকুমারী দেবীর কাহিনি খুবই প্রেরণাদায়ক। নারীদের ক্ষমতায়ন এবং কৃষিকে লাভজনক করে তোলার লক্ষ্যে তিনি এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কিষাণচাচী নিজের এলাকায় ৩০০ মহিলাকে নিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে তোলেন এবং অর্থনৈতিকভাবে তাদের স্বনির্ভরও করে তুলেছেন। তিনি গ্রামের মহিলাদের চাষবাসের পাশাপাশি স্বনির্ভর হওয়ার নানান প্রশিক্ষণ দেন। আসল কথা এই যে, তিনি চাষবাসের সঙ্গে কারিগরি বিদ্যা প্রয়োগের কাজটিও করেছেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এই বোধহয় প্রথমবার এমন হল যে এই বছর যাঁদের ‘পদ্ম’ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ১২ জন কৃষক রয়েছেন। সাধারণত কৃষিক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত খুব কম মানুষ এবং সরাসরি যাঁরা কৃষক তাঁদের মধ্যে খুব স্বল্পজনই ‘পদ্মশ্রী’ প্রাপকদের তালিকায় আসেন। আর এটাই হল বদলে যাওয়া ভারতের জীবন্ত ছবি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি আজ আপনাদের সকলের সঙ্গে এক হৃদয়স্পর্শী অনুভবের কথা জানাব, কথাটা গত কয়েকদিন ধরে আমি নিজে উপলব্ধি করেছি। আজকাল আমি দেশের যে অঞ্চলেই যাই, ‘আয়ুষ্মান ভারত’ যোজনা — ‘PM-JYA’ তথা ‘PM জন আরোগ্য যোজনা’য় উপকৃত মানুষের সঙ্গে দেখা করতে চাই। এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সুযোগ হয়েছিল। একজন সহায়সম্বলহীন মা তাঁর ছোট বাচ্চার চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না। এই যোজনার সাহায্য নিয়ে তার বাচ্চাকে চিকিৎসা করিয়েছেন এবং সে সুস্থ হয়ে উঠেছে। দিনভর খাটাখাটনির উপার্জনে সংসারের ভার সামলানো পরিবারের প্রধান মানুষটি অ্যাক্সিডেণ্টে পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলেন, কর্মহীন হয়ে পড়েছিলেন। এই যোজনার সাহায্য নিয়ে চিকিৎসা করিয়ে এখন নতুন জীবন লাভ করেছেন।
ভাই ও বোনেরা, গত পাঁচ মাসে প্রায় বারো লক্ষ দরিদ্র পরিবার এই যোজনার সুযোগ নিয়েছেন। আমি বুঝতে পারছি, দরিদ্র মানুষের জীবনে এর ফলে কত বড় পরিবর্তন এসেছে। আপনারা যদি কোনো দরিদ্র মানুষকে জানেন, যিনি অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না, তাঁদের এই যোজনা সম্পর্কে জানান। এই যোজনা এইসব দরিদ্র জনসাধারণের উপকারের জন্যই চালু করা হয়েছে।
আমার প্রিয় ভাই বোনেরা স্কুলে স্কুলে পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা সংসদদশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু করবে। পরীক্ষার্থীদের, তাদের অভিভাবক ও শিক্ষকদের সকলকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা।
কিছুদিন আগে দিল্লিতে ‘পরীক্ষা পে চর্চা’ এই কার্যক্রমে টাউন হল ফরম্যাটে এক বিপুল আয়োজন হয়েছিল। এই টাউন হল কার্যক্রমে টেকনলোজির সাহায্যে দেশ-বিদেশের কয়েক কোটি ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে,তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে,টিচারদের সঙ্গে কথা বলার অবকাশ হয়েছিল। ‘পরীক্ষা পে চর্চা’র একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পরীক্ষা সংক্রান্ত নানান বিষয় নিয়ে এখানে আলোচনা করা যায়। এমন কিছু না কিছু বিষয়চলে আসে যে তা সব পরীক্ষার্থীদের কাছেই অত্যন্ত কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে। সমস্ত বিদ্যার্থী, তাদের শিক্ষক, পিতা-মাতা ইউটিউবে এই কার্যক্রমের রেকর্ডিং দেখতে পারেন, আসন্ন পরীক্ষা-যোদ্ধাদের ওসংশ্লিষ্ট সকলকে আমার আগাম শুভকামনা জানালাম।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ভারতের কথা হবে আর তার পুজোপার্বণের কথা হবে না তা তো হয় না। সম্ভবত আমাদের দেশে হেন দিন নেই যেদিনের সঙ্গে কোনও না কোনো উৎসব বা পার্বণ জুড়ে নেই বা কোনও বিশিষ্ট তাৎপর্য নেই, কারণ আমাদের সঙ্গে রয়েছে হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্য। আর কয়েকদিনের মধ্যে মহাশিবরাত্রি আসছে এবং এবার শিবরাত্রি সোমবার পড়েছে। সোমবার এবং শিবরাত্রি একসঙ্গে পড়ে গেলে আমাদের মন বিশেষ পবিত্র ভাবনায় ও ভক্তিতে ভরে ওঠে। শিবরাত্রি পার্বণ উপলক্ষে সব্বাইকে আমার অনেক অনেক শুভকামনা!
আমার প্রিয় দেশবাসী কিছুদিন আগে আমি কাশীগিয়েছিলাম। ওখানে আমার দিব্যাঙ্গ
ভাই-বোনেদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছিল। তাঁদের নানান ভাবনা-চিন্তা নিয়ে আলোচনা হল আর সেগুলো আমাদের অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী করে তোলে,অনুপ্রাণিত করে। সেই আলোচনায় একজন দৃষ্টিতে অন্য ভাবে সক্ষমতরুণের সঙ্গে কথা বললাম,তিনি জানালেন,“আমিস্টেজ আর্টিস্ট। বিভিন্ন মনোরঞ্জনী ওবিনোদন অনুষ্ঠানে আমি মিমিক্রি করি।”তখন আমি জানতে চাইলাম কাদের মিমিক্রি করেন আপনি। তিনি জানালেন “আমিপ্রধানমন্ত্রীর মিমিক্রি করি।” তখন আগ্রহী হলাম, দেখাতে বললাম কেমন সে মিমিক্রি। অত্যন্তআশ্চর্য হয়ে গেলাম, মজাও লাগলো উনি ‘মন কি বাত’-এ আমি যেভাবেকথা বলি তার মিমিক্রি করলেনএবং ‘মন কি বাত’-এরই মিমিক্রি করে শোনালেন। আমার এটা শুনেভালো লাগল যে মানুষ শুধু আমার ‘মন কি বাত’শোনেই না তা মনে রাখে, ‘মন কি বাত’নিয়ে চর্চাও করে। এ কথা মেনে নিতেই হবে এই দিব্যাঙ্গতরুণের ক্ষমতায়আমি অত্যন্ত প্রভাবিত হয়েছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কি বাত’ কার্যক্রমের মাধ্যমে আপনাদের সকলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন আমার কাছে এক অনন্য অভিজ্ঞতা। রেডিওর মাধ্যমে প্রত্যেক মাসে কোটি কোটি পরিবারের সঙ্গে আমি মুখোমুখি হই। আত্মীয় হয়ে উঠেছি। অনেক সময় আপনাদের চিঠি পড়তে পড়তে, আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে, বা ফোনে পাঠানো আপনাদের নানান কথা, পরামর্শ শুনতে শুনতে মনে হয়েছে আমাকে আপনারা আপনাদের পরিবারেরই একজন করে নিয়েছেন। এ আমার এক অত্যন্ত খুশির অনুভব।
বন্ধুগণ নির্বাচন গণতন্ত্রের সব থেকে বড় উৎসব। আগামী দু’মাস আমরা নির্বাচন নিয়ে বিভিন্নভাবে ব্যস্ত থাকব। আমি নিজে এই নির্বাচনে একজন প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াব। সুস্থ গণতন্ত্রের নিয়ম মেনে এর পরের ‘মন কি বাত’ আগামী মে মাসের শেষ রবিবারেই হবে অর্থাৎ, এই মার্চ, এপ্রিল ও মে — এই তিন মাসের যত ভাবনাচিন্তা আছে, নির্বাচনের পর আপনাদের শুভেচ্ছা ও বিশ্বাসের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে আপনাদের আশীর্বাদ নিয়ে আবার আমাদের ‘মন কি বাত’-এর মাধ্যমে আমাদের এই কথাবার্তার প্রক্রিয়া আবার শুরু করব এবং আগামী বহু বছর ধরে ‘মন কি বাত’ বলতেই থাকব।
আপনাদের সবাইকে আরেকবার অনেক অনেক ধন্যবাদ!
আমারপ্রিয়দেশবাসী, নমস্কার!
এমাসের২১তারিখেসারাদেশএকগভীরশোকেরসংবাদপায়, কর্ণাটকেরটুমকুরজেলার
শ্রীসিদ্ধগঙ্গামঠের চিকিৎসকশ্রীশ্রীশিবকুমারস্বামীআরআমাদেরমধ্যেনেই। শিবকুমারস্বামীতাঁরগোটাজীবনটিসমাজসেবারকাজেসমর্পণকরেছিলেন।ভগবানবসবেশ্বরআমাদেরশিখিয়েছেন—‘কায়কবেকৈলাশ‘ — অর্থাৎকঠোরপরিশ্রমেরমাধ্যমেনিজেরদায়িত্বপালনকরেযাওয়া, ভগবানশিবেরনিবাসকৈলাশধামেপৌঁছোনরইসামিল।শিবকুমারস্বামীএইদর্শনেবিশ্বাসীছিলেনএবংতিনিতাঁর১১১বছরেরজীবনকালেহাজারহাজারমানুষেরসামাজিক, শিক্ষাগতএবংআর্থিকউন্নতিরজন্যেকাজকরেগেছেন।তিনিএমনইএকজনবিদ্বানমানুষহিসেবেখ্যাতছিলেন, একইসঙ্গেইংরেজি, সংস্কৃতওকন্নড়ভাষাতেযাঁরছিলঅদ্ভুতদখল।তিনিছিলেনএকজনসমাজ–সংস্কারক।মানুষেরখাদ্য, আশ্রয়, শিক্ষাএবংআধ্যাত্মিকজ্ঞানেরসংস্থানেরজন্যতিনিতাঁরপুরোজীবনটাইউৎসর্গকরেদিয়েছিলেন।তাঁরপ্রথমচাহিদাইছিলকৃষকদেরসার্বিককল্যাণসাধন।সিদ্ধগঙ্গামঠনিয়মিতপশুএবংকৃষিমেলারআয়োজনকরে।আমারসৌভাগ্যহয়েছেবেশকয়েকবারপরমপূজনীয়স্বামীজীরআশীর্বাদলাভকরার।২০০৭সালেশিবকুমারস্বামীরশতবর্ষউপলক্ষেপূর্ববর্তীরাষ্ট্রপতিডঃএ. পি. জে. আবদুলকালামটুমকুরগিয়েছিলেন।শ্রদ্ধেয়স্বামীজীরউদ্দেশেকালামসাহেবএকটিকবিতাওশুনিয়েছিলেন। তিনিবলেছিলেন —
” হেআমারসহ–নাগরিকবৃন্দ — দানেরমধ্যেইআপনারাসুখেরআস্বাদপাবেন।
দেহেএবংমনেআপনারকতকিছুইনাদেবারআছে।
যদিআপনারজ্ঞানথাকে, তাভাগকরেনিন
যদিসম্পদথাকে, তারসদ্ব্যবহারকরুন
দরিদ্র, নিঃস্বমানুষদেরজন্যে
যন্ত্রণারকষ্টটাকেলাঘবকরতে
ভারাক্রান্তহৃদয়কেউজ্জ্বীবিতকরতে
আপনিনিজেরমনওহৃদয়দিয়েসচেষ্টহোন
সর্বশক্তিমানঈশ্বরআপনাকেএবংআপনার
সমস্তপ্রচেষ্টাকেআশীর্বাদকরবেন।“
ডঃকালামেরএইকবিতাশ্রীশ্রীশিবকুমারস্বামীরজীবনএবংসিদ্ধগঙ্গামঠেরলক্ষ্যকেসুন্দরভাবেপ্রকাশকরেছে। এমনএকমহাপুরুষকেআমিআরওএকবারআন্তরিকশ্রদ্ধাজানাই।
আমারপ্রিয়দেশবাসী, ১৯৫০সালের২৬শেজানুয়ারিআমাদেরদেশেরসংবিধানপ্রবর্তিতহয়েছিল, দেশেগণতন্ত্রপ্রতিষ্ঠিতহয়েছিলওইদিনটিতেই।গতকালইআমরাউৎসাহউদ্দীপনারসঙ্গেসাধারণতন্ত্রদিবসওপালনকরেছি। কিন্তুআজআমিএইবিষয়েঅন্যকিছুকথাবলতেচাই। আমাদেরদেশেএমনএকটিগুরুত্বপূর্ণসংস্থাআছে, যাদেশেরসাধারণতন্ত্রেরঅভিন্নঅঙ্গতোবটেই — এইগণতন্ত্রেরচেয়েওতাপ্রাচীন। আমিভারতেরনির্বাচনকমিশনেরকথাবলছি। ২৫–শেজানুয়ারিছিলনির্বাচনকমিশনেরপ্রতিষ্ঠাদিবস — ‘ন্যাশনালভোটারসডে’ হিসেবেযেটিপালিতহয়েথাকে। ভারতেযেব্যাপ্তিতেনির্বাচনেরআয়োজনহয়তাদেখেসারাদুনিয়াঅবাকহয়েযায়, যেদক্ষতারসঙ্গেআমাদেরনির্বাচনকমিশনএইআয়োজনকরে, তাদেখেপ্রত্যেকদেশবাসীরএইসংস্থাটিরজন্যেগর্বহওয়াইস্বাভাবিক।ভারতেরপ্রতিটিনাগরিক, যিনিনথিভুক্তঅর্থাৎরেজিস্টার্ডভোটার, তিনিযাতেভোটদিতেপারেন, তাসুনিশ্চিতকরারজন্যেআমাদেরদেশেচেষ্টারকোনওত্রুটিরাখাহয়না।
হিমাচলপ্রদেশেসমুদ্রতলথেকে১৫হাজারফিটওপরেরএলাকাতেওযেমননির্বাচনকেন্দ্রস্থাপিতহয়, তেমনইআন্দামান–নিকোবরেরদূরবর্তীদ্বীপগুলিতেওভোটিংয়েরব্যবস্থাকরাহয়েথাকে।এছাড়াগুজরাতেরসেইকেন্দ্রটিরকথাতোআপনারানিশ্চয়ইশুনেছেনযেখানেগিরঅরণ্যেরমধ্যেমাত্রএকজনভোটদাতারজন্যেএকটিপোলিংবুথকরাহয়। কল্পনাকরুন, মাত্রএকজনভোটদাতারজন্যে।এসবকথাশুনলেনির্বাচনকমিশনেরজন্যেগর্বহওয়াখুবইস্বাভাবিক।ওইএকজনমাত্রভোটদাতারকথাখেয়ালরেখে, তিনিযাতেতাঁরমতপ্রকাশেরসুযোগপানতারজন্যে, নির্বাচনকমিশনেরকর্মচারীদেরপুরোটিমওইদূরবর্তীকেন্দ্রেগিয়েভোটদানেরব্যবস্থাকরেন— আরএটাইহলআমাদেরসাধারণতন্ত্রেরসৌন্দর্য।আমাদেরলোকতন্ত্রকেমজবুতকরতেনিরন্তরপ্রচেষ্টাচালানোরজন্যেআমিনির্বাচনকমিশনেরপ্রশংসাকরি।প্রত্যেকটিরাজ্যেনির্বাচনকমিশন, যাবতীয়সুরক্ষাকর্মীএবংঅন্যান্যকর্মচারীবৃন্দযাঁরানির্বাচনপ্রক্রিয়ায়অংশনেনএবংস্বাধীনওপক্ষপাতহীননির্বাচনসুনিশ্চিতকরেনতাঁদেরসকলকেআমিসাধুবাদজানাই।
এইবছরআমাদেরদেশেলোকসভানির্বাচনহবে।একবিংশশতাব্দীতেজন্মনেওয়াযুবক–যুবতীদেরলোকসভানির্বাচনেনিজেদেরভোটদেওয়ারএটাইহবেপ্রথমসুযোগ।তাঁদেরকাছেদেশেরদায়িত্বনিজেদেরকাঁধেনেওয়ারসময়এসেগেছে।দেশেরবিভিন্নবিষয়েসিদ্ধান্তনেওয়ারব্যাপারেতাঁরাঅংশগ্রহণকরতেচলেছেন।দেশেরস্বপ্নেরসঙ্গেনিজেদেরস্বপ্নকেমিলিয়েনেওয়ারসময়এসেগেছে।আমিযুবসম্প্রদায়কেঅনুরোধকরবযেতাঁরাযদিভোটদানেরউপযুক্তহনতাহলেভোটারতালিকায়তাঁদেরনামনথিভুক্তকরুন।আমাদেরপ্রত্যেকেরইএইউপলব্ধিহওয়াউচিতযেভোটারহওয়া, ভোটদানেরঅধিকারপাওয়াজীবনেরগুরুত্বপূর্ণউপলব্ধিগুলিরমধ্যেএকটিবিশেষউপলব্ধি।একইসঙ্গেভোটদেওয়াআমারকর্তব্য —এইভাবনাওযেনআমাদেরমধ্যেজন্মনেয়।যদিকোনওকারণবশতঃভোটদানেঅসমর্থহন, তাহলেখুবইমানসিককষ্টপাওয়াউচিত।যদিদেশেকোথাওঅনৈতিককিছুহতেদেখেনতাহলেদুঃখপাওয়াউচিত।আমিভোটদিইনি — আমিওইদিনভোটদিতেযাইনি — আজআমাদেরদেশএইসিদ্ধান্তেরকুফলভোগকরছে।এইদায়িত্বসম্পর্কেআমাদেরসজাগহওয়াপ্রয়োজন।এটিআমাদেরপ্রবৃত্তি,আমাদেরসংস্কারেরঅঙ্গহওয়াউচিত।আমিদেশেরগণ্যমান্যব্যক্তিদেরঅনুরোধকরবযেআসুন,আমরাসবাইমিলেঅভিযানচালিয়েভোটারতালিকায়নামনথিভুক্তকরণএবংনির্বাচনেরদিনভোটদানেরবিষয়েজনসাধারণকেসজাগকরি।আমারবিশ্বাস, অধিকসংখ্যকযুবক–যুবতীভোটারতালিকায়তাঁদেরনামনথিভুক্তকরাবেনএবংনিজেদেরঅংশীদারিত্বেআমাদেরগণতন্ত্রকেসুদৃঢ়করবেন।
আমারপ্রিয়দেশবাসী, ভারতেরএইপবিত্রভূমিঅনেকমহাপুরুষেরজন্মদিয়েছে।এইসবমহামানবমানবতারজন্যকিছুঅদ্ভুতএবংঅবিস্মরণীয়কাজকরেছেন।আমাদেরদেশবহুরত্ন–বসুন্ধরা।এইসমস্তমহাপুরুষদেরএকজনছিলেননেতাজীসুভাষচন্দ্রবোস।২৩–শেজানুয়ারিসমগ্রদেশবিভিন্নভাবেতাঁরজন্মদিনপালনকরেছে।নেতাজীরজন্মদিনেভারতেরস্বাধীনতাযুদ্ধেযাঁরাঅংশগ্রহণকরেছিলেন,সেইসববীরসেনানীদেরউদ্দেশেসমর্পিতএকসংগ্রহশালারউদ্বোধনকরারসৌভাগ্যআমারহয়েছে।আপনারাজানেনযেস্বাধীনতারপরথেকেএখনওপর্যন্তলালকেল্লারভিতরবেশকিছুঘর–বাড়িবন্ধপড়েছিল।লালকেল্লারসেইসমস্তবন্ধঘরগুলিকেখুবসুন্দরএকটিসংগ্রহশালাররূপদেওয়াহয়েছে।নেতাজীসুভাষচন্দ্রবোসএবংইণ্ডিয়ানন্যাশনালআর্মি–রউদ্দেশেসমর্পিতসংগ্রহশালা ‘ইয়াদ–এ–জলিয়াঁ’ এবং১৮৫৭–রভারতেরপ্রথমস্বাধীনতাযুদ্ধেরপ্রতিসমর্পিতসংগ্রহশালা—এইসম্পূর্ণপরিসরকে ‘ক্রান্তিমন্দির’ রূপেদেশকেসমর্পণকরাহয়েছে।এইসংগ্রহশালারপ্রতিটিইঁটেআমাদেরগৌরবশালীইতিহাসেরসৌরভরয়েছে।এইসংগ্রহশালায়স্তরেস্তরেবর্ণিতআমাদেরস্বাধীনতাসংগ্রামেরবীরসেনানীদেরকাহিনিআমাদেরইতিহাসেরদিকেফিরেতাকাতেঅনুপ্রাণিতকরবে।এইখানেইংরেজশাসকরাভারতমায়েরবীরসন্তানকর্ণেলপ্রেমসেহগল, কর্ণেলগুরুবক্সসিংহধীলঁএবংমেজরজেনারেলশাহনওয়াজখানেরবিচারকরেছিল।আমিযখনলালকেল্লারক্রান্তিমন্দিরেনেতাজীরসঙ্গেসম্পর্কিতজিনিষগুলিদেখছিলাম, তখননেতাজীরপরিবারেরসদস্যরাআমাকেএকটিবিশেষধরনেরটুপিউপহারদেন।একসময়নেতাজীএইটুপিব্যবহারকরতেন।এইটুপিটিআমিসংগ্রহশালায়রাখারব্যবস্থাকরেছি, যাতেসংগ্রহশালাদেখতেআসামানুষএইটুপিটিদেখেনএবংদেশভক্তিরঅনুপ্রেরণাপান।আমাদেরদেশনায়কদেরশৌর্য, দেশভক্তিরকথাআমাদেরনবীনপ্রজন্মেরকাছেবিভিন্নমাধ্যমেনিরবচ্ছিন্নভাবেপৌঁছেদেওয়াপ্রয়োজন।এইমাসখানেকআগে — গত৩০শেডিসেম্বরআমিআন্দামান–নিকোবরদ্বীপপুঞ্জেগিয়েছিলাম।নেতাজীসুভাষচন্দ্রবোস৭৫বছরআগেযেখানেপ্রথমত্রিবর্ণপতাকাউত্তোলনকরেছিলেনঠিকসেইএকইজায়গায়একঅনুষ্ঠানেজাতীয়পতাকাউত্তোলনকরাহয়।একইভাবে২০১৮সালেরঅক্টোবরমাসেযখনলালকেল্লাতেত্রিবর্ণপতাকাউত্তোলনকরাহয়, তখনসবাইআশ্চর্যহয়েছিল, কেননাওখানেতোসাধারণভাবে১৫–ইআগষ্টদিনটিতেইপতাকাউত্তোলনেরপরম্পরাআছে।কিন্তুসেটাছিলআজাদহিন্দসরকারগঠনের৭৫বছরপূর্ণহওয়ারঘটনা।একজনবীরসৈনিকএবংএকজনকুশলসংগঠকরূপেসুভাষবাবুকেসর্বদাস্মরণকরাহবে।এমনইএকজনবীরসৈনিক,যিনিস্বাধীনতারযুদ্ধেগুরুত্বপূর্ণভূমিকাপালনকরেছিলেন। “দিল্লিচলো”, “তোমরাআমাকেরক্তদাও, আমিতোমাদেরস্বাধীনতাদেব” —এইধরনেরতেজস্বীস্লোগানদিয়েনেতাজীসমস্তভারতবাসীরঅন্তরেস্থানকরেনিয়েছেন।বেশকিছুবছরযাবৎএকটাদাবীছিলযেনেতাজীসম্পর্কিতসবফাইলসার্বজনিককরতেহবে।আমিআনন্দিতযেআমরাএইকাজসম্পন্নকরতেপেরেছি।সেইদিনটিআমারমনেআছে, যেদিননেতাজীরপরিবারেরসকলেপ্রধানমন্ত্রীরবাসস্থানেএসেছিলেন।আমরাসকলেমিলেনেতাজীসম্পর্কিতঅনেককথাআলোচনাকরেছিলামএবংনেতাজীসুভাষবসুকেশ্রদ্ধাঞ্জলিঅর্পণকরেছিলাম।
আমিআনন্দিতযেভারতেরমহাননায়কদেরস্মৃতিবিজড়িতবেশকিছুজায়গাকেদিল্লিতেপ্রদর্শনেরচেষ্টাকরাহচ্ছে।সেটাবাবাসাহেবআম্বেদকরেরসঙ্গেসম্পর্কিত২৬,আলিপুররোডহোকবাসর্দারপ্যাটেলসংগ্রহশালা, অথবাক্রান্তিমন্দির।আপনারাদিল্লিএলেএইজায়গাগুলিঅবশ্যইদেখবেন।
আমারপ্রিয়দেশবাসী, আজআমরাযখননেতাজীসুভাষচন্দ্রবোসেরসম্পর্কেআলোচনাকরছিএবংসেটা ‘মনকিবাত’ অনুষ্ঠানে, তখনআমিনেতাজীরজীবনেরএকটিঘটনাআপনাদেরজানতেচাই।আমিসবসময়ইসাধারণমানুষেরসঙ্গেযোগাযোগেরজন্যরেডিওকেএকগুরুত্বপূর্ণমাধ্যমহিসেবেমান্যতাদিই।সেরকমইরেডিওরসঙ্গেনেতাজীরখুবগভীর
সম্পর্কছিল।দেশবাসীরসঙ্গেবার্তাআদান–প্রদানেরজন্যউনিওরেডিওকেইবেছেনিয়েছিলেন।সন১৯৪২–এসুভাষচন্দ্রবোসআজাদহিন্দরেডিও–রশুভারম্ভকরেছিলেনএবংরেডিওরমাধ্যমেতিনিআজাদহিন্দফৌজেরসৈনিকদেরএবংদেশেরমানুষেরকাছেবার্তাপৌঁছেদিতেন।সুভাষচন্দ্রবোসেররেডিওতেকথাশুরুকরারএকবিশেষধরনছিল।সবারআগেতিনিবলতেন – This is Subhash Chandra Bose speaking to you over the Azad Hind Radio, আরএইটুকুশুনেইশ্রোতাদেরমনেএকনতুনউত্তেজনা, একনতুনশক্তিসঞ্চারিতহত।
আমাকেজানানোহয়েছেযে, রেডিওস্টেশনসাপ্তাহিকখবরওপ্রচারকরতইংরেজী, হিন্দী, তামিল, বাংলা, মারাঠী, পাঞ্জাবী, পুস্তু, ঊর্দুইত্যাদিভাষাতে।এইরেডিওস্টেশনচালাতেগুজরাতনিবাসীএম. আর.ব্যাসমহাশয়গুরুত্বপূর্ণভূমিকাপালনকরেছিলেন।আজাদহিন্দরেডিওতেপ্রচারিতঅনুষ্ঠানসাধারণমানুষেরমধ্যেখুবজনপ্রিয়ছিলএবংএইঅনুষ্ঠানগুলিআমাদেরস্বাধীনতাসংগ্রামীদেরওউৎসাহিতকরেছিল।
এইক্রান্তিমন্দিরেএকটিচিত্রসংগ্রহশালাওতৈরিহয়েছে।ভারতীয়কলাওসংস্কৃতিকেআকর্ষণীয়করারএটাহলোআরোএকপ্রচেষ্টা।মিউজিয়ামেচারটিঐতিহাসিকexhibitionআছেআরসেখানেতিনপ্রজন্মেরপুরানো৪৫০এরওবেশিpainting আরart workসংরক্ষিতআছে।এখানেআমৃতাশেরগিল, রাজারবিবর্মা, অবনিন্দ্রনাথঠাকুর,গগনেন্দ্রনাথঠাকুর, নন্দলালবোস, যামিনীরায়, শৈলজমুখার্জীদেরমতোমহানশিল্পীদেরশ্রেষ্ঠশিল্পকলাসুন্দরভাবেপ্রদর্শিতহয়েছে।আমিআপনাদেরপ্রত্যেককেবিশেষভাবেঅনুরোধকরবোএইমিউজিয়ামেআসুনএবংগুরুদেবরবীন্দ্রনাথঠাকুরেরসৃষ্টিকেযেনঅবশ্যইদেখুন।
আপনারাহয়তভাবছেনযেযখনশিল্পকলানিয়েকথাহচ্ছে, আমিআপনাদেরগুরুদেবরবীন্দ্রনাথঠাকুরেরসৃষ্টিকেদেখারকথাকেনবলছি।আপনারাএখনওপর্যন্তগুরুদেবরবীন্দ্রনাথঠাকুরকেলেখকএবংসংগীতশ্রষ্টাহিসেবেইজানেন, কিন্তুআমিবলতেচাইগুরুদেবএকজনচিত্রশিল্পীওছিলেন।তিনিঅনেকবিষয়েpainting তৈরিকরেছেন। তিনিপশুপাখিদেরওছবিএকেঁছেন, এরমধ্যেঅনেকপ্রাকৃতিকসৌন্দর্যেরছবিওরয়েছে, এছাড়াওতিনিhuman character–কেশিল্পকলারমাধ্যমেcanvass–এফুটিয়েতুলেছেন।আরআশ্চর্যেরকথাহলোগুরুদেবরবীন্দ্রনাথঠাকুরএইশিল্পকলারবেশিরভাগেরইকোনওনামরাখেননি।উনিমানতেনযেওঁরpainting–কেদর্শকরানিজেরাইনিজেদেরমতকরেবুঝুন,তাঁরাইতাঁদেরদৃষ্টিদিয়েশিল্পীরসৃষ্টিকেজানুন।ওঁরpainting–গুলিইউরোপেরবিভিন্নদেশে, রাশিয়াএবংআমেরিকাতেওপ্রদর্শিতহয়েছে।আমিআশাকরিআপনারাক্রান্তিমন্দিরেতাঁরpaintingঅবশ্যইদেখতেযাবেন।
আমারপ্রিয়দেশবাসী, ভারতসাধুসন্তদেরভূমি।আমাদেরসন্ত’রানিজেদেরমতামতএবংকাজেরমাধ্যমেসদ্ভাব, সাম্যএবংসামাজিকক্ষমতায়নেরবাণীদিয়েছেন।এরকমইএকসন্তছিলেন – সন্তরবিদাস।১৯শেফেব্রুয়ারীরবিদাসেরজন্মজয়ন্তী। সন্তরবিদাসেরদোঁহাখুবইবিখ্যাত।সন্তরবিদাসজীকয়েকলাইনেরমধ্যেইবড়বড়লোকশিক্ষাদিয়েগেছেন।তিনিবলেছিলেন—
জাতি–জাতিমেজাতিহ্যায়
জোকেতনকেপাত,
রৈদাসমনুষনাজুড়সকে
যবতকজাতিনাজাত
যেভাবেকলাগাছকেছাড়ালেপাতারনীচেপাতাতারনীচেআবারপাতাথাকে, অবশেষেআরকিছুইথাকেনা,ঠিকসেইরকমইমানুষকেবিভিন্নজাতিতেভাগকরেদেওয়ারফলেমানুষআরমানুষনেই।তিনিবলতেনযদিবাস্তবেভগবানসবমানুষেরমধ্যেথাকেনতাহলেজাতি, ধর্মআরসামাজিককর্মেরভিত্তিতেভেদাভেদউচিৎনয়।
গুরুরবিদাসবারাণসীরপবিত্রমাটিতেজন্মেছিলেন।সন্তরবিদাসজীজীবনভরশ্রমওশ্রমিকেরগুরুত্ববোঝানোরপ্রয়াসকরেগেছেন।এটাবলাভুলহবেনাযেতিনিগোটাপৃথিবীকেশ্রমেরগুরুত্বেরবাস্তবঅর্থবুঝিয়েছেন।তিনিবলতেন, মনযদিঠিকথাকেতবেস্বল্পতেইমানুষসন্তুষ্টথাকে।অর্থাৎযদিআপনারমনআরহৃদয়পবিত্রহয়,তাহলেস্বয়ংঈশ্বরআপনারহৃদয়েবসবাসকরবেন।সন্তরবিদাসেরবার্তাসববর্ণেরমানুষকেপ্রভাবিতকরেছিল।চিতোরেরমহারাজাবামহারানীথেকেমীরাবাঈপর্যন্তসবাইতাঁকেঅনুসরণকরতেন।আমিআরএকবারসন্তরবিদাসকেপ্রণামজানাচ্ছি।
আমারপ্রিয়দেশবাসী, কিরণসিদর ‘মাইগভ’-এলিখেছেনযেআমিযেনভারতেরমহাকাশগবেষণাআরতারভবিষ্যতেরসঙ্গেসংশ্লিষ্টসবকিছুরওপরআলোকপাতকরি।তিনিআমারকাছেএইআবেদনওকরেনযাতেআমিশিক্ষার্থীদেরমহাকাশগবেষণায়আগ্রহীহওয়ারকথাবলি।কিরণজী, আমিআপনারএইচিন্তাভাবনা,বিশেষতআমাদেরনবীনদেরজন্যপ্রেরিতএইবার্তাকেসাধুবাদজানাই।
কিছুদিনআগেআমিআমেদাবাদেছিলাম।সেখানেডঃবিক্রমসারাভাইয়েরমূর্তিরআবরণউন্মোচনকরারসুযোগপেয়েছিলাম।ডঃবিক্রমসারাভাইভারতেরমহাকাশগবেষণায়গুরুত্বপূর্ণঅবদানরেখেছেন।আমাদেরস্পেসপ্রোগ্রামেদেশেরঅসংখ্যযুব–বৈজ্ঞানিকজড়িত।আমিএইবিষয়েগর্ববোধকরিযেআজআমাদেরছাত্রদেরতৈরি ‘স্যাটেলাইট’ এবং ‘সাউণ্ডিংরকেট’ মহাকাশেপৌঁছেগেছে।গত২৪–শেজানুয়ারিআমাদেরছাত্রদেরতৈরি ‘কলাম–স্যাট’উৎক্ষেপণকরাহয়েছে।ওড়িশারবিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদেরতৈরি ‘সাউণ্ডিংরকেট’-ওদৃষ্টান্তস্থাপনকরেছে।দেশস্বাধীনহওয়ারপরথেকে২০১৪পর্যন্তযতগুলিমহাকাশঅভিযানহয়েছে, প্রায়সমসংখ্যকঅভিযানগতচারবছরেহয়েছে।আমরাএকটিমহাকাশযানথেকেএকসঙ্গে১০৪–টিস্যাটেলাইটউৎক্ষেপণকরেবিশ্বরেকর্ডস্থাপনকরেছি।আমরাশীঘ্রইচন্দ্রায়ণ–২অভিযানেরমাধ্যমেচাঁদেভারতেরপারাখারব্যবস্থাকরছি।
আমাদেরদেশখুবসুন্দরভাবেমহাকাশপ্রযুক্তিব্যবহারকরছেদেশেরমানুষআরসম্পত্তিরক্ষাকরবারজন্য।রাস্তাঘাটেরসুরক্ষা, রেলপথেরসুরক্ষাবাসাইক্লোনেরআগামসতর্কবার্তা— সবক্ষেত্রেইমহাকাশপ্রযুক্তিরসাহায্যনেওয়াহচ্ছে।আমাদেরমৎস্যজীবীদেরজন্যেNAVICযন্ত্রবিতরণকরাহয়েছেযেটাশুধুতাদেরনিরাপত্তাইদেবেনা, আর্থিকউন্নতিতেওসাহায্যকরবে।সরকারিপরিষেবাঠিকঠাকপৌঁছেদিতেএবংতারদায়বদ্ধতাসুনিশ্চিতকরতেমহাকাশপ্রযুক্তিব্যবহারকরাহচ্ছে।
‘হাউসিংফরঅল’ অর্থাৎসবারজন্যবাসস্থান— এইপরিকল্পনায়তেইশটিরাজ্যেপ্রায়চল্লিশলক্ষগৃহকেGeo Tagকরাহয়েছে।এরইসঙ্গে‘মনরেগা’-রঅধীনেপ্রায়সাড়েতিনকোটিসম্পত্তিকেওGeo Tagকরাহয়েগেছে।আমাদেরএইসবস্যাটেলাইট, দেশেরক্রমবর্ধমানশক্তিরপ্রতীক।বিশ্বেরঅনেকদেশেরসঙ্গেভালোসম্পর্কেরগড়েওঠারক্ষেত্রেআমাদেরএইএরঅবদানআছে।
সাউথএশিয়াsatellitesএকটাঅনন্যউদ্যোগযেটারমাধ্যমেআমাদেরপ্রতিবেশীদেশগুলিরউন্নতিসাধনহয়েছে।ভারততারপ্রতিযোগিতামূলকউৎক্ষেপণপরিষেবারমাধ্যমেশুধুবিকাশশীলদেশনয়, পৃথিবীরউন্নতদেশেরsatellite–ওমহাকাশেছেড়েছে।ছোটদেরজন্যেআকাশএবংতারাচিরকালইআকর্ষণীয়ওবিস্ময়কর।আমাদেরএইমহাকাশকর্মসূচি, ছোটদেরবড়স্বপ্নদেখায়, সীমানাঅতিক্রমকরারসুযোগকরেদেয়, যাকেএরআগেঅসম্ভবমনেকরাহতো।এতেআমাদেরদেশেরছোটরাশুধুযেমুগ্ধবিস্ময়েতারাদেরদেখবেতাইনয়, তারসঙ্গেনতুননতুনতারারঅনুসন্ধানকরারওপ্রেরণাপাবে।
আমারপ্রিয়দেশবাসী।সবসময়বলেএসেছি, যেখেলে, সেফুলেরমতোইফোটে।এবারে‘খেলোইন্ডিয়াyouthগেমস’-এঅনেকতরুণওযুবখেলোয়াড়েরপ্রতিভাপ্রকাশ পেয়েছে।Januaryমাসেপুনেতেঅনুষ্ঠিতএইগেমসের18টিখেলাধুলায়প্রায়৬০০০খেলোয়াড়অংশনেন।
যখনআমাদেরদেশেখেলাধুলারপরিবেশটিমজবুতহবে, অর্থাৎযখনভিতমজবুতহবে, তখনইআমাদেরযুবকরাদেশওদুনিয়াতেনিজেরক্ষমতারশ্রেষ্ঠপ্রদর্শনকরতেপারবে।স্থানীয়অর্থাৎআঞ্চলিকস্তরেখেলোয়াড়যখনতারসর্বোত্তমদক্ষতাপ্রদর্শনকরবেতখনইসেবিশ্বেরদরবারেসর্বোত্তমপ্রদর্শনকরবে।
এবারKhelo Indiaপ্রতিযোগিতায়প্রত্যেকটিরাজ্যেরখেলোয়াড়তাদেরনিজেরস্তরেউল্লেখযোগ্যকৃতিত্বদেখিয়েছেন।যাঁরাপদকজিতেছেনতাঁদেরঅনেকেরইজীবনবিশেষপ্রেরণাদায়ক।যুবমুষ্টিযোদ্ধাআকাশগোর্খারৌপ্যপদকপেয়েছেন।আমিএকজায়গায়পড়েছিলামযেআকাশেরপিতারমেশজীপুনেরএকটিআবাসনেপাহারাদারেরকাজকরেন।তাঁরাসপরিবারেগাড়িরাখারশেডেরমধ্যেথাকেন।অন্যদিকেমহারাষ্ট্রেরঅনুর্ধএকুশমহিলাকবাডিদলেরঅধিনায়িকাসোনালীহেলভীসাতারাতেথাকেন।খুবঅল্পবয়সেবাবাকেহারানোরপরমাআরভাইসোনালীরস্বপ্নকেবাস্তবায়িতকরতেসাহায্যকরেছেন।সাধারণতকবাডিরমতোখেলায়মেয়েদেরউৎসাহিতকরাহয়না।তত্সত্বেওসোনালীহেলভীকবাডিকেবেছেছেনএবংতাতেদক্ষতাদেখিয়েছেন।
আসানসোলনিবাসী১০বছরেরঅভিনবশাkhelo india youthগেমস–এরসর্বকনিষ্ঠস্বর্ণপদকবিজেতা।কর্ণাটকেরএকটিকৃষকপরিবারেরমেয়েAkshata Baswani Kamtiভারোত্তলনেস্বর্ণপদকজিতেছে।এইবিজয়েরমুকুটসেনিজেরবাবাকেদিয়েছে।তারবাবাবেলগাঁওয়েরএককৃষক।যখন‘নবভারত’-এরনির্মাণেরকথাবলছি, তখনএইযুবশক্তিরযেসংকল্প —এটাইতোসেইনতুনভারত।
খেলোইন্ডিয়ারএইকাহিনিগুলোপ্রমাণকরেযেনবভারতেরনির্মাণশুধুমাত্রবড়শহরবামহানগরেরমানুষেরদ্বারাহবেনা, বরঞ্চতাতে ছোটশহর, মফস্বল, গ্রামথেকেআসাশিশু, যুবকএবংতরুণখেলোয়াড়দেরবড়অবদানরয়েছে।
আমারপ্রিয়দেশবাসী, আপনারানিশ্চয়ইঅনেকবিখ্যাতবিউটিকনটেস্ট–এরবিষয়েশুনেথাকবেন।কিন্তুকখনওশৌচাগারচমকানোরকোনওপ্রতিযোগিতারবিষয়েকিছুশুনেছেন? জেনেঅবাকহবেন,গতপ্রায়একমাসধরেচলাএইআশ্চর্যপ্রতিযোগিতায়৫০লাখেরওবেশিশৌচালয়এরমধ্যেইঅংশগ্রহণকরেছে।আরএইআশ্চর্যপ্রতিযোগিতারনামহল ‘স্বচ্ছসুন্দরশৌচালয়’।মানুষএখননিজেরশৌচালয়কেপরিষ্কার–পরিচ্ছন্নরাখারপাশাপাশিরঙতুলিদিয়েরঙিনছবিতেসাজিয়েওতুলছে।কাশ্মীরথেকেকন্যাকুমারী, কচ্ছথেকেকামরূপ — এই‘স্বচ্ছসুন্দরশৌচালয়েরপ্রচুরসুন্দরসুন্দরছবিআপনিচাইলেইসোস্যালমিডিয়াতেদেখতেপাবেন।এইপ্রসঙ্গেআমিওসরপঞ্চআরগ্রামপ্রধানদেরনিজেরনিজেরএলাকায়এইঅভিযানেরনেতৃত্বদানেরজন্যআহ্বানকরছি।প্রত্যেকেরনিজেরস্বচ্ছসুন্দরশৌচালয়েরছবি#MyIzzatGharলিখেসোশ্যালমিডিয়ায়অবশ্যইশেয়ারকরুন।
বন্ধুরা, ২০১৪সালের২–রাঅক্টোবরআমরাআমাদেরদেশকেপরিচ্ছন্নকরেতোলাএবংখোলাজায়গায়শৌচমুক্তকরারজন্যএকসঙ্গেএকচিরস্মরণীয়যাত্রাশুরুকরেছিলাম।ভারতেরপ্রত্যেকেরসহযোগিতায়আজ২–রাঅক্টোবর, ২০১৯–এরঅনেকআগেইখোলাজায়গায়শৌচ–মুক্তহওয়ারদিকেআমরাঅনেকএগিয়েগেছি,যাবাপুজীরসার্ধশতজন্মজয়ন্তীতেতাঁকেআমরাউৎসর্গকরতেপারব।
স্বচ্ছভারতেরএইচিরস্মরণীয়যাত্রায় ‘মনকিবাত’-এরশ্রোতাদেরঅনেকবড়
ভূমিকাছিল।তাইএইকথাআজআপনাদেরসঙ্গেভাগকরেনিতেখুবআনন্দহচ্ছেযে,৫লক্ষ৫০হাজারেরবেশিগ্রামএবং৬০০জেলা ‘খোলাজায়গায়শৌচমুক্ত’ ঘোষিতহয়েগেছে।গ্রামীণভারতের৯৮শতাংশএলাকাইস্বচ্ছতারআওতায়এসেছে।তাছাড়া, আরওবড়ব্যাপারহলযেপ্রায়নয়কোটিপরিবারকেশৌচালয়েরসুবিধাদেওয়াগেছে।
আমারছোট্টবন্ধুরা, পরীক্ষারদিনএগিয়েআসছে।হিমাচলপ্রদেশথকেঅংশুলশর্মাmygov–এলিখেছেযে, এইসবপরীক্ষাএবংতারপরীক্ষার্থী–যোদ্ধাদেরনিয়েআমায়কিছুবলতেহবে।অংশুলজী,এইপ্রসঙ্গতোলারজন্যআপনাকেঅনেকধন্যবাদ।হ্যাঁ, কিছুপরিবারেরকাছেএইপরীক্ষারমরশুমটাইঅগ্রাধিকারপায়।শিক্ষার্থী,তাদেরবাবা–মাএবংশিক্ষক–শিক্ষিকা —পরীক্ষারসঙ্গেযুক্তপ্রত্যেকেইভীষণব্যস্তথাকে।
আমিপ্রত্যেকশিক্ষার্থী, তাদেরমা–বাবাআরশিক্ষকদেরশুভকামনাজানাই।আজকেরএই ‘মনকিবাত’ অনুষ্ঠানেআমারএইবিষয়েকথাবলতেভালোলাগতো, কিন্তুআপনারাএকথাজেনেখুশিহবেনযে —আগামী২৯–শেজানুয়ারিসকাল১১–টায় ‘পরীক্ষাপেচর্চা’ এইঅনুষ্ঠানেআমিসারাদেশেরপরীক্ষার্থীদেরসঙ্গেকথাবলব।এবারপড়ুয়াদেরসঙ্গেসঙ্গেতাদেরবাবা–মাওশিক্ষকরাওএইঅনুষ্ঠানেঅংশগ্রহণকরবেন।এমনকিএবারঅন্যকয়েকটিদেশেরপড়ুয়ারাওঅংশগ্রহণকরছেনএই ‘পরীক্ষাপেচর্চা’ অনুষ্ঠানে।পরীক্ষারসঙ্গেযুক্তসমস্তবিষয়, বিশেষকরে ‘Stress Free Exam’অর্থাৎউৎকণ্ঠাহীনপরীক্ষানিয়েআমারতেজোদীপ্তবন্ধুদেরসঙ্গেঅনেককথাবলব।এইবিষয়েআমিজনগণেরমতামতজানতেচেয়েছিলামএবংএটাখুবইআনন্দেরব্যাপারযেmygov–এপ্রচুরমানুষএইবিষয়েতাঁদেরমতামতজানাচ্ছেন।এরমধ্যেবেশকিছুবিচারবিবেচনাএবংপরামর্শআমিটাউনহলেরসেইঅনুষ্ঠানেআপনাদেরসামনেতুলেধরব।আপনারাঅবশ্যইএইঅনুষ্ঠানেঅংশনিন।সোস্যালমিডিয়াএবং ‘নমোঅ্যাপ’-এরমাধ্যমেআপনারাএইঅনুষ্ঠানেরলাইভটেলিকাস্টদেখতেপাবেন।
আমারপ্রিয়দেশবাসী, ৩০–শেজানুয়ারিবাপুজীরপুণ্যতিথি।সেদিন১১–টারসময়েসমস্তদেশবাপুজীরউদ্দেশেশ্রদ্ধাঞ্জলীনিবেদনকরে।আমরাযেখানেইথাকি,শহীদদেরপ্রতি২মিনিটযেনঅবশ্যইশ্রদ্ধাঞ্জলীঅর্পণকরি।পূজনীয়বাপুজীরপুণ্যস্মরণেতাঁরস্বপ্নকেবাস্তবায়িতকরা, ‘নতুনভারত’-এরনির্মাণ,সুনাগরিকহিসাবেনিজেরকর্তব্যপালনকরারপ্রতিজ্ঞানিয়েইআমরাএগিয়েযাব।২০১৯–এরএইযাত্রাকেসাফল্যেরসঙ্গেআমাদেরএগিয়েনিয়েযেতেহবে।
আপনাদেরসবাইকেঅনেকঅনেকশুভকামনাওঅসংখ্যধন্যবাদ!
আমার প্রিয় দেশবাসী! নমস্কার!
২০১৮ শেষ হতে চলেছে। আমরা ২০১৯-এ প্রবেশ করতে চলেছি। স্বাভাবিকভাবেই এই সন্ধিক্ষণে বিগত বছরের কথা এবং আসন্ন নববর্ষের সঙ্কল্পের কথা উভয়ই আলোচিত হচ্ছে। ব্যক্তিবিশেষ, সমাজ এবং রাষ্ট্র — সবাইকে পিছন ফিরে তাকাতে হবে এবং সামনের দিকে যতদূর দৃষ্টি যায়, তাকানোর চেষ্টা করতে হবে, তবেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নতুন কিছু করার আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠবে। আমরা এমন কি কি উদ্যোগ নিতে পারি, যাতে নিজের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারি ও তার সাথে দেশ ও সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। আপনাদের সবাইকে ২০১৯-এর অনেক অনেক শুভেচ্ছা!
আপনারা সবাই নিশ্চয়ই ভেবেছেন, ২০১৮-কে কিভাবে মনে রাখা যায়। ১৩০ কোটি জনতার বলে বলীয়ান ভারত ২০১৮-কে কীভাবে মনে রাখবে — এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই ভাবনা আমাদের গৌরবাণ্বিত করবে।
২০১৮-য় বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ স্বাস্থ্যবীমা পরিকল্পনা ‘আয়ুষ্মান ভারত’-এর সূচনা হয়। দেশের প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। বিশ্বের বিশিষ্ট সংস্থাসমূহ স্বীকার করে নিয়েছে যে ভারত রেকর্ড গতিতে দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করার পথে এগিয়ে চলেছে। দেশবাসীর অদম্য সংকল্পের জেরে ‘স্বচ্ছতা অভিযান’ ৯৫ শতাংশ লক্ষ্য পূরণের পথে এগিয়ে চলেছে।
স্বাধীনতার পর লালকেল্লা থেকে আজাদ হিন্দ সরকারের ৭৫-তম বর্ষপূর্তিতে প্রথমবার রাষ্ট্রীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। দেশকে একতার সূত্রে যিনি গেঁথেছিলেন, সেই পূজনীয় সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের সম্মানে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মূর্তি ‘Statue of Unity’ তৈরি হয় এতে সারা বিশ্বে ভারতের নাম উজ্জ্বল হয়েছে। রাষ্ট্র সঙ্ঘের সর্বোচ্চ পরিবেশ পুরস্কার ‘Champions of the Earth’-এ ভারতকে ভূষিত করা হয়েছে। সৌর শক্তি ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধের ক্ষেত্রে ভারতের প্রয়াসকে
সমগ্র বিশ্ব সাধুবাদ জানিয়েছে। ভারতে ‘আন্তর্জাতিক সৌর জোট’-এর প্রথম মহাসভা ‘International Solar Alliance’-এর আয়োজন করা হয়। সার্বিক প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ আমাদের দেশ ‘Ease of doing Business’ র্যাঙ্কিং-এ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। দেশের আত্মরক্ষার স্থিতি আরও মজবুত হয়ে উঠেছে। এবছর ‘Nuclear Triad’-এর পরিকল্পনাটি আমাদের দেশে সাফল্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ হয়েছে। আমরা এখন জল, স্থল ও আকাশ — এই তিনটি ক্ষেত্রেই পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন হয়ে উঠেছি। দেশের কন্যারা ‘নাবিকা’ সাগর পরিক্রমার মাধ্যমে পুরো বিশ্ব ভ্রমণ করে দেশকে গৌরবাণ্বিত করেছেন। বারাণসীতে ভারতের প্রথম জলপথের সূচনা হয়েছে। এতে জলপথ পরিবহণের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। দেশের সবচেয়ে লম্বা রেল-রোড বোগিবিল ব্রিজ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। সিকিমে প্রথম এবং দেশের শত-তম এয়ারপোর্ট পাক-ইয়ঙ-এর শুভ সূচনা হয়েছে। অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ এবং ব্লাইণ্ড ক্রিকেটের বিশ্বকাপে ভারত জয়ী হয়েছে। এবারের এশিয়ান গেমস-এও ভারত অনেক পদক জিতেছে। প্যারা-এশিয়ান গেমসেও ভারতের ফলাফল খুব ভালো হয়েছে। তবে যদি আমি প্রতিটি ভারতবাসীর সাফল্য এবং আমাদের সার্বিক প্রচেষ্টার কথা বলতে থাকি, তবে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান’টি এত লম্বা হয়ে যাবে যে ২০১৯ বোধহয় শুরুই হয়ে যাবে। এই সব কিছুই ১৩০ কোটি দেশবাসীর অদম্য প্রচেষ্টায় সম্ভব হয়েছে। আমার বিশ্বাস ২০১৯-এও ভারতের উন্নতি ও প্রগতির যাত্রার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে এবং আমাদের দেশ নতুন উচ্চতা লাভ করবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এই ডিসেম্বর মাসে আমরা কিছু অসাধারণ দেশবাসীকে হারিয়েছি। ১৯-শে ডিসেম্বর চেন্নাইয়ে ডক্টর জয়া চন্দ্রনের জীবনাবসান হয়েছে। ডক্টর জয়া চন্দ্রন-কে মানুষ ভালোবেসে ‘মক্কল মারুথুবার’ বলে সম্বোধন করত। কেননা, তিনি জনতার অন্তরে বিরাজ করতেন। ডক্টর জয়া চন্দ্রন দরিদ্র মানুষকে খুব সস্তায় চিকিৎসা পরিসেবা দেওয়ার জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি অসুস্থ মানুষের চিকিৎসা করার জন্য সর্বদা তৎপর থাকতেন। ওঁর কাছে আগত অসুস্থ বয়ঃজ্যেষ্ঠ মানুষদের আসা-যাওয়ার ভাড়াও মিটিয়ে দিতেন। আমি ‘দ্য বেটার ইণ্ডিয়া ডট কম’ ওয়েবসাইটে তাঁর অনেক প্রেরণামূলক সামাজিক কাজ সম্পর্কে পড়েছি। একই ভাবে ২৫-শে ডিসেম্বর কর্ণাটকের সুলাগিট্টি নরসাম্মা-র মৃত্যুসংবাদ পেয়েছি। নরসাম্মা গর্ভবতী মা-বোনেদের প্রসবে সাহায্যকারী ধাইমা ছিলেন। তিনি কর্ণাটকে, বিশেষত প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে হাজারও মা-বোনেদের সেবা করেছেন। এই বছরের শুরুতে তাঁকে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছিল। ডক্টর জয়া চন্দ্রন এবং সুলাগিট্টি নরসাম্মার মত বহু দৃষ্টান্তমূলক ব্যক্তিত্ব আছেন, যাঁরা সমাজের ভালোর জন্য নিজেদের জীবন নিয়োজিত করেছেন। যখন স্বাস্থ্য পরিসেবা নিয়ে আলোচনা করছি, তখন আমি উত্তর প্রদেশের বিজনোরে ডাক্তারদের সামাজিক প্রচেষ্টাগুলির উল্লেখ করতে চাই। কিছুদিন আগে আমার পার্টির কয়েকজন কর্মকর্তা আমাকে জানায় যে শহরের কিছু তরুণ চিকিৎসক শিবির করে বিনামূল্যে গরীবদের চিকিৎসা করছেন। ওখানকার Heart-Lungs Critical Centre-এর পক্ষ থেকে প্রতি মাসে স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করা হয়। একাধিক অসুখ-বিসুখের বিনামূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা করা হয়। এখন প্রতি মাসে শত শত গরীব মানুষ এই শিবির থেকে উপকৃত হচ্ছেন। নিঃস্বার্থ ভাবে সেবায় নিযুক্ত এই চিকিৎসক-বন্ধুদের উৎসাহ সত্যি প্রশংসনীয়। আজ আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলেই ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’ এক সফল অভিযানে পরিণত হয়েছে। আমাকে কিছু মানুষ জানিয়েছেন যে কয়েকদিন আগে মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরে একসঙ্গে তিন লক্ষেরও বেশি মানুষ স্বচ্ছতা অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হন। স্বচ্ছতার এই মহাযজ্ঞে নগরনিগম, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, জব্বলপুরের আম জনতা — সবাই মিলে উৎসাহের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। আমি ‘দ্য বেটার ইণ্ডিয়া ডট কম’-এর উল্লেখ করেছিলাম। এইখানেই আমি ডক্টর জয়া চন্দ্রনের বিষয়ে জানতে পারি। যখনই সময়-সুযোগ হয়, তখনই আমি ‘দ্য বেটার ইণ্ডিয়া ডট কম’ ওয়েবসাইটে গিয়ে এই ধরনের উদ্বুদ্ধকারী বিষয় সম্বন্ধে জানার চেষ্টা করি। আমি খুশি যে আজকাল এই ধরনের বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট আছে, যেগুলি প্রেরণাদায়ক মানুষদের জীবন কাহিনির সঙ্গে আমাদের পরিচয় করায়। যেমন ‘দ্য পসিটিভ ইণ্ডিয়া ডট কম’ সমাজে পজিটিভিটি ও সংবেদনশীলতার আবহ তৈরি করার চেষ্টা করছে। সেই রকমই ‘ইওর স্টোরি ডট কম’ তরুণ উদ্ভাবক ও উদ্যোগী মানুষদের সাফল্যের কাহিনি খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরে। ‘সংস্কৃতভারতী ডট ইন’-এর মাধ্যমে আপনি ঘরে বসে সহজ সরলভাবে সংস্কৃত ভাষা শিখতে পারেন। আমরা একটা কাজ করতে পারি, এই ধরনের ওয়েবসাইটগুলির কথা একে অন্যের সঙ্গে শেয়ার করতে পারি। Positivity-কে সবাই মিলে viral করি। আমার বিশ্বাস, এর ফলে বহু মানুষ জানতে পারবে, সমাজে পরিবর্তন আনা এই নায়কদের সম্পর্কে। Negativity ছড়ানো খুব সহজ, কিন্তু আমাদের আশেপাশে, আমাদের সমাজে অনেক ভালো কাজও হচ্ছে এবং এসব সম্ভবপর হচ্ছে ১৩০ কোটি ভারতবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায়।
সব সমাজেই খেলাধূলার একটা আলাদা গুরুত্ব থাকে। যখন কোনও খেলা হয়, তখন দর্শকদের মনেও উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনার সঞ্চার হয়। খেলোয়াড়দের নাম-পরিচয়-সম্মান সম্পর্কে আমরা অবগত হই, কিন্তু কখনও কখনও খেলাধূলার জগতে এমন অনেক কাহিনি আড়ালে থেকে যায়, যার গুরুত্ব অনেক বেশি। আমি কাশ্মীরের একটি মেয়ে – হনায়া নিসারের বিষয়ে বলতে চাই। সে কোরিয়াতে ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক জিতেছে। দ্বাদশবর্ষীয়া হনায়া কাশ্মীরের অনন্তনাগে থাকে। সে অনেক পরিশ্রম করে ক্যারাটে শেখে। এই বিদ্যার খুঁটিনাটি সম্পর্কে অবগত হয়ে সে নিজেকে প্রমাণ করে দেখিয়েছে। আমি সকল দেশবাসীর পক্ষ থেকে তাঁর উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করি। হনায়ার জন্য রইল অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও আশীর্বাদ।
এই রকমই আরেক কন্যা, ষোড়শী রজনীকে নিয়ে মিডিয়াতে অনেক আলোচনা হচ্ছে। আপনারাও নিশ্চয়ই পড়েছেন। রজনী মেয়েদের জুনিয়র বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ-এ স্বর্ণ পদক জিতেছে। পদক জেতার ঠিক পরেই রজনী কাছের একটি স্টলে গিয়ে এক গ্লাস দুধ খায়। তারপর পদকটি একটি কাপড়ে জড়িয়ে নিজের ব্যাগে রেখে দেয়। আপনারা নিশ্চয়ই ভাবছেন, রজনী এমনটা কেন করল? কেন সে এক গ্লাস দুধ খেল? সে তার বাবা — জসমের সিং-এর সম্মানে এমনটা করে, যিনি পানিপথের এক দোকানে লস্যি বিক্রি করেন। রজনী জানিয়েছে, তাকে এই জায়গায় পৌঁছতে তার বাবাকে অনেক ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করতে হয়েছে। জসমের সিং প্রত্যেক দিন ভোরে রজনী ও তার ভাই-বোনদের ওঠার আগেই কাজে বেরিয়ে যান। রজনী যখন বাবার কাছে বক্সিং শেখার ইচ্ছা জানায়, তার উৎসাহ বাড়ানোর, তার স্বপ্ন সফল করার জন্য তিনি সর্বতোভাবে চেষ্টা করেছেন। রজনী বক্সিং প্র্যাকটিস আরম্ভ করে পুরনো গ্লাভস দিয়েই, কারণ তখন তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। সমস্ত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও রজনী সাহস হারায়নি এবং বক্সিং শেখা চালিয়ে যায়। সে সার্বিয়াতেও একটি পদক জয় করে। আমি রজনীকে শুভেচ্ছা ও আশীর্বাদ জানানোর সঙ্গে সঙ্গে ওর বাবা-মা জসমের সিংজী ও ঊষারাণীকে অভিনন্দন জানাই রজনীর পাশে থাকার ও তাকে উৎসাহ দানের জন্য।
এই মাসেই পুনের কুড়ি বছর বয়সী বেদাঙ্গী কুলকার্ণি সাইকেলে পৃথিবী পরিক্রমা করে সবথেকে দ্রুতগতি সম্পন্ন এশিয়ান হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। ও ১৫৯ দিন ধরে প্রতি দিন প্রায় ৩০০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়েছিল। আপনারা কল্পনা করে দেখুন, প্রত্যেকদিন ৩০০ কিলোমিটার সাইক্লিং! সাইকেল চালানোর প্রতি ওর এই অদম্য উৎসাহ সত্যিই প্রশংসনীয়।
এই ধরনের উপলব্ধি, এই ধরনের প্রাপ্তির কথা কি আমাদের অনুপ্রাণিত করে না? বিশেষত আমার তরুণ বন্ধুরা যখন এই ধরনের ঘটনার কথা শোনেন, তখন সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যেও তাঁরা কিছু করে দেখাবার প্রেরণা লাভ করেন। যদি সংকল্প অটল হয়, সাহস হয় দুর্জয়, তখন বাধা নিজে নতমস্তক হয়। প্রতিকূলতা কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। এই ধরনের অন্যান্য উদাহরণের কথা যখন আমরা শুনি, তখন আমরাও জীবনের প্রত্যেক মুহূর্তে নতুন করে প্রেরণা লাভ করি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, জানুয়ারি মাসে উৎসাহ ও আনন্দ নিয়ে আসছে অনেকগুলি উৎসব। যেমন লোহড়ী, পোঙ্গল, মকর সংক্রান্তি, উত্তরায়ণ, মাঘ বিহু, মাঘী ইত্যাদি। এই সমস্ত উৎসবগুলিতে পুরো ভারতবর্ষ জুড়ে কোথাও দেখা যাবে পরম্পরাগত নৃত্যের রঙ, আবার কোথাও ফসল ফলানোর খুশিতে জ্বালানো হবে লোহড়ী, কোথাও আকাশে রঙ বেরঙের ঘুড়ি উড়বে, আবার কোথাও বসবে জমজমাট মেলা। কোথাও খেলাধূলার আয়োজন হবে, আবার কোথাও পালিত হবে একে অপরকে তিল-গুড় খাইয়ে মিষ্টিমুখ করানোর উৎসব। লোকজনেরা একে অপরকে বলবে — ‘তিল গুড় ঘ্যা আণি গোড় গোড় বোলা’, অর্থাৎ — ‘তিল-গুড় খাও আর মিষ্টি করে কথা বলো’। এই সমস্ত উৎসবের নাম আলাদা আলাদা হলেও উৎসব পালনের উদ্দেশ্য এক। এই উৎসবগুলি কোনো না কোনো ভাবে কৃষিকাজ এবং পল্লীজীবনের সঙ্গে যুক্ত। এই সময়েই সূর্যের উত্তরায়ণ হয় এবং সূর্য মকর রাশিতে প্রবেশ করে। এরপর থেকেই দিন আস্তে আস্তে বড় হতে শুরু করে আর শীতের ফসল কাটার দিন শুরু হয়। এই উপলক্ষে আমাদের অন্নদাতা কৃষক ভাই-বোনেদেরও জানাই অসংখ্য শুভেচ্ছা!
‘বিবিধের মধ্যে ঐক্য’ — ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’ — এই ভাবনার সৌরভ উৎসবের মধ্যে নিহিত আছে। আমরা দেখতে পাই, এই উৎসবগুলি প্রকৃতির সঙ্গে কতটা নিবিড় ভাবে জড়িত। ভারতীয় সংস্কৃতিতে সমাজ ও প্রকৃতিকে আলাদা করে দেখা হয় না। এখানে ব্যক্তি ও সমষ্টি এক। প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের নিবিড়তার আরও একটি সুন্দর উদাহরণ হল — উৎসবভিত্তিক ক্যালেণ্ডার। এই ক্যালেণ্ডারগুলিতে সারা বছরের উৎসবের সঙ্গে গ্রহ-নক্ষত্রের বিবরণও থাকে। এই প্রথাগত ক্যালেণ্ডারগুলি থেকে বোঝা যায়, প্রাকৃতিক এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কিত ঘটনাগুলির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কত প্রাচীন। চন্দ্র ও সূর্যের গতির উপর আধারিত এই চন্দ্র-সূর্য ক্যালেণ্ডার অনুযায়ী পরব ও উৎসবগুলির তিথি নির্ধারণ করা হয়। এটা নির্ভর করে কে কোন ক্যালেণ্ডার অনুসরণ করেন তার উপর। অনেক জায়গায় গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থানের ওপরই পরব, উৎসবের দিন নির্ধারিত হয়।
গুড়ী-পড়ওয়া, চেটি-চণ্ড, উগাদি — এই সমস্ত উৎসব যেমন চন্দ্র ক্যালেণ্ডার অনুযায়ী পালিত হয়, সেই রকমই তামিল পুথাণ্ডু এবং বিষু, বৈশাখ, বৈশাখী, পয়লা বৈশাখ, বিহু ইত্যাদি পরব সূর্য ক্যালেণ্ডার অনুসারে পালন করা হয়। আমাদের অনেকগুলি পার্বণে নদী এবং জলকে রক্ষা করার বিশেষ উদ্দেশ্যটিও অন্তর্নিহিত থাকে। ছট পরবটি নদী এবং জলাশয়ে সূর্য উপাসনার সঙ্গে জড়িত। মকর সংক্রান্তিতেও লক্ষ-কোটি মানুষ পবিত্র নদীগুলিতে স্নান করেন। আমাদের পরব, উৎসবগুলি সামাজিক মূল্যেবোধেরও শিক্ষা দেয়। একদিকে যেমন এগুলির পৌরাণিক গুরুত্ব আছে, অপরদিকে এই প্রত্যেকটি পর্ব অত্যন্ত সহজভাবে জীবনে একে অপরের সঙ্গে ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে তোলার শিক্ষা ও প্রেরণা দেয়। আমি আপনারদের সবাইকে ২০১৯-এর অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই এবং কামনা করি, এই সমস্ত উৎসবগুলিকে আপনারা খুব উপভোগ করুন। এই উৎসব উপলক্ষ্যে তোলা ফোটোগুলি আপনারা সবার সঙ্গে শেয়ার করুন যাতে ভারতের বৈচিত্র্য আর ভারতীয় সংস্কৃতির সৌন্দর্য সবাই দেখতে পান।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের সংস্কৃতিতে এমন অনেক কিছু আছে, যা নিয়ে আমরা গর্ববোধ করতে পারি এবং সমস্ত পৃথিবীকে মাথা উঁচু করে তা দেখাতে পারি। সেইরকমই একটি হল কুম্ভ মেলা। আপনারা কুম্ভ নিয়ে অনেক কিছু শুনে থাকবেন। অনেক সিনেমাতেও এই মেলার ঐতিহ্য ও বিশালত্ব নিয়ে নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে এবং এগুলো সত্যি। কুম্ভের স্বরূপ বিরাট — যতটা ঐতিহ্যপূর্ণ, ততটাই মাহাত্ম্যপূর্ণ। দেশ এবং সারা পৃথিবী থেকে লোক আসে কুম্ভে অংশগ্রহণ করতে। আস্থা এবং শ্রদ্ধার জনজোয়ার উপচে পড়ে এই কুম্ভমেলায়।এক সাথে এক জায়গায় দেশ বিদেশের লক্ষ-কোটি মানুষ মিলিত হচ্ছেন। কুম্ভের পরম্পরা আমাদের মহান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য দ্বারা পুষ্ট এবং পল্লবিত হয়েছে। বিশ্ব বিখ্যাত কুম্ভ মেলা এবার ১৫জানুয়ারি থেকে প্রয়াগরাজ-এ আয়োজিত হতে চলেছে। আপনারা সবাই হয়তো অত্যন্ত ঔৎসুক্যের সঙ্গে এর প্রতীক্ষা করছেন। সন্ত-মহাত্মারা কুম্ভ মেলার জন্য এখন থেকেই পৌঁছতে শুরু করেছেন। গত বছর ইউনেস্কো কুম্ভ মেলাকে ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অফ হিউম্যানিটি’ তালিকায় নথিভুক্ত করেছে। এই ঘটনা থেকেই এর আন্তর্জাতিক ব্যাপকতাসম্পর্কে ধারণা করা যায়। কিছুদিন আগে অনেক দেশের রাষ্ট্রদূত কুম্ভের প্রস্তুতি দেখেছেন। সেখানে একসঙ্গে অনেক দেশের জাতীয় পতাকাউত্তোলন করা হয়েছিল। প্রয়াগরাজ-এ আয়োজিত হতে চলা কুম্ভ মেলায় দেড়শটিরও বেশি দেশের মানুষের আসার সম্ভাবনা রয়েছে। কুম্ভেরমাহাত্ম্যের মাধ্যমে ভারতের মহিমা সারা পৃথিবীতে নিজের রং বিচ্ছুরণ করবে।
কুম্ভ মেলা নিজেকে আবিষ্কার করারও একটি বড় মাধ্যম, যেখানে আগত প্রতিটি ব্যক্তির আলাদা আলাদা অনুভূতি হয়। তাঁরা সামাজিক বস্তুকে আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে দেখেন এবং বোঝেন। বিশেষত যুব সমাজের জন্য এটি একটি খুব বড় ‘লার্নিং এক্সপেরিয়েন্স’ হতে পারে।আমি নিজে কিছুদিন আগে প্রয়াগরাজ-এ গিয়েছিলাম। আমি দেখলাম কুম্ভের জোরদার প্রস্তুতি চলছে। প্রয়াগরাজ-এর মানুষও কুম্ভ নিয়ে যথেষ্ট উৎসাহী। ওখানকার মানুষদের জন্য আমি ইন্টিগ্রেটেড কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার চালু করেছি। এতে তীর্থযাত্রীদের যথেষ্ট সহায়তা হবে। এবার কুম্ভে পরিচ্ছন্নতার ওপরও যথেষ্ট জোর দেওয়া হচ্ছে। আয়োজনে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বচ্ছতাও থাকলে অনেক দূর পর্যন্ত ভালো বার্তা পৌঁছবে। এবারের কুম্ভে সব তীর্থযাত্রী সঙ্গমে পবিত্র স্নানের পর অক্ষয় বটের পুণ্যদর্শন করতে পারবেন। মানুষের আস্থার প্রতীক এই অক্ষয়বট হাজার বছর ধরে দুর্গে বন্ধ ছিল। ফলে তীর্থযাত্রীরা চাইলেও এটি দর্শন করতে পারতেন না। এখন অক্ষয় বটের দ্বার সবার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। আপনাদের কাছে আমার আবেদন, যখন আপনারা কুম্ভে যাবেন কুম্ভের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য এবং ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় অবশ্যই শেয়ার করবেন যাতে আরো বেশি সংখ্যক মানুষ কুম্ভে যেতে অনুপ্রাণিত হন। আধ্যাত্মের এই কুম্ভ ভারতীয় দর্শনের মহাকুম্ভ হোক। আস্থার এই কুম্ভ দেশাত্মবোধ ও জাতীয় সংহতিরও মহাকুম্ভ হোক। তীর্থযাত্রীদের এই কুম্ভ বিদেশী ট্যুরিস্টদেরও মহাকুম্ভ হোক। সংস্কৃতির এই কুম্ভ সৃজনশীলতারও মহাকুম্ভ হোক।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ২৬-শে জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবসের সমারোহ নিয়ে দেশবাসীর মনে খুব ঔৎসুক্য থাকে। সেই দিন আমরা সেই মহান ব্যক্তিদের স্মরণ করি যাঁরা আমাদের সংবিধান উপহার দিয়েছেন। এবছর আমরা পূজনীয় বাপুর সার্ধশত-তম জন্মজয়ন্তী পালন করছি। আমাদের জন্য সৌভাগ্যের কথা, দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি শ্রী সিরিল রামাফোসা এবারের সাধারণতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি রূপে ভারতে আসছেন। পূজনীয় বাপু এবং দক্ষিণ আফ্রিকার একটি অটুট বন্ধন রয়েছে।দক্ষিণ আফ্রিকাই হচ্ছে সেই স্থান যেখানে মোহন মহাত্মায় পরিণত হয়েছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকাতেই মহাত্মা গান্ধী প্রথম সত্যাগ্রহ শুরু করেছিলেন এবং বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। উনি‘ফিনিক্স’ এবং‘টলস্টয়’ফার্ম স্থাপন করেছিলেন,যেখান থেকে সারা বিশ্বে শান্তি আরন্যায়েরজন্য আওয়াজ উঠেছিল। ২০১৮-তে নেলসন ম্যান্ডেলার জন্ম শতবর্ষ পালন করা হচ্ছে। তিনি ‘মারিবা’ নামেও পরিচিত ছিলেন। আমরা সবাই জানি যে নেলসন ম্যাণ্ডেলা সারা বিশ্বে বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক দৃষ্টান্ত ছিলেন। আর ম্যান্ডেলার প্রেরণার উৎস কে ছিলেন? তিনি অতগুলো বছর কারাগারে কাটানোর সহন শক্তি এবং প্রেরণা পূজনীয় বাপুর থেকেই তো পেয়ে ছিলেন! ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, “মহাত্মা আমাদের ইতিহাসের অভিন্ন অঙ্গ কারণ এখানেই উনি সত্যের পথে নিজেকে প্রথম প্রয়োগ করেছিলেন। এখানেই উনি ন্যায়ের প্রতি নিজের দৃঢ়তার সঠিক প্রদর্শন করেছিলেন। এখানেই উনি নিজের সত্যাগ্রহের দর্শন এবং লড়াইয়ের পদ্ধতির বিকাশ ঘটান।” উনি বাপুকে রোল মডেল মনে করতেন। বাপু এবং ম্যান্ডেলা,দুজনেই সারা বিশ্বের কাছে শুধু প্রেরণার উৎস ছিলেন না, তাদের আদর্শ আমাদের প্রেম আর করুণায় ভরা সমাজ গড়ে তোলার জন্য সর্বদা উৎসাহিত করে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছু দিন আগে গুজরাটের নর্মদা নদীর ধারে কেওড়িয়া — যেখানে পৃথিবীর সর্বোচ্চ মূর্তি ‘Statue of Unity’ আছে, সেখানে পুলিশ মহানির্দেশক-দের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে সার্থক আলোচনা হয়। দেশ এবং দেশবাসীর সুরক্ষাকে আরও মজবুত করার জন্য কি ধরনের পদক্ষেপ প্রয়োজন, সে বিষয়ে বিস্তৃত চর্চা হয়। এই সম্মেলনে আমি রাষ্ট্রীয় একতার জন্য সরদার প্যাটেল পুরস্কার শুরু করার ঘোষণা করেছি। এই পুরস্কার তাঁদেরই দেওয়া হবে যাঁরা রাষ্ট্রীয় একতার জন্য কোনো না কোনো ভাবে অবদান রেখেছেন। সরদার প্যাটেল দেশের একতার জন্য তাঁর জীবন সমর্পণ করেছিলেন। ভারতের অখণ্ডতাকে অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য তিনি সারা জীবন কাজ করেছেন। তাঁর মতে দেশের বিবিধতার মধ্যে দেশের ঐক্য নিহিত আছে। সরদার প্যাটেলের এই ভাবনার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্যই একতার এই পুরস্কারের মাধ্যমে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করতে চাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আগামী ১৩-ই জানুয়ারি গুরু গোবিন্দ সিং-এর জন্ম জয়ন্তী উৎসব। গুরু গোবিন্দ সিং পাটনাতে জন্ম গ্রহণ করেন। জীবনের অধিকাংশ সময় তাঁর কর্মভূমি ছিল উত্তর ভারত। মহারাষ্ট্রের নান্দেড়-এ তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জন্মভূমি পাটনা, কর্মস্থল উত্তরভারত এবং জীবনের অন্তিম সময় নান্দেড়-এ। একভাবে বলতে গেলে পুরো ভারতবর্ষ তাঁর আশীর্বাদ পেয়েছে। তাঁর জীবনকালকে পর্যবেক্ষণ করলে সম্পূর্ণ ভারতের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাওয়া যায়। তাঁর পিতা গুরু তেগবাহাদুর শহীদ হওয়ার পর মাত্র ৯ বছর বয়সে তিনি গুরুর আসন গ্রহণ করেন। শিখ গুরুদের ঐতিহ্য থেকেই গুরু গোবিন্দ সিং অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রেরণা পেয়েছিলেন।
তিনি ছিলেন সরল এবং শান্ত ব্যক্তিত্বের মানুষ, কিন্তু যখনই গরীব এবং দুর্বলের আওয়াজ রুদ্ধ করার প্রয়াস হয়েছে, তাদের প্রতি কোনও অন্যায় হয়েছে, তখনই গুরু গোবিন্দ সিংজী এই গরীব এবং দুর্বল মানুষদের জন্য দৃঢ়তার সঙ্গে সোচ্চার হয়েছেন। এই কারণেই বলা হয় —
“সওয়া লাখ সে এক লড়ায়ুঁ
চিড়িয়োঁ সোঁ ম্যায় বাজ তুড়ায়ুঁ
তবে গোবিন্দসিংহ নাম কহায়ুঁ”
তিনি বলতেন, দুর্বল মানুষদের সঙ্গে লড়াই করে শক্তির প্রদর্শন করা যায় না। গুরু গোবিন্দ সিং-এর মতে মানুষের দুঃখ দূর করাই সব থেকে বড়ো সেবা। বীরত্ব, শৌর্য, ত্যাগ এবং ধর্মপরায়ণতায় পূর্ণ ছিলেন এই মহামানব। অস্ত্র এবং শাস্ত্রে ছিল তাঁর অসামান্য জ্ঞান। তিনি একদিকে যেমন ছিলেন একজন তীরন্দাজ, অন্যদিকে গুরুমুখী, ব্রজভাষা, সংস্কৃত, ফারসী, হিন্দি, উর্দু প্রভৃতি বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী। আমি আরও একবার শ্রী গুরু গোবিন্দ সিংজীকে প্রণাম জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, দেশে এমন কিছু ভালো ঘটনা ঘটে, যেগুলোর ব্যাপক চর্চা হয় না। এমনই একটি অভিনব প্রয়াস চালাচ্ছেFSSAI অর্থাৎ Food Safety and Standard Authority of India। মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশততম জন্মজয়ন্তী বর্ষ উপলক্ষে সারা দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। এই পর্যায়ে FSSAI সুরক্ষিত এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে সচেষ্ট। ‘Eat Right India’ অভিযানের অংশ হিসাবে সারা দেশে ‘Swasth Bharat Yatra’ সংগঠিত হচ্ছে। এই অভিযান ২৭-শে জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। কখনও কখনও সরকারী সংগঠনগুলি পরিচালকের কাজ করে, কিন্তু এটা প্রশংসনীয় যে FSSAI এই সীমাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে জন জাগরণ এবং লোকশিক্ষার কাজ করছে। ভারত যখন স্বচ্ছ হবে, স্বাস্থ্যবান হবে তখনই ভারত সমৃদ্ধশালী হবে। ভালো স্বাস্থ্যের জন্য সব থেকে আগে প্রয়োজন পুষ্টিকর আহার। এই প্রসঙ্গে এই প্রচেষ্টার জন্য FSSAI-কে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি আপনাদের সকলকে এই অভিযানে যুক্ত হওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আপনারা এতে অংশগ্রহণ করুন এবং বিশেষ করে শিশুদের এবিষয়ে অবহিত করার জন্য আমি আপনাদের অনুরোধ করছি। খাওয়ার গুরুত্বের বিষয়ে শিক্ষা ছোট বয়স থেকেই হওয়া প্রয়োজন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ২০১৮-র এটাই শেষ ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান। ২০১৯-এ আমরা আবার মিলিত হবো। মনের কথা বলবো। ব্যক্তিগত জীবনেই হোক বা রাষ্ট্রীয় জীবন বা সামাজিক জীবন—অনুপ্রেরণা প্রগতির উৎস। আসুন, নূতন প্রেরণা, নূতন উদ্দীপনা, নূতন সংকল্প, নূতন লক্ষ্য, নূতন উচ্চতাকে সামনে রেখে এগিয়ে চলি। নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনুন, দেশকেও বদলান।
অনেক অনেক ধন্যবাদ!
আমার প্রিয় দেশবাসী! নমস্কার!
৩-রা অক্টোবর ২০১৪ বিজয়া দশমীর পার্বণ — ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা সবাই মিলে একটা যাত্রা শুরু করেছিলাম। ‘মন কি বাত’-এর সেই যাত্রার আজ ৫০-তম পর্ব পূর্ণ হলো। বলা যায় Golden Jubilee Episode — স্বর্ণময় এপিসোড। এবারে যতো চিঠি ও ফোন এসেছে তার বেশিরভাগই এই ৫০-তম সংস্করণ প্রসঙ্গেই বলেছে। ‘মাই গভ’ অ্যাপের মাধ্যমে দিল্লির অংশুকুমার, কমলকুমার, পাটনা থেকে বিকাশ যাদব আবার একই ভাবে ‘নরেন্দ্রমোদী অ্যাপ’-এ দিল্লির মণিকা জৈন, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান থেকে প্রসেনজিত সরকার, নাগপুরের সঙ্গীতা শাস্ত্রী — এঁরা প্রত্যেকেই প্রায় এক রকম প্রশ্ন পাঠিয়েছেন। এঁদের বক্তব্য সাধারণ মানুষ আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করেন টেকনোলজির নানান সোস্যাল মিডিয়া অ্যাপের মাধ্যমে কিন্তু আপনি জনসাধারনের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য রেডিও মাধ্যম বেছে নিলেন কেন? — এই প্রশ্ন খুবই স্বাভাবিক। আজকের যুগে মানুষ যখন রেডিও-কে প্রায় ভুলতে বসেছিল, সেখানে মোদী কেন রেডিও-কে ফিরিয়ে আনল? এ নিয়ে আমি আপনাদের একটা গল্প বলি। সে সময় — ১৯৯৮ সাল, আমি হিমাচল প্রদেশে ভারতীয় জনতা পার্টির কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছি। মে মাসের সন্ধেবেলা আমি কোনও পাহাড়ী অঞ্চলে কাজ করতে যাচ্ছি। হিমাচলের ঠাণ্ডায় রাস্তার ধারে একটা চায়ের দোকানে চা খেতে দাঁড়িয়ে চা চাইলাম। খুব ছোট দোকান, কোনও ছাদ নেই, একটা ঠেলা গাড়িতে সব রেখে একা হাতেই একজন মানুষ চায়ের দোকান চালাচ্ছেন। তিনি একটা কাঁচের প্লেটে মিঠাই দিয়ে বললেন আগে মিষ্টিমুখ করুন তারপর চা খাবেন। জানতে চাইলাম, বাড়িতে কোনও বিয়ে-সাদী বা পুজো-আর্চা হয়েছে কি! এ কি তার মিষ্টি! দোকানী বললো, আরে না না, আপনি কি খবর রাখেন না? এ কথা বলার সঙ্গে তাঁর এত খুশি ও উচ্ছ্বাস দেখে আমি জানতে চাইলাম, আরে কি খবর, সেটা বলুন আমাকে! তিনি বললেন, আরে আজ ভারত বোম ফাটিয়েছে। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। এবার দোকানী বললেন, এই নিন রেডিও শুনুন। রেডিওয় শুনলাম, সেই বোমা ফাটানো নিয়ে আলোচনা চলছে। দোকানী জানালো প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারি বাজপেয়ীজী সেই বোমা ফাটানোর, পরমাণু বোমার পরীক্ষার ঐতিহাসিক গুরুত্ব, সেই দিনটির তাৎপর্য নিয়ে রেডিওতে বলেছেন, তিনি শুনেছেন। দোকানদার ভদ্রলোকের খুশি, নাচ দেখতে দেখতে আমি ভাবছিলাম জনমানবশূণ্য এই এলাকা, বরফে ঘেরা পাহাড়ী অঞ্চলে, জঙ্গলের মাঝে এই দোকানী সারাদিন রেডিও শুনছেন তাঁর এই দোকানে। রেডিও তাঁর মনে বড় প্রভাব বিস্তার করছে, অনেক খবর পাচ্ছেন। তখনই আমি উপলব্ধি করেছিলাম আমাদের রেডিও প্রত্যেক মানুষের সব থেকে কাছে পৌঁছতে পারে, জুড়তে পারে মানুষকে। রেডিওর প্রকাণ্ড ক্ষমতা। রেডিওর কম্যুনিকেশন রিচ এবং তার সুদূরপ্রসারী প্রভাবের কথা আমি সেই থেকে ভেবে চলেছি। এরপর যখন আমি প্রধানমন্ত্রী হলাম সব থেকে শক্তিশালী সংযোগ মাধ্যমের সাহায্য নেবো এটাই স্বাভাবিক।
২০১৪-র মে মাস থেকে যখন আমি প্রধান সেবক-এর দায়িত্ব পালন করা শুরু করলাম আমার মনে হয়েছিল, আমাদের দেশের একতা, আমাদের গৌরবময় ইতিহাস, শৌর্য, বৈচিত্র্য, সাংস্কৃতিক বিবিধতা, মানুষের নানান কর্মযজ্ঞ, তার পুরুষকার, আবেগ, ত্যাগ, তপস্যা — ভারতের এই কাহিনিকে সারা দেশের সমস্ত মানুষের কাছে ছড়িয়ে দেওয়া দরকার। দূর দূর গ্রাম থেকে মেট্রো শহরগুলিতে, কিষাণ থেকে তরুণ প্রফেশন্যাল সব্বার কাছে পৌঁছে দিতে হবে দেশের এই সব কথা — এবং এভাবেই ‘মন কি বাত’ করা শুরু হয়েছিল। প্রতি মাসে লাখ খানেক চিঠি পড়তে পড়তে, ফোন কল শুনতে শুনতে, বিভিন্ন অ্যাপে আসা নানান কথা জানতে জানতে এবং সেগুলি এক সঙ্গে মিলিয়ে, আমার নিজের নানান হাল্কা মজার কথা বলতে বলতে ৫০-তম এপিসোডে পৌঁছে গেছি। ৫০-তম এপিসোডের যাত্রা আমরা সব্বাই মিলে সেরে ফেলেছি। ‘মন কি বাত’ নিয়ে আকাশবাণী একটা সমীক্ষা করেছে। সেই সমীক্ষার ফলাফল খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। সার্ভে থেকে জানা যাচ্ছে যে শ্রোতারা ‘মন কি বাত’ শুনে আসছেন তাঁদের মধ্যে সত্তর শতাংশ মানুষ ‘মন কি বাত’-এর প্রত্যেকটা এপিসোডই শুনেছেন।
বেশিরভাগ মানুষের ধারণা ‘মন কি বাত’ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ইতিবাচক
চিন্তা-ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে। ‘মন কি বাত’-এর মাধ্যমে গণ-আন্দোলন অনেক বিস্তৃতি লাভ করেছে। ‘হ্যাস ট্যাগ ইণ্ডিয়া পজিটিভ’ এই বিষয়ের উপর বহু আলোচনা হয়েছে।
এই বিষয়টি আমাদের দেশবাসীর অন্তর্নিহিত ধারণাকে ইতিবাচক চিন্তাধারায় উদ্ভাসিত করেছে। জনগণ ‘মন কি বাত’-এর মাধ্যমে পরস্পরের অভিজ্ঞতার বিনিময় করছেন তার সঙ্গে ‘volunteerism’ অর্থাৎ স্ব-ইচ্ছায় কিছু করার ভাবনা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটা এমনই একটা সুষ্ঠ পরিবর্তন যাতে মানুষ সমাজসেবার জন্য অনেক বেশি এগিয়ে আসছেন। আমি এটি দেখে খুবই আনন্দিত যে ‘মন কি বাত’-এর জন্য রেডিওর এত জনপ্রিয়তা। শুধুমাত্র রেডিওর মাধ্যমে জনগণ এই ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে না — টিভি, এফ.এম রেডিও, মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক লাইভ এবং periscope–এর সঙ্গে সঙ্গে ‘নরেন্দ্রমোদী অ্যাপ’ – এই সমস্ত মাধ্যমের সহায়তায় জনগণ ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানটিতে আন্তরিকতার সঙ্গে যোগদান করছেন। আমি ‘মন কি বাত’ পরিবারের সকলে সদস্যকে এই অনুষ্ঠানের উপর বিশ্বাস রাখা এবং এতে অংশগ্রহণের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ দিচ্ছি।
ফোন কল —
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহাশয়, নমস্কার! হায়দ্রাবাদ থেকে আমি শালিনী বলছি। ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানটি একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটির গোড়াতে মানুষের ধারণা হয়েছিল এই অনুষ্ঠানটি একটি রাজনৈতিক মঞ্চে পর্যবসিত হবে এবং এটি একটি আলোচনার বিষয়বস্তুও হয়েছিল। কিন্তু এই অনুষ্ঠান যেভাবে এগিয়ে যেতে লাগল, তাতে আমরা দেখলাম, রাজনীতির পরিবর্তে অনুষ্ঠানটি সামাজিক নানান সমস্যা এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের উপর কেন্দ্রীভূত এবং এই ভাবেই আমার মতন কোটি কোটি সাধারণ মানুষের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ধীরে ধীরে আলোচনাও সমাপ্ত হল। এবার আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে আপনি কী করে এই অনুষ্ঠানটিকে রাজনীতিমুক্ত করতে পারলেন। কখনও কি আপনার এই রকম মনে হয়নি, আপনি এই অনুষ্ঠানটিকে রাজনীতির ক্ষেত্র হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন অথবা এই অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে সরকারী সাফল্যের কথা তুলে ধরতে পারেন। ধন্যবাদ!”
আপনার ফোন কলের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ! আপনার অনুমান সঠিক। আসলে নেতারা মাইক পেলে আর লক্ষ-কোটি শ্রোতা পেলে আর কী চাই? কয়েকজন যুববন্ধু ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন এবং সব বিষয়ের উপর পর্যালোচনা করেছিলেন। ওঁরা সবকটি পর্বের ভাষা বিশ্লেষণ করেছিলেন এবং অধ্যয়ণ করে দেখেছেন যে কোনো কোনো শব্দ কতবার করে প্রয়োগ করা হয়েছে? আবার কোন কোন শব্দ বার বার বলা হয়েছে। ওঁরা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে এই অনুষ্ঠানটি ‘অ্যাপলিটিক্যাল’।
যখন ‘মন কি বাত’ শুরু করা হয়েছিল তখন আমি নিশ্চিত ছিলাম যে এই অনুষ্ঠানের মধ্যে কোনও রাজনীতি থাকবে না। সরকারের কোনও বাহবা থাকবে না। এই অনুষ্ঠানে কোনও ‘মোদি’ শব্দ থাকবে না এবং এই সঙ্কল্প নিশ্চিত করার জন্য আপনাদের সবার প্রেরণাই আমার সম্বল।
প্রত্যেক ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান শুরুর আগে যে সমস্ত চিঠিপত্র, comments, phone calls আসে তার থেকে জানা যায় যে শ্রোতারাও এই অনুষ্ঠান শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। মোদী আসবেন এবং চলে যাবেন কিন্তু আমাদের এই দেশ চিরস্থায়ী। আমাদের সংস্কৃতি অমর থাকবে। ১৩০ কোটি ভারতবাসীর এই ছোটো ছোটো কাহিনিগুলি সর্বদা বেঁচে থাকবে। উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভরপুর নতুন প্রেরণা দেশকে আরও উচ্চ শিখরে পৌঁছে দেবে। আমি কখনও কখনও অতীতকে ফিরে দেখি আর বিস্মিত হয়ে যাই। আমাদের দেশের কোনও এক জায়গার কোনও একজন চিঠি লিখে জানালেন — ছোট দোকানদার, অটো চালক, সবজি বিক্রেতাদের মতো মানুষদের সঙ্গে আমাদের কখনও দরাদরি করা উচিত নয়। — আমি চিঠিগুলি পড়ি আর তার মধ্যে এইরকম ভাব অনুভব করি এবং সেগুলি মনে গেঁথে রেখে কাজ করি। দুটো ঘটনাই আমি নিজে উপলব্ধি করেছি এবং ওদের সঙ্গেও share করে নিচ্ছি এবং আপনাদের সকলের সঙ্গেও ভাগ করে নিচ্ছি। কিন্তু কে জানে কখন আবার এই কথাগুলো ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে। সোস্যাল মিডিয়া আর হোয়াটস্অ্যাপ-এ ঘুরে বেড়াবে এবং আর এক পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যাবে। স্বচ্ছতার উপর আপনাদের পাঠানো গল্পগুলি, সাধারণ মানুষের অনেক অনেক উদাহরণ — জানি না, কীভাবে কখন ঘরে ঘরে স্বচ্ছতার এই শিশু ব্র্যাণ্ড অ্যাম্বাসেডার-এর জন্ম দিয়েছে যে পরিবারের সদস্যদেরও সচেতন করে, আবার কখনও কখনও ফোন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহাশয়কেও আদেশ দিয়ে থাকে।
কোনোদিন কোন সরকারের এতটা ক্ষমতা হবে কি, যে ‘selfie with daughter’ অর্থাৎ ‘নিজের কন্যার সাথে নিজস্বীর’ মত প্রকল্প হরিয়ানার এক ছোট্ট গ্রাম থেকে শুরু হয়ে, সমগ্র দেশেই নয়, সারা বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়বে। সমাজের প্রত্যেক শ্রেণির মানুষ, এমনকি সেলিব্রিটিরাও এই বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। সমাজের চিন্তাধারাকে এমন এক আধুনিক ভাষ্য-ভঙ্গিমায় তুলে ধরা হয়েছে, যাতে আধুনিক প্রজন্ম আলোকিত হয়।
কখনো কখনো ‘মন কি বাত’ নিয়ে মজাও করা হয়েছে। কিন্তু আমার মনে সব সময়ই ১৩০ কোটি দেশবাসী বিরাজ করছে। তাদের মনই আমার মন। ‘মন কি বাত’ কিন্তু সরকারি কথা নয় – এটা সমাজের কথা। ‘মন কি বাত’ একটা আশাব্যঞ্জক, উচ্চাকাঙ্ক্ষী ভারতের কথা। ভারতের মূল প্রাণশক্তি রাজনীতি বা রাজশক্তি নয়। ভারতের মূল প্রাণশক্তি হলো সমাজনীতি বা সমাজশক্তি। সমাজজীবনের অনেক দিক থাকে যার মধ্যে রাজনীতিও একটা দিক মাত্র। রাজনীতি যদি মূল বিষয় হয়ে যায়, তা কোন সুস্থ সমাজব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি হতে পারে না। কখনও রাজনৈতিক ঘটনা বা রাজনৈতিক মানুষেরা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে যে সমাজের অন্য প্রতিভা বা অন্য উদ্যম ক্ষমতা অবহেলিত হয়ে পড়ে। ভারতের মতো দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য জনমানুষের প্রতিভা এবং সমাজের অন্যান্য বিষয়গুলি যাতে উপযুক্ত স্থান পায় সেটা খেয়াল রাখা আমাদের সকলের মিলিত দায়িত্ব। আর ‘মন কি বাত’ এই লক্ষ্যে এগিয়ে চলার একটা ক্ষুদ্র, বিনম্র প্রচেষ্টা।
(ফোন কল – 2)
“নমস্কার প্রধানমন্ত্রী জি! আমি প্রমিতা মুখার্জি বলছি মুম্বই থেকে। স্যার, ‘মন কি বাত’এর প্রত্যেক পর্ব, গভীর চিন্তাভাবনায়, তথ্যে, ইতিবাচক কাহিনি এবং সাধারণ নাগরিকের শুভ কর্মে পরিপূর্ণ থাকে। তাই আমি জিজ্ঞেস করতে চাই যে প্রত্যেক প্রোগ্রামের আগে আপনি কতটা প্রস্তুতি নেন?”
ফোন করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। একদিক থেকে আপনার এই আপনার প্রশ্নটি আমাকে একজন আপনজন মনে করেই করা। আমি মনে করি ‘মন কি বাতের’ ৫০-তম পর্বের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব এই যে, আপনি প্রধানমন্ত্রীকে নয়, যেন নিজের এক ঘনিষ্ঠ সঙ্গীকে প্রশ্ন করছেন। এটাই তো গণতন্ত্র। আপনি যে প্রশ্নটি করেছেন সহজ ভাষায় যদি তার উত্তর দিই তাহলে বলব, কিচ্ছু না। আসলে ‘মন কি বাত’ আমার জন্য খুবই সোজা একটি কাজ। প্রত্যেক ‘মন কি বাতের’ আগে মানুষে চিঠি পাঠায়। ‘মাই গভ’ আর ‘নরেন্দ্রমোদী অ্যাপ’-এ মানুষেরা তাদের মতামত ভাগ করে। একটি টোল ফ্রি নাম্বারও আছে – 1XXX XX 7800, ওখানে কল করে মানুষেরা নিজের বার্তা নিজের কন্ঠে রেকর্ডও করে। আমি চেষ্টায় থাকি, যে ‘মন কি বাতের’ পূর্বে যতটা সম্ভব চিঠি আর মন্তব্য নিজেই পড়ে নেওয়ার। আমি অনেকগুলি ফোনকলও শুনি। এবার ‘মন কি বাতের’ এপিসোড যত এগিয়ে আসতে থাকে, আমি বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের সময় আপনাদের পাঠানো মতামত এবং চিন্তাধারা খুব মন দিয়ে পড়তে থাকি। আমার দেশবাসীরা সর্বক্ষণ আমার মনের মধ্যে বিরাজ করে। তাই যখন আমি কোনো পত্র পড়ি, তখন প্রেরকের পরিস্থিতি, তার ভাবনা, আমার চিন্তাধারার অংশ হয়ে যায়। সেই পত্রটি আমার জন্যশুধুমাত্র কোন কাগজের টুকরো থাকে না। আর এ ছাড়াও আমি প্রায় 40-45 বছর একটানা পরিব্রাজকের জীবন যাপন করেছি আর দেশের অধিকাংশ জেলাতেও গিয়েছি। দেশের প্রত্যন্ত জেলাগুলিতেও আমি অনেকটা সময় কাটিয়েছি। আর এই কারণেই যখন আমি কোনো পত্র পড়ি তখন খুব সহজেই সেই স্থান-কালের সাথে নিজেকে সংযুক্ত করতে পারি। এরপর আমি কিছু তথ্য, যেমন গ্রাম, ব্যক্তির নাম – এই ধরনের তথ্যগুলি নোট করি। সত্যি বলতে কি, ‘মন কি বাত’-এ, কণ্ঠ তো আমারই থাকে, কিন্তু উদাহরণ, আবেগ ও প্রাণশক্তি আমার দেশবাসীর। আমি ‘মন কি বাতে’ অবদানকারী সকল ব্যক্তিকে ধন্যবাদ দিতে চাই। এরকম লাখ লাখ মানুষ আছে যাদের নাম আমি আজ পর্যন্ত ‘মন কি বাতে’ নিতে পারিনি, কিন্তু তারা হতাশ না হয়ে নিজেদের পত্র, নিজেদের মন্তব্য পাঠাতেই থাকে। আপনাদের বিচার, আপনাদের ভাবনা আমার জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমার সম্পূর্ণ আস্থা আছে যে আপনাদের বার্তা আগের থেকে অনেকগুণ বেশি আমার কাছে আসবে আর ‘মন কি বাত’-কে আরও মনোগ্রাহী, প্রভাবশালী এবং উপযোগী করে তুলবে।
এটাও চেষ্টা করা হয়, যে সব চিঠি ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না, সে সব চিঠি আর পরামর্শের প্রতি সংশ্লিষ্ট বিভাগও যেন নজর দেয়। আমি আকাশবাণীর সকল প্রচার মাধ্যম, দূরদর্শন, অন্যান্য টিভি চ্যানেল, social media–র বন্ধুদেরও ধন্যবাদ দিতে চাই। তাঁদের পরিশ্রমে ‘মন কি বাত’ সব থেকে বেশি লোকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। আকাশবাণীর টিম প্রত্যেক episode-এ অনেক ভাষাতে প্রচারের জন্য তর্জমা করে। কিছু ঘোষক আঞ্চলিক ভাষাতে মোদীর কথা বলার ও কণ্ঠের শৈলীতে ‘মন কি বাত’ শোনায় । এই ভাবে তাঁরা তিরিশ মিনিটের জন্য নরেন্দ্র মোদী হয়ে যান। আমি ওঁদেরকেও ওঁদের ট্যালেন্ট এবং স্কিলের জন্য অভিনন্দন জানাই, ধন্যবাদ দিতে চাই। আমি আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করছি এই অনুষ্ঠানটিকে নিজেদের আঞ্চলিক ভাষাতেও যেন অবশ্যই শোনেন। আমি মিডিয়ার ওইসব বন্ধুদেরও আমার মন থেকে ধন্যবাদ জানাই, যাঁরা নিজেদের চ্যানেলে নিয়মিত ভাবে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান প্রচার করছেন।
কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তি মিডিয়া থেকে তুষ্ট হয় না, ভাবেন তাঁকে অনেক কম কভারেজ করা হয়, অথবা নেতিবাচক কভারেজ হয়, কিন্তু ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে প্রচারিত অনেক বিষয় মিডিয়া নিজেদের বিষয় করে নিয়েছে। স্বচ্ছতা, সড়ক সুরক্ষা, drugs free India, selfie with daughter ইত্যাদি বিষয়গুলিকে মিডিয়া সৃজনাত্মক পদ্ধতিতে এক অভিযানের রূপরেখা দিয়ে এদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করেছে। টিভি চ্যানেলগুলো এটাকে Most watched radio programme-এ তৈরি করেছে। আমি আমার মন থেকে মিডিয়াকে অভিনন্দন জানাই। আপনাদের সাহায্য ছাড়া ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের এই যাত্রা অসম্পূর্ণ থাকতো।
“নমস্কার মোদি জী ! আমি নিধি বহুগুণা বলছি, মসুরী উত্তরাখণ্ড থেকে – আমি দুটি যুব সন্তানের মা। আমি প্রায় দেখেছি, এই বয়সের ছেলেমেয়েরা চায় না, যে ওদের কেউ বলুক কি করা উচিত। সে হতে পারে ওদের টিচার বা মা-বাবা। কিন্তু যখন আপনার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে ছেলেমেয়েদের কিছু বলেন, ওরা মন থেকে সেটা উপলব্ধি করে আর মেনেও নেয় – আপনি কি এই রহস্য আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নেবেন ? আপনি কি, যে ভাবে বলেন বা যে সব বিষয় সামনে নিয়ে আসেন ছেলেমেয়েরা ভালোভাবে বুঝে implement করে ? ধন্যবাদ।”
নিধি-জী, আপনার ফোন কলের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। সাধারণভাবে আমি বলি আমার কাছে কোনো রহস্য নেই। আমি যেটা করছি সেটা সব পরিবারে হয়ত হয়। সহজ ভাষাতে বলি – আমি ওই সব যুবাদের মতো নিজেকে তৈরি করার চেষ্টা করি, নিজেকে ওই পরিস্থিতিতে রেখে ওদের মতামতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি wave length match করার চেষ্টা করি। আমাদের নিজেদের জীবনে কিছু পুরোনো baggages আছে, সেগুলো যদি সামনে আনা না হয় তাহলে কাউকে বোঝানো সহজ হয়ে যায়। কখনো কখনো আমাদের পুরনো সংস্কারগুলি ভাবনার বিনিময়ে অন্তরায় সৃষ্টি করে। মেনে নেওয়া বা না মেনে নেওয়া এবং নিজের প্রতিক্রিয়া জাহির করার চেয়েও অন্যের কথা বোঝাটাকে আমার অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। আমার অভিঞ্জতা বলে, এরকম পরিস্থিতিতে সামনের মানুষ আমাকে convince করার জন্য বিভিন্ন তর্ক অথবা চাপ সৃস্টি না করে আমার wave length এ আসার চেষ্টা করে। এইজন্য communication gap থাকে না, তারপর দুজনেই আমারা এক বিচারের সহমতে পৌঁছে যাই। দুজনের মধ্যে কেউ আমারা বুঝতেই পারি না, এক জন কখন কিভাবে নিজের চিন্তধারা ছেড়ে অন্যের কথা স্বীকার করে নিয়েছে – আর নিজের করে ফেলেছে। বর্তমানের যুবাদের ভাল গুণ হলো, সে যেটা নিজে বিশ্বাস করে না সেটা কখনো করে না, আর যখন কোনো জিনিসে বিশ্বাস করে তখন সব কিছ ছেড়ে তার পিছনে লেগে যায়। প্রায়ই লোকেরা পরিবারের বড়ো আর Teenager-দের মধ্যে communication gap নিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু বেশির ভাগ পরিবারে teenager-দের সঙ্গে সীমিত বিষয়ে আলোচনা হয়। বেশিরভাগ সময় পড়াশোনার কথা অথবা অভ্যাস, life style নিয়ে কথা বার্তা হয় — এটা কর, এটা না কর । কোনো রকম শর্ত আরোপ না করে খোলা মনে কথাবার্তা ধীরে ধীরে পরিবারের মধ্যে কম হয়ে যাচ্ছে, এটাও চিন্তার বিষয়। প্রত্যাশার বদলে গ্রহণ করলে এবং খারিজ না করে আলোচনা করলে, যে কোনও সংবাদমাধ্যমই গুরুত্ব পায়। নানা ধরনের কর্মসূচি এবং সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যুবসমাজের সঙ্গে আমি অবিরাম যোগাযোগ রেখে চলেছি। যুবসমাজের ভাবনা-চিন্তা থেকে আমি সবসময় শিখি। তরুণদের কাছে নানা ধরনের আইডিয়া থাকে। তরুণরা উদ্যোমী, উদ্ভাবনী এবং লক্ষ্যে অবিচল। ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি তরুণদের প্রচেষ্টা এবং চিন্তা-ভাবনাগুলো আরও বেশি করে ভাগ করে নিতে চেষ্টা করি। আমরা প্রায়ই বলে থাকি, যে তরুণরা খুব বেশি তর্ক করে। আমি বলি কি, সদ্য তরুণরা যত প্রশ্ন করবে, ততই ভালো। কারণ, তারা সবকিছুই তলিয়ে দেখতে চায়। কেউ কেউ বলেন, তরুণদের ধৈর্য্য নেই। কিন্তু আমি মনে করি যে ওদের কাছে নষ্ট করার মত সময় নেই। আজকের তরুণ প্রজন্ম যে অনেক বেশি উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন, তার কারণ এটাই । আমার মনে হয়, আজকের তরুণরা খুব উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং তারা অনেক বৃহৎ চিন্তা করে। এটাই ভালো, ওরা স্বপ্ন দেখুক এবং সেই স্বপ্ন সফল করুক — এটাই তো ‘নতুন ভারত’।
কেউ কেউ বলেন, তরুণ ছাত্ররা একসঙ্গে নানারকম কাজ করতে চায়। আমি বলি, এতে খারাপ কী আছে? ওরা ‘মাল্টি-টাস্কিং’-এ পারদর্শী, তাই ওরা এরকম করে। আমরা যদি চারদিকে দেখি, সেখানে দেখব সামাজিক উদ্যোগ হোক, ‘স্টার্ট-আপ’ হোক, খেলাধূলা হোক অথবা অন্য কোনও ক্ষেত্র — সমাজে বড় বড় পরিবর্তন তরুণরাই নিয়ে আসে।
সেই তরুণরা, যারা প্রশ্ন করার এবং স্বপ্ন দেখার সাহস দেখিয়েছে। যদি আমরা তরুণদের ওপর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ছেড়ে দিতে পারি এবং যদি খোলামনে তারা চিন্তা-ভাবনা প্রকাশ করতে পারে — তাহলে তারা দেশের গঠনমূলক পরিবর্তন আনতে পারে। আর এটা তারা করছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, গুরুগ্রাম থেকে ‘মাই গভ’ ওয়েবসাইটে বিনীতা-জী লিখেছেন যে, এবারের ‘মন কি বাত’-এ আগামী ২৬-শে নভেম্বরের ‘সংবিধান দিবস’ নিয়ে কিছু বলা দরকার। তাঁর বক্তব্য এটি একটি বিশেষ দিন, কারণ ভারতের সংবিধান চালু হওয়ার সত্তরতম বর্ষে আমরা প্রবেশ করছি।
বিনীতাজী, আপনার এই পরামর্শের জন্যে অনেক অনেক ধন্যবাদ! হ্যাঁ, কাল ‘সংবিধান দিবস’। যাঁরা আমাদের সংবিধান প্রণয়ন করেছেন — সেই সব মহান ব্যক্তিত্বদের স্মরণ করার দিন। ১৯৪৯ সালের ২৬শে নভেম্বর আমাদের সংবিধান গৃহীত হয়েছিল। সংবিধানের খসড়া তৈরির এই ঐতিহাসিক কাজটি সম্পন্ন করতে সংবিধান সভার ২ বছর ১১ মাস ১৭ দিন সময় লেগেছিল। কল্পনা করুন, তিন বছরের মধ্যেই এই মহান প্রতিভাসম্পন্ন ব্যক্তিরা আমদের এত ব্যাপক ও বিস্তৃত সংবিধান উপহার দিয়েছেন। এঁরা যে অসামান্য গতিতে সংবিধান নির্মাণ করেছেন — তা আজকের দিনেও টাইম ম্যানেজমেন্ট ও প্রোডাক্টিভিটি-র এক অনন্য উদাহরণ।
এর অনুপ্রেরণায় আমরাও আমাদের দায়িত্বগুলো রেকর্ড সময়ে শেষ করতে উজ্জীবিত হই। ‘সংবিধান সভা’ ছিল দেশের মহান প্রতিভাধর মানুষদের এক সমাবেশ। এতে প্রত্যেকে দেশকে এমন একটি সংবিধান প্রদান করতে দায়বদ্ধ ছিলেন — যাতে, ভারতের জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটে, দরিদ্রতম ব্যক্তিটিও সমর্থ হয়ে ওঠে।
আমাদের সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্য হল যে — এখানে অধিকার এবং কর্তব্য, অর্থাৎ Rights and Duties বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। দেশের নাগরিকদের জীবনে এই দুটি বিষয়ের ভারসাম্য — দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যদি আমরা অপরের অধিকারকে সম্মান করি, তাহলে নিজেদের অধিকারও আপনা আপনি রক্ষিত হবে। আবার একইভাবে যদি আমরা সংবিধানে দেওয়া আমাদের কর্তব্য পালন করি — তাহলে আমাদের নিজেদের অধিকার রক্ষার কাজটিও সম্পন্ন হবে।
আমার মনে পড়ে, ২০১০ সালে ভারতের গণতন্ত্রের ৬০ বছরে গুজরাটে আমরা হাতির পিঠের ওপর সংবিধান রেখে শোভাযাত্রা বার করেছিলাম। তরুণদের সংবিধান নিয়ে সচেতন করতে এবং তাদের সংবিধানের বিভিন্ন ধারা সম্পর্কে আগ্রহী করে তুলতে এটা একটা স্মরণীয় প্রয়াস ছিল। ২০২০ সালে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আমরা ৭০ বছর পূর্ণ করতে চলেছি এবং ২০২২ সালে আমাদের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ হবে।
আসুন, আমরা সবাই আমাদের সংবিধানের মূল্যকে আরও মর্যাদা প্রদান করি এবং আমাদের দেশে Peace, Progression, Prosperity অর্থাৎ শান্তি, উন্নতি এবং সমৃদ্ধি সুনিশ্চিত করি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, সংবিধান সভা সম্পর্কে কথা বলতে গেলে সেই মহাপুরুষের অবদান অনস্বীকার্য যিনি সংবিধান সভার মূলে ছিলেন। এই মহাপুরুষ হলেন মাননীয় ড. বাবাসাহেব আম্বেদকর। ৬-ই ডিসেম্বর তাঁর মহাপরিনির্বাণ দিবস। সমস্ত দেশবাসীর পক্ষ থেকে আমি বাবাসাহেবকে প্রণাম জানাই, যিনি কোটি কোটি ভারতীয়কে সসম্মানে বাঁচার অধিকার পাইয়ে দিয়েছেন। প্রজাতন্ত্র বাবাসাহেবের চিন্তনের অন্তর্গত ছিল এবং উনি বলতেন যে ভারতের প্রজাতান্ত্রিক আদর্শ বহিরাগত নয়। প্রজাতন্ত্র বা সংসদীয় ব্যবস্থার সংজ্ঞা ভারতের জন্য নতুন কিছু ছিল না। সংবিধান সভায় উনি এক আবেগপ্রবণ আর্জি করেছিলেন যে, এই স্বাধীনতা বহু লড়াইয়ের পরে আমরা অর্জন করেছি আর তাই আমাদের রক্তের শেষ বিন্দু দিয়েও একে রক্ষা করতে হবে। তিনি আরও বলতেন যে আমরা ভারতীয়রা যতই ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে বেড়ে উঠি না কেন, দেশের কল্যাণের ভাবনা যেন সর্বদা অগ্রাধিকার পায়। ড. বাবাসাহেব আম্বেদকরের মূল মন্ত্র ছিল — India First। আরও একবার বাবাসাহেবকে আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, দু’দিন আগে ২৩-শে নভেম্বর আমরা সবাই শ্রী গুরুনানক দেবের জন্মজয়ন্তী উদ্যাপন করেছি। আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৯-এ তাঁর ৫৫০-তম প্রকাশ পর্ব উদ্যাপন করতে চলেছি। শ্রী গুরুনানক দেব সর্বদা মানবজাতির কল্যাণ কামনা করেছেন। উনি সমাজকে সবসময় সত্য, কর্ম, সেবা, করুণা ও সৌহার্দ্য–র পথ দেখিয়েছেন। আমাদের দেশ আগামী বছর শ্রী গুরুনানক দেবের ৫৫০-তম জন্মজয়ন্তী সাড়ম্বরে পালন করবে।
এর বিস্তার দেশ ছাপিয়ে, সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়বে। সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত প্রদেশগুলিকে অনুরোধ করা হয়েছে ধুমধামের সঙ্গে এই দিনটি পালন করতে। এই ভাবেই শ্রী গুরুনানক দেবের ৫৫০-তম প্রকাশ পর্ব সারা বিশ্বের সমস্ত দেশে উদ্যাপন করা হবে। এরই সঙ্গে শ্রী গুরুনানক দেবের সঙ্গে জড়িত সমস্ত পবিত্র স্থান জুড়ে একটি ট্রেন-ও চালানো হবে। সম্প্রতি আমি যখন এই ব্যাপারে একটি আলোচনা করছিলাম তখন আমার মনে পড়ল লখপত সাহিব গুরুদ্বার-এর কথা। ২০০১ সালে গুজরাটে ভূমিকম্পের সময় এই গুরুদ্বার বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, কিন্তু যে ভাবে স্থানীয় লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে রাজ্যসরকার ঐ গুরুদ্বার পুনরুদ্ধার করে তা উদাহরণযোগ্য।
ভারত সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে — কর্তারপুর করিডর তৈরি করার। যাতে, আমাদের দেশের যাত্রীরা সহজেই পাকিস্তানে অবস্থিত কর্তারপুরে শ্রী গুরুনানক দেবের পবিত্র ভূমি দর্শন করতে পারেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ৫০-তম পর্বের পর আমরা আবার মিলিত হব আগামী
‘মন কি বাত’-এ। আমার বিশ্বাস, ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানটির বিষয়ে আমার যে চিন্তা-ভাবনা ছিল, তা আপনাদের সামনে প্রথমবার তুলে ধরতে পারলাম কারণ আপনারাই তা জানতে চেয়েছিলেন। আমাদের এই যাত্রা চলতেই থাকবে। আপনাদের সাহচর্য আমি যত বেশি করে পাব, ততই এই যাত্রা গভীর হবে এবং সন্তোষজনক হবে। কখনও কখনও মানুষের মনে প্রশ্ন ওঠে যে, ‘মন কি বাত’ থেকে আমি কী পেলাম? আমি আজ এটা বলতে চাই যে, ‘মন কি বাত’-এর যে feedback আসে, সেখানে একটা ব্যাপার আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে, বেশিরভাগ মানুষ বলেছেন যে, তাঁরা যখন সপরিবারে বসে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানটি শোনেন, তখন তাদের মনে হয় যেন পরিবারেরই কর্তা তাদের মাঝে তাদেরই কথা তাদের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছেন। আমি যখন এই কথাটা বিশদে জানতে পারলাম যে আমি আপনার, আপনাদেরই একজন, আপনাদের মাঝে এবং আপনারাই আমাকে বড় বানিয়েছেন তখন আমি খুব খুশি হলাম। আমি আপনাদের পরিবারের সদস্যরূপে ‘মন কি বাত’-এর মাধ্যমে বারবার আসব, আপনাদের সঙ্গে মিলিত হব। আপনাদের সুখ-দুঃখ, আমার সুখ-দুঃখ। আপনার আকাঙ্ক্ষা, আমার আকাঙ্ক্ষা। আপনার সদিচ্ছা, আমারও সদিচ্ছা।
আসুন, এই যাত্রাকে আমরা আরও এগিয়ে নিয়ে যাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ!
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের সকলকে নমস্কার।৩১ অক্টোবর আমাদের সবার প্রিয় সর্দার বল্লভভাই পটেলের জন্মজয়ন্তী উদযাপন এবং অন্যান্য বছরের মতোই ‘রান ফর ইউনিটি’তে দেশের যুবশক্তির একতার লক্ষ্যে দৌড়বার জন্যে আমাদের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ।এখন তো আবহাওয়াও খুব চমৎকার। তার ফলে ‘রান ফর ইউনিটি’র উদ্দীপনা আরোই বাড়বে।আমার ইচ্ছা, আপনারা সকলে বিরাট সংখ্যায় একতার এই দৌড়ে অবশ্যই অংশ নিন।স্বাধীনতার প্রায় সাড়ে ছ’ মাস আগে, বিখ্যাত আন্তর্জাতিক পত্রিকা ‘টাইম’ ম্যাগাজিনের ২৭ জানুয়ারি, ১৯৪৭-এরসংস্করণে প্রচ্ছদে সর্দার পটেলের ছবি ছাপা হয়েছিল। ‘টাইম’ সেবার তার লিড স্টোরিতে ভারতের একটি নকশা দিয়েছিল।আমরা আজ যেমন দেখি, সেই নকশা কিন্তু ঠিক তেমনটি ছিল না।সে ছিল বহুধা বিভক্ত এক ভারত। তখন ৫৫০-টিরও বেশি দেশীয় রাজ্য ছিল।ভারতের ব্যাপারে ইংরেজদের আগ্রহ যদিও তখন ফুরিয়ে গিয়েছিল, তবু এই দেশকে তারা ছিন্নভিন্ন করে রেখে যেতে চেয়েছিল। ‘টাইম’ ম্যাগাজিন লিখেছিল, বিচ্ছিন্নতা, হিংসা, খাদ্য-সঙ্কট, মূল্যবৃদ্ধি এবং ক্ষমতাররাজনীতির মতো বিপদ ভারতকে ছেয়ে আছে– কিন্তু এসবের মধ্যেও দেশকে একতার সূত্রে বাঁধবার ক্ষমতা যদি কারোর থেকে থাকে তবে তিনি সর্দার বল্লভভাই পটেল। ‘টাইম’ ম্যাগাজিনের ওই লেখাটি সেই লৌহ পুরুষের জীবনের অন্যান্য দিকগুলিতেও আলোকপাত করেছিল— কীভাবে তিনি গত শতাব্দীর দুইয়ের দশকে আমেদাবাদে বন্যাত্রাণের ব্যবস্থা করেছিলেন, কীভাবে তিনি বারদৌলি সত্যাগ্রহকে দিশা দেখিয়েছিলেন।দেশের জন্যে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা এবং দায়বদ্ধতা এতটাই ছিল যে সাধারণ কৃষক, মজদুর থেকে শুরু করে বড় বড় উদ্যোগপতিরা পর্যন্ত সকলে তাঁর ওপরে ভরসাকরতেন।গান্ধীজি সর্দার প্যাটেলকে বলেছিলেন, রাজ্যগুলির সমস্যা এতটাই ভয়াবহ যে একমাত্র আপনি এর সমাধান-সূত্র বার করতে পারেন।সর্দার প্যাটেল সত্যিই এক এক করে সমস্যাগুলির সমাধানের রাস্তা বের করলেন এবং গোটা দেশকে একতার সূত্রে গেঁথে ফেলার আপাত অসম্ভব কাজটিও সম্পন্ন করে দেখালেন। সব ক’টি দেশীয় রাজ্যকে তিনি ভারতের সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন, তা সে জুনাগড়ই হোক বা হায়দরাবাদ, ত্রিবাংকুর বা রাজস্থানের দেশীয় রাজ্যগুলি।সর্দার প্যাটেলই ছিলেন সেই একমাত্র ব্যক্তি যাঁর বুদ্ধি বিবেচনা এবং রণ নীতির কৌশলে আজ আমরা অখণ্ড ভারতবর্ষকে দেখতে পাচ্ছি। একতার বাঁধনে বাঁধা এই রাষ্ট্রকে, আমাদের ভারত মা-কে দেখলে স্বভাবতই আমাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের পুণ্যস্মৃতির কথা মনে পড়ে। এই ৩১ অক্টোবর সর্দার প্যাটেলের জন্মজয়ন্তী তো আরোই বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই দিন তাঁর প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে আমরা ‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’ রাষ্ট্রের হাতে তুলে দেব। গুজরাটে নর্মদা নদীর তীরে স্থাপিত এই মূর্তিটি উচ্চতায় আমেরিকার ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’র দ্বিগুণ। এটি হবে বিশ্বের উচ্চতম গগনচুম্বী স্থাপত্য। প্রতিটি ভারতীয় এবার গর্ব করে বলতে পারবেন যে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মূর্তিটি এখন ভারতভূমিতে রয়েছে। যে পুণ্যভূমির সঙ্গে সর্দার পটেলের সংযোগ ছিল, এই মূর্তি এবার তারই আকাশসীমাকেও আলোকিত করবে। আমি আশা রাখি, দেশের প্রতিটি নাগরিক ‘মা ভারতী’র এই মহান উপলব্ধি নিয়ে বিশ্বের সামনে বক্ষ প্রসারিত করে, মাথা উঁচু করে তার গৌরব গান করবেন এবং স্বাভাবিক ভাবেই হিন্দুস্থানের প্রতিটি মানুষ এখন ‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’ দেখতে আগ্রহী হবেন। আমার বিশ্বাস, সারা দেশে এই বিশেষ স্থাপত্য এক প্রিয় দ্রষ্টব্য বলে চিহ্নিত হবে।
আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, গতকাল আমরা ‘Infantry Day’ পালন করেছি। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সকল সদস্যকে আমি প্রনাম জানাচ্ছি। সৈনিকদের পরিবারকেও তাদের মানসিকতার জন্য স্যালুট করছি। আপনারা কি জানেন, কেন ভারতবাসী ‘Infantry Day’ পালন করে? এটা সেই দিন, যেদিন ভারতীয় সেনার জওয়ানরা কাশ্মীরের মাটিতে নেমেছিল এবং অনুপ্রবেশকারীদের থেকে এই উপত্যকাকে রক্ষা করেছিল। এই ঐতিহাসিক ঘটনাও সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমি ভারতের মহান সৈনিক সাম মানেকশ-এর একটি পুরনো সাক্ষাৎকার পড়ছিলাম। এই সাক্ষাৎকারে ফিল্ড মার্শাল মানেকশ ঐ সময়ের কথা বলেছেন, যখন তিনি কর্ণেল ছিলেন।
ঐ সময়, ১৯৪৭ সালে কাশ্মীরে সৈন্য অভিযান শুরু হয়েছিল। ফিল্ড মার্শাল মানেকশ বলেছেন, ঐ সময় কাশ্মীরে সৈন্য পাঠাতে দেরী হওয়ার জন্য এক বৈঠকে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল কেমন বিরক্ত হয়েছিলেন। বৈঠকের মধ্যে সর্দার প্যাটেল নিজের অভ্যস্ত ঢংয়ে মানেকশ’র দিকে তাকিয়ে বলেন, কাশ্মীরে সেনা অভিযানে কোনও রকম বিলম্ব করা চলবে না এবং যত শীঘ্র সম্ভব এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। আমাদের সৈনিকরা বিমানে করে কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় আর তারা কেমন সাফল্য পেয়েছিল সেটা আমরা দেখেছি। আগামী ৩১-শে অক্টোবর আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর প্রয়াণ দিবস। ইন্দিরাজীকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, খেলাধূলা পছন্দ করে না এমন মানুষ আছেন কি? খেলার জগতে Spirit, Stamina, Strength, Skill ইত্যাদি বিষয়গুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনও খেলোয়াড়ের সাফল্যের মাপকাঠি এই সকল গুণ। আবার অন্য দিকে রাষ্ট্র নির্মাণেও এই চারটি গুণ গুরুত্বপূর্ণ। কোনও দেশের যুবকদের মধ্যে এই সকল গুণ থাকলে তারা কেবলমাত্র দেশের অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতেই উন্নতি করবে তা নয়, খেলাধূলার ক্ষেত্রেও দেশের বিজয় পতাকা তুলে ধরবে। সম্প্রতি, আমার দুটি সাক্ষাৎ হয়েছে, যা মনে রাখার মতো। প্রথমত, জাকার্তায় অনুষ্ঠিত Asian Para Games, 2018-য় অংশগ্রহণকারী para athlete-দের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। এই গেমস-এ মোট ৭২-টি পদক জিতে ভারত এক নূতন রেকর্ড গড়েছে এবং দেশের সম্মান বাড়িয়েছে। এই সব প্রতিভাবান প্যারা-অ্যাথলিটদের প্রত্যেকের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে এবং আমি প্রত্যেককে অভিনন্দন জানিয়েছি। তাঁদের অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে এগিয়ে যাওয়ার সাহস আমাদের সকল দেশবাসীর কাছে প্রেরণাস্বরূপ। একই ভাবে আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিত Summer Youth Olympics, 2018-য় আমাদের বিজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে মিলিত হওয়ারও সুযোগ পেয়েছি। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে Youth Olympics, 2018-তে আমাদের খেলোয়াড়রা অন্যান্য বারের থেকেও ভালো প্রদর্শন করেছে। এই গেমসে আমরা ১৩-টি পদকের অতিরিক্ত Mix Event-এ আরও ৩-টি পদক জয় করেছি। আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে যে এবার এশিয়ান গেমসেও ভারতের প্রদর্শন খুবই ভালো ছিল। দেখুন, গত কয়েক মিনিটের মধ্যে আমি কতবার এখন পর্যন্ত সব থেকে ভালো, সব থেকে সুন্দর শব্দের ব্যবহার করেছি। এই হচ্ছে ভারতের খেলাধূলার কথা, যেটা প্রতিদিন নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাচ্ছে। শুধু খেলার জগতে নয়, ভারত অন্যান্য এমন কিছু ক্ষেত্রেও নূতন রেকর্ড বানাচ্ছে, যেগুলির কথা আমরা কখনও চিন্তাও করিনি। উদাহরণস্বরূপ, আমি আপনাদের প্যারা অ্যাথলেট নারায়ণ ঠাকুরের কথা বলবো, যিনি ২০১৮-র এশিয়ান প্যারা গেমসে দেশের জন্য স্বর্ণ পদক জিতেছেন। ইনি জন্ম থেকেই দিব্যাঙ্গ। আট বছর বয়সে তাঁর পিতৃবিয়োগ হয়। পরের আট বছর উনি এক অনাথাশ্রমে কাটান। অনাথাশ্রম ছাড়ার পর জীবন-গাড়ি চালানোর জন্য উনি DTC–র বাস পরিষ্কার করা এবং রাস্তার ধারের ধাবাতে ওয়েটারের কাজ করেন। এই নারায়ণই আজ international event-এ ভারতের জন্য স্বর্ণপদক জিতেছেন। শুধু এটাই নয়, ভারতে খেলাধূলার ক্ষেত্র এমন বিস্তৃতি লাভ করছে যে জুডো-র মতো ইভেণ্ট, যেখানে ভারত আজ পর্যন্ত জুনিয়র বা সিনিয়র লেভেল-এ কোনও অলিম্পিক পদক পায়নি, সেখানে তবাবী দেবী Youth Olympics-এ জুডোতে রৌপ্যপদক জিতে নূতন ইতিহাস বানিয়েছেন। ষোড়শ বর্ষীয়া যুবতী তবাবী দেবী মণিপুরের এক গ্রামে থাকেন। তাঁর বাবা একজন দিনমজুর এবং মা মাছ বিক্রি করেন। অনেকবার এমন পরিস্থিতি হয়েছে যে তাঁদের কাছে খাবার কেনার অর্থও থাকতো না। এইরকম পরিস্থিতিও তবাবী দেবীর উদ্দীপনার কাছে হার মেনেছে। উনি দেশের জন্য পদক জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। এরকম আরও অনেক কাহিনি আছে, তাঁদের প্রত্যেকের জীবন প্রেরণার উৎস। প্রত্যেক তরুণ খেলোয়াড়, তাদের উৎসাহ New India–র পরিচয়।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের সবার মনে আছে, আমরা ২০১৭-য় FIFA UNDER 17 WORLD CUPঅত্যন্ত সফলভাবে সংগঠিত করেছি। সারা বিশ্বের সফলতম টুর্নামেন্টের মধ্যে তা প্রশংসিতও হয়েছে। FIFA UNDER 17 WORLD CUPরেকর্ড ভেঙেছে দর্শকের সংখ্যায়। দেশের বিভিন্ন স্টেডিয়ামে প্রায় ১২ লক্ষেরও বেশি দর্শক ফুটবল দেখেছে এবং তরুণ খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করেছে। এবারে ভারত ভুবনেশ্বরে ওয়ার্ল্ডকাপ হকি সংগঠনের সৌভাগ্য অর্জন করেছে। হকি ওয়ার্ল্ডকাপ ২৮শে নভেম্বর থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। যে কোনো ভারতীয় যে খেলাই ভালোবাসুন না কেন, তাদের মনে হকির জন্য আলাদা একটা জায়গা রয়েছে। হকি খেলায় ভারতের স্বর্ণময় ইতিহাস রয়েছে। অতীতে ভারত কয়েকবার সোনা জিতেছে, একবার বিশ্বকাপ জয়ও করেছে। ভারত হকি খেলার জগতে কয়েকজন বিশ্বমানের খেলোয়াড়ও উপহার দিয়েছে। বিশ্বের যে কোনও জায়গায় হকি নিয়ে চর্চা হলে ভারতের নাম বাদ দিলে তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। হকির জাদুকর মেজর ধ্যানচাঁদ সারা বিশ্বে পরিচিতি। এছাড়া বলবিন্দর সিং সিনিয়র, লেসলি ক্লডিয়াস, মহম্মদ সহীদ, উধম সিং থেকে ধনরাজ পিল্লাই হকি বিশ্বে ভারতের নাম উজ্জ্বল করেছে। আজও টিম ইন্ডিয়ার হকি খেলোয়াড়েরা শ্রম ও নিষ্ঠায় নতুন প্রজন্মের কাছে সাফল্যের দৃষ্টান্ত গড়ে তুলছে। ক্রীড়াপ্রেমিকদের কাছে স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখা একটা দারুণ অভিজ্ঞতা দেয়। ভুবনেশ্বরে গিয়ে খেলা দেখার সময় শুধু ভারতীয় দল নয় সব দেশকেই উৎসাহিত করবেন। ওড়িশা রাজ্যের নিজস্ব গর্বিত ইতিহাস রয়েছে। সমৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক উৎকর্ষের ঐতিহ্য রয়েছে এবং ওড়িশাবাসীদের উদ্দীপক চরিত্র ও মনে রাখতে হবে। ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে ওড়িশা বেড়ানোও এক সুন্দর সুযোগ। খেলা দেখার ফাঁকে কোনারকের সূর্য মন্দির, পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দির থেকে চিল্কা হ্রদের মতো বিশ্বখ্যাত পর্যটনক্ষেত্র ভ্রমণের সুযোগ পাবেন। আমি এই সুযোগে ভারতের পুরুষ হকি টিমকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। সোয়াশো কোটি ভারতবাসীর সমর্থন রয়েছে। বিশ্বের বাকি দলগুলিকেও আমার শুভকামনা জানালাম।
আমার প্রিয় দেশবাসী, সমাজসেবার কাজে বহু মানুষ এগিয়ে আসছে, ভলেন্টিয়ারিং করছে তারা, সারা দেশের মানুষের কাছে তা অত্যন্ত বড় অনুপ্রেরণা হয়ে উঠছে। এমনিতেই ‘সেবা হি পরম ধর্ম’ এই আদর্শের পরম্পরা রয়েছে। সমাজের প্রত্যেক স্তরেই এই আদর্শের প্রতিফলন রয়েছে। কিন্তু নতুন যুগের নব প্রজন্ম নতুন আগ্রহে, উদ্দীপনায়, নতুন নতুন উদ্যোগে সেই পরম্পরাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। কিছুদিন আগে একটা পোর্টাল উদ্বোধন-এ গেছিলাম, তার নাম – ‘সেল্ফ ফোর সোসাইটি ডট মাইগভ’ দেশের আই-টি এবং ইলেকট্রনিক ইন্ডাস্ট্রির কর্মীদের সোস্যাল এক্টিভিটিসে আগ্রহী করতে এবং তার তাৎপর্য বোঝাতে এই পোর্টাল করা হয়েছে। এই কাজের জন্য যে ভাবে সেই পোর্টাল সাজানো হয়েছে দেখলে সবার ভালো লাগবে। আই টি থেকে সোস-আই-টি, আমি নই আমরা, অহং নয় সবার, ব্যক্তি থেকে সমষ্টি যাত্রার আলোর ছটা রয়েছে। কেউ শিশুদের পড়াচ্ছে — কেউ প্রবীণদের, কেউ বা স্বচ্ছতা অভিযানে লেগে পড়েছে, কেউ বা কৃষকদের উৎসাহিত করছেন নব প্রযুক্তিতে এবং এসবের পেছনে কোনো লোভী স্বার্থপরতা নেই, দেশ সেবা রয়েছে। একজন তরুণ এমন অঙ্গীকারও করেছেন যে হুইলচেয়ারে বাস্কেটবল খেলার জন্য নিজে হুইলচেয়ার বাস্কেটবল শিখছেন। এই যে মানসিকতা, এই যে আত্মনিয়োগ — এ হলো mission mode activity। কোনও ভারতবাসী আছেন যিনি এসব শুনে গর্বিত হবেন না, নিশ্চয়ই হবেন। ‘আমি নই আমরা’ এই ভাবনা আমাদের সবাইকে প্রেরণা যোগাবে।
আমার প্রিয় ভাই-বোনেরা, এইবার যখন আমি ‘মন কি বাত’ নিয়ে আপনাদের প্রস্তাবগুলো দেখছিলাম, তখন আমার পুদুচেরির শ্রী মণীশ মহাপাত্রর একটি খুব রোমাঞ্চকর মন্তব্য দেখার সুযোগ মেলে। তিনি mygov-এ লিখেছেন — আপনি দয়া করা এবারের ‘মন কি বাত’-এ এই বিষয়ে কথা বলুন যে কী করে ভারতের জনজাতি আর তার রীতি-রেওয়াজ, পরম্পরা প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাওয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ হয়ে ওঠে। Sustainable Development-এর জন্য কী করে তাদের ঐতিহ্যকে আমরা আমাদের জীবনের অঙ্গীভূত করবো, তাদের থেকে কিছু শেখার প্রয়োজনীয়তা আছে।
মণীশজী, ‘মন কি বাত’-এর শ্রোতাদের সামনে এমন একটা বিষয় রাখার জন্য আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
এটা এমন একটা বিষয় যা আমি আমাদের গৌরবপূর্ণ অতীত আর সংস্কৃতিকে ফিরে দেখার প্রেরণা যোগায়। আজ সারা বিশ্ব, বিশেষ করে পশ্চিমী দেশগুলি পরিবেশ সংরক্ষণের আলোচনা করছে আর তার balance life অর্থাৎ ভারসাম্যযুক্ত জীবনশৈলীর জন্য নূতন রাস্তা খুঁজছে। আজ আমাদের ভারতবর্ষও এই সমস্যা থেকে দূরে নেই, কিন্তু এর সমাধানের জন্য আমাদের আত্মসমীক্ষা করতে হবে। আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাস, পরম্পরাকে দেখতে হবে আর বিশেষ করে আমাদের যাবতীয় জনজাতির জীবনশৈলীকে বুঝতে হবে। প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেঁচে থাকা আমাদের আদিবাসী সম্প্রদায়ের সংস্কৃতিতে রয়ে গেছে। আমাদের আদিবাসী ভাই-বোনেরা গাছপালা আর ফুলের পুজো দেব-দেবীদের মতন করেই করে। মধ্যপ্রদেশের ভীল জনজাতি, বিশেষ করে মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ের লোক বট, অর্জুনের মতো গাছকে শ্রদ্ধার সঙ্গে পূজা করে। রাজস্থানের মতো মরুভূমিতে বিষ্ণোই সমাজ পরিবেশ সংরক্ষণের রাস্তা আমাদের দেখিয়েছে। গাছ সংরক্ষণের জন্য তারা নিজেদের জীবন ত্যাগ করতেও প্রস্তুত, কিন্তু একটা গাছেরও ক্ষতি স্বীকার করতে তারা প্রস্তুত নয়। অরুণাচলের মিশমী-রা বাঘের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্কের দাবী করে। তারা তাকে নিজেদের ভাই-বোন বলেই মানে। নাগাল্যাণ্ডেও বাঘকে বনের রক্ষক হিসেবেই দেখা হয়। মহারাষ্ট্রের ওয়ার্লি সম্প্রদায়ের লোক বাঘকে অতিথি হিসেবে মানে। ওদের কাছে বাঘের অবস্থিতি সমৃদ্ধির প্রতীক। মধ্যপ্রদেশের কোলা সম্প্রদায় একটি ব্যাপার মানে যে ওদের নিজেদের ভাগ্য বাঘের সঙ্গে জুড়ে আছে। বাঘের যদি খাবার না মেলে তবে গ্রামবাসীকেও অভুক্ত থাকতে হবে — এমনই তাদের শ্রদ্ধা। মধ্যভারতের গোণ্ড জনজাতি breeding season-এ কেয়ন নদীর কিছু জায়গায় মাছ ধরা বন্ধ করে দেয়। এই জায়গাগুলোকে ওরা মাছেদের আশ্রয়স্থল বলে মানে। এই প্রথা চলায় ওদের প্রচুর মাত্রায় তাজা মাছ মেলে। আদিবাসী সম্প্রদায় নিজেদের ঘর natural material থেকে তৈরি করে যা মজবুত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ-বান্ধবও হয়। দক্ষিণ ভারতে নীলগিরি পর্বতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এক ছোটো যাযাবর সম্প্রদায় আছে — তোড়া, যারা পরম্পরা অনুসারে তাদের বস্তিগুলো স্থানীয় স্তরে প্রাপ্ত জিনিস থেকেই বানিয়ে থাকে।
আমার প্রিয় ভাই বোনেরা, এটা সত্যি যে আদিবাসী সম্প্রদায় অনেক শান্তিপূর্ণ এবং নিজেদের মধ্যে মিলেমিশে একসঙ্গে থাকায় বিশ্বাস করে, কিন্তু যখন কেউ তাদের প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষতি করে, তখন তারা নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই করতে ভয় পায় না। এটা কোনো আশ্চর্যের কথা নয় যে আমাদের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরাও ছিলেন। ভগবান বীরসা মুণ্ডাকে কে ভুলে যেতে পারে, যিনি নিজেদের বনভূমির রক্ষা করার জন্য ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই করেছেন। আমি যাঁদের কথা বলছি সেই তালিকা অনেক লম্বা। আদিবাসী সম্প্রদায়ের এরকম অনেক উদাহরণ আছে, যাঁরা আমাদের শেখায় প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কীভাবে বাঁচা যায়।আর আমাদের আশেপাশে যে বনসম্পদ বেঁচে আছে, এর জন্য আমাদের দেশ আদিবাসী সম্প্রদায়ের কাছে ঋণী। আসুন, আমরা ওঁদের প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আমরা সেইসব লোকেদের আর তাঁদের সমস্যা নিয়ে কথা বলি, যাঁরা সমাজের জন্য কিছু আসাধারণ কাজ করছেন। সেইসব কাজ, যেগুলো দেখলে মনে হয় সাধারণ কিন্তু বাস্তবে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তনে ও সমাজের লক্ষ্য নির্ধারণে। কিছুদিন আগে আমি পঞ্জাবের গুরুবচন সিং-জীর সম্বন্ধে পড়ছিলাম। একজন সাধারণ ও পরিশ্রমী কৃষক গুরুবচন সিং-জীর ছেলের বিয়ে ছিল। এই বিয়ের আগে গুরুবচন সিং-জী কনের মা-বাবাকে বলেছিলেন যে এই বিয়ে তাঁরা অনাড়ম্বরে করবেন। বরযাত্রী হোক বা বিয়ের সামগ্রী, খরচা বেশি করার দরকার নেই, আমরা এই কাজ অতি সাধারণভাবেই সম্পন্ন করতে চাই। আবার উনি হঠাৎ করে বললেন, ওঁর একটি শর্ত আছে। আজকাল বিয়েতে শর্ত বললে সাধারণত মনে হয় উনি কোনও বড়ো পণের কথা বলতে যাচ্ছেন— এমন কিছু চাইবেন, যার ফলে কনের পরিবার মুশকিলে পড়ে যাবেন। কিন্তু আপনারা জেনে আশ্চর্য হবেন, ভাই গুরুবচন সিং ছিলেন সরল সাদাসিধা কৃষক, উনি কনের বাবাকে বললেন— যে শর্তের কথা বলছি সেটা সমাজের আসল শক্তি। গুরুবচন সিং-জী বললেন, আপনি আমাকে কথা দিন, এখন থেকে আপনি চাষের জমিতে ফসল কাটার পর যে অবশিষ্টাংশ পরে থাকবে, তাপোড়াবেন না। আপনি চিন্তা করতে পারেন,
এর মধ্যে কত বড় সামাজিক শক্তি লুকিয়ে আছে। গুরুবচন সিং-জীর এই কথা মনে হয় অতিসাধারণ, কিন্তু এটা প্রকট করে ওঁর ব্যক্তিত্ব, আর আমরা দেখেছি যে আমাদের সমাজে এইরকম অনেক পরিবার রয়েছে যারা ব্যক্তিগত বিষয়কে সমাজের ভালো কাজে পরিবর্তিত করেছেন।
শ্রী গুরুবচন সিং-জীর পরিবার এমনি এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আমি পাঞ্জাবের আরেকটি গ্রাম কল্লর মাজরার সম্বন্ধে পড়েছি, যেটা নাভার পাশে অবস্থিত। কল্লর মাজরা এই জন্য শিরোনামে ছিল কারণ ওখানকার লোকেরা ধানের খড়বিচুলি না জ্বালিয়ে তাকে হাল করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়, এর জন্য দরকারী Technology নিজেরাই তৈরি করেন। ভাই গুরুবচন সিং-জীকে শুভেচ্ছা জানাই। কল্লর মাজরা আর ওইসব জায়গার লোকেদের শুভেচ্ছা রইল, যাঁরা পরিবেশকে দূষণমুক্ত করতে নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভারতীয় উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সুস্থ জীবনশৈলীকে আপনারা সবাই সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। যেভাবে ফোঁটা ফোঁটা জল দিয়ে সমুদ্রের সৃষ্টি হয়, সেইভাবে এরকম ছোট ছোট সচেতনতা আর ইতিবাচক কাজ সবসময়ই ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করতে অনেক বড় সহায়ক হয়।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে —
ওঁ দয়ৌ শান্তিঃ, অন্তরীক্শ শান্তিঃ,
পৃথিবী শান্তি, অপঃ শান্তি, ঔষধও শান্তিঃ।
বনস্পতয়ঃ শান্তি, বিশ্বেদেবাঃ শান্তি, ব্রহ্ম শান্তিঃ,
সর্বং শান্তি, শান্তিরেব শান্তি, সামা শান্তিরেধি।।
ওঁ শান্তিঃ, শান্তিঃ, শান্তিঃ।।
এর অর্থ হলো — হে ঈশ্বর,ত্রিলোকে শান্তির বাস হোক – জলে, পৃথিবীতে, আকাশে, অন্তরীক্ষে, অগ্নিতে, পবনে, ঔষধিতে, বনস্পতিতে, উপবনে, অবচেতনে – সম্পূর্ণ ব্রহ্মাণ্ডে শান্তির স্থাপনা কর, জীবমাত্রে, হৃদয়ে, আমার মধ্যে, তোমার মধ্যে, এই জগতের প্রত্যেকটি কণায় শান্তির স্থাপনা কর।
ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি
যখনই বিশ্বশান্তির কথা হয়েছে ভারতবর্ষের নাম ও অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ভারতবর্ষের জন্যে এই বছর এগারোই নভেম্বর দিনটার একটা বিশেষ গুরুত্ব আছে। কারণ একশো বছর আগে এগারোই নভেম্বরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছিল। অর্থাৎ সেই ভয়ংকর বিনাশ আর গণহত্যার শেষেরও একশো বছর হবে। ভারতের জন্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সত্যি বলতে কি, এই মহাযুদ্ধের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। তা সত্ত্বেও আমাদের দেশের সৈনিকরা এই যুদ্ধে বাহাদুরীর সঙ্গে লড়েছেন, খুব বড় ভূমিকা পালন করেছেন এবং সর্বোচ্চ বলিদান করেছেন। ভারতীয় সৈনিকরা পৃথিবীকে দেখালেন যে তাঁরা যুদ্ধক্ষেত্রে কারোর থেকে পিছিয়ে নন। আমাদের সৈনিকরা দুর্গম অঞ্চলে কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেদের শৌর্য দেখিয়েছেন। এসবের একটাই উদ্দেশ্য ছিল – শান্তির পুনঃস্থাপন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পুরো দুনিয়া বিনাশের তাণ্ডব দেখল। অনুমান করা হয় প্রায় এক কোটি সৈন্যবল ও ততোধিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছিলেন। এই ভয়াবহ যুদ্ধের পর পুরো বিশ্ব শান্তির মহত্ত্ব বুঝল। গত একশো বছরে শান্তির পরিভাষা বদলে গেছে। আজ শান্তি ও সৌহার্দ্যের অর্থ শুধুমাত্র যুদ্ধ না হওয়া নয় — আতঙ্কবাদ থেকে জলবায়ুর পরিবর্তন, আর্থিক বিকাশ থেকে সামাজিক ন্যায় —এই সব কিছুর জন্য বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা আর সমন্বয়ের জন্যে কাজ করাটা খুব জরুরি হয়ে গেছে। শান্তির প্রকৃত প্রতীক হলো দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম মানুষের উন্নতি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে একটা বৈশিষ্ট্য আছে। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরূপএবং এখানকার মানুষরাও অত্যন্ত প্রতিভাশালী। আমাদের উত্তর-পূর্ব এখন সেরা এবং মহৎ কাজের জন্য পরিচিত। এটা এমন একটা জায়গা যেখানে জৈব চাষ খুব উন্নতি করেছে। কিছুদিন আগে sustainable food systemঅর্থাৎ দীর্ঘমেয়াদী খাদ্যব্যবস্থাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য সম্মানজনক Future Policy Gold Awardএবার সিকিম জিতেছে। এই পুরস্কারটি রাষ্ট্রসংঘের সঙ্গে যুক্ত সংস্থা FAOঅর্থাৎ Food and Agriculture Organisation-এর তরফ থেকে দেওয়া হয়। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে এই বিশেষ ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ নীতি প্রণয়নের জন্য যে পুরস্কারটি দেওয়া হয় সেটি অস্কার (Oscar)-এর সমান। শুধু তাই নয়, আমাদের সিকিম পঁচিশটি দেশের একান্নটি মনোনয়নকে হারিয়ে এই পুরস্কার জিতেছে। যার জন্যে আমি সিকিমের লোককে ধন্যবাদ দিচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, অক্টোবর মাস শেষ হতে চলেছে। ঋতুর পরিবর্তন বোঝা যাচ্ছে। শীত এসে গেছে, আর ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে উৎসবের মরশুমও চলে এলো। ধনতেরাস, দীপাবলি, ভাইফোঁটা, ছট পুজো — বলতে পারেন, নভেম্বর মাস বিভিন্ন উৎসবেরও মাস। সব উৎসবের জন্যে প্রত্যেক দেশবাসীকে আমার অনেক শুভেচ্ছা। আপনাদের কাছে আমার নিবেদন যে উৎসবের সময় নিজের খেয়াল রাখবেন, নিজের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেবেন ও সমাজের ভালোর দিকেও নজর দেবেন। উৎসবের সময় নতুন সংকল্পের সময়, নতুন অঙ্গীকারের সময়। এই উৎসব যেন আপনার জীবনে দৃঢ়সংকল্প হয়ে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগটা এনে দেয়। আপনার প্রগতি দেশের প্রগতির একটি জরুরি অংশ। আপনারা যত এগোবেন দেশ ততটাই এগোবে। আপনাদের সবাইকে আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা। অনেক অনেক ধন্যবাদ!
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার!
এমন কোনও ভারতবাসী কি আছেন যিনি আমাদের সশস্ত্র বাহিনী, আমাদের সেনাবাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে গর্ব বোধ করেন না?প্রত্যেক ভারতবাসী, তা তিনি যে কোনও অঞ্চল, জাতি, ধর্ম বা ভাষাভুক্ত হোন না কেন, আমাদের সেনাবাহিনীর প্রতি সম্মান ও সমর্থন জানাতে সদা তৎপর। গতকালই একশো পঁচিশ কোটি দেশবাসী ‘পরাক্রম পর্ব’ পালন করেছেন। আমরা স্মরণ করেছি ২০১৬ সালে সংঘটিত ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর ঘটনাটি, যখন আমাদের সেনারা আমাদের দেশে সন্ত্রাসবাদের আড়ালে প্রক্সি ওয়্যারের নামে যারা ধৃষ্টতা দেখাচ্ছিল, তাদের যথোপযুক্ত জবাব দিয়েছিল। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সেনারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল যাতে সিংহভাগ জনসাধারণ, বিশেষত দেশের যুব প্রজন্ম অনুভব করতে পারে আমাদের শক্তি কতখানি, আমরা কতটা সক্ষম আর আমাদের সেনারা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে কীভাবে দেশবাসীকে সুরক্ষা প্রদান করে। ‘পরাক্রম পর্ব’র মত দিবস দেশের যুবশক্তির কাছে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর গৌরবপূর্ণ ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরে। দেশের একতা এবং অখণ্ডতাকে সুনিশ্চিত করার জন্য আমাদের প্রেরণা দেয়। আমিও বীর যোদ্ধাদের ভূমি রাজস্থানের যোধপুরে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলাম। এটা নিশ্চিত যে আমাদের সেনারা তাদের সবাইকে যথোপযুক্ত জবাব দেবে যারা আমাদের দেশের শান্তি ও উন্নতির পরিবেশকে নষ্ট করতে চাইবে। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি, আর শান্তি বজায় রাখার জন্য দায়বদ্ধও। কিন্তু সম্মানের সঙ্গে আপোস করে আর দেশের সার্বভৌম ক্ষমতার বিনিময়ে কদাপি নয়। ভারত সদাসর্বদাই শান্তি ব্যবস্থা কায়েম রাখার প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ও সমর্পিত। বিংশ শতাব্দীর দু–দুটি বিশ্বযুদ্ধে আমাদের এক লক্ষেরও বেশি সেনা শান্তির জন্য নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করেছেন, এই ঘটনা সেই যুদ্ধের, যার সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক ছিল না। আমাদের দৃষ্টি কখনই অপর কোনও দেশের ভূমির ওপর পরেনি। এটা ছিল ‘শান্তি’র প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা। কিছুদিন আগেই ২৩শে সেপ্টেম্বর আমরা ইজরায়েলে Haifa যুদ্ধের শতবার্ষিকী উপলক্ষে মহীশূর, হায়দ্রাবাদ ও যোধপুর ল্যান্সারের বীর সৈনিকদের স্মরণ করেছি, যাঁরা আক্রমণকারীদের থেকে Haifa-কে মুক্ত করেছিলেন। এও ছিল শান্তিরক্ষার উদ্দেশ্যে আমাদের সৈনিকদের প্রদর্শিত এক পরাক্রম। আজও রাষ্ট্রসঙ্ঘের বিভিন্ন শান্তিরক্ষা বাহিনীগুলিতে সর্বাধিক সংখ্যায় সেনা পাঠানো দেশগুলির মধ্যে ভারত অন্যতম। দশকের পর দশক ধরে আমাদের বাহাদুর জওয়ানরা blue helmet পরিধান করে সমগ্র বিশ্বের শান্তিব্যবস্থা কায়েমের উদ্দেশ্যে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের বায়ুশক্তি তুলনাহীন। আকাশে নিজেদের অপরিসীম শক্তির পরিচয় দিয়ে ভারতীয় বায়ুসেনা প্রত্যেক দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছে ও আমাদের সুরক্ষা সম্বন্ধে আশ্বস্ত করেছে। সাধারণতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে জনসাধারণ কুচকাওয়াজের যে অংশটির প্রতি সর্বাধিক আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করেন তা হল Fly Past, যেখানে আমাদের বায়ুসেনার অভূতপূর্ব কলাকৌশল ও শক্তি প্রদর্শনের ঝলক থাকে। ৮–ই অক্টোবর আমরা ‘বায়ুসেনা দিবস’ পালন করি। ১৯৩২–এ ছয়জন পাইলট ও ১৯ জন সেনাকে নিয়ে শুরু হওয়া আমাদের বায়ু সেনাবাহিনী আজ একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম সাহসী ও শক্তিশালী বায়ুসেনায় পরিনত হয়েছে। এ এক স্মরণীয় যাত্রা। দেশের প্রতি সমর্পিত সমস্ত বায়ুসেনানী ও তাদের পরিবারের সবাইকে জানাই আমার আন্তরিক অভিনন্দন। ১৯৪৭–এ যখন পাকিস্তানের আক্রমণকারীরা অতর্কিত আক্রমণ শুরু করে তখন
এই বায়ুসেনাই শ্রীনগরকে আক্রমণকারীদের হাত থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে ভারতীয় বাহিনী ও যুদ্ধোপকরণ যাতে যুদ্ধের ময়দানে সঠিক সময়ে পৌঁছয় তা সুনিশ্চিত করেছিল। ১৯৬৫–র যুদ্ধেও বায়ুসেনা শত্রুপক্ষকে উচিত জবাব দিয়েছিল। ১৯৭১–এর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথা কে না জানে? ১৯৯৯–এ কারগিলকে অনুপ্রবেশকারীদের হাত থেকে মুক্ত করতেও বায়ুসেনা অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। টাইগার হিল–এ শত্রুপক্ষের ঘাঁটিতে ক্রমাগত বোমাবর্ষণ করে বায়ুসেনা তাদের নাস্তানাবুদ করেছিল। ত্রাণ এবং উদ্ধারকার্য হোক বা আপৎকালীন ব্যবস্থাপনা, বায়ুসেনার উল্লেখযোগ্য ভূমিকার জন্য সমগ্র দেশ তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। তুফান, ঝঞ্ঝা,বন্যা বা ভয়াবহ দাবানলের মত প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলির মোকাবিলায় ও দেশবাসীর সহায়তায় বায়ুসেনার অবদান দৃষ্টান্তমূলক। দেশেGender Equality অর্থাৎ নারী–পুরুষের সমতা সুনিশ্চিত করতেও বায়ুসেনা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ও নিজেদের প্রত্যেক বিভাগের দ্বার দেশের কন্যাদের জন্য উন্মুক্ত করেছে। এখন তো বায়ুসেনা মহিলাদের ‘শর্ট সার্ভিস কমিশন’-এর সঙ্গে সঙ্গে ‘পার্মানেন্ট কমিশন’-এর বিকল্পও বেছে নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে, যার ঘোষণা আমি এই বছর ১৫ আগষ্টের দিনটিতে লালকেল্লার প্রাকার থেকে করেছিলাম। ভারত গর্বের সঙ্গে বলতে পারে, ভারতীয় সশস্ত্র সেনাবাহিনীতে শুধু পুরুষ শক্তিই নেই, নারীশক্তির যোগদানও দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারী শক্তিশালী তো বটেই এখন সশস্ত্রও হচ্ছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী! কদিন আগেই আমাদের নৌবাহিনীর এক আধিকারিক, অভিলাষ টোমি জীবন–মৃত্যুর লড়াই লড়ছিল। সারা দেশ চিন্তিত ছিল ওকে কিভাবে বাঁচানো যায়। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন অভিলাষ টোমি নৌবাহিনীর এক নির্ভীক, সাহসী ও বীর সৈনিক। অভিলাষ প্রথম ভারতীয় যিনি কোনো আধুনিক প্রযুক্তি ছাড়াই একটি ছোট্ট নৌকো নিয়ে বিশ্ব–ভ্রমণ করছিলেন। ৮০ দিন ধরে ভারত মহাসাগরের দক্ষিণে গোল্ডেন গ্লোব রেস প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে যখন দ্রুতগতিতে এগোচ্ছিলেন তখন এক ভয়ঙ্কর সামুদ্রিক ঝড়ের মধ্যে পড়েন। এত বিপদের মধ্যেও ভারতীয় নৌবাহিনীর এই বীর বেশ ক’দিন ধরে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যান। অপার সাগরের মধ্যে পানীয় জল বা খাবার ছাড়াই ভাসতে থাকেন, কিন্তু হার স্বীকার করেন নি। সাহস, সঙ্কল্পশক্তি আর দক্ষতার এ এক আশ্চর্য নিদর্শন! কয়েকদিন আগেই, অভিলাষকে মাঝ–সমুদ্রে উদ্ধারের পর, আমি ওর সঙ্গে ফোনে কথা বলি। এর আগেও অবশ্য আমাদের সাক্ষাৎ হয়েছে। এত বড় বিপদ কাটিয়েও আবার এইরকম দুঃসাহসী কিছু করার সংকল্পের কথা আমাকে বলল… ওর মধ্যে এই মনোবল, এই যে উদ্দীপনা রয়েছে… সেইটা আমাদের দেশের যুবসমাজের কাছে, তরুণ প্রজন্মের কাছে একটা প্রেরণা। আমি অভিলাষ টোমির দ্রুত আরোগ্যের জন্যে প্রার্থনা করছি আর আশা করছি যে ওর এই সাহস, এই বীরত্ব, এই দৃঢ়সংকল্প – এই লড়ে জিতে নেওয়ার শক্তি – আমাদের দেশের যুব প্রজন্মকে প্রেরণা ও উৎসাহ যোগাবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ২–রা অক্টোবর দিনটির কী মাহাত্ম্য — তা শিশুরাও জানে। এবছর এই দিনটির আরও বিশেষ এক গুরুত্ব রয়েছে। আমরা আগামী দু–বছর ধরে মহাত্মাগান্ধীর সার্ধশত জন্মজয়ন্তী উদ্যাপনের জন্য বিশ্বজুড়ে নানান কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছি। মহাত্মা গান্ধীর ভাবধারা ও চিন্তাচেতনা আজ সারা বিশ্বে পৌঁছে গেছে। ডক্টর মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র বা নেলসন ম্যাণ্ডেলার মত মণীষীরা প্রত্যেকেই গান্ধীজীর ভাবধারা থেকে শক্তি অর্জন করেছেন। তাঁরা স্বজাতির সমান অধিকার এবং সম্মান অর্জন করতে দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন। আজকের ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আমি আপনাদের সঙ্গে পূজনীয় বাপুজীর আরও এক মহৎ কাজ নিয়ে আলোচনা করতে চাই — যা সমস্ত দেশবাসীরই জানা দরকার।
১৯৪১ সালে মহাত্মা গান্ধী constructive programme বা ‘গঠনমূলক কার্যক্রম’ হিসেবে কিছু চিন্তাধারা লিপিবদ্ধ করতে শুরু করেন। পরে, ১৯৪৫ সালে যখন স্বাধীনতা সংগ্রাম জোরদার হয়ে উঠল, তখন গান্ধীজী তাঁর এই চিন্তাধারাগুলির সংশোধিত প্রতিলিপি তৈরি করলেন। পূজনীয় বাপুজী কৃষক, গ্রামের মানুষ এবং শ্রমিক ভাইদের অধিকার রক্ষা, স্বচ্ছতা, শিক্ষার প্রসার ইত্যদি নানা বিষয়ে নিজের চিন্তাভাবনা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেন, যাকে Gandhi Charter–ও বলা হয়। পূজনীয় বাপুজী জনসংযোগকারী ছিলেন। মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়া, মানুষকে আপন করে নেওয়া বাপুজীর বিশেষত্ব, যা তাঁর স্বভাবেই ছিল। এটাই মহাত্মা গান্ধীর ব্যক্তিত্বের সর্বাপেক্ষা মূল্যবান বৈশিষ্ট্য হিসেবে প্রত্যেকে অনুভবও করেছেন। তিনি দেশবাসীকে উপলব্ধি করিয়েছিলেন যে তারা দেশের বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং আবশ্যক। এই উপলব্ধিকে তিনি এক সর্বাত্মক জন আন্দোলনের রূপ দিয়েছিলেন যা ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান। স্বাধীনতা সংগ্রামে মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রের, প্রতিটি গোষ্ঠীর মানুষ নিজেকে সমর্পণ করে দিয়েছিলেন। বাপুজী আমাদের সবাইকে এক প্রেরণাদায়ক মন্ত্র দিয়েছিলেন, যা ‘গান্ধীজীর জাদুমন্ত্র’ বলে আমরা জানি।
সেখানে গান্ধীজী বলেছিলেন — “আমি তোমাদের এমন এক কৌশলের কথা বলে যাচ্ছি, যখনই তোমাদের মনে সন্দেহ জাগবে অথবা অহংকার তোমাদের মনকে আচ্ছন্ন করবে, তখনই আমার চিন্তাধারা স্মরণ কোরো। তুমি জীবনে সবচেয়ে দরিদ্র এবং দুর্বল যে মানুষটিকে দেখেছো, তার মুখ মনে কোরো এবং নিজের মনকে প্রশ্ন কোরো — তুমি যে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছো — তা ঐ মানুষটির জন্য কতখানি উপযোগী হবে। এতে কি সে লাভবান হবে? এর ফলে কি তার জীবনে এবং ভাগ্যে কোনও পরিবর্তন আসবে?অর্থাৎ এতে কি কোটি কোটি ক্ষুধার্ত এবং অতৃপ্ত মানুষ স্বরাজ অর্জন করবে? তখনই তুমি লক্ষ্য করবে তোমার সন্দেহ নিরসন হল এবং অহংকার নিবৃত্ত হল।”
আমার প্রিয় দেশবাসী, গান্ধীজীর এক কৌশল আজও একইরকম গুরুত্বপূর্ণ। দেশের ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্তশ্রেণির আর্থিক শক্তি এবং ক্রয় ক্ষমতা আজ উর্দ্ধমুখী। এই প্রেক্ষিতে আমরা যখন কিছু কিনতে যাই, তখনই পূজনীয় বাপুজীর সেই মহান কৌশল বা মন্ত্র স্মরণ করতে পারি। আমি যে পণ্যটি ক্রয় করছি, তাতে আমাদের দেশের কোনও নাগরিকের লাভ হচ্ছে কি? এতে কার মুখে খুশির আলো ঝলমল করবে? কে সেই ভাগ্যবান — যার কাছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমার এই ক্রয় থেকে লাভ পৌঁছবে। দরিদ্রতর মানুষের কাছে যদি সেই লাভ পৌঁছয় — তাহলেই আমার খুশিও বহুগুণে বেড়ে যাবে।
গান্ধীজীর এই কৌশলকে মনে রেখে আগামীদিনে আমরা যখনই কিছু কিনব, গান্ধীজীর সার্ধশত জন্মজয়ন্তী যাপন করার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে আমাদের প্রত্যেকটি ক্রয়ের ফলে যেন কোনও না কোনও দেশবাসীর ভালো হয় এবং পণ্যটির উৎপাদনে যাঁদের ঘাম ঝরেছে, যাঁরা বিনিয়োগ করেছেন, যাঁরা নিজেদের প্রতিভা কাজে লাগিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের কাছেই যেন কিছু না কিছু লাভ পৌঁছয়। এটাই গান্ধীজীর কৌশল, এটাই গান্ধীজীর বার্তা। আমার বিশ্বাস আপনাদের ছোট্ট একটি পদক্ষেপ দরিদ্রতম মানুষের জীবনে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। আমার প্রিয় দেশবাসী, গান্ধীজি যখন বলেছিলেন জঞ্জাল পরিষ্কার করলে স্বাধীনতা পাওয়া যাবে তখন হয়ত উনি জানতেনও না এটা কিভাবে হবে। কিন্তু এমনটা হয়েছে। ভারত স্বাধীনতা পেয়েছে। তেমন ভাবেই আজ আমাদের মনে হতে পারে আমাদের এই ছোট্ট কাজের মাধ্যমে ও আমার দেশের আর্থিক প্রগতিতে, আর্থিক সশক্তিকরণ এর ক্ষেত্রে ,দরিদ্রকে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি যোগাতে আমরা বড় অবদান রাখতে পারি। আর আমার মতে এটাই আজকের যুগের প্রকৃত দেশভক্তি, এটাই পুজনীয় বাপুর কাজের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। যেমন বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান উপলক্ষে খাদি ও হস্তশিল্পজাত দ্রব্য কেনার কথা ভাবুন। এতে অনেক বয়ন শিল্পীর সাহায্য হবে। কথিত আছে লাল বাহাদুর শাস্ত্রীজী পুরনো বা ছেঁড়াফাটা খাদির কাপড়ও যত্ন করে রেখে দিতেন। কারণ তাতেও কারো পরিশ্রম জড়িয়ে থাকে। উনি বলতেন এইসব খাদির কাপড় অনেক পরিশ্রম করে বানানো হয়েছে। এর প্রতিটি সুতো যেন কাজে লাগে। দেশ ও দেশবাসীর প্রতি ভালোবাসা ওই ছোটখাটো চেহারার মহামানবের শিরায় শিরায় প্রবাহিত ছিল। দুদিন পর পূজনীয় বাপুর সঙ্গে আমরা শাস্ত্রীজির জন্মজয়ন্তী ও পালন করব। শাস্ত্রীজীর নাম উচ্চারিত হতেই আমাদের অর্থাৎ ভারতবাসীর মনে এক অসীম শ্রদ্ধার জন্ম হয়। ওর সৌম্য ব্যক্তিত্ব প্রত্যেক দেশবাসীর মন সর্বদা গর্বে ভরে দেয়। লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর বিশেষত্ব ছিল বাইরে থেকে ওঁকে অত্যন্ত নরম দেখাতো। কিন্তু অন্তরে তিনি দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিলেন। ‘জয় জওয়ান জয় কিষাণ’ মন্ত্রটি ছিল তাঁর বিরাট ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক। প্রায় দেড় বছরের সংক্ষিপ্ত কার্যকালে উনি দেশের যুবক ও কৃষকের সাফল্যকে শিখরে পৌঁছে দেওয়ার মন্ত্র দিয়ে গেছেন। এটা রাষ্ট্রের প্রতি ওর নিঃস্বার্থ তপস্যারই ফল।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ যখন আমরা পূজনীয় বাপুকে স্মরণ করছি খুব স্বাভাবিক ভাবেই স্বচ্ছতার কথা তো বলতেই হয় 15সেপ্টেম্বর থেকে ‘স্বচ্ছতা হি সেবা’ অভিযান শুরু হয়েছে। কোটি কোটি মানুষ এই অভিযানে অংশ নিয়েছেন। আমারও সৌভাগ্য হয়েছে দিল্লির আম্বেদকার স্কুলে বাচ্চাদের সঙ্গে স্বচ্ছতা শ্রম দান করার। আমি সেই স্কুলে গেছি, যার ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন পূজনীয় বাবা সাহেব নিজে। 15 তারিখ থেকে দেশজুড়ে প্রতিটি শ্রেণির মানুষ এই শ্রম দানে যুক্ত হন। বিভিন্ন সংস্থা এতে অংশগ্রহণ করেছে। স্কুলের বাচ্চা, কলেজের ছাত্র ছাত্রী, এন সি সি, এন এস এস, যুব সংগঠন, মিডিয়া গ্রুপ, কর্পোরেট জগত সবাই বৃহদাকারে স্বচ্ছতা শ্রম দান করেছেন। আমি এর জন্য সকল স্বচ্ছতাপ্রেমী দেশবাসীকে আন্তরিকভাবে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই। আসুন শোনা যাক একটি ফোন কল,
"নমস্কার, আমার নাম শয়তান সিং। জেলা বিকানির, তহশীল পুগল, রাজস্থান থেকে বলছি আমি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী দুটি চোখের একটিতেও আমি দেখতে পাই না। আমি সম্পূর্ণ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। আমি বলতে চাই ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে মোদীজি ‘স্বচ্ছ ভারত’-এর যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমরা দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা শৌচকর্ম করতে যেতে খুবই অসুবিধায় পড়তাম। এখন প্রতিটি ঘরে শৌচালয় তৈরি হয়েছে, তাই এতে আমাদের খুব সুবিধা হয়েছে। এই পদক্ষেপ খুবই প্রশংসনীয় এবং এই উদ্যোগ আরও এগিয়ে যাক। অনেক অনেক ধন্যবাদ!
আপনি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা বলেছেন। প্রত্যেকের জীবনেই স্বচ্ছতার নিজস্ব গুরুত্ব আছে। আর ‘স্বচ্ছ ভারত’ অভিযানের ফলে আপনার ঘরে শৌচালয় তৈরি হয়েছে,
তাতে এখন আপনার সুবিধা হচ্ছে, আমাদের সবার জন্য এর থেকে খুশির খবর আর কি হতে পারে! সম্ভবত এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত মানুষরাও কল্পনা করতে পারবেন না যে প্রজ্ঞাচক্ষু হওয়ার কারণে শৌচালয় হওয়ার আগে আপনি কতটা অসুবিধার মধ্যে দিয়ে জীবন কাটাচ্ছিলেন আর শৌচালয় হওয়ার পর তা আপনার জন্য কত বড় আশীর্বাদ হয়েছে। আপনি যদি এই বিষয়টা জানিয়ে আমাদের ফোন না করতেন তাহলে হয়তো স্বচ্ছতা অভিযানে যুক্ত ব্যক্তিদের মনেও এই সংবেদনশীল বিষয়টি আসত না। আপনার ফোনের জন্য আমি আপনাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’ শুধু দেশেই নয় বরং সারা পৃথিবীতে একটি সাফল্যের কাহিনি হয়ে উঠেছে যার বিষয়ে সকলেই আলোচনা করছেন। এবার ভারত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্বচ্ছতা সম্মেলন আয়োজন করতে চলেছে– ‘মহাত্মা গান্ধী আন্তর্জাতিক স্বচ্ছতা সম্মেলন’ অর্থাৎ মহাত্মা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল স্যানিটেশন কনভেনশন। সারা পৃথিবীর থেকে স্বচ্ছতা মন্ত্রকের আধিকারিক এবং এই বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা এসে স্বচ্ছতা সম্পর্কিত প্রয়োগ ও অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেবেন। ‘Mahatma Gandhi International Sanitation Convention’-এর সমাপ্তি ২রা অক্টোবর, ২০১৮–তে বাপুর সার্ধশত জন্ম জয়ন্তীর শুভ সূচনার সঙ্গেই হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, সংস্কৃতে একটা কথা আছে, "ন্যায়মূলং স্বরাজ্যং স্যাত" অর্থাৎ স্বরাজের মূলে থাকে ন্যায়। যখন ন্যায়ের বিষয়ে আলোচনা হয়, তখন মানবাধিকারের চিন্তাভাবনা সেখানে সম্পূর্ণরূপে অন্তর্নিহিত থাকে। শোষিত, পীড়িত এবং বঞ্চিত মানুষদের স্বাধীনতা, শান্তি এবং তাদের প্রতি ন্যায় সুনিশ্চিত করার জন্য এটা অনিবার্য। ডক্টর বাবাসাহেব আম্বেদকার রচিত সংবিধানে গরীবদের মূল অধিকারগুলি রক্ষার জন্য বেশ কিছু উপায় রয়েছে। তাঁর ভাবনায় অনুপ্রাণিত হয়ে, ১২ ই অক্টোবর ১৯৯৩ সালে, ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন’ অর্থাৎ "National Human Rights Commission" (NHRC) গঠন করা হয়েছিল। কিছুদিনের মধ্যেই NHRC–র পঁচিশ বছর পূর্ণ হবে। NHRC শুধু মানবাধিকার রক্ষা করেনি, আত্মিক গৌরব বৃদ্ধিতেও সাহায্য করেছে। আমাদের পরমপ্রিয় নেতা, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত অটল বিহারী বাজপেয়ী স্পষ্ট রূপে বলেছিলেন যে, মানবাধিকার আমাদের কাছে কোনও বিদেশী ধারণা নয় । আমাদের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতীক চিহ্নে, বৈদিক যুগের আদর্শ নীতি, "সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ" অলংকৃত রয়েছে। NHRC মানবাধিকার নিয়ে ব্যাপক মাত্রায় সচেতনতা সৃষ্টি করেছে, সঙ্গে এর অপব্যবহার আটকাতেও প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে। পঁচিশ বছরের এই সফরে এই কমিশন দেশবাসীর মধ্যে আশা ও বিশ্বাসের এক পরিবেশ তৈরি করেছে। আমার মনে হয় এটা একটা সুস্থ সমাজ গঠনের জন্য, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য খুব আশাব্যঞ্জক। এখন জাতীয় স্তরে মানবাধিকার বিষয়ে কাজের পাশাপাশি, 26 টি ‘রাজ্য মানবাধিকার কমিশন’ গঠন করা হয়েছে। সমাজবদ্ধভাবে আমাদের মানবাধিকারের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে হবে ও আমাদের আচরণেও তা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এটাই “সবকা সাথ সবকা বিকাশ" অর্থাৎ “সকলের সাথে সকলের উন্নতির” মূল চিন্তা–ধারা।
আমার প্রিয় দেশবাসী, অক্টোবর মাসে জয়প্রকাশ নারায়ণজীর জন্মজয়ন্তী। রাজমাতা বিজয়ারাজে সিন্ধিয়াজীরও জন্ম শতবর্ষের শুভ সূচনা হবে। এই সকল মহাপুরুষরা আমাদের অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, এঁদের আমরা প্রণাম জানাই। 31 শে অক্টোবর সর্দারসাহেবেরও জন্ম জয়ন্তী। আমি আগামী 'মান কি বাত'-এ এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, কিন্তু এটি আজ আমি অবশ্যই উল্লেখ করতে চাই যে কিছু বছর ধরে সর্দারসাহেবের জন্ম–জয়ন্তী, ৩১ অক্টোবরে ভারতের প্রতিটি ছোট–ছোট শহরে, মফঃস্বলে,গ্রামে, ‘Run for Unity’ অর্থাৎ ‘ঐক্যের জন্য দৌড়’-এর আয়োজন করা হয়। এই বছরেও আসুন আমরা নিজেদের গ্রামেগঞ্জে, শহরে,মহানগরে, ‘Run for Unity’-র আয়োজন করতে সচেষ্ট হই। ‘ঐক্যের জন্য দৌড়’ — এটাই তো সর্দার সাহেবকে স্মরণ করার সঠিক উপায়, কারণ তিনি সারাজীবন দেশের ঐক্যের লক্ষ্যে কাজ করেছেন। আমি আপনাদের সকলকে অনুরোধ জানাই যে ৩১শে অক্টোবর "Run for Unity"–র মাধ্যমে, সমাজের প্রতিটি শ্রেণিকে, প্রতিটি ব্যক্তিকে একতার সূত্রে বাঁধার এই প্রয়াসকে আমরা শক্তিশালী করি এবং সেটাই হবে তাঁর প্রতি উপযুক্ত শ্রদ্ধাঞ্জলি ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নবরাত্রি, দুর্গাপূজা, বিজয়াদশমী — এই সকল পবিত্র উৎসবের জন্য আমি আপনাদের সকলকে আন্তরিকভাবে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই । ধন্যবাদ!
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার! আজ সমগ্র দেশ রাখীবন্ধন উৎসব পালন করছে। এই পুণ্যলগ্নে সমস্ত দেশবাসীকে জানাই অনেক অনেক শুভেচ্ছা! রাখীবন্ধনের এই উৎসব বোন ও ভাইয়ের প্রেম ও বিশ্বাসের প্রতীক। বহু শতাব্দী ধরে এই উৎসব সামাজিক সৌহার্দ্যের এক বড় উদাহরণ। দেশের ইতিহাসে এমন অনেক ঘটনা আছে, যখন দেখা গেছে একটি রক্ষাসূত্র কীভাবে দুটি রাজ্য, বা আলাদা আলাদা ধর্মের মানুষকে বিশ্বাসের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। কিছুদিন বাদেই জন্মাষ্টমী। আকাশে বাতাসে শোনা যাবে ‘হাথী ঘোড়া পাল-কি জয় কান্হাইয়া লাল-কি’ আর ‘গোবিন্দা – গোবিন্দা’ নামের জয়ধ্বনি। কৃষ্ণের রঙে নিজেকে রাঙিয়ে নিয়ে এই উল্লাসে মেতে ওঠার আনন্দই আলাদা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষত মহারাষ্ট্রে ‘দহী-হাণ্ডি’র আয়োজনও ছেলেমেয়েরা করতে শুরু করে দিয়েছে নিশ্চয়ই। সমস্ত দেশবাসীকে জানাই রাখীবন্ধন ও জন্মাষ্টমীর আন্তরিক অভিনন্দন!
বেঙ্গালুরুর বিজয়ভারতী বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী চিন্ময়ী সংস্কৃত ভাষায় জানিয়েছেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, নমস্কার! আমি চিন্ময়ী। মহাশয়, আজ ‘সংস্কৃত দিবস’। সংস্কৃত ভাষা যে সহজ সরল, সবাই জানে। আমরা এখানে সাধারণত সংস্কৃত ভাষাতেই কথা বলে থাকি। এই কারণে সংস্কৃত ভাষার গুরুত্ব এবং গভীরতাকে এইভাবে তুলে ধরছি।”
— ভগিনী চিন্ময়ী, সংস্কৃতের গুরুত্ব নিয়ে তোমার এই ভাবনাকে সাধুবাদ জানাই। তোমাকে অনেক অনেক অভিনন্দন ও ‘সংস্কৃত সপ্তাহ’উপলক্ষ্যে দেশবাসীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা!
আমি চিন্ময়ীর প্রতি কৃতজ্ঞ যে সে এই বিষয়টি নজরে এনেছে। বন্ধুরা, রাখীবন্ধন ছাড়াও শ্রাবণ পূর্ণিমার দিনটি পালন করা হয় ‘সংস্কৃত দিবস’ হিসাবে। আমি সেই সমস্ত মানুষকেও অভিনন্দন জানাই, যাঁরা এই মহান ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার, এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এবং জনে জনে পৌঁছে দেওয়ার কাজে নিয়োজিত আছেন। প্রত্যেকটি ভাষার নিজস্ব গুরুত্ব আছে। ভারতের এটা গর্ব যে ‘তামিল’ ভাষা বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ভাষা আর এটাও সমগ্র দেশবাসীর গর্ব যে বেদের সময় থেকে আজ পর্যন্ত জ্ঞানের প্রচার ও প্রসারে সংস্কৃত ভাষা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজে লাগার মত জ্ঞানের বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে। তা সে বিজ্ঞান হোক বা তন্ত্রের জ্ঞান, কৃষি হোক বা স্বাস্থ্য, জ্যোতির্বিজ্ঞান হোক বা আর্কিটেকচার, অঙ্ক হোক বা ম্যানেজমেন্ট, অর্থশাস্ত্র হোক বা পরিবেশ — বলা হয়, গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর মত চ্যালেঞ্জের সঙ্গে লড়বার মন্ত্রও আমাদের বেদে বিস্তারিত ভাবে উল্লিখিত আছে। আপনারা সবাই জেনে খুশি হবেন যে, কর্ণাটকের শিবমোগা জেলার ‘মট্টুর’ গ্রামের সমস্ত মানুষ আজ কথাবার্তার মাধ্যম হিসাবে সংস্কৃত ভাষাকে বেছে নিয়েছেন।
আপনারা একটা কথা জেনে আশ্চর্য বোধ করবেন যে সংস্কৃত এমন একটি ভাষা, যার মধ্যে অনন্ত শব্দের নির্মাণ সম্ভব। দু-হাজার ধাতু, ২০০ প্রত্যয় — অর্থাৎ Suffix, ২২-টি উপসর্গ অর্থাৎ Prefix, আর সমাজজীবনের কাজে লাগার মত অসংখ্য শব্দের নির্মাণ সম্ভব এই ভাষায়। এই কারণে সূক্ষ্মাতীত ভাব ও বিষয় যাই হোক না কেন, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তার বর্ণনা করতে পারা সংস্কৃত ভাষার একটি বড় বৈশিষ্ট্য। আমরা কোনও কথাকে ওজনদার করতে হলে ইংরাজি কোটেশন ব্যবহার করি, কখনও কখনও শায়রী ইত্যাদিও বলে থাকি। কিন্তু যাঁরা সংস্কৃতের সুভাষিত শব্দগুলির সঙ্গে পরিচিত, তাঁরা জানেন, কত কম শব্দে বিষয়ের সঠিক ব্যাখ্যা সংস্কৃতের এই সুভাষিত শব্দগুলির মাধ্যমে হতে পারে। তাছাড়া এই ভাষা, শব্দ আমাদের মাটির সঙ্গে, আমাদের পরম্পরার সঙ্গে জড়িত থাকায় একে বোঝাও খুব সহজ।
জীবনে ‘গুরু’র স্থান বোঝানোর জন্য বলা হয় —
‘একমপি অক্সরমস্তু, গুরুঃ শিষ্যং প্রবোধয়েত্
পৃথীব্যাং নাস্তি তদ্-দ্রব্যং, ইয়দ্-দত্ত্বা হ্যণৃণী ভবেৎ।।’
অর্থাৎ, কোনও গুরু তাঁর শিষ্যকে যদি এক অক্ষর জ্ঞানও প্রদান করেন, তাহলে সমগ্র বিশ্বে এমন কোনও বস্তু বা ধন নেই, যা দিয়ে শিষ্য গুরুর ঋণ চুকিয়ে দিতে পারে। আসুন, আসন্ন ‘শিক্ষক দিবস’ দিনটি আমরা এই মনোভাব নিয়ে পালন করি। জ্ঞান ও গুরু তুলনাহীন, অমূল্য! ‘মা’ ছাড়া একমাত্র শিক্ষকই পারেন শিশুর ভাবনাকে সঠিক পথে পরিচালনার দায়িত্ব নিতে। আর সেই কারণে তাঁর প্রভাবও থাকে সমস্ত জীবন জুড়ে। ‘শিক্ষক দিবস’ উপলক্ষ্যে মহান দার্শনিক ও দেশের ভূতপূর্ব রাষ্ট্রপতি ভারতরত্ন ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণকে আমরা সর্বদাই স্মরণ করি। তাঁর জন্মজয়ন্তীতেই পুরো দেশ জুড়ে ‘শিক্ষক দিবস’ পালিত হয়। আমি দেশের সমস্ত শিক্ষকদের আসন্ন ‘শিক্ষক দিবস’-এর শুভেচ্ছা জানাই ও সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞান, শিক্ষা ও ছাত্রদের প্রতি তাঁর সমর্পণকে, তাঁর নিষ্ঠাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের কৃষকভাইরা, যাঁরা উদয়াস্ত পরিশ্রম করেন, তাঁদের জন্য বর্ষা খুশির খবর নিয়ে আসে। গ্রীষ্মের ভীষণ দাবদাহে ঝলসে যাওয়া গাছপালা, শুকিয়ে যাওয়া জলাশয়গুলি বর্ষার আগমনে স্বস্তি লাভ করে। কিন্তু কখনও কখনও আবার অতিবৃষ্টি, বিধ্বংসী বন্যারূপেও দেখা দেয়। এমন একটা প্রাকৃতিক অবস্থা তৈরি হয়েছে যে কোথাও কোথাও অন্য স্থানগুলির তুলনায় অতিরিক্ত বর্ষা হচ্ছে। ক’দিন আগেই আমরা দেখলাম, ভীষণ বন্যা কীভাবে কেরলের জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এইরকম কঠিন পরিস্থিতিতে সারা দেশ
কেরলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। যাঁরা এই বিপর্যয়ে নিজেদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, আমাদের গভীর সমবেদনা জানাই সেই সব পরিবারগুলিকে। যা ক্ষতি হয়ে গেছে, তা হয়তো কোনও দিনই
পূরণ হবে না ঠিক, কিন্তু সেই সমস্ত শোকসন্তপ্ত পরিবারজনেদের আমি ভরসা যোগাতে
চাই, ১২৫ কোটি দেশবাসী এই দুর্দিনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আপনার পাশে রয়েছে।
আমি প্রার্থনা করি, যাঁরা এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আহত হয়েছেন, তাঁরা দ্রুত আরোগ্য লাভ করুন। আমার পুরো বিশ্বাস আছে যে অদম্য প্রাণশক্তি ও সাহসের উপর ভর করে কেরলের জনজীবন দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।
বিপর্যয় যেভাবে জনজীবনকে বিধ্বস্ত করে তোলে, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যপূর্ণ ঠিকই, কিন্তু এই দুর্দিনেই আবার আমরা মানবতার ধর্মকেও উপলব্ধি করি। কচ্ছ থেকে কামরূপ আর কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত প্রত্যেকটি মানুষ নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন, যাতে যে যে প্রান্তগুলিতে বিপর্যয় ভয়াবহ হয়ে উঠেছে, তা সে কেরল হোক বা ভারতের যে কোনও জেলা বা এলাকা, সেই সমস্ত স্থানের জনজীবন স্বাভাবিক ছন্দে ফেরে। সমস্ত বয়সের মানুষ এবং সমস্তরকম কাজের সঙ্গে যুক্ত মানুষ নিজেদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। প্রত্যেকে ভাবছেন কেরলের মানুষের দুঃখ-কষ্ট কীভাবে ভাগাভাগি করে নেওয়া যায়, যাতে তা লাঘব হয়। আমরা সবাই জানি, সশস্ত্র সুরক্ষাবলের জওয়ানরা কেরলের এই বিপর্যয়ে উদ্ধারকার্যের নায়ক। তাঁরা বন্যাকবলিত মানুষদের বাঁচাবার জন্য সব রকম উপায় অবলম্বন করেছেন। এয়ার ফোর্স, নেভি বা আর্মি, বি-এস-এফ, সি-আই-এস-এফ, আর-এ-এফ — প্রত্যেকে উদ্ধার কার্যে ও ত্রাণ পৌঁছে দিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। আমি বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই এন-ডি-আর-এফের জওয়ানদের কঠোর পরিশ্রমের কথা। এই বিপদের মোকাবিলায় তাঁরা যেভাবে কাজ করেছেন তা বিশেষ প্রশংসার দাবী রাখে। এন-ডি-আর-এফের ক্ষমতা, তাঁদের দায়বদ্ধতা, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিস্থিতিকে আয়ত্বে আনার ক্ষমতা সমস্ত দেশবাসীর মনে এক শ্রদ্ধার আসন তৈরি করেছে।
গতকালই ছিল ‘ওনাম’ উৎসব। আমরা প্রার্থনা করি, ‘ওনাম’-এর শুভ পার্বণ দেশকে বিশেষত কেরলকে এই বিপর্যয় দ্রুত কাটিয়ে ওঠার শক্তি দিক আর কেরলের উন্নতির গতিবৃদ্ধি হোক। আমি আরও একবার সমস্ত দেশবাসীর পক্ষ থেকে কেরলের জনসাধারণকে এবং দেশের অন্যান্য বিপর্যস্ত জায়গাগুলির মানুষজনকে বলতে চাই — এই দুর্দিনে পুরো দেশ তাঁদের পাশে আছে।
প্রিয় দেশবাসী, এবারের ‘মন কি বাত’-এর জন্য পাঠানো পরামর্শগুলি পড়তে গিয়ে দেখলাম সবচেয়ে বেশি লোক যে বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন তা হল আমাদের সবার প্রিয়
শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী। গাজিয়াবাদ থেকে কীর্তি, সোনিপত থেকে স্বাতি বৎস, কেরলের ভাই প্রবীণ, পশ্চিমবাংলা থেকে ডক্টর স্বপন ব্যানার্জী, বিহারের কাটিহার থেকে অখিলেশ পাণ্ডে — আরও অসংখ্য মানুষ ‘নরেন্দ্র মোদী মোবাইল অ্যাপ’-এ এবং ‘মাই গভ’-এ অটলজীর জীবনের বিভিন্ন দিকগুলি নিয়ে আমাকে বলতে অনুরোধ করেছেন। ১৬-ই আগষ্ট যে মুহূর্তে দেশের ও বিশ্বের মানুষ অটলজীর প্রয়াণের খবর পেয়েছেন, প্রত্যেকে গভীর শোক ব্যক্ত করেছেন।
তিনি এমন একজন রাষ্ট্রনেতা, যিনি ১৪ বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করেন এবং গত দশ বছরে সক্রিয় রাজনীতি থেকে বহু দূরে চলে গিয়েছিলেন বলা চলে। তাঁকে খবরে বিশেষ দেখা যেত না। জনসমক্ষে তেমন আসতেন না। দশ বছরের অন্তরাল অনেকখানি। কিন্তু গত ১৬-ই আগষ্ট দেশ ও দুনিয়া দেখল যে ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষের মনে দশ বছরের এই ব্যবধান বিন্দুমাত্র রেখাপাত করেনি। অটলজীর জন্য সকলের যে স্নেহ, শ্রদ্ধা ও শোকভাবনার বহিঃপ্রকাশ দেখা গেল, তা ওঁর বিশাল ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক। বিগত কয়েক দিনে ওঁর আরও অনেক গুণের বিষয়ে আমরা জানতে পেরেছি। জনমানসে তিনি একজন যোগ্য সাংসদ, সংবেদনশীল লেখক, সুবক্তা ও জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী। সুশাসন অর্থাৎ Good Governance-কে মূল ধারায় নিয়ে আসার জন্য এই দেশ অটলজীর প্রতি সবসময় কৃতজ্ঞ থাকবে। আমি আজ অটলজীর বিশাল
ব্যক্তিত্বের আরও এক নিদর্শনের ব্যাপারে আপনাদের জানাতে চাই — সেটি হল ওঁর প্রবর্তন করা Political Culture। উনি Political Culture-এ যে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছেন এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে সুব্যবস্থিত পরিকাঠামো দেওয়ার যে প্রয়াস করেছেন, তার ফলে
দেশের অনেক লাভ হয়েছে ও ভবিষ্যতেও হবে, একথা নিশ্চিত। ভারত সব সময়
‘একানব্বইতম সংশোধন অধিনিয়ম ২০০৩’-এর জন্য অটলজীর কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে।
এই সংশোধন আমাদের দেশের রাজনীতিতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনে।
প্রথমটি হল রাজ্যগুলির মন্ত্রীমণ্ডলীকে বিধানসভার মোট আসনের পনের শতাংশ পর্যন্ত সীমিত করা। দ্বিতীয়টি হল দল-বদল বিরোধী আইনের নির্দিষ্ট সীমাকে এক-তৃতীয়াংশ থেকে বাড়িয়ে দুই-তৃতীয়াংশ করা এবং তার পাশাপাশি দল-বদলকারী নেতা-কর্মীদের অনুপযুক্ত ঘোষণা করার স্পষ্ট নির্দেশিকা তৈরি করা।
বহু বছর পর্যন্ত ভারতে জাম্বো অর্থাৎ বিরাট মন্ত্রীমণ্ডল গঠনের এক রাজনৈতিক সংস্কৃতি ছিল। এই বিশাল মন্ত্রীমণ্ডল গঠনের মূল অভিপ্রায় ছিল বিভিন্ন নেতাদের খুশি করা, কাজের যথাযথ বণ্টন নয়। অটলজী এই ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনেন যার ফলস্বরূপ অর্থ ও সম্পদের সাশ্রয় সম্ভব হয়, কর্মদক্ষতা বাড়ে। একমাত্র অটলজীই এমন দূরদর্শী ছিলেন যিনি পরিস্থিতির পরিবর্তন আনেন ও রাজনীতিতে সুস্থ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন।
অটলজী এক সত্যিকারের দেশভক্ত ছিলেন। ওঁর সময়েই বাজেট পেশ করার সময়কে বদলানো হয়। আগে, ইংরেজদের প্রথানুযায়ী বিকেল পাঁচটায় বাজেট পেশ করা হত। কারণ সেই সময়েই লণ্ডনে পার্লামেণ্ট বসত। ২০০১-এ অটলজী বাজেট পেশ করার সময়কে বিকেল পাঁচটার বদলে বেলা এগারোটা করে দেন। আরও একটি ‘আজাদী’ আমরা অটলজীর কার্যকালে লাভ করি ‘ইণ্ডিয়ান ফ্ল্যাগ কোড’ তৈরির মাধ্যমে। এটি লাগু হয় ২০০২ থেকে, যার ফলে সার্বজনিক জায়গায় তিরঙ্গা উত্তোলন সম্ভব হয়। সাধারণ ভারতীয়রা জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সুযোগ পায়। এই ভাবে উনি আমাদের প্রাণপ্রিয় তিরঙ্গাকে জনসাধারণের কাছে নিয়ে আসেন।
আপনারা দেখেছেন কীভাবে অটলজী ভোট প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এনে, জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে দেশের ভিত মজবুত করেছেন। আপনারা দেখছেন
আজকাল কেন্দ্রে ও রাজ্যে একইসঙ্গে নির্বাচন করানোর বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। লোকে এর পক্ষে-বিপক্ষে নিজেদের মতামত রাখছেন, যা হিতকারী ও লোকতন্ত্রের পক্ষে শুভ সংকেত।
আমি অবশ্যই উল্লেখ করব, সুস্থ লোকতন্ত্রের জন্য, উত্তম লোকতন্ত্রের জন্য হিতকারী পরম্পরাগুলির বিকাশ, নানা বিষয়ে খোলামনে আলোচনা প্রয়োজন। গণতন্ত্র মজবুত করার ক্রমাগত প্রয়াস করাই উপযুক্ত শ্রদ্ধাঞ্জলি হবে অটলজীর প্রতি। ওঁর সমৃদ্ধ ও উন্নত ভারতের স্বপ্নকে পূরণ করার সংকল্পকে আরও একবার স্মরণ করে, সকলের পক্ষ থেকে অটলজীকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজকাল সংসদের সম্পর্কে যখনই আলোচনা হয়, তখন অবরোধ, হইহল্লার কথাই বলা হয়। কিন্তু যখন ভাল কিছু হয়, সেই বিষয়ে বিশেষ চর্চা হতে দেখা যায় না। কিছু দিন আগেই সংসদের বাদল অধিবেশন সমাপ্ত হয়। আপনারা জেনে প্রসন্ন হবেন লোকসভার productivity ১১৮ শতাংশ ও রাজ্যসভার ৭৪ শতাংশ ছিল। দলীয় স্বার্থ ত্যাগ করে সমস্ত সাংসদ বাদলঅধিবেশনকে সবথেকে বেশি কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন, তারই পরিনাম হলো, লোকসভা ২১ টি ও রাজ্যসভা ১৪ টি বিল পাস করেছে। সংসদের এই বাদল অধিবেশন সামাজিক ন্যায় এবং যুবকল্যাণের ক্ষেত্রে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই অধিবেশনে যুব এবং অনগ্রসর শ্রেণির উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বেশ কতগুলো বিল পাস করা হয়েছে। আপনারা সবাই জানেন, কয়েক দশক ধরে SC/ST কমিশনের মতো OBC কমিশন তৈরির দাবী করা হচ্ছিল। অনগ্রসর শ্রেণীর অধিকারকে সুনিশ্চিত করার জন্য, দেশ এই বার OBC কমিশন তৈরির সংকল্পকে পূর্ণকরেছেএবং এই প্রতিষ্ঠানকে একটি সাংবিধানিক অধিকার দিয়েছে। এই পদক্ষেপ সামাজিক ন্যায়ের উদ্দেশ্যকে সফলভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। তপশিলী জাতি ও তপশিলী উপজাতিদের অধিকারকে সু্রক্ষিত করার জন্য সংশোধিত বিল পাস করার কাজও এই অধিবেশনে শুরু হয়েছে। এই আইন SC ও ST শ্রেণির মানুষদের স্বার্থকে আরও বেশি সুরক্ষিত করবে। একই সঙ্গে এটি তাদেরঅপরাধীদের অত্যাচার থেকে রক্ষা করবে এবং তাদের আস্থা বাড়াবে।
দেশের নারীদের প্রতি কোনও সভ্যসমাজ কোনও প্রকার অন্যায় বরদাস্ত করতে পারে না। ধর্ষণের অপরাধীদের দেশ সহ্য করতে প্রস্তুত নয়, তাই সংসদে‘ফৌজদারী আইন সংশোধনী বিল’ পাস করে কঠোরতম সাজার বিধান করা হয়েছে। এই অপকর্মের অপরাধীদের ন্যূনতম
১০ বছরের সাজা হবে, ১২ বছরের কম মেয়েদের ধর্ষণ করলে ফাঁসির সাজা হবে।
কিছু দিন আগে আপনারা হয়তো সংবাদপত্রে পড়েছেন, মধ্যপ্রদেশের মন্দসোরের একটি আদালত মাত্র দু’ মাসের শুনানির পর এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করার অপরাধে দু’জন দোষীকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছেন। এরও আগে মধ্যপ্রদেশের কাটনীর এক আদালত মাত্র পাঁচ দিন শুনানির পর অপরাধীদের ফাঁসির শাস্তি দেন। রাজস্থানের একটি আদালতও এরকম দ্রুত রায় দিয়েছেন। এই আইন মহিলা এবং বালিকাদের প্রতি অপরাধের মামলাকে নিষ্পত্তি করতে গঠনমূলক ভূমিকা নেবে। সামাজিক পরিবর্তন ছাড়া আর্থিক প্রগতি অসম্পূর্ণ। লোকসভাতে ‘তিন তালাক’ বিলটিকে পাস করা হয়েছে, যদিও রাজ্যসভাতে এই অধিবেশনে পাস করানো সম্ভব হয়নি। আমি মুসলিম মহিলাদের আশ্বাস প্রদান করতে চাই, সমগ্র দেশ ওঁদের ন্যায় প্রদান করার জন্য সমস্ত শক্তি দিয়ে সঙ্গে রয়েছে।
যখন আমরা দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য এগিয়ে আসি, তখন দরিদ্র, পিছিয়ে পড়া, শোষিত ও বঞ্চিতদের জীবনে পরিবর্তন আনা সম্ভব। এবারের বাদল অধিবেশনে সবাই একসঙ্গে একটি আদর্শ স্থাপন করে দেখিয়েছি। আমি দেশের সমস্ত সাংসদকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এই মুহূর্তে কোটি কোটি দেশবাসীর দৃষ্টি জাকার্তাতে আয়োজিত এশিয়ান গেমসের প্রতি নিবদ্ধ। প্রতিদিন সকালে সবার আগে সংবাদপত্রে, টেলিভিশনে, খবরে, Social Media-তে নজর থাকে কোন ভারতীয় খেলোয়াড় পদক জিতেছেন। এশিয়ান গেমস এখনও চলছে। আমি দেশের জন্য যাঁরা পদক জিতেছেন, তাঁদের সবাইকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। যাঁদের প্রতিযোগিতা এখনও বাকি, ওঁদেরওঅনেক অনেক শুভকামনা জানাই।
ভারতের খেলোয়াড়রা, বিশেষ করে Shooting আর Wrestling-এখুব ভালো প্রদর্শন করছেই, যে সব খেলাতে আগে আমরা ভালো ফল করতে পারিনি, সেসব খেলাতেও আমাদের খেলোয়াড়রা পদক নিয়ে আসছেন, যেরকম Wushu আর Rowing। এগুলো কেবলমাত্র পদক নয়, এটা ভারতীয় খেলা আর ভারতীয় প্রতিযোগীদের আকাশ ছোঁয়ার সাহস এবং তাঁদের স্বপ্নপূরণের প্রমাণস্বরূপ। দেশের জন্য পদক জেতার তালিকায় আমাদের মেয়েদের সংখ্যা অনেক।
এটা একটা ইতিবাচকদিক।এমনকি যেসব যুবরা পদক জিতেছেন তাঁদের মধ্যে অনেকেই ১৫–১৬ বছরের। এটাও একটা ভালো চিহ্ন যে, যে সব খেলোয়াড়রা পদক জিতেছেন, তাঁদের অনেকেই অখ্যাত গ্রাম ও মফঃস্বল থেকে উঠে এসেছেন এবং কঠিন পরিশ্রম করে এই সাফল্যঅর্জন করেছেন।
২৯-শেআগস্ট আমরা ‘জাতীয় ক্রীড়া দিবস’ পালন করব, এই উপলক্ষ্যে আমি সমস্ত ক্রীড়াপ্রেমীদের শুভেচ্ছা জানাই, একই সঙ্গে হকির জাদুকর মহান খেলোয়াড় শ্রীধ্যানচাঁদজী-কে আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করছি ।
দেশের সমস্ত নাগরিকদের কাছে আমার আবেদন, আপনারা সবাই খেলাধূলা করুন এবং নিজের ফিটনেসের প্রতি নজর দিন, কারণ সুস্থ ভারতই সম্পন্ন ও সমৃদ্ধ ভারতের নির্মাণ করবে। যখন ইন্ডিয়া ফিট হবে তখনই ভারতের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের নির্মাণ হবে। আরেকবার, এশিয়ান গেমসে পদক বিজেতাদের অভিনন্দন জানাই, একইসঙ্গে বাকি খেলোয়াড়দেরও ভালো ফলাফলের শুভকামনা জানাই। সবাইকে ‘জাতীয় ক্রীড়া দিবস’-এর অনেক অনেক শুভকামনা ।
“প্রধানমন্ত্রীজি নমস্কার! আমি কানপুর থেকে ভাবনা ত্রিপাঠী বলছি। আমি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রী। প্রধানমন্ত্রীজি গত ‘মন কি বাত’-এআপনি কলেজপড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তার আগেও আপনি ডাক্তার ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যাণ্টদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন।
আপনার কাছে আমার অনুরোধ আগামী 15 সেপ্টেম্বর Engineers’ Day উপলক্ষ্যে আপনি যদি আমার মত ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কিছু কথা বলেন তাহলে আমাদের সবার মনোবল বাড়বে, আমরা খুব আনন্দিত হব এবং আগামী দিনে দেশের জন্য কিছু করার উৎসাহ পাব। ধন্যবাদ।”
নমস্কার ভাবনাজি! আমি আপনার ভাবনার প্রশংসা করছি। আমরা সবাই ইঁট-পাথর দিয়ে ঘরবাড়ি তৈরি হতে দেখেছি। কিন্তু আপনারা কল্পনা করতে পারেন, প্রায় বারোশো বছর আগে একটি Single Stone বিশাল পাহাড়কে এক বিরাট, উৎকৃষ্ট এবং অত্যাশ্চর্যমন্দিরের রূপ দেওয়া হয়েছিল!হয়তো কল্পনা করা কঠিন কিন্তু এমনটা সত্যিই হয়েছিল এবং সেই মন্দিরটি হল মহারাষ্ট্রের ইলোরাতে অবস্থিত কৈলাশনাথ মন্দির। যদি কেউ আপনাকে বলে প্রায় হাজার বছর আগে ৬০ মিটারেরও বেশি দীর্ঘ একটি গ্রানাইট স্তম্ভ বানানো হয়েছিল এবং তার শীর্ষে প্রায় ৮০ টন ওজনের একটি গ্রানাইট শিলাখন্ড রাখা হয়েছিল, তাহলে কি আপনি বিশ্বাস করবেন? কিন্তু তামিলনাড়ুর তাঞ্জাভুর-এর বৃহদেশ্বর মন্দির সেই স্থান, যেখানে স্থাপত্যকলা এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এই অবিস্মরণীয় মেলবন্ধন দেখা যায়। গুজরাতের পাটনে একাদশ শতাব্দীর ‘রানী কি বাও’ দেখে সকলেই আশ্চর্য হয়ে যান। ভারতভূমি বরাবরই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রয়োগশালা। ভারতে এমন অনেক ইঞ্জিনিয়ার জন্মেছেন যারা অকল্পনীয়কে কল্পনীয় করেছেন এবং Engineering জগতে অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়ে উদাহরণ স্থাপন করেছেন। আমাদের মহান ইঞ্জিনিয়ারদের ঐতিহ্যের ভাণ্ডারে এমন রত্নও আছেন যাঁর কাজ আজও মানুষকে আশ্চর্য করে দেয়। উনি হলেন ভারতরত্ন Dr. M. Vishweshwaraiah। কাবেরী নদীর উপর ওঁর বানানো Krishnarajasagar বাঁধের মাধ্যমে আজও লক্ষ লক্ষ কৃষক ও সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। দেশের ওই অংশে তিনি তো পূজনীয় বটেই দেশের বাকি অংশের সব মানুষও তাকে অত্যন্ত সম্মান ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তাঁরই স্মরণে 15–ই সেপ্টেম্বর Engineers’ Day হিসেবে পালিত হয়। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমাদের দেশের ইঞ্জিনিয়াররা প্রাচ্য দুনিয়ায় নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি করেছেন। Engineering জগতের অভাবনীয় কৃতিত্বের কথা বলতে গেলে 2001 সালে গুজরাটের কচ্ছের সেই ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের সময়কার একটা ঘটনা আমার মনে পড়ে। তখন আমি সেখানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছিলাম। সেই সূত্রে আমার একটি গ্রামে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। সেখানে ১০০বছরেরও বেশি বয়সীমাতৃস্থানীয়া একজনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। উনি আমাকে দেখে মজা করে বলছিলেন, দেখুন এই আমার বাড়ি। কচ্ছে একে ‘ভুঙ্গা’বলে। আমার বাড়ি তিনটে ভূমিকম্প দেখেছে। আমি নিজে তিনটে ভূমিকম্প দেখেছি। এই বাড়িতেই দেখেছি। কিন্তু কোথাও আপনি ক্ষয়ক্ষতির কোনো চিহ্ন দেখতে পাবেন না। এই ঘর আমার পূর্বপুরুষ প্রকৃতি ও পরিবেশের কথা মাথায় রেখে বানিয়েছিলেন। এই কথাটা উনি খুব গর্বের সঙ্গে বলছিলেন। তখন আমার মনে হল বহু যুগ আগেও আমাদের সেই সময়ের ইঞ্জিনিয়াররা স্থানীয় পরিবেশ ও পরিস্থিতি বিচার করে বাড়ি তৈরি করতেন যার ফলে মানুষ সুরক্ষিত থাকত। এখন যখন আমরা Engineers’ Day উদ্যাপন করি তখন আমাদের ভবিষ্যতের কথাও ভাবতে হবে, বিভিন্ন জায়গায় কর্মশালার আয়োজনকরতে হবে। আমাদের ভাবতে হবে পরিবর্তিত সময়ে আমাদের কি কি নতুন বিষয় শিখতে হবে? শেখাতে হবে?নতুন কি কি যুক্ত করতে হবে? আজকাল Disaster Management খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সারা পৃথিবী প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে লড়ছে।এখানে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের নতুন প্রয়োগ কি হবে?তার কোর্স কী কী আছে? ছাত্র-ছাত্রীদের কি শেখানো উচিত? পরিবেশবান্ধবনির্মাণ কীভাবে সম্ভব? লোকাল মেটারিয়ালের ভ্যালু এডিশন করে কন্সট্রাকশনের অগ্রগতিকীভাবে করা যায়? Zero Waste-কে আমাদের অগ্রাধিকার হিসেবে কীভাবে গণ্য করতে পারি?Engineers’ Day উদযাপনের সময় এই কথাগুলি আমাদের অবশ্যই ভাবতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, উৎসবের পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গে দীপাবলীর প্রস্তুতিও শুরু হয়ে যাবে। ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আমরা মিলিত হতে থাকব। মনের কথা বলতে থাকব এবং নিজেদের মন থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজেও আমরা একসঙ্গে নিযুক্ত থাকব। এই ভাবনা নিয়ে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। ধন্যবাদ! আবার কথা হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার!
আজকাল অনেক জায়গা থেকে ভালো বর্ষার খবর আসছে। কোথাও কোথাও অতিরিক্ত বর্ষা চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে, অন্যদিকে কিছু জায়গায় মানুষ এখনও বর্ষার প্রতীক্ষা করছেন। ভারতের বিশালত্ব ও বিবিধতার কারণে কখনও কখনও বর্ষাও তার পছন্দ-অপছন্দ প্রকট করে। কিন্তু এজন্য বর্ষাকে দোষারোপ করা ঠিক নয়। মানুষই প্রকৃতির সঙ্গে বিরোধের পথে এগিয়ে গেছে আর তারই ফলস্বরূপ কখনো কখনো প্রকৃতি আমাদের উপর বিরূপ হয়ে পড়ে। এই কারণে এটা আমাদের সবার দায়িত্ব যে আমরা প্রকৃতিকে ভালোবাসি, প্রকৃতিকে রক্ষা করি, প্রকৃতির উন্নয়নে সহায়তা করি। তাহলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকবে।
বিগত দিনে এই রকমই একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয় পুরো বিশ্বের মনযোগ আকর্ষণ করেছে। মানুষের চিন্তা-ভাবনাকে উদ্বেলিত করেছে। আপনারা টিভি-তে নিশ্চয় দেখেছেন যে থাইল্যাণ্ডে ১২ জন কিশোর ফুটবল খেলোয়াড়ের একটি দল এবং তাদের কোচ একটি গুহাতে
বেড়াতে গিয়েছিল। ওখানে গুহাতে যেতে এবং সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে সাধারণভাবে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে। কিন্তু ঐ দিন ভাগ্যদেবীর অন্যরকম ইচ্ছা ছিল। ওরা যখন গুহার ভিতরে অনেকটা ঢুকে গেছে, তখন হঠাৎ প্রচুর বৃষ্টির কারণে গুহার মুখে প্রচুর জল জমে যায়।
খেলোয়াড়দের বাইরে বেরনোর রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। কোন রাস্তা না পাওয়াতে ওরা গুহার
ভেতরে একটি ছোট টিলার উপর আটকে ছিল, তাও একদিন-দুদিন নয় — ১৮ দিন!
কল্পনা করতে পারেন, মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ওই কিশোররা যখন এক-একটা মুহূর্ত কাটাচ্ছিল, তখন সেই সময়টা কেমন ছিল? একদিকে তারা যখন বিপদের সঙ্গে লড়াই করছিল, তখন অন্যদিকে সমগ্র বিশ্বের মানুষ একজোট হয়ে এই কিশোরদের নিরাপদে বাইরে বেরনোর জন্য প্রার্থনা করছিল। ওই কিশোরেরা কোথায় আছে, কি অবস্থায় আছে, ওদের কীভাবে বাইরে আনা যায় — সেটা জানার সব রকম প্রচেষ্টা চালানো হয়। সময় মতো উদ্ধার না করা গেলে মনসুন-এর কারণে কয়েক মাস ওদের বার করে নিয়ে আসা সম্ভব হত না। যাই হোক, যখন ভালো খবর এলো, সারা বিশ্ব শান্তি পেল। খুশি হল। কিন্তু এই পুরো ঘটনাটিকে আমার একটু অন্যভাবে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে। এই পুরো অপারেশানটা কীভাবে চালানো হয় — প্রতিটি স্তরে সকলে যে দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছেন সেটা সত্যিই অভূতপূর্ব! ওখানকার সরকার, বাচ্চাদের পিতা-মাতা, পরিবারের লোকজন, গণমাধ্যম, দেশের নাগরিকবর্গ — প্রত্যেকে শান্তি ও ধৈর্যের এক অনুকরণীয় আচরণ করে দেখিয়েছে। সবাই দলবদ্ধ ভাবে এই মিশনে সামিল হয়েছে। প্রত্যেকের এই সংযত ব্যবহার — আমার মনে হয় এটা শেখার ও আত্মস্থ করার বিষয়। মা-বাবার দুঃখ হয়নি বা মা চোখের জল ফেলেননি তা কিন্তু নয়। প্রত্যেকের ধৈর্য, সংযম, পুরো সমাজের শান্ত ব্যবহার সত্যিই আমাদের জন্য শিক্ষামূলক বিষয়। এই অপারেশানে থাইল্যাণ্ডের নৌবাহিনীর এক সৈন্যকে প্রাণ দিতে হয়েছে। সমগ্র বিশ্ব আশ্চর্যান্বিত যে এইরকম বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতি সত্ত্বেও উদ্ধারকারীরা জলমগ্ন অন্ধকার গুহাতে সাহস ও ধৈর্যের সঙ্গে কাজ করেছে, আশা ছাড়েনি। এই ঘটনা এটাই দেখায় যে যখন মানুষ জোটবদ্ধ হয়, তখন অনেক আশ্চর্য জিনিষ হয়। এটাই প্রয়োজন যে আমরা শান্ত মনে স্থির চিত্তে নিজেদের লক্ষ্যে মনোনিবেশ করি এবং তার জন্য কাজ করতে থাকি।
কিছুদিন আগে আমাদের দেশের জনপ্রিয় কবি নীরজ প্রয়াত হয়েছেন। কবি নীরজের বৈশিষ্ট্য ছিল — আশা, ভরসা, দৃঢ় সংকল্প এবং আত্মবিশ্বাস। কবি নীরজের সব কথা আমাদের সকল ভারতবাসীকে অনেক শক্তি, প্রেরণা দিতে পারে। উনি লিখেছেন —
অন্ধকার দূর হবেই
যতই তুফান উঠুক যতই বজ্রপাত হোক
দীপ যখন জ্বলেছে তখন অন্ধকার দূর হবেই।
— কবি নীরজকে আন্তরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই।
প্রধানমন্ত্রীজী নমস্কার! আমার নাম সত্যম। আমি এবছর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে অ্যাডমিশান নিয়েছি। আমাদের স্কুলের বোর্ড-পরীক্ষার সময় আপনি এক্জাম স্ট্রেস এবং এডুকেশনের কথা বলেছিলেন। আমাদের মত স্টুডেন্টদের জন্য এখন আপনার কী বক্তব্য আছে?
জুলাই এবং আগষ্ট মাস কৃষকদের জন্য এবং সব তরুণদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এটাই হচ্ছে সেই সময় যখন কলেজগুলির জন্য ‘পিক সেশন’। সত্যমের মত লক্ষ লক্ষ যুবক স্কুল থেকে বেরিয়ে কলেজে যায়। ফেব্রুয়ারি আর মার্চ মাস যায় পরীক্ষা, প্রশ্ন-উত্তর লেখায়। এপ্রিল এবং মে মাস ছুটিতে আনন্দ করার সঙ্গে সঙ্গে রেজাল্ট, ভবিষ্যত জীবনের দিক নির্ণয় এবং ‘কেরিয়ার চয়েস’ করতে ব্যয় হয়। জুলাই হচ্ছে সেই মাস, যখন যুবকরা নিজের জীবনের নূতন পথে পদক্ষেপ করে। যখন ফোকাস ‘কোশ্চেন’ থেকে সরে ‘কাট-অফ’-এ চলে যায়। ছাত্রদের মনযোগ ‘হোম’ থেকে ‘হোস্টেল’-এ চলে যায়। ছাত্ররা ‘পেরেন্ট’দের ছত্রছায়া থেকে ‘প্রফেসর’দের ছত্রছায়াতে প্রবেশ করে। আমার বিশ্বাস, আমার যুব বন্ধুরা কলেজ জীবনের শুভারম্ভকে নিয়ে খুবই উৎসাহিত এবং খুশি। প্রথমবার বাড়ির বাইরে বেরনো, গ্রামের বাইরে যাওয়া, এক সুরক্ষিত পরিবেশ থেকে বাইরে বেরিয়ে নিজেকে নিজের পথ প্রদর্শক হতে হয়। এতসব যুবক নিজের ঘর ছেড়ে জীবনকে এক নূতন পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে বেরিয়ে পরে। অনেক ছাত্র কলেজে জয়েন করেছে, অনেকে জয়েন করবে। আপনাদের আমি এটাই বলবো যে, “Be Calm! Enjoy Life!” জীবনের আনন্দ পুরোপুরি উপভোগ করুন। বই ছাড়া কোনও উপায় নেই, পড়াশোনা তো করতেই হবে। কিন্তু নূতন নূতন বিষয় খোঁজার ইচ্ছা চালিয়ে যেতে হবে। পুরনো বন্ধুরা খুবই মূল্যবান। ছোটোবেলার বন্ধুত্ব অমূল্য। কিন্তু নূতন বন্ধু নির্বাচন, বন্ধুত্ব করা এবং চালিয়ে যাওয়া খুবই বুঝেশুনে করা দরকার। নূতন কিছু শিখুন। যেমন নতুন নতুন দক্ষতা, নতুন নতুন ভাষা শিখুন।
যে সমস্ত যুবক নিজের ঘর ছেড়ে বাইরে অন্য কোথাও পড়তে গেছেন, তাঁরা ঐ জায়গাকে আবিষ্কার করুন। ওখানকার সম্পর্কে, ওখানকার লোক, ভাষা, সংস্কৃতি সম্বন্ধে জানুন। ওখানকার যে সব বেরানোর জায়গা আছে, সেখানে যান, সে সম্পর্কে জানুন। নূতন অধ্যায় শুরু করছেন —সব নব যুবকদের জন্য আমার শুভকামনা রইল।
কলেজ মরশুমের কথা যখন উঠলই, তখন মধ্যপ্রদেশের ছাত্র আশারাম চৌধুরীর কথা বলতেই হয়। খবরে দেখছিলাম অত্যন্ত গরীব পরিবারের ছেলে এই আশারাম জীবনের কত সমস্যা পার হয়ে সাফল্য অর্জন করেছে। যোধপুর AIIMS–এর MBBSপরীক্ষায় প্রথম চেষ্টাতেই সে পাশ করে গেছে। তার বাবা আজীবন আস্তাকুঁড়ের আবর্জনা কুড়িয়ে পরিবারের ভরণপোষণ করে এসেছেন। সেই পরিস্থিতিতে এই সাফল্যের জন্য আমি আশারামকে অভিনন্দন জানাই। এমন কত দুঃস্থ পরিবারের ছাত্র আছে যারা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেই নিজেদের পরিশ্রম আর মনযোগকে সম্বল করে এমন কিছু করে দেখিয়েছে, যা আমাদের সকলকে প্রেরণা যোগায়। যেমন দিল্লির প্রিন্স কুমার, যার বাবা ডি-টি-সি’র বাসচালক, কিংবা কলকাতার অভয় গুপ্তা, যে ফুটপাথে রাস্তার আলোর নীচে বসে পড়াশোনা করেছে — এদের মধ্যে আছে আমেদাবাদের মেয়ে আফরীন শেখ, যার বাবা অটো চালান, আছে নাগপুরের স্কুলবাস চালকের মেয়ে খুশি, হরিয়ানার চৌকিদারের ছেলে কার্তিক কিংবা ঝাড়খণ্ডের ইঁট-ভাঁটার মজদুরের ছেলে রমেশ সাহু। রমেশ নিজেও মেলায় খেলনা বিক্রি করত। গুরগাঁওয়ের প্রতিবন্ধী মেয়ে অনুষ্কা পাণ্ডে জন্ম থেকেই ‘স্পাইনাল মাসকুলার অটোপ্সি’ নামক বংশগত রোগের শিকার — এরা সবাই নিজেদের দৃঢ় সংকল্প আর মনের জোরে সব বাধা পার করে দুনিয়াকে দেখানোর মতো সাফল্য অর্জন করেছে। নিজেদের আশেপাশে তাকালে আমরা এমন কত উদাহরণই পেয়ে যাব।
দেশের যে কোনও প্রান্তের যে কোনও ভালো ঘটনা আমার মনকে শক্তি দেয়, প্রেরণা যোগায়। আর এই সব তরুণদের কথা আপনাদের বলতে গিয়ে আমার কবি নীরজের কথা মনে পড়ছে। জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে নীরজ বলেছিলেন —
আকাশের গান আমার পৃথিবীকে শোনাতে হবে,
সব আঁধারকে নিয়ে আসতে হবে আলোয়,
ফুলের সুবাস দিয়ে জয় করতে হবে তলোয়ারকে,
আর পাহাড়কে জাগাতে হবে গান গেয়ে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কয়েক দিন আগে একটি খবর আমার চোখে পড়লো, যাতে লেখা ছিল — “মোদীর স্বপ্ন সফল করলেন দুই যুবক।” ভিতরের খবরটি পড়ার পর জানতে পারলাম আমাদের যুবশক্তি কীভাবে টেকনোলজি-র স্মার্ট এবং ক্রিয়েটিভ ইউজ-এর সাহায্যে সাধারণ মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে। ঘটনাটা ছিল এইরকম — একবার আমেরিকার ‘টেকনোলজি হাব’ সান জোস শহরে আমি ভারতীয় তরুণদের সঙ্গে আলোচনার সময় আমি তাঁদের কাছে আবেদন রেখেছিলাম তাঁরা যেন ভারতের জন্য নিজেদের ট্যালেন্টকে কীভাবে ব্যবহার করা যায় সেটা ভাবেন এবং সময় বের করে কিছু করেন। আমি ‘ব্রেন-ড্রেন’-কে ‘ব্রেন-গেইন’-এ বদলে ফেলার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। রায়বেরিলির দুই আই-টি প্রফেশনাল যোগেশ সাহুজী এবং রজনীশ বাজপেয়ীজী আমার এই চ্যালেঞ্জকে স্বীকার করে এক অভিনব চেষ্টা চালিয়েছেন। নিজেদের প্রফেশনাল স্কিলকে ব্যবহার করে যোগেশজী এবং রজনীশজী মিলে একটি ‘স্মার্ট গাঁও অ্যাপ’ তৈরি করেছেন। এই অ্যাপ শুধু যে গ্রামের লোকেদের গোটা দুনিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করবে তা-ই নয়, এখন তাঁরা যে কোনও তথ্য বা সংবাদ নিজেদের মোবাইলেই পেয়ে যাবেন। তৌধকপুর নামে রায়বেরিলির এই গ্রামটির গ্রাম-প্রধান, ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট, সি-ডি-ও সকলে মিলে এই অ্যাপটি ব্যবহার করার জন্য সাধারণ গ্রামবাসীকে উৎসাহ দিয়েছেন। এই অ্যাপ এক হিসেবে গ্রামে একরকমের ডিজিট্যাল বিপ্লব আনার কাজ করছে। গ্রামে যত উন্নয়নের কাজ হচ্ছে এই অ্যাপের মাধ্যমে সেগুলির রেকর্ড রাখা, ট্র্যাক করা, মনিটর করা সহজ হয়ে গেছে।
এই অ্যাপ-এ গ্রামের টেলিফোন ডিরেক্টরি, নিউজ সেকশান, ইভেন্টস লিস্ট, হেলথ সেন্টার, নফরমেশন সেন্টার — সবই দেওয়া আছে। এই অ্যাপ কৃষকদের জন্যও খুবই কাজের।
অ্যাপের ফিচার, কিসানদের মধ্যে ‘FACT’ রেট একদিক থেকে তাঁদের উৎপাদিত সামগ্রী বিক্রির জন্য বাজারের কাজ করছে। এই ঘটনাটিকে খতিয়ে দেখলে একটা ব্যাপার আপনাদের অবশ্যই মনে হবে যে এই তরুণেরা আমেরিকায় সেদেশের চলন-বলন, বিচার-বিবেচনার মধ্যে জীবন কাটাচ্ছেন, হয়ত বেশ কিছু বছর আগে দেশ ছেড়েছেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও নিজের গ্রামের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়গুলি জানেন, চ্যালেঞ্জগুলিকে বোঝেন এবং গ্রামের সঙ্গে ইমোশনালি যুক্ত রয়েছেন। এই কারণেই সম্ভবত তাঁরা গ্রামের যা প্রয়োজন, ঠিক সেই অনুসারে কিছু বানাতে পেরেছেন। নিজের গ্রাম, নিজের শিকড়ের সঙ্গে এই যোগ এবং নিজের দেশের জন্য কিছু করে দেখাবার এই মানসিকতা সব ভারতবাসীর মধ্যে স্বাভাবিক ভাবেই রয়েছে। কিন্তু কখনও কখনও সময়ের জন্য, দূরত্বের জন্য, কখনও বা পরিস্থিতির জন্য তার ওপর হাল্কা একটা পর্দা পড়ে যায়। কিন্তু ছোট্ট একটি অগ্নিস্ফুলিঙ্গও যদি তাকে স্পর্শ করে তো সব কথা আবার জেগে ওঠে এবং চলে যাওয়া দিনগুলির দিকে আমাদের আবার টেনে নিয়ে আসে। আমরাও বরং একটু পরখ করে নিই, আমাদের ক্ষেত্রেও এরকম কিছু ঘটেনি তো — অবস্থান, পরিস্থিতি বা দূরত্ব আমাদেরও বিচ্ছিন্ন করে দেয়নি তো — কোনও আস্তরণ পড়ে যায়নি তো! ভেবে দেখুন অবশ্যই।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহাশয়, নমস্কার! আমি সন্তোষ কাকড়ে, কোলাপুর, মহারাষ্ট্র থেকে বলছি। পণ্ঢরপুরের বারী অর্থাৎ পুণ্যযাত্রা মহারাষ্ট্রের পুরনো ঐতিহ্য। প্রতি বছর এই উৎসব খুব উৎসাহ ও আনন্দের সঙ্গে পালন করা হয়। প্রায় ৭-৮ লক্ষ বারকরী এতে যোগদান করেন। এই অভিনব অনুষ্ঠান সম্পর্কে দেশের বাকি মানুষ জানুক, তাই ‘বারী’ উৎসব সম্বন্ধে আরও কিছু জানান।
সন্তোষজী, আপনার ফোনের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ! সত্যিই পণ্ঢরপুরের
পুণ্যযাত্রা এক অদ্ভুত উৎসব। বন্ধুগণ, আষাঢ় মাসের একাদশী, যেটা এবছর ২৩-শে জুলাই তারিখে ছিল, এই দিনে পণ্ঢরপুরের পুণ্যযাত্রা জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয়। পণ্ঢরপুর মহারাষ্ট্রের কোলাপুর জেলার পবিত্র শহর। আষাঢ় মাসের একাদশীর প্রায় ১৫-২০ দিন আগে থেকেই বারকরী অর্থাৎ তীর্থযাত্রীরা পালকি নিয়ে পণ্ঢরপুরের উদ্দেশ্যে পদযাত্রা শুরু করেন।
এই যাত্রা, যাকে ‘বারী’ বলা হয়ে থাকে, এতে লক্ষ লক্ষ বারকরী যোগদান করেন। সন্ত জ্ঞানেশ্বর আর সন্ত তুকারামের মত সন্ন্যাসীদের পাদুকা পালকিতে রেখে বিঠ্ঠল ভগবানের নামে নাচগান করতে করতে পণ্ঢরপুরের দিকে রওনা দেওয়া হয়। এই পুণ্যযাত্রা শিক্ষা, সংস্কৃতি আর শ্রদ্ধার ত্রিবেণী সঙ্গম। ভগবান বিট্ঠল, যাঁকে বিঠোবা বা পাণ্ডুরঙ্গ-ও বলা হয়, তাঁর দর্শনের জন্য ভক্তরা ওখানে পৌঁছন। ভগবান বিট্ঠল দরিদ্র, অসহায়, পীড়িতদের স্বার্থরক্ষা করেন। মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, গোয়া, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানার লোকেদের অপার শ্রদ্ধা এবং ভক্তি রয়েছে এই ভগবানের প্রতি। আপনারা পণ্ঢরপুরের বিঠোবা মন্দিরে যান, ওখানকার মাহাত্ম্য, সৌন্দর্য, আধ্যাত্মিক আনন্দের এক আলাদা অনুভূতি রয়েছে। ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের শ্রোতাদের আমার অনুরোধ, যদি সুযোগ আসে পণ্ঢরপুরের পুণ্যযাত্রার অভিজ্ঞতা অবশ্যই অর্জন করবেন। জ্ঞানেশ্বর, নামদেব, একনাথ, রামদাস, তুকারাম — এরকম অসংখ্য সন্ন্যাসী মহারাষ্ট্রে আজও সাধারণ মানুষকে শিক্ষা প্রদান করছেন। এঁরা অন্ধ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে শক্তি দেন। ভারতের প্রতি প্রান্তে এইসব সন্ন্যাসী যুগ যুগ ধরে প্রেরণা দিয়ে আসছেন। ‘ভারূড’ বা ‘আভংগ’-এর মতো শ্লোকে আমরা ওঁদের কাছ থেকে সদ্ভাব, প্রেম আর ভ্রাতৃত্ববোধের উপদেশ পাই। অন্ধ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে শ্রদ্ধার সঙ্গে সমাজ লড়াই করতে পারে, এই মন্ত্র আমরা এঁদের কাছ থেকে পাই। এঁরাই সঠিক সময়ে সমাজকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন এবং সমাজ থেকে পুরনো কুসংস্কার দূর হোক, এটা সুনিশ্চিত করেছেন। মানুষের মধ্যে করুণা, সাম্য এবং শুচিতার ভাবনা নিয়ে এসেছেন। আমাদের এই ভারতভূমি বহু রত্নে খচিত বসুন্ধরা। সাধু-সন্ন্যাসীদের যেমন এক উজ্জ্বল ঐতিহ্য রয়েছে আমাদের দেশে, ঠিক সেইরকম কর্মবীর মহাপুরুষেরা মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে জীবনদান করেছেন, নিজেদের সমর্পিত করেছেন। ঠিক এরকমই এক মহাপুরুষ ছিলেন লোকমান্য তিলক, যিনি অনেক ভারতীয়ের মনে গভীর ছাপ ফেলেছেন। আমরা ২৩-শে জুলাই তিলকজীর জন্মজয়ন্তী, আর ১-লা আগষ্ট ওঁর প্রয়াণদিবসে তাঁকে ভক্তি ভরে স্মরণ করি। লোকমান্য তিলক সাহস আর আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান ছিলেন। ব্রিটিশ শাসকদের ভুলভ্রান্তি দেখিয়ে দেওয়ার মতো ক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তা তাঁর ছিল। ইংরেজরা লোকমান্য তিলককে এতটাই ভয় পেত যে কুড়ি বছরের মধ্যে তিন-তিনবার তাঁর বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের অভিযোগ এনেছিল। এটা কোনও সামান্য কথা নয়! লোকমান্য তিলক এবং আমেদাবাদে তাঁর যে মূর্তি রয়েছে তা নিয়ে এক বিশেষ ঘটনার কথা আপনাদের আমি বলছি। ১৯১৬-র অক্টোবর মাসে লোকমান্য তিলকজী যখন আমেদাবাদে এসেছিলেন — ভাবুন, আজ থেকে ১০০ বছর আগে, তাঁকে স্বাগত জানাতে চল্লিশ হাজারেরও বেশি মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। এই সময় সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের সঙ্গে লোকমান্য তিলকজীর দীর্ঘক্ষণ কথা বলার সুযোগ হয়েছিল এবং সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল লোকমান্য তিলকজীর দ্বারা অত্যন্ত প্রভাবিত হয়েছিলেন। ১-লা আগষ্ট, ১৯২০ লোকমান্য তিলকজীর মৃত্যু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আমেদাবাদে তাঁর স্মারক মূর্তি প্রতিষ্ঠা করতেই হবে। এরপর নগর কর্পোরেশনের মেয়র হয়েই বল্লভভাই প্যাটেল ব্রিটেনের মহারানীর নামাঙ্কিত ‘ভিক্টোরিয়া গার্ডেন’-এ মহামান্য তিলকের স্মারক প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন। স্বাভাবিক ভাবেই ব্রিটিশ শাসক এই বিষয়ে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হয় এবং সেখানকার কালেক্টর বার বার ‘স্মারু হেলা’ নামক স্মারক নির্মাণের প্রস্তাব
নাকচ করে দিতে থাকেন। কিন্তু সর্দার সাহেব তো সর্দার সাহেব। প্রয়োজনে তিনি পদত্যাগ করবেন কিন্তু লোকমান্য তিলকের স্মারক মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেই ছাড়বেন। অবশেষে সর্দার প্যাটেল মূর্তি নির্মাণ করে ২৮-শে ফেব্রুয়ারি ১৯২৯-এ মহাত্মা গান্ধীকে আমন্ত্রণ জানান সেই মূর্তির উদ্বোধন করতে। সেই মহা-উদ্ঘাটন অনুষ্ঠানে পূজনীয় বাপু বলেছিলেন, আমেদাবাদ পুরসভা মেয়র হিসেবে শুধু একজন ব্যক্তিকেই পায়নি, সেই সঙ্গে এমন এক শক্তি পেয়েছে, যার দ্বারা তিলকের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে। আমার প্রিয় দেশবাসী, এই যে মূর্তি সর্দার প্যাটেল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তার একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে লোকমান্য তিলকজী চেয়ারে উপবিষ্ট। এই মূর্তির নীচে লেখা আছে, “স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার”। ইংরেজের কাছে এই লেখা ঈশ্বরের নির্দেশের মত শুনতে লেগেছিল। লোকমান্য তিলকের উদ্যোগেই প্রথম সার্বজনীন গণেশ উৎসব উদ্যাপন শুরু হয়েছিল। সার্বজনীন গণেশ উৎসব পরম্পরাগতভাবে শ্রদ্ধা ও আয়োজনে সমৃদ্ধ হয়ে উঠলেও একই সঙ্গে সমাজ জাগরণ, একতা, সমদর্শিতা এবং সাম্যের মানসিকতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটা প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছিল। সেই সময়ের দাবীই ছিল ইংরেজের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশবাসীকে একজোট করা। গণেশ উৎসব জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে জনসাধারণকে
সঙ্ঘবদ্ধ হতে সাহায্য করেছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই উৎসবের জনপ্রিয়তা বাড়তে লাগল।
এর থেকেই প্রমাণ হয় আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্য এবং বীর নায়কদের প্রতি যুব সমাজের আজও craze আছে। এখন যে কোনও শহরের অলিতে গলিতে গণেশ মণ্ডপ দেখতে পাওয়া যায়। ঐ গলির সব পরিবার মিলেমিশে ঐ গণেশ উৎসবের আয়োজন করে। একটা টিম হিসেবে কাজ করে। আমাদের যুবসমাজের কাছে এ এক অতুলনীয় সুযোগ। এতে তাঁরা organisation ও leadership-এর মতো বিশেষ ক্ষমতা অর্জন করতে পারেন এবং নিজেদের ভেতর সেগুলিকে বিকশিত করতে পারেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি গতবারেও বলেছি, আজ লোকমান্য তিলকজীকে স্মরণ করতে গিয়ে আবারও বলছি, এবারেও আপনারা গণেশ উৎসব ধুমধামের সঙ্গে পালন করুন কিন্তু ‘পরিবেশ-বন্ধব’ উৎসব উদ্যাপন করুন। গণেশজীর মূর্তি থেকে তাঁর সাজসজ্জা, পূজা সামগ্রী সব পরিবেশ-বন্ধব হোক। আমি চাই, প্রত্যেক শহরে ইকো-ফ্রেণ্ডলি গণেশ উৎসবের প্রতিযোগিতা হোক, তাঁদের পুরষ্কৃত করা হোক এবং ‘মাইগভ’ ও ‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এ এই পরিবেশ-বন্ধব গণেশ উৎসবের ব্যাপক প্রচার করা হোক। আমি অবশ্যই জনগণকে আপনাদের কথা জানাবো। লোকমান্য তিলকজী দেশবাসীকে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর হতে আহ্বান করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার এবং সে অধিকার অর্জন করেই ছাড়বো।” আজ আমাদের আবার বলার সময় এসেছে, “স্বরাজ আমাদের জন্মগত অধিকার এবং সে অধিকার অর্জন করেই ছাড়বো।” সুশাসন এবং উন্নয়নের সুফল প্রত্যেক ভারতবাসীর কাছে পৌঁছে দিতে হবে। এভাবেই নতুন ভারত সৃষ্টি হবে। তিলকজীর জন্মের পঞ্চাশ বছর পরে ঠিক ওই দিন অর্থাৎ ২৩-শে জুলাই ভারতমাতার আর এক সুপুত্রর জন্ম হয়েছিল। যিনি নিজের জীবন সমর্পণ করেছিলেন যাতে করে দেশবাসী স্বাধীন ভারতে শ্বাস নিতে পারে। আমি চন্দ্রশেখর আজাদের কথা বলছি। ভারতে এমন কোনও নওজোয়ান আছেন, যিনি এই পংক্তি শুনে প্রেরণা পাবেন না —
সরফোরশি কি তমন্না অব হামারে দিল মে হ্যায়
দেখনা হ্যায় জোর কিতনা বাজু-এ-কাতিল মে হ্যায়।
এই কবিতার লাইনগুলি আশফাক উল্লাহ্ খান, ভগৎ সিং, চন্দ্রশেখর আজাদের মতো তেজীদের প্রেরণা দিয়েছিল। চন্দ্রশেখর আজাদের সাহসিকতা এবং স্বাধীনতার জন্য আকুলতা অনেক যুবককেই প্রেরণা জুগিয়েছিল। আজাদ নিজের জীবন বাজী রেখেছিলেন কিন্তু বিদেশী শাসনের সামনে কখনও মাথা নোয়াননি। এটা আমার সৌভাগ্য যে মধ্যপ্রদেশে চন্দ্রশেখর আজাদের গ্রাম অলীরাজপুর যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। এলাহাবাদের চন্দ্রশেখর আজাদ পার্কেও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার সুযোগ মিলেছে এবং চন্দ্রশেখর আজাদজী সেই বীর ছিলেন, যিনি বিদেশীদের গুলিতে মরতে চাইতেন না — বাঁচলে স্বাধীনতার জন্য লড়তে লড়তে বাঁচব আর মরলেও স্বাধীনতা অর্জন করেই মরবো — এই ছিল ওঁর বৈশিষ্ট্য। আরও একবার ভারতমাতার দুই মহান সন্তান লোকমান্য তিলকজী এবং চন্দ্রশেখর আজাদজীকে শ্রদ্ধাপূর্ণ নমস্কার জানাচ্ছি।
কিছুদিন আগে ফিনল্যাণ্ডে অনুষ্ঠিত জুনিয়র অনূর্ধ্ব কুড়ি বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ৪০০ মিটারের দৌড়ে ভারতের বাহাদুর কন্যা, কিষাণকন্যা হিমা দাস স্বর্ণপদক জিতে ইতিহাস
সৃষ্টি করেছে। দেশের আর এক কন্যা একতা ভয়ান আমার চিঠির জবাবে ইন্দোনেশিয়া থেকে
আমাকে ই-মেল করে। এখন ও ওখানে এশিয়ান গেমসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ই-মেলে একতা লিখছে — যে কোনও অ্যাথলিটের জীবনে মাহেন্দ্রক্ষণ সেটাই যখন সে তেরঙ্গা জড়িয়ে ধরে আর আমার গর্ব যে আমি তা করে দেখিয়েছি। একতা, আমাদের সবার আপনাকে নিয়ে গর্ব হয়। আপনি দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। টিউনিশিয়ায় বিশ্ব প্যারা-অ্যাথলেটিক্স গ্রাঁ প্রি, ২০১৮-তে একতা স্বর্ণপদক ও ব্রোঞ্জ পদক জিতেছে। ওর এই সাফল্য উল্লেখযোগ্য এই কারণে, যে ও নিজের চ্যালেঞ্জকে সাফল্যের মাধ্যম বানিয়ে নিয়েছে। ২০০৩-এ রোড অ্যাকসিডেণ্টে একতা ভয়ানের শরীরের নীচের অংশ অচল হয়ে পড়ে। কিন্তু এই মেয়েটি সাহস হারায়নি এবং নিজেকে শক্তিশালী করে তুলে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছেছে। আরও একজন সাহসী যোগেশ কটুনিয়াজী।
ইনি বার্লিনে প্যারা-অ্যাথলেটিকদের গ্রাঁ প্রি-তে ডিস্কাস থ্রোয়িংয়ে বিশ্বরেকর্ড করে স্বর্ণপদক জিতেছেন। ওঁর সঙ্গে সুন্দর সিং গুর্জরও জ্যাভলিন থ্রোয়িংয়ে স্বর্ণপদক জেতেন। আমি একতা ভয়ানজী, যোগেশ কটুনিয়াজী, সুন্দর সিংজীকে তাঁদের সাহস ও সংগ্রামী মনোভাবের জন্য সেলাম জানাচ্ছি, অভিনন্দন জানাচ্ছি। আপনারা আরও এগিয়ে চলুন, খেলুন, উন্নতি করুন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আগষ্ট মাস ইতিহাসের অনেক ঘটনা, উৎসবের ঘটনাপ্রবাহে ভরা। কিন্তু আবহাওয়ার জন্য কখনও কখনও অসুখও ঘরে প্রবেশ করে। আমি আপনাদের সকলের ভালো স্বাস্থ্যের জন্য, দেশভক্তির প্রেরণা জাগানো এই আগষ্ট মাসের জন্য এবং শতবর্ষ ধরে চলে আসা অনেক অনেক উৎসবের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। ‘মন কি বাত’-এ আবার মিলিত হবে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ!
নমস্কার! আমার প্রিয়দেশবাসী, আজ আবার একবার ‘মন কি বাত’-এর এই অনুষ্ঠানে আপনাদের সবার সঙ্গেমুখোমুখি হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। কিছু দিন আগে ব্যাঙ্গালুরুতে একটি ঐতিহাসিক ক্রিকেট ম্যাচ হয়েছিল। আপনারা হয়তো বুঝে ফেলেছেন যে আমি ভারত আর আফগানিস্তানের টেস্ট ম্যাচের কথা বলছি। এটা আফগানিস্তানের প্রথম আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচ ছিল, আর সকল ভারতীয়দের গর্বের বিষয় যে আফগানিস্তানের এই ঐতিহাসিক ম্যাচটি ভারতের সঙ্গে ছিল। এই ম্যাচে দু’পক্ষই চমৎকার ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শন করেছে। আফগানিস্তানের এক বোলার রাশিদ খান এই বছর আই-পি-এলে খুব ভালো খেলেছিলেন, আর আমার মনে আছে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি শ্রী আশরফগণি আমাকে ট্যাগ করে নিজের ট্যুইটারে লিখেছিলেন – “আফগানিস্তানের লোকেরা নিজেদের হিরো রাশিদ খানকে নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত। আমি আমাদের ভারতীয় বন্ধুদেরও ধন্যবাদ জানাই, যাঁরা আমাদের খেলোয়াড়দের ক্রীড়ানৈপুণ্য দেখানোর এক মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছেন।আফগানিস্তানের যেটা শ্রেষ্ঠ, রাশিদ তার প্রতিনিধিত্ব করেছেন”। তিনি ক্রিকেটের জগতে একজন সম্পদ,আর এর সাথে সাথে তিনি একটু মজা করেও লিখেছেন - “না, আমি এটা কাউকে দিতেও চাই না”। এই ম্যাচটি আমাদের সবার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। যদিও এটা প্রথম ম্যাচ ছিল, এইজন্য মনে থাকাটা স্বাভাবিক, কিন্তু এই ম্যাচ অন্য এক বিষয়ের জন্যও আমার মনে থাকবে। ভারতীয় টিম এমন একটা কাজ করেছে যেটা গোটা বিশ্বে নজিরবিহীন। ভারতীয় টিম ট্রফি নেওয়ার সময়, এক বিজেতা টিম কি করতে পারেতাই করেদেখিয়েছে। ভারতীয় টিম ট্রফি নেওয়ার সময়, আফগানিস্তান টিম — যাঁরা প্রথমবার আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলছে, তাদের আমন্ত্রণ জানায়, আর একসাথে ফোটো তোলে। Sportsman spirit ও sportsmanship কী হতে পারে — এই ঘটনা থেকে আমরা অনুভব করতে পারি। খেলা সমাজকে একজোট করার জন্য এবংআমাদের যুবদের যে কৃতিত্ব রয়েছে, তাদের মধ্যে যে প্রতিভা আছে সেটা খুঁজে বের করার উত্তম পদ্ধতি। ভারত আর আফগানিস্তানের দুই টিমকে আমার শুভকামনা! আমি আশা করি, ভবিষ্যতেও একে অপরের সাথে আমরা পুরোSportsman spirit বজায় রেখে খেলব আর আনন্দ করবো।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এই ২১শে জুন চতুর্থ যোগদিবসে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখা গেছে। সমগ্র পৃথিবী একজোট নজরে এসেছে।সারা বিশ্বে লোকেরা সম্পূর্ণ উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে যোগাভ্যাস করেছেন। ব্রেসিল-এEuropean Parliament হোক, New York-এ অবস্থিত সম্মিলিত রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রধান দপ্তরহোক, জাপানী নৌসেনার লড়াকু জাহাজ হোক, সমস্ত জায়গায় লোকেরা যোগ ব্যায়াম করছেন নজরে এসেছে। সৌদি আরবে প্রথমবার যোগের ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে, আর আমাকে জানানো হয়েছে অনেকগুলো আসনেরDemonstration মহিলারাও করেছেন। লাদাখের উঁচু বরফের শিখরে ভারত আর চিনের সেনারা একসাথে মিলে যোগাভ্যাস করেছেন। যোগ সকল সীমাকে অতিক্রম করে, সবাইকে একত্র করার কাজ করেছে। বহু দেশের হাজার হাজার উৎসাহী লোক জাতি, ধর্ম, ক্ষেত্র, রঙ অথবা লিঙ্গ, সমস্ত প্রকারের ভেদ ভুলে এই অনুষ্ঠানকে এক বিশাল বড় উৎসবের রূপ দিয়েছে। যদি সমগ্র পৃথিবীর লোকেরা এত উৎসাহের সঙ্গে ‘যোগ দিবস’-এর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন, তবে ভারতে এর উৎসাহ অনেক গুণ কেন হবে না।
দেশ গর্বিত হয়, যখন একশো পঁচিশ কোটি লোক দেখেন, আমাদের দেশের সেনারা জল, স্থল আর অন্তরীক্ষ — তিন জায়গাতেই যোগের অভ্যাস করছেন। কিছু বীর সেনা
ডুবোজাহাজে যোগ করেছেন, আবার কিছু সেনা সিয়াচেনের বরফ ঢাকা পাহাড়ের মাথায় যোগাভ্যাস করেছেন। বায়ুসেনার আমাদের যোদ্ধারা আকাশের মাঝে মাটি থেকে১৫ হাজার ফুট উঁচুতে যোগাসন করে সবাইকে স্তম্ভিত করে দিয়েছেন। দেখার মতো দৃশ্য ছিল,এঁরা উড়োজাহাজে বসে নয়, হাওয়ায় ভেসে ভেসে যোগ করছিলেন। স্কুল হোক, কলেজ হোক, অফিস হোক, পার্ক হোক, উঁচু বাড়ি হোক বা খেলার মাঠ, সব জায়গায় যোগাভ্যাস হয়েছে। আমেদাবাদের এক দৃশ্য মন্ত্রমুগ্ধ করার মতো ছিল, সেখানে প্রায় ৭৫০ দৈহিক প্রতিবন্ধী
ভাই-বোনেরা এক জায়গায়, একসাথে যোগাভ্যাস করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। যোগ জাতি, পন্থা আর ভূগোলের ঊর্ধ্বে উঠে, বিশ্বেরমানুষকে একজোট করার কাজ করেছে। ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’-এর যে অনুভূতি আমরা অতীতকাল থেকে বয়ে নিয়ে আসছি, আমাদের ঋষি, মুনি, সন্ন্যাসীরা যার উপর জোর দেন, যোগ সেটাকে আজ সঠিক প্রমাণ করে দেখিয়েছে। আমি মানি, আজ যোগ একwellness,revolution-এর কাজ করছে। যোগের দ্বারা wellness-এর এক প্রয়াস চালানো হচ্ছে, আমি আশা করি, সেটা এগিয়ে যাবে। ধীরে ধীরে অনেক বেশি মানুষ যোগকে নিজেদের জীবনের অংশ হিসেবে বেছে নেবেন।
আমারপ্রিয়দেশবাসী ! MyGov আর NarendraModiApp- দুটি app-এঅনেকেআমাকেলিখেছেনযে‘মনকিবাত’-এরএইসংখ্যায়,আসন্নপয়লাজুলাইয়ের‘Doctor's Day’ অর্থাৎ ‘ডাক্তার দিবস’ উপলক্ষ্যেআমিআলোচনাকরি।
খুবইসময়োচিতপ্রস্তাব!বিপদে-আপদেআমরাডাক্তারদেরশরণাপন্নহইসারাবছর, কিন্তুপয়লাজুলাইএমনএকটাদিনযেদিনআমরাডাক্তারদেরঅবদান,ডাক্তারদেরঅভিজ্ঞতাকেসম্মানকরি।সমাজেরপ্রতিডাক্তারদেরসেবাআরসমর্পণেরজন্যেতাঁদেরঅকুন্ঠধন্যবাদজানাই।আমরাসেইসবলোকযারাস্বাভাবিকভাবেইমাকেভগবানেরপ্রতিমূর্তি, ঈশ্বরেরস্বরূপজেনেপুজোকরি —কারণমাআমাদেরজীবনদেয়, জন্মদেয়।আরডাক্তাররাতোআমাদেরপুনর্জন্মদেন — একবারনয়, অনেকবারই।একজনডাক্তারেরভূমিকাশুধুমাত্ররোগআরঅসুস্থতাথেকেআমাদেরসুস্থকরাপর্যন্তইসীমিতনয়, অনেকক্ষেত্রেতাঁরাআমাদেরপারিবারিকবন্ধুহয়েযান।তাঁরাআমাদেরজীবনচর্যায়পথপ্রদর্শক: “তাঁরাশুধুসুস্থকরেতোলেননা, আরোগ্যেরপথদেখান”।একজনডাক্তারএখনশুধুচিকিৎসকহিসেবেইদক্ষনন,তিনিআধুনিকজীবনধারায়স্বাস্থ্যেরওপরপ্রভাববিষয়েগভীরভাবেপারদর্শী, অভিজ্ঞ।ভারতীয়ডাক্তাররাআজনিজেদেরদক্ষতাআরকর্মক্ষমতারকারণেসারাবিশ্বেসুবিদিত। চিকিৎসাজগতেআমাদেরডাক্তাররাপরিশ্রমীএবংজটিলস্বাস্থ্য-সমস্যারসমাধানকরারব্যাপারেপরিচিতিলাভকরেছেন।
‘মনকিবাত’-এরমাধ্যমে, সকলদেশবাসীরপক্ষ থেকেআমিআমাদেরসবডাক্তারবন্ধুকেআগামী১লাজুলাইয়ের‘ডক্টর্সডে’উপলক্ষ্যেঅনেকশুভকামনাজানাচ্ছি।
আমারপ্রিয়দেশবাসী,আমরাসেইসবভাগ্যবানযাদেরজন্মএইভারতেরভূমিতেহয়েছে।ভারতবর্ষেরইতিহাসএতটাইসমৃদ্ধ,এতটাইঐশ্বর্যশালীযেএমনএকটিওমাসবাদিননেইযেসময়েকোনওঐতিহাসিকঘটনাঘটেনি।এইভারতেরপ্রতিটিজায়গার, প্রতিপ্রান্তেরকোনোনাকোনোঐতিহ্যরয়েছে।এইদেশেরপ্রত্যেকটিঅংশযুক্তআছেকোনোমহাপুরুষ, কোনো কিংবদন্তীরসঙ্গে।প্রত্যেকেরঅবদানইমহৎ।
“মাননীয়প্রধানমন্ত্রী, নমস্কার।আমি Dr. সুরেন্দ্রমিশ্রবলছি।আমরাজানতেপেরেছিযেআঠাশেজুনআপনিমগহরআসছেন।আমি মগহর-এরকাছেই,গোরখপুরেরএকটাছোটগ্রাম Tadwa-তেথাকি।মগহর-এসন্তকবীর-এরপুণ্যসমাধিস্থল।সাম্যআরঐক্যেরবাণীরজন্যেসন্তকবীরকেমানুষএখনোমনেরেখেছে।সমাজেরসর্বস্তরেওঁরভাবাদর্শকেনিয়েআলোচনাহয়।আপনারকর্ম-অভিযানেরফলেএইদিশায়গভীরপ্রভাবপড়বেবলেআমারবিশ্বাস।আমারসনির্বন্ধঅনুরোধ,এইবিষয়েভারতসরকারেরনানানকর্ম-পরিকল্পনাবিষয়েআমাদেরঅবহিতকরুন।”
আপনারফোনেরজন্যেধন্যবাদ।হ্যাঁ, আমি২৮তারিখেমগহরযাব।আমিযখনগুজরাটেছিলাম, আপনিনিশ্চয়ইগুজরাটের Kabirwadজায়গাটিভালোভাবেজানেন, সেইসময়েআমিওখানেসন্তকবীরেরপরম্পরায়যুক্তযাঁরা,তাঁদেরজন্যেএকবিরাটজাতীয়অধিবেশনেরআয়োজনকরেছিলাম।আপনারাকিজানেন,কবীরদাসজীকেনএইমগহর-এ গিয়েছিলেন? সেইসময়েএকটিপ্রচলিতধারণাছিলযেযারমগহর-এমৃত্যুহয়,তিনিস্বর্গেপ্রবেশকরতেপারেননা।বরঞ্চযাঁরাকাশিতেদেহত্যাগকরেনতাঁরাইস্বর্গেযান।মগহর-কেঅপবিত্রমনেকরাহতো।কিন্তুসন্তকবীরেরএইধারণায়কোনোবিশ্বাসছিলনা। নিজেরসমকালেরএইঅন্ধবিশ্বাসআরকুসংস্কারকেভাঙবারজন্যেইসন্তকবীরমগহরেসমাধিস্থ হন।নিজেরকবিতা, সাখিআরদোঁহারমাধ্যমেসন্তকবীরসামাজিকসাম্য, শান্তিআরভ্রাতৃত্বের কথাইবলেছেনবারেবারে।যাছিলওঁরজীবনেরআদর্শ।কবীরেররচনাতেসেইআদর্শইআমরাদেখতেপাইআরআজকেরযুগেওসেইবাণীসমানভাবেপ্রেরণাযোগায়।ওঁরএকটিদোঁহাথেকেবলি :
“কবীর সোঈ পীর হ্যায়, জো জানে পর পীর।
জো পর পীর ন জান হি, সো কা পীর মে পীর।।”
অর্থাৎপ্রকৃত সাধক তিনিই, যিনি অন্যদের দুঃখ জানতে পারেন, বুঝতে পারেন। যিনি অন্যের দুঃখ-কষ্টকে বোঝেন না, তিনি নিষ্ঠুর। কবীরদাসজী সামাজিক সমন্বয়ে বিশেষ জোর দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর সময়ের থেকে এগিয়ে ভাবতেন। যে কালে সমগ্র বিশ্বে মানবিকতার অবনতি ও সংঘর্ষের পরম্পরা চলছে, সেই সময়ে তিনি শান্তি ও সম্প্রীতির বাণী প্রচার করেন এবং মানবজাতিকে একত্রিত করে, মতানৈক্য দূর করার কাজ করেছিলেন।
“জগমে বৈরি কোঈ নেহি, জো মন শীতল হোয়।
ইহ আপা তো ডাল দে, দয়া করে সব কোয়।।”
আরেক দোঁহায় কবীরদাসজী বলছেন,
“যাঁহা দয়া তহঁ ধর্ম হ্যায়, যাহাঁ লোভ তহঁ পাপ।
যাহাঁ ক্রোধ তহঁ কাল হ্যায়, যাহাঁ ক্ষমা তহঁ আপ।।”
তিনি বলেছেন, ‘জাতি না পুছো সাধু কী, পুছ লিজিয়ে জ্ঞান’।
সকল মানুষের কাছে তিনি আবেদন রেখেছেন যে তাঁরা যেন কোনও মানুষকে ধর্ম বা জাত-পাতের নিরিখে বিচার না করে তাকে তাঁর জ্ঞানের নিরিখে মান্যতা দেন এবং তাঁকে সম্মান করেন। তাঁর এই অমূল্য বাণী আজ এতদিন পরেও একইভাবে প্রভাব বিস্তার করে, এখন যখন আমরা সন্ত কবি কবীরদাসজী সম্পর্কে কথা বলছি, তখন ওঁর এক দোঁহার কথা মনে পড়ছে। যেখানে কবীরদাসজী বলেছেন,
“গুরু গোবিন্দ দোঔ খড়ে, কাকে লাগু পায়।
বলিহারি গুরু আপনে, গোবিন্দ দিয়ো বতায়ে।।”
এটাই হচ্ছে গুরুর মহানতা এবং এরকমই একজন গুরু হচ্ছেন জগৎগুরু — গুরু নানক দেব। যিনি কোটি কোটি মানুষকে সত্যের পথ দেখিয়েছেন, যা আবহমান কাল ধরে মানুষকে প্রেরণা দিয়ে আসছে। গুরু নানকদেবজী সমাজে জাতিগত ভেদাভেদকে নির্মূল করতে চেয়েছেন এবং সব মানুষকে একই মানবজাতির সদস্য হিসেবে মেনে নিয়ে একে অপরের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বলতেন গরীব ও অভাবী মানুষের সেবাই ভগবানের সেবা। তিনি যেখানেই গেছেন, সমাজের ভালো করার লক্ষ্যে অনেক উদ্যোগ নিয়েছেন। সামাজিক ভেদাভেদ ভুলে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন যেখানে জাতি-ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে স্বচ্ছন্দে খাবার খেতে পারেন। গুরু নানকজীই পংক্তিভোজন ব্যবস্থার শুরু করেছিলেন। ২০১৯-এ গুরু নানকদেবজীর ৫৫০-তম প্রকাশ পর্ব উদ্যাপিত হবে। আমার আবেদন, আসুন, আমরা সবাই মিলে উৎসাহ এবং আনন্দের সঙ্গে এই অনুষ্ঠানে সামিল হই। আপনাদের সকলের কাছ থেকে আমি আশা করছি, গুরু নানকদেবজীর ৫৫০-তম প্রকাশ পর্ব পুরো দেশে এবং সমগ্র বিশ্বে কীভাবে উদ্যাপিত হবে, নতুন নতুন পরিকল্পনা কী হবে, নতুন সংকল্পগুলি কী হবে, এইসব বিষয়ে আমরা চিন্তা-ভাবনা করি, প্রস্তুতি নিই এবং গর্বের সঙ্গে আমরা এই প্রকাশ পর্বকে প্রেরণা পর্ব হিসাবে পালন করি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন অনেক দীর্ঘ, অনেক বড়, খুব গভীর। অসংখ্য শহীদের ইতিহাস। পাঞ্জাবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে আছে এমনই আর একটি ইতিহাস। ২০১৯-এ জালিয়ানওয়ালাবাগের সেই ভয়াবহ ঘটনা, যার ১০০ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। সেই ঘটনা, যা মানবতাকে লজ্জিত করেছিল। ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল সেই কালোদিনকে কেউ ভুলতে পেরেছে, যখন শক্তির অপব্যবহার করে নিষ্ঠুরতার সমস্ত সীমা পার করে নির্দোষ, নিরস্ত্র এবং নিরীহ সাধারণ মানুষের উপর গুলি বর্ষিত হয়েছিল। এই মর্মান্তিক ঘটনার ১০০ বছর পূর্তি হতে চলেছে। কিন্তু এই ঘটনা যে শাশ্বত বার্তা দিয়েছে, তা আমরা সবসময় মনে রাখব, সেটি হল, হিংসা ও হানাহানির মধ্যে দিয়ে কখনও কোনও সমস্যার সমাধান করা যায় না। শান্তি, অহিংসা, ত্যাগ ও বলিদানেরই সর্বদা জয় হয়।
আমার প্রিয় দেশবাসী, দিল্লির রোহিনীর শ্রী রমণ কুমার ‘নরেন্দ্রমোদি মোবাইল অ্যাপ’-এ লিখেছেন আগামী ৬-ই জুলাই ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির জন্মদিন এবং তিনি চান ‘মন কি বাত’-এর এবারের পর্বে ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির সম্বন্ধে আমি দেশবাসীর সঙ্গে কথা বলি।
রমণজী, সবার প্রথমে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ! ভারতের ইতিহাসের প্রতি আপনার আগ্রহ দেখে খুব ভালো লাগল। আপনি জানেন, গতকাল ২৩শে জুনই ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির প্রয়াণ দিবস ছিল। ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বহু বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বিষয়গুলি ছিল — Education, Administration এবং Parliamentary Affairs। খুব কম মানুষই হয়তো জানেন উনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বকনিষ্ঠ ভাইস-চ্যান্সেলর ছিলেন। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে উনি ভাইস-চ্যান্সেলর হয়েছিলেন। এটাও হয়তো খুব কম মানুষ জানেন, ১৯৩৭ সালে ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির আমন্ত্রণেই গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশনে বাংলা ভাষায় বক্তব্য রেখেছিলেন। সেটিই প্রথম উদাহরণ ছিল যখন ইংরেজ শাসনকালে কোনও ব্যক্তি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশনে বাংলা ভাষায় বক্তব্য রাখেন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫০ পর্যন্ত ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি ভারতের প্রথম শিল্পমন্ত্রী ছিলেন এবং এক অর্থে বলতে গেলে ভারতের শিল্পোন্নতি এবং সার্বিক ভাবে ভারতের প্রগতির মজবুত ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন, তাকে এক শক্তিশালী ভিত্তি এবং মঞ্চে দাঁড় করিয়েছিলেন। ১৯৪৮-এ স্বাধীন ভারতের প্রথম শিল্পনীতি, ওঁর পরিকল্পনা ও দূরদৃষ্টির ওপর নির্ভর করেই তৈরি হয়েছিল। ড. মুখার্জির স্বপ্ন ছিল, শিল্পের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারত আত্মনির্ভর, উন্নত ও সমৃদ্ধ হবে। তিনি চাইতেন, ভারত বৃহৎ শিল্প গড়ে তুলুক এবং তার সঙ্গে MSMEs, তাঁতশিল্প, বস্ত্র ও কুটিরশিল্পের প্রতিও পুরোপুরি মনোযোগ দিক। কুটিরশিল্প ও লঘুশিল্পের যথাযথ বিকাশের জন্য উনি ফাইন্যান্স এবং অরগানাইজেশন সেট আপ পেয়েছিলেন।
যেকারণে ১৯৪৮ থেকে ১৯৫০-এর মধ্যে All India Handicrafts Board, All India Handloom Board এবং Khadi & Village Industries Board স্থাপন করা হয়েছিল। ভারতের প্রতিরক্ষা উৎপাদনের স্বদেশীকরণের উপরও ড. মুখার্জি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস ফ্যাক্টরি, হিন্দুস্থান এয়ারক্র্যাফট ফ্যাক্টরি, সিন্ধ্রির সার কারখানা এবং দামোদর ভ্যালি করপোরেশান — এই চারটি সবচেয়ে বড় ও সফল প্রজেক্ট এবং অন্যান্য River Valley Project স্থাপনে ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির বিরাট অবদান ছিল। পশ্চিমবঙ্গের উন্নতির বিষয়ে উনি খুব আবেগপ্রবণ ছিলেন। ওঁর চিন্তাভাবনা, বিবেকবোধ ও সক্রিয়তার ফলেই পশ্চিমবঙ্গের একটি অংশ রক্ষা করা গেছে এবং সেটি আজও ভারতবর্ষের অংশরূপে রয়েছে। ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ভারতের একতা এবং অখণ্ডতা। আর এই কারণেই মাত্র ৫২ বছর বয়সে তাঁকে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়। আসুন, আমরা ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির এই একতার বার্তাকে মনে রাখি এবং সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের মধ্য দিয়ে ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমার সুযোগ হয়েছিল ভিডিও কলের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন যোজনা থেকে যাঁরা উপকৃত হয়েছেন, সেই সব ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলবার। ফাইল থেকে সরে এসে সরাসরি মানুষের মুখ থেকে শোনার সুযোগ পেয়েছিলাম তাঁদের জীবনে আসা পরিবর্তনের কথা। মানুষজন জানিয়েছেন নিজেদের সংকল্প, সুখ-দুঃখের কথা, উপলব্ধির কথা। আমি মনে করি, এটা আমার কাছে শুধু এক সরকারী অনুষ্ঠানই ছিল না, বরং এ ছিল অন্য ধরনের learning experience। আর এই সময়ে জনসাধারণের চোখেমুখে যে আনন্দ আমি প্রত্যক্ষ করেছি তার থেকে বেশি সন্তুষ্টি আর কিসে হতে পারে? যখন একজন সাধারণ মানুষের কথা শুনতাম, তাঁর সহজ সরল শব্দ, বাচনভঙ্গী, নিজস্ব অনুভবের কথা, তখন তা হৃদয়কে স্পর্শ করে যেত। জেনেছিলাম, সুদূর প্রত্যন্ত গ্রামে মেয়েরা common service centre থেকে কীভাবে গ্রামের বয়স্ক, বৃদ্ধদের পেনসন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের পাসপোর্ট তৈরিতে সাহায্য করে চলেছে।
ছত্তিশগড়ের এক বোন আতা সংগ্রহ করে তার থেকে আইসক্রিম তৈরির ব্যবসা করছেন, ঝাড়খণ্ডে অঞ্জন প্রকাশের মত দেশের লক্ষ লক্ষ তরুণ ‘জন-ঔষধি’ ব্যবস্থা চালানোর সঙ্গে সঙ্গে আশেপাশের গ্রামগুলিতে গিয়ে গিয়ে সুলভে ওষুধপত্র সরবরাহ করছেন। পশ্চিমবঙ্গে যে যুবকটি দু-তিন বছর আগেও চাকরি খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন, এখন তিনি সাফল্যের সঙ্গে নিজের ব্যবসাই শুধু চালাচ্ছেন না, ১০-১৫ জন মানুষকে চাকরি দিয়ে তাদের অন্নসংস্থান করেছেন। এদিকে তামিলনাড়ু, পাঞ্জাব, গোয়াতে স্কুলের ছাত্ররা এই অল্প বয়সেই স্কুলের ‘টিংকারিং ল্যাব’-এ ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর কাজ করছে। এই রকম অসংখ্য অনুভবের গল্প ছিল সেখানে। দেশের এমন কোনও প্রান্ত ছিল না যেখান থেকে সাফল্যের বার্তা আসেনি। আমি এই ভেবে আনন্দিত যে, সমগ্র অনুষ্ঠানটিতে সরকারের সাফল্যের থেকে সাধারণ মানুষের সাফল্যের শক্তি, দেশের-দশের শক্তি, ‘নতুন ভারত’ স্বপ্নের শক্তি, সংকল্পের শক্তি আমি অনুভব করেছি। সমাজে কিছু মানুষ থাকেন, যতক্ষণ তাঁরা নিরাশাব্যঞ্জক কথাবার্তা না বলেন, হতাশার কথা না বলেন, অবিশ্বাস তৈরির কাজ না করেন, গড়ার বদলে ভাঙার রাস্তা না খোঁজেন, ততক্ষণ তাঁরা শান্তি পান না। এই রকম বাতাবরণে সাধারণ মানুষজন যখন নতুন আশা, নতুন উৎসাহ নিয়ে নিজের জীবনের উপলব্ধির কথা বলেন, তখন তার সাফল্য সরকারের নয় তাঁদেরই প্রাপ্য। সুদূর প্রান্তের এক ক্ষুদ্র গ্রামের এক ছোট্ট মেয়ের কাহিনিও ১২৫ কোটি মানুষের জন্য প্রেরণা সঞ্চার করে। টেকনোলজির সাহায্যে, ভিডিও ব্রিজের মাধ্যমে সরকারী যোজনা থেকে উপকৃত ব্যক্তিদের সঙ্গে সময় কাটানোর মুহূর্তগুলি আমার কাছে ছিল অত্যন্ত মধুর ও খুবই প্রেরণাদায়ক। আর এতে কাজ করার সন্তুষ্টি তো পাওয়া যায়ই, আরও বেশি কাজ করার উৎসাহ বৃদ্ধি পায়। দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম ব্যক্তির কাছ থেকেও জীবনযাপনের নতুন উৎসাহ, নতুন প্রেরণা পাওয়া যায়। আমি দেশবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ। আপনারা ৪০-৪০, ৫০-৫০ লাখ লোক এই ভিডিও ব্রিজ অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আর আমাকে নতুন শক্তি প্রদান করেছেন। আমি আরও একবার আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি সবসময় মনে করি, আশে পাশে তাকালে দেখা যাবে কোথাও না কোথাও, কিছু না কিছু ভাল কাজ হয়ে চলেছে, ভাল করার লোকজনেরা রয়েছেন। ভালোর এই ‘সুগন্ধ’, তা আমারও অনুভূত হয়েছে। কিছুদিন আগে যে ব্যাপারটি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে, তা হল এক অদ্ভূত সুন্দর combination, এতে একদিকে যেমন প্রফেশনাল আর ইঞ্জিনিয়াররা আছেন, তেমনই অন্যদিকে আছেন মাঠে কাজ করা কৃষক ভাই-বোনেরা। আপনাদের মনে হতেই পারে এতো সম্পূর্ণ পৃথক পেশা, এর আবার সম্বন্ধ কি করে হয়? আসলে ব্যাপারটা হল এই যে, বেঙ্গালুরুর করপোরেট প্রফেশনালরা, আই-টি ইঞ্জিনিয়াররা একসঙ্গে মিলে একটি ‘সহজ সমৃদ্ধি ট্রাস্ট’ তৈরি করেছেন আর কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে এই ট্রাস্টকে অ্যাকটিভেট করেছেন, অর্থাৎ কাজে লাগিয়েছেন। এই ট্রাস্টের মাধ্যমে এঁরা কৃষকদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, যোজনা নির্মাণ করেছেন এবং কৃষকদের আয় কীভাবে বৃদ্ধি করা যায়, তার সার্থক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। চাষের নতুন নতুন পদ্ধতির সঙ্গে জৈবিক চাষ কীভাবে করা যায় এবং এক ফসলের সঙ্গে সঙ্গে অন্য ফসলও কীভাবে ফলানো যায় — এই সমস্ত ট্রেনিং এই ট্রাস্টের মাধ্যমে এই প্রফেশনাল, ইঞ্জিনিয়ার ও প্রযুক্তিবিদদের সহযোগিতা কৃষকভাইদের দেওয়া হচ্ছে। আগে যে সমস্ত কৃষক শুধু একটি মাত্র ফসলের ওপর নির্ভরশীল ছিল, যাতে ফসলও ভাল হত না আর লাভও তেমন হত না, আজ তারা শুধুমাত্র একাধিক ফসলই ফলাচ্ছেন না, এই ট্রাস্টের মাধ্যমে ফসলের সঠিক বিপণন করে ভালো মুনাফা লাভ করছেন। আনাজ উৎপাদনকারী কৃষকেরা এই ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এই ব্যবস্থায় একদিকে যেমন ফসল ফলানো থেকে বিপণন — এই গোটা শৃঙ্খলে কৃষকদের মুখ্য ভূমিকা রয়েছে, অন্যদিকে কৃষকদের অংশীদারীত্ব এবং লাভের মাত্রাও সুনিশ্চিত করার প্রচেষ্টা রয়েছে। ফসল ভালো তখনই হবে যখন ভালো প্রজাতির বীজের ব্যবহার হবে। এর জন্য আলাদা করে Seed Bank বানানো হয়েছে। মহিলারা এই Seed Bank দেখাশোনার কাজ করেন। এইভাবে মহিলাদেরও এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। আমি এই সমস্ত যুবকদের এই অভিনব প্রচেষ্টার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, আর এটা দেখে আনন্দ লাভ করছি যে প্রফেশনাল, টেকনোক্র্যাট — যাঁরা ইঞ্জিনিয়ারিং জগতের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা নিজ নিজ গণ্ডি থেকে বেরিয়ে এসে কৃষকদের সঙ্গে, গ্রামের সঙ্গে, ক্ষেত-খামারের সঙ্গে, মাটির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার রাস্তা বেছে নিয়েছেন। আমি আরও একবার দেশের যুবশক্তিকে ও তাদের এই ধরনের অভিনব প্রচেষ্টাকে, যার কিছুটা হয়ত আমি জানি, কিছুটা জানি না, যার কিছুটা হয়ত লোকে জানে, কিছুটা লোকে জানে না, কিন্তু এই যে নিরন্তর কোটি কোটি মানুষ কিছু না কিছু ভালো কাজ করে চলেছেন, তাঁদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা!
আমার প্রিয় দেশবাসী, জি-এস-টি ব্যবস্থার ১ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। ‘One Nation One Tax’ যা দেশবাসীর স্বপ্ন ছিল, তা আজ বাস্তবায়িত হয়েছে। ‘One Nation One Tax reform’ — এই ব্যবস্থার জন্য যদি আমাকে কাউকে credit দিতে হয়, তবে আমি রাজ্যগুলিকে এই credit দেবো। জি-এস-টি ‘কো-অপারেটিভ ফেডারিলিজম’-এর এক সুন্দর উদাহরণ, যেখানে সমস্ত রাজ্যগুলি একসঙ্গে দেশের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আর তারই ফলস্বরূপ দেশে এত বড় ট্যাক্স রিফর্ম ব্যবস্থা চালু করা গেছে। এখনও পর্যন্ত জি-এস-টি কাউন্সিলের ২৭-টি মিটিং হয়েছে ও আমরা গর্ব করতে পারি যে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক চিন্তাধারার ব্যক্তিরা, আলাদা আলাদা রাজ্য এমনকি পৃথক পৃথক priority-যুক্ত রাজ্যের প্রতিনিধিরা সেখানে থাকা সত্ত্বেও জি-এস-টি কাউন্সিল-এ আজ পর্যন্ত যত সিদ্ধান্ত নেওয়া গেছে, তা সর্বসম্মতিতে নেওয়া হয়েছে। জি-এস-টি’র আগে দেশে ১৭ ধরনের আলাদা আলাদা ট্যাক্স ছিল। কিন্তু এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর এখন সারা দেশে একটাই কর প্রণালী। জি-এস-টি সততার জিত আর সততা এক উৎসবও বটে। আগে প্রায়শই করপ্রণালী নিয়ে দেশে ‘ইনস্পেকটর রাজ’ চলছে — এই ধরনের অভিযোগ শোনা যেত। জি-এস-টি আসার পর ইনস্পেকটরের স্থান আই-টি অর্থাৎ ইনফরমেশন টেকনোলজি নিয়ে নিয়েছে। ‘রিটার্ন’ থেকে ‘রিফাণ্ড’ পর্যন্ত পুরোটাই বর্তমানে অনলাইনে ‘ইনফরমেশন টেকনোলজি’র মাধ্যমে কার্যকরী হচ্ছে। জি-এস-টি আসার পর চেক পোস্টগুলিও বন্ধ হয়েছে আর এর ফলে পণ্য ও অন্যান্য জিনিসপত্রের পরিবহনে গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে শুধুমাত্র সময়ই বাঁচেনি, সঙ্গে সঙ্গে লজিস্টিক ক্ষেত্রগুলিতেও লাভ হতে দেখা যাচ্ছে। জি-এস-টি সম্ভবত বিশ্বের সর্ববৃহৎ Tax reform ব্যবস্থা। ভারতে এত বড় Tax Reform সফল হয়েছে কারণ দেশের জনসাধারণ এই ব্যবস্থাকে গ্রহণ করেছেন, আর এই জনশক্তি, জনগ্রাহ্যতাই জি-এস-টি’র সাফল্য সুনিশ্চিত করেছে। সাধারণভাবে মনে করা হয়, এত বড় আকারের reform এত বিপুল জনসংখ্যা সম্পন্ন এত বড় দেশে সঠিকভাবে রূপায়িত হতে ৫ থেকে ৭ বছরের সময় লাগে। কিন্তু সত্যনিষ্ঠ দেশবাসীর উৎসাহ, দেশের সততার উৎসবের প্রবাহ ও জনশক্তির অংশীদারিত্বের পরিণাম হল এই যে, এক বছরের মধ্যেই এই নতুন কর প্রণালী নিজের জায়গা তৈরি করে নিয়েছে, স্থিতি পেয়েছে ও দরকার মতো inbuilt ব্যবস্থার মাধ্যমে নিজেকে সংশোধনও করে চলেছে। এ এক খুব বড় সাফল্য, যা দেশের ১২৫ কোটি দেশবাসী অর্জন করেছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আরও একবার ‘মন কি বাত’ শেষ করতে করতে অপেক্ষা করছি পরবর্তী ‘মন কি বাত’-এর। অপেক্ষা রইল আপনাদের সঙ্গে দেখা করার, কথা বলার। আপনাদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা, অনেক অনেক ধন্যবাদ!
নমস্কার!
‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আবার একবার আপনাদের সবার সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, নৌসেনার ছয়জন মহিলা কম্যাণ্ডারের একটি দল গত কয়েক মাস ধরে সমুদ্রসফর করছিল। যার নাম ‘নাবিকা সাগর পরিক্রমা’। এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই। ভারতের এই ছয় কন্যার দল ২৫০ দিনেরও বেশি ‘আই-এন-এস-ভি তারিনী’র মাধ্যমে পুরো বিশ্ব ঘুরে গত ২১-শে মে ভারতে ফিরে এসেছে এবং সারা দেশ তাঁদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছে। বিভিন্ন মহাসাগর এবং কয়েকটি সমুদ্রযাত্রা করে প্রায় ২২,০০০ নটিক্যাল দূরত্ব অতিক্রম করেছে। এটি সারা বিশ্বেই একটি নজীর বিহীন ঘটনা। গত বুধবার, এই কন্যাদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার, তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা শোনার সুযোগ পেয়েছিলাম। আমি আরেকবার এই কন্যাদের দুঃসাহসিক কাজের জন্য, নৌসেনার খ্যাতি বাড়ানোর জন্য, ভারতের সম্মান বৃদ্ধির জন্য এবং বিশেষ করে ভারতের কন্যারা কোনও অংশেই কম নয় — বিশ্বের দরবারে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন জানাচ্ছি। ‘সেন্স অফ অ্যাডভেঞ্চার’-এর কথা কে না জানে। যদি আমরা মানবজাতির প্রগতির দিকে দেখি, তবে দেখব, কোনও না কোনও দুঃসাহসিক কাজের মধ্যেই প্রগতির উদ্ভাবন ঘটেছে। আসলে প্রগতি দুঃসাহসিক কাজের মধ্যেই জন্ম নেয়। প্রথার বাইরে গিয়ে কিছু অসাধারণ কাজ করে দেখানোর অদম্য ইচ্ছে — এই ভাবনার মানুষ হয়ত কম, কিন্তু যুগ যুগ ধরে কোটি কোটি মানুষকে তা অনুপ্রাণিত করে এসেছে। আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন, গত কয়েকদিনে মাউণ্ট এভারেস্ট-জয়ী মানুষদের সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য পাওয়া গেছে। শতাব্দী ধরে মাউণ্ট এভারেস্ট মানবজাতিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে এবং সাহসী মানুষ সেই চ্যালেঞ্জ স্বীকারও করেছে।
১৬-ই মে মহারাষ্ট্রের চন্দ্রপুরের একটি আশ্রম-বিদ্যালয়ের পাঁচজন আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রী — মনীষা ধুরবে, প্রমেশ আলে, উমাকান্ত মঢবি, কবিদাস কাতমোড়ে এবং বিকাশ সোয়াম — এরা পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় করেছে। ২০১৭ সালের অগাস্ট মাস থেকে ওয়ার্ধা, হায়দ্রাবাদ, দার্জিলিং এবং লে-লাদাখে এদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। ‘মিশন শৌর্য’-য় এদের নির্বাচন করা হয়েছিল। এবং নামের সার্থকতা রেখে এভারেস্ট জয় করে এরা দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে। আমি চন্দ্রপুর স্কুলের এই ছোট ছোট ছাত্র-ছাত্রীদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। সম্প্রতি ষোলো বছরের শিবাঙ্গী পাঠক সবচেয়ে কনিষ্ঠ ভারতীয় মহিলা হিসেবে নেপালের দিক থেকে এভারেস্ট জয় করেছে। কন্যা শিবাঙ্গীকে অনেক অনেক অভিনন্দন!
অজিত বাজাজ এবং তাঁর কন্যা দিয়া এভারেস্ট জয়ী প্রথম পিতা-পুত্রীর জুটি। শুধু যুবপ্রজন্মই এভারেস্ট জয় করছেন তা নয়, গত ১৯-শে মে পঞ্চাশোর্ধ্ব শ্রীমতী সঙ্গীতা বেহল-ও এভারেস্ট জয় করেছেন।
এভারেস্ট আরোহীদের মধ্যে কয়েকজন এমনও আছেন যাঁরা শুধু দক্ষই নন, অনুভূতিপ্রবণও। কিছুদিন আগে ‘স্বচ্ছ গঙ্গা অভিযান’-এর অন্তর্ভুক্ত কার্যক্রমে BSF-এর একটি দল এভারেস্ট-এ আরোহন করে। সেই দলটি এভারেস্ট থেকে যথাসম্ভব নোংরা আবর্জনা নীচে নামিয়ে আনে। এই কাজ প্রশংসনীয় তো বটেই, পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতার প্রতি, পরিবেশের প্রতি এঁদের দায়িত্ববোধেরও পরিচায়ক। বহু বছর ধরেই লোকে এভারেস্টে আরোহণ করছেন। বহু লোক এই পর্বতশৃঙ্গের চূড়ায় পৌঁছতে সফলও হয়েছেন। আমি সেই সমস্ত সাহসী বীরদের, বিশেষত কন্যাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, বিশেষত আমার নওজওয়ান বন্ধুরা! দুই মাস আগে আমি যখন ‘Fit India’-র কথা বলেছিলাম, তখন আমি ভাবিনি যে এই বিষয়ে এত ভাল সাড়া পাওয়া যাবে। বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে এত সংখ্যক মানুষ এই বিষয়কে সমর্থন করার জন্য এগিয়ে আসবেন। ‘Fit India’-র প্রসঙ্গে আমি বলব আমার বিশ্বাস, আমরা যত খেলবো, ততই দেশ খেলবে। Social Media-তে লোকে তাঁদের Fitness Challenge–এর ভিডিও শেয়ার করছেন, সেখানে অন্যদের ট্যাগ করে তাদেরও চ্যালেঞ্জ করছেন। Fit India-র এই অভিযানে আজ সকলে অংশগ্রহণ করছেন। সিনেমা জগতের লোক হোক, ক্রীড়াজগতের মানুষজন হোক বা দেশের আমজনতা, সেনা জওয়ান হন বা স্কুল শিক্ষক, চতুর্দিক থেকে একটাই সম্মিলিত ধ্বনি শোনা যাচ্ছে— “আমরা fit তো India fit”। আমার কাছে আনন্দের বিষয় যে ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলি আমায় চ্যালেঞ্জ করেছেন এবং আমিও সেই চ্যালেঞ্জ স্বীকার করেছি। আমার বিশ্বাস, এটি খুবই ভালো প্রক্রিয়া এবং এই ধরনের চ্যালেঞ্জ আমাদের নিজেদের fit থাকতে ও অন্যদের fit রাখতে উৎসাহিত করে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কি বাত’-এ একাধিক বার আপনারা আমার কাছ থেকে খেলার বিষয়ে, ক্রীড়াবিদ্দের বিষয়ে কিছু না কিছু শুনেছেন। গতবার কমনওয়েলথ-এর নায়ক তার মতামত, তাঁর মনের কথা এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের জানান—
“নমস্কার স্যার! আমি ছবি যাদব, নয়ডা থেকে বলছি। আমি আপনার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের নিয়মিত শ্রোতা এবং আজ আপনার সঙ্গে আমার ‘মন কি বাত’ বলতে চাই। এখন গ্রীষ্মকালীন ছুটি আরম্ভ হয়ে গেছে। আমি একজন মা এবং আমি লক্ষ্য করেছি যে এখনকার বাচ্চারা অধিকাংশ সময়েই ইন্টারনেটে গেম খেলতে ব্যস্ত। আমরা যখন ছোটো ছিলাম, তখন ট্র্যাডিশনাল গেমস যা অধিকাংশই আউটডোর গেমস — সেইগুলি খেলতাম। যেমন একটি খেলা ছিল যেখানে সাতটি পাথরের টুকরো একের উপর এক রেখে সেটাকে বল দিয়ে মারতে হত। আর যেমন উঁচু-নীচু খেলা, খো-খো — এইসব খেলাগুলি আজকাল যেন হারিয়ে গেছে। আমার বিনীত অনুরোধ আপনি আজকালকার প্রজন্মকে কিছু ট্র্যাডিশনাল গেমস-এর ব্যাপারে জানান, যাতে তাদের সেইদিকে ঝোঁকটা বাড়ে, ধন্যবাদ!”
ছবি যাদবজী, আপনার ফোনের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ! এটা একদম সঠিক কথা যে, যেসমস্ত খেলা একসময় অলিগলিতে দেখা যেত, সব বাচ্চার জীবনের অঙ্গ ছিল। সেগুলি আজ কমে যাচ্ছে। এই খেলাগুলি গরমের ছুটির বিশেষ অঙ্গ ছিল। কখনও ভরদুপুরে, তো কখনও রাতে খাওয়ার পর একদম নিশ্চিন্তে বাচ্চারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা খেলত। কিছু খেলা তো এমনও ছিল যা গোটা পরিবার একসঙ্গে খেলত — যেমন পিট্ঠু, গুলি খেলা, খো-খো, লাট্টু বা ডাঙ্গুলি — এমন অগণিত খেলা কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, কচ্ছ থেকে কামরূপ পর্যন্ত সবার শৈশবের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল। হ্যাঁ এটা অবশ্যই, আলাদা আলাদা জায়গায় খেলাগুলির আলাদা আলাদা নাম। পিট্ঠু খেলাটিই বিভিন্ন নামে লোকে জানে যেমন লাগোরী, সাতোলিয়া, সাত পাত্থর, ডিকোরী, সতোদিয়া এবং আরও না জানি কত অন্য নাম এই একই খেলার। পরম্পরাগত খেলাগুলির মধ্যে দুটি ধরন আছে। আউটডোরও আছে আবার ইন্ডোরও আছে। আমাদের দেশের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য কোথাও হয়ত এই খেলাগুলির মধ্যেও দেখা যায়। একই খেলা নানা জায়গায় বিভিন্ন নামে পরিচিত। আমি গুজরাটের, আমি জানি গুজরাটের একটা খেলা আছে যাকে ‘চোমল্ ইস্তো’ বলা হয়। এটি কড়ি বা তেঁতুল বিচি অথবা গুটি দিয়ে ৮ বাই ৮-এর স্কোয়্যার বোর্ড-এ খেলা হয়। এবং ঐটি প্রায় সব রাজ্যেই দেখতে পাওয়া যায়। কর্ণাটকে একে চোকাবারা বলে। মধ্যপ্রদেশে এর নাম অত্তু। কেরলে পাকিড়াকালী আবার মহারাষ্ট্রতে চম্পল, তামিলনাড়ুতে দায়াম ও থায়াম আর রাজস্থানে চঙ্গাপো — এরকম না জানি আরও কত নাম। বিভিন্ন রাজ্যের বাসিন্দারা একে অপরের ভাষা না জানলেও খেলার সময় তারা ঠিক দেখে — আরে! ঐটি তাদের অজানা নয়! আমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন যিনি ছোটবেলায় ডাঙ্গুলি খেলেননি! ঐটি তো গ্রাম-শহর নির্বিশেষে সব জায়গায় দেখা যায় এমন খেলা। ঐটিও কিন্তু দেশের নানা প্রান্তে বিভিন্ন নামে পরিচিত। অন্ধ্রপ্রদেশে এটি গোটিবিল্লা অথবা কর্যাবিল্লা নামে পরিচিত। ওড়িশাতে একে গুলিবাড়ি বলে, মহারাষ্ট্রে একে বলে বিত্তিডালু। কিছু খেলার অবশ্য মরশুম থাকে। যেমন ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য একটি বিশেষ মরশুম থাকে। যখন সবাই মিলে ঘুড়ি ওড়াই, যখন আমরা খেলাধূলা করি, নিজেদের বৈশিষ্ট্যগুলি স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রকাশ করতে পারি। আপনারা দেখে থাকবেন অনেক বাচ্চা খুব লাজুক গোছের হয় কিন্তু খেলাধূলা করার সময় খুব চঞ্চল হয়ে ওঠে, নিজেকে প্রকাশ করে। বড়রা যারা স্বভাবত গম্ভীর থাকেন, খেলাধূলার সময় তাঁদের ভেতরে থাকা বাচ্চাটি বেড়িয়ে আসে। পারম্পরিক খেলাগুলি তৈরিই এমনভাবে যা শারীরিক ক্ষমতার পাশাপাশি আমাদের লজিক্যাল থিংকিং, একাগ্রতা, সজাগ থাকতে, স্ফূর্তি বাড়াতেও সাহায্য করে। আর এগুলি শুধু খেলা নয়, এগুলি আমাদের জীবনের মূল্যবোধ শেখায়, শেখায় লক্ষ্য স্থির করতে, দৃঢ়তা অর্জন করতে, টিম স্পিরিট তৈরি করতে, পরস্পরকে সাহায্য করতে। কিছুদিন আগে আমি দেখছিলাম, বিজনেস ম্যানেজমেন্টের ট্রেনিং প্রোগ্রামগুলিতে সামগ্রিক ব্যক্তিত্বের উন্নয়ন ও interpersonal skill উন্নত করার জন্য আমাদের পরম্পরাগত খেলাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং সেগুলি ফলপ্রসূ হচ্ছে। তাছাড়া আমাদের এই খেলাগুলির তো কোনও বয়সসীমা নেই। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে দাদু-দিদা, সবাই মিলে একসঙ্গে খেলতে পারে আর তখন এই জেনারেশন গ্যাপ ছু-মন্তর হয়ে যায়। একই সঙ্গে আমরা আমাদের সংস্কৃতি ও পরম্পরা সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল হই।
কিছু খেলা আমাদের সমাজ, পরিবেশ ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন করে। কখনও কখনও মনে হয় যে আমাদের এই খেলাগুলি যেন হারিয়ে না যায়, খেলাগুলি যদি হারিয়ে যায় তাহলে হয়ত শৈশবও হারিয়ে যাবে।
‘ইয়ে দৌলত ভি লে লো
ইয়ে শহরত্ ভি লে লো
ভালে ছিন্ লো মুঝসে মেরি জওয়ানী
মগর মুঝকো লৌটা দো বচপন কা শাওন
ও কাগজ কি কশ্টি, ও বারিষ কা পানি…।
অর্থাৎ, আমার ধনদৌলত নিয়ে নাও, যশ-খ্যাতি নিয়ে নাও, আমার যৌবন নিয়ে নাও কিন্তু আমার শৈশব ফিরিয়ে দাও — এই গান আমরা শুনে থাকি, আর এই জন্যই এই ঐতিহ্যপূর্ণ খেলা, একে হারিয়ে ফেলা যাবে না। এখন স্কুল, পাড়া, যুবসম্প্রদায়য়ের উচিত এগিয়ে এসে এই খেলাগুলিকে উৎসাহিত করা। ‘Crowd Sourcing’-এর দ্বারা আমরা আমাদের ঐতিহ্যশালী খেলাগুলির এক সংগ্রহশালা গড়ে তুলতে পারি। এই খেলার ভিডিও বানানো যেতে পারে, যাতে খেলার নিয়ম, কীভাবে খেলবে এই বিষয়ে দেখান যেতে পারে। অ্যানিমেশন ফিল্ম-ও বানানো যেতে পারে যাতে আমাদের নতুন প্রজন্ম এই খেলাগুলি সম্পর্কে জানতে পারে, খেলতে পারে আর বড় হয়ে উঠতে পারে।
আমার প্রিয় দেশবাসী! আগামী ৫-ই জুন আমাদের দেশ ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ উদ্যাপন অনুষ্ঠানটির আয়োজন করছে। এটা ভারতের পক্ষে অত্যন্ত গর্বের বিষয়। পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে সারা বিশ্ব ভারতের নেতৃত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এবারের থিম — ‘Beat Plastic Pollution’। আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, এই ভাবনার গুরুত্ব বুঝে আমরা সবাই এটা সুনিশ্চিত করি যে আমরা পলিথিন, লো গ্রেড প্লাস্টিকের ব্যবহার করব না আর ‘প্লাস্টিক পলিউশান’-এর যে ক্ষতিকর প্রভাব আমাদের প্রকৃতি, বন্য জীবন ও আমাদের স্বাস্থ্যের উপর পড়ছে, তাকে কম করার চেষ্টা করব। World Environment Day-এর ওয়েবসাইট wedindia2018 থেকে সব তথ্য দেখে নিয়ে নিজের রোজকার জীবনে তার প্রয়োগের চেষ্টা করার জন্য আমি অনুরোধ করছি। যখন প্রচণ্ড গরম পরে বা বন্যা হয়, বৃষ্টি থামতেই চায় না, প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পড়লে সবাই বিশেষজ্ঞর মতো ‘Global Warming’, ‘Climate Change’ -এসবের কথা বলতে থাকে। কিন্তু শুধু কথা বললেই হবে? প্রকৃতির প্রতি সংবেদনশীলতা, প্রকৃতিকে রক্ষা করা — এ আমাদের অভ্যাস এবং সংস্কার হওয়া উচিত। বিগত কয়েক সপ্তাহে আমরা সবাই দেখেছি, দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধুলোর ঝড় চলেছে। সঙ্গে প্রচণ্ড বৃষ্টি যা কিনা সময়োচিত নয়। প্রাণহানি ঘটেছে, সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই সবই মূলতঃ Weather Pattern-এ যে পরিবর্তন হয়েছে, তার পরিনাম। আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য প্রকৃতির বিরুদ্ধে যেতে আমাদের শিক্ষা দেয়নি। প্রকৃতির সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে মিলেমিশে থাকতে হবে। মহাত্মা গান্ধী তাঁর সারা জীবন ধরে এই কথাই বলে এসেছেন।
ভারত আজ Climate Justice-এর কথা বলছে, COP 21 এবং Paris চুক্তিতে প্রধান ভূমিকা নিয়েছে, আমরাInternational Solar Alliance–এর মাধ্যমে সারা পৃথিবীকে একজোট করেছি, এই সবের পিছনে মহাত্মা গান্ধীর স্বপ্ন পূর্ণ করার এক শুভ চিন্তা কাজ করছে।
এই ‘পরিবেশ দিবস’-এ আমরা একটু ভাবি, এই পৃথিবীকে আরও পরিষ্কার, আরও সবুজ বানানোর জন্য আমরা কী করতে পারি। এই পথে কীভাবে আরও এগিয়ে যেতে পারি, কী কী innovation করতে পারি! বর্ষা আসছে। এখন আমরা রেকর্ড সংখ্যক বৃক্ষ রোপণ করতে পারি। শুধু রোপণ করাই নয়, গাছ বড় হওয়া অবধি তার দেখাশোনা করাটাও জরুরী।
আমার প্রিয় দেশবাসী, বিশেষ করে আমার যুবা বন্ধুরা! আপনারা এখন ২১-শে জুনকে সবাই মনে রাখেন। শুধু আপনি-আমি নই, সারা পৃথিবী এখন ২১-শে জুনকে মনে রাখে। সারা বিশ্বে এখন ২১-শে জুন ‘আন্তর্জাতিক যোগ দিবস’ হিসেবে পালন করা হয় এবং এটা সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত যে কয়েক মাস আগে থেকেই এই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়ে যায়। খবর পাওয়া যাচ্ছে যে সারা বিশ্বে ২১-শে জুনকে ‘আন্তর্জাতিক যোগ দিবস’ হিসেবে পালন করার জন্য প্রস্তুতি চলছে।Yoga for Unity এবং Harmonious Society এমন এক বার্তা যা সারা বিশ্ব বিগত কয়েক বছর ধরে বারবার অনুভব করেছে। সংস্কৃতের মহান কবি ‘ভর্তুহরি’ কয়েক শতাব্দী আগে শতকত্রয়ম্–এ লিখেছিলেন—
ধ্যারয়ম্ ইয়স্যয় পিতা শমা চ জননী
শান্তিস্ চিরম্ গেহিনী
সত্যম্ সুনুরয়াম্ দয়া চ ভগিনী ভ্রাতা মনহঃ সইয়ামহ
শয্যা ভূমিতলম্ দিশোপি বসনাম্ জ্ঞানামৃতম্ ভোজনম্
এতে ইয়স্যয় কুটুম্বিনহ্ বদ সখে কস্মাদ্ ভয়ম্ যোগীনহ্।।
শত শত বছর আগে বলা এই কথার অর্থ হল এই যে — নিয়মিত যোগাভ্যাস করার ফলে কিছু সদ্গুণ বন্ধু ও স্বজনের মতো হয়ে ওঠে। যোগাভ্যাসে সাহস বাড়ে যা সবসময় পিতার মত আমাদের রক্ষা করে। ক্ষমার মানসিকতা তৈরি হয় যেমন মা তাঁর নিজের সন্তানের জন্য অনুভব করে। মানসিক শান্তি আমাদের চিরস্থায়ী বন্ধু হয়ে ওঠে। ভর্তুহরি বলেছিলেন, নিয়মিত যোগাভ্যাস করলে সত্য আমাদের সন্তান, দয়া আমাদের ভগ্নী, আত্মসংযম আমাদের ভ্রাতা, পৃথিবী আমাদের শয্যা আর জ্ঞান আমাদের ক্ষুধা নিবৃত্ত করার কাজ করে। যখন এত গুণের অধিকারী কেউ হন, তখন স্বাভাবিক ভাবেই এই যোগী সব ধরনের ভয়কে জয় করে। আরও একবার আমি সব দেশবাসীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি যে, তাঁরা যেন ‘যোগ’-এর বিরাট ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যান এবং এক সুস্থ, সুখী এবং সদ্ভাবনাপূর্ণ রাষ্ট্র গড়ে তোলেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ ২৭-শে মে। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর তিরোধান দিবস। আমি পণ্ডিতজীকে প্রণাম জানাচ্ছি। এই মে মাস আরও এক মহান মানবের জন্য স্মরণীয়। তিনি হলেন বীর সাভারকর। ১৮৫৭-র মে মাসে ভারতবাসী ইংরেজকে নিজের শক্তির পরিচয় দিয়েছিল। দেশের অনেক অংশে আমাদের জওয়ান ও কৃষকরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল। দুঃখের কথা এই যে, আমরা অনেক দিন ধরে ১৮৫৭-র ঘটনাকে কেবলমাত্র বিদ্রোহ বা সিপাহী বিদ্রোহ বলে এসেছি। প্রকৃতপক্ষে এই ঘটনাকে শুধু ছোট করেই দেখান হয়নি, আমাদের আত্মসম্মানকে আঘাত করার এক চেষ্টা ছিল। এই বীর সাভারকর-ই নির্ভীক হয়ে লিখলেন যে ১৮৫৭ সালে যা কিছু হয়েছিল তা কোনওবিদ্রোহ নয় বরং স্বাধীনতার প্রথম লড়াই। সাভারকরের সঙ্গে লন্ডনের ইন্ডিয়া হাউজের বীরেরা এর পঞ্চাশতম জয়ন্তীসমারোহ সহকারে পালন করল। এটাও এক অদ্ভূত সংযোগ, যে মাসে স্বাধীনতার প্রথম স্বতন্ত্র সংগ্রাম শুরু হল, সেই মাসেই বীর সাভারকরের জন্ম হয়। সাভারকর-জীর ব্যক্তিত্ব নানা বিশেষত্বে পূর্ণ ছিল; শস্ত্র আর শাস্ত্র, দুটোরই উপাসক ছিলেন তিনি। মূলত বাহাদুরি আর ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে তাঁর সঙ্ঘর্ষের জন্য পরিচিত বীর সাভারকর। কিন্তু এসব ছাড়াও তিনি এক ওজস্বী কবি আর সমাজ সংস্কারকও ছিলেন যিনি সর্বদা সদ্ভাবনা আর একতার উপর জোর দিয়েছেন। সাভারকর-জীর ব্যাপারে এক অদ্ভূত বর্ণনা দিয়েছেন আমাদের প্রিয়, আদরণীয় অটল বিহারী বাজপেয়ী-জী। অটলজী বলেছিলেন, সাভারকর মানে শক্তি, সাভারকর মানে ত্যাগ, সাভারকর মানে তপস্যা, সাভারকর মানে নীতি-নিষ্ঠা, সাভারকর মানে তর্ক, সাভারকর মানে তারুণ্য, সাভারকর মানে তীর, সাভারকর মানে তলোয়ার। কতটা সঠিক ছবি তুলে ধরেছিলেন অটলজী। সাভারকর কবিতা আর বিপ্লব, দুটোকেই সঙ্গে নিয়ে চলেছেন। সংবেদনশীল কবি হওয়ার পাশাপাশি উনি সাহসী বিপ্লবীও ছিলেন।
আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা। আমি টিভিতে একটা কাহিনি দেখছিলাম। রাজস্থানের সীকরের বস্তিতে থাকা আমাদের গরীব মেয়েদের কাহিনি। আমাদের এই কন্যারা, যারা কোনো এক সময় আবর্জনার স্তূপ ঘাঁটা থেকে শুরু করে বাড়ি-বাড়ি ভিক্ষা করতে বাধ্য হত – আজ তারা সেলাইয়ের কাজ শিখে গরীবদের আচ্ছাদন সেলাই করছে। এখানকারকন্যারা আজ নিজের এবং নিজের পরিবারের কাপড়চোপড় ছাড়াও সাধারণ থেকে উন্নত বস্ত্র সেলাই করছে। তারা এর সঙ্গে কৌশল বিকাশের কোর্সও করছে। আমাদের এই কন্যারা আজ আত্মনির্ভর হয়েছে। সম্মানের সঙ্গে জীবন যাপন করছে আর নিজের-নিজের পরিবারের জন্য এক শক্তি হয়ে উঠেছে। আশা আর বিশ্বাসে ভরপুর আমাদের এই কন্যাদের আমি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের শুভকামনা জানাই। এঁরা দেখিয়েছেন যে যদি কিছু করে দেখানোর জেদ থাকে আর তার জন্য আপনি কৃতসঙ্কল্প হন তো যাবতীয় মুশকিলের মধ্যেও সাফল্য লাভ করা যায় আর এটা শুধু সীকরের কথা নয়, হিন্দুস্থানের প্রতিটি কোণে আপনি এটা দেখতে পাবেন। আপনার আশেপাশে, পাড়া-প্রতিবেশীদের মধ্যে খেয়াল করলে নজরে পড়বে যে কীভাবে লোকেরানানা সমস্যাকে পরাজিত করছে। আপনি অনুভব করেছেন যে যখনই আমরা কোনও চায়ের দোকানে যাই, সেখানকার চা খেয়ে তৃপ্তি পাই তখন কিছু মানুষের সঙ্গে আলোচনা আর
বিচার-বিশ্লেষণও হয়। এই আলোচনা রাজনৈতিকও হয়, সামাজিকও হয়, চলচ্চিত্র সম্পর্কেও হয়, খেলা আর খেলোয়াড়দের সম্পর্কেও হয়, দেশের সমস্যা নিয়েও হয় – যে, সমস্যাটা এমন – এর সমাধান এমনভাবে হবে – এমনটা করা উচিৎ। কিন্তু অধিকাংশ সময় এই চর্চা কেবল আলোচনাতেই সীমিত থাকে। কিন্তু কিছু লোক এমন হন যাঁরা নিজেদের কাজের মাধ্যমে, নিজেদের পরিশ্রম আর উদ্যোগের মাধ্যমে পরিবর্তনের অভিমুখে এগিয়ে যান, সেটাকে বাস্তবে রূপ দেন। অন্যের স্বপ্নকে আপন করে নেওয়ারএবং সেটাকে সম্পূর্ণ করতে নিজেকে সঁপে দেওয়ার এমনই এক কাহিনিওড়িশার কটক শহরের ঝুপড়িতে বাস করা ডি প্রকাশ রাওয়ের। গতকালই ডি প্রকাশ রাওয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের সৌভাগ্য হল আমার। শ্রীমান ডি প্রকাশ রাও গত পাঁচ দশক ধরে শহরে চা বিক্রি করছেন। আপনারা জেনে আশ্চর্য হয়ে যাবেন, এক মামুলি চা-বিক্রেতা সত্তরেরও বেশি বাচ্চার জীবনে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। উনি ঝুপড়ি আর বস্তিতে থাকা বাচ্চাদের জন্য ‘আশা আশ্বাসন’ নামে এক স্কুল খুলেছেন। সেই গরীব চা-ওয়ালা এখানেই তার আয়ের পঞ্চাশ শতাংশ খরচ করেন। তিনি স্কুলে আসা সব বাচ্চার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য আর ভোজনের যাবতীয় আয়োজন করেন। আমি ডি প্রকাশ রাওয়ের কঠিন পরিশ্রম, ওঁর উদ্যোগ আর সেইসব গরীব বাচ্চাদের জীবনকে এক নতুন দিশা দেখানোর জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই। উনি ওদের জীবনের অন্ধকারকে মুছে দিয়েছেন। ‘তমসো মা জ্যোতির্গময়ঃ’ এই বেদবাক্য কে না জানে, কিন্তু সেটা করে দেখিয়েছেন ডি প্রকাশ রাও। ওঁর জীবন আমাদের সবার জন্য, সমাজ আর গোটা দেশের জন্য এক অনুপ্রেরণা। অনুপ্রেরণা দেওয়া এমন অনেকঘটনাবলী আপনারও আশেপাশে থাকবে। অসংখ্য ঘটনা হয়ত আছে। আসুন আমরা সদর্থক মানসিকতাকে এগিয়ে নিয়ে যাই।
জুন মাসে এত গরম হয় যে লোক বর্ষার জন্য অপেক্ষা করে আর এই আশায় আকাশের মেঘের দিকে চাতকের মত চেয়ে থাকে। আজ থেকে কিছু সময় পরে লোক চাঁদেরও প্রতীক্ষা করবে। চাঁদ দেখতে পাওয়ার অর্থ হল ঈদ পালিত হওয়া।রমজানের সময় এক মাসের উপবাস শেষে ঈদের পর্ব জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব শুরুর প্রতীক। আমার বিশ্বাস সবাইখুবউৎসাহের সঙ্গে ঈদ পালন করবে। এই উপলক্ষে বিশেষ করে বাচ্চাদের ভালো ঈদি লাভ হবে। আশা করছি যে ঈদের উৎসব আমাদের সমাজে সদ্ভাবের বন্ধনকে আরও মজবুত করবে। সবাইকে অনেক-অনেক শুভকামনা।
আমার প্রিয় দেশবাসী। আপনাদের সবাইকে অনেক-অনেক ধন্যবাদ। সামনের মাসে আবার একবার ‘মন কি বাত’এ মিলিত হব।ধন্যবাদ!
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার!
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়াতে গত চৌঠা এপ্রিল থেকে ১৫-ই এপ্রিল অবধি কমনওয়েলথ গেমস্-এর আয়োজন হয়েছিল। ভারত সহ পৃথিবীর ৭১টি দেশ এতে অংশগ্রহণ করেছিল। যখন এতবড় আয়োজন হয়, গোটা বিশ্ব থেকে আসা হাজার হাজার খেলোয়াড় এতে অংশগ্রহণ করে, কল্পনা করুন, এতে কত উৎসাহব্যঞ্জক পরিবেশ তৈরি হতে পারে? আবেগ, উদ্দীপনা, উৎসাহ, আশা, আকাঙ্ক্ষা, কিছু করে দেখানোর সঙ্কল্প— যখন এরকম উৎসাহব্যঞ্জক পরিবেশ হয় সেখানে কে এর থেকে নিজেকে আলাদা রাখতে পারে? এটা এমন এক সময় ছিল যখন গোটা দেশ জুড়ে প্রত্যেকে ভাবত আজ কোন কোন খেলোয়াড় perform করবে। ভারতের ক্রীড়ানৈপুণ্য কেমন হবে, আমরা কত পদক জিতব, এরকমই সব স্বাভাবিক ভাবনাচিন্তা ছিল। আমাদের খেলোয়াড়রাও দেশবাসীর আশানুরূপ দুর্দান্ত ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শন করে এবং একের পর এক মেডেল জিততে থাকেন। সেটা শ্যুটিং হোক, কুস্তি হোক, ভারোত্তোলন হোক, টেবিল টেনিস হোক, কি ব্যাডমিণ্টন — সবকিছুতেই ভারত রেকর্ড সাফল্য পেয়েছে। ২৬-টি সোনা, ২০টি রূপো, ২০-টি ব্রোঞ্জ নিয়ে ভারত মোট ৬৬টা পদক জিতেছে। প্রত্যেক ভারতীয়কে এই সাফল্য গর্বিত করেছে। পদক জেতা প্রত্যেক খেলোয়াড়ের কাছে গর্ব আর আনন্দের বিষয়।এটা সমগ্র দেশ আর দেশবাসীর জন্যও অত্যন্ত গৌরবের উৎসব। খেলা শেষ হওয়ার পর যখন পদকের সঙ্গে ভারতের প্রতিনিধিত্বকারী অ্যাথলিট তেরঙ্গা পতাকা জড়িয়ে বিজয় মঞ্চে পদক নিয়ে দাঁড়ান, জাতীয় সঙ্গীত বাজতে থাকে, তখন যে অনুভূতি হয়, খুশির, গৌরবের, সম্মানের— এ এক অনবদ্য অভিজ্ঞতা — বিশেষ অভিজ্ঞতা। মন-প্রাণ একেবারে জুড়িয়ে যায়, আশা আর উৎসাহে ভরপুর হয়। আমরা সবাই একাত্ম বোধ করি। হয়তো এই বিশেষ অনুভবকে প্রকাশ করার জন্য আমার কাছে যথেষ্ট শব্দ নেই। কিন্তু আমি এই খেলোয়াড়দের কাছ থেকে যা শুনছি, আমি আপনাদের তা শোনাতে চাই। আমার তো গর্ব হচ্ছে, আপনাদেরও গর্ব হবে।
আমি মণিকা বাত্রা।
কমনওয়েলথ থেকে চারটি পদক এনেছি। দুটো সোনা, একটি রূপো, একটি ব্রোঞ্জ। আমি ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান যাঁরা শোনেন, তাদের বলতে চাই যে আমি খুবই খুশি। কারণ, ভারত এই প্রথমবার টেবিল টেনিস এত জনপ্রিয় হচ্ছে। হ্যাঁ, আমি সম্ভবতঃ আমার সেরা টেবিল টেনিস খেলেছি। এর আগে আমি যে ম্যাচ প্র্যাক্টিস করেছি, সেই বিষয়ে বলতে চাই যে আমি আমার প্রশিক্ষক সন্দীপ স্যার-এর সঙ্গে অনেক প্র্যাক্টিস করেছি। কমনওয়েলথ-এর আগে পর্তুগালে আমাদের শিবির হয়েছিল। সরকার আমাদের টুর্ণামেন্টে পাঠিয়েছিল, আমি সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি কারণ তারা আমাদের এত International Exposure অর্থাৎ আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। তরুণ প্রজন্মকে শুধু একটাই বার্তা দেব, কখনো হাল ছেড়ো না। নিজেকে উজাড় করে দাও।
আমি পি. গুরুরাজ ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান যাঁরা শোনেন, তাঁদের এটা বলতে চাই যে কমনওয়েলথ গেমস, ২০১৮-য় আমার পদক জেতার স্বপ্ন ছিল। আমি প্রথমবার কমনওয়েলথ গেমসে অংশ গ্রহণ করে ভারতকে পদক দিতে পারায় খুব খুশি। আমি এই পদক আমার গ্রাম কুন্দপুর এবং আমার রাজ্য কর্ণাটক, আর আমার দেশকে উৎসর্গ করেছি।
আমি মীরাবাঈ চানু—
২১-তম কমনওয়েলথ গেমস্-এ আমি ভারতের জন্য প্রথম স্বর্ণপদক জিতেছিলাম। এই কারণে আমি খুবই খুশি হয়েছি। অনেক ছায়াছবিতে যেমন দেখি, সেরকম আমার স্বপ্ন ছিল ভারতের জন্য—মণিপুরের জন্য এক সফল খেলোয়াড় হওয়ার। মণিপুরের মেরি দিদির মত আমিও এক সফল খেলোয়াড় হওয়ার চিন্তা করতাম। আমার সাফল্যের ভিত্তি আমার নিয়মানুবর্তিতা, আন্তরিকতা, সমর্পণ ভাবনা এবং কঠোর পরিশ্রম।
কমনওয়েলথ গেমস্-এ ভারতের প্রদর্শন খুব ভাল তো ছিলই, একই সাথে এটা ছিল
বৈশিষ্ট্য পূর্ণ। বৈশিষ্ট্যপূর্ণ এই কারণে যে এবার এমন কিছু বিষয় ছিল যা প্রথমবার হয়েছে। আপনারা কি জানেন, এবার কমনওয়েলথ গেমস্-এ ভারতের যত জন কুস্তিগীর অংশগ্রহণ করেছেন প্রত্যেকে পদক এনেছেন। মণিকা বাত্রা যতগুলি ইভেণ্ট-এ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, সবগুলিতেই পদক জিতেছেন। মণিকা বাত্রা প্রথম ভারতীয় মহিলা যিনি ব্যক্তিগত Table Tennis-এ ভারতকে স্বর্ণপদক এনে দিয়েছেন। শ্যুটিং-এ ভারত সব থেকে বেশি পদক জিতেছে। ১৫ বছর বয়স্ক ভারতীয় শ্যুটার অনিশ ভানবালা স্বর্ণপদক জেতার ক্ষেত্রে ভারতের সব থেকে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে নাম করেছেন। ভারতের একমাত্র সচিন চৌধুরী কমনওয়েলথ গেমস-এ ‘প্যারা পাওয়ার লিফটিং’-এ পদক জিতেছেন। এবারের গেমস এজন্যও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মহিলা খেলোয়াড় রাই বেশির ভাগ পদক জিতেছেন। স্কোয়াশ হোক বা বক্সিং, ভারোত্তলন হোক বা শ্যুটিং সব ক্ষেত্রেই মহিলা খেলোয়াড়রা তাদের পরাক্রম দেখিয়েছে। ব্যাডমিণ্টন-এর ফাইনালে তো দুই ভারতীয় খেলোয়াড় সাইনা নেহবাল ও পি. ভি. সিন্ধুর মধ্যে খেলা হয়। সবাই উৎসাহিত ছিল কারণ লড়াই যাই হোক দুটি পদক তো ভারত পাবেই। পুরো দেশবাসী এই খেলা দেখেছে। আমারও এই খেলা দেখে খুব ভালো লেগেছে। গেমস্-এ অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়রা দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে ছোট ছোট শহর থেকে এসেছে। অনেক বাধা-বিপত্তি পার করে এই জায়গায় পৌঁছেছে। আজকে তাঁরা যে সাফল্য অর্জন করেছেন, যে লক্ষ্যে পৌঁছেছেন, তাঁদের এই জীবনযাত্রায়, তাঁদের মাতা-পিতা, অভিভাবক, কোচ, অন্যান্য সহায়ক, স্কুল, স্কুলের শিক্ষক বা স্কুলের পরিবেশ প্রত্যেকেরই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে। ওঁদের বন্ধুদেরও ভূমিকা আছে যাঁরা সকল পরিস্থিতিতে খেলোয়াড়দের মনোবল বাড়িয়েছেন। খেলোয়াড়দের সঙ্গে সঙ্গে আমি তাঁদের সকলকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি, শুভেচ্ছা জানাচ্ছি!
গতমাসের ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আমি দেশবাসীদের, বিশেষ করে যুবকদের ‘Fit India’-র জন্য আহ্বান জানিয়েছিলাম। আমি সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম যে, Fit India–র সঙ্গে যুক্ত হন। Fit India-কে lead করুন। আমি খুবই আনন্দিত যে উৎসাহের সঙ্গে মানুষ এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। Fit India-র প্রতি সমর্থন জানিয়ে অনেকে আমাকে চিঠি লিখেছেন Social Media-য় নিজেদের Fitness মন্ত্র Fit India Story–ও share করেছেন।
জনৈক ভদ্রলোক, শ্রী শশিকান্ত ভোঁসলে নিজের Swimming Pool-এর একটি ছবি share করে লিখেছেন, আমার শরীর আমার অস্ত্র, আমার মৌলিক পদার্থ জল, আমার বিশ্ব হচ্ছে সাঁতার।
আরেকজন, রুমা দেবনাথ লিখেছেন প্রাতঃভ্রমণ করে আমি নিজেকে সুখী এবং স্বাস্থ্যবান অনুভব করছি। তিনি আরও বলেছেন যে, Fitness হাসি নিয়ে আসে। আমরা যখন সুখী হই, তখন আমরা তো হাসবোই।
শ্রীমতী দেবনাথ, এতে কোনও সন্দেহ নেই যে সুখ বা আনন্দই হচ্ছে Fitness।
ধবল প্রজাপতি নিজের ট্রেকিং-এর ছবি দিয়ে লিখেছেন। আমার জন্য travelling এবং ট্রেকিংই হচ্ছে Fit India। এটা দেখে ভাল লাগছে যে বেশ কিছু নামকরা ব্যক্তিও বেশ আকর্ষণীয় ভাবে Fit India-র জন্য আমাদের যুবকদের উৎসাহিত করছেন। চিত্রাভিনেতা অক্ষয়কুমার ট্যুইটারে একটি ভিডিও দিয়েছেন। আমি ওই ভিডিও দেখেছি, আপনারাও নিশ্চয় দেখবেন। এই ভিডিওতে ওকে কাঠের খুঁটি নিয়ে ব্যায়াম করতে দেখা যাচ্ছে। উনি বলেছেন যে, এই ব্যায়াম পেট এবং পিঠের মাংসপেশির জন্য খুব উপকারী। ওঁর আর একটি ভিডিও-ও বেশ জনপ্রিয় হয়ে গেছে, যাতে ওঁকে অন্যদের সঙ্গে ভলিবল খেলতে দেখা যাচ্ছে। আরও অনেক যুবক Fit India উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা share করেছেন। আমার মনে হয়, এই ধরনের আন্দোলন আমাদের সকলের জন্য, সমগ্র দেশের জন্য খুবই লাভজনক। একটা কথা তো আমি নিশ্চয় বলবো যে বিনা খরচের Fit India আন্দোলনের নাম যোগ ব্যায়াম। Fit India অভিযানে যোগ ব্যায়ামের বিশেষ গুরুত্ব আছে। আপনারাও নিশ্চয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ২১-শে জুন ‘আন্তর্জাতিক যোগ দিবস’-এর গুরুত্ব তো এখন গোটা বিশ্ব স্বীকার করেছে। আপনারাও এখন থেকে প্রস্তুত হন।
আপনি একা নন। আপনার শহর, গ্রাম, আপনার এলাকা, আপনার স্কুল, আপনার কলেজ, যে কোনও বয়সের পুরুষ-মহিলা প্রত্যেককে যোগ অভ্যাসের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। সম্পূর্ণ শারীরিক বিকাশে, মানসিক বিকাশে, মানসিক স্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যোগ অভ্যাসের উপযোগিতা এখন ভারতে বা বিশ্বের কাউকে বলার প্রয়োজন নেই। আপনারা হয়তো একটি অ্যানিমেটেড ভিডিও দেখেছেন, যেখানে আমাকে দেখানো হয়েছে। ভিডিও-টি আজকাল খুব বিখ্যাত হয়েছে। যে কাজ একজন শিক্ষক করতে পারেন, সেই কাজ অ্যানিমেশন-এর মাধ্যমে করা হচ্ছে, এই কারণে খুব যত্ন নিয়ে এই কাজ করার জন্য আমি অ্যানিমেশন প্রস্তুতকারকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আমার যুবা বন্ধুরা, আপনারা সবাই তো পরীক্ষা-পরীক্ষা-পরীক্ষার খপ্পর থেকে বেড়িয়ে এসে এখন ছুটির চিন্তা করছেন। ছুটি কীভাবে কাটাবেন, কোথায় যাবেন ভাবছেন। আমি আজ আপনাদের একটি নতুন কাজের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে চাই। আমি দেখেছি যে অনেক যুবক এখন নতুন কিছু একটা শেখার জন্য সময় ব্যয় করছেন। Summer Internship-এর গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে আর যুবকরাও খোঁজ খবর করছেন। Summer Internship অবশ্যই একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা। চার দেওয়ালের বাইরে, কাগজ-কলম, কম্প্যুটার থেকে দূরে থেকে নতুন ভাবে জীবন কাটানোর অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ হয়। আমার যুব বন্ধুরা, এক বিশেষ internship–এর জন্য আমি আজকে আপনাদের অনুরোধ করবো, ভারত সরকারের তিন-চারটি মন্ত্রক যেমন ক্রীড়া, মানবসম্পদ উন্নয়ন, পানীয় জল বিভাগ — সবাই মিলে ‘স্বচ্ছ ভারত Summer Internship, ২০১৮’ শুরু করেছে। কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, NCC, NSS, নেহরু যুবকেন্দ্রের তরুণরা যাঁরা দেশের জন্য, সমাজের জন্য কিছু করতে চান, কিছু শিখতে চান, সমাজের পরিবর্তনে যাঁরা নিজেদের যুক্ত করতে চান, পরিবর্তনের দিশারী হতে চান তাঁরা এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। এক ইতিবাচক শক্তি নিয়ে যাঁরা সমাজে কিছু করে দেখানোর ইচ্ছা রাখেন, তাঁদের জন্য এটা একটা সুযোগ আর এতে স্বচ্ছতা অভিযানও গতি পাবে। আগামী ২-রা অক্টোবর আমরা যখন মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশত জন্মজয়ন্তী পালন করবো তার আগে ভালো কিছু করার জন্য আনন্দ পাবো। আমি এটাও বলতে চাই যে যাঁরা খুব ভালো Intern হবেন। যাঁরা কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব ভালো কাজ করেছেন, তাঁদের সকলকে জাতীয় স্তরে পুরস্কৃত করা হবে। যাঁরা সাফল্যের সঙ্গে Internship সম্পন্ন করবেন তাঁদের প্রত্যেককে ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’-এর পক্ষ থেকে শংসাপত্র দেওয়া হবে। এছাড়াও যে Intern ভালো ভাবে Internship সম্পন্ন করবেন, UGC তাঁকে দুটি Credit Point দেবে। আমি ছাত্র-ছাত্রী, যুববন্ধুদের আবার একবার Internship–এ যুক্ত হয়ে লাভবান হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আপনারা ‘mygov’ অ্যাপ-এ গিয়ে ‘স্বচ্ছ Summer Internship’-এর জন্য নাম নথিভুক্ত করতে পারেন। আমি আশা করি, আমাদের তরুণ সমাজ স্বচ্ছতা আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাবে। আপনাদের সমস্ত প্রয়াস সম্পর্কে আমি জানতে চাই। আপনারা আপনাদের অভিজ্ঞতা অবশ্যই পাঠাবেন, story পাঠাবেন, ছবি পাঠাবেন, ভিডিও পাঠাবেন। আসুন, এই ছুটির সময়টা নতুন সচেতনতার সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমার যখনই ফুরসৎ মেলে দূরদর্শনের ‘Good News India’ অনুষ্ঠানটি দেখি এবং আপনাদেরও অনুরোধ করছি ‘Good News India’ অনুষ্ঠানটি নিয়মিত দেখুন। এই অনুষ্ঠানেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কত মানুষ কতরকম ভালো কাজ করছেন এবং কত ভালো কথা আলোচনা করছেন তা জানতে পারবেন।
কিছুদিন আগে আমি দেখছিলাম দিল্লির কিছু তরুণ গরীব শিশুদের নিঃস্বার্থ ভাবে
বিনা পয়সায় পড়াচ্ছেন এই তরুণেরা দিল্লির পথশিশু এবং বস্তির বাচ্চাদের শিক্ষার জন্য এক মস্ত কর্মকাণ্ড শুরু করেছেন। শুরুতে ওঁরা রাস্তার ভিখারি ও ছোটখাটো কাজ করা ছেলেমেয়েদের এমন বোঝালেন তারাও এই উন্নয়নমূলক কাজে সামিল হয়ে গেল। দিল্লির গীতা কলোনীর পাশের বস্তির ১৫ জন বাচ্চাদের নিয়ে শুরু করা কর্মসূচি আজ রাজধানীর ১২-টা জায়গায় দু-হাজার শিশুকে পড়াশোনা করানোর কর্মকাণ্ডে পরিণত হয়েছে। এই অভিযানে তরুণ শিক্ষকরা তাঁদের সারাদিনের ব্যস্ততার থেকে দু’ঘণ্টা Free time বের করে সমাজ বদলানোর ভগীরথ প্রয়াসে যোগ দিচ্ছেন।
ভাই ও বোনেরা, ঠিক একই ভাবে উত্তরাখণ্ডের কিছু কৃষক সারা দেশের কৃষকদের কাছে অনুপ্রেরণার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। দলবদ্ধ প্রচেষ্টায় ওঁরা শুধু নিজেদের নয়, নিজেদের এলাকার ভাগ্য বদলে দিয়েছেন। উত্তরাখণ্ডের বাগেশ্বরে মূলতঃ ছোলা, ভুট্টা, যব চাষ হয়। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় কৃষকেরা নিজেদের ফসলের উচিৎ মূল্য পাচ্ছিলেন না, কিন্তু কপকোট তহশিলের কৃষকেরা তাঁদের ফসল সরাসরি বাজারে বিক্রির লোকসান এড়িয়ে তাঁদের ফসলের মূল্যবৃদ্ধির পথ করে নিলেন, value addition-এর পথ বার করলেন। ওঁরা কি করেছেন? ওঁরা ক্ষেতের ফসল থেকে বিস্কুট বানিয়েছেন এবং সেই বিস্কুট বিক্রি করছেন। এই এলাকার ফসল Iron reach, সব্বাই জানেন এবং এই Iron reached বিস্কুট গর্ভবতী মায়েদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই কৃষকেরা মুনার-এ একটা সরকারী সংস্থা বানিয়েছেন এবং বিস্কুটের বেকারি খুলেছেন। কৃষকদের এই প্রয়াস দেখে প্রশাসন একে রাষ্ট্রীয় জীবিকা মিশনের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এই বিস্কুট শুধু বাগেশ্বর জেলার প্রায় ৫০-টি অঙ্গণওয়াড়ি কেন্দ্র এমনকি কোসানি আলমোড়া পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। কৃষকদের এই প্রয়াসের ফলে সংস্থার Turn Overশুধু যে ১০ থেকে ১৫ লক্ষে পৌঁছে গেল শুধু তাই নয়, একই সঙ্গে প্রায় ৯০০-রও বেশি পরিবারের অন্ন সংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। এর ফলে জেলা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার প্রবণতাও কমে আসছে।
প্রিয় দেশবাসী, আমি প্রায়ই শুনি, আগামী দিনে জলের জন্য যুদ্ধ শুরু হবে। একথা সবাই বলে, কিন্তু আমাদের কি কোনও দায়িত্ব নেই? আমাদের কি ভাবা উচিৎ নয় যে জলসংরক্ষণ একটা সামাজিক দায়বদ্ধতা হয়ে ওঠা উচিৎ! বৃষ্টির এক-এক ফোঁটা জল কীভাবে বাঁচান যায়, আমাদের প্রত্যেকের তা জানা আছে। ভারতীয়দের কাছে জল সংরক্ষণ কোনও নতুন বিষয় নয়। বইয়ের পড়ার বিষয় নয়, এজন্য কোনও বিশেষ ভাষা জানারও প্রয়োজন নেই।
অতীতে আমাদের পূর্বপুরুষেরা তা করে দেখিয়ে গেছেন। প্রত্যেক ফোঁটা জলের মাহাত্ম্যকে ওঁরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেক ফোঁটা জল বাঁচানোর নতুন নতুন উপায় বার করেছেন।
আপনারা কেউ তামিলনাড়ুতে গেলে দেখবেন, সেখানকার অনেক মন্দিরে জলসেচ ব্যবস্থা, জলসংরক্ষণ প্রক্রিয়া, জল সঞ্চয়, দিঘি বানানো ইত্যাদি নিয়ে শিলালিপি পাওয়া যায়।
মনারকোবিল, চিরান মহাদেবী কোবিলপট্টি এবং পুদুকোট্টাইয়ের মন্দিরে বড় বড় শিলালিপি দেখতে পাওয়া যায়। আজও অনেক বাউরি অর্থাৎ step wells পর্যটন ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত, কিন্তু আসলে সেগুলো আমাদের পূর্বপুরুষদের জল সংরক্ষণ প্রচেষ্টার জাজ্বল্য প্রমাণ। গুজরাটের অডালজ এবং পাটনের রানীর বাউরি-কে UNESCO ‘World Heritage Site’ হিসেবে ঘোষণা করেছে তার কারণ এই জায়গাগুলোর তাৎপর্য ও অভাবনীয় সৌন্দর্য। আপনারা রাজস্থান গেলে অবশ্যই যোধপুরের চাঁদ বাউরি দেখতে যাবেন। এটা ভারতবর্ষের বৃহত্তম এবং সবথেকে সুন্দর বাউরি। একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে, এমন এক এলাকায় এই বৃহত্তম বাউরি যেখানে জলের তীব্র সংকট রয়েছে। এপ্রিল, মে, জুন-জুলাই জল সংরক্ষণের প্রকৃষ্ট সময় এবং আগাম ব্যবস্থা যত উত্তমভাবে করে রাখা যাবে, ততই কার্যকরী হবে জল সংরক্ষণের কাজ। ‘মন্রেগা’ বাজেট থেকে জলসংরক্ষণ ব্যবস্থায় ব্যয় করা যেতে পারে। গত তিনবছরে জল সংরক্ষণ ও জলবাঁধ নির্মাণে অনেকেই নানারকম প্রয়াস চালাচ্ছেন। প্রতি বছর ‘মনরেগা’ বাজেটে জলসংরক্ষণ ও জল বাঁধ নির্মাণে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। ২০১৭-’১৮-র কথা বললে আমি বলতে পারি, ৬৪ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৫৫% অর্থাৎ ৩৫ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি জলসংরক্ষণের মত কর্মসূচিতে ব্যয় হয়েছে। গত তিন বছরে এই জলসংরক্ষণ ও জলবাঁধ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রায় ১৫০ লাখ হেক্টর কৃষিজমিতে অনেক বেশি লাভ এসেছে। জলসংরক্ষণ ও জলবাঁধ নির্মাণে ভারতসরকারে ‘মন্রেগা’ প্রকল্পে যে অর্থ বরাদ্দ হয়, তা অনেকেই বেশ ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছেন। কেরলের কুট্টেমপেরুর নদীতে ‘মনরেগা’ প্রকল্পের আওতায় ৭ হাজার মানুষ ৭০ দিনের কঠোর শ্রমে নদীকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। গঙ্গা ও যমুনা নদী জলে ভরে থাকে কিন্তু উত্তরপ্রদেশের কিছু এলাকায় জলাভাব আছে, যেমন ফতেহ্পুর জেলায় সসুর ও খদেবী দুটো ছোট নদী শুকিয়ে গেছিল, জেলা প্রশাসন ‘মনরেগা’ প্রকল্পের আওতায় প্রচুর মাটি ও জলসংরক্ষণের মাধ্যমে নদী দুটিকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। প্রায় ৪০-৪৫টি গ্রামের লোকের পরিশ্রমে এই কাজ সম্ভব হয়েছে। পশু হোক, পাখি হোক, কৃষক হোক, কৃষিখেত হোক— সব্বার কাছে এটা কত বড় আশীর্বাদে পরিণত হয়েছে।
কত বড় সাফল্য! আমি বলব, এপ্রিল, মে, জুন, জুলাই এসে গেছে এবং আসছে। আমরা আগামীদিনে জলসংরক্ষণ ও জলসঞ্চয় নিয়ে বেশ কিছু দায়িত্ব নিতে পারি, কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারি এবং কিছু করে দেখাতে পারি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কি বাত’ যখন হয়, দেশের চারদিক থেকে নানান খবর আসে, চিঠি আসে, ফোন আসে। পশ্চিমবাংলার উত্তর ২৪ পরগণা জেলার দেবীতলা গ্রাম থেকে অয়ন কুমার ব্যানার্জী mygov-অ্যাপে কমেণ্ট করেছেন, প্রতিবছর আমরা রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করি। কিন্তু নোবেল
পুরস্কার বিজেতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের peacefully, beautifully এবং integrity–র সঙ্গে বাঁচার যে philosophy সেই বিষয়ে জনসাধারণ কিছুই জানে না। দয়া করে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আপনি এই নিয়ে বলবেন, যাতে সাধারণ মানুষ তা জানতে পারে।
আমি অয়ণজীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তাঁদের কাছে ‘মন কি বাত’ এতটা মনোযোগ আকর্ষণ করেছে সেই জন্য। গুরুদেব জ্ঞান ও বিবেকপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাঁর লেখায় সব বিষয়ের উপর তাঁর অনন্য ছাপ রেখেছেন, রবীন্দ্রনাথ প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব ছিলেন, বিচিত্র ভাবনার ব্যক্তিত্ব ছিলেন কিন্তু তাঁর ভেতরে একজন শিক্ষক ছিল তা সবসময় অনুভব করা যায়। তিনি গীতাঞ্জলিতে লিখেছেন—
“He who has the knowledge has the responsibility to impart it to the students”— অর্থাৎ, জ্ঞান যাঁর আছে, সেই সঙ্গে তাঁর দায়িত্বও আছে সেই জ্ঞানকে জিজ্ঞাসু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার।
বাংলা ভাষা তো আমি জানি না, তবে যখন ছোট ছিলাম, তখন থেকে আমার খুব ভোরে ওঠার অভ্যাস ছিল। একেবারে শৈশব থেকেই। পূর্ব ভারতে রেডিওর অধিবেশন তাড়াতাড়ি শুরু হয়। পশ্চিম ভারতে শুরু হয় দেরিতে। কখন ভোর হয়, সেটা আমার মোটামুটি একটা আন্দাজ ছিল। সম্ভবত সাড়ে পাঁচটা নাগাদ রেডিওতে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুরু হত আর সেটা শোনা আমার একরকম অভ্যেসই হয়ে গিয়েছিল। ভাষা তো জানতাম না, কিন্তু তা সত্ত্বেও ভোরবেলা তাড়াতাড়ি উঠে রেডিওতে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনাটা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল আর যখন ‘আনন্দ লোকে’ বা ‘আগুনের পরশমণি’ – এই রবীন্দ্রসঙ্গীতগুলি শোনার সুযোগ হত, মনে বড় একটি চেতনার উন্মেষ হত। রবীন্দ্রসঙ্গীত, রবীন্দ্রনাথের কবিতা নিশ্চয়ই আপনাদেরও প্রভাবিত করেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আমি আমার সশ্রদ্ধ শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আর কিছুদিনের মধ্যেই রমজানের পবিত্র মাস শুরু হতে চলেছে,
সারা বিশ্বে এই রমজান মাস শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে পালন করা হয়। রোজা রাখার সামগ্রিক অর্থটি হল, মানুষ যখন নিজে অভুক্ত থাকে, তখন সে অন্যের ক্ষুধা অনুভব করতে পারে।
যখন সে নিজে তৃষ্ণার্ত হয়, তখন অন্যের তৃষ্ণা অনুভব করতে পারে। এটি হল পয়গম্বর মহম্মদের শিক্ষা এবং বার্তাকে স্মরণ করার সময়। তাঁর জীবনের শিক্ষা আমাদের মধ্যে সাম্য এবং ভ্রাতৃত্বের পথে চলার দায়বদ্ধতা তৈরি করে দেয়। একবার একজন পয়গম্বর সাহেবকে প্রশ্ন করেছিল— “ইসলামে কোন্ কাজটা সবচেয়ে ভালো?” পয়গম্বর বলেছিলেন, “কোনও গরীব আর অভাবী মানুষকে খাওয়ানো আর চেনা-অচেনা নির্বিশেষে সকলের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখা।” পয়গম্বর মহম্মদ জ্ঞান এবং করুণায় বিশ্বাসী ছিলেন। কোনও বিষয়ে তাঁর অহঙ্কার ছিল না। তিনি বলতেন, অহঙ্কারই জ্ঞানকে পরাভূত করে। পয়গম্বর মহম্মদের অভিমত ছিল, যদি কারুর কাছে কোন জিনিস প্রয়োজনের অতিরিক্ত থাকে, তাহলে আপনি তা এমন কাউকে দিয়ে দিন, যার সেটার প্রয়োজন আছে— এইজন্য রমজানে দানেরও বিশেষ গুরুত্ব আছে। এই পবিত্র মাসে সকলে অভাবী মানুষদের হাতে দান তুলে দেন। পয়গম্বর মহম্মদ বিশ্বাস করতেন যে, ব্যক্তির নিজের পবিত্র আত্মাই তাঁকে ধনী করে —
ধন-দৌলত নয়। আমি সব দেশবাসীকে রমজানের পবিত্র মাসের শুভকামনা জানাই। আমি আশা করি, এই পবিত্র সময় মানুষকে শান্তি এবং শুভবুদ্ধির পথে চলতে প্রেরণা যোগাবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, প্রত্যেক ভারতীয়র জন্য বুদ্ধপূর্ণিমা এক বিশেষ দিন। আমাদের গর্ব হওয়া উচিৎ যে ভারত করুণা, সেবা এবং ত্যাগের প্রতিমূর্তি মহামানব ভগবান বুদ্ধের দেশ, যিনি আপামর বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষকে পথ দেখিয়েছেন। এই বুদ্ধপূর্ণিমা ভগবান বুদ্ধকে স্মরণ করে তাঁর দেখানো পথে চলার প্রচেষ্টা, সংকল্প এবং চলার মহান দায়িত্বের কথা আমাদের আবার মনে করিয়ে দেয়। ভগবান বুদ্ধ সাম্য, শান্তি, সদ্ভাব এবং ভ্রাতৃত্বের প্রেরণাশক্তি। এটা হল সেই ধরনের মানবিক মূল্যবোধ, সারা দুনিয়ায় আজ যার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। বাবাসাহেব ডা. আম্বেদকর খুব জোর দিয়ে বলতেন যে, তাঁর social philosophy-তে ভগবান বুদ্ধের বিরাট এক প্রেরণা ছিল। তিনি বলেছিলেন, “My social philosophy may be said to be enshrined in three words; liberty, equality and fraternity. My philosophy has roots in religion and not in political science. I have derived them from the teaching of my master, the Buddha.”
দেশের মানুষ দলিত হোক, পীড়িত হোক, শোষিত বা বঞ্চিত হোক, বাবা সাহেব সংবিধানের মাধ্যমে এই প্রান্তিক স্তরের মানুষদের শক্তিমান করে তুলেছেন। করুণার এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কিছু হতে পারে না। মানুষের কষ্টের জন্য ভগবান বুদ্ধের এই করুণা ছিল তাঁর মহত্তম গুণগুলির মধ্যে একটি। শোনা যায় যে, বৌদ্ধ ভিক্ষুকরা বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করতেন। তাঁরা সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন বুদ্ধের সমৃদ্ধ চিন্তাধারা। দীর্ঘকাল ধরে এটাই চলে আসছে। আমরা সমগ্র এশিয়াবাসীরা ভগবান বুদ্ধের শিক্ষা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। চিন, জাপান, কোরিয়া, থাইল্যাণ্ড, কম্বোডিয়া, মায়ানমার ইত্যাদি এশিয়ার অনেক দেশে বুদ্ধের এই পরম্পরা, বুদ্ধের শিক্ষা সেখানকার শিকড়ের সঙ্গেও যুক্ত হয়ে আছে, আর সেই কারণেই আমরা বৌদ্ধ পর্যটনের পরিকাঠামো গড়ে তুলছি, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মহত্ত্বপূর্ণ স্থানগুলিকে ভারতের বিশিষ্ট বৌদ্ধ অঞ্চলগুলির সঙ্গে যুক্ত করছে। ভারত সরকার যে বেশ কিছু বৌদ্ধ মন্দিরের পুনরুদ্ধারের কাজে অংশ নিয়েছে। সেই জন্য আমি অত্যন্ত আনন্দিত। এর মধ্যে মায়ানমারের বাগানে বহুযুগের প্রাচীন বৈভবশালী আনন্দ মন্দিরও আছে। বিশ্বের সর্বত্র আজ প্রতিযোগিতা আর মানবিক যন্ত্রণাই চোখে পড়ে। ভগবান বুদ্ধের শিক্ষা ঘৃণাকে দয়ায়
রূপান্তরিত করার পথ দেখায়। ভগবান বুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তাঁর করুণাময় সিদ্ধান্তে আস্থাবান যত মানুষ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছেন, সকলকে আমি বুদ্ধপূর্ণিমার মঙ্গলকামনা জানাই। গোটা দুনিয়ার জন্য সেই মহাপুরুষের কাছে আশীর্বাদ প্রার্থনা করি, যেন আমরা তাঁর আদর্শে এক
শান্তিপূর্ণ ও করুণাময় বিশ্ব গঠনে নিজেদের দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করতে পারি। আজ আমরা ভগবান বুদ্ধকে স্মরণ করছি। আপনারা ‘লাফিং বুদ্ধ’ মূর্তির কথাও শুনে থাকবেন, যার সম্বন্ধে বলা হয় যে ‘লাফিং বুদ্ধ’ সৌভাগ্য নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম লোকই জানেন যে, এই সহাস্য বুদ্ধ ভারতের সুরক্ষার ইতিহাসেও এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছেন। আপনারা হয়ত ভাবছেন যে ‘লাফিং বুদ্ধ’ আর ভারতের সৈন্যশক্তির মধ্যে কী সম্বন্ধ থাকতে পারে! আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, আজ থেকে ২০ বছর আগে ১৯৯৮ সালের ১১-ই মে সন্ধ্যায় তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী
শ্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীজী দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একটি বক্তব্য রেখেছিলেন, যা গোটা
দেশকে গৌরব, পরাক্রম এবং খুশির বার্তায় আপ্লুত করেছিল। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা তাবৎ ভারতবাসীর মধ্যে এক নতুন আত্মবিশ্বাস জেগে উঠেছিল। সেই দিনটি ছিল বুদ্ধপূর্ণিমা। ১১-ই মে, ১৯৯৮, ভারতের পশ্চিম প্রান্তে রাজস্থানের পোখরানে পরমাণু পরীক্ষা করা হয়েছিল। তার বিশ বছর পূর্ণ হচ্ছে। এই পরীক্ষাটি ভগবান বুদ্ধের আশীর্বাদ নিয়ে বুদ্ধ পূর্ণিমার দিনই করা হয়েছিল।
ভারতের পরীক্ষা সফল হয়েছিল, একদিক থেকে বলতে গেলে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারত তার শক্তির প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছিল। আমরা বলতে পারি, সেই দিনটি ভারতের ইতিহাসে তার সামরিক শক্তির প্রদর্শনের দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ভগবান বুদ্ধ পৃথিবীকে দেখিয়েছেন শান্তির জন্য inner strength অর্থাৎ অন্তরের শক্তি আবশ্যক। এইভাবে যখন আপনি একটি দেশ হিসেবে শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারবেন, তখন সকলের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে থাকতেও পারবেন। ১৯৯৮ সালের মে মাস শুধু এইজন্য গুরুত্বপূর্ণ নয় যে ওই মাসে পরমাণু পরীক্ষা হয়েছিল, বরং যেভাবে তা সম্ভব করা গিয়েছিল, বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটাই। এই ঘটনা পুরো দুনিয়াকে দেখিয়ে দিয়েছিল যে ভারত মহান বৈজ্ঞানিকদের নিজস্ব ভূমি, এবং এক দৃঢ় নেতৃত্বকে সামনে রেখে সে নিত্যই নতুন নতুন লক্ষ্য এবং উচ্চতায় পৌঁছে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। অটলবিহারী বাজপেয়ীজী মন্ত্র দিয়েছিলেন, “জয় জওয়ান—জয় কিসান—জয় বিজ্ঞান”। আজ যখন আমরা ১১-ই মে ১৯৯৮-এ বিংশতি বর্ষ উদ্যাপন করতে চলেছি, তখন ভারতের শক্তিবৃদ্ধির জন্য অটলজী ‘জয় বিজ্ঞান’-এর যে মন্ত্র আমাদের দিয়েছেন, তাকে আত্মস্থ করেই আধুনিক ভারত গড়ার লক্ষ্যে এগোতে হবে। এই আধুনিক দেশ গড়ার উদ্দেশ্যে শক্তিশালী ভারত, সমর্থ ভারত বানানোর কর্মকাণ্ডে দেশের প্রতিটি যুবককে অংশগ্রহণ করার সঙ্কল্প করতে হবে। নিজেদের শক্তিকে ভারতের শক্তির অংশ করে তুলতে হবে। আর তাহলেই দেখতে দেখতে অটলজী যে যাত্রা শুরু করেছিলেন, তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এক নতুন আনন্দ, নতুন তৃপ্তি আমরাও অর্জন করতে পারবো।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কি বাত’-এ আবার যোগাযোগ হবে, তখন আরও কথা বলবো।
অনেক অনেক ধন্যবাদ!
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার! আজ ‘রামনবমী’ পার্বণ। রামনবমী-র এই পবিত্র দিনে দেশবাসীকে জানাই আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা! পূজনীয় বাপুজীর জীবনে রামনামের মাহাত্ম্য কতটা ছিল, তা আমরা ওঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই দেখেছি। গত ২৬-শে জানুয়ারি, ‘আসিয়ান গোষ্ঠী’ভুক্ত দেশগুলির প্রতিনিধিরা এখানে এসেছিলেন এবং সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দল। অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে, তাদের মধ্যে অধিকাংশ দেশ আমাদের সামনে ‘রামায়ণ’ উপস্থাপিত করেছিল। অর্থাৎ, শুধু ভারতেই নয়, পৃথিবীর এই ভূখণ্ডে ‘আসিয়ান গোষ্ঠী’ভুক্ত দেশগুলিতেও রাম ও রামায়ণের প্রেরণা ও প্রভাব আজও ততটাই। আমি আরও একবার আপনাদের সবাইকে ‘রামনবমী’র শুভকামনা জানাচ্ছি!
আমার প্রিয় দেশবাসী, প্রতিবারের মত এবারেও আমি আপনাদের কাছ থেকে প্রচুর চিঠি, ই-মেইল, ফোন কল ও মতামত পেয়েছি। কোমল ঠাক্কর সংস্কৃতের ‘অনলাইন কোর্স’ শুরু করার বিষয়ে mygov–এ যা লিখেছেন, সেটা আমি পড়েছি। তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী হওয়ার পাশাপাশি সংস্কৃতের প্রতি আপনার এই অনুরাগ দেখে আমার খুব ভাল লাগল। আমি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এই বিষয়ে আপনাকে যাবতীয় তথ্য জানানোর জন্য বলেছি। ‘মন কি বাত’-এর যে সমস্ত শ্রোতা সংস্কৃত নিয়ে কাজ করছেন, আমি তাঁদেরকেও অনুরোধ করছি, কোমল ঠাক্কর-এর এই প্রস্তাবকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেই বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা করতে।
‘নরেন্দ্রমোদী অ্যাপ’-এ বিহারের নালন্দা জেলার বরাকর গ্রামের শ্রী ঘণশ্যাম কুমার-এর মতামত পড়েছি। ভূগর্ভস্থ জলস্তর কমে যাওয়া প্রসঙ্গে আপনি যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।
কর্ণাটকের শ্রী শকল শাস্ত্রী খুব সুন্দর ভাষায় লিখেছেন, ‘আয়ুষ্মাণ ভারত’ তখনই সম্ভব, যখন ‘আয়ুষ্মাণ ভূমি’ হবে। আর ‘আয়ুষ্মাণ ভূমি’ তখনই হতে পারে, যখন আমরা এই ভূমিতে বসবাসকারী প্রতিটি প্রাণির খেয়াল রাখব। আপনি গ্রীষ্মকালে পশু-পাখিদের জন্য জলের ব্যবস্থা রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন। শকল-জী, আপনার ভাবনা আমি সব শ্রোতা বন্ধুর কাছে পৌঁছে দিয়েছি।
শ্রী যোগেশ ভদ্রেশা-র বক্তব্য, আমি যেন এবার যুবাদের স্বাস্থ্য প্রসঙ্গে কিছু বলি। ওঁর মতে, অন্যান্য এশিয় দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশের যুবারা শারীরিকভাবে দুর্বল। যোগেশ-জী, আমি ভেবেছি, এবার স্বাস্থ্য বিষয়ে সবার সঙ্গে বিশদে কথা বলব, ‘Fit India’-র কথা বলব, আর আপনাদের মত নব্যযুবকরাই ‘Fit India’ কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
কিছুদিন আগে ফ্রান্সের মাননীয় রাষ্ট্রপতি কাশী গিয়েছিলেন। বারাণসীর শ্রী প্রশান্ত কুমার লিখেছেন, সেই যাত্রার সব দৃশ্য তাঁর মন ছুঁয়ে গেছে, তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি আগ্রহ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, সেই সব ছবি, ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা উচিৎ। প্রশান্ত-জী, ভারত সরকার ঐদিনই সব ছবি সোস্যাল মিডিয়া এবং ‘নরেন্দ্রমোদী অ্যাপ’-এ শেয়ার করেছে। আপনারা সেগুলি ‘লাইক’ করে, ‘রি-ট্যুইট’ করে আপনাদের পরিচিত মহলে ছড়িয়ে দিন।
চেন্নাই থেকে অঙ্ঘা ও জায়েশ আর অনেক শিশুই ‘একজাম ওয়ারিয়ার’ বইয়ের শেষে যে Gratitude Cards দেওয়া আছে, সেখানে ওরা নিজেদের মনে যে যে ভাবনা এসেছে, সেগুলিই লিখে আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। অঙ্ঘা, জায়েশের মত সব শিশুকেই বলতে চাই যে, তাদের পাঠানো এই সব চিঠি পড়লে আমার সারা দিনের ধকল, পরিশ্রম একদম ছু-মন্তর হয়ে উড়ে যায়। এত সব চিঠি, এত এত ফোন কল, মতামত, তার মধ্যে যেগুলো আমি পড়ে উঠতে পেরেছি, যেগুলি শুনতে পেরেছি এবং এই সবের মধ্যে অনেক বিষয়ই রয়েছে যা আমার মন-হৃদয়কে স্পর্শ করেছে। আমি যদি শুধু তাদের বিষয়েই কথা বলতে থাকি, মনে হয়, সারা মাস ব্যপী টানা কথা বললেও বোধহয় আমাকে এই সব কথাই চালিয়ে যেতে হবে। এবারের বেশিরভাগ চিঠিই পেয়েছি শিশুদের কাছ থেকে। তারা তাদের পরীক্ষার কথা লিখেছে, ছুটির পরিকল্পনা ভাগ করেছে, এই গরমে পশু-পাখিদের জলকষ্টের কথাও চিন্তা করেছে।
‘কিষাণ মেলা’ ও চাষবাস নিয়ে সারা দেশে যে কর্মকাণ্ড চলছে, সেই বিষয়েও কৃষক ভাই-বোনেরা আমায় চিঠি পাঠিয়েছেন। জলসংরক্ষণ বিষয়ে কিছু সচেতন নাগরিক আমাকে পরামর্শ পাঠিয়েছেন। যখন থেকে আকাশবাণীর মাধ্যমে আমরা এই জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘মন কি বাত’ প্রচার করছি, তখন থেকেই আমি লক্ষ্য করছি, এই গ্রীষ্মকাল ও গরমের সংকট নিয়ে বেশি বেশি চিঠি আসছে। পরীক্ষার আগে পরীক্ষার্থী বন্ধুদের কাছ থেকেও তাদের পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তার চিঠিও আমি পাচ্ছি। উৎসবের মরশুমে আমাদের নানান উৎসব, আমাদের সংস্কৃতি ও পরম্পরা নিয়েও অনেক চিঠি আসছে। অর্থাৎ, এই ‘মন কি বাত’ মরশুম পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে, যা কিনা এই ‘মন কি বাত’ কারও কারও জীবনের মরশুমও বদলে দিচ্ছে। তাছাড়া, বদলাবে নাই বা কেন, আপনাদের পাঠানো এই সব চিঠির ছত্রে ছত্রে আপনাদের অনুভবের কথা, আপনাদের প্রেরণা, আপনজনের ভাষা এবং সেই সঙ্গে নিজের মাতৃভূমির প্রতি দায়বদ্ধতার কথাও বারে বারে উঠে এসেছে। আর এই সব ভাবনাই দেশের আমূল পরিবর্তনের শক্তি ধরে। যখন আপনাদের পাঠানো চিঠি পড়ে আমি জানতে পারি যে, আসামের করিমগঞ্জের এক রিক্সাচালক আহমদ আলি, নিজের ইচ্ছাশক্তিতে ভর করে গরীব শিশুদের জন্য নয়টি স্কুল বানিয়ে দিয়েছেন, তখনই এই দেশের অদম্য ইচ্ছাশক্তির পরিচয় পাই। যখন আমি কানপুরের ডাক্তার অজিত মোহন চৌধুরীর কাহিনি শুনতে পাই, যিনি, ফুটপাথে ফুটপাথে ঘুরে এই ডাক্তার ফুটপাথবাসী ভাই-বোনেদের চিকিৎসা করেন এবং বিনামূল্য ওষুধও দেন—তখনই এদেশের সহমর্মিতা এবং মনুষ্যত্বের জন্য গর্ব হয়। তের বছর আগে সময় মত চিকিৎসার অভাবে কলকাতার ট্যাক্সিচালক সইদুল লস্করের বোনের মৃত্যু হয়। সইদুল তখনই হাসপাতাল তৈরি শপথ নেন, যাতে চিকিৎসার অভাবে কোনও গরীব মানুষ মারা না যান। এই প্রতিজ্ঞার জন্য সইদুল নিজের ঘরের গয়না বেচেন, মানুষের কাছ থেকে জনে জনে দান সংগ্রহ করেন, এবং ট্যাক্সি আরোহীরাও তাঁকে আর্থিক সাহায্য করেন। এক ইঞ্জিনিয়ার তরুণী তো তাঁর প্রথম মাইনে সইদুলকে দিয়ে দেন। এইভাবে তিল তিল করে অর্থ সংগ্রহ করে বারো বছর বাদে অসম্ভবকে সম্ভব করে সইদুল কলকাতার উপকণ্ঠে পুনরি গ্রামে তিরিশ শয্যাবিশিষ্ট এক হাসপাতাল নির্মাণ করেন। এটাই হল ‘New India’-র সক্তি। যখন উত্তর প্রদেশের এক মহিলা নিজের লড়াই লড়েও একশো পঁচিশটি শৌচালয় নির্মাণ করেন নিজের অদম্য চেষ্টায়, তখন আশপাশের অন্যান্য মহিলারাও দারুণ উৎসাহিত হন। এটাই নতুন মাতৃশক্তির প্রকাশ। এরকমই অনেক অনেক প্রেরণা যোগানো ঘটনা আমার দেশের পরিচয় বহন করে। আজ সারা বিশ্বই ভারতবর্ষকে অন্য চোখে দেখে। আজ যখন ভারতবর্ষের নাম অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে উচ্চারিত হয়, তখন এর পেছনে এই দেশের সন্তান-সন্ততিদের উদ্যম লুকিয়ে থাকে। আজ, সারা দেশের যুব সম্প্রদায়, মহিলা, পিছিয়ে পড়া মানুষ, গরীব, মধ্যবিত্ত — সব সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যেই এই বিশ্বাসটা জন্মেছে যে, হ্যাঁ, আমরা উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে পারি। আমার দেশও প্রগতির পথে এগিয়ে যেতে পারে। আজ, আশা-আকাঙ্ক্ষায় ভরা আত্মবিশ্বাসের এক ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এই আত্মবিশ্বাস, এই ইতিবাচক মানসিকতা ‘New India’-র সঙ্কল্পকে বাস্তবায়িত করবে, স্বপ্ন সার্থক হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আগামী কয়েক মাস কৃষক ভাই-বোনেদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। কারণ চাষবাস সম্পর্কিত প্রচুর চিঠি এসেছে। এই বার আমি দূরদর্শনের ‘ডি ডি কিষাণ’ চ্যানেলে কৃষক বন্ধুদের সঙ্গে যে আলোচনা করেছি, সেই অনুষ্ঠানের ভিডিও আমি দেখেছি, এবং আমার মনে হয়েছে দূরদর্শনের এই ‘ডি ডি কিষাণ’ চ্যানেল সমস্ত কৃষকবন্ধুদেরই দেখা উচিৎ। সেই সঙ্গে কৃষি পরামর্শগুলি নিজের নিজের ক্ষেতে প্রয়োগ করা উচিৎ।
মহাত্মা গান্ধীর কথাই যদি ধরি, বা শাস্ত্রীজী কি লোহিয়াজী বা চৌধুরী চরণ সিং বা চৌধুরী দেবীলাল জী — এঁরা প্রত্যেকেই কৃষি ও কৃষকভাইদের এই দেশের অর্থব্যবস্থা ও জনজীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করতেন। মাটি, ক্ষেত-খামার এবং কৃষক ভাইদের প্রতি মহাত্মা গান্ধীর কতটা অনুরাগ ছিল, তা তাঁর বক্তব্যে ভীষণ উজ্জ্বল ভাবে ধরা দেয়। তিনি বলেছিলেন, “To forget how to dig the Earth and to tend the soil, is to forget ourselves” তার মানে, পৃথিবীকে কর্ষণ করা আর মৃত্তিকার যত্ন রাখা যদি আমরা ভুলে যাই, তাহলে, এটা স্বয়ং নিজেকে ভুলে যাওয়ার মত হবে। শ্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী বৃক্ষ, উদ্ভিদ, অরণ্য ইত্যাদির সংরক্ষণ এবং উন্নততর কৃষি-প্রক্রিয়ার আবশ্যকতার উপর সর্বদা গুরুত্ব দিতেন। ডঃ রামমনোহর লোহিয়া আমাদের কৃষকদের জন্য উন্নততর উপার্জন, উন্নততর সেচ-ব্যবস্থা আর এই সব বিষয়কে সুনিশ্চিত করার জন্য এবং খাদ্য ও দুগ্ধ উৎপাদনকে বাড়ানোর জন্য সার্বিক জনজাগরণের কথা বলেছিলেন। ১৯৭৯ সালে চৌধুরী চরণ সিং তাঁর ভাষণে কৃষকদের নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগ ও নতুন আবিষ্কার করার জন্য আবেদন করেছিলেন, এর আবশ্যকতার উপর জোর দিয়েছিলেন। আমি কিছুদিন আগে দিল্লিতে আয়োজিত কৃষি-উন্নতি মেলায় গিয়েছিলাম। ওখানে কৃষক ভাই-বোন এবং বৈজ্ঞানিকদের সঙ্গে আমার আলোচনা। কৃষি সংক্রান্ত অনেক অভিজ্ঞতাকে জানা, বোঝা, কৃষি সংক্রান্ত নতুন আবিষ্কারের বিষয়ে জানা — এ সবই আমার জন্য এক আনন্দদায়ক অনুভূতি তো ছিলই, কিন্তু যে বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছিল তা হল মেঘালয়ের কৃষকদের পরিশ্রমের কাহিনি। স্বল্প ভূমির এই রাজ্য এক বিশাল কাজ করে দেখিয়েছে। আমাদের মেঘালয়ের কৃষকরা ২০১৫-১৬ বর্ষে বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন করেছে। ওঁরা দেখিয়েছেন, যদি লক্ষ্য স্থির থাকে, পূর্ণ আত্মবিশ্বাস থাকে, মনে প্রতিজ্ঞা থাকে তাহলে সব সম্ভব করে তোলা যায়। আজ, কৃষকদের পরিশ্রমের সঙ্গে প্রযুক্তির মিলন হয়েছে। যার ফলে কৃষি-উৎপাদকদের যথেষ্ট শক্তি লাভ হচ্ছে। আমার কাছে যে চিঠি এসেছে, তাতে আমি দেখলাম, অনেক কৃষক বন্ধুরা MSP-র বিষয়ে লিখেছিলেন এবং ওঁরা চাইছেন আমি এই বিষয়ে ওঁদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করি।
ভাই ও বোনেরা, এই বছরের বাজেটে কৃষকদের ফসলের উচিৎ মূল্য দেওয়ার জন্য এক বিরাট সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটা ঠিক করা হয়েছে যে, নির্দিষ্ট ফসলের জন্যে MSP, কম করে লগ্নির দেড় গুণ করা হবে। যদি আমি বিস্তারিত ভাবে বলি, তাহলে MSP-র জন্য যে লগ্নি করা হবে, তাতে অন্য শ্রমিক যাঁরা মেহনত আর পরিশ্রম করেন, তাঁদের পরিশ্রম, গৃহপালিত পশুর খরচ, মেশিনের খরচ অথবা ভাড়ায় নেওয়া মেশিন, পশুর খরচ, বীজের মূল্য, ব্যবহার করা হয়েছে এমন সব ধরনের সারের দাম, সেচের খরচ, রাজ্য সরকারের দেওয়া রাজস্ব, কার্যকরী মূলধন-এর উপর দেওয়া সুদ, যদি জমি লিজ-এ নেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে তার ভাড়া। আর শুধু এই নয়, কৃষক নিজে যে পরিশ্রম করে, যদি তার পরিবারের কেউ কৃষিকাজে শ্রম দেয়, তার মূল্যও উৎপাদন লগ্নিতে জোড়া হবে। এছাড়া, কৃষকদের ফসলের উচিৎ দাম যাতে দেওয়া যায়, তার জন্য দেশে ‘Agriculture Marketing Reform’-এর উপর ও বিস্তারিত কাজ চলছে। গ্রামের স্থানীয় বাজার, পাইকারী বাজার যাতে বিশ্ববাজারের সঙ্গে যুক্ত হয়, তার চেষ্টা চলছে। কৃষকদের নিজের উৎপাদন বিক্রি করার জন্য যাতে অনেক দূর যেতে না হয় — তার জন্য দেশের বাইশ হাজার গ্রামীণ হাটের জরুরি পরিকাঠামোর সঙ্গে upgrade করে APMC আর e-NAM Platform–এর সঙ্গে যুক্ত করা হবে। তার মানে, একপ্রকার ক্ষেতের থেকে দেশের যে কোনও বাজারের সঙ্গে connect করা যায়, এমন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এ-বছর মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশতবর্ষ উৎসবের শুভারম্ভ হচ্ছে। এ এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। দেশ কীভাবে এই উৎসব উদ্যাপন করবে? ‘স্বচ্ছ ভারত’ তো আমাদের সঙ্কল্প হিসেবে আছেই, ১২৫ কোটি দেশবাসী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কীভাবে গান্ধীজীকে এর থেকে শ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধাঞ্জলী জ্ঞাপন করতে পারে? কি কি নতুন কার্যক্রম তৈরি করা যেতে পারে? কি কি নতুন উপায়ে ভাবা যেতে পারে? আপনাদের কাছে অনুরোধ, আপনারা mygov-এর মাধ্যমে আপনাদের চিন্তাভাবনা সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিন। ‘গান্ধী ১৫০’–এর লোগো কী হতে পারে? স্লোগান কী হতে পারে, এই সব বিষয়ে আপনাদের কি পরামর্শ তা জানান। আমরা সবাই মিলে বাপুজীর এক স্মরণীয় শ্রদ্ধাঞ্জলীর আয়োজন করব, আর বাপুজীর থেকে প্রেরণা নিয়ে আমাদের দেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাব।
(ফোন)
নমস্কার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজী! আমি গুড়গাঁও থেকে প্রীতি চতুর্বেদী বলছি। আপনি ‘স্বচ্ছ ভারত’ অভিযানকে এক সফল অভিযানে পরিণত করেছেন। এখন সময় এসেছে, যে আমরা ‘সুস্থ ভারত’ অভিযান’কেও একই ভাবে সফল করে তুলব। এই অভিযানের জন্য আপনি মানুষ, সরকার, প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে উজ্জীবিত করেছেন, এই বিষয়ে আপনি আমাদের কিছু বলুন, ধন্যবাদ!
ধন্যবাদ! আপনি সঠিক বলেছেন। আমি এটা মানি যে, ‘স্বচ্ছ ভারত’ আর ‘সুস্থ ভারত’ দুজনে একে অপরের পরিপূরক। স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে আজ দেশ ‘conventional approach’ অর্থাৎ প্রচলিত পদ্ধতিকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে। স্বাস্থ্যের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত কাজ আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিল। এখন সমস্ত বিভাগ ও মন্ত্রক — সে স্বচ্ছতা মন্ত্রক হোক বা আয়ুষ মন্ত্রক, রাসায়ণিক ও সার মন্ত্রক হোক বা উপভোক্তা মন্ত্রক, মহিলা ও শিশুবিকাশ মন্ত্রক হোক কিংবা বিভিন্ন রাজ্য সরকার—সবাই এক সঙ্গে ‘সুস্থ ভারত’-এর জন্য কাজ করে চলেছে। ‘Preventive Health’-এর পাশাপাশি ‘Affordable Health’-এর ওপরও যথেষ্ট জোর দেওয়া হচ্ছে। Preventive Health Care খুব সস্তা এবং সহজও বটে। আমরা Preventive Health Care সম্পর্কে যতটা সচেতন হব, ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজ — সবাই এতে লাভবান হবে। জীবন সুস্থ রাখার প্রথম শর্তই হল পরিচ্ছন্নতা। আমরা সবাই এর জন্য বদ্ধপরিকর। এর পরিণাম এই যে গত চার বছরে ‘স্বচ্ছতা অভিযান’ দ্বিগুণ হয়ে আশি শতাংশ কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া, সারা দেশে ‘Health Wellness Centre’ তৈরি করার দিকে জোর কদমে কাজ চলছে। ‘Preventive Health Care’ হিসেবে যোগ নতুন ভাবে বিশ্বে নিজের একটা পরিচিতি তৈরি করেছে। যোগ সুস্থ ও সক্ষম দুই-ই হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এটা আমাদের সবার দায়বদ্ধতার পরিণাম যে, যোগ আজ এক গণ আন্দোলন হিসেবে গড়ে উঠেছে এবং ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। এই বছর ‘আন্তর্জাতিক যোগ দিবস’ ২১-শে জুন — আর ১০০ দিনও বাকি নেই। গত তিনটি ‘আন্তর্জাতিক যোগা দিবস’-এ দেশ-বিদেশের প্রতিটি জায়গায় সমস্ত মানুষ খুব উৎসাহের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এবারও আমাদের এটা সুনিশ্চিত করতে হবে যে, আমরা নিজেরা যোগ করব এবং পরিবার-বন্ধু সবাইকে যোগ করার জন্য উৎসাহ দেব। নতুন ও অভিনব রূপে শিশু, তরুণ এবং বয়স্ক মানুষদের মধ্যে, পুরুষ হোক বা মহিলা — যোগকে জনপ্রিয় করে তুলতে হবে। দেশের টিভি এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া যোগ নিয়ে আলাদা আলাদা অনুষ্ঠান করে থাকে। কিন্তু এখন থেকে ‘যোগা দিবস’ পর্যন্ত এক অভিযান হিসেবে যোগের প্রতি সচেতনতা কি তৈরি করতে পারবেন?
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি যোগাসনের শিক্ষক নই, কিন্তু আমি ‘যোগাভ্যাসী’। কিছু মানুষ তাঁদের নিজ নিজ চিন্তাধারার মাধ্যমে আমাকে যোগাসনের শিক্ষক বানিয়ে তুলেছেন। আর আমার যোগাভ্যাসের থ্রি-ডি অ্যানিমেটেড ভিডিও বানিয়ে ফেলেছেন। আমি আপনাদের সঙ্গে এই ভিডিও শেয়ার করতে চাই, যাতে আমরা একসঙ্গে আসন ও প্রাণায়াম অভ্যাস করতে পারি। স্বাস্থ্য পরিষেবা অবাধ হোক, সবার সাধ্যের মধ্যে হোক, জনসাধারণের জন্য সস্তা আর সুলভ হোক – এর জন্য পর্যাপ্ত চেষ্টা করা হচ্ছে। আজ সমগ্র দেশে তিন হাজারের বেশি জন-ঔষধি কেন্দ্র খোলা হয়েছে, যেখানে ৮০০-রও বেশি ওষুধ কম দামে বিক্রির ব্যাবস্থা করা হয়েছে। আরও নতুন কেন্দ্র খোলা হচ্ছে। ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের শ্রোতাদের কাছে আমার অনুরোধ, অভাবী মানুষের কাছে জন-ঔষধি কেন্দ্রের কথা পৌঁছে দিন, ওঁদের ওষুধের খরচ অনেক কমে যাবে। ওঁদের অনেক উপকার হবে। হৃদরোগীদের জন্য Heart Stent-এর দাম ৮৫% পর্যন্ত কম করা হয়েছে। কৃত্রিম হাঁটুর খরচও নিয়ন্ত্রণ করে ৫০ থেকে ৭০% পর্যন্ত কম করা গেছে। ‘আয়ুষ্মান ভারত’ যোজনা-র অন্তর্গত প্রায় ১০ কোটি পরিবার অর্থাৎ ৫০ কোটির কাছাকাছি মানুষের চিকিৎসার জন্য এক বছরে ৫ লাখ টাকার খরচ ভারত সরকার এবং বীমা কোম্পানি মিলে বহন করবে। দেশের বর্তমান ৪৭৯-টি মেডিকেল কলেজের MBBS-এর আসন সংখ্যা বাড়িয়ে প্রায় ৬৮ হাজার করা হয়েছে। সমগ্র দেশের জনসাধারণের জন্য উন্নত চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য–পরিষেবা পৌঁছে দিতে বিভিন্ন রাজ্যে নতুন AIIMS-এর স্থাপন করা হচ্ছে। প্রতি তিনটি জেলার মধ্যে একটি করে নতুন মেডিক্যাল কলেজ খোলা হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে দেশকে যক্ষ্মা-মুক্ত করার লক্ষ্য রাখা হয়েছে। এটা বড় কঠিন কাজ। প্রত্যেক মানুষের কাছে এই সচেতনতা পৌঁছানোর জন্য আপনার সাহায্য দরকার। যক্ষ্মা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমাদের সবাইকে একসঙ্গে চেষ্টা করতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ১৪-ই এপ্রিল ডক্টর বাবাসাহেব আম্বেদকরের জন্ম-জয়ন্তী। অনেক বছর আগে ডক্টর বাবাসাহেব আম্বেদকর ভারতে শিল্পায়নের কথা বলেছিলেন। ওঁর ভাবনায় শিল্প এমনই এক শক্তিশালী মাধ্যম, যার প্রভাবে দেশের দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম মানুষের আয়ের ব্যবস্থা সম্ভব হবে। আজ, যখন সারা দেশে ‘মেক ইন ইণ্ডিয়া’ প্রকল্প সাফল্যের সঙ্গে অগ্রসর হচ্ছে, তখন তাঁর সেই স্বপ্নদর্শীতাই আমাদের প্রেরণা। বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের অবস্থান এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত। সবচেয়ে বেশি বিদেশী বিনিয়োগ অর্থাৎ FDI ভারতবর্ষেই হচ্ছে। বিশ্ববাণিজ্য এখন ভারতের দিকেই তাকিয়ে আছে। কারণ, আমরাই এখন বিনিয়োগ আর নতুন উদ্ভাবনার কেন্দ্র হয়ে উঠছি। শিল্পায়নের এই জোয়ার শহর থেকেই উঠবে বলে মনে করতেন ডক্টর আম্বেদকর। আর তাই দেশের নগরায়নের উপর বিশেষ করে ভরসা করতেন। তাঁর এই স্বপ্নকে পাথেয় করে আজ দেশে ‘স্মার্ট সিটি মিশন’ এবং ‘আরবান মিশন’ প্রকল্প শুরু হয়ে গিয়েছে।
আমার প্রিয় নাগরিকগণ,
আগামী ১৪-ই এপ্রিল ডক্টর বাবাসাহেব আম্বেদকরের জন্মজয়ন্তী। অনেক বছর আগে ডক্টর আম্বেডকর ভারতের শিল্পায়নের কথা বলেছিলেন। ওঁর ভাবনায় শিল্পএমন’ই এক শক্তিশালী মাধ্যম, যার প্রভাবে দেশের দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম মানুষের আয়ের ব্যবস্থা হবে। ডক্টর আম্বেদকর স্বপ্ন দেখেছিলেন: ভারত এক সময়ে শ্রম-শিল্পের এক শক্তিশালী কেন্দ্রবিন্দু হবে। আজকে যখন সারা দেশে‘মেকইনইন্ডিয়া’প্রকল্প সাফল্যের সঙ্গে অগ্রসর হচ্ছে, তখন তাঁর সেই স্বপ্ন দর্শিতা’ই আমাদের প্রেরণা। বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের অবস্থান এখন এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো, আর সবচেয়ে বেশি বিদেশী বিনিয়োগ অর্থাৎ FDI ভারতবর্ষেই হচ্ছে। বিশ্ববাণিজ্য এখন ভারতের দিকেই তাকিয়ে আছে কারণ আমরাই এখন বিনিয়োগ আর নতুন প্রথা উদ্ভাবনের কেন্দ্র হয়ে উঠছি।
শিল্পায়নের এই জোয়ার শহর থেকেই উঠবে বলে মনে করতেন ডক্টর আম্বেদকর আর তাই দেশের নগরায়ন এর ওপর বিশেষভাবে ভরসা করতেন। তাঁর এই স্বপ্নকে পাথেয় করে আজ দেশে ‘স্মার্টসিটিসমিশন’ এবং নগরায়ণ প্রকল্প শুরু হয়ে গেছে। শুধু বড় শহর নয়, আজ দেশের ছোট ছোট জনপদকেও সবরকমের আধুনিক সুযোগ সুবিধার আওতায় আনার চেষ্টা চলছে: মসৃণ রাস্তাঘাট- রাজপথ থেকে পরিষ্কার পানীয় জল, স্বাস্থ্য আর শিক্ষা থেকে ডিজিটাল সংযোগ, ইত্যাদি।
ডক্টর আম্বেদকর স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং আত্মনির্ভরতায় গভীরভাবে বিশ্বাসী ছিলেন।
দেশের একটি মানুষও যেন দারিদ্র্যের মধ্যে বেঁচে না থাকে, এইরকম চাইতেন ডক্টর আম্বেদকর।
দরিদ্রদের দান দিয়ে যে দারিদ্র্য ঘোচানো সম্ভব নয়, এই কথাটিও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন।
আজ ‘মুদ্রা যোজনা’, ‘স্টার্ট-up ইন্ডিয়া’, ‘স্ট্যান্ড-up ইন্ডিয়া’র মতো প্রকল্পগুলি আমাদের দেশে যুব-উদ্যোক্তা – যুব-উদ্ভাবক তৈরি করছে। ১৯৩০ আর ১৯৪০-এর দশকগুলিতে যখন শুধুসড়ক, রাজপথ আর রেল সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করা হচ্ছিল, সেই সময়েও ডক্টর আম্বেদকর বন্দর আর জলপথ তৈরির কথা বলেছিলেন। বাবাসাহেব আম্বেদকর জলশক্তি-কেরাষ্ট্র-শক্তির সমার্থক মনে করতেন। দেশের উন্নতি তখনই হবে যখন জলের ব্যবহার সঠিকভাবে হবে। তাঁর মতন দূরদর্শী মানুষ সেইসময়েই বলেছিলেন, নদী আর উপত্যকা পরিচালন সংসদের কথা। কল্পনা করেছিলেন জলসংরক্ষণ আর ব্যবহারের জন্যে থাকবে নানান কার্যনির্বাহী সমিতি। আজ দেশে জলপথ আর বন্দরের সম্প্রসারণের ঐতিহাসিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন সমুদ্রতটে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন বন্দর আর পুরোনো বন্দরগুলির সংস্কারের কাজও হচ্ছে একইসঙ্গে।
১৯৪০ এর দশকে যখন সারা পৃথিবী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, দুই শক্তিশালী ক্ষমতার মধ্যে শীতল যুদ্ধ আর দেশভাগের দুশ্চিন্তায় উদ্বেল, ঠিক সেইসময়ে ডক্টর আম্বেদকর ‘টিম ইন্ডিয়া’ অথবা ভারতের আত্মার কল্পনা করেছিলেন। উনি Federalism বা মৈত্রীতন্ত্রের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন আর তাই মনে করতেন যে দেশের উন্নতির জন্যে কেন্দ্র আর রাজ্যগুলিকে একসঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে। আজ আমরা দেশ-শাসনের প্রত্যেকটি স্তরে সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্র বা cooperative federalism এবং আরও একধাপ এগিয়ে প্রতিযোগিতামূলক সহযোগিতা সম্পন্ন যুক্তরাষ্ট্রের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছি।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি হল, দেশের পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ভুক্ত আমার মত অসংখ্য মানুষের কাছে ডক্টর আম্বেডকর এক প্রেরণা। একটি গরিব পরিবারে জন্ম নিয়েও যে নিজের স্বপ্নকে বাস্তব করা যায়, তার নিদর্শন উনি নিজেই। একটা সময় ডক্টর আম্বেদকরকেও শুনতে হয়েছে বিদ্রুপ, ওঁকে নিয়ে হয়েছে অনেক ঠাট্টা। হতোদ্যম করার চেষ্টা হয়েছে বহুবার, যাতে গরিব পরিবারের একটি ছেলে জীবনে সফলনা হতে পারে।
কিন্তু ‘New India’র ছবিটি একেবারেই আলাদা : এ এমন এক ভারতবর্ষ যা আম্বেদকরের, যা গরিবের, যা সব পিছিয়ে পড়া মানুষের।
ডক্টর আম্বেডকরের জন্মজয়ন্তীকে ঘিরে ১৪ই এপ্রিল থেকে ৫ই মে সারা দেশে ‘গ্রাম স্বরাজ অভিযান’-এর আয়োজন করা হচ্ছে। দেশব্যাপী এই অভিযানে থাকবে গ্রামোন্নয়ন, দরিদ্রকল্যাণ আর সামাজিক ন্যায়ের নানান কার্যক্রম। আপনাদের প্রতি আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ যে, এই জাতীয় অভিযানে সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছুদিনের মধ্যেই পরপর অনেকগুলি উৎসব, পার্বন আসছে : মহাবীর জয়ন্তী, হনুমান জয়ন্তী, ইস্টার আর বৈশাখী। মহাবীর জয়ন্তী ভগবান মহাবীরের ত্যাগ আর তপস্যাকে স্মরণ করার দিন। অহিংসার প্রচারক ভগবান মহাবীরের জীবন আর দর্শন আমাদের কাছে প্রেরণা। সকল দেশবাসীকে আমি জানাই মহাবীর জয়ন্তীর শুভেচ্ছা।
ইস্টার এলেই আমাদের মনে করি য়ে দেয় যীশু খ্রীষ্টের কথা, যিনি চেয়েছিলেন মানবতার শান্তি, শুনিয়েছিলেন সদ্ভাব, ন্যায়, দয়া আর করুণারবাণী। এপ্রিল মাসে পঞ্জাব আর পশ্চিম ভারতে বৈশাখীর উৎসব পালিত হবে, ওই সময় বিহারে জুড়শিতল এবং সতুবাইন, আসামে বিহু এবং পশ্চিমবঙ্গে পয়লা বৈশাখের আনন্দ-উল্লাসে ছেয়ে থাকবে। এই সমস্ত পার্বণ কোনও না কোনও ভাবে আমাদের কৃষিকাজ ও অন্নদাতাদের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে। এই সব উৎসবের মাধ্যমে আমরা ফসল হিসেবে পাওয়া অমূল্য উপহারের জন্য প্রকৃতিকে ধন্যবাদ দিই। আবার একবার আপনাদের সবাইকে আসন্ন সকল উৎসবের অনেক শুভকামনা জানাই! অনেক অনেক ধন্যবাদ!
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার ! আজ ‘মন কি বাত’-এর শুরুতেইএক ফোন কলের উল্লেখ করব —
(ফোন)
প্রিয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, আমি কোমল ত্রিপাঠীমীরাট থেকে বলছি। ২৮ তারিখ ‘ন্যাশনাল সায়েন্স ডে’। ভারতের প্রগতি আর তার উন্নয়নপুরোপুরি বিজ্ঞানের সঙ্গে জড়িত। আমরা এক্ষেত্রে যত গবেষণা আর উদ্ভাবনকরব ততই আমরা এগিয়ে যাব আর উন্নতি করব। আপনি কি আমাদের তরুণদের উৎসাহিত করতে এমনকিছু কথা বলতে পারেন, যাতে তারা বৈজ্ঞানিক উপায়ে নিজেদের ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে যায়,আর আমাদের দেশকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে? ধন্যবাদ!
আপনার ফোন কলের জন্য অনেকঅনেক ধন্যবাদ। বিজ্ঞান নিয়ে অনেক প্রশ্ন আমার তরুণ সাথীরা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছে,কিছু কিছু লিখেও পাঠাচ্ছে। আমরা দেখেছি যে সমুদ্রের রঙ নীল দেখায়, কিন্তু আমরানিজেদের রোজকার অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে জলের কোনও রঙ হয় না। আমরা কি কখনও ভেবেছি যেনদী হোক, সমুদ্র হোক, জল রঙিন হয়ে যায় কেন? এই প্রশ্নই
১৯২০-র দশকে এক যুবকের মনে এসেছিল। এই প্রশ্নই আধুনিক ভারতে এক মহান বৈজ্ঞানিকেরজন্ম দিয়েছিল। যখন আমরা বিজ্ঞানের কথা বলি, তখন সবার আগে ভারতরত্ন স্যার সি. ভি.রমনের নাম সামনে আসে। ‘লাইট স্ক্যাটারিং’ বা বিকিরণের বিক্ষেপের উপর উৎকৃষ্ট কাজকরার জন্য তাঁকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। ওঁর এই আবিষ্কার ‘রমন এফেক্ট’ নামেবিখ্যাত। আমরা প্রতি বছর ২৮শে ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় বিজ্ঞান দিবস’ হিসাবে পালন করি,কারণ বলা হয়, এই দিনে উনি ‘লাইট স্ক্যাটারিং’-এর আবিষ্কার করেছিলেন। যার জন্যতাঁকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। এই দেশ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অনেক মহানবৈজ্ঞানিকের জন্ম দিয়েছে। যেখানে এক দিকে মহান গণিতজ্ঞ বৌধায়ন, ভাস্কর,ব্রহ্মগুপ্ত আর আর্যভট্টের পরম্পরা রয়েছে সেখানে অন্যদিকে চিকিৎসার ক্ষেত্রে চরকআর সুশ্রুত আমাদের গৌরব। স্যার জগদীশ চন্দ্র বোস আর হরগোবিন্দ খুরানা থেকে শুরুকরে সত্যেন্দ্র নাথ বোসের মত বিজ্ঞানীরা ভারতের গৌরব। সত্যেন্দ্র নাথ বোসের নামেতো বিখ্যাত কণা, বোসনের নামকরণও করা হয়েছে। সম্প্রতি মুম্বাইয়ের এক অনুষ্ঠানেঅংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলাম আমি — ‘ওয়াধওয়ানি ইনস্টিটিউট ফর আর্টিফিশিয়্যালইন্টেলিজেন্স’ উদ্বোধনের অনুষ্ঠান। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যে অত্যাশ্চর্য কাজ হচ্ছেতা জানা বেশ আকর্ষণীয়। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সাহায্যে রোবোট, বট আরনির্ধারিত কাজ করার উপযোগী মেশিন বানানোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা পাওয়া যায়। আজকাল সেল্ফলার্নিং-এর মাধ্যমে বিভিন্ন মেশিন নিজের ইন্টেলিজেন্সকে আরও স্মার্ট করে তুলছে। এইটেকনোলজি গরীব, বঞ্চিত এবং অসহায় মানুষদের জীবনকে উন্নততর করার কাজে আসতে পারে।আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের এই অনুষ্ঠানে আমি বিজ্ঞানীদের কাছে জানতে চাইলাম যেদিব্যাঙ্গ ভাই আর বোনেদের জীবন সুগম করতে কোন্ ধরনের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সেরসাহায্য পাওয়া যেতে পারে? আমরা কি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে প্রাকৃতিকবিপর্যয় সম্পর্কে আরও ভালো পূর্বাভাস পেতে পারি? কৃষকের ফসল ফলানোর ব্যাপারে কোনোসাহায্য করতে পারি? আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি স্বাস্থ্য পরিষেবার নাগালপাওয়াকে সহজ করতে পারে? অসুখবিসুখের আধুনিক চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে?
কিছুদিন আগে ইজরায়েলেরপ্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গুজরাতের আমেদাবাদে ‘আই ক্রিয়েট’ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে যাওয়ারসুযোগ হয়েছিল আমার। সেখানে এক নব্য যুবক বলল যে সে এমন এক ডিজিটাল ইনস্ট্রুমেণ্টবানিয়েছে যেখানে, যে কেউ যদি কথা বলতে না পারে তবে সেই ইনস্ট্রুমেণ্টের মাধ্যমেনিজের কথা লিখে দিলে সেটা ভয়েসে পরিবর্তিত হয়ে যায় আর আপনি এমনভাবে কথাবার্তাচালাতে পারেন, যেমনটা আপনি একজন কথা বলতে সক্ষম ব্যক্তির সঙ্গে করেন। আমার মনে হয়আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের প্রয়োগ আমরা এমনই নানা বিষয়ে করতে পারি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভ্যালুনিউট্রাল। এর মধ্যে আপনা-আপনি মূল্য যুক্ত হয়ে নেই। যে কোনও মেশিন সেই কাজই করবেযা আমরা চাইব। কিন্তু এটা আমাদের উপর নির্ভর করে যে আমরা মেশিন থেকে কেমন কাজ চাই।এখানে মানবিক লক্ষ্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। শুধুমাত্র মানুষের কল্যাণের জন্যবিজ্ঞানের ব্যবহার, মানব জীবনের সর্বোচ্চ শিখর ছোঁয়ার জন্য এর প্রয়োগ করতে হবে।
লাইট বালবের আবিষ্কর্তা টমাসআলভা এডিসন নিজের কাজে অনেকবার অসফল হন। এক বার এ ব্যাপারে তাঁকে প্রশ্ন করা হলেউত্তরে তিনি বলেন – “আমি লাইট বালব না তৈরির দশ হাজার উপায় অনুসন্ধান করেছি”,অর্থাৎ এডিসন নিজের অসফলতাকেও নিজের শক্তি বানিয়ে নেন। ঘটনাক্রমে এ এক সৌভাগ্যেরব্যাপার যে আজ আমি মহর্ষি অরবিন্দের কর্মভূমি ‘অরোভিল’-এ রয়েছি। এক বিপ্লবী হিসাবেতিনি ব্রিটিশ প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করেন, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন, তাদের শাসনকেপ্রশ্নের মুখে দাঁড় করান। এইভাবে তিনি এক মহান ঋষির মত জীবনের প্রতিটি ব্যাপারেপ্রশ্ন তোলেন, উত্তর খুঁজে বের করেন আর মানবতাকে পথ দেখান। সত্যকে জানতে বার বারপ্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার আগ্রহ গুরুত্বপূর্ণ। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের পেছনে আসল প্রেরণাতো এটাই। ততক্ষণ শান্তিতে বসা যাবে না যতক্ষণ — কেন, কী আর কীভাবে-জাতীয় প্রশ্নেরউত্তর না পাওয়া যায়। ‘ন্যাশনাল সায়েন্স ডে’ উপলক্ষে আমাদের বৈজ্ঞানিকরা এবং বিজ্ঞানেরসঙ্গে জুড়ে থাকা সব মানুষকে অভিনন্দন জানাচ্ছি আমি। আমাদের তরুণ প্রজন্ম, সত্যআর জ্ঞানের অনুসন্ধানের জন্য অনুপ্রাণিত হোক, বিজ্ঞানের সাহায্যে সমাজের সেবা করারজন্য অনুপ্রাণিত হোক, এর জন্য আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা!
বন্ধুরা, সঙ্কটের সময়‘সেফটি’, ‘ Disaster ’ এই সব ব্যাপারে অনেকবারঅনেক বার্তা পাই আমি। মানুষজন আমাকে কিছু-না-কিছু লিখে পাঠান। পুনে থেকে শ্রীমানরবীন্দ্র সিংহ
‘নরেন্দ্রমোদী মোবাইল অ্যাপ’-এ অকুপেশন্যাল সেফটি নিয়ে নিজের মন্তব্য পাঠিয়েছেন।উনি লিখেছেন যে আমাদের দেশে কলকারখানা আর নির্মাণ কাজের জায়গায় সেফটিস্ট্যান্ডার্ড তেমন ভালো নয়। আগামী চৌঠা মার্চ ভারতের ‘ন্যাশনাল সেফটি ডে’, তাইপ্রধানমন্ত্রী নিজের ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে সেফটি নিয়ে কথা বলুন, যাতে মানুষেরমধ্যে ‘সেফটি’ নিয়ে চেতনা বাড়ে।
যখন আমরা PublicSafety – র বিষয়ে কথা বলি , তখন দুটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয় — প্রথমটি pro-activeness এবং দ্বিতীয়টি preparedness । সুরক্ষা দুই প্রকারের হয়। এক —
যা কোনও আকস্মিক দুর্যোগের সময় প্রয়োজন হয় , SafetyDuring Disaster এবং দুই —
যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আবশ্যক — Safety in EverydayLife । যদি আমরা দৈনিক জীবনে সুরক্ষা বিষয়ে সচেতন না হই , যদি সুরক্ষাকে আয়ত্ত করতে না পারি , তবে কোনও বড় বিপদ বা দুর্বিপাকের সময় সুরক্ষাব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা আরও মুশকিল। রাস্তাঘাটে যাতায়াতের সময় বহু নোটিশ বোর্ড আমাদের চোখে পড়ে , যাতে লেখা থাকে —
· সতর্কতা সরলো — দুর্ঘটনা ঘটলো। ।
· এক ভুলেই হয় লোকসান
হারায় খুশি , হারায় প্রাণ। ।
· দুনিয়া ছাড়ার তাড়া ছাড়ো
সুরক্ষার সাথে সম্পর্ক গড়ো। ।
· সুরক্ষা নিয়ে ছেলেখেলা ঠিক নয়
জীবনের মূল্য বোঝা হবে দায়। ।
এই সতর্কবার্তাগুলিকে আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গুরুত্ব দিই না। প্রাকৃতিক দুর্যোগকে বাদ দিলে দেখা যাবে অধিকাংশ দুর্ঘটনাই কিন্তু আমাদের ভুল – ত্রুটির পরিণাম। যদি আমরা সতর্ক থাকি , আবশ্যক নিয়মাবলী মেনে চলি , তাহলে আমরা নিজেদের জীবন তো বাঁচাতে পারবই , পাশাপাশি বড় কোনও দুর্ঘটনার থেকে সমাজকেও রক্ষা করতে পারব। কখনও কখনও লক্ষ্য করেছি , কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা নিয়ে নানান নির্দেশিকা দেওয়া রয়েছে , কিন্তু সেই নিয়ম একেবারেই পালন করা হয় না। আমার অনুরোধ , যে সমস্ত মহানগরপালিকা , নগরপালিকাগুলির কাছে ফায়ার ব্রিগেড আছে , তারা সপ্তাহে একবার না হলেও মাসে অন্তত একবার বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে ছাত্র – ছাত্রীদের সামনে মক ড্রিল করুক। এতে দুটি উপকার হবে — দমকলের সতর্ক থাকার অভ্যাস হবে এবং নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাও অনেক কিছু শিখতে পারবে। এই পুরো প্রক্রিয়াতে বাড়তি কোনও খরচের ব্যাপার নেই , বরং একপ্রকার শিক্ষাপদ্ধতির প্রচলন হতে পারে এবং এই প্রথা প্রবর্তনের বিষয়ে আমি সব সময়ে সচেষ্ট ।
দুর্যোগ বা Disaster – এর প্রসঙ্গে বলা প্রয়োজন যে , ভারতবর্ষ ভৌগোলিক এবং পরিবেশগত দিক থেকে বৈচিত্র্যপূর্ণ। এই দেশ বহু আপদ – বিপদের সম্মুখীন হয়েছে — তা প্রাকৃতিক দুর্যোগই হোক বা মনুষ্য – সৃষ্ট। যেমন , রাসায়নিক ও কল – কারখানার দুর্ঘটনা। আজ NationalDisaster Management Authority অর্থাৎ NDMA সারা দেশে দুর্যোগ মোকাবিলার বিষয়ে নেতৃত্ব দেয়। ভূমিকম্প হোক , বন্যা হোক , সাইক্লোন কিংবা ধ্বস — যে কোনও রকমের দুর্যোগের সময় RescueOperation – এর জন্য NDMA তৎক্ষণাৎ অকুস্থলে হাজির হয়। তারা guidelines জারি করে , পাশাপাশি CapacityBuilding – এর জন্য নিয়মিত training – এর ব্যবস্থাও করে। সাইক্লোন কিংবা বণ্যা – প্রবণ জেলাগুলিতে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ‘ আপদা – মিত্র ’ নামক একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। দু – তিন বছর আগে পর্যন্ত লু অথবা
হিট ওয়েভ – এ প্রতি বছর হাজারো মানুষ প্রাণ হারাতো। এরপর থেকে NDMA,Heat Wave মোকাবিলা সম্পর্কিত workshop – এর আয়োজন করে , জনসচেতনতা বাড়াতে অভিযান চালায়। আবহাওয়া দপ্তর সঠিক পূর্বাভাস দেয়। সবার সম্মিলিত উদ্যোগে ভাল পরিণাম আমরা পাই।
২০১৭ – তে তাপ প্রবাহের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা অপ্রত্যাশিত ভাবে কমে দাঁড়ায় প্রায় ২২০ – তে। এর থেকে বোঝা যায় , যদি আমরা সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিই , তবেই আমরা সুরক্ষিত থাকতে পারব ।
সমাজে এই ধরনের কাজে নিযুক্ত বহু মানুষ আছেন , সংগঠন আছে , সচেতন নাগরিক আছেন। আমি তাঁদের সকলকে সম্মান জানাতে চাই , যাঁরা কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে মুহূর্তের মধ্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন উদ্ধারকাজে হাত লাগাতে ও পীড়িতদের সাহায্য করতে। এই রকম নাম – না – জানা ‘ হিরো ’ দের সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। এছাড়াও বিপদে – আপদে সব সময় হাজির থাকেন Fireand Rescue Services , NationalDisaster Response Forces, Para-Military Force ও সশস্ত্র বাহিনীর বীর জওয়ানরা , যাঁরা নিজেদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে অন্যদের সঙ্কট থেকে উদ্ধার করেন। NCC , Scout – এর মত সংগঠনগুলিও আজকাল এই ধরনের কাজের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে , সরাসরি অংশ গ্রহণও করছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ মিলে যেমন JointMilitary Exercise করে , তেমনই DisasterManagement – এর জন্যও JointExercise করা হবে না কেন ! আমরা এই বিষয়ে উদ্যোগী হয়ে এমনই এক JointDisaster Management Exercise – এর প্রবর্তন করি। কিছুদিন আগে ভারতের নেতৃত্বে ঘটে যাওয়া এই exercise – এ অংশগ্রহণ করে ভারত তথা অন্যান্য BIMSTEC দেশগুলি , অর্থাৎ , বাংলাদেশ , মায়ানমার , শ্রীলঙ্কা , থাইল্যাণ্ড , ভুটান ও নেপাল। এই উদ্যোগ প্রথম এবং বড় মাপের মানবিক প্রচেষ্টা। আমাদের এক RiskConscious Society হয়ে উঠতে হবে। আমাদের সংস্কৃতিতে Safetyof Values, অর্থাৎ , মূল্যবোধের সুরক্ষা নিয়ে অনেক আলোচনা হয় , কিন্তু আমাদের Valuesof Safety অর্থাৎ সুরক্ষার মূল্য বোঝাও ততখানি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এই বিষয়টিকে দৈনন্দিন জীবনের অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন ।
আমরা দেখেছি , আমরা যতবার বিমানযাত্রা করি , বিমানের ভেতর এয়ার হোস্টেস প্রথমেই সুরক্ষা সম্পর্কিত কতগুলি নির্দেশ দেন। আমরা সবাই সেগুলি বহুবার শুনেছি। কিন্তু আজ যদি কেউ আমাদের বিমানে নিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করে , কোন জিনিসটা কোথায় , লাইভ জ্যাকেট কোথায় রাখা আছে , কীভাবে তা ব্যবহার করতে হয় ইত্যাদি আমি নিশ্চিত , কেউ এর উত্তর দিতে পারবে না। তাহলে মানে দাঁড়াল এই যে — যথাযথভাবে জানানোর ব্যবস্থা কি ছিল ? ছিল। সরাসরি সেই দিকে মন দিয়ে দেখার সম্ভাবনা ছিল ? ছিল। কিন্তু আমরা তা করি না। কেন ? কেননা , আমাদের স্বভাবে সচেতনতা নেই। আর সেই জন্যই এরোপ্লেনে বসে আমরা সমস্ত ঘোষণা শুনি বটে , কিন্তু এই ঘোষণা যে আমার জন্যও প্রযোজ্য , সেটা আমাদের মনেই হয় না। ঠিক একই রকম অভিজ্ঞতা আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। আমাদের এটা মনে করা উচিত নয় ‘ Safety ’ বা ‘ নিরাপত্তা ’ র বিষয়টা অন্যদের জন্য। আমরা প্রত্যেকে যদি নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন হয়ে যাই , তবে সমাজের নিরাপত্তাও তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় ।
আমার প্রিয় দেশবাসী , এই বারের বাজেটে ‘ স্বচ্ছ ভারত ’ তৈরির লক্ষ্যে গ্রামে গ্রামে বায়োগ্যাসের মাধ্যমে WasteTo Wealth এবং Wasteto Energy উৎপাদনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এর জন্য প্রচেষ্টা শুরু হয়ে গেছে ও এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ GOBAR Dhan ’ অর্থাৎ , Galvanising OrganicBio-Agro Resources । এই GOBAR Dhan যোজনার উদ্দেশ্য হল — গ্রামগুলোকে পরিষ্কার – পরিচ্ছন্ন করে তোলা এবং পশু – প্রাণিদের গোবর এবং চাষবাসের পর ক্ষেতে পড়ে থাকা অবশিষ্ট বর্জ্যকে compost এবং Bio-gas – এ পরিবর্তিত করে তার থেকে আয় ও শক্তি উৎপাদন করা। গবাদি পশুর সংখ্যা সারা বিশ্বের নিরিখে ভারতে সবচেয়ে বেশি। ভারতে গবাদি পশুর সংখ্যা হল প্রায় ৩০ কোটি আর গোবর গ্যাসের উৎপাদনমাত্রা দিনপ্রতি প্রায় ৩০ লক্ষ টন। কোনও কোনও ইউরোপীয় দেশে এবং চিনে পশুপ্রাণীর গোবর এবং অন্যান্য জৈবিক অবশেষের ব্যবহার শক্তি উৎপাদনের জন্য করা হয়। কিন্তু ভারতে এখনও এর পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করা হচ্ছিল না।
স্বচ্ছ ভারতের ‘ মিশন গ্রামীণ ’ প্রকল্পে একে অন্তর্ভুক্ত করে আমরা এই দিকে ক্রমশঃ অগ্রসর হচ্ছি ।
গবাদি পশুর গোবর , কৃষিকাজের পর অবশিষ্ট বর্জ্য , রান্নাঘরের বর্জ্য — এই সমস্তগুলিকেই বায়ো – গ্যাস নির্ভর শক্তি উৎপাদনের কাজে লাগাবার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ‘ গোবর – ধন ’ যোজনার মাধ্যমে গ্রামীণ ভারতের কৃষকদের , গ্রামীণ ভাই – বোনদের উৎসাহ দেওয়া হবে , যাতে তারা গোবর এবং বর্জ্যপদার্থকে কেবলমাত্র waste হিসেবে না দেখে আয়ের উৎস হিসাবে দেখে। ‘ গোবর ধন ’ যোজনার মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকাগুলি অনেকভাবে উপকৃত হবে। গ্রামগুলিকে পরিচ্ছন্ন রাখা সহজ হবে। এতে পশুগুলি রোগমুক্ত থাকবে ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। বায়োগ্যাসকে রান্নার কাজে এবং বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করলে স্বনির্ভরতাও বাড়বে। এই ব্যবস্থা কৃষকদের এবং পশুপালনকারীদের আয় বৃদ্ধির সহায়ক হবে। Wastecollection , transportation , বায়ো – গ্যাস বিক্রি ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলিতে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। ‘ গোবর ধন ’ প্রকল্পটি যথাযথ ভাবে কার্যকরী করার জন্য একটি ‘ Online trading platform ’ তৈরি করা হবে , যা কৃষকদের ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেবে , যাতে কৃষকরা গোবর এবং agriculturewaste অর্থাৎ কৃষিজ বর্জ্যের সঠিক মূল্য পান। আমি এই বিষয়ে উৎসাহীদের , বিশেষ করে গ্রামে বসবাসকারী বোনেদের অনুরোধ করব , যেন তাঁরা এগিয়ে আসেন এবং SelfHelp Group তৈরি করে , সহকারী সমিতি সংগঠিত করে এই সুযোগের পূর্ণ ব্যবহার করেন। আমি আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি , আসুন , আপনারাও CleanEnergy and Green Jobs – এর আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হোন। নিজেদের গ্রামের waste – কে wealth – এ পরিবর্তিত করার এবং গোবর থেকে গোবর ধন তৈরির এই প্রচেষ্টায় উদ্যোগী হোন ।
আমার প্রিয় দেশবাসী , আজ পর্যন্ত আমরা MusicFestival , FoodFestival , FilmFestival ইত্যাদি কতরকম Festival – এর কথাই না শুনে এসেছি ! কিন্তু , ছত্তিশগড়ের রায়পুরে এক অনুপম প্রচেষ্টার কথা জানা গেল , আর তা হল , এই রাজ্যে আয়োজিত প্রথম ‘ বর্জ্য মহোৎসব ’ । রায়পুর নগরনিগম দ্বারা আয়োজিত এই মহোৎসবের উদ্দেশ্য ছিল স্বচ্ছতা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা , শহরের বর্জ্য পদার্থের ‘ creativeuse ’ করা ও garbage – এর re-use করার বিভিন্ন পদ্ধতিগুলির সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা। এই মহোৎসবে নানা ধরনের activity রাখা হয়েছিল , যাতে ছাত্র – ছাত্রী থেকে শুরু করে বয়স্ক — প্রত্যেকেই যোগদান করেছিলেন। এখানে বর্জ্যপদার্থের ব্যবহার করে নানা ধরনের কলাকৃতির রূপ দেওয়া হয়েছে , wastemanagement – এর প্রত্যেকটি দিক সম্পর্কে লোকেদের প্রশিক্ষণ দিতে workshop – এর ব্যবস্থা করা হয়েছে , স্বচ্ছতার theme – এর musicperformance রাখা হয়েছে এবং artwork তৈরি করা হয়েছে। রায়পুরের থেকে প্রেরণা নিয়ে অন্যান্য জেলাগুলিতেও আলাদা আলদা ভাবে বর্জ্য উৎসবের আয়োজন করা হয়। প্রত্যেকেই নিজের নিজের মত করে চেষ্টা করেছে। স্বচ্ছতা নিয়ে innovativeideas share করা হয়েছে। আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে , কবিতা পাঠ হয়েছে। স্বচ্ছতা নিয়ে এক উৎসবের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে স্কুলের ছাত্র – ছাত্রীরা যেরকম অত্যুৎসাহের সঙ্গে এতে অংশ নিয়েছেন , তা সত্যিই প্রশংসনীয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং স্বচ্ছতার গুরুত্ব অভিনব পদ্ধতিতে এই মহোৎসবে প্রদর্শিত করার জন্য , রায়পুর নগরনিগম , সমগ্র ছত্তিশগড়ের জনসাধারণ এবং ওখানকার সরকার ও প্রশাসনকে আমি অনেক শুভেচ্ছা জানাই !
প্রতি বছর ৮ – ই মার্চ ‘ আন্তর্জাতিক নারী দিবস ‘ পালিত হয়। দেশ ও বিশ্বে নানা রকমের অনুষ্ঠান হয় । ঐ দিনে দেশে ‘ নারীশক্তি পুরষ্কার ’ প্রদানের মাধ্যমে সেই সকল মহিলাদের সম্মানিত করা হয় , যাঁরা বিগত কিছু দিনের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুকরণীয় কাজ করেছেন । আজ দেশ নারী উন্নয়নকে ছাড়িয়ে নারী নেতৃত্বাধীন উন্নয়নের দিকে এগোচ্ছে । আজ আমরা নারী উন্নয়নকে অতিক্রম করে নারী নেতৃত্বাধীন উন্নয়নের কথা বলছি । আজ এই মুহূর্তে আমার স্বামী বিবেকানন্দর এক বাণী মনে আসছে । উনি বলেছিলেন , ” The Idea of perfect Womanhood is perfectIndependence ” । একশো পঁচিশ বছর আগে স্বামীজীর এই চিন্তাধারা ভারতীয় সংস্কৃতিতে নারীশক্তির ভাবনাকেই ব্যক্ত করে । আজ সামাজিক , অর্থনৈতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর সমান অংশীদারীত্ব নিশ্চিত করা আমাদের সকলের কর্তব্য , আমাদের সকলের দায়িত্ব । আমরা সেই ঐতিহ্যের অংশীদার , যেখানে নারীদের মাধ্যেমে পুরুষেরা পরিচিত হয় । যশোদা – নন্দন , কৌশল্যা – নন্দন , গান্ধারী – পুত্র — পুত্রের পরিচয় হত এই প্রকারে । আজ আমাদের নারীশক্তি তাঁদের কর্মের মাধ্যমে আত্মবল এবং আত্মবিশ্বাসের পরিচয় দিয়েছেন । স্বনির্ভর হয়েছেন । ওঁরা তো নিজেদের এগিয়েছেনই , সাথে দেশ ও সমাজকেও এগিয়ে নিয়ে গেছেন ও এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার কাজ করেছেন । অবশেষে আমাদের নতুন ভারতের স্বপ্নতো এইটাই , যেখানে নারীরা ক্ষমতাবান , সবল ও দেশের সার্বিক উন্নয়নে সমানরূপে অংশীদার । কিছুদিন আগে , এক ব্যক্তি আমায় দারুণ একটি পরামর্শ দিয়েছিলেন । উনি পরামর্শ দিয়েছিলেন যে ৮ – ই মার্চ , ‘ নারী দিবস ‘ পালনের উদ্দেশে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান হয় । কিন্তু প্রতিটি গ্রামে – শহরে যে সকল মা – বোনেরা ১০০ বছর পূর্ণ করেছেন তাঁদের সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে কি অনুষ্ঠান আয়োজন করা যেতে পারে ? আর সেখানে একটি দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতার কথা কি বলা যেতে পারে ? আমার ধারণাটি ভালো লেগেছে । আপনাদের কাছে পৌঁছে দিলাম । নারীশক্তি কি করতে পারে , আপনারা তার অনেক উদাহরণ পাবেন। আপনি যদি আশেপাশে খোঁজেন , তবে এমন কোন – না – কোনো কাহিনি আপনার জীবনকে অনুপ্রাণিত করবে । একটু আগেই আমি ঝাড়খন্ড থেকে একটি সংবাদ পেলাম । ‘ স্বচ্ছ ভারত অভিযান ‘ – এ অন্তর্গত ঝাড়খণ্ডের প্রায় ১৫ লক্ষ মহিলা ! — এই সংখ্যাটি ছোট নয় — ১৫ লক্ষ মহিলা সংগঠিত হয়ে এক মাস যাবৎ স্বচ্ছতা অভিযান চালিয়েছেন । ২৬শে জানুয়ারি , ২০১৮ থেকে আরম্ভ হওয়া এই অভিযানটিতে , মাত্র ২০ দিনের মধ্যে , এই মহিলারা ১ লক্ষ ৭০ হাজার শৌচালয় নির্মাণ করে একটি নতুন উদাহরণ স্থাপন করেছেন । এতে প্রায় ১ লক্ষ ‘ সখী মণ্ডল ’ যুক্ত রয়েছে । ১৪ লক্ষ মহিলা , ২ হাজার মহিলা পঞ্চায়েত প্রতিনিধি , ২৯ হাজার জল – সহিয়া অর্থাৎ জল – মিত্র , ১০ হাজার মহিলা স্বচ্ছাগ্রহী এবং ৫০ হাজার মহিলা রাজমিস্ত্রি । আপনি কল্পনা করতে পারেন , এটি কত বড় ঘটনা ! ঝাড়খন্ডের এই মহিলারা দেখিয়েছেন যে নারীশক্তি , স্বচ্ছ ভারত অভিযানের এমন এক শক্তি , যা দৈনন্দিন জীবনে স্বচ্ছতার অভিযানকে , স্বচ্ছতার সংস্কারকে জোরের সঙ্গে জনসাধারণের স্বভাবে পরিবর্তিত করবে ।
ভাই ও বোনেরা , মাত্র দু দিন আগে আমি নিউজে দেখছিলাম যে এলিফ্যান্টা দ্বীপের তিনটি গ্রামে স্বাধীনতার সত্তর বছর পরে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে আর এটা নিয়ে সেখানকার মানুষের মধ্যে কতটা আনন্দ আর উৎসাহ দেখা দিয়েছে। আপনারা ভালোই জানেন যে, এলিফ্যান্টা দ্বীপ মুম্বাই থেকে দশ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রের মধ্যে। এটা পর্যটনের একটা খুব বড় আর আকর্ষণীয় কেন্দ্র। এলিফ্যান্টার গুহা ইউনেস্কোর ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’-এর অন্তর্গত। এখানে প্রত্যেক দিন দেশ – বিদেশ থেকে প্রচুর পর্যটক আসেন। এটা এক গুরুত্বপূর্ণ ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন। আমার এটা জেনে অদ্ভূত লেগেছে যে মুম্বাইয়ের কাছে অবস্থিত আর পর্যটনের এত বড় কেন্দ্র হওয়া সত্ত্বেও স্বাধীনতা লাভের এত বছর পরেও এলিফ্যান্টায় বিদ্যুৎ পৌঁছয় নি। সত্তর বছর অবধি এলিফ্যান্টা দ্বীপের তিনটি গ্রাম — রাজবন্দর , মোরবন্দর আর সেন্তবন্দর , ওখানকার মানুষের জীবনে যে অন্ধকার ছেয়ে ছিল , এই সবে সেই অন্ধকার দূর হয়েছে আর তাদের জীবনে ঔজ্জ্বল্য এসেছে। আমি ওখানকার প্রশাসন আর জনতাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি আনন্দিত যে এখন এলিফ্যান্টার গ্রাম আর এলিফ্যান্টার গুহা বিদ্যুতের আলোয় উদ্ভাসিত হবে। এটা শুধু বিদ্যুৎ নয় বরং উন্নয়নের অভিমুখে এক নতুন শুভারম্ভ। দেশবাসীর জীবনে ঔজ্জ্বল্য আসুক, তাঁদের জীবনে আনন্দআসুক ! এর থেকে বেশি তৃপ্তিআর আনন্দর মুহূর্ত কী হতে পারে?
আমারপ্রিয় ভাই-বোনেরা, কয়েকদিন আগেই আমরা ‘শিবরাত্রি’ মহোৎসব পালন করেছি। সামনে মার্চমাস। সতেজ ফসলে ভরপুর ক্ষেত, সোনালী গমগাছের হাওয়ায় দোল এবং আমের মঞ্জরীর শোভা —এটাই তো এই মাসের বৈশিষ্ট্য। মার্চ মাসেই আমাদের সকলের অত্যন্ত প্রিয় উৎসব ‘হোলি’।আগামী ২-রা মার্চ, হোলি উৎসব। সারা দেশ এই উৎসব আনন্দের সঙ্গে পালন করবে। হোলিউৎসবে রঙের যতটা গুরুত্ব, ততটাই গুরুত্ব ‘হোলিকা দহন’-এর। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েথাকে, খারাপকে আগুনে জ্বালিয়ে নষ্ট করা হয় এই দিনটিতে। হোলির দিনে সব মনোমালিণ্যভুলে একসঙ্গে বসা, একে অন্যের সুখ, আনন্দ ভাগ করে নেওয়া — একটা সুন্দর মুহূর্ত এবংহোলি উৎসব — প্রেম, একতা ও সম্প্রীতির বার্তাবাহক। সমস্ত দেশবাসীকে রঙের উৎসবহোলির জন্য অনেক অনেক শুভকামনা! রঙে ভরা শুভকামনা রইল! এই উৎসবে সব প্রিয় দেশবাসীরজীবন
রঙবেরঙের খুশিতে ভরে উঠুক — এই শুভকামনা রইল! আমার প্রিয় দেশবাসী, অনেক অনেক ধন্যবাদ ! নমস্কার !
আমার প্রিয় দেশবাসীগণ, নমস্কার, ২০১৮’র এটা প্রথম ‘মন কি বাত’| আর দু’দিন আগেই আমরা সোত্সাহে সাধারণতন্ত্র দিবস উদযাপন করেছি| ইতিহাসে প্রথম এমনটা হয়েছে যে, দশটি দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব সেই উদযাপন সমারোহে উপস্থিত ছিলেন|
আমার প্রিয় দেশবাসীগণ, আমাকে ‘নরেন্দ্র মোদি অ্যাপ’-এ শ্রী প্রকাশ ত্রিপাঠি আজ এক দীর্ঘ চিঠি লিখেছেন| তিনি ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, আমি যেন ওঁর লেখা চিঠির বিষয়বস্তু ছুঁয়ে যাই| তিনি লিখেছেন, পয়লা ফেব্রুয়ারি মহাকাশ অভিযাত্রী কল্পনা চাওলার মৃত্যু দিবস| কলম্বিয়া মহাকাশযান দুর্ঘটনায় তিনি আমাদের কাছ থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন| কিন্তু বিশ্বের লক্ষ লক্ষ তরুণ-তরুণীকে অনুপ্রাণিত করে গেছেন| আমি, ভাই প্রকাশজিকে নিজের দীর্ঘ চিঠিটি কল্পনা চাওলার চির বিদায়ের ঘটনা দিয়ে শুরু করার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি| এটা সবার জন্যই দুঃখের যে আমরা কল্পনা চাওলাজিকে এতো কম বয়সে হারিয়েছি| কিন্তু তিনি নিজের জীবন দিয়ে গোটা বিশ্বে, বিশেষ করে ভারতে হাজার হাজার মেয়ের জন্য এই বার্তা রেখে গেছেন যে, নারী-শক্তির জন্য কোনো সীমানাই যথেষ্ট নয়| ইচ্ছা ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞা থাকলে, কিছু করে দেখানোর ক্ষিধে থাকলে, কোনো কিছুই অসম্ভব নয়| এটা খুবই খুশির বিষয় যে, ভারতে আজ মহিলারা প্রতিটি ক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছেন এবং দেশের গৌরব বৃদ্ধি করছেন|
প্রাচীন কাল থেকেই আমাদের দেশে মহিলাদের সম্মান| সমাজে তাঁদের স্থান এবং অবদান গোটা দুনিয়াকে বিস্মিত করে এসেছে| ভারতীয় বিদূষীদের দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে| বেদের বিভিন্ন অংশ রচনায় এদেশের অনেক বিদূষীর কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে| লোপামুদ্রা, গার্গী, মৈত্রেয়ী—এমন না জানি কতো নাম! আজ আমরা ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’-এর কথা বলি, কিন্তু শত শত বছর আগে আমাদের শাস্ত্রে, স্কন্ধপুরাণে বলা হয়েছে—
“দশপুত্র, সমাকন্যা, দশপুত্রাণ প্রবর্ধয়ন|
ইয়ত ফলং লভতে মর্ত্য, তদ্ লভ্যং কন্যকৈকয়া||”
অর্থাত এক মেয়ে দশ ছেলের সমান| দশ ছেলে দিয়ে যতো পুণ্যলাভ হবে, এক মেয়ে দিয়ে সমান পুণ্য লাভ হবে| এটাই আমাদের সমাজে নারীদের মাহাত্ম্য বোঝাচ্ছে| আর সেজন্যই তো, আমাদের সমাজে নারীকে শক্তির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে| এই নারীশক্তি গোটা দেশকে, সমস্ত সমাজকে, পরিবারকে একতার সুতোয় বেঁধে রাখে| তা সে বৈদিক যুগের বিদূষীরা—লোপামুদ্রা, গার্গী, মৈত্রেয়ীর বিদূষীপনা হোক বা আক্কা মহাদেবী ও মীরাবাঈয়ের জ্ঞান ও ভক্তিময়তা হোক, অথবা অহল্যাবাঈ হোলকরের শাসন ব্যবস্থা, রানি লক্ষ্মীবাঈয়ের বীরাঙ্গনা রূপ হোক—নারী শক্তি সবসময় আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে| দেশের মান-সম্মান বাড়িয়েছে|
শ্রী প্রকাশ ত্রিপাঠি এরপর আরও অনেক উদাহরণ তুলে ধরেছেন| তিনি লিখেছেন, আমাদের দুঃসাহসিনী প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের ‘সুখোই-৩০’ যুদ্ধ বিমানে সওয়ার হওয়ার ঘটনা তাঁকে অনুপ্রেরণা যোগাবে| তিনি বর্তিকা যোশীর নেতৃত্বে ভারতীয় নৌসেনার মহিলা নাবিক দলের সদস্যদের বর্তমানে আই.এন.এস.ভি. তারিণীতে গোটা বিশ্ব পরিক্রমার বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন| তিন দুঃসাহসিনী মহিলা ভাবনা কন্থ, মোহনা সিংহ ও অবনী চতুর্বেদী যুদ্ধ বিমানের চালক হয়েছেন| বর্তমানে ‘সুখোই-৩০’ যুদ্ধ বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তাঁরা| ক্ষমতা বাজপেয়ীর নেতৃত্বে এয়ার ইন্ডিয়া রোয়িং জেটে করে দিল্লি থেকে আমেরিকার সানফ্রান্সিস্কো যাওয়া, ফের দিল্লি ফিরে আসার অভিযান পরিচালিত হলো| তাও পরিচালনা করলেন সব মহিলারাই| আপনি একদম ঠিক বলেছেন—আজ নারীরা প্রতিটি ক্ষেত্রে শুধু যে এগিয়ে চলেছেন তা-ই নয়, রীতিমতো নেতৃত্ব প্রদান করছেন| আজ এমন বেশকিছু ক্ষেত্র আছে, যেখানে মহিলারাই সবার আগে থাকছেন| আমাদের নারীশক্তিই কিছু না কিছু করে দেখাচ্ছেন| এক একটা মাইল ফলক স্থাপন করে চলেছেন| বিগত দিনে মাননীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয় এক নতুন বিষয়ের অবতারণা করেছেন|
রাষ্ট্রপতি মহোদয়, তেমনই অসাধারণ মহিলাদের একটি দলের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন| তাঁরা প্রত্যেকেই নিজের নিজের ক্ষেত্রে সবার আগে কিছু একটা করে দেখিয়েছেন| দেশের এই সফল মহিলা, প্রথম মহিলা মার্চেন্ট নেভি ক্যাপ্টেন, যাত্রী ট্রেনের প্রথম মহিলা চালক, প্রথম মহিলা অগ্নি নির্বাপণ কর্মী, প্রথম মহিলা বাস চালক, দক্ষিণ মেরু অভিযাত্রী প্রথম মহিলা, এভারেস্টের চূড়ায় ওঠা প্রথম মহিলা—এভাবে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রের প্রথম নারীরা, আমাদের নারী-শক্তির প্রতিভূরা সমস্ত বাধার দেওয়াল চূর্ণ করে অসাধারণ সাফল্যের অনুভূতি অর্জন করেছেন| নজির স্থাপন করেছেন| তাঁরা এটাই দেখিয়েছেন যে, কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞা কাজে লাগিয়ে সমস্ত বাধা ও বন্ধনের দেওয়াল ডিঙিয়ে নতুন পথ তৈরি করে নেওয়া যায়| এমন এক পথ, যা নাকি নিজের সমকালের মানুষ তো বটেই, আগামী প্রজন্মকেও অনুপ্রাণিত করবে| তাদের ভরিয়ে তুলবে নতুন উত্সাহ এবং উদ্দীপনায়| এই সফল মহিলা, প্রথম নারীদের নিয়ে একটি বই রচিত হয়েছে, যাতে গোটা দেশ এই নারীশক্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে পারে| তাঁদের জীবন ও কর্মধারা থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজে নিতে পারে| এটা নরেন্দ্র মোদি ওয়েবসাইটেও ‘ই-বুক’ হিসেবে সংযোজিত হয়েছে|
আজ দেশ ও সমাজের চলমান ইতিবাচক পরিবর্তনেও মহিলাদের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রয়েছে| আজ আমরা যখন মহিলা ক্ষমতায়ন নিয়ে আলোচনা করছি, তাতে আমি এক রেলওয়ে স্টেশনের কথা উল্লেখ করতে চাইবো| একটি রেলওয়ে স্টেশন ও মহিলা ক্ষমতায়ন—আপনারা হয়তো ভাবছেন এর মধ্যে কী যোগাযোগ থাকতে পারে! মুম্বাইয়ের মাটুঙ্গা স্টেশন ভারতের প্রথম এমন রেলওয়ে স্টেশন, যেখানে সমস্ত স্তরের কর্মচারীই মহিলা| সমস্ত বিভাগে মহিলা কর্মী| তা সে কমার্শিয়াল বিভাগ হোক, রেলওয়ে পুলিশ হোক, টিকিট পরীক্ষক হোন, ঘোষণার লোক, পয়েন্ট পার্সন—সব মিলিয়ে চল্লিশেরও বেশি মহিলা কর্মীদল এই স্টেশন সামলাচ্ছেন| এবার অনেকে সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ দেখার পর ট্যুইটারে ও অন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, কুচকাওয়াজের এক প্রধান বিষয় ছিল বি.এস.এফ.-এর কুশলী বাইক চালক দলের প্রদর্শন| সেখানে সব মহিলারাই অংশগ্রহণ করেছিলেন| তাঁরা দুঃসাহসী সব কাণ্ড করে যাচ্ছিলেন| আর এই দৃশ্যে বিদেশ থেকে আসা অতিথিরাও হতবাক হয়ে যাচ্ছিলেন| ক্ষমতায়ন আত্ম-নির্ভরতারই এক রূপ| আজ আমাদের নারিশক্তি সামনে থেকে নেতৃত্ব প্রদান করছে| আত্মনির্ভর হয়ে উঠছেন তাঁরা| এরকমই একটি কথা আমি জানতে পেরেছি| ছত্তিসগড়ে আমাদের আদিবাসী মহিলারাও এক অসাধারণ কাণ্ড করে বসেছেন| তাঁরা এক নতুন উদাহরণ তৈরি করেছেন| আদিবাসী মহিলাদের কথা যখন ওঠে, সবার মনেই নিশ্চিত একটা ছবি সামনে আসে| সেখানে জঙ্গল থাকবে, পাহাড়ের বুক থাকবে, সেখানে শিশুদের মাথায় করে মেয়েদের এগিয়ে চলার চেনা দৃশ্য থাকবে| কিন্তু ছত্তিসগড়ে আমাদের আদিবাসী নারী, আমাদের এই নারিশক্তি দেশের সামনে এক নতুন ছবি তৈরি করেছেন| ছত্তিসগড়ের দান্তেওয়াড়া এলাকা, যা নাকি মাওবাদী প্রভাবিত এলাকার মধ্যে পড়ে| হিংসা, অত্যাচার, বোমা, বন্দুক, পিস্তল—মাওবাদীরা সেখানে এক ভয়াবহ পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে| এমন সাংঘাতিক অবস্থায় থাকা আদিবাসী মহিলারা ‘ই-রিক্সা’ চালিয়ে নিজেদের আত্মনির্ভর করে তুলছেন| খুবই কম সময়ের ব্যবধানে সেখানকার সমস্ত মহিলা এই প্রক্রিয়ার অংশীদার হয়েছেন| আর এতে তিন ধরনের লাভ হচ্ছে| একদিকে তাঁরা যেমন স্বরোজগারের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতায়িত করছেন, একই সঙ্গে এর মাধ্যমে মাওবাদী প্রভাবিত এলাকার ছবিও বদলে দিচ্ছে| আর এর সঙ্গে সমস্ত কিছুর পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণের কাজেও বিশেষ শক্তি যোগানো সম্ভব হচ্ছে| আমি সেখানকার জেলা প্রশাসনেরও প্রশংসা করছি| অনুদান দেওয়া থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ দেওয়া পর্যন্ত জেলা প্রশাসন এই মহিলাদের সাফল্যের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন|
আমরা বারবার শুনে আসছি যে, মানুষজন বলেন, ‘কোনো কোনো কথা এমন, যাতে আমাদের অস্তিত্ব হারিয়ে যায় না|’ সে কথাটা কী, সেকথা হচ্ছে ফ্লেক্সিবিলিটি—নমনীয়তা, রূপান্তরণ| যা কিছু নেতিবাচক নির্যাস, তা বর্জন, যা কিছু প্রয়োজনীয় তার সংস্কারের বিষয় মেনে নেওয়া| আর আমাদের সমাজের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে—আত্ম-সংশোধনের নিরন্তর প্রক্রিয়া জারি রাখা| নিজেকে সংশোধন—এটাই ভারতীয় ঐতিহ্য, আমাদের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সংস্কৃতি| যেকোনো জীবন্ত সমাজের পরিচিতি এর আত্ম-সংশোধনের প্রক্রিয়ার মধ্যেই নিহিত থাকে| সামাজিক কু-প্রথা, কু-রীতিনীতি’র বিরুদ্ধে বহু শতাব্দী ব্যাপী প্রয়াস আমাদের দেশে ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে ক্রমাগত চলে আসছে| মাত্র কিছুদিন আগেই বিহারে এক আকর্ষণীয় বিষয়ের অবতারণা হয়| সে রাজ্যে সামাজিক কু-রীতিনীতিগুলোকে শেকড়সুদ্ধ উপড়ে ফেলার ভাবনায় বিশ্বের সবচেয়ে বড়, প্রায় ১৩০০০ কিলোমিটারেরও বেশি লম্বা মানবশৃঙ্খল—হিউম্যান চেইন তৈরি করা হয়| এই অভিযানের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ ও পণপ্রথার মতো সামাজিক অভিশাপের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির প্রয়াস নেওয়া হয়| পণপ্রথা ও বাল্যবিবাহের মতো কু-রীতিনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার ব্যপারে সে রাজ্যে শপথ গ্রহণ করা হয়| শিশু, বৃদ্ধ, উত্সাহ ও উদ্দীপনায় ভরপুর তরুণরা, মায়েরা, বোনেরা—সবাই নিজেকে এই লড়াইয়ে শামিল করেছেন| পাটনার ঐতিহাসিক গান্ধী ময়দান থেকে শুরু হয়ে এই মানব-শৃঙ্খল রাজ্যের সীমানা পর্যন্ত অটুটভাবে জুড়ে যেতে থাকলো| সমাজের সমস্ত মানুষকে সত্যিকারের বিকাশ প্রক্রিয়ার অংশীদার করার জন্য এ ধরনের কু-রীতিনীতি-মুক্ত হওয়া জরুরি| আসুন আমরা সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে এমন কু-রীতিনীতিকে সমাজ থেকে দূর করার ব্যাপারে প্রতিজ্ঞা করি এবং এক নতুন ভারত, এক শক্তিশালী এবং সক্ষম ভারতের নির্মাণ করি| আমি বিহারের মানুষজন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, সেখানকার প্রশাসন, মানব শৃঙ্খলে শামিল প্রত্যেক ব্যক্তিকে সমাজ কল্যাণের লক্ষ্যে এমন বিশেষ এবং ব্যাপক বিষয়ের অবতারণার জন্য প্রশংসা করছি|
আমার প্রিয় দেশবাসীগণ, কর্ণাটকের মাইসোর থেকে শ্রী দর্শন ‘মাই গভ’-এ লিখেছেন, তাঁর বাবার চিকিত্সার জন্য প্রতিবছর ছয় হাজার টাকা খরচ হতো| তিনি প্রথমে প্রধানমন্ত্রী জন-ঔষধি যোজনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না| কিন্তু যখনই তিনি জন-ঔষধি কেন্দ্র সম্পর্কে জানতে পারলেন, সেখান থেকে ঔষধ কিনতে গিয়ে পঁচাত্তর শতাংশ পর্যন্ত দাম কম পড়ল| তিনি ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন, আমি যেন ‘মন কি বাতে’ মনের কথা বলার সময় এই বিষয়ে কথা বলি| যাতে করে বেশি সংখ্যক লোকের কাছে এর বিষয়ে তথ্য পৌঁছে যায়| বিগত বেশ কিছুকাল যাবত বহু মানুষ আমাকে এই বিষয়ে লিখে চলেছেন| বলে চলেছেন| আমিও অনেক ভিডিও, সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছি—অনেকেই এই যোজনার সুবিধা গ্রহণ করছেন| আর এই ধরনের কথা যখন জানতে পারি, আমার দারুণ খুশি লাগে| এক গভীর সন্তুষ্টি পেয়ে থাকি| আর আমার এটাও খুব ভালো লাগলো যে শ্রী দর্শনজি’র মনে এই ভাবনা এসেছে, যে সুবিধা তিনি পেয়েছেন, তা যেন অন্যরাও পান| এই যোজনার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যয় কমানো, আর সহজসাধ্য জীবন যাপনের বিষয়টিকে উত্সাহিত করা| জন-ঔষধি কেন্দ্রগুলোতে সহজলভ্য ঔষধগুলো বাজারে পাওয়া নামী কোম্পানির বিশ্বস্ত ওষুধগুলোর তুলনায় প্রায় পঞ্চাশ থেকে নব্বই শতাংশ পর্যন্ত সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে| এর ফলে সাধারণ মানুষ, বিশেষত প্রতিদিন ওষুধ নিতে বাধ্য হওয়া প্রবীণ মানুষজন আর্থিক দিক থেকে উপকার পাচ্ছেন| অনেক সাশ্রয় হচ্ছে| এখান থেকে কেনা জীবনদায়ী ওষুধ বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা অনুমোদিত মান অনুযায়ী তৈরি করা হয়ে থাকে| এটাই ভালো গুণমানের ওষুধ সস্তায় পাওয়ার মূল কারণ| আজ দেশজুড়ে তিন হাজারেরও বেশি জন-ঔষধি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়ে গেছে| এগুলোতে যে শুধুমাত্র ওষুধ সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে তাই নয়, বরং ব্যক্তিগত উদ্যোগীদের জন্যও রোজগারের এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে| প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় জন-ঔষধি কেন্দ্র এবং হাসপাতালের ‘অমৃত স্টোরসে’ সস্তায় ওষুধ পাওয়া যায়| এগুলোর পেছনে একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেশের গরিব থেকে গরিব ব্যক্তিকে গুণমান সম্পন্ন ও সাশ্রয়ী মূল্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করা| যাতে এক সুস্থ ও সমৃদ্ধ ভারতের নির্মাণ করা যায়|
আমার প্রিয় দেশবাসী, মহারাষ্ট্র থেকে শ্রী মঙ্গেশ ‘নরেন্দ্র মোদি অ্যাপ’-এ একটি ছবি শেয়ার করেছেন| সেই ছবিটা এমন ছিল যে আমার মনোযোগ সেই ছবির দিকে আকর্ষিত হয়ে যায়| এই ছবিটি ছিল, এক নাতি তার দাদুর সঙ্গে ‘ক্লিন মোর্না রিভার’ সাফাই অভিযানে যোগ দিয়েছে| আমি জানতে পেরেছি যে, আকোলা’র নাগরিকগণ ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’-এর মাধ্যমে মোর্না নদীকে পরিচ্ছন্ন করার জন্য স্বচ্ছতা অভিযানের আয়োজন করেছিলেন| মোর্না নদী আগে বারোমাসই প্রবাহিত হতো, কিন্তু এখন তা ঋতু নির্ভর হয়ে গেছে| দুঃখের দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, নদীটি জংলা ঘাস ও কচুরিপানায় ভরে গিয়েছিল| নদী ও এর আশেপাশে প্রচুর পরিমাণে আবর্জনা ফেলা হচ্ছিল| তাই এনিয়ে এক অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হয় এবং মকর-সংক্রান্তির একদিন আগে ১৩ জানুয়ারি থেকে ‘মিশন ক্লিন মোর্না’-র প্রথম পর্যায়ে চার কিলোমিটার এলাকায় চৌদ্দটি স্থানে মোর্না নদীর তীরের দুই প্রান্তকে সাফাই করা হয়| ‘মিশন ক্লিন মোর্না’র এই মহান কাজে আকোলা’র ছয় হাজারেরও বেশি নাগরিক, শতাধিক এন.জি.ও., কলেজ, ছাত্র-ছাত্রী, ছোট-ছোট ছেলেমেয়ে, বয়স্ক মানুষ, মা-বোনেরা সহ সমস্ত অংশের মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন| ২০ জানুয়ারিও এই স্বচ্ছতা-অভিযান একইরকমভাবে চালিয়ে যাওয়া হয় এবং আমাকে বলা হয়েছে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত মোর্না নদী সম্পূর্ণরূপে পরিচ্ছন্ন হয়ে না যায়, এই অভিযান প্রত্যেক শনিবারের সকালে চালিয়ে যাওয়া হবে| এর মাধ্যমে এটাই বোঝা যায় যে, যদি মানুষ কিছু করার জন্য স্থির সংকল্প গ্রহণ করে, তাহলে কিছুই অসম্ভব নয়| জন-আন্দোলনের মাধ্যমে অনেক বড় বড় পরিবর্তন নিয়ে আসা সম্ভব| আমি আকোলার জনগণকে, সেখানকার জেলা ও পুরনিগমের প্রশাসনকে, এই কাজকে জন-আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যুক্ত হওয়া সমস্ত নাগরিককে, আপনাদের এই প্রয়াসকে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই| আপনাদের এই প্রয়াস দেশের অন্য মানুষদেরও অনুপ্রাণিত করবে|
আমার প্রিয় দেশবাসী, ইদানীং পদ্ম-পুরস্কার নিয়ে বেশকিছু আলোচনা আপনারাও শুনেছেন| খবরের কাগজ ও টিভি-তে এই বিষয়ে আলোচনা মনোযোগ আকর্ষণ করেছে| কিন্তু কিছুটা মনোযোগ দিয়ে যদি বিষয়টি দেখেন, তাহলে গর্ব হবে আপনাদের| গর্ব হবে, কেননা কী ধরনের মহান মানুষ আমাদের মধ্যে রয়েছেন এবং স্বাভাবিকভাবে এই বিষয়টা নিয়েও গর্ব হবে যে, কীভাবে আজ আমাদের দেশের সামান্য মানুষ কোনো রকম সুপারিশ ছাড়াই এই উচ্চতায় পৌঁছাচ্ছেন| প্রতি বছরই পদ্ম-পুরস্কার প্রদান করার পরম্পরা রয়েছে| কিন্তু গত তিন বছরে এর সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এসে গেছে| এখন যেকোন নাগরিক যেকোনো ব্যক্তিকে মনোনীত করতে পারেন| সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া অনলাইনে হওয়ার জন্য এতে স্বচ্ছতা এসে গেছে| বলতে গেলে এই পুরস্কারের নির্বাচন প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ রূপান্তর হয়ে গেছে| আপনাদের মনোযোগও এ বিষয়ে এসেছে হয়ত যে, অনেক সাধারণ মানুষও পদ্ম-পুরস্কার পাচ্ছেন| এমন সব ব্যক্তিকে পদ্ম-পুরস্কার দেওয়া হয়েছে যাদেরকে বড় বড় শহরে, খবরের কাগজে, টিভিতে, অনুষ্ঠানে দেখা যায় না| এখন পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যক্তির পরিচয় নয়, তাঁর কাজের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে| আপনারা হয়তো শুনেছেন, শ্রী অরবিন্দ গুপ্তাজি সম্পর্কে| আপনারা জেনে খুশি হবেন, যে অরবিন্দজি আই.আই.টি. কানপুরের ছাত্র ছিলেন, তিনি ছোটদের জন্য খেলনা তৈরিতে নিজের সারা জীবন ব্যয় করে দিয়েছেন| তিনি চার দশক ধরে ফেলে দেওয়া জিনিস থেকে খেলনা তৈরি করছেন, যাতে ছোটদের মধ্যে বিজ্ঞানের প্রতি কৌতূহল বাড়াতে পারেন| তাঁর প্রচেষ্টা হচ্ছে ছোটরা যাতে অপ্রয়োজনীয় জিনিস থেকে বৈজ্ঞানিক প্রয়োগের দিকে উত্সাহিত হয়| এর জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তের তিন হাজার স্কুলে গিয়ে ১৮টি ভাষায় তৈরি ফিল্ম দেখিয়ে ছোটদের অনুপ্রাণিত করছেন| কী ধরনের অদ্ভূত জীবন| কী ধরনের আশ্চর্যজনক সমর্পণ| এ ধরনেরই এক কাহিনি হচ্ছে কর্ণাটকের সিতাবা জোদাত্তি’র| তাঁকে ‘মহিলা ক্ষমতায়নের দেবী’ এমনি-এমনি বলা হয়না| গত তিন দশক থেকে বেলাগাভি-তে তিনি অগণিত মহিলার জীবন পরিবর্তনের জন্য মহান কাজ করেছেন| তিনি সাত বছর বয়সেই নিজেকে দেবদাসী হিসেবে সমর্পিত করে দিয়েছিলেন| কিন্তু তারপর দেবদাসীদের কল্যাণের জন্যই নিজের গোটা জীবন যুক্ত করে দেন| শুধু এটুকুই নয়, তিনি দলিত মহিলাদের কল্যাণের জন্যও অভূতপূর্ব কাজ করেছেন| আপনারা মধ্যপ্রদেশের ভজ্জু শ্যামের নাম শুনে থাকতে পারেন| শ্রীমান ভজ্জু শ্যাম-এর জন্ম সম্পূর্ণ এক গরিব পরিবারে, আদিবাসী পরিবারে হয়েছিল| তিনি জীবন যাপনের জন্য সামান্য চাকরি করতেন| কিন্তু তাঁর পরম্পরাগত আদিবাসী পেন্টিং তৈরির শখ ছিল| আজ এই শখের জন্যই শুধুমাত্র ভারতেই নয়, গোটা প্রথিবী জুড়েই তিনি সম্মানিত| নেদারল্যান্ড, জার্মানি, ইংল্যান্ড, ইতালি’র মতো অনেক দেশেই তাঁর চিত্র প্রদর্শনী হয়ে গেছে| বিদেশে ভারতের নাম উজ্জ্বল করা ভজ্জু শ্যামজি’র প্রতিভাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মান প্রদান করা হয়েছে| কেরালা’র আদিবাসী মহিলা লক্ষ্মীকুট্টি’র কাহিনি শুনে আপনারা ভীষণ আশ্চর্য হয়ে যাবেন| লক্ষ্মীকুট্টি কোল্লার এলাকায় শিক্ষকতা করেন এবং এখনও ঘন জঙ্গলের মধ্যে আদিবাসী এলাকায় তালপাতায় ছাওয়া ঝুপড়ির মধ্যে থাকেন| তিনি নিজের স্মৃতির ওপর নির্ভর করেই পাঁচশো ভেষজ ওষুধ তৈরি করেছেন| জড়িবুটি থেকে ওষুধ তৈরি করেছেন| সাপের কামড়ের ওষুধ তৈরিতে তাঁর দক্ষতা রয়েছে| লক্ষ্মীজি এই হারবাল ওষুধ সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান থেকে প্রতিনিয়ত মানুষের সেবা করে চলেছেন| এই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিত্বকে চিহ্নিত করে সমাজে তাঁর অংশগ্রহণের জন্য তাঁকে পদ্মশ্রী প্রদান করে সম্মানিত করা হয়েছে| আজ আরও একটি নামের উল্লেখ করার ইচ্ছে করছে| পশ্চিমবঙ্গের পঁচাত্তর বছরের সুভাষিণী মিস্ত্রিকেও পুরস্কারের জন্য বাছাই করা হয়েছে| সুভাষিণী মিস্ত্রি এমন এক মহিলা যিনি হাসপাতাল তৈরির জন্য অন্য লোকের বাড়িতে বাসন মেজেছেন, সবজি বিক্রি করেছেন| তাঁর যখন তেইশ বছর বয়স ছিল, তখন চিকিত্সার অভাবে তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়| আর এই ঘটনাটি তাঁকে গরিব মানুষদের জন্য হাসপাতাল তৈরির ক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত করেছে| আজ তাঁর কঠোর পরিশ্রমের ফলে তৈরি করা হাসপাতালে হাজার হাজার গরিব মানুষের বিনামূল্যে চিকিত্সা হচ্ছে| আমার স্থির বিশ্বাস যে, আমাদের বহুরত্না-বসুন্ধরায় এ ধরনের অনেক নর-রত্ন রয়েছেন, নারী-রত্ন রয়েছেন, যাঁদের কেউ জানেননা, চেনেননা| এ ধরনের মানুষের পরিচিতি তৈরি না হওয়া সমাজেরই ক্ষতি| এক্ষেত্রে পদ্ম-পুরস্কার একটা মাধ্যম| কিন্তু আমি দেশবাসীকেও বলতে চাই, আমাদের আশেপাশে সমাজের জন্য বেঁচে থাকা, সমাজের জন্য জীবনপাত করা, কোনো না কোনো বিশেষ বিশিষ্টতা নিয়ে জীবনভর কাজ করে যাওয়া লক্ষ লক্ষ মানুষ রয়েছেন| কখনও না কখনও তাঁদেরকে সমাজের মধ্যে নিয়ে আসা উচিত| তাঁরা মান-সম্মানের জন্য কাজ করেন না| কিন্তু তাঁদের কাজের জন্য আমরা অনুপ্রেরণা পেয়ে থাকি| কখনও স্কুলে, কলেজে এ ধরনের মানুষদের নিয়ে এসে তাঁদের অভিজ্ঞতাকে জানা উচিত| পুরস্কারের বাইরে সমাজেও কিছু প্রয়াস হওয়া উচিত|
আমার প্রিয় দেশবাসী, প্রতি বছর নয় জানুয়ারি আমরা প্রবাসী ভারতীয় দিবস পালন করি| এটা হচ্ছে সেই দিন, যেদিন পূজনীয় মহাত্মা গান্ধী দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতে ফিরে এসেছিলেন| এদিন আমরা ভারতীয় এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী ভারতীয়দের মধ্যে অটুট বন্ধনের উত্সব পালন করি| এই বছর প্রবাসী ভারতীয় দিবসে আমরা এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা ভারতীয় বংশোদ্ভুত সমস্ত সাংসদ ও মেয়রদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল| আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, এই অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, পর্তুগাল, মরিশাস, ফিজি, তানজানিয়া, কেনিয়া, কানাডা, ব্রিটেন, সুরিনাম, দক্ষিণ আফ্রিকা, আমেরিকা এবং আরও নানা দেশ থেকে ভারতীয় বংশোদ্ভুত সাংসদ ও মেয়র যোগ দিয়েছেন| আমি আনন্দিত যে, বিভিন্ন দেশে থাকা ভারতীয় বংশোদ্ভুত সেইসব মানুষ ওই দেশগুলোর সেবা তো করছেনই, সেইসঙ্গে তাঁরা ভারতের সঙ্গেও নিজের গভীর সম্পর্ক বজায় রাখছেন| এবার ইউরোপিও সংঘ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে আমাকে ক্যালেন্ডার পাঠানো হয়েছে, যেখানে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে থাকা ভারতীয় বংশোদ্ভুত মানুষরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব ভালো কাজ করছেন, সেগুলোকে খুব ভালোভাবে প্রদর্শন করা হয়েছে| আমাদের ভারতীয় বংশোদ্ভুত মানুষ যারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন—কেউ সাইবার সুরক্ষা নিয়ে কাজ করছেন, তো কেউ আয়ুর্বেদে যুক্ত রয়েছেন, কেউ সঙ্গীতের মাধ্যমে বা কবিতার মাধ্যমে সমাজের মনকে আনন্দিত করছেন| কেউ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা করছেন, আবার কেউ ভারতীয় গ্রন্থ নিয়ে কাজ করছেন| কেউ ট্রাক চালিয়ে গুরুদুয়ার স্থাপন করেছেন, কেউ মসজিদ বানিয়েছেন| অর্থাৎ যেখানেই আমাদের মানুষজন রয়েছেন, তাঁরা সেখানকার ভূমিকেই কোনো না কোনোভাবে সুসজ্জিত করেছেন| আমি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে চাই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এই উল্লেখযোগ্য কাজের জন্য, ভারতীয় বংশোদ্ভুত মানুষদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য এবং তাঁদের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের মানুষদের তা জানানোর জন্যও|
ত্রিশ জানুয়ারি পূজনীয় বাপুর পুণ্য-তিথি, যিনি আমাদের সবাইকে এক নতুন পথ দেখিয়েছিলেন| সেদিন আমরা ‘শহীদ দিবস’ পালন করি| সেদিন আমরা দেশরক্ষার জন্য আত্ম-বলিদান দেওয়া মহান শহিদদের এগারোটার সময় শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে থাকি| শান্তি ও অহিংসার পথ, সেটাই বাপুর দেখানো পথ| তা সে ভারত হোক বা বিশ্ব, ব্যক্তি হোক বা পরিবার, সমাজ-পূজ্য বাপু যেসব আদর্শ নিয়ে জীবন কাটিয়েছেন, পূজ্য বাপু সেসব বক্তব্য আমাদের বলেছেন, সেগুলো আজও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক| এগুলো শুধুমাত্র মূল তত্ত্বই ছিলনা| বর্তমান সময়েও আমরা প্রতিটি পদক্ষেপেই দেখতে পাই যে, বাপু’র বার্তা কতটুকু সঠিক ছিল| যদি আমরা সংকল্প গ্রহণ করি যে, বাপু’র দেখানো পথে চলবো—যতটুকু চলতে পারি চলবো—তাহলে তার চেয়ে বড় শ্রদ্ধাঞ্জলি আর কী হতে পারে?
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের সবাইকে দু’হাজার আঠারো সালের শুভকামনা জানিয়ে আমার কথা বলা শেষ করছি| অনেক অনেক ধন্যবাদ| নমস্কার |
‘মন কিবাত’ অনুষ্ঠানের এবারের পর্ব এ’বছরের শেষতম পর্ব। আর কী অদ্ভুত সমাপতন দেখুন, আজ২০১৭-র-ও শেষ দিন। এই বছর প্রায় সারা বছর ধরেই আমি ও আপনারা অনেক কথা শেয়ার করেছি।‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আপনাদের লেখা অজস্র চিঠি, Comments এবং মতামতেরআদানপ্রদান আমাকে সবসময়েই এক নতুন উদ্দীপনায় ভরিয়ে রাখে। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেইবছর বদলে যাবে, কিন্তু আমাদের বার্তালাপের এই ধারাবাহিকতা চলতেই থাকবে। আগত নতুনবছরে আমরা আরও অনেক নতুন নতুন কথা বলব, নতুন অভিজ্ঞতা share করব। আপনাদেরসবাইকে জানাই নতুন বছর, ২০১৮-র অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন!
কিছুদিন আগেই সারা পৃথিবী জুড়ে ধুমধাম করে পালিত হলক্রিসমাসের উৎসব। সারা ভারত জুড়েও এই উৎসব অত্যন্ত হর্ষোল্লাসের সঙ্গে পালন করাহয়। ক্রিসমাসের এই সময়টিতে আমরা যীশুখ্রিস্টের শিক্ষা ও উপদেশকে মনে করি, আর যীশুযে কথাটিতে সবচেয়ে বেশি জোর দিতেন, তা হল – সেবা ভাব। এই সেবা ভাবনার সারসত্যটিবাইবেলেও পরিলক্ষিত হয়।
The son of man has come, not to be served
But to serve
And to give his life, as blessing
To all humankind.
এর থেকেই বোঝা যায় সেবার গুরুত্ব কতটা অপরিসীম! সারাপৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে আছে কতই না জাতি, ধর্ম, রঙ, বর্ণের সমাহার, কিন্তু সেবা ভাবনা,মানবিক মূল্যগুলির মধ্যে অতুলনীয় ও অনন্য। আমাদের দেশে নিষ্কাম কর্মের কথা বলা হয়েথাকে। নিষ্কাম কর্ম অর্থাৎ এমন সেবা যা কোন প্রতিদানের অপেক্ষা রাখে না। আমাদেরএখানে এও বলা হয় – সেবাই পরমধর্ম এবং জীব সেবাই শিবসেবা। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবও বলেগিয়েছেন, শিব জ্ঞানে জীব সেবা করার কথা – আর এই প্রত্যেক কথারই মানবিক মূল্য রয়েছেসারা পৃথিবী জুড়ে। আসুন, আমরা এই সমস্ত মহাপুরুষদের এবং এই পবিত্র দিনগুলিকে স্মরণকরার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পরম্পরা এবং মানবিক মূল্যবোধগুলিকেও মনে রাখি। এতে নতুনচেতনা, নতুন প্রাণশক্তি সঞ্চার করি এবং নিজেরাও তা পালন করি।
প্রিয় দেশবাসী, এই বছরটি ছিল গুরু গোবিন্দ সিংহ-জীর ৩৫০-তমপ্রকাশ পর্বের বছরও। অদম্য সাহস ও ত্যাগের প্রতীক গুরু গোবিন্দ সিংহ-জী শুধুমাত্রমহান মানব মূল্যের কথাই বলেননি, তাঁর সম্পূর্ণ জীবনের ভিত্তিও ছিল এই মানবিকজীবনমূল্য। একাধারে গুরু, কবি, দার্শনিক, মহান যোদ্ধা – এই সমস্ত ভূমিকায় তিনিমানুষকে নিরন্তর প্রেরণা জুগিয়ে গেছেন। অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতেশিখিয়েছেন, জাতি ও ধর্মের বন্ধন থেকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। আর এই প্রচেষ্টায় যদিওতাঁকে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে অনেক কিছু হারাতে হয়েছিল, কিন্তু তিনি কখনো হীনভাবনাকে মনে ঠাঁই দেন নি। তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল প্রেম, ত্যাগ ও শান্তিরবাণীতে ভরা। আর এই বৈশিষ্ট্যগুলি ছিল তাঁর মহান ব্যক্তিত্বেও। আমার সৌভাগ্য যে, এইবছরের শুরুতে গুরু গোবিন্দ সিংহ-জীর ৩৫০-তম জয়ন্তী উপলক্ষ্যে পটনাসাহিবে আয়োজিত‘প্রকাশোৎসব’-এ আমি সামিল হতে পেরেছিলাম।
আসুন, আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই গুরু গোবিন্দ সিংহ-জীর শিক্ষাএবং তাঁর মহান জীবন দর্শন থেকে আমরা প্রেরণা নেব ও আমাদের জীবনে তাঁর আদর্শকে মেনেচলব। পয়লা জানুয়ারি, ২০১৮ অর্থাৎ, আগামীকালটি আমার মতে একটি বিশেষ দিন। আপনারনিশ্চয়ই এই ভেবে আশ্চর্য হচ্ছেন যে, নতুন বছর তো প্রত্যেকবার আসে আর পয়লাজানুয়ারিও প্রত্যেকবার আসে, এতে আর ‘বিশেষ দিন’ হওয়ার কী আছে? কিন্তু যখন আমি বলছিএটি এক ‘বিশেষ দিন’, তখন আমি সত্যিই বলতে চাই যে এটি এক বিশেষ দিন। যে সমস্ত মানুষ২০০০ সালে জন্ম নিয়েছেন, অর্থাৎ একবিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীর আলো দেখেছেন, পয়লাজানুয়ারি, ২০১৮ দিনটি থেকে তাঁরা প্রত্যেকেই eligible voter হিসেবে গণ্য হবেন।আমি দেশের এই যুবশক্তিকে অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং অনুরোধ করছি, আপনারা নিজেদের নামঅবিলম্বে ভোটার হিসেবে নথিভূক্ত করান। সম্পূর্ণ ভারত আপনাদের একবিংশ শতকের মতদাতাহিসেবে স্বাগত জানাবার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। একবিংশ শতাব্দীর ভোটারহিসেবে আপনারাও নিশ্চয়ই নিজেদের নিয়ে গর্বিত। আপনার মূল্যবান ভোটই হবে ‘ New India ’-রভিত্তি। মতদানের শক্তি গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শক্তি। লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনেইতিবাচক পরিবর্তন আনতে ভোটই সবচেয়ে শক্তিশালী ও প্রভাবশালী মাধ্যম। আর আপনারাশুধুমাত্র মতদানের অধিকারীই হচ্ছেন না, একবিংশ শতাব্দীর ভারত কীরকম হবে, আগামীদিনের ভারতকে নিয়ে আপনার কী স্বপ্ন – আপনাদের এগুলি নিয়েও ভাবতে হবে। কারণ, মনেরাখবেন, আপনিও একবিংশ শতকের ভারত নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন আর পয়লাজানুয়ারি থেকেই এর শুরু হতে যাচ্ছে।
‘মন কি বাত’-এর এবারের পর্বে আমি ১৮ থেকে ২৫ বছরের টগবগেজীবনীশক্তিতে ভরপুর, দৃঢ় নিশ্চয়ী যুবাশক্তিকে বিশেষ ভাবে সম্বোধন করতে চেয়েছিলাম।আমি মনে করি এরা নতুন ভারতের যুবশক্তি – New India Youth । New India Youth -এরমানে হল – আনন্দ, উৎসাহ, জীবনীশক্তি। আমার বিশ্বাস প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর এইযুবশক্তির দক্ষতা ও শক্তির ওপর ভর করেই আমাদের New India -র স্বপ্নবাস্তবায়িত হবে। আগামী দিনের যে নতুন ভারতের কথা আমরা বলছি, তা হল জাতিবাদ,সম্প্রদায়বাদ, আতঙ্কবাদ ও ভ্রষ্টাচারের বিষমুক্ত ভারত। অপরিচ্ছন্নতা ও দারিদ্রতাথেকে মুক্ত ভারত। New India – যেখানে সবার জন্য থাকবে সমান সুযোগ,যেখানে সবার আশা-আকাঙ্ক্ষা স্বপ্ন পাবে পূর্ণতা। নতুন ভারত, যার চালিকা শক্তি হবেশান্তি, একতা ও সদ্ভাবনা। আমার নতুন ভারতের যুবশক্তি New India Youth , তোমরা এগিয়েএসো, ভাবো কীভাবে সাকার হবে New India –র স্বপ্ন। নিজেদের জন্য একটি রাস্তাতৈরি কর, তোমরা যাদের সঙ্গে যুক্ত, তাদেরকেও নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করো, আর এইভাবেদল সমৃদ্ধ হোক, এগিয়ে চলুক। তোমরাও এগিয়ে চল, দেশও এগিয়ে যাক।
আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে একটা ভাবনা আমার মনে এল,ভারতের প্রতিটি জেলাতে আমরা কি Mock Parliament –এর আয়োজন করতে পারি? যেখানে ১৮ থেকে ২৫বছরের যুবক-যুবতীরা একসঙ্গে বসে New India –র ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করবে, দিশাখুঁজবে, পরিকল্পনা তৈরি করবে? ভাববে, কি করে আমরা ২০২২-এর আগেই আমাদের পরিকল্পনারূপায়ন করবো? কি করে আমরা এমন এক ভারতের নির্মাণ করব, যার স্বপ্ন আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামের বীর যোদ্ধারা দেখেছিলেন? মহাত্মা গান্ধী স্বাধীনতার আন্দোলনকেজন-আন্দোলনের রূপ দিয়েছিলেন। আমার যুবা-বন্ধুরা, এটা এই সময়ের দাবী যে আমরাওএকবিংশ শতকের সুন্দর, সার্থক ভারতের স্বপ্নকে এক জন আন্দোলনের রূপ দিই। বিকাশ ওঅগ্রগতির জন আন্দোলন – প্রগতির জন আন্দোলন। সামর্থ্য বলে বলীয়ান এক শক্তিশালীভারতের জন্য জন আন্দোলন। আমি মনে করি – ১৫-ই আগস্টের আশেপাশে কোন এক সময়ে দিল্লিতেএকটি MockParliament –এর আয়োজন করা হোক, যাতে প্রতিটি জেলা থেকে বাছাই করা একজন যুবা অংশ নেবেন ও আলোচনা করবে কীভাবে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে New India –রস্বপ্ন সাকার করা যায়। সংকল্প থেকে সিদ্ধিতে কীভাবে পৌঁছান যায়। আজ তরুণদের জন্য অনেকনতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। স্কিল ডেভলপমেন্ট থেকে শুরু করে ইনোভেশন আরএন্টারপ্রেনারশিপে আমাদের তরুণরা এগিয়ে আসছে এবং সফল হচ্ছে। আমি চাইব যে এই সবপ্রকল্পের খবর এই ‘ নিউ ইন্ডিয়া ইউথ ’ -এর কোনো এক জায়গায় কীভাবে পাওয়া যেতেপারে তার জন্য ভাবনাচিন্তা হোক আর এ ব্যাপারে এমন এক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হোক যাতেআঠেরো বছর বয়স পূর্ণ হতেই এই জগতের ব্যাপারে, এই যাবতীয় জিনিস সম্পর্কে সহজভাবেজানতে পারে সে, আর এক্ষেত্রে আবশ্যিক লাভ যেন করতে পারে সে।
প্রিয়দেশবাসী, আগের ‘ মন কি বাত ’ অনুষ্ঠানে আমিপজিটিভিটি নিয়ে কথা বলেছিলাম আপনাদের সঙ্গে। সংস্কৃত একটি শ্লোক মনে আসছে আমার –
উৎসাহোবলবানায়ে, নাস্তুৎসাহাৎপরম্ বলম্ ।
সোৎসাহস্যচ লোকেষু ন কিঞ্চিদপি দুর্লভম্ ।।
এর অর্থ হল, উৎসাহেপরিপূর্ণ এক ব্যক্তি অত্যন্ত বলশালী, কেননা উৎসাহের থেকে বড় আর কিছু হয় না।পজিটিভিটি আর উৎসাহে ভরা ব্যক্তির জন্য কিছুই অসম্ভব নয়। ইংরেজিতেও সবাই বলেন – পেসিমিজ্ম লীড্সটু উইক্নেস্, অপ্টিমিজ্ম টু পাওয়ার। আমি আগের ‘ মন কি বাত ’ অনুষ্ঠানেদেশবাসীদের প্রতি আবেদন রেখেছিলাম যে ২০১৭ সালে নিজের পজিটিভ মুহূর্তগুলি শেয়ারকরুন আর এক পজিটিভ অ্যাটমসফিয়ারে ২০১৮-কে স্বাগত জানান। আমি খুব খুশি যে মানুষজনবিপুল সংখ্যায় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, ‘মাইগভ’ আর ‘নরেন্দ্রমোদী অ্যাপ’-এঅত্যন্ত পজিটিভ
রেসপন্সদিয়েছেন, নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। ‘পজিটিভ ইন্ডিয়া হ্যাশট্যাগ’-সহ লক্ষ লক্ষট্যুইট করা হয়েছে যা প্রায় দেড়শো কোটিরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছেছে। এক অর্থেপজিটিভিটির যে সঞ্চার, তা ভারতে শুরু হয়ে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। যে ট্যুইট আররেসপন্স এসেছে
তাসত্যিই ইন্সপায়ারিং ছিল। এক সুখের অনুভূতি ছিল। কিছু দেশবাসী এই বছরে যে সব ঘটনাতাঁদের মনে বিশেষ প্রভাব ফেলেছে,ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে সেই সব ঘটনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। কিছু মানুষ নিজেরব্যক্তিগত উপলব্ধিও শেয়ার করেছেন।
সাউন্ড বাইট
# আমারনাম মিনু ভাটিয়া। আমি ময়ূর বিহার, পকেট ওয়ান, ফেজ ওয়ান, দিল্লিতে থাকি। আমার মেয়েএম বি এ করতে চেয়েছিল। যার জন্য আমার ব্যাঙ্ক থেকে লোনের প্রয়োজন ছিল যা খুব সহজেইআমি পেয়ে গিয়েছি আর আমার মেয়ের লেখাপড়া চালু রয়েছে।
# আমারনাম জ্যোতি রাজেন্দ্র বাড়ে। আমি বোডল থেকে কথা বলছি। ওই যে এক টাকা কেটে নেয়বীমায়, সেই বীমা করিয়েছিল আমার স্বামী। আর অ্যাকসিডেন্টে তার মৃত্যু হয়। সেই সময়আমাদের কী অবস্থা হয়েছিল তা আমরাই জানি। সরকারের এই সহায়তায় আমাদের খুব উপকারহয়েছিল আর এতে আমরা পরিস্থিতির কিছুটা সামাল দিতে পেরেছিলাম।
# আমারনাম সন্তোষ যাদব। আমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে, ভিন্নর গ্রাম থেকে ২০১৭ সালে ন্যাশনালহাইওয়ে তৈরি হয়েছে। এই কারণে আমাদের রাস্তা খুব ভালো হয়ে গিয়েছে আর বিজনেসও বাড়তেচলেছে।
# আমারনাম দীপাংশু আহুজা, মহল্লা সাদতগঞ্জ, জেলা সহরণপুর, উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা আমি।দুটো ঘটনা যা আমাদের ভারতীয় সৈনিকরা ঘটিয়েছেন – এক তো পাকিস্তানেতাদের করা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক যা উগ্রপন্থার লঞ্চিং প্যাড যেগুলো ছিল তাদেরনাস্তানাবুদ করে দিয়েছে আর সঙ্গে সঙ্গে ডোকলামে আমাদের ভারতীয় সৈনিকদের যে পরাক্রমদেখতে পেলাম সেটা অতুলনীয় ছিল।
# আমারনাম সতীশ বেওয়ানি। গত চল্লিশ বছর ধরে আমাদের এলাকায় জলের সমস্যা ছিল। আমরাসেনাবাহিনীর জন্য নির্মিত পাইপ লাইনের উপরে নির্ভরশীল ছিলাম। এখন আমাদের পাইপ লাইনআলাদা হয়েছে। তো ২০১৭ সালে এটা আমাদের বড় পাওনা।
এমনভাবে, অনেকব্যক্তি আছেন, যাঁরা নিজের নিজের স্তরে এমন কাজ করছেন যাতে অনেক মানুষের জীবনেইতিবাচক পরিবর্তন আসছে। বাস্তবে এটাই তো ‘ নিউ ইন্ডিয়া ’ যা আমরা সবাই মিলেনির্মাণ করছি। আসুন এই সব ছোট-ছোট আনন্দ নিয়ে আমরা ২০১৮ সালে প্রবেশ করি, নতুনবছরের শুভারম্ভ করি আর ‘ পজিটিভ ইন্ডিয়া ’ র লক্ষ্যে দৃঢ় পদক্ষেপ নিই।
যখনআমরা সবাই পজিটিভিটির কথা বলছি তখন আমারও একটা কথা শেয়ার করতে ইচ্ছে হচ্ছে। অতিসম্প্রতি কাশ্মীরের প্রশাসনিক সেবার টপার অঞ্জুম বশির খান খটক-এর প্রেরণাদায়ীকাহিনীর কথা জানতে পারলাম আমি। উনি উগ্রপন্থা আর ঘৃণার দংশন থেকে বেরিয়ে এসেকাশ্মীর অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের পরীক্ষায় টপ করেছেন। আপনার জেনে হয়রান হয়েযাবেন যে ১৯৯০ সালে উগ্রপন্থীরা ওনার পৈতৃক বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল। ওখানেউগ্রপন্থা আর হিংসা এত বেশি ছিল যে ওনার পরিবারকে নিজেদের পৈতৃক ভিটে ছেড়ে বেরিয়েআসতে হয়েছিল। একটি ছোট শিশুর চারপাশে এত হিংসার বাতাবরণ হৃদয়ে অন্ধকার আর তিক্ততাসৃষ্টির জন্য যথেষ্ট ছিল – কিন্তু অঞ্জুম এমনটা হতে দেয় নি। সে কখনও আশা ছাড়ে নি। সেনিজের জন্য আলাদা এক পথ বেছে নেয় – জনগণের সেবার পথ। সে প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসেনিজের সফলতার কাহিনী নিজেই লেখে। আজ সে শুধু জম্মু আর কাশ্মীরেরই নয় বরং গোটাদেশের যুবকদের প্রেরণ আহয়ে উঠেছে। অঞ্জুম প্রমাণ করেছে যে পরিস্থিতি যতই খারাপ হোকনা কেন, ইতিবাচক কাজের মাধ্যমে নিরাশার মেঘকেও বিনষ্ট করা যায়।
এই গত সপ্তাহেই জম্মু-কাশ্মীরের কয়েকজন কন্যার সঙ্গে সাক্ষাতেরসুযোগ হল আমার। তাদের মধ্যে যে আবেগ ছিল, যে উৎসাহ ছিল, যে স্বপ্ন ছিল আর আমিশুনছিলাম তারা জীবনে কোন কোন ক্ষেত্রে অগ্রগতি করতে চায়। আর তারা কত আশায় পরিপূর্ণমানুষজন। তাদের সঙ্গে আমি কথা বলাম, কোথাও নিরাশার চিহ্নটুকুও ছিল না – উৎসাহ ছিল, আনন্দছিল, শক্তি ছিল, স্বপ্ন ছিল, সঙ্কল্প ছিল। ওই কন্যাদের সঙ্গে যতটা সময় আমিকাটিয়েছি তাতে নিজেও প্রেরণা পেয়েছি আর এটাই তো দেশের শক্তি, এই তো আমাদেরযুবক-যুবতীরা, এরাই তো আমার দেশের ভবিষ্যৎ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, শুধু আমাদের দেশেরইনয়, যখনই বিশ্বের বিখ্যাত ধার্মিক স্থানের চর্চা হয় তখন কেরলের সবরীমালা মন্দিরেরআলোচনা হওয়া খুব স্বাভাবিক। বিশ্বখ্যাত এই মন্দিরে ভগবান আয়াপ্পাস্বামীর আশীর্বাদনিতে প্রতি বছর কোটি কোটি শ্রদ্ধানত মানুষ সেখানে উপস্থিত হন। যেখানে এত বিপুলসংখ্যায় শ্রদ্ধানত মানুষ আসেন, যে স্থানের এত বড় মাহাত্ম্য, সেখানে স্বচ্ছতা বজায়রাখা কত বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে? আর বিশেষ করে সেই জায়গায় যা পাহাড় আর জঙ্গলেরমধ্যে অবস্থিত। কিন্তু কী করে এই সমস্যাকেই একটা সংস্কারে বদলে ফেলা যায়, সমস্যারমোকাবিলা কীভাবে খোঁজা যেতে পারে, ভাবতে হবে। জনসাধারণের অংশগ্রহণে কতটা জোরদারহতে পারে একটা কর্মসূচি তা আমরা সবরীমালা মন্দিরের উদাহরণ থেকে জানতে পারি। পি.বিজয়ন নামে একজন পুলিশ অফিসার ‘পুণ্যম্ পুন্কাভনম্’ নামে একটা প্রোগ্রাম শুরুকরেছিলেন। স্বচ্ছতা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে স্বচ্ছতা অভিযান শুরু করলেন। সে অভিযানেরনিয়ম হল একজন তীর্থযাত্রী যতক্ষণ না স্বচ্ছতার জন্য কিছু না কিছু শারীরিক শ্রমদিচ্ছেন, তাঁর পূণ্যযাত্রা সম্পূর্ণ হবে না।
এই অভিযানে ছোট-বড়কোন ভেদ নেই। প্রত্যেক তীর্থযাত্রী ভগবানের পূজার অংশ হিসেবে স্বচ্ছতা কর্মকাণ্ডেকিছু না কিছু ভাবে অংশগ্রহণ করছেন, আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ করছেন। প্রত্যেক সকালেএই সাফাইয়ের অদ্ভুত এক দৃশ্য দেখা যায় আর সমস্ত তীর্থযাত্রী তাতে সামিল হন। তিনিসেলিব্রিটি হতে পারেন বা ধনবান হতে পারেন, কিংবা মস্ত বড় অফিসার হতে পারেন, অথবাসাধারণ তীর্থযাত্রী – প্রত্যেকেই পূণ্যম্ পুন্কাভনম্ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেনএবং সাফাই কাজ করেই তাঁদের এগোতে হয়। দেশবাসীর কাছে এমন অনেক উদাহরণ আছে।সবরীমালায় এই স্বচ্ছতা অভিযান এগিয়ে চলে, পুণ্যম্ পুন্কাভনম্ সফল হয় এবং সবতীর্থযাত্রী এতে অংশগ্রহণ করেন। ওখানে কঠোর ব্রত পালনের সঙ্গে সঙ্গে কঠোর সংকল্পওএকসঙ্গে চলেছে।
প্রিয় দেশবাসী, ২০১৪-র ২-রা অক্টোবর পূজনীয় বাপু-র জন্মজয়ন্তীদিবসে আমরা সবাই সংকল্প নিয়েছি বাপুর যে অসমাপ্ত কাজ অর্থাৎ স্বচ্ছ ভারত,দুর্গন্ধমুক্ত ভারত গড়ব, পূজনীয় বাপু সারা জীবন এই কাজের জন্য যুঝেছেন এবং চেষ্টাওকরতেন। আর আমরা শপথ নিয়েছি বাপুর যখন ১৫০-তম জন্মজয়ন্তী হবে, তখন তাঁর স্বপ্নেরভারত স্বচ্ছ ভারত উপহার দেওয়ার জন্য কিছু না কিছু করব। স্বচ্ছতার জন্য সারা দেশেব্যাপক স্তরে প্রচেষ্টা চলছে। গ্রামীন ও শহরের সব জায়গায় বিপুল জনগণ অংশগ্রহণকরছেন, তাতে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শহর স্তরে স্বচ্ছতার অগ্রগতি পরখ করারজন্য আগামী ২০১৮-র ৪-ঠা জানুয়ারি থেকে ১০-ই মার্চের মধ্যে দুনিয়ার সব থেকে বড় সার্ভে ‘স্বচ্ছসর্বেক্ষণ ২০১৮’-র আয়োজন করা হবে। এই কর্মসূচি চার হাজারের বেশি শহরের প্রায়চল্লিশ কোটি জনগণের মধ্যে করা হবে। এই সার্ভেতে কি কি করা যাবে দেখা যাক। শহরেখোলা জায়গায় শৌচ থেকে মুক্তি, আবর্জনা সংগ্রহ, সেই আবর্জনা উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যপরিবহনের ব্যবস্থা, আবর্জনার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রসেসিং, বিহেভিরিয়্যাল চেঞ্জ কীকরে করা যায়, ক্যাপাসিটি বিল্ডিং আর স্বচ্ছতার জন্য ইনোভেটিভ প্রয়াস কী কী চলছেএবং তাতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ কী করে বাড়ান যায়। এই সার্ভের জন্য আলাদা আলাদাদল শহরগুলো ইন্স্পেকশন করবে। নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের প্রতিক্রিয়া নেবে।স্বচ্ছতা অ্যাপ উপযোগিতা তথা সেবাক্ষেত্রের সংশোধনের জন্য অ্যানালিসিস্ করবে। এইকাজে দেখা হবে শহরের প্রতিটি মানুষের স্বভাবের মধ্যে শহরকে স্বচ্ছ রাখার প্রক্রিয়াযাতে যুক্ত হয় এবং তা শহরের অভ্যাসে পরিনত হয়। স্বচ্ছতা শুধু সরকারের দায়িত্ব –এমনটা নয়, এতে নাগরিক ও নাগরিক সংগঠনগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ এবং সমস্ত নাগরিকের
কাছেআমার আবেদন, আপনারা এই সার্ভেতে জোরদার অংশগ্রহণ করুন। আপনার পাড়া, আপনার মহল্লা,আপনার শহর অন্যদের থেকে পিছিয়ে না পড়ে তা নিয়ে আপনারা সচেতন হয়ে উঠুন।
আমার পুরো বিশ্বাস, আপনারা ঘরদোরের শুকনো আবর্জনা এবং ভেজা আবর্জনা আলাদা করেযথাক্রমে নীল আর সবুজ ডাস্টবিনে ফেলছেন।
আবর্জনা reduce , reuse এবং recycle করার সিদ্ধান্ত খুবইউপযোগী হবে। যখন কোনো শহরের র্যাঙ্কিং এই সার্ভের ভিত্তিতে হবে, তখন আপনার শহরেযদি ১ লাখের ওপর বাসিন্দা থাকে তবে জাতীয় স্তরে, আর ১ লাখের কম হলে আঞ্চলিক স্তরেআপনার শহর যাতে ওপরের দিকের ranking –এ আসে, তার জন্য আপনারা স্বপ্ন দেখবেন,চেষ্টা চালাবেন, এটাই আমার বিশ্বাস।
৪-ঠা জানুয়ারি থেকে ১০-ই মার্চ, ২০১৮-র মাঝে স্বচ্ছতা-সর্বেক্ষণ অভিযানের Healthy competition –এ আপনারা পিছিয়ে নাপড়েন এই নিয়ে সারাক্ষণ আপনাদের চর্চার বিষয় করে তুলুন এবং আপনাদের সব্বার স্বপ্নহওয়া উচিত ‘আমার শহর আমার প্রয়াস – আমার প্রগতি দেশের প্রগতি’। আসুন, এই শপথেরসঙ্গে পূজনীয় বাপুকে স্মরণ করি এবং স্বচ্ছ ভারতের সঙ্কল্প নিয়ে নিজেদের পুরুষকারেরউত্তরণ ঘটাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছু কিছু কথা আপাতদৃষ্টিতে খুবই ছোট বাসামান্য মনে হয়, কিন্তু একটা সমাজের ক্ষেত্রে তা সুদূরপ্রসারী হয়ে যায়। আজ ‘মন কিবাত’ এই কার্যক্রমে এমনই একটি ঘটনার উল্লেখ করছি। আমার চেনা-পরিচিত জগৎ থেকে জানলামকোনো মুসলিম মহিলা যদি হজ করতে যেতে চায় তবে মহরম অর্থাৎ পুরুষ অভিভাবক ছাড়া তিনিযেতে পারবেন না। যখন প্রথম এই বিষয়টা আমার কানে এল, ভাবলাম, এটা কেন হবে? কে এমননিয়ম বানালো? এমন discrimination কেন থাকবে? এর গভীরে যখন গেলাম, আমি হতবাক হয়ে গেলাম।স্বাধীনতার ৭০ বছর পরেও এই বাধ্যবাধকতা আমরাই চালু রেখেছি! দশকের পর দশক মুসলিমমহিলাদের সঙ্গে এই অন্যায় হয়ে চলেছে? কিন্তু কেউ তা নিয়ে ভাবছে না! এমন কি কিছুমুসলিম দেশেও এমন নিয়ম নেই! অথচ, আমাদের দেশের মুসলিম মহিলাদের সে অধিকার দেওয়াহয়নি। আমার অত্যন্ত ভালো লেগেছে, আমাদের সরকার এই ব্যাপারে মনোযোগ দিয়েছে। আমাদের Ministry of MinorityAffairs এই বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ৭০ বছরের পুরনো এই পরম্পরাপরিবর্তন করে ঐ প্রতিবন্ধকতা তুলে দিয়েছে। আজ একজন মুসলিম মহিলা মহরম ছাড়াই হজকরতে যেতে পারবেন এবং আমার ভালো লেগেছে এবারে প্রায় ১৩০০ মুসলিম মহিলা মহরম ছাড়াহজ যাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন এবং দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে – কেরল থেকে উত্তরভারত –সব জায়গা থেকে মুসলিম মহিলারা হজে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। সংখ্যালঘু বিষয়কমন্ত্রণালয়কে আমি পরামর্শ দিয়েছি, যে মহিলারা একলা হজ-এ যেতে চাইছেন, তাঁদের সেআবেদনে যেন অনুমতি মিলে যায়। সাধারণভাবে হজ-এ যাওয়ার জন্য লটারির ব্যবস্থা আছে।কিন্তু আমি চাই, যে মহিলারা একলা হজে যেতে আগ্রহী, তাঁদের এই লটারির বাইরে রেখেস্পেশ্যাল ক্যাটেগরি হিসেবে যেন বিচার করা হয়। আমি পরিপূর্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে বলছিএবং এ আমার দৃঢ় ধারণা, ভারতের বিকাশযাত্রা আমাদের নারীশক্তি ও তাদের প্রতিভারভরসায় এগিয়ে যাচ্ছে এবং এগোতে থাকবে। আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে আমাদের মহিলারাপুরুষদের মতই সমান অধিকার পাবেন, সমান সুযোগ পাবেন যাতে প্রগতির পথে সমান ভাবেঅংশগ্রহণ করতে পারেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ২৬-শে জানুয়ারি আমাদের দেশের এক ঐতিহাসিকদিন। কিন্তু
২৬-শে জানুয়ারি, ২০১৮ দিনটিকে বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে। এবছর সাধারণতন্ত্র দিবসসমারোহে আসিয়ানভুক্ত দশটি দেশের নেতৃত্ব প্রধান অতিথি হিসেবে ভারতে আসবেন। ভারতেরইতিহাসে এর আগে এমনটা কখনও হয়নি। ২০১৭ বছরটি ছিল আসিয়ানভুক্ত দেশগুলি ও ভারত – এইদুই পক্ষের জন্যই উল্লেখযোগ্য। ‘আসিয়ান’ এবার পঞ্চাশ বছর পূর্ণ করল এবং ২০১৭ সালআসিয়ান-ভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সমঝোতার ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। ২৬-শে জানুয়ারিবিশ্বের দশজন মহান নেতার একসঙ্গে মিলিত হওয়ার ঘটনা আমাদের কাছে অত্যন্ত গর্বের।
প্রিয় দেশবাসী, এটা উৎসবের মরশুম। এমনিতে আমাদের দেশ এক অর্থেউৎসবের দেশ। সম্ভবত এমন কোনও দিন নেই, যেদিন কোনো না কোনো পার্বণ থাকে না।সম্প্রতি আমরা সবাই মিলে ক্রিসমাস পালন করেছি, আবার নতুন বছর আসছে সামনে। নতুন বছরআপনাদের সবার জন্য সুখ, সমৃদ্ধি ও খুশি আনুক। আমরা সবাই নতুন উদ্যোগ, নতুন উৎসাহ,নতুন আশা ও সংকল্প নিয়ে অগ্রসর হই এবং দেশও এগিয়ে চলুক। জানুয়ারি মাসে সূর্যেরউত্তরায়ণ হয় এবং এসময় মকর সংক্রান্তি পার্বণ পালন হয়। এটি প্রকৃতির সঙ্গেসম্পর্কিত একটি পরব। একদিকে আমাদের প্রত্যেক পার্বণ কোনও না কোনভাবে প্রাকৃতিকঘটনার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে, কিন্তু বৈচিত্র্যে ভরা আমাদের সংস্কৃতিতে প্রকৃতির এইঘটনাগুলি পালন করার পদ্ধতি ভিন্ন। একদিকে যখন পঞ্জাব আর উত্তর ভারতে ‘লোহড়ী’ নিয়েআনন্দ উৎসব হয়, অন্যদিকে তখন ইউ.পি-বিহারে ‘খিচড়ি’ আর ‘তিল সংক্রান্তি’র অপেক্ষাথাকে, রাজস্থানে ‘সংক্রান্তি’, অসমে ‘মাঘ বিহু’, তামিলনাড়ুতে ‘পোঙ্গল’ – এই সবকটিউৎসবই নিজ নিজ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রত্যেক উৎসবেরই আলাদা মাহাত্ম্য আছে।এই সব পার্বণ মোটামুটি ১৩ থেকে ১৭ জানুয়ারির মধ্যে পালিত হয়। এইসব পার্বণের নামআলাদা আলাদা কিন্তু এর গভীরে একটাই তত্ত্ব – প্রকৃতি ও কৃষির মেলবন্ধন।
সমস্ত দেশবাসীকে সব পার্বণের জন্য শুভেচ্ছা জানাই। আরেকবারআপনাদের সবাইকে নববর্ষ ২০১৮’র শুভেচ্ছা! অনেক অনেক ধন্যবাদ! আবার ২০১৮-য়আমি কথা বলব। ধন্যবাদ!
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের সবাইকে নমস্কার!
আকাশবাণীর মাধ্যমে ‘মন কি বাত’ করতে করতে তিন বছর পূর্ণ হয়েগেল। আজ এটি ৩৬-তম পর্ব। ‘মন কি বাত’ হল একরকম ভারতের যে সদর্থক শক্তি আছে, দেশেরকোণে কোণে যে ভাবনাচিন্তা পূর্ণ হয়ে রয়েছে, ইচ্ছা রয়েছে, প্রত্যাশা আছে, কোথাওকোথাও নালিশও আছে – জনগণের মনে যে যে ভাবনার উদয় হতে থাকে, ‘মন কি বাত’ সেই সবভাবনার সঙ্গে আমার নিজেকে যুক্ত করার এক সুযোগ দিয়েছে, আর আমি কখনও এটা বলি না যে,এটা আমার ‘মন কি বাত’। এই ‘মন কি বাত’ দেশবাসীর মনের সঙ্গে যুক্ত, তাদের আবেগেরসঙ্গে যুক্ত, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে। আর যখন ‘মন কি বাত’-এরকথা বলি, তখন দেশের প্রতিটি কোণে যেসমস্ত মানুষ তাঁদের কথা আমাকে পাঠান, আপনাদেরতো হয়ত আমি খুব কম কথা বলতে পারি, কিন্তু আমার প্রচুর বিষয় মিলে যায়। ই-মেইল হোক,দূরভাষ হোক, ‘মাই গভ’ পোর্টাল হোক, নরেন্দ্র মোদী অ্যাপের মাধ্যমে হোক, এত কথাআমার কাছে পৌঁছে যায়। বেশীরভাগই আমাকে উৎসাহ দেয়। অনেক কিছু সরকারের সংশোধনের জন্যথাকে, কখনও ব্যক্তিগত নালিশও থাকে তো আবার কখনও সামগ্রিক সমস্যার প্রতি মনোযোগআকর্ষণ করা হয়। আর আমি তো মাসে একবার আপনাদের আধঘণ্টা সময় নিই, কিন্তু মানুষেরাতিরিশ দিন ‘মন কি বাত’-এর জন্য নিজের কথা পৌঁছতে থাকেন। আর তার ফলে যা হয়েছে তাহল, সরকারেরও সংবেদনশীলতা, সমাজের দূর-সুদূরে কত না শক্তি রয়েছে, তার প্রতি তাদেরমনোযোগ দেওয়ার এক সহজ ভাবনা তৈরি হচ্ছে। আর এজন্য ‘মন কি বাত’-এর তিন বছরের এইযাত্রা দেশবাসীর – তাদের ভাবনাচিন্তার, তাদের অনুভূতির এক যাত্রা। আর হয়ত এত কমসময়ে দেশের সাধারণ মানুষের আবেগ জানা-বোঝার জন্য যে সুযোগ আমার হয়েছে তার জন্য আমিদেশবাসীর কাছে খুবই কৃতজ্ঞ। ‘মন কি বাত’-এ আমি প্রায়ই আচার্য বিনোবা ভাবের সেইকথাটি মনে রাখি। আচার্য বিনোবা ভাবে প্রায়ই বলতেন, অ-সরকারি, কার্যকর। আমিও ‘মন কিবাত’-এ এই দেশের জনগণকে কেন্দ্রে রাখার চেষ্টা করেছি। রাজনীতির রঙ থেকে অনেক দূরেরেখেছি। তৎকালিন উত্তেজনা, আক্রোশ হতে থাকে তার মধ্যে না গিয়ে স্থির মন নিয়েআপনাদের সঙ্গে যুক্ত থাকার চেষ্টা করেছি। আমি অবশ্যই মানি, এখন তিন বছর পরে সমাজবিজ্ঞানী,বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষক, গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞরা অবশ্যই এর বিশ্লেষণ করবেন। প্রতিটিজিনিসের প্লাস-মাইনাস তুলে ধরবেন, আর আমার বিশ্বাস যে, এই বিচার-বিশ্লেষণ ভবিষ্যতে‘মন কি বাত’-এর জন্য অনেক উপযোগী হবে, তাতে এক নতুন চেতনা, নতুন উদ্যম মিলবে। আরআমি যখন একবার ‘মন কি বাত’-এ বলেছিলাম, আমাদের খাওয়ার সময়ে চিন্তা করা উচিত যে,যতটা প্রয়োজন, ততটাই নেব, আমরা তা নষ্ট করব না। কিন্তু তারপর আমি দেখেছি যে, দেশেরপ্রতিটি কোণ থেকে এত চিঠি এসেছে, অনেক সামাজিক সংগঠন, অনেক নব্যযুবক অনেক আগেথেকেই এই কাজ করছেন। খাওয়ার থালায় যা ফেলে যাওয়া হয়েছে, তা একসঙ্গে করে তার ঠিকঠাকব্যবহার কীভাবে হবে, এই কাজে যুক্ত এত মানুষ আমার মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন, আমারঅত্যন্ত ভালো লেগেছে, আনন্দ হয়েছে।
একবার আমি ‘মনকি বাত’-এ মহারাষ্ট্রের এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রীযুক্ত চন্দ্রকান্ত কুলকার্ণিরকথা বলেছিলাম, যিনি নিজের পেনশনে যে ষোল হাজার টাকা পেতেন, তার থেকে পাঁচ হাজারটাকা করে তিনি ৫১টি পোস্ট-ডেটেড চেকের মাধ্যমে স্বচ্ছতার জন্য দান করেছিলেন। আরতারপর তো আমি দেখেছি যে স্বচ্ছতার জন্য এই ধরনের কাজ করতে কত মানুষ এগিয়ে এসেছেন।
একবার আমিহরিয়ানাতে এক পঞ্চায়েত প্রধানের ‘সেলফি উইথ ডটার’ দেখি আর আমি ‘মন কি বাত’-এ তাসবার সামনে রাখি। দেখতে না দেখতে শুধু ভারত থেকেই নয়, সারা বিশ্ব জুড়ে ‘সেলফি উইথডটার’ এক বড় অভিযান শুরু হয়ে যায়। এটা শুধু সোস্যাল মিডিয়ারই একটি বিষয় নয়,প্রতিটি কন্যাকে এক নতুন আত্মবিশ্বাস, নতুন গর্ব করার মত ঘটনা হয়ে উঠেছে। প্রতিমা-বাবার মনে হতে থাকে যে নিজের কন্যার সঙ্গে সেলফি তুলি। প্রতিটি মেয়ের মনে হতেথাকে যে আমারও কোন মহিমা আছে, কোনো মহত্ত্ব আছে।
কিছুদিন আগেভারত সরকারের পর্যটন দপ্তরের সঙ্গে বসেছিলাম। আমি যখন পর্যটকদের বলি যে আপনারা Incredible India –তে যেখানেগেছেন সেখানকার ফোটো পাঠান।
ভারতের প্রতি কোণ থেকে লাখখানেক ছবি একরকম পর্যটন ক্ষেত্রে যাঁরাকাজ করেন তাঁদের এক মস্ত বড় সম্পদ হয়ে উঠেছে। ছোটো ছোটো ঘটনা কত বড় আন্দোলন তৈরিকরে দেয়, তা ‘মন কি বাত’-এ আমি অনুভব করেছি। আজ ইচ্ছে করছে, কারণ যখন ভাবছি যে তিনবছর হয়ে গেছে, তো গত তিন বছরের কত ঘটনা আমার মনে ভিড় করে আসছে। দেশ সঠিক রাস্তায়যাওয়ার জন্য প্রতি মুহূর্তে এগিয়ে চলেছে। দেশের প্রতিটি নাগরিক অন্যের ভালোর জন্য,সমাজের ভালোর জন্য, দেশের উন্নতির জন্য কিছু না কিছু করতে চাইছেন। আমার তিন বছরের‘মন কি বাত’-এর যাত্রায়, আমি এটা দেশবাসীর কাছ থেকে জেনেছি, বুঝেছি, শিখেছি। যেকোনো দেশের জন্যই এ এক মস্ত বড় সম্পদ, এক মস্ত বড় শক্তি। আমি অন্তর থেকে দেশবাসীকেপ্রণাম জানাচ্ছি।
আমি একবার ‘মনকি বাত’-এ খাদি নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আর খাদি শুধু এক বস্ত্র নয়, এক ঐতিহ্য। আর আমিদেখেছি ইদানিং খাদির প্রতি প্রচুর আকর্ষণ বেড়ে গেছে আর আমি স্বাভাবিক ভাবেই বলেছিযে কাউকে শুধুই খাদি পড়তে হবে না। কিন্তু নানারকম fabric তো আছে, তা খাদি নয় কেন? ঘরের চাদরহতে পারে, রুমাল হতে পারে, পর্দা হতে পারে। আর এটা মনে হচ্ছে যে যুবপ্রজন্মেরমধ্যে খাদির প্রতি আকর্ষণ বেড়ে গেছে। খাদির বিক্রি বেড়ে গেছে আর তার জন্য গরীবদেররোজগারের সঙ্গে এক সরাসরি সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। ২-রা অক্টোবর খাদিতে ছাড় দেওয়া হয়,অনেকটাই ছাড় পাওয়া যায়। আমি আরও একবার বলব যে, খাদির জন্য যে অভিযান চলছে, তাকেআমরা আরও এগিয়ে নিয়ে যাই, আরও বাড়াই। খাদি কিনে গরীবদের ঘরে দীপাবলির প্রদীপজ্বালাব, এই ভাবনা নিয়ে আমরা কাজ করি। আমাদের দেশের দরিদ্রদের এই কাজের থেকে একশক্তি মিলবে, আর আমাদের তা করা উচিত। আর এই খাদির প্রতি রুচি বাড়ার জন্য খাদিক্ষেত্রের কর্মীদের, ভারত সরকারের খাদির সঙ্গে যুক্ত মানুষদের এক নতুন ভাবেভাবনাচিন্তা করার উৎসাহ বেড়েছে। নতুন প্রযুক্তি কীভাবে আনবে, উৎপাদনক্ষমতা কীভাবেবাড়াবে, সৌরশক্তি ও হস্তচালিত তাঁত কীভাবে নিয়ে আসবে? পুরনো যে ঐতিহ্য ছিল, যাপ্রায় ২০, ২৫, ৩০ বছর ধরে বন্ধ হয়ে পড়েছিল, তাকে পুনর্জীবিত কীভাবে করা যায়।
উত্তর প্রদেশেবারাণসীর সেবাপুরে – সেবাপুরীর এক খাদি আশ্রম ২৬ বছর ধরে বন্ধ হয়ে পড়েছিল, কিন্তুআজ তা পুনর্জীবিত হয়েছে। অনেক রকম পদ্ধতি যুক্ত হয়েছে। অনেক লোকের রোজগারের নতুনসুযোগ তৈরি হয়েছে। কাশ্মীরের পম্পোরে বন্ধ হয়ে থাকা খাদি ও গ্রামোদ্যোগ প্রশিক্ষণকেন্দ্র আবার চালু হয়েছে আর কাশ্মীরের কাছে তো এই ক্ষেত্রে দেওয়ার অনেক কিছু আছে।এখন এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আবার শুরু হওয়ার জন্য নতুন প্রজন্ম আধুনিকভাবে নির্মাণকাজ করতে, বয়ন করতে, নতুন জিনিস তৈরি করতে এক সাহায্য মিলছে আর আমার ভালো লাগছে যেবড় বড় করপোরেট হাউস দীপাবলির সময় যে উপহার দেয়, তারা ইদানিং খাদির জিনিস দিতে শুরুকরেছে। লোকেরাও একজন আরেকজনকে উপহার হিসেবে খাদির জিনিস দিচ্ছে। সহজভাবে কোন জিনিসকীভাবে এগিয়ে চলে তা আমরা সবাই অনুভব করছি।
আমার প্রিয়দেশবাসী, গতমাসে ‘মন কি বাত’-এ আমরা সবাই মিলে এক সংকল্প করেছিলাম এবং আমরা ঠিক করেছিলামযে গান্ধী জয়ন্তীর আগের ১৫ দিন সারা দেশ জুড়ে স্বচ্ছতা উৎসব পালন করব। স্বচ্ছতারসঙ্গে জনমনকে যুক্ত করব। আমাদের শ্রদ্ধেয় রাষ্ট্রপতি এই কাজ শুরু করেছেন এবং দেশতাতে যুক্ত হয়েছে। আবালবৃদ্ধ, পুরুষ-মহিলা, শহর-গ্রাম – প্রত্যেকেই আজ স্বচ্ছতাঅভিযানের এক অংশ হয়ে উঠেছে।
আমি যখনসংকল্প সাধনের কথা বলি, তখন আমাদের এই স্বচ্ছতা অভিযান সংকল্প সাধনের পথে কীভাবেএগিয়ে চলেছে তা আমরা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। সবাই এটাকে স্বীকার করে, সহায়তাকরে এবং এর সাফল্যের জন্য কোনো না কোনো ভাবে সাহায্য করেন। আমি মাননীয় রাষ্ট্রপতিরপ্রতি কৃতজ্ঞ, কিন্তু একই সঙ্গে দেশের সব শ্রেণির মানুষ এই স্বচ্ছতা অভিযানকেনিজেদের কাজ বলে স্বীকার করেছেন। এর সঙ্গে সকলে নিজেকে যুক্ত করেছেন। খেলাধূলারজগতের মানুষ-ই হোন বা সিনেমা জগতের মানুষ, শিক্ষার জগতের মানুষ, স্কুল, কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষক, মজদুর, অফিসার, কেরানি, পুলিশ, সৈনিক সকলে এর সঙ্গে যুক্তহয়ে গেছেন। জনসাধারণ ব্যবহার করেন এই রকম জায়গা নোংরা থাকলে আজকাল মানুষ বিরক্তিপ্রকাশ করেন, ফলে যাঁরা এই সব জায়গা দেখাশোনার কাজ করেন তাঁরা একধরনের তাগিদ অনুভবকরেন। আমি এটাকে একটা ভালো সংকেত বলে মনে করি। আমি খুশি যে ‘স্বচ্ছতাই সেবা’অভিযানের প্রথম চার দিনে প্রায় ৭৫ লক্ষের বেশি মানুষ ৪০ হাজারের বেশি উদ্যোগ নিয়েএই কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছেন। আমি লক্ষ করেছি কিছু মানুষতো লাগাতার কাজকরে চলেছেন। তাঁরা উপযুক্ত ফল না পাওয়া পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাওয়া মনস্থির করেছেন।এই বার আরও একটা জিনিস দেখলাম – প্রথমতঃ একটা জিনিস হতে পারে আমরা কোনো একটা জায়গাপরিষ্কার করবো, দ্বিতীয়তঃ এটা হতে পারে যে আমরা সচেতন ভাবে কোনও জায়গা অপরিষ্কারকরবো না কিন্তু পরিচ্ছন্নতাকে যদি অভ্যাস বানাতে হয়, তাহলে আমাদের বিচারধারারমধ্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন প্রয়োজন। এবার ‘স্বচ্ছতাই সেবা’ অভিযানে বেশ কিছুপ্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। আড়াই কোটিরও বেশি শিশু স্বচ্ছতা বিষয়ে রচনাপ্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করেছিল। হাজার হাজার শিশু পেইণ্টিং করেছে। স্বচ্ছতা বিষয়েতাদের নিজের নিজের কল্পনা প্রকাশ করতে ছবি এঁকেছে। অনেকে কবিতা লিখেছেন, আমার ছোটোছোটো বন্ধুরা, ছোটো ছোটো বালক-বালিকারা যে সব ছবি পাঠিয়েছে আমি আজকাল সেগুলিকেসোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দিচ্ছি। তাদের গৌরবগাথা লিখছি। যখনই স্বচ্ছতার কথা হয়,তখন আমি কিন্তু প্রচার মাধ্যমের মানুষদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে কখনোভুলি না। এই আন্দোলনকে তাঁরা পবিত্ররূপে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। নিজের নিজের মত তাঁরাএর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন এবং একটা সদর্থক পরিবেশ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তাকরেছেন। এখনও পর্যন্ত তাঁরা নিজের মত করে স্বচ্ছতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।আমাদের দেশের ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, প্রিণ্ট মিডিয়া দেশের কতবড়ো সেবার কাজ করতেপারে, সেটা আমরা ‘স্বচ্ছতাই সেবা’ আন্দোলনে দেখছি। সম্প্রতি কয়েকদিন আগে কেউশ্রীনগরের ১৮ বছরের তরুণ বিলাল ডার-এর সম্পর্কে আমার মনোযোগ আকর্ষণ করে। আপনারাশুনে খুশি হবেন যে শ্রীনগর ম্যুনিসিপ্যাল কর্পোরেশান বিলাল ডারকে স্বচ্ছতার জন্যতাঁদের ব্র্যাণ্ড অ্যামবাসেডর বানিয়েছেন। যখনই ব্র্যাণ্ড অ্যাম্বাসেডর-এর কথা ওঠে,তখন আপনারা ভাবেন, উনি হয়ত সিনেমা আর্টিস্ট বা খেলাধুলার জগতের কোনও হিরো, কিন্তুসেটা সত্যি নয়। ১২-১৩ বছর বয়স থেকে অর্থাৎ গত ৫-৬ বছর যাবৎ বিলাল স্বচ্ছতা নিয়েকাজ করে চলেছে। শ্রীনগরের পাশে এশিয়ার সব থেকে বড় যে লেক আছে, সেখানেও প্লাসটিক,পলিথিন, ব্যবহৃত বোতল, ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে। এর থেকে কিছু উপার্জনও করে নেয়।ওর খুব ছোটো বয়সে ওর বাবার ক্যান্সারে মৃত্যু হয়। জীবিকা উপার্জনের সঙ্গে ওস্বচ্ছতাকে যুক্ত করে নিয়েছে। এক আনুমানিক হিসাব অনুসারে বিলাল প্রতি বছর ১২ হাজারকিলোগ্রামেরও বেশি আবর্জনা পরিষ্কার করেছে। স্বচ্ছতার প্রতি তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিএবং ব্র্যাণ্ড অ্যাম্বাসেডর নির্বাচনে তাঁদের পদক্ষেপ-এর জন্য শ্রীনগর পৌর নিগমকেআমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। শ্রীনগর একটি পর্যটন কেন্দ্র এবং ভারতবর্ষের সব নাগরিকেরইশ্রীনগরে যাওয়ার ইচ্ছা থাকে, সেখানে পরিচ্ছন্নতার প্রতি এই রকম গুরুত্ব আরোপ করাসত্যিই তাৎপর্যপূর্ণ। আমি আনন্দিত যে পৌরনিগম বিলালকে কেবল মাত্র ব্র্যাণ্ডঅ্যাম্বাসেডর-ই বানায়নি, তারা বিলালকে এবার গাড়ি দিয়েছে, ইউনিফর্ম দিয়েছে। বিলালওঅন্য এলাকায় গিয়ে সেখানকার লোকজনদের স্বচ্ছতা বিষয়ে শিক্ষিত করে তুলছে, তাঁদেরঅনুপ্রাণিত করছে এবং প্রত্যাশিত ফল না পাওয়া পর্যন্ত হাল ছাড়ে না। বিলাল ডার বয়সেছোট কিন্তু স্বচ্ছতার প্রতি যাঁদের আগ্রহ আছে, তাঁদের কাছে প্রেরণাদায়ক। আমি বিলালডারকে অনেক অভিনন্দন জানাচ্ছি।
আমার প্রিয়দেশবাসী, আমাদের এটা স্বীকার করতেই হবে যে ইতিহাসের গর্ভেই ভবিষ্যতের ইতিহাস জন্মনেয়। আর আমরা যখন ইতিহাসের কথা বলবো, তখন মহাপুরুষদের কথা স্মরণে আসা স্বাভাবিক।অক্টোবর মাস আমাদের অনেক মহাপুরুষকে স্মরণ করার মাস। মহাত্মা গান্ধী থেকে সরদারপ্যাটেল এই অক্টোবর মাসে অনেক মহাপুরুষ জন্ম নিয়েছেন, যাঁরা বিংশ শতাব্দী এবংএকবিংশ শতাব্দীতে আমাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন, আমাদের চলার পথ দেখিয়েছেন আর দেশের জন্যযাঁরা নিজেরা অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন। দোসরা অক্টোবর মহাত্মা গান্ধী এবং লালবাহাদুর শাস্ত্রীর জন্মদিন, ১১-ই অক্টোবর জয়প্রকাশ নারায়ণ আর নানাজি দেশমুখেরজন্মদিন। আবার ২৫-শে সেপ্টেম্বর পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্মদিন। এবছর তো আবারনানাজীর এবং দীনদয়ালজীর জন্মের শতবর্ষ। এই সকল মহাপুরুষদের একটা কেন্দ্রবিন্দু ছিল– সেটা কি? তাঁদের সকলের জন্য একটা বিষয় স্বাভাবিক ছিল, সেটা হল দেশের জন্য বাঁচা,দেশের জন্য কিছু করা আর শুধুমাত্র উপদেশ দেওয়া নয়, জীবন যাপনে সেই উপদেশ পালন করা।গান্ধীজী, জয়প্রকাশজী, দীনদয়ালজীরা এমন মহাপুরুষ ছিলেন যাঁরা ক্ষমতার অলিন্দ থেকেঅনেক দূরে থাকতেন কিন্তু প্রতিটি মুহূর্ত সাধারণ মানুষের সঙ্গে জীবন যাপন করতেন,সংগ্রাম করতেন, সর্বজনের হিতার্থে, সর্বজনের সুখার্থে কিছু না কিছু করতেন। নানাজিদেশমুখ রাজনীতি ছেড়ে গ্রাম উন্নয়নের কাজে মন দেন। আজকে আমরা যখন তাঁর শতবর্ষ পালনকরছি, তখন তাঁর গ্রাম উন্নয়নের কাজকে শ্রদ্ধা জানানো খুবই স্বাভাবিক।
ভারতেরপ্রাক্তন রাষ্ট্রপতি শ্রীমান আব্দুল কালামজী যখন তরুণদের সঙ্গে কথা বলতেন, তখনতিনি প্রায়ই নানাজী দেশমুখের গ্রামীণ বিকাশের কথা আলোচনা করতেন। গভীর আন্তরিকতায়তিনি সেই কর্মসূচির উল্লেখ করতেন এবং তিনি নিজেও নানাজীর এই কাজ প্রত্যক্ষ করারজন্য গ্রামে গিয়েছিলেন।
দীনদয়ালউপাধ্যায়ের মতো মহাত্মা গান্ধীও সমাজের নিম্নবর্গের মানুষজনের কথা বলতেন।দীনদয়ালজী সমাজের নীচের স্তরের গরীব, পীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত জনসাধারণের জীবনেপরিবর্তন আনার কথা বলতেন; শিক্ষা এবং উপার্জনের মাধ্যমে কীভাবে সে বদল আনা যেতেপারে, সে বিষয়ে আলাপ আলোচনা করতেন। এইসব মহাপুরুষকে স্মরণ করলে তাঁদের কোনও উপকারকরা হয় না, আমরা এঁদের স্মরণ করি, যাতে সামনে এগিয়ে চলার রাস্তা খুঁজে পাই, যাতেভবিষ্যতের জন্য সঠিক দিগ্নির্দেশ মেলে।
এর পরের ‘মনকি বাত’-এ আমি অবশ্যই সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের বিষয়ে বলব। আপাতত ৩১-শে অক্টোবরসারা দেশে Run for Unity ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। দেশেরপ্রতিটি শহরে-নগরে খুব বড় করে ‘ Run for Unity ’ কার্যসূচি রূপায়িত হওয়া দরকার। এখন আবহাওয়াটি এমন যেদৌড়তে ভালোও লাগে – সর্দার সাহেবের মতো লৌহ-শক্তি পাওয়ার জন্য সেটা জরুরিও বটে।সর্দার সাহেব দেশকে এক করেছিলেন, আমাদেরও একতার জন্য দৌড়ে সামিল হয়ে একতারমন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে চলা প্রয়োজন।
আমরা খুব সহজেবলে থাকি – বিবিধের মাঝে ঐক্যই ভারতের বিশেষত্ব। বিবিধতার জন্য আমরা গর্বিত, অথচযে বৈচিত্র্যের জন্য আমরা গর্বিত, নিজেদের সেই বিবিধ বৈশিষ্ট্যকে অনুভব করারচেষ্টা কখনও করি কি? আমি হিন্দুস্থানে আমার সমস্ত দেশবাসীকে বারবার বলতে চাই,বিশেষ করে আমার যুবপ্রজন্মকে বলতে চাই যে, আমরা এক জাগ্রত অবস্থার মধ্যে আছি। এইভারতের বিচ্ছিন্নতাকে অনুভব করুন, তাকে স্পর্শ করুন, তার গৌরবকে উপলব্ধি করুন।আপনাদের অন্তরস্থিত ব্যক্তিত্বের বিকাশের জন্য আমাদের দেশের এই বৈচিত্র্য যেনবিরাট এক পাঠশালার ভূমিকা পালন করে। ছুটি পরলে বা দীপাবলির পরব এলে আমাদের দেশেকোথাও না কোথাও বেড়াতে বেরিয়ে পড়ার একটা প্রবণতা আছে। ট্যুরিস্ট হিসেবে সবাইবেড়িয়ে পড়েন। কিন্তু মাঝে মাঝে চিন্তা হয়, নিজের দেশকে তো আমরা সেভাবে দেখি না,তার বিভিন্নতাকে জানতে বা বুঝতে চেষ্টা করিনা, কিন্তু বিদেশের চাকচিক্যের টানেআমরা ইদানিং পর্যটনের জন্য বিদেশকেই বেশি পছন্দ করতে শুরু করেছি। আপনারা বিদেশেযান, আমার কোন আপত্তি নেই, কিন্তু কখনও কখনও নিজের ঘরটাকেও তো দেখবেন! উত্তরভারতের মানুষ জানবেন না দক্ষিণ ভারতে কী আছে? পশ্চিম ভারতের মানুষটি জানবেন না যেপূর্বভারতে কী আছে? আমাদের এই দেশ কতরকম বৈচিত্র্যে ভরা।
মহাত্মাগান্ধী, লোকমান্য তিলক, স্বামী বিবেকানন্দ, আমাদের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আব্দুলকালামজী – এঁরা প্রত্যেকেই যখন ভারত ভ্রমণ করেছেন, তখন তাঁদের মধ্যে দেশকে দেখার,বোঝার, দেশের জন্য বাঁচা-মরার এক নতুন প্রেরণা জেগে উঠেছিল। এইসব মহাপুরুষেরাএদেশকে ব্যাপকভাবে ঘুরে দেখেছেন। নিজেদের কাজের শুরুতে তাঁরা ভারতকে জানার এবংবোঝার চেষ্টা করেছেন। ভারতকে নিজের মধ্যে আত্মস্থ করে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আমরাওকি পারিনা আমাদের দেশের ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যের, ভিন্ন ভিন্ন সমাজের বা গোষ্ঠীরনিয়মকানুন, পরম্পরা, তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ, খাওয়াদাওয়াকে একজন শিক্ষার্থীর মতো করেশিখে নিতে, বুঝে নিতে, সে জীবনচর্যা আয়ত্ত করতে?
পর্যটনে value addition তখনই হবে যখন আমরা শুধু দর্শক হিসেবে নয়, একজন ছাত্রের মতোসেই সব জায়গার বৈশিষ্ট্যকে গ্রহণ করতে, বুঝতে এবং আত্মীকরণ করতে সচেষ্ট হব। আমারনিজের হিন্দুস্থানের পাঁচশোর বেশি জেলায় যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। সাড়ে চারশোর বেশিজেলায় রাত্রিবাস করারও অভিজ্ঞতা হয়েছে। আজ যখন আমি দেশের এই গুরত্বপূর্ণ দায়িত্বসামলাচ্ছি, তখন সেই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার খুবই কাজে লাগে। তার জন্যেই বহু জিনিসবুঝতে আমার বিশেষ সুবিধা হয়। আপনাদের কাছেও আমার অনুরোধ, বিশাল এই ভারতে ‘বিবিধেরমধ্যে একতা’ – এটাকে শুধু স্লোগান হিসেবে না দেখে, আমাদের অপার শক্তির এইভাণ্ডারকে উপলব্ধি করুন। ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর স্বপ্ন এরই মধ্যে নিহিত আছে।
খাদ্য-পানীয়ই কত রকমের আছে! সারা জীবন ধরেপ্রত্যেক দিন যদি এক একরকমের নতুন খাবার খাওয়া যায়, তা-ও পুনরাবৃত্তি হবে না। এটাইআমাদের পর্যটনের এক বড় শক্তি। আমি চাইবো, এই ছুটিতে আপনারা শুধু একটু ঘরের বাইরেযাওয়ার জন্য, একটু পরিবর্তনের জন্য বেরিয়ে পড়লেন – এমন যেন না হয়। কিছু জানতে হবে,বুঝতে হবে, আত্মস্থ করতে হবে – এরকম প্রতিজ্ঞা নিয়ে ঘুরতে যান। ভারতকে নিজের মধ্যেগ্রহণ করুন। কোটি কোটি দেশবাসীর বিভিন্নতাকে আপন করে নিন। এই উপলব্ধি আপনার জীবনকেসমৃদ্ধ করে তুলবে। আপনার চিন্তার ব্যাপ্তি বিশাল হয়ে যাবে। উপলব্ধির চেয়ে বড়শিক্ষক আর কী হতে পারে! সাধারণভাবে অক্টোবর থেকে বড়জোর মার্চ পর্যন্ত সময়টিপর্যটনের জন্য প্রশস্ত। এই সময়েই সকলে বেড়াতে যান। আমার বিশ্বাস, এবার যদি আপনারাবেড়াতে যান, তবে আমার অভিযানকেই আপনারা আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আপনারা যেখানেই যান,নিজেদের অভিজ্ঞতা আর ছবি শেয়ার করুন, ‘হ্যাশ ট্যাগ incredible India ’-তে অবশ্যই আপনাদের ছবি পাঠান।সেখানকার মানুষদের সঙ্গে পরিচয় হলে তাঁদেরও ছবি পাঠান। শুধু সেখানকার সৌধ বাস্থাপত্যের নয়, শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেরই নয়, সেখানকার জনজীবনের সম্পর্কেওদু-চার কথা লিখুন। আপনাদের বেড়ানো নিয়ে চমৎকার সব প্রবন্ধ লিখে ‘মাইগভ’-এ পাঠিয়েদিন, ‘নরেন্দ্রমোদী অ্যাপ’-এ পাঠিয়ে দিন। আমি একটা ব্যাপার ভেবে দেখেছি, ভারতেরপর্যটন শিল্পের উন্নতির জন্য আপনারা যদি নিজের নিজের রাজ্যের সাতটি সেরা ট্যুরিস্টডেস্টিনেশন কী হতে পারে, প্রত্যেক ভারতবাসীকে নিজের রাজ্যের এইসাতটি জিনিসের বিষয়ে জানা দরকার। যদি সম্ভব হয় ওই সাতটি জায়গায় যেতে হবে। আপনি এইবিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারবেন কি? Narendramodiapp এ এগুলো রাখতে পারবেন কি? ‘হ্যাশ ট্যাগ Incredible India ’-তে রাখতে পারবেন কি? আপনি দেখুন, একই রাজ্যের সবাই যদিএইসব তথ্য পাঠান, তাহলে আমি সরকারকে বলবো ওগুলোর scrutiny করুক, আর কোন সাতটি commonবিষয় প্রত্যেক রাজ্য থেকে এসেছে, সেইগুলোকে নিয়ে প্রচার বিষয় বানাক । অর্থাৎ, এক প্রকার মানুষেরঅভিপ্রায় থেকে tourist destination-এর উন্নতি কিভাবে করা যায়। একই ভাবে আপনিসমগ্র দেশে যেসব দেখেছেন, এর মধ্যে যে সাতটি জিনিষ আপনার সবথেকে ভালো লেগেছে, আপনিচান কারোর না কারোর তো এটা দেখা দরকার, ওখানে যাওয়া দরকার, এর বিষয়ে জানা দরকার, তাহলেআপনার পছন্দের এইরকম সাতটি জায়গার নাম MyGov এ, NarendraModiApp এ অবশ্যই পাঠান। ভারত সরকার এটানিয়ে কাজ করবে। এরকম ভালো দেখার জায়গা যেগুলো হবে, সেগুলো নিয়ে film তৈরি, ভিডিওতৈরি, প্রচার সাহিত্য তৈরি করা, বাহবা দেওয়া – আপনার দ্বারা নির্ণয় করা বিষয় সরকারমেনে নেবে। আসুন, আমার সঙ্গে যোগদান করুন। এই অক্টোবর মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্তসময়ে পর্যটনের উন্নতিতে আপনিও এক বড়োঅনুঘটক হতে পারেন। আমি আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, একজন মানুষ হওয়ার খাতিরে, অনেক কিছু জিনিষআমার মনকেও স্পর্শ করে, আমার মন কে নাড়াদেয়। আমার মনে গভীর প্রভাব ফেলে। কারণ আমিও তো আপনাদের মতো মানুষ। কিছুদিন আগেরঘটনা, হয়ত আপনারও দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে – নারীশক্তি আর দেশপ্রেমের এক আশ্চর্যউদাহরণ দেশবাসী দেখলো। ভারতীয় সেনা লেফটেন্যান্ট স্বাতি এবং নিধি নামে দুইবীরাঙ্গনাকে পেয়েছে, ওঁরা অসাধারণ বীরাঙ্গনা। অসাধারণ এইজন্য যে, স্বাতি আর নিধিরস্বামী মা-ভারতীর সেবা করতে করতে শহীদ হয়ে গিয়েছিলেন। আমরা চিন্তা করতে পারি এই কমবয়সে সংসার বিনষ্ট হলে মনের অবস্থা কিরকম হবে? কিন্তু শহীদ কর্নেল সন্তোষ মহাদিকের স্ত্রী স্বাতি মহাদিক এই কঠিনপরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আর ভারতীয় সেনাতে যোগদানকরেছেন। ১১ মাস ধরে কঠোর পরিশ্রম করে প্রশিক্ষণ নিলেন এবং নিজের স্বামীর স্বপ্নকেসাকার করতে নিজের জীবন সমর্পণ করেছেন। একইরকম ভাবে, নিধি দুবে, ওঁর স্বামী মুকেশদুবে সেনাতে নায়ক পদে কাজ করতেন এবং মাতৃভূমির জন্য যখন শহীদ হয়ে গেলেন, তাঁরপত্নী নিধি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলেন এবং তিনিও সেনাতে ভর্তি হয়ে গেলেন। প্রত্যেকদেশবাসীকে আমাদের এই নারীশক্তির উপর, আমাদের এই বীরাঙ্গানাদের প্রতি সম্মান দেখানোখুবই স্বাভাবিক । আমি এই দুই বোনকে মন থেকে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই। ওঁরা দেশের কোটি কোটিলোকের কাছে এক নতুন প্রেরণা, এক নতুন চেতনা জাগ্রত করেছেন। ওই দুই বোনকে অনেক অনেকঅভিনন্দন।
আমার প্রিয়দেশবাসী, নবরাত্রির উৎসব আর দীপাবলির মাঝখানের এই সময় আমাদের দেশের যুব প্রজন্মেরজন্য এক অনেক বড়ো সুযোগও। FIFA under-17 এর World Cup আমাদেরএখানে হচ্ছে। আমার বিশ্বাস চতুর্দিকে ফুটবলের গুঞ্জন শোনা যাবে। প্রত্যেকপ্রজন্মের ফুটবলের প্রতি আকর্ষণ বাড়বে। ভারতবর্ষের কোনও স্কুল-কলেজের মাঠ থাকবেনা, যেখানে আসবে আমাদের তরুণদের ফুটবল খেলতেদেখা যাবে না। আসুন, সমগ্র বিশ্ব যখন ভারতের মাটিতে খেলতে আসছে, আমরাও এই খেলাটাকেআমাদের জীবনের অংশ করে নিই।
আমার প্রিয় দেশবাসী,নবরাত্রির উৎসব চলছে। মা দুর্গার বোধনের সময়। সমগ্র পরিবেশ শুভ পবিত্র সুগন্ধে ভরেউঠেছে। চারিদিকে এক আধ্যত্মিকতার পরিবেশ, উৎসবের পরিবেশ, ভক্তির পরিবেশ, এই সবকিছুই শক্তির আরাধনার উৎসব হিসেবে পালিত হয়। একে আমরা শারদীয়-নবরাত্রি রূপে জানি।এখন থেকেই শরৎ ঋতুর আরম্ভ হয়। নবরাত্রির এই শুভ উৎসব উপলক্ষে আমি দেশবাসীকে অনেকঅনেক অভিনন্দন জানাই, মাতৃ শক্তির কাছে প্রার্থনা করি, দেশের সাধারণ মানুষেরআশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের উদ্দেশে আমাদের দেশ সাফল্যের নতুন শিখরে পৌঁছে যাক । প্রত্যেক চ্যালেঞ্জেরমোকাবিলা করার ক্ষমতা দেশের আসুক। দেশ দ্রুত গতিতে উন্নতি করুক, আর ২০২২-এ ভারতেরস্বাধীনতার ৭৫ বছরে – স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্বপ্নপূরণের প্রয়াস, ১২৫ কোটিদেশবাসীর সঙ্কল্প, অপার পরিশ্রম, অনেক পৌরুষ এবং সঙ্কল্পকে সাকার করার লক্ষ্যেপাঁচ বছরের road map তৈরি করে আমরা যাত্রা শুরু করে দিয়েছি, মাতৃশক্তি আমাদেরআশীর্বাদ দিন। আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা। উৎসব পালন করুন, উৎসাহকেওউজ্জীবিত করুন। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার!
দীপাবলীর ছ’দিন পরে পালিত মহাপরব ‘ছট’। আমাদের দেশে সবথেকেবেশি নিয়ম-নিষ্ঠার সঙ্গে পালিত উৎসবের মধ্যে একটা। যেখানে খাওয়াদাওয়া থেকে শুরুকরে বেশভূষা পর্যন্ত প্রতিটি বিষয় পরম্পরা মেনে পালন করা হয়। ছট পূজার অনুপম-পর্বপ্রকৃতি আর প্রকৃতির উপাসনার সঙ্গে পুরোপুরি যুক্ত। একদিকে সূর্য আর জল, মহাপরবছটের উপাসনার কেন্দ্রে, অন্যদিকে বাঁশ আর মাটি দিয়ে তৈরি বাসনপত্র আর মূল, এর পূজাবিধিরসঙ্গে জড়িত অভিন্ন সামগ্রী। আস্থার এই মহাপর্বে উদীয়মান সূর্যের উপাসনা আর ডুবন্তসূর্যের পূজার বার্তা অদ্বিতীয় সংস্কারে পরিপূর্ণ। সমস্ত জগৎ উদীয়মান সূর্যের পূজাকরে থাকে কিন্তু ছট পূজা অস্তগামী সূর্যকে আরাধনা করার সংস্কারও দেয় আমাদের।আমাদের জীবনে স্বচ্ছতার মহত্ত্বের অভিব্যক্তিও এর মধ্যে নিহিত। ছটের আগে গোটাবাড়ির সাফাই, সঙ্গে নদী, পুকুর, খানাখন্দের আশপাশ, পূজাস্থল অর্থাৎ ঘাটেরও সাফাই,প্রচুর উৎসাহের সঙ্গে সব লোক একজোট হয়ে করে। সূর্য বন্দনা অথবা ছট পূজা – পরিবেশসংরক্ষণ, রোগ নিবারণ এবং অনুশাসনের পর্ব।
সাধারণভাবে কিছু চেয়ে নেওয়াকেমানুষ হীন বলে মনে করে কিন্তু ছট পূজায় সকালের অ র্ঘ্য শেষ হওয়ার পরে প্রসাদ চেয়ে খাওয়ারএক বিশেষ পরম্পরা আছে। প্রসাদ চেয়ে খাওয়ার এই রীতির পেছনে এই যুক্তিও দেওয়া হয় যেএতে অহঙ্কার নষ্ট হয়। এই অহঙ্কার এমন ভাবনা যা ব্যক্তির প্রগতির পথে বাধা হয়েদাঁড়ায়। ভারতের এই মহান পরম্পরা নিয়ে সবার গর্বিত হওয়া খুব স্বাভাবিক।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কি বাত’-এর প্রশংসাও হচ্ছে আবারসমালোচনাও হচ্ছে। কিন্তু যখন আমি ‘মন কি বাত’-এর প্রভাবের দিকে তাকিয়ে দেখি তখনআমার বিশ্বাস দৃঢ় হয় যে ‘মন কি বাত’ এদেশের জনমানসের সঙ্গে অটুট সম্পর্কে বাঁধাপড়েছে। খাদি আর হ্যান্ডলুমের উদাহরণই নিন। গান্ধী জয়ন্তীতে আমি সবসময় হ্যান্ডলুমেরজন্য, খাদির পক্ষে ওকালতি করে চলি। আর তার পরিণাম কী হয়েছে! আপনারাও এটা জেনে খুশিহবেন, আমাকে জানানো হয়েছে যে এই মাসের ১৭ই অক্টোবর ধনতেরাসের দিন দিল্লির খাদিগ্রামোদ্যোগ ভবন স্টোরে প্রায় এক কোটি বিশ লক্ষ টাকার রেকর্ড বিক্রি হয়েছে। খাদিআর হ্যান্ডলুমের একটা মাত্র স্টোরে এত বেশি বিক্রি হওয়া, এটা শুনে আপনাদেরওনিশ্চয়ই আনন্দ হয়েছে, সন্তুষ্টি হয়েছে। দীপাবলীর সময় খাদি গিফট কুপনের বিক্রিতেপ্রায় ছ’শো আশি শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে। খাদি আর হ্যান্ডিক্র্যাফটের মোটবিক্রিতেও গত বছরের তুলনায় এই বছরে প্রায় নব্বই শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে। এটাদেখা যাচ্ছে যে আজ তরুণরা, প্রবীণ-বৃদ্ধরা, মহিলারা – প্রত্যেক বয়সসীমার মানুষখাদি আর হ্যান্ডলুম পছন্দ করছে। আমি কল্পনা করতে পারছি যে এতে কত তাঁতি পরিবারের,গরীব পরিবারের, হস্তচালিত তাঁতে কাজ করা পরিবারের কতটা লাভ হয়েছে। আগে খাদি, ‘খাদিফর নেশন’ ছিল। আর আমরা ‘খাদি ফর ফ্যাশন’-এর কথা বলেছিলাম। কিন্তু বিগত কিছু সময়ধরে আমি অন্তর থেকে বলতে পারছি যে ‘খাদি ফর নেশন’ আর ‘খাদি ফর ফ্যাশন’-এর পরে এখন,‘খাদি ফর ট্র্যান্সফর্মেশন’ ওই জায়গা নিচ্ছে। খাদি দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর ব্যক্তিরজীবনে, হ্যান্ডলুম গরীব থেকে আরও গরীব মানুষের জীবনে বদল এনে তাকে সশক্ত বানানোরশক্তিশালী উপকরণ হিসাবে উঠে এসেছে। গ্রামোদয়ের জন্য খুব বড় ভূমিকা পালন করছে।
শ্রীমান রাজন ভট্ট ‘নরেন্দ্রমোদীঅ্যাপ’-এ লিখেছেন যে উনি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে আমার দীপাবলীর অভিজ্ঞতারব্যাপারে জানতে চান আর উনি এটাও জানতে চান যে প্রতিরক্ষা বাহিনী কীভাবে দীপাবলীপালন করে। শ্রীমান তেজস গায়কোয়াড়-ও নরেন্দ্রমোদী অ্যাপে লিখেছেন – আমাদের বাড়িরমিষ্টিও প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাছে পৌঁছনোর ব্যবস্থা কি করা যায়? আমরাও আমাদের বীরপ্রতিরক্ষা বাহিনীর কথা ভাবি। আমরাও মনে করি যে আমাদের ঘরের মিষ্টি দেশের জওয়ানদেরকাছে পৌঁছনো দরকার। আপনারা সবাই দীপাবলী খুব হর্ষোল্লাসের মধ্যে দিয়ে কাটিয়েছেননিশ্চয়ই। আমার জন্য দীপাবলী এবার এক বিশেষ অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছে। আবার একবারসীমান্তে নিযুক্ত আমাদের বীর প্রতিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে দীপাবলী পালনের সৌভাগ্য হলআমার। এবার জম্মু-কাশ্মীরের গুরেজ সেক্টরে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে দীপাবলী পালনআমার জন্য অবিস্মরণীয় হয়ে রইল। সীমান্তে যে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করে আমাদেরপ্রতিরক্ষা বাহিনী দেশকে রক্ষা করে সেই সঙ্ঘর্ষ, সমর্পণ আর ত্যাগের জন্য, আমি সকলদেশবাসীর পক্ষ থেকে আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রত্যেক জওয়ানকে সম্মান জানাই। যখনআমাদের কাছে অবকাশ আসে, যখন সুযোগ পাই তখন আমাদের জওয়ানদের অভিজ্ঞতা জানা উচিত,তাঁদের গৌরবগাথা শোনা উচিত। আমাদের মধ্যে অনেক লোক জানেই না যে আমাদের প্রতিরক্ষাবাহিনীর জওয়ান, শুধু বর্ডারেই না, গোটা বিশ্বে শান্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাপালন করছেন। রাষ্ট্রসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর হয়ে এঁরা সারা দুনিয়ায় ভারতের নামউজ্জ্বল করছেন। এই তো কয়েক দিন আগে, ২৪শে অক্টোবর সারা বিশ্বে ইউ এন ডে, সংযুক্তরাষ্ট্র দিবস পালন করা হল। বিশ্বে শান্তি স্থাপনে রাষ্ট্রসঙ্ঘেরর প্রয়াস, এরসদর্থক ভূমিকার কথা মনে রাখে সবাই। আর আমরা তো ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ মেনে চলি অর্থাৎপুরো বিশ্বই আমাদের পরিবার। আর এই বিশ্বাসের জন্য শুরু থেকে ভারত রাষ্ট্রসঙ্ঘেরবিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগে সক্রিয় অবদান রেখে চলেছে। আপনারা নিশ্চয়ই জানবেন যেভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা আর ইউ এন চার্টারের প্রস্তাবনা, দুটোই ‘উই দ্য পিপ্ল’এই শব্দগুলো দিয়ে শুরু হয়। ভারত নারীর সমান অধিকারের উপর সব সময় জোর দিয়েছে আর ইউএন ডিক্লেয়ারেশন অফ হিউম্যান রাইট্স এর জীবন্ত উদাহরণ। এর প্রারম্ভিক বাক্যাংশেযে প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটা ছিল ‘অল মেন আর বর্ন ফ্রি অ্যান্ড ইক্যুয়াল’ যাভারতের প্রতিনিধি হংসা মেহতার চেষ্টায় পালটে নেওয়া হয়েছে আর পরে সেটা হল ‘অলহিউমান বিয়িংস আর বর্ন ফ্রি অ্যান্ড ইক্যুয়াল’।এমনিতে তো এটা খুব ছোট একটা পরিবর্তন মনে হয় কিন্তু এর মধ্যে একটা স্বাস্থ্যকরচিন্তার দর্শন পাই আমরা। ইউ এন আমব্রেলার ক্ষেত্রে ভারত যে এক সবথেকে গুরুত্বপূর্ণঅবদান রেখেছে তা হল রাষ্ট্রসঙ্ঘের শান্তিরক্ষা প্রচেষ্টায় ভারতের ভূমিকা। সংযুক্তরাষ্ট্রের শান্তি-শিক্ষা মিশনে, ভারত সবসময়ই এক বড় ভূমিকা পালন করে এসেছে। আপনাদেরমধ্যে এমন অনেকে আছেন যাঁরা হয়ত প্রথমবার এই তথ্য জানছেন। আঠেরো হাজারের বেশিপ্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য রাষ্ট্রসঙ্ঘের শান্তিরক্ষা প্রচেষ্টায় নিজেদের অবদানরেখেছে। বর্তমানে ভারতের প্রায় সাত হাজার সৈনিক রাষ্ট্রসঙ্ঘের শান্তিরক্ষারউদ্যোগের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে আর গোটা বিশ্বে এটা তৃতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যা। ২০১৭ সালেরঅগাস্ট পর্যন্ত বিশ্বের একাত্তরটি শান্তিরক্ষার প্রয়াসের মধ্যে প্রায় পঞ্চাশটিতেতারা নিজেদের অবদান রেখেছে। এই সব প্রচেষ্টা কোরিয়া, কাম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম,কঙ্গো, সাইপ্রাস, লাইবেরিয়া, লেবানন, সুদান প্রভৃতি বিশ্বের নানা ভূ-ভাগে, বিভিন্নদেশে চলছে। কঙ্গো আর দক্ষিণ সুদানে ভারতীয় সেনার হাসপাতালে কুড়ি হাজারেরও বেশিরোগীর চিকিৎসা হয়েছে এবং অগুন্তি মানুষকে বাঁচানো হয়েছে। ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীবিভিন্ন দেশে কেবল সেখানকার মানুষদের রক্ষাই করে নি, সেখানে শান্তিরক্ষারপ্রচেষ্টা চালিয়ে তাদের মনও জয় করে নিয়েছে।
ভারতীয় মহিলারা শান্তি স্থাপনপ্রক্রিয়ায় অত্যন্ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। খুব কমজনই একথা জানেন যে, ভারতইপ্রথম দেশ যে লাইবেরিয়ায় রাষ্ট্রসঙ্ঘের শান্তি অভিযানে ‘মহিলা পুলিশ ইউনিট’ পাঠায়।আর দেখুন, ভারতের এই পদক্ষেপ এরপর থেকে সব দেশগুলির কাছে প্রেরণা হয়ে উঠল। এরপরথেকে সব দেশ নিজেদের ‘মহিলা পুলিশ ইউনিট’ পাঠাতে শুরু করল। আপনারা শুনে গর্ববোধকরবেন যে – ভারতের ভূমিকা শুধুমাত্র শান্তিরক্ষার কাজেই সীমাবদ্ধ নেই, ভারত ৮৫-টিদেশের শান্তিরক্ষা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজও করে। মহাত্মা গান্ধী ও গৌতমবুদ্ধের এই মাটি থেকে আমাদের বাহাদুর শান্তিরক্ষকরা সারা বিশ্বে শান্তি ওসদ্ভাবনার বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন।
শান্তি-সুরক্ষার অভিযানটি মোটেইসহজসাধ্য নয়। আমাদের সুরক্ষা বাহিনীর জওয়ান্দের দুর্গম সব এলাকায় গিয়ে কাজ করতেহয়। তাঁদের ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতি এবং আলাদা আলাদা সংস্কৃতি জানতে বুঝতে হয়।তাঁদের সেখানকার স্থানীয় প্রয়োজন, পরিবেশ নিজেদেরই বিচার- বিবেচনায় অনুভব করতে হয়।আজ যখন ‘রাষ্ট্রসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী’র কথা আমরা স্মরণ করছি, তখন ক্যাপ্টেনগুরবচন সিংহ সালারিয়ার কথা কে ভুলতে পারে। আফ্রিকার কঙ্গোয় শান্তির জন্য লড়াই করতেগিয়ে নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করেছিলেন। তাঁকে স্মরণ করে সমস্ত দেশবাসীর বুক গর্বে ভরেওঠে। তিনি একমাত্র রাষ্ট্রসঙ্ঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী-র সদস্য ছিলেন – বীরপুরুষছিলেন – যাঁকে পরমবীর চক্র সম্মানে সম্মানিত করা হয়।
লেফটেন্যাণ্টজেনারেল প্রেমচন্দ্জী ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনীর একজন, যিনি
সাইপ্রাস-এও নিজের কাজের বিশেষ স্বীকৃতি পেয়েছেন। ১৯৮৯ সালে, ৭২ বছর বয়সে তাঁকেনামিবিয়ার অভিযানে বাহিনী কম্যাণ্ডার নিযুক্ত করা হয়। তিনি নামিবিয়ার স্বাধীনতাসুনিশ্চিত করতে নিজের সেবা প্রদান করেন।
ভারতীয় সেনার পূর্ব-প্রধানজেনারেল থিমৈয়্যা, সাইপ্রাস-এ রাষ্ট্রসঙ্ঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর নেতৃত্ব দেন এবংশান্তিস্থাপনে নিজের সর্বস্ব নিয়োজিত করেন। ভারত সর্বদাই শান্তির দূত হিসেবেবিশ্বে শান্তি, একতা আর সদ্ভাবনার বার্তা বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস,প্রত্যেকে শান্তি ও সদ্ভাবপূর্ণ জীবন যাপন করুক এবং এক উন্নততর ও শান্তিপূর্ণভবিষ্যৎ নির্মাণের লক্ষ্যে এগিয়ে চলুক।
আমার প্রিয়দেশবাসী, আমাদের পূণ্যভূমি এই ভারতবর্ষ এমন সব মহামানবের আবির্ভাবে সুরভিত, যাঁরাসারা জীবন নিঃস্বার্থভাবে মানবতার সেবাই করে গেছেন। সিস্টার নিবেদিতা, যাঁকে আমরাভালোবাসায়, শ্রদ্ধায় ভগিনী নিবেদিতা বলেই জানি – তিনিও এই সব অসাধারণ মহামানবদেরএকজন। মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল আয়ারল্যাণ্ডে জন্মেছিলেন, পরে তাঁকে স্বামীবিবেকানন্দ ‘নিবেদিতা’ নাম দেন। ‘নিবেদিতা’র অর্থই হল যিনি পূর্ণরূপে সমর্পিতা।পরে তিনি নিজের নামের যথার্থ মহিমাটি প্রমাণ করে দেখিয়েছিলেন। গতকাল সিস্টারনিবেদিতার সার্ধশত জন্মজয়ন্তী ছিল। তিনি স্বামী বিবেকানন্দের দ্বারা এতটাইপ্রভাবিত হয়েছিলেন যে, নিজের সুখ-স্বাচ্ছ্যন্দের জীবন ত্যাগ করে গরীব-দুঃখীমানুষদের জন্যই নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। সিস্টার নিবেদিতা, বৃটিশ রাজের অত্যাচারীশাসনে ভীষণ কষ্ট পেতেন। ইংরেজরা ভারতীয়দের সেসময়ে শুধুই শারীরিক ভাবেই নয়, মানসিকভাবেও গোলামি ও দাসত্ব মানতে বাধ্য করার চেষ্টা করেছিল। আমাদের সংস্কৃতিকে নীচ,হীন প্রতিপন্ন করার চেষ্টাও চলতো সব সময়। ভগিনী নিবেদিতা ভারতীয় সংস্কৃতির গৌরবপুনঃস্থাপিত করেন। রাষ্ট্রীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে, জাগরিত করে, মানুষজনকে একজোটহতে সাহায্য করেন। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরে ঘুরে সনাতন ধর্ম ও দর্শন বিষয়েঅপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। প্রসিদ্ধ জাতীয়তাবাদী তামিল কবি সুব্রহ্মণ্যভারতী তাঁর বৈপ্লবিক কবিতা ‘পুদুমই পেন্ন’, NewWomen আর ‘নারী সশক্তিকরণ’-এর জন্য চিরপ্রণম্য হয়েথাকবেন। বলা হয়, এসবেরও প্রেরণার উৎস ছিলেন ভগিনী নিবেদিতা।
ভগিনীনিবেদিতা মহান বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুকেও নানা ভাবে সাহায্য করেছিলেন। তাঁরলেখনী ও বিভিন্ন সম্মেলনের মাধ্যমে শ্রী বসুর যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রকাশনাএবং প্রচার – দুটিতেই খুব সাহায্য করেন। আমাদের ভারতবর্ষের এই এক আশ্চর্য সুন্দরসহাবস্থান – যেখানে আমাদের সংস্কৃতির আধ্যাত্মিকতা ও বিজ্ঞান – একে অন্যেরপরিপূরক। সিস্টার নিবেদিতা এবং আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু – এই ভাবনার সুন্দরউদাহরণ।
১৮৯৯ সালেকলকাতা মহানগরীতে মারাত্মক প্লেগের প্রাদুর্ভাবে দেখতে দেখতে শ’য়ে শ’য়ে মানুষমৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। সিস্টার নিবেদিতা, নিজের শরীর-স্বাস্থ্য অবজ্ঞা করে,রাস্তাঘাট, নর্দমা সাফাই অভিযানে এগিয়ে আসেন। ইনি সেই মহিলা, যিনি বিলাস-ব্যসন,সুখ-ভোগ ছেড়ে গরীব-দুঃখী মানুষের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। ওঁর এই ত্যাগ ওনিষ্ঠার প্রেরণায় সেসময় বহু মানুষ তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে কর্মে ব্রতী হয়। নিজের কর্মেরউদাহরণ স্থাপন করে তিনি মানুষকে সেবা ও স্বচ্ছতার পথে চালিত করেন। তাঁর সমাধির ওপরলেখা আছে – “ Here reposes Sister Nivedita,who gave her all to India. ” – এখানে বিশ্রামকরছেন সিস্টার নিবেদিতা, যিনি তাঁর সবকিছুই দিয়ে গেছেন ভারতবর্ষকে। নিঃসন্দেহেএকথা সর্বৈব সত্য। এই মহিয়সী ব্যক্তিত্বের প্রতি এটাই হবে আমাদের যথার্থশ্রদ্ধাঞ্জলি – যদি প্রত্যেক ভারতবাসী তাঁর জীবন থেকে শিক্ষাগ্রহণ করি ও তাঁরপ্রদর্শিত সেবার পথ অনুসরণ করি।
একটি ফোন কলআসে আমার কাছে –
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার নাম ডক্টর পার্থ শাহ্। ১৪-ইনভেম্বর আমরা আমাদের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর জন্মদিনকে ‘শিশু দিবস’হিসেবে পালন করি। আবার এই দিনটি ‘বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস’ হিসেবেও স্বীকৃত।ডায়াবেটিস শুধুমাত্র বড়দের রোগই নয়, বহু শিশুও এই অসুখে আক্রান্ত। আমরা এই অসুখেরমোকাবিলা কীভাবে করতে পারি?
আপনার ফোনেরজন্য ধন্যবাদ। সবার আগে সমস্ত বাচ্চাদের জানাই আমাদের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলালনেহরুর জন্মদিন উপলক্ষে উদ্যাপিত ‘শিশু দিবস’-এর অনেক অনেক শুভেচ্ছা। শিশুরাই হল‘নব ভারত’ নির্মাণের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, আগামীদিনের নায়ক। আপনার উদ্বেগ যথার্থ।যে সমস্ত রোগব্যাধি আগে প্রৌঢ়ত্বে দেখা যেত, তা আজকাল শৈশবেই দেখা যাচ্ছে। শুনতেআশ্চর্য লাগলেও এটা সত্যি যে বাচ্চারাও আজকাল ডায়াবেটিস-এর শিকার। আগেকার দিনে এইসমস্ত অসুখ ‘রাজ রোগ’ নামে পরিচিত ছিল। ‘রাজ রোগ’ অর্থাৎ এমন সমস্ত রোগব্যাধি যাআগে কেবল স্বচ্ছল ঘরের, আরাম-আয়েসে জীবন কাটানো মানুষদের মধ্যে দেখা যেত।যুবাবস্থায় এই রোগ প্রায় হতই না। কিন্তু এখন আমাদের জীবনযাত্রার অনেক পরিবর্তনঘটেছে। আজকাল এই অসুখগুলিকে lifestyledisorder বলা হয়। কম বয়েসে এই সমস্ত রোগেআক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ হল শারীরিক পরিশ্রমের ঘাটতি এবং খাদ্যাভ্যাসেরপরিবর্তন। সমাজ ও পরিবার উভয়েরই এতে নজর দেওয়া প্রয়োজন। এই বিষয়ে বিবেচনা করলেদেখা যাবে, অস্বাভাবিক বা মারাত্মক কোনো পরিবর্তনের দরকার নেই। যেটা দরকার তা হলছোটো ছোটো ব্যপারে মনোযোগ দেওয়া এবং তা নিজেদের অভ্যাসের অন্তর্গত করা। আমি চাইপরিবারের লোকজন সচেতনভাবে চেষ্টা করুন যাতে বাচ্চারা খোলা মাঠে খেলাধূলা করারঅভ্যাস তৈরি করে। সম্ভব হলে পরিবারের বড়রাও তাদের সঙ্গে অংশ নিক। বাচ্চাদের লিফ্ট–এরপরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করার অভ্যাস করানো হোক। ডিনারের পর পুরো পরিবার বাচ্চাদেরসঙ্গে নিয়ে হাঁটাহাঁটি করতে যাক। ‘ Yogafor Young India ’ – যোগ আমাদের যুবক-যুবতীদেরস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অভ্যাস তৈরি করতে এবং lifestyledisorder থেকে বাঁচতে সাহায্য করবে। স্কুলেরআগে তিরিশ মিনিটের যোগাভ্যাসে দেখুন কত উপকার হতে পারে। যোগ অনায়াসে ঘরেও অভ্যাসকরা যেতে পারে। যোগের বৈশিষ্ট্যই হল তা অত্যন্ত সহজ, এবং সহজ বলেই আমি বলছি, যেকোনো বয়সের মানুষই স্বচ্ছন্দে যোগাভ্যাস করতে পারেন। যোগ সরল এই জন্য যে, যোগঅনায়াসেই শেখা যেতে পারে। সর্বসুলভ এই জন্য যে, যেকোনো জায়গাতেই যোগ অভ্যাস করাসম্ভব। বিশেষ কোনো যন্ত্রপাতি বা ময়দানের প্রয়োজন নেই। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে যোগকতটা কার্যকরী এই বিষয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এইমস্-এও এই বিষয়ে অনেক কাজচলছে এবং এখন পর্যন্ত যে ফলাফল পাওয়া গেছে তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। আয়ুর্বেদ এবংযোগকে শুধুমাত্র রোগমুক্তির পদ্ধতি না ভেবে একে দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ করা উচিত।
আমার প্রিয়দেশবাসী, বিশেষ করে আমার যুবা বন্ধুরা, খেলাধূলার জগত থেকে বিগত কয়েকদিনে সুখবরএসেছে। বিভিন্ন ধরনের খেলায় আমাদের ক্রীড়াবিদ্রা দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। হকিতেভারত অসাধারণ খেলে এশিয়া কাপ জিতেছে। তাদের এই অসাধারণ ক্রীড়ানৈপুণ্যের জন্য দীর্ঘদশ বছর পর ভারত এই খেতাব পেয়েছে। এর আগে ২০০৩ ও
২০০৭-এ ভারত এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। পুরো টিম ও সাপোর্ট স্টাফদের আমার ওদেশবাসীর তরফ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
হকির মতব্যাডমিন্টনেও ভারতের জন্য সুখবর আছে। ব্যাডমিন্টন স্টার Kidambi Srikant অসাধারণ খেলেডেনমার্ক ওপেন জয় করেছেন এবং প্রত্যেক ভারতবাসীকে গৌরবান্বিত করেছেন। ইন্দোনেশিয়ানওপেন ও অস্ট্রেলিয়ান ওপেন-এর পর এটা ওঁর তৃতীয় সুপার সিরিজ খেতাব জয়। আমি এই যুবাখেলোয়ারকে তাঁর সাফল্যের জন্য এবং ভারতের গৌরববৃদ্ধির জন্য অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুরা, এইমাসেই FIFA Under-17 World Cup আয়োজিত হয়েছে। বিশ্বের নানা দেশের টিম এতে অংশগ্রহণ করতে ভারতে এসেছে এবংতাদের ক্রীড়াকৌশল আমাদের মুগ্ধ করেছে। আমারও একটা ম্যাচ দেখার সুযোগ হয়েছিল।খেলোয়াড় থেকে দর্শক সবাই খুব উৎসাহী ছিলেন। ওয়ার্ল্ড কাপ বড় একটি আয়োজন, যেখানেগোটা বিশ্বের নজর আছে আপনার উপর। আমি যুবা খেলোয়াড়দের উৎসাহ, স্ফূর্তি আর উদ্দীপনাদেখে বিস্মিত হয়ে গেছিলাম। ওয়ার্ল্ড কাপের আয়োজন সুষ্ঠ ও সফল ভাবে সম্পন্ন হয়েছেএবং সব টিমই তাদের সর্বশ্রেষ্ঠ নৈপুণ্য দেখিয়েছে। ভারত খেতাব না জিততে পারলেওভারতের খেলোয়াড়রা সকলের মন জয় করে নিয়েছে। ভারত তথা গোটা বিশ্ব খেলার এই উৎসবকেউপভোগ করেছে। ফুটবলপ্রেমীদের জন্য পুরো ফুটবল টুর্ণামেণ্টই ছিল অত্যন্ত মনোরঞ্জক।ফুটবলের ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল এবং এর পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। আমি পুনরায় সমস্তখেলোয়ার, তাঁদের সহযোগীদের এবং সমস্ত ক্রীড়াপ্রেমী সাধারণকে আমার অভিনন্দন ওশুভেচ্ছা জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘স্বচ্ছ ভারত’বিষয়ে আমায় যত মানুষ লেখেন তাঁদের প্রতি যদি সুবিচার করতে হয়, তবে আমায়প্রত্যেকদিন ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান করতে হবে এবং প্রত্যেকটা ‘মন কি বাত’-এইস্বচ্ছতা বিষয়ে চর্চা করতে হবে। কেউ ছোটো ছোটো বাচ্চাদের নানান প্রচেষ্টার ছবিপাঠায় তো আবার কোথাও তরুণদের টিম এফোর্টের সাফল্যর কথা থাকে। কোথাও স্বচ্ছতা নিয়ে‘ innovation ’-এর ঘটনা থাকে,আবার কোথাও কোনো আধিকারিকের কাজের প্রতি উৎসাহ News হয়ে যায়। কিছুদিন আগে আমি একটা বড়োরিপোর্ট পেয়েছি, যেখানে মহারাষ্ট্রের চন্দ্রপুর কেল্লার নবরূপায়ণের বর্ণনা রয়েছে। Ecological Protection Organisation নামে একটি NGO -র পুরো টিম চন্দ্রপুর কেল্লায় সাফাই অভিযান চালিয়েছিল।টানা দুশোদিন অবিরাম অক্লান্ত টিম ওয়ার্ক চালিয়ে ঝক্ঝকে তক্তকে করার কাজ চলেছে।একটানা দুশোদিন! সাফাইয়ের আগের ও পরের দুটো ছবিই ওঁরা আমায় পাঠিয়েছেন। দেখে আমিঅবাক হয়ে গেছি এবং আমার মনে হয়েছে যাঁরা চারপাশের আবর্জনা, দুর্গন্ধময় পরিবেশ দেখেহতাশ হয়ে পড়েছেন, ভাবছেন এতো নোংরা পরিষ্কার করা কী করে সম্ভব, তাঁরা এই চন্দ্রপুরকেল্লার ছবি দেখতে পারেন। তাঁদের আমি বলবো EcologicalProtection Organisation –এর তরুণ-তরুণীদের শ্রম,সংকল্প, জেদ, সজীবতা ছবিতে কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে তা দেখুন। ওঁদের দেখে আপনারভেতরের হতাশা, অবিশ্বাস সব দূর হয়ে যাবে। স্বচ্ছতার জন্য এই ‘ভগীরথ প্রয়াস’সৌন্দর্য, দলবদ্ধতা ও ক্রমাণ্বয়তার এক অদ্ভুত উদাহরণ। কেল্লা তো আমাদের ঐতিহ্যেরপ্রতীক। ঐতিহাসিক সৌধ সুরক্ষা ও সংরক্ষণ সমস্ত দেশবাসীর দায়িত্ব। আমি Ecological Protection Organisation -এর সমস্ত কর্মীকে এবং চন্দ্রপুরের সমস্ত অধিবাসীকে আমার অনেক অনেক ধন্যবাদজানাই।
আমার প্রিয়দেশবাসী, আগামী ৪-ঠা নভেম্বর আমরা গুরু নানকের জন্মজয়ন্তী পালন করবো। গুরু নানকশুধু শিখ সম্প্রদায়ের প্রথম গুরুই নন, তিনি জগদ্গুরু। তিনি সমগ্র মানবজাতিরকল্যাণের কথা ভেবেছেন। সমস্ত জাতি-সম্প্রদায় সমান এই বাণী দিয়েছেন। নারীরআত্মসম্মান ও সশক্তিকরণের ওপর জোর দিয়েছেন।
গুরু নানক দেব২৮ হাজার কিলোমিটার পদযাত্রা করেছেন এবং এই পদযাত্রায় তিনি মানবতার বার্তা ছড়িয়েদিয়েছেন। তিনি মানুষের সঙ্গে মিশেছেন, তাদেরকে সততা, ত্যাগ ও কর্মনিষ্ঠার পথদেখিয়েছেন। তিনি শুধু মুখেই একথা বলেননি, নিজের জীবনে, নিজের কাজেও তা পালনকরেছেন। তিনি লঙ্গরখানা চালু করে মানুষের মধ্যে সেবাব্রতের সঞ্চার করেছেন। একসঙ্গেবসে লঙ্গরখানায় খাদ্য গ্রহণ করলে ঐক্য ও সাম্যভাব জাগ্রত হয়। গুরু নানক সার্থকজীবনের তিনটি সাধনার কথা বলে গেছেন। পরমাত্মার নাম জপ কর, শ্রমকার্যে মগ্ন থাকোএবং বিপদগ্রস্তকে সাহায্য কর। গুরু নানক নিজের বাণী প্রচারের জন্য ‘গুরুবাণী’ও রচনাকরেছিলেন। আগামী ২০১৯-এ গুরু নানকের ৫৫০-তম জন্মজয়ন্তী উদ্যাপিত হবে। আসুন, আমরাতাঁর বাণী ও শিক্ষা মেনে জীবনে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করি।
আমার প্রিয়দেশবাসী, আর দু’দিন পরে ৩১শে অক্টোবর। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মজয়ন্তী পালনকরা হবে। আমরা সবাই জানি, অখণ্ড আধুনিক ভারতের পরিকল্পনা তিনিই রচনা করেছিলেন।ভারতমাতার এই মহান সন্তানের অসাধারণ জীবন থেকে আমরা বহু কিছু শিখতে পারি। ৩১শেঅক্টোবর শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী এই জগৎ ছেড়ে চলে গেছিলেন। সর্দার বল্লভভাইপ্যাটেলের বৈশিষ্ট্য ছিল তিনি শুধু পরিবর্তনের সিদ্ধান্তই নিতেন না, জটিল থেকেজটিলতর সমস্যার সমাধান করার কার্যকরী উপায় খুঁজে বের করতেও সমর্থ ছিলেন। পরিকল্পনাবাস্তবায়নে তাঁর এক মহান ক্ষমতা ছিল। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ভারতকে এক সূত্রেগাঁথার কাজ করেছিলেন। কোটি কোটি ভারতবাসীকে ‘এক রাষ্ট্র এক সংবিধান’-এর ছত্রছায়ায়আনা সুনিশ্চিত করেছিলেন। তাঁর বিচক্ষণতা সমস্ত বাধা অতিক্রম করার শক্তি দিয়েছিল।যেখানে মর্যাদা, সম্মান দেওয়ার প্রয়োজন – দিয়েছেন, আবার যেখানে বলপ্রয়োগের প্রয়োজনহয়েছে – বলপ্রয়োগ করেছেন। তিনি একটা লক্ষ্য স্থির করেছেন এবং পূর্ণোদ্যমে সেই লক্ষ্যপূরণে এগিয়ে গেছেন, এগোতেই থেকেছেন। তিনি বলতেন – “দেশকে এক সূত্রে গাঁথার কাজ সেইমানুষই করতে পারেন, যিনি এমন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেন যেখানে সমস্ত মানুষের সমানঅধিকার আছে”। আমি চাই, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের এই বাণী আমাদের সদাসর্বদাঅনুপ্রাণিত করুক। তিনি বলেছিলেন, জাতি ও সম্প্রদায়ের বিভিন্নতা আমরা বদলাতে পারবোনা, ভারতের প্রত্যেক নারী-পুরুষের নিজের দেশকে ভালোবাসা এবং পারস্পরিক প্রেম ও সদ্ভাবনায়নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্দিষ্ট করা উচিত।
সর্দারসাহেবের বাণী আজও আমাদের ‘ New India Vision ’-এর অনুপ্রেরণা ও শক্তি। আর সেই কারণেই তাঁর জন্মদিন‘রাষ্ট্রীয় একতা দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে। আমাদের দেশকে একটা অখণ্ড রূপ দেওয়ায়তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। সর্দার সাহেবের জন্মদিন ৩১শে অক্টোবর, সেই উপলক্ষ্যে সারাদেশ জুড়ে ‘ Run for Unity ’-এর আয়োজন করা হবে, যেখানে শিশু, নারী, যুবসমাজ, প্রবীণেরাপ্রত্যেকেই শামিল হবে। আমার আপনাদের সবার কাছে অনুরোধ, আপনারা প্রত্যেকেই Run for Unity – এই সদ্ভাবনাউৎসবে অংশগ্রহণ করুন।
আমারপ্রিয় দেশবাসী, দিওয়ালির ছুটির পর আপনারা নতুন সংকল্প, নতুন নিষ্ঠায় নিজেদেরদৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ফিরে গেছেন। সমস্ত দেশবাসীর সমস্ত স্বপ্ন পূরণের শুভেচ্ছারইল আমার তরফ থেকে ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ!
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের সবাইকে নমস্কার!
আকাশবাণীর মাধ্যমে ‘মন কি বাত’ করতে করতে তিন বছর পূর্ণ হয়ে গেল। আজ এটি ৩৬-তম পর্ব। ‘মন কি বাত’ হল একরকম ভারতের যে সদর্থক শক্তি আছে, দেশের কোণে কোণে যে ভাবনাচিন্তা পূর্ণ হয়ে রয়েছে, ইচ্ছা রয়েছে, প্রত্যাশা আছে, কোথাও কোথাও নালিশও আছে – জনগণের মনে যে যে ভাবনার উদয় হতে থাকে, ‘মন কি বাত’ সেই সব ভাবনার সঙ্গে আমার নিজেকে যুক্ত করার এক সুযোগ দিয়েছে, আর আমি কখনও এটা বলি না যে, এটা আমার ‘মন কি বাত’। এই ‘মন কি বাত’ দেশবাসীর মনের সঙ্গে যুক্ত, তাদের আবেগের সঙ্গে যুক্ত, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে। আর যখন ‘মন কি বাত’-এর কথা বলি, তখন দেশের প্রতিটি কোণে যেসমস্ত মানুষ তাঁদের কথা আমাকে পাঠান, আপনাদের তো হয়ত আমি খুব কম কথা বলতে পারি, কিন্তু আমার প্রচুর বিষয় মিলে যায়। ই-মেইল হোক, দূরভাষ হোক, ‘মাই গভ’ পোর্টাল হোক, নরেন্দ্র মোদী অ্যাপের মাধ্যমে হোক, এত কথা আমার কাছে পৌঁছে যায়। বেশীরভাগই আমাকে উৎসাহ দেয়। অনেক কিছু সরকারের সংশোধনের জন্য থাকে, কখনও ব্যক্তিগত নালিশও থাকে তো আবার কখনও সামগ্রিক সমস্যার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়। আর আমি তো মাসে একবার আপনাদের আধঘণ্টা সময় নিই, কিন্তু মানুষেরা তিরিশ দিন ‘মন কি বাত’-এর জন্য নিজের কথা পৌঁছতে থাকেন। আর তার ফলে যা হয়েছে তা হল, সরকারেরও সংবেদনশীলতা, সমাজের দূর-সুদূরে কত না শক্তি রয়েছে, তার প্রতি তাদের মনোযোগ দেওয়ার এক সহজ ভাবনা তৈরি হচ্ছে। আর এজন্য ‘মন কি বাত’-এর তিন বছরের এই যাত্রা দেশবাসীর – তাদের ভাবনাচিন্তার, তাদের অনুভূতির এক যাত্রা। আর হয়ত এত কম সময়ে দেশের সাধারণ মানুষের আবেগ জানা-বোঝার জন্য যে সুযোগ আমার হয়েছে তার জন্য আমি দেশবাসীর কাছে খুবই কৃতজ্ঞ। ‘মন কি বাত’-এ আমি প্রায়ই আচার্য বিনোবা ভাবের সেই কথাটি মনে রাখি। আচার্য বিনোবা ভাবে প্রায়ই বলতেন, অ-সরকারি, কার্যকর। আমিও ‘মন কি বাত’-এ এই দেশের জনগণকে কেন্দ্রে রাখার চেষ্টা করেছি। রাজনীতির রঙ থেকে অনেক দূরে রেখেছি। তৎকালিন উত্তেজনা, আক্রোশ হতে থাকে তার মধ্যে না গিয়ে স্থির মন নিয়ে আপনাদের সঙ্গে যুক্ত থাকার চেষ্টা করেছি। আমি অবশ্যই মানি, এখন তিন বছর পরে সমাজবিজ্ঞানী, বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষক, গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞরা অবশ্যই এর বিশ্লেষণ করবেন। প্রতিটি জিনিসের প্লাস-মাইনাস তুলে ধরবেন, আর আমার বিশ্বাস যে, এই বিচার-বিশ্লেষণ ভবিষ্যতে ‘মন কি বাত’-এর জন্য অনেক উপযোগী হবে, তাতে এক নতুন চেতনা, নতুন উদ্যম মিলবে। আর আমি যখন একবার ‘মন কি বাত’-এ বলেছিলাম, আমাদের খাওয়ার সময়ে চিন্তা করা উচিত যে, যতটা প্রয়োজন, ততটাই নেব, আমরা তা নষ্ট করব না। কিন্তু তারপর আমি দেখেছি যে, দেশের প্রতিটি কোণ থেকে এত চিঠি এসেছে, অনেক সামাজিক সংগঠন, অনেক নব্যযুবক অনেক আগে থেকেই এই কাজ করছেন। খাওয়ার থালায় যা ফেলে যাওয়া হয়েছে, তা একসঙ্গে করে তার ঠিকঠাক ব্যবহার কীভাবে হবে, এই কাজে যুক্ত এত মানুষ আমার মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন, আমার অত্যন্ত ভালো লেগেছে, আনন্দ হয়েছে।
একবার আমি ‘মন কি বাত’-এ মহারাষ্ট্রের এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রীযুক্ত চন্দ্রকান্ত কুলকার্ণির কথা বলেছিলাম, যিনি নিজের পেনশনে যে ষোল হাজার টাকা পেতেন, তার থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে তিনি ৫১টি পোস্ট-ডেটেড চেকের মাধ্যমে স্বচ্ছতার জন্য দান করেছিলেন। আর তারপর তো আমি দেখেছি যে স্বচ্ছতার জন্য এই ধরনের কাজ করতে কত মানুষ এগিয়ে এসেছেন।
একবার আমি হরিয়ানাতে এক পঞ্চায়েত প্রধানের ‘সেলফি উইথ ডটার’ দেখি আর আমি ‘মন কি বাত’-এ তা সবার সামনে রাখি। দেখতে না দেখতে শুধু ভারত থেকেই নয়, সারা বিশ্ব জুড়ে ‘সেলফি উইথ ডটার’ এক বড় অভিযান শুরু হয়ে যায়। এটা শুধু সোস্যাল মিডিয়ারই একটি বিষয় নয়, প্রতিটি কন্যাকে এক নতুন আত্মবিশ্বাস, নতুন গর্ব করার মত ঘটনা হয়ে উঠেছে। প্রতি মা-বাবার মনে হতে থাকে যে নিজের কন্যার সঙ্গে সেলফি তুলি। প্রতিটি মেয়ের মনে হতে থাকে যে আমারও কোন মহিমা আছে, কোনো মহত্ত্ব আছে।
কিছুদিন আগে ভারত সরকারের পর্যটন দপ্তরের সঙ্গে বসেছিলাম। আমি যখন পর্যটকদের বলি যে আপনারা Incredible India–তে যেখানে গেছেন সেখানকার ফোটো পাঠান।
ভারতের প্রতি কোণ থেকে লাখখানেক ছবি একরকম পর্যটন ক্ষেত্রে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের এক মস্ত বড় সম্পদ হয়ে উঠেছে। ছোটো ছোটো ঘটনা কত বড় আন্দোলন তৈরি করে দেয়, তা ‘মন কি বাত’-এ আমি অনুভব করেছি। আজ ইচ্ছে করছে, কারণ যখন ভাবছি যে তিন বছর হয়ে গেছে, তো গত তিন বছরের কত ঘটনা আমার মনে ভিড় করে আসছে। দেশ সঠিক রাস্তায় যাওয়ার জন্য প্রতি মুহূর্তে এগিয়ে চলেছে। দেশের প্রতিটি নাগরিক অন্যের ভালোর জন্য, সমাজের ভালোর জন্য, দেশের উন্নতির জন্য কিছু না কিছু করতে চাইছেন। আমার তিন বছরের ‘মন কি বাত’-এর যাত্রায়, আমি এটা দেশবাসীর কাছ থেকে জেনেছি, বুঝেছি, শিখেছি। যে কোনো দেশের জন্যই এ এক মস্ত বড় সম্পদ, এক মস্ত বড় শক্তি। আমি অন্তর থেকে দেশবাসীকে প্রণাম জানাচ্ছি।
আমি একবার ‘মন কি বাত’-এ খাদি নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আর খাদি শুধু এক বস্ত্র নয়, এক ঐতিহ্য। আর আমি দেখেছি ইদানিং খাদির প্রতি প্রচুর আকর্ষণ বেড়ে গেছে আর আমি স্বাভাবিক ভাবেই বলেছি যে কাউকে শুধুই খাদি পড়তে হবে না। কিন্তু নানারকম fabric তো আছে, তা খাদি নয় কেন? ঘরের চাদর হতে পারে, রুমাল হতে পারে, পর্দা হতে পারে। আর এটা মনে হচ্ছে যে যুবপ্রজন্মের মধ্যে খাদির প্রতি আকর্ষণ বেড়ে গেছে। খাদির বিক্রি বেড়ে গেছে আর তার জন্য গরীবদের রোজগারের সঙ্গে এক সরাসরি সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। ২-রা অক্টোবর খাদিতে ছাড় দেওয়া হয়, অনেকটাই ছাড় পাওয়া যায়। আমি আরও একবার বলব যে, খাদির জন্য যে অভিযান চলছে, তাকে আমরা আরও এগিয়ে নিয়ে যাই, আরও বাড়াই। খাদি কিনে গরীবদের ঘরে দীপাবলির প্রদীপ জ্বালাব, এই ভাবনা নিয়ে আমরা কাজ করি। আমাদের দেশের দরিদ্রদের এই কাজের থেকে এক শক্তি মিলবে, আর আমাদের তা করা উচিত। আর এই খাদির প্রতি রুচি বাড়ার জন্য খাদি ক্ষেত্রের কর্মীদের, ভারত সরকারের খাদির সঙ্গে যুক্ত মানুষদের এক নতুন ভাবে ভাবনাচিন্তা করার উৎসাহ বেড়েছে। নতুন প্রযুক্তি কীভাবে আনবে, উৎপাদনক্ষমতা কীভাবে বাড়াবে, সৌরশক্তি ও হস্তচালিত তাঁত কীভাবে নিয়ে আসবে? পুরনো যে ঐতিহ্য ছিল, যা প্রায় ২০, ২৫, ৩০ বছর ধরে বন্ধ হয়ে পড়েছিল, তাকে পুনর্জীবিত কীভাবে করা যায়।
উত্তর প্রদেশে বারাণসীর সেবাপুরে – সেবাপুরীর এক খাদি আশ্রম ২৬ বছর ধরে বন্ধ হয়ে পড়েছিল, কিন্তু আজ তা পুনর্জীবিত হয়েছে। অনেক রকম পদ্ধতি যুক্ত হয়েছে। অনেক লোকের রোজগারের নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। কাশ্মীরের পম্পোরে বন্ধ হয়ে থাকা খাদি ও গ্রামোদ্যোগ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আবার চালু হয়েছে আর কাশ্মীরের কাছে তো এই ক্ষেত্রে দেওয়ার অনেক কিছু আছে। এখন এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আবার শুরু হওয়ার জন্য নতুন প্রজন্ম আধুনিকভাবে নির্মাণ কাজ করতে, বয়ন করতে, নতুন জিনিস তৈরি করতে এক সাহায্য মিলছে আর আমার ভালো লাগছে যে বড় বড় করপোরেট হাউস দীপাবলির সময় যে উপহার দেয়, তারা ইদানিং খাদির জিনিস দিতে শুরু করেছে। লোকেরাও একজন আরেকজনকে উপহার হিসেবে খাদির জিনিস দিচ্ছে। সহজভাবে কোন জিনিস কীভাবে এগিয়ে চলে তা আমরা সবাই অনুভব করছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, গতমাসে ‘মন কি বাত’-এ আমরা সবাই মিলে এক সংকল্প করেছিলাম এবং আমরা ঠিক করেছিলাম যে গান্ধী জয়ন্তীর আগের ১৫ দিন সারা দেশ জুড়ে স্বচ্ছতা উৎসব পালন করব। স্বচ্ছতার সঙ্গে জনমনকে যুক্ত করব। আমাদের শ্রদ্ধেয় রাষ্ট্রপতি এই কাজ শুরু করেছেন এবং দেশ তাতে যুক্ত হয়েছে। আবালবৃদ্ধ, পুরুষ-মহিলা, শহর-গ্রাম – প্রত্যেকেই আজ স্বচ্ছতা অভিযানের এক অংশ হয়ে উঠেছে।
আমি যখন সংকল্প সাধনের কথা বলি, তখন আমাদের এই স্বচ্ছতা অভিযান সংকল্প সাধনের পথে কীভাবে এগিয়ে চলেছে তা আমরা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। সবাই এটাকে স্বীকার করে, সহায়তা করে এবং এর সাফল্যের জন্য কোনো না কোনো ভাবে সাহায্য করেন। আমি মাননীয় রাষ্ট্রপতির প্রতি কৃতজ্ঞ, কিন্তু একই সঙ্গে দেশের সব শ্রেণির মানুষ এই স্বচ্ছতা অভিযানকে নিজেদের কাজ বলে স্বীকার করেছেন। এর সঙ্গে সকলে নিজেকে যুক্ত করেছেন। খেলাধূলার জগতের মানুষ-ই হোন বা সিনেমা জগতের মানুষ, শিক্ষার জগতের মানুষ, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষক, মজদুর, অফিসার, কেরানি, পুলিশ, সৈনিক সকলে এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছেন। জনসাধারণ ব্যবহার করেন এই রকম জায়গা নোংরা থাকলে আজকাল মানুষ বিরক্তি প্রকাশ করেন, ফলে যাঁরা এই সব জায়গা দেখাশোনার কাজ করেন তাঁরা একধরনের তাগিদ অনুভব করেন। আমি এটাকে একটা ভালো সংকেত বলে মনে করি। আমি খুশি যে ‘স্বচ্ছতাই সেবা’ অভিযানের প্রথম চার দিনে প্রায় ৭৫ লক্ষের বেশি মানুষ ৪০ হাজারের বেশি উদ্যোগ নিয়ে এই কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছেন। আমি লক্ষ করেছি কিছু মানুষতো লাগাতার কাজ করে চলেছেন। তাঁরা উপযুক্ত ফল না পাওয়া পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাওয়া মনস্থির করেছেন। এই বার আরও একটা জিনিস দেখলাম – প্রথমতঃ একটা জিনিস হতে পারে আমরা কোনো একটা জায়গা পরিষ্কার করবো, দ্বিতীয়তঃ এটা হতে পারে যে আমরা সচেতন ভাবে কোনও জায়গা অপরিষ্কার করবো না কিন্তু পরিচ্ছন্নতাকে যদি অভ্যাস বানাতে হয়, তাহলে আমাদের বিচারধারার মধ্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন প্রয়োজন। এবার ‘স্বচ্ছতাই সেবা’ অভিযানে বেশ কিছু প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। আড়াই কোটিরও বেশি শিশু স্বচ্ছতা বিষয়ে রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করেছিল। হাজার হাজার শিশু পেইণ্টিং করেছে। স্বচ্ছতা বিষয়ে তাদের নিজের নিজের কল্পনা প্রকাশ করতে ছবি এঁকেছে। অনেকে কবিতা লিখেছেন, আমার ছোটো ছোটো বন্ধুরা, ছোটো ছোটো বালক-বালিকারা যে সব ছবি পাঠিয়েছে আমি আজকাল সেগুলিকে সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দিচ্ছি। তাদের গৌরবগাথা লিখছি। যখনই স্বচ্ছতার কথা হয়, তখন আমি কিন্তু প্রচার মাধ্যমের মানুষদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে কখনো ভুলি না। এই আন্দোলনকে তাঁরা পবিত্ররূপে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। নিজের নিজের মত তাঁরা এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন এবং একটা সদর্থক পরিবেশ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা করেছেন। এখনও পর্যন্ত তাঁরা নিজের মত করে স্বচ্ছতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমাদের দেশের ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, প্রিণ্ট মিডিয়া দেশের কতবড়ো সেবার কাজ করতে পারে, সেটা আমরা ‘স্বচ্ছতাই সেবা’ আন্দোলনে দেখছি। সম্প্রতি কয়েকদিন আগে কেউ শ্রীনগরের ১৮ বছরের তরুণ বিলাল ডার-এর সম্পর্কে আমার মনোযোগ আকর্ষণ করে। আপনারা শুনে খুশি হবেন যে শ্রীনগর ম্যুনিসিপ্যাল কর্পোরেশান বিলাল ডারকে স্বচ্ছতার জন্য তাঁদের ব্র্যাণ্ড অ্যামবাসেডর বানিয়েছেন। যখনই ব্র্যাণ্ড অ্যাম্বাসেডর-এর কথা ওঠে, তখন আপনারা ভাবেন, উনি হয়ত সিনেমা আর্টিস্ট বা খেলাধুলার জগতের কোনও হিরো, কিন্তু সেটা সত্যি নয়। ১২-১৩ বছর বয়স থেকে অর্থাৎ গত ৫-৬ বছর যাবৎ বিলাল স্বচ্ছতা নিয়ে কাজ করে চলেছে। শ্রীনগরের পাশে এশিয়ার সব থেকে বড় যে লেক আছে, সেখানেও প্লাসটিক, পলিথিন, ব্যবহৃত বোতল, ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে। এর থেকে কিছু উপার্জনও করে নেয়। ওর খুব ছোটো বয়সে ওর বাবার ক্যান্সারে মৃত্যু হয়। জীবিকা উপার্জনের সঙ্গে ও স্বচ্ছতাকে যুক্ত করে নিয়েছে। এক আনুমানিক হিসাব অনুসারে বিলাল প্রতি বছর ১২ হাজার কিলোগ্রামেরও বেশি আবর্জনা পরিষ্কার করেছে। স্বচ্ছতার প্রতি তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং ব্র্যাণ্ড অ্যাম্বাসেডর নির্বাচনে তাঁদের পদক্ষেপ-এর জন্য শ্রীনগর পৌর নিগমকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। শ্রীনগর একটি পর্যটন কেন্দ্র এবং ভারতবর্ষের সব নাগরিকেরই শ্রীনগরে যাওয়ার ইচ্ছা থাকে, সেখানে পরিচ্ছন্নতার প্রতি এই রকম গুরুত্ব আরোপ করা সত্যিই তাৎপর্যপূর্ণ। আমি আনন্দিত যে পৌরনিগম বিলালকে কেবল মাত্র ব্র্যাণ্ড অ্যাম্বাসেডর-ই বানায়নি, তারা বিলালকে এবার গাড়ি দিয়েছে, ইউনিফর্ম দিয়েছে। বিলালও অন্য এলাকায় গিয়ে সেখানকার লোকজনদের স্বচ্ছতা বিষয়ে শিক্ষিত করে তুলছে, তাঁদের অনুপ্রাণিত করছে এবং প্রত্যাশিত ফল না পাওয়া পর্যন্ত হাল ছাড়ে না। বিলাল ডার বয়সে ছোট কিন্তু স্বচ্ছতার প্রতি যাঁদের আগ্রহ আছে, তাঁদের কাছে প্রেরণাদায়ক। আমি বিলাল ডারকে অনেক অভিনন্দন জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের এটা স্বীকার করতেই হবে যে ইতিহাসের গর্ভেই ভবিষ্যতের ইতিহাস জন্ম নেয়। আর আমরা যখন ইতিহাসের কথা বলবো, তখন মহাপুরুষদের কথা স্মরণে আসা স্বাভাবিক। অক্টোবর মাস আমাদের অনেক মহাপুরুষকে স্মরণ করার মাস। মহাত্মা গান্ধী থেকে সরদার প্যাটেল এই অক্টোবর মাসে অনেক মহাপুরুষ জন্ম নিয়েছেন, যাঁরা বিংশ শতাব্দী এবং একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন, আমাদের চলার পথ দেখিয়েছেন আর দেশের জন্য যাঁরা নিজেরা অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন। দোসরা অক্টোবর মহাত্মা গান্ধী এবং লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর জন্মদিন, ১১-ই অক্টোবর জয়প্রকাশ নারায়ণ আর নানাজি দেশমুখের জন্মদিন। আবার ২৫-শে সেপ্টেম্বর পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্মদিন। এবছর তো আবার নানাজীর এবং দীনদয়ালজীর জন্মের শতবর্ষ। এই সকল মহাপুরুষদের একটা কেন্দ্রবিন্দু ছিল – সেটা কি? তাঁদের সকলের জন্য একটা বিষয় স্বাভাবিক ছিল, সেটা হল দেশের জন্য বাঁচা, দেশের জন্য কিছু করা আর শুধুমাত্র উপদেশ দেওয়া নয়, জীবন যাপনে সেই উপদেশ পালন করা। গান্ধীজী, জয়প্রকাশজী, দীনদয়ালজীরা এমন মহাপুরুষ ছিলেন যাঁরা ক্ষমতার অলিন্দ থেকে অনেক দূরে থাকতেন কিন্তু প্রতিটি মুহূর্ত সাধারণ মানুষের সঙ্গে জীবন যাপন করতেন, সংগ্রাম করতেন, সর্বজনের হিতার্থে, সর্বজনের সুখার্থে কিছু না কিছু করতেন। নানাজি দেশমুখ রাজনীতি ছেড়ে গ্রাম উন্নয়নের কাজে মন দেন। আজকে আমরা যখন তাঁর শতবর্ষ পালন করছি, তখন তাঁর গ্রাম উন্নয়নের কাজকে শ্রদ্ধা জানানো খুবই স্বাভাবিক।
ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি শ্রীমান আব্দুল কালামজী যখন তরুণদের সঙ্গে কথা বলতেন, তখন তিনি প্রায়ই নানাজী দেশমুখের গ্রামীণ বিকাশের কথা আলোচনা করতেন। গভীর আন্তরিকতায় তিনি সেই কর্মসূচির উল্লেখ করতেন এবং তিনি নিজেও নানাজীর এই কাজ প্রত্যক্ষ করার জন্য গ্রামে গিয়েছিলেন।
দীনদয়াল উপাধ্যায়ের মতো মহাত্মা গান্ধীও সমাজের নিম্নবর্গের মানুষজনের কথা বলতেন। দীনদয়ালজী সমাজের নীচের স্তরের গরীব, পীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত জনসাধারণের জীবনে পরিবর্তন আনার কথা বলতেন; শিক্ষা এবং উপার্জনের মাধ্যমে কীভাবে সে বদল আনা যেতে পারে, সে বিষয়ে আলাপ আলোচনা করতেন। এইসব মহাপুরুষকে স্মরণ করলে তাঁদের কোনও উপকার করা হয় না, আমরা এঁদের স্মরণ করি, যাতে সামনে এগিয়ে চলার রাস্তা খুঁজে পাই, যাতে ভবিষ্যতের জন্য সঠিক দিগ্নির্দেশ মেলে।
এর পরের ‘মন কি বাত’-এ আমি অবশ্যই সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের বিষয়ে বলব। আপাতত ৩১-শে অক্টোবর সারা দেশে Run for Unity ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। দেশের প্রতিটি শহরে-নগরে খুব বড় করে ‘Run for Unity’ কার্যসূচি রূপায়িত হওয়া দরকার। এখন আবহাওয়াটি এমন যে দৌড়তে ভালোও লাগে – সর্দার সাহেবের মতো লৌহ-শক্তি পাওয়ার জন্য সেটা জরুরিও বটে। সর্দার সাহেব দেশকে এক করেছিলেন, আমাদেরও একতার জন্য দৌড়ে সামিল হয়ে একতার মন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে চলা প্রয়োজন।
আমরা খুব সহজে বলে থাকি – বিবিধের মাঝে ঐক্যই ভারতের বিশেষত্ব। বিবিধতার জন্য আমরা গর্বিত, অথচ যে বৈচিত্র্যের জন্য আমরা গর্বিত, নিজেদের সেই বিবিধ বৈশিষ্ট্যকে অনুভব করার চেষ্টা কখনও করি কি? আমি হিন্দুস্থানে আমার সমস্ত দেশবাসীকে বারবার বলতে চাই, বিশেষ করে আমার যুবপ্রজন্মকে বলতে চাই যে, আমরা এক জাগ্রত অবস্থার মধ্যে আছি। এই ভারতের বিচ্ছিন্নতাকে অনুভব করুন, তাকে স্পর্শ করুন, তার গৌরবকে উপলব্ধি করুন। আপনাদের অন্তরস্থিত ব্যক্তিত্বের বিকাশের জন্য আমাদের দেশের এই বৈচিত্র্য যেন বিরাট এক পাঠশালার ভূমিকা পালন করে। ছুটি পরলে বা দীপাবলির পরব এলে আমাদের দেশে কোথাও না কোথাও বেড়াতে বেরিয়ে পড়ার একটা প্রবণতা আছে। ট্যুরিস্ট হিসেবে সবাই বেড়িয়ে পড়েন। কিন্তু মাঝে মাঝে চিন্তা হয়, নিজের দেশকে তো আমরা সেভাবে দেখি না, তার বিভিন্নতাকে জানতে বা বুঝতে চেষ্টা করিনা, কিন্তু বিদেশের চাকচিক্যের টানে আমরা ইদানিং পর্যটনের জন্য বিদেশকেই বেশি পছন্দ করতে শুরু করেছি। আপনারা বিদেশে যান, আমার কোন আপত্তি নেই, কিন্তু কখনও কখনও নিজের ঘরটাকেও তো দেখবেন! উত্তর ভারতের মানুষ জানবেন না দক্ষিণ ভারতে কী আছে? পশ্চিম ভারতের মানুষটি জানবেন না যে পূর্বভারতে কী আছে? আমাদের এই দেশ কতরকম বৈচিত্র্যে ভরা।
মহাত্মা গান্ধী, লোকমান্য তিলক, স্বামী বিবেকানন্দ, আমাদের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আব্দুল কালামজী – এঁরা প্রত্যেকেই যখন ভারত ভ্রমণ করেছেন, তখন তাঁদের মধ্যে দেশকে দেখার, বোঝার, দেশের জন্য বাঁচা-মরার এক নতুন প্রেরণা জেগে উঠেছিল। এইসব মহাপুরুষেরা এদেশকে ব্যাপকভাবে ঘুরে দেখেছেন। নিজেদের কাজের শুরুতে তাঁরা ভারতকে জানার এবং বোঝার চেষ্টা করেছেন। ভারতকে নিজের মধ্যে আত্মস্থ করে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আমরাও কি পারিনা আমাদের দেশের ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যের, ভিন্ন ভিন্ন সমাজের বা গোষ্ঠীর নিয়মকানুন, পরম্পরা, তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ, খাওয়াদাওয়াকে একজন শিক্ষার্থীর মতো করে শিখে নিতে, বুঝে নিতে, সে জীবনচর্যা আয়ত্ত করতে?
পর্যটনে value addition তখনই হবে যখন আমরা শুধু দর্শক হিসেবে নয়, একজন ছাত্রের মতো সেই সব জায়গার বৈশিষ্ট্যকে গ্রহণ করতে, বুঝতে এবং আত্মীকরণ করতে সচেষ্ট হব। আমার নিজের হিন্দুস্থানের পাঁচশোর বেশি জেলায় যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। সাড়ে চারশোর বেশি জেলায় রাত্রিবাস করারও অভিজ্ঞতা হয়েছে। আজ যখন আমি দেশের এই গুরত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলাচ্ছি, তখন সেই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার খুবই কাজে লাগে। তার জন্যেই বহু জিনিস বুঝতে আমার বিশেষ সুবিধা হয়। আপনাদের কাছেও আমার অনুরোধ, বিশাল এই ভারতে ‘বিবিধের মধ্যে একতা’ – এটাকে শুধু স্লোগান হিসেবে না দেখে, আমাদের অপার শক্তির এই ভাণ্ডারকে উপলব্ধি করুন। ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর স্বপ্ন এরই মধ্যে নিহিত আছে।
খাদ্য-পানীয়ই কত রকমের আছে! সারা জীবন ধরে প্রত্যেক দিন যদি এক একরকমের নতুন খাবার খাওয়া যায়, তা-ও পুনরাবৃত্তি হবে না। এটাই আমাদের পর্যটনের এক বড় শক্তি। আমি চাইবো, এই ছুটিতে আপনারা শুধু একটু ঘরের বাইরে যাওয়ার জন্য, একটু পরিবর্তনের জন্য বেরিয়ে পড়লেন – এমন যেন না হয়। কিছু জানতে হবে, বুঝতে হবে, আত্মস্থ করতে হবে – এরকম প্রতিজ্ঞা নিয়ে ঘুরতে যান। ভারতকে নিজের মধ্যে গ্রহণ করুন। কোটি কোটি দেশবাসীর বিভিন্নতাকে আপন করে নিন। এই উপলব্ধি আপনার জীবনকে সমৃদ্ধ করে তুলবে। আপনার চিন্তার ব্যাপ্তি বিশাল হয়ে যাবে। উপলব্ধির চেয়ে বড় শিক্ষক আর কী হতে পারে! সাধারণভাবে অক্টোবর থেকে বড়জোর মার্চ পর্যন্ত সময়টি পর্যটনের জন্য প্রশস্ত। এই সময়েই সকলে বেড়াতে যান। আমার বিশ্বাস, এবার যদি আপনারা বেড়াতে যান, তবে আমার অভিযানকেই আপনারা আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আপনারা যেখানেই যান, নিজেদের অভিজ্ঞতা আর ছবি শেয়ার করুন, ‘হ্যাশ ট্যাগ incredible India’-তে অবশ্যই আপনাদের ছবি পাঠান। সেখানকার মানুষদের সঙ্গে পরিচয় হলে তাঁদেরও ছবি পাঠান। শুধু সেখানকার সৌধ বা স্থাপত্যের নয়, শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেরই নয়, সেখানকার জনজীবনের সম্পর্কেও দু-চার কথা লিখুন। আপনাদের বেড়ানো নিয়ে চমৎকার সব প্রবন্ধ লিখে ‘মাইগভ’-এ পাঠিয়ে দিন, ‘নরেন্দ্রমোদী অ্যাপ’-এ পাঠিয়ে দিন। আমি একটা ব্যাপার ভেবে দেখেছি, ভারতের পর্যটন শিল্পের উন্নতির জন্য আপনারা যদি নিজের নিজের রাজ্যের সাতটি সেরা ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন কী হতে পারে, প্রত্যেক ভারতবাসীকে নিজের রাজ্যের এই সাতটি জিনিসের বিষয়ে জানা দরকার। যদি সম্ভব হয় ওই সাতটি জায়গায় যেতে হবে। আপনি এই বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারবেন কি? Narendramodiappএ এগুলো রাখতে পারবেন কি? ‘হ্যাশ ট্যাগ Incredible India’-তে রাখতে পারবেন কি? আপনি দেখুন, একই রাজ্যের সবাই যদি এইসব তথ্য পাঠান, তাহলে আমি সরকারকে বলবো ওগুলোর scrutiny করুক, আর কোন সাতটি common বিষয় প্রত্যেক রাজ্য থেকে এসেছে, সেইগুলোকে নিয়ে প্রচার বিষয় বানাক। অর্থাৎ, এক প্রকার মানুষের অভিপ্রায় থেকে tourist destination-এর উন্নতি কিভাবে করা যায়। একই ভাবে আপনি সমগ্র দেশে যেসব দেখেছেন, এর মধ্যে যে সাতটি জিনিষ আপনার সবথেকে ভালো লেগেছে, আপনি চান কারোর না কারোর তো এটা দেখা দরকার, ওখানে যাওয়া দরকার, এর বিষয়ে জানা দরকার, তাহলে আপনার পছন্দের এইরকম সাতটি জায়গার নাম MyGovএ, NarendraModiAppএ অবশ্যই পাঠান। ভারত সরকার এটা নিয়ে কাজ করবে। এরকম ভালো দেখার জায়গা যেগুলো হবে, সেগুলো নিয়ে film তৈরি, ভিডিও তৈরি, প্রচার সাহিত্য তৈরি করা, বাহবা দেওয়া – আপনার দ্বারা নির্ণয় করা বিষয় সরকার মেনে নেবে। আসুন, আমার সঙ্গে যোগদান করুন। এই অক্টোবর মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সময়ে পর্যটনের উন্নতিতে আপনিও এক বড়ো অনুঘটক হতে পারেন। আমি আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, একজন মানুষ হওয়ার খাতিরে, অনেক কিছু জিনিষ আমার মনকেও স্পর্শ করে, আমার মন কে নাড়া দেয়। আমার মনে গভীর প্রভাব ফেলে। কারণ আমিও তো আপনাদের মতো মানুষ। কিছুদিন আগের ঘটনা, হয়ত আপনারও দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে – নারীশক্তি আর দেশপ্রেমের এক আশ্চর্য উদাহরণ দেশবাসী দেখলো। ভারতীয় সেনা লেফটেন্যান্ট স্বাতি এবং নিধি নামে দুই বীরাঙ্গনাকে পেয়েছে, ওঁরা অসাধারণ বীরাঙ্গনা। অসাধারণ এইজন্য যে, স্বাতি আর নিধির স্বামী মা-ভারতীর সেবা করতে করতে শহীদ হয়ে গিয়েছিলেন। আমরা চিন্তা করতে পারি এই কম বয়সে সংসার বিনষ্ট হলে মনের অবস্থা কিরকম হবে? কিন্তু শহীদ কর্নেল সন্তোষ মহাদিকের স্ত্রী স্বাতি মহাদিক এই কঠিন পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আর ভারতীয় সেনাতে যোগদান করেছেন। ১১ মাস ধরে কঠোর পরিশ্রম করে প্রশিক্ষণ নিলেন এবং নিজের স্বামীর স্বপ্নকে সাকার করতে নিজের জীবন সমর্পণ করেছেন। একইরকম ভাবে, নিধি দুবে, ওঁর স্বামী মুকেশ দুবে সেনাতে নায়ক পদে কাজ করতেন এবং মাতৃভূমির জন্য যখন শহীদ হয়ে গেলেন, তাঁর পত্নী নিধি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলেন এবং তিনিও সেনাতে ভর্তি হয়ে গেলেন। প্রত্যেক দেশবাসীকে আমাদের এই নারীশক্তির উপর, আমাদের এই বীরাঙ্গানাদের প্রতি সম্মান দেখানো খুবই স্বাভাবিক। আমি এই দুই বোনকে মন থেকে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই। ওঁরা দেশের কোটি কোটি লোকের কাছে এক নতুন প্রেরণা, এক নতুন চেতনা জাগ্রত করেছেন। ওই দুই বোনকে অনেক অনেক অভিনন্দন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নবরাত্রির উৎসব আর দীপাবলির মাঝখানের এই সময় আমাদের দেশের যুব প্রজন্মের জন্য এক অনেক বড়ো সুযোগও। FIFA under-17এর World Cup আমাদের এখানে হচ্ছে। আমার বিশ্বাস চতুর্দিকে ফুটবলের গুঞ্জন শোনা যাবে। প্রত্যেক প্রজন্মের ফুটবলের প্রতি আকর্ষণ বাড়বে। ভারতবর্ষের কোনও স্কুল-কলেজের মাঠ থাকবে না, যেখানে আসবে আমাদের তরুণদের ফুটবল খেলতে দেখা যাবে না। আসুন, সমগ্র বিশ্ব যখন ভারতের মাটিতে খেলতে আসছে, আমরাও এই খেলাটাকে আমাদের জীবনের অংশ করে নিই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, নবরাত্রির উৎসব চলছে। মা দুর্গার বোধনের সময়। সমগ্র পরিবেশ শুভ পবিত্র সুগন্ধে ভরে উঠেছে। চারিদিকে এক আধ্যত্মিকতার পরিবেশ, উৎসবের পরিবেশ, ভক্তির পরিবেশ, এই সব কিছুই শক্তির আরাধনার উৎসব হিসেবে পালিত হয়। একে আমরা শারদীয়-নবরাত্রি রূপে জানি। এখন থেকেই শরৎ ঋতুর আরম্ভ হয়। নবরাত্রির এই শুভ উৎসব উপলক্ষে আমি দেশবাসীকে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই, মাতৃ শক্তির কাছে প্রার্থনা করি, দেশের সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের উদ্দেশে আমাদের দেশ সাফল্যের নতুন শিখরে পৌঁছে যাক। প্রত্যেক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার ক্ষমতা দেশের আসুক। দেশ দ্রুত গতিতে উন্নতি করুক, আর ২০২২-এ ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছরে – স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্বপ্নপূরণের প্রয়াস, ১২৫ কোটি দেশবাসীর সঙ্কল্প, অপার পরিশ্রম, অনেক পৌরুষ এবং সঙ্কল্পকে সাকার করার লক্ষ্যে পাঁচ বছরের road map তৈরি করে আমরা যাত্রা শুরু করে দিয়েছি, মাতৃশক্তি আমাদের আশীর্বাদ দিন। আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা। উৎসব পালন করুন, উৎসাহকেও উজ্জীবিত করুন। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, সাদর নমস্কার!
একদিকে যখন দেশ উৎসবে মেতে রয়েছে, তখন হিন্দুস্থানের কোনো প্রান্ত থেকে হিংসার খবর আসলে দুশ্চিন্তা হওয়া স্বাভাবিক। আমাদের দেশ বুদ্ধ এবং গান্ধীর দেশ। দেশের ঐক্যের জন্য
মন-প্রাণ সমর্পণকারী সর্দার প্যাটেলজীর দেশ। প্রাচীনকাল থেকে আমাদের পূর্বসূরীরা যে সর্বজনীন মূল্যবোধকে, অহিংসাকে, সম্প্রীতিকে লালন করে এসেছে, তা আমাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। ‘অহিংসা পরম ধর্ম’ – এটা আমরা শৈশব থেকে শুনে আসছি, বলে আসছি। আমি লালকেল্লা থেকেও বলেছিলাম, বিশ্বাসের নামে হিংসা বরদাস্ত করা হবে না। তা সাম্প্রদায়িক বিশ্বাস হতে পারে, রাজনৈতিক চিন্তাধারার প্রতি বিশ্বাস হতে পারে বা কোনো ব্যক্তি কি কোনো পরম্পরার প্রতি বিশ্বাস হতে পারে – কোনো ক্ষেত্রেই হিংসা বরদাস্ত করা হবে না। বিশ্বাসের নামে আইন হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারোরই নেই। ডা. বাবাসাহেব আম্বেদকর আমাদের যে সংবিধান দিয়ে গেছেন, প্রত্যেক ব্যক্তির সুবিচার পাওয়ার অধিকার সেখানে সুনিশ্চিৎ করা আছে। আমি দেশবাসীকে আশ্বাস দিতে চাইছি, আইন হাতে তুলে নেওয়া লোকেদের বিরুদ্ধে, হিংসার পথে যাওয়া যে কাউকেই – ব্যক্তি বা সম্প্রদায় যেই হোক – কাউকেই সরকার বা দেশ বরদাস্ত করবে না। প্রত্যেককেই আইনের কাছে নতজানু হতেই হবে, আইন তার বিচার করবে ও অপরাধীকে শাস্তি পেতেই হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের দেশ বৈচিত্র্যে ছেয়ে আছে এবং এই বৈচিত্র্য শুধু খাওয়া-দাওয়া, পোষাক-পরিচ্ছদ, আচার-ব্যবহারের মধ্যেই শুধুমাত্র সীমাবদ্ধ নয়। জীবনের প্রতিটি আচরণের মধ্যেই এই বৈচিত্র্য নজরে আসে। এমনকি আমাদের উৎসবগুলিও বৈচিত্র্যে ভরপুর। আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হাজার বছর পুরনো হওয়ায় সাংস্কৃতিক পরম্পরা, সামাজিক রীতি-নীতি, ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাব যে, ৩৬৫ দিনের প্রায় প্রতিটি দিনই আমাদের জীবন উৎসবময়। এছাড়াও, আমাদের প্রতিটি উৎসবই প্রকৃতিনির্ভর। আমাদের অনেক উৎসব সরাসরি কৃষক ও মৎস্যচাষী ভাই-বোনদের সঙ্গে যুক্ত।
আজ আমি উৎসবের কথা বলছি, তাই প্রথমেই আমি আপনাদের ‘মিচ্ছামি দুক্কড়ম’ বলতে চাই। গতকাল জৈন সমাজের ‘সম্বৎসরি’ উৎসব পালিত হয়েছে। জৈন সমাজে ভাদ্র মাসে ‘পর্যুষণ পরব’ পালন করা হয়। এই ‘পর্যুষণ পরব’-এর শেষ দিনে হয় সম্বৎসরি উৎসব, যা সত্যিই এক আশ্চর্য পরম্পরা। সম্বৎসরি উৎসব ক্ষমা, অহিংসা আর মৈত্রীর প্রতিক। আর একে ‘ক্ষমা-বাণী’ উৎসবও বলা হয় এবং এই দিনে একে অপরকে ‘মিচ্ছামি দুক্কড়ম’ বলে শুভেচ্ছা জানানোর ঐতিহ্য আছে।
তাছাড়া আমাদের শাস্ত্রে আছে ‘ক্ষমা বীরস্য ভূষণম’ অর্থাৎ ক্ষমা বীরের ভূষণ। যাঁরা ক্ষমা করতে পারেন, তাঁরা প্রকৃত বীর। এই চর্চা আমরা বহুদিন ধরে শুনে আসছি এবং মহাত্মা গান্ধী প্রায়ই বলতেন – ক্ষমা করা একমাত্র শক্তিশালী ও বলবান ব্যক্তিরই বৈশিষ্ট্য।
শেক্সপীয়র তাঁর নাটক ‘দ্য মার্চেন্ট অফ ভেনিস’-এ ক্ষমার মহত্বকে বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন – “Mercy is twice blest, It blessath him that gives and him that takes”। অর্থাৎ, যিনি ক্ষমা করছেন এবং যাঁকে ক্ষমা করা হচ্ছে – উভয়েই ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এখন ভারতবর্ষের সর্বত্রই প্রবল উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে গণেশ চতুর্থী পালন করা হচ্ছে। আর যখন গণেশ চতুর্থীর কথা উঠল তখন সর্বজনীন গণেশোৎসবের প্রসঙ্গ স্বাভাবিকভাবে চলে আসে। বালগঙ্গাধর লোকমান্য তিলক ১২৫ বছর আগে এই প্রথা চালু করেছিলেন। আর ১২৫ ধরে স্বাধীনতার বহু আগে থেকেই তা স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাছাড়া স্বাধীনতালাভের পর এই উৎসব সমাজ-শিক্ষা, সামাজিক চেতনা বিকাশের এক প্রতীক হিসাবে মর্যাদা পেয়েছে। গণেশ চতুর্থীর এই মহা পরব ১০ দিন ধরে চলে। আর এই মহোৎসবকে ঐক্য, সাম্য আর পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে আমরা জানি। এই উপলক্ষে প্রত্যেক দেশবাসীকে জানাই গণেশোৎসবের অনেক অনেক শুভকামনা।
এখন কেরালায় ‘ওনাম’ উৎসব পালিত হচ্ছে। ভারতের বহুবর্ণের উৎসবের মধ্যে ‘ওনাম’ কেরালার এক প্রধান উৎসব। এই উৎসব নিজের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক মহত্বের জন্য বিশিষ্ট। ওনাম উৎসব কেরালার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এই উৎসব সমাজে প্রেম-ভালোবাসা ও সৌহার্দ্যের বার্তা বয়ে আনে। পাশাপাশি প্রতিটি নাগরিকের মনে নতুন আশা, নতুন উদ্দীপনা ও নতুন বিশ্বাস জাগিয়ে তোলে। আর এখন তো এই উৎসবও পর্যটনের আকর্ষণের এক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া আমি তো দেশবাসীকে বলবই যে, গুজরাটের যেমন নবরাত্রি উৎসব বা পশ্চিমবাংলার দুর্গোৎসব – সেভাবেই আজ পর্যটনের মূল আকর্ষণ হয়ে উঠেছে – এই ওনাম। আমাদের দেশের অন্যান্য উৎসবগুলিতেও বিদেশিদের আকর্ষণ করার প্রচুর সুযোগ রয়ে গেছে। এই ভাবনায় – আমরা আগামী দিনে কি কি পদক্ষেপ নিতে পারি – আমাদের ভাবতে হবে বৈকি!
উৎসবের এই আনন্দমেলায় ক’দিন পরেই ‘ঈদ-উল-জুহা’ পালিত হবে। সমস্ত দেশবাসীকে জানাই ‘ঈদ-উল-জুহা’র অনেক অনেক অভিনন্দন আর শুভকামনা! এই উৎসব আমাদের কাছে এক ভরসা ও বিশ্বাসের প্রতীক তো বটেই, আমাদের ‘New India’-য় উৎসবকে স্বচ্ছতার প্রতীকরূপেও আমাদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদের পারিবারিক জীবনে তো উৎসব আর স্বচ্ছতা অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। উৎসবের প্রস্তুতিই শুরু হয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মধ্য দিয়ে। একথা নতুন নয়, কিন্তু স্বচ্ছতাকে সামাজিক স্বভাবে পরিণত করা খুব জরুরী। সর্বজনীনরূপে স্বচ্ছতা শুধুমাত্র আমাদের ঘরেই নয়, প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি শহরে, আমাদের রাজ্যে, আমাদের দেশে – এই স্বচ্ছতা ও উৎসবকে এক সুতোয় বাঁধতে হবে – যে বন্ধন হবে অটুট।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আধুনিক হয়ে ওঠার পরিভাষা ক্রমশ বদলাচ্ছে। আজকাল এই নতুন dimension, নতুন parameter হয়েছে। আপনি কতটা সংস্কৃতিবান, কতটা আধুনিক, আপনার চিন্তা-চেতনা কতটা আধুনিক তা প্রমাণ করার জন্য আজকের এই নতুন মাপকাঠি হল – আপনার পরিবেশের প্রতি আপনার সচেতনতা। আপনার নিজের দিন যাপনে eco-friendly, environment friendly-র প্রয়োগ আছে কিনা – না কি তার বিপরীত, এটা জানা খুব জরুরী। যদি বিপরীত অবস্থানে থাকেন আপনি – সমাজ আপনাকে খারাপ চোখে দেখবে। আর এর পরিণামস্বরূপ আমরা দেখতে পাই যে এই গনেশোৎসবেও আজ পরিবেশ-বান্ধব গণপতি। আমাদের আজ মানতেই হবে যে এ এক বড় আন্দোলন হয়ে উঠেছে। YouTube-এ আপনারা দেখতে পাবেন, আজকাল বাচ্চারা বাড়িতে মাটি দিয়ে গণেশের মূর্তি তৈরি করছে। কেউ কেউ গণেশকে ভেষজ রঙ দিয়ে রঙ করছেন, কেউ আবার কাগজ কেটে আঠা দিয়ে তাতে লাগাচ্ছে। একটু একটু করে এর প্রয়োগ প্রতিটি পরিবারেই ক্রমশ বাড়ছে। ‘পরিবেশ সচেতনতা’র এই বিশাল কর্মকাণ্ড এই গনেশোৎসবেই দেখার সুযোগ হল, যা আগে কখনোই সম্ভব হয় নি। আমাদের Media House এই eco-friendly গণেশ মূর্তি তৈরির বিষয়ে সচেতন করে তুলছে, উৎসাহিত করছে এবং guide–ও করছে। দেখুন, কত বড় পরিবর্তন এসে গেছে – আর এই পরিবর্তন সত্যিই সুখের। আর যেটা আমি বলছিলাম যে আমাদের দেশ কোটি কোটি মেধাবী মানুষে পূর্ণ। খুব ভালো লাগে, যখন নতুন নতুন আবিষ্কারের কথা জানতে পারি। আমাকে কেউ একজন এমন এক ভদ্রলোকের কথা বলছিলেন, যিনি নিজে একজন ইঞ্জিনীয়র। তিনি বিশেষ ধরনের মাটি সংগ্রহ করে তাঁর সংমিশ্রণ ঘটিয়ে গণেশের এমন মূর্তি বানানোর প্রশিক্ষণ মানুষকে দিয়েছেন, যা ছোটো এক বালতির জলেই বিসর্জিত করা যায় এবং বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গে জলের মধ্যে মিশে যায়। এরপরেও তিনি থেমে থাকেন নি, সেই বালতিতে তিনি একটি তুলসী চারাও রোপণ করে দেন।
তিনবছর আগে আমরা যে স্বচ্ছতা অভিযান শুরু করেছিলাম, আগামী দোসরা অক্টোবর তার তৃতীয় বর্ষপূর্তি। ইতিমধ্যে তার ইতিবাচক দিকগুলো আমাদের নজরে এসেছে। শৌচালয়ের বিস্তার ৩৯ শতাংশ থেকে বেড়ে প্রায় ৬৭ শতাংশ হয়েছে এবং ২ লক্ষ ৩০ হাজারেরও বেশি গ্রাম উন্মুক্ত স্থানে শৌচের দুরবস্থা থেকে নিজেদের মুক্ত ঘোষণা করেছে।
বিগত কিছুদিন ধরে গুজরাতের ভয়ংকর বন্যার কথা আমরা শুনছি। অসংখ্য প্রাণহানির খবর তো আছেই, তার ওপর বন্যার জল কমার সঙ্গে সঙ্গে জায়গায় জায়গায় নোংরা আবর্জনা ছড়িয়ে থাকার খবরও আসছে। এই রকম একটা সময়ে গুজরাতের বনাসকাঁঠা জেলার ধানেরায় ‘জমীয়ত-উলেমা-এ-হিন্দ’-এর কর্মকর্তারা বন্যা প্রভাবিত ২২টি মন্দির ও ৩টি মসজিদের
সাফ-সাফাই ও পরিচ্ছন্নতার সম্পূর্ণ কাজ নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছেন। নিজেরা ঘাম ঝরিয়েছেন এবং সবাই কাজে হাত লাগিয়েছেন।
স্বচ্ছতার উদ্দেশ্যে সংঘবদ্ধ হয়ে কাজ করার এমন এক অনুপম উদাহরণ ‘জমীয়ত-উলেমা-এ-হিন্দ’-এর কর্মকর্তারা প্রস্তুত করেছেন যা সবাইকে প্রেরণা দেবে। সমর্পিতভাবে স্বচ্ছতার জন্য করার এই প্রচেষ্টা যদি আমাদের স্বভাবের একটি স্থায়ী অঙ্গ হয়ে যায় তবে আমাদের দেশ কোথা থেকে কোথায় পৌঁছে যেতে পারে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি আপনাদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানাচ্ছি যে, আসুন, আবার একবার, দোসরা অক্টোবর ‘গান্ধী জয়ন্তী’র ১৫-২০ দিন আগে থাকতে ‘স্বচ্ছতাই সেবা’-র প্রচার শুরু করি। যেরকম আগে বলা হত, ‘জল সেবাই প্রভু সেবা’ এবং ‘স্বচ্ছতাই সেবা’ – ঠিক সেইরকম। পুরো দেশে স্বচ্ছতার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করি। যেরকম সুযোগ পাওয়া যাবে এবং যখনই সুযোগ মিলবে আমরা যেন সুযোগ খুঁজি ও তার সদ্ব্যবহার করি। কিন্তু অংশ নিতে হবে সবাইকে। একে মনে করুন দীপাবলী, নবরাত্রি বা দুর্গাপূজার প্রস্তুতি। শ্রমদান করুন। ছুটির দিন বা রবিবারগুলোতে একত্রিত হয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে কাজ করুন। আশেপাশের বস্তি এলাকাগুলিতে যান, কাছেপিঠের গ্রামে যান, একে এক আন্দোলনের রূপ দিন। আমি সমস্ত এন-জি-ও, স্কুল, কলেজ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক নেতৃবর্গ, সরকারী আমলা, কালেক্টর এবং পঞ্চায়েত প্রধানদের কাছে আবেদন রাখছি, দোসরা অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর জন্মজয়ন্তীর পনেরো দিন আগেই এমন এক আবহ তৈরি করি, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ তৈরি করি যাতে গান্ধীজীর স্বপ্নের ভারত বাস্তবায়িত হয়।
পানীয় জল ও স্বচ্ছতা মন্ত্রক, mygov.in-এ একটি বিভাগ তৈরি করেছে যেখানে শৌচালয় তৈরির পর আপনি আপনার নিজের নাম ও সেই পরিবারের নাম তালিকাভুক্ত করতে পারেন, যাঁদের আপনি এই কাজে সাহায্য করেছেন। আমার সোস্যাল মিডিয়ার বন্ধুরা ভার্চুয়্যাল দুনিয়ায় এমন কিছু সৃজনশীল প্রচার চালাতে পারেন যা বাস্তবে প্রেরণাদায়ক হতে পারে।
পানীয় জল ও স্বচ্ছতা মন্ত্রক দ্বারা ‘স্বচ্ছ সংকল্প থেকে স্বচ্ছ সিদ্ধি’ অভিযানের অন্তর্গত প্রবন্ধ, স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র এবং ছবি আঁকার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে। আপনারা বিভিন্ন ভাষায় প্রবন্ধ লিখতে পারেন এবং এই প্রতিযোগিতার কোনও নির্দিষ্ট বয়সসীমা নেই। আপনারা নিজের মোবাইলে স্বচ্ছতা সংক্রান্ত দুই-তিন মিনিটের চলচ্চিত্র বানিয়ে পাঠাতে পারেন, যা যে কোনও ভাষায় হতে পারে, এমনকী নির্বাকও হতে পারে। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে থেকে জেলাস্তরে তিনজন এবং রাজ্যস্তরে তিনজনকে সেরা নির্বাচিত করা হবে ও পুরস্কৃত করা হবে। আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি, স্বচ্ছতা অভিযানে আপনারা এভাবেও অংশ নিতে পারেন।
আমি আরও একবার বলতে চাই, আসুন, এই বছর দোসরা অক্টোবর গান্ধীজয়ন্তীর দিনটিকে আমরা ‘স্বচ্ছ দোসরা অক্টোবর’ হিসেবে পালন করার সংকল্প নিই এবং এর জন্য ১৫-ই সেপ্টেম্বর থেকেই ‘স্বচ্ছতাই সেবা’ – এই মন্ত্রকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিই। স্বচ্ছতার জন্য কোন না কোন পদক্ষেপ অবশ্যই নিন। নিজে পরিশ্রম করুন, অংশগ্রহণ করুন, তাহলে দেখবেন গান্ধী জয়ন্তীর দিনটি অর্থাৎ দোসরা অক্টোবর কেমন সাফল্যমণ্ডিত হয়ে উঠবে। এই পনের দিনের সাফাই অভিযানের পর, ‘স্বচ্ছতাই সেবা’ এই মন্ত্র পালনের পর, দোসরা অক্টোবর যখন আমরা গান্ধীজয়ন্তী পালন করব এবং পূজনীয় বাপুকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাব, তখন আমাদের মন এক নির্মল আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি আপনাদের কাছে বিশেষভাবে ঋণ স্বীকার করতে চাই ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই, কারণ আপনারা দীর্ঘদিন ধরে ‘মন কি বাত’-এর সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন। শুধু তাই নয়, দেশের প্রতি কোণ থেকে অসংখ্য মানুষ এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে চলেছেন। শ্রোতার সংখ্যা কয়েক কোটি এবং লক্ষাধিক মানুষ কখনও চিঠি মাধ্যমে, কখনও message পাঠিয়ে বা ফোনে যোগাযোগ করেন, বার্তা পাঠান যা আমার কাছে এক পরম প্রাপ্তি ও দুর্লভ সম্পদ। দেশের জনগণের ভাবনা ও মনের কথা জানার এটা আমার কাছে একটা বড় সুযোগ। আপনারা যতটা ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের অপেক্ষা করেন, তার চেয়ে বেশি অপেক্ষায় আমি থাকি আপনাদের খবরাখবরের। আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি কারণ, আপনাদের থেকে আমি অনেক কিছু শিখতে পারি। আমি আমার কাজ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলি পরখ করার সুযোগ পাই। আপনাদের ছোটো ছোটো মতামত অনেক পরিকল্পনাকে নতুন ভাবে ভাবতে সাহায্য করে এবং এইজন্যে আপনাদের কাছে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ঋণস্বীকার করতে চাই।
আমি চেষ্টা করি আপনাদের মতামত যত বেশি সম্ভব নিজেই দেখার, শোনার, পড়ার ও জানার। আমি এমনই এক ফোন কলের কথা এখন বলতে চাই যা শুনে আপনাদের মনে হবে যে এরকম ভুল তো আপনারাও কখনো না কখনো নিশ্চয়ই করেছেন। কিছু কিছু কাজে আমরা এতটাই অভ্যস্ত হয়ে উঠি যে আমাদের মনেই হয় না কাজটা অনুচিত।
“প্রধানমন্ত্রীজী, আমি পুণা থেকে অপর্ণা বলছি। আমি আমার এক বান্ধবীর কথা আপনাকে জানাতে চাই। সে সবসময় লোকেদের সাহায্য করার চেষ্টা করে কিন্তু ওর একটা বদভ্যাস আছে যা দেখে আমি খুব আশ্চর্য হই। আমি একবার কেনাকাটা করতে ওর সঙ্গে মলে গিয়েছিলাম। দেখলাম ও একটা দু-হাজার টাকার শাড়ি কিনল, পিৎজার জন্য ৪৫০ টাকা অনায়াসে খরচ করল। অথচ ‘মল’-এ যাওয়ার জন্য অটোওয়ালার সঙ্গে পাঁচ টাকার জন্য অনেকক্ষণ দরদাম করল। ফেরার পথে সবজি কেনার সময়ও ও একই কাজ করল ও দরদাম করে চার-পাঁচটাকা বাঁচাল। আমার খুব খারাপ লেগেছিল। আমরা বড় বড় দোকানে বিনা বাক্যব্যয়ে অনেক টাকা খরচ করি, কিন্তু আমাদের শ্রমজীবী ভাই-বোনদের সঙ্গে সামান্য কয়টা টাকার জন্য বাগ্বিতণ্ডা করি, তাদের অবিশ্বাস করি! আপনি ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে এই বিষয়ে অবশ্যই আলোচনা করবেন।”
আমার বিশ্বাস, এই ফোনের বিষয়বস্তু শোনার পর আপনারা কেবল সজাগই হননি, এমন ভুল না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। আপনার কি মনে হয় না কি আমাদের ঘরের আশেপাশে যখন কেউ জিনিস বিক্রি করতে আসে, ফেরি করতে আসে, কোনো ছোট দোকানদার, সব্জী বিক্রেতার সঙ্গে আমাদের কাজ পড়ে, কখনও অটো-রিকশার সঙ্গে দরকার পড়ে – যখনই কোনো মেহনতী মানুষের সঙ্গে কাজ পড়ে আমাদের, তখনই আমরা দরাদরি করি, দর কষতে লেগে যাই তার সঙ্গে – না এত নয়, দু’ টাকা কম করো, পাঁচ টাকা কম করো। আর আমাদের মত লোকই যখন কোনো বড় রেস্টুরেণ্টে খাবার খেতে যাই তখন বিলে কী লেখা আছে তা দেখিও না, সঙ্গে সঙ্গে টাকা বের করে দিয়ে দিই। শুধু তাই নয়, শোরুমে শাড়ি কিনতে গেলে কোনো দরাদরি করি না, কিন্তু কোনো গরীবের সঙ্গে কাজ পড়লে দরাদরি না করে ছাড়ি না। এতে গরীবের মনে কী হয় তা কখনও ভেবে দেখেছেন আপনি? তার জন্য বিষয়টা দু’টাকা-পাঁচ টাকার নয়। তার হৃদয়ে ব্যথা লাগে যে সে গরীব বলে আপনি তার সততাকে সন্দেহ করলেন। দু’ টাকা, পাঁচ টাকায় আপনার জীবনে কোনো ফারাক পড়বে না কিন্তু আপনার এই সামান্য আচরণ তার মনে কতটা গভীর আঘাত দেয় তা কখনও ভেবে দেখেছেন? ম্যাডাম, আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ, আপনি এমন হৃদয়স্পর্শী ফোন করে এক বার্তা দিলেন আমাকে। আমার বিশ্বাস যে আমার দেশবাসীর মধ্যে গরীবের সঙ্গে এই আচরণের অভ্যাস থাকলে নিশ্চিতভাবে তাঁরা তা ত্যাগ করবেন।
আমার প্রিয় তরুণ বন্ধুরা, ২৯শে অগাস্ট তারিখটা পুরো দেশ ‘জাতীয় ক্রীড়া দিবস’ হিসাবে উদযাপন করে। এই দিনটি মহান হকি খেলোয়াড় এবং হকির জাদুকর মেজর ধ্যানচাঁদজীর জন্মদিন। হকিতে ওঁর অবদান অতুলনীয়। আমি এই ব্যাপারটাকে এই কারণে স্মরণ করছি কারণ আমি চাই যে আমাদের দেশের নতুন প্রজন্ম খেলাধুলোর সঙ্গে যুক্ত হোক। খেলাধুলো আমাদের জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠুক। যদি আমরা বিশ্বের ‘তরুণ রাষ্ট্র’ হই তবে খেলার মাঠেও এই তারুণ্য নজরে পড়া উচিত। খেলাধুলো মানে ফিজিক্যাল ফিটনেস, মেন্টাল অ্যালার্টনেস, পার্সোনালিটি এনহ্যান্সমেন্ট। এর থেকে বেশি আর কি চাই? একদিক থেকে খেলাধুলো হৃদয়ের মেলবন্ধন ঘটানোর এক দারুণ দাওয়াই। আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্ম খেলার জগতে এগিয়ে আসুক আর আজ কম্প্যুটারের যুগে আমি এ ব্যাপারেও সচেতন করতে চাইব যে প্লেয়িং ফিল্ড, প্লে-স্টেশনের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কম্প্যুটারে ফিফা খেলুন কিন্তু বাইরে ময়দানেও তো কখনও ফুটবলের সঙ্গে কসরৎ করে দেখান। কম্প্যুটারে হয়ত ক্রিকেট খেলেন, কিন্তু খোলা ময়দানে আকাশের নীচে ক্রিকেট খেলার আনন্দই আলাদা। একটা সময় ছিল যখন পরিবারের ছোটরা বাইরে গেলে মা সবার আগে জিজ্ঞাসা করতেন যে তুমি কখন ফিরবে? আজ অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে বাচ্চারা ঘরে ফিরেই এক কোণে হয় কার্টুন ফিল্ম দেখতে শুরু করে আর নয়ত মোবাইল গেমে মশগুল হয়ে যায় আর তখন মা-কে চীৎকার করে বলতে হয় – তুই কখন বাইরে যাবি! সময় পালটে যায়, সে এক যুগ ছিল যখন মা ছেলেকে বলত কি তুই কখন আসবি আর আজ এমন অবস্থা হয়েছে যে মা-কে বলতে হয়, বাবা, তুই কখন বাইরে যাবি?
তরুণ বন্ধুরা, ক্রীড়া মন্ত্রক খেলাধুলোয় প্রতিভার খোঁজ করতে আর তার বিকাশের লক্ষ্যে একটা ‘স্পোর্টস ট্যালেন্ট সার্চ’ পোর্টাল বানিয়েছে যেখানে গোটা দেশ থেকে যে কোনো বাচ্চা, যে খেলাধুলোর ক্ষেত্রে কিছু কৃতিত্ব অর্জন করেছে, তার মধ্যে ট্যালেন্ট আছে – সে এই পোর্টালে নিজের বায়োডাটা বা ভিডিও আপলোড করতে পারে। সিলেক্টেড এমার্জিং প্লেয়ার্সদের ক্রীড়া মন্ত্রক ট্রেনিং দেবে আর মন্ত্রক আগামীকাল-ই এটাকে লঞ্চ করতে চলেছে। আমাদের তরুণদের জন্য খুশির খবর যে ৬ থেকে ২৮শে অক্টোবর ভারতে ফিফা আণ্ডার সেভেনটিন ওয়ার্ল্ড কাপ আয়োজিত হতে চলেছে। দুনিয়ার চব্বিশটি টিম ভারতকে নিজেদের ঘর বানাতে চলেছে। আসুন, বিশ্ব থেকে আসা আমাদের তরুণ অতিথিদের খেলার উৎসবের সঙ্গেই স্বাগত জানাই, খেলা এনজয় করি, দেশে এক উপযুক্ত পরিবেশ বানাই। যখন আজ আমি খেলার কথা বলছি তখন মনে পড়ে যাচ্ছে গত সপ্তাহের এক মর্মস্পর্শী ঘটনা। দেশবাসীদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই সেটা। খুব কম বয়সের কিছু মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ হয় আমার আর তাদের মধ্যে কয়েকজনের তো হিমালয়ের কোলে জন্ম হয়েছে। সমুদ্রের সঙ্গে যাঁদের কোনোদিনই সংযোগ ছিল না। আমাদের দেশের এমন ছয় কন্যা যাঁরা নেভিতে কাজ করে – তাঁদের আবেগ, তাঁদের উৎসাহ আমাদের সবাইকে প্রেরণা দেবে। এই ছয় কন্যা, একটা ছোট নৌকো নিয়ে – ‘আই-এন-এস তারিণী’, সেটা নিয়ে সমুদ্র পার করতে বেরোবে। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘নাবিকা সাগর পরিক্রমা’, আর ওঁরা গোটা বিশ্বের ভ্রমণ সেরে অনেক মাসের পর – বেশ কয়েক মাস পরে ভারতে পৌঁছবে। কখনও একটানা চল্লিশ দিন জলেই থাকবে। কখনও একসঙ্গে তিরিশ দিন জলে কাটাবে। সমুদ্রের ঢেউয়ের মাঝে আমাদের এই সাহসী ছয় কন্যা, আর এটা বিশ্বের এমন প্রথম ঘটনা। কোন্ ভারতবাসী আছেন যিনি গর্বিত হবেন না আমাদের এই কন্যাদের নিয়ে! আমি এই মেয়েদের অনুভবকে সেলাম জানাই, আর আমি ওঁদের বলেছি যে গোটা দেশের সঙ্গে নিজেদের ভাবনা ভাগ করে নিতে। আমিও ‘নরেন্দ্রমোদী অ্যাপ’-এ ওঁদের ভাবনার জন্য একটা আলাদা ব্যবস্থা করব যাতে আপনারা সেগুলো পড়তে পারেন। কারণ, এটা এক দিক থেকে সাহসের আখ্যান, নিজেদের ভাবনার কথা হবে সেটা, আর আমার আনন্দ হবে এই মেয়েদের কথা আপনাদের কাছে পৌঁছে দিতে। এই কন্যাদের প্রতি আমার অনেক-অনেক শুভেচ্ছা, ঢের-ঢের আশীর্বাদ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ৫ই সেপ্টেম্বর আমরা সবাই ‘শিক্ষক দিবস’ পালন করি। আমাদের দেশের ভূতপূর্ব রাষ্ট্রপতি ডক্টর রাধাকৃষ্ণণ-জীর জন্মদিন। উনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন কিন্তু গোটা জীবন ধরে নিজেকে একজন শিক্ষক হিসাবেই তৈরি করেছিলেন। উনি সবসময় শিক্ষক হিসাবে বাঁচতেই পছন্দ করতেন। তিনি শিক্ষার প্রতি সমর্পিত প্রাণ ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন বিদ্বান, রাজনীতিক, ভারতের রাষ্ট্রপতি, কিন্তু সর্বোপরি একজন শিক্ষক। তাঁকে আমার প্রণাম জানাই। মহান বৈজ্ঞানিক অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন, ‘... it is the supreme art of the teacher to awaken joy in creative expression and knowledge’। একজন শিক্ষকের মহত্ত্বম গুণ তাঁর ছাত্রদের মধ্যে সৃজনের মানসিকতা জাগানো এবং জ্ঞানার্জনের আনন্দ দান। আমরা এবার সবাই মিলে ‘শিক্ষক দিবস’ পালন করবো। কি, আমরা সবাই মিলে এই সংকল্প নিতে পারবো? এক mission mode–এ একটা অভিযান শুরু করতে পারি? ‘Teach to Transform, Educate to Empower, Learn to Lead’ এই শপথ নিয়ে, এই অঙ্গীকারে আমরা এগোতে পারি। প্রত্যেকেই পাঁচ বছরের জন্য একটা সংকল্প নিন, সেই সংকল্প সিদ্ধ করতে পাঁচ বছরের পরিকল্পনা বানান, পাঁচ বছর ধরে পরিশ্রম করুন এবং জীবনে সাফল্যের স্বাদ পেতে পারেন – এমন এক ভাবনা আমাদের স্কুল, আমাদের কলেজ, আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিতে পারে। আমাদের দেশে যখন transformation-এর কথা আসবে, ঠিক যেভাবে পরিবারের মায়ের কথা মনে আসে একইরকম ভাবে সমাজে শিক্ষকের ভূমিকার কথা মনে পড়বে। Transformation-এ শিক্ষকদের বিশাল ভূমিকা থাকে। প্রত্যেক শিক্ষকের জীবনে কোনো না কোনো ছাত্রের transformation কারিগর হওয়ার ঘটনা রয়েছে। আমরা সার্বিকভাবে প্রয়াস করি। দেশের Transformation–এ তা অনেক বড় ভূমিকা নেবে। আসুন, ‘Teach to Transform’-এই মন্ত্র নিয়ে আমরা এগিয়ে চলি।
“প্রণাম প্রধানমন্ত্রীজী! আমার নাম ডাক্তার অনন্যা অবস্থি। আমি মুম্বইয়ের বাসিন্দা এবং হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটির India Research Centre-এর সঙ্গে যুক্ত। গবেষক হিসেবে আর্থিক সংযোজনায় আমার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। অর্থাৎ, Financial inclusion-এর মত social scheme–গুলোর বিষয়ে আমি আগ্রহী। আমার প্রশ্ন, ২০১৪ সালে যে ‘জন ধন যোজনা’ চালু করা হয়েছিল, পরিসংখ্যান কি বলছে, তার তিনবছর পরে ভারতবর্ষ আর্থিক দিক থেকে বেশি সুরক্ষিত হয়েছে? এই অধিক সশক্তিকরণের উপকার আমাদের মহিলারা, কৃষকরা, শ্রমিকরা পেয়েছেন কি? গ্রাম থেকে সর্বত্র তার প্রভাব পড়েছে? ধন্যবাদ!
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনা’, Financial inclusion শুধু ভারত নয়, বিশ্বের অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কাছে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। ২০১৪ সালের ২৮শে আগষ্ট একটা স্বপ্ন নিয়ে এই যোজনা শুরু হয়েছিল। কাল, ২৮শে আগষ্ট ‘প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনা’র তিন বছর পূর্ণ হবে। ৩০ কোটি ভারতবাসী এই যোজনায় অংশগ্রহণ করে তাঁদের প্রথম ব্যাঙ্ক অ্যাকাউণ্ট খুলেছেন। বিশ্বের বহু দেশের জনসংখ্যার থেকেও বেশি এই নতুন অ্যাকাউণ্টধারী নাগরিকের সংখ্যা। আজ আমার এক বড় সাফল্য মনে হয় যে, সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির গরীব ভাইয়েরা দেশের অর্থনীতির মূলস্রোতে অংশগ্রহণ করতে পারছেন, এঁদের অভ্যাস বদলাতে শুরু করেছেন, নিজেদের অর্থের সুরক্ষা করতে শিখেছেন, ব্যাঙ্কে যাতায়াত করা শুরু করেছেন, সঞ্চয়ী মনোভাব হয়েছে। ঘরে বা পকেটে টাকা থাকলে বাজে খরচের দিকে মন যায়। এখন সংযম করতে শিখে তাঁরা ভাবছেন সঞ্চিত অর্থ ভবিষ্যতে তাঁদের সন্তানের কাছে আসবে। আগামী দিনে কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজেও সে টাকা লাগতে পারে। শুধু তাই নয়, যখন দরিদ্র মানুষের কাছে Rupay Card থাকছে, তাঁর মনে হচ্ছে ধনী লোকেদের পকেটে যেমন Credit Card থাকে, আমার কাছে Rupay Card রয়েছে। এভাবে তাঁদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাচ্ছে। ‘প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনা’য় আমাদের দেশের গরীব মানুষেরা প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা জমা করেছেন। আবার ‘প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনা’য় যাঁরা অ্যাকাউণ্ট খুলেছেন, ইন্সিওরেন্সের সুবিধাও পেয়েছেন। ‘প্রধানমন্ত্রী জীবনজ্যোতি বীমা যোজনা’, ‘প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনা’ যথাক্রমে মাত্র একটাকা ও তিন টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে আজ ঐ গরীব মানুষের জীবনে নতুন আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। বহু পরিবারে এই গরীব মানুষ যখন সংকটে পড়েছে – পরিবারের প্রধানের মৃত্যু হয়েছে, ঐ একটা প্রিমিয়ামের সুফল দু’লাখ টাকা পেয়ে যাচ্ছেন। ‘প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা’, ‘স্টার্ট আপ যোজনা’, ‘স্ট্যাণ্ড আপ যোজনা’ – দলিত হোক কি আদিবাসী, মহিলা, সদ্য কলেজপাশ তরুণ-তরুণীরা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে পাওয়া কোটি কোটি যুবক-যুবতী বিনা গ্যারাণ্টিতে ‘প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা’য় অর্থ পেয়ে যাচ্ছেন এবং শুধু নিজে স্বাবলম্বী হচ্ছেন তা নয়, অনেকেই আরও দু-একজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। কিছুদিন আগে ব্যাঙ্কের কর্মকর্তারা আমার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। ‘জনধন যোজনা’, ‘Rupay Card’, ‘প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা’, ইন্সিওরেন্সের জন্য সাধারণ মানুষের কতটা উপকার হয়েছে তার অনেক উৎসাহব্যঞ্জক ফলাফল আমাকে জানিয়েছেন। আজ এই নিয়ে বিস্তারিত বলার সময় নেই, তবে ব্যাঙ্কের কর্মকর্তাদের আমি বলব, এসব তথ্য mygov.in–এ আপলোড করে দিতে। সাধারণ মানুষ পড়তে পারবে, কোন যোজনা কত মানুষের জীবনে কতটা transformation ঘটিয়েছে, তার পরিসংখ্যান পেয়ে অনুপ্রাণিত হবেন। কীভাবে নতুন উদ্যম এসেছে, আত্মবিশ্বাসে ভরপুর হয়ে উঠেছে তার শত উদাহরণ আমাদের সামনে এসেছে। আপনাদের কাছে আমি এইসব তথ্য পৌঁছনোর চেষ্টা করব এবং তেমন উৎসাহব্যঞ্জক ঘটনা মিডিয়াও প্রচার করতে পারে। তারাও সফল ব্যক্তিত্বদের সাক্ষাৎকার নিয়ে নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে পারে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের জানাই, ‘মিচ্ছামী দুক্কড়ম’! অনেক অনেক ধন্যবাদ!
আমার প্রিয় দেশবাসী,নমস্কার! মানুষের মন এমনই যে বর্ষাকাল মানুষের কাছে খুব আনন্দদায়ক হয়। পশু-পাখী,গাছপালা, প্রকৃতি – প্রত্যেকেই বর্ষার আগমনে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। কিন্তু মাঝে মাঝেবর্ষা যখন ভয়ঙ্কর রূপ নেয় তখন বোঝা যায় জলের বিধ্বংসী ক্ষমতা কতটা। প্রকৃতি আমাদেরজীবনদাত্রী, আমাদের পালনকর্ত্রী, কিন্তু কখনও কখনও বন্যা, ভূমিকম্পের মত প্রাকৃতিকদুর্যোগ, তার ভয়াল রূপ প্রচণ্ড বিধ্বংসী হয়ে ওঠে। ঋতুচক্রের এই পরিবর্তন এবংপরিবেশে যে পরিবর্তন আসছে, তার একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। গত কিছু দিনে ভারতেরকিছু জায়গায় বিশেষ করে অসম, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, গুজরাট, রাজস্থান, বাংলা-র কিছুঅংশে অতি বৃষ্টির কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহ্য করতে হচ্ছে।
বন্যাবিধ্বস্ত অঞ্চলেরপুরো পর্যবেক্ষণ হচ্ছে। ব্যাপক ভাবে উদ্ধারকার্য চালানো হচ্ছে। যেখানে সম্ভবহচ্ছে, সেখানেই মন্ত্রীপরিষদে আমার যে সহকর্মীরা আছেন, তাঁরা পৌঁছে যাচ্ছেন। রাজ্যসরকারও নিজের নিজের মত করে বন্যাকবলিত মানুষদের সাহায্য করার জন্য সবরকম প্রয়াসচালাচ্ছে। সামাজিক সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠন, সেবামূলক কাজ করতে ইচ্ছুক নাগরিকরা এইপরিস্থিতিতে মানুষজনের কাছে সাহায্য পৌঁছনোর জন্য সবরকম প্রয়াস চালাচ্ছে। ভারতসরকারের তরফে সেনা জওয়ান, বায়ুসেনা, NDRF, প্যারামিলিটারিফোর্স প্রত্যেকেই এইরকম সময়ে বিপর্যস্ত মানুষের সেবা করার জন্য মন-প্রাণ দিয়ে কাজকরছেন। বন্যার জন্য জনজীবন অত্যন্ত বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। কৃষিশস্য, পশু, পরিকাঠামো –রাস্তা, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ব্যবস্থা সব কিছুর ওপরই এর প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে আমাদেরকৃষক ভাইদের ফসল এবং ক্ষেতের যে লোকসান হয় তার জন্য আমরা ইদানিং বীমা কোম্পানি,বিশেষ করে কৃষি বীমা কোম্পানিগুলি যাতে সদর্থক ভূমিকা নিতে পারে সেজন্য যোজনা তৈরিকরেছি, যাতে কৃষকদের Claimsettlement খুবতাড়াতাড়ি হতে পারে। আর বন্যাপরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টার জন্য Control Room খোলা হয়েছে যার Help Line নম্বর 1078 । তারা একনাগাড়ে কাজ করেচলেছে। লোকজন নিজেদের দুরাবস্থার কথা জানাচ্ছেন। বর্ষাকালের আগেই বেশিরভাগ জায়গায় Mock Drill করে পুরো সরকারি কর্মসূচি তৈরি করে রাখা হয়েছিল। NDRF -এর Team নিয়োগ করা হয়েছিল। জায়গায়জায়গায় বিপদবন্ধু তৈরি করা, তাঁদের do’s and don’ts –এর প্রশিক্ষণ দেওয়া, স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করা, এক জনসংগঠন তৈরি করে এইপরিস্থিতিতে কাজ করার কর্মসূচি তৈরি রাখা হয়েছিল। এখন বর্ষাকালের যে পূর্বাভাসপাওয়া যায়, এখন প্রযুক্তি এত উন্নত হয়ে গেছে, মহাকাশবিজ্ঞান-এরও এক বড় ভূমিকা আছে,এজন্য প্রায়শই অনুমান সঠিক হয়। ধীরে ধীরে আমরাও আমাদের এভাবেই তৈরি করেছি যেবর্ষার পূর্বাভাস অনুযায়ী আমরা এমনভাবেই আমাদের কাজ করব, যাতে আমরা লোকসানের হাতথেকে পরিত্রাণ পেতে পারি। যখনই আমি ‘মন কি বাত’-এর জন্য তৈরি হই, আমি দেখি আমারথেকেও বেশি তৈরি আমার দেশের নাগরিক। এবার তো GST নিয়ে এত চিঠি এসেছে, এত ফোন এসেছে, আর এখনও মানুষজন GST নিয়ে খুশি ব্যক্ত করছেন,প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছেন। একটি ফোন আমি আপনাদের শোনাতে চাই –
“নমস্কার প্রধানমন্ত্রীজী,আমি গুরগাঁও থেকে নীতু গর্গ বলছি। আমি ‘চার্টার্ড অ্যাকাউণ্ট্যাণ্ট ডে’-তে আপনারবক্তৃতা শুনে অত্যন্ত প্রভাবিত হয়েছি। আমাদের দেশে এজন্যই গতমাসে আজকের দিনেই Goods and Service Tax – GST শুরু হয়েছে। আপনি কি বলতে পারেন, সরকার যেরকম আশা করছেন সেরকমই ফলাফল কি একমাসবাদে আসবে – না, না? আমি এব্যাপারে আপনার মতামত শুনতে চাইব। ধন্যবাদ।”
GST চালু হওয়ার পর প্রায় একমাস হয়ে গেছে আর তারলাভজনক ফল দেখা যাচ্ছে। আর আমার খুব ভাল লাগছে, খুশি হচ্ছি যে যখনই কোনও দরিদ্রমানুষ চিঠি লিখে বলছেন GST -র জন্য দরিদ্রদেরপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কীভাবে কমে গেছে, জিনিসপত্র কীভাবে সস্তা হয়ে গেছে। আরউত্তর-পূর্বাঞ্চল, দূর-সুদূর পার্বত্য অঞ্চল, জঙ্গলে বসবাসকারী কোনও ব্যক্তি চিঠিলিখে জানাচ্ছেন যে প্রথমে ভয় হয়েছিল যে না জানি কি হবে, কিন্তু এখন যখন আমি এটাশিখে এবং বুঝে গেছি তো আমার মনে হচ্ছে আগের থেকে কাজ অনেক সহজ হয়ে গেছে।ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক সরল হয়ে গেছে। আর সবথেকে বড় কথা এই যে, গ্রাহকদের ব্যবসায়ীদেরওপর ভরসা বাড়ছে। এখন আমি দেখছি যে Transportand Logistic Sector –এর ওপর GST –র কীরকম প্রভাব পড়েছে।কীভাবে ট্রাকের আসা-যাওয়া বেড়ে গেছে। দূরত্ব অতিক্রম করার সময় কতটা কমে গেছে। রাজপথযানজটহীন হয়েছে। ট্রাকের গতি বাড়ার জন্য দূষণও কম হচ্ছে। জিনিসপত্রও অনেক তাড়াতাড়িপৌঁছে যাচ্ছে। এতে সুবিধা তো হচ্ছেই, সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতিও আরও শক্তিশালী হচ্ছে।আগে আলাদা আলাদা Tax structure হওয়ার জন্য Transport and Logistics Sector –এ অতিরিক্ত কাগজপত্র maintain করতে হত এবং প্রতিটি রাজ্যের নিজের নিজের Warehouse তৈরি করতে হত। GST -যাকে আমি Good and Simple Tax বলি, সত্যি সত্যি আমাদেরঅর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর অত্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যে এক সদর্থক প্রভাব ফেলেছে। যারফলে জোরদার smooth transition হচ্ছে, যাতে জোরদার ভাবে migration হচ্ছে, নতুন registration হচ্ছে, আর এর ফলে সারা দেশে এক নতুন বিশ্বাস তৈরি হচ্ছে। আর কখনও না কখনও,অর্থনীতিবিদ, ম্যানেজমেন্টের বিদগ্ধ ব্যক্তি, Technology -র পণ্ডিত মানুষ, তাঁদের গবেষণার মাধ্যমে ভারতে GST –র প্রয়োগকে বিশ্বের দরবারে এক মডেল হিসেবে অবশ্যই তুলেধরবেন। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এ এক Case Study হয়ে উঠবে। কারণ, এত বড় মাপে এত বড় পরিবর্তন, এত কোটিমানুষের তাতে যোগদান, এত বিশাল এক দেশে তার প্রয়োগ এবং সাফল্যের সঙ্গে তাকে এগিয়েনিয়ে যাওয়া, এটা নিজেই এক সাফল্যের শীর্ষবিন্দু। বিশ্ব অবশ্যই এই নিয়ে গবেষণাকরবে। GST প্রয়োগ করা হয়েছে, প্রতিটিরাজ্য তাতে অংশ নিয়েছে, প্রতিটা রাজ্যের তাতে দায়িত্বও আছে। সমস্ত সিদ্ধান্ত সবকটিরাজ্য ও কেন্দ্র মিলিতভাবে সর্বসম্মতিক্রমে নিয়েছে। আর এরই ফল, প্রতিটি সরকারেরএটিই প্রাথমিক লক্ষ্য যে GST –র জন্য যেন দরিদ্রদের ওপরকোনও চাপ না পড়ে। GST অ্যাপ থেকে আপনারাভালোভাবেই জানতে পারবেন, GST -এর আগে কোনও জিনিসের যেদাম ছিল, নতুন পরিস্থিতিতে তার দাম কত হবে, এই সবকিছু আপনাদের মোবাইল ফোনেই পাওয়াযাবে। One Nation One Tax - কত বড় স্বপ্ন পূর্ণ হল। GST -র ফলে আমি দেখেছি যে তহশিলদার থেকে শুরু করে ভারত সরকারেরআধিকারিকরা যে পরিশ্রম করেছেন, যেরকম আত্মনিবেদনের ভাব নিয়ে কাজ করেছেন, এক রকম যেবন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়েছে, সরকার আর ব্যবসায়ীদের মধ্যে, সরকার আর গ্রাহকদেরমধ্যে, সেই বিশ্বাস বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা এক বড় ভূমিকা পালন করেছে। আমি এই কাজেরসঙ্গে যুক্ত সমস্ত মন্ত্রক , সমস্ত দপ্তর, কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের সবকর্মচারীদের অন্তর থেকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। GST ভারতের সামগ্রিক শক্তির সাফল্যের এক উত্তম উদাহরণ। এ একঐতিহাসিক উপলব্ধি। আর এটা করব্যবস্থার সংস্কার শুধু নয়, এক নতুন সততার সংস্কৃতিকেশক্তিপ্রদানকারী অর্থব্যবস্থা। এ এক রকম সামাজিক সংস্কারেরও অভিযান। আমি আবারএকবার অত্যন্ত আন্তরিকভাবে এত বড় প্রয়াসকে সফল করার জন্য কোটি কোটি দেশবাসীকে কোটিকোটি নমস্কার করছি।
আমারপ্রিয় দেশবাসী, আগস্ট মাস আন্দোলনের মাস। শৈশব থেকে আমরা যে এই কথাটা শুনে আসছিতার কারণ হল ১লা আগস্ট, ১৯২০ আরম্ভ হয়েছিল ‘অসহযোগ আন্দোলন’, এরপর ৯-ই আগস্ট১৯৪২-এ শুরু হয় ‘ভারত ছাড়ো’ – যার অন্য নাম ‘আগস্ট বিপ্লব’, এবং ১৯৪৭-এর ১৫-ইআগস্ট দেশ স্বাধীন হয়। আগস্ট মাসের বহু ঘটনাই স্বাধীনতার সঙ্গে বিশেষভাবে জড়িত।এবছর আমরা ‘ভারত ছাড়ো’ - ‘ QuitIndia Movement ’-এর৭৫-তম বর্ষপূর্তি উদ্যাপন করতে চলেছি, কিন্তু খুব কম মানুষই একথা জানেন যে, ‘ভারতছাড়ো’–এই ধ্বনিটি প্রথম তুলেছিলেন ড. ইউসুফ মেহের আলি। আমাদের নতুন প্রজন্মের জানাদরকার ১৯৪২-এর ৯-ই আগস্ট কী হয়েছিল। ১৮৫৭ থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত ভারতবাসীস্বাধীনতার প্রত্যাশার সঙ্গে কীভাবে নিজেদের একাত্ম করেছিল, তার জন্য তাদের কতখানিযুঝতে হয়েছে, কত কিছু সহ্য করতে হয়েছে – ইতিহাসের পাতায় পাতায় তার বর্ণনা উন্নতভারত গঠনে আমাদের প্রেরণা স্বরূপ। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা ত্যাগ, তপস্যা,আত্মোৎসর্গের যে নিদর্শন দেখিয়ে গেছেন তার চেয়ে বড় প্রেরণা আর কী-ই বা হতে পারে!‘ভারত ছাড়ো’ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ সংঘর্ষের অধ্যায়, কারণ এইআন্দোলনই বৃটিশের হাত থেকে মুক্তির সংকল্পে সারা দেশকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। এ ছিল সেইসময়, যখন হিন্দুস্থানের প্রতিটি কোণে – শহরে-গ্রামে সর্বত্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত,ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের শরিক হয়েউঠেছিল। গণ আক্রোশ তখন চরমে পৌঁছেছিল। মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে লক্ষ লক্ষ ভারতবাসী‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে’ মন্ত্রে নিজেদের জীবনকে সংগ্রামে সমর্পণ করেছিল। দেশের লক্ষলক্ষ তরুণ নিজেদের পড়াশোনা ছেড়ে স্বাধীনতার ডাকে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছিল। মহাত্মাগান্ধী ৯-ই আগস্ট ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের ডাক দেওয়ার পর ইংরেজ সমস্ত বড় নেতাদের যখনজেলবন্দী করে ফেলে তারপর আন্দোলনের হাল ধরতে এগিয়ে আসেন ডা. লোহিয়া, জয়প্রকাশ নারায়ণ প্রমুখ দ্বিতীয় প্রজন্মের নেতৃবৃন্দ।
১৯২০-র‘অসহযোগ আন্দোলন’ আর ১৯৪২-এর ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে মহাত্মা গান্ধীর দুটি আলাদা রূপদেখা যায়। অসহযোগ আন্দোলনের চেহারা একরকম ছিল, এরপর ’৪২-এ অবস্থা এমন দাঁড়ালো,আন্দোলনের তীব্রতা এতটাই বেড়ে গেল যে মহাত্মা গান্ধীর মতো মহাপুরুষও ‘করেঙ্গে ইয়ামরেঙ্গে’ মন্ত্র দিয়ে দিলেন। এইসব সাফল্যের পিছনে ছিল জনসমর্থন, জনসামর্থ্য,জনসঙ্কল্প এবং জনসংঘর্ষ। গোটা দেশ সেদিন একজোট হয়ে লড়েছিল। আমি কখনও কখনও ভাবি,ইতিহাসের পাতাগুলিকে একত্র করে নিয়ে দেখলে বোঝা যায় ভারতের প্রথম স্বাধীনতাসংগ্রাম হয়েছিল ১৮৫৭-য়। ১৮৫৭-য় শুরু হওয়া সেই যুদ্ধ ১৯৪২ পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তেদেশের কোন না কোনও প্রান্তে চলেছে এবং এই দীর্ঘ সময়ে তা দেশবাসীর হৃদয়ে স্বাধীনতারজন্য এক তীব্র চাহিদার জন্ম দিয়েছে। প্রত্যেকটি মানুষ কিছু না কিছু করার জন্যপ্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে। প্রজন্ম বদলে গেছে, কিন্তু তাদের সংকল্পের তীব্রতা কিছুমাত্রকমেনি। একদল মানুষ এসেছে, সংগ্রামে যুক্ত হয়েছে, চলেও গেছে – আবার নতুন দল এসেছে,তারাও একইভাবে সংগ্রামে যোগ দিয়েছে – আর ইংরেজ সাম্রাজ্যকে সমূলে উৎপাটনের জন্যদেশ প্রতি মুহূর্তে চেষ্টা করে গেছে। ১৮৫৭ থেকে ১৯৪২ পর্যন্ত এই প্রচেষ্টাআন্দোলনকে এমন এক পর্যায়ে এনে ফেলে যে ১৯৪২-এ তা চরম সীমায় পৌঁছায় এবং ‘ভারতছাড়ো’-র বিষাণ এমনভাবে বাজে, যার ফলে পাঁচ বছরের মধ্যে ১৯৪৭-এ ইংরেজ চলে যেতেবাধ্য হয়। ১৮৫৭ থেকে ১৯৪২-এর মধ্যে স্বাধীনতার হাতছানি প্রতিটি দেশবাসীর কাছেপৌঁছেছিল এবং ১৯৪২ থেকে ১৯৪৭ – এই পাঁচ বছর সংকল্প সিদ্ধির পাঁচটি নির্ণায়ক বর্ষহিসেবে দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির
কারণহয়ে দাঁড়ায়। এই পাঁচটি বছরই ছিল মূল নির্ধারক।
এখনআমি আপনাদের এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করতে চাই। ১৯৪৭-এ আমরা স্বাধীন হয়েছি আর আজ২০১৭ সাল। প্রায় ৭০ বছর হয়ে গেছে। সরকার এসেছে, গেছে। নীতি-নিয়ম তৈরি হয়েছে, পরিবর্তিতহয়েছে, পরিবর্ধিত হয়েছে। দেশের সমস্যামুক্তির জন্য সকলেই নিজের নিজের মতো করেচেষ্টা করে গেছে। দেশে সাধারণের আয় বাড়ানোর জন্য, দারিদ্র্য দূর করার জন্য,বিকাশের জন্য নিরন্তর প্রয়াস চলেছে। যার যার নিজের মতো করে সকলেই পরিশ্রম করেছেন।সাফল্যও এসেছে। প্রত্যাশাও বেড়েছে। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৭ যেমন সঙ্কল্পসিদ্ধির নির্ণায়কপাঁচ বছর ছিল, তেমনি আমি তো দেখছি ২০১৭ থেকে ২০২২ – এই সময়টিও আরও এক সঙ্কল্পসিদ্ধির পঞ্চবার্ষিকী হয়ে আমাদের সামনে এসেছে। এই ২০১৭-র ১৫-ই আগস্ট আমরা সঙ্কল্পপর্বের সূচনা হিসেবে পালন করব এবং ২০২২-এ স্বাধীনতার যখন ৭৫ বছর হবে, ততদিনেঅবশ্যই আমরা সেই সঙ্কল্পেরও সিদ্ধি সাধন করে ফেলব। ভারতের ১২৫ কোটি অধিবাসীরপ্রত্যেকে যদি ৯-ই আগস্ট বিদ্রোহের দিনটিকে স্মরণ করে এবং ১৫-ই আগস্ট স্বাধীনতাদিবসে প্রতিজ্ঞা করে যে ব্যক্তি হিসেবে, নাগরিক হিসেবে আমি এতটুকু কাজ অবশ্যই করব;পরিবার, সমাজ, গ্রাম বা শহর, সরকারি বিভাগ কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে এই এই কাজ করব –তাহলেই তো কোটি কোটি সঙ্কল্পের জন্ম হবে। সেই সঙ্কল্প পূর্ণ করারও প্রয়াস শুরুহবে।
১৯৪২ থেকে ১৯৪৭ পাঁচটি বছর যেমন দেশের স্বাধীনতার নির্ণায়ক হয়ে উঠেছিল, তেমনই ২০১৭থেকে ২০২২ – এই পাঁচ বছরও ভারতের ভবিষ্যৎ গঠনের নির্ণায়ক বর্ষ হয়ে উঠতে পারে – এবংতাকে তা করে তুলতেই হবে। পাঁচ বছর পর আমরা স্বাধীনতার ৭৫ বছর পালন করব।
আজ আমাদের তারই সাপেক্ষে শপথ নিতে হবে – ২০১৭-কে সঙ্কল্পের বর্ষ হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। এই আগস্ট মাসে আমাদের শপথ নিতে হবে – অপরিচ্ছন্নতা – ভারত ছাড়ো,দারিদ্র্য – ভারত ছাড়ো, দুর্নীতি – ভারত ছাড়ো, সন্ত্রাসবাদ – ভারত ছাড়ো, জাতিভেদ –ভারত ছাড়ো, সাম্প্রদায়িকতা – ভারত ছাড়ো। আজ আর ‘করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে’-র প্রয়োজননেই, তার বদলে নতুন ভারত গড়ার সঙ্কল্পের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হবে, মনেপ্রাণেতার সাফল্যের জন্য চেষ্টা করতে হবে। সঙ্কল্পকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের বাঁচতে হবে, লড়াইকরতে হবে। আসুন, এই আগস্ট মাসে ৯ আগস্ট থেকে সঙ্কল্পসিদ্ধির এক মহাভিযান চালাই।প্রত্যেক ভারতবাসী, সামাজিক সংগঠন, স্থানীয় প্রশাসনিক দপ্তরগুলি, স্কুল-কলেজ,আলাদা আলাদা যাবতীয় সংস্থা – সকলে NewIndia -র জন্য কিছু নাকিছু সঙ্কল্প নিই। এমন একটি সঙ্কল্প যা আমরা আগামী পাঁচ বছরে সিদ্ধ করে দেখাবো।যুব সংগঠন, ছাত্র সংগঠন এবং এন.জি.ও-রা সামুদায়িক আলোচনার আয়োজন করতে পারেন, নতুননতুন আইডিয়ার উদ্ভাবন করতে পারেন। এক রাষ্ট্র হিসাবে আমাদের কোথায় পৌঁছানো উচিৎ,একজন ব্যক্তি হিসাবে তাতে আমি কীভাবে যুক্ত হতে পারি, আসুন আমরা এই সঙ্কল্প করি।
আমিআজ বিশেষ করে online world - কে, কারণ আমরা যেখানেই থাকি না কেন, online -এ তো অবশ্যই থাকি, সেই যে অনলাইন দুনিয়া, আরবিশেষ করে আমার যুব বন্ধুরা, আমার যুবসাথীদের, আমন্ত্রণ জানাচ্ছি নতুন ভারতেরনির্মাণ কাজে উদ্ভাবনী শক্তির সাহায্যে যুক্ত হতে এগিয়ে আসুন। আসুন, প্রযুক্তিব্যবহার করে ভিডিও পোস্ট, ব্লগ, নিবন্ধ, নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে এগিয়ে আসুন। এইআন্দোলনকে এক জন-আন্দোলনের রূপ দিতে হবে। ‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এও যুব বন্ধুদেরজন্য ‘ Quit India Quiz ’ প্রতিযোগিতা আয়োজন করাহবে। এই Quiz প্রতিযোগিতা দেশের যুবসম্প্রদায়কে দেশের গৌরবশালী ইতিহাস এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়কদের সঞগে পরিচিতকরানোর এক প্রচেষ্টা। আমি আশা করব আপনারা এটির ব্যাপক প্রচার ও প্রসার করবেন।
আমারপ্রিয় দেশবাসী, দেশের প্রধান সেবক রূপে ১৫-ই আগস্ট আমি লালকেল্লা থেকে দেশবাসীরসঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাই। কিন্তু আমি নিমিত্ত মাত্র, কারণ সেখান থেকে কোনওব্যক্তিবিশেষ কথা বলেন না, ১২৫ কোটি দেশবাসীর আওয়াজ লালকেল্লা থেকে প্রতিধ্বনিতহয়। আমি আনন্দিত যে গত তিন বছর যাবৎ ১৫-ই আগস্ট কি বলা উচিত কোন বিষয় আলোচনা করাউচিত এই নিয়ে দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে আমার কাছে অনেক প্রস্তাব এসেছে। এইপ্রস্তাবগুলির মুখ্য উদ্দেশ্য তাঁদের স্বপ্নগুলি যেন শব্দের রূপ পায়। আমি এবারওপ্রস্তাব পাঠানোর জন্য আপনাদের অনুরোধ জানাচ্ছি। My Gov অথবা NarendraModi App –এআপনারা আমাকে প্রস্তাব নিশ্চয় পাঠাবেন, আমি স্বয়ং এই প্রস্তাবগুলি পড়ে থাকি। ১৫-ইআগস্ট আমি যতটুকু সময় পাবো তার মধ্যে এই প্রস্তাবগুলি আলোচনা করার চেষ্টা করবো। গততিন বছর ১৫-ই আগস্ট আমার ভাষণ নিয়ে একটি অভিযোগ শুনতে হয় যে আমার ভাষণ একটু
দীর্ঘ হয়ে যায়। এবছর আমি মনে মনে স্থির করেছি যে ভাষণ ছোট করবো। খুব বেশি হলে৪০-৪৫ বা ৫০ মিনিটের মধ্যে শেষ করবো। আমি নিজের জন্য নিয়ম তৈরি করার চেষ্টা করছি –জানিনা সাফল্য পাবো কি না। কিন্তু এবার ভাষণ সংক্ষিপ্ত কীভাবে করবো সে বিষয়েপ্রচেষ্টা করছি দেখি সাফল্য পাই কি না।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি আজকে অন্য একটি বিষয় নিয়ে কথা বলতেচাই। ভারতবর্ষের অর্থব্যবস্থার সঙ্গে সামাজিক-অর্থনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এরগুরুত্বকে কখনোই খাটো করা উচিত নয়। আমাদের বিভিন্ন পরব, উৎসব কেবল মাত্রআনন্দ-উল্লাসের জন্য এমনটি নয়। আমাদের উৎসব, পরবগুলি আসলে সমাজ সংস্কারের অভিযানএকই সঙ্গে আমাদের প্রতিটি উৎসবের সঙ্গে দেশের গরীব থেকে গরীবতম ব্যক্তির আর্থিকজীবন সরাসরি সম্পর্কিত। কিছুদিন পর রাখী বন্ধন, জন্মাষ্টমী, তারপর পর্যায়ক্রমেগণেশ উৎসব, চৌথ চন্দ্র, অনন্ত চতুর্দশী, দুর্গা পূজা, দীপাবলী প্রভৃতি একের পর একউৎসব আসবে আর এই সময়েই গরীব ব্যক্তিরা অর্থ উপার্জনের কিছু সুযোগ পাবে। এই সবউৎসবের সঙ্গে এক সহজ স্বাভাবিক আনন্দও মিশে থাকে। উৎসব ব্যক্তিগত সম্পর্কেআন্তরিকতা, পরিবারের মধ্যে ভালোবাসা এবং সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করে, ব্যক্তি ওসমাজকে যুক্ত ক’রে এইভাবে ব্যক্তি থেকে সমষ্টির দিকে যাত্রা চলতে থাকে। আমিত্বথেকে বহুত্বের দিকে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। অর্থব্যবস্থার কথা বলতে গেলে রাখীবন্ধনউৎসবের কয়েক মাস আগে থেকেই শত শত পরিবারে ছোটো ছোটো পারিবারিক ব্যবসায় রাখী তৈরিশুরু হয়ে যায়। সুতী, সিল্ক প্রভৃতি নানারকম সুতো দিয়ে নানা ভাবে নানা রকম রাখীতৈরি হয়, আর আজকাল তো লোকজন Homemade রাখিই বেশি পছন্দ করেন।রাখি তৈরির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি, বিক্রির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি, মিষ্টি ব্যবসায়ী –এই ভাবে শত শত – হাজার হাজার ব্যবসায়ী একটি উৎসবের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। আমাদেরগরীব ভাই-বোনেদের এতেই চলে। দীপাবলীতে আমরা প্রদীপ জ্বালাই, এটা কি কেবলমাত্র একটিউৎসব? প্রকাশ উৎসব? ঘর সুসজ্জিত করার উৎসব? তা কিন্তু নয়। ছোটো ছোটো মাটির প্রদীপযাঁরা বানান, সেই সব গরীব পরিবারের সঙ্গে কিন্তু দীপাবলী সরাসরি সম্পর্কিত। আজকেআমি যখন পরব, উৎসব এবং এর সঙ্গে যুক্ত গরীব ব্যক্তিদের অর্থব্যবস্থার কথা বলছি,তখন একই সঙ্গে আমি পরিবেশের কথাও বলতে চাই। কখনও কখনও আমি ভাবি যে আমার থেকেওদেশবাসী অনেক বেশি সজাগ এবং সক্রিয় এবং সেটা আমি উপলব্ধিও করেছি। গত একমাস যাবৎপরিবেশের বিষয়ে সজাগ নাগরিকরা আমাকে চিঠি লিখেছেন। তাঁরা আমাকে আবেদন জানিয়েছেন যেসময় থাকতে আমি যেন গণেশ চতুর্থীতে eco-friendly গণেশের কথা বলি যাতেলোকেরা মাটির তৈরি গণেশ পছন্দ করেন, পরিকল্পনা বানান। সর্ব প্রথম এই সকল সজাগ নাগরিকদেরপ্রতি আমি কৃতজ্ঞ, তাঁরা আমাকে সময়ের থেকে আগেই কিছু বলার জন্য আবেদন করেছেন।লোকমান্য তিলক এই মহান পরম্পরা শুরু করেছিলেন। এই বছর সার্বজনিক গণেশ উৎসবের১২৫-তম বর্ষ। ১২৫-তম বর্ষ আর ১২৫ কোটি দেশবাসী। সামাজিক একতা, জাগ্রত সমাজ,সামাজিক সংস্কারের ভাবনাকে সামনে রেখে লোকমান্য তিলক গণেশ উৎসব শুরু করেছিলেন।আসুন, আমরাও তাঁর কথা স্মরণ করে এই বছর গণেশ উৎসবের সময় রচনা প্রতিযোগিতা, আলোচনাসভা ইত্যাদি আয়োজন করি। লোকমান্য তিলকের ভাবনার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে সার্বজনিক গণেশউৎসব পালন করি এবং একই সঙ্গে পরিবেশের সুরক্ষার জন্য eco-friendly গণেশ অর্থাৎ মাটির তৈরি গণেশ ব্যবহারের সঙ্কল্প করি। এবারআমি অনেক আগেই এই কথাগুলি বললাম, আমার বিশ্বাস আপনারা সবাই সম্মত হবেন, আর এর থেকেএটাই লাভ হবে যে আমাদের গরীব হস্তশিল্পীরা, মূর্তি-শিল্পীরা কাজ পাবেন, উপার্জনকরতে পারবেন, তাঁদের পেট ভরবে। আসুন, আমরা এই উৎসবকে গরীবদের অর্থব্যবস্থার সঙ্গেযুক্ত করি, আমাদের উৎসবের আনন্দ গরীবদের ঘরের আর্থিক উৎসব হয়ে উঠুক, আর্থিক আনন্দহয়ে উঠুক, এটাই আমাদের সবার প্রচেষ্টা হওয়া উচিৎ। আমি সমস্ত দেশবাসীকে আগামী অনেকউৎসবের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমরা নিরন্তর দেখছি যে শিক্ষা ক্ষেত্রে হোক, আর্থিক ক্ষেত্রহোক, সামাজিক ক্ষেত্র হোক বা ক্রীড়াক্ষেত্র হোক – আমাদের কন্যারা দেশের নামউজ্জ্বল করছে, নতুন নতুন সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে যাচ্ছে। আমাদের দেশবাসীদের আমাদেরকন্যাদের নিয়ে গর্ব হয়, আমরা সম্মানিত হই তাঁদের জন্য। এই কিছুদিন আগেই আমাদেরমেয়েরা মহিলা ক্রিকেটের বিশ্বকাপে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। এই সপ্তাহে আমার এইসব খেলোয়াড় মেয়েদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হয়েছিল। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে আমার খুবভালো লেগেছে। কিন্তু আমি অনুভব করেছি যে বিশ্বকাপ না জিততে পারার দরুন তাঁদের ওপরএক মস্ত বড় বোঝা চেপেছে। তাঁদের মুখে এইবোঝার ছাপ ছিল। ওইসব মেয়েদের আমি আমার এক আলাদা মূল্যায়নের কথা বলেছি। আমি বলেছি,দেখ, এখন গণমাধ্যমের জমানা এমনই যে মানুষের প্রত্যাশা এত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, এতবাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আর যখন সাফল্য আসে না, তখন তা আক্রোশে পরিণত হয়ে যায়। আমি এমনখেলা দেখেছি যে ভারতের খেলোয়াড়রা যদি বিফল মনোরথ হয় তো দেশবাসীর রাগ খেলোয়াড়দেরওপর পড়ে। কিছু মানুষ তো মানমর্যাদা ভেঙে এমন কিছু কথা বলে দেন, এমন কিছু জিনিসলিখে দেন যে খুবই কষ্টদায়ক হয়। কিন্তু এই প্রথমবার হল, যখন আমাদের মেয়েরাবিশ্বকাপে সফল হতে পারল না, তখনও একশো পঁচিশ কোটি দেশবাসী সেই পরাজয়কে নিজেদেরকাঁধে তুলে নিল। এতটুকু বোঝা ওই মেয়েদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিল না। এই-ই সব নয়, মেয়েরাযা করেছে তার গুণগান করল, তাঁদের সম্মান দিল। আমি এর মধ্যে এক সুন্দর পরিবর্তনদেখছি, আর আমি এই মেয়েদের বলেছি যে আপনারা দেখুন, এই সৌভাগ্য কেবল আপনাদেরই হয়েছে।আপনারা যে সফল হননি এটা মন থেকে দূর করে দিন। ম্যাচ জিতুন বা না জিতুন, আপনারা একশপঁচিশ কোটি দেশবাসীর মন জিতে নিয়েছেন। সত্যি সত্যি, আমাদের দেশের যুব সম্প্রদায়,বিশেষ করে আমাদের মেয়েরা দেশের নাম উজ্জ্বল করার জন্য অনেক কিছু করছে। আমি আবারএকবার আমার দেশের যুব সম্প্রদায়কে বিশেষ করে আমাদের কন্যাদের অন্তর থেকে অনেক অনেকধন্যবাদ দিচ্ছি। শুভকামনা জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আবার একবার মনে করিয়ে দিতে চাই অগাস্ট আন্দোলনকে।আবার একবার মনে করাতে চাই ৯-ই আগস্টকে। আবার একবার স্মরণ করাতে চাই ১৫-ই আগস্টকে।আবার একবার স্মরণ করাতে চাই ২০২২ সালে স্বাধীনতার ৭৫ বছরকে। প্রতিটি দেশবাসীপ্রতিজ্ঞা করুক, প্রতিটি দেশবাসী তাঁদের সংকল্প পূর্ণ করার পাঁচ বছরের পথনির্দেশতৈরি করুক। আমাদের সবার দেশকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছনো চাই, পৌঁছনো চাই, পৌঁছনো চাই।আসুন, আমরা একসঙ্গে চলি, কিছু না কিছু করে চলি। দেশের ভাগ্য, দেশের ভবিষ্যৎ আরওভাল হতে থাকবে এই বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাই। অনেক অনেক শুভকামনা, ধন্যবাদ!
আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে। এবার বেশ গরম পড়েছিল। কিন্তুসৌভাগ্যের বিষয় যে বর্ষা ঋতু সময় মত নিজের পদচিহ্ন অনুসরণ করে এগিয়ে আসছে। দেশেরবেশ কিছু অংশে বর্ষা শুরু হয়ে গেছে। বর্ষার পর ঠাণ্ডা হাওয়ায় বিগত দিনের গরম থেকেকিছুটা আরাম অনুভূত হচ্ছে। আমরা সবাই দেখেছি যে ব্যক্তিগত জীবনে বা সার্বজনিকজীবনে যতই উত্তেজনা বা উদ্বেগ থাকুক, বর্ষার আগমন কিন্তু আমাদের মানসিক স্থিতিবদলে দেয়।
আজ দেশেরবিভিন্ন অংশে ভগবান জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা খুব উৎসাহ ও আনন্দের সঙ্গে পালিতহচ্ছে। আজকাল তো পৃথিবীর অন্যান্য কিছু জায়গাতেও ভগবান জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসবপালিত হয়। ভগবান জগন্নাথদেবের সঙ্গে দেশের গরীব মানুষরা বিশেষভাবে জড়িয়ে আছেন।যাঁরা ড. বাবাসাহেব আম্বেদকর সম্পর্কে পড়াশোনা করেছেন, তাঁরা নিশ্চয় দেখেছেন যেউনি ভগবান জগন্নাথদেবের মন্দির এবং তার পরম্পরাকে খুব প্রশংসা করতেন, কারণ এরসঙ্গে সামাজিক ন্যায় এবং সমতা অন্তর্নিহিত আছে। ভগবান জগন্নাথ গরীব মানুষের দেবতা।খুব কম মানুষই জানেন যে ইংরেজি ভাষাতে একটি শব্দ আছে ‘ Juggernaut ’ যার মানে এমনএকটি সুন্দর রথ যার গতি থামানো যায় না। আভিধানিক অর্থে পাওয়া যায় যে জগন্নাথদেবেররথ থেকেই এই শব্দ এসেছে। এর থেকেই বোঝা যায় যে বিশ্বের মানুষ নিজের নিজের মতেকীভাবে জগন্নাথদেবের এই যাত্রার গুরুত্বকে স্বীকার করেছেন। ভগবান জগন্নাথদেবেরযাত্রা উপলক্ষে আমি সব দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি আর জগন্নাথদেবের শ্রীচরণেপ্রণাম করছি। ভারতের বিবিধতাই ভারতের বিশেষত্ব। ভারতের বিবিধতাই ভারতের শক্তি।রমজানের পবিত্র মাস
শ্রদ্ধা-ভক্তির সঙ্গে পালিত হয়েছে। এবার ঈদের উৎসব। ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে আমার পক্ষথেকে সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। রমজান মাস পূণ্য দানের মাস, খুশি বিতরণের মাস আরযাঁরা খুশি বিতরণ করেন তাঁদের খুশি ততটাই বৃদ্ধি পায়। আসুন, আমরা সবাই মিলে এইপবিত্র উৎসব থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে খুশির ভাণ্ডারকে বিলিয়ে দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়েযাই।
রমজানের এইপবিত্র মাসে উত্তরপ্রদেশের বিজনৌর-এর মুবারকপুর গ্রামের একটি খুব অনুপ্রেরণামূলকঘটনার কথা জানতে পারলাম। এই ছোট গ্রামে প্রায় সাড়ে তিনি হাজার মুসলমান ভাই-বোন বাসকরেন। বলতে গেলে এখানকার বেশির ভাগ অধিবাসী মুসলিম পরিবারভুক্ত। এই রমজান মাসেগ্রামের সবাই মিলে শৌচালয় বানানোর সিদ্ধান্ত করেন। ব্যক্তিগত শৌচালয় বানানোর জন্যসরকার থেকে যে সহায়তা দেওয়া হয় সেই সহায়তাস্বরূপ ১৭ লক্ষ টাকা তাঁদের দেওয়া হয়েছে।আপনারা শুনে খুশি হবেন এবং একই সঙ্গে আশ্চর্য হবেন যে রমজানের এই পবিত্র মাসেওখানকার মুসলমান ভাই-বোনেরা সরকারের ওই ১৭ লক্ষ টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেনযে, আমাদের শৌচালয় আমাদের পরিশ্রমে, আমাদের টাকাতেই তৈরি হবে। এই ১৭ লক্ষ টাকাগ্রামের অন্যান্য পরিষেবার জন্য খরচ করা হোক। সামাজিক উন্নয়নের সুযোগে এই পরিবর্তনআনার জন্য আমি রমজান মাসের এই পবিত্র সময়ে মুবারকপুরের সব গ্রামবাসীকে ধন্যবাদজানাচ্ছি। তাঁদের প্রতিটি বিষয় খুবই অনুপ্রেরণামূলক। সব থেকে বড় কথা যে তাঁরামুবারকপুরকে ‘উন্মুক্ত জায়গায় শৌচকার্য’-মুক্ত অঞ্চল করেছেন।
আমরা জানি যেআমাদের দেশের তিনটি রাজ্য – সিকিম, হিমাচল প্রদেশ এবং কেরল ইতিমধ্যে ‘উন্মুক্তস্থানে শৌচকার্য’-মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এই সপ্তাহে উত্তরাখণ্ড এবং হরিয়ানাকেও ‘উন্মুক্তস্থানে শৌচকার্য’-মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এই কাজ সম্পন্ন করার জন্য এই পাঁচরাজ্যের প্রশাসন এবং জনতাকে বিশেষভাবে আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
আমরা খুব ভালোভাবেই জানি যে ব্যক্তিগত জীবনে বা সামাজিক জীবনে কোনও ভালো কাজ করার জন্য অনেকপরিশ্রম করতে হয়। আমার হাতের লেখা যদি খারাপ হয় তাহলে সেটাকে ঠিক করার জন্য অনেকদিন যাবৎ সচেতন ভাবে প্রয়াস করতে হয়। এই ভাবে শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার পরিবর্তনআসে। স্বচ্ছতা বিষয়টাও এমনই। কিছু খারাপ অভ্যাস আমাদের স্বভাবজাত হয়ে গেছে। এরথেকে মুক্তির জন্য আমাদের অবিরাম প্রচেষ্টা করতে হবে।
প্রত্যেকের মনযোগ আকর্ষণ করতে হবে। প্রেরণাদায়ক ঘটনাগুলিকেও বার বার স্মরণ করতেহবে। আমি খুশি যে পরিচ্ছন্নতা এখন আর কেবলমাত্র সরকারী কার্যক্রম নয়। এটি সমাজে সাধারণজনগণের আন্দোলনের রূপ নিচ্ছে। প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত মানুষরা যখন জনসাধারণের অংশগ্রহণের সঙ্গে এই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যান তখন স্বাভাবিক ভাবেই শক্তি অনেক বেড়ে যায়।
বিগত দিনেরএকটি ভালো ঘটনা আমার মনে পড়ছে যেটা আমি আপনাদের বলতে চাই। এই ঘটনাটিঅন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়নগরম জেলার। জনসাধারণের সহায়তায় সেখানকার প্রশাসন একটি বড় কাজহাতে নিয়েছেন। ১০-ই মার্চ সকাল ৬-টা থেকে ১৪-ই মার্চ সকাল ১০-টা পর্যন্ত ১০০ঘণ্টার একটি বিরামহীন অভিযান। তাঁদের লক্ষ্য ছিল ১০০ ঘণ্টায় ৭১ টি গ্রাম পঞ্চায়েতেদশ হাজার পারিবারিক শৌচালয় বানানো। আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনারা শুনে খুশি হবেন যেজনতা এবং স্থানীয় প্রশাসন একত্রে ১০০ ঘণ্টায় দশ হাজার শৌচালয় বানানোর কাজ সাফল্যেরসঙ্গে সম্পন্ন করেছে। ৭১ হাজার গ্রাম ‘উন্মুক্ত স্থানে শৌচকার্য’-মুক্ত হয়ে গেছে।আমি প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত সরকারী আধিকারিক এবং অন্যান্যদের এবং বিজয়নগরম জেলারঐসব গ্রামবাসীদের অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি যাঁরা নিজেদের কঠিন পরিশ্রমের একঅনুপ্রেরণীয় উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।
আজকাল ‘মন কিবাত’ অনুষ্ঠানের জন্য জনসাধারণের কাছ থেকে আমার কাছে অনেক পরামর্শ আসে। ‘নরেন্দ্রমোদী অ্যাপ’-এ, mygov.in -এ, চিঠির মাধ্যমে, আকাশবাণীতে এই সকল পরামর্শ আসে। জরুরীঅবস্থার কথা স্মরণ করে শ্রী প্রকাশ ত্রিপাঠী লিখেছেন যে ২৫-শে জুন আমাদেরগণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি কালো দিন। গণতন্ত্রের প্রতি প্রকাশ ত্রিপাঠীজীর এই সতর্কদৃষ্টিভঙ্গি প্রশংসনীয় আর গণতন্ত্র কেবলমাত্র একটি ব্যবস্থাই নয়, এটি একটিসংস্কৃতি। “ Eternal vigilance is the priceof liberty ”। গণতন্ত্রের প্রতি সজাগ থাকা জরুরীআর এই কারণেই গণতন্ত্রকে আঘাত করে এমন ঘটনাকে স্মরণ করা এবং গণতন্ত্রের পক্ষে শুভঘটনাগুলিকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। ১৯৭৫ সালের ২৫-শে জুন এমনই একটা কালো দিন যেটাগণতন্ত্রপ্রেমী কোনও ভারতবাসী ভুলতে পারেন না। সমগ্র দেশকেই একপ্রকার জেলখানাতেপরিণত করা হয়েছিল। বিরোধীদের আওয়াজকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
জয়প্রকাশ নারায়ণ-সহ দেশের গণ্যমান্য নেতাদের কয়েদ করা হয়েছিল। বিচার ব্যবস্থাও ওইভয়াবহ জরুরী অবস্থা থেকে রেহাই পায়নি। সংবাদপত্রকে পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয় করে দেওয়াহয়েছিল। আজকের সাংবাদিক জগতের বিদ্যার্থীরা, গণতন্ত্র সম্পর্কে কার্যরত ব্যক্তিরাওই কালো দিনটিকে বারবার স্মরণ করেন এবং গণতন্ত্রের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধিতে নিরন্তরচেষ্টা করছেন এবং এই প্রচেষ্টা চালু থাকা উচিৎ। ঐ সময় অটল বিহারী বাজপেয়ীজীও জেলেছিলেন। জরুরী অবস্থার বর্ষপূর্তিতে অটলজী একটি কবিতা লিখেছিলেন। তিনি ওই কবিতাতেতাঁর সেই সময়কার মানসিক স্থিতির কথা বর্ণনা করেছেন।
ঝলসানো জ্যৈষ্ঠ মাস,
শরতের উদাসী জ্যোৎস্না,
ঝলসানো জ্যৈষ্ঠ মাস,
শরতের উদাসী জ্যোৎস্না,
ফোঁপানো শ্রাবণের,
রিক্ত হল অন্তর,
কেটে গেল একটা বছর,
কেটে গেল একটা বছর।।
কারাগারে বন্দী জগৎ
কিন্তু প্রাণপাখি বিকল,
কারাগারে বন্দী জগৎ
কিন্তু প্রাণপাখি বিকল,
মাটি থেকে আকাশ অবধি,
মাটি থেকে আকাশ অবধি,
মুক্তির গান ধ্বনিত হল,
কেটে গেল একটা বছর,
কেটে গেল একটা বছর।।
পথ চেয়ে থাকে আঁখি,
গোণে দিন-ক্ষণ-পল,
পথ চেয়ে থাকে নয়ন,
গোণে দিন-ক্ষণ-পল,
ফিরে কভু আসবে,
ফিরে কভু আসবে,
মনের যে মিতা গিয়েছে ছাড়ি,
কেটে গেল একটা বছর।।
গণতন্ত্রপ্রেমীরা অনেক লড়াই করেছে আর ভারতের মত দেশে, এত বড়দেশে, যখন সুযোগ এল তখন ভারতের প্রতিটি নাগরিকের শিরা-উপশিরায় কতটা ছড়িয়ে রয়েছেগণতন্ত্র তা নির্বাচনের মাধ্যমে প্রদর্শিত করল তারা। প্রতিটি নাগরিকেরশিরা-উপশিরায় ছড়িয়ে থাকা এই গণতন্ত্রের ভাবধারা আমাদের অমর ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যকে আরওশক্তিশালী করতে হবে আমাদের।
আমার প্রিয় দেশবাসীগণ, প্রত্যেকভারতবাসী আজ বিশ্বে মাথা উঁচু করে নিজেকে গর্বিত অনুভব করছে। ২১শে জুন, ২০১৭ গোটাবিশ্ব যোগময় হয়ে গেল। সমুদ্র থেকে পর্বত পর্যন্ত মানুষজন সকাল-সকাল যোগের মাধ্যমেসূর্যের কিরণকে স্বাগত জানাল। কোনও ভারতবাসী আছেন যার গর্ব হবে না এতে? এমন নয় যেযোগাভ্যাস হত না আগে, কিন্তু আজ যখন যোগের সূত্রে বাঁধা পড়েছে, তখন যোগই বিশ্বকেজোড়ার কারণ হয়ে উঠেছে। দুনিয়ার প্রায় সব দেশ এই যোগাভ্যাসের উপলক্ষকে নিজেদেরউপলক্ষ করে নিয়েছে। একদিকে যেখানে চীনে ‘দ্য গ্রেট ওয়াল অফ চায়না’র উপরে মানুষযোগাভ্যাস করেছে সেখানে অন্যদিকে সমুদ্রতল থেকে দু হাজার চারশো মিটার উপরে পেরুর ‘ওয়ার্ল্ডহেরিটেজ সাইট’ মাচ্চুপিছুতে যোগাভ্যাস করেছে মানুষ। ফ্রান্সে আইফেল টাওয়ারের ছায়ায়যোগ করেছে মানুষ। সংযুক্ত আরব আমীরশাহীর আবু ধাবিতে চার হাজারের বেশি মানুষ সম্মিলিতযোগাভ্যাস করেছে। আফগানিস্তানের হেরাত-এ ইণ্ডিয়া-আফগান ফ্রেণ্ডশিপ ড্যাম সলমাবাঁধের উপর যোগ করে ভারতকে বন্ধুত্বের এক নতুন দিগন্ত উপহার দিয়েছে তারা । সিঙ্গাপুরের মত ছোটদেশে সত্তরটা জায়গায় অনুষ্ঠান হয়েছে আর গোটা সপ্তাহ জুড়ে ওঁরা এক অভিযানচালিয়েছেন। রাষ্ট্রসঙ্ঘ আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষে দশটা ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে।ওই দশটা ডাকটিকিট তারা প্রকাশ করেছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সদর দপ্তরে যোগ বিশেষজ্ঞেরউপস্থিতিতে যোগসত্র পরিচালিত হয়েছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের কর্মচারীরা, সারা দুনিয়ারডিপ্লোম্যাটরা – প্রত্যেকে এতে অংশ নেয়। এবার ফের একবার, যোগ বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টিরকাজও করেছে। গুজরাতের আমেদাবাদে প্রায় পঞ্চান্ন হাজার মানুষ একসঙ্গে যোগ করে একনতুন বিশ্বরেকর্ড তৈরি করেছেন। আমারও লক্ষ্ণৌয়ে যোগের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সুযোগহল। কিন্তু প্রথমবার বৃষ্টিতে যোগ করার সৌভাগ্য হল আমার। আমাদের সৈনিকরা যেখানেমাইনাস কুড়ি, পঁচিশ, চল্লিশ ডিগ্রী তাপমাত্রায় থাকে সেই সিয়াচিনেও যোগাভ্যাস করাহয়েছে। আমাদের সশস্ত্র সেনাদল হোক, বি-এস-এফ হোক, আই-টি-বি-পি হোক, সি-আর-পি-এফহোক, সি-আই-এস-এফ হোক, প্রত্যেকে নিজেদের কর্তব্যের পাশাপাশি যোগে অংশ নিয়েছে। এইযোগ দিবসে আমি বলেছিলাম যে তিন প্রজন্ম, যেহেতু এটা তৃতীয় ‘আন্তর্জাতিক যোগ দিবস’ছিল, তাই আমি বলেছিলাম যে পরিবারের তিন প্রজন্ম এক সঙ্গে যোগ করে তার ফোটো শেয়ারকরুন। কিছু টিভি চ্যানেল এই ব্যাপারটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। এই ব্যাপারে অনেকফোটো পেয়েছি আমি, সেগুলোর মধ্যে থেকে কিছু নির্বাচিত ফোটো সঙ্কলন করে নরেন্দ্রমোদী অ্যাপে রাখা আছে। যেভাবে গোটা বিশ্বে যোগের চর্চা হচ্ছে তাতে একটা ব্যাপারসামনে উঠে আসছে যে যোগের সাহায্যে আজকের যে স্বাস্থ্য সচেতন সমাজ, তারা ফিটনেসথেকে ওয়েলনেসের দিকে যাওয়ার পথে পা রাখছে আর তাদের মনে হচ্ছে যে ফিটনেসের গুরুত্বতো রয়েইছে কিন্তু ওয়েলনেসের জন্য যোগ এক উত্তম পথ।
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্যার,আমি ডাক্তার অনিল সোনারা আমেদাবাদ, গুজরাত থেকে বলছি। স্যার, আমার একটা প্রশ্ন আছেযে সম্প্রতি কেরলে আপনার মুখ থেকে আমরা শুনেছিলাম যে বিভিন্ন জায়গায় আমরা যে ফুলেরতোড়া দিই, তার জায়গায় ভালো বই আমাদের দেওয়া উচিত স্মারক হিসাবে। এ ব্যাপারেরসূত্রপাত আপনি গুজরাতে নিজের কার্যকালেই করিয়েছিলেন স্যার। কিন্তু আজকাল এটা আমরাবেশি দেখতে পাচ্ছি না। আমরা কি কিছু করতে পারি এ ব্যাপারে? আমরা কি এ ব্যাপারে এমনকিছু করতে পারি না স্যার যাতে দেশ জুড়ে এর প্রয়োগ হয়?”
কিছু দিন আগে আমার খুব প্রিয় একঅনুষ্ঠানে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। কেরলে কিছু দিন ধরে ভালো অনুষ্ঠান হচ্ছে, পি এনপানিক্কর ফাউণ্ডেশনের উদ্যোগে মানুষের মধ্যে পড়ার অভ্যাস তৈরি হয়েছে, বই পড়ারপ্রতি উৎসাহী হচ্ছে মানুষ, এই জন্য ‘রিডিং ডে’, ‘রিডিং মান্থ’ পালন করা হচ্ছে।আমার সুযোগ হয়েছিল এর শুভারম্ভে যাওয়ার। আর সেখানে আমাকে এটাও বলা হয়েছিল যে আমরা ফুলের তোড়া নয়, বই দিই। আমার ভালোলাগল। এবার আমারও সেই ব্যাপার মনে পড়ল যা আমার মনোযোগের কেন্দ্র থেকে সরে গিয়েছিল।কারণ যখন আমি গুজরাতে ছিলাম, আমি সরকারে এক রীতি বানিয়েছিলাম যে আমরা তোড়া দেব না,বই দেব আর নয়ত রুমাল দিয়ে স্বাগত জানাব। সে রুমাল হবে খাদির যাতে খাদির শ্রীবৃদ্ধিঘটে। যতদিন পর্যন্ত আমি গুজরাতে ছিলাম তখন এটাই সবার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল, কিন্তুএখানে আসার পর আমার সেই অভ্যাস চলে যায়। কিন্তু কেরলে গিয়ে আবার সেই অভ্যাস জেগেউঠল। আর আমি তো আবার এখন সরকারে নোটিশ দেওয়া শুরু করেছি এ ব্যাপারে। আমরাও ধীরেধীরে এক স্বভাব তৈরি করতে পারি। ফুলের তোড়ার আয়ু খুব কম হয়। এক বার হাত থেকে নিয়েইফেলে দিতে হয়। কিন্তু যদি বই দিই তবে সেটা বাড়ির অংশ হয়ে ওঠে, পরিবারের সদস্য হয়েওঠে। খাদির রুমাল দিয়ে স্বাগত জানালেও কত গরীব মানুষের সাহায্য হয়। খরচও কম হয় আরঠিকমত তার প্রয়োগও হয়। যখন আমি এই সব কথা বলছি তখন ভাবুন এইসব ব্যাপারের কতঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে। আমি গত বছর যখন ইউ . কে .গিয়েছিলাম তখন লণ্ডনে, ব্রিটেনের রানি, ক্যুইন এলিজাবেথ আমাকে আহারেআমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। মায়ের হাতের স্পর্শ যেন ছিল সেখানে। অত্যন্ত আদরে তিনিআহারও করালেন, কিন্তু পরে উনি অত্যন্ত আদরে, খাদির উপরে সুতো দিয়ে বোনা একটা রুমালদেখিয়ে আবেগমথিত কণ্ঠে বললেন, আমার বিয়ের শুভকামনা জানিয়ে মহাত্মা গান্ধী এই রুমালপাঠিয়েছিলেন । কত বছর হয়ে গিয়েছে অথচ ক্যুইন এলিজাবেথ মহাত্মা গান্ধীর দেওয়া রুমাল যত্ন করেরেখেছেন। আর আমি যেতে উনি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে দেখালেন আমাকে। যখন আমি দেখছিলামতখন জানি না উনি চাইছিলেন কিনা যে আমি একবার ছুঁয়ে দেখি। মহাত্মা গান্ধীর একটাছোট্ট উপহার ওঁর জীবনের অংশ হয়ে গিয়েছে, ওঁর ইতিহাসের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। আমারবিশ্বাস যে এইসব অভ্যাস রাতারাতি বদলে যায় না আর কখনও কখনও এমন কথা বললে সমালোচনারশিকারও হতে হয়। কিন্তু এ সত্ত্বেও এমন কথা উচ্চারিত হওয়া উচিত, প্রয়াস চালিয়েযাওয়া উচিত। এখন আমি তো এটা বলতে পারি না যে আমি কোথাও গেলাম আর কেউ ফুলের তোড়ানিয়ে চলে এলেন, তখন আমি তাকে না বলে দেব, এটা আমি করতে পারব না। কিন্তু যাই হোক,সমালোচনাও হবে, কিন্তু কথা চালিয়ে যাওয়া উচিত, তাতে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসবে।
আমার প্রিয় দেশবাসীগণ,প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সূত্রে অনেক রকমের কাজ থেকে যায়। ফাইলের মধ্যে ডুবে থাকতে হয়,কিন্তু আমি নিজের এক অভ্যাস গড়ে তুলেছি। যে সব চিঠি পাই আমি তার মধ্যে কিছু চিঠিরোজ পড়ি আর এইভাবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংযোগ রক্ষার এক সুযোগ পাই।
বিভিন্ন রকমের মানুষ চিঠি লেখেন।এরমধ্যে এমন একটা চিঠি পড়ে মনে হল আপনাদের জানাই। সেই সুদূর দক্ষিণের তামিলনাড়ুরএক গৃহবধূ অরুলমোঝি সর্বণন একটা চিঠি লিখেছেন। ঐ চিঠিতে কী লিখছেন – বলছেন, আমিআমার সংসার সামলানো, বাচ্চাদের পড়াশোনা সামলাতে সামলাতে কিছু করার কথা ভাবলাম যাতেসংসারে আর্থিক কিছু সুরাহা হয়। সেই মত আমি ‘মুদ্রা যোজনা’য় ব্যাঙ্ক থেকে কিছু ঋণনিয়ে বাজার থেকে কিছু মালপত্র কিনে যোগান দেওয়ার কাজ শুরু করলাম। এরমাঝে আমিশুনলাম সরকার ‘ Government E-Marketplace ’ নামে কিছু একটা ব্যবস্থা চালু করেছে। তো আমি খোঁজখবর নিয়েঐ ব্যবস্থায় নিজেকে রেজিস্টার করে নিলাম। আমিও দেশবাসীদের বলতে চাই যদি পারেনইন্টারনেটে ‘ই-জি-ই-এম ’সাইটটি ভিজিট করুন। এ এক নতুন ব্যবস্থা। যে কেউ সরকারকে যে কোনও সামগ্রী সরবরাহকরতে চায়, ইলেক্ট্রিক বাল্ব হতে পারে, ডাস্টবিন সরবরাহ করতে চাইতে পারেন, ঝাড়ু,চেয়ার হতে পারে, টেবিল হতে পারে – যা-ই বিক্রি করতে চান সেটা আপনি রেজিস্টার করতেপারেন। কি তার কোয়ালিটি , কত দামে বেচতে চান ঐ সাইটে লিখেদিতে পারেন এবং সরকারী সমস্ত দফতর বাধ্যতামূলক ভাবে ঐ সমস্ত ভিজিট করবেই। তারাদেখবে কে কত কম দামে গুণমানের সঙ্গে আপোষ না করে সরবরাহ করতে চাইছে। এবং সেই অনুযায়ীঅর্ডার করবে। তাতে মধ্যবর্তী দালালদের দিন শেষ হয়ে গেল। মানে সবকিছুতে স্বচ্ছতাএসে গেল। Interface কিছু হবে না, প্রযুক্তির সাহায্যে , টেকনোলজির সহায়তায় সব কাজ এগোবে। মনে রাখতে হবে,
E-GEM -এ যাঁরাইরেজিস্টার করবেন তাঁদের প্রত্যেকের প্রস্তাব প্রত্যেক ডিপার্টমেণ্ট নিয়মিত দেখতেথাকবে। মাঝে দালাল না থাকায় অনেক সস্তায় পাওয়া যায়। এই অরুলমোঝি ম্যাডাম সরকারকেযা যা সরবরাহ করতেন সবই ওয়েবসাইট-এ রেজিস্টার করেছেন এবং আমায় তিনি চিঠি লিখে যাজানিয়েছেন সেটা দারুণ ইণ্টারেস্টিং। উনি লিখেছেন, প্রথমতঃ আমি ‘মুদ্রা যোজনা’ থেকেটাকা পেলাম এবং আমার ব্যবসা শুরু করলাম। এরপর E-GEM -এ আমার বিক্রির সামগ্রী সব রেজিস্ট্রী করলাম, তারপরপ্রধানমন্ত্রীর দফতর PMO থেকে আমি অর্ডার পেলাম। এটা আমার কাছেও একটা অজানা খবরছিল। জানতে চাইলাম, PMO কি কিনতে চেয়েছে? উনি জানিয়েছেন, দুখানা Thermos কিনেছে এবং ১৬০০টাকা পেমেণ্টও পেয়ে গেছেন। হ্যাঁ
এটাই হল Empowerment । এই Entrepreneurship -এরবিস্তারের সময়, সুযোগ যদি অরুলমোঝি-জী যদি আমায় না জানাতেন, আমিও এতটা বুঝতেপারতাম না এই E-GEM ব্যবস্থা দূর-দূর গ্রামের গৃহবধূ কোনও ছোটখাটো ব্যবসা করছেন আর তাঁর কাছ থেকে PMO কেনাকেটা করছে।এটাই দেশের আসল শক্তি। এতে transparency আছে, empowerment হচ্ছে ,একই সঙ্গে Entrepreneurship -ও বাড়ছে। GovernmentE-Marketplace – GEM । আমি চাইবো, যাঁরাই সরকারকেকিছু বিক্রি করতে চাইবেন তাঁদের সংখ্যা এভাবে যেন বাড়তেই থাকে। আমি বুঝতে পারছি Minimum Government and Maximum Governance -এর অতুলনীয় এক উদাহরণ এটা এবং এর লক্ষ্য MinimumPrice এবং Maximumease, efficiency and transparency ।
আমার প্রিয়দেশবাসী, একদিকে আমরা যেমন যোগ নিয়ে গর্ব করতে পারি, আবার Space Science -এও যে সাফল্য আসছেতা নিয়েও গর্ব করতে পারি। এটাই ভারতের বিশেষত্ব। যোগ আমাদের দেশের মাটিতে জুড়েরয়েছে আবার দূর দূর মহাকাশ অভিযানেও আমাদের
দেশ রয়েছে। এর আগে খেলাধুলায়, বিজ্ঞানে ভারত বহু সাফল্য দেখিয়েছে।আজ ভারত শুধু ধরিত্রীতে নয়, অন্তরীক্ষেও নিজেদের সাফল্যের জোয়ার আনছে। এই তোদু’দিন আগেই ইসরো কার্টোস্যাট-২ সিরিজ স্যাটেলাইটের সঙ্গে ৩০-টি ন্যানোস্যাটেলাইট-ও উৎক্ষেপণ করেছে। এইসব স্যাটেলাইটের মধ্যে ভারত ছাড়াও ফ্রান্স,জার্মানি, ইটালি, জাপান, ব্রিটেন, আমেরিকা এমন প্রায় ১৪-টা দেশ সামিল হয়েছে। আরভারতের এই ন্যানো স্যাটেলাইটগুলো থেকে কৃষিক্ষেত্রে, কৃষকদের উপকারে প্রাকৃতিকদুর্যোগের পূর্বাভাসের ক্ষেত্রেও প্রচুর উপকারী তথ্য পাওয়া যাবে। কিছুদিন আগে,আমাদের সবার নিশ্চয়ই মনে আছে ইসরো GSAT-19 -এর সফল উৎক্ষেপণ ঘটিয়েছে। এটা মনে রাখতে হবে এতদিন যতস্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হয়েছে এবারেরটা তার মধ্যে সবথেকে বড় এবং Heavy Satellite । আমাদেরসংবাদপত্রগুলো এই স্যাটেলাইটকে ‘হাতির মত বড়’ বলেছে। ভেবে দেখুন তবে আমাদেরবৈজ্ঞানিকরা মহাকাশ গবেষণায় কত বড় প্রতিষ্ঠা অর্জন করেছে। ১৯-শে জুন Mars Mission -এর এক হাজার দিনপূর্ণ হল। আপনাদের সবার মনে আছে, এই মার্স মিশনের জন্য আমরা সাফল্যের সঙ্গে orbit -এ স্থাপন করতেপেরেছিলাম এবং তার মেয়াদ ছয় মাসের জন্য ধার্য করা হয়েছিল। এর কার্যকাল ছিল ৬মাসের। কিন্তু আমাদের বৈজ্ঞানিকদের কি অসামান্য দক্ষতা যে ৬ মাস পেরিয়েও এক হাজারদিন পার করে ফেললো। এখনও নিয়মিত ছবি পাঠিয়ে চলেছে, তথ্য দিয়ে চলেছে, Scientific Data -ও পাঠাচ্ছে।মেয়াদ ছাড়িয়ে গেছে কিন্তু এখনও সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে চলেছে। এই এক হাজার দিনপূর্ণ করা আমাদের বৈজ্ঞানিক যাত্রা আমাদের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে মহত্তম সাফল্যনির্দেশ করছে।
এখন দেখছি Sports -এর ক্ষেত্রেওআমাদের যুবসমাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে খেলাধুলার ক্ষেত্রেওআমাদের তরুণ প্রজন্ম তাদের দক্ষতা, তাদের শারীরিক সামর্থ্য তাদের একনিষ্ঠ সাধনারফলে দেশের নাম উজ্জ্বল করে চলেছে। এই তো সেদিন ইন্দোনেশিয়া ও স্পেনে ভারতেরব্যাডমিণ্টন খেলোয়াড় কিদাম্বী চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের সম্মান বাড়িয়েছে। আমি এই অবসরেকিদাম্বী শ্রীকান্ত ও তাঁর কোচকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। কিছুদিন আগে পি.টি.ঊষা-র ‘ঊষাস্কুল অফ অ্যাথলেটিক্স’-এ সিন্থেটিক টার্ফ-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে থাকার সুযোগপেয়েছিলাম। আমরা ক্রীড়াক্ষেত্রে যত সাফল্য অর্জন করব, স্পোর্টস, স্পোর্টস্ম্যানস্পিরিট বাড়তেই থাকবে। খেলাধুলা ব্যক্তিত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালনকরে। সার্বিক ব্যক্তিত্বের বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। দেশেপ্রতিভার কোনও অভাব নেই। যদি পরিবারের ছেলে-মেয়েদের খেলাধুলার দিকে ঝোঁক থাকে তাকেউৎসাহ দেওয়া উচিৎ। খেলার মাঠ থেকে টেনে এনে, ঘরে বন্দী করে পড়াশোনায় বাধ্য করলেকিছু লাভ নেই। পড়াশোনা করে বড় হতেই পারে, কিন্তু খেলাধুলায় আগ্রহ থাকলে, সামর্থ্যথাকলে স্কুল-কলেজ-পাড়া-প্রতিবেশীদের তাকে উৎসাহিত করা উচিত। আগামি অলিম্পিক-এরজন্য সবাইকে নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করতেই হবে।
আবার একবার বলি,দেশবাসী, বর্ষাকাল, উৎসব পালনের আনন্দোৎসব একরকমভাবে এই সময়কে বিশিষ্টতা দেয়।আপনাদের সবাইকে আমার শুভকামনা জানিয়ে আগামী ‘মন কি বাত’-এ আরও কিছু বলার অপেক্ষানিয়ে শেষ করছি। নমস্কার!
আমার প্রিয় দেশবাসী , নমস্কার ! এবছর গরমকে হয়ত আমরা ভুলতে পারবো না। বর্ষার প্রতীক্ষা চলছেই । আজ আমি যখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি , তখন পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়ে গেছে। পবিত্র রমজান মাসে আমি বিশ্বের সমস্ত মানুষদের , বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের এই পবিত্র মাসে আন্তরিক শুভকামনা জানাচ্ছি। রমজানের সময় প্রার্থনা , আধ্যাত্মিকতা ও দয়া - র প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। আমরা হিন্দুস্থানীরা খুবই ভাগ্যবান – আমাদের অগ্রজরা এমন এক পরম্পরা তৈরি করেছেন যে ভারতবাসীরা গর্ব করতে পারে তা নিয়ে। আমরা একশো পঁচিশ কোটি দেশবাসী গর্ব করতে পারি এই নিয়ে যে ভারতে বিশ্বের সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষই রয়েছেন। এ এক এমন দেশ যে ঈশ্বরবিশ্বাসী বা নাস্তিক – যাঁরা মূর্তিপূজা করেন অথবা যাঁরা মূর্তিপূজার বিরোধী , সব রকমের চিন্তাধারা , সব রকমের পূজা পদ্ধতির , সব রকমের পরম্পরার মানুষ এক সঙ্গে জীবনধারণ করার কৌশল আয়ত্ত করেছেন। আর ধর্মই হোক , সম্প্রদায় , চিন্তাধারা বা পরম্পরা – যাই হোক না কেন , আমাদের একটিই বার্তা দেয় – শান্তি , একতা আর সদ্ ভাবনা। এই পবিত্র রমজান মাস শান্তি , একতা আর সদ্ ভাবনার এই ধারাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়ক হবে। আমি আবার একবার শুভকামনা জানাচ্ছি।
গতবার যখন আমি ‘ মন কি বাত ’ করেছিলাম , তখন আমি একটি শব্দপ্রয়োগ করেছিলাম। বিশেষ করে নওজোয়ানদের বলেছিলাম নতুন কিছু করতে , নতুন অনুভব নিয়ে comfort zone থেকে বাইরে বেরিয়ে আসতে। আর এই তো বয়স এইভাবে বেঁচে থাকার – একটু ঝুঁকি নেওয়ার , কঠোরতার সামনাসামনি হওয়ার। আমার আনন্দ হচ্ছে যে বহু মানুষ আমাকে feedback দিয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমার নিজের কথা বলার জন্য সবাই আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। এত বার্তা আসে যে আমি সবগুলিই তো পড়ে উঠতে পারি না , সবার পাঠানো বার্তা শুনতেও পারি না। কিন্তু আমার নজরে যতটা এসেছে তাতে দেখেছি , কেউ গান শেখার চেষ্টা করছেন , কেউ নতুন বাদ্যযন্ত্রে হাত মক্ শো করছেন , কেউ কেউ ইউ - টিউব ব্যবহার করে নতুন জিনিস শেখার চেষ্টা করছেন , কেউ নতুন ভাষা শেখার চেষ্টা করছেন , কেউ রান্না শিখছেন , কেউ নাচ শিখছেন , কেউ নাটক শিখছেন , কেউ কেউ তো লিখেছেন যে তাঁরা কবিতা লেখা শুরু করেছেন। প্রকৃতিকে জানতে , বুঝতে , এর মধ্যে বেঁচে থাকতে শেখার চেষ্টা করছেন। আমার খুব আনন্দ হয়েছে। আর আমি একটি ফোনের বার্তা আপনাদের শোনাতে চাইছি –
দীক্ষা কাত্যাল বলছি। আমার পড়াশোনার অভ্যাস প্রায় বন্ধ হয়ে গেছিল। এইজন্য এই ছুটিতে আমি পড়ার চেষ্টা করেছি। যখন আমি স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে পড়তে শুরু করলাম , তখন বুঝতে পারলাম যে ভারতের স্বাধীনতা লাভের জন্য কত সংগ্রাম করতে হয়েছে , কত জীবনদান করতে হয়েছে , কত স্বাধীনতা সংগ্রামীরা জেলে কাটিয়েছেন বছরের পর বছর। ভগৎ সিং , যিনি খুব কম বয়সে অনেক কিছু করেছেন , তাঁর জীবন থেকে আমি প্রেরণা পেয়েছি। এজন্য আপনার কাছে আমার অনুরোধ যে আজকের পর্বে আপনি এই বিষয়ে কিছু বলুন।
আমার ভালো লাগছে যে আজকের যুবক - যুবতীরা আমাদের ইতিহাস , আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামী – যাঁরা আমাদের দেশের জন্য জীবন বলিদান দিয়েছেন , তাঁদের বিষয়ে জানার ইচ্ছে প্রকাশ করছে। অগুন্তি মহাপুরুষ যাঁরা তাঁদের জীবনটাই জেলে কাটিয়েছেন , বহু তরুণ যাঁরা ফাঁসির দড়ি গলায় পরেছেন , কী না আমরা সহ্য করেছি , আর তাই তো আমরা আজ স্বাধীন হিন্দুস্থানে শ্বাস নিচ্ছি। একটা জিনিস আমি দেখেছি যে , যে সমস্ত মহাপুরুষ স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য জেলে দিন কাটিয়েছেন , তাঁরা প্রচুর লেখালেখি ও পড়াশোনা করেছেন এবং তাঁদের এই লেখালেখি স্বাধীনতাকে আরও শক্তি দিয়েছে।
বহু বছর আগে আমি আন্দামান - নিকোবর গিয়েছিলাম। সেলুলার জেল দেখতে গিয়েছিলাম। আজ বীর সাভারকরের জন্মজয়ন্তী। বীর সাভারকর জেলে বসে ‘ মাঁজী জন্মঠে ’ বইটি লিখেছিলেন। জেলের দেওয়ালে কবিতা লিখতেন। একটা ছোট ঘরে তাঁকে বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। স্বাধীনতার জন্য কত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল। যখন আমি সাভারকরজীর ‘ মাঁজী জন্মঠে ’ বইটি পড়ি তা থেকেই আমি সেলুলার জেল দেখার প্রেরণা পাই। সেখানে এক Light and Sound Show চলে যা খুবই প্রেরণাদায়ক। হিন্দুস্থানের এমন কোনো রাজ্য নেই , এমন কোনো ভাষাভাষী মানুষ নেই যাঁরা স্বাধীনতার জন্য কালাপানির সাজা ভোগ করেননি , আন্দামানের জেলে – এই সেলুলার জেলে নিজের জীবন খোয়াননি। সব ভাষা - ভাষী , সব প্রান্তের , সব প্রজন্মের মানুষ এই যন্ত্রণা সহ্য করেছেন।
আজ বীর সাভারকরের জন্মজয়ন্তী। আমি দেশের যুবপ্রজন্মকে অবশ্যই বলতে চাই যে আমরা যে স্বাধীনতা লাভ করেছি তার জন্য কত মানুষ কত কষ্ট সহ্য করেছেন , কত যন্ত্রণা সহ্য করেছেন। আর আমি সেলুলার জেলে গিয়ে দেখেছি তাকে কালাপানি কেন বলে। ওখানে যাওয়ার পরই তা বোঝা যায়। আপনারাও যদি কখনও সুযোগ পান আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের তীর্থক্ষেত্রে অবশ্যই যাবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী , ৫ - ই জুন মাসের প্রথম সোমবার। এটা খুবই সামান্য কথা যদিও , কিন্তু ৫ - ই জুন এক বিশেষ দিন। কারণ এই দিনটি ‘ বিশ্ব পরিবেশ দিবস ’ হিসাবে পালন করা হয়। আর এই বছর ইউনাইটেড নেশনস্ - এর থিম হল ‘ Connecting people toNature ’ । অন্যভাবে বলতে গেলে ‘ back to basics ’ । ‘ Nature ’- এর সঙ্গে ‘ connect ’ – একথার মানে কি ? আমার মতে নিজের সঙ্গে যুক্ত হওয়া , আমার আপনার সঙ্গে connect হওয়া। Nature – এর সঙ্গে connect – এর মানে হল উন্নততর গ্রহের লালন করা। আর একথা মহাত্মা গান্ধীর থেকে ভালভাবে আর কেই বা বলেছেন। মহাত্মা গান্ধী বহুবার বলেছেন – “ One must care about aWorld one will not see ”, অর্থাৎ আমরা যে জগৎ দেখিনি , আমাদের কর্তব্য হল সে সম্পর্কে ভাবনা - চিন্তা করা , তার প্রতি যত্নবান হওয়া। প্রকৃতির এক শক্তি আছে। আপনিও নিশ্চয়ই অনুভব করেছেন যে খুব ক্লান্ত হয়ে আসার পর এক গ্লাস জল মুখে ছিটিয়ে দিলে কতটা সতেজতা আসে। খুব ক্লান্ত হয়ে আসার পর ঘরের জানলা - দরজা খুলে দিয়ে তাজা বাতাসে শ্বাস নিলে নতুন প্রাণ আসে। যে পঞ্চভূতে আমাদের শরীর তৈরি , সেই পঞ্চভূতের সঙ্গে যখন যোগাযোগ ঘটে , তখন আপনা থেকেই আমাদের শরীরে এক নতুন প্রাণ , নতুন উদ্যমের সঞ্চার হয়। এটা আমরা সবাই দেখেছি , কিন্তু এটা নিয়ে সেভাবে ভাবিনি। আমরা এটাকে এক সূত্রে এক রশিতে বাঁধতে পারিনি। এরপর আপনি অবশ্যই দেখবেন যে , যখনই বিভিন্ন প্রাকৃতিক অবস্থার সঙ্গে আপনার যোগ হবে , আপনার ভেতরে এক নতুন চেতনার উদ্ভব হবে। আর এজন্যই ৫ - ই জুন প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য সারা বিশ্ব জুড়ে অভিযান , আমাদের নিজেদের অভিযান হওয়া উচিত। আমাদের পূর্বপুরুষরা পরিবেশ রক্ষার জন্য যে কাজ করেছেন তার কিছু ফল আমরা পাচ্ছি। আমরা যদি পরিবেশ রক্ষা করি আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম তার ফল পাবে। বেদ - এ পৃথিবী আর পরিবেশকে শক্তির মূল বলে মান্য করা হয়। আমাদের বেদ - এ এর বর্ণনা পাওয়া যায়। আর হাজার বছর আগে লেখা অথর্ববেদ তো একরকম পুরোপুরিই পরিবেশের সবচেয়ে বড় দিকনির্দেশক গ্রন্থ। আমাদের এখানে বলা হয় – মাতা ভূমিঃ পুত্র অহম পৃথিব্যাঃ। বেদ - এ বলা হয়েছে আমাদের মধ্যে যে পবিত্রতা আছে তা আমাদের পৃথিবীর জন্য। ধরিত্রী আমাদের মা আর আমরা তাঁর সন্তান। যদি আমরা ভগবান বুদ্ধের কথা মনে করি তো একটা কথা অবশ্যই বেরিয়ে আসে যে মহাত্মা বুদ্ধের জন্ম , তাঁর জ্ঞান প্রাপ্তি এবং তাঁর মহাপরিনির্বাণ – তিনটিই হয়েছিল বৃক্ষতলে। আমাদের দেশে এমন অনেক উৎসব , এমন অনেক পূজাপদ্ধতি আছে , শিক্ষিত মানুষ , অশিক্ষিত , শহুরে , গ্রামীন , আদিবাসী সমাজ হোক – প্রকৃতির পূজা , প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা এক সহজ সমাজজীবনের অংশ। কিন্তু আমাদের তাকে আধুনিক শব্দে , আধুনিক বিতর্কের সঙ্গে যুক্ত করার প্রয়োজন হয়। এ সময়ে বিভিন্ন রাজ্য থেকে খবর আসে আমার কাছে। বর্ষা আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সমস্ত রাজ্যে গাছ লাগানোর বড় অভিযান শুরু হয়ে যায়। কোটি কোটি গাছ লাগানো হয়। স্কুলের বাচ্চাদেরও সামিল করা হয়। সমাজসেবী সংগঠন এবং NGO - রাও অংশগ্রহণ করে , সরকার নিজে এই অভিযান শুরু করার দায়িত্ব নেয়। আমরাও এই বছর এই বর্ষাকালে গাছ লাগানোর এই কাজকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাই , অংশগ্রহণ করি।
আমার প্রিয় দেশবাসী , ২১ - শে জুন। ২১ - শে জুন এখন পৃথিবীতে একটি পরিচিত দিন হয়ে গেছে। ‘ বিশ্ব যোগ দিবস ’ হিসেবে সমগ্র বিশ্ব এই দিনটি পালন করে । খুব অল্প সময়ের মধ্যে
২১ জুনের এই ‘ বিশ্ব যোগ দিবস ’ সমস্ত জায়গায় বিস্তার লাভ করেছে , লোকদের সামিল করছে। একদিকে পৃথিবীতে বিভেদ সৃষ্টিকারী অনেক শক্তি তার বিকৃত রূপ দেখাচ্ছে , এই সময়ে ‘ বিশ্ব যোগ দিবস ’ ভারতের এক বড় অবদান। যোগের মাধ্যমে আমরা সমগ্র বিশ্বকে এক সূত্রে বেঁধে ফেলেছি। যোগ যেভাবে শরীর , মন , বুদ্ধি এবং আত্মাকে এক সঙ্গে বাঁধে ঠিক সেইভাবে আজ যোগ বিশ্বকেও একসঙ্গে বাঁধছে। বর্তমান জীবনযাপনের ধারা অনুযায়ী , নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতার কারণে দায়িত্বের অতিবৃদ্ধির জন্যে , চিন্তামুক্তভাবে বেঁচে থাকা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এরকম পরিস্থিতি অল্পবয়সীদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। উল্টোপাল্টা ওষুধ খাওয়া এবং দিন কাটিয়ে দেওয়া – এই পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন পাওয়ার জন্য যোগব্যায়ামের বড় ভূমিকা রয়েছে। যোগব্যায়াম ভালো থাকার ও চনমনে থাকার গ্যারান্টি দেয়। যোগ কেবলমাত্র এক ব্যায়াম নয় , সুস্থতা পরিস্ফুট হয় শরীর , মন , বিচারের মেলবন্ধনে আর এই মেলবন্ধন অনুভব করা সম্ভব একমাত্র যোগব্যায়ামের দ্বারা। দু ’ দিন আগে আমি যোগ দিবস নিয়ে বিশ্বের সমস্ত দেশের সরকারকে , সব নেতাদের চিঠি লিখেছি।
গত বছর আমি যোগ সম্পর্কিত কিছু প্রতিযোগিতার ঘোষণা করেছিলাম। কিছু পুরস্কারের ঘোষণা করেছিলাম। আস্তে আস্তে এই দিকে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমার কাছে একটা প্রস্তাব এসেছে , এই নতুন প্রস্তাব যিনি পাঠিয়েছেন , তাঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। মজার এক প্রস্তাব। তিনি বলেছেন – এটি তৃতীয় আন্তর্জাতিক যোগ দিবস , আমাকে বলছেন , আমি যেন অনুরোধ করি যে এই তৃতীয় আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে একই পরিবারের তিন প্রজন্ম এক সঙ্গে যেন যোগ ব্যায়াম করে। দাদু - ঠাকুমা হোক বা দাদু - দিদিমা , মা - বাবা , ছেলে - মেয়ে তিন প্রজন্ম এক সঙ্গে যোগ ব্যায়াম করুক , আর এর ছবি আপলোড করুন। গতকাল , আজ আর আগামী কাল - এর এক সৌভাগ্যমূলক মেলবন্ধন যোগকে এক নতুন দিশা দেখাবে । আমি এই প্রস্তাবের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি , আর আমার মনে হয় , আমরা যেমন Selfie with Daughter – এর অভিযান চালিয়েছি , আর এক আনন্দদায়ক অনুভবের সৃষ্টি করেছি , এই তিন প্রজন্মের যোগব্যায়ামের ছবি , ঠিক সমগ্র দেশ এবং পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করবে। আপনি নিশ্চয়ই ‘ নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ ’ - এর মাধ্যমে ‘ মাই গভ ’ - এ যেখানে যেখানে তিন প্রজন্মের লোকেরা একসঙ্গে যোগব্যায়াম করছে , এই তিন প্রজন্মের লোক এক সঙ্গে আমাকে ছবি পাঠাবেন । এটা কাল , আজ আর আগামীকালের ছবি হবে। যেটা এক সুন্দর কালের গ্যারাণ্টি হবে। আমি আপনাদের সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এখনও আন্তর্জাতিক যোগদিবসের প্রায় তিন সপ্তাহ বাকী। আজ থেকে অভ্যাস শুরু করে দিন। আমি ১লা জুন থেকে ট্যুইটারে প্রতিদিন যোগ সম্পর্কিত কিছু না কিছু পোস্ট করতে থাকবো এবং লাগাতার ২১ - শে জুন পর্যন্ত পোস্ট করতে থাকবো , আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেব। আপনিও তিন সপ্তাহ অবিরাম যোগ বিষয়ে প্রচার করুন , প্রসার করুন , লোকেদের সামিল করুন। এটা একরকমের Preventive Health Care – এর আন্দোলন। আমি আপনাদের সবাইকে এতে অংশগ্রহণ করতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
যেদিন থেকে আপনারা আমাকে প্রধান সেবকরূপে কাজের দায়িত্বভার দিয়েছেন , আর লালকেল্লা থেকে আমি , আমার প্রথম ১৫ - ই আগস্টের বক্তব্য রাখার সুযোগ পেয়েছিলাম , সেদিন স্বচ্ছতা সম্বন্ধে বলেছিলাম। সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে আমার যাওয়া - আসা হয়েছে। আমি দেখেছি , কিছু মানুষ খুব উৎসুকভাবে , মোদিজী কি করছেন , কোথায় যাচ্ছেন , কী কী করছেন – সব সময় লক্ষ রাখছেন। কারণ আমার কাছে এক interesting phone call এসেছে , আর আমিও মনে হয় এইভাবে এটা ভাবিনি – কিন্তু আমি এই কথাটা যে উনি ধরেছেন , এর জন্য ধন্যবাদ দিতে চাই। এই ফোন কল থেকে আপনিও বুঝতে পারবেন –
প্রণাম মোদিজী , আমি মুম্বই থেকে নয়না বলছি। মোদিজী , টিভিতে এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে আমি আজকাল প্রায় দেখছি আপনি যেখানেই যাচ্ছেন , সেখানকার লোকেরা সবাই পরিস্কার - পরিচ্ছন্নতার উপর বিশেষ নজর দিচ্ছে। মুম্বই হোক বা সুরাত , আপনার আহ্বানে লোকেরা সামগ্রিকভাবে স্বচ্ছতাকে মিশন হিসাবে মেনে নিয়েছেন। বড়দের সঙ্গে ছোটরাও স্বচ্ছতাকে নিয়ে সচেতন হয়েছে। অনেকবার ছোটোরা বড়দের জঞ্জাল ফেলতে দেখে তাদের বারণ করেছে । কাশীর ঘাট থেকে আপনি যে স্বচ্ছতার এক প্রচেষ্টা শুরু করেছিলেন , সেটা আপনার প্রেরণার মাধ্যমে এক আন্দোলনের চেহারা নিয়ে নিয়েছে।
আপনি ঠিক বলেছেন , আমি যেখানে যেখানে যাচ্ছি , সেখানে সরকারীভাবে সাফাইয়ের কাজ তো হয় , কিন্তু আজকাল সমাজেও পরিচ্ছন্নতার এক উৎসব শুরু হয়ে যায়। আমি কোথাও যখন যাই , আমি যাওয়ার পাঁচ – সাত কি দশ দিন আগে ব্যাপকভাবে সাফাইয়ের কাজ হয়। গণমাধ্যমও এসবের খুব প্রাধাণ্য দেয়। আমি কিছুদিন আগে গুজরাতের কচ্ছে গিয়েছিলাম। ওখানে অনেক বড় সাফাই অভিযান চলেছিল। আমিও খুব একটা নজর দিইনি। কিন্তু যখন এই ফোন কলটা এল , আমিও চিন্তা করলাম এবং দেখলাম যে হ্যাঁ , একথাটা ঠিক। আপনি কল্পনা করতে পারেন যে আমি কতটা আনন্দিত হই এটা জেনে যে দেশের লোকজনেরা এত ঔৎসুক্যের সঙ্গে এসব লক্ষ করছেন। আমার কাছে এর থেকে বেশি খুশি কী হতে পারে। আমার সফরের সঙ্গে স্বচ্ছতাকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর জন্য বাকি প্রস্তুতি তো থাকবেই কিন্তু সবথেকে আগে থাকবে স্বচ্ছতা। এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্বচ্ছতাপ্রেমী যেকোন লোককে আনন্দ দেবে। আমি এই স্বচ্ছতার প্রতি জোর দেওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ দিতে চাই। কেউ একজন আমাকে একটা প্রস্তাব দিয়েছেন। এমনিতে এটা এক মজাদার প্রস্তাব। আমি জানি না , এটা করতে পারব কি না।
মোদীজী , যখন আপনি কোন আমন্ত্রণে যাবেন , তখন বলবেন , যদি আমাকে আমন্ত্রণ করেন তো স্বচ্ছতা কিরকম স্তরের হবে , কত টন জঞ্জাল আপনি আমাকে উপহার দেবেন , সেই ভিত্তিতে আমি আমার যাওয়া ঠিক করব ।
Idea তো খুব ভাল , কিন্তু আমাকে ভাবতে হবে । আবার একথাও ঠিক যে আন্দোলন তো হওয়া দরকার , আর উপহারস্বরূপ অন্য জিনিসের পরিবর্তে কয়েক টন জঞ্জাল পরিস্কার করে দেবেন। কত মানুষকে আমরা অসুস্থতা থেকে বাঁচাবো। কত বড় মানবতার কাজ হবে। একটা বিষয় আমি স্পষ্ট করতে চাই যে , এই যে আবর্জনা , একে আমরা ‘ waste ’ বলে ধরবো না , এটা একরকমের ‘ wealth ’ – এক ‘ resource ’ । এটাকে কেবলমাত্র জঞ্জাল হিসেবে দেখবেন না। একবার এটাকে যদি ‘ wealth ’ হিসেবে মানতে পারি , তাহলে Waste Management – এর নতুন নতুন উপায় আমাদের সামনে আসবে। স্টার্ট - আপ - এর সঙ্গে যুক্ত তরুণরা নতুন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে আসবেন , নতুন নতুন যন্ত্রপাতির উদ্ভব হোক। রাজ্যসরকারগুলির সহায়তায় ভারত সরকার শহরগুলির জনপ্রতিনিধিদের সাহায্যে Waste Management – এর এক গুরুত্বপূর্ণ অভিযান শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে , ৫ই জুন ‘ বিশ্ব পরিবেশ দিবস ’ - এ দেশের প্রায় চার হাজার শহরে কঠিন এবং তরল বর্জ্য সংগ্রহ করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দু - রকমের Dustbin – সবুজ ও নীল দেওয়া হবে। আশা করা যায় , এই চার হাজার শহরে শুকনো আবর্জনা নীল Dustbin– এ এবং ভেজা আবর্জনা সবুজ Dustbin– এ ফেলা হবে। রান্নাঘরের আবর্জনা , যেমন শাক - সব্জির খোসা , উচ্ছিষ্ট , ডিমের খোলা , গাছপালার পাতা – এসবই ভেজা আবর্জনা – সবুজ Dustbin– এ ফেলুন। এই সমস্ত জিনিসগুলি এমনই যা কৃষিকাজে লাগে , যদি খেতের রঙ সবুজ – এই বিষয়টি মনে রাখেন , তাহলে সবুজ Dustbin– এ কী কী ফেলতে হবে , তা মনে থাকবে। আর বাকি আবর্জনা যেমন অব্যবহার্য কাগজ , লোহা , কার্ড বোর্ড , কাঁচ , কাপড় , প্লাস্টিক , পলিথিন , রবার ও অন্যান্য ধাতুর জিনিসপত্রগুলো শুকনো আবর্জনা – যেগুলো মেশিনে ফেলে রি - সাইকেল করতে হয় , সাধারণভাবে এগুলো ব্যবহার হয় না , এগুলো নীল Dustbin– এ ফেলতে হবে। আমার বিশ্বাস যে আমরা এভাবে একটা অভ্যাস গড়ে তুলতে পারব। পরিচ্ছন্নতার জন্য আমাদের নতুন নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে তাহলে গান্ধীজী পরিচ্ছন্নতার যে স্বপ্ন দেখতেন সে স্বপ্ন আমরা সম্পূর্ণ করতে পারবো। আজ আমি গর্বের সঙ্গে একটা কথা উল্লেখ করতে চাই যে একজন ব্যক্তিও যদি মনস্থির করে নেয় , তাহলে কত বড় একটা জন আন্দোলন সৃষ্টি করতে পারে। পরিচ্ছন্নতার কাজ এই রকমই একটি বিষয়। বিগত দিনে আপনারা নিশ্চয় একটি খবর শুনেছেন। মুম্বই - এর দুর্গন্ধময় বার্সোবা বিচ আজ একটি পরিষ্কার , পরিচ্ছন্ন বার্সোবা বিচ - এ পরিণত হয়েছে। এটা কিন্তু হঠাৎ হয়নি , একজন নাগরিক ৮০ - ৯০ সপ্তাহ যাবৎ লাগাতার পরিশ্রম করে বার্সোবা বিচ - এর ছবি পালটে দিয়েছেন। হাজার হাজার টন ময়লা সরিয়ে বার্সোবা বিচকে পরিষ্কার , পরিচ্ছন্ন , সুন্দর বানানো হয়েছে। আর এটার পুরো দায়িত্ব পালন করেছেন Versova ResidenceVolunteer । এক ব্যক্তি শ্রীমান অফরোজ শাহ অক্টোবর ২০১৫ থেকে সর্বশক্তি দিয়ে এই কাজে শামিল হন। ধীরে ধীরে এই কাজে আরও অনেক মানুষ যুক্ত হন আর এটা একটা জন আন্দোলনের রূপ নেয় । এই কাজের জন্য United Nations EnvironmentProgramme ( UNEP ) অফরোজ শাহকে পুরস্কৃত করেছে। উনিই প্রথম ভারতীয় যিনি Championsof the Earth পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। আমি শ্রীমান অফরোজ শাহকে এবং এই আন্দোলনকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। যেভাবে নিজের এলাকার লোকজনকে একত্রিত করে উনি এই কাজকে এক জন আন্দোলনের রূপ দিয়েছেন , তা সত্যিই এক প্রেরণামূলক উদাহরণ।
আমার ভাই - বোনেরা , আজ আমি আপনাদের আরও একটি খুশির খবর দিতে চাই। ‘ স্বচ্ছ ভারত অভিযান ’ সম্পর্কিত জম্মু - কাশ্মীরের ‘ রিয়াসী ব্লক ’ - এর কথা। আমি জানতে পারলাম যে রিয়াসী ব্লক খোলা জায়গায় শৌচমুক্ত এলাকা হয়ে গেছে। জম্মু - কাশ্মীরের রিয়াসী ব্লকের সকল নাগরিক এবং প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা এক উত্তম উদাহরণ রেখেছেন। এইজন্য আমি সকলকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি জানতে পারলাম যে এই কাজে সব থেকে বেশি নেতৃত্ব দিয়েছেন স্থানীয় মহিলারা। জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য তাঁরা মশাল নিয়ে মিছিল করেছেন। প্রতি গলিতে , প্রতি ঘরে ঘরে গিয়ে তাঁরা প্রত্যেককে এই কাজে প্রেরণা জুগিয়েছেন। এই সকল মা - বোনেদেরও আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। জম্মু - কাশ্মীরের একটি ব্লককে খোলা জায়গায় শৌচমুক্ত করে একটি সুন্দর সূচনার জন্য আমি ঐখানকার প্রশাসকদেরও অভিনন্দন জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী , বর্তমান সরকারের গত তিন বছরের কাজ - কর্ম নিয়ে গত ১৫ দিন যাবৎ পত্র পত্রিকায় , বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে , সোশ্যাল মিডিয়াতে ক্রমাগত আলোচনা হচ্ছে। তিন বছর আগে আপনারা আমাকে প্রধান সেবকের দায়িত্ব দিয়েছেন। অনেক সার্ভে হয়েছে , অনেক ওপিনিয়ন পোল নেওয়া হয়েছে। এই সব প্রক্রিয়াকে আমি ভালো স্বাস্থ্যকর নিদর্শন মনে করি। এই তিন বছরের কাজকর্মকে সব প্রকারের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করা হয়েছে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ সেটিকে বিশ্লেষণ করেছেন। গণতন্ত্রের জন্য এটি একটি ভালো পরম্পরা। আমি মনে করি যে গণতন্ত্রে জবাবদিহি করা সরকারের দায়িত্ব । জনতাকে সরকারের কাজকর্মের হিসেব নিকেশ দেওয়া উচিত। আমি ঐ সকল ব্যক্তিদের ধন্যবাদ জানাবো যাঁরা নিজেদের সময় ব্যয় করে আমাদের কাজকর্মকে গভীরভাবে আলোচনা করেছেন , কখনও প্রশংসা করেছেন , কখনো সমর্থন করেছেন , কখনো ত্রুটিগুলিকে দেখিয়ে দিয়েছেন। আমার কাছে এই সকল বিষয়গুলি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি ঐ সকল ব্যক্তিদেরও ধন্যবাদ জানাচ্ছি , যাঁরা সমালোচনামূলক এবং গুরুত্বপূর্ণ Feedback দিয়েছেন , কাজে ভুল - ভ্রান্তি , খামতি ইত্যাদি নজরে আসলে তা সুধরে নেওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়। কাজ ভালো , খারাপ – যাই হোক তার থেকে শিক্ষা নিয়ে ভালো উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। গঠনমূলক সমালোচনা গণতন্ত্রকে শক্তি যোগায়। এক সজাগ রাষ্ট্রের জন্য , এক সচেতন রাষ্ট্রের জন্য এই সমালোচনা খুব জরুরী।
আমার প্রিয় দেশবাসী , আমি ও আপনাদের মত একজন সামান্য নাগরিক সেই কারণে একজন সামান্য নাগরিকের মনে ভালো - মন্দ বিষয়ে যেরকম প্রভাব পড়ে , আমার মনেও সেই রকমই প্রভাব পড়ে । ‘ মন কি বাত ’ - কে কেউ সরাসরি বক্তৃতারূপে দেখেন , কেউ কেউ রাজনৈতিক দৃষ্টি থেকে টীকা - টিপ্পনিও করে থাকেন। কিন্তু এই সুদীর্ঘ সময়ের পর আমি নিজেও বুঝতে পারছি যে আমি যখন ‘ মন কি বাত ’ শুরু করেছিলাম , তখন আমিও কিন্তু সেরকম চিন্তা করিনি। ‘ মন কি বাত ’ - এর এই অনুষ্ঠান আমাকে হিন্দুস্থানের সব পরিবারের একজন সদস্য বানিয়ে দিয়েছে। আমার মনে হয় যেন পরিবারের মধ্যে থেকে ঘরে বসে ঘরের কথা বলছি। শত শত পরিবার আছে যারা এই বিষয়টি আমাকে লিখে জানিয়েছেন। দু ’ দিন আগে রাষ্ট্রপতি ভবনে মাননীয় রাষ্ট্রপতি , মাননীয় উপ - রাষ্ট্রপতি , মাননীয় স্পিকার মহাশয়া – সবাই মিলে ‘ মন কি বাত ’ - এর একটি বিশ্লেষণধর্মী পুস্তক প্রকাশ করেছেন। একজন সামান্য মানুষ হিসেবে , একজন সামান্য নাগরিক হিসেবে এটা আমার মনের উপর বিশেষ প্রভাব ফেলেছে , এই ঘটনা আমাকে উৎসাহিত করেছে। আমি মাননীয় রাষ্ট্রপতি , মাননীয় উপরাষ্ট্রপতি এবং মাননীয়া স্পিকার মহাশয়ার প্রতি কৃতজ্ঞ যে এত উচ্চ পদে আসীন হয়েও তাঁরা সময় করে ‘ মন কি বাত ’ - কে এতটা গুরুত্ব দিয়েছেন , ‘ মন কি বাত ’ - কে এক নতুন উচ্চতা দিয়েছেন। আমার কয়েকজন বন্ধু যখন ‘ মন কি বাত ’ শীর্ষক বইটি নিয়ে কাজ করছিলেন , তখন আমার সঙ্গেও কখনো কখনো আলোচনা করেছেন। এই আলোচনার সময় আবুধাবির আকবর সাহেব নামে একজন চিত্রকরের প্রস্তাব শুনে আমি তো আশ্চর্য হয়ে গেছি। আকবর সাহেব প্রস্তাব দিয়েছেন যে ‘ মন কি বাত ’ অনুষ্ঠানে যেসমস্ত বিষয়ে আলোচনা হয়েছে , তা নিজের স্কেচের মাধ্যমে তুলে ধরতে চান এবং এজন্য তিনি কোনো পারিশ্রমিক নেবেন না। নিজের ভালোবাসা ব্যক্ত করার জন্য আকবর ‘ মন কি বাত ’ - এর শৈল্পিক রূপ দিয়েছেন। আমি আকবর সাহেবের কাছে কৃতজ্ঞ।
আমার প্রিয় দেশবাসী , আমরা পরের বার যখন মিলিত হব , তখন দেশের প্রতিটি কোণে বর্ষা নেমে যাবে। আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়ে যাবে। পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়ে যাবে। বিদ্যার্থীদের নতুন জীবন শুরু হবে। বর্ষা নিয়ে আসবে এক নতুন খুশি , এক নতুন মাদকতা , এক নতুন সুগন্ধ। আসুন , আমরা সবাই এই পরিবেশে প্রকৃতিকে ভালোবেসে এগিয়ে যাই। আপনাদের সবার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা জানাচ্ছি। ধন্যবাদ !
PG/SB……
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার!
প্রতিটি ‘মন কি বাত’-এর আগেদেশের প্রতিটি কোণ থেকে, সব বয়সী মানুষের কাছ থেকে ‘মন কি বাত’ নিয়ে প্রচুরপরামর্শ আসে। আকাশবাণীতে আসে, নরেন্দ্র মোদী অ্যাপের মাধ্যমে আসে, ‘মাই গভ’ পোর্টালেরমাধ্যমে আসে, দূরভাষের মাধ্যমে আসে, রেকর্ডেড মেসেজ হিসেবে আসে। আর আমি যখন কখনওকখনও সময় বার করে সেগুলি দেখি, তো আমার এক সুখানুভূতি হয়। এত বিভিন্ন ধরনের খবরআসে। দেশের প্রতিটি কোণে শক্তির ভাণ্ডার রয়েছে। সাধকের মত যদিও বহু মানুষ সমাজেরজন্য কাজ করছেন, তবুও এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে সরকারের নজর পড়ছে না, সেইসবজায়গায় প্রচুর সমস্যা রয়ে গেছে। এই ব্যাপারটি সরকারও মেনে নিয়েছেন। লোকেরাও মেনেনিয়েছেন। আর বাচ্চাদের কৌতূহল, যুব প্রজন্মের মহান কিছু করার আকাঙ্ক্ষা, বড়দেরঅনুভবের সারবস্তু এমন নানা কথা আমাদের সামনে আসে। প্রত্যেক বার ‘মন কি বাত’-এরজন্য যত ইনপুট আসে সরকারের তরফে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করা হয়। পরামর্শ কিপ্রকারের, অভিযোগ কী কী আছে, মানুষদের অনুভূতি কী রকম ইত্যাদি। মোটের ওপর দেখা যায়যে লোকেদের স্বভাব হল অন্যকে পরামর্শ দেওয়া। ট্রেনে, বাসে যেতে যেতে যদি কারোরকাশি হয়, তো সঙ্গে সঙ্গে অন্যরা বলে এইরকম কর। পরামর্শ দেওয়া, পরামর্শ করা, এখানেআমাদের স্বভাবগত হয়ে গেছে। শুরুর দিকে ‘মন কি বাত’ নিয়ে যখন পরামর্শ আসত, পরামর্শশোনা যেত, পড়া যেত, তখন আমাদের টিমেরও মনে হত যে বহু মানুষের এটাই স্বভাব। কিন্তুযখন মনোযোগ দিয়ে এগুলি দেখার চেষ্টা করলাম, তখন আমি আপ্লুত হয়ে গেলাম। বেশিরভাগক্ষেত্রেই সেইসব মানুষ পরামর্শ পাঠিয়েছেন, আমার কাছ পর্যন্ত পৌঁছনোর চেষ্টাকরেছেন, যাঁরা সত্যি সত্যিই নিজেদের জীবনে কিছু না কিছু করেছেন। তাঁরা নিজেদেরবুদ্ধি, শক্তি, সামর্থ্য ও সুযোগ অনুযায়ী কিছু ভাল কাজ করার চেষ্টা করেছেন। আর যখনএটা আমি বুঝতে পারলাম, তখন আমার মনে হল যে এইসব পরামর্শ তো সামান্য নয়। এইসব এসেছেনিজেদের অনুভবের সার থেকে। কিছু মানুষের মনে হয় যে, তাঁরা যেখানে কাজ করছেন,সেখানে কাজ করতে গিয়ে এইসব বিষয় উঠে আসছে, তো সেই বিষয়গুলি যদি আরও মানুষ শোনেন,তাহলে তার একটা ব্যাপক রূপ তৈরি হতে পারে। এর থেকে বহু মানুষের উপকার হতে পারে। এইভাবনা থেকেও বহু মানুষ নানা পরামর্শ দেন। আর এইজন্যই স্বাভাবিক ভাবেই তাঁদের ইচ্ছেহয় ‘মন কি বাত’-এ এই বিষয়গুলি উঠে আসুক। এই সব কথাই আমার মতে অত্যন্ত সদর্থক। সমাজেরজন্য যাঁরা কিছু না কিছু কাজ করে যাচ্ছেন, সেইসব কর্মযোগীদের কাছ থেকে যেসব পরামর্শআসে আমি সবার আগে সেইগুলি দেখি। আমি তাঁদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করছি। শুধুতাই নয়, আমি যখন কোনো বিষয় উল্লেখ করি, তখন এইসব কথা আমার মনে আসে এবং খুব আনন্দহয়। গতবার ‘মন কি বাত’-এ কিছু লোক আমাকে খাবারের অপচয় নিয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন, সেসম্বন্ধে ভাবনা-চিন্তা উসকে দিয়েছিলেন। আমি ‘মন কি বাত’-এ ব্যাপারটি উল্লেখকরেছিলাম। আর এটা উল্লেখ করার পর খাদ্য অপচয় কীভাবে বন্ধ করা যায়, তা নিয়ে দেশেরবহু কোণ থেকে বহু মানুষ কতরকম অভিনব চিন্তাভাবনা নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ ও ‘মাই গভ’পোর্টালে পাঠিয়েছিলেন। আমি কখনও ভাবতেই পারিনি যে বর্তমানে আমাদের দেশে বিশেষ করেযুবপ্রজন্ম বহুদিন ধরে এই বিষয়ে কাজ করে চলেছেন। কিছু বছর ধরেই আমি জানতাম যে কিছুসামাজিক সংগঠন এই বিষয়ে কাজ করে চলেছে, কিন্তু, আমার দেশের যুবপ্রজন্মও যে এইব্যাপারে কাজ করে চলেছে, এ আমি অনেক পরে জানতে পারি। অনেকে আমাকে ভিডিও পাঠিয়েছেন।অনেক জায়গা আছে যেখানে রুটি ব্যাঙ্ক চালানো হচ্ছে। লোকেরা রুটি ব্যাঙ্কে নিজেদেরথেকে রুটি জমা করেন, তরকারিপাতি জমা করেন, আর যেসমস্ত অভাবী মানুষ আছেন, তাঁরাসেগুলি সংগ্রহ করেন নিজেদের জন্য। যাঁরা দিচ্ছেন, তাঁদের ভালো লাগে, আর যাঁরানিচ্ছেন তাঁদেরও নিজেদের ছোটো বলে মনে হয় না। সমাজে সহযোগিতার মাধ্যমে কীভাবে কাজহয়, এটা তারই উদাহরণ।
আজ এপ্রিল মাসের শেষ দিন। পয়লা মে গুজরাট ও মহারাষ্ট্রঅঙ্গরাজ্য হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছিল। এই উপলক্ষে দুই রাজ্যের মানুষদের আমার তরফথেকে অনেক অনেক শুভকামনা। দুটি রাজ্যই উন্নয়নের নতুন নতুন লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্যপ্রয়াস চালিয়েছে। দেশের উন্নতির কাজে যোগ দিয়েছে। আর দুটি রাজ্যেই মহাপুরুষদের পরপর আগমন এবং সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁদের জীবনচর্যা আমাদের প্রেরণা দিতে থাকে।দুটি রাজ্যের সূচনাদিবসে মহাপুরুষদের স্মরণ করতে গিয়ে আমাদের নিজেদের রাজ্য,নিজেদের দেশ, নিজেদের সমাজ, নিজেদের শহর, নিজেদের পরিবারকে কোন উচ্চতায় পৌঁছনোযায়, ২০২২ সালে অর্থাৎ স্বাধীনতা লাভের ৭৫ বছর পর, সেটাই সংকল্প করা উচিত। এইসংকল্পকে কাজে পরিণত করার জন্য পরিকল্পনা নেওয়া উচিত, এবং সমস্ত নাগরিকের এই কাজেসহযোগিতা আরও বাড়ানো উচিত। এই দুটি রাজ্যকে আমার অনেক অনেক শুভকামনা।
একটা সময় ছিল, যখন জলবায়ু পরিবর্তন বিদ্ব্যৎসমাজের ভাবনা-চিন্তারবিষয় ছিল, সেমিনারের বিষয় ছিল। কিন্তু আজ, প্রতিদিনের জীবনচর্যায় আমরা আশ্চর্য হই,অনুভব করি বিধির বিধান কীভাবে খেলার সমস্ত নিয়মকানুন বদলে দিয়েছে। আমাদের দেশেমে-জুনে যেরকম গরম হত, তা এবার মার্চ-এপ্রিলে অনুভব করার সময় এসে গেছে। ‘মন কিবাত’-এ যখন আমি লোকেদের পরামর্শ নিচ্ছিলাম, তখন বেশি করে এই গরমে কী করা উচিত সেই পরামর্শচাইছিলাম এবং তা মানুষেরা দিয়েছিলেন। এই সব বিষয়ই প্রচলিত আছে। কিছুই নতুন নয়,তবুও বিশেষ সময়ে তা আবার মনে করলে কাজে লাগে।
শ্রীমান প্রশান্ত কুমার মিশ্র, টি.এস. কার্তিক প্রমুখ বন্ধুরাপাখিদের জন্য চিন্তা করেছেন। তাঁরা বলেছেন ব্যালকনিতে, ছাদে জল রাখা উচিত। আর আমিদেখেছি যে, পরিবারের ছোটরা এই কাজ খুব ভালভাবে করছে। একবার যদি তারা বুঝে যায় যেএই জল কেন ভরে রাখা উচিত, তাহলে দিনের মধ্যে দশবার তারা পাত্রে জল আছে কি নেই তাদেখতে যায়। আর পাখি এসেছে কিনা তাও দেখতে থাকে। আমার মনে হয় কি – এ এক খেলা চলছে,কিন্তু সত্যি সত্যি বালকদের মনে সমবেদনা জাগানোর এ এক অদ্ভুত উপায়। আপনিও মাঝেমাঝে দেখুন পশু-পক্ষীদের জন্য এই অল্প কিছু ভাবনা এক নতুন আনন্দের অনুভূতি দেয়।
কিছুদিন আগে গুজরাট থেকে শ্রীমান জগৎভাই আমাকে Save the Sparrows নামে একটি বই পাঠিয়েছেন। এই বইতে তিনি চড়াই পাখির সংখ্যাকমে যাওয়ার জন্য দুশ্চিন্তা ব্যক্ত করেছেন। শুধু তাই নয়, নিজে এদের সংরক্ষণের জন্য mission mode –এ কি কি কাজ করেছেন, কি কিচেষ্টা করেছেন তার এক সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন। আমাদের দেশে তো আমরা পশু-পাখি-প্রকৃতিরসঙ্গে মিলে মিশে জীবন কাটাই, তাদের রঙে রঙ মেলাই, তবুও তাদের সংরক্ষণের জন্য একসামগ্রিক প্রয়াসে আরও জোর দেওয়া উচিত। যখন আমি গুজরাটে মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, তখন‘দাউদি বোহরা সমাজ’-এর ধর্মগুরু সৈয়দনা সাহেবের একশ বছর পূর্ণ হয়েছিল। তিনি ১০৩বছর পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। আর তাঁর একশো বছর উদ্যাপনের জন্য বোহরা সমাজ বুরহানিফাউণ্ডেশন-এর মাধ্যমে চড়ুইদের বাঁচানোর জন্য এক বড় অভিযান চালায়। এই অভিযানের শুভসূচনা করার সুযোগ আমার হয়েছিল। প্রায় বাহান্ন হাজার bird feeder বিশ্বের কোণে কোণে তাদের ছড়িয়ে দিয়েছিল। Guinness Book of World Records -এ এই অভিযান জায়গা করে নিয়েছে। কখনও কখনও আমি এতব্যস্ত হয়ে পড়ি যে, খবরের কাগজওয়ালা, দুধওয়ালা, সব্জীওয়ালা, পোস্টম্যান – যাঁরাইআমার ঘরে আসে, গরমের দিনে তাদের আগে একটু জল দেওয়ার কথা আমি ভুলে যাই।
যুবক বন্ধুরা, আমি আপনাদের সঙ্গেও কিছু কথা বলতে চাই। আমারকখনও কখনও মনে হয় যে, আমাদের যুবপ্রজন্মের কিছু লোকের comfort zone –এ থেকে জীবন কাটাতে মজা লাগে। তাদের মা-বাবাও তাদের একঘেরাটোপের মধ্যে লালন-পালন করেছেন। কিছু মানুষ চরম প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে যায়।কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ comfortzone –এই জীবন কাটায়।এখন পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। ছুটিতে মজা করার নানান পরিকল্পনা করা হয়ে গেছে। গরমেরছুটিতে গরম পড়লেও বেশ মজা লাগে। তবে আমি বন্ধু হিসেবে আপনাদের ছুটি কেমনভাবেকাটাবেন, সে বিষয়ে কিছু কথা বলতে চাই। আমার বিশ্বাস কিছু মানুষ অবশ্যই আমার কথা কাজেপরিণত করবেন এবং আমাকে জানাবেনও। আমি তিনটি পরামর্শ দিচ্ছি। আপনারা এই তিনটি পরামর্শইকাজে লাগান তো খুব ভাল হয়। কিন্তু আপনারা ছুটিতে কি তিনটির মধ্যে একটি পরামর্শকেঅন্তত কাজে পরিণত করার চেষ্টা করবেন? নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের চেষ্টা করুন, নতুনদক্ষতা অর্জন করার চেষ্টা করুন, চেষ্টা করুন যে জায়গার বিষয়ে কখনও কিছু শোনেন নি,কখনও দেখেননি, কখনও ভাবেননি, কখনও জানতেন না, সেই জায়গায় যাওয়ার ইচ্ছা করতে এবংচলে যেতে। নতুন জায়গা, নতুন অভিজ্ঞতা, নতুন দক্ষতা। কখনও কোনো জিনিস টিভিতে দেখা,বা বইতে পড়া বা পরিচিত মানুষের কাছে সে বিষয়ে শোনা আর স্বয়ং তা অনুভব করার মধ্যেআকাশ-পাতাল পার্থক্য হয়ে যায়। আমি আপনাদের অনুরোধ করব যে এই ছুটিতে যে বিষয়েআপনাদের কৌতূহল আছে তাকে জানার চেষ্টা করুন, নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করুন।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা সদর্থক হোক, comfortzone থেকে একটু বাইরেবেরোনর মত হোক। আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের, সুখী পরিবারের। কি বন্ধুরা, কখনো কি মনেহয়েছে যে আসন সংরক্ষণ না করে টিকিট নিয়ে ট্রেনের সেকেণ্ড ক্লাস কামরায় চড়ে বসি আরকম করেও ২৪ ঘণ্টা সফর করি। কেমন অনুভূতি হয় দেখি। ওইসব যাত্রীদের আলাপচারিতা কেমন,তারা স্টেশনে নেমে কী করেন, এইসব দেখে, বছরভোর আপনারা হয়ত যা শিখতে পারেননি, এই ২৪ঘণ্টায়, আসন সংরক্ষণ বিনা ভিড় ট্রেনে গিয়ে যেখানে শোয়ার জায়গাও পাওয়া যায় না,দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হয়, সেই সমস্ত জিনিস শেখা যায়। কখনও তো এটা অনুভব করুন। আমিএটা বলছি না যে বার বার করুন, কিন্তু এক-আধবার তো করুন। সন্ধেবেলা, নিজের ফুটবলনিয়ে, ভলিবল নিয়ে বা খেলাধূলার অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে এক নিতান্ত গরীব বস্তিতে চলেযান। ওইসব গরীব বালকদের সঙ্গে নিজে খেলুন, আপনি দেখবেন, আপনার মনে হবে জীবনে খেলারএই আনন্দ আগে কখনও পাননি। সমাজে এরকম জীবনযাপন করা বাচ্চাদের যখন আপনার সঙ্গেখেলার সুযোগ হবে, আপনি কি ভেবেছেন ওই বাচ্চাদের জীবনে কত বড় পরিবর্তন আসবে! আমিবিশ্বাস করি, একবার গেলে বারবার যাওয়ার ইচ্ছা হবে। এই অভিজ্ঞতা আপনাকে অনেক কিছুশেখাবে। অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই সেবার কাজ করে যাচ্ছে। আপনি গুগুল গুরুরসঙ্গে তো যুক্ত আছেন, ওখানেও খুঁজতে পারেন। এরকম কোন সংস্থার সঙ্গে ১৫ দিন, ২০দিনের জন্য যোগদান করুন, চলে যান, জঙ্গলেও চলে যান। কখনো কখনো অনেক সামারক্যাম্প-এর আয়োজন হয় personalitydevelopment –এরজন্য, এতে অনেক রকমের বিকাশ হয়, এতে সামিল হতে পারেন। যদি আপনি সামার ক্যাম্পেঅংশগ্রহণ করে থাকেন, personalitydevelopment -এরকোর্স করে থাকেন, আপনি বিনামূল্যে সমাজের সেই সব লোকেদের কাছে যান – যাঁরা এই সবকোর্স থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আপনি যা শিখেছেন, তা তাঁদের শেখান। কীভাবে এইসব কাজ করাযায়, আপনি শেখাতে পারেন। আমাদের এই কথা উদ্বিগ্ন করে যে প্রযুক্তি পারস্পরিক ব্যবধানও দূরত্ব কম করার জন্য এসেছে, কিন্তু তার পরিণাম হচ্ছে যে একই ঘরে ছ’জন একসঙ্গেবসে আছে, কিন্তু তাদের মধ্যে ব্যবধান এত বেড়ে গেছে, যা কল্পনাতীত। কেন? সবাই নতুনপ্রযুক্তির মাধ্যমে অন্য কোথাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। একসঙ্গে থাকাটাও এক সংস্কার,ঐক্য হল শক্তি। দ্বিতীয়ত, আমি বলতে চাই দক্ষতা নিয়ে। আপনার কি ইচ্ছে করে না নতুন কিছুশিখতে! বর্তমান যুগ হল প্রতিযোগিতার। পরীক্ষাতে আমরা পুরো ডুবে থাকি। ভাল ফল করারজন্য সবরকমের চেষ্টা করি, নিজেদের হারিয়ে ফেলি। Vacation -এ কোন না কোন কোচিং ক্লাস-এ ভর্তি হয়ে যাই, সামনেরপরীক্ষার চিন্তা লেগেই থাকে। কখনো কখনো ভয় লাগে, আমাদের যুব প্রজন্ম রোবোট হয়েযাচ্ছে না তো। যন্ত্রের মতো জীবন কাটাতে নেই।
বন্ধুরা, জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন খুব ভালো। কিছু করার ইচ্ছাখুব ভালো কথা, আর এটা হওয়া উচিত। কিন্তু এটাও দেখুন যে, নিজেদের মধ্যে যেমনুষ্যত্ব আছে, তা যেন সঙ্কুচিত না হয়, আমরা মানবিক মূল্য থেকে দূরে যেন চলে নাযাই। দক্ষতার উন্নতির দিকে একটু জোর দেওয়া যেতে পারে। প্রযুক্তি থেকে দূরে, নিজের সঙ্গেসময় কাটানোর চেষ্টা করা যেতে পারে – কেউ বাদ্যযন্ত্র শিখছে, কেউ বা – তামিল,তেলেগু, অসমীয়া, বাংলা, মালয়ালম, গুজরাতি, মারাঠী বা পাঞ্জাবী ভাষার পাঁচ থেকেপঞ্চাশটি বাক্য শিখছে – কত বিভিন্নতা রয়েছে আমাদের দেশে – লক্ষ্য করলে আমাদের আশপাশেশেখানোর কেউ না কেউ বন্ধু পেয়ে যাবেন। সাঁতার না জানলে সাঁতার শিখুন, ছবি আঁকুন।হতে পারে ভালো ছবি হবে না, কিন্তু কাগজে কিছু তো আঁকার চেষ্টা করতে পারেন। আপনারমধ্যে যে প্রতিভা আছে, সেটা প্রকাশিত হতে থাকবে। কখনো কখনো যেসব কাজকে আমরা ছোটভাবি, কেন মনে হয় না – সেগুলো শিখি। আপনার গাড়ি চালানো শেখার ইচ্ছা হয়। কখনো কিঅটো-রিক্সা চালানো শিখতে ইচ্ছে করে? আপনি সাইকেল তো চালাতে পারেন, কিন্তু তিনচাকার সাইকেল অর্থাৎ রিক্সা, যেটা লোকেদের নিয়ে যায়, কখনো চালানোর চেষ্টা করেছেনকি? আপনি দেখুন এসবই নতুন প্রয়োগ, এর দক্ষতা এরকম যেটা আপনাকে আনন্দও দেবে এবংজীবনকে যে একঘেঁয়েমি ছন্দে বেঁধে রেখেছেন, তার থেকে আপনি মুক্তি পাবেন। গতানুগতিকজীবন থেকে বেরিয়ে, কিছু একটা করুন, বন্ধুরা। জীবন গড়ে তোলার এটাই তো সুযোগ। আপনিহয়ত ভাবছেন সব পরীক্ষা ( Exam ) শেষ হয়ে যাক, নতুন career -এ গেলে তখনই শিখব, তখন কিন্তু সুযোগ আসবে না। আবার আপনিঅন্য কোনো ঝামেলাতে জড়িয়ে পড়বেন, তাই আমি আপনাদের বলব, যদি আপনার জাদু শেখার শখথাকে, তো অন্তত তাসের জাদু শিখুন। নিজের বন্ধুদের জাদু দেখাতে থাকুন। কিছু না কিছুএরকম জিনিস যেটা আপনি জানেন না, সেটা জানার চেষ্টা করুন, আপনি নিশ্চয়ই উপকৃত হবেন।আপনার ভেতরের মানবিক গুণগুলো জাগ্রত হবে। উন্নতির অনেক সোপান তৈরি হবে। আমি নিজেরঅভিজ্ঞতা থেকে বলছি, দুনিয়াকে দেখে আমরা যত শিখতে-বুঝতে পারি তার কল্পনাও করতেপারি না। নতুন নতুন স্থান, নতুন নতুন শহর, নতুন নতুন নগর, নতুন নতুন গ্রাম, নতুননতুন এলাকা। কিন্তু যাওয়ার আগে যেখানে যাচ্ছি – ওখানকার রীতি-নীতি, আর সেখানে গিয়েজিজ্ঞাসুর মতো দেখা, বোঝা, লোকেদের মধ্যে চর্চা করা, জিজ্ঞেস করা, এই সব চেষ্টাযদি করা যায়, তবে ওই নতুন জায়গা দেখার আনন্দ আরও বেড়ে যায়। আপনি নিশ্চয়ই চেষ্টাকরবেন, আর ঠিক করে নিন যে ট্র্যাভলিং বেশি করবেন না। একই জায়গায় গিয়েতিনদিন-চারদিন থাকুন। আবার অন্য জায়গায় যান এবং তিনদিন-চারদিন থাকুন। এর থেকে আপনিঅনেক শিখতে পারবেন। আর আমি চাইব যে, আপনিযখন যাচ্ছেন আমাকে ছবি অবশ্যই পাঠাবেন। কি কি নতুন দেখলেন? কোথায় গিয়েছিলেন? আপনি‘হ্যাশ ট্যাগ ইনক্রেডিবল ইণ্ডিয়া’র ব্যবহার করে আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন।
বন্ধুগণ, এইবার ভারত সরকারও আপনার জন্য খুব ভালো সুযোগদিয়েছে। নতুন প্রজন্ম নগদ লেনদেন থেকে প্রায় মুক্ত হয়ে যাচ্ছে। এদের ক্যাশের দরকারনেই। এরা ডিজিট্যাল কারেন্সি-তে বিশ্বাস করতে শুরু করে দিয়েছে। আপনি তো এর ব্যবহারকরেন, কিন্তু এই যোজনা থেকে আয়ও করতে পারেন – আপনি চিন্তা করেছেন? ভারত সরকারের একযোজনা আছে। ‘ভীম’ অ্যাপ আপনি ডাউনলোড করতেপারেন, আপনি ব্যবহারও করতে পারেন। কিন্তু যদি অন্য কাউকে রেফার করেন বা অন্য কাউকেযোগ করেন এবং ওই নতুন ব্যক্তি অর্থের লেনদেন তিনবার করেন, এই কাজটা করার জন্য আপনারদশ টাকা আয় হয়ে যায়। আপনার অ্যাকাউণ্টে সরকারের পক্ষ থেকে দশ টাকা জমা হয়ে যাবে।যদি দিনে আপনি ২০ জন লোকেদের করিয়ে নেন, সন্ধে হতে হতে ২০০ টাকা আয় হয়ে যাবে।ব্যবসায়ীদেরও আয় হতে পারে, শিক্ষার্থীদেরও আয় হতে পারে। এই যোজনা ১৪ অক্টোবরপর্যন্ত রয়েছে, ডিজিট্যাল ইণ্ডিয়া গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এটাই হবে আপনার অবদার। ‘নিউইণ্ডিয়া’র আপনি প্রহরী হয়ে যাবেন, তাহলে ভ্যাকেশনের ভ্যাকেশন এবং আয় হি আয়। রেফারকরুন আর আয় করুন।
সাধারণভাবে আমাদের দেশে ভি.আই.পি কালচারের প্রতি বিতৃষ্ণারয়েছে, কিন্তু এটা যে এত প্রবল – এটা আমি এখনই বুঝতে পারলাম। যখন সরকার ঠিক করেছিলযে বর্তমানে ভারতবর্ষে যত বড় ব্যক্তি হোক না কেন, নিজের গাড়িতে লাল বাতি লাগিয়েচলাফেরা করতে পারবে না। এটা একরকমের ভি.আই.পি.-কালচারের সিম্বল হয়ে গিয়েছিল,কিন্তু অভিজ্ঞতা এটা বলছে যে, লাল বাতি তো গাড়িতে লাগানো হত, কিন্তু ধীরে- ধীরে-ধীরেসেটা মাথার মধ্যে গেঁথে গেছে এবং মনের মধ্যে ভি.আই.পি কালচার মনের মধ্যে ছড়িয়েযেত। এখন তো লাল বাতি চলে গেছে, এর জন্য কেউ এটা বলতে পারবে না যে মনের মধ্যে যেলাল বাতি ঢুকে আছে, সেটা হয়ত বেড়িয়ে গেছে।
আমারকাছে এক ইন্টারেস্টিং ফোন কল এসেছিল। এই ফোনের মাধ্যেম আশঙ্কাও ব্যক্ত করেছেনকিন্তু এই ফোন থেকে এটা বোঝা যাছে যে, সাধারণ মানুষ এটাকে একেবারেই পছন্দ করতেননা, এঁরা একটা দূরত্ব অনুভব করতেন।
“নমস্কার প্রধানমন্ত্রীজী,আমি জব্বলপুর, মধ্যপ্রদেশ থেকে শিবা চৌবে বলছি। আমি সরকারের রেড বেকন লাইট ব্যানসম্বন্ধে কিছু বলতে চাই। আমি এক লাইন পড়েছিলাম সংবাদপত্রে, যেখানে লেখা ছিল “ Every Indian is a VIP on a road ”। এটা শুনে আমি গর্ব বোধ করছি আর খুশিও হয়েছি।আমার সময়েরও অনেক মূল্য রয়েছে। আমাকে ট্র্যাফিক জ্যামে ফাঁসতে হবে না, আর আমাকেকারও জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। আমি আপনাকে মন থেকে অনেক ধন্যবাদ দিতে চাই এইসিদ্ধান্তের জন্য। আর এই যে ‘স্বচ্ছ ভারত’ অভিযান চালিয়েছেন, এতে কেবল আমাদের দেশপরিচ্ছন্ন হচ্ছে তাই নয়, আমাদের রাস্তা থেকে ভি.আই.পি-দের দাদাগিরিও পরিষ্কার হয়েযাচ্ছে – এর জন্য ধন্যবাদ।”
গাড়িতেলালবাতি জ্বালানো সরকারি ব্যবস্থার একটি অঙ্গ। কিন্তু আমাদের মন থেকে এই ভাবনাটাদূর করতে সচেষ্ট হতে হবে। আমরা সবাই মিলে সচেতনভাবে চেষ্টা করলে সেটা দূর করাযাবে। নতুন ভারতে আমাদের ভাবাদর্শ হল, দেশে ভি.আই.পি-র জায়গায় ই.পি.আই-এর গুরুত্ববাড়ুক। আমি যে ভি.আই.পি-র বদলে ই.পি.আই বলছি, এ ব্যাপারে আমার চিন্তাধারা খুবইস্পষ্ট। EPI , অর্থাৎ Every Person is Important । দেশের সব মানুষইগুরুত্বপূর্ণ, সব মানুষেরই মাহাত্ম্য আছে। একশো-পঁচিশ কোটি দেশবাসীর এই গুরুত্বএবং মাহাত্ম্য স্বীকার করে নিলে মহান স্বপ্ন পূরণের শক্তি সঞ্চয় করা সহজ হবে।আমাদের সকলকে মিলিতভাবে এটা করতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি সবসময়েই বলে থাকি যে আমাদেরইতিহাসকে, আমাদের সংস্কৃতিকে, আমাদের ঐতিহ্যকে বারবার স্মরণ করতে হবে। এর থেকেআমরা শক্তি সঞ্চয় করি, প্রেরণা পাই। এবছর আমরা সন্ত রামানুজাচার্যের সহস্র বর্ষপালন করছি। কোন-না-কোনো কারণে আমাদের গণ্ডীটা এত সঙ্কীর্ণ হয়ে গেছে, আমরা চিন্তায়এতটাই ক্ষুদ্র হয়ে গেছি যে, বড়জোর শতাব্দী উদ্যাপন পর্যন্তই ভাবতে পারি। পৃথিবীরঅন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে শতাব্দী পালনই যথেষ্ট বলে বিবেচিত হয়, কিন্তু ভারত এতটাইপ্রাচীন এক রাষ্ট্র যে তার ক্ষেত্রে হাজার বছর বা তারও বেশি পুরোন স্মৃতিকে মনেকরার সুযোগ আমাদের আছে। একটু কল্পনা করুন তো, এক হাজার বছরের আগের সমাজ, তখনকারচিন্তাভাবনা কেমন ছিল? আজও যখন সামাজিক অব্যবস্থাগুলিকে সরিয়ে এগিয়ে যাওয়া এতটাইকষ্টকর, তাহলে সহস্র বছর আগে তা কেমন ছিল? খুব কম লোকই জানেন যে সমাজে যেসবকু-রীতি, উচ্চ-নীচ ভেদাভেদ, অস্পৃশ্যতা, জাতিবাদের সমস্যা ছিল, রামানুজাচার্যকেতার বিরুদ্ধে কেমন লড়াই করতে হয়েছিল। সমাজে যাদের অচ্ছুৎ বলে মানা হত, তিনি নিজেতাদের আলিঙ্গণ করেছিলেন। আজ থেকে হাজার বছর আগে তিনি তাদের মন্দিরে প্রবেশেরঅধিকার নিয়ে আন্দোলন করেছিলেন এবং সফল হয়েছিলেন। আমরা এতটাই ভাগ্যবান যে, সব যুগেইসমাজের দোষগুলিকেই খণ্ডন করার জন্য কোন-না-কোনো মহাপুরুষ এদেশে জন্ম নিয়েছেন। সন্তরামানুজাচার্যের সহস্রতম জয়ন্তী পালনকালে সামাজিক একতার জন্য সঙ্ঘবদ্ধ প্রয়াসই যেশক্তির উৎস সেই ভাবনাটিকে তুলে ধরতে আমরা তাঁর কাছ থেকে প্রেরণা নিতে পারি। ভারতসরকার আগামীকাল, পয়লা মে, সন্তের স্মৃতিতে একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করছে। আমি সন্তরামানুজাচার্যকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি, প্রণাম জানাচ্ছি।
প্রিয় দেশবাসী, আগামীকাল পয়লা মে তারিখটির আরও একটি গুরুত্বআছে। বিশ্বের বেশ কিছু জায়গায় এই দিনটিকে ‘শ্রমিক দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। আরযখন শ্রমিক দিবসের কথা ওঠে, শ্রম এবং শ্রমিজীবীদের কথা ওঠে তখন বাবাসাহেব আম্বেদকরেরকথা আমার মনে পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। খুব কম লোকই হয়ত জানেন যে, আজ শ্রমিকরা যেসুযোগ-সুবিধা, সম্মান পেয়েছেন, তার জন্য আমরা বাবাসাহেব আম্বেদকরের কাছে কৃতজ্ঞ।শ্রমিক কল্যাণে বাবাসাহেবের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। আজ যখন আমি বাবাসাহেব আম্বেদকর এবংসন্ত রামানুজাচার্যের কথা বলছি, তখন দ্বাদশ শতাব্দীর কর্ণাটকের মহান সন্ত এবংসমাজসংস্কারক জগতগুরু বাসবেশ্বরের কথাও মনে পড়ছে। গতকাল আমার এক অনুষ্ঠানে যাওয়ারসুযোগ হয়েছিল যেখানে তাঁর বাণীর সঙ্কলন প্রকাশ করা হয়। দ্বাদশ শতাব্দীতে তিনিকন্নড় ভাষায় শ্রম এবং শ্রমিকদের বিষয়ে সুগভীর আলোচনা করেছেন। কন্নড় ভাষায় তিনিবলেছিলেন – “কায় কওয়ে কৈলাস”। এর অর্থ হল, পরিশ্রমের দ্বারাই আপনি শিবের আলয়কৈলাসে পৌঁছতে পারবেন। কর্ম করলেই স্বর্গপ্রাপ্তি হয়। অন্যভাবে বললে – ‘শ্রমইশিব’। আমি বারবার বলে থাকি – শ্রমেব জয়তে। Dignity of Labour -এর কথা বলে থাকি। তেমনি আমার মনে আছে ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘেরজনক ও চিন্তাবিদ্ শ্রী দত্তোপন্ত ঠেঙ্গড়ি বলতেন, একদিকে যেমন মাওবাদী বিচারধারায়বলা হয়ে থাকে দুনিয়ার মজদুর এক হও, তেমনি দত্তোপন্ত ঠেঙ্গরি বলতেন, ‘মজদুররা এসো,দুনিয়াকে এক করো’। একদিকে যেমন বলা হয়ে থাকে, ‘ Workers of the World Unite ’, তেমনি ভারতীয় দর্শন থেকে তৈরি ভাবধারা নিয়েদত্তোপন্ত বলতেন – ‘ Workers Unitethe World ’।আজ যখন শ্রমিকদের কথা বলছি তখন, দত্তোপন্ত ঠেঙ্গড়িকে স্মরণ করা খুবই স্বাভাবিক।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কয়েকদিন পরেই আমরা বুদ্ধপূর্ণিমা পালনকরব। দুনিয়ার সব বৌদ্ধধর্মাবলম্বী ওইদিন উৎসব পালন করেন। সাম্প্রতিক পৃথিবীতে যখনহিংসা, যুদ্ধ, ধ্বংস আর অস্ত্রের আস্ফালনের পরিবেশ দেখি, তখন বুদ্ধের চিন্তাধারাকেখুব সময়োপযোগী বলে মনে হয়। আর ভারতে তো মহামতি অশোকের জীবনে যুদ্ধ থেকে বুদ্ধেরদিকে যাত্রা এক অনন্য প্রতীক। বুদ্ধপূর্ণিমার এই দিনেই রাষ্ট্রসঙ্ঘ ‘ Vesak Day ’ পালন করে। এবছর এটি শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত হবে এবং আমারসৌভাগ্য যে এই উপলক্ষ্যে আমি সেখানে গিয়ে ভগবান বুদ্ধকে শ্রদ্ধা নিবেদনের সুযোগপাব। তাঁর স্মৃতিকে সজীব করে তোলার সুযোগ পাব।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ভারত সর্বদা ‘সব কা সাথ সব কা বিকাশ’ –এই মন্ত্রকে পাথেয় করে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করেছে। আর আমরা যখন ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’-এরকথা বলি, তখন সেটা কেবল ভারতের মধ্যেই আবদ্ধ থাকে না, গোটা বিশ্বকেই তার পরিমণ্ডলধরা হয়। বিশেষ করে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য। ভারতেরপড়শী দেশগুলির নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা বজায় থাক – সেইসঙ্গে তাদের উন্নয়নও হোক।আন্তর্জাতিক স্তরে অনেক প্রকল্পের কাজ চলছে। আগামী ৫-ই মে ভারত ‘দক্ষিণ এশিয়াস্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণ করবে। এই স্যাটেলাইট থেকে যে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে, তাদক্ষিণ এশীয় দেশগুলির আর্থিক এবং অন্যান্য উন্নয়নক্ষেত্রগুলিতে বিশেষ সহায়ক হবে।এর মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদের ম্যাপিং, টেলিমেডিসিন, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তির সংযোগএবং মানুষে মানুষে সম্পর্ক সবকিছুই থাকবে। দক্ষিণ এশিয়ার এই উপগ্রহ আমাদের পুরোএলাকাটির অগ্রগতির সহায়ক হবে। সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে সহযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে এহবে ভারতের তরফ থেকে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ – এক অমূল্য উপহার, দক্ষিণ এশিয়ারপ্রতি আমাদের দায়বদ্ধতার এ এক উপযুক্ত নিদর্শন। দক্ষিণ এশিয়ার যেসব দেশ এই দক্ষিণএশীয় স্যাটেলাইট প্রকল্পে যুক্ত আছে, আমি তাঁদের সকলকে এই বিশেষ প্রচেষ্টার জন্যস্বাগত জানাই – তাঁদের জন্য আমার শুভকামনা রইল।
আমার প্রিয় দেশবাসী, খুব গরম পড়েছে। আপনার নিজের যত্ন নিন,আপনজনদেরও যত্ন নিন। অনেক অনেক শুভেচ্ছা। ধন্যবাদ!
আমার প্রিয় দেশবাসীগণ , আপনাদের সবাইকে নমস্কার !
দেশের প্রতিটি কোণে অধিকাংশ পরিবার নিজেদের সন্তানদের পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত। যাদের পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছে সেখানে কিছুটা স্বস্তির পরিবেশ রয়েছে আর যেখানে পরীক্ষা চলছে , সেই সব পরিবার এখনও কিছুটা চাপে আছেন। কিন্তু এমন একটা সময় আমি এটাই বলব যে গত বার আমি ‘ মন কী বাত ’ এ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে যে কথাগুলো বলেছিলাম , ওগুলো আবার শুনে নিন। পরীক্ষার সময় ওই কথাগুলো নিশ্চিতভাবে আপনাদের কাজে লাগবে।
আজ ২৬শে মার্চ। ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক লড়াই , বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনতার অভূতপূর্ব বিজয়। আজ এই মহান দিবসে , আমি বাংলাদেশের নাগরিক ভাই – বোনেদের স্বাধীনতা দেবসের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আর এই কামনা করছি যে বাংলাদেশের অগ্রগতি হোক , উন্নয়ন হোক আর বাংলাদেশবাসীদেরও আমি এই আশ্বাস দেব যে ভারত বাংলাদেশের এক শক্তিশালী সঙ্গী , এক ভালো বন্ধু আর আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই গোটা অঞ্চলে শান্তি , সুরক্ষা আর উন্নয়নে অবদান রাখব।
আমরা সবাই এ ব্যাপারে গর্বিত যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর , তাঁর স্মৃতি , আমাদের দু ’ দেশেরই ঐতিহ্য। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতও গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্পর্কে একটা খুব আকর্ষণীয় তথ্য এই যে , ১৯১৩ সালে উনি শুধু নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত এশিয়ার প্রথম ব্যক্তিই ছিলেন না , ইংরেজরা ওঁকে নাইটহুড উপাধিও দিয়েছিল। আর যখন ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালা বাগে ইংরেজরা গণহত্যা চালাল , তখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন সেই সব মহাপুরুষদের মধ্যে যাঁরা প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিলেন আর এই সেই সময় যখন বারো বছরের এক শিশুর মনে এই ঘটনার গভীর প্রভাব পড়েছিল। মাঠে – ময়দানে হেসেখেলে বেড়ানো ওই বালকের জীবনে এক নতুন অভিমুখ এনে দিল জালিয়ান ওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকান্ড। আর ১৯১৯ সালে ১২ বছরের ওই বালক ভগৎ আমাদের সবার প্রিয় , আমাদের সবার প্রেরণা – শহীদ ভগৎ সিং। আজ থেকে তিন দিন আগে , ২৩শে মার্চ ভগৎ সিংকে আর ওনার সঙ্গী – সুখদেব আর রাজগুরুকে ইংরেজরা ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল আর আমরা সবাই জানি ২৩শে মার্চের সেই ঘটনা – ভগৎ সিং , সুখদেব , রাজগুরুর মুখে ভারত মায়ের সেবায় লাগার তৃপ্তি – কোনো মৃত্যুভয় ছিল না। জীবনের সব স্বপ্ন ভারত মায়ের মুক্তির জন্য বলি দিয়েছিলেন তাঁরা। আর ওই তিন বীর আজও আমাদের প্রেরণা। ভগৎ সিং , সুখদেব আর রাজগুরুর বলিদানের কাহিনি আমরা শব্দে বর্ণনা করতে পারব না। গোটা ব্রিটিশ প্রশাসন এই তিন যুবককে ভয় পেত। জেলে তাঁরা বন্দী , ঠিক হয়ে গিয়েছে ফাঁসির দিন , কিন্তু তাও তাঁদের নিয়ে কী করা যায় এই চিন্তা উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল ব্রিটিশদের। আর তাই তো ২৪শে মার্চ যেখানে ফাঁসী দেওয়ার কথা সেখানে ফাঁসি হয়ে গেল ২৩ তারিখ। লুকিয়েচুরিয়ে করা হল এটা যা সাধারণভাবে দেখা যায় না। আর এর পরে ওঁদের মৃতদেহ আজকের পাঞ্জাবে এনে ইংরেজরা চুপচাপ পুড়িয়ে দিয়েছিল। অনেক বছর আগে যখন প্রথমবার আমি সেখানে যাওয়ার সুযোগ পেলাম তখন ওই ভূমির কম্পন যেন অনুভব করতে পেরেছিলাম। আর আমি দেশের তরুণদের অবশ্যই বলব , যখনই পাঞ্জাবে যাওয়ার সুযোগ পাবে , ভগৎ সিং , সুখদেব , রাজগুরু , ভগৎ সিংয়ের জননী এবং বটুকেশ্বর দত্তের সমাধিতে অবশ্যই যেও।
এই সময়েই স্বাধীনতার হাতছানি , তার তীব্রতা , তার উন্মাদনা বেড়ে চলল। এক দিকে ভগৎ সিং , সুখদেব , রাজগুরুর মত বীরেরা সশস্ত্র বিপ্লবের প্রেরণা দিয়েছিলেন যুবকদের। অন্যদিকে , আজ থেকে ঠিক ১০০ বছর আগে , ১৯১৭ সালের ১০ই এপ্রিল , চম্পারণে সত্যাগ্রহ করেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। এ বছর চম্পারণ সত্যাগ্রহের শতবর্ষ পূর্তি। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে গান্ধী ভাবধারা আর গান্ধী শৈলী , এর প্রকট রূপ প্রথমবার দেখা গেল চম্পারণে। স্বাধীনতার গোটা আন্দোলনে এ ছিল এক পট পরিবর্তন , বিশেষ করে সঙ্ঘর্ষের রীতি – পদ্ধতির দৃষ্টিকোণ থেকে। এই সেই পর্ব , চম্পারণের সত্যাগ্রহ , খেড়া সত্যাগ্রহ , আহমেদাবাদে কারখানার শ্রমিকদের হরতাল – আর এই সব কিছুর মধ্যে মহাত্মা গান্ধীর ভাবধারা আর কাজের শৈলীর গভীর প্রভাব দেখা যাচ্ছিল। ১৯১৫ সালে গান্ধীজী বিদেশ থেকে ফিরে এলেন আর ১৯১৭ সালে বিহারের এক ছোটো গ্রামে গিয়ে উনি দেশকে নতুন প্রেরণা দিলেন।
আজ আমাদের মনে মহাত্মা গান্ধীর যে ছবি রয়েছে , সেই ছবির ভিত্তিতে আমরা চম্পারণ সত্যাগ্রহের মূল্যায়ন করতে পারব না। কল্পনা করুন এক জন মানুষের কথা , যিনি ১৯১৫ সালে হিন্দুস্থানে ফিরে এলেন , কাজ করলেন মাত্র দুটো বছর। না জানতেন দেশকে , না ছিল ওঁর কোনো প্রভাব , সেটা ছিল আরম্ভ মাত্র। সেই সময় ওঁকে কতটা কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল , কতটা পরিশ্রম করতে হয়েছিল , তার আন্দাজ করতে পারি আমরা। আর চম্পারণ সত্যাগ্রহ এমনই ছিল যেখানে মহাত্মা গান্ধীর সাংগঠনিক কৌশল , মহাত্মা গান্ধীর ভারতীয় সমাজের নাড়ি – নক্ষত্র জানার শক্তি , মহাত্মা গান্ধীর নিজের আচরণের মাধ্যমে ইংরেজ প্রশাসনের বিরুদ্ধে হতদরিদ্র , একান্তই অক্ষরজ্ঞানশূন্য ব্যক্তিকে লড়াইয়ের জন্য তৈরি করা , অনুপ্রাণিত করা , লড়াইয়ের ময়দানে নিয়ে আসা – এক অদ্ভূত শক্তির প্রদর্শন ঘটেছিল। তাই আমরা মহাত্মা গান্ধীর বিশালত্বকে অনুভব করতে পারি। কিন্তু যদি একশো বছর আগের গান্ধীর কথা ভাবেন , ওই চম্পারণ সত্যাগ্রহের গান্ধীর কথা , তাহলে জনজীবনের অঙ্গণে সদ্য প্রবেশ করা যে কোনো ব্যক্তির জন্য চম্পারণ সত্যাগ্রহ এক গভীর অধ্যয়নের বিষয়। জনজীবনে অংশগ্রহণের কাজটা শুরু করা যায় কীভাবে , নিজেকে কতটা পরিশ্রম করতে হয় আর গান্ধী কীভাবে সেটা করেছিলেন , এটা আমরা ওঁর থেকে শিখতে পারি। আর সে ছিল একটা সময় , যখন তাবড় তাবড় নেতারা , যাঁদের নাম শুনি আমরা , সে রাজেন্দ্রবাবু হোন , আচার্য কৃপালনী হোন – সবাইকে গ্রামে পাঠিয়েছিলেন গান্ধী। মানুষের সাথে মিশে , মানুষ যে কাজ করছে তাকেই স্বাধীনতার রঙে রাঙিয়ে তোলা – এর পদ্ধতি শিখিয়েছিলেন। আর ইংরেজরা বুঝতেই পারে নি যে এই গান্ধীর কাজের রীতি – পদ্ধতি কী। লড়াইও চলল , সৃষ্টিও চলল আর দুটোই একসঙ্গে চলল। গান্ধী যেন একটা নয়া পয়সার দুটো পিঠ বানিয়ে দিয়েছিলেন – এক পিঠে লড়াই তো অন্য পিঠে সৃষ্টি। এক দিকে জেল ভরে দেওয়া তো অন্যদিকে গঠনমূলক কাজে নিজেকে সঁপে দেওয়া । এক বড় অদ্ভূত ভারসাম্য ছিল গান্ধীর কার্যশৈলীর মধ্যে। সত্যাগ্রহের অর্থ কী হতে পারে , অসহমত কী হতে পারে , এত বড় একটা সাম্রাজ্যের সামনে অসহযোগের অর্থ কী হতে পারে – শুধু শব্দ দিয়েই নয় , সফল উপস্থাপনের মাধ্যমে এক সম্পূর্ণ নতুন বিচারধারা উপস্থাপন করেছিলেন গান্ধী। আজ যখন গোটা দেশ চম্পারণ সত্যাগ্রহের শতবর্ষ পূর্তি পালন করছে , নতুন ভারতের সাধারণ মানুষের শক্তি কত অসীম , এই অসীম শক্তিকে স্বাধীনতা সংগ্রামের মত , স্বরাজ থেকে সুরাজের যাত্রাতেও , একশো পঁচিশ কোটি ভারতবাসীর সংকল্পশক্তি , পরিশ্রম ; সর্বজন হিতায় সর্বজন সুখায় – এই মন্ত্রকে মূলধন করে দেশের জন্য , সমাজের জন্য কিছু করে দেখানোর অখণ্ড প্রয়াসই সেই সমস্ত মহাপুরুষের স্বপ্নকে সাকার করবে যাঁরা দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছেন।
আর এই একবিংশ শতাব্দীতে এমন কোন ভারতীয় আছেন – যিনি পরিবর্তন চান না , যিনি দেশের প্রগতিতে অংশীদার হতে চান না। একশো পঁচিশ কোটি ভারতবাসীর প্রগতির এই ইচ্ছেই এক নতুন ভারত – New India – র বীজ বপণ করবে। New India , অর্থাৎ নতুন ভারত কোনো সরকারী কার্যক্রম নয় , কোনও রাজনৈতিক দলের ইস্তেহার নয় , বা কোনও Project – ও নয়। এ হল একশো পঁচিশ কোটি দেশবাসীর আহ্বান। সমগ্র ভারতবাসী এক অতুল , অভিনব দেশ গঠন করতে চান। এ হল তাঁদের মনের এক আশা , এক সংকল্প , এক আকাঙ্ক্ষা।
আমার প্রিয় দেশবাসী , আমরা যদি নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনকে একপাশে রেখে সংবেদনশীল দৃষ্টিতে সমাজের গতিবিধির প্রতি দৃষ্টিপাত করি এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি জানার ও বোঝার চেষ্টা করি , তাহলে আমরা অবাক হয়ে দেখব – লক্ষ লক্ষ মানুষ নিঃস্বার্থভাবে পারিবারিক কর্তব্যের ঊর্ধ্বে উঠে সমাজের শোষিত , বঞ্চিত , গরীব – দুঃখী মানুষের জন্য কিছু না কিছু করে চলেছেন এবং করে চলেছেন মৌন তপস্বীর মত। এমন অনেক মানুষ আছেন , যাঁরা নিয়মিত হাসপাতালে যান রুগীদের সেবা করতে। অনেকে আছেন যাঁরা রক্তদানের প্রয়োজন শুনলে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে রক্তদানের জন্য এগিয়ে আসেন। আবার অনেকে এমনও আছেন , যাঁরা ক্ষুধার্তদের ভোজনের ব্যবস্থা করে থাকেন। আমাদের দেশ রত্নগর্ভা এবং জনসেবাই প্রভুর সেবা – এই ভাবনা আমাদের জন্মগত। যদি আমরা এই চিন্তাভাবনাকে একসঙ্গে সংগঠিতরূপে দেখি , তাহলে বোঝা যাবে , এটা কত বড় শক্তি। New India – র প্রসঙ্গে আলোচনা হলে , ভিন্ন মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গিও যে উঠে আসবে তা খুবই স্বাভাবিক ও অনিবার্য। কিন্তু এটাও সত্যি যে সমগ্র দেশবাসী যদি সংকল্প করে এবং তাকে বাস্তবায়িত করার পথে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে থাকে , তাহলে নতুন ভারতের স্বপ্ন সফল হতে পারে। জরুরি নয় যে এসমস্ত কাজ বাজেট বা সরকারী খরচায় হতে হবে। যদি প্রত্যেক নাগরিক সংকল্প করেন তাঁরা ট্র্যাফিক নিয়ম মেনে চলবেন , নিজকর্তব্য নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবেন , সপ্তাহে অন্তত একদিন পেট্রোল – ডিজেল – এর ব্যবহার বন্ধ রাখবেন , তাহলে আমরা এই ছোটো ছোটো পদক্ষেপের মাধ্যমে New India – র স্বপ্নকে সাকার হতে দেখবো। এটুকুই বলব যে , প্রত্যেকে নিজেদের নাগরিকধর্ম পালন করুন , কর্তব্য পালন করুন। এইভাবেই ‘ নতুন ভারত ’ গঠনের সূচনা হতে পারে। আগামী ২০২২ – এ ভারতের স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর হতে চলেছে। আসুন , আমরা এই উপলক্ষে ভগৎ সিংহ , রাজগুরু , সুখদেবকে স্মরণ করি , স্মরণ করি চম্পারণ সত্যাগ্রহকে। আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি , আসুন , আপনারা নিজেদের জীবনকে অনুশাসিত ও সংকল্পবদ্ধ করুন ও ‘ স্বরাজ থেকে সুরাজ ’ – এর এই যাত্রায় অংশীদার হন।
আমার প্রিয় দেশবাসী , আজ আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও ব্যক্ত করতে চাই। বিগত কয়েক মাস ধরে আমরা লক্ষ করেছি , বৃহৎ সংখ্যক মানুষ ডিজিট্যাল পেমেণ্ট অর্থাৎ ‘ ডিজিধন ’ আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। নগদহীন লেনদেনের প্রতি মানুষের ঔৎসুক্য বেড়েছে , গরীব মানুষরাও শেখার চেষ্টা করছেন এবং ধীরে ধীরে সকলে নগদহীন লেনদেনের দিকে ঝুঁকছেন। ‘ ডিমনিটাইজেশন ’ অর্থাৎ বিমুদ্রাকরণের পরে ডিজিট্যাল পেমেণ্টের বিভিন্ন পদ্ধতি ও তার প্রয়োগের প্রতি উৎসাহ বৃদ্ধি হতে দেখেছি। ‘ ভীম ’ অ্যাপ শুরু হয়েছে দু – আড়াই মাস আগে , কিন্তু ইতিমধ্যেই প্রায় দেড়কোটি মানুষ এটি ডাউনলোড করেছেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী , কালো টাকা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। একশো পঁচিশ কোটি দেশবাসীর পক্ষে এক বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকার ডিজিট্যাল লেনদেন করার সংকল্প নেওয়া সম্ভব কি ? যদি আপনারা চান তাহলে এক বছর অপেক্ষাও নিষ্প্রয়োজন। ছয় মাসেই এই কার্যসাধন সম্ভব। আমরা বাজেটেও এই কথার উল্লেখ করেছি। এই আড়াই হাজার কোটির ডিজিট্যাল লেনদেন কীভাবে সম্ভব ? আমরা যখন স্কুলের ফিজ্ দেব , তখন নগদ ব্যবহার না করে ডিজিট্যাল পেমেণ্ট করবো। রেলে অথবা বিমান যাত্রার সময় ডিজিট্যাল পেমেণ্ট করব। ওষুধ কেনার সময় বা দোকানে লেনদেনের সময়েও আমরা ডিজিট্যাল মাধ্যমের ব্যবহার করবো। দৈনন্দিন জীবনে আমরা অনায়াসেই এই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারি। আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না , এইভাবে আপনি দেশসেবার এক বড় অংশীদার হতে পারেন। কালো টাকা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিজেকে এক বীর সৈনিক প্রতিপন্ন করতে পারেন। কিছুদিন আগে লোকশিক্ষা ও সচেতনতার জন্য ‘ ডিজিধন মেলা ’ র আয়োজন করা হয়েছিল। সারা দেশ জুড়ে এরকম একশোটি কার্যক্রম করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যার মধ্যে ৮০ – ৮৫টি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। এতে পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। প্রায় সাড়ে বারো লক্ষ মানুষ উপভোক্তাদের জন্য নির্দিষ্ট পুরস্কার পেয়েছেন এবং সত্তর হাজার মানুষ ব্যবসায়ীদের জন্য নির্দিষ্ট পুরস্কার প্রাপ্ত হয়েছেন । উপস্থিত প্রত্যেকেই এই প্রয়াসকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সংকল্প নিয়েছেন। ১৪ – ই এপ্রিল ড . বাবাসাহেব আম্বেদকরের জন্মজয়ন্তী। পূর্ব নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ – ই এপ্রিল এই ‘ ডিজি মেলা ’ র সমাপ্তি হবে। একশো দিন শেষ হওয়ার পর এক বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে যেখানে একটি বড় ড্র – এর ব্যবস্থা রাখা হবে। আমার মনে হয় , বাবাসাহেব আম্বেদকরের জন্মজয়ন্তী আসতে এখনও যে ক ’ দিন সময় আছে , তার মধ্যে ‘ ভীম ’ অ্যাপ – এর প্রভূত প্রচার হওয়া দরকার। নগদ লেনদেন এবং নোটের ব্যবহার কমানোর এই প্রচেষ্টায় আসুন আমরা যোগদান করি।
আমার প্রিয় দেশবাসী , আমি খুশি যে যখনই ‘ মন কি বাত ’ – এর জন্য আপনাদের পরামর্শ চাই , তখন অনেক মতামত আসে। কিন্তু আমি লক্ষ করেছি যে , স্বচ্ছতা বিষয়ে আগ্রহের অভাব নেই। দেরাদুন থেকে গায়ত্রী নামের এক কন্যা – যে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী , সে ফোনে একটি বার্তা পাঠিয়েছে।
আদরণীয় প্রধান শিক্ষক – প্রধান মন্ত্রীজি , আপনাকে প্রণাম জানাই। সর্বপ্রথম আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি যে আপনি এই নির্বাচনে প্রচুর ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। আমি আপনাকে আমার মনের কথা জানাতে চাই। আমার মনে হয় স্বচ্ছতা কতটা জরুরি সেটা সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে। আমি প্রতিদিন একটি নদীর পাশ দিয়ে যাই , যেখানে লোকজন অনেক আবর্জনা ফেলে নদীটিকে দূষিত করে। এই নদীটি রিস্পনা পুল দিয়ে আসছে এবং আমাদের বাড়ি পাশ দিয়ে বয়ে গেছে । এই নদীকে স্বচ্ছ রাখার জন্য আমি পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি , মিছিল করেছি , কিন্তু বিশেষ লাভ হয়নি। আমি আপনাকে অনুরোধ করবো যে আপনি এখানে একটি দল পাঠান অথবা সংবাদপত্রের মাধ্যমে এই বিষয়টিকে প্রকাশ করুন। ধন্যবাদ !
ভাই – বোনেরা , আপনারা দেখুন – একাদশ শ্রেণির একটি মেয়ে কতটা কষ্ট পাচ্ছে। নদীতে ফেলা ময়লা আবর্জনা দেখে সে কতটা ক্রুদ্ধ ! এটাকে আমি একটা ভালো সংকেত মনে করি। আমি তো এটাই চাই যে ১২৫ কোটি দেশবাসীর মনে আবর্জনার প্রতি ক্রোধ সৃষ্টি হোক। একবার ক্রোধ সৃষ্টি হলে , অসন্তুষ্টি সৃষ্টি হলে , ক্ষোভ তৈরি হলে আমরা আবর্জনার বিরুদ্ধে অভিযানে কিছু নিশ্চয় করতে পারবো। এটা ভালো ব্যাপার যে গায়ত্রী নিজে ক্রোধ প্রকাশ করেছে , আমাকে পরামর্শ দিয়েছে এবং একই সঙ্গে একথাও বলেছে যে সে অনেক চেষ্টা করেছে , কিন্তু বিফল হয়েছে। যখন থেকে স্বচ্ছতার আন্দোলন শুরু হয়েছে , সচেতনতা বেড়েছে। সবাই সদর্থক রূপে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এটা একটা আন্দোলনের রূপ নিয়েছে। আবর্জনার প্রতি ঘৃণা ধীরে ধীরে বাড়ছে। মানুষ সচেতন হোক , সক্রিয় ভাবে অংশ গ্রহণ করুক , আন্দোলন হোক – এর তো একটা নিজস্ব গুরুত্ব আছেই। কিন্তু আন্দোলনের থেকেও স্বচ্ছতার বিষয়টি অভ্যাসের সঙ্গে বেশী জড়িত । তাই এই আন্দোলন অভ্যাস পরিবর্তনের আন্দোলন , এই আন্দোলন স্বচ্ছতার অভ্যাস তৈরি করার আন্দোলন। সার্বিকভাবে এই আন্দোলন সম্ভব। কাজ কঠিন , কিন্তু এটা আমাদের করতেই হবে। আমার বিশ্বাস যে দেশের নবীনদের মধ্যে , ছেলেদের মধ্যে , শিক্ষার্থীদের মধ্যে , যুবকদের মধ্যে যে সচেতনতা এসেছে , সেটা সামগ্রিকভাবে একটা ভালো পরিনামের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আজকে আমার ‘ মন কি বাত ’ – এ যাঁরা গায়ত্রীর কথা শুনছেন , আমি সেই সব দেশবাসীকে বলতে চাইবো যে গায়ত্রীর বক্তব্য যেন আমাদের সকলের বক্তব্য হয়।
আমার প্রিয় দেশবাসী , যখন থেকে আমি ‘ মন কি বাত ’ অনুষ্ঠান করছি , প্রথম থেকে একটি বিষয়ে অনেক পরামর্শ আসছে , অনেক লোক যে বিষয়ে তাঁদের চিন্তা ব্যক্ত করেছেন সেটা হচ্ছে উদ্বৃত্ত খাদ্য সম্পর্কে , আমরা সকলেই জানি যে বাড়িতেই হোক বা কোনও সামুদায়িক ভোজের ক্ষেত্রে আমরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত থালায় নিয়ে ফেলি। যা যা চোখের সামনে দেখি , সবই থালায় নিয়ে নিই এবং শেষ পর্যন্ত খেতে পারি না। যতটা থালায় নিই অর্ধেকও পেটে যায় না , আর সেটা সেখানে ফেলে দিয়েই বেরিয়ে পড়ি। কখনও ভেবে দেখেছেন আমরা যে অভুক্ত খাবার ফেলে দিই , তাতে আমরা কতটা অপচয় করি। এটা কী কখনও ভেবে দেখেছেন যদি অপচয় না করেন , তাহলে এই খাবার কত গরীব মানুষের পেট ভরাতে পারে। এই বিষয়ে আলাদা করে বোঝানোর কিছু নেই। সাধারণত আমাদের বাড়িতে মা যখন ছোটো বাচ্চাদের খাবার পরিবেশন করেন , তখন বলেন যতটা খেতে পারবে , ততটাই নাও। এই মর্মে কিছু প্রচেষ্টা তো হয়ই কিন্তু তা সত্ত্বেও এই ব্যাপারে উদাসীনতা সামাজিক অব্যবস্থার প্রকাশ। গরীবদের প্রতি এটা অন্যায়। দ্বিতীয়তঃ যদি সাশ্রয় হয় , তাহলে পরিবারেরও আর্থিক লাভ হবে। সমাজের জন্য ভাবনা ভালো , কিন্তু এই বিষয়টি এমন যে এতে পরিবারও সুফল পাবে । আমি এই বিষয়ে কিছু বলতে চাই না কিন্তু আমি চাই যে সচেতনতা বাড়ুক। আমি কিছু যুবকদের চিনি , যাঁরা এই ধরনের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা মোবাইল অ্যাপ বানিয়েছেন এবং কোথাও যদি এরকম অভুক্ত খাওয়ার পড়ে থাকে তাহলে লোক ডেকে একত্রিত করে তার সদ্ব্যবহার করেন। আমাদের দেশের নবযুবকরাই এই ধরনের পরিশ্রম করেন। দেশের সব রাজ্যেই কোথাও না কোথাও এই ধরনের মানুষ পাওয়া যাবে। ওঁদের কাজ আমাদের প্রেরণা জোগাতে পারে , যাতে আমরা খাবার অপচয় না করি। আমরা ততটাই নেব , যতটা খাব। পরিবর্তনের জন্য এটাই তো পথ। এবং যাঁরা স্বাস্থ্যসচেতন , তাঁরা তো সবসময়েই বলে থাকেন – প্লেটও একটু খালি রাখুন , পেটও একটু খালি রাখুন । স্বাস্থ্যর কথাই যখন এল , তখন বলি , ৭ এপ্রিল ‘ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ’ । রাষ্ট্র সঙ্ঘ ২০৩০ পর্যন্ত ‘ Universal HealthCoverage ’ অর্থাৎ ‘ সকলের জন্য স্বাস্থ্য ’ লক্ষ্য স্থির করেছেন। এবার রাষ্ট্রসঙ্ঘ ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে depression – এর উপর বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন। এবারের থিম depression । আমরা depression শব্দের সঙ্গে পরিচিত , কিন্তু যদি আক্ষরিক অর্থ করি , তো কিছু মানুষ একে অবসাদও বলেন। একটি হিসেব অনুসারে বিশ্বে প্রায় পঁয়ত্রিশ কোটির বেশি মানুষ মানসিক অবসাদের শিকার। সমস্যা হল আমাদের আশেপাশের অনেকেই এই রোগের শিকার , কিন্তু আমরা সেটা বুঝতে পারি না। আর হয়ত মন খুলে এবিষয়ে কথা বলতেও সংকোচ বোধ করি। যে নিজে অবসাদে ভোগে , সেও কিছু বলে না। কারণ , সে এবিষয়ে কথা বলতে লজ্জা বোধ করে।
আমার দেশবাসীকে বলতে চাই , depression এমন নয় যে তার থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। একটা মনোবৈজ্ঞানিক পরিসর তৈরি করলেই সে মুক্তির পথ মিলতে শুরু করে। প্রথম কথা depression – কে suppress না করে তাকে express করা দরকার। নিজের বন্ধুদের সঙ্গে বাবা – মা ’ র সঙ্গে , ভাই – বোনদের সঙ্গে , শিক্ষকের কাছে মন খুলে বলুন – আপনার ভেতরে কী হচ্ছে। হোস্টেলে থাকলে অনেক সময় একাকীত্ব গ্রাস করে। আমাদের সৌভাগ্য , আমরা যৌথ পরিবারে বড় হই । অনেক বড় হয় যৌথ পরিবার। সবাই মিলে এক সঙ্গে থাকায় depression – এর সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়। তারপরেও আমি বাবা – মায়েদের বলব , খেয়াল রাখুন , আগে যে পারিবারিক সদস্য সবার সঙ্গে মিলে মিশে থাকতো , ইদানিং সে খেতে ডাকলে পরে খাবে বলে নিজেকে আলাদা করে রাখতে চাইছে কিনা। সবাই মিলে বাইরে কোথাও যাচ্ছেন অথচ পরিবারের ঐ সদস্য ‘ আজ আমার ভালো লাগছে না , আমি যাবো না ’ – বলে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখছে কিনা। আপনি কি কখনো ভেবেছেন ঐ মানুষটি কেন এমন করছে ? আপনি নিশ্চিত থাকুন , এগুলিই depression – এর প্রথম লক্ষণ। কেউ সবার মাঝখান থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখে একা থাকতে চাইলে খেয়াল রাখুন – তাকে একা হতে দেবেন না। যার বা যাদের সঙ্গে সে থাকতে পছন্দ করে তাদের সঙ্গে থাকতে দিন। হই – হুল্লোড় মজার কথার মধ্যে তাকে মন খুলে কথা বলায় উৎসাহিত করুন। মনের গভীরে তার কিসের কুণ্ঠা লুকিয়ে রয়েছে , খুঁজে বার করুন। এটাই শ্রেষ্ঠ উপায়। মনে রাখবেন , depression থেকে শরীরও খারাপ হতে শুরু করে। ডায়াবেটিসের মতো অসুখে মানুষ যেমন শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে , depression মানুষের বিবেচনা শক্তি কমিয়ে দেয় , সাহস কেড়ে নেয় , জীবনযুদ্ধে লড়াইয়ের শক্তি কমিয়ে দেয়। আমাদের সব জীবনীশক্তি ধ্বংস করে দেয়। আপনার সব বন্ধু – বান্ধব , আত্মীয় – স্বজন – পরিবার – সবাই মিলে আপনাকে depression থেকে দূরে রাখে আর depression থেকে মুক্তও করে। অনেকের মাঝে যদি নিজেকে ব্যক্ত করতে না পারেন , তবে আরেকটা উপায় বলে দিই। আপনার এলাকায় কোনও সমাজসেবী থাকলে তাঁর কাছে চলে যান। সেবাকার্যে মানুষের দুঃখ – কষ্ট , তাদের জীবনের নানান সমস্যা ভাগাভাগি করে নিতে শুরু করলে দেখবেন মনের depression চলে যাবে। সেবার মন নিয়ে অন্যের সমস্যার সমাধান করতে শুরু করলে আপনার আত্মবিশ্বাস ফিরে আসবে। অন্যের সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পারলে , সেবা করতে পারলে এবং তা যদি নিঃস্বার্থভাবে করতে পারেন , দেখবেন কি অনায়াসে মন হালকা হয়ে যায়। যোগ অভ্যাস কিন্তু মনের স্বাস্থ্য সুন্দর রাখার উপকারী পথ। মনোকষ্ট থেকে মুক্তি , দমবন্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি এবং প্রসন্ন মনোভাবের জন্য যোগ এক অত্যন্ত কার্যকরী উপায়। প্রতিবছর ২১ জুন ‘ আন্তর্জাতিক যোগ দিবস ’ উদ্ যাপন করা হয়। এবার তৃতীয় বর্ষ হতে যাচ্ছে। আপনারা এখন থেকে তৈরি হতে শুরু করুন। সবাই মিলে মহাসমারোহে এই যোগ উৎসব পালন করতে হবে।
‘ আন্তর্জাতিক যোগ দিবস ’ উদ্ যাপনে আপনাদের যদি কিছু পরামর্শ দেওয়ার থাকে , আমার মোবাইল অ্যাপ – এর মাধ্যমে আমায় সে সব ভাবনা পাঠিয়ে দিন , পথ দেখান । যোগ নিয়ে যত কবিতা , গান লিখতে পারেন , লিখতে থাকুন , যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক উদ্দীপনা আসতে পারে।
এবার আমি মা – বোনেদের কিছু বলবো। স্বাস্থ্যচর্চা নিয়ে অনেক কথাই বলা হল। কিছুদিন আগে ভারত সরকার এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের দেশে যে কর্মরতা মহিলারা রয়েছেন , বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যে মহিলারা সামিল হয়েছেন , তাঁদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মহিলাদের অংশগ্রহণের হার বাড়ছে এটা খুব ভালো কথা। কিন্তু পাশাপাশি মহিলাদের অন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও রয়ে যাচ্ছে। তাঁরা সংসার সামলাচ্ছেন , সংসারের আর্থিক দিকও সামলাচ্ছেন আর তাতে নবজাতক শিশুটির প্রতি অন্যায় হয়ে যাচ্ছে। এজন্য ভারত সরকার একটা অত্যন্ত জরুরি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কর্মরতা মহিলাদের গর্ভাবস্থার সময় , প্রসবকালীন ও প্রসব – পরবর্তী সন্তান প্রতিপালনের সময় যে মাতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়া হত , আগে তা ছিল ১২ সপ্তাহের। এখন সেই মাতৃত্বকালীন ছুটি ১২ সপ্তাহ থেকে বাড়িয়ে ২৬ সপ্তাহ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিশ্বের মাত্র দু – তিনটি দেশই আমাদের থেকে এগিয়ে আছে। হবু মায়েদের জন্য এই বাড়তি ছুটির ব্যবস্থা এক মহৎ প্রয়াস বলে আমি মনে করি। সদ্যোজাত শিশুর সঠিক পরিচর্যার জন্য গর্ভাবস্থা থেকে তাদের উপযুক্ত প্রতিপালনের জন্য মায়ের পরিপূর্ণ মনোযাগ তারা পাবে এবং তারাই আমাদের আগামী দিনের নাগরিক। এই শিশুরা যখন বড়ো হয়ে উঠবে , দেশের সম্পদ হবে। এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে মায়েদের স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। সংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরতা প্রায় ১৮ লক্ষ মায়েদের এই নিয়ম খুব কাজে আসবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী , ৫ এপ্রিল রামনবমী উৎসব পালন হবে। ৯ এপ্রিল মহাবীর জয়ন্তী , আবার ১৪ এপ্রিল বাবাসাহেব আম্বেদকরের জন্মজয়ন্তী। এই মহাপুরুষদের জীবন আমাদের অনুপ্রেরণা দেয় ও New India গঠনের শক্তি যোগায় । দু ’ দিন পরেই চৈত্র শুক্ল প্রতিপদ , বছরের প্রথমদিন । নতুন বছর আসবে , তার জন্য আপনাদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা ! বসন্ত পেরিয়ে যাওয়ার পর ফসল কাটার সময় আসছে , চাষী ভাইদের শ্রমের ফসল তোলার এটাই সময়। আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নববর্ষ উৎসব নানান ভাবে পালিত হয়। মহারাষ্ট্রে ‘ গুড়ি পড়োয়া ’, অন্ধ্র – কর্ণাটকে নববর্ষে পালিত হয় ‘ উগাড়ি ’ , সিন্ধি ‘ চেটি চাঁদ ’, কাশ্মিরী ‘ নবরেহ ’, আওয়োধ – এ ‘ সংবৎসর পূজা ’, বিহারের মিথিলায় ‘ জুড় শীতল ’ আবার মগধে ‘ সতুওয়ানি ’ পালনে নববর্ষের উৎসব পালন করা হয়।
বিপুল দেশ ভারতে বৈচিত্র্যে ভরা রয়েছে। আপনাদের সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই ! অনেক অনেক ধন্যবাদ !
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার! শীত বিদায় নিতে চলেছে।আমাদের সবার জীবনে কড়া নেড়েছে বসন্ত ঋতু। পাতা ঝরার শেষে গাছে নবপত্রেরসঞ্চার হয়। ফুল ফোটে। বাগ-বাগিচায় সবুজের সমারোহ দেখা যায়। পাখির কলকাকলি মনেখুশির জোয়ার আনে। শুধু ফুলই নয়, গাছের শাখায় ফলও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে রৌদ্রকিরণে। গ্রীষ্মঋতুর ফল আমের মুকুলও দেখা যায় এই বসন্তে। একইভাবে চাষের ক্ষেতে সর্ষের হলুদ ফুলদেখে আশায় বুক বাঁধে চাষি। পলাশের লাল ফুল হোলির আগমনের সঙ্কেত দেয়। আমীর খসরু ঋতুপরিবর্তনের এই সময়টার বড় সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেনঃ
বন জুড়ে ফুটছে সর্ষে
আম ফলছে, পলাশ ফুটছে
কোকিল ডাকছে, কুহু-কুহু।
যখন প্রকৃতিতে খুশির রঙ, যখনঋতুর রূপে উৎফুল্লতার ছোঁয়া, তখন মানুষও সেই আনন্দ উপভোগ করে। বসন্ত-পঞ্চমী,মহাশিবরাত্রি এবং হোলি উৎসব মানুষের জীবনকে রঙিন করে তোলে। প্রেম, ভ্রাতৃত্ব আরমানবতায় পূর্ণ এক পরিবেশে আমরা শেষ মাস ফাল্গুনকে বিদায় দিয়ে নতুন মাস চৈত্রকে বরণকরার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছি। এই দুই মাস জুড়েই তো বসন্ত ঋতু।
আমি সবার আগে দেশের লক্ষ লক্ষ নাগরিককে এই জন্য ধন্যবাদ দিতে চাই যে ‘ মন কী বাত ’ -এর আগে যখন আমি আপনাদেরমতামত চাই তখন তা প্রচুর সংখ্যায় এসে জমা হয়। ‘নরেন্দ্রমোদী’ অ্যাপে, টুইটারে,ফেসবুকে এবং ডাকযোগে। আমি এর জন্য আপনাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞ।
শোভা জালান আমাকে ‘নরেন্দ্রমোদী’ অ্যাপে জানিয়েছেন যে অনেক মানুষ ইসরোরসাফল্যের ব্যাপারে অবহিত নয়। আর তাই তিনি বলেছেন যে আমি যেন ১০৪টি উপগ্রহেরউৎক্ষেপণ এবং ইন্টারসেপ্টর মিসাইল নিয়ে কিছু বলি। শোভাজী আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদযে আপনি ভারতের গর্বের নিদর্শনকে স্মরণ করেছেন। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই হোক,অসুখবিসুখের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করা হোক, দুনিয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন হোক,জ্ঞান বা তথ্যের প্রেরণ হোক – প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান নিজের ভূমিকা প্রমাণ করেছে। ২০১৭ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারিভারতের জাতীয় জীবনে এক গৌরবময় দিন। বিশ্বের সমক্ষে আমাদের মাথা উঁচু করে দিয়েছেনআমাদের বিজ্ঞানীরা। আর আমরা জানি যে কয়েক বছরের মধ্যে ইসরো কয়েকটা অভূতপূর্বপ্রকল্প সাফল্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ করেছে। মঙ্গল গ্রহে মার্স মিশন, ‘ মঙ্গলযান ’ পাঠানোর সাফল্যের পরসম্প্রতি মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে এক বিশ্বরেকর্ড স্থাপন করেছে ইসরো। এক মেগামিশনের মাধ্যমে ইসরো বিভিন্ন দেশের যার মধ্যে রয়েছে আমেরিকা, ইজরায়েল, কাঝাখস্তান,নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, ইউ-এ-ই এবং ভারতের মোট ১০৪টি স্যাটেলাইট সাফল্যেরসঙ্গে উৎক্ষেপণ করেছে। ১০৪টি স্যাটেলাইট একসঙ্গে মাহাকাশে পাঠিয়ে ইতিহাস রচনা করাবিশ্বের প্রথম দেশ ভারতবর্ষ। আর এটাও খুশির কথা যে এটা পি-এস-এল-ভির ৩৮তম ধারাবাহিকসফল উৎক্ষেপণ। এটা শুধু ইসরো নয়, গোটা ভারতবর্ষের পক্ষে এক ঐতিহাসিক সাফল্য। ইসরোরএই খরচ সাশ্রয়ী কার্যকরী মহাকাশ কর্মসূচি সারা পৃথিবীর কাছে এক বিস্ময় হয়ে দেখাদিয়েছে আর তাই সারা বিশ্ব খোলা মনে ভারতের বৈজ্ঞানিকদের সাফল্যের প্রশংসা করেছে।
আমার ভাই ও বোনেরা, এই ১০৪টি স্যাটেলাইটের মধ্যে একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ – কার্টোস্যাট 2D – এটা ভারতের স্যাটেলাইট এবংএর মাধ্যমে গৃহীত চিত্র আমাদের সম্পদের ম্যাপিং, পরিকাঠামো নির্মাণ, উন্নয়নেররূপরেখা তৈরি, বিভিন্ন শহরের উন্নতির নক্শা রচনার জন্য প্রচুর সাহায্য করবে।বিশেষ করে আমার কৃষক ভাই বোনেরা জানতে পারবেন যে আমাদের দেশে কোথায় কতটা জলসম্পদআছে, এর ব্যবহার কেমনভাবে করা উচিত, কোন কোন ব্যাপারে নজর দেওয়া উচিত – এই সব বিষয়ে আমাদের নতুনস্যাটেলাইট Cartosat 2D খুব সাহায্য করবে।আমাদের স্যাটেলাইট কক্ষে পৌঁছেই কিছু ছবি পাঠিয়েছে। নিজের কাজ শুরু করে দিয়েছে সেটি।আমাদের কাছে এটাও খুব আনন্দের যে এই সব অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছেন আমাদের যুবাবৈজ্ঞানিকরা, আমাদের মহিলা বৈজ্ঞানিকরা, তাঁরাই এসব করেছেন। যুবকদের এবং মহিলাদেরএই দুর্দান্ত সহযোগিতা ইসরোর সাফল্যের এক বড় গৌরবজনক দিক। আমি দেশবাসীদের পক্ষথেকে ইসরোর বৈজ্ঞানিকদের ভূয়সী প্রশংসা করছি। সাধারণ মানুষের জন্য, রাষ্ট্রেরসেবার জন্য মাহাকাশ বিজ্ঞানকে প্রয়োগ করার উদ্দেশ্যকে তাঁরা সবসময় অটুট রেখেছেন আরনিত্যদিন নতুন নতুন কৃতিত্বের রচনা করে চলেছেন। আমাদের এই বৈজ্ঞানিকদের, তাঁদেরপুরো টীমকে আমরা যতই প্রশংসা করি না কেন ততই তা কম হবে।
শোভাজী আর একটি প্রশ্ন রেখেছেন এবং তা ভারতের সুরক্ষা সম্পর্কিত। এই বিষয়েভারত এক বড় সাফল্য পেয়েছে। এই ব্যাপারটার নিয়ে খুব বেশি চর্চা এখনও অবধি হয় নিকিন্তু শোভাজীর নজর পড়েছে এদিকে। প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে ভারত ব্যালিস্টিকইন্টারসেপ্টর মিসাইলের সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। ইন্টারসেপশন প্রযুক্তিতে বলীয়ানএই ক্ষেপণাস্ত্র নিজের পরীক্ষামূলক উড়ানের সময় মাটি থেকে প্রায় একশ কিলোমিটার উপরেশত্রুর ক্ষেপণাস্ত্রকে আটকে দিয়ে সাফল্য সূচিত করেছে। প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে এ একগুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। আর আপনারা জেনে খুশি হবেন যে বিশ্বে খুব বেশি হলে চারটি বাপাঁচটি দেশের এই দক্ষতা রয়েছে। ভারতের বৈজ্ঞানিকরা এটা করে দেখিয়েছেন। আর এর শক্তিএমনই যে যদি দু ’ হাজার কিলোমিটার দূর থেকেওভারতকে আক্রমণের লক্ষ্যে কোনো মিসাইল ছোঁড়া হয়, তবে এই মিসাইল শূন্যেই সেটাকে নষ্টকরে দেবে।
যখন নতুন প্রযুক্তি দেখি, কোনো নতুন বৈজ্ঞানিক সাফল্য দেখি, তখন আনন্দ হয়আমাদের। আর মানব জীবনের বিকাশের ধারায় জিজ্ঞাসা এক বড় ভূমিকা পালন করেছে। আর যিনিবিশেষ বুদ্ধিধর তিনি জিজ্ঞাসাকে জিজ্ঞাসা রূপে রাখতে দেন না, উনি তার মধ্যেওপ্রশ্নের সঞ্চার করেন, নতুন জিজ্ঞাসা খুঁজে বেড়ান, নতুন জিজ্ঞাসার সৃষ্টি করেন। আরসেই জিজ্ঞাসাই নতুন আবিষ্কারের কারণ হয়ে ওঠে। এঁরা ততক্ষণ শান্ত হন না যতক্ষণ সেইপ্রশ্নের উত্তর না পাওয়া যায়। আর হাজার হাজার বছরের মানব জীবনের বিকাশের ধারাকেযদি আমরা দেখি, তাহলে আমরা বলতে পারি যে মানব জীবনের এই বিকাশের ধারায় কোথাওপূর্ণচ্ছেদ নেই। পূর্ণচ্ছেদ অসম্ভব। ব্রহ্মাণ্ডকে, সৃষ্টির নিয়মসমূহকে, মানুষেরমনকে জানার প্রয়াস নিরন্তর চলতে থাকে। নতুন বিজ্ঞান, নতুন প্রযুক্তি তার মধ্যেথেকেই জন্ম নেয়। আর প্রতিটি প্রযুক্তি, বিজ্ঞানের প্রতিটি নতুন রূপ, এক নতুন যুগেরজন্ম দেয়।
আমার প্রিয় তরুণেরা, যখন আমরা বিজ্ঞানের কথা বলি,বৈজ্ঞানিকদের কঠোর শ্রমের কথা বলি, আমার মনে পড়ে আমার এই ‘মন কী বাত’ অনুষ্ঠানেকয়েকবার বলেছি যে তরুণ প্রজন্মের বিজ্ঞানের প্রতি আকর্ষণ থাকা উচিত। দেশে অনেক –অনেক বৈজ্ঞানিকের প্রয়োজন। আজকের বৈজ্ঞানিক আগামী প্রজন্মের জীবনে স্থায়ীপরিবর্তনের সূচনা করবেন।
মহাত্মা গান্ধী বলতেন, ‘ No science has dropped from the skies in a perfect form. All sciencesdevelop and built up through experience ’ পূজনীয়বাপু আরও বলতেন ‘ I have nothing butpraise for the zeal, industry and sacrifice that have animated the moderscientists in the pursuit after the truth ’। সাধারণমানুষের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে বিজ্ঞান যখন তার গবেষণা করে, কিছু আবিষ্কার করেএবং সেই আবিষ্কার কীভাবে জনসাধারণের কাজে আসবে সেই ভাবনায় সামিল হয়, বিজ্ঞান তখনসাধারণ মানুষের আপন হয়ে ওঠে। তখনই বিজ্ঞান মহান হয়ে ওঠে। কিছুদিন আগে ১৪-তম‘প্রবাসী ভারতীয় দিবস’ উপলক্ষে ‘নীতি আয়োগ’ ও ‘বিদেশ ’ মন্ত্রক এক বড় ও অভিনব ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল।সমাজের উপযোগী উদ্ভাবনের পরিকল্পনার আহ্বান করা হয়েছিল। এই সব উদ্ভাবনকে চিহ্নিতকরা, কারণ দর্শানো, এই সব উদ্ভাবন কীভাবে সাধারণ মানুষের কাজে আসবে, কীভাবে এর mass production হবে,ব্যবসায়িক উপযোগিতা কী হতে পারে – এমন সব প্রদর্শনের আয়োজন করেছিল ‘নীতি আয়োগ’ এবং‘বিদেশ মন্ত্রক’ যৌথভাবে। এখানেই আমি আমাদের দীন দরিদ্র মৎস্যজীবীদের কাজে আসারমতো একটা উদ্ভাবন দেখলাম। একটা বিশেষ অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। সামান্য একটা অ্যাপবলে দেবে মৎস্যজীবীরা কোন অঞ্চলে গেলে সব থেকে বেশি মাছ পাবেন, সেখানে ঢেউ কতটা,বাতাসের গতি কী রকম ইত্যাদি। সব তথ্য একটা অ্যাপ-এর সাহায্যে জানতে পারলে আমাদেরমৎস্যজীবীরা অনেক কম সময়ে অনেক বেশি মাছ ধরতে পারবেন এবং তাঁদের আর্থিক পরিস্থিতিরউন্নতি হবে।
বিজ্ঞান কখনো কিছু সমস্যার সমাধানে অসামান্য ভূমিকা পালনকরে। যেমন ২০০৫-এ মুম্বইয়ে প্রবল বৃষ্টি হল, বন্যা দেখা দিল, সমুদ্র উত্তাল হয়েউঠেছিল। তাতে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হয়েছিল। আর প্রাকৃতিক দুর্যোগে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্তহয় দরিদ্র – গরীব মানুষেরা। দুজন বৈজ্ঞানিক পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে গবেষণা শুরুকরে এমন বাড়ি তৈরির প্রযুক্তি বের করেছেন যাতে প্রবল বৃষ্টিতেও বাড়ি অটুট থাকবে,বাড়ির বাসিন্দাদের নিরাপদ রাখবে, জমা জল থেকে রক্ষা করবে, এমনকি জলবাহিত রোগেরপ্রাদুর্ভাব ঠেকাবে। এমনই সব উদ্ভাবন এই প্রতিযোগিতা থেকে পাওয়া গেল।
এতো কথা বলার কারণ আমাদের সমাজে, আমাদের দেশে এমন সবগুরুত্বপূর্ণ কাজের মানুষ রয়েছেন সেটাই জানানো। মনে রাখতে হবে সমাজ ক্রমাগতপ্রযুক্তি তাড়িত হয়ে উঠছে। বিভিন্ন পরিষেবাও প্রযুক্তি তাড়িত হতে চলেছে। বলতে গেলেপ্রযুক্তি জীবনের অভিন্ন অঙ্গ হয়ে উঠেছে। কিছুদিন ধরেই ‘ডিজি ধন’-এর বিস্তার দেখাযাচ্ছে। ধীরে ধীরে মানুষ নগদ কেনাবেচা ছেড়ে ‘ digitalcurrency ’-তে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। ভারতেরডিজিট্যাল ট্র্যানজেকশনের হার বাড়ছে। বিশেষ করে যুব সমাজ তাদের হাতের মোবাইল থেকেইডিজিট্যাল পেমেন্ট সেরে নিচ্ছেন। এটা একটা শুভ লক্ষণ বলেই আমি মনে করি। ‘লাকিগ্রাহক যোজনা’, ‘ডিজি ধন ব্যাপার যোজনা’য় বিপুল সাড়া মিলছে। প্রায় দু’মাস হয়ে গেল,এই দুই যোজনা থেকে প্রতিদিন ১৫ হাজার মানুষ ১ হাজার টাকা করে পুরস্কার পাচ্ছেন। এইদুই যোজনার দরুণ ডিজিট্যাল আদানপ্রদানের জোয়ার এসেছে, একটা জন আন্দোলনের চেহারানিয়েছে। আনন্দের কথা হল এখনও পর্যন্ত ‘ডিজি ধন যোজনা’য় প্রায় দশ লক্ষ সাধারণ মানুষপুরস্কার পেয়েছেন, ৫০ হাজারেরও বেশি ব্যবসায়ী পুরস্কৃত হয়েছে এবং প্রায় দেড়শ কোটিটাকা পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এই যোজনায় অংশ নিয়ে অনেকেই ১ লক্ষ টাকাপুরস্কার পেয়েছেন। পঞ্চাশ হাজার টাকা করে পেয়েছেন চার হাজারেরও বেশি ব্যবসায়ী।কৃষক থেকে গৃহবধূ, বৃহৎ ব্যবসায়ী থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ছাত্র-ছাত্রীরা যথেষ্টউৎসাহ নিয়েই এই যোজনা সফল করে তুলছেন। এই যোজনার তথ্য বিশ্লেষণ করে জেনেছি, শুধুতরুণ প্রজন্মই নয়, প্রৌঢ় – প্রবীণেরাও অংশগ্রহণ করছেন। ১৫ বছরের কিশোর থেকে পঁয়ষট্টি-সত্তরবছরের প্রবীণ মানুষেরাও পুরস্কৃতের তালিকায় রয়েছেন। এটা আমার খুব ভালো লেগেছে।
মহীশূরের শ্রীমান সন্তোষ ‘নরেন্দ্রমোদী-অ্যাপ’-এ খুশির খবরজানিয়েছেন যে ‘লাকি গ্রাহক যোজনা’তে তিনি ১ হাজার টাকা পুরস্কার পেয়েছেন। তারপরশ্রীমান সন্তোষ যা লিখেছেন আপনাদের সঙ্গে share করা উচিত বলেই আমি মনে করি। উনি লিখেছেন ১ হাজার টাকাপুরস্কার পাওয়ার পর আমার মনে পড়লো এক বৃদ্ধার বাড়িতে কিছুদিন আগে আগুন লেগে সব পুড়েনষ্ট হয়ে গেছে। সেই বৃদ্ধাকেই এই এক হাজার টাকা দিয়ে দেওয়া উচিৎ এবং এটা তাঁরইপ্রাপ্য। এটা জেনে আমার এতো ভালো লেগেছে –, সন্তোষজী, আপনার নাম ও কাজ দুই-ইআমাদের সবাইকে অত্যন্ত আনন্দ দিয়েছে। আপনি এক বিরাট প্রেরণাদায়ক কাজ করেছেন।
দিল্লির ২২ বছরের গাড়িচালক সবীর, নোট বাতিলের পর ডিজিট্যালব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন এবং ‘লাকি গ্রাহক যোজনা’য় অংশগ্রহণ করে ১ লক্ষ টাকাপুরস্কার জিতে নিয়েছেন। একদিকে তিনি যেমন গাড়ি চালাচ্ছেন, অন্যদিকে ‘লাকি গ্রাহকযোজনা’র অ্যাম্বাসেডর হয়ে উঠেছেন। গাড়ীর যাত্রীদেরও উদ্দীপনার সঙ্গে ডিজিট্যালব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতন করে তুলছেন এবং তার সেই উৎসাহে আরও অনেকেই ডিজিট্যালব্যবস্থায় অংশ নিতে শুরু করেছেন।
মহারাষ্ট্র থেকে এক যুব সাথী পূজা নেমাঢ়ে একজন স্নাতকোত্তরছাত্রী পরিবারের মধ্যে ‘রূপে’ কার্ড, ‘ই-ওয়ালেট’-এর ব্যবহার কেমন ভাবে হচ্ছে আর এইব্যাপারে তাঁরা কত আনন্দিত সেই বিষয়ে তাঁর অনুভূতি নিজের বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনাকরেন। এক লক্ষ টাকার পুরস্কার তাঁর জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবং এটাকে একটা মিশনহিসাবে নিয়ে তিনি অন্যদেরও এই কাজে উৎসাহিত করছেন। আমি দেশবাসীকে বিশেষ করেযুবাদের, যাঁরা ‘লাকি গ্রাহক যোজনা’ বা ‘ডি জি ধন ব্যাপার’ যোজনাতে পুরস্কৃতহয়েছেন, তাঁদের অনুরোধ করব, আপনারা নিজেরাই এই যোজনার ambassador হিসেবে কাজ করুন।এই আন্দোলনে আপনি নেতৃত্ব দিন, আপনি এগিয়ে নিয়ে যান। এই কাজ এক প্রকারে দুর্নীতিএবং কালো টাকার বিরুদ্ধে যে লড়াই, তাতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই কাজেরসঙ্গে যাঁরা জড়িয়ে আছেন, সবাই আমার দৃষ্টিতে দেশের মধ্যে এক নতুন anti-corruption cadre । আপনি একপ্রকারের শুচিতা সৈনিক। আপনি জানেন, ‘লাকি গ্রাহক যোজনা’ যখন একশ’দিন পূর্ণ করবে, ১৪-ই এপ্রিল, দিনটি বাবাসাহেব আম্বেদকরের জন্ম-জয়ন্তী দিবস। স্মরণীয়একটি দিন। ১৪-ই এপ্রিলে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে ‘কোটি টাকার লাকি ড্র’-এর পুরস্কারঘোষণা হবে। এখনও প্রায় চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ দিন বাকি রয়েছে, বাবাসাহেব আম্বেদকরকেস্মরণ করে আপনি কি একটা কাজ করতে পারেন? কিছুদিন আগেই বাবাসাহেব আম্বেদকরের ১২৫-তমজন্ম-জয়ন্তী পেরিয়ে গেল। তাঁকে স্মরণ করে আপনিও ন্যূণতম ১২৫ জনকে ‘ভীম’ অ্যাপ্ডাউনলোড করতে শেখান। এর মাধ্যমে কীভাবে লেনদেন হয়, তা শেখান। বিশেষ করে আপনারআশেপাশের ছোটো ছোটো ব্যবসায়ীদের শেখান। এবারের বাবাসাহেব আম্বেদকারের জন্ম-জয়ন্তীআর ‘ভীম’ অ্যাপ – এদের বিশেষভাবে গুরুত্ব দিন। তাই আমি বলতে চাই, ড. বাবাসাহেবআম্বেদকর যে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন, আমাদের সেটাকে মজবুত করতে হবে। ঘরেঘরে গিয়ে সবাইকে নিয়ে ১২৫ কোটি লোকের হাতে ‘ভীম’ অ্যাপ পৌঁছে দিতে হবে। বিগতদু-তিন মাস ধরে এই যে আন্দোলন চলছে, তার সাফল্য অনেক গ্রাম ও শহরে পাওয়া যাচ্ছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের দেশের অর্থব্যবস্থারমূলে কৃষির অনেক অবদান রয়েছে। গ্রামের আর্থিক শক্তি, দেশের আর্থিক গতিকে শক্তিপ্রদান করে। আজ আমি এক আনন্দের কথা আপনাদের বলতে চাই। আমাদের কৃষক ভাই-বোনেরা অনেকপরিশ্রম করে অন্নের ভাণ্ডার ভরে দিয়েছেন। আমাদের দেশের কৃষকদের পরিশ্রমের ফলে এইবছর সর্বাধিক ধানের উৎপাদন হয়েছে। সবরকমের তথ্য এটা জানিয়ে দিচ্ছে যে, আমাদেরকৃষকরা পুরনো সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন। এবছর ক্ষেতের মধ্যে ফসল যেভাবে ঢেউ তুলেছে,প্রত্যেক দিনই মনে হচ্ছে পোঙ্গল বা বৈশাখী উৎসব পালন করি। এই বছর দেশে প্রায়দু’হাজার সাত কোটি টনেরও বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়েছে। আমাদের কৃষকদের সর্বশেষ যেরেকর্ড লেখা ছিল, তার থেকেও আট শতাংশ বেশি। এটা এক অভূতপূর্ব প্রাপ্তি। আমিবিশেষভাবে দেশের কৃষকদের ধন্যবাদ দিতে চাই। কৃষকদের ধন্যবাদ এই জন্য দিতে চাই যেপরম্পরাগত ফসলের সঙ্গে সঙ্গে দেশের দরিদ্রদের কথা মনে রেখে বিভিন্নরকমের ডালেরওচাষ হয়েছে। ডালের মাধ্যমে দরিদ্ররা সব থেকে বেশি প্রোটিন পায়। আমি আনন্দিত যেদেশের কৃষকরা দরিদ্রদের কথা শুনেছেন। প্রায় দু’শ নব্বই লাখ হেক্টর জমিতেবিভিন্নরকমের ডালের চাষ হয়েছে। এটা কেবল ডালের উৎপাদন নয়, এটা হল কৃষকদের দ্বারাদেশের দরিদ্রদের সবথেকে বড় সেবা। আমার একটা প্রার্থনাকে, একটা অনুরোধকে শিরোধার্য করেআমার দেশের কৃষক ভাই-বোনেরা যে পরিশ্রম করেছেন, রেকর্ড পরিমাণ ডালের উৎপাদনকরেছেন, সেজন্য তাঁরা আমার বিশেষ ধন্যবাদের অধিকারী।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদেরদেশে সরকারের দ্বারা, সমাজের দ্বারা, বিভিন্ন সংস্থার দ্বারা, সংগঠনের দ্বারা –সবার মাধ্যমে পরিচ্ছন্নতার জন্য কিছু না কিছু কার্যক্রম চলছেই। কিছু না কিছু ভাবেসবারই এক প্রকারে পরিচ্ছন্নতার প্রতি সচেতনতা চোখে পড়ছে। সরকারও নিরন্তর চেষ্টাকরে চলেছে। বিগত দিনে ভারত সরকারের যে ‘পানীয় জল এবং স্বচ্ছতা’ মন্ত্রক রয়েছে, তারসচিবের নেতৃত্বে ২৩-টি রাজ্যের সরকারের বরিষ্ঠ আধিকারিকদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠানতেলেঙ্গানাতে সম্পন্ন হল। তেলেঙ্গানা রাজ্যের ওয়ারাঙ্গালে শুধু বন্ধ ঘরে সেমিনারনয়, সরাসরি পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। ১৭ এবং ১৮-ই ফেব্রুয়ারিহায়দ্রাবাদে ‘ Toilet Pit Emptying Exercise ’-এর আয়োজন করা হয়েছিল। ছ’টি ঘরের টয়লেট পিট পরিস্কার করাহয়েছে এবং আধিকারিকরা নিজেরাই দেখালেন ‘ TwinPit Toilet ’ বানানো গর্তকে খালি করে কীভাবেআবার ব্যবহারযোগ্য করা যায়। তাঁরা এটাও দেখালেন যে এই নতুন পদ্ধতির শৌচালয় কতটাসুবিধাজনক, আর একে খালি করা থেকে পরিস্কার করা পর্যন্ত অন্য কোনও অসুবিধা বা সংকোচবা মানসিক দ্বিধা থাকে না। আমরাও ছোট-খাট সাফাইয়ের কাজ করি, যেমন শৌচালয়ের গর্তআমরাই পরিস্কার করতে পারি। এই প্রচেষ্টার ফল হলো, দেশের সংবাদ মাধ্যম এসবের খুবপ্রচার করলো, গুরুত্বও দিয়েছে। আর যখন এক I A S অফিসার নিজে টয়লেটের গর্তপরিস্কার করেন তখন সেদিকে দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ খুবই স্বাভাবিক। যাকে আমরা টয়লেটপিট-এর ময়লা বলে জানি, তাকে সার হিসেবে দেখলে, এতো এক প্রকারের কালো সোনা। ‘বর্জ্য’থেকে ‘সম্পদ’ কীভাবে হয়, এটা আমরা দেখতে পাই, আর এটা প্রমাণিত হয়েছে। ছয় সদস্যেরপরিবারের জন্য একটি ‘ Standard Twin PitToilet ’ প্রায় পাঁচ-ছ’বছরে ভরে যায়। এর পরে নোংরাকেসহজেই অন্য গর্তে স্থানান্তরিত করা যেতে পারে। ছ’মাস-এক বছরে গর্তে জমা নোংরা পুরোপচে যায়। এই পচা আবর্জনা পরিস্কার করা পুরোপুরি সুরক্ষিত আর সারের দিক থেকেগুরুত্বপূর্ণ সার হল ‘ NPK ’। আমাদের কৃষকরা NPK -র সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই পরিচিত। এটি নাইট্রোজেন, ফসফরাস ওপটাশিয়াম প্রভৃতি পৌষ্টিক পদার্থে সমৃদ্ধ। চাষের জন্য এই সারটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণবলে মানা হয়।
যেভাবে সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছেঅন্যরাও এই ধরনের অন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন। আর এখনতো দূরদর্শনে পরিচ্ছন্নতা নিয়েএকটি বিশেষ সংবাদ অনুষ্ঠান হয়। এর মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় যত প্রকাশ পাবে ততই লাভহবে। বিভিন্ন সরকারি বিভাগ ও আলাদা আলাদা ভাবে পরিচ্ছন্নতা পক্ষ পালন করে। মার্চমাসের প্রথম পক্ষে মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক এবং একই সঙ্গে জনজাতি উন্নয়নমন্ত্রক পরিচ্ছন্নতা অভিযানে সামিল হবে। মার্চ মাসের দ্বিতীয় পক্ষে আরও দুটিমন্ত্রক ‘নৌপরিবহন’ মন্ত্রক এবং ‘জলসম্পদ, নদী উন্নয়ন এবং গঙ্গা পুনরুজ্জীবন’মন্ত্রক স্বচ্ছতা অভিযান চালাবে।
আমরা জানি যে আমাদের দেশের যেকোনো নাগরিক যখন কোনও উল্লেখযোগ্য কাজ করে তখন সমগ্র দেশ এক নতুন শক্তি লাভ করে,আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। রিও প্যারালিম্পিক্স-এ আমাদের দিব্যাঙ্গ খেলোয়াড়রা যে ধরনেরফল করেছে তাকে আমরা সকলে স্বাগত জানিয়েছি। এই মাসে আয়োজিত ‘ব্লাইণ্ড টি-২০ ওয়ার্ল্ডকাপ ফাইনাল’-এ ভারত পাকিস্তানকে হারিয়ে ক্রমাণ্বয়ে দ্বিতীয় বার ওয়ার্ল্ডচ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের গৌরব বৃদ্ধি করেছে। আমি পুনরায় এই দলের সব খেলোয়াড়কে অভিনন্দনজানাচ্ছি। আমাদের এই দিব্যাঙ্গ বন্ধুদের সাফল্যে দেশ গৌরবান্বিত। আমি সব সময় এটামানি যে দিব্যাঙ্গ ভাই-বোনেরা সমর্থ, দৃঢ় চিত্ত, সাহসী এবং সংকল্পে অটুট। সব সময়আমরা তাঁদের কাছ থেকে নতুন কিছু শিখতে পারি।
খেলাধুলার ক্ষেত্রেই হোক বা মহাকাশবিজ্ঞান – আমাদের দেশের মেয়েরা কোনও ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। পায়ে পায়ে তারা এগিয়েচলেছে এবং নিজেদের সাফল্যে দেশকে গৌরবাণ্বিত করছে। কিছু দিন আগে ‘এশিয়ান রাগবিসেভেন’স ট্রফি’-তে আমাদের মহিলা খেলোয়াড়েরা রৌপ্য পদক জিতেছে। এই সব খেলোয়াড়দেরআমি অনেক অভিনন্দন জানাচ্ছি।
৮-ই মার্চ সমগ্র বিশ্বে মহিলাদিবস পালিত হয়। কন্যাসন্তানের গুরুত্ব বিষয়ে পরিবার ও সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধিরউদ্দেশে আরও বেশি সংবেদনশীল হওয়ার পক্ষে ভারতেও এই দিনটি পালিত হয়। ‘বেটি বাঁচাও –বেটি পড়াও’ আন্দোলন দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। এটা এখন আর শুধুমাত্র একটি সরকারিপ্রকল্প নয়, এটি এখন সামাজিক চেতনা এবং লোকশিক্ষার অভিযান হয়ে উঠেছে। বিগত দু-বছরেএই প্রকল্পে সাধারণ মানুষও যুক্ত হয়েছেন। দেশের প্রতিটি কোণা থেকে যে সকল জ্বলন্তউদাহরণ পাওয়া যাচ্ছে তা সাধারণ মানুষকেও ভাবতে বাধ্য করছে আর বছরের পর বছর ধরে চলেআসা পুরনো রীতিনীতি সম্পর্কে মানুষের মনোভাবে পরিবর্তন আসছে। যখন এই ধরনের খবরপাওয়া যায় যে কন্যাসন্তানের জন্ম উপলক্ষে উৎসব পালিত হয়েছে, তখন সত্যিই খুব আনন্দহয়। কন্যাসন্তানের প্রতি এই ধরনের ইতিবাচক চিন্তাধারা সামাজিক স্বীকৃতির পথকেপ্রশস্ত করে। আমি জানতে পারলাম যে, তামিলনাড়ু রাজ্যের ‘ Cuddalore ’ জেলা এক বিশেষঅভিযান চালিয়ে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে সমর্থ হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১৭৫-টিরও বেশি বাল্যবিবাহঅনুষ্ঠান বন্ধ করা গেছে। ‘সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা’-তে প্রায় ৫৫-৬০ হাজারেরও বেশিব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের কঠুয়া জেলায় ‘ Convergence Model ’ অনুযায়ীসকল বিভাগকে ‘বেটি বাঁচাও – বেটি পড়াও’ যোজনাতে যুক্ত করা হয়েছে। গ্রামসভা আয়োজন ক’রেজেলা প্রশাসন অনাথ কন্যাসন্তানদের দত্তক নেওয়া, তাদের পড়াশোনা সুনিশ্চিত করারপ্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মধ্যপ্রদেশে ‘হর ঘর দস্তক’ যোজনায় প্রতিটি গ্রামেপ্রতিটি ঘরে কন্যাসন্তানদের শিক্ষিত করার অভিযান চালানো হচ্ছে। ‘আপনা বাচ্চা আপনাবিদ্যালয়’ অভিযানের মাধ্যমে রাজস্থান, শিক্ষা শেষ না করে বিদ্যালয় ছেড়ে যাওয়ামেয়েদের পুনরায় বিদ্যালয়ে ভর্তি করে তাদের লেখাপড়ায় উৎসাহিত করার অভিযান চালাচ্ছে।আমার বলার উদ্দেশ্য এটাই যে, ‘বেটি বাঁচাও – বেটি পড়াও’ আন্দোলন অনেক প্রকার রূপনিয়েছে এবং জন আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। নতুন নতুন কল্পনাও এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।স্থানীয় আবশ্যকতা অনুযায়ী এতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। আমার বিবেচনায় লক্ষ্য অর্জনেরপথে এটা ভালো প্রয়াস। আমরা যখন ৮-ই মার্চ মহিলা দিবস পালন করবো, তখন আমাদের একটাইঅনুভূতি, –
নারী, শক্তির রূপ, সক্ষম – তাঁরা ভারতীয় নারী।
বেশিও নয় কমও নয়, সব ক্ষেত্রে তাঁরা সমতার অধিকারী।।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কি বাত’-এর মাধ্যমে অনেক সময় আপনাদের বিভিন্ন খবরদেওয়ার সুযোগ হয়। আপনারা সক্রিয়ভাবে এর সঙ্গে যুক্ত থাকেন। আপনাদের কাছ থেকে আমিঅনেক কিছু জানতে পারি। পৃথিবীতে কোথায় কী হচ্ছে, গ্রামের দরিদ্র মানুষদের চিন্তা-ভাবনাআমার কাছে পৌঁছচ্ছে। আপনাদের সহযোগিতার জন্য আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। অনেক অনেকধন্যবাদ!
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের সবাইকে নমস্কার!
২৬-শে জানুয়ারি আমাদের গণতন্ত্র দিবস দেশের প্রতিটি কোণেউৎসাহ আর উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করেছেন সবাই। ভারতের সংবিধান, নাগরিকদের কর্তব্য,নাগরিকদের অধিকার, লোকতন্ত্রের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা – এ যেন এক অর্থে সংস্কারউৎসব যা আগামী প্রজন্মকে গণতন্ত্রের বিষয়ে, গণতন্ত্রের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনকরে, সংস্কারে আবদ্ধ করে। কিন্তু এখনও আমাদের দেশে নাগরিকদের কর্তব্য আর নাগরিকদেরঅধিকার – এর উপর যতটা বিতর্ক হওয়া উচিত, যতটা গভীরেগিয়ে বাদানুবাদ হওয়া উচিত, যতটা ব্যাপকভাবে চর্চা হওয়া উচিত, তা হচ্ছে না। আমি আশাকরি প্রত্যেক স্তরে, প্রতি মুহূর্তে, যতটা জোর অধিকারের উপর দেওয়া হয়, ততটাই জোরকর্তব্যের উপর দেওয়া হোক। অধিকার আর কর্তব্যের দুই পথের উপরই ভারতের লোকতন্ত্রেরগাড়ি অগ্রসর হতে পারে।
কাল ৩০-শে জানুয়ারি, আমাদের পূজনীয়বাপুর পুণ্য তিথি। ৩০-শে জানুয়ারি আমরা সকাল ১১-টায়, ২ মিনিটের মৌনতা পালন করে,দেশের জন্য প্রাণদানকারী শহীদদের উদ্দেশে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করি। ঐক্যবদ্ধ সমাজহিসেবে, একটা দেশ হিসেবে, ৩০-শে জানুয়ারি, ১১-টায় দুই মিনিটের শ্রদ্ধাঞ্জলি পালন – এ আমাদের সাধারণ অভ্যাস হয়ে ওঠা উচিত। দুই মিনিটই হোক না কেন,কিন্তু তার মধ্যে সামগ্রিকতা আছে, সঙ্কল্প আছে এবং শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাওঅভিব্যক্ত হয়।
আমাদের দেশের সৈন্যদের প্রতি,নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি, এক সহজ সমাদর ব্যক্ত হয়। এবারের গণতন্ত্র দিবসের প্রাক্-সন্ধ্যায়,বিভিন্ন বীরত্বসূচক পুরস্কারে যেসব বীর জওয়ান সম্মানিত হয়েছেন, তাঁদের এবং তাঁদেরপরিবারের সদস্যদের আমি অভিনন্দন জানাই। এই সব পুরস্কারের মধ্যে ‘কীর্তি চক্র ’, ‘শৌর্যচক্র ’ , ‘পরম বিশিষ্ট সেবা পদক ’, ‘বিশিষ্ট সেবা পদক ’ – অনেক বিভাগ আছে। আমি বিশেষ করে নবযুবকদের কাছে আবেদন জানাতে চাই – আপনারাযাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব সক্রিয়, আপনারা কি একটা কাজ করতে পারেন? এইবার যে যেবীর এই সম্মানে ভূষিত হয়েছেন – ইন্টারনেটে খোঁজ করে তাঁদেরসম্পর্কে প্রশস্তি লিখুন আর নিজের বন্ধুদের কাছে সেসব পৌঁছে দিন। যখন তাঁদের সাহস,বীরত্ব ও পরাক্রমের কথা বিস্তারিত ভাবে আমরা জানতে পারি, তখন যেমন আশ্চর্য হয়েযাই, তেমনি গর্বও হয় এবং প্রেরণাও পাই।
এক দিকে আমরা সবাই ২৬-শে জানুয়ারিরউৎসাহ আর উদ্দীপনার খবরে যখন আনন্দে ছিলাম, ঠিক সেই সময় কাশ্মীরে আমাদের সেনাজওয়ানরা, যাঁরা দেশের সুরক্ষায় স্থিরপ্রতিজ্ঞ, তুষার ধ্বসের ফলে তাঁদের বীর-প্রয়াণঘটে। আমি এই সব বীর জওয়ানদের প্রতি সম্মান এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করি, প্রণাম জানাই।
আমার যুবা বন্ধুরা, আপনারা তো ভালোকরেই জানেন যে, আমি ধারাবাহিকভাবে ‘মনকী বাত ’ শোনাচ্ছি। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল – এই সব মাস প্রত্যেক পরিবারে পরীক্ষার মাস। সংসারের এক-আধ জন বা দু ’জন বাচ্চার পরীক্ষা থাকে – কিন্তু গোটা পরিবারই পরীক্ষার চাপে নুয়ে থাকে।তো আমি ভাবলাম যে, এটাই প্রকৃত সময় ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলার। তাদেরঅভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলার। তাদের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলার। কারণ বেশ কিছু বছরধরে আমি যেখানেই গিয়েছি, যাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি, দেখেছি যে পরীক্ষা এক বড়মাথাব্যথার কারণ। পরিবার দুশ্চিন্তায়, বিদ্যার্থী দুশ্চিন্তায়, শিক্ষক দুশ্চিন্তায়– একটা বেশ বিচিত্র মনোবৈজ্ঞানিক বাতাবরণ প্রত্যেক সংসারে দেখা যায়। আর আমার সবসময়মনে হয়েছে যে এর থেকে বেরিয়ে আসা উচিত আর এই জন্যই আজ আমি তরুণ বন্ধুদের সঙ্গে এসম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে কথা বলতে চাই। যখন আমি এই বিষয়টা ঘোষণা করলাম, তখন অনেকশিক্ষক, অভিভাবক, বিদ্যার্থী আমাকে মেসেজ পাঠালেন, প্রশ্ন পাঠালেন, পরামর্শপাঠালেন, যন্ত্রণার কথাও লিখলেন, দুশ্চিন্তার উল্লেখ করলেন আর সেসব দেখার পর আমারযা মনে হল তা আজ আমি আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। টেলিফোনে আমি এক বার্তাপেয়েছি সৃষ্টির কাছ থেকে। আপনারাও শুনুন সৃষ্টি কী বলছেন –
‘স্যার আমি আপনাকে শুধু এইটুকুবলতে চাই যে পরীক্ষার সময়ে প্রায়শই এমন হয় যে আমাদের বাড়িতে, পাড়া-প্রতিবেশে,আমাদের সোসাইটিতে এক ভয়ের আর আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এর ফলে ছাত্ররা অনুপ্রেরণাতো পায়ই না বরং খুব ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে। তো আমি আপনার কাছে জানতে চাই যে এই পরিবেশকি খুশির হতে পারে না? ’
যাই হোক, প্রশ্ন তো সৃষ্টি করেছে,কিন্তু এই একই প্রশ্ন আপনাদের সবার মনেও নিশ্চয়ই আছে। পরীক্ষা এমনিতেই এক আনন্দেরঅবকাশ হওয়া উচিত। সারা বছর পরিশ্রম করা হয়েছে, এবার জানানোর সুযোগ এসেছে, এটা আশাএবং উৎসাহের পর্ব হওয়া উচিত। খুব কম লোক আছেন যাঁদের জন্য পরীক্ষা একটা pleasure। বেশিরভাগের কাছে পরীক্ষা একটা pressure. সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে যে এটাকে আপনি pressure ভাববেন,না pleasure. যে pleasure মানবে সেকিছু পাবে; যে pressure মানবে সে ভুগবে। আর তাই আমার মত হলযে পরীক্ষা এক উৎসব। পরীক্ষাকে এমনভাবে গ্রহণ করুন যেন সেটা এক উৎসব। আর যখন উৎসবহয় তখন আমাদের ভেতর সেরা যেটা সেটাই বেরিয়ে আসে। উৎসবের সময়ই সমাজ নিজের শক্তিরআন্দাজ পায়। সবথেকে ভালো যেটা সেটাই প্রকাশিত হয়। সাধারণভাবে আমার মনে হয় আমরা কতবিশৃঙ্খল, কিন্তু যখন ৪০-৪৫ দিন ধরে চলা কুম্ভ মেলার ব্যবস্থাপনার দিকে তাকাই তখনবুঝি make-shift arrangement -এর গুরুত্ব আর মানুষের মধ্যে শৃঙ্খলার তাৎপর্য। এই উৎসবইআমাদের শক্তি। পরীক্ষার সময়ও পরিবারে, বন্ধুদের মধ্যে, পাড়া-প্রতিবেশে এক উৎসবেরবাতাবরণ তৈরি হওয়া উচিত। আপনারা দেখবেন এই চাপ খুশিতে পরিবর্তিত হবে। উৎসবপূর্ণবাতাবরণ আপনাকে ভারমুক্ত করবে। আর এখানে আমি মা-বাবাদের প্রতি বেশি আবেদন রাখব যেআপনারা তিন-চার মাস এক উৎসবের বাতাবরণ তৈরি করে রাখুন। গোটা পরিবার একটা টিমের মতএই উৎসবকে সফল করতে নিজের-নিজের ভূমিকা উৎসাহের সঙ্গে পালন করুন। দেখুন, কততাড়াতাড়ি পরিবর্তন আসে। সত্যি তো এটাই যে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা, কচ্ছ থেকেকামরূপ, অম্রেলী থেকে অরুণাচল এই তিন-চার মাস কেবল পরীক্ষা আর পরীক্ষা। আমাদেরপ্রত্যেকের দায়িত্ব যে প্রত্যেক বছর এই তিন-চার মাস, নিজের-নিজের পদ্ধতিতে,নিজের-নিজের পরম্পরা মেনে, নিজের-নিজের পরিবারের বাতাবরণ বুঝে, একে এক উৎসবে পরিণতকরা। আর তাই তো আমি আপনাদের বলব ‘ smile more score more ’. যতবেশি আনন্দে এই সময়টা কাটাবে, তত বেশি নম্বর পাবে। করে দেখো। আর তোমরা দেখেছ যেযখন তুমি আনন্দে থাকো, হাসিখুশি থাকো তখন নিজেকে relaxed মনেহয় তোমার। খুব সহজভাবে relax হয়ে যাও তুমি আর যখন এমন relaxথাক তখন এক বছরের পুরনো কথাও সহজে মনে এসে যায় তোমার। এক বছর আগেক্লাসরুমে টিচার কী বলেছিলেন তার গোটা দৃশ্যটা মনে পড়ে যায় তোমার। আর নিশ্চয়ই জানোযে স্মরণ করার যে শক্তি তা relaxation হলেই সবথেকে বেশি হয়।যদি তুমি অশান্তির মধ্যে থাকো তাহলে সব দরজা বন্ধ হয়ে যায়। বাইরের জিনিস ভেতরে আসেনা, ভেতরেরটা বাইরে যায় না।
বিচারবুদ্ধি থমকে যায়, নিজেই এক সমস্যাহয়ে দাঁড়ায়। পরীক্ষার সময় তোমরা দেখে থাকবে, প্রায় অনেক কিছুই মনে থাকে, বই মনেথাকে, অধ্যায় মনে থাকে, পাতার সংখ্যা মনে থাকে, এমনকী সেটা পাতার উপরে না নীচেদেওয়া তাও মনে থাকে। কিন্তু একটা বিশেষ শব্দ কিছুতেই মনে পড়ে না। যেই পরীক্ষা শেষহয় আর পরীক্ষার হল থেকে তুমি বেরিয়ে আস, তখন আচমকাই মনে পড়ে – আরে, এই শব্দটাই তো ছিল!পরীক্ষার সময় কেন মনে এল না – কারণ তখন তুমি চাপে ছিলে। বাইরে আসার সঙ্গে সঙ্গে কীকরে মনে পড়ল? কেউ তো বলেও দেয়নি! জানা জিনিসটা তখন মনে পড়ে গেল কারণ তুমি তখনরিল্যাক্সড হয়ে গেছ। এই জন্যই বলা হয়, memoryrecall করার সবচেয়ে মোক্ষম দাওয়াই হল relaxation যা আমি আমারনিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। যখন আমরা Pressure -এ থাকি, তখন আমরা অনেক জিনিস ভুলে যাই কিন্তু যখন relax করি, তখন আমাদের বহু দামী ও কাজের কথা মনে পরে যায়। এর মানে
এই নয় যে তোমার কাছে জ্ঞান নেই বা তথ্য নেই বা তুমি চেষ্টা করছ না। কিন্তু যখনতুমি tension -এ থাকো তখন তাসবকিছুকে ছাপিয়ে যায়। এই জন্যই বলা হয়, ‘ A happy mind is the secret for a good mark sheet ’, অর্থাৎ পরীক্ষায় ভাল ফল করার মূল মন্ত্র হল ধীর-স্থির, relaxed থাকা। কখনও কখনওএরকমও মনে হয় আমরা পরীক্ষাকে সঠিক আঙ্গিকে দেখে উঠতে পারছি না। তখন মনে হয়,পরীক্ষা যেন জীবন-মরণের প্রশ্ন। পরীক্ষার অর্থ হল তুমি সারা বছর ধরে যে পড়াশোনাকরেছ তার মূল্যায়ন। এটা জীবন-মরণ পণ নয়। তোমার জীবন কেমন ছিল, বর্তমানে কেমন আছ,ভবিষ্যতই বা কেমন হবে এটা তার পরীক্ষা নয়। শুধুমাত্র ক্লাসরুমের পাঠ্যবইয়েরপরীক্ষার মধ্যেই তোমরা আবদ্ধ থাকবে না, তোমাদের জীবনে আরও অনেক কঠিন কঠিন পরীক্ষারসম্মুখীন হতে হবে। তাই স্কুলের পরীক্ষার উপর জীবনের সাফল্য বা ব্যর্থতা নির্ভর করে– এই ভাবনা থেকে তোমরা মুক্ত হও। আমাদের সামনেই আছে আমাদের প্রাক্তণ রাষ্ট্রপতিএ.পি.জে. আবদুল কালামের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি বায়ুসেনাতে যোগদান করতে চেয়েছিলেনকিন্তু অকৃতকার্য হন। মনে কর এই ব্যর্থতার পর তিনি যদি হতাশ হয়ে যেতেন, হতোদ্যমহয়ে যেতেন, তাহলে কি ভারত এত বড় একজন বৈজ্ঞানিককে পেত – এমন একজন রাষ্ট্রপতিকেপেত! পেত না।
জনৈক রিচা আনন্দ আমার কাছে জানতেচেয়েছেন – “বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার সবথেকে বড় সমস্যা হল, তা সম্পূর্ণভাবেপরীক্ষাকেন্দ্রিক। পরীক্ষার নম্বরই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যার ফলেছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে শুধুমাত্র প্রতিযোগিতাই বাড়েনি, দুশ্চিন্তাও বেড়েছে।শিক্ষাব্যবস্থার বর্তমান স্থিতি ও ভবিষ্যত সম্পর্কে আপনার মতামত জানতে চাই।”
যদিও রিচা নিজের প্রশ্নের উত্তরনিজেই দিয়েছেন, কিন্তু তাঁর সঙ্গে আমার মতামতও জানতে চেয়েছেন। পরীক্ষার নম্বর ওফলাফলের গুরুত্ব খুব সীমিত। জীবনে সেটাই সব নয়। জীবনের সারবত্তা হল – আপনি আসলেকতখানি জ্ঞান অর্জন করেছেন এবং কতখানি তা নিজের জীবনে প্রয়োগ করেছেন। সঠিকভাবেবাঁচার মানে হল জীবনের উদ্দেশ্য ও জীবনের লক্ষ্যের মধ্যে সামঞ্জস্য গড়ে তোলা। আপনিকি তা করতে পেরেছেন? যখনই আপনি এই সামঞ্জস্য গড়তে সক্ষম হবেন, তখন আপনাকে আরপরীক্ষার নম্বরের পেছনে দৌড়াতে হবে না – বরং সে নিজে থেকেই আপনার আয়ত্তে আসবে।জীবনে যা আপনার সত্যিকারের পাথেয় হবে তা হল – আপনার অর্জিত জ্ঞান, আপনার দক্ষতা, আপনারআত্মবিশ্বাস ও সংকল্পশক্তি। আপনারাই বলুন, আপনাদের পরিবারে নিশ্চয়ই কেউ না কেউডাক্তার আছেন – যাঁকে আপনারা family doctor বলেন। আপনারা কি কখনও তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছেন – তিনিপরীক্ষায় কত নম্বর পেয়েছিলেন? নিশ্চয়ই নয়। আপনাদের মনে হয়েছে তিনি ভালো ডাক্তার,তাই আপনারা দরকারে তাঁর কাছে যান। বড় বড় মামলা মোকদ্দমার সময় আপনারা যখন কোনও নামীউকিলের কাছে যান, তখন কি তাঁর মার্কশিট-এর খোঁজ করেন? আপনি তাঁর অভিজ্ঞতা, তাঁরজ্ঞান এবং সাফল্যকেই দেখেন। এই জন্যই কখনও কখনও এই নম্বরের বোঝা আমাদের সঠিক পথেযাওয়ার অন্তরায় হয়ে ওঠে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে পড়াশোনার দরকার নেই। এটা নিজেকেযাচাই করার মাপকাঠি। আমি কাল কোথায় ছিলাম, আজ কোথায় আছি তার মূল্যায়নের জন্যপড়াশোনা ও পরীক্ষা দুইয়েরই প্রয়োজন রয়েছে। আত্মবিশ্লেষণ করলে দেখবেন যে যখনশুধুমাত্র নম্বরের জন্য দৌড়েছেন তখন সহজতম পথ খুঁজেছেন এবং নির্দিষ্ট কিছু জিনিসেরউপরই মনোযোগ দিয়েছেন। কিন্তু এই গণ্ডির বাইরে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে গেলেইআপনি অপ্রস্তুত হয়ে পড়ছেন। যখন জ্ঞান অর্জনকে লক্ষ্য করেছেন তখন সমস্ত বিষয়কেসহজেই আত্মস্থ করতে পেরেছেন। কিন্তু যে মুহূর্তে নম্বর পাওয়াকে প্রধান উদ্দেশ্যকরেছেন তখন আপনার জ্ঞানের পরিধি সংকুচিত হয়ে উঠেছে এবং আপনি নিজেকে একটি গণ্ডিরমধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছেন। আর এই জন্যই কখনও কখনও এরকমও হয় পরীক্ষায় অত্যন্তসাফল্যের সঙ্গে কৃতকার্য হয়েও আমরা জীবনে ব্যর্থতার মুখোমুখি হই।
রিচা আরও একটি বিষয় উত্থাপন করেছেন,তা হল প্রতিযোগিতা। এটা একটা খুব বড় মানসিক দ্বন্দ্বের ক্ষেত্র। সত্যি বলতে জীবনেরঅগ্রগতির পথে প্রতিযোগিতা আদৌ গুরুত্বপূর্ণ নয়। যেটা প্রয়োজন, তা হল নিজেকে নিজেছাপিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত অতীতের তুলনায় ভবিষ্যতকে আমরাকীভাবে আরও উন্নত করে তুলতে পারি? ভবিষ্যতের সমস্ত সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারি।এর যথাযথ উদাহরণ আমরা খেলার জগতে পেয়ে থাকি। সহজবোধ্য বলেই আমি খেলার জগতেরদৃষ্টান্ত দিচ্ছি। বেশির ভাগ সফল খেলোয়াড়দের বৈশিষ্ট্যই হল তাঁরা নিজের সঙ্গে নিজেপ্রতিযোগিতা করেন। এক্ষেত্রে আমরা শচীন তেণ্ডুলকরের উদাহরণ দিতে পারি। দীর্ঘ কুড়িবছর ধরে উনি খেলার জগতে নিজেই নিজের রেকর্ড ভেঙেছেন, নিজেকে পরাজিত করেছেন ও আরওএগিয়ে গেছেন। ওঁর জীবন অত্যন্ত দৃষ্টান্তমূলক। উনি বাহ্যিক প্রতিযোগিতার বদলেআত্মিক প্রতিযোগিতার পথ বেছে নিয়েছেন।
বন্ধুরা, জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেএবং বিশেষ করে যখন আপনারা পরীক্ষা দিতে যাচ্ছেন, তখন খেয়াল করে দেখুন, আগে যদিপড়াশোনার জন্য দুই ঘণ্টা সময় দিতেন, এখন কি সেটা তিন ঘণ্টা করতে পেরেছেন? আগেসকালে যখন ওঠার কথা ভাবতেন, তবুও দেরি হত, এখন কি ঠিক সময়ে উঠতে পারছেন? আগেপরীক্ষার চিন্তায় রাত্রে ঘুম আসতো না। এখন শান্তিতে ঘুমোতে পারছেন? নিজেই নিজেকেমাপকাঠিতে যাচাই করুন। দেখবেন, প্রতিযোগিতা জন্ম দেয় পরাজয়, হতাশা, নিরাশা এবংঈর্ষার। কিন্তু নিজের সঙ্গে নিজের প্রতিযোগিতা গড়ে তোলে আত্মচিন্তনের ক্ষমতা, দৃঢ়করে সংকল্প শক্তি। যখন এভাবে নিজেকে ছাপিয়ে যাই, স্বতঃপ্রণোদিতভাবে আরও এগিয়েযাওয়ার উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা পাই। কোনো বাহ্যিক প্রেরণার প্রয়োজন পড়ে না। ভিতর থেকেআপনা-আপনি এক শক্তির সৃষ্টি হয়। বিষয়টিকে সহজ ভাবে ব্যাখ্যা করতে হলে আমি বলব যেযখন আপনি কারও সঙ্গে প্রতিদ্বন্দিতা করেন, তখন মোটামুটিভাবে তিন ধরনের সম্ভাবনাদেখা যায়। প্রথমত আপনি অপরজনের থেকে শ্রেষ্ঠ, দ্বিতীয়ত আপনি অপর জনের থেকে নিকৃষ্টএবং তৃতীয়ত আপনারা দুজনেই একই ক্ষমতাসম্পন্ন। আপনি যদি শ্রেষ্ঠতর হন, তাহলে আপনিতাকে পরোয়া করবেন না, অধিক আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়বেন। যদি আপনি অপর জনের সঙ্গেপ্রতিযোগিতায় খারাপ ফল করেন, তাহলে অসুখী হবেন, ঈর্ষান্বিত হবেন। এই ঈর্ষা আপনাকেবিচলিত করবে। আর যদি আপনারা একই ক্ষমতাসম্পন্ন হন, তাহলে আপনি আত্মউন্নতির বিষয়টিচিন্তার মধ্যেই আনবেন না। গাড়ি যেমন নিজের বেগে চলে, সেইরকম চলতেই থাকবেন। সেইকারণে আমি আপনাদের নিজের সঙ্গেই প্রতিযোগিতার অনুরোধ করবো। আগে কী করেছি, এরপর কীকরব এবং এর থেকে ভালো কীভাবে করব সেটা চিন্তা করতে হবে। তাহলেই আপনি অনেক পরিবর্তনঅনুভব করবেন।
অভিভাবকদের ভূমিকা সম্বন্ধে শ্রী এস.সুন্দর নিজের চিন্তা ব্যক্ত করেছেন। তাঁর মতে পরীক্ষাতে অভিভাবকদের একটিগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। উনি আরো লিখেছেন – “আমার মা বিশেষ লেখা-পড়া জানতেন না,কিন্তু তা সত্ত্বেও উনি আমার পাশে বসে থাকতেন। আমাকে অঙ্ক করতে বলতেন। অঙ্ক করাহলে উনি উত্তর মিলিয়ে দেখতেন। এই ভাবে উনি আমাকে সাহায্য করতেন। ভুল সুধরে দিতেন।আমার মা দশম শ্রেণির পরীক্ষা পাশ করতে পারেন নি কিন্তু ওঁর সাহায্য না পেলে CBSE -র পরীক্ষা পাশ করাআমার পক্ষে সম্ভব হত না।
সুন্দর-জী, আপনি সঠিক বলেছেন। আপনিনিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন যে আমাকে যাঁরা প্রশ্ন করেন, উপদেশ দেন, তাঁদের মধ্যেমহিলাদের সংখ্যাই বেশি। আসলে বাড়ির সন্তানদের ভবিষ্যত সম্পর্কে মায়েরা খুব সচেতনথাকেন। সক্রিয় থাকেন। তাঁরা অনেক বিষয়কে সহজ-সরল করে দেন। আমি অভিভাবকদের তিনটিবিষয়ের উপর জোর দিতে বলবো। স্বীকার করা, শেখানো এবং সময় দেওয়া। যা আছে তাকেস্বীকার করুন। আপনার যতটুকু ক্ষমতা সেই অনুযায়ী মেণ্টরের কাজ করুন আর আপনি যতইব্যস্ত থাকুন না কেন, সময় বের করে সময় দিন। আপনি যদি একবার স্বীকার করতে শিখে যান,তাহলে অনেক সমস্যার সেখানেই সমাধান হয়ে যাবে। প্রত্যেক অভিভাবক নিশ্চয় এই বিষয়টিমানবেন যে অভিভাবকদের ও শিক্ষকদের প্রত্যাশা সব সমস্যার মূল কারণ। এটা স্বীকার করেনিলে এই সমস্যার থেকে সমাধানের পথ খুলে যায়। আশা রাস্তাকে কঠিনতর করে তোলে।বর্তমান অবস্থাকে স্বীকার করে নিলে সমাধানের নূতন রাস্তা খোলার সুযোগ সৃষ্টি হয়।তাই যা আছে তাকে স্বীকার করে নিন। দেখবেন, আপনিও ভারমুক্ত হয়ে যাবেন। আমরা ছোটোছোটো শিশুদের স্কুল ব্যাগ-এর ওজনের বিষয়ে আলোচনা করি, কিন্তু কখনো কখনো আমার তোমনে হয় – অভিভাবকদের প্রত্যাশা, আকাঙ্ক্ষা শিশুদের স্কুল ব্যাগ-এর থেকেও বেশিভারী।
অনেক বছর আগের কথা, হার্ট অ্যাটাকহওয়ার কারণে আমাদের একজন পরিচিত ব্যক্তি হাসপাতালে ছিলেন। ভারতের লোকসভার প্রথমস্পিকার গণেশ দাদা মবলঙ্কর-এর পুত্র প্রাক্তণ সাংসদ পুরুষোত্তম মবলঙ্কর অসুস্থব্যক্তিকে দেখতে হাসপাতালে যান। আমি সেই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলাম। দেখলাম যে উনিহাসপাতালে এসে অসুস্থ ব্যক্তির শারীরিক সমস্যা নিয়ে কোনও প্রশ্ন করলেন না। তিনিওখানে বসে ওখানকার অবস্থাটা দেখে নিলেন, অসুখ সম্পর্কে কোন কথা না বলে নানারকমচুটকি শোনাতে শুরু করলেন আর দু-চার মিনিটের মধ্যেই সেখানকার পরিবেশকে উৎফুল্ল করেতুললেন। আসলে আমরা অসুস্থ ব্যক্তির কাছে গিয়ে অসুখ সম্পর্কে তাঁর মনে এক ভয় সৃষ্টিকরি। অভিভাবকদের আমি এই কথাই বলতে চাই যে, কখনো কখনো ছোটদের সঙ্গেও আমরা এইরকমইকরে থাকি। আপনি কি কখনও ভেবেছেন যে পরীক্ষার দিনগুলিতে বাচ্চাদের হাসি-খুশির একটাপরিবেশ দিই। আপনি দেখবেন পরিস্থিতিটাই বদলে যাবে।
আমার কাছে বেশ মজার একটা ফোন এসেছে।ভদ্রলোক নিজের নাম বলতে চাননি। ফোনটার বিবরণ শুনলে আপনারা বুঝতে পারবেন, ওইব্যক্তি কেন নিজের নাম প্রকাশ করতে চাইছেন না।
“নমস্কার,প্রধানমন্ত্রীজী, আমি আমার শৈশবে এমন কিছু কাজ করেছিলাম যে আমি আমার নাম বলতেপারছি না। আমি ছোটবেলায় একবার নকল করার চেষ্টা করেছিলাম। কীভাবে নকল করবো, সেজন্যকী কী ব্যবস্থা নেব, সে সব বিষয় নিয়ে ভাবনা চিন্তাতে আমি অনেক সময় নষ্ট করেছি। ওইসময়টা আমি পড়াশোনার জন্য ব্যয় করলে একই নম্বর পেতে পারতাম। আমি যখন নকল করে পাশকরার চেষ্টা করেছিলাম, তখন ধরা পড়ে যাই আর আমার জন্য আমার আশেপাশের অনেক বন্ধুদেরওবেশ অসুবিধা হয়েছিল।”
আপনি ঠিক বলেছেন। কাজকে short cut করার এই যেরাস্তা, সেটাই নকল করার কারণ হয়ে যায়। কখনো কখনো নিজের উপর আস্থা না থাকলে মনে হয়পাশের জনের থেকে একটু দেখে নিই। Confirm করে নিই, আমি যালিখেছি, সেটা সঠিক কিনা। কখনো কখনো তো এমনও হয় যে আমি ঠিক লিখেছি, কিন্তু পাশের জনভুল লিখেছে, নিজেরটার পরিবর্তে সেই ভুলটাকে ঠিক ভেবে নিয়ে মারা পড়েছি। তাই নকলেকোনও লাভ নেই। “ To cheat is to becheap, so please, do not chat ” অর্থাৎ নকল করামানে খেলো হয়ে যাওয়া। তাই অনুগ্রহ করে নকল করো না। নকল করবেন না, নকল আপনাকে খারাপকরে। নকল করো না – এই কথাটা নিশ্চয় আপনারা অনেকবার শুনেছেন। আমি আপনাদের সেইকথাটাই আবার বলছি। যেভাবেই দেখুন না কেন, নকল জীবনকে ব্যর্থতার দিকে টেনে নিয়ে যায়আর পরীক্ষার সময় আপনার উপর নজর রাখছে সে রকম ব্যক্তির কাছে ধরা পরলে সব শেষ আর যদিধরা না পড়েন তাহলেও আপনার জীবনে আপনার মনের উপর আপনার কৃতকার্যের বোঝা রয়েই যাবে।আপনার বাচ্চাদের বোঝানোর সময় আপনি কিন্তু তাঁদের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারবেননা। আর নকল করা একবার নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হলে জীবনে কিছু শেখার ইচ্ছাও হবে না।তাহলে আপনি কোথায় পৌঁছাবেন? মনে করুন, আপনি নিজেই নিজের রাস্তা গর্ত খুঁড়ছেন,অর্থাৎ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন। আমি এমনও দেখেছি যে কিছু মানুষ নকল করার উপায়খুঁজতেই নিজের সমস্ত প্রতিভা কাজে লাগাচ্ছে এবং সৃজনশক্তিকে ব্যবহার করছে। যদি এইপ্রতিভা, সময় এবং সৃজনীশক্তিকে আপনি পড়াশোনার জন্য ব্যয় করতেন, তাহলে নকল করারকোনো প্রয়োজন হত না। আপনার পরিশ্রমলব্ধ সাফল্যে যে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে, তা অতুলনীয়।
একটা ফোন পেয়েছিলাম – “নমস্কার,প্রধানমন্ত্রীজী! আমার নাম মণিকা এবং আমি একজন দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। আমি বোর্ডপরীক্ষা সম্পর্কে আপনাকে কয়েকটি প্রশ্ন করতে চাই। আমার প্রথম প্রশ্ন পরীক্ষার সময়আমাদের মনের ওপর যে চাপ পড়ে তা কীভাবে কমানো যায়? আর আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন হল,পরীক্ষা মানে শুধু পড়া কেন? এতে খেলার কোনো অবকাশ নেই কেন? ধন্যবাদ।”
পরীক্ষার সময় আমি যদি খেলার কথাইবলি, তখন সবাই বলবে – এ কেমন প্রধানমন্ত্রী! পরীক্ষার সময় বাচ্চাদের খেলতে বলছেন!কারণ সাধারণ মানুষের ধারণা যে পড়ুয়ারা খেলাধূলায় মন দিলে তারা পড়াশোনাতে অমনোযোগীহয়ে পড়বে। এই ধারণার মূলেই ভুল রয়েছে। যতো সমস্যার শিকড় ওখানেই। সর্বাঙ্গীণবিকাশের জন্য পড়াশোনার বাইরেও যে এক মস্ত জীবন রয়েছে, তার ভূমিকাও অনেক বড়। সেইজীবনের সাফল্যের জন্য অভিজ্ঞতা অর্জনের বয়সও এটাই। অনেকেই এমন বলেন – সব পরীক্ষাপাশ করে নিই, তারপর খেলা যাবে, পরে বাকী সব করা যাবে – এটা অবাস্তব ভাবনা। জীবনকেগড়ে তোলার এটাই সময়। আসলে পরীক্ষায় সাফল্যের জন্য তিনটি অত্যন্ত জরুরী কথা মনেরাখতে হবে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম, শরীরের প্রয়োজন মতো ঘুম এবং একই সঙ্গে মস্তিষ্কেরসঠিক কার্যকলাপের জন্য শরীরের এক জরুরি ভূমিকা রয়েছে – এটাও মনে রাখতে হবে।মস্তিষ্ক ছাড়াও বাকি শরীরের সঠিক সক্রিয়তা থাকা উচিত। কখনও কি একবারও ভেবে দেখেছেনঘর থেকে বেরিয়ে একটু আকাশের দিকে তাকাই, খানিক গাছপালা প্রকৃতির দিকে চোখ মেলেদেখি, তাতে মাথা অনেক হাল্কা হয়ে যাবে, আপনারা দেখবেন পড়ার ঘরে ফিরে অনেক তাজা মনেআবার পড়তে বসতে পারবেন। আপনি যাই বলুন না কেন, পড়ার ফাঁকে মাঝে মাঝে উঠে পরে পড়ারঘর থেকে বেরিয়ে আসুন। একটু রান্নাঘরে গেলেন, পছন্দের খাবার কিছু থাকলে এদিক ওদিকখুঁজুন, যে বিস্কুট ভালোবাসেন যদি পেয়ে যান খেয়ে নিন, একটু মজা করুন, হাসি-ঠাট্টাকরুন। যদি পাঁচ মিনিটের জন্যেও হয় একটা ব্রেক নিন, আপনি অনুভব করবেন আপনার পড়ায়অনেক বেশি মন বসছে। সব্বার এই মত পছন্দ হবে কিনা জানি না, কিন্তু আমি আমারবিশ্বাসের কথা জানালাম। এই সময় ডিপ ব্রেদিং করলে খুব উপকার হয়। গভীর শ্বাস নিয়েদেখুন কেমন Relaxed লাগে। কোনও ঘরে বসে এই বুকভরা শ্বাস নিলে চলবে না। ঘরের বাইরে আকাশের নীচেছাদে চলে যান, ৫ মিনিট বুক ভর্তি শ্বাস নিয়ে আবার ঘরে ফিরে পড়তে বসে দেখুন – মাথাযেমন relaxed মনে হবে, বাকীশরীরও কেমন সতেজ লাগে! অনেকেই মনে করেন, রাত জাগলে বেশি বেশি পড়া হয়। এই ধারণাএকেবারেই ভুল। শরীরের যতটা বিশ্রাম প্রয়োজন, আপনাকে তা নিতেই হবে, এতে পড়ার সময় তোকমবেই না, উলটে আপনার পড়াশোনা করার শক্তি বেড়ে যাবে, আপনার একাগ্রতা বেড়ে যাবে,নিজেকে অনেক তরতাজা লাগবে, fresh লাগবে। আপনার সামগ্রিক কর্মকুশলতা বেড়ে যাবে। আমি যখননির্বাচনী সভা করি, মাঝে মাঝে আমার গলা বসে যায়। একবার একজন লোকসংগীত গায়ক আমারসঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তিনি আমায় জিজ্ঞেস করেছিলেন কতক্ষণ ঘুমোন আপনি? আমিজানতে চাইলাম, ভাই আপনি কি ডাক্তার? তিনি বললেন, আরে না-না, আপনি বলুনই না, এই যেবক্তৃতা দিতে দিতে আপনার গলা বসে যায় তার সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে। আপনি ঠিকঠাকঘুমোলে আপনার ভোকাল কর্ডও বিশ্রাম পাবে। এর আগে আমি আমার ঘুম ও গলার স্বর নিয়েকক্ষনো ভাবিনি। তিনিই আমাকে একটা সহজ টোটকা দিয়ে দিলেন। আপনারাও দেখুন, আপনাদেরকতোটা কাজে আসে এই পরামর্শ। তার মানে এটা ভাববেন না যে, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন জেগেথাকার দরকার নেই – ঘুমিয়ে থাকলেই কাজ হয়ে যাবে! ভুলেও এমনটা করবেন না। তাতে আপনারঅভিভাবকেরা আমার ওপর অসন্তুষ্ট হবেন। তা নাহলে যেদিন মার্কশিট আসবে তাতে অভিভাবকরাআপনাদের বদলে আমার প্রতিচ্ছবিই দেখতে পাবেন। তাহলে শুয়ে থাকলেই কাজ হয়ে যাবে –এমনটা একবারও ভাববেন না। সেই জন্যই আমি বলি, Pfor Prepared এবং P for Play । যে খেলে সেই ঝলমল করে। The person who plays, shines । মন, বুদ্ধি, দেহ সচল রাখতে খেলাধূলারও মস্ত ভূমিকা রয়েছে।
তরুণ বন্ধুরা,আপনারা ভাবছেন আমরা পরীক্ষার পড়ায় ব্যস্ত আর আমি ‘মন কি বাত’ ভাষণেও আপনাদের নিয়েপড়লাম! এমন তো হতে পারে, আমার আজকের কথা আপনাদের relaxation -এর কাজ করে দিল। কিন্তু এটাও আমি এরসঙ্গে বলবো, আমি যা সব বলছি, সেটা নিয়ে ভেবে মন ভারাক্রান্ত করবেন না। যদি পারেনতো মেনে চলবেন, না পারলে করবেন না। আমি যেন আপনাদের কোনও চিন্তার কারণ না হয়ে পড়ি।যেমন আমি আপনাদের মা-বাবা-অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিতে চাই একই ভাবেআমিও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে চাই। আপনাদের সংকল্প আমি জানি, আত্মবিশ্বাস নিয়েপরীক্ষা দিতে যান, আপনাদের জন্য আমার হার্দিক শুভেচ্ছা রইল। যে কোনও চ্যালেঞ্জেরমুখোমুখি হতে একটা চ্যালেঞ্জের উৎসব পালন করুন, দেখবেন কোনও চ্যালেঞ্জ আরচ্যালেঞ্জ থাকবে না। এই মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে চলুন।
প্রিয়দেশবাসী, এবছরের ১-লা ফেব্রুয়ারি ভারতীয় কোস্ট গার্ড বাহিনীর চল্লিশ বছর পূর্তিহচ্ছে। এই উপলক্ষে কোস্ট গার্ড বাহিনীর প্রত্যেক কর্মী ও সেনাদের তাঁদের দেশেরপ্রতি কর্তব্য পালনের জন্য অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের কোস্ট গার্ডবাহিনী আমাদের স্বদেশে নির্মিত ১২৬টি যুদ্ধজাহাজ ও ৬২ টি বিমান সহযোগে বিশ্বেরপ্রথম চার শ্রেষ্ঠ কোস্ট গার্ড বাহিনীর মধ্যে নিজেদের গর্বিত স্থান অর্জন করেছে।
কোস্ট গার্ডবাহিনীর মন্ত্র ‘অয়ম্ রক্শাম্’ – এই অঙ্গীকারকে মনে রেখে দেশের সমুদ্র সীমা ওসামুদ্রিক অঞ্চলকে সুরক্ষিত রাখতে আমাদের কোস্ট গার্ড বাহিনী সবরকম প্রতিকূলতারমধ্যেই সারাক্ষণ তৎপর রয়েছে। গত বছর এই দিনে কোস্ট গার্ড বাহিনী তাদের মূলকর্মকাণ্ডের সঙ্গে আমাদের দেশের সমুদ্রতট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার কর্মসূচিনিয়েছিল এবং সেই কাজে হাজার হাজার সাধারণ দেশবাসীও সামিল হয়েছিলেন। সমুদ্রসীমা সুরক্ষারপাশাপাশি সমুদ্রতীর পরিচ্ছন্নতার ভাবনাও কার্যকরী করেছে, এর জন্য তাদের অভিনন্দন!অনেকেই আপনারা জানেন না, কোস্ট গার্ড বাহিনীতে শুধু পুরুষরা নয়, মহিলারাও রয়েছেন।তাঁরা পুরুষেদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ে চলেছেন এবং অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গেইতাঁদের দায়িত্ব পালন করছেন। কোস্ট গার্ড-এ আমাদের মহিলা পাইলট অফিসার রয়েছেন,এমনকি হোভারক্র্যাফ্ট-এর কামান সামলাতেও তাঁরা পারদর্শী। ভারতের সমুদ্রতটসুরক্ষায় ও সামুদ্রিক নজরদারিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে চলেছে আমাদের কোস্টগার্ড বাহিনী। তাদের চল্লিশ বছর পূর্তিতে আমি তাদের অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই।
১ ফেব্রুয়ারিবসন্ত পঞ্চমী পালন হবে। সর্বশ্রেষ্ঠ ঋতু বসন্তের স্বীকৃতি হিসেবেই এই উৎসব। বসন্তঋতুরাজ। বসন্ত-পঞ্চমীতেই সরস্বতী পূজা হয়। বিদ্যার অর্চনার জন্য, আরাধনার জন্যপালন করা হয়। শুধুই বিদ্যার্চনা নয়, বীরত্বের অনুপ্রেরণার উৎসবও বটে। ‘মেরে রঙ দেবাসন্তী চোলা’ – এটাই তো সেই অনুপ্রেরণা। এই বসন্ত-পঞ্চমী উদ্যাপনের পরিসরেদেশবাসীকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।
আমার প্রিয়দেশবাসী, ‘মন কি বাত’ কার্যক্রমকে আকাশবাণী আরও অনেক বর্ণময় ভাবনাচিন্তায় ভরিয়ে তুলেছে।গত মাসে আমার ‘মন কি বাত’ ভাষণের অব্যবহিত পরে আঞ্চলিক ভাষায় ‘মন কি বাত’ শোনানোশুরু করেছে। এই প্রচেষ্টায় বৃহৎ সাফল্য এসেছে। এই নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে দেশবাসীরাচিঠি লিখেছেন। আকাশবাণীর এই স্বতঃপ্রণোদিত প্রচেষ্টার জন্য আমি তাদের অনেক অনেকঅভিনন্দন জানাচ্ছি। দেশবাসী, আবার আপনাদেরকে আমার অনেক অনেক অভিনন্দন জানাচ্ছি।‘মন কি বাত’-এর সাহায্যে আপনাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগের সেতু তৈরি হয়েছে। অনেক অনেকশুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ!
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার! আপনাদের সকলকে ক্রিসমাসের অনেক অনেক শুভকামনা। নিজের জীবনে সেবা, ত্যাগ এবং করুণাকে উপলব্ধি করার দিন আজ। ত্রাণকর্তা যিশু বলেছেন – “দরিদ্রের জন্য উপকারই নয়, চাই তাঁদের জন্য আমাদের স্বীকৃতি”। সন্ত লুক লিখিত সুসমাচারে আছে – “প্রভু যিশু কেবল দরিদ্রদের সেবাই করেননি, দরিদ্র মানুষরা যে সেবা প্রদান করছেন তাকেও মহত্ব দিয়েছেন”। এটাই তো সশক্তিকরণের প্রকৃত রূপ। এই সম্পর্কে বহুল প্রচলিত একটি গল্প আছে। প্রভু যিশু একবার এক টেম্পল্ ট্রেজারির পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অনেক ধনী ব্যক্তি এলেন এবং প্রচুর দানধ্যান করলেন। ঠিক তারপরেই এক দরিদ্র বিধবা এলেন এবং দুটি তামার পয়সা দান করলেন। একদিক দিয়ে দেখলে দুটি তামার পয়সা দান হিসেবে কোনো অর্থই বহন করে না। সেখানে উপস্থিত ভক্তদের মনের স্বাভাবিক কৌতূহল বুঝতে পেরে যিশু বললেন, - “ঐ বিধবা ভদ্রমহিলাই সবথেকে বেশি দান করেছেন, কারণ অন্য সকলে বহু কিছু দিয়েছেন কিন্তু এই বিধবা ভদ্রমহিলা নিজের যা ছিল তার সবটুকুই দান করেছেন।”
আজ ২৫-শে ডিসেম্বর। মহামতি মদনমোহন মালব্যজীরও জন্মদিন। ভারতীয় জনমানসে সংকল্প আর আত্মবিশ্বাস জাগানো মালব্যজী আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থাকে এক নতুন দিশা দেখিয়েছিলেন। তাঁর জন্মদিনে জানাই ভাব-গম্ভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। মাত্র দু-দিন আগেই মালব্যজীর তপভূমি বেনারসে বেশ কয়েকটি উন্নয়নমূলক কাজের শুভ সূচনা করার সুযোগ হয়েছিল আমার।
‘বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি’–তে ‘মহামতি মদনমোহন মালব্য ক্যানসার সেন্টার’-এরও শিলান্যাস করেছি। এই সম্পূর্ণ অঞ্চলের জন্য তৈরি হচ্ছে একটি ক্যানসার সেন্টার। শুধু উত্তরপ্রদেশের পূর্বাঞ্চলের নয়, ঝাড়খণ্ড এবং বিহারের মানুষের উপকারেও লাগবে এটি।
আজ ভারতের প্রাক্তণ প্রধানমন্ত্রী ভারতরত্ন অটলবিহারী বাজপেয়ীজীরও জন্মদিন। এই দেশ অটলজীর অবদানের কথা কখনো ভুলবে না। ওঁনারই নেতৃত্বে পরমাণু শক্তির ক্ষেত্রেও আমাদের দেশের মাথা উঁচু হয়েছে। দলনেতা, সাংসদ, মন্ত্রী কিংবা প্রধানমন্ত্রী – প্রত্যেকটি ভূমিকাতেই অটলজী এক আদর্শ স্থাপন করেছেন। অটলজীর জন্মদিনে আমার প্রণাম জানাই এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানাই। একজন কর্মী হিসেবে অটলজীর সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। অনেক স্মৃতির ছবি চোখের সামনে ভাসছে। আজ সকালে যখন আমি ট্যুইট করেছি তখন একটা পুরনো ভিডিও আমি শেয়ার করেছি। এক ক্ষুদ্র কর্মীর প্রতি অটলজীর স্নেহ কীভাবে বর্ষিত হত তা ঐ ভিডিও-টা দেখলেই বোঝা যাবে।
বড়দিনের উপহার হিসেবে সমস্ত দেশবাসী আজ দুটি যোজনার সুফল লাভ করতে চলেছেন। এক প্রকার দুটি নতুন যোজনার শুভারম্ভ হচ্ছে। শহর হোক বা গ্রাম, শিক্ষিত হন বা অশিক্ষিত, সারা দেশে এখন একটাই প্রশ্ন – ‘ক্যাশলেস’ কী? ‘ক্যাশলেস ব্যবসা’ কীভাবে সম্ভব? ক্যাশ ছাড়া বেচা-কেনা কীভাবে করা যায়? প্রত্যেকেই একে অপরের কাছে বুঝতে এবং শিখতে চাইছেন। এই ব্যাপারটাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য, মোবাইল ব্যাঙ্কিং-এর শক্তি বৃদ্ধির জন্য,
‘ই-পেমেন্ট’-কে অভ্যাসে পরিণত করার জন্য ভারত সরকার গ্রাহক এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উৎসাহ-বর্দ্ধক এক যোজনার সূত্রপাত করছে আজ।
গ্রাহকদের উৎসাহিত করার যোজনাটি হল – ‘লাকি গ্রাহক যোজনা’ এবং ব্যবসায়ীদের যোজনাটির নাম – ‘ডিজি-ধন ব্যাপার যোজনা’।
আর ২৫-শে ডিসেম্বর, ক্রিসমাসের উপহার হিসেবে ‘ড্র’ পদ্ধতির মাধ্যমে ১৫ হাজার মানুষের অ্যাকাউণ্টে এক-এক হাজার টাকা জমা হবে। আজ শুধু একদিনের জন্য নয়, এই যোজনা আগামী ১০০ দিন ধরে চলবে। প্রতিদিন ১৫ হাজার মানুষ পাবেন এই পুরস্কার।
১০০ দিনে লক্ষাধিক পরিবারের কাছে কোটি টাকার উপহার পৌঁছে যাবে – কিন্তু এই উপহারের যোগ্য হবেন তাঁরাই, যাঁরা ‘মোবাইল ব্যাঙ্কিং’, ‘ই-ব্যাঙ্কিং’, ‘রূপে কার্ড’, ‘UPI’, ‘USSD’ ইত্যাদি যত রকম ডিজিট্যাল লেনদেন পদ্ধতি আছে, তার ব্যবহার করবেন। ড্র নির্ভর করবে এরই ওপর।
এর সঙ্গে সপ্তাহে এক দিন আরও বড় আকারে ড্র হবে, যেখানে পুরস্কার থাকবে লক্ষ টাকা এবং তিন মাস পরে ১৪-ই এপ্রিল ডক্টর বাবাসাহেব আম্বেদকরের জন্মদিনে এক বাম্পার ড্র হবে, যেখানে পুরস্কার থাকবে কোটি টাকার।
‘ডিজি-ধন ব্যাপার যোজনা’ হল ব্যবসায়ীদের জন্য। ব্যবসায়ী নিজে যেমন এই যোজনায় নিজেকে যুক্ত করবেন, তেমনই নিজের ব্যবসাকে ক্যাশলেস করার ক্ষেত্রে গ্রাহকদেরও যুক্ত করবেন। ব্যবসায়ীদেরকেও আলাদাভাবে পুরস্কার দেওয়া হবে এবং সেই পুরস্কারের সংখ্যা হবে হাজার-হাজার। এতে নিজেদের ব্যবসাও চলবে আবার পুরস্কারও মিলবে। এই যোজনা সমাজের সমস্ত ক্ষেত্রে – বিশেষ করে দরিদ্র এবং নিম্নমধ্যবিত্তদের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে এবং এই যোজনার লাভ তাঁরাই, যাঁরা ৫০ টাকার বেশি এবং তিন হাজার টাকার কম অর্থমূল্যে কেনাকাটা করতে সমর্থ।
তিন হাজার টাকার বেশি অর্থমূল্যে যাঁরা কেনাকাটা করতে পারেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই পুরস্কারের সুবিধা থাকবে না। দরিদ্রতর মানুষ USSD-এর সাহায্যে ‘Feature’ ফোন এবং সাধারণ ফোনের মাধ্যমে বেচা-কেনা করতে পারেন এবং দামও মিটিয়ে দিতে পারেন। এঁরা সকলেই এই যোজনার পুরস্কার লাভের সুযোগ পাবেন। গ্রামাঞ্চলের মানুষ AEPS-এর মাধ্যমে বেচাকেনা করে এই পুরস্কার জিতে নিতে পারবেন। খুব আশ্চর্যের বিষয়, ভারতবর্ষে আজ প্রায় ৩০ কোটি ‘রূপে কার্ড’ আছে, যার মধ্যে ২০ কোটিই আছে জন-ধন যোজনার অ্যাকাউন্টধারী মানুষের কাছে। এই ৩০ কোটি মানুষইতো এই পুরস্কার যোজনার অংশীদার হতে পারেন। আমি বিশ্বাস করি যে দেশবাসী এই পদ্ধতির প্রতি আগ্রহ দেখাবেন এবং আশেপাশের তরুণ প্রজন্মের কাছে জানতে চাইলে তাঁরা নিশ্চয়ই বলে দেবেন। আপনার পরিবারে দশ বা বারো ক্লাসের বাচ্চাটিও আপনাকে ভালোভাবে এই পদ্ধতি শিখিয়ে দিতে পারবে। এটি খুব সহজ – মোবাইল ফোন থেকে হোয়াটস্ অ্যাপ পাঠানোর মতই সহজ কাজ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি এটা জেনে খুশী হয়েছি যে দেশের মধ্যে প্রযুক্তির ব্যবহার কীভাবে করতে হবে, ই-পেমেন্ট কীভাবে হবে, অনলাইন পেমেন্ট কীভাবে করতে হবে – এসবের সচেতনতা দ্রুতগতিতে বাড়ছে। গত কিছুদিনের মধ্যে ক্যাশলেস ব্যবসা, বিনা নগদে লেনদেন ২০০ থেকে ৩০০ শতাংশ বেড়েছে। এই পদ্ধতিকে উৎসাহিত করার জন্য ভারত সরকার একটা বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত যে কত বড় সেটা ব্যবসায়ীরা সহজেই অনুমান করতে পারেন। যে সব ব্যবসায়ীরা ডিজিট্যাল আদান-প্রদান করবেন, নিজের ব্যবসাতে নগদের পরিবর্তে অনলাইন পেমেন্ট পদ্ধতি প্রসারিত করবেন, তাঁদের আয়করে ছাড় দেওয়া হবে।
আমি কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চল-সহ দেশের সমস্ত রাজ্যকেও অভিনন্দন জানাচ্ছি। সবাই নিজস্ব পদ্ধতিতে এই অভিযানকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমান চন্দ্রবাবু নাইডু-র অধ্যক্ষতায় একটি কমিটি গঠিত হয়েছে, যে কমিটি এই সম্বন্ধীয় অনেক যোজনা-র কথা বিবেচনা করছে, কিন্তু আমি দেখছি অনেক সরকারও নিজস্ব পদ্ধতিতে অনেক যোজনা বাস্তবায়িত করেছে এবং নতুন ভাবে আরম্ভ করছে। আমি জেনেছি, আসাম সরকার প্রপার্টি ট্যাক্স এবং বাণিজ্য লাইসেন্স ফি ডিজিট্যালি প্রদান করলে ১০ শতাংশ ছাড়ের ঘোষণা করেছে। গ্রামীণ ব্যাঙ্কের শাখাগুলি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নিজেদের ৭৫ শতাংশ গ্রাহক জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত কম করে দুটি ডিজিট্যাল ট্র্যানজাকশন করলে তাঁদের সরকারের পক্ষ থেকে ৫০,০০০ টাকা পুরস্কৃত করা হবে। ৩১শে মার্চ ২০১৭ পর্যন্ত যদি কোনও গ্রাম ১০০ শতাংশ ডিজিট্যাল ট্র্যানজাক্শন করায় তবে সরকারের পক্ষ থেকে ‘উত্তম পঞ্চায়েত ফর ডিজি-ট্র্যানজাক্শন’ যোজনার মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা অসম সরকারের তরফ থেকে করা হয়েছে। কৃষকদের জন্য অসম সরকার ‘ডিজিট্যাল কৃষক শিরোমণি’ প্রকল্পে প্রথম ১০ জন কৃষককে, যাঁরা বীজ ও সার কেনাকাটার জন্য সম্পূর্ণ ভাবে ডিজিট্যাল পদ্ধতি অনুসরণ করবেন, তাঁদেরকে ৫,০০০ টাকা পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি অসম সরকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং যে সব রাজ্য এই রকম উদ্যোগ নিয়েছে তাদেরকেও অভিনন্দন জানাচ্ছি। অনেক সংস্থাও গ্রামাঞ্চলে কৃষকদের মধ্যে ডিজিট্যাল আদান-প্রদানকে প্রসারিত করার জন্য অনেক সফল উদ্যোগ নিয়েছে। আমি জানতে পেরেছি, GNFC অর্থাৎ ‘গুজরাট নর্মদা ভ্যালি ফার্টিলাইজার অ্যাণ্ড ক্যামিকাল লিমিটেড’, যাঁরা মূলত সারের কাজকর্ম করে, তারা কৃষকদের সুবিধার জন্য, সেখানে সার বিক্রয়কেন্দ্রে এক হাজার POS মেশিন বসিয়েছে এবং সেখানে ‘ডিজিট্যাল পেমেন্ট’-এর ব্যবস্থা করেছে।
৩৫ হাজার কৃষককে ৫ লাখ সারের বস্তা ডিজিট্যাল আদান-প্রদানের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে – সেটাও মাত্র দু-সপ্তাহের মধ্যে। মজার কথা হলো, গত বছরের তুলনায় GNFC-এর সার বিক্রি বেড়েছে ২৭ শতাংশ।
ভাই-বোনেরা, আমাদের অর্থব্যবস্থায়, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অসংগঠিত ক্ষেত্রের গুরুত্ব আছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সব লোকজনের মজুরীর টাকা, কাজের জন্য টাকা বা বেতন নগদেও দেওয়া হয়, আর আমরা জানি, এর জন্য শ্রমিকদের বঞ্চনাও করা হয়। ১০০ টাকার পরিবর্তে ৮০ টাকা দেওয়া হয়, যখন ৮০ টাকা দেওয়ার কথা, সেখানে ৫০ টাকা দেওয়া হয় এবং ইনসিওরেন্সের মতো স্বাস্থ্য বীমাসহ আরও অনেক সুবিধা থেকে এই সব শ্রমিকদের বঞ্চিত করা হয়। কিন্তু যখন ক্যাশলেস পেমেন্ট করা হচ্ছে, টাকা সোজাসুজি ব্যাঙ্কে জমা হয়ে যায়। এই ভাবে অসংগঠিত ক্ষেত্র, সংগঠিত ক্ষেত্রে পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। বঞ্চনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যে টাকা কেটে নেওয়া হত, সেসব এখন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, আর শ্রমিকদের কারিগরদের, এই রকম দরিদ্র লোকেদের সম্পূর্ণ টাকা পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। আর সঙ্গে অন্য সব সুযোগ-সুবিধারও দাবীদার হচ্ছে। আমাদের দেশ সর্বাধিক যুবদের দেশ। প্রযুক্তি আমাদের কাছে সহজলভ্য। ভারতের মতো দেশ তো এসব ক্ষেত্রে সবথেকে এগিয়ে আসা উচিত। আমাদের তরুণরা স্টার্ট-আপ-এর মাধ্যমে অনেক উন্নতি করেছে। এই ডিজিট্যাল-আন্দোলন এক সোনালী সুযোগ, আমাদের তরুণ প্রজন্ম নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে, নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে, নতুন নতুন পদ্ধতির সঙ্গে এই ক্ষেত্রে যত উদ্যোগ নিতে পারবে, ততটাই নেওয়া উচিত। দেশকে কালো টাকা এবং আর্থিক দুর্নীতি থেকে মুক্ত করার অভিযানে সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে আমাদের সামিল হতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি প্রত্যেক ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের আগে লোকেদের কাছে অনুরোধ করছি, আপনারা আপনাদের পরামর্শ পাঠান, নিজস্ব মতামত জানান এবং এইবার হাজার হাজার মতামত ‘mygov’ ও ‘Narendra Modi App’-এ পরামর্শ এসেছে। আমি বলছি ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষের প্রস্তাব আর্থিক দুর্নীতি এবং কালোটাকার বিরুদ্ধে যে লড়াই সেই সম্বন্ধীয় ও নোটবন্দীর আলোচনা এসেছে। এই সব বিষয়কে আমি যখন পর্যালোচনা করে মোটামুটি ভাবে এই মতামতগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করতে পারি, কিছু মানুষ যাঁরা আমাকে লিখেছেন, তাঁদের মধ্যে জনসাধারণের কি কি সমস্যা হচ্ছে, কি কি অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন, এই সব জানিয়ে সবিস্তারে লিখেছেন। দ্বিতীয় গোষ্ঠীর লেখক যাঁরা এই সব বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেছেন, এতো ভাল কাজ, দেশের ভালোর জন্য কাজ, এ-তো পবিত্র কাজ। কিন্তু এর বিরুদ্ধে কোথায় কোথায় কীরকম জালিয়াতি হচ্ছে, কীভাবে নতুন নতুন অসৎ পন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে, তার বিবরণ দিয়েছেন। আর তৃতীয় গোষ্ঠীর লোকেরা, যাঁরা যা হচ্ছে, তাকে সমর্থন করেছেন এবং সঙ্গে সঙ্গে এই লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যেতে, দুর্নীতি দূর করতে এবং কালো টাকা সম্পূর্ণ নষ্ট করতে আরও কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া দরকার – এরকম জোর দিয়েও অনেকে লিখেছেন।
আমি আমার দেশবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ, কারণ তাঁরা চিঠি লিখে আমাকে যথেষ্ট মদত যুগিয়েছেন। শ্রীমান গুরুমণি কেওবল ‘মাই গভ’-এ লিখেছেন – কালো টাকায় রাশ টানার জন্য এই পদক্ষেপ প্রশংসার যোগ্য। নাগরিক হিসেবে আমাদের অসুবিধে হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আমরা যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছি, সেই লড়াইতে সহযোগিতা করছে, এতেই আমরা খুশি। দুর্নীতি, কালো টাকা ইত্যাদির বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমরা সেনাবাহিনীর ভূমিকা পালন করছি। গুরুমণি কেবল যে কথা লিখে জানিয়েছেন, দেশের সমস্ত প্রান্ত থেকে এই একই ভাবনা উঠে আসছে। আমরা সকলে তা অনুভব করতে পারছি। তবে একথা সত্যি যে জনসাধারণকে যখন এত কষ্ট, এত অসুবিধা ভোগ করতে হচ্ছে, তখন এমন কোন মানুষ আছেন, যাঁর খারাপ না লাগে? আপনাদের যতটা খারাপ লাগছে, আমারও ততটাই খারাপ লাগছে। কিন্তু একটি উত্তম উদ্দেশ্যের জন্য, একটি উন্নত লক্ষ্যকে অতিক্রম করার জন্য যখন স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে কর্মযজ্ঞ চলতে থাকে, তখন সেই দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণার মধ্যেও দেশবাসী আত্মশক্তিতে বলীয়ান থাকেন। আসলে এঁরাই হলেন ‘Agent of Change’ – পরিবর্তনের পুরোধা। আমি সবাইকে আরও একটি কারণে ধন্যবাদ দিতে চাই, তাঁরা শুধু যে অসুবিধে সহ্য করেছেন তা-ই নয়, যারা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে, তাদের তাঁরা কড়া জবাবও দিয়েছেন। কত গুজব রটেছে। দুর্নীতি আর কালোটাকার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাম্প্রদায়িকতার রঙ লাগাবারও কত চেষ্টা হয়েছে, কেউ গুজব ছড়িয়েছে যে নোটে ভুল বানান লেখা হয়েছে, কেউ বলে দিয়েছে লবণের দাম বেড়ে গেছে, আবার এমন গুজবও শোনা গেছে যে, ২০০০, ৫০০ আর ১০০ টাকার নোটও শিগগিরই বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু আমি দেখেছি, নানা রকমের গুজব ছড়িয়েও দেশবাসীকে কেউ বিভ্রান্ত করতে পারেনি। শুধু তাই নয়, কিছু মানুষ তাঁদের বুদ্ধি, শক্তি, সৃজনশীলতা দিয়ে এইসব গুজবকে, গুজবের রটনাকারীদের মুখোশ খুলে দিয়েছেন। সত্যকে সামনে এনে দিয়েছেন। আমি জনগণের এই শক্তিকে শত শত প্রণাম জানাই।
এটা আমি স্পষ্ট অনুভব করছি, প্রতি মুহূর্তে অনুভব করছি যে, একশো পঁচিশ কোটি দেশবাসী সঙ্গে থাকলে কোনও কিছুই আর অসম্ভব থাকে না। জনতা জনার্দনই তো ঈশ্বরের প্রতিভূ, জনতার আশীর্বাদ ঈশ্বরেরই আশীর্বাদ। আমি দেশের জনগণকে ধন্যবাদ দিচ্ছি, প্রণাম জানাচ্ছি দুর্নীতি আর কালো টাকার বিরুদ্ধে এই মহাযজ্ঞে পূর্ণ উৎসাহে অংশ নেওয়ার জন্য। আমি চেয়েছিলাম, দুর্নীতি আর কালো টাকার বিরুদ্ধে যেমন লড়াই চলছে, তেমনি সংসদেও রাজনৈতিক দল আর পলিটিক্যাল ফাণ্ডিং-এর বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হোক। সংসদ চালু থাকলে নিশ্চয়ই আলোচনা হত। যাঁরা রটাচ্ছেন যে রাজনৈতিক দলগুলির প্রচুর ছাড় আছে – তাঁদের রটনা ভুল। আইন সকলের জন্যই এক এবং ব্যক্তি সংগঠন বা রাজনৈতিক দল – যা-ই হোক, সকলকেই আইন মেনে চলতে হয় – চলতে হবেই। যাঁরা প্রকাশ্যে ভ্রষ্টাচার আর কালো টাকাকে সমর্থন করতে পারেন না, তাঁরা সরকারের দোষ-ত্রুটি ধরার জন্য সর্বক্ষণ লেগে থাকেন। একটা কথা শোনা যাচ্ছে, বারবার নিয়ম কেন বদলাচ্ছে? এই সরকার জনতা-জনার্দনের সরকার। জনসাধারণের কাছে ‘ফিডব্যাক’ নেওয়ার কাজটা সরকার ধারাবাহিক ভাবে করে চলেছেন। সাধারণ মানুষের কোথায় অসুবিধা হচ্ছে, কোন নিয়মের জন্য সমস্যা তৈরি হচ্ছে – তার সমাধানের কী পথ খোঁজা যায়, দেশের সংবেদনশীল সরকার প্রতি মুহূর্তে সেটা খেয়াল রাখে। তার জন্য নিয়ম বদলানোর দরকার হলে নিয়ম বদলাতে হয়, যাতে লোকের হয়রানি কম হয়। অন্যদিকে আমি প্রথম দিন – ৮ তারিখেই বলেছিলাম, এটি একটি অসাধারণ লড়াই। ’৭০ সাল থেকে অবিশ্বাস আর দুর্নীতির এই কালোবাজারিতে কত শক্তি জড়িত আছে, তাঁদের কত ক্ষমতা? আমি যখন এইসব শক্তির মোকাবিলা করব বলে ঠিক করলাম, তখন তাঁরাও সরকারকে হারাতে রোজ রোজ নতুন নতুন পন্থা উদ্ভাবন করতে লাগলেন। তাঁরা যখন নতুন উপায় খুঁজে বার করছেন তখন আমাকেও তো তাদের হারাবার জন্য নতুনতর পদ্ধতির সন্ধান করতে হয়। তুমি চলো ডালে ডালে, আমি চলি পাতায় পাতায়। কারণ আমি ঠিক করেছি দুর্নীতি, কালোবাজার, কালোটাকা – সবগুলিকেই নির্মূল করতে হবে। অনেকেই চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন এই নিয়ে কত রকমের কারচুপি হচ্ছে, কত নতুন নতুন রাস্তার খোঁজ চলছে।
আমি আমার প্রিয় দেশবাসীদের আরও একটি কারণে অভিনন্দন জানাতে চাই আপনারা টিভিতে, সংবাদপত্রে দেখে থাকবেন, রোজ কত নতুন নতুন লোক ধরা পড়ছে, নোট ধরা পড়ছে, তল্লাসী হচ্ছে, তাবড় তাবড় লোক ধরা পড়ছে – এটা কীভাবে সম্ভব হল? আমি সেই গোপন কথাটাই বলছি। সেটা হল এই, যে খবর আমি সাধারণ মানুষের কাছ থেকেই পাচ্ছি। সরকারি ব্যবস্থা থেকে যত খবর আসছে, তার অনেকগুণ বেশি খবর আসছে সাধারণ নাগরিকদের কাছ থেকে। যে সাফল্য আমরা পাচ্ছি, সেটা মূলত জনসাধারণের সচেতনতার কারণে। কেউ কি কল্পনা করতে পারেন, আমাদের দেশের সচেতন নাগরিক এঁদের মুখোশ খোলার জন্য কতটা ঝুঁকি নিচ্ছেন? আর এইভাবে পাওয়া তথ্য থেকেই বেশি সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে। এইসব খবর দেওয়ার জন্য সরকারের তরফ থেকে একটি ই-মেইল অ্যাড্রেস বানানো হয়েছে, ওই অ্যাড্রেসে জানানো যেতে পারে বা, ‘মাই গভ’ অ্যাড্রেসেও পাঠাতে পারেন। সরকার এইসব অশুভের সঙ্গে লড়াই করতে বদ্ধপরিকর। আপনাদের সহায়তা পেলে এই লড়াই অনেক সহজ হয়ে যাবে।
আমাকে যাঁরা চিঠি পাঠাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে তৃতীয় একটি দল আছে, যাঁরা সংখ্যায় অনেক। তাঁরা বলছেন, মোদীজী থেমে যাবেন না, ক্লান্ত হয়ে পড়বেন না, যতটা কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব, সেটাই নিন। একবার যখন পথে নেমেছেন, তখন লক্ষ্যে পৌঁছতেই হবে। এভাবে যাঁরা লিখেছেন, তাঁদের সকলকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কেননা, তাঁদের চিঠিতে বিশ্বাস যেমন আছে, তেমনই আছে আশীর্বাদ। আমি আপনাদের এই বলে আশ্বস্ত করতে চাই যে, বিরাম নয় – এই তো সবে শুরু। এই যুদ্ধে জিততেই হবে, ক্লান্ত হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আর যে বিষয়ে ১২৫ কোটি দেশবাসীর আশীর্বাদ আছে, তার থেকে পিছিয়ে আসার কোনও কথাই ওঠে না। আপনাদের হয়ত জানা আছে, আমাদের দেশে বেনামী সম্পত্তি বিষয়ে একটি আইন আছে। যেটি ১৯৮৮ সালে তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তার কোনও নিয়ম বিধিবদ্ধ হয়নি, সেটিকে নোটিফাই করাও হয়নি। সেই আইন এতদিন ঠাণ্ডাঘরে পড়েছিল। আমরা সেটিকে বার করে এনেছি এবং খুব কঠোরভাবে ‘বেনামী সম্পত্তি আইন’ আমরা বানিয়েছি। আগামী দিনে এই আইন তার ভূমিকা পালন করবে। দেশহিত এবং জনহিতের জন্য যা করণীয়, সেটাই আমাদের প্রাথমিক কর্তব্য।
আমার প্রিয় দেশবাসী, গত ‘মন কী বাত’ অনুষ্ঠানে আমি বলেছিলাম যে, এই সকল অসুবিধা সত্ত্বেও আমাদের কৃষকরা কঠিন পরিশ্রম করে ফসল রোপনে গত বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন। ফসল চাষে এটি একটি শুভ সংকেত। দেশের শ্রমিক, কৃষক ও যুবকদের পরিশ্রম এক নতুন দিশা দেখাচ্ছে। বিগত সময়ে বিশ্ব অর্থ ব্যবস্থায় অনেক ক্ষেত্রেই ভারত গৌরবের সঙ্গে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। দেশবাসীর লাগাতার প্রচেষ্টায় বিশ্ব অর্থ ব্যবস্থার বিভিন্ন সূচকে ভারতের উন্নতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক-এর ‘ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট’-এ ভারতের স্থান উন্নত হয়েছে। ভারতের বাণিজ্য নীতিকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বাণিজ্য নীতির সমান করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, আর এই বিষয়ে আমরা সাফল্য পাচ্ছি। UNCTAD-এর প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট’ অনুযায়ী ২০১৬-১৮ ‘টপ প্রসপেক্টিভ হোস্ট ইকনমিস’-এ ভারত তৃতীয় স্থানে পৌঁছে গেছে। ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম-এর ‘গ্লোবাল কম্পিটিটিভ্নেস রিপোর্ট’-এ ভারত ৩২-টি ধাপ উন্নত হয়েছে। ‘গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্স – ২০১৬’ অনুযায়ী ভারত ১৬ ধাপ উন্নতি করতে সমর্থ হয়েছে। একই ভাবে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের ‘লজিস্টিক্স পারফর্মেন্স ইনডেক্স – ২০১৬’য় ভারতের ১৯টি ধাপ অগ্রগতির কথা বলা হয়েছে। একই প্রকার অন্যান্য কয়েকটি রিপোর্টেও ভারতের দ্রুত উন্নতি ইঙ্গিত করছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এইবার সংসদের অধিবেশন দেশবাসীর মধ্যে উষ্মার সৃষ্টি করেছে। সংসদের গতিবিধি নিয়ে বিভিন্ন ভাবে তাঁদের রাগ প্রকাশ পেয়েছে। রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতিও এই বিষয়ে তাঁদের উষ্মা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এসবের মধ্যেও কখনো কখনো কিছু কিছু ভালো কথা হয় তখন মন খুশিতে ভরে ওঠে। সংসদের হইহল্লার মধ্যেও এমনই একটি ভালো কাজ হয়েছে, যেটা দেশের সাধারণ মানুষের নজরে আসেনি।
ভাই-বোনেরা, আজ এই কথা বলতে আমার আনন্দ হচ্ছে, গর্ব হচ্ছে যে দিব্যাঙ্গ ব্যক্তিদের জন্য যে লক্ষ সামনে রেখে সরকার চলছে সেই সম্পর্কিত একটি বিল সংসদে গৃহীত হয়েছে। এই জন্য দেশের কয়েক কোটি দিব্যাঙ্গ ব্যক্তির তরফ থেকে লোকসভা এবং রাজ্যসভার সকল সাংসদকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দিব্যাঙ্গ ব্যক্তিদের জন্য আমাদের সরকার দায়বদ্ধ। আমার নিজের তরফ থেকেও এই বিষয়টিতে গতি আনার চেষ্টা করেছি। আমার উদ্দেশ্য ছিল দিব্যাঙ্গ ব্যক্তিরা যেন তাঁদের নিজের অধিকার এবং সম্মান পান, যেটা তাদের প্রাপ্য। আমার এই প্রচেষ্টাকে আমার দিব্যাঙ্গ ভাই-বোনেরা আরও শক্তি জুগিয়েছেন যখন প্যারা অলিম্পিক্সে চারটি মেডেল জিতে নিয়েছেন। এই জিত কেবল দেশের সম্মানই বাড়ায়নি, তাদের শক্তি দেশবাসীকে আশ্চর্যান্বিত করেছে। দেশের অন্যান্য নাগরিকদের মতো আমাদের এই দিব্যাঙ্গ ভাই-বোনেরা আমাদের এক অমূল্য সম্পদ ও শক্তি। আমি আজ অত্যন্ত খুশি যে এই আইন পাশ হওয়ার ফলে দিব্যাঙ্গদের জন্য চাকরির আরও সুবিধা উপলব্ধ হবে। সরকারী চাকরির ক্ষেত্রে সংরক্ষণের সীমা বাড়িয়ে চার শতাংশ করা হয়েছে। এই আইনে দিব্যাঙ্গদের শিক্ষা, সুবিধা আর অভিযোগের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দিব্যাঙ্গ ব্যক্তিদের প্রতি সরকার কতটা সংবেদনশীল, তা আপনারা আন্দাজ করতে পারবেন এই বিষয় থেকে যে বিগত দুই বছরে এদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে ৪৩৫০ টি শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। ৩৫২ কোটি টাকা খরচ করে ৫,৮০,০০০ দিব্যাঙ্গ ভাই-বোনকে বিভিন্ন প্রকার উপকরণ দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের ভাবনার অনুরূপ সরকার এই নতুন আইন প্রণয়ন করেছেন। আগে দিব্যাঙ্গ ব্যক্তিদের ৭-টি শ্রেণিতে ভাগ করা হতো। নতুন আইনে ১৪-টি শ্রেণি বাড়িয়ে সেটা ২১ করা হয়েছে। দিব্যাঙ্গ ব্যক্তিদের জন্য এমন কয়েকটি শ্রেণি তৈরি করা হয়েছে যাতে প্রথমবার তাঁরা উপযুক্ত সুযোগ ও ন্যায় পাবেন। থ্যালাসেমিয়া, পারকিন্সন্স রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং বামনদেরও এই শ্রেণির মধ্যে যুক্ত করা হয়েছে।
আমার যুব-বন্ধুরা, বিগত কয়েকটি সপ্তাহে খেলার মাঠ থেকে এমন খবর আসছে, যাতে আমরা সকলেই গৌরবাণ্বিত বোধ করছি। ভারতীয় হওয়ার কারণে আমাদের গর্ব হওয়া স্বাভাবিক। ভারতীয় ক্রিকেট দল ইংলণ্ডের বিপক্ষে ৪-০-তে সিরিজ জিতেছে। এতে কিছু যুব খেলোয়াড়ের পারফর্ম্যান্স খুবই প্রশংসনীয়। আমাদের যুব খেলোয়াড় করুণ নায়ার ট্রিপল সেঞ্চুরী করেছেন। কে.এল.রাহুল ১৯৯ রানের ইনিংস খেলেছেন। টেস্ট অধিনায়ক বিরাট কোহলি কেবল ভালো ব্যাটিং-ই করেননি, ভালো নেতৃত্বও দিয়েছেন। ভারতীয় ক্রিকেট দলের অফ্স্পিন বোলার রবিচন্দ্রণ অশ্বিন-কে আই.সি.সি. ২০১৬-র ‘ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার’ এবং ‘বেস্ট টেস্ট ক্রিকেটার’ নির্বাচিত করেছেন। এঁদের সবাইকে আমার অনেক অনেক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। হকিতেও ১৫ বছর পরে খুব ভালো খবর পাওয়া গেছে। জুনিয়র হকি দল ১৫ বছর পর বিশ্বকাপ জিতেছে। তাঁদের এই সাফল্যের জন্য আমি এই যুব-খেলোয়াড়দের অনেক অনেক অভিনন্দন জানাচ্ছি। এই সাফল্য ভারতীয় হকি দলের ভবিষ্যতের জন্য এক শুভ সংকেত। গত মাসে আমাদের মহিলা খেলোয়াড়েরাও অসাধারণ সাফল্য পেয়েছেন। ভারতীয় মহিলা হকি দল এশিয়ান চ্যাম্পিয়নস্ ট্রফি জিতেছেন। আর কয়েকদিন আগে অনূর্দ্ধ ১৮ এশিয়া কাপে ভারতের মহিলা হকি দল ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেছেন। আমি ক্রিকেট এবং হকি দলের সকল খেলোয়াড়কে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ২০১৭ সাল নতুন আশা ও উৎসাহের বছর হোক। আপনাদের সকল সংকল্প সফল হোক। উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা যেন এক নতুন উচ্চতা লাভ করতে পারি। নতুন বছরে গরীব ব্যক্তিরাও যেন সুখ-শান্তির জীবন অতিবাহিত করতে পারেন, ২০১৭-র জন্য আমার পক্ষ থেকে সমস্ত দেশবাসীকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ!
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার!
গত মাসে আমরা সবাই দীপাবলির উৎসবপালন করেছি। প্রত্যেক বছরের মতো এবারও দীপাবলির সময়, সেনাবাহিনীর সঙ্গে দীপাবলিপালন করতে আমি চীন সীমান্তে গিয়েছিলাম।
আই-টি-বি-পি’র জওয়ানদের সঙ্গে হিমালয়ের উঁচু এলাকায় দীপাবলি উৎসব পালন করেছি।প্রতি বছরই আমি সীমান্তে যাই, কিন্তু এবারেরদীপাবলির অভিজ্ঞতা একেবারেই আলাদা। ১২৫ কোটি ভারতবাসী যে অতুলনীয় আবেগে এই দীপাবলিকেসেনাবাহিনীর জওয়ানদের সমর্পণ করেছেন – সেনানীদের উৎসর্গ করেছেন এবারে, সেই আবেগেরউপলব্ধি জোয়ানদের চেহারায় প্রতিফলিত হচ্ছিল। সেই আবেগে ওঁরা ভরপুর ছিলেন এবং শুধুতাই নয়, দেশবাসী যে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন, নিজেদের খুশির সঙ্গে সেনানীদেরসামিল করেছেন তার এক অদ্ভূত প্রতিক্রিয়া দেখছিলাম। শুধু যে শুভেচ্ছাবার্তাপাঠিয়েছেন এমন নয়, সমস্ত আবেগ দিয়ে কেউ কবিতা পাঠিয়েছেন, কেউ ছবি এঁকে পাঠিয়েছেন,কেউ কার্টুন, কেউ বা ভিডিও – এমন কতো কী, মনে হচ্ছিল – কী করে যেন প্রত্যেক ঘরেঘরে একটা সেনা চৌকি রয়েছে। যখন আমি এইগুলো দেখছিলাম, কী অপূর্ব সব কল্পনায় সে সববানানো, ভেবে অবাক হয়ে গেছি। এই সব বিচিত্র শুভেচ্ছাবার্তা থেকে বাছাই করে একটা‘কফি টেবিল বুক’ করা হবে বলে ‘মাই-গভ’ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই বইয়ের কাজ চলছে,আপনাদের সকলের সহযোগিতায়, দেশের সেনাবাহিনীর জওয়ানদের প্রতি আপনাদের আবেগময় বৈচিত্র্যপূর্ণসৃষ্টি, জওয়ানদের সঙ্গে আপনাদের যে ভাব বিনিময়ের জগৎ, সব একটা বইতে সংকলিত করাহবে।
সেনাবাহিনীরএক জওয়ান লিখেছেন –
“প্রধানমন্ত্রীজী, আমাদের মতো জওয়ানরা হোলি, দেওয়ালি সবউৎসবে সীমান্তেই থাকি এবং প্রতিটি মুহূর্ত আমরা দেশের সুরক্ষার চিন্তায় আশঙ্কিতথাকি। তারপরেও উৎসবের সময়গুলোয় বাড়ির কথা মনে পড়ে। কিন্তু, সত্যি বলতে কি এবারেদীপাবলি উৎসবের সময় আমাদের তেমনটা মনে হয় নি। উল্টে এবারে মনে হচ্ছিল, ১২৫ কোটিভারতবাসীর সঙ্গেই যেন দীপাবলির উৎসবে সামিল হয়েছি।
প্রিয়দেশবাসী, যে আন্তরিকতা, খুশী, ভালোবাসা ও আনন্দ আমাদের সেনাবাহিনীর জওয়ানদের মধ্যেসঞ্চারিত হয়েছে, একি শুধু হোলি-দীপাবলিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে, না থাকা উচিৎ? আপনাদেরকাছে আমার আবেদন, আসুন, সমাজ হিসেবে, রাষ্ট্র হিসেবে একে স্বভাব ও প্রকৃতির অংশকরে তুলি। যে কোনও পার্বণ বা উৎসবই হোক, যে কোনও আনন্দের সময় আমরা আমাদেরসেনাবাহিনীর জওয়ানদের কোনও না কোনও ভাবে মনে রাখবো। যখন রাষ্ট্র সেনাবাহিনীর সঙ্গেএকাত্ম হয়ে উঠবে, সেনাবাহিনীর শক্তিও ১২৫ কোটি গুণ বেড়ে যাবে।
কিছুদিন আগে,জম্মু ও কাশ্মীরের সব গ্রামের প্রধানরা আমার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। ওঁরাজম্মু-কাশ্মীর পঞ্চায়েত সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছিলেন। কাশ্মীর উপত্যকার বিভিন্নগ্রাম থেকে প্রায় ৪০-৫০ জন প্রধান এসেছিলেন। অনেকক্ষণ ধরে কথাবার্তার সুযোগহয়েছিল। ওঁরা গ্রামের বিকাশ ও উন্নয়নের জন্য কিছু দাবিদাওয়া জানাতে এলেও স্বাভাবিকভাবেই আলোচনায় কাশ্মীর উপত্যকার সাম্প্রতিক অবস্থা, আইন-কানুন, বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ- এই সব প্রসঙ্গও উঠে এলো। এত আন্তরিক ভাবে খোলা মনে ওঁরা সেসব কথা বলছিলেন, আমিঅভিভূত হয়ে পড়েছিলাম। কথায় কথায় বাচ্চাদের স্কুলবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গ উঠল।আমি দেখলাম দেশের বাকি জনগণের মতোই ওঁরা অত্যন্ত কষ্ট পাচ্ছেন এবং তাঁরা মনে করেনবাচ্চাদের স্কুলবাড়ি পোড়ানো মানে বাচ্চাদের আগামী সম্ভাবনা জ্বালিয়ে শেষ করে ফেলা।
আমি ওইগ্রামপ্রধানদের নিজেদের এলাকায় ফিরে বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে কী করা যায়তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে অনুরোধ করেছি। আজ আমার বলতে ভালো লাগছে যে, কাশ্মীরউপত্যকার বিভিন্ন গ্রামের যে প্রধানেরা এসেছিলেন, আমায় যেমন কথা দিয়েছিলেন, ফিরেগিয়ে তাঁরা আমার অনুরোধ মতো গ্রামের মানুষদের উৎসাহিত করতে শুরু করেছেন,প্রত্যেকটি পরামর্শ মেনে চলছেন। কিছুদিন আগে কাশ্মীরে বোর্ড এক্জাম হয়ে গেল এবংসেখানকার প্রায় ৯৫% ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষায় বসেছেন। বোর্ডের পরীক্ষায় এই বিপুলসংখ্যায় ছাত্র-ছাত্রীর অংশগ্রহণে আমি স্পষ্ট আভাস পাচ্ছি যে জম্মু-কাশ্মীরউপত্যকায় আমাদের বাচ্চারা শিক্ষার মাধ্যমে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের বিকাশের জন্যদৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ছাত্র-ছাত্রীদের এই অঙ্গীকারের জন্য শুধু ওদের নয়, ওদের অভিভাবক,বাবা-মা, শিক্ষক এবং সর্বোপরি গ্রামপ্রধানদের অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আমার প্রিয়ভাই-বোনেরা, যখন আমি এবারের ‘মন কি বাত’ নিয়ে জনসাধারণের আলোচনা প্রস্তাব চেয়েছি,আমি স্বীকার করছি, প্রত্যেকে একটাই প্রস্তাব করেছেন। প্রত্যেকেই চেয়েছেন পাঁচশো ওহাজার টাকার নোট নিয়ে আমি বিস্তারিত ভাবে কিছু বলি। ৮-ই নভেম্বর রাত ৮-টায় আমিদেশের সঠিক উন্নয়নের জন্য, রাষ্ট্রের পক্ষে এক মহা অভিযানের কথা জানিয়েছিলাম। যেসময় আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং আপনাদের সেই সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলাম, স্পষ্টবলেছিলাম, এটা একটা সাধারণ সিদ্ধান্ত নয়, এটা একটা কঠিন পদক্ষেপ। এই সিদ্ধান্তনেওয়াটা যেমন অত্যন্ত কঠিন ছিল, তা প্রয়োগ ও বাস্তবায়িত করা আরও কঠিন। এটাও আমিজানতাম, এই সিদ্ধান্তের জন্য জনসাধারণকে নতুন নতুন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে।সিদ্ধান্ত ঘোষণার সময়ই আমি সতর্ক করেছিলাম এই প্রস্তাব কার্যকরী করার প্রভাব এতটাইব্যাপক যে তার থেকে বেরোতে অন্ততঃ ৫০ দিন তো লাগবেই। তারপরই আমরা স্বাভাবিকঅবস্থার দিকে এগোতে পারবো। সত্তরটা বছর ধরে যে অসুখ ছড়িয়েছে, তার থেকে সুস্থ হয়েওঠা খুব সহজ ঘটনা নয়। আপনাদের কষ্টের কথা আমি ভালো ভাবেই উপলব্ধি করতে পারছি। আপনাদেরবিভ্রান্ত ও বিচলিত করতে ক্রমাগত যে প্রচেষ্টা চলেছে, তার পরেও এই পথই যে দেশেরকল্যাণসাধনের পক্ষে সঠিক, তা আপনারা বুঝতে পারছেন। আমি আপনাদের বিপুল সমর্থন ওসহযোগিতা পাচ্ছি। আমি দেখছি, সারা বিশ্ব দেখছে, নানান অর্থনীতিবিদ্ এই বিশাল দেশেবিভিন্ন কারেন্সি, কালো টাকা, জাল নোট এই সব কিছু নিয়ে চর্চা করে চলেছে। বিশ্বেরমানুষ কৌতূহলী যে ১২৫ কোটি ভারতবাসী এমন কঠিন পরিস্থিতি সামলে উঠতে পারে কিনা। এমনসংশয় তো হতেই পারে। ১২৫ কোটি ভারতবাসীর নিজের দেশের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা ও পূর্ণ বিশ্বাসআছে যে তাঁরা দেশের উন্নতির জন্য সর্বান্তঃকরণে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমাদের দেশ পুড়েখাঁটি সোনায় পরিণত হবে এদেশের নাগরিকদের জন্য। এর কারণ আপনারাই, এই সাফল্যেরযাত্রাপথ আপনারাই তৈরি করেছেন।
সারা দেশের কেন্দ্রসরকার, রাজ্য সরকার, স্বশাসিত সংস্থা, ১ লাখ ৩০ হাজার ব্যাঙ্কের শাখা, লক্ষ লক্ষব্যাঙ্ক কর্মচারি, দেড় লক্ষেরও বেশি ডাকঘর, এক লক্ষেরও বেশি ব্যাঙ্ক-সহযোগীরাত-দিন এই ব্যবস্থায় কাজ করে চলেছেন, এই কাজে নিজেদের উৎসর্গ করেছেন। বিচিত্র সবহট্টগোলের মাঝে এই সমস্ত কর্মীরা ধৈর্যের সঙ্গে দেশসেবার এক মহান কর্মযজ্ঞ মেনেনিয়ে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তনের কাজে মগ্ন রয়েছেন। সকালে কাজ শুরু করে কখন যে রাতহয়ে যাচ্ছে, তাঁরা খেয়ালও করতে পারছেন না, কাজ করে চলেছে। এই জন্যই আমরা সাফল্যপাবোই। ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরের কর্মীরা কি প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ করে চলেছেন। আর যখনমানবিকতার কথা আসছে ওঁরা যেন আরও সক্রিয় হয়ে উঠছেন। আমি শুনলাম খাণ্ডোয়ার একপ্রবীণ মানুষ অ্যাক্সিডেন্টে আহত হওয়ায় তাঁর টাকার আচমকা প্রয়োজন হয়। সেই কথা যখনস্থানীয় ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের কানে গেছে তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে প্রবীণ ভদ্রলোকের বাড়িতেটাকা পৌঁছে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তাঁর চিকিৎসার সুব্যবস্থা করেছেন। আমি এই ঘটনাটিজেনে অভিভূত হয়েছি। এমন কতো ঘটনা সংবাদপত্রে, টিভিতে, অন্যান্য মিডিয়াতে ছড়িয়েপড়েছে। প্রতিকূলতার মুখোমুখি হলেই আপনার শক্তির আসল পরিচয় পাওয়া যায়।প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে জন-ধন যোজনা অভিযান যখন চালু হয়, সেই সময় ব্যাঙ্ককর্মচারীরা কি শ্রম ও আত্মত্যাগ করেছেন, আমি দেখেছি। ওঁদের সামর্থের পরিচয় পেয়েছি।৭০ বছরে যে কাজ অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল, ওঁরা তা সম্ভব করে দেখিয়েছেন। আজ আবার সেইকঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি এবং আমি বিশ্বাস করি ১২৫ কোটি দেশবাসীর সংকল্প,তাঁদের পুরুষকার, এই দেশ – এই রাষ্ট্রকে নতুন শক্তিতে বলীয়ান করে তুলবেই।
কিন্তুদুর্নীতি এমনই শিকড় গেড়েছে, যে কিছু মানুষের দুর্নীতির অভ্যাস যাচ্ছে না। অনেকেইএখনও মনে করছেন দুর্নীতির টাকা, কালো টাকা, হিসাব-বহির্ভূত টাকা চালু রাখার কোনওনা কোনও উপায় বের করে নেবেন। ওঁরা নিজেদের কালো টাকা বাঁচাতে বিভিন্ন
বে-আইনী উপায় নিচ্ছেন। আমার বেশি খারাপ লাগছে যখন দেখছি, ওঁরা নিজেদের অসৎ কাজেরউপায় বের করতে সাধারণ গরীব মানুষদের জড়াচ্ছেন। গরীবদের বোকা বানিয়ে তাঁদেরপ্রলুব্ধ করে, তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকিয়ে, তাঁদের নানান দুর্নীতিরসঙ্গী করে নিজেদের টাকা বাঁচাচ্ছেন। এই ধরনের অসৎ লোকজনদের আমি শুধু একটা কথাইবলতে পারি, নিজেদের শোধরাবেন কিনা আপনাদের ব্যাপার, আইন মেনে না চললে আইন তার যাব্যবস্থা নেওয়ার নেবে। একটাই অনুরোধ, নিজেদের অন্যায্য স্বার্থ পূরণের জন্য গরীবমানুষগুলিকে নিয়ে খেলবেন না। আপনাদের অন্যায় উপার্জন গরীব মানুষের রেকর্ডে জুড়েদিচ্ছেন, তদন্তের পর আপনি নয়, এই গরীব মানুষগুলো ফেঁসে যাবে, ওরা কষ্ট ভোগ করবে। বেনামীসম্পত্তিকে আওতায় আনার জন্য অত্যন্ত কঠোর নিয়মকানুন বানানো হয়েছে, যেগুলি সবক্ষেত্রে বাস্তবায়িত করা হচ্ছে। কারণ সরকার চায় না যে সাধারণ দেশবাসী কোনও রকমঅসুবিধার সম্মুখীন হোক।
পাঁচশো ওহাজার টাকার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কালো টাকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে লড়াই আমরা শুরুকরেছি, তাকে সমর্থন জানিয়ে মধ্যপ্রদেশ থেকে শ্রীমান আশীষ আমাকে টেলিফোন করেন –
“স্যার নমস্কার, আমার নাম আশীষ পারে। আমি মধ্যপ্রদেশের জেলাহরদা, তহশীল ও গ্রাম তিরালির এক সাধারণ নাগরিক। আপনার এই পাঁচশো-হাজারের নোট বন্ধকরার পদক্ষেপ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমার অনুরোধ, ‘মন কি বাত’-এর মাধ্যমে এমন কয়েকটিউদাহরণ দিন যেখানে সাধারণ মানুষ বহু অসুবিধার সম্মুখীন হয়েও রাষ্ট্রের উন্নতিরজন্য আপনার এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। এতে লোকের উৎসাহ বৃদ্ধি পাবে। রাষ্ট্রনির্মাণের জন্য ‘ক্যাশ লেস’ প্রণালী খুবই জরুরি বলে আমি মনে করি। আমি সমগ্রদেশবাসীর সঙ্গে আছি এবং অত্যন্ত আনন্দিত যে আপনি পাঁচশো-হাজার টাকার নোট বন্ধ করারমতো পদক্ষেপ নিয়েছেন।’
ঠিক এরকমই আরএকটি ফোন আমি পাই কর্ণাটকের শ্রীমান য়েলপ্পা ওয়েলাঙ্কারের কাছ থেকে।
“মোদীজী নমস্কার, আমি কর্ণাটকের কোপ্পল জেলার একটি গ্রামথেকে য়েলপ্পা ওয়েলাঙ্কার বলছি। আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনি বলেছিলেন যে সুদিন আসছে,কিন্তু কেউ ভাবতে পারেনি যে আপনি এত বড় একটি পদক্ষেপ নিতে পারবেন। পাঁচশো ও হাজারটাকার নোট বন্ধ করে আপনি দুর্নীতিগ্রস্ত কালোবাজারিদের উচিত শিক্ষা দিয়েছেন।ভারতের প্রত্যেক নাগরিকের কাছে এর চেয়ে বড় সুদিন আর হয় না। এই জন্য আমি আপনাকে আরওএকবার ধন্যবাদ জানাই।”
মিডিয়া,সাধারণ মানুষ ও সরকারী সূত্রের মাধ্যমে যখন এই ধরনের খবর শুনতে পাই, তখন কাজ করারউৎসাহ অনেক বেড়ে যায়। অত্যন্ত আনন্দ ও গর্ব হয় এই ভেবে যে দেশের সাধারণ মানুষের কীঅদ্ভূত সামর্থ! মহারাষ্ট্রের আকোলায় ন্যাশনাল হাইওয়ে সিক্স-এ একটি রেস্তোরাঁ আছে। ওঁরারেস্তোরাঁর সামনে একটি বড় বোর্ড লাগিয়েছেন, যাতে লেখা – যদি আপনার পকেটে পুরনোপাঁচশো-হাজারের নোট থাকে এবং আপনি খেতে চান, তাহলে আপনি টাকার চিন্তা করবেন না এবংঅভুক্ত যাবেন না। পেট পুরে খেয়ে যান ও আবার যখন এই রাস্তা দিয়ে যাবেন, তখন পয়সামিটিয়ে যাবেন। লোকেরা সেখানে গিয়ে খেয়েছেন, আর দুই-চার-ছয়দিন বাদে আবার যখন সেইরাস্তা দিয়ে ফিরেছেন তখন বিল মিটিয়ে দিয়েছেন। এই হচ্ছে আমার দেশের শক্তি, যেখানেসেবা পরায়ণতা ও ত্যাগ ধর্মই প্রধান।
আমিনির্বাচনের সময় যে চা-বৈঠক করতাম সেই খবর সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল। বিশ্বেরঅনেক দেশ চা-বৈঠক শব্দটির প্রয়োগও শিখে গিয়েছিল। কিন্তু আমার এটা জানা ছিল না যেবিয়েতেও ‘চা-বৈঠক’ হতে পারে! আমি খবর পাই সতেরোই নভেম্বর সুরাতে এমনই এক বিয়ে হয়।এই বিয়েতে পাত্রীপক্ষ আমন্ত্রিতদের জন্য শুধুমাত্র চা পানের আয়োজন করেছিলেন, অন্যকোনও খাওয়াদাওয়া ও ভুরিভোজের অনুষ্ঠান ছিল না – কারণ, নোট বন্ধ হওয়ার দরুণ তাঁদেরহাতে নগদ টাকার অভাব ছিল। বরযাত্রীরাও এই ব্যাপারটিকে সমর্থন করেন। এই ধরনের বিয়েরমাধ্যমে সুরাতের ভরত মারু ও দক্ষা পরমার দুর্নীতি ও কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াইয়েঅংশগ্রহণ করে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নববিবাহিত দম্পতিকে জানাই আমার অনেকঅনেক আশীর্বাদ। বিয়ের মতো অনুষ্ঠানকেও এই মহান যজ্ঞে সামিল করার জন্য আমি তাদেরঅসংখ্য অভিনন্দন জানাচ্ছি। যখন সঙ্কট আসে, তখনই মানুষ নতুন নতুন পথ খুঁজে নেয়।
একবার টিভি-রখবরে আসামের ঢেকিয়াজুলি গ্রামের একটি ঘটনা আমার চোখে পড়ে। গ্রামটি চা-শ্রমিকদেরএবং এই চা-শ্রমিকরা সাপ্তাহিক মজুরি পেয়ে থাকে। এবারে যখন দু-হাজার টাকার নোটদেওয়া হয়, তখন তাঁরা কী করলেন? প্রতিবেশী চারজন মহিলা একজোট হয়ে এক সঙ্গে কেনাকাটাকরলেন এবং দু-হাজার টাকার নোটে পেমেন্ট করলেন। তাঁদের কোনও ছোটো কারেন্সির দরকারইপড়ল না। তাঁরা এটাও ঠিক করলেন পরের সপ্তাহে এর হিসাব মিলিয়ে নেবেন। লোকেরা এভাবেইনতুন নতুন উপায় বের করে নিচ্ছে। আর এর ফলও চোখে পড়ছে। সরকারের কাছে খবর আসে যেআসামের চা বাগানের শ্রমিকরা এ-টি-এম পরিষেবার দাবি জানাচ্ছেন। দেখুন, কীভাবেগ্রাম্য জীবনেও পরিবর্তন আসছে। এই অভিযানের সুফল দেশ পরবর্তী সময়ে পাবে, কিন্তুকিছু মানুষ এখনই লাভবান হয়ে গেছেন। যদি জিজ্ঞেস করেন কী হয়েছে তো আমি বলবো ছোটোছোটো শহর থেকে আমরা কিছু কিছু খবর পাচ্ছি। প্রায় চল্লিশ-পঞ্চাশটা শহর থেকে আমরাখবর পেয়েছি যে যাঁরা এতদিন কর ফাঁকি দিতে অভ্যস্ত ছিলেন, যে কোনও ধরনের ট্যাক্স –যেমন, জলকর, বিদ্যুতের বিল, প্রভৃতি – তাঁরা এখন তড়িঘড়ি পুরনো নোটে সমস্ত বকেয়ামিটিয়ে দিচ্ছেন। আপনারা ভালোভাবেই জানেন যে গরীব মানুষ দুদিন আগে হলেও ন্যূণতমবকেয়াও জমা দিয়ে দেন। কিন্তু ধনী, ক্ষমতাবান লোকেরা, যাঁরা জানেন, তাঁদের কখনও এইব্যাপারে প্রশ্ন করা হবে না, তাঁরাই এর ফায়দা উঠিয়ে থাকেন। আর এই জন্যই বাকিরপরিমাণ বাড়তে থাকে। প্রত্যেক মিউনিসিপ্যালিটির ট্যাক্সের কেবল মাত্র পঞ্চাশ শতাংশইজমা পড়ে। কিন্তু আট তারিখের এই ঘোষণার পরে মানুষজনের মধ্যে পুরনো নোটে বকেয়া জমাদেওয়ার হিড়িক পড়ে যায়। সাতচল্লিশটি শহরের হিসেব নিয়ে দেখা গেছে, গত বছর এই সময়েযেখানে তিন-সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা কর হিসেবে জমা পড়েছিল, আপনারা জেনে আশ্চর্যএবং আনন্দিত হবেন যে সেখানে এক সপ্তাহে তেরো হাজার কোটি টাকা জমা পড়েছে! কোথায় তিন– সাড়ে তিন হাজার, আর কোথায় তেরো হাজার! তাও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে! এখন সেই সবমিউনিসিপ্যালিটির কাছে চার গুণ পয়সা জমা পড়েছে, যা স্বাভাবিক ভাবে গরীব বস্তিরনিকাশী ব্যবস্থায়, পানীয় জলের ব্যবস্থায় ও অঙ্গণওয়ারির জন্য খরচ করা হবে। এরকম বহুউদাহরণ আমরা পাচ্ছি, যার প্রত্যক্ষ সুফল আমাদের নজরে আসছে।
ভাই-বোনেরা,গ্রাম ও চাষিভাইরা আমাদের দেশের অর্থব্যবস্থার মেরুদণ্ড স্বরূপ। অর্থব্যবস্থার এইপরিবর্তনের ফলে নানান সমস্যার সম্মুখীন হয়েও যখন আমরা, প্রত্যেক নাগরিক অ্যাডজাস্টকরছি, তখন আমি দেশের চাষিভাইদের বিশেষ ভাবে অভিনন্দন জানাতে চাই। আমি এই বছরেরফসলের বীজ বপনের হিসাব নিচ্ছিলাম। নভেম্বরের কুড়ি তারিখ পর্যন্ত হিসাব আমার কাছেআছে। আমি দেখে খুব খুশি হলাম যে গম, ডাল বা তিল সবক্ষেত্রেই গতবছরের তুলনায় এবছরেরবীজ বপণের অঙ্কটা বেড়েছে। সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যেও চাষিভাইরা নতুন নতুন পথ বেরকরে নিয়েছেন। সরকারী তরফ থেকেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যেখানেচাষিভাইদের এবং গ্রামগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তারপরও কিছু সমস্যা রয়েছেকিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে, চাষিভাইরা সবসময় প্রতিকূলতাকে দৃঢ়ভাবে মোকাবিলাকরেছেন, তা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হোক বা অন্য কিছু। এই সময়েও তাঁরা পিছুপা হবেন না।
আমাদের দেশেরছোটো ব্যবসায়ীরা রোজগারের সুযোগও তৈরি করেন এবং আর্থিক উন্নয়নেও যোগদান করেন।তাঁদের জন্য গতবছর বাজেটে আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সিদ্ধান্তটিহল, শহরের বড় বড় Mall -এর মত গ্রামের ছোটো দোকানিরাও চব্বিশ ঘণ্টাই ব্যবসা করতেপারবেন। কোনও আইন তাঁদের আটকাবে না। আমার মনে হয়েছিল, বড় বড় Mall যদি চব্বিশ ঘণ্টাখোলা থাকতে পারে, তাহলে গ্রামের গরীব দোকানদাররা সেই সুযোগ কেন পাবেন না? ‘মুদ্রা’যোজনার মাধ্যমে তাঁদের লোন পাইয়ে দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত উদ্যম নেওয়া হয়েছে।লক্ষ-কোটি টাকা ‘মুদ্রা’ যোজনার মাধ্যমে এই সমস্ত ছোটো ব্যবসায়ীদের দেওয়া হয়েছে।কারণ অসংখ্য মানুষ যাঁরা এই ছোটো ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, তাঁরাই কোটি কোটি টাকারবাণিজ্যিক লেনদেনকে চালু রাখেন। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের ফলে এই সমস্ত ছোটোব্যবসায়ীদেরও অসুবিধা হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু আমি দেখলাম, এঁরা প্রযুক্তি, মোবাইলঅ্যাপ, মোবাইল ব্যাঙ্ক, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদির মাধ্যমে গ্রাহকদের পরিষেবাদিচ্ছেন। কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বাসকেও মূলধন করে কাজ চালানো হচ্ছে। আমি সমস্ত ক্ষুদ্রব্যবসায়ী ভাই-বোনদের বলতে চাই, এই সুযোগে আপনারাও ডিজিট্যাল জগতে সঙ্গে যুক্ত হন।আপনারাও নিজেদের মোবাইল ফোনে ব্যাঙ্ক-এর অ্যাপ ডাউনলোড করুন। ক্রেডিট কার্ডের জন্য POS Machine -এর ব্যবস্থা রাখুনএবং বিনা নোটে কীভাবে ব্যবসা করা যায়, তা শিখে নিন। আপনারা দেখেছেন, বড় বড় Mall- গুলি টেকনোলজিরমাধ্যমে ব্যবসা চালিয়ে থাকে। ঠিক সেইভাবে একজন ছোটো ব্যবসায়ীও সামান্য ‘ইউজারফ্রেইণ্ডলি’ টেকনোলজির সাহায্যে কারবারের লেনদেন করতে পারেন। এক্ষেত্রে কোনওলোকসানের সম্ভাবনা তো নেই-ই, প্রসারের সুযোগ আছে। আমি আপনাদের অনুরোধ জানাই,‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ তৈরিতে আপনারাও যোগদান করুন। আপনারা বাণিজ্যিক প্রসারের জন্যমোবাইল ফোনেই সম্পূর্ণ ব্যাঙ্কিং-এর সুবিধা নিতে পারেন এবং নগদ নোটের লেনদেন ছাড়াইব্যবসা চালু রাখতে পারেন। এগুলি প্রযুক্তিগত উপায়, যা নিরাপদ, সুরক্ষিত এবং দ্রুত।আমি চাই আপনারা এই অভিযানকে সফল করতে শুধুমাত্র সাহায্য করুন তাই নয়, আপনারানেতৃত্বও দিন। আমার বিশ্বাস আপনারাই পারেন এই পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিতে। আপনারাগ্রামের সমস্ত ব্যবসায়িক লেনদেন প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন করতে পারবেন বলেই আমারবিশ্বাস। আমি শ্রমিক ভাই-বোনদেরও বলতে চাই যে, আপনাদের উপর অনেক শোষণ চালানোহয়েছে। কাগজে লেখা হচ্ছে এক বেতন আর হাতে যা দেওয়া হচ্ছে তা আরেক রকম। কখনও পুরোপারিশ্রমিক পাওয়া গেল তো দেখা গেল বাইরে একজন দাঁড়িয়ে আছে, তাকে ভাগ দিতে হবে আরশ্রমিক বাধ্য হয়ে এই শোষণকে জীবনের অঙ্গ বলে মেনে নেয়। এখনকার নতুন ব্যবস্থায় আমরাচাই যে ব্যাঙ্কে আপনার অ্যাকাউন্ট থাকুক, আপনার পারিশ্রমিকের অর্থ ব্যাঙ্কে জমাহোক্ যাতে ন্যূণতম মজুরির শর্ত পালিত হয়। আপনি যেন পুরো অর্থ পান, কেউ কেটে না নেয়।আপনার উপর যেন শোষণ না হয়। আর একবার আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউণ্টে টাকা এসে গেলে আপনিআপনার ছোট মোবাইলে – কোনও বড় স্মার্ট ফোন দরকার নেই – আজকাল তো আপনার মোবাইল ফোনইমানিব্যাগের কাজ করে – সেই মোবাইল ফোন দিয়ে আশপাশের ছোটখাটো দোকানে যা কেনার কিনতেপারেন, ওটা থেকে পয়সা মিটিয়ে দিতে পারেন। এই জন্য আমি শ্রমিক ভাই-বোনদের এই যোজনারঅংশীদার হতে বিশেষ অনুরোধ জানাই কারণ প্রকৃত অর্থে আমি এই সিদ্ধান্ত দেশের গরীবদেরজন্য, শ্রমিকদের জন্য, বঞ্চিতদের জন্য, পীড়িতদের জন্য নিয়েছি। এর লাভ ওঁদের পাওয়াউচিত।
আজ আমি বিশেষভাবে যুবক বন্ধুদেরসঙ্গে কথা বলতে চাই। আমরা গোটা দুনিয়ায়
ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বলি যে – ভারত এমন দেশ যেখানে জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ পঁয়ত্রিশ বছরেরকম বয়সী। আপনারা, আমার দেশের যুবক ও যুবতীরা, আমি জানি আমার সিদ্ধান্ত আপনাদেরপছন্দ হয়েছে। আমি এটাও জানি যে আপনারা এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন। আমি এও জানি যেএই ব্যাপারটাকে সদর্থকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে আপনারা অনেক অবদানও রাখবেন। কিন্তুবন্ধুরা, আপনারা আমার সত্যিকারের সৈন্য, সত্যিকারের বন্ধু। ভারত মায়ের সেবার করারএক অদ্ভূত সুযোগ এসেছে আমাদের সামনে। দেশকে আর্থিক সমৃদ্ধির শীর্ষে নিয়ে যাওয়ারসুযোগ এসেছে। আমার বাহাদুর তরুণরা, আপনারা কি আমাকে সাহায্য করতে পারেন? শুধু আমারসঙ্গে থাকবেন, এইটুকুতে কাজ হবে না। আজকের দুনিয়া সম্পর্কে যে ধারণা আছে আপনাদের,তা পুরনো প্রজন্মের নেই। এমন হতে পারে যে আপনাদের পরিবারে বড় ভাইও এতটা জানে না আরমা-বাবা, কাকা-কাকিমা, মামা-মামীও সম্ভবতঃ এতটা জানেন না। আপনারা জানেন ‘অ্যাপ’ কীজিনিস, ‘অনলাইন ব্যাঙ্কিং’ কী, ‘অনলাইন টিকিট’ বুকিং কীভাবে হয়। আপনাদের জন্য এসবখুব সাধারণ ব্যাপার এবং আপনারা এর ব্যবহারও করেন। কিন্তু আজ দেশ যে মহান কাজটাকরতে চায়, আমাদের সেই স্বপ্ন হল ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’। এটা ঠিক যে একশো শতাংশক্যাশলেস সোসাইটি সম্ভব নয়। কিন্তু একবার যদি আমরা ‘লেস-ক্যাশ সোসাইটি’-র সূত্রপাতকরতে পারি, তবে ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’-র লক্ষ্য অধরা থাকবে না। আর এই ব্যাপারেআপনাদের সক্রিয় সহযোগিতা, সময় ও সংকল্প চাই। আর আপনারা আমাকে কখনও নিরাশ করবেন নাতা আমি জানি, কারণ আমরা সবাই হিন্দুস্থানের গরীব মানুষদের জীবন পরিবর্তনের ইচ্ছাপোষণ করা নাগরিক। আপনারা জানেন, ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’র জন্য, ডিজিট্যাল ব্যাঙ্কিং-এরজন্য বা মোবাইল ব্যাঙ্কিং-এর জন্য আজ কত সুযোগ রয়েছে। প্রত্যেকটা ব্যাঙ্ক অনলাইনসুবিধা দেয়। হিন্দুস্থানে প্রতিটি ব্যাঙ্কের নিজস্ব মোবাইল অ্যাপ আছে। প্রতিটি ব্যাঙ্কেরনিজস্ব ওয়ালেট আছে। ওয়ালেটের সাদামাটা অর্থ হল – ‘ই’-মানিব্যাগ। বেশ কয়েকরকম কার্ডপাওয়া যায়। জন-ধন যোজনার অধীনে ভারতের কোটি কোটি গরীব পরিবারের কাছে Rup a y Card আছে, যে Rupay Card খুব কম ব্যবহৃত হত।আট তারিখের পর থেকে তার বহুল ব্যবহার করছেন গরীব মানুষেরা এবং তাতে প্রায় তিনশোশতাংশ বৃদ্ধি ঘটেছে। মোবাইল ফোনে যেমন প্রি-পেইড কার্ড পাওয়া যায়, তেমনই ব্যাঙ্কেওপয়সা খরচের জন্য কার্ড পাওয়া যায়। এ এক বড় প্ল্যাটফর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্যের‘বিশ্বজনীন মূল্য সূচক’ ( UPI ), যা দিয়ে আপনি কেনাকাটাও করতে পারেন, অর্থও পাঠাতে পারেন,অর্থ গ্রহণও করতে পারেন। আর এই কাজটা এতটাই সরল যেমনটা আপনার হোয়াট্স অ্যাপেবার্তা পাঠানো। যিনি কোনও লেখাপড়াই শেখেন নি তেমন ব্যক্তিও জানেন কেমনভাবে হোয়াট্সঅ্যাপে বার্তা পাঠাতে হয় বা আসে, ফরওয়ার্ড কীভাবে করতে হয়, কীভাবে তা ঢোকে। শুধুএটাই নয়, টেকনোলজি দিনে দিনে এত সরল হয়ে যাচ্ছে যে এই কাজের জন্য কোনও বড় স্মার্টফোনেরও প্রয়োজন নেই। সাধারণ বৈশিষ্ট্য-সহ যে ফোন পাওয়া যায়, তাতেও ক্যাশট্রান্সফার হতে পারে। ধোপা হোক বা শাকসব্জী, দুধ, খবরের কাগজ, চা, ছোলা বিক্রেতা হোক– সবাই অনায়াসে এটা ব্যবহার করতে পারে। আর আমিও এই ব্যবস্থাকে আরও সরল করার উপরজোর দিয়েছি। সব ব্যাঙ্ক এতে সামিল হয়ে কাজটা করছে। আর এখন তো আমরা ওই অনলাইনসারচার্জের যে খরচ, তাও বাতিল করে দিয়েছি। আরও এইরকম কার্ড ইত্যাদির যে খরচা হত,সেগুলো আপনারা দেখেছেন গত দু-চারদিনের খবরের কাগজে, সব খরচ বাতিল করে দিয়েছি, যাতে‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ আন্দোলনকে শক্তি যোগানো যায়।
আমার তরুণ বন্ধুরা, এতসব হওয়ারপরেও একটা গোটা প্রজন্ম এমন রয়েছে, যাঁরা এইসব ব্যাপারের সঙ্গে অপরিচিত। আর আপনারাসবাই, আমি ভালো ভাবেই জানি, এই মহান কাজে সক্রিয় রয়েছেন। হোয়াটস অ্যাপে যে ধরনেরক্রিয়েটিভ ম্যাসেজ দেন আপনারা – স্লোগান, কবিতা, গল্প, কার্টুন, নতুন নতুন কল্পনা,হাসি-ঠাট্টা – সব কিছুই দেখছি, আর চ্যালেঞ্জের মুখে তরুণ প্রজন্মের এই যে সৃজন শক্তি,এ দেখে মনে হচ্ছে, যেন এই ভারতবর্ষের বিশেষত্বই হলো যে কোনও এক যুগে যুদ্ধেরময়দানে ‘গীতা’র জন্ম হয়েছিল। তেমনই আজ যখন এত বড়ো পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে চলেছিআমরা তখনই আপনাদের ভেতরের মৌলিক সৃষ্টিশীলতা প্রকট হচ্ছে। কিন্তু আমার প্রিয় তরুণবন্ধুরা, আমি আবার একবার বলছি, এই কাজে আপনাদের সাহায্য প্রয়োজন আমার এবং আমারবিশ্বাস, আপনারা, দেশের কোটি কোটি তরুণ এই কাজ করবেন। এক কাজ করুন আপনারা, আজথেকেই প্রতিজ্ঞা করুন যে আপনি স্বয়ং ‘ক্যাশলেস সোসাইটির এক অঙ্গ হবেন। অনলাইনখরচের যত প্রযুক্তি আছে তা ব্যবহার করবেন নিজের মোবাইল ফোনে। শুধু এইটুকুই নয়,প্রতি দিন আধ ঘণ্টা, এক ঘণ্টা, দু’ঘণ্টা সময় বের করে কম করে দশটা পরিবারকে বোঝাবেনএই প্রযুক্তি কী, কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, কেমনভাবে নিজের ব্যাঙ্কের অ্যাপ ডাউনলোডকরতে হয়, নিজের অ্যাকাউন্টে যে অর্থ পড়ে আছে সেই অর্থ কীভাবে খরচা করা যায়, কীভাবেদোকানদারকে তা দেওয়া যায়। দোকানদারকেও শেখান কীভাবে ব্যবসা করা যায়। আপনিস্বেচ্ছায় এই ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’-তে প্রবেশের, এই নোটের চক্কর থেকে সমাজকে বের করেআনার যে মহা-অভিযান, দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার যে অভিযান, কালো টাকা থেকে মুক্তিপাওয়ানোর যে অভিযান, মানুষকে দুর্দশা আর সমস্যা থেকে মুক্ত করার যে অভিযান – তারনেতৃত্ব দিতে হবে আপনাকে। একবার মানুষকে RupayCard কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, এটা আপনি শিখিয়ে দেবেন,তবে গরীব মানুষ আপনাকে আশীর্বাদ করবে। সাধারণ নাগরিককে এই ব্যবস্থা শিখিয়ে দিলে সেতার সব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে আর এই কাজে যদি হিন্দুস্থানের সব তরুণরাসামিল হয় তবে আমি মনে করি, সময় বেশি লাগবে না। এক মাসের মধ্যেই আমরা বিশ্বে একনতুন, আধুনিক হিন্দুস্থান হয়ে আত্মপ্রকাশ করতে পারি আর এই কাজ আপনি আপনার মোবাইলফোনের মাধ্যমে করতে পারেন। রোজ দশটা বাড়িতে গিয়ে করতে পারেন, রোজ দশটা পরিবারকে এইব্যবস্থায় যুক্ত করে করতে পারেন। আমি আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি – আসুন, শুধুসমর্থন নয়, আমরা এই পরিবর্তনের সৈনিক হই আর পরিবর্তন ঘটিয়ে ছাড়ি। দুর্নীতি আর কালোটাকা থেকে দেশকে মুক্ত করার এই লড়াইকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব আর দুনিয়ায় এমন অনেকদেশ আছে যেখানে তরুণ প্রজন্ম সেই রাষ্ট্রের জীবনধারা বদলে দিয়েছেন আর এটা মানতেহবে যে পরিবর্তন যা আসে তা তরুণরা ও যুবকরাই আনেন, তাঁরাই বিপ্লব করেন। কেনিয়াউদ্যোগ নিয়ে M-PESA নামে এক মোবাইল ব্যবস্থা দাঁড় করিয়েছে, প্রযুক্তির ব্যবহার করেছে, M-PESA নাম দিয়েছে আর আজআফ্রিকার এই এলাকায় কেনিয়াতে পুরো ব্যবসা-বাণিজ্য এই অভিমুখে পরিবর্তিত হওয়ারপ্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। এক বড় বিপ্লব ঘটিয়েছে এই দেশ।
আমার তরুণরা, আমি ফের একবার,আবারও একবার প্রবল আগ্রহ নিয়ে আপনাদের বলছি যে আপনারা এই অভিযানকে এগিয়ে নিয়েচলুন। প্রত্যেকটা স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, এন-সি-সি, এন-এস-এস’কে গোষ্ঠীবদ্ধভাবে, ব্যক্তিগত স্তরে এই কাজ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি আপনাদের। আমরা এইব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাই। দেশের পরম সেবার সুযোগ পেয়েছি আমরা, সুযোগ হারানো উচিৎনয়।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আমাদের দেশের এক মহান কবি শ্রী হরিবংশরাই বচ্চনের আজ জন্মজয়ন্তী আর আজ হরিবংশরাই-জীর জন্মদিনে শ্রী অমিতাভ বচ্চন ‘স্বচ্ছতাঅভিযান’-এর জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। আপনারা দেখেছেন যে এই সময়ের সবথেকে জনপ্রিয়শিল্পী অমিতাভ-জী স্বচ্ছতা অভিযানকে খুব পরিশ্রম করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। মনেহচ্ছে যে স্বচ্ছতার বিষয়টি ওঁর শিরায় শিরায় ছড়িয়ে গিয়েছে আর তাই তো নিজের পিতারজন্মজয়ন্তীতেও ওঁর স্বচ্ছতার বিষয়টি মনে এসেছে। হরিবংশ রাই-জীর একটি কবিতার পঙ্ক্তিএইরকম –
“মিট্টি কা তন,
মস্তি কা মন,
ক্ষণ ভর জীবন,
মেরা পরিচয়।’ (অর্থাৎ, মাটির শরীর, খুশি খুশি মন, ক্ষণিকেরজীবন, এই মোর পরিচয়।)
হরিবংশ রাই-জী এই ভাবেই নিজের পরিচয় দিতেন। ‘মিট্টি কা তন, মস্তি কা মন, ক্ষণভর জীবন, মেরা পরিচয়’ – এর সঙ্গে মিল রেখে ওঁর সুযোগ্য পুত্র শ্রী অমিতাভ-জী, যাঁরশিরায় শিরায় স্বচ্ছতা অভিযান ছড়িয়ে গিয়েছে, তিনি হরিবংশ রাই-জীর কবিতা ব্যবহার করেআমাকে লিখে পাঠিয়েছেন –
‘স্বচ্ছ্তন,
স্বচ্ছমন্,
স্বচ্ছ্ভারত,
মেরাপরিচয়।’ (অর্থাৎ পরিচ্ছন্ন শরীর,পরিচ্ছন্ন মন, পরিচ্ছন্ন ভারত, আমার পরিচয়)।
আমি হরিবংশ রাই-জীকে শ্রদ্ধাপূর্বক নমস্কার জানাই। ‘মন কী বাত’-এর সঙ্গেএইভাবে যুক্ত হওয়ার জন্য আর স্বচ্ছতার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য শ্রীযুক্তঅমিতাভ বচ্চনকে ধন্যবাদ জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এখন তো ‘মনকী বাত’-এর মাধ্যমে আপনাদের চিন্তা, আপনাদের ভাবনা পত্রের মাধ্যমে, ‘মাই গভ’-এ,‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এ পৌঁছচ্ছে আর আপনাদের সঙ্গে জুড়ে রাখছে আমাকে। এখন তো বেলাএগারোটার সময় ‘মন কি বাত’ প্রচারিত হয় কিন্তু এই সম্প্রচার শেষ হওয়ার পর পরইপ্রাদেশিক ভাষায় এটা শোনানোর ব্যবস্থা শুরু হতে চলেছে। আমি আকাশবাণীর প্রতিকৃতজ্ঞ, এই নতুন উদ্যোগ যে ওঁরা নিয়েছেন, যাতে যে সব জায়গায় হিন্দি ভাষার প্রচলননেই, সেখানেও এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন দেশবাসীরা। আপনাদের সবাইকে অনেকঅনেক ধন্যবাদ!
আমার প্রিয় দেশবাসী,
আপনাদের সবাইকে দীপাবলীর অনেক অনেকশুভকামনা। ভারতের প্রতিটি কোণে কোণে উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে দীপাবলীর উৎসব পালনকরা হয়। ভারত এমনই এক দেশ, যেখানে ৩৬৫ দিন ধরে দেশের কোনও না কোনও অংশে কোনও নাকোনও উৎসব চোখে পড়ে। দূর থেকে যাঁরা দেখছেন আমাদের দেশকে, তাঁদের কখনও কখনও এমনওমনে হতে পারে যে ভারতীয় জনজীবন যেন উৎসবেরই দ্বিতীয় এক নাম, আর এটা খুবইস্বাভাবিক। বেদের সময় থেকে আজ পর্যন্ত ভারতে উৎসবের যে পরম্পরা রয়েছে, তা সময়েরসঙ্গে পরিবর্তনশীল উৎসব। চিরাচরিত বেশ কিছু উৎসবের সমাপ্তি ঘটিয়ে সময় ও সমাজেরচাহিদা অনুসারে উৎসবে নানা পরিবর্তনকে আমরা সহজভাবে মেনে নিয়েছি। কিন্তু এই সবকিছুমধ্যে আমরা একটা বিষয় ভালোভাবে দেখতে সক্ষম যে ভারতে এই যে সারাবছর ধরে উৎসবেরপুরো যাত্রাপথ, তার ব্যপ্তি, তার গভীরতা, প্রতিটি ব্যক্তির ওপর তার প্রভাব – এইসবকিছু একটিই মূল মন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত – ব্যক্তিকে সমষ্টির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্বের প্রসার ঘটিয়ে, নিজেদের সীমিত চিন্তা-ভাবনার গণ্ডি পেরিয়েসমাজ থেকে মহাবিশ্ব পর্যন্ত বিস্তৃত করার এক প্রয়াস চলতেই থাকে। এবং তা এই উৎসবেরমাধ্যমেই করা সম্ভব। কখনও কখনও ভারতবর্ষে উৎসব মানে খাওয়া-দাওয়ার মহোৎসব মনে হয়।কিন্তু তার মধ্যেও চিন্তা-ভাবনা থাকে – কোন্ ঋতুর উৎসব এবং সেখানে কী খাওয়া উচিত।কৃষকদের কোন্ ধরণের ফসল হচ্ছে এবং সেই ফসলকে উৎসবের সঙ্গে কীভাবে যুক্ত করা যায়,রোগমুক্তির ক্ষেত্রে কী ধরণের সংস্কার মানা উচিত ইত্যাদি সমস্ত চিন্তা-ভাবনা আমাদেরপূর্বসূরীরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে উৎসবের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছেন। আজ সারা দুনিয়াপরিবেশ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে। প্রকৃতি ধ্বংস হয়ে যাওয়া এক চিন্তার বিষয় হয়েউঠেছে। সেখানে ভারতবর্ষে উৎসবের এই পরম্পরা প্রকৃতি-প্রেমকে আরও শক্তিশালী করেতোলে। বালক থেকে শুরু করে প্রতিটি মানুষকে আরও শুভচিন্তাসম্পন্ন করে তোলে। বৃক্ষবা গুল্ম, নদী, পশু-পাখি, পর্বত – যাই হোক না কেন, প্রত্যেকের প্রতি দায়িত্ববোধজাগিয়ে তোলে উৎসব। আজকাল তো আমরা রোববার-কে ছুটির দিন হিসাবে পালন করি। কিন্তুযাঁরা পুরনো দিনের মানুষ, যাঁরা শ্রমিক, মৎস্যজীবী, আপনারা দেখে থাকবেন, শত শত বছরধরে আমাদের পরম্পরা ছিল পূর্ণিমা ও অমাবস্যায় ছুটি পালন করা। আর বিজ্ঞান এটাপ্রমাণ করে দিয়েছে যে পূর্ণিমা ও অমাবস্যায় সমুদ্রের জলে কী ধরণের পরিবর্তন আসে,প্রকৃতির ওপর কোন্ কোন্ জিনিসের প্রভাব পড়ে এবং মানুষের মনের ওপরেও তার প্রভাব পড়ে।অর্থাৎ এখন পর্যন্ত আমাদের এখানে ছুটিও মহাবিশ্বের সঙ্গে বিজ্ঞানকে যুক্ত করে পালনকরার এক পরম্পরা রয়ে গেছে। আজ যখন আমরা দীপাবলী উৎসব পালন করছি, যেমন আমি বললাম,আমাদের প্রতিটি উৎসব শিক্ষামূলক হয়, শিক্ষার বোধ নিয়ে আসে। দীপাবলীর এই উৎসব ‘তমসোমা জ্যোতির্গময়’ – অন্ধকার থেকে আলোয় যাওয়ার বার্তা দেয়। আর অন্ধকার – আলোর অভাবেযে অন্ধকার এটা সেই অন্ধকার নয়, অন্ধ শ্রদ্ধারও অন্ধকার, অশিক্ষারও অন্ধকার, দারিদ্র্যেরওঅন্ধকার, সামাজিক অন্যায়েরও অন্ধকার। সামাজিক দোষত্রুটির – ব্যক্তিগত দোষত্রুটির ছায়াথেকে প্রদীপ জ্বালিয়ে মুক্তির, অন্ধকার থেকে আলোয় পৌঁছনোর উৎসব দীপাবলী। একটা কথাআমরা সবাই ভালো করেই জানি, ভারতবর্ষের যে কোনও প্রান্তে চলে যান, ধনীর থেকে ধনীরঘর কিংবা গরীবস্য গরীবের ঝুপড়ি দীপাবলীর সময় প্রতি পরিবারে স্বচ্ছতা অভিযান চলছেদেখা যায়। ঘরের প্রতিটি কোণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়। দরিদ্র মানুষ তাঁর মাটিরবাসনও এমনভাবে পরিষ্কার করেন যাতে মনে হয় দীপাবলী এসে গেছে। দীপাবলী এক স্বচ্ছতারওঅভিযান। কিন্তু সময়ের দাবী হল শুধু ঘরের পরিচ্ছন্নতা নয়, সমগ্র পরিবেশেরপরিচ্ছন্নতা, সমস্ত এলাকার পরিচ্ছন্নতা, পুরো গ্রামের পরিচ্ছন্নতা – আমাদের এইআচরণ, এই পরম্পরাকে আরও ছড়িয়ে দিতে হবে, আরও বিস্তৃতি দিতে হবে। দীপাবলীর এই উৎসবশুধু ভারতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে নেই, পৃথিবীর সব দেশেই কোনও না কোনও ভাবে দীপাবলীউৎসব পালন করা হয়। পৃথিবীর যে কোন জায়গার সরকার, সেখানকার সংসদ, শাসক – সবাইদীপাবলী উৎসবের অংশ হয়ে ওঠেন। তা সে দেশ পূর্বে হোক বা পশ্চিমে, উন্নত বাউন্নয়নশীল, আফ্রিকা কিংবা আয়ার্ল্যাণ্ড – সব জায়গাতেই দীপাবলীর ধুমধাম নজরে পড়ে।আপনাদের জানা আছে নিশ্চয়ই, আমেরিকার ইউ. এস. পোস্টাল সার্ভিস এই বছর দীপাবলীউপলক্ষে ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী দীপাবলীর সময় প্রদীপজ্বালাচ্ছেন – নিজের এই ছবি তুলে টুইটারের মাধ্যমে সকলের সঙ্গে শেয়ার করেছেন। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী লণ্ডনে দীপাবলীর জন্য,সমাজের সবাইকে যুক্ত করে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন এবং তাতে নিজেও অংশ নেন। আরইউ.কে.-তে হয়ত এমন কোন শহর নেই যেখানে ধুমধামের সঙ্গে দীপাবলী পালন করা হয় না।সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে দীপাবলী উৎসব পালনের ছবি অত্যন্তগর্বের সঙ্গে সারা বিশ্বের সঙ্গে শেয়ার করেছেন। আর সেই ছবি কী? সিঙ্গাপুর সংসদের১৬ জন মহিলা সদস্য ভারতীয় শাড়ি পরে সংসদের বাইরে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন আর সেই ছবিসোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ছড়িয়ে পড়েছে। আর এই সব করা হয়েছে দীপাবলীর জন্য।সিঙ্গাপুরে তো প্রতিটি রাস্তায়, প্রতিটি এলাকায় দীপাবলী উৎসব পালন করা হয়।অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী সমস্ত ভারতীয়দের দীপাবলীর শুভকামনা জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরের সব মানুষকে দীপাবলী উৎসবের সঙ্গে যুক্ত হওয়ারআহ্বান জানিয়েছেন। সম্প্রতি নিউজিল্যাণ্ডের প্রধানমন্ত্রী এসেছিলেন, তিনি আমাকেবলেছিলেন যে তাঁকে তাড়াতাড়ি ফিরে যেতে হবে, কারণ তাঁকে দীপাবলী উৎসবে অংশ নিতেহবে। আমার এই কথা বলার তাৎপর্য এই যে দীপাবলী আলোর উৎসব, বিশ্বের সবাইকে অন্ধকারথেকে আলোর দিকে যাওয়ার প্রেরণা দেয় এই উৎসব।
দীপাবলী উৎসবে ভাল জামা-কাপড়, ভাল খাবার-দাবারের সঙ্গে বাজিফাটানো হয় খুব উৎসাহের সঙ্গে। আর ছোট-বড় সবাই খুব আনন্দ করে। কিন্তু কখনও কখনওছোটরা দুঃসাহস করে ফেলে। অনেক বাজি একত্রিত করে যাতে খুব আওয়াজও হয়, কিন্তু সেইসঙ্গে দুর্ঘটনাকেও আমন্ত্রণ জানায়। কখনও কখনও তাদের খেয়াল থাকে না যে আশেপাশে কিজিনিস আছে, তাতে সহজে আগুন ধরে যাবে কিনা। দীপাবলীর সময় দুর্ঘটনার খবর, আগুন লেগেযাওয়ার খবর, অপমৃত্যুর খবর খুব দুশ্চিন্তা জাগায়। আর এক অসুবিধা হয় দীপাবলীর সময় –ডাক্তারবাবুরা অনেকেই দীপাবলীতে পরিবারের সকলের সঙ্গে দীপাবলী উৎসব পালন করার জন্যবাড়ি চলে যান। ফলে বিপদের ওপর বিপদ এসে উপস্থিত হয়। আমার বিশেষভাবে মা-বাবারপ্রতি, অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ যে, ছোটরা যখন বাজি ফাটাবে, তখন বড়োদের সঙ্গে থাকাউচিত, কোনও ভুলচুক যেন না হয়। আমাদের দেশে দীপাবলী উৎসব খুব দীর্ঘ। তা খালিএকদিনের নয়, গোবর্ধন পূজা, ভাইফোঁটা, লাভ-পঞ্চমী থেকে কার্তিক-পূর্ণিমা পর্যন্তদীর্ঘদিন ধরে তা চলে। এর সঙ্গে আমরা ছট পূজার আয়োজনও করি। ভারতের পূর্ব প্রান্তেছট পূজা এক বড় উৎসব। এক রকম মহোৎসব এটি। চারদিন ধরে চলতে থাকে এই উৎসব। কিন্তু এরএক বিশেষত্ব আছে – সমাজকে এক গভীর বার্তা দেয় এই উৎসব। ভগবান সূর্যদেব আমাদের যাদেন, তাতে আমরা সবকিছু পেয়ে যাই। প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে ভগবান সূর্য দেবতারকাছ থেকে আমরা যা পাই, তার হিসেব করা আমাদের পক্ষে খুব কঠিন। এত কিছু আমরা সূর্যেরকাছ থেকে পাই। ছট পূজা সূর্য উপাসনার উৎসব। প্রবাদ আছে যে বিশ্বের সমস্ত মানুষউদিত সূর্যের পূজা করেন। ছট পূজা এক এমন উৎসব যেখানে অস্তগামী সূর্যেরও পূজা হয়।এর মধ্যে একটি খুব বড় সামাজিক বার্তা আছে।
আমি দীপাবলী উৎসবের কথা বলি, ছট পুজোর কথা বলি, এই উপলক্ষ্যেআপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা জানানোর, বিশেষ করে দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানানোর,কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করার সময় এটাই। গত কয়েক মাসে, যে সব ঘটনা ঘটেছে, আমাদেরসুখনিদ্রার জন্য আমাদের সেনাবাহিনীর প্রতিটি জওয়ান নিজেদের সব কিছু ত্যাগ করেছেন। আমারমনোজগতে সেনা জওয়ান – সুরক্ষা বাহিনীর জওয়ানদের ত্যাগ, সাধনা, পরিশ্রম এক বিশেষপ্রভাব ফেলেছে। আর এজন্যই আমার মনে হয়েছে যে এই দীপাবলী সুরক্ষা বাহিনীর নামেঅর্পণ করার কথা। আমি দেশবাসীকে আহ্বান করেছি ‘সন্দেশ টু সোলজারস্’ নামে একঅভিযানে অংশ নেওয়ার জন্য। কিন্তু আজ আমি মাথা নত করে বলতে চাই যে ভারতবর্ষে এমনকোনো মানুষ নেই, যাঁর মনে দেশের সৈন্যবাহিনীর জন্য অপরিসীম ভালোবাসা নেই,সেনাবাহিনী নিয়ে গর্ব, প্রতিরক্ষা বাহিনী নিয়ে গর্ব নেই। যেভাবে মানুষ তা প্রকাশকরেছেন তা দেশবাসীকে আরও শক্তি দেবে। সুরক্ষা বাহিনীর জওয়ানদের ক্ষেত্রে তো আমরাকল্পনাই করতে পারি না, আপনাদের একটি বার্তা তাঁদের কতটা শক্তি দেয়। স্কুল, কলেজছাত্র, গ্রাম, গরীব, ব্যবসায়ী, দোকানদার, দেশনেতা, খেলোয়াড় বা সিনেমা জগতের মানুষ –মনে হয় এমন কেউ বাদ নেই যিনি দেশের জওয়ানদের উদ্দেশ্যে প্রদীপ জ্বালাননি, দেশেরজওয়ানদের জন্য বার্তা দেননি। গণমাধ্যমও এই দীপোৎসবকে সেনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাজানানোর এক সুযোগ হিসেবে নিয়েছেন। আর কেনই বা করবেন না – বি.এস.এফ হোক,সি.আর.পি.এফ. হোক, ইন্দো-টিবেটান পুলিশ হোক, আসাম রাইফেল্স হোক, নৌবাহিনী, পদাতিকবাহিনী বা বায়ুসেনা হোক, বা কোস্ট গার্ড, আমি সবার নাম বলতে পারছি না, অগুনতি –আমাদের জওয়ানরা কী কী ধরনের কষ্ট সহ্য করেন তা ধারণার বাইরে। আমরা যখন দীপাবলীপালন করছি, তখন এঁরা কেউ মরুভূমিতে, কেউ হিমালয়ের কোনও শিখরে, কেউ শিল্প রক্ষাকরছেন, কেউ বিমানবন্দর রক্ষা করছেন। কত ধরণের দায়ভার তাঁরা পালন করছেন। আমরা যখনউৎসবের আমেজে রয়েছি, তখন তাঁদের কথা মনে করলে, তো এক নতুন শক্তি এসে যায়। একটিবার্তাতে ক্ষমতা বেড়ে যায়, দেশবাসী সেটাই করে দেখিয়েছেন। আমি সত্যি সত্যি দেশবাসীরপ্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই। যিনি শিল্পী, তিনি শিল্পের মাধ্যমে বার্তাদিয়েছেন, কেউ ছবি, আলপনা, কার্টুন তৈরি করেছেন, যাঁর প্রতি সরস্বতীর কৃপাদৃষ্টিআছে তিনি কবিতা লিখেছেন। কেউ স্লোগান লিখেছেন। আমার মনে হয়েছে যে আমার ‘নরেন্দ্রমোদী অ্যাপ’ বা আমার ‘মাই গভ’, তাতে দেশবাসীর চিন্তা-ভাবনার তরঙ্গ উপছে পড়ছে –শব্দের মাধ্যমে, লেখার মাধ্যমে, রঙের মাধ্যমে আরও অগুনতি নানান ভাবে। আমি কল্পনাকরতে পারি, আমার দেশের জওয়ানদের জন্য এটা কত গর্বের সময়। ‘সন্দেশ টু সোলজারস্’ –এই হ্যাশট্যাগে কতরকম বার্তা, কতরকম ভাবে যে এসেছে।
শ্রীমান অশ্বিনী কুমার চৌহান একটি কবিতাপাঠিয়েছেন, আমি সেটি পড়ে শোনাতে চাই। অশ্বিনী কুমার লিখেছেন –
“আমি উৎসব পালন করি,সানন্দে, সহাস্যে।
আমি উৎসব পালন করিসানন্দে, সহাস্যে।
আজ তোমাকে বলি, এসবসম্ভব হয় তুমি আছ বলেই।
আমার স্বাধীনতা তোমারইজন্যে, তুমিই আমার খুশির উৎস
আমি নিশ্চিন্তে ঘুমাতেপারি কারণ
আমি নিশ্চিন্তে ঘুমাতেপারি কারণ তুমি আছ অতন্দ্র প্রহরায়,
পর্বত, আকাশ এবংভারতভূমি তোমার কাছে মাথা নত করে,
বীর সেনানী, আমিও তোমাকেশত শত প্রণাম জানাই।”
আমার প্রিয় দেশবাসী,যাঁর বাপের বাড়ি এবং শ্বশুরবাড়ি – দুটি পরিবারের অনেকেই সেনাবাহিনীতে কর্মরত, এমনইএক বোন, শিবানী আমাকে একটি টেলিফোন মেসেজ পাঠিয়েছেন। আসুন এই সৈনিক পরিবারটি কীবলছে শুনি –
“নমস্কারপ্রধানমন্ত্রীজী, আমি শিবানী মোহন বলছি। এই দীপাবলীতে যে ‘সন্দেশ টু সোলজার্স’অভিযান শুরু হয়েছে, তাতে আমাদের ফৌজি ভাইয়েরা বিশেষ উৎসাহ পেয়েছেন। আমার পরিবারএকটি সৈনিক পরিবার। আমার স্বামী একজন আর্মি অফিসার। আমার বাবা এবং শ্বশুরমশাইদু’জনেই আর্মি অফিসার ছিলেন। সীমান্তে আমাদের যেসব সেনা অফিসার আছেন, তাঁদের এবংআর্মি সার্কেলের সকলকেই এই ‘সন্দেশ’ বিশেষ অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। আমি বলতে চাই যে,আর্মি অফিসার এবং সৈনিকদের সঙ্গে তাঁদের পত্নী এবং গোটা পরিবারকেই যথেষ্ট ত্যাগস্বীকার করতে হয়। অতএব একসঙ্গে গোটা সেনাগোষ্ঠীর কাছেই এর মাধ্যমে চমৎকার একটি বার্তাপৌঁছেছে। আমিও আপনাকে ‘হ্যাপি দিওয়ালি’ জানাতে চাই, ধন্যবাদ!”
আমার প্রিয় দেশবাসীরা,একথা ঠিক যে, সেনা জওয়ানরা শুধু যে সীমান্তে প্রহরায় থাকেন তা-ই নয়, জীবনের নানাক্ষেত্রে তাঁদের সজাগ উপস্থিতি নজরে আসে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা প্রশাসনিক সঙ্কটইহোক কিংবা শত্রুদের মোকাবিলা বা ভুল পথে চালিত যুবশক্তিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা –আমাদের সাহসী সৈনিকরা জীবনের সব ক্ষেত্রেই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজে এগিয়েআসেন।
একটি ঘটনা আমার নজরেএসেছে, যেটি আমি আপনাদের বলতে চাই। কিছু কিছু সাফল্য কীভাবে বিরাট এক শক্তি হয়েওঠে এটি তারই দৃষ্টান্ত। আপনারা শুনে থাকবেন, হিমাচল প্রদেশে মুক্ত শৌচালয় বন্ধকরা সম্ভব হয়েছে। সিকিম আগেই এই সাফল্য অর্জন করেছিল। ১ নভেম্বর থেকে কেরলের নামওএই তালিকায় যুক্ত হতে চলেছে। কীভাবে এই সাফল্য এলো, সেটাই বলছি – আমাদেরসেনাবাহিনীতে আই-টি-বি-পি’র এক জওয়ান আছেন শ্রী বিকাশ ঠাকুর, তাঁর বাড়ি হিমাচলপ্রদেশের সিরমৌর জেলার ছোটো গ্রাম বধানায় ছুটিতে তিনি গ্রামে গিয়েছিলেন। সেই সময়েসেখানে গ্রামসভা চলছিল। তিনি সেই সভায় পৌঁছন। গ্রাম সভায় তখন শৌচালয় বানানোর বিষয়েআলোচনা হচ্ছিল। এই আলোচনা থেকে জানা যায় যে, কিছু পরিবার টাকার অভাবে বাড়িতেশৌচালয় বানাতে পারছে না। শুনে দেশভক্ত জওয়ান বিকাশ ঠাকুরের মনে হল, এই কলঙ্ক দূরকরা দরকার। শুধু যে শত্রুপক্ষের ওপর গুলি চালানোর জন্যই তাঁরা দেশের সেবা করেন,তা-ই নয়, বিকাশ সঙ্গে সঙ্গে নিজের চেকবই বার করে ৫৭ হাজার টাকার একটি চেক কেটেপঞ্চায়েত প্রধানের হাতে দিয়ে বললেন, “যে ৫৭টি পরিবার টাকার জন্য শৌচালয় বানাতেপারছেন না, আমার তরফ থেকে তাঁদের প্রত্যেককে এক এক হাজার টাকা দিয়ে দিন, যাতেতাঁরা বাড়িতে শৌচালয় বানিয়ে বধানা গ্রামকে উন্মুক্ত শৌচালয় হীন করে তুলতে পারে।”
বিকাশ ঠাকুর করেদেখিয়েছেন। ৫৭টি পরিবারকে নিজের পকেট থেকে এক-এক হাজার করে টাকা দিয়ে স্বচ্ছতাঅভিযানকে শক্তি যুগিয়েছেন। এইভাবেই হিমাচল প্রদেশ উন্মুক্ত শৌচালয় বিহীন রাজ্য হতেপেরেছে। এরকমই আমি কেরলের তরুণদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমার মনে পড়ছে, কেরলেরপ্রান্তিক জঙ্গল এলাকায়, যেখানে যাওয়ার কোনও ভালো রাস্তাও নেই, পুরো দিন পায়েহেঁটে পৌঁছতে হয় – এরকম একটি জনজাতীয় পঞ্চায়েত ইড্মালাকুড়ির কথা। সহজে সেখানে কেউযায় না। নিকটবর্তী শহরের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রদের মনে হল ওই গ্রামে শৌচালয়বানানো দরকার। এন.সি.সি ক্যাডেট, এন.এস.এস-এর সদস্যরা, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজেরছাত্ররা সকলে মিলিতভাবে ঠিক করলেন, আমরা শৌচালয় বানাবো। এই যুবকরা নিজেদের কাঁধেকরে ইঁট, সিমেন্ট এবং শৌচালয় বানানোর অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে সারাদিন পায়ে হেঁটে এইজঙ্গলে পৌঁছান। নিজেরা পরিশ্রম করে শৌচালয় বানান। এবং এই দূরবর্তী জঙ্গলের মধ্যেএকটি গ্রামকে উন্মুক্ত শৌচালয়-বিহীন করে তোলেন। এইভাবেই কেরালা রাজ্য উন্মুক্তশৌচালয়-মুক্ত হতে চলেছে। গুজরাতেও দেড়শটিরও বেশি মিউনিসিপ্যালিটি এবং কর্পোরেশনকেখোলা শৌচালয়-মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। দশটি জেলাও এই তালিকায় এসেছে। হরিয়ানা থেকেওসুখবর এসেছে। আগামী ১লা নভেম্বর হরিয়ানা রাজ্য সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে চলেছে।তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কয়েক মাসের মধ্যেই খোলা শৌচালয়-হীন রাজ্য করে তুলবেন।তাঁরা ইতিমধ্যেই সাতটি জেলায় এই কাজ সম্পন্ন করেছেন। প্রতিটি রাজ্যেই অত্যন্তদ্রুততার সঙ্গে এই কাজ এগোচ্ছে। আমি মাত্র কয়েকটিই উল্লেখ করলাম। আমি এই সবরাজ্যের নাগরিকদের এই সুমহান কাজে যোগদানের জন্য, দেশ থেকে অপরিচ্ছন্নতার অন্ধকারদূর করার প্রয়াসের জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসী,সরকার তো অনেকরকম পরিকল্পনা করেন। প্রথম পরিকল্পনার পরে যদি তার থেকে উন্নততর কোনওদ্বিতীয় পরিকল্পনা আসে, তবে প্রথমটিকে বাদ দিতে হয়। কিন্তু সাধারণত কেউ এইবিষয়টিতে নজর দেন না। ফলে পুরনো পরিকল্পনাটির সঙ্গে নতুন পরিকল্পনাও চলতে থাকে এবংপরবর্তী পরিকল্পনার জন্যও প্রতীক্ষা করা হয়। আমাদের দেশে যে সব বাড়িতে গ্যাসেরউনুন আছে, বিদ্যুৎ আছে, সেখানে কেরোসিনের কোনও প্রয়োজন নেই। কিন্তু সরকারে কে আরতার খোঁজ রাখে! কেরোসিনও যাচ্ছে, গ্যাসও যাচ্ছে, বিদ্যুৎ-ও যাচ্ছে। আর তার ফলেদালালদের তো পোয়াবারো। আমি হরিয়ানাকে অভিনন্দিত করতে চাই, কারণ তাঁরা তাঁদেররাজ্যকে কেরোসিন-মুক্ত করতে পেরেছে। কোন্ কোন্ পরিবারে গ্যাসের উনুন আছে,পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে তাঁরা সেটা আধার নম্বর দেখে নিশ্চিত করেছে। আমি শুনেছি,এপর্যন্ত সেরাজ্যে সাত কিংবা আটটি জেলা কেরোসিন-মুক্ত করা গেছে। যেভাবে তাঁরা এইকাজটি হাতে নিয়েছেন, তাতে আমার মনে হয়, পুরো রাজ্যই খুব শিগগিরি কেরোসিন-মুক্ত হয়েযাবে। কত বড় পরিবর্তন আসবে! চুরি বন্ধ হয়ে যাবে, পরিবেশের উপকার হবে, আমাদেরবিদেশী মুদ্রাও বাঁচবে আর সাধারণ মানুষের সুবিধাও বাড়বে। হ্যাঁ, কষ্ট যদি হয়, সেটাহবে দালাল আর বেইমানদের।
আমার প্রিয় দেশবাসী,মহাত্মা গান্ধী সবসময়েই আমাদের সকলের পথপ্রদর্শক। দেশ কী করবে, কীভাবে করবে,সেবিষয়ে তাঁর যাবতীয় মতাদর্শকে এখনও দৃষ্টান্ত হিসেবে মানা হয়। গান্ধীজী বলতেন,যখনই আপনারা কোনও পরিকল্পনা করবেন, তখন দেশের গরীব এবং দুর্বল শ্রেণির কথা মনেরাখবেন এবং তারপর ভাববেন, আপনারা যা করতে যাচ্ছেন, তাতে এই মানুষগুলোর কোনও লাভহবে কিনা। তাঁদের কোনও ক্ষতি হবে না তো? এটাকে মনে রেখেই সিদ্ধান্ত নেবেন। সময়েরদাবি এটাই যে, গরীবদের মধ্যে যে উচ্চাশা জেগেছে, তাকে যথার্থ গুরুত্ব দিতে হবে।সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য আমাদের একটার পর একটা পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের পুরনোধ্যানধারণা যেমনই হোক না কেন, সমাজে ছেলে ও মেয়ের মধ্যে বিভেদ দূর করতেই হবে। এখনস্কুলগুলিতে ছাত্রীদের জন্য শৌচালয় আছে। ছাত্রদের জন্যও শৌচালয় আছে। এই সুযোগআমাদের কন্যাদের কাছে ভারতীয় সমাজে বিভেদমুক্তির নিদর্শনস্বরূপ।
সরকারের পক্ষ থেকেটীকাকরণ তো হয়, কিন্তু তবুও লক্ষ লক্ষ শিশু টীকাকরণ কর্মসূচি থেকে বাদ পড়ে যায়।রোগের শিকার হয়। ‘মিশন ইন্দ্রধনুষ’ টীকাকরণ এরকমই একটি অভিযান, যার মধ্যে বাদযাওয়া শিশুদেরও সামিল করা হচ্ছে। এই কর্মসূচিটি শিশুদের ভয়ানক রোগগুলি থেকে মুক্তিদেওয়ার জন্য শক্তি যোগায়। একবিংশ শতাব্দীতে গ্রাম অন্ধকার থাকবে, সেটা হয় না। আরসেইজন্য গ্রামকে আঁধার থেকে মুক্ত করতে, গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর অভিযান সাফল্যেরসঙ্গে এগিয়ে চলছে। ধার্য সময়সীমার থেকে আগে কাজ চলছে। স্বাধীনতার এতগুলো বছর পরেওদরিদ্র মা কাঠের উনুনে রান্না করে দিনে প্রায় চারশো সিগারেটের ধোঁয়া নিজের শরীরেনিচ্ছেন, ওঁদের স্বাস্থ্যের কী হাল হবে! চেষ্টা চলছে ৫ কোটি পরিবারকে ধোঁয়া থেকেমুক্তি দেওয়ার। এই অভিযানও সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে চলছে।
ছোটোব্যবসায়ী, ছোটোখাটো দোকানদার, সব্জীওয়ালা, দুধ বিক্রেতা, ক্ষৌরকারেরা মহাজনের কাছেনেওয়া ঋণের ওপর চাপা সুদের বোঝায় ফেঁসে যায় – খুব খারাপ ভাবে ফেঁসে যায়। মুদ্রাযোজনা, স্ট্যাণ্ড-আপ যোজনা, জন ধন অ্যাকাউণ্ট – এই সবই সুদখোরদের হাত থেকে মুক্তিপাওয়ার এক সফল অভিযান। আধার কার্ডের মাধ্যমে অর্থ সরাসরি ব্যাঙ্কে পৌঁছে যাচ্ছে।প্রকৃত প্রাপকদের সরাসরি আর্থিক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষের জীবনে দালালদেরহাত থেকে মুক্তি পাওয়ার সময় এসেছে। এমন একটি অভিযান চালাতে হবে যার মাধ্যমে কেবলবদল আর পরিবর্তনই নয়, সমস্যার থেকে মুক্তি পাওয়ার রাস্তা প্রশস্ত করতে হবে, আরসেটা হচ্ছেও।
আমারপ্রিয় দেশবাসী, আগামী কাল ৩১শে অক্টোবর, এই দেশের মহাপুরুষ ভারতের একতাকে যিনিজীবনের মূলমন্ত্র করেছিলেন এবং করেও দেখিয়েছিলেন – সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলেরজন্মজয়ন্তী। ৩১শে অক্টোবর একদিকে সর্দার সাহেবের জন্মজয়ন্তী, দেশের একতা রক্ষাকরার অগ্রগণ্য মহাপুরুষ, অন্যদিকে শ্রীমতী গান্ধীর পূণ্য তিথিও। মহাপুরুষদের পূণ্যতিথিস্মরণ তো আমরা করি, আর করাও দরকার। কিন্তু পঞ্জাবের এক ভদ্রলোকের ফোন, ওঁর দুঃখআমার হৃদয়কে স্পর্শ করে গেল।
“প্রধানমন্ত্রীমহোদয় নমস্কার। মহাশয়, আমি জসদীপ পঞ্জাব থেকে বলছি। মহাশয়, আপনি জানেন যে ৩১শে অক্টোবরসর্দার প্যাটেলের জন্মদিন। সর্দার প্যাটেল এমন একজন ব্যক্তি যিনি নিজের সারা জীবনদেশের অখণ্ডতার জন্য দিয়ে গেছেন এবং এই উদ্দেশে আমার মনে হয় সফলও হয়েছেন। তিনিসকলকে একত্রিত করেছেন, আর আমরা দেশের দুর্ভাগ্যই বলতে পারি বা বলি, যে ওই দিনইন্দিরা গান্ধীর হত্যাও হয়েছিল। এবং যেটা আমরা সবাই জানি, যে ওঁর হত্যার পর দেশেরমধ্যে কীরকম ঘটনা ঘটেছিল। মহাশয়, আমি এটা বলতে চাই যে এরকম দুর্ভাগ্যপূর্ণ যেসবঘটনা ঘটে, তা কীভাবে আমরা বন্ধ করতে পারি।”
প্রিয়দেশবাসী, এই দুঃখ একজনের নয়। এক সর্দার – সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, ইতিহাস এইঘটনার সাক্ষী রয়েছে, চাণক্যের পর দেশকে একত্রিত করার মহান কাজ সর্দার বল্লভভাইপ্যাটেল করেছেন। স্বাধীন ভারতবর্ষকে একই পতাকার নীচে নিয়ে আসার সফল প্রয়াস, এতবড়বিশাল কাজ যে মহাপুরুষ করেছেন, সেই মহাপুরুষকে শত শত প্রণাম জানাই। কিন্তু এটাও তোএক দুঃখ, যে সর্দার সাহেব একতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, লড়াই করেছেন, দেশের একতাওঁর মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল, তার জন্য কতজনের অসন্তোষের শিকারও হয়েছেন, কিন্তু একতাররাস্তাকে কখনও ছাড়েন নি। কিন্তু সেই সর্দারের জন্মজয়ন্তীতে হাজার হাজার সর্দারকে, হাজারহাজার সর্দার পরিবারকে শ্রীমতী গান্ধীর হত্যার পর, মৃত্যুর পথে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।একতার জন্য সারা জীবন যে মহাপুরুষ ব্যয় করে গেছেন, তাঁরই জন্মদিনে – সর্দারেরজন্মদিনে সর্দারদের উপর অত্যাচার, ইতিহাসের এই পৃষ্ঠা, আমাদের সবাইকে কষ্ট দেয়।
কিন্তুএই সংকটের মধ্যেও, একতার মন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বিবিধের মধ্যে একতাই দেশেরশক্তি। অনেক ভাষা রয়েছে, জাতি অনেক, পোষাক অনেক, খাওয়া-দাওয়া অনেক কিন্তু এইবিবিধতার মধ্যে একতা – এটাই ভারতের শক্তি, ভারতের বিশেষতা। প্রত্যেক প্রজন্মেরএকটা দায়িত্ব রয়েছে, প্রত্যেক সরকারের দায়িত্বও রয়েছে, দেশের কোণে কোণে একতার উদাহরণখুঁজি, দেশের একতার নীতিকে বিকশিত করি। বিভেদের চিন্তাধারা, ভেদাভেদের প্রবৃত্তিথেকে আমরা যেন নিজেদের এবং দেশকে রক্ষা করি। সর্দার সাহেব আমাদের ‘এক ভারত’দিয়েছেন, আমাদের সবার দায়িত্ব হল ‘শ্রেষ্ঠ ভারত’ তৈরি করার। একতার মূল মন্ত্রইশ্রেষ্ঠ ভারত তৈরির ভিত প্রশস্ত করে।
সর্দারসাহেবের জীবন শুরু হয় কৃষক আন্দোলনের মাধ্যমে, কৃষকের ছেলে ছিলেন তিনি। স্বাধীনতাসংগ্রামের আন্দোলনকে কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে সরদার সাহেবের এক বিশাল কৃতিত্বরয়েছে। স্বাধীনতার সংগ্রামকে গ্রামে শক্তি সঞ্চার করার সফল প্রয়াস ছিল সর্দার সাহেবের।তাঁর সাংগঠনিক শক্তি এবং কৌশলের পরিণামে সেটা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু সর্দার সাহেবকেবল সংঘর্ষই করতেন – তা নয়, গঠনের কাজেও তিনি অগ্রগণ্য। বর্তমানে কখনও কখনও আমরা‘আমূল’-এর নাম শুনি। ‘আমূল’-এর প্রত্যেক পণ্যর সঙ্গে আজ সমগ্র ভারত এবং ভারতবর্ষেরবাইরের মানুষও পরিচিত। কিন্তু কম লোকই জানেন যে দূরদর্শী সরদার সাহেব কো-অপারেটিভমিল্ক প্রোডিউসার’স-এর ইউনিয়ন তৈরির কল্পনা করেছিলেন। খেড়া জেলা, যেটা সেই সময়কেরা জেলা নামে পরিচিত ছিল – ১৯৪২ সালে এই ধারণার প্রতি জোর দেন এবং তার প্রকৃতরূপ আজকের ‘আমূল’ – কৃষকদের সুখ-সমৃদ্ধির জন্য সরদার সাহেব কী করে করেছিলেন তার একজীবন্ত উদাহরণ আমাদের সামনে রয়েছে। আমি সর্দার সাহেবকে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করছি।এই ৩১শে অক্টোবর একতা দিবসে আমরা যেখানেই থাকি, সর্দার সাহেবকে স্মরণ করব, একতারসংকল্প নেব।
আমারপ্রিয় দেশবাসী, এই দীপাবলীর পরেই কার্তিক পূর্ণিমা, এটাও আলোর উৎসবের একটা অঙ্গ।গুরু নানক তাঁর শিক্ষা-দীক্ষা সমগ্র মানবজাতির জন্য, শুধুমাত্র ভারতবর্ষের জন্যনয়, সমগ্র মানবজাতির জন্য আজও সঠিক দিশা দর্শন করায়। সেবা, সত্য এবং প্রত্যেকেরভালো হোক, এটাই গুরু নানকের বার্তা। শান্তি, একতা এবং সদ্ভাবনা-ই তাঁর মূল মন্ত্রছিল। ভেদাভেদ, অন্ধ বিশ্বাস, কু-রীতি থেকে সমাজকে মুক্তি দেওয়ার অভিযান ছিল গুরুনানকের প্রত্যেক কথায়। যখন আমাদের সমাজে স্পৃশ্য-অস্পৃশ্য, জাতিভেদপ্রথা,উঁচু-নীচু, আর এদের বিকৃতি চরম সীমাতে ছিল, তখন গুরু নানক ভাই লালো-কে নিজেরসহযোগী বেছেছিলেন। আসুন, আমরাও গুরু নানক যে জ্ঞানের আলো আমাদের দিয়েছেন, যাআমাদের ভেদাভেদ ত্যাগ করার প্রেরণা দেয়, ভেদাভেদের বিরুদ্ধে কিছু করার আদেশ দেয়সেটা পালন করি। ‘সকলকে নিয়ে সকলের উন্নতি’ – এই মন্ত্র নিয়ে যদি আমাদের এগিয়ে চলতেহয়, তো গুরু নানক-এর থেকে ভালো আমাদের পথপ্রদর্শক কে হতে পারে। আমি গুরু নানককেওআসন্ন প্রকাশ উৎসবে হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে প্রণাম জানাই।
আমারপ্রিয় দেশবাসী, আরও একবার, দেশের সৈনিকদের নামে উৎসর্গীকৃত এই দীপাবলী, এই দীপাবলীউপলক্ষে আপনাদের অনেক অনেক শুভকামনা। আপনার স্বপ্ন, আপনার সংকল্প সবরকম ভাবে সফলহোক। আপনার জীবন সুখ-শান্তিতে ভরে থাকুক, এই শুভকামনা সকলকে জানাচ্ছি। অনেক অনেক ধন্যবাদ!
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের সবাইকে নমস্কার। কিছু দিন আগে জম্মু-কাশ্মীরের উরি সেক্টরে উগ্রপন্থী হামলায় আমরা দেশের আঠেরো জন বীর সন্তানকে হারিয়েছি। আমি এই সব বাহাদুর সৈনিককে প্রণাম জানাই এবং আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করছি। এই ন্যক্কারজনক ঘটনা পুরো দেশকে নাড়িয়ে দেওয়ারজন্য যথেষ্ট ছিল। দেশের মধ্যে এই নিয়ে যেমন আছে শোক, তেমনি আছে আক্রোশ আর এই ক্ষতিকেবল সেই সব পরিবারের নয় যারা হারিয়েছে নিজেদের পুত্র, ভাই বা স্বামীকে। এই ক্ষতিগোটা রাষ্ট্রের। আর তাই আমি আমার দেশবাসীদের এটাই বলব, যা বলেছিলাম সেই দিনে,সেটারই পুনরাবৃত্তি করব যে, দোষীরা সাজা পাবেই।
আমার প্রিয় দেশবাসী,আমাদের সেনাবাহিনীর উপর ভরসা আছে। নিজেদের পরাক্রমে এরা এমন প্রত্যেকটি ষড়যন্ত্রকেবিফল করবে আর একশো পঁচিশ কোটি দেশবাসী যাতে সুখে জীবন যাপন করতে পারে তার জন্যপরাক্রমের পরাকাষ্ঠা তৈরিতে প্রস্তুত এরা। আমাদের সেনাবাহিনী নিয়ে গর্বিত আমরা।আমাদের নাগরিকদের জন্য, নেতাদের জন্য বলার অনেক সুযোগ থাকে। আমরা বলেও থাকি।কিন্তু সেনাবাহিনী কিছু বলে না। সেনা বীরত্বের প্রদর্শন করে।
আমি আজ কাশ্মীরেরনাগরিকদের সঙ্গেও বিশেষ ভাবে কথা বলতে চাই। কাশ্মীরের নাগরিকরা দেশবিরোধীশক্তিসমূহকে ভালোই চিনতে পারছে। আর যেই সত্যকে বুঝতে পারছে, তারা অমনি সেই সবশক্তি থেকে নিজেদের পৃথক করে নিয়ে শান্তির পথে চলা শুরু করেছে। প্রত্যেক মা-বাবাচাইছেন দ্রুত এবং পূর্ণোদ্যমে চালু হোক সব স্কুল-কলেজ। কৃষকরাও চাইছেন যে তাদেরফলানো ফল, ফসল দেশের সব বাজারে পৌঁছে যাক। আর গত কয়েক দিনে ব্যবসা-বাণিজ্যসুচারুভাবে চলতেও শুরু করেছে। আমরা সব জানি – শান্তি, একতা আর সদ্ভাবনা আমাদের সবসমস্যা সমাধানের রাস্তাও বটে, আমাদের প্রগতির রাস্তাও বটে এবং আমদের উন্নয়নেররাস্তাও। আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য আমাদের উন্নয়নের নব-নব শিখর পার করতে হবে। আমারবিশ্বাস যে আমরা একসঙ্গে বসে সব সমস্যার সমাধান খুঁজব, সমাধানের পথ বের করব এবংসঙ্গে-সঙ্গে কাশ্মীরের ভাবী প্রজন্মের জন্য উন্নত পথও তৈরি করব। কাশ্মীরেরনাগরিকদের সুরক্ষা এই প্রশাসনের দায়িত্ব। আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রশাসনকে কিছুব্যবস্থা নিতে হয়। আমি আইনরক্ষকদের বলব যে আমাদের যে সামর্থ্য আছে, শক্তি আছে, আইনআছে, নিয়ম আছে তার প্রয়োজন আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য, কাশ্মীরের সাধারণনাগরিকদের সুখ-শান্তির জীবন দেওয়ার জন্য আর তার পূর্ণ ব্যবহার করব আমরা। কখনও কখনওআমরা যা ভাবি তার থেকে ভিন্ন চিন্তার মানুষজন অন্য ভাবনা পোষণ করেন। সোশ্যালমিডিয়ায় আজকাল অনেক কিছু জানার সুযোগ হয় আমার। হিন্দুস্থানের প্রতিটি কোণ থেকে, সবধরণের মানুষের ভাবনাচিন্তা জানার সুযোগ পাওয়া যায় আর এতে গণতন্ত্রের শক্তি বৃদ্ধিপায়। কিছু দিন আগে একাদশ শ্রেণীর এক ছাত্র হর্ষবর্ধন আমার কাছে একদম অন্য ধরনের একভাবনা পাঠিয়েছে। সে লিখেছে – ‘উরিতে উগ্রপন্থী হামলার পর আমি খুব বিচলিত হয়েপড়েছি। কিছু করে দেখানোর তীব্র এক ইচ্ছে ছিল মনের মধ্যে। কিন্তু কিছু করার রাস্তাখুঁজে পাচ্ছিলাম না। তাছাড়া আমার মত কমবয়সী এক ছাত্র কীই বা করতে পারে। আমার মনেরমধ্যে এই প্রশ্ন উঠছিল যে দেশহিতের জন্য আমি কী কাজ করতে পারি। আমি সঙ্কল্প নিলামযে রোজ আমি বাড়তি তিন ঘন্টা পড়াশুনো করব। দেশের কাজে আসতে পারি এমন যোগ্য নাগরিকহয়ে উঠব।’
ভাই হর্ষবর্ধন, আক্রোশেরএই বাতাবরণে এবং এত কম বয়সে তুমি যে সুস্থভাবে ভাবতে পারছ, এটাই আমার কাছেআনন্দের। কিন্তু হর্ষবর্ধন, আমি এটাও বলব যে দেশের নাগরিকদের মনে যে আক্রোশ রয়েছেতারও একটা বড় মূল্য আছে। এটা রাষ্ট্রচেতনার প্রতীক। এই আক্রোশও কিছু করে দেখানোরক্ষমতা রাখে। হ্যাঁ, তুমি তাকে এক গঠনমূলক রূপ দিয়েছ। কিন্তু তুমি জানো নিশ্চয়ই,যখন ১৯৬৫ সালের যুদ্ধ হয়েছিল, লাল বাহাদুর শাস্ত্রীজী আমাদের নেতৃত্বে ছিলেন আরগোটা দেশে এমন একটা আবেগ ছিল, আক্রোশ ছিল, দেশভক্তির জোয়ার ছিল আর প্রত্যেকে – সে যেইহোক না কেন, চাইত কিছু না কিছু একটা করতে। তখন লাল বাহাদুর শাস্ত্রীজি গোটাবিশ্বের কাছে দেশের এই মনোভাব পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। আর উনি ‘জয় জওয়ান, জয়কিষাণ’ মন্ত্র দিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রেরণা দিয়েছিলেন, দেখিয়েছিলেন দেশের জন্যকীভাবে কাজ করতে হয়। বোমা আর বন্দুকের আওয়াজের মধ্যে দেশভক্তি প্রদর্শনের আরও একটারাস্তা যে আছে তা দেখিয়েছিলেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রীজি। মহাত্মা গান্ধীও যখন আন্দোলনপরিচালনা করতেন, যখন আন্দোলন পৌঁছত তীব্রতায়, একটা অভিমুখ গঠনের প্রয়োজন হত, তখনউনি আন্দোলনের এই তীব্রতাকে সমাজের ভেতরে গঠনমূলক কাজকে আরও সংগঠিত করতে ব্যবহার করতেনঅত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে। আমরা সবাই – সেনাবাহিনী নিজেদের দায়িত্ব পালন করুক,প্রশাসনে থাকা মানুষজন নিজেদের কর্তব্য পালন করুক আর আমরা দেশবাসীরা এই দেশভক্তিরআবেগকে সঙ্গে নিয়ে কিছু-না-কিছু গঠনমূলক কাজে অবদান রাখি। তাহলেই দেশ পৌঁছবে নতুনউচ্চতায়।
আমার প্রিয় দেশবাসী,শ্রী টি. এস. কার্তিক আমাকে নরেন্দ্রমাদী অ্যাপের মাধ্যমে লিখেছেন যে প্যারা-অলিম্পিক্সেযে সব অ্যাথলিট গিয়েছিলেন তাঁরা ইতিহাস রচনা করেছেন আর তাঁদের জয় হিউম্যানস্পিরিটের জয়। শ্রী বরুণ বিশ্বনাথন ‘নরেন্দ্রমাদী অ্যাপ’-এর মাধ্যমে লিখেছেন যেআমাদের অ্যাথলিটরা দারুণ কাজ করেছেন। ‘মন কী বাত’-এ এটা উল্লেখ করা উচিত আপনার।আপনারা দু’জনই শুধু নন, দেশের প্রতিটি ব্যক্তির একটা ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট গড়েউঠেছে প্যারা-অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণকারী অ্যাথলিটদের প্রতি। সম্ভবত খেলাধুলোর ঊর্ধেউঠে প্যারা-অলিম্পিক্স আর আমাদের খেলোয়াড়দের প্রদর্শন, মানবতার দৃষ্টিকোণ থেকে,দিব্যাঙ্গদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। আর আমি আমাদের বিজয়ীবোন দীপা মালিকের এই কথাটা কখনও ভুলতে পারব না। যখন সে পদক পেল তখন সে বলল, ‘এইপদকের মাধ্যমে আমি বিকলাঙ্গতাকেই হারিয়ে দিয়েছি।’ এই কথাটায় প্রচুর শক্তি আছে।এবার প্যারা-অলিম্পিক্সে আমাদের দেশ থেকে তিন জন মহিলা সহ উনিশ জন অ্যাথলিট অংশনিয়েছিলেন। অন্যান্য খেলার সঙ্গে দিব্যাঙ্গদের খেলার তুলনা যদি করি তবে শারীরিকক্ষমতা, খেলার কৌশল এই সব ছাপিয়ে বড় কথা হয়ে ওঠে – ইচ্ছা শক্তি, সঙ্কল্পের শক্তি।
আপনারা জেনে সুখী হবেনএবং আশ্চর্য হবেন যে আমাদের খেলোয়াড়রা এ যাবৎ সর্বশ্রেষ্ঠ প্রদর্শন করে চারটি পদকজিতেছেন – এর মধ্যে দুটি স্বর্ণপদক, একটি রৌপ্য পদক এবং একটি ব্রোঞ্জ পদক রয়েছে।স্বর্ণপদকজয়ী দেবেন্দ্র ঝাঝারিয়া বর্শা ছোড়ায় দ্বিতীয় বার স্বর্ণপদক আনলেন বারোবছর পরে। বারো বছরে বয়স বেড়ে যায় অনেকটাই। এক বার স্বর্ণপদক পেয়ে গেলে ক্ষিদেটাওকমে যায়। কিন্তু দেবেন্দ্র দেখিয়ে দিয়েছেন শরীরের অবস্থা, বেড়ে চলা বয়স ওঁরসঙ্কল্পকে কখনও লঘু হতে দেয় নি আর উনি বারো বছর পরে আবার স্বর্ণপদক জিতে এনেছেন।উনি জন্ম থেকে দিব্যাঙ্গ ছিলেন না। বৈদ্যুতিক শকের কারণে ওনার একটা হাত বাদ যায়।আপনারা ভাবুন, যে ব্যক্তি তেইশ বছর বয়সে প্রথম স্বর্ণপদক আর পঁয়ত্রিশ বছর বয়সেদ্বিতীয় স্বর্ণপদক পান তিনি জীবনে কত বড় সাধনা করেছেন। মরিয়প্পন থঙ্গাভেলু হাইজাম্পে স্বর্ণ পদক জিতেছেন। থঙ্গাভেলু মাত্র পাঁচ বছর বয়সে নিজের ডান পা হারান।দারিদ্র্য ওনার সঙ্কল্পের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে নি। উনি বড় শহর থেকে আসেন নি,মধ্যবিত্ত স্বচ্ছ্বল পরিবার থেকেও আসেন নি। একুশ বছরের জীবনে যাবতীয় কাঠিণ্যেরসঙ্গে লড়াই করে, শারীরিক সমস্যা সত্বেও সঙ্কল্পের শক্তিতে দেশকে পদক এনে দিয়েছেন। অ্যাথলিটদীপা মালিকের নামের সঙ্গে তো জুড়ে গিয়েছে অনেক বিজয়চিহ্ন।
বরুণ সি. ভাটি হাইজাম্পে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছেন। প্যারা-অলিম্পিক্সের পদকের গুরুত্ব তো রয়েইছে আমাদেরদেশে, আমাদের সমাজে, আমাদের চারপাশে। আমাদের দিব্যাঙ্গ ভাই-বোনেদের প্রতি আমাদেরদৃষ্টিভঙ্গী বদলের ক্ষেত্রে এই সব পদক অনেক বড় কাজ করে দিয়েছে। খুব কম মানুষইজানেন যে এবারের প্যারা-অলিম্পিক্সে দিব্যাঙ্গজনেরা কেমন পরাক্রম দেখিয়েছেন। কিছুদিন আগে ওই একই জায়গায় অলিম্পিক প্রতিযোগিতা হয়েছিল। কেউ ভাবতে পারেন, সাধারণঅলিম্পিকের রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছেন দিব্যাঙ্গ প্রতিযোগীরা। পনেরোশো মিটারের যে দৌড়হয় তাতে অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জয়ী যে রেকর্ড গড়েছেন তার থেকে এক দশমিকসাত সেকেন্ড কম সময় নিয়ে দিব্যাঙ্গদের পনেরোশো মিটার দৌড়ে আলজিরিয়ার আবদেল লতিফবাকা রেকর্ড বানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, আমি হতচকিত হয়ে গেলাম যখন জানলাম যেদিব্যাঙ্গদের মধ্যে চতুর্থ হয়েছেন যিনি, যিনি কোনও মেডেল পান নি, তিনি সাধারণদৌড়বীরদের মধ্যে যিনি স্বর্ণপদক পেয়েছেন তার থেকে কম সময়ে দৌড়েছেন। আমি আরও একবার,আমাদের সব খেলোয়াড়দের অনেক-অনেক অভিনন্দন জানাচ্ছি। আগামী দিনে ভারত প্যারা-অলিম্পিক্সেরজন্য এবং তার বিকাশের জন্য এক সুচারু যোজনা বানানোর পথে এগোচ্ছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, গত সপ্তাহেগুজরাতের নবসারী-তে আমার কতগুলো আশ্চর্য অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমার কাছে এটা খুবইসংবেদনশীল মুহূর্ত ছিল। দিব্যাঙ্গদের জন্য ভারত সরকার একটি Mega Camp –এর আয়োজন করেছিল,অনেকগুলো বিশ্বরেকর্ড কায়েম হয়েছে ওই দিন। ওখানে আমার সঙ্গে ছোট্ট একটি মেয়ে গৌরীশার্দুল-এর সাক্ষাৎ হয়। মেয়েটি চোখে দেখতে পায় না, এসেছে ডাং জেলার সুদূর জঙ্গলথেকে। বয়সও খুব কম। কাব্যপাঠের সুরে পুরো রামায়ণ ওর মুখস্থ। কিছু অংশও আমাকে ওশুনিয়েছিল। আমি ওখানে সমবেত লোকেদেরও শোনালাম। লোকেরা আশ্চর্য ও মুগ্ধ হয়েগিয়েছিল। ওইদিন একটি বইয়ের উদ্বোধন করার সুযোগ হয়েছিল। বইটিতে কিছু দিব্যাঙ্গব্যক্তির সাফল্যের কাহিনি ছিল। অনুষ্ঠানটি ছিল খুবই উৎসাহবর্ধক। ভারত সরকারনবসারী-র মাটিতে বিশ্বরেকর্ড স্থাপন করল, যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। আটঘণ্টার মধ্যে ছ’শো দিব্যাঙ্গ, যাঁরা শুনতে পান না, ওঁদের শোনার জন্য মেশিন যোগানোরসফল ব্যবস্থা হয়েছিল। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এ এই ঘটনাটি স্থান পেয়েছে। একদিনে দিব্যাঙ্গদের দ্বারা তিন-তিনটি বিশ্বরেকর্ড স্থাপন আমাদের দেশবাসীর কাছেগৌরবের কথা।
প্রিয়দেশবাসী, দু’বছর আগে, ২-রা অক্টোবর পূজণীয় বাপুর জন্মজয়ন্তীতে আমরা ‘স্বচ্ছ ভারতমিশন’ শুরু করেছিলাম। ওই দিনও আমি বলেছিলাম, স্বচ্ছতা, পরিচ্ছন্নতা আমাদের স্বভাবহওয়া দরকার। প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য হওয়া উচিত, অপরিচ্ছন্নতার প্রতি ঘৃণার একপরিবেশ সৃষ্টি করা। আগামী ২-রা অক্টোবর যখন দু’বছর পূর্ণ হচ্ছে, আমি বিশ্বাসেরসঙ্গে বলতে পারি, ১২৫ কোটি দেশবাসীর হৃদয়ে স্বচ্ছতার প্রতি সচেতনতার বৃদ্ধি ঘটেছে।আমি বলেছিলাম, স্বচ্ছতার দিকে এক কদম এগিয়ে চলুন। আজ আমরা সবাই বলতে পারি, প্রত্যেকেইএক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার প্রয়াস নিশ্চয়ই করেছেন। অর্থাৎ দেশ ১২৫ কোটি কদম স্বচ্ছতারদিকে এগিয়েছে। এটাও নিশ্চিত হয়েছে যে লক্ষ্য যদি স্থির হয়, ফল তত সুন্দর হয়। অল্পচেষ্টাতেও অনেক কিছু হয়, সেটাও নজরে এসেছে। তাই প্রত্যেকে – হতে পারে সাধারণনাগরিক, শাসক, সরকারী দপ্তর বা রাস্তাঘাট, বাসডিপো বা রেল স্টেশন, স্কুল-কলেজ,ধর্মস্থান, হাসপাতাল – শিশু থেকে প্রবীণ – গাঁয়ের গরীবরা – কৃষক রমণী – সবাই-ইস্বচ্ছতার জন্য কিছু না কিছু অবদান রেখেছেন। গণমাধ্যমের বন্ধুরাও এক্ষেত্রে সদর্থকভূমিকা পালন করেছেন। আমি মনে করি যে আমাদের এখনও অনেক দূর এগোতে হবে। কিন্তু শুরুভালো হয়েছে, চেষ্টাও অনেক হচ্ছে আর আমরা সফল হব – এই বিশ্বাসও মনের মধ্যে স্থানকরে নিয়েছে। এটাই তো দরকার। আর এই জন্য গ্রামীন ভারতের কথা বললে, এখনও পর্যন্তদু-কোটি আটচল্লিশ লক্ষ, মানে প্রায় আড়াই কোটি শৌচাগারের নির্মাণ হয়েছে আর আগামী একবছরে আরও দেড় কোটি শৌচালয় স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। সুস্থ থাকতে হলে,নাগরিকদের সম্মানের জন্য, বিশেষ করে মা-বোনেদের সম্মান রক্ষার্থে, খোলা জায়গায়শৌচকর্মের অভ্যাস বন্ধ করতে হবে। আর সেইজন্য Open Defecation Free বা (ODF) অর্থাৎ ‘খোলাজায়গায় শৌচকর্মের অভ্যাস থেকে মুক্তি’-র এক অভিযান শুরু হয়ে গেছে। রাজ্যগুলিরমধ্যে, জেলাগুলির মধ্যে এবং গ্রামগুলির মধ্যে এক সুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাত এবং কেরালা খোলা জায়গায় শৌচকর্মের অভ্যাস থেকে মুক্তিরলক্ষ্যে খুব শীঘ্রই পূর্ণ সাফল্যে পৌঁছতে চলেছে। আমি সম্প্রতি গুজরাত গিয়েছিলাম,সেখানে আমাকে আধিকারিকরা জানিয়েছেন, মহাত্মা গান্ধীর জন্মস্থান পোরবন্দর এই বছর২-রা অক্টোবর ODF -এর লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে। যাঁরা এই উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যে সফলহয়েছেন, তাঁদের অভিনন্দন জানাই, যাঁরা সাফল্য লাভের প্রচেষ্টা করছেন তাঁদের প্রতিরইল শুভকামনা। দেশবাসীর প্রতি আমার নিবেদন – মা-বোনেদের সম্মানের জন্য, ছোটো-ছোটোবাচ্চাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য এই সমস্যা থেকে আমাদের দেশকে মুক্ত করবে হবে। আসুন,আমরা সংকল্প করে সামনের দিকে এগিয়ে যাই। আমি যুবক বন্ধুদের – যাঁরা আজকালপ্রযুক্তির ব্যবহারে অভ্যস্ত, বিশেষ করে তাঁদের জন্য একটি নতুন প্রকল্প শুরু করতেচাই। আপনাদের শহরে স্বচ্ছতা মিশন কি অবস্থায় রয়েছে তা জানার অধিকার সবার রয়েছে।সেইজন্য ভারত সরকার একটি টেলিফোন নাম্বার দিয়েছে – 1969 । আমরা জানি যে,১৮৬৯ সালে মহাত্মা গান্ধীর জন্ম হয়েছিল। ১৯৬৯-এ আমরা মহাত্মা গান্ধীর জন্মশতবর্ষপালন করেছি। আর ২০১৯ সালে আমরা মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশতবার্ষিকী অর্থাৎ ১৫০-তমজন্মজয়ন্তী পালন করতে চলেছি। এই 1969 নম্বরে আপনি ফোন করে শুধু মাত্র নিজের শহরের শৌচালয়নির্মাণের পরিসংখ্যান জানতে পারবেন তা নয়, নতুন শৌচালয় বানানোর আবেদনও জানাতেপারবেন। আপনারাও নিশ্চয়ই এর সুবিধা নেবেন। শুধু এইটুকুই নয়, সাফাই নিয়ে অভিযোগ এবংএই অভিযোগের সমাধানের পরিস্থিতি জানানোর জন্য একটা ‘স্বচ্ছতা অ্যাপ’-এর সূচনা করাহয়েছে। আপনারা, বিশেষ করে যুব প্রজন্ম এর সুবিধা নিন। ভারত সরকার করপোরেটওয়ার্ল্ড-কেও এগিয়ে আসতে আহ্বান করছে এবং স্বচ্ছতা-র জন্য যাঁরা কাজ করতে ইচ্ছুক,এরকম পেশাদার যুবকর্মীদের স্পনসর করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। জেলাগুলোতে ‘স্বচ্ছভারত কর্মী’-রূপে তাঁদের পাঠানো যেতে পারে।
এই স্বচ্ছতাঅভিযান কেবল মাত্র সংস্কারের মধ্যে সীমিত থাকলে চলবে না, স্বচ্ছতা স্বভাবে পরিনতহলেও যথেষ্ট নয়, বর্তমান যুগে স্বচ্ছতা ও স্বাস্থ্য যেরকম পরিপূরক, সেইরকমস্বচ্ছতা ও ‘রেভিনিউ মডেল’-ও অনিবার্য। ‘ Waste to Wealth ’-ও এর অঙ্গ হওয়া দরকার। আর তাইস্বচ্ছতা মিশনের সঙ্গে সঙ্গে ‘ Wasteto Compost ’-এর দিকে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। Solid Waste -এর processing হোক, Compost -এ বদলানোর জন্যকাজ হোক, এর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে PolicyIntervention -এরও সূচনা করা হয়েছে। রাসায়নিক সারকোম্পানিগুলিকে বলা হয়েছে যে Waste থেকে যে Compost তৈরি হয়েছে, সেগুলো তারা কিনুক। যে কৃষক Organic Farming -এ যেতেইচ্ছুক, তাঁদের প্রয়োজনীয় রসদ যোগান দিক। যাঁরা নিজেদের জমির স্বাস্থ্য শোধরাতেচান, মাটির স্বাস্থ্যের চিন্তা যাঁরা করেন, যাঁদের রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলেযথেষ্ট লোকসান হয়ে গেছে, তাঁদেরও যদি কিছু মাত্রায় এই রকম সারের দরকার হয়, তাহলেতা তাদের সরবরাহ করুক। শ্রীমান অমিতাভ বচ্চন এই কাজের জন্য ব্র্যাণ্ড অ্যামবাসেডররূপে যোগদান করেছেন। আমি যুবকদের ‘ Wasteto Weath ’ – এই আন্দোলনে নতুন নতুন স্টার্ট-আপ-এরজন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এইরকম পরিকাঠামো তৈরি করুক, এই প্রযুক্তি গড়ে তুলুক, সস্তায়এর বহুল উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ করুক। এটা করা একটা বড়ো কাজ। অধিক রোজগারেরও সুযোগরয়েছে। বিশাল আর্থিক লেনদেনেরও সুযোগ রয়েছে। Waste অর্থাৎ জঞ্জাল থেকে Wealth Creation অর্থাৎরোজগারের রাস্তা খোঁজা সফল হবে। এবছর ২৫-শে সেপ্টেম্বর থেকে ২-রা অক্টোবর পর্যন্তএক বিশেষ কার্যক্রম ‘ INDOSAN ’, India Sanitation Conference আয়োজিত হচ্ছে।সমগ্র দেশ থেকে মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, মহানগরগুলির মেয়র, কমিশনার – সবাই মিলেশুধুমাত্রই স্বচ্ছতার উপর গভীর চিন্তা-ভাবনা ও আলোচনা করবেন। প্রযুক্তি দিয়ে কত কীকরা যায়, Financial Model কীরকম হতে পারে? জনসাধারণের যোগদান কীভাবে হতে পারে?রোজগারের সুযোগ এর মধ্যে কী ভাবে বাড়ানো সম্ভব? – সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। আমি তোদেখছি যে স্বচ্ছতা নিয়ে নিরন্তর নতুন নতুন সংবাদ আসছে। একদিন আমি খবরের কাগজেপড়লাম – গুজরাট টেকনোলজি ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা ১০৭-টি গ্রামে গিয়ে শৌচালয়নির্মাণে সচেতনতার অভিযান চালিয়েছেন। নিজেরাই শ্রমদান করেছেন। প্রায় ন’হাজারশৌচালয় নির্মাণের জন্য তাঁরা নিজেদের নিয়োজিত করেছেন। বিগত দিনে আপনারা হয়তদেখেছেন, Wing Commander পরমবীর সিং-এর নেতৃত্বে একটি টিম গঙ্গাতে দেবপ্রয়াগ থেকেশুরু করে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত ২,৮০০ কিলোমিটার যাত্রা করে স্বচ্ছতার বার্তা দিয়েছেন।ভারত সরকারও নিজেদের বিভিন্ন বিভাগে এক বছরের ক্যালেণ্ডার তৈরি করেছে। প্রত্যেক Department ১৫ দিন বিশেষ করে স্বচ্ছতার উপর গুরুত্ব আরোপ করছে। আগামীঅক্টোবর মাসে এক থেকে পনেরই অক্টোবর পর্যন্ত ‘ Drinking Water and Sanitation Department ’, ‘ PanchayetiRaj Department ’ এবং ‘ Rural Development Department ’ সংযুক্তভাবে নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা কার্যক্রমের পথনির্দেশিকা বানিয়ে কাজকরবে। অক্টোবর মাসের শেষ দু’সপ্তাহ – ষোলোই অক্টোবর থেকে একত্রিশে অক্টোবর পর্যন্তঅপর তিনটি বিভাগ – ‘ Department ofAgriculture and Farmer Welfare ’, ‘ Food Processing Industries ’ এবং ‘ Consumer AffairsDepartment ’ পনেরো দিন ধরে তাদের সম্পর্কিতক্ষেত্রগুলিতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাবে। সাধারণ নাগরিকদের কাছে আমার অনুরোধ, এইসব সরকারী বিভাগগুলি যে কাজকর্ম করে, আপনারা যদি কোনও ভাবে তার সঙ্গে সম্পর্কিতহন, তাহলে আপনারাও এই অভিযানে যুক্ত হন।
আপনারা হয়ত দেখেছেন, স্বচ্ছতা বিষয়েনানা রকম সমীক্ষাও হচ্ছে। এর আগে তিয়াত্তরটি শহরে এই ধরনের সমীক্ষা চালানো হয়েছেএবং স্বচ্ছতার বর্তমান পরিস্থিতি জনতার সামনে উপস্থাপিত করা হয়েছে। এবার এক লাখেরউপর জনসংখ্যার প্রায় পাঁচশোটি শহরের পালা। এই কারণে প্রত্যেকটি শহরের জনগণের মধ্যেএকটা ভাবনা তৈরি হচ্ছে যে আমরা পিছিয়ে আছি, আগামীবার আমরা ভালো কিছু করব। স্বচ্ছতাবিষয়ে প্রতিযোগিতার একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আমি আশা করি এই অভিযানে সমস্ত নাগরিকসাধ্যমত যোগদান করবেন। আগামী ২-রা অক্টোবর মহাত্মা গান্ধী এবং লাল বাহাদুরশাস্ত্রীর জন্ম-জয়ন্তী। স্বচ্ছ ভারত মিশনের দু’বছর পূর্ণ হচ্ছে। আমি গান্ধী জয়ন্তীথেকে দীপাবলী পর্যন্ত খাদি থেকে প্রস্তুত কিছু না কিছু সামগ্রী কেনার জন্য অনুরোধকরি। এবারও আমি অনুরোধ করবো যে প্রত্যেক পরিবার যেন খাদির কোনো সামগ্রী কেনেন,যাতে গরীবের ঘরেও দীপাবলীর প্রদীপ জ্বলে। আগামী ২-রা অক্টোবর যদিও রবিবার, কিন্তুএকজন নাগরিক হিসেবে আমরা কী কোথাও না কোথাও স্বচ্ছতা অভিযানে অংশ নিতে পারি?স্বচ্ছতার কাজে আপনারা অন্তত দু’চার ঘণ্টার জন্য কায়িক পরিশ্রম করুন এবং তার একটিফোটো ‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এ শেয়ার করুন। ভিডিও হলে তাও শেয়ার করতে পারেন। আমাদেরএই সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে এই অভিযান শক্তি পাবে, নতুন গতি পাবে। আসুন, আমরামহাত্মা গান্ধী এবং লাল বাহাদুর শাস্ত্রীকে স্মরণ করে দেশের জন্য ভালো কিছু করারসঙ্কল্প করি।
প্রিয় দেশবাসী, কেউ স্বীকৃতি দিক বানা দিক জীবনে দান করার মধ্যে এক আলাদা আনন্দ আছে, এক অদ্ভুত খুশি আছে। বিগত দিনেআমি এটাও দেখেছি যে, যখন আমি গ্যাসের ওপর ভর্তুকি ছেড়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলাম,তখন সাধারণ মানুষ যে ভাবে সাড়া দিয়েছেন সেটা আমাদের রাষ্ট্রীয় জীবনে এক অত্যন্তপ্রেরণাদায়ক ঘটনা। আমাদের দেশের কিছু যুবক, ছোটো-খাটো সংগঠন, কর্পোরেট জগতের মানুষজন,বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী এবং কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভ্যরা সকলে মিলিত ভাবে২-রা অক্টোবর থেকে ৮-ই অক্টোবর পর্যন্ত বেশ কিছু শহরে ‘ Joy of Giving Week ’ পালন করবে। বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী, জামা-কাপড়ইত্যাদি জোগাড় করে অভাবগ্রস্ত লোকেদের কাছে পৌঁছে দেওয়াই হবে তাঁদের অভিযানেরউদ্দেশ্য। আমি যখন গুজরাটে ছিলাম, তখন দেখেছি যে, আমাদের কর্মকর্তারা বিভিন্নপরিবারের কাছে গিয়ে তাঁদের বাড়িতে যে পুরনো খেলনা আছে তা সংগ্রহ করে গরীব বস্তিতেযে সব অঙ্গণওয়ারি আছে, সেখানকার বাচ্চাদের দিত। এই সব খেলনা পেয়ে ওই সব গরীববাচ্চাদের আনন্দ দেখে সত্যিই ভালো লাগতো। আমার মনে হয়, যে সব শহরে ‘ Joy of Giving Week ’ পালন করা হবে, সেখানকার উৎসাহী যুবকদেরঅনুপ্রেরণা দিতে হবে, সাহায্য করতে হবে। এই উৎসব দানের উৎসব। যে সকল যুবকবৃন্দ এইকাজ করছেন, তাঁদের আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
প্রিয়দেশবাসী, আজ ২৫-শে সেপ্টেম্বর পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্ম-জয়ন্তী আর আজ থেকেইতাঁর জন্মশতবার্ষিকী পালন শুরু হচ্ছে। আমার মত লক্ষ লক্ষ মানুষ যে রাজনৈতিকবিচারধারা নিয়ে কাজ করছেন সেই রাজনৈতিক বিচারধারাকে যিনি ব্যাখ্যা করেছেন, যিনিভারতের মূল স্রোতের সঙ্গে যুক্ত রাজনীতির সমর্থক, ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে এগিয়েনিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা করেছেন যিনি, যিনি এক নিজস্ব রাজনৈতিক আদর্শ দিয়েছেন,একাত্ম মানব দর্শন দিয়েছেন, সেই পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্মশতবর্ষ শুরু হচ্ছেআজ থেকে। সর্বজন হিতায় সর্বজন সুখায় – অন্ত্যোদয়-এর সিদ্ধান্ত তাঁর অবদান। মহাত্মাগান্ধীও প্রান্তিকতম ব্যক্তিটির কল্যাণের কথা বলতেন। উন্নয়নের লাভ গরীব থেকেগরীবতম ব্যক্তি কী ভাবে পেতে পারে? সব হাতে কাজ এবং সব জমিতে জল – এই দুই শব্দেতিনি তাঁর অর্থনৈতিক ভাবনাকে ব্যক্ত করেছিলেন। তাঁর জন্মশতবর্ষকে দেশ ‘গরীব কল্যাণবর্ষ’ রূপে পালন করবে।
উন্নয়নের ফলগরীবরা কীভাবে লাভ করবে সেই বিষয়ে সমাজ, সরকার এবং অন্যান্য সকলকে মনোযোগী হতে হবে– তাহলেই আমরা দেশকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে পারব। পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়েরজন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমি কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর আবাসস্থল – যা ইংরেজদেরসময় থেকে ‘রেসকোর্স রোড’ নামে পরিচিত ছিল, তা পরিবর্তন করে ‘লোক কল্যাণ মার্গ’ করেদিয়েছি। এই নাম পরিবর্তন ‘গরীব কল্যাণ বর্ষ’ উদ্যাপনের এক প্রতীক স্বরূপ। আমাদেরসকলের প্রেরণার উৎস, আমাদের ঐতিহ্যের প্রবক্তা শ্রদ্ধেয় দীনদয়াল উপাধ্যায়কেসশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই।
প্রিয়দেশবাসী, দু’বছর আগে বিজয়াদশমীর দিন আমি ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান শুরু করেছিলাম। আমারপ্রচেষ্টা ছিল যাতে ‘মন কি বাত’ সরকারী কাজকর্মের গুণগান প্রচার বা রাজনৈতিক কাদাছোঁড়াছুড়ির অনুষ্ঠান বা বাদানুবাদের জায়গা না হয়ে ওঠে। দু’বছর যাবৎ অনেক চাপ ওপ্রলোভন দেখা দিয়েছে, কখনও কখনও অভিমানবশতঃ কিছু বলার ইচ্ছা হলেও আপনাদের সকলেরআশীর্বাদে এই সব উপেক্ষা করে ‘মন কি বাত’-কে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যুক্ত রাখারপ্রচেষ্টা করেছি। দেশের সমস্ত মানুষ আমাকে প্রেরণা দিয়েছেন। দেশের সাধারণ মানুষসবসময় আমার মন জুড়ে থাকেন, যেটা সবসময় ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে প্রকাশ পেয়েছে।দেশবাসীর কাছে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান বিভিন্ন তথ্য জানার একটা সুযোগ হতে পারে,কিন্তু আমার কাছে ‘মন কি বাত’ দেশের একশো পঁচিশ কোটি মানুষের শক্তি-সামর্থের সঙ্গেপরিচিত হওয়ার এবং তার থেকে প্রেরণা পাওয়ার এক কর্মসূচি। ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানেরদু’বছর পূর্তিতে এই অনুষ্ঠানকে আপনারা যেভাবে উৎসাহ দিয়েছেন, শক্তি জুগিয়েছেন,আশীর্বাদ করেছেন, তার জন্য সমস্ত শ্রোতাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আমিআকাশবাণীকেও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যে তারা শুধু অনুষ্ঠানটি প্রচারই করেননি, সব ভাষাতেএই অনুষ্ঠান শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ারও সব রকম প্রচেষ্টা করেছেন। আমি সেই সবদেশবাসীকেও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যাঁরা ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে চিঠি লিখে, পরামর্শদিয়ে, সরকারী ব্যবস্থার দোষ-ত্রুটিগুলি প্রকাশ করেছেন। আকাশবাণী এই সমস্তচিঠিপত্রগুলি নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান তৈরি করেছে, সরকারী কর্মচারীদের অনুষ্ঠানে সামিলকরে সমস্যাগুলি সমাধানের একটা মঞ্চ তৈরি করেছে। এই কারণে ‘মন কি বাত’ কেবলমাত্রপনেরো-কুড়ি মিনিটের একটি ভাষণমাত্র নয়, সমাজ পরিবর্তনের এক নতুন মাধ্যম হয়ে উঠেছে।যে কোনো কারও পক্ষে এর থেকে বড় সন্তুষ্টির কারণ আর কী হতে পারে? এই কারণে এইঅনুষ্ঠানকে সফল বানাতে এর সঙ্গে যুক্ত সকলকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি, কৃতজ্ঞতাজানাচ্ছি।
আমার প্রিয়দেশবাসী, আগামী সপ্তাহে নবরাত্রি এবং দুর্গাপূজা, বিজয়াদশমীর উৎসব, দীপাবলীরপ্রস্তুতি শুরু হচ্ছে। সমগ্র দেশে এক অন্য প্রকার বাতাবরণ সৃষ্টি হচ্ছে। এগুলিশক্তি-উপাসনার পর্ব। সমাজের ঐক্যই দেশের শক্তি। নবরাত্রি বা দুর্গাপূজা – শক্তিরএই আরাধনা সমাজের ঐক্যের আরাধনা হতে হবে। একের সঙ্গে এক-কে যুক্ত করার উৎসব হতেহবে। তবেই সেটা হবে আসল শক্তির সাধনা আর তখনই আমরা মিলিতভাবে বিজয় উৎসব পালন করতেপারব। আসুন, শক্তির আরাধনা করি। একতার মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে চলি। দেশকে এক নতুনউচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য শান্তি, একতা, সদ্ভাবনার সঙ্গে নবরাত্রি আর দুর্গাপূজারউৎসব পালন করি, বিজয়াদশমীর বিজয় উদ্যাপন করি।
অনেক অনেকধন্যবাদ!
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার!
কাল, ২৯-শেঅগাস্ট হকির জাদুকর ধ্যানচাঁদের জন্মদিন। এই দিনটি সারা দেশে ‘জাতীয় ক্রীড়া দিবস’হিসেবে পালিত হয়। আমি ধ্যানচাঁদজীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি আর একই সঙ্গে আপনাদেরসবাইকে তাঁর অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাইছি। তিনি ১৯২৮, ১৯৩২ এবং ১৯৩৬ সালে ভারতেরহয়ে অলিম্পিক হকিতে স্বর্ণপদক জয়ের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।আমরা সবাই ক্রিকেট-প্রেমী। ব্র্যাডম্যানের নাম জানি। তিনি ধ্যানচাঁদ সম্পর্কেবলেছিলেন, ‘ He scores goals like runs ’। ধ্যানচাঁদজী খেলোয়াড়সুলভ মনোবৃত্তি এবং দেশভক্তির একজীবন্ত মশাল-স্বরূপ ছিলেন। এক বার কলকাতায় এক ম্যাচের সময়, বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়ধ্যানচাঁদজীর মাথায় হকি স্টিক দিয়ে আঘাত করে।
সেসময় ম্যাচ শেষ হতে আর মাত্র ১০মিনিট সময় বাকি। ধ্যানচাঁদজী ওই ১০ মিনিটে তিনটি গোল করেন আর বলেন, আমি আঘাতেরবদলা নিলাম – গোল করে।
আমার প্রিয়দেশবাসী, যখনই ‘মন কি বাত’-এর সময় আসে, তখনই মাই-গভ পোর্টালে বা নরেন্দ্র মোদীঅ্যাপে অনেক অনেক পরামর্শ আসে। নানা রকমের মতামতে তা পরিপূর্ণ থাকে। কিন্তু এবারআমি দেখলাম যে বেশিরভাগ মানুষ আগ্রহ প্রকাশ করেছেন রিও অলিম্পিকস্ সম্পর্কে আমারমতামত জানার জন্য। সাধারণ মানুষের রিও অলিম্পিকের প্রতি এই ভালোবাসা, এই সচেতনতাএবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই বিষয়ে কিছু বলার জন্য দাবী করা – এসব আমার কাছেঅত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক মনে হয়েছে। ক্রিকেট ছাড়া অন্যান্য খেলার প্রতিও ভারতবাসীর এতভালোবাসা, এত সচেতনতা, এত জ্ঞান রয়েছে – এটা আমার নিজের কাছে অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক।শ্রীমান অজিত সিং ‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এ লিখেছেন, দয়া করে এবার ‘মন কি বাত’-এমেয়েদের শিক্ষা এবং খেলাধূলায় তাঁদের অংশগ্রহণের বিষয়ে অবশ্যই বলবেন। কারণ রিওঅলিম্পিক্সে পদক জয় করে তাঁরা দেশকে গৌরবান্বিত করেছেন। শ্রীমান শচীন লিখেছেনআপনাকে অনুরোধ, এবার ‘মন কি বাত’-এ সিন্ধু, সাক্ষী আর দীপা কর্মকারের কথা অবশ্যইউল্লেখ করবেন। আমরা যা পদক পেয়েছি, তা এনে দিয়েছে মেয়েরাই। আমাদের মেয়েরা আরওএকবার প্রমাণ করে দিল যে তাঁরা কোনওভাবে কারোর চেয়ে কম নয়। এঁদের মধ্যে একজন উত্তরভারতের তো আর একজন দক্ষিণ ভারতের। একজন পূর্ব ভারতের, তো আর একজন ভারতের অন্য কোনঅংশের। মনে হচ্ছে যেন ভারতবর্ষের নাম উজ্জ্বল করার ভার সারা দেশের মেয়েরাই তাঁদেরকাঁধে তুলে নিয়েছেন।
‘মাই-গভ’পোর্টালে শিখা ঠাকুর লিখেছেন, আমরা অলিম্পিক্সে আরও ভাল ফল করতে পারতাম। তিনিলিখেছেন, শ্রদ্ধেয় মোদী স্যার, সব থেকে আগে রিওতে দুটি পদক জয়ের জন্য আপনাকেধন্যবাদ জানাই। কিন্তু এইসঙ্গে আমি এবিষয়েও আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই – আমাদেরঅন্যান্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মান কি ভাল ছিল? এর উত্তর হল – ‘না’। খেলাধুলোরজগতে আমাদের এখনও অনেক পথ এগোতে হবে। আমাদের মা-বাবারা আজও পড়াশোনা এবংশিক্ষাগ্রহণের ওপরই জোর দেন। সমাজে এখনও মনে করা হয়, খেলাধুলো করা মানে সময় নষ্টকরা। এই ধারণা আমাদের বদলানো প্রয়োজন। সমাজকে এই বিষয়ে অনুপ্রেরণা দিতে হবে। আর এইকাজ আপনি ছাড়া আর কেউ ভাল ভাবে করতে পারবে না।
এরকমই শ্রীমানসত্যপ্রকাশ মেহরা ‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এ লিখেছেন, ‘মন কি বাত’-এ আমাদের অতিরিক্তশিক্ষাগত কার্যক্রমের ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে শিশু ও যুবক-যুবতীদেরখেলাধূলার বিষয়ে। এই একই রকম ভাব প্রকাশ করেছেন হাজারও মানুষ। এটা তো অস্বীকারকরার কোনও উপায় নেই যে আমরা আশানুরূপ ফল প্রদর্শন করতে পারিনি। কিছু ক্ষেত্রে তোএমনও হয়েছে যে আমাদের খেলোয়াড়রা স্বদেশে যে মানে পৌঁছেছিলেন, এখানে খেলাধূলারক্ষেত্রে যে পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন, ওখানে গিয়ে সেই মান পর্যন্তও পৌঁছতে পারেন নি।আর পদক তালিকায় আমরা তো শুধুমাত্র দুটি পদকের অধিকারী হয়েছি। কিন্তু এটাও সত্যি যেপদক না পেলেও যদি আমরা ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করি, তো দেখব, বেশ কিছু বিষয়ে ভারতেরখেলোয়াড়রা প্রথমবার অত্যন্ত পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। দেখুন, শ্যুটিং-এ আমাদের অভিনববিন্দ্রা চতুর্থ স্থান অধিকার করেছেন এবং খুব অল্প ব্যবধানের জন্য পদক তাঁরহাতছাড়া হয়ে গেছে। জিমন্যাস্টিক্সে দীপা কর্মকারও অত্যন্ত ভালো ক্রীড়া প্রদর্শনকরেছেন এবং চতুর্থ স্থান অধিকার করেছেন। খুব কম ব্যবধানে পদক তাঁর হাতছাড়া হয়।কিন্তু একথা আমরা কীভাবে ভুলব যে তিনি জিমন্যাস্টিক্সে প্রথম ভারতীয় মহিলা যিনিঅলিম্পিকসের জন্য এবং অলিম্পিক্সের ফাইনাল পর্বের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছেন।মোটামুটি এরকমই ঘটনা ঘটেছে সানিয়া মির্জা এবং রোহন বোপান্না জুটির ক্ষেত্রেও।অ্যাথলেটিক্সে এবার আমরা ভাল ফল প্রদর্শন করেছি। পি.টি.ঊষার পর ৩২ বছর বাদে ললিতাবাবর ট্র্যাক অ্যাণ্ড ফিল্ড ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন। আপনারা জেনে খুশিহবেন যে ৩৬ বছর বাদে মহিলা হকি টিম অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণ করেছে। গত ৩৬ বছরে এইপ্রথম পুরুষদের হকি টিম অলিম্পিক্সে নক্ আউট স্টেজ পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে।আমাদের হকি দল অত্যন্ত পারদর্শী, আর একটা মজার কথা এই যে স্বর্ণপদক জয়ীআর্জেন্টিনা দল গোটা টুর্ণামেন্টে একটিই ম্যাচ হেরেছে এবং সেটা কাদের কাছে? ভারতেরখেলোয়াড়দের কাছে। আগামী দিনে আমাদের নিশ্চিতভাবে আরও ভাল ফল হবে।
বক্সিং-ওবিকাশ কৃষ্ণ যাদব কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছেছেন। কিন্তু ব্রোঞ্জ পদক লাভ করতেপারেন নি। বেশ কিছু খেলোয়াড়, যেমন বলা যায় অদিতি অশোক, দত্তু ভোকনল, অতনু দাস এমনআরও অনেকে আছেন, যাঁরা বেশ ভাল ক্রীড়া প্রদর্শন করেছেন। কিন্তু আমার প্রিয়দেশবাসী, আমাদের আরও অনেক কিছু করতে হবে। যা আমরা এবার করে এসেছি তাই যদি করতেথাকি, তাহলে হয়ত আমরা আবার নিরাশ হব। আমি একটি কমিটি তৈরির কথা ঘোষণা করেছি।বিশ্বের কোথায় কীভাবে খেলাধূলার অনুশীলন হচ্ছে তা নিয়ে ঘরোয়া ভাবে আমরা গভীরে গিয়েপর্যালোচনা করব। আমরা কীভাবে আরও ভাল করতে পারি, তার এক রোডম্যাপ তৈরি করব। ২০২০,২০২৪, ২০২৮ সাল পর্যন্ত ফলাফলের ভাবনা নিয়ে আমরা পরিকল্পনা তৈরি করেছি। আমি রাজ্যসরকারদেরও অনুরোধ করব, যে আপনারাও এরকম কমিটি তৈরি করুন এবং দেখুন খেলার জগতে আমরাকী করতে পারি। আমাদের এক এক রাজ্য নিজেদের একটা-দুটো খেলা পছন্দ করে সেই খেলারজগতে কতটা ক্ষমতা দেখাতে পারেন তার চেষ্টা করুন।
আমি খেলাধূলারজগতের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলিকেও অনুরোধ করব যে, আপনারা নিরপেক্ষ ভাবে ‘ব্রেইনস্টর্মিং’ করুন। আর দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে আমার অনুরোধ যে খেলাধূলারব্যাপারে যাঁরই আগ্রহ আছে, তিনি আমাকে ‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এ পরামর্শ পাঠান।সরকারকে লিখুন, প্রতিষ্ঠানগুলি পর্যালোচনা করে নিজেদের সিদ্ধান্ত সরকারকে জানাক।রাজ্যসরকারগুলি নিজেরা পর্যালোচনা করে তাদের পরামর্শ পাঠাক। আমাদের পুরোদস্তুরনিজেদের প্রস্তুত করতে হবে আর আমার বিশ্বাস যে আমরা ১২৫ কোটি দেশবাসী, ৬৫ শতাংশযুবপ্রজন্ম, খেলার জগতে অত্যন্ত ভালো ফল লাভ করব – এই লক্ষে প্রতিজ্ঞা নিয়ে নিশ্চিতভাবেএগিয়ে যেতে হবে।
আমার প্রিয়দেশবাসী, ৫-ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস। আমি কয়েক বছর ধরে শিক্ষকদিবসে ছাত্রদেরসঙ্গে কিছু সময় কাটাই এবং এক ছাত্রের মত করেই সময়টা কাটাই। এই সব ছোট ছোট ছেলেদেরকাছ থেকে অনেক কিছু শিখি। আমার কাছে ৫-ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস যেমন, তেমনইশিক্ষাদিবসও বটে। কিন্তু এবার আমাকে G-20summit –এ যেতে হচ্ছে। তাই আমার ইচ্ছে হচ্ছে আজ ‘মন কিবাত’-এ আমি আমার মনের এই অনুভূতিটুকু প্রকাশ করি।
জীবনে মা-রস্থান যতটা, ততটাই শিক্ষকের স্থান। এমন শিক্ষকও আমি দেখেছি যাঁরা তাঁদের শিষ্যদের জন্য, তাঁদের ছাত্র-ছাত্রীদেরজন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দেন। এই কদিন রিও অলিম্পিক্সের পর, পুল্লেলা গোপীচাঁদেরকথা বার বার আলোচনা হচ্ছে। উনি একজন খেলোয়াড় ঠিকই, কিন্তু উনি কত ভাল প্রশিক্ষকতার প্রমাণ আমরা পেয়েছি। আমি আজ গোপীচাঁদকে এক খেলোয়াড়-এর থেকেও বেশি এক উত্তমপ্রশিক্ষক হিসাবে দেখছি। আর শিক্ষক দিবসে পুল্লেলা গোপীচাঁদকে, তাঁর সাধনা, খেলারপ্রতি তাঁর আত্মদান আর তাঁর শিষ্যের সফলতায় তাঁর নিজস্ব পদ্ধতিতে আনন্দ পাওয়াকেসম্মান জানাই। আমাদের সবার জীবনে শিক্ষকের ভূমিকা সবসময়ই আমরা অনুভব করি। ৫-ইসেপ্টেম্বর, ভারতের প্রাক্তণ রাষ্ট্রপতি ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ-জীর জন্মদিন আরসারা দেশ এই দিনটি ‘শিক্ষক দিবস’ হিসাবে পালন করে। তিনি জীবনে যেখানেই পৌঁছন নাকেন, নিজে সবসময় শিক্ষক হিসাবে দিন কাটানোর চেষ্টা করতেন। শুধু তাই নয়, তিনি সবসময়বলতেন, “ভাল শিক্ষক সেই হয়, যার ভেতরের ছাত্রসত্ত্বা কখনও হারিয়ে না যায়।”রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরেও শিক্ষক হিসাবে দিন কাটানো, নিজের মধ্যের ছাত্রসত্ত্বাকেবাঁচিয়ে রাখা, এই অদ্ভূত জীবনযাপন করে দেখিয়েছেন ড. রাধাকৃষ্ণণজী।
আমি কখনও কখনওভাবি যে আমার তো আমার শিক্ষকের অনেক কথা মনে আছে। কারণ আমাদের ছোট্ট গ্রামে উনিইছিলেন আমাদের আদর্শ। আমি আজ আনন্দের সঙ্গে বলতে পারি যে আমার এক শিক্ষক, যাঁর এখনপ্রায় নব্বই বছর বয়স হয়ে গেছে, আজও প্রতি মাসে তাঁর নিজের হাতে লেখা চিঠি আসে আমারকাছে। সারা মাস ধরে তিনি যে সমস্ত বই পড়েন, তার উল্লেখ, সেখান থেকে উদ্ধৃতি থাকেসে চিঠিতে। সারা মাস ধরে আমি কী করেছি, তাঁর দৃষ্টিতে তা ঠিক কি বেঠিক তারও উল্লেখথাকে। যেন আজও তিনি শ্রেণিকক্ষে আমাকে পড়াচ্ছেন এমনই মনে হয়। তিনি আজও আমাকে একরকমদূর-প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। আর নব্বই বছর বয়সে তাঁর হাতের লেখা দেখে অবাক হয়ে যাইযে এত বয়সেও এত সুন্দর হস্তাক্ষর কীভাবে হয়! আমার নিজের হাতের লেখা অত্যন্ত খারাপ।আর তাই যখনই আমি কারোর সুন্দর হস্তাক্ষর দেখি, আমার মন ভালোলাগায় ভরে ওঠে। আমার যেঅনুভূতি মনে হয় আপনাদেরও সেই অনুভূতি হবে। আপনার শিক্ষকের শিক্ষায় আপনার জীবনে যাকিছু ভাল হয়েছে তা যদি সারা বিশ্বকে জানান, তাহলে শিক্ষকদের প্রতি ব্যবহারেপরিবর্তন আসবে, শিক্ষকদের গৌরব বাড়বে আর সমাজে আমাদের শিক্ষকদের গৌরবান্বিত করাআমাদের সবার দায়িত্ব। আপনাদের শিক্ষকদের সঙ্গে ফটো থাকলে, আপনাদের শিক্ষকদের সঙ্গেকোনও ভাল ঘটনা ঘটে থাকলে, আপনাদের শিক্ষকদের পাঠানো কোনও বার্তা থাকলে অবশ্যইআপনারা ‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এ তা সবার সঙ্গে ভাগ করে নিন। দেখুন, দেশে শিক্ষকদেরঅবদান শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে দেখা অত্যন্ত মূল্যবান।
আমার প্রিয়দেশবাসী, কিছুদিন পরেই গণেশ উৎসব পালিত হবে। ভগবান গণেশ সকল বিঘ্ন দূর করেন আরআমরা সকলেই চাই আমাদের দেশ, সমাজ, পরিবার, সকল ব্যক্তি এবং তাঁদের জীবন নির্বিঘ্নথাকুক। আমরা যখনই গণেশ উৎসবের কথা বলি, তখন লোকমান্য তিলকের নাম স্মরণে আসা খুবইস্বাভাবিক। লোকমান্য তিলক-ই গণেশ উৎসবকে সর্বজনীন রূপ প্রদান করেছিলেন। সর্বজনীনগণেশ উৎসবের মাধ্যমে তিনি এই ধর্মীয় উৎসবকে রাষ্ট্রিয় চেতনার উৎসবে পরিণতকরেছিলেন, সমাজ সংস্কারের উৎসব করে তুলেছিলেন। সর্বজনীন গণেশ উৎসবের মাধ্যমে সমাজজীবনকে প্রভাবিত করে এমন সকল বিষয়ের আলোচনা হওয়া উচিত যাতে এই সময়ে আয়োজিতঅনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে সমাজ নতুন শক্তিতে, নতুন বলে বলীয়ান হয়ে ওঠে। তবে একইসঙ্গে লোকমান্য তিলক যে মন্ত্রদিয়েছিলেন – স্বরাজ আমাদের জন্মসিদ্ধ অধিকার– সেটাই হোক সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।আজকাল তো কেবলমাত্র মহারাষ্ট্রই নয়, দেশের সর্বত্র গণেশ উৎসব পালিত হয়। বিশেষ করেযুবকরা এই উৎসব পালনের জন্য উৎসাহের সঙ্গে প্রস্তুতি শুরু করেন। কিছু মানুষতো এখনওপর্যন্ত লোকমান্য তিলক যে ভাবনা নিয়ে এই উৎসব শুরু করেছিলেন তা অনুসরণ করতে সচেষ্টথাকেন। বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোচনা সভা, রচনা প্রতিযোগিতা, আল্পনা প্রতিযোগিতারআয়োজন করা হয়। প্রতিমার শোভাযাত্রায় আমাদের সমাজকে প্রভাবিত করে এমন সব বিষয়গুলিকেসুন্দর ভাবে উপস্থাপিত করা হয়। এই সর্বজনীন গণেশ উৎসবে একপ্রকার লোকশিক্ষার প্রচারঅভিযান চালানো হয়। লোকমান্য তিলক ‘স্বরাজ আমাদের জন্মসিদ্ধ অধিকার’ আমাদের এইপ্রেরণাদায়ক মন্ত্রটি দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন আমরা স্বাধীন ভারতে বসবাস করি। এইসর্বজনীন গনেশ উৎসবে এখন আমরা বলব, সু-রাজ আমাদের অধিকার। আমরা সু-রাজের পথে এগিয়েযাবো, সু-রাজ হবে আমদের মূল চাহিদা। এই মন্ত্র-কে সঙ্গে নিয়ে আমরা কি এগিয়ে যেতেপারি না? আসুন, আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি। একথা সত্যি, উৎসব সমাজের শক্তি। উৎসবব্যক্তি এবং সমাজে নতুন প্রাণ সঞ্চার করে। উৎসব বিনা আমাদের জীবন অসম্ভব। কিন্তুসময়ের দাবী অনুযায়ী তার মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে। এবার আমাকে অনেকেই বিশেষ করেগণেশ উৎসব এবং দুর্গাপুজা নিয়ে অনেক কিছু লিখেছেন। তাঁরা বিশেষ করে পরিবেশ বিষয়েখুব চিন্তিত। শঙ্কর নারায়ণ প্রশান্ত নামে এক ব্যক্তি আমাকে বলেছেন- “মোদীজি, আপনিমন কি বাত্ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সবাইকে বোঝান যে তারা যেন প্লাষ্টার অফ্ প্যারিসদিয়ে নির্মিত গণেশ মূর্তি ব্যবহার না করে গ্রামের পুষ্করিণীর মাটি দিয়ে তৈরি গণেশমূর্তি ব্যবহার করে”। প্লাষ্টার অফ্ প্যারিস দিয়ে তৈরি প্রতিমা পরিবেশের অনুকূলনয়। শঙ্কর নারায়ণ ছাড়া আরও অনেকে এ বিষয়ে আমাকে লিখেছেন। আমিও আপনাদের সকলকেঅনুরোধ করছি আমরা কি গণেশ বা দুর্গা মূর্তি নির্মাণে মাটি ব্যবহার করতে পারি না? আমাদেরসেই পুরনো ঐতিহ্য কি ফিরিয়ে আনা যায় না? পরিবেশের সুরক্ষা, নদী এবং পুষ্করিণীসুরক্ষা এবং এর ফলে দূষণ থেকে জলে থাকা ছোট ছোট জীবের সুরক্ষা তো ঈশ্বরের সেবারইনামান্তর। ভগবান গণেশ – বিঘ্নহারী। তাই আমরা এমন ধরণের মূর্তি তৈরি করব না যাবিঘ্ন সৃষ্টি করে। আমি জানি না আপনারা আমার এই কথাগুলি কীভাবে নেবেন। কিন্তুকেবলমাত্র আমি একাই একথা বলছি না, আরও অনেকেই বলছেন। পুনের এক মৃৎশিল্পী শ্রীমানঅভিজিৎ ধোড়ফলে, কোলাপুরের একটি সংস্থা নিসর্গ মিত্র, বিজ্ঞানপ্রবোধিনী, বিদর্ভঅঞ্চলের নিসর্গ কাট্টা, পুনের জ্ঞানপ্রবোধিনী এবং মুম্বইয়ের গিরগাওচা রাজা প্রভৃতিঅনেক সংস্থা এবং ব্যক্তি মাটির নির্মিত গণেশ মূর্তি নির্মাণে অনেক পরিশ্রম করছেনএবং প্রচার চালাচ্ছেন। পরিবেশ-বান্ধব গণেশ উৎসব – এটাও তো একটি সমাজ সেবা।দুর্গাপূজার এখনও কিছু সময় বাকি আছে। এখনই আমাদের স্থির করতে হবে যে আমাদের ওইসবপুরনো পরিবার – যারা মূর্তি বানাতেন, তাঁরা যদি পুষ্করিণীর বা নদীর থেকে আনা মাটিরমূর্তি বানান তাহলে তাঁরা উপার্জনের সুযোগ পাবেন। আর উৎসবের পরে সেগুলি আবার উৎসেচলে যাবে এবং পরিবেশও রক্ষা পাবে। আমি আপনাদের সবাইকে গণেশ চতুর্থীর অনেক অনেকশুভেচ্ছা জানাছি।
আমার প্রিয়দেশবাসী। ভারতরত্ন মাদার টেরেসা-কে আগামী ৪ঠা সেপ্টেম্বর ‘সন্ত’ উপাধিতে ভূষিত করাহবে। মাদার টেরেসা তাঁর পুরো জীবনকাল ভারতের গরীব মানুষের সেবায় নিয়োজিত করেছিলেন।ওঁর জন্ম হয়েছিল আলবেনিয়ায়। ইংরাজি ওঁর ভাষা ছিল না। কিন্তু উনি তাঁর জীবন ধারায়পরিবর্তন এনেছিলেন। নিজেকে গরীবের সেবায় উপযুক্ত করে তোলার জন্য অনেক প্রয়াস করেছেন।এই মাদার টেরেসার ‘সন্ত’ উপাধি পাওয়ায় সকল ভারতবাসীর গর্বিত হওয়া খুবই স্বাভাবিক।৪-ঠা সেপ্টেম্বর যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে, তাতে অংশগ্রহণের জন্য একশো পঁচিশকোটি ভারতবাসী এবং ভারত সরকারের তরফে আমাদের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের নেতৃত্বেআধিকারিকদের এক প্রতিনিধি দল সেখানে উপস্থিত থাকবেন। সন্ত, ঋষি, মুনি এবংমহাপুরুষদের কাছ থেকে আমরা সব সময় কিছু শিখতে পারি। আমি আশা করি আমরা নতুন কিছুপাবো, শিখতে থাকবো এবং ভালো কিছু করব।
আমার প্রিয় দেশবাসী। উন্নয়ন যখন জন আন্দোলনের রূপ নেয় তখনএক বিরাট পরিবর্তন এসে যায়। জনশক্তিকে ঈশ্বরের এক রূপ হিসেবে মানা হয়। বিগত দিনেভারত সরকার পাঁচটি রাজ্যসরকারের সঙ্গে সংযুক্ত ভাবে স্বচ্ছ গঙ্গার জন্য গঙ্গাসাফাই অভিযানে সাধারণ লোককে যুক্ত করার এক সফল প্রচেষ্টা করেছে। এ মাসের ২০ তারিখেএলাহাবাদ গঙ্গার তীরবর্তী গ্রামগুলির পুরুষ ও মহিলা প্রধানদের আমন্ত্রন জানানো হয়েছিল।এলাহাবাদে উপস্থিত গ্রামপ্রধানরা মা-গঙ্গাকে সাক্ষী রেখে শপথ নিয়েছেন তাঁরা নিজনিজ গ্রামে উন্মুক্ত স্থানে শৌচকার্য করার প্রচলিত অভ্যাস এখনই বন্ধ করাবেন,শৌচালয় বানানোর অভিযান চালাবেন, গঙ্গাকেনোংরা হতে দেবেন না, গঙ্গা সাফাই অভিযানে সম্পূর্ণরূপে যোগদান করবেন।উত্তরাখন্ড, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খন্ড এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত গ্রামপ্রধানদেরএই সংকল্পের জন্য আমি তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ জানাছি। আমি ভারত সরকারের ওই সকলমন্ত্রক এবং মন্ত্রীদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি যাঁরা এই অনুষ্ঠানকে সম্ভব করেছেন। আমিপাঁচ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদেরও ধন্যবাদ জানাচ্ছি, যাঁরা গঙ্গা সাফাই অভিযানে সাধারণজনতাকে সংযুক্ত করে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কখনও কখনও কিছু বিষয় আমার মনকে খুবইস্পর্শ করে। আর যাঁরা এই বিষয়গুলি ভাবেন তাঁদের আমি বিশেষ সম্মানের চোখে দেখি।১৫-ই জুলাই ছত্তিশগড়ের কবীরধাম জেলার ১৭০০-র অধিক বিদ্যালয়ের প্রায় সওয়া লাখেরথেকে বেশি ছাত্র-ছাত্রী সামগ্রিক ভাবে নিজের নিজের পিতা-মাতাকে চিঠি লিখেছে। কেউ ইংরেজিতে,কেউ হিন্দিতে, কেউ ছত্তিশগড়িতে চিঠি লিখে বলেছে আমাদের বাড়িতে শৌচাগার থাকা উচিত।তাদের চাহিদা শৌচাগার। কেউ কেউ এও লিখেছে যে এবছর আমার জন্মদিন পালন না করলেও চলবেকিন্তু শৌচাগার নিশ্চয়ই বানাও। সাত থেকে সতেরো বছর বয়সী বালক-বালিকারা এই কাজকরেছে। এই চিঠির এমন আবেগপ্রবণ প্রভাব পড়েছে যে সেই চিঠি পাওয়ার পরের দিনই যখনছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে এসেছে, তাদের হাতে কিছু পিতা-মাতা স্কুলের শিক্ষকেরউদ্দেশে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, তাঁরা একটা নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে বাড়িতে শৌচাগারবানিয়ে দেবেন। যাঁরা এই বিষয়টি পরিকল্পনা করেছেন, তাঁদের আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি।ওইসকল ছাত্র-ছাত্রীদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি সেইসব পিতা-মাতাদের,যাঁরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে শৌচাগার বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এইগুলি আমাদেরসত্যিই অনুপ্রেরণা যোগায়। কর্ণাটকের কোপ্পাল জেলার ষোল বছর বয়সী একটি মেয়েমল্লম্মা নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে সত্যাগ্রহে বসেছে। মল্লম্মা অনশন করছিল – নিজেরজন্য কোন জামা-কাপড় বা মিষ্টান্ন খাওয়ার জন্য নয়, মল্লম্মা জেদ ধরেছিল, বাড়িতেশৌচাগার বানাতে হবে। ওই পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়, কিন্তু মেয়ে জেদছাড়তে প্রস্তুত নয়, সত্যাগ্রহ ছাড়তে প্রস্তুত নয়। গ্রামপ্রধান মহম্মদ শাফি যখনজানতে পারেন যে মল্লম্মা শৌচাগারের জন্য সত্যাগ্রহ করছে তখন তিনি ১৮ হাজার টাকাযোগাড় করে এক সপ্তাহের মধ্যে শৌচাগার বানিয়ে দেন। মল্লম্মার মতো মেয়ের জেদের শক্তিআর মহম্মদ শাফির মতো গ্রামপ্রধান সত্যিই উল্লেখযোগ্য। সমস্যার সমাধানের জন্যকীভাবে রাস্তা তৈরি করা যায় – এটাই তো জনশক্তি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘স্বচ্ছ ভারত’ এখন সমস্ত ভারতবাসীরস্বপ্ন হয়ে গেছে। কারও কারও কাছে এটা একটা সংকল্প। আর কিছু ভারতবাসী এটাকেই তাঁদেরউদ্দেশ্য হিসাবে বেছে নিয়েছেন। কিন্তু সবাই-ই কোনও না কোনও ভাবে এই অভিযানের সঙ্গেযুক্ত, সকলেরই যোগদান রয়েছে। প্রত্যেক দিনই খবর আসতে থাকে, কি কি নতুন চেষ্টাচালানো হচ্ছে। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ভাবা হয়েছে এবং সমস্ত লোকেদের জানানো হচ্ছেযে দুই বা তিন মিনিটের জন্য ‘স্বচ্ছ ভারত’ নিয়ে একটা ফিল্ম তৈরি করুন। এই শর্টফিল্ম ভারত সরকারকে পাঠিয়ে দিন। এই সম্বন্ধে বিস্তারিত বিবরণ ওয়েবসাইটে পাওয়াযাবে। এর একটি প্রতিযোগিতা হবে এবং ২-রা অক্টোবর গান্ধী জয়ন্তী-র দিনে যিনি বিজয়ীহবেন, তাঁকে পুরষ্কৃত করা হবে। আমি টিভি চ্যানেলদেরও বলছি, আপনারা এরকম ছবিরপ্রতিযোগিতা করান। সৃজনশীলতাও স্বচ্ছতা অভিযানকে শক্তি যোগাতে পারে, নতুন স্লোগানপাওয়া যাবে, নতুন পদ্ধতি জানা যাবে, নতুন প্রেরণা পাওয়া যাবে। আর এই সবকিছু সাধারণমানুষের দ্বারা, ছোটোখাটো শিল্পীদের মাধ্যমে। এই ফিল্ম বানানোর জন্য বড়ো কোনওস্টুডিও বা বড় ক্যামেরার দরকার নেই, বর্তমানে নিজেদের মোবাইল ফোনের ক্যামেরা দিয়েওআপনারা ফিল্ম বানাতে পারেন। আসুন, এগিয়ে চলুন, আপনাকে আমার আমন্ত্রণ রইল।
আমার প্রিয় দেশবাসী,ভারত সব সময় চেষ্টা করে আসছে যে আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গভীরহোক, সহজ হোক, প্রাণবন্ত হোক। কিছুদিন আগে একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটলো, আমাদেররাষ্ট্রপতি মাননীয় প্রণব মুখার্জী কলকাতাতে ‘আকাশবাণী মৈত্রী’ চ্যানেলের শুভউদ্বোধন করেছেন। এখন অনেকেই হয়ত ভাববেন রাষ্ট্রপতি কি একটা রেডিও চ্যানেলেরউদ্বোধন করবেন? কিন্তু এটা একটা সাধারণ রেডিও চ্যানেল নয়, এটা একটা অনেক বড়গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমাদের পড়শি বাংলাদেশ রয়েছে। আমরা জানি, বাংলাদেশ ওপশ্চিমবঙ্গ একই সাংস্কৃতিক পরম্পরাকে আজও এগিয়ে নিয়ে চলছে। তাই একদিকে ‘আকাশবাণীমৈত্রী’ আর অন্যদিকে ‘বাংলাদেশ বেতার’ – এরা নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আদানপ্রদানকরবে, আর দুই দিকের বাংলাভাষী মানুষ আকাশবাণীর অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন। মানুষেরসঙ্গে মানুষের যোগাযোগে আকাশবাণী-র এক বড় অবদানরয়েছে। মাননীয় রাষ্ট্রপতি এর উদ্বোধন করেছেন। আমি বাংলাদেশকেও ধন্যবাদ দিতে চাই যেতারাও এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আমি আকাশবাণীর বন্ধুদেরও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, তাঁরাওবিদেশ নীতিতে নিজেদের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।
আমার প্রিয়দেশবাসী, আপনারা আমাকে প্রধানমন্ত্রীর কাজ দিয়েছেন, কিন্তু আমিও আপনাদের মতো এক জনমানুষ। কখনও কখনও কিছু ঘটনা আমাদের মনকে নাড়া দিয়ে যায়। এই রকম ঘটনা নতুন শক্তিরজোগান দেয়, নতুন অনুপ্রেরণা দেয়, আর এটাই দেশবাসীর জন্য কিছু না কিছু করারপ্রেরণার উৎস। কিছুদিন আগে আমি একটা চিঠি পেয়েছিলাম, যেটা আমার মনকে নাড়া দিয়েছিল।প্রায় চুরাশি বছরের এক মা, যিনি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা, উনি এই চিঠি লিখেছেন। যদিনা, উনি চিঠিতে কখনও নিজের নাম প্রকাশে নিষেধ করতেন, তো আমার খুব ইচ্ছে ছিল ওঁরনাম আপনাদের সবাইকে বলবার। চিঠিতে উনি লিখেছেন, “আপনি যখন গ্যাসের ওপর ভর্তুকিছেড়ে দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন, তখন আমি গ্যাসের ভর্তুকি ছেড়ে দিয়েছিলাম। তারপরেতো এটা ভুলেই গিয়েছিলাম। কিন্তু কিছু দিন আগে আপনাদের একজন এসে একটি চিঠি দিয়েযায়। এই ‘ Give it up ’-এর জন্য আমি ধন্যবাদপত্র পাই। আমার কাছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই পত্র কোনোপদ্মশ্রী সম্মান থেকে কম নয়।”
দেশবাসী, আপনারাহয়ত জানেন, আমি চেষ্টা করেছিলাম, যাঁরা যাঁরা গ্যাসের ভর্তুকি ছেড়ে দিয়েছেন,তাঁদের একটি চিঠি পাঠাই, আর আমার কোনও প্রতিনিধি স্বয়ং উপস্থিত হয়ে সেই চিঠিপৌঁছাক। এক কোটিরও বেশি চিঠি লেখার জন্য আমি চেষ্টা করছি। এই যোজনার অধীনে আমার এইচিঠি ওই মা-র কাছে পৌঁছায়। উনি আমাকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন আপনি ভাল কাজ করছেন,গরীব মায়েদের উনুনের ধোঁয়া থেকে মুক্তি দেওয়ার এটা একটা অভিযান। আমি একজনঅবসর-প্রাপ্ত শিক্ষিকা, আর কয়েক বছরেই আমার বয়স নব্বই বছর হয়ে যাবে। আমি পঞ্চাশহাজার টাকার দান আপনাকে পাঠালাম। এই টাকাটা আপনি এই গরীব মা-বোনেদের উনুনের ধোঁয়াথেকে মুক্ত করার কাজে লাগাবেন। আপনারা কল্পনা করতে পারেন – পেনশনের উপর নির্ভরশীলএকজন সামান্য অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা মা-বোনেদের উনুনের ধোঁয়া থেকে মুক্ত করতে আরতাদের জন্য গ্যাস কানেকশান-এর বন্দোবস্ত করতে পঞ্চাশ হাজার টাকা দান করেছেন। এখানেপঞ্চাশ হাজার টাকাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, জরুরি হল এই মায়ের আবেগ। উনি আর ওঁর মতোকোটি কোটি মা-বোনেদের আশীর্বাদই আমাদের দেশের ভবিষ্যৎকে গড়তে সাহায্য করে, শক্তিদেয়, ভরসা দেয়। আর উনি আমাকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চিঠি লেখেননি, সাদামাটাচিঠিতে সম্বোধন করেছেন মোদী-ভাইয়া বলে। আমি এই মাকে প্রণাম জানাই। আমি ভারতের এইকোটি কোটি মায়েদের প্রণাম জানাই, যাঁরা নিজেরা কষ্ট স্বীকার করেও অন্যদের সাহায্যকরে যাচ্ছেন।
আমার প্রিয়দেশবাসী, গত বছর আমরা খরার জন্য খুব চিন্তাগ্রস্ত ছিলাম। কিন্তু এই অগাস্ট মাসটায়আমরা ক্রমাগত বন্যার সমস্যায় জেরবার। দেশের কিছু জায়গায় একাধিকবার বন্যা হয়েছে।রাজ্য সরকার, কেন্দ্র সরকার, স্থানীয় প্রশাসনিক সংস্থা, সামাজিক সংস্থা ও নাগরিকরাযতটা করা সম্ভব, করেছেন।
কিন্তু এই বন্যারখবরের মধ্যেও এমন কিছু খবর আছে, যা আমাদের মনে রাখা বেশি প্রয়োজন। একতার শক্তিকতখানি, সবাই একজোট হয়ে এগোলে কত বড় সুফল আমরা পেতে পারি, তার নিদর্শন হয়ে রইল এইবছরের অগাস্ট মাসটা। এই অগাস্ট ২০১৬-তে ঘোর রাজনৈতিক বিরোধী দল, একে অন্যকেআক্রমণের কোনও সুযোগ হাতছাড়া না করা দল, পুরো দেশের প্রায় নব্বইটি দল ও সংসদের আরওঅন্যান্যরা মিলে জি-এস-টি বিল পাস্ করান। এর কৃতিত্ব সবক’টি দলের প্রাপ্য। আর সবদল মিলে যদি একসাথে চলা যায়, তাহলে কত বড় বড় কাজ করা সম্ভব – এটা তার প্রকৃষ্টউদাহরণ।
এই একই ভাবেকাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল একজোট। সবাই একই সুরে বার্তাদিয়েছে বিশ্বের সকলকে, বার্তা দিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের। এর পাশাপাশি কাশ্মীরেরনাগরিকদের প্রতিও সমবেদনা ব্যক্ত করেছে তারা। কাশ্মীর সম্বন্ধে আমার সমস্ত দলগুলিরসঙ্গে যত আলাপ-আলোচনা হয়েছে, তা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট। কয়েকটি শব্দে এর নির্যাসবোঝাতে হলে আমি বলব ঐক্য ও মমতা – এই দুটি হল মূল মন্ত্র। আমাদের সকলের মত এই –দেশের একশো পঁচিশ কোটি দেশবাসীর মত এই, গ্রামপ্রধান থেকে আরম্ভ করে প্রধানমন্ত্রীপর্যন্ত সকলের এই মত যে কাশ্মীরে যদি একটিও প্রাণহাণি হয় – তা সে কোনও সাধারণযুবকের হোক বা কোনও নিরাপত্তাকর্মীর – সে ক্ষতি আমাদেরই, আমাদের দেশের। যারা এইছোটো ছোটো ছেলেদের এগিয়ে দিয়ে কাশ্মীরে অশান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন, তাদেরকখনও না কখনও অবশ্যই এই নির্দোষ বালকদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
আমার প্রিয়দেশবাসী, আমাদের এই দেশ সুবৃহৎ, নানা বিবিধতায় সমৃদ্ধ। এই বিবিধতায় পূর্ণ দেশকেঐক্যের বন্ধনে বেঁধে রাখতে – নাগরিক হিসেবে, সমাজ হিসেবে, সরকার হিসেবে আমাদেরসকলের দায়িত্ব যে আমরা ঐক্যের প্রতি জোর দেব, ঐক্যের উদ্ভাস ঘটাব আর তবেই দেশনিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরি করতে পারবে এবং করবে। আমার একশো পঁচিশকোটি দেশবাসীরক্ষমতার উপর ভরসা আছে। আজ ব্যস্ এই পর্যন্তই, অনেক অনেক ধন্যবাদ!
আমারপ্রিয় দেশবাসী, নমস্কার! আজ সকাল-সকাল দিল্লির তরুণ বন্ধুদের সঙ্গে কিছু সময়কাটানোর সুযোগ আমার হয়েছিল। আমার বিশ্বাস আগামী দিনগুলিতে পুরো দেশজুড়ে ছড়িয়ে যাবেখেলা নিয়ে প্রতিটি তরুণের উ ৎসাহ-উদ্দীপনার বাতাবরণ। আমরা সবাইজানি কিছুদিনের মধ্যেই বিশ্ব-খেলাধুলোর ক্ষেত্রে সবথেকে বড় ক্রীড়ার মহাকুম্ভ আয়োজিতহতে চলেছে। বারবার আমাদের কানে প্রতিধ্বনিত হবে ‘রিও’। সারা বিশ্ব খেলবে, পৃথিবীরপ্রতিটি দেশ নিজ নিজ খেলোয়াড়দের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখবে, আপনারাও রাখবেন। আমাদেরআশা-প্রত্যাশা তো অনেক, কিন্তু রিওতে খেলার জন্য যাঁরা গেছেন, সেইসব খেলোয়াড়দের উৎসাহকেআরও জোরদার করার কাজ ১২৫ কোটি দেশবাসীর। আজ দিল্লিতে ভারত সরকার ‘ Run for Rio ’,‘খেলো আর বাঁচো, খেলো আর প্রস্ফুটিত হও’ শীর্ষক এক বিশাল এবং সুন্দর দৌড়ের আয়োজনকরেছে। আমিও আগামী দিনে যেখানেই থাকি না কেন, আমাদের খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করারজন্য কিছু না কিছু করব। যে সমস্ত খেলোয়াড় এই পর্যায়ে এসে পৌঁছন তাঁরা অনেক কঠিনপরিশ্রমের পরই এই জায়গায় এসে পৌঁছন। এক রকম কঠোর সাধনা করেন তাঁরা। খাওয়া-দাওয়ারযত শখই থাকুক না কেন, সবকিছু ছেড়ে দিতে হয়। শীতের সময় ঘুমোনোর ইচ্ছে করলেও, বিছানাছেড়ে মাঠে দৌড়তে হয়। আর শুধু খেলোয়াড়ই তো নয়, তাঁর মা-বাবাও ততটাই মনোযোগ সহকারেনিজের ছেলের জন্য মেহনত করেন। রাতারাতি কেউ খেলোয়োড় হয়ে যায় না। এক কঠিন সাধনার পরখেলোয়োড় হয়ে ওঠেন। হার-জিত নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সেইসঙ্গে এই প্রতিযোগিতারস্তর পর্যন্ত পৌঁছনো তার চেয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এজন্যই সব দেশবাসীর উচিত রিওঅলিম্পিকে আমাদের যেসমস্ত খেলোয়োড়রা গেছেন তাঁদের শুভকামনা জানানো। আমাদের হয়ে এইকাজ করার জন্য আমি তৈরি। আপনাদের শুভেচ্ছাবার্তা এইসব খেলোয়োড়দের কাছে পৌঁছনোরজন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী ডাকপিওন হতে প্রস্তুত। আপনারা আমাকে ‘নরেন্দ্রমোদীঅ্যাপ’–এ খেলোয়োড়দের নামে শুভেচ্ছা পাঠান, আমি সেই শুভেচ্ছাবার্তা তাঁদের কাছেপৌঁছে দেব। আমিও ১২৫ কোটি দেশবাসীর মত এক দেশবাসী, এক নাগরিক হিসাবে আমাদের এই সবখেলোয়োড়দের উৎসাহ বাড়ানোর জন্য আপনাদের সঙ্গে থাকব। আসুন, আমরা সবাই আগামীদিনগুলিতে এক-একজন খেলোয়োড়কে যতটা গৌরবান্বিত করা সম্ভব তাঁদের প্রচেষ্টাকেপুরস্কৃত করা সম্ভব, করি। আমি আজ যখন রিও অলিম্পিকের কথা বলছি, তখন এক কবিতা-প্রেমিক– পঞ্জাব কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুরজপ্রকাশ উপাধ্যায় একটি কবিতাপাঠিয়েছেন। হতে পারে, আরো অনেক কবি আছেন যাঁরা অনেক কবিতা লিখেছেন, হয়ত কবিতা লিখেকেউ কেউ তা আবৃত্তি করবেন, প্রতিটি ভাষাতে করবেন, তবে আমাকে সূরজজী যে কবিতাটাপাঠিয়েছেন আমি তা আপনাদের সঙ্গে উপভোগ করতে চাই।
উঠলখেলার আওয়াজ
উঠলখেলার আওয়াজ,
প্রতিযোগিতারবর্ণালী মেজাজ
খেলারএই মহাকুম্ভে, রিও-র শব্দ ঝংকারে
খেলারএই মহাকুম্ভে, রিও-র শব্দ ঝংকারে।
ভারতেরএক শুভ সূচনা হোক।
ভারতেরএক শুভ সূচনা হোক
সোনারুপো, এবং ব্রোঞ্জের বর্ষণ হোক।
ভারতেরএক শুভ সূচনা হোক
সোনা,রুপো এবং ব্রোঞ্জের বর্ষণ হোক।
এবারআমাদের জয় হোক, এমনই প্রস্তুতি হোক।
লক্ষ্যথাকুক সোনাতে
লক্ষ্যথাকুক সোনাতে
নিরাশহয়ো না হারেতে
নিরাশহয়ো না হারেতে।
কোটিমনের গর্ব তোমরা
খেলাতেআমাদের প্রাণ তোমরা।
কোটিমনের গর্ব তোমরা
খেলাতেআমাদের প্রাণ তোমরা।
তোমাদেরকীর্তির নিশানায়
রিওতেউড়ুক বিজয় নিশান
রিওতেউড়ুক বিজয় নিশান।
সূরজ-জী, আপনার এই অনুভব আমি সব খেলোয়োড়দের প্রতি অর্পণকরছি, আর আমার তরফে, ১২৫ কোটি দেশবাসীর তরফে রিও-তে ভারতবর্ষের পতাকা উড্ডীন করারজন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাতে চাই।
এক যুবক, শ্রীমান অঙ্কিত, আমাকেরাষ্ট্রপতি আব্দুল কালাম-জীর মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। গত সপ্তাহেআব্দুল কালাম-জীর প্রয়াণ দিবসে দেশ এবং বিশ্ব শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছে। যখনই আব্দুলকালাম-জীর নাম করা হয়, তখনই বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ক্ষেপনাস্ত্র – ভবিষ্যতের একশক্তিশালী ভারতের ছবি আমাদের চোখের সামনে ভেসেওঠে। আর এজন্য অঙ্কিত লিখেছেন যে আপনার সরকার আব্দুল কালাম-জীর স্বপ্নকে সার্থককরার জন্য কি করছে? আপনার কথা ঠিক। আগামী দিন প্রযুক্তিনির্ভর, আর প্রযুক্তি সততপরিবর্তনশীল। প্রতিদিন প্রযুক্তি বদলাচ্ছে, প্রতিদিন নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে,ফলে আগামী দিনগুলিতে নতুন সম্ভাবনার জন্ম দিচ্ছে, বদলাচ্ছে। আপনি প্রযুক্তিকে একজায়গায় ধরে রাখতে পারবেন না, যদি এক জায়গায় আটকে রাখতে চান, ততক্ষণে অন্য কোথাওনতুন প্রযুক্তি তৈরি হয়েছে। আপনাদের যদি এই পরিবর্তনের দৌড়ে পা মেলাতে হয়, পরিবর্তনের দৌড়ে এগিয়েথাকতে হবে। গবেষণা ও আবিষ্কার – যা প্রযুক্তির প্রাণ, সেদিকে নজর দিতে হবে। গবেষণাও আবিষ্কার যদি না হয়, তাহলে জমে থাকা জল যেমন দুর্গন্ধ ছড়ায়, তেমনি প্রযুক্তিওবোঝা হয়ে ওঠে। যদি আমরা গবেষণা ও আবিষ্কার বাদ দিয়ে পুরনো প্রযুক্তিকে আঁকড়ে ধরেথাকি, তাহলে আমরা এই বিশ্বের পরিবর্তনশীল যুগের বাইরে পড়ে থাকব। আর এজন্যই নতুনপ্রজন্ম বিজ্ঞানের প্রতি, প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য, গবেষণা ও আবিষ্কারের প্রতিযাতে আকৃষ্ট হয়, সেজন্য সরকার অনেক ব্যবস্থা নিয়েছে। তাই তো আমি বলি, ‘ Let us aim to innovate ’ – আসুন আমরা এগোই গবেষণারলক্ষ্যে। আর যখন আমি ‘ Let us aim to innovate ’ বলি, তখন AIM –এর মানে হল Atal Innovation Mission । নীতি আয়োগের মাধ্যমে Atal Innovation Mission –কে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। আমার আশা এই AIM –এর মাধ্যমে – Atal Innovation Mission -এর মাধ্যমে গোটা দেশে এক পরিকাঠামো তৈরি হবে। একইসঙ্গে আবিষ্কার,পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও শিল্পোদ্যোগের এক ধারাবাহিকতা চলুক, এতে নতুন নতুন কাজেরসম্ভাবনাও বাড়বে। আমাদের যদি পরবর্তী প্রজন্মকে উদ্যোগী করতে হয়, তাহলে আমাদেরছেলেদের এই কাজের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। আর এজন্য ভারত সরকার Atal Tinkering Labs তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে। যে সমস্ত স্কুলে এরকম Tinkering Lab তৈরি হবে, তাদের দশ লক্ষ করে টাকা দেওয়া হবে। আর পাঁচ বছরধরে তাকে ঠিকভাবে চালু রাখার জন্য আরও ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। আবিষ্কারের সঙ্গেসরাসরি সম্পর্কিত – IncubationCentre বা গবেষণার আঁতুড়ঘর। আমাদেরকাছে যদি শক্তিশালী এবং উন্নতমানের গবেষণাগার থাকে, তাহলে আবিষ্কারের জন্য, নতুনউদ্যোগের জন্য, তাকে কাজ লাগানোর জন্য, তাকে এক নিশ্চিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্যএক পরিকাঠামো তৈরি হয়। যেমন নতুন গবেষণাগার তৈরির প্রয়োজন আছে, তেমনই পুরনোগবেষণাগারকে উন্নত মানের করে তোলারও প্রয়োজন আছে। আর আমি যে ‘অটল ইনকিউবেশনেরসেন্টার’-এর কথা বলছি, তাকে দশ কোটি টাকার এক বড় আর্থিক অনুদান দেওয়ার লক্ষ্যেভাবনা-চিন্তা করছে ভারত সরকার। ভারত নানা সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছে। প্রতিদিনেরজীবনে এইসব সমস্যার প্রযুক্তিগত সমাধান খুঁজতে হবে। আমরা আজকের যুবপ্রজন্মকে ‘অটলগ্র্যাণ্ড চ্যালেঞ্জেস’-এর প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। যদি আপনাদের নজরে কোনো সমস্যাআসে, তার সমাধানের জন্য প্রযুক্তি খুঁজে বার করুন, গবেষণা করুন, আবিষ্কার করুন,আমাদের জানান। ভারত সরকার আমাদের সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য এই ধরনের নতুনপ্রযুক্তির সন্ধান দিতে পারলে উদ্ভাবনকারীকে বিশেষভাবে পুরস্কৃত করে উৎসাহ দিতেচায়। আমি আনন্দিত যে এব্যাপারে মানুষের যথেষ্ট আগ্রহ আছে। আমরা যখন ‘টিংকারিংল্যাব’-এর কথা বলি, তখন প্রায় তেরো হাজারেরও বেশি স্কুল আবেদন করেছিল। আর যখন আমরা‘ইনকিউবেশন সেন্টার’-এর কথা বলেছিলাম, তখন চার হাজারেরও বেশি শিক্ষাদানকারী ওঅন্যান্য প্রতিষ্ঠান আবেদন জানিয়েছিল। আমার বিশ্বাস আব্দুল কালাম-জীর প্রতিসত্যিকারের শ্রদ্ধাঞ্জলি হল গবেষণা ও আবিষ্কার। আমাদের নিত্যকার সমস্যা সমাধানেরজন্য প্রযুক্তির ব্যবহার, আমাদের সমস্যাসঙ্কুল জীবন থেকে মুক্তির জন্য – জীবনযাত্রাকেসহজ করার জন্য আমাদের নবীন প্রজন্ম যত কাজ করবে, তাদের অবদান একবিংশ শতকের আধুনিকভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। আর সেটাই হবে আব্দুল কালাম-জীরপ্রটি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছুদিন আগেই আমরা খরা নিয়েচিন্তাগ্রস্ত ছিলাম। এখন যেমন বর্ষার আনন্দ পাচ্ছি তেমনি বন্যারও খবর আসছে। রাজ্যসরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বন্যাকবলিত মানুষদের সাহায্যকরার জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্ষার জন্য কিছু সমস্যা তৈরি হলেও, বর্ষায়প্রতিটি মানুষের মন পুলকিত হয়ে ওঠে। কারণ আমাদের গোটা আর্থিক চিত্রেরকেন্দ্রবিন্দুতে আছে বর্ষা আর চাষাবাদ। কখনও কখনও এমন রোগ আসে যে আমাদের জীবনভোর আফশোষকরতে হয়। তবে, আমরা যদি সচেতন থাকি, সর্তক থাকি, রোগের মোকাবিলায় সচেষ্ট থাকি,তাহলে এর থকে বাঁচা সহজ। ডেঙ্গুর কথাই ধরুন, ডেঙ্গু থেকে বাঁচা সম্ভব। একটুপরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি মনোযোগী থাকার চেষ্টা করুন, একটু সতর্ক থাকুন,সুরক্ষিত থাকার চেষ্টা করুন। বাচ্চাদের প্রতি বিশেষভাবে মনোযোগ দিন আর এই যে ভুলধারণা আছে না যে ডেঙ্গু শুধু গরীব বস্তিতেই হয়, তা কিন্তু ঠিক নয়। সুখী, সমৃদ্ধএলাকাতেই সবচেয়ে আগে ডেঙ্গু ছড়ায়। এজন্য এটা বুঝুন। আপনারা দূরদর্শনে নিশ্চয়ইবিজ্ঞাপন দেখেন, তবুও কখনও কখনও আমরা তা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে উদাসীন হয়ে পড়ি।সরকার, হাসপাতাল, ডাক্তাররা তো নিজেদের কাজ করবেনই, কিন্তু আমাদেরও সর্তক থাকতেহবে যাতে আমাদের ঘরে, আমাদের এলাকায়, আমাদের পরিবারে ডেঙ্গু প্রবেশ করতে না পারেএবং জলবাহিত কোনো রোগ যেন না হয়। এটাই আমার আপনাদের কাছে প্রার্থনা।
আরেকসমস্যার প্রতি প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। জীবন এখন এতপ্রাণচঞ্চল, এত এর মধ্যে দৌড়-ঝাঁপ রয়েছে, তাই কখনো কখনো নিজের জন্য চিন্তা করার অবকাশহয় না। অসুস্থ হলাম তো মনে হয় তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাই, সেই জন্য যে কোন অ্যান্টিবায়োটিকখেয়ে ফেলি। সঙ্গে সঙ্গে রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, কিন্তু আমার প্রিয় দেশবাসী,এরকম কথায় কথায় অ্যাণ্টি-বায়োটিক খাওয়ার অভ্যেস গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।হতে পারে আপনি কিছু সময়ের জন্য আরাম পেলেন, কিন্তু আমাদের উচিত ডাক্তারদের পরামর্শছাড়া অ্যাণ্টি-বায়োটিক খাওয়া বন্ধ করা। ডাক্তার যতক্ষণ পর্যন্ত লিখে না দিচ্ছেন, ততক্ষণআমরা যেন এটা না খাই, এই শর্টকাট রাস্তা পরিত্যাগ করি, কারণ এর থেকে এক জটিলসমস্যার উদ্ভব হচ্ছে, অ্যাণ্টি-বায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে রোগী তো সঙ্গেসঙ্গে সুস্থ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু রোগের জীবানু এই সব
অ্যাণ্টি-বায়োটিকের কর্মক্ষমতাকে নষ্ট করে দিচ্ছে, তাই এই ঔষধগুলি ওইসবরোগজীবানুকে মারতে অক্ষম হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে নতুন ঔষধ আবিষ্কারকরে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বছরের পর বছর কেটে যায়, তখন এই সব রোগ নতুনসমস্যার সৃষ্টি করে, সেইজন্য অ্যাণ্টি-বায়োটিক ব্যবহারের প্রতি আমাদের সচেতনতারদরকার। আর একটি সমস্যা হলো, ডাক্তার হয়তো বললেন, এই অ্যান্টি-বায়োটিক পনেরোটা খেতেহবে পাঁচদিন ধরে, আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, ডাক্তারের কথা শুনে পুরো কোর্স ঔষধখান, আর্ধেক খাওয়ার পর ছেড়ে দেবেন না, তা না হলে এতে জীবানুদের সুবিধা হবে, আরদরকারের বেশি খেয়ে ফেললেও ওই সব জীবানুদের সুবিধা হয়ে যাবে। তাই যতদিনের জন্যযতগুলো ঔষধ দেওয়া হয়েছে, সেই কোর্সটা পুরো করাটা খুবই দরকারী, শরীর সুস্থ হয়েগেছে, তাই এখন আর দরকার নেই, এটা যদি আমরা করি, তাতে রোগের জীবানুদের সুবিধা হয়েযাবে, আর ওই সব জীবানু আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। যেসব জীবানু যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়াছড়ায় সেগুলি দ্রুত গতিতে নিজেদের মধ্যে এতটাই পরিবর্তন আনছে যাতে ঔষধের কর্মক্ষমতানষ্ট হয়ে যায়। ডাক্তারি ভাষায় একে ‘অ্যান্টি-বায়োটিক রেজিস্ট্যান্স’ বলে। সেইজন্যনিয়ম মেনে অ্যান্টি-বায়োটিকের ব্যবহার করা উচিত। সরকার ‘অ্যাণ্টি-বায়োটিকরেজিস্ট্যান্স’-কে বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর। আপনি হয়তো দেখেছেন, আজকালঅ্যাণ্টি-বায়োটিকের যে ঔষধ বিক্রি হয়, তার যে পাতা থাকে, তাতে একটা লাল লাইন এঁকেআপনাদের সাবধান করে দেওয়া হয়। আপনি এর প্রতি নিশ্চয়ই নজর দেবেন।
যখনস্বাস্থ্য সম্বন্ধীয় কথা হচ্ছে, আমি আরেকটি কথা এর সঙ্গে যোগ করতে চাই। আমাদেরদেশে যেসব গর্ভবতী মায়েরা আছেন, তাঁদের জীবনহানির চিন্তা কখনো কখনো খুব ভাবায়।আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় তিনকোটি মহিলা গর্ভবতী হন, কিন্তু কিছু মা সন্তানপ্রসবের সময় মারা যান, কখনো মা মারা যান, কখনো বা সন্তান, আবার কখনো মা ও সন্তানদুজনেই মারা যায়। এটা ঠিক যে গত এক দশকে মায়েদের প্রসবকালীন মৃত্যুর হার কমেছেকিন্তু তবুও আজও অনেক গর্ভবতী মায়েদের জীবন বাঁচানো সম্ভবপর হয় না। গর্ভাবস্থায় বাপরে রক্তাল্পতা, প্রসবের সময় সংক্রমণ, উচ্চ রক্তচাপ – কতরকমের অজানা সংকট কখন তাঁরজীবনকে নষ্ট করে দেবে কেউ জানে না। এই সব কথা মনে রেখে ভারত সরকার গত কিছু মাসথেকে এক নতুন অভিযান শুরু করেছে – ‘প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষিত মাতৃত্ব অভিযান’। এইঅভিযান অনুসারে প্রত্যেক মাসের নয় তারিখে সকল গর্ভবতী মহিলাদের সরকারীস্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনা খরচে পরীক্ষা করা যাবে। এক পয়সাও খরচ না করে সরকারীহাসপাতালে প্রত্যেক মাসের নয় তারিখে এই কাজকর্ম চলবে। আমি প্রত্যেক দরিদ্রপরিবারকে অনুরোধ করবো, সকল গর্ভবতী মায়েরা মাসের নয় তারিখে এই পরিষেবা গ্রহণ করুণ,যাতে নবম মাস পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে আগে থেকেই তারচিকিৎসা সম্ভব হবে। মা ও সন্তান – দুজনেরই প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে, আর আমি স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ–দেরবিশেষ ভাবে বলতে চাই, আপনারা কি মাসের একদিন, নয় তারিখ দরিদ্র মায়েদের বিনা পয়সায়চিকিৎসা করতে পারেন না! আমার ডাক্তার ভাই-বোনেরা কি বছরে বারো দিন দরিদ্রদের এইকাজের জন্য নিজেদের নিয়োজিত করতে পারেন না? বিগত দিনে আমাকে অনেক ডাক্তাররা চিঠিলিখেছেন, হাজার হাজার ডাক্তাররা আমার কথামতো এগিয়ে এসেছেন, কিন্তু ভারতবর্ষ এত বড়একটা দেশ, লক্ষ লক্ষ ডাক্তারদের এই অভিযানে সামিল হতে হবে। আমার বিশ্বাস, আপনিঅবশ্যই সামিল হবেন।
আমারপ্রিয় দেশবাসী, আজ সমগ্র পৃথিবী ঋতু পরিবর্তন, বিশ্ব উষ্ণায়ণ, পরিবেশ নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তাগ্রস্ত। দেশ-বিদেশে সামগ্রিকভাবে এর আলোচনা হচ্ছে। আদিকাল থেকে ভারতেএই বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় যুদ্ধক্ষেত্রেও ভগবানশ্রীকৃষ্ণ গাছেদের কথা বলেছেন, যুদ্ধক্ষেত্রেও গাছেদের কথা চিন্তা করার মাহাত্ম্যযে কতখানি, আমরা সেটা নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারি। গীতাতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন –‘অশ্বত্থ: সর্ববৃক্ষানাং’ অর্থাৎ সকল বৃক্ষের মধ্যে আমি অশ্বত্থ। শুক্রাচার্যনীতিতে বলা হয়েছে, ‘নাস্তি মূলং অনৌষধং’ – এরকম কোনও গাছ নেই যার ঔষধি গুণ নেই।মহাভারতের অনুশাসন পর্বে বিস্তৃতভাবে এর আলোচনা রয়েছে, এতে লেখা রয়েছে যে গাছলাগায়, তাঁর কাছে গাছ সন্তানসম, এতে কোনো সংশয় নেই। যে গাছ দান করে, তাঁকে ওই গাছসন্তানের মতো পরলোকেও পার করে দেয়। সেই জন্য যেসব মাতা-পিতা নিজেদের কল্যাণের কথাভাবেন, ভালো ভালো গাছ লাগিয়ে সন্তানের মতো লালন-পালন করুন। আমাদের শাস্ত্র – গীতাহোক, শুক্রাচার্য নীতি হোক বা মহাভারতের অনুশাসন পর্ব – বর্তমান প্রজন্মের কিছুমানুষ রয়েছেন, যাঁরা শাস্ত্রের এই দর্শনকে নিজেদের কর্মে করে দেখিয়েছেন। কিছুদিনআগে পুনের এক মেয়ে সোনাল-এর উদাহরণ আমার মনে আসছে – ও আমার হৃদয়কে স্পর্শ করেছে।মহাভারতের অনুশাসন পর্বে বলা হয়েছে – গাছ পরলোকেও সন্তানের কর্তব্য পালন করে।সোনাল কেবলমাত্র নিজেদের মাতা-পিতার দায়িত্ব ছাড়াও সমাজের চাহিদা পূর্ণ করতে এরকমকঠিন কাজ করেছেন। মহারাষ্ট্র রাজ্যের পুনের জুন্নর তালুকের নারায়ণপুর গ্রামের কৃষকখণ্ডু মারুতি মহাত্রে নিজের নাতনি সোনালের বিয়ে এক দৃষ্টান্তমূলক পদ্ধতিতেকরিয়েছেন। মহাত্রেজী সোনালের বিয়েতে যত কুটুম, বন্ধু-বান্ধব, অতিথি এসেছিলেন,সবাইকে কেসর আমের চারা উপহারস্বরূপ দান করেছেন। যখন আমি সোশ্যাল মিডিয়াতে এর ছবিদেখলাম, আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম – বিয়েতে বরযাত্রী দেখা যাচ্ছে না, চারদিকে শুধুগাছের চারা দেখা যাচ্ছিল। হৃদয়স্পর্শী দৃশ্য এই ছবিগুলোর মধ্যে ছিল। সোনাল নিজেই এগ্রিকালচারালগ্র্যাজুয়েট, এই বুদ্ধি ওই দিয়েছিল, বিয়েতে আমের চারা উপহার দেওয়া, দেখুন,প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা কত সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। একদিক থেকে সোনালের বিয়েপ্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার এক অমরগাথা হয়ে রইলো। আমি সোনাল আর শ্রীমান মোহাত্রেজী-কেএই অভিনব প্রয়াসের জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই। আর এরকম দৃষ্টান্ত অনেকেইরেখেছেন। আমার মনে আছে, আমি যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, ওখানে অম্বাজীরমন্দিরে ভাদ্র মাসে অনেক পুণ্যার্থী আসেন, একবার এক সমাজসেবী সংস্থা ঠিক করলমন্দিরে যেসব পুণ্যার্থী আসবেন, তাঁদের প্রসাদে গাছের চারা দেবেন আর তাঁদেরকেবলবেন, দেখুন, এটা মাতাজীর প্রসাদ, এই গাছের চারাকে নিজেদের গ্রামে-ঘরে গিয়েলাগিয়ে বড় করুন, মাতা আপনাদের আশীর্বাদ দিতে থাকবেন। গাছের যত্ন আপনারা নিন। লক্ষলক্ষ পুণ্যার্থী এসেছিলেন, লক্ষ লক্ষ গাছের চারা বণ্টন করা হয়েছিল সেই বছর।অন্যান্য মন্দিরও এই বর্ষাতে প্রসাদের পরিবর্তে গাছের চারা বিলি করার পরম্পরা শুরুকরতে পারেন। গাছ লাগানোর এক জন-আন্দোলন সহজ ভাবে তৈরি হতে পারে। আমি কৃষক ভাইদেরবারবার বলি, আমাদের খেতের ধারে যে আল দিয়ে জমি নষ্ট করি, তার পরিবর্তে কেন আমরা বড়,লম্বা গাছের চারা লাগাই না! বর্তমানে ভারতবর্ষে ঘর বানানোর জন্য, আসবাবপত্রবানানোর জন্য কোটি কোটি টাকার কাঠের গুঁড়ি বিদেশ থেকে আমদানী করতে হয়। যদি আমরাআমাদের খেতের ধারে এরকম গাছের চারা লাগাই, যেগুলো আসবাবপত্রে ও ঘর বানাতে কাজেলাগবে, তাহলে ১৫-২০ বছর পরে সরকারী অনুমতি নিয়ে ওদের কেটে বিক্রিও করতে পারেন আপনি।এটা আপনার আয়ের এক নতুন উৎস হতে পারে, আর ভারতবর্ষকে কাঠ আমদানি থেকে বাঁচাতেওপারেন। বিগত দিনে অনেক রাজ্য এই বর্ষা ঋতুর সুবিধা নিয়ে অনেক অভিযান চালিয়েছে,ভারত সরকারও এক CAMPA আইন সম্প্রতি পাশ করেছে, এইআইনের মাধ্যমে প্রায় চল্লিশ হাজার কোটিরও বেশি টাকা রাজ্যগুলিকে বৃক্ষরোপণের জন্যবিলি করা হচ্ছে। আমাকে বলা হয়েছে যে, মহারাষ্ট্র সরকার পয়লা জুলাই সমগ্র রাজ্যেরপ্রায় ২ কোটি ২৫ লক্ষ গাছের চারা লাগিয়েছে, আর আগামী বছর ওরা তিন কোটি চারালাগানোর লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে। সরকার এক জন-আন্দোলন শুরু করে দিয়েছে। রাজস্থানএক মরুভূমি-র রাজ্য – এতবড় বন-মহোৎসব পালন করেছে এবং পঁচিশ লক্ষ চারা লাগানোরসংকল্প নিয়েছে। রাজস্থানে পঁচিশ লাখ চারাগাছ লাগানো ছোটোখাটো ব্যাপার নয়। যাঁরারাজস্থানের মাটির সঙ্গে পরিচিত তাঁরাই বুঝতে পারবেন কত কঠিন কাজ। অন্ধ্রপ্রদেশও২০২৯ সালের মধ্যে রাজ্যের সবুজায়ন ৫০ শতাংশে বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। কেন্দ্রসরকার যে ‘গ্রীন ইণ্ডিয়া মিশন’ চালাচ্ছে, সেই যোজনার মাধ্যমে রেলকর্তৃপক্ষ সবুজায়নকরছে। গুজরাতেও বন-মহোৎসবের এক উজ্জ্বল ধারাবাহিকতা আছে। এবছর গুজরাত ‘আমবন’, ‘একতাবন’, ‘শহীদ বন’ নামক অনেক প্রকল্পকে বন-মহোৎসব হিসাবে পালন করেছে এবং কোটি কোটিগাছ লাগানোর অভিযান চালিয়েছে। আমি সমস্ত রাজ্যের কথা উল্লেখ করতে পারছি না কিন্তুসবাই প্রশংসার যোগ্য।
আমারপ্রিয় দেশবাসী, কিছুদিন আগে আমার দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। এটা আমারপ্রথম যাত্রা, এবং যখনই বিদেশ যাত্রা হয়, তখনই কূটনীতির কথা হয়, শিল্প-বাণিজ্যনিয়ে কথা হয়, সুরক্ষা নিয়ে আলোচনা হয়, কখনো ‘মউ’ সাক্ষরিত হয় – এই সবকিছুই তো হওয়াচাই। কিন্তু আমার কাছে দক্ষিণ আফ্রিকা যাত্রা একরকম তীর্থযাত্রা ছিল। যখনই দক্ষিণআফ্রিকার কথা মনে করা হয়, মহাত্মা গান্ধী এবং নেলসন ম্যাণ্ডেলার কথা মনে আসা খুবইস্বাভাবিক। যখনই এই পৃথিবীতে অহিংসা, প্রেম, ক্ষমা ইত্যাদি শব্দগুলি কানে আসে,তখনই তাঁদের চেহারা আমাদের চোখের সামনে ফুটে ওঠে। আমি আমার দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণেরসময় Phoenix Settlement -এ গিয়েছিলাম, যা মহাত্মাগান্ধীর বাসস্থান ‘সর্বোদয়’ নামে পরিচিত। যে ট্রেনে মহাত্মা গান্ধী সফর করেছিলেন,যে ট্রেনের ঘটনায় জনৈক মোহনদাসকে মহাত্মা গান্ধীতে পরিণত করার বীজবপন হয়েছিল, আমারসৌভাগ্য হয়েছিল সেই পিটারমারিৎসবুর্গ স্টেশন থেকে সেই ট্রেনে সফর করার, কিন্তু আমিযে কথা বলতে চাইছি, তা হল, এবার আমার সেই মহান মানুষদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগহয়েছিল যাঁরা নিজেদের জীবন নিয়োজিত করেছেন সকলের সমানাধিকারের জন্য, সকলের সমানসুযোগের জন্য। নেলসন ম্যাণ্ডেলার সঙ্গে একসঙ্গে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে লড়াই করেছেন,কুড়ি-বাইশ বছর ধরে জেলে নেলসন ম্যাণ্ডেলার সঙ্গে জীবন কাটিয়েছেন, একরকম নিজেদেরপুরো যৌবনই তাঁরা আহুতি দিয়েছেন। পুরো যৌবনকাল-কেই তাঁরা সমর্পণ করেছেন। নেলসনম্যাণ্ডেলার ঘনিষ্ঠ সঙ্গী আহমেদ কথাড়া, লালু চিবা, জর্জ বিজোস, রনি কাসরিল্সেরমতো মহান ব্যক্তিদের দর্শন করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। এঁরা আদতে ভারতীয়, কিন্তুসেখানে গিয়ে সেখানকারই হয়ে গেছেন। যাঁদের মধ্যে থেকেছেন, তাঁদের জন্য জীবন উৎসর্গকরতে প্রস্তুত হয়েছেন। আমি যখন তাঁদের সঙ্গে কথা বলছিলাম, তাঁদের বন্দীজীবনেরঅভিজ্ঞতার কথা শুনছিলাম, তাঁদের কথার মধ্যে কোনওরকম কটুতা বা বিরূপতা ছিল না। এটাকতবড় শক্তির কথা। এতবড় তপস্যা করার পরও তাঁদের চেহারায় কিছু নেবার, কিছু পাওয়ার বাকিছু হওয়ার কোন চাহিদার প্রকাশ চোখে পড়েনি। গীতাতে যে কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে,তার সাক্ষাৎ রূপ যেন আমি তাঁদের মধ্যে দেখতে পাচ্ছিলাম। সেই সাক্ষাৎকারটি আমারচিরদিন মনে থাকবে। কোনও সমাজের বা কোনও সরকারের জন্যই সাম্য এবং সমান সুযোগের এরচেয়ে বড় কোনও মন্ত্র হতে পারে না। সকলকে সমান ভাবা এবং সকলকে আপন ভাবার এটাই তো পথযা আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যায়। আমরা সুন্দর জীবন চাই, বাচ্চাদের ভালোভবিষ্যৎ চাই – প্রত্যেকের প্রয়োজন আলাদা আলাদা। ‘ Priority ’ আলাদা আলাদা হতে পারে, কিন্তু পথ একটাই, আর সেই পথ হলউন্নয়ন, সাম্য, সমান সুযোগ, সকলকে সমান ভাবা এবং সকলকে নিজের ভাবা। আসুন, আমরা সেইভারতীয়দের জন্য গর্ব অনুভব করি, যাঁরা দক্ষিণ আফ্রিকাতেও আমাদের জীবনের মূলমন্ত্রকে সম্বল করে জীবনযাপন করে দেখিয়েছেন।
আমারপ্রিয় দেশবাসী, আমি শিল্পী বর্মার প্রতি কৃতজ্ঞ, উনি আমাকে একটি ঘটনার কথাজানিয়েছেন। “…প্রধানমন্ত্রীজী, আমি ব্যাঙ্গালোর থেকে শিল্পী বর্মা বলছি। কিছুদিনআগে আমি সংবাদপত্রের এক নিবন্ধে পড়েছি যে এক ভদ্রমহিলা ভুয়ো এবং প্রতারণামূলকই-মেলে প্রতারিত হয়ে এগারো লক্ষ টাকা হারিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। একজন মহিলা হিসেবেতাঁর পরিবারের জন্য আমার যথেষ্ট সমবেদনা আছে। আমি জানতে চাই, এই প্রতারণামূলক এবংভুয়ো ই-মেলের সম্পর্কে আপনারা কী ভাবছেন।”
এটাতোআপনারা সকলেই জানেন, আমাদের মোবাইল ফোনে, ই-মেইলে কখনও কখনও খুব লোভনীয় মেসেজ আসে –“আপনি এত টাকার পুরস্কার জিতেছেন। এত টাকা দিয়ে পুরস্কার নিয়ে নিন।” কিছু মানুষভুল করে টাকার মোহে ফেঁসে যান। প্রযুক্তির মাধ্যমে চৌর্যবৃত্তির এ এক নতুন উপায়,যা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রযুক্তি একদিকে যেমন আর্থিক উন্নয়নে এক বড় ভূমিকানিয়েছে, তেমনি অন্যদিকে তার অপব্যবহার করার লোকও মাঠে নেমে পড়েছে। একজনঅবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি, যাঁর মেয়ের বিয়ে দেওয়া বাকি এবং বাড়িও তৈরি করতে হবে, তাঁরকাছে এই মর্মে একটি এস.এম.এস. আসে যে, বিদেশ থেকে ওঁর জন্য একটি মূল্যবান উপহারএসেছে, যেটা পেতে গেলে কাস্টমস্ ডিউটি বাবদ একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে তাঁকে দুইলক্ষ টাকা জমা করতে হবে। এই ভদ্রলোক কোন চিন্তা-ভাবনা না করেই শুধু একটিএস.এম.এস-এর ভরসায় সারা জীবনের পরিশ্রমের উপার্জন দু’লাখ টাকা একটি অপরিচিতমানুষকে পাঠিয়ে দিলেন। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি বুঝতে পারেন যে তাঁর সবকিছু লুঠহয়ে গেছে। আপনারাও কোনও কোনও সময়ে ভুল করে ফেলেন, কারণ ওরা এত সুন্দর করে আপনাদেরচিঠি লেখে যে মনে হয় যেন একেবারে আসল। কোনও একটা নকল লেটার প্যাড বানিয়ে পাঠিয়েদিয়ে আপনার ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ডের নম্বর জেনে নেয় এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনারব্যাঙ্কের খাতা খালি হয়ে যায়। এ হল নতুন রকমের ধোঁকাবাজি, ডিজিটাল-ধোঁকাবাজি।এধরনের মোহ থেকে দূরে থাকতে হবে, সজাগ থাকতে হবে, আর এরকম কোনও মিথ্যে মেসেজ এলেনিজেদের বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে তা শেয়ার করে তাঁদেরও সতর্ক করে দিতে হবে। শিল্পীবর্মা একটা জরুরি কথা আমার গোচরে এনেছেন। বিষয়টা আপনারা সবাই বোঝেন, কিন্তু হয়তঅতটা গভীরতা দিয়ে দেখেন না। কিন্তু আমার মনে হয়, দেখার দরকার আছে।
আমারপ্রিয় দেশবাসী, এখন সংসদের অধিবেশন চলছে। এই অধিবেশন চলাকালীন দেশের বহু মানুষের সঙ্গেআমার মিলিত হওয়ার সুযোগ হয়। আমাদের সাংসদরাও নিজের নিজের এলাকা থেকে লোককে নিয়েআসেন, আমার সঙ্গে দেখা করান, কথাবার্তা হয়, তাঁরা তাঁদের অসুবিধার কথাও বলেন।কিন্তু সম্প্রতি আমার এক ভালো অভিজ্ঞতা হল। আলিগড়ের কিছু ছাত্র আমার কাছেএসেছিলেন। আলিগড়ের সাংসদ তাঁদের নিয়ে এসেছিলেন, ছেলে-মেয়েগুলির উৎসাহ ছিল দেখারমতো। ওঁরা একটা বেশ বড় অ্যালবাম নিয়ে এসেছিলেন আমাকে তার থেকে ছবি দেখালেন। তাঁরাআলিগড় রেলস্টশনের সৌন্দর্যীকরণ করেছেন। স্টেশনে চমৎকার ছবি এঁকেছেন। শুধু এ-ই নয়,গ্রামে যত প্লাস্টিকের বোতল কিংবা তেলের ক্যানের মতো আবর্জনা পড়ে ছিল, তা খুঁজেখুঁজে জড়ো করে মাটি ভরে গাছ লাগিয়ে ‘ভার্টিক্যাল গার্ডেন’ বানিয়েছেন। এইভাবে তাঁরারেলস্টেশনটিকে সম্পূর্ণ নতুন এক রূপ দিয়েছেন। আপনারা কখনও আলিগড় গেলে স্টেশনটিনিশ্চয়ই দেখবেন। ভারতের বেশ কিছু রেলস্টেশন থেকে ইদানিং আমি এইরকম খবর পাচ্ছি।স্থানীয় মানুষজন তাঁদের রেলস্টেশনগুলির দেওয়ালকে চিত্রকলায় সাজিয়ে নিজেদের এলাকারস্বতন্ত্র পরিচয় রাখছেন। একটি নতুনত্বের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। জনসাধারণের অংশগ্রহণেকীরকম পরিবর্তন আনা যায়, এটা তারই উদাহরণ। দেশে এরকম কাজ যাঁরা করছেন, তাঁদেরধন্যবাদ, বিশেষ করে ধন্যবাদ আমার আলিগড়ের সাথীদের।
আমারপ্রিয় দেশবাসী, বর্ষা এলেই আমাদের দেশে উৎসবের মরশুম শুরু হয়ে যায়। আগামীদিনগুলিতে বিভিন্ন জায়গায় মেলার আয়োজন হবে। মন্দিরে, আরাধনাস্থলে উৎসব পালিত হবে,আর আপনারাও ঘরে-বাইরে উৎসবে মেতে উঠবেন। রাখীবন্ধন আমাদের এক গুরুত্বপূর্ণ উৎসব।গতবছরের মত এবছরেও কি আপনারা রাখীবন্ধন উপলক্ষে দেশের মা-বোনেদের ‘প্রধানমন্ত্রীসুরক্ষা বীমা যোজনা’ বা ‘জীবন-জ্যোতি বীমা যোজনা’ উপহার দিতে পারেন না? ভাবুন,বোনকে এমন কোন উপহার দিন, যা তার জীবনকে সত্যি সত্যি সুরক্ষা দেবে। শুধু এ-ই নয়,আমাদের বাড়িতে যে মহিলা রান্না করেন, যে মহিলা বাড়ি পরিষ্কার করেন বা পরিচিত কোনওগরীব মায়ের মেয়েকে এই রাখীবন্ধন উৎসবে আপনি ‘সুরক্ষা বীমা যোজনা’ বা ‘জীবনজ্যোতিবীমা যোজনা’ উপহার দিতে পারেন। আর এটাই তো যথার্থ সামাজিক সুরক্ষা, রাখীবন্ধনেরসঠিক অর্থই তো এই।
আমারপ্রিয় দেশবাসী, আমাদের মধ্যে বহু মানুষ আছেন, যাঁদের জন্ম হয়েছে স্বাধীনতার পরে।আমি দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যে স্বাধীন ভারতবর্ষে জন্মেছে। ৮-ই আগস্ট ‘ভারতছাড়ো’ আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, এবছর তার ৭৫ বছর হচ্ছে। আর ১৫-ই আগস্ট স্বাধীনতার৭০ বছর হতে চলেছে। আমরা স্বাধীনতার আনন্দ উপভোগ করছি, স্বাধীন নাগরিক হওয়ার গর্বওঅনুভব করছি – এই স্বাধীনতা যাঁরা এনেছিলেন, সেই সব মানুষদের স্মরণ করার এটাই তোসময়। ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের ৭৫ বছর এবং স্বাধীনতার ৭০ বছর আমাদের নতুন প্রেরণাদিতে পারে, নতুন উৎসাহ যোগাতে পারে, এবং দেশের জন্য ভালো কিছু করার সংকল্প নেওয়ারউপযুক্ত সময় হয়ে উঠতে পারে। আসুন, আমরা এমন এক পরিবেশ তৈরি করি, যাতে স্বাধীনতাসংগ্রামীদের সংগ্রামের রঙ গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ে, স্বাধীনতার সুবাস চারদিকে অনুভূতহয়। স্বাধীনতার এই উৎসব কোনও সরকারি অনুষ্ঠান নয়, দীপাবলির মত এটিও দেশবাসীরনিজস্ব উৎসব হওয়া উচিত। আমার আশা, আপনারাও স্বদেশপ্রেমের প্রেরণায় কিছু না কিছুভালো কাজ করবেন। ‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এ তার ছবি অবশ্যই পাঠান। দেশে একটাদেশভক্তির পরিবেশ গড়ে তুলুন।
প্রিয়দেশবাসী, ১৫ আগস্ট লালকেল্লার প্রাকার থেকে আমার গোটা দেশের সঙ্গে কথা বলারসৌভাগ্য হয়। এটি একটি পরম্পরা। আপনাদের মনেও হয়ত এমন কিছু কথা থাকতে পারে, যাআপনারা চান লালকেল্লার ওই প্রাকার থেকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে পেশ করা হোক। আমিআপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, আপনাদের মনে যে ভাবনা আসছে, যেটা আপনারা মনে করেনআপনাদের প্রতিনিধি হিসেবে, আপনাদের প্রধান সেবক হিসেবে আমার লালকেল্লা থেকে বলাদরকার, সেটা আমাকে অবশ্যই লিখে পাঠান, মতামত দিন, পরামর্শ দিন, নতুন চিন্তাভাবনানিয়ে আসুন। আমি আপনাদের কথা দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দিতে সচেষ্ট হবো। আমি চাইনা যেলালকেল্লার প্রাকার থেকে যেকথা বলা হবে, তা কেবল প্রধানমন্ত্রীর কথাই হবে, উপরন্তুদেশের ১২৫ কোটি জনসাধারণের কথাই বলা হবে। আপনারা আমাকে অবশ্যই কিছু লিখে পাঠান।‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এ বা mygov.in –এ পাঠাতে পারেন। আর আজকালতো প্রযুক্তি এত সুলভ হয়ে গেছে যে আপনারা স্বচ্ছন্দেই যে কোন জিনিস আমার কাছেপৌঁছে দিতে পারেন। আমি আপনাদের আমন্ত্রণ জানাই – আসুন, স্বাধীনতাসংগ্রামীদের পুণ্যজীবনকে স্মরণ করি। ভারতের জন্য যাঁরা জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেইসব মহাপুরুষদের স্মরণকরি এবং দেশের জন্য কিছু করার সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাই, অনেক অনেক শুভেচ্ছা। অনেকঅনেক ধন্যবাদ!
আমারপ্রিয় দেশবাসী, নমস্কার! আজ সকাল-সকাল দিল্লির তরুণ বন্ধুদের সঙ্গে কিছু সময়কাটানোর সুযোগ আমার হয়েছিল। আমার বিশ্বাস আগামী দিনগুলিতে পুরো দেশজুড়ে ছড়িয়ে যাবেখেলা নিয়ে প্রতিটি তরুণের উ ৎসাহ-উদ্দীপনার বাতাবরণ। আমরা সবাইজানি কিছুদিনের মধ্যেই বিশ্ব-খেলাধুলোর ক্ষেত্রে সবথেকে বড় ক্রীড়ার মহাকুম্ভ আয়োজিতহতে চলেছে। বারবার আমাদের কানে প্রতিধ্বনিত হবে ‘রিও’। সারা বিশ্ব খেলবে, পৃথিবীরপ্রতিটি দেশ নিজ নিজ খেলোয়াড়দের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখবে, আপনারাও রাখবেন। আমাদেরআশা-প্রত্যাশা তো অনেক, কিন্তু রিওতে খেলার জন্য যাঁরা গেছেন, সেইসব খেলোয়াড়দের উৎসাহকেআরও জোরদার করার কাজ ১২৫ কোটি দেশবাসীর। আজ দিল্লিতে ভারত সরকার ‘ Run for Rio ’,‘খেলো আর বাঁচো, খেলো আর প্রস্ফুটিত হও’ শীর্ষক এক বিশাল এবং সুন্দর দৌড়ের আয়োজনকরেছে। আমিও আগামী দিনে যেখানেই থাকি না কেন, আমাদের খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করারজন্য কিছু না কিছু করব। যে সমস্ত খেলোয়াড় এই পর্যায়ে এসে পৌঁছন তাঁরা অনেক কঠিনপরিশ্রমের পরই এই জায়গায় এসে পৌঁছন। এক রকম কঠোর সাধনা করেন তাঁরা। খাওয়া-দাওয়ারযত শখই থাকুক না কেন, সবকিছু ছেড়ে দিতে হয়। শীতের সময় ঘুমোনোর ইচ্ছে করলেও, বিছানাছেড়ে মাঠে দৌড়তে হয়। আর শুধু খেলোয়াড়ই তো নয়, তাঁর মা-বাবাও ততটাই মনোযোগ সহকারেনিজের ছেলের জন্য মেহনত করেন। রাতারাতি কেউ খেলোয়োড় হয়ে যায় না। এক কঠিন সাধনার পরখেলোয়োড় হয়ে ওঠেন। হার-জিত নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সেইসঙ্গে এই প্রতিযোগিতারস্তর পর্যন্ত পৌঁছনো তার চেয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এজন্যই সব দেশবাসীর উচিত রিওঅলিম্পিকে আমাদের যেসমস্ত খেলোয়োড়রা গেছেন তাঁদের শুভকামনা জানানো। আমাদের হয়ে এইকাজ করার জন্য আমি তৈরি। আপনাদের শুভেচ্ছাবার্তা এইসব খেলোয়োড়দের কাছে পৌঁছনোরজন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী ডাকপিওন হতে প্রস্তুত। আপনারা আমাকে ‘নরেন্দ্রমোদীঅ্যাপ’–এ খেলোয়োড়দের নামে শুভেচ্ছা পাঠান, আমি সেই শুভেচ্ছাবার্তা তাঁদের কাছেপৌঁছে দেব। আমিও ১২৫ কোটি দেশবাসীর মত এক দেশবাসী, এক নাগরিক হিসাবে আমাদের এই সবখেলোয়োড়দের উৎসাহ বাড়ানোর জন্য আপনাদের সঙ্গে থাকব। আসুন, আমরা সবাই আগামীদিনগুলিতে এক-একজন খেলোয়োড়কে যতটা গৌরবান্বিত করা সম্ভব তাঁদের প্রচেষ্টাকেপুরস্কৃত করা সম্ভব, করি। আমি আজ যখন রিও অলিম্পিকের কথা বলছি, তখন এক কবিতা-প্রেমিক– পঞ্জাব কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুরজপ্রকাশ উপাধ্যায় একটি কবিতাপাঠিয়েছেন। হতে পারে, আরো অনেক কবি আছেন যাঁরা অনেক কবিতা লিখেছেন, হয়ত কবিতা লিখেকেউ কেউ তা আবৃত্তি করবেন, প্রতিটি ভাষাতে করবেন, তবে আমাকে সূরজজী যে কবিতাটাপাঠিয়েছেন আমি তা আপনাদের সঙ্গে উপভোগ করতে চাই।
উঠলখেলার আওয়াজ
উঠলখেলার আওয়াজ,
প্রতিযোগিতারবর্ণালী মেজাজ
খেলারএই মহাকুম্ভে, রিও-র শব্দ ঝংকারে
খেলারএই মহাকুম্ভে, রিও-র শব্দ ঝংকারে।
ভারতেরএক শুভ সূচনা হোক।
ভারতেরএক শুভ সূচনা হোক
সোনারুপো, এবং ব্রোঞ্জের বর্ষণ হোক।
ভারতেরএক শুভ সূচনা হোক
সোনা,রুপো এবং ব্রোঞ্জের বর্ষণ হোক।
এবারআমাদের জয় হোক, এমনই প্রস্তুতি হোক।
লক্ষ্যথাকুক সোনাতে
লক্ষ্যথাকুক সোনাতে
নিরাশহয়ো না হারেতে
নিরাশহয়ো না হারেতে।
কোটিমনের গর্ব তোমরা
খেলাতেআমাদের প্রাণ তোমরা।
কোটিমনের গর্ব তোমরা
খেলাতেআমাদের প্রাণ তোমরা।
তোমাদেরকীর্তির নিশানায়
রিওতেউড়ুক বিজয় নিশান
রিওতেউড়ুক বিজয় নিশান।
সূরজ-জী, আপনার এই অনুভব আমি সব খেলোয়োড়দের প্রতি অর্পণকরছি, আর আমার তরফে, ১২৫ কোটি দেশবাসীর তরফে রিও-তে ভারতবর্ষের পতাকা উড্ডীন করারজন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাতে চাই।
এক যুবক, শ্রীমান অঙ্কিত, আমাকেরাষ্ট্রপতি আব্দুল কালাম-জীর মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। গত সপ্তাহেআব্দুল কালাম-জীর প্রয়াণ দিবসে দেশ এবং বিশ্ব শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছে। যখনই আব্দুলকালাম-জীর নাম করা হয়, তখনই বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ক্ষেপনাস্ত্র – ভবিষ্যতের একশক্তিশালী ভারতের ছবি আমাদের চোখের সামনে ভেসেওঠে। আর এজন্য অঙ্কিত লিখেছেন যে আপনার সরকার আব্দুল কালাম-জীর স্বপ্নকে সার্থককরার জন্য কি করছে? আপনার কথা ঠিক। আগামী দিন প্রযুক্তিনির্ভর, আর প্রযুক্তি সততপরিবর্তনশীল। প্রতিদিন প্রযুক্তি বদলাচ্ছে, প্রতিদিন নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে,ফলে আগামী দিনগুলিতে নতুন সম্ভাবনার জন্ম দিচ্ছে, বদলাচ্ছে। আপনি প্রযুক্তিকে একজায়গায় ধরে রাখতে পারবেন না, যদি এক জায়গায় আটকে রাখতে চান, ততক্ষণে অন্য কোথাওনতুন প্রযুক্তি তৈরি হয়েছে। আপনাদের যদি এই পরিবর্তনের দৌড়ে পা মেলাতে হয়, পরিবর্তনের দৌড়ে এগিয়েথাকতে হবে। গবেষণা ও আবিষ্কার – যা প্রযুক্তির প্রাণ, সেদিকে নজর দিতে হবে। গবেষণাও আবিষ্কার যদি না হয়, তাহলে জমে থাকা জল যেমন দুর্গন্ধ ছড়ায়, তেমনি প্রযুক্তিওবোঝা হয়ে ওঠে। যদি আমরা গবেষণা ও আবিষ্কার বাদ দিয়ে পুরনো প্রযুক্তিকে আঁকড়ে ধরেথাকি, তাহলে আমরা এই বিশ্বের পরিবর্তনশীল যুগের বাইরে পড়ে থাকব। আর এজন্যই নতুনপ্রজন্ম বিজ্ঞানের প্রতি, প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য, গবেষণা ও আবিষ্কারের প্রতিযাতে আকৃষ্ট হয়, সেজন্য সরকার অনেক ব্যবস্থা নিয়েছে। তাই তো আমি বলি, ‘ Let us aim to innovate ’ – আসুন আমরা এগোই গবেষণারলক্ষ্যে। আর যখন আমি ‘ Let us aim to innovate ’ বলি, তখন AIM –এর মানে হল Atal Innovation Mission । নীতি আয়োগের মাধ্যমে Atal Innovation Mission –কে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। আমার আশা এই AIM –এর মাধ্যমে – Atal Innovation Mission -এর মাধ্যমে গোটা দেশে এক পরিকাঠামো তৈরি হবে। একইসঙ্গে আবিষ্কার,পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও শিল্পোদ্যোগের এক ধারাবাহিকতা চলুক, এতে নতুন নতুন কাজেরসম্ভাবনাও বাড়বে। আমাদের যদি পরবর্তী প্রজন্মকে উদ্যোগী করতে হয়, তাহলে আমাদেরছেলেদের এই কাজের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। আর এজন্য ভারত সরকার Atal Tinkering Labs তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে। যে সমস্ত স্কুলে এরকম Tinkering Lab তৈরি হবে, তাদের দশ লক্ষ করে টাকা দেওয়া হবে। আর পাঁচ বছরধরে তাকে ঠিকভাবে চালু রাখার জন্য আরও ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। আবিষ্কারের সঙ্গেসরাসরি সম্পর্কিত – IncubationCentre বা গবেষণার আঁতুড়ঘর। আমাদেরকাছে যদি শক্তিশালী এবং উন্নতমানের গবেষণাগার থাকে, তাহলে আবিষ্কারের জন্য, নতুনউদ্যোগের জন্য, তাকে কাজ লাগানোর জন্য, তাকে এক নিশ্চিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্যএক পরিকাঠামো তৈরি হয়। যেমন নতুন গবেষণাগার তৈরির প্রয়োজন আছে, তেমনই পুরনোগবেষণাগারকে উন্নত মানের করে তোলারও প্রয়োজন আছে। আর আমি যে ‘অটল ইনকিউবেশনেরসেন্টার’-এর কথা বলছি, তাকে দশ কোটি টাকার এক বড় আর্থিক অনুদান দেওয়ার লক্ষ্যেভাবনা-চিন্তা করছে ভারত সরকার। ভারত নানা সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছে। প্রতিদিনেরজীবনে এইসব সমস্যার প্রযুক্তিগত সমাধান খুঁজতে হবে। আমরা আজকের যুবপ্রজন্মকে ‘অটলগ্র্যাণ্ড চ্যালেঞ্জেস’-এর প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। যদি আপনাদের নজরে কোনো সমস্যাআসে, তার সমাধানের জন্য প্রযুক্তি খুঁজে বার করুন, গবেষণা করুন, আবিষ্কার করুন,আমাদের জানান। ভারত সরকার আমাদের সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য এই ধরনের নতুনপ্রযুক্তির সন্ধান দিতে পারলে উদ্ভাবনকারীকে বিশেষভাবে পুরস্কৃত করে উৎসাহ দিতেচায়। আমি আনন্দিত যে এব্যাপারে মানুষের যথেষ্ট আগ্রহ আছে। আমরা যখন ‘টিংকারিংল্যাব’-এর কথা বলি, তখন প্রায় তেরো হাজারেরও বেশি স্কুল আবেদন করেছিল। আর যখন আমরা‘ইনকিউবেশন সেন্টার’-এর কথা বলেছিলাম, তখন চার হাজারেরও বেশি শিক্ষাদানকারী ওঅন্যান্য প্রতিষ্ঠান আবেদন জানিয়েছিল। আমার বিশ্বাস আব্দুল কালাম-জীর প্রতিসত্যিকারের শ্রদ্ধাঞ্জলি হল গবেষণা ও আবিষ্কার। আমাদের নিত্যকার সমস্যা সমাধানেরজন্য প্রযুক্তির ব্যবহার, আমাদের সমস্যাসঙ্কুল জীবন থেকে মুক্তির জন্য – জীবনযাত্রাকেসহজ করার জন্য আমাদের নবীন প্রজন্ম যত কাজ করবে, তাদের অবদান একবিংশ শতকের আধুনিকভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। আর সেটাই হবে আব্দুল কালাম-জীরপ্রটি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছুদিন আগেই আমরা খরা নিয়েচিন্তাগ্রস্ত ছিলাম। এখন যেমন বর্ষার আনন্দ পাচ্ছি তেমনি বন্যারও খবর আসছে। রাজ্যসরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বন্যাকবলিত মানুষদের সাহায্যকরার জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্ষার জন্য কিছু সমস্যা তৈরি হলেও, বর্ষায়প্রতিটি মানুষের মন পুলকিত হয়ে ওঠে। কারণ আমাদের গোটা আর্থিক চিত্রেরকেন্দ্রবিন্দুতে আছে বর্ষা আর চাষাবাদ। কখনও কখনও এমন রোগ আসে যে আমাদের জীবনভোর আফশোষকরতে হয়। তবে, আমরা যদি সচেতন থাকি, সর্তক থাকি, রোগের মোকাবিলায় সচেষ্ট থাকি,তাহলে এর থকে বাঁচা সহজ। ডেঙ্গুর কথাই ধরুন, ডেঙ্গু থেকে বাঁচা সম্ভব। একটুপরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি মনোযোগী থাকার চেষ্টা করুন, একটু সতর্ক থাকুন,সুরক্ষিত থাকার চেষ্টা করুন। বাচ্চাদের প্রতি বিশেষভাবে মনোযোগ দিন আর এই যে ভুলধারণা আছে না যে ডেঙ্গু শুধু গরীব বস্তিতেই হয়, তা কিন্তু ঠিক নয়। সুখী, সমৃদ্ধএলাকাতেই সবচেয়ে আগে ডেঙ্গু ছড়ায়। এজন্য এটা বুঝুন। আপনারা দূরদর্শনে নিশ্চয়ইবিজ্ঞাপন দেখেন, তবুও কখনও কখনও আমরা তা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে উদাসীন হয়ে পড়ি।সরকার, হাসপাতাল, ডাক্তাররা তো নিজেদের কাজ করবেনই, কিন্তু আমাদেরও সর্তক থাকতেহবে যাতে আমাদের ঘরে, আমাদের এলাকায়, আমাদের পরিবারে ডেঙ্গু প্রবেশ করতে না পারেএবং জলবাহিত কোনো রোগ যেন না হয়। এটাই আমার আপনাদের কাছে প্রার্থনা।
আরেকসমস্যার প্রতি প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। জীবন এখন এতপ্রাণচঞ্চল, এত এর মধ্যে দৌড়-ঝাঁপ রয়েছে, তাই কখনো কখনো নিজের জন্য চিন্তা করার অবকাশহয় না। অসুস্থ হলাম তো মনে হয় তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাই, সেই জন্য যে কোন অ্যান্টিবায়োটিকখেয়ে ফেলি। সঙ্গে সঙ্গে রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, কিন্তু আমার প্রিয় দেশবাসী,এরকম কথায় কথায় অ্যাণ্টি-বায়োটিক খাওয়ার অভ্যেস গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।হতে পারে আপনি কিছু সময়ের জন্য আরাম পেলেন, কিন্তু আমাদের উচিত ডাক্তারদের পরামর্শছাড়া অ্যাণ্টি-বায়োটিক খাওয়া বন্ধ করা। ডাক্তার যতক্ষণ পর্যন্ত লিখে না দিচ্ছেন, ততক্ষণআমরা যেন এটা না খাই, এই শর্টকাট রাস্তা পরিত্যাগ করি, কারণ এর থেকে এক জটিলসমস্যার উদ্ভব হচ্ছে, অ্যাণ্টি-বায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে রোগী তো সঙ্গেসঙ্গে সুস্থ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু রোগের জীবানু এই সব
অ্যাণ্টি-বায়োটিকের কর্মক্ষমতাকে নষ্ট করে দিচ্ছে, তাই এই ঔষধগুলি ওইসবরোগজীবানুকে মারতে অক্ষম হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে নতুন ঔষধ আবিষ্কারকরে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বছরের পর বছর কেটে যায়, তখন এই সব রোগ নতুনসমস্যার সৃষ্টি করে, সেইজন্য অ্যাণ্টি-বায়োটিক ব্যবহারের প্রতি আমাদের সচেতনতারদরকার। আর একটি সমস্যা হলো, ডাক্তার হয়তো বললেন, এই অ্যান্টি-বায়োটিক পনেরোটা খেতেহবে পাঁচদিন ধরে, আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, ডাক্তারের কথা শুনে পুরো কোর্স ঔষধখান, আর্ধেক খাওয়ার পর ছেড়ে দেবেন না, তা না হলে এতে জীবানুদের সুবিধা হবে, আরদরকারের বেশি খেয়ে ফেললেও ওই সব জীবানুদের সুবিধা হয়ে যাবে। তাই যতদিনের জন্যযতগুলো ঔষধ দেওয়া হয়েছে, সেই কোর্সটা পুরো করাটা খুবই দরকারী, শরীর সুস্থ হয়েগেছে, তাই এখন আর দরকার নেই, এটা যদি আমরা করি, তাতে রোগের জীবানুদের সুবিধা হয়েযাবে, আর ওই সব জীবানু আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। যেসব জীবানু যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়াছড়ায় সেগুলি দ্রুত গতিতে নিজেদের মধ্যে এতটাই পরিবর্তন আনছে যাতে ঔষধের কর্মক্ষমতানষ্ট হয়ে যায়। ডাক্তারি ভাষায় একে ‘অ্যান্টি-বায়োটিক রেজিস্ট্যান্স’ বলে। সেইজন্যনিয়ম মেনে অ্যান্টি-বায়োটিকের ব্যবহার করা উচিত। সরকার ‘অ্যাণ্টি-বায়োটিকরেজিস্ট্যান্স’-কে বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর। আপনি হয়তো দেখেছেন, আজকালঅ্যাণ্টি-বায়োটিকের যে ঔষধ বিক্রি হয়, তার যে পাতা থাকে, তাতে একটা লাল লাইন এঁকেআপনাদের সাবধান করে দেওয়া হয়। আপনি এর প্রতি নিশ্চয়ই নজর দেবেন।
যখনস্বাস্থ্য সম্বন্ধীয় কথা হচ্ছে, আমি আরেকটি কথা এর সঙ্গে যোগ করতে চাই। আমাদেরদেশে যেসব গর্ভবতী মায়েরা আছেন, তাঁদের জীবনহানির চিন্তা কখনো কখনো খুব ভাবায়।আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় তিনকোটি মহিলা গর্ভবতী হন, কিন্তু কিছু মা সন্তানপ্রসবের সময় মারা যান, কখনো মা মারা যান, কখনো বা সন্তান, আবার কখনো মা ও সন্তানদুজনেই মারা যায়। এটা ঠিক যে গত এক দশকে মায়েদের প্রসবকালীন মৃত্যুর হার কমেছেকিন্তু তবুও আজও অনেক গর্ভবতী মায়েদের জীবন বাঁচানো সম্ভবপর হয় না। গর্ভাবস্থায় বাপরে রক্তাল্পতা, প্রসবের সময় সংক্রমণ, উচ্চ রক্তচাপ – কতরকমের অজানা সংকট কখন তাঁরজীবনকে নষ্ট করে দেবে কেউ জানে না। এই সব কথা মনে রেখে ভারত সরকার গত কিছু মাসথেকে এক নতুন অভিযান শুরু করেছে – ‘প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষিত মাতৃত্ব অভিযান’। এইঅভিযান অনুসারে প্রত্যেক মাসের নয় তারিখে সকল গর্ভবতী মহিলাদের সরকারীস্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনা খরচে পরীক্ষা করা যাবে। এক পয়সাও খরচ না করে সরকারীহাসপাতালে প্রত্যেক মাসের নয় তারিখে এই কাজকর্ম চলবে। আমি প্রত্যেক দরিদ্রপরিবারকে অনুরোধ করবো, সকল গর্ভবতী মায়েরা মাসের নয় তারিখে এই পরিষেবা গ্রহণ করুণ,যাতে নবম মাস পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে আগে থেকেই তারচিকিৎসা সম্ভব হবে। মা ও সন্তান – দুজনেরই প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে, আর আমি স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ–দেরবিশেষ ভাবে বলতে চাই, আপনারা কি মাসের একদিন, নয় তারিখ দরিদ্র মায়েদের বিনা পয়সায়চিকিৎসা করতে পারেন না! আমার ডাক্তার ভাই-বোনেরা কি বছরে বারো দিন দরিদ্রদের এইকাজের জন্য নিজেদের নিয়োজিত করতে পারেন না? বিগত দিনে আমাকে অনেক ডাক্তাররা চিঠিলিখেছেন, হাজার হাজার ডাক্তাররা আমার কথামতো এগিয়ে এসেছেন, কিন্তু ভারতবর্ষ এত বড়একটা দেশ, লক্ষ লক্ষ ডাক্তারদের এই অভিযানে সামিল হতে হবে। আমার বিশ্বাস, আপনিঅবশ্যই সামিল হবেন।
আমারপ্রিয় দেশবাসী, আজ সমগ্র পৃথিবী ঋতু পরিবর্তন, বিশ্ব উষ্ণায়ণ, পরিবেশ নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তাগ্রস্ত। দেশ-বিদেশে সামগ্রিকভাবে এর আলোচনা হচ্ছে। আদিকাল থেকে ভারতেএই বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় যুদ্ধক্ষেত্রেও ভগবানশ্রীকৃষ্ণ গাছেদের কথা বলেছেন, যুদ্ধক্ষেত্রেও গাছেদের কথা চিন্তা করার মাহাত্ম্যযে কতখানি, আমরা সেটা নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারি। গীতাতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন –‘অশ্বত্থ: সর্ববৃক্ষানাং’ অর্থাৎ সকল বৃক্ষের মধ্যে আমি অশ্বত্থ। শুক্রাচার্যনীতিতে বলা হয়েছে, ‘নাস্তি মূলং অনৌষধং’ – এরকম কোনও গাছ নেই যার ঔষধি গুণ নেই।মহাভারতের অনুশাসন পর্বে বিস্তৃতভাবে এর আলোচনা রয়েছে, এতে লেখা রয়েছে যে গাছলাগায়, তাঁর কাছে গাছ সন্তানসম, এতে কোনো সংশয় নেই। যে গাছ দান করে, তাঁকে ওই গাছসন্তানের মতো পরলোকেও পার করে দেয়। সেই জন্য যেসব মাতা-পিতা নিজেদের কল্যাণের কথাভাবেন, ভালো ভালো গাছ লাগিয়ে সন্তানের মতো লালন-পালন করুন। আমাদের শাস্ত্র – গীতাহোক, শুক্রাচার্য নীতি হোক বা মহাভারতের অনুশাসন পর্ব – বর্তমান প্রজন্মের কিছুমানুষ রয়েছেন, যাঁরা শাস্ত্রের এই দর্শনকে নিজেদের কর্মে করে দেখিয়েছেন। কিছুদিনআগে পুনের এক মেয়ে সোনাল-এর উদাহরণ আমার মনে আসছে – ও আমার হৃদয়কে স্পর্শ করেছে।মহাভারতের অনুশাসন পর্বে বলা হয়েছে – গাছ পরলোকেও সন্তানের কর্তব্য পালন করে।সোনাল কেবলমাত্র নিজেদের মাতা-পিতার দায়িত্ব ছাড়াও সমাজের চাহিদা পূর্ণ করতে এরকমকঠিন কাজ করেছেন। মহারাষ্ট্র রাজ্যের পুনের জুন্নর তালুকের নারায়ণপুর গ্রামের কৃষকখণ্ডু মারুতি মহাত্রে নিজের নাতনি সোনালের বিয়ে এক দৃষ্টান্তমূলক পদ্ধতিতেকরিয়েছেন। মহাত্রেজী সোনালের বিয়েতে যত কুটুম, বন্ধু-বান্ধব, অতিথি এসেছিলেন,সবাইকে কেসর আমের চারা উপহারস্বরূপ দান করেছেন। যখন আমি সোশ্যাল মিডিয়াতে এর ছবিদেখলাম, আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম – বিয়েতে বরযাত্রী দেখা যাচ্ছে না, চারদিকে শুধুগাছের চারা দেখা যাচ্ছিল। হৃদয়স্পর্শী দৃশ্য এই ছবিগুলোর মধ্যে ছিল। সোনাল নিজেই এগ্রিকালচারালগ্র্যাজুয়েট, এই বুদ্ধি ওই দিয়েছিল, বিয়েতে আমের চারা উপহার দেওয়া, দেখুন,প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা কত সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। একদিক থেকে সোনালের বিয়েপ্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার এক অমরগাথা হয়ে রইলো। আমি সোনাল আর শ্রীমান মোহাত্রেজী-কেএই অভিনব প্রয়াসের জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই। আর এরকম দৃষ্টান্ত অনেকেইরেখেছেন। আমার মনে আছে, আমি যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, ওখানে অম্বাজীরমন্দিরে ভাদ্র মাসে অনেক পুণ্যার্থী আসেন, একবার এক সমাজসেবী সংস্থা ঠিক করলমন্দিরে যেসব পুণ্যার্থী আসবেন, তাঁদের প্রসাদে গাছের চারা দেবেন আর তাঁদেরকেবলবেন, দেখুন, এটা মাতাজীর প্রসাদ, এই গাছের চারাকে নিজেদের গ্রামে-ঘরে গিয়েলাগিয়ে বড় করুন, মাতা আপনাদের আশীর্বাদ দিতে থাকবেন। গাছের যত্ন আপনারা নিন। লক্ষলক্ষ পুণ্যার্থী এসেছিলেন, লক্ষ লক্ষ গাছের চারা বণ্টন করা হয়েছিল সেই বছর।অন্যান্য মন্দিরও এই বর্ষাতে প্রসাদের পরিবর্তে গাছের চারা বিলি করার পরম্পরা শুরুকরতে পারেন। গাছ লাগানোর এক জন-আন্দোলন সহজ ভাবে তৈরি হতে পারে। আমি কৃষক ভাইদেরবারবার বলি, আমাদের খেতের ধারে যে আল দিয়ে জমি নষ্ট করি, তার পরিবর্তে কেন আমরা বড়,লম্বা গাছের চারা লাগাই না! বর্তমানে ভারতবর্ষে ঘর বানানোর জন্য, আসবাবপত্রবানানোর জন্য কোটি কোটি টাকার কাঠের গুঁড়ি বিদেশ থেকে আমদানী করতে হয়। যদি আমরাআমাদের খেতের ধারে এরকম গাছের চারা লাগাই, যেগুলো আসবাবপত্রে ও ঘর বানাতে কাজেলাগবে, তাহলে ১৫-২০ বছর পরে সরকারী অনুমতি নিয়ে ওদের কেটে বিক্রিও করতে পারেন আপনি।এটা আপনার আয়ের এক নতুন উৎস হতে পারে, আর ভারতবর্ষকে কাঠ আমদানি থেকে বাঁচাতেওপারেন। বিগত দিনে অনেক রাজ্য এই বর্ষা ঋতুর সুবিধা নিয়ে অনেক অভিযান চালিয়েছে,ভারত সরকারও এক CAMPA আইন সম্প্রতি পাশ করেছে, এইআইনের মাধ্যমে প্রায় চল্লিশ হাজার কোটিরও বেশি টাকা রাজ্যগুলিকে বৃক্ষরোপণের জন্যবিলি করা হচ্ছে। আমাকে বলা হয়েছে যে, মহারাষ্ট্র সরকার পয়লা জুলাই সমগ্র রাজ্যেরপ্রায় ২ কোটি ২৫ লক্ষ গাছের চারা লাগিয়েছে, আর আগামী বছর ওরা তিন কোটি চারালাগানোর লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে। সরকার এক জন-আন্দোলন শুরু করে দিয়েছে। রাজস্থানএক মরুভূমি-র রাজ্য – এতবড় বন-মহোৎসব পালন করেছে এবং পঁচিশ লক্ষ চারা লাগানোরসংকল্প নিয়েছে। রাজস্থানে পঁচিশ লাখ চারাগাছ লাগানো ছোটোখাটো ব্যাপার নয়। যাঁরারাজস্থানের মাটির সঙ্গে পরিচিত তাঁরাই বুঝতে পারবেন কত কঠিন কাজ। অন্ধ্রপ্রদেশও২০২৯ সালের মধ্যে রাজ্যের সবুজায়ন ৫০ শতাংশে বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। কেন্দ্রসরকার যে ‘গ্রীন ইণ্ডিয়া মিশন’ চালাচ্ছে, সেই যোজনার মাধ্যমে রেলকর্তৃপক্ষ সবুজায়নকরছে। গুজরাতেও বন-মহোৎসবের এক উজ্জ্বল ধারাবাহিকতা আছে। এবছর গুজরাত ‘আমবন’, ‘একতাবন’, ‘শহীদ বন’ নামক অনেক প্রকল্পকে বন-মহোৎসব হিসাবে পালন করেছে এবং কোটি কোটিগাছ লাগানোর অভিযান চালিয়েছে। আমি সমস্ত রাজ্যের কথা উল্লেখ করতে পারছি না কিন্তুসবাই প্রশংসার যোগ্য।
আমারপ্রিয় দেশবাসী, কিছুদিন আগে আমার দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। এটা আমারপ্রথম যাত্রা, এবং যখনই বিদেশ যাত্রা হয়, তখনই কূটনীতির কথা হয়, শিল্প-বাণিজ্যনিয়ে কথা হয়, সুরক্ষা নিয়ে আলোচনা হয়, কখনো ‘মউ’ সাক্ষরিত হয় – এই সবকিছুই তো হওয়াচাই। কিন্তু আমার কাছে দক্ষিণ আফ্রিকা যাত্রা একরকম তীর্থযাত্রা ছিল। যখনই দক্ষিণআফ্রিকার কথা মনে করা হয়, মহাত্মা গান্ধী এবং নেলসন ম্যাণ্ডেলার কথা মনে আসা খুবইস্বাভাবিক। যখনই এই পৃথিবীতে অহিংসা, প্রেম, ক্ষমা ইত্যাদি শব্দগুলি কানে আসে,তখনই তাঁদের চেহারা আমাদের চোখের সামনে ফুটে ওঠে। আমি আমার দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণেরসময় Phoenix Settlement -এ গিয়েছিলাম, যা মহাত্মাগান্ধীর বাসস্থান ‘সর্বোদয়’ নামে পরিচিত। যে ট্রেনে মহাত্মা গান্ধী সফর করেছিলেন,যে ট্রেনের ঘটনায় জনৈক মোহনদাসকে মহাত্মা গান্ধীতে পরিণত করার বীজবপন হয়েছিল, আমারসৌভাগ্য হয়েছিল সেই পিটারমারিৎসবুর্গ স্টেশন থেকে সেই ট্রেনে সফর করার, কিন্তু আমিযে কথা বলতে চাইছি, তা হল, এবার আমার সেই মহান মানুষদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগহয়েছিল যাঁরা নিজেদের জীবন নিয়োজিত করেছেন সকলের সমানাধিকারের জন্য, সকলের সমানসুযোগের জন্য। নেলসন ম্যাণ্ডেলার সঙ্গে একসঙ্গে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে লড়াই করেছেন,কুড়ি-বাইশ বছর ধরে জেলে নেলসন ম্যাণ্ডেলার সঙ্গে জীবন কাটিয়েছেন, একরকম নিজেদেরপুরো যৌবনই তাঁরা আহুতি দিয়েছেন। পুরো যৌবনকাল-কেই তাঁরা সমর্পণ করেছেন। নেলসনম্যাণ্ডেলার ঘনিষ্ঠ সঙ্গী আহমেদ কথাড়া, লালু চিবা, জর্জ বিজোস, রনি কাসরিল্সেরমতো মহান ব্যক্তিদের দর্শন করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। এঁরা আদতে ভারতীয়, কিন্তুসেখানে গিয়ে সেখানকারই হয়ে গেছেন। যাঁদের মধ্যে থেকেছেন, তাঁদের জন্য জীবন উৎসর্গকরতে প্রস্তুত হয়েছেন। আমি যখন তাঁদের সঙ্গে কথা বলছিলাম, তাঁদের বন্দীজীবনেরঅভিজ্ঞতার কথা শুনছিলাম, তাঁদের কথার মধ্যে কোনওরকম কটুতা বা বিরূপতা ছিল না। এটাকতবড় শক্তির কথা। এতবড় তপস্যা করার পরও তাঁদের চেহারায় কিছু নেবার, কিছু পাওয়ার বাকিছু হওয়ার কোন চাহিদার প্রকাশ চোখে পড়েনি। গীতাতে যে কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে,তার সাক্ষাৎ রূপ যেন আমি তাঁদের মধ্যে দেখতে পাচ্ছিলাম। সেই সাক্ষাৎকারটি আমারচিরদিন মনে থাকবে। কোনও সমাজের বা কোনও সরকারের জন্যই সাম্য এবং সমান সুযোগের এরচেয়ে বড় কোনও মন্ত্র হতে পারে না। সকলকে সমান ভাবা এবং সকলকে আপন ভাবার এটাই তো পথযা আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যায়। আমরা সুন্দর জীবন চাই, বাচ্চাদের ভালোভবিষ্যৎ চাই – প্রত্যেকের প্রয়োজন আলাদা আলাদা। ‘ Priority ’ আলাদা আলাদা হতে পারে, কিন্তু পথ একটাই, আর সেই পথ হলউন্নয়ন, সাম্য, সমান সুযোগ, সকলকে সমান ভাবা এবং সকলকে নিজের ভাবা। আসুন, আমরা সেইভারতীয়দের জন্য গর্ব অনুভব করি, যাঁরা দক্ষিণ আফ্রিকাতেও আমাদের জীবনের মূলমন্ত্রকে সম্বল করে জীবনযাপন করে দেখিয়েছেন।
আমারপ্রিয় দেশবাসী, আমি শিল্পী বর্মার প্রতি কৃতজ্ঞ, উনি আমাকে একটি ঘটনার কথাজানিয়েছেন। “…প্রধানমন্ত্রীজী, আমি ব্যাঙ্গালোর থেকে শিল্পী বর্মা বলছি। কিছুদিনআগে আমি সংবাদপত্রের এক নিবন্ধে পড়েছি যে এক ভদ্রমহিলা ভুয়ো এবং প্রতারণামূলকই-মেলে প্রতারিত হয়ে এগারো লক্ষ টাকা হারিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। একজন মহিলা হিসেবেতাঁর পরিবারের জন্য আমার যথেষ্ট সমবেদনা আছে। আমি জানতে চাই, এই প্রতারণামূলক এবংভুয়ো ই-মেলের সম্পর্কে আপনারা কী ভাবছেন।”
এটাতোআপনারা সকলেই জানেন, আমাদের মোবাইল ফোনে, ই-মেইলে কখনও কখনও খুব লোভনীয় মেসেজ আসে –“আপনি এত টাকার পুরস্কার জিতেছেন। এত টাকা দিয়ে পুরস্কার নিয়ে নিন।” কিছু মানুষভুল করে টাকার মোহে ফেঁসে যান। প্রযুক্তির মাধ্যমে চৌর্যবৃত্তির এ এক নতুন উপায়,যা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রযুক্তি একদিকে যেমন আর্থিক উন্নয়নে এক বড় ভূমিকানিয়েছে, তেমনি অন্যদিকে তার অপব্যবহার করার লোকও মাঠে নেমে পড়েছে। একজনঅবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি, যাঁর মেয়ের বিয়ে দেওয়া বাকি এবং বাড়িও তৈরি করতে হবে, তাঁরকাছে এই মর্মে একটি এস.এম.এস. আসে যে, বিদেশ থেকে ওঁর জন্য একটি মূল্যবান উপহারএসেছে, যেটা পেতে গেলে কাস্টমস্ ডিউটি বাবদ একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে তাঁকে দুইলক্ষ টাকা জমা করতে হবে। এই ভদ্রলোক কোন চিন্তা-ভাবনা না করেই শুধু একটিএস.এম.এস-এর ভরসায় সারা জীবনের পরিশ্রমের উপার্জন দু’লাখ টাকা একটি অপরিচিতমানুষকে পাঠিয়ে দিলেন। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি বুঝতে পারেন যে তাঁর সবকিছু লুঠহয়ে গেছে। আপনারাও কোনও কোনও সময়ে ভুল করে ফেলেন, কারণ ওরা এত সুন্দর করে আপনাদেরচিঠি লেখে যে মনে হয় যেন একেবারে আসল। কোনও একটা নকল লেটার প্যাড বানিয়ে পাঠিয়েদিয়ে আপনার ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ডের নম্বর জেনে নেয় এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনারব্যাঙ্কের খাতা খালি হয়ে যায়। এ হল নতুন রকমের ধোঁকাবাজি, ডিজিটাল-ধোঁকাবাজি।এধরনের মোহ থেকে দূরে থাকতে হবে, সজাগ থাকতে হবে, আর এরকম কোনও মিথ্যে মেসেজ এলেনিজেদের বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে তা শেয়ার করে তাঁদেরও সতর্ক করে দিতে হবে। শিল্পীবর্মা একটা জরুরি কথা আমার গোচরে এনেছেন। বিষয়টা আপনারা সবাই বোঝেন, কিন্তু হয়তঅতটা গভীরতা দিয়ে দেখেন না। কিন্তু আমার মনে হয়, দেখার দরকার আছে।
আমারপ্রিয় দেশবাসী, এখন সংসদের অধিবেশন চলছে। এই অধিবেশন চলাকালীন দেশের বহু মানুষের সঙ্গেআমার মিলিত হওয়ার সুযোগ হয়। আমাদের সাংসদরাও নিজের নিজের এলাকা থেকে লোককে নিয়েআসেন, আমার সঙ্গে দেখা করান, কথাবার্তা হয়, তাঁরা তাঁদের অসুবিধার কথাও বলেন।কিন্তু সম্প্রতি আমার এক ভালো অভিজ্ঞতা হল। আলিগড়ের কিছু ছাত্র আমার কাছেএসেছিলেন। আলিগড়ের সাংসদ তাঁদের নিয়ে এসেছিলেন, ছেলে-মেয়েগুলির উৎসাহ ছিল দেখারমতো। ওঁরা একটা বেশ বড় অ্যালবাম নিয়ে এসেছিলেন আমাকে তার থেকে ছবি দেখালেন। তাঁরাআলিগড় রেলস্টশনের সৌন্দর্যীকরণ করেছেন। স্টেশনে চমৎকার ছবি এঁকেছেন। শুধু এ-ই নয়,গ্রামে যত প্লাস্টিকের বোতল কিংবা তেলের ক্যানের মতো আবর্জনা পড়ে ছিল, তা খুঁজেখুঁজে জড়ো করে মাটি ভরে গাছ লাগিয়ে ‘ভার্টিক্যাল গার্ডেন’ বানিয়েছেন। এইভাবে তাঁরারেলস্টেশনটিকে সম্পূর্ণ নতুন এক রূপ দিয়েছেন। আপনারা কখনও আলিগড় গেলে স্টেশনটিনিশ্চয়ই দেখবেন। ভারতের বেশ কিছু রেলস্টেশন থেকে ইদানিং আমি এইরকম খবর পাচ্ছি।স্থানীয় মানুষজন তাঁদের রেলস্টেশনগুলির দেওয়ালকে চিত্রকলায় সাজিয়ে নিজেদের এলাকারস্বতন্ত্র পরিচয় রাখছেন। একটি নতুনত্বের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। জনসাধারণের অংশগ্রহণেকীরকম পরিবর্তন আনা যায়, এটা তারই উদাহরণ। দেশে এরকম কাজ যাঁরা করছেন, তাঁদেরধন্যবাদ, বিশেষ করে ধন্যবাদ আমার আলিগড়ের সাথীদের।
আমারপ্রিয় দেশবাসী, বর্ষা এলেই আমাদের দেশে উৎসবের মরশুম শুরু হয়ে যায়। আগামীদিনগুলিতে বিভিন্ন জায়গায় মেলার আয়োজন হবে। মন্দিরে, আরাধনাস্থলে উৎসব পালিত হবে,আর আপনারাও ঘরে-বাইরে উৎসবে মেতে উঠবেন। রাখীবন্ধন আমাদের এক গুরুত্বপূর্ণ উৎসব।গতবছরের মত এবছরেও কি আপনারা রাখীবন্ধন উপলক্ষে দেশের মা-বোনেদের ‘প্রধানমন্ত্রীসুরক্ষা বীমা যোজনা’ বা ‘জীবন-জ্যোতি বীমা যোজনা’ উপহার দিতে পারেন না? ভাবুন,বোনকে এমন কোন উপহার দিন, যা তার জীবনকে সত্যি সত্যি সুরক্ষা দেবে। শুধু এ-ই নয়,আমাদের বাড়িতে যে মহিলা রান্না করেন, যে মহিলা বাড়ি পরিষ্কার করেন বা পরিচিত কোনওগরীব মায়ের মেয়েকে এই রাখীবন্ধন উৎসবে আপনি ‘সুরক্ষা বীমা যোজনা’ বা ‘জীবনজ্যোতিবীমা যোজনা’ উপহার দিতে পারেন। আর এটাই তো যথার্থ সামাজিক সুরক্ষা, রাখীবন্ধনেরসঠিক অর্থই তো এই।
আমারপ্রিয় দেশবাসী, আমাদের মধ্যে বহু মানুষ আছেন, যাঁদের জন্ম হয়েছে স্বাধীনতার পরে।আমি দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যে স্বাধীন ভারতবর্ষে জন্মেছে। ৮-ই আগস্ট ‘ভারতছাড়ো’ আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, এবছর তার ৭৫ বছর হচ্ছে। আর ১৫-ই আগস্ট স্বাধীনতার৭০ বছর হতে চলেছে। আমরা স্বাধীনতার আনন্দ উপভোগ করছি, স্বাধীন নাগরিক হওয়ার গর্বওঅনুভব করছি – এই স্বাধীনতা যাঁরা এনেছিলেন, সেই সব মানুষদের স্মরণ করার এটাই তোসময়। ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের ৭৫ বছর এবং স্বাধীনতার ৭০ বছর আমাদের নতুন প্রেরণাদিতে পারে, নতুন উৎসাহ যোগাতে পারে, এবং দেশের জন্য ভালো কিছু করার সংকল্প নেওয়ারউপযুক্ত সময় হয়ে উঠতে পারে। আসুন, আমরা এমন এক পরিবেশ তৈরি করি, যাতে স্বাধীনতাসংগ্রামীদের সংগ্রামের রঙ গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ে, স্বাধীনতার সুবাস চারদিকে অনুভূতহয়। স্বাধীনতার এই উৎসব কোনও সরকারি অনুষ্ঠান নয়, দীপাবলির মত এটিও দেশবাসীরনিজস্ব উৎসব হওয়া উচিত। আমার আশা, আপনারাও স্বদেশপ্রেমের প্রেরণায় কিছু না কিছুভালো কাজ করবেন। ‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এ তার ছবি অবশ্যই পাঠান। দেশে একটাদেশভক্তির পরিবেশ গড়ে তুলুন।
প্রিয়দেশবাসী, ১৫ আগস্ট লালকেল্লার প্রাকার থেকে আমার গোটা দেশের সঙ্গে কথা বলারসৌভাগ্য হয়। এটি একটি পরম্পরা। আপনাদের মনেও হয়ত এমন কিছু কথা থাকতে পারে, যাআপনারা চান লালকেল্লার ওই প্রাকার থেকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে পেশ করা হোক। আমিআপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, আপনাদের মনে যে ভাবনা আসছে, যেটা আপনারা মনে করেনআপনাদের প্রতিনিধি হিসেবে, আপনাদের প্রধান সেবক হিসেবে আমার লালকেল্লা থেকে বলাদরকার, সেটা আমাকে অবশ্যই লিখে পাঠান, মতামত দিন, পরামর্শ দিন, নতুন চিন্তাভাবনানিয়ে আসুন। আমি আপনাদের কথা দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দিতে সচেষ্ট হবো। আমি চাইনা যেলালকেল্লার প্রাকার থেকে যেকথা বলা হবে, তা কেবল প্রধানমন্ত্রীর কথাই হবে, উপরন্তুদেশের ১২৫ কোটি জনসাধারণের কথাই বলা হবে। আপনারা আমাকে অবশ্যই কিছু লিখে পাঠান।‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এ বা mygov.in –এ পাঠাতে পারেন। আর আজকালতো প্রযুক্তি এত সুলভ হয়ে গেছে যে আপনারা স্বচ্ছন্দেই যে কোন জিনিস আমার কাছেপৌঁছে দিতে পারেন। আমি আপনাদের আমন্ত্রণ জানাই – আসুন, স্বাধীনতাসংগ্রামীদের পুণ্যজীবনকে স্মরণ করি। ভারতের জন্য যাঁরা জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেইসব মহাপুরুষদের স্মরণকরি এবং দেশের জন্য কিছু করার সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাই, অনেক অনেক শুভেচ্ছা। অনেকঅনেক ধন্যবাদ!
My dear countrymen, namaskar!
Once again I have got an opportunity to talk to you about matters close to my heart, through ‘Mann Ki Baat’. For me, ‘Mann Ki Baat’ is not a matter of ritual; I myself am very eager to talk to you. And I am really happy that I am able to connect with you all in every corner of India, through this programme ‘Mann Ki Baat’. I am grateful to All India Radio that they have also been successfully broadcasting ‘Mann Ki Baat’ in regional languages at 8 pm. I am also very happy that the people who listen to me, later communicate their feelings to me through letters, telephone calls, the website MyGov.in and also through the NarendraModiApp. A lot of what you say is of great help to me in the functioning of the government. How active should the government be in terms of public service? How much priority should be given to public welfare activities? In terms of these matters, this dialogue, this link that I have with you all, is of great use. I hope that you will now be even more actively and enthusiastically involved in ensuring that our democracy should function with people’s participation.
The summer heat is increasing day by day. We were hoping for some respite, instead we are experiencing continual rise in temperature. And in the midst of this came the information that the monsoon will perhaps be delayed by a week, which has added to the worry. Almost the entire country is reeling under the scorching impact of severe heat. The mercury continues to soar. Be it animals, birds or humans…everyone is suffering. These problems have been getting increasingly worse due to environmental degradation. Forest cover has kept receding due to indiscriminate felling of trees. In a way, the human race itself has paved the way for self-annihilation by destroying the environment.
5th June is World Environment Day. On this day, discussions expressing concern on the issue are held all over the world for saving the environment. This time on the occasion of World Environment Day, the United Nations has given the theme “Zero Tolerance for Illegal Wildlife Trade”. This topic will, of course, be discussed, but we also must talk about saving our flora and fauna, conserving water, and how to expand our forest cover. You must have seen in the last few days how forest fires raged in the lap of the Himalayas in Uttarakhand, Himachal Pradesh and Jammu and Kashmir. The main cause of these forest fires was dry leaf littering combined with carelessness, which led to the massive inferno. And so, it becomes the bounden duty of each one of us, to save forests and save water.
Recently, I convered at length with the Chief Ministers of eleven states, reeling under severe drought- Uttar Pradesh, Rajasthan, Gujarat, Maharashtra, Madhya Pradesh, Chhattisgarh, Jharkhand, Karnataka, Andhra Pradesh, Telangana and, Odisha.
As per the conventional Government precedent, I could have had a combined meeting with all the drought affected states, but I chose not to do so. I had a one-on-one meeting with each state, devoting about two to two and a half hours with each one. I carefully heard what each state had to say. Usually such talks do not go beyond discussion on how much money was granted by the Central Government state-wise, and how much money was actually spent by each state. Thus, it came as a surprise even to the officers of the Central Government that some states have indeed made some very commendable efforts related to water, environment, tackling drought, caring for animals as well as affected human beings. Based on inputs from all corners of the country, irrespective of the ruling party there, we found that we had to give a thought to finding not only permanent solutions but also devising practical ways and means to deal with this long-standing problem. In a way, It was a kind of a learning experience too for me. And I have told the Niti Aayog that they should work on how to incorporate the best practices across all the states.
Some states, especially Gujarat and Andhra Pradesh have made full use of technology. I would like that in future, through the Niti Aayog, the exceptionally successful efforts of these states should be applied to other states also. People’s participation is a strong base for solving such problems. And for this, I believe that if there is a confluence of perfect planning, use of appropriate technology, and time-bound action, then we can achieve optimum results in drought management, for water conservation, to save every single drop of water. My faith is that water is a Gift from God. When we go to a temple, we are given an offering of Prasad and even if a small bit of that spills, we feel bad in our hearts. We not only pick it up but also pray five times for God’s forgiveness. Water is also an offering form the God. Even if a drop of water is wasted, then we should feel remorse and pain. And so water storage, water conservation and proper water irrigation are all of equal importance. And so there is need for implementing the maxim ‘Per Drop More Crop’ through Micro-Irrigation and cultivating crops that require minimal water intake. At present, it is indeed good news that in many states, even sugarcane farmers are using micro irrigation, some are using drip irrigation and some are using sprinklers. When I discussed with the eleven states, I noticed that even for cultivating paddy for production of rice, some of them had employed drip irrigation successfully and got higher yields, thereby also reducing the requirement for water as well as for labour. I also found that there were many states which had taken on very big targets, especially, Maharashtra, Andhra Pradesh and Gujarat- these three states have done massive work in the field of drip irrigation. And they are striving to bring every year 2 to 3 lakh hectares additional land under micro- irrigation. If this campaign gets underway in all the states, then not only will it benefit cultivation, but more water will also be conserved. Our farmer brothers in Telangana, through ‘Mission Bhagirathi’ have made a commendable effort to optimally use the waters of Godavari and Krishna rivers. In Andhra Pradesh, ‘Neeru Pragati Mission’ has been using technology for ground water recharging. People are devoting hard work and contributing financially as well to the mass movement that has been started in Maharashtra,. ‘Jal Yukt Shivir’ is one such people’s movement which is really going to be of great help in saving Maharashtra from water crisis in the future- this is what I feel. Chhattisgarh has started the ‘Lok-Suraj, Jal-Suraj’ campaign. Madhya Pradesh has started the ‘Balram Talaab Yojana’- and dug nearly 22,000 ponds, which is no small figure, work is also being carried out on their ‘Kapil Dhara Koop Yojana.’ In Uttar Pradesh there is ‘Mukhya Mantri Jal Bachao Abhiyaan’. In Karnataka water conservation efforts are in the form of ‘Kalyani Yojana’, under which they are trying to revive wells once again. In Rajasthan and Gujarat there are many ancient baodis – deep tanks or masonry wells with steps going down to the water. These states are making a very big effort to revive these as ‘water temples’. Rajasthan has started the Chief Minister’s Jal Swawalamban Abhiyan – Water Self Sufficiency Campaign. Jharkhand, although being a predominantly forest area, still has some parts which face water problem. They have launched a very big campaign for building ‘Check Dams’. They have started an exercise to check and stop the flow of water. Some states have started a campaign and made a number of small dams at distances of 10 to 20 kilometres in the rivers themselves to check the flow of water.
This is a wonderful experience. I urge the people of India that during this June, July, August September, we should resolve that we shall not let a single drop of water be wasted. We should decide right now upon the places where we can conserve water and where we can check the flow of water. The Almighty blesses us with water according to our needs, nature fulfils our needs. But if we become careless during the abundance of water and then during the lean water season land into trouble due to water scarcity, how can this be allowed? And the issue of water is not just for the farmers. This concerns everybody – the villages, the poor, the labourers, the farmers, the urban people, the country folk, the rich and the poor. And for this reason, now that the rainy season is approaching, saving water should be our priority. And when we celebrate Diwali this time, then we should also revel in how much water did we save; how much water we stopped from flowing out. You will see for yourselves that our joy will increase manifold. Water has this power, no matter how tired one is, just a bit of water splashed on the face makes one feel so refreshed. No matter how tired we are; when we see a large lake or an ocean, how magnificent that sight is. What a priceless treasure it is bestowed upon us by the Almighty! Just connect to it with your heart. Conserve it! We should harvest water. We should also store water. We should also modernise water irrigation. This I say as an earnest appeal. We should not let this season go waste. The coming four months should be transformed into a Save the Water Campaign, to save every drop of water. And this is not just for the governments, not just for the politicians, it is a work to be carried out by the people at large. Recently the Media reported about the water crisis in great detail. I hope that the Media will show the path to the people on how to save water, start a campaign, and also share the responsibility to free us from the water crisis forever; I invite then as well.
My dear Countrymen, we have to build a modern India. We have to make a transparent India. We have to make many services uniformly available across the entire country from one corner to another. So we will have to change some of our old habits as well. Today I want to touch upon one topic in which if you can be of help to me, then we can together achieve progress in that direction. We all know and we were taught about it in school that there was a time when there were no coins, no currency notes; there was a barter system. If you wanted vegetables you could give wheat in return. If you wanted salt, you could give vegetables in exchange. Business was carried out only through the barter system. Then gradually came currency, coins came, notes came. But now times have changed. The whole world is moving towards a cashless society. Through the facility of electronic technology, we can get money and also give money; we can buy things and pay our bills too. And with this there is no question of our wallets getting stolen from our pocket. We need not worry about keeping an account; the account will be maintained automatically. In the beginning it may appear to be a bit difficult, but once we get used to it, then this arrangement will seem very easy for us. And this possibility is there because under the Pradhan Mantri Jan Dhan Yojana that we have started recently, nearly all the families in the country have had their bank accounts opened. On the other hand, they have also got their Aadhar numbers. And the mobile phone has reached the hands of almost every Indian. So Jan Dhan, Aadhar and Mobile – Jam – J. A. M. Synchronising these three, we can move ahead towards a cashless society. You must have seen that along with the Jan Dhan account people have been given a RuPay card. In the coming days this card is going to be useful as both- a credit and a debit card. And now-a-days a very small instrument has come which is called ‘point of sale’- P. O. S. – ‘Pos’. With the help of that, be it your Aadhar number or your RuPay card, if you have to pay money to someone, you can do it through that. There is no need to take out any money from your pocket and count it; there is no need to carry around any cash with you. One of the initiatives in this regard taken by the Government of India is about how to make payments through ‘Pos’, how to receive money. The second endeavour we have started is Bank on Mobile. The ‘Universal Payment Interface’ banking transaction- UPI will change the way things work. It will become very easy to do money transactions through your mobile phone. And I’m happy to tell you that the N.P.C.I. and banks are working together to launch this platform through a mobile app. If this happens, perhaps you may not even need to carry a RuPay card with you.
Across the country, nearly 1.25 lakh young people have been recruited as banking correspondents. In a way we have worked towards providing the bank at your door step. Post offices have also been geared up for banking services. If we learn and adapt ourselves to use these services, then we will not require the currency, we will not need notes, we will not need coins. Businesses will function automatically, resulting in a certain transparency. Under-hand dealings will stop; the influence of black money will be reduced. So I appeal to my countrymen, that we should at least make a beginning. Once we start, we will move ahead with great ease. Twenty years ago who would have thought that so many mobiles would be in our hands. Slowly we cultivated a habit and now we can’t do without those. Maybe this cashless society assumes a similar form. But the sooner this happens, the better it will be.
My dear countrymen, whenever the Olympic games come around, and when these begin, we sit and clutch our heads and sigh, “we were left so far behind in the tally of gold medals… did we get a silver or not… should we do with just a bronze or not…” This happens. It is true that in the field of sports we face a lot of challenges. But an atmosphere for sports should be created in the country.
To encourage the sportspersons who are leaving for the Rio Olympics, to boost their morale, everyone should try in one’s own way. Someone could write a song, someone could draw cartoons, someone could send messages with good wishes, somebody could cheer a particular sport, but on the whole a very positive environment should be created in the entire country for these sportspersons. Whatever may be the result, a game is a game, one can win or lose, medals are won sometimes and sometimes not; our spirits should always soar high. And as I speak, I would like to mention our Sports Minister Shri Sarbanand Sonowal for a gesture that has touched my heart. Last week all of us were busy in the ups & downs of Assam election results. Shri Sarbanandji himself was leading the campaign. He was the Chief Ministerial candidate; but he was also the Union Minister. And I was very happy when I came to know that one day before the Assam election results, he discreetly reached Patiala in Punjab. You must be aware of the Netaji Subhash National Institute of Sports- N.I.S. – where the sportspersons going for the Olympics are trained. They all are there. He suddenly reached there, much to the surprise of the sportspersons. And it was a matter of surprise for the world of sports as well, that a Minister personally cares for our sportspersons. What are the arrangements for them? How is the food? Are they getting nutritious food according to their needs or not? Are the appropriate trainers for their body fitness present there? Are all the training machines functioning properly? He surveyed everything in great detail. He personally inspected each and every sportsperson’s room. He spoke to all the players in great detail. He had a word with the management and trainers; he himself ate with the sportspersons. With election results being due, with the distinct possibility of a new responsibility as a Chief Minister, and yet if one of my colleagues, in the capacity of a Sports Minister, displays such concern for his work, then it gives me great joy. And I am confident that like this, we should all realize the importance of sports, we should encourage the people in the world of sports, encourage our sportspersons. This becomes a source of strength in itself, when the sportsperson feels that his 125 crore countrymen are with him, his morale gets boosted.
Last time I spoke to you about the FIFA Under 17 World Cup and recently I got to see the suggestions that have come pouring in. And these days I have noticed that a conducive atmosphere for Football can be seen in the whole country. Many people are taking an initiative to form their own teams. I have received thousands of suggestions on the NarendraModi Mobile App. Maybe many people don’t play the game themselves, but hundreds of thousands of young Indians have displayed such keen interest in the sport, this by itself was a very delightful experience for me. We all know the bond that India has with Cricket, but I saw the same passion for Football as well, and this by itself heralds a very positive signal for the future. For all the selected candidates for the Rio Olympics, and for our favourite sportspersons, we should create a cheerful and positive atmosphere. We should not judge everything in terms of victory and defeat. India should be known in the world for its spirit of sportsmanship. I appeal to my countrymen to contribute their bit in creating an atmosphere that boosts the spirits and enthusiasm of our athletes.
In the last week or so, results have been pouring in from all over the country…. and I am not talking about election results… I am talking about those students who slogged for the entire year, those of 10th and 12th Class. It is clear that our daughters are marching ahead triumphantly. It is a matter of joy. To those who have succeeded in these exams, I extend my congratulations and felicitations. And those who were not able to succeed, I would like to tell them once again that there is a lot to do in life. Life does not get stuck if we do not get results according to our expectations. We should live with hope, we should move ahead with confidence.
But I have been confronted with a new type of question, about which earlier I had never given a thought. I’ve received one email on MyGov.in site, which drew my attention. One Mr. Gaurav, Gaurav Patel of Madhya Pradesh writes that in the M.P. Board exam he has secured 89.33% marks. Reading this I felt elated. But in his continued narration, he tells us his tale of woes. Gaurav Patel says that Sir, afte securing 89.33% marks when I reached home, I was thinking that I would be congratulated by my family and friends, I would be applauded. But I was amazed when everybody in the house, friends and my teachers said the same thing, “Oh Dear, if your had secured just 4 more marks, you would have made it to 90%”. So it seems that my family, my friends, my teachers, nobody was pleased with my 89.33% marks. Everyone was lamenting that I missed my 90% by four marks. Now I’m perplexed and don’t know how to handle the situation. Is this all to life. Was what I did not good enough? Did I not prove myself? I don’t know but I feel a burden on my heart and mind.
Gaurav, I have read your letter very carefully. And I feel that perhaps this pain is not just yours; like you there are many lakhs and crores of other students who share the same pain. Because nowadays there is a trend that instead of finding satisfaction in what we have achieved, we tend to express our dissatisfaction in not achieving unrealistic goals. This is another form of negativity. We can never guide society towards the path of satisfaction if we always find dissatisfaction in everything. It would have been better if your family members, your class mates and your friends had appreciated your 89.33%. Then you would have felt motivated enough to do a lot more. I would like to urge guardians, parents and people all around, to please accept, welcome and express your satisfaction over your children’s results, and motivate them to surge ahead in life. Else, it might happen that a day will come when he brings 100% marks and you will say that, “you have got 100 percent! But still, had you done something more, it would have been better!” There is a limit to everything and that should be accepted.
Santosh Giri Goswami has written to me from Jodhpur something similar, almost along the same lines. He says that the people around him just don’t accept the results. They say that you should have done something better. There was a poem I had read long ago. I don’t remember the complete poem. The poet had written something like this – “I painted a picture of my anguish on the canvas of life. And when it was exhibited, almost all the visiting people commented that it needed some touching up. Someone said, ‘yellow here would have been better in place of blue.’ Someone said, ‘This line would have been better situated there instead of here.’ I wish some odd visitor had also shed a tear or two over the picture of my anguish.” I don’t remember if these were the exact words of the poem, as I read this poem way back. But nobody was able to grasp the pain depicted in that picture; everyone just spoke of touching it up.
Santosh Giriji, you have the same problem that Gaurav has. And there must be crores of students like you. You have the burden on yourself of fulfilling the expectations of millions of others. All that I would like to say to you is that in such a situation, don’t lose your balance. Everyone expresses their expectations; just keep listening, but stick to your point and make an effort to do something even better. But if you are not satisfied over what you have got, you will never be able to create something new. The strong foundation of one success becomes the foundation for another greater success. The dissatisfaction arising out of success never becomes a ladder to success; it guarantees failure. And so I would like to appeal that you should sing in celebration of the success that you have achieved. Possibilities of newer successes will arise out of success achieved earlier. I would like to appeal to parents, friends and neighbours that please don’t impose your expectations upon your children. And friends, does our life come to a standstill if we meet with failure sometimes. Sometimes one is not able to score good marks in exams, but he or she surges ahead in sports, or does well in music, or excels in the fine arts, or forges ahead in business. God has gifted each one of us with a unique talent. Please recognize your internal strength, build upon it and you will be able to march ahead. And this happens everywhere in life.
You must have heard of the musical instrument called santoor. There was a time when the santoor was associated with the folk music of the Kashmir valley. But it was Pandit Shiv Kumar (Sharma) whose magical touch transformed it into one of the prime musical instruments of the world. Shehnai once had a limited space in the world of music. It was mostly played at the threshold of the courts of emperors and kings. But Ustad Bismillah Khan’s mastery over the Shehnai made it one of the finest musical instruments in the world; it has now carved an identity of its own. And so you should stop worrying about what you have and how is that. Just concentrate on what you have and devote your utmost with that you are sure to reap handsome rewards.
My dear countrymen, sometimes I notice that the money that our poor families have to spend on their healthcare, throws their life off the track. It is true that while one has to spend little on preventing illness, the expenditure incurred on regaining health after you have fallen ill, is a lot more. Why can’t we lead life in such a way that we don’t ever fall sick and no financial burden falls upon the family. Cleanliness is one of the strongest protections from disease. The greatest service that can be rendered to the poor is by maintaining cleanliness. And the second thing that I constantly urge you to do is Yog. Some people also call it Yoga. 21st June is the International Day for Yog. People are not only attracted to Yog the world over, they have implicit faith in it and the whole world has embraced it. This is a priceless gift handed over to us by our ancestors, which we have given to the world. To the world which is filled with stress, Yog gives the power to lead a balanced life. Prevention is better than cure. A person practicing Yog, can easily have the achievements of staying healthy, maintaining balance, being richly endowed with a strong will power, nurturing supreme self confidence and to have concentration in every task one does. 21st June, International Yog Day is not just a mere event. It should spread wide, it should find a place in every person’s life. Each person should take 20-25-30 minutes out from his daily routine and spend it on practicing Yog. And for this, the International Yog day on 21st June gives us the inspiration. These collective occasions do become a reason for effecting positive change in an individual’s life. I do hope that on 21st June, wherever you may be, please take the initiative; you have a month with you. If you visit the website of the Government of India, the syllabus for this time, which ‘asanas’ you have to do, how one has to do them, all that has been described in it. Have a look at it. Do get these followed in your village, in your mohallas, in your city, in your school, in your institution, even in offices. Start it from now, one month in advance and you will be a participating partner on 21st June. I have read it several times that there are offices where on a regular basis, when they first meet in the morning, they begin with Yog and Pranayam and the efficiency of the entire office increases. The whole culture of the office gets transformed and the environment also undergoes a positive change. Can we make use of 21st June to bring Yog into our lives? Can we use it to bring Yog into our social life? Can we use it to bring Yog into our surroundings? I will be going this time to Chandigarh to participate in the programme on 21st June. I shall be doing Yog with the people of Chandigarh. You too must connect yourself with it when the whole world will be doing Yog on that day. I urge you all not to get left behind. Your staying healthy is very important to make India healthy.
My dear country men, through Mann Ki Baat, I connect with you regularly. I had given all of you a mobile number earlier, which you could use for listening to ‘Mann Ki Baat’ by giving a missed call on that number. But now we have made it a lot simpler. Now, to be able to listen to this programme, all you have to do is to dial just four digits. That four digit number is 1-9-2-2 . I repeat …One- Nine- Two -Two. By giving a missed call on this number, you will be able to listen to ‘Mann Ki Baat’ at any time, wherever you are and in any language of your choice.
My dear countrymen, Namaskar to all of you once again! Please don’t forget what I had said about water. You will remember it, won’t you? Okay! Thank You. Namaste!
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের সবাইকে নমস্কার! ছুটির সময় প্রতিটি মানুষ নানা পরিকল্পনা করে। আর এই ছুটির সময় আমের মরশুম। তো মনে হয় আমের স্বাদ গ্রহণ করি (আম খাওয়ার মজা উপভোগ করি)। আবার কখনও মনে হয় যে দুপুরে যদি কিছু সময় শোওয়ার সুযোগ আসে তো খুব ভাল হয়। কিন্তু এবার ভয়ঙ্কর গরম চতুর্দিকে সব মজাকেই তছনছ করে দিয়েছে। দেশবাসীর চিন্তা হওয়া খুব স্বাভাবিক। আর তার মধ্যে ক্রমাগত খরা হওয়াতে জল সংগ্রহের যে সমস্ত জায়গা আছে তাও কমে আসছে। কখনও কখনও দখলদারি, পলি পড়া-র জন্য জলের যে প্রবাহ তাতে বাধা পড়ে এবং জলাশয়ের নিজস্ব ক্ষমতার তুলনায় কম জল সংগ্রহ হয়। আর বছরের পর বছর এইরকম চলার কারণে জলাশয়ের জল ধারণ ক্ষমতাও কমে আসে। খরার মোকাবিলা করার জন্য, জলসঙ্কট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সরকার নিজের কাজ তো করবেনই, কিন্তু আমি দেখেছি জনগণও একাজে যথেষ্ট সচেষ্ট। অনেক গ্রামেই এই ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি হয়েছে, আর জল কতটা মূল্যবান এটা সেই মানুষই বুঝতে পারেন যিনি জলকষ্ট ভোগ করেছেন। এইজন্য এই সমস্ত জায়গায় জলের প্রতি মানুষ অনেক সংবেদনশীল এবং জল সংরক্ষণের ব্যাপারে কিছু না কিছু করার একটা চেষ্টা থাকে। কিছুদিন আগে আমাকে কেউ বলছিলেন যে, মহারাষ্ট্রের আহ্মদনগর জেলার হিবড়ে বাজার গ্রাম পঞ্চায়েত আর তার অধীন গ্রামবাসীরা গ্রামে জলের প্রয়োজনীয়তার ওপরে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। জল সংরক্ষণের ইচ্ছা আছে এমন গ্রাম অনেক পাওয়া যায়, কিন্তু এই গ্রামগুলি কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করে চাষের ধারাই বদলে দিয়েছেন। আখ, কলা ইত্যাদি যে সমস্ত ফসলে জলের প্রয়োজন বেশি হয়, তাঁরা সেই সমস্ত ফসলের চাষ ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শুনতে যতটা সরল মনে হচ্ছে, আদতে কাজটা ততটা সহজ নয়। সবাই মিলে কত বড় একটা সংকল্প করেছেন! যদি কোনও কারখানা জলের ব্যবহার করে আর আমরা সেই কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলি, কারণ জলের ব্যবহার বেশি হচ্ছে, তাহলে কি পরিণাম হবে তা আপনারা জানেন। কিন্তু এই কৃষকবন্ধুদের দেখুন, যখন তাঁরা দেখলেন যে আখ চাষে জল বেশি লাগছে, কাজেই আখের চাষ ছেড়ে দেওয়া উচিত, তো তাঁরা ছেড়ে দিলেন। আর তাঁরা শুরু করলেন সেইসব ফল ও সবজির চাষ যাতে জল কম লাগে। তাঁরা স্প্রিংক্লার, ড্রিপ ইরিগেশন, ওয়াটার হারভেস্টিং, ওয়াটার রিচার্জিং প্রভৃতি পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। তার ফলে গ্রামটি আজ নিজের শক্তিতেই জল সংকটের সঙ্গে লড়াই করার জন্য তৈরি হয়ে গেছে। এটা ঠিক যে আমি একটি ছোট্ট গ্রাম হিবড়ে বাজারের কথাই বললাম, কিন্তু এরকম আরও অনেক গ্রাম আছে। আমি এই সব গ্রামবাসীদের এই ধরণের ভালো কাজের জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন জানাচ্ছি।
আমাকে জনৈক ব্যক্তি জানিয়েছেন যে মধ্যপ্রদেশের দেবাস জেলার গোরবা গ্রাম পঞ্চায়েত নিজেদের চেষ্টায় কৃষি জলাশয় তৈরির প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন। তাঁরা প্রায় ২৭টি কৃষি-জলাশয় তৈরি করেছিলেন। এর ফলে ভূগর্ভস্থ জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছিল, জল অনেক ওপরে উঠে এসেছিল। যখনই চাষের জন্য জলের প্রয়োজন হয়েছিল, জল পাওয়া গেছিল এবং ফসল উৎপাদন ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। জল সংরক্ষণ তো হলই, আর যখন এভাবে জলস্তর ওপরে উঠে আসে তখন বিশুদ্ধ জল পাওয়ার অনেক সুবিধা হয়। আর এটা বলা হয় যে বিশুদ্ধ পানীয় জল মোট আভ্যন্তরীণ বিকাশ বাড়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করে, স্বাস্থ্যও ভালো হয়। কখনো কখনো মনে হয় যে এখন তো ভারত সরকার রেল পরিষেবার মাধ্যমে লাতুরে জল পৌঁছে দেয়, তা বিশ্বের কাছে এক বড় খবর হয়ে ওঠে। এটা ঠিক যে, যে দ্রুতগতির সঙ্গে রেল এই কাজ করে চলেছে তা অভিনন্দনযোগ্য। কিন্তু সেই গ্রামের মানুষরাও অভিনন্দনযোগ্য। আমি তো বলব, রেলের থেকেও তাঁরা বেশি অভিনন্দনযোগ্য। এমন অনেক পরিকল্পনা জনগণের সাহায্যে চলছে, যা কখনও সামনে আসে না। সরকারের ভালো কাজের কথা কখনও না কখনও সামনে আসে, কিন্তু যদি কখনো আমরা আমাদের আশেপাশে দেখি, তো দেখব, যে খরার মোকাবিলা করার জন্য, মানুষ কতরকম ভাবে, নতুন নতুন পদ্ধতির সাহায্যে সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হয়েছেন।
মানুষের স্বভাবই হল, যত বিপদের মধ্যেই দিন কাটুক না কেন, কোনো সুসংবাদ এলে বিপদ যেন কেটে গেছে মনে হয়। যখন থেকে ১০৬ শতাংশের পরিবর্তে ১১০ শতাংশ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা সর্বজনবিদিত হয়েছে, তখনই মনে হল যেন এক মস্ত বড় শান্তির বার্তা এল! এখনও বর্ষা আসার দেরি আছে, কিন্তু ভাল বর্ষা হওয়ার খবর এক নতুন উদ্দীপনা তৈরি করেছে।
কিন্তু আমার প্রিয় দেশবাসী, ভালো বৃষ্টি হবে – এই খবর আমাদের যতটা আনন্দ দেয়, ততটাই আমাদের কাছে এক ভালো সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ এনে দেয়। – আমরা কি গ্রাম গ্রামে জল সংরক্ষণের জন্য অভিযান চালাতে পারব? কৃষকদের মাটির প্রয়োজন, ক্ষেতে ফসলের জন্য কাজে লাগে। এবার আমরা গ্রামের পুকুর থেকে মাটি তুলে নিয়ে ক্ষেতে ঢালতে পারি না? তাতে ক্ষেতও ভাল থাকবে আর তার জল সঞ্চয়ের ক্ষমতাও বেড়ে যাবে। কখনও সিমেন্টের বস্তায়, কখনও সারের খালি বস্তায় পাথর আর মাটি ভরে জল যাওয়ার রাস্তায় সেগুলো রেখে জল সঞ্চয় করা যেতে পারে কি? পাঁচদিন বা সাতদিন জল তাহলে আটকে থাকবে, এবং ভূগর্ভে জল সঞ্চিত হবে। জলস্তর বাড়বে, আমাদের কুয়োতে জল আসবে। তাই যতটা সম্ভব জল সঞ্চয় করা প্রয়োজন। বর্ষার জল, গ্রামের জল গ্রামেই থাকবে। এই উদ্দেশ্যে যদি আমরা কিছু কাজ করি, সেটা সম্মিলিত প্রয়াসেই সম্ভব। তো আজ জলের সংকট ভালোই রয়েছে, খরা চলছে। কিন্তু আগামী মাস দেড়েক আমাদের হাতে সময় রয়েছে। আমি তো সবসময়ই বলি যে, যদি আমরা মহাত্মা গান্ধীর জন্মস্থান পোরবন্দরে যাই, তো ওখানে যে আলাদা আলাদা জায়গা আমরা দেখি, সেখানে একটি জায়গা আছে, যেখানে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের জন্য ঘরের নীচে ২০০ বছরের পুরনো জলাশয় তৈরি করা আছে। আর সেখানে জল কতটা বিশুদ্ধ থাকে।
শ্রীমান কুমার কৃষ্ণা ‘মাই গভ’-এ প্রশ্ন করেছেন – আমাদের জীবৎকালে গঙ্গা সাফাই অভিযান সম্ভব হবে কি? ওঁর চিন্তা খুবই স্বাভাবিক। কারণ প্রায় ৩০ বছর ধরে এই কাজ চলছে। কত সরকার এসেছে, কত প্রকল্প তৈরি হয়েছে, অনেক খরচও হয়েছে। আর তাই ভাই কুমার কৃষ্ণা-র মত দেশের কোটি কোটি মানুষের মনে এই প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক। যাঁরা ধর্ম মানেন, তাঁদের কাছে গঙ্গা মোক্ষদায়িনী। আমার মনে হয় গঙ্গা শুধু মোক্ষদায়িনীই নয়, জীবন-দায়িনীও বটে। গঙ্গা আমাদের রুজি-রুটির সংস্থান করে। গঙ্গা আমাদের নতুন করে বাঁচার শক্তি যোগায়। গঙ্গা যেমন বয়ে চলে, তেমনভাবে দেশের অর্থনীতিকেও এক নতুন প্রবহমানতা দেয়। এক ভগীরথ আমাদের গঙ্গা এনে দিয়েছিলেন, কিন্তু একে বাঁচানোর জন্য কোটি কোটি ভগীরথ দরকার। জনগণের সামগ্রিক সাহায্য ছাড়া এ কাজ কখনই সম্ভব হবে না। এর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বচ্ছতার জন্য আমাদের change agent হতে হবে। বার বার একই কথা আলোচনা করতে হবে। বলতে হবে। সরকারের তরফে অনেকগুলো প্রকল্প চলছে। গঙ্গার তীরে যেসমস্ত রাজ্য আছে, সেইসব রাজ্যের সম্পূর্ণ সহযোগিতা নেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে। সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে একাজের সঙ্গে যুক্ত করার প্রয়াস চলছে। পরিবেশ দূষণ ও কারখানার মাধ্যমে দূষণ রোধ করার জন্য নানান পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন গঙ্গায় খুব বেশি মাত্রায় নালা-নর্দমার মাধ্যমে জঞ্জাল এসে পড়ে। এই জঞ্জাল পরিষ্কার করার জন্য বারাণসী, এলাহাবাদ, কানপুর, পাটনা ইত্যাদি নানা জায়গায় Trash skimmer জলে ভাসতে ভাসতে জঞ্জাল পরিষ্কার করতে থাকে। সমস্ত স্থানীয় সংগঠনগুলিকে জানানো হয়েছে এবং অনুরোধ করা হয়েছে যে তারা যেন এই কাজ চালু রাখেন এবং জঞ্জাল পরিষ্কারের কাজটি নিয়মিত করেন। আগে আমাকে বলা হয়েছিল, যে যেখানে প্রচেষ্টা হয় ভালোভাবে, সেখানে প্রতিদিন ৩ থেকে ১১ টন পর্যন্ত জঞ্জাল সাফ করা সম্ভব হয়। তাহলে এটা ঠিক যে আমরা এক বড়ো মাত্রায় জঞ্জাল পরিষ্কার করতে সমর্থ হচ্ছি। আগামী দিনে আরও কয়েকটি জায়গায় Trash skimmer লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। আর এর উপযোগিতা গঙ্গা ও যমুনার তীরবর্তী মানুষরা খুব শীঘ্রই বুঝতে পারবেন, pulp and paper, distillery এবং sugar industry–র দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য এক কার্যকরী পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই পরিকল্পনা কার্যকর করাও শুরু হয়ে গেছে। আমার মনে হয়, এই কাজের সুফল আসবে।
গত কয়েকদিনে কিছু সরকারি কর্তাব্যক্তি আমাকে জানিয়েছে যে উত্তরাখণ্ড এবং উত্তরপ্রদেশে distillery থেকে যে বর্জ্য পদার্থ নিষ্ক্রমণ হতো, তা সম্পূর্ণ বন্ধ করতে তাঁরা সফল হয়েছেন। এটা আমার কাছে একটা আনন্দের খবর। Pulp and Paper industry বাblack liquor–এর কারখানা থেকে বর্জ্য পদার্থ নিষ্ক্রমণ প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই সব ঘটনা প্রমাণ করছে যে আমরা সঠিক লক্ষ্যের দিকে এগোচ্ছি আর সচেতনতাও বেড়েছে।
আমি দেখেছি যে শুধু গঙ্গার তীরই নয়, সুদূর দাক্ষিণাত্যে যাঁরা বসবাস করেন, তাঁরাও অবশ্যই বলেন যে গঙ্গা সাফাই সম্পূর্ণ হবে তো? তো জনগণের এই আস্থা গঙ্গা সাফাইয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই সফলতা দেবে। গঙ্গার পরিচ্ছন্নতার জন্য লোকে আর্থিক সাহায্যও করছেন যার ফলে খুব ভালোভাবে এই কাজ চলছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ ২৪-শে এপ্রিল। ভারতে এই দিনটি ‘পঞ্চায়েতি রাজ দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। আজকের দিনেই আমাদের দেশে পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। আর আজ সারা দেশে পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থা আমাদের গণতন্ত্রের এক গুরুত্বপূর্ণ একক হিসাবে সফলতার সঙ্গে কাজ করে চলেছে। চোদ্দই এপ্রিল আমরা বাবা সাহেব আম্বেদকরের ১২৫-তম জন্মজয়ন্তী পালন করেছি, আর আজ ২৪-শে এপ্রিল ‘পঞ্চায়েতি রাজ দিবস’ পালন করছি। এ এক সুন্দর সমাপতন। আমাদের সংবিধানের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ আমাদের গ্রাম। সংবিধানের সঙ্গে গ্রামকে যুক্ত করার এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করার প্রেরণা তিনি। এই লক্ষ্যে তাঁর জন্মদিন
১৪-ই এপ্রিল থেকে ২৪-শে এপ্রিল এই দশ দিন ব্যপী গ্রামোদয় থেকে ভারতোদয় অভিযান চালানো হয়েছে। এ আমার সৌভাগ্য যে ১৪-ই এপ্রিল, বাবা সাহেব আম্বেদকরের জন্মদিনে তাঁর জন্মস্থান মহু যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। সেই পবিত্র স্থানে প্রণাম জানানোর সুযোগ আমার হয়েছিল। আজ ২৪ তারিখ, ঝাড়খণ্ডে, যেখানে সবথেকে বেশি আদিবাসী ভাই-বোন রয়েছেন, সেখানে গিয়ে আজ আমি ‘পঞ্চায়েতি রাজ দিবস’ পালন করব। বেলা তিনটের সময় আরও একবার দেশের সব পঞ্চায়েত-এর সঙ্গে কথা বলব। এই অভিযান এক মস্ত বড়ো সচেতনতার কাজ করেছে। ভারতবর্ষের প্রতিটি গ্রামে গণতান্ত্রিক কাঠামো কীভাবে দৃঢ় করা যায়, গ্রামগুলিকে কীভাবে স্বনির্ভর করা যায়, গ্রাম নিজেই নিজের উন্নতির লক্ষ্যে নানান পরিকল্পনা কীভাবে তৈরি করবে, পরিকাঠামো, সামাজিক পরিকাঠামোর গুরুত্ব, গ্রামে ড্রপ-আউট হওয়ার সম্ভাবনা নির্মূলকরণ, বাচ্চাদের স্কুলছুট হওয়া বন্ধ করা, ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ অভিযান সাফল্যের সঙ্গে চালানো, কন্যার জন্মদিনকে গ্রামের উৎসবের দিন হিসাবে পালন করা ইত্যাদি নানা লক্ষ্যের সঙ্গে কিছু গ্রামে খাদ্য দানের কাজও হয়েছে। একই সঙ্গে ভারতের এতগুলো গ্রামে এতগুলো অনুষ্ঠান দশ দিন ধরে চলেছে, এরকম খুব কমই দেখা যায়। আমি সমস্ত রাজ্য সরকারকে, গ্রাম প্রধানদের এজন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি। আপনারা অত্যন্ত মৌলিক ও নতুন পদ্ধতিতে গ্রামের উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য, গণতন্ত্রকে আরও দৃঢ় করার জন্য এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছেন। গ্রামে যে সচেতনতা এসেছে সেটাই তো ভারত উদয়ের মূল চাবিকাঠি। ভারত উদয়ের সাফল্য নির্ভর করে গ্রাম উদয়ের ওপর। আর তাই গ্রাম উদয়ের ওপর আমরা সবাই যত জোর দেব, ততই ঈপ্সিত ফল পাব।
মুম্বই থেকে শর্মিলা ধারকুড়ে ফোন করে নিজের ভাবনার কথা জানিয়েছেন। –
প্রধানমন্ত্রীজী নমস্কার! আমি মুম্বই থেকে শর্মিলা ধারকুড়ে বলছি। আমার বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষা সম্পর্কে আপনার কাছে প্রশ্ন আছে। যেমন শিক্ষাক্ষেত্রে বিগত বহু বছর ধরে সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা আছে। যথেষ্ট পরিমানে স্কুল-কলেজ না থাকার জন্য, শিক্ষার মান যথেষ্ট না হওয়ার জন্য দেখা যায়, শিশুরা তাদের শিক্ষা সম্পূর্ণ করেছে কিন্তু তাদের অক্ষরশিক্ষা, প্রাথমিক জ্ঞান হয়নি। এজন্য আমাদের শিশুরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। এই ব্যাপারে আপনার ভাবনা-চিন্তা কী? আপনি এই ক্ষেত্রের উন্নতি কীভাবে করতে চাইছেন তা যদি দয়া করে আমাদের জানান। ধন্যবাদ!
এই চিন্তা খুবই স্বাভাবিক। আজ প্রতিটি পরিবারে মা-বাবার যদি একটিই স্বপ্ন থাকে, তবে তা হল সন্তানের শিক্ষা। বাড়ি-গাড়ির কথা পরে আসে। ভারতবর্ষের মত দেশে সন্তানের পড়াশোনার জন্য এই ভাবনা, তাদের যথেষ্ট শিক্ষাদানের ভাবনা, এক মস্ত বড়ো শক্তি। সন্তানকে ভালো শিক্ষাদানের এই ভাবনা আরো বাড়ানো চাই। এই ব্যাপারে আরও সচেতনতা আসা প্রয়োজন।
আমি মনে করি যে সমস্ত পরিবারে এই সচেতনতা আছে, তার সুফল স্কুলে শিক্ষকদের ওপর পড়ে, এমনকি বাচ্চাও শিক্ষার ব্যাপারে সচেতন হয়ে ওঠে। এজন্য আমি সমস্ত অভিভাবক ও মা-বাবাকে অনুরোধ করব যে বাচ্চাদের সঙ্গে স্কুলের কার্যক্রম সম্পর্কে যথেষ্ট সময় দিয়ে আলোচনা করুন। আর যদি কোনও বিষয় মনে হয় তো নিজেই স্কুলে গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করুন। এই নজরদারী আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রের অনেক ত্রুটি কমাতে সাহায্য করবে। আর সবার অংশীদারীত্বে এটা অবশ্যই সম্ভব হবে। আমাদের দেশের প্রতিটি সরকার শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন এবং তাঁরা নিজের নিজের পদ্ধতিতে চেষ্টাও করেছেন। আর এটাও সত্যি যে দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের মনোযোগ ছিল যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি হোক, শিক্ষা ব্যবস্থার বিস্তার ঘটুক, স্কুল-কলেজ তৈরি হোক, শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ হোক, অনেক শিশু স্কুলে আসুক প্রভৃতি বিষয়ে। তো একপ্রকার শিক্ষাকে চতুর্দিকে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াস ছিল আমাদের প্রধান গুরুত্ব। আর এর প্রয়োজনও ছিল। কিন্তু এখন, শিক্ষাব্যবস্থা প্রসারের থেকেও বেশি গুরুত্ব শিক্ষার উন্নতির। শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে এক বড়ো কাজ আমরা করেছি। এখন আমাদের গুণগত শিক্ষার ওপর জোর দিতেই হবে। সাক্ষরতা অভিযানের মাধ্যমে ভালো শিক্ষা – এটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। এতদিন পরিকাঠামোর হিসাব-নিকাশ প্রয়োজন হত। এখন শিক্ষার সাফল্যের হিসাব নিকাশ করা প্রয়োজন। এতদিন পর্যন্ত স্কুলে কতজন শিক্ষার্থী এসেছে তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হত। এখন ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যার তুলনায় শিক্ষার গুণগত মানের ওপর জোর দিতে হবে। ভর্তি, ভর্তি, ভর্তি – এই মন্ত্র সারাক্ষণ জপ করা হত। কিন্তু এখন যে শিশু স্কুলে এসেছে, তাদের ভাল এবং যোগ্য শিক্ষা দেওয়ার ওপর আমাদের মনোনিবেশ করতে হবে। বর্তমান সরকারের বাজেট আপনারা দেখেছেন। সুশিক্ষার ওপরে জোর দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা ঠিক যে, অনেক পথ চলা বাকি। তবে যদি আমরা ১২৫ কোটি দেশবাসী সিদ্ধান্ত নিই, তাহলে এই পথও আমরা অতিক্রম করতে পারব। তবে শর্মিলাজীর কথাটা সত্যি যে আমাদের নিজেদের চিন্তাধারাতেও আপাদমস্তক পরিবর্তন আনা বাঞ্ছনীয়।
আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন, এবার বাজেটে পরম্পরাগত ধারণার বাইরে গিয়ে কিছু কাজ করা হয়েছে। বাজেটের মধ্যে দশটি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এবং দশটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকারী বন্ধন থেকে মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে এবং তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে সর্বোত্তম বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার জন্য তাদের সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে! তাদের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য এই পরিকল্পনা করা হয়েছে। ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে, আর এরকম প্রতিযোগিতা করাও দরকার। এরই সঙ্গে শিক্ষা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দক্ষতা। এই কারণে শিক্ষার ক্ষেত্রে টেকনোলজি খুব বড় ভূমিকা পালন করবে। দূর-শিক্ষার টেকনোলজি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও সহজ করবে। আর অদূর ভবিষ্যতে এর ফল বুঝতে পারব বলে আমার বিশ্বাস।
বেশ কিছুদিন যাবৎ একটি বিষয় নিয়ে আমাকে কিছু মানুষ প্রশ্ন করছেন, কেউ কেউ mygov webportal–এ লিখছেন, কেউ কেউ Narendra Modi App–এ লিখছেন, আর এরমধ্যে বেশিরভাগই যুব সম্প্রদায়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, নমস্কার! আমি বিজনোর থেকে মীণা কর্ণওয়াল বলছি। আজকের দিনে লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে খেলাধুলাতেও যুবকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। তাদের মধ্যে দলবদ্ধভাবে কাজ করার মানসিকতা, আর ভালো নেতৃত্বের গুণ থাকা দরকার যাতে তাদের সার্বিক বিকাশ সম্ভব হয়। এটা আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, কেননা আমি নিজে ‘ভারত স্কাউটস্ অ্যান্ড গাইডস্’-এর সদস্য ছিলাম। আমার জীবনে তার এক বড়ো প্রভাব পড়েছে। আমি চাই আপনি অনেক বেশি সংখ্যক যুবকদের অনুপ্রাণিত করুন। আমি চাই সরকার অধিক থেকে অধিক সংখ্যক NCC, NSS এবং ভারত Scouts and Guide-কে উৎসাহিত করুক।
আপনারা আমাকে এত প্রস্তাব পাঠিয়েছেন যে আমিও আপনাদের সঙ্গে কথা বলার আগে NCC, NSS, ভারত Scouts and Guides প্রভৃতি সংস্থার সঙ্গে কথা বলার জন্য মনস্থির করি। আপনাদের বারংবার অনুরোধে ও প্রস্তাবে আমি একটি বৈঠকের আয়োজন করেছিলাম, যাতে NCC, NSS, Scouts and Guide, Red Cross, Nehru যুবকেন্দ্রের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। আমি যখন তাদের জিজ্ঞেস করলাম তারা এর আগে কবে একত্রে মিলিত হয়েছেন, তো তারা আমাকে জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তারা প্রথমবার এই ধরনের বৈঠকে উপস্থিত হয়েছেন। এই কারণে আমি সর্বপ্রথম সেই সব যুবা বন্ধুদের অভিনন্দন জানাতে চাই, যাঁরা এই কাজ করার জন্য আমাকে অনুরোধ করেছেন। এর ফলে আমি এই বৈঠকের আয়োজন করেছিলাম, যা আমার খুব ভালো লেগেছে। তবে আমার মনে হয়, এই সংস্থাগুলির মধ্যে বোঝাপড়ার আবশ্যকতা আছে। প্রত্যেকে নিজের নিজের মতো অনেক কিছু করছে, কিন্তু যদি বিভিন্ন সংগঠন মিলিত ভাবে, সংগঠিত রূপে কাজ করে তো কত ভালোভাবে কাজ সম্পন্ন করতে পারে। কত বড়ো এদের বিস্তৃতি, কত পরিবার পর্যন্ত এরা পৌঁছবে। এদের ব্যপ্তি দেখে আমি খুব আশ্চর্যান্বিত হয়েছি। তাদের মধ্যে কিছু না কিছু করার উৎসাহ আমি লক্ষ করেছি। আর এটাতো ঠিক, যে আমি নিজে NCC ক্যাডেট ছিলাম। তাই আমি জানি যে এই সংগঠন থেকে কীভাবে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গী জন্ম নেয়, প্রেরণা পায় এবং এক রাষ্ট্রিয় একতার চিন্তাভাবনা সংগঠিত হয়। আমি তো অল্প বয়সেই লাভবান হয়েছি। তবে আমার মনে হয়, এই সব সংগঠনগুলিতে এক নতুন প্রাণ সঞ্চয় করা দরকার। এক নতুন শক্তি সৃষ্টি করা দরকার। এবার আমি তাদের সামনে এই ধরণের কিছু বিষয় তুলে ধরেছি। আমি তাদেরকে বলেছি, এই গরমের সময় আমাদের যুবাবন্ধুরা কেন জল সঞ্চয়ের কাজে অংশ গ্রহণ করবে না? আমরা চেষ্টা করে কত ব্লক, কত জেলাতে খোলা জায়গায় শৌচকাজ বন্ধ করতে পারি, খোলা জায়গায় শৌচকর্ম কীভাবে বন্ধ করা যায়? দেশকে সংগঠিত করতে কীরকম পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার, আমাদের সকল সংগঠনের যুবকদের একটি সাধারণ জপমন্ত্র কী হতে পারে? ওদের সঙ্গে এরকমই কিছু কথাবার্তা হয়েছে।
আমি আপনাদের অনুরোধ করব, আপনারা আমাকে বলুন, কিছু সঠিক পরামর্শ দিন যে এই যুব সংগঠনগুলির কার্যপদ্ধতির মধ্যে নতুন কী সংযোজন করা যেতে পারে। আমার নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ-এ আপনারা লিখলে আমি সেটা উপযুক্ত জায়গায় পৌছে দেব আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই বৈঠক-এর পর সংগঠনগুলির কাজে গতি আসবে। আপনারাও এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করবেন এরকম পরিস্থিতি তৈরি হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের সবাইকে চিন্তা করতে বাধ্য করছে এরকম কিছু কথা এখন আমি বলব। আমি এটাকে আমাদের মধ্যে আলোড়ণ সৃষ্টিকারী বিষয়রূপে দেখি। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন যে আমাদের দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বিগত কয়েকটি নির্বাচনে এই বিষয়ে অনেক কথাবার্তা হয়েছে – কোন পার্টি কতগুলি গ্যাস সিলিণ্ডার দেবে? ১২-টা না ৯-টা? নির্বাচনে এটা ছিল একটা মুখ্য বিষয়। সব রাজনৈতিক দল মনে করেছিলেন যে মধ্যবিত্ত সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য গ্যাস সিলিণ্ডার একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অন্যদিকে অর্থনীতিবিদ্রা গ্যাস সাবসিডি কম করার কথা বলেছিলেন। কয়েকটি কমিটিও গ্যাস সাবসিডি কম করার বিষয়ে তাদের প্রস্তাব রেখেছেন। এই কমিটিগুলির জন্য কয়েক কোটি টাকা খরচ হচ্ছিল, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এটা সবারই অভিজ্ঞতা। কিন্তু তা সত্ত্বেও এর বাইরে কিছু ভাবা হয়নি। আমার দেশবাসী, আজকে আপনাদের বলতে আমাদের আনন্দ হচ্ছে যে, আমরা একটি তৃতীয় রাস্তা বার করেছি। আর এই রাস্তা হচ্ছে জনতা-জনার্দ্দনের উপরই বিশ্বাস রাখা। কখনো কখনো আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের নিজের থেকে নিজের লোকেদের ওপর বিশ্বাস করা উচিত। জনতা জনার্দনের ওপর বিশ্বাস রেখে আমি কথার কথা বলেছিলাম, আপনারা যদি বছরে ১৫০০ বা ২০০০ টাকার বোঝা সহ্য করতে পারেন, তাহলে গ্যাস সাবসিডি কেন ছেড়ে দিচ্ছেন না, যেটা কোনো গরীবের কাজে আসবে! আমি এই ধরনের কথা বলেছিলাম, কিন্তু আজকে আমি বলতে চাই, আমার দেশবাসীর ওপর আমার গর্ব হচ্ছে। এক কোটি পরিবার স্বেচ্ছায় গ্যাস সাবসিডি ছেড়ে দিয়েছেন। আর এই এক কোটি পরিবার ধনী নয়। আমি দেখছি, যারা সাবসিডি ছেড়েছেন, তাদের মধ্যে কেউ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, অবসরপ্রাপ্ত clerk, কৃষক, ছোটো দোকানদার – এই ধরনের মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবার। আর একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় লক্ষ করুন, গ্যাস সাবসিডি ছাড়ার জন্য মোবাইল ফোন অ্যাপ-এর সাহায্য নেওয়া যেতে পারত, অনলাইন-এ করতে পারতেন, টেলিফোনে মিস্ড কল করেও করতে পারতেন – এরকম অনেক উপায় ছিল। কিন্তু হিসেব করে দেখা গেছে যে এই এক কোটি পরিবার যাঁরা গ্যাস সাবসিডি ছেড়েছেন, তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে লিখিত আবেদন করে গ্যাস সাবসিডি ছেড়েছেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এটা খুব একটা ছোটো বিষয় নয়। সরকার যদি ট্যাক্স-এ অল্প কিছু ছাড় দেয়, তাহলে সপ্তাহব্যপী টিভি এবং সংবাদপত্রে সরকারের প্রশংসা শোনা যায়। আমাদের দেশে সাবসিডিকে একধরনের অধিকার বলে মানা হয়। কিন্তু এক কোটি পরিবার সাবসিডি ছেড়ে দিয়েছেন। আমি সবার আগে ঐ এক কোটি পরিবারকে শত শত প্রণাম জানাচ্ছি, অভিনন্দন জানাচ্ছি, কেননা তাঁরা রাজনৈতিক নেতাদের নতুনভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করেছেন। বিশ্বের অর্থনীতিবিদ্রা, যাঁরা এটা করলে ওটা হবে, এই ধরনের আর্থিক সমীকরণ উপস্থাপনা করেন, এই ঘটনা তাঁদেরও চিন্তার বাইরে। এক কোটি পরিবারের সাবসিডি ছাড়া এবং তার বদলে এককোটি গরীব পরিবারের গ্যাস সিলিণ্ডার পাওয়ার বিষয়টি সত্যিই মনে রাখার মতো। এক কোটি পরিবারের সাবসিডি ছাড়ার ফলে যে পরিমান টাকা বাঁচানো যাচ্ছে, সেটা হয়তো বাইরে থেকে দেখলে খুবই সামান্য। যেটা অসামান্য বিষয়, সেটা হল জনগণের ওপর বিশ্বাস রেখে কাজ করলে কত সন্তুষ্টি পাওয়া যায়। আমি, বিশেষ করে সমস্ত রাজনীতিবিদ্দের অনুরোধ করব, তাঁদের বলব আমরা যেন সর্বক্ষেত্রে জনগণের ওপর বিশ্বাস রাখি। আপনারা নিশ্চয়ই কখনো চিন্তাও করেননি যে আমরা এই ধরনের সাফল্য পাব আর আমাদের এই অভিমুখে যাওয়া উচিৎ। আমার বারবার মনে হয় যে তৃতীয় এবং চতুর্থ বর্গের জন্য কেন ইন্টারভিউ করব। পরীক্ষা দিয়ে যে নম্বর পাঠিয়েছে, তার উপর আস্থা রাখুন। কখনও কখনও তো আমার মনে হয় কি, আমরা ঘোষণা করি, আজ রেলের এই রাস্তায় কোনও টিকিট পরীক্ষক থাকবেন না। দেশের জনগণের ওপর আস্থা রেখে দেখুন কী হয়! এই ধরনের অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা আমরা করতে পারি। দেশের জনগণের ওপর আস্থা রাখলে আশাতীত ফল পাওয়া যেতে পারে। যাই হোক, এটাতো নিজস্ব মতামত। এটা কোনো সরকারী নিয়ম হতে পারে না। কিন্তু এই ধরনের একটা পরিবেশ তো আমরা তৈরি করতে পারি। আর এই পরিবেশ কোনো রাজনৈতিক নেতা তৈরি করছেন না, দেশের এককোটি পরিবার এই পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন।
রবি কর্কে নামে এক ভদ্রলোক আমাকে চিঠি লিখেছেন – “Good News everyday!” উনি লিখেছেন – দয়া করে আপনার আধিকারিকদের বলুন, প্রতিদিন কোনো একটি ভালো ঘটনার বিষয়ে প্রত্যেক খবরের কাগজ ও নিউজ চ্যানেল-এ পোস্ট করতে। সব ব্রেকিং নিউজই খারাপ খবর হয়। ১২৫ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে আমাদের আশেপাশে কি ভালো কিছুই হচ্ছে না? দয়া করে এই অবস্থার পরিবর্তন করুন। শ্রীমান রবি খুব রাগ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু আমার বিশ্বাস ও আমার উপর রাগ করছে না, বর্তমান অবস্থার উপর রাগ ব্যক্ত করছেন। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ভারতের প্রাক্তণ রাষ্ট্রপতি ড: এ পি জে আবদুল কালাম সবসময় বলতেন, সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় সব সময় আশাব্যঞ্জক খবর ছাপুন। তিনি বারবার এই কথা বলতেন। কিছুদিন আগে একটি খবরের কাগজের তরফ থেকে আমাকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন যে সোমবার দিন ওরা কোনো নিরাশাব্যঞ্জক খবর ছাপবেন না। অর্থাৎ কেবলমাত্র আশাব্যঞ্জক খবরই ছাপবে। আজকাল আমি দেখছি কিছু টিভি চ্যানেল আশাব্যঞ্জক খবর প্রচারের জন্য কিছু সময় নির্দিষ্ট করেছেন। তাহলে এটা তো ঠিকই যে আজকাল আশাব্যঞ্জক খবর প্রকাশের একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আর সবাই চাইছেন সাধারণ মানুষ যেন সঠিক আর ভালো খবর পান। এটা ঠিক যে কোনো বিখ্যাত ব্যক্তিও যদি ভালো ভালো কথা বলেন, ভালো ভালো শব্দ চয়ন করেন, ভালোভাবে তা উপস্থাপনা করেন তার যে প্রভাব, তার থেকে বেশি প্রভাব লক্ষ্য করা যায় কোনো ভালো খবরের। ভালো খবর ভালো কাজ করার প্রেরণা যোগায়। এটা তো ঠিক, ভালোর ওপর গুরুত্ব দিলে খারাপের স্থান আপনা থেকেই কমে যাবে। যদি প্রদীপ জ্বালাই, তাহলে অন্ধকার দূর হবেই, হবেই, হবেই! হয়তো আপনারা জানেন, এই কারণে সরকারী তরফে একটি ওয়েবসাইট খোলা হয়েছে – ট্রান্সফর্মিং ইণ্ডিয়া – এই ওয়েবসাইট-এ আশাব্যঞ্জক খবর প্রকাশ করা হয়। এটা শুধু সরকারের নয়, সাধারণ মানুষ এমনকী আপনিও কোনো ভালো খবর এই পোর্টালে পাঠাতে পারেন। আপনিও এতে যোগদান করতে পারেন। রবিজী, আপনি ভালো পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু দয়া করে আমার ওপর রাগ করবেন না। আমরা সবাই মিলে গঠনমূলক কাজ করার চেষ্টা করব, গঠনমূলক কথা বলার চেষ্টা করব, গঠনগত লক্ষ্যে পৌঁছনোর চেষ্টা করব।
আমাদের দেশের বৈশিষ্ট্য কুম্ভমেলা। কুম্ভমেলা পর্যটক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে। বিশ্বের খুব কম লোকেরই জানা আছে যে এত দীর্ঘ সময় ধরে নদীর তীরবর্তী স্থানে কোটি কোটি মানুষ আসেন। শান্ত মনে, শান্ত পরিবেশে এই মেলা সম্পন্ন হয়। এই ঘটনা প্রাতিষ্ঠানিক দৃষ্টিভঙ্গীতে, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দৃষ্টিভঙ্গিতে, সাধারণ মানুষের অংশীদারীত্বের দৃষ্টিভঙ্গীতে নিজেই এক খুব বড়ো নজির সৃষ্টি করে। বিগত কয়েকদিন ধরে আমি দেখছি যে, কিছু মানুষ সিংহস্ত কুম্ভের ছবি আপলোড করছে। আমি চাই যে ভারত সরকার ও রাজ্য সরকারের পর্যটন দপ্তর এই ছবিগুলির এক প্রতিযোগিতা আয়োজন করুন। আর লোকজনকে বলুন ভালো ভালো ফোটো তুলে আপলোড করতে। সাধারণ মানুষ জানতে পারবেন যে কুম্ভমেলার প্রতিটি কোণে কত বিভিন্ন রকমের ঘটনা ঘটে চলেছে – এক সুন্দর পরিবেশ তৈরি হয়ে যাবে। এই কাজ অবশ্যই করা সম্ভব। দেখুন, এই কথা ঠিক। মাঝে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আমার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তিনি বলছিলেন যে, আমরা স্বচ্ছতার ওপর বিশেষ জোর দিয়েছি, আর স্বচ্ছতা শুধু এই পরিসরে আটকে থাকুক, তা নয়, কুম্ভমেলা থেকে মানুষ স্বচ্ছতার বার্তা নিয়ে যাবেন এটাই তাঁরা চান। আমি মানি যে এই কুম্ভমেলা এক ধার্মিক এবং আধ্যাত্মিক মেলা। কিন্তু আমরা এটিকে এক সামাজিক মিলনক্ষেত্র হিসেবেও তৈরি করতে পারি। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র হিসেবেও গড়ে তুলতে পারি। সৎ সংকল্প, সৎ অভ্যাস গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার এ এক সুযোগ হতে পারে। জলের প্রতি ভালোবাসা, জলের প্রতি ভরসা কীভাবে বাড়ানো যায়, জল সঞ্চয়ের বার্তা দেওয়ার জন্য কুম্ভমেলার ব্যবহার যতরকম ভাবে করা যায়, তা আমাদের করা উচিত।
আমার প্রিয় দেশবাসী, পঞ্চায়েত রাজের এই মহতী দিনে আমি আরও একবার আপনাদের সঙ্গে অবশ্যই মিলব, আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আর প্রতিবারের মতো আপনাদের মনের কথার সঙ্গে আমার মনের কথার এই যে অটুট সংযোগ – এই জন্য আমার আনন্দ। আরও একবার অনেক অনেক ধন্যবাদ!
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক নমস্কার! আজ সারা বিশ্ব জুড়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ ইস্টার পালন করছেন। আমি সবাইকে ইস্টারের অনেক শুভকামনা জানাই।
আমার যুবা বন্ধুরা, আপনারা সবাই এখন পরীক্ষায় ব্যস্ত। কিছু লোকের হয়তো পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। আর কিছু লোকের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে – কারণ একদিকে পরীক্ষা, অন্যদিকে টি-২০ ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ। আজও হয়ত আপনারা ভারত আর অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে ম্যাচের জন্য অপেক্ষা করছেন। এর আগে ভারত পাকিস্তান আর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে খেলায় অসাধারণ ভাবে জয়ী হয়েছে। খেলায় খুব ভাল গতি এসেছে। আজ ভারত অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলবে। আমি দু’দলের খেলোয়াড়দেরই আমার শুভকামনা জানাচ্ছি। আমাদের জনসংখ্যার
৬৫ শতাংশ যুব প্রজন্ম। আর খেলার দুনিয়ায় আমরা যদি হেরে যাই, তো সে দুঃখের কথা। খেলার দুনিয়ায় এক নতুন বিপ্লবের সূচনা হয়েছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ক্রিকেটের মত এখন ফুটবল, হকি, টেনিস, কাবাডি – সব খেলার প্রতি ভারতে আগ্রহ বেড়েছে। আজ আমি যুব প্রজন্মকে আর এক খুশির খবর শুনিয়ে আমার প্রত্যাশার কথা জানাতে চাই। আপনারা তো নিশ্চয়ই এই খবর এখন জানতে পেরে গেছেন যে আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে অনূর্দ্ধ-১৭ ফিফা বিশ্বকাপের আয়োজন করছে আমাদের দেশ। সারা বিশ্বের ২৪টি দল খেলার জন্য ভারতে আসবে। ১৯৫১, ১৯৬২-র এশিয়ান গেমসে ভারত স্বর্ণপদক জয়ী হয়েছিল আর ১৯৫৬-র অলিম্পিক গেমসে ভারত চতুর্থ স্থান অধিকার করেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য – গত কয়েক দশকে আমরা ক্রমাগত নিম্নস্থান পেয়ে আসছি – হেরে যাচ্ছি – পিছু হটছি – পিছিয়ে যাচ্ছি – পিছিয়েই যাচ্ছি। এখন তো ফিফাতে আমাদের স্থান এত নীচে নেমে গেছে যে কোনও কথা বলার সাহসই আমরা করতে পারি না। অন্য দিকে আমি দেখছি যে বর্তমানে ভারতের যুব প্রজন্মের ফুটবলের প্রতি আগ্রহ বেড়ে চলেছে। ই-পি-এল হোক, স্প্যানিশ লীগ হোক বা ইণ্ডিয়ান সুপার লীগ-এর খেলা হোক, আমাদের দেশের যুব প্রজন্ম এই বিষয়ে খবরাখবর পাওয়ার জন্য, টিভিতে খেলা দেখার জন্য সময় বার করে নেয়। এই কথা বলার তাৎপর্য এই যে, খেলার প্রতি আগ্রহ তো বাড়ছে। কিন্তু এত বড় সুযোগ যখন ভারতের সামনে এসেছে, তখন আমরা শুধু আয়োজন করেই আমাদের দায়িত্ব শেষ করব? এই পুরো বছর জুড়ে আমরা এক ফুটবল-ফুটবল পরিবেশ তৈরি করে তুলতে পারি। স্কুলে, কলেজে, দেশের প্রতিটি কোণে আমাদের যুবা প্রজন্ম, আমাদের স্কুলের ছেলেরা তাদের ঘাম ঝরাক। চতুর্দিকে ফুটবল খেলা হোক। যদি এটা করতে পারি, তবেই তো আয়োজনের মজা আসবে আর এই জন্য আমাদের সবার প্রচেষ্টা হওয়া উচিত ফুটবলকে গ্রামে গ্রামে অলিতে গলিতে পৌঁছে দেওয়ার। ২০১৭ ফিফা অনূর্দ্ধ-১৭ বিশ্বকাপ এমনই এক সুযোগ। এই এক বছরের মধ্যে আমরা চারদিকে যুবপ্রজন্মের মধ্যে ফুটবলের জন্য এক নতুন উদ্যম, এক নতুন উৎসাহ তৈরি করি। এই আয়োজনের একটা লাভ তো আমাদের আছেই, আমাদের এখানে পরিকাঠামো তৈরি হবে, খেলার জন্য যে সব সুযোগ-সুবিধা আবশ্যক, তার প্রতি মনোযোগ পড়বে। আমি তো তখনই এর আনন্দ পাব যখন যুব প্রজন্মের প্রত্যেককে ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত করতে পারব।
বন্ধুরা, আপনাদের কাছে আমার এক প্রত্যাশা আছে। ২০১৭-র এই আয়োজন, এই সুযোগ কেমন হবে, আমাদের ফুটবলে গতি আনার জন্য বছরভর কী কী পরিকল্পনা করতে হবে, কী ধরনের প্রচার করতে হবে, বর্তমান ব্যবস্থায় কী সংশোধন করতে হবে, ফিফা অনূর্দ্ধ-১৭ বিশ্বকাপের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের খেলার প্রতি আগ্রহ কীভাবে বাড়ানো যায়, সরকারী স্তরে, প্রশিক্ষণ সংস্থাগুলিতে, অন্যান্য সামাজিক সংগঠনগুলিকে খেলার সঙ্গে কীভাবে যুক্ত করা যায়, তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করুন। ক্রিকেটে আমরা এই সবকিছু দেখতে পাই, কিন্তু অন্যান্য খেলার ক্ষেত্রেও এই জিনিসগুলি আনতে হবে। ফুটবল এক সুযোগ। আপনারা কি আমাকে এই ব্যাপারে পরামর্শ দিতে পারেন? বিশ্বের সামনে ভারতের সম্মান বাড়ানোর এ এক মস্ত বড় অবসর বলে আমার মনে হয়। ভারতের যুবশক্তিকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করার এ এক সুযোগ বলে আমার মনে হয়। ম্যাচের সময় কি পেলাম, কি হারালাম এই অর্থে নয় – এই আয়োজন করার মাধ্যমে আমাদের নিজস্ব ক্ষমতাকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারি, শক্তি প্রদর্শন করতে পারি, আর ভারতের ‘ব্র্যান্ডিং’-ও করতে পারি। আপনারা কি নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ-এ আপনাদের পরামর্শ পাঠাতে পারেন? লোগো কীরকম হবে, স্লোগান কীরকম হবে, সারা দেশে এই বিষয়ে উৎসাহ তৈরি করার জন্য কী কী করা উচিত, থিম সং কীরকম হবে, স্যুভেনির কী কী রকম তৈরি করা যেতে পারে – বন্ধুরা ভাবুন, আর আমি চাই যে, আমার প্রতিটি নওজোয়ান এই ২০১৭-র ফিফা অনূর্দ্ধ-১৭ বিশ্বকাপের দূত হয়ে উঠুন। ভারতের এক নতুন পরিচয় তুলে ধরার এই সুন্দর সুযোগে আপনারা সবাই সামিল হোন।
আমার প্রিয় বিদ্যার্থীরা, ছুটির সময় কোথায় বেড়াতে যাবেন তা নিয়ে নিশ্চয়ই ভাবনা-চিন্তা করেছেন। খুব কম মানুষই আছেন, যাঁরা বিদেশ যান, বেশির ভাগ মানুষই নিজের নিজের রাজ্যে কোথাও না কোথাও ৫ দিন – ৭ দিনের জন্য বেড়াতে যান। কিছু মানুষ রাজ্যের বাইরেও যান। আগের বারেও আমি আপনাদের বলেছিলাম, আপনারা যেখানেই যান না কেন, সেখান থেকে ফোটো আপলোড করুন। আর আমি দেখেছি যে, যে কাজ পর্যটন দপ্তর, সংস্কৃতি দপ্তর, রাজ্য সরকার ও ভারত সরকার করতে পারে নি, সেই কাজ দেশের এই রকম কোটি কোটি পর্যটক করে দিয়েছেন। এমন এমন জায়গার ফোটো আপলোড করেছেন যে দেখে সত্যিই আনন্দ পেয়েছি। এই কাজকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এবারেও আপনারা একইরকম ভাবে করুন, তবে এবার তার সঙ্গে কিছু লিখুন – শুধু ফোটোই নয়। আপনার লেখার যে ক্ষমতা আছে, তার প্রদর্শন করুন আর নতুন জায়গা দেখলে অনেক কিছু শেখার সুযোগ হয় – যে জিনিস আমরা শ্রেণিকক্ষে শিখতে পারি না, যা আমরা আমাদের পরিবারে শিখতে পারি না, যে জিনিস আমরা বন্ধুদের কাছ থেকে শিখতে পারি না, তা কখনও কখনও পর্যটনের মাধ্যমে শেখার অনেক বেশি সুযোগ পাওয়া যায় আর নতুন জায়গার নতুনত্বকে অনুভব করা যায়। লোক, ভাষা, খাওয়া-দাওয়া, সেখানকার আদব-কায়দা, না জানি আরও কত কিছু দেখার সুযোগ পাওয়া যায়। আর সেই যে বলা হয় – ‘A traveller without observation is a bird without wing’। ভাল জিনিস দেখার শখ থাকলে নজরটাও তৈরি করতে হয়। ভারত বৈচিত্রে ভরা এক দেশ। একবার দেখার জন্য বেরিয়ে পড়ুন, জীবনভোর দেখতেই থাকবেন, দেখতেই থাকবেন। কখনই মন ভরবে না। আর আমি তো ভাগ্যবান, আমি ভ্রমণ করার অনেক সুযোগ পেয়েছি। যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম না, প্রধানমন্ত্রী ছিলাম না, আর আপনাদের মত অল্প বয়সের ছিলাম, আমি অনেক ঘুরেছি। বোধহয় ভারতবর্ষের এমন কোনও জেলা নেই, যেখানে আমার যাওয়ার সুযোগ হয় নি। জীবনকে তৈরি করার জন্য পর্যটনের এক বড় ভূমিকা আছে। আর এখন ভারতের যুবকরা সাহসের সঙ্গে পর্যটনে চলে যাচ্ছেন, কৌতূহল নিরসন করতে চলে যাচ্ছেন। আগের মত তাঁরা গতানুগতিক পথে না চলে, নতুন কিছু করতে চাইছেন – নতুন কিছু দেখতে চাইছেন। আমি একে একটা খুব ভাল নিদর্শন বলে মানি। আমাদের যুব প্রজন্ম সাহসী, যেখানে কেউ পা রাখেনি, সেখানে পৌঁছনোর চেষ্টা তাঁদের থাকা উচিত।
আমি কোল ইণ্ডিয়া-কে বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ দিতে চাই। নাগপুরের কাছে সাওনের-এ যেখানে কয়লাখনি আছে, সেখানকার ওয়েস্টার্ণ কোলফিল্ড লিমিটেড এক পরিবেশ বান্ধব ‘খনি পর্যটন এলাকা’ তৈরি করেছে। সাধারণত আমাদের মত মানুষের ভাবনাচিন্তা হচ্ছে – কয়লাখনি? তাহলে দূরেই থাকি। আমরা যখন সেখানকার মানুষের ছবি দেখি, আমাদের মনে হয় যে ওখানে গিয়ে কী লাভ। আর কথাই তো আছে যে কয়লাতে হাত কালো হয়, সেজন্যই লোক খনি থেকে দূরে চলে যায়। কিন্তু সেই কয়লা খনিকেই পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা? আর আমি খুশি যে এই তো সবে শুরু, এখন পর্যন্ত প্রায় দশ হাজারেরও বেশি মানুষ নাগপুরের কাছে সাওনের গ্রামে পরিবেশ বান্ধব খনি পর্যটন কেন্দ্র দেখেছেন। এই জায়গা নিজেই নতুন জিনিস দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে। আমি আশা করব, ছুটিতে যদি আপনারা বাইরে বেড়াতে যান, তাহলে পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও কিছু কাজ আপনারা করতে পারবেন। আজকাল একটা জিনিস দেখা যাচ্ছে – এই ব্যাপারে কম বা বেশি যা-ই হোক, আলোচনা কিন্তু হচ্ছে। হয়ত ব্যতিক্রমও আছে, তবু একটা সচেতনতা যে এসেছে – একথা বলা যেতেই পারে। পর্যটন ক্ষেত্রগুলিতে মানুষ পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার চেষ্টা করছেন। পর্যটকরাও এই চেষ্টায় সামিল হচ্ছেন। পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে যাঁরা স্থায়ীভাবে বসবাস করেন, তাঁরাও এই কাজে যোগ দিচ্ছেন। হয়ত খুব বেশি বৈজ্ঞানিকভাবে কাজ হচ্ছে না, কিন্তু হচ্ছে। আপনিও কি একজন পর্যটক হিসেবে পর্যটন কেন্দ্রের স্বচ্ছতায় গুরুত্ব দিতে পারেন না? আমার স্থির বিশ্বাস, আমাদের যুব বন্ধুরা এই বিষয়ে অবশ্যই সহায়তা করবেন। আর একথা সত্যি যে, পর্যটন থেকে সবচেয়ে বেশি আয় হয়, অত্যন্ত দরিদ্র লোকেরাও এই ক্ষেত্র থেকে রোজগার করতে পারেন। পর্যটক যখন কোথাও বেড়াতে যান, তখন দরিদ্র হলেও তিনি কিছু তো কিনবেনই – ধনী হলে খরচের পরিমাণ হবে বেশি। অতএব পর্যটন থেকে প্রচুর রোজগারের সম্ভাবনা আছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারত এখনও পর্যটনে অনেক পিছিয়ে আছে। কিন্তু আমরা একশো পঁচিশ কোটি দেশবাসী যদি মনে করি যে আমাদের পর্যটনকে শক্তিশালী করতে হবে, তাহলে আমরা অবশ্যই সারা বিশ্বকে আকর্ষণ করতে পারি। বিশ্বপর্যটনের এক বড় অংশকে আমরা এইভাবে নিজেদের দিকে টেনে নিতে পারি। আর তাহলে আমাদের দেশের কোটি কোটি নব্য যুবার রোজগারের উপায় করে দেওয়া সম্ভব হবে। সরকার হোক, সংস্থা হোক, সমাজ হোক বা নাগরিক – এই কাজ সবাই মিলে করতে হবে। আসুন, আমরা সেই উদ্দেশ্যে কিছু কাজ করি।
আমার যুবা বন্ধুরা, ছুটিগুলো এমনি এমনি আসে আর চলে যায় – এটা আমার ভাল লাগে না। আপনারাও এই বিষয়টি ভাবুন। আপনারাও কি আপনাদের ছুটি, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বছরগুলো, মহত্বপূর্ণ এই সময়গুলো এইভাবেই চলে যেতে দেবেন? আমি কতকগুলো বিষয় বলছি – আপনারা ভেবে দেখতে পারেন। আপনারা কি এই ছুটিতে নিজেদের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে আরও কোনও বাড়তি গুণ যোগ করার সঙ্কল্প নিতে পারেন না? যদি আপনি সাঁতার না জানেন তবে ছুটিতে সাঁতার শিখে নেওয়ার সঙ্কল্প করতে পারেন। যদি সাইকেল চালানো না জানা থাকে তাহলে পণ করুন, ছুটির দিনগুলোতে সাইকেল চালানো শিখবেন। আমি আজ পর্যন্ত দু’আঙুলে কম্পিউটার টাইপ করি – তাহলে কি টাইপিংটা শিখে নেব? আমাদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটাবার কতরকম কৌশলই না আছে – সেগুলোই শিখি না কেন! নাহয় আমাদের ঘাটতিগুলোকেই দূর করি। আমাদের নিজেদের শক্তিকে আরও বাড়াই। ভেবে দেখুন, এর জন্য যে খুব বড় কোনও ক্লাস দরকার, কোনও প্রশিক্ষক দরকার, বিরাট অঙ্কের ফিজ্ বা বড় বাজেট চাই – তা নয়। নিজের আশেপাশে তাকিয়ে দেখে যদি মনে করেন – ফেলে দেওয়া জিনিস থেকে আপনি দারুণ কিছু বানাতে পারেন – তবে শুরু করে দিন, দেখুন কত আনন্দ পাবেন। দিনের শেষে দেখবেন জঞ্জাল থেকে আপনি কী অপূর্ব জিনিস বানিয়েছেন। আপনার ছবি আঁকার শখ আছে, কিন্তু ছবি আঁকতে পারেন না – আরে শুরু করেই দেখুন না, ঠিক এসে যাবে। ছুটির সময়টাতে নিজের ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য, নিজের ক্ষমতা, কর্মকুশলতা বাড়ানোর জন্য কিছু করুন। শুধু আমি যে ক্ষেত্রগুলির কথা বললাম, তা-ই নয়, তার বাইরে আরও অজস্র কাজের সুযোগ আছে। এর ফলে আপনার ব্যক্তিত্ব, আপনার আত্মবিশ্বাস যে কতখানি বেড়ে যাবে – দেখে নেবেন। ছুটির শেষে যখন স্কুল বা কলেজে ফিরে যাবেন, আর গিয়ে বন্ধুদের বলবেন – ভাই, আমি ছুটিতে এইটা শিখেছি; দেখবেন, যদি তারা কিছু না শিখে থাকে, তো ভাববে, এই যাঃ, আমার তো সর্বনাশ হয়ে গেল। তুমি তো দারুণ বুদ্ধিমান, কিছু শিখে এসেছো। বন্ধুদের মধ্যে এটা নিয়ে কথা হবে। আমি নিশ্চিত, আপনারা নিশ্চয়ই কিছু করবেন এবং আমাকে জানাবেন যে কী শিখলেন। কি – জানাবেন তো?
এবারের ‘মন কি বাত’-এর জন্য ‘মাই গভ’ পোর্টালে কিছু পরামর্শ এসেছে। যেমন –
“আমার নাম অভি চতুর্বেদী। নমস্কার, প্রধানমন্ত্রীজী, গতবার গরমের ছুটিতে আপনি বলেছিলেন, পাখিদেরও গরম লাগে। একটি পাত্রে জল ভরে আমাদের ব্যালকনি বা ছাদে রেখে দেওয়া দরকার। যা থেকে পাখিরা এসে জল খেয়ে যেতে পারবে। আমি এই কাজটি করে আনন্দ পেয়েছি। এই সুযোগে অনেক পাখির সঙ্গে আমার বন্ধুত্বও হয়ে গেছে। আমার অনুরোধ, আপনি ‘মন কি বাত’-এ এই বিষয়টা আবার বলুন। ধন্যবাদ!”
আমার প্রিয় দেশবাসীগণ, আমি অভি চতুর্বেদী নামে এই বালকটিকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। সে আমাকে একটা ভালো কাজের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। গতবার আমার মনে ছিল। আর তাই আমি বলেছিলাম যে, গরমের দিনে পাখিদের জন্য ঘরের বাইরে মাটির পাত্রে জল রাখুন। অভি আমাকে জানিয়েছে, সে সারা বছর এই কাজ করে চলেছে এবং অনেক পাখি তার বন্ধু হয়ে গেছে। হিন্দির মহান কবি মহাদেবী বর্মা পাখিদের খুব ভালবাসতেন। নিজের কবিতায় তিনি লিখেছিলেন – “তোকে দূরে যেতে দেবো না, উঠোন ভরে দেবো দানায়, পাত্রে ভরে দেবো মিষ্টি ঠাণ্ডা জল।” আসুন মহাদেবীজী-র এই কথাকে আমরা কাজে পরিণত করি। আমি অভিকে অভিনন্দন জানাচ্ছি, সেইসঙ্গে কৃতজ্ঞতাও জানাচ্ছি – তুমি আমাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা মনে করিয়ে দিয়েছো।
মহীশূর থেকে শিল্পা কুকে আমাদের সকলের জন্য একটা খুব সংবেদনশীল বিষয় তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের বাড়ির পাশে দুধওয়ালা, খবরের কাগজওয়ালা, পোস্টম্যান আসেন। কখনও কখনও বাসনওয়ালা, কাপড় বিক্রিওয়ালাও ওই পথ দিয়ে যান। গরমের দিনে আমরা কি কখনও তাঁদের জল পান করতে ডেকেছি, কখনও কি জল দিয়েছি তাঁদের? শিল্পা, আমি আপনার প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞ। কারণ আপনি এক অতি সংবেদনশীল বিষয়কে খুব সহজভাবে তুলে ধরেছেন। এটা ঠিক কথা। ব্যাপারটা খুবই সামান্য, কিন্তু গরমের সময় যদি পোস্টম্যান বাড়ির পাশে আসেন, আর আমরা তাঁকে জল খাওয়াই, তাহলে তাঁর কত ভাল লাগবে! অবশ্য ভারতের তো এটাই পরম্পরা। কিন্তু শিল্পা, আমি কৃতজ্ঞ। কারণ আপনি এই জিনিসটা লক্ষ্য করেছেন।
আমার প্রিয় কৃষক ভাইবোনেরা, আপনারা ডিজিট্যাল ইণ্ডিয়ার কথা অনেক শুনেছেন। কিছু লোকের মনে হয়, ডিজিট্যাল ইণ্ডিয়া তো শহরের তরুণদের জগৎ! কিন্তু না, আপনারা শুনে খুশি হবেন যে, আপনাদের সকলের সুবিধার্থে একটি ‘কিসান সুবিধা অ্যাপ’ তৈরি করা হয়েছে। আপনারা যদি এই অ্যাপটি আপনাদের মোবাইল ফোনে ডাউনলোড করে নেন, তাহলে কৃষি এবং আবহাওয়া সম্পর্কিত বহু তথ্য আপনার হাতে চলে আসবে। বাজারের অবস্থা কেমন, পাইকারি বাজারের পরিস্থিতি কি, এই সময়ে ভাল ফসলের যোগান কেমন, উপযুক্ত ওষুধ কোনটি, ইত্যাদি অনেক বিষয়ই এই অ্যাপে আছে। শুধু তা-ই নয়, এতে এমন একটি বাটন আছে, যা টিপলে সরাসরি কৃষি বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। আর যদি আপনি কোনও প্রশ্ন তাঁদের সামনে রাখেন, তাঁরা তার জবাব দেবেন এবং আপনাকে বুঝিয়েও দেবেন। আমি আশা করি, আমার কৃষক ভাই-বোনেরা এই ‘কিসান সুবিধা অ্যাপ’ নিজেদের মোবাইল ফোনে ডাউনলোড করবেন। চেষ্টা করে তো দেখুন, এটা আপনার কাজে লাগছে কিনা। যদি কোনও অসুবিধা থাকে তবে আমাকে অভিযোগ জানাতে পারেন।
আমার কৃষক ভাই-বোনেরা, অন্যদের তো গরমের ছুটি মানে বিশ্রামের সময়। কিন্তু কৃষকের জন্য এটা আরও ঘাম ঝরাবার মরশুম। তাঁরা বর্ষার জন্য অপেক্ষা করেন এবং বর্ষা আসার আগে নিজের ক্ষেতটিকে তৈরি করার জন্য প্রাণপণে চেষ্টা শুরু করে দেন যাতে বর্ষার এক ফোঁটা জলও নষ্ট না হয়। কৃষকদের জন্য চাষ শুরুর আগের এই সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমাদের দেশবাসীকেও ভাবতে হবে জল ছাড়া কীভাবে চলবে? আমরা আমাদের নিজ নিজ এলাকার পুকুর, জল আসার রাস্তা, পুকুরে জল ভরার পথ যদি নোংরা জঞ্জাল ফেলে বন্ধ করে রাখি, তবে জল আসা বন্ধ হয়ে জলের সঞ্চয় ক্রমশ কমে যাবে। আমরা কি ওইসব পুরনো জায়গাগুলো আবার একবার খুঁড়ে, পরিষ্কার করে রাখতে পারিনা, যাতে বেশি জল সঞ্চয় করা যায়? যতটা জল বাঁচানো যাবে ততটাই লাভ। প্রথম বর্ষণে যদি জল বাঁচানো যায়, তবে পুকুর ভরে থাকবে, নদী-নালা ভরে থাকবে এবং পরে বৃষ্টি কম হলেও আমাদের ক্ষতি কম হবে। এবার আপনারা হয়তো দেখেছেন, ৫ লাখ পুকুর এবং চাষ জমির পুকুর বানানোর প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। ‘মনরেগা’ প্রকল্পের আওতায় জল সংরক্ষণের মাধ্যমে সম্পদ সৃষ্টিতে জোর দেওয়া হয়েছে।
গ্রামে-গ্রামে জল বাঁচানো, আসন্ন বৃষ্টির প্রত্যেক ফোঁটা কী করে সংরক্ষণ করা যায়, গ্রামের জল গ্রামেই থাকুক – এই সব সচেতনতার অভিযান কীভাবে শুরু করা যায়, তার পরিকল্পনা আপনারা তৈরি করুন। এই সম্বন্ধীয় বিভিন্ন সরকারী যোজনায় আপনারা সামিল হোন, যাতে জলের গুরুত্ব এবং সংরক্ষণের জন্য সবাইকে নিয়ে এক জন-আন্দোলন গড়ে ওঠে। দেশের মধ্যে এমন অনেক গ্রাম আছে, অনেক প্রগতিশীল কৃষক রয়েছেন, অনেক সচেতন নাগরিক রয়েছেন, যাঁরা এই কাজ করছেন। কিন্তু আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে।
আমার কৃষক ভাই-বোনেরা, আমি আপনাদের আরও একটা কথা বলতে চাই। কিছুদিন আগে ভারত সরকার এক বড় কৃষি মেলার আয়োজন করেছিল। তাতে আমি দেখেছি, কত রকমের আধুনিক প্রযুক্তি এসেছে আর তা কৃষিকাজে কত পরিবর্তন এনে দিয়েছে। কিন্তু এই প্রযুক্তিগুলিকে এখন কৃষকের ক্ষেত পর্যন্ত পৌঁছতে হবে। আর এখন কৃষকরাও বলছেন, রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমাতে হবে। আমি এই মতকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। রাসায়নিক সারের অত্যধিক ব্যবহার আমাদের ধরিত্রী মাকে অসুস্থ করে দিয়েছে। আমরা ধরিত্রী মায়ের সন্তান। আমরা আমাদের ধরিত্রী মাকে অসুস্থ রাখতে চাই না। ভালো মশলা যদি রান্নায় দেওয়া হয়, তো রান্না ভাল হয়। কিন্তু ভাল ভাল মশলা যদি বেশি মাত্রায় দেওয়া হয়, তাহলে সেটা খেতে কি ভালো লাগে? সেটা খেতে নিশ্চয়ই ভাল লাগে না! রাসায়নিক সারের ব্যবহারও ঠিক এই রকম। যত ভাল সার-ই হোক না কেন, অতিরিক্ত এইসব সারের ব্যবহার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। প্রত্যেক জিনিষের ব্যবহার প্রয়োজনমত হওয়া দরকার। এতে খরচাও কম হয়, পয়সাও বাঁচে। আমি তো ভাবি, কম cost – বেশি output – কম খরচে বেশি উৎপাদন – এই নীতি নিয়ে আমাদের চলতে হবে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সঙ্গে আমাদের কৃষিকাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বর্ষাকাল আসতে এখনও ১-২ মাস বাকি। আমি আশা করছি, জল সংরক্ষণের জন্য যেসব আবশ্যক কাজ রয়েছে, এরই মধ্যে পুরো মনোযোগ দিয়ে এই কাজটি সম্পূর্ণ করতে পারব। যত জল বাঁচবে, কৃষকদের ততটাই লাভ হবে আর জীবনও ঠিক ততটাই বাঁচবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ৭-ই এপ্রিল হল ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস’। এই বছর পৃথিবীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের থিম হল – ‘বিট ডায়াবেটিস’। অর্থাৎ ডায়াবেটিসকে পরাস্ত করুন। ডায়াবেটিস এমন একটা রোগ, যেটা অন্যান্য সব রোগকেও ডেকে নিয়ে আসে। একবার যদি কারও ডায়াবেটিস হয়, তারপর অনেক রোগরূপী অতিথি নিজের ঘরে, শরীরে প্রবেশ করে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪ সালে আমাদের দেশে সাড়ে ৬ কোটি ডায়াবেটিসের রোগী ছিলেন। তিন শতাংশ মৃত্যুর কারণ হল ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস দুই রকমের – টাইপ 1 ও টাইপ 2। টাইপ 1 হল বংশগত, মা-বাবার থাকলে, সন্তানদের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর টাইপ-2-র কারণ হল বদভ্যাস, বয়সজনিত এবং অতিরিক্ত ওজন। আমরা এদের নিমন্ত্রণ করে ডেকে নিয়ে আসি।
সমগ্র পৃথিবী ডায়াবেটিস নিয়ে চিন্তিত। এই জন্য ৭ তারিখ, বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের থিম হল ডায়াবেটিস। আমরা সবাই জানি, ডায়াবেটিস-এর সবথেকে বড় কারণ হল আমাদের
লাইফ-স্টাইল। কায়িক পরিশ্রম কম হচ্ছে। ঘামের কোনও নাম-গন্ধ নেই। হাঁটাচলা হচ্ছে না। খেলাও আমরা অনলাইনে খেলছি। অফলাইন-এ কিছু হচ্ছে না। আমরা কি ৭ তারিখের অনুপ্রেরণা নিয়ে ডায়াবেটিস-কে পরাস্ত করার জন্য নিজস্ব জীবনশৈলিতে কিছু পরিবর্তন আনতে পারি না? যদি আপনি যোগব্যায়ামে রুচি রাখেন, তাহলে যোগাভ্যাস করুন। না হলে অন্তত কিছু দৌড়-ঝাঁপ করুন। যদি আমাদের দেশের প্রত্যেক নাগরিক সুস্থ হয়, তাহলে আমাদের ভারত সুস্থ থাকবে। কখনও কখনও আমরা সঙ্কোচবশত মেডিক্যাল চেক-আপ করাই না। আর তারপর যখন অবস্থা খুব সঙ্কটজনক হয়, তখন আমাদের মনে আসে যে আমরা ডায়াবেটিস-এর পুরনো রোগী। পরীক্ষা করতে তো কোনও কষ্ট নেই! এইটুকু তো করতেই পারেন। আর এখন তো সমস্ত সুযোগ-সুবিধা হাতের কাছেই, অনেক সহজেই হয়ে যায়। আপনি নিশ্চয়ই বিষয়টি নিয়ে ভাববেন।
গত ২৪-শে মার্চ পৃথিবীতে ‘যক্ষ্মা দিবস’ পালিত হল। যখন আমি ছোটো ছিলাম, তখন যক্ষ্মার নাম শুনলেই ভয় পেতাম। ভাবতাম যে, মৃত্যু একেবারে শিয়রে। কিন্তু এখন যক্ষ্মা ভয়ের কারণ নয়। কারণ, এখন সবাই জানে যে, যক্ষ্মার চিকিৎসা সম্ভব ও খুব সহজেই তাকে সারানো যায়। কিন্তু যখন যক্ষ্মা মৃত্যুর কারণ ছিল, তখন আমরা ভয় পেতাম। কিন্তু এখন আমরা যক্ষ্মার পরোয়া করি না। সমগ্র পৃথিবীর তুলনায় আমাদের দেশে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। যক্ষ্মা থেকে যদি মুক্তি পেতে হয়, তাহলে সঠিক চিকিৎসার দরকার এবং সার্বিক চিকিৎসার দরকার। আমাদের সঠিক ও সম্পূর্ণ চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা মাঝখানে ছেড়ে দিলে, নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়। যক্ষ্মা তো এমন একটা রোগ, যেটা আশেপাশের সবাই জানে, তাঁরাও চেক-আপ করার জন্য পরামর্শ দিতে পারেন। যদি কাশি হয়, জ্বর থাকে, ওজন কমতে থাকে, তাহলে আশেপাশের লোকেরও সন্দেহ হতে পারে যে, ব্যক্তিটির যক্ষ্মা হয়েছে কিনা। এর মানে হল, এটি এমন একটা রোগ যার তাড়াতাড়ি পরীক্ষা দরকার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এই বিষয়ে অনেক কাজ চলছে। ১৩,৫০০-র বেশি মাইক্রোস্কোপি সেন্টার রয়েছে। চার লাখেরও বেশি DOTs provider রয়েছে। অনেক আধুনিক পরীক্ষাগার রয়েছে আর, এসমস্ত পরিষেবা বিনামূল্যে পাওয়া যায়। আপনি একবার পরীক্ষা তো করান আর এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। সঠিক চিকিৎসা করুন এবং রোগ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসা চালিয়ে যান। আমি আপনাদের অনুরোধ করব, যক্ষ্মা হোক বা ডায়াবেটিস – এদের আমাদের পরাস্ত করতে হবে। ভারতকে এই রোগগুলি থেকে মুক্ত করতে হবে। কিন্তু এটা কেবল সরকার, ডাক্তার, ওষুধ দিয়ে হবে না – যতক্ষণ না আপনারা এগিয়ে আসেন। আর এই জন্য আমি আজ দেশবাসীদের অনুরোধ করছি, আসুন, ডায়াবেটিস-কে পরাস্ত করুন এবং যক্ষ্মা থেকে মুক্তি পান।
আমার প্রিয় দেশবাসী, এপ্রিল মাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিন আসছে। বিশেষ করে ১৪-ই এপ্রিল বাবাসাহেব ভীমরাও অম্বেদকর-এর জন্মদিন। ওঁর ১২৫-তম জন্ম-জয়ন্তী ধুমধামের সঙ্গে সারা দেশে পালিত হল। পঞ্চতীর্থের একটি ‘মহু’ ওঁর জন্মস্থান। লণ্ডনে ওনার পড়াশোনা। নাগপুরে দীক্ষা। ২৬, আলিপুর রোড, দিল্লি-তে ওঁর মহাপরিনির্বাণ হয়েছিল এবং মুম্বইতে যেখানে ওঁর শেষকৃত্য হয়েছিল সেই পূণ্যস্থল – এই পাঁচ তীর্থের উন্নতির জন্য আমরা নিরন্তর চেষ্টা করছি। আমার সৌভাগ্য যে, এই বছর ১৪-ই এপ্রিল পূজনীয় বাবাসাহেব আম্বেদকর-এর জন্মস্থান মহু যাওয়ার সৌভাগ্য হবে। দেশের দায়িত্ববান নাগরিক হওয়ার জন্য বাবাসাহেব আমাদের অনেক কিছু দিয়েছেন। সেই পথ অনুসরণ করে দেশের দায়িত্ববান নাগরিক হয়ে ওঁকে আমরা সবথেকে বড় শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে পারি। কিছুদিন পরে, বিক্রম অব্দ শুরু হচ্ছে। নতুন বিক্রম অব্দ আসবে। বিভিন্ন রাজ্যে, বিভিন্ন নামে এই উৎসব পালিত হয়। কেউ এটাকে ‘নব সম্বৎসর’ বলে, কেউ ‘গুড়ি-পর্বা’, কেউ ‘বর্ষ প্রতিপদা’, আবার কেউ ‘উগাদী’ বলে। কিন্তু ভারতবর্ষের প্রায় সমস্ত জায়গায় এটি পালিত হয়। নববর্ষের জন্য সবাইকে আমার অনেক অনেক অভিনন্দন।
আপনারা জানেন, আমি গতবার বলেছিলাম যে, আমার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান প্রায় ২০টি ভাষায় আপনার সময় মতো যে কোনো সময় আপনার মোবাইল ফোনে শুনতে পারবেন। আপনাকে শুধু একটা মিসড কল করতে হবে। এই সুবিধা মাত্র একমাস হয়েছে, আর আমি খুশি হয়েছি যে, প্রায় ৩৫ লক্ষ মানুষ এর থেকে লাভবান হয়েছেন। আপনিও নম্বরটি লিখে নিন – 81908 81908। আমি আবার বলছি, 81908 81908। আপনি মিসড কল করুন, আর যখন আপনার সুবিধা হবে, আপনি পুরনো ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানও আপনি আপনার মাতৃভাষায় শুনতে পাবেন। আমি খুশি হব, আপনার সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক অভিনন্দন! অনেক অনেক ধন্যবাদ!
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার! আপনারা নিশ্চয়ই রেডিওতে আমার ‘মন কি বাত’ শুনছেন। কিন্তু মন পড়ে রয়েছে বাচ্চাদের পরীক্ষার দিকে – কারও দশম, কারও বারো ক্লাসের পরীক্ষা হয়ত ১ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে। আপনাদের মনেও সেই চিন্তা হচ্ছে। আমিও এই ব্যাপারে আপনাদের শরিক হতে চাই। নিজেদের সন্তানদের পরীক্ষা নিয়ে আপনাদের যতটা চিন্তা আছে, আমারও ততটাই চিন্তা রয়েছে। তবে আমরা যদি পরীক্ষা সম্পর্কে আমাদের ভাবনা-চিন্তার প্রক্রিয়ার বদল ঘটাই, তবে হয়ত আমরা চিন্তামুক্ত থাকতে পারব। আমি আমার আগের ‘মন কি বাত’-এ বলেছি যে, আপনারা আপনাদের অনুভূতি, আপনাদের পরামর্শ ‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এর মাধ্যমে আমাকে অবশ্যই পাঠান। আমার ভালো লাগছে যে শিক্ষকরা, যে সমস্ত শিক্ষার্থীরা সফল কেরিয়ারের অধিকারী, মা-বাবা, সমাজের চিন্তাবিদ্ ব্যক্তিরা আমাকে নানান কিছু লিখে পাঠিয়েছেন। এই সমস্ত লেখকদের লেখার মধ্যে দুটি কথা আমাকে খুব ছুঁয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত, এত বেশি বিষয়ের কথা এসেছে আমার কাছে যা আমি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। আমরা ‘পরীক্ষা’ নামক বিষয়টিকে বিদ্যালয়ের গণ্ডি, পরিবার এবং বিদ্যার্থীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখে দিয়েছি। আমার অ্যাপ-এ যে সমস্ত পরামর্শ এসেছে তা থেকে মনে হয়, এ এক মস্ত বড় বিষয়। সারা দেশে বিদ্যার্থীদের সম্পর্কে আলোচনা চলতে থাকা উচিত। আমার এই ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আমি মা-বাবা, পরীক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের সঙ্গে বিশেষ ভাবে কথা বলতে চাই। যা আমি শুনেছি, যা আমি পড়েছি, আমাকে যা বলা হয়েছে, তার থেকেই কিছু কথা আমি বলতে চাই। আমার যা মনে হয়, তাও আমি এই সঙ্গে যোগ করতে চাই। আমার বিশ্বাস যে, যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা পরীক্ষা দেবে তাদের জন্য আমার এই ২৫-৩০ মিনিটের বক্তব্য খুবই উপকারী হবে – এটাই আমার ধারণা। আমার প্রিয় ছাত্র-ছাত্রী বন্ধুরা, আমি কিছু বলার আগে আজকের ‘মন কি বাত’-এর ওপেনিং বিশ্বের বিখ্যাত ওপেনারকে দিয়েই শুরু করি না কেন? জীবনে সাফল্যের শীর্ষবিন্দু ছোঁয়ার জন্য যে যে বিষয় তাঁর কাজে এসেছে – তাঁর অনুভূতি আপনাদের অবশ্যই কাজে লাগবে। ভারতের যুব সম্প্রদায় যাঁকে নিয়ে গর্বিত, সেই ভারতরত্ন শ্রী শচীন তেণ্ডুলকর যে কথা বলেছেন তা আমি আপনাদের শোনাতে চাই –
“নমস্কার, আমি শচীন তেণ্ডুলকর বলছি। আমি জানি, কিছুদিনের মধ্যেই পরীক্ষা শুরু হতে চলেছে। আপনাদের মধ্যে কিছু মানুষ এই নিয়ে দুশ্চিন্তাও করছেন। আমার আপনাদের জন্য একটিই বার্তা – আপনাদের কাছ থেকে আপনার মা-বাবা, শিক্ষক, আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব প্রত্যেকের অনেক প্রত্যাশা, যেখানেই যাবেন – প্রত্যেকে জিজ্ঞেস করবে, পরীক্ষার প্রস্তুতি কেমন হচ্ছে? পরীক্ষায় কত শতাংশ নম্বর পাবে? আমি এটাই বলতে চাই যে, আপনি নিজে আপনার জন্য কিছু লক্ষ্য স্থির করুন। অন্য কারওর প্রত্যাশার চাপ নিজের ওপর নেবেন না। আপনি অবশ্যই পরিশ্রম করবেন, কিন্তু এক বাস্তবসম্মত এবং পারা সম্ভব এমন (যেটা পারবেন সেরকম) লক্ষ্য নিজের জন্য ঠিক করুন এবং এই লক্ষ্য ছোঁয়ার চেষ্টা করুন। আমি যখন ক্রিকেট খেলতাম, তখন আমার কাছেও বহু মানুষের বহু প্রত্যাশা ছিল। গত ২৪ বছরে বহু কঠিন মুহূর্ত এসেছে, আবার অনেক ভাল মুহূর্তও এসেছে, কিন্তু মানুষের প্রত্যাশা সর্বদা ছিল এবং তা বেড়েই চলেছিল। যেমন যেমন সময় পার হয়েছে, তেমন তেমনই লোকের প্রত্যাশাও বেড়েছে। এর এক সমাধান বার করা আমার জন্য অত্যন্ত জরুরী ছিল। আমি এটাই ভেবেছিলাম যে, আমি নিজের কাছে নিজেই প্রত্যাশা করব এবং নিজের জন্য নিজেই লক্ষ্য স্থির করব। আর আমি যদি নিজের লক্ষ্য নিজেই স্থির করি এবং সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারি তখন আমি অবশ্যই দেশের জন্য কিছু না কিছু ভাল কাজ করতে পারি। আর এই লক্ষ্য পূরণ করার জন্য আমি সবসময়ই চেষ্টা করেছি। আমার সব সময় লক্ষ্য ছিল বলের ওপর এবং তার ফলে সেই লক্ষ্য নিজে নিজেই ধীরে ধীরে পূরণ হয়ে গেছে। আমি আপনাদের এটাই বলব যে, আপনাদের চিন্তা-ভাবনা ইতিবাচক হওয়া অত্যন্ত জরুরী। ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনা হলেই ইতিবাচক ফল আসা সম্ভব। কাজেই আপনারা অবশ্যই ইতিবাচক মানসিকতা রাখুন। আর আমার বিশ্বাস, ঈশ্বর আপনাকে ভালো ফল অবশ্যই দেবেন। আপনাদের আমি আমার তরফ থেকে আপনাদের পরীক্ষার জন্য শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। দুশ্চিন্তা-মুক্ত হয়ে পরীক্ষা দিন এবং ভালো ফল করুন। গুড লাক!”
বন্ধুরা, শুনলেন তেণ্ডুলকরজী কী বললেন। প্রত্যাশার চাপে কখনও পড়বেন না। আপনার ভবিষ্যত আপনাকেই তৈরি করতে হবে। আপনার লক্ষ্য আপনি নিজেই স্থির করুন। মুক্ত মনে, খোলা-মেলা চিন্তাধারার মাধ্যমে এবং নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী টার্গেট স্থির করুন। আমার বিশ্বাস শচীনজীর এই বার্তা আপনাদের কাজে আসবে। এটা সঠিক – প্রতিযোগিতা বাইরের সঙ্গে কেন? নিজের সঙ্গে নিজের প্রতিযোগিতা কেন নয়? অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে কেন নিজের সময় নষ্ট করব? আমি আমার নিজের সঙ্গেই কেন প্রতিযোগিতা করব না? আমি নিজের তৈরি করা সব রেকর্ড কেন নিজেই ভাঙ্গার চেষ্টা করব না? আপনি দেখবেন, আপনার এগিয়ে যাওয়ার পথে কেউ বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না। আর আপনার নিজের রেকর্ড যখন আপনি ভাঙবেন, তখন আনন্দের জন, ভালো লাগার জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না – নিজের ভেতর থেকেই আসবে ভালো লাগার বোধ। বন্ধুরা, পরীক্ষাকে নম্বরের খেলা ভাববেন না। কোথায় পৌঁছলেন, কতদূর পৌঁছলেন, এইসব হিসেব-নিকেশের মধ্যে একদমই যাবেন না। জীবনকে সব সময়ই এক মহান উদ্দেশ্যে চালিত করা উচিত – একটা স্বপ্ন নিয়ে চলা উচিত – প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া উচিত। আমরা সঠিক পথে চালিত হচ্ছি কিনা, বা ঠিকঠাকভাবে এগোচ্ছি কিনা, এই পরীক্ষা তারই হিসেব-নিকেশ করে। স্বপ্ন যদি বড় হয়, তবে পরীক্ষা নিজে নিজেই এক আনন্দ উৎসব হয়ে ওঠে। প্রতিটি পরীক্ষা সেই মহান উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে এক-একটি পদক্ষেপ। প্রতিটি সাফল্য সেই মহান উদ্দেশ্য পূরণের দরজার চাবিকাঠি হয়ে ওঠে। আর এজন্যই এই বছর কী হবে, এই পরীক্ষায় কী হবে, এই সব চিন্তার মধ্যে আবদ্ধ না থেকে এক বড় উদ্দেশ্য নিয়ে অগ্রসর হন। তাতে যদি কোথাও প্রত্যাশা পূরণে কিছু খামতি থেকে যায়, তো নিরাশ হবেন না। আরও-আরও-আরও পরিশ্রম ও চেষ্টা করার মানসিকতা তৈরি করুন। হাজার হাজার মানুষ আমার অ্যাপ-এ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নানান ছোটো ছোটো কথা লিখেছেন। শ্রেয় গুপ্তা বলেছেন সুস্থ শরীরেই থাকে সুস্থ মন।
ছাত্র-ছাত্রীরা, তোমরা তোমাদের পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যের প্রতিও মনোযোগ দাও, যাতে তোমরা পরীক্ষা ঠিক ভাবে দিতে পারো। আমি আজ পরীক্ষার ঠিক আগে এটা বলব না যে, তোমরা ডন বৈঠক দাও, কিংবা তিন অথবা পাঁচ কিলোমিটার দৌড়ও – যেটা মূল কথা তা হল বিশেষ করে পরীক্ষার দিনগুলোতে তোমাদের রোজনামচা কীরকম? এমনিতেও ৩৬৫ দিন আমাদের রোজনামচা আমাদের স্বপ্ন আর সংকল্পের অনুকূল হওয়া উচিত। শ্রী প্রভাকর রেড্ডির কথার সঙ্গে আমি একমত। উনি বিশেষ করে ঠিক সময়ে শুতে বলেছেন এবং ভোর-ভোর উঠে রিভিশন করতে বলেছেন। অ্যাডমিট কার্ড ও অন্যান্য কাগজপত্রসহ পরীক্ষাকেন্দ্রে আগে পৌঁছনো উচিত – এই কথা বলেছেন প্রভাকর রেড্ডিজী। আমি হয়ত এই কথা বলতে পারতাম না, কারণ ঘুমনোর সময় নিয়ে আমি একটু উদাসীন। আমার অনেক বন্ধুই অভিযোগ করেন যে, আপনি খুবই কম সময় ঘুমোন। এটা আমার ত্রুটি। আমি এটা ঠিক করার চেষ্টা করব। তবে এই ব্যাপারে আমি অবশ্যই একমত। নির্ধারিত সময়ে শুতে যাওয়া – গভীর ঘুম ততটাই জরুরী, যতটা আপনার দিনের অন্যান্য কাজ। আমি ভাগ্যবান যে, আমার ঘুম কম হলেও তা গভীর। আর এজন্যই আমার অসুবিধা হয় না। কিন্তু আপনাদের আমি বলব, আপনারা আপনাদের ঘুমের ব্যাপারটা ঠিক রাখুন। কিছু মানুষের অভ্যেস আছে ঘুমের আগে দূরভাষে দীর্ঘক্ষণ কথা বলা। তারপর সেটা নিয়েই চিন্তা-ভাবনা চলতে থাকলে ঘুম কীভাবে আসবে? আর আমি যখন ঘুমের কথা বলেছি, তখন ভেবো না যে, পরীক্ষার জন্য আমি ঘুমের কথা বলছি। ভুল বুঝো না, আমি পরীক্ষার সময় ভালো পরীক্ষা দেওয়ার জন্য টেনশনমুক্ত থাকার জন্য ঘুমের কথা বলছি। ঘুমিয়ে থাকার কথা বলছি না। এমন যেন না হয় যে, কম নম্বর পেলে আর মা প্রশ্ন করাতে উত্তর দিলে যে মোদীজী তো ঘুমোতে বলেছেন, তাই আমি ঘুমিয়েছি। এরকম নিশ্চয়ই করবে না। আমার বিশ্বাস তোমরা এরকম করবে না। জীবনে শৃঙ্খলাবোধ, সফলতার ভিত্তিপ্রস্তরকে মজবুত করার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। শৃঙ্খলাবোধ থেকেই তৈরি হয় জীবনের মজবুত ভিত্তি। যে অগোছালো ও বিশৃঙ্খল, যে সকালের কাজ দুপুরে করে, দুপুরের কাজ রাতে করে, তার মনে হয় যে কাজ তো হয়ে গেল। কিন্তু এতে প্রচুর শক্তিক্ষয় হয়, এবং প্রতি মুহূর্তে দুশ্চিন্তা থাকে, আমাদের শরীরের এক-আধটি অঙ্গ যদি অল্প একটুও বিকল হয়ে পড়ে, তাহলে নিশ্চয়ই দেখেছেন যে পুরো শরীরের ওপর তার প্রভাব পড়ে। এটাই সব নয় – আমাদের দৈনন্দিন কাজেও তার প্রভাব পড়ে। এজন্য কোনও কিছুকেই ছোট বলে ভাবতে নেই। দেখুন, আপনার জন্য যে কাজ নির্ধারিত আছে, তার সঙ্গে আপোস করার অভ্যাস যেন না গড়ে ওঠে। ঠিকভাবে করুন, করে তো দেখুন।
বন্ধুরা, আমি মাঝে মাঝে দেখেছি পরীক্ষার্থীরা দু’রকম। এক, যারা কী পড়েছে, কী শিখেছে, কোনটা ভাল তৈরি হয়েছে সেই ব্যাপারে তারা মনোনিবেশ করে। দ্বিতীয়ত, অন্য এক ধরনের পরীক্ষার্থী আছে যারা জানে না কোন প্রশ্ন আসবে, কি রকমের প্রশ্ন আসবে, সমাধান করতে পারব কি পারব না। প্রশ্নপত্র কঠিন হবে না সহজ হবে ইত্যাদি ভাবে – এই দু’রকমের পরীক্ষার্থী আমি দেখেছি। যারা কিরকম প্রশ্ন আসবে এই নিয়ে দুশ্চিন্তা করে তাদের ফলও নেতিবাচক হয়। যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে যায়, সে ঠিকই সফল হয়। এই কথা আমার থেকেও ভাল যদি কেউ বুঝিয়ে বলতে পারেন তো তিনি হলেন কিস্তি-মাতের যিনি মাস্টার – বিশ্বের বড় বড় খেলোয়াড়কে যিনি কিস্তিমাত করে দিয়েছেন সেই দাবা খেলার চ্যাম্পিয়ন বিশ্বনাথন আনন্দ তাঁর অভিজ্ঞতা বলেছেন। এস, পরীক্ষায় কিস্তিমাৎ করার কৌশল আমরা তাঁর কাছ থেকে শিখে নিই –
হ্যালো, আমি বিশ্বনাথন আনন্দ। প্রথমত, আমি সবাইকে পরীক্ষার জন্য শুভকামনা জানাচ্ছি। এরপর আমি কীভাবে পরীক্ষা দিতে যেতাম এবং আমার পরীক্ষা দেওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। আমি মনে করি পরবর্তী জীবনে যে সব সমস্যার মোকাবিলা তোমাদের করতে হবে পরীক্ষা সেই রকমই এক সমস্যা। তোমাদের যথেষ্ট বিশ্রাম, রাতের ভাল ঘুম, পেট খালি না রেখে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করা খুব প্রয়োজন। আর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মনকে শান্ত রাখা। দাবা খেলার সঙ্গে পরীক্ষার প্রচুর মিল। যখন তুমি খেলছ, তখন বোড়ের কোন চালটা আসবে তুমি যেমন জান না, ঠিক তেমনই পরীক্ষায় কোন প্রশ্ন আসবে, সেটা তোমার জানা নেই। কাজেই তুমি যদি শান্ত থাক, ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া কর, যথেষ্ট ঘুমোও, তাহলে দেখবে যে, তোমার মস্তিষ্ক সঠিক প্রশ্নের সঠিক উত্তর সঠিক মুহূর্ত মনে করতে পারবে। সুতরাং শান্ত থাক। নিজের ওপর কখনই বেশি চাপ নেবে না – এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খুব উচ্চ প্রত্যাশা রেখ না – একে শুধু একটা চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখ – ভাব, আমি কি মনে করতে পারব সারা বছর ধরে আমি যা যা শিখেছি, আমি কি এই প্রশ্নগুলির উত্তর দিতে পারব? শেষ মুহূর্তে, শুধুমাত্র খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি দেখে নাও এবং যে বিষয়গুলি ভাল করে মনে রাখতে পারছ না – সেগুলো দেখে নাও। যখন তুমি পরীক্ষায় উত্তর লিখছ তখন শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যের কিছু ঘটনা মনে পড়ে যেতে পারে। এইসব ঘটনাও বেশ কিছু পড়ার বিষয় মনে করতে সাহায্য করবে। যদি শক্ত প্রশ্ন আবার পড়, তো দেখবে সেটা অনেক সহজ হয়ে গেছে। তখন উত্তর লেখার সময় সহজে তার সমাধান করতে পারবে। সুতরাং শান্ত থাক, রাতে ভাল করে ঘুমোও, অতিরিক্ত আত্মপ্রত্যয়ী হয়ো না, তবে নেতিবাচকও হয়ো না। আমি দেখেছি, পরীক্ষা নিয়ে তোমাদের যত ভীতি থাকে, তার থেকে তোমাদের পরীক্ষা অনেক ভাল হয়। সুতরাং, আত্মবিশ্বাসী হও এবং অনেক শুভেচ্ছা তোমাদের জন্য।”
বিশ্বনাথন আনন্দ সত্যি সত্যিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। আপনারাও নিশ্চয়ই দেখেছেন আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগিতায় যখন তিনি অংশ নেন, তখন কত শান্ত, কত ধীর-স্থির থাকেন। তাঁর চোখ এদিক-ওদিক ঘোরে না। আমরা তো শুনেছি অর্জুনের জীবনের সেই ঘটনা – পাখির চোখের দিকেই শুধু তার নজর ছিল। সেইভাবেই দেখেছি বিশ্বনাথন আনন্দ-কে। খেলার সময় তাঁর সম্পূর্ণ মনোযোগ থাকে লক্ষ্যের প্রতি – আর সেটা তাঁর অন্তরজগতের শান্তিরই প্রকাশ। অন্তরের শান্তির কথা বলাটা খুব সহজ, কিন্তু সত্যি সত্যিই প্রশান্ত অন্তর হওয়াটা খুব কঠিন। তবে চেষ্টা করতে হবে। হাসতে হাসতেই তা করা উচিত। আপনি দেখবেন, পরীক্ষার দিনও যদি হাসতে পারেন, আনন্দে থাকতে পারেন, তবে শান্তি আপনিই আসবে। আপনি বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলবেন না – একলা থাকবেন, মনমরা হয়ে থাকবেন, প্রচুর বইপত্রের পাতা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত উল্টাবেন – তো কখনই মনকে শান্ত করতে পারবেন না। এইজন্য হাসুন – প্রচুর হাসুন – বন্ধুদের সঙ্গে হাসি-মস্করা করুন – দেখবেন মন আপনিই শান্ত হয়ে যাবে।
আমি আপনাদের একটা ছোট্ট কথা বোঝাতে চাই – আপনি কল্পনা করুন যে আপনি একটি জলাশয়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন এবং নীচে খুব সুন্দর জিনিস দেখা যাচ্ছে। কিন্তু যদি কেউ হঠাৎ জলে ঢিল ছোঁড়ে এবং জলে ঢেউ ওঠে, তো নীচে যেসব ভালো জিনিস দেখা যাচ্ছিল তা কি দেখা যায়? যদি জল শান্ত থাকে, তবে জলের নীচে – তা যতই গভীরেই থাকুক না কেন, প্রতিটি জিনিস দেখা যায়। কিন্তু যদি জল শান্ত না থাকে, তো কিছুই দেখা যায় না। আপনার ভিতরে বছর-ভোর পরিশ্রমের ফসল জমা হয়ে রয়েছে। মন অশান্ত হলে এই গুপ্তধনের সন্ধান পাবে না। কিন্তু যদি মন শান্ত থাকে তো সেই গুপ্তধন আপনিই হাতে চলে আসবে এবং পরীক্ষাও সহজ হয়ে যাবে। আমি আমার একটা কথা বলি – আমি কখনও কখনও যদি কোন বক্তৃতা শুনতে যাই, বা সরকারী স্তরে যদি কোনও আলোচনা হয় – যা আমার জানা নেই, তখন আমাকে যথেষ্ট মনোনিবেশ করতে হয়। যখন অতিরিক্ত মনোযোগ দিয়ে এরকম কিছু শুনতে চেষ্টা করি তখন মনের মধ্যে মাঝে মাঝে অস্থিরতা আসে। তখন আমার মনে হয় যে – নাঃ, একটু যদি বিশ্রাম নিয়ে নিই তাহলে ভাল লাগবে – তাই এইজন্য আমি নিজেই একটি পদ্ধতি তৈরি করেছি। Deep breathing – গভীর শ্বাস নিতে থাকি। তিনবার-পাঁচবার গভীর শ্বাস নিতে থাকি। কখনও ৩০, ৪০ কিংবা ৫০ সেকেণ্ড পার হয়ে যায়। কিন্তু আমার মন একদম শান্ত হয়ে যায় যে, কোনও জিনিস বোঝার উপযুক্ত হয়ে যায়। হতে পারে এটা আমার অভিজ্ঞতা, কিন্তু এটা আপনাদেরও কাজে আসতে পারে।
রজত আগরওয়াল একটা ভালো কথা বলেছেন – উনি আমার অ্যাপে লিখেছেন, “আমি প্রতিদিন অন্তত আধঘণ্টা বন্ধুদের সঙ্গে, পরিবারের লোকজনের সঙ্গে, অবসর বিনোদন করি, গল্প করি”। রজতজী, খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। কেননা অধিকাংশ সময় আমরা দেখি, পরীক্ষা দিয়ে এসে আমরা হিসেব করতে থাকি, ক’টা ঠিক – আর ক’টা ভুল লিখেছি! বাড়িতে যদি মা-বাবা শিক্ষিত হন, তার ওপর মা-বাবা শিক্ষক হন তো আবার পুরো খাতায় কী লিখেছি তা লিখতে বলেন। সব যোগ করে দেখেন তুমি চল্লিশ, আশি না নব্বই পাবে – যে পরীক্ষাটি হয়ে গেছে তার ওপরই আপনার মনোযোগ চলে যায়। বন্ধুদের ফোন করে তারা কেমন লিখেছে জানতে চান। আপনি বলেন – “আমার তো গোলমাল হয়ে গেছে – আমি তো ভুল করেছি – আমি বিষয়টা জানতাম, কিন্তু মনে পড়েনি”। আমরা এর মধ্যেই আটকা পড়ি। বন্ধুরা, আপনারা এরকম করবেন না। পরীক্ষার সময় যা হয়েছে, তা হয়ে গেছে। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে অন্য বিষয়ে কথাবার্তা বলুন। ফেলে আসা দিনের কোন হাসির কথা মনে করুন। মা-বাবার সঙ্গে যদি কোথাও বেড়াতে গিয়ে থাকেন, সেই দৃশ্য মনে করুন। পরীক্ষার চিন্তা ছেড়ে অন্তত আধঘণ্টা সময় কাটান। রজতজীর কথাগুলি সত্যিই উল্লেখযোগ্য।
বন্ধুরা, আমি আপনাদের শান্তির কথা বলব। আজকে আপনাদের পরীক্ষার আগে এমন একজন ব্যক্তি আপনাদের জন্য কিছু উপদেশ দিয়েছেন – যিনি মূলত শিক্ষক এবং আজকাল একরকম সংস্কারমূলক শিক্ষা দেন। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে ‘রামচরিত মানস’-এর গুরুত্ব বিষয়ে তাঁর মতামত সারা বিশ্বে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। পূজনীয় মুরারী বাপু, শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন। আর যেহেতু তিনি শিক্ষক, সু-চিন্তক, তাই তাঁর কথার মধ্যে দুটি বিষয়ের উল্লেখ দেখতে পাচ্ছি –
“আমি মুরারী বাপু বলছি – আমি শিক্ষার্থী ভাই-বোনেদের এটাই বলতে চাই যে, পরীক্ষার সময় কোনও রকম মানসিক চাপ না রেখে, বুদ্ধি করে, একাগ্র চিত্তে, পরীক্ষায় বসো। আর যাই পরিস্থিতি হোক না কেন, তাকে স্বীকার করে নাও। আমার অভিজ্ঞতায় বলে – পরিস্থিতিকে মানিয়ে নিলে আমরা মানসিকভাবে প্রসন্ন ও খুশি থাকতে পারি। কোনও মানসিক চাপ না রেখে প্রসন্ন চিত্তে পরীক্ষায় বসলে নিশ্চয় সফল হবে। আর যদি সাফল্য নাও পাও – তবুও ব্যর্থতার জন্য দুঃখ হবে না। আর সাফল্যের জন্য গর্ব তো হবেই – একটি শের উল্লেখ করে আমার শুভেচ্ছা জানাচ্ছি–
সবাই সফল হবে, এটা সম্ভব নয়।
অসফলতাকে সঙ্গে করেও বাঁচতে শেখো।।
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই যে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান – একে আমি অনেক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সবার জন্য আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল। ধন্যবাদ!
পূজনীয় মুরারীবাপু আমাদের সবার জন্য যে উপদেশ দিয়েছেন, তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। বন্ধুরা, আজকে আমি আর একটা কথা বলতে চাই। আমি দেখছি, এবার বিভিন্ন মানুষ আমাকে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তাতে যোগব্যায়াম বিষয়ে আলোচনা অবশ্যই আছে। আমার পক্ষে এটা আনন্দের কথা যে আজকাল বিশ্বের যে কোনও জায়গায়, যে কোনও ব্যক্তির সঙ্গে যখন মিলিত হই, তখন তাঁরা কেউ না কেউ যোগব্যায়ামের বিষয়ে কিছু না কিছু আলোচনা করেন। বিশ্বের যে কোনও ব্যক্তি বা যে কোনও ভারতবাসীর মনে যোগব্যায়াম সম্পর্কে যে আকর্ষণ সৃষ্টি হয়েছে – এই বিষয়ে তাঁদের অনুসন্ধিৎসা – সেটা আমার খুব ভালো লাগে। আমার মোবাইল অ্যাপে শ্রী অতনু মণ্ডল, শ্রী কুণাল গুপ্তা, শ্রী সুশান্ত কুমার, শ্রী কে.জি. আনন্দ, শ্রী অভিজিৎ কুলকার্ণি এবং আরও অসংখ্য মানুষ ধ্যানের কথা বলেছেন। যোগের ওপর জোর দিয়েছেন।
কিন্তু বন্ধুরা, আমি যদি বলি – কাল সকাল থেকেই যোগব্যায়াম শুরু করুন, তাহলে সেটা আপনাদের প্রতি অন্যায় করা হবে। কিন্তু, যাঁরা যোগব্যায়াম করেন, তাঁরা পরীক্ষা আছে বলে আজকে করব না – এরকম করবেন না। যদি যোগব্যায়াম করতে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই করুন। কিন্তু এটা সত্যিই যে শিক্ষার্থী জীবনই হোক বা পরবর্তী জীবন – মানসিক বিকাশে যোগব্যায়ামের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। সব থেকে সহজ উপায় – আপনি অবশ্যই এর ওপর মনোযোগ দিন। পরীক্ষার আগে আপনি যোগব্যায়াম না করে থাকলে, আপনার কাছাকাছি যোগব্যায়াম জানেন এমন কোনও ব্যক্তি থাকলে যোগাযোগ করুন। যিনি আপনাকে, দুই-চার-পাঁচ মিনিটের মধ্যে করতে পারেন এমন কিছু যোগ ব্যায়াম বলে দেবেন। দেখুন – আপনি করতে পারেন কিনা – আমি তো এটাতে খুব বিশ্বাস করি।
আমার যুবা বন্ধুগণ, পরীক্ষার হলে আপনাদের পৌঁছতে অনেক তাড়াহুড়ো থাকে? তাড়াতাড়ি করে নিজেদের নির্দিষ্ট স্থানে বসতে ইচ্ছা হয়? এর জন্য তাড়াহুড়ো কেন করবেন! নিজেদের পুরো দিনের সময়সূচি এমনভাবে তৈরি করুন, যাতে ট্র্যাফিক জ্যামে আটকে পড়লেও সময়মত পরীক্ষা হলে পৌঁছতে পারেন। তা না হলে, এরকম অবস্থা মনের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। আর একটা বিষয়, প্রশ্নপত্রে যেরকম নির্দেশিকা থাকে, মনে হয় সেগুলি পড়তে গেলে সময় নষ্ট হবে। কিন্তু, এটা ঠিক নয়। আপনারা, নির্দেশগুলি খুব মনোযোগের সঙ্গে পড়ুন। দু’মিনিট-তিন মিনিট-পাঁচ মিনিট সময় যাবে – কিন্তু, কোনও সমস্যা হবে না, পরে আফশোস হবে না। আমি দেখেছি, কখনও কখনও প্রশ্নপত্র পাওয়ার পর ঠিকমতো বুঝে ওঠা যায় না, কিন্তু, নির্দেশিকাগুলি ভালোভাবে পড়ে নিলে, আমরা নিজেদের তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারি এবং ঠিক করতে পারি – কীভাবে এগোব। হয়তো, আপনার পাঁচ মিনিট সময় লাগবে, কিন্তু, আমি আপনাদের অনুরোধ করব, যে এটা মেনে চলুন।
শ্রী যশ নাগর (Yash Nagar) আমার অ্যাপে লিখেছেন যে, উনি যখন প্রথম প্রশ্নপত্রটি পড়েন, তখন ওঁর মনে হয়েছিল এটা খুব কঠিন। আবার আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সেই প্রশ্নপত্রই দ্বিতীয়বার পড়ার পর উনি ভাবলেন, অন্য কোনও প্রশ্নপত্র উনি পাবেন না – ওঁকে ঐ প্রশ্নপত্রেরই উত্তর লিখতে হবে। তখন যেন খুব সহজেই প্রশ্নপত্রটি বুঝতে পারলেন। যেটা প্রথমবার মনে হয়েছিল তিনি জানেন না – দ্বিতীয়বার পড়বার পর তিনি বুঝতে পারলেন যে প্রশ্নটি ঘুরিয়ে করা হয়েছে, কিন্তু বিষয়টি তিনি জানেন। প্রশ্নগুলিকে বোঝা খুবই জরুরী। না বুঝতে পারলে কখনও কখনও প্রশ্নপত্র কঠিন মনে হয়।
আমি যশ নাগর-এর এই প্রসঙ্গটিতে গুরুত্ব দিতে চাই যে আপনারা প্রশ্নপত্র দু’বার-তিনবার-চারবার পড়ুন। আর তার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন। আপনারা দেখবেন, লেখার আগেই প্রশ্নটি আপনার কাছে সহজ হয়ে যাবে।
আজ আমার জন্য খুশির বিষয় যে, আমাদের সম্মানীয় বৈজ্ঞানিক, ভারতরত্ন, সি. এন. আর. রাও ধৈর্যের ওপরে জোর দিয়েছেন – খুব অল্প কথায় সমস্ত পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি তাঁর উপদেশ দিয়েছেন। আসুন, রাও সাহেবের উপদেশ শুনি –
আমি বেঙ্গালুরু থেকে সি. এন. আর. রাও বলছি, আমি পুরোপুরি বিশ্বাস করি পরীক্ষা উদ্বেগের সৃষ্টি করে, এমনকি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাতেও বিচলিত হবে না, সব থেকে ভালো ফল করার চেষ্টা কর। সেটাই আমি আমার তরুণ-বন্ধুদের বলি। একই সঙ্গে মনে রেখো, আমাদের দেশে অনেক সুযোগ আছে। তুমি জীবনে কী করতে চাও সেটা মনস্থির কর এবং হাল ছেড়ো না – তুমি সফল হবেই। এটা ভুলে যেওনা, তুমি বিশ্বের একজন শিশু। বৃক্ষ এবং পর্বতের মতো তোমারও এখানে থাকার অধিকার আছে। তোমার যেটা প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে জেদ, আত্মোৎসর্গ এবং লেগে থাকার ক্ষমতা। এই সমস্ত গুণগুলি থাকলে, তুমি সকল পরীক্ষায় এবং প্রচেষ্টায় সফল হবে। তোমাদের সকল প্রচেষ্টাকে আমি শুভ কামনা জানাই। ঈশ্বর মঙ্গল করুন!
দেখলেন, একজন বৈজ্ঞানিক কীভাবে কথা বলেন – যে কথাগুলি বলতে আমি আধ ঘণ্টা সময় খরচ করি, উনি সেই কথাগুলিই তিন মিনিটে বলে দেন। এটাই তো বিজ্ঞানের শক্তি এবং বৈজ্ঞানিক মনের শক্তি। আমি রাও সাহেবের প্রতি কৃতজ্ঞ, যে তিনি দেশের বাচ্চাদের উৎসাহিত করেছেন, দৃঢ়তা, নিষ্ঠা, সাধনার যে কথা বলেছেন, সেটাই আত্মোৎসর্গ, একাগ্রতা এবং পরিশ্রম। লেগে থাক বন্ধুরা, লেগে থাক। যদি তুমি লেগে থাকো, তাহলে ‘ভয়’ও ভয় পাবে। ভালো করার জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমার অ্যাপে রুচিকা ডাবস নিজের পরীক্ষার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। উনি বলেছেন পরীক্ষার সময় ওঁর পরিবারে এবং পরিচিত পরিবারগুলির মধ্যেও একটা ইতিবাচক পরিবেশ রাখার প্রচেষ্টা চালান হয় – সব মিলিয়ে একটা ইতিবাচক পরিবেশ। এটা ঠিক যেরকমটা শচীনজী বলেছেন, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী, ইতিবাচক মানসিক স্থিতি, ইতিবাচক শক্তির সৃষ্টি করে।
কখনও কখনও এমন কিছু বিষয় আছে, যা শুধু আমাদেরই নয়, শিক্ষার্থীদেরও উৎসাহ দেয়। জীবনের যে কোন অবস্থায় ভালো উদাহরণ, সত্য ঘটনা খুব উৎসাহিত করে, শক্তি দেয়, আর বিপদের সময় নতুন পথ দেখিয়ে দেয়। আমরা সবাই বৈদ্যুতিক বাল্বের আবিষ্কারক থমাস আলভা এডিসন সম্পর্কে জানি, আমাদের সিলেবাসেও ওঁর বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু বন্ধুরা, কখনও ভেবেছ, এই আবিষ্কারের পেছনে তিনি কত বছর সময় দিয়েছেন – কতবার ব্যর্থ হয়েছেন – কত সময় লেগেছে – কত অর্থ ব্যয় হয়েছে – ব্যর্থতার জন্য কতটা নিরাশ হয়েছেন! কিন্তু, আজ ঐ বিদ্যুৎ - ঐ বাল্বের আলো মানুষের জীবনকে আলোকিত করছে – এজন্যই বলে, ব্যর্থতার মধ্যেই সাফল্যের বীজ নিহিত আছে।
শ্রীনিবাস রামানুজন্কে কে না জানে? এই ভারতীয় গণিতজ্ঞ বর্তমান কালের গণিত বিষয়ক চিন্তাবিদ্দের মধ্যে একজন মহানতম ব্যক্তিত্ব। আপনারা কি জানেন? গণিতে ওঁর কোন বিধিবদ্ধ শিক্ষা ছিল না, কোনও বিশেষ প্রশিক্ষণও হয়নি। কিন্তু, গাণিতিক বিশ্লেষণ, সংখ্যা তত্ত্ব প্রভৃতি বিষয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। অত্যন্ত কষ্টকর জীবন, দুঃখময় জীবন হওয়া সত্ত্বেও উনি বিশ্বকে অনেক কিছু দিয়ে গেছেন।
সাফল্য যে কেউ যে কোন সময় পেতে পারে, যার এক উজ্জ্বল উদাহরণ জে. কে. রাউলিং। হ্যারি পটার সিরিজ আজ সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। কিন্তু শুরুতে এমনটা ছিল না। ওঁকে কত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে – কত ব্যর্থতা এসেছে। রাউলিং নিজেই বলেছেন – “মুশকিলের সময় উনি সমস্ত শক্তি সেই কাজে লাগাতেন যেটা ঐ সময় ওঁর প্রয়োজন ছিল”।
পরীক্ষা আজকাল কেবলমাত্র বিদ্যার্থীদের নয়, পুরো পরিবার, বিদ্যালয়, শিক্ষক এতে যুক্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু পিতা-মাতা এবং শিক্ষকের মিলিত সহযোগিতা ছাড়া বিদ্যার্থীদের পরিস্থিতি অনুকূল হয় না। শিক্ষক, পিতা-মাতা, এমনকি সিনিয়র ছাত্রদের সবাইকে নিয়ে একটি দল তৈরি করে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমচিন্তাধারার সঙ্গে এগিয়ে গেলে পরীক্ষা সহজ হয়ে যায়।
শ্রী কেশব বৈষ্ণব, আমার অ্যাপে লিখেছেন, উনি অভিযোগ করেছেন, বেশি নম্বর পাওয়ার জন্য ছাত্রদের উপর পিতা-মাতার বেশি চাপ দেওয়া উচিত নয়। প্রস্তুত হওয়ার জন্য শুধু উৎসাহিত করতে হবে। ওরা যেন উদ্বেগমুক্ত থাকে সেই চিন্তা করতে হবে।
বিজয় জিন্দল লিখেছেন, বাচ্চাদের উপর নিজেদের আশার বোঝা চাপিয়ে দেবেন না। যতটা সম্ভব ওদের সাহস জুগিয়ে যান। আত্ম-বিশ্বাস অটুট রাখতে সহায়তা করুন। এটা খুব সত্যি কথা, আজকে আমি পিতা-মাতাদের বেশি কিছু বলতে চাই না। দয়া করে চাপ দেবেন না। যদি ও ওর বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছে, তো ওকে আটকাবেন না। হাল্কা মেজাজের পরিবেশ তৈরি করুন। ইতিবাচক পরিবেশ বজায় রাখুন। দেখুন, আপনার ছেলে বা মেয়ের মধ্যে কতটা আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে। এই আত্মবিশ্বাস আপনিও বুঝতে পারবেন।
বন্ধুগণ, একটি বিষয়ে আমি নিশ্চিত, যা বিশেষত আমার তরুণ-বন্ধুদের বলতে চাই – আমাদের বর্তমান জীবনশৈলী আমাদের পুরনো প্রজন্মের থেকে অনেক বদলে গেছে। প্রতি মুহূর্তে নতুন ভাবনা, নতুন প্রযুক্তি, আর বিজ্ঞানের নতুন নতুন দিক দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। আমরা কেবল অভিভূত হয়ে পড়ছি তা নয়, আমরা এর সঙ্গে যুক্ত হতেও পছন্দ করি। আমরা বিজ্ঞানের সঙ্গে একই গতিতে এগিয়ে যেতে চাই। বন্ধুগণ, আমি বিষয়টি এইজন্য বলছি কারণ, আজ জাতীয় বিজ্ঞান দিবস। প্রত্যেক বছর আটাশে ফেব্রুয়ারির দিনটি আমরা ‘জাতীয় বিজ্ঞান দিবস’ হিসেবে পালন করি। আটাশে ফেব্রুয়ারি, ১৯২৮-এ স্যর সি.ভি. রামন নিজের আবিষ্কার ‘রামন এফেক্ট’-এর ঘোষণা করেছিলেন। এই আবিষ্কারের জন্যই তিনি নোবেল পুরষ্কার পান। এই কারণেই আটাশে ফেব্রুয়ারি দিনটি ‘জাতীয় বিজ্ঞান দিবস’ রূপে পালিত হয়। জিজ্ঞাসাই বিজ্ঞানের জননী। বিজ্ঞান-বিষয়ক চিন্তা, বিজ্ঞানের প্রতি আকর্ষণ নতুন ভাবনার সৃষ্টি করে এবং অপরদিকে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিকে বাদ দিয়ে নতুন ভাবনার সৃষ্টি সম্ভব নয়। আজ ‘জাতীয় বিজ্ঞান দিবস’-এ দেশের উদ্ভাবনী শক্তি গুরুত্ব পাবে, জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি আমাদের উন্নয়নের সহায়ক হবে। এই কারণেই ‘জাতীয় বিজ্ঞান দিবস’-এর মূল বিষয় – “Make in India Science and Technology Driven Innovations…” আমি সি.ভি. রামন-কে প্রণাম জানাই, আর বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর জন্য আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করব।
বন্ধুগণ, কখনও কখনও সাফল্য পেতে অনেক দেরী হয়। আর যখন সাফল্য পাওয়া যায়, তখন বিশ্বকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গির বদল হয়ে যায়। পরীক্ষার জন্য ব্যস্ত থাকার কারণে হয়তো অনেক খবর আপনার মনে দাগ কাটেনি, কিন্তু আমি দেশবাসীকে একটি কথা মনে করিয়ে দিতে চাই – আপনারা সম্ভবত শুনেছেন, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে পৃথিবীতে একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হয়েছে। পৃথিবীর বৈজ্ঞানিকরা কয়েক প্রজন্ম ধরে কিছু না কিছু করেছেন। অনেক পরিশ্রম করেছেন, আর প্রায় একশ বছর পর সাফল্য এসেছে। আমাদের বৈজ্ঞানিকরা নিজেদের ক্ষমতায় গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ বা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ চিহ্নিত করতে পেরেছেন। এটা বিজ্ঞানের সুদূরপ্রসারী সাফল্য। এটা কেবল গত শতাব্দীর মহান বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইনের তত্ত্বকেই প্রমাণ করে না, এটা পদার্থ বিজ্ঞানের এক মহান আবিষ্কার। এটা সমগ্র মানবজাতির এবং সমগ্র বিশ্বের কাজে লাগবে। একজন ভারতবাসী হিসেবে আমাদের খুশির বিষয় যে এই গবেষণা প্রক্রিয়ায় আমাদের দেশের কিছু বিশিষ্ট বিজ্ঞানীও যুক্ত ছিলেন, তাঁদেরও অবদান রয়েছে। আমি ঐ সকল বৈজ্ঞানিকদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। ভবিষ্যতেও এই গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমাদের বৈজ্ঞানিকরা প্রচেষ্টা চালাবেন। আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় ভারতও অংশগ্রহণ করবে। আমার দেশবাসীগণ, বিগত দিনে আমরা এক গুরত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই গবেষণায় সাফল্যের জন্য ‘Laser Interferometer Gravitational Wave Observatory’ সংক্ষেপে ‘LIGO’ ভারতবর্ষে স্থাপনের জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। পৃথিবীতে দুটি মাত্র স্থানে এই ধরনের ব্যবস্থা আছে। ভারত তৃতীয়। ভারত যুক্ত হওয়ায় এই গবেষণা নতুন শক্তি পাবে – এতে নতুন জ্ঞান সঞ্চার হবে – সম্মানজনক সম্পদের মধ্যে থেকেও মানবকল্যাণে এই মহৎ বৈজ্ঞানিক অন্বেষণের প্রক্রিয়ায় ভারত সক্রিয় ভাগীদার হবে। আমি আবার সব বৈজ্ঞানিকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি – শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় দেশবাসীগণ, একটি নম্বর বলছি, এই নম্বরে মিস্ড কল দিয়ে আগামীকাল থেকে আপনারা আমার ‘মন কি বাত’ শুনতে পাবেন। আপনারা আপনাদের মাতৃভাষাতেও শুনতে পাবেন। মিস্ড কল দেওয়ার নম্বর হচ্ছে – 81908 81908, আমি আবার বলছি – 81908 81908। বন্ধুগণ, আপনাদের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। আমাকেও কাল পরীক্ষা দিতে হবে। ১২৫ কোটি দেশবাসী আমার পরীক্ষা নেবেন। আর জানেন তো, কাল বাজেট। ২৯ ফেব্রুয়ারি - এটা লিপ্ ইয়ার। কিন্তু হ্যাঁ, আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন আমার কথা শুনেই বুঝতে পারছেন – আমি কতটা স্বাস্থ্যবান, কতটা আত্মবিশ্বাসী। ব্যস্ কাল আমার পরীক্ষা হয়ে যাবে – পরশু আপনাদের শুরু হয়ে যাবে। আমরা সবাই সফল হলে পুরো দেশ সফল হবে। তাহলে বন্ধুগণ, অনেক অনেক শুভেচ্ছা! সাফল্য এবং ব্যর্থতার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে মুক্ত মনে এগিয়ে চলুন – লেগে থাকুন।
অনেক ধন্যবাদ!
আমার প্রিয় দেশবাসী, ২০১৬-র এই প্রথম ‘মন কি বাত’। ‘মন কি বাত’ আমাকে আপনাদের সঙ্গে এমনভাবে জুড়ে রেখেছে – এমন ভাবে বেঁধে রেখেছে, যে কোনও জিনিস চোখে পড়লে বা কোন ভাবনা মাথায় এলে তা আপনাদের বলতে ইচ্ছা হয়। কাল আমি পূজনীয় বাপুর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোর জন্য রাজঘাট গিয়েছিলাম। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য প্রতি বছর আমরা এই দিনটি পালন করি। দেশের জন্য প্রাণকে বাজি রেখেছিলেন যাঁরা, প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন যেসব মহাপুরুষেরা, সেইসব বীরপুরুষদের জন্য – দেশের জন্য, ত্যাগ স্বীকার করেছেন যাঁরা, তাঁদের জন্য এই দিন ঠিক ১১টার সময় দু’মিনিটের নিরবতা পালন করে সেইসব মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করার সুযোগ পাই আমরা। কিন্তু যদি আমরা দেখি যে আমাদের মধ্যেই কিছু মানুষ রয়েছেন যাঁরা এটা করেননি, তখন আপনার কি মনে হবে না যে এটা আমাদের অভ্যাস হওয়া উচিত। এটা আমাদের জাতীয় কর্তব্য হিসাবে পালন করা উচিত? আমি জানি আমার একটা ‘মন কি বাত’-এর মাধ্যমে এই কাজ সম্ভব নয়। তবু, কাল আমি যা অনুভব করেছিলাম, তা আপনাদের বলতে চেয়েছি। আর এটাই তো দেশের জন্য কাজ করার উৎসাহ যোগায়। আপনি কল্পনা করুন, প্রতি বছর ৩০ জানুয়ারি ঠিক ১১টার সময় একশ’ পঁচিশ কোটি দেশবাসী দু’মিনিটের জন্য নীরবতা পালন করেন। আপনি কল্পনা করতে পারেন – এই ঘটনার শক্তি কতখানি? আর এটা ঠিক যে শাস্ত্রে বলেছে – ‘সংগচ্ছধ্বং সংবদধ্বং সং বো মনা সিজানতাম্।’ – আমরা সবাই একসঙ্গে চলব, একসঙ্গে বলব, আমাদের মনের ঐক্য বজায় থাকবে – এটাই দেশের প্রকৃত শক্তি। এই শক্তিকে জীবনদান করে এই সব ঘটনা।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কিছু দিন আগে আমি সর্দার প্যাটেলের লেখা পড়ছিলাম। কিছু কথা আমার মনোযোগ আকর্ষণ করল। তাঁর একটি কথা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। খাদির ব্যাপারে সর্দার প্যাটেল বলেছেন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা খাদির ওপর নির্ভর করছে। ভারতবর্ষের সভ্যতাও নির্ভরশীল খাদির ওপরেই। ভারতবর্ষে যে অহিংসা ধর্মকে আমরা পরম ধর্ম বলে মানি, তাও জুড়ে রয়েছে এই খাদিরই সঙ্গে। ভারতবর্ষের কৃষক সমাজ, যাঁদের জন্য আমরা নানা রকম ভাবনাচিন্তা করছি, তাঁদের কল্যাণও নিহিত আছে খাদির মধ্যেই। সর্দার সাহেবের অভ্যাস ছিল সোজা কথা সোজা ভাষায় বলার, আর উনি খুব সুন্দরভাবে খাদির মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছেন। গতকাল, ৩০ জানুয়ারি, পূজনীয় বাপুর পুণ্যতিথিতে আমি দেশে খাদি ও গ্রামোদ্যোগ-এর সঙ্গে যত লোক যুক্ত আছেন, তাঁদের যত জনের কাছে পৌঁছনো সম্ভব, চিঠি লিখে তাঁদের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করেছি। পূজনীয় বাপু বিজ্ঞানের সপক্ষে ছিলেন। আমিও প্রযুক্তির ব্যবহার করেছি, আর এই প্রযুক্তির মাধ্যমে এইরকম লাখ লাখ ভাই-বোনের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করেছি।
খাদি এখন এক প্রতীক – এক আলাদা পরিচিতি। খাদি যুব প্রজন্মের কাছে এখন এক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে। বিশেষ করে যাঁরা সার্বিক স্বাস্থ্য চর্চা এবং জৈব উপাদানের ব্যবহার পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য এটা এক উত্তম উপায় হয়ে উঠেছে। ফ্যাশনের ক্ষেত্রেও খাদি তার নিজের জায়গা তৈরি করে নিয়েছে। আমি খাদির সঙ্গে যুক্ত সব মানুষকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। তাঁরা খাদিতে নতুনত্ব আনার জন্য সবরকমভাবে চেষ্টা করেছেন। অর্থনীতিতে বাজারের এক গুরুত্ব আছে। খাদি মানুষের মনের কাছাকাছি আসার সঙ্গে সঙ্গে তার অর্থকরী দিকটির উন্নতিও অনিবার্য হয়ে উঠেছে। আমি মানুষকে বলি যে আপনাদের কাছে তো নানা রকম উপাদানের পোশাক আছে, সেইসঙ্গে খাদিও তো থাকা উচিত। এখন মানুষরাও বুঝতে শিখেছেন যে শুধুই খাদির পোষাক না পরলেও এক-আধটা খাদির পোষাক থাকতেই পারে। এই সঙ্গে আমার পরামর্শে খাদির জন্য এক সদর্থক সরকারী পরিবেশ গড়ে উঠছে। বহু বছর আগে সরকার খাদির পূর্ণ ব্যবহার করত। কিন্তু আস্তে আস্তে আধুনিকীকরণের নামে তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে খাদির সঙ্গে যুক্ত আমাদের সেই সব গরীব মানুষরা বেকার হয়ে যায়। খাদি কোটি কোটি মানুষকে কাজের সুযোগ দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। বিগত দিনে রেল, পুলিশ, ভারতীয় নৌবাহিনী, উত্তরাখণ্ডের ডাক বিভাগ প্রভৃতি বেশ কয়েকটি সরকারি সংস্থা খাদির উপযোগিতাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। আর আমাকে জানানো হয়েছে যে সরকারী দপ্তরগুলির এই প্রচেষ্টার ফলে সরকারের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে খাদির সঙ্গে যুক্ত মানুষদের জন্য অতিরিক্ত ১৮ লক্ষ মানব দিবস তৈরি হবে। ১৮ লক্ষ মানব দিবস – এ নিজেই এক বিরাট পদক্ষেপ। পূজনীয় বাপুজীও প্রযুক্তির উন্নতির জন্য সর্বদা উৎসাহী ও সচেষ্ট ছিলেন। সেইজন্যই তো আমাদের চরকার উন্নতি হতে হতে আজ এখানে এসে পৌঁছেছে। আজকের দিনে সৌরশক্তি কাজে লাগিয়ে চরকা চালানো, সৌরশক্তিকে চরকার সঙ্গে যুক্ত করা এক অত্যন্ত সফল প্রচেষ্টা। এর ফলে পরিশ্রম কমেছে, উৎপাদন বেড়েছে এবং গুণগত মানের উন্নতি হয়েছে। বিশেষ করে সৌরশক্তি পরিচালিত চরকার জন্য লোকে আমাকে অনেক চিঠি লিখেছেন। রাজস্থানের দশা থেকে গীতাদেবী, কোমলদেবী আর বিহারের নওয়াদা জেলার সাধনাদেবী আমায় চিঠি লিখে জানিয়েছেন যে, সৌরশক্তি পরিচালিত চরকার জন্য তাঁদের জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। তাঁদের রোজগার দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সুতলীর প্রতি লোকের আকর্ষণ বেড়ে গেছে। এই সমস্ত কিছুই এক নতুন উৎসাহের সঞ্চার করে। আর ৩০ জানুয়ারি যখন শ্রদ্ধেয় বাপুকে আমরা স্মরণ করি, তখন আমি আবারও বলব, আপনাদের নানান পোশাকের মধ্যে খাদিকেও অবশ্যই স্থান দিন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ২৬ জানুয়ারি দিনটি আমরা যথেষ্ট উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করেছি। চারদিকে আতঙ্কবাদীদের সন্ত্রাসের কথা মাথায় রেখেও দেশবাসী তাঁদের সাহস, তাঁদের উদ্দীপনা দেখিয়েছেন এবং যথেষ্ট আড়ম্বরের সঙ্গে সাধারণতন্ত্র দিবস পালন করেছেন। কিন্তু কিছু মানুষ অন্য কথা বলছেন। আর আমার মনে হয়, এই কথার প্রতি সবার মনোযোগ দেওয়া উচিত। বিশেষ করে হরিয়ানা এবং গুজরাট, এই দুটি রাজ্য এক অভূতপূর্ব প্রচেষ্টা করেছে। এবছর তারা নিজ নিজ রাজ্যের প্রতিটি গ্রামে যে সরকারী বিদ্যালয় আছে, সেখানে পতাকা উত্তোলন করার জন্য সেই গ্রামে সবথেকে শিক্ষিত মেয়েটিকে মনোনীত করেছিলেন তাঁরা। হরিয়ানা আর গুজরাট মেয়েদের সম্মান দিয়েছে, শিক্ষিত মেয়েদের আরও সম্মানিত করেছে। ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’-এর লক্ষে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেওয়ার প্রচেষ্টা করেছে তারা। আমি দুই রাজ্যের এই ভাবনাকে অভিনন্দন জানাই। আর সেই সমস্ত মেয়েদের, যাঁদের পতাকা তোলার সুযোগ হয়েছিল, তাঁদের আমি অভিনন্দন জানাই। হরিয়ানাতে তো আরও ঘটনা ঘটেছে। গত এক বছরে যে সমস্ত পরিবারে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে, ২৬ জানুয়ারি সেইসব পরিবারকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, অনুষ্ঠানে ভি-আই-পি হিসাবে প্রথম সারিতে বসার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এটা আমাদের এক মস্ত বড় গৌরবের মুহূর্ত। আর আমার আরও আনন্দ এই যে, আমি ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ প্রকল্পের সূচনা হরিয়ানা থেকেই করেছিলাম। কারণ হরিয়ানাতে লিঙ্গ অনুপাত যথেষ্ট অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। প্রতি হাজার পুত্র-সন্তানের তুলনায় কন্যা-সন্তানের সংখ্যা ছিল অত্যন্ত কম। খুব চিন্তা ছিল, কারণ সামাজিক ভারসাম্য বিপদের সম্মুখীন হয়েছিল। যখন এই কাজের জন্য আমি হরিয়ানাকে বেছে নিয়েছিলাম, তখন আমাদের আধিকারিকরা আমাকে বারণ করেছিলেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, হরিয়ানাতে কন্যা-সন্তানদের প্রতি অত্যন্ত নঞর্থক পরিবেশ রয়েছে। কিন্তু আমি কাজ করেছিলাম, আর আজ আমি হরিয়ানাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি, তাঁরা আমার প্রয়াসকে গুরুত্ব দিয়েছেন, আর কন্যাসন্তান জন্মের হারে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। তাঁদের সামাজিক জীবনে যে পরিবর্তন এসেছে, তার জন্য সত্যি সত্যিই আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি।
গতবার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আমি দুটি কথা বলেছিলাম। প্রথমত, নাগরিক হিসাবে আমাদের দেশের মহাপুরুষদের মূর্তি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব আমরা কেন পালন করব না? মূর্তি স্থাপনের সময় আমরা খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি, কিন্তু পরে আর তার দিকে মনোযোগ দিই না। দ্বিতীয়ত, বলেছিলাম যে, সাধারণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আমরা কর্তব্য-র প্রতি কীভাবে মনোযোগ দেব এবং কর্তব্য নিয়ে আলোচনা কীভাবে করব। আমাদের অধিকার নিয়ে আমরা অনেক কথা বলি – কথা চলতেই থাকে, কিন্তু আমাদের দায়িত্ব কর্তব্য নিয়েও তো ভাবনা-চিন্তা করা উচিত। আমার আনন্দ হচ্ছে যে দেশের বেশ কিছু জায়গার সাধারণ মানুষ, সামাজিক সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সাধু মহাত্মারা কর্তব্য পালনের লক্ষ্যে এগিয়ে এসেছেন। আর তাঁরা সবাই যেখানে যেখানে এইসব মূর্তি আছে সেগুলি এবং তার চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছেন। এক শুভ সূচনা হয়েছে। এটা শুধু ‘স্বচ্ছতা অভিযান’ নয়, ‘সম্মান অভিযান’-ও বটে। আমি প্রত্যেকের উল্লেখ করতে পারছি না, কিন্তু যা খবর পেয়েছি, তা অত্যন্ত সন্তোষজনক। কিছু মানুষ সংকোচবশত তাঁদের কাজের খবর দেন না। আমি তাঁদের অনুরোধ করছি, mygov পোর্টালে আপনি যে মূর্তি পরিষ্কার করেছেন, তার ছবি অবশ্যই পাঠান। সারা পৃথিবীর লোক তা দেখে গর্ব অনুভব করবে। এভাবেই ২৬ জানুয়ারি আমি নাগরিকের কর্তব্য ও অধিকার সম্পর্কে মানুষের মতামত জানতে চেয়েছিলাম। আমার আনন্দ হচ্ছে, হাজার হাজার মানুষ তাতে অংশ নিয়েছেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, একটা কাজের জন্য আমার আপনাদের সাহায্য চাই, আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আপনারা আমাকে সাহায্য করবেন। আমাদের দেশে কৃষকদের নাম করে নানান কথা বলা হয়ে থাকে। আমি সেই বিতর্কে যেতে চাই না। কৃষকদের এক মস্ত বড় বিপদ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যার ফলে তাঁদের সমস্ত পরিশ্রম বিফলে যায়। তাঁদের সময়ের কোন মূল্য তাঁরা পান না। তাঁদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য একটাই উপায় আমার মাথায় আসছে, তা হল ফসল বীমা প্রকল্প। ২০১৬ সালে ভারত সরকার কৃষকদের এক মস্ত বড় উপহার দিয়েছেন – প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা প্রকল্প। এই প্রকল্পের প্রশংসা হবে – বাহবা হবে – প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানো হবে – সেই জন্য এই প্রকল্প নয়। এতদিন ধরে ফসলের বীমার ব্যাপারটি আলোচিত হয়ে চলেছে। কিন্তু দেশের ২০-২৫ শতাংশের বেশি কৃষক এর সুবিধা নিতে পারেননি, এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারেননি। আমরা কি এই প্রতিজ্ঞা করতে পারি যে, আগামী দু-এক বছরের মধ্যে আমরা অন্তত দেশের ৫০ শতাংশ কৃষককে এই ফসল বীমা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করতে পারব? ব্যস্, আমার শুধু এই ব্যাপারে আপনাদের সাহায্য চাই। কারণ, যদি কৃষক ফসল বীমার সুবিধা পায়, তাহলে বিপদের সময় তা যথেষ্ট কাজে আসে। আর এবার ‘প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা প্রকল্প’ যে জনসাধারণের এত স্বীকৃতি পেয়েছে তার কারণ, ফসল বীমা প্রকল্পকে অত্যন্ত সরল ও সুদূরপ্রসারী করা হয়েছে এবং প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হয়েছে। এটাই সব নয়। ফসল কাটার ১৫ দিনের মধ্যে যদি কোনও দুর্ঘটনা ঘটে, তবে সেক্ষেত্রেও সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে কীভাবে এই কাজে গতি আনা যায়, বীমা-র পয়সা পাওয়ার ক্ষেত্রে যাতে দেরি না হয়, এই সমস্ত বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। সব থেকে বড় বিষয় যেটা, সেটা হল ফসল বীমার প্রিমিয়াম এতটা কম করা হয়েছে যা সম্ভবত কেউ চিন্তাও করতে পারেনি। নতুন বীমা প্রকল্পে কৃষকদের প্রিমিয়ামের অধিকতম মাত্রা খারিফ ফসলের জন্য দুই শতাংশ এবং রবি ফসলের জন্য দেড় শতাংশ হবে। এখন আমাকে বলুন, আমার কোনও কৃষকভাই যদি এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকে, তাহলে তার লোকসান হবে কি না? আপনি হয়তো কৃষক নন, কিন্তু ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান শুনছেন – আপনি কী কৃষকদের কাছে আমার কথা পৌঁছে দেবেন? আর এইজন্যই আমি চাই যে এটার আরও প্রচার হোক। এই কারণে এবার আমি আপনাদের জন্য একটা নতুন প্রকল্প এনেছি। আমি চাই আমার ফসল বীমা প্রকল্পের কথা প্রত্যেক মানুষের কাছে পৌঁছাক। আর এটা ঠিক যে টিভি বা রেডিও-তে আপনারা ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান শোনেন। কিন্তু যদি পরবর্তীকালে শুনতে চান তাহলে কী করবেন? এবার আমি আপনাদের একটি নতুন উপহার দিতে যাচ্ছি। আপনারা মোবাইল ফোনে যে কোনও সময় ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান শুনতে পাবেন। আপনাদের শুধু এটাই করতে হবে যে আপনার মোবাইল ফোন থেকে একটি মিসকল করুন। ‘মন কি বাত’-এর জন্য মোবাইল নম্বর হল – 81908 81908– ‘আট এক নয় শূন্য আট – আট এক নয় শূন্য আট’। আপনি মিস কল করলে যে কোনও সময়েই ‘মন কি বাত’ শুনতে পাবেন। এখনও পর্যন্ত এই পরিষেবাটি হিন্দি ভাষায়, কিন্তু খুব শীঘ্রই আপনাদের মাতৃভাষাতেও ‘মন কি বাত’ শোনার সুযোগ হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আমার প্রিয় যুবা বন্ধুগণ, আপনারা দারুণ কাজ করেছেন। ১৬ জানুয়ারি যখন ‘স্টার্ট-আপ’ কর্মসূচি শুরু হয়, সারা দেশের যুবসম্প্রদায়ের মধ্যে এক নতুন শক্তি, নতুন চেতনা, নতুন আশা, নতুন উৎসাহ আমি অনুভব করেছিলাম। এই কর্মসূচিতে যোগদানের জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন। কিন্তু জায়গার অভাবে শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞান ভবনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আপনারা সেখানে পৌঁছতে পারেননি, কিন্তু পুরো সময় অনলাইন-এ এতে অংশগ্রহণ করেছেন। একটা অনুষ্ঠানে লক্ষ লক্ষ যুবা কয়েক ঘণ্টা নিজেদের যুক্ত রেখেছেন – এটা বিরলতম ঘটনা, কিন্তু এটা হয়েছে। আর আমি দেখছিলাম, ‘স্টার্ট-আপ’ নিয়ে লোকের মনে কত আশা! কিন্তু একটা বিষয় যা সাধারণ মানুষ ভাবেন, তা হল ‘স্টার্ট-আপ’-এর অর্থ আই-টি সম্বন্ধীয় কিছু বিষয় যা খুব পরিশীলিত। ‘স্টার্ট-আপ’-এর এই অনুষ্ঠানের পর এই ভ্রান্ত ধারণা কেটে গেছে। ‘স্টার্ট-আপ’তো ‘আই-টি’-র একটা ছোটো অংশ মাত্র। জীবন বিশাল, তাই প্রয়োজনীয়তাও অনন্ত। স্টার্ট-আপ-ও প্রচুর সুযোগ নিয়ে আসবে।
কিছুদিন আগে আমি সিকিমে গিয়েছলাম। সিকিম এখন দেশের ‘অরগ্যানিক স্টেট’ হয়ে গেছে। সারা দেশের কৃষি মন্ত্রী এবং কৃষি সচিবদের আমি সেখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। সেখানে আমার দু’জন যুবা বন্ধুর সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ হয়েছে, যাঁরা আই-আই-এম থেকে পাশ করে বেরিয়েছেন। প্রথমজন অনুরাগ অগ্রবাল, আর দ্বিতীয় জন সিদ্ধি কারনানি (Siddhi Karnani) – সিকিমে এঁদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল, এঁরাও স্টার্ট-আপ শুরু করতে চান। ওঁরা উত্তর-পূর্ব ভারতে কাজ করছেন, কৃষিক্ষেত্রে ভেষজ এবং জৈব উৎপাদনের গ্লোবাল মার্কেটিং করছেন। এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গতবার আমি স্টার্ট-আপ-এর সঙ্গে যুক্ত লোকেদের ‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এ নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে বলেছিলাম। কিছু মানুষ পাঠিয়েছেন, কিন্তু আরও বেশি পেলে আমি খুশি হব। কিন্তু যা পেয়েছি, তা সত্যিই প্রেরণামূলক। Viswas Dwibedi নামের একজন যুবক অনলাইন কিচেন স্টার্ট-আপ করেছেন। উনি জীবিকার অন্বেষণে আসা মধ্যবিত্ত মানুষদের জন্য ‘অনলাইন নেটওয়ার্কিং’-এর মাধ্যমে টিফিন পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছেন। Mr. Dignesh Pathak নামে একজন কৃষকদের জন্য বিশেষ করে পশুখাদ্য নিয়ে কাজের বিষয়ে মনস্থির করেছেন। পশুরা যদি ভালো আহার পায়, তাহলে ভালো দুধ পাব। ভালো দুধ পেলে আমাদের দেশের যুবকবৃন্দ শক্তিশালী হবে। Manoj Gilda, Nikhil Ji কৃষিজাত পণ্য গুদামজাতকরণের স্টার্ট-আপ শুরু করেছেন। তাঁরা বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় ফল সংরক্ষণ ব্যবস্থার সঙ্গে কৃষি উৎপাদনের জন্য বৃহদায়তন গুদামের ব্যবস্থা তৈরি করেছেন। এরকম অনেক প্রস্তাব এসেছে। আপনারা আরও এরকম প্রস্তাব পাঠান – আমার ভালো লাগবে। ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে যেমন আমি স্বচ্ছতা বিষয়ে বার বার বলছি, সেই রকম স্টার্ট-আপ বিষয় নিয়েও যদি আমাকে বার বার বলতে হয়, তাহলে আমি বলব, কারণ আপনাদের ঝুঁকি নেওয়ার এই সাহস-ই আমার প্রেরণা।
আমার প্রিয় দেশবাসী, স্বচ্ছতা এবং সৌন্দর্য পরস্পর সম্পর্কিত। অনেক বছর ধরে আমরা আবর্জনার বিরুদ্ধে আমাদের বিরূপতা ব্যক্ত করেছি কিন্তু আবর্জনা কমেনি। এখন দেশবাসী আবর্জনার কথা ছেড়ে স্বচ্ছতার আলোচনা শুরু করেছে আর পরিচ্ছন্নতার কাজ কোথাও না কোথাও চলছে। কিন্তু এখন দেশের নাগরিকরা এক নতুন পদক্ষেপ নিয়ে স্বচ্ছতাকে সৌন্দর্যের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। এতো সোনায় সোহাগা! বিশেষ করে রেলওয়ে স্টেশনগুলিতে এটা লক্ষণীয়। আমি দেখেছি যে, আজকাল অনেক রেলওয়ে স্টেশন সেখানকার স্থানীয় নাগরিক, শিল্পী ও শিক্ষার্থীরা সাজানোর কাজে এগিয়ে এসেছেন। স্থানীয় শিল্পকে গুরুত্ব দিয়ে দেওয়ালগুলিকে পেইন্টিং করছেন, সুন্দর সুন্দর সাইনবোর্ড লাগাচ্ছেন, যাতে মানুষ সচেতন হয়, এমন আরও কত কী করছেন। আমাকে কেউ একজন বলেছেন যে আদিবাসী মহিলারা স্থানীয় Sohrai এবং Kohowar Art Design দিয়ে হাজারীবাগ রেলওয়ে স্টেশনকে সাজিয়েছেন। থানে জেলার তিনশতাধিক স্বেচ্ছাসেবী কিং সার্কেল, মাতুঙ্গা, বরিভেলি, খার স্টেশনগুলিকে সাজিয়েছেন। এদিকে রাজস্থান থেকেও অনেক খবর আসছে, যেমন – সওয়াই-মাধোপুর, কোটা প্রভৃতি। আমার এরকম মনে হচ্ছে যে, আমাদের রেলওয়ে স্টেশনগুলি আমাদের সংস্কৃতির পরিচায়ক হয়ে উঠবে। রেলযাত্রীরা এখন আর জানালা দিয়ে চা-পকোড়ার বিক্রেতাকে খুঁজবেন না। ট্রেনে বসে বসেই দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে দেখবেন যে এখানকার বিশেষত্ব কী। আর এটা না রেলওয়ে-র উদ্যোগ ছিল – না নরেন্দ্র মোদীর। এটা ছিল সাধারণ নাগরিকদের উদ্যোগ। দেখুন সাধারণ নাগরিকরা কী করতে পারে! আমি তো বেশ কিছু ছবি পেয়েছি, কিন্তু আরও কিছু এইরকম ছবি দেখার ইচ্ছা আছে। রেলওয়ে স্টেশন-এ বা অন্য কোথাও আপনারা স্বচ্ছতার সঙ্গে সৌন্দর্যকে যুক্ত করার প্রয়াস করেছেন সেরকম কিছু ছবি কী আমাকে পাঠাতে পারেন? নিশ্চয় পাঠান! আমি দেখবো, অন্যরাও দেখবে এবং এর থেকে প্রেরণা পাবে। রেলওয়ে স্টেশনে যেটা সম্ভব সেটা তো বাস স্ট্যাণ্ডে, হাসপাতালে, বিদ্যালয়ে, মন্দির, গির্জাঘর বা মসজিদের আশেপাশে বা বাগানেও হতে পারে। যাঁরা এটা চিন্তা করেছেন, যাঁরা শুরু করেছেন এবং যাঁরা এটা কার্যকর করেছেন তাঁরা সকলেই অভিনন্দনযোগ্য। আপনারা আমাকে নিশ্চয়ই ছবি পাঠাবেন – আমি দেখতে চাই আপনারা কী কী করেছেন!
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের জন্যে গর্বের বিষয় যে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে চার থেকে আট তারিখ পর্যন্ত ভারত এক বৃহৎ আপ্যায়নের ব্যবস্থা করছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের এখানে অতিথিরা আসছেন আর আমাদের নৌসেনা পুরো উদ্যমে আপ্যায়নের জন্য তৈরি হচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশের যুদ্ধ জাহাজ, নৌসেনা, জাহাজ অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমের সমুদ্রতটে একত্রিত হচ্ছে। ভারতের সমুদ্রতটে ‘ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউ’ অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্বের সৈন্যশক্তি ও আমাদের সৈন্যশক্তির মধ্যে বোঝাপড়ার এটি একটি প্রয়াস, একটি সংযুক্ত অনুশীলন এবং একটি খুব বড়ো সুযোগ। আগামী দিনে টিভি মিডিয়ার মাধ্যমে এই বিষয়ে তথ্য তো আপনারা পাবেনই, কারণ এটি একটি বড় অনুষ্ঠান এবং সবাই একে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। ভারতের মত দেশের জন্য এটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভারতের সামুদ্রিক ইতিহাস তো সুবর্ণরঞ্জিত। সংস্কৃততে সমুদ্রকে ‘উদধি’ বা ‘সাগর’ বলা হয়। এর অর্থ অনন্ত – অসীম। সীমানা আমাদের আলাদা করতে পারে, জমিও আমাদের আলাদা করতে পারে, কিন্তু জল আমাদের যুক্ত করে, সমুদ্র আমাদের যুক্ত করে। সমুদ্রের মাধ্যমে আমরা যে কোনও কারোর সঙ্গে যুক্ত হতে পারি। বহু শতাব্দীর আগে থেকে আমাদের পূর্বসূরিরা বিশ্ব ভ্রমণ করে, বিশ্ব-বাণিজ্য করে সমুদ্রপথের এই শক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিলেন। ছত্রপতি শিবাজী-ই হন বা চোল সম্রাটরা – সমুদ্রশক্তির বিষয়ে তাঁরা নিজেদের এক নতুন পরিচয় তৈরি করেছিলেন। এখনও পর্যন্ত আমাদের অনেক রাজ্য সমুদ্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত – নানান সংস্কৃতি এখনও জীবিত যা উৎসব রূপে পালন করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভারতের অতিথি হচ্ছে, নৌসেনার শক্তির পরিচয় পাচ্ছে – এটা একটা ভালো সুযোগ। এই বিশেষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার সুযোগ আমি পাব। সেই রকমই ভারতের পূর্বাঞ্চলে গুয়াহাটিতে সার্ক দেশগুলির ক্রীড়া উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। সার্ক দেশগুলির হাজার-হাজার খেলোয়ার গুয়াহাটিতে আসছেন। সার্ক দেশগুলির নতুন প্রজন্মের এক জমকালো খেলাধূলার উৎসব, যা আমদের গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত হবে। সার্ক দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের এটা একটা ভালো সুযোগ।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমি প্রথমেই বলেছি, আমার মনে যা আসছে, যা ইচ্ছা হচ্ছে, খোলাখুলি আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিই। আগামী দিনে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা হবে। গতবার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে পরীক্ষা সম্পর্কে বিদ্যার্থীদের সঙ্গে আমি কথা বলেছিলাম। যে সকল বিদ্যার্থী সফল হয়েছেন, কীভাবে পরীক্ষার দিনগুলি উদ্বেগহীন হয়ে কাটিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের পরিবারের পরিবেশ, গুরুজন ও শিক্ষকদের ভূমিকা, নিজেদের প্রচেষ্টা, তাঁদের থেকে বয়োজ্যেষ্ঠরা তাঁদের কী বলেছেন, সেটা তাঁরা যেন বলেন – এটাই আমার কামনা। পরীক্ষার্থীদের জন্য এটা একটা ভালো অভিজ্ঞতা হবে। এবার আমরা এরকম একটা কাজ করতে পারি যে, আপনারা আপনাদের অভিজ্ঞতা ‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এ পাঠিয়ে দিন। আমি মিডিয়াকেও অনুরোধ করব এর মধ্যে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি আছে, সেগুলি তারা আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে তাদের নিজেদের প্রচার মাধ্যমে প্রচার করুন যাতে সারা দেশের পরীক্ষার্থীরা এগুলো পড়বেন, টি.ভি.-তে দেখবেন আর তাঁরা চিন্তামুক্ত, উদ্বেগহীন পরীক্ষা কেমন হয়, হেসে-খেলে পরীক্ষা কীভাবে দেওয়া যায় – তার মোক্ষম দাওয়াই পেয়ে যাবেন। আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস প্রচার মাধ্যমের বন্ধুরা এই বিষয়ে নিশ্চয় সাহায্য করবেন। তবে হ্যাঁ, এটা তখনই সম্ভব, যখন আপনারা এই সব বিষয়ে পাঠাবেন – পাঠাবেন তো? নিশ্চয়ই পাঠান!
বন্ধুরা অনেক অনেক ধন্যবাদ! সামনের মাসে পরবর্তী ‘মন কি বাত’-এ অবশ্যই মিলিত হব। অনেক ধন্যবাদ!
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের সকলকে নমস্কার!
২০১৫-এর এটা আমার শেষ ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান। আগামি ‘মন কি বাত’ হবে
২০১৬-তে। কিছুদিন আগে আমরা Christmasপালন করেছি, আর এখন নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি চলছে। ভারত এক বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ। এখানে বিভিন্ন প্রকার উৎসব লেগেই থাকে। একটা যেতে না যেতে আরেকটা চলে আসে। একপ্রকার, এক-একটা উৎসব পরের উৎসবকে আমন্ত্রণ জানিয়ে চলে যায়।
কখনো কখনো মনে হয়, ভারত এমন একটা দেশ যেখানে উৎসবের সঙ্গে অর্থনীতিও জুড়ে রয়েছে। সমাজের দরিদ্র শ্রেণির মানুষের রোজগারের উপায় হল উৎসব। আমিও সকল দেশবাসীকে Christmas-এর অনেক শুভেচ্ছা আর ইংরেজি নতুন বছর ২০১৬-র অনেক অনেক শুভকামনা জানাচ্ছি। ২০১৬ আপনাদের সবার জন্য অনেক খুশি নিয়ে আসুক। নতুন আনন্দ, নতুন আশা, নতুন সংকল্প আপনাদের নতুন এক উচ্চতার শিখরে পৌঁছে দিক। সন্ত্রাসবাদ হোক, বিশ্ব উষ্ণায়ণ হোক, প্রাকৃতিক বিপর্যয় হোক, মানব-সৃষ্ট অন্যান্য সংকট হোক – সব কিছু থেকে পৃথীবি যেন মুক্ত থাকে। মানুষের জীবনে সুখ-শান্তি আসুক, এর থেকে বড় আনন্দের বিষয় কী হতে পারে?
আপনারা তো জানেন আমি প্রযুক্তিকে পুরোদমে ব্যবহার করি, এর থেকে আমি অনেক কিছু জানতে পারি। mygov-পোর্টালে আমি বিশেষ নজর রাখি।
পুনে থেকে শ্রী গনেশ ভি সাওলেশওয়ার্কার আমায় লিখে জানিয়েছেন যে, এই সময়টা পর্যটনের মরশুম। দেশ-বিদেশ থেকে বহু পর্যটক আসেন। অনেকে Christmas-এর ছুটি কাটাতে বাইরে যান। পর্যটনের ক্ষেত্রে অন্য সব সুবিধার দিকে নজর দেওয়া হয়, কিন্তু উনি একটি বিশেষ দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। যেখানে পর্যটকরা যান এবং থাকেন, সেইসব পর্যটনস্থলগুলি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার প্রতি আমাদের বিশেষ আগ্রহ থাকা উচিত। আমাদের পর্যটনকেন্দ্রগুলি যত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে, বিশ্বের দরবারে ভারতের ছবি তত উজ্জ্বল হবে। আমি শ্রী সাওলেশওয়ার্কার-এর চিন্তাধারাকে স্বাগত জানাচ্ছি এবং তাঁর কথা দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। আর এমনিতেই আমাদের কাছে অতিথি দেবতুল্য। আমাদের ঘরে যখন অতিথিরা আসেন, তার আগে ঘরকে আমরা খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে সুন্দর করে সাজাই। ঠিক সেই ভাবে আমাদের পর্যটনস্থলগুলিকে, বিশ্রামাগারগুলি ও অতিথিনিবাসগুলি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা প্রকৃতপক্ষে একটা বড় কাজ। আমি খুবই আনন্দিত যে দেশকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার খবর, আমি নিয়মিত ভাবে পাচ্ছি। এই বিষয়ে আমি প্রথম দিন থেকেই প্রচার মাধ্যমের বন্ধুদের ধন্যবাদ জানিয়ে আসছি। কারণ, তাঁরাই এরকম ছোটো কিন্তু ভালো কাজগুলি খুঁজে বার করে জনগণের সামনে তুলে ধরে। সম্প্রতি আমি একটি সংবাদপত্রে একটি বিষয় পড়ছিলাম, যা আমি সমস্ত দেশবাসীর সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছি – মধ্য প্রদেশের সিহোর জেলার ভোজপুরা গ্রামের দিলীপ সিং মালভিয়া নামে এক প্রবীণ কারিগর আছে। উনি একজন সাধারণ রাজমিস্ত্রী। উনি এক অভিনব কাজ করেছেন, যা সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। তাই আমার মনে হয়েছে, এটা আপনাদের কাছে পৌঁছে দিই।
একটা ছোটো গ্রামের বাসিন্দা দিলীপ সিংহ মালভিয়া স্থির করলেন যে গ্রামের কেউ যদি শৌচালয় তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ জোগাড় করে দেয়, তবে উনি বিনা পারিশ্রমিকে শৌচালয় তৈরি করে দেবেন। এই কাজকে পবিত্র ভেবে উনি এই পর্যন্ত ভোজপুরা গ্রামে প্রচণ্ড পরিশ্রম করে এখনও পর্যন্ত ১০০টি শৌচালয় নির্মাণ করে ফেলেছেন। আমি দিলীপ সিং মালভিয়াকে আন্তরিকভাবে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমাদের দেশ সম্পর্কে কখনও কখনও নিরাশাজনক কথাও শোনা যায়। কিন্তু এইরকম কোটি কোটি দিলীপ সিং আছেন, যাঁরা নিজের মত করে ভালো কাজ করেই চলেছেন। এটাই দেশের শক্তি, এটাই দেশের আশা। এই কাজগুলোই দেশকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়, আর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে দিলীপ সিং-কে গৌরাবান্বিত করা এবং তার জন্য আমাদের গর্ব বোধ করা খুবই স্বাভাবিক। সকল মানুষের সম্মিলিত প্রয়াসের ফলস্বরূপ আমাদের দেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ১২৫ কোটি দেশবাসী একজোট হয়ে নিজেরা এগিয়ে চলেছেন ও দেশকেও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। উন্নত শিক্ষা, নতুন প্রযুক্তি এবং জীবিকার নিত্য নতুন সুযোগ, নাগরিকদের বীমা সুরক্ষার আওতায় নিয়ে আসা থেকে ব্যাঙ্কিং সুযোগ প্রদান, আন্তর্জাতিক স্তরে ব্যবসা-বাণিজ্য করার যুগে এক নতুন সংস্কার এবং নতুন ব্যবসার ক্ষেত্রে পরিকাঠামো উন্নয়ন, আমরা এইগুলো সব করতে পেরেছি। সাধারণ পরিবারের লোকেরা যাঁরা ব্যাঙ্কের দোরগোড়ায় পৌঁছতে পারত না, তাঁদের জন্য মুদ্রা যোজনা-র মাধ্যমে সহজভাবে ঋণ পরিষেবা পৌঁছে দিয়েছি।
প্রতিটি ভারতবাসী যখন জানতে পারল যে সমগ্র বিশ্ব যোগ ব্যায়ামের প্রতি আকর্ষিত হয়েছে এবং যখন আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালনের মাধ্যমে বিশ্বের সমস্ত দেশ একজোট হল, তখন আমাদের বিশ্বাস জন্মালো যে, এটাই আমাদের দেশ – মহান ভারতবর্ষ। যখন আমাদের মনে এরকম ভাবনা তৈরি হয় তখনই চোখের সামনে অত্যাশ্চর্য ছবি ভেসে ওঠে। যেমন মা যশোদা ও শ্রীকৃষ্ণের সেই কাহিনির কথা কে ভুলতে পারে – যখন বালক শ্রীকৃষ্ণ নিজের মুখগহ্বরে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড দর্শন করিয়েছিলেন, তখন মা যশোদা বালক কৃষ্ণের ঐশ্বরিক ক্ষমতা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। ‘আন্তর্জাতিক যোগ দিবস’ পালনের ঘটনা আমাদের সেই অনুভূতিকেই আবার জাগিয়ে তুলেছে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার রব প্রতিটি ঘরেই শোনা যাচ্ছে। জনসাধারণের অংশীগ্রহণও বেড়ে চলেছে। স্বাধীনতার এত বছর পরেও যখন কোনও গ্রামে বিদ্যুতের খুঁটি পৌঁছয়, অন্ধকার দূর হওয়ার আশার অপরিসীম আনন্দ ও উচ্ছ্বাস বিদ্যুতের সুবিধাপ্রাপ্ত শহরবাসী অনুভবও করতে পারবেন না। ভারত ও বিভিন্ন রাজ্যসরকারের বিদ্যুৎ দপ্তর আগেও কাজ করত, কিন্তু এখন ১০০০ দিনের মধ্যে প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছনোর সংকল্প আমরা নিয়েছি। প্রতিদিন আমরা যখন জানতে পারি যে দেশের বিভিন্ন গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছচ্ছে, তখন সেই সব গ্রামের মানুষদের আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের কথাও আমরা জানতে পারি। এখনও পর্যন্ত এই বিষয়টি প্রচারমাধ্যম ব্যাপকভাবে তুলে ধরে নি। কিন্তু আমার বিশ্বাস, প্রচারমাধ্যম এই সব গ্রামে পৌঁছে সেখানকার মানুষের আশা ও আকাঙ্খার কথা সমগ্র দেশবাসীর কাছে তুলে ধরবে। এই কারণে সব থেকে বড় লাভ এটাই হবে, যে সমস্ত সরকারি-কর্মচারী এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা এই ভেবে উৎসাহিত ও আনন্দিত হবেন যে তাঁরা এমন কিছু করেছেন, যা গ্রামের মানুষের জীবনে এক বিরাট পরিবর্তন এনে দেবে। এই সুখবরটি কৃষক, দরিদ্র, যুবক, মহিলা – সবার কাছে পৌঁছানো কি জরুরি নয়? কোন সরকার কাজ করেছে, কোন সরকার কাজ করেনি – সেই খবর পৌঁছানোর দরকার নেই, যেটা পৌঁছনোর দরকার, সেটা হলো তাঁরা কি পেতে পারেন, সেটা থেকে তাঁদের যেন বঞ্চিত করা না হয়। নিজস্ব অধিকার পাওয়ার তথ্য তাঁদের অবশ্যই জানানো উচিত। সাধারণ মানুষের কার্যোপযোগী সঠিক ও ভালো বার্তাগুলি অধিক সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রতি আমাদের সচেষ্ট হওয়া উচিত। এটাও একরকমের সেবামূলক কাজ। আমি আমার মতো করে এই কাজ করার একটা ছোট্ট প্রয়াস করেছি। আমি একা তো সব কিছু করতে পারবো না, কিন্তু যেটা আমি বলছি, সেটা আমারও তো করা উচিত। একজন সাধারণ লোক নিজের মোবাইল ফোনে ‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’ ডাউনলোড করে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। এই অ্যাপ-এর মাধ্যমে অনেক ছোটো ছোটো কথা আমি ভাগ করে চলেছি। আমার কাছে আনন্দের বিষয়, এই অ্যাপের মাধ্যমে বহু মানুষ আমাকে অনেক কিছু জানাচ্ছেন। আপনিও আপনার মত করে এই প্রচেষ্টায় সামিল হোন। ১২৫ কোটি দেশবাসীর কাছে আমি পৌঁছতে চাই, আপনার সাহায্য ছাড়া এটা সম্ভব নয়। আসুন, আমরা সবাই মিলে সাধারণ মানুষের মঙ্গল ও প্রাপ্য অধিকারের কথা সাধারণ ভাষায় পৌঁছে দিয়ে তাঁদেরকে উৎসাহিত করি।
আমার প্রিয় যুব-বন্ধুরা, গত ১৫-ই অগাস্ট লালকেল্লা থেকে আমি ‘Start up India, Stand up India’ বিষয়ে এক প্রারম্ভিক বক্তব্য রেখেছিলাম। তারপর থেকে সরকারের প্রতিটি দপ্তরে এই কথা ছড়িয়ে পড়ে যে ভারত কি Start up Capital হয়ে উঠতে পারে। আমাদের রাজ্যগুলি কি নিজেদের নতুন Start up, উৎপাদন ও কৃষি ক্ষেত্রে বা পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের যুবাদের জন্য নব দিগন্ত খুলে দিতে পারে না? প্রতিটি ব্যাপারে নতুন চিন্তা-ভাবনা, নতুন কৌশল থাকা বাঞ্ছনীয়। কারণ নতুন উদ্ভাবন শক্তি ছাড়া বিশ্ব এগিয়ে যেতে পারে না। Start up India, Stand up India যুবা বন্ধুদের জন্য এক বড় সুযোগ নিয়ে এসেছে। আমার যুবা-বন্ধুরা, ১৬ই জানুয়ারি ভারত সরকার Start up India, Stand up Indiaপ্রকল্প চালু করতে চলেছে। এই প্রকল্পে কী হবে, কেমন হবে এবং কীভাবে হবে তার বিস্তারিত পরিকাঠামো আপনাদের সামনে তুলে ধরা হবে। এবং এই প্রকল্পে দেশের সমস্ত আই-আই-টি, আই-আই-এম, কেন্দ্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং এন-আই-টি-তে পাঠরত যুবসম্প্রদায়কে ‘live connectivity’-র মাধ্যমে সংযুক্ত করা হবে। Start up প্রকল্প সম্পর্কে আমাদের বদ্ধমূল এক ধারণা রয়েছে যে এই প্রকল্পটি ‘Digital World’ কিংবা আই-টি কর্মীদের জন্য, কিন্তু তা নয়। আমরা একে ভারতের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে নতুন ভাবে গড়তে চাই। দরিদ্র শ্রেণির মানুষ যখন কাজ করে, তখন তার কায়িক পরিশ্রম হয়। কোনও যুবা-বন্ধু যদি এমন কিছু প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন, যার মাধ্যমে তাদের পরিশ্রম কিছুটা লাঘব হয়, সেটাকেও আমরা Start up হিসাবে গণ্য করি। এই উদ্ভাবনের কাজে যুবাদের সাহায্যের জন্য ব্যাংক পরিষেবাকে অনুরোধ করব এবং যুব-শক্তিকে বলব – এগিয়ে চল, বাজার পেয়ে যাবে। আমাদের শহরের যুব-বন্ধুদেরই যে কেবল মেধাসম্পদ রয়েছে এই ধারণাটা ভুল। ভারতবর্ষের প্রতিটি কোণে প্রতিভাসম্পন্ন যুবা-বন্ধু রয়েছে, তাদের প্রয়োজন শুধু সুযোগের। এই Start up India, Stand up India ভারতের গুটিকয়েক শহরে সীমাবদ্ধ না রেখে গোটা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে দেওয়া দরকার। সমস্ত রাজ্য সরকারদের কাছে অনুরোধ, এই প্রকল্পটিকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। ১৬ই জানুয়ারি আমি আপনাদের সম্মুখীন হয়ে সবিস্তারে আলোচনা করব, আপনাদের পরামর্শের অপেক্ষায় থাকবো।
প্রিয় যুবা-বন্ধুরা, ১২-ই জানুয়ারি স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম-জয়ন্তী। আমার মতো এই দেশে কোটি কোটি মানুষ রয়েছেন যাঁরা স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে উদ্বুদ্ধ। ১৯৯৫ সাল থেকে ১২-ই জানুয়ারি, স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম-জয়ন্তী-র দিনটি জাতীয় যুব উৎসব হিসেবে পালন করা হয়। এই বছর এই উৎসব ১২-ই জানুয়ারি থেকে ১৬-ই জানুয়ারি পর্যন্ত ছত্তিশগড়ের রায়পুরে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। প্রতি বছরই এই উৎসবের একটি থিম থাকে। আমি জানতে পেরেছি, এই বছরের থিম হল Indian Youth of Development, Skill and Harmony অর্থাৎ উন্নয়ন, উৎকর্ষ এবং সৌহার্দের প্রতীক – ভারতীয় যুবা। আমি জানতে পেরেছি যে ভারতবর্ষের প্রতিটি প্রান্ত থেকে ১০ হাজারের বেশি যুব-বন্ধু এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে চলেছে। ভারতের ক্ষুদ্র সংস্করণের একটি ছবি এখানে দেখা যাবে। যুব-ভারতের একটি প্রতিচ্ছবিও এখানে ফুটে উঠবে। এক প্রকারে এই উৎসব স্বপ্নের প্লাবন হয়ে দেখা দেবে এবং এক সংকল্পের অনুভূতি হবে। এই যুব-উৎসব সম্পর্কে আপনারা আমাকে কিছু পরামর্শ দিতে পারেন? যুবা-বন্ধুদের কাছে আমার বিশেষ অনুরোধ এই যে নরেন্দ্র মোদী অ্যাপের মাধ্যমে আপনারা সরাসরি আপনাদের পরামর্শ পাঠান। আমি আপনাদের মনের কথা জানতে ও বুঝতে চাই। এটা জাতীয় যুব উৎসবে প্রতিফলিত হবে। আমি আমার সরকারকে সঠিক পরামর্শ ও তথ্য দেব। তাহলে বন্ধুরা, আমি ‘নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ’-এর মাধ্যমে যুব উৎসব সম্পর্কে আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় রইলাম।
আহ্মদাবাদ, গুজরাতের দৃষ্টিহীন শিক্ষক দিলীপ চৌহান নিজের বিদ্যালয়ে ‘Accessible India Day’ পালন করেছেন। আমাকে ফোন করে নিজের মতামত জানিয়েছেন। উনি জানিয়েছেন –
মহাশয়, আমরা আমাদের বিদ্যালয়ে Accessible India প্রচার চালিয়েছি। আমি একজন দৃষ্টিহীন শিক্ষক। বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষের মধ্যে সচেতনা বৃদ্ধি এবং তাঁদের কীভাবে সাহায্য করা যায় সেই বিষয়ে আমি প্রায় দু’হাজার ছাত্রের সামনে বক্তব্য রেখেছি। ছাত্রদের কাছ থেকে খুব উৎসাহজনক সাড়া পেয়েছি। সমাজে শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের সাহায্যের জন্য, তাদের অনুপ্রাণিত করা হয়েছে।
আমার মনে হয় এই প্রচেষ্টা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দিলীপজী, আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনি তো নিজেই এই বিষয়ে কাজ করছেন। এদের সমস্যা সম্পর্কে আপনি ভালোভাবেই অবগত আছেন আর আপনি নিজেও নিশ্চয়ই অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। যখন সমাজে এই ধরনের মানুষের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ হয়, তখন আমার মনে অনেক ধরনের ভাবনা আসে। আমাদের চিন্তা-ভাবনা অনুযায়ী তাঁদের সমস্যাগুলির প্রতি আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করি। কিছু মানুষ দুর্ঘটনাবশতঃ অঙ্গহানির শিকার হন। আবার কিছু মানুষ জন্মগতভাবে শারীরিক অক্ষমতার শিকার হন। এই সমস্ত মানুষদের সনাক্তকরণের জন্য অনেক রকমের শব্দ ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের শব্দ নিয়ে অনেক চিন্তাও করা হচ্ছে। কিন্তু সব সময় মনে হয়, এই লোকেদের জন্য এই ধরনের শব্দের প্রয়োগ ঠিক নয়, সম্মানজনক নয়। আর আপনারা তো জানেন কত ধরনের শব্দ ব্যবহৃত হয়। কখনও হ্যাণ্ডিক্যাপ্ড (Handicapped), তো কখনো disabled শব্দ শুনতাম। আবার কখনও Specially Abled Person– এই ধরনের অনেক শব্দ শুনে আসছি। একথা ঠিকই যে শব্দের একটা বিশেষ মাহাত্ম্য আছে। এই বছর ভারত সরকার ‘সুগম্য ভারত অভিযান’ শুরু করেছে। ওই অনুষ্ঠানে আমার উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু তামিলনাড়ুর কয়েকটি জেলায় বিশেষ করে চেন্নাইয়ে ভয়ঙ্কর বন্যার কারণে আমাকে ওখানে যেতে হয়েছিল। তাই ‘সুগম্য ভারত অভিযান’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারিনি। যেহেতু ওই অনুষ্ঠানটিতে আমার উপস্থিত থাকার কথা ছিল, তাই আমার মনে এই বিষয়ে কিছু চিন্ত-ভাবনা কাজ করছিল। এই সময়ে আমার মনে হল, ঈশ্বর যার শরীরে কিছু অপূর্ণতা দিয়েছেন কিংবা যার দু-একটি অঙ্গ ঠিকভাবে কাজ করে না, আমরা তাকে বিকলাঙ্গ বলি, বিকলাঙ্গরূপে জানি। কিন্তু কখনও কখনও যখন তাদের সঙ্গে পরিচিত হই, তখন বুঝতে পারি যে, আমাদের দৃষ্টিতে সেই মানুষটির কিছু অপূর্ণতা রয়েছে, কিন্তু ঈশ্বর তাঁকে কিছু extra-power দিয়েছেন। ঈশ্বর তাঁর মধ্যে এক বিশেষ শক্তি দিয়েছেন, যা আমাদের চোখে ধরা পরে না। তাঁকে যখন কাজ করতে দেখি, তাঁর কার্যক্ষমতার প্রতি আমাদের দৃষ্টি পরে, তখন আশ্চর্যান্বিত হয়ে ভাবি ও কাজটা কীভাবে সম্পূর্ণ করছে! তখন আমার মনে হয়, আমাদের দৃষ্টিতে হয়ত সে বিকলাঙ্গ, কিন্তু অভিজ্ঞতা বলে, ওর কাছে কিছু extra-power আছে, অতিরিক্ত শক্তি আছে। এই সব দেখে আমার মনে এক ভাবনা এসেছে যে আমাদের দেশে বিকলাঙ্গ শব্দের পরিবর্তে কেন দিব্যাঙ্গ শব্দের ব্যবহার করি না? এঁরা সেই মানুষ যাঁদের এমন ধরনের এক বা একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আছে, যার মধ্যে দৈবশক্তি আছে, যা আমাদের মত সাধারণ মানুষের শরীরে নেই। এই শব্দটি আমার খুব ভাল লেগেছে। দেশবাসীর কাছে আমার আবেদন, বিকলাঙ্গ শব্দের পরিবর্তে আমরা কি ‘দিব্যাঙ্গ’ শব্দের প্রচলন করতে পারি? আমার আশা, আমরা এই বিষয়ে ভবিষ্যতে চিন্তা-ভাবনা করতে পারি। সেই দিন আমরা ‘সুগম্য ভারত অভিযান’ শুরু করেছিলাম। ফিজিক্যাল ও ভার্চুয়াল – এই দুই ধরনের পরিকাঠামোর উন্নয়ন করে দিব্যাঙ্গ ব্যক্তিদের সুগম্য করার চেষ্টা করবো। হতে পারে বিদ্যালয়, হাসপাতাল, সরকারি অফিস বা বাস টার্মিনাস, রেল স্টেশনে ঢালু পথ বা র্যািম্প, সহজগম্য পার্কিং ও লিফ্টের ব্যবস্থা, ব্রেইল লিপি ইত্যাদি অনেক জিনিসের আমাদের প্রয়োজন। আর এই সব জিনিস সহজলভ্য করার জন্য এই বিষয়ে আমাদের প্রয়োজন উদ্ভাবনী শক্তির, নতুন প্রযুক্তির এবং সংবেদনশীল মনের। আমরা এই কাজ শুরু করেছি, সাধারণ মানুষ এতে অংশগ্রহণ করছে, তাঁরা এই কাজের তারিফও করছে। আপনিও আপনার মতো করে এতে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, সরকারী প্রকল্প নিরন্তর আসতে থাকে, চলতে থাকে – কিন্তু এটা বিশেষভাবে প্রয়োজন যে, প্রকল্পগুলি কার্যকরী এবং প্রান্তিক ব্যক্তি পর্যন্ত সজীব ও প্রাণবন্ত থাকুক – ফাইলবন্দী হয়ে তার মৃত্যু কাম্য নয়। আসলে প্রকল্প বানানো হয় সাধারণ মানুষের জন্য, গরীব মানুষের জন্য। সম্প্রতি ভারত সরকার এক প্রকল্প শুরু করেছে যাতে বিভিন্ন প্রকল্পের সুফল যোগ্য ব্যক্তির কাছে সহজে পৌঁছায়। আমাদের দেশে গ্যাস সিলিণ্ডারে ভর্তুকি দেওয়া হয়। এর জন্য কয়েক কোটি টাকা খরচ হয়, কিন্তু যোগ্য ব্যক্তির কাছে এই লাভ সময় মতো পৌঁছচ্ছে কি না তার কোনও হিসাব-নিকাশ ছিল না। সরকার এই বিষয়ে কিছু পরিবর্তন এনেছে। ‘জন ধন’ অ্যাকাউন্ট, আধার কার্ড ইত্যাদির সাহায্যে বিশ্বের সব থেকে বৃহৎ ‘Largest Direct Benefit Transfer Scheme’-এর মাধ্যমে উপকৃত ব্যক্তির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ভর্তুকি পৌঁছানো। দেশবাসীকে এটা জানাতে পেরে আমি গর্বিত যে সব থেকে বড় Direct Benefit প্রকল্প সাফল্যের সঙ্গে চালু করার জন্য এটা ‘গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস্’-এ স্থান পেয়েছে। ‘পহল’ নামে পরিচিত এই প্রকল্প খুব সফল হয়েছে। নভেম্বরের শেষ অবধি প্রায় ১৫ কোটি এল-পি-জি ব্যবহারকারী ‘পহল’ যোজনার মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন। ১৫ কোটি মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি সরকারি টাকা পৌঁছচ্ছে। এর মধ্যে কোনও দালাল বা সুপারিশের প্রয়োজন নেই বা দুর্ণীতির সম্ভাবনাও নেই। প্রথমত, আধার কার্ডের প্রচলন, দ্বিতীয়ত, ব্যাংকে ‘জন-ধন’ অ্যাকাউন্ট খোলানো, তৃতীয়ত, কেন্দ্রিয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলির যৌথ উদ্যোগে উপকৃতদের তালিকা তৈরি করে তা ব্যক্তিবিশেষের আধার কার্ড এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে সংযুক্তিকরণের প্রক্রিয়া চলছে।
আজকাল MNREGA প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ মানুষের রোজগার সুনিশ্চিত করা হয়। এই প্রকল্পের প্রদত্ত অর্থের বিষয়ে নানান অভিযোগ আসছিল। এখন বেশির ভাগ জায়গায় এই টাকা সোজাসুজি শ্রমিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপের অর্থ নিয়েও অনেক সমস্যা ছিল, অনেক অভিযোগ আসছিল। তাদের জন্যও এই ব্যবস্থা শুরু করা হয়েছে এবং এটা ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। বিভিন্ন প্রকল্পে উপকৃতদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি এখনও পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা পৌঁছেছে। এক সাধারণ হিসাব অনুযায়ী ‘Direct Benefit Transfer’-এর মধ্যে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০টি প্রকল্পকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ২৬শে জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবস। ভারতীয় গণতন্ত্রে এক স্বর্ণোজ্জ্বল দিন। সুখের বিষয়, এই বছর সংবিধানের রূপকার ড. বাবাসাহেব আম্বেদকরের ১২৫-তম জন্মজয়ন্তী। সংবিধান বিষয়ে বিশেষভাবে আলোচনার জন্য সংসদের অধিবেশনে দুটি দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছিল। এটা একটা বেশ ভালো অভিজ্ঞতা। প্রতিটি দল, প্রতিটি সাংসদ – সংবিধানের পবিত্রতা, গুরুত্ব এবং সংবিধানকে সঠিক ভাবে বোঝার বিষয়ে খুব ভালো আলোচনা করেছেন। ভবিষ্যতেও এই ধরনের প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে। সঠিক অর্থে সাধারণতন্ত্র দিবস কি প্রতিটি নাগরিককে সংবিধানের সঙ্গে এবং সংবিধানকে প্রতিটি নাগরিকের সঙ্গে যুক্ত করতে পারবে? আমাদের সংবিধান আমাদের অনেক অধিকার সুনিশ্চিত করে। এই অধিকার সম্বন্ধে অনেক আলোচনা হয় যা সঠিক। এই আলোচনাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধানে কর্তব্যের ওপরেও সমান জোর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই বিষয়ে বিশেষ আলোচনা হয় না। বিশেষ করে নির্বাচনের সময় ‘ভোটদান আমাদের পবিত্র কর্তব্য’ লেখা হোর্ডিং, বিজ্ঞাপন, দেওয়াল-লিখন ইত্যাদি দেখা যায়। ভোট দেওয়ার সময় কর্তব্যের কথা তো অনেক হয়, কিন্তু দৈনন্দিন জীবনেও কর্তব্যের কথা কেন হবে না? এই বছর আমরা যখন বাবাসাহেব আম্বেদকরের ১২৫তম জন্ম-জয়ন্তী পালন করছি তখন ২৬শে জানুয়ারি দিনটিকে সামনে রেখে স্কুল, কলেজ, গ্রাম, শহর ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলিতে ‘আমাদের প্রাথমিক কর্তব্য’ বিষয়ে রচনা, বিতর্ক ও কবিতার প্রতিযোগিতার আয়োজন কি করতে পারি না? যদি ১২৫ কোটি ভারতবাসী কর্তব্যের প্রতি দায়বদ্ধভাবে এগিয়ে চলে, তাহলে এক ঐতিহাসিক ঘটনার সূচনা হবে। সর্বপ্রথম আমাদের এই বিষয়ে আলোচনা শুরু করা দরকার। আমার মনে একটা নতুন ভাবনা এসেছে। ২৬শে জানুয়ারির আগে আপনারা নিজেদের মাতৃভাষায় অথবা ইংরাজি বা হিন্দিতে কর্তব্য বিষয়ে রচনা, কবিতা লিখে আমাকে পাঠাতে পারেন। আমি আপনাদের চিন্তা-ভাবনার বিষয়ে অবগত হতে চাই। আমার ‘mygov’ পোর্টালে তা পাঠাতে পারেন। আমাদের দেশের যুবশক্তির কর্তব্য বিষয়ে ধ্যান-ধারণা সম্বন্ধে জানতে আমি খুবই আগ্রহী।
আমি একটি ছোটো প্রস্তাব রাখতে চাই। ২৬শে জানুয়ারি যখন আমরা সাধারণতন্ত্র দিবস পালন করব, তখন দেশের নাগরিক ও স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের দ্বারা আমাদের শহরগুলিতে স্থাপিত মহাপুরুষদের প্রতিকৃতিগুলিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সুশোভিত করা এবং প্রতিকৃতির সংলগ্ন ক্ষেত্রের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারি না? আমি কিন্তু সরকারি ব্যবস্থার কথা বলছি না। সাধারণ নাগরিক হিসাবে এই মহাপুরুষদের প্রতিকৃতি স্থাপনের ব্যাপারে আমরা যতটা উৎসাহী ও আবেগপ্রবণ, এগুলির রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে আমরা ততটাই উদাসীন। সমাজের জন্য, দেশের জন্য আমরা কি এটাকে আমাদের স্বাভাবিক অভ্যাসে পরিণত করতে পারি না?
এই ২৬-শে জানুয়ারি, আসুন, আমরা সকলে মিলে মহাপুরুষদের সম্মানে নির্মিত এই সকল প্রতিকৃতিগুলির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সচেষ্ট হই। এর জন্য সাধারণ মানুষকে, নাগরিকদেরকে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসতে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসীগণ, আমি আরও একবার আপনাদের সবাইকে নতুন বছর ২০১৬-র অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আপনাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ!
Namaskar to all my fellow citizens!
Once again I have the opportunity of connecting with you through Mann ki Baat. Today the fifth “one day” cricket match is being played between India and South Africa in Mumbai. This series has been named as the ‘Gandhi-Mandela’ series. It is at an interesting point with both teams having won 2 matches each. So the last game is significantly important. My best wishes to all the players.
Today I would like to congratulate the friends at the Kannur centre of Akashwani. I started the Mann ki Baat and people started connecting with it. One of them was Shraddha Thamban from Kerala a grade 12 student. Kannur Centre invited her for a ceremony and a lot of feedback was received. It created an environment of belonging. Kannur centre appreciated the awareness of Shraddha and she was rewarded. The development at Kannur centre inspired me. I wish all the Akashwani centers pay attention to raise the level of awareness among the members and make them active in their region so that our aim of governance with public participation gets a boost. My heartfelt greetings and congratulations to the team at Kannur station of Akashwani centre for their efforts.
I would like to talk about Kerala again. The girl students from Saint Mary Upper primary School from Chittoor in Kerala have sent me a letter. This letter is special in many ways. Firstly, these girls have created an image of Mother India by thumb prints on a huge piece of cloth. They have sent me the image of mother India. Initially I was surprised to see why they created a map of India using thumb prints. But when I read their letter, I realized how beautifully a symbolic message was given. It is not as if these girls have tried to just awaken the Prime Minister alone. They are trying to create awareness among the people in their region and their mission is organ donation. They are organizing a public awareness campaign for organ donation. They have organized plays for creating an understanding about organ donation. Organ donation should become a habit as well as an instinct. They have asked me in their letter to appeal to people about Organ Donation in Mann ki Baat. The octogenarian Vasantrao Sudke Guru ji from Maharashtra has been running a movement from a long time. He says that organ donation should be a celebrated as a festival. These days I get a lot of messages on phone calls also. Devesh from Delhi gas also sent me a similar message. ‘I am very happy with the government’s initiative on the organ donation and steps towards creating a policy on the same. The country really needs support in these things where people need to go out and help each other and the ambitious target of one per million organ donation is a very productive steps taken by the government.’
I feel that this topic is very important. The country needs more than 2.5 lakh kidneys, hearts and livers for donation per year. However in a country with 125 crore people, only 5000 transplants could take place. Each year about one lakh eyes are in need of a vision. And we are able to reach upto only 25,000 people who need it .It implies that we are able to provide eye transplant services to only one out of the four needy persons. We should also know that if someone is killed in a road accident, then also the organs can be donated. There are some legal hassles involved. And efforts have been made to guide the states in this direction.
By reducing the paper work, some of the states have made a good effort in speeding up the process involved in organ donation. Today, I can say that Tamil Nadu today ranks first in the field of organ donation. Many social organizations and NGO’s are doing commendable job in this direction. National Organ and Tissue transplant Organization (NOTO) has been established to encourage organ transplant. A 24x7 helpline facility is also available. Its number is 1800 114 770. And there is a saying ‘Tain Tyakten Bhunjhita’ ("What is given by Him, allotted to you, you enjoy that"). The joy of sacrifice is beautifully described in this mantra ‘Tain Tyakten Bhunjhita’. In the past few days we saw on television that the wife of a poor hawker in Delhi received a transplant in Delhi’s G.B. Pant Hospital. This liver was brought from Lucknow by making special arrangements. The transplant was successful. A life was saved. Organ donation is the biggest donation. Let us all realize the mantra of ‘Tain Tyakten Bhunjhita’ .
Dear countrymen, we recently celebrated the festival of Navratri and Vijayadashmi. And after some days we will celebrate Diwali too. We celebrated Eid and Ganesh Chaturthi too. But amongst all these another big festival is being organized which all our countrymen should be proud of. In the National Capital of Delhi an ‘India Africa Foreign Summit’ is being organized from 26th to 29th October. For the first time a program of this scale is being organized on the Indian soil. Leaders of 54 African countries and unions have been invited. This is the biggest conference of African countries outside Africa. India-Africa ties are deep. The African nations have a population equal to that of India. If both are combined together they make for a third of the world population. And it is said that lakhs of years ago it was all one landmass. Later from the Indian Ocean two parts got separated. There are a lot of similarities amongst us. The bio diversity of both the nations is similar. Our natural resources are similar. And almost 27 lakh Indians have settled in these nations from a long time. India shares a lot of economic, cultural and political ties with the African Nations. But India plays the largest role in training the youth of the African countries. More than 25,000 African youths have studied human resource development and capacity building in India. And many leaders from Africa have studied in India. So you can understand the depth of our relationship. And from that perspective this summit is very important. Generally when there is a summit, leaders of various countries meet. Similarly, in this summit the leaders will be meeting. We are making efforts that the people should also meet.
And this time, the Government of India, especially the HRD ministry has done something really commendable. An essay competition was organized among all the CBSE affiliated schools. A poetry competition was organized to increase their participation. Almost 1600 schools participated in the event. It included schools within and outside India. And thousands of children wrote on topics about strengthening the Indo Africa ties. On the other hand, a mobile exhibition called “Memories of Mahatma” starting from his birth place Porbander and travelling through North is about to reach Delhi on 29th October. Lakhs of school children enjoyed this exhibition. The villagers also had a glimpse. People realized the importance of the role of Mahatma Gandhi in developing the ties of both India and Africa and also the effect of his personality on these nations. Some excellent creations were received in this competition. One of the creations drew my attention and I want to share it with you. It reflects the talent, the broad vision and the depth of thoughts of students from small cities. Garima Gupta from Muzzafarnagar, UP writes beautifully and says-
The river in Africa is Nile and the name of the sea is Red,
The Continent is Huge and the Indian Diaspora Happy
Like the Indus Valley is recognition of India civilization
River Nile and Carthage are synonymous with African civilization
Gandhi ji started his revolution in Africa
He wove a spell and won everybody’s heart
Be it Johannesburg or Kingston, Zimbabwe or Chad
In each African nation, we can find our Aloo chat
To write, a thousand lines can be written
But I want to mention that I love African jungles
The poem is very long, but I have read a few lines to you. Though it is an Indo – Africa summit but how this too can become an opportunity to connect people is clearly evident here. I heartily congratulate Garima, the students and more than 1600 schools who participated and HRD Ministry for this initiative.
Last time on 15th August I had proposed the Sansad Adarsh Gram Yojana. Since then, many parliamentarian friends have adopted it. They were deeply involved. Last month a workshop was organized in Bhopal. All the pradhans, collectors, parliamentarians of villages adopted under Adarsh Gram, the representatives of Indian government and state government, all had an in-depth discussion on this program. Many new and encouraging things came to our attention. I would like to bring to your attention a few things. Jharkhand, a huge state is primarily tribal. Unfortunately whenever one talks of Jharkhand what comes to mind is Maoism, violence, guns and blood soaked land. Many regions in the state have been ruined by these communist terrorists. But the MP from that place, a senior member who has also been our Deputy S peaker, Shri Karia Munda has dedicated his life for the tribals. He chose Parsi Gram Panchayat from Khunti district to be adopted for Adarsh Gram. It is difficult for government officials to go to places ruled by the Maoists. Even the doctors cannot visit those places. He himself started travelling to this village, to instill faith and give a new lease of life to governmental organizations. He encouraged the officials to visit. He tried to change the mood of despondency and create a mood to achieve something. A successful effort has been made in Parsi village to create awareness along with infrastructure and organizational development. I would like to congratulate our Honourable parliamentarian Sri Karia Munda ji for the same.
I got similar information from Andhra too. The MP from Andhra Sri Ashok Gajapati Raju became involved in this plan and chose Dwarapudi Gram Panchayat from Vijaynagram district for the same. Other arrangements are in progress, but he did something really innovative. He gave a task to the students in the village school. The new generation in the village is fortunate to be educated but the older generation is not literate. So he asked the students of a higher age group to educate the parents. So in the morning they are students and by evening they become educators. And so, nearly 550 adults were taught by these children and made literate. Just see, no budget, no circular, no special arrangements but just will power brought about such a big change. This is amply demonstrated by the Dwarapudi Gram Panchayat.
Similarly, another respectable parliamentarian Sri C. L Ruwala ji, he is an MP from Mizoram, our North East. He chose Khwalahilung village for Adarsh Gram and ran a special initiative. This village is famous for sugarcane production and a Kurtayi jaggery. Sri Ruwala ji started a Sugarcane Festival on 11th March. All the people from the region came together for it. Senior members from social public life, retired government officials from the region also participated. They put up an exhibition on increasing sugarcane production. They discussed how the village could be made the centre of economic activities and how it could market for its produce. I congratulate Ruwala ji for his efforts to make this village not only an Adarsh gram but self dependent village too.
My dear brothers and sisters, it is not possible that there be an episode of Mann ki Baat and we do not discuss cleanliness. Savita Rai from Mumbai has sent me a telephonic message - “each year on Diwali we clean our houses. This Diwali let us clean our environment along with our homes and maintain that cleanliness even after Diwali”. She has drawn attention to this issue. I want to remind you my dear countrymen that last year in our country, the media ran a special campaign and showed all the places where crackers were lying and told that it was not the right thing. This was an awareness campaign launched by the media. As a result of it, soon after Diwali a cleanliness drive got initiated all by itself. So what you are saying is true that our concern before and after the festival should be the same. And we should express this concern on every public platform. And today, I especially congratulate all the members of the Indian media fraternity.
This 2nd October, on Gandhi ji’s anniversary and also on the completion of one year of ‘Clean India Campaign’, I had the fortune of participating in the ‘Safaigiri Campaign’ of the India today group. They gave away the Clean India Awards and I could see several initiatives being carried out. Different people were working as ‘One Like, One Mission’. There are so many places in our country that have been kept so clean. All these things were brought to light and I offered my heartfelt appreciation to India Today group for their commendable efforts. Since the inception of the cleanliness drive I have seen that from Andhra and Telangana, ETV, Eanadu have participated whole heartedly and specially Sri Ramoji Rao who is very aged but beats any youth in his enthusiasm. He has made cleanliness his personal program, his mission. He has been promoting the cleanliness program through ETV for the past one year. The newspapers carry news about them and he has emphasized on positive news about cleanliness. He has been successful in bringing together around 51 lakh children from 55-56 thousand schools of Andhra and Telangana to this mission. Be it public places, stations, religious places, hospitals, parks or other places, he ran a cleanliness drive. All these news exhibit the power to realize the dream of a Clean India.
ABP news has started a program called ‘Ye Bharat Desh Hai Mera’. In this program they have shown how people have become aware towards cleanliness and through this they are trying to train people about keeping their surroundings clean. NDTV has started a campaign called ‘Banega Swachh India’. Dainik Jagaran has also encouraged this campaign, so has Zee TV, and India TV also started ‘Mission Clean India’. Thousands of channels and newspapers in our country, I am unable to name them all due to time constraints, but they all have helped run this campaign. This is why, Savita Rai ji, the suggestion that you have given us; the whole nation has taken it upon them to do this work and taking it forward. The Governor of Meghalaya, Mr. Shanmuganthan, wrote me a letter and talked about a village in Meghalaya called Mavalyannong. He has written that from last many years, this village has set out on a mission for cleanliness and more or less every generation is completely dedicated towards this cause. He has also mentioned that a few years ago they also got the award for the ‘cleanest village’ of Asia. The idea of a far-flung village situated in the north-eastern region in Meghalaya, which has been particular about cleanliness since years, makes me extremely happy. This has become the habit and the culture of the village. This is what reinforces our belief that our nation will be clean one day, for sure. This will be possible because of the efforts of the people, and by the time we celebrate the 150th anniversary of Mahatma Gandhi, the 125 crore people of the country should be able to proudly proclaim that we have made India clean.
My dear countrymen, I said this from the Red Fort on the 15th of August that there are few places where corruption is deep rooted. When a poor man goes for an ordinary job, he faces so many problems to get a decent reference and has to go through through a team of agents who take money from him in exchange for the position he is applying for. He loses money whether he gets the job or not. We keep hearing things like these and this is when I had an idea, why do we need to interview people for ordinary jobs. I have never heard of any psychologist in the world who can analyze a person completely in a 1-2 minute long interview. With this thought I decided to do away with the tradition of interviews for small positions.
My dear young friends, I feel very proud to tell you all that the government has completed all the formalities and now there will not be any interview for the non-gazetted posts of group ‘D’, group ‘C’, and group ‘B’ in the Central Government. This will come into effect from January 1st 2016. We will not interrupt the ongoing procedures now but from January 1st, 2016, this will come into play. So, let me congratulate all my young friends for the same.
We had, anyways, declared an important scheme in the last budget. In our country, gold has become a part of our social life. Gold is considered the medium of financial security. Gold is considered to be the solution for difficult times. This has been an age old tradition. I don’t believe that anyone can reduce this love for gold that we have developed but keeping gold as dead-money does not suit today’s generation. Gold can become our strength. It can become our financial strength. Gold can become the financial property of the nation and every Indian must contribute to this. I am happy that the promise that we made of introducing important schemes, we will do so around Diwali and Dhanteras when people buy specially buy gold. We have introduced a ‘Gold Monetization Scheme’. Under this scheme, you can deposit your gold in a bank and the bank will give you interest, same as you deposit your money and get interest from the bank.
Earlier, we used to keep our gold in the lockers and paid for the lockers ourselves. Now, when you keep your gold in the bank, the bank will give you money as interest. Now, tell me countrymen, can gold become a property or not?
Can gold be converted from dead-money to a live strength or not? This is exactly what we have to do and you must stand with me. Do not keep your gold in your homes. Avail dual benefits, its security and interest on the gold. You must avail this opportunity. Another thing is, in Sovereign Gold Bonds, you do not really get a physical gold in your hand. You get a sheet of paper and the value of that paper is equivalent to that of the amount of gold and the day you return that paper, you will get the amount that is equivalent to the value of gold on that particular day. Let us assume, you buy a gold bond worth Rs. 1000 and five years later you go to return that bond and at that time the rate of gold is Rs. 2500, you will receive an amount of Rs. 2500 in exchange of that bond. So, we are introducing this scheme now. Due to this scheme, we will not have to buy gold now. We will not have to secure our gold now. We will not have to worry about where to put the gold and no one will come to steal the papers. In the coming week, I will certainly put forward this scheme that guarantees security to the people of this country. I feel very glad to tell you that we are also introducing Gold Coin, a gold coin with Ashok Chakra. It has been around 70 years of independence but we are still using a foreign gold coin only or the Gold Bullion Bars, these are also used by the foreigners. Why should it not have the national emblem of our country? This is why we are introducing it in the market and it will be available for the citizens in the coming week, before Dhanteras - 5gm and 10gm of gold coins with Ashok Chakra are being introduced. Along with it a 20 gm Gold Gunion will also be available for the people. I have full faith that this new scheme will usher a new change in the financial development of the country and I will get your support in this.
My dear countrymen, 31st October is the birth anniversary of the Iron-Man of India, Sardar Vallabh Bhai Patel. “Ek Bharat, Shreshtha Bharat.” A complete layout of India unfolds in front of us when we talk about Sardar Vallabh Bhai Patel. This great man has contributed a lot in building the unity of India. He has proven his capabilities as the Iron-Man of India. We will certainly pay tribute to Sardar Sahab but along with that his dream of seeing India integrated, he made it possible geographically. But this mantra of unity should be a continuously present in our thoughts in our minds, behaviour and our expressions. India is full of diversities. Many sects, communities, languages, castes, attires, and it is this diversity that adds to its charm. If it was not for this diversity, we wouldn’t have been this proud of our country. This is why diversity is the mantra of unity. Peace, social harmony, unity, these are essential elements of a society. Since last many years, ‘Run for Unity’ programs have been organized in various parts of the country on the 31st of October. ‘Ekta ki Daud’ - I also had a chance to run in one of these earlier. I have heard this year also, this race is being planned at many places. People are excited to be preparing for this race. In the true sense ‘Ekta ki Daud’ is the true race for development. In other words, the guarantee for the race of development lies in the race of unity. Come, let us pay tribute to Sardar Sahab. Let us take forward the mantra of unity.
Dear brothers and sisters, you must all be busy in the preparations for Diwali, houses must be getting cleaned. You must be shopping for new things. The festival of Diwali is celebrated in various ways all over the country. I extend my good wishes to you on this pious festival. We also get to hear of a few accidents around the time of Diwali. Fire breaks out due to firecrackers or lamps. Especially children suffer a lot because of fire crackers. I will suggest all the parents to be careful along with enjoying Diwali and see to it that the kids should not get hurt or any untoward incident should not happen and we lose our child due to accidents. I know you will be careful about this and of course about keeping the environment clean.
My dear countrymen, I have to leave for a trip to Britain on the next day of Diwali. I am very excited about my Britain trip this time. There is a reason behind my excitement. A few weeks back I went to Mumbai to inaugurate a magnificent memorial of Dr. Baba Bhimrao Ambedkar near his ‘Chaitya Bhoomi’. Now, I am going to London to formally inaugurate the house where Babasaheb used to stay, which has now become the property of India, an inspiration for 125 crore countrymen. Be it a dalit, an underprivileged, a victim, a bereaved, or any Indian who is leading a difficult life. This house inspires us to believe in the fact that if one has a strong will power, we can overcome the difficulties to tread on the path of success, one can get educated and this is the very place where Babasaheb Ambedkar used to meditate. The Indian government and the government of different Indian states give scholarships to such promising students who go abroad to study and who belong to the dalit community, the tribal community or any other under privileged community. I believe that when these kids go to Britain to study, this memorial of Babasaheb will become a pilgrimage for them, it will become a source of inspiration. Whatever you learn in life, you must use it later for the nation and live for your nation, Babasaheb gave this message and even lived it himself.
This is why I am saying that I am very excited about my Britain trip this time. This issue has been lying entangled since many years, now it has become the property of 125 crore countrymen and if the name of Babasaheb Ambedkar is attached, you can imagine how happy it makes me.
I am going to get another opportunity in London, the unveiling of the statue of Lord Vishweshwara. Many years ago, what Lord Vishweshwara had done for democracy and empowerment of women can make for a very good subject to study in the world. The unveiling of the statue of Lord Vishweshwara on the land of London is in itself a perfect example of the fact that the great men of India were very far-sighted. Now you see, when such incidents are connected, how excited we get.
My dear countrymen, you are connected with us through “Mann ki Baat.” I keep getting your suggestions through telephone and mygov.in. Your letters are also discussed on Akashvani. Government officials are called in and discussions are held. Some people write down their grievances, there are efforts to solve their problems as well. We should learn more than one language in a country like India. I am fortunate enough to have learned a few languages, but still there are so many languages that I could not learn. I am indebted to Akashvani because they broadcast this program of “Mann ki Baat” by 8 O’clock in every state in their regional languages. Even though a different voice is used but the thoughts are mine.
I will try to make it reach out to you in your language. We have formed a beautiful bond between us. Last time I had completed a year in power. This year we are entering a new year. A heartfelt congratulations to all my countrymen once again!
Jai Hind.
আমার প্রিয় দেশবাসীগণ, আপনাদের সবাইকে নমস্কার!
আবার একবার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আপনাদের মধ্যে আমার আসার সুযোগ হল। সুদূর দক্ষিণ ভারতের মানুষেরা এখন ওনাম উৎসবে মেতে রয়েছেন আর গতকালই পুরো দেশ পবিত্র রাখীবন্ধন উৎসব পালন করল।
ভারত সরকার সাধারণ মানুষের জন্য সামাজিক সুরক্ষা-সহ আরও কয়েকটি নতুন নতুন যোজনা শুরু করেছে। খুব অল্প সময়েই অনেক মানুষ যে এইসব যোজনার আওতায় এসেছেন, এতেই আমি আনন্দিত। আমি ছোট্ট একটি অনুরোধ করেছিলাম, রাখীবন্ধন উৎসবে আমাদের বোনেদের যেন এমনই একটি সুরক্ষা যোজনা দেওয়া হয়। আমার কাছে প্রচুর তথ্য এসেছে, যা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে পরিকল্পনা শুরু হওয়ার পর থেকে এপর্যন্ত এগারো কোটি পরিবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আমাকে এটাও জানানো হয়েছে যে, এর প্রায় অর্ধেক সুবিধা মা-বোনেরা পেয়েছেন। আমি এটাকে ভালো লক্ষণ বলে মনে করছি। সব মা-বোনেদের আমি রাখীবন্ধন উৎসবের অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। আজ যখন আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি, তার একবছর আগে ‘জনধন যোজনা’ হাতে নেওয়া হয়েছিল। অনেক প্রশ্ন উঠেছিল, যে কাজ ষাট বছরে হয় নি, তা এত কম সময়ে হবে কি? কিন্তু আজ আমি সানন্দে জানাচ্ছি যে, এই যোজনা শুরু করতে সরকার ও ব্যাঙ্কগুলির সমস্ত বিভাগ মনপ্রাণ দিয়ে নেমে পড়ে এবং সাফল্য পায়। এখনও পর্যন্ত আমার কাছে যা তথ্য আছে সেই অনুসারে প্রায় পৌনে আঠারো কোটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে – সতেরো কোটি চুয়াত্তর লাখ! আমি দরিদ্র জনগণের ক্ষমতাও দেখলাম। যেখানে ‘জিরো ব্যালান্স’-এ খাতা খোলার কথা ছিল, সেখানে তাঁরা সঞ্চয়ের মাধ্যমে মোট বাইশ হাজার কোটি টাকা জমা করেছেন। অর্থব্যবস্থার মূল ধারা যে ব্যাঙ্কিং – তাকে দরিদ্র মানুষের ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশে ‘ব্যাঙ্ক মিত্র যোজনার’ ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। আজ এক লক্ষ পঁচিশ হাজারেরও বেশি ব্যাঙ্ক মিত্র সারা দেশে কাজ করছে। এর ফলে দেশের তরুণরাও কাজ পেয়েছেন। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, এই এক বছরে ব্যাঙ্কিং সেক্টর, অর্থনীতি এবং নিম্নবিত্ত মানুষদের একত্রিত করার জন্য ১ লক্ষ ৩১ হাজার Financial Literacy Camp খোলা হয়েছে। শুধু অ্যাকাউন্ট খুলে থেমে যাওয়া নয়, এখন তো কয়েক হাজার মানুষ এই ‘জনধন যোজনা’র আওতায় ওভারড্রাফট্ নেওয়ারও যোগ্যতা অর্জন করেছেন এবং নিয়েছেনও। দরিদ্র মানুষও যে ব্যাঙ্ক থেকে পয়সা পেতে পারেন এই বিশ্বাস তৈরি হয়েছে। আমি আবার একবার এর সঙ্গে যুক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং যে সব দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর ভাই ও বোনেরা ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন, তাঁদের অনুরোধ করছি, আপনারা ব্যাঙ্কের সঙ্গে এই সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হতে দেবেন না। এই ব্যাঙ্ক আপনাদেরই, আপনারা আর একে ছাড়বেন না। আমি একে আপনাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি, এবার একে ধরে রাখার দায়িত্ব আপনাদের। ব্যাঙ্কে আমাদের সকলের খাতা চালু রাখতে হবে। আমার পূর্ণ আস্থা আছে, আপনারা তা রাখবেন।
কিছুদিন আগে গুজরাতের হিংসাত্মক ঘটনাবলী গোটা দেশকে বিচলিত করে তুলেছিল। আর এটা তো স্বাভাবিক যে গান্ধী এবং সর্দার প্যাটেলের রাজ্যে যদি তেমন কিছু ঘটে যায়, তাহলে সারা দেশ দুঃখ পায় – ব্যথিত হয়। কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই গুজরাতের বিচক্ষণ নাগরিক – আমার ভাই-বোনেরা পরিস্থিতিকে সামলে নিয়েছেন। পরিস্থিতির বেসামাল হওয়া আটকাতে তাঁরা সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছেন এবং গুজরাত আবার শান্তির পথ নিয়েছে। শান্তি, একতা ও ভ্রাতৃত্বের এই রাস্তাই ঠিক রাস্তা এবং উন্নতির জন্য আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে হবে। সমৃদ্ধিতেই আমাদের সব সমস্যার সমাধান।
সম্প্রতি আমার সুফি ধারার বিদ্বজ্জনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার এবং তাঁদের কথা শোনার সুযোগ হয়েছিল। আমি সত্যি বলছি, তাঁদের সেই মহৎ কথা শোনার এই অভিজ্ঞতা আমার শ্রবণে যেন এক সঙ্গীতের অনুভব নিয়ে এসেছে। সেই পণ্ডিতদের শব্দচয়ন, তাঁদের কথা বলার ধরন, অর্থাৎ সুফি ধারায় যে শান্ত উদারতার ঐতিহ্য রয়েছে – তা যেন এক সঙ্গীতের লয়ের মতো আমার উপলব্ধিতে পৌঁছেছে। আমার খুবই ভালো লেগেছে। সম্ভবত ইসলামের এই সত্য স্বরূপটিকে তামাম দুনিয়ার কাছে ঠিকমতো পৌঁছে দেওয়াই এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। আমার বিশ্বাস, সুফি পরম্পরার এই প্রেম এবং উদারতার বাণী দূর-দূরান্তে পৌঁছে যাবে, যাতে সমগ্র মানবজাতি তথা ইসলামের উপকার হবে। আমি অন্যদেরও বলি, আমরা ভিন্ন সম্প্রদায়ভুক্ত হলেও সুফি ভাবধারাটি আমাদের বোঝা দরকার।
আগামী দিনে আমার আর একটি সুযোগ আসতে চলেছে এবং এই নিমন্ত্রণ পাওয়ার জন্য আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। বিশ্বের বহু দেশের বৌদ্ধ ধর্মের পণ্ডিতেরা ভারতের বুদ্ধগয়ায় আসছেন, তাঁরা সারা বিশ্বের মানবজাতির সঙ্গে সম্পর্কিত নানা বিষয়ে আলোচনা করবেন। এই বিদ্বানেরা যে আমাকেও সেখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তাতে আমি আনন্দিত। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত নেহরু বুদ্ধগয়ায় গিয়েছিলেন। বিশ্বের এইসব বিদ্বজ্জনের সঙ্গে দেখা হওয়ার এই ক্ষণটি আমার কাছে এক আনন্দের মুহূর্ত হতে চলেছে।
আমার প্রিয় কৃষক ভাই-বোনেরা, আমি আরও একবার আপনাদের বিশেষ করে মনের কথা বলতে চাই। আমি এর আগেও এই বিষয় নিয়ে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে কথা বলেছি। আপনারা সংসদে, সার্বজনীন সভায় বা ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে সে কথা শুনেছেন। আমি প্রত্যেকবার একটা কথাই বলে আসছি, জমি অধিগ্রহণ আইন নিয়ে যে বিবাদ চলছে, সেই বিষয়ে সরকারের মন খোলাই আছে। কৃষকদের মঙ্গলের জন্য যে কোন পরামর্শ গ্রহণ করতে আমি রাজি আছি – একথা আমি বহুবার বলে আসছি। কিন্তু আজ কিষাণ ভাই-বোনেদের আমি বলতে চাই যে, জমি অধিগ্রহণ আইনে সংশোধনের প্রস্তাব রাজ্যের তরফ থেকে এসেছে। সকলের মনে হয়েছিল যে, গ্রামের দরিদ্র কৃষকের যদি ভালো করতে হয়, ক্ষেত পর্যন্ত সেচের জল পৌঁছবার জন্য খাল বানাতে হয়, গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার জন্য খুঁটি পুঁততে হয়, গ্রামের জন্য সড়ক তৈরি করতে হয়, গ্রামের গরীব মানুষদের জন্য ঘর তৈরি করতে হয়, গ্রামের দরিদ্র যুবকদের জন্য উপার্জনের ব্যবস্থা করতে হয় – তাহলে আমাদের আইনকে আমলাতন্ত্রের লাল ফিতার ফাঁস থেকে বের করে আনতে হবে। এই সব ভেবেই সংশোধনের প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু আমি দেখলাম যে, এই নিয়ে প্রচুর ভুল ধারণা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, কৃষকদের ভয় পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার কিষান ভাই-বোনেরা, আমাদের কৃষকেরা কখনই ভুল ধারণা করলে চলবে না আর ভয় তো কখনই পাওয়া চলবে না। আমি কাউকেই কিষাণদের ভুল বোঝাবার বা ভয় দেখানোর সুযোগ দিতে চাই না। আমার কাছে দেশের প্রত্যেকটি দাবিই জরুরি, কিন্তু তার মধ্যেও কৃষকদের দাবি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একটি অধ্যাদেশ জারি করেছিলাম, যার মেয়াদ আগামীকাল, ৩১শে অগাস্ট শেষ হচ্ছে। আমি ঠিক করেছি, এই মেয়াদ শেষ হতে দেওয়া হোক। অর্থাৎ, আমার সরকার তৈরি হওয়ার আগে যে অবস্থান ছিল, সেটাই আবার ফিরে এলো। কিন্তু তাতে একটা কাজ অসম্পূর্ণ ছিল। ১৩টি এমন বিষয় ছিল, যার কাজ এক বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল এবং সেইজন্য আমরা অধ্যাদেশেও সেগুলি এনেছিলাম, কিন্তু এই বিবাদের জেরে সে বিষয়টিও অসম্পূর্ণ থেকে গেল। অধ্যাদেশ তো শেষ হতে চলেছে। কিন্তু যাতে কৃষকদের সরাসরি লাভ হতে পারে, তাঁদের সরাসরি আর্থিক লাভ যার সঙ্গে যুক্ত, সেই তেরটা বিষয়কে আমরা নিয়মকানুনের আওতায় এনে আজই চালু করে দিচ্ছি। এতে কৃষকদের লোকসান হবে না, আর্থিক ক্ষতি হবে না, আর এইজন্য যে তেরটা বিষয়কে নিয়মের আওতায় এনে চালু করার কথা ছিল, তা আজই আমরা সম্পন্ন করছি আর আমি আমার কৃষক ভাই ও বোনেদের এই কথা বলতে চাই যে, আমাদের ‘জয় জওয়ান, জয় কিষাণ’ নিছক এক শ্লোগান নয়, এ আমাদের কাজের মন্ত্র। গ্রামে গরীব ও কৃষকদের কল্যাণ আমাদের পথ চলার মন্ত্র। তাই আমি ১৫ই অগাস্ট বলেছিলাম যে, শুধু কৃষি বিভাগ নয়, কৃষি ও কৃষক-কল্যাণ বিভাগও তৈরি করা হবে। এই সিদ্ধান্ত আমরা দ্রুত কাজে পরিনত করার চেষ্টা করছি। আমার কৃষক ভাই ও বোনেরা, এখন আর বিভ্রান্তির কোনও কারণ নেই, সংশয়ের কোন কারণ নেই। কেউ যদি আপনাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে তাহলে ভয় পাবেন না।
আমার আরও একটি কথা বলার আছে। দু’দিন আগে ১৯৬৫-র যুদ্ধের পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হয়েছে। যখনই ১৯৬৫-র যুদ্ধের কথা ওঠে, তখন লালবাহাদুর শাস্ত্রীর কথা মনে পড়া খুব স্বাভাবিক। ‘জয় জওয়ান জয় কিষাণ’ মন্ত্রটি স্মরণে আসাও খুব স্বাভাবিক। ভারতের ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকার গৌরব ও সম্মান বজায় রাখার জন্য যেসমস্ত মানুষ শহীদ হয়েছেন, তাঁদের আত্মবলিদানের কথা স্মরণে আসাও খুব স্বাভাবিক। ’৬৫-র ভারত বিজয়ের সঙ্গে যুক্ত সকলকে আমি আমার প্রণাম জানাই, বীর শহীদদের নমস্কার জানাই। এরকম ঐতিহাসিক ঘটনা আমাদের প্রতিনিয়ত প্রেরণা যোগায়।
গত সপ্তাহে সুফি পরম্পরার মানুষজনের সঙ্গ লাভ করার সুযোগ পেয়ে আমি অত্যন্ত সুখী হয়েছি। দেশের গণ্যমান্য বৈজ্ঞানিকদের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলাম, তাঁদের কথা শোনার সুযোগ পেয়েছিলাম। আমার খুব ভাল লেগেছে যে বিজ্ঞানের নানান ক্ষেত্রে ভারত খুব ভাল কাজ করছে। আমাদের বিজ্ঞানীরা সত্যিই খুব ভাল কাজ করছেন। বিজ্ঞানীদের কাজের ফলে আমাদের সামনে যে সব সুযোগ আসছে, তা দেশের সাধারণ মানুষের কাছে কীভাবে পৌঁছে দেব, বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তকে পরীক্ষামূলকভাবে কীভাবে কাজে লাগানো যাবে, ল্যাব-কে ল্যাণ্ডের সঙ্গে অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগারের সুফল সাধারণ মানুষের উপকারে কীভাবে লাগাবো এবং উন্নয়নকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাব, তা এখন ভাবতে হবে। অনেক নতুন নতুন তথ্য আমার হাতে এসেছে যা অত্যন্ত উৎসাহজনক এবং শিক্ষামূলক। আমি দেখেছি তরুণ বৈজ্ঞানিকেরা কি উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে কথা বলছেন, তাঁদের চোখে নতুন স্বপ্ন আমি দেখেছি। গতবারের ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আমি বলেছিলাম যে, আমাদের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের দিকে আরও অগ্রসর হওয়া উচিত। বৈজ্ঞানিকদের সঙ্গে এই আলোচনার পর আমার মনে হয়েছে যে এই ক্ষেত্রে অনেক সুযোগ, অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। আমি একথা আবারও বলতে চাই যে, সমস্ত তরুণ বন্ধুরা, আপনারা বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহশীল হন। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরও উচিত শিক্ষার্থীদের এই ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া।
আমি দেশের মানুষের কাছ থেকে অনেক চিঠি পেয়েছি। থানে থেকে শ্রীমান পরিমল শা mygov.in-এ শিক্ষার সংস্কার সম্পর্কে লিখেছেন, কারিগরী দক্ষতা (skilled development) নিয়ে লিখেছেন। তামিলনাড়ুর চিদাম্বরমের শ্রীমান প্রকাশ ত্রিপাঠী প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে সংস্কারের গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন, ভাল শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
আমি বিশেষ করে আমার তরুণ বন্ধুদের একটি কথা বলতে চাই, আমি গত ১৫ই অগাস্ট লালকেল্লার প্রাকার থেকে আমার ভাষণে বলেছিলাম যে ছোটো ছোটো চাকরির জন্য ইন্টারভিউ-এর কি প্রয়োজন! আর যখন ইন্টারভিউ-এর ডাক আসে, তখন প্রতিটি গরীব পরিবার, বিধবা মা খুঁজতে থাকেন, কোথা থেকে সুপারিশ করানো যাবে, কার সাহায্যে এই চাকরি পাওয়া যাবে, কোন খুঁটিকে চাকরির জন্য ধরা যাবে? আরও কি-কি শব্দ এই ব্যাপারে প্রয়োগ করা হয় কে জানে? সবাই দৌড়চ্ছেন, আর হয়ত নীচুস্তরের দুর্ণীতির এও এক কারণ। আমি ১৫ই অগাস্ট বলেছিলাম যে আমি চাই ইন্টারভিউ-এর এই চলে আসা ব্যবস্থা থেকে একটি স্তরের অন্তত মুক্তি পাওয়া উচিত। আমার ভাল লাগছে মাত্র পনের দিনের মধ্যে, সরকার খুব দ্রুত এগিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে এই ব্যাপারে কাজ করা শুরু করেছে। নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, আর খুব তাড়াতাড়ি আশা করা যায় ছোটো ছোটো চাকরির ক্ষেত্রে ইন্টারভিউ ব্যবস্থা তুলে দেওয়া সম্ভব হবে। গরীবকে সুপারিশের জন্য দৌড়তে হবে না, exploitation হবে না, দুর্ণীতি থাকবে না।
ইদানিং ভারতে বিশ্বের অনেক দেশ থেকে অতিথিরা এসেছেন। স্বাস্থ্য, বিশেষ করে মা ও শিশুর মৃত্যুহার কমানোর জন্য বিশ্বের ২৪টি দেশ একজোট হয়ে ভারতের Call to Action পরিকল্পনায় মতামত দিয়েছেন। আমেরিকার বাইরে অন্য কোনও দেশে এই পরিকল্পনা এই প্রথমবার হ’ল। এটা ঠিক যে আজও আমাদের প্রত্যেক বছর প্রায় পঞ্চাশ হাজার মা আর প্রায় তের লক্ষ শিশু প্রসবকালে কিংবা তার পরবর্তী সময়ে মারা যায়। এটা অত্যন্ত চিন্তাজনক এবং ভয়েরও। যদিও এই ব্যাপারে অনেক উন্নতি হয়েছে, আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের প্রশংসাও শুরু হয়েছে, তবুও এই সংখ্যা নেহাত কম নয়। যেমন আমরা পোলিও থেকে মুক্তি পেয়েছি, তেমনই মা ও শিশুর টিটেনাসের কারণে মৃত্যু থেকেও মুক্তি পেয়েছি। গোটা বিশ্ব একে স্বীকৃতি জানিয়েছে। কিন্তু এখনও আমাদের মা ও সদ্যোজাত শিশুদের সকলকে বাঁচাতে হবে। ভাই ও বোনেরা, আজকাল ডেঙ্গুর খবর খুব পাওয়া যাচ্ছে। এটা ঠিক যে ডেঙ্গু অত্যন্ত বিপজ্জনক। কিন্তু ডেঙ্গু থেকে পরিত্রাণ পাওয়া খুব সহজ। আমি যে স্বচ্ছ ভারতের কথা বলি, তার সঙ্গে এর সরাসরি যোগ আছে। ডেঙ্গু নিয়ে টিভিতে আমরা বিজ্ঞাপন দেখি, খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন ছাপা হয়, কিন্তু আমরা সেদিকে মন দিই না। ঘরের ছোট ছোট জিনিসপত্র পরিষ্কার রাখা, জল বিশুদ্ধ রাখার নিয়মকানুন আছে। এই ব্যাপারে ব্যাপক হারে লোকশিক্ষা শুরু হয়েছে কিন্তু সেদিকে আমরা মনোযোগ দিচ্ছি না। কখনও কখনও মনে হয় যে আমরা খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ঘরে থাকি, খুব ভাল ব্যবস্থা, কিন্তু মাথায় থাকেন না যে আমারই ঘরে যে জল জমে আছে, তাতে আমি ডেঙ্গুকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আমি সবাইকে অনুরোধ করব যে মৃত্যুকে এত সহজে আসতে দেবেন না। জীবন অনেক মূল্যবান। চারপাশের নোংরা জমা জলের প্রতি উদাসীন ভাব মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে, এটা ঠিক নয়। সারা দেশে প্রায় ৫১৪টি কেন্দ্রে বিনা পয়সায় ডেঙ্গুর পরীক্ষা করার ব্যবস্থা রয়েছে। সময় থাকতে থাকতে পরীক্ষা করানো মৃত্যুকে ঠেকিয়ে রাখার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এই ব্যাপারে আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। পরিচ্ছন্নতাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতে হবে।
এখন রাখীবন্ধন থেকে দীপাবলী পর্যন্ত দেশজুড়ে নানান উৎসব চলবে। সব উৎসবের সঙ্গেই আমরা পরিচ্ছন্নতাকে কেন যুক্ত করব না! আপনারা দেখবেন, পরিচ্ছন্নতার এই বিধি পালন আপনার স্বভাব হয়ে যাবে। আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ আমি একটি খুশির খবর শোনাতে চাই। আমি প্রায়ই বলি যে, এখন আমাদের দেশের জন্য জীবন দান করার সৌভাগ্য হয় না, কিন্তু দেশের জন্য বাঁচার সৌভাগ্য তো হয়েছে। আমার দেশের দুটি তরুণ, মহারাষ্ট্রের নাসিকের দুই ভাই – ড. হিতেন্দ্র মহাজন এবং ড. মহেন্দ্র মহাজন –এর মধ্যে দেশের আদিবাসীদের সেবা করার প্রবল ইচ্ছা রয়েছে। এই দুই ভাই ভারতের গৌরব বাড়িয়েছেন। আমেরিকায় একটি সাইকেল রেস হয়, ‘রেস অ্যাক্রস আমেরিকা’, যা খুব কঠিন। এই রেস প্রায় ৪,৮০০ কিলোমিটার লম্বা। এই বছর এই দুই ভাই এই রেসে বিজয়ী হয়ে ভারতের সম্মান বাড়িয়েছেন। আমি এই দুই ভাইকে অনেক অনেক শুভকামনা, ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমার এটা অত্যন্ত ভাল লাগছে যে এই দুই ভাই ‘টিম ইণ্ডিয়া ভিশন ফর ট্রাইবালস্’-এর যে উদ্দেশ্য অর্থাৎ, আদিবাসীদের উন্নতির জন্য কাজ করা – এই অভিযানের মাধ্যমে তাঁরা তা সফল করেছেন। দেখুন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রত্যেকেই ব্যক্তিগত স্তরে কীভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যখন এইসব ঘটনা শুনি তখন গর্বে বুক ফুলে ওঠে। কখনও কখনও পুরনো ধ্যান-ধারণার বশবর্তী হয়ে আমরা নতুন প্রজন্মের প্রতি অন্যায় করে ফেলি। পুরনো প্রজন্মের মানুষের ধারণা আছে যে নতুন প্রজন্ম কিছু জানে না। এই ধ্যান-ধারণা বহু শতাব্দী ধরে চলে আসছে। কিন্তু আমি নতুন প্রজন্মের প্রতি অন্য ধারণা পোষণ করি। কখনও কখনও যুবকদের সঙ্গে কথা বললে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। আমি এমন অনেক যুবকের সঙ্গে মিলিত হয়েছি, যাঁরা Sunday on Cycle–কে তাঁদের জীবনের ব্রত করেছেন। কিছু মানুষ বলেন, আমি তো সপ্তাহে একদিন ‘সাইকেল ডে’ পালন করি। আমার শরীর-স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের সুরক্ষার জন্যও এটি অত্যন্ত উপযোগী। আর আমি যে যুবক, সেটা ভাবতেও ভাল লাগে। এখন তো আমাদের দেশের অনেক শহরে সাইকেল চালানো হচ্ছে এবং সাইকেল চালাতে উৎসাহ দেওয়ার লোকও অনেক আছেন। এটি পরিবেশ সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য এক ভাল প্রচেষ্টা। আজ যখন আমার দেশের দুই তরুণ আমেরিকায় দেশের জাতীয় পতাকা তুলে ধরেছেন, তখন ভারতের যুবকদের ভাবনা-চিন্তা যে পথে চলেছে তা উল্লেখ করতে আমার ভাল লাগছে।
আমি আজ মহারাষ্ট্র সরকারকে বিশেষভাবে অভিনন্দন জানাতে চাই। মুম্বই-এ ইন্দু মিল-এর জমিতে বাবাসাহেব আম্বেদকরের স্মারক তৈরির কাজ বহুদিন ধরে আটকে ছিল। মহারাষ্ট্রের নতুন সরকার এই কাজ সম্পন্ন করেছেন। এখন ওই জমিতে বাবাসাহেব আম্বেদকরের এক পবিত্র সুন্দর এবং প্রেরণাদায়ক স্মারক তৈরি হবে, যা আমাদের দলিত, নিপীড়িত, শোষিত এবং বঞ্চিত মানুষদের জন্য কাজ করার প্রেরণা জোগাবে। এই সঙ্গে লণ্ডনের 10, King Henry Road–এর যে বাড়িতে ড. বাবাসাহেব আম্বেদকর থাকতেন, সেটি আমরা কিনে নিয়েছি। মহারাষ্ট্র সরকার বাবাসাহেব আম্বেদকরের এক স্মারক সেখানে তৈরি করবেন। ভারতীয়রা, যাঁরা বিশ্বজুড়ে ঘুরে বেড়ান, তাঁদের জন্য লণ্ডনের এই জায়গা এক প্রেরণাস্থল হবে। বাবাসাহেব আম্বেদকরের প্রতি সম্মান জানানোর জন্য মহারাষ্ট্র সরকারের এই দুটি প্রচেষ্টাকেই আমি সাধুবাদ জানাচ্ছি, আমি গর্ব বোধ করছি, আমি তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি।
আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, পরবর্তী ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের আগে আপনারা আপনাদের মতামত অবশ্যই আমাকে জানান, কারণ আমার বিশ্বাস, গণতন্ত্র প্রতিটি মানুষের অংশগ্রহণে, প্রতিটি ব্যক্তির ভোটপ্রয়োগে সফলতার দিকে এগিয়ে চলে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ এগিয়ে যেতে পারে।
আপনাদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসীগণ, নমস্কার!
এই বছর বর্ষার শুরুটা ভালোই হয়েছে। আমাদের কৃষক ভাই-বোনেদের খারিফ শস্যরোপণে সাহায্য হবে। আর একটি খুশির খবর আমার মনে আসাতে খুব আনন্দ হয়েছে। আমাদের দেশে ডালশস্য এবং তৈলবীজের খুব ঘাটতি আছে। গরীব মানুষদের ডাল চাই, খাবার জন্য তরি-তরকারি তৈরিতে অল্প তেলও চাই। আমার কাছে এটা আনন্দের খবর যে এবার যে ফসল হয়েছে, তাতে ডালের পরিমাণ প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তৈলবীজের ক্ষেত্রে মোটামুটি ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। আমার কৃষক ভাই-বোনদের এজন্য আমি ধন্যবাদ জানাই। তাঁদের অনেক অভিনন্দন। আমার প্রিয় দেশবাসী, ২৬শে জুলাই দিনটি আমাদের দেশের ইতিহাসে ‘কারগিল বিজয় দিবস’ হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে। কৃষকদের দেশের জমির সঙ্গে যতটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, আমাদের দেশের জওয়ানদেরও তাই। কারগিলের যুদ্ধে আমাদের এক-একজন জওয়ান শত্রুপক্ষের শত শত সৈন্যদের কাছে আতঙ্কজনক হয়ে উঠেছিলেন। নিজেদের জীবনের পরোয়া না করে, শত্রুপক্ষের সমস্ত প্রচেষ্টা বানচাল করে দিয়েছিলেন যে বীর সৈনিকরা তাঁদের শত শত প্রণাম করি। কারগিলের যুদ্ধ কেবল দেশের সীমারেখাতেই হয়নি, ভারতের প্রতিটি শহর, প্রতিটি গ্রামের যোগ ছিল এই যুদ্ধের সঙ্গে। এই যুদ্ধ সেই সব মা ও বোনেরাও লড়েছেন, যাঁদের জওয়ান ছেলে বা ভাই কারগিলে শত্রুদের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। সেইসব মেয়েরা লড়াই করেছিলেন যাঁদের হাত থেকে তখনও নতুন বিবাহের মেহেন্দি মুছে যায় নি। সেইসব পিতারা লড়াই করেছেন যাঁরা নিজের জওয়ান পুত্রকে দেখে নিজেকেও সৈনিক বলে মনে করেছেন। আর সেইসব ছেলেরা লড়েছে যারা এখনও বাবার হাত ধরে হাঁটাও শেখে নি। এঁদের আত্মবলিদানের জন্যই আজ ভারত সারা বিশ্বে মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারছে। আর এজন্যই আজ ‘কারগিল বিজয় দিবস’-এ আমাদের সৈন্যবাহিনীকে আমার শত শত প্রণাম।
২৬শে জুলাইকে আরও এক দৃষ্টিতে আমি মহত্বপূর্ণ মনে করি, কারণ ২০১৪ সালে আমাদের সরকার গঠনের কয়েক মাস পর ২৬শে জুলাইতেই আমি ‘mygov’ পোর্টাল-এর শুরু করেছিলাম। গণতন্ত্রে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ আরও বাড়ানো, প্রতিটি মানুষকে দেশের উন্নতির কাজে লাগানোর সংকল্প আমার, আর আজ এক বছর বাদে এই কাজ করতে গিয়ে এটাই আমার আনন্দ যে প্রায় দু’কোটি মানুষ ‘mygov’ পোর্টালটি দেখেছেন। সাড়ে পাঁচ লক্ষের কাছাকাছি মানুষ তাঁদের মতামত দিয়েছেন আর সবথেকে খুশির কথা এই যে পঞ্চাশ হাজারের বেশি মানুষ সময় বার করে পি.এম.ও অ্যাপ্লিকেশন-এর ব্যাপারে মতামত দিয়েছেন। এই ব্যাপারে মনোনিবেশ করেছেন। এই কাজকে গুরুত্ব দিয়েছেন। আর কিরকম গুরুত্বপূর্ণ মতামত এসেছে শুনুন – কানপুর থেকে অখিলেশ বাজপেয়ী মহাশয় এক সুন্দর পরামর্শ পাঠিয়েছেন - IRCTC-র Website-এর মাধ্যমে ট্রেনের টিকিট বুক করার সময় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কেন সংরক্ষণ রাখা যাবে না? প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের টিকিট পাওয়ার জন্য এত ঝামেলার মোকাবিলা করা কি উচিত? এখন এই কথাটা খুব ছোট, কিন্তু কখনও সরকারী তরফে এটা নিয়ে ভাবা হয়নি বা কোনো বিচার-বিবেচনা করা হয়নি। কিন্তু ভাই অখিলেশ বাজপেয়ী-র এই মতামত সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে এবং আজ আমাদের প্রতিবন্ধী ভাই-বোনদের জন্য এই ব্যবস্থা চালু করা হয়ে গেছে। আজ যে লোগো তৈরি হচ্ছে, ট্যাগ লাইন তৈরি হচ্ছে, পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে, নীতি তৈরি করা হচ্ছে – ‘mygov’ পোর্টালে এই সবকিছু ব্যাপারে সদর্থক মতামত আসছে। শাসন ব্যবস্থায় এক নতুন স্বচ্ছ বাতাস বয়ে যাওয়ার অনুভূতি হচ্ছে। এক নতুন চেতনা অনুভব হচ্ছে। ১৫ই অগাস্টে আমার কি বলা উচিত তা নিয়েও ইদানিং ‘mygov’ পোর্টালে নানান পরামর্শ আসছে। চেন্নাই থেকে সুচিত্রা রাঘবচারী অনেক মতামত পাঠিয়েছেন। ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’, ‘ক্লিন গঙ্গা’, ‘স্বচ্ছ ভারত’ সম্পর্কে বলুন। কিন্তু এর থেকে আমার এক ভাবনা এসেছে যে এবার ১৫ই অগাস্টে আমার কী বলা উচিত, আপনারা কি এব্যাপারে কোনো উপদেশ পাঠাতে পারেন? ‘mygov’ পোর্টালে পাঠাতে পারেন, আকাশবাণীতে চিঠি লিখতে পারেন, প্রধানমন্ত্রী-র কার্যালয়েও চিঠি লিখতে পারেন। দেখুন, আমি এটা মানি এ এক ভাল জিনিস যে ১৫ই অগাস্ট আমার ভাষণের জন্য জনতা-জনার্দনের কাছ থেকে পরামর্শ সংগ্রহ। আমার বিশ্বাস আপনারা অবশ্যই ভাল পরামর্শ পাঠাবেন। একটি ব্যাপারে আমি আমার চিন্তাভাবনা জানাতে চাই, আমি কোন উপদেশ দিতে চাই না – এটাও ভাববেন না যে আমি রাজ্যসরকার, কেন্দ্র সরকার বা ছোটো ছোটো স্বশাসিত সংস্থার দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার রাস্তা খুঁজছি।
মাত্র দু’দিন আগে দিল্লিতে এক দুর্ঘটনার দৃশ্য আমার চোখে পড়ে। দুর্ঘটনার পরে এক স্কুটার চালক ১০ মিনিট ধরে পড়ে ছটফট করছেন। তিনি কোনও সাহায্য পাননি! আমি এটাও দেখছি যে কিছু মানুষ বার বার আমাকে লিখছেন পথ নিরাপত্তার বিষয়ে কিছু বলার অনুরোধ জানিয়ে। মানুষজনকে সচেতন করার অনুরোধ জানিয়ে। বেঙ্গালুরু-র হোশাকোট থেকে অক্ষয় হ’ন, পুনের অমেয় জোশী হ’ন বা কর্ণাটকের মুড়বিদ্রী থেকে প্রসন্না কাকুঞ্জে হ’ন, এঁরা সবাই, এমন আরও আছেন, যাঁদের নাম আমি বলিনি, এই বিষয়ে চিন্তাভাবনা করেছেন এবং আপনাদের সবার চিন্তাই সঠিক। আর যখন পরিসংখ্যানের দিকে চোখ যায়, তখন মন ব্যথিত হয়ে ওঠে। আমাদের দেশে প্রতি মিনিটে একটি করে দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার জন্য, পথ-দুর্ঘটনার জন্য প্রতি ৪ মিনিটে একটি করে মৃত্যু হয়। আর সবথেকে বড় চিন্তার কথা এই যে, এই সমস্ত মৃত মানুষদের এক-তৃতীয়াংশই ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী নওজওয়ান। একটি মৃত্যু পুরো পরিবারকে ধ্বংস করে দিতে পারে। প্রশাসনের যে কাজ করা উচিত, তা তো তাঁরা করবেনই, কিন্তু আমি মা-বাবাদের অনুরোধ জানাব, আপনার সন্তান টু-হুইলার চালাক বা ফোর-হুইলার, সাবধানতার জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা পরিবারের তরফেই হওয়া উচিত। কখনও কখনও আমি দেখি, অটো রিক্সার পেছনে লেখা আছে, “পাপা জলদি ঘর আ যানা” (‘বাবা তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরে এস’) – এই লেখা কতটা মর্মস্পর্শী! আর এজন্যই আমি বলছি যে, সরকার তো এব্যাপারে বেশ কিছু নতুন উদ্যোগ নিয়েছে – পথ নিরাপত্তার ব্যাপারে শিক্ষাদান হোক বা রাস্তা তৈরির কারিগরী, প্রশাসনিক ব্যবস্থা লাগু করার কথাই হোক অথবা দুর্ঘটনার পর আহত ব্যক্তিদের আপৎকালীন চিকিৎসা ব্যবস্থার কথা হোক, এই সব কথা মাথায় রেখেই বলব, ‘রোড ট্রান্সপোর্ট অ্যাণ্ড সেফটি বিল’ আমরা আনছি। আগামী দিনে ‘জাতীয় পথ নিরাপত্তা নীতি’ আর ‘রোড সেফটি অ্যাকশন প্ল্যান’-এর প্রয়োগ করার লক্ষে আমি কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে ভাবনা-চিন্তা করছি। আমি আরও একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছি, যা গুরগাঁও, জয়পুর আর বদোদরা থেকে শুরু করে মুম্বই, রাঁচি, রণগাঁও, মোণ্ডিয়ার রাজপথসহ দেশের সমস্ত রাজপথ জুড়ে বিস্তার লাভ করবে। আমি দুর্ঘটনা-পরবর্তী প্রথম পঞ্চাশ ঘণ্টার জন্য একটা ক্যাশলেস্ চিকিৎসা ব্যবস্থার কথা ভাবছি – আহত ব্যক্তির কাছে পয়সা আছে কি নেই, কে পয়সা দেবে, কে দেবে না – এই সমস্ত চিন্তা ছেড়ে আহত ব্যক্তি কীভাবে ভাল স্বাস্থ্য পরিষেবা পাবেন, প্রাথমিক চিকিৎসা পাবেন সেটাই দেখা হবে। সারা দেশ জুড়ে আমি দুর্ঘটনার খবর দেওয়ার জন্য একটি টোল-ফ্রি নম্বর 1033-এর ব্যবস্থা করেছি, অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেছি – কিন্তু এই সব কিছুই দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ। দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেব্যাপারে আমাদের ভাবনা-চিন্তা করা উচিত। প্রতিটি প্রাণ, প্রতিটি জীবন আমাদের অত্যন্ত প্রিয়। এই জায়গা থেকে বিষয়টি দেখা উচিত। কখনও কখনও আমি বলি যে, কর্মচারীরা কর্মযোগী হন।
গত কিছু দিনে কিছু ঘটনা আমার নজরে এসেছে, যা আমার ভাল লেগেছে, সেই কথাটি আমি আপনাদের বলতে চাই। কখনও কখনও কাজ করতে করতে মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়ে, আর কিছু বছর বাদে মনে করে ঠিক আছে, মাইনে তো পাচ্ছি, কাজ পরে করে নেব। গত কয়েক দিনে রেলের কর্মচারীদের বিষয়ে একটি তথ্য আমার নজরে আসে – নাগপুর ডিভিশনে বিজয় বিশওয়াল নামে একট টি.টি.ই আছেন। তাঁর ছবি আঁকার শখ আছে। উনি যে কোনো জায়গায় গিয়ে ছবি আঁকতে পারতেন। কিন্তু উনি রেলের কাজকে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং রেলের চাকরি করছেন আর রেলের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের ছবি আঁকছেন – এতে তাঁর কাজের প্রতি আগ্রহ এবং আনন্দ – দুই-ই বেড়ে যাচ্ছে। এই উদাহরণ দেখে আমার খুব ভাল লেগেছে এই ভেবে যে নিজের কাজের ভেতরও কীভাবে আন্তরিকতার স্পর্শ আনা যায়, তা তিনি দেখিয়েছেন। নিজস্ব রুচি, নিজস্ব শিল্প, নিজস্ব ক্ষমতাকে নিজের কাজের সঙ্গে কীভাবে যুক্ত করা যায়, তা বিজয় বিশওয়াল দেখিয়ে দিয়েছেন। আগামীদিনে বিজয় বিশওয়ালের ছবি নিয়ে নানান আলোচনা, মত বিনিময় অবশ্যই হতে পারে। আমার আর একটি কথাও মনে পড়ছে – মধ্যপ্রদেশের হরদা জেলার সরকারী আধিকারিকদের পুরো দল, পুরো জেলাতে এক এমন কাজ শুরু করেছেন যা আমার মনকে ছুঁয়ে গেছে এবং তাঁদের কাজ আমার খুব পছন্দ হয়েছে। তাঁরা ‘অপারেশন মলযুদ্ধ’ শুরু করেছেন। এখন কেউ এটা শুনলে মনে করবেন যে এটা অন্য কোনো প্রসঙ্গ হবে। কিন্তু আসল কথা হল, তাঁরা ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’কে এক নতুন দিশা দেখিয়েছেন – তাঁরা গোটা জেলায় আর একটি অভিযান শুরু করেছেন – “ব্রাদার নম্বর ওয়ান” অর্থাৎ সেই সবথেকে ভালো ভাই যিনি রাখীবন্ধন উপলক্ষে তাঁর বোনকে একটি শৌচালয় উপহার দেন। আর তাঁরা দায়িত্ব নিয়েছেন যে রাখীবন্ধন উৎসবের মধ্যেই যাতে এইভাবে সব ভায়েরা তাঁদের বোনদের শৌচালয় দেন আর গোটা জেলার কোনও মা-বোনকে যেন খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করতে যেতে না হয়। দেখুন রাখীবন্ধনের অর্থ কেমন বদলে গেছে। আমি হরদা জেলার সরকারী আধিকারিক-দের পুরো টিম-কে অনেক অভিনন্দন জানাচ্ছি। কখনও কখনও কিছু ছোটো ছোটো জিনিস আমাকে খুব আনন্দ দেয়। এইরকম একটি খবর আমি জানতে পারলাম। যেটা আমি আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। ছত্রিশগড়ের রাজনন্দ গাঁও-তে কেশলা নামে একটি ছোটো গ্রাম আছে। এই গ্রামের লোকেরা গত কয়েক মাস যাবৎ শৌচালয় তৈরির অভিযান চালিয়েছেন। এখন এই গ্রামের কোনও ব্যক্তিকে উন্মুক্ত স্থানে শৌচকর্ম করতে হয় না। শৌচালয় তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর পুরো গ্রামের লোক এই উপলক্ষ্যে একটি বড় উৎসব পালন করেছেন। গ্রাম এই বিষয়ে কৃতকার্য হয়েছে। কেশলা গ্রামের সকলে মিলে আনন্দ-উৎসব পালন করেছেন। সমাজ জীবনে মূল্যবোধ কীভাবে বদলে যাচ্ছে, জনসাধারণের মানসিক চাহিদা কীভাবে বদলে যাচ্ছে, দেশের নাগরিকবৃন্দ দেশকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এটি যা আমার সামনে এসেছে।
উত্তর-পূর্ব ভারতের বিষয়ে গুয়াহাটির ভবেশ ডেকা আমাকে লিখেছেন যে এমনিতে উত্তর-পূর্ব ভারতের লোকের কাজ-কর্মে খুবই সক্রিয়। তাঁরা অনেক কিছু লিখতে থাকেন – এটা খুব ভাল কথা। আমি আজ আনন্দের সঙ্গে তাঁদের বলতে চাই যে, উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য একটি পৃথক মন্ত্রক রয়েছে। যখন অটল বিহারী বাজপেয়ীজী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন ‘ডেভেলপ্মেন্ট অফ্ নর্থ-ইস্ট রিজিয়ন’ অর্থাৎ ‘D-O-N-E-R’ (ডোনার) নামে একটি পৃথক মন্ত্রক তৈরি হয়। আমাদের সরকার গঠনের পরে আমাদের ‘ডোনার’ ডিপার্টমেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় যে দিল্লিতে বসে উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নয়ন সম্ভব নয়। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয় যে ভারত সরকারের আধিকারিকদের একটি দল উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে যেমন – নাগাল্যাণ্ড, মণিপুর, অরুণাচল, ত্রিপুর, অসম, সিকিম প্রভৃতি জায়গায় যাবেন এবং সাত দিন শিবির করে থাকবেন। জেলাতে যাবেন, গ্রামে যাবেন, সেখানকার স্থানীয় সরকারী আধিকারিকদের সঙ্গে মিলিত হবেন, জন প্রতিনিধি ও জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলবেন, তাঁদের সমস্যা সম্পর্কে অবগত হবেন এবং সমস্যার সমাধানে ভারত সরকারের যা করণীয় তা করবেন। আগামী দিনে এই প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হবে। যে আধিকারিকরা ওখানে যান, তাঁরাও বলেন, কত সুন্দর এই রাজ্যগুলো, লোকেরা কত ভালো। এই এলাকার উন্নয়ন করতেই হবে। লোকেদের সমস্যার সমাধান করার খুবই দরকার। এই সঙ্কল্প করে দিল্লিতে ফেরার পরে ওখানকার সমস্যার সমাধান করা অনেক সহজ হয়ে যায়। এটি একটি ভাল প্রচেষ্টা। দিল্লি থেকে দূরে পূর্ব পর্যন্ত যাওয়ার প্রচেষ্টা যাকে আমি ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’ বলছি, এটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মার্স মিশন’-এর সফলতায় আমরা আনন্দিত। আমরা গর্বিতও। বিগত দিনে ভারতের ‘PSLV C28’ ইউনাইটেড কিংডমের পাঁচটি উপগ্রহকে সফল উৎক্ষেপণ করেছি। এখনও পর্যন্ত ভারতের উপগ্রহ উৎক্ষেপণগুলির মধ্যে এটাই ছিল সবচেয়ে ভারী উপগ্রহ উৎক্ষেপণ প্রকল্প। এই সমস্ত সংবাদগুলো কয়েক মুহূর্তের জন্য আসে, আবার চলেও যায়। এইগুলো আমরা সাধারণত মনে রাখি না। কিন্তু এটা একটা বড় সাফল্য।
কিন্তু কখনও কখনও ভাবি, আজ আমরা যখন যুব প্রজন্মের সঙ্গে কথা বলি এবং জানতে চাই, তাঁরা ভবিষ্যতে কি হতে চান, সেক্ষেত্রে একশো জনের মধ্যে এক-আধজন বিদ্যার্থী পাওয়া যায়, যাঁরা বলেন, ‘আমি বৈজ্ঞানিক হতে চাই’। বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া খুব চিন্তার বিষয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আসলে উন্নয়নের DNA। নতুন প্রজন্ম বৈজ্ঞানিক হওয়ার স্বপ্ন দেখুক, গবেষণা এবং উদ্ভাবনায় আগ্রহ দেখাক, আর তাঁদের উৎসাহিত করা, তাঁদের ক্ষমতা সম্পর্কে অবহিত হওয়া খুব দরকার। ভারত সরকারের মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক নতুন প্রতিভার সন্ধানে একটি জাতীয় মেধা অনুসন্ধান অভিযান শুরু করেছে। আমাদের দেশের প্রাক্তণ রাষ্ট্রপতি ড. কালাম এটা শুরু করেছেন। এই অভিযানের অন্তর্গত যেখানে এই রকম মেধার সম্ভাবনা আছে, সেখানকার বিদ্যার্থীদের উৎসাহিত করতে, পথ দেখাতে এবং অন্যান্য সাহায্য করতে IIT,NIT, কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি মেন্টররূপে কাজ করবে। আমি তো আমার আই-এ-এস আধিকারিকদের বলি, আপনারা লেখাপড়া করে এতদূর এগিয়েছেন, আপনারা কখনও কখনও সপ্তাহে দু-চার ঘণ্টা আপনাদের কাছাকাছি স্কুল-কলেজে গিয়ে বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলুন, আপনাদের উপলব্ধি, আপনাদের ভাবনাশক্তি এই নতুন প্রজন্মের কাজে লাগবে।
আমরা বড় একটা দায়িত্ব নিয়েছি। আমাদের দেশের প্রতি গ্রামে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ দরকার। কাজটি কঠিন। কিন্তু আমাদের করতে হবে। আমরা এর শুভারম্ভ করে দিয়েছি। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে প্রতিটি গ্রামে ২৪-ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকবে। পরীক্ষার দিনগুলিতে বিদ্যুতের অভাবে গ্রামের বাচ্চাদের পড়াশোনার কোনও কষ্ট হবে না। গ্রামে ছোটখাটো শিল্প স্থাপনে বিদ্যুতের অভাব হবে না। এখন তো মোবাইল চার্জ করতে হলেও অন্য গ্রামে যেতে হয়। শহরে লভ্য সমস্ত সুবিধা গ্রামেও পাওয়া উচিত। এই সুবিধা দরিদ্র মানুষের কাছ পর্যন্ত পৌঁছনো দরকার। সেইজন্যই আমরা শুরু করেছি ‘দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রাম জ্যোতি কার্যক্রম’। আমি জানি, আমাদের দেশ বিশাল। লক্ষ লক্ষ গ্রাম রয়েছে। দূর দূরান্তের প্রতিটি ঘর পর্যন্ত বিদ্যুৎ পৌঁছতে হবে। কিন্তু গরীবদের জন্য আমাদের আরও কাজ করতে হবে। আমরা এটা সম্পূর্ণ করব। এটা শুরু করে দিয়েছি, শেষও করব।
আজ এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলার ইচ্ছা হল। একদিক দিয়ে আমাদের দেশে অগাস্ট-সেপ্টেম্বর উৎসবের মাস বলে পালিত হয়। অনেক উৎসবও পালিত হয়। আপনাদের সবাইকে আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা। ১৫-ই অগাস্টের জন্য আপনাদের পরামর্শ অবশ্যই পাঠান। আপনাদের মতামত আমার অনেক কাজে আসবে।
অসংখ্য ধন্যবাদ!
আমার প্রিয় দেশবাসীগণ, আপনাদের সবাইকে নমস্কার!
গত ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আমি আপনাদের অনুরোধ করেছিলাম, ছুটিতে আপনারা কোথাও ঘুরতে গেলে সেখানকার মনে রাখার মত কিছু ছবি ‘Incredible India’ হ্যাশ ট্যাগ-এ পোস্ট করতে। যখন বলেছিলাম, আমি ভাবিনি, এরকম উল্লেখযোগ্য সাড়া পাব। লাখ লাখ লোক ট্যুইটার, ফেসবুক, ইন্স্টাগ্রাম-এ ফটো পোস্ট করেছেন। একটার পর একটা ফোটো দেখলাম, ভারতে কত বৈচিত্র্য রয়েছে – স্থাপত্য, কলা, প্রকৃতি, ঝরনা, পাহাড়, নদী, সমুদ্র – কত কী? আমার মনে হয় ভারত সরকার পর্যটনের জন্য যে কথাটা ভাবতেও পারে নি, সেই বড় কাজটাই আপনারা করে দিয়েছেন। আর কিছু কিছু ছবি আমার এতই ভালো লেগেছে যে আমি নিজেই পুনরায় ট্যুইট করেছি।
আমার মনে হয় অন্ধ্রপ্রদেশের বেলম গুহার ফোটো পোস্ট না করলে আমাদের দেশের মধ্যে যে এমন জায়গা লুকিয়ে আছে তা হয়ত আমরা জানতেই পারতাম না। মধ্যপ্রদেশের ওরছা-র ফোটো হোক বা রাজস্থান যাকে জলের অভাবগ্রস্ত প্রদেশ হিসাবে চিহ্নিত করা হয় সেখানকার মৌনাল জলপ্রপাতের ছবি দেখলে খুবই আশ্চর্য লাগে। মানে সত্যিই এক অদ্ভুত কাজ হয়েছে। এই প্রচেষ্টাকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব, বজায় রাখব। বিশ্ববাসী দেখবেন, আমাদের দেশবাসী দেখবেন, আমাদের নতুন প্রজন্ম দেখবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনারা আমাকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করেছেন, কিন্তু আমার ভিতরকার মানুষ সব পদ-প্রতিষ্ঠা ভুলে নিজের মধ্যেই হারিয়ে যায়। ২১শে জুন ছিল আন্তর্জাতিক যোগ দিবস। আমি যখন রাষ্ট্রসঙ্ঘে বিষয়টি উত্থাপন করেছিলাম, তখন আমার মনে একপ্রকার আন্দোলন ঘটেছিল – তখন মনে হয় বিষয়টা এতটা গুরুত্ব পায়নি। কিন্তু ২১ জুন আমরা যে দৃশ্য দেখলাম, তা বড়ই অদ্ভুত। আমার মনে হয় পৃথিবীর যেখানেই সূর্যের রশ্মি পৌঁছেছে সেখানে এমন কোন দেশ ছিল না যেখানে যোগ ব্যায়াম দ্বারা সূর্যকে স্বাগত জানানো হয়নি। আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, যোগাভ্যাসের বিশ্বে সূর্য অস্ত যায় না। যোগকে যেভাবে বিশ্বের লোকেরা সম্মানিত করেছেন এবং আত্মস্থ করেছেন তা প্রত্যেক ভারতবাসীর কাছেই গর্বের বিষয়। আমিও অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি। মন খুশিতে ভরে গেছে। ফ্রান্সের লোকের কাছে সিন্ নদী আর আইফেল টাওয়ার গৌরবের প্রতীক। তাঁরা যোগের জন্য ঐ স্থান পছন্দ করে যোগকেও সমান সম্মান দেখিয়েছেন। নিউ ইয়র্কের টাইম্স স্কোয়ারে লোকেরা যোগাভ্যাস করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার সিডনির কথা উঠলে অপেরা হাউসের ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকরা অপেরা হাউসে যোগাভ্যাস করেছেন, যোগকে অপেরা হাউসের সমান সম্মান দেখিয়েছেন। উত্তর আমেরিকা হোক বা সিলিকন ভ্যালি বা মিলানের ডুয়োমো ক্যাথিড্রাল – সব জায়গাতেই যোগাভ্যাস আমাদের গর্বান্বিত করেছে। যখন ২১ জুন রাষ্ট্রসঙ্ঘের সেক্রেটারি জেনারেল শ্রীমান বান-কি-মুন, রাষ্ট্রসংঘের মুখ্যদপ্তরে যোগাভ্যাস করলেন তখন আমি খুব আনন্দিত হয়েছি। একই ভাবে রাষ্ট্রসঙ্ঘের শান্তিরক্ষক বাহিনীর সদস্যরা খুব সুন্দর যোগাভ্যাস প্রদর্শন করেছেন। ভারতের সিয়াচেনে সাদা বরফের চাদরের উপর আমাদের সেনা যোগা করেছেন, সমুদ্রে নৌসেনারা যেখানেই আমাদের নৌবহর ছিল সেখানেই যোগাভ্যাসের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন। দিল্লীতে যোগাভ্যাস তো গিনেসবুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান করে নিয়েছে। রাজপথ ‘যোগপথ’ হয়ে গেছে। আমি দেশ এবং বিশ্বের প্রত্যেককে আমার মন থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আর আমি বলতে পারি যে এটা কোন গতানুগতিক অনুষ্ঠান ছিল না। মনে হচ্ছিল, বিশ্বের প্রতিটি স্থান থেকে এক নতুন প্রশ্ন – এক নতুন আনন্দ – এক নতুন উৎসাহ – এক নতুন একাত্মবোধ উঠে আসছে। কিছুদিন আগে যখন আমি ট্যুইটারে ভিয়েতনামের এক পরিবারের ছোট্ট বাচ্চার যোগাভ্যাস করার ফোটো ট্যুইট করেছিলাম, ঐ ফোটোটা এত সুন্দর ছিল যে বিশ্বজুড়ে তার প্রশংসা হয়েছে। স্ত্রী-পুরুষ, বাচ্চা-বুড়ো, গ্রাম-শহর, উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশ সকলেই যোগের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করেছেন। যোগ সত্যিই গোটা পৃথিবীকে এক সূত্রে বেঁধেছে। আমি জানি না, বিদ্বজ্জন ও বিত্তবানেরা এই ঘটনাকে কীভাবে দেখবেন – কিন্তু একটা কথা আমি অনুভব করছি, প্রত্যেক ভারতবাসী গর্ব করতে পারেন, যে সারা বিশ্ব ভারতকে জানার জন্য আগ্রহান্বিত। ভারতকে জানার জন্য প্রত্যেকের আগ্রহ বেড়েছে। ভারতের মূল্যবোধ, পরম্পরা, ঐতিহ্য – বিশ্ব জানতে চায়। আমাদের সকলের দায়িত্ব এই ঐতিহ্যকে আগলে না রেখে সবার মাঝে বিলিয়ে দেওয়া। আমাদের ঐতিহ্যের প্রতি গর্ব থাকলে আমরা এই কাজ করতে পারব। কখনো কখনো কোনো কোনো বিষয় আমাদের কাছে এতই পরিচিত যে তার মধ্যে আমরা কোন নূতনত্ব দেখতে পাইনা – যেমন আমাদের পারিবারিক মূল্যবোধ। আমরা জানিই না আমাদের পারিবারিক মূল্যবোধ বিশ্বের লোকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তা হলে আমরা কেন আমাদের পারিবারিক প্রথা ও মূল্যবোধ বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত করাব না? আমার বিশ্বাস বিশ্ব আশ্চর্য হবে – আমার স্থির বিশ্বাস আশ্চর্য হবেই – এরকম অনেক কিছুই শ্রেষ্ঠ বিষয় রয়েছে যা পূর্বপুরুষরা আমাদের দিয়ে গিয়েছেন, এর উপর বিশ্ব অধিকার দাবী করে। ‘আন্তর্জাতিক যোগ দিবস’-এর সাফল্য, আনন্দ ও সন্তুষ্টির সঙ্গে এক নতুন দায়িত্ববোধ নিয়ে এসেছে। বিশ্বকে ভালো যোগ-শিক্ষক দেওয়ার দায়িত্ব আমাদেরই। এটা আমাদের দায়িত্ব যে যোগব্যায়ামের সবক’টি ঘরাণাকে বিশ্ব একই মঞ্চে দেখতে পাক। আমি দেশের সব নবযুবকদের বিশেষ করে আই-টি প্রফেশনাল্স-দের অনুরোধ করছি, আপনারা সবাই মিলে ‘অনলাইন যোগা এক্টিভিটি’-র কিছু পরিকল্পনা তৈরি করুন, যাতে যোগের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংস্থা, যোগ-গুরু এবং যোগ সম্বন্ধিত অন্যান্য তথ্য থাকবে। কোথায় যোগ শিখবেন, কোথায় যোগ-শিক্ষক পাওয়া যাবে – এই সম্বন্ধে একটি ডেটাবেস আপনারা তৈরি করতে পারেন বলে আমার বিশ্বাস। কোথাও তো এর আরম্ভ হোক। এটা একটা নতুন উদাহরণ হয়ে যাবে।
বিগত দিনের ঘটনাগুলিকে আমি এক অন্য দৃষ্টিতেও দেখছি। সরকার কাজ করছে, সরকার ভীষণ সক্রিয়, লক্ষ্য স্থির থাকলে তার কি ফল হয় সেটা আমরা দেখেছি। আমাদের চারিদিকে যখন নিরাশা ছেয়ে ছিল, যেমন এক বছর আগেই আমরা শুনতাম, কিচ্ছু হবে না - কিচ্ছু হবে না – কিচ্ছু হবে না। আপনি ভাবতে পারেন! সরকারের একটি বিভাগ আছে ‘আয়ুশ’। কেউ এই বিষয়ে কোন গুরুত্বই দেননি! একটি ছোট বিভাগ – দু-পাঁচ বছরের মধ্যে তার কোন ছোটখাটো খবর সংবাদপত্রে বেরিয়েছে। ব্যাস্ এই পর্যন্তই। কিন্তু ‘যোগা দিবস’-এর দিনে এক কোণে পড়ে থাকা এই ছোট বিভাগই নেতৃত্ব দিয়েছে এবং গোটা বিশ্বজুড়ে এত বড় একটা অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করে দেখিয়েছে। যদি লক্ষ্য স্থির থাকে, তবে ছোটো ছোটো বিভাগও ভাল কাজ করতে পারে – এটা তারই নমুনা। কিছুদিন আগেই বিশ্ব দেখেছে আমাদের লোক ইয়েমেন থেকে বিপদগ্রস্থ লোকেদের কীভাবে রক্ষা করেছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ভারতীয়রা নেপালে পৌঁছে সাহায্যের জন্য এগিয়ে গেছে। সরকার যদি সক্রিয় হয়, ব্যাঙ্কে ‘জন ধন অ্যাকাউন্ট’ খোলার জন্য সমস্ত ব্যাঙ্কের কর্মচারী এগিয়ে আসেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই কোটি কোটি দেশবাসী ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। গত ১৫ই আগস্ট আমি লালকেল্লায় সমস্ত বিদ্যালয়ে শৌচালয় বানানোর জন্য অনুরোধ করেছিলাম, আর বলেছিলাম সামনের ১৫ই আগস্টের মধ্যে এই কাজ আমাদের সম্পূর্ণ করতে হবে। যে কাজ ষাট বছরে সম্ভব হয়নি তা এক বছরে পুরো করার আহ্বান জানানো এক বড়ই সাহসিকতার কাজ ছিল। প্রায় সাড়ে চার লাখ শৌচালয় বানানোর প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আজ সন্তুষ্টির সঙ্গে আমি বলতে পারি, যদিও ১৫ই আগস্ট আসতে দেরী আছে, তবুও সমস্ত স্কুলে শৌচালয় বানানোর কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে, যদিও কোথাও কোথাও কাজ চলছে। অর্থাৎ সরকার, সাধারণ মানুষ, সরকারী কর্মচারী – সবাই দেশের জন্য কাজ করতে চায়। নিঃস্বার্থভাবে সকলের হিতের জন্য সকলের সুখের জন্য যদি আমরা সংকল্প নিয়ে কাজ করি তো সরকারী কাজে গতি থাকে, আর সরকারের সঙ্গে যুক্ত লোকেরাও সক্রিয় থাকে, সাধারণ জনতাও একে হৃদয় দিয়ে স্বাগত জানায়। এটা আমি অনুভব করেছি যে, এটাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আসল শক্তি। গত মাসে আমি কলকাতা থেকে তিনটি জন-সুরক্ষা প্রকল্প শুরু করেছিলাম। খুব কম সময়ের মধ্যে খুব ভালো সাড়া পাওয়া গেছে। জনসুরক্ষার দৃষ্টিতে ভারতে খুব কম কাজ হয়েছে। তবে এই তিন প্রকল্পের ফলে এক খুব বড় পদক্ষেপ নিতে পেরেছি আমরা। এত কম সময়ের মধ্যে জন সুরক্ষা প্রকল্পে প্রায় ১০ কোটির বেশি মানুষ কোনো না কোনো ভাবে যুক্ত হয়েছেন, যদিও এই প্রকল্প আমাদের আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমার একটি ভাবনা আছে। সেই ভাবনা আমি আপনাদের সামনে রাখতে চাই। আগষ্ট মাসে আসছে রাখীবন্ধনের উৎসব। আমরা সমস্ত দেশবাসী মিলে একসঙ্গে এই উৎসবের আগে এক শক্তসমর্থ জন-আন্দোলন গড়ে তুলে আমাদের দেশের মা ও বোনেদের জনসুরক্ষা প্রকল্পের সুবিধা দিতে পারি না? হতে পারে তিনি আমাদের ঘরে রান্না করেন, কিংবা আমাদের বাসন-কোসন পরিষ্কার করেন অথবা আমাদের চাষের ক্ষেত্রে শ্রম দেন কিংবা আমাদের নিজেদের বোন। রাখীবন্ধন উৎসব উপলক্ষে ১২ টাকার ‘জনসুরক্ষা প্রকল্প’ অথবা ৩৩০ টাকার ‘জনসুরক্ষা প্রকল্প’ কি আমরা আমাদের বোনেদের সারা জীবনের সুরক্ষার জন্য উপহার দিতে পারি না? রাখীবন্ধন উপলক্ষে এটা ভায়ের তরফে বোনের জন্য এক খুব বড় উপহার হতে পারে। দেখাই যাক না, রাখীবন্ধন উৎসবকে লক্ষ করে আমরা ২ কোটি – ৫ কোটি – ৭ কোটি অথবা ১০ কোটি – কতজন বোনকে এই লাভের অংশীদার করতে পারি। আসুন না, আমরা সবাই একসঙ্গে মিলে এই প্রতিজ্ঞা পূরণের চেষ্টা করি। আমি যখন ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আসি, তখন অনেকে আমাকে পরামর্শ পাঠান। বহু মানুষ আমাকে পরামর্শ পাঠিয়েছেন যে বর্ষা নিয়ে কিছু কথা আমার বলা উচিত। নাগপুর থেকে যোগেশ দাণ্ডেকর, মাইসোর থেকে হর্ষবর্ধন মহাশয়, প্রবীণ নাদকর্ণী মহাশয়, দিব্যাংশু গুপ্তা মহাশয় – প্রত্যেকে আমাকে বলেছেন ‘মন কি বাত’-এ বর্ষা নিয়ে কিছু কথা বলতে। ওঁরা খুব ভালো পরামর্শ পাঠিয়েছেন। এই ঋতু মনকে খুব আনন্দ দেয়। যে কোনো বয়সের মানুষই প্রথম বৃষ্টির জলের আনন্দ উপভোগ করতে চান। আপনারাও নিশ্চয়ই এই বর্ষায় গরম পকোড়া, ভাজাভুজি ও ভুট্টা-র সঙ্গে গরম চা-এর আমেজ উপভোগ করছেন। যেমন সূর্যের কিরণ আমাদের প্রাণশক্তি দেয় তেমনি বর্ষা আমাদের শক্তি যোগায়। বিন্দু বিন্দু জলও খুব মূল্যবান। নাগরিক হিসেবে, সমাজের মানুষ হিসেবে আমাদের বিন্দু বিন্দু জলও বাঁচানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। গ্রামের জল গ্রামে থাকবে, শহরের জল শহরে – এই আমাদের সংকল্প হওয়া উচিত। জল সংরক্ষণের চেষ্টা করা উচিত। আর বর্ষার জল যদি ধরে রাখা যায় এবং তা আবার জমিতে ফেরত পাঠিয়ে জমি সিঞ্চন করা যায়, তবে সারা বছরের সমস্যার সমাধান করা যায়। ‘রেন ওয়াটার হার্ভেস্টিং’ কোনো নতুন জিনিস নয় – বহু শতাব্দী ধরে চলে আসছে। চেক ড্যাম, ওয়াটারশেড ডেভেলপমেন্ট, ছোট পুকুর, ক্ষেতের ছোটো জলাধার – যাই হোক না কেন, আমাদের বিন্দু বিন্দু জলও বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আমি প্রায়ই লোকজনদের বলি যে, যদি আপনারা মহাত্মা গান্ধীর জন্মস্থান গুজরাটের পোরবন্দরে যান এবং মহাত্মা গান্ধীর বাসস্থান দেখতে যান, তাহলে দেখবেন দুশো বছরের পুরনো ঘরের ভেতরে এক ভূগর্ভস্থ জলাশয় আছে, যেখানে বর্ষার জল সরাসরি এসে জমা হওয়ার ব্যবস্থা ছিল। আর আপনারা মহাত্মা গান্ধীর জন্মস্থান যদি দেখতে যান, তো অবশ্যই দেখবেন দুশো বছরের সেই পুরনো ব্যবস্থা আজও একইরকমভাবে কাজ করছে। আর এই জল সারা বছরে একটুও দূষিত হয় না। সমুদ্রের তীরে এই পোরবন্দর। তাই মিষ্টি জলের জন্য বর্ষার জল সংগ্রহ করে ঘরে রাখা হত। সেই সময়ও বর্ষার জল সংরক্ষণে এতটাই প্রচেষ্টা করা হত। আমরাও তো এরকম করতে পারি। এটা এক জন-আন্দোলনের রূপ নেওয়া উচিত। গ্রামে গ্রামে এই ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত। এইভাবেই সবুজ আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেবে, শস্যপূর্ণ জীবন আমাদের কত ভাল লাগবে, গাছ-গাছালি, বাগ-বাগিচা জীবনকে শস্যশ্যামল করে তুলবে। এই বর্ষা ঋতুতে বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে আমাদের বৃক্ষরোপণ, এমনকি আমাদের যুবা বন্ধুদের সাহায্যে বৃক্ষরোপণ অভিযান এক বড় মাত্রায় গড়ে তোলা উচিত। আর আমি একটি পরামর্শ দিচ্ছি যা আমার প্রত্যক্ষ এবং সফল অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া। এটা সম্পূর্ণ এক গ্রামীণ কারিগরি। আপনারা যখন গাছ লাগাবেন তখন গাছের পাশে একটি পুরনো মাটির কলসী বসিয়ে তাতে জল ভরে দিন। মাসে এক-দু বার জল ভরলেই চলবে। দেখবেন এই গাছ খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠবে এবং খুব শক্তসমর্থ হবে। পুরনো মাটির কলসী তো পেয়ে যাবেনই। এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে দেখুন। আমি তো কৃষকদেরও বলব, আপনারা আপনাদের ক্ষেতের পাশে বেড়া না লাগিয়ে গাছ লাগান। গাছ আপনার সম্পদ হয়ে উঠবে। এটা ঠিক যে বর্ষাকাল খুব ভাল লাগে, খুব আনন্দ হয়, কিন্তু কখনও কখনও বর্ষাকালে এত শরীর খারাপ হয় এবং এত মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন যে ডাক্তাররা বিশ্রামের ফুরসৎ পান না। আর আমরা এ-ও জানি যে বর্ষাকালে জলের মাধ্যমে রোগ বেশি ছড়ায়। আবহাওয়ায় আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ার জন্য ব্যাকটেরিয়া সক্রিয় হয়ে ওঠে। তাই পরিচ্ছন্নতা এই সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা অত্যন্ত জরুরী। বিশুদ্ধ পানীয় জল এই সময় পান করা উচিত। বহু মানুষ এইসময় জল ফুটিয়ে পান করেন এবং তাতে উপকারও পান। এটা তো ঠিক যে, আমরা যত সাবধান হব, রোগও তত দূরে থাকবে। জল চাই, বৃষ্টিও চাই – কিন্তু সেইসঙ্গে রোগ থেকে বাঁচাও চাই। আমার দেশবাসী, আমরা সদ্য সদ্য তিনটি নতুন প্রকল্প শুরু করেছি, বিশেষ করে শহরবাসীর জন্য। আমাদের দেশে কম করে হলেও পাঁচশো ছোটোখাটো শহর আছে। ‘Waste to Wealth’ – বর্জ্য থেকেও সম্পদ হতে পারে, সার তৈরি হতে পারে, ইঁট তৈরি হতে পারে, বিদ্যুৎ উৎপন্ন হতে পারে – এমনকি অপরিশুদ্ধ জলকেও বিশুদ্ধ করে আবার কৃষিজমিতে ব্যবহার করা যায়। এই প্রচেষ্টাকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ‘অমৃত’ প্রকল্পে আমরা আমাদের শহরে সুস্থ জীবনযাপনের লক্ষে পদক্ষেপ নিয়েছি। সারা বিশ্বের সমকক্ষ যাতে আমরা হতে পারি, সেই চেষ্টা তো করতে হবে। দেশের মধ্যে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত ‘স্মার্ট সিটি’ গড়ে তোলা চাই, আবার অন্যদিকে দেশের দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর মানুষের থাকার জন্য নিজেদের বাসস্থান হওয়া চাই। আর এই ঘরে থাকা চাই বিদ্যুৎ, পানীয় জল, শৌচালয় এবং এর কাছে থাকা চাই ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য বিদ্যালয়। ২০২২ সালে যখন ভারতবর্ষ তার স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ করবে, তখন আমরা প্রত্যেক দেশবাসীকে নিজের ঘর দিতে চাই। এই তিনটি চিন্তাভাবনাকে একজোট করে আমরা একটি বড় প্রকল্প শুরু করেছি। আমার বিশ্বাস যে শহুরে জীবনে পরিবর্তন আনতে এই সমস্ত প্রকল্প কাজে আসবে। আমি তো সোস্যাল মিডিয়ার সাহায্যে আপনাদের সকলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রয়েছি। নানান নতুন নতুন চিন্তাভাবনা, পরামর্শ আপনাদের কাছ থেকে পাচ্ছি, সরকারের কাজকর্ম সম্পর্কেও ভাল-মন্দ নানান মতামত পাচ্ছি। তবে কখনো কখনো দূর – বহুদূর গ্রামের কোনও মানুষের এক-আধটি কথাও আমার মনকে ছুঁয়ে যায়। আপনারা জানেন, সরকারী তরফে এক ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ প্রকল্প চলছে। কিন্তু যখন এই সরকারী প্রকল্প কোন ব্যক্তি, সমাজ বা গ্রামের নিজেদের প্রকল্প হয়ে ওঠে, তখন তার শক্তি কতটা বেড়ে যায়। বিগত দিনে হরিয়ানার বিবিপুর গ্রামের এক পঞ্চায়েত প্রধান শ্রীমান সুনীল জগলান মহাশয় এক খুব মজার প্রচেষ্টা শুরু করেছেন। তিনি ‘সেলফি উইদ্ ডটার’ এই প্রতিযোগিতা শুরু করেন নিজের গ্রামে। আর এর ফলে এমন পরিবেশ তৈরি হয় যে প্রত্যেক পিতা তাঁদের কন্যার সঙ্গে সেলফি তুলে সোস্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করার কথা ভাবেন। এই পরিকল্পনা আমার খুব ভাল লেগেছে। এই ভাল লাগার কিছু কারণও আছে। হরিয়ানাতে বালকদের তুলনায় বালিকার সংখ্যা খুব কম। দেশের মধ্যে প্রায় ১০০টি জেলা এরকম আছে যেখানে এইরকম অবস্থা রয়েছে, যা খুবই চিন্তাজনক। হরিয়ানার পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। আর যখন এই হরিয়ানাতেই এক ছোট গ্রামের পঞ্চায়েতপ্রধান ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ অভিযানের ক্ষেত্রে এইরকম এক উদ্যোগ নেন তখন মনে খুব আনন্দ হয় আর এক নতুন আশা জাগে। এই জন্যই আমি আমার এই আনন্দ ব্যক্ত করছি। এই ঘটনা থেকে আমি উৎসাহও পেয়েছি। আর তাই আমি আপনাদের অনুরোধ জানাচ্ছি, আপনারাও আপনাদের কন্যাদের সঙ্গে ‘সেল্ফি উইদ ডটার’-এ অংশ নিন। নিজের কন্যার সঙ্গে সেল্ফি তুলে হ্যাশ-ট্যাগ-‘selfiewithdaughter’-এ পোস্ট করুন। এর সঙ্গে ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ প্রকল্পকে আরও শক্তিশালী করার জন্য ট্যাগলাইন লিখে দিন, সুন্দর ট্যাগলাইন লিখুন, তা যে কোনো ভাষাতেই হতে পারে। ইংরেজি, হিন্দি, আপনার মাতৃভাষা বা অন্য যে কোনো ভাষাতেই হোক না কেন। এর মধ্যে যে ট্যাগ লাইনটা প্রেরণাদায়ক হবে, আমি সেটা আপনাদের কন্যার সঙ্গে তোলা আপনাদের সেল্ফি পুনরায় ট্যুইট করব। আমরা সবাই একরকম ভাবে ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ এই প্রকল্পটিকে জন আন্দোলনের রূপ দিতে পারি। যে কাজ হরিয়ানার বিবিপুর গ্রামের সুনীলভাই শুরু করেছেন, সেই কাজ যেন আমরা সবাই মিলে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। আমি আপনাদের অনুরোধ করব, আপনারা সবাই ‘হ্যাশ ট্যাগ selfiewithdaughter’ পোস্ট করুন। আপনারা দেখবেন, কন্যার গরিমা, কন্যার গৌরব, বেটি বাঁচাও অভিযান কতটা আনন্দ দেবে। আর আমাদের ওপর এই যে কলঙ্ক লেগে আছে, সেই কলঙ্ক দূর হয়ে যাবে। তো আমি এই বর্ষায় আপনাদের সবাইকে শুভকামনা জানাচ্ছি, আপনারা সবাই আনন্দ করুন। আমাদের দেশকে শস্যশ্যামলা করে তুলুন। ‘আন্তর্জাতিক যোগ দিবস’-কে একদিনের জন্য নয়, যোগের অভ্যাস আপনারা রোজ করুন। আপনারা দেখবেন, এর উপকার আপনারা বুঝতে পারবেন। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এই প্রচেষ্টা আপনারা এগিয়ে নিয়ে যান। একে আপনাদের জীবনের অংশ করে তুলুন। আর একটি কথা – ‘ইনক্রেডিবল্ ইণ্ডিয়া’ – আপনারা যেখানেই যান না কেন, সেখানকার ছবি অবশ্যই পাঠাবেন। আমাদের দেশ – এমন কি সমস্ত বিশ্ব জানতে পারবে আমাদের দেশে কত বৈচিত্র্য আছে। আমার মনে হয়েছে, যে ছবি আপনারা পাঠাচ্ছেন, তার মধ্যে হস্তশিল্প সংক্রান্ত ছবি খুব কম এসেছে। আপনারা আপনাদের এলাকার হস্তশিল্পের ছবিও তো ইন্ক্রেডিব্ল ইণ্ডিয়াতে পোস্ট করতে পারেন। আপনাদের শহরে নানান জিনিস তৈরি হয় – গরীব মানুষরাও নানান জিনিস তৈরি করেন। যাঁর-ই কারিগরি দক্ষতা আছে তিনিই নানান বস্তু তৈরি করতে পারেন এবং তা পাঠাতে পারেন। আমাদের বিশ্বের দিকে দিকে ভারতের বৈশিষ্ট্য পৌঁছে দেওয়া উচিত। আর আমাদের এক সহজ মাধ্যম আছে যার সাহায্যে আমরা অবশ্যই পৌঁছতে পারি। আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ এইটুকুই। পরবর্তী ‘মন কি বাত’-এ আবার আপনাদের সঙ্গে কথা হবে। কিছু কিছু মানুষের কখনও কখনও মনে হয় যে, ‘মন কি বাত’-এ আমি যেন সরকারের বড় বড় প্রকল্প ঘোষণা করি। কিন্তু তা নয়। আমি তো দিন-রাত কাজ করে চলেছি। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আপনাদের সঙ্গে হাল্কা-পল্কা মিঠে-কড়া কথা বলছি, ব্যাস্ এতেই আমার আনন্দ!
অনেক অনেক ধন্যবাদ!
मेरे प्यारे देशवासियो, पिछली बार जब मैंने आपसे मन की बात की थी, तब भूकंप की भयंकर घटना ने मुझे बहुत विचलित कर दिया था। मन बात करना नहीं चाहता था फिर भी मन की बात की थी। आज जब मैं मन की बात कर रहा हूँ, तो चारों तरफ भयंकर गर्म हवा, गर्मी, परेशानियां उसकी ख़बरें आ रही हैं। मेरी आप सब से प्रार्थना है कि इस गर्मी के समय हम अपना तो ख़याल रखें... हमें हर कोई कहता होगा बहुत ज़्यादा पानी पियें,शरीर को ढक कर के रखें... लेकिन मैं आप से कहता हूँ, हम अपने अगल-बगल में पशु-पक्षी की भी दरकार करें। ये अवसर होता है परिवार में बच्चों को एक काम दिया जाये कि वो घर के बाहर किसी बर्तन में पक्षियों को पीने के लिए पानी रखें, और ये भी देखें वो गर्म ना हो जाये। आप देखना परिवार में बच्चों के अच्छे संस्कार हो जायेंगें। और इस भयंकर गर्मी में पशु-पक्षियों की भी रक्षा हो जाएगी।
ये मौसम एक तरफ़ गर्मी का भी है, तो कहीं ख़ुशी कहीं ग़म का भी है। एग्ज़ाम देने के बाद जब तक नतीजे नहीं आते तब तक मन चैन से नहीं बैठता है। अब सी.बी.एस.ई., अलग-अलग बोर्ड एग्ज़ाम और दूसरे एग्ज़ाम पास करने वाले विद्यार्थी मित्रों को अपने नतीजे मिल गये हैं। मैं उन सब को बधाई देता हूँ। बहुत बहुत बधाई। मेरे मन की बात की सार्थकता मुझे उस बात से लगी कि जब मुझे कई विद्यार्थियों ने ये जानकारी दी, नतीजे आने के बाद कि एग्ज़ाम के पहले आपके मन की बात में जो कुछ भी सुना था, एग्ज़ाम के समय मैंने उसका पूरी तरह पालन किया था और उससे मुझे लाभ मिला। ख़ैर, दोस्तो आपने मुझे ये लिखा मुझे अच्छा लगा। लेकिन आपकी सफलता का कारण कोई मेरी एक मन की बात नहीं है... आपकी सफलता का कारण आपने साल भर कड़ी मेहनत की है, पूरे परिवार ने आपके साथ जुड़ करके इस मेहनत में हिस्सेदारी की है। आपके स्कूल,आपके टीचर, हर किसी ने प्रयास किया है। लेकिन आपने अपने आप को हर किसी की अपेक्षा के अनुरूप ढाला है। मन की बात, परीक्षा में जाते-जाते समय जो टिप मिलती है न, वो प्रकार की थी। लेकिन मुझे आनंद इस बात का आया कि हाँ, आज मन की बात का कैसा उपयोग है, कितनी सार्थकता है। मुझे ख़ुशी हुई। मैं जब कह रहा हूँ कहीं ग़म, कहीं ख़ुशी... बहुत सारे मित्र हैं जो बहुत ही अच्छे मार्क्स से पास हुए होंगे। कुछ मेरे युवा मित्र पास तो हुए होंगे, लेकिन हो सकता है मार्क्स कम आये होंगे। और कुछ ऐसे भी होंगे कि जो विफल हो गये होंगे। जो उत्तीर्ण हुए हैं उनके लिए मेरा इतना ही सुझाव है कि आप उस मोड़ पर हैं जहाँ से आप अपने करियर का रास्ता चुन रहे हैं। अब आपको तय करना है आगे का रास्ता कौन सा होगा। और वो भी, किस प्रकार के आगे भी इच्छा का मार्ग आप चुनते हैं उसपर निर्भर करेगा। आम तौर पर ज़्यादातर विद्यार्थियों को पता भी नहीं होता है क्या पढ़ना है, क्यों पढ़ना है, कहाँ जाना है, लक्ष्य क्या है। ज़्यादातर अपने सराउंन्डिंग में जो बातें होती हैं, मित्रों में, परिवारों में, यार-दोस्तों में, या अपने माँ-बाप की जो कामनायें रहती हैं, उसके आस-पास निर्णय होते हैं। अब जगत बहुत बड़ा हो चुका है। विषयों की भी सीमायें नहीं हैं, अवसरों की भी सीमायें नहीं हैं। आप ज़रा साहस के साथ आपकी रूचि, प्रकृति, प्रवृत्ति के हिसाब से रास्ता चुनिए। प्रचलित मार्गों पर ही जाकर के अपने को खींचते क्यों हो? कोशिश कीजिये। और आप ख़ुद को जानिए और जानकर के आपके भीतर जो उत्तम चीज़ें हैं, उसको सँवारने का अवसर मिले, ऐसी पढ़ाई के क्षेत्र क्यों न चुनें? लेकिन कभी ये भी सोचना चाहिये, कि मैं जो कुछ भी बनूँगा, जो कुछ भी सीखूंगा, मेरे देश के लिए उसमें काम आये ऐसा क्या होगा?
बहुत सी जगहें ऐसी हैं... आपको हैरानी होगी... विश्व में जितने म्यूज़ियम बनते हैं, उसकी तुलना में भारत में म्यूज़ियम बहुत कम बनते हैं। और कभी कभी इस म्यूज़ियम के लिए योग्य व्यक्तियों को ढूंढना भी बड़ा मुश्किल हो जाता है। क्योंकि परंपरागत रूप से बहुत पॉपुलर क्षेत्र नहीं है। ख़ैर, मैं कोई, कोई एक बात पर आपको खींचना नहीं चाहता हूँ। लेकिन, कहने का तात्पर्य है कि देश को उत्तम शिक्षकों की ज़रूरत है तो उत्तम सैनिकों की भी ज़रूरत है, उत्तम वैज्ञानिकों की ज़रूरत है तो उत्तम कलाकार और संगीतकारों की भी आवश्यकता है। खेल-कूद कितना बड़ा क्षेत्र है, और खिलाडियों के सिवाय भी खेल कूद जगत के लिए कितने उत्तम ह्यूमन रिसोर्स की आवश्यकता होती है। यानि इतने सारे क्षेत्र हैं, इतनी विविधताओं से भरा हुआ विश्व है। हम ज़रूर प्रयास करें, साहस करें। आपकी शक्ति, आपका सामर्थ्य, आपके सपने देश के सपनों से भी मेलजोल वाले होने चाहिये। ये मौक़ा है आपको अपनी राह चुनने का।
जो विफल हुए हैं, उनसे मैं यही कहूँगा कि ज़िन्दगी में सफलता विफलता स्वाभाविक है। जो विफलता को एक अवसर मानता है, वो सफलता का शिलान्यास भी करता है। जो विफलता से खुद को विफल बना देता है, वो कभी जीवन में सफल नहीं होता है। हम विफलता से भी बहुत कुछ सीख सकते हैं। और कभी हम ये क्यों न मानें, कि आज की आप की विफलता आपको पहचानने का एक अवसर भी बन सकती है, आपकी शक्तियों को जानने का अवसर बन सकती है? और हो सकता है कि आप अपनी शक्तियों को जान करके, अपनी ऊर्जा को जान करके एक नया रास्ता भी चुन लें।
मुझे हमारे देश के पूर्व राष्ट्रपति श्रीमान ए.पी.जे. अब्दुल कलाम जी की याद आती है। उन्होंने अपनी किताब‘माई जर्नी – ट्रांस्फोर्मिंग ड्रीम्स इनटू एक्शन’, उसमें अपने जीवन का एक प्रसंग लिखा है। उन्होंने कहा है कि मुझे पायलट बनने की इच्छा थी, बहुत सपना था, मैं पायलट बनूँ। लेकिन जब मैं पायलट बनने गया तो मैं फ़ेल हो गया, मैं विफल हो गया, नापास हो गया। अब आप देखिये, उनका नापास होना, उनका विफल होना भी कितना बड़ा अवसर बन गया। वो देश के महान वैज्ञानिक बन गये। राष्ट्रपति बने। और देश की आण्विक शक्ति के लिए उनका बहुत बड़ा योगदान रहा। और इसलिये मैं कहता हूँ दोस्तो, कि विफलता के बोझ में दबना मत। विफलता भी एक अवसर होती है। विफलता को ऐसे मत जाने दीजिये। विफलता को भी पकड़कर रखिये। ढूंढिए। विफलता के बीच भी आशा का अवसर समाहित होता है। और मेरी ख़ास आग्रहपूर्वक विनती है मेरे इन नौजवान दोस्तों को, और ख़ास करके उनके परिवारजनों को, कि बेटा अगर विफल हो गया तो माहौल ऐसा मत बनाइये की वो ज़िन्दगी में ही सारी आशाएं खो दे। कभी-कभी संतान की विफलता माँ-बाप के सपनों के साथ जुड़ जाती है और उसमें संकट पैदा हो जाते हैं। ऐसा नहीं होना चाहिये। विफलता को पचाने की ताक़त भी तो ज़िन्दगी जीने की ताक़त देती है। मैं फिर एक बार सभी मेरे सफल युवा मित्रों को शुभकामनाएं देता हूँ। और विफल मित्रों को अवसर ढूँढने का मौक़ा मिला है, इसलिए भी मैं इसे शुभकामनाएं ही देता हूँ। आगे बढ़ने का, विश्वास जगाने का प्रयास कीजिये।
पिछली मन की बात और आज जब मैं आपके बीच बात कर रहा हूँ, इस बीच बहुत सारी बातें हो गईं। मेरी सरकार का एक साल हुआ, पूरे देश ने उसका बारीकी से विश्लेषण किया, आलोचना की और बहुत सारे लोगों ने हमें डिस्टिंक्शन मार्क्स भी दे दिए। वैसे लोकतंत्र में ये मंथन बहुत आवश्यक होता है, पक्ष-विपक्ष आवश्यक होता है। क्या कमियां रहीं, उसको भी जानना बहुत ज़रूरी होता है। क्या अच्छाइयां रहीं, उसका भी अपना एक लाभ होता है।
लेकिन मेरे लिए इससे भी ज़्यादा गत महीने की दो बातें मेरे मन को आनंद देती हैं। हमारे देश में ग़रीबों के लिए कुछ न कुछ करने की मेरे दिल में हमेशा एक तड़प रहती है। नई-नई चीज़ें सोचता हूँ, सुझाव आये तो उसको स्वीकार करता हूँ। हमने गत मास प्रधानमंत्री सुरक्षा बीमा योजना, प्रधानमंत्री जीवन ज्योति बीमा योजना, अटल पेंशन योजना - सामाजिक सुरक्षा की तीन योजनाओं को लॉन्च किया। उन योजनाओं को अभी तो बीस दिन नहीं हुए हैं, लेकिन आज मैं गर्व के साथ कहता हूँ... शायद ही हमारे देश में, सरकार पर भरोसा करके, सरकार की योजनाओं पर भरोसा करके, इतनी बड़ी मात्रा में सामान्य मानवी उससे जुड़ जाये... मुझे ये बताते हुए ख़ुशी होती है कि सिर्फ़ बीस दिन के अल्प समय में आठ करोड़, बावन लाख से अधिक लोगों ने इन योजनाओं में अपना नामांकन करवा दिया, योजनाओं में शरीक हो गये। सामाजिक सुरक्षा की दिशा में ये हमारा बहुत अहम क़दम है। और उसका बहुत लाभ आने वाले दिनों में मिलने वाला है।
जिनके पास अब तक ये बात न पहुँची हो उनसे मेरा आग्रह है कि आप फ़ायदा उठाइये। कोई सोच सकता है क्या, महीने का एक रुपया, बारह महीने के सिर्फ़ बारह रूपये, और आप को सुरक्षा बीमा योजना मिल जाये। जीवन ज्योति बीमा योजना - रोज़ का एक रूपये से भी कम, यानि साल का तीन सौ तीस रूपये। मैं इसीलिए कहता हूँ कि ग़रीबों को औरों पर आश्रित न रहना पड़े। ग़रीब स्वयं सशक्त बने। उस दिशा में हम एक के बाद एक क़दम उठा रहे हैं। और मैं तो एक ऐसी फौज बनाना चाहता हूँ, और फौज भी मैं ग़रीबों में से ही चुनना चाहता हूँ। और ग़रीबों में से बनी हुई मेरी ये फौज, ग़रीबी के खिलाफ लड़ाई लड़ेगी, ग़रीबी को परास्त करेगी। और देश में कई वर्षों का हमारे सर पर ये बोझ है, उस ग़रीबी से मुक्ति पाने का हम निरंतर प्रयास करते रहेंगे और सफलता पायेंगे।
दूसरी एक महत्वपूर्ण बात जिससे मुझे आनंद आ रहा है, वो है किसान टीवी चैनल । वैसे तो देश में टीवी चैनेलों की भरमार है, क्या नहीं है, कार्टून की भी चैनलें चलती हैं, स्पोर्ट्स की चैनल चलती हैं, न्यूज़ की चलती है, एंटरटेनमेंट की चलती हैं। बहुत सारी चलती हैं। लेकिन मेरे लिए किसान चैनल महत्वपूर्ण इसलिए है कि मैं इससे भविष्य को बहुत भली भांति देख पाता हूँ।
मेरी दृष्टि में किसान चैनल एक खेत खलियान वाली ओपन यूनिवर्सिटी है। और ऐसी चैनल है, जिसका विद्यार्थी भी किसान है, और जिसका शिक्षक भी किसान है। उत्तम अनुभवों से सीखना, परम्परागत कृषि से आधुनिक कृषि की तरफ आगे बढ़ना, छोटे-छोटे ज़मीन के टुकड़े बचे हैं। परिवार बड़े होते गए, ज़मीन का हिस्सा छोटा होता गया, और तब हमारी ज़मीन की उत्पादकता कैसे बढ़े, फसल में किस प्रकार से परिवर्तन लाया जाए - इन बातों को सीखना-समझना ज़रूरी है। अब तो मौसम को भी पहले से जाना जा सकता है। ये सारी बातें लेकर के,ये टी० वी० चैनल काम करने वाली है और मेरे किसान भाइयों-बहिनों, इसमें हर जिले में किसान मोनिटरिंग की व्यवस्था की गयी है। आप उसको संपर्क ज़रूर करें।
मेरे मछुवारे भाई-बहनों को भी मैं कहना चाहूँगा, मछली पकड़ने के काम में जुड़े हुए लोग, उनके लिए भी इस किसान चैनल में बहुत कुछ है, पशुपालन भारत के ग्रामीण जीवन का परम्परागत काम है और कृषि में एक प्रकार से सहायक होने वाला क्षेत्र है, लेकिन दुनिया का अगर हिसाब देखें, तो दुनिया में पशुओं की संख्या की तुलना में जितना दूध उत्पादन होता है, भारत उसमें बहुत पीछे है। पशुओ की संख्या की तुलना में जितना दूध उत्पादन होना चाहिए, उतना हमारे देश में नहीं होता है। प्रति पशु अधिक दूध उत्पादन कैसे हो, पशु की देखभाल कैसे हो, उसका लालन-पालन कैसे हो, उसका खान पान क्या हो - परम्परागत रूप से तो हम बहुत कुछ करते हैं,लेकिन वैज्ञानिक तौर तरीकों से आगे बढ़ना बहुत ज़रूरी है और तभी जा करके कृषि के साथ पशुपालन भी आर्थिक रूप से हमें मजबूती दे सकता है, किसान को मजबूती दे सकता है, पशु पालक को मजबूती दे सकता है। हम किस प्रकार से इस क्षेत्र में आगे बढें, किस प्रकार से हम सफल हो, उस दिशा में वैज्ञानिक मार्गदर्शन आपको मिले।
मेरे प्यारे देश वासियों! याद है 21 जून? वैसे हमारे इस भू-भाग में 21 जून को इसलिए याद रखा जाता है कि ये सबसे लंबा दिवस होता है। लेकिन 21 जून अब विश्व के लिए एक नई पहचान बन गया है। गत सितम्बर महीने में यूनाइटेड नेशन्स में संबोधन करते हुए मैंने एक विषय रखा था और एक प्रस्ताव रखा था कि 21 जून को अंतरराष्ट्रीय योग-दिवस के रूप में मनाना चाहिए। और सारे विश्व को अचरज हो गया, आप को भी अचरज होगा, सौ दिन के भीतर भीतर एक सौ सतत्तर देशो के समर्थन से ये प्रस्ताव पारित हो गया, इस प्रकार के प्रस्ताव ऐसा यूनाइटेड नेशन्स के इतिहास में, सबसे ज्यादा देशों का समर्थन मिला, सबसे कम समय में प्रस्ताव पारित हुआ, और विश्व के सभी भू-भाग, इसमें शरीक हुए, किसी भी भारतीय के लिए, ये बहुत बड़ी गौरवपूर्ण घटना है।
लेकिन अब जिम्मेवारी हमारी बनती है। क्या कभी सोचा था हमने कि योग विश्व को भी जोड़ने का एक माध्यम बन सकता है? वसुधैव कुटुम्बकम की हमारे पूर्वजों ने जो कल्पना की थी, उसमें योग एक कैटलिटिक एजेंट के रूप में विश्व को जोड़ने का माध्यम बन रहा है। कितने बड़े गर्व की, ख़ुशी की बात है। लेकिन इसकी ताक़त तो तब बनेगी जब हम सब बहुत बड़ी मात्रा में योग के सही स्वरुप को, योग की सही शक्ति को, विश्व के सामने प्रस्तुत करें। योग दिल और दिमाग को जोड़ता है, योग रोगमुक्ति का भी माध्यम है, तो योग भोगमुक्ति का भी माध्यम है और अब तो में देख रहा हूँ, योग शरीर मन बुद्धि को ही जोड़ने का काम करे, उससे आगे विश्व को भी जोड़ने का काम कर सकता है।
हम क्यों न इसके एम्बेसेडर बने! हम क्यों न इस मानव कल्याण के लिए काम आने वाली, इस महत्वपूर्ण विद्या को सहज उपलब्ध कराएं। हिन्दुस्तान के हर कोने में 21 जून को योग दिवस मनाया जाए। आपके रिश्तेदार दुनिया के किसी भी हिस्से में रहते हों, आपके मित्र परिवार जन कहीं रहते हो, आप उनको भी टेलीफ़ोन करके बताएं कि वे भी वहाँ लोगो को इकट्ठा करके योग दिवस मनायें। अगर उनको योग का कोई ज्ञान नहीं है तो कोई किताब लेकर के, लेकिन पढ़कर के भी सबको समझाए कि योग क्या होता है। एक पत्र पढ़ लें, लेकिन मैं मानता हूँ कि हमने योग दिवस को सचमुच में विश्व कल्याण के लिए एक महत्वपूर्ण क़दम के रूप में, मानव जाति के कल्याण के रूप में और तनाव से ज़िन्दगी से गुजर रहा मानव समूह, कठिनाइयों के बीच हताश निराश बैठे हुए मानव को, नई चेतना, ऊर्जा देने का सामर्थ योग में है।
मैं चाहूँगा कि विश्व ने जिसको स्वीकार किया है, विश्व ने जिसे सम्मानित किया है, विश्व को भारत ने जिसे दिया है, ये योग हम सबके लिए गर्व का विषय बनना चाहिए। अभी तीन सप्ताह बाकी है आप ज़रूर प्रयास करें,ज़रूर जुड़ें और औरों को भी जोडें, ये मैं आग्रह करूंगा।
मैं एक बात और कहना चाहूँगा खास करके मेरे सेना के जवानों को, जो आज देश की सुरक्षा में जुटे हुए उनको भी और जो आज सेना से निवृत्त हो करके अपना जीवन यापन कर रहे, देश के लिए त्याग तपस्या करने वाले जवानों को, और मैं ये बात एक प्रधानमन्त्री के तौर पर नहीं कर रहा हूँ। मेरे भीतर का इंसान, दिल की सच्चाई से, मन की गहराई से, मेरे देश के सैनिकों से मैं आज बात करना चाहता हूँ।
वन-रैंक, वन-पेंशन, क्या ये सच्चाई नहीं हैं कि चालीस साल से सवाल उलझा हुआ है? क्या ये सच्चाई नहीं हैं कि इसके पूर्व की सभी सरकारों ने इसकी बातें की, किया कुछ नहीं? मैं आपको विश्वास दिलाता हूँ। मैंने निवृत्त सेना के जवानों के बीच में वादा किया है कि मेरी सरकार वन-रैंक, वन-पेंशन लागू करेगी। हम जिम्मेवारी से हटते नहीं हैं और सरकार बनने के बाद, भिन्न-भिन्न विभाग इस पर काम भी कर रहे हैं। मैं जितना मानता था उतना सरल विषय नहीं हैं, पेचीदा है, और चालीस साल से उसमें समस्याओं को जोड़ा गया है। मैंने इसको सरल बनाने की दिशा में, सर्वस्वीकृत बनाने की दिशा में, सरकार में बैठे हुए सबको रास्ते खोज़ने पर लगाया हुआ है। पल-पल की ख़बरें मीडिया में देना ज़रूरी नहीं होता है। इसकी कोई रनिंग कमेंट्री नहीं होती है। मैं आपको विश्वास दिलाता हूँ यही सरकार, मैं फिर से कहता हूँ - यही सरकार आपका वन-रैंक, वन-पेंशन का मसला, सोल्यूशन लाकर के रहेगी - और जिस विचारधारा में पलकर हम आए हैं , जिन आदर्शो को लेकर हम आगे बढ़ें हैं, उसमें आपके जीवन का महत्व बहुत है।
मेरे लिए आपके जीवन के साथ जुड़ना आपकी चिंता करना ये सिर्फ़ न कोई सरकारी कार्यक्रम है, न ही कोई राजनितिक कार्यक्रम है, मेरे राष्ट्रभक्ति का ही प्रकटीकरण है। मैं फिर एक बार मेरे देश के सभी सेना के जवानों को आग्रह करूंगा कि राजनैतिक रोटी सेंकने वाले लोग चालीस साल तक आपके साथ खेल खेलते रहे हैं। मुझे वो मार्ग मंज़ूर नहीं है, और न ही मैं कोई ऐसे क़दम उठाना चाहता हूँ, जो समस्याओं को जटिल बना दे। आप मुझ पर भरोसा रखिये, बाक़ी जिनको बातें उछालनी होंगी, विवाद करने होंगे, अपनी राजनीति करनी होगी, उनको मुबारक। मुझे देश के लिए जीने मरने वालों के लिए जो कर सकता हूँ करना है - ये ही मेरे इरादे हैं, और मुझे विश्वास है कि मेरे मन की बात जिसमें सिवाय सच्चाई के कुछ नहीं है, आपके दिलों तक पहुंचेगी। चालीस साल तक आपने धैर्य रखा है - मुझे कुछ समय दीजिये, काम करने का अवसर दीजिये, और हम मिल बैठकर के समस्याओं का समाधान करेंगे। ये मैं फिर से एक बार देशवासियों को विश्वास देता हूँ।
छुट्टियों के दिनों में सब लोग कहीं न कहीं तो गए होंगे। भारत के अलग-अलग कोनों में गए होंगे। हो सकता है कुछ लोग अब जाने का कार्यक्रम बनाते होंगे। स्वाभाविक है ‘सीईंग इज़ बिलीविंग’ - जब हम भ्रमण करते हैं,कभी रिश्तेदारों के घर जाते हैं, कहीं पर्यटन के स्थान पर पहुंचते हैं। दुनिया को समझना, देखने का अलग अवसर मिलता है। जिसने अपने गाँव का तालाब देखा है, और पहली बार जब वह समुन्दर देखता है, तो पता नहीं वो मन के भाव कैसे होते हैं, वो वर्णन ही नहीं कर सकता है कि अपने गाँव वापस जाकर बता ही नहीं सकता है कि समुन्दर कितना बड़ा होता है। देखने से एक अलग अनुभूति होती है।
आप छुट्टियों के दिनों में अपने यार दोस्तों के साथ, परिवार के साथ कहीं न कहीं ज़रूर गए होंगे, या जाने वाले होंगे। मुझे मालूम नहीं है आप जब भ्रमण करने जाते हैं, तब डायरी लिखने की आदत है कि नहीं है। लिखनी चाहिए, अनुभवों को लिखना चाहिए, नए-नए लोगों से मिलतें हैं तो उनकी बातें सुनकर के लिखना चाहिए, जो चीज़ें देखी हैं, उसका वर्णन लिखना चाहिए, एक प्रकार से अन्दर, अपने भीतर उसको समावेश कर लेना चाहिए। ऐसी सरसरी नज़र से देखकर के आगे चले जाएं ऐसा नहीं करना चाहिए। क्योंकि ये भ्रमण अपने आप में एक शिक्षा है। हर किसी को हिमालय में जाने का अवसर नहीं मिलता है, लेकिन जिन लोगों ने हिमालय का भ्रमण किया है और किताबें लिखी हैं उनको पढ़ोगे तो पता चलेगा कि क्या आनन्ददायक यात्राओं का वर्णन उन्होंने किया है।
मैं ये तो नहीं कहता हूँ कि आप लेखक बनें! लेकिन भ्रमण की ख़ातिर भ्रमण ऐसा न होते हुए हम उसमें से कुछ सीखने का प्रयास करें, इस देश को समझने का प्रयास करें, देश को जानने का प्रयास करें, उसकी विविधताओं को समझें। वहां के खान पान कों, पहनावे, बोलचाल, रीतिरिवाज, उनके सपने, उनकी आकांक्षाएँ,उनकी कठिनाइयाँ, इतना बड़ा विशाल देश है, पूरे देश को जानना समझना है - एक जनम कम पड़ जाता है,आप ज़रूर कहीं न कहीं गए होंगे, लेकिन मेरी एक इच्छा है, इस बार आप यात्रा में गए होंगे या जाने वाले होंगे। क्या आप अपने अनुभव को मेरे साथ शेयर कर सकते हैं क्या? सचमुच में मुझे आनंद आएगा। मैं आपसे आग्रह करता हूँ कि आप इन्क्रेडिबल इंडिया हैश टैग, इसके साथ मुझे अपनी फोटो, अपने अनुभव ज़रूर भेजिए और उसमें से कुछ चीज़ें जो मुझे पसंद आएंगी मैं उसे आगे औरों के साथ शेयर करूँगा।
देखें तो सही आपके अनुभवों को, मैं भी अनुभव करूँ, आपने जो देखा है, मैं उसको मैं दूर बैठकर के देखूं। जिस प्रकार से आप समुद्रतट पर जा करके अकेले जा कर टहल सकते हैं, मैं तो नहीं कर पाता अभी, लेकिन मैं चाहूँगा आपके अनुभव जानना और आपके उत्तम अनुभवों को, मैं सबके साथ शेयर करूँगा।
अच्छा लगा आज एक बार फिर गर्मी की याद दिला देता हूँ, मैं यही चाहूँगा कि आप अपने को संभालिए, बीमार मत होना, गर्मी से अपने आपको बचाने के रास्ते होतें हैं, लेकिन उन पशु पक्षियों का भी ख़याल करना। यही मन की बात आज बहुत हो गयी, ऐसे मन में जो विचार आते गए, मैं बोलता गया। अगली बार फिर मिलूँगा, फिर बाते करूँगा, आपको बहुत बहुत शुभकामनाएं, बहुत बहुत धन्यवाद।
मेरे प्यारे देशवासियो,
नमस्कार,
मन की बात करने का मन नहीं हो रहा था आज। बोझ अनुभव कर रहा हूँ, कुछ व्यथित सा मन है। पिछले महीने जब बात कर रहा था आपसे, तो ओले गिरने की खबरें, बेमौसमी बरसात, किसानों की तबाही। अभी कुछ दिन पहले बिहार में अचानक तेज हवा चली। काफी लोग मारे गए। काफी कुछ नुकसान हुआ। और शनिवार को भयंकर भूकंप ने पूरे विश्व को हिला दिया है। ऐसा लगता है मानो प्राकृतिक आपदा का सिलसिला चल पड़ा है। नेपाल में भयंकर भूकंप की आपदा। हिंदुस्तान में भी भूकंप ने अलग-अलग राज्यों में कई लोगों की जान ली है। संपत्ति का भी नुकसान किया है। लेकिन नेपाल का नुकसान बहुत भयंकर है।
मैंने 2001, 26 जनवरी, कच्छ के भूकंप को निकट से देखा है। ये आपदा कितनी भयानक होती है, उसकी मैं कल्पना भली-भांति कर सकता हूँ। नेपाल पर क्या बीतती होगी, उन परिवारों पर क्या बीतती होगी, उसकी मैं कल्पना कर सकता हूँ।
लेकिन मेरे प्यारे नेपाल के भाइयो-बहनो, हिन्दुस्तान आपके दुःख में आपके साथ है। तत्काल मदद के लिए चाहे हिंदुस्तान के जिस कोने में मुसीबत आयी है वहां भी, और नेपाल में भी सहाय पहुंचाना प्रारंभ कर दिया है। सबसे पहला काम है रेस्क्यू ऑपरेशन, लोगों को बचाना। अभी भी मलबे में दबे हुए कुछ लोग जीवित होंगे, उनको जिन्दा निकालना हैं। एक्सपर्ट लोगों की टीम भेजी है, साथ में, इस काम के लिए जिनको विशेष रूप से ट्रेन किया गया है ऐसे स्निफ़र डॉग्स को भी भेजा गया है। स्निफर डॉग्स ढूंढ पाते हैं कि कहीं मलबे के नीचे कोई इंसान जिन्दा हो। कोशिश हमारी पूरी रहेगी अधिकतम लोगों को जिन्दा बचाएं। रेस्क्यू ऑपरेशन के बाद रिलीफ का काम भी चलाना है। रिहैबिलिटेशन का काम भी तो बहुत लम्बा चलेगा।
लेकिन मानवता की अपनी एक ताकत होती है। सवा-सौ करोड़ देश वासियों के लिए नेपाल अपना है। उन लोगों का दुःख भी हमारा दुःख है। भारत पूरी कोशिश करेगा इस आपदा के समय हर नेपाली के आंसू भी पोंछेंगे, उनका हाथ भी पकड़ेंगे, उनको साथ भी देंगे। पिछले दिनों यमन में, हमारे हजारों भारतीय भाई बहन फंसे हुए थे। युद्ध की भयंकर विभीषिका के बीच, बम बन्दूक के तनाव के बीच, गोलाबारी के बीच भारतीयों को निकालना, जीवित निकालना, एक बहुत बड़ा कठिन काम था। लेकिन हम कर पाए। इतना ही नहीं, एक सप्ताह की उम्र की एक बच्ची को जब बचा करके लाये तो ऐसा लग रहा था कि आखिर मानवता की भी कितनी बड़ी ताकत होती है। बम-बन्दूक की वर्षा चलती हो, मौत का साया हो, और एक सप्ताह की बच्ची अपनी जिन्दगी बचा सके तब एक मन को संतोष होता है।
मैं पिछले दिनों विदेश में जहाँ भी गया, एक बात के लिए बहुत बधाइयाँ मिली, और वो था यमन में हमने दुनिया के करीब 48 देशों के नागरिकों को बचाया था। चाहे अमेरिका हो, यू.के. हो, फ्रांस हो, रशिया हो, जर्मनी हो, जापान हो, हर देश के नागरिक को हमने मदद की थी। और उसके कारण दुनिया में भारत का ये “सेवा परमो धर्मः”, इसकी अनुभूति विश्व ने की है। हमारा विदेश मंत्रालय, हमारी वायु सेना, हमारी नौसेना इतने धैर्य के साथ, इतनी जिम्मेवारी के साथ, इस काम को किया है, दुनिया में इसकी अमिट छाप रहेगी आने वाले दिनों में, ऐसा मैं विश्वास करता हूँ। और मुझे खुशी है कि कोई भी नुकसान के बिना, सब लोग बचकर के बाहर आये। वैसे भी भारत का एक गुण, भारत के संस्कार बहुत पुराने हैं।
अभी मैं जब फ्रांस गया था तो फ्रांस में, मैं प्रथम विश्व युद्ध के एक स्मारक पर गया था। उसका एक कारण भी था, कि प्रथम विश्व युद्ध की शताब्दी तो है, लेकिन साथ-साथ भारत की पराक्रम का भी वो शताब्दी वर्ष हैI भारत के वीरों की बलिदानी की शताब्दी का वर्ष है और “सेवा परमो-धर्मः” इस आदर्श को कैसे चरितार्थ करता रहा हमारा देश , उसकी भी शताब्दी का यह वर्ष है, मैं यह इसलिए कह रहा हूँ कि 1914 में और 1918 तक प्रथम विश्व युद्ध चला और बहुत कम लोगों को मालूम होगा करीब-करीब 15 लाख भारतीय सैनिकों ने इस युद्ध में अपनी जान की बाजी लगा दी थी और भारत के जवान अपने लिए नहीं मर रहे थेI हिंदुस्तान को, किसी देश को कब्जा नहीं करना था, न हिन्दुस्तान को किसी की जमीन लेनी थी लेकिन भारतीयों ने एक अदभुत पराक्रम करके दिखाया थाI बहुत कम लोगों को मालूम होगा इस प्रथम विश्व युद्ध में हमारे करीब-करीब 74 हजार जवानों ने शहादत की थी, ये भी गर्व की बात है कि इस पर करीब 9 हजार 2 सौ हमारे सैनिकों को गैलेंट्री अवार्ड से डेकोरेट किया गया थाI इतना ही नहीं, 11 ऐसे पराक्रमी लोग थे जिनको सर्वश्रेष्ठ सम्मान विक्टोरिया क्रॉस मिला थाI खासकर कि फ्रांस में विश्व युद्ध के दरमियान मार्च 1915 में करीब 4 हजार 7 सौ हमारे हिनदुस्तानियों ने बलिदान दिया था। उनके सम्मान में फ्रांस ने वहां एक स्मारक बनाया है। मैं वहाँ नमन करने गया था, हमारे पूर्वजों के पराक्रम के प्रति श्रध्दा व्यक्त करने गया था।
ये सारी घटनायें हम देखें तो हम दुनिया को कह सकते हैं कि ये देश ऐसा है जो दुनिया की शांति के लिए, दुनिया के सुख के लिए, विश्व के कल्याण के लिए सोचता है। कुछ न कुछ करता है और ज़रूरत पड़े तो जान की बाज़ी भी लगा देता है। यूनाइटेड नेशन्स में भी पीसकीपिंग फ़ोर्स में सर्वाधिक योगदान देने वालों में भारत का भी नाम प्रथम पंक्ति में है। यही तो हम लोगों के लिए गर्व की बात है।
पिछले दिनों दो महत्वपूर्ण काम करने का मुझे अवसर मिला। हम पूज्य बाबा साहेब अम्बेडकर की 125 वीं जयन्ती का वर्ष मना रहे हैं। कई वर्षों से मुंबई में उनके स्मारक बनाने का जमीन का विवाद चल रहा था। मुझे आज इस बात का संतोष है कि भारत सरकार ने वो जमीन बाबा साहेब अम्बेडकर के स्मारक बनाने के लिए देने का निर्णय कर लिया। उसी प्रकार से दिल्ली में बाबा साहेब अम्बेडकर के नाम से एक इंटरनेशनल सेंटर बने, पूरा विश्व इस मनीषी को जाने, उनके विचारों को जाने, उनके काम को जाने। ये भी वर्षों से लटका पड़ा विषय था, इसको भी पूरा किया, शिलान्यास किया, और 20 साल से जो काम नहीं हुआ था वो 20 महीनों में पूरा करने का संकल्प किया। और साथ-साथ मेरे मन में एक विचार भी आया है और हम लगे हैं, आज भी हमारे देश में कुछ परिवार हैं जिनको सर पे मैला ढ़ोने के लिए मजबूर होना पड़ता है।
क्या हमें शोभा देता है कि आज भी हमारे देश में कुछ परिवारों को सर पर मैला ढोना पड़े? मैंने सरकार में बड़े आग्रह से कहा है कि बाबा साहेब अम्बेडकर जी के पुण्य स्मरण करते हुए 125 वीं जयन्ती के वर्ष में, हम इस कलंक से मुक्ति पाएं। अब हमारे देश में किसी गरीब को सर पर मैला ढोना पड़े, ये परिस्थति हम सहन नहीं करेंगे। समाज का भी साथ चाहिये। सरकार ने भी अपना दायित्व निभाना चाहिये। मुझे जनता का भी सहयोग चाहिये, इस काम को हमें करना है।
बाबा साहेब अम्बेडकर जीवन भर शिक्षित बनो ये कहते रहते थे। आज भी हमारे कई दलित, पीड़ित, शोषित, वंचित समाज में, ख़ास करके बेटियों में, शिक्षा अभी पहुँची नहीं है। बाबा साहेब अम्बेडकर के 125 वीं जयन्ती के पर्व पर, हम भी संकल्प करें। हमारे गाँव में, नगर में, मोहल्ले में गरीब से गरीब की बेटी या बेटा, अनपढ़ न रहे। सरकार अपना कर्त्तव्य करे, समाज का उसमें साथ मिले तो हम जरुर संतोष की अनुभूति करते हैं। मुझे एक आनंद की बात शेयर करने का मन करता है और एक पीड़ा भी बताने का मन करता है।
मुझे इस बात का गर्व होता है कि भारत की दो बेटियों ने देश के नाम को रौशन किया। एक बेटी साईना नेहवाल बैडमिंटन में दुनिया में नंबर एक बनी, और दूसरी बेटी सानिया मिर्जा टेनिस डबल्स में दुनिया में नंबर एक बनी। दोनों को बधाई, और देश की सारी बेटियों को भी बधाई। गर्व होता है अपनों के पुरुषार्थ और पराक्रम को लेकर के। लेकिन कभी-कभी हम भी आपा खो बैठते हैं। जब क्रिकेट का वर्ल्ड कप चल रहा था और सेमी-फाइनल में हम ऑस्ट्रेलिया से हार गए, कुछ लोगों ने हमारे खिलाड़ियों के लिए जिस प्रकार के शब्दों का प्रयोग किया, जो व्यवहार किया, मेरे देशवासियो, ये अच्छा नहीं है। ऐसा कैसा खेल हो जिसमें कभी पराजय ही न हो अरे जय और पराजय तो जिन्दगी के हिस्से होते हैं। अगर हमारे देश के खिलाड़ी कभी हार गए हैं तो संकट की घड़ी में उनका हौसला बुलंद करना चाहिये। उनका नया विश्वास पैदा करने का माहौल बनाना चाहिये। मुझे विश्वास है आगे से हम पराजय से भी सीखेंगे और देश के सम्मान के साथ जो बातें जुड़ी हुई हैं, उसमें पल भर में ही संतुलन खो करके, क्रिया-प्रतिक्रिया में नहीं उलझ जायेंगे। और मुझे कभी-कभी चिंता हो रही है। मैं जब कभी देखता हूँ कि कहीं अकस्मात् हो गया, तो भीड़ इकट्ठी होती है और गाड़ी को जला देती है। और हम टीवी पर इन चीजों को देखते भी हैं। एक्सीडेंट नहीं होना चाहिये। सरकार ने भी हर प्रकार की कोशिश करनी चाहिये। लेकिन मेरे देशवासियो बताइये कि इस प्रकार से गुस्सा प्रकट करके हम ट्रक को जला दें, गाड़ी को जला दें.... मरा हुआ तो वापस आता नहीं है। क्या हम अपने मन के भावों को संतुलित रखके कानून को कानून का काम नहीं करने दे सकते हैं? सोचना चाहिये।
खैर, आज मेरा मन इन घटनाओं के कारण बड़ा व्यथित है, ख़ास करके प्राकृतिक आपदाओं के कारण, लेकिन इसके बीच भी धैर्य के साथ, आत्मविश्वास के साथ देश को भी आगे ले जायेंगे, इस देश का कोई भी व्यक्ति...दलित हो, पीड़ित हो, शोषित हो, वंचित हो, आदिवासी हो, गाँव का हो, गरीब हो, किसान हो, छोटा व्यापारी हो, कोई भी हो, हर एक के कल्याण के मार्ग पर, हम संकल्प के साथ आगे बढ़ते रहेंगे।
विद्यार्थियों की परीक्षायें पूर्ण हुई हैं, ख़ास कर के 10 वीं और 12 वीं के विद्यार्थियों ने छुट्टी मनाने के कार्यक्रम बनाए होंगे, मेरी आप सबको शुभकामनाएं हैं। आपका वेकेशन बहुत ही अच्छा रहे, जीवन में कुछ नया सीखने का, नया जानने का अवसर मिले, और साल भर आपने मेहनत की है तो कुछ पल परिवार के साथ उमंग और उत्साह के साथ बीते यही मेरी शुभकामना है।
आप सबको मेरा नमस्कार।
धन्यवाद।
मेरे प्यारे किसान भाइयो और बहनो, आप सबको नमस्कार!
ये मेरा सौभाग्य है कि आज मुझे देश के दूर सुदूर गाँव में रहने वाले मेरे किसान भाइयों और बहनों से बात करने का अवसर मिला है। और जब मैं किसान से बात करता हूँ तो एक प्रकार से मैं गाँव से बात करता हूँ, गाँव वालों से बात करता हूँ, खेत मजदूर से भी बात कर रहा हूँ। उन खेत में काम करने वाली माताओं बहनों से भी बात कर रहा हूँ। और इस अर्थ में मैं कहूं तो अब तक की मेरी सभी मन की बातें जो हुई हैं, उससे शायद एक कुछ एक अलग प्रकार का अनुभव है।
जब मैंने किसानों के साथ मन की बात करने के लिए सोचा, तो मुझे कल्पना नहीं थी कि दूर दूर गावों में बसने वाले लोग मुझे इतने सारे सवाल पूछेंगे, इतनी सारी जानकारियां देंगे, आपके ढेर सारे पत्र, ढेर सारे सवाल, ये देखकर के मैं हैरान हो गया। आप कितने जागरूक हैं, आप कितने सक्रिय हैं, और शायद आप तड़पते हैं कि कोई आपको सुने। मैं सबसे पहले आपको प्रणाम करता हूँ कि आपकी चिट्ठियाँ पढ़कर के उसमें दर्द जो मैंने देखा है, जो मुसीबतें देखी हैं, इतना सहन करने के बावजूद भी, पता नहीं क्या-क्या आपने झेला होगा।
आपने मुझे तो चौंका दिया है, लेकिन मैं इस मन की बात का, मेरे लिए एक प्रशिक्षण का, एक एजुकेशन का अवसर मानता हूँ। और मेरे किसान भाइयो और बहनो, मैं आपको विश्वास दिलाता हूँ, कि आपने जितनी बातें उठाई हैं, जितने सवाल पूछे हैं, जितने भिन्न-भिन्न पहलुओं पर आपने बातें की हैं, मैं उन सबके विषय में, पूरी सरकार में जागरूकता लाऊँगा, संवेदना लाऊँगा, मेरा गाँव, मेरा गरीब, मेरा किसान भाई, ऐसी स्थिति में उसको रहने के लिए मजबूर नहीं किया जा सकता। मैं तो हैरान हूँ, किसानों ने खेती से संबधित तो बातें लिखीं हैं। लेकिन, और भी कई विषय उन्होंने कहे हैं, गाँव के दबंगों से कितनी परेशानियाँ हैं, माफियाओं से कितनी परेशानियाँ हैं, उसकी भी चर्चा की है, प्राकृतिक आपदा से आने वाली मुसीबतें तो ठीक हैं, लेकिन आस-पास के छोटे मोटे व्यापारियों से भी मुसीबतें झेलनी पड़ रही हैं।
किसी ने गाँव में गन्दा पानी पीना पड़ रहा है उसकी चर्चा की है, किसी ने गाँव में अपने पशुओं को रखने के लिए व्यवस्था की चिंता की है, किसी ने यहाँ तक कहा है कि पशु मर जाता है तो उसको हटाने का ही कोई प्रबंध नहीं होता, बीमारी फैल जाती है। यानि कितनी उपेक्षा हुई है, और आज मन की बात से शासन में बैठे हुए लोगों को एक कड़ा सन्देश इससे मिल रहा है। हमें राज करने का अधिकार तब है जब हम इन छोटी छोटी बातों को भी ध्यान दें। ये सब पढ़ कर के तो मुझे कभी कभी शर्मिन्दगी महसूस होती थी, कि हम लोगों ने क्या किया है! मेरे पास जवाब नहीं है, क्या किया है? हाँ, मेरे दिल को आपकी बातें छू गयी हैं। मैं जरूर बदलाव के लिए, प्रामाणिकता से प्रयास करूंगा, और उसके सभी पहलुओं पर सरकार को, जगाऊँगा, चेताऊंगा, दौडाऊंगा, मेरी कोशिश रहेगी, ये मैं विश्वास दिलाता हूँ।
मैं ये भी जानता हूँ कि पिछले वर्ष बारिश कम हुई तो परेशानी तो थी ही थी। इस बार बेमौसमी बरसात हो गयी, ओले गिरे, एक प्रकार से महाराष्ट्र से ऊपर, सभी राज्यों में, ये मुसीबत आयी। और हर कोने में किसान परेशान हो गया। छोटा किसान जो बेचारा, इतनी कड़ी मेहनत करके साल भर अपनी जिन्दगी गुजारा करता है, उसका तो सब कुछ तबाह हो गया है। मैं इस संकट की घड़ी में आपके साथ हूँ। सरकार के मेरे सभी विभाग राज्यों के संपर्क में रह करके स्थिति का बारीकी से अध्ययन कर रहे हैं, मेरे मंत्री भी निकले हैं, हर राज्य की स्थिति का जायजा लेंगे, राज्य सरकारों को भी मैंने कहा है कि केंद्र और राज्य मिल करके, इन मुसीबत में फंसे हुए सभी किसान भाइयों-बहनों को जितनी ज्यादा मदद कर सकते हैं, करें। में आपको विश्वास दिलाता हूँ कि सरकार पूरी संवेदना के साथ, आपकी इस संकट की घड़ी में, आपको पूरी तत्परता से मदद करेगी। जितना हो सकता है, उसको पूरा करने का प्रयास किया जायेगा।
गाँव के लोगों ने, किसानों ने कई मुददे उठाये हैं। सिंचाई की चिंता व्यापक नजर आती है। गाँव में सड़क नहीं है उसका भी आक्रोश है। खाद की कीमतें बढ़ रही हैं, उस पर भी किसान की नाराजगी है। बिजली नहीं मिल रही है। किसानों को यह भी चिंता है कि बच्चों को पढ़ाना है, अच्छी नौकरी मिले ये भी उनकी इच्छा है, उसकी भी शिकायतें हैं। माताओं बहनों की भी, गाँव में कहीं नशा-खोरी हो रही है उस पर अपना आक्रोश जताया है। कुछ ने तो अपने पति को तम्बाकू खाने की आदत है उस पर भी अपना रोष मुझे व्यक्त करके भेजा है। आपके दर्द को मैं समझ सकता हूँ। किसान का ये भी कहना है की सरकार की योजनायें तो बहुत सुनने को मिलती हैं, लेकिन हम तक पहुँचती नहीं हैं। किसान ये भी कहता है कि हम इतनी मेहनत करते हैं, लोगों का तो पेट भरते हैं लेकिन हमारा जेब नहीं भरता है, हमें पूरा पैसा नहीं मिलता है। जब माल बेचने जाते हैं, तो लेने वाला नहीं होता है। कम दाम में बेच देना पड़ता है। ज्यादा पैदावार करें तो भी मरते हैं, कम पैदावार करें तो भी मरते हैं। यानि किसानों ने अपने मन की बात मेरे सामने रखी है। मैं मेरे किसान भाइयों-बहनों को विश्वास दिलाता हूँ, कि मैं राज्य सरकारों को भी, और भारत सरकार के भी हमारे सभी विभागों को भी और अधिक सक्रिय करूंगा। तेज गति से इन समस्याओं के समाधान के रास्ते खोजने के लिए प्रेरित करूँगा। मुझे लग रहा है कि आपका धैर्य कम हो रहा है। बहुत स्वाभाविक है, साठ साल आपने इन्तजार किया है, मैं प्रामाणिकता से प्रयास करूँगा।
किसान भाइयो, ये आपके ढेर सारे सवालों के बीच में, मैंने देखा है कि करीब–करीब सभी राज्यों से वर्तमान जो भूमि अधिग्रहण बिल की चर्चा है, उसका प्रभाव ज्यादा दिखता है, और मैं हैरान हूँ कि कैसे-कैसे भ्रम फैलाए गए हैं। अच्छा हुआ, आपने छोटे–छोटे सवाल मुझे पूछे हैं। मैं कोशिश करूंगा कि सत्य आप तक पहुचाऊं। आप जानते हैं भूमि-अधिग्रहण का कानून 120 साल पहले आया था। देश आज़ाद होने के बाद भी 60-65 साल वही कानून चला और जो लोग आज किसानों के हमदर्द बन कर के आंदोलन चला रहे हैं, उन्होंने भी इसी कानून के तहत देश को चलाया, राज किया और किसानों का जो होना था हुआ। सब लोग मानते थे कि कानून में परिवर्तन होना चाहिए, हम भी मानते थे। हम विपक्ष में थे, हम भी मानते थे।
2013 में बहुत आनन-फानन के साथ एक नया कानून लाया गया। हमने भी उस समय कंधे से कन्धा मिलाकर के साथ दिया। किसान का भला होता है, तो साथ कौन नहीं देगा, हमने भी दिया। लेकिन कानून लागू होने के बाद, कुछ बातें हमारे ज़हन में आयीं। हमें लगा शायद इसके साथ तो हम किसान के साथ धोखा कर रहे हैं। हमें किसान के साथ धोखा करने का अधिकार नहीं है। दूसरी तरफ जब हमारी सरकार बनी, तब राज्यों की तरफ से बहुत बड़ी आवाज़ उठी। इस कानून को बदलना चाहिए, कानून में सुधार करना चाहिए, कानून में कुछ कमियां हैं, उसको पूरा करना चाहिए। दूसरी तरफ हमने देखा कि एक साल हो गया, कोई कानून लागू करने को तैयार ही नहीं कोई राज्य और लागू किया तो उन्होंने क्या किया? महाराष्ट्र सरकार ने लागू किया था, हरियाणा ने किया था जहां पर कांग्रेस की सरकारें थीं और जो किसान हितैषी होने का दावा करते हैं उन्होंने इस अध्यादेश में जो मुआवजा देने का तय किया था उसे आधा कर दिया। अब ये है किसानों के साथ न्याय? तो ये सारी बातें देख कर के हमें भी लगा कि भई इसका थोडा पुनर्विचार होना ज़रूरी है। आनन–फानन में कुछ कमियां रह जाती हैं। शायद इरादा ग़लत न हो, लेकिन कमियाँ हैं, तो उसको तो ठीक करनी चाहिए।…और हमारा कोई आरोप नहीं है कि पुरानी सरकार क्या चाहती थी, क्या नहीं चाहती थी? हमारा इरादा यही है कि किसानों का भला हो, किसानों की संतानों का भी भला हो, गाँव का भी भला हो और इसीलिए कानून में अगर कोई कमियां हैं, तो दूर करनी चाहिए। तो हमारा एक प्रामाणिक प्रयास कमियों को दूर करना है।
अब एक सबसे बड़ी कमी मैं बताऊँ, आपको भी जानकर के हैरानी होगी कि जितने लोग किसान हितैषी बन कर के इतनी बड़ी भाषणबाज़ी कर रहें हैं, एक जवाब नहीं दे रहे हैं। आपको मालूम है, अलग-अलग प्रकार के हिंदुस्तान में 13 कानून ऐसे हैं जिसमें सबसे ज्यादा जमीन संपादित की जाती है, जैसे रेलवे, नेशनल हाईवे, खदान के काम। आपको मालूम है, पिछली सरकार के कानून में इन 13 चीज़ों को बाहर रखा गया है। बाहर रखने का मतलब ये है कि इन 13 प्रकार के कामों के लिए जो कि सबसे ज्यादा जमीन ली जाती है, उसमें किसानों को वही मुआवजा मिलेगा जो पहले वाले कानून से मिलता था। मुझे बताइए, ये कमी थी कि नहीं? ग़लती थी कि नहीं? हमने इसको ठीक किया और हमने कहा कि भई इन 13 में भी भले सरकार को जमीन लेने कि हो, भले रेलवे के लिए हो, भले हाईवे बनाने के लिए हो, लेकिन उसका मुआवजा भी किसान को चार गुना तक मिलना चाहिए। हमने सुधार किया। कोई मुझे कहे, क्या ये सुधार किसान विरोधी है क्या? हमें इसीलिए तो अध्यादेश लाना पड़ा। अगर हम अध्यादेश न लाते तो किसान की तो जमीन वो पुराने वाले कानून से जाती रहती, उसको कोई पैसा नहीं मिलता। जब ये कानून बना तब भी सरकार में बैठे लोगों में कईयों ने इसका विरोधी स्वर निकला था। स्वयं जो कानून बनाने वाले लोग थे, जब कानून का रूप बना, तो उन्होंने तो बड़े नाराज हो कर के कह दिया, कि ये कानून न किसानों की भलाई के लिए है, न गाँव की भलाई के लिए है, न देश की भलाई के लिए है। ये कानून तो सिर्फ अफसरों कि तिजोरी भरने के लिए है, अफसरों को मौज करने के लिए, अफ़सरशाही को बढ़ावा देने के लिए है। यहाँ तक कहा गया था। अगर ये सब सच्चाई थी तो क्या सुधार होना चाहिए कि नहीं होना चाहिए? ..और इसलिए हमने कमियों को दूर कर के किसानों का भला करने कि दिशा में प्रयास किये हैं। सबसे पहले हमने काम किया, 13 कानून जो कि भूमि अधिग्रहण कानून के बाहर थे और जिसके कारण किसान को सबसे ज्यादा नुकसान होने वाला था, उसको हम इस नए कानून के दायरे में ले आये ताकि किसान को पूरा मुआवजा मिले और उसको सारे हक़ प्राप्त हों। अब एक हवा ऐसी फैलाई गई कि मोदी ऐसा कानून ला रहें हैं कि किसानों को अब मुआवजा पूरा नहीं मिलेगा, कम मिलेगा।
मेरे किसान भाइयो-बहनो, मैं ऐसा पाप सोच भी नहीं सकता हूँ। 2013 के पिछली सरकार के समय बने कानून में जो मुआवजा तय हुआ है, उस में रत्ती भर भी फर्क नहीं किया गया है। चार गुना मुआवजा तक की बात को हमने स्वीकारा हुआ है। इतना ही नहीं, जो तेरह योजनाओं में नहीं था, उसको भी हमने जोड़ दिया है। इतना ही नहीं, शहरीकरण के लिए जो भूमि का अधिग्रहण होगा, उसमें विकसित भूमि, बीस प्रतिशत उस भूमि मालिक को मिलेगी ताकि उसको आर्थिक रूप से हमेशा लाभ मिले, ये भी हमने जारी रखा है। परिवार के युवक को नौकरी मिले। खेत मजदूर की संतान को भी नौकरी मिलनी चाहिए, ये भी हमने जारी रखा है। इतना ही नहीं, हमने तो एक नयी चीज़ जोड़ी है। नयी चीज़ ये जोड़ी है, जिला के जो अधिकारी हैं, उसको इसने घोषित करना पड़ेगा कि उसमें नौकरी किसको मिलेगी, किसमें नौकरी मिलेगी, कहाँ पर काम मिलेगा, ये सरकार को लिखित रूप से घोषित करना पड़ेगा। ये नयी चीज़ हमने जोड़ करके सरकार कि जिम्मेवारी को Fix किया है।
मेरे किसान भाइयो-बहनो, हम इस बात पर agree हैं, कि सबसे पहले सरकारी जमीन का उपयोग हो। उसके बाद बंजर भूमि का उपयोग हो, फिर आखिर में अनिवार्य हो तब जाकर के उपजाऊ जमीन को हाथ लगाया जाये, और इसीलिए बंजर भूमि का तुरंत सर्वे करने के लिए भी कहा गया है, जिसके कारण वो पहली priority वो बने।
एक हमारे किसानों की शिकायत सही है कि आवश्यकता से अधिक जमीन हड़प ली जाती है। इस नए कानून के माध्यम से मैं आपको विश्वास दिलाना चाहता हूँ कि अब जमीन कितनी लेनी, उसकी पहले जांच पड़ताल होगी, उसके बाद तय होगा कि आवश्यकता से अधिक जमीन हड़प न की जाए। कभी-कभी तो कुछ होने वाला है, कुछ होने वाला है, इसकी चिंता में बहुत नुकसान होता है। ये Social Impact Assessment (SIA) के नाम पर अगर प्रक्रिया सालों तक चलती रहे, सुनवाई चलती रहे, मुझे बताइए, ऐसी स्थिति में कोई किसान अपने फैसले कर पायेगा? फसल बोनी है तो वो सोचेगा नहीं-नहीं यार, पता नहीं, वो निर्णय आ जाएगा तो, क्या करूँगा? और उसके 2-2, 4-4, साल खराब हो जाएगा और अफसरशाही में चीजें फसी रहेंगी। प्रक्रियाएं लम्बी, जटिल और एक प्रकार से किसान बेचारा अफसरों के पैर पकड़ने जाने के लिए मजबूर हो जाएगा कि साहब ये लिखो, ये मत लिखों, वो लिखो, वो मत लिखो, ये सब होने वाला है। क्या मैं मेरे अपने किसानों को इस अफसरसाही के चुंगल में फिर एक बार फ़सा दूं? मुझे लगता है वो ठीक नहीं होगा। प्रक्रिया लम्बी थी, जटिल थी। उसको सरल करने का मैंने प्रयास किया है।
मेरे किसान भाइयो-बहनो 2014 में कानून बना है, लेकिन राज्यों ने उसको स्वीकार नहीं किया है। किसान तो वहीं का वहीं रह गया। राज्यों ने विरोध किया। मुझे बताइए क्या मैं राज्यों की बात सुनूं या न सुनूं? क्या मैं राज्यों पर भरोसा करूँ या न करूँ? इतना बड़ा देश, राज्यों पर अविश्वास करके चल सकता है क्या? और इसलिए मेरा मत है कि हमें राज्यों पर भरोसा करना चाहिये, भारत सरकार में विशेष करना चाहिये तो, एक तो मैं भरोसा करना चाहता हूँ, दूसरी बात है, ये जो कानून में सुधार हम कर रहे हैं, कमियाँ दूर कर रहे हैं, किसान की भलाई के लिए जो हम कदम उठा रहे हैं, उसके बावजूद भी अगर किसी राज्य को ये नहीं मानना है, तो वे स्वतंत्र हैं और इसलिए मैं आपसे कहना चाहता हूँ कि ये जो सारे भ्रम फैलाए जा रहे हैं, वो सरासर किसान विरोधी के भ्रम हैं। किसान को गरीब रखने के षड्यन्त्र का ही हिस्सा हैं। देश को आगे न ले जाने के जो षडयंत्र चले हैं उसी का हिस्सा है। उससे बचना है, देश को भी बचाना है, किसान को भी बचाना है।
अब गाँव में भी किसान को पूछो कि भाई तीन बेटे हैं बताओ क्या सोच रहे हो? तो वो कहता है कि भाई एक बेटा तो खेती करेगा, लेकिन दो को कहीं-कहीं नौकरी में लगाना है। अब गाँव के किसान के बेटों को भी नौकरी चाहिये। उसको भी तो कहीं जाकर रोजगार कमाना है। तो उसके लिए क्या व्यवस्था करनी पड़ेगी। तो हमने सोचा कि जो गाँव की भलाई के लिए आवश्यक है, किसान की भलाई के लिये आवश्यक है, किसान के बच्चों के रोजगार के लिए आवश्यक है, ऐसी कई चीजों को जोड़ दिया जाए। उसी प्रकार से हम तो जय-जवान, जय-किसान वाले हैं। जय-जवान का मतलब है देश की रक्षा। देश की रक्षा के विषय में हिंदुस्तान का किसान कभी पीछे हटता नहीं है। अगर सुरक्षा के क्षेत्र में कोई आवश्कता हो तो वह जमीन किसानों से मांगनी पड़ेगी।..और मुझे विश्वास है, वो किसान देगा। तो हमने इन कामों के लिए जमीन लेने की बात को इसमें जोड़ा है। कोई भी मुझे गाँव का आदमी बताए कि गाँव में सड़क चाहिये कि नहीं चाहिये। अगर खेत में पानी चाहिये तो नहर करनी पड़ेगी कि नहीं करनी पड़ेगी। गाँव में आज भी गरीब हैं, जिसके पास रहने को घर नहीं है। घर बनाने के लिए जमीन चाहिये की नहीं चाहिये? कोई मुझे बताये कि यह उद्योगपतियों के लिए है क्या? यह धन्ना सेठों के लिए है क्या? सत्य को समझने की कोशिश कीजिये।
हाँ, मैं एक डंके की चोट पर आपको कहना चाहता हूँ, नए अध्यादेश में भी, कोई भी निजी उद्योगकार को, निजी कारखाने वाले को, निजी व्यवसाय करने वाले को, जमीन अधिग्रहण करने के समय 2013 में जो कानून बना था, जितने नियम हैं, वो सारे नियम उनको लागू होंगे। यह कॉर्पोरेट के लिए कानून 2013 के वैसे के वैसे लागू रहने वाले हैं। तो फिर यह झूठ क्यों फैलाया जाता है। मेरे किसान भाइयो-बहनो, एक भ्रम फैलाया जाता है कि आपको कानूनी हक नहीं मिलेगा, आप कोर्ट में नहीं जा सकते, ये सरासर झूठ है। हिंदुस्तान में कोई भी सरकार आपके कानूनी हक़ को छीन नहीं सकती है। बाबा साहेब अम्बेडकर ने हमें जो संविधान दिया है, इस संविधान के तहत आप हिंदुस्तान के किसी भी कोर्ट में जा करके दरवाजे खटखटा सकते हैं। तो ये झूठ फैलाया गया है। हाँ, हमने एक व्यवस्था को आपके दरवाजे तक लाने का प्रयास किया है।
एक Authority बनायी है, अब वो Authority जिले तक काम करेगी और आपके जिले के किसानों की समस्याओं का समाधान उसी Authority में जिले में ही हो जायेगा।..और वहां अगर आपको संतोष नहीं होता तो आप ऊपर के कोर्ट में जा सकते हैं। तो ये व्यवस्था हमने की है।
एक यह भी बताया जाता है कि भूमि अधिग्रहित की गयी तो वो पांच साल में वापिस करने वाले कानून को हटा दिया गया है। जी नहीं, मेरे किसान भाइयो-बहनो हमने कहा है कि जब भी Project बनाओगे, तो यह पक्का करो कि कितने सालों में आप इसको पूरा करोगे। और उस सालों में अगर पूरा नहीं करते हैं तो वही होगा जो किसान चाहेगा। और उसको तो समय-सीमा हमने बाँध दी है। आज क्या होता है, 40-40 साल पहले जमीने ली गयी, लेकिन अभी तक सरकार ने कुछ किया नहीं। तो यह तो नहीं चल सकता। तो हमने सरकार को सीमा में बांधना तय किया है। हाँ, कुछ Projects ऐसे होते हैं जो 20 साल में पूरे होते हैं, अगर मान लीजिये 500 किलोमीटर लम्बी रेलवे लाइन डालनी है, तो समय जाएगा। तो पहले से कागज़ पर लिखो कि भाई कितने समय में पूरा करोगे। तो हमने सरकार को बाँधा है। सरकार की जिम्मेवारी को Fix किया है।
मैं और एक बात बताऊं किसान-भाइयो, कभी-कभी ये एयरकंडीशन कमरे में बैठ करके जो कानून बनाते हैं न, उनको गाँव के लोगों की सच्ची स्थिति का पता तक नहीं होता है। अब आप देखिये जब डैम बनता है, जलाशय बनता है, तो उसका नियम यह है कि 100 साल में सबसे ज्यादा पानी की सम्भावना हो उस हिसाब से जमीन प्राप्त करने का नियम है। अब 100 साल में एक बार पानी भरता है। 99 साल तक पानी नहीं भरता है। फिर भी जमीन सरकार के पास चली जाती है, तो आज सभी राज्यों में क्या हो रहा है की भले जमीन कागज़ पर ले ली हो, पैसे भी दे दिए हों। लेकिन फिर भी वो जमीन पर किसान खेती करता है। क्योंकि 100 साल में एक बार जब पानी भर जाएगा तो एक साल के लिए वो हट जाएगा। ये नया कानून 2013 का ऐसा था कि आप खेती नहीं कर सकते थे। हम चाहते हैं कि अगर जमीन डूब में नहीं जाती है तो फिर किसान को खेती करने का अवसर मिलना चाहिये।..और इसीलिये वो जमीन किसान से कब्ज़ा नहीं करनी चाहिये। ये लचीलापन आवश्यक था। ताकि किसान को जमीन देने के बावजूद भी जमीन का लाभ मिलता रहे और जमीन देने के बदले में रुपया भी मिलता रहे। तो किसान को डबल फायदा हो। ये व्यवस्था करना भी जरूरी है, और व्यावहारिक व्यवस्था है, और उस व्यावहारिक व्यवस्था को हमने सोचा है।
एक भ्रम ऐसा फैलाया जाता है कि ‘सहमति’ की जरुरत नहीं हैं। मेरे किसान भाइयो-बहनो ये राजनीतिक कारणों से जो बाते की जाती हैं, मेहरबानी करके उससे बचिये! 2013 में जो कानून बना उसमे भी सरकार नें जिन योजनाओं के लिए जमीन माँगी है, उसमें सहमती का क़ानून नहीं है।...और इसीलिए सहमति के नाम पर लोगों को भ्रमित किया जाता है। सरकार के लिए सहमति की बात पहले भी नही थी, आज भी नहीं है।..और इसीलिये मेरे किसान भाइयों-बहनो पहले बहुत अच्छा था और हमने बुरा कर दिया, ये बिलकुल सरासर आपको गुमराह करने का दुर्भाग्यपूर्ण प्रयास है। मैं आज भी कहता हूँ कि निजी उद्योग के लिए, कॉर्पोरेट के लिए, प्राइवेट कारखानों के लिए ये ‘सहमति’ का कानून चालू है, है...है।
...और एक बात मैं कहना चाहता हूँ, कुछ लोग कहतें है, PPP मॉडल! मेरे किसान भाइयो-बहनो, मान लीजिये 100 करोड रुपए का एक रोड बनाना है। क्या रोड किसी उद्योगकार उठा कर ले जाने वाला है क्या? रोड तो सरकार के मालिकी का ही रहता है। जमीन सरकार की मालिकी की ही रहती है। बनाने वाला दूसरा होता है। बनाने वाला इसीलिए दूसरा होता है, क्योंकि सरकार के पास आज पैसे नहीं होते हैं। क्योंकि सरकार चाहती है कि गाँव में स्कूल बने, गाँव में हॉस्पिटल बने, गरीब का बच्चा पढ़े, इसके लिए पैसा लगे। रोड बनाने का काम प्राइवेट करे, लेकिन वो प्राइवेट वाला भी रोड अपना नहीं बनाता है। न अपने घर ले जाता है, रोड सरकार का बनाता है। एक प्रकार से अपनी पूंजी लगता है। इसका मतलब ये हुआ कि सरकार का जो प्रोजेक्ट होगा जिसमें पूंजी किसी की भी लगे, जिसको लोग PPP मॉडल कहतें हैं। लेकिन अगर उसका मालिकाना हक़ सरकार का रहता है, उसका स्वामित्व सरकार का रहता है, सरकार का मतलब आप सबका रहता है, देश की सवा सौ करोड़ जनता का रहता है तो उसमें ही हमने ये कहा है कि सहमति की आवश्यकता नहीं है और इसीलिये ये PPP मॉडल को लेकर के जो भ्रम फैलाये जातें हैं उसकी मुझे आपको स्पष्टता करना बहुत ही जरुरी है।
कभी-कभार हम जिन बातों के लिए कह रहे हैं कि भई उसमें ‘सहमति’ की प्रक्रिया एक प्रकार से अफसरशाही और तानाशाही को बल देगी। आप मुझे बताईये, एक गावं है, उस गॉव तक रोड बन गया है, अब दूसरे गॉव के लिए रोड बनाना है, आगे वाले गॉव के लिए, 5 किलोमीटर की दूरी पर वह गॉव है। इस गॉव तक रोड बन गया है, लेकिन इन गॉव वालों की ज़मीन उस गॉव की तरफ है। मुझे बताईये उस गॉव के लोगों के लिए, रोड बनाने के लिए, ये गॉव वाले ज़मीन देंगे क्या? क्या ‘सहमति’ देंगे क्या? तो क्या पीछे जो गॉव है उसका क्या गुनाह है भई? उसको रोड मिलना चाहिए कि नहीं, मिलना चाहिये? उसी प्रकार से मैं नहर बना रहा हूँ। इस गॉव वालो को पानी मिल गया, नहर बन गयी। लेकिन आगे वाले गॉव को पानी पहुंचाना है तो ज़मीन तो इसी गावंवालों के बीच में पड़ती है। तो वो तो कह देंगे कि भई नहीं, हम तो ज़मीन नहीं देंगे। हमें तो पानी मिल गया है। तो आगे वाले गावं को नहर मिलनी चाहिए कि नहीं मिलनी चाहिए?
मेरे भाइयो-बहनो, ये व्यावहारिक विषय है। और इसलिए जिस काम के लिए इतनी लम्बी प्रक्रिया न हो, हक और किसान के लिए, ये उद्योग के लिए नहीं है, व्यापार के लिए नहीं है, गावं की भलाई के लिए है, किसान की भलाई के लिए है, उसके बच्चों की भलाई के लिए है।
एक और बात आ रही है। ये बात मैंने पहले भी कही है। हर घर में किसान चाहता है कि एक बेटा भले खेती में रहे, लेकिन बाकी सब संतान रोज़ी–रोटी कमाने के लिए बाहर जाये क्योंकि उसे मालूम है, कि आज समय की मांग है कि घर में घर चलाने के लिए अलग-अलग प्रयास करने पड़ते हैं। अगर हम कोई रोड बनाते है और रोड के बगल में सरकार Industrial Corridor बनाती है, प्राइवेट नहीं। मैं एक बार फिर कहता हूँ प्राइवेट नहीं, पूंजीपति नहीं, धन्ना सेठ नहीं, सरकार बनाती है ताकि जब Corridor बनता है पचास किलोमीटर लम्बा, 100 किलोमीटर लम्बा तो जो रोड बनेगा, रोड के एक किलोमीटर बाएं, एक किलोमीटर दायें वहां पर अगर सरकार Corridor बनाती है ताकि नजदीक में जितने गाँव आयेंगे 50 गाँव, 100 गाँव, 200 गाँव उनको वहां कोई न कोई, वहां रोजी रोटी का अवसर मिल जाए, उनके बच्चों को रोजगार मिल जाए।
मुझे बताइये, भाइयों-बहनो क्या हम चाहतें हैं, कि हमारे गाँव के किसानों के बच्चे दिल्ली और मुंबई की झुग्गी झोपड़ियों में जिन्दगी बसर करने के लिए मजबूर हो जाएँ? क्या उनके घर और गाँव के 20-25 किलोमीटर की दूरी पर एक छोटा सा भी कारखाना लग जाता है और उसको रोजगार मिल जाता है, तो मिलना चाहिये की नहीं मिलना चाहिये? और ये Corridor प्राइवेट नही है, ये सरकार बनाएगी। सरकार बनाकर के उस इलाके के लोगों को रोजगार देने का प्रबंध करेगी। ..और इसीलिए जिसकी मालिकी सरकार की है, और जो गाँव की भलाई के लिए है, गाँव के किसानो की भलाई के लिए है, जो किसानों की भावी पीड़ी की भलाई के लिए हैं, जो गाँव के गरीबों की भलाई के लिए हैं, जो गाँव के किसान को बिजली पानी मोहैया कराने के लिए उनके लिए हैं, उनके लिए इस भूमि अधिग्रहण बिल में कमियाँ थी, उस कमियों को दूर करने का हमारे प्रामाणिक प्रयास हैं।...और फिर भी मैंने Parliament में कहा था की अभी भी किसी को लगता है कोई कमी हैं, तो हम उसको सुधार करने के लिए तैयार हैं।
जब हमने लोकसभा में रखा, कुछ किसान नेताओं ने आ करके दो चार बातें बताईं, हमने जोड़ दी। हम तो अभी भी कहतें कि भाई भूमि अधिग्रहण किसानों की भलाई के लिए ही होना चाहिये। ..और ये हमारी प्रतिबद्धता है, जितने झूठ फैलाये जाते हैं, कृपा करके मैं मेरे किसान भाइयों से आग्रह करता हूँ कि आप इन झूठ के सहारे निर्णय मत करें, भ्रमित होने की जरुरत नहीं है। आवश्यकता यह है की हमारा किसान ताकतवर कैसे बने, हमारा गाँव ताकतवर कैसे बने, हमारा किसान जो मेहनत करता है, उसको सही पैसे कैसे मिले, उसको अच्छा बाज़ार कैसे मिले, जो पैदा करता है उसके रखरखाव के लिए अच्छा स्टोरेज कैसे मिले, हमारी कोशिश है कि गाँव की भलाई, किसान की भलाई के लिए सही दिशा में काम उठाएं।
मेरे किसान भाइयो-बहनो, हमारी कोशिश है कि देश ऐसे आगे बढ़े कि आपकी जमीन पर पैदावार बढ़े, और इसीलिए हमने कोशिश की है, Soil Health Card. जैसे मनुष्य बीमार हो जाता है तो उसकी तबीयत के लिए लेबोरेटरी में टेस्ट होता हैं। जैसा इंसान का होता है न, वैसा अपनी भारत-माता का भी होता हैं, अपनी धरती- माता का भी होता है। और इसीलिए हम आपकी धरती बचे इतना ही नहीं, आपकी धरती तन्दुरूस्त हो उसकी भी चिंता कर रहे हैं।
....और इसलिये भूमि अधिग्रहण नहीं, आपकी भूमि अधिक ताकतवर बने ये भी हमारा काम है। और इसीलिए “Soil Health Card” की बात लेकर के आये हैं। हर किसान को इसका लाभ मिलने वाला है, आपके उर्वरक का जो फालतू खर्चा होता है उससे बच जाएगा। आपकी फसल बढ़ेगी। आपको फसल का पूरा पैसा मिले, उसके लिए भी तो अच्छी मंडियां हों, अच्छी कानून व्यवस्था हो, किसान का शोषण न हो, उस पर हम काम कर रहे हैं और आप देखना मेरे किसान भाइयो, मुझे याद है, मैं जब गुजरात में मुख्यमंत्री था इस दिशा में मैंने बहुत काम किया था। हमारे गुजरात में तो किसान की हालत बहुत ख़राब थी, लेकिन पानी पर काम किया, बहुत बड़ा परिवर्तन आया। गुजरात के विकास में किसान का बहुत बड़ा योगदान बन गया जो कभी सोच नही सकता था। गाँव के गाँव खाली हो जाते थे। बदलाव आया, हम पूरे देश में ये बदलाव चाहते हैं जिसके कारण हमारा किसान सुखी हो।
...और इसलिए मेरे किसान भाइयो और बहनो, आज मुझे आपके साथ बात करने का मौका मिला। लेकिन इन दिनों अध्यादेश की चर्चा ज्यादा होने के कारण मैंने ज़रा ज्यादा समय उसके लिए ले लिया। लेकिन मेरे किसान भाइयो बहनो मैं प्रयास करूंगा, फिर एक बार कभी न कभी आपके साथ दुबारा बात करूंगा, और विषयों की चर्चा करूँगा, लेकिन मैं इतना विश्वास दिलाता हूँ कि आपने जो मुझे लिख करके भेजा है, पूरी सरकार को मैं हिलाऊँगा, सरकार को लगाऊंगा कि क्या हो रहा है। अच्छा हुआ आपने जी भरके बहुत सी चीजें बतायी हैं और मैं मानता हूँ आपका मुझ पर भरोसा है, तभी तो बताई है न! मैं ये भरोसे को टूटने नहीं दूंगा, ये मैं आपको विश्वास दिलाता हूँ।
आपका प्यार बना रहे, आपके आशीर्वाद बने रहे। और आप तो जगत के तात हैं, वो कभी किसी का बुरा सोचता, वो तो खुद का नुकसान करके भी देश का भला करता है। ये उसकी परंपरा रही है। उस किसान का नुकसान न हो, इसकी चिंता ये सरकार करेगी। ये मैं आपको विश्वास दिलाता हूँ लेकिन आज मेरी मन की बातें सुनने के बाद आपके मन में बहुत से विचार और आ सकते हैं। आप जरुर मुझे आकाशवाणी के पते पर लिखिये। मैं आगे फिर कभी बातें करूँगा। या आपके पत्रों के आधार पर सरकार में जो गलतियाँ जो ठीक करनी होंगी तो गलतियाँ ठीक करूँगा। काम में तेजी लाने की जरुरत है, तो तेजी लाऊंगा और और किसी को अन्याय हो रहा है तो न्याय दिलाने के लिए पूरा प्रयास करूँगा।
नवरात्रि का पावन पर्व चल रहा है। मेरी आपको बहुत-बहुत शुभकामनाएं।
नमस्ते, युवा दोस्तो। आज तो पूरा दिन भर शायद आपका मन क्रिकेट मैच में लगा होगा, एक तरफ परीक्षा की चिंता और दूसरी तरफ वर्ल्ड कप हो सकता है आप छोटी बहन को कहते होंगे कि बीच - बीच में आकर स्कोर बता दे। कभी आपको ये भी लगता होगा, चलो यार छोड़ो, कुछ दिन के बाद होली आ रही है और फिर सर पर हाथ पटककर बैठे होंगे कि देखिये होली भी बेकार गयी, क्यों? एग्जाम आ गयी। होता है न! बिलकुल होता होगा, मैं जानता हूँ। खैर दोस्तो, आपकी मुसीबत के समय मैं आपके साथ आया हूँ। आपके लिए एक महत्वपूर्ण अवसर है। उस समय मैं आया हूँ। और मैं आपको कोई उपदेश देने नहीं आया हूँ। ऐसे ही हलकी - फुलकी बातें करने आया हूँ।
बहुत पढ़ लिया न, बहुत थक गए न! और माँ डांटती है, पापा डांटते है, टीचर डांटते हैं, पता नहीं क्या क्या सुनना पड़ता है। टेलीफोन रख दो, टीवी बंद कर दो, कंप्यूटर पर बैठे रहते हो, छोड़ो सबकुछ, चलो पढ़ो यही चलता है न घर में? साल भर यही सुना होगा, दसवीं में हो या बारहवीं में। और आप भी सोचते होंगे कि जल्द एग्जाम खत्म हो जाए तो अच्छा होगा, यही सोचते हो न? मैं जानता हूँ आपके मन की स्थिति को और इसीलिये मैं आपसे आज ‘मन की बात’ करने आया हूँ। वैसे ये विषय थोड़ा कठिन है।
आज के विषय पर माँ बाप चाहते होंगे कि मैं उन बातों को करूं, जो अपने बेटे को या बेटी को कह नहीं पाते हैं। आपके टीचर चाहते होंगे कि मैं वो बातें करूँ, ताकि उनके विद्यार्थी को वो सही बात पहुँच जाए और विद्यार्थी चाहता होगा कि मैं कुछ ऐसी बातें करूँ कि मेरे घर में जो प्रेशर है, वो प्रेशर कम हो जाए। मैं नहीं जानता हूँ, मेरी बातें किसको कितनी काम आयेंगी, लेकिन मुझे संतोष होगा कि चलिये मेरे युवा दोस्तों के जीवन के महत्वपूर्ण पल पर मैं उनके बीच था. अपने मन की बातें उनके साथ गुनगुना रहा था। बस इतना सा ही मेरा इरादा है और वैसे भी मुझे ये तो अधिकार नहीं है कि मैं आपको अच्छे एग्जाम कैसे जाएँ, पेपर कैसे लिखें, पेपर लिखने का तरीका क्या हो? ज्यादा से ज्यादा मार्क्स पाने की लिए कौन - कौन सी तरकीबें होती हैं? क्योंकि मैं इसमें एक प्रकार से बहुत ही सामान्य स्तर का विद्यार्थी हूँ। क्योंकि मैंने मेरे जीवन में किसी भी एग्जाम में अच्छे परिणाम प्राप्त नहीं किये थे। ऐसे ही मामूली जैसे लोग पढ़ते हैं वैसे ही मैं था और ऊपर से मेरी तो हैण्डराइटिंग भी बहुत ख़राब थी। तो शायद कभी - कभी तो मैं इसलिए भी पास हो जाता था, क्योंकि मेरे टीचर मेरा पेपर पढ़ ही नहीं पाते होंगे। खैर वो तो अलग बातें हो गयी, हलकी - फुलकी बातें हैं।
लेकिन मैं आज एक बात जरुर आपसे कहना चाहूँगा कि आप परीक्षा को कैसे लेते हैं, इस पर आपकी परीक्षा कैसी जायेगी, ये निर्भर करती है। अधिकतम लोगों को मैंने देखा है कि वो इसे अपने जीवन की एक बहुत बड़ी महत्वपूर्ण घटना मानते हैं और उनको लगता है कि नहीं, ये गया तो सारी दुनिया डूब जायेगी। दोस्तो, दुनिया ऐसी नहीं है। और इसलिए कभी भी इतना तनाव मत पालिये। हाँ, अच्छा परिणाम लाने का इरादा होना चाहिये। पक्का इरादा होना चाहिये, हौसला भी बुलंद होना चाहिये। लेकिन परीक्षा बोझ नहीं होनी चाहिये, और न ही परीक्षा कोई आपके जीवन की कसौटी कर रही है। ऐसा सोचने की जरुरत नहीं है।
कभी-कभार ऐसा नहीं लगता कि हम ही परीक्षा को एक बोझ बना देते हैं घर में और बोझ बनाने का एक कारण जो होता है, ये होता है कि हमारे जो रिश्तेदार हैं, हमारे जो यार - दोस्त हैं, उनका बेटा या बेटी हमारे बेटे की बराबरी में पढ़ते हैं, अगर आपका बेटा दसवीं में है, और आपके रिश्तेदारों का बेटा दसवीं में है तो आपका मन हमेशा इस बात को कम्पेयर करता रहता है कि मेरा बेटा उनसे आगे जाना चाहिये, आपके दोस्त के बेटे से आगे होना चाहिये। बस यही आपके मन में जो कीड़ा है न, वो आपके बेटे पर प्रेशर पैदा करवा देता है। आपको लगता है कि मेरे अपनों के बीच में मेरे बेटे का नाम रोशन हो जाये और बेटे का नाम तो ठीक है, आप खुद का नाम रोशन करना चाहते हैं। क्या आपको नहीं लगता है कि आपके बेटे को इस सामान्य स्पर्धा में लाकर के आपने खड़ा कर दिया है? जिंदगी की एक बहुत बड़ी ऊँचाई, जीवन की बहुत बड़ी व्यापकता, क्या उसके साथ नहीं जोड़ सकते हैं? अड़ोस - पड़ोस के यार दोस्तों के बच्चों की बराबरी वो कैसी करता है! और यही क्या आपका संतोष होगा क्या? आप सोचिये? एक बार दिमाग में से ये बराबरी के लोगों के साथ मुकाबला और उसी के कारण अपने ही बेटे की जिंदगी को छोटी बना देना, ये कितना उचित है? बच्चों से बातें करें तो भव्य सपनों की बातें करें। ऊंची उड़ान की बातें करें। आप देखिये, बदलाव शुरू हो जाएगा।
दोस्तों एक बात है जो हमें बहुत परेशान करती है। हम हमेशा अपनी प्रगति किसी और की तुलना में ही नापने के आदी होते हैं। हमारी पूरी शक्ति प्रतिस्पर्धा में खप जाती है। जीवन के बहुत क्षेत्र होंगे, जिनमें शायद प्रतिस्पर्धा जरूरी होगी, लेकिन स्वयं के विकास के लिए तो प्रतिस्पर्धा उतनी प्रेरणा नहीं देती है, जितनी कि खुद के साथ हर दिन स्पर्धा करते रहना। खुद के साथ ही स्पर्धा कीजिये, अच्छा करने की स्पर्धा, तेज गति से करने की स्पर्धा, और ज्यादा करने की स्पर्धा, और नयी ऊंचाईयों पर पहुँचने की स्पर्धा आप खुद से कीजिये, बीते हुए कल से आज ज्यादा अच्छा हो इस पर मन लगाइए। और आप देखिये ये स्पर्धा की ताकत आपको इतना संतोष देगी, इतना आनंद देगी जिसकी आप कल्पना नहीं कर सकते। हम लोग बड़े गर्व के साथ एथलीट सेरगेई बूबका का स्मरण करते हैं। इस एथलीट ने पैंतीस बार खुद का ही रिकॉर्ड तोड़ा था। वह खुद ही अपने एग्जाम लेता था। खुद ही अपने आप को कसौटी पर कसता था और नए संकल्पों को सिद्ध करता था। आप भी उसी लिहाज से आगे बढें तो आप देखिये आपको प्रगति के रास्ते पर कोई नहीं रोक सकता है।
युवा दोस्तो, विद्यार्थियों में भी कई प्रकार होते हैं। कुछ लोग कितनी ही परीक्षाएं क्यों न भाए बड़े ही बिंदास होते हैं। उनको कोई परवाह ही नहीं होती और कुछ होते हैं जो परीक्षा के बोझ में दब जाते हैं। और कुछ लोग मुह छुपा करके घर के कोने में किताबों में फंसे रहते हैं। इन सबके बावजूद भी परीक्षा परीक्षा है और परीक्षा में सफल होना भी बहुत आवश्यक है और में भी चाहता हूँ कि आप भी सफल हों लेकिन कभी- कभी आपने देखा होगा कि हम बाहरी कारण बहुत ढूँढ़ते हैं। ये बाहरी कारण हम तब ढूँढ़ते हैं, जब खुद ही कन्फ्यूज्ड हों। खुद पर भरोसा न हो, जैसे जीवन में पहली बार परीक्षा दे रहे हों। घर में कोई टीवी जोर से चालू कर देगा, आवाज आएगी, तो भी हम चिड़चिड़ापन करते होंगे, माँ खाने पर बुलाती होगी तो भी चिड़चिड़ापन करते होंगे। दूसरी तरफ अपने किसी यार-दोस्त का फ़ोन आ गया तो घंटे भर बातें भी करते होंगें । आप को नहीं लगता है आप स्वयं ही अपने विषय में ही कन्फ्यूज्ड हैं।
दोस्तो खुद को पहचानना ही बहुत जरुरी होता है। आप एक काम किजीये बहुत दूर का देखने की जरुरत नहीं है। आपकी अगर कोई बहन हो, या आपके मित्र की बहन हो जिसने दसवीं या बारहवी के एग्जाम दे रही हो, या देने वाली हो। आपने देखा होगा, दसवीं के एग्जाम हों बारहवीं के एग्जाम हों तो भी घर में लड़कियां माँ को मदद करती ही हैं। कभी सोचा है, उनके अंदर ये कौन सी ऐसी ताकत है कि वे माँ के साथ घर काम में मदद भी करती हैं और परीक्षा में लड़कों से लड़कियां आजकल बहुत आगे निकल जाती हैं। थोड़ा आप ओबजर्व कीजिये अपने अगल-बगल में। आपको ध्यान में आ जाएगा कि बाहरी कारणों से परेशान होने की जरुरत नहीं है। कभी-कभी कारण भीतर का होता है. खुद पर अविश्वास होता है न तो फिर आत्मविश्वास क्या काम करेगा? और इसलिए मैं हमेशा कहता हूँ जैसे-जैसे आत्मविश्वास का अभाव होता है, वैसे वैसे अंधविश्वास का प्रभाव बढ़ जाता है। और फिर हम अन्धविश्वास में बाहरी कारण ढूंढते रहते हैं। बाहरी कारणों के रास्ते खोजते रहते हैं. कुछ तो विद्यार्थी ऐसे होते हैं जिनके लिए हम कहते हैं आरम्म्भीशुरा। हर दिन एक नया विचार, हर दिन एक नई इच्छा, हर दिन एक नया संकल्प और फिर उस संकल्प की बाल मृत्यु हो जाता है, और हम वहीं के वहीं रह जाते हैं। मेरा तो साफ़ मानना है दोस्तो बदलती हुई इच्छाओं को लोग तरंग कहते हैं। हमारे साथी यार- दोस्त, अड़ोसी-पड़ोसी, माता-पिता मजाक उड़ाते हैं और इसलिए मैं कहूँगा, इच्छाएं स्थिर होनी चाहिये और जब इच्छाएं स्थिर होती हैं, तभी तो संकल्प बनती हैं और संकल्प बाँझ नहीं हो सकते। संकल्प के साथ पुरुषार्थ जुड़ता है. और जब पुरुषार्थ जुड़ता है तब संकल्प सिद्दी बन जाता है. और इसीलिए तो मैं कहता हूँ कि इच्छा प्लस स्थिरता इज-इक्वल टू संकल्प। संकल्प प्लस पुरुषार्थ इज-इक्वल टू सिद्धि। मुझे विश्वास है कि आपके जीवन यात्रा में भी सिद्दी आपके चरण चूमने आ जायेगी। अपने आप को खपा दीजिये। अपने संकल्प के लिए खपा दीजिये और संकल्प सकारात्मक रखिये। किसी से आगे जाने की मत सोचिये। खुद जहां थे वहां से आगे जाने के लिए सोचिये। और इसलिए रोज अपनी जिंदगी को कसौटी पर कसता रहता है उसके लिए कितनी ही बड़ी कसौटी क्यों न आ जाए कभी कोई संकट नहीं आता है और दोस्तों कोई अपनी कसौटी क्यों करे? कोई हमारे एग्जाम क्यों ले? आदत डालो न। हम खुद ही हमारे एग्जाम लेंगें। हर दिन हमारी परीक्षा लेंगे। देखेंगे मैं कल था वहां से आज आगे गया कि नहीं गया। मैं कल था वहां से आज ऊपर गया कि नहीं। मैंने कल जो पाया था उससे ज्यादा आज पाया कि नहीं पाया। हर दिन हर पल अपने आपको कसौटी पर कसते रहिये। फिर कभी जिन्दगी में कसौटी, कसौटी लगेगी ही नहीं। हर कसौटी आपको खुद को कसने का अवसर बन जायेगी और जो खुद को कसना जानता वो कसौटियों को भी पार कर जाता है और इसलिए जो जिन्दगी की परीक्षा से जुड़ता है उसके लिए क्लासरूम की परीक्षा बहुत मामूली होती है।
कभी आपने भी कल्पना नहीं की होगी की इतने अच्छे अच्छे काम कर दिए होंगें। जरा उसको याद करो, अपने आप विश्वास पैदा हो जाएगा। अरे वाह! आपने वो भी किया था, ये भी किया था? पिछले साल बीमार थी तब भी इतने अच्छे मार्क्स लाये थे। पिछली बार मामा के घर में शादी थी, वहां सप्ताह भर ख़राब हो गया था, तब भी इतने अच्छे मार्क्स लाये थे। अरे पहले तो आप छः घंटे सोते थे और पिछली साल आपने तय किया था कि नहीं नहीं अब की बार पांच घंटे सोऊंगा और आपने कर के दिखाया था। अरे यही तो है मोदी आपको क्या उपदेश देगा। आप अपने मार्गदर्शक बन जाइए। और भगवान् बुद्ध तो कहते थे अंतःदीपो भव:।
मैं मानता हूँ, आपके भीतर जो प्रकाश है न उसको पहचानिए आपके भीतर जो सामर्थ्य है, उसको पहचानिए और जो खुद को बार-बार कसौटी पर कसता है वो नई-नई ऊंचाइयों को पार करता ही जाता है। दूसरा कभी- कभी हम बहुत दूर का सोचते रहते हैं। कभी-कभी भूतकाल में सोये रहते हैं। दोस्तो परीक्षा के समय ऐसा मत कीजिये। परीक्षा समय तो आप वर्तमान में ही जीना अच्छा रहेगा। क्या कोई बैट्समैन पिछली बार कितनी बार जीरो में आऊट हो गया, इसके गीत गुनगुनाता है क्या? या ये पूरी सीरीज जीतूँगा या नहीं जीतूँगा, यही सोचता है क्या? मैच में उतरने के बाद बैटिंग करते समय सेंचुरी करके ही बाहर आऊँगा कि नहीं आऊँगा, ये सोचता है क्या? जी नहीं, मेरा मत है, अच्छा बैट्समैन उस बॉल पर ही ध्यान केन्द्रित करता है, जो बॉल उसके सामने आ रहा है। वो न अगले बॉल की सोचता है, न पूरे मैच की सोचता है, न पूरी सीरीज की सोचता है। आप भी अपना मन वर्तमान से लगा दीजिये। जीतना है तो उसकी एक ही जड़ी-बूटी है। वर्तमान में जियें, वर्तमान से जुड़ें, वर्तमान से जूझें। जीत आपके साथ साथ चलेगी।
मेरे युवा दोस्तो, क्या आप ये सोचते हैं कि परीक्षा आपकी क्षमता का प्रदर्शन करने के लिए होती हैं। अगर ये आपकी सोच है तो गलत है। आपको किसको अपनी क्षमता दिखानी है? ये प्रदर्शन किसके सामने करना है? अगर आप ये सोचें कि परीक्षा क्षमता प्रदर्शन के लिए नहीं, खुद की क्षमता पहचानने के लिए है। जिस पल आप अपने मन्त्र मानने लग जायेंगे आप पकड़ लेंगें न, आपके भीतर का विश्वास बढ़ता चला जाएगा और एक बार आपने खुद को जाना, अपनी ताकत को जाना तो आप हमेशा अपनी ताकत को ही खाद पानी डालते रहेंगे और वो ताकत एक नए सामर्थ्य में परिवर्तित हो जायेगी और इसलिए परीक्षा को आप दुनिया को दिखाने के लिए एक चुनौती के रूप में मत लीजिये, उसे एक अवसर के रूप में लीजिये। खुद को जानने का, खुद को पह्चानने का, खुद के साथ जीने का यह एक अवसर है। जी लीजिये न दोस्तो।
दोस्तो मैंने देखा है कि बहुत विद्यार्थी ऐसे होते हैं जो परीक्षाओं के दिनों में नर्वस हो जाते हैं। कुछ लोगों का तो कथन इस बात का होता है कि देखो मेरी आज एग्जाम थी और मामा ने मुझे विश नहीं किया. चाचा ने विश नहीं किया, बड़े भाई ने विश नहीं किया। और पता नहीं उसका घंटा दो घंटा परिवार में यही डिबेट होता है, देखो उसने विश किया, उसका फ़ोन आया क्या, उसने बताया क्या, उसने गुलदस्ता भेजा क्या? दोस्तो इससे परे हो जाइए, इन सारी चीजों में मत उलझिए। ये सारा परीक्षा के बाद सोचना किसने विश किये किसने नहीं किया। अपने आप पर विश्वास होगा न तो ये सारी चीजें आयेंगी ही नहीं। दोस्तों मैंने देखा है की ज्यादातर विद्यार्थी नर्वस हो जाते हैं। मैं मानता हूँ की नर्वस होना कुछ लोगों के स्वभाव में होता है। कुछ परिवार का वातावरण ही ऐसा है। नर्वस होने का मूल कारण होता है अपने आप पर भरोसा नहीं है। ये अपने आप पर भरोसा कब होगा, एक अगर विषय पर आपकी अच्छी पकड़ होगी, हर प्रकार से मेहनत की होगी, बार-बार रिवीजन किया होगा। आपको पूरा विश्वास है हाँ हाँ इस विषय में तो मेरी मास्टरी है और आपने भी देखा होगा, पांच और सात सब्जेक्ट्स में दो तीन तो एजेंडा तो ऐसे होंगे जिसमें आपको कभी चिंता नहीं रहती होगी। नर्वसनेस कभी एक आध दो में आती होगी। अगर विषय में आपकी मास्टरी है तो नर्वसनेस कभी नहीं आयेगी।
आपने साल भर जो मेहनत की है न, उन किताबों को वो रात-रात आपने पढाई की है आप विश्वाश कीजिये वो बेकार नहीं जायेगी। वो आपके दिल-दिमाग में कहीं न कहीं बैठी है, परीक्षा की टेबल पर पहुँचते ही वो आयेगी। आप अपने ज्ञान पर भरोसा करो, अपनी जानकारियों पर भरोसा करो, आप विश्वास रखो कि आपने जो मेहनत की है वो रंग लायेगी और दूसरी बात है आप अपनी क्षमताओं के बारे में बड़े कॉंफिडेंट होने चाहिये। आपको पूरी क्षमता होनी चाहिये कि वो पेपर कितना ही कठिन क्यों न हो मैं तो अच्छा कर लूँगा। आपको कॉन्फिडेंस होना चाहिये कि पेपर कितना ही लम्बा क्यों न होगा में तो सफल रहूँगा या रहूँगी। कॉन्फिडेंस रहना चाहिये कि में तीन घंटे का समय है तो तीन घंटे में, दो घंटे का समय है तो दो घंटे में, समय से पहले मैं अपना काम कर लूँगा और हमें तो याद है शायद आपको भी बताते होंगे हम तो छोटे थे तो हमारी टीचर बताते थे जो सरल क्वेश्चन है उसको सबसे पहले ले लीजिये, कठिन को आखिर में लीजिये। आपको भी किसी न किसी ने बताया होगा और मैं मानता हूँ इसको तो आप जरुर पालन करते होंगे।
दोस्तो माई गोव पर मुझे कई सुझाव, कई अनुभव आए हैं । वो सारे तो मैं शिक्षा विभाग को दे दूंगा, लेकिन कुछ बातों का मैं उल्लेख करना चाहता हूँ!
मुंबई महाराष्ट्र के अर्णव मोहता ने लिखा है कि कुछ लोग परीक्षा को जीवन मरण का इशू बना देते हैं अगर परीक्षा में फेल हो गए तो जैसे दुनिया डूब गयी हैं। तो वाराणसी से विनीता तिवारी जी, उन्होंने लिखा है कि जब परिणाम आते है और कुछ बच्चे आत्महत्या कर देते हैं, तो मुझे बहुत पीड़ा होती है, ये बातें तो सब दूर आपके कान में आती होंगी, लेकिन इसका एक अच्छा जवाब मुझे किसी और एक सज्जन ने लिखा है। तमिलनाडु से मिस्टर आर. कामत, उन्होंने बहुत अच्छे दो शब्द दिए है, उन्होंने कहा है कि स्टूडेंट्स worrier मत बनिए, warrior बनिए, चिंता में डूबने वाले नहीं, समरांगन में जूझने वाले होने चाहिए, मैं समझता हूँ कि सचमुच मैं हम चिंता में न डूबे, विजय का संकल्प ले करके आगे बढ़ना और ये बात सही है, जिंदगी बहुत लम्बी होती है, उतार चढाव आते रहते है, इससे कोई डूब नहीं जाता है, कभी कभी अनेच्छिक परिणाम भी आगे बढ़ने का संकेत भी देते हैं, नयी ताकत जगाने का अवसर भी देते है!
एक चीज़ मैंने देखी हैं कि कुछ विद्यार्थी परीक्षा खंड से बाहर निकलते ही हिसाब लगाना शुरू कर देते है कि पेपर कैसा गया, यार, दोस्त, माँ बाप जो भी मिलते है वो भी पूछते है भई आज का पेपर कैसा गया? मैं समझता हूँ कि आज का पेपर कैसा गया! बीत गयी सो बात गई, प्लीज उसे भूल जाइए, मैं उन माँ बाप को भी प्रार्थना करता हूँ प्लीज अपने बच्चे को पेपर कैसा गया ऐसा मत पूछिए, बाहर आते ही उसको कह दे वाह! तेरे चेहरे पर चमक दिख रही है, लगता है बहुत अच्छा पेपर गया? वाह शाबाश, चलो चलो कल के लिए तैयारी करते है! ये मूड बनाइये और दोस्तों मैं आपको भी कहता हूँ, मान लीजिये आपने हिसाब किताब लगाया, और फिर आपको लगा यार ये दो चीज़े तो मैंने गलत कर दी, छः मार्क कम आ जायेंगे, मुझे बताइए इसका विपरीत प्रभाव, आपके दूसरे दिन के पेपर पर पड़ेगा कि नहीं पड़ेगा? तो क्यों इसमें समय बर्बाद करते हो? क्यों दिमाग खपाते हो? सारी एग्जाम समाप्त होने के बाद, जो भी हिसाब लगाना है, लगा लीजिये! कितने मार्क्स आएंगे, कितने नहीं आएंगे, सब बाद में कीजिये, परीक्षा के समय, पेपर समाप्त होने के बाद, अगले दिन पर ही मन केन्द्रित कीजिए, उस बात को भूल जाइए, आप देखिये आपका बीस पच्चीस प्रतिशत बर्डन यूं ही कम हो जाएगा
मेरे मन मे कुछ और भी विचार आते चले जाते हैं खैर मै नहीं जानता कि अब तो परीक्षा का समय आ गया तो अभी वो काम आएगा। लेकिन मै शिक्षक मित्रों से कहना चाहता हूँ, स्कूल मित्रों से कहना चाहता हूँ कि क्या हम साल में दो बार हर टर्म में एक वीक का परीक्षा उत्सव नहीं मना सकते हैं, जिसमें परीक्षा पर व्यंग्य काव्यों का कवि सम्मलेन हो. कभी एसा नहीं हो सकता परीक्षा पर कार्टून स्पर्धा हो परीक्षा के ऊपर निबंध स्पर्धा हो परीक्षा पर वक्तोतव प्रतिस्पर्धा हो, परीक्षा के मनोवैज्ञानिक परिणामों पर कोई आकरके हमें लेक्चर दे, डिबेट हो, ये परीक्षा का हव्वा अपने आप ख़तम हो जाएगा। एक उत्सव का रूप बन जाएगा और फिर जब परीक्षा देने जाएगा विद्यार्थी तो उसको आखिरी मोमेंट से जैसे मुझे आज आपका समय लेना पड़ रहा है वो लेना नहीं पड़ता, वो अपने आप आ जाता और आप भी अपने आप में परीक्षा के विषय में बहुत ही और कभी कभी तो मुझे लगता है कि सिलेबस में ही परीक्षा विषय क्या होता हैं समझाने का क्लास होना चाहिये। क्योंकि ये तनावपूर्ण अवस्था ठीक नहीं है
दोस्तो मैं जो कह रहा हूँ, इससे भी ज्यादा आपको कईयों ने कहा होगा! माँ बाप ने बहुत सुनाया होगा, मास्टर जी ने सुनाया होगा, अगर टयूशन क्लासेज में जाते होंगे तो उन्होंने सुनाया होगा, मैं भी अपनी बाते ज्यादा कह करके आपको फिर इसमें उलझने के लिए मजबूर नहीं करना चाहता, मैं इतना विश्वास दिलाता हूँ, कि इस देश का हर बेटा, हर बेटी, जो परीक्षा के लिए जा रहे हैं, वे प्रसन्न रहे, आनंदमय रहे, हसंते खेलते परीक्षा के लिए जाए!
आपकी ख़ुशी के लिए मैंने आपसे बातें की हैं, आप अच्छा परिणाम लाने ही वाले है, आप सफल होने ही वाले है, परीक्षा को उत्सव बना दीजिए, ऐसा मौज मस्ती से परीक्षा दीजिए, और हर दिन अचीवमेंट का आनंद लीजिए, पूरा माहौल बदल दीजिये। माँ बाप, शिक्षक, स्कूल, क्लासरूम सब मिल करके करिए, देखिये, कसौटी को भी कसने का कैसा आनंद आता है, चुनौती को चुनौती देने का कैसा आनंद आता है, हर पल को अवसर में पलटने का क्या मजा होता है, और देखिये दुनिया में हर कोई हर किसी को खुश नहीं कर सकता है!
मुझे पहले कविताएं लिखने का शौक था, गुजराती में मैंने एक कविता लिखी थी, पूरी कविता तो याद नहीं, लेकिन मैंने उसमे लिखा था, सफल हुए तो ईर्ष्या पात्र, विफल हुए तो टिका पात्र, तो ये तो दुनिया का चक्र है, चलता रहता है, सफल हो, किसी को पराजित करने के लिए नहीं, सफल हो, अपने संकल्पों को पार करने के लिए, सफल हो अपने खुद के आनंद के लिए, सफल हो अपने लिए जो लोग जी रहे है, उनके जीवन में खुशियाँ भरने के लिए, ये ख़ुशी को ही केंद्र में रख करके आप आगे बढ़ेंगे, मुझे विश्वास है दोस्तो! बहुत अच्छी सफलता मिलेगी, और फिर कभी, होली का त्यौहार मनाया कि नहीं मनाया, मामा के घर शादी में जा पाया कि नहीं जा पाया, दोस्तों कि बर्थडे पार्टी में इस बार रह पाया कि नहीं रह पाया, क्रिकेट वर्ल्ड कप देख पाया कि नहीं देख पाया, सारी बाते बेकार हो जाएँगी , आप और एक नए आनंद को नयी खुशियों में जुड़ जायेंगे, मेरी आपको बहुत शुभकामना हैं, और आपका भविष्य जितना उज्जवल होगा, देश का भविष्य भी उतना ही उज्जवल होगा, भारत का भाग्य, भारत की युवा पीढ़ी बनाने वाली है, आप बनाने वाले हैं, बेटा हो या बेटी दोनों कंधे से कन्धा मिला करके आगे बढ़ने वाले हैं!
आइये, परीक्षा के उत्सव को आनंद उत्सव में परिवर्तित कीजिए, बहुत बहुत शुभकामनाएं!
(Hon’ble Shri Narendra Modi):
Today, Shri Barack Obama, President of the United States, joins us in a special programme of Mann Ki Baat. For the last few months, I have been sharing my "Mann Ki Baat" with you. But today, people from various parts of the country have asked questions.
But most of the questions are connected to politics, foreign policy, economic policy. However, some questions touch the heart. And I believe if we touch those questions today, we shall be able to reach out to the common man in different parts of the country. And therefore, the questions asked in press conferences, or discussed in meetings – instead of those – if we discuss what comes from the heart, and repeat it, hum it, we get a new energy. And therefore, in my opinion, those questions are more important. Some people wonder, what does "Barack" mean? I was searching for the meaning of Barack. In Swahili language, which is spoken in parts of Africa, Barack means, one who is blessed. I believe, along with a name, his family gave him a big gift.
African countries have lived by the ancient idea of ‘Ubuntu’, which alludes to the ‘oneness in humanity’. They say – “I am, because we are”. Despite the gap in centuries and borders, there is the same spirit of Vasudhaiva Kutumbakam, which speak of in India. This is the great shared heritage of humanity. This unites us. When we discuss Mahatma Gandhi, we remember Henry Thoreau, from whom Mahatma Gandhi learnt disobedience. When we talk about Martin Luther King or Obama, we hear from their lips, respect for Mahatma Gandhi. These are the things that unite the world.
Today, Barack Obama is with us. I will first request him to share his thoughts. Then, I and Barack will both answer the questions that have been addressed to us.
I request President Barack Obama to say a few words.
(Hon’ble Shri Barack Obama):
Namaste! Thank you Prime Minister Modi for your kind words and for the incredible hospitality you have shown me and my wife Michelle on this visit and let me say to the people of India how honoured I am to be the first American President to join you for Republic Day; and I’m told that this is also the first ever Radio address by an Indian Prime Minister and an American President together, so we’re making a lot of history in a short time. Now to the people of India listening all across this great nation. It’s wonderful to be able to speak you directly. We just come from discussions in which we affirmed that India and the United States are natural partners, because we have so much in common. We are two great democracies, two innovative economies, two diverse societies dedicated to empowering individuals. We are linked together by millions of proud Indian Americans who still have family and carry on traditions from India. And I want to say to the Prime Minister how much I appreciate your strong personal commitment to strengthening the relationship between these two countries.
People are very excited in the United States about the energy that Prime Minister Modi is bringing to efforts in this country to reduce extreme poverty and lift people up, to empower women, to provide access to electricity, and clean energy and invest in infrastructure, and the education system. And on all these issues, we want to be partners. Because many of the efforts that I am promoting inside the United States to make sure that the young people get the best education possible, to make sure that the ordinary people are properly compensated for their labour, and paid fair wages, and have job security and health care. These are the same kinds of issues that Prime Minister Modi, I know cares so deeply about here. And I think there’s a common theme in these issues. It gives us a chance to reaffirm what Gandhi ji reminded us, should be a central aim of our lives. And that is, we should endeavour to seek God through service of humanity because God is in everyone. So these shared values, these convictions, are a large part of why I am so committed to this relationship. I believe that if the United States and India join together on the world stage around these values, then not only will our peoples be better off, but I think the world will be more prosperous and more peaceful and more secure for the future. So thank you so much Mr. Prime Minister, for giving me this opportunity to be with you here today.
(Hon’ble Shri Narendra Modi):
Barack the first question comes from Raj from Mumbai
His question is, the whole world knows about your love for your daughters. How will you tell your daughters about youre experience of India? Do you plan to do some shopping for them?
(Hon’ble Shri Barack Obama):
Well first of all they very much wanted to come. They are fascinated by India, Unfortunately each time that I have taken a trip here, they had school and they couldn’t leave school. And in fact, Malia, my older daughter, had exams just recently. They are fascinated by the culture, and the history of India, in part because of my influence I think, they are deeply moved by India’s movement to Independence, and the role that Gandhi played, in not only the non-violent strategies here in India, but how those ended up influencing the non-violent Civil Rights Movement in the United States. So when I go back I am going to tell them that India is as magnificent as they imagined. And I am quite sure that they are going to insist that I bring them back the next time I visit. It may not be during my Presidency, but afterwards they will definitely want to come and visit.
And I will definitely do some shopping for them. Although I can’t go to the stores myself, so I have to have my team do the shopping for me. And I’ll get some advice from Michelle, because she probably has a better sense of what they would like.
(Hon’ble Shri Narendra Modi):
Barack said he will come with his daughters. I extend an invitation to you. Whether you come as President, or thereafter, India looks forward to welcoming you and your daughters.
Sanika Diwan from Pune, Maharashtra has asked me a question. She asks me, whether I have sought assistance from President Obama for the Beti Bachao, Beti Padhao Mission
Sanika you have asked a good question. There is a lot of worry because of the sex ratio in India. For every 1000 boys, the number of girls is less. And the main reason for this is that, there is a defect in our attitudes towards boys and girls.
Whether or not I seek help from President Obama, his life is in itself an inspiration. The way he has brought up his two daughters, the way he is proud of his two daughters.
In our country too, I meet many families who have only daughters. And they bring up their daughters with such pride, give them such respect, that is the biggest inspiration. I believe that inspiration is our strength. And in response to your question, I would like to say, to save the girl child, to educate the girl child, this is our social duty, cultural duty, and humanitarian responsibility. We should honour it.
Barack, there is a question for you. The second question for President Obama comes through e-mail: Dr. Kamlesh Upadhyay, a Doctor based in Ahmedabad, Gujarat - Your wife is doing extensive work on tackling modern health challenges like obesity and diabetes. These are increasingly being faced in India as well. Would you and the First Lady like to return to India to work on these issues after your Presidency, just like Bill and Melinda Gates?
(Hon’ble Barack Obama):
Well, we very much look forward to partnering with organizations, and the government and non-governmental organizations here in India, around broader Public Health issues including the issue of obesity. I am very proud of the work that Michelle has done on this issue. We’re seeing a world-wide epidemic of obesity, in many cases starting at a very young age. And a part of it has to do with increase in processed foods, not naturally prepared. Part of it is a lack of activity for too many children. And once they are on this path, it can lead to a life time of health challenges. This is an issue that we would like to work on internationally, including here in India. And it is a part of a broader set of issues around global health that we need to address. The Prime Minister and I have discussed, for example, how we can do a better job in dealing with issues like pandemic. And making sure that we have good alert systems so that if a disease like Ebola, or a deadly flu virus, or Polio appears, it is detected quickly and then treated quickly so that it doesn’t spread. The public health infrastructure around the world needs to be improved. I think the Prime Minister is doing a great job in focusing on these issues here in India. And India has a lot to teach many other countries who may not be advancing as rapidly in improving this public health sector. But it has an impact on everything, because if children are sick they can’t concentrate in school and they fall behind. It has a huge economic impact on the countries involved and so we think that there is a lot of progress to be made here and I am very excited about the possibilities of considering this work even after I leave office.
(Hon’ble Shri Narendra Modi):
Mr. Arjun asks me a question. An interesting question. He says he has seen an old photo of me as a tourist outside the White House. He asks me what touched me when I went there last September.
It is true that when I first went to America, I was not lucky enough to visit the White House. There is an iron fence far from the White House. We stood outside the fence and took a photograph. White House is visible in the background. Now that I have become Prime Minister, that photo too has become popular. But at that time, I had never thought that sometime in my life, I would get a chance to visit the White House. But when I visited the White House, one thing touched my heart. I can never forget that. Barack gave me a book, a book that he had located after considerable effort. That book had become famous in 1894. Swami Vivekananda, the inspiration of my life, had gone to Chicago to participate in the World Religions Conference. And this book was a compilation of the speeches delivered at the World Religions Conference. That touched my heart. And not just this. He turned the pages of the book, and showed me what was written there. He had gone through the entire book! And he told me with pride, I come from the Chicago where Swami Vivekananda had come. These words touched my heart a lot. And I will treasure this throughout my life. So once, standing far from the White House and taking a photo, and then, to visit the White House, and to receive a book on someone whom I respect. You can imagine, how it would have touched my heart.
Barack there is a question for you. Himani from Ludhiana, Punjab. Question is for you ……:
(Hon’ble Shri Barack Obama):
Well the question is “Did you both imagine you would reach the positions that you’ve reached today?”
And it is interesting, Mr. Prime Minister, your talking about the first time you visited White House and being outside that iron fence. The same is true for me. When I first went to the White House, I stood outside that same fence, and looked in, and I certainly did not imagine that I would ever be visiting there, much less living there. You know, I think both of us have been blessed with an extraordinary opportunity, coming from relatively humble beginnings. And when I think about what’s best in America and what’s best in India, the notion that a tea seller or somebody who’s born to a single mother like me, could end up leading our countries, is an extraordinary example of the opportunities that exist within our countries. Now I think, a part of what motivates both you and I, is the belief that there are millions of children out there who have the same potential but may not have the same education, may not be getting exposed to opportunities in the same way, and so a part of our job, a part of government’s job is that young people who have talent, and who have drive and are willing to work for, are able to succeed. And that’s why we are emphasizing school, higher education. Making sure that children are healthy and making sure those opportunities are available to children of all backgrounds, girls and boys, people of all religious faiths and of all races in the United States is so important. Because you never know who might be the next Prime Minister of India, or who might be the next President of United States. They might not always look the part right off the bat. And they might just surprise you if you give them the chance.
(Hon’ble Shri Narendra Modi):
Thank you Barack.
Himani from Ludhiana has also asked me this question – did I ever imagine I would reach this high office?
No. I never imagined it. Because, as Barack said, I come from a very ordinary family. But for a long time, I have been telling everyone, never dream of becoming something. If you wish to dream, dream of doing something. When we do something, we get satisfaction, and also get inspiration to do something new. If we only dream of becoming something, and cannot fulfil the dream, then we only get disappointed. And therefore, I never dreamt of becoming something. Even today, I have no dream of becoming something. But I do dream of doing something. Serving Mother India, serving 125 crore Indians, there can be no greater dream than this. That is what I have to do. I am thankful to Himani.
There is a question for Barack from Omprakash. Omprakash is studying Sanskrit at JNU. He belongs to Jhunjunu, Rajasthan. Om Prakash is convener of special centre for Sanskrit Studies in JNU.
(Hon’ble Shri Barack Obama):
Well this is a very interesting question. His question is, the youth of the new generation is a global citizen. He is not limited by time or boundaries. In such a situation what should be the approach by our leadership, governments as well as societies at large.
I think this is a very important question. When I look at this generation that is coming up, they are exposed to the world in ways that you and I could hardly imagine. They have the world at their fingertips, literally. They can, using their mobile phone, get information and images from all around the world and that’s extraordinarily powerful. And what that means, I think is that, governments and leaders cannot simply try to govern, or rule, by a top-down strategy. But rather have to reach out to people in an inclusive way, and an open way, and a transparent way. And engage in a dialogue with citizens, about the direction of their country. And one of the great things about India and the United States is that we are both open societies. And we have confidence and faith that when citizens have information, and there is a vigorous debate, that over time even though sometimes democracy is frustrating, the best decisions and the most stable societies emerge and the most prosperous societies emerge. And new ideas are constantly being exchanged. And technology today I think facilitates that, not just within countries, but across countries. And so, I have much greater faith in India and the United States, countries that are open information societies, in being able to succeed and thrive in this New Information Age; than closed societies that try to control the information that citizens receive. Because ultimately that’s no longer possible. Information will flow inevitably, one way or the other, and we want to make sure we are fostering a healthy debate and a good conversation between all peoples.
(Hon’ble Shri Narendra Modi):
Omprakash wants me too, to answer the question that has been asked to Barack.
Barack has given a very good answer. It is inspiring. I will only say, that once upon a time, there were people inspired primarily by the Communist ideology. They gave a call: Workers of the world, Unite. This slogan lasted for several decades. I believe, looking at the strength and reach of today's youth, I would say, Youth, Unite the world. I believe they have the strength and they can do it.
The next question is from CA Pikashoo Mutha from Mumbai, and he asks me, which American leader has inspired you
When I was young, I used to see Kennedy's pictures in Indian newspapers. His personality was very impressive. But your question is, who has inspired me. I liked reading as a child. And I got an opportunity to read the biography of Benjamin Franklin. He lived in the eighteenth century. And he was not an American President. But his biography is so inspiring – how a person can intelligently try to change his life.
If we feel excessively sleepy, how can we reduce that?
If we feel like eating too much, how can we work towards eating less?
If people get upset with you that cannot meet them, because of the pressure of work, then how to solve this problem?
He has addressed such issues in his biography. And I tell everyone, we should read Benjamin Franklin's biography. Even today, it inspires me. And Benjamin Franklin had a multi-dimensional personality. He was a politician, he was a political scientist, he was a social worker, he was a diplomat. And he came from an ordinary family. He could not even complete his education. But till today, his thoughts have an impact on American life. I find his life truly inspiring. And I tell you too, if you read his biography, you will find ways to transform your life too. And he has talked about simple things. So I feel you will be inspired as much as I have been.
There is a question for Barack, from Monika Bhatia.
(Hon’ble Shri Barack Obama):
Well the question is “As leaders of two major economies, what inspires you and makes you smile at the end of a bad day at work?”
And that is a very good question. I say sometimes, that the only problems that come to my desk are the ones that nobody else solves. If they were easy questions, then somebody else would have solved them before they reached me. So there are days when it’s tough and frustrating. And that’s true in Foreign Affairs. That is true in Domestic Affairs. But I tell you what inspires me, and I don’t know Mr. Prime Minister if you share this view - almost every day I meet somebody who tells me, “You made a difference in my life.”
So they’ll say, “The Health-Care law that you passed, saved my child who didn’t have health insurance.” And they were able to get an examination from a Physician, and they caught an early tumour, and now he is doing fine.
Or they will say “You helped me save my home during the economic crisis.”
Or they’ll say, “I couldn’t afford college, and the program you set up has allowed me to go to the university.”
And sometimes they are thanking you for things that you did four or five years ago. Sometimes they are thanking you for things you don’t even remember, or you’re not thinking about that day. But it is a reminder of what you said earlier, which is, if you focus on getting things done as opposed to just occupying an office or maintaining power, then the satisfaction that you get is unmatched. And the good thing about service is that anybody can do it. If you are helping somebody else, the satisfaction that you can get from that, I think, exceeds anything else that you can do. And that’s usually what makes me inspired to do more, and helps get through the challenges and difficulties that we all have. Because obviously we are not the only people with bad days at work. I think everybody knows what it is like to have a bad day at work. You just have to keep on working through it. Eventually you make a difference.
(Hon’ble Shri Narendra Modi):
Indeed Barack has spoken words from the heart (Mann Ki Baat). Whatever position we may hold, we are human too. Simple things can inspire us. I also wish to narrate an experience. For many years, I was like an ascetic. I got food at other people's homes. Whoever invited me, used to feed me as well. Once a family invited me over for a meal, repeatedly. I would not go, because I felt they are too poor, and if I go to eat at their place, I will become a burden on them. But eventually, I had to bow to their request and love. And I went to eat a meal at their home. It was a small hut, where we sat down to eat. They offered me roti made of bajra (millet), and mik. Their young child was looking at the milk. I felt, the child has never even seen milk. So I gave that small bowl of milk to the child. And he drank it within seconds. His family members were angry with him. And I felt that perhaps that child has never had any milk, apart from his mother's milk. And maybe, they had bought milk so that I could have a good meal. This incident inspired me a lot. A poor person living in a hut could think so much about my well-being. So I should devote my life to their service. So these are the things that serve as inspiration. And Barack has also spoken about what can touch the heart.
I am thankful to Barack, he has given so much time. And I am thankful to my countrymen for listening to Mann Ki Baat. I know radio reaches every home and every lane of India. And this Mann Ki Baat, this special Mann Ki Baat will echo forever.
I have an idea. I share it with you. There should be an e-book made of the talk between Barack and me today. I hope the organizers of Mann Ki Baat will release this e-book. And to you all, who have listened to Mann Ki Baat, I also say, do participate in this. And the best hundred thoughts that emerge out of this, will also be added to this e-book. And I want you to write to us on Twitter, on Facebook, or online, using the hashtag #YesWeCan.
• Eliminate Poverty - #YesWeCan • Quality Healthcare to All - #YesWeCan • Youth empowered with Education - #YesWeCan • Jobs for All - #YesWeCan • End to Terrorism - #YesWeCan • Global Peace and Progress - #YesWeCan
I want you to send your thoughts, experiences and feelings after listening to Mann Ki Baat. From them, we will select the best hundred, and we will add them to the book containing the talk that Barack and I have had. And I believe, this will truly become, the Mann Ki Baat of us all.
Once again, a big thank you to Barack. And to all of you. Barack's visit to India on this pious occasion of 26th January, is a matter of pride for me and for the country.
Thank you very much.
My Dear Fellow Countrymen,
Today I have this great opportunity of interacting with you again. You must be wondering why a Prime Minister should be interacting the way I am doing it. Well, first and foremost, I am a less of your Prime Minister and more of a Pradhan Sewak (serving the people). Since childhood I have been hearing that by sharing, our intensity of pain become less while the intensity of our joys grow manifold. Well I think, this is the guiding thought behind Mann ki Baat. It is an opportunity for me to sometimes share my concern and sometimes my joy. Sharing my deepest concerns with you makes me feel light hearted and sharing my joy just doubles my happiness.
Last time, I mentioned my concern about the youth of the country. It is not because you chose me as the Prime Minister but because I feel concerned as an individual. Sons and daughters of many families are caught in the trap of drugs. It just does not destroy the person involved, but his entire family, the society and the Nation at large. Drug is such a grave menace which destroys the most powerful individuals.
While serving as the Chief Minister of Gujarat, my officers with good records would often come to ask for leave. Initially they would hesitate to spell out the reasons, however on insisting they revealed that their child had fallen into the drug trap and they now need to spend time with their kids and rehabilitate them. I could see the bravest of my officers struggling to control their tears. I met suffering mothers too. In Punjab I had the chance to meet some mothers who were very angry and yet concerned about their children who had fallen into the trap of drugs.
We have to work together as a society to tackle this menace. I understand that the youth who fall into this drug trap are often blamed. We blame these youth as being careless and irresponsible. We perceive that the victims are bad but the fact is that the drugs are bad. The youth are not wrong; it is this addiction which is wrong. Let us not blame and wrong our kids. Let us get rid of this habit of addiction and not victimize our kids. Blaming the kids would push them further into addiction. This is in fact a psycho-socio-medical issue and let us treat it as such a problem. This menace needs to be handled carefully as its solution is not limited to medical intervention only. The individual concerned, his family, friends, the society, the government and the legal system all have to work in tandem to tackle this menace. Each one of us have to contribute to get rid of this menace.
A few days ago, I had organized a DGP level conference in Assam. I expressed my concern over this issue and my displeasure at the non-serious attitude of the people concerned. I have asked the police department to seriously discuss this issue and come out with relevant solutions. I have suggested the department to launch a toll free helpline. The families often feel ashamed to come out in open about the addiction problem of their children. They have no one to confide in. Parents from any part, any corner of the country can freely approach the police if their children have fallen a victim to addiction. The department has taken this suggestion seriously and working towards its fulfillment.
The drug menace brings about the Three D’s. These Three D’s are not the ones related to entertainment but I am talking about the Three D’s related to the three vices.
First D is Darkness, the second D is Destruction and the third D is Devastation.
Drugs lead a person to a blind path of destruction. There is nothing left in its trail but devastation. This is a topic of great concern and demands total attention.
I had mentioned this topic in my last address in Mann ki Baat. We received more than 7000 letters on our Akashvani address. Some letters were received in the government offices. We received responses on government portal, Mygov.in, online and through e-mails. Lakhs of comments were received on twitter and facebook. Hence, a deep rooted concern in the society’s psyche has found a voice.
I am especially thankful to the media of our country for carrying this concern forward. Many channels conducted hour long programs. These programs were not just meant to criticize the government. They were forums for open discussion, a concern and an effort to come out with workable solutions. These initiatives created background for healthy discussions. The government was also sensitized to its responsibilities in this direction. The government can no longer remain neutral to these concerns.
There is a question I want to ask these youth caught in the drug trap. I want to ask these youth that when for three or four hours they are in a state of intoxication, they might be feeling free of all concerns, free of all tensions and in a different world altogether. But have you ever lent a thought to the fact that when you buy drugs where does this money go to? Have you ever thought about it? Just make a guess. What if this drug money goes to the terrorists? What if this money is spent by the terrorists to procure weapons? And with this weapon the very same terrorist might be pumping bullets in the heart of my soldiers. The soldier of my country gets martyred. Have you ever thought about our soldiers- a soldier who is so dear to his mother, the treasured son of Mother India, the brave son of the soil is hit by a bullet probably funded by the money spent on purchasing drugs. I know and firmly believe that you too love your motherland and have tremendous respect for our soldiers. Then how can you support a habit which funds drug mafia and the terrorists.
Some people feel that when a person is in despair, faces failures and when he is directionless, he is an easy prey to drugs. But I feel that people who lack ambition, do not have any set goals and targets, who have a deep vacuum in their lives, are the ones where drugs will have an easy access. If you want to avoid drugs and save your children from this menace then foster ambition in them, give them dreams to pursue and make them individuals with a desire to achieve something in life. Then you will see that they will not be easily distracted. Their aim then will be to achieve something in life.
Have you ever followed a sportsman’s life? A sportsman is motivated forever. In the bleak winters everyone feels like sleeping in the warmth of a quilt but a sportsman will still rise at 4 or 5 and go for his workouts. Why? because the goal is set. Similarly, if your child would be aimless, there are chances of him/her to fall prey to menace like drugs.
I remember the words of Vivekananda. These words are very apt for all the young people. Just keep repeating this thought over and over again. “Take a thought, make it your life. Ponder on it and dream about it. Make it an integral part of your dreams. Make it a part of your mind, brain, veins and each and every part of your body and forget everything else”.
This thought of Vivekananda is apt for every young person and that is why I say that each person should have an ambition in life. Having an ambition does not allow your focus on unnecessary things.
Some take it under peer pressure because it looks “cool”, some consider it as a style statement. So sometimes the youth inadvertently fall into this serious trap, due to the wrong mental perception. Addiction is neither cool nor a style statement. In reality, it is a precursor to destruction. So whenever your friends boast about their drug habits, do not applaud and enjoy such conversation. Do not be a mute spectator to such absurdities. Have the courage to stand against such conversations and say NO. Have the guts to despise such a conversation, reject such a conversation and have the guts to tell the person that he is wrong.
I would like to share some views with the parents too. These days none of us have time. All of us are running against time to earn our livelihood. We are racing against time to improve the quality of our lives. But in this blind race, do we have the time to spare for our kids. Do we ever work for our kid’s spiritual progress and discuss it with them, rather we discuss only material progress. How are they doing in their studies, what has been their progress in exam, what to eat and what not to eat, where to go and where not to go – majorly these topics form the core of the entire interactions. Do we share such a relationship that our children can bare their hearts to us? I request all of you to do this. If your children share a frank relationship then you can very well know what is going on in their life. Children do not take to bad habits suddenly. It happens gradually and it also impacts the home. Observe the changes that are happening in your home. If you observe closely then I believe that you may be successful in detecting the problem at the very beginning. Be aware of your child’s friend circle and don’t keep your conversations focused just about progress. Your concern should extend to their inner depths, their thoughts, their logic, their books, their friends and their mobiles - how and where are they spending their time. These need to be taken care of. I believe that no one else can do what a parent can for their kids. Our ancestors have left us certain pearls of wisdom and that is why they are known as statesmen. A saying goes like this:
Paanch Varsh Laaw Lijiye
Dass Laaw Tadan dei
Paanch Varsh Laaw Lijiye
Dass Laaw Tadan dei
Sut Hi Solah Varsh Mein
Mitra Sarij Gani Dei
This means that till 5 years of age a child should grow in the loving and tender care of his parents, by the time he is 10 the values of discipline should be inculcated in him. Sometimes we see that an intelligent mother gets angry and does not speak with her child throughout the day. This is a big punishment for the child. The mother punishes herself but the child too gets punished in turn. The mother just has to say that I will not talk and the 10 year old will remain worried the whole day long. He changes his habit and by the time he is of 16 years then the relationship should turn like a friend towards him. There should be an open conversation with him. This is a brilliant advice which has been passed on by our ancestors. I would like to see this inculcated in our family life.
Another thing brought to our notice is the role of the pharmacists. Some of the medicines lead to addiction. So such medicines should not be distributed without a doctor’s prescription. Sometimes a simple thing like a cough syrup can trigger addiction. It becomes the starting point for addiction. There are quite a few things that I would not like to raise from this platform. But we will have to follow and accept this discipline.
These days many children from villages go to city for higher education and start living in a hostel or a boarding school. I have heard that sometimes these avenues become the entry point of such addiction. For this the education system, the society and the security force will have to act as a vigilante. Each one will have to fulfill their roles and responsibilities. The government will fulfill the responsibilities on its end. We should constantly strive to fulfill our obligations.
I would also like to mention about the letters we have received. Some of them are interesting, some are filled with grief and some are inspiring. I cannot mention all, but I would like to mention one. There was a certain Mr. Dutt. He was deep into addiction .He was also jailed where he had several restrictions. Then later his life changed. He studied in jail and then his life was transformed. His story is very famous. He was in Yerawada Jail. There might be many such inspiring stories. Many people have been victorious in their fight against addiction. We too can come out of such habits and so we should definitely try. We should make efforts for de-addiction and rehabilitation. I would ask celebrities to be a part of this initiative - be it from the field of cinema, sports or someone concerned with public life. Be it the cultural or spiritual world, we should use every possible platform to create awareness. There should be constant messages in public interest. They will certainly have an effect. Those active on the social media, I would request them to create a continuous online movement by joining #DrugsFreeIndia hash-tag. This is more relevant because most of the addicted youth are a part of the social media. If we take this #DrugsFreeIndia hash-tag movement forward then we will do a great service for public awareness and education.
I want to take this concern forward. I would request all those who have successfully come out of this addiction to share their stories. I touched this topic because like I said in the beginning grief becomes less on sharing. This is a topic of national concern and I am not here to sermonize. And neither am I entitled to preach. I am just sharing my grief with you. Those families who are suffering from this menace, I want to share their pain as well. I want to create a responsible environment. There can be difference of opinions but let us make a beginning somewhere.
Like I mentioned before, I want to share happiness. Last week I had the opportunity to meet the Blind Cricket Team. They had won the world cup. What joy and excitement, they were exuding great self confidence. God has given us everything, eyes, hands, legs i.e. we are totally capable yet we lack this kind of determination and passion which I could see in the blind cricketers. What zeal and enthusiasm, really it was contagious. I felt super charged after meeting them. Such incidents bring great pleasure in life.
In the past few days there was yet another important news. The cricket team from Kashmir defeated Mumbai on their home ground. I do not view it as a matter of someone’s victory and other’s loss. I view it differently. All the stadiums in Kashmir have been inundated after the floods. Kashmir is passing through a tough phase. The circumstances have been extremely grim with these boys not standing any chance to practice. But the Team Spirit shown by these boys, their conviction and determination is awe inspiring. These boys have shown us that one can overcome the most trying and testing circumstances if one remains focused on our goals. This news gave me immense pleasure and I take this opportunity to congratulate all these players on their victory.
Two days back, the United Nations has decided to celebrate June 21st as International Yoga Day. It is a matter of great pride and honour for India. Our ancestors developed a beautiful tradition and today the entire world is associated with it. It does not merely benefit one personally but it has the potential to bring all the people together globally. The entire world came together on the issue of Yoga in the UN and a unanimous resolution was passed just two days back. 177 countries became the co-sponsors. In the past when it was decided to celebrate the birthday Mr. Nelson Mandela, 165 countries became co-sponsors. Before that efforts were on for International Toilet Day and 122 nations became co-sponsors to that initiative too. For celebrating Oct 2nd as Non Violence Day 140 Countries became co-sponsors, before that. But 177 countries co- sponsoring Yoga is a world record of sorts. I am thankful to all the countries that have come out in support and have honored the sentiments of the Indians and decided to observe World Yoga Day. It is now our duty that Yoga reaches out to the masses in its true essence.
Last week I had the chance to have a meeting with the Chief Ministers of all the states. This tradition has been going on for the past 50-60 years. This time it was organized at the Prime Minister’s residence. We started it as a retreat program with no papers, no files and no officers. It was a simple interaction where the Prime Minister and Chief Minister were all the same, seated together like friends. For an hour or two, matters of national concern were seriously discussed in a friendly atmosphere. Everyone just poured their hearts out. There was no political agenda involved. This too was a memorable experience that I wanted to share with you.
Last week I had the chance to travel to the North East. I had been there for three days. Many a times youth express their desire to see the Taj, Singapore or Dubai. But I would urge all the nature lovers, all who want to experience the divinity in nature, to take a tour of the North East. I had gone earlier too. This time when I went as the Prime Minister, I tried to explore its potential. Our North east has tremendous potential and possibilities. It’s a land of beautiful people and beautiful surroundings. I was filled with immense joy visiting that place. Sometimes people ask Modi ji don’t you get tired? I want to say that whatever little fatigue I had, well the North East took it away completely, I am thoroughly rejuvenated. Such is the pleasure that I derived from that visit. The love and respect accorded by the people there is something that will stay with me forever. The kinship and affinity showed by the people of the North East touched me deeply. I will also tell you, it is not a joy for only Modi to enjoy, it is there for you to enjoy too. So do travel to the North East and enjoy.
The next edition of Mann Ki Baat will happen in 2015. This is probably my last program in 2014. I wish you all a Merry Christmas. I would like to wish all the very best of New Year hes in advance. It gives me immense pleasure to know that this program Mann Ki Baat is broadcast in regional languages by the Local Radio stations that same night at 8 pm. And it is surprising to know some of the regional voice-over artists also speak in the voice very similar to me. I am surprised at the brilliant work being done by the artists associated at Akashvani and I would like to congratulate them. I consider this as an effective medium to connect to the masses. We have had tremendous response. Seeing the response Akashvani has devised a new method. They have taken a new Post Box number. So now if you wish to write into me you can write on this Post Box number.
Mann Ki Baat
Post Box no 111, Akashvani
New Delhi.
I will be awaiting your letters. You do not realize that your letters become my inspiration. Some suggestions penned down can do good to the entire nation. I am thankful to you all. We will meet next in 2015 and on some Sunday morning we will again have our own Mann Ki Baat.
Thank you very much.
My dear fellow countrymen,
I am with you again almost after a month. A month is quite a long time. Lots of things keep happening in the world. You all have recently celebrated the festival of Diwali with great fervour and joy. It is these festivals which bring happiness in our daily lives from time to time. Be it poor or rich, people from village or from urban areas, festivals hold a different significance in everyone’s lives. This is my first meeting after Diwali, so I convey my very warm wishes to you all.
Last time we had some general conversation. But then I came to some new realizations after that conversation. Sometimes we think leave it… nothing is going to change, people are indifferent, they will not do anything, our country is like this. From my last conversation in Mann Ki Baat to this one, I would urge you all to change this mindset. Neither is our country is like this nor our people indifferent. Sometimes I feel the Nation is way ahead and the government is lacking behind. And from my personal experience I will say that the governments too needs to change their mindsets. And I say that because I can see tremendous sense of commitment in the Indian youth. They are very eager to do their bit and are just seeking an opportunity where they can do their bit. And they are making efforts at their own end. Last time I had asked them to buy at least one khadi outfit. I had not asked anyone to be Khadidhari, But the feedback I got from Khadi stores was that in a week’s time the sales had jumped up by 125%. In this way, as compared to last year the sales this year is more than double in the week following 2nd Oct. This means, the people of our country is many times more than we think of. I salute all my fellow Indians.
Cleanliness……….. Can anyone imagine that cleanliness will become a such a huge public movement. The expectations are high and they should be so. I can see some good results, cleanliness can now be witnessed in two parts. One is those huge garbage piles which keep lying in the city; well the people in the government will work to remove those. It is a big challenge but you cannot run away from your responsibilities. All state governments and all municipalities will now have to take concrete actions due to the rising public pressure. Media is playing a very positive role in this. But there is the second aspect which gives me immense pleasure, happiness and a sense of satisfaction that the general public has started feeling that leave what happened in the past, now they will not dirty their surroundings. We will not add to the existing dirt. A gentleman Mr Bharat Gupta has sent me a mail on mygov.in from Satna, Madhya Pradesh. He has related his personal experience during his tour of the railways. He said that people eat on trains and usually litter around. He continues to say that he has been touring from the past many years but it is this time around no one was littering, rather they were looking for dustbins to throw their trash. When they could not see any arrangements they collected all their litter in a corner. He says that it was a very gratifying experience for me. I thank Bharat ji for sharing this experience with me.
What I am seeing is that this campaign has had a great influence on kids. Many families mention that now whenever kids eat a chocolate they themselves pick the wrapper and disposes it. I was seeing a message on the social media. Someone had posted a picture with the Title “My hero of the Day”. This picture was that of a little kid who, picks up trash, wherever he goes, even when going to school. He is himself motivated to do this. Just see…people now feel it is their country and they will not make it dirty. We will not add to the existing dirt pile. And those do litter feel ashamed for someone is around to point it out to them. I consider all these to be good omens.
Another thing is that many people come to meet me who are from all the sections of the society. They can be government officers, from film world, sports world, industrialists, scientists ……. All of them, whenever they interact with me, in ten minutes discussion, about four to five minutes the discussion is on social issues. Someone talks about cleanliness, while some others talk about education, while someone talks about social reforms. Some people discuss the ruining of family life. I initially thought if a businessman comes, he will definitely talk of things of his personal interest. But I am seeing a major change.
They talk less about their interest and more about taking on some or the other social responsibility. When I add up all these small incidents I see a larger picture and I realize that we are moving in the right direction. It is true that unhealthy environment leads to diseases and sickness, but where does sickness strike first. It first strikes the poor household. When we work towards cleanliness, we make a major effort in the direction of helping the poor. If the poor families are saved from diseases, then they will be saved from a lot of financial problems. If a person is healthy, then he will work hard, earn for the family and help in running the family smoothly. And so this cleanliness drive is directly related to the health and welfare of my poor brethren. We may not be able to do something to help the poor, but even keeping the environs clean helps the poor in a big way. Let us view it from this perspective; it will be very beneficial.
I receive different kinds of letters. Last time I had mentioned about our specially abled children. Whom God has given some kind of deficiencies; I had expressed my feelings regarding those people. I see that people who work in this field are sending me their success stories. But I came to know about two things from my people in the government. The people from the HRD ministry after hearing my talk, felt the need to do something. And the officers came together to work out an action plan. This is an example of how changes are coming about in governance. One they have decided that those specially abled who want to pursue technical education, a thousand of them who are good will be selected for Special Scholarships, and a plan has been made. I congratulate the officials who could think in those lines. Another important decision is that all the Kendriya Vidyalaya’s and all Central Universities will have a special infrastructure for the specially abled, for example if they can’t climb stairs then there will be provision for ramps to facilitate movement by wheel chair. They need different kinds of toilets. The HRD ministry has decided to allocate an additional Lakh rupees to the Kendriya Vidyalays and Central universities. This fund will be used by these institutions to create infrastructure for the specially abled. This is an auspicious beginning……………these things will lead us to change.
I had the chance to visit Siachin a few days back. I spent Diwali with the Jawans who are ready to lay down their lives for the nation. When the nation was celebrating Diwali I was at Siachin. It is because of them that we were able to celebrate Diwali, so I wanted to be with them. I experienced the difficulties in which they spent their time there. I salute all my Jawans. But I want to share another matter of great pride with you. Our Jawans work in the field of security. In calamities, they risk their lives to save our life. They also fetch medals for us in sporting events. You will be glad to know that these Jawans have won a gold medal in a very prestigious event in Britain called Cambrian Patrol, defeating contestants from 140 nations. I offer these Jawans my heartiest congratulations.
I also got an opportunity to meet, the young and dynamic students, boys and girls over tea who had won medals in Sports. They give me renewed energy. I was seeing their zeal and enthusiasm. The facilities in our country are quite less as compared to other nations, but instead of complaining they were just sharing their joy and excitement. For me, this tea programme for these players was very inspiring, and I felt really good.
I would like to tell you something more and that too from my heart. I truly believe that people of my country trust my words and my intentions. But, today one more time, I want to reiterate my commitment. As far as black money is concerned, my people, please trust your Prime Servant, for me this is the Article of Faith. This is my commitment that the hard-earned money of the poor people stashed abroad, every penny of that should be brought back. The ways and means to be followed can be different. And this is very obvious in a democratic country, but on the basis of as much I understand and as much I know, I assure you that we are on the right track. Today, nobody, neither me, nor the government, nor you, nor even the previous government knew how much money is stashed abroad. Everyone gives estimate calculated in his/her own way. I don’t want to get lost in some such figures and estimates, Its my commitment that, be it 2 rupees, or 5 rupees, or millions or even billions, this is the hard-earned money of the poor people of my country and it has to come back. And I assure you that I will keep trying till the end. No efforts will be spared. I want your blessings to be always with me. I assure you that I will do whatever and whenever something is required to be done for you. I give my commitment to you.
I have received a letter. It has been sent by Sri Abhishek Pareekh. The same sentiments were expressed to me by many mothers and sisters when I was not even the Prime Minister. Some doctor friends had also expressed their concern and I too have expressed my views on this issue a number of times in the past. Mr. Parikh has drawn my attention towards the increase of drug addiction that is fast catching up with our young generation. He has asked me to discuss this topic in “Mann ki Baat.” I agree with his concern and I will definitely include this topic, in my next edition of Mann Ki Baat. I will discuss the topic of drugs, drug addiction and drug mafia and how they are a threat to our country’s youth. If you have some experience, any information in this regard, if you have ever rescued any child from this drug addiction, if you know of any ways and means to help, if any government official has played a good role, if you give me any such information, I will convey such efforts to the public and together we will try to create an environment in each family that no child ever thinks of choosing this vice out of sheer frustration. I will definitely discuss this in detail in the next edition.
I know I am choosing those topics which put the government in the dock. But how long will we keep these things hiding? How long will we brush these important concerns under the carpet? Some day or the other we need to take a call, follow our instincts and for grand intentions tough calls are equally important. I am mustering the courage to do so because your love inspires me to do so. And I will continue to do such things because of your love.
Some people told me “ Modi ji you asked us to send you suggestions on Facebook, twitter or email. But a large section of the social class does not have access to these facilities, so what can they do. Your point is very valid. Everyone does not have this facility. Well then, if you have something to say related to Mann Ki Baat, that you hear on the radio even in the villages then do write into me on the following address
Mann Ki Baat
Akashvani
Sansad Marg
New Delhi.
Even if you send some suggestions through letters they will definitely reach me. And I will take them seriously as active citizens are the biggest asset for development. You write one letter, it indicates that you are very active. When you give your opinion, it means that you are concerned with national issues and this is strength of the nation. I welcome you.
For my Mann Ki Baat, your mann ki baat sould also reach me. Maybe you will definitely write a letter. I will try and interact with you again next month. I will try, that whenever I talk, it is Sunday, around 11 am. So I am getting closer to you.
The weather is changing. Winters are slowly setting in. This is a good month for health. Some find it a good season for eating. Some find it good for wearing nice clothes. Besides food and clothes it is a good season for health. Don’t let it go waste. Make the most of it.
Thank You.
My Dear Countrymen,
Today is the holy festival of Vijay Dashami. My heartiest greetings on this occasion of Vijay Dashami to one and all.
Through the medium of radio, I would like to share few heartfelt thoughts with you today. And, I hope that not only today, this series of conversation may be carried out regularly in future. I will try my best, if possible, to take out time twice a month or even once to speak with you. In future, I have also decided that whenever I will speak to you, it would be on Sunday morning at 11am. It would be convenient for you too and I will be content to have shared my thoughts with you.
We are celebrating the festival of Vijaya Dashami today, which is a symbol of victory of Good over Evil. A gentleman named Ganesh Venkatadari, a native of Mumbai, has sent me a mail writing that we must take a vow to eliminate ten bad habits from within ourselves on the occasion of Vijaya Dashami. I express my gratitude to him for this suggestion. As individuals, all of us must be thinking to put an end to our bad habits and win over them. For the sake of our nation, I believe all of us should come together and take a vow in getting rid of the dirt and filth from our country. On the occasion of Vijaya Dashami, we must take a vow to eliminate dirt and filth and we can do so.
Yesterday, on 2nd October on the eve of Mahatma Gandhi’s birth anniversary, more than 1.25 crore countrymen have started the ‘Swachh Bharat’ movement. I had shared one thought yesterday that I will nominate nine people and they need to upload their videos of cleaning the nation on social media websites, and nominating nine more people to do the same. I want you all to join me, clean up the nation, and nominate nine more people in this drive. Eventually, the entire nation will be filled with this atmosphere. I strongly believe that all of you will join hands with me to carry this movement forward.
Whenever we think of Mahatma Gandhi, we are reminded of Khaadi. You may be wearing variety of clothes with different fabrics and company brands in your family. But is it not possible to include Khaadi too? I am not telling you to use only Khaadi products. I am just insisting to use, at least one Khaadi product, like handkerchief, or a bath towel, a bed sheet, a pillow cover, a curtain or anything of that kind. If you have an inclination for all kinds of fabrics and clothes in your family, you can also buy Khaadi products on a regular basis. I am saying this as when you buy Khaadi products, it helps poor people to light lamps on Diwali. Also, you can avail a special discount on Khaadi products from 2nd October for a month. It is a very small thing, but has a very big impact which binds you with the poor. How you see this as a success. When I speak of 1.25 crore countrymen and assess the outcome, we might assume that government will take care of everything and as individuals we stand nowhere. We have seen that if we intend to move ahead, we need to identify our potential, understand our strengths and I can swear that we form the incomparable souls of this world. You all know that our own scientists have been successful in reaching Mars, with least expenditure. We do not lack in our strengths, but have forgotten our fortes. We have forgotten ourselves. We have become hopeless. My dear Brothers and Sisters I cannot let this happen. I always remember one of the sayings by Swami Vivekananda Ji as he always used to emphasize on one thought and possibly, he might have shared this thought with many others.
Vivekananda ii used to say, once a lioness was carrying her two cubs on the way and came upon a flock of sheep from a distance. She got a desire to prey upon them and started running towards the flock. Seeing her running, one of the cub too, joined her. The other cub was left behind and the lioness moved on, post preying upon the flock. One of the cub went with the lioness but the other cub was left behind, and was brought up by a mother sheep. He grew among the sheep, started speaking their language and adapted their ways of life. He used to sit, laugh and enjoy with them. The cub who went with the lioness, was a grown-up now. Once, he happened to meet his brother and was shocked to see him. He thought in his mind,” He is a lion and is playing with sheep, talking like sheep. What is wrong with him? “He felt that his ego was at stake and went to talk to his brother. He said,” What are you doing, brother? You are a lion.” He gets a reply from his brother, “No, I am a sheep. I grew up with them. They have brought me up. Listen to my voice and the way I talk.” He said, “Come, I will show you, who you really are.” He took his brother to a well and told him to look in the water his own reflection, and asked him, if both of them had similar faces. “I am a lion, you, too, are a lion.” His brother’s self-esteem got awakened; he attained self-realization through this and even a lion brought up among sheep started roaring like a lion. His inner soul was awakened. Swami Vivekananda Ji used to say the same. My countrymen, 1.25 crore Indians have infinite strength and capabilities. We need to understand ourselves. We need to identify our inner strengths and like Swami Ji always used to say, we need to carry our self-respect, identify ourselves and move forward in life and be successful, which in turn, make our nation a winning and successful country. I believe, all our countrymen with a population of 1.25 crores are efficient, strong and can stand against any odds with confidence.
These days, I have been getting many letters through social media websites, like Facebook, from my friends. One of them, Mr. Gautam Pal, has addressed an issue regarding the specially-abled children. He has floated the idea of a separate Municipality, Municipal Corporation or councils for them. We need to plan something for them and extend moral support. I liked his suggestion and I have experienced this during my tenure as the Chief Minister of Gujarat. A Special Olympics was held in Athens in 2011. After the Olympics, I invited all the participants and winners of specially abled category from Gujarat to my home. I spent two hours with them, and it was the most emotional and inspiring incident in my life. As I believe, a specially-abled child in not only the responsibility of the parents in a family, it is the responsibility of the entire society. God has chosen this family to support a specially abled child, but a child is a responsibility of the entire nation. After this incident, I got so emotionally attached with them, that I started organizing separate Olympics for them in Gujarat. Thousands of children with their parents used to come and attend, I, too, used to attend the Olympics. There was an atmosphere of trust and, this is the reason, I liked the suggestion given by Mr. Gautam Pal and felt like sharing it with you.
It reminds me of another story. Once, a traveller was sitting at the corner of a road, and was asking everyone the way to a specific place. He continued asking the route from many people. A man, sitting beside him was observing. The traveller stood up and started asking passers-by again. He stood up and said,” The way to your destination is here.” The traveller, then, said,” Brother, you were sitting next to me for so long, saw me asking the route from everyone. If you knew the route, why didn’t you tell me before?” The man answered,” I was waiting to verify if you really intend to reach your destination or you are asking people just for your knowledge. But, when you stood up, I was assured that you truly wish to reach your destination, and decided to give confirm the address”.
My countrymen, till the time we do not decide to walk, stand on our own, we will also not get the guidance from others in our journey. We will not get the people to hold our fingers and help us in walking. We need to take the initiative in walking and I trust all my 1.25 crore Indians, who are capable of walking on their own and will keep moving.
For the past few days, I have been getting very interesting suggestions from people. I am aware, when to adapt to these suggestions. But, I want everyone to actively participate in these suggestions as we all belong to our nation, the nation does not only belong to any Government. We are the citizens of our Nation and we all need to unite without any exceptions. Some of you have suggested simplifying the registration process for Small Scale Industries. I will definitely put this under government’s notice. Some of you have written to me to incorporate skills development courses in the school curriculum from 5th standard. This will help the students to learn various skills and crafts. I loved this idea. They have also suggested that even the adults should learn skills development courses along with their studies. One of the suggestions given was to keep a dustbin at every 100 meters and a putting in place a cleaning system.
Some of you have written to me, to abolish the use of plastic bags. I am receiving numerous suggestions from people. I have always been telling you, to write to me and narrate a true incident, which is positive and inspiring to me and our Countrymen, along with the evidence. If you do this, I can promise this to you, that I will share all those heartfelt thoughts or suggestions with all our Countrymen, through Mann ki Baat.
I have only one intention in speaking with you all,” Come, let us serve our Mother India. Let us all take our nation to the new heights. Let us all take a step forward. If you take one step, our nation takes 1.25 crore steps to move forward, and for this purpose, on this auspicious occasion of Vijaya Dashami, we all need to defeat all of our inner evils and pledge to do something good for the nation. A beginning has been made today. I will be sharing my heartfelt thoughts with one and all. Today, I have shared all the thoughts coming directly from my heart. I will meet you all next at 11 am on Sundays, but I trust our journey shall never end and will continue receiving love and suggestions from you.
After listening to my thoughts, please do not hesitate in sharing your thoughts or advice to me, I will appreciate that your suggestions keep flowing coming. I am glad to talk with you through this simple medium of Radio, which serves each and every corner of the nation. I can reach the poorest homes, as mine, my nation’s strength lies within the hut of Poor, within the villages; my nation’s strength lies with the Mothers, Sisters and Youths; my nation’s strength lies with the Farmers. Nation will only progress, if you believe in it. I am expressing my trust towards the nation. I believe in your strength, hence, I believe in our nation’s future.
I would once again, like to thank one and all for taking out time and listening to me. Thank you all!