১. ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মুর আমন্ত্রণে তানজানিয়ার রাষ্ট্রপতি শ্রীমতী সামিয়া সুলুহু হাসান ৮-১০ অক্টোবর ২০২৩, ভারতে সরকারি সফরে এসেছেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তানজানিয়ার বিদেশ ও পূর্ব আফ্রিকা সংক্রান্ত সহযোগিতা মন্ত্রী জানুয়ারি মাকাম্বা, বিভিন্ন ক্ষেত্রের সদস্য, পদস্থ সরকারি আধিকারিক ও ব্যবসায়িক ক্ষেত্রের সদস্য সহ এক উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল ।
২. নতুন দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবন প্রাঙ্গনে তানজানিয়ার রাষ্ট্রপতিকে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাগত জানানো হয়। তিনি রাজঘাটে গিয়ে মহাত্মা গান্ধীর প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তানজানিয়ার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন এবং তাঁর সম্মানে রাষ্ট্রীয় ভোজের আয়োজন করবেন।
৩. তানজানিয়ার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। দুই নেতা পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে মতবিনিময় করেছেন। ভারত ও তানজানিয়ার মধ্যে যে ঘনিষ্ঠ, সৌহার্দ্যপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক রয়েছে, দুই নেতা তার প্রশংসা করে বলেছেন, এই দুটি দেশ অভিন্ন মূল্যবোধ ও আদর্শের ভিত্তিতে সময়ের কষ্টিপাথরে যাচাই করা অংশীদারিত্বে আবদ্ধ। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তানজানিয়া সফরের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গভীরতর হয়েছে এবং উন্নয়ন সংক্রান্ত সহযোগিতা গতি পেয়েছে বলে দুই নেতা মন্তব্য করেছেন।
৪. সম্প্রতি বিদেশমন্ত্রী ডঃ এস জয়শঙ্কর অর্থনৈতিক, কারিগরি ও বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা সংক্রান্ত দশম যৌথ কমিশনের সভাপতিত্ব করতে তানজানিয়া সফর করেন। লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা সংসদীয় প্রতিনিধি দল নিয়ে তানজানিয়া সফরে যান। এই দুটি সফরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন দুই নেতা। এছাড়া চলতি বছরে তানজানিয়ার কয়েকজন মন্ত্রীও ভারত সফরে আসেন। এই ধরনের উচ্চ পর্যায়ের সফর ভারত ও তানজানিয়ার মধ্যেকার সম্পর্ককে আরও মজবুত করেছে বলে দুই নেতা সহমত প্রকাশ করেছেন।
৫. তানজানিয়ার রাষ্ট্রপতি সামিয়া সুলুহু হাসান ১০ অক্টোবর ভারত – তানজানিয়া ব্যবসায়িক ও বিনিয়োগ সম্মেলনে যোগ দিয়ে মূল ভাষণ দেবেন। ভারতের প্রথম সারির শিল্পপতিদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন তিনি।
৬. দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করতে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে দুই নেতা ভারত – তানজানিয়া সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারিত্বের পর্যায়ে উন্নীত করার ঘোষণা করেছেন। এই অংশীদারিত্ব দুই দেশকে সমুদ্র নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, উন্নয়ন সংক্রান্ত সহযোগিতা, শিল্প ও বিনিয়োগ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করতে সাহায্য করবে বলে তাঁরা আশাপ্রকাশ করেন।
৭. এই সফরের সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু-দেশের মধ্যে সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই বিষয়ক তালিকাটি এর সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে।
রাজনৈতিক সম্পর্ক
৮. দ্বিপাক্ষিক রাজনৈতিক সংযোগ এবং আঞ্চলিক ও বিশ্বজনীন বিভিন্ন বিষয়ে দু-দেশের মধ্যে কৌশলগত বার্তালাপ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে দু-পক্ষ সন্তুষ্টির সঙ্গে উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গী এবং ভারত মহাসাগর রিম অ্যাসোসিয়েশন সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গী। ভারত ও তানজানিয়া দীর্ঘ দিনের সামুদ্রিক প্রতিবেশী এবং তাদের মধ্যে বাণিজ্য ও নাগরিক সংযোগের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতের সাগর (সিকিউরিটি অ্যান্ড গ্রোথ ফর অল ইন দ্য রিজিয়ন) দৃষ্টিভঙ্গীতে তানজানিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। উভয় পক্ষই ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহমত প্রকাশ করে বলেছে, ভারতের সাগর দৃষ্টিভঙ্গীর সঙ্গে তানজানিয়ার এইউ দৃষ্টিভঙ্গী মিলে যায়। আফ্রিকায় শান্তি ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে এবং সমুদ্র অর্থনীতির বিকাশের উদ্দেশ্যে তানজানিয়া এই দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণ করেছে। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ পরিচালনার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে ভারত প্রতি বছর যে মহড়ার (হিউম্যানেটেরিয়ান অ্যাসিস্ট্যান্স ডিজাস্টার রিলিফ – এইচএডিআর) আয়োজন করে, তাতে তানজানিয়ার অংশগ্রহণকে স্বাগত জানানো হয়েছে।
৯. বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ে যৌথ কমিশন এবং নেতাদের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংলাপ চালিয়ে যেতে দুই দেশ সহমত হয়েছে। দুই দেশের বিদেশ মন্ত্রকের নীতি ও পরিকল্পনা সংক্রান্ত একটি বার্তালাপের সূচনা করতেও একমত হয়েছে ভারত ও তানজানিয়া।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা
১০. চলতি বছরের ২৮ ও ২৯ জুন আরুশায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় যৌথ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা কমিটির বৈঠক সফল হওয়ায় দুই নেতা সন্তোষপ্রকাশ করেছেন। এতে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সহযোগিতার আগামী ৫ বছরের পথনির্দেশিকা প্রণয়ন করা সম্ভব হয়েছে।
১১. ২০২২ সালের অগাস্ট এবং চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তানজানিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সফল ভারত সফরের কথা দু-পক্ষই স্মরণ করেছে। এই সময়ে দুই দেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পরিধি বাড়াতে সহমত হয়েছিল। দুলুটির কম্যান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজে ভারতীয় সামরিক প্রশিক্ষণ দল পাঠানোর প্রশংসা করেছে তানজানিয়া।
১২. দার এস সালামে ২০২২ সালের ৩১ মে এবং চলতি বছরের ২ অক্টোবর প্রতিরক্ষা প্রদর্শনের সফল আয়োজন করেছে তানজানিয়া। বেশকিছু ভারতীয় প্রতিরক্ষা সংস্থা এই প্রদর্শনী দুটিতে অংশগ্রহণ করেছিল। এর প্রেক্ষিতে দু-দেশ প্রতিরক্ষা শিল্পে সহযোগিতা আরও প্রসারিত করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তানজানিয়ার বাহিনী ও শিল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দু-পক্ষের সহযোগিতার অগ্রগতিতে সন্তোষপ্রকাশ করেছেন দুই নেতা।
সমুদ্র নিরাপত্তা
১৩. ভারত ও তানজানিয়া সমুদ্র প্রতিবেশী এবং দু-দেশকেই সমুদ্র নিরাপত্তা সংক্রান্ত অভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হয়। এই কথা মাথায় রেখে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সমুদ্র নিরাপত্তায় দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়াতে সহমত হয়েছে দুই দেশ। চলতি বছরের জুলাই মাসে প্রথম ভারত – তানজানিয়া যৌথ অর্থনৈতিক অঞ্চল নজরদারি মহড়ার সাফল্যে দুই দেশ সন্তোষপ্রকাশ করেছে। এই মহড়ার সময় ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ ত্রিশূল জানজিবার এবং দার এস সালামে গিয়েছিল। ২০২২ সালের অক্টোবর মাসেও দুই দেশের সমুদ্র মহড়ার আয়োজন করা হয়েছিল। সেই সময়ে ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ তারকাশ ওই মহড়ায় যোগ দেয়।
১৪. সম্প্রতি ভারত তানজানিয়ার প্রধান বন্দরগুলির যে সমীক্ষা চালিয়েছে, তানজানিয়া তার প্রশংসা করেছে। এক্ষেত্রে সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে সহমত হয়েছে দুই দেশ।
১৫. দুই নেতা তাঁদের সশস্ত্রবাহিনীর মধ্যে যোগাযোগ আরও বাড়াবার কথা বলেছেন। ভারতীয় জাহাজগুলির নিয়মিত ভাবে তানজানিয়ার বন্দরগুলিতে যাওয়ার এবং ভারত – তানজানিয়া ও মোজাম্বিককে নিয়ে প্রথম ত্রিদেশীয় সামুদ্রিক মহড়া আয়োজনের প্রশংসা করেছে দুই দেশ।
১৬. ভারত ও তানজানিয়ার মধ্যে জাহাজ চলাচল সংক্রান্ত তথ্য বিনিময়ের লক্ষ্যে কারিগরি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রশংসা করেছেন দুই নেতা।
সমুদ্র অর্থনীতি
১৭. পর্যটন, সামুদ্রিক বাণিজ্য, পরিষেবা ও পরিকাঠামো, সমুদ্র সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণা, সমুদ্রতল খননের ক্ষমতা, সমুদ্র সংরক্ষণ ও সমুদ্র নিরাপত্তায় ভারত সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে তানজানিয়া। শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ ও সুস্থিত ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল সুনিশ্চিত করতে দুই দেশ ভারত মহাসাগর রিম অ্যাসোসিয়েশনের অন্তর্গত হয়ে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহমত হয়েছে।
শিল্প ও বিনিয়োগ
১৮. দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে দুই পক্ষ এবং এজন্য বাণিজ্যের নতুন ক্ষেত্র অন্বেষণ করতে আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুপক্ষের বাণিজ্য ভারসাম্য বজায় রাখা এবং ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দলের সফরের আয়োজন, ব্যবসায়িক প্রদর্শনীর আয়োজন, ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের মধ্যে মতবিনিময়ের ব্যবস্থা প্রভৃতির মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধির লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
১৯. তানজানিয়ায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভারত প্রথম ৫টি দেশের মধ্যে রয়েছে। বর্তমানে তানজানিয়ায় ৩.৭৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে ৬৩০টি প্রকল্পের কাজ চালাচ্ছে ভারত। এতে ৬০ হাজার নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে তানজানিয়া স্বীকার করেছে। তানজানিয়ায় বিনিয়োগের প্রতি ভারতীয় ব্যবসায়ীরা যে আগ্রহ দেখাচ্ছেন তাকে স্বাগত জানিয়েছে দুই দেশ। তানজানিয়ায় একটি বিনিয়োগ পার্ক গড়ে তোলার বিষয়ে দুপক্ষ ভাবনা-চিন্তা করছে। এবিষয়ে তানজানিয়া পূর্ণ সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
২০. দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে স্থানীয় মুদ্রা অর্থাৎ ভারতীয় টাকা ও তানজানিয়ার শিলিং ব্যবহারের ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন দুই নেতা। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এই বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। লেনদেনও শুরু হয়ে গেছে। এই প্রক্রিয়াকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছে দুই পক্ষ।
২১. দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কৃষি সংক্রান্ত সহযোগিতা এক মজবুত স্তম্ভের মত কাজ করছে বলে দুই পক্ষ উল্লেখ করেছে। ভারতের ডিউটি ফ্রি ট্যারিফ প্রেফারেন্স – ডিএফটিপি প্রকল্পের মাধ্যমে তানজানিয়া থেকে আমদানি করা ৯৮ শতাংশ পণ্যই শুল্কমুক্ত হয়েছে। তানজানিয়ার কাজুবাদাম, মটর, মশলা, অ্যাভোকাডো ও অন্যান্য কৃষিপণ্য ব্যাপক ভাবে ভারতে আমদানি করা হয়। এই ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও বাড়াতে দুই দেশ সম্মত হয়েছে।
উন্নয়ন অংশীদারিত্ব
২২. জল, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সক্ষমতা বৃদ্ধি, মেধাবৃত্তি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে তানজানিয়া।
২৩. ভারত পানীয়জল পরিকাঠামো, কৃষি ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে তানজানিয়াকে ১.১ বিলিয়ন ডলারের যে ঋণ সহায়তা দিয়েছে তাতে দুই পক্ষ সন্তোষপ্রকাশ করেছে। এর সুবাদে তানজানিয়ার ২৪টি শহরে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে পানীয় জল প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। এগুলি শেষ হলে তানজানিয়ার ৬০ লক্ষেরও বেশি মানুষ উপকৃত হবেন।
২৪. ভারতের দেওয়া মেধাবৃত্তি ও সক্ষমতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত কর্মসূচি তাদের মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিপুল সহায়তা করছে বলে তানজানিয়া জানিয়েছে। ভারত তানজানিয়াকে কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিষয়ক ৪৫০টি এবং সংস্কৃতি বিষয়ক ৭০টি মেধাবৃত্তি দিয়েছে। এই দীর্ঘমেয়াদি মেধাবৃত্তির সংখ্যা ৭০ থেকে বাড়িয়ে চলতি বছরে ৮৫ করা হচ্ছে। এছাড়া স্মার্ট বন্দর, মহাকাশ, জৈব প্রযুক্তি, কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা, বিমান চলাচল প্রভৃতি ক্ষেত্রে ভারত তানজানিয়ার জন্য ১০০০টি স্লট বরাদ্দ করেছে।
শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
২৫. ভারতের পক্ষ থেকে তানজানিয়াকে মহাকাশ প্রযুক্তি এবং ইন্ডিয়া স্ট্যাকের অধীনে ইউনিফায়েড পেমেন্ট ইন্টারফেস (ইউপিআই) ও ডিজিটাল অনন্য পরিচয়পত্র (আধার) সহ ডিজিটাল পরিকাঠামো ক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
২৬. তানজানিয়া জানজিবারের পেম্বায় একটি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা এবং স্থানীয় বাজারের চাহিদার ভিত্তিতে পাঠ্যক্রম তৈরির ভারতীয় উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।
২৭. দার এস সালাম ইন্সটিটিউট অফ টেকনলোজি এবং আরুশার নেলসন ম্যান্ডেলার আফ্রিকান ইন্সটিটিউট ফর সায়েন্স অ্যন্ড টেকনলোজিতে দুটি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কেন্দ্র স্থাপনের যে সিদ্ধান্ত ভারত নিয়েছে, তানজানিয়া তাকে স্বাগত জানিয়েছে। আরুশার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কেন্দ্র আধুনিকীকরণের যে উদ্যোগ ভারত নিয়েছে, তাকেও স্বাগত জানিয়েছে তানজানিয়া।
জানজিবারে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ টেকনলোজি, মাদ্রাজের ক্যাম্পাস স্থাপন
২৮. ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ টেকনলোজি জানজিবারে বিদেশের মাটিতে তাদের প্রথম ক্যাম্পাস স্থাপন করতে চলেছে। দুই নেতা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। জানজিবারের আইআইটি, আফ্রিকা মহাদেশে কারিগরি শিক্ষার এক প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়ে উঠবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন তাঁরা। চলতি মাসেই এই প্রতিষ্ঠানে প্রথম ব্যাচের ক্লাস শুরু হচ্ছে।
মহাকাশ সহযোগিতা
২৯. চলতি বছরের ২৩ অগাস্ট চাঁদের মাটিতে চন্দ্রযান ৩-এর সফল অবতরণের জন্য তানজানিয়া ভারতকে অভিনন্দন জানিয়েছে।
৩০. ভারত তানজানিয়াকে মহাকাশ প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে, তানজানিয়া এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য
৩১. স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দু-দেশের মধ্যে যে সুদৃঢ় সহযোগিতা রয়েছে, উভয় পক্ষ তার পুনর্ব্যাক্ত করেছে। এই প্রসঙ্গে চলতি বছরের জুলাই মাসে তানজানিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী উম্মি মোয়ালিমুর ভারত সফর এবং গত বছরের অগাস্ট মাসে ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর যৌথ প্রতিনিধি দলের তানজানিয়া সফরের উল্লেখ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও বাড়াতে দুই দেশ সহমত পোষণ করেছে।
৩২. রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ভারত তানজানিয়াকে ১০টি অ্যাম্বুলেন্স উপহার দিয়েছে। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে তানজানিয়া।
৩৩. ২০১৯ সালে রেডিয়েশন থেরাপির মেসিন ভাবাট্রন ২, অত্যাবশ্যক ওষুধপত্র, কৃত্রিম অঙ্গ প্রদানের শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। এতে তানজানিয়ার ৫২০ জন উপকৃত হন। উভয় পক্ষ এই চমৎকার উদ্যোগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে।
নাগরিক সংযোগ ও সাংস্কৃতিক বিনিময়
৩৪. দুই নেতা নাগরিক সংযোগ, সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান, শিক্ষাগত সংযোগ ও পর্যটনের বিকাশের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। তানজানিয়ার প্রবাসী ভারতীয়রা যেভাবে দুটি দেশের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করছেন এবং তানজানিয়ার অর্থনীতি ও সমাজে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন, দুই পক্ষই তার ভূয়সী প্রশংসা করে।
৩৫. সাংস্কৃতিক বিনিয়োগের ওপর গুরুত্ব দিয়ে ২০২৩-২৭ সময়কালের জন্য এসংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের প্রশংসা করেছে দুই পক্ষ। ভারত আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে দিল্লির ফরিদাবাদের সুরজকুন্ড মেলায় অংশীদার দেশ হিসেবে তানজানিয়াকে যোগদানের আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
৩৬. দু-দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের উল্লেখ করে একে আরও জোরদার করে তুলতে দুপক্ষ সহমত হয়েছে।
৩৭. তানজানিয়ায় কবাডি খেলা শেখাতে দুজন ভারতীয় প্রশিক্ষক নিয়োগ করায় তানজানিয়া ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
৩৮. দু-দেশের বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভাবনা কেন্দ্রগুলির মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ বিনিময়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন দুই নেতা।
আঞ্চলিক বিষয়
৩৯. চলতি বছরের জুলাইতে আফ্রিকান হিউম্যান ক্যাপিটাল হেডস অফ স্টেট এবং সেপ্টেম্বরে আফ্রিকা ফুড সিস্টেম – এই দুটি শীর্ষ সম্মেলনের সফল আয়োজনের জন্য তানজানিয়াকে অভিনন্দন জানিয়েছে ভারত।
আন্তর্জাতিক বিষয়
৪০. পূর্ব আফ্রিকার গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করায় ভারত তানজানিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
৪১. আন্তর্জাতিক মঞ্চে দুদেশের দৃষ্টিভঙ্গীর মধ্যে সাযুজ্য রয়েছে বলে দুই নেতা জানিয়েছেন। উভয় পক্ষই রাষ্ট্রসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষায় উদ্যোগ নিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা উন্নয়ন গোষ্ঠীর উদ্যোগে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে তানজানিয়ার অবদানের কথাও উঠে এসেছে।
৪২. দু-দেশই রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সম্প্রসারণের পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছে। ২০২১-২২ এবং ২০২৮-২৯ সালে রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে ভারতের দাবিকে সমর্থনের জন্য তানজানিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়েছে ভারত।
৪৩. জি-২০ শেখর সম্মেলনের সফল আয়োজন এবং জি-২০-র সভাপতিত্বের জন্য তানজানিয়া ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। জি-২০-তে আফ্রিকান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্তির জন্য ভারতের উদ্যোগের প্রশংসা করেছে তানজানিয়া। অন্যদিকে ভারতও তানজানিয়ার সমর্থনের জন্য সেদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
৪৪. ইন্টারন্যাশনাল বিগ ক্যাট অ্যালায়েন্স এবং গ্লোবাল বায়োফুয়েল অ্যালায়েন্সে তানজানিয়ার যোগদানকে স্বাগত জানিয়েছে ভারত। কোয়ালিশন ফর ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার-এও তানজানিয়ার যোগদানের দিকে ভারত তাকিয়ে রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
৪৫. দুই নেতা সমস্ত ধরনের সমস্ত আকারের সন্ত্রাসবাদের কঠোর নিন্দা করেছে। বিশ্ব শান্তি, নিরাপত্তা ও সুস্থিতির সামনে সন্ত্রাসবাদই সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ এবং কড়া হাতে এর মোকাবিলা করা দরকার বলে মত পোষণ করেছেন তাঁরা।
৪৬. ভারতে উষ্ণ অভ্যর্থনা ও আতিথেয়তার জন্য তানজানিয়ার রাষ্ট্রপতি সামিয়া সুলুহু হাসান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী ভারত সফরের জন্য তানজানিয়ার রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁর সুস্বাস্থ্য এবং তানজানিয়ার মানুষের সমৃদ্ধি প্রার্থনা করেছেন।