কম উপযোগী এবং বেশি আবর্জনা সৃষ্টিকারী একবার ব্যবহার করা যায়, এমন প্লাস্টিক সহ প্লাস্টিকের দূষণ ঠেকাতে ফ্রান্স এবং ভারত যৌথভাবে অঙ্গীকার করেছে। আবর্জনা এবং প্লাস্টিক বর্জ্যের ক্ষেত্রে অব্যবস্থার কারণে প্লাস্টিক পণ্যের দূষণের ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে গোটা বিশ্বকে অবশ্যই নজর দিতে হবে। এটি সাধারণ এবং সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে (স্থলে দূষণের জন্য দায়ী ৮০ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য। ১৯৫০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৯.২ বিলিয়ন টন প্লাস্টিক উৎপাদিত হয়েছে, যার থেকে কোটি কোটি টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়েছে। প্রতি বছর ৪০০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক উৎপাদিত হয়, যার এক তৃতীয়াংশ হল একবার ব্যবহার করা যায় এমন প্লাস্টিক এবং প্রায় ১০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক সমুদ্রে জমা হচ্ছে)।
একবার ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া বা পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিককে রাষ্ট্রসঙ্ঘ পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) –তে সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে, খাবারের প্যাকেট, বোতল, স্ট্র, পাত্র, কাপ শপিং ব্যাগ প্রভৃতি।
প্লাস্টিকের দূষণ মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সংস্থা (আইএমও) জাহাজ থেকে সমুদ্রে আবর্জনা ফেলা আটকাতে ২০১৪ সাল থেকে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। ২০১৭ সালে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি গোষ্ঠীও তৈরি করা হয়।
একবার ব্যবহার করা যায় এমন প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো এবং বিকল্প সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
২০১৯ –এর মার্চ মাসে ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট অ্যাসেম্বলি (ইউএনইএ)-তে "একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিকের দূষণ”-এর বিষয়ে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল, যেখানে একবার ব্যবহার করা যায়, এমন প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে ব্যাপারে সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। সেই সঙ্গে আইইউসিএন একক ব্যবহার্য প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে তিনটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, সংরক্ষিত এলাকাগুলিতে ২০২৫ সালের মধ্যে একবার ব্যবহার করা যায়, এমন প্লাস্টিক বন্ধ করা যায়।
বিকল্প সমাধানসূত্রের মধ্যে রয়েছে :
যেখানে বিকল্প ব্যবস্থা সহজলভ্য রয়েছে, সেখানে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি;
পরিবেশ উপযোগী বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে উৎপাদকদের দায়বদ্ধ করা;
প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার, পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার যথাসম্ভব কমানো এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহারে জোর দেওয়া;
মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলার ব্যাপারে উৎসাহিত করা;
২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ফ্রান্সে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য, যেমন – চামচ, প্লেট, স্ট্র, খাবারের পাত্র পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্যাকেজিং-এর ক্ষেত্রে ফ্রান্স ২০৪০ সালের মধ্যে একবার ব্যবহার করা যায়, এমন প্লাস্টিক পুরোপুরি বন্ধ করা লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে।
২০২১ সালে ১২ অগাস্ট থেকে ভারত, ধাপে ধাপে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক তুলে দেওয়ার ব্যাপারে নিয়ম বিধি চালু করেছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে প্লাস্টিক প্যাকেজিং-এর ক্ষেত্রে উৎপাদকদের জন্য গাইডলাইন তৈরি করেছে ভারত। রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রস্তাব মেনে ভারত এবং ফ্রান্স অন্য সমভাবাপন্ন দেশগুলির সঙ্গে প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে গঠনমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে।