প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত ২১ মে রুশ ফেডারেশনের সোচি শহরে প্রথম অনানুষ্ঠানিক শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। উভয় নেতার কাছে এই শীর্ষ বৈঠক তাঁদের মৈত্রী সম্পর্ক গভীরতর করা এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ইস্যু বিষয়ে মত বিনিময় করার এক সুযোগ এনে দিয়েছিল। ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক মত বিনিময়ের ঐতিহ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
দুই নেতা-ই, ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে বিশেষ এবং সুবিধাপ্রাপ্ত কৌশলগত অংশীদ্বারিত্ব, বিশ্বশান্তি এবং স্হিতিশীলতার পক্ষে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে একমত হয়েছেন। তাঁরা, মুক্ত এবং সমতা ভিত্তিক বিশ্ব ব্যবস্হায় ভারত ও রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অবদান বিষয়টিও উল্লেখ করেন। এই প্রসঙ্গে তাঁরা বিশ্বশান্তি এবং স্হিতিশীলতা রক্ষায় অভিন্ন দায়িত্বশীল দুটি প্রধান শক্তি হিসাবে একে অপরের কাজের স্বীকৃতি দেন।
উভয় নেতা-ই গুরুত্বপূর্ণ আর্ন্তজাতিক বিষয়ে গভীরভাবে আলাপ-আলোচনা করেন। তাঁরা একটি বহুপাক্ষিক বিশ্ব ব্যবস্হা গড়ে তোলার গুরুত্ব বিষয়ে একমত হন। তাঁরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা এবং সমন্বয় বিশেষ করে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন বিষয়ে এই সমন্বয়কে জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং প্রেসিডেন্ট পুতিন রাষ্ট্রসঙ্ঘ, সাংহাই সহযোগিতা সংগঠন, ব্রিকস এবং জি-২০এর মতো বহুপাক্ষিক সংগঠনে একজোট হয়ে কাজ করার বিষয়েও রাজি হন।
উভয় নেতা-ই সন্ত্রাসবাদ এবং সাধারণ মানুষের বিদ্রোহীকরণ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং যে কোনও ধরনের সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় তাঁদের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এই প্রসঙ্গে তাঁরা আফগানিস্হানে সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের ভয়মুক্ত পরিবেশে শান্তি এবং স্হিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার গুরুত্ব দেন। এছাড়া এই লক্ষ্য অর্জনেও একযোগে কাজ করার বিষয়ে তাঁরা রাজি হন।
উভয় নেতা-ই জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং অগ্রাধিকার বিষয়ে বিস্তারিতভাবে মত বিনিময় করেন। তাঁরা ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের বৈশিষ্ট্যে গভীর আস্হা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং সদিচ্ছা প্রসঙ্গে সন্তোষ ব্যক্ত করেন। ২০১৭-র জুন মাসে সেন্ট পিটার্সবার্গ-এ দু দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে যে শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তার সদর্থক প্রভাবে সন্তোষ ব্যক্ত করে উভয় নেতাই এ বছরের শেষ দিকে ভারতে শীর্ষ বৈঠক আয়োজনের আগে তার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রস্তুত করার জন্য আধিকারিকদের নির্দেশ দেন।
উভয় নেতাই-ই ভারতের নীতি আয়োগ এবং রুশ ফেডারেশন অর্থনৈতিক উন্নয়ন মন্ত্রকের মধ্যে একটি কৌশলগত অর্থনৈতিক আলোচনা শুরু করার বিষয়ে একমত হন। এই আলোচনার মধ্য দিয়ে দু দেশের মধ্যে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও বেশি অগ্রগতির সম্ভাবনাযুক্ত স্হানগুলিকে চিন্হিত করার কথা বলা হয়। তাঁরা শক্তিক্ষেত্রে দু দেশের মধ্যে সহযোগিতা পরিধি বৃদ্ধির বিষয়ে সন্তোষ ব্যক্ত করেন এবং এই প্রসঙ্গে রাশিয়ার ‘গ্যাজপ্রোম’ এবং ভারতের ‘গেইল’-এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় প্রথম দফা এলএনজি সরবরাহকে স্বাগত জানান। উভয় নেতা-ই দু দেশের মধ্যে সামরিক, নিরাপত্তা, পারমানবিক শক্তিক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্বের তাৎপর্যের ওপর জোর দেন এবং এইসব ক্ষেত্রে প্রচলিত সহযোগিতাকে স্বাগত জানান।
উভয় নেতা-ই দু দেশের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বার্ষিক শীর্ষ বৈঠক ছাড়াও, নেতৃত্বের স্তরে অতিরিক্ত সংযোগের জন্য এই ধরনের অনানুষ্ঠানিক শীর্ষ বৈঠক আয়োজনের ধারনাটিকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রেসিডেন্ট পুতিনকে এ বছরের শেষ দিকে ভারতে দু দেশের মধ্যে ১৯তম শীর্ষ বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান।