মার্কিন রাষ্ট্রপতি জোসেফ আর বাইডেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ জানিয়েছেন, ভারত-মার্কিন সর্বাত্মক বিশ্ব কৌশলগত অংশীদারিত্বের প্রসার অক্ষুন্ম রাখবে। বিশ্ব কল্যাণের স্বার্থে একে একবিংশ শতাব্দীর সবথেকে উল্লেখযোগ্য অংশীদারিত্ব বলে একে আখ্যা দেন তাঁরা। উভয় নেতা জানান, এই ঐতিহাসিক সময়কালে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা এবং সহযোগিতা এক অভূতপূর্ব স্তরে পৌঁছেছে। তাঁরা এও জানান, ভারত-মার্কিন অংশীদারিত্ব গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা, আইনের শাসন, মানবাধিকার, বহুত্ববাদ প্রভৃতি ক্ষেত্রে একই মনোভাব পোষণ করে। তাঁরা বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মধ্যে প্রধান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিশ্ব সুরক্ষা ও শান্তির লক্ষ্যে এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। প্রতিরক্ষা শিল্পে উদ্ভাবন, পারস্পরিক তথ্য বিনিময় এবং সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরও প্রসারিত করা হবে বলে তারা জানান। আগামী দশকগুলিতে ভারত-মার্কিন সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও বেশি শক্তিশালী হবে বলে তাঁরা আশা প্রকাশ করেছেন।
বিশ্ব মঞ্চে ভারতের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি। বিশেষত, প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে জি-২০ এবং গ্লোবাল সাউথের উল্লেখ করেন তিনি। সেইসঙ্গে সমৃদ্ধ ভারত- প্রশান্ত মহাসাগরীয় ক্ষেত্রে উন্মুক্ত বাতাবরণ গড়ে তুলতে কোয়াডের প্রতি প্রধানমন্ত্রী মোদীর দায়বদ্ধতার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। কোভিড-১৯ অতিমারিতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভারত সম্মুখ সারিতে এগিয়ে এসেছে। সেইসঙ্গে সংঘর্ষদীর্ণ বিশ্বেও ভারতের তরফে শান্তির বার্তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। পোল্যাণ্ড এবং ইউক্রেনে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সফরকে কয়েক দশকে কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম ঐতিহাসিক সফর হিসেবে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে বলেও জানান তিনি। সেইসঙ্গে শক্তিক্ষেত্র সহ মানবিক সহায়তায় মোদীর বার্তারও উল্লেখ করেন তিনি। উভয় নেতা বাণিজ্য রক্ষার স্বার্থে মধ্যপ্রাচ্যে গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথকে উন্মুক্ত করার করার কথা বলেন। ২০২৫ সালে আরব সাগরে যৌথ নৌ মহড়ায় যৌথ টাক্স ফোর্সের নেতৃত্ব দেবে ভারত। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদের দাবিকেও মার্কিন রাষ্ট্রপতি সমর্থন জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে সংস্কারের জন্য ভারতের দাবিকেও তিনি সমর্থন জানান।
মহাকাশ, সেমি কন্ডাক্টর এবং উন্নত টেলি যোগাযোগ সহ ক্রিটিক্যাল এবং উদীয়মান প্রযুক্তি (আইসিইটি)-র মূল প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে কৌশলগত সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারের সাফল্যকে উভয় রাষ্ট্রনেতাই প্রশংসা করেছেন। কৃত্রিম মেধা সহ কোয়ান্টাম, জৈব প্রযুক্তি এবং স্বচ্ছ জ্বালানীর ক্ষেত্রে যৌথ সহযোগিতা এক উল্লেখযোগ্য স্তরে পৌঁছেছে। সেইসঙ্গে এইসব ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা অক্ষুণ্ম রাখার কথাও তাঁরা জানান। দুদেশের মধ্যে প্রযুক্তি বিনিময়ের ক্ষেত্রে যাবতীয় বাধাকে কমিয়ে আনা হবে। সেইসঙ্গে সরকারীভাবে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও উভয় তরফে উদ্যোগ দ্বিগুণ বাড়ানো হবে বলেও জানানো হয়। ভারত-মার্কিন কৌশলগত বাণিজ্য আলোচনার মাধ্যমে প্রযুক্তি সুরক্ষার বিষয়টির ওপর তাঁরা আলোকপাত করেন। আরও গভীর সাইবার স্পেস সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন প্রক্রিয়া গড়ে তুলতে দ্বিপাক্ষিক স্তরে সাইবার সুরক্ষা আলোচনা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথাও উভয় রাষ্ট্রনেতা জানিয়েছেন। উভয় নেতা নির্মাণ ক্ষেত্রে তাঁদের দায়বদ্ধতার কথা জানিয়ে বলেন, এক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন জ্বালানীর ব্যবহার করা হবে। সেইসঙ্গে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সৌর, বায়ু এবং পরমাণু শক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রসার ঘটাবে এবং ছোট মডুলার চুল্লি নির্মাণ প্রযুক্তি উন্নয়নেও কাজ করে যাবে।
উভয় নেতা স্থিতিশীল, সুরক্ষিত,সুস্থায়ী সেমি কন্ডাক্টর সরবরাহ শৃঙ্খল গড়ে তোলা সহ গ্লোবাল ফাউন্ড্রিস(GF)- এর কলকাতায় জি এফ কলকাতা পাওয়ার সেন্টার গড়তে গৃহীত উদ্যোগের প্রশংসা করেন। ইন্টারনেট অফ থিংস প্রযুক্তি সহ কৃত্রিম মেধা এবং ডেটা সেন্টার সহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি প্রশ্নে বলেন, কার্বন নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনতে ও চিপ নির্মাণে গবেষণা উন্নয়ন এবং পারমানবিক সহযোগিতার সম্পর্কসূত্রের প্রসার ঘটানো হবে।
২০২৫ সালে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় নাসা এবং ইসরোর মধ্যে যৌথ উদ্যোগের অগ্রগতির প্রশংসা করেন তাঁরা। অসামরিক মহাকাশ যৌথ কর্মীগোষ্ঠীর অধীন নানা উদ্যোগ ও আলোচনার অগ্রগতির প্রশংসা করে তাঁরা বলেন ২০২৫-এর শুরুতেই এই কর্মীগোষ্ঠীর পরবর্তী বৈঠকে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের নানা রাস্তা তৈরি হবে।
কৃত্রিম মেধা,কোয়ান্টাম এবং অন্যান্য ক্রিটিকাল ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত সহযোগিতার বিষয়েও উভয় নেতা আলোকপাত করেছেন। উদীয়মান প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নতুন বেসরকারি ক্ষেত্রের সহযোগিতাকেও স্বাগত জানিয়েছেন তাঁরা। উভয় নেতা ফাইভ জি প্রযুক্তির প্রসার সহ পরবর্তী প্রজন্মের টেলি যেগাযোগ সম্প্রসারণে সহযোগিতা আরও প্রসারিত করার কথা বলেছেন।
নিরাপদ ও সুরক্ষিত পরিচ্ছন্ন বিশ্ব সরবরাহ শৃঙ্খল গড়তে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরস্পরকে সহযেগিতা করবে।
বৈচিত্রপূর্ণ পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিক্ষেত্রের উন্মোচনে ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভালপমেন্ট এবং ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্সের মধ্যে নতুন সহযোগিতা সমঝোতা চুক্তির কথা ঘোষণা করেন তাঁরা।
রিও দি জেনেইরোতে জি-২০ শিখর বৈঠকে ভারতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জি-২০ শিখর বৈঠকে উঠে আসা অগ্রাধিকারের বিভিন্ন বিষয় প্রাধান্য পাবে বলেও মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধান আশাপ্রকাশ করেছেন।