আমরা অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতারা আজ প্রথমবার ব্যক্তিগতভাবে "কোয়াড" বৈঠকে মিলিত হয়েছি।এই ঐতিহাসিক আনুষ্ঠানে অংশীদারিত্বের প্রতি আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিস্থাপকতাযুক্ত উন্মুক্ত ভারত- প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে আমাদের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি ভাগ করে নিতে চাই। আমাদের শেষ বৈঠক হয়েছে মাত্র ছয় মাস হল। মার্চ থেকে, কোভিড -১৯ মহামারী বিশ্বব্যাপী নানান সমস্যার সৃষ্টি করেছে; জলবায়ু সংকট ত্বরান্বিত হয়েছে; এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা আরও জটিল হয়ে উঠেছে, যা আমাদের বিশ্বের সমস্ত দেশকে পৃথকভাবে এবং একসঙ্গে পরীক্ষার সামনে দাঁড় করিয়েছে।
কোয়াড শীর্ষ সম্মেলনের উদ্দেশ্য হল ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমাদের ও বিশ্বের যে দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে তার ওপর পুনরায় আলোকপাত করা এবং আমাদের যা লক্ষ্য রয়েছে তা অর্জন করা। আমরা একসঙ্গে,ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এবং এর বাইরে নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক আইনে যে নিরপেক্ষ, উন্মুক্ত, নিয়ম-ভিত্তিক আদেশ রয়েছে তা প্রচারের জন্য সুপারিশ করেছি। আমরা আইনের শাসন, নৌ চলাচল এবং অতিরিক্ত উড়ান চলাচলের স্বাধীনতা, সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার পক্ষে দাঁড়িয়েছি। আমরা একসঙ্গে এবং বিভিন্ন অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আসিয়ান ঐক্য এবং ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আসিয়ান গোষ্ঠী ভুক্ত দেশগুলির দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি আমাদের দৃঢ় সমর্থন সুনিশ্চিত করেছি। পাশাপাশি আসিয়ান গোষ্ঠী ভুক্ত সদস্য দেশগুলি একসঙ্গে কাজ করার উপর জোর দিয়েছি। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে সহযোগিতার জন্য চলতি বছরের সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৌশলকেও স্বাগত জানাচ্ছি।
আমাদের প্রথম বৈঠকের পর থেকে, আমরা কোভিড -১৯ মহামারী, জলবায়ু সংকট এবং উদীয়মান প্রযুক্তি'র মতো বিশ্বের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যথেষ্ট অগ্রগতি লাভ করেছি।
কোভিড -১৯ মোকাবিলা এবং ত্রাণ বিষয়ে আমাদের অংশীদারিত্ব কোয়াড ভুক্ত দেশগুলির জন্য এক ঐতিহাসিক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি। আমরা কোয়াড ভুক্ত দেশগুলির টিকা বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠী চালু করেছি, যা আমাদের নিজ নিজ দেশের সরকারের শীর্ষ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত। এদের উপর ভিত্তি করে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও কোভিড -১৯ মোকাবিলায় সাহায্য করার জন্য আমাদের পরিকল্পনাগুলিকে আরও ভালভাবে সাজানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে, আমরা মহামারীর অবস্থা সম্পর্কে মূল্যায়ন ভাগ করে নিয়েছি এবং এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টাকে একত্রিত করেছি।পাশাপাশি এই অঞ্চলে কোভিড ১৯ প্রশমনের জন্য কূটনৈতিক নীতিগুলিকে শক্তিশালী করেছি এবং কোভ্যাক্স সুবিধা সহ বহুপাক্ষিক প্রচেষ্টার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সমন্বয় রেখে নিরাপদ, কার্যকরী, গুণমান সম্পন্ন টিকা উৎপাদন ও ন্যায়সঙ্গত বন্টনের সুবিধার বিষয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বজায় রাখা হয়েছে। কোভ্যাক্সের মাধ্যমে টিকার ডোজ তৈরিতে অর্থ জোগাড় করা ছাড়াও, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী নিরাপদ এবং কার্যকর কোভিড -১৯ টিকাকরণের জন্য ১.২ বিলিয়নেরও বেশি ডোজ দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আজ অবধি, আমরা এই প্রতিশ্রুতির অঙ্গ হিসাবে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলিতে প্রায় ৭৯ মিলিয়ন নিরাপদ, কার্যকরী এবং মান-নিশমান-সম্মত টিকার ডোজ সরবরাহ করেছি।
বায়োলজিকাল ই লিমিটেডে'র উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কোয়াড দেশগুলির টিকা অংশীদারিত্বের অর্থের জোগানের জন্য ধন্যবাদ।ভারতে অতিরিক্ত টিকা উৎপাদন এই বছরের শেষের দিকে আসতে চলেছে। বিশ্বজুড়ে মহামারী সত্ত্বেও আমরা আজ পর্যন্ত অনেক কিছু অর্জন করেছি।কোয়াড গোষ্ঠী ভুক্ত দেশগুলির বিনিয়োগের মাধ্যমে ২০২২ সালের মধ্যে কমপক্ষে এক বিলিয়ন নিরাপদ ও কার্যকরী কোভিড -১৯ টিকা উৎপাদন হবে।আমরা ক্লিনিকাল ট্রায়াল এবং জিনোমিক গবেষণা ক্ষেত্রে আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (এসএন্ডটি) সহযোগিতা জোরদার করব, যাতে আমরা এই মহামারীর অবসান এবং উন্নত স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করতে পারি।আমরা জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় সচেষ্ট হয়েছি।জরুরি ভিত্তিতে এই সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে।জলবায়ু পরিবর্তন রোধ ও কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমাতে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
শিল্প সংস্থার সঙ্গে অংশীদারিত্বে আমরা নিরাপদ, উন্মুক্ত এবং স্বচ্ছ ৫জি নেটওয়ার্ক স্থাপনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি এবং এই ক্ষেত্রে উৎসাহ যোগানো হচ্ছে।আমরা আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের মতো বহুপাক্ষিক মানসম্মত প্রতিষ্ঠানেও সাহায্য করবো।আজ, আমরা সাইবার স্পেসে নতুন সহযোগিতা শুরু করেছি এবং সাইবার হুমকি মোকাবেলা, স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি এবং আমাদের গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোকে সুরক্ষিত করার জন্য একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকারবদ্ধ। মহাকাশ ক্ষেত্রে আমরা নতুন সহযোগিতার সুযোগ সুবিধাগুলি চিহ্নিত করেছি এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধ, দুর্যোগ মোকাবিলা, মহাসাগর ও সামুদ্রিক সম্পদের সুস্থায়ী ব্যবহার এবং তথ্য ভাগ করে নেওয়ার বিষয় সুনিশ্চিত করেছি।
শিক্ষা ও মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা কোয়াড ফেলোশিপ উদ্বোধন করেছি।এ এক নতুন অন্যায়ের সূচনা হয়েছে।দক্ষিণ এশিয়ায়, আমরা আফগানিস্তানের প্রতি আমাদের কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং মানবাধিকার নীতিগুলিকে ঘনিষ্ঠভাবে বজায় রাখবো।আফগানিস্তানের মাটি কোনোভাবেই সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ ও প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।
আমরা এটাও স্বীকার করেছি যে ভবিষ্যতে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধি জোরদার করে তুলবো। রাষ্ট্র সংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনুযায়ী উত্তর কোরিয়ার সম্পূর্ণ পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছি।আমরা আমাদের দেশের নেতৃত্ব ও বিদেশ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অব্যাহত রাখবো।একটি শক্তিশালী অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা তৈরিতে পারস্পরিক সমন্বয় বজায় থাকবে।এই অংশীদারিত্বের জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বজায় থাকবে। এই অবিচল সহযোগিতাকে সঙ্গী করেই আমরা এখানে মিলিত হতে পেরেছি।