আজ স্টকহোমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী লার্সলোক্কে রাসমুসেন, ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জুহা সিপিলা, আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী কাট্রিন জ্যাকবসদোত্তির নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী এরনা সোলবার্গ এবং সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন লফভেন এক শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীদের আলোচনাকালে ভারতের সঙ্গে উত্তর ইউরোপ এবং উত্তর আটলান্টিকের দেশগুলির সহযোগিতা প্রচেষ্টাকে আরও নিবিড় করে তোলার সংকল্প গ্রহণ করা হয়। বিশ্ব নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক বিকাশ ও অগ্রগতি, উদ্ভাবন প্রচেষ্টা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যার মতো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও তাঁরা মত বিনিময় করেন। অন্তর্ভুক্তিমূলক বিকাশ এবং নিরন্তর উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থা যে একটি অনুঘটকের ভূমিকা পালন করতে পারে, সে প্রশ্নে সহমত প্রকাশ করেন সকল প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠকে উদ্ভাবন এবং ডিজিটাল রূপান্তর প্রচেষ্টাকে পরস্পর সংযুক্ত বিশ্ব রাষ্ট্রগুলির এক বিশেষ চালিকাশক্তি হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বলা হয় যে, এর মধ্য দিয়ে উত্তর ইউরোপ এবং উত্তর আটলান্টিক অঞ্চলের দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সংযোগ ও যোগাযোগের প্রসার ঘটতে পারে। এই দেশগুলি যে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উদ্ভাবন প্রচেষ্টায় বিশেষ নেতৃত্বদান করতে পারে, সেই প্রশ্নেও সকলে একমত হন। সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্র এবং সেই সঙ্গে শিক্ষা ক্ষেত্রকে সঙ্গে নিয়ে উদ্ভাবন প্রচেষ্টার কাজে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবকে বৈঠকে সমর্থন জানানো হয়। বলা হয় যে, ভারতে মেধা ও দক্ষতার কোনও অভাব নেই। সুতরাং, নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণে তা নিশ্চিতভাবেই ব্যবহার করা যেতে পারে।
নিরন্তর উন্নয়নের লক্ষ্যে ভারত উদ্ভাবন এবং ডিজিটাল পদ্ধতির প্রয়োগ ও ব্যবহারের জন্য যে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছে, সেই প্রসঙ্গে মেক ইন ইন্ডিয়া কর্মসূচি, স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া, ডিজিটাল ইন্ডিয়া এবং স্বচ্ছ ভারত কর্মসূচির বিশেষ প্রশংসা করা হয়। এই প্রসঙ্গে নির্মল প্রযুক্তি, সামুদ্রিক সমস্যার সমাধান, বন্দর আধুনিকীকরণ, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, স্বাস্থ্য, জীবন বিজ্ঞান এবং কৃষি সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে উত্তর ইউরোপ এবং উত্তর আটলান্টিকের দেশগুলি যে সমাধান প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তার কথাও উল্লেখ করা হয়। ভারত সরকারের স্মার্টনগরী কর্মসূচিটিকে সহায়তাদানের লক্ষ্যে ঐ দেশগুলি যে নিরন্তর নগরায়ন প্রকল্পের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তাকে বৈঠকে স্বাগত জানানো হয়।
শীর্ষ বৈঠকে অংশগ্রহণকারী প্রধানমন্ত্রীরা বিশেষ জোর দিয়ে বলেন যে, ভারত সহ এই দেশগুলির যে বিশেষ দক্ষতা ও ক্ষমতা রয়েছে, তার সুযোগ গ্রহণ করে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিস্থিতিকে আরও উন্নত করে তোলা যেতে পারে এবং এর ফলে লাভবান হবে সংশ্লিষ্ট সবকটি দেশই। নীতিনিয়ম নির্দেশিত বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা এবং বিকাশ ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রচেষ্টার গুরুত্বের কথাও বৈঠকে আলোচিত হয়। ভারত সহ এই দেশগুলিতে বাণিজ্যিক প্রচেষ্টার এক বিশেষ অঙ্গ হিসাবে বাণিজ্যিক কাজকর্মকে সহজতর করে তোলার উপযোগী পরিবেশ ও পরিস্থিতি সৃষ্টির ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে হিংসা ও সন্ত্রাস যে একটি বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ সেই প্রশ্নে সহমত প্রকাশ করেন সকল প্রধানমন্ত্রীই। বিশ্ব নিরাপত্তা, সাইবার নিরাপত্তা, মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ও আলোচিত হয় তাঁদের মধ্যে। পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠীর সদস্যপদে ভারতের আবেদনকে স্বাগত জানায় বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সবকটি দেশই।
রাষ্ট্রসংঘের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সেখানকার মহাসচিবের সংস্কার প্রচেষ্টাকেও সাধুবাদ জানানো হয়। ২০৩০ সাল পর্যন্ত কর্মসূচি রূপায়ণের ক্ষেত্রে সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে মদতদানের লক্ষ্যে এই সংস্কার প্রচেষ্টা যে একান্ত জরুরি, সে বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীরা সহমত পোষণ করেন। সেই সঙ্গে, প্যারিস চুক্তির রূপায়ণ প্রচেষ্টাকেও সর্বতোভাবে সমর্থন ও সহযোগিতার কথা বলা হয়। বিশুদ্ধ জ্বালানি উৎপাদনের প্রসঙ্গে বিশেষত, পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি শক্তির প্রসারে সকল রকম প্রচেষ্টা নিরন্তর রাখার সপক্ষে মত প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রীরা। অন্যদিকে, নারী ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এবং আর্থ-সামাজিক তথা রাজনৈতিক জীবনে মহিলাদের পূর্ণ ও অর্থবহ অংশগ্রহণ যে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের একটি পূর্বশর্ত সে বিষয়েও সহমত পোষণ করা হয় এদিনের বৈঠকে।
প্রধানমন্ত্রীরা একযোগে বলেন যে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলির মধ্যে বলিষ্ঠ সহযোগিতার বাতাবরণ গড়ে তোলার মাধ্যমে উদ্ভাবন প্রচেষ্টা, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, নিরন্তর সমাধান প্রচেষ্টা এবং পারস্পরিক কল্যাণসাধক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিস্থিতির উদ্ভব সম্ভব। শিক্ষা, সংস্কৃতি, পর্যটন এবং শ্রম বিনিময়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির জনসাধারণের মধ্যে যে ঘনিষ্ঠ সংযোগ ও সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব এ প্রশ্নেও একমত হন সকল প্রধানমন্ত্রী।