২০১৪ সালের গরমকালে, দেশের মানুষ সন্দেহাতীতভাবে রায় দিয়েছিলেন:‌

পরিবারতন্ত্রের বদলে সততাকে।

স্তব্ধতার বদলে উন্নয়নকে।

অচলবস্থার বদলে সুরক্ষাকে।

বাধার বদলে সুযোগকে।

ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির বদলে বিকাশকে।

দেশের মানুষ এই পাঁচটি বিষয় নিয়ে বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন। দেশে ভাল কিছুর বদলে দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, নিজেদের লোককে পাইয়ে দেওয়ার ঘটনা নিত্যদিন শিরোনামে থাকত।

এই অতীত দূরে সরিয়ে দেশের ভাল করার জন্য মানুষ ভোট দিয়েছিলেন।

২০১৪ সালে জনতার রায় এক যুগান্তকারী ঘটনা ছিল। কারণ ভারতের ইতিহাসে এই প্রথমবার কোনও অপরিবারতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করতে পেরেছিল।

পরিবার আগে’–র বদলে দেশ আগে’— এই ভাবনা নিয়ে যখন কোনও সরকার কাজ করে, তখন সেটা তার কাজেও দেখা যায়।

বিগত পাঁচ বছরে ভারতীয় অর্থনীতি বিশ্বের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

ভারত পাকা শৌচালয় নির্মাণে অসাধারণ সাফল্য লাভ করেছে (‌২০১৪-র ৩৮ শতাংশ বেড়ে এখন ৯৮ শতাংশ হয়েছে)‌, যাঁরা ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পেতেন না, তাঁদের কাছে সেই পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে, মূলধন জোগান হয়েছে, পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে, গৃহহীনদের জন্য বাড়ির ব্যবস্থা, আর্থিকভাবে দুঃস্থদের স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং তরুণ প্রজন্মের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এই সব পরিকল্পনার ফল এখন দেখা যাচ্ছে। সরকার প্রতিষ্ঠানগুলিকে বাকি সব কিছুর থেকে ওপরে রেখেছে।

যখন পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি দেশ শাসন করেছে, তখনই প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আঘাত এসেছে, ভারত সে সবকিছু দেখেছে।

সংসদ:

ষষ্ঠদশ লোকসভায় ৮৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। এটা বিস্ময়কর। পাশাপাশি কাজের পরিমাণ গতবার অর্থাৎ পঞ্চদশ লোকসভার থেকে অনেকটাই বেশি।

২০১৪ এবং ২০১৯ সালের মধ্যে রাজ্যসভার কাজ হয়েছে ৬৮ শতাংশ।

অভ্যন্তরীণ বাজেট অধিবেশনের সময় লোকসভায় ৮৯ শতাংশ এবং রাজ্যসভায় মাত্র ৮ শতাংশ কাজ হয়েছে।

সংসদের এই দুই কক্ষের কি গুরুত্ব, তা দেশের মানুষ জানেন। যথন কোনও অপরিবারকেন্দ্রীক দল থাকে ক্ষমতায় থাকে, তখন তাদের কাজ অনেক বেশি চোখে পড়ে।

দেশের মানুষের প্রশ্ন তোলা দরকার কেন রাজ্যসভায় লোকসভার মতো কাজ হয় না? কোন শক্তি তাকে কাজ করতে বাধা দিয়েছে এবং কেন?

সমবাদমাধ্যম:

পরিবারতান্ত্রিক দলগুলো কখনোই নিয়ন্ত্রণহীন এবং সক্রিয় সংবাদমাধ্যমের কাজ পছন্দ করে না। আর তাই তো বাক্‌ স্বাধীনতার কন্ঠরোধ করতে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারই যে প্রথম সাংবিধানিক সংস্কার এনেছিল। এতে আশ্চর্য হওয়ার মতো কিছুই নেই। সংবাদমাধ্যমের কাজ হল সকলের কাছে সত্যটা তুলে ধরা, সত্যটা বলা। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের এই গুণকে অশালীন এবং খারাপ হিসেবে দেখানো হয়েছিল।

আপত্তিকরকিছু পোস্ট করেছেন বলে আপনার জেল হতে পারে ইউপিএ সরকারের শাসনকালে এমন আইনও আনা হচ্ছিল।

ইউপিএর এক ক্ষমতাশালী মন্ত্রীর ছেলের বিরুদ্ধে টুইটারে কিছু মন্তব্য করায় দেশের নিরিহ নাগরিকের জেল হতে পারে।

কর্ণাটকে একদল যুবক এক অনুষ্ঠানে নিজেদের মত প্রকাশ করেছিলেন। এবং তার ফলে তাঁদের গ্রেপ্তার হতে হয়েছিল। কর্ণাটকের শাসন ক্ষমতার দায়িত্বে রয়েছে কংগ্রেস।

তবে কংগ্রেসকে বলতে চাইব, কোনও হুমকিই বাস্তব সত্যকে পাল্টে দিতে পারবে না। মানুষের কন্ঠরোধ করে ওই দল সম্পর্কে মানুষের ভাবনাচিন্তা পাল্টে দিতে পারবে না।

সংবিধান এবং আদালত:

১৯৭৫ সালের ২৫শে জুন সূর্যাস্তের সময়, দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোও অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল।

একটা পরিবারকে রক্ষা করতে কংগ্রেস দল যে কতদূর যেতে পারে, তা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এক রেডিওবার্তাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

জরুরি অবস্থার মধ্য দিয়ে একটা দেশ রাতারাতি বন্দি হয়ে গিয়েছিল। এমনকি তখন মুখ খোলাকে অপরাধ, পাপ হিসেবে দেখা হত।

৪২তম সাংবিধানিক সংস্কার আদালতের ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছিল। সংসদ এবং আরও অনেক কিছুতেও তার প্রভাব ছিল।

জরুরি অবস্থা সরিয়ে দেওয়ার জন্য মানুষের প্রতিবাদের স্রোত আছড়ে পড়েছিল। কিন্তু যাঁরা এটিকে ব্যবহার করেছিলেন তাঁদের মধ্যে এখনও সাংবিধানিক বিরোধী মানসিকতা রয়ে গেছে। কংগ্রেস ৩৫৬টি ধারাটিকে প্রায় একশোবার ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী নিজেই পঞ্চাশবারের বেশি ব্যবহার করেছেন। যখন তাদের কোনও রাজ্য সরকার অথবা কোনও নেতাকে পছন্দ হয়নি, তখনই তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হতো।

আদালত অবমাননার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের ভূমিকা এক অন্য মাত্রায় পৌঁছেছে। শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বিচার বিভাগ’–এর কথা বলেছিলেন, যেখানে আদালত দেশের সংবিধানের বদলে পরিবারের প্রতি বেশি দায়বদ্ধ থাকবে।

প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বিচার বিভাগ’–এর তত্ত্বের জন্য কংগ্রেস সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক সম্মানীয় বিচারপতিদের এড়িয়ে গেছে।

কংগ্রেসের কাজ করার পদ্ধতি খুব সহজপ্রত্যাখ্যান করো, সম্মানহানি করো এবং ভয় দেখাও। আদালতের কোনও রায় তাঁদের বিরুদ্ধে গেলে সেটা প্রত্যাখ্যান করে দাও। এরপর সেই বিচারকের সম্মানহানি করো। ওই বিচারকের বিরুদ্ধে ইমপিচমিন্ট আনা হতে চলেছেএমন কথা নিয়ে আলোচনা শুরু করে দাও।

 

সরকারি প্রতিষ্ঠান:‌

ড.‌ মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন যোজনা কমিশনকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী বলেছিলেন, ‘একদল জোকার

সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কংগ্রেরের কি ধ্যানধারনা তা এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়।

ইউপিএ সরকারের কথা মনে করুন। কংগ্রেস সিএজি সম্পর্কে প্রশ্ন তুলছিল। কারণ, ওই প্রতিষ্ঠানটি তাদের ২জি, কয়লা দুর্নীতি সম্পর্কে সবাইকে জানিয়েছিল।

সিবিআই মানে কংগ্রেস ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন। গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের ঠিক আগের মুহূর্তে এই প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক দলগুলো বারবার কাজে লাগাত।

আইবি, এর মতো সংস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে সমস্যা তৈরি করা হতো।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নেওয়া সিদ্ধান্তের কাগজপত্র টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল। যিনি এই কাজ করেছিলেন তিনি মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন না। এক প্রেস কনফারেন্সে এমন কাজ করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সমান্তরালে কাজ করা জন্য এনএসি তৈরি করা হয়েছিল। এবং এই সবের পর কংগ্রেস প্রতিষ্ঠান নিয়ে কথা বলতে আসছে?

৯০এর দশকে দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোতে এক ভুয়ো গুপ্তচরের কথা বলা হয়ছিল। এটা আসলে কেরলে কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ থামানোর চেষ্টা ছিল। এবং এর কারণে এক বিশিষ্ট বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়েছিল। তবে সেটা ওঁদের কাছে কোনও ব্যাপারই নয়।

সশস্ত্র বাহিনী:‌

প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে কংগ্রেস সব সময় অর্থ উপার্জনের এক উৎস হিসেবে দেখে এসেছে। আর তাই কংগ্রেসের কাছে বাহিনীর যে মর্যাদা পাওয়ার কথা ছিল, তাঁরা সেই মর্যাদা পাননি।

১৯৪৭ সালের পর প্রত্যেক কংগ্রেস সরকার প্রতিরক্ষাদুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়েছে। তারা শুরু করেছেন জিপ দিয়ে। এরপর তারা যুক্ত হয়েছেন বন্দুক, সাবমেরিন এবং হেলিকাপ্টারের সঙ্গে।

প্রত্যেকটা ফঁড়েই একটা পরিবারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

এক শীর্ষ কংগ্রেস নেতা এক সেনাপ্রধানকে গুন্ডা বলেছিলেন। এবং পরবর্তীকালে সেটাই দলের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে চালু হয়ে গেল। বাহিনীর প্রতি তাঁদের অসম্মান কত তীব্রএই ঘটনাই তার প্রমাণ।

যখন আমাদের বাহিনী সন্ত্রাসবাদীদের ধ্বংস করছে, তখন কংগ্রেস নেতারা রাজনৈতিক নেতৃত্বকে রক্তের দালালিকরছেন বলে গাল পাড়ছেন। যখন বিমানবাহিনী সন্ত্রাসবাদীদের ধ্বংস করছে, তখনও বিভিন্ন প্রশ্ন তুলছে কংগ্রেস।

 

কংগ্রেস দলে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের অভাব:‌

রাজনৈতিক দলগুলি হলো এমন স্পন্দনশীল প্রতিষ্ঠান যারা বিভিন্ন জনমত প্রকাশ করে। তবে দুর্ভাগ্য হলেও এটা সত্যি, কংগ্রেস দল গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না।

দলের কোনও নেতা দলের শীর্ষ পদে যাওয়ার স্বপ্ন দেখলে তাঁকে দল থেকে একেবারে ছেঁটে ফেলা হয়।

তাঁদের এই ধরণের অধিকারবোধ বিভিন্ন সময় আইনি প্রক্রিয়া পরিচালনার ক্ষেত্রে দেখা গেছে। এখন দলের শীর্ষ নেতারা বড় বড় দুর্নীতির অভিযোগে জামিনে রয়েছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যখন তাঁদের এই ব্যাপারে প্রশ্ন করে, তাঁরা জবাব দেওয়ার সৌজন্যটুকুও দেখায় না।

তাঁরা কি দায়বদ্ধতা থেকে ভীত নাকি তাঁরা এতে একেবারেই বিশ্বাস করেন না?

 

একটু ভালো করে ভাবুন:‌

সংবাদমাধ্যম থেকে সংসদ।

সেনা থেকে বাক্‌ স্বাধীনতা।

সংবিধান থেকে আদালত।

প্রতিষ্ঠানকে নিজের মতো অপমান করে চলেছে কংগ্রেস।

বাকি সবাই ভুল, এবং একমাত্র কংগ্রেসই সঠিক।

আপনি যখন ভোট দিতে যাবেন তখন অতীতের কথা মনে রাখবেন। এবং মনে করবেন কিভাবে একটা পরিবার ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশকে ভারী দাম দিয়ে যেতে হচ্ছে।

এর আগেও যদি তাঁরা এমনটা করে থাকতে পারেন, তবে তাঁরা নিশ্চয়ই এটি ফের করতে পারবেন।

মুক্তির দাম হল শাশ্বত সতর্কতা।

আসুন আমরা সকলে সজাগ থাকি। এবং আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করে তুলতে কঠোর পরিশ্রম করি। যেগুলো সংবিধানের প্রতিষ্ঠাতারা আমাদের দিয়ে গিয়েছিলেন।

 

Explore More
প্রত্যেক ভারতীয়ের রক্ত ফুটেছে: মন কি বাত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদী

জনপ্রিয় ভাষণ

প্রত্যেক ভারতীয়ের রক্ত ফুটেছে: মন কি বাত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদী
Gaya to Ayodhya in just 6 hours,thanks to Namo Bharat Rapid Train

Media Coverage

Gaya to Ayodhya in just 6 hours,thanks to Namo Bharat Rapid Train
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
একতার মহাকুম্ভ – নতুন এক যুগের সূচনা
February 27, 2025

পবিত্র প্রয়াগরাজ শহরে সফল এক মহাকুম্ভ সম্পন্ন হয়েছে। ঐক্যের মহাযজ্ঞ সম্পূর্ণ হল। কোন জাতির মধ্যে যখন চেতনা জাগ্রত হয়, তখন সেই জাতি দীর্ঘ কয়েক শতক পুরনো পরাধীনতার শিকলকে ভেঙে ফেলে, নতুন শক্তিতে মুক্ত বাতাস গ্রহণ করে। ১৩ জানুয়ারি থেকে প্রয়াগরাজে একতার মহাকুম্ভে তার-ই প্রতিফলন দেখা গেছে।

|

অযোধ্যায় রাম মন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠার সময় ২২ জানুয়ারি আমি দেবভক্তি এবং দেশভক্তির বিষয়ে বলেছিলাম। প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভ চলাকালীন দেব-দেবী, সাধু-সন্ত, মহিলা, শিশু, যুবক-যুবতী, প্রবীণ নাগরিকবৃন্দ থেকে শুরু করে সমাজের সকল স্তরের মানুষ এখানে জড়ো হয়েছেন। আমরা জাতির মধ্যে চেতনা জাগ্রত হওয়ার প্রমাণ পেয়েছি। একতার এই মহাকুম্ভে একই জায়গায় একই সময়ে পবিত্র এক আয়োজনে ১৪০ কোটি ভারতবাসীর আবেগ পুঞ্জিভূত হয়েছে।

প্রয়াগরাজ অঞ্চলের পবিত্র শৃঙ্ঘারপুর হল ঐক্য, সম্প্রীতি এবং ভালোবাসার এক মহান ভূমি, যেখানে প্রভু শ্রীরাম এবং নিশাদরাজের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়। তাঁদের সেই সাক্ষাৎ আসলে নিষ্ঠা এবং সদিচ্ছার মিলন। আজও সেই একই মানসিকতায় প্রয়াগরাজ আমাদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে।

|

গত ৪৫ দিন ধরে আমি প্রত্যক্ষ করেছি দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে কোটি কোটি মানুষ সঙ্গমের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন। মিলনের সেই আবেগ আরো সঞ্চারিত হয়েছে। গঙ্গা, যমুনা এবং সরস্বতীর পবিত্র সঙ্গমে ভক্তরা বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় আস্থার সঙ্গে মিলিত হয়েছেন।

|

প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভ নিয়ে আধুনিক যুগের ম্যানেজমেন্টের পেশাদার ব্যক্তিত্বরা পড়াশোনা করছেন। বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন যারা করেন, সেই বিশেষজ্ঞ এবং পরিকল্পনাকারীরাও এই মহাকুম্ভের বিষয়ে আগ্রহপ্রকাশ করেছেন। এর আগে বিশ্বের কোথাও এত বৃহৎ জনসমাগম হয় নি।

তিনটি নদীর সঙ্গমস্থলে কোটি কোটি মানুষ জড়ো হওয়ার জন্য কিভাবে প্রয়াগরাজে এসেছেন সারা বিশ্ব তা প্রত্যক্ষ করেছে। এঁদের কাছে কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে কোন আমন্ত্রণপত্র পাঠায়নি, কোথায় যেতে হবে তা বলে দেয়নি, অথচ কোটি কোটি মানুষ স্বইচ্ছায় মহাকুম্ভের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন, পবিত্র অবগাহনের মাধ্যমে নিজেকে আশীর্বাদধন্য বলে মনে করেছেন।

|

পবিত্র স্থানের পর প্রত্যেকের মুখে যে অপার আনন্দ ও তৃপ্তি আমি প্রত্যক্ষ করেছি তা কোনদিনই ভোলার নয়। মহিলা, বয়স্কজনেরা, আমাদের দিব্যাঙ্গ ভাই ও বোনেরা – প্রত্যেকেই ঠিক সঙ্গমে পৌঁছোনোর রাস্তা খুজে পেয়েছেন।

|

ভারতের যুবসম্প্রদায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই আয়োজনে সামিল হয়েছেন, যা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। মহাকুম্ভে তরুণ প্রজন্মের উপস্থিতি এক নতুন বার্তা দিয়েছে – আমাদের গৌরবোজ্জ্বল সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে তাঁরা এগিয়ে নিয়ে যাবেন। একে সংরক্ষণ করার বিষয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে তাঁরা ওয়াকিবহাল হয়েছেন এবং এই দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন।

মহাকুম্ভ উপলক্ষে প্রয়াগরাজের বিপুল জনসমাগম নতুন এক রেকর্ড তৈরি করেছে। কিন্তু শারীরিক ভাবে উপস্থিত না হয়েও কোটি কোটি মানুষ এই উপলক্ষে এখানে মানসিক ভাবে সমাবেত হন। ভক্তরা যে পবিত্র জল নিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে গেছেন, সেই জল লক্ষ লক্ষ মানুষের আধ্যাত্মিক ভাবনার উৎসে পরিণত হয়েছে। মহাকুম্ভ ফেরত বহু পূণ্যার্থীকে নিজ নিজ গ্রামে সসম্মানে বরণ করে নেওয়া হয়েছে, সমাজ তাঁদের সম্মানিত করেছে।

|

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রয়াগরাজে যা ঘটেছে তা অভূতপূর্ব। এর মাধ্যমে আগামীদিনের দেশ গঠনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছে।

কেউ ভাবতেও পারেননি এত বিপুল সংখ্যক তীর্থযাত্রী এখানে জড়ো হবেন। কুম্ভের অতীতের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে এখানে কতজন আসতে পারেন, সেবিষয়ে প্রশাসন কিছু হিসেব-নিকেশ করেছিল, কিন্তু সেই প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে বহু মানুষ এখানে এসেছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যতজন বসবাস করেন তার প্রায় দ্বিগুণ মানুষ একতার এই মহাকুম্ভে এসেছিলেন।

কোটি কোটি উৎসাহী অংশগ্রহণকারী ভারতবাসীর বিষয়ে আধ্যাত্মিক জগতের বিশেষজ্ঞরা যদি পর্যালোচনা করেন, তাহলে তাঁরা দেখবেন নিজ ঐতিহ্যে গর্বিত দেশবাসী এখন নতুন এক উদ্দীপনায় ভরপুর হয়ে উঠেছেন। আমি তাই মনে করি নতুন এক যুগের সূচনা হয়েছে, যা নতুন ভারতের ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করবে।

|

হাজার হাজার বছর ধরে ভারতের জাতীয় ভাবনাকে মহাকুম্ভ শক্তিশালী করেছে। প্রতিটি পূর্ণ কুম্ভে সাধু-সন্ত, বিদ্বান ব্যক্তি এবং পণ্ডিতেরা জড়ো হতেন। তাঁরা সেই সময়ে সমাজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মত বিনিময় করতেন। তাঁদের আলোচনার ওপর ভিত্তি করে দেশ এবং সমাজ নতুন এক দিশায় এগিয়ে চলতো। প্রতি ৬ বছর পর অর্ধকুম্ভের সময় গৃহীত নীতিগুলি পর্যালোচনা করা হতো। ১৪৪ বছর পর ১২টি পূর্ণ কুম্ভের শেষে সেকেলে ঐতিহ্যগুলিকে বাতিল করে দেওয়া হতো, নতুন নতুন ধারণা যুক্ত হতো, ভবিষ্যতের জন্য নতুন নতুন রীতি-নীতি কার্যকর করা হতো।

১৪৪ বছর পর এই মহাকুম্ভে ভারতের উন্নয়নযাত্রা সম্পর্কে আমাদের সাধু-সন্ন্যাসীরা নতুন এক বার্তা দিয়েছেন। সেই বার্তা হল বিকশিত অর্থাৎ উন্নত ভারত গড়তে হবে।

একতার এই মহাকুম্ভে ধনী, দরিদ্র নির্বিশেষে , তরুণ বা প্রবীণ, গ্রামবাসী বা শহরের বাসিন্দা, দেশ-বিদেশের মানুষ, পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ – যে কোন প্রান্তের মানুষ এখানে মিলিত হয়েছেন। জাত, ধর্ম, নীতি, আদর্শ এ সব কিছু অগ্রাহ্য করে সঙ্গমে তাঁরা সমবেত হয়েছেন। এটি আসলে এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত ভাবনার প্রতিফলন, যেখানে কোটি কোটি মানুষের আস্থা রয়েছে। আর এখন আমরা সেই একই উৎসাহ, উদ্দীপনায় উন্নত ভারত গড়তে ব্রতী হব।

|

এই প্রসঙ্গে আমার ভগবান কৃষ্ণের সেই উপাখ্যানটি মনে পড়ছে। মা যশোদা তাঁকে মুখ খুলে হাঁ করতে বললে, তিনি যখন মুখ খুলেছিলেন, তখন তাঁর মা সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মান্ড প্রত্যক্ষ করেন। একই ভাবে এই মহাকুম্ভে দেশ-বিদেশের মানুষ ভারতের সম্মিলিত শক্তির সম্ভাবনাকে প্রত্যক্ষ করেছেন। আমাদের আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে, একনিষ্ঠ ভাবে উন্নত ভারত গড়তে হবে।

অতীতে ভক্তি আন্দোলনের সময় সাধু-সন্ন্যাসীরা দেশ জুড়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ সংকল্পকে চিহ্নিত করে তাকে কাজে লাগাতে উৎসাহিত করেছিলেন। আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের শক্তি সম্পর্কে স্বামী বিবেকানন্দ থেকে শ্রী অরবিন্দ — প্রত্যেক মহান চিন্তাবিদ মনে করিয়ে দিয়েছেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় মহাত্মা গান্ধীও সেই অভিজ্ঞতা লাভ করেন। স্বাধীনতা উত্তর যুগে এই সম্মিলিত শক্তিকে যদি যথাযথ ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হতো, তাহলে তা প্রত্যেকের কল্যাণে ব্যবহার করা যেত। ফল স্বরূপ নতুন এক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য তা গুরুত্বপূর্ণ এক শক্তি হিসেবে কাজে লাগান যেতো। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সেই শক্তিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তবে, বর্তমানে উন্নত ভারত গড়তে যে ভাবে জনগণের সম্মিলিত শক্তি আত্মপ্রকাশ করছে তা দেখে আমি আনন্দিত।

|

বৈদিক যুগ থেকে বিবেকানন্দ , প্রাচীন যুগের নীতি থেকে আধুনিক যুগের কৃত্রিম উপগ্রহ – দেশের মহান রীতি-নীতি সবসময়ই জাতি গঠনে সহায়ক হয়েছে। নাগরিক হিসেবে আমি চাইবো আমাদের পূর্বপুরুষ এবং সাধু-সন্ন্যাসীদের কর্ম তৎপরতা অনুপ্রেরণার নতুন উৎস হোক। একতার এই মহাকুম্ভ নতুন নতুন সংকল্পকে বাস্তবায়িত করতে সহায়তা করুক। আসুন আমরা ঐক্যকে আমাদের পথপ্রদর্শক নীতি হিসেবে গ্রহণ করি। দেশ সেবা আসলে অধ্যাত্ম সেবার সমার্থক – এই ভাবনায় আমরা এগিয়ে চলি।

কাশীতে আমার নির্বাচনী প্রচারের সময়কালে আমি বলেছিলাম, “মা গঙ্গার আহ্বানে আমি এখানে এসেছি”। এটি নিছক কোন আবেগ ছিল না। এর মধ্য দিয়ে পবিত্র নদীগুলিকে পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে আমাদের দায়বদ্ধতার বিষয়টি অন্তর্নিহীত ছিল। প্রয়াগরাজে গঙ্গা, যমুনা এবং সরস্বতী নদীর সঙ্গমে দাঁড়িয়ে আমার সেই সংকল্প আরও দৃঢ় হয়েছে। আমাদের নদীগুলির পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার সঙ্গে নিজেদের জীবনযাত্রা যুক্ত রয়েছে। তাই বড় বা ছোট যেরকমেরই নদী হোক সেই নদীকে জীবনদায়ী মাতা হিসেবে আমরা পুজো করবো। আমাদের নদীগুলিকে পরিচ্ছন্ন রাখার ক্ষেত্রে যে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, এই মহাকুম্ভ তাকে আরও অনুপ্রাণিত করেছে।

|

আমি জানি এধরনের একটি বৃহৎ কর্মকান্ডকে বাস্তবায়িত করা সহজ কোন কাজ নয়। আমাদের নিষ্ঠায় কোন ঘাটতি থাকলে তার জন্য আমি মা গঙ্গা, মা যমুনা এবং মা সরস্বতীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। আধ্যাত্মিক চেতনার প্রতিমূর্তি জনতা জনার্দনকে পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের তরফে যদি কোনরকমের খামতি থাকে, তার জন্য আমি সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

এই মহাকুম্ভে অগণিত মানুষ যে আধ্যাত্মিক চেতনায় জড়ো হয়েছিলেন, তাঁদের পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে একই রকমের ভাবনায় আমরা কাজ করেছি। উত্তর প্রদেশের সাংসদ হিসেবে আমি বলতে চাই যোগীজির নেতৃত্বে প্রশাসন এবং জনসাধারণ যে ভাবে এই একতার মহাকুম্ভকে সফল করে তুলেছেন তার জন্য আমি গর্বিত। রাজ্য অথবা কেন্দ্র, প্রশাসক অথবা শাসক – কারোর পক্ষে একক ভাবে এই আয়োজন সফল করা সম্ভব নয়। নিকাশী ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত কর্মী, পুলিশ, নৌকো চালক, গাড়ি চালক, খাদ্য সরবরাহকারী - প্রত্যেকে একনিষ্ঠ সেবক হিসেবে এখানে নিরলস ভাবে কাজ করে গেছেন। প্রয়াগরাজের জনসাধারণ নিজেদের হাজারও অসুবিধা সত্বেও যে ভাবে তীর্থযাত্রীদের স্বাগত জানিয়েছেন, তা এককথায় অনবদ্য। আমি প্রয়াগরাজের জনসাধারণ সহ উত্তরপ্রদেশের প্রত্যেককে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। তাঁরা এক অসাধারণ কাজ করেছেন।

|

আমাদের দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের বিষয়ে আমার সবসময়ই অটুট আস্থা রয়েছে। এবারের মহাকুম্ভ প্রত্যক্ষ করে সেই আস্থা বহুগুণ শক্তিশালী হয়েছে।

যেভাবে ১৪০ কোটি ভারতবাসী একতার মহাকুম্ভকে আন্তর্জাতিক এক কর্মসূচিতে পরিণত করেছেন, তা অবিশ্বাস্য। আমাদের জনগণের নিষ্ঠা, অধ্যবসায় এবং উদ্যোগে আমি আপ্লুত। দেশবাসীর এই সম্মিলিত প্রয়াসের মধ্য দিয়ে যে সাফল্য আমরা অর্জন করেছি, আমি তা শ্রী সোমনাথকে নিবেদন করবো। দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে আমি প্রথমে সেখানে যাব এবং তার কাছে প্রত্যেক দেশবাসীর জন্য প্রার্থনা করবো।

মহাশিবরাত্রীর দিনে মহাকুম্ভ হয়তো আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ হয়েছে, কিন্তু গঙ্গার শাশ্বত প্রবাহের মতো আমাদের আধ্যাত্মিক শক্তি, জাতীয় ঐক্য ও চেতনা জাগ্রত থাকবে, যেগুলিকে মহাকুম্ভ আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে সঞ্চারিত করেছে। এই শক্তি, ঐক্য ও চেতনা আমাদের আগামী প্রজন্মকেও অনুপ্রাণিত করবে।