আমরা ব্রাজিল যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র, রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্র, ভারতীয় প্রজাতন্ত্র, গণ-প্রজাতন্ত্রী চিন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা জাপানের ওসাকায় জি-২০ শীর্ষ বৈঠকের ফাঁকে ২৮শে জুন, ২০১৯ তারিখে এক বৈঠকে মিলিত হই। আমরা জি-২০ গোষ্ঠীর সভাপতি হিসাবে জাপানকে অভিনন্দন জানাই এবং আতিথেয়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।
এই দেশ গোষ্ঠীর সভাপতি হিসাবে জাপান, বাণিজ্য বিজ্ঞান প্রযুক্তি উদ্ভাবন, পরিকাঠামো, জলবায়ু পরিবর্তন, সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা, প্রবীণ জনসংখ্যার সমস্যা, এক সুষম উন্নয়ন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব অগ্রাধিকারকে বেছে নিয়েছে আমরা তা লক্ষ্য করেছি।
বিশ্বের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার স্থিতিশীল হয়ে উঠতে চলেছে বলে মনে হয় এবং এ বছরের শেষ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এই বৃদ্ধির হার মাঝারি মানের ঊর্ধ্বগতি অর্জন করবে বলে অনুমান করা যায়। তবে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির এই শক্তি অর্জন দারুনভাবে অনিশ্চিত হয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে ঝুঁকির কারণ হিসাবে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি, পণ্যদ্রব্যের দামের ওঠাপড়া, অসমতা এবং অপর্যাপ্ত অন্তর্ভুক্ত বৃদ্ধি ও দুর্বল আর্থিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।
বিশ্বব্যাপী দীর্ঘমেয়াদি বৃহদাকার অসমতা রয়েছে এবং তার মোকাবিলায় বিস্তারিত নজরদারি এবং উপযুক্ত ও নির্ণায়ক নীতির প্রয়োজন। আমরা পুনরায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের স্থায়ী ও সুষম বৃদ্ধির জন্য অনুকূল বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিবেশের ওপর জোর দিতে চাই।
এরকম এক পরিস্থিতিতে গত এক দশক ধরে বিশ্বের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ব্রিক্স দেশগুলি যেভাবে প্রধান চালিকাশক্তির ভূমিকা নিয়েছে, আমরা তাতে সন্তোষ ব্যক্ত করছি। বিশ্বের মোট উৎপাদনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এই দেশগুলিতে হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের অনুমান যে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বিশ্বের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির অর্ধেকেরও বেশি হবে এই ব্রিক্স দেশগুলিতে। নিরবচ্ছিন্নভাবে কাঠামোগত সংস্কার রূপায়ণের ফলে আমাদের বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়বে।ব্রিক্স সদস্যভুক্ত দেশগুলির মধ্যে সমতাভিত্তিক বাণিজ্যের প্রসার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রবাহকে আরও শক্তিশালী করে তোলায় অবদান যোগাবে।
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলায় এবং বিভিন্ন সময়ে উঠে আসা সুযোগকে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে আমরা যে যে বিষয়গুলির ওপর গুরুত্ব দিতে চাই তা হল – খোলা বাজার, জোরালো অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা, আর্থিক স্থিতিশীলতা, সুচিন্তিত ও সুসংহত অর্থনৈতিক নীতি, কাঠামোগত সংস্কার, মানবসম্পদের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ, দারিদ্র্য ও অসাম্য হ্রাসের উদ্যোগ, বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা, খোলা, ন্যায্য, নিয়মানুগ, সমতা-ভিত্তিক বাণিজ্যিক পরিবেশ, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে সহযোগিতা এবং পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিকাশের লক্ষ্যে অর্থের যোগান নিশ্চিত করা – এই সমস্ত ক্ষেত্রগুলিতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের উদ্যোগের ফলে সুষম ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক বিকাশ নিশ্চিত হতে পারে। আমরা বিশ্বব্যাপী উৎপাদন মূল্য শৃঙ্খলে উন্নয়নশীল দেশগুলির আরও বেশি অংশগ্রহণের আহ্বান জানাই। আমরা বাণিজ্য এবং ডিজিটাল অর্থনীতির মধ্যে সংযোগের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিতে চাই। এছাড়া, আমরা উন্নয়নের ক্ষেত্রে তথ্য বা ডেটা-র ভূমিকার ওপর গুরুত্ব দিতে চাই।
আমরা স্বচ্ছ, বৈষম্যহীন, খোলা, মুক্ত এবং অন্তর্ভুক্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রতি দায়বদ্ধ। আমরা মনে করি যে রক্ষণশীলতা এবং এক তরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণের রীতি বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠনের নিয়মনীতি ও মূল সুরের বিরোধী। আমরা পুনরায় বহুপাক্ষিকতা এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা ব্যক্ত করতে চাই। আমরা বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠন-কেন্দ্রিক নিয়মতান্ত্রিক বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণভাবে সমর্থন জানাই। আমরা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বর্তমান ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলায় বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠনের সদস্য রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে গঠনমূলকভাবে কাজ করে এই আন্তর্জাতিক সংগঠনটির সংস্কারের মাধ্যমে ডব্লিউটিও-কে আরও বেশি যথাযথ ও প্রাসঙ্গিক করে তুলতে চাই। তবে এই সংস্কারের ক্ষেত্রে বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠনের মৌলিক নীতি এবং প্রধান মূল্যবোধগুলিকে সুরক্ষিত রেখে উন্নয়নশীল ও সর্বাধিক অনুন্নত দেশগুলি সহ সমস্ত সদস্য রাষ্ট্রের স্বার্থকে বিবেচনার মধ্যে রাখতে হবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠনের আলোচনাসূচিকে সমতা-ভিত্তিক এবং খোলামেলা ও স্বচ্ছ রাখা অত্যন্ত জরুরি।
বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠনের বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা বহুপাক্ষিক বাণিজ্যিক লেনদেনের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। তাই, বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য উচ্চতর পর্যায়ের আপিল ব্যবস্থা এই সংগঠনের যথাযথ ও সুষ্ঠু পরিচালনায় বিশেষভাবে প্রয়োজন।
আমরা বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠনের বিরোধ নিষ্পত্তির দ্বিস্তরীয় ও বাধ্যতামূলক আইনগত ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত রাখতে আমাদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করতে চাই। ডব্লিউটিও-র উচ্চতর আপিল সংস্থার সদস্য নিয়োগের অচলাবস্থা জরুরিভিত্তিতে দূর করার জন্য আমরা অবিলম্বে সদস্য নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করার আহ্বান জানাই।
আমরা বিশ্বের আর্থিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার কেন্দ্রে শক্তিশালী ও কোটা-ভিত্তিক এবং পর্যাপ্তভাবে সহায়সম্পদে সমৃদ্ধ আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের পক্ষে মত প্রকাশ করতে চাই। আমরা পুনরায় আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের কোটা সংক্রান্ত নিয়মনীতি রূপায়ণের কাজে আমাদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করি। এছাড়া, ২০১০ সালে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত নীতির ভিত্তিতে আইএমএফ-এর প্রশাসনিক সংস্কারের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করি। আমরা ২০১৯ সালের বার্ষিক বৈঠকের আগেই আইএমএফ-এর কোটা সংক্রান্ত পঞ্চদশ সাধারণ পর্যালোচনার কাজকে সম্পূর্ণ করার পক্ষপাতি। আমরা পরিকাঠামো ও সুষম উন্নয়নের ক্ষেত্রে অর্থের যোগান দিতে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের (এনডিবি) ভূমিকার প্রশংসা করি এবং এই ব্যাঙ্কের একটি শক্তিশালী ও সমতাভিত্তিক উচ্চমানের প্রকল্প সংক্রান্ত বিভাগ গড়ে তোলার পক্ষপাতি।আমরা সদস্য রাষ্ট্রগুলির গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগের ঘাটতি সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগের গুরুত্বের ওপর জোর দিতে চাই। আমরা মনে করি যে এনডিবি-র আঞ্চলিক পর্যায়ের অফিস স্থাপনের মধ্য দিয়ে এই ব্যাঙ্ককে আরও বেশি শক্তিশালী করে তোলা সম্ভব। আমরা সমস্ত সদস্য রাষ্ট্রগুলির নিজস্ব মুদ্রার মাধ্যমে সহায়সম্পদ সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে এই ব্যাঙ্কের দায়বদ্ধতাকে স্বাগত জানাই। চিনে, চিনের মুদ্রায় সহায়সম্পদ সংগ্রহের এই কাজ এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ও রাশিয়াতে বন্ডের মাধ্যমে সম্পদ সংগ্রহের ব্যাঙ্কের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আমরা এনডিবি-র প্রকল্প প্রস্তুতি তহবিল ব্যবস্থার দ্রুত রূপায়ণের জন্য অপেক্ষা করে আছি এবং আশা করি এই ব্যাঙ্কের সদস্য রাষ্ট্রগুলির প্রকল্প প্রস্তুতিতে টেকনিক্যাল সহায়তা প্রদানে এটি এক দক্ষ হাতিয়ার হয়ে উঠবে।
আমরা ব্রিক্স দেশগুলির আপৎকালীন অর্থ তহবিল ব্যবস্থাকে (সিআরএ) সদস্য রাষ্ট্রগুলির ওপর স্বল্পমেয়াদি ঋন পরিশোধ সংক্রান্ত সমস্যা নিরসনে এক ব্যবস্থা হিসাবে অব্যাহত রাখার ওপর বিশেষ জোর দিতে চাই। ২০১৮ সালে পরীক্ষামূলকভাবে এই ব্যবস্থার সফলতার পর যে কোন সদস্য রাষ্ট্রের অর্থ ও সহায়সম্পদের জরুরি প্রয়োজন মেটাতে আমরা আরও বেশি করে পরীক্ষামূলকভাবে কার্যকর প্রস্তুতি গড়ে তোলার প্রতি দায়বদ্ধ। আমরা ব্রিক্স দেশগুলির মধ্যে ব্যাপক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সংক্রান্ত তথ্য বিনিময়ের সিআরএ ব্যবস্থাকে অব্যাহত রাখাকে স্বাগত জানাই। এছাড়া, ব্রিক্স-এর স্থানীয় মুদ্রাভিত্তিক বন্ড তহবিল গড়ে তোলার উদ্যোগকে অব্যাহত রাখাও এই তহবিলের কাজ শুরু করার জন্য অপেক্ষা করতে চাই। আমরা সিআরএ এবং আইএমএফ-এর মধ্যে সহযোগিতাকেও সমর্থন জানাই।
আমরা ব্রিক্স সদস্য রাষ্ট্রগুলি সহ যে কোন দেশের ওপর সন্ত্রাসবাদি আক্রমণকে কঠোরভাবে নিন্দা করি। যে কোন ধরনে বা আকারে যে বা যারা এই ধরনের সন্ত্রাসমূলক তৎপরতা চালায়, আমরা তার কঠোর নিন্দা করতে চাই। আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি দৃঢ় আইন-ভিত্তিক সন্ত্রাসবাদ বিরোধী সার্বিক ব্যবস্থা রাষ্ট্রসঙ্ঘের অধীনে চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে আমরা পুনরায় জোরের সঙ্গে জানাতে চাই যে কোন দেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা চালানো বা সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির অর্থের যোগান বন্ধ করার দায়িত্ব সমস্ত রাষ্ট্রের ওপর বর্তায়। সন্ত্রাসমূলক কাজকর্মের জন্য ইন্টারনেটের ব্যবহার বন্ধের উদ্যোগের প্রতি আমরা আমাদের দায়বদ্ধতা পুনরায় ব্যক্ত করি। যদিও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের ভূমিকার প্রাধান্যের কথা আমরা স্বীকার করি, তবুও এই কাজে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলিকে বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করবার জন্য আমরা আহ্বান জানাই। কোনভাবেই যাতে সন্ত্রাসবাদীরা ডিজিটাল মঞ্চ ব্যবহার করে সন্ত্রাসমূলক কাজে উৎসাহদান, লোক নিয়োগ বা অর্থ সংগ্রহ না করতে পারে, তাই প্রচলিত আইন মেনে তাদের সেই ক্ষমতা নির্মূল করা দরকার।
আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে সততার সঙ্গে কাজকর্মের প্রতি আমাদের সমর্থনকে অব্যাহত রাখতে চাই। এই কারণেই আমরা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দুর্নীতি বিরোধী উদ্যোগে সহযোগিতা এবং এ সংক্রান্ত আইনি ব্যবস্থাকে জোরদার করার লক্ষ্যে চেষ্টা চালিয়ে যেতে চাই। আমরা মনে করি, এইসব পদক্ষেপের মাধ্যমেই দুর্নীতি মোকাবিলা এবং হৃত সম্পদ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে। আমরা দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের ক্ষেত্রে আমাদের পারস্পরিক উদ্যোগকে আরও বৃদ্ধি করতে চাই। আমরা দুর্নীতি প্রতিরোধে এবং তা মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে ‘হুইসেল ব্লোয়ার’ বা দুর্নীতি সংক্রান্ত তথ্য যাঁরা ফাঁস করে, তাঁদের ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিতে চাই এবং তাঁদের সুরক্ষার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের পদ্ধতিকে আরও উন্নত করার পক্ষপাতি।
আমরা মনে করি দুর্নীতি বিশেষ করে, বেআইনি অর্থ পাচার এবং বিদেশে বেআইনি সম্পদ জমা রাখার সমস্যা মোকাবিলা একটি বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ, যার ফলে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং সুষম বিকাশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
আমরা এক্ষেত্রে আমাদের উদ্যোগকে সুসংহতভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব এবং এ বিষয়ে একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাব। এছাড়াও, আমরা দুর্নীতি বিরোধী আইন কার্যকর করার ক্ষেত্রে, অপরাধী এবং পলাতক অর্থনৈতিক অপরাধীদের প্রত্যার্পণের ক্ষেত্রে এবং লুঠ হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির অভ্যন্তরীণ আইনি ব্যবস্থা সাপেক্ষে সহযোগিতাকে শক্তিশালী করে তোলার পক্ষে জোর দিতে চাই। আমরা বেআইনি অর্থের প্রবাহ প্রতিরোধে রাষ্ট্রসঙ্ঘের ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ), বিশ্ব সীমাশুল্ক সংগঠন এক অনন্য প্রাসঙ্গিক বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার মধ্যে সহযোগিতা সহ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রতি আমাদের সমর্থন পুনরায় ব্যক্ত করতে চাই।
আমরা পরিচ্ছন্ন এবং আরও বেশি স্থিতিস্থাপক শক্তিদক্ষ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহযোগিতার ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিতে চাই। বিশেষ করে, গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাস শক্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সকলের জন্য শক্তির ব্যবস্থা করা এবং শক্তিক্ষেত্রে সাম্য ও সুফলতা বজায় রেখে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য সহযোগিতা বাড়াতে চাই।
আমরা শক্তির বিভিন্ন ধরনের উৎস এবং কম গ্যাস নির্গমন সহ ভবিষ্যতের বৃদ্ধি অর্জন করতে সৌরশক্তি, জৈবশক্তি এবং প্রাকৃতিক গ্যাসকে পরিবহণ ক্ষেত্রে কাজে লাগানোর গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিতে চাই। এই প্রসঙ্গে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিসম্পদের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গড়ে তুলতে ব্রিক্স দেশগুলির ভূমিকাকে আমরা স্বীকৃতি দিতে চাই। একইসঙ্গে, ব্রিক্স-এর শক্তি গবেষণা সহযোগিতা মঞ্চকে আরও শক্তিশালী করে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করতে চাই।
আমরা রাষ্ট্রসঙ্ঘের নীতির ভিত্তিতে গৃহীত জলবায়ু সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তির সম্পূর্ণ রূপায়ণের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা উন্নয়নশীল দেশগুলিতে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য উন্নত দেশগুলির প্রতি আহ্বান জানাতে চাই। এক্ষেত্রে সদর্থক ফলাফলের জন্য এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে রাষ্ট্রসঙ্ঘের জলবায়ু সংক্রান্ত শিখর বৈঠকের জন্য আমরা আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করে আছি।
২০৩০ সালে সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যের কথা স্মরণ করে আমরা সুষম বিকাশের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করতে চাই। আদ্দিস আবাবা-তে গৃহীত কর্মপরিকল্পনা অনুসারে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে সহায়তা প্রদান সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারকে সম্মান জানানোর গুরুত্বের ওপর আমরা জোর দিতে চাই। এ প্রসঙ্গে আমরা ২০৩০-এর সুষম উন্নয়ন কর্মসূচির ক্ষেত্রে জি-২০-র কর্মপরিকল্পনা, আফ্রিকার দেশগুলিতে ও সবচেয়ে কম উন্নত দেশগুলিতে শিল্পায়নের সহায়তার জন্য জি-২০-র উদ্যোগের প্রতি আমাদের সমর্থন ব্যক্ত করতে চাই।
২০১৯ সালে ব্রিক্স-এর চেয়ারম্যান হিসাবে ব্রাজিল যেভাবে “অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য উদ্ভাবন-ভিত্তিক ভবিষ্যৎ”কে মূল সুর হিসাবে চিহ্নিত করেছে, তার জন্য তাদের প্রশংসা করি। আমরা উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি হিসাবে উদ্ভাবনের স্বীকৃতি দিয়ে ডিজিটালাইজেশন এবং দরিদ্র ও প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসকারী জনসংখ্যার জন্য প্রযুক্তির সুবিধার প্রতি আমাদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করতে চাই। আমরা ইন্টারনেট-চালিত দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং শিল্পক্ষেত্রে ডিজিটাল রূপান্তরের ভালো কাজকে ছড়িয়ে দিতে যৌথ উদ্যোগকে উৎসাহ দিতে চাই।
আমরা ব্রিক্স-এর বিজ্ঞান, টেকনিক্যাল, উদ্ভাবনী এবং শিল্পোদ্যোগ সংক্রান্ত সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাই। ব্রিক্স-এর নতুন শিল্প বিপ্লব সংক্রান্ত অংশীদারিত্ব, আই-ব্রিক্স নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা এবং যুব বিজ্ঞানীদের মঞ্চের কাজকে অব্যাহত রাখার পক্ষপাতি।
আমরা ২০১৯ সালে ব্রিক্স-এর চেয়ারম্যান হিসাবে ব্রাজিলের প্রতি আমাদের দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করতে চাই এবং এ বছরের নভেম্বরে একাদশ ব্রিক্স শীর্ষ বৈঠকের সাফল্য কামনা করি।