প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ফেডারেল চ্যান্সেলর ওলফ স্কোলজ ২৫ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে নতুন দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ভারত-জার্মানি ইন্টার-গভর্মেন্টাল কনসালটেশনস-এর সপ্তম পর্বের বৈঠকে যৌথ সভাপতিত্ব করেন। ভারতের পক্ষে প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন প্রতিরক্ষা, বিদেশ, বাণিজ্য ও শিল্প, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (প্রতিমন্ত্রী) এবং দক্ষতা উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী। জার্মানির পক্ষে ছিলেন সেদেশের আর্থিক বিষয়ক ও জলবায়ু, বিদেশ বিষয়ক, শ্রম ও সামাজিক বিষয়ক এবং শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক মন্ত্রীরা। সেই সঙ্গে ছিলেন দু-দেশের পদস্থ আধিকারিকরা।
২. প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জার্মান চ্যান্সেলর ওলফ স্কোলজ তাঁর তৃতীয়বারের ভারত সফরকে স্বাগত জানান। দুই নেতাই সরকারি স্তর, শিল্প, নাগরিক সমাজ এবং শিক্ষা সহ ক্ষেত্রে দুদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
৩. দুই নেতাই দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এশিয়া-প্যাসিফিক কনফারেন্স অফ জার্মান বিজনেস (এপিকে)-এর গুরুত্বের ওপর জোর দেন এবং ভারত, জার্মানি ও ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আর্থিক বোঝাপড়া ও কৌশলগত অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করার কথা উল্লেখ করেন।
৪. সপ্তম আইজিসি বৈঠকে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন, শ্রম ও মেধা, জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপ, পরিবেশ, অর্থ, প্রতিরক্ষা এবং কৌশলগত বোঝাপড়ার ওপর জোর দেওয়া হয়। বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, উদ্ভাবন, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, উন্নয়নমূলক সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, জীব বৈচিত্র এবং মানুষে মানুষে যোগাযোগ নিয়ে দুই পক্ষই সহমত হয়েছে।
৫. বিজ্ঞান গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে আন্তঃ-সরকারস্তরীয় চুক্তির এ বছর ৫০তম বর্ষ উদযাপিত হচ্ছে। এই উপলক্ষে সপ্তম আইজসি-তে ভারত ও জার্মানির মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
৬. ষষ্ঠ আইজসি-তে গ্রিন অ্যান্ড সাস্টেনেবল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ (জিএসডিপি)-এর কথা ঘোষণা করেছিল দুই দেশ। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে দুই দেশের মধ্যে মাইগ্রেশন অ্যান্ড মবিলিটি পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (এমএমপিএ) স্বাক্ষরিত হয় এবং ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে "ইন্ডিয়া - জার্মানি ভিশন টু এনহ্যান্স কো-অপারেশন ইন ইনোভেশন অ্যান্ড টেকনোলজি"-র সূচনা করা হয়। সেই সূত্রে শান্তি, সুরক্ষা এবং স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে উভয় সরকারের পক্ষ থেকে "ইন্ডিয়া-জার্মানি ইনোভেশন অ্যান্ড পার্টনারশিপ রোডম্যাপ"-এর সূচনা করা হয়।
৭. দুই নেতা গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব, আন্তর্জাতিক শান্তি ও সুরক্ষার ক্ষেত্রে পারস্পরিক অঙ্গীকারের কথা জানান। বাস্তবতা মেনে এবং ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী ও অস্থায়ী সদস্যপদের ক্ষেত্রে সম্প্রসারণ সহ বহুমাত্রিক ব্যবস্থার সংস্কারের ওপর জোর দেন দুই নেতা।
৮. ভারত এবং জার্মানি এ বিষয়ে এক মত হয়েছে যে, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সমস্যার মোকাবিলায় রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার প্রয়োজন। "গ্রুপ অফ ফোর (জি৪)"-এর সদস্য হিসেবে ভারত এবং জার্মানি নিরাপত্তা পরিষদকে দক্ষ, কার্যকর, স্বচ্ছ এবং একুশ শতকের বাস্তবতার উপযোগী করে তোলার ডাক দেন দুই নেতা।
৯. দুই নেতা ইউক্রেনে যুদ্ধ এবং মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রসংঘের সনদ মেনে সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখন্ডতা বজায় রেখে এই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর জোর দেন তাঁরা। তাঁদের মতে, ইউক্রেনের এই যুদ্ধ আন্তর্জাতিক খাদ্য ও শক্তির সুরক্ষার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এই প্রসঙ্গে পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার বা ব্যবহারের হুমকি গ্রহণযোগ্য নয় বলেও মনে করেন তাঁরা।
১০. মধ্য প্রাচ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও তাঁরা মত বিনিময় করেন। ২০২৩-এর ৭ অক্টোবর হামাসের জঙ্গি হামলার নিন্দা করেন তাঁরা এবং গাজায় বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় তাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। হামাসের হাতে সমস্ত পণবন্দির মুক্তির দাবি জানান তাঁরা এবং অবিলম্বে অস্ত্র বিরতির পক্ষে সওয়াল করেন। দুই নেতাই মানুষের জীবনরক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন এবং মানুষের কাছে ত্রাণ সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার পক্ষে মত দেন। এক্ষেত্রে সব পক্ষের কাছে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আবেদন জানান তাঁরা। দুই নেতা লেবাননের পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কূটনৈতিক পথে গাজা এবং লেবাননের সমস্যা সমাধানের ওপর জোর দেন তাঁরা।
১১. দুই নেতাই বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ হিসেবে সুরক্ষা, সমৃদ্ধি ও ধারাবাহিক উন্নয়নে ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিন্ন স্বার্থের কথা তুলে ধরেন। তাঁরা জোর দিয়ে বলেন, ভারত-ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে শুধুমাত্র দুই পক্ষই উপকৃত হবে না, সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এর সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। বাণিজ্য, প্রযুক্তি এবং সুরক্ষার ক্ষেত্রে ভারত ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাণিজ্য ও প্রযুক্তি পরিষদকে সাহায্য করার ওপর জোর দেন তাঁরা। ভারত-মধ্য প্রাচ্য-ইউরোপ আর্থিক করিডর সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্তরে সহযোগিতা নিয়ে দুই নেতা একমত হন।
১২. দুই নেতাই ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি, বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি এবং ভৌগোলিক সূচক সংক্রান্ত চুক্তির গুরুত্বের কথা বলেন।
১৩. দুই নেতাই যে কোনও ধরনের সন্ত্রাসবাদ এবং হিংসাত্মক কার্যকলাপের নিন্দা করেন। দুই পক্ষই সন্ত্রাসবাদকে আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে বড় বিপদ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে একযোগে পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দেন তাঁরা।
১৪. দুই নেতাই মানবহীন এয়ারক্র্যাফ্ট ব্যবস্থা, সন্ত্রাসবাদীদের ব্যবহৃত ভার্চুয়াল সম্পদ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
১৫. সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার কাঠামোকে মজবুত করার ক্ষেত্রে অঙ্গীকারের কথা জানিয়ে জঙ্গিদের অস্ত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধ কঠোর করার ওপর জোর দেন তাঁরা। সন্ত্রাসবাদ দমনে যৌথ কর্মীগোষ্ঠীর মধ্যে নিয়মিত শলাপরামর্শের ওপর জোর দেন দুই নেতা। জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি, জঙ্গিদের ইন্টারনেট ব্যবহার এবং সীমান্তে জঙ্গিদের তৎপরতা নিয়ে পারস্পরিক তথ্য বিনিময়ের ব্যাপারে একমত হয়েছে দুই পক্ষ।
১৬. সন্ত্রাসবাদ সহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ দমন, তদন্ত এবং অপরাধীদের সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে দুই দেশের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা সুনিশ্চিত করতে ভারত ও জার্মানি মিউচুয়াল লিগাল অ্যাসিস্ট্যান্স ট্রিটি ইন ক্রিমিন্যাল ম্যাটার্স (এমএলএটি) চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। সুরক্ষা সহযোগিতাকে মজবুত করার ক্ষেত্রে এমএলএটি-কে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত করেছে দুই নেতা।
১৭. সুরক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতাকে আরও গভীর করার লক্ষ্যে দুই দেশই এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড মিউচুয়াল প্রোটেকশন অফ ক্লাসিফায়েড ইনফরমেশন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।
১৮. বিদেশ নীতির ক্ষেত্রে পশ্চিম এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকা (ডব্লুএএনএ) নিয়ে ভারত ও জার্মানির মধ্যে বিদেশমন্ত্রী স্তরে আলাপ-আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই দেশ। নীতি নির্ধারণ, সাইবার-সুরক্ষা, রাষ্ট্রসঙ্ঘ সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নিয়মিত শলাপরামর্শ নিয়ে সন্তোষপ্রকাশ করেছে দুই দেশ।
১৯. চিন্তাবিদ, বিদেশ ও সুরক্ষা নীতি বিশেষজ্ঞ সহ দুই দেশ ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স (আইসিডব্লুএ), রিসার্চ অ্যান্ড ইনফর্মেশন সিস্টেম ফর ডেভলপিং কান্ট্রিজ (আরআইএস) এবং বিদেশমন্ত্রকের সঙ্গে জার্মান ইন্সটিটিউট ফর গ্লোবাল অ্যান্ড এরিয়া স্টাডিজ (জিআইজিএ), জার্মান ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিট অ্যাফেয়ার্স (এসডব্লুপি) এবং জার্মান ফেডেরাল বিদেশ কার্যালয়ের মধ্যে ভারত-জার্মানি ট্র্যাক ১.৫ বৈঠকের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে দুই সরকার।
২০. আন্তর্জাতিক আইন, পারস্পরিক সার্বভৌমত্বকে সম্মান, বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের মাধ্যমে অবাধ, উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল গড়ে তুলতে দুই পক্ষ অঙ্গীকারবদ্ধ। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় সামুদ্রিক উদ্যোগ (আইপিওআই)-এ জার্মানির নেতৃত্বদানকে স্বাগত জানিয়েছে ভারত।
২১. সফলভাবে জি২০-র সভাপতিত্ব করার জন্য ভারতকে অভিনন্দন জানিয়েছে জার্মানি। ভারতের জি২০-র সভাপতিত্বে আফ্রিকান ইউনিয়নকে স্থায়ী সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির প্রশংসা করেছে জার্মানি।
২২. প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে বোঝাপড়াকে গুরুত্ব দিয়ে রপ্তানির ক্ষেত্রে দ্রুত ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য জার্মান সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে ভারত। দুই দেশের প্রতিরক্ষা শিল্পে যৌথ উন্নয়ন, যৌথ উৎপাদন এবং যৌথ গবেষণাকে উৎসাহিত করার ব্যাপারে দুই দেশ একমত হয়েছে।
২৩. দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর নিয়মিত সফর এবং মতবিনিময়ের পাশাপাশি আগামী বছর ভারতে অনুষ্ঠেয় উচ্চ প্রতিরক্ষা কমিটি (এইচডিসি)-র বৈঠকের দিকে তাকিয়ে রয়েছে দুই দেশ। কৌশলগত অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে দুই দেশের এই বৈঠক বিশেষ গুরুত্ব পেতে চলেছে।
২৪. সমৃদ্ধি ও সুরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গুরুত্বের কথা দুই পক্ষের আলোচনায় উঠে আসে। ফেডারেল সরকারের নীতি মেনে জার্মানি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তাদের অংশগ্রহণ আরও বৃদ্ধি করবে। আন্তর্জাতিক আইন মেনে অবাধ নৌচলাচল এবং বাধাবিঘ্নহীন সামুদ্রিক রুটের গুরুত্বের ওপর জোর দেন তাঁরা। ভারত ও জার্মানির সশস্ত্রবাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক লজিস্টিক সহায়তা ও বিনিময় এবং প্রতিরক্ষা ও সুরক্ষার ক্ষেত্রে বোঝাপড়াকে আরও মজবুত করতে দুই দেশ যৌথ সমঝোতা চুক্তির ব্যাপারে সহমত হয়েছে।
২৫. ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে জার্মানির ক্রমবর্ধমান ভূমিকাকে স্বাগত জানিয়েছে দুই দেশ। ২০২৪-এর অগাস্টে ভারত ও জার্মানির বায়ুসেনার সফল মহড়া 'তরঙ্গ শক্তি'-র প্রশংসা করেছেন দুই নেতা।
২৬. গবেষণা, যৌথ বিকাশ এবং যৌথ উৎপাদনমূলক কাজকর্মের মাধ্যমে সুরক্ষা এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দুই দেশ দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়া বাড়াতে সম্মত হয়েছে। এক্ষেত্রে দুই দেশ প্রতিরক্ষায় শিল্পস্তরে পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা করবে। প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ও প্রতিরক্ষা উৎপাদনের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হবে।
২৭. ভারত ও জার্মানির মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘ ৫০ বছরের সফল সহযোগিতা নিয়ে দুই নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং এই বোঝাপড়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন। পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, স্টার্টআপ, সেমিকন্ডাক্টর, এআই এবং কোয়ান্টাম প্রযুক্তি, জলবায়ুর বিপদ প্রভৃতি ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি স্তরে গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তাঁরা একমত হন।
২৮. গবেষণা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিনিময় এবং জার্মানিতে ভারতীয় পড়ুয়াদের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে দুই নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ প্রসঙ্গে ইন্দো-জার্মান সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি সেন্টার (আইজিএসটিসি)-র ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন তাঁরা। প্রযুক্তির নতুন নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপরও জোর দেন তাঁরা।
২৯. দুই নেতা দুদেশের মধ্যে গড়ে ওঠা ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ ট্রেনিং গ্রুপ (আইআরটিজি)-র কথা উল্লেখ করেন এবং মৌলিক গবেষণার ক্ষেত্রে এর ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।
৩০. দুই নেতা ফেসিলিটি ফর অ্যান্টি-প্রোটোন অ্যান্ড আয়ন রিসার্চ (এফএআইআর)-এ ভারতের অংশগ্রহণ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে এফএআইআর-এর সুযোগসুবিধা রূপায়ণে আর্থিক সহায়তার অঙ্গীকার করেন তাঁরা।
৩১. উচ্চ শিক্ষা, গবেষণা এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিকে তাঁরা স্বাগত জানান। "জল সুরক্ষা ও আন্তর্জাতিক পরিবর্তন" কর্মসূচিতে ভারত-জার্মান যৌথ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদানে পুরোপুরি সহায়তার অঙ্গীকার করেন তাঁরা। আইআইটি খড়গপুর এবং ডিএএডি-এর মধ্যে মউ স্বাক্ষরকেও দুই দেশ স্বাগত জানিয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত ও জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সহযোগিতা প্রকল্পে যৌথ আর্থিক সহায়তার পথ সুগম হবে।
৩২. ডিজিটাল এবং প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্বকে আরও মজবুত করতে দুই দেশ ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্টট্রাকচার (ডিপিআই)-এর ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ও পারদর্শিতাকে কাজে লাগাতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। ডিপিআই-এর ক্ষেত্রে ভারতের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে জার্মানি উপকৃত হতে পারে। উদ্ভাবন এবং ডিজিটাল পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ভারতের তথ্য প্রযুক্তি শিল্পকে কাজে লাগানোর ব্যাপারেও একমত হয়েছে দুই দেশ।
৩৩. এসডিজি-কে এগিয়ে নিয়ে যেতে এআই-কে কাজে লাগানো এবং এআই পরিচালনার ক্ষেত্রে উদ্ভাবন-বান্ধব, ভারসাম্যমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং মানব-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গীর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে দুই পক্ষ। কৃষকদের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা, জলবায়ু সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এআই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। ডিজিটাল কৃষি, এআই-এর ক্ষেত্রে বর্তমান সহযোগিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ।
৩৪. প্রযুক্তি, উদ্ভাবন এবং দক্ষতা উন্নয়নের মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে কৌশলগত গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে দুই পক্ষ। এক্ষেত্রে উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্বের রোডম্যাপ অনুযায়ী দুই দেশই প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
৩৫. প্রাকৃতিক বিপর্যয়, সুনামি সতর্কতা, আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা, বিপর্যয়ের ঝুঁকি কমানো, জীবন বিজ্ঞান ও জৈব ভূ-রসায়ন, ভূ-পদার্থবিদ্যার মতো ক্ষেত্রে বোঝাপড়াকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে দুই দেশের মধ্যে মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে।
৩৬. জীববিজ্ঞান, ভৌতবিজ্ঞান এবং গণিতের ক্ষেত্রে ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস (এনসিবিএস) এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর থিওরিটিক্যাল সায়েন্সেস (আইসিটিএস)-এর মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে দুই দেশ। এই চুক্তির ফলে বিজ্ঞানী, গবেষক, পড়ুয়া বিনিময় প্রক্রিয়া সহজ হবে।
৩৭. জার্মানি নিউস্ট্রেলিৎজ আন্তর্জাতিক গ্রাউন্ড স্টেশনকে আরও আধুনিক করার লক্ষ্যে মেসার্স নিউ স্পেস ইন্ডিয়া লিমিটেড এবং মেসার্স জিএএফ এজি-র মধ্যে সহযোগিতার প্রশংসা করেছেন দুই নেতা।
৩৮. শূন্য কার্বন নিঃসরণ অর্জনের লক্ষ্যে দুই নেতা সবুজ স্থায়ী, জলবায়ু উপযোগী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক এবং বহুপক্ষীয় সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন তাঁরা। এক্ষেত্রে প্যারিস চুক্তি মেনে অংশীদারিত্বের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন তাঁরা।
৩৯. দুই নেতাই মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের অগ্রগতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে নিয়মিত আলাপ-আলোচনা ও মতবিনিময়ের ওপর জোর দেন। জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সমস্যার মোকাবিলায় দুই দেশ একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে।
৪০. জিএসডিপি-র অধীনে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে :
ক) ইন্দো-জার্মান গ্রিন হাইড্রোজেন রোডম্যাপের সূচনা। এই রোডম্যাপ গ্রিন হাইড্রোজেনের উৎপাদন, ব্যবহার এবং রপ্তানি বাড়াতে সাহায্য করবে।
খ) জিএসডিপি ড্যাসবোর্ড চালু। এর মাধ্যমে ভারত ও জার্মানির মধ্যে উদ্ভাবন ও অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে।
গ) আর্থিক ও সামাজিক অগ্রগতির পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব নগরায়নের লক্ষ্যে যৌথ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর।
ঘ) আন্তর্জাতিক সৌর জোট (আইএসএ)-এর সাফল্য এবং ভবিষ্যৎ কর্মসূচির প্রশংসা এবং এই সহযোগিতাকে আরও বাড়ানোর ব্যাপারে মতৈক্য হয়েছে।
ঙ) বনসৃজন এবং অরণ্য ধ্বংসের বিরুদ্ধে সহযোগিতার প্রশংসা এবং রিও কনভেনশন মেনে বনভূমি রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণের প্রশংসা।
৪১. দুই নেতাই স্বীকার করেছেন যে, ভারত এবং জার্মানির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আর্থিক সম্পর্ককে মজবুত করা, আর্থিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করা এবং আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলার ক্ষেত্রে ইন্দো-জার্মান এনার্জি ফোরাম (আইজিইএফ) এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
৪২. গত সেপ্টেম্বরে গান্ধীনগরে অনুষ্ঠিত চতুর্থ গ্লোবাল রি-ইনভেস্ট রিনিউয়েবল এনার্জি ইনভেস্টর মিট অ্যান্ড এক্সপো-র ভূমিকা নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা হয়। এই মঞ্চ ভারত ও বিশ্বে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির সম্প্রসারণকে ত্বরান্বিত করবে।
৪৩. জীব বৈচিত্রের ক্ষেত্রে যৌথ কর্মীগোষ্ঠীর মাধ্যমে পারস্পরিক সহযোগিতাকে মজবুত করার ব্যাপারে দুই দেশ তাদের সদিচ্ছা প্রকাশ করেছে।
৪৪. ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সার্কুলার ইকোনোমি সংক্রান্ত যৌথ কর্মীগোষ্ঠীর ভূমিকার কথা তুলে ধরে দুই দেশ সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছে। ইন্দো - জার্মান পরিবেশ সহযোগিতার সফল রূপায়ণেরও প্রশংসা করেছেন তাঁরা।
৪৫. দুই নেতা ট্র্যাঙ্গুলার ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন (টিডিসি)-র আওতায় অগ্রগতির কথা উল্লেখ করেন। আফ্রিকা, এশিয়া ও অন্য দেশগুলিতে জলবায়ুর ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন তাঁরা। বিভিন্ন অংশীদারদের কাছে পৌঁছতে দুই দেশ একটি যৌথ স্টিয়ারিং কমিটি এবং যৌথ রূপায়ণ গোষ্ঠী তৈরি করেছে।
৪৬. দুই নেতা লিঙ্গ সমতার ওপর জোর দেন এবং মহিলাদের ক্ষমতায়নে বিনিয়োগের কথা বলেন। আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় মহিলাদের সমান এবং কার্যকর অংশীদারিত্ব বাড়াতে মহিলা পরিচালিত উন্নয়নকে উৎসাহিত করার ওপর জোর দেন দুই নেতা।
৪৭. জিএসডিপি-র আওতায় আর্থিক এবং কারিগরি সহযোগিতার ক্ষেত্রে যে সব মাইলফলক অর্জিত হয়েছে, দুই নেতা তাকে স্বাগত জানান। এগুলি হল :
ক) জিএসডিপি-র মূল ক্ষেত্রগুলিতে এক বিলিয়নের বেশি ইউরো লগ্নির ব্যাপারে নতুন অঙ্গীকার।
খ) ইন্দো-জার্মান রিনিউয়েবল এনার্জি পার্টনারশিপ অনুযায়ী, উদ্ভাবনমূলক সৌরশক্তি, গ্রিন হাইড্রোজেন, অন্যান্য অচিরাচরিত শক্তি, গ্রিড সমন্বয়, স্টোরেজ এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
গ) "অ্যাগ্রোইকোলজি অ্যান্ড সাস্টেনেবল ম্যানেজমেন্ট অফ ন্যাচারাল রিসোর্সেস"-এর সহযোগিতার মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে বিপন্ন মানুষ এবং ক্ষুদ্র চাষীরা উপকৃত হবেন। এর ফলে তাঁদের আয়, খাদ্য সুরক্ষা, মাটির স্বাস্থ্য, জৈব বৈচিত্র এবং জল সুরক্ষা বৃদ্ধি পাবে।
ঘ) শহরাঞ্চলের উন্নয়নে দুই দেশই পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ওপর জোর দিয়েছে।
৪৮. দুই নেতাই সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সন্তোষপ্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন, ভারত ও জার্মানির মধ্যে উভয়মুখী বিনিয়োগ শক্তিশালী হলে, আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খলে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
৪৯. দুই নেতাই ভারতে জার্মান বাণিজ্য এবং জার্মানিতে ভারতের বাণিজ্যের কথা তুলে ধরেন এবং দুই দেশের আর্থিক ও বাণিজ্যিক ভিত্তিকে মজবুত করার লক্ষ্যে কাজ করতে একমত হন।
৫০. আর্থিক অগ্রগতি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প সংস্থাগুলির গুরুত্বের কথা স্বীকার করেন দুই নেতা। এই প্রসঙ্গে স্টার্টআপগুলির ভূমিকার কথা উঠে আসে। ভারতীয় স্টার্টআপগুলি জার্মানির বাজারে সাফল্য পাচ্ছে এবং বিদেশের আর্থিক সহযোগিতাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
৫১. মাইগ্রেশন অ্যান্ড মোবিলিটি পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (এমএমপিএ)-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দুই দেশ শ্রমিক অভিবাসনের ক্ষেত্রে বৈধ এবং আইনি বিধিনিষেধ মেনে চলতে অঙ্গীকারবদ্ধ। নিয়োগ প্রক্রিয়া, ভিসা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা সহ আন্তর্জাতিক নীতি মেনে অভিবাসন প্রাপ্ত শ্রমিকদের যথেষ্ট মর্যাদা এবং সম্মান প্রদান করা হয়।
৫২. কর্মসংস্থান ও শ্রমিক, পারস্পরিক স্বার্থে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা ও বিনিময় বৃদ্ধির লক্ষ্যে দুই দেশ একটি জেডিআই-এ স্বাক্ষর করেছে। পেশাগত রোগ-ব্যধি, শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে দুই নেতা সমঝোতা সৃষ্টিতে আগ্রহের কথা জানিয়েছে।
৫৩. দুই নেতা জানিয়েছেন, জার্মানিতে এক চতুর্থাংশ ভারতীয় পেশাদারের ব্লু কার্ড রয়েছে এবং জার্মানিতে বিশ্বের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ভারতীয়রাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। ভারত হল তরুণ, শিক্ষিত এবং দক্ষ ব্যক্তিদের দেশ, যা জার্মানির ক্রমবর্ধমান বাজারে সম্পদ হতে পারে।
৫৪. দক্ষতা উন্নয়ন এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে মউ স্বাক্ষর নিয়ে দুই নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেন।
৫৫. উচ্চ মাধ্যমিক, বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা কেন্দ্র সহ ভারতে জার্মান ভাষার শিক্ষার প্রসার ঘটাতে দুই দেশ অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে। ভারত এবং জার্মানি দুই দেশের সমস্ত রাষ্ট্র, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে ভারত ও জার্মানিরদ ভাষার শিক্ষার ব্যাপারে দুই দেশ একমত হয়েছে।
৫৬. আর্থিক অগ্রগতিতে দক্ষ পেশাদারদের ভূমিকার কথা স্বীকার করেছে দুই দেশ। "পার্টনারিং ইন বিজনেস উইথ জার্মানি" কর্মসূচির আওতায় ভারতের কর্পোরেট এক্সিকিউটিভ এবং জুনিয়র এক্সিকিউটিভদের উন্নত প্রশিক্ষণের সাফল্য নিয়ে দুই দেশ সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
৫৭. এমএমপিএ অনুযায়ী অনিয়মিত অভিভাষণের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দুই দেশের মতৈক্য রয়েছে। এক্ষেত্রে এপর্যন্ত যা অগ্রগতি হয়েছে, তাকে স্বাগত জানিয়েছে উভয় পক্ষ এবং উপযুক্ত পদ্ধতিগত ব্যবস্থার মাধ্যমে এই সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়েছে দুই দেশ।
৫৮. দুই পক্ষের মধ্যে ক্রমবর্ধমান চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন দুই নেতা এবং সমস্ত বিষয়ে এবং দূতাবাস সংক্রান্ত সমস্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পক্ষে মত দিয়েছেন দুই নেতা। ভিসা সহ অন্যান্য বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে তাঁরা একমত হয়েছেন।
৫৯. সাংস্কৃতিক দূত, উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করা এবং দুই দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে তরুণদের ভূমিকার কথা স্বীকার করেছে উভয় পক্ষ। এই প্রসঙ্গে দুই নেতা তরুণদের মধ্যে সহযোগিতা এবং দুই পক্ষের মধ্যে প্রতিনিধি পর্যায়ে যোগাযোগের জন্য বিশেষ মঞ্চ গঠনের ওপর জোর দিয়েছেন দুই নেতা।
৬০. সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে কাজকর্ম নিয়ে উভয় পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছে এবং সংগ্রহালয়, সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারিত করতে মউ স্বাক্ষরের প্রয়াসকে স্বাগত জানিয়েছেন দুই নেতা।
৬১. জি২০ নতুন দিল্লি ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জাতীয়, আঞ্চলিক এবং রাজ্য স্তরে সাংস্কৃতিক সম্পদের অবৈধ পাচারের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে দুই নেতা তাঁদের অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছেন। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের আলাপ-আলোচনার ওপর জোর দিয়েছেন তাঁরা।
৬২. জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ভারতীয় অ্যাকাডেমিক চেয়ার স্থাপনের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা বিনিময়ের ক্ষেত্রে যে সাফল্য এসেছে, তার প্রশংসা করেছে দুটি দেশ।
৬৩. সপ্তম আইজিসি-তে যেসব বক্তব্য উঠে এসেছে, সেসম্পর্কে দুই নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং ভারত-জার্মান কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও মজবুত করার অঙ্গীকার করেন। চ্যান্সেলর স্কোলজ উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ধন্যবাদ জানান এবং জার্মানিতে পরবর্তী আইজিসি আয়োজনের ব্যাপারে তাঁর অধীর প্রতীক্ষার কথা জানান।