প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আর বাইডেন জুনিয়রকে ভারতে স্বাগত জানিয়ে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারিত্বের প্রতি আস্থা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। চলতি বছরের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ঐতিহাসিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময়ে যেসব যুগান্তকারী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তার বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রশংসা করেছেন দুই নেতা।
ভারত-মার্কিন কৌশলগত অংশীদারিত্বকে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও আস্থার ভিত্তিতে আমাদের বহুমুখী বিশ্বজনীন কর্মসূচির সর্বক্ষেত্রে প্রসারিত করার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা জারি রাখার আহ্বান জানিয়েছেন দুই নেতা। তাঁরা বলেছেন, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, অন্তর্ভুক্তিকরণ, বহুত্ববাদ ও সব নাগরিকের সমানাধিকারের মতো অভিন্ন মূল্যবোধের কারণেই এই দুটি দেশ সাফল্য অর্জন করেছে। আমাদের সম্পর্ককে আরও মজবুত করার ক্ষেত্রেও এই মূল্যবোধগুলির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জি২০ একটি মঞ্চ হিসেবে কী রকম গুরুত্বপূর্ণ নানা পদক্ষেপ নিতে পারে, তা প্রদর্শনের জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেন ভারতের জি২০ সভাপতিত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। দুই নেতা জি২০-র প্রতি তাঁদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। নতুন দিল্লিতে জি২০ শীর্ষ সম্মেলন সুস্থিত উন্নয়ন, বহুপাক্ষিক সহযোগিতা, অভিন্ন চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলায় অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়নে বিশ্বমত গড়ে তোলা, বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাঙ্কগুলির পুনর্নির্মাণ ও তাদের কাজের পরিধি আরও প্রসারিত করার মতো অভিন্ন লক্ষ্যগুলি অর্জনে বিশেষ সহায়ক হবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তাঁরা।
ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে মুক্ত, অবাধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রাণবন্ত করে তুলতে কোয়াড-এর গুরুত্বের ওপর প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট বাইডেন জোর দিয়েছেন। আগামী বছর ভারতে আয়োজিত পরবর্তী কোয়াড শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে স্বাগত জানাতে তিনি উন্মুখ বলে প্রধানমন্ত্রী মোদী জানিয়েছেন। চলতি বছরের জুন মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় সামুদ্রিক প্রয়াসে যোগ দিয়েছে। এই মঞ্চে বাণিজ্য সংযোগ ও সামুদ্রিক পরিবহণ সংক্রান্ত ক্ষেত্রে সহ নেতৃত্ব দেওয়ার মার্কিন সিদ্ধান্তকে ভারত স্বাগত জানিয়েছে।
বিশ্বজনীন শাসন ব্যবস্থা আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রতিনিধিত্বমূলক হওয়া উচিত বলে দুই নেতাই আবারও মতপ্রকাশ করেছেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেন রাষ্ট্রসংঘের সংস্কার এবং রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে ভারতের অন্তর্ভুক্তির দাবিকে ফের সমর্থন জানিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে ২০২৮-২৯এ রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে ভারতের প্রার্থী পদকেও তিনি সমর্থন জানান। দুই নেতা সমসাময়িক বাস্তবতাকে আরও ভালভাবে প্রতিফলিত করতে বহুপাক্ষিক ব্যবস্থাপনার সংস্কার এবং একে শক্তিশালী করে তোলার ওপর জোর দেন। এই প্রসঙ্গে রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী ও অস্থায়ী বিভাগের সদস্যপদ সম্প্রসারণের প্রয়োজনয়ীতা নিয়েও তাঁরা সহমত হয়েছেন।
আমাদের কৌশলগত অংশীদারিত্বকে গভীরতর করে তুলতে প্রযুক্তির ভূমিকার ওপর প্রধানমন্ত্রী মোদী ও প্রেসিডেন্ট বাইডেন জোর দিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ও উদীয়মান প্রযুক্তি ক্ষেত্রে (আইসিইটি) ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়াসের প্রশংসা করেছেন তাঁরা। পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে আইসিইটি অবাধ, সুলভ, নিরাপদ ও প্রাণবন্ত প্রযুক্তি ব্যবস্থা ও মূল্য শৃঙ্খল গড়ে তুলবে এবং এর মাধ্যমে আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলি ও অভিন্ন মূল্যবোধ আরও শক্তিশালী হবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন দুই নেতা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আইসিইটি-র কাজের অগ্রগতি অন্তর্বর্তী পর্যালোচনা করা হবে বলে দুই দেশ স্থির করেছে। আগামী বছরের গোড়ায় আইসিইটি-র বার্ষিক পর্যালোচনা করবেন দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা।
চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে চন্দ্রযান-৩এর ঐতিহাসিক সফল অবতরণ এবং ভারতের প্রথম সৌর মিশন আদিত্য এল১-এর সফল উৎক্ষেপণের জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়ারদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। মহাকাশ সহযোগিতার নতুন দিগন্তে পৌঁছনোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করে দুই নেতা ভারত-মার্কিন অসামরিক মহাকাশ সংক্রান্ত যৌথ কর্মীগোষ্ঠীর অধীনে মহাকাশের বাণিজ্যিক ব্যবহারের লক্ষ্যে আরও একটি কর্মীগোষ্ঠী গঠনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। মহাকাশ অন্বেষণে আমাদের অংশীদারিত্ব আরও গভীর করার লক্ষ্যে ইসরো এবং ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন- নাসা ২০২৪ সালে যৌথ উদ্যোগে একটি আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন গড়ে তোলার ব্যাপারে আলোচনা চালাচ্ছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ মহাকাশে মানুষ পাঠানোর বিষয়েও কৌশলগত অংশীদারিত্বের একটি কাঠামো চূড়ান্ত করার প্রয়াস চলছে। ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গ্রহাণু ও পৃথিবীর কাছাকাছি থাকা অন্যান্য বস্তুর প্রভাব থেকে পৃথিবী ও মহাকাশ সম্পদ রক্ষার জন্য গ্রহ প্রতিরক্ষায় সমন্বয় বাড়াতে চায়। এজন্য মাইনর প্ল্যানেট সেন্টারের মাধ্যমে গ্রহাণু শনাক্তকরণ ও তার গতিবিধি অনুসরণের কাজে ভারতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করবে।
বিশ্বজুড়ে সেমি-কন্ডাক্টরের একটি প্রাণবন্ত সরবরাহ শৃঙ্খল গড়ে তোলার লক্ষ্যে দুই নেতা তাঁদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এক্ষেত্রে ভারতে তাদের গবেষণা ও উন্নয়ন সংক্রান্ত কাজের বিস্তারে মাইক্রোচিপ টেকনোলজির ৩০০ মিলিয়ন ডলার এবং অ্যাডভান্স মাইক্রো ডিভাইসের আগামী ৫ বছরে ৪০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণাকে তাঁরা স্বাগত জানিয়েছেন। মার্কিন সংস্থা মাইক্রন, এলএএম রিসার্চ ও অ্যাপ্লায়েড মেটিরিয়াল্স চলতি বছরের জুনে বিনিয়োগের যে ঘোষণা করেছিল, তার বাস্তবায়নের গতিতে দুই নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থা, প্রাণবন্ত সরবরাহ শৃঙ্খল এবং বিশ্বব্যাপি ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তিকরণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং রাষ্ট্রপতি বাইডেন ভারত সিক্স-জি অ্যালায়েন্স ও নেক্সট জি অ্যালায়েন্সের মধ্যে সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরকে স্বাগত জানিয়েছেন। বিক্রেতা ও অপারেটরদের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা গভীরতর করার এটি প্রথম পদক্ষেপ বলে তাঁরা মন্তব্য করেন। ফাইভ-জি/সিক্স-জি প্রযুক্তির গবেষণা ও উন্নয়নে এবং ওপেন আরএএন ক্ষেত্রে সহযোগিতার লক্ষ্যে দুটি যৌথ টাস্কফোর্সের গঠনকেও তাঁরা স্বাগত জানান। এর জেরে শীর্ষস্থানীয় কোনো ভারতীয় টেলিকম ক্ষেত্রের অপারেটরের ফাইভ-জি ওপেন আরএএন পাইলট কার্যক্ষেত্রে নিয়োগের আগে কোনোও মার্কিন ওপেন আরএএন উৎপাদক সেটির দায়িত্বভার গ্রহণ করবে। মার্কিন রিপ অ্যান্ড রিপ্লেস কর্মসূচিতে ভারতীয় কোম্পানীগুলির অংশগ্রহণ নিয়ে দুই নেতাই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রিপ অ্যান্ড রিপ্লেস পাইলটে ভারতের সহযোগিতাকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন স্বাগত জানিয়েছেন।
কোয়ান্টাম ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দ্বিপাক্ষিক এবং আন্তর্জাতিক কোয়ান্টাম বিনিময়ের মঞ্চ- কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গেলমেন্ট এক্সচেঞ্জ- দুভাবেই তারা ভারতের সঙ্গে কাজ করতে চায়। কোয়ান্টাম ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কনসোর্টিয়ামের সদস্য হিসেবে ভারতের কলকাতার এস এন বোস ন্যাশনাল সেন্টার ফর বেসিক সায়েন্সেস-এর অংশগ্রহণকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বাগত জানিয়েছে। আইআইডি বম্বে আন্তর্জাতিক অংশীদার হিসেবে শিকাগো কোয়ান্টাম এক্সচেঞ্জে যুক্ত হবে বলে স্থির হয়েছে।
জৈব প্রযুক্তি ও জৈব উৎপাদন সংক্রান্ত উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন (এনএসএফ) এবং ভারতের ডিপার্টমেন্ট অফ বায়ো টেকনোলজির মধ্যে স্বাক্ষরিত বাস্তবায়ন ব্যবস্থাপনাকে দুই নেতা স্বাগত জানিয়েছেন। সেমি কন্ডাক্টর গবেষণা, পরবর্তী প্রজন্মের যোগাযোগ ব্যবস্থা, সাইবার নিরাপত্তা, সুস্থিত দূষণমূক্ত প্রযুক্তি এবং মেধাসম্পন্ন পরিবহন ব্যবস্থায় শিক্ষা ও শিল্পগত যে সহযোগিতার প্রস্তাব এনএসএফ এবং ভারতের বৈদ্যুতিন ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রক দিয়েছে, দুই নেতা তারও প্রশংসা করেছেন।
প্রযুক্তিগত মূল্যশৃঙ্খল গঠন এবং প্রতিরক্ষা শিল্প সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনার সংযোগ সাধনে দুই নেতা তাঁদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। শিল্পমহল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি স্তরে যাতে আরও বেশি করে প্রযুক্তির হস্তান্তর এবং সহ উন্নয়ন ও সহ উৎপাদন হতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় নীতি ও বিধিনিয়ম প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। চলতি বছরের জুনে শুরু হওয়া দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত বাণিজ্য বার্তার উদ্যোগকে তাঁরা স্বাগত জানিয়েছেন।
অন্ততপক্ষে ১০ মিলিয়ন ডলার প্রাথমিক তহবিল নিয়ে ভারত-মার্কিন গ্লোবাল চ্যালেঞ্জেস ইন্সটিটিউট গড়ে তোলার লক্ষ্যে ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির প্রতিনিধি, কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউটস অফ টেকনোলজি এবং অ্যাসোসিয়েশন অফ আমেরিকান ইউনিভার্সিটিজ-এর মধ্যে সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরকে দুই নেতা স্বাগত জানিয়েছেন। এই ইন্সটিটিউট আমাদের দুই দেশের প্রথম সারির গবেষণা ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে একত্রিত করবে। এখানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সুস্থিত জ্বালানী, কৃষি, স্বাস্থ্য ও অতিমারীর জন্য প্রস্তুতি, সেমি কন্ডাক্টর প্রযুক্তি ও উৎপাদন, টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থা, কৃত্রিম মেধা, কোয়ান্টাম বিজ্ঞান সহ বিভিন্ন বিষয়ে যৌথ উদ্যোগে গবেষণা হবে।
দুই নেতা দু-দেশের শিক্ষা সংক্রান্ত অংশীদারিত্বের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ ও উদীয়মান প্রযুক্তি নিয়ে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় ট্যান্ডন ও আইআইটি কানপুর অ্যাডভান্সড রিসার্চ সেন্টারের মধ্যেকার সমঝোতা এবং নিউইয়র্ক স্টেট ইউনিভার্সিটি ও আইআইটি দিল্লি কানপুর, যোধপুর ও বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির উদ্যোগে গঠিত যৌথ গবেষণাকেন্দ্রকেও স্বাগত জানিয়েছেন তাঁরা।
ডিজিটাল অর্থনীতিতে লিঙ্গ ভিত্তিক বিভাজনের অবসান ঘটানোর অঙ্গীকার নিয়ে দুই নেতা ২০৩০ সালের মধ্যে ডিজিটাল লিঙ্গ ফারাক অর্ধেক করার যে লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে তার উল্লেখ করেছেন। এজন্য সরকার, বেসরকারি কোম্পানী, নাগরিক সমাজ ও বহুপাক্ষিক সংগঠনগুলি যে উদ্যোগ নিচ্ছে তাকে সমর্থন জানিয়েছেন তারা।
প্রধানমন্ত্রী মোদী ও প্রেসিডেন্ট বাইডেন ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বকে গভীরতর ও বহুমুখী করার ওপর জোর দিয়েছেন। মহাকাশ, কৃত্রিম মেধার মতো নতুন ক্ষেত্রগুলিতে এই অংশীদারিত্ব প্রসারিত করার এবং প্রতিরক্ষা শিল্প সংক্রান্ত যৌথ উদ্যোগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
ভারতে জিইএফ ৪১৪ জেট ইঞ্জিন উৎপাদনের জন্য জিই এরোস্পেস ও হিন্দুস্থান অ্যারোনটিক্যাল লিমিটেডের মধ্যে হওয়া বাণিজ্যিক চুক্তি নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের বিজ্ঞপ্তি জারির প্রক্রিয়া গত ২৯ অগাস্ট সম্পন্ন হয়েছে। এই নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনার সূচনা হওয়ায় দুই নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
চলতি বছরে অগাস্টে মার্কিন নৌবাহিনী এবং মাজগাঁও ডক শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের মধ্যে মাস্টারশিপ রিপেয়ার সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় দুই নেতা আনন্দ প্রকাশ করেছেন। ভারতকে জাহাজ ও বিমানের মেরামতি ও রক্ষণাবেক্ষণের এক হাবে পরিনত করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। মার্কিন শিল্পমহল এক্ষেত্রে আরও বিনিয়োগের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, দুই নেতা তাকে স্বাগত জানিয়েছেন।
প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সংক্রান্ত অভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় ভারত-মার্কিন ডিফেন্স অ্যাক্সিলারেশন ইকো সিস্টেম (ইন্দাস-এক্স) টিম গঠনকে স্বাগত জানিয়েছেন। ইন্দাস-এক্স আইআইটি কানপুরে একটি স্টার্টআপ অংশীদারিত্বের সূচনা করেছে। পেন স্টেট ইউনির্ভিসিটির উদ্যোগে ভারতীয় স্টার্টআপগুলির জন্য একটি জয়েন্ট অ্যাক্সিলারেটর প্রোগ্রামও শুরু হয়েছে। অগাস্ট মাসে এক কর্মশালার মাধ্যমে এর সূচনা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এইচফোর এক্স এবং আইআইটি হায়দ্রাবাদ। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা উদ্ভাবন ইউনিট প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সংক্রান্ত অভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য স্টার্টআপগুলিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৩১টি দূর-নিয়ন্ত্রিত বিমান ও সেই সংক্রান্ত সরঞ্জাম কেনার যে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাকে স্বাগত জানিয়েছেন।
জলবায়ু, জ্বালানী রূপান্তর ও জ্বালানী সুরক্ষার ক্ষেত্রে পরমাণু শক্তির অসীম গুরুত্বের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মোদী ও প্রেসিডেন্ট বাইডেন এই নিয়ে দু-পক্ষের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। পরবর্তী প্রজন্মের ছোট পরমাণু চুল্লি সংক্রান্ত্র প্রযুক্তির উন্নয়ন সহ পরমাণু শক্তি ক্ষেত্রে ভারত-মার্কিন সহযোগিতা আরও বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। পরমাণু জ্বালানী সরবরাহকারীদের গোষ্ঠীতে ভারতের সদস্যপদের দাবিকে সমর্থন জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
দুই নেতা চলতি বছরের অগাস্ট মাসে ভারত-মার্কিন পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি প্রযুক্তি উদ্যোগ মঞ্চের উদ্বোধনী বৈঠককে স্বাগত জানিয়েছেন। এর আওতায় দুটি দেশ এ সংক্রান্ত উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, নীতি ও পরিকল্পনা, বিনিয়োগ, পরিচর্যা, প্রসার, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন উদ্যোগে একে অপরের সহযোগিতা করবে।
পরিবহন ক্ষেত্রকে কার্বন মুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে দুই নেতা ভারতে ইলেক্ট্রিক পরিবহন ব্যবস্থা সম্প্রসারিত করার উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। ভারতে তৈরি ১০ হাজার ইলেক্ট্রিক বাস কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ই-বাস সেবা কর্মসূচির আওতায় বাসগুলিও রয়েছে। এতে চার্জ দেওয়ার পরিকাঠামো থাকছে। ই-পরিবহনের বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলকে বহুমুখী করে তুলতে দুই দেশ একযোগে কাজ করতে সহমত হয়েছে।
ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মূলধনের খরচ কমাতে বিনিয়োগ মঞ্চ সৃষ্টির লক্ষ্যেও উদ্যোগ নিচ্ছে। এর আওতায় পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির প্রয়োগ, ব্যাটারি মজুত এবং উদীয়মান দূষণহীন প্রযুক্তির প্রকল্পগুলিকে সহায়তা করা হবে। এজন্য ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফান্ড এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেভেলপমেন্ট ফিনান্স কর্পোরেশনের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। এই দুটি সংস্থা ৫০০ মিলিয়ন ডলার করে জমা দিয়ে একটি পুনর্নবীকরণযোগ্য পরিকাঠামো বিনিয়োগ তহবিল গড়ে তুলবে।
ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠন সংক্রান্ত সপ্তম ও চূড়ান্ত বিরোধের নিষ্পত্তি হওয়ায় দুই নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। চলতি বছরের জুন মাসে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়ে বকেয়া ৬টি বিরোধের নিষ্পত্তি হয়েছিল।
ভারত-মার্কিন বাণিজ্যিক বার্তার আওতায় “ইনোভেশন হ্যান্ডশেক” চালু করার উদ্যোগকে দুই নেতা স্বাগত জানিয়েছেন। এর আওতায় আরও দুটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। একটি হবে ভারতে এবং অন্যটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এই অনুষ্ঠানগুলিতে দু-পক্ষই স্টার্টআপ, বেসরকারী মূলধন ও বিনিয়োগকারীদের নিয়ে আসবে।
ক্যান্সার গবেষণা, প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনায় দুই দেশের সহযোগিতা বৃদ্ধিতে দুই নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। চলতি বছরের নভেম্বর মাসে ভারত-মার্কিন ক্যান্সার বার্তার সূচনা হবে। এতে ক্যান্সার সংক্রান্ত নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি, পরিচর্যা এবং এই রোগের গতিপ্রকৃতি নিয়ে আলোচনা হবে। দুই নেতা অক্টোবরে ওয়াশিংটনে আয়োজিত হতে চলা মার্কিন ভারত স্বাস্থ্য বার্তার উল্লেখও করেছেন। এর মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক নিয়ন্ত্রণমূলক ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সহযোগিতা আরও জোরদার হবে বলে তাঁদের আশা।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর এবং ভারতীয় পূরাতত্ব সর্বেক্ষণের মধ্যে একটি ব্যবস্থাপনা স্মারকের পুনর্নবীকরণ হওয়ায় দুই নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এর আওতায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতে নিহত মার্কিন সেনাদের দেহাবশেষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো হবে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী ও প্রেসিডেন্ট বাইডেন দু-দেশের সরকার, শিল্পমহল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে সংযোগ অক্ষুন্ন রেখে ভারত-মার্কিন অংশীদারিত্বকে সুদুরপ্রসারী করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন। এই অংশীদারিত্ব আমাদের নাগরিকদের উজ্জ্বল ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের স্বপ্নকে সাকার করবে, বিশ্ব কল্যাণে সহায়ক হবে এবং এক মুক্ত, অবাধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, প্রাণবন্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল গড়ে তুলতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।